HSC গার্হস্থ্য বিজ্ঞান ২য় পত্র (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর pdf download অধ্যায় ৫

HSC গার্হস্থ্য বিজ্ঞান ২য় পত্র (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর pdf download
এইচএসসি পরীক্ষার পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি
HSC Home Science 2nd Paper Srijonshil question and answer pdf download.

উচ্চ মাধ্যমিক

গার্হস্থ্য বিজ্ঞান
দ্বিতীয় পত্র

সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
৫ম অধ্যায়

HSC Home Science 2nd Paper
Srijonshil
Question and Answer pdf download

১. সালেহার ৬ মাস বয়সি মেয়ে ইদানীং নানাভাবে তার মনের অভিব্যক্তি প্রকাশ করে। কিছুদিন আগেও সে সুখ-দুঃখের অনুভূতি প্রকাশ করতে পারত না। কিন্তু এখন সে আনন্দিত হলে হাসে, ভয় পেলে কান্না করে এবং মায়ের প্রতি তার ভালোবাসাকে প্রকাশ করতে পারে। সন্তানের এ পরিবর্তন দেখে সালেহা অত্যন্ত খুশি। সবসময় সে তার মেয়ের আশপাশেই থাকে।
ক. বুদ্ধির বিকাশ কিসের মাধ্যমে পরিমাপ করা যায়?
খ. বিকাশের ক্ষেত্রে পরিপক্বতা ও শিক্ষণ কীভাবে ভূমিকা রাখে।
গ. উদ্দীপকের সালেহার মেয়ের কোন ধরনের বিকাশ ঘটেছে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকের সালেহার মেয়ের বিকাশ সাধনে পরিবেশ কি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়? তোমার মতামত প্রদানপূর্বক উত্তর দাও।

১ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. বুদ্ধির বিকাশ বুদ্ধাঙ্ক বা ওছ টেস্টের মাধ্যমে পরিমাপ করা যায়।

খ. পরিপক্বতা ও শিক্ষণ শিশুর গুণগত পরিবর্তন ঘটানোর মাধ্যমে তার বিকাশের ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখে। পরিপক্বতা ও শিক্ষণই শিশুর মধ্যে গুণগত পরিবর্তন ঘটায়। এ পরিবর্তন শিশুর আচরণের মাধ্যমে প্রকাশ পায়। বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে শিশুর অঙ্গ সঞ্চালনের ক্ষমতা বাড়ে। সে হাঁটতে পারে, সাইকেল চালাতে পারে, পড়াশুনা করতে পারে। এসব শক্তি, সামর্থ্য ও দক্ষতা শিশুর বিকাশকেই নির্দেশ করে। শিশুর এরূপ বিকাশ সুনিশ্চিত করতে পরিপক্বতা ও শিক্ষণ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

গ. উদ্দীপকের সালেহার মেয়ের আবেগিক বিকাশ ঘটেছে।
বিকাশ হচ্ছে শিশুর গুণগত পরিবর্তন, যা আচরণের মাধ্যমে প্রকাশ পায়। বিকাশ মানবজীবনের বিভিন্ন দিককে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয়। এসব দিকের মধ্যে রয়েছে শারীরিক, মানসিক, সামাজিক, আবেগিক ও ভাষাগত দিক। এসব দিকের বিকাশের ক্ষেত্রে পরিপক্কতা ও শিক্ষণ অপরিহার্য বিষয়। এগুলোই শিশুর মধ্যে গুণগত পরিবর্তন ঘটায়, যা শিশুর আচরণের মাধ্যমে প্রকাশ পায়। উদ্দীপকের সালেহার মেয়ে বিভিন্ন আচরণের মাধ্যমে তার আবেগের বহিঃপ্রকাশ ঘটাচ্ছে। আবেগজনিত বিকাশ সাধিত হওয়ার ফলেই সে এসব অভিব্যক্তি প্রকাশ করতে পারছে। শিশুদের কোনো দিক থেকে বিকাশ সাধিত হলে তাদের গুণগত পরিবর্তন ঘটে, যা আচরণের মাধ্যমে প্রকাশ পায়। আবেগ ও অনুভূতির বিকাশ শিশুর জীবনকে বৈচিত্র্যময় করে। সে তার আবেগিক বিকাশকে হাসি, কান্না, ভালোবাসা ইত্যাদির মাধ্যমে অপরের কাছে প্রকাশ করে থাকে। এরূপ বিকাশে পরিবেশের ভূমিকাও বেশ গুরুত্বপূর্ণ। পরিপক্বতা ও শিক্ষণের ফলেই শিশুর নানা দিক থেকে বিকাশ সাধিত হয়।

ঘ. হ্যাঁ, উদ্দীপকের সালেহার মেয়ের বিকাশ সাধনে পরিবেশ অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
শিশুর অন্তর্নিহিত শক্তি ও সুপ্ত সম্ভাবনা যখন পারিপার্শ্বিক অবস্থার প্রভাবে বিকশিত হতে থাকে, তখন একে ক্রমবিকাশ বলে অভিহিত করা হয়। শিশুর বেড়ে ওঠার জন্য পারিপার্শ্বিকতার সাথে অভিযোজনের জন্য মানসিক, সামাজিক, বুদ্ধিগত, আবেগীয় ও নৈতিক বিকাশ সাধন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ ধরনের বিকাশে পরিবেশ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। শিশুর বিকাশ সাধিত হলে তার গুণগত পরিবর্তন ঘটে, যা আচরণের মাধ্যমে প্রকাশ পায়। শিশুর বিকাশ নানা দিক থেকে সাধিত হতে পারে। যেমন- শারীরিক, মানসিক, সামাজিক, আবেগিক ও ভাষাগত। এসব বিকাশের ক্ষেত্রে পারিপার্শ্বিক পরিবেশ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। পরিবেশের নানা বিষয় তার দৈনন্দিন বিকাশে প্রভাব রাখে। তাই উদ্দীপকের সালেহার মেয়ের বিকাশ সাধনে আমি পরিবেশকে অতীব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বলে মনে করি।

২. আট বছর বয়সি একটি ছেলে ইমরান। বস্থি এলাকায় পরিবারসমেত বসবাস করে সে। এলাকার বিভিন্ন ধরনের ছেলেদের সাথে মিশে তার আচার-আচরণ বেশ প্রভাবিত হয়েছে। তাদের সাথে থেকেই ইমরান বড়দের সাথে খারাপ ব্যবহার করতে শিখেছে। এমনিক তার ভাষার ব্যবহারও বেশ অশালীন। কোথায়, কার সাথে, কেমন ব্যবহার করতে হবে তা ইমরান জানে না।
ক. শিশুর পরবর্তী জীবনের মূল ভিত্তি কী?
খ. শিশুদের বিকাশের ভিত্তি দুর্বল হতে পারে কেন?
গ. উদ্দীপকের ইমরানের আচরণের জন্য কোন বিষয়টিকে দায়ী করা যায়? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকের ইমরানের শৈশব পরবর্তী বিকাশও বাধাগ্রস্থ হতে পারে- মন্তব্যটির যথার্থতা বিচার কর।

২ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. শিশুর পরবর্তী জীবনের মূলভিত্তি হলো শৈশব।

খ. শৈশবই শিশুর পরবর্তী জীবনের মূলভিত্তি। শৈশবের অনুকূল পরিবেশে শারীরিক, মানসিক, সামাজিক, আবেগীয় ও নৈতিকতার বিকাশই শিশুর পরবর্তী জীবনকে সাফল্যম--ত করে। যেসব শিশু শৈশবে সঠিক যত্ন ও পরিবেশ পায়, তাদের পরবর্তী বিকাশ সুষ্ঠু হয়। তবে যেসব শিশু শৈশবে অবহেলা ও অনাদয়ে লালিত হয় এবং সুষ্ঠু পরিবেশ থেকে বঞ্চিত হয় তাদের বিকাশ যথাযথ হয় না। অর্থাৎ সুষ্ঠু পরিবেশের অভাবে শিশুদের বিকাশের ভিত্তি দুর্বল হতে পারে।

গ. উদ্দীপকের ইমরানের আচরণের জন্য সুষ্ঠু পরিবেশের অভাবকে দায়ী করা যায়।
শৈশবের অভিজ্ঞতাই মানুষের ব্যক্তিত্বের উন্মেষ ঘটায়। শৈশবই শিশুর পরবর্তী জীবনের মূলভিত্তি। তবে সুষ্ঠু পরিবেশ না পেলে শিশুর বিকাশ যথাযথভাবে সাধিত হয় না। এ ধরনের শিশুরা পরিবেশ অনুযায়ী কাঙি্ক্ষত আচরণ করতে পারে না। উদ্দীপকের আট বছর বয়সি ছেলে ইমরান। বস্থি র নানা ধরনের ছেলেদের সাথে মিশে সে বড়দের সাথে খারাপ আচরণ করতে শিখেছে এবং তার ভাষার ব্যবহারও অশালীন। ইমরানের আচরণের এরূপ অধঃপতনের জন্য দায়ী সুষ্ঠু পরিবেশের অভাব। শৈশবের যথাযথ বিকাশই শিশুর পরবর্তী জীবনকে সাফল্যম--ত করে। যেসব শিশু শৈশবে অবহেলা ও অনাদারে লালিত হয় এবং সুষ্ঠু পরিবেশ থেকে বঞ্চিত হয় তাদের শারীরিক, মানসিক, সামাজিক ও আবেগীয় বিকাশের ভিত্তি অত্যন্ত দুর্বল থাকে। সুষ্ঠু পরিবেশের অভাবে তারা যথার্থ শিক্ষাও পায় না। ফলে তারা পরিবেশ অনুযায়ী কাঙি্ক্ষত আচরণ করতে পারে না। তাদের সুষ্ঠু সামাজিক ও মানসিক বিকাশ ঘটে না এবং সুঅভ্যাসও গঠিত হয় না। এসব শিশু শৈশবে যথাযথ পরিবেশ না পাওয়ার দরুন জীবনে সফল হতে পারে না তাদের ব্যক্তিত্বের উন্মেষ ঘটে না।

ঘ. উদ্দীপকের ইমরানের শৈশবের বিকাশের ভিত্তি দুর্বল হওয়ায় তার শৈশব পরবর্তী বিকাশও বাধাগ্রস্থ হবে বলে আমি মনে করি।
শৈশবের অভিজ্ঞতাই মানুষের ব্যক্তিত্বের উন্মেষ ঘটায়। শৈশবকালই শিশুর পরবর্তী জীবনের মূলভিত্তি। যেসব শিশুর শৈশবের বিকাশ সুষ্ঠু ও স্বাভাবিক হয় তাদেরই শৈশব পরবর্তী বিকাশ যথাযথ হয়। আর যদি শৈশবের বিকাশের ভিত্তি দুর্বল থাকে। তবে পরবর্তী জীবনেও শিশুরা বাধাগ্রস্থ হয়। উদ্দীপকের ইমরান বস্থি এলাকার বাসিন্দা। সেখানকার ছেলেদের সাথে মিশে নানা ধরনের খারাপ আচরণ শিখেছে। বড়দের সাথে সে খারাপ আচরণ করে এবং তার ভাষাও বেশ অশালীন। পরিবেশ অনুযায়ী কাঙি্ক্ষত আচরণ করতেও সে অপারগ। তার এরূপ আচরণের জন্য সুষ্ঠু পরিবেশের অভাবই দায়ী। এ কারণেই তার বিকাশ যথাযথ হয়নি। যে সকল শিশু শৈশবে অবহেলা ও অনাদরে লালিত হয় এবং সুষ্ঠু পরিবেশ থেকে বঞ্চিত হয় তাদের শারীরিক, মানসিক, সামাজিক ও আবেগীয় বিকাশের ভিত্তি দুর্বল থাকে। তাদের বিকাশ সুষ্ঠু হয় না বিধায় সুষ্ঠু ব্যক্তিত্বেরও উন্মেষ ঘটে না। শৈশবের বিকাশের ভিত্তি দুর্বল থাকে বলে তাদের শৈশব-পরবর্তী বিকাশও বাধাগ্রস্থ হয়। অতএব সার্বিক দিক বিবেচনা করে বলা যায়, উদ্দীপকের ইমরানের শৈশবের বিকাশের ভিত্তি দুর্বল বলে তার শৈশব-পরবর্তী বিকাশও বাধাগ্রস্থ হতে পারে।

৩. ঝুমঝুমির বয়স দুই বছর। তার আধো আধো কথা বলে, পুতুল নিয়ে খেলা করে, ছোটাছুটি করে তার বাবা-মাকে খুব আনন্দ দেয়। ঝুমঝুমি তার পুতুলের সাথে সেরকম ব্যবহারই করে যেমন তার মা- বাবার সাথে করে। পুতুলকে খাইয়ে দেওয়া, চুল বেঁধে দেওয়া, জামা পরিয়ে দেওয়া ইত্যাদি তার দৈনন্দিন কাজ।
ক. Phylogenetic Functions কী?
খ. শিশুর বিকাশে পরিপক্বতা গুরুত্বপূর্ণ কেন?
গ. উদ্দীপকের ঝুমঝুমি শিক্ষণের কোন পদ্ধতিকে গ্রহণ করেছে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকের ঝুমঝুমির সুষ্ঠু বিকাশের জন্য তাকে আরও অনেক শিক্ষণ পদ্ধতি আয়ত্ত করতে হবে- বিশ্লেষণ কর।

৩ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. যে দক্ষতা বা কৌশলগুলো শিশুর মধ্যে স্বয়ংক্রিয়ভাবে আসে তা হচ্ছে Phylogenetic Functions।

খ.পরিপক্বতা হলো মানুষের অন্তর্নিহিত বৈশিষ্ট্যের উন্মোচন। পরিপক্কতা আসলেই শিশুর বিকাশ সাধিত হয়। শিশু যেসব সম্ভাবনা নিয়ে জন্মগ্রহণ করে, পরিপক্কতা লাভের সাথে সাথে তার বিকাশ ঘটতে থাকে। পরিপক্কতা সম্পর্কে শিশুবিজ্ঞানী এবংবষষ বলেছেন, ‘‘পরিপক্বতা হচ্ছে নির্দিষ্ট জীবনচক্রের মধ্যে বংশগতির প্রভাবের যোগফল।’’ শিশু দুভাবে পরিপক্বতা অর্জন করতে পারে। তাই শিশুর বিকাশে পরিপক্বতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

গ. উদ্দীপকের ঝুমঝুমি শিক্ষণের অনুকরণ পদ্ধতিকে গ্রহণ করেছে। শিক্ষণ হলো শিশুর আচরণের পরিবর্তন। শিশুর মধ্যে পরিপক্বতা বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে স্বাভাবিকভাবে এলেও এর সুষ্ঠু বিকাশের জন্য শিক্ষণ অপরিহার্য। শিক্ষণের আবার তিনটি পদ্ধতি রয়েছে। যথা- ১. অনুকরণ, ২. শনাক্তকরণ ও ৩. প্রশিক্ষণ। উদ্দীপকের ঝুমঝুমি তার পুতুলের সাথে তার মায়ের মতো আচরণ করার মধ্য দিয়ে তার মাকে অনুকরণ করছে। তার মধ্যে এ আচরণিক পরিবর্তন মাকে অনুসরণ করার মধ্য দিয়েই এসেছে। শিক্ষণের একটি বিশেষ পদ্ধতি হচ্ছে অনুসরণ। শিশুরা অন্যকে অনুকরণ করে অনেক নতুন কিছু শেখে। মা শিশুটির সাথে যেরূপ আচরণ করেন, শিশুও তার পুতুলের সাথে সেরূপ আচরণ করে থাকে। অনুকরণপ্রিয়তা শিশুকে নতুন নতুন অনেক কিছু শিখিয়ে দেয় যা আচরণের মাধ্যমে শিশু প্রকাশ করে থাকে।

ঘ. উদ্দীপকের ঝুমঝুমির সুষ্ঠু বিকাশের জন্য শিক্ষণ পদ্ধতিকে আয়ত্ত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
শিশুর বিকাশের জন্য পরিপক্কতা ও শিক্ষণ উভয়ই আবশ্যক। শিক্ষণ হচ্ছে শিশুর আচরণের পরিবর্তন। পরিপক্কতা বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে এলেও তার সুষ্ঠু বিকাশের জন্য শিক্ষণ দরকার। শিশুর এ শিক্ষণ প্রক্রিয়া তিনটি পদ্ধতির মধ্য দিয়ে সম্পন্ন হয়। শিশুরা অনুকরণ, শনাক্তকরণ এবং প্রশিক্ষণের মাধ্যমে শিক্ষণ প্রক্রিয়া আয়ত্ত করে। তবে উদ্দীপকের ঝুমঝুমির সুষ্ঠু বিকাশের জন্য তাকে আরও বেশ কয়েকটি শিক্ষণ পদ্ধতি আয়ত্ত করতে হবে। শিশুরা অনুকরণ করার পাশাপাশি নিজেদের শনাক্তও করে। মেয়েশিশুরা সাধারণত মা বা মেয়েদের এবং ছেলেশিশুরা বাবা বা অন্য ছেলেদের শনাক্ত করে। শিশুরা যাকে শনাক্ত করে তার আচরণ ও মূল্যবোধকে নিজের মধ্যে ধারণ করে। প্রশিক্ষণের মাধ্যমেও শিশুর আচরণের পরিবর্তন ঘটে। ফলে শিশুর যথার্থ শিক্ষণ হয়। অতএব দেখা যায়, শিশুদের যথার্থ বিকাশের জন্য শিক্ষণ প্রক্রিয়ার তিনটি পদ্ধতিই আয়ত্ত করা প্রয়োজন। উদ্দীপকের ঝুমঝুমিকেও তাই অনুকরণের পাশাপাশি অন্য দুটি পদ্ধতিও আয়ত্ত করতে হবে।

৪. অমৃতার ছেলের বয়স ৬ মাস। কিছুদিন আগেও শিশুটির ঘাড় বেশ নরম ছিল। সে একদমই ঘাড় সোজা করতে পারত না বলে তাকে খুব সাবধানে কোলে নিতে হতো। কিন্তু ধীরে ধীরে অমৃতার ছেলে তা আয়ত্ত করেছে। এখন সে হামাগুড়ি দিতে পারে, বিছানায় উল্টো হয়ে ডিগবাজিও খায়। ছেলের এ দুরন্তপনা মাকে বেশ আনন্দ দেয়।
ক. মনোবিজ্ঞানী Havinghurst পরিপক্বতা সম্পর্কে কী বলেছেন?
খ. শিশুর পরিপক্বতা ও শিক্ষণের আন্তঃসম্পর্ক কীভাবে প্রভাবিত হয়?
গ. উদ্দীপকের শিশুটির মাঝে জন্ম-পরবর্তী শারীরিক বিকাশের কোন গতিটির কার্যকারিতা লক্ষণীয়? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকের শিশুটির বিকাশের নমুনায় অনুমেয় বৈশিষ্ট্যের উপস্থিতি রয়েছে- মন্তব্যটির যৌক্তিকতা যাচাই কর।

৪ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. মনোবিজ্ঞানী Havinghurst পরিপক্বতা সম্পর্কে বলেছেন, ‘‘পরিপক্বতাই 'Teachalde moment' বা শিক্ষা দেওয়ার উপযুক্ত সময় নির্দেশ করে।’’

খ. শিশুর পরিপক্কতা ও শিক্ষণের আন্তঃসম্পর্ক কতকগুলো বিষয় দ্বারা প্রভাবিত হয়। শিশুর জন্ম-পরবর্তী পরিপক্বতা ও শিক্ষণ পরস্পর ঘনিষ্ঠ সম্পর্কযুক্ত এবং একে অপরের পরিপূরক। পরিপক্কতা ও শিক্ষণের আন্তঃসম্পর্ক আবার অনেকগুলো বিষয় দ্বারা প্রভাবিত হয়। এসব বিষয়ের মধ্যে রয়েছে পরিবেশের ভিন্নতা, শিশুর আগ্রহ ও প্রচেষ্টা, অনুশীলন, উদ্দীপনা ও পর্যাপ্ত সময়। এ বিষয়গুলো সমন্বিতভাবে পরিপক্বতা ও শিক্ষণের আন্তঃপ্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করে।

গ. উদ্দীপকের শিশুটির মাঝে জন্ম-পরবর্তী শারীরিক বিকাশের Proximodistal law গতিটির কার্যকারিতা লক্ষণীয়।
বিকাশের ধারা অনুমান করা যায়। গর্ভাবস্থায় এবং ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর শিশুর বিকাশধারা পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন ধাপ অতিক্রম করে পরিণতি লাভ করে। শিশুর জন্মপূর্ব ও জন্ম-পরবর্তী শারীরিক বিকাশের গতি দুটি নীতি অনুসরণ করে থাকে। এগুলো হলো Cephalocaudal law I Proximodistal law। উদ্দীপকের অমৃতার ছেলের বয়স ৬ মাস। সে একদমই ঘাড় সোজা করতে পারত না বলে তাকে খুব সাবধানে কোলে নিতে হতো। কিন্তু ধীরে ধীরে অমৃতার ছেলে তা আয়ত্ত করতে পেরেছে। তার এরূপ নিয়ন্ত্রণের পিছনে শারীরিক বিকাশের Proximodistal law কার্যকর ভূমিকা রেখেছে। এ নীতি অনুসারে বিকাশ কাছে থেকে দূরে হয়। এক্ষেত্রে শিশুর বিকাশ দেহের কেন্দ্র থেকে দূরবর্তী অংশে প্রসারিত হয়। এ গতির ফলে প্রথমে শিশু মাথা, চোখ ও ঘাড়ের নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। পরবর্তীতে বাহু, কনুই ও আঙুলের নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। এভাবেই শারীরিক বিকাশের এ গতিটি শিশুকে দেহের বিভিন্ন অঙ্গ নিয়ন্ত্রণ করার শিক্ষা দেয়।

ঘ. উদ্দীপকের শিশুটির হামাগুড়ি দেওয়া ও ডিগবাজি খাওয়া বিকাশের নমুনায় অনুমেয় বৈশিষ্ট্যের উপস্থিতিকে তুলে ধরে।
সকল শিশুর বিকাশ ধারার মধ্যে সাদৃশ্য রয়েছে। শিশুর বিকাশের নমুনায় এমন কিছু বৈশিষ্ট্য আছে, যা পূর্বেই অনুমান করা যায়। সুস্থ শিশুর ক্ষেত্রে বিকাশের কোনো অবস্থাতেই ব্যতিক্রম লক্ষ করা যায় না। উপুড় হওয়া, হামাগুড়ি দেওয়া এমনি কিছু অনুমেয় বৈশিষ্ট্য, যা সকল শিশুর বিকাশের ক্ষেত্রেই উপস্থিত থাকে। উদ্দীপকের শিশুটির এ ধরনের কার্যকলাপ বিকাশের অনুমেয় বৈশিষ্ট্যকেই উপস্থাপন করে। সকল শিশুর বিকাশ ধারার মধ্যে সাদৃশ্য লক্ষ করা যায়। সকল শিশু মায়ের গর্ভে বিকাশ লাভ করার পরই জন্মগ্রহণ করে। জন্মের পর বিকাশের ক্ষেত্রে শিশু প্রথমে উপুড় হয়, হামাগুড়ি দেয়, তারপর বসতে শেখে, এরপর দাঁড়াতে ও হাঁটতে শেখে। সুস্থ শিশুর ক্ষেত্রে বিকাশের কোনো অবস্থাতেই এর ব্যতিক্রম ঘটে না। অতএব দেখা যায়, শিশুদের মধ্যে। বিকাশের ক্ষেত্রে কিছু বৈশিষ্ট্য পূর্ব থেকেই অনুমান করা যায়। উদ্দীপকের অমৃতার ছেলের বিকাশের ক্ষেত্রেও এসব বৈশিষ্ট্যের উপস্থিতি লক্ষণীয়। তাই বলা যায়, প্রশ্নের মন্তব্যটি নিঃসন্দেহে যৌক্তিক।

৫. আবিরের বয়স দশ বছর পূর্ণ হলো। সে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে। দিনের অধিকাংশ সময় সে তার বন্ধুদের সাথে স্কুলে কাটায়। বাড়ি আসার পর সে মার কাছে সারাদিনের সব কথা জানায়। সে তার মাকে বলে যে, সে বড় হয়ে চিকিৎসক হবে। মা-বাবার ভালোবাসায় আবির ধীরে ধীরে বড় হচ্ছে।
ক. বিকাশমূলক কার্যক্রম কয়টি বিষয়ের সমন্বয়ে অর্জিত হয়?
খ. ‘বিকাশের প্রতিটি পর্যায়ে বিপত্তির আশঙ্কা বিদ্যমান’- কথাটি বুঝিয়ে লেখ।
গ. উদ্দীপকের আবির কীভাবে সমাজ প্রত্যাশিত আচরণ করতে সফলকাম হয়েছে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকের আবির সঠিক পরিবেশ পাওয়ায় পরবর্তীতে সুখী হবে এবং সামাজিক গ্রহণযোগ্যতা পাবে- বিশ্লেষণ কর।

৫ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. বিকাশমূলক কার্যক্রম তিনটি বিষয়ের সমন্বয়ে অর্জিত হয়।

খ. বিকাশের প্রতিটি পর্যায়ে বিপত্তির আশঙ্কা বিদ্যমান'- কথাটি দ্বারা বোঝায় বিকাশের ধারা যখন স্বাভাবিকভাবে অগ্রসর হতে থাকে তখন বেশকিছু বিপত্তি দেখা দিতে পারে। এটি স্বাভাবিক বিকাশে বাধার সৃষ্টি করে বলে অনেক সমস্যার সৃষ্টি হয়। ফলে শিশুর স্বাভাবিক বৃদ্ধি ও বিকাশ ক্ষতিগ্রস্থ হয়। এসব বিপত্তির মধ্যে কিছু পরিবেশগত কারণে এবং কিছু আকস্মিকভাবে ঘটতে পারে। শিশু যদি অযত্ন, অবহেলা, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ ও অজ্ঞতার মধ্যে লালিত- পালিত হয় তবে বিপত্তি দেখা দিতে পারে। আবার হঠাৎ আঘাত পাওয়া, দুর্ঘটনা ইত্যাদিও শিশুর বিপত্তির কারণ হতে পারে। তাই মাতা-পিতাকে পূর্ব থেকেই এসব ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে।

গ. উদ্দীপকের আবির বিকাশমূলক কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করতে পারায় সমাজ প্রত্যাশিত আচরণ করতে সফলকাম হয়েছে।
বিকাশের প্রতিটি পর্যায়েই সমাজ শিশুর কাছ কিছু প্রত্যাশা করে। প্রত্যেকেই আশা করে, বিকাশের বিভিন্ন পর্যায়ে শিশু কিছু যোগ্যতা, দক্ষতা বা নৈপুণ্য আয়ত্ত করবে। এর মধ্যে শিশুর পড়াশুনা করতে শেখা এবং উচ্চাকাঙ্ক্ষা রাখা সমাজের স্বাভাবিক কিছু প্রত্যাশা। উদ্দীপকের আবিরের এ ধরনের আচরণ সমাজের কাছে প্রত্যাশিত। সমাজের প্রত্যেকেই আশা করে সে বিকাশের বিভিন্ন পর্যায় শিশু কিছু যোগ্যতা, দক্ষতা বা নৈপুণ্যতা আয়ত্ত করবে। এগুলো সমাজস্বীকৃত হবে। এ বিকাশমূলক কার্যক্রম তিনটি বিষয়ের সমন্বয়ে অর্জিত হয়ে থাকে। এ কার্যক্রমের মধ্যে Culture Pressures of Society পদ্ধতিতে। সমাজের কুষ্টিগত চাপে কিছু বিকাশমূলক কার্যক্রম শিশুর মধ্যে দেখা যায়। পড়াশুনা করতে শেখা এমনি একটি কাজ। আবার Personal Values and espirations পদ্ধতিতে ব্যক্তির মূল্যবোধ এব উচ্চকাঙ্ক্ষা কিছু বিকাশমূলক কার্যক্রমে সহায়তা করে। বড় হয়ে শিশু কী হতে চায় বা পেশা সম্পর্কে তার ভাবনা এমনি একটি বিকাশমূলক কাজ। শিশুর মধ্যে এ ধরনের বিকাশই সমাজ প্রত্যাশিত হয়।

ঘ. উদ্দীপকের আবির অনুকূল পরিবেশে বেড়ে ওঠায় সে পরবর্তী জীবনে সুখী হতে পারবে এবং সামাজিক গ্রহণযোগ্যতাও অর্জন করতে সক্ষম হবে। শিশুর সাফল্যের ভিত্তি তৈরি করে সুখ। শৈশবকাল হচ্ছে জীবনের সবচেয়ে সুখময় সময়। শৈশবকালে যেসব শিশুর সুখের অনুভূতি থাকে, তারাই প্রাপ্ত বয়সে ভালো অভিযোজন করতে পারে। তবে 'সুখ' বিষয়টি একেকজনের কাছে একেক রকম হয়। পরিবারের অনুকূল পরিবেশই শিশুকে পরবর্তীতে সুখী করতে ভূমিকা রাখে। অর্থাৎ উদ্দীপকের আবির বিকাশের অনুকূল পরিবেশ পেয়েছে, যা তাকে প্রাপ্ত বয়সে ভালো অভিযোজন করার শিক্ষা দেবে এবং পরবর্তীতে তাকে সুখী করবে। বিলম্ব শৈশবে সুখ নির্ভর করে পরিবেশের ওপর। এ বয়সে যেসব শিশু দিনে অধিকাংশ সময় স্কুলে, খেলার মাঠে কাটায় এবং যারা বাড়ির অনুকূল পরিবেশে বেড়ে ওঠে তারা সুখী হয়। সুখী শিশুরা পরবর্তীতে পরিবেশের সাথে সহজে খাপ খাওয়াতে পারে এবং সামাজিকভাবে গ্রহণযোগ্য হয়। পরিবারের অনুকূল পরিবেশে শিশুর বিকাশ হলে সেসব শিশু পরবর্তীতে সুখী হতে পারে। তাই বলা যায়, উদ্দীপকের আবিরও সঠিক পরিবেশ পাওয়ায় পরবর্তীতে সুখী হবে এবং সামাজিক গ্রহণযোগ্যতাও লাভ করবে।

৬. নাঈমার মেয়ের বয়স ৪ মাস। কেউ তার পায়ের পাতা স্পর্শ করলে সে সাথে সাথে পা সরিয়ে নেয়। আবার তাকে যদি ভেজা কাঁথায় শুইয়ে রাখা হয় তবে সে কান্না করে অস্বস্থি প্রকাশ করে এবং মুখের ওপর কাঁথা পড়লে হাত-পা ছুড়াছুড়ি করে।
ক. সদ্যোজাত শিশুর কোন ক্রিয়া জীবনীশক্তির পরিচয় বহন করে?
খ. নবজাতকের আদি প্রতিবর্তী ক্রিয়া সম্পর্কে ধারণা দাও।
গ. উদ্দীপকের নবজাতকের স্পর্শকাতরতার বিষয়টি কোন ধরনের ক্রিয়াকে নির্দেশ করে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকের শিশুটির মাঝে আত্মরক্ষামূলক প্রবৃত্তির বিকাশ লক্ষণীয়- মন্তব্যটির যথার্থতা বিচার কর।

৬ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. সদ্যোজাত শিশুর প্রাথমিক প্রতিবর্তী ক্রিয়া জীবনীশক্তির পরিচয় বহন করে।

খ. নবজাতকের আদি প্রতিবর্তী ক্রিয়া বলতে এমন কিছু প্রতিবর্তী ক্রিয়াকে বোঝায় যেগুলো জন্মগ্রহণের পর পরই দেখা যায় এবং বয়স বাড়ার সাথে সাথে দৈহিক নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা অর্জিত হওয়ার পর আস্থে আস্থে বিলুপ্ত হয়। এসব আদি প্রতিবর্তী ক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে পায়ের আঙুল সম্প্রসারণ করা, হাতে বস্তু ধরা, আলিঙ্গনরূপী প্রতিবর্তী ক্রিয়া, হাত-পা ছোড়া, পদচারণা প্রতিবর্তী ক্রিয়া ও হাসি। এসব ক্রিয়ার ওপর বয়সের সাথে সাথে শিশু নিয়ন্ত্রণ করতে শেখে। এ ধরনের ক্রিয়াগুলোই হলো নবজাতকের আদি প্রতিবর্তী ক্রিয়া।

গ. উদ্দীপকের নবজাতকের স্পর্শকাতরতার বিষয়টি অসিত্মত্ব ও জীবন রক্ষাকারী প্রতিবর্তী ক্রিয়াকে নির্দেশ করে।
ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর শিশুকে পরিবেশের সাথে সংগতি বিধান করতে হয়। জন্মগতভাবে শিশু এমন কিছু শক্তি নিয়ে আসে, যা তার অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে ও সংগতিবিধান করতে সহায়তা করে। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে প্রতিবর্তী ক্রিয়া, যা শিশুর জীবনীশক্তির পরিচয় বহন করে। এ প্রতিবর্তী ক্রিয়াগুলো স্থায়ী ও পুনরাবৃত্তিমূলক। উদ্দীপকের নাঈমার মেয়ের বয়স ৪ মাস। কেউ তার পায়ের পাতা স্পর্শ করলে সে সাথে সাথে পা সরিয়ে নেয়। এর দ্বারা তার স্পর্শকাতর অনুভূতির পরিচয় পাওয়া যায়। নবজাতকের মধ্যে এ ধরনের অনুভূতি খুব স্বাভাবিক। নবজাতকের ত্বক বেশ সংবেদনশীল হয়। গালে স্পর্শ করা মাত্র সে মাথা ঘোরায়। ঠোঁট স্পর্শ করা মাত্র হাঁ করে। পায়ের পাতা স্পর্শ করলে পা সরিয়ে নেয়। শিশুর এ ক্রিয়াগুলো অসিত্মত্ব ও জীবনরক্ষাকারী প্রতিবর্তী ক্রিয়ার অন্তর্গত। ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর শিশুকে পরিবেশের সাথে সংগতিবিধান করতে হয়। এ সময় অস্তিত্ব ও জীবনরক্ষাকারী প্রতিবর্তী ক্রিয়া শিশুর ক্ষেত্রে লক্ষ করা যায়। নবজাতকের ত্বকের সংবেদনশীলতা এবং স্পর্শকাতরতার অনুভূতি এ ক্রিয়ারই অন্তর্গত।

ঘ. উদ্দীপকের শিশুটির অস্বস্থি প্রকাশ করা এবং হাত-পা ছোড়াছুড়ি করা তার আত্মরক্ষামূলক প্রবৃত্তির বিকাশই তুলে ধরে। নবজাতক ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর থেকেই নানা ধরনের ক্রিয়াকলাপ করে। সদ্যোজাত শিশু পরিবেশের সাথে সংগতি বিধান করতে এবং অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে প্রাথমিক প্রতিবর্তী ক্রিয়া করে থাকে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে অস্তিত্ব ও জীবনরক্ষাকারী প্রতিবর্তী ক্রিয়া এবং আদি প্রতিবর্তী ক্রিয়া। আদি প্রতিবর্তী ক্রিয়ার মাঝে শিশুর আত্মরক্ষামূলক প্রবৃত্তি লক্ষ করা যায়। যেমনটি উদ্দীপকের নাঈমার ক্ষেত্রেও লক্ষণীয় এগুলো তার আত্মরক্ষামূলক প্রবৃত্তির বিকাশকেই উপস্থাপন করে। ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর নবজাতক যেকোনো উদ্দীপকের প্রতি সাড়া দিতে সমস্ত শরীরকে সঞ্চালিত করে। তার মধ্যে ঠান্ডা গরম স্পর্শজনিত অনুভূতির প্রতি প্রতিক্রিয়া লক্ষ করা যায়। সে ভেজা কাঁথায় অস্বস্থি বোধ করে। মুখের ওপর কাঁথা পড়লে সে হাত-পা ছোড়ে। আধুনিক শিশু মনোবিজ্ঞানীদের গবেষণা থেকে জানা যায়, এগুলো নবজাতকের আত্মরক্ষামূলক ও সহজাত প্রবৃত্তি। এসব আচরণ ও আত্মরক্ষামূলক প্রবৃত্তির বিকাশ শিশুর সুস্থতার লক্ষণ। উপরিউক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে শিশুর যে আত্মরক্ষামূলক ক্রিয়ার কথা জানা যায় তা উদ্দীপকের শিশুটির মাঝে আত্মরক্ষামূলক প্রবৃত্তির বিকাশ লক্ষণীয় এবং প্রশ্নের মন্তব্যটি যথার্থ।

৭. উদ্দীপক-১ : শামীমার মেয়ের বয়স ৪ দিন। শামীমা লক্ষ করে একটু নড়াচড়া করলেই তার নবজাতকের মুখমন্ডল রক্তাভ হয় এবং তার কিছুক্ষণ পর পরই ক্ষুধা লাগে। এসব বিষয় নিয়ে শামীমা চিন্তা করলেও চিকিৎসক তাকে বোঝালেন যে এগুলো খুব স্বাভাবিক ব্যাপার।
উদ্দীপক-২ : সাইফুল সাহেব তার ৬ মাস বয়সী পুত্রের দোলনার ওপর একটি খেলনা টাঙিয়ে দিলেন। এটি চাবি দিলে ঘুরতে থাকে। এটি দেখে তার ছেলে খুব খুশি হয়। আর কেউ যদি তাকে মিষ্টি কিছু খেতে দেয় তবে সে বেশ পরিতৃপ্তি পায়।
ক. জন্মের সময় নবজাতকের ওজন কত থাকে?
খ. নবজাতকের দৈহিক গঠন কেমন থাকে?
গ. উদ্দীপক-১ এর নবজাতকের কার্যক্রমকে চিকিৎসকের স্বাভাবিক বলার কারণ ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপক-২ নবজাতকের সংবেদনশীলতাকেই উপস্থাপন করেছে- বিশ্লেষণ কর।

৭ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. জন্মের সময় নবজাতকের ওজন থাকে ২.৫ থেকে ৩.৫ কেজি।

খ. নবজাতকের দৈহিক গঠন ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর একটু আলাদা হয়। তার মাথা থাকে সমস্ত শরীরের এক-চতুর্থাংশ। চোখের পাতা ফোলা এবং থুতনি ছোট থাকে। ঠোঁট থাকে পাতলা, নাক হয় চ্যাপ্টা ও গলা ফোলা থাকে। ঘাড় ছোট থাকে, কাঁধ সরু হয় ও পেট বড় থাকে। মাথা ও শরীরের অন্যান্য অংশের তুলনায় বাহু ও পা ছোট থাকে এবং দেহের রং হয় রক্তাভ। নবজাতকের দৈহিক গঠন এমনি হয়ে থাকে।

গ. উদ্দীপক-১-এর নবজাতকের কার্যক্রমকে চিকিৎসক স্বাভাবিক বলেছেন কারণ এ ধরনের কার্যকলাপ সুস্থ ও স্বাভাবিক নবজাতকদের মাঝেই লক্ষ করা যায়।
শিশুর ভূমিষ্ঠ হওয়া থেকে দুই মাস পর্যন্ত সময়কাল হচ্ছে নবজাতককাল। ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর শিশুকে পরিবেশের সাথে সংগতি বিধান করতে হয়। মাতৃগর্ভে ২৭০/২৮০ দিন অতিবাহিত করার পর শিশু জন্মগ্রহণ করে। এসময় শিশুর দৈহিক বিকাশধারায় স্বাতমত্ম্র্য লক্ষ করা যায়। সুস্থ স্বাভাবিক নবজাতকের বিকাশমূলক যেসব বৈশিষ্ট্য লক্ষ করা যায় তার মধ্যে রক্ত চলাচল করা ও ক্ষুধা লাগা অন্যতম। চিকিৎসক উদ্দীপকের শামীমার মেয়ের এ ধরনের ক্রিয়াকলাপকে স্বাভাবিক বলেন কারণ সুস্থ স্বাভাবিক নবজাতকের মাঝে এসব বৈশিষ্ট্য লক্ষ করা যায়। মাতৃগর্ভে রক্ত চলাচল হয় নাভিরজ্জুর মাধ্যমে। নাভিরজ্জু কাটার পর স্বয়ংক্রিয়ভাবে রক্ত চলাচল আরম্ভ হয়। এ রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ বেশি থাকে বলে নবজাতক নড়াচড়া করলেই তার মুখমন্ডল রক্তাভ হয়। আবার, জন্মের পর কয়েকদিন অতিবাহিত না হওয়া পর্যন্ত শিশুর ক্ষুধা উদ্বেগের কোনো সময়সূচি থাকে না। গবেষকদের মতে, প্রাপ্তবয়স্কদের তুলনায় নবজাতকের ক্ষুধার মাত্রা তীব্র হয়। এ ধরনের ঘটনা সুস্থ্য স্বাভাবিক নবজাতকের ক্ষেত্রেই ঘটে থাকে।

ঘ. উদ্দীপক-২-এর শিশুটির মাঝে যে বৈশিষ্ট্য উপস্থিত তা নবজাতকের সংবেদনশীলতাকেই উপস্থাপন করে।
ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর নবজাতককে পরিবেশের সাথে সংগতি বিধান করতে হয়। মাতৃগর্ভে ২৭০/২৮০ দিন অতিবাহিত করার পর শিশু জন্মগ্রহণ করে। এ সময় শিশুর দৈহিক বিকাশ ধারায় স্বাতন্ত্র্য লক্ষ করা যায়। সুস্থ স্বাভাবিক নবজাতকের বিকাশমূলক যেসব বৈশিষ্ট্য লক্ষ করা যায় তার মধ্যে সংবেদনশীলতা অন্যতম। নবজাতকের সংবেদনশীলতা যেসব ক্ষেত্রে বিদ্যমান থাকে সেগুলো হলো- চোখ, শ্রবণ, ঘ্রাণ, স্বাদ ও ত্বক। উদ্দীপক-২ এ শিশুটির এ ধরনের আচরণের কারণ হলো তার সংবেদনশীলতা। নবজাতক ভূমিষ্ঠ হওয়ার প্রথম সপ্তাহেই দোলায়মান বস্তুর ওপর দৃষ্টিপাত করার ক্ষমতা অর্জন করে। কিন্তু চোখের পেশির দুর্বলতার জন্য একসাথে দুটি চোখ একই বস্তুর উপর নিবন্ধ করতে পারে না। নবজাতকের স্বাদ গ্রহণের ক্ষমতা বেশ তীক্ষ্ণ। মিষ্টি জিনিস তাকে তৃপ্তি দেয়। তাই মিষ্টি জিনিস খেলে নবজাতক পরিতৃপ্তি অনুভব করে। এগুলো নবজাতকের সংবেদনশীলতাকে তুলে ধরে। উপরিউক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, নবজাতকের সংবেদনশীলতার মধ্যে চোখ ও স্বাদের সংবেদনশীলতা অন্যতম। এ ধরনের সংবেদনশীলতায় নবজাতক যা করে থাকে উদ্দীপক-২-এর নবজাতককেও তা করতে দেখা যায়। তাই বলা যায়, উদ্দীপক-২ নবজাতকের সংবেদনশীলতাকেই উপস্থাপন করেছে।

৮. সুপ্তি বাবা-মার খুব আদরের সন্তান। তার বয়স ৮ মাস। ইদানীং সে তার আনন্দানুভূতি প্রকাশ করতে পারে। বাবা অফিস থেকে ফিরে এসে তাকে কোলে নিলে সে বেজায় খুশি হয়। মুখ দিয়ে নানা ধরনের শব্দ করে। ‘‘বা-বা, তা-তা, না-না’’ ইত্যাদি শব্দ উচ্চারণ করে বাবাকে আনন্দ দেয়।
ক. শিশুর মধ্যে কত মাস বয়সে পরিতৃপ্তি লক্ষ করা যায়?
খ. বয়স অনুসারে শিশুর সামাজিক বিকাশ সম্পর্কে ধারণা দাও।
গ. উদ্দীপকের সুপ্তির আনন্দ প্রকাশ করা প্রাক-শৈশবকালের শিশুর কোন বিকাশকে নির্দেশ করে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকের সুপ্তির ভাষার প্রকাশ প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে- উত্তরের সপক্ষে যুক্তি দাও।

৮ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. শিশুর মধ্যে ৩ মাস বয়সে পরিতৃপ্তি লক্ষ করা যায়।

খ. বয়স অনুসারে শিশুর সামাজিক বিকাশও নানাভাবে সাধিত হতে থাকে। ২ মাস বয়স থেকে মায়ের সাথে শিশুর মিথস্ক্রিয়ার মাধ্যমে প্রথম সামাজিক প্রতিক্রিয়া লক্ষ করা যায়। ৪/৫ মাস বয়সে শিশু পরিচিত ও অপরিচিত ব্যক্তিকে পৃথক করতে পারে। পরিচিত ব্যক্তিকে দেখলে সে খুশি হয়, হাসে, হাত উঠিয়ে দেয় ও কোলে উঠতে চায়। ৬/৭ মাস বয়সে মায়ের ভাবভঙ্গি, স্পর্শের ধরন অর্থাৎ মায়ের মেজাজ বুঝতে পারে শিশু। ৯/১০ মাস বয়সে শিশু অন্যের স্বরধ্বনি ও অঙ্গভঙ্গি নকল করার চেষ্টা করে। ১৩/১৪ মাস বয়সে শিশু অন্য শিশুর প্রতি আগ্রহ প্রকাশ করে। ১৮/১৯ মাস বয়সে সে অন্য শিশুর সাথে খেলে। তবে এ সময় সে বড়দের সাথে খেলতে বেশি পছন্দ করে। এভাবেই বয়স অনুসারে শিশুর সামাজিক বিকাশ ঘটতে থাকে।

গ. উদ্দীপকের সুপ্তির আনন্দ প্রকাশ করা প্রাক-শৈশবকালের শিশুর আবেগিক বিকাশকে নির্দেশ করে।
প্রাক-শৈশবকাল শিশুর বিকাশের ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সময়। উন্নত পরিবেশে শিশুর সার্বিক বিকাশ সুষ্ঠু হয়। এ সময় শিশুর যেসব বিকাশ সাধিত হয় তার মধ্যে আবেগিক বিকাশ অন্যতম। আবেগ ও অনুভূতির বিকাশ সাধন শিশুর জীবনকে বৈচিত্র্যময় করে। উদ্দীপকের সুপ্তির বাবাকে দেখে খুশি হওয়া আবেগিক বিকাশেরই প্রতিফলন। আবেগিক বিকাশ শিশুর জীবনে আলাদা মাত্রা যোগ করে। আবেগ প্রকাশের ক্ষেত্রে শিশু মুখে যে অভিব্যক্তি প্রকাশ করে তা সহজেই অন্যে বুঝতে পারে। আবেগের বহিঃপ্রকাশ ঘটানোর জন্য শিশু খুশি হলে হাসে, দেহ দোলায়, হাত-পা নাড়ায় এবং আনন্দ প্রকাশ করে। এতে করে বাবা-মা কিংবা অন্যান্য আত্মীয়দের সাথে শিশুর সুদৃঢ় বন্ধন তৈরি হয়। তবে শিশুদের আবেগ ক্ষণস্থায়ী এবং তা সহজেই পরিবর্তিত হয়। শিশুরা তাদের আবেগ তীব্রভাবে প্রকাশ করে। তাই বলা যায়, শিশুর খুশি হওয়া তার আবেগিক বিকাশকেই নির্দেশ করে থাকে।

ঘ. উদ্দীপকের সুপ্তির আধো আধো কথা বলতে পারায় তার ভাষার বিকাশ প্রাথমিক পর্যায়েই রয়েছে বলা যায়।
প্রাক-শৈশবকাল, শিশুর বিকাশের ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সময়। এ সময় শিশুর মৌলিক বিশ্বাসের ভিত্তি স্থাপনের সময়। প্রাক-শৈশবকালে শিশুর নানা দিক থেকে বিকাশ সাধিত হয়। যার মাধ্যমে ভাষার বিকাশ অন্যতম। ভাষা যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম। ভাষা বিকাশের প্রথম ধাপ হচ্ছে প্রাক-বাচনিক পর্ব। ১ থেকে ২৪ মাস পর্যন্ত শিশুর ভাষা বিকাশে যে চারটি পর্যায় লক্ষ করা যায় সেগুলো হলো- কান্না, ব্যাবলিং, আকার-ইঙ্গিত ও অর্থবোধক শব্দ। এর মধ্যে ব্যাবলিং ভাষা বিকাশের প্রাথমিক পর্যায়কেই ইঙ্গিত করে। উদ্দীপকের সুপ্তির ‘‘বা-বা, তা-তা, না-না’’ ইত্যাদি শব্দ উচ্চারণ করে কথা বলার কোনো অর্থ না থাকলেও এটি তার ভাষার বিকাশ সাধনের প্রাথমিক পর্যায়কেই নির্দেশ করে। সুপ্তির এ পর্যায়ের নাম ব্যাবলিং। শিশুর ২/৩ মাস বয়সে ব‍াবলিং জাতীয় শব্দের উৎপত্তি হয়। ৭/৮ মাস বয়সে কলকূজন, উদ্দেশ্যহীনভাবে শব্দ উচচারণ করে ও তা পুনরাবৃত্তি করে। যেমন- ‘‘দা-দা, বা-বা, না-না’’ ইত্যাদি শব্দ। এরপর আস্থে আস্থে শিশু আকার ইঙ্গিত এবং অর্থবোধক শব্দ উচচারণ করতে শেখে। সুতরাং দেখা যায় যে, ব্যাবলিং ভাষার বিকাশের প্রাথমিক পর্যায়কেই ইঙ্গিত করে। তাই বলা যায়, উদ্দীপকের সুপ্তির ভাষার বিকাশও প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে।

৯. আকাশের বয়স ৬ বছর। আকাশের মা তাকে সাঁতার শেখার জন্য একটি প্রতিষ্ঠানে ভর্তি করিয়ে দিলেন। তিনি লক্ষ করলেন আকাশ লেখাপড়া, খেলাধুলার পাশাপাশি এখানেও বেশ ভালো করছে। আকাশের অজানাকে জানার ব্যাপারেও বেশ আগ্রহ আছে। সে তার বাবা-মায়ের কাছে নানা ব্যাপারে জানতে ক্রমাগত প্রশ্ন করে থাকে। বাবা-মাও তার কৌতূহল মেটাতে চেষ্টা করেন।
ক. প্রারম্ভিক শৈশবকালের সময়সীমা কত?
খ. প্রারম্ভিক শৈশবে শিশুর দৈহিক বিকাশ ও গঠন কেমন হয়?
গ. উদ্দীপকের আকাশের মাঝে যে অফুরন্ত শক্তি উপস্থিত তার কারণ ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকের আকাশের মাঝে মানসিক বিকাশ সংঘটিত হচ্ছে কি? উত্তরের সপক্ষে যুক্তি দাও।

৯ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. প্রারম্ভিক শৈশবকালের সময়সীমা হলো ২ বছর থেকে ৬ বছর।

খ. প্রারম্ভিক শৈশবে শিশুর দৈহিক বিকাশ ধীরগতিতে হয়। এ সময় শিশুর ওজন ও উচ্চতার সুসমন্বয়কে ভালো স্বাস্থ্যের লক্ষণ হিসেবে ধরা হয়। যেমন- ২ বছরের একটি মেয়ের উচ্চতা ৮০.০০ সে. মি. ও ওজন ৯.৫ কেজি এবং একটি ছেলের উচ্চতা ৮১.৫ সে. মি. ও ওজন ১০.০ কেজি হলে তা যথার্থ বলে ধরা হয়। প্রাক-শৈশবকালে কোনো কোনো শিশুর দৈহিক গড়ন ছিপছিপে, কেউ বেশ মোটাসোটা এবং কেউ সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হয়। দেহ লম্বা, বক্ষ ও কাঁধ প্রশস্থ এবং বাহু ও পা লম্বা হয়। প্রারম্ভিক শৈশবে শিশুর দৈহিক বিকাশ ও গঠন এমনি হয়ে থাকে।

গ. উদ্দীপকের আকাশের মাঝেঝ যে অফুরন্ত শক্তি উপস্থিত তার কারণ হলো আকাশের দৈহিক সুস্থতা।
শিশুর ৬ বছর বয়সে অস্থি, পেশি ও স্বায়ুতন্ত্র বেশ মজবুত হয়। ফলে তারা হাঁটাচলা, দৌড়ঝাঁপ, সাঁতার কাটা, খেলাধুলা ইত্যাদি বিষয়ে বেশ কৌশলী হয়। সুস্থ শিশুর মধ্যে অফুরন্ত শক্তি লক্ষ করা যায়। উদ্দীপকের আকাশের মধ্যে রয়েছে অফুরন্ত প্রাণশক্তি। আর এর কারণ হলো তার বয়স এবং দৈহিক সুস্থতা। শিশুর ৬ বছর বয়সে অস্থি, পেশি ও স্নায়ুতন্ত্র বেশ মজবুত হয়। ছেলেমেয়েদের পেশির বর্ধন ভিন্নতর হয়। অস্থি পেশি মজবুত হওয়ায় ৬ বছর বয়সে শিশুরা হাঁটাচলা, দৌড়ঝাপ, সাঁতার কাটা, খেলাধুলা ইত্যাদিতে বেশ নিপুণ হয়। এ সময় শিশুর সূক্ষ্ম অঙ্গ সঞ্চালন বিকাশে পরিপক্বতা আসে। তাই অস্থি, পেশি ও স্নায়ুতন্ত্র মজবুত হওয়ার কারণেই এ বয়সি শিশুরা অফুরন্ত শক্তির অধিকারী হয়।

ঘ. হ্যাঁ, উদ্দীপকের আকাশের মাঝে মানসিক বিকাশ সংঘটিত হচ্ছে।
শিশুর বিকাশ সংঘটিত হওয়ার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সময় প্রারম্ভিব শৈশব। এ সময় শিশুর মানসিক ও ভাষার বিকাশ পরিবেশের ওপর নির্ভর করে। শিশুর মানসিক বিকাশ উন্নত করতে হলে ছোটবেলা থেকেই তার মানসিক বিকাশকে সঠিকভাবে পরিচালনা করতে হবে। তাই শিশুর যথাযথ মানসিক বিকাশ সাধনের জন্য তার জানার আগ্রহকে উৎসাহ দিতে হবে। শিশুর প্রশ্নের যথাযথ উত্তর দেওয়ার মাধ্যমে তার কৌতূহল নিবৃত্ত করতে হবে এবং মানসিক বিকাশ সাধন নিশ্চিত করতে হবে। উদ্দীপকের আকাশের বয়স ৬ বছর। তার মধ্যে অজানাকে জানার প্রবল আগ্রহ কাজ করে। আকাশের বাবা-মাও তার কৌতূহল মেটানোর সর্বাত্মক চেষ্টা করে থাকেন। এর মধ্য দিয়েআকাশের যথাযথ মানসিক বিকাশ সাধিত হবে বলা যায়। শিশুর মানসিক বিকাশ নির্ভর করে পরিবেশের ওপর। প্রাক-শৈশবকালে শিশুর কল্পনাশক্তি বৃদ্ধি পায় এবং তার মনে বিভিন্ন বস্তু সম্পর্কে ধারণা বা প্রতিরূপ সৃষ্টি হয়। তার মধ্যে জানার আগ্রহ বৃদ্ধি পায় এবং সে ক্রমাগত প্রশ্ন করে থাকে। শিশুর মানসিক বিকাশ উন্নত করতে হলে ছোটবেলা থেকেই তার মানসিক বিকাশকে সঠিকভাবে পরিচালনা করা প্রয়োজন। এ বয়সে শিশুরা বেশ কৌতূহলপ্রিয় হয়। আর বাবা-মায়ের উচিত শিশুর কৌতূহলকে নিবৃত্ত করা। তবেই শিশুর যথাযথ মানসিক বিকাশ সাধিত হয়। উপরিউক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিত বলা যায় যে, উদ্দীপকের আকাশের বাবা-মাও তার কৌতূহল মেটাতে প্রয়াসী হওয়ায় আকাশের মাঝেও মানসিক বিকাশ সংঘটিত হচ্ছে।

১০. ঐশী তার দাদির সাথেই বেশি সময় অবস্থান করে। প্রতিবেশী মেয়েদের সাথে খেলতে গেলেই ঐশী ঝগড়া বাধায়। কখনো সে কারও খেলনা কেড়ে নেয় এবং কখনো কাউকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। ঐশীর মা তাকে এসব স্বভাবের জন্য বকাবকি করলে দাদি খুব ক্ষেপে যায়। ফলে ঐশীর মা ও দাদির মধ্যে কলহ দেখা দেয়। এসব দেখে ঐশীর মনে ভীতির সঞ্চার হয়।
ক. প্রারম্ভিক শৈশবকালের শিশুকে কোন ধরনের শিশু বলা হয়?
খ. প্রারম্ভিক শৈশবে শিশুর ভাষার বিকাশ সম্পর্কে ধারণা দাও।
গ. উদ্দীপকের ঐশীর আচরণের জন্য প্রারম্ভিক শৈশবের শিশুদের কোন স্বভাবকে দায়ী করা যায়? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকের ঐশীর পরবর্তীতে আবেগজনিত সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে- বিশ্লেষণ কর।

১০ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. প্রারম্ভিক শৈশবকালের শিশুকে প্রাক-বিদ্যালয়গামী শিশু বলা হয়।

খ. প্রারম্ভিক শৈশবে শিশুর ভাষার বিকাশ দ্রুতগতিতে সাধিত হয় প্রারম্ভিক শৈশবকালের সময়সীমা হলো ২ বছর থেকে ৬ বছর। এ সময়কালে শিশুর শব্দভান্ডার বৃদ্ধি পায় এবং ভাষার ক্ষেত্রে দক্ষতা আসে। শিশু এ সময় ভাষার ব্যবহার করে মনের ভাব প্রকাশ করতে পারে। সে শব্দ চয়নের ব্যাপারে বেশ সজাগ ও সক্রিয় হয়, শিশুর শব্দভান্ডার বৃদ্ধি পায় এবং উচ্চারণ সৃষ্টি হয়। ফলে শিশুর ভাষাজনিত ত্রুটি হ্রাস পায়। এভাবেই প্রারম্ভিক শৈশবকালে শিশুর ভাষার বিকাশ সাধিত হয়ে থাকে।

গ. উদ্দীপকের ঐশীর আচরণের জন্য প্রারম্ভিক শৈশবের শিশুদের আত্মকেন্দ্রিক স্বভাবকে দায়ী করা যায়।
প্রারম্ভিক শৈশবকাল শিশুদের বিকাশের একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়। প্রাথমিক শৈশবে শিশু সামাজিক চাহিদা ও প্রত্যাশা অনুযায়ী আচরণ করার ক্ষমতা অর্জন করে থাকে। তবে এ সময় শিশুদের মধ্যে আত্মকেন্দ্রিকতার স্বভাব দেখা দেয়। এ স্বভাবের কারণে তারা বেশি সময় ধরে অন্য শিশুদের সাথে খেলতে পারে না। উদ্দীপকের ঐশী খেলতে গেলেই সে ঝগড়া বাধায়। কখনো সে কারও খেলনা কেড়ে নেয় বা কখনো কাউকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। এ ধরনের আচরণ তার আত্মকেন্দ্রিকতা স্বভাবের কারণেই উদ্ভূত হয়েছে। প্রারম্ভিক শৈশবকালে শিশুদের মধ্যে বন্ধুত্ব ও সহযোগিতার মনোভাব বৃদ্ধি পায়। তারা নিজের খেলনা দিয়ে অন্য শিশুদের সাথে খেলে। তবে নিজেদের আত্মকেন্দ্রিক স্বভাবের জন্য বেশি সময় ধরে একসাথে। খেলতে পারে না। কেড়ে নেওয়া, ধাক্কা দেওয়া, মারামারি করা ইত্যাদি নেতিবাচক আচরণও দেখা যায় শিশুদের মাঝে, যার মূলে রয়েছে শিশুর এ আত্মকেন্দ্রিক স্বভাব।

ঘ. উদ্দীপকের ঐশীর প্রারম্ভিক শৈশব পারিবারিক সংকটের মুখোমুখি হওয়ায় পরবর্তীতে তার আবেগজনিত সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে।
প্রারম্ভিব শৈশব শিশুর বিকাশের একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়। এ সময় শিশুর আবেগে স্থিতিশীলতা আসে। তবে যদি শিশু অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ, অবহেলা, পারিবারিক সংকট ইত্যাদির মুখোমুখি হয় তবে তার আবেগজনিত সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে। উদ্দীপকের ঐশীর আত্মকেন্দ্রিক স্বভাবের কারণে মা ও দাদির মাঝে কলহ বাধে এবং তা দেখে তার মনে ভীতির সঞ্চার হয়। পারিবারিক পরিবেশের এরূপ প্রতিকূলতা পরবর্তীতে ঐশীর আবেগজনিত সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। প্রারম্ভিক শৈশবে শিশুর সঠিক পরিচালনা, আদর্শ ও অবিচল নীতিবোধ এবং স্নেহ-মমতা শিশুর বিকাশকে ত্বরান্বিত করে। অপরদিকে, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ, অবহেলা, পারিবারিক সংকট ইত্যাদি শিশুর আবেগজনিত সমস্যার সৃষ্টি করে। ফলে শিশুর মধ্যে ভয়-ভীতি, দুশ্চিন্তা ও উদ্বেগ দেখা দেয়। সার্বিক দিক বিবেচনা শেষে বলা যায় যে, উদ্দীপকের ঐশীর পরিবারে সংকট থাকায় এবং বিকাশের প্রতিকূল পরিবেশ বিদ্যমান থাকায় ঐশীরও পরবর্তীতে আবেগজনিত সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে।
Share:

0 Comments:

Post a Comment