HSC গার্হস্থ্য বিজ্ঞান ১ম পত্র (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর pdf download অধ্যায় ৩

HSC গার্হস্থ্য বিজ্ঞান ১ম পত্র (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর pdf download
এইচএসসি পরীক্ষার পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি
HSC Home Science 1st Paper Srijonshil question and answer pdf download.

উচ্চ মাধ্যমিক

গার্হস্থ্য বিজ্ঞান
প্রথম পত্র

সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
৩য় অধ্যায়

HSC Home Science 1st Paper
Srijonshil
Question and Answer pdf download

১. নিচের চিত্রটি লক্ষ্য কর এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
চিত্র
ক. আর্থিক আয় কী?
খ. আয় ও ব্যয়ের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করে বাজেট- বুঝিয়ে লেখ।
গ. ছক-A কোন সম্পদের ধারণা দেয়? সম্পদগুলো পারস্পরিক বিনিময়যোগ্য নয়- ব্যাখ্যা কর।
ঘ. ছক-A-এর যথার্থ ব্যবহার পরোক্ষভাবে ছক-B এর সমৃদ্ধি ঘটায়- উত্তরের সপক্ষে যুক্তি দাও।

১ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. আর্থিক আয় হলো দেশের প্রচলিত মুদ্রা অর্জন করার প্রক্রিয়া।

খ. বাজেট পরিবারের আয় ও ব্যয়ের মধ্যে সমতা রক্ষা করে। বাজেট হচ্ছে আয় ও ব্যয়ের আনুমানিক হিসাব। একটি নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট আয় অনুযায়ী কোন খাতে কী পরিমাণ অর্থ ব্যয় করতে হবে তা বাজেটের মাধ্যমে নির্ধারণ করা হয়। টাকার ক্রয়ক্ষমতাকে বাড়াতে না পারলেও টাকাকে পরিবারের সর্বাধিক প্রয়োজনে ব্যয় করে পরিবারের চাহিদাগুলো সহজেই মেটাতে পারে বাজেট। তাই বাজেট হলো অর্থ পরিকল্পনার প্রধান যন্ত্র বা কৌশল। এসব দিক বিবেচনা করেই বলা হয়, বাজেট আয় ও ব্যয়ের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করে থাকে।

গ. ছক-A মানবীয় সম্পদের ধারণা দেয়।
মানবীয় সম্পদ হলো মানুষের অন্তর্নিহিত গুণাবলি, যা মানুষকে বিভিন্ন সম্পদ আহরণে সহায়তা করে। এসব সম্পদ হস্তান্তরযোগ্য নয়। এগুলো মানুষের অন্তর্নিহিত গুণ। ছক-A-তে যেসব সম্পদের কথা বলা হয়েছে সেগুলো হলো সময়, শক্তি, জ্ঞান ও দক্ষতা। এসব সম্পদ হস্তান্তরযোগ্য নয়। এগুলো ব্যক্তির নিজস্ব সম্পদ। মানবীয় সম্পদের সকল বৈশিষ্ট্য এগুলোর মধ্যে বিদ্যমান থাকায় এগুলো উক্ত সম্পদেরই অন্তর্ভুক্ত। মানবীয় সম্পদগুলো স্পর্শনীয় নয় এবং এগুলো শনাক্ত করা যায় না। এসব সম্পদ বিনিময়যোগ্য নয়। সময়, শক্তি, জ্ঞান ও দক্ষতা মানুষের নিজস্ব সম্পদ। এসব সম্পদ কখনই বিনিময় করা সম্ভব নয়। পরিবারের প্রতিটি সদস্য তাদের সামর্থ্য অনুযায়ী সময়, শক্তি, জ্ঞান ও দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে পরিবারের সচ্ছলতা বজায় রাখতে চেষ্টা করে। এসব সম্পদ কেবল ব্যক্তির অধীনে থাকে। এগুলো দর্শনীয় বা স্পর্শনীয় নয় বরং অন্তর্নিহিত ও বিমূর্ত। তাই এ সম্পদগুলো পারস্পরিক বিনিময়যোগ্য নয়।

ঘ. ছক-A এর মানবীয় সম্পদগুলোর যথার্থ ব্যবহারই পরোক্ষভাবে ছক-B-এর অমানবীয় সম্পদগুলোর সমৃদ্ধি ঘটায়।
মানবীয় সম্পদ ব্যতীত অন্য যেসব সম্পদ মানুষের অভাব পূরণ করে সেগুলোই হলো অমানবীয় সম্পদ। এসব সম্পদের সাহায্যে মানুষ পরিবারের সমৃদ্ধি ঘটিয়ে থাকে। ছক-A-তে মানবীয় সম্পদগুলো তুলে ধরা হলেও ছক-B-তে যেসব সম্পদ তুলে ধরা হয়েছে, সেগুলো হলো অমানবীয় সম্পদ। এসব সম্পদের মধ্যে উল্লেখ করা হয়েছে অর্থ, জমি, গহনা ও বাড়িঘরের কথা। অমানবীয় সম্পদকে বস্তুবাচক সম্পদও বলা হয়ে থাকে। এসব সম্পদের ওপর ব্যক্তির অধিকার থাকতে হবে। অধিকার থাকলেই কেবল মানুষ এসব সম্পদ ব্যবহার ও নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা অর্জন করে। টাকান্ডপয়সা, জমি, বাড়িঘর, গহনা ইত্যাদি অমানবীয় সম্পদ পরিবারের সমৃদ্ধি ঘটায়। তবে এসব সম্পদ বৃদ্ধিতে মূল প্রেরণা যোগায় মানবীয় সম্পদগুলো। সময়, শক্তি, জ্ঞান, দক্ষতা ইত্যাদি মানবীয় সম্পদকে যথাযথভাবে কাজে লাগাতে না পারলে অমানবীয় সম্পদগুলোর বৃদ্ধি ঘটানো সম্ভব নয়। বেঁচে থাকার জন্য অমানবীয় সম্পদগুলো যেমন আবশ্যক, তেমনি সেগুলো অর্জন করতে হলে প্রয়োজন মানবীয় সম্পদের সদ্ব্যবহার করা।
তাই বলা হয়েছে, ছক-A তথা মানবীয় সম্পদের যথার্থ ব্যবহার পরোক্ষভাবে ছক-B তথা অমানবীয় সম্পদগুলোর সমৃদ্ধি ঘটায়। এ কারণেই প্রশ্নের উক্তিটি করা হয়েছে।

২. করিম সাহেব তার স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে নিজের বাড়িতে থাকেন। তিনি ঘরে তৈরি খাবার বাজারে সরবরাহ করে অর্থ উপার্জন করেন। তার স্ত্রী একাই ঘরের সব কাজ করেন এবং মেয়েকে পড়ান। চলমান পারিবারিক অবস্থায় তারা খুব খুশি।
ক. বাজেট কাকে বলে?
খ. সম্পদের রূপান্তর সম্ভব- বুঝিয়ে লেখ।
গ. করিম সাহেবের সম্পদ কোন ধরনের? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. করিম সাহেবের পরিবারে সকল ধরনের আয় অর্জিত হয়- উক্তিটির যথার্থতা মূল্যায়ন কর।

২ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. পরিবারের লক্ষ্যসমূহ অর্জন করার জন্য সীমিত সম্পদের ভবিষ্যৎ খরচের খসড়া পরিকল্পনাকে বাজেট বলে।

খ. সম্পদের রূপান্তর সম্ভব। পারিবারিক লক্ষ্য অর্জনের জন্য এক প্রকার সম্পদকে অন্য প্রকার সম্পদে রূপান্তর করে ব্যবহার করা যায়। রূপান্তর দ্বারা সম্পদের ব্যবহার ও তৃপ্তি বাড়ানো যায়। তাছাড়া সম্পদ পরিবর্তন করে ব্যবহারের ফলে মোট সম্পদের পরিমাণ বৃদ্ধি পায় এবং লক্ষ্য অর্জন সহজ হয়। যেমন একজন শিক্ষক তার জ্ঞান ও দক্ষতা কাজে লাগিয়ে রূপান্তরিত অর্থ উপার্জন করেন। আর অর্থের দ্বারা জীবনের বিভিন্ন চাহিদা মেটানো হয়। আবার অর্থ, সময় ও শক্তির মাধ্যমে বাড়ি তৈরি করা হয়। যা পরবর্তীতে নিজস্ব আকারে থাকে না বরং বাড়ি সম্পদে রূপান্তরিত হয়। আর এভাবেই বিভিন্ন সম্পদের রূপান্তর করা সম্ভব।

গ. করিম সাহেবের সম্পদ মানবীয় সম্পদের অন্তর্ভুক্ত। সময়, শক্তি, জ্ঞান, দৃষ্টিভঙ্গি, সামর্থ্য, দক্ষতা ইত্যাদি মানবীয় সম্পদ।
উদ্দীপকে করিম সাহেব সময়, শক্তি, জ্ঞান কাজে লাগিয়ে ঘরে তৈরি খাবার বাজারে সরবরাহ করে অর্থ উপার্জন করছেন। মানবীয় সম্পদ অত্যন্ত মূল্যবান এ সম্পদ সঠিকভাবে কাজে লাগিয়ে বস্তুগত সম্পদ অর্জন করা যায়।
সুষ্ঠু গৃহ পরিচালনায় মানবীয় সম্পদ অপরিহার্য। করিম সাহেব তার মানবীয় সম্পদকে কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন খাবার তৈরি করছেন। উদ্দীপকে উল্লিখিত করিম সাহেবের স্ত্রী তার দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে নিজেই মেয়েকে পড়াান। আবার সে তার শক্তি কাজে লাগিয়ে গৃহের সব কাজ একাই করছেন। শারীরিক ও মানসিক দুই রকম শক্তিই মানুষের সম্পদ। চিন্তার জন্য চাই শক্তি এবং মনের প্রস্তুতির জন্যও চাই শক্তি। এ শক্তির সমন্বয়ে পরিবারের কাজগুলো সম্পাদন সহজ হয়।

ঘ. করিম সাহেবের পরিবারে সকল ধরনের আয় অর্জিত হয়- উক্তিটি যথার্থ।
সম্পদ বিভিন্ন ধরনের রয়েছে। এর মধ্যে একটি হলো মানবীয় সম্পদ। মানবীয় সম্পদ পরিবারের সদস্যরা তাদের লক্ষ্য অর্জনে ব্যবহার করে থাকে। যেমন করিম সাহেবের স্ত্রী শিক্ষার জ্ঞান কাজে লাগিয়ে তার মেয়েকে পড়াান। আর এ জ্ঞান এক ধরনের সম্পদ। যেটির যথার্থ ব্যবহারের মাধ্যমে তারা সম্পদ উপার্জন করতে পারে। করিম সাহেব তার দক্ষতা কাজে লাগিয়ে ঘরে বিভিন্ন খাবার তৈরি করে তা বাজারে বিক্রি করে অর্থ উপার্জন করছে। সকলের দক্ষতা ও নৈপুণ্য সমান নয়। যে লোক যে কাজে দক্ষ সে সেই কাজের মাধ্যমে সম্পদ অর্জন করতে পারে। এছাড়াও মানবীয় সম্পদের আরও একটি হলো শক্তি। যেটি ব্যবহার করে করিম সাহেবের স্ত্রী ঘরের সব কাজ নিজেই করছেন।
তাই বলা যায়, করিম সাহেবের পরিবারে সকল মানবীয় সম্পদের যথার্থ ব্যবহার হয়েছে।

৩. কণা ও বীণা দুজনই স্কুলশিক্ষক। কণা কোনো চিন্তাভাবনা ছাড়া যখন যা দেখেন তাই কেনেন। ফলে মাসের শেষে তাকে অসুবিধায় পড়াতে হয়। বীণা তার সন্তানদের নিজে পড়াান। কেনাকাটার ব্যাপারে অত্যন্ত সচেতন। তিনি পরিকল্পনা করে কেনাকাটা করেন। এতে তার কিছু অর্থ বাড়তি থাকে। বীণার মতে বিন্দু বিন্দু জল থেকেই সাগর সৃষ্টি হয়।
ক. উপযোগ কী?
খ. 'সব সম্পদ হস্তান্তর করা যায় না'- ব্যাখ্যা কর।
গ. বীণা সন্তানদের পড়াাশোনা করানোর ক্ষেত্রে কোন সম্পদ ব্যবহার করেন? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. বীণার মতে বিন্দু বিন্দু জল থেকেই সাগর সৃষ্টি হয়- উক্তিটির সপক্ষে তোমার মতামত বিশ্লেষণ কর।

৩ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. মানুষের অভাব মোচনে পণ্যের যে ক্ষমতা তা-ই উপযোগ।

খ. সব সম্পদ হস্তান্তর করা যায় না। একটি পরিবার লক্ষ্য অর্জনের জন্য নানাবিধ সম্পদ ব্যবহার করে থাকে। কেননা সম্পদ ছাড়া লক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব নয়। এ সম্পদের বিভিন্ন শ্রেণিবিভাগ রয়েছে। যার কিছু সম্পদ হস্তান্তরযোগ্য এবং কিছু সম্পদ হস্তান্তর যোগ্য না। যেমন- মানবীয় সম্পদ বা জ্ঞান, শক্তি, পারস্পরিক ভালোবাসা, মনোভাব ইত্যাদি। যা কখনো হস্তান্তর করা সম্ভব নয়। টাকা, জমি, স্বর্ণালংকার ইত্যাদি অর্থনৈতিক সম্পদ। যা হস্তান্তর করা যায়।

গ. বীণা সন্তানদের পড়াাশোনা করানোর ক্ষেত্রে অ-অর্থনৈতিক সম্পদ ব্যবহার করছেন।
সম্পদ বলতে সাধারণত ধন-সম্পত্তি বা টাকান্ডপয়সাকে বোঝায়। অর্থনৈতিক দৃষ্টিতে সম্পদ বলতে বোঝায়, যার বিনিময় মূল্য আছে, যা মানুষের দারিদ্র্য মোচনে সহায়তা করে এবং যার চাহিদা আছে। সম্পদের মধ্যে বিভিন্ন শ্রেণিবিভাগ রয়েছে। যেমন- মানবীয়, অর্থনৈতিক, অ-অর্থনৈতিক ইত্যাদি।
কিছু কিছু সম্পদ আছে যেগুলো সীমিত নয়। যে সম্পদের বিনিময় মূল্য নেই কিন্তু পরিবারের লক্ষ্য অর্জনে ব্যবহৃত হয় তাই অ-অর্থনৈতিক সম্পদ। অ-অর্থনৈতিক সম্পদগুলো নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য ছাড়া ব্যবহার করা যায় না। যেমন- শক্তি, সময়, দক্ষতা, আগ্রহ ইত্যাদি। উদ্দীপকে উল্লিখিত, বীণা কোনো কাজ করার আগে চিন্তা করে। পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করে। এমনকি সে শক্তি, সময়, শিক্ষা ও দক্ষতা কাজে লাগিয়ে তার সন্তানদের পড়াাশোনা করান। তাই এগুলো অ-অর্থনৈতিক সম্পদ।

ঘ. বীণার মতে, ‘‘বিন্দু বিন্দু জল থেকেই সাগর সৃষ্টি হয়।’’
শূন্য থেকেই সব কিছুর সৃষ্টি। কোনোকিছুই একদিনে সৃষ্টি হয়নি। ধীরে ধীরে একটু একটু করে পূর্ণরূপ ধারণ করেছে। এর জন্য প্রয়োজন সময় এবং ধৈর্য। বীণা অত্যন্ত সচেতন। যেকোনো কাজ করার আগে সে চিন্তা করে। পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করে। এতে করে তাঁর কিছু অর্থ বাড়তি থাকে। এভাবে সে প্রতিদিন কিছু কিছু অর্থ জমায়। প্রতিদিন যদি কিছু জমায় তাহলে এক সময় তার জমানো সম্পদের পরিমাণ অনেক বেড়ে যায়। অনুরূপ সাগরও একদিনে সৃষ্ট হয়নি। বিন্দু বিন্দু জল থেকেই এক সময় নদী সৃষ্টি হয়। সেই নদী একসময় সাগরে রূপ নেয়। বিন্দু বিন্দু জলের কোনো অসিত্মত্ব না থাকতে পারে, কিন্তু বিন্দু বিন্দু জল জমতে জমতে যখন সাগরে রূপ নেয় তখন সেটা দৃশ্যমান হয়। তেমনি অল্প পরিমাণ অর্থ কোনো উপকারে না আসলেও অল্প অল্প করে জমে যখন অর্থের পরিমাণ অনেক বেড়ে যাবে তখন সেটা অনেক উপকারেই আসতে পারে। তাই প্রতিদিন কিছু পরিমাপৈ সঞ্জয় করলে একসময়ে সেটা আর কিছু থাকবে না বরং বিপুলে পরিণত হবে।

৪. ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী আকমল সাহেবের তিন ছেলে মেয়েই স্কুল-কলেজে পড়াাশোনা করে। পরিবারের সচ্ছলতার জন্য তার স্ত্রীও আয় বৃদ্ধির জন্য বাড়িতে নানা ধরনের কাজ করেন এবং সদস্যদের সতর্কতার সাথে সম্পদ ব্যবহারের পরামর্শ দেন। স্বামী স্ত্রী দুজনেই সীমিত আয় দ্বারা বাজেট করে চলেন বলে পরিবারের কারও চাহিদা অপূর্ণ থাকে না।
ক. পরিবারের আয়কে প্রধানত কত ভাগে ভাগ করা যায়?
খ. সম্পদের বৈশিষ্ট্যগুলো আলোচনা কর।
গ. আকমল সাহেবের স্ত্রী কীভাবে বাড়িতে সম্পদ বৃদ্ধির ব্যবস্থা করতে পারেন? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. তোমার পরিবারের সদস্য সংখ্যা কতজন? তাদের জন্য বাজেট তৈরির সময় তুমি কী কী বিষয় বিবেচনা করবে? বিশ্লেষণ কর।

৪ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. পরিবারের আয়কে প্রধানত তিন ভাগে ভাগ করা যায়। যথা- ১. আর্থিক আয়, ২. প্রকৃত আয় ও ৩. মানসিক আয়।

খ. সম্পদ বলতে সাধারণত ধনসম্পদকে বোঝায়। অর্থনীতির ভাষায় সম্পদ হলো যার বিনিময় মূল্য আছে, যা দারিদ্র্য বিমোচনে সাহায্য করে এবং যার চাহিদা আছে। সম্পদের বৈশিষ্ট্য হলো- ১. উপযোগ, ২. ক্ষমতাধীন, ৩. সীমাবদ্ধতা, ৪. পরস্পর পরিবর্তনশীলতা ও ৫. পরিচালনা যোগ্যতা।

গ. আকমল সাহেবের স্ত্রী বাড়তি আয় করে বাড়িতে সম্পদ বৃদ্ধির ব্যবস্থা করতে পারেন।
যেমন তিনি পরিকল্পিত উপায়ে হাঁস-মুরগি ও ছাগল পালন করতে পারেন। সেলাইয়ের কাজ করতে পারেন। বাড়ির আঙিনায় সবজি চাষ করতে পারেন। বাড়ির পরিত্যক্ত ফাঁকা স্থানে পেঁপে, কলার আবাদ করতে পারেন, ফলদ ও বনজ গাছ রোপণ করতে পারেন। এসব কিছু হতে প্রাপ্ত আয় দিয়ে তিনি সম্পদ বৃদ্ধি করতে পারেন। তাছাড়া তিনি শিক্ষিত হলে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমেও আয় করে সম্পদ বৃদ্ধি করতে পারেন। অন্য বিবেচনায় তিনি তার ছেলেমেয়েদের যথাযথ লেখাপড়াা শিখিয়ে তাদেরকে প্রকৃত মানবসম্পদে রূপান্তর করতে পারেন।

ঘ. আমার পরিবারের সদস্য সংখ্যা পাঁচজন। তাদের জন্য বাজেট তৈরির সময় যেসব বিষয় বিবেচনা করতে হবে তা হলো-
১. পরিবারের সদস্যদের প্রয়োজনীয় দ্রব্যের তালিকা তৈরি করতে হবে।
২. তালিকাভুক্ত প্রতিটি দ্রব্যের মূল্য নির্ধারণ করে মোট মূল্য বের করতে হবে।
৩. পরিবারের সবার মতামত জানতে হবে।
৪. যে সময়ের বাজেট করা হবে, সে সময়ের আয়ের হিসাব করতে হবে।
৫.আনুমানিক আয়ের সাথে সম্ভাব্য ব্যয়ের সমতা রক্ষা করতে হবে।
৬. সঞ্জয়ের ব্যবস্থা বাজেট পরিকল্পনায় থাকতে হবে।
৭. পরিকল্পনাটি বাস্তবায়নের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

৫. অরূপ সাহেব একটি কাপড়ের দোকানের কর্মচারী। স্বল্প বেতনে সংসার চালাতে তিনি হিমশিম খান। তবে তিনি নানা উপায়ে তার আয়ের সাথে ব্যয়কে সংকুলান করে চলেন। তার মুদি দোকানদার, বৈদ্যুতিক মিস্ত্রি, সবজি বিক্রেতা সবাই পরিচিত হওয়ায় তিনি তাদের কাছ থেকে স্বল্প মূল্যে সেবা আদায় করতে পারেন। এছাড়াও তিনি পরিবারের সদস্যদের অসুস্থতায় সরকারি হাসপাতালে নিয়ে যান এবং সেখানেই স্বল্প খরচে চিকিৎসা করান। এভাবেই স্বল্প আয়ের মধ্যেও তিনি ভালো থাকতে পারছেন।
ক. প্রকৃত আয় কত প্রকার?
খ. প্রকৃত আয় সম্পর্কে ধারণা দাও।
গ. অরূপ সাহেব তার অপ্রত্যক্ষ প্রকৃত আয় বাড়াতে সফল হবে কীভাবে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. অরূপ সাহেব প্রত্যক্ষ প্রকৃত আয়ও বাড়তে পারেন- বিশ্লেষণ কর।

৫ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. প্রকৃত আয় দুই প্রকার।

খ. পরিবারের ভোগ্য দ্রব্যসামগ্রী ও সেবাকর্ম দ্বারা নির্দিষ্ট সময়ে অর্জিত আয়ই হলো প্রকৃত আয়। প্রকৃত আয় নির্ভর করে বাজারদরের ওপর। আর্থিক আয় দ্বারা প্রকৃত আয় লাভ করা যায়। এ কারণেই আর্থিক আয় প্রকৃত আয়ের ওপর নির্ভরশীল। প্রকৃত আয় আবার দুই প্রকার হয়ে থাকে- ১. প্রত্যক্ষ প্রকৃত আয় এবং ২. অপ্রত্যক্ষ প্রকৃত আয়। পরিবার শ্রমের বিনিময়ে যে দ্রব্যসামগ্রী বা সেবাকর্ম লাভ করে তা হলো প্রত্যক্ষ প্রকৃত আয়। আর আমরা অর্থের বিনিময়ে যে দ্রব্য বা সেবা অর্জন করি, তার ওপর নির্ভর করে অপ্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ প্রকৃত আয়। অপ্রত্যক্ষ প্রকৃত আয় আমরা সহজেই বাড়াতে পারি। পারিবারিক জীবনে প্রকৃত আয় খুব গুরুত্বপূর্ণ।

গ. অরূপ সাহেব তার কার্যাবলির মাধ্যমে অপ্রত্যক্ষ প্রকৃত আয় বাড়াতে সফল হবেন।
আমরা অর্থের বিনিময়ে যে দ্রব্য বা সেবা অর্জন করি তার ওপর অপ্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ প্রকৃত আয় নির্ভর করে। প্রকৃত আয়ের একটি প্রকারভেদ হলো অপ্রত্যক্ষ প্রকৃত আয়। অপ্রত্যক্ষ আয় আমরা নানা উপায় অবলম্বনপূর্বক সহজেই বাড়াতে পারি। উদ্দীপকের ঘটনায় এর নমুনা লক্ষ করা যায়। উদ্দীপকের অরূপ সাহেব একটি কাপড়ের দোকানের কর্মচারী। স্বল্প বেতনে সংসার চালাতে তিনি হিমশিম খান। তবে তিনি নানা উপায়ে আয়ের সাথে ব্যয়কে সংকুলান করে চলেন। মুদি দোকানদার, বৈদ্যুতিক মিস্ত্রি, সবজি বিক্রেতা সবাই অরূপ সাহেবের পরিচিত হওয়ায় তিনি তাদের কাছ থেকে স্বল্পমূল্যে সেবা আদায় করতে পারেন। আবার পরিবারের সদস্যদের অসুস্থতায় তিনি সরকারি হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা করান এবং এভাবে স্বল্প আয়ের মধ্যেও তিনি নানাদিক সামলে নিচ্ছেন। অপ্রত্যক্ষ প্রকৃত আয় এসব মাধ্যমেই বাড়ানো যায়। পরিচিত ব্যক্তির কাছ থেকে পরিবার অল্প মূল্যে বা বিনামূল্যে সেবা লাভ করে অপ্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ আয় বাড়াতে পারে। আবার সরকার জনগণকে অল্প মূল্যে যে সেবা দেয় সে সুযোগ গ্রহণ করেও পরোক্ষ আয় বাড়ানো যায়। উদ্দীপকের অরূপ সাহেবকে এসব সুযোগ গ্রহণ করতে দেখা যায়। আর এভাবেই তিনি অপ্রত্যক্ষ প্রকৃত আয় বাড়াতে সফল হবেন।

ঘ. উদ্দীপকের অরূপ সাহেব পরিবারের শ্রমের বিনিময়ে অর্জিত দ্রব্যসামগ্রী দ্বারা প্রত্যক্ষ প্রকৃত আয়ও বাড়াতে পারেন।
পরিবারের আয়কে প্রধানত তিন ভাগে ভাগ করা যায় যার মধ্যে প্রকৃত আয় একটি। প্রকৃত আয়কে আবার ২ ভাগে ভাগ করা যায়- ১. প্রত্যক্ষ প্রকৃত আয় ও ২. অপ্রত্যক্ষ প্রকৃত আয়। প্রকৃত আয় আবার আর্থিক আয়ের ওপর নির্ভরশীল। পরিবার শ্রমের বিনিময়ে যে দ্রব্যসামগ্রী বা সেবাকর্ম লাভ করে থাকে সেটাই হলো প্রত্যক্ষ প্রকৃত আয়। বেতন, বাড়িতে উৎপাদিত শাকসবজি, হাঁস-মুরগি পালন, জামাকাপড়া নিজেরা সেলাই বা ইস্ত্রি করা ইত্যাদির মাধ্যমে প্রত্যক্ষ প্রকৃত আয় করা যায়। উদ্দীপকের অরূপ সাহেবের ক্ষেত্রে এ বিষয়গুলো অনুপস্থিত। অরূপ সাহেব স্বল্প আয়ের মধ্যেও ব্যয় সংকুলান করতে সক্ষম। তার কার্যাবলির মাধ্যমে তিনি তার অপ্রত্যক্ষ প্রকৃত আয় সহজেই বাড়াতে পারেন। তবে তিনি নানা কার্যাবলির মাধ্যমে তার প্রত্যক্ষ প্রকৃত আয়ও বাড়াতে পারবেন। যদি তিনি তার পরিবারের শ্রমের বিনিময়ে দ্রব্যসামগ্রী বা সেবাকর্ম লাভ করতে সক্ষম হন তবে তার প্রত্যক্ষ প্রকৃত আয়ও বাড়বে। এক্ষেত্রে তিনি বাড়িতে উৎপাদিত শাকসবজি ব্যবহার বাড়িতে হাঁস-মুরগি পালন করা, নিজেদের জামাকাপড়া সেলাই বা ইস্ত্রি করা ইত্যাদি কার্যাবলি সম্পাদন করতে পারেন। কেননা এসব কাজের দ্বারাই তিনি তার প্রত্যক্ষ প্রকৃত আয়ও বাড়াতে পারেন। তাই সার্বিক দিক বিবেচনায় প্রশ্নের মন্তব্যটিকে যথার্থ বলা যায়।

৬. নাজমা বেগম তার বাড়ির উঠানে বেগুন, পুঁইশাক, লাউ এবং কাঁচামরিচ চাষ করেন। নিজের হাতে উৎপাদিত শাকসবজি খেয়ে তিনি এবং তার পরিবারের সদস্যগণ যথেষ্ট তৃপ্তি লাভ করেন। এসব শাকসবজি তাদের কিনে খেতে হয় না বলে বেশকিছু টাকাও বাঁচে। তাই নাজমা বেগম তার সবজির ক্ষেতকে আরও সমৃদ্ধ করার কথা ভাবছেন।
ক. আর্থিক আয় কোন আয়ের ওপর নির্ভরশীল?
খ. মোট আয় বলতে কী বোঝ?
গ. নাজমা বেগম ও তার পরিবারের সদস্যদের সন্তুষ্টি কোন ধরনের আয়? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. নাজমা বেগমের উদ্যোগ প্রত্যক্ষ প্রকৃত আয়েরই উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত- মন্তব্যটির যথার্থতা যাচাই কর।

৬ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. আর্থিক আয় প্রকৃত আয়ের ওপর নির্ভরশীল।

খ. আর্থিক আয় ও প্রকৃত আয়ের সমষ্টি বের করলে যা পাওয়া যায় তাই হলো মোট আয়। আর্থিক আয় ও প্রকৃত আয় যোগ করেই পরিবারের মোট আয় হিসাব করা হয়। এ মোট আয় থেকেই পরিবার তার সকল ধরনের ব্যয় নির্বাহ করে। আবার মোট আয় দিয়ে ভবিষ্যতের জন্য সঞ্চয় বা বিনিয়োগও করা হয়। পরিবারের আয়ের যে প্রকারভেদ রয়েছে তার মধ্যে আর্থিক আয় ও প্রকৃত আয়ের সমন্বয়ে যে আয়ের হিসাব পাওয়া যায় সেটাই হলো মোট আয়।

গ. নাজমা বেগম ও তার পরিবারের সদস্যদের সন্তুষ্টি হলো মানসিক আয়।
মানসিক আয় হলো এক ধরনের অনুভূতি। অর্থ ব্যয় করে ও প্রকৃত আয় থেকে আমরা যে মানসিক তৃপ্তি পাই সেটাই হলো মানসিক আয়। এটি এক ধরনের বিমূর্ত ভাবনা। মানসিক আয়ের আবার হ্রাসবৃদ্ধি আছে। কোনো দ্রব্য ক্রয় করার পর তৃপ্তি লাভ করলে বা ইতিবাচক মন্তব্য শুনলে মানসিক আয় বৃদ্ধি পায়। কিন্তু কোনো দ্রব্য ক্রয় করার পর তৃপ্তি লাভ করতে না পারলে বা নেতিবাচক মন্তব্য শুনলে মানসিক আয় হ্রাস পায়। উদ্দীপকের ঘটনায় মানসিক আয়ের দিকটিকেই তুলে ধরা হয়েছে। উদ্দীপকের নাজমা বেগম তার বাড়ির উঠানে বেগুন, পুঁইশাক, লাউ এবং কাঁচামরিচ চাষ করেন। নিজের হাতে উৎপাদিত শাকসবজি খেয়ে তিনি এবং তার পরিবারের সদস্যগণ তৃপ্তি লাভ করেন। তাদের এ সন্তুষ্টি হলো মূলত এক ধরনের মানসিক তৃপ্তি। নিজ হাতে উৎপাদিত শাকসবজি আহার করে নাজমা বেগম ও তার পরিবার যে মানসিক তৃপ্তি লাভ করে তা মূলত মানসিক আয়েরই অন্তর্ভুক্ত। তারা অর্থ ব্যয় করে ও প্রকৃত আয় থেকে মানসিক তৃপ্তি লাভ করেছেন এবং তাদের সন্তুষ্টি মূলত এক ধরনের অনুভূতি। এ বিষয়গুলো মানসিক আয়ের বৈশিষ্ট্যকে ধারণ করে বিধায় তাদের সন্তুষ্টি মানসিক আয়েরই অন্তর্ভুক্ত।

ঘ. পরিবারের শ্রমের বিনিময়ে দ্রব্যসামগ্রী বা সেবাকর্ম লাভ করে প্রত্যক্ষ প্রকৃত আয় বাড়ানো যায় যা উদ্দীপকের নাজমা বেগমের উদ্যোগের মাঝেও লক্ষ করা যায়।
প্রকৃত আয় পরিবারের নির্দিষ্ট সময়ে ভোগ্য দ্রব্যসামগ্রী ও সেবাকর্ম দ্বারা অর্জিত হয়। প্রকৃত আয় আবার দুই ধরনের হয়ে থাকে। যথা- ১. প্রত্যক্ষ প্রকৃত আয় ও ২. অপ্রত্যক্ষ প্রকৃত আয়। পরিবার শ্রমের বিনিময়ে যে দ্রব্যসামগ্রী বা সেবাকর্ম লাভ করে তা প্রত্যক্ষ প্রকৃত আয়ের অন্তর্ভুক্ত। উদ্দীপকের নাজমা বেগমের উদ্যোগে এ দৃষ্টান্তই লক্ষ করা যায়। উদ্দীপকের নাজমা বেগম তার বাড়ির উঠানে বেগুন, পুঁইশাক, লাউ এবং কাঁচামরিচ চাষ করেন। নিজের হাতে উৎপাদিত শাকসবজি খেয়ে তিনি এবং তার পরিবারের সদস্যগণ যথেষ্ট তৃপ্তি লাভ করেন। এসব শাকসবজি তাদের কিনে খেতে হয় না বলে বেশকিছু টাকাও বাঁচে। তাই নাজমা বেগম তার সবজির ক্ষেতকে আরও সমৃদ্ধ করার কথা ভাবছেন। নাজমা বেগমের এ কর্মকান্ড তার পরিবারের প্রত্যক্ষ প্রকৃত আয় বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে। পরিবার শ্রমির বিনিময়ে যে দ্রব্যসামগ্রী বা সেবাকর্ম লাভ করে তা প্রত্যক্ষ প্রকৃত আয় হিসেবে গণ্য হয়। বাড়িতে শাকসবজি উৎপাদন করা, হাঁস-মুরগি পালন করা, জামাকাপড়া সেলাই বা ইস্ত্রি করা ইত্যাদি কার্যাবলির মাধ্যমে প্রত্যক্ষ প্রকৃত আয় বাড়ানো যায়। উদ্দীপকের নাজমা বেগমের উদ্যোগ প্রকৃত আয়েরই উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করে যা উপর্যুক্ত আলোচনা থেকে স্পষ্টভবে বোঝা যায়। তাই প্রশ্নের মন্তব্যটি যথার্থ বলে বিবেচিত হয়।

৭. শফিউল সাহেব খুব বিনোদনপ্রেমী এবং আমুদে মানুষ। প্রতিমাসেই তিনি তার পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বাইরে কোথাও খেতে যান কিংবা কোথাও ঘুরতে যান কিংবা সিনেমা দেখতে যান। তাই প্রতিমাসেই তিনি বিনোদন খাতে বেশকিছু টাকা ব্যয় করেন। কিন্তু সঞ্চয়ের ব্যাপারে তার মধ্যে উদাসীনতা লক্ষ করা যায়।
ক. পরিবারের ব্যয় কিসের ওপর নির্ভর করে?
খ. জীবনযাত্রার মানে পার্থক্য দেখা দেয় কেন?
গ. শফিউল সাহেবের পারিবারিক ব্যয়ে কোন বিষয়টি প্রভাব বিস্তার করেছে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. শফিউল সাহেবের পারিবারিক ব্যয়ে আরও যেসব বিষয় সক্রিয় ভূমিকা রাখতে পারে সেগুলো উপস্থাপন কর।

৭ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. পরিবারের ব্যয় আয়ের ওপর নির্ভর করে।

খ. বিত্তের পার্থক্যের ভিত্তিতে জীবনযাত্রার মানে পার্থক্য দেখা দেয়। পরিবারের ব্যয় যেসব বিষয়ের ওপর নির্ভর করে তার মধ্যে জীবনযাত্রার মান অন্যতম। জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধি পেলে ব্যয় বৃদ্ধি পায় এবং জীবনযাত্রার মান কম হলে ব্যয় কম হয়। বিত্ত ও স্থানের ওপর জীবনযাত্রার মান নির্ভর করে থাকে। বিত্তের ভিত্তিতে উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত পরিবার লক্ষ করা যায়। আর্থিক অবস্থাভেদে এসব শ্রেণিভেদ দেখা যায়। আর এর ভিত্তিতেই জীবনযাত্রার মানে পার্থক্য লক্ষ করা যায়। আবার জায়গাভেদেও জীবনযাত্রার মান পৃথক হয়ে থাকে। যেমন- গ্রাম ও শহরের জীবনযাত্রার মান পৃথক হয়। এসব কারণেই জীবনযাত্রার মানে পার্থক্য দেখা দেয়।

গ. শফিউল সাহেবের পারিবারিক ব্যয়ে পরিবারের মূল্যবোধ ও লক্ষ্য বিষয়টি প্রভাব বিস্তার করেছে।
পরিবারের ব্যয় বিভিন্ন বিষয়ের ওপর নির্ভর করে থাকে। এসব বিষয়ের মধ্যে একটি হলো পরিবারের মূল্যবোধ ও লক্ষ্য। একেক পরিবার একেকটি বিষয়কে বেশি প্রাধান্য দিয়ে থাকে। এর ভিত্তিতে তাদের লক্ষ্যও আলাদা হতে দেখা যায়। উদ্দীপকের শফিউল সাহেবের ক্ষেত্রে এ বিষয়টির প্রভাব লক্ষ করা যায়। শফিউল সাহেব খুব বিনোদনপ্রেমী এবং আমুদে মানুষ। প্রতিমাসেই তিনি তার পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বাইরে কোথাও খেতে যান কিংবা ঘুরতে যান কিংবা সিনেমা দেখতে যান। তাই প্রতিমাসেই তাকে বিনোদন খাতে বেশকিছু টাকা ব্যয় করতে হয়। কিন্তু সঞ্চয়ের ব্যাপারে তার মাঝে উদাসীনতা লক্ষ করা যায়। শফিউল সাহেবের ক্ষেত্রে পরিবারের মূল্যবোধের বিষয়টি বিশেষভাবে লক্ষ করা যায়। অনেক পরিবার শিক্ষাকে বেশি মূল্য দেয়, অনেক পরিবার আমোদ-প্রমোদকে বেশি মূল্য দেয়, আবার অনেক পরিবার সঞ্চয়কে মূল্য দেয়। যে পরিবার যে বিষয়কে বেশি মূল দেয় তার ওপরই এ পরিবারের ব্যয় নির্ভর করে। উদ্দীপকের শফিউল সাহেব আমুদে ব্যক্তি হওয়ায় তিনি আমোদ-প্রমোদকে বেশি মূল্য দেন এবং এ খাতেই বেশি অর্থ ব্যয় করেন।
তাই বলা যায়, শফিউল সাহেবের পারিবারিক ব্যয় পরিবারের মূল্যবোধ ও লক্ষ্য বিষয়টিই প্রভাব বিস্তার করেছে।

ঘ. শফিউল সাহেবের পারিবারিক ব্যয় আরও বেশকিছু বিষয় সক্রিয় ভূমিকা রাখতে পারে।
একটি পরিবারের ব্যয় নানা বিষয়ের ওপর নির্ভর করে থাকে। বিভিন্ন প্রয়োজনীয় বিষয়কে কেন্দ্র করে পরিবারের ব্যয় নির্ধারিত হয়ে থাকে। পারিবারিক ব্যয় যেসব বিষয়ের ওপর নির্ভর করে থাকে সেগুলো শফিউল সাহেবের পরিবারের ক্ষেত্রেও লক্ষণীয়। শফিউল সাহেবের পরিবারের ব্যয় যেসব বিষয় সক্রিয় ভূমিকা রাখবে সেগুলোর মধ্যে রয়েছে- পরিবারের আয়, পরিবারের লোকসংখ্যা, বাসস্থানের অবস্থান, জীবনযাত্রার মান, ব্যক্তিগত অভ্যাস, যাতায়াত, সামাজিকতা ও আমোদ-প্রমোদ, পরিবারের মূল্যবোধ ও লক্ষ্য ইত্যাদি। পরিবারের আয়ের ওপরই শফিউল সাহেবের পরিবারের ব্যয় নির্ভর করে। পরিবারের লোকসংখ্যা বেশি হলে শফিউল সাহেবের ব্যয় বেশি এবং লোকসংখ্যা কম হলে শফিউল সাহেবের ব্যয় কম হবে। শফিউল সাহেবের বাসস্থান যদি শহর এলাকায় হয় তবে তার ব্যয় বৃদ্ধি পাবে। তবে যদি শহরতলিতে হয় তবে ব্যয় কম হবে। তার জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধি পেলে ব্যয় বৃদ্ধি পাবে এবং জীবনযাত্রার মন কম হলে ব্যয় কম হবে। আবার তার ব্যক্তিগত বিভিন্ন অভ্যাসের ওপরও তার পারিবারিক ব্যয় নির্ভর করে। এছাড়াও যাতায়াত ব্যবস্থা, বিভিন্ন সামাজিক উৎসব-অনুষ্ঠান ইত্যাদির ওপরও শফিউল সাহেবের ব্যয় নির্ভর করবে। আর পরিবারের মূল্যবোধ ও লক্ষ্য যে পরিবারের ব্যয়কে নিয়ন্ত্রণ করে তা উদ্দীপকের ঘটনা থেকে স্পষ্টই বোঝা যায়।
তাই বলা যায়, শফিউল সাহেবের পারিবারিক ব্যয় উপরিউক্ত বিষয়গুলোই সক্রিয় ভূমিকা রাখবে।

৮. রিনি ও তার স্বামীর মিলিতভাবে পারিবারিক আয় ৪০,০০০ টাকা। রিনি তার সাংসারিক প্রয়োজনে ৩০,০০০ ব্যয় করে। বাকি ১০,০০০ টাকা সে প্রতিমাসে ব্যাংকে সঞ্চয় করে রাখে ভবিষ্যতের জন্য। তাই বেশ সচ্ছলভাবেই সংসার কাটছে তাদের।
ক. বাজেট কথাটি কোন শব্দ হতে এসেছে?
খ. বাজেট পরিবারে সমৃদ্ধি আনতে পারে কীভাবে?
গ. রিনির পারিবারিক বাজেট কোন ধরনের? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. বাজেটের প্রকারভেদ সম্পর্কে সমগ্র ধারণা প্রদানে উদ্দীপকটি কি পুরাপুরি সার্থক? উত্তরের সপক্ষে যুক্তি দাও।

৮ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. বাজেট কথাটি ফরাসি শব্দ 'Bougette' হতে এসেছে।

খ. বাজেটের মাধ্যমে সচেতনভাবে অর্থ ব্যয় করে সকল চাহিদা পূরণ করা যায় বলে বাজেট পরিবারে সমৃদ্ধি আনতে পারে। বাজেট হচ্ছে আয় ও ব্যয়ের আনুমানিক হিসাব। একটি নির্দিষ্ট সময়ে, নির্দিষ্ট আয় অনুযায়ী কোন খাতে কী পরিমাণ অর্থ ব্যয় করতে হবে তা নির্ধারণ করা হয় বাজেটের মাধ্যমে। সচেতনভাবে অর্থ ব্যয়ের নির্দেশিকাই হলো বাজেট। বাজেট টাকার ক্রয়ক্ষমতাকে বাড়াতে পারে না, কিন্তু বাজেট করলে টাকাকে পরিবারের সর্বাধিক প্রয়োজনে ব্যয় করে পরিবারের চাহিদাগুলো সহজেই মেটানো যায় এবং পরিবারে সমৃদ্ধি আনয়ন করা যায়। এভাবেই সচেতনভাবে অর্থ ব্যয়ের মাধ্যমে সকল চাহিদা পূরণ করা যায় বলে বাজেট পরিবারে সমৃদ্ধি আনতে পারে।

গ. রিনির পারিবারিক বাজেট হলো উদ্বৃত্ত বাজেট।
যে বাজেটে আয় অপেক্ষা ব্যয় কম হয় তাকে বলা হয় উদ্বৃত্ত বাজেট বাজেট মানেই হলো আয় ও ব্যয়ের আনুমানিক হিসাব। আয় অনুযায়ী সম্ভাব্য ব্যয়ের দলিল হিসেবে বাজেট প্রণয়ন করা হয়ে থাকে। বাজেটের নানা প্রকারভেদ লক্ষ করা যায়। এর মধ্যে উদ্বৃত্ত বাজেটই উত্তম। উদ্দীপকের রিনির পারিবারিক বাজেট হলো উদ্বৃত্ত বাজেট। রিনি ও তার স্বামীর মিলিতভাবে পারিবারিক আয় হলো ৪০,০০০ টাকা। রিনি তার সাংসারিক প্রয়োজনে ৩০,০০০ ব্যয় করে এবং বাকি ১০,০০০ টাকা সে প্রতিমাসে ব্যাংকে সঞ্চয় করে রাখে। এতে তার ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত করা সম্ভব হয়। তাই বেশ সচ্ছলভাবেই সংসার কাটছে তাদের। আগেই বলা হয়েছে যে বাজেট আয় অপেক্ষা ব্যয়, কম সেটি হলো উদ্বৃত্ত বাজেট। উদ্দীপকের রিনির পারিবারিক বাজেটে এ বিষয়টি লক্ষণীয়। রিনি ও তার স্বামীর আয় ৪০,০০০ টাকা হলেও তাদের ব্যয় হয় ৩০,০০০। সুতরাং তাদের বাজেটে আরও ১০,০০০ টাকা বাড়তে থাকে যা তারা ভবিষ্যতের জন্য সঞ্চয় করে থাকে। অর্থাৎ তাদের বাজেটে আয় অপেক্ষা ব্যয় কম। এ কারণেই বাজেটে তাদের টাকা উদ্বৃত্ত থাকে যা উদ্বৃত্ত বাজেটের বৈশিষ্ট্যকে ধারণ করে। তাই বলা যায়, রিনির পারিবারিক বাজেট হলো একটি উদ্বৃত্ত বাজেট।

ঘ. না, বাজেটের প্রকারভেদ সম্পর্কে সমগ্র ধারণা প্রদানে উদ্দীপকটি পুরাপুরি সার্থক নয়।
বাজেট হলো আয় ও ব্যয়ের আনুমানিক হিসাব। একটি নির্দিষ্ট সময়ে, নির্দিষ্ট আয় অনুযায়ী কোন খাতে কী পরিমাণ অর্থ ব্যয় করতে হয়ে তা নির্ধারণ করা হয় বাজেটের মাধ্যমে। বাজেট হচ্ছে সচেতনভাবে অর্থ ব্যয়ের একটি নির্দেশিকা। অর্থ পরিকল্পনাই হলো বাজেটের মূল উদ্দেশ্য। বাজেটকে আবার তিন ভাগে ভাগ করা যায় যার সম্পূর্ণ ধারণা উদ্দীপকের মাধ্যমে পাওয়া যায় না। উদ্দীপকে রিনিরও পরিবারের বাজেট সম্পর্কে ধারণা দেওয়া হয়েছে। উদ্দীপকে দেখা যায়, রিনি ও তার স্বামীর মিলিতভাবে পারিবারিক আয় ৪০,০০০ টাকা। রিনি তার সাংসারিক প্রয়োজনে ৩০,০০০ টাকা ব্যয় করে বাকি ১০,০০০ টাকা ভবিষ্যতের জন্য সঞ্চয় করে। অর্থাৎ তার বাজেটে আয়ের চেয়ে ব্যয় কম হয়। বাজেটের প্রকারভেদ অনুযায়ী যে বাজেটটি আয় অপেক্ষা ব্যয় কম হয় সেটি হলো উদ্বৃত্ত বাজেট। এছাড়াও বাজেটের আরও কয়েকটি প্রকারভেদ রয়েছে। এগুলো হলো সুষম বাজেট এবং ঘাটতি বাজেট। যে বাজেটে আয়-ব্যয়ের সমতা রক্ষা করা হয় সেটি হলো সুষম বাজেট। আর যে বাজেটে আয় অপেক্ষা ব্যয় বেশি থাকে সেটি হলো ঘাটতি বাজেট। উদ্দীপকের রিনির পারিবারিক বাজেট উদ্বৃত্ত বাজেট সম্পর্কে ধারণা প্রদানে সক্ষম হলেও অন্যগুলো সম্পর্কে ধারণা দিতে ব্যর্থ হয়েছে।
তাই বলা যায়, বাজেটের প্রকারভেদ সম্পর্কে সমগ্র ধারণা প্রদানে উদ্দীপকটি পুরাপুরি সার্থক নয়।

৯. আফরোজ বেগম মাসের শুরুতেই বাজেট তৈরি করে ফেলেন এবং সেভাবেই সাংসারিক খরচ করেন। এভাবে বাজেট করে খরচ করায় তিনি প্রতিমাসে ৩,০০০ টাকা করে জমাতে পারেন। এ প্রক্রিয়ায় টাকা সঞ্চয় করে ২ বছরে তিনি ৭২,০০০ টাকা সঞ্চয় করলেন এবং এ টাকা স্বামীকে দিলেন ব্যবসায় বিনিয়োগ করতে। উক্ত টাকা বিনিয়োগ করে এখন তাদের আয়ও বৃদ্ধি পেয়েছে।
ক. অর্থ পরিকল্পনার প্রধান মন্ত্র কী?
খ. বাজেট বলতে কী বোঝ?
গ. আফরোজা বেগমের প্রেক্ষিতে বাজেটের কোন সুবিধার দিকটি উপস্থিত? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. বাজেট করে চলায় আফরোজা বেগম অন্যান্য আরও অনেক সুবিধাই ভোগ করবেন- মন্তব্যটির যথার্থতা যাচাই কর।

৯ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. অর্থ পরিকল্পনার প্রধান মন্ত্র হলো বাজেট।

খ. বাজেট বলতে বোঝায় আয় অনুযায়ী সম্ভাব্য ব্যয়ের দলিলকে।
আয় ও ব্যয়ের আনুমানিক হিসাব করা হয় বাজেটের মাধ্যমে। একটি নির্দিষ্ট সময়ে, নির্দিষ্ট আয় অনুযায়ী কোন খাতে কি পরিমাণ অর্থ ব্যয় করতে হবে তা নির্ধারণ করে দেয় বাজেট। বাজেট হচ্ছে সচেতনভাবে অর্থ ব্যয়ের একটি নির্দেশিকা। অর্থকে পরিকল্পনামাফিকভাবে ব্যবহার করতে শেখায় বাজেট। এ কারণেই বাজেটকে অর্থ পরিকল্পনার প্রধান মন্ত্র বা কৌশল বলা হয়। তাই বলা যায়, অর্থকে পরিবারের সর্বাধিক প্রয়োজনে ব্যয় করে পরিবারের চাহিদাগুলো সহজে মেটানোর মাধ্যমে পরিবারের সমৃদ্ধি আনয়ন করা যায় যার দ্বারা সেটিই হলো বাজেট।

গ. আফরোজা বেগমের প্রেক্ষিতে বাজেটের বিনিয়োগ সুবিধার দিকটি উপস্থিত।
বাজেট হচ্ছে আয় ও ব্যয়ের আনুমানিক হিসাব। এর মাধ্যমে পরিবারের সর্বাধিক প্রয়োজনে অর্থ ব্যয় করে পরিবারের চাহিদাগুলো সহজেই মেটানো যায়। এতে করে পরিবারের সমৃদ্ধি আনয়ন করা সম্ভব হয়। এ কারণেই বাজেটের বেশকিছু সুবিধার দিক রয়েছে। এসব সুবিধার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো সঞ্চিত অর্থ বিনিয়োগ করে আয় বাড়ানোর সুবিধা। উদ্দীপকের আফরোজা বেগমের ঘটনায় এ বিষয়টিই প্রতিফলিত হয়। আফরোজা বেগম মাসের শুরুতেই তার পরিবারের জন্য বাজেট তৈরি করে ফেলেন। বাজেটের ভিত্তিতেই সাংসারিক খরচ পরিচালনা করতে দেখা যায় তাকে। এভাবে বাজেট করে খরচ করায় তিনি প্রতিমাসে ৩,০০০ টাকা করে জমাতে পারেন। এভাবে সঞ্চয় করার মাধ্যমে ২ বছরে তিনি ৭২,০০০ টাকা সঞ্চয় করেন। এ সঞ্চিত অর্থ তিনি স্বামীকে ব্যবসায় বিনিয়োগ করতে দিলেন এবং উক্ত টাকা রিনিয়োগ করায় তাদের আয়ও বৃদ্ধি পেল। এভাবে বাজেট করে খরচ করায় আফরোজা বেগমের পক্ষে সঞ্চয় করা সম্ভব হয়েছে। উক্ত অর্থ বিনিয়োগ করে তারা তাদের আয় বৃদ্ধিতেও সফল হয়েছে। আর এটি বাজেটের সঞ্চিত অর্থ বিনিয়োগ করে আয় বাড়ানোর সুবিধার দিকটিকেই তুলে ধরে।

ঘ. বাজেট করে চলায় আফরোজা বেগম নানাদিক থেকে সুবিধা পাবেন বিধায় প্রশ্নের মন্তব্যটির যথার্থতা রয়েছে।
বাজেট হলো আয় অনুযায়ী ব্যয়ের দলিল। একটি নির্দিষ্ট সময়ে, নির্দিষ্ট আয় অনুযায়ী কোন খাতে কী পরিমাণ অর্থ ব্যয় করতে হবে তা নির্ধারণ করা হয় বাজেটের মাধ্যমে। সচেতনভাবে অর্থ ব্যয়ের নির্দেশনা প্রদান করায় বাজেট করে চলার মাধ্যমে যথেষ্ট সুবিধা ভোগ করা যায়। উদ্দীপকের আফরোজা বেগম সে সুবিধাই ভোগ করেছেন। তিনি প্রতিমাসের শুরুতেই বাজেট তৈরি করে ফেলেন এবং সে অনুযায়ীই সাংসারিক খরচ পরিচালনা করেন। এভাবে বাজেট করে খরচ করায় তিনি প্রতি মাসে ৩,০০০ টাকা করে জমাতে পারেন। এভাবে ২ বছরে ৭২,০০০ টাকা জমিয়ে তিনি স্বামীকে সে টাকা ব্যবসায়ে বিনিয়োগ করতে দেন এবং আয় বৃদ্ধি করেন। কিন্তু এর পাশাপাশি তিনি বাজেটের আরও অনেক সুবিধা ভোগ করতে পারবেন। যেমন- তিনি পরিবারের আয় ও ব্যয়ের মধ্যে সমতা রক্ষা করে চলতে পারবেন, অর্থের অপচয় রোধ করতে পারবেন, বিপদের সময় কিংবা উৎসব অনুষ্ঠানে সহায়তা পাবেন, দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্যার্জনে সফল হবেন, পণ্য ক্রয় করতে সময় ও শক্তির অপচয় রুখতে পারবেন এবং অন্যান্য আরও অনেক ক্ষেত্রেই যথেষ্ট সুবিধা পাবেন। বাজেটের বহুমুখী সুবিধার অংশীদার হবেন আফরোজা বেগম। বাজেট করে চলায় আফরোজা বেগম এরূপ আরও অনেক ক্ষেত্রে সুবিধা ভোগ করতে পারবেন বলে সার্বিক বিবেচনায় প্রশেণর মন্তব্যটি যথার্থ বলে বিবেচিত।

১০. রিজিয়ার স্বামী একজন ব্যবসায়ী। প্রতি মাসে তার আয় এক থাকে না। কখনো বাড়ে, আবার কখনো কমে। সে হিসেবেই রিজিয়া তার বাজেট পরিকল্পনা করে ফেলেন। এবার তিনি মাসিক ব্যয়ের হিসাব ধরেছেন প্রায় ৫০,০০০ টাকার। কিন্তু এবার তার স্বামীর আয় এর অর্ধেক হওয়ায় রিজিয়া সমস্যায় পড়ালেন।
ক. বাজেট ব্যক্তির পছন্দকে কী করে?
খ. বাজেটের খাত কীভাবে প্রস্তুত করা হয়?
গ. রিজিয়া বাজেটের কোন বিষয়টি বিবেচনা না করায় সমস্যায় পড়ালেন? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. বাজেট পরিকল্পনায় রিজিয়াকে কি কেবল একটি বিষয় বিবেচনা করলেই চলবে? উত্তরের সপক্ষে যুক্তি দাও।

১০ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. বাজেট ব্যক্তির পছন্দকে সীমাবদ্ধ করে।

খ. আয় ও ব্যয়ের সামঞ্জস্য বিধান করার মাধ্যমে বাজেটের খাত প্রস্তুত করা হয়। বাজেটের খাত প্রস্তুত করার প্রথমে সম্ভাব্য আয় নির্দিষ্ট করে নিতে হবে। এরপর ব্যয়ের খাতসমূহ গুরুত্বের ভিত্তিতে ধারাবাহিকভাবে সাজাতে হবে। একেক পরিবারের ব্যয়ের খাত একেক রকম হলেও প্রধান খাতগুলো সব পরিবারে প্রায় একই রকম। এসব খাতের মধ্যে রয়েছে খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা, যাতায়াত, যোগাযোগ, টেলিফোন, মোবাইল, ইন্টারনেট, সঞ্চয়, দান ও অন্যান্য ব্যয়। এভাবে আগে আয় নির্দিষ্ট করে পরে প্রয়োজনীয়তার ভিত্তিতে ব্যয়ের খাতগুলোকে সাজিয়ে বাজেটের খাত প্রস্তুত করা হয়।

গ. রিজিয়া বাজেটের আনুমানিক আয়ের সাথে সম্ভাব্য ব্যয়ের সমতা রক্ষা করার বিষয়টি বিবেচনা না করায় সমস্যায় পড়ালেন।
বাজেট হলো অর্থ পরিকল্পনার যন্ত্র বা কৌশল। বাজেট করে খরচ পরিচালনা করলে পরিবারের সদস্যদের সকল চাহিদা পূরণ করার মাধ্যমে পরিবারের সমৃদ্ধি আনয়ন করা যায়। তবে বাজেট তৈরির ক্ষেত্রে বেশকিছু বিষয় বিবেচনা করতে হয়। এর ব্যতিক্রম হলেই সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। উদ্দীপকের রিজিয়ার ক্ষেত্রে এ সমস্যাই লক্ষণীয়। রিজিয়ার স্বামী একজন ব্যবসায়ী। প্রতিমাসে তার আয় এক রকম থাকে না। কখনো বাড়ে, কখনো কমে। সে হিসেবেই রিজিয়া তার সাংসারিক খরচের বাজেট পরিকল্পনা করে ফেলেন। এবার তিনি তার মাসিক ব্যয়ের হিসাব ধরেছেন প্রায় ৫০,০০০ টাকার। কিন্তু এ মাসে তার স্বামীর আয় এর অর্ধেক হওয়ায় রিজিয়া সমস্যায় পড়ালেন। তিনি যদি বাজেট পরিকল্পনার আগে আনুমানিক আয়ের সাথে সম্ভাব্য ব্যয়ের সমতা রক্ষা করতেন তবে তাকে আর সমস্যায় পড়াতে হতো না। বাজেট প্রণয়নে যেসব বিষয়ের প্রতি লক্ষ রাখতে হয় তার মধ্যে এটি উল্লেখযোগ্য। আয় ও ব্যয়ের সমতা না থাকার কারণেই রিজিয়া আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি ধরে ফেলায় সমস্যায় পড়ালেন। তিনি যদি আয় ও ব্যয়ের সমতা রক্ষা করার বিষয়টি বিবেচনা করতেন তবে সমস্যায় পড়াতেন না।
তাই বলা যায়, রিজিয়া আয় ও ব্যয়ের সমতা রক্ষার বিষয়টি বিবেচনা না করে বাজেট করার কারণেই সমস্যায় পড়ালেন।

ঘ. না, বাজেট পরিকল্পনায় রিজিয়াকে কেবল একটি বিষয় বিবেচনা করলেই চলবে না।
বাজেট হলো অর্থ পরিকল্পনার কৌশল। বাজেট করে নিলে সর্বাধিক প্রয়োজনে ব্যয় করে পরিবারের চাহিদাগুলো সহজেই মেটানো যায় এবং পরিবারের সমৃদ্ধ আনয়ন করা যায়। তবে বাজেট তৈরির সময় বেশকিছু বিষয় বিবেচনা করতে হয়। অন্যথায় নানা সমস্যার সম্মুখীন হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। উদ্দীপকের রিজিয়ার অবস্থা পর্যবেক্ষণ করলে এ বিষয়টি সহজেই বোঝা যায়। উদ্দীপকের রিজিয়ার স্বামী একজন ব্যবসায়ী। প্রতিমাসে তার আয় এক রকম থাকে না। কখনো বাড়ে, আবার কখনো কমে। সে হিসেবেই রিজিয়া সাংসারিক বাজেট পরিকল্পনা করেন। কিন্তু এবার তার স্বামীর আয়ের চেয়ে রিজিয়ার ব্যয়ের হিসাব বেশি হয়ে যাওয়ায় তিনি সমস্যায় পড়ালেন। এক্ষেত্রে তিনি আয় ও ব্যয়ের সমতা রক্ষার বিষয়টি বিবেচনা না করায় সমস্যায় পড়েছেন। কিন্তু বাজেট প্রণয়নে তাকে কেবল এ একটি বিষয় বিবেচনা করলেই হবে না। তাকে আরও অনেক বিষয়ের প্রতি খেয়াল রাখতে হবে। যেমন- বাজেট তৈরি করতে তাকে আগে পরিবারের সদস্যদের প্রয়োজনীয় দ্রব্যের তালিকা করে নিতে হবে, পরিবারের সকলের মতামত নিতে হবে, যে সময়ের বাজেট করা হবে, সে সময়ের হিসাব করতে হবে, বাজেট পরিকল্পনায় সঞ্চয়ের ব্যবস্থা থাকতে হবে এবং অন্যান্য আরও অনেক বিষয় বিবেচনা করতে হবে। উদ্দীপকে রিজিয়া আয়-ব্যয়ের সমতা রক্ষার বিষয়টি বিবেচনা না করায় বাজেট পরিকল্পনা করতে গিয়ে সমস্যায় পড়েছেন। কিন্তু বাজেট করতে তাকে এ বিষয়ের পাশাপাশি উপযুক্ত বিষয়গুলো নিয়েও ভাবতে হবে। তবেই তার বাজেট পরিকল্পনা সফল ও সার্থক হবে।
Share:

0 Comments:

Post a Comment