HSC যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর pdf download অধ্যায় ১

HSC যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর pdf download

এইচএসসি পরীক্ষার পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি
HSC Logic 1st Paper Srijonshil question and answer pdf download.

উচ্চ মাধ্যমিক

যুক্তিবিদ্যা
প্রথম পত্র

সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
১ম অধ্যায়

HSC Logic 1st Paper
Srijonshil
Question and Answer pdf download

১. উদ্দীপক-১
সভ্যতার সূচনা লগ্ন হতে মানব সমাজ আত্মরক্ষার্থে নানা কৌশল অবলম্বন করে আসছে। অন্যান্য প্রাণীর আক্রমণ হতে রক্ষার কৌশল ছিল এক সময় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। প্রাকৃতিক দুর্যোগ হতে রক্ষার জন্য আমাদের এখনও নানা কৌশল অবলম্বন করতে হয়। তায়কোয়ান্দো এক ধরনের কৌশল। কিছু শিক্ষার্থী অনাকাঙি্ক্ষত পরিস্থিতি এড়ানোর জন্য এ কৌশল অবলম্বন করে সফলতা অর্জন করেছে।

উদ্দীপক-২
মহাকর্ষীয় তরঙ্গ শনাক্ত করার পদ্ধতি উদ্ভাবন ও গবেষণার জন্য ২০১৭ সালে পুরস্কার লাভ করে মার্কিন গবেষকরা। বাংলাদেশের তরুণ বিজ্ঞানী পরিমল কাজ করেছেন এ গবেষণায়। ১৯১৫ সালে আলবার্ট আইনস্টাইন যে মহাকর্ষীয় তরঙ্গের কথা বলেন, তা ২০১৫ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর প্রমাণিত হয়।
ক. কলা কী?
খ. যুক্তিবিদ্যাকে সকল বিজ্ঞানের বিজ্ঞান বলা হয় কেন?
গ.উদ্দীপক-১ যুক্তিবিদ্যার কোন বিষয়টিকে নির্দেশ করে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপক-১ ও ২ এর স্বরুপ পাঠ্যবইয়ের আলোকে ব্যাখ্যা করো।

১ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. কলা বলতে কোনো বিশেষ জ্ঞানকে বাস্তবে প্রয়োগ করার কৌশলকে বোঝায়।

খ. বিজ্ঞান হলো প্রকৃতির কোনো বিশেষ বিভাগ সম্পর্কে সুশৃঙ্খল ও সুসংবদ্ধ জ্ঞান।
প্রতিটি বিজ্ঞানের কিছু নিজস্ব নিয়ম ও পদ্ধতি রয়েছে। প্রতিটি বিজ্ঞানের নিয়মনীতি যৌক্তিক ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত। বিজ্ঞান সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করতে চায়। আর সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য প্রতিটি বিজ্ঞানকে যুক্তির ওপর নির্ভর হতে হয়। এজন্য যুক্তিবিদ্যাকে সকল বিজ্ঞানের বিজ্ঞান বলা হয়।

গ. উদ্দীপক-১ যুক্তিবিদ্যার কলাবিদ্যা বা কলার দিককে নির্দেশ করছে।
সাধারণত কলাবিদ্যা বলতে কোনো বিশেষ জ্ঞানকে বাস্তবে প্রয়োগ করার কৌশলকে বোঝায়। আবার, কলা বলতে দক্ষতা, পারদর্শিতা বা নৈপুণ্যও বোঝায়। যুক্তিবিদ্যার জনক এরিস্টটল মনে করতেন, কলাবিদ্যা এমন একটা কিছু যা দ্বারা কোনো ব্যক্তি একটি বিষয়ের পরিবর্তন ঘটাতে পারেন। অর্থাৎ, নিজের দক্ষতা দ্বারা কোনো ব্যক্তি একটি বিষয়কে নিজস্ব রূপ দিতে পারেন। যখন একজন ব্যক্তি পাথর দিয়ে মূর্তি তৈরি করেন তখন তিনি তার দক্ষতা বা কৌশলকে প্রয়োগ করেন। আবার, অনেক ক্ষেত্রে কলা বলতে কেউ কেউ কোনো বিধিবদ্ধ জ্ঞানকে বাস্তবে প্রয়োগ করাকে বুঝে থাকেন। যুক্তিবিদ্যা বৈধ যুক্তির কিছু নিয়মকানুন শিক্ষা দেয়। এসব নিয়মের জ্ঞান বাস্তবে প্রয়োগ করা যায়। এদিক থেকে যুক্তিবিদ্যাকে কলা বলে অভিহিত করা যায়।
উদ্দীপকে তায়কোয়ান্দোর কৌশল অবলম্বন করে শিক্ষার্থীদের শারীরিক আক্রমণের মতো অনাকাঙি্ক্ষত পরিস্থিতি এড়ানোর বিষয়টি কলাবিদ্যার অনুরূপ।

ঘ. উদ্দীপক-১ ও উদ্দীপক-২ কলা ও বিজ্ঞান হিসেবে যুক্তিবিদ্যার স্বরুপকে নির্দেশ করে।
যুক্তিবিদ্যাকে বিভিন্ন যুক্তিবিদ নিজস্ব দৃষ্টিকোণ থেকে সংজ্ঞায়িত করেছেন। যুক্তিবিদ্যার স্বরুপ নিয়ে বিভিন্ন যুক্তিবিদ ভিন্ন ভিন্ন মত দিয়েছেন। যুক্তিবিদ হ্যামিলটন, টমসন মনে করেন, যুক্তিবিদ্যা একটি বিজ্ঞান। কারণ চিন্তা সম্পর্কিত কতগুলো নিয়মনীতি প্রদান করাই হলো যুক্তিবিদ্যার কাজ। অর্থাৎ, বিজ্ঞানের মতো যুক্তিবিদ্যা নিজস্ব বিষয়বস্তুকে ব্যাখ্যা করার জন্য কিছু স্বতন্ত্র নিয়মকানুন প্রণয়ন করে। তাই তাত্ত্বিক দিকের ওপর গুরুত্ব দিয়ে তারা যুক্তিবিদ্যাকে বিজ্ঞান বলে অভিহিত করেছেন।
অন্যদিকে, কিছু যুক্তিবিদ যুক্তিবিদ্যাকে কলা বলে অভিহিত করেছেন। যুক্তিবিদ অ্যালড্রিচ মনে করেন, যুক্তিবিদ্যা হলো কলা। তিনি ব্যবহারিক দিকের ওপর গুরুত্ব দিয়ে যুক্তিবিদ্যাকে কলা বলে অভিহিত করেছেন। তার মতে, যুক্তিবিদ্যা কলাবিদ্যার মতো যুক্তিপদ্ধতির নিয়মাবলীকে বাস্তবে প্রয়োগ করার শিক্ষা দেয়। তাই যুক্তিবিদ্যা হলো কলাবিদ্যা।
কিছু যুক্তিবিদ যুক্তিবিদ্যাকে কলা ও বিজ্ঞান উভয়ই বলে অভিহিত করেছেন। যুক্তিবিদ মিল ও হোয়েটলি যুক্তিবিদ্যাকে কলা ও বিজ্ঞান উভয়ই বলেছেন। তাদের মতে, যুক্তিবিদ্যা বিজ্ঞান এই কারণে যে, এটি নির্ভুল চিন্তার নির্দেশ প্রদান করে। আবার, যুক্তিবিদ্যা কলা এই কারণে যে, এটি যুক্তির সাধারণ নিয়মাবলীকে সার্বিকভাবে প্রয়োগের কলাকৌশলের জ্ঞান দান করে। তাই যুক্তিবিদ্যা কলা ও বিজ্ঞান উভয়ই।

২. রবি, সুমন ও লিসা একাদশ শ্রেণিতে পড়ে। ক্লাসের ফাঁকে আড্ডায় লিসা বললো, ‘লক্ষ করেছিস? আমাদের পাঠ্যবিষয়গুলোর মধ্যে একটি বিষয় আছে, যেটি আমাদের বাস্তব জীবনে চলার সঠিক নির্দেশনা দিতে পারে।' সুমন বললো, ‘‘ঠিক বলেছিস, সেটি আমাদের বিভিন্ন বিষয়ে কর্মপদ্ধতির সন্ধান দেয়।' রবি যোগ করে, শুধু কি তাই। এ বিষয়টি বিজ্ঞানের সাথেও সম্পর্কিত।'
ক. 'Logic' শব্দটি কোন ভাষা হতে উৎপত্তি?
খ. কলা বলতে কী বোঝায়?
গ. উদ্দীপকে লিসার বক্তব্যের যৌক্তিকতা ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকে সুমন ও রবির বক্তব্যগুলোর সাথে তুমি কি একমত? তোমার মতের পক্ষে যুক্তি দাও।

২ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. যুক্তিবিদ্যার ইংরেজি প্রতিশব্দ 'Logic' শব্দটির উৎপত্তি হয়েছে গ্রিক শব্দ 'Logike' থেকে।

খ. কলা (Art) বলতে দক্ষতা, পারদর্শিতা, নৈপুণ্য বা কোনো বিশেষ জ্ঞানকে বাস্তব ক্ষেত্রে প্রয়োগ করার কৌশলকে বোঝায়।
কলা হচ্ছে একটি প্রায়োগিক বিদ্যা। এ বিদ্যা কোনো বিশেষ উদ্দেশ্য সাধনের জন্য বৈজ্ঞানিক জ্ঞানকে বাস্তবে প্রয়োগ করার নিয়ম-কানুন ও কৌশল শিক্ষা দেয়। যেমন- শল্যচিকিৎসা বিদ্যা (Surgery) সঠিকভাবে অস্ত্রোপচার করার নিয়মকানুন ও কৌশল শিক্ষা দেয়।

গ. উদ্দীপকে লিসার বক্তব্যে যুক্তিবিদ্যার আদর্শনিষ্ঠ (Normative) দিকটি প্রকাশিত হয়েছে। এ কারণে তার বক্তব্যটি অবশ্যই যৌক্তিক।
যুক্তিবিদ্যা একটি আদর্শনিষ্ঠ বিজ্ঞান। এর মূল আদর্শ হলো সত্যতা। সত্যতার আদর্শের আলোকে যুক্তিবিদ্যা সঠিক চিন্তা পদ্ধতি ও এর নিয়মাবলি নির্ধারণ করে। যেমন- মামলায় জয়লাভের জন্য আদালতে মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়া ঠিক নয়। কেননা, এটি সত্যতা তথা যুক্তিবিদ্যার আদর্শের পরিপন্থী।
উদ্দীপকের লিসা এমন একটি বিষয়ের কথা বলেছে যেটি আমাদের বাস্তব জীবনে চলার সঠিক নির্দেশনা দিতে পারে। যৌক্তিকভাবেই লিসার বক্তব্যটি যুক্তিবিদ্যার আদর্শনিষ্ঠ দিকের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। কেননা, যুক্তিবিদ্যাই সত্যতার আদর্শের আলোকে আমাদের বাস্তব জীবনে চলার সঠিক নির্দেশনা প্রদান করে।

ঘ. হ্যাঁ, সুমন ও রবির বক্তব্যের সাথে আমি একমত। কারণ সুমনের বক্তব্যে যুক্তিবিদ্যার ব্যবহারিক দিক এবং রবির বক্তব্যে তাত্ত্বিক দিক ফুটে উঠেছে।
যুক্তিবিদ্যায় প্রধানত দু'টি দিক রয়েছে। একটি হলো তাত্ত্বিক বা বিজ্ঞান বিষয়ক দিক এবং অন্যটি ব্যবহারিক দিক। প্রকৃতির কোনো নির্দিষ্ট বিষয় সম্পর্কে বিজ্ঞান আমাদের তাত্ত্বিক জ্ঞান প্রদান করে। আর ব্যবহারিক বা প্রায়োগিক বিদ্যা সে জ্ঞানকে বাস্তবে প্রয়োগ করার কর্মপদ্ধতি ও কৌশল শিক্ষা দেয়। যেমন, তাত্ত্বিক বিজ্ঞান হিসেবে পদার্থবিজ্ঞান পদার্থের গঠন ও প্রকৃতি সম্পর্কে জ্ঞান দান করে। আবার প্রায়োগিক বিদ্যা হিসেবে নৌবিদ্যা আমাদের শেখায় কীভাবে নৌযান চালাতে হবে।
উদ্দীপকে সুমন এমন একটি বিষয়ের কথা বলে, যেটি আমাদের বিভিন্ন বিষয়ে কর্মপদ্ধতির সন্ধান দেয়। সুমনের এ বক্তব্য যুক্তিবিদ্যার ব্যবহারিক দিকের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। আবার রবি বলে, এ বিষয়টি বিজ্ঞানের সাথেও সম্পর্কিত। অর্থাৎ তার বক্তব্য যুক্তিবিদ্যার তাত্ত্বিক দিকের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।
পরিশেষে বলা যায়, উদ্দীপকে সুমন ও রবির বক্তব্যে যুক্তিবিদ্যার সামগ্রিক দিক প্রকাশিত হয়েছে।

৩. রাজিব ও মিরাজ খুবই ঘনিষ্ঠ বন্ধু। তারা ২০১৬ সালে এইচএসসি পাস করেছে। তারা কম্পিউটারের ব্যবহার ভালোভাবে জানতে চায়। তাই পরিকল্পনা করে তারা দু'জনই দিনাজপুর কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে ভর্তি হয়ে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করছে। রাজিব প্রশিক্ষণ গ্রহণের পাশাপাশি একটি কম্পিউটার ক্রয় করে তার অর্জিত জ্ঞান বাস্তবে প্রয়োগ করে। অপরদিকে, মিরাজও একটি কম্পিউটার ক্রয় করবে বলে চিন্তা করছে।
ক. যুক্তিবিদ্যা কাকে বলে?
খ. যুক্তিবিদ্যা আমাদের বাস্তব জীবনে কীভাবে সহায়তা করে?
গ. উদ্দীপকে রাজিবের কর্মকান্ডটি কোন বিষয়টিকে ইঙ্গিত করছে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. পাঠ্যবইয়ের আলোকে রাজিব ও মিরাজের কর্মকান্ড-র মধ্যকার পার্থক্য নিরূপণ করো।

৩ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. যে বিদ্যা বৈধ যুক্তি থেকে অবৈধ যুক্তিকে পৃথক করার পদ্ধতি ও নিয়মসমূহ সম্পর্কে আলোচনা করে তাকে যুক্তিবিদ্যা (Logic) বলে।

খ. যুক্তিবিদ্যা আমাদের বাস্তব জীবনের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে, সত্য উদ্ঘাটনে এবং ভ্রান্তি নিরসনে সহায়তা করে।
যুক্তিবিদ্যার দুটি দিক- ১. বিজ্ঞান বিষয়ক এবং ২. কলাবিদ্যা বিষয়ক। বিজ্ঞান হিসেবে যুক্তিবিদ্যা নির্ভুল চিন্তার নীতিসমূহ আবিষ্কার করে। পাশাপাশি কলাবিদ্যা হিসেবে সত্য করতে আমাদের সাহায্য করে।

গ. সৃজনশীল ১ এর ‘গ’ নং প্রশ্নোত্তর দেখো।

ঘ. উদ্দীপকে রাজিবের কর্মকান্ড ব্যাবহারিক বা প্রায়োগিক দিককে এবং মিরাজের কর্মকান্ড তাত্ত্বিক দিককে নির্দেশ করে।
আমরা জানি, সুশৃঙ্খল ও সুসংবদ্ধ আলোচনা হলো তাত্ত্বিক বিষয় বা বিজ্ঞানের কাজ। আর তাত্ত্বিক জ্ঞানকে বাস্তবে প্রয়োগ করে কোনো বিশেষ উদ্দেশ্য সাধনের নিয়ম-কানুন ও কৌশল শেখানো হলো প্রায়োগিক বা কলা বিদ্যার কাজ। অর্থাৎ তাত্ত্বিক জ্ঞানকে যখন ব্যবহারিক জীবনে প্রয়োগ করা হয় তখন তা প্রায়োগিক বিদ্যায় পরিণত হয়। যেমন- জীববিজ্ঞান জীবদেহের গঠন ও কার্যাবলি সম্পর্কে তাত্ত্বিক জ্ঞান প্রদান করে। আর শল্যচিকিৎসা বিদ্যা (Surgery) শেখায় কীভাবে সঠিক পদ্ধতিতে কোনো রোগীর অস্ত্রোপচার করতে হয়। আমরা জানি, তাত্ত্বিক বিষয়ের পরিধি ব্যবহারিক বিষয়ের চেয়ে ব্যাপক। কারণ তাত্ত্বিক বিষয় হলো ব্যবহারিক বিষয়ের পূর্ববর্তী অবস্থা।
উদ্দীপকে রাজিবের কর্মকান্ড ব্যবহারিক বা প্রায়োগিক দিকের সাথে এবং মিরাজের কর্মকান্ড তাত্ত্বিক দিকের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।
পরিশেষে বলা যায়, তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক দিকের মূল পার্থক্য হলো- তাত্ত্বিক বিষয় বা বিজ্ঞান নিজ নিজ আলোচ্য বিষয় সম্পর্কে সুশৃঙ্খল ও ক্রুসংবদ্ধ জ্ঞান দান করে। আর প্রায়োগিক বিদ্যা তথা কলা কোনো বিশেষ উদ্দেশ্য সাধনের জন্য বিজ্ঞানের জ্ঞানকে বাস্তব ক্ষেত্রে প্রয়োগ করার কৌশল শেখায়।

৪. যুক্তিবিদ্যার ক্লাস শেষে খোকন বললো, 'যুক্তিবিদ্যা প্রকৃতপক্ষেই কলাবিদ্যা।' সুমন এর বিরোধিতা করে বললো, 'যুক্তিবিদ্যা হলো একটি বিজ্ঞান।' তাদের বিতর্কের একপর্যায়ে পলি এসে বললো, 'যুক্তিবিদ্যা একটি আদি কলা ও সেরা বিজ্ঞান।'
ক. যুক্তিবিদ্যার জনক কে?
খ. Logic এর ব্যুৎপত্তিগত অর্থ ব্যাখ্যা করো।
গ. উদ্দীপকে যুক্তিবিদ্যা সম্পর্কে খোকন ও সুমন-এর বিতর্কটি পাঠ্যপুস্তকের আলোকে ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকে উল্লেখিত পলির বক্তব্যটি বিশ্লেষণ করো।

৪ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. যুক্তিবিদ্যার জনক হলেন প্রখ্যাত গ্রিক দার্শনিক এরিস্টটল (Aristotle)।

খ. Logic এর ব্যুৎপত্তিগত অর্থ হলু চিন্তা, ভাষা ও বিজ্ঞান। অর্থাৎ যুক্তিবিদ্যা হল ভাষায় ব্যবহৃত চিন্তার বিজ্ঞান।
যুক্তিবিদ্যার ইংরেজি প্রতিশব্দ 'Logic'-এর উৎপত্তি গ্রিক 'Logike' শব্দ থেকে। Logike এর বিশেষ রূপ 'Logos'। গ্রিক পরিভাষায় Logos এর তিনটি অর্থ রয়েছে- চিন্তা, ভাষা ও বিজ্ঞান। তিনটি বিষয়ের সাথেই যুক্তিবিদ্যার মৌলিক সম্পৃক্ততা রয়েছে। কাজেই ব্যুৎপত্তিগত অর্থে Logic হলো ভাষায় প্রকাশিত চিন্তা সম্পর্কিত বিজ্ঞান।

গ. যুক্তিবিদ্যা একটি বিজ্ঞান, না একটি কলা- এ প্রশ্ন নিয়ে খোকন এবং সুমনের মধ্যে মতবিরোধ দেখা যায়।
যুক্তিবিদ্যা শুধু বিজ্ঞান নয়, আবার শুধু কলাও নয়। বরং যুক্তিবিদ্যা একাধারে একটি বিজ্ঞান ও একটি কলা। বিজ্ঞান হিসেবে যুক্তিবিদ্যা সঠিক যুক্তিপদ্ধতির নিয়ম-কানুন সম্পর্কে আমাদেরকে জ্ঞান দান করে। আর কলা হিসাবে যুক্তিবিদ্যা এসব নিয়মকে আমাদের বাস্তব চিন্তাক্ষেত্রে সুষ্ঠুভাবে প্রয়োগের মাধ্যমে সত্যকে আবিষ্কার করতে সহায়তা করে।
উদ্দীপকে খোকন যুক্তিবিদ্যাকে কলাবিদ্যা বলে। কারণ কলাবিদ্যার ন্যায় যুক্তিবিদ্যা বিশেষ কর্ম সম্পাদনের কলাকৌশল শিক্ষা দেয় যা বৈজ্ঞানিক জ্ঞানের ওপর নির্ভরশীল। আবার যুক্তিবিদ্যার তত্ত্বগত দিক বিবেচনা করে সুমন যুক্তিবিদ্যাকে একটি বিজ্ঞান হিসেবে উল্লেখ করে। বিজ্ঞানের ন্যায় যুক্তিবিদ্যার নির্ধারিত ও সুশৃঙ্খল আলোচ্য বিষয় আছে এবং আলোচ্য বিষয় ব্যাখ্যার জন্য পর্যাপ্ত নিয়ম আছে। সুতরাং তাদের মত পক্ষপাত দোষে দুষ্ট। কারণ, যুক্তিবিদ্যা আমাদেরকে তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক উভয় জ্ঞান দান করে। এজন্য এটি একাধারে কলা ও বিজ্ঞান।

ঘ. ‘যুক্তিবিদ্যা একটি আদি কলা ও সেরা বিজ্ঞান - পলির কথায় যুক্তিবিদ্যার প্রকৃত স্বরূপ ফুটে উঠেছে।
কোনো একটি বিদ্যাকে কলা হতে হলে সেটিকে দুটি শর্ত পালন করতে হয়। প্রথমত, সেই বিদ্যাকে বিশেষ কোনো কর্ম সম্পাদনের কলাকৌশল শিক্ষা দিতে হবে। দ্বিতীয়ত, তাকে কোনো বৈজ্ঞানিক জ্ঞানের ওপর নির্ভরশীল হতে হবে। অপরদিকে কোনো একটি জ্ঞানের শাখাকে বিজ্ঞান হতে হলে তার মধ্যে দুটি শর্ত থাকতে হবে। প্রথমত, সেই শাখার নির্ধারিত ও সুশৃঙ্খল আলোচ্য বিষয় থাকতে হবে। দ্বিতীয়ত, আলোচ্য বিষয় ব্যাখ্যার জন্য পর্যাপ্ত নিয়মকানুন থাকতে হবে।
পলি যুক্তিবিদ্যাকে একাধারে একটি বিজ্ঞান ও একটি কলা বলেছে। বিজ্ঞান হিসাবে যুক্তিবিদ্যা সঠিক যুক্তিপদ্ধতির নিয়ম-কানুন সম্পর্কে আমাদের জ্ঞান দান করে। আর কলা হিসেবে যুক্তিবিদ্যা এসব নিয়মকে আমাদের বাস্তব চিন্তাক্ষেত্রে সুষ্ঠুভাবে প্রয়োগের মাধ্যমে সত্যতাকে আবিষ্কার করতে সহায়তা করে।
পরিশেষে বলা যায়, যুক্তিবিদ্যা একাধারে একটি কলা ও বিজ্ঞান। শুধু চিন্তাবা অনুমান সম্পর্কে কয়েকটি নিয়ম কানুন প্রণয়ন করাই যুক্তিবিদ্যার কাজ নয়। সেগুলোকে যথাযথভাবে বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করাও যুক্তিবিদ্যার লক্ষ্য। সুতরাং পলির কথায় যুক্তিবিদ্যার তত্ত্বগত ও ব্যবহারিক উভয় দিকেরই নির্দেশ পাওয়া যায়।

৫. একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হওয়ার সময় পড়াশোনার বিষয় নির্ধারণ করতে গিয়ে সাজিদ বললো, জীবজগৎ ও জড়জগতের যে কোনোটিতে বিশেষ জ্ঞান লাভের সুযোগ আছে, এমন বিষয় আমি পড়তে চাই। এ কথা শুনে সুজন বললো, শুধু বিশেষ জ্ঞান লাভ নয় বরং যে বিশেষ জ্ঞানকে বাস্তব বা ব্যাবহারিক কাজে লাগানো যায় এমন বিষয় আমি পড়তে চাই। সাজিদ ও সুজনের কথা শুনে ফারিহা বললো, বিশেষ জ্ঞান এবং সে জ্ঞানকে ব্যবহারিক কাজে লাগানো যায়, সেরূপ কোনো বিষয়কে আমি বেছে নেব।
ক. যুক্তিবিদ্যা কাকে বলে?
খ. যুক্তিবিদ্যাকে আকারগত বিজ্ঞান বলা হয় কেন?
গ. উদ্দীপকে সাজিদের বক্তব্যে কোন বিষয়ের ইঙ্গিত আছে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. পাঠ্যপুস্তকের আলোকে সুজন ও ফারিহার বক্তব্য যে বিষয় প্রকাশ করছে তাদের সম্পর্ক বিশ্লেষণ করো।

৫ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. যে বিদ্যা বৈধ যুক্তি থেকে অবৈধ যুক্তিকে পৃথক করার পদ্ধতি ও নিয়মসমূহ সম্পর্কে আলোচনা করে তাকে যুক্তিবিদ্যা (Logic) বলে।

খ. যুক্তিবিদ্যার আলোচ্য বিষয় আকারগত সত্যতার ওপর প্রতিষ্ঠিত। এ কারণে যুক্তিবিদ্যাকে আকারগত বিজ্ঞান (Formal Science) বলা হয়।
যে শাস্ত্র তার আলোচ্য বিষয়ের আকার নিয়ে আলোচনা করে তাকে আকারগত বিজ্ঞান বলে। যেমন- গণিত, পরিসংখ্যান, কম্পিউটার বিজ্ঞান প্রভৃতি হলো আকারগত বিজ্ঞান। এ হিসেবে যুক্তিবিদ্যাকেও আকারগত বিজ্ঞান বলা হয়। কেননা, অবরোহ (Deductive) যুক্তিবিদ্যার প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে আকারগত সত্যতা লাভ করা। এছাড়া আরোহ (Inductive) যুক্তিবিদ্যাও বস্তুগত সত্যতা অর্জনের পাশাপাশি আকারগত সত্যতার ওপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করে। এ কারণে ব্রিটিশ যুক্তিবিদ উইলিয়াম হ্যামিলটন (William Hamilton) বলেন, 'যুক্তিবিদ্যা হলো চিন্তার আকারগত নিয়মাবলি সম্পর্কিত বিজ্ঞান'।

গ. উদ্দীপকে সাজিদের বক্তব্যে যুক্তিবিদ্যার তাত্ত্বিক বা বিজ্ঞান (Science) বিষয়ক দিকের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে।
যুক্তিবিদ্যার প্রধানত দুটি দিক রয়েছে। একটি হলো তাত্ত্বিক বা বিজ্ঞান বিষয়ক দিক এবং অন্যটি হলো ব্যবহারিক বা কলাবিদ্যা বিষয়ক দিক। আমরা জানি, কোনো সাধারণ নিয়মের ভিত্তিতে প্রকৃতির একটি বিশেষ বিষয়ের সুশৃঙ্খল ও সুসংবদ্ধ আলোচনা হচ্ছে বিজ্ঞান। অর্থাৎ বিজ্ঞান কোনো নির্দিষ্ট বিষয় সম্পর্কে তাত্ত্বিক জ্ঞান প্রদান করে। যেমন, পদার্থবিজ্ঞান পদার্থের গঠন ও প্রকৃতি সম্পর্কে আলোচনা করে। এর মাধ্যমে আমরা পদার্থ সম্পর্কে তাত্ত্বিক জ্ঞান অর্জন করি।
উদ্দীপকের সাজিদ একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হওয়ার সময় পড়াশোনার বিষয় নির্ধারণ করতে গিয়ে বলে, 'জীবজগৎ ও জড়জগতের যে কোনোটির বিশেষ জ্ঞান লাভের সুযোগ আছে, এমন বিষয় আমি পড়তে চাই'। সাজিদের এ বক্তব্য যুক্তিবিদ্যার তাত্ত্বিক বা বিজ্ঞান বিষয়ক দিকের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।

ঘ. উদ্দীপকে সুজন ও ফারিহার বক্তব্যে যুক্তিবিদ্যার সামগ্রিক দিক তথা তাত্ত্বিক বা বিজ্ঞান এবং ব্যাবহারিক বা কলাবিদ্যা বিষয়ক উভয় দিক ফুটে উঠেছে।
যুক্তিবিদ্যার দুটি প্রধান দিক হলোু তাত্ত্বিক বা বিজ্ঞান বিষয়ক দিক এবং ব্যাবহারিক বা কলাবিদ্যা বিষয়ক দিক। কোনো সাধারণ নিয়মের ভিত্তিতে প্রকৃতির কোনো একটি বিশেষ বিষয়ের সুশৃঙ্খল ও সুসংবদ্ধ আলোচনা হচ্ছে বিজ্ঞান। অর্থাৎ বিজ্ঞান কোনো নির্দিষ্ট বিষয় সম্পর্কে তাত্ত্বিক জ্ঞান প্রদান করে। যেমনত পদার্থবিজ্ঞান পদার্থের গঠন ও প্রকৃতি সম্পর্কে আলোচনা করে। এর মাধ্যমে আমরা পদার্থ সম্পর্কে তাত্ত্বিক জ্ঞান লাভ করি। অন্যদিকে, কলাবিদ্যা হচ্ছে একটি প্রায়োগিক বিদ্যা, যা কোনো বিশেষ উদ্দেশ্য সাধনের জন্য বৈজ্ঞানিক জ্ঞানকে বাস্তব ক্ষেত্রে প্রয়োগ করার নিয়ম-কানুন ও কৌশল শিক্ষা দেয়। যেমন- নৌবিদ্যা শেখায় কীভাবে নৌযান চালনা করতে হবে এবং শল্যচিকিৎসা বিদ্যা (Surgery) সঠিকভাবে অস্ত্রোপচার করার নিয়ম-কানুন ও কৌশল শিক্ষা দেয়।
উদ্দীপকে বর্ণিত, সুজন ও ফারিহা একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হওয়ার সময় এমন একটি বিষয়ে পড়ার আগ্রহ প্রকাশ করে, যা তাদেরকে কোনো বিশেষ জ্ঞান প্রদান করবে এবং সে জ্ঞানকে ব্যবহারিক ক্ষেত্রে কাজে লাগানো যাবে। সুজন ও ফারিহার বক্তব্য যুক্তিবিদ্যার সামগ্রিক তথা তাত্ত্বিক বা বিজ্ঞান বিষয়ক এবং ব্যবহারিক বা কলাবিদ্যা বিষয়ক উভয় দিকের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।
পরিশেষে বলা যায়, বিজ্ঞান ও কলাবিদ্যা যুক্তিবিদ্যার দুটি ভিন্ন দিক হলেও পরস্পর গভীরভাবে সম্পর্কিত। একটিকে ছাড়া অন্যটি পূর্ণাঙ্গ হতে পারে না। কেননা, বিজ্ঞান কোনো নির্দিষ্ট বিষয় সম্পর্কে তাত্ত্বিক জ্ঞান প্রদান করে এবং কলাবিদ্যা বৈজ্ঞানিক জ্ঞানকে বাস্তব ক্ষেত্রে প্রয়োগ করার নিয়ম-কানুন ও কৌশল শিক্ষা দেয়। কাজেই কোনো বিষয়ের পূর্ণাঙ্গ জ্ঞানার্জনের জন্য তাত্ত্বিক ও ব্যাবহারিক উভয় দিক' অবিচ্ছেদ্যভাবে সম্পর্কিত।

৬. একাদশ শ্রেণিতে ক্লাস শুরুর প্রথম দিনই একজন শিক্ষক পঠিত বিষয় সম্পর্কে বললেন, এ বিদ্যা মূলত 'ভাষায় প্রকাশিত চিন্তার বৈজ্ঞানিক আলোচনা, যা জ্ঞাত সত্য থেকে অজ্ঞাত সত্যে আরোহন ও এর সহায়ক অন্যান্য মানসিক প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা করে।' এ বিদ্যার আলোচনায় যেসব ব্যক্তির অবদান উল্লেখযোগ্য তারা হলেনত এরিস্টটল, ইবনে সিনা, আল ফারাবি, ফ্রান্সিস বেকন, লাইবনিজ, জে এস মিল, বার্ট্রান্ড রাসেল প্রমুখ।
ক. আদর্শনিষ্ঠ বিজ্ঞান বলতে কী বোঝায়?
খ. যুক্তিবিদ্যা একটি চিন্তার বিজ্ঞানু বুঝিয়ে লিখ।
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত প্রথম ব্যক্তিই মূলত এ বিদ্যার জনক'-ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকে জ্ঞানের যে শাখার উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশের উল্লেখ করা হয়েছে তার তুলনামূলক বিশ্লেষণ কর।

৬ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. যে বিজ্ঞান একটি আদর্শের আলোকে তার বিষয়সমূহের মূল্যায়ন করে তাকে আদর্শনিষ্ঠ বিজ্ঞান বলে।

খ. যুক্তিবিদ্যা চিন্তা নিয়ে আলোচনা করলেও সব ধরনের চিন্তা এর অন্তর্ভুক্ত নয়। কেবল অনুধ্যানমূলক চিন্তাই যুক্তিবিদ্যার আলোচ্য বিষয়।
উৎপত্তিগত অর্থে যুক্তিবিদ্যা হলো ভাষায় প্রকাশিত চিন্তা সম্পর্কিত বিজ্ঞান। কিন্তু চিন্তা শব্দটি ব্যাপক অর্থে ব্যবহৃত হয়। মনোবিজ্ঞানে চিন্তা বলতে কল্পনা, স্মৃতি, প্রত্যক্ষণ, অনুমান প্রভৃতি বোঝায়। আবার চিন্তা বলতে চিন্তার পদ্ধতি, ফল এবং জ্ঞানকেও বোঝায়। যুক্তিবিদ্যা চিন্তা নিয়ে আলোচনা করলেও সব ধরনের চিন্তা যুক্তিবিদ্যার সাথে সম্পর্কিত নয়। কেবল অনুধ্যানমূলক চিন্তাই এর সাথে সম্পর্কিত। এ কারণেই আধুনিক নারী যুক্তিবিদ স্টেবিং বলেছেন, "Logic is the science of reflective thinking".

গ. উদ্দীপকে উল্লেখিত প্রথম ব্যক্তি তথা গ্রিক দার্শনিক এরিস্টটল যুক্তিবিদ্যার জনক।
এরিস্টটলকে যুক্তিবিদ্যার জনক বলার পেছনে বিভিন্ন যুক্তি রয়েছে। যুক্তিবিদ্যার ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, এরিস্টটল প্রথম উপলব্ধি করেন, বিচারমূলক চিন্তাপদ্ধতি নিয়ে একটি বিশিষ্ট জ্ঞানের বিষয়বস্তু গড়ে উঠতে পারে। তিনিই সর্বপ্রথম যুক্তিবিদ্যার পরিপূর্ণ রূপরেখা নির্দেশ করেছিলেন এবং একে একটি সুসংহত রূপ দিয়েছিলেন। এরিস্টটলীয় যুক্তিবিদ্যা দীর্ঘ দুহাজার বছরেরও বেশিকাল ধরে মানুষের চিন্তার ওপর একচ্ছত্র প্রভাব বিস্তার করেছে। তিনি বলেন, 'জ্ঞানপদ্ধতির নির্দেশ প্রদান করাই হলো যুক্তিবিদ্যার মূলকাজ।' তিনি যুক্তিবিদ্যাকে জ্ঞান আহরণের গুরুতবপূর্ণ বাহন বলে মনে করেন। যুক্তিবিদ্যা হলো প্রারম্ভিক বিজ্ঞান। এরিস্টটল আরোহ ও অবরোহ উভয় যুক্তিবিদ্যারই ধারণা প্রদান করেন।
পরিশেষে বলা যায়, উদ্দীপকে উল্লেখিত প্রথম ব্যক্তি অর্থাৎ এরিস্টটল হলেন যুক্তিবিদ্যার জনক।

ঘ. উদ্দীপকে যুক্তিবিদ্যার উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশের উল্লেখ করা হয়েছে। উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশের দীর্ঘপথ পাড়ি দিয়ে যুক্তিবিদ্যা বর্তমান রূপ ধারণ করেছে।
যুক্তিবিদ্যার বিবর্তন অর্থাৎ উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশকে চারটি যুগে বিভক্ত করা যায়। যথাত প্রাচীন যুগ, মধ্যযুগ, আধুনিক যুগ ও সাম্প্রতিক যুগ। প্রাচীন যুগে যুক্তিবিদ্যার বিকাশে পিথাগোরাস, সক্রেটিস, এরিস্টটল প্রমুখ যুক্তিবিদগণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। মধ্যযুগীয় যুক্তিবিদ্যা বলতে প্রধানত স্কলাস্টিক যুক্তিতত্ত্বকেই নির্দেশ করে। দার্শনিক পরফিরিও মধ্যযুগের যুক্তিবিদ্যার ক্ষেত্রে অবদান রেখেছেন। মধ্যযুগের মুসলিম দার্শনিক ও যুক্তিবিদগণ হলেনত আল-ফারাবি, ইবনে সিনা, ইবনে রুশদ প্রমূখ। আধুনিক যুগের প্রধান যুক্তিবিদগণ হলেন- লাইবনিজ, হেগেল প্রমুখ। লাইবনিজ এর সময় থেকেই সাবেকী যুক্তিবিদ্যা আধুনিক রূপ লাভ করে। তার যৌক্তিক কলন এর মাধ্যমে যুক্তিবিদ্যা একটি নির্দিষ্ট রূপ লাভ করে। সাম্প্রতিক যুগের প্রধান যুক্তিবিদগণ হলেনত জে. এস. মিল, জর্জ বুল, এস জেভন্স, সি এস পার্স, রাসেল প্রমুখ।
উদ্দীপকে যুক্তিবিদ্যার পরিবর্তন ও বিবর্তনের ইঙ্গিত রয়েছে। আড়াই হাজার বছর পরিবর্তন ও বিবর্তনের ভেতর দিয়ে বর্তমান পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে। এই সময়ের মধ্যে এর পরিধিতে নানা রকম সংযোজন ও বিয়োজন ঘটেছে এবং সর্বশেষ এসে প্রতীকী যুক্তিবিদ্যার উদ্ভব ঘটেছে।
সুতরাং যুক্তিবিদ্যার উদ্ভব ও বিকাশের পেছনে রয়েছে সুমহান ঐতিহ্য। যা দীর্ঘ ইতিহাস পার হয়ে বর্তমান রূপ লাভ করেছে।

৭. দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী মিজান বাস্তব অবস্থা বিবেচনা করে তার বন্ধু সুহাইলকে বলে তোর কী মনে হয় না যে আমাদের পাঠ্যবিষয়গুলোর মধ্যে একটি বিষয় আছে, যেটি আমাদের বাস্তবজীবনে চলার পথে সঠিক দিক নির্দেশনা দিতে পারে। সুহাইল মিজানের কথায় মিলিয়ে বলে শুধু তাই নয় বরং এটি আমাদের বিভিন্ন বিষয়ের কর্মপদ্ধতিরও সন্ধান দেয় এবং এই বিষয়টি বিজ্ঞানের সাথেও সম্পর্কিত।
ক. Logos শব্দের অর্থ কী?
খ. Logic এর বুৎপত্তিগত অর্থ ব্যাখ্যা করো।
গ. উদ্দীপকে মিজানের উল্লিখিত বিষয়টির যৌক্তিকতা বা উপযোগিতা ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকের আলোকে মিজান ও সুহাইলের বক্তব্যগুলোর সাথে তুমি কি একমত? উত্তরে সপক্ষে তোমার মত ব্যক্ত করো।

৭ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. Logos শব্দের অর্থ চিন্তা, শব্দ বা ভাষা।

খ. Logic এর ব্যুৎপত্তিগত অর্থ হল- চিন্তা, ভাষা ও বিজ্ঞান। অর্থাৎ, যুক্তিবিদ্যা হল ভাষায় ব্যবহৃত চিন্তার বিজ্ঞান।
যুক্তিবিদ্যার ইংরেজি প্রতিশব্দ 'Logic' এর উৎপতি গ্রিক Logikc শব্দ থেকে। খড়মরশব এর বিশেষ রূপ 'Logos'। গ্রিক পরিভাষায় Logos-এর তিনটি অর্থ রয়েছে- চিন্তা, ভাষা ও বিজ্ঞান। তিনটি বিষয়ের সাথেই যুক্তিবিদ্যার মৌলিক সম্পৃক্ততা রয়েছে। কাজেই ব্যুৎপত্তিগত অর্থে Logic হলো ভাষায় প্রকাশিত চিন্তা সম্পর্কিত বিজ্ঞান।

গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত মিজানের উল্লিখিত বিষয়টি হলো ‘যুক্তিবিদ্যা'।
যুক্তিবিদ্যা আমাদের সুষ্ঠুভাবে চিন্তা করতে সহায়তা করে। কেননা যুক্তিপদ্ধতির সাধারণ নিয়মাবলি যথাযথভাবে পালনের মাধ্যমে ব্যবহারিক জীবনে সেগুলো প্রয়োগ করলে চিন্তার ক্ষেত্রে ভ্রান্তি ঘটার কোনোরূপ সম্ভাবনা থাকে না। পাশাপাশি এটি বিজ্ঞান পাঠকে সহজ করে তোলে। এর মাধ্যমে আমরা সঠিক চিন্তার নিয়মাবলি সম্পর্কে জানতে পারি। তাই চিন্তার ক্ষেত্রে এই জ্ঞান প্রয়োগ করে সহজেই আমার নিজের এবং একই সাথে অন্যের চিন্তার ভুল নির্ণয় করতে পারি।
উদ্দীপকে দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী মিজান বাস্তব অবস্থা বিবেচনা করে তার বন্ধু সুহাইলকে বলে, আমাদের পাঠ্যবিষয়গুলোর মধ্যে একটি বিষয়আছে যা আমাদের বাস্তবজীবনে চলার পথে সঠিক দিক নির্দেশনা দিতে পারে। এখানে যুক্তিবিদ্যার কথা বলা হয়েছে কারণ যুক্তিবিদ্যা আমাদের ভুল নির্ণয় করতে সাহায্য করে যা মানব মনের সহজাত ভাবাবেগকে সুসংহত ও সুনিয়ন্ত্রিত করে সঠিক পথে পরিচালিত করতে সাহায্য করে। যার ফলে, আমরা সংস্কারমুক্ত মন নিয়ে যুক্তির আলোকে সবকিছু যাচাই করার মাধ্যমে সত্যকে অর্জন ও মিথ্যাকে বর্জন করতে পারি।

ঘ. হ্যাঁ, উদ্দীপকের মিজান ও সুহাইলের বক্তব্যগুলোর সাথে আমি একমত।
যে বিদ্যা বৈধ যুক্তি থেকে অবৈধ যুক্তিকে পৃথক করার পদ্ধতি ও নিয়মসমূহ সম্পর্কে আলোচনা করে তাকে যুক্তিবিদ্যা বলে। এর ফলে বাস্তবজীবনে চলার পথে সঠিক দিক নির্দেশনা পাওয়া যায়। আবার, যুক্তিবিদ্যা একটি বিজ্ঞান কারণ এটি নির্ভুল চিন্তার নিয়মাবলিকে নির্দেশ করে এবং বিশুদ্ধ চিন্তা বলতে কী বোঝায় সেটি তুলে ধরে। অন্যদিকে যুক্তিবিদ্যা হলো কলা, কারণ এটি যুক্তির সাধারণ নিয়মাবলিকে বা চিন্তা ও যুক্তিকে সঠিকভাবে প্রয়োগের কৌশলের জ্ঞান দান করে। অর্থাৎ, যুক্তিবিদ্যায় তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক দিক থাকার কারণে যুক্তিবিদ্যা কলা ও বিজ্ঞান উভয়ই। আবার, যুক্তিবিদ্যা সত্যতাকে আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করে যথার্থ চিন্তার সম্ভাব্যতা নির্ধারণ করে বলে এ বিদ্যা আদর্শনিষ্ঠ বিজ্ঞান নামেও পরিচিত।
উদ্দীপকে উল্লিখিত মিজান ও সুহাইল বাস্তবজীবনে যুক্তিবিদ্যার প্রয়োগের পাশাপাশি বিভিন্ন বিষয়ের কর্মপদ্ধতির অনুসন্ধান এবং বিজ্ঞানের সাথে সম্পর্কের কথা বলেছে। বিজ্ঞান, কলা, দর্শনসহ যুক্তিবিদ্যার সাথে কমবেশি সম্পর্কিত বিষয়ের প্রাথমিক কিছু মৌলিক বৈশিষ্ট্য আছে। আবার এ বিদ্যার সাথে ঐ সকল বিষয় পরস্পর নির্ভরশীল।
পরিশেষে বলা যায় যে, প্রায় আড়াই হাজার বছর পূর্বে সূত্রপাত ঘটা যুক্তিবিদ্যার পরিসর অনেক বিসত্মৃত।

৮. একাদশ মানবিকের ছাত্র রাসেল, রতন ও রিপা ক্লাসের ফাঁকে পাঠ্যবিষয় নিয়ে আলোচনা করছিলো। রিপা বললো, আমাদের পাঠ্যবিষয়গুলোর মধ্যে একটি বিষয় রয়েছে যা একটি মানদ--র প্রেক্ষিতে আমাদের বাস্তব জীবনে চলার নির্দেশনা দিতে পারে। রাসেল বললো, এ বিষয়টি বিভিন্ন তত্ত্ব আবিষ্কার করে। এ প্রসঙ্গে রতন বললো- এ বিষয়টি আমাদের কর্মপদ্ধতিরও সন্ধান দেয়।
ক. ‘Logic’ শব্দটির উৎপত্তি কোন ভাষা থেকে?
খ. যুক্তিবিদ্যাকে সকল বিজ্ঞানের বিজ্ঞান বলা হয় কেন?
গ. রিপার ইঙ্গিতকৃত বিষয়টি বর্ণনামূলক না আদর্শমূলক? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকে রাসেল ও রতনের বক্তব্যের সাথে তুমি কি একমত? তোমার মতের পক্ষে যুক্তি দাও।

৮ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. 'Logic' শব্দটির উৎপত্তি হয়েছে গ্রিক ভাষা থেকে।

খ. বিজ্ঞানের প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রণীত পদ্ধতি বা সূত্রাবলি যৌক্তিকতা ও বৈধতা যুক্তিপদ্ধতির নিয়ম-কানুন দ্বারা যাচাই করার কারণে যুক্তিবিদ্যাকে সকল বিজ্ঞানের বিজ্ঞান বলা হয়।
বিজ্ঞানকে যথার্থ হওয়ার জন্য সঠিক অনুমান এবং চিন্তাপদ্ধতির জন্য যুক্তিপদ্ধতি অনুসরণ করতে হয়। কারণ, যুক্তিবিদ্যাই একমাত্র সত্য অর্জনের লক্ষ্যে নির্ভুল চিন্তার নিয়মাবলি প্রণয়ন করে। তাই যুক্তিবিদ্যাকে সকল বিজ্ঞানের বিজ্ঞান বলা হয়।

গ. রিপার ইঙ্গিতকৃত বিষয়টি যুক্তিবিদ্যার আদর্শনিষ্ঠ বা আদর্শমূলক দিকটিকে প্রকাশ করেছে।
যে বিজ্ঞান কোনো আদর্শ বিবেচনা না করে কেবল বাস্তবক্ষেত্রে কোনো ঘটনা যেমন আছে তেমনভাবেই বর্ণনা করে তাকে বর্ণনামূলক বিজ্ঞান বলে। কিন্তু, যুক্তিবিদ্যা সত্যের আদর্শকে সামনে রেখে বৈধ যুক্তি পদ্ধতির নিয়মাবলি আবিষ্কার এবং তাদের মূল্য নিরূপণ করে। আবিষ্কার ও অনুসন্ধান করার জন্য যুক্তিপ্রক্রিয়ার নির্ণয় হলো যুক্তিবিদ্যার আলোচ্য বিষয়। তাই, যুক্তিবিদ্যা বর্ণনামূলক নয় বরং আদর্শমূলক বিজ্ঞান।
ক্লাসের ফাঁকে গল্প করার সময় রিপা বলে, আমাদের পাঠ্যবিষয়গুলোর মধ্যে একটি বিষয় রয়েছে যা একটি মানদ--র প্রেক্ষিতে আমাদের বাস্তব জীবনে চলার নির্দেশনা দিতে পারে। রিপার বক্তব্যটি যুক্তিবিদ্যার আদর্শনিষ্ঠ দিকের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। কারণ, যুক্তিবিদ্যাই সত্যতার আদর্শের আলোকে আমাদের বাস্তবজীবনে চলার সঠিক নির্দেশনা প্রদান করে।

ঘ. হ্যাঁ, উদ্দীপকের রাসেল ও রতনের বক্তব্যের সাথে আমি একমত।
যুক্তিবিদ্যায় প্রধানত দু'টি দিক রয়েছে। একটি হলো তাত্ত্বিক বা বিজ্ঞান বিষয়ক দিক এবং অন্যটি হলো ব্যবহারিক দিক। প্রকৃতির কোনো নির্দিষ্ট বিষয় সম্পর্কে বিজ্ঞান আমাদের তাত্ত্বিক জ্ঞান প্রদান করে। আর ব্যবহারিক বা প্রায়োগিক বিদ্যা সে জ্ঞানকে বাস্তবে প্রয়োগ করার কর্মপদ্ধতি ও কৌশল শিক্ষা দেয়। যেমন, তাত্ত্বিক বিজ্ঞান হিসেবে পদার্থবিজ্ঞান পদার্থের গঠন ও প্রকৃতি সম্পর্কে জ্ঞান দান করে। আবার প্রায়োগিক বিদ্যা হিসেবে নৌবিদ্যা আমাদের শেখায় কীভাবে নৌযান চালাতে হবে।
রাসেল, রতন ও রিপা ক্লাসের ফাঁকে পাঠ্যবিষয় নিয়ে আলোচনা করার সময় রাসেল বলে, এ বিষয়টি বিভিন্ন তত্ত্ব আবিষ্কার করে, যা যুক্তিবিদ্যাকে নির্দেশ করে কারণ, যুক্তিবিদ্যা আমাদের তাত্ত্বিক বা বিজ্ঞান বিষয়ক জ্ঞান প্রদান করে। আবার, ব্যবহারিক বা প্রায়োগিক দিকের কারণে যুক্তিবিদ্যার মাধ্যমে বাস্তবে প্রয়োগ করার কর্ম পদ্ধতি ও কৌশল সম্পর্কে শিক্ষা পাওয়া যায় যা রতনের বক্তব্যের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।
উপরের আলোচনা থেকে বলা যায়, রাসেল ও রতনের বক্তব্যের মাধ্যমে যুক্তিবিদ্যার তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক তথা সামগ্রিক দিক প্রকাশিত হয়েছে।

৯. জিশানের বাবা-মা দুজনই চাকুরিজীবী। সে কলেজ থেকে বাসায় ফিরে দেখে ঘরের দরজা খোলা, তালা ভাঙা। ভেতরে গিয়ে দেখল সবকিছু এলোমেলো অবস্থায় পড়ে আছে। তখন সে বুঝলো, ঘরে চোর এসেছিল।
ক. যুক্তিবিদ্যা কাকে বলে?
খ. যুক্তিবিদ্যাকে আদর্শনিষ্ঠ বিজ্ঞান বলা হয় কেন?
গ. উদ্দীপকে জিশানের ভাবনায় যুক্তিবিদ্যার কোন বিষয়টি প্রকাশ পেয়েছে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকের কোন অংশটি প্রত্যক্ষ জ্ঞান এবং কোন অংশটি পরোক্ষ জ্ঞান তা বিশ্লেষণ করো।

৯ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. কি যে বিদ্যা বৈধ যুক্তি থেকে অবৈধ যুক্তিকে পৃথক করার নিয়ম সম্পর্কে আলোচনা করে তাকে যুক্তিবিদ্যা বলে।

খ. যুক্তিবিদ্যা সত্যতাকে আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করে যথার্থ চিন্তার সম্ভাব্যতা নির্ধারণ করে বলে যুক্তিবিদ্যাকে একটি আদর্শনিষ্ঠ বিজ্ঞান বলা হয়।
যে বিজ্ঞান কোনো আদর্শের আলোকে তার বিষয়বস্তুর মূল্যায়ন করে তাকে আদর্শনিষ্ঠ বিজ্ঞান বলা হয়। যুক্তিবিদ্যাকেও আদর্শনিষ্ঠ বিজ্ঞান বলা হয়। কারণ, যুক্তিবিদ্যা সত্যতাকে আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করে যথার্থ চিন্তার গতিপথ নির্ধারণ করে। আর এ সত্যের আদর্শকে সামনে রেখে যুক্তির বৈধতা- অবৈধতা বিচার করে বলে একে আদর্শনিষ্ঠ বিজ্ঞান বলা হয়।

গ. উদ্দীপকে জিশানের ভাবনায় যুক্তিবিদ্যার অনুমান বিষয়টি প্রকাশ পেয়েছে।
যুক্তিবিদ্যার মূল আলোচ্য বিষয় হলো অনুমান। অনুমান আমাদের জ্ঞান লাভের প্রধান উৎস। কোনো জানা বিষয়ের উপর ভিত্তি করে কোনো অজানা বিষয় সম্বন্ধে জ্ঞান লাভের মানসিক প্রক্রিয়াকে অনুমান বলে। যেমন দূরে সবুজ বনানীর উপর দিয়ে ধোঁয়া উড়তে দেখে আমরা অনুমান করি যে, সেখানে কোন বাড়িতে আগুন লেগেছে। এক্ষেত্রে ধোঁয়া আমাদের জানা বিষয়, কারণ একে আমরা সরাসরি দেখতে পাচ্ছি। এ জানা ও দেখা বিষয়ের উপর নির্ভর করে আমরা অজানা ও অদেখা আগুনের বিষয়টি অনুমান করি।
উদ্দীপকে ঘরের দরজা খোলা ও তালাভাঙা এগুলো হলো দেখা অর্থাৎ জানা বিষয়, আর ‘ঘরে চোর এসেছিল' অজানা বিষয়। জিশান জানা বিষয় (ঘরের দরজা খোলা ও তালা ভাঙা) এর ওপর ভিত্তি করে অজানা বিষয় (ঘরে চোর এসেছিল) সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করে। এই জানা বিষয় থেকে অজানা বিষয়ের জ্ঞান লাভই হলো অনুমান।

ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত 'দরজা খোলা, তালা ভাঙ্গা' অংশটুকু প্রত্যক্ষ জ্ঞান এবং 'ঘরে চোর এসেছিল' অংশটুকু পরোক্ষ জ্ঞান।
আমরা জানি, জানা বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে কোনো অজানা বিষয় সম্পর্কে জ্ঞান লাভের মানসিক প্রক্রিয়াই হলো অনুমান। অনুমান দুই ধরনের জ্ঞানের সমন্বয়ে গঠিত। এক প্রত্যক্ষ জ্ঞান ও দুই পরোক্ষ জ্ঞান। অনুমানের ক্ষেত্রে যেমন প্রত্যক্ষ জ্ঞান প্রয়োজন তেমনি পরোক্ষ জ্ঞান ও অপরিহার্য। মানুষ কেবল বর্তমান সংক্রান্ত জ্ঞান নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে চায় না। বরং সে চায় অতীত ও ভবিষ্যতকে জানতে। এই অতীত ও ভবিষ্যত জ্ঞান হচ্ছে পরোক্ষ জ্ঞান। কিন্তু প্রত্যক্ষ জ্ঞান ব্যতীত পরোক্ষ জ্ঞানার্জন অসম্ভব। কারণ, পরোক্ষ জ্ঞানের ভিত্তি হলো প্রত্যক্ষ জ্ঞান।
উদ্দীপকে জিশান প্রত্যক্ষ জ্ঞান ‘দরজা খোলা, তালা ভাঙা' এর ভিত্তিতেই কিন্তু পরোক্ষ জ্ঞান 'ঘরে চোর এসেছিল' অর্জন করতে সক্ষম আমরা অনুমান হিসেবে আখ্যায়িত করি।
পরিশেষে বলা যায়, প্রত্যক্ষ জ্ঞান ও পরোক্ষ জ্ঞানে সমন্বয় হচ্ছে অনুমান।

১০. পদার্থ, রসায়ন, উদ্ভিদ, প্রাণিবিজ্ঞান প্রভৃতি বিষয় আমাদেরকে জ্ঞান অর্জন করতে বা জানতে শেখায়। এর ভাষা হচ্ছে এটি নৌবিদ্যা, রান্নার কাজ, সংগীত, চিত্রকর্ম প্রভৃতি বিষয়ে আমাদের জ্ঞানকে কাজে লাগাতে বা প্রয়োগ করতে শেখায়।
ক. এরিস্টটল প্রদত্ত যুক্তিবিদ্যাকে কী বলা হয়?
খ. ব্যুৎপত্তিগত দিক থেকে যুক্তিবিদ্যার সংজ্ঞা দাও।
গ. উদ্দীপকটি যে বিষয় দুটির ইঙ্গিত বহন করে, তার ব্যাখ্যা দাও।
ঘ. উদ্দীপকে বিধৃত বিষয় দুটির সাথে যুক্তিবিদ্যার কোনো সম্পর্ক আছে কি? তোমার মতামত বিশ্লেষণ করো।

১০ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. এরিস্টটল প্রদত্ত যুক্তিবিদ্যাকে প্রতীকী যুক্তিবিদ্যা ও আরোহ যুক্তিবিদ্যা বলা হয়।

খ. ব্যুৎপত্তিগত দিক থেকে যুক্তিবিদ্যা হলো ভাষায় প্রকাশিত চিন্তার বিজ্ঞান।
যুক্তিবিদ্যার ইংরেজি প্রতিশব্দ 'Logic'-এর উৎপত্তি গ্রিক 'Logike' শব্দ থেকে। 'Logike' শব্দটি 'Logos' শব্দের বিশেষণ। গ্রিক পরিভাষায় 'খড়মড়ং' এর তিনটি অর্থ রয়েছেত চিন্তা, ভাষা ও বিজ্ঞান। তিনটি বিষয়ের সাথেই যুক্তিবিদ্যার অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক রয়েছে। কাজেই ব্যুৎপত্তিগত অর্থে যুক্তিবিদ্যা হলো ভাষায় ব্যবহৃত চিন্তা সম্পর্কিত বিজ্ঞান।

গ. উদ্দীপকটি 'বিজ্ঞান' ও 'কলা' বিষয় দুটির ইঙ্গিত বহন করে।
যুক্তিবিদ্যার দুটি প্রধান দিক হলো- তাত্ত্বিক বা বিজ্ঞান বিষয়ক দিক এবং ব্যবহারিক বা কলাবিদ্যা বিষয়ক দিক। কোনো সাধারণ নিয়মের ভিত্তিতে প্রকৃতির একটি বিশেষ বিষয়ের সুশৃঙ্খল ও সুসংবদ্ধ আলোচনা হচ্ছে বিজ্ঞান। অর্থাৎ বিজ্ঞান কোনো একটি নির্দিষ্ট বিষয় সম্পর্কে তাত্ত্বিক জ্ঞান প্রদান করে। যেমনত পদার্থ বিজ্ঞান পদার্থের গঠন ও প্রকৃতি সম্পর্কে আলোচনা করে। এর মাধ্যমে আমরা পদার্থ সম্পর্কে তাত্ত্বিক জ্ঞান লাভ করি। অন্যদিকে কলাবিদ্যা হচ্ছে প্রয়োগিক বিদ্যা, যা কোনো বিশেষ উদ্দেশ্য সাধনের জন্য বৈজ্ঞানিক জ্ঞানকে বাস্তব ক্ষেত্রে প্রয়োগ করার নিয়ম-কানুন ও কলা-কৌশলের শিক্ষা দেয়। যেমন- নৌ বিদ্যা শেখায় কীভাবে নৌযান চালনা করতে হবে এবং রন্ধনশিল্প বিদ্যা শেখায় কীভাবে রান্না সবার কাছে সুস্বাদু ও আকর্ষণীয় করতে হবে।
উদ্দীপকটিতে আলোচিত দুটি বিষয়ের প্রথমটি (পদার্থ, রসায়ন, উদ্ভিদ, প্রাণিবিজ্ঞান প্রভৃতি বিষয় ) আমাদের তাত্ত্বিক জ্ঞানার্জনে সহায়তা করে; পক্ষান্তরে দ্বিতীয়টি (নৌবিদ্যা, রান্নার কাজ, সংগীত, চিত্রকর্ম প্রভৃতি বিষয়) জ্ঞান প্রয়োগ করতে বা কাজে লাগাতে সাহায্য করে। এ কারণে প্রথম বিষয়টি হলো বিজ্ঞান ও দ্বিতীয় বিষয়টি হলো কলা।

ঘ. উদ্দীপকে বিধৃত বিষয় দুটির সাথে যুক্তিবিদ্যার অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক রয়েছে। কেননা যুক্তিবিদ্যাকে বিজ্ঞান ও কলা উভয় হিসেবে অভিহিত করা হয়।
বিজ্ঞান ও কলার সাথে যুক্তিবিদ্যার নিবিড় সম্পর্ক বিদ্যমান। যুক্তিবিদ্যা উভয়ের সাথে অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িত। বিজ্ঞান, কলা ও যুক্তির লক্ষ্য, উদ্দেশ্য ও কাজের পদ্ধতি এক ও অভিন্ন। যেমনত সকলে সত্যকে জানতে চায় এবং সত্যকে জানার ক্ষেত্রে একটি সুশৃঙ্খল পদ্ধতি অনুসরণ করে। কেউই কোনো বিষয় বিচার-বিশ্লেষণ না করে অন্ধভাবে গ্রহণ করে না। কলাবিজ্ঞানও যুক্তিবিদ্যার যাচাইকরণ নীতি অনুসরণ করে সত্যকে আবিষ্কার করে। যুক্তিবিদ্যা ও কলাবিদ্যা বিজ্ঞানের নিত্যনতুন আবিষ্কারকে বাস্তব ক্ষেত্রে সঠিকভাবে কাজে লাগানোর রীতিনীতির শিক্ষা দেয়।
উদ্দীপকে বিধৃত বিষয় দুটির সাথে যুক্তিবিদ্যার সম্পর্ক সর্বজনীন এবং উভয়ের লক্ষ্য কল্যাণ সাধন। তাই উভয়ের সম্পর্কের প্রয়োজনীয়তা বাস্তব ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যুক্তিবিদ্যা, বিজ্ঞান ও কলা একে অপরের পরিপূরক। একটি ছাড়া অন্যটি চলতে পারে না।
বিজ্ঞান শুধু আবিষ্কার করে কিন্তু বিজ্ঞানের আবিষ্কারকে মানুষের প্রয়োজনে কাজে লাগাতে কলা ও যুক্তিবিদ্যা উভয়ই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। অর্থাৎ এরা প্রত্যেকেই পরস্পরের ওপর নির্ভরশীল।
Share:

HSC যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর pdf download অধ্যায় ২

HSC যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর pdf download

এইচএসসি পরীক্ষার পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি
HSC Logic 1st Paper Srijonshil question and answer pdf download.

উচ্চ মাধ্যমিক

যুক্তিবিদ্যা
প্রথম পত্র

সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
২য় অধ্যায়

HSC Logic 1st Paper
Srijonshil
Question and Answer pdf download

১. উদ্দীপক-১: বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিখ্যাত কিশোর গল্প ‘পড়ে পাওয়া'। এ গল্পে কিশোরেরা এক বাক্স টাকা পেয়ে লোভের পরিচয় দেয়নি। বরং তারা সঠিক ব্যক্তির নিকট টাকা ফেরত দিয়ে সততা, নিষ্ঠা ও চারিত্রিক দৃঢ়তার পরিচয় দিয়েছে।
উদ্দীপক-২: সত্য-মিথ্যা এক নয়। দার্শনিক সক্রেটিস হেমলক বিষ পান করে সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। মিথ্যাকে মেনে নিলে হয়তো তাকে বিষপান করে মৃত্যুবরণ করতে হতো না। ব্যবহারিক জীবনে সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করার এটা এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
ক. যুক্তিবিদ্যা কী?
খ. নীতিবিদ্যা আদর্শনিষ্ঠ বিজ্ঞান কেন?
গ. উদ্দীপক-১ এ উল্লেখিত বিষয়টি পাঠ্যপুস্তকের আলোকে ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপক-১ ও উদ্দীপক-২ এর পার্থক্য বিশ্লেষণ করো।

১ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. অবৈধ ন্যায় বা যুক্তি থেকে বৈধ ন্যায়কে পৃথক করার পদ্ধতি ও নীতিসমূহের একটি বিশিষ্ট বিদ্যা হলো যুক্তিবিদ্যা।

খ. সমাজে বসবাসকারী মানুষের ঐচ্ছিক আচরণকে নৈতিক আদর্শের ভিত্তিতে মূল্যায়ন করে বলে নীতিবিদ্যা আদর্শনিষ্ঠ বিজ্ঞান।
নীতিবিদ্যা মানুষের ঐচ্ছিক আচরণ মূল্যায়নের ক্ষেত্রে নৈতিক আদর্শকে ব্যবহার করে। আর আদর্শনিষ্ঠ বিজ্ঞান আদর্শ বা মানদন্ডের ভিত্তিতে নিজস্ব বিষয়বস্তু মূল্যায়ন করে। যেহেতু, নীতিবিদ্যা নৈতিক আদর্শের ভিত্তিতে নিজস্ব বিষয়বস্তুর মূল্যায়ন করে, তাই নীতিবিদ্যাকে আদর্শনিষ্ঠ বিজ্ঞান বলা হয়।

গ. উদ্দীপক-১-এর মাধ্যমে নীতিবিদ্যার পরিচয় পাওয়া যায়।
মূল্যবিদ্যার তিনটি শাখার মধ্যে অন্যতম একটি হলো নীতিবিদ্যা।
নীতিবিদ্যার ইংরেজি প্রতিশব্দ হলো 'Ethics'। ইংরেজি 'Ethics' শব্দটি গ্রিক শব্দ 'Ethica' থেকে এসেছে। 'Ethica' শব্দটি এসেছে 'Ethos' শব্দ থেকে, যার অর্থ হলো আচার-আচরণ, রীতি-নীতি, অভ্যাস ইত্যাদি। তাই শব্দগত অর্থে নীতিবিদ্যা আচার-আচরণ, রীতি-নীতি সংক্রান্ত বিজ্ঞান। নীতিবিদ্যাকে বিভিন্ন নীতি দার্শনিক বিভিন্নভাবে সংজ্ঞায়িত করেছেন। তবে নীতিবিদ্যা সমাজবদ্ধ মানুষের ঐচ্ছিক আচরণের সাথে যুক্ত এবং মানব আচরণের ভালো-মন্দ মূল্যায়ন করাই নীতিবিদ্যার কাজ। যদিও বর্তমানে নীতিবিদ্যার পরিধি অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে কিন্তু আদর্শগত দিক থেকে নীতিবিদ্যা মানব আচরণের মূল্যায়নের সাথে যুক্ত। উদ্দীপকে কিশোরদের নৈতিকতা ও সততা নীতিবিদ্যাকেই নির্দেশ করে।
তাই বলা যায়, নীতিবিদ্যা এমন একটি আদর্শনিষ্ঠ বিজ্ঞান যা সমাজে বসবাসকারী মানুষের ঐচ্ছিক আচরণের ভালোত্ব-মন্দত্ব ইত্যাদি নৈতিক আদর্শের ভিত্তিতে মূল্যায়ন করে।

ঘ. উদ্দীপক-১ ও উদ্দীপক-২-এর মাধ্যমে যথাক্রমে নীতিবিদ্যা ও যুক্তিবিদ্যার পরিচয় পাওয়া যায়। এই দুটি বিষয়ের মধ্যে বেশকিছু পার্থক্য রয়েছে।
নীতিবিদ্যা মানব আচরণের সাথে যুক্ত। এই বিষয়টি মানুষের ঐচ্ছিক আচরণের ভালোত্ব-মন্দত্ব ইত্যাদি নৈতিক আদর্শের ভিত্তিতে মূল্যায়ন করে। অন্যদিকে, যুক্তিবিদ্যা যুক্তির বৈধতা-অবৈধতার সাথে যুক্ত। অবৈধ যুক্তি থেকে বৈধ যুক্তির পার্থক্য নির্ণয় করাই যুক্তিবিদ্যার প্রধান কাজ। নৈতিক নিয়মের ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, স্থান-কাল-পাত্র ভেদে এই বিদ্যার ভিন্নতা থাকে। অর্থাৎ, স্থান-কাল-পাত্র ভেদে নীতিবিদ্যা ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে। অন্যদিকে, যৌক্তিক নিয়মের ক্ষেত্রে কোনো ভিন্নতা দেখা যায় না। অর্থাৎ, স্থান-কাল-পাত্র ভেদে যৌক্তিক নিয়ম একই হয়ে থাকে। আবার দেখা যায়, নৈতিক নিয়মের সাথে বাস্তবতার মিল থাকে। অর্থাৎ, নৈতিক নিয়ম বাস্তবতার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ। কিন্তু যৌক্তিক নিয়মের সাথে সবসময় বাস্তবতার মিল থাকে না। অর্থাৎ, বাস্তবতার অনুরূপ না হয়েও অনেক সময় যুক্তি বৈধ হয়। নৈতিক নিয়ম সমাজের মানুষের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হয়। কেননা নৈতিক নিয়ম না মানলে সামাজিক মানুষকে অনেক খারাপ চোখে দেখা হয়। অপরদিকে, যৌক্তিক নিয়ম যুক্তির বৈধতা-অবৈধতার সাথে যুক্ত। এই নিয়ম মানা সামাজিক মানুষের জন্য অপরিহার্য নয়।
উদ্দীপকে কিশোরদের নৈতিকতা ও সততা নীতিবিদ্যাকে এবং দার্শনিক সক্রেটিসের হেমলক বিষ পান যুক্তিবিদ্যাকে নির্দেশ করে। এই দুটি ঘটনার ভিন্নতা মূলত যুক্তিবিদ্যা ও নীতিবিদ্যার পার্থক্যকে তুলে ধরেছে। সুতরাং দেখা যাচ্ছে যে, নীতিবিদ্যা ও যুক্তিবিদ্যার মধ্যে বিভিন্ন দিক দিয়ে পার্থক্য রয়েছে। তবে বিভিন্ন দিক দিয়ে এই দুটি বিষয়ের মধ্যে সম্পর্কও রয়েছে। কেননা উভয়ই মূল্যবিদ্যার অন্তর্গত দুটি শাখা।

২. বিপ্লব সরকার ও তাঁর স্ত্রী সুজাতা সরকার দু'জন একটি বিদ্যালয়ে জনপ্রিয় শিক্ষক। বিপ্লব সরকার তাঁর পাঠদানে জীবন ও শিল্পের নানদনিক বৈচিত্র্য, শৈল্পিক চিন্তা ও সংস্কৃতির সামগ্রিক সত্তাকে তুলে ধরেন। পক্ষান্তরে, সুজাতা সরকার তাঁর পাঠদানে প্রতীকমূলক পদ্ধতির ব্যবহার করেন। তাঁর পাঠদানের বৈশিষ্ট্য হল সরলতা, যথার্থতা ও উত্তরের নিশ্চয়তা। ইহা পরিমাণ ও পরিমাপের সুস্পষ্ট ধারণা দেয়।
ক. যুক্তিবিদ্যার অভিধানিক অর্থ কী?
খ. সৌন্দর্য বিষয়ক বিজ্ঞান' বলতে কী বোঝায়?
গ. উদ্দীপকে বর্ণিত বিপ্লব সরকার ও সুজাতা সরকারের পাঠদানের বিষয়টি পাঠ্যসূচির কোন বিষয়ের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ ব্যাখ্যা করো।
ঘ. বিপ্লব সরকার ও সুজাতা সরকারের পাঠদানের বিষয়ের তুলনামূলক বিশ্লেষণ করো।

২ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. যুক্তিবিদ্যা (Logic) গ্রিক শব্দ Logos থেকে এসেছে। যার অর্থ হচ্ছে, চিন্তা, শব্দ বা ভাষা।

খ. সৌন্দর্য বিষয়ক বিজ্ঞান বলতে বোঝায় নন্দনতত্ত্বকে (Aesthetics)।
নন্দনতত্ত্ব এমন একটি বিদ্যা যা বিভিন্ন প্রকারে সৌন্দর্য চর্চার জন্য নিয়ম কানুন প্রণয়ন করে এবং সেগুলোকে আমাদের বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করে সুন্দরভাবে জীবন যাপন করার নির্দেশনা দান করে। যেমন: সুন্দর করে কথা বলা, সুন্দর পোশাক পরা, নিজ দেহের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের পরিচর্যা করে সুন্দরভাবে সাজাতে পারা। এ সকল সৌন্দর্য বিজ্ঞানের অন্তর্ভুক্ত।

গ. উদ্দীপকে বর্ণিত বিপ্লব সরকার ও সুজাতা সরকারের পাঠদানের বিষয়টি যথাক্রমে পাঠ্যসূচীর নন্দনতত্ত্ব (Aestheticis) এবং গণিত (Mathematics) বিষয়ের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ।
নন্দনতত্ত্ব হচ্ছে সৌন্দর্য বিষয়ক বিজ্ঞান। নন্দনতত্ত্বে বিভিন্ন প্রকারে সৌন্দর্য চর্চার জন্য নিয়ম-কানুন প্রণয়ন করে এবং সেগুলোকে বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করে সুন্দরভাবে জীবন যাপন করার নির্দেশনা দেয়। যেমন: একজন চিত্র শিল্পীর অংকিত শিল্পকর্মের দ্বারা সামগ্রিক সত্তার সৌন্দর্য ফুটে ওঠে। অপরদিকে, গণিত একটি পরিমাণ সংক্রান্ত বিজ্ঞান। কোনো কিছুর গণনা বা পরিমাণ করাই গণিতের মূল লক্ষ্য। সংখ্যা বা প্রতীক হচ্ছে গণিতের প্রাণ যার মধ্যে কোনো অযৌক্তিক তত্ত্ব নেই এবং এটি সরল, যথার্থ ও নিশ্চিত জ্ঞান দান করে। যেমন: ২ + ২ = ৪, এটি নিশ্চিত জ্ঞান।
উদ্দীপকে বিপ্লব সরকার তাঁর পাঠদানে জীবন ও শিল্পের যে নান্দনিক বৈচিত্র্য তুলে ধরেন তা নন্দনতত্ত্বের জ্ঞানের উপর ভিত্তি করে। যেখানে নন্দনতত্ত্ব সৌন্দর্য চর্চার নিয়ম শিক্ষা দেয় এবং তা বাস্তব জীবনে প্রয়োগের নির্দেশনা প্রদান করে। অপরদিকে, তাঁর স্ত্রী সুজাতা সরকার পাঠদানে প্রতীকমূলক পদ্ধতির ব্যবহার করেন। যে পদ্ধতি সর্বদা সঠিক, সরল এবং নিশ্চিত তথ্য প্রদান করে।

ঘ. বিপ্লব সরকার ও সুজাতা সরকারের পাঠদানের বিষয় হলো নন্দনতত্ত্ব (Aesthetics) এবং গণিত (Mathematics)। যাদের মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ে মিল ও অমিল রয়েছে।
নন্দনতত্ত্ব হচ্ছে সৌন্দর্য বিষয়ক বিজ্ঞান। সৌন্দর্যকে আয়ত্ত্ব করা নন্দনতত্ত্বের আদর্শ। এই বিদ্যা বিভিন্ন প্রকারে সৌন্দর্য চর্চার জন্য নিয়ম-কানুন প্রণয়ন করে এবং সেগুলোর বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করে। অপরদিকে, গণিত একটি পরিমাণ সংক্রান্ত বিজ্ঞান। কোনো কিছুর গণনা বা পরিমাণ করাই গণিতের মূল লক্ষ্য। সংকেত বা প্রতীক ব্যবহার করার মাধ্যমে গণিতের আকার প্রকাশ পায়। নন্দনতত্ত্ব ও গণিত উভয়ই ‘যুক্তিনির্ভর ব্যবহারিক বিজ্ঞান। কারণ উভয় বিষয় নিজস্ব লক্ষ্য অর্জনে বিভিন্ন নিয়ম-কানুন প্রণয়ন করে এবং সেগুলো বাস্তব জীবনে প্রয়োগের নির্দেশ দান করে অপরদিকে নন্দনতত্ত্ব আদর্শমূলক গুণ হলেও গণিতের কোন আদর্শ নেই। গণিতের লক্ষ্য কেবলই পরিমাপ। তাদের মধ্যে বিষয়গত পার্থক্যও বিদ্যমান। নন্দনতত্ত্বের আলোচ্য বিষয় সৌন্দর্য। পক্ষান্তরে, গণিতের আলোচ্য বিষয় সংখ্যা বা পরিমাণ।
উদ্দীপকে বিপ্লব সরকার পাঠদানে জীবন ও শিল্পের যে নানদনিক বৈচিত্র্য তুলে ধরেন তা ননদনতত্ত্বের জ্ঞানের উপর ভিত্তি করে। তার পাঠদানের বিষয়টি সৌন্দর্যবোধ এবং তা চর্চার ওপর গুরুত্ব দেয়। অপরদিকে, তার স্ত্রী সুজাতা সরকার পাঠদানে প্রতীকমূলক পদ্ধতির ব্যবহার করেন। যা গণিতের সাথে সংশ্লিষ্ট। এর পদ্ধতি সর্বদা সঠিক, সরল ও নিশ্চিত জ্ঞান প্রদান করে।
পরিশেষে বলা যায়, ব্যবহারিক এবং যুক্তিনির্ভর মিল ছাড়া নন্দনতত্ত্ব এবং গণিতের প্রকৃতি ভিন্নরূপ। আদর্শ, বিষয়বস্তু এবং নিয়মাবলির ক্ষেত্রে উভয়ের মধ্যে পার্থক্য বিদ্যমান। যুক্তিবিদ্যা এই দুটি বিষয়ের সাথে সম্পর্ক তৈরিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।

৩. দৃশ্যকল্প-১: মি. রহমান যেকোনো বিষয় সুন্দরভাবে উপস্থাপন করেন। অন্যের বক্তব্যে ভুল থাকলে তিনি তা শনাক্ত করেন এবং কৌশলে সংশোধন করে দেন।
দৃশ্যকল্প-২: মি. জামান ক্রেতাদের সাথে ভালো ব্যবহার করেন এবং সীমিত লাভে মানসম্পন্ন পণ্য বিক্রয় করেন।
ক. যুক্তিবিদ্যার জনক কে?
খ. যুক্তিবিদ্যা কোন ধরনের বিজ্ঞান?
গ. উদ্দীপকের দৃশ্যকল্প-১ এ কোন বিষয়টির প্রতিফলন ঘটেছে? সংক্ষেপে ব্যাখ্যা করো।
ঘ. পাঠ্যপুস্তকের আলোকে দৃশ্যকল্প-১ ও ২ এর মধ্যকার পার্থক্য বিশ্লেষণ করো।

৩ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. গ্রিক দার্শনিক এরিস্টটল (Aristotle) যুক্তিবিদ্যার জনক।

খ. যুক্তিবিদ্যা হলো আদর্শনিষ্ঠ বিজ্ঞান (Normative Science)।
যে বিজ্ঞান একটি আদর্শের ভিত্তিতে কোনো আচরণের বিষয় বা ঘটনার মূল্য নির্ধারণ করে তাকে আদর্শনিষ্ঠ বিজ্ঞান বলে: যুক্তিবিদ্যা তার বিষয়বস্তুকে সত্যতার মানদ-- যাচাই করে থাকে। যেমন: সকল মানুষ হয় মরণশীল। যেহেতু অতীত থেকে এখন পর্যন্ত কোনো মানুষ অমর নেই সেজন্য এ যুক্তিটি সত্য। এ কারণে বলা হয়, যুক্তিবিদ্যা একটি আদর্শনিষ্ঠ বিজ্ঞান।

গ. উদ্দীপকে দৃশ্যকল্প-১ এ যুক্তিবিদ্যার (Logic) প্রতিফলন ঘটেছে।
যুক্তিবিদ্যা হচ্ছে চিন্তা বা অনুমান সম্পর্কিত বিজ্ঞান। অর্থাৎ যুক্তিবিদ্যা চিন্তার নিয়মাবলি নিয়ে আলোচনা করে। যেসব নিয়ম অনুসরণ করে যুক্তির বৈধতা নির্ণয় করা যায় সেগুলো আবিষ্কার করা যুক্তিবিদ্যার কাজ। যুক্তিবিদ্যার জ্ঞান আমাদেরকে নিজেদের ও অপরের চিন্তার মধ্যকার ত্রুটি খুঁজে বের করতে এবং তা পরিহার করতে সাহায্য করে। যেমন: কেউ যদি বলে, হাতি হয় পশুরাজ। তাহলে সেটি অশুদ্ধ হবে। কারণ আমরা জানি, পশুরাজ হচ্ছে সিংহ। এরূপ তথ্যগত ত্রুটি পরিহার করতে যুক্তিবিদ্যা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
উদ্দীপকে দৃশ্যকল্প-১-এ বর্ণিত মি. রহমান যেকোনো বিষয় সুন্দরভাবে উপস্থাপন করেন। অন্যের বক্তব্যে ভুল থাকলে তিনি তা শনাক্ত করে কৌশলে সংশোধন করে দেন। তার এরূপ কর্মকান্ড যুক্তিবিদ্যার জ্ঞানের অনুরূপ। কারণ যুক্তিবিদ্যা নিজের এবং অপরের চিন্তার ত্রুটি খুঁজে বের করতে এবং তা পরিহার করতে সাহায্য করে।

ঘ. উদ্দীপকে দৃশ্যকল্প-১ এ পাঠ্যপুস্তকের যুক্তিবিদ্যা এবং দৃশ্যকল্প-২ এ নীতিবিদ্যার ব্যবসায় ও পেশাগত বিষয়ের ওপর আলোকপাত করা হয়েছে।
যুক্তিবিদ্যা হচ্ছে চিন্তা বা অনুমান সম্পর্কিত বিজ্ঞান। সুশৃঙ্খল নিয়ম- কানুন প্রয়োগের মাধ্যমে প্রকৃত সত্য আবিষ্কার করা যুক্তিবিদ্যার কাজ। যেমন- মানুষ হয় মরণশীল। এ বাক্যটি মানুষের মরণশীলতার ওপর নির্ভর করে। প্রকৃতপক্ষে, পৃথিবীর কোনো মানুষ অমর নয়। সুতরাং এ যুক্তিটি সত্য। আর নীতিবিদ্যা সমাজে বসবাসকারী মানুষের আচরণ সম্পর্কিত বিজ্ঞান। কল্যাণ হচ্ছে নীতিবিদ্যার আদর্শ। এটি মানুষের বিভিন্ন কাজকে উচিত-অনুচিত অর্থে মূল্যায়ন করে থাকে। যেমন- ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে ওজনে কম দেওয়া অনৈতিক কাজ। বস্তুত যুক্তিবিদ্যা সঠিক যুক্তিপদ্ধতি আবিষ্কার তথা ঘটনার সত্যতা নির্ণয় করে। যা একটি মানসিক প্রক্রিয়া। অন্যদিকে, নীতিবিদ্যা আমাদের আচরণের ভালো-মন্দ দিক মূল্যায়ন করে থাকে।
উদ্দীপকে দৃশ্যকল্প-১ এ মি. রহমানের যেকোনো বিষয় সুন্দরভাবে উপস্থাপন করা, কারো বক্তব্যে ভুল থাকলে তা শনাক্ত করে কৌশলে সংশোধন করা হচ্ছে তার মানসিক প্রক্রিয়ার ফল। তিনি চিন্তা বা অনুমানের মাধ্যমে এ কাজ সম্পাদন করেন। সুতরাং, তার কর্মকান্ড যুক্তিবিদ্যার সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। অপরপক্ষে, দৃশ্যকল্প-২ এ মি. জামান ব্যবসায়ক্ষেত্রে ক্রেতাদের সাথে ভালো ব্যবহার এবং সীমিত লাভে পণ্য বিক্রি করে থাকেন। তার এ কর্মকান্ড- নৈতিকতার দিকটি প্রকাশ পায়। অর্থাৎ এটি তার বাহ্যিক আচরণের প্রতিফলন। এ কারণে মি. জামানের কর্মকান্ড নীতিবিদ্যার সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।
পরিশেষে বলা যায়, যুক্তিবিদ্যা ও নীতিবিদ্যার আলোচ্য বিষয় ভিন্ন। আমরা জানি, চিন্তা একটি মানসিক প্রক্রিয়া এবং আচরণ একটি বাহ্যিক প্রক্রিয়া। উদ্দীপকে মি. রহমানের কাজটি অনুমান নির্ভর আর মি. জামানের কাজটি আচরণ নির্ভর। এ কারণে তাদের মধ্যে বিষয়গত পার্থক্য বিদ্যমান।

৪. মিজান সাহেব দর্শনের শিক্ষক। তার মেয়ে মিলি একাদশ মানবিক বিভাগে যুক্তিবিদ্যা নিয়ে পড়ে। সে বাবাকে বললো, 'বাবা যুক্তির প্রকারভেদ ও বৈধতা-অবৈধতা বুঝতে পারছি না।' মিজান সাহেব রুলেন, 'যুক্তি গঠনের উপাদান হলো যুক্তিবাক্য। যুক্তির প্রকারভেদ ও যথার্থতা বিচার করতে হলে প্রথমে ধারণা, পদ, অবধারণ ও যুক্তিবাক্যের প্রকৃতি, প্রকারভেদ এবং ব্যাকরণের শব্দ ও বাক্যের সাথে এদের সম্পর্ক সুস্পষ্টভাবে জানা দরকার। সেই সাথে যুক্তিবাক্যে পদের ব্যাপ্যতা অবশ্যই জানতে হবে। তাহলেই তুমি সহজে যুক্তির গঠন, প্রকারভেদ এবং বৈধতা বিচার করতে পারবে।'
ক. একটি যুক্তিবাক্যের অংশ কয়টি ও কী কী?
খ. অবধারণ বলতে কী বোঝ?
গ. উদ্দীপকের আলোকে যুক্তির উপাদানগুলো কী কী? আলোচনা করো।
ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত মিজান সাহেবের বিষয় এবং তার মেয়ে মিলির পাঠ্য বিষয়ের মধ্যে আন্তঃসম্পর্ক আলোচনা করো।

৪ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. একটি যুক্তিবাক্যের ৩টি অংশ। যথা- উদ্দেশ্য, সংযোজক ও বিধেয়।

খ. দুটি ধারণার মানসিক সংযুক্তিকে অবধারণ বলে।
অবধারণ হলো এমন একটি মানসিক প্রক্রিয়া যাকে চেতনার প্রাথমিক স্তর বলা হয়। অবধারণের সাহায্যে আমরা দুটি সার্বিক ধারণাকে মনে মনে তুলনা করে তাদের মধ্যে সম্বন্ধ স্থাপন করি। যেমন- কাক হয় কালো' এখানে 'কাক' ও 'কালো' এই দুইটি পদের মধ্যে সমন্ধ স্থাপন করি বলে এটি অবধারণ।

গ. উদ্দীপকের আলোকে যুক্তির উপাদানগুলো হলো পদ, শব্দ ও যুক্তিবাক্য।
পদ, ও বাক্য যুক্তিবিদ্যার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। পদ হচ্ছে বাক্যের বা বচনের উদ্দেশ্য বা বিধেয় হিসেবে ব্যবহৃত শব্দ। পদের মাধ্যমে আমরা কেবল বিবৃতি বা চিন্তা প্রকাশ করতে পারি। যুক্তিবিদ্যায় শব্দ বা শব্দের সমষ্টিতে পদ গঠিত হয়। তাই শব্দ হচ্ছে ধ্বনি বা অক্ষরের অর্থপূর্ণ সমষ্টি। শব্দকে পদযোগ্য শব্দ, সহ-পদযোগ্য শব্দ এবং পদ- নিরপেক্ষ শব্দে বিভক্ত করা হয়। যুক্তিবিদ্যায় দুটি পদের মধ্যে কোনো সম্পর্কের বর্ণনাকে যুক্তিবাক্য বলে। গঠনগত দিক থেকে যুক্তিবাক্যের তিনটি অংশ থাকে। যথাত উদ্দেশ্য, সংযোজক ও বিধেয়।
উদ্দীপকে বর্ণিত মিজান সাহেবে যুক্তিবিদ্যা বোঝাতে মেয়ে মিলিকে যুক্তির উপাদানসমূহ জানার প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করেন। পাশাপাশি যুক্তির উপাদান হিসেবে পদ, অবধারণ, যুক্তিবাক্যের প্রকৃতি, শব্দ ইত্যাদি বিষয় উল্লেখ করেন। তার বক্তব্যের মাধ্যমেই যুক্তির উপাদান শব্দ, পদ ও যুক্তিবাক্যের বিষয় পরিলক্ষিত হয়।

ঘ. উদ্দীপকে উল্লেখিত মিজান সাহেবের বিষয় তথা দর্শন এবং মেয়ে মিলির পাঠ্য বিষয়ে যুক্তিবিদ্যার বিষয় পরিলক্ষিত হয়।
জনাব মিজান সাহেব দর্শনের শিক্ষক। অন্যদিকে, তার মেয়ে একাদশ শ্রেণির মানবিক বিভাগের ছাত্রী হিসেবে যুক্তিবিদ্যা বিষয়কে পাঠ্য করেছে। নিচে দর্শন ও যুক্তিবিদ্যার আন্তঃসম্পর্ক আলোচনা করা হলো- যুক্তিবিদ্যায় যুক্তিপদ্ধতির যে নিয়মাবলি নির্দেশ করে দর্শনকে তা মেনে চলতে হয় এবং সত্তার স্বরূপ ও অস্তিত্ব সম্পর্কে দর্শন যে যুক্তি প্রদর্শন করে সেগুলোকে অবশ্যই যৌক্তিক নিয়মাবলির সাথে সঙ্গতিপূর্ণ হতে হয়। এদিক থেকে দর্শন যুক্তিবিদ্যার ওপর নির্ভরশীল। অন্যদিকে, দর্শন যুক্তিবিদ্যার মৌলিক নিয়মাবলির নিশ্চয়তা বিধান করে থাকে। যেমন- 'অভেদ নিয়ম', 'বিরোধ নিয়ম', 'প্রকৃতির নিয়মানুবর্তিতা নিয়ম', ‘কার্যকারণ নিয়ম' প্রভৃতি। যুক্তিবিদ্যা এ নিয়মগুলোকে স্বতঃসিদ্ধ হিসেবে স্বীকার করে। দর্শন যুক্তির সাহায্যে এগুলোর বৈধতা প্রতিষ্ঠিত করে।
প্রকৃতপক্ষে দর্শন ও যুক্তিবিদ্যা একে অন্যের পরিপূরক, একে অন্যের ওপর নির্ভরশীল। দর্শন ছাড়া যৌক্তিক চিন্তার অগ্রগতি সম্ভব নয়, ঠিক তেমনি যুক্তিবিদ্যার নিয়মাবলি ছাড়া দার্শনিক বিশ্লেষণ সম্ভব নয়। দর্শনের কষ্টিপাথরে যুক্তিবিদ্যার নিয়মগুলো যাচাই করা হয় বলেই যুক্তিবিদ্যা সেগুলোকে নির্দ্বিধায় মেনে নিতে পারে। যুক্তিবিদ্যার যৌক্তিক পথপ্রদর্শন দর্শনের জন্য এক অতি মূল্যবান ও গুরুত্বপূর্ণ সহায়তা। এজন্য যুক্তিবিদ্যা ও দর্শন পরস্পর অবিচ্ছেদ্য সম্পর্কে আবদ্ধ।

৫. সভ্যতার উন্নয়নের সাথে সাথে মানুষের জীবনযাত্রায় পরিবর্তন এসেছে। বৈজ্ঞানিক গবেষণার মাধ্যমে মানুষ নতুন নতুন সম্ভাবনার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এর পিছনে কাজ করেছে কেবল মানুষের উন্নত চিন্তা। রেহানা বলল, সঠিক চিন্তাই মানুষকে বৈধ থেকে অবৈধ বিষয়ের পার্থক্য বোঝাতে সক্ষম। আর এটিই মানুষের কাছে সত্যের আদর্শ। সত্য তাই যা সবার জন্য কল্যাণ বয়ে আনে। অন্যদিকে সোহানা বলল মানুষ যেসব কাজ করে সেগুলোর সাথে তাকে নৈতিক দিকটিও বিবেচনায় রাখতে হয়।
ক. কলাবিদ্যা কী?
খ. যুক্তিবিদ্যাকে কি বিজ্ঞান বলা যায়? বুঝিয়ে লেখো।
গ. উদ্দীপক অনুযায়ী রেহানার বক্তব্যে যে দিকটি ফুটে উঠেছে তার বাস্তব উপযোগিতা ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপক অনুযায়ী রেহানা আর সোহানার বক্তব্যে যে দুটি দিক ফুটে উঠেছে তার তুলনামূলক বিশ্লেষণ করো।

৫ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. কোনো বিশেষ জ্ঞানকে বাস্তবে প্রয়োগ করার কলাকৌশল সম্পর্কিত বিদ্যাকে কলাবিদ্যা বলে।

খ. হ্যাঁ, যুক্তিবিদ্যাকে বিজ্ঞান বলা যায়।
বিজ্ঞান যেমন সাধারণ নীতি প্রণয়নের চেষ্টা করে, আর বিশেষ ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট সূত্র প্রবর্তন করে, যুক্তিবিদ্যা তেমনি বৈধ যুক্তি থেকে অবৈধ যুক্তির পার্থক্য নির্ণয়ের জন্য কিছু নিয়ম নির্ধারণ করে। তাই এসব বিবেচনায় যুক্তিবিদ্যাকে যথার্থই বিজ্ঞান বলা চলে।

গ. উদ্দীপকে রেহানার বক্তব্য যুক্তিবিদ্যাকে নির্দেশ করে।
জীবনের সকল ক্ষেত্রে যে কোনো সমস্যায় যথার্থ সমাধান সম্পর্কে কেবল যুক্তিবিদ্যাই যথার্থ পথ নির্দেশ করতে পারে। বাস্তব জীবনে প্রত্যেকটি মানুষের চাকরির উন্নয়ন ও পেশাগত প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে যুক্তিবিদ্যা সহায়তা করতে পারে। ব্যবস্থাপনা, প্রশাসন, আইন, অর্থ, পদার্থ অন্যান্য জ্ঞান শাখা সকল ক্ষেত্রেই যুক্তিবিদ্যার জ্ঞান অপরিহার্য। আমাদের চিন্তা-ভাবনা ও কাজ যৌক্তিকভাবে পরিচালিত হলে ব্যক্তিগত পরিমন্ডল থেকে শুরু করে পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় ক্ষেত্রে সমস্যা অনেক কমে আসবে। অন্যের মতের প্রতি আমরা যেমন সহনশীল হতে পারব তেমনি নিজের জীবনের অনেক সমস্যাই আর সমস্যারূপে প্রতীয়মান হবে না।
উদ্দীপকে রেহানার বক্তব্য অনুসারে দেখা যাচ্ছে যে, যুক্তিবিদ্যা শুধু শ্রেণিকক্ষে সীমাবদ্ধ নেই বরং বাস্তব জীবনেও এর উপযোগীতা অনস্বীকার্য।

ঘ. উদ্দীপকে সোহানা ও রেহানার বক্তব্যে যথাক্রমে নীতিবিদ্যা ও যুক্তিবিদ্যার পরিচয় পাওয়া যায়।
নীতিবিদ্যা মানব আচরণের সাথে যুক্ত। এই বিষয়টি মানুষের ঐচ্ছিক আচরণের ভালোত্ব-মন্দত্ব ইত্যাদি নৈতিক আদর্শের ভিত্তিতে মূল্যায়ন করে। অন্যদিকে, যুক্তিবিদ্যা যুক্তির বৈধতা-অবৈধতার সাথে যুক্ত। অবৈধ যুক্তি থেকে বৈধ যুক্তির পার্থক্য নির্ণয় করাই যুক্তিবিদ্যার প্রধান কাজ। নৈতিক নিয়মের ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, স্থান-কাল-পাত্র ভেদে এই বিদ্যার ভিন্নতা থাকে। অর্থাৎ, স্থান-কাল-পাত্রভেদে নীতিবিদ্যা ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে। অন্যদিকে, যৌক্তিক নিয়মের ক্ষেত্রে কোনো ভিন্নতা দেখা যায় না। অর্থাৎ, স্থান-কাল-পাত্রভেদে যৌক্তিক নিয়ম একই হয়ে থাকে। আবার দেখা যায়, নৈতিক নিয়মের সাথে বাস্তবতার মিল থাকে। অর্থাৎ, নৈতিক নিয়ম বাস্তবতার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ। কিন্তু যৌক্তিক নিয়মের সাথে সবসময় বাস্তবতার মিল থাকে না। অর্থাৎ, বাস্তবতার অনুরূপ না হয়েও অনেক সময় যুক্তি বৈধ হয়। নৈতিক নিয়ম সমাজের মানুষের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হয়। কেননা নৈতিক নিয়ম না মানলে সমাজে মানুষকে অনেক খারাপ চোখে দেখা হয়। অপরদিকে, যৌক্তিক নিয়ম যুক্তির বৈধতা-অবৈধতার সাথে যুক্ত। এই নিয়ম মানা সামাজিক মানুষের জন্য অপরিহার্য নয়।
উদ্দীপকে রেহানা সঠিক চিন্তার মাধ্যমে বৈধ-অবৈধ বিষয়ের পার্থক্যের কথা বলেছে যা যুক্তিবিদ্যা। সোহানা মানুষ যেস কাজ তার মান নৈতিক দিকটি বিবেচনায় রাখার কথা বলে যা নীতিবিদ্যা। এই দুটি ঘটনার ভিন্নতা মূলত যুক্তিবিদ্যা ও নীতিবিদ্যার তুলনামূলক দিকগুলোকে ধরেছে।
সুতরাং দেখা যাচ্ছে যে, নীতিবিদ্যা ও যুক্তিবিদ্যার মধ্যে বিভিন্ন দিক দিয়ে পার্থক্য রয়েছে। তবে বিভিন্ন দিক দিয়ে এই দুটি বিষয়ের মধ্যে সম্পর্কও রয়েছে। কেননা উভয়ই মূল্যবিদ্যার অন্তর্গত দুটি শাখা।

৬. দৃশ্যকল্প-১: আকবর আলী সীমিত লাভে ব্যবসা করেন।
ওজনে সঠিক দেন। ফ্রেশ ফল বিক্রয় করেন। তিনি সব সময় যৌক্তিক চিন্তা ও কাজ করতে পছন্দ করেন। তিনি সত্যকে গ্রহণ করেন। অসত্যকে বর্জন করেন।
দৃশ্যকল্প-২: আঁখি চমৎকার ছবি আঁকে এবং গান শুনে, চমৎকার করে কথা বলে। সে মার্জিত পোশাক পরিধান করে। আসলে সে সুন্দরের পূজারী।
ক. যুক্তিবিদ্যার জনক কে?
খ. যুক্তিবিদ্যা একটি চিন্তার বিজ্ঞান বুঝিয়ে লেখো।
গ. দৃশ্যকল্প-২ এ তোমার পাঠ্যবই এর কোন বিষয়ের প্রতিফলন ঘটেছে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. দৃশ্যকল্প-১ এ যে দুটি বিষয়ের প্রতিফলন রয়েছে তাদের সম্পর্ক বিশ্লেষণ করো।

৬ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. যুক্তিবিদ্যার জনক হলেন প্রখ্যাত গ্রিক দার্শনিক এরিস্টটল।

খ. 'যুক্তিবিদ্যা চিন্তার বিজ্ঞান'- উক্তিটি যথার্থ।
চিন্তা মানুষের একটি বুদ্ধিমূলক প্রক্রিয়া। চিন্তা বিভিন্ন ধরনের। যেমন- স্মৃতি, কল্পনা, স্মরণ, পর্যবেক্ষণ, অনুমান ইত্যাদি। সমস্ত চিন্তার মধ্যে উন্নততর চিন্তা হলো যুক্তিপদ্ধতি বা অনুমান। অতএব বলা যায়, চিন্তা পদ্ধতি মূলত যুক্তিবিদ্যাকে নির্দেশ করে। নিয়ম অনুযায়ী চিন্তা করে সত্যকে অর্জন ও ভুলকে বর্জন করাই হলো চিন্তার প্রকৃতি বা যুক্তিবিদ্যার প্রকৃতি।

গ. উদ্দীপকে দৃশ্যকল্প-২ এ পাঠ্যবইয়ের নন্দনতত্ত্ব (Aesthetics) বিষয়ের প্রতিফলন ঘটেছে।
নন্দনতত্ত্ব হচ্ছে সৌন্দর্য বিষয়ক বিজ্ঞান। এটি এমন একটি বিদ্যা যা বিভিন্ন নান্দনিক বিষয়ের নিয়মকানুন প্রণয়ন করে এবং সেগুলোকে আমাদের বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করে সুন্দরভাবে জীবনযাপন করতে সাহায্য করে। বস্তুত মানুষ মাত্রই সুন্দরের পূজারী। নন্দনতত্ত্বের আদর্শ হচ্ছে সুন্দরকে আয়ত্ত করা। যেমন: সুন্দর করে কথা বলতে পারা, সুন্দর পোশাক পরিধান করা, দৈহিক পরিচর্যা ইত্যাদি বিষয়গুলো নন্দনতত্ত্বের মাধ্যমে শিক্ষা নেয়।
দৃশ্যকল্প-২ এ আঁখির চমৎকার ছবি আঁকা, গান শোনা, চমৎকার করে কথা বলতে পারা এবং মার্জিত পোশাক পরিধানের গুণগুলি সে নন্দনতত্ত্ব থেকে গ্রহণ করেছে। কারণ নন্দনতত্ত্ব জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সৌন্দর্য চর্চার শিক্ষা দেয়। তাই আঁখি সৌন্দর্য চর্চার নিয়মকানুন, কলা-কৌশল শিক্ষা নিয়ে বাস্তব জীবনে তার যথাযথ প্রয়োগ ঘটিয়েছে।

ঘ. দৃশ্যকল্প-১ এ নীতিবিদ্যা (Ethics) এবং যুক্তিবিদ্যা (Logic) বিষয় দুটির প্রতিফলন ঘটেছে।
যে বিদ্যা সমাজে বসবাসকারী মানুষে আচরণের ভালো-মন্দ উচিত- অনুচিত নৈতিক আদর্শের আলোকে মূল্যায়ন করে তাকে নীতিবিদ্যা বলে। আর যে বিদ্যা বৈধ যুক্তি থেকে অবৈধ যুক্তিকে পৃথক করার পদ্ধতি ও নিয়মাবলি শিক্ষা দেয় তাকে যুক্তিবিদ্যা বলে। নীতিবিদ্যা ও যুক্তিবিদ্যার সম্পর্ক আলোচনা করলে তাদের মধ্যে কিছু সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্য পরিলক্ষিত হয়। সাদৃশ্যের ক্ষেত্রে উভয়ই মূল্যায়নমূলক বিদ্যা। উভয়েই কিছু নির্দিষ্ট মানদ- অনুসরণ করে এবং আদর্শ প্রতিষ্ঠায় তৎপর। বৈসাদৃশ্যের ক্ষেত্রে দেখা যায় ত নীতিবিদ্যা আচার আচরণ সংক্রান্ত বিদ্যা। আর যুক্তিবিদ্যা যুক্তি সংক্রান্ত বিদ্যা। নীতিবিদ্যার আদর্শ হলো কল্যাণ। আর যুক্তিবিদ্যার আদর্শ হলো সত্য। নীতিবিদ্যার বিষয়গুলো স্থান, কাল, পাত্র ভেদে ভিন্ন হয়। কিন্তু যুক্তিবিদ্যার বিষয়গুলো স্থান, কাল, পাত্র ভেদে একই রূপ হয়। নীতিবিদ্যার নিয়ম না মানলে মানুষকে সমাজে খারাপ চোখে দেখা হয়। কিন্তু যৌক্তিক নিয়মের ক্ষেত্রে তেমনটা করা হয় না। নীতিবিদ্যা মানুষের সব ধরনের কর্মকান্ড-র নৈতিক মান বিচার করে। অন্যদিকে, যুক্তিবিদ্যা মানুষের চিন্তা ও কর্মের যৌক্তিকতা বিচার করে।
উদ্দীপকে দৃশ্যকল্প-১ এ আকবর আলীর সীমিত লাভে ব্যবসা, ওজনে সঠিক দেওয়া এবং ফ্রেশ ফল বিক্রি করা নৈতিকতার প্রতিফলন। আবার তার সব সময়ে যৌক্তিক চিন্তা ও কাজ করা, সত্যকে গ্রহণ এবং অসত্যকে বর্জন করার বিষয়গুলো যুক্তিবিদ্যার কলা-কৌশলের ব্যবহারিক রূপ।
পরিশেষে বলা যায়, আকবর আলীর চিন্তা ও কাজের সাথে যুক্তিবিদ্যা এবং নীতিবিদ্যার মিল লক্ষণীয়। তার ব্যবসায় ক্ষেত্রে সীমিত লাভ, ওজনে সঠিক দেওয়া, ফ্রেশ ফল বিক্রি নীতিবিদ্যার আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে করা। অপরদিকে, যৌক্তিক চিন্তা ও কাজ, সত্যকে গ্রহণ এবং অসত্যকে বর্জন করার দিকগুলো যুক্তিবিদ্যার কলা-কৌশল। যার লক্ষ্য ভুল-ত্রুটি সংশোধন করে সততার সাথে জীবন পরিচালনা করা।

৭. ফারহান ও মুগ্ধ দুই ভাই। উভয়ই মেধাবী শিক্ষার্থী। ফারহান যেকোনো বিষয় যৌক্তিকভাবে চিন্তা করার মাধ্যমে বোঝার চেষ্টা করে। এইচ.এস.সি.তে পড়ার সময় সে যুক্তিবিদ্যা নেয়। তখন থেকেই সে অন্ধবিশ্বাস ও কুসংস্কারকে অপছন্দ করে। অন্যদিকে মুগ্ধ তার চেয়ে জুনিয়র। আধুনিক তথ্য প্রযুক্তির প্রতি তার প্রবল ঝোঁক। কারণ খুব সহজেই এর মাধ্যমে সে তথ্য সংরক্ষণ, বিশ্লেষণ ও নিজের কাজে ব্যবহার করতে পারে।
ক. দর্শন কাকে বলে?
খ. পেশাগত জীবনে নীতিবিদ্যার প্রয়োজন কেন?
গ. মুগ্ধ কোন বিষয় নিয়ে পড়ছে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. ফারহানের জীবনে যুক্তিবিদ্যার বাস্তব প্রয়োগ ঘটেছে- কথাটির মূল্যায়ন করো।

৭ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. জগত ও জীবন সম্পর্কিত কিছু মৌলিক বিষয়ের যৌক্তিক অনুসন্ধানই হলো দর্শন।

খ. প্রতিটি পেশায় কোনো না কোনো নৈতিক ভিত্তি কাজ করে বিধায় পেশাগত জীবনে নীতিবিদ্যার প্রয়োজন রয়েছে।
সকল পেশার সাথে ভালো-মন্দ, ন্যায়-অন্যায় এবং বৈধতা-অবৈধতা ও কর্তব্যবোধের প্রশ্ন জড়িত আছে। তাই নীতিবিদ্যার নীতিসমূহ অনুসরণ করলে মানুষ খুব সহজে সফলতা লাভ করতে পারে। নীতিবিদ্যার আদর্শ মানুষের পেশাগত জীবনকে নৈতিক করে তোলে। এজন্য পেশাগত জীবনে নীতিবিদ্যার শিক্ষা অতীব প্রয়োজনীয়।

গ. উদ্দীপকে মুগ্ধ যে বিষয়টি নিয়ে পড়ছে তা হলো কম্পিউটার বিজ্ঞান (Computer Science)।
কম্পিউটার বিজ্ঞান জ্ঞানের একটি শাখা যেখানে তথ্য ও গণনার তাত্ত্বিক ভিত্তির গবেষণা করা হয়। কম্পিউটার নামক যন্ত্রে এসব গণনা সম্পাদনের ব্যবহারিক পদ্ধতির প্রয়োগ ও বাস্তবায়ন সম্পর্কে আলোচনা করা হয়। এর মূল লক্ষ্য হচ্ছে, তথ্যের উন্নত ব্যবহারের মাধ্যমে মানব জাতির বর্তমান ও ভবিষ্যতের উন্নতি সাধন। তত্ত্ব, প্রকৌশল ও পরীক্ষা- নিরীক্ষা এ তিন মিলেই কম্পিউটার বিজ্ঞান। যেমন: কম্পিউটার বিজ্ঞানীরা রোবট তৈরির তত্ত্ব দাঁড় করে ঐ তত্ত্বের ওপর ভিত্তি করে হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যারের সমন্বয়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করেন।
উদ্দীপকে মুগ্ধ আধুনিক তথ্য প্রযুক্তিকে পছন্দ করে। কেননা এর মাধ্যমে সে সহজেই তথ্য সংরক্ষণ, বিশ্লেষণ ও নিজের কাজে ব্যবহার করতে পারবে। তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে তথ্য সংরক্ষণ ও তা কাজে লাগানোর এই পদ্ধতি কম্পিউটার বিজ্ঞানকে নির্দেশ করে।

ঘ. যুক্তিবিদ্যা এমন একটি বিদ্যা যা মানুষকে যৌক্তিকভাবে চিন্তা করতে শেখায় এবং সত্যকে জানতে সহযোগিতা করে। ফারহানের জীবনে এর প্রয়োগ দেখা যায়।
যুক্তিবিদ্যা আমাদের শুদ্ধভাবে চিন্তা করতে সাহায্য করে। ভ্রান্তিকে উদ্ঘাটন ও আমাদের বুদ্ধিবৃত্তিকে শাণিত করতে যুক্তিবিদ্যার জ্ঞান অপরিহার্য। এ জ্ঞানের মাধ্যমে আমরা যেমন নিজেদের চিন্তার ভুল-ভ্রান্তি নির্ণয় করতে পারি তেমনি অন্য মানুষের চিন্তার ভুল-ভ্রান্তিও ধরিয়ে দিতে পারি। যুক্তিবিদ্যা চর্চা ও অনুশীলনের ফলে আমাদের চিন্তাশক্তির উৎকর্ষ সাধিত হয়। এর ফলে আমরা সূক্ষ্ম চিন্তা করার ক্ষমতা অর্জন করি।
উদ্দীপকে ফারহান যেকোনো বিষয় যৌক্তিকভাবে চিন্তা করে এবং অন্ধ বিশ্বাস ও কুসংস্কার অপছন্দ করে। তার এই মনোভাব যুক্তিবিদ্যার স্পষ্ট প্রতিফলন এবং যুক্তিবিদ্যার বাস্তব প্রয়োগকে নির্দেশ করে।
সুতরাং বলা যায়, যুক্তিবিদ্যা মানুষের জীবন পদ্ধতিকে পরিবর্তন করে দিতে পারে। তাই প্রায়োগিক দিক বিবেচনায় বাস্তব জীবনে যুক্তিবিদ্যার প্রয়োগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

৮. দিব্যদের পরিবারের সবাই খুব ছিমছাম থাকে। ঘরের জিনিসপত্রও তারা সবাই গুছিয়ে জায়গা মতো রাখে। দিব্যর বাবা ঘর-বাড়ি সাজিয়ে রাখার জন্য সুন্দর ফুলের টব, ফুল ও বিভিন্ন ধরনের উপকরণ কিনে আনেন। দিব্যর মা সেগুলি দিয়ে খুব সুন্দর করে সাজিয়ে ঘর-বাড়ি পরিপাটি করে রাখেন। তাদের ঘরে গেলেই সবার দৃষ্টি আকৃষ্ট হয় আর তাদের রুচি-বোধের পরিচয় পাওয়া যায়। অন্যদিকে দিব্যর কাকা রহমান সাহেব ও তার বন্ধু আবিদ একই মহাজনের কাছ থেকে কাপড় কিনে দোকানে বিক্রি করে। রহমান সাহেব তার দোকানের সব কাপড় সুন্দর করে সাজিয়ে রাখেন, ন্যায্য মূল্যে কাপড় বিক্রয় করেন ও মহাজনের টাকা সময়মতো পরিশোধ করলেও আবিদ তা করেন না। ফলে আবিদের দোকানে লোকসান দেখা যায়।
ক. আদর্শনিষ্ঠ বিজ্ঞান কাকে বলে?
খ. কোন দিক থেকে যুক্তিবিদ্যা গণিতের সাথে সম্পর্কযুক্ত? ব্যাখ্যা করো।
গ. দিব্যদের পরিবারের চিত্রে যুক্তিবিদ্যার প্রায়োগিক দিকের কোন বিষয়টি ফুটে ওঠে?
ঘ. উদ্দীপকে রহমান সাহেব ও আবিদের কর্মকান্ড- যে প্রায়োগিক দিকটি ফুটে উঠেছে তার সাথে যুক্তিবিদ্যার তুলনামূলক আলোচনা করো।

৮ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. যে বিজ্ঞান কোনো আদর্শের আলোকে কোনো বিষয় বা ঘটনা আসলে কেমন হওয়া উচিত তা নিয়ে আলোচনা করে তাকে আদর্শনিষ্ঠ বিজ্ঞান বলে।

খ. তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক দিক থেকেই যুক্তিবিদ্যা ও গণিত পরস্পর নির্ভরশীল।
যুক্তিবিদ্যা গণিতকে বিকশিত হওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে। অপরদিকে গণিতের তাত্ত্বিক প্রয়োগ যুক্তিবিদ্যার সমকালীন বিকাশকে করেছে সমৃদ্ধ থেকে সমৃদ্ধতর। ফলে যুক্তিবিদ্যা ও গণিত একে অপরকে ছাড়া বিকশিত হতে পারে না। বর্তমানে তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক উভয় দিক থেকেই যুক্তিবিদ্যা ও গণিত বিষয় দুটি পরস্পর পরস্পরের পরিপূরক।

গ. উদ্দীপকে দিব্যদের পরিবারের চিত্রে নন্দনতত্ত্ব (Aesthetics) বিষয়ের প্রতিফলন ঘটেছে।
নন্দনতত্ত্ব হচ্ছে সৌন্দর্য বিষয়ক বিজ্ঞান। এটি এমন একটি বিদ্যা যা বিভিন্ন নান্দনিক বিষয়ের নিয়মকানুন প্রণয়ন করে এবং সেগুলোকে আমাদের বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করে সুন্দরভাবে জীবনযাপন করতে সাহায্য করে। বস্তুত মানুষ মাত্রই সুন্দরের পূজারী। নন্দনতত্ত্বের আদর্শ হচ্ছে সুন্দরকে আয়ত্ত করা। যেমন: সুন্দর করে কথা বলতে পারা, সুন্দর পোশাক পরিধান করা, দৈহিক পরিচর্যা ইত্যাদি বিষয়গুলো নন্দনতত্ত্বের মাধ্যমে শিক্ষা নেয়।
দিব্যদের বাড়ি সুন্দর ফুলের টব, ফুল ও বিভিন্ন ধরনের উপকরণ দিয়ে পরিপাটি করে সাজানো। এখানে তাদের রুচিবোধের পরিচয় পাওয়া যায় যা সে নন্দনতত্ত্ব থেকে গ্রহণ করেছে। কারণ নন্দনতত্ত্ব জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সৌন্দর্য চর্চার শিক্ষা দেয়। তাই দিব্যর বাবা-মা, সৌন্দর্য চর্চার নিয়মকানুন, কলা-কৌশল শিক্ষা নিয়ে বাস্তব জীবনে তার যথাযথ প্রয়োগ ঘটিয়েছে।

ঘ. উদ্দীপকে আবিদ সাহেব ও রহমানের কর্মকান্ড- নীতিবিদ্যার ব্যবসায় ও পেশাগত দিক এবং যুক্তিবিদ্যার মধ্যে কিছু সাদৃশ্য-বৈসাদৃশ্য লক্ষ করা যায়।
যুক্তিবিদ্যা হচ্ছে চিন্তা বা অনুমান সম্পর্কিত বিজ্ঞান। সুশৃঙ্খল নিয়ম- কানুন প্রয়োগের মাধ্যমে প্রকৃত সত্য আবিষ্কার করা যুক্তিবিদ্যার কাজ। যেমন- মানুষ হয় মরণশীল। এ বাক্যটি মানুষের মরণশীলতার ওপর নির্ভর করে। প্রকৃতপক্ষে, পৃথিবীর কোনো মানুষ অমর নয়। সুতরাং এ যুক্তিটি সত্য। আর নীতিবিদ্যা সমাজে বসবাসকারী মানুষের আচরণ সম্পর্কিত বিজ্ঞান। কল্যাণ হচ্ছে নীতিবিদ্যার আদর্শ। এটি মানুষের বিভিন্ন কাজকে উচিত-অনুচিত অর্থে মূল্যায়ন করে থাকে। যেমন- ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে ওজনে কম দেওয়া অনৈতিক কাজ। বস্তুত যুক্তিবিদ্যা সঠিক যুক্তিপদ্ধতি আবিষ্কার তথা ঘটনার সত্যতা নির্ণয় করে। যা একটি মানসিক প্রক্রিয়া। অন্যদিকে, নীতিবিদ্যা আমাদের আচরণের ভালো-মন্দ দিক মূল্যায়ন করে থাকে।
উদ্দীপকে রহমান সাহেব দোকানের সব কাপড় সুন্দর করে সাজিয়ে রাখেন, ন্যায্যমূল্যে কাপড় বিক্রি করেন ও মহাজনের টাকা সময়মত পরিশোধ করেন। অর্থাৎ তার বাহ্যিক আচরণে নৈতিকতার প্রতিফলন দেখা যায় যা পেশাগত নীতিবিদ্যা আবার, আবিদ সাহেব এ কাজগুলো করেন না। এ জন্য তার কর্মকান্ড পেশাগত নীতি পরিপন্থী। পেশাগত নীতিবিদ্যা হলো বাহ্যিক আচরণের প্রতিফলন। অপরদিকে যুক্তিবিদ্যা হলো অবৈধ যুক্তি থেকে বৈধ যুক্তি পৃথক করার প্রক্রিয়া, যা একটি মানসিক প্রক্রিয়া।
পরিশেষে বলা যায়, যুক্তিবিদ্যা ও নীতিবিদ্যার আলোচ্য বিষয় ভিন্ন। আমরা জানি, চিন্তা একটি মানসিক প্রক্রিয়া এবং আচরণ একটি বাহ্যিক প্রক্রিয়া।

৯. মুনমুন ও মিথুন দুই বান্ধবী। তারা তাদের দেশকে মনেপ্রাণে ভালোবাসে। নিম্ন আয়ের দেশ থেকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার খবরে তাদের মন যেমন আনন্দে ভরে যায়। তেমনি দেশের মানুষের মধ্যে অশান্তি, বিরোধ, নারী ও শিশু নির্যাতনের খবরে তারা কষ্ট অনুভব করে। তাদের মতে, যা কিছু যৌক্তিক, সুন্দর ও কল্যাণকর তা সবাইকে মেনে চলা উচিত।
ক. নন্দনতত্ত্বের ইংরেজি প্রতিশব্দ কী?
খ. নন্দনতত্ত্ব কাকে বলে?
গ. যুক্তিবিদ্যার সাথে নন্দনতত্ত্বের পার্থক্য নিরূপণ করো।
ঘ. উদ্দীপকে যে দুটি বিষয়ের ইঙ্গিত রয়েছে তাদের সম্পর্ক ব্যাখ্যা করো।

৯ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. নন্দনতত্ত্বের উংরেজি প্রতিশব্দ Aesthetics।

খ. সৌন্দর্যবিষয়ক বিজ্ঞানকে নন্দন তত্ত্ব বলে।
নন্দনতত্ত্ব এমন একটি বিদ্যা যা বিভিন্ন প্রকারের সৌন্দর্য চর্চার জন্য নিয়ম-কানুন প্রণয়ন করে এবং সেগুলোকে আমাদের বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করে সুন্দরভাবে জীবনযাপন করার নির্দেশনা দেয়। যেমন: সুন্দর করে কথা বলা, সুন্দর পোশাক পরা, বাড়ির সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য বাগান করা এগুলো সৌন্দর্য বিজ্ঞানের অন্তর্ভুক্ত।

গ. বিভিন্ন দিক থেকে যুক্তিবিদ্যা ও নন্দনতত্ত্বের মধ্যে মিল থাকলেও বেশকিছু দিক থেকে পার্থক্যও রয়েছে।
যুক্তিবিদ্যা ও নন্দনতত্ত্বের পার্থক্য নিচে নিরূপণ করা হলো। যেমন: যুক্তিবিদ্যা বচনের সত্যতা ও যুক্তির বৈধতা নিয়ে আলোচনা করে। পক্ষান্তরে নন্দনতত্ত্ব সৌন্দর্য, শিল্প, রুচিবোধ, রসবোধ নিয়ে আলোচনা করে। যুক্তিবিদ্যায় আবেগ-অনুভূতির স্থান নেই। কিন্তু নন্দনতত্ত্বে ঐগুলো বিশেষ ভূমিকা পালন করে। যুক্তিবিদ্যা একটি বিজ্ঞান কিন্তু নন্দনতত্ত্ব বিজ্ঞান বলে বিবেচিত হয় না। যুক্তিবিদ্যার সুনির্দিষ্ট পদ্ধতি রয়েছে। নন্দনতত্ত্বের কোনো পদ্ধতি পাওয়া যায় না। যুক্তিবিদ্যা নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম অনুসরণ করে। কিন্তু নন্দনতত্ত্বের কোনো নিয়ম নেই। যুক্তিবিদ্যা বুদ্ধিনির্ভর। পক্ষান্তরে নন্দনতত্ত্ব অভিজ্ঞতামূলক। যুক্তিবিদ্যায় কোনো কিছুকে প্রশংসা করা হয় না। কিন্তু নন্দনতত্ত্ব কোনো ব্যক্তি বা বস্তু সম্পর্কে প্রশংসা করে থাকে।
পরিশেষে বলা যায় যে, যুক্তিবিদ্যা ও নন্দনতত্ত্ব একই শাখার দুটি উপশাখা হলেও অনেক ক্ষেত্রেই উভয়ের মধ্যে বিপরীতমুখী সম্পর্ক বিদ্যমান।

ঘ. উদ্দীপকে যুক্তিবিদ্যা ও নীতিবিদ্যা বিষয় দুটির ইঙ্গিত রয়েছে।
যে বিদ্যা সমাজে বসবাসকারী মানুষের আচারণের ভালো-মন্দ, উচিত- অনুচিত নৈতিক আদর্শের আলোকে মূল্যায়ন করে তাকে নীতিবিদ্যা বলে। আর যে বিদ্যা বৈধ যুক্তি থেকে অবৈধ যুক্তিকে পৃথক করার পদ্ধতি ও নিয়মাবলির শিক্ষা দেয় তাকে যুক্তিবিদ্যা বলে। নীতিবিদ্যা ও যুক্তিবিদ্যার সম্পর্ক আলোচনা করলে তাদের মধ্যে কিছু সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্য লক্ষ করা যায়। সাদৃশ্যের ক্ষেত্রে উভয়ই মূল্যায়নমূলক বিদ্যা। উভয়ই কিছু মানদ- অনুসরণ করে এবং আদর্শ প্রতিষ্ঠায় তৎপর। বৈসাদৃশ্যের ক্ষেত্রে দেখা যায় নীতিবিদ্যা আচার-আচরণ সংক্রান্ত বিদ্যা আর যুক্তিবিদ্যা হলো যুক্তি সংক্রান্ত বিদ্যা। নীতিবিদ্যার আদর্শ কল্যাণ। পক্ষান্তরে যুক্তিবিদ্যার আদর্শ সত্য। নীতিবিদ্যার বিষয়গুলো স্থান, কাল, পাত্রভেদে ভিন্ন হয়। কিন্তু যুক্তিবিদ্যার বিষয়গুলো স্থান, কাল, পাত্রভেদে একই রূপ হয়।
উদ্দীপকের আলোকে যুক্তিবিদ্যা ও নীতিবিদ্যার সম্পর্ক অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ। যুক্তিবিদ্যা ও নীতিবিদ্যা আদর্শগত দিক থেকে, সত্যের দিক থেকে সম্পর্কিত। উভয়ের উদ্দেশ্য সত্য, সুন্দর ও কল্যাণের দিকে ধাবিত হওয়া।
পরিশেষে বলা যায় যে, আদর্শনিষ্ঠ বিজ্ঞান হিসেবে যুক্তিবিদ্যা ও নীতিবিদ্যা একই সূত্রে গাঁথা। আদর্শের বিকাশের জন্য তা ভিন্ন ভিন্ন পদ্ধতি প্রয়োগ করে। মানবজীবনকে সুন্দর ও সার্থক করে তোলার ক্ষেত্রে উভয়ের পারস্পরিক সম্পর্কের গুরুত্ব অত্যধিক।

১০. দৃশ্যকল্প-১: প্রথম আলোচক বললেন- ‘‘সক্রেটিস শারীরিক সৌন্দর্য নয় বরং প্রখর যুক্তিবাদিতার জন্য যুগে যুগে মানুষের অন্তরে শ্রদ্ধার পাত্র হিসেবে বিরাজমান।"
দৃশ্যকল্প-২: দ্বিতীয় আলোচক বললেন ‘‘সক্রেটিসের মতে, যার যা কর্তব্য তা পালন করাই হলো ন্যায়।"
ক. দর্শনের তিনটি শাখা কী কী?
খ. যুক্তিবিদ্যা, নীতিবিদ্যা ও নন্দনতত্ত্ব দর্শনের কোন শাখায় আলোচনা করা হয়?
গ. দৃশ্যকল্প-১ এর মূল বিষয় দর্শনে প্রয়োজন আছে কি?
ঘ. দৃশ্যকল্প-১ ও ২ এর সম্পর্ক আলোচনা করো।

১০ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. দর্শনের তিনটি শাখা হলো- i. জ্ঞানবিদ্যা ii. তত্ত্ববিদ্যা এবং iii. মূল্যবিদ্যা।

খ. যুক্তিবিদ্যা, নীতিবিদ্যা ও নন্দনতত্ত্ব দর্শনের মূল্যবিদ্যা শাখায় আলোচনা করা হয়েছে।
দর্শনের আলোচ্য বিষয়ের অন্যতম হলো মূল্যবিদ্যা। আবার মূল্যবিদ্যার আলোচ্য বিষয় হলো সত্য, সুন্দর ও মঙ্গল। এর মধ্যে সত্য হচ্ছে যুক্তিবিদ্যার আদর্শ, সুন্দর হচ্ছে নন্দনতত্ত্বের আদর্শ এবং মঙ্গল কল্যাণের আদর্শ। অর্থাৎ যে বিদ্যা মানুষের ঐচ্ছিক আচরণের সত্য, সুন্দর ও কল্যাণকর বিষয়গুলো মূল্যায়ন করে তাকে মূল্যবিদ্যা বলে।

গ. দৃশ্যকল্প-১ এর মূল বিষয় হলো যুক্তিবিদ্যা যার প্রয়োজন দর্শনে আবশ্যক। কেননা যুক্তিবিদ্যা হলো দর্শনের একটি শাখা।
দর্শন ও যুক্তিবিদ্যার নিয়মগুলো একই হওয়ার কারণে তারা পরস্পরের ওপর নির্ভরশীল। যুক্তিবিদ্যার ক্ষেত্রে যেমন দর্শনের প্রয়োগ দেখা যায়, তেমনি দর্শনের ক্ষেত্রেও যুক্তিবিদ্যার প্রয়োগ দেখা যায়। দর্শন যেমন যৌক্তিক চিন্তা করতে সাহায্য করে তেমনি যৌক্তিক নিয়মগুলো দার্শনিক বিশ্লেষণে সহায়তা করে। দর্শন হলো সত্য বা জ্ঞানের প্রতি অনুরাগ। পক্ষান্তরে যুক্তিবিদ্যা হলো যৌক্তিক চিন্তার ভিত্তিতে অসত্য বর্জন করে প্রকৃত সত্যকে অর্জন করা।
তাই বলা যায়, দৃশ্যকল্প-১ এর মূল বিষয় যুক্তিবিদ্যা দর্শনে প্রয়োজন আছে এবং বিষয় দুটি ভিন্ন বিষয় হলেও একে অন্যের ওপর নির্ভরশীল।

ঘ. দৃশ্যকল্প-১ ও ২ হলো যুক্তিবিদ্যা এবং নীতিবিদ্যা। নিচে উভয়ের সম্পর্ক আলোচনা করা হলো।
যে বিদ্যা বৈধ যুক্তি থেকে অবৈধ যুক্তিকে পৃথক করার পদ্ধতি ও নিয়মাবলির শিক্ষা দেয় তাকে যুক্তিবিদ্যা বলে। আর যে বিদ্যা মানুষের ঐচ্ছিক আচরণের ভালো-মন্দ, উচিত-অনুচিত নৈতিক আদর্শের আলোকে মূল্যায়ন করে তাকে নীতিবিদ্যা বলে। যুক্তিবিদ্যা ও নীতিবিদ্যার সম্পর্ক আলোচনা করলে তাদের মধ্যে কিছু সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্য লক্ষ করা যায়। সাদৃশ্যের ক্ষেত্রে উভয়ই মূল্যায়নমূলক বিদ্যা। উভয়ই কিছু নির্দিষ্ট মানদ- অনুসরণ করে এবং আদর্শ প্রতিষ্ঠায় তৎপর। বৈসাদৃশ্যের ক্ষেত্রে দেখা যায় যুক্তিবিদ্যা যুক্তি সংক্রান্ত বিদ্যা। আর নীতিবিদ্যা আচার-আচরণ সংক্রান্ত বিদ্যা। যুক্তিবিদ্যার আদর্শ সত্য, পক্ষান্তরে নীতিবিদ্যার আদর্শ কল্যাণ। যুক্তিবিদ্যার বিষয়গুলো স্থান, কাল, পাত্রভেদে একই রূপ হয়। আর নীতিবিদ্যার বিষয়গুলো স্থান, কাল, পাত্রভেদে ভিন্ন হয়।
দৃশ্যকল্প-১: প্রথম আলোচক বলেন, ‘‘সক্রেটিস শারীরিক সৌন্দর্য নয় বরং প্রখর যুক্তিবাদিতার জন্য যুগে যুগে মানুষের অন্তরে শ্রদ্ধার পাত্র হিসেবে বিরাজমান।" যুক্তিবিদ্যার জ্ঞানের প্রতিফলন এবং দৃশ্য ২: ‘‘ সক্রেটিসের মতে, যার কর্তব্য তা পালন করাই হলো ন্যায়।" নীতিবিদ্যায় জ্ঞানের প্রতিফলন হয়। যুক্তিবিদ্যা ও নীতিবিদ্যার সাথে এখানে চিন্তা ও কাজের মিল লক্ষণীয়।
পরিশেষে বলা যায় যে, যুক্তিবিদ্যা ও নীতিবিদ্যা পরস্পর ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কযুক্ত। উভয়ের উদ্দেশ্য সত্যকে প্রতিষ্ঠা করা এবং সার্বিক কল্যাণ সাধন করা।
Share:

HSC যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর pdf download অধ্যায় ৩

HSC যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর pdf download

এইচএসসি পরীক্ষার পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি
HSC Logic 1st Paper Srijonshil question and answer pdf download.

উচ্চ মাধ্যমিক

যুক্তিবিদ্যা
প্রথম পত্র

সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
৩য় অধ্যায়

HSC Logic 1st Paper
Srijonshil
Question and Answer pdf download

১. পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন জাতি-গোষ্ঠী ডিসেম্বর মাসে উৎসব পালন করে। বিভিন্ন ধর্ম ও বর্ণের লোক এ উৎসবের অংশগ্রহণ করে। উৎসব দেখার সময় সুবর্ণা পাশের একজন সাদা রঙবিশিষ্ট লোককে দেখলেন। তিনি ঐ লোকটিকে জিজ্ঞাসা করেন, ভাই আপনি কি 'ভারতবাসী না অ-ভারতবাসী'। লোকটি উত্তরে বলেন যে, আমি ভারতবাসী নই অস্ট্রেলিয়াবাসী। আমার নাম ওয়ার্ন।
ক. পদ কী?
খ. একটি পদ কেন অব্যাপ্য হয়?
গ. উদ্দীপকে সুবর্ণার বক্তব্যে কোন পদের বিশ্লেষণ ঘটেছে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. যুক্তিবিদ্যার আলোকে সুবর্ণা ও ওয়ার্নের বক্তব্য বিশ্লেষণ করো।

১ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. কোনো যুক্তিবাক্যের উদ্দেশ্য বা বিধেয় হিসেবে ব্যবহৃত হওয়ার যোগ্যতা সম্পন্ন শব্দ বা শব্দসমষ্টিকে পদ বলে।

খ. একটি পদ আংশিক ব্যক্ত্যর্থে কোনো যুক্তিবাক্যে ব্যবহৃত হওয়ার কারণে অব্যাপ্য হয়।
কোনো পদ একটি যুক্তিবাক্যে কতটুকু ব্যক্ত্যর্থের ভিত্তিতে প্রকাশিত হলো তার ওপর নির্ভর করে পদটির ব্যাপ্যতা নির্ধারিত হয়। যখন একটি পদ তার সম্পূর্ণ ব্যক্ত্যর্থের ভিত্তিতে কোনো যুক্তিবাক্যে ব্যবহৃত হয় তখন পদটি ব্যাপ্য হয়। আর যখন একটি পদ কোনো যুক্তিবাক্যে আংশিক ব্যক্তার্থে প্রকাশিত হয় তখন সেটিকে অব্যাপ্য পদ বলে। সুতরাংআংশিক ব্যক্ত্যর্থে কোনো যুক্তিবাক্যে ব্যবহৃত হওয়ার কারণে একটি পদ অব্যাপ্য হয়।

গ. উদ্দীপকে সুবর্ণার বক্তব্যে বিরুদ্ধ পদের বিশ্লেষণ ঘটেছে।
যে শব্দ বা শব্দসমষ্টি কোনো যুক্তিবাক্যের উদ্দেশ্য বা বিধেয় হিসেবে ব্যবহৃত হয় বা হতে পারে সে শব্দ বা শব্দসমষ্টিকে যুক্তিবিদ্যায় পদ বলে। যুক্তিবিদ্যায় পদকে বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে ভাগ করা হয়। এর মধ্যে ভিন্ন অর্থবোধক যুগল পদকে সম্বন্ধের দিক থেকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়, যার মধ্যে একটি হলো বিরুদ্ধ পদ। যদি পরস্পর বিরোধী দুটি পদ এমনভাবে সম্পর্কিত হয় যে তাদের দ্বারা নির্দেশিত বিষয়ের সম্পূর্ণ ব্যক্ত্যর্থকে প্রকাশ করে তবে পদ দুটিকে পরস্পর বিরুদ্ধ পদ বলে। যেমন- 'সাদা' ও 'অ-সাদা' এই শব্দ দুটি পরস্পর বিরুদ্ধ পদ। এখানে প্রথম পদটি সাদা রংকে এবং দ্বিতীয় পদটি সাদা ব্যতীত অন্যান্য সকল রংকে নির্দেশ করে।
উদ্দীপকে সুবর্ণা তার বক্তব্যে যে দুটি পদের উল্লেখ করেছে তা হলো- ভারতবাসী ও অ-ভারতবাসী। এই শব্দ দুটিও পরস্পর বিরুদ্ধ পদ। সুতরাং সুবর্ণার বক্তব্যে বিরুদ্ধ পদের বিশ্লেষণ ঘটেছে।

ঘ. উদ্দীপকের সুবর্ণার বক্তব্যে বিরুদ্ধ পদ এবং ওয়ার্নের বক্তব্যে বিপরীত পদের প্রকাশ ঘটেছে।
পদকে বিভিন্ন শ্রেণিতে ভাগ করা যায়। তবে দুটি ভিন্ন অর্থবোধক পদের পাশাপাশি উপস্থিতির ভিত্তিতে পদকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যথা- ১. বিপরীত পদ ও ২. বিরুদ্ধ পদ। বিরুদ্ধ পদ দুটি পরস্পর বিরুদ্ধ এবং ঐ পদ দুটি মিলিতভাবে কোনো বিষয়ের সম্পূর্ণ ব্যসত্ম্যর্থকে প্রকাশ করে। যেমন- 'সবুজ ও অ-সবুজ' মিলিতভাবে সম্পূর্ণ রং-এর ব্যস্তার্থকে প্রকাশ করে। তাই পদ দুটি পরস্পর বিরুদ্ধ পদ। অন্যদিকে, বিপরীত পদ একটি অন্যটির বিপরীত কিন্তু এর দ্বারা কোনো বিষয়ের সম্পূর্ণ ব্যক্ত্যর্থ প্রকাশিত হয় না। তাই বলা যায়, যদি দুটি পরস্পরবিরোধী পদ এমনভাবে সম্পর্কিত হয় যে এদের দ্বারা কোনো বিষয়ের সম্পূর্ণ ব্যক্ত্যর্থ প্রকাশিত হয় না, তাহলে পদ দুটিকে পরস্পর বিপরীত পদ বলে। যেমন- 'লাল ও নীল'-এই পদ দুটি রং শ্রেণির সম্পন্ন ব্যক্ত্যর্থ প্রকাশ করে না। তাই পদ দুটি পরস্পর বিপরীত পদ।
উদ্দীপকের সুবর্ণা যে দুটি পদের উল্লেখ করেছে সেখানে সমগ্র ব্যসত্ম্যর্থ প্রকাশিত হয়েছে। কেননা 'ভারতবাসী ও অ-ভারতবাসী' মিলে সকল মানব জাতির ব্যক্ত্যর্থকেই প্রকাশ করে। তাই পদ দুটি পরস্পর বিরুদ্ধ পদ। আবার ওয়ার্নের বক্তব্যে বিপরীত পদ প্রকাশিত হয়েছে। তার বক্তব্যে যে দুটি পদ প্রকাশিত হয়েছে তা হলো- 'ভারতবাসী ও অস্ট্রেলিয়াবাসী'। এই দুটি পদ দ্বারা সম্পূর্ণ মানব জাতির ব্যক্ত্যর্থ প্রকাশিত হয় না। তাই পদ দুটি পরস্পর বিপরীত পদ।
সুতরাং, ওপরের আলোচনা থেকে বলা যায় বিরুদ্ধ ও বিপরীত পদ পদের সম্পূর্ণ ভিন্ন দুটি রূপ।

২. বাবা বাজার থেকে এক ঝুডw় আম কিনে আনলেন। ছেলে অমল বললো, বাবা আমগুলো দেখতে বেশ সুন্দর। মেয়ে অর্চনা বললো, কিন্তু কিছু কিছু আম ছোট। বাবা বললেন, তোমরা এক ধরনের গুণের কথা বলেছ, আর এক ধরনের পরিমাণের কথা বলেছ। গুণ ও পরিমাণ একত্রে বর্ণনা করোনি।
ক. যুক্তিবাক্য কী?
খ. যুক্তিবাক্য ও অবধারণের মধ্যে পার্থক্য আছে কি?
গ. অর্চনার বক্তব্যে যুক্তিবাক্যের যে শ্রেণিবিভাগ উল্লেখ হয়েছে, তা তোমার পাঠ্যপুস্তকের আলোকে ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত বাবার বক্তব্য তোমার পাঠ্যপুস্তকের আলোকে মূল্যায়ন করো।

২ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. উদ্দেশ্য (Subject) এবং বিধেয় (Predicate) নামক দুটি পদের মধ্যে স্বীকৃতি বা অস্বীকৃতি জ্ঞাপক কোনো সম্পর্কের লিখিত বা মৌখিক বিবৃতি হলো যুক্তিবাক্য।

খ. যুক্তিবাক্য (Proposition) এবং অবধারণের (Judgement) মধ্যে পার্থক্য আছে।
দুটি ধারণার মধ্যকার কোনো সম্পর্কের স্বীকৃতি বা অস্বীকৃতি অথবা সংযোগমূলক মানসিক অবস্থা হলো অবধারণ। পক্ষান্তরে, দুটো পদের মধ্যে সম্পর্ক জ্ঞাপক ভাষায় প্রকাশিত রূপ হলো যুক্তিবাক্য। আবার, অবধারণ যুক্তির অংশ হতে পারে না। কেননা, তার অবস্থান মনে। সেটি অনুমানের বিষয় হতে পারে। কিন্তু যুক্তিবাক্য যুক্তির অংশ হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

গ. উদ্দীপকে অর্চনার বক্তব্যে পরিমাণ অনুসারে যুক্তিবাক্যের শ্রেণিবিভাগ উল্লেখ করা হয়েছে।
পরিমাণ অনুসারে যুক্তিবাক্য দুই প্রকারত ১. সার্বিক যুক্তিবাক্য ও ২. বিশেষ যুক্তিবাক্য। যে যুক্তিবাক্যে উদ্দেশ্যের সম্পূর্ণ ব্যক্ত্যর্থ (Denotation) সম্পর্কে কোনো কিছু স্বীকার বা অস্বীকার করা হয় তাকে সার্বিক যুক্তিবাক্য বলে। যেমন- 'সকল দার্শনিক হয় বিচক্ষণ।' এখানে ‘বিচক্ষণ' বিধেয় পদটিকে উদ্দেশ্য দার্শনিক পদের সমগ্র ব্যক্ত্যর্থ সম্পর্কে স্বীকার করা হয়েছে। আবার, 'কোনো মানুষ নয় অমর' এখানে 'অমর' বিধেয় পদটিকে উদ্দেশ্য 'মানুষ' পদের সমগ্র ব্যক্ত্যর্থ সম্পর্কে অস্বীকার করা হয়েছে। অপরদিকে, যে যুক্তিবাক্যে উদ্দেশ্যের আংশিক ব্যক্ত্যর্থ সম্পর্কে বিধেয়কে স্বীকার বা অস্বীকার করা হয় তাকে বিশেষ যুক্তিবাক্য বলে। যেমন: কিছু ছাত্র হয় মেধাবী এখানে 'মেধাবী' বিধেয় পদকে উদ্দেশ্য 'ছাত্র' পদের আংশিক ব্যক্ত্যর্থ সম্পর্কে স্বীকার করা হয়েছে। একইভাবে 'কিছু মানুষ নয় সৎ' এই যুক্তিবাক্যে 'সৎ' বিধেয় পদটি উদ্দেশ্য 'মানুষ' পদের আংশিক ব্যসত্ম্যর্থ সম্পর্কে অস্বীকার করা হয়েছে।
উদ্দীপকে অর্চনার বক্তব্যে বলা হয়েছে, কিছু কিছু আম ছোট। এখানে আংশিক আমের ক্ষেত্রে ছোট হওয়াকে স্বীকার করে নেয়া হয়েছে। যা বিশেষ যুক্তিবাক্যের অনুরূপ।

ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত বাবার বক্তব্যের বিষয় হলো গুণ ও পরিমাণের যৌথ নীতি অনুসারে যুক্তিবাক্যের শ্রেণিবিন্যাস।
গুণ ও পরিমাণের যৌথ নীতি অনুসারে- যুক্তিবাক্যকে সার্বিক সদর্থক, সার্বিক নঞর্থক, বিশেষ সদর্থক ও বিশেষ নঞর্থক এই চারভাগে ভাগ করা যায়। এই চার প্রকার যুক্তিবাক্যকে যথাক্রমে A, E, I এবং O দ্বারা চিহ্নিত করা হয়।
যেসব যুক্তিবাক্যে বিধেয় পদ (Predicate) উদ্দেশ্য পদের (Subject) সমগ্ৰ ব্যক্ত্যর্থ (Denotation) সম্পর্কে স্বীকার করা হয় তাকে সার্বিক সদর্থক যুক্তিবাক্য (Universal Affirmative Proposition) বা অ বাক্য বলে। যেমন- 'সকল মানুষ হয় মরণশীল।' এখানে বিধেয় পদ ‘মরণশীল' কে উদ্দেশ্য পদ ‘মানুষ' এর সমগ্র ব্যক্ত্যর্থ সম্পর্কে স্বীকার করে নেওয়া হয়েছে। যেসব যুক্তিবাক্যে বিধেয় পদকে উদ্দেশ্য পদের সমগ্র ব্যক্ত্যর্থ সম্পর্কে অস্বীকার করা হয় তাকে সার্বিক নঞর্থক যুক্তিবাক্য (Universal Negative Proposition) বা E বাক্য বলে। যেমন- 'কোনো মানুষ নয় অমর' এখানে বিধেয় 'অমর' পদকে উদ্দেশ্য ‘মানুষ' পদের সমগ্র ব্যক্ত্যর্থ সম্পর্কে অস্বীকার করা হয়েছে।
আবার, যেসব যুক্তিবাক্যে বিধেয় পদকে উদ্দেশ্য পদের আংশিক ব্যসত্ম্যর্থ সম্পর্কে স্বীকার করা হয় তাকে বিশেষ সদর্থক যুক্তিবাক্য (Particular Affirmative Preposition) বা ১ বাক্য বলে। যেমন- কিছু ফুল হয় লাল' এই যুক্তিবাক্যে 'লাল' বিধেয় পদকে 'ফুল' উদ্দেশ্য পদের আংশিক ব্যক্ত্যর্থ সম্পর্কে স্বীকার করে নেওয়া হয়েছে। একইভাবে, যেসব যুক্তিবাক্যে বিধেয় পদকে উদ্দেশ্য পদের আংশিক ব্যক্ত্যর্থ সম্পর্কে অস্বীকার করা হয় তাকে বিশেষ নঞর্থক যুক্তিবাক্য (Particular Negative Proposition) বা বাক্য বলে। যেমন- "কিছু মানুষ নয় সৎ এই যুক্তিবাক্যে বিধেয় 'সৎ' পদকে উদ্দেশ্য 'মানুষ' পদের আংশিক ব্যসত্ম্যর্থ সম্পর্কে অস্বীকার করা হয়েছে।
উদ্দীপকে বাবার বক্তব্যে উল্লিখিত গুণ ও পরিমাণের একত্রে বর্ণনা উপরের গুণ ও পরিমাণের যৌথ নীতি অনুসারে যুক্তিবাক্যের শ্রেণিবিন্যাসের অনুরূপ।
সুতরাং আমরা বলতে পারি, উপর্যুক্ত আলোচনাই হলো গুণ ও পরিমাণের যৌথ নীতি অনুসারে যুক্তিবাক্যের শ্রেণিবিন্যাসের বিশ্লেষিত রূপ।

৩. মা আট বছর বয়সের মেয়ে রুনাকে নিয়ে মার্কেটে গেলেন। দোকানে লাল ও অ-লাল রঙের পোশাক দেখিয়ে মা রুনাকে বললো, তোমাকে হয় লাল না হয় অ-লাল রঙের পোশাকটি নিতে হবে। মায়ের বক্তব্য শ্রবণ করে রুনা বললো, আমি লাল ও সাদা রঙের দু'টি পোশাকই নিব।
ক. পদ কাকে বলে?
খ. বিশেষ যুক্তিবাক্যের উদ্দেশ্য পদ অব্যাপ্য কেন?
গ. উদ্দীপকে মায়ের বক্তব্যে কোন বিষয়টির প্রতিফলন ঘটেছে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. তোমার পাঠ্যপুস্তকের আলোকে রুনা ও মায়ের বক্তব্যের তুলনামূলক আলোচনা করো।

৩ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. যে অর্থপূর্ণ শব্দ বা শব্দ সমষ্টি কোনো যুক্তিবাক্যের উদ্দেশ্য বা বিধেয় হিসেবে ব্যবহৃত হয় বা হওয়ার যোগ্যতা রাখে তাকে পদ (Term) বলে।

খ. বিশেষ যুক্তিবাক্যের উদ্দেশ্য পদ আংশিক ব্যক্ত্যর্থ নিয়ে ব্যবহৃত হয় তাই এটি অব্যাপ্য।
কোনো যুক্তিবাক্যে একটি পদ তার আংশিক ব্যক্ত্যর্থ নিয়ে ব্যবহৃত হলে তাকে অব্যাপ্য পদ বলে। আবার, যে যুক্তিবাক্যে বিধেয় পদকে উদ্দেশ্য পদের আংশিক ব্যক্ত্যর্থ সম্পর্কে স্বীকার বা অস্বীকার করা হয় তাকে বিশেষ যুক্তিবাক্য বলে। সুতরাং, আংশিক ব্যক্ত্যর্থ নির্দেশক পদকে যেহেতু অব্যাপ্য বলা হয়, সেহেতু বিশেষ যুক্তিবাক্যের উদ্দেশ্য অব্যাপ্য।

গ. উদ্দীপকে মায়ের বক্তব্যে বৈকল্পিক যুক্তিবাক্যের (Disjunctive Proposition) প্রতিফলন ঘটেছে।
যে সাপেক্ষ যুক্তিবাক্যে দুই বা ততোধিক সরল যুক্তিবাক্য পরস্পর বিকল্প হিসেবে 'হয়-না হয়', 'বা', 'অথবা', 'কিংবা' ইত্যাদি জাতীয় অর্থ প্রকাশক শব্দ দ্বারা যুক্ত থাকে তাকে বৈকল্পিক যুক্তিবাক্য বলে। এ ধরনের বাক্যে দুটি পৃথক বিকল্পের সম্ভাবনাকে কোনো ব্যক্তি বা বস্তুর ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা হয়। দুটি বিকল্পের মধ্যে যে কোনো একটি সত্য হলে অন্যটি মিথ্যা হয়। যেমনত লোকটি হয় সৎ না হয় অসৎ। এখানে লোকটি যদি সৎ হয় তবে সে অসৎ নয়। আবার যদি অসৎ হয় তবে সে সৎ নয়।
উদ্দীপকে, মা রুনাকে বলেন তার হয় লাল না হয় সাদা রঙের পোশাক নিতে হবে। এখানে দুটি বিকল্প আছে। একটি লাল রঙের পোশাক অন্যটি সাদা রঙের পোশাক। রুনা যদি লাল রঙের পোশাক নেয় তবে সাদা রঙের পোশাক নিতে পারবে না। আবার, সে যদি সাদা পোশাক নেয় তবে লাল রঙের পোশাক নিতে পারবে না। অর্থাৎ এখানে দুটি বিকল্প 'হয়-না হয়' শর্ত দ্বারা যুক্ত এবং এদের একটি সত্য হলে অন্যটি মিথ্যা হবে। তাই রুনার মায়ের বক্তব্য বৈকল্পিক যুক্তিবাক্য।

ঘ. যে উদ্দীপকে রুনার বক্তব্য সংযৌগিক যুক্তিবাক্যকে এবং মায়ের বক্তব্য বৈকল্পিক যুক্তিবাক্যকে নির্দেশ করে। এই দু'ধরনের বাক্যের তুলনামূলক সম্পর্ক নিচে আলোচনা করা হলো।
যে সাপেক্ষ যুক্তিবাক্যে একাধিক বিকল্প সম্ভাবনার উল্লেখ থাকে এবং এগুলো হয় না হয়' কিংবা 'অথবা' এসব আকারে যুক্ত থাকে তাকে বৈকল্পিক যুক্তিবাক্য বলে। যেমনত সুমন হয় মেধাবী না হয় বোকা আবার, যৌগিক যুক্তিবাক্যের অন্তর্গত প্রতিটি সরল বচন সদর্থক হলে তাকে সংযৌগিক যুক্তিবাক্য বলে। যেমন: তাপস হয় সৎ ও বুদ্ধিমান।
বৈকল্পিক যুক্তিবাক্য এবং সংযৌগিক যুক্তিবাক্যের সাদৃশ্য হলো এরা উভয়ই দুই বা ততোধিক সরল বাক্যের সমন্বয়ে গঠিত হয়। উদ্দীপকে মায়ের বক্তব্য 'রুনা হয় লাল না হয় সাদা পোশাক পাবে' বৈকল্পিক যুক্তিবাক্যটির দুটি সরল বাক্য ১. রুনা লাল পোশাক পাবে ২. অথবা রুনা সাদা পোশাক পাবে এর সমন্বয়ে গঠিত। আবার, রুনার বক্তব্যে সংযৌগিক বাক্যটি 'আমি লাল ও সাদা রঙের দুটি পোশাকই নিব' দুটি সরল বাক্য- ১. আমি লাল রঙের পোশাক নিব, ২. আমি সাদা রঙের পোশাক নিব এর সমন্বয়ে গঠিত।
বৈকল্পিক যুক্তিবাক্য ও সংযৌগিক যুক্তিবাক্যের বৈসাদৃশ্য হলো, বৈকল্পিক যুক্তিবাক্যে দুটি বিকল্পের একটি সত্য হলে অন্যটি মিথ্যা হয়। যেমনত উদ্দীপকে মায়ের মতে, রুনা হয় লাল পোশাক পাবে নয়তো সাদা পোশাক পাবে। কিন্তু সংযৌগিক যুক্তিবাক্যে উভয় বিকল্পই একইসাথে সত্য বা মিথ্যা হতে পারে। যেমনত উদ্দীপকে রুনা লাল ও সাদা উভয় পোশাকই নিবে। আবার, বৈকল্পিক যুক্তিবাক্যে চিহ্ন হিসেবে অথবা, হয় না হয় ইত্যাদি ব্যবহৃত হয়। যেমনত উদ্দীপকে রুনা লাল না হয় সাদা পোশাক পাবে। কিন্তু, সংযৌগিক যুক্তিবাক্যে চিহ্ন হিসেবে ব্যবহৃত হয় ও, এবং ইত্যাদি। যেমনত উদ্দীপকে রুনা লাল ও সাদা উভয় পোশাকই নিবে।
সুতরাং, বৈকল্পিক যুক্তিবাক্য ও সংযৌগিক যুক্তিবাক্যের তুলনামূলক আলোচনা থেকে আমরা বলতে পারি এদের মধ্যে সাদৃশ্যের ও বৈসাদৃশ্যের উভয় সম্পর্কই রয়েছে।

৪. দৃশ্যকল্প-১ : সকল মানুষ হয় দ্বিপদ
কিছু ছাত্র হয় মেধাবী।
দৃশ্যকল্প-২ : কোনো ফুল নয় ফল।
কিছু ছাত্র নয় মেধাবী।
ক. যুক্তিবাক্যের অংশ কয়টি?
খ. কোন ধরনের বাক্যকে অ যুক্তিবাক্যে রূপান্তর করা হয়?
গ. দৃশ্যকল্প-১ কোন নীতিতে গঠিত হয়েছে বিশ্লেষণ করো।
ঘ. দৃশ্যকল্প-১ ও দৃশ্যকল্প-২ এর পার্থক্য নির্দেশ করো।

৪ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক যুক্তিবাক্যের (Proposition) অংশ তিনটি।

খ. যেসকল বাক্যে উদ্দেশ্য ও বিধেয়কে সদর্থক সংযোজক দ্বারা সংযুক্ত করা যায় এবং যাদের পরিমাণ নির্দিষ্ট করে থাকে না তাদের অ বাক্য বা সার্বিক সদর্থক যুক্তিবাক্যে রূপান্তর করা যায়।
এমন অনেক বাক্য আছে যেগুলোতে উদ্দেশ্য ও বিধেয় থাকলেও পৃথকভাবে কোনো সংযোজক থাকে না এবং পরিমাণের বিষয়টিও নির্দিষ্ট থাকে না। এক্ষেত্রে সংযোজক স্থাপনের মাধ্যমে এদের অ বাক্যে রূপান্তর করা যায়। যেমন- সব মানুষ মরণশীল।
অ বাক্য: সব মানুষ হয় মরণশীল। (রূপান্তরিত)

গ. দৃশ্যকল্প-১ গুণ ও পরিমাণের যৌথ নীতি অনুসারে গঠিত হয়েছে। এখানে, প্রথম যুক্তিবাক্যটি সার্বিক সদর্থক এবং দ্বিতীয়টি বিশেষ সদর্থক যুক্তিবাক্য।
যেসব বাক্যের বিধেয় উদ্দেশ্যের সমগ্র ব্যক্ত্যর্থ সম্পর্কে স্বীকৃত হয় সেসব বাক্যকে সার্বিক সদর্থক যুক্তিবাক্য (Universal Affirmative Proposition) বলে। এরূপ বাক্য পরিমাণগত দিক থেকে 'সার্বিক' এবং গুণগত দিক থেকে ‘সদর্থক' হয়ে থাকে। যেমনত সকল মানুষ হয় মরণশীল'ত এ বাক্যে বিধেয় ‘মরণশীল' উদ্দেশ্য 'মানুষ' শ্রেণির সমগ্র ব্যক্ত্যর্থ সম্পর্কে স্বীকৃত হয়েছে।
আবার, যেসব বাক্যের বিধেয় উদ্দেশ্যের আংশিক ব্যর্ক্ত্যর্থ সম্পর্কে স্বীকৃত হয় সেসব বাক্যকে বিশেষ সদর্থক যুক্তিবাক্য (Particular Affirmative Proposition) বলে। এরূপ বাক্য পরিমাণগত দিক থেকে ‘বিশেষ' এবং গুণগত দিক থেকে ‘সদর্থক' হয়ে থাকে। যেমনত 'কিছু মানুষ হয় কবি', এ বাক্যে বিধেয় 'কবি' উদ্দেশ্য 'মানুষ' শ্রেণির আংশিক ব্যক্ত্যর্থ সম্পর্কে স্বীকৃত হয়েছে।
এ উদ্দীপকে প্রথম বাক্যে 'সকল মানুষ হয় দ্বিপদ' এ 'দ্বিপদ' বিধেয় পদকে উদ্দেশ্য 'মানুষ' পদের সমগ্র ব্যক্ত্যর্থ সম্পর্কে স্বীকার করা হয়েছে তাই এটি সার্বিক সদর্থক যুক্তিবাক্য। আবার দ্বিতীয় বাক্য 'কিছু ছাত্র হয় মেধাবী' এ বাক্যে 'মেধাবী' বিধেয় পদটি উদ্দেশ্য ছাত্র' পদের আংশিক ব্যক্ত্যর্থ সম্পর্কে স্বীকার করা হয়েছে তাই এটি বিশেষ সদর্থক যুক্তিবাক্য।

ঘ. দৃশ্যকল্প-১ সদর্থক যুক্তিবাক্যকে এবং দৃশ্যকল্প-২ নঞর্থক যুক্তিবাক্যেকে নির্দেশ করে। তাই এদের মূল পার্থক্য হলো গুণের দিক থেকে।
যেসকল যুক্তিবাক্যে বিধেয় পদকে উদ্দেশ্য পদের সমগ্র ব্যক্ত্যর্থ সম্পর্কে স্বীকার করা হয় তাকে সার্বিক সদর্থক যুক্তিবাক্য বলে। যেমনত সকল মানুষ হয় দ্বিপদ'। আবার, যেসকল যুক্তিবাক্যে বিধেয় পদকে উদ্দেশ্য পদের আংশিক ব্যক্ত্যর্থ সম্পর্কে স্বীকার করা হয় তাকে বিশেষ সদর্থক যুক্তিবাক্য বলে। যেমনত 'কিছু ফুল হয় লাল'।
অপরপক্ষে, যেসকল যুক্তিবাক্যে বিধেয় পদকে উদ্দেশ্য পদের সমগ্র ব্যক্ত্যর্থ সম্পর্কে অস্বীকার করা হয় তাকে সার্বিক নঞর্থক যুক্তিবাক্য বলে। যেমনত 'কোনো মানুষ নয় অমর'। আবার, যেসকল যুক্তিবাক্যে বিধেয় পদকে উদ্দেশ্য পদের আংশিক ব্যক্ত্যর্থ সম্পর্কে অস্বীকার করা হয় তাকে বিশেষ নঞর্থক যুক্তিবাক্য বলে। যেমন- কিছু ছাত্র নয় মেধাবী।
উদ্দীপকে, দৃশ্যকল্প-১ এ উভয় বাক্যেই উদ্দেশ্য সম্পর্কে বিধেয়কে স্বীকার করা হয়েছে তাই এরা সদর্থক। অন্যদিকে, দৃশ্যকল্প-২-এ উভয় বাক্যেই উদ্দেশ্য সম্পর্কে বিধেয়কে অস্বীকার করা হয়েছে তাই এরা নঞর্থক।
সুতরাং, দৃশ্যকল্প-১ ও দৃশ্যকল্প-২ এর প্রধান পার্থক্য হলো গুণের দিক থেকে।

৫. রাজন বললো, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পেলে দ্রব্যের চাহিদা যেমন কমে আবার দ্রব্যমূল্য কমলে চাহিদা বৃদ্ধি পায়। ফয়েজ বললো, যুক্তিবিদ্যার স্যারও যুক্তির উপাদান অধ্যায়ে এরূপ একটি বিষয় আলোচনা করেছেন।
ক. সরল পদ কাকে বলে?
খ. বস্তুবাচক ও গুণবাচক পদ বলতে কী বোঝ?
গ. উদ্দীপকে ফয়েজের বক্তব্যে যুক্তির উপাদান অধ্যায়ের যে বিষয়ের ইঙ্গিত আছে তা ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকে রাজনের বক্তব্যে যে বিষয়গুলোর ইঙ্গিত আছে তাদের সম্পর্ক বিশ্লেষণ করো।

৫ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. যে পদ মাত্র একটি শব্দ দ্বারা গঠিত তাকে সরল পদ বলে।

খ. যে পদ দ্বারা কোন অস্তিত্বশীল বস্তুকে নির্দেশ করা হয় তাকে বস্তুবাচক পদ বলে। পক্ষান্তরে যে পদ দ্বারা কোন গুণকে নির্দেশ করা. হয় তাকে গুণবাচক পদ বলে।
বস্তুবাচক পদ হল একটি নাম যা একটি বস্তুর ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়। যেমন: মানুষ, গরু, বই, খাতা ইত্যাদি পদগুলো বস্তুবাচক পদ। অন্যদিকে গুণবাচক পদ হল একটি নাম যা একটি বস্তুর কোনো গুণের নির্দেশ প্রদানে ব্যবহৃত হয়। যেমন- সততা, সাদার, মিষ্টত্ব ইত্যাদি পদগুলো গুণবাচক পদ।

গ. উদ্দীপকে ফয়েজের বক্তব্যে যুক্তির উপাদান অধ্যায়ের পদের ব্যক্ত্যর্থ এবং পদের জাত্যর্থের বিষয়ে ইঙ্গিত রয়েছে।
কোন পদ একই অর্থে যে বস্তু বা বস্তু সমূহের উপর আরোপিত হয় সে বস্তু বা বস্তুসমূহকে ঐ পদের ব্যক্ত্যর্থ বলে। ব্যসত্ম্যর্থ হলো পদের সংখ্যার দিক। যেমন- 'মানুষ' পদের ব্যক্ত্যর্থ হচ্ছে অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যতের সেই সমস্ত জীব যারা মানুষ নামে পরিচিত। আবার যে পদ সাধারণ বা আবশ্যিক গুণ বা গুণের সমষ্টিকে নির্দেশ করে সেই গুণ বা গুণ সমষ্টিকে পদের জাত্যর্থ বলে। যেমন- 'মানুষ' পদের জাত্যর্থ হচ্ছে- জীববৃত্তি ও বুদ্ধিবৃত্তি। ব্যক্ত্যর্থ ও জাত্যর্থের মধ্যে সব সময় বিপরীতমুখী সম্পর্ক বিরাজ করে। কোনো পদের ব্যক্ত্যর্থ বাড়লে জাত্যর্থ কমে। আবার ব্যক্ত্যর্থ কমলে জাত্যর্থ বাড়ে।
উদ্দীপকে ফয়েজের বক্তব্যে পদের ব্যক্ত্যর্থ এবং জাত্যর্থের মধ্যকার সম্পর্কের ইঙ্গিত পাওয়া যায়। কারণ দ্রব্যের দামের সাথে চাহিদার বিপরীতধর্মী সম্পর্ক উল্লেখ করে। এই সম্পর্কের সাথে পদের ব্যক্ত্যর্থ ও জাত্যর্থ সাদৃশ্যপূর্ণ।

ঘ. রাজনের বক্তব্যে পদের ব্যক্ত্যর্থ এবং পদের জাত্যর্থের মধ্যকার সম্পর্কের আলোকপাত করা হয়েছে।
পদের ব্যক্ত্যর্থ ও জাত্যর্থের মধ্যে গভীর সম্পর্ক বিদ্যমান। এরা একে অপরের ওপর নির্ভরশীল। পদের ব্যক্ত্যর্থ ও জাত্যর্থ বিপরীতক্রমে হ্রাস- বৃদ্ধি পায়। অর্থাৎ এদের একটি বাড়লে অপরটি কমে এবং একটিকমলে অপরটি বাড়ে। যেমন- জীব পদের ব্যক্ত্যর্থ হচ্ছে 'সকল জীব'। মানুষ পদের ব্যক্ত্যর্থ 'সকল মানুষ' আর সভ্য মানুষের ব্যক্ত্যর্থ সকল ‘সভ্য মানুষ'। সুতরাং জীব-মানুষ-সভ্যমানুষ এর মধ্যে জীবের ব্যক্ত্যর্থ বেশি। আবার জীবের জাত্যর্থ 'জীববৃত্তি'। মানুষের জাত্যর্থ 'জীববৃত্তি' ও 'বুদ্ধিবৃত্তি'; সভ্য মানুষের জাত্যর্থ 'জীববৃত্তি', 'বুদ্ধিবৃত্তি’ ও ‘সভ্যতা' সুতরাং এখানে সভ্য মানুষের জাত্যর্থ বেশি।
রাজন দ্রব্যমূল্য এবং দ্রব্যের চাহিদার সম্পর্কে বলে, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পেলে দ্রব্যের চাহিদা যেমন কমে আবার দ্রব্যমূল্য কমলে চাহিদা বৃদ্ধি পায়। তদ্রূপ যুক্তিবিদ্যায় যুক্তির উপাদান অধ্যায়ে দ্রব্যমূল্য এবং দ্রব্যের চাহিদার ন্যায়পদের ব্যক্ত্যর্থ এবং জাত্যর্থের মধ্যে এরূপ সম্পর্ক বিদ্যমান। অর্থাৎ পদের ব্যক্ত্যর্থ বৃদ্ধি পেলে জাত্যর্থ কমে আবার জাত্যর্থ কমলে ব্যক্ত্যর্থ বাড়ে।
পরিশেষে বলা যায়, পদের ব্যক্ত্যর্থ ও জাত্যর্থ বিপরীতমুখী সম্পর্কের নির্দেশ করে। যে পদের ব্যক্ত্যর্থ বেশি তার জাত্যর্থ কম এবং যে পদের জাত্যর্থ বেশি তার ব্যক্ত্যর্থ কম। জাত্যর্থ বাড়লে ব্যক্ত্যর্থ কমে যাবে আবার ব্যসত্ম্যর্থ বাড়লে জাত্যর্থ কমে যাবে। সুতরাং রাজনের কথায় পদের ব্যক্ত্যর্থ ও জাত্যর্থের মধ্যকার সম্পর্কের যথার্থ রূপটি ফুটে উঠেছে।

৬. নিশানের ভাই নিশাত একটি দুর্ঘটনার কারণে কথা বলতে পারত না। বিভিন্ন জায়গায় চিকিৎসার পর সে আবার কথা বলতে পারে। সেই আনন্দের খবর জানাতে নিশান পবনের বাড়ীতে গেল। পবন পড়া লেখা করছিল। নিশানের মুখে এই খুশীর সংবাদ; শুনে সে বলল, আজ আর আমি পড়ব না ও চল আমরা শব্দের খেলা খেলি। তখন পবন শব্দ বলা শুরু করেত টেবিল, পাখি, মাছ, থলা ইত্যাদি। পবনকে থামিয়ে নিশান জোড়া জোড়া শব্দ বলল, মাতা-পিতা, গুরু-শিষ্য, ধনী-গরিব ইত্যাদি।
ক. পদের সংজ্ঞা দাও।
খ. সকল ক্ষেত্রে কি পদের ব্যক্তর্থ্য বাড়লে জাত্যর্থ কমে? ব্যাখ্যা করো।
গ. উদ্দীপকে নিশাতের চিকিৎসার ধরনে বস্তু ও গুণের অস্তিত্বের ভিত্তিতে কোন পদকে নির্দেশ করে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. পবন ও নিশানের উল্লিখিত শব্দগুলো যে দুই শ্রেণীর পদ নির্দেশ করে তাদের আন্ত-সম্পর্ক বিশ্লেষণ কর।

৬ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. যে শব্দ বা শব্দ সমষ্টি কোন যুক্তিবাক্যের উদ্দেশ্য বা বিধেয় হিসেবে ব্যবহৃত হয় বা ব্যবহৃত হওয়ার যোগ্যতা রাখে তাকে পদ (Term) বলে।

খ. না, সকল ক্ষেত্রেই পদের ব্যক্তার্থ বাড়লে জ্ঞাতার্থ কমে না।
পদের ব্যক্ত্যর্থ ও জাত্যর্থের বিপরীতমুখী হ্রাস বৃদ্ধি সকল ক্ষেত্রে ঠিক থাকে না। যে সব ক্ষেত্রে কোনো পদকে জাতি-উপজাতি, শ্রেণি- উপশ্রেণি আকারে ক্রমিক ভাবে সাজানো যায় না, সে ক্ষেত্রে এ নিয়ম কার্যকর হয় না। কিছু পদের ব্যক্ত্যর্থ সুনির্দিষ্ট থাকে। তাদের ক্ষেত্রেও এ নিয়ম কার্যকর নয়। তাই কোনো পদের ব্যক্ত্যর্থ বাড়লেই যে জাত্যৰ&থ কমে যাবে এমনটি অপরিহার্য নয়।

গ. উদ্দীপকে নিশাতের চিকিৎসার ধরনে বস্তু ও গুণের অস্তিত্বের ভিত্তিতে সদর্থক এবং ব্যাহতার্থক পদকে নির্দেশ করে।
যেসব পদ দ্বারা কোনো বস্তু বা গুণের উপস্থিতিকে বোঝায় সেসব পদকে সদর্থক পদ বলে। যেমন: সৎ, জ্ঞানী ইত্যাদি আবার যেসব পদ দ্বারা কোনো বস্তুতে কোনো গুণের বর্তমান অনুপস্থিতি বোঝায় অথচ বস্তুটি স্বাভাবিক ভাবে ওই গুণের অধিকারী হতে পারে সেসব পদকে ব্যাহতার্থক পদ বলে। যেমন: অন্ধ, কালা, বোবা, অচেতন ইত্যাদি।
উদ্দীপকে নিশাত চিকিৎসার মাধ্যমে কথা বলার শক্তি ফিরে পায়। চিকিৎসার মাধ্যমে তার এই শক্তি ফিরে পাওয়া বা এই শক্তির উপস্থিতি হলো সদর্থক পদ। অপরদিকে কথা বলার ক্ষমতা তার মধ্যে বর্তমান থাকার কথা ছিল কিন্তু দুর্ঘটনার কারণে ক্ষমতার অনুপস্থিতি ব্যাহতার্থকে নির্দেশ করে।

ঘ. পবনের উল্লেখিত শব্দগুলো নিরপেক্ষ পদ এবং নিশানের উল্লেখিত শব্দগুলো সাপেক্ষ পদ।
যেসব পদের নিজস্ব অর্থ আছে এবং যেগুলোকে বোঝার জন্য অন্য কোনো পদের সাহায্য নিতে হয় না সেসব পদকে নিরপেক্ষ পদ বলে। যেসব পদের স্বয়ংসম্পূর্ণ কোনো অর্থ নেই এবং যেসব পদের অর্থ বোঝার জন্য অন্য কোনো পদের সাহায্য নিতে হয় সেসব পদকে সাপেক্ষ পদ বলে।
উদ্দীপকে পবনের উচ্চারিত পদগুলো টেবিল, পাখি, মাছ, থালা ইত্যাদি। এগুলোর নিজস্ব অর্থ আছে এবং এগুলোর অর্থ আমরা সহজেই বুঝতে পারি। অন্যদিকে নিশানের উল্লেখিত পদগুলো মাতা-পিতা, গুরু শিষ্য ধনী-গরিব ইত্যাদি। এগুলো ভিনণ অর্থবোধক সাপেক্ষ শব্দ। এক্ষেত্রে প্রতিটি জোড়ার মূল পদ ও তার পরিপূরক পদ পরস্পর ভিন্ন অর্থবোধক এবং এরা ভিন্ন দুটি জিনিসকে নির্দেশ করে।
নিরপেক্ষ পদ ও সাপেক্ষ পদ সংজ্ঞাগত দিক থেকে আলাদা হলেও তাদের মধ্যে আন্ত:সম্পর্ক রয়েছে। উভয় ধরনের পদই স্বয়ংসম্পূর্ণতার দিক থেকে কিছু শব্দকে আলাদা করেছে মাত্র।

৭. তন্দ্রা একটি বাগান দেখে এসে তামান্নাকে দেখিয়ে বলল, এই বাগানের সকল গাছ গোলাপ ফুলের। উত্তরে তামান্না বলল, যদি বাগানটিতে সাথে ডালিয়া ফুলের গাছ থাকত তাহলে সুন্দর দেখাত। তখন তন্দ্রার ছোট ভাই এসে বলল, আমাদের বাড়ীর বাগানটিতে আমি রজনীগন্ধা ও গোলাপ ফুলের গাছ রোপণ করব।
ক. সংযোজক কাকে বলে?
খ. বাক্যকে যুক্তিবাক্যে রূপান্তরের সময় কোন দুটি বিষয় স্পষ্ট করতে হবে? ব্যাখ্যা করো।
গ. তন্দ্রার ভাইয়ের বক্তব্য কোন ধরনের যুক্তিবাক্যকে নির্দেশ করে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. তন্দ্রা ও তামান্নার বক্তব্যে উল্লেখিত যুক্তিবাক্য দুটির পারস্পরিক সম্পর্ক বিশ্লেষণ করো।

৭ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. যুক্তিবাক্যে উদ্দেশ্য এবং বিধেয়ের মাঝখানে বসে যে শব্দ বাক্যের সদর্থক বা নঞর্থক গুণ প্রকাশ করে তাকে সংযোজক বলে।

খ. ভাষায় প্রকাশিত যে কোনো বাক্যকে যুক্তিবাক্যের আকারে রূপান্তর করাকে যুক্তিবাক্যে রূপান্তর বলে।
বাক্যকে যুক্তিবাক্যে রূপান্তরের সময় দুটি বিষয় স্পষ্ট করতে হবে। প্রথমত, যুক্তিবাক্যে রূপান্তরের পর যেন তার অর্থের কোনো পরিবর্তন না হয়। এবং দ্বিতীয়ত, সদর্থক বা নঞর্থক গুণ আরোপের ক্ষেত্রে উদ্দেশ্য এবং বিধেয়ের মাঝখানে সংযোজক বসাতে হবে। অর্থাৎ যৌক্তিক আকারের জন্য উদ্দেশ্য, সংযোজক ও বিধেয় আকারে সাজাতে হবে।

গ. তন্দ্রার ভাইয়ের বক্তব্য সংযোজক যুক্তিবাক্যকে নির্দেশ করে।
যে যৌগিক যুক্তিবাক্য একাধিক সদর্থক সরল যুক্তিবাক্য দিয়ে গঠিত হয় তাকে সংযোজক যুক্তিবাক্য বলে। যেমন- সকল শিশুই নিষ্পাপ ও সুন্দর এ যুক্তিবাক্যটি বিশ্লেষণ করলে দুটি সদর্থক সরল যুক্তিবাক্য পাওয়া যায়।
উদ্দীপকের তন্দ্রার ভাইয়ের বক্তব্যটি হলো- বাগানটিতে আমি রজনীগন্ধা ও গোলাপ ফুলের গাছ রোপণ করব। বাক্যটি একটি সংযোজক যুক্তিবাক্য। এখানে দুটি সদর্থক সরল বাক্য রয়েছে। একটি হলো- বাগানটিতে রজনীগন্ধা ফুলের গাছ রোপণ করব এবং অন্যটি বাগানটি গোলাপ ফুলের গাছ রোপণ করব। সুতরাং তনদ্রার ভাইয়ের বক্তব্যটি সংযোজক যুক্তিবাক্য।

ঘ. উদ্দীপকে তন্দ্রার বক্তব্যটি একটি নিরপেক্ষ যুক্তিবাক্য এবং তামান্নার বক্তব্যটি প্রাকল্পিক যুক্তিবাক্যকে নির্দেশ করে।
যে যুক্তিবাক্যের উদ্দেশ্য ও বিধেয়ের সম্পর্ক কোনো প্রকার শর্তের উপর নির্ভরশীল নয় তাকে নিরপেক্ষ যুক্তিবাক্য বলে। এসব বাক্যের বিধেয় শর্তহীনভাবে উদ্দেশ্যের ক্ষেত্রে স্বীকৃত বা অস্বীকৃত হয়। যেসব সাপেক্ষ যুক্তিবাক্যে কোনো শর্ত অস্বীকৃত হয়, সেসব সাপেক্ষ যুক্তিবাক্যকে প্রাকল্পিক যুক্তিবাক্য বলে। এ যুক্তিবাক্যের উদ্দেশ্য ও বিধেয়ের সম্পর্ক অন্য শর্তের ওপর নির্ভরশীল। প্রাকল্পিক যুক্তিবাক্যসমূহ যদি.....তাহলে দ্বারা নির্দেশিত হয়।
উদ্দীপকে তন্দ্রার বক্তব্যটি হলো এই বাগানের সকল গাছ গোলাপ ফুলের। এই বাক্যের মধ্যে কোন শর্ত আরোপ করা হয়নি। তামান্নার বক্তব্যটি হলো- যদি বাগানটিতে ডালিয়া ফুলের গাছ থাকত তাহলে সুন্দর দেখাতো। এখানে শর্তের অবতারণা করা হয়েছে। এটি একটি প্রাকল্পিক যুক্তিবাক্য।
পরিশেষে বলা যায়, পারস্পরিক সম্পর্কের দৃষ্টিকোণ থেকে নিরপেক্ষ ও প্রাকল্পিক যুক্তিবাক্য আলাদা হলেও তারা উভয়ই সম্পর্ক বা সম্বন্ধ অনুসারে যুক্তিবাক্যের দুটি প্রকার।

৮. রাজন বললো, দ্রব্য মূল্য বৃদ্ধি পেলে দ্রব্যের চাহিদা যেমন কমে আবার দ্রব্যমূল্য কমলে চাহিদা বৃদ্ধি পায়। ফয়েজ বললো, যুক্তিবিদ্যার স্যারও যুক্তির উপাদান অধ্যায়ে এরূপ একটি বিষয় আলোচনা করেছেন।
ক. পদ কী?
খ. সকল শব্দই পদ নয় কেন? ব্যাখ্যা করো।
গ. উদ্দীপকের ফয়েজের বক্তব্যে যুক্তি উপাদান অধ্যায়ের যে বিষয়ের ইঙ্গিত আছে তা ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকে রাজনের বক্তব্যে যে বিষয়গুলোর ইঙ্গিত আছে তাদের সম্পর্ক বিশ্লেষণ করো।

৮ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. যে অর্থপূর্ণ শব্দ বা শব্দসমষ্টি কোনো যুক্তিবাক্যের উদ্দেশ্য বা বিধেয় হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে বা ব্যবহৃত হওয়র যোগ্যতা রাখে, তাকে পদ বলে।

খ. সব পদ শব্দ হলেও সব শব্দ পদ নয়।
শব্দ হলো অর্থপূর্ণ ধ্বনি বা ধ্বনি সমষ্টি। কিন্তু পদ হলো কোনো যুক্তিবাক্যের উদ্দেশ্য বা বিধেয় হিসেবে ব্যবহৃত হওয়ার যোগ্যতাসম্পন্ন শব্দ বা শব্দ সমষ্টি। শব্দের সংখ্যা অসংখ্য। অসংখ্য শব্দের মধ্যে যেসব শব্দ কোনো যুক্তিবাক্যের উদ্দেশ্য বা বিধেয় হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে কেবল ঐসব শব্দকে পদ বলে। যেহেতু সব শব্দ যুক্তিবাক্যের উদ্দেশ্য বা বিধেয় হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে না, তাই সব শব্দ পদ নয়।

গ. উদ্দীপকে ফয়েজের বক্তব্যে যুক্তির উপাদান অধ্যায়ের পদের ব্যক্ত্যর্থ এবং পদের জাত্যর্থের বিষয়ে ইঙ্গিত রয়েছে।
কোন পদ একই অর্থে যে বস্তু বা বস্তু সমূহের উপর আরোপিত হয় সে বস্তু বা বস্তুসমূহকে ঐ পদের ব্যক্ত্যর্থ বলে। ব্যক্ত্যর্থ হলো পদের সংখ্যার দিক। যেমন- 'মানুষ' পদের ব্যক্ত্যর্থ হচ্ছে অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যতের সেই সমস্ত জীব যারা মানুষ নামে পরিচিত। আবার যে পদ সাধারণ বা আবশ্যিক গুণ বা গুণ সমষ্টিকে উক্ত নির্দেশ করে সেই গুণ বা গুণ সমষ্টিকে পদের জাত্যর্থ বলে। যেমন- 'মানুষ' পদের জাত্যর্থ হচ্ছে- জীববৃত্তি ও বুদ্ধিবৃত্তি। ব্যক্ত্যর্থ ও জাত্যর্থের মধ্যে সব সময় বিপরীতমুখী সম্পর্ক বিরাজ করে। কোনো পদের ব্যক্ত্যর্থ বাড়লে জাত্যর্থ কমে। আবার ব্যক্ত্যর্থ কমলে জাত্যৰ&থ বাড়ে।
উদ্দীপকে ফয়েজের বক্তব্যে পদের ব্যক্ত্যর্থ এবং জাত্যর্থের মধ্যকার সম্পর্কের ইঙ্গিত পাওয়া যায়। কারণ দ্রব্যের দামের সাথে চাহিদার বিপরীতধর্মী সম্পর্ক উল্লেখ করে। এই সম্পর্কের সাথে পদের ব্যক্ত্যর্থ ও জাত্যর্থ সাদৃশ্যপূর্ণ।

ঘ. রাজনের বক্তব্যে পদের ব্যক্ত্যর্থ এবং পদের জাত্যর্থের মধ্যকার সম্পর্কের আলোকপাত করা হয়েছে।
পদের ব্যক্ত্যর্থ ও জাত্যর্থের মধ্যে গভীর সম্পর্ক বিদ্যমান। এরা একে অপরের ওপর নির্ভরশীল। পদের ব্যক্ত্যর্থ ও জাত্যর্থ বিপরীতক্রমে হ্রাস- বৃদ্ধি পায়। অর্থাৎ এদের একটি বাড়লে অপরটি কমে এবং একটি কমলে অপরটি বাড়ে। যেমন- জীব পদের ব্যক্ত্যর্থ হচ্ছে 'সকল জীব'। মানুষ পদের ব্যক্ত্যর্থ 'সকল মানুষ' আর সভ্য মানুষের ব্যক্ত্যর্থ সকল ‘সভ্য মানুষ'। সুতরাং জীব-মানুষ-সভ্য মানুষ এর মধ্যে জীবের ব্যক্ত্যর্থ বেশি। আবার জীবের জাত্যর্থ 'জীববৃত্তি'। মানুষের জাত্যর্থ 'জীববৃত্তি' ও 'বুদ্ধিবৃত্তি'; সভ্য মানুষের জাত্যর্থ 'জীববৃত্তি', 'বুদ্ধিবৃত্তি' ও 'সভ্যতা'। সুতরাং এখানে সভ্য মানুষের জাত্যর্থ বেশি।
রাজন দ্রব্যমূল্য এবং দ্রব্যের চাহিদার সম্পর্কে বলে, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পেলে দ্রব্যের চাহিদা যেমন কমে আবার দ্রব্যমূল্য কমলে চাহিদা বৃদ্ধি পায়। তদ্রূপ যুক্তিবিদ্যায় যুক্তির উপাদান অধ্যায়ে দ্রব্যমূল্য এবং দ্রব্যের চাহিদার ন্যায় পদের ব্যক্ত্যর্থ এবং জাত্যর্থের মধ্যে এরূপ সম্পর্ক বিদ্যমান। অর্থাৎ পদের ব্যক্ত্যর্থ বৃদ্ধি পেলে জাত্যর্থ কমে আবার জাত্যর্থ কমলে ব্যক্ত্যর্থ বাড়ে।
পরিশেষে বলা যায়, পদের ব্যক্ত্যর্থ ও জাত্যর্থ বিপরীতমুখী সম্পর্কের নির্দেশ করে। যে পদের ব্যক্ত্যর্থ বেশি তার জাত্যর্থ কম এবং যে পদের জাত্যর্থ বেশি তার ব্যক্ত্যর্থ কম। জাত্যর্থ বাড়লে ব্যক্ত্যর্থ কমে যাবে আবার ব্যক্ত্যর্থ বাড়লে জাত্যর্থ কমে যাবে। সুতরাং রাজনের কথায় পদের ব্যক্ত্যর্থ ও জাত্যর্থের মধ্যকার সম্পর্কের যথার্থ রূপটি ফুটে উঠেছে।

৯. তাহসীন ও শায়ান কলেজ লাইব্রেরিতে বসে বিভিন্ন বই দেখছিল। তাহসীন একটি বই হাতে নিয়ে বলল, বইটি হয় সুন্দর। শায়ান তখন তার দিকে মনোযোগ দিলে বলল, কিছু বই নয় সুন্দর।
ক. শব্দ কাকে বলে?
খ. সব বাক্য যুক্তিবাক্য নয় কেন?
গ. তাহসীনের বাক্যটি কোন ধরনের যুক্তিবাক্য?
ঘ. তাহসীন ও শায়ানের উক্তিতে কোন ধরনের পার্থক্য বিদ্যমান? আলোচনা কর।

৯ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. এক বা একাধিক বর্ণের সমষ্টি যখন কোনো অর্থ প্রকাশ করে তখন তাকে শব্দ বলে।

খ. যুক্তিবাক্যের নিয়ম অনুযায়ী গঠিত না হওয়ার কারণে সকল বাক্যকে যুক্তিবাক্য বলা যায় না।
একটি যুক্তিবাক্যে দুটি পদ থাকে। যথা- ১. উদ্দেশ্য পদ ও ২. বিধেয় পদ। উদ্দেশ্য ও বিধেয় পদ সংযোজকের দ্বারা যুক্ত হয়ে যুক্তিবাক্য গঠন করে। তাই যুক্তিবাক্য সবসময় উদ্দেশ্য সংযোজক-বিধেয়' আকারে প্রকাশিত হয়। যেহেতু সকল বাক্য উদ্দেশ্য সংযোজক-বিধেয়' আকারে প্রকাশিত হয় না, তাই সকল বাক্য যুক্তিবাক্য নয়।

গ. তাহসীনের বাক্যটি বিশেষ সদর্থক যুক্তিবাক্যকে নির্দেশ করে।
যেসব বাক্যের বিধেয় উদ্দেশ্যের আংশিক ব্যক্ত্যর্থ সম্পর্কে (Particular Affirmative Proposition) বলে। এরূপ বাক্য পরিমাণগত দিক থেকে 'বিশেষ' এবং গুণগত দিক থেকে ‘সদর্থক' হয়ে থাকে। যেমন- ‘কিছু মানুষ হয় কবি' এ বাক্যে বিধেয় ‘করি' উদ্দেশ্য ‘মানুষ’ শ্রেণির আংশিক ব্যক্ত্যর্থ সম্পর্কে স্বীকৃত হয়েছে।
উদ্দীপকে তাহসীনের বক্তব্যটি হলো- 'বইটি হয় সুন্দর'। এ বাক্যে 'সুন্দর' বিধেয় পদটি উদ্দেশ্য 'বই' পদের আংশিক ব্যক্ত্যর্থ সম্পর্কে স্বীকার করা হয়েছে। তাই তাহসীনের বক্তব্যটি একটি বিশেষ সদর্থক যুক্তিবাক্য।

ঘ. উদ্দীপকে তাহসীনের উদ্ভিটি বিশেষ সদর্থক যুক্তিবাক্য এবং শায়ানের উক্তিটি বিশেষ নঞর্থক যুক্তিবাক্য।
যে সকল যুক্তিবাক্যে বিধেয় পদকে উদ্দেশ্য পদের আংশিক ব্যক্ত্যর্থ সম্পর্কে স্বীকার করা হয় তাকে বিশেষ সদর্থক যুক্তিবাক্য বা ঞ বাক্য বলে। উদাহরণস্বরূপ- ‘‘কিছু কবি হন দার্শনিক'। এখানে বিধেয় 'দার্শনিক' পদকে উদ্দেশ্য 'কবি' পদের আংশিক ব্যক্ত্যর্থ সম্পর্কে স্বীকার করা হয়েছে। অপরদিকে যে সকল যুক্তিবাক্যের বিধেয় পদ উদ্দেশ্য পদের আংশিক ব্যক্ত্যর্থকে অস্বীকার করে তাকে নঞর্থক যুক্তিবাক্য বা 'O' বাক্য বলা হয়। যেমন- ‘‘কিছু মানুষ নয় সৎ'। এখানে বিধেয় পদ 'সৎ' কে উদ্দেশ্য পদ ‘মানুষের’ আংশিক ব্যক্ত্যর্থ সম্পর্কে অস্বীকার করা হয়েছে।
উদ্দীপকের তাহসীনের বক্তব্যটি হলো 'বইটি হয় সুন্দর'। আলোচনার মাধ্যমে দেখা যায়, এটি বিশেষ সদর্থক যুক্তিবাক্য। অন্যদিকে, শায়ানের বক্তব্যটি হলো 'কিছু বই নয় সুন্দর'। যা বিশেষ নঞর্থক যুক্তিবাক্যের প্রতিফলন।
সুতরাং, তাহসীন ও শায়ানের বক্তব্য পরিমাণগত দিক থেকে উভয়ই বিশেষ যুক্তিবাক্য। কিন্তু, এদের পার্থক্য হলো গুণগত দিক থেকে। তাহসীনের বক্তব্য হলো সদর্থক এবং শায়ানের বক্তব্য হলো নঞর্থক।

১০. অর্থনীতির শিক্ষক বরকত স্যার বললেন, বাজারে দ্রব্যের সরবরাহ বাড়লে দাম কমে যায়। আবার সরবরাহ কমলে দাম বাড়ে। একজন ছাত্র তখন বলল, স্যার যুক্তিবিদ্যায়ও এ ধরনের একটি বিষয় আছে।
ক. বিবরণমূলক যুক্তিবাক্য কাকে বলে?
খ. সার্বিক যুক্তিবাক্যের উদ্দেশ্য পদ ব্যাপ্য কেন?
গ. বরকত স্যারের কথায় যুক্তিবিদ্যার কোন বিষয়টির ইঙ্গিত এসেছে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উক্ত বিষয়টির হ্রাস-বৃদ্ধির তুলনামূলক আলোচনা কর।

১০ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. যে যুক্তিবাক্যের উদ্দেশ্য ও বিধেয়ের মধ্যকার সম্পর্ক আমাদের অভিজ্ঞতার ওপর নির্ভরশীল তাকে বিবরণমূলক যুক্তিবাক্য বলে।

খ. সার্বিক যুক্তিবাক্যের উদ্দেশ্যপদ সম্পূর্ণ ব্যক্ত্যর্থ নিয়ে ব্যবহৃত হয়, তাই এটি ব্যাপ্য।
কোনো যুক্তিবাক্যে একটি পদ তার সম্পূর্ণ ব্যক্ত্যর্থ নিয়ে ব্যবহৃত হলে তাকে ব্যাপ্য পদ বলে। আবার, যে যুক্তিবাক্যে বিধেয় পদকে উদ্দেশ্য পদের সম্পূর্ণ ব্যক্ত্যর্থ সম্পর্কে স্বীকার বা অস্বীকার করা হয় তাকে সার্বিক যুক্তিবাক্য বলে। সুতরাং সম্পূর্ণ ব্যক্ত্যর্থ নির্দেশক পদকে যেহেতু ব্যাপ্য বলা হয়, সেহেতু সার্বিক যুক্তিবাক্যের উদ্দেশ্য পদ ব্যাপ্য।

গ. উদ্দীপকে বরকত স্যারের বক্তব্যে যুক্তির উপাদান অধ্যায়ের পদের ব্যক্ত্যর্থ এবং পদের জাত্যর্থের বিষয়ে ইঙ্গিত রয়েছে।
কোন পদ একই অর্থে যে বস্তু বা বস্তু সমূহের উপর আরোপিত হয় সে বস্তু বা বস্তুসমূহকে ঐ পদের ব্যক্ত্যর্থ বলে। ব্যক্ত্যর্থ হলো পদের সংখ্যার দিক। যেমন- 'মানুষ' পদের ব্যক্ত্যর্থ হচ্ছে অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যতের সেই সমস্ত জীব যারা মানুষ নামে পরিচিত। আবার যে পদ সাধারণ বা আবশ্যিক গুণ বা গুণ সমষ্টিকে নির্দেশ করে সেই গুণ বা গুণ সমষ্টিকে পদের জাত্যর্থ বলে। যেমন- 'মানুষ' পদের জাত্যর্থ হচ্ছে- জীববৃত্তি ও বুদ্ধিবৃত্তি। ব্যক্ত্যর্থ ও জাত্যর্থের মধ্যে সব সময় বিপরীতমুখী সম্পর্ক বিরাজ করে। কোনো পদের ব্যক্ত্যর্থ বাড়লে জাত্যর্থ কমে। আবার ব্যক্ত্যর্থ কমলে জাত্যৰ&থ বাড়ে।
উদ্দীপকে বরকত স্যারের বক্তব্যে পদের ব্যক্ত্যর্থ এবং জাত্যর্থের মধ্যকার সম্পর্কের ইঙ্গিত পাওয়া যায়। কারণ দ্রব্যের দামের সাথে চাহিদার বিপরীতধর্মী সম্পর্ক উল্লেখ করে। এই সম্পর্কের সাথে পদের ব্যক্ত্যর্থ ও জাত্যর্থ সাদৃশ্যপূর্ণ।

ঘ. উদ্দীপকে পদের ব্যক্ত্যর্থ এবং পদের জাত্যর্থের মধ্যকার সম্পর্কের আলোকপাত করা হয়েছে।
পদের ব্যক্ত্যর্থ ও জাত্যর্থের মধ্যে তুলনামূলক সম্পর্ক বিদ্যমান। পদের ব্যক্ত্যর্থ ও জাত্যর্থ বিপরীতক্রমে হ্রাস-বৃদ্ধি পায়। অর্থাৎ এদের একটি বাড়লে অপরটি কমে এবং একটি কমলে অপরটি বাড়ে। যেমন- জীব পদের ব্যক্ত্যর্থ হচ্ছে 'সকল জীব'। মানুষ পদের ব্যক্ত্যর্থ 'সকল মানুষ’ আর সভ্য মানুষের ব্যক্ত্যর্থ সকল 'সভ্য মানুষ'। সুতরাং জীব-মানুষ- সভ্যমানুষ এর মধ্যে জীবের ব্যক্ত্যর্থ বেশি। আবার জীবের জাত্যর্থ ‘জীববৃত্তি'। মানুষের জাত্যর্থ 'জীববৃত্তি' ও 'বুদ্ধিবৃত্তি'; সভ্য মানুষের জাত্যৰ&থ 'জীববৃত্তি', 'বুদ্ধিবৃত্তি' ও 'সভ্যতা'। সুতরাং এখানে সভ্য মানুষের জাত্যর্থ বেশি।
উদ্দীপকে দ্রব্যমূল্য এবং দ্রব্যের চাহিদার সম্পর্কে বলা হয়েছে, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পেলে দ্রব্যের চাহিদা যেমন কমে আবার দ্রব্যমূল্য কমলে চাহিদা বৃদ্ধি পায়। তদ্রূপ যুক্তিবিদ্যায় যুক্তির উপাদান অধ্যায়ে দ্রব্যমূল্য এবং দ্রব্যের চাহিদার ন্যায় পদের ব্যক্ত্যর্থ এবং জাত্যর্থের মধ্যে এরূপ সম্পর্ক বিদ্যমান। অর্থাৎ পদের ব্যসত্ম্যর্থ বৃদ্ধি পেলে জাত্যর্থ কমে আবার জাত্যর্থ কমলে ব্যক্ত্যর্থ বাড়ে।
পরিশেষে বলা যায়, পদের ব্যক্ত্যর্থ ও জাত্যর্থ বিপরীতমুখী সম্পর্কের নির্দেশ করে। যে পদের ব্যক্ত্যর্থ বেশি তার জাত্যর্থ কম এবং যে পদের জাত্যর্থ বেশি তার ব্যক্ত্যর্থ কম। জাত্যর্থ বাড়লে ব্যক্ত্যর্থ কমে যাবে আবার ব্যক্ত্যর্থ বাড়লে জাত্যর্থ কমে যাবে।
Share: