HSC যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর pdf download অধ্যায় ৮

HSC যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর pdf download

এইচএসসি পরীক্ষার পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি
HSC Logic 1st Paper Srijonshil question and answer pdf download.

উচ্চ মাধ্যমিক

যুক্তিবিদ্যা
প্রথম পত্র

সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
৮ম অধ্যায়

HSC Logic 1st Paper
Srijonshil
Question and Answer pdf download

১. বর্ণনা-১: কোন কিছুকে সহজে নির্দেশ করার, বোঝার বা জ্ঞাপন করার জন্য ব্যবহৃত লিখিত বা কথিত চিহ্নকে আমরা প্রায়শই ব্যবহার করে থাকি। এই সকল চিহ্ন আমাদের ব্যবহারের ওপর এবং ব্যাখ্যার ওপর গড়ে উঠে। আমরা আমাদের কাজের জন্য বিভিন্ন চিহ্ন আবিষ্কার করি, পরে তা ব্যবহার করি। যেমন- লাল আলো গাড়ি থামার নির্দেশ হিসেবে কাজ করে। এখানে লাল আলোর সাথে গাড়ি থামার কোনো আবশ্যিক সম্পর্ক নেই। কিন্তু লাল বাতিকে আমরা থামার নির্দেশ হিসেবে ব্যবহার করি।
বর্ণনা-২: পৃথিবীতে অনেক বিষয় আছে যা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে অন্য কোন বিষয়কে সূচীত করে কিংবা অন্য কোন বিষয়ের প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করে। যেমন- একটি দেশের মানচিত্র বা পতাকা সেই দেশের প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করে।
ক. প্রতীকী যুক্তিবিদ্যার অন্যমত প্রবর্তক কে?
খ. যুক্তিবিদ্যায় প্রতীক ব্যবহার করা হয় কেন?
গ. বর্ণনা-১ এ যে বিষয়ের প্রতিফলন ঘটেছে তা ব্যাখ্যা করো।
ঘ. বর্ণনা-১ এবং বর্ণনা-২ অনুসারে প্রতীকী যুক্তিবিদ্যার গুরুত্ব আলোচনা করো।

১ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. প্রতীকী যুক্তিবিদ্যার অন্যতম প্রবর্তক হলেন জর্জ বুল।

খ. প্রতীকের প্রায়োগিক উপযোগিতার জন্য এবং যুক্তির নিশ্চয়াত্মক নির্ভুলতা প্রকাশের জন্য যুক্তিবিদ্যায় প্রতীক ব্যবহার করা হয়। প্রতীক চিন্তা প্রকাশে সহায়কা ভূমিকা পালন করে। তাছাড়া ভাষার দ্ব্যর্থকতা দূরীকরণেও প্রতীকের প্রয়োগ যথেষ্ট উপযোগী। ভাষা সংক্ষিপ্তকরণেও প্রতীক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। যেমন- 'দুইয়ে দুইয়ে চার হয়' কথাটি ২ + ২ = ৪ লেখা যায়। সর্বোপরি, যুক্তির বৈধতা ও ভাষার দূর্বোধ্যতা দুরীকরণে প্রতীকের ব্যবহার অপরিহার্য।

গ. উদ্দীপকের লাল বাতি দ্বারা পাঠ্যপুস্তকের প্রতীকের ইঙ্গিত রয়েছে।
যুক্তিবিদ্যায় প্রতীক খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। কোনো কিছু নির্দেশ করার জন্য, বোঝার জন্য, চিনে নেওয়ার জন্য বা সহজে প্রকাশ করার জন্য ইচ্ছাকৃতভাবে যে চিহ্ন বা সংকেত ব্যবহার করা হয় তাকে প্রতীক বলে। যেমন: '+', '', 'x', + ইত্যাদি হলো গণিতের প্রতীক। আবার, P, S ও M হচ্ছে যুক্তিবিদ্যায় যথাক্রমে প্রধান পদ, অ-প্রধান পদ ও মধ্যপদের প্রতীক। এমনিভাবে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিভিন্ন রকম প্রতীক ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
উদ্দীপকে যে 'লাল বাতি'-এর কথা বলা হয়েছে সেটিও প্রতীক। কেননা লাল বাড়ি গাড়ি থামার প্রতীক। তেমনিভাবে সবুজ বাতি গাড়ি চলার প্রতীক। কেবল যুক্তিবিদ্যা নয় বিভিন্ন ক্ষেত্রেই প্রতীক ব্যবহৃত হয়ে থাকে এবং এটি খুবই গুরুত্ব বহন করে।

ঘ. উদ্দীপকের বর্ণনা-১ এবং বর্ণনা-২ এর মাধ্যমে প্রতীকের বিষয়টি নির্দেশিত হয়েছে। বাস্তব জীবনে প্রতীকের বিভিন্ন উপযোগিতা পরিলক্ষিত হয়।
আমাদের চিন্তা-ভাবনা, অনুভূতি অপরের কাছে প্রকাশ করার জন্যই আমরা ভাষা ব্যবহার করি। কিন্তু কথ্য ও লেখ্য ভাষার মধ্যে নানা অস্পষ্টতা ও জটিলতা রয়েছে। ফলে কখনো কখনো মনের ভাব যথাযথভাবে প্রকাশ করা সম্ভব হয় না। শুধু তাই নয়, ব্যাকরণসম্মত ভাষাও অনেক ক্ষেত্রে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে। যেমন- সরকার হন রাষ্ট্রের পরিচালক, রফিক সাহেব হন সরকার। অতএব, রফিক সাহেব হন রাষ্ট্রের পরিচালক। এ যুক্তিটিতে ‘সরকার' শব্দটির অর্থ নিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হতে পারে। কেননা বাংলা ভাষায় 'সরকার' বলতে আমরা যেমন রাষ্ট্রের পরিচালককে বুঝি, তেমনি 'সরকার' বলতে কোনো মানুষের বংশগত পদবিকেও বোঝানো হয়। এ সমস্যা সমাধানকল্পে যুক্তিবিদরা ভাব প্রকাশের বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে প্রতীকের প্রচলন করেন। প্রতীক ব্যবহারের মাধ্যমে সহজেই যুক্তির আকার নির্ধারণ করা যায়। যুক্তির আকার নির্ধারণ বলতে কোনো একটি যুক্তি কোন প্রকৃতির তা নির্ধারণ করাকে বোঝায়। একটি যুক্তির আকার নির্ধারণ করতে পারলে যুক্তিটির বৈধতা নির্ণয় খুব সহজ হয়ে যায়। পাশাপাশি প্রতীক ব্যবহারের মাধ্যমে ভাষাগত জটিলতা দূর করা সম্ভব হয়। কেননা ভাষায় বিভিন্ন শব্দ ও বাক্য অনেক জটিলতা সৃষ্টি করে। প্রতীক ব্যবহারের মাধ্যমে ভাষার এসব জটিলতা দূর হয়।
উদ্দীপকে বিভিন্ন দেশের পতাকা সেই দেশকে নির্দেশ করে। তাছাড়া লাল বাতি ব্যবহারের মাধ্যমে গাড়ি থামাকে নির্দেশ করে। এক্ষেত্রে পতাকাগুলো ও লাল বাতি প্রতীক আকারে ব্যবহৃত হওয়ায় অর্থ নিয়ে কোনো বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয় না।
সুতরাং আলোচনা শেষে বলা যায় যে, প্রতীকের উপযোগিতার গুরুত্ব অপরিসীম। এ কারণেই ব্রিটিশ দার্শনিক Alfred North Whitehead তাঁর An Introduction to Mathematics নামের গ্রন্থে বলেন- 'প্রতীক ব্যবহারের সাহায্যে যুক্তিপদ্ধতিকে আমরা যান্ত্রিক পদ্ধতিতে রূপান্তরিত করি, চোখ দিয়েই যার সমাধান করা যায়। অন্যথায় তার জন্য মস্তিষ্কের উন্নততর অংশকে কাজে লাগাতে হতো।

২. রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা থাকলে দেশের অর্থনৈতিক উন্নতি অব্যাহত থাকে এবং দেশের সমৃদ্ধি হয়। দেশের সমৃদ্ধি না হলে মানুষ ভাল থাকে না এবং মানুষের জীবনযাত্রা নিম্নগামী হয়। কাজেই মানুষের জীবনযাত্রা নিম্নগামী হবে না, যদি এবং কেবল যদি রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা থাকে অথবা দেশের সমৃদ্ধি হয়।
ক. সত্য সারণি কি?
খ. সরল ও যৌগিক বাক্য বলতে কি বোঝায়।
গ. উদ্দীপকে কোন কোন বাক্যের উল্লেখ রয়েছে। বাক্যগুলোর যথাযথ আকার দিয়ে প্রতিটির প্রতীক রূপ দাও।
ঘ. পাঠ্যপুস্তক অনুসারে উদ্দীপকে ব্যক্ত বাক্যগুলোর স্বরূপ বিশ্লেষণ করো।

২ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. সত্য-সারণি হলো এমন একটি সারণি যার সাহায্যে কোনো যৌক্তিক যোজকের অর্থ, তাৎপর্য, যৌগিক বাক্যের সত্যমান ও যুক্তির বৈধতা অবৈধতা যাচাই করা হয়।

খ. নিচে সরল বাক্য ও যৌগিক বাক্যের সংজ্ঞা দেওয়া হলো-
যে বাক্য বক্তব্য বা বিবৃতি প্রকাশ করে তাকে সরল বাক্য বলে। যেমন- মানুষ মরণশীল। পক্ষান্তরে, যে বাক্য একাধিক বক্তব্য বা বিবৃতি প্রকাশ করে তাকে যৌগিক বাক্য বলে। যেমন- রাসেল হন একজন দার্শনিক ও সাহিত্যিক।

গ. উদ্দীপকে সংযৌগিক ও সমমানিক বাক্যের উল্লেখ রয়েছে। বাক্যগুলোর যথাযথ আকার দিয়ে প্রতিটির প্রতীক রূপ দেওয়া হলো-
যখন দুই বা ততোধিক সরলবাক্য 'এবং' 'ও', 'আর' প্রভৃতি যোজকের মাধ্যমে সংযুক্ত করা হয়, তখন তাকে সংযৌগিক বাক্য বলে। যেমন- মুহিত হয় ডাক্তার এবং সঙ্গীত শিল্পী। এই যুক্তিবাক্যের দুটি অঙ্গবাক্য হলো 'মুহিত হয় ডাক্তার' এবং 'মুহিত হয় সঙ্গীত শিল্পী'। অঙ্গবাক্য দুটির যোজক 'এবং'।
অঙ্গবাক্য দুটিকে p ও q দ্বারা এবং 'এবং' -কে (ডট) চিহ্ন দ্বারা প্রতীকায়িত করা হয়। সুতরাং সংযৌগিক বাক্যটির প্রতীকীরূপ p.q। আবার দুই বা ততোধিক সরলবাক্য 'যদি এবং কেবল যদি' যোজকের সাহায্যে যুক্ত হয়ে যে যুক্তি বাক্য গঠন করে, তাকে সমমানিক বাক্য বলে। যেমন- বাংলাদেশের উন্নতি হবে যদি এবং কেবল যদি দেশের মানুষ সৎ হয়। এ বাক্যের অঙ্গবাক্য দুটি হলো বাংলাদেশের উন্নতি হবে এবং দেশের মানুষ সৎ হয়। যোজক হলো 'যদি এবং কেবল যদি' বাক্য দুটিকে p ও q এবং যোজক 'কেবল যদি' কে = চিহ্ন দ্বারা প্রতীকায়িত করা হয়। সুতরাং প্রতীক রূপ হলো p=q।

ঘ. উদ্দীপকে ব্যক্ত বাক্যগুলো একটি সংযৌগিক এবং অন্যটি সমমানিক। পাঠ্যপুস্তকের আলোকে বাক্যগুলোর স্বরূপ বিশ্লেষণ করা হলো-
যে যৌগিক বাক্যের অন্তর্গত দুটি সরল বাক্য 'এবং' 'ও', 'আর', 'কিন্তু' ইত্যাদি জাতীয় শব্দ দ্বারা যুক্ত হয়, তাকে সংযৌগিক বাক্য বলে। যেমন: 'রাসেল হন দার্শনিক এবং সাহিত্যিক' এ বাক্যটিকে বিশ্লেষণ করলে যে দুটি সরল বাক্য পাওয়া যায় তাহলো-
(i) রাসেল হন দার্শনিক,
(ii) রাসেল হন সাহিত্যিক।

বস্তুত সংযৌগিক বাক্যের আকারকে বলে সংযৌগিক অপেক্ষক, অপেক্ষকের উপাদান সরল বাক্যগুলোকে বলে সংযোগী এবং যে যোজক দ্বারা সংযোগীগুলো যুক্ত হয় তাকে বলে সংযোজক। সংযোজকের প্রতীক হিসেবে ডট (.) চিহ্ন ব্যবহৃত হয়। কাজেই উপর্যুক্ত বাক্যটির অন্তর্গত সংযোগীদ্বয়কে যথাক্রমে গ্রাহক প্রতীক p ও q ধরে আর এর সংযোজন হিসেবে এবং যোজকের পরিবর্তে ' . ' (ডট) প্রতীক ব্যবহার করে বাক্যটিকে প্রতীকায়ন করলে এর আকার হবে p. q। আবার, যে শর্তমূলক যৌগিক বাক্যের অন্তর্গত দুটি সরলবাক্য 'যদি এবং কেবল যদি' শব্দসমষ্টি দ্বারা যুক্ত থাকে তাকে সমমানিক বাক্য বলে। যেমন- ছাত্ররা পরিক্ষায় পাস করবে যদি এবং কেবল যদি তারা পড়াশুনা করে। এখানে দুটি সরল বাক্য হলো-
(i) ছাত্ররা পরীক্ষায় পাস করে,
(ii) ছাত্ররা ভালোভাবে পড়াশোনা করে

এখানে, বাক্যদ্বয়ের গ্রাহক প্রতীক p ও q এবং যোজকের প্রতীক ≡ ব্যবহার করে বাক্যটিকে প্রতীকায়ন করলে এর আকার হবে- p ≡ q উদ্দীপকে উল্লেখিত বাক্যগুলো যৌগিক বাক্যের শ্রেণিবিভাগের অন্তর্গত। উভয় বাক্যের স্বরূপ আলোচনা করে দেখা যায় যে, তাদের মধ্যে সম্পর্কের ক্ষেত্রে মিল হলো উভয় বাক্যে দুটি করে সরল বাক্যের উপস্থিতি।
পরিশেষে বলা যায়, সংযৌগিক ও সমমানিক বাক্যের মধ্যে যেমন মিল রয়েছে তেমনি তাদের মধ্যে বিভিন্ন ক্ষেত্রে পার্থক্যও লক্ষ করা যায়।

৩. বাংলাদেশ ও ইংল্যান্ড এর মধ্যে টেস্ট সিরিজ চলছে। স্টেডিয়ামের উপরে দুই দেশের পতাকা বাতাসে উড়ছে। গ্যালারিতে বসে দর্শকগণ বাঘের প্রতিকৃতি নিয়ে মাঝে মাঝে হই দিয়ে বাংলাদেশের খেলোছাড়দের উৎসাহ প্রদান করছেন।
ক. সত্য সারণি কী?
খ. সকল সংকেত কে প্রতীক বলা যায় না কেন?
গ. সত্যতা ও বৈধতা যুক্তি বিদ্যার কোন কোন বিষয়ের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকের আলোকে আমাদের ব্যবহারিক জীবনে প্রতীকের উপযোগিতা মূল্যায়ন করো।

৩ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. যে সারণি ব্যবহার করে যৌক্তিক যোজকের অর্থ ও তাৎপর্য, বচনের সত্যমান এবং যুক্তির বৈধতা বা অবৈধতা নির্ধারণ করা হয় তাকে সত্য সারণি বলে।

খ. সব সংকেতকে প্রতীক বলা যায় না।
সংকেত হলো এক প্রকার চিহ্ন। যদি কোনো চিহ্ন স্বাভাবিকভাবে ব্যবহৃত হতে হতে কোনো বিশেষ বিষয়কে প্রতিনিধিত্ব করে বা কোনো লক্ষণ, উপস্থিতি নির্দেশ করে তখন তাকে ঐ বিষয়ের সংকেত বলে। সব প্রতীককে সংকেত হিসেবে অভিহিত করা যায়। কিন্তু সকল সংকেত ইচ্ছা ও পরিকল্পনা অনুযায়ী ব্যবহৃত হয় না। তাই সব সংকেত প্রতীক নয়।

গ. সত্যতা ও বৈধতা যুক্তিবিদ্যার বচন ও যুক্তির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।
বচন বা বাক্যের বৈশিষ্ট্য হলো- এটি সত্য বা মিথ্যা হবে। সত্যতা যুক্তিবাক্যের একটি বিশেষ গুণ। কোন যুক্তি বাক্য যখন বাস্তবের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ হয় তখন তা সত্য বলে পরিগণিত হয়। আবার, যুক্তিবাক্য যখন বাস্তবের সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ হয় তখন তা মিথ্যা বলে বিবেচিত হয়। যেমন: সকল মানুষ হয় মরণশীল'। এই যুক্তিবাক্যটি সত্য। অন্যদিকে 'সকল মানুষ হয় কবি' এই যুক্তি বাক্যটি মিথ্যা।
পক্ষান্তরে কোন যুক্তির বৈধতা তার অন্তর্গত বাক্যের সত্যতার উপর নির্ভর করে না। যুক্তির ক্ষেত্রে আমাদের বিচার্য বিষয় হলো আশ্রয়বাক্য থেকে সিদ্ধান্তটি বিধি অনুসারে নিঃসৃত হলো কিনা তা দেখা। সিদ্ধান্তটি আশ্রয়বাক্য থেকে বিধি অনুসারে নিঃসৃত হলে যুক্তিটি বৈধ হবে। যেমন:
সকল দার্শনিক হন জ্ঞানী
সক্রেটিস একজন দার্শনিক
অতএব, সক্রেটিস হলো জ্ঞানী।
উপরের যুক্তিটি বৈধ। কারণ আশ্রয় বাক্য থেকে সিদ্ধান্তটি বিধিসম্মতভাবে নিঃসৃত হয়েছে।
উপরের আলোচনা থেকে বলতে পারি যে, সত্যতা ও বৈধতা যথাক্রমে বচন ও যুক্তির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।

ঘ. সুশৃঙ্খল ও সহজ জীবনযাপনের জন্য দৈনন্দিন জীবনে প্রতীকের ব্যবহার প্রয়োজন।
কোনো কিছু নির্দেশ করার জন্য বা বোঝার জন্য যে চিহ্ন ব্যবহার করা তাকে প্রতীক (Symbol) বলে। মাথায় টুপি ও পাগড়ি, সিঁদুর ব্যবহার বিশেষ ধর্মীয় ও সামাজিক স্বীকৃতির প্রতীক হিসেবে কাজ করে। জলোচ্ছ্বাস ও ঘূর্ণিঝড়ের সময় সাইরেনের বিভিন্ন শব্দ দুর্যোগের মাত্রার প্রতীক হিসেবে কাজ করে। তেমনিভাবে ট্রাফিকের লালবাতি চলন্ত গাড়ির প্রতিরোধের প্রতীক হিসেবে কাজ করে। এ কারণেই আমাদের দৈনন্দিন জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রতীকের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য।
উদ্দীপকে দেখা যায়, বাংলাদেশ ও ইংল্যান্ডের মধ্যে টেস্ট সিরিজ চলছে। স্টেডিয়ামের উপরে দুই দেশের পতাকা বাতাসে উড়ছে। গ্যালারিতে বসে দর্শকগণ বাঘের প্রতিকৃতি নিয়ে মাঝে মাঝে হই দিয়ে বাংলাদেশের খেলোছাড়দের উৎসাহ প্রদান করছেন। উদ্দীপকে দেখা যায়, পতাকা হলো একটি দেশের পরিচিতির প্রতীক এবং অন্যদিকে বাঘের প্রতিকৃতি বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের প্রতীক। আমাদের সুশৃঙ্খল ও সহজ জীবন যাপনের জন্য প্রতীকের যথেষ্ট উপযোগিতা রয়েছে।
পরিশেষে বলা যায় যে, দৈনন্দিন জীবনকে সহজ ও সুশৃঙ্খল করে সাজাতে প্রতীকের গুরুত্ব অপরিসীম।

৪. মুসা ইব্রাহিম সর্বোচ্চ শৃঙ্গ এভারেস্টে আরোহণ করে বাংলাদেশের পতাকা উড়িয়েছেন। নিল আর্মস্ট্রং যেদিন চাঁদে যান সেদিন মার্কিন পতাকা চাঁদে উড়িয়েছেন। রুশ বিপ্লবের শততম বার্ষিকীতে পৃথিবীর অনেক দেশে লাল পতাকা মিছিল হয়েছে।
ক. যৌগিক বচন কী?
খ. প্রাকল্পিক বচন বলতে কী বোঝ?
গ. উদ্দীপকে পতাকা দ্বারা পাঠ্যপুস্তকের কোন বিষয়ের ইঙ্গিত রয়েছে?
ঘ. উদ্দীপকে নির্দেশিত বিষয়টির উপযোগিতা বিশ্লেষণ করো।

৪ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. একাধিক সরল বচন যুক্ত হয়ে যে বচন গঠন করে তাকে যৌগিক বচন বলে।

খ. যে সাপেক্ষ যুক্তিবাক্য যদি....তাহলে বা এর কোনো সমার্থক শব্দ দ্বারা গঠিত হয় তাকে প্রাকল্পিক বচন বা যুক্তিবাক্য বলে।
যেমন: 'যদি মেঘ হয় তাহলে বৃষ্টি হবে' - এই যুক্তিবাক্যটি একটি প্রাকল্পিক যুক্তিবাক্য। প্রাকল্পিক যুক্তিবাক্যের দুটি অংশ থাকে। এর প্রথম অংশকে বলা হয় পূর্বর্গ এবং দ্বিতীয় অংশকে বলা হয় অনুগ। এই পূর্বগ ও অনুগ শর্ত দ্বারা যুক্ত হয়ে প্রাকল্পিক যুক্তিবাক্য গঠন করে।

গ. উদ্দীপকের পতাকা দ্বারা পাঠ্যপুস্তকের প্রতীকের ইঙ্গিত রয়েছে।
যুক্তিবিদ্যায় প্রতীক খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। কোনো কিছু নির্দেশ করার জন্য, বোঝার জন্য, চিনে নেওয়ার জন্য বা সহজে প্রকাশ করার জন্য ইচ্ছাকৃতভাবে যে চিহ্ন বা সংকেত ব্যবহার করা হয় তাকে প্রতীক বলে। যেমন: '+', ' - ', 'x', স্ট ইত্যাদি হলো গণিতের প্রতীক। আবার, P, S ও M হচ্ছে যুক্তিবিদ্যায় যথাক্রমে প্রধান পদ, অ-প্রধান পদ ও মধ্যপদের প্রতীক। এমনিভাবে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিভিন্ন রকম প্রতীক ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
উদ্দীপকে যে 'পতাকা'-এর কথা বলা হয়েছে সেটিও প্রতীক। কেননা বাংলাদেশের 'পতাকা' হচ্ছে আমাদের দেশের প্রতীক। তেমনিভাবে অন্যান্য দেশের পতাকাও সেসব দেশের প্রতীক। কেবল যুক্তিবিদ্যা নয় বিভিন্ন ক্ষেত্রেই প্রতীক ব্যবহৃত হয়ে থাকে এবং এটি খুবই গুরুত্ব বহন করে।

ঘ. উদ্দীপকের মাধ্যমে প্রতীকের বিষয়টি নির্দেশিত হয়েছে। বাস্তব জীবনে প্রতীকের বিভিন্ন উপযোগিতা পরিলক্ষিত হয়।
আমাদের চিন্তা-ভাবনা, অনুভূতি অপরের কাছে প্রকাশ করার জন্যই আমরা ভাষা ব্যবহার করি। কিন্তু কথ্য ও লেখ্য ভাষার মধ্যে নানা অস্পষ্টতা ও জটিলতা রয়েছে। ফলে কখনো কখনো মনের ভাব যথাযথভাবে প্রকাশ করা সম্ভব হয় না। শুধু তাই নয়, ব্যাকরণসম্মত ভাষাও অনেক ক্ষেত্রে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে। যেমন- সরকার হন রাষ্ট্রের পরিচালক, রফিক সাহেব হন সরকার। অতএব, রফিক সাহেব হন রাষ্ট্রের পরিচালক। এ যুক্তিটিতে 'সরকার' শব্দটির অর্থ নিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হতে পারে। কেননা বাংলা ভাষায় 'সরকার' বলতে আমরা যেমন রাষ্ট্রের পরিচালককে বুঝি, তেমনি 'সরকার' বলতে কোনো মানুষের বংশগত পদবিকেও বোঝানো হয়। এ সমস্যা সমাধানকল্পে যুক্তিবিদরা ভাব প্রকাশের বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে প্রতীকের প্রচলন করেন। প্রতীক ব্যবহারের মাধ্যমে সহজেই যুক্তির আকার নির্ধারণ করা যায়। যুক্তির আকার নির্ধারণ বলতে কোনো একটি যুক্তি কোন প্রকৃতির তা নির্ধারণ করাকে বোঝায়। একটি যুক্তির আকার নির্ধারণ করতে পারলে যুক্তিটির বৈধতা নির্ণয় খুব সহজ হয়ে যায়। পাশাপাশি প্রতীক ব্যবহারের মাধ্যমে ভাষাগত জটিলতা দূর করা সম্ভব হয়। কেননা ভাষায় বিভিন্ন শব্দ ও বাক্য অনেক জটিলতা সৃষ্টি করে। প্রতীক ব্যবহারের মাধ্যমে ভাষার এসব জটিলতা দূর হয়।
উদ্দীপকে বাংলাদেশের পতাকা বাংলাদেশকে মার্কিন পতাকা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে এবং লাল পতাকা রুশ বিপ্লবকে নির্দেশ করে। এক্ষেত্রে পতাকাগুলো প্রতীক আকারে ব্যবহৃত হওয়ায় অর্থ নিয়ে কোনো বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয় না।
সুতরাং আলোচনা শেষে বলা যায় যে, প্রতীকের উপযোগিতার গুরুত্ব অপরিসীম। এ কারণেই ব্রিটিশ দার্শনিক Alfred North Whitehead তাঁর An Introduction to Mathematics নামের গ্রন্থে বলেন- 'প্রতীক ব্যবহারের সাহায্যে যুক্তিপদ্ধতিকে আমরা যান্ত্রিক পদ্ধতিতে রূপান্তরিত করি, চোখ দিয়েই যার সমাধান করা যায়। অন্যথায় তার জন্য মস্তিষ্কের উন্নততর অংশকে কাজে লাগাতে হতো।'

৫. দৃষ্টান্ত-১: P . Q
দৃষ্টান্ত-২: যদি পড়ালেখা কর, তবে পরীক্ষায় পাস করবে। পড়ালেখা করোনি।
অতএব, পরীক্ষায় পাস করোনি।
ক. প্রতীক কাকে বলে?
খ. সকল সংকেতকে প্রতীক বলা যায় না কেন?
গ. দৃষ্টান্ত-১ এবং দৃষ্টান্ত ২ দ্বারা কোন বিষয়টি নির্দেশ করছে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকে দৃষ্টান্ত-১ দ্বারা যা বোঝানো হয়েছে তার সাথে সাবেকী যুক্তিবিদ্যার পার্থক্য উল্লেখ করো।

৫ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. কোনো বক্তব্য বা বিষয়কে সংক্ষেপে প্রকাশ করার জন্য যে চিহ্নব্যবহার করা হয় তাকে প্রতীক বলে।

খ. সব সংকেতকে প্রতীক বলা যায় না।
সংকেত হলো এক প্রকার চিহ্ন। যদি কোনো চিহ্ন স্বাভাবিকভাবে ব্যবহৃত হতে হতে কোনো বিশেষ বিষয়কে প্রতিনিধিত্ব করে বা কোনো লক্ষণ, উপস্থিতি নির্দেশ করে তখন তাকে ঐ বিষয়ের সংকেত বলে। সব প্রতীককে সংকেত হিসেবে অভিহিত করা যায়। কিন্তু সকল সংকেত ইচ্ছা ও পরিকল্পনা অনুযায়ী ব্যবহৃত হয় না। তাই সব সংকেত প্রতীক নয়।

গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত দৃষ্টান্ত-১ দিয়ে প্রতীকী যুক্তিবিদ্যা এবং দৃষ্টান্ত-২ দিয়ে সাবেকী যুক্তিবিদ্যার বিষয়টিকে নির্দেশ করা হয়েছে।
যুক্তিবিদ্যার যে শাখায় প্রতীক প্রবর্তনের মাধ্যমে বাক্যের সত্যতা বা মিথ্যাত্ব এবং যুক্তির বৈধতা বা অবৈধতা নিরূপণ করা হয়, তাকে প্রতীকী যুক্তিবিদ্যা বলে। এই যুক্তিবিদ্যায় প্রতীক ব্যবহার করে সহজেই যৌগিক বাক্যের সত্যমূল্য এবং যুক্তির বৈধতা বা অবৈধতা নিরূপণ করা হয়। অপরদিকে, গতানুগতিক সনাতনী ও এরিস্টটলীয় যুক্তিবিদ্যাকে সাবেকী যুক্তিবিদ্যা বলে। সাবেকী যুক্তিবিদ্যা একটি নির্দিষ্ট আদর্শের আলোকে অবৈধ যুক্তি থেকে বৈধ যুক্তির পার্থক্য নির্ণয় করে।
উদ্দীপকে উল্লিখিত দৃষ্টান্ত-১ এ P . Q এর .(Dot) দিয়ে এবং, ও, আর, কিন্তু বোঝানো হয়। যেমন- রহিম এবং করিম মেধাবী বাক্যটিকে P.Q দিয়ে সংক্ষেপে প্রকাশ করা হয়। তাই এটি প্রতীকী যুক্তিবিদ্যা। অপরদিকে, যদি পড়ালেখা কর, তবে পরীক্ষায় পাস করবে; পড়ালেখা করেনি অতএব, পরীক্ষায় পাস করেনি। যুক্তিবাক্যের মাধ্যমে যুক্তির পার্থক্য নির্ণয় করে সিদ্ধান্তে উপনীত হয় তাই এটা সাবেকী যুক্তিবিদ্যা।

ঘ. উদ্দীপকে নির্দেশিত প্রতীকী যুক্তিবিদ্যার সাথে সাবেকী যুক্তিবিদ্যার বেশকিছু পার্থক্য লক্ষ করা যায়।
গতানুগতিক, সনাতনী ও এরিস্টটলীয় যুক্তিবিদ্যাকে সাবেকী যুক্তিবিদ্যা বলে। অপরদিকে সাবেকী যুক্তিবিদ্যার আকারগত দিককে যখন প্রতীকের মাধ্যমে প্রকাশ করা হয় তখন তাকে প্রতীকী যুক্তিবিদ্যা বলে। প্রাচীন যুগে এরিস্টটলের সময় থেকে শুরু হয়ে বর্তমান পর্যন্ত সাবেকী যুক্তিবিদ্যার ইতিহাস বিসত্মৃত। অন্যদিকে গাণিতিক ধারা হিসেবে যুক্তিবিদ্যায় প্রতীকের ব্যবহার হচ্ছে মূলত আধুনিক যুগ থেকে।
সাবেকী যুক্তিবিদ্যায় অবৈধ যুক্তি থেকে বৈধ যুক্তির পার্থক্য নির্ণয় করা হয়। কিন্তু প্রতীকী যুক্তিবিদ্যায় নির্দিষ্ট প্রতীক ব্যবহারের মাধ্যমে যুক্তির অন্তর্গত বাক্যের সত্যতা মিথ্যাত্ব নির্ণয় করা হয়। সাবেকী যুক্তিবিদ্যায় যেখানে সীমিত পরিসরে প্রতীকের ব্যবহার হয়, সেখানে প্রতীকী যুক্তিবিদ্যায় কেবলই প্রতীক ব্যবহার হয়। যেমন- সাবেকী যুক্তিবিদ্যার ক্ষেত্রে বলা হয়, 'যদি বৃষ্টি হয় তাহলে মাটি ভিজবে'। অপরদিকে প্রতীকী যুক্তিবিদ্যায় P ⊃ Q লিখেই বিষয়টি প্রকাশ করা হয়। সাবেকী যুক্তিবিদ্যা হলো যুক্তিবিদ্যার মৌলিক ও প্রাথমিক দিক। পক্ষান্তরে প্রতীকী যুক্তিবিদ্যা হলো এর আধুনিক ও প্রায়োগিক দিক। আবার সাবেকী যুক্তিবিদ্যায় বিষয়বস্তু (পদ, যুক্তিবাক্য, যুক্তি) ব্যাখ্যা করা হয় ব্যাকরণগত দিক থেকে। কিন্তু প্রতীকী যুক্তিবিদ্যার বিষয়বস্তু (বচন, যুক্তি ও এদে আকার) ব্যাখ্যা করা হয় গাণিতিক দিক থেকে।
সুতরাং উপরের আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়, সাবেকী ও প্রতীকী যুক্তিবিদ্যার মধ্যে বিষয়বস্তুগত কোনো পার্থক্য নেই; তাদের পার্থক্য কেবল বিষয়বস্তু প্রকাশ করার পদ্ধতিতে।

৬. রহমত সাহেব দেশের নামকরা 'সাংবাদিক'। তার মেয়ে গণিত অলিম্পিয়াডে +, -, x + চিহ্নের খেলায় পুরস্কার লাভ করেছে। তিনি মেয়ের কাছে জানতে চাইলেন যে, x2 = কত? মেয়ে বলল, x-এর মান না জানলে এর মান নির্ণয় করা সম্ভব নয়। মেয়েরা কথা শুনে তিনি খুব খুশি হলেন।
ক. প্রতীক কাকে বলে?
খ. সত্যতা ও বৈধতা কি একই বিষয়? বুঝিয়ে লেখ
গ. রহমত সাহেবের পেশা প্রতীকের কোন নির্দেশ করে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. মেয়ের খেলা এবং বাবার জিজ্ঞাসা প্রতীকের আলোকে মূল্যায়ন করো।

৬ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. প্রতীক হলো এমন একটি চিহ্ন যা কোনো কিছু নির্দেশ করে।

খ. সত্যতা আর বৈধতা একই বিষয় নয়।
বাস্তব ঘটনার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ বিষয় হলো সত্যতা। আর বৈধতা হলো যুক্তিবাক্যের নিয়মের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ। সত্যতা হচ্ছে বচনের বৈশিষ্ট্য কিন্তু বৈধতা হচ্ছে যুক্তির বৈশিষ্ট্য। এক্ষেত্রে সকল যুক্তিবাক্য সত্য হলেও বৈধতার বিচারে ভ্রান্ত হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। আবার সত্যতা বাক্যের আকারগত ও বস্তুগত উভয় দিকের ওপর নির্ভর করে। কিন্তু বৈধতা কেবল আকারগত দিকের ওপর নির্ভরশীল। অর্থাৎ উভয়ই যুক্তিবিদ্যার অন্তর্ভুক্ত হলেও এরা পরস্পর আলাদা।

গ. সাংবাদিক রহমত সাহেবের পেশা শাব্দিক প্রতীককে নির্দেশ করে।
কোনো কিছুকে নির্দেশ করার জন্য যে লিখিত বা কথিত চিহ্ন ব্যবহার করা হয় তাকে প্রতীক বলে। প্রতীক দুই প্রকার। যথা- শাব্দিক প্রতীক ও অশাব্দিক প্রতীক। ভাষায় ব্যবহৃত প্রতীককে শাব্দিক প্রতীক বলে। যখন কোনো শব্দ কোনো কিছুর প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত হয়, তখন তাকে শাব্দিক প্রতীক বলে। যেমন- বাড়ি, গাড়ি, চেয়ার শব্দগুলো হলো দ্রব্যের প্রতীক। শাব্দিক প্রতীকগুলো অস্পষ্ট ও দ্ব্যর্থক হয়। এই প্রতীকের সাহায্যে বক্তা সব সময় তার চিন্তা ও আবেগকে শ্রোতার নিকট সঠিকভাবে প্রকাশ করতে পারে না। যেমন- ধর্ম শব্দটি কোনো সুনির্দিষ্ট বিষয়কে বোঝায় না। সেজন্য ধর্ম সম্পর্কে যে কোনো আলোচনা প্রায়ই অযৌক্তিক বিতর্কে পরিণত হয়।
উদ্দীপকে দেখা যায়, রহমত সাহেব একজন সাংবাদিক। এখানে 'সাংবাদিক' শব্দটি একটি পেশার প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। তাই এই শব্দটি একটি শাব্দিক প্রতীক।

ঘ. প্রতীক ধারণার ক্ষেত্রে মেয়ের গণিত অলিম্পিয়াড খেলাকে ধ্রুবক প্রতীকের সাথে এবং বাবার জিজ্ঞাসাকে গ্রাহক প্রতীকের সাথে তুলনা করা যায়। উভয়ই অশাব্দিক প্রতীকের উদাহরণ।
গ্রাহক প্রতীক হচ্ছে এমন একটা প্রতীক যা কোনো একটি বিষয়ের প্রতিনিধিত্ব করে। আর ধ্রুবক প্রতীক হচ্ছে এমন একটা প্রতীক যা বাক্যের অপরিবর্তনীয় আকারকে সংক্ষেপে প্রকাশ করতে ব্যবহৃত হয়। রহমত সাহেব মেয়ের কাছে জানতে চায় x2 = কত?। এখানে x2 রহমত সাহেবের জিজ্ঞাসার প্রতিনিধিত্ব করছে তাই এটাকে গ্রাহক প্রতীক বলা যায়। অন্যদিকে রহমত সাহেবের মেয়ে গণিত অলিম্পিয়াডের +, -, ×, ÷ চিন্তের খেলায় প্রথম পুরস্কার লাভ করেছে। গণিতের +, -, x, ÷ এই চিহ্নগুলো সর্বদা অপরিবর্তনীয় বলে এগুলোকে আমরা ধ্রুবক প্রতীক বলতে পারি।
গ্রাহক প্রতীকের নিজস্ব কানো অর্থ নেই। এটি কেবল একটি স্থান নির্দেশক চিহ্ন। রহমত সাহেবের জিজ্ঞাসার x2 প্রতীকের নিজস্ব কোনো অর্থ নেই। কিন্তু মেয়ের খেলায় ব্যবহৃত প্রতীকগুলো (+, -, ×, ÷) ধ্রুবক প্রতীক হওয়ায় এগুলোর নিজস্ব অর্থ রয়েছে এবং সেই অর্থ অপরিবর্তনীয়।
আধুনিক প্রতীকী যুক্তিবিদ্যা এবং গণিতে গ্রাহক প্রতীক ধ্রুবক প্রতীকের ব্যবহার খুব গুরুত্বপূর্ণ। ভাষার অস্পষ্টতা ও দ্ব্যর্থকতা নিরসনে গ্রাহক প্রতীক ও ধ্রুবক প্রতীক ব্যবহার করা হয়। উদ্দীপকে বাবার জিজ্ঞাসা ও মেয়ের খেলার পদ্ধতি প্রকাশে এই প্রতীক দুটির ব্যবহার করা হয়েছে যার থেকে আমরা বাবার জিজ্ঞাসা ও মেয়ের খেলার পদ্ধতি সম্পর্কে একটি সংক্ষিপ্ত ও পূর্ণাঙ্গ ধারণা পাই।

৭. দিপ্তা কলেজে যাওয়ার জন্য বাসা থেকে বের হচ্ছে এমন সময় হঠাৎ আকাশে ঘন কালো মেঘ দেখা যায় এবং মেঘের গর্জন শুনতে পায়। সে দ্রম্নত রিকশা নিয়ে যাচ্ছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই সে রাস্তার পাশে তীর চিহ্ন দেওয়া তার স্কুলের নামের প্ল্যাকার্ড দেখতে পায় এবং বৃষ্টি শুরুর আগেই স্কুলে পৌঁছে যায়
ক. জর্জবুলের মতে প্রতীক কী?
খ. দৈনন্দিন জীবনে প্রতীকের ব্যবহার প্রয়োজন কেন?
গ. উদ্দীপকে উল্লেখিত প্ল্যাকার্ডটি কোন বিষয়কে ইঙ্গিত করছে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকে যে দুটি বিষয়ের প্রকাশ ঘটেছে তাদের মধ্যে পার্থক্য দেখাও।

৭ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. জর্জ বুলের মতে- সংকেতিক ভাষার মাধ্যমেই চিন্তার নিয়মাবলি সঠিকভাবে প্রকাশ করা যায়। আর চিন্তার উপাদান হলো প্রতীক বা চিহ্ন।

খ. সুশৃঙ্খল ও সহজ জীবনযাপনের জন্য দৈনন্দিন জীবনে প্রতীকের ব্যবহার প্রয়োজন।
কোনো কিছু নির্দেশ করার জন্য বা বোঝার জন্য যে চিহ্ন ব্যবহার করা তাকে প্রতীক (Symbol) বলে। মাথায় টুপি ও পাগড়ি, সিঁদুর ব্যবহার বিশেষ ধর্মীয় ও সামাজিক স্বীকৃতির প্রতীক হিসেবে কাজ করে। জলোচ্ছ্বাস ও ঘূর্ণিঝড়ের সময় সাইরেনের বিভিন্ন শব্দ দুর্যোগের মাত্রার প্রতীক হিসেবে কাজ করে। তেমনিভাবে ট্রাফিকের লালবাতি চলন্ত গাড়ির প্রতিরোধের প্রতীক হিসেবে কাজ করে। এ কারণেই আমাদের দৈনন্দিন জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রতীকের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য।

গ. উদ্দীপকের প্ল্যাকার্ড দ্বারা পাঠ্যপুস্তকের প্রতীকের ইঙ্গিত রয়েছে।
যুক্তিবিদ্যায় প্রতীক খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। কোনো কিছু নির্দেশ করার জন্য, বোঝার জন্য, চিনে নেওয়ার জন্য বা সহজে প্রকাশ করার জন্য ইচ্ছাকৃতভাবে যে চিহ্ন বা সংকেত ব্যবহার করা হয় তাকে প্রতীক বলে। যেমন: '+', 'x', ÷ ইত্যাদি হলো গণিতের প্রতীক। আবার, P, S ও M হচ্ছে যুক্তিবিদ্যায় যথাক্রমে প্রধান পদ, অ-প্রধান পদ ও মধ্যপদের প্রতীক। এমনিভাবে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিভিন্ন রকম প্রতীক ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
উদ্দীপকে যে 'পস্নাকার্ড'-এর কথা বলা হয়েছে সেটিও প্রতীক। কেননা বাংলাদেশের 'পতাকা' হচ্ছে আমাদের দেশের প্রতীক। তেমনিভাবে অন্যান্য দেশের পতাকাও সেসব দেশের প্রতীক। কেবল যুক্তিবিদ্যা নয় বিভিন্ন ক্ষেত্রেই প্রতীক ব্যবহৃত হয়ে থাকে এবং এটি খুবই গুরুত্ব বহন করে।

ঘ. উদ্দীপকে প্রতীক ও সংকেতের বিষয় দুটি প্রকাশ পেয়েছে।
কোনো কিছুকে নির্দেশ করার, বোঝার এবং ব্যক্ত করার জন্য যে চিহ্ন ব্যবহার করা হয় তাকে প্রতীক বলে। অর্থাৎ প্রতীক সর্বদাই কৃত্রিম। যেমন- জাতীয় পতাকা হচ্ছে আমাদের জাতীয়তা, সার্বভৌমত্ব ও স্বাধীনতার প্রতীক। অন্যদিকে, কোনো বিষয় যখন নির্দিষ্ট কিছুর আভাস দেয় তখন তাকে সংকেত বলে। উদ্দীপকে বর্ণিত ঘটনায় আকাশে ঘন কালো মেঘ ঝড়-বৃষ্টির সংকেত বহন করে। কারণ আকাশে মেঘ দেখলে আমরা ধারণা করি, বৃষ্টি হতে পারে। তেমনিভাবে বাসস্ট্যান্ডের স্টার্টারের হুইসেল গাড়ি ছাড়ার সংকেত হিসেবে কাজ করে। অর্থাৎ সংকেত প্রাকৃতিক ও কৃত্রিম উভয় হতে পারে।
প্রতীক সর্বদা মানুষের ব্যবহার ও ব্যাখ্যার ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু সংকেত মানুষের ব্যবহার বা ব্যাখ্যার ওপর নির্ভরশীল নয়। যেমন- উদ্দীপকে বর্ণিত প্ল্যাকার্ডটি একটি নির্দেশসূচক চিহ্ন হিসেবে কাজ করে। এ চিহ্নের তাৎপর্য যখন ব্যাখ্যা করা হয় তখনই এর অর্থ আমাদের কাছে সুস্পষ্ট হয়। অন্যদিকে, সংকেত হিসেবে আকাশের মেঘ ঝড়-বৃষ্টির প্রতিনিধিত্ব করে। এটা আমাদের ব্যাখ্যার ওপর নির্ভর করে না। কারণ আকাশে মেঘ দেখলে যে কেউ ধারণা করে যে বৃষ্টি হতে পারে। অর্থাৎ প্রতীক হচ্ছে সুপরিকল্পিত। কিন্তু সংকেত হলো অপরিকল্পিত।
পরিশেষে বলা যায়, সব ধরনের প্রতীক সংকেতের মর্যাদা পেলেও সকল সংকেত প্রতীকের মর্যাদা পায় না। উদ্দীপকে বর্ণিত কালো মেঘকে আমরা বৃষ্টির সংকেত বললেও বৃষ্টির প্রতীক বলতে পারি না। এ কারণেই প্রতীক ও সংকেত দুটি আলাদা বিষয়।

৮. রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা থাকলে, দেশের অর্থনৈতিক উন্নতি অব্যাহত থাকে এবং দেশের সমৃদ্ধি হয়। দেশের সমৃদ্ধি না হলে, মানুষ ভালো থাকে না এবং মানুষের জীবনযাত্রা নিম্নগামী হয়। কাজেই মানুষের জীবনযাত্রা নিম্নগামী হবে না, যদি এবং কেবল যদি রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা থাকে অথবা দেশের সমৃদ্ধি হয়।
ক. সত্য সারণি কী?
খ. সরল ও যৌগিক বাক্য বলতে কী বোঝায়?
গ. উদ্দীপকে কোন কোন বাক্যের উল্লেখ রয়েছে? বাক্যগুলোর যথাযথ আকার দিয়ে প্রতিটির প্রতীকী রূপ দাও।
ঘ. পাঠ্যপুস্তক অনুসারে উদ্দীপকে ব্যক্ত বাক্যগুলোর স্বরূপ ব্যাখ্যা করো।

৮ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. যে সারণি ব্যবহার করে যৌক্তিক যোজকের অর্থ ও তাৎপর্য, বাক্য ও বাক্যাকারের সত্যমান এবং যুক্তির বৈধতা বা অবৈধতা নির্ধারণ করা হয়, তাকে সত্য সারণি বলে।

খ. যে বাক্যে একাধিক অবস্থা বা ঘটনা বিবৃত হয় এবং যেখানে একাধিক বক্তব্য নিহিত থাকে তাকে সরল বাক্য বলে। যেমন- 'রাসেল হন দার্শনিক।' -এ বাক্যে কেবল রাসেলের দার্শনিক হওয়ার বিষয়টি ব্যক্ত হয়েছে। কাজেই এটি একটি সরল বাক্য।
আর যে বাক্যে একাধিক অবস্থা বা ঘটনা বিবৃত হয় এবং যেখানে একাধিক বক্তব্য নিহিত থাকে, তাকে যৌগিক বাক্য বলে। যেমন: রাসেল হন দার্শনিক এবং সাহিত্যিক।

গ. উদ্দীপকে যথাক্রমে সংযৌগিক, সমমানিক এবং বৈকল্পিক বাক্যের উল্লেখ রয়েছে।
১ম বাক্যটি হলো সংযৌগিক বাক্য এবং এর প্রতীকী রূপ হলো→ p.q। ২য় বাক্যটিও হলো সংযৌগিক বাক্য এবং এর প্রতীকী রূপ হলো → pq। ৩য় বাক্যটি হলো সমমানিক বাক্য এবং বৈকল্পিক বাক্য। যার প্রতীকী রূপ হলো→ p≡q এবং p v q।
উদ্দীপকে ৩টি বাক্যের উল্লেখ আছে এবং তিনটি বাক্যের ১ম টি হলো সংযৌগিক বাক্য। যেমন- রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা থাকলে দেশের অর্থনৈতিক উন্নতি অব্যাহত থাকে এবং দেশের সমৃদ্ধি হয়। ২য় বাক্যটি সংযৌগিক বাক্য। যেমন- দেশের সমৃদ্ধি না হলে মানুষ ভালো থাকে না এবং মানুষের জীবনযাত্রা নিম্নগামী হয়। ৩য় বাক্যটি একাধারে সমমানিক ও বৈকল্পিক বাক্য। যেমন: কাজেই মানুষের জীবন যাত্রা নিম্নগামী হবে না, যদি এবং কেবল যদি রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা থাকে অথবা দেশের সমৃদ্ধি হয়।

ঘ. উদ্দীপকে যে বাক্যগুলো ব্যক্ত হয়েছে সেগুলো হলো→ সংযৌগিক, সমমানিক এবং বৈকল্পিক বাক্য।
যে যৌগিক যুক্তিবাক্যে তার অংশগুলো এবং, ও, আর, কিংবা ইত্যাদি যোজক দ্বারা সংযোজিত হয় তাকে সংযৌগিক যুক্তিবাক্য বলে। যেমন: সে চা খায় এবং কফি খায়। এখানে
সে চা খায় = p
সে কফি খায় = q
এবং এর প্রতীকী রূপ হলো→ p.q। অন্যদিকে, যে যৌগিক যুক্তিবাক্যে একাধিক সরল যুক্তিবাক্য পরস্পর বিকল্প হিসেবে হয় না হয়, অথবা ইত্যাদি বিকল্প সূচক শব্দ দ্বারা সংযুক্ত করা হয় তাকে বৈকল্পিক যুক্তিবাক্য বলে। যেমন: সে চা খায় অথবা কফি খায়। এর প্রতীকী রূপ হলো → p v q। আর যে যৌগিক যুক্তিবাক্য 'যদি এবং কেবল যদি' কিংবা অনুরূপ কোনো সমার্থক শব্দ দ্বারা দুই বা ততোধিক সরল যুক্তিবাক্যকে যুক্ত করা হয়, তাকে সমমানিক যুক্তিবাক্য বলে। যেমন: সে সম্মানিত হবে যদি এবং কেবল যদি সে সৎ হয়। বাক্যটির প্রতীকী রূপ হলো p ≡ q।
উদ্দীপকের আলোকে সংযৌগিক বাক্য দ্বারা সর্বদা বাক্যকে যুক্ত করা হয়, বৈকল্পিক বাক্য দ্বারা বাক্যের বিকল্প ধারার উল্লেখ করা হয় এবং সমমানিক বাক্য সমার্থক শব্দ বা দুই বা ততোধিক সরল যুক্তিবাক্যকে যুক্ত করা হয়।
পরিশেষে বলা যায় যে, উদ্দীপকে আলোচিত তিনটি বাক্যই দৈনন্দিন জীবনের যৌক্তিক ব্যাখ্যায়ও বিজ্ঞানসম্মত আলোচনার ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

৯. দৃষ্টান্ত-১ দৃষ্টান্ত-২
ছাত্রটি মেধাবী অথবা চালাক। pvq
ছাত্রটি চালাক। p
অতএব, ছাত্রটি মেধাবী অতএব, q
ক. প্রতীক কী?
খ. সব সংকেত প্রতীক নয় কেন? ব্যাখ্যা করো।
গ. উদ্দীপকে বর্ণিত দৃষ্টান্ত-১ এর প্রথম সারিতে কোন ধরনে যৌগিক বচনের ইঙ্গিত রয়েছে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. দৃষ্টান্ত-১ ও দৃষ্টান্ত-২ এ যুক্তিবিদ্যার যে দুটি বিষয়ের প্রতিফলন ঘটেছে তাদের পার্থক্য বর্ণনা করো।

৯ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. কোনো কিছু নির্দেশ করার জন্য, বোঝার জন্য, চিনে নেওয়ার জন্য বা সহজে প্রকাশ করার জন্য ইচ্ছাকৃতভাবে যে চিহ্ন বা সংকেত ব্যবহার করা হয় তাকে প্রতীক বলে।

খ. সব সংকেতকে প্রতীক বলা যায় না।
সংকেত হলো এক প্রকার চিহ্ন। যদি কোনো চিহ্ন স্বাভাবিকভাবে ব্যবহৃত হতে হতে কোনো বিশেষ বিষয়কে প্রতিনিধিত্ব করে বা কোনো লক্ষণ, উপস্থিতি নির্দেশ করে তখন তাকে ঐ বিষয়ের সংকেত বলে। সব প্রতীককে সংকেত হিসেবে অভিহিত করা যায়। কিন্তু সকল সংকেত ইচ্ছা ও পরিকল্পনা অনুযায়ী ব্যবহৃত হয় না। তাই সব সংকেত প্রতীক নয়।

গ. উদ্দীপকে বর্ণিত দৃষ্টান্ত-১-এর প্রথম সারিতে বৈকল্পিক বচনের ইঙ্গিত রয়েছে।
যৌগিক বচনে একাধিক সরল বচন যুক্ত থাকে এবং সরল বচনগুলো বিভিন্ন প্রকার যোজক দ্বারা যুক্ত হয়ে যৌগিক বাক্য গঠন করে। আর যখন একাধিক সরল বচন হয়....না হয় ইত্যাদি যোজক দ্বারা যুক্ত হয়ে যৌগিক বচন গঠন করে তখন তাকে বৈকল্পিক যুক্তিবাক্য বলে। যেমন- হাসান হয় ঢাকা যাবে না হয় খুলনা যাবে' এই যৌগিক বাক্যটি একটি বৈকল্পিক বাক্য। কেননা এখানে দুটি সরল বচন বৈকল্পিক যোজক দ্বারা যুক্ত হয়ে যৌগিক বাক্য গঠন করেছে।
উদ্দীপকের প্রথম সারির যৌগিক বাক্যটি হচ্ছে, ছাত্রটি মেধাবী অথবা চালাক'। এই যৌগিক বাক্যটিতে দুটি সরল বাক্য বৈকল্পিক যোজক দ্বারা যুক্ত হয়েছে। তাই দৃষ্টান্ত-১-এর প্রথম সারির বাক্যটি বৈকল্পিক যুক্তিবাক্যকে প্রকাশ করেছে।

ঘ. দৃষ্টান্ত-১ ও দৃষ্টান্ত-২-এর মাধ্যমে যথাক্রমে সাবেকী যুক্তিবিদ্যা ও প্রতীকী যুক্তিবিদ্যার প্রতিফলন ঘটেছে।
গতানুগতিক সনাতনী ও এরিস্টটলীয় যুক্তিবিদ্যাকে সাবেকী যুক্তিবিদ্যা বলে। অপরদিকে সাবেকী যুক্তিবিদ্যার আকারগত দিককে যখন প্রতীকের মাধ্যমে প্রকাশ করা হয় তখন তাকে প্রতীকী যুক্তিবিদ্যা বলে। প্রাচীন যুগে এরিস্টটলের সময় থেকে শুরু হয়ে বর্তমান পর্যন্ত সাবেকী যুক্তিবিদ্যার ইতিহাস বিসত্মৃত। অন্যদিকে গাণিতিক ধারা হিসেবে যুক্তিবিদ্যায় প্রতীকের ব্যবহার হচ্ছে মূলত আধুনিক যুগ থেকে।
সাবেকী যুক্তিবিদ্যায় অবৈধ যুক্তি থেকে বৈধ যুক্তির পার্থক্য নির্ণয় করা হয়। কিন্তু প্রতীকী যুক্তিবিদ্যায় নির্দিষ্ট প্রতীক ব্যবহারের মাধ্যমে যুক্তির অন্তর্গত বাক্যের সত্যতা মিথ্যাত্ব নির্ণয় করা হয়। সাবেকী যুক্তিবিদ্যায় যেখানে সীমিত পরিসরে প্রতীকের ব্যবহার হয় সেখানে প্রতীকী যুক্তিবিদ্যায় কেবলই প্রতীক ব্যবহার হয়, যেমন- সাবেকী যুক্তিবিদ্যার ক্ষেত্রে বলা হয় 'যদি বৃষ্টি হয় তাহলে মাটি ভিজবে'। অপরদিকে প্রতীকী যুক্তিবিদ্যায় p ⊃ q লিখেই বিষয়টি প্রকাশ করা হয়। সাবেকী যুক্তিবিদ্যা হলো যুক্তিবিদ্যার মৌলিক ও প্রাথমিক দিক। পক্ষান্তরে আধুনিক ও প্রায়োগিক দিক হলো প্রতীকী যুক্তিবিদ্যা। আবার সাবেকী যুক্তিবিদ্যায় বিষয়বস্তু (পদ, যুক্তিবাক্য, যুক্তি) ব্যাখ্যা করা হয় ব্যাকরণগত দিক থেকে কিন্তু প্রতীকী যুক্তিবিদ্যার বিষয়বস্তু (বচন, যুক্তি ও এদের আকার) ব্যাখ্যা করা হয় গাণিতিক দিক থেকে।
উদ্দীপকের দৃষ্টান্ত-১ এর ছাত্রটি মেধাবী অথবা চালাক' যুক্তিবাক্যটি সাবেকী যুক্তিবিদ্যাকে এবং দৃষ্টান্ত-২ এর ঢ়ায় প্রতীকী যুক্তিবিদ্যাকে নির্দেশ করে।
সুতরাং ওপরের আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায় যে, সাবেকী ও প্রতীকী যুক্তিবিদ্যার মধ্যে বিষয়বস্তুগত কোনো পার্থক্য নেই, তাদের কেবল বিষয়বস্তু প্রকাশ করার পদ্ধতিতে।

১০. দৃষ্টান্ত-১: যদি কোথাও ধোঁয়া থাকে, তাহলে সেখানে পাখি বাস করে।
সাগরে ধোঁয়া থাকে।
অতএব, সাগরে পাখি বাস করে।
দৃষ্টান্ত-২: যদি পড়ালেখা করো, তবে পরীক্ষায় পাস করবে।
পড়ালেখা করনি,
অতএব, পরীক্ষায় পাস করনি।
ক. প্রতীক কাকে বলে?
খ. সকল সংকেতকে প্রতীক বলা যায় না কেন?
গ. দৃষ্টান্ত-১ এর আশ্রয়বাক্য ও সিদ্ধান্তের সত্যতা বিচার করো।
ঘ. দৃষ্টান্ত-১ ও দৃষ্টান্ত-২ এ উপস্থাপিত যুক্তিসমূহের বৈধতা ও অবৈধতার ব্যাপারে তোমার মতামত দাও।

১০ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. কোনো কিছু নির্দেশ করার জন্য, বোঝার জন্য যে চিহ্ন ব্যবহার করা হয় তাকে প্রতীক বলে।

খ. সংকেত শব্দের অর্থ হলো চিহ্ন। সংকেত দুই প্রকার। যথা: স্বাভাবিক সংকেত ও কৃত্রিম সংকেত। স্বাভাবিক সংকেত মানুষের ব্যাখ্যা ও ব্যবহারের ওপর নির্ভরশীল নয়। কিন্তু প্রতীক মানুষের ব্যাখ্যা ও ব্যবহারের ওপর নির্ভরশীল। তাই সব ধরনের সংকেতকে প্রতীক বলা যায় না। কেবল কৃত্রিম সংকেত প্রতীকের মর্যাদা পেতে পারে। কেননা কৃত্রিম সংকেত আমাদের ব্যবহারিক উপযোগিতা নির্দেশ করে। যেমন- ট্রাফিকের লাল বাতি একদিকে প্রতীক এবং অন্যদিকে গাড়ি থামানোর সংকেত হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

গ. দৃষ্টান্ত- ১ এর আশ্রয়বাক্য (Conclusion) সত্যতা বিচার করা হলো-
(Premises) ও সিদ্ধান্তের সত্যতা (Truth) হলো বচনের একটি বিশেষ গুণ। সত্যতা বাস্তব ঘটনার অনুরূপ বিষয়কে নির্দেশ করে। অর্থাৎ কোনো বিষয় বা ঘটনা বাস্তবের অনুরূপ হলে তা সত্য বলে বিবেচিত হবে। অন্যথায় মিথ্যা বলে গণ্য হবে। যেমন- পাঠাগারে বই থাকে। এ বাক্যটি সত্য। কেননা বাস্তবে পাঠাগার হলো বইয়ের আধার। আমরা জানি, অবরোহ অনুমানে আশ্রয়বাক্যগুলো সত্য হলে সিদ্ধান্ত সত্য হয়।
দৃষ্টান্ত- ১ এ আশ্রয়বাক্য ও সিদ্ধান্তের সত্যতা বিচার করতে বলা হয়েছে। বস্তুত এটি একটি অবরোহ অনুমানের দৃষ্টান্ত। যেখানে উল্লেখ করা হয়েছে-
যদি কোথাও ধোঁয়া থাকে, তাহলে সেখানে পাখি বাস করে।
সাগরে ধোঁয়া থাকে।
অতএব, সাগরে পাখি বাস করে।
ওপরের যুক্তিটিতে আশ্রয়বাক্য ও সিদ্ধান্ত মিথ্যা। কেননা, বাস্তবে কোথাও ধোঁয়া থাকলে সেখানে পাখি থাকে না। তাছাড়া সাগর হলো বিশাল জলরাশির ভান্ডার। সেখানে পাখির বাসা থাকার প্রশ্নই ওঠে না। তাই বলা যায় উপযুক্ত যুক্তিটির আশ্রয়বাক্য ও সিদ্ধান্ত মিথ্যা।

ঘ. আমি মনে করি, দৃষ্টান্ত-১ ও দৃষ্টান্ত-২ এ উপস্থাপিত উভয় যুক্তিই বৈধ।
প্রাকল্পিক নিরপেক্ষ সহানুমানের (Hypothetical Categorical Syllogism) ১ম নিয়মানুযায়ী অপ্রধান আশ্রয়বাক্যে, প্রধান আশ্রয়বাক্যের পূর্বর্গকে স্বীকার করে সিদ্ধান্তে অনুগকে স্বীকার করতে হয়। এই নিয়মটি প্রয়োগ করে দৃষ্টান্ত- ১ এর বৈধতা বা অবৈধতা বিচার করা হলো-
দৃষ্টান্ত-১ এ বলা হয়েছে,
যদি কোথাও ধোঁয়া থাকে, তাহলে সেখানে পাখি বাস করে।
সাগরে ধোঁয়া থাকে।
অতএব, সাগরে পাখি বাস করে।
আলোচ্য যুক্তিটি প্রাকল্পিক নিরপেক্ষ সহানুমানের একটি দৃষ্টান্ত। উপর্যুক্ত নিয়মানুযায়ী যুক্তিটি বৈধ। কেননা এতে পূর্ববর্গকে (সাগরে ধোঁয়া থাকে) স্বীকার করা অনুগকে (সাগরে পাখি বাস করে) স্বীকার হয়েছে।
প্রাকল্পিক নিরপেক্ষ সহানুমানের ২য় নিয়মানুযায়ী অপ্রধান আশ্রয়বাক্যে, প্রধান আশ্রয়বাক্যের পূর্বগকে অস্বীকার করে সিদ্ধান্তে অনুগকে অস্বীকার করতে হয়। যেমন-দৃষ্টান্ত-২ এ বলা হয়েছে,
যদি পড়ালেখা করো তাহলে পরীক্ষায় পাস করবে।
পড়ালেখা করনি,
অতএব, পরীক্ষায় পাস করনি।
আলোচ্য যুক্তিটিতে অপ্রধান আশ্রয়বাক্যে, প্রধান আশ্রয়বাক্যের পূর্বপকে (পড়ালেখা করনি) অস্বীকার করে সিদ্ধান্তে অনুগকে (পরীক্ষায় পাস করনি) অস্বীকার করা হয়েছে। এ কারণে যুক্তিটি অবৈধ বলে প্রতিপন্ন হয়েছে।
পরিশেষে বলা যায় যুক্তিবিদ্যা হলো বৈধ যুক্তি থেকে অবৈধ যুক্তিকে পৃথক করার নিয়মাবলি ও পদ্ধতি সংক্রান্ত বিজ্ঞান। এ কারণেই সহানুমানের ১ম ও ২য় নিয়মের সঠিক প্রয়োগের ফলে দৃষ্টান্ত- ১ ও দৃষ্টান্ত- ২ উভয় যুক্তিই বৈধ হিসেবে প্রমাণিত।
Share:

HSC যুক্তিবিদ্যা ২য় পত্র (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর pdf download অধ্যায় ১

HSC যুক্তিবিদ্যা ২য় পত্র (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর pdf download

এইচএসসি পরীক্ষার পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি
HSC Logic 2nd Paper Srijonshil question and answer pdf download.

উচ্চ মাধ্যমিক

যুক্তিবিদ্যা
দ্বিতীয় পত্র

সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
১ম অধ্যায়

HSC Logic 2nd Paper
Srijonshil
Question and Answer pdf download

১. শিক্ষক সুজনকে ‘মানুষ' পদের সংজ্ঞা দিতে বললেন এবং সুজন বললো, ‘‘মানুষ হয় মনুষ্য জাতীয় জীব’’। সোহেল বললো, ‘‘মানুষ হয় শিক্ষিত বুদ্ধিবৃত্তিসম্পন্ন জীব’’। শিক্ষক বললেন, ‘‘তোমাদের দুজনেরই উত্তর ভুল’’।
ক. যৌক্তিক সংজ্ঞা কী?
খ. বৃহত্তম জাতির সংজ্ঞা দেওয়া যায় না কেন?
গ. উদ্দীপকে সুজনের বক্তব্যে যৌক্তিক সংজ্ঞার কোন নিয়মটি লঙ্ঘন করা হয়েছে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকে সোহেলের সংজ্ঞা কি যথার্থ? তোমার পাঠ্যবইয়ের আলোকে বিশ্লেষণ করো।

১ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. কোনো পদের পূর্ণ জাত্যর্থ উল্লেখের মাধ্যমে পদটিকে সহজ, সরল ও স্পষ্টভাবে প্রকাশ করাকে যৌক্তিক সংজ্ঞা বলে।

খ. পরতম বা সর্বোচ্চ পদ হওয়ার কারণে বৃহত্তম জাতির সংজ্ঞা দেওয়া যায় না।
বৃহত্তম জাতি হচ্ছে সর্বোচ্চ জাতি, যা অন্য কোনো জাতির উপজাতি নয়। এ কারণে এরূপ জাতির কোনো আসন্নতম জাতি থাকে না। আর সংজ্ঞায় যেহেতু আসন্নতম জাতির উল্লেখ থাকা অপরিহার্য, তাই আসন্নতম জাতি না থাকার কারণে বৃহত্তম জাতির সংজ্ঞা দেওয়া সম্ভব নয়।

গ. উদ্দীপকে সুজনের বক্তব্যে যৌক্তিক সংজ্ঞার তৃতীয় নিয়মটি লঙ্ঘন করা হয়েছে।
যৌক্তিক সংজ্ঞার তৃতীয় নিয়মানুসারে বলা হয়, ‘সংজ্ঞায় কোনো পদের প্রতিশব্দ বা সমার্থক ভাষা ব্যবহার করা যাবে না’। এই নিয়ম লঙ্ঘন করলে চক্রক সংজ্ঞাজনিত অনুপপত্তি (Circle in definition) ঘটে। যেমন- ‘গাছ হয় বৃক্ষ’, ‘টাকা হয় অর্থ' ইত্যাদি। এসব দৃষ্টান্তে একই পদের সমার্থক বা প্রতিশব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। ফলে সংজ্ঞায় নতুন কিছুই বলা হয়নি। এতে সংজ্ঞেয় পদের অর্থ মোটেই সুস্পষ্ট হয়নি। বরং একই শব্দ একই আবর্তে ফিরে আসায় চক্রক সংজ্ঞাজনিত অনুপপত্তি ঘটেছে।
উদ্দীপকের সুজন বলে, ‘মানুষ হয় মনুষ্যজাতীয় প্রাণী’। এটি একটি ভ্রান্ত সংজ্ঞা। কারণ মানুষের এ সংজ্ঞাটিতে একই কথার পুনরাবৃত্তি ঘটেছে। কেননা 'মানুষ' এবং ‘মনুষ্য’ একই অর্থবোধক শব্দ। কাজেই ‘মনুষ্য’ শব্দটি দ্বারা মানুষকে সংজ্ঞায়িত করায় সংজ্ঞাটি চক্রক সংজ্ঞায় পরিণত হয়েছে। সুতরাং বলা যায়, উদ্দীপকে সুজনের বক্তব্যে যৌক্তিক সংজ্ঞার তৃতীয় নিয়মটি লঙ্ঘন করা হয়েছে।

ঘ. উদ্দীপকের সোহেলের সংজ্ঞা যথার্থ নয়। কারণ তার বক্তব্যে অব্যাপক সংজ্ঞাজনিত অনুপপত্তি ঘটেছে।
সংজ্ঞায় জাত্যর্থের অতিরিক্ত কোনো গুণের উল্লেখ থাকলে এবং তা বিচেছদ্য অবান্তর লক্ষণ (Separable Accident) হলে অব্যাপক সংজ্ঞা অনুপপত্তি বা অতি সংকীর্ণ সংজ্ঞা অনুপপত্তি (Fallacy of Too Narrow Definition) ঘটে। যথাত ‘মানুষ একটা ভদ্র বুদ্ধিবৃত্তিসম্পন্ন জীব।' এ দৃষ্টান্তে মানুষের সংজ্ঞায় ভদ্রতা গুণটার অন্তর্ভুক্তি সংজ্ঞাটাকে সংকীর্ণ করে তুলেছে। কারণ, গুণটা কিছুসংখ্যক মানুষেরই আছে, সব মানুষের নেই।
উদ্দীপকে সোহেল বলে, ‘মানুষ হয় শিক্ষিত বুদ্ধিবৃত্তিসম্পন্ন প্রাণী’। এক্ষেত্রে 'শিক্ষিত' গুণটি হচ্ছে মানুষ পদের বিচ্ছেদ্য অবান্তর লক্ষণ, যা মানুষের সংজ্ঞায় অতিরিক্ত হিসেবে যুক্ত হওয়ার সংজ্ঞাটি অব্যাপক সংজ্ঞায় পরিণত হয়েছে। কারণ মানুষের সংজ্ঞায় ‘শিক্ষিত’ গুণটি যুক্ত করায় কেবল শিক্ষিত শ্রেণি মানুষের অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। আর অশিক্ষিত শ্রেণি মানুষের বহির্ভূত রয়েছে। অথচ শিক্ষিত-অশিক্ষিত উভয় শ্রেণিই মানুষের অন্তর্ভুক্ত। কাজেই ‘শিক্ষিত’ গুণটি মানুষের সংজ্ঞায় ব্যবহার করায় সংজ্ঞাটি ভ্রান্ত হয়েছে।
তাই বলা যায়, উদ্দীপকের সোহেলের বক্তব্যে অব্যাপক সংজ্ঞাজনিত অনুপপত্তি ঘটায় তার সংজ্ঞা যথার্থ নয়।

২. দৃষ্টান্ত-১: ‘‘ন্যায় তাকেই বলে যা অন্যায় নয়।’’
দৃষ্টান্ত-২: ‘‘শৈশব হলো জীবনের প্রভাতকাল।’’
ক. বর্ণনা বলতে কী বোঝ?
খ. মৌলিক গুণের সংজ্ঞা দেওয়া যায় না কেন?
গ. দৃষ্টান্ত-১ এ যৌক্তিক সংজ্ঞার কোন ধরনের অনুপপত্তি ঘটেছে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. দৃষ্টান্ত-২ এর যৌক্তিক সংজ্ঞাটি কি যথার্থ? পাঠ্যবইয়ের আলোকে বিশ্লেষণ করো।

২ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. কোনো পদের উপলক্ষণ বা অবান্তর লক্ষণ অথবা জাত্যর্থের অংশবিশেষ উল্লেখ করে যে বিবৃতি দেওয়া হয় তাকে বর্ণনা বলে।

খ. মৌলিক গুণের অপরিহার্য অর্থ প্রকাশ করা যায় না বলে এ বিষয়ের কোনো সংজ্ঞাও দেওয়া যায় না।
ব্যক্তি বা বস্তুর বিভিন্ন মৌলিক গুণ রয়েছে। যেমন: তিক্ততা, মিষ্টতা, আনন্দ, বেদনা ইত্যাদি। এসব মৌলিক গুণের আসন্নতম জাতি ও বিভেদক লক্ষণ না থাকার কারণে অপরিহার্য অর্থ প্রকাশ করা যায় না। তাই এসব পদের যৌক্তিক সংজ্ঞা দেওয়া সম্ভব নয়।

গ. দৃষ্টান্ত-১ এ যৌক্তিক সংজ্ঞার নঞর্থক অনুপপত্তি ঘটেছে।
কোনো পদের সংজ্ঞায় নর্থক ভাষা ব্যবহার করা হলে সংজ্ঞা ভ্রান্ত বা ত্রুটিপূর্ণ হবে। এরূপ সংজ্ঞাকে বলা হয় নঞর্থক বা নেতিবাচক সংজ্ঞা। যেমন ‘পাপ নয় পুণ্য’, ‘পাখি নয় চতুষ্পদ’। এ সংজ্ঞা দুটোতে ‘পাপ’ ও ‘পাখির’ মধ্যে কী কী বৈশিষ্ট্য আছে তা বলা হয়নি। বরং যে গুণ নেই শুধু তাই উল্লেখ করা হয়েছে। অনুরূপ ভ্রান্তি লক্ষ করা যায় দৃষ্টান্ত-১ এ।
দৃষ্টান্ত-১ এ উল্লেখিত, ‘ন্যায় তাকেই বলে যা অন্যায় নয়।' এ সংজ্ঞায় 'ন্যায়’ কী তা ব্যক্ত হয়নি, বরং ‘ন্যায়’ কী নয় কেবল তাই ব্যক্ত হয়েছে। এতে ন্যায় এর অর্থ সুস্পষ্ট না হয়ে অস্পষ্টই রয়ে গেছে। এরূপ নেতিবাচক অর্থ প্রকাশকারণে বলা যায়, দৃষ্টান্ত-১ এ নঞর্থক সংজ্ঞাজনিত অনুপপত্তি ঘটেছে।

ঘ. দৃষ্টান্ত-২ এর যৌক্তিক সংজ্ঞাটি যথার্থ নয়। কারণ এই সংজ্ঞায় রূপক সংজ্ঞাজনিত অনুপপত্তি ঘটেছে।
যৌক্তিক সংজ্ঞার অন্যতম ভ্রান্ত রূপ হচ্ছে ‘রূপক সংজ্ঞা', যার উদ্ভব ঘটে সংজ্ঞার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য একটি গুরুত্বপূর্ণ নিয়মের লঙ্ঘন থেকে। এই নিয়মের মূলকথা হচ্ছে, কোনো পদের সংজ্ঞাদানের ক্ষেত্রে সেই পদের চেয়ে স্পষ্ট ও সহজ ভাষা ব্যবহার করতে হবে। সংজ্ঞাকে কোনো অবস্থায় দুর্বোধ্য বা রূপক ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। কারণ সংজ্ঞার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে সংজ্ঞেয় পদের অর্থকে সুস্পষ্ট ও সহজবোধ্য করা। কিন্তু কোনো পদের সংজ্ঞা দেওয়ার ক্ষেত্রে রূপক শব্দ ব্যবহার করা হলে পদটি ভিন্ন অর্থ ধারণ করে। এতে সংজ্ঞাটি অস্পষ্ট হয়ে পড়ে। যার ফলে সংজ্ঞার মূল উদ্দেশ্য ব্যাহত হয়। আর এরূপ ক্ষেত্রেই উদ্ভব ঘটে ‘রূপক সংজ্ঞা’ নামক ত্রুটিপূর্ণ সংজ্ঞার।
দৃষ্টান্ত-২ এ বর্ণিত, শৈশব হলো জীবনের প্রভাতকাল। এটি একটি ভ্রান্ত সংজ্ঞা। কারণ এ সংজ্ঞায় ‘শৈশব' পদটির স্বরূপ ব্যক্ত হয়নি, বরং এ ক্ষেত্রে যা ব্যক্ত হয়েছে তা থেকে মানুষের মনে শৈশব পদের একটি ভিন্ন ধারণা পেতে পারে। ফলে এতে সংজ্ঞেয় পদের প্রকৃত অর্থ অস্পষ্ট হয়ে পড়ে। কাজেই সংজ্ঞেয় পদকে সুস্পষ্টভাবে উপস্থাপন করতে হলে এর সংজ্ঞার্থে এমন ভাষা ব্যবহার করতে হবে, যা পদটির অন্তর্নিহিত রূপকে প্রকাশ করে এবং যা মূলত জাত্যর্থের মধ্য দিয়ে প্রকাশিত হয়। অন্যথায় সংজ্ঞাটি রূপক ভাষার অন্তরালে থেকে ভ্রান্তির সৃষ্টি করে।
পরিশেষে বলা বলা যায়, রূপক শব্দ ব্যবহার করার কারণে দৃষ্টান্ত-২ এর যৌক্তিক সংজ্ঞাটি যথার্থ নয়।

৩. অনিক, পাঠান ও মামুন যুক্তিবিদ্যায় ‘মানুষকে’ কীভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে তা নিয়ে আলোচনা করছিল। অনিক বললো, ‘‘মানুষ হলো হাস্যপ্রিয় অনুভূতিপ্রবণ সামাজিক জীব’’। পাঠান বললো, ‘‘মানুষ নয় জড়বস্তু।’’ উভয়ের কথা শুনে মামুন বললো, ‘‘তোমাদের কারো দেওয়া সংজ্ঞা যৌক্তিক হয়নি। কারণ মানুষ হলো বুদ্ধিবৃত্তিসম্পন্ন জীব।’’
ক. যৌক্তিক সংজ্ঞার উপায় কী?
খ. ‘দ্রব্য' পদটির কি যৌক্তিক সংজ্ঞা দেওয়া সম্ভব?
গ. উদ্দীপকের পাঠানের বক্তব্যে সংজ্ঞার কোন ধরনের অনুপপত্তি ঘটেছে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকে অনিক এর সংজ্ঞা থেকে মামুনের সংজ্ঞা কেন পৃথক? বিশ্লেষণ করো।

৩ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. যৌক্তিক সংখ্যার উপায় হলো অপরিহার্য গুণ হিসেবে পদের জাত্যর্থ উল্লেখ করা।

খ. না, দ্রব্য পদটির সংজ্ঞা দেওয়া সম্ভব নয়।
আমরা জানি, দ্রব্য হলো সর্বোচ্চ জাতি। এর চেয়ে ব্যাপকতর জাতি নেই। পাশাপাশি এর কোনো আসন্নতম জাতিও নেই। তাই এ পদের সংজ্ঞা দেওয়া যায় না।

গ. উদ্দীপকে পাঠানের বক্তব্যে নঞর্থক সংজ্ঞাজনিত অনুপপত্তি ঘটেছে।
কোনো পদের সংজ্ঞায় নঞর্থক ভাষা ব্যবহার করা হলে সংজ্ঞা ভ্রান্ত বা ত্রুটিপূর্ণ হবে। এরূপ সংজ্ঞাকে বলা হয়, নঞর্থক বা নেতিবাচক সংজ্ঞা। যেমন- ‘পাপ নয় পুণ্য’, ‘পাখি নয় চতুষ্পদী'। এ সংজ্ঞা দুটোতে ‘পাপ’ ও ‘পাখির’ মধ্যে কী কী বৈশিষ্ট্য আছে তা বলা হয়নি। বরং পদগুলোর মধ্যে যে গুণ নেই শুধু তাই উল্লেখ করা হয়েছে।
অনুরূপভাবে উদ্দীপকের পাঠান বলে, ‘‘মানুষ নয় জড় বস্তু।’’ অর্থাৎ সে মানুষের সংজ্ঞা না দিয়ে বরং মানুষ কি নয় তাই বলেছে। নেতিবাচকভাবে মানুষ সম্পর্কে বলার কারণে তার বক্তব্য নঞর্থক সংজ্ঞাজনিত অনুপপত্তির দৃষ্টান্ত।

ঘ. উদ্দীপকে অনিক অবান্তর সংজ্ঞা এবং মামুন যৌক্তিক সংজ্ঞা দিয়েছে। দুই সংজ্ঞার বৈশিষ্ট্যের ভিন্নতার কারণে উভয়ের সংজ্ঞা পরস্পর থেকে পৃথক।
সংজ্ঞায় জাত্যর্থের অতিরিক্ত গুণ থাকলে এবং তা অবিচ্ছেদ্য অবান্তর লক্ষণ (Inseparable Accident) হলে অবান্তর লক্ষণজনিত সংজ্ঞা অনুপপত্তি (Fallacy of Accidental Definition) ঘটে। যেমন- উদ্দীপকের অনিক বলে, মানুষ একটা হাস্যপ্রিয়, অনুভূতিপ্রবণ, সামাজিক জীব। এ দৃষ্টান্তে ‘হাস্যপ্রিয়’, ‘অনুভূতিপ্রবণ’, সামাজিক গুণগুলো মানুষের অবান্তর লক্ষণ। পাশাপাশি মানুষ পদের অপরিহার্য দিক হিসেবে বুদ্ধিবৃত্তি উল্লেখ করা হয়নি। এসব কারণেই অনিকের সংজ্ঞাটি অবান্তর সংজ্ঞার দৃষ্টান্ত। এই সংজ্ঞার মাধ্যমে পদের অপরিহার্য অর্থ জানা যায় না। কারণ এটি একটি ভ্রান্ত প্রক্রিয়া।
অন্যদিকে, মামুন বলেছে, মানুষ হয় বুদ্ধিবৃত্তিসম্পন্ন জীব। এখানে সে ‘মানুষ’ পদের পূর্ণ জাত্যর্থ হিসেবে আসন্নতম জাতি ও বিভেদক লক্ষণ উল্লেখ করেছে। পাশাপাশি মানুষ পদের অতিরিক্ত কোনো গুণ উল্লেখ করেনি। এ কারণে এটি মানুষ পদের যথার্থ সংজ্ঞা।
পরিশেষে বলা যায়, অবান্তর সংজ্ঞা ও যৌক্তিক সংজ্ঞা দুটি ভিন্ন বিষয়। কোনো পদের অপরিহার্য অর্থ জানার জন্য যৌক্তিক সংজ্ঞা একটি মাধ্যম, অবান্তর সংজ্ঞা নয়।

৪. দৃষ্টান্ত-১: মানুষ হলো বুদ্ধিবৃত্তিসম্পন্ন জীব।
দৃষ্টান্ত-২: নদী হলো সতত চলনশীল স্রোতস্বিনী জলাধার।
দৃষ্টান্ত-৩: হাইড্রোজেন হলো এক প্রকার গ্যাস।
ক. বাহুল্য সংজ্ঞা কী?
খ. যৌক্তিক সংজ্ঞার দুটি বৈশিষ্ট্য লেখো।
গ. দৃষ্টান্ত-২ এ যৌক্তিক সংজ্ঞার কোন ধরনের অনুপপত্তি সংঘটিত হয়েছে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. দৃষ্টান্ত-৩ কীভাবে দৃষ্টান্ত-১ থেকে পৃথক? বিশ্লেষণ করো।

৪ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. কোনো পদের সংজ্ঞায় জাত্যর্থের অতিরিক্ত কোনো গুণের উল্লেখ থাকলে এবং সে গুণটি উপলক্ষণ হলে যে অনুপপত্তি ঘটে তাকে বাহুল্য সংজ্ঞা বলে।

খ. যৌক্তিক সংজ্ঞার দুটি বৈশিষ্ট্য হলো-
১. সংজ্ঞায় কোনো শ্রেণিবাচক পদের সমগ্র জাত্যর্থ বা মৌলিক বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করা হয়।
২. যৌক্তিক সংজ্ঞা সর্বদা একটি সমীকরণের নির্দেশনা দান করে। যথার্থ সংজ্ঞা সংজ্ঞেয় এবং সংজ্ঞার্থ পদের পরিধির সমান থাকে।

গ. দৃষ্টান্ত-২ এ দুর্বোধ্য সংজ্ঞাজনিত অনুপপত্তি ঘটেছে।
সংজ্ঞাকে সংজ্ঞেয় পদের চেয়ে স্পষ্ট হতে হবে। কোনো পদের সংজ্ঞায় বহু অর্থবোধক বা দুর্বোধ্য শব্দ ব্যবহার করা যাবে না। সংজ্ঞায় সহজ- সরল ভাষার পরিবর্তে দুর্বোধ্য ভাষা ব্যবহার করলে দুর্বোধ্য সংজ্ঞাজনিত অনুপপত্তি ঘটে।
দৃষ্টান্ত-২ এ বলা হয়েছে, নদী হলো সতত চলনশীল স্রোতস্বিনী জলাধার। এখানে নদীকে দুর্বোধ্যভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে। এ সংজ্ঞার প্রতিটি শব্দ অত্যন্ত কঠিন, জটিল ও দুর্বোধ্য। সংজ্ঞায় সহজ-সরল ভাষার পরিবর্তে দুর্বোধ্য ভাষা ব্যবহার করা হয়েছে বিধায় দুর্বোধ্য সংজ্ঞাজনিত অনুপপত্তি ঘটেছে।

ঘ. অনুপপত্তির ভিত্তিতে দৃষ্টান্ত-৩ থেকে দৃষ্টান্ত-১ পৃথক।
দৃষ্টান্ত-৩ এ বলা হয়েছে, হাইড্রোজেন হলো একপ্রকার গ্যাস। এটি অতিব্যাপক সংজ্ঞাজনিত অনুপপত্তির দৃষ্টান্ত। কারণ সংজ্ঞার ক্ষেত্রে পালনীয় একটি অন্যতম নিয়ম হচ্ছে, সংজ্ঞার ক্ষেত্রে সংজ্ঞেয় ও সংজ্ঞার্থের ব্যক্ত্যর্থ বেশি হতে পারবে না। অথচ দৃষ্টান্ত-৩ এ প্রদত্ত সংজ্ঞায় এ নিয়মটির লঙ্ঘন করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে হাইড্রোজেন পদের ব্যক্ত্যর্থের চেয়ে গ্যাস পদের ব্যক্ত্যর্থ বেশি। কারণ হাইড্রোজেন ছাড়াও জগতে অক্সিজেন, নাইট্রোজেন নামে আরও বিভিন্ন গ্যাস আছে। কিন্তু হাইড্রোজেনকে গ্যাস বললে অন্যান্য গ্যাসের নাম বাদ পড়ে যায়। অর্থাৎ, তখন হাইড্রোজেন পদের ব্যক্ত্যর্থ বৃদ্ধি পায়। এর ফলে অতিব্যাপক সংজ্ঞা অনুপপত্তি ঘটে।
দৃষ্টান্ত-১ এ বর্ণিত, ‘মানুষ হয় বুদ্ধিবৃত্তিসম্পন্ন জীব'। এখানে 'মানুষ' পদের পূর্ণ জাত্যর্থ হিসেবে আসন্নতম জাতি ও বিভেদক লক্ষণ উল্লেখ করা হয়েছে। এ কারণে এটি মানুষ পদের যথার্থ সংজ্ঞা। এখানে কোনো অনুপপত্তি ঘটেনি।
তাই এরূপ অনুপপত্তিজনিত কারণে দৃষ্টান্ত-১ ও দৃষ্টান্ত-৩ একটি থেকে অন্যটি পৃথক।

৫. দৃশ্যকল্প-১: হেঁশেল হলো রান্নাঘর।
দৃশ্যকল্প-২: পদ্মাসন হলো ত্রিকোণাকার মন্ডলমধ্যে পদ্মাসনে সমাসীন।
দৃশ্যকল্প-৩: ইংল্যান্ড হলো ক্রিকেটের মক্কা।
ক. সংজ্ঞার্থ পদ কাকে বলে?
খ. ‘চেতনা’ পদের যৌক্তিক সংজ্ঞা দেওয়া যায় না কেন? ব্যাখ্যা করো।
গ. দৃশ্যকল্প-২ এ কোন ধরনের সংজ্ঞা অনুপপত্তি ঘটেছে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. সংজ্ঞার নিয়মের আলোকে দৃশ্যকল্প-১ ও ৩ এর সম্পর্ক বিশ্লেষণ করো।

৫ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. যে পদের মাধ্যমে সংজ্ঞা প্রদান করা হয় তাকে সংজ্ঞার্থ পদ বলে।

খ. সরলতম গুণ হওয়ার কারণে চেতনা পদের সংজ্ঞা দেওয়া যায় না।
সরল ও মৌলিক মানসিক প্রক্রিয়া হচ্ছে চেতনা, সুখ, দুঃখ ইত্যাদি। এগুলো হচ্ছে সরলতম গুণ। এদের যেমন বিশ্লেষণ করা যায় না তেমনি আবার অন্য কোনো গুণের সাথে মিশানোও যায় না বা তুলনাও করা যায় না। যে কারণে এদের সংজ্ঞা প্রদান করা যায় না।

গ. দৃশ্যকল্প-২ এ দুর্বোধ্য সংজ্ঞা অনুপপত্তি ঘটেছে।
কোনো পদের সংজ্ঞায় কঠিন বা দুর্বোধ্য শব্দ ব্যবহার করলে সংজ্ঞাটি দুর্বোধ্য বা জটিল প্রকৃতির হয়। এর ফলে যে ভ্রান্তি ঘটে তাই দুর্বোধ্য সংজ্ঞাজনিত অনুপপত্তি। সংজ্ঞার দ্বিতীয় নিয়মানুসারে, যে পদের সংজ্ঞা দিতে হবে সে পদটি থেকে সংজ্ঞার্থ পদকে অধিক স্পষ্ট হতে হবে।' অর্থাৎ সংজ্ঞায় দুর্বোধ্য ভাষা ব্যবহার করা যাবে না। যেমন- সংগীত হলো দুর্মূল্য কোলাহল। এটি দুর্বোধ্য সংজ্ঞাকে নির্দেশ করে।
দৃশ্যকল্প-২ এ বর্ণিত, পদ্মাসন হলো ত্রিকোণাকার মন্ডলমধ্যে পদ্মাসনে সমাসীন। এখানে ‘পদ্মাসন' পদের যে সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে তা জটিল ও দুর্বোধ্য। এ কারণে সংজ্ঞাটিতে দুর্বোধ্য সংজ্ঞাজনিত অনুপপত্তি ঘটেছে।

ঘ. দৃশ্যকল্প-১ ও ৩ যথাক্রমে যৌক্তিক সংজ্ঞার তৃতীয় ও দ্বিতীয় নিয়মের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। নিচে উভয় বিষয়ের সম্পর্ক সংজ্ঞার নিয়মের আলোকে বিশ্লেষণ করা হলো-
সংজ্ঞার তৃতীয় নিয়মানুসারে, যে পদের সংজ্ঞা দেয়া হয়, সংজ্ঞায় সে পদ বা তার সমার্থক পদ ব্যবহার করা যাবে না। এ নিয়ম লঙ্ঘন করলে চক্রক সংজ্ঞানুপপত্তি ঘটে। অর্থাৎ কোনো পদের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে ভিন্ন ভাষার সেই পদের পুনরুক্তি করা হলে সংজ্ঞাটায় ভ্রান্তি দেখা দিবে। এ অনুপপত্তির নাম চক্রক সংজ্ঞা অনুপপত্তি। যেমন- দৃশ্যকল্প-১ এ বর্ণিত, হেঁশেল হলো রান্নাঘর। এ সংজ্ঞাটা ভ্রান্ত। এতে নতুন কিছুই বলা হয়নি ফলে সংজ্ঞেয় পদটার অর্থ মোটেই সুস্পষ্ট হয়নি। এখানে ‘হেঁশেল' ও ‘রান্নাঘর’ হলো সমার্থক শব্দ।
যৌক্তিক সংজ্ঞার দ্বিতীয় নিয়মানুসারে, যে পদের সংজ্ঞা নির্দেশ করা হয় সংজ্ঞাটা সে পদ অপেক্ষা স্পষ্টতর হবে, সংজ্ঞাটি রূপকের মাধ্যমে বা দুর্বোধ্য ভাষায় ব্যক্ত করা যাবে না। এ নিয়মটি লঙ্ঘন করে সংজ্ঞায় কোনো রূপক বা দুর্বোধ্য শব্দ ব্যবহার করা হলে রূপক সংজ্ঞা কিংবা দুর্বোধ্য সংজ্ঞা অনুপপত্তি ঘটবে। দৃশ্যকল্প-৩ এ উল্লেখিত, ইংল্যান্ড হলো ক্রিকেটের মক্কা। এটা হলো একটি রূপক সংজ্ঞা। কারণ এখানে ‘ক্রিকেট’ পদের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে মক্কা নামক রূপক শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। তাই দৃশ্যকল্প-৩ এ রূপক সংজ্ঞাজনিত অনুপপত্তি ঘটেছে।
পরিশেষে বলা যায়, দৃশ্যকল্প-১ ও ৩ যথাক্রমে যৌক্তিক সংজ্ঞার তৃতীয় ও দ্বিতীয় নিয়মের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। কারণ উভয় দৃষ্টান্তে সংজ্ঞার তৃতীয় ও দ্বিতীয় নিয়ম লঙ্ঘনজনিত অনুপপত্তি ঘটেছে।

৬. দৃশ্যকল্প-১: ধনী নয় দরিদ্র
দৃশ্যকল্প-২: দুগ্ধজাত পণ্য হলো পনির।
দৃশ্যকল্প-৩: চাল হলো শর্করা জাতীয়।
ক. বাহুল্য সংজ্ঞা কাকে বলে?
খ. অবান্তর সংজ্ঞা অনুপপত্তি কখন ঘটে? ব্যাখ্যা করো।
গ. দৃশ্যকল্প-১ যৌক্তিক সংজ্ঞার কোন নিয়মের পরিপন্থী? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. দৃশ্যকল্প-২ ও দৃশ্যকল্প-৩ এ যৌক্তিক সংজ্ঞাগত যে পার্থক্য রয়েছে তা বিশ্লেষণ করো।

৫ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. কোনো পদের সংজ্ঞায় জাত্যর্থের অতিরিক্ত কোনো গুণের উল্লেখ থাকলে এবং সে গুণটি উপলক্ষণ হলে যে অনুপপত্তি ঘটে তাকে বাহুল্য সংজ্ঞা বলে।

খ. সংজ্ঞায় জাত্যর্থের অতিরিক্ত গুণ থাকলে এবং তা অবিচ্ছেদ্য অবান্তর লক্ষণ (Inseparable Accident) হলে অবান্তর লক্ষণজনিত সংজ্ঞা অনুপপত্তি (Fallacy of Accidental Definition) ঘটে।
অবান্তর সংজ্ঞা এক প্রকার ভ্রান্ত সংজ্ঞা। এরূপ সংজ্ঞায় অতিরিক্ত গুণ হিসেবে অবান্তর লক্ষণ উল্লেখ করা হয়। যথাত মানুষ একটা হাস্যপ্রিয় বুদ্ধিবৃত্তিসম্পন্ন জীব। এ দৃষ্টান্তে ‘হাস্যপ্রিয়’ গুণটা মানুষের অবান্তর লক্ষণ। কাজেই এটি অবান্তর সংজ্ঞার দৃষ্টান্ত।

গ. দৃশ্যকল্প-১ যৌক্তিক সংজ্ঞার চতুর্থ নিয়মের পরিপন্থী।
সংজ্ঞার চতুর্থ নিয়মানুসারে, কোনো পদের সংজ্ঞায় সর্বদা সদর্থক ভাষা ব্যবহার করতে হবে, নর্থক ভাষা ব্যবহার করা যাবে না। এ নিয়ম লঙ্ঘন করলে নর্থক সংজ্ঞাজনিত অনুপপত্তি ঘটে। যেমন: 'আনন্দ হচ্ছে বেদনার অভাব’ এখানে আনন্দের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বেদনার অভাব নামক নঞর্থক ভাষা ব্যবহার করা হয়েছে। ফলে নঞর্থক সংজ্ঞাজনিত অনুপপত্তি ঘটেছে।
দৃশ্যকল্প-১ এ বর্ণিত, ধনী নয় দরিদ্র। এ সংজ্ঞায় ধনী পদে কী বৈশিষ্ট্য আছে তা বলা হয়নি। বরং এই পদে যে গুণ নেই শুধু তাই উল্লেখ করা হয়েছে। এ কারণে বলা যায়, দৃশ্যকল্প-১ যৌক্তিক সংজ্ঞার চতুর্থ নিয়মের পরিপন্থী।

ঘ. দৃশ্যকল্প-২ ও দৃশ্যকল্প-৩ যথাক্রমে অব্যাপক সংজ্ঞা ও অতিব্যাপক সংজ্ঞার দৃষ্টান্ত। নিচে উভয় সংজ্ঞার যে পার্থক্য রয়েছে তা বিশ্লেষণ করা হলো-
কোনো পদের সংজ্ঞায় যদি দেখা যায় যে, সংজ্ঞার্থ পদ সংজ্ঞেয় পদের ব্যক্ত্যর্থকে কমিয়ে দিচ্ছে, তাহলে সংজ্ঞাটি ত্রুটিপূর্ণ হবে। এরূপ ত্রুটিপূর্ণ সংজ্ঞাকে অব্যাপক সংজ্ঞা বলে। যেমন- দৃশ্যকল্প-২ এ বর্ণিত, দুগ্ধজাত পণ্য হলো পনির। এখানে দুগ্ধজাত পণ্য হিসেবে শুধু পনির উল্লেখ করায় দই, মিষ্টি, ছানা ইত্যাদি বাদ পড়ে যাচ্ছে। ফলে দুগ্ধজাত পদের ব্যক্ত্যর্থ কমে যাচ্ছে। তাই এটি একটি অব্যাপক সংজ্ঞা।
অন্যদিকে, কোনো পদের সংজ্ঞায় যদি দেখা যায় যে, সংজ্ঞার্থ পদ সংজ্ঞেয় পদের ব্যক্ত্যর্থকে বাড়িয়ে দিচ্ছে, তাহলে সংজ্ঞাটি ত্রুটিপূর্ণ অতিব্যাপক সংজ্ঞা বলে বিবেচিত হবে। যেমন- দৃশ্যকল্প-৩ এ বর্ণিত, চাল হলো শর্করা। এই সংজ্ঞায় চালকে শর্করা বলায় অন্যান্য শর্করাযুক্ত খাবারও চালের শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত হয়ে পড়ছে। ফলে চালের ব্যক্ত্যর্থ বেড়ে যাচ্ছে। তাই এটি একটি অতিব্যাপক সংজ্ঞা।
পরিশেষে বলা যায়, অতিব্যাপক ও অব্যাপক দুটি পরস্পর বিপরীতধর্মী সংজ্ঞা। যার একটি ব্যক্ত্যর্থ বৃদ্ধির বিপরীতে জাত্যর্থ হ্রাস পায়। অন্যদিকে ব্যক্ত্যর্থ হ্রাস পেলে জাত্যর্থ বৃদ্ধি পায়। এ কারণে দৃশ্যকল্প-২ ও দৃশ্যকল্প-৩ এর মধ্যে যৌক্তিক সংজ্ঞাগত পার্থক্য প্রকাশ পায়।

৭. দৃশ্যকল্প-১: বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন থেকে ঘুরে এসেছে প্রমা। প্রমার ছোট বোন লায়লা যুক্তিবিদ্যার ছাত্রী হওয়ায় চালাকি করে সেন্টমার্টিনের অপরূপ সৌন্দর্য্যের মূল বিষয় জানতে চায়। কিন্তু প্রমা তাকে যথার্থ উত্তর দিতে ব্যর্থ হয়। প্রমার ব্যর্থতা লায়লাকে কষ্ট দেয়। তাই প্রমা তাকে বলে, তোমার নামের যেমন কোনো সংজ্ঞা নেই, তেমনি সেন্টমার্টিনেরও কোনো সংজ্ঞা নেই।
দৃশ্যকল্প-২: ত্রিভুজ হলো তিনবাহু দ্বারা বেষ্টিত একটি সমতলক্ষেত্র।
ক. যৌক্তিক সংজ্ঞার নিয়ম কয়টি?
খ. ‘আলো নয় অন্ধকার’ সংজ্ঞাটি সঠিক নয় কেন?
গ. যুক্তিবিদ্যার আলোকে প্রমার বক্তব্য ব্যাখ্যা করো।
ঘ. দৃশ্যকল্প-২ দ্বারা নির্দেশিত বিষয়টির প্রয়োজনীয়তা যুক্তিবিদ্যার আলোকে মূল্যায়ন করো।

৭ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. যৌক্তিক সংজ্ঞার নিয়ম পাঁচটি।

খ. ‘আলো নয় অন্ধকার’ এই সংজ্ঞাটিতে যৌক্তিক সংজ্ঞার চতুর্থ নিয়ম লঙ্ঘন করা হয়েছে বলে এটি সঠিক নয়।
যৌক্তিক সংজ্ঞার চতুর্থ নিয়মানুযায়ী, কোনো পদের সংজ্ঞায় নঞর্থক ভাষা ব্যবহার করা যাবে না। যেহেতু সংজ্ঞাটিতে যৌক্তিক সংজ্ঞার নিয়ম লঙ্ঘন করা হয়েছে, তাই সংজ্ঞাটি সঠিক নয়।

গ. উদ্দীপকে প্রমার বক্তব্যে যৌক্তিক সীমাবদ্ধতার দিকটি প্রকাশ পেয়েছে।
পরতম বা সর্বোচ্চ জাতির সংজ্ঞা দেওয়া যায় না। কারণ এরূপ পদের আসন্নতম জাতি থাকে না। পাশাপাশি বিশিষ্ট গুণবাচক পদ হিসেবে বিষাদ-সিন্ধু, তুষার-ধবল ইত্যাদি পদ এতো সরল ও বিশিষ্ট যে এর কোনো জাত্যর্থ পাওয়া যায় না। এছাড়াও স্বকীয় নামবাচক পদ হিসেবে নূরজাহান, সুমনা, ঢাকা প্রভৃতি পদেরও জাত্যর্থ নেই। তাই এরূপ স্বকীয় নামবাচক পদের সংজ্ঞা দেওয়া সম্ভব নয়। আমরা জানি, চরম প্রাকৃতিক গুণ (প্রকৃতির নিয়মানুবর্তিতা নীতি, কার্যকারণ নিয়ম, মাধ্যাকর্ষণ নিয়ম ইত্যাদি) ও মৌলিক গুণের সংজ্ঞা দেওয়া যায় না। কেননা, এসব গুণের আসন্নতম জাতি ও বিভেদক লক্ষণ উল্লেখ করা যায় না। পাশাপাশি অনন্য বিষয় হিসেবে বিধাতা, দেশ, কাল, আত্মা ইত্যাদি পদের আসন্নতম জাতি নির্ণয় করা যায় না। তাই এর সংজ্ঞা দেওয়া সম্ভব নয়।
উদ্দীপকে প্রমার বক্তব্যে উল্লেখিত সেন্টমার্টিন পদটি একটি স্বকীয় নামবাচক পদ। তাই এর সংজ্ঞা দেওয়া যায় না।

ঘ. দৃশ্যকল্প-২ দ্বারা নির্দেশিত যৌক্তিক সংজ্ঞার বিষয়টির প্রয়োজনীয়তা যুক্তিবিদ্যার আলোকে মূল্যায়ন করা হলো-
একটি পদের অর্থ সুস্পষ্ট ও সুনির্দিষ্টভাবে প্রকাশ করা যায় সংজ্ঞার মাধ্যমে। যুক্তির অন্তর্গত যুক্তিবাক্যে যেসব শব্দ বা পদ ব্যবহৃত হয় সংজ্ঞার মাধ্যমে সেগুলোর অর্থ সুনির্দিষ্ট ও সুস্পষ্ট হয়। কাজেই পদের সংজ্ঞা দানের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য।
আমাদের চিন্তার স্বচ্ছতা অনেকাংশে সংজ্ঞায়নের ওপর নির্ভর করে। কারণ সংজ্ঞার মাধ্যমে পদের সাধারণ ও আবশ্যিক গুণ বা বৈশিষ্ট্যসমূহ প্রকাশিত হলে তা আমাদের সুষ্ঠু চিন্তার সহায়ক হয়। পাশাপাশি বস্তুগুলো সম্বন্ধে আমাদের ধারণা সুস্পষ্ট ও সুনির্দিষ্ট করে দেয়। এর ফলে আমরা নির্ভুল সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারি। কারণ সঠিক সিদ্ধান্তে আসার জন্য প্রয়োজন নির্ভুল অনুমানের। আবার অনুমানের যথার্থতা নির্ভর করে পদ সম্পর্কে আমাদের জ্ঞানের ওপর। এ জ্ঞান সংজ্ঞাই দিয়ে থাকে। তাই সঠিক সংজ্ঞায়ন ছাড়া বৈজ্ঞানিক জ্ঞান অর্জন করা সম্ভব হয় না। এ কারণেই এরিস্টটল বলেছেন- সংজ্ঞাই হচ্ছে বৈজ্ঞানিক জ্ঞানের আদি ও অন্ত।
পরিশেষে বলা যায়, যৌক্তিক সংজ্ঞার জ্ঞান যৌক্তিক বিভাজনের জন্য সহায়ক। কারণ কোনো শ্রেণিকে তার অধীনস্থ শ্রেণিতে বিভাজন করতে হলে তার আসন্নতম জাতি ও বিভেদক লক্ষণ সম্পর্কে জ্ঞানের প্রয়োজন। যৌক্তিক সংজ্ঞার জ্ঞান ছাড়া কোনো শ্রেণিকে তার অন্তর্গত বিভিন্ন উপ- শ্রেণিতে যথাযথভাবে বিভক্ত করা যায় না। এসব বিবেচনায় বলা যায়, যুক্তিবিদ্যায় যৌক্তিক সংজ্ঞার প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।

৮. যুক্তিবিদ্যা ক্লাসে নিখিল স্যার যৌক্তিক সংজ্ঞা পড়াতে গিয়ে শিক্ষার্থীদের ‘মানুষ’ পদের সংজ্ঞা দিতে বললেন। উত্তরে নয়ন বললো, ‘‘মানুষ হলো জীব’’। সুমি বললো, ‘‘না স্যার, মানুষ হলো মনুষ্য জাতীয় জীব’’। তাদের উত্তর শুনে নিখিল স্যার বিষয়টি নিয়ে ক্লাসে বিস্তারিত আলোচনা করলেন।
ক. যৌক্তিক সংজ্ঞা কী?
খ. রূপক সংজ্ঞা অনুপপত্তি কখন ঘটে?
গ. উদ্দীপকে সুমির যৌক্তিক সংজ্ঞায় কোন ধরনের অনুপপত্তি ঘটেছে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. নয়ন ও সুমির প্রদত্ত সংজ্ঞার মধ্যে তুলনামূলক পার্থক্য বিশ্লেষণ করো।

৮ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. কোনো পদের পূর্ণ জাত্যর্থের সুস্পষ্ট বিবৃতিই হলো যৌক্তিক সংজ্ঞা।

খ. কোনো পদের সংজ্ঞায় রূপক শব্দ ব্যবহার করলে রূপক সংজ্ঞাজনিত অনুপপত্তি ঘটে।
যৌক্তিক সংজ্ঞার দ্বিতীয় নিয়মানুসারে, 'কোনো পদের সংজ্ঞায় রূপক ভাষা ব্যবহার করা যাবে না’’। এই নিয়ম লঙ্ঘন করে কোনো পদের সংজ্ঞায় রূপক শব্দ ব্যবহার করলে সংজ্ঞাটি ত্রুটিপূর্ণ হবে। যেমন- 'উট হচ্ছে মরুভূমির জাহাজ'। এখানে 'উট' পদের সংজ্ঞায় ‘মরুভূমির জাহাজ’ নামক রূপকের সাহায্য নেওয়া হয়েছে। তাই এখানে রূপক সংজ্ঞাজনিত অনুপপত্তি ঘটেছে।

গ. সুমির বক্তব্যে চক্ৰক সংজ্ঞাজনিত অনুপপত্তি ঘটেছে।
চক্রক সংজ্ঞাজনিত অনুপপত্তি হলো এক প্রকার ভ্রান্ত সংজ্ঞা। যে সংজ্ঞায় সংজ্ঞেয় পদের সমার্থক শব্দ ব্যবহার করা হয়। এতে একই কথার পুনরুক্তি ঘটে। যেমন: ‘কুমার হয় অবিবাহিত ব্যক্তি’। এখানে কুমার ও অবিবাহিত ব্যক্তি মূলত একই কথা। তাই এটি একটি চক্রক সংজ্ঞার দৃষ্টান্ত।
উদ্দীপকের সুমি ‘মানুষ’ পদের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলে, মানুষ হলো মনুষ্য জাতীয় জীব। এখানে সে মানুষ পদের কোনো প্রয়োজনীয় গুণ উল্লেখ করেনি; বরং প্রতিশব্দ ব্যবহার করেছে মাত্র। সুতরাং তার সংজ্ঞাটি ত্রুটিপূর্ণ। এরূপ ত্রুটিপূর্ণ সংজ্ঞাই হলো চক্রক সংজ্ঞা।

ঘ. নয়ন ও সুমির বক্তব্যে যথাক্রমে অতিব্যাপক সংজ্ঞা ও চক্রক সংজ্ঞার দৃষ্টান্ত পরিলক্ষিত হয়। নিচে উভয় সংজ্ঞার মধ্যে তুলনামূলক পার্থক্য বিশ্লেষণ করা হলো-
কোনো পদের সংজ্ঞায় জাত্যর্থের কম গুণ উল্লেখ করা হলে সংজ্ঞাটি ত্রুটিপূর্ণ হবে। এরূপ ত্রুটিপূর্ণ সংজ্ঞাকে বলা হয় অতিব্যাপক সংজ্ঞা। উদ্দীপকের নয়ন ‘মানুষ’ পদের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেছে, ‘মানুষ হলো জীব’। এখানে সে মানুষ পদের পূর্ণ জাত্যর্থ উল্লেখ বরং তার বক্তব্যে ‘বুদ্ধিবৃত্তি’ গুণটি বাদ পড়েছে। তাই নয়নের বক্তব্যটি অতিব্যাপক সংজ্ঞা। অপরদিকে, করেনি। কোনো পদের সংজ্ঞায় সমার্থক বা প্রতিশব্দ ব্যবহার করলে যে অনুপপত্তি ঘটে তা-ই চক্রক সংজ্ঞা। উদ্দীপকের সুমি বলেছে, মানুষ হলো মনুষ্য জাতীয় জীব। এখানে সে মানুষ সম্পর্কে নতুন কিছুই না বলে একই কথা। ঘুরিয়ে বলেছে। এ কারণে তার বক্তব্যটি চক্রক সংজ্ঞার দৃষ্টান্ত।
অতিব্যাপক সংজ্ঞায় মূল পদের জাত্যর্থ বা অপরিহার্য গুণের উল্লেখ কম। থাকে। অন্যদিকে, চক্রক সংজ্ঞায় মূল পদের অপরিহার্য গুণ উল্লেখ না করে। প্রতিশব্দ ব্যবহার করা হয়।
শেষে বলা যায়, অতিব্যাপক সংজ্ঞা ও চক্রক সংজ্ঞা উভয়ই ত্রুটিপূর্ণ। তবেু উভয়ের ত্রুটির ধরন আলাদা। এ কারণেই উভয় সংজ্ঞার মধ্যে ভিন্নতা লক্ষ করা যায়।

৯. সোহেল বললো, "মানুষ হলো বুদ্ধিবৃত্তিসম্পন্ন জীব।' নাসির বললো, মানুষ হলো এমন জীব যার দু'টি পা, দু'টি হাত আছে; সে হাসে, কাঁদে ও তার ব্যক্তিত্ব আছে।' আসমা বললো, মানুষ হলো কলুর বলদ।
ক. বাহুল্য সংজ্ঞা কী?
খ. পাপ নয় পুণ্যত সংজ্ঞাটি সঠিক নয় কেন?
গ. আসমার বক্তব্যে যৌক্তিক সংজ্ঞার কোন নিয়মের লঙ্ঘন ঘটেছে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. সোহেল ও নাসিরের বক্তব্যে যে দু'টি বিষয় ফুটে উঠেছে তাদের মধ্যে পার্থক্য দেখাও।

৯ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. কোনো পদের সংজ্ঞায় জাত্যর্থের অতিরিক্ত গুণ হিসেবে উপলক্ষণ উল্লেখ করা হলে যে ভ্রান্তি ঘটে তাকে বাহুল্য সংজ্ঞা বলে।

খ. পাপ নয় পুণ্যত সংজ্ঞাটিতে নঞর্থক শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। এ কারণেই সংজ্ঞাটি সঠিক নয়।
আমরা জানি, যৌক্তিক সংজ্ঞার চতুর্থ নিয়মানুযায়ী কোনো পদের সংজ্ঞা সদর্থকভাবে দেওয়া সম্ভব হলে তাতে নঞর্থক ভাষা ব্যবহার করা যাবে না।' এ নিয়মটি লঙ্ঘন করে কোনো পদের সংজ্ঞায় নঞর্থক ভাষা ব্যবহার করা হলে নঞর্থক সংজ্ঞাজনিত অনুপপত্তি ঘটে। যেমন- পাপ নয় পুণ্য। এখানে নেতিবাচক শব্দের ব্যবহারের ফলে নঞর্থক সংজ্ঞার উদ্ভব হয়েছে। এ কারণেই সংজ্ঞাটি সঠিক নয়।

গ. আসমার বক্তব্যে যৌক্তিক সংজ্ঞার দ্বিতীয় নিয়মের লঙ্ঘন ঘটেছে।
যৌক্তিক সংজ্ঞার দ্বিতীয় নিয়মটি হলো- ‘যে পদের সংজ্ঞা দেওয়া হবে সেই পদটি থেকে সংজ্ঞাটি স্পষ্টতর হতে হবে। অর্থাৎ সংজ্ঞায় কোনো রূপক ভাষা ব্যবহার করা যাবে না।' এ নিয়মটি লঙ্ঘন করে যদি কোনো পদের সংজ্ঞায় রূপক শব্দ ব্যবহার করা হয়, তাহলে রূপক সংজ্ঞাজনিত অনুপপত্তি ঘটে।
উদ্দীপকের আসমা ‘মানুষ’ পদের সংজ্ঞায় দ্বিতীয় নিয়ম লঙ্ঘন করেছে। কারণ সে বলেছে ‘মানুষ হলো কলুর বলদ।' অর্থাৎ সে ‘মানুষ' পদের সংজ্ঞায় 'কলুর বলদ' নামক রূপকের আশ্রয় নিয়েছে। যা যৌক্তিক সংজ্ঞার দ্বিতীয় নিয়ম বিরুদ্ধ। এ কারণেই বলা যায়, আসমার বক্তব্যে যৌক্তিক সংজ্ঞার দ্বিতীয় নিয়মের লঙ্ঘন ঘটেছে।

ঘ. সোহেল ও নাসিরের বক্তব্যে যৌক্তিক সংজ্ঞা ও বর্ণনার বিষয় দু'টি ফুটে উঠেছে।
যৌক্তিক সংজ্ঞায় পদের পূর্ণ জাত্যর্থ উল্লেখ করতে হয়। উদ্দীপকের সোহেল ‘মানুষ’ পদের সংজ্ঞায় জীববৃত্তি ও বুদ্ধিবৃত্তি উভয় গুণ উল্লেখ করছে। যা মানুষ পদের পূর্ণ জাত্যর্থ। এ কারণে তার বক্তব্য যৌক্তিক সংজ্ঞা বলে বিবেচিত। অন্যদিকে, বর্ণনায় পদের নিছক বিবৃতি দেওয়া হয়। উদ্দীপকের নাসির বলেছে, মানুষ হলো এমন জীব যার দু'টি পা, দু'টি হাত আছে; সে হাসে, কাঁদে ও তার ব্যক্তিত্ব আছে। এটি মানুষ পদের বিবৃতি মাত্র। এ কারণে নাসিরের বক্তব্যকে বর্ণনা বলা যায়।
সংজ্ঞার ক্ষেত্রে জাত্যর্থ ছাড়া অন্য কোনো গুণ উল্লেখ করা হয় না। কিন্তু বর্ণনায় পদের জাত্যর্থ ছাড়াও অন্যান্য গুণ উল্লেখ করা হয়। এ কারণে অনেক পদ রয়েছে, যার বর্ণনা দেওয়া গেলেও সংজ্ঞা দেওয়া যায় না। যেমন- দ্রব্য, টাকা, সততা ইত্যাদি। পরিশেষে বলা যায়, যৌক্তিক সংজ্ঞা ও বর্ণনা দু'টি ভিন্ন বিষয়। এ কারণে সোহেল ও নাসিরের বক্তব্যে পার্থক্য লক্ষ করা যায়।

১০. মিশা বললো, 'কোনো জিনিসকে জানতে হলে সেটা যেরকম সেভাবেই জানতে হবে। যেমন- লাল শাড়িটি হলো লাল বর্ণের। সীমা বললো, 'কেউ কেউ আবার নিজের মতো করে কোনো জিনিসকে প্রকাশ করে। যেমন- তারা মানুষকে প্রকাশ করতে গিয়ে বলে যে, মানুষ হলো যুক্তিপ্রবণ জীব কিংবা মানুষ হলো হাস্যপ্রিয় জীব।'
ক. রূপক সংজ্ঞা কী?
খ. ‘মানুষ একটা জীব'ত সংজ্ঞাটিতে কোন দোষ ঘটেছে?
গ. মিশার বক্তব্যে যৌক্তিক সংজ্ঞার কোন নিয়মের প্রকাশ ঘটেছে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. সীমার বক্তব্যে যে দুটি সংজ্ঞা দোষ ঘটছে তা বিশ্লেষণ করো।

১০ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. কোনো পুদের সংজ্ঞায় রূপক ভাষা ব্যবহার করলে যে অনুপপত্তি ঘটে, তাকে রূপক সংজ্ঞা বলে।

খ. ‘মানুষ একটা জীব’- সংজ্ঞাটিতে অতিব্যাপক সংজ্ঞা দোষ ঘটেছে।
যৌক্তিক সংজ্ঞার প্রথম নিয়ম অনুসারে- 'কোনো পদের সংজ্ঞায় পূর্ণ জাত্যর্থ উল্লেখ করতে হবে। এই নিয়ম অমান্য করে কোনো পদের সংজ্ঞায় আংশিক জাত্যর্থ উল্লেখ করলে সে পদের ব্যক্ত্যর্থ বৃদ্ধি পাবে। এর ফলে অতিব্যাপক সংজ্ঞাজনিত অনুপপত্তি ঘটবে। যেমন- 'মানুষ একটা জীব।
এখানে ‘মানুষ’ পদের সংজ্ঞায় ‘বুদ্ধিবৃত্তি' গুণটি বাদ পড়েছে। ফলে মানুষ পদের জাত্যর্থ হ্রাস পাওয়ার বিপরীতে ব্যক্ত্যর্থ বৃদ্ধি পেয়েছে। এ কারণে অতিব্যাপক সংজ্ঞাজনিত অনুপপত্তি ঘটেছে।

গ. মিশার বক্তব্যে যৌক্তিক সংজ্ঞার প্রথম নিয়মের প্রকাশ ঘটেছে।
যৌক্তিক সংজ্ঞার প্রথম নিয়মানুসারে- যে পদের সংজ্ঞা দেওয়া হবে সেই পদের পূর্ণ জাত্যর্থ উল্লেখ করতে হবে, পূর্ণ জাত্যর্থের কম বা বেশি উল্লেখ করা যাবে না। অর্থাৎ যৌক্তিক সংজ্ঞায় আসন্নতম জাতি ও বিভেদক লক্ষণ উল্লেখ করলেই পূর্ণ জাত্যর্থ প্রকাশ করা হবে। যেমন: ‘মানুষ হয় বুদ্ধিবৃত্তিসম্পন্ন জীব'। এখানে ‘মানুষ’ পদের পূর্ণ জাত্যৰ&থ হিসেবে ‘জীববৃত্তি’ ও ‘বুদ্ধিবৃত্তি’ উভয়ই উল্লেখ করা হয়েছে। তাই এটি মানুষ পদের যথার্থ সংজ্ঞা।
উদ্দীপকের বর্ণিত ঘটনায় মিশা বলে, কোনো জিনিসকে জানতে হলে সেটা যেরকম সেভাবেই জানতে হবে। অর্থাৎ কোনো বিষয়ের সংজ্ঞায় তার পরিপূর্ণ অর্থ প্রকাশ করতে হবে। এ কারণে বলা যায়, মিশার বক্তব্যে যৌক্তিক সংজ্ঞার প্রথম নিয়মের প্রকাশ ঘটেছে।

ঘ. সীমার বক্তব্যে চক্রক ও অব্যাপক সংজ্ঞা দোষ বা অনুপপত্তি ঘটেছে। নিচে উভয় অনুপপত্তি বিশ্লেষণ করা হলো-
কোনো পদের সংজ্ঞায় সমার্থক বা প্রতিশব্দ ব্যবহার করলে চক্রক সংজ্ঞাজনিত অনুপপত্তি ঘটে। যেমন- ‘মানুষ হয় মনুষ্য জাতীয় জীব। এ সংজ্ঞায় মানুষ সম্পর্কে নতুন কিছুই না বলে একই কথা ঘুরিয়ে বলা হয়েছে। কারণ ‘মানুষ’ ও ‘মনুষ্য’ হলো সমার্থক শব্দ।
উদ্দীপকে বর্ণিত ঘটনায় মানুষ পদের সংজ্ঞা প্রসঙ্গে সীমা বলে, মানুষ হলো যুক্তিপ্রবণ জীব। এখানে 'যুক্তিপ্রবণ জীব’ মানুষ পদের সমার্থক শব্দ হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। তাই সীমার এ বক্তব্যে চক্রক সংজ্ঞাজনিত অনুপপত্তি ঘটেছে।
কোনো পদের সংজ্ঞায় যদি পূর্ণ জাত্যর্থ উল্লেখের পরিবর্তে অতিরিক্ত কোনো গুণ উল্লেখ করা হয় এবং সেই গুণ যদি ঐ পদের বিচ্ছেদ্য অবান্তর লক্ষণ হয়, তাহলে সংজ্ঞায় ভ্রান্তি দেখা দেবে। যা অব্যাপক সংজ্ঞা হিসেবে পরিচিত। যেমন- ‘মানুষ হয় বুদ্ধিবৃত্তিসম্পন্ন কালো জীব’। এখানে 'কালো' গুণটি মানুষ পদের একটি অবিচ্ছেদ্য অবান্তর লক্ষণ। কেননা, এ গুণটি সকল মানুষের বেলায় প্রযোজ্য নয়। উদ্দীপকের সীমা মানুষ পদের সংজ্ঞায় বলে, ‘মানুষ হলো হাস্যপ্রিয় জীব।' এখানে ‘হাস্যপ্রিয়' গুণটি হলো বিচ্ছেদ্য অবান্তর লক্ষণ। ফলে সীমায় সংজ্ঞাটি অব্যাপক সংজ্ঞায় পরিণত হয়েছে।
পরিশেষে বলা যায়, যৌক্তিক সংজ্ঞা হলো জাত্যর্থের সুস্পষ্ট প্রকাশ। এজন্য এখানে বেশ কিছু নিয়ম অনুসরণ করতে হয়। এ নিয়মগুলো লঙ্ঘন করলে বিভিন্ন অনুপপত্তি ঘটে। তাই তো সংজ্ঞার তৃতীয় ও প্রথম নিয়ম লঙ্ঘনের ফলে সীমার প্রদত্ত সংজ্ঞা দু'টিতে চক্রক সংজ্ঞা ও অব্যাপক সংজ্ঞা নামক অনুপপত্তি ঘটেছে।
Share:

HSC যুক্তিবিদ্যা ২য় পত্র (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর pdf download অধ্যায় ২

HSC যুক্তিবিদ্যা ২য় পত্র (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর pdf download

এইচএসসি পরীক্ষার পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি
HSC Logic 2nd Paper Srijonshil question and answer pdf download.

উচ্চ মাধ্যমিক

যুক্তিবিদ্যা
দ্বিতীয় পত্র

সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
২য় অধ্যায়

HSC Logic 2nd Paper
Srijonshil
Question and Answer pdf download

১. গনি মিয়া একজন গরিব কৃষক। পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া অল্প কয়েক খ- জমিই তার সম্বল। অল্প জমিতে অধিক ফসল পাওয়ার আশায় তিনি জমিগুলোকে উর্বরতার ভিত্তিতে দু'ভাগে ভাগ করে উর্বর জমিতে তরমুজ এবং অনুর্বর জমিতে পুকুর খনন করে মাছের চাষ করলেন। তরমুজের ফলন খুব ভালো হয়েছে। তিনি তরমুজগুলোকে তাদের আকার, আকৃতি ও রংয়ের ভিত্তিতে ভাগ করেন।
ক. যৌক্তিক বিভাগ কী?
খ. অতিব্যাপক বিভাগ অনুপপত্তি কখন ঘটে?
গ. উদ্দীপকে গনি মিয়ার জমি ভাগ করার পদ্ধতি যৌক্তিক বিভাগের কোন নিয়মের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. তুমি কি মনে কর, তরমুজ ভাগ করার ক্ষেত্রে গনি মিয়া যৌক্তিক বিভাগের যথার্থ নিয়ম পালন করেছে? পাঠ্যবিষয়ের আলোকে যুক্তি দেখাও।

১ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. একটি নীতির ভিত্তিতে কোনো জাতিকে তার অন্তর্গত বিভিন্ন উপজাতিতে বিভক্ত করার প্রক্রিয়াই হলো যৌক্তিক বিভাগ।

খ. বিভক্ত উপজাতিগুলোর ব্যক্ত্যর্থ মূল পদের চেয়ে বেশি হলে অতিব্যাপক বিভাগ অনুপপত্তি ঘটে।
যৌক্তিক বিভাগের তৃতীয় নিয়মানুযায়ী, বিভক্ত উপজাতির ব্যক্ত্যর্থ মিলিতভাবে মূল পদ বা জাতির ব্যক্ত্যর্থের সমান হবে। কিন্তু কোনো বিভাগে উপজাতির ব্যক্ত্যর্থ জাতির চেয়ে বেশি হলে যে ভ্রান্তি ঘটবে তা-ই অতিব্যাপক বিভাগ অনুপপত্তি। যেমন- মুদ্রাকে স্বর্ণ, রৌপ্য, তাম্র, ব্রোঞ্জ এবং ব্যাংক নোটে বিভক্ত করলে ‘মুদ্রার’ ব্যক্ত্যর্থ বৃদ্ধি পাবে। এর ফলে অতিব্যাপক বিভাগজনিত অনুপপত্তি ঘটবে।

গ. উদ্দীপকে গনি মিয়ার জমি ভাগ করার পদ্ধতি যৌক্তিক বিভাগের দ্বিতীয় নিয়মের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।
যৌক্তিক বিভাগের দ্বিতীয় নিয়মানুসারে, 'কোনো জাতিবাচক পদের বিভক্তকরণে একটি মূলনীতি অনুসরণ করতে হবে।' যেমন- ‘মানুষ’ পদকে ‘সততা’ নামক গুণের মানদ-- সৎ ও অসৎ শ্রেণিতে বিভক্ত করার প্রক্রিয়া হলো যৌক্তিক বিভাগ। কারণ ‘সততা’ হলো একটি মূলনীতি, যার আলোকে মানুষ পদকে বিভক্ত করা হয়েছে।
উদ্দীপকের গনি মিয়া জমি ভাগ করার ক্ষেত্রে ‘উর্বরতা’ নামক একটিমূলনীতির অনুসরণ করেছেন। এ নীতির ভিত্তিতে তিনি নিজের জমিগুলোকে উর্বর ও অনুর্বর জমিতে বিভক্ত করেছেন। তাই বলা যায়, গনি মিয়ার জমি ভাগ করার পদ্ধতি যৌক্তিক বিভাগের দ্বিতীয় নিয়মের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।

ঘ. না, তরমুজ ভাগ করার ক্ষেত্রে গনি মিয়া যৌক্তিক বিভাগের যথার্থ নিয়ম পালন করেনি। নিচে এ বিষয়ে যুক্তি দেখানো হলো-
যৌক্তিক বিভাগের নিয়ম অনুসারে কোনো জাতিকে তার অন্তর্গত উপজাতিতে বিভক্ত করতে হলে একটি মূলসূত্র গ্রহণ করতে হবে। অন্যথায়, একের অধিক নীতির আলোকে কোনো পদকে বিভক্ত করলে সংকর বিভাগজনিত অনুপপত্তি ঘটে। উদ্দীপকের গনি মিয়া তরমুজগুলোকে একই সাথে আকার, আকৃতি ও রং এরূপ তিনটি নীতির আলোকে ভাগ করেছে। এ কারণে তার এ কর্মকান্ড- সংকর বিভাগজনিত অনুপপত্তি ঘটেছে।
আমরা জানি, যৌক্তিক বিভাগের নিয়মানুযায়ী সাধারণত জাতিবাচক বা শ্রেণিবাচক পদকে বিভক্ত করা যায়, একক কোনো ব্যক্তি বা বস্তুকে নয়। কিন্তু, গনি মিয়া এ নিয়মটির লঙ্ঘন করে জমির তরমুজগুলোকে ভাগ। করেছে। ফলে এ ক্ষেত্রে গুণগত বিভাগ অনুপপত্তির সৃষ্টি হয়েছে। আর এভাবেই তরমুজ ভাগ করার ক্ষেত্রে গনি মিয়ার কর্মকান্ড- যৌক্তিক বিভাগের অন্যতম দুটি নিয়মের লঙ্ঘন ঘটেছে।
পরিশেষে বলা যায়, সংকর বিভাগ ও গুণগত বিভাগ উভয়ই ভ্রান্ত বিভাগ যার দৃষ্টান্ত গনি মিয়ার কর্মকান্ড- পরিলক্ষিত হওয়ার কারণে বলা যায়ত তরমুজ ভাগ করার ক্ষেত্রে গনি মিয়া যৌক্তিক বিভাগের যথার্থ নিয়ম পালন করেনি।

২. দৃশ্যকল্প-১: বর্তমানে বাংলাদেশে বসবাসকারী মোট জনসংখ্যার ৮০% মুসলিম এবং ২০% অমুসলিম।
দৃশ্যকল্প-২: সজলপুর গ্রামে বসবাসকারী মানুষের মধ্যে আজিজ হলো সবচেয়ে সৎ, মেধাবী, সুখী ও ধার্মিক ব্যক্তি।
দৃশ্যকল্প-৩: মানুষের হাত, পা, চোখ, কান, নাক ও চুল রয়েছে।
ক. 'Dichotomy' শব্দটি কোন দুটি গ্রিক শব্দ থেকে উদ্ভূত?
খ. দ্বিকোটিক বিভাগের সুবিধাগুলো লেখো।
গ. দৃশ্যকল্প-২ এ যৌক্তিক বিভাগের কোন নিয়মের লঙ্ঘন ঘটেছে?
ঘ. দৃশ্যকল্প-২ ও দৃশ্যকল্প-৩ এ যৌক্তিক বিভাগের যে দুটি অনুপপত্তি ঘটেছে সেগুলো বিশ্লেষণ করো।

২ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. 'Dichotomy' শব্দটি গ্রিক 'Dicha' ও 'Temno' এ দুটি গ্রিক শব্দ থেকে উদ্ভূত।

খ. দ্বিকোটিক বিভাগ একটি নির্ভুল আকারগত বিভাগ প্রক্রিয়া। এ বিভাগ প্রক্রিয়ায় কোনো ভ্রান্তি বা অনুপপত্তি ঘটার আশঙ্কা থাকে না। পাশাপাশি এ বিভাগে পদের বিভক্তকরণে কোনো বাস্তব জ্ঞানের প্রয়োজন হয় না। এখানে কেবল একটি জাতিকে পরস্পর দুটি বিরোধী উপজাতিতে ভাগ করা হয়। এ কারণে বলা হয়, দ্বিকোটিক বিভাগ প্রক্রিয়া একটি সহজ-সরল প্রক্রিয়া।

গ. দৃশ্যকল্প-২ এ যৌক্তিক বিভাগের প্রথম নিয়মের লঙ্ঘন ঘটেছে।
যৌক্তিক বিভাগের প্রথম নিয়ম অনুসারে, একটি শ্রেণিবাচক বা জাতিবাচক পদকে ভাগ করতে হয়; কোনো বিশেষ বস্তু বা ব্যক্তিকে নয়। অর্থাৎ আমরা কোনো শ্রেণিবাচক বা জাতিবাচক পদকে তার অন্তর্গত নিম্নতর উপজাতিতে বিভক্ত করতে পারি। যেহেতু ব্যক্তি বা বস্তুর নিম্নতর শ্রেণি বা উপজাতি নেই তাই তাদের যৌক্তিক বিভাগ সম্ভব নয়।
দৃশ্যকল্প-২ এ বর্ণিত, আজিজ হলো সৎ, মেধাবী, সুখী ও ধার্মিক ব্যক্তি। এখানে শ্রেণিবাচক বা জাতিবাচক পদের পরিবর্তে বিশেষ ব্যক্তিকে বিভাজন করা হয়েছে। যা সুস্পষ্টই যৌক্তিক বিভাগের প্রথম নিয়মের লঙ্ঘন।

ঘ. দৃশ্যকল্প-২ এ গুণগত বিভাগ এবং দৃশ্যকল্প-৩ এ অঙ্গগত বিভাগ অনুপপত্তি ঘটেছে। নিচে উভয় অনুপপত্তির বিশ্লেষণ করা হলো-
কোনো জাতিবাচক বা শ্রেণিবাচক পদের পরিবর্তে যদি বিশেষ ব্যক্তি বা বস্তুকে তার বিভিন্ন গুণে ভাগ করা হয়, তবে গুণগত বিভাগ অনুপপত্তি ঘটে। যেমন- দৃশ্যকল্প-২ এ ‘আজিজকে' সৎ, মেধাবী, সুখী ও ধার্মিক পদে বিভক্ত করা হয়েছে। এখানে ‘আজিজ’ কোনো জাতিবাচক বা শ্রেণিবাচক পদ নয় বরং একজন বিশিষ্ট ব্যক্তির নাম। এ ধরনের অনুপপত্তিকে যুক্তিবিদগণ গুণগত বিভাগ অনুপপত্তি বলে চিহ্নিত করেছেন।
অন্যদিকে, কোনো জাতিবাচক বা শ্রেণিবাচক পদের পরিবর্তে বিশেষ ব্যক্তি বা বস্তুকে তার বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে বিভক্ত করা হলে অঙ্গগত বিভাগ অনুপপত্তি ঘটে। যেমন- দৃশ্যকল্প-৩ এ মানুষকে তার হাত, পা, চোখ, কান, নাক ও চুলে ভাগ করা হয়েছে। অর্থাৎ মানুষকে তার বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে বিভক্ত করার কারণে অঙ্গগত বিভাগ অনুপপত্তি ঘটেছে। তাই বলা যায়, গুণগত বিভাগ ও অঙ্গগত বিভাগ দুটি ভ্রান্ত বিভাগ। যার
দৃষ্টান্ত দৃশ্যকল্প-২ ও দৃশ্যকল্প-৩ এ পরিলক্ষিত হয়।

৩. তমা বললো, 'যখন কোনো পদকে মাত্র দুটি মূলসূত্রের আলোকে আলাদা করা হয় তখন অনেক সমস্যা দূর করা সহজ হয়।' রেখা মানুষ পদকে বিভাজন করতে গিয়ে বললো, ‘‘মানুষ হলো সভ্য, শিক্ষিত ও সৎ জীব। ’’
ক. অঙ্গগত বিভাগ কী?
খ. অতিব্যাপক বিভাগ অনুপপত্তি উদাহরণসহ ব্যাখ্যা করো।
গ. তমার বক্তব্য তোমার পাঠ্যবইয়ের কোনটিকে নির্দেশ করে?
ঘ. রেখার বক্তব্যে যৌক্তিক বিভাগের যে অনুপপত্তি ঘটেছে তা ব্যাখ্যা করো।

৩ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. কোনো ব্যক্তি বা বস্তুকে তার বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে বিভক্ত করা হলে যে ভ্রান্তি ঘটে, তাকেই বলে অঙ্গগত বিভাগ।

খ. যৌক্তিক বিভাগের তৃতীয় নিয়ম লঙ্ঘন করলে অতিব্যাপক বিভাগ অনুপপত্তি ঘটে।
যৌক্তিক বিভাগের নিয়ম অনুযায়ী, বিভক্ত উপজাতিগুলোর ব্যক্ত্যর্থ মিলিত ভাবে বিভাজ্য জাতিটির ব্যক্তর্থের সমান হবে। কিন্তু এ নিয়ম লঙ্ঘন করে যদি বিভক্ত উপজাতিগুলোর ব্যক্ত্যর্থ ঐ পদের ব্যক্তর্থের চেয়ে বেশি হয়, তাহলে অতিব্যাপক বিভাগ অনুপপত্তি ঘটে। যেমন- মুদ্রাকে স্বর্ণ, রৌপ্য, তাম্র, ব্রোঞ্জ ও ব্যাংক নোটে বিভক্ত করা হলে অতিব্যাপক বিভাগজনিত অনুপপত্তি ঘটে।

গ. তমার বক্তব্য পাঠ্যবইয়ের দ্বিকোটিক বিভাগের দিকটি নির্দেশ করে।
দ্বিকোটিক বিভাগে ‘বিরোধ নিয়ম’ ও ‘মধ্যম রহিত নিয়ম’ - এই নীতির আলোকে কোনো শ্রেণিবাচক বা জাতিবাচক পদকে দুটি উপজাতিতে ভাগ করা হয়। যাদের একটি হয় সদর্থক পদ অপরটি নঞর্থক পদ। এ দুটি নিয়মের কারণে দ্বিকোটিক বিভাগে বিভক্ত দুটি উপজাতি পরস্পর বিরুদ্ধ পদ হয়।
উদ্দীপকের তমা বলে, ‘যখন কোনো পদকে মাত্র দুটি মূলসূত্রের আলোকে আলাদা করা হয়, তখন অনেক সমস্যা দূর করা সহজ হয়।' তমার এ বক্তব্যের মাধ্যমে পাঠ্যপুস্তকের দ্বিকোটিক বিভাগের দিকটি প্রতিফলিত হয়।

ঘ. রেখার বক্তব্যে যৌক্তিক বিভাগের সংকর বিভাগজনিত অনুপপত্তি ঘটেছে।
যৌক্তিক বিভাগের দ্বিতীয় নিয়ম অনুযায়ী, একটি পদকে বিভক্ত করার সময় একটি মূলসূত্র গ্রহণ করতে হবে। যদি এই নিয়ম লঙ্ঘন করে কোনো পদকে একাধিক সূত্রের ভিত্তিতে বিভক্ত করা হয়, তবে সংকর বিভাগজনিত অনুপপত্তি ঘটবে। যেমন- ‘মানুষ' পদটিকে একই সাথে ‘বর্ণ’ ও ‘উচ্চতা’ অনুসারে ভাগ করলে যে উপশ্রেণির উদ্ভব হবে তা হলো, ‘লম্বা ও ফর্সা মানুষ' এবং 'বেঁটে ও কালো মানুষ'। এ বিভাগ প্রক্রিয়ায় সংকর বিভাগ অনুপপত্তি ঘটেছে। কারণ এখানে দু'টি মূল সূত্রের ওপর নির্ভর করে ‘মানুষ’ জাতিকে বিভক্ত করা হয়েছে।
উদ্দীপকে বর্ণিত ঘটনায় রেখা মানুষ পদকে সভ্য, শিক্ষিত ও সৎ জীবে বিভাজন করেছে। অর্থাৎ সে মানুষ পদকে সভ্যতা, শিক্ষা ও সততা নামক তিনটি সূত্রের আলোকে বিভাজন করেছে। এতে তার বক্তব্যে সংকর বিভাগজনিত অনুপপত্তি ঘটেছে।
পরিশেষে বলা যায়, সংকর বিভাগ একটি ত্রুটিপূর্ণ বিভাগ প্রক্রিয়া। সাধারণত কোনো জাতিবাচক পদকে একাধিক নীতির আলোকে বিভক্ত করলে এরূপ ত্রুটি ঘটে। উদ্দীপকের রেখা তিনটি সূত্রের আলোকে মানুষ পদকে বিভক্ত করেছে। তাই তার বিভক্তকরণে সংকর বিভাগজনিত অনুপপত্তি ঘটেছে।

৪. ঘটনা-১: মানুষকে সৎ, সুখী ও বিদ্বান পদে বিভক্ত করা হলো।
ঘটনা-২: ফাতেমার ব্যবহৃত গহনাটি স্বর্ণালী, ভারি ও মূল্যবান অংশে বিভক্ত করা হলো।
ক. গুণগত বিভাগ কী?
খ. যৌক্তিক সংজ্ঞা থেকে যৌক্তিক বিভাগ কীভাবে পৃথক?
গ. ঘটনা-১ এ কোন অনুপপত্তি ঘটেছে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. ঘটনা-১ ও ঘটনা-২ বর্ণিত বিষয়টি যৌক্তিক বিভাগের সাথে কীভাবে সম্পর্কযুক্ত? বিশ্লেষণ করো।

৪ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. কোনো জাতিবাচক বা শ্রেণিবাচক পদের পরিবর্তে বিশেষ ব্যক্তি বা বস্তুকে তার বিভিন্ন গুণে বিভক্ত করলে যে ভ্রান্তি ঘটে তাই গুণগত বিভাগ।

খ. প্রকৃতিগত দিক থেকে যৌক্তিক বিভাগ যৌক্তিক সংজ্ঞা থেকে পৃথক।
যুক্তিবিদ্যায় ব্যবহৃত পদের দুটি দিক থাকে। একটি হলো পদের গুণগত দিক বা জাত্যর্থ এবং অন্যটি পরিমাণগত দিক বা ব্যক্ত্যর্থ। পদের গুণগত দিক বা জাত্যর্থ যৌক্তিক সংজ্ঞায় আলোচনা করা হয়। অন্যদিকে, পরিমাণগত বা ব্যক্ত্যর্থ যৌক্তিক বিভাগে আলোচনা করা হয়। এ কারণেই যৌক্তিক বিভাগ যৌক্তিক সংজ্ঞা থেকে আলাদা।

গ. ঘটনা-১ এ পরস্পরাঙ্গী বিভাগজনিত অনুপপত্তি ঘটেছে।
যৌক্তিক বিভাগের উপজাতিগুলো একটি থেকে অন্যটি আলাদা হবে। কিন্তু কোনো জাতির বিভাজ্য উপজাতিগুলো একটি অন্যটির সাথে মিলেমিশে থাকলে সেই বিভাজ্য প্রক্রিয়াটি ভ্রান্ত হয়। এ ভ্রান্ত প্রক্রিয়াই হলো পরস্পরাঙ্গী বিভাগজনিত অনুপপত্তি।
ঘটনা-১ এ ‘মানুষ’ পদকে সৎ, সুখী ও বিদ্বান এই তিনটি উপজাতিতে বিভক্ত করা হয়েছে। এতে করে একটি উপজাতি অন্য উপজাতির সাথে মিশে পরস্পরাঙ্গী বিভাগজনিত অনুপপত্তি ঘটেছে।

ঘ. ঘটনা-১ ও ঘটনা-২ এ বর্ণিত পরস্পরাঙ্গী বিভাগ এবং সংকর বিভাগ অনুপপত্তি যৌক্তিক বিভাগের নিয়ম বিরুদ্ধ। তাই বৈসাদৃশ্যের প্রেক্ষাপটে উভয় বিষয় যৌক্তিক বিভাগ থেকে ভিন্ন।
যৌক্তিক বিভাগের দ্বিতীয় নিয়মানুসারে, কোনো পদের যৌক্তিক বিভাগে সর্বদা একটি নীতি অনুসরণ করতে হবে। কোনোভাবেই একের অধিক নীতি অনুসরণ করা যাবে না। এ নিয়ম অনুসারে ‘শিক্ষা’ মূলনীতির ভিত্তিতে ‘মানুষ’ জাতিকে ‘শিক্ষিত’ ও ‘অশিক্ষিত' এ দুটি উপজাতিতে ভাগ করা যায়। যৌক্তিক বিভাগের এ নিয়ম লঙ্ঘন করলে সংকর বিভাগ অনুপপত্তি ঘটে। অনুরূপভাবে যৌক্তিক বিভাগের চতুর্থ নিয়ম লঙ্ঘনের কারণে পরস্পরাঙ্গী বিভাগজনিত অনুপপত্তি ঘটে।
ঘটনা-১ এর দৃষ্টান্তে বিভাজ্য উপজাতিগুলো একটি অন্যটির সাথে পরস্পর অবিচ্ছিন্ন অবস্থায় আছে বলে এটি পরস্পরাঙ্গী বিভাগজনিত অনুপপত্তির দৃষ্টান্ত। যা যৌক্তিক বিভাগের চতুর্থ নিয়ম বিরুদ্ধ। আবার ঘটনা-২ এ গহনাকে স্বর্ণালী, ভারি ও মূল্যবান এ তিন পদে বিভক্ত করে বর্ণ, ওজন ও মূল্য নামক তিনটি সূত্রের আশ্রয় নেওয়া হয়েছে। তাই এই দৃষ্টান্তে সংকর বিভাগ অনুপপত্তি ঘটেছে। এটি যৌক্তিক বিভাগের দ্বিতীয় নিয়ম বিরুদ্ধ।
পরিশেষে বলা যায়, পরস্পরাঙ্গী বিভাগ অনুপপত্তি এবং সংকর বিভাগ অনুপপত্তি উভয়ই ভ্রান্ত বিভাগ প্রক্রিয়া। এ কারণে এ দুটি বিভাগ যৌক্তিক বিভাগ থেকে আলাদা।

৫. মনিরের মৃত্যুর পর তার রেখে যাওয়া সম্পত্তি ভাগাভাগি নিয়ে ছেলে-মেয়েদের মধ্যে সমস্যা দেখা দেয়। এ সময় সমাধানের জন্য ঐ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিপূর্ণ একরাত্রি হয়ে রাষ্ট্রীয় আইন ও নীতি অনুযায়ী মনিরের ছেলে-মেয়েদের মধ্যে কৃষি ও অকৃষি সম্পত্তি ভাগ করে দেন। ফলে সম্পত্তি নিয়ে সৃষ্ট সমস্যার নিষ্পত্তি হয়।
ক. যৌক্তিক বিভাগের মূলসূত্র কয়টি?
খ. সর্বনিম্ন উপজাতিকে ভাগ করা যায় না কেন?
গ. উদ্দীপকে এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের মাধ্যমে সম্পত্তি ভাগাভাগি ক্ষেত্রে যুক্তিবিদ্যার কোন বিষয়টির ইঙ্গিত পাওয়া যায়? এর বৈশিষ্ট্যগুলো ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকে যুক্তিবিদ্যার যে বিষয়টির ইঙ্গিত পাওয়া যায়, তার প্রাসঙ্গিকতা বিশ্লেষণ করো।

৫ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. যৌক্তিক বিভাগের মূলসূত্র একটি।

খ. সর্বনিম্ন বা ক্ষুদ্রতম উপজাতির কোনো নিম্নতর উপজাতি থাকে না বলে এর যৌক্তিক বিভাগ করা সম্ভব নয়।
যৌক্তিক বিভাগের উপজাতি হলো শ্রেণিবাচক পদ। এ জাতীয় পদকে বিভক্ত করলে একক ব্যক্তি বা বস্তুকে পাওয়া যায়। যৌক্তিক বিভাগের নিয়মানুযায়ী যেহেতু একক ব্যক্তি বা বস্তুর বিভাজন করা যায় না, তাই ক্ষুদ্রতম উপজাতিকেও বিভক্ত করা যায় না।

গ. উদ্দীপকে এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের মাধ্যমে সম্পত্তি ভাগাভাগির ক্ষেত্রে যৌক্তিক বিভাগের ‘একটি মূলসূত্র’ নীতি অনুসরণ করেছেন।
যৌক্তিক বিভাগে কোনো জাতিবাচক পদকে বিভক্ত করতে হলে একটি মূলসূত্র অনুসরণ করতে হবে। যেমন- মানুষ জাতিকে ‘সততা' নামক একটি মূলসূত্র অনুসারে 'সৎ মানুষ’ ও ‘অসৎ মানুষ' এই দুটি পদে বিভক্ত করা যায়। অন্যথায় একের অধিক নীতি অনুসরণ করলে অনুপপত্তি ঘটবে।
উদ্দীপকে বর্ণিত ঘটনায়, মনিরের সম্পত্তি তার ছেলেমেয়ের মধ্যে বণ্টন করে দেওয়ার ক্ষেত্রে গণ্যমান্য ব্যক্তিরা ‘রাষ্ট্রীয় আইন ও নীতি’ নামক একটি নীতি অনুসরণ করেছেন। তাই বলা যায়, গণ্যমান্য ব্যক্তিদের কার্যক্রম যৌক্তিক বিভাগের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।

ঘ. উদ্দীপকে যুক্তিবিদ্যার যৌক্তিক, বিভাগের দৃষ্টান্ত পরিলক্ষিত হয়। নিচে যৌক্তিক বিভাগের প্রাসঙ্গিকতা বিশ্লেষণ করা হলো-
যুক্তিবিদ্যায় পদের পরিমাণগত বা সংখ্যাগত দিক বলতে পদের ব্যক্ত্যর্থকে বোঝায়, যা যৌক্তিক বিভাগে আলোচনা করা হয়। এ বিভাগের মাধ্যমে যুক্তিবাক্যে ব্যবহৃত পদসমূহের সংখ্যা বা পরিমাণগত বিষয় সুস্পষ্ট করা হয়। বস্তুত যৌক্তিক ব্রিভাগে একটি মূলনীতির ভিত্তিতে কোনো বৃহত্তম শ্রেণিকে তার অন্তর্গত ক্ষুদ্রতম শ্রেণিতে বিভক্ত করা হয়। সে ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট কিছু নিয়ম অনুসরণ করে পদের যৌক্তিক বিভাগ করা হয়।
যৌক্তিক বিভাগ প্রক্রিয়া একটি জাতি তার অন্তর্গত উপজাতি সম্পর্কে সুস্পষ্ট জ্ঞান প্রদান করে, যা সঠিক অনুমান গঠন বা যুক্তি প্রণয়নে কার্যকর ভূমিকা পালনে সহায়ক হয়।
তাই বলা যায়, যুক্তিবিদ্যার শিক্ষার্থী হিসেবে যৌক্তিক বিভাগ সম্পর্কে যথাযথ জ্ঞান অর্জন করা উচিত।

৬. আবু তাহের সবসময় কঠিন করে কথা বলে। তার কথার মর্মার্থ বুঝতে সবারই কষ্ট হয়। একদিন সে হাতির সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলে, ‘হাতি হলো প্রচন্ডমত্ত বিপুল দেহধারী চতুষ্পদ আত্মা।' এ কথা শুনে জীববিজ্ঞানের ছাত্র কামরুজ্জামান বলে, ‘এলিফাস ম্যাক্সিমাস, লক্সোডন্টা এবং লক্সোডন্টা সাইক্লোটিসতএ তিনটি হলো হাতির প্রজাতি। যার প্রথমটি এশীয় হলেও অন্য দুটি আফ্রিকান। হাতি বলতে এই তিনটি প্রজাতিকেই বোঝায়।
ক. যৌক্তিক সংজ্ঞার কয়টি নিয়ম আছে?
খ. যৌক্তিক সংজ্ঞার মাধ্যমে কীভাবে পদের অপরিহার্য অর্থ প্রকাশ পায়?
গ. উদ্দীপকের আবু তাহেরের বক্তব্যে কোন ধরনের অনুপপত্তি ঘটেছে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকের কামরুজ্জামানের বক্তব্য কি যথার্থ? উত্তরের সপক্ষে যুক্তি দাও।

৬ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. যৌক্তিক সংজ্ঞার পাঁচটি নিয়ম আছে।

খ. যৌক্তিক সংজ্ঞায় পূর্ণ জাত্যর্থ প্রকাশের মাধ্যমে পদের অপরিহার্য অর্থ প্রকাশ পায়।
যৌক্তিক সংজ্ঞা হলো কোনো পদের পূর্ণ জাত্যর্থের প্রকাশ। এ কারণে কোনো পদের সংজ্ঞায় আসন্নতম জাতি ও বিভেদক লক্ষণ উল্লেখ করতে হয়। যেমন- ‘মানুষ হয় বুদ্ধিবৃত্তিসম্পন্ন জীব’। এখানে ‘মানুষ’ পদের পূর্ণ জাত্যর্থ হিসেবে আসন্নতম জাতি ও বিভেদক লক্ষণ উল্লেখ করা হয়েছে। এ কারণে এটি মানুষ পদের যথার্থ সংজ্ঞা। তাই বলা যায়, জাত্যর্থের মাধ্যমে যৌক্তিক সংজ্ঞায় পদের অপরিহার্য অর্থ প্রকাশ পায়।

গ. উদ্দীপকের আবু তাহেরের বক্তব্যে দুর্বোধ্য সংজ্ঞাজনিত অনুপপত্তি ঘটেছে।
কোনো পদের সংজ্ঞায় সহজ-সরল বা সুস্পষ্ট ভাষা ব্যবহার না করে জটিল বা দুর্বোধ্য ভাষা ব্যবহার করলে দুর্বোধ্য সংজ্ঞাজনিত অনুপপত্তি ঘটে। যেমন- ‘বক হলো শ্বেত-শুভ্র, দীর্ঘ-গ্রীবা, স্থিতাচারী, সুশ্রী বিহঙ্গ’। এখানে ‘বক' পদের সংজ্ঞায় দুর্বোধ্য শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। অর্থাৎ ব্যবহৃত ভাষাগুলো জটিল প্রকৃতির।
উদ্দীপকে বর্ণিত আবু তাহের হাতির সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলে, 'হাতি হলো প্রচন্ডমত্ত বিপুল দেহধারী চতুষ্পদ আত্মা'। এরূপ দুর্বোধ্য ভাষায় সংজ্ঞা দেওয়ার কারণে তার বক্তব্যে দুর্বোধ্য সংজ্ঞাজনিত অনুপপত্তি ঘটেছে।

ঘ. হ্যাঁ, উদ্দীপকের কামরুজ্জামানের বক্তব্যে যথার্থ। কারণ সে একটি নীতির আলোকে হাতির যৌক্তিক বিভাগ করেছে।
একটি মূলসূত্র বা নীতির ভিত্তিতে কোনো শ্রেণি বা জাতিকে তার অন্তর্ভুক্ত নিম্নতর শ্রেণি বা উপজাতিতে বিভক্ত করার প্রক্রিয়াকে যৌক্তিক বিভাগ বলে। এ বিভাগে কোনো পদকে বিভাজন করার ক্ষেত্রে অবশ্যই একটি নীতি অনুসরণ করতে হয়, কোনোভাবেই একের অধিক নয়। যেমন- 'শিক্ষা' নামক নীতির ভিত্তিতে ‘মানুষ’ জাতিকে ‘শিক্ষিত’ ও ‘অশিক্ষিত' এ দুটি উপজাতিতে ভাগ করা যৌক্তিক বিভাগের একটি দৃষ্টান্ত।
উদ্দীপকে বর্ণিত ঘটনায়, কামরুজ্জামান প্রজাতির ভিত্তিতে হাতিকে এলিফাস ম্যাক্সিমাস, লক্সোডন্টা এবং লক্সোডন্টা সাইক্লোটিসতএ তিন ভাগে বিভক্ত বলে উল্লেখ করেছে। যার প্রথমটি এশীয় হাতি ও অন্য দুটি আফ্রিকান হাতি। বস্তুত হাতি বলতে এই তিনটি প্রজাতিকেই বোঝায়। এ কারণে কামরুজ্জামানের বক্তব্য যৌক্তিক বিভাগের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।
পরিশেষে বলা যায়, যৌক্তিক বিভাগ একটি মানসিক প্রক্রিয়া। যেখানে একটি মূলসূত্র বা নীতির ভিত্তিতে কোনো জাতি বা শ্রেণিকে তার অন্তর্গত উপজাতি ও উপশ্রেণিতে বিভক্ত করা হয়। এরূপ দৃষ্টান্ত কামরুজ্জামানের বক্তব্যে পরিলক্ষিত হয়। এ কারণে তার বক্তব্য যথার্থ বলে মনে করি। প্রশ্ন।

৭. তাহের সাহেব প্রতিদিন সকালে পার্কে হাঁটতে যান। একদিন হাঁটতে গিয়ে হঠাৎ করেই তার বাল্যবন্ধু এনামুলের সাথে দেখা হয়। এরপর তারা পার্কে বসে গল্প করেন। ফেরার সময় তাহের সাহেব বন্ধুকে বাসায় আসতে বলেন। বাসায় ফিরে তিনি পরিবারের সবার কাছে তার বন্ধু সম্পর্কে বলেন, এনামুল বেশ শিক্ষিত, দেখতে ফর্সা ও উচ্চতায় লম্বা।
ক. যৌক্তিক সংজ্ঞার ইংরেজি শব্দ কী?
খ. বাহুল্য সংজ্ঞাজনিত অনুপপত্তি ঘটে কেন?
গ. তাহের সাহেবের বক্তব্যে কোন অনুপপত্তি ঘটেছে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. তাহের সাহেবের বক্তব্যে ‘মানুষ’ পদের যৌক্তিক সংজ্ঞা প্রকাশ পেয়েছে কি? উত্তরের সপক্ষে যুক্তি দাও।

৭ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. যৌক্তিক সংজ্ঞার ইংরেজি শব্দ হলো Logical Definition।

খ. জাত্যর্থের গুণ উল্লেখ করার কারণে বাহুল্য সংজ্ঞাজনিত অনুপপত্তি ঘটে।
কোনো পদের সংজ্ঞায় জাত্যর্থের অতিরিক্ত গুণ উল্লেখ করা হলে এবং সেই গুণটি যদি ঐ পদের উপলক্ষণ হয় তাহলে বাহুল্য সংজ্ঞাজনিত অনুপপত্তি ঘটে। যেমন- মানুষ হয় বুদ্ধিবৃত্তিসম্পন্ন বিচারশীল প্রাণী। এখানে ‘বিচারশীল’ গুণটি মানুষ পদের উপলক্ষণ। এ কারণে এখানে বাহুল্য সংজ্ঞাজনিত অনুপপত্তি ঘটেছে।

গ. তাহের সাহেবের বক্তব্যে সংকর বিভাগ নামক অনুপপত্তি ঘটেছে।
যৌক্তিক বিভাগের দ্বিতীয় নিয়মানুযায়ী, কোনো পদের বিভক্তকরণে একটি মূলসূত্র অনুসরণ করতে হবে। এ নিয়মটি লঙ্ঘন করে একাধিক মূলসূত্র অনুসরণ করা হলে বিভাগটি ভ্রান্ত হবে। আর এরূপ ভ্রান্ত বিভাগের নাম সংকর বিভাগ। যেমন- 'মানুষ' জাতিকে সৎ, ফর্সা ও জ্ঞানী এ তিনটি উপজাতিতে বিভক্ত করা হলে সংকর বিভাগজনিত অনুপপত্তি ঘটবে। কারণ এখানে পদের বিভক্তকরণে একটির পরিবর্তে তিনটি সূত্র (সততা, বর্ণ ও জ্ঞান) অনুসরণ করা হয়েছে। উদ্দীপকে বর্ণিত ঘটনায়, তাহের সাহেব তার বন্ধু এনামুল সম্পর্কে বলেন, সে বেশ শিক্ষিত, দেখতে ফর্সা ও উচ্চতায় বেশ লম্বা। অর্থাৎ তিনি এক্ষেত্রে একটির পরিবর্তে তিনটি সূত্র (শিক্ষা, বর্ণ ও উচ্চতা) অনুসরণ করেছেন। এ কারণেই তার বক্তব্যে সংকর বিভাগজনিত অনুপপত্তি ঘটেছে।

ঘ. না তাহের সাহেবের বক্তব্যে ‘মানুষ' পদের যৌক্তিক সংজ্ঞা প্রকাশ পায়নি।
যৌক্তিক সংজ্ঞা হলো কোনো পদের জাত্যর্থ বা অপরিহার্য অর্থ প্রকাশ করার মাধ্যম। যেমন- মানুষ পদের মৌলিক ও আবশ্যিক গুণ হলো ‘জীববৃত্তি’ ও ‘বুদ্ধিবৃত্তি’। তাই ‘মানুষ হয় বুদ্ধিবৃত্তিসম্পন্ন জীব'ত এটি বলার মাধ্যমে মানুষ পদের পূর্ণ জাত্যর্থ বা যৌক্তিক সংজ্ঞা দেওয়া হবে।
উদ্দীপকে বর্ণিত ঘটনায় তাহের সাহেব তার বন্ধুকে শিক্ষিত, ফর্সা ও উচ্চতায় লম্বা বলে উল্লেখ করেছেন। কিন্তু এগুলো মানুষ পদের মৌলিক গুণ নয়, বরং অবান্তর লক্ষণ মাত্র। এ কারণে তাহের সাহেবের বক্তব্যে মানুষ পদের অপরিহার্য অর্থ বা জাত্যর্থ প্রকাশিত হয়নি।
পরিশেষে বলা যায়, জাত্যর্থ হলো পদের মৌলিক ও সাধারণ গুণাবলির প্রকাশ। কিন্তু উদ্দীপকে তাহের সাহেবের বক্তব্যে জাত্যর্থের এই দিকটি উপেক্ষিত হয়েছে। অর্থাৎ তিনি মানুষ পদের সংজ্ঞা না দিয়ে বর্ণনা দিয়েছেন।
তাই বলা যায়, কোনো পদের যৌক্তিক সংজ্ঞা দেওয়ার সময় অবশ্যই অবান্তর লক্ষণ পরিহার করে বিভেদক লক্ষণ ও আসন্নতম জাতির আশ্রয় নিতে হবে। তবেই তা যথার্থ সংজ্ঞা বলে বিবেচিত হবে।

৮. মোকাররম হোসেন একদিন উপজাতিদের জীবনযাত্রার মান ও ধরনের ওপর একটি প্রতিবেদন তৈরি করেন। প্রতিবেদন অনুযায়ী তিনি উপজাতিদের বিভিন্ন শ্রেণি যেমন- গারো, মারমা, সাঁওতাল ইত্যাদিতে ভাগ করে তার উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাকে দেখালেন। তিনি প্রতিবেদনটি পড়ে মোকাররম হোসেনকে বলেন, এটি আরও মার্জিত ও স্পষ্ট করে উপস্থাপন করতে হবে যাতে কোনোরূপ অস্পষ্টতা না থাকে।
ক. বাহুল্য সংজ্ঞা কী?
খ. প্রদর্শনমূলক সংজ্ঞা বলতে কী বোঝ?
গ. মোকাররম হোসেনের কার্যক্রমে যুক্তিবিদ্যার কোন প্রত্যয়ের সাদৃশ্য রয়েছে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকে বর্ণিত উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার উক্তিটির তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো।

৮ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. কোনো পদের সংজ্ঞায় জাত্যর্থের অতিরিক্ত কোনো গুণের উল্লেখ থাকলে এবং সে গুণটি উপলক্ষণ হলে তাকে বাহুল্য সংজ্ঞা বলে।

খ. প্রদর্শনমূলক সংজ্ঞায় কোনো নির্দেশক বস্তুর সংজ্ঞা দেওয়া হয়।
নির্দিষ্ট দৃষ্টান্তের সাহায্যে যখন কোনো ব্যক্তির কাছে সংশ্লিষ্ট শব্দ বা পদের অর্থ ব্যাখ্যা করা হয় তখন এ ব্যাখ্যার প্রক্রিয়াকেই প্রদর্শনমূলক সংজ্ঞা বলা হয়। এ ধরনের সংজ্ঞায় কোনো পদকে সরাসরিভাবে ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য পার্থিব বস্তু বা সত্তার মাধ্যমে সংজ্ঞায়িত করা হয়ে থাকে।

গ. মোকাররম হোসেনের কার্যক্রমে যৌক্তিক বিভাগ প্রত্যয়ের সাদৃশ্য রয়েছে।
সাধারণত একটি নীতির ভিত্তিতে কোনো জাতিকে তার অন্তর্গত উপজাতিতে বিভক্ত করা হলে তাকে যৌক্তিক বিভাগ বলা হয়। বস্তুত যৌক্তিক বিভাগ হলো এক প্রকার মানসিক প্রক্রিয়া। যেখানে একটি বৃহত্তম শ্রেণিকে তার অন্তর্গত ক্ষুদ্রতম শ্রেণিতে বিভক্ত করা হয়। উল্লেখ্য যে, যৌক্তিক বিভাজন প্রক্রিয়ায় সবসময়ই একটি মূলনীতি অনুসরণ করা হয়।
উদ্দীপকে বর্ণিত ঘটনায় মোকাররম হোসেন জীবনযাত্রার মান ও ধরন অনুযায়ী উপজাতিদের গারো, মারমা, সাঁওতাল ইত্যাদিতে যৌক্তিকভাবে বিভক্ত করেছে। অর্থাৎ তিনি একটি নীতির আলোকে উপজাতিদের বিভক্ত করেছেন। এ কারণে মোকাররম হোসেনের কার্যক্রমে যৌক্তিক বিভাগ প্রত্যয়ের সাদৃশ্য বিদ্যমান।

ঘ. প্রতিবেদনটিকে আরও মার্জিত ও স্পষ্ট করে উপস্থাপন করতে হবে- উদ্দীপকে বর্ণিত উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার এ উক্তিটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ তার বক্তব্য যৌক্তিক সংজ্ঞার সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।
যৌক্তিক সংজ্ঞার মাধ্যমে একটি নির্দিষ্ট পদ বা বিষয়কে স্পষ্ট ও প্রাঞ্জল করে তোলা হয়। যাতে করে উক্ত পদ বা বিষয় সম্পর্কে কোনোরূপ অস্পষ্টতা না থাকে। উদ্দীপকের মোকাররম হোসেন একটি প্রতিবেদন তৈরি করে তার উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাকে দেখালে তিনি মার্জিত ও স্পষ্ট করে উপস্থাপনের বিষয়টি উল্লেখ করেন। তার এ বক্তব্যে যৌক্তিক সংজ্ঞার প্রাসঙ্গিকতার বিষয়টি ফুটে উঠেছে।
বস্তুত মানুষের চিন্তাধারাকে সহজ-সরল, সুস্পষ্ট ও বোধগম্য করে তোলার ক্ষেত্রে যৌক্তিক সংজ্ঞার ভূমিকা আপরিহার্য। সাধারণত কোনো পদের অর্থ বিশ্লেষণ করতে সমার্থক শব্দ বা প্রতিশব্দ ব্যবহার করা হলে সেই পদের প্রকৃত অর্থ প্রকাশ পায় না। কিন্তু পদের অপরিহার্য অর্থ প্রকাশ করলে সেই পদের অর্থ স্পষ্ট ও বোধগম্য হয়। অর্থাৎ যৌক্তিক সংজ্ঞার মাধ্যমে কোনো দুর্বোধ্য বিষয়কে সুবোধ্য করা যায়, জটিল বিষয়কে সরল করা যায় এবং কঠিন বিষয়কে সহজ করা যায়। পাশাপাশি শব্দ ও পদের অপ্রাসঙ্গিকতা দোষ বর্জন করা যায়। এর ফলে শব্দভান্ডার বৃদ্ধি পায় এবং পদের তত্ত্বগত অর্থ সুস্পষ্ট হয়।
পরিশেষে বলা যায় যে, কোনো পদ বা বিষয়ের অস্পষ্টতা নিরূপণের পাশাপাশি অসংগতি দূর করার ক্ষেত্রে যৌক্তিক সংজ্ঞা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এ কারণে বলা যায়, প্রথম আলোর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার উক্তিটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।

৯. আববার মৃত্যুর পরই আলী ও রিয়াজ দু'ভাই এর মধ্যে বড় একটা আম গাছের ভাগ নিয়ে গোলমাল শুরু হলো। রিয়াজ বললো, ‘‘আম গাছের পাতা, ডাল, কান্ড যা আছে তার প্রত্যেকটার ভাগ আমার চাই।’’ প্রতিবেশী আরজ আলী বললেন, ‘‘আলীর তুলনায় তুমি বিদ্বান, ফর্সা, লম্বা ও সুন্দর হবে এমন অযৌক্তিক ভাগের কথা কীভাবে তুললে?’’
ক. যৌক্তিক বিভাগ কী?
খ. সংকর বিভাগ অনুপপত্তি কেন ঘটে?
গ. উদ্দীপকে রিয়াজ সম্পর্কে আরজ আলীর ধারণা বিভাগের কোন ধরনের অনুপপত্তি?
ঘ. উদ্দীপকে বর্ণিত রিয়াজের বক্তব্যে যে অসঙ্গতি পরিলক্ষিত হয়েছে পাঠ্যবিষয়ের আলোকে তার ব্যাখ্যা দাও।

৯ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. একটি সূত্র বা নীতির ভিত্তিতে কোনো জাতি বা উচ্চতর শ্রেণিকে তার অন্তর্গত উপজাতি বা নিম্নতর শ্রেণিসমূহে বিভক্ত করার প্রক্রিয়াকে যৌক্তিক বিভাগ বলে।

খ. যৌক্তিক বিভাগে একাধিক নীতি অনুসরণ করার কারণে সংকর বিভাগজনিত অনুপপত্তি ঘটে।
যৌক্তিক বিভাগের দ্বিতীয় নিয়মানুসারে, কোনো পদের বিভাগায়নে একটি নীতি অনুসরণ করতে হয়। কিন্তু কোনো ক্ষেত্রে একটি মূলনীতির পরিবর্তে একাধিক নীতি অনুসরণ করা হলে বিভাগ প্রক্রিয়ায় যে ভ্রান্তির সৃষ্টি হয়, তাকে সংকর বিভাগজনিত অনুপপত্তি বলে। যেমন: মানুষকে শিক্ষিত ও সৎ নামক পদে বিভক্ত করলে ‘শিক্ষা’ ও ‘সততা’ নামক দুটি নীতি অনুসরণ করতে হয়। এ কারণে এটি সংকর বিভাগজনিত অনুপপত্তির দোষে দুষ্ট হবে।

গ. উদ্দীপকে রিয়াজ সম্পর্কে আরজ আলীর ধারণা হচ্ছে সংকর বিভাগ অনুপপত্তি।
যৌক্তিক বিভাগে একই সময়ে একটি মূলনীতির ভিত্তিতে কোনো জাতি বা শ্রেণিবাচক পদের যৌক্তিক বিভাগ করা হয়। যদি কোনো পদের যৌক্তিক বিভাগ করার সময় একের অধিক মূলনীতি অনুসরণ করা হয়, তাহলে বিভাগ ত্রুটিপূর্ণ হয়। যৌক্তিক বিভাগের এ ত্রুটিকে সংকর বিভাগ অনুপপত্তি বলে।
উদ্দীপকের আরজ আলী রিয়াজ সম্পর্কে যে বক্তব্য প্রদান করেছেন, সেখানে একই সাথে অনেকগুলো মূলনীতির উল্লেখ করা হয়েছে। ফলে সেখানে যৌক্তিক বিভাগের নিয়ম লঙ্ঘন করা হয়েছে এবং সংকর বিভাগজনিত অনুপপত্তি প্রকাশ পেয়েছে।

ঘ. উদ্দীপকে বর্ণিত রিয়াজের বক্তব্যে অঙ্গগত বিভাগজনিত অনুপপত্তি পরিলক্ষিত হয়।
অঙ্গগত বিভাগ হলো যৌক্তিক বিভাগের একটি ত্রুটিপূর্ণ বা ভ্রান্ত বিভাগ। সাধারণত কোনো ব্যক্তি বা বস্তুকে তার অন্তর্গত বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বা অংশসমূহে বিভক্ত করলে অঙ্গগত বিভাগ নামক অনুপপত্তি ঘটে। এ বিভাগের বিভক্ত বিষয়গুলো আমাদের কাছে দৃশ্যমান থাকে। যার ফলে বিভক্ত বিষয়গুলোকে আমরা সামগ্রিক ধারণা থেকে আলাদা করতে পারি। যেমন কোনো গাছকে তার মূল, কান্ড, শাখা, পাতা, ফুল ও ফল অংশে বিভক্ত করলে তা হবে অঙ্গগত বিভাগ।
উদ্দীপকে বর্ণিত ঘটনায় রিয়াজ আম গাছকে পাতা, ডাল ও কান্ড- বিভক্ত করেছে। অর্থাৎ সে যৌক্তিক বিভাগের প্রথম নিয়ম লঙ্ঘন করে কোনো বস্তুকে তার বিভিন্ন অংশে বিভক্ত করেছে। এ কারণে তার বক্তব্যে অঙ্গগত বিভাগজনিত অনুপপত্তি পরিলক্ষিত হয়।
যৌক্তিক বিভাগের প্রথম নিয়মে বলা হয়েছে, সর্বদা একটি জাতিবাচক পদকে বিভক্ত করতে হবে, কোনো বিশেষ ব্যক্তি বা বস্তুকে নয়। কিন্তু এই নিয়ম লঙ্ঘন করে উদ্দীপকের রিয়াজ বিশিষ্ট পদ আম গাছকে বিভাজন করেছে। এ কারণে তার বক্তব্যে অঙ্গগত বিভাগজনিত অসঙ্গতি পরিলক্ষিত হয়েছে।

১০. দৃশ্যকল্প- ১:
মানুষ→ সৎ, লম্বা, ফর্সা
দৃশ্যকল্প- ২:
প্রাণী→ মানুষ, গরু, ঘোড়া, ছাগল
দৃশ্যকল্প- ৩:
মানুষ→ এশিয়াবাসী, অস্টেলিয়াবাসী, আমেরিকাবাসী, আফ্রিকাবাসী, ইউরোপবাসী, বনমানুষ
ক. দ্বিকোটিক বিভাগ কী?
খ. সর্বনিম্ন উপজাতিকে বিভক্ত করা যায় না কেন?
গ. দৃশ্যকল্প-১ এ কী ধরনের অনুপপত্তি ঘটেছে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. দৃশ্যকল্প-২ এবং ৩ এর মধ্যে তুলনামূলক আলোচনা করো।

১০ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. দ্বিকোটিক বিভাগ হলো কোনো জাতিকে তার অন্তর্গত দুটি বিরুদ্ধ উপজাতিতে বিভক্ত করার প্রক্রিয়া।

খ. সর্বনিম্ন বা ক্ষুদ্রতম উপজাতির কোনো নিম্নতর উপজাতি থাকে না বলে এর যৌক্তিক বিভাগ করা সম্ভব নয়।
যৌক্তিক বিভাগের উপজাতি হলো শ্রেণিবাচক পদ। এ জাতীয় পদকে বিভক্ত করলে একক ব্যক্তি বা বস্তুকে পাওয়া যায়। যৌক্তিক বিভাগের নিয়মানুযায়ী যেহেতু একক ব্যক্তি বা বস্তুর বিভাজন করা যায় না, তাই ক্ষুদ্রতম উপজাতিকেও বিভক্ত করা যায় না।

গ. দৃশ্যকল্প-১ এ সংকর বিভাগজনিত অনুপপত্তি ঘটেছে।
যৌক্তিক বিভাগের দ্বিতীয় নিয়মানুযায়ী কোনো পদের বিভক্তকরণের সময় একটিমাত্র মূলসূত্র অনুসরণ করতে হবে। এ নিয়মটি লঙ্ঘন করে যদিএকাধিক মূলসূত্র অনুসরণ করা হয় তাহলে বিভাগটি ভ্রান্ত হবে। আর এরূপ ভ্রান্ত বিভাগের নাম সংকর বিভাগ। যেমন- 'মানুষ' জাতিকে সৎ ফর্সা ও জ্ঞানী এ তিনটি উপজাতিতে বিভক্ত করা হলে সংকর বিভাগজনিত অনুপপত্তি ঘটবে। কারণ এখানে পদের বিভক্তকরণে একটির পরিবর্তে তিনটি মূলসূত্র (সততা, বর্ণ ও জ্ঞান) গ্রহণ করা হয়েছে।
দৃশ্যকল্প-১ এ 'মানুষ' পদকে সৎ, লম্বা ও ফর্সা এ তিনটি উপজাতিতে বিভক্ত করা হয়েছে। অর্থাৎ এখানে যৌক্তিক বিভাগে একটির পরিবর্তে তিনটি সূত্র (সততা, উচ্চতা ও বর্ণ) গ্রহণ করা হয়েছে। এভাবে দৃশ্যকল্প-১ এ ‘মানুষ’ পদকে তিনটি সূত্রের মাধ্যমে বিভক্ত করায় সংকর বিভাগজনিত অনুপপত্তি ঘটেছে।

ঘ. দৃশ্যকল্প-২ এ অব্যাপক বিভাগ এবং দৃশ্যকল্প-৩ এ অতিব্যাপক বিভাগ অনুপপত্তি ঘটেছে। নিচে উভয় বিভাগ প্রক্রিয়ার মধ্যে তুলনামূলক আলোচনা করা হলো-
আমরা জানি, যৌক্তিক বিভাগের বিভক্ত উপজাতিগুলোর মিলিত সংখ্যা জাতির সংখ্যার চেয়ে কম হলে অব্যাপক বিভাগ অনুপপত্তি ঘটে। যেমন- দৃশ্যকল্প-২ এ প্রাণী জাতিকে মানুষ, গরু, ঘোড়া, ছাগল উপজাতিতে বিভক্ত করা হয়েছে। ফলে উপজাতিগুলোর পরিমাণ জগতের সমস্ত প্রাণীর পরিমাণের চেয়ে কম হয়েছে। অর্থাৎ জগতের অন্যান্য প্রাণীর নাম বিভাজন প্রক্রিয়া থেকে বাদ পড়েছে। এ কারণে দৃশ্যকল্প-২ এ অব্যাপক বিভাগজনিত অনুপপত্তি ঘটেছে।
অন্যদিকে, যৌক্তিক বিভাগের বিভক্ত উপজাতিগুলোর মিলিত সংখ্যা জাতির সংখ্যার চেয়ে বেশি হলে অতিব্যাপক বিভাগ অনুপপত্তি ঘটে। যেমন- দৃশ্যকল্প-৩ এ উল্লেখিত মানুষ পদকে এশিয়াবাসী, অস্ট্রেলিয়াবাসী, আমেরিকাবাসী, আফ্রিকাবাসী, ইউরোপবাসী ও বনমানুষে বিভক্ত করা হয়েছে। অর্থাৎ উপজাতিগুলোর মিলিত সংখ্যা জাতির সংখ্যা থেকে বেশি হয়েছে। এর ফলে অতিব্যাপক বিভাগজনিত অনুপপত্তি ঘটেছে।
পরিশেষে বলা যায়, অব্যাপক ও অতিব্যাপক উভয়ই ত্রুটিপূর্ণ বিভাগ প্রক্রিয়া। এরূপ ত্রুটি বা অনুপপত্তি নিরসনে আমাদের যৌক্তিক বিভাগের তৃতীয় নিয়ম অনুসরণ করতে হবে। অর্থাৎ যৌক্তিক বিভাগের বিভক্ত- উপশ্রেণিগুলোর বিভাজ্য জাতির সমান ব্যক্ত্যর্থ রাখতে হবে।
Share: