HSC গার্হস্থ্য বিজ্ঞান ২য় পত্র (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর pdf download অধ্যায় ১

HSC গার্হস্থ্য বিজ্ঞান ২য় পত্র (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর pdf download
এইচএসসি পরীক্ষার পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি
HSC Home Science 2nd Paper Srijonshil question and answer pdf download.

উচ্চ মাধ্যমিক

গার্হস্থ্য বিজ্ঞান
দ্বিতীয় পত্র

সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
১ম অধ্যায়

HSC Home Science 2nd Paper
Srijonshil
Question and Answer pdf download

১. মুরাদ সাহেব তার চাকরিজীবী স্ত্রী কনা ও দুই শিশু সন্তান নিয়ে বাস করেন। কনা সংসারের সব কাজ করে যা সে শিখেছে দাদা-দাদি, চাচা ও ফুফুর কাছে। শিশু সন্তানদের গৃহপরিচারিকার কাছে রেখে কর্মস্থলে গিয়ে তিনি কাজে মন দিতে পারেন না।
ক. পরিবারের সংজ্ঞা দাও।
খ. পরিবার সমাজেরই অংশ- বুঝিয়ে লেখ।
গ. মুরাদ সাহেবের পরিবার কোন ধরনের? সামাজিক পরিবর্তনের কারণে এ ধরনের পরিবার গড়ে ওঠে- ব্যাখ্যা কর।
ঘ. শৈশবে কনার কোন ধরনের পরিবারে সময় কেটেছে? সেই পরিবারের সাথে তার বর্তমান পরিবারের সুবিধা- অসুবিধাগুলোর তুলনামূলক বিশ্লেষণ কর।

১ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. বিবাহবন্ধন, রক্তের বন্ধন ও পালিত বন্ধনের ওপর ভিত্তি করে যখন কিছু মানুষ একত্রে একই স্থানে বসবাস করে এবং একে অপরের প্রতি কিছু দায়িত্ব-কর্তব্য পালন করে তখন তাকে পরিবার বলে।

খ. পরিবার ছাড়া সমাজ গড়ে ওঠে না। কারণ পরিবার হচ্ছে সমাজের একটি সর্বজনীন, সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ ও মৌলিক সংগঠন। মানুষের পারস্পরিক সম্পর্কের সমষ্টিই হলো সমাজ। সমাজ গঠিত হয় বিভিন্ন ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর সমন্বয়ে। আর প্রত্যেক ব্যক্তি কোনো না কোনো পরিবারের সদস্য। জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত মানুষ জীবনের সকল পর্যায়ে পরিবারের ওপর নির্ভরশীল। তাই মানব সমাজ বিকাশের প্রক্রিয়ায় পরিবারকে বৃহত্তর সমাজের একটি অন্যতম প্রতিষ্ঠান বলে গণ্য করা হয়।

গ. মুরাদ সাহেবের পরিবার একক ধরনের। পরিবারের আকার অনুযায়ী, পরিবারকে মোটামুটি তিন ভাগে ভাগ করা হয়। এর মধ্যে একক পরিবার অন্যতম। যে পরিবারে স্বামী তার স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে পৃথকভাবে বাস করে তাকে একক পরিবার বলে। বাংলাদেশের শহরাঞ্চলে একক পরিবারের সংখ্যা বেশি দেখা যায়। উদ্দীপকে মুরাদ সাহেবের পরিবারে তার স্ত্রী ও দুই শিশু সন্তান রয়েছে। পরিবারের আকার বিচারে বলা যায়, এটি একক পরিবার। সামাজিক নানা পরিবর্তনের কারণেই এ ধরনের পরিবার গড়ে ওঠে। চাকরিসূত্রে অথবা অর্থনৈতিক সমস্যার কারণে নগরে একক পরিবারের সংখ্যা ক্রমশ বেড়েই চলছে। আধুনিক যুগে নগরায়ণ ও শিল্পায়নের ফলে যৌথ পরিবার ধীরে ধীরে লোপ পাচ্ছে এবং গড়ে উঠছে একক পরিবার। জীবিকার প্রয়োজনে মানুষ সব ছাড়ছে। মানুষ গ্রাম ছেড়ে শহরে আসার কারণে যৌথ পরিবারগুলো ভেঙে একক পরিবার গঠিত হচ্ছে। অর্থনৈতিক কারণ, পেশা, শিক্ষা, প্রযুক্তির উন্নয়ন, দক্ষতা ইত্যাদির প্রাধান্য, নানাবিধ সামাজিক কারণে যৌথ পরিবারগুলো ভেঙে একক পরিবারে পরিণত হচ্ছে।
তাই বলা যায়, সামাজিক পরিবর্তনের কারণেই উদ্দীপকের মতো একক পরিবারগুলো গড়ে উঠছে।

ঘ. শৈশবে কনার যৌথ পরিবারে সময় কেটেছে। যৌথ পরিবারের সাথে বর্তমান সময়ে গড়ে ওঠা একক পরিবারের সুবিধা-অসুবিধায় বেশকিছু পার্থক্য রয়েছে। শিশুর সুষ্ঠু বিকাশে একক ও যৌথ পরিবারের সুবিধা-অসুবিধাগুলো নিচে আলোচনা করা হলো-

একক পরিবারের সুবিধাসমূহ:
১. একক পরিবারে সুযোগ-সুবিধা বেশি থাকে। যা সন্তানের মানসিক বিকাশে সহায়তা করে।
২. একক পরিবারে যেহেতু মতামত প্রকাশের প্রাধান্য থাকে তাই মা তার মতো করে উপযুক্তভাবে সন্তানকে গড়ে তুলতে পারেন।
৩. একক পরিবারে সাধারণত ঝগড়া-বিবাদ কম হয়। তাই শিশুর মানসিক বিকাশে কোনো প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয় না।
৪. একক পরিবারে যেহেতু উপার্জনকারী নিজের পছন্দমতো খরচ করতে পারেন, তাই শিশুর চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হয়। যা শিশুর সুষ্ঠু বিকাশে সহায়ক।
৫. একক পরিবারের সন্তানরা বাবা-মাকে সহজেই কাছে পায় যা তাদের বিকাশে সহায়তা করে।

যৌথ পরিবারের সুবিধাসমূহ:
১. যৌথ পরিবারের শিশুরা কোনো সমস্যায় পড়লে সাহায্য করার জন্য সবাই এগিয়ে আসে। তাই শিশুদের মধ্যে কোনো একাকীত্ব তৈরি হয় না।
২. একত্রে বাস করার ফলে অর্থনৈতিক সচ্ছলতা থাকে। ফলে শিশুদের লালন-পালনে কোনো সমস্যা হয় না এবং তাদের বিকাশ ঠিকমতো হয়।
৩. যৌথ পরিবারে সন্তানেরা বড়দের সম্মান ও ছোটদের স্নেহ করতে শেখে।
৪. সকলে মিলেমিশে থাকার ও কাজ ভাগ করে নেওয়ার মানসিকতা তৈরি হয়, যা শিশুর সুষ্ঠু বিকাশকে সাহায্য করে।
৫. যৌথ পরিবারের ছেলেমেয়েরা কষ্টসহিষ্ণু ও সহনশীল হয়।

একক পরিবারের অসুবিধাসমূহ:
১. বাবা-মা দুজনে কর্মজীবী হওয়ায় শিশুর রক্ষণাবেক্ষণ ও লালন- পালনের ভার কাজের লোকের ওপর পড়ে, যা শিশুর সুস্থ বিকাশকে ব্যাহত করে।
২. একক পরিবারের শিশুরা সাধারণত স্বার্থপর ও আত্মকেন্দ্রিক হয়।
৩. একক পরিবারের শিশুরা অনেক সময় নিঃসঙ্গতায় ভোগে, যা তাদের বিকাশের অন্তরায়।

যৌথ পরিবারের অসুবিধাসমূহ:
১. ব্যক্তিগত সুবিধা না থাকার কারণে অনেক সময় শিশুর অনেক চাহিদা বাদ দিতে হয়। যা শিশুর বিকাশে বাধা হয়ে দাঁড়ায়।
২. যৌথ পরিবারে সদস্য সংখ্যা বেশি হওয়ার কারণে পরস্পরের দ্বন্দ্ব ও অসমেত্মাষ শিশুর বিকাশকে বাধাগ্রস্থ করে।
৩. যৌথ পরিবারে পরিবার প্রধানের কর্তৃত্বের ফলে শিশু অনেক ক্ষেত্রে অসহায় বোধ করে।

২. আনিস সাহেব প্রায় দুই বছর আগে ছেলের বিয়ে দিয়েছেন। কিছু দিন হলো পরিবারে নতুন বংশধর এসেছে। বর্তমানে তিনি তাঁর স্ত্রী, পুত্র, পুত্রবধূ ও নাতিকে নিয়ে সুখে দিন কাটাচ্ছেন। উনার মেয়ে দিনা স্বামীর সাথে আলাদা ফ্ল্যাটে বসবাস করে। তারও একটি মেয়ে রয়েছে।
ক. সমাজের সংজ্ঞা দাও।
খ. পারিবারিক বন্ধন শিশুর সুষ্ঠু বিকাশে সহায়ক- বুঝিয়ে লেখ।
গ. আনিস সাহেবের পরিবারে যে কাজ দেখানো হয়েছে তা ব্যাখ্যা কর।
ঘ. আনিস সাহেবের পরিবার ও দিনার পরিবারের সুবিধা- অসুবিধার তুলনামূলক বিশ্লেষণ কর।

২ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. যখন অনেক ব্যক্তি একই উদ্দেশ্য সাধনের জন্য সংঘবদ্ধ হয়ে বাস করে এবং পরস্পরের স্বার্থ সংরক্ষণে সকলে একই সাথে কাজ করে তখন তাকে সমাজ বলে।

খ. শিশুর সুষ্ঠু ব্যক্তিত্ব গঠনে পারিবারিক বন্ধন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও সুদূরপ্রসারী ভূমিকা রাখে। শিশুর পরিচর্যা, শিক্ষা, সামাজিকীকরণ এবং তাকে স্নেহের পরশে লালন-পালনের কাজটি পরিবারই করে থাকে। শুধু শিশুকালেই নয়, বাল্যকাল, কৈশোর, যৌবনকালের মানসিক ভারসাম্য রক্ষা করতে ও সুষ্ঠু ব্যক্তিত্ব গঠন করতে পরিবারের স্নেহ ও শাসনের কোনো বিকল্প নেই। শিশুর সুষ্ঠু বিকাশ নিশ্চিত করে তার পরিবার। পারিবারিক বন্ধনের দৃঢ়তা শিশুর চরিত্রকেও দৃঢ় করে এবং তার শারীরিক বন্ধনের দৃঢ়তা শিশুর চরিত্রকেও দৃঢ় করে এবং তার শারীরিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশকে ত্বরান্বিত করে। এ কারণেই বলা হয়, পারিবারিক বন্ধন শিশুর সুষ্ঠু বিকাশে সহায়ক।

গ. আনিস সাহেবের পরিবারে যে কাজ দেখানো হয়েছে তা হলো পরিবারের জৈবিক কাজ।
পরিবার সবচেয়ে পুরাতন সামাজিক সংগঠন। যুগের পরিবর্তনে পরিবারের কার্যাবলিরও পরিবর্তন হয়েছে। আদিম যুগ ও মধ্য যুগের পরিবারের সাথে বর্তমান পারিবারিক জীবনের কার্যাবলির তুলনা করলে এ বিষয়টি সহজেই অনুমান করা যায়। উদ্দীপকে দেখা যায়, আনিস সাহেব প্রায় দুই বছর আগে ছেলের বিয়ে দিয়েছেন। পরিবারে নতুন বংশধর এসেছে এবং তিনি সবাইকে নিয়ে একই পরিবারে বাস করছেন। আবার তার মেয়ে দিনা স্বামীর সাথে আলাদা বাসায় বসবাস করে এবং তাদেরও একটি মেয়ে আছে। এখানে পরিবারের জৈবিক কার্যাবলিকে তুলে ধরা হয়েছে। জৈবিক চাহিদা মানুষের চিরন্তন। পরিবারের জৈবিক কার্যাবলি প্রধানত দুটি। যথা- ১. জৈবিক চাহিদা বজায় রাখা ও ২. সন্তান জন্মদান করা। প্রাচীনকাল থেকেই এ ধারা চলে আসছে। সমাজ ও ধর্মস্বীকৃত পন্থায় জৈবিক চাহিদা পূরণের জন্য মানুষ একটি চুক্তির মাধ্যমে স্বামী-স্ত্রী হিসেবে পরিবার গঠন করে থাকে। ফলে সমাজে শৃঙ্খলা বিরাজ করে। মানবসভ্যতা তথা সৃষ্টির ধারা বজায় রাখতে বংশ রক্ষা, ভবিষ্যৎ নিরাপত্তা এবং সম্পদের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতে সন্তান জন্মদান পরিবারের গুরুত্বপূর্ণ কাজ। স্বামী-স্ত্রীর একত্রে বসবাস, সন্তান জন্মদান করা এগুলো সবই পরিবারের জৈবিক কার্যাবলির অন্তর্ভুক্ত।

ঘ. উদ্দীপকের আনিস সাহেব তার স্ত্রী, পুত্রবধূ ও নাতিকে নিয়ে বসবাস করেন, যাকে যৌথ পরিবার বলা হয়। অপরদিকে আনিস সাহেবের মেয়ে দিনা স্বামী ও সন্তানকে নিয়ে আলাদা বসবাস করে, যা একক পরিবারের দৃষ্টান্ত। এ দুই ধরনের পরিবারেই বেশকিছু সুবিধা-অসুবিধা রয়েছে।
একক পরিবারে মতামত প্রকাশের প্রাধান্য থাকায় মা তার মনের মতো করে সন্তানকে গড়ে তুলতে পারেন। একক পরিবারে যেহেতু মনোমালিন্য, ঝগড়া-বিবাদ কম হয়, তাই শিশুর মানসিক বিকাশে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয় না। একক পরিবারে লোকসংখ্যা কম থাকায় ঝামেলা কম থাকে এবং সুযোগ-সুবিধা বেশি থাকে। তবে একক পরিবারে শিশুরা একাকী বেড়ে উঠায় তারা অনেক সময় স্বার্থপর ও আত্মকেন্দ্রিক হয়। বাবা-মা দুজনে চাকরিজীবী হলে একক পরিবারে সন্তান লালন-পালনে অসুবিধা হয়। একক পরিবারে বিপদে-আপদে সাহায্য করার মতো কেউ থাকে না। অপরদিকে, যৌথ পরিবারে সবাই একত্রে বসবাস করায় অর্থনৈতিক সচ্ছলতা থাকে। এ ধরনের পরিবারে সন্তানরা একাকিত্ব অনুভব করে না এবং তাদের মানসিক স্বাস্থ্য ভালো থাকে। যৌথ পরিবারের সদস্যরা কেউ কোনো সমস্যায় পড়লে সবাই মিলে সাহায্য করতে এগিয়ে আসে। আবার এ ধরনের পরিবারের কিছু অসুবিধাও রয়েছে। পরিবারের সদস্যসংখ্যা বেশি হওয়ায় পরস্পরের দ্বন্দ্ব ও অসমেত্মাষ শিশুর বিকাশকে বাধাগ্রস্থ করে। শিশুকে সাহায্যকারীর সংখ্যা বেশি হওয়ায় তার মাঝে স্বাবলম্বী মনোভাব গড‡় উঠতে পারে না। ব্যক্তিগত সুবিধা না থাকার কারণে অনেক সময় শিশুর অনেক চাহিদা বাদ দিতে হয়। অতএব বলা যায়, একক ও যৌথ উভয় পরিবারেই কিছু সুবিধা- অসুবিধা বিদ্যমান।

৩. গারো উপজাতি পরিবারের সদস্য জনা। সে বিয়ে করে তার স্বামীকে বাড়িতে নিয়ে এসে সংসার শুরু করে। জনা পরিবারের ভরণপোষণের দায়িত্ব নিজে পালন করে। প্রথম সন্তান জন্মের মাধ্যমে তাদের বংশ রক্ষা হয়। বিভিন্ন সামাজিক আচার-অনুষ্ঠানে তারা একসাথে অংশগ্রহণ করে।
ক. পরিবারের সংজ্ঞা দাও।
খ. স্থায়িত্ব পরিবারের অন্যতম শর্ত- বুঝিয়ে লেখ।
গ. জনার পরিবার কোন ধরনের? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. পরিবারের সকল কার্যাবলি কি উদ্দীপকে তুলে ধরা হয়েছে? তোমার উত্তরের সপক্ষে যুক্তি দাও।

৩ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. বিবাহবন্ধন, রক্তের বন্ধন ও পালিতবন্ধনের ওপর ভিত্তি করে যখন কতিপয় মানুষ একত্রে একই স্থানে বসবাস করে এবং একে অপরের প্রতি কিছু দায়িত্ব-কর্তব্য পালন করেন তখন তাকে পরিবার বলা হয়।

খ. পরিবারের অন্যতম শর্ত স্থায়িত্ব। এটি পরিবারের একটি বড় বৈশিষ্ট্য। স্বামী-স্ত্রীকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে একটি পরিবার। আর পরিবার একটি স্থায়ী ও বিশ্বজনীন সংগঠন। তবে অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে তা পরিবর্তন হতে পারে। ঐতিহ্যবাহী পরিবারগুলো বংশপরম্পরায় স্থায়িত্ব দৃঢ় হয়। যে পরিবারের সদস্যরা যত বেশি আন্তরিক সে পরিবারের স্থায়িত্ব তত বেশি।

গ. উদ্দীপকের জনার পরিবার ‘মাতৃতান্ত্রিক পরিবার।
মাতৃতান্ত্রিক পরিবারে পুরুষের পরিবর্তে স্ত্রীলোকের ওপর পরিবারের সকল দায়িত্ব থাকে। পরিবারের সকল ক্ষমতা ও নেতৃত্ব মাতা বা প্রাপ্তবয়স্ক স্ত্রীলোকের ওপর ন্যস্থ থাকে। তারা পরিবারের ভরণপোষণের দায়িত্ব পালন করে। মাতৃতান্ত্রিক পরিবারে বিয়ের পর স্বামী তার স্ত্রীর পরিবারে অবস্থান করে। স্ত্রীলোকের মাধ্যমে বংশ পরিচয় নির্ধারিত হয়ে থাকে। আমাদের দেশে গারো উপজাতিদের মধ্যে এ ধরনের পরিবার দেখা যায়।
উদ্দীপকে উল্লিখিত জনার পরিবারের বৈশিষ্ট্যগুলো মূলত মাতৃতান্ত্রিক পরিবারের বৈশিষ্ট্য। তাই আমরা বলতে পারি, জনার পরিবার একটি মাতৃতান্ত্রিক পরিবার।

ঘ. উদ্দীপকে পরিবারের সকল কার্যাবলি নয়, বরং কিছু কার্যাবলি তুলে ধরা হয়েছে।
পরিবার সবচেয়ে পুরাতন সামাজিক সংগঠন। যুগের পরিবর্তনের সাথে সাথে পরিবারের কার্যাবলিরও পরিবর্তন হয়েছে। জাগতিক জীবনে প্রত্যেক পরিবারের কিছু নির্দিষ্ট কাজ রয়েছে। এর মধ্যে শিক্ষামূলক কার্যাবলি, রাজনৈতিক, ধর্মীয়, অর্থনৈতিক, মনস্থ াত্ত্বিক, সামাজিক, বিনোদন ও অবসরমূলক ও জৈবিক কার্যাবলি রয়েছে। পরিবারকে বলা হয় সমাজের প্রাথমিক শিক্ষাকেন্দ্র। পরিবারই শিশুকে নৈতিক শিক্ষা, ধর্মীয় শিক্ষা ও নাগরিকতার অধিকার ও দায়িত্ব-কর্তব্য সম্পর্কে সচেতন হতে শিক্ষা দেয়।
উদ্দীপকে জনার পরিবারে সামাজিক, অর্থনৈতিক ও জৈবিক কার্যাবলি তুলে ধরা হয়েছে। এগুলো ছাড়াও একটি পরিবারের আরও অনেক কার্যাবলি রয়েছে। যা উদ্দীপকে উল্লেখ করা হয়নি। সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে পরিবারের কার্যাবলি 'বদলে যায়। তবে কিছু কিছু কাজ পরিবারকে সবসময় করতে হয়। একটি পরিবার তার কার্যাবলি সঠিকভাবে সম্পাদন করলে সদস্যদের জীবনযাপন সহজ ও সুন্দর হয়।

৪. স্বামী ও দুই সন্তান নিয়ে সুমির পরিবার। সুমি তার দুই সন্তানকে স্কুলে পড়ানোর পাশাপাশি ধর্মীয় শিক্ষাও দিচ্ছেন। তারা একসাথে প্রায়ই বেড়াতে যায়। তার স্বামী সমাজসেবার সাথে বেশ সম্পৃক্ত থাকেন। সুমি তার সন্তানদের সাথে অনেকটা সময় কাটাতে পারেন।
ক. পরিবারের সংজ্ঞা লেখ।
খ. ‘স্থায়িত্ব পরিবারের একটি অন্যতম শর্ত’- বুঝিয়ে লেখ।
গ. সুমির পরিবার কী ধরনের পরিবার? এ ধরনের পরিবারের সুবিধা ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকে একটি আদর্শ পরিবারের সব ধরনের কার্যাবলি দেখানো হয়েছে কি? উত্তরের সপক্ষে তোমার মতামত ব্যক্ত কর।

৪ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. বিবাহবন্ধন, রক্তের বন্ধন ও পালিতবন্ধনের ওপর ভিত্তি করে যখন কতিপয় মানুষ একত্রে একই স্থানে বসবাস করে এবং একে অপরের প্রতি কিছু দায়িত্ব-কর্তব্য পালন করেন তখন তাকে পরিবার বলা হয়।

খ. পরিবারের অন্যতম শর্ত স্থায়িত্ব। স্বামী-স্ত্রীকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে একটি পরিবার। আর পরিবার একটি স্থায়ী ও বিশ্বজনীন সংগঠন। তবে অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে তা পরিবর্তন হতে পারে। ঐতিহ্যবাহী পরিবারগুলো বংশপরম্পরায় স্থায়িত্ব দৃঢ় হয়। যে পরিবারের সদস্যরা যত বেশি আন্তরিক সে পরিবারের স্থায়িত্ব তত বেশি।

গ. পরিবারের আকার অনুযায়ী সুমির পরিবার একক পরিবার।
একক বা অণু পরিবার বলতে আমরা বুঝি, যে পরিবারে স্বামী তার স্ত্রী, সন্তানদের নিয়ে পৃথকভাবে বসবাস করে। চাকরি সূত্রে বা অর্থনৈতিক সমস্যার কারণে নগরে একক পরিবারের সংখ্যা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
একক পরিবারের সুবিধা-অসুবিধা দুই বিদ্যমান। শিশুর সুষ্ঠু বিকাশে একক পরিবারে কিছু সুবিধা রয়েছে। যেমন- একক পরিবারে মতামত প্রকাশের প্রাধান্য থাকার কারণে মা তার মতো করে উপযুক্তভাবে সন্তানকে গড়ে তুলতে পারেন। লোকসংখ্যা কম হওয়াতে ছেলেমেয়েদের সাথে বাবা-মায়ের সম্পর্ক ভালো হয়। সন্তান সুষ্ঠু বিকাশের কারণে সুপ্ত প্রতিভা বিকশিত হয়। একক পরিবারে পিতা- মাতার স্বাধীনতা থাকার কারণে সন্তান লালন-পালন করার ব্যাপারে কেউ হস্থ ক্ষেপ করে না। ফলে শিশুর বিকাশ বাধাগ্রস্থ হয় না। একক পরিবারে উপার্জনকারী নিজের পছন্দমতো খরচ করতে পারেন ও শিশুর চাহিদা পূরণ করতে পারেন, যা শিশুর মানসিক বিকাশে সাহায্য করে।

ঘ. হ্যাঁ, আমি মনে করি, উদ্দীপকে একটি আদর্শ পরিবারের সব ধরনের কার্যাবলি দেখানো হয়েছে।
শিশুকাল থেকে মানুষ পরিবারে গড়ে ওঠে। পরিবার থেকে শিশু যে শিক্ষা গ্রহণ করে তা তার ভবিষ্যৎ জীবনে বিরাট প্রভাব ফেলে। তাই একটি আদর্শ পরিবারের কিছু নির্দিষ্ট কাজ আছে। যেমন- জৈবিক কাজ, মনস্থ াত্ত্বিক কাজ, অর্থনৈতিক কাজ, রাজনৈতিক কাজ, ধর্মীয় কাজ, বিনোদন ও অবসরমূলক কাজ, সামাজিক ও শিক্ষামূলক কার্যাবলি ইত্যাদি। পরিবারেই শিশুর প্রাথমিক শিক্ষা শুরু হয়। পারিবারিক জীবন থেকে সামাজিক রীতিনীতি, আদব-কায়দা, ধর্মীয় শিক্ষায় শিক্ষিত হওয়া, রাজনৈতিক জ্ঞান ইত্যাদি শিক্ষা লাভ করে।
উদ্দীপকে সুমি স্বামী ও দুই সন্তান নিয়ে সংসার করছে, যা জৈবিক কাজের আওতাভুক্ত। তাছাড়া সুমি দুই সন্তানকে স্কুলে নিয়ে যাচ্ছেন পড়াশুনার জন্য, পাশাপাশি ধর্মীয় শিক্ষাও দিচ্ছেন যা ধর্মীয় শিক্ষামূলক কার্যাবলির অন্তর্ভুক্ত এবং সবাই মিলে একসাথে বেড়াতে যাওয়া, বিনোদন ও অবসরমূলক কাজের আওতাভুক্ত। সর্বোপরি তার স্বামীর সমাজসেবার মধ্য দিয়ে সামাজিক, মনস্থ াত্ত্বিক, অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক কাজের
পরিচয় বহন করে। সুতরাং দেখা যাচ্ছে সুমির পরিবারে একটি আদর্শ পরিবারের সকল কার্যাবলি বিদ্যমান। তাই নিঃসন্দেহে আমি বলতে পারি, সুমির পরিবার একটি আদর্শ পরিবার।

৫. ভার্সিটিতে পড়তে এসে রাবেয়া ও জমিরের পরিচয় ঘটে। পরে বিয়ের মাধ্যমে পরিণতি লাভ করে। ৬ বৎসরের ১টি মাত্র কন্যা সন্তান নিয়ে তাদের সুখের সংসার। জমির বিসিএস সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে কলোনিতে বাসায় থাকেন। রাবেয়া একটি কেজি স্কুলে শিক্ষকতা করেন। সাংসারিক সব কাজের পর সন্ধ্যায় সন্তানকে নিয়ে পড়াতে বসান। আরবি পড়াটাও নিজে দেখে দেন। ছুটির দিনে তারা বিভিন্ন জায়গায় বেড়াতে যান।
ক. যৌথ পরিবার কাকে বলে?
খ. মাতৃপ্রধান পরিবারে স্ত্রী লোকের অধিকার, পুরুষের চেয়ে বেশি-ব্যাখ্যা কর।
গ. উদ্দীপকে রাবেয়া-জমিরের পরিবারটি কোন ধরনের? সমাজে এ ধরনের পরিবারের উৎপত্তির কারণ ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকের পরিবারে সব কাজ কি উপস্থাপনা করা হয়েছে বলে তুমি মনে কর? তোমার যুক্তি দেখাও।

৫ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. একটি পরিবারে যখন স্বামী-স্ত্রী, সন্তান, স্বামীর বাবা-মা, ভাইবোন এবং নিকট আত্মীয়-স্বজন নিয়ে একত্রে বসবাস করে তখন তাকে যৌথ পরিবার বলে।

খ. মাতৃপ্রধান পরিবারের ক্ষমতা ও নেতৃত্ব একজন মহিলার ওপর ন্যস্থ থাকে বিধায় এ ধরনের পরিবারে স্ত্রীলোকের অধিকার পুরুষের চেয়ে বেশি থাকে। মাতৃপ্রধান পরিবারের সকল ক্ষমতা ও নেতৃত্ব মাতা বা প্রাপ্তবয়স্ক স্ত্রীলোকের ওপর ন্যস্থ থাকে। এ পরিবারে স্ত্রীলোকের মাধ্যমেই বংশপরিচয় নির্ধারিত হয়ে থাকে। মাতৃপ্রধান পরিবার প্রথায় বিয়ের পর স্বামী-স্ত্রীর পরিবারে অবস্থান করে। আমাদের দেশে গারো আদিবাসীদের মধ্যে এ ধরনের পরিবার দেখা যায়। মাতৃপ্রধান পরিবার বলেই এ ধরনের পরিবারে স্ত্রীলোকের অধিকার পুরুষের চেয়ে বেশি থাকে।

গ. উদ্দীপকে রাবেয়া-জমিরের পরিবারটি হলো নয়াবাস পরিবার। সমাজে এ ধরনের পরিবারের উৎপত্তির কারণ হলো পেশাগত বৈচিত্র্য, শহরায়ণ ও শিল্পায়ন। বিবাহোত্তর বসবাসভুক্ত পরিবারের কৃষ্টি-সংস্কৃতি, সংঘ, গোষ্ঠী ইত্যাদি নানা কারণে সমাজে বিভিন্ন ধরনের পরিবার গড়ে উঠেছে। এর মধ্যে নয়াবাস পরিবার অন্যতম। এ ধরনের পরিবারে স্বামী-স্ত্রী বিবাহের পর নতুন বাড়িতে এসে তাদের দাম্পত্য জীবন শুরু করে। উদ্দীপকের রাবেয়া-জমির বিবাহের পর জমিরের কর্মস্থলের কাছাকাছিই নতুন বাসায় দাম্পত্য জীবন শুরু করে। স্বামী-স্ত্রী এবং কন্যা নিয়ে তাদের গঠিত পরিবারটি হলো নয়াবাস পরিবার। বিয়ের পর স্বামী-স্ত্রী যে নতুন সংসারে বসবাস শুরু করে তাকে নয়াবাস পরিবার বলে। আমাদের দেশে অনেকে বিয়ের পর স্ত্রীসহ নিজের কর্মস্থলে এসে পারিবারিক জীবনযাপন করে। এভাবেই গড়ে উঠে নয়াবাস পরিবার। পাশ্চাত্য সমাজে এ ধরনের পরিবার বেশি প্রচলিত। বর্তমানে আমাদের দেশেও নয়াবাস পরিবার প্রচুর পরিমাণে দেখা যায়। পেশাগত কারণে শহরাঞ্চলে এ ধরনের পরিবারের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

ঘ. না, উদ্দীপকে পরিবারের সব কাজ উপস্থাপন করা হয়েছে বলে আমি মনে করি না।
পরিবার সবচেয়ে পুরাতন সামাজিক সংগঠন। যুগের পরিবর্তনের সাথে সাথে পরিবারের কার্যাবলিতেও পরিবর্তন এসেছে। পরিবারের কার্যাবলির পরিধি অনেক ব্যাপক ও বিস্তৃত। উদ্দীপকে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া, সন্তান জন্মদান, পরিবারের অর্থনৈতিক নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে চাকরি করা, সাংসারিক কাজকর্ম পরিচালনা করা, সন্তানকে ধর্মীয় শিক্ষা দেওয়া এবং অবসরে ঘুরতে যাওয়া কাজের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এগুলো হলো যথাক্রমে পরিবারের জৈবিক কাজ, অর্থনৈতিক কাজ, মনস্থ াত্ত্বিক কাজ, ধর্মীয় কাজ, বিনোদন অবসরমূলক কাজ। তবে পরিবারের রাজনৈতিক কাজ ও সামাজিক কাজ সম্পর্কে উদ্দীপকে কোনো ধারণা দেওয়া হয়নি। পরিবারকে আমরা রাষ্ট্রের সাথে তুলনা করতে পারি। পরিবারের অন্যতম কাজ হচ্ছে সন্তান-সন্ততিদের উপযুক্ত নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলা। পরিবারের সামাজিক শিক্ষার মাধ্যমে সদস্যরা প্রাথমিক নাগরিকতার অধিকার, কর্তব্য, দায়িত্ব ইত্যাদি সম্বন্ধে সচেতন হওয়ার শিক্ষা দেয়। আবার, পরিবার সামাজিক কার্যাবলি শিক্ষা দেওয়ারও কেন্দ্রস্থল। পারিবারিক জীবন থেকে সামাজিক আচার-আচারণ, আদব-কায়দা, মূল্যবোধ- রীতিনীতি ইত্যাদি শিক্ষা অর্জনের মাধ্যমে পরিবারের সদস্যরা সমাজে চলার যোগ্যতা অর্জন করে। পরিবারের উক্ত দুটি কার্যাবলি সম্পর্কে উদ্দীপকে কোনো ধারণা দেওয়া হয়নি। তাই আমি মনে করি উদ্দীপকে পরিবারের সব কাজকে উপস্থাপন করা হয়নি।

৬. বাংলাদেশের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জনসংখ্যা বিষয়ক তথ্য সংগ্রহের জন্য এনজিও কর্মকর্তা পারভিন বেগম বান্দরবান এলাকার প্রত্যন্ত অঞ্চলে জরিপে যান। জরিপকালে তিনি দেখতে পান সেখানকার পরিবারগুলোতে সকল দায়িত্ব স্ত্রীলোকেরা পালন করেন এবং বিয়ের পর স্বামী তার স্ত্রীর পরিবারে অবস্থান করে।
ক. অধ্যাপক ম্যাকাইভারের পরিবারের সংজ্ঞাটি লেখ।
খ. পারিবারিক বন্ধন বলতে কী বোঝ?
গ. পারভিনের দেখা পরিবারটি কোন পরিবারের আওতাভুক্ত? ব্যাখ্যা কর।পারভিনের
ঘ. পারভিনের দেখা পরিবার ও পিতৃতান্ত্রিক পরিবারেরমধ্যে মিল আছে কি? মতামত দাও।

৬ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. অধ্যাপক ম্যাকাইভারের মতে, সন্তান-সন্তানাদির জন্মদান ও লালন-পালনের নিমিত্তে যৌন সম্পর্ক দ্বারা সংগঠিত ক্ষুদ্রবর্গই হচ্ছে পরিবার।

খ. পারিবারিক বন্ধন বলতে বোঝায় মা-বাবা, ভাই-বোন ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যের মধ্যে মত ও মনের মিল। শিশুর সুষ্ঠু বিকাশে পারিবারিক বন্ধন বিরাট ভূমিকা পালন করে। পরিবার থেকে শিশু স্নেহ, মায়া-মমতা ও সহনশীলতাসহ সব ধরনের শিক্ষা লাভ করে। বর্তমানে শিক্ষা ও শিল্পের প্রসারতা, অর্থনৈতিক সমস্যা, বেকারত্ব প্রভৃতি কারণ পরিবারগুলোকে যৌথ পরিবার থেকে একক পরিবারে পরিণত করছে। বিভিন্ন ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যের প্রভাবের ফলে আমাদের দেশে পারিবারিক বন্ধনেও নানা রকম সমস্যা দেখা দিচ্ছে।

গ. পারভিনের দেখা পরিবারটি মাতৃপ্রধান পরিবারের আওতাভুক্ত। ক্ষমতার মাত্রা অনুসারে পরিবারকে দুশ্রেণিতে বিভক্ত করে। যথা- ১. পিতৃপ্রধান পরিবার ও ২. মাতৃপ্রধান পরিবার। মাতৃপ্রধান পরিবারের ক্ষমতা ও নেতৃত্ব একজন মহিলার ওপর ন্যস্থ থাকে মাতৃপ্রধান পরিবারে পুরুষের চেয়ে স্ত্রীলোকের ক্ষমতা, মর্যাদা ও অধিকার বেশি। সাধারণত মাতা বা বয়োজ্যেষ্ঠ মহিলা এ পরিবারের প্রধান হন। এ ধরনের পরিবারের বিয়ের পর স্বামী তার স্ত্রীর পরিবারে বাস করে। স্ত্রীলোকের পরিচয়ে এ পরিবারের বংশ পরিচয় নির্ধারিত হয়। দক্ষিণ ভারত, মালাবার, কোচিন প্রভৃতি স্থানে মাতৃপ্রধান পরিবার ব্যবস্থা চালু রয়েছে। বাংলাদেশের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী গারোদের মধ্যেও এ ধরনের পরিবার ব্যবস্থা বিদ্যমান। উদ্দীপকেও উক্ত পরিবারের চিত্র পরিস্ফুটিত হয়েছে। তাই পারভিনের দেখা পরিবারটি হলো মাতৃপ্রধান পরিবার।

ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত পারভিনের দেখা পরিবারটি হলো মাতৃতান্ত্রিক পরিবার। আর পারভিনের পরিবারটি হলো পিতৃতান্ত্রিক পরিবার।
সভ্যতার ক্রমবিকাশের সাথে সাথে পরিবারের গঠন ও আকারের মধ্যে পরিবর্তন ঘটেছে। পিতৃতান্ত্রিক ও মাতৃতান্ত্রিক পরিবারের মধ্যে তুলনামূলক আলোচনা করা হলো। পারভিনের পরিবারের সকল ক্ষমতা পিতার হাতে ন্যাস্থ থাকে। আর তার দেখা পরিবারের সকল ক্ষমতা মাতার হাতে ন্যাস্থ থাকে।
পিতৃতান্ত্রিক পরিবারে পিতার পরিচয়ে পরিচিত হয়, অপরদিকে মাতৃতান্ত্রিক পরিবারে সন্তানেরা মায়ের পরিচয়ে পরিচিত হয় এবং পদবি গ্রহণ করে। পিতৃতান্ত্রিক পরিবারে বিয়ের পর স্ত্রী স্বামীর বাড়িতে থাকে এবং সকল সদস্যের দায়িত্ব পিতা পালন করে। অন্যদিকে মাতৃতান্ত্রিক পরিবারে বিয়ের পর স্বামী স্ত্রীর বাড়িতে থাকে এবং মাতাই সকল সদস্যের দায়িত্ব পালন করে। অতএব বলা যায়, পারভিনের দেখা মাতৃতান্ত্রিক পরিবার ও তার পিতৃতান্ত্রিক পরিবারের মধ্যে কর্তৃত্বের ক্ষেত্রে অমিল দেখা দেয় তাছাড়া সবক্ষেত্রে মিল রয়েছে।

৭. মিতাদের চার ভাইবোনসহ যৌথ পরিবার। অন্যদিকে মিতার বাবা মাসুদ আহমেদ ছোট একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। মিতার মা প্রায়ই অসুস্থ থাকেন। সবচেয়ে ছোট ভাইটির বয়স দেড় বছর। বাবার অল্প আয়ের কারণে তাদের লেখাপড়া প্রায়ই বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়। উপরন্তু ছোট ভাইটি প্রায়ই অসুস্থ থাকে। তার বাবাকে এতবড় সংসার চালাতে প্রায়ই হিমশিম খেতে হয়।
ক. কাঠামো অনুযায়ী পরিবার কত প্রকারের?
খ. পরিকল্পিত পরিবার বলতে কী বোঝ?
গ. মিতার পরিবারে মা ভাইয়ের অসুস্থতার কারণ ব্যাখ্যা কর।
ঘ. মাসুদ আহমেদের পরিবার পরিকল্পিত পরিবার হলে সন্তান পালনে কী সুবিধা হতো? বর্ণনা কর।

৭ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. কাঠামো বা আকার অনুযায়ী পরিবার তিন প্রকার।

খ. পরিকল্পিত উপায়ে পরিবার গঠন করাকেই পরিকল্পিত পরিবার বলে। মানবসমাজের মৌলিক ও ক্ষুদ্রতম প্রতিষ্ঠান হচ্ছে পরিবার। এ পরিবার গঠিত হয় বিবাহ, রক্তের সম্পর্ক ও পালিত বন্ধনের মাধ্যমে। পরিকল্পিত পরিবার গঠনে বিবাহ হচ্ছে মৌলিক উপাদান। বিবাহবন্ধনের মাধ্যমে স্বামী-স্ত্রী তাদের সামর্থ্য অনুযায়ী স্বল্পসংখ্যক সুস্থ ও সবল সন্তান নিয়ে যে পরিবার গঠন করে তা-ই পরিকল্পিত পরিবার।

গ. মিতার পরিবারে মা ও ভাইয়ের অসুস্থতার কারণ অর্থ সংকট। মিতার বাবা মাসুদ আহমেদ অল্প বেতনে একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। তার আয় দ্বারা মিতাদের যৌথ পরিবারের সকল চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হয় না। এমনকি তাদের পরিবারে শিক্ষা ও চিকিৎসার মতো মৌলিক চাহিদাগুলো পূরণ করাও সম্ভব হচ্ছে না। মিতার বাবার আয় যদি অধিক হতো তাহলে মিতার মা ও ভাইয়ের চিকিৎসা করা সম্ভব হতো। অথবা মিতার পরিবারটি যদি যৌথ পরিবার না হয়ে একক পরিবার বা অণু পরিবার হতো তাহলে উক্ত সমস্যার উদ্ভব হতো না। কারণ অল্প আয়ের দ্বারা অণু পরিবার বা একক পরিবার পরিচালনা করতে তেমন অসুবিধা হয় না। মূলত উদ্দীপকটিতে যৌথ পরিবারের অসুবিধাকে নির্দেশ করে। সুতরাং বলা যায়, মিতার মা ও ভাইয়ের অসুস্থতার অন্যতম কারণ হলো অর্থংসকট, যার জন্য দায়ী হলো অপরিকল্পিত পরিবার।

ঘ. মাসুদ আহমেদের পরিবার পরিকল্পিত পরিবার হলে সন্তান পালনে অনেক সুবিধা হতো। যেমন- পরিকল্পিত পরিবারে সন্তান জন্মদানে বাবা-মার আর্থিক ও মানসিক প্রস্তুতি থাকে। ফলে সবল ও সুস্থ সন্তান ভূমিষ্ঠ হয় এবং তার লালন-পালন ও পরিচর্যার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা সম্ভব হয়। যা অপরিকল্পিত পরিবারে অসম্ভব। পরিকল্পিত পরিবারে সন্তানের মৌলিক চাহিদা পূরণে কোনো বেগ পেতে হয় না। ফলে সে অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা ও বিনোদন লাভ করে ভবিষ্যতের সুনাগরিক হিসেবে গড়ে ওঠে। পরিকল্পিত পরিবারে সন্তানের সংখ্যা কম হওয়ায় স্বল্প আয়ের লোকেরাও তাদের চাহিদা পূরণ করতে পারে। মোটকথা পরিকল্পিত পরিবারে আর্থিক সচ্ছলতা থাকার কারণে মা-বাবা সন্তানদের সার্বিক বিষয়ে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারে। সুতরাং মাসুদ আহমদের পরিবারটি পরিকল্পিত পরিবার হলে তার সন্তান পালনে উপরিউক্ত সুবিধা হতো।

৮. সুমন ও সেঁজুতি বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছে। সুমনের বাবা-মা গ্রামে বসবাস করে। সুমন ও সেঁজুতি উভয়ই চাকরি করে ঢাকায়। তাই তারা বিয়ের পর বাসায় উঠে নতুন সংসার শুরু করল। তবে উভয় পক্ষের আত্মীয়-স্বজনই তাদের বাসায় আসা-যাওয়া করে।
ক. ক্ষমতার মাত্রার ভিত্তিতে পরিবারকে কত ভাগে ভাগ করা যায়?
খ. পিতৃপ্রধান পরিবার বলতে কী বোঝায়?
গ. উদ্দীপকের সুমন ও সেঁজুতি বিবাহের পর কোন ধরনের পরিবার গড়ে তুলেছে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. ‘‘সুমন ও সেঁজুতির পরিবার বিবাহোত্তর বসবাসের ভিত্তিতে গড়ে তোলা পরিবারের একটি অংশমাত্র’’- বিশ্লেষণ কর।

৮ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. ক্ষমতার মাত্রার ভিত্তিতে পরিবারকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়।

খ. পিতৃপ্রধান পরিবার বলতে এমন পরিবারকে বোঝায় যেখানে পরিবারের ক্ষমতা ও নেতৃত্ব একজন পুরুষের ওপর ন্যস্ত থাকে। পিতৃপ্রধান পরিবারের কর্তা হয়ে থাকেন স্বামী, পিতা বা পরিবারের বয়স্ক কোনো পুরুষ। পিতৃপ্রধান পরিবারে পুরুষের মাধ্যমে বংশপরিচয় নির্ধারিত হয়।

গ. উদ্দীপকের সুমন ও সেঁজুতি বিবাহের পর নয়াবাস পরিবার গড়ে তুলেছে।
সভ্যতার ক্রমবিকাশের সাথে সাথে পরিবারের গঠন ও আকারের মধ্যে পরিবর্তন ঘটেছে। বিবাহোত্তর বসবাসের স্থানের ওপর ভিত্তি করেও পরিবারকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করা যায়। আধুনিক সময়ে এর মধ্যে নয়াবাস পরিবারও অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। পাশ্চাত্য সমাজে এ ধরনের পরিবারের সংখ্যা অধিক। তবে বর্তমানে আমাদের দেশেও পেশাগত কারণে বিশেষত শহরাঞ্চলে এ ধরনের পরিবারের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। নয়াবাস পরিবার বিবাহোত্তর বসবাসের ভিত্তিতে গড়ে ওঠে। নয়াবাস পরিবার মূলত স্বামী-স্ত্রীই বিবাহের পর নতুন করে গড়ে তোলে। উদ্দীপকের সুমন ও সেঁজুতি উভয়ই এ ধরনের পরিবার গড়ে তোলায় বলা যায়, এটি নয়াবাস পরিবার।

ঘ. সুমন ও সেঁজুতির নয়াবাস পরিবার বিবাহোত্তর বসবাসের ভিত্তিতে গড়ে তোলা পরিবারের একটি অংশমাত্র। কারণ এর বাইরে আরও কয়েক ধরনের পরিবার দেখা যায়।
বিবাহোত্তর বসবাসভুক্ত পরিবারের কৃষ্টি-সংস্কৃতি, সংঘ, গোষ্ঠী ইত্যাদি নানা কারণে সমাজে বিভিন্ন ধরনের পরিবার গড়ে উঠেছে। সভ্যতার ক্রমবিকাশের সাথে সাথে পরিবারের গঠন ও আকারের মধ্যেও পরিবর্তন ঘটেছে। বিভিন্ন উৎসের ভিত্তিতে পরিবারকে নানা ভাগে ভাগ করা যায়। বিবাহোত্তর বসবাস পদ্ধতি এর মধ্যে একটি। বিবাহোত্তর বসবাসের ভিত্তিতে পরিবারকে আরও দুটি ভাগে ভাগ করা যায়। এগুলো হলো-
১. পিতৃবাস পরিবার ও
২. মাতৃবাস পরিবার।

বিবাহের পর স্বামী-স্ত্রী যদি স্বামীর পিতৃগৃহে বাস করে তখন তাকে পিতৃবাস পরিবার বলে। আমাদের সমাজ পিতৃবাস নীতি অনুসরণ করে। আর মাতৃবাস পরিবার হলো ঠিক এর বিপরীত। স্বামী-স্ত্রী বিবাহের পর যদি স্ত্রীর পিতৃগৃহে বাস করে তবে তাকে বলা হয় মাতৃবাস পরিবার। এ ধরনের পরিবার আমাদের সমাজে খুব কম দেখা যায়। সার্বিক দিক বিবেচনায় তাই বলা যায়, বিবাহোত্তর বসবাসের ভিত্তিতে যেসব পরিবার গড়ে ওঠে উদ্দীপকের সুমন ও সেঁজুতির গড‡় তোলা পরিবার তার একটি অংশমাত্র।

৯. রুবেলের বাবা-মা, দাদা-দাদি, চাচা-চাচি, চাচাতো ভাইবোন এবং তার ছোট ভাই সবাই একসাথে গ্রামে বসবাস করে। রুবেল ঢাকায় পড়াশুনা করলেও বাড়ির জন্য তার সবসময় মন খারাপ লাগে। তাই ছুটি পেলেই সে বাড়ি চলে যায় আপনজনদের সান্নিধ্য পাওয়ার আশায়।
ক. বহু স্ত্রী বিবাহভিত্তিক পরিবার কাকে বলে?
খ. বংশমর্যাদা ও সম্পত্তির উত্তরাধিকারের ভিত্তিতে পরিবারের শ্রেণিবিভাগ সম্পর্কে ধারণা দাও।
গ. উদ্দীপকের রুবেলের পরিবার কোন ধরনের পরিবারকে ইঙ্গিত করে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকের রুবেলের পরিবারের মতো পরিবার বর্তমানকালে শহরাঞ্চলে খুঁজে পাওয়া কষ্টসাধ্য ব্যাপার’’- মন্তব্যটির যথার্থতা যাচাই কর।

৯ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক.যদি কোনো পুরুষ একাধিক বিবাহ করে বা একের অধিক স্ত্রী নিয়ে বসবাস করে তখন তাকে বহু স্ত্রী বিবাহভিত্তিক পরিবার বলে।

খ. বংশমর্যাদা ও সম্পত্তির উত্তরাধিকারের ভিত্তিতে পরিবারকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। এগুলো হলো- ১. পিতৃসূত্রীয় পরিবার ও ২. মাতৃসূত্রীয় পরিবার। পিতৃসূত্রীয় পরিবারে সন্তান পিতার বংশমর্যাদা অর্জন করে এবং পিতার সম্পত্তি উত্তরাধিকার সূত্রে লাভ করে। অপরদিকে, মাতৃসূত্রীয় পরিবারে সন্তান মাতার সম্পত্তি ও বংশমর্যাদা উত্তরাধিকার সূত্রে লাভ করে থাকে। এ ধরনের পরিবার আমাদের সমাজে কম দেখা যায়।

গ. উদ্দীপকের রুবেলের পরিবার যৌথ পরিবারকে ইঙ্গিত করে।
কৃষ্টি-সংস্কৃতি, সংঘ, গোষ্ঠী ইত্যাদি নানা কারণে সমাজে বিভিন্ন ধরনের পরিবার গড়ে উঠেছে। বিভিন্ন উৎসের ভিত্তিতে পরিবারকে বিভিন্ন শ্রেণিতে ভাগ করা যায়। সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে পরিবারের আকারেও পরিবর্তন এসেছে। উদ্দীপকের রুবেলের পরিবারকে যৌথ পরিবার বলা হয়। আকারের ওপর ভিত্তি করে পরিবারকে যে কয়টি ভাগে ভাগ করা যায় তার মধ্যে যৌথ পরিবার একটি। যখন পরিবারের স্বামী-স্ত্রী, সন্তান, তার বাবা-মা, ভাইবোন এবং নিকট আত্মীয়স্বজন নিয়ে একত্রে বসবাস করে তখন তাকে বলা হয় যৌথ পরিবার। গ্রামাঞ্চলে কৃষিপ্রধান সমাজে যৌথ পরিবারের সংখ্যা বেশি। তবে বর্তমানকালে যৌথ পরিবারের সংখ্যা অনেক হ্রাস পেয়েছে। উদ্দীপকের রুবেলের পরিবারের মধ্যে যৌথ পরিবারের সকল বৈশিষ্ট্যই খুঁজে পাওয়া যায়। তাই বলা যায়, উদ্দীপকের রুবেলের পরিবার যৌথ পরিবারকে ইঙ্গিত করে।

ঘ. উদ্দীপকের রুবেলের পরিবারের মতো পরিবার তথা যৌথ পরিবার বর্তমানকালে শহরাঞ্চলে খুঁজে পাওয়া কষ্টসাধ্য ব্যাপার। কারণ এখন এখানে অণু পরিবারের সংখ্যাই বেশি দেখা যায়।
পরিবার সমাজের মৌলিক এবং অন্যতম ক্ষুদ্রতম সংগঠন। মানবজীবনে পরিবারের স্থান বিশেষ গুরুত্ববহ। সভ্যতার ক্রমবিকাশ এবং সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে পরিবারের আকারও পরিবর্তিত হয়েছে। বর্তমানকালে শহরাঞ্চলে যৌথ পরিবার খুঁজে পাওয়া কষ্টসাধ্য ব্যাপার। কেননা, আধুনিককালে শহরাঞ্চলে অণু পরিবারের সংখ্যা বেশি। স্বামী-স্ত্রী এবং তাদের অবিবাহিত সন্তানদের নিয়ে গঠিত পরিবারই হলো অণু পরিবার। সময়ের পরিবর্তনে বর্তমানকালে অণু পরিবারের চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে। শহরাঞ্চলে এ ধরনের পরিবারের সংখ্যাই বেশি। এ কারণেই উদ্দীপকের রুবেলের পরিবারের মতো পরিবার বর্তমানকালে শহরাঞ্চলে খুঁজে পাওয়া কষ্টসাধ্য ব্যাপার। তাই বলা যায়, প্রশ্নের মন্তব্যটি যথার্থ ও যৌক্তিক।

১০. রামিসা বাবা-মায়ের একমাত্র মেয়ে। বাবা-মায়ের আদর-যত্ন, স্নেহ- ভালোবাসা ও নিবিড় পরিচর্যায় সে ধীরে ধীরে বেড়ে উঠছে। পরিবারের কর্তা হিসেবে রামিসার বাবাকে সবদিকে খেয়াল রাখতে হয়। তার লেখাপড়ার সর্বোত্তম ব্যবস্থা করতে বাবা-মায়ের চেষ্টার কোনো অন্ত নেই। রামিসার ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত ও নিশ্চিত করাই তাদের প্রধান লক্ষ্য।
ক. সংঘবদ্ধ জীবনের সবচেয়ে বিশ্বজনীন রূপ কোনটি?
খ. পারস্পরিক বিশ্বাস ও নির্ভরশীলতা পরিবারের ওপর গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব রাখে।- ব্যাখ্যা কর।
গ. উদ্দীপকের রামিসার প্রতি তার বাবা-মায়ের ভালোবাসা পরিবারের কোন বৈশিষ্ট্যকে মনে করিয়ে দেয়? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. ‘‘উদ্দীপকের রামিসার বাবাকে পরিবারের কর্তা হিসেবে আরও অনেক দায়িত্ব পালন করতে হয়’’- উত্তরের সপক্ষে যুক্তি দাও।

১০ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. সংঘবদ্ধ জীবনের সবচেয়ে বিশ্বজনীন রূপ হলো পরিবার।

খ. পারস্পরিক বিশ্বাস ও নির্ভরশীরতা পরিবারের ওপর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব রাখে। পরিবারের চেয়ে কোনো সংগঠনেরই সামাজিক গুরুত্ব বেশি নয়। আর পরিবারের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো পারস্পরিক বিশ্বাস ও নির্ভরশীলতা। পরিবারের সদস্যদের মধ্যে পারস্পরিক বিশ্বাস যত গভীর হবে, পারিবারিক বন্ধন তত সুদৃঢ় হবে। পরিবারের সদস্যদের এ বিশ্বাস ও নির্ভরশীলতাই একে অপরের প্রতি দায়িত্ব ও কর্তব্যবোধকে জাগ্রত করে।

গ. উদ্দীপকের রামিসার প্রতি তার বাবা-মায়ের ভালোবাসা পরিবারের আবেগময় ভিত্তি বৈশিষ্ট্যকে মনে করিয়ে দেয়।
সমাজ জীবনে ছোট-বড় নানা ধরনের সামাজিক সংগঠনের উপস্থিতি লক্ষ করা যায়। এসব সংগঠনের মধ্যে পরিবার অন্যতম। পরিবারের চেয়ে অন্য কোনো সংগঠনের সামাজিক গুরুত্ব এত বেশি নয়। আর পরিবারের একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো আবেগময় ভিত্তি, যা প্রত্যেক পরিবারেই থাকা জরুরি। উদ্দীপকের রামিসা তার বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান। আর তাই সন্তানের প্রতি বাবা-মায়ের স্নেহ-ভালোবাসা এবং আবেগ প্রকাশের দিকটি উদ্দীপকে সুন্দরভাবে তুলে ধরা হয়েছে। এটি হলো পরিবারের আবেগময় ভিত্তি। দৈহিক প্রবৃত্তি, মানসিক আবেগপ্রবণতার প্রধান কেন্দ্র হলো পরিবার। পরিবারের আবেগপ্রবণতার মধ্যে পিতামাতার স্নেহ-ভালোবাসা, মায়া-মমতা, অধিকারবোধ ইত্যাদি বিষয় অন্তর্ভুক্ত থাকে। এর ওপর পরিবারের অনেক কিছু নির্ভর করে। পরিবারের এ বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতেই মানুষের জীবন সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে পরিচালিত হয়। উদ্দীপকের রামিসার প্রতি তার বাবা-মায়ের ভালোবাসা পরিবারের এ আবেগময় ভিত্তি বৈশিষ্ট্যকেই মনে করিয়ে দেয়।

ঘ. উদ্দীপকের রামিসার বাবাকে পরিবারের কর্তা হিসেবে পরিবার পরিচালনার জন্য উদ্দীপকে আলোচিত বিষয় পরিবারের আবেগময় ভিত্তি ছাড়াও নানা ধরনের দায়িত্ব পালন করতে হয়। যেমন- জৈবিক, নিরাপত্তামূলক, অর্থনৈতিক, শিক্ষামূলক, ধর্মীয়, সামাজিকীকরণ, রাজনৈতিক, চিত্তবিনোদনমূলক প্রভৃতি পরিবারের কার্যাবলি সম্পাদনে পরিবারের কর্তা হিসেবে রামিসার বাবার মুখ্য ভূমিকা রয়েছে। জৈবিক কাজের মধ্যে রয়েছে সন্তান জন্মদান ও লালন-পালন করা। যা রামিসার বাবার দায়িত্বের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত। পরিবারের কর্তাকে অত্যান্ত গুরুত্বের সাথে অর্থনৈতিক কার্জ সম্পাদন করতে হয়। পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য রামিসার বাবাকে বাসস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। পরিবারের কর্তাকে তাদের ছেলেমেয়েদের পড়াশুনার ব্যবস্থা করতে হবে। ধর্মীয় শিক্ষাদানের ব্যাপারেও পরিবারের কর্তার দায়িত্ব রয়েছে। শিশুর সামাজিকীকরণের ব্যাপারে পরিবারের কর্তার ভূমিকা রয়েছে। তাছাড়া চিত্তবিনোদনের ব্যাপারেও রামিসার বাবার মতো কর্তার দায়িত্ব রয়েছে।
Share:

0 Comments:

Post a Comment