HSC গার্হস্থ্য বিজ্ঞান ১ম পত্র (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর pdf download অধ্যায় ১০

HSC গার্হস্থ্য বিজ্ঞান ১ম পত্র (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর pdf download
এইচএসসি পরীক্ষার পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি
HSC Home Science 1st Paper Srijonshil question and answer pdf download.

উচ্চ মাধ্যমিক

গার্হস্থ্য বিজ্ঞান
প্রথম পত্র

সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
১০ম অধ্যায়

HSC Home Science 1st Paper
Srijonshil
Question and Answer pdf download

১. প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফলে প্রতিবছর আমাদের জান ও মালের অনেক ক্ষতি সাধন হয়। মূলত পরিবেশ দূষণই এর প্রধান কারণ। মানুষ বিভিন্নভাবে পরিবেশ দূষণ করছে। শুধু সরকার নয় জনগণকেও প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় এগিয়ে আসতে হবে।
ক. দুর্যোগ কাকে বলে?
খ. উচ্চ শব্দে মাইক বাজানো কী ধরনের দূষণ- ব্যাখ্যা কর।
গ. পরিবেশ দূষণের কারণগুলো ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকের আলোকে শেষে বাক্যটি বিশ্লেষণ কর।

১ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. প্রাকৃতি বা মানবসৃষ্ট কারণে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হলে এবং পরিবেশে ভারসাম্য নষ্ট হলে তাকে দুর্যোগ বলে।

খ. উচ্চ শব্দে মাইক বাজানো শব্দ দূষণের অন্তর্ভুক্ত। বিভিন্ন অনুষ্ঠান, মিটিং মিছিলে উচ্চ শব্দে মাইক বাজানো হয়ে থাকে; যা শব্দ দূষণের অন্যতম প্রধান কারণ। শব্দের তীব্রতা বেড়ে গেলে মানুষের জন্য বিরক্তিকর পরিবেশের সৃষ্টি হয়। এ তীব্র শব্দ অসহনীয় পর্যায়ে মানুষের শরীরবৃত্তীয় ক্ষতিসাধন করে। এমন কি মানুষের শ্রবণ শক্তি হ্রাস করে।

গ. পরিবেশ দূষণের নানাবিধ কারণ রয়েছে।
মানুষ জীবনযাত্রাকে সহজ ও আরামদায়ক করার জন্য নিজের সুবিধামতো ও অপরিকল্পিতভাবে বহুমল ভবন নির্মাণ, ভূগর্ভের পানি উত্তোলন ও শিল্পকারখানা তৈরি করছে, বিভিন্ন বৈদ্দ্যুতিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করছে, যা পক্ষান্তরে পরিবেশ দূষণের কারণ হয়ে জনজীবনে দুভোর্গ ডেকে আনছে। যেসব কারণে পরিবেশ দূষণ ঘটে তা নিচে আলোচনা করা হলো-
• ক্রমাগত জনসংখ্যা বৃদ্ধিতে প্রাকৃতিক ভারসাম্যহীনতা ও পরিবেশ দূষণ মারাত্মক আকার ধারণ করছে। বর্ধিত জনসংখ্যার প্রয়োজনে বনজঙ্গল, গাছপালা কেটে বসতবাড়ি, চাষের জমি তৈরি করা হয়। গাছপালা কাটার ফলে বৃষ্টিপাত কমে যায়, খরার প্রকোপ বৃদ্ধি পায়। তাছাড়া জনসংখ্যা বৃদ্ধিতে বাসস্থান, যানবাহন, শিল্পকারখানা সবকিছুর চাহিদা বৃদ্ধি পায়। সেই সাথে বৃদ্ধি পায় বিভিন্ন ধরনের দূষণ।
• অপরিকল্পিত নগরায়ণ ও শিল্পায়নের ফলে পরিবশেদূষণ ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। কলকারখানা ও গাড়ির কালো ধোঁয়া বায়ু দূষণের অন্যতম কারণ বলে চিহ্নিত। বাস, ট্রাক ও অন্যান্য গাড়ির হর্ণ থেকে শব্দ দূষণ হচ্ছে। আবার নদীর পানিতে কলকারখানার আবর্জনা মিশে নদীর পানি দূষিত হচ্ছে। নগরায়ণের ফলে মানুষ কাজের আশায় গ্রাম ছেড়ে শহরে এসে বসবাস করছে। শহরে অধিক জনসংখ্যার ফলে আবাসন সমস্যা দেখা দিচ্ছে, বসিত্ম গড়ে উঠছে। বসিত্মতে বিশুদ্ধ পানি ও স্যানিটেশন সমস্যা ও ময়লা আবর্জনা ফেলার অব্যবস্থা ও সচেতনতার অভাব পরিবেশদূষণ ঘটাচ্ছে।
• পরিবেশ দূষণের আরেকটি অন্যতম কারণ হলো বনজ সম্পদ ধ্বংস। নগরায়ন, শিল্পায়ন, জ্বালানি সংগ্রহ ও কৃষিকাজ সম্প্রসারণে প্রতিনিয়ত বনজ সম্পদ ধ্বংস হচ্ছে। ফলে ভূমিক্ষয় হয়ে প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে।
• অপরিকল্পিত বর্জ্য ও পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থার অব্যবস্থাপনা মাটি ও পানি দূষিত করে পরিবেশ দূষণের মাত্রা বাড়িয়ে দিচ্ছে। এছাড়া নদী-নালা, খাল-বিল ভরাট, কোনো নিয়মনীতি ছাড়াই ইটভাটা গড়ে তোলা, অচল ও অধিক যানবাহন ব্যবস্থা, অপরিকল্পিতভাবে রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহার প্রভৃতি মারাত্মকভাবে পরিবেশকে দূষিত করছে।

ঘ. দুর্যোগ প্রস্তুতি হচ্ছে এমন কিছু পদক্ষেপ যেখানে কোনো দুর্ঘটনার ভয়াবহতা সচেতনতাভাবে মোকাবিলা করার লক্ষ্যে মানসিক, শারীরিক, সাংগঠনিক, আর্থিক ও প্রশাসনিকভাবে সতর্কতার সঙ্গে তৈরি থাকা। এক্ষেত্রে আমি মনে করি, শুধু সরকার নয় জনগণকেও প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় এগিয়ে আসতে হবে।
দুর্যোগকালীন কিছু সতর্কতা অবলম্বন করলে দুর্যোগের ক্ষয়ক্ষতি কিছুটা কমিয়ে আনা সম্ভব। ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বাভাস পাবার সঙ্গে সঙ্গে খাবার পানি কলসিতে ভরে ভালো করে ঢেকে দিয়ে পলিথিন দিয়ে বেঁধে এবং সেই সাথে কিছু শুকনো খাবার যেমন : চিড়া, মুড়ি, গুড় একটি পাত্রে ভরে ভালো করে পলিথিন বা প্লাষ্টিক ব্যাগে মুড়ে মাটির নিচে পুতে রাখতে হবে। বন্যা শুরু হলে নিয়মিতভাবে বছরের যে সময় ঘূর্ণিঝড় হওয়ার আশঙ্কা থাকে সে সময় পানি বাড়া বা কমা পর্যবেক্ষণ কিংবা এ সম্পর্কে খোঁজ-খবর রাখতে হবে। গবাদি পশুর নিরাপদ আশ্রয়ের ব্যবস্থা করতে হবে। বন্যার পানিতে বাড়িঘর ডোবার পূর্বে খাদ্য ও প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সরিয়ে ফেলতে হবে। বাড়িঘর ডুবে গেলে নিকটস্থ আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিতে হবে। ভূমিকম্প হলে তাড়াহুড়া না করে দরজার চৌকাঠের নিচে, টেবিল বা খাটের নিচে ঢুকতে হবে। পরে আসেত্ম ধীরে বের হতে হবে। দুর্যোগকালীন সময়ে বিভিন্ন রোগব্যাধি বিশেষ করে ডায়রিয়ার প্রকোপ সম্পর্কে সতর্ক থাকতে হবে। আশ্রয়কেন্দ্রের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সামাজিকভাবে উদ্দ্যোগী হতে হবে। সর্বোপরি, সকলে মিলে দুর্যোগ মোকাবিলা করতে হবে। নিজের সুযোগ, সুবিধাকে বড় করে না দেখে সবার প্রতি সহানুভূতিশীল ও মানবিক আচরণ করতে হবে।

২. ঘূর্ণিঝড়ের ফলে সমুদ্রের পানি ফুলে ওঠে উপকূল-তীরবর্তী অঞ্চল ভেসে গেছে। সেখানকার ঘরবাড়ি, দোকান, রাস্তা, বৈদ্যুতিক সংযোগ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। রেডিওতে আগেই সতর্ক সংকেত দেওয়ার ফলে প্রাণহানি না ঘটলেও পরবর্তীতে খাদ্যাভাব ও বিশুদ্ধ পানির অভাবে জনজীবনে দুর্ভোগের শেষ নেই।
ক. খরা কাকে বলে?
খ. ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা পরিবেশ দূষণের অন্যতম কারণ- বুঝিয়ে লেখ।
গ. উদ্দীপকে কোন ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগের কথা বলা হয়েছে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত উপকূল অঞ্চলের দুর্যোগ-পূর্ববর্তী ও পরবর্তী ব্যবস্থাপনার সঠিকতা নিরূপণ কর।

২ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. দীর্ঘ সময় বৃষ্টি না হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে যে অবস্থার সৃষ্টি হয় তাকে খরা বলে।

খ. ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা পরিবেশ দূষণের অন্যতম বিষয়টি যথার্থ কারণ। কারণ ক্রমাগত জনসংখ্যা বৃদ্ধিতে প্রাকৃতিক ভারসাম্যহীনতা ও পরিবেশ দূষণ মারাত্মক আকার ধারণ করে। বর্ধিত জনসংখ্যার প্রয়োজনে বনজঙ্গল, গাছপালা কেটে চাষের জমি তৈরি করা হয় বা বসতবাড়ি নির্মাণ করা হয়। গাছপালা কাটার ফলে বৃষ্টিপাত কমে যায়, খরার প্রকোপ বৃদ্ধি পায়। অধিক জনসংখ্যা পরিবেশের ওপর অধিক চাপ সৃষ্টি করছে। জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে খাদ্য, বাসস্থান, যানবাহন, শিল্পকারখানা সবকিছুর চাহিদা বৃদ্ধি পায়। অধিক খাদ্য উৎপাদন করতে অধিক কীটনাশক ও সার ব্যবহার, ভূগর্ভের পানি উত্তোলনের ফলে মাটি দূষণ হচ্ছে।

গ. উদ্দীপকে যে ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগের কথা বলা হয়েছে সেটি হচ্ছে জলোচ্ছ্বাস।
ঘূর্ণিঝড় যখন প্রবলবেগে স্থলভাগের দিকে ধেয়ে আসে, তখন সমুদ্রের পানি ফুলে ওঠে ঝড়ের সাথে স্থলভাগে আঘাত হানে। ভূমিকম্পের ফলেও জলোচ্ছ্বাস হতে পারে। তখন তাকে সুনামি বলে। জলোচ্ছ্বাস হলে পানির উচ্চতা ১২ ফুট পর্যন্ত উঠতে পারে। ঘূর্ণিঝড়ের ফলে যে ধ্বংসযজ্ঞের সৃষ্টি হয় জলোচ্ছ্বাস তা ভাসিয়ে নিয়ে যায়। জলোচ্ছ্বাসের ঘূর্ণিঝড়, বন্যা প্রভৃতি প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রতিবছরই আমাদের জীবন, সম্পদ ও পরিবেশের বিপুল ক্ষতিসাধন করে। জলোচ্ছ্বাস ঘরবাড়ি, দোকান ভাসিয়ে নিয়ে যায়। এসব প্রাকৃতিক দুর্যোগ হওয়ার অন্যতম কারণ হলো আমাদের দেশের ভৌগোলিক অবস্থান। ভৌগোলিক বাস্তবতার কারণে আমাদের প্রাকৃতিক দুর্যোগের মধ্যেই বসবাস করতে হয়। প্রাকৃতিক দুর্যোগ আকস্মিকভাবে ঘটে।

ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত উপকূল অঞ্চলের দুর্যোগ-পূর্ববর্তী ও দুর্যোগ- পরবর্তী সঠিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে দুর্যোগের ক্ষয়ক্ষতি কিছুটা কমিয়ে আনা সম্ভব।
দুর্যোগের পূর্বপ্রস্তুতি হিসেবে রেডিও, টেলিভিশন ও স্থানীয়ভাবে মাইক ব্যবহার করে দুর্যোগের পূর্বাভাস জানিয়ে দেওয়া। জনগণকে আশ্রয়কেন্দ্রে আসতে উদ্বুদ্ধ করা, ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় শুকনা খাবার, পানি, মোম, দিয়াশলাই ইত্যাদি নিরাপদভাবে সংরক্ষণের জন্য তথ্য প্রদান করা। দুর্যোগ প্রতিরোধের জন্য টেকসই ঘরবাড়ি, ব্রিজ, বাঁধ, আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ করা ইত্যাদি। দুর্যোগ-পরবর্তী সময়ে সঠিক ব্যবস্থাপনা গ্রহণ করে জনগণকে উদ্ধার করা, ত্রাণ পৌঁছানো, আহতদের চিকিৎসাসেবা প্রদান করা, অবকাঠামো উন্নয়ন, বিভিন্ন রোগের উপদ্রব থেকে জনগণকে রক্ষা করা, দুর্যোগ-পরবর্তী অবস্থা মোকাবিলায় সমাজের সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। দুর্গতদের মাঝে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করতে হবে।

৩. মারিয়া সমুদ্র উপকূলবর্তী এলাকায় বাস করে। সম্প্রতি এখানে প্রচন্ড ঝড়ে সমুদ্রের পানি ফুলে ওঠে উপকূলে আঘাত হানে। এলাকায় মাইকিং ও রেডিও টিভি বার্তায় সতর্ক সংকেত ঘোষণা করা হয়। জনগণ আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ায় মৃত্যুর হার কমলেও গাছপালা, ঘরবাড়ি ও ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়। বর্তমানে দুর্যোগ কবলিত অঞ্চলে খাবারের অভাব ও তীব্র ডায়রিয়া দেখা দিয়েছে।
ক. ঘূর্ণিঝড় কী?
খ. ‘‘অধিক জনসংখ্যা পরিবেশ দূষণের অন্যতম কারণ"- ব্যাখ্যা কর।
গ. মারিয়ার এলাকায় দুর্যোগটি কী ধরনের? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকের আলোকে দুর্যোগ-পূর্ববর্তী ও দুর্যোগ- পরবর্তী ব্যবস্থাপনার যথার্থতা যুক্তিসহ বিশ্লেষণ কর।

৩ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. ঘূর্ণিঝড় হচ্ছে উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন বায়বীয় ঝড়। যা মারাত্মক ধ্বংসাত্মক হতে পারে।

খ. অধিক জনসংখ্যা পরিবেশ দূষণের অন্যতম কারণ। ক্রমাগত জনসংখ্যা বৃদ্ধিতে প্রাকৃতিক ভারসাম্যহীনতা ও পরিবেশ দূষণ মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। বর্ধিত জনসংখ্যার প্রয়োজনে, গাছপালা কেটে চাষের জমি তৈরি করা হয় বা বসতবাড়ি নির্মাণ করা হয়। গাছপালা কাটার ফলে বৃষ্টিপাত কমে যায়। খরার প্রকোপ বৃদ্ধি পায়। অধিক জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে খাদ্য, বাসস্থান, যানবাহন, শিল্পকারখানা সবকিছুর চাহিদা বৃদ্ধি পায়। অধিক খাদ্য উৎপাদন করতে অধিক কীটনাশক ও সার ব্যবহার, ভূগর্ভের পানি উত্তোলনের ফলে মৃত্তিকা দূষণ হচ্ছে।

গ. মারিয়ার এলাকার দুর্যোগটি হচ্ছে ঘূর্ণিঝড়।
আমাদের দেশে প্রতিবছর কিছু প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা দেয়। বাংলাদেশ, পৃথিবীর অন্যতম প্রাকৃতিক দুর্যোগের দেশ। প্রতিবছর, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, বন্যা, খরা ইত্যাদি প্রাকৃতিক দুর্যোগ আমাদের জীবন, সম্পদ ও পরিবেশের বিপুল ক্ষতি সাধন করে।
প্রাকৃতিক দুর্যোগের মধ্যে ঘূর্ণিঝড় অন্যতম। ঘূর্ণিঝরড়র উৎপত্তি হয় উষ্ণম-লীয় অঞ্চলে বিষুবরেখার দুই প্রান্তের শান্ত সমুদ্রে। ঘূর্ণিঝড় হচ্ছে উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন বায়বীয় ঝড়, যা মারাত্মক ধ্বংসাত্মক হতে পারে। প্রথমে সমুদ্রে লঘুচাপের সৃষ্টি হয় এবং পরে তা নিম্নচাপে পরিণত হয়ে ঘূর্ণিঝরড় রূপান্তরিত হয়। ঘূর্ণিঝড়কে নিম্নচাপ বা ডিপ্রেশান বলা হয়।
মারিয়া সমুদ্রে উপকূলবর্তী এলাকায় বাস করে। সম্প্রতি এখানে প্রচন্ড ঝড়ে গাছপালা, ঘরবাড়ি ও ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বর্তমানে সেখানে খাবারের অভাব ও তীব্র ডায়রিয়া দেখা দিয়েছে।

ঘ. দুর্যোগ-পূর্ববর্তী ও দুর্যোগ-পরবর্তী যথার্থ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে জীবন, সম্পদ ও পরিবেশকে বহুলাংশে রক্ষা করা সম্ভব।
দুর্যোগ-পূর্ব প্রস্তুতি বলতে দুর্যোগপূর্ব সময়ে দুর্যোগের ঝুঁকি কমানোর ব্যবস্থাপনাকে বোঝায়। উদ্দীপকে দেখা যায় যে, মাইকিং ও রেডিও টিভির বার্তায় সতর্ক সংকেত ঘোষণা করার ফলে জনগণ আশ্রয় কেন্দ্রে যেতে পেরেছে। এছাড়াও দুর্যোগের আগে শুকনা খাবার, পানি, মোম-দিয়াশলাই, ওষুধ ইত্যাদি নিরাপদভাবে সংরক্ষণ করতে হবে দুর্যোগ পরবর্তী ব্যবস্থাপনা দুর্যোগের ক্ষয়ক্ষতির ওপর নির্ভর করে। দুর্যোগপূর্ণ এলাকার জনগণকে উদ্ধার করা, ত্রাণ পৌছানো, আহতদের চিকিৎসাসেবা প্রদান করা, অবকাঠামো উন্নয়ন ইত্যাদি কার্যক্রম দ্রুত ও সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত করা।
উদ্দীপকে আমরা দেখতে পাই, দুর্যোগপূর্ব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে যেগুলো যথার্থ ছিল। কিন্তু দুর্যোগ পরবর্তী কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।

৪. আর্জিনা কলেজের দুর্যোগকালীন কর্মশালায় অংশ নিয়ে দুর্যোগকালীন সতর্কর্তা এবং এর পরবর্তী সময়ে ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে অনেক কিছু জানেন। হঠাৎ করে এলাকার জলোচ্ছ্বাস শুরু হওয়ায় তার পরিবার পূর্ব থেকেই ব্যবস্থা গ্রহণ করে। ফলে তাদের কোনো রকম সমস্যায় পড়াতে হয়নি। আর্জিনা বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে গিয়ে সেখানে আশ্রিতাদের সবাইকে দুর্যোগ পরবর্তীকালীন করণীয় বিষয় সম্পর্কে অবগত করেন।
ক. জাতীয় পরিবেশ নীতি বাস্তবায়নের দায়িত্ব কার?
খ. গ্রিন হাউস প্রতিক্রিয়া কীভাবে হয় ব্যাখ্যা কর।
গ. আর্জিনা বেগমের পরিবার কোনো সমস্যায় না পড়াার কারণ ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকে আর্জিনা আশ্রয়কেন্দ্রের সবাইকে যে বিষয়ে সতর্ক করেছেন তা পাঠ্যবইয়ের আলোকে বিশ্লেষণ কর।

৪ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. জাতীয় পরিবেশ নীতি বাস্তবায়নের দায়িত্ব আমাদের সকলের।

খ. পৃথিবীর তাপ মহাশূন্যে বিকিরিত হওয়ার পথে বায়ুম-লের কার্বন ডাইঅক্সাইড অধিক তাপ ধরে রাখে। ফলে বায়ুম-লের তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ার কারণে পৃথিবীর তাপমাত্রাও বেড়ে যায়। আবার যানবাহন, শিল্পকারখানা, বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্র থেকে সৃষ্ট ধোঁয়া, রেফ্রিজারেটর, শীততাপ নিয়ন্ত্রিত যন্ত্রের কারণেও পৃথিবী উত্তপ্ত হচ্ছে। এছাড়া কতকগুলো প্রাকৃতিক কারণ যেমন- আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত, দাবানল ও বৃক্ষক্ষয় বা নিধনও পৃথিবী উত্তপ্ত হওয়ার অন্যতম কারণ। আর এভাবেই গ্রিন হাউস প্রতিক্রিয়া হচ্ছে।

গ. আর্জিনা বেগম একটি কর্মশালায় অংশগ্রহণের মাধ্যমে দুর্যোগকালীন সতর্কতা এবং দুর্যোগ পরবর্তী সময়ে করণীয় সম্পর্কে জ্ঞানলাভ করে। এজন্য তার পরিবার হঠাৎ জলোচ্ছ্বাসের কারণে কোনো সমস্যায় পড়েনি।
আর্জিনা বেগম তার অর্জিত জ্ঞানের মাধ্যমে জলোচ্ছ্বাসের সময় কতকগুলো পদক্ষেপ গ্রহণ করে। যেমন- ১. বিশুদ্ধ পানি ও শুকনা খাবার সঙ্গে নেয়, ২. জলোচ্ছ্বাসের পানি বাড়া বা কমার খোঁজ রাখে, ৩. গবাদি পশু নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে যায়, ৪. শিশুদের প্রতি বিশেষ খেয়াল রাখে এবং ৫. দুর্যোগকালীন বিভিন্ন রোগব্যাধির ব্যাপারে সতর্ক থাকে। এছাড়া সে জলোচ্ছ্বাস শেষে দ্রুত আশ্রয়কেন্দ্র থেকে বাড়ি ফিরে আসে এবং ঘরবাড়ি পরিষ্কার ও মেরামত করে বাসযোগ্য করে তোলে। পাশাপাশি সংক্রমণ জাতীয় রোগের ব্যাপারে সতর্ক থাকে। এসব কারণে আর্জিনা বেগমের পরিবারের কোনো সমস্যা হয়নি।

ঘ. উদ্দীপকে আর্জিনা বেগম আশ্রয়কেন্দ্রের সবাইকে দুর্যোগ পরবর্তী করণীয় বিষয়ে অবগত করেছে। আর্জিনা বেগম আশ্রয় কেন্দ্রের সবাইকে যা যা অবগত করেছিল তাহলো-
১. দুর্যোগ থেমে গেলে অবস্থা বুঝে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। বন্যার পানি নেমে গেলে বা ঝড় পুরাপুরি থেমে গেলে আশ্রয়কেন্দ্র ছেড়ে নিজ নিজ বাড়িতে ফিরে যেতে হবে।
২. ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষেত্রে ঝড় থেমে যাবার পর পরই আশ্রয়কেন্দ্র ছেড়ে যেতে নেই। কারণ একবার ঝড় থেমে যাবার কিছুক্ষণ পর আবার উল্টো দিক থেকে তীব্র বেগে ঝড় প্রবাহিত হয়ে আঘাত হানতে পারে। দেখা গেছে, উল্টোদিকের ঝড়ে জলোচ্ছ্বাসের পানি তীরের সবকিছু সমুদ্রের বুকে টেনে নেয়।
৩. নানা স্থানের নোংরা, দূষিত পানি ও আবর্জনা দিয়ে বাড়ি-ঘর ময়লা হয়ে যায়। ঘরবাড়ি পরিষ্কার ও মেরামত করে বাসযোগ্য। করে তুলতে হবে। এজন্য প্রয়োজনে ব্লিচিং পাউডার ব্যবহারকরতে হবে।
৪. এ সময় রোগ সংক্রমণের ব্যাপকতা দেখা যায়। তাই সতর্কতার সাথে চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। দুর্যোগে কেউ আহত হলে তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিতে হবে। আঘাত গুরুতর হলে দ্রুত তাকে কাছাকাছি হাসপাতালে নিতে হবে এবং সেখানে প্রয়োজনীয় চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে।
৫. কোনো ব্যক্তি মারা গেলে, লাশ উদ্ধার করে যত দ্রুত সম্ভব তা সমাহিত করার ব্যবস্থা করতে হবে। মরা পশুপাখিও রোগ বিস্তার ঘটাতে পারে এসব মাটিতে পুঁতে ফেলতে হবে।
৬. বাইরে থেকে ত্রাণ ও চিকিৎসক দল এলে প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তরা যাতে সাহায্য পায় সে ব্যাপারে সহযোগিতা করতে হবে।
৭. দুর্যোগ পরবর্তী পরিস্থিতি মোকাবিলায় সমাজের সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।
আর্জিনা বেগমের উক্ত কার্যক্রম দুর্যোগে আক্রান্ত জনগণের বিশেষ কাজে লাগবে এবং তারা সঠিক উপায়ে দুর্যোগ পরবর্তী সমস্যাগুলো কাটিয়ে উঠতে পারবে।

৫. মিসেস আলী দীর্ঘদিন যাবৎ গৃহস্থ কাজের পর ব্যবহৃত আবর্জনা পলিথিনের প্যাকেটে ভরে বাড়ির পাশে নিচু জমিতে ফেলেন। তার বাড়ির পাশে রয়েছে একটি ডাইং কারখানা এবং অন্য পাশে রয়েছে একটি ওয়েটি ওয়েল্ডিং কারখানা, উক্ত কারখানার বর্জ্য বাড়ির পাশ দিয়ে প্রবাহিত খালে ফেলা হয়। বর্ষায় খালের পানি খুব সহজেই তার জমিতে চলে আসে। শীতকালে জনাব আলী উক্ত জমিতে শাকসবজি চাষ করে ভালো ফলন পেলেন না। পরিবেশ দূষণ রোধে সঠিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় এলাকাবাসী পাড়ার ডাস্টবিনকে ৩টি ভাগে ভাগ করে ৩ ধরনের ময়লা অর্থাৎ পচনশীল, অপচনশীল ও রাসায়নিক বর্জ্যগুলোকে ভিন্ন ভিন্নভাবে অপসারণের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। গতসপ্তাহে তারা পাড়ার স্কুলগুলোতে বৃক্ষরোপণের উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন।
ক. ভূমিকম্প কী?
খ. উচ্চ শব্দে মাইক বাজালে কী ধরনের দূষণ হয়? ব্যাখ্যা কর।
গ. জনাব আলীর সবজি চাষে ব্যর্থতার জন্য পরিবেশ দূষণের প্রভাব ব্যাখ্যা কর।
ঘ. এলাকাবাসীর পদক্ষেপগুলো উদ্দীপকে বর্ণিত সামগ্রিক পরিবেশ দূষণ রোধে কতটুকু কার্যকর? বিশ্লেষণপূর্বক মতামত দাও।

৫ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. কখনো কখনো ভূপৃষ্ঠের কতক অংশে হঠাৎ কোনো কারণে কেঁপে ওঠে। এ কম্পন অত্যন্ত মৃদু থেকে প্রচন্ড হয়ে থাকে, যা মাত্র কয়েক সেকেন্ড স্থায়ী হয়। ভূপৃষ্ঠের এরূপ আকস্মিক ও ক্ষণস্থায়ী কম্পনই ভূমিকম্প।

খ. উচ্চ শব্দে মাইক বা অন্যকোনো শব্দযন্ত্র বাজালে মানুষের স্নায়ুর ওপর চাপ পড়ে। মাইকে উচ্চ শব্দে গান-বাজনা চালালে পরিবেশের শান্তিপূর্ণ অবস্থার ব্যাঘাত ঘটে। কর্মপরিবেশ নষ্ট হয়, রোগীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এছাড়া ওই এলাকার প্রাকৃতিক পরিবেশও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এভাবে উচ্চ শব্দে মাইক বাজালে শব্দ দূষণ হয়। শব্দ দূষণের ফলে মানুষ স্বাভাবিক আচরণে অক্ষম হয়ে ওঠে।

গ. উদ্দীপকের জনাব আলীর সবজি চাষে ব্যর্থতার জন্য পরিবেশ দূষণের অন্যতম একটি উপাদান মাটি দূষণই দায়ী।
মাটি দূষণ বলতে বোঝায় মাটির প্রয়োজনীয় উপাদানের হ্রাস ও অবাঞ্ছিত পদার্থসমূহের আধিক্য যা বর্তমান জীব ও উদ্ভিদ জগতের জন্য মঙ্গলকর নয়। গৃহস্থালি তথা পৌর আবর্জনা, শিল্প কারখানার আবর্জনা, প্লাস্টিকের সামগ্রী, পলিথিন, কৃষিকাজের আবর্জনা, খনিজ আবর্জনা প্রভৃতি মাটিকে নানাভাবে দূষিত করছে। এছাড়া কৃষিকাজে ব্যবহৃত রাসায়নিক সার ও কীটনাশক পদার্থের ব্যবহারও মাটি দূষণ ঘটায়। উদ্দীপকের জনাব আলী তার বাড়ির পাশের নিচু জমিতে শীতকালে শাকসবজি চাষ করেন। কিন্তু তার ভালো ফলন পান না। এর কারণ হলো মাটি দূষণ। তার স্ত্রী দীর্ঘদিন যাবৎ গৃহ গৃহস্থালির ময়লা-আবর্জনা পলিথিনের প্যাকেটে ভরে তার চাষের জমিটিতে ফেলেন। এছাড়া তার বাড়ির পাশের ডাইং কারখানা ও ওয়েটি ওয়েল্ডিং কারখানার বর্জ্য বাড়ির পাশে প্রবাহিত খালে ফেলা হয়।
দূষিত পানি খুব সহজেই তার জমিতে প্রবেশ করে। এসব আবর্জনা ও বর্জ্য পদার্থ তার জমির মাটিকে দূষিত করেছে। এর ফলে তার জমিটি উর্বরাশক্তি হারিয়েছে। যার কারণে তিনি শাকসবজি চাষ করে ভালো ফলন পাননি। উপরিউক্ত আলোচনা শেষে বলা যায়, মাটি দূষণের কারণে জনাব আলী ভালো সবজি উৎপাদনে ব্যর্থ হয়েছেন।

ঘ. উদ্দীপকে বর্ণিত সামগ্রিক পরিবেশ দূষণ রোধে এলাকাবাসীর পদক্ষেপগুলো কার্যকরী ভূমিকা রাখবে বলে আমি মনে করি।
মানুষের সুস্থ ও সুন্দর জীবনযাপনের জন্য ভালো ও স্বাস্থ্যকর একটি পরিবেশ একান্ত প্রয়োজন রয়েছে। দৈনন্দিন বিভিন্ন কাজের মধ্য দিয়ে আমাদের পরিবেশ দূষিত হয়ে থাকে। এ পরিবেশ দূষণের কারণ, উৎপত্তিস্থল চিহ্নিতকরণ, যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণপূর্বক পরিবেশকে পরিচ্ছন্ন রেখে দূষণ প্রতিরোধ কর্মসূচিকে জরুরি ভিত্তিতে যত তাড়াতাড়ি কার্যকর করা যাবে দেশের জন্য ততই মঙ্গল হবে। উদ্দীপকে উল্লিখিত এলাকাবাসীরা পরিবেশ দূষণ রোধে সঠিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় পাড়ার ডাস্টবিনকে ৩টি ভাগে ভাগ করে পচনশীল, অপচনশীল ও রাসায়নিক বর্জ্যগুলোকে ভিন্ন ভিন্নভাবে অপসারণের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। এর ফলে ময়লা-আবর্জনা যথাযথভাবে ফেললে পরিবেশ দূষিত হবে না। তাছাড়া তারা পাড়ার স্কুলগুলোতে বৃক্ষরোপণের উদ্যোগ নেন। এর ফলে মাটি দূষণ রোধ হবে এবং পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা পাবে। কিন্তু এ পদক্ষেপগুলো সামগ্রিক পরিবেশের দূষণ রোধে যথেষ্ট নয়। এছাড়াও বেশকিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত। যেমন- পরিবেশ দূষণের কারণ ও তার প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে দেশের জনগণকে সচেতন করার জন্য বিভিন্ন গণমাধ্যমের মাধ্যমে ব্যাপক প্রচারণা চালানো। আবাসিক এলাকায় শিল্প স্থাপন বিরত রাখা। কৃষিতে রাসায়নিক সারের ব্যবহার বন্ধ করে জৈব সার ব্যবহার এবং কীটনাশক সহনীয় মাত্রায় ব্যবহারের জন্য জনগণকে সচেতন করে তোলা। এছাড়া ত্রুটিপূর্ণ, অকেজো, দুই স্টোকবিশিষ্ট ইঞ্জিন যান চলাচল নিষিদ্ধ করা।
অতএব বলা যায়, উদ্দীপকে উল্লিখিত এলাকাবাসীর পরিবেশ দূষণজনিত পদক্ষেপগুলোর যথাযথ প্রয়োগ হলে পরিবেশকে দূষণের হাত থেকে রক্ষা করা যাবে।

৬. সানাউল সাহেব তার ক্রয়কৃত ধান খেতে একটি ইটের ভাটা গড়ে তুলেছেন। ইটের ভাটা থেকে বেশ লাভ পাওয়া যায় বলে তিনি এ ব্যবসায় নেমেছেন। তার আরও বেশ কয়কজন বন্ধুও এ ব্যবসায় নিয়োজিত আছেন।
ক. বাংলাদেশে বনভূমির পরিমাণ কত?
খ. অপরিকল্পিত শিল্পায়ন কীভাবে পরিবেশকে দূষিত করে?
গ. উদ্দীপকের সানাউল সাহেবের কর্মকান্ড পরিবেশকে কীভাবে দূষিত করছে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. সানাউল সাহেবের কর্মকান্ডের দরুন পরিবেশ দূষিত হলেও এটিই পরিবেশ দূষণের একমাত্র কারণ নয়- বিশ্লেষণ কর।

৬ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. বাংলাদেশে বনভূমির পরিমাণ হলো ১৭%।

খ. অপরিকল্পিত শিল্পায়ন বিভিন্ন সমস্যা সৃষ্টির মাধ্যমে পরিবেশকে দূষিত করে। বাংলাদেশে পরিবেশ দূষণের অন্যতম কারণ হিসেবে দায়ী করা যায় অপরিকল্পিত শিল্পায়নকে। এখানে যত্রতত্র শিল্পকারখানা গড়ে তোলা হচ্ছে কোনো নিয়ম না মেনেই। খাদ্যসামগ্রী তৈরির কারখানার পাশে তৈরি করা হচ্ছে সার ও কীটনাশকের কারখানা। বর্জ্য নিষ্কাশন এবং পরিশোধনেরও যথাযথ ব্যবস্থা নেই। ফলে জলাশয়ে গিয়ে পতিত হচ্ছে বর্জ্য। এতে করে পানি, বায়ু ও মাটি দূষণ ঘটছে। এভাবেই অপরিকল্পিত শিল্পায়ন পরিবেশকে দূষিত করে।

গ. উদ্দীপকের সানাউল সাহেবের কর্মকান্ড বনভূমি ধ্বংস এবং বায়ুকে দূষিত করার মাধ্যমে পরিবেশকে দূষিত করছে।
সানাউল সাহেব তার ক্রয়কৃত ধান খেতে ইট ভাটা গড়ে তুলেছেন। এ ব্যবসায় লাভ বেশি হওয়ায় তিনি এতে নিয়োজিত হয়েছেন। তার আরও বেশ কয়েকজন বন্ধুও এ ব্যবসায় নিযুক্ত আছেন। ইটভাটা পরিবেশের জন্য হুমকিস্বরূপ। ইটভাটায় জ্বালানি হিসেবে কাঠ ব্যবহার করা হয়। আর এ কাঠ ব্যবহারের ফলে ধ্বংস হয় বনভূমি। আবার ইট পোড়ানোর ফলে বায়ুতে নির্গত ধোঁয়া কার্বন গ্যাসের পরিমাণ বৃদ্ধি করছে। এর ফলে দূষিত হচ্ছে বায়ু। এভাবে ইটভাটা বনজ সম্পদ ধ্বংস করছে এবং পাশাপাশি বায়ুকেও দূষিত করছে। এতে করে পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। এছাড়া ইটভাটার শ্রমিকরা সাধারণত খোলা পায়খানা ব্যবহার করে। এ ধরনের পায়খানা পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। এভাবেই সানাউল সাহেবের কর্মকান্ড আমাদের পরিবেশকে মারাত্মকভাবে দূষিত করছে।

ঘ. সানাউল সাহেবের ইটভাটা পরিবেশ দূষণের জন্য দায়ী হলেও এটিই পরিবেশ দূষণের একমাত্র কারণ নয়।
প্রাকৃতিক পরিবেশের বিভিন্ন উপাদান, যেমন- মাটি, পানি, বায়ু ইত্যাদির যখন ভৌত, রাসায়নিক ও জৈবিক পরিবর্তন ঘটে যা জীবজগতের ওপর ক্ষতিকর বা নেতিবাচক প্রভাব সৃষ্টি করে তখন তাকে বলা হয় পরিবেশ দূষণ। আর এ পরিবেশ দূষণের পিছনে নানাবিধ কারণ রয়েছে। উদ্দীপকের সানাউল সাহেব তার ক্রয়কৃত জায়গায় যে ইটভাটা গড়ে তুলেছেন এটি পরিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকিস্বরূপ। ইটভাটায় কাঠ ব্যবহারের ফলে বনভূমি ধ্বংস হচ্ছে এবং ইট পোড়ানোর ফলে বায়ুতে নির্গত ধোঁয়ায় বিষাক্ত গ্যাসের পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এসব কারণে পরিবেশ মারাত্মকভাবে দূষিত হচ্ছে। তবে পরিবেশ দূষণের জন্য কেবল এ কারণটিই দায়ী নয়। এছাড়াও আরও অনেক কারণে পরিবেশ দূষিত হতে পারে। এসব কারণের মধ্যে রয়েছে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়া, অপরিকল্পিত নগরায়ণ ও শিল্পায়ন, অপরিকল্পিত বর্জ্য ও পয়ঃনিষ্কাশন, নদীনালা, খাল-বিল ভরাট করে ফেলা, অচল ও অধিক যানবাহন ব্যবহার করা, অপরিকল্পিত সার ও কীটনাশক ব্যবহার করা, ভূমিক্ষয় হওয়া ইত্যাদি। সুতরাং দেখা যায়, সানাউল সাহেবের গড়ে তোলা ইটভাটার জন্য পরিবেশ দূষণ ঘটলেও এটিই পরিবেশ দূষণের একমাত্র কারণ নয়।

৭. প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক অওলাদ হোসেন। তিনি তার গ্রামের সকলকে গাছের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে জ্ঞানদান করেন। যেখানেই তিনি বৃক্ষ নিধন করতে দেখেন সেখানেই তিনি বাধা দেন। সবাইকে বৃক্ষরোপণে উৎসাহিত করায় তাকে বিদ্যালয় থেকে পুরস্কৃত করা হয়েছে।
ক. ঢাকা শহরের লোকসংখ্যা কত?
খ. ওজোন স্তর কীভাবে মানুষের উপকার সাধন করে?
গ. উদ্দীপকের আওলাদ সাহেব পরিবেশ দূষণ প্রতিরোধে কীভাবে ভূমিকা রাখছেন? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. পরিবেশ দূষণ প্রতিরোধে আওলাদ সাহেবের একক উদ্যোগ যথেষ্ট নয়- মন্তব্যটির যথার্থতা যাচাই কর।

৭ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. ঢাকা শহরের লোকসংখ্যা প্রায় ২ কোটি।

খ. ওজোন স্তর সূর্যের অতি বেগুনি রশ্মি থেকে মানুষকে রক্ষা করে মানুষের উপকার সাধন করে। ওজোন স্তর মানুষ, অন্যান্য প্রাণী ও উদ্ভিদের জীবন রক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। রাসায়নিক বিক্রিয়ার ব্যাপারে এটি খুব সক্রিয়। সূর্যের অতি বেগুনি রশ্মি মানুষের নানা ধরনের রোগ সৃষ্টির জন্য দায়ী। এ স্তর সূর্যের অতি বেগুনি রশ্মির হাত থেকে আমাদেরকে রক্ষা করে নানা ধরনের রোগ থেকেও মুক্তি দেয়। এভাবেই ওজোন স্তর মানুষের উপকার সাধন করে।

গ. উদ্দীপকের আওলাদ সাহেব সবাইকে বৃক্ষরোপণের ব্যাপারে উৎসাহ প্রদান করার মাধ্যমে পরিবেশ দূষণ প্রতিরোধে ভূমিকা রাখছেন।
মানুষের বিভিন্ন বিধ্বংসী কর্মকান্ড এবং প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারণে পরিবেশ আজ হুমকির সম্মুখীন। পরিবেশ দূষণ প্রকারান্তরে আমাদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রাকে ব্যাহত করে। এ কারণেই পরিবেশ দূষণ প্রতিরোধে সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন। উদ্দীপকের আওলাদ সাহেব পরিবেশ দূষণ প্রতিরোধে ইতিবাচক ভূমিকা রেখেছেন। তিনি প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক। তিনি নিজে গাছের প্রয়োজনীয়তা অনুভর করেন এবং অন্যকেও এ ব্যাপারে সচেতন করেন। বৃক্ষ নিধন করতে দেখলেই তিনি সেখানে বাধা প্রদান করেন। গাছ লাগাতে সবাইকে উৎসাহিত করেন। তার এ অবদানের জন্য তাকে বিদ্যালয় থেকে পুরস্কৃতও করা হয়। গাছপালা প্রকৃতির অংশ এবং মানুষের অকৃত্রিম বন্ধু। বৃক্ষ বৃষ্টিপাত ও বাতাসে আর্দ্রতা সংরক্ষণ করে। অধিক পরিমাণে বৃক্ষরোপণ করলে প্রকৃতিতে কার্বন ডাইঅক্সাইডের পরিমাণ হ্রাস পায়। এতে করে পরিবেশ দূষণ প্রতিরোধ করা সহজ হয়। আর উদ্দীপকের আওলাদ সাহেব বৃক্ষরোপণ উৎসাহ দেওয়ার মাধ্যমে পরিবেশ দূষণ প্রতিরোধে অগ্রণী ভূমিকা রাখছেন। তার উৎসাহে বৃক্ষরোপণ করার পথ প্রশস্ত হবে এবং এটি পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।

ঘ. পরিবেশ দূষণ প্রতিরোধে আওলাদ সাহেবের একক উদ্যোগের পাশাপাশি সরকারি বেসরকারি উদ্যোগেরও প্রয়োজন।
পরিবেশ দূষণের কারণে নানা ধরনের প্রকৃতিক দুর্যোগ সৃষ্টি হয়ে থাকে। পরিবেশের বিভিন্ন উপাদান যেমন- বায়ু, পানি, মাটি ও শব্দ নানা ধরনের ক্ষতিকর উপাদান দ্বারা দূষিত হয়ে থাকে। পরিবেশ দূষণ প্রতিরোধে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। যেন আমাদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত না হয়। কেননা গাছপালা প্রকৃতির অংশ এবং মানুষের অকৃত্রিম বন্ধু। জীববৈচিত্র্য ও প্রাকৃতিক ভারসাম্য বজায় রাখতে বৃক্ষ অনবদ্য ভূমিকা রাখে। কিন্তু কেবল আওলাদ সাহেবের একক উদ্যোগে পরিবেশ দূষণ প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়। তাই সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এবং জনগণের একযোগে কাজ করার মাধ্যমে পরিবেশ দূষণরোধ করা যায়। বর্তমানে পরিবেশ দূষণ ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। এটি প্রতিরোধ করতে হলে সকলের সচেতন থাকা আবশ্যক। সকলের সক্রিয় অংশগ্রহণই এক্ষেত্রে কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারে। একক উদ্যোগ নয় বরং সম্মিলিত উদ্যোগই পারে পরিবেশ দূষণকে প্রতিরোধ করতে।
তাই বলা যায়, পরিবেশ দূষণ প্রতিরোধে আওলাদ সাহেবের একক উদ্যোগ যথেষ্ট নয় এবং প্রশ্নের মন্তব্যটি যথার্থ।

৮. জরিনা বেগম তার বাড়িতে সবজি ও ফুলের বাগান গড়ে তুলেছেন। তিনি এবং তার মেয়েরা মিলে এসবের পরিচর্যা করেন। ফলে তার বাগানটি চমৎকারভাবে গড়ে উঠেছে। তার দেখাদেখি গ্রামের অনেকেই বাগান গড়ে তুলতে উদ্বুদ্ধ হয়েছে।
ক. কৃষিকাজে কী ব্যবহার করে কীটনাশকের ব্যবহার হ্রাস করা যায়?
খ. বাসগৃহ নির্মাণে কোন বিষয়গুলোর প্রতি খেয়াল রাখতে হবে? বুঝিয়ে লেখ।
গ. উদ্দীপকের জরিনা বেগম পরিবেশ সংরক্ষণে কীভাবে ভূমিকা রাখছেন? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. পরিবেশ সংরক্ষণের জন্য উদ্দীপকের জরিনা বেগমের গৃহীত পদক্ষেপই কি যথেষ্ট? উত্তরের সপক্ষে যুক্তি দাও।

৮ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. কৃষিকাজে বিষটোপ ব্যবহার করে কীটনাশকের ব্যবহার হ্রাস করা যায়।

খ. বাসগৃহ নির্মাণে এর নিয়মকানুনের পাশাপাশি নির্মাণের ধরনের প্রতিও খেয়াল রাখতে হবে। বাসগৃহ তৈরির আইনকানুন মেনে বাড়িঘর নির্মাণ করতে হবে। এর পাশাপাশি বাসগৃহে যেন যথেষ্ট আলোবাতাস চলাচল করতে পারে সে ব্যবস্থাও থাকতে হবে। তাহলেই বাসগৃহ নির্মাণ যথাযথ হবে।

গ. উদ্দীপকের জরিনা বেগম নিজ বাড়িতে বাগান গড়ে তোলার মাধ্যমে পরিবেশ সংরক্ষণে ভূমিকা রাখছেন।
পরিবেশ আমাদের জীবনের ওপর প্রত্যক্ষভাবে প্রভাব বিস্তার করে। তাই আমাদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা অব্যাহত রাখতে পরিবেশ সংরক্ষণে সচেতন হওয়া প্রয়োজন। আর পরিবেশ সংরক্ষণে পরিবারও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। প্রতিটি পরিবার যদি পরিবেশ সংরক্ষণে সচেতন হয় তবে পরিবেশ দূষণ অনেকাংশে রোধ সম্ভব হয়। উদ্দীপকের জরিনা বেগম তার বাড়িতে সবজি ও ফুলের বাগান গড়ে তোলার মাধ্যমে পরিবেশ সংরক্ষণে ভূমিকা রেখেছেন। তার গড়ে তোলা সবজি ও ফুলের বাগান হতে প্রচুর অক্সিজেন উৎপন্ন হচ্ছে, যা আমাদের প্রতি মুহূর্তে প্রয়োজন। এছাড়া আমাদের জন্য ক্ষতিকর কার্বন ডাইঅক্সসাইড এরা শুষে নিয়ে আমাদের বায়ুমন্ডলকে নির্মল করছে। সর্বোপরি পাখিরা সবজি বাগানের পোকামাকড় খাচ্ছে, মৌম ছি ফুলবাগান হতে মধু সংগ্রহ করছে। এভাবে প্রাকৃতিক পরিবে শর জীববৈচিত্র্য রক্ষায় তার বাগান ভূমিকা রাখছে।

ঘ. না, পরিবেশ সংরক্ষণের জন্য উদ্দীপকের জরিনা বেগমের গৃহীত পদক্ষেপই যথেষ্ট নয়।
পরিবেশ আমাদের জীবনের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। তাই পরিবেশ সংরক্ষণে সকলের সচেতন থাকা প্রয়োজন। বিশেষ করে প্রতিটি পরিবার যদি পরিবেশ সংরক্ষণে সচেতন হয় তবে পরিবেশ দূষণ অনেকাংশে রোধ করা সম্ভব। তাই আমি মনে করি, পরিবেশ সংরক্ষণের জন্য উদ্দীপকের জরিনা বেগমের গৃহীত পদক্ষেপই যথেষ্ট নয়। উদ্দীপকের জরিনা বেগম তার বাড়িতেই সবজি ও ফুলের বাগান। গড়ে তুলেছেন। এর মাধ্যমে তিনি বনায়ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছেন। তার দেখাদেখি গ্রামের অনেকেই বাগান গড়ে তুলতে উদ্বুদ্ধ হয়েছেন। কিন্তু সবাই এটিকে গুরুত্ব দেননি। তার পরিবেশ দূষণের জন্য শুধু গাছ নিধনই একমাত্র কারণ নয়। পরিবেশ দূষণে আরও বিভিন্ন কারণ রয়েছে। আমাদেরকে সে ঘরের পাশাপাশি পরিবারগুলোকে আরও নানা বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে। যেমন- জনসংখ্যা হ্রাসের ব্যাপারে সচেতন হতে হবে, বাড়িতে বর্জ্য নিষ্কাশনে সুষ্ঠু ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে, কৃষিকাজে কীটনাশক ব্যবহার হ্রাস করে জৈব সারের ব্যবহার বৃদ্ধি করতে হবে, আবাসিক এলাকায় শিল্পকারখানা গড়ে তোলা থেকে বিরত থাকতে হবে, নদীনালা, খালবিল ভরাট করা থেকে বিরত থাকতে হবে এবং বিল্ডিং তৈরির আইন মেনে বাড়িঘর নির্মাণ করতে হবে। এসব পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমেই পরিবেশ সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখা যায়।
তাই পরিবেশ সংরক্ষণের জন্য কেবল উদ্দীপকের জরিনা বেগমের গৃহীত পদক্ষেপই যথেষ্ট নয় বলা যায়।

৯. অধিক বৃষ্টিপাতের কারণে আলেয়াদের গ্রামে দেখা দেয় বন্যার প্রকোপ। আলেয়াদের বাড়িসহ আরও অনেকের বাড়িঘর বন্যার পানিতে তলিয়ে যায়। অসহায় মানুষগুলো নির্বিকার হয়ে থাকা ব্যতীত আর কিছুই করতে পারে না।
ক. জাতীয় পর্যায়ে দুর্যোগসংক্রান্ত কয়টি সাংগঠনিক কমিটি রয়েছে?
খ. আকস্মিক প্রাকৃতিক দুর্যোগ মানবজীবনে কীরূপ প্রভাব ফেলে?
গ. উদ্দীপকের আলেয়াদের সাহায্যার্থে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কীভাবে অবদান রাখতে পারে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. আলেয়াদের এরূপ দুরবস্থার জন্য আমাদের ভৌগোলিক বাস্তবতাই দায়ী- বিশ্লেষণ কর।

৯ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. জাতীয় পর্যায়ে দুর্যোগসংক্রান্ত আটটি সাংগঠনিক কমিটি রয়েছে।

খ. আকস্মিক প্রাকৃতিক দুর্যোগ মানবজীবনে অত্যন্ত নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। এতে মানুষের জীবন ও সম্পদের ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়। পরবর্তীকালে সমাজের ওপরও এর প্রভাব পড়ে। সমাজের স্বাভাবিক কাজকর্ম প্রচন্ডভাবে বাধাগ্রস্ত হয়। মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হয় এবং দুর্যোগ কবলিত অঞ্চলের মানুষগুলো সব হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়ে। এভাবে আকস্মিক প্রাকৃতিক দুর্যোগ মানবজীবনে বিভিন্ন রকমের নেতিবাচক প্রভাব রাখে।

গ. আমাদের ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে প্রতিবছরই নানা ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা দেয়। এগুলো মোকাবিলা করা কারও একার পক্ষে সম্ভব নয়। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা উদ্দেশ্য পূরণের ভিত্তিতে এসব অসহায় মানুষকে সাহায্য করতে পারে। উদ্দীপকে দেখা যায়, বন্যাকবলিত একটি গ্রামের চিত্র। আলেয়াদের গ্রাম অতিবৃষ্টির কারণে বন্যার প্রকোপে পড়েছে। আলেয়াদের বাড়িঘরসহ আরও অনেকের বাড়িঘর বন্যার পানিতে তলিয়ে গিয়েছে। অসহায় মানুষগুলো নির্বিকার হয়ে দেখা ব্যতীত আর কিছুই করতে পারছে না। তাদেরকে সাহায্যার্থে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা তাদের উদ্দেশ্য পূরণের ভিত্তিতে অবদান রাখতে পারে। এক্ষেত্রে তারা দুর্যোগের সময় জীবন, সম্পদ এবং পরিবেশের যে ক্ষতি হয়ে থাকে তা হ্রাস করতে পারে। প্রয়োজন অনুসারে ক্ষতিগ্রস্ত জনগণের মধ্যে অল্প সময়ে ত্রাণ পৌঁছানোর ব্যবস্থা করতে পারে এবং দুর্যোগ পরবর্তী পুনরুদ্ধার ও পুনর্বাসন নিশ্চিত করতে পারে। এভাবে তারা তাদের উদ্দেশ্য পূরণ করার মাধ্যমে উদ্দীপকের বন্যাকবলিত আলেয়াদের সাহায্যার্থে এগিয়ে এসে সহায়তা প্রদান করতে পারে।

ঘ. ‘‘আলেয়াদের দুরবস্থার জন্য আমাদের ভৌগোলিক বাস্তবতাই দায়ী।’’ উক্তিটি যথার্থ।
আমাদের ভৌগোলিক বাস্তবতার কারণেই নানা ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ সংঘটিত হওয়ায় উদ্দীপকের আলেয়াদের দুরবস্থার জন্যও একেই দায়ী করা যায়। আমাদের ভৌগোলিক অবস্থানের কারণেই এদেশে প্রতিবছর ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, বন্যা, খরা ইত্যাদি দেখা দেয়। এতে আমাদের দেশের অনেক সম্পদ, জীবন ও পরিবেশের ক্ষতি হয়। উদ্দীপকের আলেয়াদের গ্রাম অতিবৃষ্টির কারণে বন্যার করলে পড়েছে। বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে আলেয়াসহ আরও অনেকের বাড়িঘর। আমাদের দেশের ভৌগোলিক অবস্থানগত কারণেই এদেশে দুর্যোগ বেশি হয়। এদেশের উত্তরে রয়েছে হিমালয় পর্বতমালা। হিমালয়ের বরফগলা পানি, অতিবৃষ্টি ও বন্যার সৃষ্টি করে থাকে। উদ্দীপকের আলেয়ারা এ পরিণতিরই শিকার। তাদের গ্রামে যে বন্যা প্রকোপ দেখা গিয়েছে তা উক্ত কারণেই সৃষ্ট। আমাদের দেশের ভৌগোলিক অবস্থানের বাস্তবতাই এরূপ প্রাকৃতিক দুর্যোগ সৃষ্টির জন্য দায়ী। এ কারণেই আমাদের দেশে প্রতিবছর নানা ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ লেগেই থাকে এবং আমাদেরকেও বাস করতে হয় দুর্যোগের মধ্যে। আর এর জন্য আমাদের দেশের ভৌগোলিক অবস্থানই প্রধানত দায়ী বলে বিবেচ্য। উদ্দীপকের আলেয়ারাও এ কারণেই বন্যার প্রকোপে পড়েছে।

১০. উপকূলীয় অঞ্চলে বসবাস করেন সুজিত সরকার ও তার পরিবার। একদিন তিনি রেডিওতে শুনতে পেলেন ঘূর্ণিঝড়ের আভাস। তিনি বাড়ির দিকে ছুটলেন এবং পরিবারের সবাইকে নিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রের দ্রুত দিকে রওনা হলেন।
ক. দুর্যোগ পূর্বপ্রস্তুতি বলতে কী বোঝায়?
খ. আবহাওয়া অধিদপ্তর দুর্যোগ পূর্বপ্রস্তুতি গ্রহণে কীভাবে সাহায্য করে?
গ. উদ্দীপকে দুর্যোগ পূর্বপ্রস্তুতির কোন দিকটির ইতিবাচক প্রভাব বিদ্যমান? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকের সুজিত সরকারকে দুর্যোগ মোকাবিলায় আরও বেশকিছু ব্যবস্থা নিতে হবে- মন্তব্যটির যথার্থতা যাচাই কর।

১০ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. দুর্যোগ পূর্বপ্রস্তুতি বলতে দুর্যোগপূর্ব সময়ে দুর্যোগের ঝুঁকি কমানোর ব্যবস্থাপনাকে বোঝায়।

খ. আবহাওয়া অধিদপ্তর সতর্কীকরণ বার্তা প্রচারের মাধ্যমে দুর্যোগ পূর্বপ্রস্তুতি গ্রহণে সাহায্য করে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলার প্রস্তুতি গ্রহণে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো সময়মতো আবহাওয়ার তথ্যভিত্তিক পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ বার্তা প্রচার করা। বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর এ ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করে। এ অধিদপ্তর জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আবহাওয়ার উপাত্ত সংগ্রহ করে আগাম সতর্কীকরণ বার্তা প্রচার করে যেন মানুষ সচেতন হয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারে। এভাবেই আবহাওয়া অধিদপ্তর দুর্যোগ পূর্বপ্রস্তুতি গ্রহণে আমাদেরকে সাহায্য করে।

গ. উদ্দীপকে দুর্যোগ-পূর্ব প্রস্তুতির প্রচার মাধ্যমের ইতিবাচক প্রভাব বিদ্যমান।
উদ্দীপকে লক্ষ করা যায় সুজিত সরকার তার পরিবার নিয়ে উপকূলীয় অঞ্চলে বসবাস করেন। তিনি একদিন রেডিওতে ঘূর্ণিঝড়ের আড্ডাস শুনে দ্রুত বাড়ির দিকে ছুটলেন এবং পরিবারের সবাইকে নিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রের দিকে রওয়ানা হলেন। এখানে প্রচার মাধ্যমের ইতিবাচক প্রভাব লক্ষণীয়। দুর্যোগ পূর্বপ্রস্তুতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। হলো প্রচার মাধ্যমকে প্রস্তুত রাখা। দুর্যোগ পূর্বপ্রস্তুতি বলতে দুর্যোগপূর্ণ সময়ে দুর্যোগের ঝুঁকি কমানোর ব্যবস্থাপনাকে বোঝায়। তাই প্রচার মাধ্যমকে প্রস্তুত রাখা এ ব্যবস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। এর মাধ্যমে জনগণকে দুর্যোগের পূর্বাভাস প্রদান করা যায়। রেডিও, টেলিভিশন ও স্থানীয়ভাবে মাইক ব্যবহার করে স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীর মাধ্যমে প্রত্যন্ত অঞ্চলে দুর্যোগের পূর্বাভাস পৌঁছে দেওয়া হয়। এর ফলে জনগণ আগে থেকেই সচেতন হয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে। উদ্দীপকের সুজিত সরকারও প্রচার মাধ্যম তথা রেডিওতে খবর শুনেই ঘূর্ণিঝাড়ের পূর্বাভাস পেয়ে নিরাপদ আশ্রয়স্থলে যেতে উদ্যত হয়েছেন।
তাই বলা যায়, এখানে দুর্যোগ পূর্বপ্রস্তুতির প্রচার মাধ্যমের ইতিবাচক প্রভাবের দিকটিই বিদ্যমান।

ঘ. উদ্দীপকের সুজিত সরকারকে দুর্যোগ মোকাবিলায় আরও বেশকিছু প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে।
দুর্যোগ পূর্বপ্রস্তুতি গ্রহণের উদ্দেশ্য হলো দুর্যোগকালীন সময়ের পূর্বেই সচেতনতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা। যেকোনো দুর্যোগ মানবজাতির জন্য যন্ত্রণাদায়ক পরিস্থিতির সৃষ্টি করে। মানবসভ্যতাকে এ বিপর্যয় এবং আকস্মিক চরম পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য পূর্বপ্রস্তুতি রাখতে হয়। এর দ্বারা ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ হ্রাস করা যায়। এক্ষেত্রে তাকে সম্ভাব্য দুর্যোগের পূর্বে খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি ও ওষুধ ইত্যাদি প্রয়োজনীয় সামগ্রীর বন্দোবস্ত করতে হবে। শুকনা খাবার, নিরাপদ পানি, মোম, দিয়াশলাই, শিশু খাদ্য ইত্যাদি জিনিসগুলোও সাথে নিতে হবে। এছাড়াও গবাদি পশুপাখিকে নিরাপদ আশ্রয়ে নিতে হবে। ঘূর্ণিঝড়- পরবর্তী সময়ে ক্ষতিগ্রস্ত ফসলের জমিতে দ্রুত চাষযোগ্য বীজের ব্যবস্থা করতে হবে। এসব প্রস্তুতি রাখলে দুর্যোগ মোকাবিলা করতে গিয়ে তিনি খুব বেশি সমস্যায় পড়াবেন না। তাকে কেবল আশ্রয়কেন্দ্রের দিকে অগ্রসর হতে দেখা গেলেও অন্যান্য ব্যবস্থা গ্রহণ করতে দেখা যায়না। কিন্তু তাকে দুর্যোগ মোকাবিলায় উপযুক্ত ব্যবস্থাসমূহও গ্রহণ করতে হবে।
তাই সার্বিক দিক বিবেচনা করে বলা যায় যে, প্রশ্নের মন্তব্যটি যথার্থ।
Share:

0 Comments:

Post a Comment