HSC গার্হস্থ্য বিজ্ঞান ২য় পত্র (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর pdf download অধ্যায় ২

HSC গার্হস্থ্য বিজ্ঞান ২য় পত্র (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর pdf download
এইচএসসি পরীক্ষার পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি
HSC Home Science 2nd Paper Srijonshil question and answer pdf download.

উচ্চ মাধ্যমিক

গার্হস্থ্য বিজ্ঞান
দ্বিতীয় পত্র

সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
২য় অধ্যায়

HSC Home Science 2nd Paper
Srijonshil
Question and Answer pdf download

১. গত বছর নীলিমার বিয়ে হয়েছে। ইদানীং সে সকালবেলা দুর্বলতা অনুভব করে এবং প্রায়ই তার বমি বমি ভাব হয়। অপরদিকে, পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা সেলিনাকে তার খালা দেখতে আসেন। তিনি সেলিনাকে এ সময় বেশি পরিমাণে মাছ-মাংস খেতে বলেন। এছাড়াও তিনি সেলিনাকে সময়মতো টিকা গ্রহণ ও বিভিন্ন স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরামর্শ দেন।
ক. বিকাশ-এর সংজ্ঞা দাও।
খ. ‘‘নতুন শিশুর আগমনে বাবার সহযোগিতা অনস্বীকার্য।’’- ব্যাখ্যা কর।
গ. উদ্দীপকে নীলিমার মধ্যে কিসের লক্ষণ পরিলক্ষিত হয়েছে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকে সেলিনার ক্ষেত্রে তার খালার পরামর্শের যথার্থতা বিশ্লেষণ কর।

১ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. পরিপক্বতা ও অভিজ্ঞতার পারস্পরিক ক্রিয়ার ফলে মানুষের মাঝে ধীরে ধীরে পর্যায়ক্রমিক পরিবর্তন হলো বিকাশ।

খ. নতুন শিশুর আগমনে বাবার সহযোগিতার কোনো বিকল্প নেই। স্ত্রীর গর্ভাবস্থায় স্বামীর সহানুভূতি, সহযোগিতা এবং নিরাপত্তার আশ্বাস ভবিষ্যৎ মাকে তার দায়িত্ব নিতে সাহস যোগায়। সন্তান যেহেতু দুই জনের সেজন্য নতুন শিশুর আগমনে স্বামীর সহযোগিতা অবশ্যই কাম্য।

গ. উদ্দীপকের নীলিমার মাঝে গর্ভধারণের লক্ষণ পরিলক্ষিত হয়েছে। গর্ভধারণে নারীর দেহে বেশ কিছু পরিবর্তন আসে। এ পরিবর্তন উপলব্ধি করা যায় বেশ কিছু লক্ষণ দেখে, নারীর শারীরিক নানা সমস্যা এবং পরিবর্তন দেখে। উদ্দীপকের নীলিমার বিয়ে হয়েছে গত বছর। সে নিজের মাঝে ইদানীং বেশকিছু শারীরিক পরিবর্তন লক্ষ করছে, যা আগে অনুভব করেনি। তার সকালে বেশ দুর্বল লাগে এবং প্রায়ই তার বমি হয়। গর্ভধারণের পর যেসব লক্ষণ দেখা যায় তার মধ্যে সকাল বেলা দুর্বলতা অনুভূত হওয়া, বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। তবে এর বাইরেও গর্ভধারণের আরও অনেক লক্ষণ রয়েছে। তাই বলা যায়, উদ্দীপকের নীলিমার মাঝে গর্ভধারণের লক্ষণই উপস্থিত রয়েছে।

ঘ. উদ্দীপকে সেলিনার ক্ষেত্রে তার খালার পরামর্শ অত্যন্ত যথার্থ। গর্ভবতী মায়েদের শারীরিক যত্নের ব্যাপারে সকলকে সচেতন থাকতে হয়। এ সময় তার খাদ্যাভ্যাস, স্বাস্থ্য পরীক্ষা ইত্যাদি ব্যাপারে অবহেলা করার কোনো অবকাশ নেই। উদ্দীপকের পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা সেলিনাকেও তার খালা এসব ব্যাপারে পরামর্শ দিয়েছেন। সেলিনাকে তিনি বেশি পরিমাণে মাছ-মাংস খেতে বলেন। এছাড়া তাকে সময়মতো টিকা গ্রহণ ও বিভিন্ন স্বাস্থ্যবিধিও মেনে চলার পরামর্শ দেন। এ সকল পরামর্শ একজন অন্তঃসত্ত্বা মহিলার পক্ষে মেনে চলা অবশ্য কর্তব্য। গর্ভাবস্থায় একজন মায়ের স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি প্রোটিন প্রয়োজন হয়। এ প্রোটিন মাছ, মাংস, ডিম, ডাল ইত্যাদি থেকে পাওয়া যায়। গর্ভাবস্থায় ৫ মাস পর থেকে দৈনিক ৬৫ গ্রাম প্রোটিন গ্রহণের সুপারিশ করা হয়। এছাড়া নিরাপদ মাতৃত্বের জন্য নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা, টিকা গ্রহণ করা ইত্যাদিও প্রয়োজন। তাই বলা যায়, উদ্দীপকে সেলিনার ক্ষেত্রে তার খালার পরামর্শ অত্যন্ত যথার্থ।

২. দৃশ্যকল্প-১ : আইরিনের বয়স ২৩ বছর। সে ৭ মাসের অন্তঃসত্ত্বা। সে নিয়মিত সুষম খাবার খায় ও ডাক্তারের কাছে যায়। পরিবারের সবাই তাকে নিয়ে আনন্দে আছে।
দৃশ্যকল্প-২ : রোজিনার বয়স ১৬ বছর। সে ৫ মাসের অন্তঃসত্ত্বা। কিন্তু দরিদ্রতার কারণে সে পুষ্টিকর খাবার খেতে পায় না। তার প্রায়ই স্বামীর সাথে মনোমালিন্য হয়।
ক. বংশগতি কাকে বলে?
খ. ডাউন্স সিনড্রোম একটি বংশগত ত্রুটি। বুঝিয়ে লেখ।
গ. দৃশ্যকল্প-১ -এর গর্ভস্থ শিশুর বর্ধন ব্যাখ্যা কর।
ঘ. দৃশ্যকল্প-১ ও ২ -এর ক্ষেত্রে পারিপার্শ্বিক প্রভাবের তুলনামূলক বিশ্লেষণ কর।

২ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. যে পদ্ধতিতে পিতামাতার এবং পূর্বপুরুষের দোষগুণ বা চরিত্রগত বৈশিষ্ট্যগুলো প্রায় অপরিবর্তিত অবস্থায় বংশানুক্রমে সঞ্চারিত হয় তাকে বংশগতি বলে।

খ. সেক্স ক্রোমোজোমসহ যেকোনো কারণে ক্রোমোজোমের অস্বাভাবিকতা শিশুর ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে। ক্রোমোজোমের অস্বাভাবিকতার কারণে শিশুর মধ্যে যে বিকাশজনিত ত্রুটি ও বৈকল্য দেখা যায় তা বংশগত। ডাউন্স সিনড্রোম এমনই একটি বংশগত ত্রুটি। মানুষের দেহকোষের ২১নং ক্রোমোজোমের জোড়ায় যদি ১টি ক্রোমোজোম বেশি থাকে তবে তাকে ডাউন্স সিনড্রোম বলে। এতে ক্রোমোজোমের মোট সংখ্যা হয় ৪৭টি। এ ত্রুটিযুক্ত শিশুদের দৈহিক ও মানসিক বৈশিষ্ট্য একই রকম হয় না।

গ. দৃশ্যকল্প-১ এর গর্ভস্থ শিশুর মা ৭ মাসের অন্তঃসত্ত্বা এবং এটি হলো ভ্রূণ সমাপ্তিকাল বা ফিটাস বিকাশ পর্যায়। গর্ভস্থ শিশুর জীবনের তৃতীয় মাসের শুরু থেকে সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়া পর্যন্ত এ পর্যায় চলতে থাকে। এই পর্যায়ে ভ্রূণের বিকাশ আরও দ্রুত ও স্পষ্ট হয়। উদ্দীপকের আইরিনের বয়স ২৩ বছর এবং সে ৭ মাসের অন্তঃসত্ত্বা। সে নিয়মিত সুষম খাবার খায় ও ডাক্তারের কাছে যায়। ৭ মাসের শিশু মাতৃগর্ভে যেভাবে বর্ধিত হবে আইরিনের শিশুর বর্ধনও সেভাবে হবে। ৭ মাসে ভ্রূণ লম্বা হয় ৩৮-৪০ সে. মি এবং ওজন হয় ২.৫ পাউন্ড। ৭ম মাসে মস্থি ষ্কের বৃদ্ধি দ্রুত হয় এবং দৈহিক কার্যকলাপ বৃদ্ধি পায়। মাতৃগর্ভের বাইরের পরিবেশের সাথে খাপ খাওয়ানোর প্রস্থুতি চলে। গর্ভস্থ শিশুর ফুসফুস কিছুটা কর্মক্ষম হয়। খাবার গ্রহণ ও রেচন ক্ষমতা লাভ করে। ৭ম মাসে শিশুর বেঁচে থাকার মতো সব রকম শারীরিক পূর্ণতা আসে। মাতৃগর্ভে ৭ম মাসে শিশুর এরূপ বর্ধন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়।

ঘ. দৃশ্যকল্প ১ ও ২-এর ক্ষেত্রে পারিপার্শ্বিক প্রভাবের ভিন্ন রূপ পরিলক্ষিত হয়।
মাতৃগর্ভে শিশু ২৭০-২৮০ দিন বা ৪০ সপ্তাহ অবস্থান করে। এ সময়টা হচ্ছে ভ্রূণের জীবন বিকাশের ভিত্তিকাল। তাই এ সময় মায়ের পুষ্টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অন্তঃসত্ত্বা আইরিন পর্যাপ্ত পুষ্টিকর খাবার খেতে পাচ্ছে এবং সে মানসিকভাবেও ভালো আছে। ফলে তার গর্ভের সন্তানও পুষ্টি পাচ্ছে এবং তার বর্ধনও যথাযথ হচ্ছে। কিন্তু অল্পবয়সী রোজিনা দরিদ্রতার কারণে পুষ্টিকর খাবার খেতে পারছে না। তাই তার গর্ভের সন্তানও পর্যাপ্ত পুষ্টি পাচ্ছে না। আবার প্রায়ই স্বামীর সাথে মনোমালিন্য হওয়ায় তার মানসিক অবস্থাও ভালো না। কিন্তু গর্ভবতী থাকাকালীন এসব পারিপার্শ্বিক প্রভাবের ব্যাপারে সতর্ক হওয়া প্রয়োজন। জন্মপূর্ব বর্ধনে মায়ের উপযুক্ত পুষ্টির যথেষ্ট প্রয়োজন আছে। গর্ভস্থ শিশুর পুষ্টি মায়ের পুষ্টির ওপর নির্ভর করে। মায়ের সুষম খাদ্য ও পুষ্টির ফলে শিশুর শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সুষ্ঠুরূপে বিকশিত হয়। শিশুর জন্মপূর্ব বর্ধনে গর্ভবতী মায়ের মানসিক প্রভাবও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মায়ের মানসিক অবস্থা ও মনোভাবের ব্যাপারে প্রত্যেকের বিশেষভাবে যত্নবান হতে হবে। গর্ভবতী মাকে কোনো অবস্থাতেই উত্তেজিত হতে দেওয়া যাবে না। গর্ভবতী মায়ের স্বাস্থ্য, শারীরিক যত্ন ও মানসিক যত্নের ব্যাপারে এ সময় মাসহ পরিবারের অন্য সদস্যদেরও সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।

৩. সালমা বেগম কিছুদিন ধরে লক্ষ করছেন ১৩ বছর বয়সী মেয়ে জিন্তির মধ্যে কিছু শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন দেখা দিচ্ছে। তিনি জানতেন বয়ঃসন্ধিকালে এ ধরনের পরিবর্তন হরমোনের কারণে হয়ে থাকে। এছাড়া তার নিজের মধ্যেও গর্ভধারণের বিভিন্ন লক্ষণ প্রকাশ পাচ্ছে।
ক. কোরিওন কী?
খ. ক্রিটিনিজম বলতে কী বোঝ?
গ. সালমা বেগমের মধ্যে যে লক্ষণগুলো প্রকাশ পাচ্ছে সেগুলো ব্যাখ্যা কর।
ঘ. জিন্তির শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তনে হরমোনের প্রভাব বিশ্লেষণ কর।

৩ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. কোরিওন হলো ভ্রূণের সর্ববহিস্থ আবরণী।

খ. থাইরয়েড গ্রন্থি থেকে থাইরক্সিন হরমোন নিঃসৃত হয়। বংশগত কারণে বা অন্য কোনো কারণে গর্ভাবস্থায় আয়োডিনের অভাব হলে থাইরয়েড গ্রন্থির কর্মক্ষমতা কমে যায়; এতে থাইরক্সিন হরমোন কম ক্ষরিত হয়। ফলে বামনত্ব, মাথায় চুল অল্প, কপাল ছোট, নাক চ্যাপ্টা, জিহবা মোটা, গলগ- প্রভৃতি লক্ষণ দেখা দেয়। বিপাক হ্রাস পায়। যৌনাঙ্গের বিকাশ ঠিকমতো হয় না। এ ধরনের শারীরিক অবস্থাকে ক্রিটিনিজম বলে।

গ. উদ্দীপকের সালমা বেগমের মধ্যে গর্ভধারণের যেসব সাধারণ লক্ষণ প্রকাশ পাচ্ছে নিচে সেগুলো আলোচনা করা হলো-
• গর্ভাবস্থার প্রথম এবং প্রধান লক্ষণ মাসিক বন্ধ থাকা। সাধারণত সন্তান গর্ভে আসার পর থেকে ভূমিষ্ঠ না হওয়া পর্যন্ত মাসিক বন্ধ থাকে; যা সালমা বেগমের ক্ষেত্রেও ঘটেছে।
• প্রথম ৩/৪ মাস পর্যন্ত অনেক গর্ভবতী মহিলার মধ্যে বমির প্রবণতা দেখা যায়; যেমনটি- সালমা বেগমের মধ্যেও দেখা দিয়েছে।
• ঘন ঘন প্রস্রাবের বেগ হয়।
• সালমা বেগমের স্থ নের বেশ পরিবর্তন দেখা দিয়েছে। তার স্তন ব্যথা অনুভূত হয়।
• গর্ভাবস্থায় মায়েদের অনিয়মিত খাদ্যাভ্যাসের দরুন অনেক সময় কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দেয়; যা সালমা বেগমের মধ্যেও দেখা দিয়েছে।
• কোনো কোনো খাবারের প্রতি অরুচি, পেশির ব্যথা, মাঝে মাঝে শ্বাসকষ্ট, অতিরিক্ত ঘাম প্রভৃতি উপসর্গগুলো সালমা বেগমের মধ্যে লক্ষ করা যাচ্ছে।
• সালমা বেগমের ওজন বৃদ্ধি পেয়েছে।
• তলপেটে, গালে ও কপালে কালো দাগ দেখা দিয়েছে। সালমা বেগমের তলপেট বড় হচ্ছে।
উপরিউক্ত লক্ষণগুলো গর্ভবতী সালমা বেগমের মধ্যে প্রকাশ পাচ্ছে।

ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত ১৩ বছর বয়সী জিন্তির বয়ঃসন্ধিকাল বা কৈশোরকাল চলছে। এ সময় হরমোনের প্রভাবে জিন্তির মধ্যে কিছু শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন দেখা দিচ্ছে।
হরমোনের প্রভাবে কিশোরী জিন্তির মধ্যে বেশকিছু দৈহিক ও মানসিক পরিবর্তন লক্ষণীয়। বয়ঃসন্ধিক্ষণে তার প্রাপ্তবয়স্কদের মতো তার দেহের আকার-আকৃতি ও যৌন বৈশিষ্ট্য অর্জিত হয়। যৌন ক্ষমতার পূর্ণ বিকাশে সে প্রজনন ক্ষমতা অর্জন করে। বিমূর্ত বিষয় চিন্তা করতে পারে অর্থাৎ যে বিষয় চোখে দেখা যায় না যেমন- সততা, স্নেহ, ভালোবাসা ইত্যাদি বিষয়গুলো বুঝতে পারে। যৌন পরিপক্কতা অর্জনের বৈশিষ্ট্যস্বরূপ জিন্তির ডিম্বকোষ, জরায়ু, স্তন এবং অন্য অঙ্গসমূহের বৃদ্ধি ঘটছে; সাথে সাথে উচ্চতা, ওজনও দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। তার মধ্যে শিশুসুলভ বৈশিষ্ট্য বিলুপ্ত হচ্ছে এবং নতুন আচরণগত বৈশিষ্ট্য ও মনোভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে। শারীরিক পরিবর্তনের সাথে সংগতি রেখেই মনোভাব ও আচরণের পরিবর্তন ঘটছে। সে বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আকর্ষণ অনুভব করে; সঙ্গীর কাছে প্রশংসা পেতে চেষ্টা করে। এ সময় হরমোনের প্রভাবে শিশুকালীন মনমানসিকতার পরিবর্তন এবং ব্যক্তিত্বের পরিস্ফুটন ঘটে। তাছাড়া নৈতিকতা অর্জন এ বয়সের অন্যতম মানসিক পরিবর্তন। এ
সময়ে হরমোনের প্রভাবে জিন্তির মধ্যে ভালো-মন্দ, ন্যায়-অন্যায়ের নিজস্ব ধারণা তৈরি হচ্ছে। তার মধ্যে সামাজিকভাবে দায়িত্বপূর্ণ আচরণ গ্রহণের আগ্রহ তৈরি হচ্ছে। বাবা-মা ও অন্যের ওপর থেকে আবেগীয় নির্ভরশীলতা কমছে এবং সে আত্মনির্ভরশীল হচ্ছে, আত্মপরিচিতি অর্জন করছে। স্বাধীনভাবে চলার ক্ষেত্রে দায়িত্ব গ্রহণে পরস্পরবিরোধী মনোভাবও দেখা দিচ্ছে। এ বয়সের অন্যতম মানসিক পরিবর্তন হলো মূল্যবোধের পরিবর্তন। ছেলেবেলার অটুট বিশ্বাস তরুণ বয়সে পরিবর্তন হয়। অন্যায়ের কাছে মাথা নত না করা, পুরাতনকে ভেঙে নতুন জাগরণের পথে অগ্রসর হওয়া এ বয়সের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। উপরিউক্ত আলোচনা থেকে বলা যায়, জিন্তির শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তনে হরমোনের তাৎপর্যপূর্ণ প্রভাব অনস্বীকার্য।

৪. জুলেখা ও আরিফা দুই বোন। দুজনেই চার মাসের অন্তঃসত্ত্বা। জুলেখার বয়স ২৫, আরিফার বয়স ১৬ বছর। জুলেখা নিয়মিত সুষম খাবার খায় ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যায়। কিন্তু আবারও মেয়ে সন্তানের মা হবে বলে পরিবারের সবাই জুলেখার প্রতি বিরূপ আচরণ করে। এই নিয়ে জুলেখা খুব দুশ্চিন্তায় আছে। অন্যদিকে আরিফা দারিদ্রে্যর জন্য তিনবেলা ঠিকমতো খেতে পায় না। কিন্তু প্রথম বংশধর আসছে বলে আরিফার পরিবারের সবাই খুশি।
ক. নিষেক কাকে বলে?
খ. ‘ডাউন্স সিনড্রোম' একটি বংশগত ত্রুটি- বুঝিয়ে লেখ।
গ. জুলেখার গর্ভকালীন অবস্থানে গর্ভস্থ শিশুর বিকাশ ব্যাখ্যা কর।
ঘ. জুলেখা ও আরিফার ক্ষেত্রে গর্ভকালীন বিকাশে পারিপার্শ্বিকতার প্রভাব কি একই রকম হবে? তোমার উত্তরের পক্ষে যুক্তি দেখাও।

৪ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. যৌন প্রজননে ডিম্বাণু ও শুক্রাণুর মিলনকে নিষেক বলে।

খ. ক্রোমোজোম ও জিনের অস্বাভাবিকতার জন্য মাতৃগর্ভে ভ্রূণের বিকাশ ব্যাহত হয় এবং শিশু শারীরিক ত্রুটি ও বৈকল্য নিয়ে জন্মগ্রহণ করে। এর মধ্যে অটোজমজনিত ক্রোমোজোমের সংখ্যা বৃদ্ধি বা গঠনগত অস্বাভাবিকতা অন্যতম। ডাউন্স সিনড্রোম এ ধরনের অস্বাভাবিকতা। মানুষের দেহকোষের ২১নং ক্রোমোজোমের জোড়ায় যদি ১টি ক্রোমোজোম বেশি থাকে তবে তাকে ডাউন্স সিনড্রোম বলে। এতে ক্রোমোজোমের মোট সংখ্যা হয় ৪৭টি। এ অস্বাভাবিকতার শিকার শিশুরা অন্যান্য শিশুদের মতো হয় না। এটি এক ধরনের বংশগত ত্রুটি।

গ. জুলেখা চার মাসের অন্তঃসত্ত্বা এবং সে অনুযায়ীই তার গর্ভস্থ শিশুর বিকাশ সাধিত হবে। গর্ভসঞ্চারের পর থেকে প্রসবের পূর্বক্ষণ পর্যন্ত সময়ে শিশু মাতৃগর্ভে অবস্থান করে। এসময় প্রাকৃতিক নিয়ম অনুসারেই গর্ভকালীন বিকাশ সংঘটিত হয়। এ বিকাশ তিনটি পর্যায়ে সম্পন্ন হয়। (i) অঙ্কুরিত কাল, (ii) ভ্রূণকাল ও (iii) ভ্রূণ সমাপ্তিকাল। উদ্দীপকের জুলেখা চার মাসের অন্তঃসত্ত্বা। সে নিয়মিত সুষম খাবার খায়, স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যায়। সবকিছু স্বাভাবিকভাবে হওয়ায় তার গর্ভস্থ শিশুর বিকাশও স্বাভাবিক হবে। ৪র্থ মাসে গর্ভস্থ ভ্রূণ লম্বা হয় ১৫ থেকে ১৭ সে. মি. এবং ওজন হয় ২৫ পাউন্ড। এ সময় ভ্রূণের আঙুল ও নখ গঠিত হয়। প্লাসেন্টার পরিপূর্ণ বিকাশ ঘটে ৪র্থ মাসে নাভিরজ্জু লম্বা ও মোটা হয়। ভ্রূণের গতিশীলতা বাড়ে বলে মা সন্তানের গতিবিধি বোঝতে পারেন। মানবশিশুর গর্ভস্থকালীন বিকাশ খুবই গুরুত্বপূর্ণ এসময় গর্ভবতী মহিলাকে যথেষ্ট সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়। গর্ভাবস্থার ৪র্থ মাসে গর্ভস্থ শিশুর এরপ বিকাশই সাধিত হয়ে থাকে।

ঘ. না, জুলেখা ও আরিফার ক্ষেত্রে গর্ভকালীন বিকাশে পারিপার্শ্বিকতার প্রভাব একই রকম হবে না।
মাতৃগর্ভ একটি জটিল রসায়ন ঘরের মতো। মাতৃগর্ভে নানা রকম ঘটনার মধ্য দিয়ে মানবশিশু সৃষ্টি হয়। মাতৃগর্ভে থাকাকালীন ভ্রূণের জীবন বিকাশের ভিত্তিকাল রচিত হয়। এসময় পারিপার্শ্বিক প্রভাব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। উদ্দীপকের জুলেখার আবারও মেয়ে সন্তান হবে বলে তার প্রতি পরিবারের সবাই বিরূপ আচরণ করছে। কিন্তু সে পুষ্টিকর খাবার খেতে পারছে। আবার, আরিফা দারিদ্রে্যর কারণে তিনবেলা ঠিকমতো খেতে না পেলেও প্রথম বংশধর আসছে বলে আরিফার পরিবারের সবাই খুশি। গর্ভকালীন বিকাশে যেসব পারিপার্শ্বিক প্রভাব দেখা যায় সেগুলোকে দু'ভাগে ভাগ করা হয়- (ক) শারীরিক প্রভাব ও (খ) মানসিক প্রভাব। জন্মপূর্ব বর্ধনে মায়ের উপযুক্ত পুষ্টির যথেষ্ট প্রয়োজনীয়তা আছে। কেননা, গর্ভস্থ শিশুর পুষ্টি মায়ের পুষ্টির ওপর নির্ভর করে। আবার, শিশুর জন্মপূর্ব বর্ধনে গর্ভবতী মায়ের মানসিক প্রভাবও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জন্মের পূর্বে মায়ের আবেগ, অনুভূতি, ক্ষোভ ইত্যাদি পরিস্থিতি মায়ের দেহে যে রাসায়নিক পরিবর্তন হয় তার প্রভাবে গর্ভস্থ শিশুর ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই এসময় গর্ভবর্তী মাকে যথাসম্ভব হাসি-খুশি রাখার চেষ্টা করতে হবে। সার্বিক দিক বিবেচনা শেষে বলা যায় যে, উদ্দীপকের দু'বোনের ক্ষেত্রে গর্ভকালীন বিকাশে পারিপার্শ্বিকতার প্রভাব একই রকম হবে না।

৫. রুবিনা ইসলাম ২ মাসের গর্ভবতী। গর্ভকালীন সমস্যা নিয়ে তিনি গাইনি ডা. তাহমিনার কাছে এসেছেন। ডা. তাহমিনা তাকে পরামর্শ দিয়ে বলেন, গর্ভকালে ভ্রূণের বিকাশের বিভিন্ন পর্যায়ে বিপত্তি ঘটতে পারে। এ বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। তিনি আরও বলেন, গর্ভকালীন সময়ে মায়ের অপুষ্টি ও অসুস্থতা শিশুর উপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে।
ক. জাইগোট কাকে বলে?
খ. গর্ভধারণে মায়ের বয়স গুরুত্বপূর্ণ কেন? ব্যাখ্যা কর।
গ. উদ্দীপকে ডা. তাহমিনা কোন কোন বিপর্যয়ের প্রতি ইঙ্গিত করেছেন তা বর্ণনা কর।
ঘ. ডা. তাহমিনার বক্তব্যের শেষাংশের সাথে তুমি কি একমত? তোমার মতের সপক্ষে মতামত দাও।

৫ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. পরিণত শুক্রাণু ও পরিণত ডিম্বাণুর নিউক্লিয়াসে একিভবনের মাধ্যমে নারীদেহে যে প্রাণের সঞ্চার হয় তাকে জাইগোট বলে।

খ. গর্ভধারণে মায়ের বয়স অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অপরিণত বয়সে গর্ভধারণ করলে অনেক সময় তা মা ও সন্তানের মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এজন্য গর্ভধারণের উপযুক্ত সময় হলো ১৮ বছরের কম বা ৩৫ বছরের বেশি বয়স না হওয়া। নিরাপদ মাতৃত্ব ও সুস্থ সন্তান লাভের জন্যই মায়েদের উক্ত বয়স হওয়া আবশ্যক।

গ. রুবিনা ইসলাম ২ মাসের গর্ভবতী। গর্ভকালীন সমস্যা নিয়ে তিনি গাইনি ডা. তাহমিনার কাছে যান। ডা. তাহমিনা রুবিনা ইসলামকে গর্ভকালে ভ্রুণের বিকাশের বিভিন্ন পর্যায়ে বিপত্তি ঘটা সম্পর্কে সতর্ক করেন। ডা. তাহমিনা যেসব বিপত্তি বা বিপর্যয় সম্পর্কে ইঙ্গিত করেছেন তা হলো-
১. ডিম্বকোষ পর্যায় (Period of the ovum) বিপত্তি : ডিম্বকোষ পর্যায়ে বিপত্তিসমূহের মধ্যে দেখা যায়-পুষ্টির অভাবে ফ্যালাপিয়ান টিউব বেয়ে নিষিক্ত ডিম্বটি জরায়ুর দিকে যাওয়ার পথে দেরি হলে নিষিক্ত ডিম্বটি মৃত্যুবরণ করে। মায়ের পিটুইটারি গ্রন্থি ও ডিম্বথলির ভারসাম্যহীনতার কারণে জরায়ু প্রাচীরের নিষিক্ত ডিম্বকে গ্রহণের অক্ষমতার কারণে বিপত্তি সৃষ্টি হয়। ডিম্বকোষ পর্যায়ে নিষিক্ত ডিম্বটি যদি কোনো কারণে ফ্যালাপিয়ান টিউবে সংযোজিত হয় তবে পুষ্টির অভাবে ও পর্যাপ্ত জায়গার অভাবে বিপত্তি সৃষ্টি হয়।
২. ভ্রূণ পর্যায়ে (Period of the embryo) বিপত্তি: ভ্রূণ পর্যায়ে মাতৃগর্ভের প্রতিকূল পরিবেশের কারণে অর্থাৎ অপুষ্টি, গ্রন্থিসমূহের অস্বাভাবিকতা, আবেগীয় চাপ প্রভৃতি কারণে গর্ভপাত হয়ে থাকে। গর্ভকালে মায়ের দুশ্চিন্তা, গ্রন্থিরসের স্বল্পতা, মাদক গ্রহণ কিংবা বিভিন্ন রোগের কারণে সৃষ্ট ক্ষেত্রে গর্ভপাত না হলেও সেক্ষেত্রে শিশুর স্বাভাবিক বিকাশে বিপত্তি সৃষ্টি হয়।
৩. ফেটাস পর্যায় (Period of the fetus) বিপত্তি : ফেটাস পর্যায়ে চন্দ্র মাসের হিসাব পাঁচ মাস পর্যন্ত যেকোনো সময় গর্ভপাত হয়ে যেতে পারে। নির্দিষ্ট সময়ের পূর্বে শিশু জন্মগ্রহণ করলে বিকাশে বিঘ্ন ঘটে কিংবা মৃত্যু হয়। শিশু দেরিতে জন্মগ্রহণ করলেও অনুরূপ বিপত্তি দেখা দেয়। ফেটাস পর্যায়ে শিশুর জন্মকালীন অবস্থান বা অন্য কারণে প্রসবকালীন জটিলতা ঘটলে শিশুর বিকাশ ত্রুটিপূর্ণ হয়। এ সময়ে শিশু অক্সিজেন গ্রহণের ক্ষমতা অর্জন করে। ফেটাস পর্যায়ে মায়ের অতিরিক্ত ধূমপান, অ্যালকোহল পান গর্ভকালীন শিশুর বিকাশে বিপত্তি সৃষ্টি করে।

ঘ. ডা. তাহমিনা তার বক্তব্যের শেষাংশে বলেন, গর্ভকালীন সময়ে মায়ের অপুষ্টি ও অসুস্থতা শিশুর ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। ডা. তাহমিনার উক্ত মতের সাথে আমি একমত পোষণ করছি। গর্ভবতী মায়ের অপুষ্টি ও অসুস্থতা যেভাবে শিশুর ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে তা হলো-
১. মায়ের অপুষ্টি : মায়ের পুষ্টি থেকেই ভ্রূণ পুষ্টি গ্রহণ করে। গর্ভবর্তী মায়ের সুষম খাদ্য গ্রহণ করা আবশ্যক। মা যদি পর্যাপ্ত পুষ্টি গ্রহণ না করেন তাহলে ভ্রূণের দৈহিক গঠন দুর্বল হয়, যেমন- প্রোটিনের অভাবে শিশুর দৈহিক গঠন ব্যাহত হয় এবং খর্বাকৃতি হয়। মানসিক প্রতিবন্ধী হওয়ার আশঙ্কা থাকে। ভিটামিনের অভাবে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস পায়। মায়ের খাদ্যে লৌহের অভাবে ভ্রূণের রক্তস্বল্পতা দেখা দেয়। ক্যালসিয়ামের অভাবে ভ্রূণের হাড়ের গঠন ব্যাহত হয়। এছাড়া, অকাল গর্ভপাত, অপরিণত ও মৃত শিশু হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
২. মায়ের অসুস্থতা : মায়ের উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, জন্ডিস, হাম, মামস, যৌন ব্যাধি ইত্যাদি ভ্রূণের জীবন বিপন্ন করে। এ রোগসমূহ গর্ভের বিভিন্ন পর্যায়ে গর্ভস্থ ভ্রূণের ক্ষতিসাধন করে। যেমন-
৩. উচ্চ রক্তচাপ : স্বাভাবিক রক্তচাপ ১২০/৮০ মি.মি. অফ মারকারি। রক্তচাপ যদি ১৪০/৯০ মি.মি. এর অধিক হয়, তাহলে প্রি-একলামসিয়া দেখা দেয়। এতে ফেটাস ও মায়ের মৃত্যু বা বিকলাঙ্গ শিশুর জন্ম হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
৪. ডায়াবেটিস : ফেটাসের আকৃতি বড় হয়। গঠনগত ত্রুটি হওয়ার আশঙ্কা থাকে। গর্ভপাত এবং ইনফেকশন হতে পারে।
৫. সংক্রামক রোগ : ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া ও প্যারাসাইট দ্বারা আক্রান্ত হলে ভ্রূণের মারাত্মক ক্ষতির আশঙ্কা থাকে। শিশু শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধী হতে পারে।
উপরিউক্ত আলোচনা হতে এটাই প্রতীয়মান হয়, গর্ভকালে মায়ের অপুষ্টি ও অসুস্থতা শিশুর ওপর মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে।

৬. শিল্পী তার অনাগত সন্তান নিয়ে অত্যন্ত আগ্রহী। প্রতিদিনই তার মধ্যে একজনের বেড়ে উঠাকে সে অনুভব করতে পারে। হঠাৎ একদিন সে তার মধ্যে গর্ভজাত সন্তানের নড়াচড়া প্রথম অনুভব করল। এ অনুভূতি তাকে অবাক করল এবং সে সবার কাছে তার এ অনুভূতির কথা জানাল। তবে সন্তানকে কোলে পেতে তাকে আরও অনেক মাসের নতুন অভিজ্ঞতা অর্জন করতে হবে।
ক. অপরিপক্ব শিশুর জন্ম হয় কোন মাসে?
খ. তৃতীয় মাসে ভ্রূণের অবস্থা কেমন থাকে?
গ. উদ্দীপকের শিল্পীর অনুভূতি ভ্রূণ সমাপ্তিকালের কোন সময়কে ইঙ্গিত করে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকের শেষ বাক্যটিকে ভ্রূণের সমাপ্তিকাল বিবেচনাপূর্বক বিশ্লেষণ কর।

৬ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. অপরিপক্ক শিশুর জন্ম হয় ৭ম মাসে।

খ. ভ্রূণের সমাপ্তিকালের শুরু হয় তৃতীয় মাস থেকে। এ সময় ভ্রূণ লম্বা হয় ৭ থেকে ৮ সে. মি. এবং এর ওজন হয় ১ আউন্স। হাড়ের গঠনও চলতে থাকে। তৃতীয় মাসে ভ্রূণ মুখ খুলতে ও বন্ধ করতে পারে। হাতের ও পায়ের আঙুল, কান, চোখের পাতা ইত্যাদিও তৈরি হয়। তৃতীয় মাসে ভ্রূণের অবস্থা এমনি থাকে এবং ধীরে ধীরে এর বিকাশ ত্বরান্বিত হয়।

গ. উদ্দীপকের শিল্পীর অনুভূতি ভ্রূণ সমাপ্তিকালের চতুর্থ মাসকে ইঙ্গিত করে।
মাতৃদেহে গর্ভকালীন বিকাশ প্রাকৃতিক নিয়ম অনুসারে হয়। গর্ভকালীন বিকাশ যে তিনটি পর্যায়ে সম্পূর্ণ হয় তার মধ্যে একটি হলো- ভ্রূণ সমাপ্তিকাল। এর ব্যাপ্তি তৃতীয় মাস থেকে সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়া পর্যন্ত থাকে। উদ্দীপকের শিল্পী তার মধ্যে বেড়ে ওঠা অনাগত সন্তানকে নিয়ে অত্যন্ত আগ্রহী। হঠাৎ একদিন সে তার মধ্যে গর্ভজাত সন্তানের নড়াচড়া প্রথম অনুভব করল। এ অনভূতি তাকে খুব অবাক করল এবং সে সবাইকে তার অনুভূতির কথা জানাল। এ অনুভূতি প্রথম চতুর্থ মাসেই হয়। ভ্রূণ সমাপ্তিকালের শুরু হয় তৃতীয় মাসে এবং শেষ হয় সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর। এর মধ্যে চতুর্থ মাসে ভ্রূণ লম্বা হয় ১৫ থেকে ১৭ সে. মি. এবং এর ওজন হয় ২৫ পাউন্ড। এ সময় ভ্রূণের গতিশীলতা বাড়ে এবং মা সন্তানের নড়াচড়া অনুভব করতে পারেন। এর আগের মাসগুলোতে আস্থে আস্থে ভ্রূণ বিকশিত হতে থাকে। ভ্রূণের নড়াচড়া মা প্রথম চতুর্থ মাসেই উপলব্ধি করতে পারে বলে উদ্দীপকের শিল্পীর অনুভূতি এ সময়কেই ইঙ্গিত করে।

ঘ. উদ্দীপকের শেষ বাক্যটি সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার আগের সময়কালগুলোকে নির্দেশ করছে, যা ভ্রূণের সমাপ্তিকাল বিবেচনা করলে সহজেই উপলব্ধি করা যায়।
গর্ভকালীন বিকাশের তিনটি পর্যায়ের শেষ পর্যায় হলো ভ্রূণ সমাপ্তিকাল। তৃতীয় মাস থেকে সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়া পর্যন্ত থাকে এর ব্যাপ্তিকাল। এ সময়কালের মধ্যে ধীরে ধীরে ভ্রূণ বিকশিত ও পরিবর্তিত হতে থাকে যার প্রভাব মাতৃদেহেও পড়ে। তবে সন্তানকে কোলে পাওয়ার জন্য তাকে আরও কয়েক মাস অপেক্ষা করতে হবে। এ সময় তার অনেক নতুন অভিজ্ঞতাও অর্জিত হবে। যেমন- চতুর্থ মাসে সন্তানের নড়াচড়া বুঝতে পারা, পঞম মাসে শিশুর হৃৎস্পন্দন শুনতে পারা এবং ভ্রূণের বেশ নড়াচড়া করা, ষষ্ঠ মাসে শিশুর বড় হতে থাকা, সপ্তম মাসে শিশুর খাবার গ্রহণ ও রেচন ক্ষমতা লাভ করার অনুভূতি, অষ্টম মাসে মায়ের গর্ভে শিশুর মাথা নিম্নমুখী হওয়া, নবম মাসে প্রসব প্রস্থুতি হিসেবে শিশুর মাথা তলপেটে নেমে আসা ইত্যাদি। এতগুলো মাসে নানা নতুন অভিজ্ঞতা অর্জন করার পর ই.ডি.ডি বা প্রত্যাশিত তারিখে শিশু ভূমিষ্ঠ হয়। উপরিউক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে এবং সার্বিক দিক বিবেচনায় তাই বলা যায়, উদ্দীপকের শেষ বাক্যটি যথার্থ ও সঠিক। ভ্রূণের সমাপ্তিকাল বিবেচনায় এ বিষয়টি সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায়।

৭. তুলি প্রথমবারের মতো গর্ভবতী হয়েছে। চাকরির সুবাদে সে ও তার স্বামী পরিবার থেকে দূরে বসবাস করে। গর্ভকালীন সময়ের করণীয় কিংবা ক্ষতিকর কোনো ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা ইত্যাদি তার জানা নেই। এ সময় হঠাৎ তার জ্বর হলো। সামান্য সর্দি-জ্বরে সে সবসময় যে ওষুধ সেবন করে এবারও তাই গ্রহণ করল। এ বিষয়টি একজন চিকিৎসক জানতে পেরে বলল, এ সময়ে সে যদি সচেতন না হয় তবে তার গর্ভকালীন বিকাশে আরও অনেক বিপত্তি আসতে পারে।
ক. ভ্রূণ বিকাশের কয়টি পর্যায়?
খ. গর্ভকালীন বিকাশের বিপত্তি সম্পর্কে ধারণা দাও।
গ. উদ্দীপকের তুলির ঘটনা স্তুপের গর্ভকালীন বিকাশে কোন ধরনের বিপত্তি সৃষ্টি করতে পারে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকের তুলি যদি সচেতন না হয় তবে তার গর্ভকালীন বিকাশে আরও অনেক বিপত্তি আসতে পারে- চিকিৎসকের আলোচ্য মন্তব্যটির যথার্থতা যাচাই কর।

৭ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. ভ্রুণ বিকাশের তিনটি পর্যায়।

খ. মানবশিশুর গর্ভকালীন বিকাশ তিনটি পর্যায়ে সম্পন্ন হয়ে থাকে। এ এর যেকোনো পর্যায়ে বিপত্তি দেখা দিতে পারে এবং এতে ভ্রুণ ও মায়ের জীবন বিপন্ন হতে পারে। অঙ্কুরিতকাল বা জাইগোট বিকাশ পর্যায়ে বিপত্তি দেখা দিলে জাইগোটটি ফেলোপিয়ান টিউবে আটকে যায় এবং এর বৃদ্ধি ঘটলে ফেলোপিয়ান টিউবে ভ্রূণের স্থান সংকুলান হয় না। ফলে টিউবটি ফেটে যায় এবং ভ্রূণ ও মায়ের জীবন বিপন্ন হয়। আবার, হরমোনের অভাবে কিংবা ভ্রূণ ও ফিটাস, বিকাশ পর্যায়েও গর্ভকালীন বিকাশে বিপত্তি দেখা দিতে পারে। এ পরিস্থিতিতে ভ্রূণ ও মা উভয়ের জীবন বিপন্ন হওয়ার আশঙ্কা থাকে।

গ. উদ্দীপকের তুলির ঘটনা ভ্রূণের গর্ভকালীন বিকাশে ভ্রূণ ও ফিটাস বিকাশ পর্যায়ের বিপত্তি সৃষ্টি করতে পারে।
মানবশিশুর গর্ভকালীন বিকাশ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ বিকাশ তিনটি পর্যায়ে সংঘটিত হয়ে থাকে। এ বিকাশের যেকোনো পর্যায়েই বিপত্তি দেখা দিতে পারে। ভ্রূণ ও ফিটাস বিকাশ পর্যায়ের বিপত্তি এর মধ্যে অন্যতম। উদ্দীপকের তুলি সামান্য সর্দি-জ্বর হওয়ায় বরাবরের মতোই ওষুধ সেবন করে। তবে সে চিকিৎসকের সাথে এ ব্যাপারে কোনো পরামর্শই করেনি। গর্ভাবস্থায় মায়ের এ ধরনের সিদ্ধান্ত ভ্রূণের গর্ভকালীন বিকাশ ব্যাহত করতে পারে। গর্ভকালীন সময়ে মা যদি চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ গ্রহণ করেন তবে ভ্রূণ ও ফিটাসের বিকাশে বিপত্তি দেখা দেওয়ার আশঙ্কা থাকে। এতে ভ্রূণ ও মায়ের জীবন বিপন্ন হওয়ারও আশঙ্কা থাকে, যা গর্ভকালীন বিকাশের জন্য মারাত্মক বিপত্তি। উদ্দীপকের তুলির গর্ভাবস্থায় চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ সেবন করা ভ্রুণ ও ফিটাসের বিকাশ পর্যায়ের বিপত্তিই সৃষ্টি করতে পারে।

ঘ. উদ্দীপকের তুলি যদি তার গর্ভাবস্থায় সচেতন না থাকে তবে তার অসাবধানতার দরুন গর্ভকালীন বিকাশে আরও অনেক বিপত্তি আসতে পারে- চিকিৎসকের আলোচ্য মন্তব্যটি যথার্থ। মানবশিশুর গর্ভকালীন বিকাশ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গর্ভধারণের পর থেকে ভূমিষ্ঠ হওয়া পর্যন্ত গর্ভের প্রতিকূল পরিবেশ ভ্রূণের বিকাশকে ঝুঁকিপূর্ণ করে তোলে। ভ্রূণ বিকাশের তিনটি পর্যায়ের যেকোনো পর্যায়েই নানা ধরনের বিপত্তি দেখা দিতে পারে। তাই এ সময় গর্ভবতী মহিলাদের যথেষ্ট সচেতন থাকতে হয়। উদ্দীপকের তুলি প্রথমবার গর্ভবতী হওয়ায় এ সময়ের করণীয় সম্পর্কে তার কোনো ধারণা নেই। সামান্য সর্দি-জ্বর হওয়ায় চিকিৎসকের মতামত না নিয়েই ওষুধ সেবন করে সে যে বোকামির পরিচয় দিয়েছে, সেজন্য তার গর্ভকালীন বিকাশে ভ্রূণ ও ফিটাস পর্যায়ের বিপত্তি দেখা দিতে পারে। পরবর্তীতেও সে যদি সচেতন না হয় এবং চিকিৎসকের কাছে না যায় তবে তার গর্ভকালীন বিকাশে আরও নানা বিপত্তি আসতে পারে। যেমন- জাইগোট বিকাশ পর্যায়ের এক্টোপিক প্রেগন্যান্সি বিপত্তি, গর্ভপাতজনিত বিপত্তি, প্রতিবন্ধী শিশু জন্মদানজনিত বিপত্তি। ভ্রূণের স্বাভাবিক বিকাশ না হলে গর্ভকালীন সময়ে এ ধরনের নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে। এতে মা ও ভ্রূণের জীবন বিপন্ন হওয়ারও আশঙ্কা থাকে। এ বিষয়টি উপলব্ধি করেই চিকিৎসক আলোচ্য মন্তব্যটি করেছেন। তাই শেষে বলা যায়, উদ্দীপকের তুলি যদি সচেতন না হয় তবে তার গর্ভকালীন বিকাশে আরও নানা বিপত্তি উৎপন্ন হতে পারে। তাই সার্বিক বিচারে চিকৎসকের মন্তব্যটিকে যথার্থ বলা যায়।

৮. দুইবার মেয়ে সন্তান হওয়ায় ছেলের আশায় তৃতীয়বার সন্তান নিলেন বেবি জামান। তবে এবারের সন্তানটিও মেয়ে হওয়ায় শ্বশুরবাড়ির লোকজন তাকে নানা কথা শুনাতে লাগলেন। তাদের মতে ছেলে সন্তান না হওয়া মায়েরই দোষ। তাদের কথাবার্তা শুনতে পেয়ে একজন মহিলা চিকিৎসক তাদেরকে বললেন, সন্তানের লিঙ্গ এবং সংখ্যা জন্মমুহূর্তেই নির্ধারিত হয়ে যায়। এতে মায়ের কোনো দোষ নেই।
ক. বংশগতির ধারক ও বাহক কী?
খ. বংশগত গুণাবলি কীভাবে নির্ধারিত হয়ে থাকে?
গ. উদ্দীপকের বেরি জামানের মেয়ে সন্তান হওয়ার কারণ ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকের মহিলা চিকিৎসকের কথার সাথে কি তুমি একমত? উত্তরের সপক্ষে যুক্তি দাও।

৮ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. বংশগতির ধারক ও বাহক হলো জিন।

খ. বংশগত গুণাবলি জন্মমুহূর্তেই নির্ধারিত হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে ক্রোমোজোম ভূমিকা রাখে। ক্রোমোজোমের মধ্যে থাকে অসংখ্য জিন যেগুলো হয় বংশগতির ধারক ও বাহক। জাইগোট সৃষ্টির সময় ক্রোমোজোমের সংখ্যা থাকে ২৩ + ২৩ = ৪৬ জোড়া। প্রত্যেকটি ভ্রূণ মায়ের কাছ থেকে ২৩টি ও বাবার কাছ থেকে ২৩টি করে ক্রোমোজোম লাভ করে। শিশু বংশগতি থেকে কী কী গুণ পাবে তা তার জন্মমুহূর্তেই নির্ধারিত হয়ে যায়। মাতৃগর্ভের অনুকূল পরিবেশ বংশগত গুণাবলি বিকাশে সহায়তা করে থাকে এবং প্রতিকূল পরিবেশ ব্যাহত করে থাকে।

গ. উদ্দীপকের বেবি জামানের মেয়ে সন্তান হওয়ার কারণ হলো নারী ও পুরুষের X ক্রোমোজোমের মিলিত হওয়া। গর্ভধারণ মানবজীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। এ সময় মানববিকাশের অনেক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা সংঘটিত হয়। এর মধ্যে লিঙ্গ নির্ধারণ ঘটনাটি অন্যতম। এটি জন্মমূহূর্তেই নির্ধারিত হয়ে যায়। উদ্দীপকে বেবি জামানের তৃতীয় সন্তানটিও মেয়ে হওয়ায় তার শ্বশুরবাড়ির লোকজন তাকে দায়ী করতে লাগলেন। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এখানে তার কোনো দোষ নেই। কেননা ভ্রুণটি মেয়ে হবে না ছেলে হবে তা জন্মমুহূর্তেই নির্ধারিত হয়ে যায়। মানবদেহের প্রতিটি কোষে ২৩ জোড়া ক্রোমোজোয় থাকে। এর মধ্যে ২২ জোড়া হচ্ছে অটোজম বা দেহ গঠনকারী ক্রোমোজোম এবং শেষ ১ জোড়া হচ্ছে লিঙ্গ নির্ধারক ক্রোমোজোম। নারীর ডিম্বকোষে থাকে XX ক্রোমোজোম এবং পুরুষের ডিম্বকোষে থাকে XY ক্রোমোজোম। ডাইগোট সৃষ্টির সময় নারীর X পুরুষের X ক্রোমোজোমের সাথে মিলিত হলে XX দ্বারা মেয়েশিশুর জন্ম হয়। অর্থাৎ সন্তান মেয়ে হবে না ছেলে হবে তা জন্মমূহূর্তেই নির্ধারিত হয়ে যায়। উদ্দীপকের বেবি জামানের মেয়ে সন্তান
হওয়ার কারণও এটিই। তাই এখানে বেবি জামানের কোনো দোষ নেই।

ঘ. হ্যাঁ, উদ্দীপকের মহিলা চিকিৎসকের কথার সাথে আমি একমত।
গর্ভধারণ মানবজীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। এ সময় মানববিকাশের কতকগুলো গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা সংঘটিত হয়। এগুলো হলো- বংশগত গুণাবলি নির্ধারণ, লিঙ্গ নির্ধারণ ও সন্তান সংখ্যা নির্ধারণ। লিঙ্গ ও সন্তানসংখ্যা জন্মমুহূর্তেই নির্ধারিত হয়ে যায়। এর বৈজ্ঞানিক কারণও রয়েছে। উদ্দীপকের মহিলা চিকিৎসকের এ কথার বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যাও রয়েছে। ভ্রূণটি মেয়ে হবে না ছেলে হবে এবং নারীর গর্ভে একসাথে কয়টি সন্তান হবে এগুলো জন্মমুহূর্তেই নির্ধারিত হয়ে যায়। জাইগোট সৃষ্টির সময় X নারীর পুরুষের X ক্রোমোজোমের সাথে মিলিত হলে XX দ্বারা মেয়েশিশুর জন্ম হয়। আর পুরুষের Y ক্রোমোজোমের সাথে মিলিত হলে XY দ্বারা ছেলেশিশুর জন্ম হয়। আর গর্ভধারণের প্রাথমিক পর্যায়ে যখন কোষ বিভাজন। চলতে থাকে, তখন যদি কোষগুলো দুই বা ততোধিক অংশে বিভক্ত না হয়ে বিভাজিত হয় তবে একটি শিশু, যদি দুই বা ততোধিক অংশে। বিভক্ত হয় তবে এক জোড়া বা বহুসংখ্যক অভিন্ন যমজ শিশুর জন্ম হয়। উপরিউক্ত আলোচনা থেকে বোঝা যায়, সন্তানের লিঙ্গ এবং সংখ্যা জন্মমুহূর্তেই নির্ধারিত হয়ে যায় এবং এতে মাকে কোনোভাবেই দোষারোপ করা চলবে না। তাই উদ্দীপকের মহিলা চিকিৎসকের কথার সাথে আমি পুরাপুরি একমত।

৯. রাহেনা বেগমের বয়স ৩৮ বছর। তার আগে একটি সন্তান রয়েছে এবং বর্তমানে তিনি আবার গর্ভবতী হয়েছেন। স্বামীর আয় কম বলে তিনি গর্ভকালীন সময়ে সুষম খাদ্য গ্রহণ করতে পারছেন না। এমনকি নিয়মিত চিকিৎসকের কাছেও যেতে পারছেন না। সুষম খাদ্য খেতে না পারায় তিনি ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়ছেন।
ক. টেরাটোলজি কাকে বলে?
খ. গর্ভবতী মহিলাদের চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ সেবন করতে হবে কেন?
গ. উদ্দীপকের রাহেলা বেগমের বয়স তার ভ্রূণের গর্ভকালীন বিকাশে কীরূপ প্রভাব ফেলতে পারে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকের রাহেলা বেগমের গর্ভের সন্তান পুষ্টি না পাওয়ায় অপরিণত কিংবা মৃত হতে পারে বিশ্লেষণ কর।

৯ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. গর্ভাবস্থায় পারিপার্শ্বিক প্রভাবের দরুন সন্তানের মধ্যে যে অস্বাভাবিকতা দেখা দেয় ইংরেজিতে তাকে টেরাটোলজি বলে।

খ. গর্ভবতী মহিলাদের চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ সেবন করতে হবে কারণ এর ব্যতিক্রম হলে ভ্রূণের ক্ষতি হতে পারে গর্ভাবস্থায় অ্যাসপিরিন জাতীয় ওষুধ মাত্রাতিরিক্ত গ্রহণ করলে তৃণের রক্ত সংক্রান্ত সমস্যা সৃষ্টি হয়। স্ট্রেপটোমাইসিন, টেট্রাসাইক্লিন, কুইনিনেন ইত্যাদি যেকোনো ধরনের ওষুধের প্রভাব ভ্রূণের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। তাই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া গর্ভবর্তী মহিলাদের সব ধরনের ওষুধ সেবন থেকে বিরত থাকতে হবে।

গ. উদ্দীপকের রাহেলা বেগমের বয়স তার ভ্রূণের গর্ভকালীন বিকাশে যথেষ্ট নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
গর্ভকালীন সময়ে মায়ের শারীরিক ও মানসিক অবস্থা ভ্রূণের বিকাশকে প্রভাবিত করে। এ সময় মায়ের শারীরিক ও মানসিক। অবস্থা যদি অনুকূল না হয় তবে ভ্রূণের গর্ভকালীন বিকাশ ব্যাহত হতে পারে। এক্ষেত্রে মায়ের বয়সও একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার উদ্দীপকের রাহেলা বেগমের বয়স ৩৮ বছর। তবে গর্ভধারণের জন্য বছরের বেশি হয় তবে ভ্রূণের বিকাশ ব্যাহত হয়। ক্রোমোজোমজনিত সবচেয়ে উপযুক্ত বয়স হচ্ছে ২২-৩০ বছর। মায়ের বয়স যদি ৩৫ ত্রুটি হওয়ার আশঙ্কা থাকে। মা যদি ৩৫ বছরের পর প্রথম সন্তান গ্রহণ করেন, তাহলে ক্রোমোজোমজনিত ত্রুটি হওয়ার আশঙ্কা ২৫% বৃদ্ধি পায়। এ ধরনের ত্রুটির কারণে ডাউন্স সিনডোম টার্নার সিনড্রোম, ঢঢণ সিনড্রোম, ক্লিনেফেলটার্স সিনড্রোম ইত্যাদি। উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও বেশি বয়সে গর্ভধারণ করলে ডিম্বের ওপর নানা ধরনের ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে। যেমন- মায়ের অসুস্থতা, ওষুধের প্রভাব, রাসায়নিক দ্রব্যের প্রভাব ইত্যাদি। ফলে বয়স্ক মহিলাদের সন্তান মানসিক প্রতিবন্ধী হওয়ার আশঙ্কা থাকে। অনেক সময় মা ও শিশুর জীবন বিপন্ন হওয়ারও সম্ভাবনা থাকে। তাই বলা যায়, উদ্দীপকের রাহেলা বেগমের বয়স তার ভ্রূণের গর্ভকালীন বিকাশে নানা ধরনের বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে।

ঘ. উদ্দীপকের রাহেলা বেগমের গর্ভের সন্তান সুষম খাদ্য না পাওয়ায় তার অপরিণত কিংবা মৃত হওয়ার আশঙ্কা থাকে- কথাটি যথার্থ। মাতৃগর্ভে শিশু ২৭০-২৮০ দিন বা ৪০ সপ্তাহ অবস্থান করে। এ সময়টা হচ্ছে ভ্রূণের জীবন বিকাশের ভিত্তিকাল। এ সময়ে মায়ের শারীরিক ও মানসিক অবস্থা ভ্রূণের বিকাশকে প্রভাবিত করে। অন্যান্য পারিপার্শ্বিক প্রভাব, যেমন- মায়ের পুষ্টি, ওষুধ, রক্তের উপাদান, তেজস্ক্রিয়া এবং মানসিক অবস্থা ইত্যাদিও অনুকূলে থাকা জরুরি। উদ্দীপকের রাহেলা বেগমের স্বামীর আয় কম থাকায় তিনি ঠিকমতো সুষম খাদ্য খেতে পারছেন না। সুষম খাদ্য খেতে না পারায় তিনি ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়ছেন। গর্ভাবস্থায় মায়ের পুষ্টি থেকেই ভ্রূণ পুষ্টি গ্রহণ করে থাকে। গর্ভবতী মায়ের সুষম খাদ্য গ্রহণ করা আবশ্যক। মা যদি পর্যাপ্ত পুষ্টি গ্রহণ না করে তবে ভ্রূণের দৈহিক গঠন দুর্বল হয়। যেমন- প্রোটিনের অভাবে শিশুর দৈহিক গঠন ব্যাহত হয় এবং শিশু খর্বাকৃতি হয়। মানসিক প্রতিবন্ধী হওয়ারও আশঙ্কা থাকে। ভিটামিনের অভাব হলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস পায়। মায়ের খাদ্যে লৌহের অভাবে ভ্রূণের রক্তস্বল্পতা দেখা দেয়। ক্যালসিয়ামের অভাবে ভ্রূণের হাড়ের গঠন ব্যাহত হয়। এছাড়া অকাল গর্ভপাত, অপরিণত ও মৃত শিশু হওয়ারও আশঙ্কা থাকে। উপরিউক্ত আলোচনা থেকে জানা যায়, গর্ভকালীন সময়ে যদি মা সুষম খাদ্য না পায় তবে ভ্রূণের গর্ভকালীন বিকাশ ব্যাহত হতে পারে এবং সন্তান অপরিণত ও মৃতও হতে পারে। উদ্দীপকের রাহেলা বেগমের ক্ষেত্রেও এ বিষয়টি প্রযোজ্য হবে।

১০. সুমি সন্তানসম্ভবা হওয়ায় তার স্বামী খুশি হতে পারলেন না। কেননা তার স্বামী এ সন্তানের দায়িত্ব নেওয়ার জন্য প্রস্তুত নন। এ অবস্থায় তিনি সবসময় সুমির সাথে খারাপ ব্যবহার করেন। স্বামীর সহযোগিতা এবং পরিবারের কারও সমর্থন না পাওয়ায় সুমি মানসিকভাবে ভেঙে ড়ল এবং নিজেকে একা ভাবতে লাগল।
ক. মায়ের মানসিক প্রভাবকে কত ভাগে ভাগ করা যায়?
খ. গর্ভকালীন বিকাশে মায়ের মানসিক অবস্থা কীরূপ প্রভাব রাখে?
গ. উদ্দীপকের সুমির মাঝে মায়ের মানসিক প্রভাবের কোন দিকটি উপস্থিত? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকের সুমির অবস্থা তার গর্ভস্থ ভ্রূণকেও আলোড়িত করবে- মন্তব্যটির যথার্থতা যাচাই কর।

১০ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. মায়ের মানসিক প্রভাবকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়।

খ. গর্ভকালীন বিকাশে মায়ের মানসিক অবস্থা বেশ গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব রাখে। গর্ভাবস্থায় যে ধরনের পারিপার্শ্বিক প্রভাব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে সেগুলো হলো- শারীরিক প্রভাব ও মানসিক প্রভাব। মায়ের মানসিক অবস্থা যদি স্বাভাবিক না থাকে তবে গর্ভস্থ ভ্রূণও চঞ্চল ও অস্থির হয়ে যায়। আবার, মায়ের স্নায়ুবৈকল্য ও মানসিক বিপর্যয় দেখা দিলে ভ্রূণের বিকাশ ব্যাহত হওয়ারও আশঙ্কা থাকে। এছাড়াও গর্ভকালীন ও প্রসবকালীন নানা জটিলতা দেখা দিতে পারে এবং অপরিণত শিশুরও জন্ম হতে পারে। তাই বলা যায়, গর্ভকালীন বিকাশে মায়ের মানসিক অবস্থা ভ্রূণের ওপর বেশ বিরূপ প্রভাব রাখে।

গ. উদ্দীপকের সুমির মাঝে মায়ের মানসিক প্রভাবের মনোভাবগত প্রতিকূলতার দিকটি উপস্থিত।
মাতৃগর্ভে শিশু যে সময়কালে অবস্থান করে সে সময়টাই হচ্ছে ভ্রূণের জীবন বিকাশের ভিত্তিকাল। এ সময়ে মায়ের শারীরিক ও মানসিক অবস্থা ভ্রূণের বিকাশকে প্রভাবিত করে। মায়ের মানসিক অবস্থা যদি ভালো না থাকে তবে ভ্রূণের ওপরও এর মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে। উদ্দীপকের সুমি সন্তানসম্ভবা হওয়ায় তার স্বামী খুশি হতে পারলেন না। কেননা তার স্বামী এখন সন্তানের দায়িত্ব নেওয়ার জন্য প্রস্তুত নন। এ অবস্থায় স্বামীর কাছ থেকে ভালো ব্যবহার কিংবা পরিবারের সমর্থন না পাওয়ায় সুমি মানসিকভাবে ভেঙে পড়ল এবং নিজেকে একা ভাবতে লাগল। গর্ভাবস্থায় মায়ের এ ধরনের মানসিক অবস্থা ভ্রূণের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। গর্ভস্থ সন্তানের প্রতি মায়ের ইতিবাচক মনোভাব ভ্রূণের বিকাশে ভারসাম্য বজায় রাখে। গর্ভাবস্থায় মা যদি দেখেন নতুন শিশুর আগমনে পরিবারের কেউ খুশি নয়, তখন মায়ের স্নায়ুবৈকল্য ও মানসিক বিপর্যয় হতে পারে। এর প্রভাবে ভ্রূণের বিকাশ ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। উদ্দীপকের সুমির মাঝে গর্ভবতী মায়েদের মানসিক প্রভাবের এ অসুবিধার দিকটিই উপস্থিত।

ঘ. উদ্দীপকের সুমির মানসিক অবস্থা স্বাভাবিক না থাকায় তার গর্ভস্থ ভ্রুণও আলোড়িত হবে- মন্তব্যটি যথার্থ।
গর্ভধারণ মানবজীবনের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। গর্বকালীন সময়ে মায়ের শারীরিক ও মানসিক অবস্থা ভ্রূণের বিকাশকে প্রভাবিত করে। মায়ের মানসিক প্রভাব যদি ভ্রূণের জন্য অনুকূল না হয় তবে মাতৃগর্ভে ভ্রূণের মধ্যে আলোড়ন সৃষ্টি হতে পারে। গর্ভবতী মায়ের মানসিক প্রভাবকে আবার দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যথা- (১) মায়ের মানসিক অবস্থা ও (২) মায়ের মনোভাব। এগুলো যদি স্বাভাবিক না থাকে তবে ভ্রূণের ওপর এর খারাপ প্রভাব পড়ে। গর্ভাবস্থায় মায়ের মানসিক উত্তেজনা ও অস্থিরতা হরমোনের ক্ষরণ ব্যাহত করে, মায়ের ঘুমের ব্যাঘাত ঘটায় এবং খাবারে অরুচি আনে। এর প্রভাবে গর্ভস্থ ভ্রূণ অধিক চঞ্চল ও অস্থির হয়। এছাড়া গর্ভকালীন ও প্রসবকালীন নানা জটিলতা দেখা দিতে পারে এবং অপরিণত শিশুও জন্ম নিতে পারে। উপরিউক্ত আলোচনা থেকে বোঝা যায়, গর্ভবতী মায়ের মানসিক অবস্থা যদি অস্বাভাবিক থাকে তবে তার গর্ভস্থ ভ্রূণও আলোকিত হয়। তাই উদ্দীপকের সুমি সম্পর্কে প্রশ্নে যে মন্তব্যটি করা হয়েছে সেটিকে যথার্থ বলাই সমীচীন।
Share:

0 Comments:

Post a Comment