এইচএসসি পরীক্ষার পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি
HSC Home Science 2nd Paper Srijonshil question and answer pdf download.
উচ্চ মাধ্যমিক
গার্হস্থ্য বিজ্ঞান
দ্বিতীয় পত্র
সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
৭ম অধ্যায়
HSC Home Science 2nd Paper
Srijonshil
Question and Answer pdf download
১. সুমন একাদশ শ্রেণির ১ম সাময়িক পরীক্ষায় প্রথম হয়েছে। একদিন সে কয়েকজন সহপাঠীকে বাথরুমে নেশাজাতীয় দ্রব্য সেবন করতে দেখে। ইদানীং তার পড়াশুনায় বেশ অবনতি হচ্ছে এবং সে প্রায়ই মা- বাবার সাথে ঔদ্ধত্য আচরণ করে।
ক. মানসিক স্বাস্থ্য কী?
খ. ‘‘তারুণ্য মানবজীবনের গুরুত্বপূর্ণ সময়’’- ব্যাখ্যা কর।
গ. উদ্দীপকে সুমনের সাথে মা-বাবার সম্পর্কের অবনতির কারণ ব্যাখ্যা কর।
ঘ. সুমনের বয়সি ছেলেমেয়েদের উল্লিখিত সমস্যা হতে পরিত্রাণের উপায় বিশ্লেষণ কর।
১ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. মানসিক স্বাস্থ্য হলো মনের দিক থেকে সুস্থ অবস্থা ও পরিবেশের সাথে সুস্থ সংগতি বিধান করা।
খ. তারুণ্য পর্যায়টি জীবন বিকাশের একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়। এ সময় একটি শিশুর শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন ঘটে। ফলে সে শারীরিক ও মানসিক পরিক্বতা অর্জন করে। এ পর্যায়ের বয়সসীমা হচ্ছে ১৩ থেকে ১৮ বছর। নানা ধরনের গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন সংঘটিত হয় বলে এ সময়কে মানবজীবনের গুরুত্বপূর্ণ সময় বলা হয়।
গ. উদ্দীপকে সুমনের সাথে মা-বাবার সম্পর্কের অবনতির কারণ হলো নবীন-প্রবীণের মাঝে দৃষ্টিভঙ্গির ব্যবধান ও জেনারেশন গ্যাপ। এ ব্যবধান সৃষ্টির মূলে রয়েছে তরুণ-তরুণীদের পরিবর্তনশীল সমাজব্যবস্থা এবং মা-বাবার সাথে সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও সৃজনশীল চিন্তাধারায় পার্থক্য। বাবা-মায়ের সাথে তরুণদের এ ব্যবধান বা সম্পর্কের অবনতির জন্য উভয় পক্ষই সমানভাবে দায়ী। উদ্দীপকে উল্লিখিত সুমন সঙ্গদোষের কারণেই ইদানীং সুমনের পড়াশুনায় বেশ অবনতি হচ্ছে এবং সে প্রায়ই মা-বাবার সাথে খারাপ আচরণ করে। তার মতো তরুণদের সাথে মা-বাবার সম্পর্কের এরূপ অবনতি ঘটার পিছনে নানা কারণ রয়েছে। তারুণ্যে পদার্পণকারী ছেলেমেয়েদের অভিযোগ, মা-বাবা তাদের বোঝেন না। তরুণ ছেলেমেয়েরা মা-বাবার শাসনপদ্ধতি পছন্দ করে না। তারা মনে করে অন্যায়ভাবে তাদের শাস্থি দেওয়া হচ্ছে, ফলে তারা মা-বাবার প্রতি ক্ষুব্ধ হয়। এ বয়সের ছেলেমেয়েরা পরিবারের বয়স্ক ব্যক্তির আচরণের সূক্ষ্ম বিশ্লেষণ বা সমালোচনা করে। অনেক সময় সন্তানের আচরণে পরিপক্বতার অভাব পরিলক্ষিত হয়। মা-বাবা তাদের শিশুসুলভ আচরণে বিরক্ত হন। তাই বলা যায়, উপরিউক্ত কারণসমূহের প্রভাবেই উদ্দীপকে সুমনের সাথে তার মা-বাবার সম্পর্কের অবনতি ঘটেছে।
ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত সুমনের বয়সি ছেলেমেয়েদের উল্লিখিত সমস্যা অর্থাৎ মাদকাসক্তি হতে পরিত্রাণের নানাবিধ উপায় রয়েছে। মাদকাসক্তি বর্তমান সমাজে এক মারাত্মক সমস্যা। এ সমস্যা থেকে পরিত্রাণের নানাবিধ উপায় রয়েছে। তাই মাদক সম্পর্কে নেতিবাচক মনোভাব গঠন করে মাদক সম্পর্কে সচেতন হওয়া যায়। বন্ধু নির্বাচনে সচেতন হতে হবে এছাড়াও আরোও কিছু উপায় রয়েছে। তরুণ-তরুণীদের মা-বাবা ও পরিবারের সাথে সহজ ও ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলা এবং সুষ্ঠু পারিবারিক ও সামাজিক পরিবেশ গঠনে ঐক্যবদ্ধ থাকা। কোনো অবস্থাতেই বন্ধুবান্ধবের সাথে হাসি-ঠাট্টার ছলে মাদক বা এ জাতীয় কোনো দ্রব্য গ্রহণ না করা। তরুণ-তরুণীদের সৃজনশীল কাজে বেশি পরিমাণে সম্পৃক্ত হতে হবে, যাতে করে তারা তাদের অবসর সময়ে খারাপ সঙ্গী-সাথীদের সাথে মিশে নিজেকে মাদকের মতো জঘন্য নেশায় জড়াতে না পারে। মাদকদ্রব্য ব্যবহার ও চোরাকারবারিদের সাথে জড়িত না হওয়া বা তাদের প্রলোভনে প্রলুব্ধ না হওয়া। অত্যন্ত সুকৌশলে অবস্থা বুঝেঝ সে স্থান ত্যাগ করা। সভা, সমিতি, সেমিনার ও জাতীয় প্রচার মাধ্যমে নিয়মিত মাদকবিরোধী অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া এবং মাদকের ক্ষতিকর দিকগুলো সম্পর্কে সকলকে অবহিত করা। যেমন- মাদক গ্রহণের ফলে দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পূর্ণভাবে হারিয়ে যায়, নানাবিধ রোগব্যাধিতে মানুষ আক্রান্ত হয়, শারীরিক অক্ষমতা বৃদ্ধিসহ মানসিক ভারসাম্য, বিবেক, বুদ্ধি সম্পূর্ণভাবে বিলুপ্ত হয়। মাদকাসক্তির পরিণাম অকাল মৃত্যু। উপরিউক্ত কাজগুলোর পাশাপাশি তরুণদের মাদকের হাত থেকে রক্ষা করতে পরিবার ও সমাজকেও সচেতন ভূমিকা রাখতে হবে।
২. পরিবার ও সমাজবিচ্ছিন্ন রশীদের কাজ করার ক্ষমতা কমে গেছে। স্নায়ুতন্ত্রেও সমস্যা দেখা দিয়েছে। সে নানা ধরনের অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। বিষয়টি জানতে পেরে শিক্ষক বলেন, রশীদের মতো ছেলেদের বিপর্যয় থেকে বাঁচাতে পরিবার ও সমাজের ভূমিকা রয়েছে।
ক. অপসংস্কৃতি কী?
খ. তারুণ্যের শেষভাগে ছেলেমেয়ে পেশা নির্বাচনের গুরুত্ব বুঝতে পারে- ব্যাখ্যা কর।
গ. রশীদের মধ্যে তারুণ্যের কী ধরনের বিপত্তি দেখানো হয়েছে? এর সম্ভাব্য কারণ ব্যাখ্যা কর।
ঘ. শিক্ষকের উক্তিটির যথার্থতা যাচাই কর।
২ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. নিজেস্ব সংস্কৃতির বিকৃত রূপ হলো অপসংস্কৃতি।
খ. শৈশব থেকেই একজন ব্যক্তি জীবিকা নির্বাচনের তাগিদ অনুভব করে। কিন্তু তারুণ্যের শেষভাগে ছেলেমেয়েরা তাদের ভবিষ্যৎ পেশা সম্পর্কে গভীরভাবে চিন্তা করে। তরুণ বয়সে বাস্থ ব অবস্থার প্রেক্ষাপটে পেশা নির্বাচন করা হয় এবং তা মোটামুটি বাস্থ বধর্মী হয়। পেশা নির্বাচন তরুণ বয়সে প্রতিষ্ঠা আনার একটা মাধ্যম। এ কারণেই বলা হয় যে, তারুণ্যের শেষভাগে ছেলেমেয়েরা পেশা নির্বাচনের গুরুত্ব বুঝতে পারে।
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত রশীদের মধ্যে তারুণ্যের নৈতিকতাবোধের অভাবজনিত বিপত্তি দেখানো হয়েছে।
নির্দিষ্ট একটি বয়সে তরুণদের মধ্যে আদর্শ দৃষ্টান্ত ও মূল্যবোধের অভাব দেখা দেয় যার কারণ হলো মাদকাসক্তি। তারুণ্য জীবন বিকাশের একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়। জীবনের এ পর্যায়ে ছেলেমেয়েরা শারীরিক ও মানসিক পরিপক্বতা অর্জন করে। এ সময় তরুণদের দৈহিক, মানসিক' ইত্যাদি নানা প্রকার বিপত্তি দেখা দিতে পারে। উদ্দীপকে দেখা যায়, পরিবার ও সমাজ বিচ্ছিন্ন রশীদের কর্মক্ষমতা কমে গেছে, তার স্নায়ুতন্ত্রেও সমস্যা দেখা দিয়েছে এবং সে নানা ধরনের অপরাধে জড়িয়ে পড়েছে। তার মধ্যে নৈতিকতাবোধের অভাব দেখা দিয়েছে। একজন ব্যক্তি মাদকাসক্ত হওয়ার সম্ভাব্য কারণ হলো- বাবা-মায়ের অতিরিক্ত শাসন, আদর অথবা অবহেলা সন্তানকে অপরাধী করে তোলে। অপসংস্কৃতি পারিবারিক বিচ্ছেদ, সমাজবিরোধী কাজ ইত্যাদি। তাই বলা যায়, রশীদের মধ্যে তারুণ্যের নৈতিকতাবোধের অভাবজনিত বিপত্তিকে দেখানো হয়েছে।
ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত শিক্ষকের মতে, রশীদের মতো ছেলেদের বিপর্যয় বাঁচতে পরিবার ও সমাজের ভূমিকা রয়েছেু উক্তিটি যথার্থ।
তারুণ্য জীবনের অনেক গুরুত্বপূর্ণ সময়। পরিবার ও সমাজের সহযোগিতাই তরুণদেরকে বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা করতে পারে। উদ্দীপকের রশীদের মতো বিপর্যস্থ তরুণকে সঠিক পথে চালিত করতে পরিবার ও সমাজের ভূমিকা অগ্রগণ্য। তারুণ্যের বিপর্যয় রোধে পরিবার ও সমাজ উভয়ের ভূমিকাই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উন্নত পরিবেশ, প্রচার মাধ্যম যেমন- টিভি, সিনেমা, পত্রপত্রিকা ইত্যাদির গঠনমূলক ভূমিকা তরুণদের সুপথে চালিত করতে ভূমিকা রাখতে পারে। এছাড়া তরুণদের জন্য খেলাধুলার ব্যবস্থা, সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড, প্রতিযোগিতামূলক অনুষ্ঠান, নির্মল চিত্তবিনোদনের ব্যবস্থা ইত্যাদি তরুণদের বিপথগামিতা রোধ করতে পারে। এ ধরনের সামাজিক কর্মকান্ডের ব্যবস্থা করার মাধ্যমে তরুণদেরকে বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা করা যায়। তাই বলা যায়, উদ্দীপকের রশীদের মতো তরুণদের বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষার জন্য পরিবারের পাশাপাশি সমাজকেও অগ্রণী ভূমিকা রাখতে হবে। তাই শিক্ষকের উক্তিটিকে যথার্থ বলা যায়।
৩. শিহাব দশম শ্রেণির ছাত্র। সে পরীক্ষায় বার বার অকৃতকার্য হয়। ইদানীং পড়ায় তার কোনো মনোযোগ নেই। এ অবস্থায় তার বাবা- মা, শিক্ষক উপদেশ দিলে সে বিদ্রোহ করে। এমনকি বেশ কয়েকবার সে ঘর থেকে পালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।
ক. তারুণ্যের বয়সসীমা কত বছর?
খ. সামাজিক পরিবেশ কীভাবে যুবকদের ব্যক্তিত্ব বিকাশে প্রভাব বিস্তার করে?
গ. শিহাবের বিপর্যয়ের কারণ ব্যাখ্যা কর।
ঘ. ‘‘শিহাবের সমস্যা সমাধানে শুধুমাত্র পরিবারই ভূমিকা রাখতে পারে’’- উক্তিটির যথার্থতা যাচাই কর।
৩ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. তারুণ্যের বয়সসীমা হলো ১৩-১৮ বছর।
খ. সামাজিক পরিবেশ যুবকদের ব্যক্তিত্ব বিকাশে সক্রিয় প্রভাব বিস্তার করে। ব্যক্তিত্বের দৃঢ়তা পরিবার ও সমাজের জন্য কল্যাণকর। ব্যক্তিত্বই মানুষের চালিকাশক্তি। তরুণ বয়সেই মানুষের ব্যক্তিত্বের বীজ রোপিত হয়। এসময় শিশুকালীন মনমানসিকতার পরিবর্তন হয় এবং ব্যক্তিত্বের পরিস্ফুটন ঘটে। সামাজিক পরিবেশ যদি প্রতিকূল হয় তখন যুবকরা হিতাহিত জ্ঞানশূন্য হয়ে পড়ে এবং নানারকম সমাজবিরোধী কাজে নিজেকে জড়িয়ে ফেলে। তাই যুবকদের ব্যক্তিত্ব বিকাশে সুষ্ঠু সামাজিক পরিবেশ অত্যন্ত প্রয়োজন। এভাবেই সামাজিক পরিবেশ যুবকদের ব্যক্তিত্ব বিকাশে প্রত্যক্ষভাবে প্রভাব বিস্তার করে।
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত শিহাবের বিপর্যয়ের কারণ হলো আত্মদ্বন্দ্ব। তারুণ্য একটি সংকটময় সময়। এ সময় দৈহিক ও মানসিক পরিবর্তনের সাথে সাথে অনেক তরুণ ছেলেমেয়ের মধ্যে অসংগতি, হতাশা, দ্বন্দ্ব প্রভৃতি নেতিবাচক দিকগুলো বেশ স্পষ্টভাবে দেখা দেয়। ফলে পরিবার, স্কুল এবং সমাজে তারা এক ধরনের 'সমস্যা' হিসেবে চিহ্নিত হয়। উদ্দীপকের শিহাব দশম শ্রেণির ছাত্র। তরুণ শিহাবের মাঝে যেসব আচরণিক বৈশিষ্ট্য লক্ষ করা যায় তা তারুণ্যের বিপর্যয়ের ফলেই সৃষ্ট। তার বার বার পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়া, পড়াশুনায় মনোযোগ না থাকা, বাবা-মা বা শিক্ষকের উপদেশে বিদ্রোহ করা, বেশ কয়েকবার ঘর থেকে পালিয়ে যাবার সিদ্ধান্ত নেওয়া ইত্যাদি সবই তারুণ্যের বিপর্যয়ের লক্ষণ। আত্মদ্বনে্দ্বর কারণেই এমনটা হয়ে থাকে। কিছু সংখ্যক তরুণের মধ্যে আত্মদ্বন্দ্ব দেখা যায়। এরা নিজেদের আত্মবোধ সম্পর্কে অজ্ঞ। এরা একরাশ হতাশা ও উদ্বেগ নিয়ে দিন কাটায়। এরা পড়াশুনা ছেড়ে দেয়, দল ত্যাগ করে। অনেক সময় বাবা-মা বা শিক্ষকের আদেশ, উপদেশ বা পরিচালনার প্রতি বিদ্রোহ প্রদর্শন করে এবং সবকিছু ছেড়ে দিয়ে এক সময় ঘর ত্যাগ করে। আত্মদ্বনে্দ্বর কারণেই তরুণদের এরূপ বিপর্যয় লক্ষ করা যায়। অতএব বলা যায়, উল্লিখিত কারণেই শিহাবের মধ্যে বিপর্যয়ের সৃষ্টি হয়েছে।
ঘ. ‘‘শিহাবের সমস্যা সমাধানে শুধুমাত্র পরিবারই ভূমিকা রাখতে পারে’’- উক্তিটি যথার্থ।
তারুণ্যের বিপর্যয় রোধের উপায় খুঁজে বের করলে আমাদের তরুণ সমাজকে বিভিন্ন প্রকার সমাজ বিরোধী কাজ, অপরাধমূলক কাজ, মাদকাসক্তি ইত্যাদি সমস্যা থেকে রক্ষা করা সম্ভব হবে। এক্ষেত্রে তরুণদের পরিবারই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। উদ্দীপকের শিহাবের মাঝে যে ধরনের আচরণের বহিঃপ্রকাশ লক্ষ করা যায় তা তারুণ্যের বিপর্যয়কেই ইঙ্গিত করছে। তার পরীক্ষায় বারবার অকৃতকার্য হওয়া, পড়াশুনায় মনোযোগ না থাকা, বাবা-মা বা শিক্ষকের উপদেশে বিদ্রোহ করা এবং ঘর থেকে পালিয়ে যাবার সিদ্ধান্ত নেওয়া এগুলো তারুণ্যের বিপর্যয়ের ফলেই সৃষ্ট। এক্ষেত্রে পরিবারের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রথম থেকে তরুণদের ছোটখাটো অপরাধগুলো সংশোধন করতে হবে। বাবা-মা'র অন্তঃকলহ কোনো অবস্থাতেই সন্তানদের সামনে আনা উচিত নয়। সন্তানদের প্রতি অতিরিক্ত কঠোর শাসন এবং উদাসীনতা উভয়ই ক্ষতিকর। ছেলেমেয়েদের অবসর সময় যেন নষ্ট না হয় সেজন্য তাদেরকে বিভিন্ন সৃজনশীল কর্মকান্ড- যুক্ত করতে হবে। মা-বাবার সাথে যেন সন্তানদের সহজ ও স্বাভাবিক সম্পর্ক থাকে সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। সন্তানের অপরাধ গোপন রেখে অন্যকে দোষী সাব্যস্থ করা চলবে না। তরুণদের প্রতি বন্ধুভাবাপন্ন হয়ে তাদের বক্তব্য ও মতামতকে মর্যাদা দিতে হবে। পরিবারের কাছ থেকেই মূল্যবোধের ভিত্তি রচিত হয়। তরুণদেরকে বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা করতে পরিবারই মুখ্য ভূমিকা রাখতে পারে। তাই প্রশ্নের উক্তিটি যথার্থ।
৪. সুমি অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে। সামনে তার জেএসসি পরীক্ষা। কিন্তু পড়ালেখার চেয়ে অধিকাংশ সময় সে কম্পিউটারে গেমস খেলে এবং ফোনে বান্ধবীদের সাথে কথা বলে সময় অতিবাহিত করে থাকে। এসব নিয়ে সুমির মা তার সাথে রাগারাগি করলে সুমি উত্তেজিত হয়ে পড়ে এবং মার সাথে খারাপ আচরণ করে।
ক. কত বছর বয়সের ছেলেমেয়েরা খিটখিটে মেজাজের হয়?
খ. তারুণ্যের আবেগের বিকাশে পরিবেশ কীরূপ ভূমিকা রাখে?
গ. উদ্দীপকের সুমির মাঝে তারুণ্যের আবেগ কীভাবে প্রকাশ পেয়েছে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকের সুমির ব্যবহারের জন্য তার বয়সই দায়ী- বিশ্লেষণ কর।
৪ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. ১৪ বছর বয়সের ছেলেমেয়েরা খিটখিটে মেজাজের হয়।
খ. তারুণ্যের আবেগের বিকাশে পরিবেশ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তারুণ্যে ছেলেমেয়েদের দৈহিক পরিবর্তন আবেগ প্রকাশের ক্ষেত্রে নতুন মাত্রা যোগ করে। প্রতিকূল পারিবারিক ও সামাজিক পরিস্থিতি অনেক সংকটের সৃষ্টি করে। অনুকূল পরিবেশেই তারুণ্যের আবেগের সুষ্ঠু বিকাশ হয়। প্রতিকূল পরিবেশে লালিত শিশু হীনম্মন্যতায় ভোগে বা অপরাধপ্রবণ হয়। তাই বলা যায়, তারুণ্যের আবেগের বিকাশে পরিবেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
গ. উদ্দীপকের সুমির মাঝে তারুণ্যের আবেগ তার অনিয়ন্ত্রিত আচরণের মাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে।
তারুণ্যের প্রথম পর্যায়ে ছেলেমেয়েদের দৈহিক পরিবর্তনের ফলে আবেগ প্রকাশের ক্ষেত্রে নতুন মাত্রা যোগ হয়। ১৪ বছর বয়সি ছেলেমেয়েরা খিটখিটে মেজাজের হয় এবং সহজেই উত্তেজিত হয়ে পড়ে। উদ্দীপকের সুমির এ ধরনের অনিয়ন্ত্রিত আচরণেই তার আবেগের বহিঃপ্রকাশ ঘটায়। এবংবষষ ও অন্য গবেষকদের বিবরণ অনুযায়ী ১৪ বছর বয়সি ছেলেমেয়েরা খিটখিটে মেজাজের হয়। তারা সহজেই উত্তেজিত হয় এবং নিজেদের আবেগময় অনুভূতি নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা না করে আবেগে ফেটে পড়ে। রেগে গেলে তরুণ-তরুণীরা চেঁচামেচি করা ছাড়াও অভিমান করে। তাদের এরকম উত্তেজিত হওয়া তারুণ্যের অতিরিক্ত আবেগেরই বহিঃপ্রকাশ ঘটায়। বয়স বাড়ার সাথে সাথে ছেলেমেয়েদের মধ্যে আবেগ নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা জন্মায়। তবে ১৪ বছর বয়সি ছেলেমেয়েদের মধ্যে এ আবেগ অতিরিক্ত মাত্রায় বিদ্যমান থাকে। উদ্দীপকের সুমিও এ বয়সি হওয়ায় তার মাঝেও এ ধরনের আচরণ পরিলক্ষিত হয়।
তাই তার বয়সি ছেলেমেয়েরা সহজেই উত্তেজিত হয় এবং ক্রোধে ফেটে পড়ে।
ঘ. উদ্দীপকের সুমি অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে। তার বয়স ১৪ বছরের কাছাকাছি হওয়ায় তার আচরণের জন্য তার বয়সকেই দায়ী করা যায়। তারুণ্য সম্পর্কে সমাজে একটি ধারণা প্রচলিত রয়েছে যে, এটি ঝড়ঝঞ্ঝার বয়স, মানসিক পীড়ন ও বিপর্যয়ের সময়, এ সময়ে ছেলেমেয়েরা অধিক খিটখিটে মেজাজের অধিকারী হয়। উদ্দীপকের সুমি অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে। সে লেখাপড়া বাদ দিয়ে অন্য কাজে সময় বেশি অতিবাহিত করে, মায়ের সাথে খারাপ আচরণ করে। তার এরূপ অনিয়ন্ত্রিত আচরণের জন্য মূলত বয়সই দায়ী। তরুণ-তরুণীরা সহজেই উত্তেজিত হয় এবং নিজেদের আবেগময় অনুভূতি নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা না করে আবেগে ফেটে পড়ে। তারুণ্যের দ্বিতীয় পর্যায়ে তারা আবেগ নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা অর্জন করে। অতএব দেখা যায় যে, উক্ত বয়সি ছেলেমেয়েরা আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না বলে উত্তেজিত হয়ে খারাপ ব্যবহার শুরু করে। তাই বলা যায়, উদ্দীপকের সুমির ব্যবহারের জন্য তার বয়সই দায়ী।
৫. সাজ্জাদের অধিকাংশ সময় কাটে তার সমবয়সি বন্ধুদের সাথে। ইদানীং সে ধূমপানে আসক্ত হয়ে পড়েছে। বাসায় বাবা-মার কাছে যেন ধরা পড়ে না যায় সে ব্যাপারে সাজ্জাদ বেশ সচেতন। কিন্তু মা তার আচরণিক পরিবর্তন ধরে ফেলেন। মার সাথে তার সম্পর্কও এখন আর আগের মতো স্বাভাবিক নেই।
ক. অভিযোজনের সংকট সময় কাল কোনটি?
খ. সামাজিক কর্মকান্ড- অংশগ্রহণ করলে তরুণদের মাঝে কীরূপ পরিবর্তন দেখা দিবে?
গ. উদ্দীপকের সাজ্জাদের সামাজিক অভিযোজনে কোন বিষয়টির কুপ্রভাব লক্ষণীয়? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকের সাজ্জাদের আচরণে পরিবারের চেয়ে বাস্তব জগতের প্রভাবই বেশি পরিলক্ষিত হয়- মন্তব্যটির যথার্থতা যাচাই কর।
৫ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. অভিযোজনের সংকটময় কাল হচ্ছে তারুণ্য।
খ. সামাজিক কর্মকান্ড- অংশগ্রহণ করলে তরুণদের সামাজিক আচরণ পরিবর্তিত হবে এবং তাদের সামাজিক অন্তর্দৃষ্টি উন্নত হবে। তরুণ-তরুণীরা যত বেশি সামাজিক কর্মকান্ড যেমন- নৃত্য, গান, আড্ডা, খেলাধুলা ইত্যাদিতে অংশগ্রহণ করে তাদের সামাজিক নৈপুণ্য অর্জনের ক্ষমতাও তত বেশি থাকে। এর ফলে তাদের সামাজিক অভিযোজনও সহজতর হয়। তাই বলা যায়, সামাজিক কর্মকান্ড- অংশগ্রহণ করলে তরুণদের মাঝে ইতিবাচক পরিবর্তন দেখা দিবে।
গ. উদ্দীপকের সাজ্জাদের সামাজিক অভিযোজনে সমবয়সি দলের কুপ্রভাব লক্ষণীয়।
সামাজিক অভিযোজন তরুণ বয়সের সবচেয়ে কঠিন একটি বিকাশমূলক কাজ। এটি অভিযোজনের সংকটময় কাল। এ সময় সমবয়সি দলের যথেষ্ট প্রভাব পড়ে। উদ্দীপকের সাজ্জাদের আচরণের এরূপ পরিবর্তন তার সমবয়সি দলের কুপ্রভাবকেই ফুটিয়ে তোলে। তরুণ বয়সের ছেলেমেয়েরা প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার জন্য দিনের অধিকাংশ সময় কাটায় গৃহের বাইরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ও বন্ধুদের সাথে। সে কারণে তাদের মনোভাব, কথাবার্তা, আগ্রহ ও আচরণের ওপর পরিবারের চেয়ে সমবয়সি দলের প্রভাব বেশি পরিলক্ষিত হয়। একইভাবে মদ্যপান, মাদকদ্রব্য সেবন, ধূমপানের প্রতি তারা যে মনোভাব পোষণ করে তা দলের প্রভাবে বা কৌতূহলবশত পরে সেটি অভ্যাসে পরিণত হয়। তরুণ-তরুণীদের সঙ্গ যদি খারাপ হয় তবে এর কুপ্রভাব পড়ে তাদের সামাজিক অভিযোজনের ওপর।
ঘ. উদ্দীপকের সাজ্জাদের আচরণে পরিবারের চেয়ে বাস্তব জগৎ তথা সমবয়সিদের প্রভাবই বেশি পরিলক্ষিত হয়- মন্তব্যটি যথার্থ।
তরুণ বয়সের সবচেয়ে কঠিন বিকাশমূলক কাজ হলো সামাজিক অভিযোজন। এ সময় তরুণ-তরুণীরা অধিকাংশ সময় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ও বন্ধুদের সাথেই সময় কাটায়। তাই তাদের আচরণে বাস্তব জগৎ বা সমবয়সি দলের প্রভাবই বেশি পরিলক্ষিত হয়। উদ্দীপকের সাজ্জাদের অধিকাংশ সময় কাটে তার সমবসয়সী বন্ধুদের সাথে। তার আচরণে পরিবারের প্রভাব অনুপস্থিত এবং বাস্তব জগৎ বা সমবয়সিদের প্রভাব স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। তরুণ বয়সের ছেলেমেয়েরা দিনের অধিকাংশ সময় কাটায় গৃহের বাইরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ও বন্ধুদের সাথে। সমবয়সি দল তরুণ-তরুণীর জীবনে একটি বাস্থ ব জগৎ। তাই তরুণদের জীবনে সমবয়সি দলের যথেষ্ট প্রভাব থাকে। তরুণ-তরুণীর জীবনে সমবয়সি দলের সুপ্রভাব বা কুপ্রভাব উভয়ই দেখা যায়। উপরিউক্ত আলোচনায় আমরা দেখতে পাচ্ছি সাজ্জাদের আচরণে পরিবারের চেয়ে বাস্থ ব জগতের প্রভাবই বেশি। এ কারণে প্রশ্নের মন্তব্যটি যথার্থ।
৬. নাহিদা তার বন্ধুমহলে বেশ জনপ্রিয় এবং শিক্ষক- শিক্ষিকাদের কাছেও বেশ সমাদৃত। তার আচার-ব্যবহার, পোশাক-পরিচ্ছদ সকলকে আকৃষ্ট করে। সবদিক বিচার করে তাকে ভি.পি হিসেবে নির্বাচিত করা হলো। কলেজের কেবিনেটে গুরুত্বপূর্ণ পদ পাওয়ায় নাহিদা যেমন খুশি তৈমনি তার সহপাঠীরাও আনন্দিত।
ক. তারুণ্যের শেষদিকে কী ধরনের খেলাধুলার প্রতি আগ্রহ কমে যায়?
খ. তারুণ্যে বন্ধুত্ব তৈরি হয় কিসের ভিত্তিতে? বুঝিয়ে লেখ।
গ. উদ্দীপকের নাহিদাকে নেতৃত্ব দানের জন্য উপযুক্ত মনে করার কারণ ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকে নাহিদা সুষ্ঠু পারিবারিক পরিবেশ পাওয়ায় তার সামাজিক অভিযোজনও সুষ্ঠু হয়েছে- মন্তব্যটির যথার্থতা বিচার কর।
৬ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. তারুণ্যের শেষদিকে পরিশ্রম সাপেক্ষ খেলাধুলার প্রতি আগ্রহ কমে যায়।
খ. তারুণ্যে বন্ধুত্ব তৈরি হয় আগ্রহ ও মূল্যবোধের ভিত্তিতে। একই স্কুলে কিংবা একই এলাকায় বসবাস করার ফলে সান্নিধ্য বৃদ্ধি পায় এবং ছোট ছেলেমেয়েদের মধ্যে বন্ধুত্ব তৈরি হয়। কিন্তু তারুণ্যে দুই জনের মধ্যে তখনই বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে, যখন পরস্পরের আগ্রহ ও মূল্যবোধের মধ্যে সাদৃশ্য থাকে। এক্ষেত্রে একে অন্যকে বুঝতে পারে এবং একে অপরের সান্নিধ্যে নিরাপদ বোধ করে। তারুণ্যে বন্ধু নির্বাচনের ক্ষেত্রে নতুন মূল্যবোধের উদ্ভব ঘটে। এর ভিত্তিতেই তারুণ্যে বন্ধুত্ব তৈরি হয়।
গ. উদ্দীপকের নাহিদাকে নেতৃত্ব দানের জন্য উপযুক্ত মনে করার কারণ হলো তার গুণাবলি।
তরুণ-তরুণীদের মধ্যে সে সমাজের কাছে নিজেদের পরিচয় তুলে ধরে এমন ব্যক্তিকে সকলে নেতা হিসেবে দেখতে পছন্দ করে। নেতা হিসেবে তরুণ-তরুণীরা তাকেই দেখতে চায় যে উন্নত বুদ্ধিমত্তার অধিকারী, সবার প্রশংসা পাওয়ার যোগ্য ও শ্রদ্ধার পাত্র। উদ্দীপকের নাহিদাও তার বন্ধুমহলে বেশ জনপ্রিয় এবং শিক্ষক-শিক্ষিকাদের কাছেও বেশ সমাদৃত। কলেজের কেবিনেটে নাহিদার গুরুত্বপূর্ণ একটি পদ পাওয়ার পিছনে তার গুণাবলিই মুখ্য ভূমিকা রেখেছে। তরুণ-তরুণীদের মধ্যে যে সমাজের কাছে নিজেদের পরিচয় তুলে ধরতে পারে তাকেই সবাই নেতা হিসেবে দেখতে পছন্দ করে। নেতা হয় সবার প্রশংসা পাওয়ার যোগ্য ও শ্রদ্ধার পাত্র। পোশাক সচেতন তরুণ-তরুণীদের কাছে নেতার আকর্ষণীয় চেহারা ও পোশাকের পরিপাট্য আবশ্যকীয় বিষয় হিসেবে ভূমিকা রাখে। এছাড়াও নেতার বুদ্ধি, শিক্ষাগত যোগ্যতা ও পরিপক্বতার মাত্রা গড় মানের উপরে থাকতে হবে। এসব গুণাবলির ভিত্তিতেই তরুণ-তরুণীরা তাদের নেতা নির্বাচন করে থাকে।
ঘ. উদ্দীপকের নাহিদা সুষ্ঠু পারিবারিক পরিবেশে বেড়ে উঠেছে বলেই তার মধ্যে সকল গুণাবলির সুষ্ঠু বিকাশ ঘটেছে এবং সামাজিক অভিযোজনও যথার্থ হয়েছে।
সামাজিক অভিযোজন তরুণ বয়সের সবচেয়ে কঠিন একটি বিকাশমূলক কাজ। তারুণ্য হচ্ছে অভিযোজনের সংকটময় কাল। সৃষ্ট পারিবারিক পরিবেশে বেড়ে উঠলে তরুণ-তরুণীদের সামাজিক অভিযোজন যথার্থ হয়। উদ্দীপকের নাহিদার মাঝে এমন অনেক। গুণাবলি রয়েছে, যার কারণে সে তার বন্ধুমহল এবং শিক্ষক- শিক্ষিকার কাছে বেশ সমাদৃত। তার সামাজিক অভিযোজন সুষ্ঠু হয়েছে। বলেই সে সহজে সকলকে আকৃষ্ট করতে পারে। নেতৃস্থানীয় তরুণ- তরুণীর গুরুত্বপূর্ণ একটি বৈশিষ্ট্য হলো তার ব্যক্তিত্ব। যেসব তরুণ- তরুণী সুষ্ঠু পারিবারিক পরিবেশে বেড়ে ওঠে তাদের সামাজিক অভিযোজনও সুষ্ঠু হয়। তারা বন্ধুসুলভ সহযোগিতামূলক আচরণ প্রদর্শন করে এবং সহজেই সমবয়সি ও অন্য সকলকে আকর্ষণ করতে পারে। উপরিউক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, যেসব তরুণদের সামাজিক অভিযোজন যথার্থ হয় তারাই সহজে সকলের ভালোবাসার পাত্র হতে পারে। উদ্দীপকের নাহিদার ক্ষেত্রে এ বিষয়ের প্রত্যক্ষ প্রমাণ পাওয়া যায়। তাই বলা যায়, প্রশ্নের মন্তব্যটি যথার্থ।
৭. নাদিয়ার বাবা একজন আদর্শ শিক্ষক। তিনি সবসময় তার মেয়েকে যথার্থ শিক্ষা প্রদান করেন। নাদিয়ার মাও নাদিয়াকে নৈতিক ও ধর্মীয় শিক্ষা দিয়ে থাকেন। বাবা-মায়ের কাছ থেকে উপযুক্ত জ্ঞান লাভ করায় নাদিয়াও যেকোনো অন্যায় দেখলে প্রতিবাদ করে। কেউ বিপদে পড়লে সবার আগে সে সাহায্য করতে ছুটে যায়। যেকোনো ভুল করলে সে সহজেই তা স্বীকার করে নেয় এবং তা শোধরানোর চেষ্টা করে।
ক. নৈতিকতার চালিকাশক্তি কী?
খ. তরুণদের ক্ষেত্রে Cognitive growths-এর প্রভাব বুঝিয়ে লেখ।
গ. উদ্দীপকের নাদিয়ার মাঝে নৈতিক আচরণের কীরূপ পরিবর্তন লক্ষ করা যায়? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকের নাদিয়ার মধ্যবিত্ত পরিবার ও বিবেকের উন্মেষই তার আচরণকে নিয়ন্ত্রিত করেছে- মন্তব্যটির যথার্থতা বিচার কর।
৭ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. নৈতিকতার চালিকাশক্তি হলো বিবেক।
খ. তরুণদের ক্ষেত্রে নৈতিক উন্নতির সাথে সাথে অন্য আরোও একটি বিষয় ওতপ্রোতভাবে জড়িত এবং সেটি হলো Cognitive growths। এটি দ্বারা তাদের চিন্তাধারার বৃদ্ধিকে বোঝায়। এ বয়সে তরুণরা সমস্যাকে ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে দেখে, বিশ্লেষণ করে এবং সে অনুযায়ী সমাধানের উপায় খোঁজে। এ সময় তরুণদের ন্যায়-অন্যায় সম্পর্কে জ্ঞান বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং অন্যায় প্রতিরোধ করতে শেখে। তাই তরুণদের নৈতিক মূল্যবোধ বৃদ্ধিতে IleumCognitive grotths -এর প্রভাব অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।
গ. উদ্দীপকের নাদিয়ার মাঝে নৈতিক আচরণের ইতিবাচক পরিবর্তন লক্ষ করা যায়।
সমবয়সি দলের ভালোমন্দের প্রতি জ্ঞান অর্জন এবং দলের প্রত্যাশা অনুযায়ী নিজ আচরণে পরিবর্তন আনা তারুণ্যের নৈতিক আচরণের প্রথম ধাপ। এক্ষেত্রে সুষ্ঠু পারিবারিক পরিবেশের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। বাবা-মায়ের কাছ থেকে উপযুক্ত জ্ঞান লাভ করায় উদ্দীপকের নাদিয়ার নৈতিক আচরণেও ইতিবাচক পরিবর্তন দেখা যায়। অন্যায় দেখলে প্রতিবাদ করা, যেকোনো মানুষের বিপদে ছুটে আসা, ভুল করলে সহজে স্বীকার করে তা শোধরানোর চেষ্টা করা ইত্যাদি এরই প্রমাণ বহন করে। তারুণ্যে নৈতিক আচরণে নানা ধরনের পরিবর্তন লক্ষ করা যায়। এসব পরিবর্তনের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ন্যায়-অন্যায় বিচার করার ক্ষমতা অর্জন, নৈতিক সমস্যা সমাধান করার যোগ্যতা অর্জন এবং কর্তব্য সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি হওয়া। নৈতিকতার চালিকাশক্তি হচ্ছে, বিবেক। বিবেক জাগ্রত হলেই মানুষের মাঝে অন্যকে সাহায্য করার বোধ তৈরি হয়। উদ্দীপকে নাদিয়ার বাবা নাদিয়াকে নৈতিক শিক্ষা দিয়েছেন- ফলশ্রুতিতে নাদিয়ার আচরণের মধ্যেও নৈতিক আচরণের ইতিবাচক দিকগুলোই ফুটে উঠেছে। মধ্যবিত্ত পরিবারের তরুণদের মাঝে ন্যায়-অন্যায়ের সম্পর্কিত ধারণা অত্যন্ত স্পষ্ট থাকে। তাই তাদের নৈতিক আচরণের ইতিবাচক পরিবর্তন হয়ে থাকে।
ঘ. উদ্দীপকের নাদিয়ার মধ্যবিত্ত পরিবারের শিক্ষা তার বিবেকের উন্মেষ ঘটিয়েছে বলেই সে নিজের আচরণকে নিয়ন্ত্রিত ও পরিশীলিত করতে পেরেছে।
সমাজ নির্ধারিত সকল রীতিনীতি অনুযায়ী ভালোমন্দ বিচারবুদ্ধি ও লোভ প্রতিহত করাই হলো নৈতিকতা। নিজ আচরণে কাঙি্ক্ষত পরিবর্তন আনাই হলো তারুণ্যের নৈতিক আচরণের প্রথম ধাপ। এ সময় তারুণ্যের নৈতিক আচরণের নানা পরিবর্তন আসে। মধ্যবিত্ত পরিবারের তরুণ-তরুণীদের মাঝে ন্যায়-অন্যায়ের সম্পর্কে ধারণা অত্যন্ত স্পষ্ট থাকে। বিবেকের উন্মেষ ঘটলেই তরুণ-তরুণীরা নিজেদের আচরণকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। উদ্দীপকের নাদিয়ার বাবা একজন আদর্শ শিক্ষক তিনি সবসময় তার মেয়েকে যথার্থ শিক্ষা প্রদান করে থাকেন। নাদিয়ার মাও তাকে নৈতিক ও ধর্মীয় শিক্ষা দিয়ে থাকেন। এতে নাদিয়ার বিবেকের উন্মেষ ঘটেছে বলেই কেউ বিপদে পড়লে সে সবার আগে ছুটে যায়। তারুণ্যে নৈতিক আচরণে যেসব পরিবর্তন দেখা দেয় তার মধ্যে অন্যতম হলো ন্যায়-অন্যায়ের মধ্যে পার্থক্য করতে পারা। মধ্যবিত্ত পরিবারের তরুণ-তরুণীদের মধ্যে এ সম্পর্কিত ধারণা অত্যন্ত সুস্পষ্ট থাকে। নৈতিকতার চালিকাশক্তি হলো বিবেক। বিবেকের উন্মেষ ঘটলে তারুণ্যে আচরণকে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়। এটা এমন একটি মানসিক ক্ষমতা, যা বাইরের নিয়ন্ত্রণমুক্ত। অতএব দেখা যায় যে, নৈতিকতার বিকাশ ও বিবেকের উন্মেষ ঘটলেই তরুণ ছেলেমেয়েরা তাদের আচরণ নিয়ন্ত্রণ করে ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারে। উদ্দীপকে নাদিয়ার ক্ষেত্রে এরই প্রত্যক্ষ প্রমাণ পাওয়া যায় বলে প্রশ্নের মন্তব্যটি যথার্থ।
৮. রাসেলের সাথে তার বন্ধুদের সম্পর্ক বেশ ভালো। তারা ছেলেমেয়ে সবাই বন্ধু। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ছেলেদের থেকেও মেয়ে বন্ধুদের কাছ থেকে সে পড়াশুনার ব্যাপারে বেশি সাহায্য পায়। রাসেলের কাছে এটা খুব স্বাভাবিক ব্যাপার হলেও তার মা এটা মোটেও পছন্দ করেন না। তাই মায়ের সাথে রাসেলের মতবিরোধ হয়। রাসেলের মনে এখন একটাই কষ্ট যে, তার মা তাকে বুঝতে পারে না। পরিবারের সবাইকেই সে এখন নিজের বিপক্ষ বলে ভাবে।
ক. মা-বাবা তরুণদের কী ধরনের আচরণে বিরক্ত হন?
খ. তরুণদের সাথে পরিবারের সম্পর্কের অবনতি ঘটাতে Generation Gap কীভাবে দায়ী?
গ. উদ্দীপকের রাসেলের সাথে তার মায়ের সম্পর্কের অবনতির জন্য কোন কারণটি দায়ী? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকের রাসেলের কষ্ট লাঘবে রাসেল ও তার পরিবার উভয়কেই সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে- বিশ্লেষণ কর।
৮ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. মা-বাবা তরুণদের শিশুসুলভ আচরণে বিরক্ত হন।
খ. তরুণদের সাথে পরিবারের সম্পর্কের অবনতি ঘটাতে Generation Gap অনেকাংশে দায়ী। ছেলেমেয়েদের বেড়ে ওঠার সাথে সাথে তাদের যোগ্যতার বিষয়ে মা-বাবা নিজেদের ধারণার পরিবর্তন করেন না। ফলে তরুণ ছেলেমেয়ের সাথে শিশুর মতো আচরণ করেন। আবার কখনো কখনো বাবা-মা চান যে, ছেলেমেয়ে পূর্ণবয়স্ক ব্যক্তির মতো দায়িত্বশীল হোক। নবীন-প্রবীণের মাঝে দৃষ্টিভঙ্গির ব্যবধান বা এবহবৎধঃরড়হ এধঢ় এক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব রাখে। তরুণ-তরুণীদের পরিবর্তনশীল সমাজে তাদের মা-বাবার চেয়ে সামাজিক, সাংস্কৃতিক, সৃজনশীল চিন্তাধারায় অগ্রসর হওয়ায় এ ধরনের ব্যবধান তৈরি হয়। ফলে মতের মিল না হওয়ায় তরুণদের সাথে পরিবারের সম্পর্কের অবনতি ঘটে।
গ. উদ্দীপকের রাসেলের সাথে তার মায়ের সম্পর্কের অবনতির জন্য সংস্কৃতিগত পার্থক্যের কারণটি দায়ী।
তরুণ বয়সের ছেলেমেয়েদের সাথে পরিবারের সদস্যদের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক থাকা আবশ্যক। যদি সম্পর্কের অবনতি ঘটে তবে সেজন্য দুই পক্ষই দায়ী। এক্ষেত্রে সংস্কৃতিগত পার্থক্য বেশ প্রভাব রাখে। উদ্দীপকের রাসেল আধুনিক যুগের ছেলে। তারা ছেলেমেয়ে সবাই বন্ধু। রাসেলের কাছে এটা খুব স্বাভাবিক ব্যাপার কিন্তু রাসেলের মা এ বিষয়টিকে পছন্দ করেন না বলে রাসেলের তাই অভিযোগ যে, তার মা তাকে বুঝতে পারে না। তাদের দুই জনের মধ্যে মতবিরোধ সৃষ্টি হওয়ার কারণ হলো সংস্কৃতির পার্থক্য। রাসেলের কাছে যা স্বাভাবিক তাতে রাসেলের মা অভ্যস্ত নন। তরুণ বয়সের ছেলেমেয়েরা মনে করে, মা-বাবা সেকেলে বা Back dated। বয়সের ব্যবধানের চেয়ে সংস্কৃতিগত পার্থক্য এর আসল কারণ হলো যেসব বিধিনিষেধ মা-বাবা অপরিহার্য বলে মনে করেন তরুণ ছেলেমেয়েরা সেগুলোর বিরোধিতা করে। ফলে উভয় পক্ষের মধ্যে মতবিরোধ সৃষ্টি হয় এবং সন্তানের সাথে মাতা-পিতার সম্পর্কের অবনতি ঘটে। তাই তারা অভিযোগ করে যে, মা-বাবা তাদের বোঝে না। এ পরিস্থিতিতে উভয় পক্ষকেই অগ্রসর হয়ে সমস্যা সমাধান করতে হবে।
ঘ. উদ্দীপকের রাসেলের কষ্ট লাঘবে রাসেল এবং তার পরিবার উভয়কেই সক্রিয় ভূমিকা রাখতে হবে যেন সমস্যা সমাধান হয়।
তরুণ বয়সের ছেলেমেয়েদের সাথে পরিবারের সদস্যদের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক থাকা আবশ্যক। অন্যথায় তারুণ্যের বিপর্যয় ঘটার সম্ভাবনা থাকে। এক্ষেত্রে উভয় পক্ষকেই কুশলী ও সহনশীল হতে হবে। তরুণদের যেমন মা-বাবার মনোভাব বুঝতে হবে তেমন মা-বাবাকেও তরুণ-তরুণীর মনোভাব বুঝতে হবে। উদ্দীপকের রাসেলের সাথে তার বন্ধুদের সম্পর্ক বেশ ভালো। তারা ছেলেমেয়ে সবাই বন্ধু। কিন্তু রাসেলের মায়ের কাছে এ বিষয়টি পছন্দসই না হওয়ায় ছেলের সাথে তার মতবিরোধ সৃষ্টি হয়। এ পরিস্থিতি সৃষ্টিতে সংস্কৃতিগত পার্থক্য মুখ্যত দায়ী। রাসেলের মনে তাই কষ্ট যে, তার মা তাকে বোঝে না। এক্ষেত্রে রাসেল ও তার পরিবার উভয়কেই অগ্রণী ভূমিকা রাখতে হবে। বাবা-মায়ের সাথে তরুণ বয়সের ছেলেমেয়েদের সম্পর্কের অবনতিতে কেবল বাবা-মা কিংবা কেবল তরুণ-তরুণীরা দায়ী নয়। তরুণ-তরুণীদের ব্যাপারে মা-বাবা নিজেদের ধারণার পরিবর্তন করেন না। আবার তরুণ-তরুণীদের খামখেয়ালি ও একগুঁয়েমি বাবা-মায়ের পক্ষে মেনে নেওয়া কষ্টকর। তাই উভয় পক্ষকেই প্রত্যাশিত আচরণ করতে হবে এবং একে অপরকে বুঝতে হবে। তাই বলা যায়, উদ্দীপকের রাসেলের কষ্ট লাঘবেও রাসেল ও তার পরিবার উভয়কেই সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে।
৯. আরিফের এখন বাবার কাছ থেকে টাকা চেয়ে নিতে ভালো লাগে না। তাই সে যেকোনো কাজ সন্ধান করছে। কাজ করে অর্থ আয় করার ভাবনাই এখন ঘোরপাক খাচ্ছে তার মাথায়। এ ব্যাপারে সে তার বড় ভাইয়ের সাথে আলাপ করলে ভাই তাকে আরোও অনেক অজানা বিষয় সম্পর্কে ধারণা দিলেন যেগুলো চাকরি পাওয়ার জন্য জরুরি।
ক. পেশা বলতে কী বোঝায়?
খ. প্রাক-শৈশবকালে শিশুরা সঠিক জীবিকা নির্বাচন করতে পারে না কেন?
গ. উদ্দীপকের আরিফের মাঝে জীবিকা নির্বাচনের চিন্তাভাবনা দেখা দেওয়ার কারণ ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকের আরিফ তার বড় ভাইয়ের কাছ থেকে যেসব কথা জানল সেগুলো পরবর্তীতে তাকে উদ্বিগ্ন করতে পারে- বিশ্লেষণ কর।
৯ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. পেশা বলতে নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য, দক্ষতা, নৈপুণ্য এবং মর্যাদাসম্পন্ন কোনো বিশেষ বৃত্তিকে বোঝায়।
খ. প্রাক-শৈশবকালে শিশুদের বয়স অপরিণত থাকায় তারা সঠিক জীবিকা নির্বাচন করতে পারে না। প্রাক-শৈশবকালে একটি শিশু মা- বাবার পেশা, পাঠ্যপুস্তক, প্রচার মাধ্যম প্রভৃতির মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহের পন্থা সম্পর্কে অবহিত হয়। এছাড়া পরিবারের সদস্যরা নানাবিধ জীবিকা সম্পর্কে ছেলেমেয়েদের অবহিত করে। বয়স ও অভিজ্ঞতার দিক থেকে অপরিণত ও অনভিজ্ঞ থাকায় তারা সুচিন্তিতভাবে সঠিক জীবিকা নির্বাচন করতে পারে না।
গ. উদ্দীপকের আরিফের মাঝে জীবিকা নির্বাচনের চিন্তাভাবনা দেখা দেওয়ার কারণ হলো তার অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়ার ইচ্ছা। তারুণ্যের শেষভাগে এসে ছেলেমেয়েরা তাদের ভবিষ্যৎ পেশা সম্পর্কে গভীরভাবে চিন্তা করে। তরুণ বয়সে শারীরিক, মানসিক ও আবেগিক পরিপক্কতা আসায় পেশা ভাবনা দেখা যায়। এ সময় তারা চলাফেরার স্বাধীনতার পাশাপাশি অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হতে চায়। উদ্দীপকের আরিফ একজন তরুণ। তার মধ্যে এখন অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়ার ইচ্ছা দেখা দিয়েছে। তাই তার মধ্যে জীবিকা চিন্তা দেখা দিয়েছে। সে যেকোনো কাজ সন্ধান করছে, যেন কাজ করে অর্থ আয় করতে পারে। শৈশব থেকেই একজন ব্যক্তি জীবিকা নির্বাচনের তাগিদ অনুভব করে। তবে তারুণ্যের শেষভাগে ছেলেমেয়েরা তাদের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে গভীরভাবে চিন্তিত হয়। তরুণ বয়সে শারীরিক, মানসিক, আবেগিক পরিপক্বতা আসায় তাদের মধ্যে পেশা নিয়ে ভাবনা দেখা যায়। এ বয়সে ছেলেমেয়েরা চলাফেরায় স্বাধীনতা চায় এবং অর্থনৈতিকভাবেও স্বাবলম্বী হতে চায়। অর্থনৈতিক স্বাবলম্বিতা অর্জনের ইচ্ছা থেকেই তরুণদের মধ্যে জীবিকা নির্বাচনের চিন্তাভাবনা ও প্রস্থুতি দেখা দেয়। তরুণ বয়সই তাদের মধ্যে এ দায়িত্ববোধ তৈরি করে দেয়।
ঘ. উদ্দীপকের আরিফকে তার বড় ভাই চাকরি পাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় নানা বিষয় সম্পর্কে যে ধারণা দিল তা পরবর্তীতে আরিফকে উদ্বিগ্ন করতে পারে।
পেশা বা বৃত্তি জীবনে অর্থনৈতিক নিরাপত্তা দেয়, প্রতিষ্ঠা আনে এবং সম্মান দেয়। তরুণ বয়সে ছেলেমেয়েরা চলাফেরায় স্বাধীনতা চায় এবং অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়ার ইচ্ছা পোষণ করে। কৈশোরের শেষ পর্যায়ে এবং তারুণ্যের সূচনায় বিভিন্ন পেশা সম্পর্কে প্রচলিত ধারণা অর্জিত হয়। এরপর যৌবনে পদার্পণ এবং চাকরি করার বিভিন্ন যোগ্যতার কথা ভেবে তারা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে। উদ্দীপকের আরিফের মধ্যে অর্থনৈতিক স্বাবলম্বিতা অর্জনের চিন্তা দেখা দিয়েছে। তাই সে যেকোনো কাজ করে অর্থ আয় করতে চায়। এ ব্যাপারে সে তার বড় ভাইয়ের সাথে কথা বলতেই ভাই তাকে চাকরি পাওয়ার জন্য দরকার এমন আরোও অনেক অজানা তথ্য জানাল। আরিফের মনে এসব বিষয় উদ্বেগ সৃষ্টি করতে পারে। চাকরি করার পূর্বে উক্ত চাকরি করার যোগ্যতা আছে কিনা এবং সে যোগ্যতা অর্জনের জন্য প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ গ্রহণ করার বিষয় ইত্যাদি বিবেচনা করতে হয়। পেশা নির্বাচনের ক্ষেত্রে পেশাগত মর্যাদা বিশেষ প্রাধান্য লাভ করায় চাকরি গ্রহণের পূর্বেই ছেলেমেয়েরা প্রতিযোগিতামূলক নিয়োগ পরীক্ষা, চাকরির সুযোগ-সুবিধা, স্বাধীনতা, কর্তৃত্ব ও নিরাপত্তা ইত্যাদি শর্ত তরুণদের উদ্বিগ্ন করে তুলে। উপরিউক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে তাই বলা যায় যে, উদ্দীপকের আরিফও তার বড় ভাইয়ের কাছ থেকে এসব শর্তের কথা শুনে উদ্বিগ্ন হতে পারে।
১০. টেলিভিশনে প্রচারিত ভারতীয় চ্যানেলের একটি নাটক দেখে সুজন প্রেম নিবেদন করার এক অভিনব কৌশল শিখল। কলেজের যে মেয়েটিকে তার ভালো লাগত। কোনো কথাবার্তা ছাড়াই তাকে সে প্রেমের প্রস্থ াব দিত। মেয়েরা তার এ উদ্ভট আচরণে খুবই বিরক্ত হতো। কিন্তু তাতে সুজনের মধ্যে কোনো অনুশোচনা না দেখে ঈড়ষষবমব কর্তৃপক্ষ তার বাবা-মাকে নালিশ করল।
ক. সমাজবিরোধী কাজ কী?
খ. প্রতিকূল পারিবারিক পরিবেশ তারুণ্যের বিপর্যয়ে কীভাবে প্রভাব রাখে?
গ. উদ্দীপকের সুজনের বিপর্যয়ের জন্য কোন কারণটি দায়ী? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকের সুজনের মতো তরুণদের বিপর্যয়ে আরোও অনেক কারণ রয়েছে যা উদ্দীপকে অনুপস্থিত বিশ্লেষণ কর।
১০ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. সমাজের অনাকাঙি্ক্ষত কাজগুলোই হলো সমাজবিরোধী কাজ।
খ. তারুণ্য একটি সংকটময় কাল এবং এ সময়ে নানা ধরনের বিপর্যয় দেখা দেয়। প্রতিকূল পারিবারিক পরিবেশ এ ধরনের বির্যয়ের জন্য অনেকাংশে দায়ী। মা-বাবার দাম্পত্য কলহ, তাদের সমাজবিরোধী ও পরস্পরবিরোধী কার্যকলাপ ইত্যাদি সন্তানের মনে দারুণ নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। সন্তানকে শাসনের ক্ষেত্রে মা-বাবার অতিরিক্ত রক্ষণশীল আচরণ, প্রত্যাখ্যান, স্বেচ্ছাচারী মনোভাব, সন্তানের স্বেচ্ছাচারী জীবনযাপন, অসৎ সঙ্গ, শিল্প এলাকায় বসবাস, আত্মবিশ্বাসের অভাব ইত্যাদি বিষয় তারুণ্যের জীবনকে এক চরম অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দেয়। আর এভাবেই প্রতিকূল পারিবারিক পরিবেশের অস্থিরতা থেকে স্বস্থি পেতে এবং নিজের কষ্ট লাঘবের জন্য তরুণরা বিভিন্ন ধরনের অপকর্মে লিপ্ত হয়।
গ. উদ্দীপকের সুজনের বিপর্যয়ের জন্য অপসংস্কৃতির প্রভাব কারণটি দায়ী তারুণ্য একটি সংকটময় কাল। এ সময় নানা ধরনের বিপর্যয় দেখা দেয়। তারুণ্যের বিপর্যয়ের পিছনে নানা ধরনের কারণ রয়েছে। এসব কারণের মধ্যে অপসংস্কৃতির প্রভাব অন্যতম। উদ্দীপকের সুজনের এ বিপর্যয়ের পিছনে অপসংস্কৃতির প্রভাবকেই দায়ী করা যায়। সংস্কৃতি যেমন জীবনকে সুন্দর করে, তেমনি অপসংস্কৃতি জীবনকে ধ্বংস করে। নিজ সংস্কৃতির বাইরে অন্য সংস্কৃতি থেকে যা ধার করা হয়, সেটি যদি আমাদের সংস্কৃতির সাথে বেমানান হয় তবে তাই অপসংস্কৃতি। নিজস্ব সংস্কৃতির বিকৃত রূপই হলো অপসংস্কৃতি। অপসংস্কৃতির জোয়ারে আমাদের তরুণ সমাজ আজ বিপর্যস্থ। সংস্কৃতির চেয়ে অপসংস্কৃতির প্রতিই তাদের আগ্রহ বেশি। এ কারণে তাদের নৈতিকতার অবক্ষয় ঘটছে এবং তারা নানা ধরনের অন্যায় কর্মকান্ড- জড়িয়ে পড়ছে। এভাবেই অপসংস্কৃতির প্রভাবে তারুণ্যের বিপর্যয় ঘটছে।
ঘ. উদ্দীপকের সুজনের মতো তরুণদের বিপর্যয়ে অপসংস্কৃতির বাইরেও আরোও নানা কারণ রয়েছে, যা উদ্দীপকে অনুপস্থিত।
তারুণ্য একটি সংকটময় কাল। এ সময় নানা ধরনের বিপর্যয় দেখা দেয়। তারুণ্যের বিপর্যয়ের পিছনে নানা কারণ রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে- পারিপার্শ্বিক পরিবেশ, নগরায়ণ ও শিল্পায়ন, অপসংস্কৃতি, অর্থনৈতিক বিপর্যয় ইত্যাদি। উদ্দীপকের সুজন ভারতীয় চ্যানেল দেখে প্রেম নিবেদনের অভিনব কৌশল রপ্ত করে এবং কলেজের যে মেয়েটিকে পছন্দ করত তাকেই সে প্রস্থ াব দেয়। সুজনের মতো তরুণের এ অধঃপতনের জন্য অপসংস্কৃতির প্রভাবই দায়ী। তবে তরুণদের বিপর্যয়ের পিছনে এর বাইরেও আরোও অনেক কারণ রয়েছে। এসব কারণের মধ্যে রয়েছে- প্রতিকূল পারিবারিক পরিবেশ, প্রতিকূল সামাজিক পরিবেশ, আদর্শ দৃষ্টান্ত ও মূল্যবোধের অভাব ইত্যাদি। এসব কারণেও তারুণ্যের বিপর্যয় ঘটতে দেখা যায়। অতএব দেখা যায় যে, তারুণ্যের বিপর্যয়ের পিছনে নানা কারণ দায়ী। উদ্দীপকের সুজনের ঘটনায় কেবল অপসংস্কৃতির প্রভাব লক্ষ করা গেলেও অন্যান্য কারণগুলো এখানে অনুপস্থিত। তাই বলা যায়, উদ্দীপকের সুজনদের মতো তরুণদের বিপর্যয়ের যেসব কারণ দায়ী তার একটির, কথা উদ্দীপকে উপস্থিত থাকলেও অন্যগুলো অনুপস্থিত।
0 Comments:
Post a Comment