HSC কৃষিশিক্ষা ১ম পত্র (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর pdf download অধ্যায় ১

এইচএসসি পরীক্ষার পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি
HSC Agricultural Education 1st Paper Srijonshil question and answer. HSC Agricultural Education 1st Paper (Srijonshil) Creative Questions pdf download. HSC Krishi Shikkha 1st paper Srijonshil Proshno Uttor.

উচ্চ মাধ্যমিক
কৃষিশিক্ষা
প্রথম পত্র

সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
অধ্যায়-১

HSC Agriculture 1st Paper
Srijonshil Question and Answer pdf download

১. সুজন মিয়া ফুলতলা গ্রামের একজন কৃষক। বাড়ি থেকে বাজারে যেতে হলে তাকে দুপুরে প্রচ- রোদে চার কিলোমিটার পথ অতিক্রম করতে হয়। বিশ্রাম নেওয়ার মত ছায়া কোথাও নেই। তাই সে কয়েকজন কৃষকের সাথে আলোচনা করে সম্পূর্ণ রাস্তায় কিছু বনজ বৃক্ষের চারা রোপণ করেন। তারা উৎপাদিত দ্রব্যগুলো চুক্তি অনুযায়ী বণ্টনের সিদ্ধান্ত নেয়।
ক. মাঠ ফসল কী?
খ. টমেটো কেন উদ্যান ফসল? ব্যাখ্যা কর।
গ. উদ্দীপকের ফসলটি কৃষির কোন ক্ষেত্রের অন্তর্ভুক্ত? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. সুজন মিয়ার উদ্যোগটি বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে মূল্যায়ন কর।

১ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. উন্মুক্ত মাঠে বেড়াবিহীন অবস্থায় চাষকৃত ফসল হলো মাঠ ফসল। যেমন- ধান, পাট ইত্যাদি।

খ. টমেটো উদ্যান ফসল কারণ টমেটো বাড়ির আশে পাশে এমনকি ছাদে বা টবের মাটিতে চাষ করা যায়। টমেটো উৎপাদন খরচ কম কিন্তু দাম বেশি। টমেটো গাছ থেকে সংগ্রহ করে সরাসরি খাওয়া যায় অন্যান্যা উদ্যান ফসলের মত টমেটো একবারে পরিপক্ক হয় না এবং ধাপে ধাপে সংগ্রহ করা যায় তাই টমেটোকে উদ্যান ফসল বলে।

গ. উদ্দীপকের ফসলটি কৃষির সামাজিক বনায়নের অন্তর্ভুক্ত। ফসলটি সামাজিক বনায়নে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করা হলো।
যে বনায়ন ব্যবস্থাপনায় জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করে এবং এতে যে লাভ হয় তা অংশগ্রহণকারী জনগণ সরাসরি ভোগ করে। অর্থাৎ জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের মাধ্যমে, জনগণের কল্যাণে এবং জনগণ দ্বারা সৃষ্ট বনায়নকে সামাজিক বনায়ন বলে। ফুলতলা গ্রামের সুজন মিয়া ও কয়েকজন কৃষক মিলে রোপনকৃত চারা থেকে প্রাপ্ত উদ্ভিদের লভ্যাংশ দাবিদার সুজন মিয়াসহ অন্যান্য কৃষক। যা সামাজিক বনায়নের অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য। সামাজিক বনায়নে যেরূপ উদ্দীপকের উক্ত ফসলের ব্যবস্থাপনায় সুজন মিয়া ও অন্যান্য দরিদ্র লোক অংশগ্রহণ করে।
সামাজিক বনায়ন জনগণের জ্বালানি, খাদ্য কাঠসহ অন্যান্য চাহিদা মেটায় ভবিষ্যতে সুজন মিয়াদের দিয়ে সৃষ্ট বনভূমি একইভাবে জনগণের জ্বালানি, খাদ্য ও কাঠের চাহিদা মেটাবে। সুজন মিয়া ও অন্যান্য কৃষকের সৃষ্ট বনায়ন গ্রামীণ কৃষক ও ভূমিহীনদের অর্থ উপার্জন ও কর্মসংস্থানের সুযোগ-সৃষ্টি করে। যা সামাজিক বনায়নের অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য।
সুতরাং, উক্ত আলোচনা থেকে বলা যায় যে, সুজন মিয়া ও কয়েকজন কৃষক দিয়ে সৃষ্ট ফসলে, সামাজিক বনায়নের সকল বৈশিষ্ট্য, উদ্দেশ্য বিদ্যমান থাকায় ফসলটি সামাজিক বনায়নের অন্তর্ভুক্ত।

ঘ. উদ্দীপকের সুজন মিয়ার সামাজিক বনায়নের উদ্যোগটি বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সামাজিক বনায়নের মূল্যায়ন করা হলো সামাজিক বনায়ন বা বৃক্ষ রোপণের মাধ্যমে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর আয়ের উৎস তৈরি হয়। এই কার্যক্রমের সঙ্গে স্থানীয় জনগণ গাছের চারা রোপণের পাশাপাশি এর পরিচর্যার সব দায়িত্ব পালন করে। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবেলায় সামাজিক বনায়ন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আমাদের দেশের বনভূমি যে অনুপাতে থাকা প্রয়োজন তা না থাকায় পরিবেশের বিভিন্ন উপাদানের (যেমন- তাপমাত্রা) ভারসাম্যতা নষ্ট হচ্ছে। সামাজিক বনায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশের বনভূমির চাহিদা পূরণ করা সম্ভব। সামাজিক বনায়নের মাধ্যমে রোপণকৃত গাছ প্রাকৃতিক দেয়াল হিসেবে কাজ করে। এই বনায়নের মাধ্যমে উপকূলীয় অঞ্চলে সারিবদ্ধভাবে অধিক পরিমাণে গাছ লাগিয়ে সবুজ বেষ্টনী তৈরি করা যায়। সামাজিক বনায়নে ফলজ গাছ রোপণ করলে গ্রামের মানুষের খাদ্য ও পুষ্টির উৎস সৃষ্টি হয়। দেশের প্রতিটি অঞ্চলে গ্রামের মানুষ একটি বনজ, একটি ফলজ ও একটি ভেষজ গাছের চারা রোপণ করার পদ্ধতি অনুসরণ করায় খাদ্য ও পুষ্টি সরবরাহ নিশ্চিত হয়েছে। প্রাকৃতিক বন আছে তা উজাড় হয়ে যেত। বাংলাদেশে প্রতি বছর ৮.০ মিলিয়ন ঘনমিটারের বেশি জ্বালানি কাঠের চাহিদা রয়েছে যার প্রায় ৮২-৯৯% আসে সামাজিক বন থেকে। সামাজিক বনায়ন বাংলাদেশের গ্রামীণ জনসাধারণের কর্মসংস্থান ও আয় বৃদ্ধির সুযোগ সৃষ্টি করে। সুতরাং, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সামাজিক বনায়ন আশির্বাদস্বরূপ। সংক্ষেপে এর মূল্যায়ন করা অসম্ভব।

২. জামান সাহেব আমন মৌসুমে ধান চাষ করে কম লাভ হওয়ায় উপজেলা কৃষি অফিসারের নিকট যান। কৃষি অফিসার কৃষির বিভিন্ন ক্ষেত্র নিয়ে আলোচনা করেন। জমিতে পর্যাপ্ত পরিমাণে জৈব সার প্রয়োগ করে সবজি চাষ করতে বলেন। তিনি সময়মতো সেচ এবং বালাইনাশকও প্রয়োগ করতে বলেন। এতে উৎপাদন খরচ বাড়লেও জামান সাহেব পূর্বের তুলনায় বেশি লাভবান হন।
ক. মাঠ ফসল কী?
খ. আলু কেন উদ্যান ফসল- ব্যাখ্যা কর।
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত ফসলের ক্ষেত্রগুলোর মধ্যে তুলনামূলক আলোচনা কর।
ঘ. জামান সাহেবের লাভবান হওয়ার ক্ষেত্রে কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শের যথার্থতা মূল্যায়ন কর।

২ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. যেসব ফসল সাধারণত বিস্তীর্ণ মাঠে, বড় জমিতে, নিচু ও মাঝারি উঁচু জমিতে চাষ করা হয় তাদেরকে মাঠ ফসল বলে। যেমন- ধান, গম ইত্যাদি।

খ. উদ্যান জাতীয় ফসল বাড়ির আশপাশে উর্বর জমিতে চাষ করা হয়। ব্যবসায়িক ভিত্তিতে আলু চাষ করা হলেও কম জমিতে স্বল্প পরিসরে বাড়ির আশপাশে চাষ করা হয়। আলু সারা বছর সবজি হিসেবে খাওয়া হয়। সবজি জাতীয় ফসল উদ্যান ফসলের অন্তর্ভুক্ত। আলু চাষের সময় ও পরিপক্বের পর উত্তোলনের সময় বিশেষ যত্নের প্রয়োজন হয়। যা উদ্যান ফসলের বৈশিষ্ট্য। এসব কারণে আলুকে উদ্যান ফসল বলা হয়।

গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত ফসলের ক্ষেত্রগুলো হলো মাঠ ফসল ও উদ্যান ফসল। কারণ ধান মাঠ ফসল আর সবজি হলো উদ্যান ফসল। নিচে মাঠ ফসল ও উদ্যান ফসলের মধ্যে তুলনামূলক আলোচনা করা হলো-
উদ্যান ফসল ক্ষুদ্রায়তনের জমিতে চাষ করা হয় এবং পৃথকভাবে প্রতিটি গাছের যত্ন নেওয়া হয়, যেমন- আম, কলা, কাঁঠাল, ফুলকপি, আনারস ইত্যাদি অপরদিকে মাঠ ফসল বৃহদায়তনের জমিতে চাষ করা হয় এবং সমষ্টিগতভাবে যত্ন ও পরিচর্যা করা হয়। যেমন- ধান, গম, ভুট্টা, পাট ইত্যাদি। উদ্যান ফসল ভূপৃষ্ঠ থেকে কম-বেশি উঁচু জমিতে চাষ করা হয় কিন্তু মাঠ ফসল নিচু ও মাঝারি উঁচু জমিতে চাষ করা হয়। উদ্যান ফসল রক্ষার জন্য চারদিকে বেড়া নির্মাণের প্রয়োজন হয়, পক্ষান্তরে মাঠ ফসল রক্ষার জন্য চারদিকে বেড়া নির্মাণের প্রয়োজন হয় না। উদ্যান ফসলের বেশি যত্ন ও পরিচর্যা প্রয়োজন হয় অপরদিকে মাঠ ফসলের কম যত্ন ও পরিচর্যার প্রয়োজন হয়। উদ্যান ফসল একাধারে পরিপক্ব হয় না এবং ধাপে ধাপে সংগ্রহ করা হয় কিন্তু মাঠ ফসলের সবগুলো একত্রে পরিপক্ব হয় এবং তা একত্রে সংগ্রহ করা হয়। ফসলের মূল্য মৌসুমের শুরুতে বেশি থাকে অন্যদিকে ফসলের মূল্য মৌসুমের শুরুতে কম থাকে। উদ্যান ফসলের উৎপাদন খরচ তুলনামূলকভাবে বেশি এবং নিট লাভ কম হয়, পক্ষান্তরে মাঠ ফসলের উৎপাদন খরচ তুলনামূলকভাবে কম এবং নিট লাভ বেশি হয়। উদ্যান ফসল সাধারণত তাজা অবস্থায় ব্যবহার করা হয়, অন্যদিকে মাঠ ফসল সাধারণত শুকিয়ে ব্যবহার করা হয়।

ঘ. কৃষি কর্মকর্তা জামান সাহেবকে সবজি চাষ করার পরামর্শ দেন। তিনি সময়মতো সেচ ও বালাইনাশক প্রয়োগ করারও পরামর্শ দেন। নিচে জামান সাহেবের লাভবান হওয়ার ক্ষেত্রে কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শের যথার্থতা মূল্যায়ন করা হলো-
সবজি একটি উদ্যান ফসল। উদ্যান ফসল চাষ করা শ্রমসাপেক্ষ হলেও লাভজনক ও ঝুঁকি কম। উদ্যান ফসলের গাছ হতে ফল সংগ্রহ করে সরাসরি খাওয়া যায়। অনেক উদ্যান ফসল থেকে সারাবছরই ফল পাওয়া যায়। উদ্যান ফসল অত্যন্ত স্বল্প পরিসরে চাষ করা যায়। তাছাড়া পারিবারিক পুষ্টি চাহিদা পূরণ, ব্যবসা, কাঠ ও জ্বালানি কাঠের চাহিদা পূরণ, আত্মকর্মসংস্থান বৃদ্ধিতে উদ্যান ফসল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। উদ্যান ফসলে নিয়মিত পানি সেচ দেওয়ার প্রয়োজন হয়। তাছাড়া সবজি জাতীয় ফসলে পোকা ও রোগাক্রমণ বেশি হয়। তাই সময়মতো বালাইনাশক প্রয়োগ করতে হয়। এতে উৎপাদন বেশি হয়। উপরোক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়, লাভবান হওয়ার ক্ষেত্রে কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শ যথার্থ ছিল।

৩. আরমান সাহেবের একটি পোল্ট্রি খামার আছে। তিনি খামারে ব্রয়লার ও লেয়ার মুরগি পালন করেন। এতে তার খামারে কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়। তিনি আর্থিকভাবেও লাভবান হন।
ক. পোল্ট্রি কী?
খ. ব্রয়লার মুরগি পালন করা হয় কেন?
গ.উদ্দীপকে উল্লিখিত শিল্পের সমস্যা কীভাবে সমাধান হতে পারে বর্ণনা কর।
ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত শিল্পের অর্থনৈতিক গুরুত্ব আলোচনা কর।

৩ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. যেসব পাখি গৃহে মানুষের তত্ত্বাবধানে লালিত-পালিত হয়, বংশ বৃদ্ধি করে, ডিম ও মাংস উৎপাদন করে তাদের পোল্ট্রি বলে।

খ. ব্রয়লার মুরগি দ্রুত বৃদ্ধি পায় এবং অধিক মাংস উৎপাদন করে। ফলে মাংসের ঘাটতি পূরণ হয়। দ্রুত বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে ব্রয়লার মুরগি পালন করে অধিক লাভবান হওয়া যায়। তাই ব্রয়লার মুরগি পালন করা হয়।

গ. উদ্দীপকে উল্লেখিত পোল্ট্রি শিল্পের সমস্যা নিম্নোক্তভাবে সমাধান হতে পারে-
১। উন্নত জাতের পোল্ট্রির বাচ্চা প্রাপ্যতা নিশ্চিত করতে হবে।
২। পোল্ট্রির স্বাস্থ্যসম্মতভাবে বাসস্থান তৈরি করতে হবে।
৩। পোল্ট্রির জন্য সুষম খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে এবং এই খাদ্যের উপকরণ সহজলভ্য হতে হবে।
৪। পোল্ট্রির রোগ প্রতিষেধক টিকা প্রাপ্যতা নিশ্চিত করতে হবে।
৫। পোল্ট্রির ডিম বাজারজাতকরণের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে যাতে খামারি উপযুক্ত মূল্য পেতে পারেন।
৬। পোল্ট্রির খামারের সাথে বাজারের যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত থাকতে হবে।
৭। পোল্ট্রি পালন ও বিভিন্ন রোগের চিকিৎসা সম্পর্কিত প্রশিক্ষণ কার্যক্রম জোরদার করতে হবে।
৮। বাচ্চার প্রাপ্যতা সহজলভ্য হতে হবে।
৯। খামারি যাতে সহজ শর্তে হাঁস-মুরগির খামারের জন্য ঋণ পেতে পারে, সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।

ঘ. দেশের আমিষের চাহিদা পূরণ, খাদ্য, অর্থনৈতিক, কর্মসংস্থান ও মানবজাতির আর্থসামাজিক উন্নয়নে পোল্ট্রির গুরুত্ব অপরিসীম। পোল্ট্রি শিল্পের অর্থনৈতিক গুরুত্ব নিচে আলোচনা করা হলো-
১. পোল্ট্রি শিল্পে প্রায় ২০ শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধি হচ্ছে। তাই এটি আয়ের উত্তম উৎস।
২. বর্তমানে পোল্ট্রি শিল্পে প্রায় ২১ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ হচ্ছে।
৩. খুব অল্প সময়ে বিনিয়োগ থেকে অর্থ প্রাপ্তি হয়।
৪. পোল্ট্রির বিষ্ঠা থেকে বায়োগ্যাস তৈরি হয়।
৫. পোল্ট্রির বিষ্ঠা উত্তম জৈবসার যা ফসলের জমিতে ও পুকুরে প্রয়োগ করা যায়।
৬. অন্য পেশার সাথে অবসরে পোল্ট্রি পালন করা যায়। ফলে আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়।
৭. জায়গা কম লাগে বলে অল্প জায়গা থেকে ফসলের চেয়ে লাভ বেশি হয়।
৮. দারিদ্র্য দূর করা হয়। ফলে বেকার যুবক-যুবতী, কৃষক ও দুস্থ নারীদের কর্মসংস্থানের পথ সৃষ্টি হয়।
৯. মাংস, ডিম ও পালক বিদেশে রফতানির সুযোগ আছে।
১০. নাড়িভুঁড়ি মাছের খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। উক্তভাবে পোল্ট্রি আমাদের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

৪. বিপ্লব শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। বিপ্লব ও তার সহপাঠীদের সবাইকে নিয়ে তাদের শিক্ষক একদিন গাজীপুর গেলেন। তারা প্রথম বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (BRRI) এবং পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (BARI) ঘুরে দেখে।
ক. কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠান কী?
খ. বাংলাদেশের ৭টি কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের নাম লেখ।
গ. বিপ্লব ও তার সহপাঠীর ঘুরে দেখা প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্য কী? তা বর্ণনা কর।
ঘ. কৃষি উন্নয়নে প্রতিষ্ঠান দুটি কোনো ভূমিকা রাখে কি? ব্যাখ্যা কর।

৪ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. কৃষি উন্নয়নকে ত্বরান্বিত এবং কৃষিবিষয়ক যাবতীয় সমস্যা সমাধানের নিমিত্তে বিভিন্ন ধরনের গবেষণা যে প্রতিষ্ঠানে করা হয়, তাকে কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠান বলে।

খ.বাংলাদেশের ৭টি কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের নাম নিম্নরূপ:
১. বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (BRRI)
২. বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (BARI)
৩. বাংলাদেশ পরমাণু গবেষণা ইনস্টিটিউট (BINA)
৪. বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট
৫. বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট
৬. বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউট
৭. মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউট

গ. বিপ্লব ও তার সহপাঠীর ঘুরে দেখা প্রতিষ্ঠান দুটি হলো বাংলাদেশ ধান গবেষণা ও কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট। প্রতিষ্ঠান দুটির উদ্দেশ্য বহুবিদ। নিচে তা বর্ণনা করা হলো-
ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের উদ্দেশ্যাবলি:
i. ধানের উন্নত ও উপযোগী জাত উদ্ভাবন করা।
ii. ধানের উন্নত ও সহজ চাষাবাদ কৌশল উদ্ভাবন করা।
iii. ধানের রোগবালাই দমন নিয়ে গবেষণা করা।
iv. ধানের সার ব্যবস্থাপনা নিয়ে গবেষণা করা।
v. কম পানি দিয়ে ধান চাষের প্রযুক্তি উদ্ভাবন করা।

কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের উদ্দেশ্যাবলি:
i. ফসলের জাত উদ্ভাবন ও উন্নয়ন সাধন করা।
ii. ফসলের উন্নত চাষাবাদ কলাকৌশল উদ্ভাবন।
iii. সার ব্যবস্থাপনা নিয়ে গবেষণা করা।
iv. উন্নত সেচ পদ্ধতি উদ্ভাবন করা।
v. বিভিন্ন গবেষণা প্রকল্প তদারকিকরণ।
vi. শস্যবিন্যাস পদ্ধতির আধুনিকীকরণ ও উন্নয়ন।

ঘ. কৃষি উন্নয়নে প্রতিষ্ঠান দুটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তা নিচে বিশ্লেষণ করা হলো-
i. ফসলের জাত উদ্ভাবন ও উন্নয়ন।
ii. দেশের চাহিদাভিত্তিক কৃষি গবেষণা পরিচালনা ও সরকারকে কৃষি উন্নয়নে পরামর্শ দান।
iii. কৃষিক্ষেত্রে প্রযুক্তিগত উন্নয়নের জন্য বিদেশের সঙ্গে যোগাযোগ সাধন।
iv. কৃষি ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত প্রযুক্তি উদ্ভাবন।
v. ফসলের বালাই ও প্রতিকার সংক্রান্ত গবেষণা পরিচালনা করা।
vi. মৃত্তিকার উর্বরতা রক্ষা ও উন্নয়ন।
vii. সার ও অন্যান্য উপকরণের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ও মাত্রা নির্ধারণ।
viii. পানি সেচ ব্যবস্থা সংক্রান্ত পরামর্শ দান।
ix. চাষাবাদ ও পণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ যন্ত্র উদ্ভাবন।
x. কৃষি পণ্যের বহুমুখী ব্যবহার কৌশল উদ্ভাবন।

৫. রহমত আলী টেলিভিশনে কৃষি সম্প্রসারণ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন দেখেছিলেন। প্রতিবেদনে কৃষি সম্প্রসারণে উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার দেখানো হয়েছিল। তিনি অনুষ্ঠান দেখে উদ্বুদ্ধ হন এবং জমিতে সার প্রয়োগের সিদ্ধান্ত নেন।
ক. ই-কৃষি কী?
খ. কৃষি কলসেন্টার বলতে কী বোঝ?
গ. কৃষি সম্প্রসারণে কোন কোন উন্নত প্রযুক্তি দেখে রহমত আলী উদ্বুদ্ধ হন তা বর্ণনা কর।
ঘ. উদ্দীপকের আলোকে রহমত আলীর সিদ্ধান্ত মূল্যায়ন কর।

৫ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. ই-কৃষি হলো একটি ইলেকট্রনিকস ভিত্তিক কৃষি তথ্য প্রদান কার্যক্রম।

খ. কৃষি তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির যুগে কৃষি তথ্য সার্ভিসকেও যুগোপযোগী করার লক্ষ্যে আধুনিক মানসম্মত আইসিটি সেন্টারকে কৃষি কলসেন্টার বলে। কৃষি তথ্য সার্ভিসই প্রথম আইপিএম/আইসিএম ক্লাবের কৃষক ইন্টারনেট গ্রাম পর্যায়ে কৃষি তথ্য ও যোগাযোগ কেন্দ্র স্থাপন করে কৃষি তথ্য ও প্রযুক্তি হস্তান্তরের যুগোপযোগী, আধুনিক এবং সহজতর পদ্ধতি ব্যবহারের সূত্রপাত করেছে।

গ. রহমত আলী কৃষি সম্প্রসারণে যে বিষয় দেখে উদ্বুদ্ধ হন তা হলো ইন্টারনেটের ব্যবহার। কৃষি তথ্যের সবচেয়ে বড় ভান্ডার হচ্ছে ইন্টারনেটের ওয়েবসাইট। আধুনিক কৃষি প্রযুক্তিনির্ভর। প্রতিনিয়ত নতুন নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন হচ্ছে। যেমন- ফসলের জমিতে গুটি ইউরিয়া প্রয়োগ একটি আধুনিক প্রযুক্তি। যার ফলে উদ্দীপকে রহমত আলী বিটিভিতে গুটি ইউরিয়া প্রয়োগের একটি প্রতিবেদন দেখে এবং প্রয়োগে উদ্বুদ্ধ হয়। বোরো ধানে প্রযুক্তিটি ব্যবহার করে সফল হন। ফলে এলাকার কৃষকরা এই প্রযুক্তি ব্যবহারে আগ্রহী হন। কৃষক চান কম খরচে অধিক ফসল উৎপাদন করতে এবং অধিক লাভবান হতে। জমিতে গুটি ইউরিয়া প্রয়োগে খরচ কমে, উৎপাদন বাড়ে, এতে কৃষকরা লাভবান হন। দেখা যায় গুটি ইউরিয়া প্রয়োগে ২০-৩০ ভাগ নাইট্রোজেন সাশ্রয় হয় ফলে খরচ কমে। গুটি ইউরিয়া ফসলের জমিতে ধীরে ধীরে কাজ করে সেজন্য কৃষকদের বার বার ইউরিয়া প্রয়োগের ঝামেলা করতে হয় না। গুটি ইউরিয়া প্রয়োগে ফলন ১৫-২০ ভাগ বৃদ্ধি পায়। তাই রহমত আলীর দেখাদেখি তার এলাকার অন্য কৃষকরাও পরবর্তীতে ধানের জমিতে গুটি ইউরিয়া প্রয়োগ করেন এবং ফলন বেশি পান। ফলে কৃষকরা বেশি করে। ধান চাষ করবেন। উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে পারিবারিক চাহিদা মিটিয়ে অতিরিক্ত ধান বিক্রয় করে আর্থিকভাবে লাভবান হবে। দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হবে। গুটি ইউরিয়া প্রযুক্তি ব্যবহার করে লাভবান হওয়ার কারণে কৃষির অন্যান্য প্রযুক্তির প্রতি আকৃষ্ট হবে। ফলে বাংলাদেশের কৃষি তথা কৃষকের ভাগ্যোন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে।

ঘ. উদ্দীপকে রহমত আলীর সিদ্ধান্তটি ছিল জমিতে সার প্রয়োগ। ফসলের জমিতে গুটি ইউরিয়া প্রয়োগ একটি অন্যতম কৃষি প্রযুক্তি। প্রযুক্তিটি জনপ্রিয় করার জন্য কৃষি সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানসমূহ দিনরাত কাজ করে যাচ্ছেন। উদ্দীপকে রহমত আলী বিটিভিতে গুটি ইউরিয়ার উপর একটি প্রতিবেদন দেখে জানতে পারেন যে, গুটি ইউরিয়া প্রয়োগে খরচ কম ও ফলন বেশি হয়। তাই তিনি বোরো ধানে গুটি ইউরিয়া প্রয়োগ করে ফলন বেশি পান। এছাড়াও তিনি একটি সমীক্ষায় দেখেন, গুটি ইউরিয়া ব্যবহার করে ২০-৩০ ভাগ নাইট্রোজেন সাশ্রয় করা যায়। গুটি ইউরিয়া ধীরে ধীরে গাছরে নাইট্রোজেন সরবরাহ করে। ফলে মৌসুমে একবার ব্যবহার করলে দ্বিতীয়বার করতে হয় না। গুটি ইউরিয়া ব্যবহারের ফলে ফলন ১৫-২০ ভাগ বৃদ্ধি পায়। বাংলাদেশ টেলিভিশনে সপ্তাহে ৬ দিন 'মাটি ও মানুষ' এবং একদিন 'হৃদয়ে মাটি ও মানুষ' অনুষ্ঠানটি প্রচার করা হয়। অনুষ্ঠানগুলোতে প্রতিবেদন, সফল কাহিনী, কৃষি সমস্যা ও সমাধান, টকশো, টেলপ, বিজ্ঞপ্তি সম্প্রচার করা হয়। এছাড়াও বাংলাদেশ বেতার, রেডিও টুডে, চ্যানেল আইতে কৃষিবিষয়ক অনুষ্ঠান প্রচার হচ্ছে। এসব অনুষ্ঠানে গুটি ইউরিয়া প্রয়োগে কৃষকদের কৃষি ক্ষেত্রে উন্নতির বিভিন্ন প্রতিবেদন ও চিত্র দেখে রহমত আলী তার জমিতে ইউরিয়া সারের পরিবর্তে গুটি ইউরিয়া প্রয়োগের সিদ্ধান্ত নেন, যা অত্যন্ত সময়োপযোগী।

৬. দীপু এইচএসসি পাস করার পর তার ইচ্ছা যে সে কৃষিবিজ্ঞান নিয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করবে। সে জানতে পারল কৃষিবিজ্ঞানে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করে বাংলাদেশের কৃষি উন্নয়ন ও বিভিন্ন সমস্যা সমাধান করা সম্ভব। সেই লক্ষ্যে সে বাংলাদেশের ময়মনসিংহে অবস্থিত বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ভর্তি হয়।
ক. কৃষি তথ্য সার্ভিস কী?
খ. বাংলাদেশের উন্নয়নে প্রাণিসম্পদ গুরুত্বপূর্ণ কেন?
গ. দীপু যে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছিল ঐ প্রতিষ্ঠানটির উদ্দেশ্য বর্ণনা কর।
ঘ. উক্ত প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রমগুলো আমাদের কৃষি ক্ষেত্রের উপর নতুন দিগন্ত উন্মোচন করছে তা বিশ্লেষণ কর।

৬ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. কৃষি তথ্য সার্ভিস গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের কৃষি মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন একটি স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান। এটি কৃষি তথ্য ও প্রযুক্তি তৃণমূল পর্যন্ত দ্রুত বিস্তার কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে আসছে।

খ. বাংলাদেশের উন্নয়নে প্রাণিসম্পদ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। খাদ্য নিরাপত্তা, সুষম পুষ্টি সরবরাহ, আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টি, বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন, কৃষি জমির উর্বরতা বৃদ্ধি ও নারীর ক্ষমতায়নে প্রাণিসম্পদ বিশেষ ভূমিকা রাখে। বাংলাদেশের জনসংখ্যার প্রায় ২২% সরাসরি এবং ৫০% পরোক্ষভাবে প্রাণিসম্পদ খাতের উপর নির্ভরশীল।

গ. দীপু বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছিল। উক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে মানসম্মত উচ্চতর কৃষিশিক্ষা ব্যবস্থার নিশ্চয়তা বিধানের মাধ্যমে দেশে কৃষি উন্নয়নের গুরুদায়িত্ব বহনে সক্ষম তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক জ্ঞানসম্পন্ন দক্ষ কৃষিবিদ, কৃষিবিজ্ঞানী, প্রযুক্তিবিদ ও কৃষি প্রকৌশলী তৈরি করা। এ প্রতিষ্ঠানের প্রধান উদ্দেশ্য নিম্নরূপ:
i. কৃষির সকল শাখায় পেশাভিত্তিক উচ্চশিক্ষা প্রদান করা।
ii. কৃষির বিভিন্ন বিষয়ে মৌলিক ও ফলিত গবেষণা পরিচালনা করা।
iii. বিভিন্ন পর্যায়ে ও বিভিন্ন ধরনের কৃষি সম্প্রসারণ ও জাতি গঠনমূলক কার্যকলাপ পরিচালনা ও তদারকি করা।
iv. কৃষি ও পল্লী উন্নয়নের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান কর্মী, কৃষক ও খামার নেতাদের জন্য প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা করা।
v. দেশের ভেতরের ও বাইরের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বা সংস্থার মধ্যে দ্বিপক্ষীয় এবং বহুপক্ষীয় সহযোগিতা ও যৌথ উদ্যোগের জন্য প্রয়োজনীয় সুবিধাদি প্রদান করা।

ঘ. উক্ত প্রতিষ্ঠানটি অর্থাৎ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় কার্যক্রম আমাদের কৃষি ক্ষেত্রের উপর নতুন দিগন্ত উন্মোচন করছে তা বিশ্লেষণ করা হলো-
বাংলাদেশ একটি কৃষিপ্রধান দেশ এবং এদেশের অধিকাংশ লোকই কৃষক। তা সত্ত্বেও এদেশের কৃষকরা কৃষিশিক্ষায় শিক্ষিত নয়। যার কারণে উন্নত চাষাবাদ পদ্ধতি প্রয়োগ করা সম্ভব হয়নি। এর ফলে এদেশে আজও খাদ্য ঘাটতি সম্পূর্ণ লাঘব হয়নি। এদেশে প্রান্তিক চাষির পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে, এতে জমিগুলো খ- ও বিখ--ত হয়ে যাচ্ছে। কৃষি ফসল উৎপাদনের জমি ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে। তাই এদেশের ক্রমহ্রাসমান জমি থেকে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার জন্য খাদ্য, বস্ত্র ও বাসস্থানের চাহিদা পূরণ করতে চাইলে কৃষিশিক্ষার প্রতি গুরুত্ব দেওয়া এবং গবেষণা কার্যক্রম, শিক্ষা কার্যক্রম, প্রশিক্ষণ কার্যক্রম সম্প্রসারণের বিকল্প নেই। কৃষিশিক্ষার মাধ্যমে এদেশের জনগণ দক্ষ জনশক্তিতে রূপান্তরিত হয়। কৃষিশিক্ষার মাধ্যমে উৎপাদনের কলাকৌশল অধিক ফলনশীল, উদ্ভাবন, প্রযুক্তিগত সম্প্রসারণ, বিভিন্নভাবে ক্ষতিকর প্রভাব থেকে ফসলকে রক্ষা, আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতি উদ্ভাবন, সেচ ও সার ব্যবস্থাপনা, উন্নত বীজ ও জাত নির্বাচন, কৃষি সমস্যা দূরীকরণ ইত্যাদি ক্ষেত্রে কৃষিশিক্ষার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। কৃষিশিক্ষার এসব প্রয়োজনীয়তার আলোকে কাজ করে চলেছে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ডিগ্রি অর্জন শেষে দেশের সব অঞ্চলে তাদের অর্জিত জ্ঞান ছড়িয়ে দিচ্ছে। পাশাপাশি গবেষণা, প্রশিক্ষণ ও সম্প্রসারণ কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করেও শিক্ষা বিস্তারে ভূমিকা রাখছে। ফলে আমাদের কৃষি ক্ষেত্র দিন দিন সম্প্রসারণ হচ্ছে।

HSC কৃষিশিক্ষা ১ম পত্র (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর অধ্যায় ১ pdf download

৭. আসিফ গ্রীষ্মকালীন ছুটিতে মামার বাড়ি বেড়াতে যান। গিয়ে দেখে বাড়ির সামনে মামা রফিকের ছোট জমিতে শাকসবজি। দূরে একটি ভুট্টাক্ষেত দেখেন। গত বছর যে জমিতে আউশ ধান দেখেছিলেন। লাভের কথা চিন্তা করে এবার সেই জমিতে কিছু ফলের গাছ রোপণ করা হয়েছে। তবে ভুট্টা ও আউশ চাষ, পরিচর্যা, সংরক্ষণসহ প্রায় সকল কাজই শাকসবজি ও ফল চাষের চেয়ে ভিন্ন। লাভ দেখে অন্যান্য কৃষকরাও শাকসবজি ও ফল চাষ শুরু করেন।
ক. কৃষির ক্ষেত্র কী?
খ. কৃষক সভা ও উঠোন বৈঠকের বৈশিষ্ট্য তুলনামূলক ব্যাখ্যা কর।
গ. ভুট্টা ও আউশ উৎপাদনের সাথে শাকসবজি ও ফল উৎপাদনের ভিন্নতা বিশ্লেষণ কর।
ঘ. আউশ ধানের জমিতে কেন ফল গাছ রোপণ করা হয়েছে বিশ্লেষণ কর।

৭ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. কৃষির বিভিন্ন উপাদান বা শাখা রয়েছে এই শাখাগুলোকে কৃষির ক্ষেত্র বলে। বাংলাদেশের কৃষির ক্ষেত্র ৬টি।

খ. কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপজেলা কৃষি অফিসের কর্মকর্তারা প্রায় প্রতি মাসে অথবা প্রয়োজন অনুসারে মাঝে মাঝে কৃষকদের নিয়ে বিভিন্ন বিষয়ে যে সভা বা বৈঠক করে তাকে কৃষক সভা বলে। অন্যদিকে কৃষকের উঠানে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে যে সভা বা বৈঠক করা হয়। তাকে উঠোন বৈঠক বলে।

গ. ভুট্টা ও আউশ হলো মাঠ ফসল অন্যদিকে শাকসবজি ও ফল উদ্যান ফসল। মাঠ ফসল ও উদ্যান ফসল উৎপাদনে ভিন্নতা পরিলক্ষিত হয়। নিচে তা বিশ্লেষণ করা হলো-
মাঠ ফসল বিস্তীর্ণ মাঠে চাষ করা হয় আর উদ্যান ফসল ছোট জমিতে চাষ করা হয়। সাধারণত একসঙ্গে অনেক বেশি। জমিতে মাঠ ফসল চাষ করা যায় কিন্তু উদ্যান ফসল একসঙ্গে কম জমিতে চাষ করা যায়। মাঠ ফসলের বীজ সাধারণত ছিটিয়ে বপন করা হয়। অন্যদিকে উদ্যান ফসল রোপণকালে আলাদা আলাদা গর্ত করতে হয়। মাঠ ফসলের জমিতে কোনো বেড়া বা ঘেরার প্রয়োজন হয় না কিন্তু উদ্যান ফসলে বেড়া বা ঘেরা দিতে হয়। মাঠ ফসলে প্রতিটি গাছের পৃথক পরিচর্যার প্রয়োজন হয় না। অন্যদিকে উদ্যান ফসলের ক্ষেত্রে প্রতিটি গাছের পৃথকভাবে পরিচর্যা করা হয়। মাঠ ফসলের ক্ষেত্রে পুরো মাঠের ফসল একসঙ্গে সংগ্রহ করা হয় কিন্তু উদ্যান ফসল একসঙ্গে পরিপক্ব হয় না। তাই ধাপে ধাপে সংগ্রহ করা হয়।

ঘ. আউশ ধান মাঠ ফসল এবং ফল গাছ উদ্যান ফসল। নিচে আউশ ধানের জমিতে ফল গাছ রোপণ করার কারণ ব্যাখ্যা করা হলো-
আসিফ গত বছর গ্রীষ্ম মৌসুমে যে জমিতে আউশ ধান দেখেছিল সেই জমিতে এ বছর ফলের চাষ করা হয়েছে। এর কারণ মাঠ ফসলের উৎপাদন খরচ ও ঝুঁকি বেশি কিন্তু দাম কম। ঝুঁকি ও ব্যয়বহুল ফসল চাষ করে কৃষককে লোকসান গুনতে হয়।
অন্যদিকে উদ্যান ফসল চাষাবাদে লাভ বেশি এবং ঝুঁকি কম। উদ্যান ফসল লাভজনক হওয়ায় এর চাষ বাড়ছে। উদ্যান ফসল বিশেষ করে ফল ধাপে ধাপে সংগ্রহ করা যায়। ফলে হঠাৎ করে দাম কমে গেলেও লোকসান হওয়ার সম্ভাবনা কম। উদ্যান ফসলের দাম মৌসুমের শুরুতে বেশি থাকে। কৃষক উদ্যান ফসল চাষে যে বিনিয়োগ করে তা মৌসুমের শুরুতে উঠে আসে। উঁচু বন্যামুক্ত জায়গায় চাষ করা হয় বলে বন্যার কারণে ফসলহানির ঝুঁকি কম। এ ধরনের ফসল অর্থাৎ ফল চাষে উৎপাদন খরচ কম হওয়ার কারণে কৃষক বেশি লাভবান হন। এছাড়া ফল তাজা খাওয়া যায় এবং ফলে পুষ্টিমান বেশি থাকে। এজন্য কৃষক তার পরিবারের প্রয়োজনেও উদ্যান ফসলের চাষ দিন দিন বৃদ্ধি করছে। উপরের আলোচনা থেকে বলা যায়, অধিক লাভের উদ্দেশ্যে।আউশ ধানের পরিবর্তে ফল চাষ করা হয়েছে।

৮. ইউরিয়া সারের দাম বাড়ায় কৃষক মফিজ চিন্তায় পড়েন। তিনি বিটিভিতে গুটি ইউরিয়ার উপর একটি প্রামাণ্যচিত্র দেখে জানতে পারেন যে, গুটি ইউরিয়া প্রয়োগে খরচ কম ও ফলন বেশি হয়। তিনি বোরো ধানে গুটি ইউরিয়া প্রয়োগ করে ফলন বেশি পান। মফিজের জমির ধান দেখে এবং উৎপাদন খরচ কম জেনে এলাকার অন্য কৃষকরা গুটি ইউরিয়া ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ হয়। সাকিব ওয়েবসাইট থেকে অনেক আগে এসব তথ্য পেয়েছিলেন।
ক. উদ্যান ফসল কী?
খ. কৃষি তথ্য পেতে কৃষক বিদ্যালয়ের ভূমিকা ব্যাখ্যা কর।
গ. মফিজ গুটি ইউরিয়া প্রয়োগে উদ্বুদ্ধ কীভাবে হলো ব্যাখ্যা কর।
ঘ. সাকিব কোন উৎস থেকে সহজে কৃষির তথ্য ও সেবা পেয়েছিল কারণসহ বিশ্লেষণ কর।

৮ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. যেসব ফসল সাধারণ কম বা ছোট জমিতে উদ্যানে বাগানে, স্বল্প পরিসরে, বন্যামুক্ত এলাকায় চাষ করা হয় সেসব ফসলকে উদ্যান ফসল বলে।

খ. কৃষক বিদ্যালয়ের মাধ্যমে কৃষকরা বিভিন্ন তথ্য সেবা পেয়ে থাকেন। সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনা (আইপিএম), সমন্বিত ফসল ব্যবস্থাপনা (আইপিএম) ও সমন্বিত খামার ব্যবস্থাপনা (আইএফএম) বিদ্যালয় থেকে প্রশিক্ষণ ক্লাস করার মাধ্যমে কৃষকরা কৃষিবিষয়ক তথ্য ও সেবা পান। এ তথ্য সমৃদ্ধ জ্ঞান তারা কৃষি কাজে সরাসরি বাস্তব প্রয়োগ করতে পারেন।

গ. উদ্দীপকে মফিজ বিটিভিতে গুটি ইউরিয়ার উপর একটি প্রতিবেদন দেখেন এবং জানতে পারেন যে গুটি ইউরিয়া প্রয়োগে খরচ কম ও ফলন বেশি হয়। তিনি বোরো ধানে গুটি ইউরিয়া প্রয়োগ করে ফলন বেশি পান। এছাড়াও তিনি একটি সমীক্ষায় দেখেন, গুটি ইউরিয়া ব্যবহার করে ২০-৩০ ভাগ নাইট্রোজেন সাশ্রয় করা যায়। গুটি ইউরিয়া ধীরে ধীরে গাছকে নাইট্রোজেন সরবরাহ করে। ফলে মৌসুমে একবার ব্যবহার করলে দ্বিতীয়বার করতে হয় না। গুটি ইউরিয়া ব্যবহারের ফলে ফলন ১৫-২০ ভাগ বৃদ্ধি পায়। বাংলাদেশ টেলিভিশনে সপ্তাহে ৬ দিন 'মাটি ও মানুষ' এবং একদিন 'হৃদয়ে মাটি ও মানুষ' অনুষ্ঠানটি প্রচার করা হয়। অনুষ্ঠানগুলোতে প্রতিবেদন, সফল কাহিনী, কৃষি সমস্যা ও সমাধান, টকশো, টেলপ, বিজ্ঞপ্তি সম্প্রচার করা হয়। এছাড়াও চ্যানেল আই, বাংলাদেশ বেতার, রেডিও টুডেতে কৃষিবিষয়ক অনুষ্ঠান প্রচারিত হচ্ছে। এসব অনুষ্ঠানে গুটি ইউরিয়া প্রয়োগে কৃষকদের কৃষি ক্ষেত্রে উন্নতির বিভিন্ন প্রতিবেদন ও চিত্র দেখে মফিজ তার জমিতে ইউরিয়া সারের পরিবর্তে গুটি ইউরিয়া প্রয়োগে উদ্বুদ্ধ হন।

ঘ. সাকিব কৃষি তথ্য সার্ভিস এর 'অনলাইন ফার্টিলাইজার রিকমেন্ডেশন সিস্টেম' নামক ওয়েবসাইট থেকে কৃষি তথ্য ও সেবা পেয়েছিলেন। এই কৃষি তথ্য ও সেবা পাওয়ার কারণসমূহ নিচে বিশ্লেষণ করা হলো-
সারাদেশে ভূমি ও মৃত্তিকা সম্পদ ব্যবহার নির্দেশিকায় সন্নিবেশিত মৃত্তিকা উর্বরতা বিষয়ক তথ্য-উপাত্ত জিআইএস প্রযুক্তির মাধ্যমে তথ্যে রূপান্তরের জন্য এই অনলাইন সার্ভিস চালু করা হয়েছে। যাতে সহজে কৃষকরা অনলাইন ফার্টিলাইজার রিকমেন্ডেশন সার্ভিসের মাধ্যমে সুষম সার ব্যবহারের ফলাফল পায়। এছাড়াও এর অন্যান্য কারণসমূহ নিম্নরূপ-
i. উৎপাদন বৃদ্ধি যেমন- ধান ফসলের ফলন ২০-২৫% এবং অন্যান্য ফসলের ফলন ১৫-২০% বৃদ্ধির জন্য।
ii. সারের অপচয়রোধ করে ২৫-৩০ ভাগ পর্যন্ত সার ব্যবহার কমানোর জন্য।
iii. উৎপাদিত ফসলের মান বৃদ্ধির জন্য।
iv. রাসায়নিক পদার্থ দ্বারা মাটি ও পানির দূষণ সর্বনিম্ন পর্যায়ে রাখার জন্য।
v. দানাদার ইউরিয়া থেকে গুটি ইউরিয়া ব্যবহার সাশ্রয়ের জন্য। সর্বোপরি একজন কৃষক যাতে সর্বোচ্চ সেবা পেয়ে ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি করতে পারে। আর এটি খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে বাংলাদেশ সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার ক্ষেত্রে যুগান্তকারী মাইলফলক হিসেবে কাজ করবে বলে আমি মনে করি।

৯. হারুনুর রশিদ এখন খুব নামকরা কৃষিবিজ্ঞানী। তিনি একাদশ শ্রেণির ছাত্র থাকাকালীন কৃষিশিক্ষা বইয়ের 'উচ্চ শিক্ষা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান' বিষয়ে পড়ার সময় কৃষিতে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করে। কৃষিবিজ্ঞানী হওয়ার আগ্রহী হন। তিনি গবেষণা করে বিভিন্ন কিছু উদ্ভাবন, উন্নয়ন ও সংরক্ষণ করেছেন। তার গবেষণা কার্যক্রমে দেশ অনেক উপকৃত হয়েছে।
ক. ই-কৃষি কী?
খ. কৃষি শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা কর।
গ. হারুনুর রশিদ কী কাজ করে নামকরা কৃষিবিজ্ঞানী' হলেন ব্যাখ্যা কর।
ঘ. হারুনুর রশিদের গবেষণা কাজে দেশ উপকৃত হওয়ার বিষয়টি বিশ্লেষণ কর।

৯ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. কৃষি সংক্রান্ত তথ্য ও সেবা ইলেকট্রনিক্স প্রক্রিয়ায় পাওয়াকে ই-কৃষি বলে।

খ. বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ। কৃষি উন্নয়নের উপর এদেশের উন্নতি নির্ভর করছে। কৃষি বিষয়ে শিক্ষা বা জ্ঞান অর্জন করে বাস্তবে প্রয়োগ করলে দেশে কৃষিপণ্যের উৎপাদন বাড়বে। দেশের খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থানসহ সকল মৌলিক চাহিদা পূরণ হবে। কৃষিশিক্ষা বিষয়ক জ্ঞান উন্নত চাষ পদ্ধতি, মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি, সংরক্ষণের উপায়, জৈব ও অজৈব সার উৎপাদনে ব্যবহার করা যায়। হাঁস-মুরগি পালন, গবাদিপশু পালন, মাছ চাষ, বনায়ন ইত্যাদি বিষয়গুলো কৃষিশিক্ষার সঙ্গে জড়িত। তাই বলা যায়, কৃষিশিক্ষার প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।

গ. উদ্দীপকে হারুনুর রশিদ কৃষিতে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করেন এবং গবেষণা করে নামকরা বিজ্ঞানী হয়ে যান। এজন্য তাকে অনেক পরিশ্রম করতে হয়েছে। নাম করা বিজ্ঞানী হওয়ার জন্য হারুনুর রশিদকে নিচের কাজগুলো করতে হয়েছে-
i. ফসলের নতুন জাত উদ্ভাবন ও উন্নয়ন করতে হয়েছে।
ii. ফসলের উন্নত চাষাবাদ পদ্ধতি উদ্ভাবন করতে হয়েছে।
iii. ফসলের রোগ-বালাই দমন নিয়ে গবেষণা করে লাগসই প্রযুক্তি উদ্ভাবন করতে হয়েছে।
iv. সার ব্যবস্থাপনা নিয়ে গবেষণা করে উন্নত সার প্রযুক্তি উদ্ভাবন করতে হয়েছে।া. উন্নত সেচ পদ্ধতির উদ্ভাবন করতে হয়েছে।
vi. উন্নত কৃষি যন্ত্রপাতি উদ্ভাবন করতে হয়েছে।
vii. ফসল প্রক্রিয়াজাতকরণ ও সংরক্ষণ বিষয়ে উন্নত প্রযুক্তি উদ্ভাবন করতে হয়েছে।
viii. মাটির উর্বরতা রক্ষা ও বৃদ্ধির প্রযুক্তি উদ্ভাবন করতে হয়েছে।
ix. জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে সাথে উপযোগী শস্য বিন্যাস তৈরি করতে হয়েছে।

ঘ. উদ্দীপকে হারুনুর রশিদ একজন নামকরা কৃষিবিজ্ঞানী। এ জায়গায় আসতে তাকে অনেক গবেষণা করতে হয়েছে।
গবেষণালব্ধ ফলাফল যখন সুফল বয়ে আনে তখনই বিজ্ঞানী হওয়া যায়। হারুনুর রশিদের ক্ষেত্রে তাই ঘটেছে। বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ। হারুনুর রশিদ কৃষির ওপর গবেষণা করে বড় বিজ্ঞানী হয়েছেন। বড় বিজ্ঞানী হওয়ার জন্য অবশ্যই তাকে নতুন নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন করতে হয়েছে। বাংলাদেশের কৃষির বর্তমান প্রেক্ষাপটে উন্নত প্রযুক্তি উদ্ভাবন একটি গুরুত্বপূর্ণ। ব্যাপার। হারুনুর রশিদ নিরলস প্রচেষ্টার মাধ্যমে তাই করতে পেরেছেন। বাংলাদেশের প্রধান খাদ্য ফসল ধান ও প্রধান অর্থকরী ফসল পাট। হারুনুর রশিদ এই ফর্সল দুটির উন্নত ও অধিক ফলনশীল জাত উদ্ভাবন করেছেন। তিনি হয়তো বিরূপ পরিবেশে সহনশীল নতুন ফসলের জাত উদ্ভাবন করেছেন। এমনও হতে পারে, স্থানীয় জাতের ধানের জিন সংরক্ষণ করে উন্নত জাতে রূপান্তরিত করেছেন। আবার, মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি ও সংরক্ষণের নতুন প্রযুক্তিও উদ্ভাবন করেছেন। ফসলের সার, রোগবালাই, সেচ ইত্যাদি নিয়ে কাজ করে বিজ্ঞানী হওয়ার পাশাপাশি বাংলাদেশের কৃষির উন্নয়নে অবদান রেখেছেন।
উপরের আলোচনা থেকে দেখা যায়, হারুনুর রশিদের উদ্ভাবন বাংলাদেশের কৃষি তথা কৃষকের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

১০. ঘাটাইল উপজেলা কৃষি অফিস কৃষকদের বিভিন্ন বিষয়ে জ্ঞানদান ও সমস্যা সমাধানের জন্য আইপিএম স্কুল স্থাপন করেন। এখানে কৃষক ও কৃষাণীরা ক্লাস করেন। তার এই জ্ঞান এলাকায় প্রচার করে। ঘাটাইলে প্রতিবছর বোরো ধানক্ষেতে পোকা আক্রমণ হয়। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. নূরে আলম সিদ্দিকী কৃষক বিদ্যালয়ে কৃষকদের পোকা দমনের জন্য সমন্বিত বালাই দমন ব্যবস্থার কৌশল। শিখিয়ে দেন। কৃষক বিদ্যালয়ের জ্ঞান দিয়ে কৃষকরা পোকা দমন করে। সফল হন এবং বিরাট ক্ষতি থেকে বেঁচে যান।
ক. কৃষক সভা কাকে বলে?
খ. কৃষক সভা ও উঠোন বৈঠকের প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা কর।
গ. ঘাটাইল উপজেলা কৃষি অফিস কেন ও কীভাবে কৃষক বিদ্যালয়। স্থাপন করেছিল বিশ্লেষণ কর।
ঘ. কৃষক ও উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার গৃহীত পদক্ষেপ মূল্যায়ন কর।

১০ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপজেলা কর্মকর্তা কৃষকদের নিয়ে বিভিন্ন বিষয়ে ইউনিয়ন পরিষদে অথবা গ্রোথ সেন্টারে যে সভা করেন তাকে কৃষক সভা বলে।

খ. ফসল চাষাবাদের মৌসুম শুরুর আগে অথবা মাঝে কৃষক সভা ও উঠোন বৈঠক করা হয়। এর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হচ্ছে- নতুন প্রযুক্তি হস্তান্তরে উদ্বুদ্ধ করা, কৃষকদের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান দেওয়া, মতবিনিময় করা। এই সভার মাধ্যমে কৃষকদের মধ্যে অভিজ্ঞতা, জ্ঞান ও তথ্য নিয়ে মতবিনিময় হয়। কৃষি কর্মকর্তাদের অংশগ্রহণের ফলে কৃষকদের জ্ঞান ও তথ্যে দুর্বল কৃষকের জ্ঞান বাড়ে এবং কাজে স্পৃহা হয়। এই জ্ঞান মাঠ পর্যায়ে প্রয়োগ করে কৃষি উন্নয়নে ভূমিকা পালন করছে। কৃষক সভা ও উঠোন বৈঠকের মাধ্যমে কৃষকরা তথ্য সেবা পায়।

গ. ঘাটাইল উপজেলা কৃষি অফিস কৃষকদের বিভিন্ন বিষয়ে জ্ঞান ও সমস্যা সমাধানের জন্য কৃষক বিদ্যালয় স্থাপন করেছিল। এই বিদ্যালয়ের মাধ্যমে তাদের বোরো ধান ক্ষেতে পোকার আক্রমণ দমনের জন্য সমন্বিত বালাই দমন ব্যবস্থার কৌশল শিখেছিল। উদ্দীপকে যেভাবে বিদ্যালয় অর্থাৎ আইপিএম স্কুল স্থাপন হয়েছিল তা নিচে বিশ্লেষণ করা হলো-
কৃষক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য যেসব ধাপ অনুসরণ করা হয় তা হলো- গ্রাম শনাক্তকরণ, গ্রামের অবস্থা পর্যালোচনা, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা, কৃষক নির্বাচন, পরিকল্পনা সভা আয়োজন এবং কৃষক মাঠ স্কুল পরিচালনার সময় নির্ধারণ। সাধারণত মাঠের কোনায়, বাড়ির উঠানে, ক্লাব ঘরকে কৃষক বিদ্যালয়ের কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এই বিদ্যালয়ের মাধ্যমে ৫০ জন কৃষক-কৃষাণীকে একটি মৌসুমের পুরো সময় ধরে ২০টি অধিবেশনের মাধ্যমে হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এর মধ্যে মহিলাদের জন্য পৃথক সেশন রয়েছে এবং পুরুষ ও মহিলা কৃষকদের যৌথ সেশন রয়েছে। এছাড়াও শুধু পুরুষদের জন্য সেশন রয়েছে। প্রতিটি সেশনের সময় ৩-৪ ঘণ্টা। এসব সেশন থেকে প্রশিক্ষণার্থীরা তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক উভয় বিষয়ে শিক্ষা লাভ করে থাকেন। পাঠদানের ক্ষেত্রে কৃষকদের মাঠের অভিজ্ঞতা, প্রত্যাশা, দলীয় অনুশীলন। ইত্যাদি বিষয়ে উৎসাহিত করা হয়। এভাবে ঘাটাইল গ্রামের কৃষকরা বিদ্যালয় থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে তাদের ধানক্ষেতের পোকা দমনের কৌশল শিখে ধান চাষে সফল হন এবং বিরাট ক্ষতির হাত থেকে বেঁচে যান।

ঘ. উদ্দীপকে ঘাটাইলে বোরো ধান ক্ষেতে পোকার আক্রমণ হলে কৃষি কর্মকর্তা কৃষকদের কৃষক মাঠ স্কুলে একত্রিত করেন। এবং পোকা দমনের জন্য সমন্বিত বালাই দমন ব্যবস্থার (আইপিএম) পরামর্শ দেন। পরামর্শ মোতাবেক কৃষকরা পোকা দমন করে সফল হন এবং বিরাট ক্ষতি থেকে বেঁচে যান। কৃষি কর্মকর্তার উদ্যোগের ফলে মাঠের ফসল রক্ষা পায়। রাসায়নিক কীটনাশক ব্যবহার না করার কারণে খরচ বৃদ্ধি পায়নি এবং পরিবেশেরও কোনো ক্ষতি হয়নি। পরিবেশ রক্ষা করে ফসল রক্ষার এমন ব্যবস্থা বিশ্বব্যাপী যেমন সমাদৃত তেমনি আমাদের দেশেও। তাই দিন দিন সমন্বিত বালাই দমন ব্যবস্থা জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনা (আইপিএম) সমাধা করা হয় বলে কৃষকরা তাদের অর্জিত জ্ঞান, অভিজ্ঞতা ও তথ্য নিজেদের মধ্যে বিনিময় করতে পারে। কৃষি কর্মকর্তার উদ্যোগের ফলে পোকা দমনে কৃষকরা আরও দক্ষ হয়ে উঠতে পারে। তারা উপকারী ও ক্ষতিকর পোকার সঙ্গে পরিচিত হয়। তারা তাদের ফসলের জমিতে উপকারী পোকা সংরক্ষণ করতে পারবে এবং ক্ষতিকর পোকা কম খরচে দমন করতে পারবে।
উপরের আলোচনা থেকে দেখা যায়, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার গৃহীত পদক্ষেপ খুবই মূল্যবান। তার গৃহীত পদক্ষেপের কারণে কৃষকদের ফসল রক্ষা পায় ও ভবিষ্যতে পোকা দমনে স্বাবলম্বী হতে সাহায্য করে।
Share:

HSC কৃষিশিক্ষা ১ম পত্র (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর pdf download অধ্যায় ২

এইচএসসি পরীক্ষার পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি
HSC Agricultural Education 1st Paper Srijonshil question and answer. HSC Agricultural Education 1st Paper (Srijonshil) Creative Questions pdf download. HSC Krishi Shikkha 1st paper Srijonshil Proshno Uttor.

উচ্চ মাধ্যমিক
কৃষিশিক্ষা
প্রথম পত্র

সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
অধ্যায়-২

HSC Agriculture 1st Paper
Srijonshil Question and Answer pdf download

১. আবু নাসের একজন গরীব কৃষক। তার জমিতে ভালো ফসল হয় না। অন্যদিকে তার পাশের জমির মালিক করিম মিয়ার কাছে তাঁর ভালো ফসল উৎপাদনের কারণ জানতে চাইলেন। তিনি তাঁর অণুজীব সার ব্যবহারের পরামর্শ দেন যা আবু নাসেরকে আশানুরূপ ফসল উৎপাদনে সহায়তা করে।
ক. বায়ো ফানজিসাইড কী?
খ. অণুজীব সার পরিবেশ-বান্ধব কেন?
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত সারটি কীভাবে ভালো ফসল উৎপাদনে সহায়ক? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. বেঁলে মাটিকে দোআঁশ মাটিতে রূপান্তর করার ক্ষেত্রে উল্লিখিত সারটি ভূমিকা রাখতে পারে কী? তোমার উত্তরের সপক্ষে মতামত দাও।

১ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. যে সব অণুজীব মাটির গুণাগুণ বৃদ্ধির পাশাপাশি মাটিতে উপস্থিত বিভিন্ন ছত্রাক জাতীয় জীবাণু ধ্বংস করে তাকে বায়ো ফানজিসাইড বলে।

খ. ফসলের ফলন বৃদ্ধি এবং মাটির ঊর্বরতা বৃদ্ধি করে অণুজীব সার রাসায়নিক সার অপেক্ষা অধিক পরিবেশবান্ধব ভূমিকা পালন করে।
রাসায়নিক উপাদানমুক্ত অণুজীব সারে প্রায় সবটুকু উদ্ভিদ কর্তৃক শোষিত হতে পারে ফলে জমির ফসল উৎপাদনে রাসায়নিক সারের উপর নির্ভরশীলতা কমে। অণুজীব সারে ক্ষতিকর কোনো উপাদান থাকে না এবং উৎপাদিত ফসলেও কোনো ক্ষতিকারক উপাদান থাকে না। মূলত ক্ষতিকর উপাদান না থাকা এবং রাসায়নিক সার কম প্রয়োজন হওয়ায় অণুজীব সার পরিবেশ বান্ধব।

গ. উদ্দীপকের উল্লিখিত সারটি হলো অণুজীব সার। অণুজীব সার ভাল ফসল উৎপাদনে, সহায়ক ভূমিকা পালন করে। নিচে তা বর্ণনা করা হলো-
অণুজীব সার নাইট্রোজেন সারের বিকল্প হিসেবে কাজ করে। মাটিতে বাতাস হতে নাইট্রোজেন যোগ করে। অণুজীবের সংখ্যা ও কার্যাবলি কমায়। ধান, ডাল ও শিম জাতীয় ফসলে নাইট্রোজেনের চাহিদা পূরণ করে। ফসলের ফলন বাড়ায় যেমন- মসুরে ১৫-৪০%, ছোলাতে ২০-৪৫%, মুগে ১৮-৩৫% এবং সয়াবিনে ২০-২৫%। কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই এবং পরিবেশকে সুস্থ রাখে। ফসলের জমিতে এই সার জৈবসার সংযোগ করে। মাটিতে ক্ষতিকর জীবাণু নষ্ট করে এবং অপচয় কম হয় ও পরিমাণে খুব কম লাগে। অণুজীব সারের প্রায় সকল অংশ শোষণযোগ্য এবং পরিবেশবান্ধব হওয়ায় ফসলের মান উন্নয়নে ব্যাপক সহায়ক ভূমিকা পালনে করে।

ঘ. উদ্দীপকের উল্লিখিত অণুজীব সার বেলে মাটিকে দোআঁশ মাটিতে রূপান্তর করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। নিচে বেলে মাটিকে দোআঁশ মাটিতে রূপান্তরিত করার ক্ষেত্রে অণুজীব সারের ভূমিকা আলোচনা করা হলো। অণুজীব সারের হিউমাস মৃত্তিকার কণাসমূহকে দলা সৃষ্টিতে সাহায্য করে। ফলে মৃত্তিকায় সঠিক সংযুক্তি সৃষ্টি হয়। পানি, বায়ু, পুষ্টি উপাদানের চলাচল বৃদ্ধি পায়। ফলে বেলে মাটিকে দোআঁশ মাটিতে পরিণত করা যায়।
অণুজীব সার মৃত্তিকায় ঈধ, গম সমৃদ্ধ জৈব পদার্থ হয়ে যায়। বায়ু, পানি, উদ্ভিদ শিকড়, মৃত্তিকা বায়োটার চলাচল বৃদ্ধি পায়। পলি বা এঁটেল মাটির সঙ্গে অণুজীব সার প্রয়োগ করলে বেলে মাটিকে সহজে দোআঁশ মাটিতে পরিণত করা যায়। বেড়ে
অণুজীব সার একটি উত্তম জৈব সার। সাধারণ মৃত্তিকার তুলনায় এই সারে হিউমাস, নাইট্রোজেন, ফসফেট ও পটাশিয়ামের পরিমাণ অনেক বেশি। ফলে এই সার প্রয়োগে মৃত্তিকায় জৈব-রাসায়নিক বিক্রিয়া বেড়ে যায়। হিউমাস, ঈধ, গম এর আধিক্যের ফলে মাটির সংযুক্তির উন্নয়ন ঘটে। অণুজীবের কার্যক্রম বৃদ্ধি পায়। বৃহৎ মৃত্তিকা কণায় বহিরাবরণে অণুজীবের কলোনি গড়ে ওঠে। এক পর্যায় বৃহৎ কণার ভাঙন শুরু হয় এবং বেলে মাটি দোআঁশ মাটিতে পরিণত হয়।

২. জসীম উদ্দিনের এলাকায় খেজুর, তাল, লেবু, খুব ভাল হয়। মধুপুরের আনারস খাওয়ার পর সেও ঐ জাতের আনারস চাষের চেষ্টা করে। কিন্তু আনারসের মান ও ফলন খুব কম হয়। জসীম উদ্দিন তার এলাকায় কৃষিবিদের পরামর্শক্রমে আনারস চাষে সফল হয়।
ক. মৃত্তিকা বুনট কী?
খ. জৈব পদার্থ কীভাবে মাটির ভৌত গুণাবলি উন্নত করে?
গ. জসীম উদ্দিনের এলাকার মাটির বৈশিষ্ট্যগুলো ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকের আলোকে কৃষিবিদের পরামর্শের যথার্থতা বিশ্লেষণ কর।

২ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. মাটির একক কণার পারস্পরিক অনুপাত দ্বারা সৃষ্টস্থূলতাকে বা সূক্ষ্মতাকে মাটির বুনট বলে।

খ. পচা আবর্জনা, সবুজ সার, গোবর, খৈল, হাঁস-মুরগির বিষ্ঠা ‘ইত্যাদিকে জৈব পদার্থ বলা হয়। মাটির উর্বরতা এবং উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধিতে জৈব পদার্থের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ পদার্থটিকে বলা হয় মাটির জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ। জৈব পদার্থ মাটির অণুজীবগুলোকে ক্রিয়াশীল করে, পানি ধারণক্ষমতা বাড়ায়, মাটিতে হিউমাস সৃষ্টি করে যা মাটির উর্বরতার জন্য খুবই দরকারি। এভাবে জৈব পদার্থ মাটির গঠনকে উন্নত করার মাধ্যমে মাটির ভৌত গুণাবলি উন্নত করে।

গ. উদ্দীপকের জসীম উদ্দিনের এলাকায় যেহেতু খেজুর, তাল, লেবু খুব ভালো হয় সুতরাং জসীম উদ্দিনের এলাকার মাটি ক্ষারীয়। নিচে ক্ষারীয় মাটির বৈশিষ্ট্যগুলো ব্যাখ্যা করা হলো-
১. ক্ষারীয় মৃত্তিকায় pH মান সাধারণত ৭.১ থেকে ১০ এর মধ্যে থাকে।
২. এই মৃত্তিকায় ESP (Exchangable Sodium Percentage) ১৫% এর বেশি হয়।।
৩. এই মৃত্তিকায় SAR (Sodium Absorption Ratio) ১৩% এর বেশি হয়।
৪. সোডিয়ামের তুলনায় ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়ামের পরিমাণ বেশি হলে সেই মৃত্তিকাকে লবণাক্ত মৃত্তিকা বলে। ফলে মাটির উপরিভাগ সাদা বর্ণের দেখায়।
৫. মৃত্তিকায় ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়ামের তুলনায় সোডিয়ামের শতকরা হার বেশি হলে উক্ত মৃত্তিকাকে ক্ষারীয় মৃত্তিকা বলে। জৈব পদার্থের দ্রুত বিচ্ছিন্ন করায় মাটির উপরিভাগ কালচে দেখায়।
৬. অণুজীবের কার্যক্রম দুর্বল হওয়ায় জৈব পদার্থের বিয়োজন কম হয়।
৭. সোডিয়ামের প্রাধান্য থাকলে মৃত্তিকার প্রাথমিক কণাসমূহ পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।
৮. মৃত্তিকায় দস্তা, বোরন ও তামার স্বল্পতা দেখা দেয়।
৯. মৃত্তিকায় বাতান্নয়ন এবং পানি পরিবাহিতার হার কমে যায়।
১০. ক্ষারীয় মৃত্তিকায় কদম বা এঁটেল কণা ও জৈব পদার্থের পরিমাণ কম হয়।
১১. ক্ষারীয় মৃত্তিকায় নারিকেল, সুপারি, তাল খেজুর, সুগারবিট, ক্লোভার, আলফা-আলফা ইত্যাদি শস্য ভালো জন্মে।

ঘ. উদ্দীপকের জসীম উদ্দিনের এলাকার মাটি ক্ষারীয়। উক্ত এলাকায় খেজুর, তাল, লেবু খুব ভালো হলেও আনারস এর ফলন খুব কম হয়। এজন্য কৃষি কর্মকর্তা তাকে মৃত্তিকা সংশোধন করে আনারস চাষের পরামর্শ দেন যাতে জসীম উদ্দিন সফল হন। নিচে কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শের যথার্থতা বিশ্লেষণ করা হলো-
মাটিতে অম্লতব বা ক্ষারতেবর কারণে ফসলের উৎপাদন কমে গেলে ফসল উৎপাদন কমে যায়। সেক্ষেত্রে বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে জমির ঊর্বরতা বৃদ্ধি ও চাষোপযোগী করে গড়ে তোলাকেই মাটি সংশোধন বলা হয়। ক্ষারীয় মাটি সংশোধন করে অম্লীয় মাটিতে ভালো জন্মে এমন ফসল চাষাবাদ করা হয়। মাটি থেকে ক্ষারত্ব দূর করতে কৃষিবিদ নিম্নোক্ত পরামর্শ দেন-
i. ক্ষারীয় মৃত্তিকার জিপসাম সার ব্যবহার করে মৃত্তিকার ক্ষারত্ব হ্রাস করা যায়।
ii. গন্ধক বা সালফার ব্যবহার করে মাটির ক্ষারত্ব হ্রাস করা যায়।
iii. বিভিন্ন প্রকার জৈব সার যেমন- গোবর, সবুজ সার, খামারজাত সার, কম্পোস্ট সার, কেঁচো সার ব্যবহার করলে মৃত্তিকার ক্ষারত্ব হ্রাস পায়।
iv. মাটিতে পর্যাপ্ত পরিমাণ লবণযুক্ত পানি সেচ দিয়ে এর বিকাশের ব্যবস্থা করলে মাটি থেকে ক্ষারদ্রব্য ধুয়ে মাটি ক্ষারমুক্ত হয়।
v. মৃত্তিকায় জীবাণু সার ব্যবহার করে মৃত্তিকার ক্ষারত্ব হ্রাস করা যায়।
vi. ক্ষারীয় মাটির উপরিভাগ ফেলে দিয়ে সেখানে সোডিয়ামযুক্ত মাটি প্রতিস্থাপন করে ক্ষারত্ব হ্রাস করা যায়।
vii. ক্ষার জাতীয় মাটিতে পর্যাপ্ত পরিমাণে চিনি কলের বর্জ্যদ্রব্য প্রয়োগ করে চাষাবাদ করলে মৃত্তিকার ক্ষারত্ব কমে যায়।
সুতরাং উক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়, জসীম উদ্দিনের এলাকার ক্ষারীয় মাটি সংশোধন করে অম্লীয় মাটিতে রূপান্তরের মাধ্যমে তার জমিতে আনারস চাষ করা সম্ভব। অতএব উদ্দীপকের কৃষিবিদের পরামর্শ যথার্থ ছিল।

৩. কফিলের বাবা দীর্ঘদিন যাবৎ চরাঞ্চলে চীনাবাদাম ও তরমুজ চাষ করে আসছিলেন। বাবার মৃত্যুর পর সে তার জমিতে মাঠ ফসল চাষের ইচ্ছায় কৃষি অফিসে গিয়ে পরামর্শ চায়। কৃষি কর্মকর্তা তাকে মাটির বুনট পরিবর্তনের পরামর্শ দিলে কফিল পরামর্শ মোতাবেক কাজ করে মাঠ ফসল চাষে সক্ষম হয়। কর্মকর্তা তাকে আরও বলেন, 'মাটির বুনট বিবেচনায় রেখে ফসল নির্বাচন করা উচিত।'
ক. SRI এর পূর্ণরূপ কী?
খ. ভূমিক্ষয় মৃত্তিকায় কী প্রভাব ফেলে?
গ. কফিলকে কৃষি কর্মকর্তা যে পরামর্শ দিয়েছিলেন উদ্দীপকের আলোকে তা বর্ণনা কর।
ঘ. উদ্দীপকের শেষোক্ত বাক্যটি বিশ্লেষণ কর।

৩ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. SRI - এর পূর্ণরূপ হলো- System of Rice Intensification.

খ.ভূমিক্ষয়ের কারণে মাটি থেকে কর্দমকণা, হিউমাস, জৈব পদার্থ প্রভৃতি অপসারণের ফলে মাটির উর্বরতা কমে যায়। যার ফলে উদ্ভিদের খাদ্যোপাদানের অপচয় ঘটে উৎপাদন ক্ষমতা হ্রাস পায়। এর ফলে ভূ-পৃষ্ঠ মৃত্তিকায় অণুজৈবিক কর্মকান্ড স্থিমিত হয়ে যায়। অতিরিক্ত ভূমিক্ষয়ের প্রভাবে গাছপালা মরে গিয়ে মাটি মরুভূমিতে রূপ নিতে পারে।

গ. কফিল চরাঞ্চলের বাসিন্দা হওয়ায় তার জমির মাটি বেলে প্রকৃতির। সে এই বেলে প্রকৃতির মাটিতে মাঠ ফসল চাষ করবে বলে কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শ চাইল। কৃষি কর্মকর্তা তাকে জমির মাটির বুনট রূপান্তরের পরামর্শ দিলেন। আর কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শ অনুসারে বেলে মাটিতে মাঠ ফসল চাষ করতে চাইলে কফিলকে জমির মাটির বুনট রূপান্তর করে দোআঁশ প্রকৃতির করতে হবে। কফিল নিম্নোক্ত পদ্ধতিতে মাটির বুনট রূপান্তর করে মাঠ ফসল চাষের উপযোগী করবে।
i. মাটিতে প্রচুর পরিমাণে জৈব সার যেমন- গোবর সার, সবুজ সার, কম্পোস্ট সার, খামারজাত সার, কেঁচো সার ও অন্যান্য জৈব সার প্রয়োগ করে তা মাটির সাথে মিশিয়ে দিয়েছিলেন।
ii. জমির মাটির সঙ্গে পর্যাপ্ত পরিমাণ এঁটেল মাটি মিশিয়ে দিয়েছিলেন।
iii. জমিতে আইল বেঁধে প্রচুর পরিমাণ সেচ প্রয়োগের পর পানি জমা রেখে মাটির গুণাগুণ উন্নত করেছিলেন।
iv. বৃষ্টিপাতের সময় পানিবাহিত পলিমাটি জমিতে আটকে রাখার ব্যবস্থা করেছিলেন।
v. জমিতে উত্তমরূপে গভীর চাষের মাধ্যমে মাটির কণা স্থানান্তর করেছিলেন।
vi. বৈশাখ মাসে জমিতে ধইঞ্চা বীজ বপন করে গাছ ২৫/৩০ ইঞ্চি লম্বা করে তা মাটির সাথে মিশিয়ে দিয়েছিলেন।
vii.জমতে পর্যাপ্ত পরিমাণে ছাই প্রয়োগ করে তা মাটির সাথে মিশিয়ে দিয়েছিলেন।
উপরোক্ত কাজগুলো সঠিকভাবে করতে পারলে কফিল তার জমির মাটি মাঠ ফসল চাষের উপযোগী করে তুলতে পারবে।

ঘ. উদ্দীপকের শেষোক্ত বাক্যটি 'মাটির বুনট বিবেচনায় রেখে ফসল নির্বাচন করা উচিত।' নিচে বাক্যটি বিশ্লেষণ করা হলো সব ধরনের মাটিতে সব ফসল ভালো জনেম না। মাটির বুনটের ধরনের ওপর ভিত্তি করে ফসল জন্মানোর প্রকৃতিতেও ভিন্নতা পরিলক্ষিত হয়। বুনট হলো মাটির বালু, পলি ও কর্দমকণার তুলনামূলক অনুপাত বা শতকরা হার। ফসল উৎপাদনে মাটির বুনটের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মাটির বুনট পরিবর্তনের সাথে সাথে ফসলের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের তারতম্য হয় তা নিচের উদাহরণগুলোর সাহায্যে বোঝা যাবে।
১. বেলে বুনটের মাটি কৃষিকাজের জন্য উপযোগী নয়, তবে বালুর কণা মিহি হলে এবং মাটিতে প্রচুর গোবর, কম্পোস্ট, সবুজ সার ইত্যাদি প্রয়োগ করলে চিনা, কাউন, ফুটি, তরমুজ, বাদাম, আলু এসব ফসল চাষ করা যায়।
২. মাটির বুনট বেলে দোআঁশ প্রকৃতির হলে সেখানে মুলা, তামাক, মরিচ এসব ফসল ভালো জন্মে।
৩. মাটির বুনট পলি দোআঁশ প্রকৃতির হলে ধান, পাট, গম, আখ, আলু ও শাকসবজি ভালো জন্মে।
৪. এঁটেল দোআঁশ বুনটের মাটিতে ধান, তুলা, গম, ডাল, তেলবীজ ফসল ভালো জন্মে।
৫. এঁটেল বুনটের মাটিতে ধান, পাট, আখ ও শাকসবজি ভালো জন্মে।
উপরোক্ত আলোচনা থেকে বলা যায়, সামান্য কিছু ফসল ব্যতিক্রম বাদে মাটির বুনট পরিবর্তনের সাথে সাথে ফসলেরও পরিবর্তন হয়েছে। তাই বুনট ও ফসলের প্রকৃতি যাচাই না করে ফসল চাষ করলে উৎপাদন বিঘ্নিত হবে।

৪. চাঁদ মিয়া একজন কৃষক। তিনি প্রতিবছর ধান, মরিচ, আলু চাষ করে লাভবান হয়ে থাকেন। কিন্তু গত বছর যমুনা নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় বিস্তীর্ণ এলাকা ডুবে যায়। পানি নেমে যাওয়ার পর পলি মাটির পরিবর্তে বালুতে তার সব জমি ডেকে যায়। তিনি এখন মাথায় হাত দিয়ে চোখের পানি ফেলছেন। এই দেখে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা তাকে জৈব পদার্থ যোগ করাসহ আরও কিছু বিষয়ে ব্যবস্থা নিয়ে জমির গুণাগুণ উন্নত করার পরামর্শ দিলেন। সে অনুযায়ী কাজ করে চাঁদ মিয়া তার জমিতে আবার ফসল চাষ করে লাভবান হলেন। তাকে অনুসরণ করে অন্যান্য কৃষকও উপকৃত হলেন।
ক. সেচ কী?
খ. সবুজ সার বলতে কী বোঝ?
গ. চাঁদ মিয়া কীভাবে তার জমিতে ফসল চাষ করে লাভবান হলেন- ব্যাখ্যা কর।
ঘ. কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শের আলোকে চাঁদ মিয়ার কর্মকান্ডের যথার্থতা মূল্যায়ন কর।

৪ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. ফসলের ফলন বৃদ্ধি ও গাছের জীবনচক্র সম্পন্ন করার জন্য প্রয়োজনীয় পরিমাণ ও উপযুক্ত সময়ে কৃত্রিমভাবে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করাকে সেচ বলে।

খ. শিম জাতীয় উদ্ভিদকে নির্দিষ্ট বয়সে সবুজ ও সতেজ অবস্থায় চাষের মাধ্যমে মাটির নিচে ফেলে পচানোর ব্যবস্থা করলে যে জৈব পদার্থসমৃদ্ধ বস্তুর সৃষ্টি হয় তাকে সবুজ সার বলে। সবুজ সার হিসেবে ব্যবহৃত উদ্ভিদগুলো হচ্ছে- ধইঞ্ঝা, শণ, বরবটি, ইপিল-ইপিল, মুগ, কলাই, অড়হর, খেসারি, সয়াবিন, আলফা আলফা ইত্যাদি। সবুজ সার জমিতে জৈব পদার্থ ও নাইট্রোজেনের যোগান বাড়ায়।

গ. চাঁদ মিয়া তার জমিতে প্রতিবছর ধান, মরিচ, আলু চাষ করেন। তাই তার জমির মাটি দোআঁশ প্রকৃতির। কিন্তু গত বছর যমুনা নদীর পানিতে তার জমি ডুবে যাওয়ায় পলি পড়ার পরিবর্তে বালুতে ডেকে জমিকে শস্য উৎপাদনের অনুপযুক্ত করে ফেলেছে। এমতাবস্থায় চাঁদ মিয়া দিশেহারা হয়ে উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শ চাইলে তাকে জমিতে জৈব পদার্থ যোগসহ আরও কিছু বিষয় ব্যবস্থা নিতে বললেন। এতে চাঁদ মিয়া জমিতে জৈব পদার্থ হিসেবে সবুজ সার, কম্পোস্ট সার, খামারজাত সার, কেঁচোর সার ব্যবহার করলেন। এছাড়া তিনি তার জমিতে বেলে মাটির সঙ্গে পর্যাপ্ত পরিমাণে এঁটেল মাটি মিশিয়ে মাটিকে দোআঁশ মাটিতে রূপান্তর করলেন। ফলে জমির উপরিভাগে রোলার যন্ত্র চালানোর দ্বারা বেলে মাটি চেপে নিয়ে নিম্নস্তরের মাটি উপরে উঠে এসে দোআঁশে পরিণত হয়। এছাড়াও তিনি জমিতে পর্যাপ্ত পরিমাণে সেচের ব্যবস্থা করেন, আইল বেঁধে পানি জমা করে রাখেন, বৃষ্টিপাতের সময় পানিবাহিত পলিমাটি জমিতে আটকিয়ে রাখেন। এভাবে চাঁদ মিয়ার জমি বেলে থেকে দোআঁশ রূপান্তরের ফলে তার জমি আবার পূর্বের মতো উর্বর ও উৎপাদনক্ষম হয়েছে এবং পরবর্তীতে তার জমিতে ফসলের ভালো ফলন হয় এবং তিনি লাভবান হন।

ঘ. কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শের আলোকে চাঁদ মিয়ার কর্মকান্ডের যথার্থতা নিচে মূল্যায়ন করা হলো চাঁদ মিয়া একজন কৃষক। তিনি প্রতিবছর ধান, মরিচ, আলু চাষ করে লাভবান হন। কিন্তু গত বছর যমুনা নদীর পানিতে তার জমি ডুবে যায়। ফলে জমিতে পলিমাটি পড়ার পরিবর্তে বেলে মাটিতে তার জমি ঢেকে যায়। কিন্তু বেলে মাটিতে তার চাষকৃত ফসল উৎপাদন সম্ভব নয়। এমতাবস্থায় তিনি দিশেহারা হয়ে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শ চাইলেন। কৃষি কর্মকর্তা তাকে জমির মাটির বুনট পরিবর্তনের পরামর্শ দিলেন। কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শে চাঁদ মিয়া তার জমিতে জৈব পদার্থ হিসেবে সবুজ যার, কম্পোস্ট সার, খামারজাত সার ও কেঁচো সার প্রয়োগ করলেন। এছাড়াও তিনি তার জমিতে এঁটেল মাটি মিশিয়ে অন্যান্য আনুষঙ্গিক কাজ সম্পন্ন করেন। এতে তার জমির মাটির গুণাগুণ পরিবর্তিত হয়ে উন্নত হয়। ফলে তার জমির মাটিতে বেলে কণার প্রাধান্য থাকা পানিবদ্ধতা সৃষ্টি হয় না, কর্ষণ কাজ সহজ হয়, মাটি ঢেলা হয় না, মাটির সংযুক্তি উন্নত হয়ে পানি ধারণ ও শোষণ ক্ষমতা ভালো হয়। এতে তিনি ফসল চাষ করে অধিক ফলন পান এবং লাভবান হন। চাঁদ মিয়া যদি কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শে জমির মাটির বুনট পরিবর্তন না করে ফসল চাষ করতেন তাহলে ফসল উৎপাদন ভালো হতো না এবং তিনি ক্ষতিগ্রস্ত হতেন। বাংলাদেশে অনেক কৃষক সঠিক পরামর্শের অভাবে ফসল উৎপাদনে ব্যর্থ হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। যা উদ্দীপকে চাঁদ মিয়ার বেলায় ঘটেনি।
উক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়, কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শে চাঁদ মিয়ার ফসল উৎপাদনের কর্মকান্ড যথার্থতা ছিল।

৫. গণি মিয়া গতানুগতিক পদ্ধতিতে ধান চাষ করেন। কিন্তু এ বছর রসুলপুর গ্রামে তিনি দেখতে পান যে কৃষকেরা দশদিন বয়সের চারা বর্গাকার রোপণ করেছেন। তারা প্রতি গোছায় একটি করে চারা রোপণ করেছেন। তিনি জমিতে পানি দেখতে পেলেন না কিন্তু মাটিতে খাড়াভাবে পুঁতে দেওয়া কয়েকটি ছিদ্রযুক্ত পাইপ দেখতে পান। পরবর্তীতে তিনি উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তার নিকট থেকে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে পারেন।
ক. মালচিং কী?
খ. মাটির উর্বরতা বৃদ্ধিতে কেঁচোর ভূমিকা ব্যাখ্যা কর।
গ. উদ্দীপকের সেচ ব্যবস্থাপনা পদ্ধতিটি লাভজনকভাবে ফসল উৎপাদনে কীভাবে সাহায্য করবে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. গণি মিয়ার দেখা ধান চাষ পদ্ধতিটি গ্রহণের যৌক্তিকতা মূল্যায়ন কর।

৫ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. মাটির আর্দ্রতা ও পুষ্টি সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে মাটির উপরিভাগে ধানের খড়, লতাপাতা, কচুরিপানা ইত্যাদি জৈব পদার্থ দিয়ে ঢেকে দেওয়াই হলো মালচিং।

খ. মাটির উর্বরতা বৃদ্ধিতে কেঁচোর ভূমিকা ব্যাপক। মাটিকে আলগা, ফাঁপা ও নরম রাখে ফলে মাটির গভীরে আলো বাতাস ও পানি সহজে প্রবেশ করতে পারে। আবার ভার্মিকম্পোস্ট তৈরিতেও ব্যবহার করা হচ্ছে কেঁচো। এর বিষ্ঠায় বহুবিধ রাসায়নিক পদার্থ, উৎসেচক, নাইট্রোজেন আবদ্ধকারী নাইট্রিফাইং ও অ্যামোনিফাইং ব্যাকটেরিয়াসহ অনেক ধরনের জীবাণু ও উদ্ভিদ বৃদ্ধির সহায়ক ইনডোল যৌগ উপস্থিত থাকে। ফলে মাটিতে জৈব পদার্থ যুক্ত হয় পানি ধারণ ক্ষমতা বাড়ে এবং মাটি উর্বর হয়।

গ. উদ্দীপকের সেচ ব্যবস্থাপনা পদ্ধতিটি হলো AWD পদ্ধতি AWD পদ্ধতি লাভজনকভাবে ফসল উৎপাদনে সাহায্য করে। নিচে তা ব্যাখ্যা করা হলো-
ধান উৎপাদনে সেচের খরচ একটি উল্লেখযোগ্য স্থান দখল করে আছে। বোরো ধান উৎপাদনে মাটি ভেদে ১ কেজি ধান উৎপাদনে ৩০০০-৫০০০ লিটার পানি ব্যবহার করা হয়। যা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক বেশি। AWD পদ্ধতিতে সেচ প্রদান করা হলে সনাতন সেচ পদ্ধতির চেয়ে শতকরা ২০-২৫ ভাগ পানি সাশ্রয় হয়। এ পদ্ধতিটি মাঠ পর্যায়ে সহজে ব্যবহার করা যায় এবং প্রয়োজনে সাশ্রয়কৃত পানি দিয়ে অধিক জমি চাষের আওতায় আনা যায়। এ পদ্ধতিতে জ্বালানি সাশ্রয় হয় ২৫-৩০% এবং হেক্টরপ্রতি ফলন বাড়ে প্রায় ০.০৫ মে. টন। এই পদ্ধতিটি পরিবেশবান্ধব যাতে ভূ-গর্ভস্থ পানির ব্যবহার কম হয় ও ধান ক্ষেতে মশা ও পোকামাকড়ের উপদ্রব কম হয়। বাংলাদেশে এ প্রযুক্তি ব্যবহার করে শুধু ঝড়ো মৌসুমে প্রায় ৫০০ কোটি টাকার জ্বালানি সাশ্রয় করা সম্ভব। AWD পদ্ধতি ব্যবহার করে ধানের উৎপাদন খরচ কমার সাথে সাথে পানি ও জ্বালানি সাশ্রয় হবে। এভাবেই AWD পদ্ধতিটি লাভজনকভাবে ফসল উৎপাদনে সহায়তা করে।

ঘ. গণি মিয়ার দেখা ধান চাষ পদ্ধতিটি হলো এডব্লিউডি পদ্ধতি। এডব্লিউডি পদ্ধতিতে প্রতিটি ধানগাছের সমান যত্ন নেওয়া হয়। এতে কম বয়সের চারা রোপণ করা হয় এবং প্রতিটি গুছিতে ১টি চারা রোপণ করা হয়। এছাড়া চারা বর্গাকারে রোপণ করা হয় হয়। বলে বীজ, সার ও সেচ কম লাগে। এডব্লিউডি পদ্ধতিতে সেচ দেওয়া মানে পানির অপচয় রোধ করা। প্রচলিত পদ্ধতিতে আগাছা দমনে খরচ ও সময় বেশি লাগে বলে এসআরআই পদ্ধতিতে যান্ত্রিকভাবে আগাছা দমন করা হয়। ধান উৎপাদনে কম সময় লাগায় জমি ব্যবস্থাপনার জন্য অধিক সময় পাওয়া যায়। পাশাপাশি এ পদ্ধতি পরিবেশ ক্ষতিকর মিথেন গ্যাস নির্গমনের হারকে কমিয়ে দেয়। সুতরাং উপরের আলোচনা থেকে বলা যায়, এডব্লিউডি পদ্ধতিটি ধান চাষের জন্য লাভজনক এবং উপযুক্ত পদ্ধতি।

৬. সবুর মিয়া গতানুগতিক পদ্ধতিতে ধান চাষ করেন। কিন্তু এ বছর বিনোদপুর গ্রামে তিনি দেখতে পান যে, কৃষকরা দশ দিন বয়সের চারা বর্গাকারে রোপণ করেছেন। তারা প্রতি গোছায় একটি করে চারা রোপণ করেছেন। তিনি জমিতে পানি দেখতে পেলেন না কিন্তু মাটিতে খাড়াভাবে পুঁতে দেওয়া কয়েকটি ছিদ্রযুক্ত পাইপ দেখতে পান। পরবর্তীতে তিনি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার নিকট থেকে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে পারেন।
ক. মাটির বুনট কী?
খ. মাটির pH জানা প্রয়োজন কেন? ব্যাখ্যা কর।
গ. উদ্দীপকের সেচ ব্যবস্থাপনা পদ্ধতিটি লাভজনকভাবে ফসল উৎপাদনে কীভাবে সাহায্য করবে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. সবুর মিয়ার দেখা ধান চাষ পদ্ধতিটি গ্রহণের যৌক্তিকতা মূল্যায়ন কর।

৬ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. মাটির একক কণার পারস্পরিক অনুপাত দ্বারা সৃষ্টস্থূলতাকে বা সূক্ষ্মতাকে মাটির বুনট বলে।

খ. মাটির pH হলো মাটিতে হাইড্রোজেন আয়নের ঘনত্বের ঋণাত্মক লগারিদম। এটি মাটির একটি রাসায়নিক ধর্ম যা এর উর্বরতাকেও নির্দেশ করে। সব মাটিতে সব ফসল ভালো হয় না। মাটির pH মানের (অম্লতা, ক্ষারকতা ও নিরপেক্ষতা) ওপর কোন ফসল ভালো জনমাবে তা নির্ভর করে। কোন ফসল অম্লীয় মাটিতে ভালো জন্মে, যেমন- চা, কফি, লেবু ইত্যাদি। আবার কোন ফসল ক্ষারীয় মাটিতে ভালো জন্মে, যেমন নারিকেল, সুপারি, আখ ইত্যাদি। তবে অধিকাংশ ফসলই নিরপেক্ষ মাটিতে ভালো জন্মে। তাই মাটির pH মান জেনে সেই অনুযায়ী ফসল চাষ করলে লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। এ কারণেই মাটির জানা pH জরুরি।

গ. উদ্দীপকের সেচ ব্যবস্থাপনা পদ্ধতিটি হলো AWD পদ্ধতি। AWD পদ্ধতি লাভজনকভাবে ফসল উৎপাদনে সাহায্য করে। নিচে তা ব্যাখ্যা করা হলো-
ধান উৎপাদনে সেচের খরচ একটি উল্লেখযোগ্য স্থান দখল করে আছে। বোরো ধান উৎপাদনে মাটি ভেদে ১ কেজি ধান উৎপাদনে ৩০০০-৫০০০ লিটার পানি ব্যবহার করা হয়। যা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক বেশি। AWD পদ্ধতিতে সেচ প্রদান করা হলে সনাতন সেচ পদ্ধতির চেয়ে শতকরা ২০-২৫ ভাগ পানি সাশ্রয় হয়। এ পদ্ধতিটি মাঠ পর্যায়ে সহজে ব্যবহার করা যায় এবং প্রয়োজনে সাশ্রয়কৃত পানি দিয়ে অধিক জমি চাষের আওতায় আনা যায়। এ পদ্ধতিতে জ্বালানি সাশ্রয় হয় ২৫-৩০% এবং হেক্টরপ্রতি ফলন বাড়ে প্রায় ০.০৫ মে. টন। এই পদ্ধতিটি পরিবেশবান্ধব যাতে ভূ-গর্ভস্থ পানির ব্যবহার কম হয় ও ধান ক্ষেতে মশা ও পোকামাকড়ের উপদ্রব কম হয়। বাংলাদেশে এ প্রযুক্তি ব্যবহার করে শুধু ঝড়ো মৌসুমে প্রায় ৫০০ কোটি টাকার জ্বালানি সাশ্রয় করা সম্ভব। AWD পদ্ধতি ব্যবহার করে ধানের উৎপাদন খরচ কমার সাথে সাথে পানি ও জ্বালানি সাশ্রয় হবে। এভাবেই AWD পদ্ধতিটি লাভজনকভাবে ফসল উৎপাদনে সহায়তা করে।

ঘ. সবুর মিয়ার দেখা ধান চাষ পদ্ধতিটি হলো SRI পদ্ধতি। SRI পদ্ধতিতে প্রতিটি ধানগাছের সমান যত্ন নেওয়া হয়। এতে কম বয়সের চারা রোপণ করা হয় এবং প্রতিটি গুছিতে ১টি চারা রোপণ করা হয়। এছাড়া চারা বর্গাকারে রোপণ করা হয় হয় বলে বীজ, সার ও সেচ কম লাগে। এডব্লিউডি পদ্ধতিতে সেচ দেওয়া মানে পানির অপচয় রোধ করা। প্রচলিত পদ্ধতিতে আগাছা দমনে খরচ ও সময় বেশি লাগে বলে এসআরআই পদ্ধতিতে যান্ত্রিকভাবে আগাছা দমন করা হয়। ধান উৎপাদনে কম সময় লাগায় জমি ব্যবস্থাপনার জন্য অধিক সময় পাওয়া যায়। পাশাপাশি এ পদ্ধতি পরিবেশ ক্ষতিকর মিথেন গ্যাস নির্গমনের হারকে কমিয়ে দেয়। সুতরাং উপরের আলোচনা থেকে বলা যায়, এডব্লিউডি পদ্ধতিটি ধান চাষের জন্য লাভজনক এবং উপযুক্ত পদ্ধতি।

HSC কৃষিশিক্ষা ১ম পত্র (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর অধ্যায় ২ pdf download

৭. সাইফুল ইসলামের বাড়ি করতোয়া নদীর তীরে। গত দুই বছর আগেও তার বসতবাড়ি অনেক বড় ছিল। কিন্তু প্রতিনিয়ত ভূমিক্ষয়ের ফলে তার বসতবাড়ির আয়তন কমে যাচ্ছে।
ক. ভূমিক্ষয় কী?
খ. মাটির বুনট বলতে কী বোঝ?
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত ভূমিক্ষয়ের কারণ ব্যাখ্যা কর।
ঘ. ভূমিক্ষয়রোধ করা কি সম্ভব? তোমার উত্তরের সপক্ষে যুক্তি দাও।

৭ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. মাটির স্থানচ্যুতিকে ভূমিক্ষয় বলে।

খ. মাটির কণাসমূহ বিভিন্ন আকারের। যেমন- বালিকণা বড়, পলিকণা মাঝারি ও কর্দমকণা ছোট। মাটির কণাসমূহের বিভিন্ন আকারই হচ্ছে বুনট। মাটির একক কণার পারস্পরিক অনুপাত দ্বারা সৃষ্ট স্থূলতা বা সূক্ষ্মতাকে মাটির বুনট বলে। অর্থাৎ মাটির বালি, পলি ও কদম কণার তুলনামূলক আকার বা শতকরা অনুপাতকে মাটির বুনট বলে।

গ. উদ্দীপকে সাইফুল ইসলামের বাড়ি করতোয়া নদীর তীরে। তার বাড়ির আয়তন দিন দিন কমে যাওয়ার প্রধান কারণ হলো নদী ভাঙনজনিত সমস্যা। নদীর প্রবল স্রোত, ঢেউয়ের কারণে নদীর কূল ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে মাটির কণাসমূহ পরস্পর থেকে আলাদা হয়ে যায়। অতঃপর উপরি গড়ানো ও অবলুণ্ঠন প্রক্রিয়ায় ক্ষয়প্রাপ্ত মাটিকণা স্থানান্তরিত হয়। এছাড়াও নদীতে জোয়ার শুরু ও শেষ হওয়ার সময় এরূপ ভাঙনের গতি তীব্রতর হয়। ফলে নদীর তীরে বসবাসকারী সাইফুল ইসলামের বসতবাড়ি আস্তে আস্তে 'নদীগর্ভে বিলীন হয়। আর এই নদী ভাঙনজনিত ভূমিক্ষয়ের কারণেই উদ্দীপকে উল্লিখিত সাইফুল ইসলামের বাড়ির আয়তন দিন দিন কমে যাচ্ছে।

ঘ. সাইফুল ইসলামের বাড়ি করতোয়া নদীর তীরে। প্রতিবছর নদী ভাঙনের ফলে তার বাড়ির আয়তন দিন দিন কমে যাচ্ছে। যেহেতু নদী ভাঙনজনিত ভূমিক্ষয়ের কারণে তার বাড়ির আয়তন কমে যাচ্ছে সেহেতু এ ভূমিক্ষয় রোধ করা সম্ভব। এ ধরনের ভূমিক্ষয় রোধে সাইফুল ইসলামকে কিছু পদক্ষেপ অবলম্বন করতে হবে। তাই তাকে সর্বপ্রথম নদীর ধারে প্রতিরক্ষামূলক বাঁধ নির্মাণ করতে হবে। এজন্য তাকে নদীর তীরে গাছ রোপণ করতে হবে। কারণ গাছের শিকড় মাটিকে শক্ত করে ধরে রাখবে এবং নদীর তীর ভাঙনের হাত থেকে রক্ষা করবে। এছাড়াও নদীর তীরে পাথর ফেলে, খঙকুটা, লতাপাতা, কচুরিপানা এবং বৃক্ষের গুড়ি দ্বারা প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে নদীর তীরস্থ ভূমিক্ষয় অনেকটা রোধ করা সম্ভব। মাটির বুনট শক্ত করে এ ধরনের ভাঙন থেকে রক্ষা করা যায়।
অতএব, সাইফুল ইসলাম যদি উপরোক্ত পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করে তাহলে নদী ভাঙনের হাত থেকে তার বাড়ি রক্ষা করতে পারবে বলে আমি মনে করি

৮. রংপুর জেলার বাসিন্দা আজাহার আলীর অনেক আবাদি জমি আছে। গত খরার কারণে তার জমিতে ফসল উৎপাদন ব্যাহত হয়েছিল। তাই তিনি কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শ নিয়ে সাশ্রয়ীরূপে জমিতে সেচের ব্যবস্থা করেন।
ক. সেচের পানির উৎস কয়টি?
খ. মৃত্তিকা ও ফসল উৎপাদনে পানির ভূমিকা ব্যাখ্যা কর।
গ. আজাহার আলী কেন সেচ পদ্ধতি গ্রহণ করলেন? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকে আজাহার আলীর কার্যক্রমটি সময়োপযোগী বিশ্লেষণ কর।

৮ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. সেচের পানির উৎস হলো দুটি। যথা- ১. ভূ-গর্ভস্থ পানি ও ২. ভূপৃষ্ঠস্থ পানি।

খ. মৃত্তিকা ও ফসল উৎপাদনে পানির ভূমিকা নিম্নরূপ:
১. মাটির জৈবিক ও অনুজৈবিক কার্যাবলি বৃদ্ধি ও নিয়ন্ত্রণ করে।
২. মাটির তাপ নিয়ন্ত্রণ করে।
৩. উদ্ভিদের কোষের সজীবতা রক্ষা করে।
৪. ফসলের গুণগতমান ও ফলন বাড়ায়।

গ. আজাহার আলী AWD পদ্ধতিতে তার ফসলের জমিতে সেচ দিয়েছিলেন। AWD পদ্ধতি হলো ফসলের ক্ষেতে পর্যায়ক্রমে ভিজানো ও শুকানো পদ্ধতিতে প্রয়োজন মতো সেচ দেওয়া। AWD পদ্ধতিতে সেচ দেওয়া মানে পানির অপচয় রোধ করা। এটি একটি সাশ্রয়ী সেচ পদ্ধতি।
এ পদ্ধতিতে একটি ছিদ্রযুক্ত পস্নাস্টিক বা বাঁশের পাইপ বসিয়ে মাটির ভেতরের পানির স্তর পর্যবেক্ষণ করে সেচ দেওয়া। এ পাইপের ব্যাস হবে ৭-১০ সে.মি. এবং লম্বা ২৫ সে.মি.। পাইপের উপরের ১০ সে.মি. ছিদ্রহীন এবং নিচের ১৫ সে.মি. ছিদ্রযুক্ত হবে। পাইপটিকে ৫ সে.মি. পরপর ড্রিল বিট দিয়ে ৩ সে.মি. ব্যাসের ছিদ্র করতে হবে। পাইপটি এমনভাবে ফসলের জমিতে বসাতে হবে যেন পাইপটির উপরের ছিদ্রহীন ১০ সে.মি. মাটির উপরে থাকে, যাতে সেচের পানির মাধ্যমে খঙকুটা বা আবর্জনা পাইপের মধ্যে প্রবেশ করতে না পারে। নিচের ছিদ্রযুক্ত ১৫ সে.মি. মাটির নিচে থাকবে, যাতে মাটির ভেতরের পানি দিয়ে পাইপে সহজে প্রবেশ করতে বা বেরিয়ে যেতে পারে। মাটিতে পর্যাপ্ত রস বা পানি থাকলে ফসলে শিকড়ের মাধ্যমে তার প্রয়োজনীয় পানি গ্রহণ করতে পারে। এই পদ্ধতিতে প্রচলিত পদ্ধতির চেয়ে ২৫% সেচের পানির এবং ৩০% জ্বালানি সাশ্রয় হয়। ভালো ফলন পাওয়ার জন্য ফসলের ক্ষেত্রে সব সময় পানি রাখার প্রয়োজন নেই। এজন্য ফসলের জমিতে AWD পদ্ধতি ব্যবহার করে সঠিক সময়ে প্রয়োজন মতো সেচ প্রদান করলে একদিকে যেমন ফসলের উৎপাদন খরচ কমবে অন্যদিকে তেমনি মূল্যবান পানি ও জ্বালানি সাশ্রয়। হবে। উক্ত কারণে আজাহার আলী তার ফসলের জমিতে AWD পদ্ধতিতে সেচ দিলেন।

ঘ. উদ্দীপকে আজাহার আলীর কার্যক্রমটি সময়োপযোগী নিচে তা বিশ্লেষণ করা হলো-
উদ্দীপকে কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শে আজাহার আলী AWD অর্থাৎ সাশ্রয়ীরূপে ফসলের জমিতে সেচ দিলেন। কারণ বর্তমান সময়ে ফসল উৎপাদনের জন্য অন্যতম প্রয়োজনীয় উপাদান হলো সেচের পানি। আর এ পানি যথাযথভাবে ব্যবহার না করে সেচের মাধ্যমে ভূ-গর্ভস্থ অতিরিক্ত পানি উত্তোলন করলে পানির স্তর নিচে নেমে যাবে। এছাড়া সেচের পানি সঠিক ব্যবহার না করে অতিরিক্ত পানি উত্তোলন করলে মানুষের ব্যবহারযোগ্য পানির সমস্যা দেখা দিবে। এসব পানিতে ভারী ক্ষতিকারক ধাতব পদার্থের ঘনত্ব বেড়ে যাবে। যা মানুষের তথা প্রাণিজগতের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর হবে। সেচের পানির যথাযথভাবে ব্যবহার না করলে পানি বিরোধী ফসলের ক্ষতি করবে। অন্যদিকে ভূ-পৃষ্ঠস্থ নদী, খাল, বিল, হাওর, বাঁওড়, পুকুর, দিঘি ইত্যাদি পানি সেচের মাধ্যমে অপরিকল্পিতভাবে ব্যবহারের দরুন এসব জলাশয় শুকিয়ে যাবে। ফলে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হবে। যার প্রভাবে মানুষও নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
অপরদিকে AWD পদ্ধতিতে ফসলে সেচ দিলে সেচ কম লাগে। এতে ২৫% সেচের পানি ও ৩০% জ্বালানি সাশ্রয় হয়। এ পদ্ধতি সেচের ফলে ফসলের ফলন ও উৎপাদন বহুগুণে বৃদ্ধি পায়। উক্ত বিষয়গুলো বিবেচনা করে কৃষি কর্মকর্তা আজাহার আলীকে AWD পদ্ধতি ফসলের জমিতে সেচ দিতে বললেন। কারণ পরবর্তীতে আজাহার আলীর জমির ফসলে সেচ পদ্ধতি দেখে অন্যান্য কৃষকও এ পদ্ধতিতে সেচে আগ্রহী হবে। আর এভাবেই কৃষকের প্রয়োজনে এই পদ্ধতির বিস্তার ঘটবে। তাই কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শে আজাহার আলীর কার্যক্রমটি সময়োপযোগী ছিল।

৯. জমির মিয়া গত কয়েক বছর ধরে তার জমিতে ভালো ফসল পাওয়ার লক্ষ্যে সেচ, সার প্রয়োগ, রোগ ও পোকামাকড় নিরোধক ব্যবস্থা গ্রহণ করে আসছেন। কিন্তু আশানুরূপ ফসল তিনি পাচ্ছেন না। তাই তিনি কৃষি কর্মকর্তার নিকট বিষয়টি অবগত করলেন। কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শ অনুযায়ী তিনি মাটির পরীক্ষা করালেন। মাটির পরীক্ষায় pH এর মান হলো ৪.৫।
ক. জাবড়া প্রয়োগ কী?
খ. মাটির ক্ষারত্ব বলতে কী বোঝ?
গ. জমির মিয়ার আশানুরূপ ফসল না পাওয়ার কারণ বর্ণনা কর।
ঘ. জমির মিয়ার উক্ত সমস্যা থেকে উত্তরণে কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শ মূল্যায়ন কর।

৯ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. মাটির উপরিভাগে ধানের খঙ, লতাপাতা, কচুরিপানা ইত্যাদি জৈব পদার্থ প্রয়োগ করাকে জাবড়া প্রয়োগ বলে।

খ. মাটির দ্রবণে হাইড্রোক্সিল আয়নের (OH) ঘনত্ব বেশি হলে মাটিতে ক্ষারত্বের সৃষ্টি হয় অর্থাৎ কোনো মাটির অম্লমান ৭-এর বেশি হলে ঐ মাটিতে ক্ষারতব দেখা দেয়। ক্ষারত্ব সৃষ্টির জন্য হাইড্রোক্সিল আয়নের সঙ্গে বিভিন্ন ক্ষারজ উপাদান সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে থাকে। হাইড্রোক্সিল আয়নের সঙ্গে ক্ষারজ এসব উপাদান মিশে ক্ষারত্ব বৃদ্ধি করে।

গ. pH এর মান ৭ এর বেশি থাকলে তাকে ক্ষারীয় মাটি বলে। জমির মিয়া তার জমিতে কিছু ফসল চাষ করে আশানুরূপ ফলন পায়নি। মাটির নমুনা পরীক্ষা করলে অম্লমান ৪.৫ হয় অর্থাৎ তার জমির মাটি অম্লীয়। জমিরের জমির মাটিতে সৃষ্ট সমস্যার ফলে তিনি আশানুরূপ ফসল পাননি। যথা-
i. উদ্ভিদের বৃদ্ধির জন্য ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম সহজলভ্য হয় না।
ii. মাটিতে আয়রন ও অ্যালুমিনিয়ামের আধিক্যজনিত বিষক্রিয়া সৃষ্টি হয়।
iii. মাটিস্থ অণুজীবসমূহ বিশেষ করে ব্যাকটেরিয়ার কার্যকারিতা কমে যায়।
iv. মাটিতে অম্লতেবর মাত্রা বৃদ্ধি হলে নাইট্রোজেন, ফসফরাস, পটাশিয়াম, সালফার জাতীয় মুখ্য পুষ্টি উপাদান বেশি মাত্রায় দ্রবণীয় হয়।
v. জমিতে অপুষ্ট গাছের জন্ম হয়।
vi. পাতায় সবুজ কণা বিনষ্ট হওয়ার লক্ষণ প্রকাশ পায়।

ঘ. জমির মিয়ার জমির মাটির pH এর মান ৪.৫ যা অতিরিক্ত অম্লীয় মাটি নির্দেশ করে। এমন মাটি ফসল চাষের জন্য উপযোগী নয়। এ ধরনের জমিতে ফসল চাষ করে ক্ষতিগ্রস্ত হতে হয়। জমির তার জমিতে ফসল চাষ করে ভালো ফলন পাচ্ছিলেন না। কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শে উক্ত সমস্যা দূরীকরণে জমির মিয়াকে নিম্নলিখিত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে-
i. মাটিতে চুন ব্যবহার করবেন। চুন ব্যবহার করলে ক্যালসিয়াম আয়ন হাইড্রোজেন আয়নকে প্রতিস্থাপন করে। এতে হাইড্রোজেন আয়ন কমে হাইড্রোক্সিল আয়ন বেড়ে যায়। মাটির অম্ল সংশোধন হয়ে নিরপেক্ষ হয়।
ii. মাটিতে প্রচুর পরিমাণে জৈব সার ব্যবহার করবেন। জৈব সার থেকে উৎপন্ন জৈব এসিডসমূহ মাটির বাফার ক্ষমতা বাড়াতে অর্থাৎ মাটির একটি নির্দিষ্ট pH মান স্থির রাখতে সহায়তা করে। এছাড়াও জৈব সারে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম থাকে। এ মৌলদ্বয় মৃত্তিকা দ্রবণ থেকে ঐ' কে সরিয়ে অম্লতা কমায়।
iii. বায়োফার্টিলাইজার, ট্রাইকোডার্মা, বায়োপেস্টিসাইড জৈব বালাইনাশক ব্যবহার করে মাটির অম্লতা সংশোধন করবেন।
iv. বশির তার জমির অম্লতা সংশোধনে ডাল ও শিম জাতীয় গাছ পচিয়ে সবুজ সার তৈরি করে জমিতে প্রয়োগ করবেন। এতে জমি ফসল চাষের উপযোগী হবে।
v. অণুজীব সার (রাইজোবিয়াম) জমিতে ব্যবহার করবেন। অণুজীব সার ঐ' আয়ন কমিয়ে ক্ষারত্ব বাড়ায়। ফলে মাটি নিরপেক্ষ হয়।
vi. এছাড়াও সেচের মান উন্নয়ন, সুষম সার ব্যবহার, অম্লীয় সার ব্যবহার কমিয়ে ও কাঠের ছাই ব্যবহার করে বশির তার জমিকে ফসল চাষের উপযোগী করবেন। উপরের আলোচনা থেকে দেখা যায়, জমির মিয়া তার জমির অম্লতব সংশোধন করে ফসল চাষের উপযোগী করার জন্য বেশ কিছু কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন।

১০. রফিকের জমিতে প্রতি বছরই বিভিন্ন ফসলের ফলন কমছে। সে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শে ভূমির উর্বরতা বৃদ্ধির জন্য জৈব সার প্রয়োগ, সবুজ সার, শস্য চাষ, লিগিউমিনাস শস্য চাষ ও রাসায়নিক সার প্রয়োগ করে ফলন ভালো পেলেন। অন্যান্য কৃষকরাও রফিকের মতো ব্যবস্থা গ্রহণ করে ভালো ফলন পেলেন।
ক. ভূমি সংরক্ষণ কী?
খ. ভূমি সংরক্ষণ কেন করা হয় ব্যাখ্যা কর।
গ. রফিকের জমিতে কীভাবে ফসলের ফলন বৃদ্ধি করলেন ব্যাখ্যা কর।
ঘ. মাটির উর্বরতা স্থায়িত্বের জন্য রফিকের ব্যবস্থা মূল্যায়ন কর।

১০ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. কোনো এলাকায় মাটি বা ভূমিক্ষয় রোধ করে এর ভৌত, রাসায়নিক ও জৈবিক গুণাগুণ বজায় রাখাই হচ্ছে ভূমি বা মৃত্তিকা সংরক্ষণ।

খ. মাটির স্বাস্থ্য রক্ষার নামই ভূমি সংরক্ষণ। নিম্নলিখিত কারণে ভূমি সংরক্ষণ করা হয়-
i. গাছের প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান মাটিতে সংরক্ষণের জন্য।
ii. মাটির উর্বরতা ও উৎপাদনক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য।
iii.ফসলের গোড়া শক্তভাবে মাটিতে আটকে রাখার জন্য।
iv.অতিরিক্ত সারের প্রয়োজনীয়তা কমে।
v. মাটির অণুজীবের কার্যাবলি স্বাভাবিক রাখার জন্য।

গ. রফিক যেভাবে ফসলের ফলন বৃদ্ধি করেছিলেন নিচে তা বর্ণনা করা হলো-
উদ্দীপকে রফিকের জমিতে দিন দিন ফসলের ফলন কমে যাচ্ছে। মাটির উর্বরতা কমে যাওয়ার কারণে এমন হচ্ছে। রফিক কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শে ভূমি ব্যবস্থাপনা উন্নয়ন করে ভালো ফলন পান।
i. নিয়মিত জৈব সার প্রয়োগ করেছেন। জৈব সারে গাছের প্রয়োজনীয় ১৭টি পুষ্টি উপাদান থাকে। মাটির ক্ষয়রোধ করে মাটিতে পুষ্টি সংরক্ষণ করে।
ii. জমিতে সুষম মাত্রায় রাসায়নিক সার প্রয়োগ করেছিল। মুখ্য ও গৌণ ১৪টি পুষ্টি উপাদানের ঘাটতি রাসায়নিক সারের মাধ্যমে করা যায়।
iii. লিগিউম জাতীয় শস্যের চাষ করেছিল। লিগিউম জাতীয় শস্য ব্যাকটেরিয়ার সাহায্যে শিকড়ে নাইট্রোজেন সংরক্ষণ করে।
iv. জমির আগাছা দমন করে উর্বরতা রক্ষা ও বৃদ্ধি করেছিল।
v. মাটির অম্লতব ও ক্ষারতব নিয়ন্ত্রণ করে পর্যায়ক্রমে ফসলের চাষ করেছিল। যাতে মাটির সব অংশ হতে পুষ্টি শোষণ হয়। এতে মাটির উর্বরতা রক্ষা করা সম্ভব।
vi. ভূমিক্ষয় রোধে ব্যবস্থা, উত্তম সেচ ও নিকাশ পদ্ধতি গ্রহণ করে জমির উর্বরতা বৃদ্ধি করেছিল।
vii. সবুজ সার জাতীয় গাছ জন্মাবে এবং সবুজ সার তৈরি করে জমিতে প্রয়োগ করেছিল।
viii. আচ্ছাদন শস্য (শসা, লাউ, বাংগি, তরমুজ) জাতীয় ফসলের চাষ করেছিল।
ix. খড়, কচুরিপানা, শুকনা লতাপাতা জমিতে প্রয়োগ করে জমির উর্বরতা ও উৎপাদন ক্ষমতা বাড়িয়েছিল।
v. শস্যের অবশিষ্টাংশ, জীবাণু সার ব্যবহার করে জমির উর্বরতা সংরক্ষণ ও উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি করেছিল।

ঘ. উদ্দীপকে রফিক উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শে মাটির উর্বরতা স্থায়িত্বের জন্য জৈব সার প্রয়োগ, সবুজ সার শস্য চাষ, লিগিউমিনাস শস্য চাষ ইত্যাদি করেছিলেন। নিচে তার ব্যবস্থাগুলো মূল্যায়ন করা হলো-
রফিক জমিতে জৈব সার প্রয়োগ করে জমির উর্বরতা বৃদ্ধি করেছিলেন। জৈব সারে ফসলের প্রয়োজনীয় সকল পুষ্টি উপাদান উপস্থিত থাকে। তিনি জমিতে সবুজ সার তৈরির জন্য শস্য চাষ করেছিলেন। এতে জমির উর্বরতা বৃদ্ধি পেয়েছে। জমিতে অণুজীবের বৃদ্ধি হয়েছে। তিনি জমিতে লিগিউম জাতীয় শস্য চাষ করেছিলেন। এ ধরনের শস্যের শিকড়ে রাইজোবিয়াম নামক এক প্রকার ব্যাকটেরিয়া গুঁটি বা নডিউল তৈরি করে যা বায়ুমন্ডল থেকে নাইট্রোজেন সংগ্রহ করে সঞ্চয় করে। পরে এসব নডিউল পচে নাইট্রোজেন ফসলের কাজে লাগে। তিনি জমির উবর্রর্তা যেন নষ্ট না হয় এজন্য পরিমিত পরিমাণ রাসায়নিক সার প্রয়োগ করেছিলেন। উপরিউক্ত কাজগুলোর জন্য তার জমির উর্বরতা বৃদ্ধি পেয়ে ফলন বেড়ে গিয়েছিল। সুতরাং মাটির উর্বরতা স্থায়িত্বের জন্য রফিকের ব্যবস্থাগুলো সঠিক ও যথার্থ ছিল।

Share:

HSC কৃষিশিক্ষা ১ম পত্র (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর pdf download অধ্যায় ৩

এইচএসসি পরীক্ষার পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি
HSC Agricultural Education 1st Paper Srijonshil question and answer. HSC Agricultural Education 1st Paper (Srijonshil) Creative Questions pdf download. HSC Krishi Shikkha 1st paper Srijonshil Proshno Uttor.

উচ্চ মাধ্যমিক
কৃষিশিক্ষা
প্রথম পত্র

সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
অধ্যায়-৩

HSC Agriculture 1st Paper
Srijonshil Question and Answer pdf download

১. চায়নিজ রেস্তোরাঁয় স্যুপ খাওয়ার সময় জারিন তার কৃষিবিদ মামাকে বলল, এর মধ্যে ব্যাঙের ছাতা, এটা খাওয়া যাবে না। মামা বললেন, এটা ব্যাঙের ছাতা নয়। এটা বহু পুষ্টিগুণসম্পন্ন একটি সবজি যা জমি ছাড়াও চাষ করা যায় এবং এ ধরনের সবজির চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
ক. রিবন রেটিং কী?
খ. বীজ ফসলের জমি নিরাপদ দূরত্বে রাখা হয় কেন?
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত সবজির উৎপাদন কৌশল সহজ ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকের সবজিটির চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাওয়ার কারণ বিশ্লেষণ কর।

১ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. পাটগাছ কাটার পর কাঁচা থাকা অবস্থায় গাছ থেকে ফিতার মতো ছালকে পৃথক করে পরে পচানোর ব্যবস্থাই হলো রিবন রেটিং।

খ. একই ফসলের বিভিন্ন জাতের মধ্যে পরাগায়ন হয়ে জাতের বিশুদ্ধতা যাতে নষ্ট না হয় সেজন্য বীজ ফসলের জমির নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখতে হয়। বীজ ফসলের জমি থেকে একই ফসলের বীজ বপনের সময় পরিবর্তন করেও নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখা যায়। যেমন- পিঁয়াজের বীজের জমি ভিত্তি বীজ হলে ৭৫ মিটার এবং প্রত্যায়িত বীজ হলে ৭০ মিটার দূরত্ব বজায় রাখতে হবে।

গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত সবজিটি হলো মাশরুম। মাশরুম খোলা জায়গায় চাষ করা যায় না। তাই এর জন্য আবাদি জমির প্রয়োজন হয় না। মাশরুমের চাষ পদ্ধতি সহজ হওয়ার কারণে যেকেউ ঘরে বসে মাশরুম চাষ করতে পারে। চাষের উপকরণ সহজলভ্য। ঘরের মধ্যে অল্প পরিশ্রমে, অল্প পুঁজিতে সহজেই ভূমিহীন কৃষক মাশরুম চাষের সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে পারেন। মাশরুম চাষে ঝুঁকি কম, কারণ প্রাকৃতিক দুর্যোগ, রোগবালাই দ্বারা ক্ষতির সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। মাশরুম চাষের জন্য শ্রমিক খরচ লাগে না কারণ অন্যান্য কাজের পাশাপাশি পরিবারের সব সদস্যকে এ কাজে সম্পৃক্ত করা যায়। নারীরা ঘরে বসেই এর চাষ করতে পারেন, মাঠে যেতে হয় না। গ্রীষ্মকালে যেকোনো চালা ঘরের নিচে এবং বারান্দায় চাষ করা যায়। বর্ষাকালে পানি প্রবেশ করে না অথচ বাতাস চলাচলের সুবিধা আছে এমন ঘরে এর চাষ করতে হয়। শীতকালে ভেজা স্যাঁতসেতে অন্ধকার ঘরে এর চাষ হয়ে থাকে। মাশরুম মাত্র ১০-১৫ দিনেই খাবার উপযোগী হয়।
সুতরাং উক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়, মাশরুম উৎপাদন কৌশল সহজ।

ঘ. উদ্দীপকের সবজিটি হলো মাশরুম। নিচে মাশরুমের চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাওয়ার কারণ বিশ্লেষণ করা হলো-
i. মাশরুমে অনেক ধরনের ঔষধিগুণ ও পুষ্টিমান রয়েছে। অন্য যেকোনো সবজির মতো এটিকে খুব সহজেই সবজি হিসেবে খাওয়া যায়।
ii. মাশরুম প্রোটিন সমৃদ্ধ সবজি। তাই একে সবজি মাংসও বলা হয়ে থাকে। প্রতি ১০০ গ্রামে ২০-৩০ গ্রাম প্রোটিন পাওয়া যায়। কম খরচে ও কম শ্রমে মাশরুম চাষের দ্বারা বিপুল পরিমাণে আমিষ উৎপাদন সম্ভব।
iii. মাশরুমের পরিমিত পরিমাণ কার্বোহাইড্রেট ও যথেষ্ট আঁশ থাকে। এতে শর্করার পরিমাণ কম বিধায় বহুমূত্র রোগীদের জন্য মাশরুম আদর্শ খাবার।
iv. মাশরুম খুব নিম্নশক্তি সম্পন্ন খাবার। এতে কোলেস্টেরল নেই, চর্বির পরিমাণ অত্যন্ত কম; কম চর্বি, কোলেস্টেরলমুক্ত এবং লিনোলেয়িক এসিড সমৃদ্ধ হওয়ায় মাশরুম হৃদরোগীদের জন্য খুব উপকারী।
v. হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ, ক্যান্সার, টিউমার, মেদভুঁড়ি, জন্ডিস, রক্তস্বল্পতা, যৌন অক্ষমতা, ডেঙ্গুজ্বর, ডায়াবেটিস ইত্যাদি দুরারোগ্য ব্যাধির প্রতিরোধ ও নিরাময়ে মাশরুমের অবদান রয়েছে। এসব কারণে মাশরুমের চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

২. নেহালপুর গ্রামের হাসেম মিয়া তার দেশি গাভীকে ডাকে আসার পর স্থানীয় পশু প্রজনন কর্মীকে ডেকে এনে প্রজনন করালেন। কিছু দিনপর ঐ গাভী থেকে একটি বকনা বাছুর হলো। বাছুরটি দেখতে বেশ সুন্দর ও বড়সড় ধরনের। পরবর্তীতে ঐ বাছুরটি যখন বড় হয়ে ডাকে আসল তখন একইভাবে প্রজননের মাধ্যমে হাসেম মিয়া তার থেকে আরও একটি বাছুর পেলেন এবং গাভীর দুধ উৎপাদনও বেড়ে গেল। গ্রামবাসীর হাসেম মিয়ার গাভী দেখে তারাও ঐ ধরনের গাভী পালনে আগ্রহী হলো।
ক. মৌচাষ কী?
খ. রাইজোবিয়াম কেন অণুজীব সার- ব্যাখ্যা কর।
গ. হাসেম মিয়া কীভাবে একটি উন্নত জাতের বাছুর পেলেন ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকের হাসেম মিয়ার কর্মকান্ডটি মূল্যায়ন কর।

২ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক.মৌমাছিকে তাদের প্রাকৃতিক পরিবেশ থেকে এনে মৌচাকের উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টি করে আধুনিক ও বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে পালন করাকে মৌচাষ বলে।

খ. নাইট্রোজেন সংবন্ধনকারী রাইজোবিয়াম সার ইউরিয়ার বিকল্প হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এই সার উৎপাদনে রাইজোবিয়াম নামক ক্ষুদ্র অণুজীব বা ব্যাকটেরিয়া ব্যবহার করা হয়। এই ব্যাকটেরিয়া শিমজাতীয় উদ্ভিদের শিকড়ে নডিউল সৃষ্টি করে। নডিউলের ভিতরে ব্যাকটেরিয়া বায়ুমন্ডল থেকে নাইট্রোজেন সংযোজন করে নিজের প্রয়োজন মেটায় এবং সহঅবস্থানকারী উদ্ভিদকেও সরবরাহ করে। রাইজোবিয়াম ব্যাকটেরিয়া এক প্রকার অণুজীব বলেই এর দ্বারা তৈরিকৃত সারকে অণুজীব সার বলা হয়।
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত হাসেম মিয়া তার ডাকে আসা দেশি গাভীটিকে স্থানীয় পশু প্রজনন কেন্দ্রে নিয়ে গেছেন। সেখানে উন্নত ব্যবস্থাপনা সংরক্ষিত উন্নত জাতের ষাঁড়ের সিমেন ছিল। সেই সিমেন দ্বারা পশু প্রজনন কর্মকর্তার সহায়তায় কৃত্রিম প্রজনন করানো হয়েছে। উক্ত কৃত্রিম প্রজনন সফল হয়েছে। কিছুদিন পর গাভীটির একটি বকনা বাছুর হয়েছে। বাছুরটি অন্যসব বাছুরের থেকে দেখতে সুন্দর ও আকারে বড় হয়েছে। পরবর্তীতে এ বাছুরটি বড় হয়ে যখন ডাকে আসল তখন একইভাবে পশু প্রজনন কেন্দ্রের কর্মকর্তার সহায়তায় কৃত্রিম প্রজনন করিয়েছেন। তার এই কৃত্রিম প্রজনন সফল হয়েছে। এবারও হাসেম মিয়ার বকনা গাভী থেকে উন্নত বাছুর পেয়েছেন। এভাবে কৃত্রিম প্রজনন করানোর মাধ্যমে তিনি উন্নত জাতের বাছুর পেয়েছেন।

ঘ. উদ্দীপকের হাসেম মিয়ার কর্মকান্ডটি হলো কৃত্রিম প্রজনন পদ্ধতি। নিচে কর্মকান্ডটির মূল্যায়ন করা হলো বাংলাদেশে জনসংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধির ফলে দিন দিন কৃষি জমির পরিমাণ কমে যাচ্ছে। কৃষকের জমির পরিমাণ প্রতি বছর ১% হারে কমে আসছে। ফলে কৃষির সঙ্গে সম্পর্কিত অন্যান্য বিভাগে নতুন নতুন প্রযুক্তির মাধ্যমে মানুষ কার্য নির্বাহ করছে। এসব প্রযুক্তির মধ্যে দুগ্ধবতী গাভী পালন অন্যতম। তাছাড়া বাংলাদেশে প্রাণিজ প্রোটিনের ব্যাপক ঘাটতির কারণে "এদেশের শতকরা ৮০ ভাগের বেশি মানুষ অপুষ্টিতে ভুগছে। আমাদের দেশে গবাদিপশু সংখ্যার দিক থেকে অনেক বেশি। হলেও উন্নত জাতের গরুর সংখ্যা কম। ৮০ ভাগের বেশি গরু দেশীয়, যার উৎপাদন ক্ষমতা খুবই কম। আমাদের দেশে যেসব গবাদিপশু আছে সেগুলো থেকে দুগ্ধ, চামড়া ও মাংসের ঘাটতি রয়েছে। প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ দুধের ঘাটতি বিদেশ থেকে পূরণ করা হয়। তাই দেশে ব্যাপকভাবে বাণিজ্যিক ডেইরি খামার প্রয়োজন।
উক্ত কারণে হাসেম মিয়া তার দেশি জাতের গাভীর সাথে। উন্নত জাতের ষাঁড়ের প্রজনন করিয়ে উন্নত সংকর জাতের গরু পেয়েছেন। তিনি কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে দেশি গরুর জাত উন্নয়ন করেছেন। তিনি কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে অল্প সময়ের মধ্যে দেশি অনুন্নত গবাদিপশুর জাতের উন্নয়ন করেছেন। তার উক্ত কার্যক্রমে একদিকে দেশের দুধ ও মাংসের ঘাটতি পূরণ হবে অন্যদিকে তিনি স্বাবলম্বী হবেন। তাই আমাদের মতো অর্থনৈতিক দিক থেকে পশ্চাৎপদ কৃষিনির্ভর দেশে একটি ত্বরিৎ আর্থসামাজিক উন্নয়নে হাসেম মিয়ার কার্যক্রমের ভূমিকা অত্যন্ত সুদূরপ্রসারী ও লাগসই।

৩. মি. রহমত তার জমিতে প্রচুর পরিমাণে ইউরিয়া সার, সেচ ও কীটনাশক প্রয়োগের মাধ্যমে ব্রি-ধান ২৮ জাতের ধান উৎপাদন করেন। এতে তার সংলগ্ন জমির তুলনায় ফলন বেশি হয়। কিন্তু পাশের গ্রামের সুমন তার জমিতে অ্যাজোলা চাষ করে মাটিতে মিশিয়ে ব্রি ধান-২৮ জাতের ধানের চাষ করেন। তার জমির দশ মিটারের মধ্যে অন্য কোনো জাতের ধান চাষ করেন। সে রোগিংসহ সকল পরিচর্যা করেন। এতে তার উৎপাদন খরচ অনেকটা কমে গেল।
ক. রাইজোবিয়াম কী?
খ. ব্রীজশোধন করা হয় কেন? ব্যাখ্যা কর।
গ. সুমনের জমিতে উৎপাদন খরচ কমে যাওয়ার কারণ ব্যাখ্যা কর।
ঘ. বীজ উৎপাদনের ক্ষেত্রে কৃষকের উৎপাদন কৌশল বেশি গ্রহণযোগ্য- যুক্তি দিয়ে বিচার কর।

৩ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. রাইজোবিয়াম হলো এক প্রকারের ব্যাকটেরিয়া যা শিম জাতীয় উদ্ভিদের মূলে নডিউল সৃষ্টি করে।

খ. বীজশোধন করার কারণ হলো-
i. বীজকে রোগজীবাণু মুক্ত রাখা।
ii. বীজবাহিত রোগ থেকে চারা সুস্থ রাখা।
iii. পোকামাকড় থেকে বীজ রক্ষা করা।
iv. সর্বোপরি ফসলের গুণগত মান ও ফলন বৃদ্ধি করা।

গ. সুমনের জমিতে উৎপাদন খরচ কমে যাওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করা হলো-
সুমন তার জমিতে অ্যাজোলা চাষ করেছিলেন। অ্যাজোলা উন্নতমানের জৈব সার। অ্যাজোলা মাটিতে অণুজীবের সংখ্যা বৃদ্ধি করে মাটির উর্বরতা বাড়ায় ফলে ফসলের উৎপাদন খরচ কমে যায়। অ্যাজোলা পরপর ২/৩ বার উৎপাদন করে জমিতে মেশাতে পারলে ইউরিয়া ছাড়াই ভালো ফলন পাওয়া যায়। ফলে সারের খরচ কমে যায়।
সুমন তার ধানের জমিতে রোগিংসহ সকল পরিচর্যা করেন। রোগিং করার ফলে ফসলের জমি থেকে আগাছা দূর হয়।। ফলে ফসলের প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান সঠিকভাবে পায়। এছাড়া বিভিন্ন রোগবালাই থেকে ফসল রক্ষা পায় এবং কীটপতঙ্গের আক্রমণ কম হয়। তাই কীটনাশক প্রয়োগ করার প্রয়োজন পড়ে না। এসব কারণেই সুমনের জমিতে উৎপাদন খরচ কমে গিয়েছিল।

ঘ. বীজ উৎপাদনের ক্ষেত্রে কৃষক সুমনের উৎপাদন কৌশল বেশি গ্রহণযোগ্য। নিচে এর সপক্ষে যুক্তি দেওয়া হলো উন্নত মানের বীজ পেতে হলে যথাযথ নিয়ম ও পদ্ধতি অনুসরণ করে বীজ উৎপাদন করতে হয়। মানসম্মত বিশুদ্ধ বীজ উৎপাদনে সাধারণ চাষাবাদ ব্যবস্থাপনার চেয়ে অনেক বেশি সতর্কতা, কৌশল অবলম্বন, পরিচর্যা ইত্যাদি করতে হয়। বীজ উৎপাদন কৌশলের মধ্যে বিশেষত স্বতন্ত্রীকরণ দূরত্ব বজায় রাখা ও রোগিং-এ দুটি কাজ অবশ্যই সতর্কতার সাথে সময়মতো করতে হয়। এ দুটি ব্যবস্থা ঠিকমতো পালন করলে বীজের মৌলিক বিশুদ্ধতা বজায় রাখা অনেকটা সম্ভব। মানসম্মত বীজ উৎপাদনে সাধারণত কিছু কৌশল অবলম্বন করতে হয়। যথা- উপযুক্ত স্থান নির্বাচন, বীজ ফসলের পৃথকীকরণ দূরত্ব, জমি তৈরিকরণ, বীজ শোধন, বীজ বপন সময়, সার প্রয়োগ, সেচ প্রদান, আগাছা দমন, রোগিং, বীজ সংগ্রহ ইত্যাদি। উদ্দীপকে কৃষক সুমন তার জমিতে অ্যাজোলা চাষ করে মাটিতে মিশিয়েছিলেন ফলে তার জমির উর্বরতা বৃদ্ধি পেয়েছিল। তার জমির ১০ মিটারের মধ্যে অন্য জাতের ধান চাষ হয়নি ফলে তার ধান বীজে অন্যজাতের মিশ্রণ ঘটবে না। কৃষক সুমন তার ধান বীজ উৎপাদনের সময় রোগিংসহ সব পরিচর্যা করেন, যা মানসম্মত বীজ উৎপাদনে অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কৃষক সুমন রাসায়নিক সার, কীটনাশক ইত্যাদি ব্যবহার না করে অ্যাজোলা সার, রোগিং, পৃথকীকরণ দূরত্ব বজায় রাখা ইত্যাদি কৌশল মেনে চলেছেন ফলে তার উৎপাদিত বীজের মান ও গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। অতএব বীজ উৎপাদনে সুমনের উৎপাদন কৌশল বেশি গ্রহণযোগ্য।

৪. মি. আলম একজন এইচএসসি পাস ভূমিহীন বেকার যুবক। পুষ্টি চাহিদা পূরণ এবং অর্থনৈতিক লাভের জন্য তিনি মাশরুম চাষের উপর প্রশিক্ষণ নেন। প্রশিক্ষণে মাশরুম উৎপাদন কৌশল শেখার পাশাপাশি ভালোমানের স্পন সংগ্রহ এবং উৎপাদনকালীন চাষ ঘরের পরিচর্যার গুরুত্ব সম্পর্কে তিনি অবহিত হন। পরবর্তীতে তিনি তার বাড়িতে মাশরুম চাষের উদ্দেশ্যে একটি ঘর তৈরি করেন এবং মাশরুম চাষ করে সচ্ছলতা ফিরিয়ে আনেন।
ক. কৃত্রিম প্রজনন কী?
খ. 'মধু সর্বরোগের মহৌষধ' - ব্যাখ্যা কর।
গ. মি. আলম মাশরুম চাষের জন্য যেসব পরিচর্যা করেছে- তা ব্যাখ্যা কর।
ঘ. বর্তমান প্রেক্ষাপটে মি. আলমের সিদ্ধান্ত কতটুকু সঠিক? উদ্দীপকের আলোকে বিশ্লেষণ কর।

৪ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. কৃত্রিম উপায়ে ষাঁড় থেকে বীর্য বা সিমেন বা শুক্রাণু সংগ্রহ করে নির্দিষ্ট মাত্রায় সেই বীর্য গরম হওয়া গাভীর জরায়ুতে প্রবেশ করিয়ে গর্ভবতী করার পদ্ধতিকে কৃত্রিম প্রজনন বলে।

খ. মধুতে উপস্থিত রিবোফ্লাভিন ও নিকোটিনিক এসিড দেহের সুস্থতা ও সজীবতা রক্ষা করে রোগের প্রতিষেধক হিসেবে কাজ করে। মধুর খাদ্যপ্রাণ মানুষের বেরিবেরি, পেলেগ্রা প্রভৃতি মারাত্মক রোগ প্রতিরোধ করতে সক্ষম। শ্বাসকষ্ট, রক্ত পরিশোধক, ঠান্ডা সর্দি-কাশি প্রতিরোধ, জ্বর নিরাময়ে, ক্ষত, চক্ষু রোগ, জিহবার ঘা, গলার ঘা এবং আগুনে পোড়া ঘা দূর করার জন্য মধু ব্যবহৃত হয়। বুক ও পেটের ব্যথা উপশমে মধু উপকারী। প্রায় সব ধরনের রোগ প্রতিরোধে সক্ষম বলে মধুকে সর্বরোগের মহৌষধ অভিহিত করা হয়।

গ. মি. আলম মাশরুম চাষের জন্য যেসব পরিচর্যা করেছে তা নিচে ব্যাখ্যা করা হলো-
i. মাশরুম বেডে বীজ বপনের পর থেকে গজানোর আগ পর্যন্ত তাপমাত্রা ৩৫-৪৫ক্ক সেলসিয়াসের মধ্যে রাখা দরকার এবং মাশরুম গজাতে শুরু করলে তাপমাত্রা ৩০-৩৫° সে.-এর মধ্যে রাখতে হবে।
ii. পলিথিন দ্বারা ভালোভাবে ঢেকে তাপ বাড়ানো এবং খুলে দিয়ে তাপ কমানো যায়। কাজেই অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে তাপ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।

iii. মাশরুম বেডকে পোকামাকড় ও জীবজন্তুর উপদ্রব থেকে রক্ষা করতে হবে। মাশরুমে মাছির প্রকোপ দেখা দিতে পারে। এজন্য ম্যালাথিয়ন (০.১%) স্প্রে করা যেতে পারে। এ ছাড়া ফরমালডিহাইড (৪%) তুলা ভিজিয়ে সানস্ট্রেটে ঘষে দিলে সবুজ বাদামি বা নীল মোল্ড দূর হবে।
iv. মাশরুম বেড সবসময় ভেজা থাকা দরকার। বেডের উপরিভাগ শুকিয়ে গেলে মাঝে মধ্যে হালকাভাবে পানি ছিটিয়ে আর্দ্রতা নিয়ন্ত্রণ করতে হয়।

ঘ. বর্তমান প্রেক্ষাপটে মি. আলমের সিদ্ধান্ত নিচে বিশ্লেষণ করা হলো-
i. বাংলাদেশের আবহাওয়া উপযোগী মাশরুম চাষ সম্প্রসারণের মাধ্যমে এক একর জমির উৎপাদনকে বাড়িয়ে প্রায় ১০ গুণ আমিষ উৎপাদন সম্ভব। এক হিসাবে দেখা গেছে, দানা শস্য বছরে প্রতি হেক্টর ৩-৬ টন উৎপাদন হয়, সেখানে মাশরুম বছরে প্রতি হেক্টরে ২০০ টন উৎপাদন করা সম্ভব।
ii. মাশুরুমের উৎপাদন খরচ প্রতি কেজিতে ৪০ টাকা এবং বিক্রয় মূল্য প্রতি ২০০ টাকা। লাভ হয় প্রতি কেজিতে ১৬০ টাকা। উদ্যান ও মাঠ ফসলে উৎপাদন খরচ বেশি বিক্রির দাম কম। মাশরুমের উৎপাদনের খরচ কম লাভ বেশি।
iii. বিদেশে মাশরুমের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। আমাদের দেশে উৎপাদিত মাশরুম বিদেশে রফতানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন সম্ভব।
iv. মাশরুম চাষ শুরুর মাত্র ১০-১৫ দিনে মাশরুম খাবার উপযোগী হয়। তাই পুঁজি তাড়াতাড়ি ফেরত আসে।
v. মাশরুম চাষে আবাদি জমি প্রয়োজন হয় না। চাষের উপকরণ সহজলভ্য। বেকার যুবক-যুবতী এবং মহিলারা ঘরে বসেই মাশরুমের চাষ করতে পারেন। তাই মহিলা ও বেকার যুবক-যুবতীদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়।
vi. এটা চাষে আবাদি জমির প্রয়োজন হয় না। ঘরে বসেই মাশরুমের চাষ করা যায়। ফলে ভূমিহীন কৃষক মাশরুম চাষের সঙ্গে অনায়াসে সম্পৃক্ত হতে পারেন।
vii. মাশরুম চাষে ঝুঁকি কম। কারণ প্রাকৃতিক দুর্যোগ, রোগবালাই দ্বারা ক্ষতির সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।
viii. এটা চাষে শ্রমিক কম লাগে এবং উৎপাদন খরচও কম। উপরোক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, বর্তমান প্রেক্ষাপটে মি. আলমের সিদ্ধান্তটি সঠিক।

৫. জমির আলী একজন আদর্শ কৃষক। এ বছর গম চাষ করতে গিয়ে জমিতে লক্ষ করলেন যে, গমের মতো দেখতে অন্য জাতের ফসল জমিতে আছে। জমিতে ফসল থাকা অবস্থায় তিনি এর যথাযথ ব্যবস্থা নিয়েছিলেন।
ক. হাম পুলিং কী?
খ. বিশুদ্ধ বীজ উৎপাদন করা হয় কেন?
গ. জমির আলীর পর্যবেক্ষণকৃত বিষয়টি কীভাবে করা যায়? বর্ণনা কর।
ঘ. জমির আলীর জমিতে উপযুক্ত বিষয়টির গুরুত্ব বিশ্লেষণ কর।

৫ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. মাটির উপরে আলুগাছের সম্পূর্ণ অংশকে উপরে ফেলাকে হাম পুলিং বলে।

খ. ফসলের ফলন বৃদ্ধির জন্য বীজের জাত বিশুদ্ধতার গুরুত্ব অপরিসীম। কারণ ভালো বীজ থেকে ভালো ফলন পাওয়া যায়। বিশুদ্ধ বীজ উৎপাদনের মাধ্যমে প্রজাতি ও জাতের বংশধারা রক্ষা করা যায়। তাছাড়া ভালো বীজ বেশি দামে বিক্রি করে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়া যায়। এজন্য বিশুদ্ধ বীজ উৎপাদন করা হয়।

গ. উদ্দীপকে জমির আলী গমের ক্ষেতে অন্য জাতের ফসল দেখে তা রোগিং করে গম উৎপাদন করেছিলেন। নিচে তা বর্ণনা করা হলো-
বীজ ফসলের জমি থেকে নির্বাচিত ফসলের জাত ছাড়া অন্যজাতের ফসলের গাছ অর্থাৎ একই ফসলের অন্য জাতের গাছ জমি থেকে সরিয়ে ফেলাকে রোগিং বলে।
রোগিং প্রক্রিয়া ৩টি পর্যায়ে করা যায়। যথা-
i. শারীরিক বৃদ্ধি পর্যায়ে: বীজের কৌলিক বিশুদ্ধতা রক্ষার জন্য শারীরিক বৃদ্ধি পর্যায়ে প্রথম রোগিং করা দরকার। কারণ অন্য জাতের সাথে পরপরাগায়ন করে নির্বাচিত জাতের বংশগতি বিশুদ্ধতা নষ্ট হতে পারে। এ সময় নির্বাচিত জাতের গাছের সাথে উচ্চতায়, পাতার আকার ও গঠনে এবং অন্য কোনো বৈশিষ্ট্য পার্থক্য দেখা গেলেই তা মাঠ থেকে তুলে ফেলতে হবে। রোগাক্রান্ত, পোকাক্রান্ত গাছ তুলে ধ্বংস করতে হবে।
ii. ফুলোৎপাদন পর্যায়: প্রথম রোগিং-এর সময় কোনো অনাকাঙি্ক্ষত গাছ চিনতে না পারলে ফুল আসার সময় দ্বিতীয় পর্যায়ে সেগুলোকে খুব সাবধানে তুলে ফেলতে হবে। ফুল আসে নাই এমন সরিষা গাছ তুলে ফেলতে হবে। এ সময় অনাকাঙি্ক্ষত গাছের পরাগরেণু বাতাসে ছড়িয়ে গিয়ে নির্বাচিত জাতের বিশুদ্ধতা নষ্ট করতে পারে। ফুলের পাপড়ি, রং, আকার ইত্যাদি দেখেও গাছ তুলে ফেলতে হবে।
iii. পরিপক্ব পর্যায়ে: তৃতীয় ও সর্বশেষ পর্যায়ে ফসল পরিপক্ব হওয়ার কিছু আগে রোগিং করা দরকার। এ সময় নির্বাচিত জাতের গাছের সাথে মিল নেই এমন সব গাছ তুলে ফেলতে হবে। ফসলের ছড়ার মধ্যে কোনো পার্থক্য দেখা গেলে তাও তুলে ফেলতে হবে।

ঘ. উদ্দীপকে জমির আলী জমিতে অন্য জাতের ফসল পর্যবেক্ষণ করে এর যথাযথ ব্যবস্থা নিয়েছিলেন অর্থাৎ রোগিং করেছিলেন। নিচে রোগিং-এর গুরুত্ব বিশ্লেষণ করা হলো-
i. একই ফসলের অন্য জাত জমি থেকে অপসারণ করা হয় বলে বীজের জাত বিশুদ্ধতা রক্ষা পায়।
ii. উন্নত গুণসম্পন্ন বীজ উৎপাদনের জন্য বীজ ফসলের জমিতে রোগিং করা আবশ্যক।
iii. জমি থেকে অনাকাঙি্ক্ষত গাছ তুলে ফেললে নির্বাচিত গাছের জন্য পুষ্টি উপাদান গ্রহণ এবং আলো-বাতাসের ব্যবস্থা ভালো হয়।
iv. রোগিং-এর মাধ্যমে জমি থেকে পোকা ও রোগাক্রান্ত এবং অস্বাভাবিক উদ্ভিদ অপসারণ করা হয় ফলে সুস্থ, সবল ও রোগমুক্ত বীজ পাওয়া যায়।
v.প্রজাতির বংশ রক্ষা করা যায়।
vi. ভেজালমুক্ত বীজ ও খাদ্য পাওয়া যায় এবং বাজারে বীজের ও খাদ্যের দাম বেশি পাওয়া যায়। উপরের আলোচনা থেকে দেখা যায়, বীজ উৎপাদনে রোগিং এর গুরুত্ব অপরিসীম। ভালো বীজ উৎপাদন করে বেশি ফসল পেতে কৃষকদের বীজ উৎপাদনে অবশ্যই রোগিং করতে হবে।

৬. শহীদ আলী একজন দরিদ্র কৃষক। তার জমিতে ফসলের উৎপাদন ভালো হয় না। অন্যদিকে তার পাশের জমির মালিক জমির মিয়ার জমিতে ফসলের উৎপাদন ভালো হয়। শহীদ আলী জমির মিয়ার কাছে তার ভালো ফসল উৎপাদনের কারণ জানতে চাইলে জমির মিয়া তকে অণুজীব সার ব্যবহার করতে বলেন। তিনি আরও বলেন এটি হলো 'এক প্রযুক্তির দুই লাভ, মাটির শক্তি ছত্রাক সাফ।'
ক. বায়োফানজিসাইড কী?
খ. ট্রাইকোডার্মাকে ডক্টরস ফাংগাস বলা হয় কেন?
গ. শহীদ আলীর জমিতে ফসল ভালো না হওয়ার কারণ বর্ণনা কর।
ঘ. জমির মিয়ার শেষের উক্তিটি শহীদ আলীর কতটা উপকারে আসবে বলে তুমি মনে কর তা বিশ্লেষণ কর।

১ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. বায়োফানজিসাইড প্রকৃতি থেকে আহরিত এক ধরনের উপকারী ছত্রাক, যা কৃষিজ উচ্ছিষ্টের উপর সহজে জন্মানো যায়।

খ. ট্রাইকোডার্মা কঠিন বস্তু, যেমন- কাঠের গুঁড়া, গাছের শক্ত অংশ ইত্যাদির বিয়োজনে অন্যান্য অণুজীব বা ছত্রাকের চেয়ে বেশি পারদর্শী। এছাড়াও ট্রাইকোডার্মা মাটিতে অবস্থানকারী রোগজীবাণু খেয়ে পরিবেশকে সুস্থ রাখে। এসব কারণেই ট্রাইকোডার্মাকে ডক্টরস ফাংগাস বলা হয়।

গ. শহীদ আলীর জমিতে ফসল ভালো না হওয়ার কারণ নিচে বর্ণনা করা হলো-
শহীদ আলী তার জমিতে অণুজীব সার ব্যবহার করেনি। অন্যদিকে তিনি দরিদ্র তাই পর্যাপ্ত রাসায়নিক সারও দিতে পারেনি। অণুজীব সারের মধ্যে অণুজীব জীবন্ত থাকে। সারের মাধ্যমে জীবন্ত অণুজীব জমিতে দিলে বংশ বৃদ্ধি করে এবং বাতাস থেকে নাইট্রোজেন আহরণ করে গাছে ও মাটিতে সংযোজক করে মাটির উর্বরতা বাড়ায়। অণুজীব সার পরিমাণে কম লাগে, দাম কম এবং প্রতি ফসলে প্রয়োগ করতে হয় না। অনুজীব সার ফলন বাড়ায় মসুরে ১৫-৪০% ছোলাতে ২০-৪৫% মুগে ১৮-৩৫%, সয়াবিনে ২০-২৫% ইত্যাদি। উদ্দীপকে শহীদ আলী অণুজীব সার ব্যবহার না করে রাসায়নিক সার ব্যবহার করেছেন ফলে মাটির উর্বরতা কমে গেছে, ফসল উৎপাদন কমে গেছে। অন্যদিকে ফসলের রোগ পোকার আক্রমণেও ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। এজন্যই শহীদ আলীর জমিতে ফসল উৎপাদন ভালো হয়নি।

ঘ. জমির মিয়ার শেষের উক্তিটি হলো 'এক প্রযুক্তির দুই লাভ, মাটির শক্তি ছত্রাক সাফ।' উক্তিটি শহীদ আলীর উপকারে আসবে বলে আমি মনে করি। নিচে তা বিশ্লেষণ করা হলো-
শহীদ আলী একজন দরিদ্র কৃষক এবং তার জমিতে ফসল ভালো হয় না এজন্য জমির মিয়া তাকে অণুজীব সার ব্যবহারের পরামর্শ দিলেন। কারণ অণুজীব সার মাটির উর্বরতা বাড়ায়, ফসলের ফলন বাড়ায়। অন্যদিকে রাসায়নিক সার মাটির উর্বরতা কমায়, দাম বেশি, পরিমাণেও বেশি লাগে, যা শহীদ আলীর জন্য উপযোগী নয়। অণুজীব সার ব্যবহার শহীদ মিয়ার জন্য উপযোগী, কারণ অণুজীব সার পরিমাণে কম লাগে, অপচয় হয় না, দাম কম এবং প্রতি ফসলে প্রয়োগ করতে হয় না। সার্বিকভাবে ফসলের উৎপাদন খরচ কমায়। এছাড়াও অণুজীব সার মাটিবাহিত রোগ দমনে কার্যকর। মাটিতে বসবাসকারী ফসলের বিভিন্ন প্রকার ক্ষতিকর জীবাণু যেমন- ছত্রাক, ব্যাকটেরিয়া ইত্যাদি ধ্বংস করে। ফলে আলাদা করে পেস্টিসাইড ব্যবহার হয় না। এজন্যই অণুজীব সার সম্পর্কে বলা হয়- 'এক প্রযুক্তির দুই লাভ, মাটির শক্তি ছত্রাক সাফ।'

HSC কৃষিশিক্ষা ১ম পত্র (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর অধ্যায় ৩ pdf download

৭. কামরান সাহেব এ বছর তার ৪০ শতক জমিতে পাট চাষ করেছেন। সঠিক পদ্ধতি অবলম্বন করে তিনি পাটের রিবন রেটিং করলেন। কিন্তু এ বছর খরা থাকার পরও তিনি পাটের ভালো ফলন পেলেন।
ক. রিবন রেটিং কী?
খ. রিবন রেটিং পদ্ধতি কেন উদ্ভাবন করা হয়েছে?
গ. কামরান সাহেবের কর্মকান্ড বর্ণনা কর।
ঘ. খরা থাকার পরও কেন কামরান সাহেব ভালো ফলন পেলেন বলে তুমি মনে কর?

৭ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. পাটগাছ কাটার পর কাঁচা অবস্থায় গাছ থেকে ছাল ফিতার মতো পৃথক করে পরে ছাল পচানোর ব্যবস্থা করাকে রিবন রেটিং বলে।

খ. পাট ভালোভাবে পচাতে হলে পর্যাপ্ত মিষ্টি পানির প্রয়োজন।
তাছাড়া মৃদু স্রোতযুক্ত স্থান হলে আঁশের রং ও মান দুটিই ভালো হয়। বাংলাদেশের অভ্যন্তরে পানির প্রবাহ ও উৎস কমে গেছে। তাই পাটের আঁশের মান ঠিক রাখাসহ কতকগুলো বিষয় বিবেচনা করে রিবন রেটিং পদ্ধতি উদ্ভাবিত হয়েছে।

গ. কামরান সাহেব এ বছর তার ৪০ শতক জমিতে পাট চাষ করেছিলেন। আঁশের জন্য পাট চাষ করা হয় বলে পাট উৎপাদনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হলো পাটের রিবন রেটিং। তিনি ১০০-১১০ দিন বয়সের পাট কেটে ফেলেছিলেন। সে সময় প্রায় ৫০% গাছে কুঁড়ি দেখা গিয়েছিল। এরপর তিনি কাটা পাটের পাতার অংশ ৭২ ঘণ্টার জন্য ঢেকে রেখে দিয়েছিলেন যেন পাতা ঝরে পরে। অতঃপর তিনি পাটের গোড়ার ৩-৪ ইঞ্চি পরিমাণ মুগুর দিয়ে থেঁতলে দিয়েছিলেন। তিনি পাটের ছাল ছাড়ানোর জন্যঁ আকৃতির রিবনার ব্যবহার করেছিলেন। এরপর তিনি পাটের ছাল পচানোর জন্য প্রতি বিঘা হিসেবে ৬ মিটার দৈর্ঘ্য, ২ মিটার প্রস্থ ও ১ মিটার গভীর ১টি করে গর্ত খনন করে পলিথিন দিয়ে গর্তের তল ও কিনারা মুড়িয়ে দিয়েছিলেন। এরপর গর্তে প্রয়োজনমতো পানি দিয়ে আঁটি বাঁধা ছালগুলোকে ১২-১৫ দিনের জন্য পচিয়েছিলেন। পচনক্রিয়া ত্বরান্বিত করতে তিনি প্রতি ১০০০ কেজি ছালের জন্য ১০০ গ্রাম ইউরিয়া সার পানিতে মিশিয়েছিলেন। এরপর পচনকৃত ছাল পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে বাঁশের আড়ায় সেগুলোকে শুকিয়েছিলেন। এভাবেই কামরান সাহেব তার উৎপাদিত পাটের রিবন রেটিং করেছিলেন।

ঘ. খরা থাকার পরও কামরান সাহেব পাটের ভালো ফলন পাওয়ার কারণ আমার মতামত দ্বারা বিশ্লেষণ করা হলো-
সাধারণত দেখা যায় যে, পাট উৎপাদনকারী যেসব এলাকায় পচন পানির যথেষ্ট অভাব রয়েছে সেসব এলাকায় উৎপাদিত পাটের আঁশ অত্যন্ত নিম্নমানের হয়ে থাকে। এর ফলে উক্ত এলাকার চাষিরা পাট ভালো মূল্যে বিক্রি করতে পারেন না। এবং পাট চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন। এ সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট দীর্ঘদিন গবেষণা করে জলাভাবসম্পন্ন এলাকার জন্য বিকল্প পাট পচন পদ্ধতি আবিষ্কার করেছে, যা রিবন রেটিং নামে পরিচিত। কিন্তু অনেক কৃষকই এ পদ্ধতি সম্পর্কে জানেন না। কামরান সাহেব এ পদ্ধতিটি জানতেন এবং খরা হওয়ার কারণে তিনি এ পদ্ধতি সঠিকভাবে ব্যবহার করে পাটের আঁশ সংগ্রহ করেছিলেন। পাট পচানোর রিবন রেটিং পদ্ধতি ব্যবহারের কারণেই খরা থাকার পরও তিনি ভালো ফলন পেয়েছেন বলে আমি মনে করি।

৮. মি. রিপন একজন দরিদ্র কৃষক। তার নিজস্ব কোনো জমি নেই। তিনি তার পরিবার নিয়ে অত্যন্ত কষ্টে জীবনযাপন করতেন। এমতাবস্থায় তার পাশে এসে দাঁড়াল গ্রামীণ যুব উন্নয়ন সংস্থা। এই সংস্থা থেকে তাকে জমি বর্গা দেওয়া হলো এবং রেশম চাষের পরামর্শ দিল। এ উদ্দেশ্য তিনি জমিতে তুঁতগাছ রোপণ করলেন।
ক. রেশম কী?
খ. রেশম গুটি অবস্থায় রোদে শুকানো উচিত নয় কেন?
গ. উক্ত গাছ রোপণে মি. রিপনের কর্মকান্ড বর্ণনা কর।
ঘ. মি. রিপনের দারিদ্র্য নিরসনে গ্রামীণ যুব উন্নয়ন সংস্থার পরামর্শটির যৌক্তিকতা মূল্যায়ন কর।

৮ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. রেশম পোকার মুখ নিঃসৃত নালাই হচ্ছে রেশম।

খ.রেশম গুটি অবস্থায় কখনো গাদা বা রোদে শুকিয়ে সংরক্ষণ, করা উচিত নয়। কারণ তাতে সুতা নরম হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে এবং গুণগত মান কমে যেতে পারে।

গ. মি.রিপন একজন দরিদ্র কৃষক। তার নিজস্ব কোনো জমি না থাকায় গ্রামীণ যুব উন্নয়ন সংস্থা থেকে তাকে জমি বর্গা দিলেন এবং রেশম চাষের পরামর্শ দিলেন। এ উদ্দেশ্যে তিনি জমিতে তুঁতগাছ রোপণ শুরু করলেন। প্রথমে তিনি জমি ৩-৪ বার চাষ দিয়ে মাটি গুঁড়া করে নিলেন। তারপর জমিতে প্রতিসারিতে দুই লাইন করে ৪৫-৬০ সে.মি. দূরত্বে ৪৫ সে.মি. × ৪৫ সে.মি. × ৪৫ সে.মি. আকারে গর্ত করেন এবং প্রতি গর্তে ৫ কেজি গোবর সার ও ১৫০ গ্রাম টিএসপি সার মিশিয়ে দিলেন। চারা লাগানোর ১০-১২ দিন পূর্বে তিনি এ কাজ করলেন। তিনি তুঁতগাছ সংগ্রহ করে কাটিং করে চারা। তৈরি করে প্রতি গর্তে রোপণ করেছিলেন। চারা রোপণের সময় প্রতিগর্তে ২৩০ গ্রাম ইউরিয়া ও ১০০ গ্রাম এমওপি সার মিশিয়ে দিয়েছিলেন। এছাড়া চারা রোপণের পর পানি দিয়ে ভিজিয়ে দিলেন। এতে চারা তাড়াতাড়ি মাটির সাথে লেগে যায়। এভাবে ডাল লাগানোর ৬-৭ মাসের মধ্যেই নতুন গাছগুলো প্রথম পাতা তোলার জন্য উপযুক্ত হয়। এতে পর্যাপ্ত পাতা ও ডালপালা বের হলে মাটি ও আগাছা পরিষ্কার করে দিলেন এবং বিভিন্ন সময়ে তুঁত পাতা ছাঁটাই করে তুঁতপাতা সংগ্রহ করলেন।

ঘ. মি. রিপনের দারিদ্র্য নিরসনে গ্রামীণ যুব উন্নয়ন সংস্থার রেশম চাষের পরামর্শটি অত্যন্ত ফলপ্রসূ হবে। যেসব কারণে সিদ্ধান্তটি ফলপ্রসূ হবে তা নিচে মূল্যায়ন করা হলো-
বাংলাদেশের রেশম বস্ত্র আজ আন্তর্জাতিক বাজারে যথেষ্ট খ্যাতি অর্জন করেছে। এ খ্যাতির মূলে রয়েছে বাংলাদেশি রেশমের উৎকর্ষ, ঔজ্জ্বল্য ও স্থায়িত্ব। এদেশের প্রায় ৫০ হাজার লোকের কর্মসংস্থান প্রত্যক্ষভাবে রেশম চাষের উপর নির্ভরশীল। কেননা যেকোনো ফসলের চেয়ে রেশম চাষে লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। এটি চাষে বারবার জমি চাষ, আগাছা দমন, সেচ ও রোগ ব্যবস্থাপনার প্রয়োজন হয় না। একবার রোপণের ফলে ২০-২৫ বছর পর্যন্ত পাতা সংগ্রহ করা যায়। বাড়ির আনাচে-কানাচে পতিত জমি, জমির আইল, রাস্তা ও বাঁধের পাশে তুঁতগাছ চাষ করা যায়। রেশম চাষে ঘরে বাইরে দুই জায়গাতেই কাজের সুযোগ সৃষ্টি হয়। বিশেষ কোনো যন্ত্রপাতি ছাড়াই গ্রামীণ পরিবেশে সাধারণ পদ্ধতিতে চাষ করা যায়। রেশমের গুটি থেকে অভ্যন্ত উন্নতমানের সুতা তৈরি হয়, যা দ্বারা রফতানিযোগ্য কাপড় তৈরি হয়। ফলে বৈদেশিক মুদ্রা আয় হয়। এছাড়া রেশম চাষে বিঘাপ্রতি বছরে ৩০-৩২ হাজার টাকা আয় করা সম্ভব। এর লার্ভা মাছ, হাঁস, মুরগির খাদ্য হিসেবে বিক্রি করা যায়। স্বল্প পুঁজি ও সহজ উপায়ে রেশম উৎপাদনের মাধ্যমে বেকার যুবক-যুবতী, নারী-পুরুষ, দুস্থ মহিলা, ভূমিহীন নারী পুরুষ সবাই ঘরে বসে উপার্জন করতে পারে। ফলে দেশের জনগণের কর্মসংস্থানের পাশাপাশি আত্মকর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়। উক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়, গ্রামীণ যুব উন্নয়ন সংখ্যার রেশম চাষের পরামর্শটি মি. রিপনের দারিদ্র্যতা নিরসনে উপযুক্ত ভূমিকা পালন করবে।

৯. মি. খোকন তার জমিতে প্রচুর পরিমাণে ইউরিয়া সার, সেচ ও কীটনাশক প্রয়োগের মাধ্যমে ব্রি-ধান ২৮ জাতের ধান উৎপাদন করেন। এতে তার সংলগ্ন জমির তুলনায় ফলন বেশি হয়। কিন্তু পাশের গ্রামের রোকন তার জমিতে অ্যাজোলা চাষ করে মাটিতে মিশিয়ে ব্রি ধান-২৮ জাতের ধানের চাষ করেন। তার জমির দশ মিটারের মধ্যে অন্য কোনো জাতের ধান চাষ করেন। তিনি রোগিংসহ সকল পরিচর্যা করেন। এতে তার উৎপাদন খরচ অনেকটা কমে গেল।
ক. রিবন রেটিং কী?
খ. বীজশোধন করা হয় কেন? ব্যাখ্যা কর।
গ. রোকনের জমিতে উৎপাদন খরচ কমে যাওয়ার কারণ ব্যাখ্যা কর।
ঘ. বীজ উৎপাদনের ক্ষেত্রে কার উৎপাদন কৌশল বেশি গ্রহণযোগ্য- যুক্তি দিয়ে বিচার কর।

৯ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. পাটগাছ কাটার পর কাঁচা অবস্থায় গাছ থেকে ছাল ফিতার মতো পৃথক করে পরে ছাল পচানোর ব্যবস্থা করাকে রিবন রেটিং বলে।

খ. বীজশোধন করার কারণ হলো-
i. বীজকে রোগজীবাণু মুক্ত রাখা।
ii. বীজবাহিত রোগ থেকে চারা সুস্থ রাখা।
iii. পোকামাকড় থেকে বীজ রক্ষা করা।
iv. সর্বোপরি ফসলের গুণগত মান ও ফলন বৃদ্ধি করা।

গ. রোকনের জমিতে উৎপাদন খরচ কমে যাওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করা হলো-
রোকন তার জমিতে অ্যাজোলা চাষ করেছিলেন। অ্যাজোলা উন্নতমানের জৈব সার। অ্যাজোলা মাটিতে অণুজীবের সংখ্যা বৃদ্ধি করে মাটির উর্বরতা বাড়ায় ফলে ফসলের উৎপাদন খরচ কমে যায়। অ্যাজোলা পরপর ২/৩ বার উৎপাদন করে জমিতে মেশাতে পারলে ইউরিয়া ছাড়াই ভালো ফলন পাওয়া যায়। ফলে সারের খরচ কমে যায়।
রোকন তার ধানের জমিতে রোগিংসহ সকল পরিচর্যা করেন। রোগিং করার ফলে ফসলের জমি থেকে আগাছা দূর হয়। ফলে ফসলের প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান সঠিকভাবে পায়। এছাড়া বিভিন্ন রোগ বালাই থেকে ফসল রক্ষা পায় এবং কীটপতঙ্গের আক্রমণ কম হয়। তাই কীটনাশক প্রয়োগ করার প্রয়োজন পড়ে না। এসব কারণেই রোকনের জমিতে উৎপাদন খরচ কমে গিয়েছিল।

ঘ. বীজ উৎপাদনের ক্ষেত্রে কৃষক রোকনের উৎপাদন কৌশল বেশি। গ্রহণযোগ্য। নিচে এর সপক্ষে যুক্তি দেওয়া হলো-
উন্নত মানের বীজ পেতে হলে যথাযথ নিয়ম ও পদ্ধতি অনুসরণ করে বীজ উৎপাদন করতে হয়। মানসম্মত বিশুদ্ধ বীজ উৎপাদনে সাধারণ চাষাবাদ ব্যবস্থাপনার চেয়ে অনেক বেশি সতর্কতা, কৌশল অবলম্বন, পরিচর্যা ইত্যাদি করতে হয়। বীজ উৎপাদন কৌশলের মধ্যে বিশেষত স্বতন্ত্রীকরণ দূরত্ব বজায় রাখা ও রোগিং-এ দুটি কাজ অবশ্যই সতর্কতার সাথে সময়মতো করতে হয়। এ দুটি ব্যবস্থা ঠিকমতো পালন করলে বীজের মৌলিক বিশুদ্ধতা বজায় রাখা অনেকটা সম্ভব। মানসম্মত বীজ উৎপাদনে সাধারণত কিছু কৌশল অবলম্বন করতে হয়। যথা- উপযুক্ত স্থান নির্বাচন, বীজ ফসলের পৃথকীকরণ দূরত্ব, জমি তৈরিকরণ, বীজ শোধন, বীজ বপন সময়, সার প্রয়োগ, সেচ প্রদান, আগাছা দমন, রোগিং, বীজ সংগ্রহ ইত্যাদি। উদ্দীপকে কৃষক রোকন তার জমিতে অ্যাজোলা চাষ করে মাটিতে মিশিয়েছিলেন ফলে তার জমির উর্বরতা বৃদ্ধি পেয়েছিল। তার জমির ১০ মিটারের মধ্যে অন্য জাতের ধান চাষ হয়নি ফলে তার ধান বীজে অন্যজাতের মিশ্রণ ঘটবে না। অর্থাৎ তার ধান বীজে জাতের বিশুদ্ধতা বজায় থাকবে। কৃষক রোকন তার ধান বীজ উৎপাদনের সময় রোগিংসহ সব পরিচর্যা করেন যা মানসম্মত বীজ উৎপাদনে অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কৃষক রোকন রাসায়নিক সার, কীটনাশক ইত্যাদি ব্যবহার না করে অ্যাজোলা সার, রোগিং, পৃথকীকরণ দূরত্ব বজায় রাখা ইত্যাদি কৌশল মেনে চলেছেন ফলে তার উৎপাদিত বীজের মান ও গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। অতএব, বীজ উৎপাদনে রোকনের উৎপাদন কৌশল বেশি গ্রহণযোগ্য।

১০. জহির উদ্দিন গরু পালন করেন। তার গরুগুলো রুগ্ণ এবং বেশি দুধ দেয় না। কিন্তু তার প্রতিবেশী করিম মোল্লার গরুগুলো বলিষ্ঠ, কর্মক্ষম ও বেশি দুধ দেয়। জহির উদ্দীন তার গরুগুলোর অবস্থার উন্নতির জন্য করিম মোল্লার কাছে পরামর্শ চাইলে করিম মোল্লা তাকে কৃত্রিম প্রজননের কথা বলেন।
ক. কৃত্রিম প্রজনন কী?
খ. গরুর সিমেন কীভাবে সংরক্ষণ করা যায়, ব্যাখ্যা কর।
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত প্রযুক্তির উদ্দেশ্য বর্ণনা কর।
ঘ. 'কৃত্রিম প্রজনন গরুর জাত উন্নয়নে একটি উত্তম পন্থা' উক্তিটি বিশ্লেষণ কর।

১০ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. যে পদ্ধতিতে গর্ভধারণের উদ্দেশ্যে কৃত্রিমভাবে সংগৃহীত ও প্রক্রিয়াজাতকৃত ষাঁড়ের বীর্য বা সিমেন কৃত্রিমভাবে গাভী বা বকনার জরায়ুতে প্রবেশ করানো হয়, তাকে কৃত্রিম প্রজনন বলে।

খ. ষাঁড় থেকে বীর্য সংগ্রহ করে প্রক্রিয়াকরণ করার পর ৩-৫° সে. তাপমাত্রায় রেফ্রিজারেটরে ২/৩ দিন পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যায়। প্রজননের জন্যে এ সিমেন দূর-দূরান্তে নেওয়ার প্রয়োজন হয়। শুক্রাণু বাইরের গরম আবহাওয়া সহ্য করতে পারে না বলে সহজেই নষ্ট হয়ে যায়। তাই থার্মোফ্লাক্সে বরফ দিয়ে তার মধ্যে সিমেন রেখে পরিবহন করতে হয়। এ অবস্থায় ৩ দিন পর্যন্ত সিমেনের কার্যকারিতা থাকে।

গ. উদ্দীপকে উল্লেখিত প্রযুক্তিটি হলো কৃত্রিম প্রজনন পদ্ধতি। উন্নতজাতের ষাঁড়ের বীর্য সংগ্রহ করে দেশি গাভীকে প্রজনন করানো হলে ষাঁড়ের উন্নত গুণাবলি তার বাচ্চার মধ্যে সঞ্চালিত হয়। এজন্য কৃত্রিম প্রজনন দরকার। নিচে কৃত্রিম প্রজননের উদ্দেশ্য বর্ণনা করা হলো-
i. কম সময়ে গৃহপালিত পশুর জাত উন্নত করা।
ii. কৃষিকাজের জন্যে বলিষ্ঠ ও কর্মক্ষম গরু সৃষ্টি করা।
iii. দুধ ও মাংসের (আমিষ খাদ্য) ঘাটতি পূরণ করা।
iv. গাভীর প্রজনন সংকট ও বিভিন্ন যৌনব্যাধি প্রতিরোধ করা।
v. পছন্দমতো সংকর জাতের বাচ্চা উৎপাদন করা।
vi. আমিষ খাদ্যের উৎপাদন বৃদ্ধি করা।
vii. অধিক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা।

ঘ. কৃত্রিম প্রজনন গরুর জাত উন্নয়নের একটি উত্তম পন্থা-উক্তিটি নিচে বিশ্লেষণ করা হলো-
গরুর জাত উন্নয়নের একাধিক প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। কারণ যেখানে দেশি গাভী দৈনিক ১-২ লিটার দুধ দেয়, তাকে উন্নত পরিবেশ এবং সুষম খাদ্য দিলেও এ উৎপাদন ৩ লিটারের বেশি আশা করা যায় না। কিন্তু দেশি গাভী উন্নত জাতের ষাঁড়ের সঙ্গে সংক্ররায়ণের মাধ্যমে যে বাচ্চা হবে সেটি থেকে ১০-১৫ লিটার দুধ পাওয়া সম্ভব হবে। বাংলাদেশের গবাদিপশু আকারে ছোট, মাংস উৎপাদন ক্ষমতা খুবই কম। একটি প্রাপ্ত বয়স্ক গরুর ওজন গড়ে ১০০ কেজি মাত্র। অথচ উন্নত জাতের ষাঁড়ের সঙ্গে সংকরায়ণের মাধ্যমে যে বাচ্চা হবে সেটি প্রাপ্ত বয়স্ক হলে ওজন হবে ৩০০-৪০০ কেজি। এতে গরুর আকার বড় হবে, মাংস বেশি হবে ও ভালো মানের চামড়াও পাওয়া যাবে। ফসলাদির উৎপাদন মূলত পশুসম্পদের ওপরই নির্ভরশীল। একজোড়া দেশি বলদ বছরে ৩-৪ একর জমি চাষ করতে পারে। অন্যদিকে সংকরায়িত একজোড়া বলদ দ্বারা বছরে ৭-৮ একর জমি চাষ করা সম্ভব। দেশি গবাদিপশুর জাত উন্নয়নের ফলে দুধ, মাংস ও শক্তি উৎপাদন বাড়বে। এতে গ্রামীণ বেকার মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে এবং বেকারত্ব ও দারিদ্র্য বিমোচন হবে। গরু মোটাতাজাকরণে দেশি গরু চেয়ে সংকরায়িত গরুর মাধ্যমে প্রচুর অর্থ আয় করা যায়।
উক্ত আলোচনা পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়, বাংলাদেশে জনসংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধির ফলে দুধ ও মাংসের চাহিদা পূরণ, কৃষিকার্য পরিচালনায় গরুর জাত উন্নয়নের কোনো বিকল্প নেই। তাই কৃত্রিম প্রজননের পন্থা দেশের গো-খামার শিল্প বিকাশ এবং উন্নত জাত উৎপাদনের পথ সৃষ্টি করবে।

Share: