HSC গার্হস্থ্য বিজ্ঞান ২য় পত্র (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর pdf download অধ্যায় ৩

HSC গার্হস্থ্য বিজ্ঞান ২য় পত্র (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর pdf download
এইচএসসি পরীক্ষার পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি
HSC Home Science 2nd Paper Srijonshil question and answer pdf download.

উচ্চ মাধ্যমিক

গার্হস্থ্য বিজ্ঞান
দ্বিতীয় পত্র

সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
৩য় অধ্যায়

HSC Home Science 2nd Paper
Srijonshil
Question and Answer pdf download

১. রতন মিঞা একজন কৃষক। তার স্ত্রী সালেহা ২ মাসের অন্তঃসত্ত্বা। শাশুড়ি মা তাকে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে গেলেন। সেখানে ডাক্তার তাকে কিছু স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাতে বললেন। নতুন সদস্য আসছে বলে পরিবারের সবাই খুব খুশি। তবে এখন ধান তোলার মৌসুম বলে সালেহাকে অনেক ভারী কাজ করতে হয়। তাছাড়া খাবার গ্রহণেও তার কোনো পরিবর্তন আসেনি।
ক. নবজাতককালের সময়সীমা লেখ।
খ. নিরাপদ মাতৃত্ব বলতে কী বোঝায়?
গ. বর্তমানে সালেহা যে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাবে তা ব্যাখ্যা কর।
ঘ. সালেহার শারীরিক ও মানসিক যত্নের যথার্থতা মূল্যায়ন কর।

১ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. নবজাতককালের সময়সীমা হলো জন্মগ্রহণের পর থেকে ১৪ দিন পর্যন্ত।

খ. নিরাপদ মাতৃত্ব বলতে মেয়েদের মাতৃত্বজনিত ঝুঁকি প্রতিরোধ করে প্রসব জটিলতা নিশ্চিহ্ন করাকে বোঝায়। নিরাপদ মাতৃত্ব নিশ্চিতকরণের জন্য গর্ভধারণ মুহূর্ত থেকে প্রসবকালীন এবং প্রসব পরবর্তী কমপক্ষে দেড় মাস মা ও শিশুর বিশেষ সেবা প্রয়োজন। নিরাপদ মাতৃত্ব নিশ্চিতকরণের উদ্দেশ্যে বেশকিছু বিষয় খেয়াল রাখতে হবে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে- পরিণত বয়সে বা ২০ বছরের পর গর্ভধারণ করা, মা ও শিশু মৃত্যুহার রোধ, গর্ভকালীন ও প্রসবকালীন জটিলতা রোধ, প্রসব- পরবর্তী মা ও শিশুর সুস্থতা রক্ষা করা, চিকিৎসক বা প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত স্বাস্থ্যকর্মীর দ্বারা মায়ের নিরাপদ প্রসব নিশ্চিত করা ইত্যাদি। নিরাপদ মাতৃত্ব নিশ্চিত করতে এ বিষয়গুলো নিশ্চিত করা আবশ্যক।

গ. বর্তমানে সালেহা যে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাবে সেটি হলো প্রথম তিন মাসের স্বাস্থ্য পরীক্ষা। স্বাভাবিক ক্ষেত্রে গর্ভবতী মহিলার স্বাস্থ্য পরীক্ষা তিন মাস অন্তর হওয়া আবশ্যক। নিরাপদ মাতৃত্ব নিশ্চিত করার লক্ষ্যে এ স্বাস্থ্য পরীক্ষাগুলো করা হয়ে থাকে। উদ্দীপকের সালেহা ২ মাসের অন্তঃসত্ত্বা। তার শাশুড়ি তাকে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানোর জন্য স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে গেলেন। তার গর্ভাবস্থা বিবেচনায় বলা যায় যে, তাকে ১ম তিন মাসের জন্য প্রযোজ্য স্বাস্থ্য পরীক্ষাগুলোই করানো হবে। এটি গর্ভসঞ্চারের পর থেকে ১২ সপ্তাহের মধ্যে করানো হয়। এক্ষেত্রে সন্তানসম্ভবা মায়ের মূত্র পরীক্ষা করানো হয়। তার গর্ভসঞ্চার নির্ধারণের জন্য এ পরীক্ষা করা হয়। গর্ভবতী মায়ের রক্ত পরীক্ষা করা হয় নিয়মিত। এ ধরনের পরীক্ষায় গর্ভবতী মায়ের রক্তের গ্রুপ, হিমোগ্লোবিন, হেপাটাইটিস ভাইরাস, যৌনবাহিত রোগ সংক্রান্ত পরীক্ষা এবং ডায়াবেটিস পরীক্ষা করা হয়। এছাড়া গর্ভবতী মায়ের আলট্রাসনোগ্রাম করা হয়। এটি করার কারণ হলো ফিটাসের সুস্থতা, সংখ্যা ও ওজন নির্ণয় করা। বর্তমানে সালেহাকেও উপরিউক্ত স্বাস্থ্য পরীক্ষাসমূহ করতে হবে।

ঘ. সালেহা একজন গর্ভবতী নারী এবং তার শারীরিক ও মানসিক যত্নের ব্যাপারে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়োজন।
মায়ের দেহ থেকে পুষ্টি নিয়েই ভ্রূণ ধীরে ধীরে বৃদ্ধি লাভ করে এবং মানবশিশুতে পরিণত হয়। তাই এসময় গর্ভবতী মায়ের শরীর ও মনের বিশেষ যত্ন নেওয়া আবশ্যক। উদ্দীপকের সালেহা ২ মাসের অন্তঃসত্ত্বা এবং তার শাশুড়ি তাকে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যান। ধান তোলার মৌসুম বলে সালেহাকে এ অবস্থাতেও অনেক ভারী কাজ করতে হয়। তার খাবার গ্রহণেও কোনো পরিবর্তন আসেনি। কিন্তু এ সময় তার শারীরিক ও মানসিক বিশেষ যত্নের প্রয়োজন। একজন গর্ভবতী মায়ের খাদ্য সুষম হওয়া আবশ্যক। কেননা সুষম খাদ্যেই সবকয়টি খাদ্য উপাদন পর্যাপ্ত পরিমাণে থাকে। গর্ভবতী মাকে সুতির ঢিলেঢালা পোশাক ব্যবহার করতে হবে। গর্ভাবস্থায় যেকোনো ভ্রমণের ব্যাপারে সচেতন হতে হবে। এছাড়া গর্ভবতী মায়ের গোসল, কোষ্ঠ পরিষ্কার, ব্যায়াম ও বিশ্রাম, পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা, টিকা প্রদান ইত্যাদি শারীরিক যত্নের ব্যাপারেও সচেতন হতে হবে। এসবের পাশাপাশি তার মানসিক যত্ন নেওয়াও আবশ্যক। গর্ভবতী মা যেন আনন্দে ও প্রফুল্লচিত্তে থাকেন সেদিকে সকলের খেয়াল রাখতে হবে। গর্ভবতী মায়ের বিশেষ মুহূর্তটি যেন আনন্দময় হয়ে ওঠে সেজন্য সবাইকে সচেষ্ট হতে হবে। গর্ভবতী মায়ের শারীরিক ও মানসিক যত্নই পারে তার নিরাপদ মাতৃত্ব নিশ্চিত করতে।

২. রিতা ও মুক্তি একই সাথে সন্তানসম্ভবা হয়। রিতার শাশুড়ি কুসংস্কারাচ্ছন্ন। তিনি রিতাকে, কম পরিমাণে খেতে দেন এবং ডাক্তারের কাছে যেতে নিরুৎসাহিত করেন। রিতার সন্তান জন্মের সময় খিচুনি ও তীব্র মাথাব্যথা ইত্যাদি জটিলতা দেখা দেয়। অন্যদিকে মুক্তি এ সময় স্বাভাবিকের চেয়ে একটু বেশি পরিমাণে সুষম খাবার খায় এবং নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করায়।
ক. নবজাতকের সংজ্ঞা দাও।
খ. 'শিশুর জন্য মায়ের দুধই সর্বোৎকৃষ্ট'- বুঝিয়ে লেখ।
গ. রিতার জটিলতা কোন ধরনের? এটি রোধের উপায় ব্যাখ্যা কর।
ঘ. রিতা ও মুক্তির গর্ভকালীন যত্নের সঠিকতা নিরূপণ কর।

২ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. জন্মের পর প্রথম দুই সপ্তাহকাল বা ১৫ দিন পর্যন্ত অথবা কারও কারও মতে ২৮ দিন বা ১ মাস পর্যন্ত সময়ের শিশুকে Neonate বা নবজাতক বলে।

খ. শিশুর জন্য মায়ের দুধ সর্বোৎকৃষ্ট। কারণ শিশুর বৃদ্ধির জন্য মায়ের দুধে সব রকমের পুষ্টি উপাদান পর্যাপ্ত পরিমাণে আছে এবং ৬ মাস বয়স পর্যন্ত শিশুর জন্য মায়ের দুধই সুষম খাদ্য। মায়ের দুধের সবচেয়ে প্রধান উপকারিতা হচ্ছে যে এ দুধে রোগ প্রতিরোধকারী এন্টিবডি এবং ইমিউনোগ্লোবিন (immunoglobin) থাকে, যা শিশুকে নানা রোগ হতে প্রতিরক্ষা দান করে থাকে। মায়ের দুধে লালিত শিশুদের মধ্যে ডায়রিয়া, পেটের অসুখ বা এলার্জি হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে। মায়ের দুধ বিশুদ্ধ, টাটকা, তাই এ দুধ বাসি হওয়া বা সংক্রমিত হওয়ার কোনোই সম্ভাবনা নেই।

গ. উদ্দীপকের রিতার গর্ভাবস্থায় খিচুনি, দাঁত লেগে যাওয়া, মাথা ব্যথা ইত্যাদি একলামসিয়া নামক মারাত্মক রোগের লক্ষণ। যা প্রসবকালীন জটিলতাকে নির্দেশ করে।
মায়ের দেহ থেকে পুষ্টি নিয়েই ভ্রূণ ধীরে ধীরে বৃদ্ধি লাভ করে ও মানবশিশুতে পরিণত হয়। তাই গর্ভবর্তী মায়েদের বিশেষ যত্ন নেওয়া প্রয়োজন। গর্ভবতী মায়ের খাদ্য সুষম হওয়া আবশ্যক। মা যদি পর্যাপ্ত পুষ্টি গ্রহণ না করে তাহলে ভ্রূণের দৈহিক গঠন দুর্বল হয়। মানসিক প্রতিবন্ধী হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এমনকি সন্তান জন্মের সময় মা বিভিন্ন জটিল সমস্যার মুখোমুখি হতে পারে। তাই সুষম খাবারের সাথে সাথে গর্ভবতী মায়ের নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা একান্ত প্রয়োজন এবং গর্ভাবস্থায় শ্রম ও বিশ্রামের মাঝে সমতার প্রয়োজন আছে। যা রিতার ক্ষেত্রে পরিলক্ষিত হয়নি। উদ্দীপকের রিতার শাশুড়ি কুসংস্কারাচ্ছন্ন। তিনি রিতাকে কম পরিমাণে খেতে দেন এবং ডাক্তারের কাছে যেতে নিরুৎসাহিত করেন। যে কারণে রিতার শারীরিক সমস্যা দেখা দেয় যা একদম অনুচিত। গর্ভকালীন এসব সমস্যা সমাধানকল্পে নিয়মিত পুষ্টিকর খাবার খাওয়ার পাশাপাশি ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া একান্ত জরুরি।

ঘ. রিতার গর্ভকালীন সময়ের যত্ন সঠিক নয়। অপরদিকে, মুক্তির গর্ভকালীন সময়ের যত্ন সঠিক।
গর্ভকালীন সময়ে মায়ের পুষ্টিকর খাবার খাওয়া এবং নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা একান্ত প্রয়োজন। যাতে মা ও শিশু উভয়ই সুস্থ থাকে। কারণ এ সময়ে কোনো জটিলতা ধরা পড়লে তা সময়মতো চিকিৎসা করা যায়। ফলে মা ও শিশু উভয়েই স্বাভাবিক থাকতে পারে। রিতার গর্ভকালীন সময়ে তার শাশুড়ি তাকে কম পরিমাণে খেতে দিতেন এমনকি ডাক্তারের কাছে যেতেও নিরুৎসাহিত করতেন। তার শাশুড়ি ছিলেন কুসংস্কারাচ্ছন্ন। যার ফলে সন্তান জন্মের সময়ে রিতা খিচুনি ও তীব্র মাথা ব্যথার মতো জটিলতার সম্মুখীন হয়েছে। এ ধরনের সমস্যা পুষ্টিহীনতার কারণে হয়ে থাকে। তাই রিতার যত্ন সঠিক ছিল না।
অপরদিকে মুক্তি গর্ভকালীন সময়ে প্রচুর পুষ্টিকর খাবার খেয়েছে এবং সময়মতো স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেছে, যা গর্ভকালীন সময়ে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গর্ভকালীন সময়ে মায়ের বিশেষ যত্ন প্রয়োজন। তাই গর্ভকালীন সময়ে মুক্তির যত্ন সঠিক ছিল।
পরিশেষে বলা যায়, গর্ভকালীন সময়ে একজন নারীর প্রতি পরিবারের প্রত্যেক সদস্যের ভূমিকা ও সচেতনতা অপরিহার্য।

৩. মিনা ও রিনা দুই বোন, যাদের বয়সের পার্থক্য ৬ বছর। বড় বোন মিনার ২৩ বছর বয়সে বিয়ে হয়ে গেলে, রিনার বিয়ে দেওয়ার জন্য পরিবারের সকলে উঠে পড়ে লাগে এবং ৬ মাসের মধ্যে রিনারও বিয়ে হয়। বছর খানেকের মধ্যেই রিনা ও মিনা দু'জনই গর্ভবতী হয়। রিনা প্রসব বেদনায় গুরুত্বর অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হলো। কিন্তু তার সদ্যোজাত সন্তানকে বাঁচানো সম্ভব হলো না। চিকিৎসক বললেন, ‘‘সুস্থ শিশু জন্মদানের জন্য মায়ের পরিপক্কতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’’ অন্যাদিকে মিনা স্বাভাবিক প্রসবের মাধ্যমে সুস্থ সন্তানের জন্ম দিল।
ক. জাইগোট কাকে বলে?
খ. নিরাপদ মাতৃত্ব বলতে কী বোঝায়?
গ. উদ্দীপকে রিনার সন্তানের পরিণতির জন্য কোন কোন বিষয়কে দায়ী করবে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকের আলোকে ‘‘সুস্থ শিশু জন্মদানের জন্য মায়ের পরিক্বতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ’’ উক্তিটি বিশ্লেষণ কর।

৩ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. পরিণত শুক্রাণু ও পরিণত ডিম্বাণুর নিউক্লিয়াসে একীভবনের মাধ্যমে নারীদেহে যে প্রাণের সঞ্চার হয় তাকে জাইগোট বলে।

খ. নিরাপদ মাতৃত্ব বলতে বোঝায় একজন নারী স্ব-ইচ্ছায় গর্ভবতী বা অন্তঃস্বত্ত্বা হওয়ার পর থেকে শুরু করে প্রসবের সময় ও পরবর্তীতে তার প্রয়োজনীয় শারীরিক ও মানসিক সেবা প্রদান করা যাতে কোনো রকম জটিলতা দেখা না দেয় এবং জরুরি সেবা বিঘ্নিত না হয়। গর্ভধারণ একটি প্রাকৃতিক নিয়ম হলেও সকল গর্ভাবস্থাই কমবেশি ঝুঁকিপূর্ণ। তাই নিরাপদ মাতৃত্ব নিশ্চিতকরণের জন্য গর্ভধারণ মুহূর্ত থেকে প্রসবকালীন এবং প্রসব-পরবর্তী কমপক্ষে দেড় মাস মা ও শিশুর বিশেষ যত্ন বা সেবা প্রয়োজন।

গ. উদ্দীপকের রিনার সন্তানের পরিণতির জন্য অপরিণত বয়সে গর্ভধারণ করার বিষয়টিকে দায়ী করব।
বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী মেয়েদের বিয়ের বয়স কমপক্ষে ১৮ বছর এবং ছেলেদের বিয়ের বয়স কমপক্ষে ২১ বছর। কিন্তু এই আইন লঙ্ঘন করে অনেক অভিভাবক তাদের সন্তানদের কম বয়সে বিয়ে দিয়ে দেন। ফলে মায়েদের অল্প বয়সে গর্ভধারণে নানা ধরনের প্রসব জটিলতা দেখা দেয়। উদ্দীপকের রিনাও এ জটিল পরিস্থিতির শিকার। রিনা তার ২৩ বছর বয়সী বড় বোন মিনার চেয়ে ৬ বছরের ছোট। সে হিসেবে তার বয়স ১৭ বছর এবং তার বাল্যবিবাহ হয়েছে। ফলে অপরিণত বয়সে সন্তান জন্মাদানে জটিলতার সৃষ্টি হয় এবং তার সদ্যোজাত সন্তানকে বাঁচানো সম্ভব হলো না। অপরিণত বয়সে বিয়ে দেওয়া সামাজিক অপরাধ। অল্পবয়সী একজন মা সন্তান ধারণের জন্য পুরোপুরি প্রস্থুত থাকে না। একটি মেয়ের মা হওয়ার জন্য শারীরিক পূর্ণতা ও মানসিক প্রস্থুতি প্রয়োজন। ১০-১৯ বছর বয়সের গর্ভধারণকে অল্পবয়সের গর্ভধারণ বলে। অল্পবয়সী তরুণীর নিজের শারীরিক ও প্রজনন অঙ্গের বিকাশ সম্পূর্ণ না হওয়ায় তার গর্ভে শিশুর বিকাশে মা ও শিশু উভয়ের বিপদ ডেকে আনে। গর্ভবর্তী মায়ের জরায়ুর গঠন, মায়ের শারীরিক গঠন পরিপূর্ণ না হলে ভ্রূণের গঠনের অপূর্ণতা, ভ্রূণের মৃত্যু অথবা মৃত শিশুর জন্ম হতে পারে।

ঘ. উদ্দীপকের ‘‘সুস্থ শিশু জন্মাদানের জন্য মায়ের পরিপক্কতা খুব প্রয়োজন’’ উক্তিটি সঠিক ও যৌক্তিক।
গর্ভধারণ করা একটি প্রাকৃতিক ঘটনা। একজন গর্ভবতী মায়ের নিরাপদ মাতৃত্ব নিশ্চিত করা অত্যাবশ্যক। এ লক্ষ্যে সবাইকেই সচেতন ভূমিকা রাখতে হবে। নিরাপদ মাতৃত্ব এবং সুস্থ শিশুর জন্ম নিশ্চিতকরণের প্রধান শর্ত হলো অপরিণত বয়সে গর্ভধারণ রোধ করা। এ ব্যাপারে সকলকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। উদ্দীপকে দেখা যায়, উপযুক্ত বয়সে গর্ভধারণ করায় মিনা স্বাভাবিক প্রসবের মাধ্যমে সুস্থ সন্তান জন্ম দিতে পারলেও অল্পবয়সে গর্ভধারণকারী রিনার সদ্যোজাত সন্তানকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি। সুস্থ শিশু জন্মদানের জন্য মায়ের পরিক্বতা থাকা অত্যন্ত প্রয়োজন। বিভিন্ন গবেষণার ফলাফল হিসেবে দেখা যায় যে, মায়ের গর্ভবতী হওয়ার বয়সটি শিশুর স্বাভাবিক বিকাশকে ব্যাহত করে। গর্ভবতী মায়ের জরায়ুর গঠন ও মায়ের শারীরিক গঠন পরিপূর্ণ না হলে ভ্রুণের গঠনের অপূর্ণতা, ভ্রুণের মৃত্যু অথবা মৃত শিশুর জন্ম হতে পারে। অপররিপক্ব মা সুস্থ শিশু জন্মদানে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অক্ষম হয়। মায়ের বয়স ২০-এর নিচে হলে সন্তান প্রসবে নানা জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে। যেমন- গর্ভপাত, রক্তস্বল্পতা ও অপুষ্টি, রক্তক্ষরণ, উচ্চক্তচাপ ইত্যাদি। অনেক সময় শিশুর মৃত্যুও ঘটতে পারে। এ কারণেই বলা হয়েছে যে, একটি সুস্থ শিশু জন্মদানের জন্য মায়ের পরিক্বতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

৪. শাহিদা বেগম ১৬ বছর বয়সে গর্ভধারণ করেছেন। তার প্রসব বেদনা শুরু হলে তাকে বাড়িতে প্রসবের ব্যবস্থা করানো হয়। কিন্তু দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হওয়ার পরও শিশুর জন্ম না হওয়ায় শাহিদা ক্রমেই অসুস্থ ও ক্লান্ত হয়ে পড়েন। তার শারীরিক অবস্থার অবনতি দেখে দ্রুত নিকটস্থ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি করানো হয়। ডাক্তার অপারেসনের মাধ্যমে একটি সুস্থ শিশুর জন্ম নিশ্চিত করেন।
ক. গর্ভকালীন সময়ের যত্ন বলতে কী বোঝ?
খ. একজন গর্ভবতীর প্রসবকালীন বিপদ সংকেত জানা প্রয়োজন কেন?
গ. উদ্দীপকে শাহিদার প্রসবকালীন দুরবস্থার জন্য কোন কোন বিষয় জড়িত? ব্যাখ্যা দাও।
ঘ. ‘‘উদ্দীপকের আলোকে পরিণত বয়সে গর্ভধারণ এবং অপরিণত বয়সে গর্ভধারণ উভয় ক্ষেত্রে জটিলতা আছে’’- এ বিষয়ে তোমার মতামত বিশ্লেষণ কর।

৪ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. গর্ভকালীন নিয়মানুযায়ী নারীকে পরীক্ষা করা ও নির্দেশ দেওয়াকে গর্ভকালীন সময়ের পরিচর্যা বা যত্ন বলে।

খ. একজন গর্ভবতীর প্রসবকালীন বিপদ সংকেত জানা প্রয়োজন। কেননা এ বিপদ সংকেতগুলো জানা থাকলে যদি কোনো সমস্যা দেখা দেয় তাহলে দ্রুত এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া যায়। চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়ে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা নেওয়া যায় এবং মা ও শিশুর নিরাপত্তা বিধান করা যায়।

গ. উদ্দীপকের শাহিদার প্রসবকালীন দুরবস্থার জন্য মায়ের অপরিণত বয়স এ কারণটি দায়ী।
বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী মেয়েদের বিয়ের বয়স কমপক্ষে ১৮ বছর এবং ছেলেদের কমপক্ষে ২১ বছর। অল্প বয়সে বিয়ে এবং অপরিণত বয়সে সন্তান ধারণ করলে প্রসবকালীন নানা জটিলতা দেখা দেয়। এর ফলস্বরূপ মা ও শিশুর জীবন বিপন্ন হতে পারে। উদ্দীপকের শাহিদার করুণ পরিস্থিতির শিকার হওয়ার পিছনে তার অপরিণত বয়সই দায়ী। বাংলাদেশের আইন লঙ্ঘন করে অনেক অভিভাবক তাদের সন্তানদের কম বয়সে বিয়ে দিয়ে দেন। ফলে নানা ধরনের জটিলতা দেখা দেয়। মায়ের বয়স ১৮ বছরের কম বা ৩৫ বছরের বেশি হলে প্রসবকালে জটিলতা দেখা দেয়। এছাড়া শাহিদার বয়স কম হওয়া সত্ত্বেও তাকে গর্ভকালীন সময়ে এবং প্রসবকালীন সময়ে কোনো গাইনি বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের কাছে নেওয়া হয়নি। বরং তাকে বাড়িতে রেখে প্রসবের ব্যবস্থা করা হয়। এমন ঝুঁকিপূর্ণ মাকে বাড়িতে প্রসব করানোর ব্যবস্থা করা চরম নির্বুদ্ধিতার কাজ। যার দরুন শাহিদা মারাত্মক দুরবস্থায় পতিত হয়।

ঘ. পরিণত বয়সে গর্ভধারণ বলতে ২০ বছরের পর গর্ভধারণকে বোঝায়। আর অপরিণত বয়স বলতে ১৮ বছরের কম বয়সকে বোঝায়।
পরিণত বয়সে গর্ভধারণ এবং অপরিণত বয়সে গর্ভধারণ উভয়ক্ষেত্রে জটিলতা রয়েছে। তবে পরিণত বয়সের জটিলতার চেয়ে অপরিণত বয়সের জটিলতা অনেক বেশি।
পরিণত বয়সে গর্ভধারণে যেসব জটিলতা দেখা দেয় তন্মধ্যে ৫টি অবস্থাকে বিপজ্জনক বলা হয়। এসব চিহ্ন দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। এগুলো হলো- ১. খিঁচুনি ২, ভীষণ জ্বর, ৩. রক্তস্রাব ৪. মাথা ব্যথা ও ঝাপসা দেখা এবং ৫. বিলম্বিত প্রসব। অপরিণত বয়সে গর্ভধারণের ফলে উক্ত বিপদসংকেত ছাড়া আরও কতকগুলো জটিলতা রয়েছে। যেমন: মায়ের শরীর অপরিপক্ক থাকায় মায়ের ও ভ্রূণের দৈহিক বৃদ্ধির জন্য অতিরিক্ত পুষ্টি গ্রহণ করতে না পারায় পুষ্টিহীনতা দেখা দেয়, বস্থি দেশ ছোট থাকায় প্রসব বাধাপ্রাপ্ত হয়, সন্তানের বেড়ে উঠার জন্য গর্ভে পর্যাপ্ত জায়গা না থাকা, অপরিণত বা কম ওজনের শিশু জন্মানোর আশঙ্কা থাকা ইত্যাদি।
সুতরাং বলা যায়, পরিণত বয়সে ও অপরিণত বয়সে গর্ভধারণের ক্ষেত্রে জটিলতা দেখা দিলে এক্ষেত্রে অপরিণত বয়সের জটিলতা খুবই মারাত্মক।

৫. সুরভী গর্ভবতী হয়েছে প্রায় ৪ মাস। সে সবসময় চিকিৎসকের কাছে পরামর্শ নিতে যায়। এবার চিকিৎসক তাকে কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাদ্য গ্রহণ করার পরামর্শ দিলেন। সুরভীর রক্তশূন্যতার সমস্যাও ছিল। তাই চিকিৎসক তাকে আরেকটি বিশেষ খাদ্যগুণ সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ারও পরামর্শ দিলেন।
ক. গর্ভাবস্থায় ৫ মাস পর থেকে দৈনিক কত গ্রাম প্রোটিন গ্রহণের সুপারিশ করা হয়?
খ. গর্ভাবস্থায় প্রোটিন জাতীয় খাদ্য গ্রহণ করা প্রয়োজন কেন?
গ. উদ্দীপকের সুরভীর রক্তশূন্যতার কারণে চিকিৎসক তাকে কী ধরনের খাবার খেতে বললেন? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকের সুরভীকে চিকিৎসক যে কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাদ্য খেতে বললেন তার পরিমাণ পূর্বের তুলনায় অধিক হবে- মন্তব্যটির যথার্থতা যাচাই কর।

৫ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. গর্ভাবস্থায় ৫ মাস পর থেকে দৈনিক ৬৫ গ্রাম প্রোটিন গ্রহণের সুপারিশ করা হয়।

খ. গর্ভাবস্থায় মায়ের সুস্থতা বিধানের জন্য এ সময় প্রোটিন জাতীয় খাদ্য গ্রহণ করা প্রয়োজন। গর্ভবতী মায়ের জরায়ু, প্লাসেন্টা, আম্বিলিকাল কর্ড, স্থ নের বৃদ্ধি, হিমোগ্লোবিন ও রক্তরসে প্রোটিন সংশ্লেষণ ও সঞ্চয় ইত্যাদি কারণে গর্ভাবস্থায় স্বাভাবিকের তুলনায় অধিক পরিমাণে প্রোটিন প্রয়োজন। এই প্রোটিন মাছ, মাংস, ডিম, ডাল ইত্যাদি থেকে পাওয়া যায়। গর্ভাবস্থায় ৫ মাস পর থেকে দৈনিক ৬৫ গ্রাম প্রোটিন গ্রহণের সুপারিশ করা হয়।

গ. উদ্দীপকের সুরভীর রক্তশূন্যতার কারণে চিকিৎসক তাকে লৌহগুণ সমৃদ্ধ খাবার খেতে বললেন।
গর্ভবতী মায়ের বিশেষ শারীরিক যত্ন নিতে হয়। তাকে গর্ভাবস্থায় অবশ্যই সুষম খাদ্য গ্রহণ করতে হবে। কেননা, সুষম খাদ্যেই সকল খাদ্য উপাদান পর্যাপ্ত পরিমাণে থাকে। তাই গর্ভবতী মাকে এ সময় সব ধরনের খাবার খেতে হবে। কেননা, রক্তশূন্যতা লৌহের প্রভাবেই কমতে পারে। লৌহের অভাবে রক্তশূন্যতা দেখা দেয়। তাই গর্ভবতী মহিলাদের দৈনিক ২৫-৩৫ মিলিগ্রাম লৌহ গ্রহণ করা আবশ্যক। এই সময় থাইরয়েড হরমোনের ক্ষরণ বৃদ্ধি পায়। তাই দৈনিক ১২৫ মাইক্রোগ্রাম আয়োডিন গ্রহণ করা আবশ্যক। অর্থাৎ, লৌহের ঘাটতির কারণেই রক্তশূন্যতা দেখা দেয়। তাই বলা যায়, উদ্দীপকের সুরভীর রক্তশূন্যতার সমস্যা দূরীকরণে চিকিৎসক তাকে এ খাদ্যগুণ সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ারই পরামর্শ দিবেন।

ঘ. উদ্দীপকের সুরভীর গর্ভাবস্থার সময়কাল ৪ মাস হওয়ায় চিকিৎসক তাকে বর্তমানে যে কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাদ্য খেতে বললেন তার পরিমাণ পূর্বের তুলনায় বেশি হবে। - মন্তব্যটি যথার্থ।
মায়ের দেহ থেকে পুষ্টি নিয়েই ভ্রূণ ধীরে ধীরে বৃদ্ধি লাভ করে ও মানবশিশুতে পরিণত হয়। তাই গর্ভবতী মায়ের খাদ্য সুষম হওয়া আবশ্যক। গর্ভবতী মায়ের ৩ মাস অতিক্রম হওয়ার পর এ খাবারের পরিমাণ বাড়িয়ে দেওয়া হয়। তাই উদ্দীপকের সুরভীকে দেওয়া খাবারের পরিমাণও পূর্বের তুলনায় বেশি হবে। গর্ভাবস্থায় মৌল বিপাক হার বৃদ্ধি পায়। মাতার জনন অঙ্গের বৃদ্ধি ও বিকাশ হওয়ায় মৌল বিকাশ হার বৃদ্ধি পায়। আবার ভ্রূণের বিপাক হারও মাতার বিপাক হারের সাথে যুক্ত হয়। এছাড়া মায়ের ওজন, চলাফেরা ও কাজে শক্তির প্রয়োজন হয়। এসব কারণে গর্ভধারণের তিন মাস পর থেকে অতিরিক্ত ৩০০ কিলোক্যালরি খাদ্য গ্রহণ করা আবশ্যক। ভাত, রুটি, চিনি, গুড় ইত্যাদি কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাদ্য থেকেই অতিরিক্ত ক্যালরির চাহিদা পূরণ করা যায়। সার্বিক দিক বিবেচনা শেষে তাই বলা যায়, উদ্দীপকের সুরভীকে চিকিৎসক যে কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাদ্য খেতে পরামর্শ দিলেন তার পরিমাণ পূর্বের তুলনায় অবশ্যই অধিক হবে। তাই প্রশ্নের মন্তব্যটি যথার্থ।

৬. শারমিন তার গর্ভাবস্থায় প্রায় নিয়মিত একজন চিকিৎসকের কাছে যেতেন। তার গর্ভাবস্থা ৩ মাস পার হওয়ার পরই চিকিৎসক তাকে দৈনিক ২৫০ গ্রাম শাকসবজি ও ৫৫ গ্রাম ফল খাওয়ার নির্দেশ দেন। খওয়া দাওয়ার পাশাপাশি শারমিনকে অন্য অনেক বিষয়ের প্রতি খেয়াল রাখতে বলেছেন তিনি।
ক. গর্ভাবস্থায় দৈনিক কত গ্লাস পানি পান করা আবশ্যক?
খ. গর্ভাবস্থায় টিকা প্রদান সম্পর্কে ধারণা দাও।
গ. উদ্দীপকের শারমিনকে খাদ্যাভ্যাসের যে নির্দেশনা দিলেন গর্ভাবস্থায় তার গুরুত্ব ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকের শারমিনকে চিকিৎসক অন্য যেসব বিষয়ের প্রতি খেয়াল রাখতে বলেছেন সেগুলো সম্পর্কে তোমার মতামত ব্যক্ত কর।

৬ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. গর্ভাবস্থায় দৈনিক ৮ গ্লাস পানি পান করা আবশ্যক।

খ. গর্ভাবস্থায় গর্ভবতী মাকে কেবল একটি টিকা দিতে হয়। সেটি হলো টিটেনাস টক্সয়েড। যদি পূর্বে কোনো নারীর পাঁচবার টিটেনাস টিকা দেওয়া হয় তবে তাকে আর কোনো টিকা দিতে হয় না। আর যদি তা না হয় তবে গর্ভকালীন পঞ্চম বা ষষ্ঠ মাসে একটি টিটি টিকা এবং এক মাস পর আরেকটি টিকা দিতে হবে। যদি আগে গর্ভকালীন দুটি টিকা দেওয়ার ইতিহাস থাকে এবং ৫ বছরের মধ্যেই আবার গর্ভধারণ হয়ে থাকে, তবে দ্বিতীয় বার পঞ্চম মাসে একটি টিকা দিলেইচলবে। তবে দুটি গর্ভধারণের মাঝে বিরতিকাল ৫ বছরের বেশি হলে ২ বারই টিকা দিতে হবে।

গ. উদ্দীপকের শারমিনকে চিকিৎসক খাদ্যাভ্যাসের যে নির্দেশনা দিলেন তা ভিটামিন জাতীয় খাবারকে ইঙ্গিত করে, গর্ভাবস্থায় যার গুরুত্ব অপরিসীম।
মায়ের দেহ থেকে পুষ্টি নিয়েই ভ্রূণ ধীরে ধীরে বৃদ্ধি লাভ করে ও মানবশিশুতে পরিণত হয়। এ কারণেই গর্ভবতী মায়ের খাদ্য সুষম হওয়া আবশ্যক। কেননা, এ ধরনের খাদ্যে সব কয়টি খাদ্য উপাদান পর্যাপ্ত পরিমাণে থাকে। এর মধ্যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ খাদ্য উপাদান হলো ভিটামিন। উদ্দীপকের শারমিনকে চিকিৎসক দৈনিক ২৫০ গ্রাম শাকসবজি ও ৫৫ গ্রাম ফল খাওয়ার নির্দেশ দেন। এ ধরনের খাবারে প্রচুর ভিটামিন থাকে এবং গর্ভবতী মহিলাদের জন্য এসব খাবার বেশ গুরুত্বপূর্ণ। গর্ভাবস্থায় দৈনিক ৫৫ মিলিগ্রাম ভিটামিন 'সি' ও ৫,০০০ ওট ভিটামিন ‘এ’ গ্রহণ করা আবশ্যক। হাড়ের গঠনের জন্য ভিটামিন ‘ডি’-এর প্রয়োজনীয়তা বৃদ্ধি পায়। গর্ভাবস্থায় ফলিক এসিডের চাহিদা অত্যধিক বৃদ্ধি পায়। ফলিক এসিড নতুন কোষ সৃষ্টির জন্য। অপরিহার্য। ভ্রূণের দেহ গঠনের জন্য প্রথম থেকেই দৈনিক ৪০০ মাইক্রোগ্রাম ফলিক এসিড খাওয়া আবশ্যক। গর্ভাবস্থায় দৈনিক ২৫০ গ্রাম শাকসবজি ও ৫৫ গ্রাম ফল খাওয়া আবশ্যক। তাই বলা যায়, উদ্দীপকের শারমিনকে চিকিৎসক যে খাদ্যাভ্যাসের নির্দেশনা দিলেন। গর্ভাবস্থায় তার গুরুত্ব অপরিসীম।

ঘ. উদ্দীপকের শারমিনকে চিকিৎসক খাওয়া-দাওয়ার পাশাপাশি অন্য যেসব বিষয়ের প্রতি খেয়াল রাখতে বলেছেন সেগুলো দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় কার্যাবলি বলেই আমি মনে করি।
গর্ভাবস্থায় মায়ের বিশেষ শারীরিক যত্ন নেওয়া প্রয়োজন। গর্ভবতী মায়ের খাদ্য সুষম হতে হবে। কেননা, কেবল সুষম খাদ্যেই সকল খাদ্য উপাদান বিদ্যমান থাকে যা ভ্রূণের বিকাশের জন্য অতীব প্রয়োজন। তবে খাওয়া-দাওয়ার পাশাপাশি গর্ভবতী মাকে পোশাক, ভ্রমণ, গোসল, কোষ্ঠ পরিষ্কার, ব্যায়াম ও বিশ্রাম, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ইত্যাদি বিষয়েও সচেতন থাকতে হবে। গর্ভাবস্থায় এসব বিষয়ের প্রতি খেয়াল রাখাও অত্যাবশ্যক। গর্ভবতী নারীকে ঢিলেঢালা সুতির পোশাক ব্যবহার করতে হবে এবং হিল জুতা পরিহার করতে হবে। গর্ভধারণের প্রথম ও শেষ দিকে ভ্রমণ করার ব্যাপারে সচেতন হওয়া আবশ্যক। ঝুঁকিপূর্ণ ভ্রমণ থেকে অবশ্যই বিরত থাকতে হবে। ঈষৎ গরম পানি দিয়ে প্রতিদিন গোসল করা আবশ্যক। শাকসবজি, ফল, ইসবগুলের ভুসি, বেলের শরবত ইত্যাদি সেবনে কোষ্ঠ পরিষ্কার হবে। গর্ভবতী নারীর প্রতিদিন মলত্যাগ করা আবশ্যক। প্রতিদিন স্বাভাবিক কাজকর্ম করা, সকাল-সন্ধ্যা হাঁটা, ভারী কাজ না করা, দুপুরে বিশ্রাম এবং দৈনিক ৮ ঘণ্টা ঘুমও দরকার। এছাড়াও গর্ভবতী নারীর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকাও আবশ্যক। তাই আমি মনে করি, উদ্দীপকের শারমিনকে চিকিৎসক অন্যান্য বিষয় বলতে এসব দিকেই খেয়াল রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।

৭. অনন্যা তার পিতা-মাতার পরিবারে যেমন আদরে ছিল, তেমনি শ্বশুরবাড়ির লোকজনও তাকে খুব ভালোবাসে। অনন্যা প্রথমবারের মতো গর্ভবতী হওয়ায় তার শ্বশুর-শাশুড়ি অত্যন্ত খুশি হলেন। শাশুড়ি তাকে মায়ের মতোই যত্ন-আত্তি করতে লাগলেন। অনন্যার স্বামী সবসময় তাকে প্রফুল্ল রাখার চেষ্টা করেন। সবার মধ্যমণি হয়ে অনন্যার আনন্দেই সময় কাটতে লাগল।
ক. গর্ভবতী মহিলাকে সবসময় কী ধরনের চিন্তা করতে হবে?
খ. গর্ভবতী মায়ের মানসিক যত্ন নেওয়া প্রয়োজন কেন?
গ. উদ্দীপকের অনন্যার ক্ষেত্রে গর্ভবতী মায়ের কোন যত্নের দিকটি ফুটে উঠেছে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকের অনন্যার প্রতি তার পরিবারের ভালোবাসা তার গর্ভাবস্থাকে ত্রুটিমুক্ত করতে ভূমিকা রাখবে- বিশ্লেষণ কর।

৭ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. গর্ভবতী মহিলাকে সবসময় ইতিবাচক চিন্তা করতে হবে।

খ. গর্ভবতী মায়ের মানসিক যত্ন নেওয়া প্রয়োজন কারণ এর সাথে। ভ্রূণের স্বাভাবিক বিকাশ ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত। শরীর ও মন পরস্পর সম্পর্কযুক্ত। তাই মায়ের শারীরিক যত্নের পাশাপাশি মানসিক যত্ন নেওয়াও আবশ্যক। গর্ভবতী মা যেন আনন্দিত ও প্রফুল্ল থাকেন সেদিকে। সকলের সচেতন থাকতে হবে। গর্ভবতী মায়ের মন ভালো থাকলে ভ্রূণের বিকাশও স্বাভাবিক হয় এবং মায়েরও শারীরিক অবস্থা ভালো থাকে। তাই গর্ভবর্তী মায়ের মানসিক যত্ন নেওয়া অত্যন্ত প্রয়োজন।

গ. উদ্দীপকের অনন্যার ক্ষেত্রে গর্ভবতী মায়ের মানসিক যত্নের দিকটি ফুটে উঠেছে।
মাতৃগর্ভে ভ্রূণের বৃদ্ধিতে মায়ের শারীরিক ও মানসিক অবস্থার ইতিবাচক ও নেতি বাচক প্রভাব পড়ে। তাই গর্ভবতী মায়ের শারীরিক যত্নের পাশাপাশি মানসিক যত্নও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কেননা, শরীর ও মন পরস্পর সম্পর্কযুক্ত। উদ্দীপকের অনন্যা প্রথমবারের মতো গর্ভবতী হওয়ায় তার শ্বশুর-শাশুড়ি অত্যন্ত খুশি হলেন। অনন্যার স্বামীও তাকে সবসময় প্রফুল্ল রাখতে চেষ্টা করেন। তাদের এ প্রচেষ্টা অনন্যাকে মানসিকভাবে সুস্থ রাখতে সহায়তা করবে। গর্ভবতী মায়ের মানসিক যত্ন নেওয়ার জন্য প্রয়োজন হলো পরিবারের সকলের সাথে আন্তরিক সম্পর্ক বজায় রাখা, গর্ভবতী মাকে সর্বদা প্রফুল্লচিত্তে রাখার চেষ্টা করা, তাকে বিভিন্ন নেতিবাচক চিন্তা থেকে দূরে রাখা ইত্যাদি। এসব বিষয় নিশ্চিত করতে পারলে গর্ভবতী মায়ের মানসিক যত্নের বিষয়টিও নিশ্চিত করা যায়। এতে গর্ভবতী মায়ের শরীর ও মন উভয়ই ভালো থাকে। উদ্দীপকের অনন্যার প্রতি তার পরিবারের যত্নের দিকটি গর্ভবতী মায়ের মানসিক যত্নকেই তুলে ধরে।

ঘ. উদ্দীপকের অনন্যার প্রতি তার পরিবারের ভালোবাসা তাকে শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ রাখবে, যা তার গর্ভাবস্থাকে ত্রুটিমুক্ত করবে- বিষয়টি সঠিক।
গর্ভবতী মায়ের শারীরিক ও মানসিক অবস্থা ভ্রূণের বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই গর্ভবতী মায়ের শারীরিক যত্ন নেওয়ার পাশাপাশি মানসিক যত্ন নেওয়াও আবশ্যক। এতে গর্ভবতী মায়ের শরীর ও মন উভয়ই ভালো থাকে এবং তার গর্ভাবস্থাও ত্রুটিমুক্ত হয়। উদ্দীপকের অনন্যা প্রথমবারের মতো গর্ভবতী হওয়ায় তার শ্বশুর- শাশুড়ি ও স্বামী খুব খুশি হলেন এবং তারা অনন্যাকে যত্ন করতে লাগলেন। তাদের এ প্রচেষ্টা অনন্যাকে মানসিকভাবে ভালো রাখার পাশাপাশি শারীরিকভাবেও সুস্থ রাখবে। কেননা, শরীর ও মন পরস্পর সম্পর্কযুক্ত। তাই মায়ের শারীরিক যত্নের পাশাপাশি মানসিক যত্নও নিতে হয়। গর্ভবতী মা যেন আনন্দিত ও প্রফুল্ল থাকেন, সেদিকে সকলের চেষ্টা থাকা আবশ্যক। উপরিউক্ত আলোচনা থেকে বোঝা যায়, গর্ভবতী মায়ের গর্ভাবস্থাকে ত্রুটিমুক্ত রাখতে শারীরিক যত্ন ও মানসিক যত্ন উভয়ই আবশ্যক। তাই উদ্দীপকের অনন্যার প্রতি তার পরিবারের সচেতনতা ও ভালোবাসা দেখে সহজেই উপলব্ধি করা যায়। তার গর্ভাবস্থাও ত্রুটিমুক্ত হবে। তাদের প্রচেষ্টার মাঝেই এর নিশ্চয়তা প্রত্যক্ষ করা যায়।

৮. আরিফা খাতুন গর্ভবতী হয়েছেন ৫ মাস হলো। তার স্বামী আরিফার গর্ভাবস্থাকে বেশ গুরুত্ব দিচ্ছেন। তার শারীরিক অবস্থার খোঁজ খবর নিচ্ছেন প্রতিদিন। নিজে সময় না পেলেও যেকোনো নিকটাত্মীয়কে পাঠিয়ে দিচ্ছেন আরিফাকে নিয়ে চিকিৎসকের কাছে যেতে। অধিকাংশ সময় তিনিই সাথে যান। স্বামী যত্ন নিচ্ছেন বলে আরিফাও তেমন কোনো সমস্যা অনুভব করছেন না।
ক. প্রসব-পরবর্তী কমপক্ষে কত মাস মা ও শিশুর বিশেষ যত্ন প্রয়োজন?
খ. নিরাপদ মাতৃত্ব নিশ্চিতকরণে গর্ভবতী মাকে মানসিকভাবে সুস্থ রাখা দরকার কেন?
গ. উদ্দীপকের আরিফার স্বামী আরিফার নিরাপদ মাতৃত্ব নিশ্চিতকরণে কোন বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়েছেন? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকের আরিফার স্বামীকে আরিফার প্রতি আরও অনেক বিষয়েই যত্নবান হতে হবে- উত্তরের সপক্ষে যুক্তি দাও।

৮ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. প্রসব-পরবর্তী কমপক্ষে দেড় মাস মা ও শিশুর বিশেষ যত্ন প্রয়োজন।

খ. মা যদি মানসিকভাবে অসুস্থ থাকেন তবে গর্ভের সন্তানও অস্থির ও চঞ্চল হয়ে ওঠে। এর ফলে ভ্রূণের ওপর মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে। এতে করে প্রসবে জটিলতা দেখা দিতে পারে এবং গর্ভাবস্থায় নানা ধরনের ত্রুটি দেখা দিতে পারে। তাই নিরাপদ মাতৃত্ব নিশ্চিতকরণে গর্ভবতী মাকে মানসিকভাবে সুস্থ রাখা অত্যন্ত দরকার।

গ. উদ্দীপকের আরিফার স্বামী আরিফার নিরাপদ মাতৃত্ব নিশ্চিতকরণে যে বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়েছেন সেটি হলো নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা।
গর্ভধারণ একটি প্রাকৃতিক নিয়ম। তবে সকল গর্ভাবস্থাই কমবেশি ঝুঁকিপূর্ণ। নিরাপদ মাতৃত্ব নিশ্চিতকরণের জন্য গর্ভধারণ মুহূর্ত থেকে প্রসবকালীন এবং প্রসব-পরবর্তী কমপক্ষে দেড় মাস মা ও শিশুর বিশেষ যত্ন নেওয়া প্রয়োজন। এ লক্ষ্যে নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাও জরুরি। গর্ভবতী মহিলার নিরাপদ মাতৃত্ব নিশ্চিত করতে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এর মধ্য দিয়ে গর্ভকালীন সময়ে মায়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায়। তার রোগ প্রতিরোধক ব্যবস্থাও গ্রহণ করা যায় এবং চিকিৎসকের পরামর্শ মোতাবেক চলাফেরা করে গর্ভাবস্থাকে ত্রুটিমুক্ত রাখা যায়। তাই বলা যায়, উদ্দীপকের আরিফার স্বামী আরিফার নিরাপদ মাতৃত্ব নিশ্চিতকরণে নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষার বিষয়টিকেই অধিক গুরুত্ব দিয়েছেন।

ঘ. উদ্দীপকের আরিফার স্বামীকে আরিফার প্রতি স্বাস্থ্য পরীক্ষার পাশাপাশি আরও অনেক বিষয়েই যত্নবান হতে হবে- বিষয়টি যৌক্তিক। গর্ভধারণ একটি প্রাকৃতিক নিয়ম হলেও সকল গর্ভাবস্থাই কমবেশি ঝুঁকিপূর্ণ। নিরাপদ মাতৃত্ব নিশ্চিত করতে গর্ভধারণের মুহূর্ত থেকে প্রসবকালীন এবং প্রসব-পরবর্তী কমপক্ষে দেড় মাস মা ও শিশুর বিশেষ পরিচর্যা করা প্রয়োজন। আর এ পরিচর্যা কেবল স্বাস্থ্য পরীক্ষার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। উদ্দীপকের আরিফার স্বামীকে আরিফার প্রতি এর বাইরেও আরও নানা বিষয়ে যত্নবান হতে হবে। গর্ভবতী মহিলাদের নিরাপদ মাতৃত্ব নিশ্চিত করতে যেসব বিষয়ে খেয়াল রাখা আবশ্যক সেগুলো হলো- গর্ভবতী মাকে শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ রাখা ও মনোবল বৃদ্ধি করা, গর্ভকালীন প্রসবকালীন জটিলতা রোধে ভূমিকা রাখা, গর্ভকালীন, প্রসবকালীন প্রসব-পরবর্তী সময়ে মায়ের যত্ন নিশ্চিত করা, উপদেশ প্রদান করা, রোগ প্রতিরোধক ব্যবস্থা প্রদান করা, চিকিৎসক বা প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ও প্রসব স্বাস্থ্যকর্মীর দ্বারা নিরাপদ প্রসব নিশ্চিত করা এবং গর্ভকালীন প্ররবর্তী মা ও শিশুর খাদ্য, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, ব্যায়াম, ঘুম, বিশ্রাম ইত্যাদি বিষয়ে যত্নবান হওয়া, উপরিউক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতেবলা যায়, গর্ভবতী মহিলাদের নিরাপদ মাতৃত্ব নিশ্চিতকরণে এসব বিষয়ে খেয়াল রাখা আবশ্যক। তাই উদ্দীপকের আরিফার স্বামীকে আরিফার প্রতি স্বাস্থ্য পরীক্ষা ছাড়াও এসব বিষয়ে যত্নবান হতে হবে।

৯. আল্পনা অষ্টম শ্রেণিতে পড়ার সময়ই বাবা-মা তাকে বিয়ে দিয়ে দেন। অপরিণত বয়সে বিয়ে না দিতে অনেকেই পরামর্শ দিয়েছিল তাদের। কিন্তু আল্পনার বাবা-মা কারও কথা কানে নেননি। ফলশ্রুতিতে বিয়ের ১ বছর পর সন্তান জন্মদানের সময় আল্পনার মৃত্যু হয়।
ক. ছেলেদের বিয়ের বয়স কমপক্ষে কত বছর?
খ. প্রসব জটিলতার ৫টি বিপদ চিহ্ন সম্পর্কে ধারণা দাও।
গ. উদ্দীকপকের আল্পনার মৃত্যুর জন্য প্রসবকালীন জটিলতার কোন কারণটি দায়ী? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকের আল্পনার মতো আরও অনেক নারীই নানা কারণে প্রসব জটিলতার শিকার হতে পারেন- বিশ্লেষণ কর।

৯ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. ছেলেদের বিয়ের বয়স কমপক্ষে ২১ বছর।

খ. প্রসব জটিলতার ৫টি বিপদ চিহ্ন রয়েছে। যার মধ্যে একটিও দেখা দিলে জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। এ ৫টি বিপদ চিহ্ন হলো- খিঁচুনি, ভীষণ জ্বর, রক্তস্রাব, মাথা ব্যথা ও ঝাঁপসা দেখা এবং বিলম্বিত প্রসব। এ ৫টি বিপদ চিহ্নের মধ্যে একটিও যদি গর্ভবতী মায়ের ক্ষেত্রে দেখা যায় তবে প্রসব জটিলতার সৃষ্টি হয় এবং মা ও শিশু উভয়ের জীবন সংশয়পূর্ণ হয়ে ওঠে।

গ. উদ্দীপকের আল্পনার মৃত্যুর জন্য প্রসবকালীন জটিলতার মায়ের অপরিণত বয়স কারণটি দায়ী।
বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী মেয়েদের বিয়ের বয়স কমপক্ষে ১৮ বছর এবং ছেলেদের কমপক্ষে ২১ বছর। অল্প বয়সে বিয়ে এবং অপরিণত বয়সে সন্তান ধারণ করলে প্রসবকালীন নানা জটিলতা দেখা দেয়। এর ফলস্বরূপ মা ও শিশুর জীবন বিপন্ন হতে পারে। উদ্দীপকের আল্পনার এমন পরিস্থিতির শিকার হওয়ার পিছনে তার অপরিণত বয়সই দায়ী। বাংলাদেশের আইন লঙ্ঘন করে অনেক অভিভাবক তাদের সন্তানদের কম বয়সে বিয়ে দিয়ে দেন। ফলে নানা ধরনের জটিলতা দেখা দেয়। মায়ের বয়স ১৮ বছরের কম বা ৩৫ বছরের বেশি হলে প্রসবকালে-জটিলতা দেখা দেয়। উদ্দীপকের আল্পনার মৃত্যুর জন্য প্রসবকালীন জটিলতার এ কারণটিই দায়ী।

ঘ. উদ্দীপকের আল্পনার মতো অল্প বয়সে গর্ভধারণ করার কারণে আরও অনেক গর্ভবতী নারীই নানা কারণে প্রসব জটিলতার শিকার হতে পারেন- এ বিষয়টি সঠিক।
গর্ভধারণ একটি প্রাকৃতিক নিয়ম হলেও সকল গর্ভাবস্থা কমবেশি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে থাকে। নানা কারণে গর্ভবতী মহিলাদের প্রসব জটিলতা দেখা দিতে পারে। এছাড়া আরও নানা কারণে আল্পনার মতো গর্ভবতী নারীদের ক্ষেত্রে প্রসব জটিলতা দেখা দিতে পারে। গর্ভবতী মহিলাদের ক্ষেত্রে আরও যেসব কারণে প্রসব জটিলতার সৃষ্টি হতে পারে তার মধ্যে রয়েছে- মায়ের উচ্চতা ৪′/১০’’ এর কম থাকা, দুই সন্তানের মধ্যে ব্যবধান ২ বছরের কম থাকা, বিবাহের অনেক বছর পর সন্তান গ্রহণ করা, প্রথম সন্তানের জনম অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে হওয়া, পূর্বে মৃত সন্তান প্রসব করা, জরায়ুর মধ্যে প্লাসেনটার অংশ থেকে যাওয়া, পা বা সমস্ত শরীর ফুলে যাওয়া, নানা ধরনের রোগ থাকা ইত্যাদি। অতএব দেখা যায়, উদ্দীপকের আল্পনা অপরিণত বয়সে সন্তান ধারণ করায় যে প্রসব জটিলতার শিকার হয়েছে, এমনিভাবে আরও অনেক নারীই নানা কারণে প্রসব জটিলতার শিকার হতে পারেন।

১০. আয়শার গর্ভাবস্থার ৭ম মাস চলছে। এমন সময় তার হঠাৎ খিঁচুনি দিয়ে ভীষণ জ্বর দেখা দিল। গ্রামাঞ্চলে বসবাস করায় আয়শার শাশুড়ি বিষয়টিকে তেমন গুরুত্ব দিলেন না। তিনি ঘরোয়া পদ্ধতিতে আয়শার চিকিৎসা করতে শুরু করলেন।
ক. EOC-এর পূর্ণরূপ কী?
খ. প্রসবকালীন জটিলতা দেখা দেয় কেন?
গ. উদ্দীপকের আয়শার অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে কোন ধরনের সেবা নেওয়া আবশ্যক? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকের আয়শার শাশুড়ি আয়শাকে এ অবস্থায় ঘরোয়া পদ্ধতিতে চিকিৎসা করা কি যৌক্তিক? মতামত দাও।

১০ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. EOC-এর পূর্ণরূপ হলো Emergency Obstetric Complications।

খ. সাধারণত মায়ের বয়স ১৮ বছরের কম বা ৩৫ বছরের বেশি হওয়া, মায়ের উচ্চতা ৪/১০" এর কম থাকা, দুই সন্তানের মধ্যে ব্যবধান ২ বছরের কম হওয়া, বিবাহের অনেক বছর পর সন্তান গ্রহণ করা, প্রথম সন্তান অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে জন্ম নেওয়া, পূর্বে মৃত সন্তান প্রসব করা ইত্যাদি। আরও নানা শারীরিক সমস্যার দরুন প্রসবকালীন জটিলতা দেখা দিতে পারে।

গ. উদ্দীপকের আয়শার অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে যেকোনো স্বাস্থ্যকেন্দ্র বা ক্লিনিক থেকে সেবা নেওয়া আবশ্যক।
গর্ভধারণের সময়কালে গর্ভবতী মহিলাদের নানা ধরনের প্রসব জটিলতার সৃষ্টি হয়ে থাকে। নানা কারণে গর্ভবতী মহিলাদের ক্ষেত্রে প্রসব জটিলতা দেখা দিতে পারে। তবে ৫টি বিপদ চিহ্ন রয়েছে, যার একটিও যদি গর্ভবতী মহিলাদের ক্ষেত্রে দেখা যায় তবে জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হয়। এর মধ্যে খিঁচুনি ও ভীষণ জ্বর দুটি অন্যতম বিপদচিহ্ন। উদ্দীপকের আয়শার ক্ষেত্রে ৫টি বিপদচিহ্নের মধ্যে দুটি প্রকাশ পাচ্ছে। এক্ষেত্রে তাকে অবশ্যই চিকিৎসা কেন্দ্র থেকে সেবা নিতে হবে। প্রসব জটিলতায় জরুরি প্রসূতি সেবা বা EOC গ্রহণ করা আবশ্যক। এটি হলো জরুরি ভিত্তিতে প্রদানযোগ্য জীবন রক্ষাকারী চিকিৎসাব্যবস্থা বা সেরা। জরুরি অবস্থায় যেকোনো স্বাস্থ্যকেন্দ্র, কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে এ ধরনের জরুরি সেবা গ্রহণ করলেই মা ও শিশুর জীবন রক্ষা করা যায়। উদ্দীপকের আয়শার অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতেও তার এ ধরনের সেবা নেওয়া আবশ্যক।

ঘ. না, উদ্দীপকের আয়শার শাশুড়ির আয়শাকে এ অবস্থায় ঘরোয়া পদ্ধতিতে চিকিৎসা করা একদম যৌক্তিক নয়।
গর্ভধারণ একটি প্রাকৃতিক ব্যাপার হলেও এর কমবেশি ঝুঁকি রয়েছে। গর্ভাবস্থায় গর্ভবতী মহিলাদের নানা ধরনের প্রসব জটিলতা দেখা দিতে পারে। গর্ভবতী মহিলাদের মধ্যে যদি ৫টি বিপদচিহ্নের মধ্যে একটি বিপদচিহ্নও দেখা যায় তবে তাকে অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হয়। এসব বিপদচিহ্নের মধ্যে রয়েছে- খিঁচুনি, ভীষণ জ্বর, রক্তস্রাব, মাথাব্যথা ও ঝাপসা দেখা এবং বিলম্বিত প্রসব। গর্ভবতী মহিলাদের যদি প্রসব জটিলতা দেখা দেয় তবে তাদের জরুরি প্রসূতি সেবা বা ঊঙঈ দেওয়া প্রয়োজন। এটি হলো জরুরি ভিত্তিতে প্রদানযোগ্য জীবন রক্ষাকারী চিকিৎসাব্যবস্থা বা সেবা। এই সেবা প্রদানের মাধ্যমে প্রসবজনিত জটিলতার কারণে মা ও শিশুকে মৃত্যু, অসুস্থতা ইত্যাদি থেকে রক্ষা করা যায়। জরুরি অবস্থায় যেকোনো স্বাস্থ্যকেন্দ্র, কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে এই সেবা গ্রহণ করে মা ও শিশুর জীবন রক্ষা করা যায়। উপরিউক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে জানা যায়, গর্ভবতী মহিলাদের প্রসব জটিলতায় অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হয়। উদ্দীপকের আয়শার জরুরি অবস্থায়ও তার এ ধরনের সেবা নেওয়া প্রয়োজন ছিল। তাই তার শাশুড়ির ঘরোয়া পদ্ধতিতে চিকিৎসা করাকে আমি অযৌক্তিক বলে মনে করি।
Share:

0 Comments:

Post a Comment