এইচএসসি পরীক্ষার পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি
HSC Home Science 2nd Paper Srijonshil question and answer pdf download.
উচ্চ মাধ্যমিক
গার্হস্থ্য বিজ্ঞান
দ্বিতীয় পত্র
সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
৯ম অধ্যায়
HSC Home Science 2nd Paper
Srijonshil
Question and Answer pdf download
১. ফাইজা কয়েক দিন ধরে লক্ষ করছেন তার ছেলে রাতের বেলা ভালোভাবে দেখতে পাচ্ছে না। দিনের বেলা সব কাজ সে স্বাভাবিকভাবে করলেও রাতের বেলা করতে পারছে না। এ সমস্যার কারণে তিনি তার ছেলেকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যান। ডাক্তার তার ছেলেকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে জানান এক ধরনের ভিটামিনের অভাবে সে এ ধরনের রোগে আক্রান্ত হয়েছে।
ক. কোন ভিটামিন রক্তক্ষরণ বন্ধ করে?
খ. খাদ্য কীভাবে দেহের ক্ষয়পূরণ করে থাকে?
গ. ফাইজার ছেলের এরূপ রোগে আক্রান্ত হওয়ার কারণ ব্যাখ্যা কর।
ঘ. এ ধরনের রোগ প্রতিরোধের উপায় সম্পর্কে তোমার মতামত বিশ্লেষণ কর।
১ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. ভিটামিন ‘কে’ রক্তক্ষরণ বন্ধ করে।
খ. শরীর আমাদের অমূল্য সম্পদ। প্রতিদিনই আমাদের শরীর ক্ষয়প্রাপ্ত হচ্ছে। খাদ্যই শরীরের ক্ষয়পূরণের কাজ করে। খাদ্যের পুষ্টি উপাদানগুলো কোষের গঠনে সাহায্য করে। কোনো কারণে আমাদের শরীরে ক্ষত তৈরি হলে খাদ্যই সে ক্ষত পূরণ করে। আবার অসুস্থ অবস্থায় আমাদের শরীরে যে ক্ষয় হয় তাও খাদ্যের মাধ্যমে পূরণ হয়। অর্থাৎ খাদ্যের পুষ্টি উপাদানগুলো শরীরের ক্ষয়পূরণের কাজ করে শরীরকে ক্ষয় থেকে রক্ষা করে।
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত ফাইজার ছেলে ভিটামিন 'এ' এর অভাবজনিত রোগে আক্রান্ত। তাই সে রাতকানা রোগে ভূগছে। রাতকানা রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি দিনের বেলা দেখতে পেলেও সন্ধ্যা হলে বা রাতের বেলা ভালো দেখতে পায় না। অল্প আলোতে এদের দেখতে সমস্যা হয়। ফাইজারের ছেলেও রাতের বেলা ভালোভাবে দেখতে পায় না।
যা রাতকানা রোগকেই নির্দেশ করছে। রাতকানা রোগে আক্রান্ত হওয়ার কারণ হলো- ভিটামিন এ এর অভাব, চোখের রেটিনার ‘রড’ নামক একটি কোষ আছে যা রাতের বেলায় অল্প আলোতে দেখতে সাহায্য করে। রডপসিন এক প্রকার রঞ্জক পদার্থ। এটা সংশ্লেষণের জন্য ভিটামিন 'এ' প্রয়োজন। রক্তে ভিটামিন 'এ' এর মাত্রা কম থাকলে রডপসিনের সংশ্লেষণ কমে যায়। ফলে অল্প আলোতে দেখতে অসুবিধা হয়। এরূপ অবস্থাকেই রাতকানা রোগ বলা হয়। যেহেতু ভিটামিন ‘এ’ এর অভাবে রাতকানা রোগ হয়। সেহেতু বলা যায়, ফাইজার ছেলে ভিটামিন 'এ'র অভাবে রাতকানা রোগে আক্রান্ত হয়েছে।
ঘ. রাতকানা রোগ হলো ভিটামিন 'এ' এর অভাবজনিত রোগ। রাতকানা রোগীদের অল্প আলোতে দেখতে সমস্যা হয়। তারা দিনের বেলা দেখতে পেলেও রাতের বেলা দেখতে পায় না। এ রোগ, প্রতিরোধের উপায় হলো-
গর্ভবতী মাকে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন ‘এ’ যুক্ত খাবার খাওয়াতে হবে। যেমন- কলিজা, মাখন, ঘি, মাছের তেল, সবুজ হলুদ রঙের শাকসবজি, ফলমূল ইত্যাদি। জন্মের পর শিশুকে অবশ্যই মায়ের বুকের শালদুধ দিতে হবে। এছাড়া শিশুকে ২ বছর পর্যন্ত বুকের দুধ খাওয়াতে হবে। অন্ধত্ব নিবারণের জন্য শিশুর বয়স ৬ মাস পূর্ণ হলে ১,০০ আই, ইউ ক্যাপসুল প্রতি ৬ মাস অন্তর ৫ বছর পর্যন্ত দিতে হবে। শিশুর ৬ মাস বয়সের পর বাড়তি খাবারে ভিটামিন ‘এ’ সমৃদ্ধ উপাদান রাখতে হবে। শিশুর খাদ্য অবশ্যই তেল দিয়ে রান্না করতে হবে। কেননা ভিটামিন 'এ' শোষণের জন্য তেল আবশ্যক। প্রতিদিনের আহারে পরিবারের সকলের জন্য ভিটামিন 'এ' সমৃদ্ধ খাদ্য অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। ফলে এসব খাদ্যের উৎপাদন বৃদ্ধি করতে হবে। হাঁস-মুরগি ও গরু-ছাগল পালন করে ডিম, মাংস এবং দুধের যোগান বাড়াতে হবে। মা এবং পরিবারের সদস্যদেরকে শিশুর উপযোগী ভিটামিন এ সমৃদ্ধ খাদ্য তৈরির শিক্ষা দিতে হবে। গণমাধ্যমগুলোতে ভিটামিন এ এর অভাবজনিত কুফল ও প্রতিরোধের ব্যবস্থা সম্বন্ধে ব্যাপকভাবে প্রচারণার মাধ্যমে জনগণকে সচেতন করতে হবে।
পরিশেষে বলা যায়, উপরিউক্ত পদক্ষেপসমূহ যথাযথ প্রয়োগ করে রাতকানা রোগ প্রতিরোধে কার্যকরী ভূমিকা রাখা যায়।
২. পিতা হয়ে পুত্র রাওসেফ এর কংকালসার দেহ নিজ চোখে দেখতে হয় আকরামকে। দীর্ঘদিনের গৃহযুদ্ধের ফলে তার দেশ সিরিয়ায় দু একদিনেও একবেলা খাবার জোটে না। রাওসেফ এক সময় সকাল সন্ধ্যা স্বাভাবিক খাবারের পাশাপাশি ডিম, দুধ, জেলি, ফলমূল খেত। এখন একটি ত্রাণের রুটির জন্য সারাদিন খোলা মাঠে অপেক্ষা করতে হয় তাও আবার অনিশ্চয়তা নিয়ে। পিতা আকরাম ভাবে রাওসেফের ক্ষুধা নিবৃত্ত করাই তার জীবনের এখন বড় চ্যালেঞ্জ।
ক. রাসায়নিক প্রকৃতি অনুযায়ী সকল খাদ্য উপাদানকে কয়ভাগে ভাগ করা হয়েছে?
খ. রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতার জন্য খাদ্যের প্রয়োজন কথাটি বুঝিয়ে বল।
গ. বেঁচে থাকার জন্য রাওসেফের এ মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন কিসের? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. রাওসেফ তথা প্রত্যেক প্রাণিরই বেঁচে থাকার জন্য খাদ্যের প্রয়োজন- কথাটির যথার্থতা মূল্যায়ন কর।
২ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. রাসায়নিক প্রকৃতি অনুযায়ী সকল খাদ্য উপাদানকে ছয়ভাগে ভাগ করা হয়েছে।
খ. খাদ্য বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। খাদ্যের মধ্যে বিভিন্ন উপাদান রয়েছে। এ উপাদানগুলোর মধ্যে থেকে ভিটামিন ও ধাতব লবণ জাতীয় খাদ্য আমাদের দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা প্রদান করে থাকে। এদের অভাব হলে শরীরে বিভিন্ন ধরনের অপুষ্টিজনিত রোগের লক্ষণ দেখা দেয়। এসব অপুষ্টিজনিত রোগ মারাত্মক পর্যায়ে অঙ্গহানি বা মানুষের মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে।
গ. বেঁচে থাকার জন্য রাওসেফের এ মুহূর্তে বেশি প্রয়োজন খাদ্যের। কারণ খাদ্যের অভাবেই রাওসেফের শরীর এখন কংকাল সার। আপাতদৃষ্টিতে মনে হয় যে, খাদ্য শুধু আমাদের ক্ষুধা নিবৃত্ত করে, কিন্তু তা নয়, মানবদেহের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কার্য সম্পাদনের জন্য খাদ্য প্রয়োজন। খাদ্য দেহের ক্ষয়পূরণ ও বৃদ্ধি সাধন করে। মাতৃগর্ভ থেকে শুরু করে প্রায় ২৫ বছর পর্যন্ত আমাদের দেহ বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়। দেহের এ বৃদ্ধির জন্য খাদ্য প্রয়োজন। প্রত্যেক জীবন্ত প্রাণির দেহের অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন অঙ্গ, যেমন- হৃৎপিন্ড, ফুসফুস, পাকস্থলী, মস্তিষ্ক ইত্যাদি সর্বদাই চলমান থাকে। এছাড়া হাঁটাচলা, ওঠাবসা, খেলাধুলাসহ বিভিন্ন কাজে মাংস পেশির সঞ্চালন হয়ে থাকে। ফলে দেহের কোষ ক্ষয়প্রাপ্ত হয়। এ ক্ষয়পূরণের জন্য খাদ্য প্রয়োজন। তেল ছাড়া যেমন গাড়ি চলতে পারে না, তেমনি খাদ্য ছাড়া আমরা বেঁচে থাকতে পারি না। খাদ্য আমাদের দেহের অভ্যন্তরীণ ও বাইরের বিভিন্ন কাজে তাপ ও শক্তি উৎপাদন করে দেহকে সচল রাখে। তাই বলা যায়, রাওসেফ তথা সকল প্রাণির স্বাভাবিক জীবনযাপনের জন্য খাদ্যের প্রয়োজন।
ঘ. রাওসেফের যেমন বাঁচার জন্য খাদ্যের প্রয়োজন তেমনি প্রত্যেক প্রাণীর বেঁচে থাকার জন্য খাদ্যের প্রয়োজন রয়েছে।
যেসব দ্রব্য আহার করলে আমাদের শরীরের বৃদ্ধি, পুষ্টিসাধন ও ক্ষয়পূরণ হয় এবং অভ্যন্তরীণ কার্যাবলি সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়, দেহ সুস্থ- সবল ও রোগমুক্ত থাকে তাই খাদ্য। পুষ্টি একটি জৈকি প্রক্রিয়া। আমরা যেসব খাদ্য গ্রহণ করি, সেগুলো জটিল ও বৃহৎ অণুবিশিষ্ট। যে প্রক্রিয়ায় গ্রহণকৃত খাদ্যদ্রব্য পরিপাক হয়ে ভেঙে শরীরের কোষে কোষে ছড়িয়ে পড়ে, দেহের তাপ ও শক্তি উৎপন্ন করে, ক্ষয় পূরণ ও বৃদ্ধিসাধন করে এবং অভ্যন্তরীণ কার্যাবলি সুষ্ঠু ও সুচারুরূপে সম্পন্ন করে তাই পুষ্টি। মাতৃগর্ভে থাকাকালীন থেকে শুরু করে জীবনের শেষদিন পর্যন্ত খাদ্যের প্রয়োজন। খাদ্যের অভাবে নানা রকম অপুষ্টিজনিত রোগ দেখা দেয়। শরীরের স্থায়ী ক্ষতি ও মৃত্যু হতে পারে।
৩. আমেরিকার আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক দলের হিলারির শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী হলেন ভারমন্টের সিনেটর বার্নি স্যানডার্স। বার্নি স্যানডার্স তার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায় একটি বিষয়কে আমেরিকার জনগণের জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন। তার এ পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে শিশু ও কিশোরদের ভালো খাদ্য গ্রহণের মাধ্যমে একটি কর্মক্ষম জাতিতে পরিণত করা। এ লক্ষ্যে তিনি কী উপায়ে শিশু ও কিশোরদের স্বাস্থ্য ভালো রাখা যায় তার শিক্ষার প্রতি গুরুত্বারোপ করেন। প্রাতিষ্ঠানিক, অপ্রাতিষ্ঠানিক, আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিকভাবে দেহের জন্য ভালো এমন সব খাবার গ্রহণের শিক্ষার গুরুত্ব সম্পর্কে তিনি আমেরিকার জনগণকে সচেতন করতে বদ্ধ পরিকর।
ক. কখন থেকে শুরু করে কত বছর পর্যন্ত আমাদের দেহ বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়?
খ. খাদ্য প্রাণীর বৃদ্ধি সাধন ও ক্ষয় পূরণ করে থাকে- ব্যাখ্যা কর।
গ. বার্নি স্যানডার্সের পরিকল্পনায় যে ধরনের শিক্ষার প্রতি গুরুত্ব তুলে ধরা হয়েছে তার ব্যাখ্যা দাও।
ঘ. বার্নি স্যানডার্সের মতের ভিত্তিতে বলা যায়, ‘‘প্রাণী জীবনে খাদ্যের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম’’ মূল্যায়ন কর।
৩ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. মাতৃগর্ভ থেকে শুরু করে ২৫ বছর পর্যন্ত আমাদের দেহ বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়।
খ. খাদ্য প্রাণীর দেহের ক্ষয়পূরণ ও বৃদ্ধি সাধন করে থাকে। মাতৃগর্ভ থেকে শুরু করে প্রায় ২৫ বছর পর্যন্ত আমাদের দেহ বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়। দেহের এ বৃদ্ধির জন্য খাদ্যের প্রয়োজন। প্রত্যেক জীবন্ত প্রাণীর দেহের অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন অঙ্গ যেমন- হৃৎপিন্ড, ফুসফুস, পাকস্থলী, মস্তিষ্ক ইত্যাদি সর্বদাই চলমান থাকে। এছাড়া হাঁটাচলা, ওঠাবসা, খেলাধুলাসহ বিভিন্ন কাজে মাংসপেশির সঞ্চালন হয়ে থাকে। ফলে দেহের কাষগুলো ক্ষয়প্রাপ্ত হয়। এ ক্ষয়পূরণের জন্য খাদ্য প্রয়োজন।
গ. বার্নি স্যানডার্সের পরিকল্পনায় খাদ্য ও পুষ্টি শিক্ষার গুরুত্ব তুলে ধরা হয়েছে।
বিশ্বের উন্নত ও উন্নয়নশীল বা অনুন্নত সকল দেশেই পুষ্টি একটি মারাত্মক সমস্যা। এ সমস্যা সমাধানের অন্যতম পথ হচ্ছে জনসমাজকে খাদ্য ও পুষ্টি সম্পর্কে সচেতন করা। পুষ্টিজ্ঞান ও সুষম খাদ্য সম্পর্কে সচেতনতার অভাব, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার অভাব ইত্যাদি কারণে আমাদের দেশের জনগণ মারাত্মক অপুষ্টির শিকার হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক পুষ্টি জরিপে দেখা গেছে, আমাদের জনসংখ্যার ০.৮ মিলিয়ন লোক রাতকানা রোগে ভুগছে, ১২% লোক গলগ- রোগে ভুগছে, ৮২% শিশুর রক্তে হিমোগ্লোবিনের ঘাটতি আছে। ফলে এনিমিয়া বা রক্ত স্বল্পতায় ভুগছে। অনেক শিশু-কিশোরের ঠোঁটের কোণে ঘা। কাজেই এরকম জটিল ও মারাত্মক পরিস্থিতিসমাধানের জন্য খাদ্য ও পুষ্টি শিক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম।
ঘ. বার্নি স্যানডার্সের মতের ভিত্তিতে আমরা নিশ্চিত যে খাদ্য গ্রহণ এবং পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণের গুরুত্ব মানবজীবনে অসীম।
খাদ্য বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। খাদ্যের মধ্যে বিভিন্ন উপাদান রয়েছে। এ উপাদানগুলোর মধ্যে ভিটামিন ও ধাতব লবণ জাতীয় খাদ্য যা আমাদের দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা প্রদান করে থাকে। খাদ্য দেহের অভ্যন্তরীণ কার্যকলাপকে সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত করে দেহকে সুস্থ-সবল ও কর্মক্ষম করে তোলে। শরীরের স্বাভাবিক ক্রিয়া অক্ষুণ্ণ রাখার জন্য বিভিন্ন ধরনের এনজাইম ও হরমোনের প্রয়োজন। খাদ্য থেকে দেহের অভ্যন্তরে এসব হরমোন ও এনজাইম তৈরি হয়। তেল ছাড়া যেমন গাড়ি চলতে পারে না, তেমনি খাদ্য ছাড়া আমরা বেঁচে থাকতে পারি না। খাদ্য আমাদের দেহের অভ্যন্তরীণ ও বাইরের বিভিন্ন কাজ তাপ ও শক্তি উৎপাদন করে দেহকে সচল করে। খাদ্য দেহের ক্ষয়পূরণ ও বৃদ্ধি সাধন করে। মাতৃগর্ভ থেকে শুরু করে প্রায় ২৫ বছর পর্যন্ত আমাদের দেহ বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়। দেহের এ বৃদ্ধির জন্য খাদ্যের প্রয়োজন।
৪. ঢাকা মেডিকেল কলেজের ছাত্র শাওন ফারুকী বেড়াতে আসেন নিজ গ্রাম সুবর্ণ চরে। গ্রামে এসে তিনি দেখতে পান সেখানকার অনেক শিশুরই স্বাস্থ্য খারাপ। কিশোর ও যুবকদের মধ্যে অনেকেই দুধ, ডিম, কলা, শাকসবজি ইত্যাদি খেতে পছন্দ করেন না। তিনি এসব দেখে এবং শুনে হতাশ হন এবং এক সন্ধ্যায় স্কুল মাঠে আয়োজন করেন স্বাস্থ্য সচেতনতা বিষয়ক এক সেমিনার। তাকে সহযোগিতা করেন তাঁর স্কুলের শিক্ষকবৃন্দ। এ সেমিনারে তিনি আলোচনা করেন সহজলভ্য অথচ ভালো স্বাস্থ্যের জন্য অতি প্রয়োজনীয় সব খাবারের নানা দিক। সেমিনারে অনুপস্থিত গ্রামবাসীর নিকট তার এসব আলোচনা পৌঁছে দেওয়ার উপরও তিনি তাগিদ দেন।
ক. তাপশক্তি উৎপাদনের ওপর ভিত্তি করে খাদ্যকে কয়ভাগে ভাগ করা যায়?
খ. দেহকে সুস্থ সবল ও কর্মক্ষম রাখে খাদ্যু ব্যাখ্যা কর।
গ. শাওন ফারুকীর সেমিনারের ফলে খাদ্য ও পুষ্টি শিক্ষার যেসব ধারণা লাভ করা সম্ভব তার ব্যাখ্যা দাও।
ঘ. উদ্দীপকের আলোকে স্বাস্থ্য রক্ষায় খাদ্য ও পুষ্টির ভূমিকা মূল্যায়ন কর।
৪ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. তাপশক্তি উৎপাদনের ওপর ভিত্তি করে খাদ্যকে তিনভাগে ভাগ করা যায়।
খ. খাদ্যের অন্যতম প্রয়োজনীয়তা হলো দেহকে সুস্থ সবল ও কর্মক্ষম রাখা। খাদ্য দেহের অভ্যন্তরীণ কার্যকলাপকে সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত করে দেহকে সুস্থ-সবল ও কর্মক্ষম করে তোলে। শরীরের স্বাভাবিক ক্রিয়া অক্ষুণ্ণ রাখার জন্য বিভিন্ন ধরনের এনজাইম ও হরমোনের প্রয়োজন। খাদ্য থেকে দেহের অভ্যন্তরে এ সমস্ত হরমোন ও এনজাইম তৈরি হয়। যা দেহের প্রয়োজনীয় জৈব রাসায়নিক ক্রিয়া, অক্ষুণ্ণ রাখতে এবং দেহকে সুস্থ ও স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে।
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত শাওন ফারুকীর সেমিনারের ফলে খাদ্য ও পুষ্টি শিক্ষার গুরুত্ব সম্পর্কে ধারণা লাভ করা যায়। খাদ্যের ছয়টি উপাদান চিহ্নিতকরণ, কোন উপাদানের কী কাজ, উপাদানগুলোর দৈহিক চাহিদা কত, চাহিদা পূরণ না হলে কী রোগ দেখা দিতে পারে ইত্যাদি বিষয় সম্পর্কে জ্ঞান একমাত্র পুষ্টি শিক্ষার মাধ্যমেই সম্ভব। পরিপাকতন্ত্রের বিভিন্ন অংশ, খাদ্যের পরিপাক ও শোষণ সম্পর্কে ধারণা লাভ এবং সঠিক খাদ্য গ্রহণে সচেতনতা বৃদ্ধি করে। বয়স, শারীরিক অবস্থা, পরিশ্রম ও লিঙ্গভেদে চাহিদার অভাব ঘটে। সুতরাং পুষ্টির চাহিদা নির্ণয় এবং পর্যাপ্ত পুষ্টি ও সুষম খাদ্যের ব্যবস্থা পুষ্টি শিক্ষার মাধ্যমেই সম্ভব। খাদ্য, পুষ্টি ও স্বাস্থ্য ওতপ্রোতভাবে জড়িত। পুষ্টিকর খাদ্য ব্যতীত ভালো স্বাস্থ্য আশা করা যায় না। দেহের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টির চাহিদা পূরণ করতে হলে দরকার পুষ্টিকর খাদ্য নির্বাচন ও সঠিক পদ্ধতিতে রন্ধন। এছাড়া খাদ্য ও পুষ্টি সম্পর্কিত বিভিন্ন জ্ঞান লাভ করা যায়।
ঘ. দেহের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি আমরা খাদ্যের মাধ্যমে পেয়ে থাকি। আর দেহের অভ্যন্তরীণ কার্যকলাপ পরিচালনায় প্রয়োজন পুষ্টি যা সরবরাহ করে খাদ্য। সুস্বাস্থ্য রক্ষায় খাদ্য ও পুষ্টি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাছাড়া-
• শরীর গঠন, বৃদ্ধি ও ক্ষয়পূরণ এবং রোগ প্রতিরোধের জন্য;
• শারীরিক শক্তি ও কর্মক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য; এবং
• জীবনচক্রের অতি গুরুত্বপূর্ণ সময় যেমন- শিশুকাল, শৈশবকাল, কৈশর, গর্ভাবস্থা ও স্থ ন্যদানকালে বিশেষ প্রয়োজনীয় পরিমিত ও নিরাপদ খাদ্য গ্রহণ প্রয়োজন।
বয়স, লিঙ্গ, শারীরিক অবস্থা ও দৈহিক ক্রিয়াকর্ম অনুযায়ী খাদ্য চাহিদা ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে। প্রয়োজনের অতিরিক্ত বা কম কিংবা অনিরাপদ খাদ্য গ্রহণ অপুষ্টিজনিত রোগের কারণ হতে পারে। তাই জীবনের সকল পর্যায়ে আমাদের পুষ্টিকর ও নিরাপদ খাদ্য গ্রহণ করা উচিত।
পরিশেষে বলা যায়, উদ্দীপকের আলোকে সুলভমূল্যে পুষ্টিকর খাবার স্বাস্থ্যের জন্য প্রয়োজনীয়।
৫. দিয়ারা বালুয়া গুচ্ছ গ্রামে মোবারক আলীর বাড়ি। পেশায় কৃষক। নিজ জমিতে ফলান চাল, গম, আলু, আখ ইত্যাদি। পরিবার পরিজনের প্রয়োজন মিটিয়ে বিক্রি করে গঞ্জের হাটে। শুধু তিনি নয় তার গ্রামের কৃষক কর্তৃক উৎপাদিত এসব শস্য পুরো গ্রামের খাদ্যের চাহিদা মিটাতে সক্ষম। দিয়ারা বালুয়ার মানুষের কর্মক্ষমতা বেশ ভালো।
ক. কার্বোহাইড্রেট অণুতে হাইড্রোজেন ও অক্সিজেন কত অনুপাতে থাকে?
খ. মনোস্যাকারাইড-এর ব্যাখ্যা দাও।
গ. মোবারক আলীর উৎপাদিত খাদ্যশস্যগুলো রাসায়নিক প্রকৃতি অনুযায়ী যে উপাদানের তার ব্যাখ্যা কর।
ঘ. এ ধরনের খাবারের কাজ মূল্যায়ন কর।
৫ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. কার্বোহাইড্রেট অণুতে হাইড্রোজেন ও অক্সিজেন ২ : ১ অনুপাতে থাকে।
খ. ‘মনো’ অর্থ এক। অর্থাৎ এক অণুবিশিষ্ট সরল শর্করাকে মনোস্যাকারাইড বলে। মনোস্যাকারাইডকে ভেঙে অন্য কোনো যৌগে পরিণত করা যায় না। একে বিশ্লেষণ করলে কার্বন (C), হাইড্রোজেন (H) ও অক্সিজেন (O) পাওয়া যায়। যেমন- গ্লুকোজ, ফ্রুক্টোজ ও গ্যালাকটোজ এক অণুবিশিষ্ট কার্বোহাইড্রেট মনোস্যাকারাইডের সাধারণ সংকেত C6H12061।
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত মোবারক আলীর উৎপাদিত খাদ্য শস্যগুলো রাসায়নিক প্রকৃতি অনুযায়ী যে উপাদানের তা হলো কার্বোহাইড্রেট। অপরিহার্য শক্তি উৎপাদনকারী খাদ্যগুলোর মধ্যে কার্বোহাইড্রেট অন্যতম। পুষ্টিবিজ্ঞানীদের মতে, মোট কর্মশক্তির ৬০%-৭০% শক্তি কার্বোহাইড্রেট থেকে গ্রহণ করা হয়। অন্যান্য খাদ্যের তুলনায় কার্বোহাইড্রেট প্রকৃতিতে ব্যাপকভাবে পাওয়া যায়। কার্বোহাইড্রেটের মূল উপাদান কার্বন (C), হাইড্রোজেন (H), অক্সিজেন (O)। কার্বোহাইড্রেট অণুতে হাইড্রোজেন ও অক্সিজেন সর্বদা ২:১ অনুপাতে থাকে। উৎপন্ন কার্বোহাইড্রেটের বেশির ভাগই আমরা উদ্ভিদের মূল, কান্ড ও বীজ থেকে পেয়ে থাকি। স্তন্যপায়ী জীবজন্তুর রক্তে গ্লুকোজরূপে, দুগ্ধে ল্যাকটোজরূপে এবং দেহাভ্যন্তরে গ্লাইকোজেনরূপে অবস্থান করে। এক গ্রাম কার্বোহাইড্রেট থেকে ৪ ক্যালরি শক্তি পাওয়া যায়।
ঘ. এ ধরনের খাবার বলতে কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবারকে বোঝানো হয়েছে।
১. কার্বোহাইড্রেটের প্রথম ও প্রধান কাজ তাপ ও শক্তি উৎপাদন।
২. অল্প প্রোটিন মূল্যের খাদ্যকে তাপ উৎপাদন থেকে অব্যাহতি দেওয়া।
৩. প্রোটিন, ভিটামিন, ধাতব লবণ প্রভৃতি খাদ্যদ্রব্য গ্রহণে সহায়তা করে।
৪. স্নেহ পদার্থের দহনে সহায়তা করে আমাদের কিটোসিস রোগের হাত থেকে রক্ষা করে।
৫. দেহে প্রয়োজনের অতিরিক্ত কার্বোহাইড্রেট গ্লাইকোজেনরূপে যকৃতে জমা থাকে এবং প্রয়োজনবোধে দেহের কাজে ব্যবহৃত হয়।
৬. মস্তিষ্কের একমাত্র জ্বালানি হিসেবে কার্বোহাইড্রেটের ভূমিকা অপরিসীম।
৭. সেলুলোজ নামক কার্বোহাইড্রেট কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।
উপরিউক্ত বিষয়াবলির আলোকে বলা যায়, মানুষের জীবনে কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবারের গুরুত্ব অপরিসীম।
৬. নটর ডেম কলেজের ছাত্র তানভির পাটওয়ারী ঢাকার আরামবাগের একটি ছাত্রাবাসে বাস করে। তার ছাত্রাবাসে সপ্তাহে সাতদিনের খাদ্য তালিকায় রয়েছে সপ্তাহে ৩ দিন মাছ, ২ দিন মাংস, ২ দিন ডিম। এছাড়া প্রতিদিন দ্বিপ্রহর ও রাতের খাবারের সাথে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের ডাল। ছাত্রাবাসের খাদ্য নিয়ে সকল ছাত্রের অভিভাবক সন্তুষ্ট।
ক. Kwashiorkor শব্দটির উৎপত্তি কোন দেশীয় ভাষা থেকে?
খ. শ্বেতসারজাতীয় খাদ্যের ব্যাখ্যা দাও।
গ. তানভির পাটওয়ারী যে ধরনের রাসায়নিক প্রকৃতির খাদ্য গ্রহণ করে তার পরিচয় প্রদান কর।
ঘ. ছাত্রাবাসের এ ধরনের খাদ্যের শ্রেণিবিভাগ বিশ্লেষণ কর।
৬ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. 'Kwashiorkor' শব্দটির উৎপত্তি ঘানা দেশীয় ভাষা থেকে।
খ. অপরিহার্য শক্তি ও উৎপাদনকারী খাদ্যগুলোর মধ্যে কার্বোহাইড্রেট অন্যতম। পুষ্টিবিজ্ঞানীদের মতে, মোট কর্মশক্তির ৬০%- ৭০% শক্তি কার্বোহাইড্রেট থেকে গ্রহণ করা হয়। অন্যান্য খাদ্যের তুলনায় কার্বোহাইড্রেট প্রকৃতিতে ব্যাপকভাবে পাওয়া যায়। কার্বোহাইড্রেটের মূল উপাদান কার্বন (C), হাইড্রোজেন (H) অক্সিজেন (O)। কার্বোহাইড্রেট অণুতে হাইড্রোজেন ও অক্সিজেন সর্বদা ২:১ অনুপাতে থাকে। উৎপন্ন কার্বোহাইড্রেটের বেশির ভাগই আমরা উদ্ভিদের মূল, কান্ড ও বীজ থেকে পেয়ে থাকি। কার্বোহাইড্রেট স্থ ন্যপায়ী জীবজন্তুর রক্তে গ্লাকোজরূপে, দুগ্ধে ল্যাকটোজরূপে এবং দেহাভ্যন্তরে গ্লাইকোজেনরূপে অবস্থান করে।
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত তানভীর পাটওয়ারী প্রোটিন বা আমিষ জাতীয় খাদ্য গ্রহণ করে।
প্রোটিন গ্রিক শব্দ ‘প্রোটিওস’ থেকে প্রোটিন শব্দর উৎপত্তি। প্রোটিন শব্দের অর্থ হচ্ছে সর্বপ্রথম গুরুত্বপূর্ণ বা প্রধান। প্রোটিন ছাড়া কোনো জীবের অসিত্মত্ব কল্পনা করা যায় না। প্রতিটি জীবকোষ প্রোটিনের সমন্বয়ে গঠিত। দেহ গঠনে প্রোটিনের প্রয়োজনীয়তা সবচেয়ে বেশি। মাংসপেশি, অস্থি এমনকি রক্তেরও প্রধান উপাদান প্রোটিন। প্রোটিনসমূহ প্রভাবকরূপে কাজ করে, যা সকল জৈবিক বিক্রিয়ার হার নিয়ন্ত্রণ করে। যেমন- প্রাণিদেহে এনজাইমসমূহ।
কার্বন, হাইড্রোজেন, অক্সিজেন ও নাইট্রোজেনের সমন্বয়ে অ্যামাইনো এসিড গঠিত। কখনো কখনো সালফার, ফসফরাস, লৌছের সামান্য উপস্থিতিও লক্ষ করা যায়। অনেকগুলো অ্যামাইনো এসিড যুক্ত হয়ে প্রোটিন অণু গঠিত হয়। সুতরাং প্রোটিন হচ্ছে অ্যামাইনো এসিডের পলিমার।
ঘ. ছাত্রাবাসের এ ধরনের খাদ্যকে প্রোটিন জাতীয় খাদ্য বলা হয়ে থাকে। প্রোটিনকে বিভিন্ন দৃষ্টিকাণ থেকে ভাগ করা হয়েছে। উৎস অনুসারে প্রোটিনকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন-
১. প্রাণিজ প্রোটিন : প্রাণী থেকে যেসব প্রোটিন পাওয়া যায় তাকে প্রাণিজ প্রাটিন বলে। যেমন- মাছ, মাংস, ডিম, দুধ, ছানা, পনির।
২. উদ্ভিজ্জ প্রোটিন : উদ্ভিদ থেকে যেসব প্রোটিন পাওয়া যায় তাকে উদ্ভিজ্জ প্রোটিন বলে। যেমন- বিভিন্ন ধরনের ডাল, সবজির বিচি, সয়াবিন, বাদাম।
গুণগত বৈশিষ্ট্যের ওপর ভিত্তি করে প্রোটিন আবার তিন প্রকার। যেমন-
১. সরল বা সম্পূর্ণ প্রোটিন : যেসব প্রোটিনকে আর্দ্র বিশ্লেষণ করলে অ্যামাইনো এসিড ছাড়া অন্য কোনো বস্তু পাওয়া যায় না, তাকে সরল প্রোটিন বলে; যেমন- এলবুমিন, গ্লোবিউলিন, গ্লুটলিন, প্রোলামিন, হিস্টোন ইত্যাদি।
২. যৌগিক বা অসম্পূর্ণ প্রোটিন : যেসব প্রোটিনকে আর্দ্র বিশ্লেষণ করলে অ্যামাইনো এসিড ছাড়াও অ্যাপ্রোটিন অংশ পাওয়া যায়, তাকে যৌগিক প্রোটিন বলে। কখনো কখনো এদের সংযুক্ত প্রোটিনও বলা হয়ে থাকে। সংযুক্ত অংশের নামানুসারে এদের নামকরণ করা হয়। যেমন ফসফো-প্রোটিন = প্রোটিন ও ফসফেট সংযুক্ত হয়ে থাকে।
৩. উদ্ভূত প্রোটিন : সরল ও যৌগিক প্রোটিনের সংমিশ্রণে গঠিত প্রোটিনসমূহকে উদ্ভূত প্রোটিন বলে। যেমন- প্রোটিওজ, পেপটোন, পেপটাইডস ইত্যাদি।
৭. বাংলা ১৪২২ সালের সেরা রাঁধুনি নির্বাচিত হন চট্টগ্রামের সাবিনা সিরাজী। তিনি চট্টগ্রাম শিল্পকলা একাডেমিতে এক খাবারের মেলায় স্টল দেন। তিনি তার খাবারের বাটির সাথে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সম্বলিত একটি বই সরবরাহ করেন বিনামূল্যে। তাতে তিনি উল্লেখ করেন অত্যাবশ্যকীয় এক ধরনের এসিডের অভাবে শিশুদের বুদ্ধি ব্যাহত হয় এবং অ্যাকজিমা জাতীয় চর্মরোগ হয়। এ ধরনের এসিড সমৃদ্ধ খাদ্যগ্রহণ করলে রক্তে কোলেস্টেরল কমে যায়। এছাড়াও তার বইতে খাদ্যের বর্ণ, গন্ধ, স্বাদ ও গুণাগুণ বৃদ্ধি করে এমন পদার্থের কিছু চিত্র তুলে ধরেন।
ক. বাড়ন্ত শিশুদের খাদ্যে কত অংশ প্রাণিজ প্রোটিনের ব্যবস্থা করা ভালো?
খ. Kwashiorkor (কোয়াশিওরকর) কথাটি দ্বারা কী বোঝায়?
গ. সাবিনা সিরাজী যে ধরনের এসিডের আলোচনা তার বইতে উল্লেখ করেছেন তার ব্যাখ্যা দাও।
ঘ. সাবিনা সিরাজীর বইয়ের তথ্যানুসারে বলা যায় স্নেহ বা ফ্যাটের প্রয়োজনীয়তা, মানবদেহে ব্যাপক উত্তরের যথার্থতা নিরূপণ কর।
৭ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. বাড়ন্ত শিশুদের খাদ্যে ২/৩ অংশ প্রাণিজ প্রোটিনের ব্যবস্থা করা ভালো।
খ. ঘানা দেশীয় ভাষা থেকে কোয়াশিওরকর শব্দটির উৎপত্তি। কোয়াশিয়রকর কথাটির অর্থ হলো বঞ্চিত শিশু। অতি শৈশবে শিশু মায়ের দুধ থেকে বঞ্চিত হলেও বাড়তি খাবারে প্রোটিনের অভাব ঘটলে এ রোগ দেখা দেয়। এ রোগের লক্ষণগুলো নিম্নরূপ-
১. শিশুর বৃদ্ধি ব্যাহত হয় এবং ওজর হ্রাস পায়।
২. মাংসপেশি শুকিয়ে শরীর শীর্ণ হয়ে যায়।
৩. চামড়া ঢিলে হয়ে যায় ও কুঁচকে যায়।
৪. পায়ে শোথ (ইডিমা) দেখা দেয় ইত্যাদি।
গ. উদ্দীপকের সাবিনা সিরাজী তার বইতে অত্যাবশ্যকীয় ফ্যাটি এসিডের আলোচনা করেছেন।
যে সকল ফ্যাট এসিড দেহে প্রস্থুত হতে পারে না অথচ এর অভাবে দেহের কার্যাবলি বিঘ্নিত হয় এবং অবশ্যই খাদ্যের সাথে গ্রহণ করতে হয়, এজাতীয় ফ্যাটি এসিডকে অপরিহার্য বা অত্যাবশ্যকীয় ফ্যাটি এসিড বলে।
অত্যাবশ্যকীয় ফ্যাটি এসিড ৩টি। যথা-
১. লিনোনেইক এসিড (Linolic Acid) : ডিমের কুসুম, বাদাম ও সয়াবিন তেলে পাওয়া যায়।
২. লিনোলিনিক এসিড (Linolenic Acid) : মাছের তেল, যকৃত ইত্যাদিতে পাওয়া যায়।
৩. অ্যারাকিডোনিক এসিড (Arachidonic Acid): যকৃতের তেলে ও প্রাণী দেহের ফসফো লিপিড অণুতে পাওয়া যায়।
ঘ. সাবিনা সিরাজীর বাংলা ১৪২২ সালে সেরা রাঁধুনি নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি রান্না সম্পর্কিত একটি গুরুত্বপূর্ণ বই রচনা করেছেন। তিনি তার বইতে মানবদেহে স্নেহ ফ্যাটের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেছেন। তিনি তার বইয়ে যেসব বিষয় উল্লেখ করেছেন তা হলো-
১. স্নেহ বা ফ্যাটের প্রধান কাজ তাপ ও শক্তি উৎপাদন করা।
২. ত্বকের বা চামড়ার মসৃণতা আনয়নে বিশেষ ভূমিকা পালন করা।
৩. স্নেহ পদার্থ খাদ্যের বর্ণ, গন্ধ, স্বাদ ও গুণাগুণ বৃদ্ধি করে, খাবারকে আকর্ষণীয় করে।
৪. দেহ থেকে তাপের অপচয় রোধ করে দেহকে গরম রাখতে সাহায্য করে।
৫. স্নেহ পদার্থ প্রয়োজনীয় ফ্যাটি এসিড সরবরাহ করে চর্মরোগ থেকে রক্ষা করে।
৬. স্নেহ পদার্থের গ্রহণের ফলে দেহের সৌন্দর্য ও চাকচিক্য বৃদ্ধি পায়।
৭. চর্বিতে দ্রবণীয় ভিটামিনগুলো, যেমন- ভিটামিন এ, ডি, ই, কে এবং অত্যাবশ্যকীয় ফ্যাটি এসিডে বাহক হিসেবে কাজ করে।
৮. ফ্যাট সঞ্চিত শক্তি হিসেবে থাকে। যখন শক্তির অভাব ঘটে, তখন ফ্যাট ভেঙে শক্তি উৎপন্ন হয়।
৯. ফ্যাট দেহের কোষ গঠনে সাহায্য করে। দেহে তাপের সমতা রক্ষা করে।
১০. চর্বিত দ্রবণীয় ভিটামিন, ক্যারোটিন শোষণে সাহায্য করে।
পরিশেষে বলা যায়, উপরিউক্ত কারণে মানবদেহে স্নেহ ও ফ্যাটের যথেষ্ট প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।
৮. অফিস থেকে বাসায় ফিরতে কখনও কমলা বর্ণের ফল ও সবজি, কখনও সবুজ শাক, মাখন, ঘি, ডিম ইত্যাদি নিয়ে রাহাত সাহেব বাসায় ঢোকেন। স্ত্রী উম্মে সালমা এ খাবারগুলোর গুণাগুণ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এসব খাবারে এক ধরনের ভিটামিন থাকে যা যকৃতে জমা থাকে। এটি বর্ণহীন, তাপে স্থিতিশীল, অম্ল ও ক্ষারে নষ্ট হয় না। দেহের সামগ্রিক বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। ত্বক ও কোষঝিল্লির সজীবতা রক্ষা করে। চোখের উজ্জ্বলতা বাড়ায়। এমনকি প্রোটিন পরিবহনে কাজ করে।
ক. Derived Fat-এর বাংলা অর্থ কী?
খ. খাদ্য, পুষ্টি ও স্বাস্থ্য ওতপ্রোতভাবে জড়িত কেন?
গ. স্ত্রীর প্রশ্নের উত্তরে রাহাত সাহেব যে ভিটামিনের প্রতি ইঙ্গিত করেছেন দেহে তার কাজ ব্যাখ্যা কর।
ঘ. এ ধরনের ভিটামিনের অভাবজনিত রোগগুলো বিশ্লেষণ কর।
৮ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. Derived Fat-এর বাংলা অর্থ হচ্ছে উদ্ভূত স্নেহ।
খ. খাদ্য, পুষ্টি ও স্বাস্থ্য ওতপ্রোতভাবে জড়িত, কারণ সুস্বাস্থ্যের জন্য খাদ্য অপরিহার্য, তবে তা হতে হবে পুষ্টিকর খাদ্য। পুষ্টিকর খাদ্য ব্যতীত ভালো স্বাস্থ্য আশা করা যায় না। দেহের জন্য বা ভালো স্বাস্থ্যের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টির চাহিদা পূরণ করতে হলে দরকার পুষ্টিকর খাদ্য। এজন্যই খাদ্য, পুষ্টি ও স্বাস্থ্য একে অন্যের সাথে নিবিড়ভাবে সম্পর্কযুক্ত।
গ. স্ত্রীর প্রশ্নের জবাবে রাহাত সাহেব যে ভিটামিন-এর প্রতি ইঙ্গিতকরেছেন সেটি হলো ভিটামিন 'এ'।
ভিটামিন 'এ' চর্বিতে দ্রবণীয় একটি ভিটামিন। এ জাতীয় ভিটামিন চোখ, ফুসফুস, পাকস্থলী ও অন্ত্রের ওপর ক্রিয়া করে। প্রাণিজ উৎস থেকে প্রাপ্ত ভিটামিন ‘এ’ ক্যাটেরিনরূপে পাওয়া যায়। ভিটামিন ‘এ’ যকৃতে জমা থাকে। এটি বর্ণহীন। তাপে স্থিতিশীল। অম্ল ও খারে নষ্ট হয় না। মৃদু তাপে ঢাকনাসহ পাত্রে রান্না করলে এ ভিটামিন নষ্ট হয় না। এটি দেহের গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে থাকে। যেমন-
১. ভিটামিন এ দেহের সামগ্রিক বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
২. চোখের যাবতীয় রোগ থেকে ভিটামিন ‘এ’ রক্ষা করে।
৩. ত্বক ও কোষঝিল্লির সজীবতা রক্ষা করে।
৪. ভিটামিন ‘এ’ চোখের উজ্জ্বলতা বাড়ায় এবং অল্প আলোতে দেখতে সাহায্য করে।
৫. ভিটামিন ‘এ’ রোগ সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে। একে Anti-Infective ভিটামিনও বলা হয়।
৬. প্রজননতন্ত্রের গঠন ও কার্যকারিতা নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ভূমিকা পালন করে।
৭. এটি প্রোটিন পরিবহনে কাজ করে।
ঘ. উদ্দীপকে এ ধরনের ভিটামিন অর্থাৎ ভিটামিন ‘এ’-এর অভাবে নানা ধরনের রোগ হতে পারে। যেমন-
রাতকানা (Night Blindness) : এ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি দিনের আলোতে দেখতে পেলেও সন্ধ্যা হলে অল্প আলোতে দেখতে পায় না। চোখের রেটিনার 'রড' নামক একটি কোষ আছে, যা রাতের বেলায় অল্প আলোতে দেখতে সাহায্য করে। রডপসিন এক প্রকার রঞ্জক পদার্থ। এটা সংশ্লেষণের জন্য ভিটামিন ‘এ’ প্রয়োজন। রক্তে ভিটামিন ‘এ’-এর মাত্রা কম থাকলে রডপসিনের সংশ্লেষণ কমে যায়। অল্প আলোতে দেখতে অসুবিধা হয় এবং এ অবস্থাকে রাতকানা বলা হয়।
জেরোপথ্যালমিয়া (Xeropthalmia) : ভিটামিন ‘এ’ এর অভাবে চোখের কর্ণিয়া এবং কনজাংটিভা আক্রান্ত হয়।
ক্যারাটোম্যালেসিয়া (Keratomalacia) : ভিটামিন 'এ'-এর অভাবে কর্ণিয়া নিসেত্মজ হয়ে পড়ে। ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণে ঘা বা আলসার হয়। এ ঘা প্রকট হলে কর্ণিয়া নরম হয়। কনজাংটিভা ফেটে ভেতরের অংশ বেরিয়ে আসে। এ অবস্থায় রোগী অন্ধ হয়ে থাকে।
বিটটস স্পোর্ট (Bitots Sport) : ভিটামিন ‘এ’ এর অভাব চলতে থাকলে চোখের কনজাংটিভা শুষ্ক হয়, ফলে আবরণ ঘোলাটে হয়, চোখের সাদা অংশে ছোট চকচকে সাদা দাগ পড়ে। একে বিট স্পোর্ট বলে।
পরিশেষে বলা যায়, মানবদেহের সুস্থতা এবং উপরিউক্ত রোগ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য ভিটামিন 'এ' খুবই প্রয়োজন। তাই আমাদের উচিত ভিটামিন 'এ' সমৃদ্ধ খাদ্য খাওয়া।
৯. রিতা আহসান তার অবসরপ্রাপ্ত পুষ্টিবিজ্ঞানী দাদার কাছে জানতে পারে মানবদেহ কার্বন, হাইড্রোজেন, অক্সিজেন ও নাইট্রোজেন ছাড়াও অতি গুরুত্বপূর্ণ কিছু পদার্থ দ্বারা গঠিত। এ গুরুত্বপূর্ণ উপাদানগুলো অল্প হলেও দেহের গুরুত্বপূর্ণ কার্য সম্পাদনে ভূমিকা রাখে। এর মধ্যে একটি উপাদানের প্রধান উৎস হলো দুধ, তাই সুস্থ সবল দেহের জন্য দুধের প্রয়োজনীয়তা ব্যাপক।
ক. মানবদেহের কতভাগ পানি?
খ. ভিটামিন ডি ও ক্যালসিয়াম কীভাবে সম্পর্কিত?
গ. রিতা আহসান তার দাদার কাছ থেকে দেহের যে, গুরুত্বপূর্ণ উপাদান সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করেছে তার ব্যাখ্যা দাও।
ঘ. রিতা আহসানের দাদার তথ্যের ভিত্তিতে বলা যায় মানবদেহে লৌহ খুব অল্প পরিমাণে প্রয়োজন হলেও তার গুরুত্ব অপরিসীম।
৯ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. মানবদেহের প্রায় ৭০% পানি।
খ. ভিটামিন ডি ও ক্যালসিয়াম নিবিড়ভাবে সম্পর্কিত। ভিটামিন ‘ডি’-এর প্রাথমিক কাজ হলো ক্যালসিয়াম ও ফসফরাসের শোষণে সহায়তা করা। অন্তে ভিটামিন 'ডি'-এর জন্য ক্যালসিয়ামের শোষণ ত্বরান্বিত হয়। ভিটামিন 'ডি' রক্তে ক্যালসিয়ামের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। হাড়ে ও দাঁতে ক্যালসিয়াম ফসফেই সঞ্চিত হওয়ার সহায়ক অ্যালকালাইন ফসফেটেজ নামক এনজাইমের কাজ নিয়ন্ত্রণ করে।
গ. রিতা আহসান তার দাদার কাছ থেকে খনিজ উপাদান সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করেছে।
মানব দেহের ৯৬% কার্বন, হাইড্রোজেন, অক্সিজেন, নাইট্রোজেন-এ ৪টি জৈব পদার্থ এবং বাকি ৪% অজৈব বা খনিজ পদার্থ দ্বারা গঠিত। দেহ গঠনে অজৈব পদার্থ বা খনিজ উপাদানের পরিমাণ অল্প হলেও দেহের গুরুত্বপূর্ণ কার্য সমাধানে ভূমিকা রাখে। খাদ্যবস্তু পোড়ালে যে সাদা ছাই অবশিষ্ট থাকে তাই অজৈব পদার্থ বা ধাতব উপাদান। কতগুলো খনিজ লবণ বা উপাদান শরীরের জন্য আবশ্যকীয়; যেমন- ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, সোডিয়াম, পটাশিয়াম, ক্লোরিন, সালফার ও ম্যাগনেসিয়াম। এগুলোর প্রধান মৌল বা বৃহৎ মৌল বা Macrominerals বলে। অপেক্ষাকৃত কম পরিমাণে আছে এমন কয়েকটি অত্যাবশ্যকীয় খনিজ উপাদানকে লেশ মৌল বা Trace Element বলে। যেমন- আয়োডিন, লৌহ, তামা, দস্থা ইত্যাদি। খনিজ উপাদানসমূহ সাধারণত দেহ গঠনে, দেহের জৈবিক ক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ কাজে সহায়তা করে। তবে একেক ধরনের খনিজ উপাদান একেক ধরনের কাজ করে থাকে।
ঘ. রিতা আহসানের দাদার তথ্যের ভিত্তিতে বলা যায় মানবদেহে লৌহ খুব অল্প পরিমাণে প্রয়োজন হলেও তার গুরুত্ব অপরিসীম। কারণ-
১. লোহিত রক্তকণিকার উৎপাদন ও হিমোগ্লোবিন সংশ্লেষণের জন্য লৌহ আবশ্যক।
২. লৌহ হিমোগ্লোবিন গঠনে সাহায্য করে। এ হিমোগ্লোবিন ফুসফুস থেকে বিভিন্ন কোষে অক্সিজেন পরিবহন করে এবং কোষ থেকে কার্বন ডাইঅক্সাইড নিয়ে ফুসফুসে পৌঁছে দেয়।
৩. লৌহ জীবিত প্রাণী কোষের শ্বসনের জন্য অপরিহার্য।
৪. সামান্য পরিমাণ লৌহ কোনো কোনো এনজাইম গঠনে সহায়তা করে। যকৃত বা কলিজা লৌহের প্রধান উৎস। এছাড়া মাছ, মাংস, ডিম, ডাল, বাদাম, খেজুর, লাল শাক, কচু শাক, করলা, মুলা, বিট, তরমুজ প্রভৃতিতে লৌহ পাওয়া যায়।
লৌহের অভাবে এনিমিয়া বা রক্তস্বল্পতা রোগ হয়। লৌহের বিশোষণ ব্যাহত হয়। এছাড়া বিভিন্ন রোগ, দুর্ঘটনা এবং অস্ত্রোপাচারের সময় অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হলে লৌহের অভাব দেখা দেয়।
পরিশেষে বলা যায়, অন্যান্য ক্যালসিয়ামের তুলনায় মানবদেহে লৌহের প্রয়োজন কম হলেও এর গুরুত্ব কোনো অংশে কম নয়।
১০. কথায় বলে পানির অপর নাম জীবন, বাস্থ বও এর ব্যতিক্রম নয়। পানি ছাড়া কোনোভাবেই জীবন ধারণ সম্ভব নয়। আওসাফের পিতা, সন্তানের অন্যান্য খাবারের চেয়ে কোনো অংশেই পানি পান করাকে কম গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন না। নিয়মিত তিনি আওসাফকে জীবাণুমুক্ত ফুটানো পানি পান করান, ভ্রমণে সবসময় নিজের সাথে পান করার উপযোগী পর্যাপ্ত পানি রাখেন। পানি তার কাছে অন্যান্য খাবারের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
ক. মানবদেহে কত শতাংশ সোডিয়াম হাঁড়ের মধ্যে থাকে?
খ. বেরিবেরি রোগের লক্ষণসমূহ বর্ণনা কর।
গ. আওসাফের পিতা যে খনিজ পদার্থটির প্রতি অতি যত্নশীল মানবদেহে তার প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা কর।
ঘ. আওসাফের পিতার কার্যক্রমের আলোকে বলা যায় পানি ছাড়া সত্যিই জীবন অচল- উত্তরের যথার্থতা নিরূপণ কর।
১০ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. মানবদেহে ৫০% সোডিয়াম হাঁড়ের মধ্যে থাকে।
খ. বেরিবেরি রোগের প্রাথমিক লক্ষণ হলো হৃদপিন্ডের দুর্বলতা। এ রোগে হাত-পা শিরশির করে। পায়ের গোড়ালিতে ব্যথা হয়, পা অবশ হয়ে যায় এবং অন্যান্য পেশিরও দুর্বলতা দেখা যায়। এ রোগে হৃদস্পন্দন দ্রুত হয়। ক্ষুধামন্দা ও হজমের ব্যাঘাত ঘটে, ওজন হ্রাস পায়। ভিজা বেরিবেরিতে হাত-পায়ে পানি আসে। স্নায়ুতন্ত্র পীড়িত হলে প্রথমে দেহের পঙ্গুতা এবং অবশেষে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত আওসাফের পিতা যে খনিজ পদার্থটির প্রতি অতি যত্নশীল মানবদেহে তার প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। দেহের গঠনে সকল উপাদানের মধ্যে পানির পরিমাণ সবচেয়ে বেশি। দেহের সকল কোষে পানি থাকে। দেহের প্রায় ৭০% পানি। কোষে থাকে। ৫০%, কোষের বাইরে থাকে ২০%। এ ২০% এর মধ্যে ৫% রক্তে এবং ১৫% দুই কোষের মধ্যবর্তী স্থানে। আমাদের জীবনধারণের জন্য পানির প্রয়োজন সবচেয়ে বেশি। প্রাপ্তবয়সে দৈনিক ২-৩ লিটার বিশুদ্ধ পানি পান করা আবশ্যক। এছাড়া খাবার থেকে দৈনিক প্রায় ১ লিটার পানি শরীরে প্রবেশ করে। মূত্র হিসেবে দৈনিক প্রায় ১.৫ লিটার পানি দেহ থেকে বের হয়ে যায়। তবে পানির চাহিদা নানা কারণে বৃদ্ধি পায়। যেমন- গ্রীষ্মের সময় অত্যধিক গরমে ঘাম হলে, জ্বর, ডায়রিয়া, বমি, স্তন্যদানকালে, খেলাধুলা ও দৈহিক পরিশ্রমে। পানি খাদ্যের পরিপাক ও শোষণে এবং পুষ্টি পরিবহনে সহায়তা করে। দেহের বিপাকক্রিয়ার ফলে উৎপন্ন বর্জ্য পদার্থ দেহ থেকে বের করে দেয়। দেহের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। রক্তের তারল্য বজায় রাখে।
কোষের মধ্যে যে বিক্রিয়া সংঘটিত হয় তা পানির মধ্যে দ্রবীভূত অবস্থায় হয়। এছাড়া পানি কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে এবং শরীরকে সুস্থ-সবল রাখে। মানবদেহে পানির প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। তাই বলা যায়, পানির অপর নাম জীবন।
ঘ. ‘পানি ছাড়া সত্যিই জীবন অচল'- আওসাফের পিতার এ কথাটি যথার্থ। দেহের গঠনে সকল উপাদানের মধ্যে পানির পরিমাণ সবচেয়ে বেশি। দেহের সকল কোষে পানি থাকে। দেহের প্রায় ৭০% পানি। উদ্দীপকের আওসাফের পিতা আওসাফকে সবসময় জীবাণুমুক্ত ফুটানো পানি পান করান। ভ্রমণে সব সময় নিজের সাথে পান করার উপযোগী পর্যাপ্ত পানি রাখেন। কারণ-
১. পানি খাদ্যের পরিপাক ও শোষণে এবং পুষ্টি পরিবহনে সহায়তা করে।
২. দেহের বিপাকক্রিয়ার ফলে উৎপন্ন বর্জ্য পদার্থ দেহ থেকে বের করে দেয়।
৩. দেহের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। রক্তে তারল্য বজায় রাখে।
৪. কোষের মধ্য যে বিক্রিয়া সংঘটিত হয় তা পানির মধ্যে দ্রবীভূত অবস্থায় হয়।
৫. কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। শরীর সুস্থ সবল রাখে।
তবে বিভিন্ন অবস্থায় মানবদেহে পানির পরিমাণ খুব কমে যায়। তখন যা হয় তা হলো-
i. বমি, ডায়রিয়া, জ্বর হলে দেহ থেকে প্রচুর পানি বের হয়ে যায়, ফলে দেহে পানির পরিমাণ খুব কমে যায়। ফলে পানিশুষ্কতা বা ডিহাইড্রেশন দেখা দেয়।
ii. দেহের পরিপাক ও বিপাকক্রিয়া ব্যাহত হয়।
iii. রক্তের তারল্য নষ্ট হয়। মাংসপেশি দুর্বল হয়ে যায়।
vi. ঠোঁট শুকিয়ে যায়, চোখ জ্বালা করে।
v. কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দেয়।
অতএব বলা যায়, পানি ছাড়া সত্যিই জীবন অচল।
0 Comments:
Post a Comment