HSC গার্হস্থ্য বিজ্ঞান ১ম পত্র (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর pdf download অধ্যায় ২

HSC গার্হস্থ্য বিজ্ঞান ১ম পত্র (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর pdf download
এইচএসসি পরীক্ষার পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি
HSC Home Science 1st Paper Srijonshil question and answer pdf download.

উচ্চ মাধ্যমিক

গার্হস্থ্য বিজ্ঞান
প্রথম পত্র

সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
২য় অধ্যায়

HSC Home Science 1st Paper
Srijonshil
Question and Answer pdf download

১. নিচের চিত্রটি লক্ষ্য কর এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
চিত্র
ক. লক্ষ্য কী?
খ. প্রচলিত মান বলতে কী বোঝায়?
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত A চিহ্নিত স্থান গৃহ ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে কী ইঙ্গিত করে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত কাঠামোর আলোকে A চিহ্নিত স্থান ছাড়া B চিহ্নিত স্থানে পৌঁছানো সম্ভব নয়। যুক্তিসহ তোমার মতামত বিশ্লেষণ কর।

১ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. যেকোনো কাজের সঠিক বাস্তবায়নের আকাঙ্ক্ষাকে লক্ষ্য বলে।

খ. সামাজিক বিধিনিষেধ ও নিয়মকানুন হতে যে মানের সৃষ্টি হয় তাকে প্রচলিত মান বলে। এ ধরনের মান ঐতিহ্যগত এবং সমাজ দ্বারা স্বীকৃত। প্রদত্ত সময়ের জন্য এ মান অপরিবর্তনীয় কিন্তু অবস্থার পরিবর্তনে এটিও পরিবর্তিত হয়। সামাজিক ও ধর্মীয় রীতিনীতির আঙ্গিকে প্রচলিত মান গড়ে ওঠে।

গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত A চিহ্নিত স্থান গৃহ ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণকে ইঙ্গিত করে।
গৃহ ব্যবস্থাপনার মৌলিক কার্যাবলির মধ্যে নিয়ন্ত্রণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। গৃহীত পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ যখন বাস্তবায়ন হয়, তখন নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজন হয়। H. Fayal-এর মতে, ‘‘নিয়ন্ত্রণ হলো গৃহীত পরিকল্পনা এবং জারিকৃত নির্দেশনা অনুযায়ী কার্য পরিচালিত হচ্ছে কিনা তা পরীক্ষা করা।’’ অধীনস্তরা সবসময় সকল কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পাদন করতে পারে না। তাই নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজন হয়। এর মাধ্যমে সকল ভুলত্রুটি খুঁজে বের করা হয় এবং সংশোধনের ব্যবস্থা নিয়ে উদ্দেশ্য অর্জন নিশ্চিত করা যায়। নিয়ন্ত্রণের কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে। যেমন- নিয়ন্ত্রণ নমনীয় হওয়া প্রয়োজন। এটি প্রতিষ্ঠানের ব্যক্তির ভূমিকার সাথে সম্পর্কযুক্ত। এছাড়াও নিয়ন্ত্রণ কর্ম ও কর্মপ্রক্রিয়ার সঠিক গতি নির্ধারণ করে। নিয়ন্ত্রণ কর্মে নিয়োজিত ব্যক্তিদের মধ্যে দায়িত্বশীলতা অর্জনে সহায়তা করে। তাছাড়া এটি কাজের মধ্যে ফাঁকি দেওয়ার প্রবণতাও রোধ করে।

ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত কাঠামোতে A চিহ্নিত স্থান বলতে নিয়ন্ত্রণ এবং B চিহ্নিত স্থান বলতে লক্ষ্য অর্জনকে বোঝানো হয়েছে। অর্থাৎ নিয়ন্ত্রণ ব্যতীত লক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব নয়।
গৃহ ব্যবস্থাপনার ধাপ বা পদ্ধতিসমূহ হচ্ছে পরিকল্পনা, সংগঠন, নির্দেশনা, সমন্বয় সাধন, নিয়ন্ত্রণ, মূল্যায়ন ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ। আমরা যদি কর্মসম্পাদনের সময় সচেতনভাবে এ ধাপসমূহ অনুসরণ করি। তাহলে সহজেই লক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব। লক্ষ্যকে কেন্দ্র করে সিদ্ধান্ত গ্রহণের মাধ্যমে গৃহ ব্যবস্থাপনার ধাপসমূহ চক্রাকারে আবর্তিত হয়। এ ধাপগুলোর মধ্যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি হলো নিয়ন্ত্রণ। নিয়ন্ত্রণ ব্যতীত লক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব নয়। নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠানের ব্যক্তির ভূমিকার সাথে সম্পর্কযুক্ত। নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা কার্যক্ষেত্রে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করে। আর শৃঙ্খলা থাকলে অধীনস্তরা সময় ও অর্থের অপচয় করতে পারে না। ফলে সকল কাজ সুষ্ঠু ও যথাযথভাবে, যথাযথ সময়ে সম্পন্ন হবে। যা লক্ষ্য অর্জনে সহায়তা করবে। গৃহ ব্যবস্থাপনার এ ধাপগুলোর কোনো একটি বাদ দিয়ে লক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব নয়। সবগুলোর সমন্বয়ে লক্ষ্যে পৌঁছাতে হবে।

২. দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রীদের বিদায় অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। একাদশের ছাত্রী নূপুর অনুষ্ঠানের সার্বিক তত্ত্বাবধান ও পরিচালনার দায়িত্বে আছে। নূপুর, নিপা ও তার দলকে মজ্ঞসজ্জার, মেঘলা ও তার দলকে খাবারের প্যাকেট আনার দায়িত্ব দিল। নিপা তার দলের প্রত্যেককে দক্ষতা অনুযায়ী কাজ ভাগ করে দিল এবং যথাসময়েসুন্দরভাবে কাজ শেষ করল। মেঘলা খাবার নিয়ে আসার সময় ৩০ প্যাকেট খাবার পড়ে গিয়ে নষ্ট হলো। মেঘলা, নূপুরকে এটি জানানোর পর পার্শ্ববর্তী ক্যান্টিন থেকে নূপুর খাবারের ব্যবস্থা করল। অনুষ্ঠান শেষে সকলে তাদের প্রশংসা করল।
ক. প্রচলিত মান কাকে বলে?
খ. ‘লক্ষ্য, মূল্যবোধ, মান পরস্পর সম্পর্কযুক্ত’- বুঝিয়ে লেখ।
গ. নিপার কাজে গৃহ ব্যবস্থাপনার কোন পর্যায়টি প্রাধান্য পেয়েছে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. ‘‘মেঘলা ও নূপুরের কার্যক্রমে সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রতিটি ধাপ প্রতিফলিত হয়েছে।’’- উক্তিটির যথার্থতা মূল্যায়ন কর।

২ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. সামাজিক বিধিনিষেধ এবং ধর্মীয় রীতিনীতির ভিত্তিতে যে মান গড়ে ওঠে তাকে প্রচলিত মান বলে।

খ. মূল্যবোধ, লক্ষ্য ও মান পরস্পর সম্পর্কযুক্ত। মূল্যবোধ, লক্ষ্য ও মান এ নির্দেশকগুলো প্রেষণা উদ্রেককারী হিসেবে পরিচিত। মূল্যবোধ হতেই নির্ধারিত হয় লক্ষ্য ও মান। নানারকম কার্যকলাপের মাধ্যমে মূল্যবোধ প্রকাশ পায়। যেকোনো কাজের সমাপ্তিকে লক্ষ্য বলে এবং জীবনের প্রয়োজনের পরিপ্রেক্ষিতে সম্পদ ব্যবহারের গুণাগুণ ও পরিমাণের পরিমাপকে মান বলে।

গ. নিপার কাজে গৃহ ব্যবস্থাপনার ‘সংগঠন’ পর্যায়টি প্রাধান্য পেয়েছে। কেননা নিপা তার দলের প্রত্যেককে দক্ষতা অনুযায়ী কাজ ভাগ করে দেয় এবং যথাসময়ে তারা কাজটি শেষ করে, যা সংগঠনকেই নির্দেশ করে।
গৃহ ব্যবস্থাপনার দ্বিতীয় ধাপ হলো সংগঠন। সাধারণভাবে একাধিক ব্যক্তির সহযোগিতার ভিত্তিতে কাজ করার প্রণালিকে সংগঠন বলা হয়। পরিবারের বিভিন্ন সদস্যের করণীয় কাজগুলো সম্পাদনের সাথে পরিকল্পনার সংযোগ সাধন করার নাম সংগঠন। অর্থাৎ কাজ, কর্মী ও কর্ম সম্পাদনের মধ্যে সমন্বয় সাধন করাকে সংগঠন বলে। সংগঠনের পর্যায়ে কোন কাজ কোথায়, কীভাবে করা হবে তা স্থির করা হয়। সংগঠনের পর্যায়ে পরিবারের বিভিন্ন সম্পদ সম্পর্কে বিশদভাবে খুঁটিনাটি চিন্তা করে কোথায়, কী সম্পদ ব্যবহার করা হবে তা স্থির করা হয়ে থাকে। কাজ করতে গেলে- কোন কাজ কাকে দিয়ে করানো হবে, কার সে কাজ সম্পর্কে অভিজ্ঞতা আছে, কীভাবে কাজটি করতে হবে, কী কী সম্পদ ব্যবহার করা হবে ইত্যাদি বিষয় বিবেচনা করা সংগঠনের অন্তর্ভুক্ত।

Nicholes সংগঠনের তিনটি পর্যায় উল্লেখ করেন। যথা-
১. প্রথম পর্যায়ে ব্যক্তি একটি করণীয় কাজের বিভিন্ন অংশের ধারাবাহিক বিন্যাস রচনা করে।
২. দ্বিতীয় পর্যায়ে ব্যক্তি তার বিভিন্ন কাজের ধারা রচনা করে।
৩. তৃতীয় পর্যায়ে ব্যক্তি একটি নির্দিষ্ট কাজ বা কাজসমূহ বিভিন্ন ব্যক্তি দ্বারা সম্পন্ন করতে একটি কর্ম কাঠামো রচনা করে।
সংগঠন পর্যায়ে পৃথক পৃথক অংশের সমন্বয়ে পূর্ণাঙ্গ কাঠামো তৈরি করা হয়।
উপরিউক্ত আলোচনা শেষে বলা যায়, নিপার কার্যক্রমে গৃহ ব্যবস্থাপনার দ্বিতীয় স্তর সংগঠন প্রাধান্য পেয়েছে।

ঘ. ‘‘মেঘলা ও নূপুরের কার্যক্রমে সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রতিটি ধাপ প্রতিফলিত হয়েছে’’- উক্তিটি যথার্থ।
দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রীদের বিদায় অনুষ্ঠান আয়োজনের সার্বিক তত্ত্বাবধান ও পরিচালনার দায়িত্বে ছিল নূপুর। এজন্য নূপুর অনুষ্ঠানের কাজগুলো কয়েকজনের মাঝে বণ্টন করে দেয়। নূপুর মেঘলা ও তার দলকে খাবারের প্যাকেট আনার দায়িত্ব দেয়। মেঘলা খাবার নিয়ে আসার সময় ৩০টি প্যাকেট পড়ে গিয়ে নষ্ট হলো। বিষয়টি নূপুরকে জানানোর পর নূপুর পার্শ্ববর্তী ক্যান্টিন থেকে খাবারের ব্যবস্থা করে। অর্থাৎ এখানে নূপুর বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ করে সমস্যার সমাধান করে। ফলে অনুষ্ঠানটি সুন্দরভাবে অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত আলোচনায় দেখা যায়, নূপুর তার কাজের সুষ্ঠু বাস্তবায়নের জন্য সঠিক পরিকল্পনা গ্রহণ করে। অতঃপর বিভিন্ন জনে কাজ বণ্টন করে, যা সংগঠন ও নির্দেশনার অন্তর্ভুক্ত। এরপর নিদের্শনা বাস্তবায়ন ও নিয়ন্ত্রণ করে, সমন্বয় সাধন করে, কাজের মূল্যায়ন এবং প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে সে এর স্তরগুলো অনুসরণ করে। সিদ্ধান্তের স্তরগুলো হলো- ১. সমস্যার স্বরূপ উপলব্ধি; ২. বিকল্প অনুসন্ধান, ৩. বিকল্পসমূহ সম্পর্কে চিন্তা, ৪. একটি সমাধান গ্রহণ এবং ৫. সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য দায়িত্ব গ্রহণ। মেঘলা সমস্যাটি নূপুরকে জানিয়ে সঠিক কাজ করেছে। অর্থাৎ সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আর বিষয়টি নূপুর জানার পর বিকল্প পদ্ধতি গ্রহণ করে সমস্যার সমাধান করেছে।
সুতরাং বলা যায়, উদ্দীপকের ঘটনায় মেঘলা ও নূপুর গৃহ ব্যবস্থাপনার বিভিন্ন ধাপ অনুসরণের পাশাপাশি সিদ্ধান্ত গ্রহণের সকল ধাপও অনুসরণ করেছে।

৩. আবির কলেজের উদ্দেশে বাসা থেকে বের হয়ে বাসস্ট্যান্ড আসতে না আসতেই বৃষ্টি শুরু হয়ে গেল। সে বাসে যাওয়ার সিদ্ধান্ত পাল্টে রিকশায় করে কলেজে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিল এবং সেই মোতাবেক রিকশায় চড়ে বসল। কিন্তু রাস্তার অবস্থা খারাপ এবং বৃষ্টির কারণে সে প্রায় এক ঘণ্টা পর কলেজে উপস্থিত হলো।
ক. সিদ্ধান্ত গ্রহণ কত প্রকার?
খ. নিয়ন্ত্রণের ধারণা দাও।
গ. "আবিরের বিকল্প সিদ্ধান্ত গ্রহণে ঘাটতি হয়েছে।’’ ব্যাখ্যা কর।
ঘ. একক ও দলীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণের লক্ষণীয় বিষয়ে আলোচনা কর।

৩ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. সিদ্ধান্ত গ্রহণ সাধারণত দুই প্রকার। যথা- ১. একক সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও ২. দলীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ।

খ. নিয়ন্ত্রণের (Controlling) আবিধানিক অর্থ হলো কোনো কিছু পরিচালনা করা, সংযতকরণ, দমন করা, বিরত রাখা, আয়ত্তে রাখ, ইত্যাদি। ব্যবস্থাপনা কার্যাবলির, গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হলো নিয়ন্ত্রণ। নিয়ন্ত্রণ বলতে পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানের সকল কার্যক্রম সঠিকভাবে সম্পন্ন হচ্ছে কিনা তা যাচাই করা এবং কোনো প্রকার গরমিল পাওয়া গেলে তার সংশোধন করাকে বোঝায়। Koontz and Weihrich-এর মতে ‘‘পরিকল্পনা অনুযায়ী কার্য সম্পাদন নিশ্চিত করার জন্য ব্যক্তির সম্পাদিত কাজ পরিমাপ ও সংশোধন করাকে নিয়ন্ত্রণ বলে।’’

গ. ‘‘আবিরের বিকল্প সিদ্ধান্ত গ্রহণে ঘাটতি হয়েছে’’-উক্তিটি যথার্থ। কারণ, আবির কলেজের উদ্দেশে বাসা থেকে বের হয়ে রাসস্ট্যান্ড আসতে না আসতেই বৃষ্টি শুরু হয়ে গেল। সে বাসে যাওয়ার সিদ্ধান্ত পাল্টে রিকশায় করে কলেজে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিল এবং সেই মোতাবেক রিকশায় চড়ে বসল। কিন্তু রাস্তার অবস্থা খারাপ এবং বৃষ্টির কারণে সে প্রায় এক ঘণ্টা পর কলেজে উপস্থিত হলো। তাই এখানে লক্ষণীয় বিষয় হলো- আবির যে বিকল্প সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে সমস্যায় সমাধান করতে চেয়েছে, সেক্ষেত্রে ঘাটতি ছিল। কারণ সে বিকল্প সম্পর্কে সঠিক চিন্তা করেনি। বিকল্প পদ্ধতিতে সমস্যার সমাধান করতে হলে বিকল্প পন্থাগুলো বিশদভাবে মূল্যায়ন করে এর সুবিধা-অসুবিধা, ফলাফল সম্পর্কে চিন্তাভাবনা করে দেখা হয়। সেজন্য সিদ্ধান্ত গ্রহণকারীকে দূরদৃষ্টিসম্পন্ন হতে হয়। তাহলে ভবিষ্যতে সমস্যা সমাধানের ফলাফল সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারে। কিন্তু আবির দূরদর্শিতা দেখাতে না পারায় সে কাঙি্ক্ষত ফল পায়নি। আবার সিদ্ধান্ত গ্রহণকারীর দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তনের ফলে কোনো বিকল্পের ভবিষ্যৎ মূল্যায়ন নির্ধারিত মূল্যায়ন হতে অনেকটা পৃথক হয়। সময়ের সীমাবদ্ধতার কারণে বিকল্প অনুসন্ধানে বিঘ্ন ঘটে।
সুতরাং দেখা যায়, আবিরের বিকল্প সিদ্ধান্ত গ্রহণে ঘাটতি রয়েছে।

ঘ. সিদ্ধান্ত গ্রহণ দুই ধরনের হয়। যথা- ১. একক সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও ২. দলীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ।
একক ও দলীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণে কতকগুলো লক্ষণীয় দিক রয়েছে। যেমন-
একক সিদ্ধান্তের লক্ষণীয় বিষয়-
১. যখন সিদ্ধান্তের ব্যাপার জটিল তখন সমন্বয় সাধনের জন্য দলীয় সদস্যদের প্রতি লক্ষ রেখে একক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা উচিত।
২. একক সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত গ্রহণকারীর আলোচনা বা আদান-প্রদান নিয়ন্ত্রিত বা সীমিত রাখতে হবে।
দলীয় সিদ্ধান্তের লক্ষণীয় বিষয়-
১. দলীয় সিদ্ধান্তে দলের সব সদস্যকে প্রাধান্য দিতে হবে।
২. কাজটি যেন নির্ভুল হয় সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে।
৩. দলীয় সিদ্ধান্তে দলের সদস্যদের সাথে ব্যক্তিগত সম্পর্ক ভালো রাখতে হবে।
৪. গৃহীত সিদ্ধান্তে সকলের আস্থা ও সহযোগিতার দিকে লক্ষ রাখতে হবে।
সুতরাং বলা যায়, একক ও দলীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে উল্লিখিত বিষয়গুলো লক্ষ রাখতে হবে।

৪. শামীম সাহেব একটি পোলট্রি খামারে চাকরি করেন। খামারের লক্ষ্য অর্জনের ক্ষেত্রে তিনি বিভিন্ন কার্যপদ্ধতি অবলম্বন করেন। কীভাবে কাজটি করবেন পূর্বেই সে সম্পর্কে একটি নকশা তৈরি করেন। তার এ ধরনের কর্মকান্ড- খামারের মালিক তার অনেক প্রশংসা করে বলেন, তোমার এ কার্যক্রম তোমাকে সফলতার দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।
ক. গৃহ ব্যবস্থাপনার ধাপগুলো লেখ।
খ. সিদ্ধান্ত গ্রহণের পদ্ধতিগুলো লেখ।
গ. শামীম সাহেবের কর্মপন্থায় গৃহ ব্যবস্থাপনার কোন পর্যায়টি পরিলক্ষিত হয়? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. শামীম সাহেবের মালিকের উক্তিটির যথার্থতা মূল্যায়ন কর।

৪ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. গৃহ ব্যবস্থাপনার ধাপগুলো হলো- পরিকল্পনা, সংগঠন, নির্দেশনা, সমন্বয় সাধন, নিয়ন্ত্রণ, মূল্যায়ন ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ।

খ. সিদ্ধান্ত গ্রহণ একটি জটিল প্রক্রিয়া। সিদ্ধান্ত গ্রহণের পদ্ধতি হলো- ১. সমস্যার স্বরূপ উপলব্ধি করা, ২. বিকল্প অনুসন্ধান করা, ৩. বিকল্পসমূহ সম্পর্কে চিন্তা করা, ৪. একটি সমাধান গ্রহণ করা এবং ৫. গৃহীত সিদ্ধান্তের জন্য দায়িত্ব গ্রহণ করা।

গ. শামীম সাহেবের কর্মপন্থায় গৃহ ব্যবস্থাপনার পরিকল্পনা পর্যায়টি পরিলক্ষিত হয়। গৃহ ব্যবস্থাপনার প্রধান ধাপ হলো পরিকল্পনা। যেকোনো কাজ করতে গেলে পরিকল্পনা করা প্রয়োজন। ব্যবস্থাপনার পরবর্তী ধাপগুলোর ভিত্তি হলো পরিকল্পনা। লক্ষ্য অর্জনের ক্ষেত্রে যেসব কর্মপন্থা অবলম্বন করা হয় তার পূর্বে কাজটি কীভাবে করা হবে, কেন করা হবে ইত্যাদি সম্বন্ধে চিন্তাভাবনা করার নাম পরিকল্পনা। অর্থাৎ পরিকল্পনা হলো পূর্ব থেকে স্থিরকৃত কার্যক্রম। পরিকল্পনা একটি মানসিক প্রক্রিয়া। পরিকল্পনাকে অনুসরণ করে পরবর্তী কাজগুলো সম্পন্ন অগ্রসর হয়। এক কথায় পরিকল্পনাকে বলা হয় ভবিষ্যতের কার্যকলাপের পূর্বাভাস। উদ্দেশ্যমুখী কাজের পরিকল্পনা প্রণয়ন করা সহজতর হয়। লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য পরিকল্পনা কার্যক্রমকে সফলতার দিকে এগিয়ে নেয়। লক্ষ্য না থাকলে পরিকল্পনার প্রয়োজন হয় না। লক্ষ্যই পরিকল্পনায় নির্ধারণ করে কী কাজ করা হবে, কেন হবে, কীভাবে সম্পন্ন করা হবে। পারিবারিক লক্ষ্য অর্জন কীভাবে হবে তা নির্দিষ্টকরণকে পরিকল্পনা বলে।
উপরিউক্ত আলোচনা শেষে বলা যায়, শামীম সাহেব তার কাজগুলো পরিকল্পনামাফিক বাস্তবায়ন করেন। তাই তার কাজ সফলভাবে সম্পন্ন হয়। আর এজন্যই মালিক তার প্রশংসা করে।

ঘ. শামীম সাহেবের মালিক তার প্রশংসা করে বলেন, ‘‘তোমার এ কার্যক্রম তোমাকে সফলতার দিকে নিয়ে যাবে।’’ মালিকের এ উক্তিটি সঠিক হয়েছে।
কারণ, কোনো কাজ সুসম্পন্ন করতে হলে লক্ষ্য নির্ধারণ করে পরিকল্প"মাফিক কাজটি করতে হয়। তাহলে কাঙি্ক্ষত সফলতা লাভ করা যায়। শামীম সাহেব পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করেন। পরিকল্পনামতো কাজ করলে সফল হওয়া স্বাভাবিক। এক্ষেত্রে পরিকল্পনাটি সঠিক হতে হবে এবং নিয়মমাফিক তা বাস্তবায়নে অগ্রসর হতে হবে। এজন্য বলা হয় - Plan is the half of work.
শামীম সাহেব পরিকল্পনা অনুসারে কাজ করায় তার কাজগুলো সময়মতো সম্পন্ন হয়। এজন্য তার মালিক তার প্রতি সন্তুষ্ট। আর মালিক সন্তুষ্ট হলে তার পদোন্নতি হবে, বেতন বৃদ্ধি পাবে, ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। এক সময় তিনি একজন সফল মানুষে পরিণত হবেন। শামীম সাহেবের মালিক তার উক্তিতে এ কথাই ইঙ্গিত দিয়েছেন। তাই মালিকের উক্তি বাস্তবসম্মত ও সঠিক।

৫. তোসিক এবং তারিক দুই ভাই। তারা একসাথে থাকবে বলে ৫০ লাখ টাকার মধ্যে একটি জমি কিনবে বলে ঠিক করল। তাদের ইচ্ছা তারা একসাথে থাকবে। তারা এক ইউনিটের একটি বাড়ি তৈরি করল। কিছুদিন পর তাদের সম্পর্কের অবনতি হওয়ায় তারা আলাদা থাকতে চাইল। তাদের বাবার পরামর্শে তোসিক বেশি টাকার বিনিময়ে তারিক এর অংশ কিনে রাখেন।
ক. সংগঠনের সংজ্ঞা দাও।
খ. মূল্যায়ন গুরুত্বপূর্ণ কেন?
গ. উদ্দীপকের আলোকে দুই ভাইয়ের ভুল কোনটি? বর্ণনা কর।
ঘ. তারিকের ক্ষেত্রে ‘‘M.P. Follet-এর মতানৈক্যের স্তর প্রতিফলিত হয়েছে।’’- ব্যাখ্যা কর।

৫ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. বিভিন্ন বিষয়ের মধ্যে সংযোগ সাধন করাকে সংগঠন বলে।

খ. মূল্যায়ন হচ্ছে লক্ষ্যকে কেন্দ্র করে যে কর্ম সম্পাদন করা হয়েছে তা কতটা ফলপ্রসূ হয়েছে তা বিচার-বিশ্লেষণ করা। মূল্যায়নের মাধ্যমেই কাজের সফলতা ও বিফলতা নিরূপণ করা যায়। ফলে পরবর্তী কর্মপরিকল্পনা ত্রুটিমুক্ত ও অধিক ফলপ্রসূ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আর এ কারণেই মূল্যায়ন অধিক গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত।

গ. উদ্দীপকের আলোকে দুই ভাইয়ের সিদ্ধান্ত গ্রহণে ভুল ছিল।
কারণ, ব্যবস্থাপনার প্রতিটি ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা প্রয়োজন হয়। জ্ঞান, দক্ষতা, অভিজ্ঞতা, শিক্ষা, দূরদৃষ্টি প্রভৃতি সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করে। ব্যবস্থাপনাকে কার্যকর করা, সচল রাখা, সফলতা অর্জন করা প্রতিটি ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত গ্রহণ একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সঠিক সিদ্ধান্তের অভাবে অনেক সময় জীবনে অপূরণীয় ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়। তোসিক এবং তারিক দুই ভাই একসাথে থাকার জন্য ৫০ লাখ টাকার মধ্যে একটি জমি কেনে। তারা এক ইউনিটের একটি বাড়ি তৈরি করে। কিছুদিন পর তাদের সম্পর্কের অবনতি হওয়ায় তারা আলাদা থাকার সিদ্ধান্ত নেয়। তখন তাদের বাবার পরামর্শে তোসিক বেশি টাকার বিনিময়ে তারিক এর অংশ কিনে রাখে। এক্ষেত্রে দুই ভাইয়ের সিদ্ধান্ত গ্রহণে ভুল ছিল। তারা যদি আলাদাভাবে জায়গা কিনে বাড়ি তৈরি করতো, তাহলে তাদের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি ঘটতো না। আর তোসিককে বেশি টাকার বিনিময়ে তারিকের অংশ কিনে নিতে হতো না।
তাই বলা যায়, সঠিক সিদ্ধান্তের অভাবে তোসিক ও তারিক উল্লিখিত সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে।

ঘ. তারিকের ক্ষেত্রে M.P. Follet-এর মতানৈক্যের স্তর প্রতিফলিত হয়েছে।
M.P. Follet-এর পুস্তকে মতানৈক্যের চারটি স্তর দেখিয়েছেন-
১. মতবিরোধ এবং পরিশেষে এক পক্ষের জয়,
২. এক পক্ষের স্বেচ্ছায় সমর্পণ,
৩. আপস মীমাংসা,
৪. একত্রীকরণ।
তোসিক এবং তারিক দুই ভাই একত্রে জমি কিনে বাড়ি তৈরি করে বসবাস শুরু করে। কিন্তু কিছুদিন পর তাদের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি দেখা দেয়। যা M.P. Follet-এর মতানৈক্যের প্রথম স্তরের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। এসময় তাদের বাবা তোসিককে বেশি টাকার বিনিময়ে তারিকের অংশ কিনে নেওয়ার পরামর্শ দেন। অর্থাৎ এখানে তারিক স্বেচ্ছায় তোসিকের কাছে সমর্পণ করে। যা Follet এর মতানৈক্যের দ্বিতীয় স্তরকে নির্দেশ করে। তারিকের অংশ কিনে নেওয়ার মাধ্যমে দুই ভাইয়ের মধ্যকার দ্বনে্দ্বর অবসান ঘটে। অর্থাৎ Follet-এর মতানৈক্যের তৃতীয় স্তরের প্রতিফলন ঘটে। দুই ভাইয়ের মধ্যে আপস মীমাংসা হয়। পরিশেষে তারিক জয় লাভ করে।

৬. মরিয়ম রহমানের নতুন বিয়ে হয়েছে। বিয়ের পর শ্বশুর বাড়িতে উঠেছে সে। কিন্তু বাড়ির রং তার কাছে পছন্দসই হলো না। এ কারণে বিয়ের এক সপ্তাহের মধ্যেই মরিয়ম রহমান বাড়ি রং করার জন্য লোক নিয়োগ করলেন। আকস্মিকভাবে ঘরের কাজ শুরু হওয়ায় তার শ্বশুরবাড়ির লোকেরা খুব ঝামেলায় পড়াল, কারণ তারা এ ব্যাপারে আগে থেকে কিছুই জানত না।
ক. ভবিষ্যৎ করণীয় কাজের ভিত্তিস্বরূপ কী?
খ. পরিকল্পনা বলতে কী বোঝায়?
গ. মরিয়ম রহমান তার পরিকল্পনায় কোন নিয়মটি অনুসরণ না করায় তার পরিবারের অন্য সদস্যরা ঝামেলায় পড়াল? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. মরিয়ম রহমানের পরিকল্পনানুযায়ী যে কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে তা কার্যক্ষেত্রে কাঙি্ক্ষত ফল দিবে কি? উত্তরের সপক্ষে যুক্তি দাও।

৬ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. ভবিষ্যৎ করণীয় কাজের ভিত্তিস্বরূপ হলো পরিকল্পনা।

খ. কাজ আরম্ভ করার পূর্বে যে চিন্তা ও মনন প্রক্রিয়া কাজ করে সেটিই হলো পরিকল্পনা। এটি হলো গৃহ ব্যবস্থাপনার প্রথম ও মৌলিক কাজ। ভবিষ্যৎ করণীয় কাজের ভিত্তি হলো পরিকল্পনা। লক্ষ্য অর্জনের জন্য কী করতে হবে, কীভাবে ও কার দ্বারা করতে হবে, কখন ও কত সময় নিয়ে করতে হবে ইত্যাদি বিষয়ে পূর্ব সিদ্ধান্ত গ্রহণকেই পরিকল্পনা বলে। এটি একটি নিরবচ্ছিন্ন প্রক্রিয়া। পরিকল্পনা থেকেই ভবিষ্যৎ কার্যপদ্ধতি সম্পর্কে অনুমান করা যায়। তাই ঘবসিধহ বলেন, ‘‘ভবিষ্যতে কী করতে হবে তার অগ্রিম সিদ্ধান্তকেই পরিকল্পনা বলে।’’ এক কথায় বলা যায়, যেকোনো লক্ষ্য অর্জনে সকল কাজের ভিত্তি হিসেবে যা কাজ করে সেটিই হলো পরিকল্পনা।

গ. মরিয়ম রহমান তার পরিকল্পনায় মতামত যাচাইয়ের নিয়মটি অনুসরণ না করায় তার পরিবারের অন্য সদস্যরা ঝামেলায় পড়াল। কারণ, যেকোনো কাজের ভিত্তিস্বরূপ হলো পরিকল্পনা। এটি গৃহ ব্যবস্থাপনার প্রথম ও মৌলিক কাজ। কাজ আরম্ভ করার পূর্বে পরিকল্পনা করে নিলে লক্ষ্যার্জন সহজ হয়। তাই সকল কাজের পূর্বেই পরিকল্পনা গ্রহণ করা আবশ্যক। তবে পরিকল্পনা গ্রহণের বেশকিছু নিয়ম রয়েছে। যদি এর ব্যত্যয় ঘটে তবে সমস্যার সৃষ্টি হয়। উদ্দীপকের ঘটনায় এর প্রমাণ পাওয়া যায়। উদ্দীপকের মরিয়ম রহমানের নতুন বিয়ের পর প্রথম শ্বশুরবাড়িতে উঠেছে। নতুন বাড়ির রং পছন্দ না হওয়ায় তিনি বিয়ের এক সপ্তাহের মধ্যেই নতুন বাড়ি রং করার জন্য লোক নিয়োগ করলেন। কিন্তু তার পরিকল্পনায় ঘাটতি ছিল বলে আকস্মিকভাবে কাজ শুরু হওয়ায় মরিয়ম রহমানের শ্বশুরবাড়ির লোকজন ঝামেলায় পড়াল। কেননা, তারা পূর্ব থেকে এ বিষয় সম্পর্কে অবগত ছিলেন না। পরিকল্পনা করার পূর্বেই বেশকিছু নিয়ম অনুসরণ করতে হয় যার মধ্যে একটি হলো মতামত যাচাই। পরিবারের সদস্যদের মতামত যাচাই এবং প্রত্যেকের সুবিধা-অসুবিধা, ইচ্ছা- অনিচ্ছা ইত্যাদি চিন্তা করে পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হয়। এতে সবাই পরিকল্পনাকে ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করে এবং তা বাস্তবায়নও সহজ হয়। কিন্তু উদ্দীপকের মরিয়ম রহমান এ বিষয়টি অনুসরণ না করায় তার পরিকল্পনা ব্যাহত হয়েছে। শ্বশুরবাড়ির লোকজনের মতামত যাচাই না করেই পরিকল্পনা করেছে মরিয়ম রহমান। আর পরিকল্পনার এ অন্যতম নিয়মটি অনুসরণ না করার কারণেই মরিয়ম রহমানের পরিবারের সদস্যরা ঝামেলায় পড়াল।

ঘ. না, মরিয়ম রহমানের পরিকল্পনানুযায়ী যে কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে তা কার্যক্ষেত্রে কাঙি্ক্ষত ফল দিবে না।
কারণ, পরিকল্পনা যেকোনো কাজের ভিত্তিস্বরূপ। তাই যেকোনো কাজ শুরু করার পূর্বেই পরিকল্পনা করে নিতে হয়। তবে পরিকল্পনা গ্রহণের বেশকিছু নিয়ম রয়েছে। পরিকল্পনা যদি খামখেয়ালির ওপর নির্ভর করে প্রণীত হয় তবে কার্যক্ষেত্রে কাঙি্ক্ষত ফললাভ করা যায় না। উদ্দীপকের মরিয়ম রহমানের কার্যক্রম তাই কাঙি্ক্ষত ফল প্রদান করবে না। নববিবাহিত মরিয়ম রহমান বিয়ের পর নতুন বাড়িতে উঠেছে। কিন্তু নতুন বাড়ির রং তার পছন্দ না হওয়ায় তিনি বিয়ের এক সপ্তাহের মধ্যেই বাড়ি রং করার জন্য লোক নিয়োগ করলেন। পরিবারের কোনো সদস্যকেই তিনি এ ব্যাপারে অবগত না করায় আকস্মিকভাবে কাজ শুরু হওয়ায় সবাই ঝামেলায় পড়ালেন। মরিয়ম রহমানের এরূপ খামখেয়ালিপূর্ণ পরিকল্পনা কখনই কার্যক্ষেত্রে কাঙি্ক্ষত ফল দিবে না। কেননা, খামখেয়ালিপূর্ণ পরিকল্পনা তাৎক্ষণিক কিছুটা আশাবাদ সৃষ্টি করতে সক্ষম হলেও কার্যক্ষেত্রে তা কখনো কাঙি্ক্ষত ফল দেয় না। এক্ষেত্রে কার্যব্যবস্থা ত্রুটিপূর্ণ হয় এবং তা পরিতৃপ্তি প্রদান করতে পারে না। উদ্দীপকের মরিয়ম রহমানের প্রেক্ষিতেও এ বিষয়টি প্রযোজ্য। তিনি একান্তই খামখেয়ালির ওপর ভিত্তি করে পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন। যথাযথভাবে কোনো নিয়মও অনুসরণ করতে দেখা যায়নি তাকে। তাৎক্ষণিকভাবে মরিয়ম রহমানের মধ্যে আশাবাদ সৃষ্টি হলেও তা তাকে কাঙি্ক্ষত ফল প্রদান করতে পারবে না। কারণ তার পরিকল্পনায় ত্রুটি ছিল। তাই সার্বিক দিক বিবেচনা শেষে নিশ্চিতভাবেই বলা যায় যে, মরিয়ম রহমানের পরিকল্পনানুযায়ী গৃহীত কার্যক্রম তাকে কখনই কাঙি্ক্ষত ফল দিবে না।

৭. আবু সালেহ ও রায়না দম্পতি তাদের বাড়ির আসবাবপত্র পরিবর্তন করে বাড়িকে নতুন করে সাজানোর পরিকল্পনা করল। পূর্বে তারা একবার এ ধরনের কাজ করতে গিয়ে নানা সমস্যার সম্মুখীন হয়েছিল। পূর্বের মতো সমস্যা যেন আর সৃষ্টি না হয় সেজন্য তারা আগের সমস্যাগুলোকে মাথায় রেখে নির্ভুলভাবে কাজ করার চেষ্টা করতে লাগল।
ক. ভবিষ্যৎ কার্যপদ্ধতি সম্পর্কে অনুমান করা যায় কী থেকে?
খ. পরিকল্পনা মিতব্যয়িতা অর্জনে সাহায্য করে কীভাবে?
গ. উদ্দীপকের দম্পতি পরিকল্পনার কোন নিয়মটিকে অনুসরণ করার চেষ্টা করেছে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকের দম্পতির পরিকল্পনাকে সফল করতে তাদেরকে আরও অনেক 'দিক মাথায় রেখে কাজ করতে হবে- বিশ্লেষণ কর।

৭ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. ভবিষ্যৎ কার্যপদ্ধতি সম্পর্কে অনুমান করা যায় পরিকল্পনা থেকে।

খ. পরিকল্পনার মাধ্যমে পরিমিত অর্থ ও সময় ব্যয়ে সফল হওয়া যায় বলে এটি মিতব্যয়িতা অর্জনে সাহায্য করে। পরিকল্পনা হলো সকল কাজের ভিত্তি। যেকোনো কাজ শুরু করার পূর্বেই যদি পরিকল্পনা করে নেওয়া যায় তবে যেকোনো কাজ সহজ হয়। পরিকল্পনামাফিকভাবে কাজ করলে পরিমিত অর্থ ও সময় ব্যয়ে পরিকল্পনা কার্যকর করা যায়। এর মাধ্যমে মানুষ সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহারের মাধ্যমে মিতব্যয়িতা অর্জনে সক্ষম হয়। এভাবেই পরিকল্পনা মিতব্যয়িতা অর্জনে সাহায্য করে।

গ. উদ্দীপকের দম্পতি পরিকল্পনার অতীত মূল্যায়ন নিয়মটিকে অনুসরণ করার চেষ্টা করেছে।
পরিকল্পনার বেশকিছু নিয়ম রয়েছে। যেকোনো কাজের পূর্বে পরিকল্পনা করতে হলে এসব নিয়ম অনুসরণ করতে হয়। অন্যথায় পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজে বাধার সৃষ্টি হয়ে থাকে। পরিকল্পনার এসব নিয়মের মধ্যে অন্যতম হলো অতীত মূল্যায়ন। উদ্দীপকের আবু সালেহ ও রায়না দম্পতি পরিকল্পনার এ নিয়মকেই অনুসরণ করেছে। তারা তাদের বাড়ির আসবাবপত্র 'পরিবর্তন করে বাড়িকে নতুন করে সাজানোর পরিকল্পনা করল। পূর্বে একবার এ ধরনের কাজ করতে গিয়ে তারা বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হয়েছিলেন। তাই এবার উক্ত সমস্যাগুলোকে মাথায় রেখে তারা নির্ভুলভাবে কাজ করার চেষ্টা করতে লাগল। তাদের গৃহীত এ পদক্ষেপে তারা অতীত মূল্যায়নকে গুরুত্ব প্রদান করেছে, যা পরিকল্পনার একটি অন্যতম নিয়ম। পরিকল্পনা অবশ্যই অতীত অভিজ্ঞতা ও যুক্তিসংগত কারণের ওপর ভিত্তি করে গ্রহণ করা উচিত। এতে পরিকল্পনায় ভুলত্রুটি কম থাকে এবং পরিকল্পনা ফলপ্রসূ হয়। উদ্দীপকের দম্পতি অতীতের ভুলগুলো মাথায় রেখে বর্তমান পরিকল্পনাকে বাস্তবায়নের চেষ্টা করার মাধ্যমে পরিকল্পনার এ অতীত মূল্যায়নের নিয়মটিকেই অনুসরণ করার চেষ্টা করেছে।

ঘ. উদ্দীপকের দম্পতির পরিকল্পনাকে সফল করতে তাদেরকে আরও অনেক দিক মাথায় রেখে কাজ করতে হবে।
কারণ, যেকোনো কাজ শুরু করার পূর্বে পরিকল্পনা গ্রহণ করা আবশ্যক। তবে পরিকল্পনাকে সফল করতে অবশ্যই বেশকিছু নিয়ম অনুসরণ করতে হয়। এর ব্যতিক্রম ঘটলে পরিকল্পনাকে সফল করা সম্ভব হয় না। উদ্দীপকের দম্পতির ক্ষেত্রেও, এ বিষয়টি প্রযোজ্য।
উদ্দীপকে দেখা যায়, আবু সালেহ ও রায়না দম্পতি আসবাবপত্র পরিবর্তন করে বাড়িকে নতুন করে সাজানোর পরিকল্পনা করেছে। এ কাজ করতে গিয়ে পূর্বে তারা নানা সমস্যায় পড়েছিলেন। এসব সমস্যাকে মাথায় রেখেই তারা বর্তমানে পরিকল্পনাকে সফল করতে প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। তাদের এ সচেতনতা পরিকল্পনার অতীত মূল্যায়নের নিয়মটিকে প্রতিফলিত করছে। তবে তাদেরকে পরিকল্পনা সফল করতে হলে অন্যান্য আরও অনেক বিষয় মাথায় রাখতে হবে। কেননা, পরিকল্পনার আরও অনেক নিয়ম রয়েছে। এসব নিয়মের মধ্যে রয়েছে- সুস্পষ্ট লক্ষ্য নির্ধারণ, সহজবোধ্যতা, উত্তম বিকল্প গ্রহণ, মতামত যাচাই, সদস্যদের মধ্যে সুসম্পর্ক, বাস্তবমুখী, স্বল্প ব্যয়সাপেক্ষ ইত্যাদি। উদ্দীপকের আবু সালেহ ও রায়না দম্পতিকে এসব বিষয়ের দিকেও খেয়াল রেখে কাজ করতে হবে। তবেই তারা তাদের পরিকল্পনাকে সফল রূপ দিতে সক্ষম হবে।
তাই সার্বিক দিক বিবেচনায় এবং উপরিউক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়, প্রশ্নের মন্তব্যটি যথার্থ ও সঠিক।

৮. কণিকাদের যৌথ পরিবার। তাদের পরিবারে সদস্যসংখ্যা ২০ জন। প্রতি শুক্রবার তারা সবাই মিলে বাড়ির উঠান, কলতলা, ছাদ ইত্যাদি জায়গা পরিষ্কার করে। প্রতিবারই একেকজন করে দায়িত্ব নিয়ে কাজ করায়। এবার দায়িত্ব পড়াল কণিকার ওপর। কণিকা কাজের দায়িত্ব নিয়ে বেশ চিন্তায় পড়ে গেল।
ক. সংগঠন প্রক্রিয়ার প্রথম পদক্ষেপ কী?
খ. সংগঠন বলতে কী বোঝায়?
গ. কণিকা কাজের সংগঠন প্রক্রিয়া কীভাবে পরিচালনা করতে পারে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. কণিকার সঠিক সংগঠন প্রক্রিয়াই তার পরিকল্পনাকে সফল করতে পারে বিশ্লেষণ কর।

৮ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. সংগঠন প্রক্রিয়ার প্রথম পদক্ষেপ হলো লক্ষ্য সম্পর্ক সঠিক ধারণা লাভ করা।

খ. সাধারণ অর্থে সংগঠন বলতে বোঝায় কোনো বিশেষ উদ্দেশ্যে একত্রিত হয়ে কাজ করা। এটি এমন একটি পদ্ধতি, যা একই লক্ষ্য অর্জনের জন্য কতিপয় সহযোগী ব্যক্তির মধ্যে দায়িত্ব বণ্টন করে, পরস্পরের মধ্যে সম্পর্ক তৈরি করে এবং তাদের কার্যকলাপকে একই সূত্রে আবদ্ধ করে। সংগঠন কাঠামো যদি শক্তিশালী হয়, তবে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন, উপায় ও উপকরণের কার্যকর ব্যবহার করা সম্ভব হয়। কোনো পরিকল্পনা যখন বেশকিছু মানুষ একত্রে সম্পাদন করে তখন সংগঠনের প্রয়োজন হয়। আর সংগঠন প্রক্রিয়া পরিচালিত হয় বেশকিছু পদক্ষেপের মাধ্যমে।

গ. কণিকা বেশকিছু প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে তার কাজের সংগঠন প্রক্রিয়া পরিচালনা করতে পারে।
সংগঠন বলতে বোঝায় কোনো বিশেষ উদ্দেশ্যে একত্রিত হয়ে কাজ করাকে। তবে সংগঠন প্রক্রিয়াকে সফল করতে হলে বেশকিছু পদক্ষেপের সফল প্রয়োগ করা আবশ্যক। কণিকা যদি এ পন্থা, অবলম্বন করে তবে তার সংগঠন প্রক্রিয়া পরিচালনা করা সহজ হবে। উদ্দীপকের কণিকা যৌথ পরিবারে বসবাস করে। তাদের পরিবারের সদস্যসংখ্যা হলো ২০ জন। প্রতি শুক্রবার তারা সবাই মিলে বাড়ির উঠান, কলতলা, ছাদ ইত্যাদি জায়গা পরিষ্কার করে। প্রতিবারই একেকজন করে দায়িত্ব নিয়ে কাজ করায়। এবার দায়িত্ব পড়াল কণিকার ওপর। কণিকা বেশকিছু পদক্ষেপের পর্যায়ক্রমিক প্রয়োগের মাধ্যমে তার সংগঠন প্রক্রিয়া পরিচালনা করতে পারে। এক্ষেত্রে কণিকাকে প্রথমেই তার লক্ষ্য সম্পর্কে সঠিক ধারণা লাভ করতে হবে। এরপর তাকে নির্দিষ্ট করতে হবে লক্ষ্য অর্জনের জন্য প্রয়োজনীয় কার্যাবলির। এরপর কাজের প্রকৃতি অনুযায়ী তাকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করে দিতে হবে। এছাড়াও তাকে আরও বেশ কয়েকটি বিষয় খেয়াল রাখতে হবে। যেমন কাজের দায়িত্ব ও কর্তৃত্ব সঠিকভাবে বণ্টন করা, কাজ অনুযায়ী উপায়, উপকরণ সংগ্রহ ও বণ্টন করা এবং মানবীয় ও বস্তুবাচক সম্পদ এবং কাজের বিভিন্ন বিভাগের মাঝে সম্পর্ক স্থাপন করার পাশাপাশি উপরিভাগের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক বজায় রাখা।
পরিশেষে বলা যায়, এসব পদক্ষেপ পর্যায়ক্রমিকভাবে অনুসরণ করার মাধ্যমেই কণিকা তার কাজের সংগঠন প্রক্রিয়াকে পরিচালনা করতে পারে।

ঘ. পরিকল্পনাকে বাস্তবায়ন করতে হলে সংগঠন কাঠামো শক্তিশালী হওয়া আবশ্যক বিধায় কণিকার সঠিক সংগঠন প্রক্রিয়াই তার পরিকল্পনাকে সফল করতে পারে।
কোনো পরিকল্পনা যখন বেশকিছু মানুষ একত্রে সম্পাদন করে তখনই সংগঠনের প্রয়োজন হয়। সংগঠন কাঠামো শক্তিশালী হলে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন, উপায় ও উপকরণের কার্যকর ব্যবহার করা সম্ভব হয়। উদ্দীপকের কণিকার ক্ষেত্রেও এ বিষয়টি প্রযোজ্য। যৌথ পরিবারের সদস্য কণিকা। ২০ সদস্যবিশিষ্ট তার পরিবারে প্রতি শুক্রবার সবাই মিলে উঠান, কলতলা, ছাদ ইত্যাদি জায়গা পরিষ্কার করে। একেকবার একেকজন দায়িত্ব নিয়ে এ কাজ করায়। এবার কণিকার ওপর দায়িত্ব পড়াল। সংগঠন প্রক্রিয়ায় বেশকিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হয়। এগুলো অনুসরণ করলে কার্যকর সংগঠন গড়ে তোলা যায়। যেকোনো কাজ শুরুর পূর্বে পরিকল্পনা করা যেমন আবশ্যক তেমনি পরিকল্পনাকে বাস্তবায়িত করতে হলে সংগঠন প্রক্রিয়া শক্তিশালী হওয়াও আবশ্যক। সংগঠন প্রক্রিয়া শক্তিশালী ও যথাযথ হলে যেকোনো পরিকল্পনাই সফল হতে বাধ্য। উদ্দীপকের কণিকাও যদি সংগঠন প্রক্রিয়াকে শক্তিশালী করতে পারে তবে তার পরিকল্পনা ফলপ্রসূ হবে। কিন্তু এক্ষেত্রে তাকে সংগঠনের পূর্বে গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপকে যথাযথভাবে প্রয়োগ করতে হবে। তার দক্ষ সংগঠন কাঠামোই তার পরিকল্পনাকে সফল রূপ দিবে। কেননা, পরিকল্পনার সফলতার পূর্বশর্তই হলো উপযুক্ত সংগঠন প্রক্রিয়া গড়ে তোলা। এর দ্বারাই কাজে সফলতা আনা সহজ হয়।
তাই সার্বিক দিক বিবেচনা শেষে বলা যায়, কণিকার সংগঠন প্রক্রিয়ার ওপরই তার পরিকল্পনার সফলতা নির্ভর করে। তাই প্রশ্নের মন্তব্যটি অত্যন্ত যথার্থ।

৯. সরকারি চাকরিজীবী আনোয়ার পারভেজকে বিভিন্ন জায়গায় বদলি হতে হয়। এবার তাকে ঢাকা থেকে বদলি হয়ে রাজশাহী যেতে হবে। পরিবারের সবাইকে নিয়ে এত দূরের পথ পাড়ি দেওয়া এবং বাড়ির বিভিন্ন ভারী আসবাবপত্র নিয়ে যাতায়াত করার ব্যাপারে আনোয়ার সাহেব দুশ্চিন্তায় পড়ালেন। তার স্ত্রী সবাইকে যার যার কাজ করতে নির্দেশ দিলেন। কিন্তু সবাই কাজে এলোমেলো করল কারণ তাদের নির্দেশনা ভালোভাবে মনে ছিল না।
ক. নির্দেশনা প্রক্রিয়ার প্রধান কাজ কী?
খ. নির্দেশনায় ধারাবাহিকতা থাকা জরুরি কেন?
গ. আনোয়ার সাহেবের স্ত্রীর নির্দেশনায় কোন বৈশিষ্ট্যটি অনুপস্থিত থাকায় কার্যক্রমে সমস্যা হলো? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. আনোয়ার সাহেবের স্ত্রীকে উত্তম নির্দেশনা দেওয়ার জন্য যেসব দিক অনুসরণ করতে হবে সেগুলো উপস্থাপন কর।

৯ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. নির্দেশনা প্রক্রিয়ার প্রধান কাজ হলো আদেশ বা নির্দেশ প্রদান করা।

খ. কর্মে নিয়োজিত ব্যক্তি যেন নির্দেশনার অভাববোধ না করে তাই নির্দেশনায় ধারাবাহিকতা থাকতে হবে। নির্দেশনা বলতে বোঝায় কর্মে নিয়োজিত ব্যক্তিদের কার্য সম্বন্ধে অবহিতকরণ, আদেশ-নির্দেশ প্রদান, পরামর্শ দান ইত্যাদিকে। কার্যক্ষেত্রে নির্দেশনায় অবশ্যই ধারাবাহিকতা থাকতে হবে। নির্দেশনা অবশ্যই সময়মতো দিতে হবে যেন কর্মে নিয়োজিত ব্যক্তি নির্দেশনার অভাববোধ না করে। আর এ কারণেই নির্দেশনায় ধারাবাহিকতা থাকা জরুরি।

গ. আনোয়ার সাহেবের স্ত্রীর নির্দেশনায় লিখিত নির্দেশনা বৈশিষ্ট্যটি অনুপস্থিত থাকায় কার্যক্রমে সমস্যা সৃষ্টি হলো।
কার্য যথাযথভাবে সম্পাদনের জন্য উত্তম নির্দেশনা অত্যন্ত আবশ্যক। তবে কর্মে নিয়োজিত ব্যক্তিকে অবশ্যই যথাযথভাবে নির্দেশনা প্রদান করতে হবে যেন কার্যক্ষেত্রে কোনো সমস্যা সৃষ্টি না হয়। উত্তম নির্দেশনার জন্য তাই বেশকিছু বৈশিষ্ট্য লক্ষ করা যায়। কিন্তু এসব বৈশিষ্ট্যের অভাব হলেই নির্দেশনা তার লক্ষ্য পূরণে বাধাপ্রাপ্ত হয়। উদ্দীপকে এমনটাই লক্ষ করা যায়। উদ্দীপকের আনোয়ার পারভেজ একজন সরকারি চাকরিজীবী। চাকরিসূত্রেই তাকে বিভিন্ন জায়গায় বদলি হতে হয়। এবার তাকে ঢাকা থেকে বদলি হয়ে রাজশাহী যেতে হবে। পরিবারের সবাইকে নিয়ে এত দূরের পথ পাড়ি দেওয়া, বাড়ির বিভিন্ন ভারী আসবাবপত্র নিয়ে যাতায়াত করা এসব ব্যাপার নিয়ে আনোয়ার সাহেব দুশ্চিন্তায় পড়ালেন। আনোয়ার সাহেবের স্ত্রী সবাইকে যার যার কাজের নির্দেশনা দিলেও সবার সেগুলো ভালোভাবে মনে না থাকায় কাজ এলোমেলো হলো। উত্তম নির্দেশনার একটি বৈশিষ্ট্য হলো লিখিত নির্দেশনা। নির্দেশনা লিখিত হলেই ভালো হয়। মৌখিক নির্দেশনা অনেক সময় ভুলে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। উদ্দীপকের আনোয়ার সাহেবের স্ত্রী মৌখিক নির্দেশনা দেওয়ার কারণেই কাজে বিপত্তি ঘটল।
পরিশেষে বলা যায়, তার নির্দেশনায় লিখিত নির্দেশনার বৈশিষ্ট্যটি অনুপস্থিত থাকার কারণেই কার্যক্রমে সমস্যা হলো।

ঘ. আনোয়ার সাহেবের স্ত্রীকে উত্তম নির্দেশনা দেওয়ার জন্য বেশ কয়েকটি দিক অনুসরণ করতে হবে।
নির্দেশনা বলতে বোঝায় কর্মে নিয়োজিত ব্যক্তিদের কার্য সম্বন্ধে অবহিতকরণ, আদেশ-নির্দেশ এবং পরামর্শদান করা। কার্য সম্পাদনকালে যদি যথার্থ নির্দেশনা না হয় তবে লক্ষ্যার্জন ব্যাহত হয়। তবে নির্দেশনাকে অবশ্যই উত্তম হতে হবে। আর উত্তম নির্দেশনার জন্য বেশ কয়েকটি বিষয় বিবেচনা করাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। উদ্দীপকের আনোয়ার সাহেবের স্ত্রীকেও এসব বিষয় মাথায় রেখে উত্তম নির্দেশকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে হবে। উদ্দীপকে দেখা যায়, আনোয়ার সাহেবের স্ত্রী' লিখিত নির্দেশনা না দেওয়ার কারণেই কার্যক্রমে ব্যাঘাত ঘটেছে। কিন্তু লক্ষ্য অর্জনে সফল হতে হলে অবশ্যই উত্তম নির্দেশনা প্রদান করতে হবে। আর এক্ষেত্রে আনোয়ার সাহেবের স্ত্রীকে যেসব বিষয় অনুসরণ করতে হবে সেগুলো হলো- যুক্তিসংগত নির্দেশনা প্রদান করা, পূর্ণাঙ্গ নির্দেশনা দেওয়া, নির্দেশনার মূলকথাগুলো সুন্দরভাবে উপস্থাপন করা, স্পষ্ট ও সহজবোধ্য নির্দেশনা দেওয়া, ধারাবাহিকতা বজায় রেখে নির্দেশনা দেওয়া যেন কর্মে নিয়োজিত ব্যক্তি নির্দেশনার অভাববোধ না করে, নির্দেশনায় পরিবর্তিত পরিস্থিতির সঙ্গে সংহতি বিধানের ব্যবস্থা করা এবং লিখিত নির্দেশনা প্রদান করা। এসব দিক অনুসরণ করলেই উদ্দীপকের আনোয়ার সাহেবের স্ত্রী উত্তম নির্দেশকের মতো ভূমিকা পালন করতে পারবে।
তাই আনোয়ার সাহেবের স্ত্রীকে উত্তম নির্দেশনার জন্য এসব দিকই অনুসরণ করতে হবে।

১০. গ্রামে নতুন ঘর তুলছেন ইলিয়াস সাহেব। কর্মক্ষেত্র ছেড়ে গ্রামে থেকে কাজ দেখা তার পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না। তিনি সপ্তাহে একবার করে গিয়ে কাজের সার্বিক অবস্থা দেখেন। কিন্তু তার মনমতো কাজ হচ্ছে না। এদিকে তার সময় ও অর্থেরও অপচয় হচ্ছে।
ক. Deacon-এর মতে নিয়ন্ত্রণ কী?
খ. বাস্তবায়ন লক্ষ্য অর্জনে কীভাবে ভূমিকা রাখে?
গ. ইলিয়াস সাহেবের সমস্যা সমাধানে নিয়ন্ত্রণ কীভাবে ভূমিকা রাখতে পারে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. ইলিয়াস সাহেব নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমেই যথাযথ ফল লাভ করতে পারেন- বিশ্লেষণ কর।

১০ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. Deacon -এর মতে নিয়ন্ত্রণ মানে পরিকল্পিত আচরণের সুবন্দোবস্ত করা।

খ. বাস্তবায়ন লক্ষ্য অর্জনে প্রত্যক্ষভাবে ভূমিকা রাখে। পরিকল্পনা ও সুচারুরূপে পরিচালিত করে লক্ষ্য অর্জন করতে বাস্তবায়নের গুরুত্ব অপরিসীম। লক্ষ্যকে অর্জন করতে গৃহীত পদক্ষেপের বাস্তবায়ন করা অত্যধিক গুরুত্বপূর্ণ। কাজটি যখন বাস্তবায়ন হয় তখনই ব্যবস্থাপনার অন্যান্য স্তরগুলো প্রয়োগ করা যায়। এভাবেই লক্ষ্য অর্জনে বাস্তবায়ন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

গ. ইলিয়াস সাহেবের সমস্যা সমাধানে নিয়ন্ত্রণ প্রত্যক্ষভাবে ভূমিকা রাখতে পারে।
ব্যবস্থাপনার মৌলিক কার্যাবলির মধ্যে নিয়ন্ত্রণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। গৃহীত পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ যখন বাস্তবায়িত হয় তখনই প্রয়োজন হয় নিয়ন্ত্রণের। গৃহীত পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ সম্পাদিত হচ্ছে কিনা তা দেখাই নিয়ন্ত্রণের কাজ। আর এ কারণেই উদ্দীপকের ইলিয়াস সাহেবের সমস্যা সমাধানে নিয়ন্ত্রণ ভূমিকা রাখতে পারে। উদ্দীপকে দেখা যায়, ইলিয়াস সাহেব গ্রামে নতুন ঘর তুলছেন। কিন্তু কর্মক্ষেত্র ছেড়ে গ্রামে থেকে কার্যাবলি পর্যবেক্ষণ করা তার পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না। তিনি সপ্তাহে একবার করে গিয়ে কাজের সার্বিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে আসেন। কিন্তু তার কাজ মনমতো হচ্ছে না এবং এর পাশাপাশি তার সময় ও অর্থেরও অপচয় হচ্ছে। ইলিয়াস সাহেবের এ অবস্থায় নিয়ন্ত্রণ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। তিনি যদি তার পরিকল্পনাকে বাস্তবায়িত করতে চান তবে তাকে অবশ্যই কাজে নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখতে হবে। এতে তার পরিচালিত কাজে শ্রমিকদের মধ্যে ফাঁকি দেওয়ার প্রবণতা নিয়ন্ত্রণে আসবে এবং ইলিয়াস সাহেবও চাহিদানুযায়ী কাজ পাবেন। এর পাশাপাশি কার্যক্ষেত্র নিয়ন্ত্রণে থাকায় ইলিয়াস সাহেবের সময় ও অর্থের অপচয়ও হবে না। এভাবেই ইলিয়াস সাহেবের সমস্যা সমাধানে নিয়ন্ত্রণ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

ঘ. ইলিয়াস সাহেব কার্যক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণ আনার মাধ্যমেই তার সমস্যার সমাধান করে যথাযথ ফললাভ করতে পারেন।
গৃহীত পরিকল্পনা বা মান অনুযায়ী কাজ সম্পাদিত হচ্ছে কিনা তা দেখাই হলো নিয়ন্ত্রণ। কার্যক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা থাকা অত্যন্ত জরুরি। অন্যথায় ব্যক্তি কার্যক্ষেত্র থেকে কাঙি্ক্ষত ফললাভ করতে পারে না। এর মাধ্যমেই কাজের যথাযথ ফললাভ করা যায়। উদ্দীপকের ইলিয়াস সাহেব গ্রামে নতুন ঘর তুলছেন। কিন্তু কর্মক্ষেত্র ছেড়ে গ্রামে থেকে তার পক্ষে বাড়ির কাজ পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব নয়। তিনি সপ্তাহে একবার করে গিয়ে কাজের অবস্থা দেখে আসেন। কিন্তু কাজ থেকে প্রাপ্ত ফলাফল সম্পর্কে তিনি সন্তুষ্ট হতে পারেন না। এর ওপর আবার তার সময় ও অর্থেরও অপচয় ঘটছে। উদ্দীপকের ইলিয়াস সাহেবের কার্যপ্রণালিতে নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার অভাব লক্ষ করা যায়। তিনি যদি নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা গ্রহণে শক্ত হতেন তবে তিনি দূরে থেকেও যথাযথভাবে বাড়ির কাজ পরিচালনা করতে পারতেন। এতে তার পক্ষে কার্যাবলির ফাঁকিরোধ করা সম্ভব হতো এবং তিনি কার্যক্ষেত্রে কাঙি্ক্ষত ফললাভ করতে পারতেন। সময় ও অর্থের অপচয়রোধ হওয়ার পাশাপাশি কাজ যথাযথভাবে সম্পাদিত হওয়ায় সম্ভব হতো। সর্বোপরি, ইলিয়াস সাহেব কার্যক্ষেত্র থেকে যথাযথ ফল পেতেন। নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা কার্য পরিচালনার বিভিন্ন পর্যায়ে আরোপ করলে যথাযথ ফললাভ সম্ভব হয়, যা ইলিয়াস সাহেবও পেতেন। তাই প্রশ্নের মন্তব্যটি সঠিক ও যৌক্তিক বলে বিবেচিত হয়।
Share:

0 Comments:

Post a Comment