HSC ইতিহাস ২য় পত্র (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর অধ্যায় ৫ pdf download

এইচএসসি পরীক্ষার পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি
HSC History 2nd Paper Srijonshil question and answer. HSC History 2nd Paper (Srijonshil) Creative Questions pdf download. HSC Itihas 2nd paper Srijonshil Proshno Uttor.

ইতিহাস
দ্বিতীয় পত্র

সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
অধ্যায়-৫

HSC History 2nd Paper
Srijonshil Question and Answer pdf download

উচ্চ মাধ্যমিক ■ ইতিহাস (দ্বিতীয় পত্র) ■ অধ্যায়ভিত্তিক সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ও পরীক্ষা প্রস্তুতি
পঞ্চম অধ্যায় : হিটলার ও মুসোলিনীর উত্থান এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ

১. রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতায় জাফর আহম্মেদসহ দেশের সবাই রীতিমত অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে। আরও অনেকের মতো জাফর সাহেব নিজেও চাকরি না পেয়ে হতাশায় নিমজ্জিত ছিলেন। তবে তিনি অলস সময় না কাটিয়ে বেকার যুবকদের নিয়ে নতুন আদর্শকে পুঁজি করে একটি রাজনৈতিক দল গঠন করেন। কিন্তু তার দলের রাজনৈতিক কর্মকান্ড সামরিক সরকার ও অন্যান্য বৃহৎ রাজনৈতিক দলগুলোর ক্ষমতার নিচে চাপা পড়ে যায়।
ক. উনিশ শতকের শেষদিকে ইতালিতে কী ধরনের অবস্থা বিরাজ করছিল?
খ. হিটলারের মানবিক বৈশিষ্ট্য বুঝিয়ে লেখ।
গ. জাফর সাহেবের রাজনৈতিক দলটিকে সুপ্রতিষ্ঠিত করতে কী ধরনের কৌশল অবলম্বন করা আবশ্যক ছিল? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. তুমি কি মনে কর জাফর সাহেবের রাজনৈতিক দলটির অগ্রযাত্রার অনুকূল পরিবেশ দেশে বিরাজমান ছিল? তোমার মতামত বিশ্লেষণ কর।

১ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. উনিশ শতকের শেষদিকে ইতালিতে চরম বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি বিরাজ করছিল।

খ. হিটলারের মধ্যে যেসব মানবিক বৈশিষ্ট্য প্রস্ফুটিত হয়েছিল তা হলো-
১. সাধারণ মানবিক সম্পর্ক গড়ে তোলার অক্ষমতা,
২. সুপ্রতিষ্ঠিত বুর্জোয়া অজার্মান ও ইহুদিদের প্রতি অসহিষ্ণুতা ও ঘৃণা,
৩. আকস্মিক ক্রোধের বিস্ফোরণ,
৪. কল্পনার জগতে বাস করার প্রবণতা।

গ. রাজনৈতিক দলের প্রধান লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হলো জনমতের সমর্থন নিয়ে রাষ্ট্র ক্ষমতায় যাওয়া। এ থেকে সহজেই বোঝা যায়, রাজনৈতিক দলের প্রধান কাজ হলো জনসমর্থন আদায় করা এবং তাকে সংহত করা। রাজনৈতিক দলকে প্রতিষ্ঠিত করতে চাইলেও প্রথমে দরকার একটি আদর্শ স্থির করা। এ আদর্শ প্রচার-প্রসারের মাধ্যমে দলের জনসমর্থন পাওয়া যেতে পারে, যা দলকে শক্তিশালী করবে। জাফর সাহেব যে রাজনৈতিক দলটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন তাতে ছিল অধিকাংশ বেকার যুবক। দেশের অস্থিতিশীল পরিস্থিতি, যেখানে অধিকাংশ মানুষ বেকার, কর্মহীন, সেখানে যদি এ সমস্যার সমাধানের পথ ও উপায়কে প্রাধান্য দিয়ে কোনো দল সংগঠিত হয় তবে খুব সহজেই তা জনপ্রিয়তা পেতে পারে। সাধারণ রাজনৈতিক দল ও সামরিক শাসনের প্রতি বীতশ্রদ্ধ মানুষ, সহজেই এরূপ দলকে সমর্থন করত, যদি তারা তাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যকে ভালোভাবে ব্যাখ্যা করে সাধারণ মানুষের সামনে উপস্থাপন করতে পারত। সাধারণ মানুষের আবেগ ও চাহিদাকে প্রাধান্য দিয়ে, সেই আলোকে মূলনীতি স্থির করে প্রচার প্রচারণা চালানো হলে অবশ্যই দলটি জনপ্রিয়তার শীর্ষে আসতে পারত, যেমনটি সম্ভব হয়েছিল প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তীকালে জার্মানি হিটলার ও তাঁর নাৎসি দলের পক্ষে।

ঘ. উদ্দীপকের জাফর সাহেব যে সময় দলটি গঠন করেছিলেন সেসময় এরূপ একটি দলের অগ্রযাত্রার জন্য সবদিক থেকেই অনুকূল পরিবেশ বিরাজ করছিল দেশটিতে।
রাজনৈতিক দলগুলোর আবির্ভাব হয় নিজেদের আদর্শের আলোকে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়ে সমস্যা সমাধান করার লক্ষ্য নিয়ে। জনসমর্থন এক্ষেত্রে তাদের সবচেয়ে বড় শক্তি। উদ্দীপকের দেশটিতে এমন এক পরিস্থিতি বিরাজ করছে যে, রাজনৈতিক পরিস্থিতি অস্থিতিশীল। দেশের সাধারণ জনগণ সরকারের আচরণে অতিষ্ঠ। বেকার যুবকেরা যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও চাকরি পাচ্ছে না। চারদিকে মানুষের মধ্যে এক ধরনের হতাশার ভাব। সামরিক সরকার দেশের মানুষের আশা আকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে পারছে না। বিদ্যমান রাজনৈতিক দলগুলোও কার্যকর কোনো ভূমিকা পালন করতে পারছে না। এরূপ প্রেক্ষাপট নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের ক্ষেত্রে সবচেয়ে উপযুক্ত সময়। কেননা সবাই যখন সমস্যা সমাধানে ব্যর্থ হয়েছে, তখন জনগণ সমাধান বের করার মতো উপযুক্ত নেতা ও নেতৃত্ব প্রত্যাশা করে। যদি কোনো রাজনৈতিক দল এরূপ সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিতে পারে, তবে হতাশাগ্রস্ত জনগণ খুব সহজেই তাদের ওপর ভরসা করে। যেমনটি করেছিল ১৯২০ সালের দিকে হিটলারের রাজনৈতিক দলটি। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ফলে জার্মানির ওপর যখন অপমানজনক সন্ধি চাপিয়ে দেওয়া হয়েছিল, অর্থনীতি যখন বিপর্যস্ত, সেই অবস্থাতে বিদ্যমান দল ও নেতার প্রতি আস্থাহীন হয়েই জনগণ অন্ধভাবে হিটলারকে সমর্থন করেছিল। ফলে তার দলের জনপ্রিয়তা পৌঁছেছিল সবার শীর্ষে। তাই বলা যায়, উদ্দীপকে বর্ণিত পরিবেশ জাফর সাহেবের রাজনৈতিক দলটির অগ্রযাত্রার অনুকূলেই ছিল, যদিও তারা তা কাজে লাগাতে পারেনি।

২. সরিষাবাড়ি গ্রামের ইউপি নির্বাচনকে ঘিরে টানটান উত্তেজনা বিরাজ করছে। মনির হোসেনের হৃদয়কাড়া ভাষণ শু সরিষাবাড়ির অধিবাসীদেরকে অন্যান্য গ্রামবাসীদের জন্য আদর্শ হিসেবে মন্তব্য করলে তার দলের জনপ্রিয়তা বহুগুণে বৃদ্ধি পায় এবং নির্বাচনে জয়লাভ সময়ের ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়।
ক. উনিশ শতকের শেষদিকে সৃষ্ট অরাজকতার হাত থেকে ইতালিকে কে উদ্ধার করেছিল?
খ. মপার বলতে কী বোঝ?
গ. মনির সাহেবের উত্থাপনের সাথে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পূর্ব জার্মানির কোন দলের উত্থানের সাদৃশ্য পাওয়া যায়? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. তুমি কি মনে কর জনপ্রিয়তা অর্জনে মনির হোসেনের সম্মোহনী ভাষণের মতো এডলফ হিটলারের ভাষণ যথেষ্ট ছিল? তোমার মতামত বিশ্লেষণ কর।

২ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. উনিশ শতকের শেষদিকে সৃষ্ট অরাজকতার হাত থেকে মধ্যবিত্ত শ্রেণির মধ্য থেকে আবির্ভূত এক রাজনৈতিক শ্রেণি ইতালিকে উদ্ধার করেছিল।

থ. 'স্ট্রর্মস্ট্রপার'-কে সংক্ষেপ বলা হয় এস. এস। র‍্যান্ডমের নেতৃতেব যে বাহিনী কমিউনিস্টদের হাত থেকে নাৎসি দলের সভাগুলোকে রক্ষা করত ইতিহাসে তা স্ট্রমট্রপার নামে খ্যাত। অনেক সময় এরা অন্যান্য দলের ওপর হামলা করত এ বাহিনী 'বাদামি' রঙের পোশাক পরত বলে এদের ব্রাউন শার্টও বলা হয়।

গ. উদ্দীপকের মনির সাহেবের জনপ্রিয়তা ও উত্থানের সাথে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পূর্ব জার্মানির হিটলারের রাজনৈতিক দলের উত্থানের সাদৃশ্য পাওয়া যায়।
ইউপি নির্বাচনের টানটান উত্তেজনাকর মুহূর্তে মনির সাহেব নির্বাচনি ময়দানে আগমন করেন তার হৃদয়কাড়া ভাষণ ও বক্তৃতা নিয়ে। এ ভাষণে তিনি তার ইউনিয়নের জনগণকে শ্রেষ্ঠ ও আদর্শ বলে প্রচার করতে থাকেন। অধিকাংশ মানুষ আত্মপ্রশংসা পেতে চায়। এরূপ আত্মপ্রশংসায় সরিষাবাড়ি ইউনিয়নের জনগণও আত্মতুষ্টি লাভ করে। মনির সাহেবের সম্মোহনী ক্ষমতা জনগণকে তার পক্ষে ভোট দিতে প্ররোচিত করে। ঠিক একইভাবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পূর্ব সময়ে জার্মানির জনগণের মাঝে হিটলারের বাগ্মিতা প্রভাব ফেলেছিল। হিটলার প্রচার করতে থাকে, জার্মানরাই পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ জাতি এবং প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর ভার্সাই চুক্তির মাধ্যমে তাদেরকে অপমান করা হয়েছে। এরূপ সংকটময় পরিস্থিতিতে হিটলার ও তাঁর দল নাৎসি বাহিনীর প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা বৃদ্ধি পায় এবং জনপ্রিয়তার শীর্ষে অবস্থান করে।

ঘ. মনির সাহেবের সম্মোহনী ভাষণ স্থানীয় ইউপি নির্বাচনে তার জনপ্রিয়তাকে যথেষ্ট বাড়িয়ে দিয়েছে। স্থানীয় জনসাধারণের প্রশংসাসূচক বক্তব্য এবং তার বাগ্মিতা এক্ষেত্রে প্রধান ভূমিকা পালন করেছে বলে মনে হয়।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধপূর্ব সময়ে জার্মানির সবচেয়ে বড় জনপ্রিয় দলে পরিণত হয়েছিল হিটলারের নাৎসি পার্টি। অথচ এ দল যার জন্য এত জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিল সেই হিটলার যে খুব বেশি গুণাবলিসম্পন্ন ছিল তা নয়। পড়াশুনায় মাধ্যমিকের গন্ডি টপকাতে না পাড়া একজন ব্যক্তি, যে কিনা জীবিকার সন্ধানে ঘুরে বেড়াত বিভিন্ন স্থানে এবং হতাশাও অবসাদগ্রস্ত ছিল দীর্ঘ সময়। সেই হিটলার বহুধাবিভক্ত জার্মানকে ঐক্যবদ্ধ করেন। তাঁর অন্যান্য যোগ্যতা ও গুণাবলি কম থাকলেও এক ধরনের সম্মোহনী ক্ষমতা ছিল যা প্রকাশ পেত তাঁর ভাষণ ও নেতৃত্বে। জার্মানদের অন্য সবার চেয়ে শ্রেষ্ঠ জাতি বলে প্রচার করে তিনি তাঁর অবস্থান এবং জাতীয় ঐক্যকে আরও দৃঢ় করেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরুর আগে জার্মানির যে সক্ষমতা তৈরি হয়, তা ছিল হিটলারের সম্মোহনী ভাষণের ফসল। তার ভাষণের সম্মোহনী শক্তিই তাঁকে এ আসনে আসীন করেছিল। এছাড়াও হিটলারের সুযোগ্য নেতৃত্ব, সময়োপযোগী আদর্শ প্রচার এবং সুশৃঙ্খল জীবন যাপন এবং কতক যোগ্য সহচর তাকে জনপ্রিয় হতে সাহায্য করেছিল। আর উদ্দীপকে মনির হোসেনের ক্ষেত্রে তার সম্মোহনী ভাষণের শক্তি ছাড়া অন্য কিছু আমাদের চোখে পড়ে না। তাই তার জনপ্রিয়তার জন্য আমরা এ ক্ষমতাকেই মুখ্য বলে মেনে নিতে পারি।

৩. পারিবারিকভাবে সোলায়মান হোসেন রাজনৈতিক আদর্শে বড় হয়েছেন। তার বাবা ছিলেন একজন সংসদ সদস্য। বাবার রাজনৈতিক আদর্শ এবং সুনাম সোলায়মান হোসেনকে উদ্বুদ্ধ করেছে। রাজনীতিবিদ হিসেবে নিজেকে সুপ্রতিষ্ঠিত করতে। কিন্তু এলাকার মানুষদের সাথে সম্পর্কগত দূরত্ব ও রাজনৈতিক প্রতিভার অভাব থাকায় তিনি অনেক চেষ্টার পরও জনগণের প্রত্যাশিত নেতা হতে পারলেন না।
ক. উনিশ শতকের শেষদিকে ইতালিতে গড়ে ওঠা রাজনৈতিক দলের নেতার নাম কী?
খ. নাৎসিবাদ বলতে কী বোঝ?
গ. সোলায়মান হোসেনের সঙ্গে জার্মানির নাৎসি দলের সবচেয়ে জনপ্রিয় রাজনীতিবিদের পার্থক্য কী? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. তুমি কি মনে কর উক্ত বৈসাদৃশ্য সোলায়মান হোসেনের জন্য ক্ষমতা দখলের পথে অন্তরায়? তোমার মতামত বিশ্লেষণ কর।

৩ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. ঊনিশ শতকের শেষদিকে ইতালিতে গঠিত রাজনৈতিক দলের নেতার নাম 'বেনিতো মুসোলিনী'।

খ. 'নাৎসিবাদ' বিংশ শতাব্দীর ইতিহাসে বহুল আলোচিত একটি বিষয়। বিংশ শতাব্দীতে জার্মানিতে যে 'নাৎসিবাদের' জন্ম হয় তা হিটলার কিংবা নাৎসিবাদের মৌলিক কোনো মতবাদ নয়, পুরনো কিছু মতবাদের বিরোধিতা ও অন্য কতকগুলো মতের সমর্থনকেই নাৎসিবাদের মূল সঞ্চালক শক্তিরূপে গণ্য করা হয়। নাৎসিবাদ যেসব মতবাদের বিরোধী ছিল, সেগুলো হলো উদারতাবাদ, যুক্তিবাদ ও মার্কসবাদ। ঊনবিংশ শতাব্দীর ক্রান্তিলগ্নে ও বিংশ শতাব্দীর শুরুতে জার্মান আর অস্ট্রিয়ায় এক ধরনের আন্দোলন গড়ে উঠেছিল যার লক্ষ্য ছিল একক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা যার ভিত্তি হবে আর্যরক্ত, ভাষা হবে জার্মান এবং যা হবে সকল ধর্মীয় বিশ্বাসমুক্ত।

গ. উদ্দীপকের সোলায়মান সাহেবের সাথে জার্মানির নাৎসি দলের সবচেয়ে জনপ্রিয় রাজনীতিবিদ এডলফ হিটলারের প্রায় সব ক্ষেত্রেই বৈপরীত্য দেখা যায়। এর মধ্যে প্রধানগুলো হলো-
১. সোলায়মান সাহেব বড় হয়েছেন প্রাচুর্যের মধ্যে, যেখানে সাংসদ বাবার সব সুযোগ-সুবিধা পেয়েছেন। আর হিটলারের জন্ম সাধারণ এক ঘরে, যেখানে অভাব ও কষ্টই ছিল নিত্যসঙ্গী।
২. সোলায়মান বড় হয়েছেন রাজনৈতিক আদর্শের এক পরিবেশে, যেখানে হিটলারের এরূপ পরিবেশ ছিল না।
৩. সোলায়মান সাহেবের পারিবারিক ঐতিহ্য তার ব্যক্তিগত দুর্বলতাকে আড়াল করে রাজনীতিবিদ হতে সাহায্য করেনি। অপরদিকে হিটলারের ব্যক্তিগত দক্ষতা ও যোগ্যতার সামনে পারিবারিক ঐতিহ্য না থাকা কোনো বাধা হতে পারেনি।
৪. হিটলার একজন জনপ্রিয় নেতা ছিলেন। সোলায়মান সাহেব। এরূপ জনপ্রিয় হতে পারেননি।
৫. সোলায়মান সাহেব রাজনৈতিক নেতা হওয়ার জন্য দীর্ঘ সময় চেষ্টা করেও সফল হননি। আর হিটলার নেতা হতে না চাইলেও সময়ের প্রেক্ষাপটে একজন বড় নেতায় পরিণত হন।

ঘ. উদ্দীপকের সোলায়মান সাহেব এবং ইতিহাসের হিটলারের মধ্যে। আমরা বিরাট বৈপরীত্য লক্ষ করি। এ বৈপরীত্যের দরুন একজন সাধারণ পরিবার থেকে ওঠে এসে অসাধারণ নেতায় পরিণত হন। অপরজন রাজনৈতিক ঐতিহ্যসম্পন্ন পরিবারের সদস্য হয়েও নেতা হতে পারেননি। এক্ষেত্রে বৈসাদৃশ্যসমূহের কয়েকটি সোলায়মান সাহেবের ক্ষমতা দখলের পথে প্রধান অন্তরায়। তবে সবগুলো বৈসাদৃশ্য অন্তরায় নয়।
সফল নেতৃত্বের জন্য জনসম্পৃক্ততা হলো প্রধান গুণ। একজন নেতা হন জনগণের নেতা। জনগণের জন্য নেতা। জনগণের দ্বারা নেতা। কিন্তু তিনি যদি জনগণ থেকে দূরে থাকেন, জনগণের সাথে না মিশতে পারেন তবে কখনই তার পক্ষে সফল নেতা হওয়া সম্ভব নয়। সোলায়মান সাহেব রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান, যা হিটলার ছিল না। তার এ বৈসাদৃশ্য নেতা হওয়ার পথে কোনো বাধা নয়। বরং এটি তাকে আরও বড় নেতা হতে সহায়তা করত। তার নেতা হওয়ার পেছনে সবচেয়ে বড় বাধা হলো এলাকার মানুষের সাথে সম্পর্কগত দূরত্ব এবং রাজনৈতিক প্রতিভার অভাব। এ দুটি বৈসাদৃশ্য হিটলারের সাথে নেতা হওয়ার পথে তার সামনে সবচেয়ে বড় বাধা হিসেবে কাজ করেছে। তিনি রাজনৈতিক প্রজ্ঞার অভাবে একজন রাজনীতিবিদ হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারেননি। জনসাধারণের সাথে সম্পর্কগত দূরত্বের জন্য জনপ্রিয়তা অর্জন করে জনগণের নেতা হতে পারেননি। এ অযোগ্যতা তার ক্ষমতা দখলের পথে অন্তরায় হিসেবে কাজ করেছে।

৪. শরিফ সাহেব সাংসদ হওয়ার পর বছরের বেশিরভাগ সময় রাজধানীতেই অতিবাহিত করেন। আর নিজ এলাকায় যাওয়ার পূর্বে সেখানকার দীর্ঘদিনের ভাঙা রাস্তা মেরামত ও রাস্তার পাশের গাছগুলোতে রং করান। এমনকি রাস্তার দু পাশ দিয়ে ফুলের তোড়া হাতে নিয়ে লোকজনকে দাঁড়িয়ে থাকতে বাধ্য করেন। এলাকার কেউ তার বিরোধিতা করলে তাকে চরম শাস্তি প্রদান করতে তিনি কুণ্ঠাবোধ করেন না। তিনি মনে করেন তার এসব আচরণের নেতিবাচক প্রভাব থাকলেও তা রাজনৈতিক চর্চার একটি অংশ।
ক. বেনিতো মুসোলিনী প্রবর্তিত মতবাদের নাম কী?
খ. নাৎসিদলের স্লোগানগুলো উল্লেখ কর।
গ. শরিফ সাহেবের রাজনৈতিক চর্চার ক্ষেত্রে জার্মানির হিটলারের কোন দিকটি ফুটে উঠেছে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. শরিফ সাহেবের রাজনৈতিক চর্চা একটি অশুভ ধারার রাজনীতি- তোমার মতামত বিশ্লেষণ কর।

৪ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. বেনিতো মুসোলিনী প্রবর্তিত মতবাদের নাম হলো 'ফ্যাসিজম'।

খ. নাৎসি দল নিজেদের প্রচার-প্রচারণায় বেশকিছু স্লোগান ব্যবহার করত। এসব স্লোগানগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো-
ক. উদ্দীপ্ত জার্মানি ইহুদিগণ আমাদের দুর্ভাগ্য,
খ. ক্যাথলিক নিপাত যাক। ফুয়েরার দীর্ঘজীবী হন,
গ. আজ জার্মানি, আগামীকাল বিশ্ব ইত্যাদি।

গ. উদ্দীপকের শরিফ সাহেবের মধ্যে হিটলারের 'অনৈতিকতা এবং সীমাহীন নির্মমতা'র রাজনৈতিক চর্চা দেখতে পাওয়া যায়। হিটলার বিশ্বাস করতেন যে হিংসা ও সন্ত্রাস এক ধরনের মোহ সৃষ্টি করে এবং পশুশক্তির নগ্ন ব্যবহার যতটা বিতৃষ্ণা জাগায় তার চেয়ে বেশি আকর্ষণ সৃষ্টি করে। নাৎসি পার্টির জন্মের পর থেকে তিনি মনে করতেন যে, এক ডজন ইশতেহারের চেয়ে রাস্তায় প্রকাশ্য দিবালোকে একটি রক্তাক্ত দাঙ্গার মূল্য অনেক বেশি। দিন দিন তার এ বিশ্বাস স্থায়ীরূপ নেয় যে, জগৎকে সচেতন করার অন্যতম কার্যকর পন্থা হলো রাজনৈতিক বিরোধীদের জেনেশুনে হত্যা করা। হিটলারের এ নির্মমতা ও অনৈতিক রাজনৈতিক কার্যাবলি আমরা লক্ষ করি শরিফ সাহেবের মাঝে। কেননা তিনি তার মূল দায়িত্ব জনসেবা করার পরিবর্তে সাধারণ মানুষকে যেভাবে জিম্মি করেছেন তা শুধু অনৈতিক-ই নয়, অন্যায়ও বটে। আর রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে দমন করতে তিনি হিটলারের মতোই রক্তাক্ত দমননীতিকে হাতিয়ার হিসেবে গ্রহণ করেছেন।

ঘ. শরিফ সাহেব যে ধারার রাজনীতি করছেন, তা গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত একজন সংসদ সদস্যের নিকট কোনোভাবেই প্রত্যাশিত নয়। গণতন্ত্রে একজন জনপ্রতিনিধির দায়িত্ব হলো জনগণের প্রতিনিধি হিসেবে সরকারের নিকট তাদের দাবি আদায়ে কাজ করা। সরকার ও জনগণের সেতুবন্ধর হিসেবে দায়িত্ব পালন করাই হলো তার কাজ। কিন্তু তিনি তা না করে ভীতি ও নির্মমতার রাজত্ব কায়েম করেছেন। নিজ এলাকার কোনো খোঁজখবর রাখেন না। অথচ যখন এলাকায় যান তখন সাধারণ জনগণকে বাধ্য করেন তাকে সম্মান জানাতে রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে থাকতে। গণতন্ত্রে প্রতিপক্ষকে সম্মান করা হচ্ছে আদর্শ। অথচ তিনি তার প্রতিপক্ষকে নির্মমভাবে দমন করেন। তিনি যে ধারা চালু করেছেন তা হিটলারীয় আদর্শ। হিটলারের কায়দায় তিনি যে ব্যবস্থার সূচনা করেছেন তা নিঃসন্দেহে একটি অশুভ ধারা। এ ধারায় শরিফের মতো নরপিশাচ রাজনৈতিক নেতারা ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে থাকে, যার পরিণতি হয় ন্যক্কারজনক। এরূপ অশুভ শক্তির উত্থান জনগণের নিরাপত্তাকে বিঘ্নিত করে, জনগণের শান্তিশৃঙ্খলা নষ্ট করে। এর পরিণতিতে তাদেরকেও দিতে হয় চরম মূল্য, যেরূপ মূল্য দিতে হয়েছিল হিটলারকে তার নিজের পিস্তলের একটি গুলি নিজের মাথায় খরচ করে।

৫. নজরুল স্যার বেশ সুনামের সাথেই দীর্ঘদিনের শিক্ষকতা জীবন অতিবাহিত করলেন। অথচ আজ তিনি সবার নিকট রীতিমত এক মহা আতঙ্কের মানুষ। কারণ বর্তমানে তিনি নিষিদ্ধ ঘোষিত চরমপন্থি দলের জ্যেষ্ঠ নেতা। সমাজের বেপরোয়া সন্ত্রাসী কর্মকান্ড রুখতে তিনি নিজের আদর্শ অনুযায়ী সংস্কার এনেছেন সশস্ত্র এ দলটিতে। তার আশা একদিন তার আদর্শে দেশ শাসিত হবে।
ক. জার্মানির ইতিহাসে তথা বিশ্বের ইতিহাসে কে বহুল আলোচিত ব্যক্তিত্ব?
খ. ভার্সাই সন্ধি বলতে কী বোঝ?
গ. নজরুল স্যারের নেতা হিসেবে উত্থান আমাদেরকে কোন ফ্যাসিস্ট নেতার কথা মনে করিয়ে দেয়? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. তুমি কি মনে কর নজরুল স্যারের ব্যক্তিগত আদর্শ দেশের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে যথেষ্ট? তোমার মতামত বিশ্লেষণ কর।

৫ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. জার্মানির ইতিহাসে তথা বিশ্বের ইতিহাসে বহুল আলোচিত। ব্যক্তিত্ব হলো নাৎসি দলের নেতা ও জার্মান চ্যান্সেলর এডলফ হিটলার।

খ. ভার্সাই সন্ধি পৃথিবীর ইতিহাসে একটি অন্যতম প্রধান সন্ধি। ১৯১৮ সালের ২৩ অক্টোবর ফ্রান্সের ভার্সাই নগরীতে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের জন্য অভিযুক্ত করে জার্মানিকে জরিমানা করা হয়েছিল। তাই বিশ্ব ইতিহাসে এ সন্ধি ভার্সাই সন্ধি হিসেবে খ্যাত। এ সন্ধির কারণে জার্মানি হারিয়েছিল কৃষিযোগ্য জমির শতকরা সাড়ে পনের ভাগ, উৎপাদন শিল্পের শতকরা দশ ভাগ, মজুদ কয়লার দুই-পঞ্চমাংশ, খনিজ লোহার দু-তৃতীয়াংশ। এছাড়া এ সন্ধির কারণে জার্মানির নৌবাহিনী, স্থলবাহিনী ও বিমানবাহিনীর উল্লেখযোগ্য অংশ হ্রাস হয়েছিল। মোটকথা, ভার্সাই চুক্তির মাধ্যমে জার্মানি সম্পূর্ণরূপে পঙ্গু হয়ে গিয়েছিল।

গ. নজরুল স্যারের নেতা হিসেবে উত্থান আমাদেরকে ইতালির ফ্যাসিস্টবাদী শাসক বেনিতো মুসোলিনীর কথা মনে করিয়ে দেয়। ১৮৮৩ সালে জন্মগ্রহণকারী মুসোলিনী প্রথম জীবনে শিক্ষকতা পেশার সাথে যুক্ত ছিলেন। এরপর সুইজারল্যান্ডে চলে যান। সমাজতন্ত্রী দলের সাথে যুক্ত থাকায় সেখান থেকে বহিষ্কৃত হয়ে দেশে ফিরে পত্রিকার সম্পাদনা করতে থাকেন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে বিতর্কিত মন্তব্যের জন্য পত্রিকা থেকে বহিষ্কৃত হয়ে নিজেই একটি পত্রিকা চালু করেন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর যুদ্ধফেরত সৈন্য ও বেকার যুবকদের নিয়ে তিনি ফ্যাসিবাদী আধা সামরিক একটি দল গঠন করেন যা পরবর্তীকালে রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করে। এ দলের আদর্শ ছিল "রাষ্ট্রই সকল শক্তির আধার।" দলের সদস্যরা বিশ্বাস করত যে, মুসোলিনী সর্বদা সঠিক কাজ করেন। এরূপ মনোভাবের কারণে তিনি চরম একনায়ক শাসকে পরিণত হন, যা তাকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে উৎসাহিত করে তোলে। বিশ্ব ইতিহাসে মুসোলিনী একটি কলঙ্কিত নাম। নজরুল স্যারও শিক্ষকতার মতো পেশা ছেড়ে মুসোলিনীর মতো চরিত্রে নাম লিখিয়েছেন।

ঘ. নজরুল স্যারের ব্যক্তিগত আদর্শ দেশের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণে যথেষ্ট হবে কিনা, তা নির্ভর করবে দেশের মানুষ কী চায় তার ওপর। দেশের মানুষ যদি তাকে সমর্থন করে, তবেই কেবল তিনি সফল হতে পারেন। কিন্তু সে সম্ভাবনা খুবই কম।
নজরুল স্যার শিক্ষকতার মতো মহৎ পেশা ছেড়ে সমাজের অন্যায় সন্ত্রাস দূর করতে চরমপন্থা বেছে নিয়েছেন। তিনি চরমপন্থি দলকে নিজ আদর্শের আলোকে ঢেলে সাজিয়েছেন। এ একই কাজ করেছিলেন ইতালির ফ্যাসিবাদী নেতা বেনিতো মুসোলিনী। মুসোলিনীর লক্ষ্য ছিল প্রথম বিশ্বযুদ্ধ ফেরত সৈন্যদেরকে সংহত করে সমাজতন্ত্রীদেরকে প্রতিহত করা। সে সময়কার বাস্তবতার প্রেক্ষাপটে তার গৃহীত নীতি ও আদর্শ জনপ্রিয়তা লাভ করে। সর্বজনীন ভোটাধিকার, নীতিবাক্য, ইতালির শ্রেষ্ঠত্ব ইত্যাদি কথা বলে সে খুব সহজেই জনগণকে প্রলুব্ধ করতে সমর্থ্য হয়। তার ক্ষমতা দখল এজন্য সমর্থন পায়। কিন্তু চূড়ান্ত বিচারে এটি ইতালির জন্য কল্যাণ বয়ে আনেনি।
একইভাবে নজরুল স্যার সমাজ সংস্কারে যে পদ্ধতি ও কৌশলের আশ্রয় নিয়েছেন তা আধুনিক সমাজে সমর্থনযোগ্য হতে পারে না। এক্ষেত্রে তিনি জনসমর্থন ছাড়াই যদি তার আদর্শকে দেশব্যাপী প্রতিষ্ঠিত করতে চান তবে তাকে জনগণের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হবে। চরমপন্থার চিরাচরিত সংহতির পথে তাকে আগাতে হবে। কিন্তু বর্তমান সমাজব্যবস্থায় এটি কতটা গ্রহণযোগ্য ও কার্যকরী উপায় হতে পারে তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে। আমি মনে করি, দেশের বৃহত্তর আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণে এটি কখনই সমর্থ হবে না।

৬. রাভেন্না পেপার মিলে দেলোয়ারের নেতৃত্বে শ্রমিক আন্দোলন বেশ শক্তিশালী হয়ে উঠে। এক পর্যায়ে উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেলে একদিকে মালিকের লোকসান হয় এবং অন্যদিকে শ্রমিকদের বেতন বকেয়া হয়। এতে আন্দোলন আরও চাঙ্গা হয়। এমন পরিস্থিতিতে জাহাঙ্গীর নামক এক শ্রমিক বেশকিছু শ্রমিককে উৎপাদন শুরু করার গুরুত্ব বোঝাতে সক্ষম হয় এবং সংঘবদ্ধভাবে দেলোয়ারের লোকদের ওপর শক্তিপ্রয়োগ করে তাদেরকে কাজে ফিরতে বাধ্য করে।
ক. জার্মানি জাতির চরম দুর্দশা অবসানের জন্য কে রাজনৈতিক দল গঠন করে?
খ. ১৯২০ সালে হিটলার যে কর্মসূচি ঘোষণা করেছিল তা ব্যাখ্যা কর।
গ. উদ্দীপকের রাভেন্না পেপার মিলের অরাজকতা আমাদেরকে ইতালির কোন সময়কার কথা মনে করিয়ে দেয়? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. শ্রমিক অসন্তোষ ছিল জাহাঙ্গীরের 'নেতা হিসেবে উত্থানের উপযুক্ত সময়- তোমার মতামত বিশ্লেষণ কর।

৬ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. জার্মানি জাতির চরম দুর্দশা অবসানে এডলফ রাজনৈতিক দল গঠন করেছিল।

খ. হিটলার ১৯২০ সালে নাৎসি দলের কর্মসূচি ঘোষণা করেন। তিনি একটি শক্তিশালী জার্মান গঠনের অঙ্গীকার করেন। এতে ভাগাছ সন্ধির তীব্র বিরোধিতা ও জার্মান রক্তের বিশুদ্ধতার ওপর জোর দেওয়া হয়। সকল শ্রেণির মানুষের কর্তব্য ও অধিকার উল্লেখ করা হয়। এ কর্মসূচির মধ্যে অন্তর্ভুক্ত ছিল শিক্ষা ও আইন ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন, ভূমি সংস্কার, শিশু ও মাতৃমঙ্গল, বার্ধক্য ভাতা ও মুনাফাখোরদের বিরুদ্ধে কড়া শাস্তির ব্যবস্থা।

গ. উদ্দীপকের রাভেন্না পেপার মিলের অরাজকতা আমাদেরকে ইতালির ১৯২০-২১ সালের দিককার অবস্থাকে স্মরণ করিয়ে দেয়। এসময় গিত্তলিত্তির মুক্তিপন্থি সরকার ইতালির শিল্প ও কৃষিক্ষেত্রে গুরুতর অব্যবস্থাপনা ও নৈরাজ্য দূর করতে পারেনি। সরকারের ব্যর্থতায় কৃষি ও শিল্পখাত প্রায় স্থবির হয়ে যায়। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী ইতালিতে ব্যাপক আকারে নৈরাজ্য দেখা দেয়। এ সময়কার ইতালির সমাজে বিশৃঙ্খলার প্রধান কারণ ছিল সরকারের ব্যর্থতা এবং যুদ্ধ পরবর্তী অবস্থা। কৃষি ও শিল্প কারখানায় উৎপাদন হ্রাস পায়। খাদ্যদ্রব্যের দাম প্রায় ১০ গুণ বৃদ্ধি পায়। কৃষকদের সংকট উত্তরণে কোনো সহায়তা দেওয়া হয়নি। ফলে কৃষি উৎপাদন ব্যবস্থা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। খাদ্যাভাব দেখা দেয়। এসময় মুসোলিনীর আবির্ভাব ঘটে একজন ত্রাণকর্তা হিসেবে। প্রতিকূল এ পরিস্থিতিই মুসোলিনীর নেতা হিসেবে আবির্ভাবের জন্য সহায়ক হিসেবে কাজ করে।

ঘ. উদ্দীপকের রাভেন্না পেপার মিলের শ্রমিকদের আন্দোলনের ফলে উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। এরূপ অবস্থায় কারখানাটি শ্রমিকদের বেতন পরিশোধেরও সামর্থ্য হারিয়ে ফেলে। কারখানার শ্রমিকদের দাবি আদায়ের জন্য মালিকদের সামর্থ্য একটি বড় বিষয়। কিন্তু যদি ক্রমাগত বন্ধ থাকে তবে এক সময় হয়তবা স্থায়ীভাবেই বন্ধ হয়ে যেতে পারে কারখানাটি। এমতাবস্থায় এর শ্রমিকদের স্থায়িভাবে চাকরিচ্যুতির সম্ভাবনা থেকে যায়, যার চূড়ান্ত ফলাফল সুখকর হওয়ার নয়। এরূপ পরিস্থিতিতে জাহাঙ্গীর কারখানাটি চালু করতে উদ্যোগ নেয় এবং শ্রমিকদের কাজে ফিরতে বাধ্য করা হয়। দেলোয়ার তার অবস্থানে স্থির থাকতে পারে না। কেননা মিল বন্ধ হলে সবারই স্থায়ী ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে। এরূপ একটি পরিস্থিতিতে জাহাঙ্গীর যে পদক্ষেপ নেয় তা ছিল বাস্তবসম্মত। এর কোনো বিকল্প থাকার কথা নয়। এ যখন অবস্থা, তখন জাহাঙ্গীরের গুরুত্ব দেলোয়ারের চেয়ে বেশি হওয়াটা খুবই স্বাভাবিক ব্যাপারে পরিণত হয়। আর এরূপ পরিস্থিতিই জাহাঙ্গীরকে নেতার আসনে বসিয়েছে। যেমন আমরা দেখতে পাই প্রথম বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তীকালে ইতালি ও জার্মানির সমাজে। হিটলার ও মুসোলিনী যে বাস্তবতার প্রেক্ষাপটে নেতা হয়েছিলেন, তা ছিল তার যোগ্যতার চেয়ে বেশি উপযুক্ত সময়। সময়ের প্রয়োজনেই তিনি নেতৃত্বের গুণাবলিকে বিকাশ করতে পেরেছিলেন।

HSC ইতিহাস ২য় পত্র (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর অধ্যায় ৫ pdf download

৭. তুহিনের মামা শহিদ আহমেদ এক কানাডিয়ান লেখকের বই পড়ছিলেন বেশ আগ্রহ নিয়ে। লেখক বইটি রচনা করেছিলেন দীর্ঘ। ৯ বছর (১৯২০-১৯২৯ সাল) সময় ধরে। বইটির বিশেষত্ব হলো এর প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত ফ্যাসিবাদের পক্ষে খুব চমৎকারভাবে বক্তব্য উপস্থাপন করা হয়েছে।
ক. কত সালের মহামন্দা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে দুরবস্থার সৃষ্টি করেছিল?
খ. হিটলার তাঁর ব্যক্তিগত গুণাবলির জন্যই নাৎসি দলকে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত করেনু উক্তিটি ব্যাখ্যা কর।
গ. তুহিনের মামা শহিদ আহমেদের আচরণে উদ্দীপকের লেখক কী ধরনের প্রভাব রাখতে পারে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. তুমি কি মনে কর উক্ত প্রভাব তোমার দেশের রাষ্ট্র পরিচালনায় ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে সহায়ক? তোমার মতামত বিশ্লেষণ কর।

৭ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. ১৯২৯-৩০ সালের মহামন্দা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে দুরবস্থা সৃষ্টি করেছিল।

খ. জার্মানির নাৎসি বিপ্লবে নাৎসি নেতা এডলফ হিটলারের অবদান অনস্বীকার্য। তিনি ভেঙে পড়া ও বিধবস্ত জার্মান জাতিকে তাঁর নেতৃত্ব ও ভাষণের সম্মোহনী শক্তি দিয়ে আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছিলেন। তার নেতৃত্ব গুণ ছিল অত্যন্ত পরিপক্ব ও বিচক্ষণ। জার্মানি জাতির পূর্ব গৌরবের কথা সব সময় বলে বলে তিনি জার্মান জাতির মনোবল দৃঢ় ও ইস্পাত কঠিন করতে সক্ষম হন। ফলে জার্মানিরা তাঁকে মুক্তিদাতা হিসেবেই ভাবতে শুরু করে। হিটলার তাঁর দলের সহকর্মীদের বাছাই করার সময় তাদের আনুগত্য ও অন্যান্য গুণ দেখতেন। তাই আমরা বলতে পারি, হিটলার তাঁর গুণাবলির কারণেই জার্মানে নাৎসি দল ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়েছিল।

গ. উদ্দীপকের লেখকের বইটি রচিত হয় ১৯২০-১৯২৯ সালের মধ্যে। এসময়টি ছিল ইতালির প্রথম বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী ভাঙা-গড়ার সময়। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে বিপর্যন্ত ইতালিতে এসময় চলছিল অর্থনৈতিক মন্দা। ভার্সাই চুক্তির কারণে ইতালির আশা ভঙ্গ হয়েছিল। এছাড়াও সাধারণ ভোটাধিকার হরণ করে এসময় ইতালিতে ক্যাডুর চালু করেছিলেন সম্পত্তির ভিত্তিতে ভোটাধিকার।
সার্বিক দিক দিয়ে ইতালিতে তখন চলছিল চরম নৈরাজ্য। মুসোলিনীর ফ্যাসিস্ট দল এসব বিষয়ের প্রতিবাদ করে আসছিল। তারা ইটালির সাধারণ মানুষকে প্রলুব্ধ করতে যা যা করার প্রয়োজন তার সবই করছিল। ফলে ফ্যাসিস্ট পার্টির জনপ্রিয়তা কেবল বাড়ছিল। কিন্তু এসময়টা ফ্যাসিস্ট দলকে মূল্যায়নের জন্য যথেষ্ট নয়। এর লেখক হয়তবা নিজেও একজন ফ্যাসিস্ট ছিলেন। শহিদ আহমেদ এরূপ আংশিক একটি ইতিহাস থেকে বিভ্রান্ত হতে পারেন। তার উচিত হবে। এর আগে পরের আরও ইতিহাস সম্পর্কে জানার চেষ্টা করা। নয়তবা তিনি নেতিবাচক প্রভাবে প্রভাবিত হতে পারেন।

ঘ. উদ্দীপকের ঘটনায় শহিদ আহমদ ফ্যাসিবাদের সময়কার আংশিক ইতিহাসের একটি বই পড়ছেন, যা শুধু একটি দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা। আবার যে সময়ে বইটি রচিত হয়েছে, ফ্যাসিস্টদের প্রকৃত চরিত্র মূল্যায়নের জন্য এসময়টি যথেষ্ট নয়। এরূপ একটি পরিস্থিতিতে লেখা কোনো বই পড়ে ফ্যাসিস্টদের সম্পর্কে যে কেউ বিভ্রান্ত হতে পারেন। এরূপ একটি পদ্ধতি বর্তমান বিশ্বে সবার নিকট ঘৃণিত। আমাদের দেশের রাষ্ট্র পরিচালনায় এটি কোনো ইতিবাচক পরিবর্তন তো আনতে পারবেই না, বরং কেবল ধ্বংস ও ধ্বংসই সাধন করবে। ফ্যাসিবাদের মূলকথা ছিল সমাজতন্ত্রের বিরোধিতা, ধনিকশ্রেণির ওপর কর আরোপ, চার্চের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা, অস্ত্রের কারখানা বাজেয়াপ্ত করা, শ্রমিক কল্যাণে আইন প্রণয়ন করা ইত্যাদি। এতে বিশ্বাস করা হতো যে রাষ্ট্র সকল ক্ষমতার আধার। ব্যক্তির অধিকার, ব্যক্তির পছন্দ-অপছন্দ, ব্যক্তিস্বাধীনতা বলতে কিছু স্বীকার করা হয় না। এর চরম কথা হলো- রাষ্ট্রের জন্য সবকিছু, রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কিছুই নয় এবং রাষ্ট্রের বাইরেও কিছু নয়। এরূপ মূলনীতি ও আদর্শকে বর্তমান বিশ্বের শান্তির জন্য হুমকি হিসেবে দেখা হয়। কেননা আধুনিক বিশ্বে ‘‘রাষ্ট্রের জন্য নাগরিক নয়, নাগরিকদের জন্য রাষ্ট্র’’ হিসেবে দেখা যায়। ফ্যাসিস্টদের প্রথম কয়েকটি কথা শুনতে ভালো মনে হলেও এসব কথার বাস্তবায়ন কৌশল মেনে নেওয়া যায় না। তাই বলা যায়, আধুনিক 'বিশ্বে এরূপ কোনো পদ্ধতি ও কৌশল কোনো। দেশে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারে না।

৮. যুদ্ধোত্তর ভঙ্গুর অর্থনীতি এবং ব্যাপক অর্থনৈতিক ও সামরিক শক্তিতে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে মানুষ যখন সরকারি শাসন বিরোধী মনোভাব পোষণ করছে তখন সোরাব আলী নিজের দলের অবস্থান ভালো করতে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। সরকারের বিপক্ষে থেকে যদিও তার নিজের কাজের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসের অভাব ছিল তথাপি তিনি চেষ্টার কোনো ত্রুটি করলেন না।
ক. প্রথম বিশ্বযুদ্ধে কোন দেশ শোচনীয় পরাজয়বরণ করে?
খ. নাৎসি দলে জার্মানির জনগণ কেন যোগদান শুরু করেছিল?
গ. সোরাব আলীর দলের অগ্রযাত্রায় সহায়ক উদ্দীপকের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ কিছু পরিস্থিতি নির্ণয় কর।
ঘ. সোরাব আলীর জন্য উক্ত পরিস্থিতিগুলো হতে পারে সুবর্ণ সময় -উক্তির ক্ষেত্রে তোমার মতামত দাও।

৮ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. প্রথম বিশ্বযুদ্ধে জার্মানি শোচনীয় পরাজয় বরণ করে।

খ. বিশ্ববিবেক জার্মানি দেশটিকে একতরফাভাবে যেসব শাস্তির বিধান করেছিল তা সাধারণ মানুষ মেনে নিতে পারেনি। যুদ্ধের অব্যবহিত পরে জার্মানি অর্থনৈতিক মন্দা ও আইনশৃঙ্খলার ব্যাপক অবনতি হয়। সমগ্র দেশের জনগণ এ দুরবস্থা থেকে মুক্তি পেতে দিশেহারা হয়ে গিয়েছিল। জার্মানির জনগণ নাৎসি দলকে মুক্তির দিশারি ভাবতে শুরু করে। এ কারণে জার্মানির যুদ্ধ ফেরত রক্ষণশীল, রাজতন্ত্রী, দুর্দশাগ্রস্ত ব্যবসায়ী এবং হতাশা শ্রমিকরা নাৎসি দলে ভিড় করে। এমনকি ক্যাথলিক বিরোধী, ইহুদি বিরোধী এবং কমিউনিস্ট বিরোধীরাও নাৎসি দলকে বিশ্ব কর্তৃক চাপানো অপমান ও বঞ্চনা থেকে মুক্তিদাতা মনে করে।

গ. সোরাব আলী তার দল গোছানোর কাজে এমন এক সময়কে বেছে নিয়েছেন যখন যুদ্ধ পরবর্তীকালে দেশে চরম বিশৃঙ্খলা বিরাজ করছিল। এরূপ পরিস্থিতিতে মূলধারার রাজনৈতিক দলের ব্যর্থতায় দেশের সমাজ, অর্থনীতি, রাজনীতি সবকিছুতে চরম অব্যবস্থাপনা ও নৈরাজ্য চলছিল। স্বাভাবিকভাবেই এরূপ পরিস্থিতিতে জনগণ পরিবর্তন চায়। পরিবর্তনের আশায় নতুন দল ও ব্যক্তিকে ক্ষমতায় দেখতে চায়। আর এ সুযোগ নেওয়ার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন সোরাব আলী। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তীকালে এ ধরনের পরিস্থিতিতেই উত্থান ঘটেছিল হিটলার ও মুসোলিনীর মতো নাৎসি ও ফ্যাসিবাদী শাসকদের। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের অব্যাহতি পরেই জার্মানি ও ইতালির রাজনৈতিক পরিস্থিতির দ্রুত অবনতি ঘটতে থাকে। বিধ্বস্ত দেশের রাজনৈতিক শাসকদের ব্যর্থতা, অদক্ষতা ও অব্যবস্থাপনা জনগণের মাঝে চরম হতাশার সৃষ্টি করে। সরকারের বিতর্কিত সব সিদ্ধান্টের জন্য জনগণ আরও বেকায়দায় পড়ে যায়। তারা এ অবস্থার পরিবর্তন প্রত্যাশা করে। সংকট থেকে উত্তরণ চায়। এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে, আশার বাণী নিয়ে নিজ নিজ দলকে সংগঠিত করেন হিটলার ও মুসোলিনী। অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ পথে এগিয়ে যেতে জনগণ তাই তাদেরকে সমর্থন দেয় এবং তারা সফল হয়।

ঘ. দেশে স্বাভাবিক পরিস্থিতি বিরাজ করলে এবং শান্তিশৃঙ্খলা বজায় থাকলে জনগণ সরকারের ওপর আস্থাবান থাকে। রাজনৈতিক দলগুলো যখন জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে, তখন জনগণ পরিবর্তন চায় না। সেরূপ পরিস্থিতিতে নতুন কোনো রাজনৈতিক দলের অবির্ভাব সহজ হয় না। কিন্তু যখন রাজনৈতিক দলগুলো জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণে ব্যর্থ হয় এবং দেশের সার্বিক পরিস্থিতি বৃহত্তর জনগণের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়ায়, তখন জনগণ সরকারের প্রতি বীতশ্রদ্ধ হয়ে ওঠে। এরূপ পরিস্থিতিতে জনগণ নতুন আশ্রয় খুঁজে বেড়ায়। যে তাদেরকে আশার সঞ্চার করতে পারে, তাকেই সমর্থন জোগায়। যেমনটি দেখা গিয়েছিল প্রথম বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তীকালে ইটালি ও জার্মানিতে। ভঙ্গুর আর্থসামাজিক এবং রাজনৈতিক অবস্থার সুযোগ নিয়ে সেসময় হিটলার এবং মুসোলিনী ব্যাপক জনসমর্থন লাভে সমর্থ হয়। এ জনসমর্থন লাভ করে যখন তারা ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়। এরপর তাদের পূর্বের চরিত্র আর দেখা যায়নি। তারা ক্ষমতার চরম অপব্যবহার করে সারা বিশ্বকে হুমকির মুখে ফেলে দেয়। উদ্দীপকের সোরাব আলীর ক্ষেত্রেও উল্লিখিত পরিস্থিতি তার নতুন দলের প্রতিষ্ঠা ও শক্তিশালীকরণের জন্য উপযুক্ত সময় হতে পারে। এরূপ ভঙ্গুর রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে মূলধারার রাজনৈতিক দলের ব্যর্থতাকে পুঁজি করে নতুন আশার সঞ্চার করে সহজেই সোরাব আলীর দল ভালো করতে পারে। সে অর্থে এ সময়টি হলো তার জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত সময়।

৯. উদ্ভ্রান্ত চিন্তাচেতনা পোষণ করায় হামিদ আহমদকে পদচ্যুত করে সামরিক বিভাগ। তার পরিবারের কাছ থেকে শুনতে পাওয়া যায়- ইদানীং তিনি বাঙালিরা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ জাতি, যুদ্ধই বাঙালিদের জীবনের ব্রত হওয়া বাঞ্ছনীয়, আন্তর্জাতিকতার বিরোধিতা প্রভৃতি ধ্যানধারণায় নিজেকে আবদ্ধ রেখেছেন।
ক. ১৯৩০ সালে ইটালি ও জার্মানিতে কারা ক্ষমতা দখল করেছিল?
খ. ১৯২৯ সালের মহামন্দা কীভাবে হিটলারের উত্থানে সাহায্য করেছিল?
গ. হামিদ আহমদের মাঝে কোনো মতাদর্শ পরিলক্ষিত হচ্ছে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. হামিদ আহমদকে পদচ্যুতিকরণ ছিল যুক্তিসংগত তোমার মতামত বিশ্লেষণ কর।

৯ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. ১৯৩০ সালে ইতালি ও জার্মানিতে ফ্যাসিস্ট দলগুলো ক্ষমতা দখল করেছিল।

খ. ১৯২৯ সালে জার্মানিতে মহামন্দা দেখা দেয়। মুদ্রাস্ফীতিতে অভাবনীয় বিপর্যয় ঘটে। কিন্তু তৎকালীন ক্ষমতাসীনরা পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে ব্যর্থ হন। আর অন্যদিকে হিটলার তাঁর মোহনীয় বক্তব্য দ্বারা জার্মানির বেকার, মধ্যবিত্ত ও শ্রমিকদের বোঝাতে সক্ষম হন যে, তিনি ক্ষমতায় আসলে সকল সমস্যা সমাধান করতে সক্ষম হবে। তারা জার্মান কৃষক, ছোট দোকানদার ও ব্যবসায়ী শ্রেণিকে ক্ষতিপূরণের প্রতিশ্রুতি দেন। এভাবে ১৯২৯ সালের মহামন্দা নাৎসি তথা হিটলারের উত্থানে সাহায্য করেছিল।

গ. উদ্দীপকের হামিদ সাহেবের মধ্যে নাৎসিবাদের প্রভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে। এটি সংকীর্ণ জাতীয়তাবাদ ও আন্তর্জাতিকতাবাদেরও পরিপন্থী একটি মতবাদ।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তীকালে জার্মানির জনগণের মধ্যে এ মতবাদটি চরম আকার ধারণ করে। ঐতিহাসিকভাবে জার্মানরা ছিল আত্মমর্যাদাসম্পন্ন জাতি এবং তারা নিজেদেরকে বিশুদ্ধ বা আর্য জাতি বলে দাবি করত। এজন্য তারা মনে করত তারা অন্যান্য জাতির ওপর শ্রেষ্ঠত্বের দাবিদার। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর স্বাক্ষরিত ভার্সাই চুক্তি তাদের এ অনুভূতিতে প্রবল আঘাত হানে। হিটলারের আবির্ভাব এ মতবাদকে আরও শক্তিশালী করে তোলে। হিটলার অপমানজনক ভার্সাই চুক্তি এবং এর শর্তস্বরূপ জার্মানির ক্ষতিপূরণ দেওয়াকে অন্যায় বলে দাবি করতে থাকে এবং যুদ্ধের মাধ্যমেই এর প্রতিকার হতে পারে বলে প্রচার করতে থাকে। এরই চূড়ান্ত ফল ছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, যা জার্মানির এ আত্মঅহমিকা চিরতরে মিটিয়ে দেয়। হিটলার আত্মহত্যা করে এ থেকে মুক্তি পায়। এরূপ ধ্যানধারণার ভয়াবহতা ও ক্ষতি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ঘটনা থেকে সহজেই অনুধাবন করা যায়। হামিদ আহমদের মাঝে এরই একটি নমুনা দেখা যাচ্ছিল।

ঘ. উদ্দীপকের হামিদ আহমদকে পদচ্যুত করা যৌক্তিক ছিল। কেননা যে সামরিক বাহিনীর মূলমন্ত্র হলো দেশকে রক্ষা করা এবং শান্তি রক্ষা করা, তার কোনো সদস্যের মধ্যে যদি যুদ্ধবাজ এবং সংকীর্ণ জাতীয়তাবাদ মনোভাব থাকে, তবে তা যেকোনো বিপদের কারণ হতে পারে। সামরিক বাহিনীর কাজ হলো দেশকে রক্ষা করা। বহিঃশত্রুর আক্রমণ থেকে দেশের মাটিকে নিরাপদ রাখা। আগ্রাসী নয়, প্রতিরক্ষা হলো এর মূলনীতি। বিশ্বশান্তি ও আঞ্চলিক সংহতি রক্ষা করে নিজ দেশের ভৌগোলিক অখ-তা রক্ষা করা সামরিক বাহিনীর দায়িত্ব। আগ্রাসী যুদ্ধ নয়, শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে যুদ্ধই হলো এর মূলনীতি। কিন্তু এ বাহিনীর মধ্যে যদি এমন কোনো মনোভাব দেখা দেয়, যা যুদ্ধকে উৎসাহিত করে এবং অপরাপর দেশ ও জাতিকে হেয় করতে শেখায়, তবে তা সমূহ বিপদের কারণ হতে পারে। বর্তমান বিশ্বের কোনো দেশ অপর দেশের সহযোগিতা ব্যতীত চলতে পারে না। আন্তর্জাতিকতাবাদের এ মূলনীতি যদি সে না মানতে পারে, তবে সে। সামরিক বাহিনীর মতো একটি সুশৃঙ্খল বাহিনীর সদস্য থাকার যোগ্যতা হারাবে এবং সবচেয়ে বিপদের কথা হলো, এ মতবাদ ছড়িয়ে পড়ারও যথেষ্ট সম্ভাবনা আছে। কেননা এসব মতবাদ এরূপ যে, মানুষকে খুব সহজেই প্রভাবিত করতে পারে। যেমনটি দেখা যায় জার্মানিতে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তীকালে অনেক বিখ্যাত লেখক, সাহিত্যিক, অধ্যাপক এবং বিশিষ্ট ব্যক্তিরা এ মতবাদে প্রভাবিত হয়েছিলেন। তাই এরূপ মানসিকতাকে সংক্রমিত হতে না দেওয়ার উদ্দেশ্যে হামিদ সাহেবের পদচ্যুতি ছিল যৌক্তিক ৷

১০. মিঠা খালের আধিপত্য নিয়ে শতরূপা গ্রাম ও শ্যামনগর গ্রামের মাঝে সংঘর্ষ হলে সমস্যা সমাধানে এগিয়ে আসে প্রশাসন। দীর্ঘকাল মিঠা খালের সাথে শতরূপা গ্রামের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর অর্থনৈতিক জীবন জড়িত। কিন্তু প্রশাসনের কিছু দুর্নীতিপরায়ণ কর্মকর্তা শ্যামনগর গ্রামের কাছ থেকে ঘুষ গ্রহণ করে তাদেরকে মিঠা খালের ওপর আধিপত্য বিস্তারের বৈধতা স্বীকার করে নথিপত্র জমা দেয় অফিসে। এতে শতরূপা গ্রামবাসীর অর্থনৈতিক জীবনে নেমে আসে মারাত্মক বিপর্যয়।
ক. সমগ্র ইউরোপ কয়টি যুদ্ধ শিবিরে বিভক্ত হয়ে যায়?
খ. হিটলারকে জার্মান রাজনীতিবিদদের সাথে তুলনা করা হয় না কেন?
গ. মিঠা খাল হাতছাড়া হওয়াতে শতরূপা গ্রামবাসীর চিন্তাচেতনায় কী পরিবর্তন ঘটবে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকের ঘটনা এক ব্যাপক সংঘর্ষের ইঙ্গিত বহন করে - তোমার মতামত বিশ্লেষণ কর।

১০ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. সমগ্র ইউরোপ দুটি যুদ্ধ শিবিরে বিভক্ত হয়ে যায়।

খ. বিশ্বের ইতিহাসে হিটলার ছিলেন এক অনন্য ব্যক্তি। তিনি এমন এক শক্তি যার কোনো ঐতিহাসিক অতীত নেই। তাঁর জার্মানত্বও নকল। যুদ্ধে পরাজয়ের মুহূর্তে তিনি এ জার্মানত্বকেও অস্বীকার করেছিলেন। আত্মসন্তুষ্টির জন্য তিনি ক্ষমতা অধিকারের কাজে আত্মনিয়োগ করেছিলেন। এ কারণে হিটলারকে কোনো জার্মান রাজনীতিবিদের সাথে তুলনা করা যায় না।

গ. মিঠা খাল নিয়ে শতরূপা ও শ্যামনগর গ্রামের মধ্যকার বিরোধ মীমাংসায় প্রশাসন যে পদক্ষেপ গ্রহণ করে তা ছিল বৈষম্যময় এবং একপেশে। ঘুষ গ্রহণ করে প্রশাসন যে সমাধান করে দেয়, এতে শতরূপা গ্রামবাসী তাদের দীর্ঘদিনের ব্যবহৃত খালটি থেকে অন্যায়ভাবে বঞ্চিত হবে। এতে গ্রামবাসীর অর্থনৈতিক কাজকর্ম ব্যাহত হয়ে আয় হ্রাস পাবে। আয় হ্রাসজনিত কারণে তাদের জীবনযাত্রার ওপর একটি বিরূপ প্রভাব পড়বে। আর এ বিরূপ প্রভাব তাদেরকে বিদ্রোহী করতে তুলবে এবং সহিংসতার পথে ঠেলে দিতে পারে।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর ভার্সাই চুক্তির মাধ্যমে জার্মানির ওপর এমনই কিছু শর্ত চাপিয়ে দেওয়া হয়েছিল। যেসব শর্ত জার্মানিকে পর্যুদস্ত করে ফেলে। ফল হিসেবে নাৎসিবাদ প্রকাশ পায় এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সূচনা ঘটে। অনেকে বলে থাকেন যে ভার্সাই চুক্তির মধ্যেই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের বীজ নিহিত ছিল। ঠিক একইভাবে মিঠা খালের অধিকার হাতছাড়া হওয়ার প্রেক্ষাপটে শতরূপা গ্রামের বাসিন্দাদের মধ্যেও বিদ্রোহ বৃদ্ধি পেতে পারে, যার পরিণাম হবে আবারও সংঘাত।

ঘ. উদ্দীপকের ঘটনায় শতরূপা গ্রামটিকে অন্যায়ভাবে তাদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। এরূপ বঞ্চনা সাধারণ মানুষের মাঝে হতাশা সৃষ্টি করে। আর হতাশা থেকে জন্ম নেয় ক্রোধ। যখন অর্থনৈতিক বিপর্যয় নেমে আসে এবং এজন্য দায়ী থাকে অন্যকোনো পক্ষ, তখন এ ক্রোধ রূপান্তরিত হয় জিঘাংসায়। এটি সমাজের সংহতি নষ্ট করে, পরস্পরের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দেয় এবং একসময় তা রূপ নেয় ভয়াবহ সংঘর্ষের।
উদ্দীপকের শতরূপা গ্রাম তাদের নিজ অধিকার থেকে বঞ্চিত হয় প্রশাসনের পক্ষপাতপূর্ণ আচরণের জন্য। পূর্ব থেকেই শ্যামনগর গ্রামের সাথে চলে আসা বিরোধের এ সমাধান কোনো কার্যকরী সমাধান নয়। একপেশে এরূপ একটি সমাধান গ্রাম দুটির মধ্যকার দূরত্বকে আরও বাড়িয়ে দেয়। স্বভাবতই এরূপ দূরত্ব সংঘাতকে উস্কে দিবে। গ্রাম দুটির মধ্যকার এ বিরোধে মারাত্মক রকমের সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়তে পারে। প্রশাসনের পক্ষে সম্ভব নয় সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। আর কারও পিঠ যে সময় দেয়ালের সাথে লেগে যায় তখন তার রুখে দাঁড়ানো ছাড়া কোনো উপায় থাকে না। শতরূপা গ্রামের মানুষের পিঠ বর্তমান পরিস্থিতিতে দেয়ালের সাথে লেগে গেছে। তাদের জীবনমরণের প্রশ্ন হিসেবে এর দখলের প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। আবার শ্যামনগর গ্রামের বাসিন্দাদের কথা হতে পারে যে, আমরা প্রশাসনের মাধ্যমে এর বৈধ অধিকার পেয়েছি, তাই এটি ছেড়ে দেব কেন? এ অবস্থানের কারণে দু পক্ষই সর্বোচ্চ শক্তি নিয়োগ করবে, যা ভয়াবহ সংঘাত ডেকে আনতে পারে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ছিল এমনই এক অসম সন্ধির ফলাফল।

Share:

HSC ইতিহাস ২য় পত্র (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর অধ্যায় ৬ pdf download

এইচএসসি পরীক্ষার পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি
HSC History 2nd Paper Srijonshil question and answer. HSC History 2nd Paper (Srijonshil) Creative Questions pdf download. HSC Itihas 2nd paper Srijonshil Proshno Uttor.

ইতিহাস
দ্বিতীয় পত্র

সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
অধ্যায়-৬

HSC History 2nd Paper
Srijonshil Question and Answer pdf download


উচ্চ মাধ্যমিক ■ ইতিহাস (দ্বিতীয় পত্র) ■ অধ্যায়ভিত্তিক সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ও পরীক্ষা প্রস্তুতি
ষষ্ঠ অধ্যায় : জাতিসংঘ এবং বিশ্বশান্তি

১. রাজু, রনি ও মনি তিনবন্ধু। এলাকায় তাদের যথেষ্ট প্রভাব। যেকোনো বিরোধের উদ্ভব হলে সমাধানের জন্য তাদের ডাক পড়ে। এলাকায় বিরোধ ও রক্তপাত বন্ধ করার জন্য তারা একটি সংগঠন তৈরির উদ্যোগ নেন। তাদের এ মহতী উদ্যোগ দীর্ঘ প্রক্রিয়ায় সমাপ্ত হয়। সৃষ্টি হয় বিশাল স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। দেশের গন্ডি পেরিয়ে আজ তা বিশ্বসংগঠনে পরিণত হয়েছে।
ক. নিরাপত্তা পরিষদের অস্থায়ী সদস্যসংখ্যা কত?
খ. উগ্রজাতীয়তাবাদ কী? ব্যাখ্যা কর।
গ. উদ্দীপকে তিন বন্ধুর কর্মকান্ড- কোন সংস্থাটির উদ্ভব হয়েছে? উক্ত সংস্থাটি গঠনের পটভূমি উল্লেখ কর।
ঘ. বিশ্বব্যাপী শান্তি বজায় রাখতে উদ্দীপকে উল্লিখিত সংস্থাটির সফলতা ব্যর্থতা উল্লেখ কর।

১ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. নিরাপত্তা পরিষদের অস্থায়ী সদস্য সংখ্যা ১০।

খ. জাতীয়তাবাদের উপেক্ষা বা জাতীয়তাবাদ দমনের মধ্যে যেমন যুদ্ধ বিগ্রহের বীজ নিহিত থাকে তেমনি উগ্র জাতীয়তাবোধও যুদ্ধের মনোবৃত্তি সৃষ্টির সহায়তা করে। জার্মানদের মধ্যে একটা ধারণা সব সময় কাজ করত যে জার্মান পিতৃভূমি সকল দেশের শ্রেষ্ঠ এবং জার্মান জাতি অপরাপর জাতি অপেক্ষা শ্রেষ্ঠতর। জার্মানদের মতো এ ধরনের জাতীয়তাবাদ সম্পর্কিত উগ্র চেতনাকে উগ্র জাতীয়তাবাদ বলে। এ উগ্র জাতীয়তাবোধ কেবল জার্মানিতেই নয় ফ্রান্স, ইংল্যান্ড, রাশিয়া, জাপান এবং অন্যান্য দেশেও সংকীর্ণ প্রকাশ পরিলক্ষিত হয়।

গ. উদ্দীপকের তিন বন্ধুর কর্মকান্ডের যে সংস্থাটির উদ্ভব হয়েছে তা হলো জাতিসংঘ। জাতিসংঘ গঠনের পটভূমি নিম্নে বর্ণিত হলো-
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহ ধ্বংসযজ্ঞ দেখার প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা থেকে যুদ্ধরত দেশগুলোর নেতৃবৃন্দ পৃথিবীর রাষ্ট্রসমূহের মধ্যে শান্তি, স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তার বিষয়টি গভীরভাবে অনুভব করেন। যুদ্ধের সময় মিত্রশক্তিবর্গের নেতৃবৃন্দ যুদ্ধকালীন এবং যুদ্ধ পরবর্তী পৃথিবী পুনর্গঠনের বিষয়াদি নিয়ে বেশ কিছু সম্মেলন অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। উক্ত নেতৃবৃন্দ ৭টি সম্মেলন অংশগ্রহণ করে। ১৯৪৫ সালে ইয়াল্টা বৈঠকে ডাম্বারটন অক্স প্রস্তাবগুলো তিন রাষ্ট্রপ্রধান গ্রহণ করেন। পরবর্তী সম্মেলন ১৯৪৫ সালের ২৫ এপ্রিল সানফ্রান্সিসকোতে হয়। এই সম্মেলনে ৪৬টি দেশের প্রতিনিধি যোগদান করে। ১৯৪৫ সালের ২৬ জুন ৪৬টি রাষ্ট্রের প্রতিনিধিগণ আন্তর্জাতিক সংগঠনের জন্য একটি চার্টার গ্রহণের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। ১৯৪৫ সালের ২৪ অক্টোবর জাতিপুঞ্জের সনদ চূড়ান্তভাবে গৃহীত হয়। জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠার প্রাথমিক সদস্য সংখ্যা ছিল ৫০।
পরিশেষে বলা যায় যে, উদ্দীপকের তিন বন্ধুর ন্যায় বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় চার্চিল, রুজভেল্ট ও স্ট্যালিন জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।

ঘ. উদ্দীপকে বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় যে সংস্থাটির ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে সে সংস্থাটির নাম জাতিসংঘ। জাতিসংঘের যেমন সফলতা আছে তেমন ব্যর্থতাও আছে। বিশ্ব শান্তি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে জাতিসংঘ জন্ম নিয়েছে। এ মহান দায়িত্ব পালনে জাতিসংদের সফলতার চেয়ে ব্যর্থতাই অনেকাংশে বেশি পরিলক্ষিত হয়। জাতিসংঘের আন্তরিক প্রচেষ্টায় লিবিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ইন্দোচীন .ইত্যাদি জনপদ স্বাধীন হতে পেরেছে। জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় বিশ্বের দুই পরাশক্তি পারমাণবিক অস্ত্র ধ্বংস, অস্ত্র প্রতিযোগিতা হ্রাস এবং পারমাণবিক অস্ত্রমুক্ত বিশ্ব গড়ার লক্ষ্য চুক্তি করেছে। উপনিবেশ বিলোপ, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা, মানবাধিকার রক্ষা, আর্থসামাজিক উন্নয়ন, শরনার্থী সমস্যার সমাধান, পরিবেশ সংরক্ষণ, জনসংখ্যা ও স্বাস্থ্য সুরক্ষামূলক কার্যক্রমসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে জাতিসংঘ কাজ করে যাচ্ছে। তবে জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠার পর থেকে সব মহল এই প্রতিষ্ঠানের উপর আশাবাদী ছিল। কিন্তু জাতি সংঘ অনেকাংশেই ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছে। কিউবা-বার্লিন, লেবানন সংকট, ইসরাইল-ফিলিস্তিনি, জন্ম কাশ্মীর সমস্যা সমাধানে জাতি সংঘ ব্যর্থ হয়েছে।

২. বাংলাদেশ ১৯৪৭ সালে ওআইসির সদস্যপদ লাভ করে। প্রথম থেকেই ওআইসির সদস্য হিসেবে বাংলাদেশ সক্রিয় ভূমিকা পালন করে আসছে। অন্যদিকে বাংলাদেশও ওআইসি। ও তার সদস্য দেশগুলোর কাছ থেকে বিভিন্ন সহযেগিতা পাচ্ছে। বিশ্বের মুসলিম প্রধান দেশগুলোর একটি আন্তর্জাতিক সংগঠন হলো ওআইসি। এর সদস্য সংখ্যা ৫৭। এর সদর দপ্তর সৌদি আরবের জেদ্দায়। এর প্রধান লক্ষ্য হলো সদস্য দেশগুলোর মধ্যকার ঐক্য ও সংহতি বজায় রাখা, নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং সারা পৃথিবীর মুসলমানদের কল্যাণে কাজ করা।
ক. IMF এর পূর্ণরূপ কী?
খ. ভেটো ক্ষমতা কী?
গ. উদ্দীপকের উল্লিখিত সংস্থা ছাড়াও বাংলাদেশ ১৯৪৭ সালে আর কোন আন্তর্জাতিক সংস্থার সদস্য পদ লাভ করে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. তুমি কি মনে কর উদ্দীপকের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ সংস্থাটি বিশ্বশান্তি রক্ষায় প্রশংসনীয় ভূমিকা পালন করছে? বিশ্লেষণ কর।

২ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. IMF এর পূর্ণরূপ হলো International Monetary Fund.

খ. জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের ৫টি স্থায়ী সদস্যরাষ্ট্রের ভেটো (Veto) ক্ষমতা রয়েছে। ল্যাটিন শব্দ Veto অর্থ আমি এটা মানি না। কার্যসূচির ব্যাপারে সদস্যদের ভোটাধিক্যে যেকোনো প্রস্তাব গৃহীত হয়। কিন্তু নিরাপত্তা পরিষদের গুরুত্বপূর্ণ নীতি সংক্রান্ত বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হলে স্থায়ী পাঁচটি রাষ্ট্রের সদস্যের সম্মতি প্রয়োজন হয়। কোনো এক স্থায়ী সদস্য কোন বিষয়ে আপত্তি প্রকাশ করলে সে বিষয়ে নিরাপত্তা পরিষদ আর অগ্রসর হতে পারে না। এটিই Veto ক্ষমতা নামে পরিচিত।

গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত সংস্থা ছাড়াও বাংলাদেশ ১৯৭৪ সালে জাতিসংঘ নামক আন্তর্জাতিক সংস্থার সদস্যপদ লাভ করে। ১৯৪৫ সালের ২৪ অক্টোবর সকল প্রতিনিধি রাষ্ট্রের এক মহা সম্মেলনের মধ্য দিয়ে বিশ্ব ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ সংগঠন জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠা লাভ করে। বর্তমানে এর সদস্যসংখ্যা ১৯৩। বাংলাদেশ জাতিসংঘের সদস্যপদ লাভ করে ১৯৭৪ খ্রিস্টাব্দে ১৩৬ তম সদস্য হিসেবে। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন জাতিসংঘের উল্লেখ করার মতো কোনো ভূমিকা ছিল না। তবে যুদ্ধবিধবস্ত বাংলাদেশের অবকাঠামোগত উনণয়নে ও বিপুলসংখ্যাক উদ্বান্তুর সহযোগিতায় জাতিসংঘের উদ্যোগ প্রশংসনীয়। জাতিসংঘ বাংলাদেশের দারিদ্র বিমোচন এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের মাধ্যমে মানুষের জীবনমানের উন্নয়নের প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। ত্রাণ ও পুনর্বাসন প্রকল্পগুলোতে রাষ্ট্রীয় সাবভৌমত্ব, সমমর্যাদা ও সাম্যের ভিত্তিতে বাংলাদেশে বিভিন্ন রাষ্ট্রের সাথে বৈদেশিক কার্যক্রম নির্ধারণ করেছে।

ঘ. হ্যাঁ, আমি মনে করি উদ্দীপকের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ জাতিসংঘ নামক সংস্থাটি বিশ্ব শান্তি রক্ষায় প্রশংসনীয় ভূমিকা পালন করছে। জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠার অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য ছিল সদস্য রাষ্ট্রগুলোর নিরাপত্তা রক্ষা করা ও বিশ্বশান্তি নিশ্চিত করা। ২০১০ সাল পর্যন্ত এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, এ সময়কালে জাতিসংঘ ৫৫টি শান্তিরক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করেছে এবং ১৫টি শান্তিরক্ষা বাহিনী বিভিন্ন দেশে, সক্রিয়ভাবে কার্যকর রয়েছে। এ সময়কালের মধ্যে প্রায় ১৭২টি যুদ্ধ সম্ভাবনার সমস্যা আলোচনার মাধ্যমে নিরসন করেছে। যার মধ্যে ৮০টি সমস্যা বিদ্যমান দেশগুলোকে প্রায় যুদ্ধে জড়িয়ে ফেলেছিল। এর মধ্যে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যকার কারগিল সংঘর্ষ অন্যতম।
এছাড়া জাতিসংঘ ১৯৫০ সালে কোরিয় সংকট, ১৯৫৬ সালে সুয়েজ খাল সংকট, আফগানিস্তান থেকে সোভিয়েত সৈন্য প্রত্যাহার, ভিয়েতনাম যুদ্ধের অবসান, ইরান-ইরাক যুদ্ধ, লেবানন সংকট, এলসালভেদরে গৃহযুদ্ধ অবসান, বসনিয়া-হার্জেগোভিনার সংকট প্রভৃতি আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছে। বিশ্বশান্তি রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখায় ১৯৮৮ সালে জাতিসংঘ নোবেল শান্তি পুরস্কার লাভ করে।

৩. ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে যুদ্ধের করাল গ্রাস থেকে মুক্ত করা, মানবাধিকার রক্ষা, প্রত্যেক রাষ্ট্র অপর রাষ্ট্রের রাজনৈতিক স্বাধীনতা রক্ষার আন্তরিক হওয়া ইত্যাদি উদ্দেশ্য নিয়ে একটি বিশ্বসংস্থা গঠিত হয়।
ক. ফ্যাসিবাদের জনক কে?
খ. প্রথম বিশ্বযুদ্ধের প্রত্যক্ষ কারণ লিখ।
গ. উদ্দীপকে সংস্থা তোমার পাঠ্যবইয়ের সংস্থার সাথে মিল করে ব্যাখ্যা কর।
ঘ. বিশ্বশান্তি রক্ষায় সংস্থাটির সফলতা ও ব্যর্থতা পর্যালোচনা কর।

৩ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. ফ্যাসিবাদের জনক মুসোলিনি।

খ. ইউরোপের উত্তেজনাকর রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে অস্ট্রিয়ার যুবরাজ ফার্দিনান্দ স্বস্ত্রীক সার্বিয়ায় ঘুরতে যান। সার্বিয়ার সাথে অস্ট্রিয়ার সম্পর্ক খারাপ থাকার কারণে সার্বিয়ার আততায়ীগণ যুবরাজকে স্বস্ত্রীক হত্যা করে। এই ঘটনার প্রেক্ষিতে অস্ট্রিয়া সার্বিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। ১৯১৪ সালের ২৮শে জুলাই এর মাধ্যমেই প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সূচনা ঘটে।

গ. উদ্দীপকের সংস্থা আমার পাঠ্যবইয়ের জাতিসংঘ নামক সংস্থার মিল রয়েছে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সমাপ্তির পর জাতিপুঞ্জ প্রতিষ্ঠিত (২৪ অক্টোবর, ১৯৪৫ খ্রিঃ) হলেও, এর উদ্যোগ শুরু হয়েছিল বেশ কয়েকবছর পূর্বেই। ১৯৪১ খ্রিস্টাব্দের জুন মাসে ইংল্যান্ড, কানাডা, নিউজিল্যান্ড, অস্ট্রেলিা ও দক্ষিণ আফ্রিকার প্রতিনিধিগণ লন্ডনে সমবেত হয়ে একটি ঘোষণাপত্র মারফৎ বিশ্বের শান্তি ও নিরাপত্তর জন্য একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা গঠনের প্রস্তাব করেন। এই ঘোষণাপত্র 'লন্ডন ঘোষণাপত্র' নামে পরিচিত। এর দু-মাস বাদে ১৯৪১ খ্রিস্টাব্দের ৯ আগস্ট মার্কিন প্রেসিডেন্ট রুজভেল্ট ও ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিল উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরে ‘প্রিন্স অব ওয়েলস' নামে এক যুদ্ধজাহাজে গোপন বৈঠকে মিলিত হন। যুদ্ধোত্তর পর্বে বিশ্বশান্তি ও বিভিন্ন জাতির আত্মনিয়ন্ত্রাধিকার সম্পর্কে তাঁরা এক ঘোষণাপত্র প্রকাশ করেন। এই ঘোষণাপত্র 'আটলান্টিক সনদ' নামে পরিচিত। এই সনদে ভবিষ্যৎ জাতিপুঞ্জের বীজ সুপ্ত ছিল। এরপর দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্নর রাষ্ট্রের মধ্যে আলাপ-আলোচনার পর ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দের ২৫শে এপ্রিল থেকে ২৬শে জুন পার্যন্ত আমেরিকার সানফ্রান্সিসকো শহরে একটি অধিবেশন বসে। সেখানে বিশ্বের ৫০টি দেশের প্রতিনিধিবর্গ সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের উদ্দেশ্য নীতি, গণতন্ত্র প্রভৃতি বিভিন্ন বিষয়ে বিশদ ও পুঙ্খানুপুঙ্খ আলোচনা করে একটি 'সনদ' তৈরি করেন। ২৬শে জুন ৫১টি রাষ্ট্র সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের সনদে প্রথম স্বাক্ষর করে। ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দের ২৪শে অক্টোবর থেকে এই সনদ আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যকরী হয়, অর্থাৎ এই দিনটিকে সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের প্রতিষ্ঠা দিবস হিসেবে ধরা হয়।

ঘ. বিশ্বশান্তি রক্ষায় সংস্থাটি অর্থাৎ জাতিসংঘের সফলতা ও ব্যর্থতা দুটিই পরিলক্ষিত হয়। নিচে জাতিসংঘের সফলতাসমূহ তুলে ধরা হলো- আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বিশ্বশান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষায় জাতিসংঘের ভূমিকা অনেকাংশে প্রশংসার দাবি রাখে। ইন্দোনেশিয়া, লিবিয়া, নামিবিয়া প্রভৃতি রাষ্ট্র জাতিসংঘের ঐকান্তিক প্রচেষ্টা ও বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখার ফলেই স্বাধীনতার স্বাদ উপভোগ করছে। লাওস, কঙ্গো ও শান্তিরক্ষা কার্যক্রম গ্রহণ করে সেখানে শান্তি স্থাপন জাতিসংঘের বিরাট একটি সাফল্য। জাতিসংঘের মধ্যব্যবস্থতায় সুয়েজ এলাকা থেকে ১৯৫৬ খ্রিষ্টাব্দে ইসরাইল, ফ্রান্স ও ব্রিটেন সেনাবাহিনী প্রত্যাহার করলে জাতিসংঘ তার জরুরি বাহিনী মোতায়েন করলে সুয়েজ সংকটের অবসান ঘটে। পাক-ভারত যুদ্ধ (১৯৬৫ খ্রিষ্টাব্দ) জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় অবসান হয়। আরব-ইসরাইল যুদ্ধবিরতি (১৯৬৭ খ্রিষ্টাব্দ) জাতিসংঘের অন্যতম সফল প্রয়াস। লেবানন, ইসরাইল ও ফিলিস্তিন সংকট ১৯৭৭ খ্রিষ্টাব্দে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা বাহিনী মোতায়েনের ফলে স্তিমিত হয়। গ্রিস-তুরস্ক বিরোধ জাতিসংঘের মধ্যবস্থায় নিষ্পত্তি হয়, যা জাতিসংঘের উল্লেখযোগ্য সাফল্য। জাতিসংঘের ব্যর্থতাসমূহ হলো- বিশবশান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষায় সম্মিলিত জাতিসংঘের অবদান যেমন অনস্বীকার্য, তেমনি বিশ্বের শান্তিকামী মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার ভরসা ও আশ্রয়স্থল হিসেবে জাতিসংঘের ব্যর্থতা এর মর্যাদা ও গৌরবকে অনেক ক্ষেত্রে ম্লান করে দিয়েছে। সংঘাত ও সংঘর্ষে, আক্রমণ ও নির্যাতনে জাতিসংঘকে আজ আশ্রয় ও ন্যায়বিচারের আশ্রয়স্থল হিসেবে বিবেচনা করা যায় না। জাতিসংঘের উপস্থিতিতেই বিশ্বের অনেক অঞ্চলে আজ অন্যায় ও অবিচার চলছে। বৃহৎ রাষ্ট্র ক্ষুদ্র রাষ্ট্রকে আক্রমণ করতে, মানবাধিকারকে পদদলিত করতে কুণ্ঠিত হচ্ছে না। জাতিসংঘ অসহায় নির্বাক ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। কিন্তু বৃহৎ শক্তি জাতিসংঘকে কোনো তোয়াক্কা করছে না। জাতিসংঘের কার্যকারিতা ও সাফল্য সম্পর্কে আজ বিশ্ব জনমনে ব্যাপক সংশয় ও অনাস্থা দেখা দিয়েছে। বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠা আজ সুদূরপরাহত। বিশ্বের শান্তিপ্রিয় মানুষ আজ আণবিক মারণাস্ত্রের ভয়াবহতায় ভবিষ্যতের দুঃস্বপ্নে চরম অশান্তি ও উৎকণ্ঠায় সময় অতিক্রম করছে। ফিলিস্তিন সমস্যা, ইন্দোচীন সমস্যা, লেবাননের গৃহযুদ্ধ, ইরিত্রিয়ার স্বাধীনতা সংগ্রাম, আফগান সমস্যা, ইরাক সমস্যা, আফ্রিকার বর্ণবাদী সমস্যা, শরণার্থী সমস্যা, বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে মানবাধিকারের অবাধ ও নির্লজ্জ লঙ্ঘন, বুভুক্ষ ও নির্যাতিত-নিপীড়িত মানবতার করুণ আর্তনাদ বিশ্বশান্তি ও নিরাপত্তার ইস্যুকে সুদূরপরাহত করে রেখেছে।

৪. জেলার প্রভাবশালী দু নেতা আখতারুজ্জামান ও জহিরউদ্দিন ভিন্ন দলের মতাদর্শে থাকলেও এলাকার মানুষের শান্তি ও নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে এক বৈঠকে মিলিত হন। উক্ত বৈঠকে জেলার আরও কিছু ভিন্ন মতাদর্শী দলের নেতা উপস্থিত হয়ে ঐকমত্যের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেন- রাজনৈতিক কর্মকান্ড কোনোভাবেই এলাকার মানুষের অর্থনৈতিক, সামাজিক, ধর্মীয় ও নিরাপত্তা বিষয় বিঘ্নিত করবে না। বৈঠক পরবর্তী সময়ে উক্ত জেলার সার্বিক উন্নয়নের লক্ষ্যে সকলের অংশগ্রহণে 'ডিআইবি' নামক একটি স্বেচ্ছাসেবী সমিতি গঠন করা হয়।
ক. দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণে কোন সংগঠনটির অকাল মৃত্যু ঘটে?
খ. জাতিসংঘের প্রস্তাবনার বক্তব্য বুঝিয়ে লেখ।
গ. আখতারুজ্জামান ও জহিরউদ্দিনের শান্তিমুখী পদক্ষেপ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন কোন দুই বিশ্বনেতার সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. মানুষের শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষায় উদ্দীপকের 'ডিআইবি' নামক সমিতির প্রতিষ্ঠা এক ঐতিহাসিক পদক্ষেপ- তোমার মতামত বিশ্লেষণ কর।

৪ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণে জাতিপুঞ্জ সংগঠনটির অকাল মৃত্যু ঘটে।

খ. জাতিসংঘের ১১১টি ধারা ও একটি প্রস্তাবনা রয়েছে। জাতিসংঘের প্রস্তাবনায় বলা হয় যে, ভাবী প্রজন্মকে যুদ্ধের বিভীষিকা থেকে রক্ষা ও মৌলিক মানবাধিকার ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করতে জাতিসংঘ দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। বৃহত্তর স্বাধীনতার প্রেক্ষাপটে সামাজিক অগ্রগতি, উন্নততর জীবনযাত্রার মান, জাতিতে জাতিতে সুপ্রতিবেশী সুলভ আচরণের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করা জাতিসংঘের লক্ষ্য। সব জাতির সমান অধিকার ও আত্মনিয়ন্ত্রণের দাবি স্বীকার করে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে সহযোগিতা ও সহাবস্থান বৃদ্ধি করা জাতিসংঘের উদ্দেশ্য।

গ. আখতারুজ্জামান ও জহিরুদ্দিনের শান্তিমুখী পদক্ষেপ আমাদেরকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন সময়ে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী চার্চিল ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট রুজভেল্টের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়।
জাপানের সাথে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরোধ এবং হিটলারের সোভিয়েত ইউনিয়ন আক্রমণ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সাধারণ চরিত্রে পরিবর্তন সূচনা করে। এ সংকটময় পরিস্থিতি বিশ্ব নেতৃবৃন্দকে ভাবিয়ে তুলে। এছাড়াও প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহতা এবং জাতিপুঞ্জের ব্যর্থতা নতুন একটি কার্যকরী আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রয়োজনীয়তাকে জোরালো করে। এ লক্ষ্যে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিল ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডি. রুজভেল্ট এক আলোচনা সভায় মিলিত হন। আটলান্টিক মহাসাগরে ব্রিটিশ রণতরীতে এ সম্মেলন হয়। এ সম্মেলনে যুদ্ধের বর্তমান পরিস্থিতি এবং ভবিষ্যৎ করণীয় সম্পর্কে আলোচনা হয়। যার মধ্যে প্রধান ছিল ভবিষ্যৎ বিশ্ব নিরাপত্তা। মূলত এ সম্মেলনের মাধ্যমে যে ঘোষণা দেওয়া হয় তা ইতিহাসে আটলান্টিক সনদ নামে পরিচিত। এটি জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠার প্রথম আনুষ্ঠানিক পদক্ষেপ। জাতিসংঘের প্রতিষ্ঠার পেছনে এ সনদ এক বিরাট মাইলফলক হিসেবে কাজ করে। এর ওপর নির্ভর করেই পরবর্তীতে অন্যান্য সম্মেলনও ঘোষণা হয়, যা জাতিসংঘকে পূর্ণতা দেয়। উদ্দীপকের আখতারুজ্জামান ও জহিরুদ্দিনের পদক্ষেপও এর সাথে সংগতিপূর্ণ।

ঘ. উদ্দীপকের জেলাটির সার্বিক পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার জন্য। মানুষের শান্তি ও নিরাপত্তা বিঘ্নিত হচ্ছে এ কারণেই। এরূপ অবস্থা সামাজিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক, শিক্ষা, ধর্মীয় ইত্যাদি সর্বক্ষেত্রেই নেতিবাচক প্রভাব বিস্তার করছে। জনজীবনকে বিপর্যস্ত করার জন্য এ পরিস্থিতিই যথেষ্ট। অবস্থার নেতিবাচক প্রভাব উপলব্ধি করতে পেরে প্রভাবশালী দু নেতা নিজেদের অস্তিত্ব ও শৃঙ্খলা রক্ষার্থে যে পদক্ষেপ নিয়েছেন তা সত্যিই এক ঐতিহাসিক পদক্ষেপ। যুদ্ধ বিপর্যস্ত পৃথিবীর শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষার জন্য এমনই এক উদ্যোগ ছিল জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠা। সমালোচনা সত্ত্বেও জাতিসংঘ বিগত সাত দশকে বিশ্বশান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষার্থে যে অবদান রেখেছে তা প্রশংসার দাবিদার। বিশ্ব বড় বড় কয়েকটি যুদ্ধের দ্বারপ্রান্ত থেকে ফিরে আসতে সমর্থ হয়েছে জাতিসংঘের হস্তক্ষেপে। এছাড়াও শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সংস্কৃতি, নারীর ক্ষমতায়ন, আন্তর্জাতিক সহযোগিতা, বাণিজ্য ও শিল্প উন্নয়নে জাতিসংঘ যে অবদান রেখেছে তা বলাই বাহুল্য। উদ্দীপকের জেলাটির রাজনৈতিক নেতাদের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত 'ডিআইবি' নামক স্বেচ্ছাসেবী সমিতিটিও জেলার পরিসীমার মধ্যে জাতিসংঘের ন্যায় ভূমিকা পালন করতে পারে। ডিআইবি হয়তবা জাতিসংঘের মতো ক্ষমতাসম্পন্ন প্রতিষ্ঠান হওয়ার স্বপ্নও দেখতে পারে না, কিন্তু এর ক্ষেত্রের মধ্যে এটি সর্বাধিক অবদান রাখতে সক্ষম হতে পারে। আর এ সমিতিটি খুব সহজেই জেলার রাজনৈতিক শৃঙ্খলা রক্ষা করে শান্তি প্রতিষ্ঠায় অবদান রাখতে পারে। এরূপ কাজে সমর্থ হলে সংস্থাটি একটি ঐতিহাসিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হতে পারে এবং এর প্রতিষ্ঠার ঘটনাটিও একটি ঐতিহাসিক ঘটনা হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে।

৫. শুভনগর ইউনিয়নে সাতটি গ্রামের মানুষ বিভিন্ন সমস্যায় মানবেতর জীবনযাপন করছে বহুদিন ধরে। এক গ্রামের মানুষ অন্য আর এক গ্রামের ওপর বলপূর্বক যে আধিপত্য বিস্তার করছে তা এখন প্রধান সমস্যা হয়ে দাঁড়ি়য়েছে। এ অবস্থায় গ্রামের হালিম মেম্বার এরূপ অরাজকতার অবসান ঘটিয়ে স্থায়ী শান্তি আনতে খুবই তৎপর কিন্তু সমাধান খুঁজে পাচ্ছেন না।
ক. উইনস্টন চার্চিল ও রুজভেল্ট কোন রণতরীতে গোপন বৈঠক করেছিল?
খ. আটলান্টিক সনদে ঘোষিত গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলোর যুদ্ধের লক্ষ্য বুঝিয়ে লেখ।
গ. হালিম মেম্বারের তৎপরতায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন আটলান্টা সনদের লক্ষ্য কীভাবে সমাধান এনে দিতে পারে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. তুমি কি মনে কর উক্ত সমাধান পন্থা শুভনগর ইউনিয়নের সাতটি গ্রামের মাঝে ঐক্যকে সুদৃঢ় করতে সহায়ক? তোমার মতামত বিশ্লেষণ কর।

৫ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. উইনস্টন চার্চিল ও রুজভেন্ট 'অগাস্টা' ও 'প্রিন্স অব ওয়েলস' রণতরীতে গোপন বৈঠক করেছিল।

খ. আটলান্টিক সনদে ঘোষিত গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলোর যুদ্ধের লক্ষ্য হলো-
১. যুদ্ধমান গণতন্ত্র কোনো আগ্রাসন, কোনো দেশের ভূমি দখলের জন্য এ যুদ্ধ করছে না।
২. যুদ্ধরত গণতান্ত্রিক শক্তিগুলো প্রতিদেশের জনগণের ইচ্ছানুযায়ী সরকার গঠনের অধিকারকে স্বীকৃতি জানাচ্ছে।
৩. যে দেশগুলোকে বলপূর্বক অধিকার করা হয়েছে, সে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা ও পুনঃপ্রতিষ্ঠা ঘোষণাকারীদের উদ্দেশ্য।
৪. এ যুদ্ধে ফ্যাসিস্ট শক্তির হাত থেকে শুধু মুক্তিলাভ নয়, যোগদানকারী দেশগুলোর অর্থনৈতিক উন্নয়ন, শ্রমিকদের অবস্থার উন্নয়ন অন্যতম উদ্দেশ্য।

গ. শুভনগর ইউনিয়নের সাতটি গ্রামের বাসিন্দাদের সমস্যা সমাধানে হালিম মেম্বার তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন। এলাকায় বিদ্যমান গ্রামবাসীর দ্বন্দ্ব-কলহ এবং এক গ্রামের ওপর অন্য গ্রামের আধিপত্য এখানকার প্রধান সমস্যা। প্রতিটি গ্রামের এবং এর বাসিন্দাদের স্বাধীন সত্তার যে অধিকার, তা রক্ষিত হচ্ছে না বলেই তাদের মধ্যে এরূপ সমস্যা প্রধান হয়ে দেখা দিয়েছে। কিন্তু হালিম মেম্বার সাহেব এর কোনো সমাধান খুজে পাচ্ছেন না। এক্ষেত্রে তার সহায়ক হতে পারে আটলান্টিক সনদ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন বিশ্বশান্তি ও নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ও ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী মহাসাগরে ব্রিটিশ রণতরীতে এক গোপন বৈঠকে মিলিত হন। ১৯৪১ সালের এ বৈঠকে বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় আগ্রাসন বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে শান্তিরক্ষায় কয়েকটি প্রস্তাব গৃহীত হয় যা আটলান্টিক সনদ নামে পরিচিত। এ সম্মেলনটিই ছিল জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠার প্রথম আনুষ্ঠানিক কোনো পদক্ষেপ। আর জাতিসংঘের সফলতা আমাদের সবারই জানা আছে। তাই এ থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে হালিম মেম্বার সাহেব এরূপ একটি সম্মেলন আহবান করতে পারেন। ইউনিয়নের গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে এতে ইউনিয়নের স্থায়ী শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষায় কার্যকরী একটি সংস্থা গঠন করা যেতে পারে। এর মাধ্যমে সমস্যার সমাধান সম্ভব হতে পারে।

ঘ. দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে বিশ্বশান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষার্থে একটি আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হয়। এ সময় জার্মানি, ইতালি ও জাপানের আগ্রাসী ভূমিকা এবং জাতিপুঞ্জের ব্যর্থতা সবাইকে এ বিষয়ে ভাবিয়ে তোলে। ১৯৪১ সালে আটলান্টিক মহাসাগরে ব্রিটিশ রণতরী প্রিস অব ওয়েলসে ব্রিটিশ ও মার্কিন নেতৃবৃন্দ এক বৈঠকে মিলিত হন, যা থেকেই উৎপত্তি হয় জাতিসংঘের। জাতিসংঘ বিশ্বশান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষায় এবং দেশসমূহের মধ্যকার সমস্যা সমাধানে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে আসছে। এ আদলে শুভনগর ইউনিয়নে যদি একটি নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়, যা প্রতিটি গ্রামের অভিন্ন স্বার্থ সংরক্ষণে সহায়ক হবে, তবে তা একটি মাইলফলক হিসেবে কাজ করবে। জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠার পূর্বে যেসব দেশের মধ্যে যুদ্ধাবস্থা বিরাজ করত সেসব দেশও এরপর পরস্পর সহযোগী দেশে পরিণত হয়েছে। যদি শুভনগর ইউনিয়নের গ্রামসমূহ এরূপ একটি শক্তিশালী ও কার্যকর প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে সমর্থ হয় তবে তাদের মধ্যেও সৌহার্দ বিরাজ করবে বলে আশা করা যায়। পারস্পরিক সৌহার্দ এক ধরনের ঐক্যকে মজবুত করে। এরূপ ঐক্য তখনই আশা করা যায়, যখন গ্রামসমূহের মধ্যে সম্ভাব বিরাজ করবে। পারস্পরিক সংঘাত, আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা ও কলহ কেবল অনৈক্যকেই বাড়ায়। আর যদি তা দূর করা সম্ভব হয় তবে ঐক্য বৃদ্ধি পায়। শুভনগর ইউনিয়নের গ্রামবাসীর মধ্যে যখন হানাহানি বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হবে, তখনই কেবল ঐক্যের আশা করা যাবে।

৬. উসমান সাহেব একজন বিশিষ্ট নাগরিক। দেশের চলমান রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার সমাধান খুঁজতে তিনি বিখ্যাত তিনটি সম্মেলন নিয়ে গবেষণা শুরু করেছেন। এ সম্মেলন তিনটির প্রথমটি আটলান্টিক সম্মেলন, দ্বিতীয়টি ইয়ান্টা সম্মেলন এবং তৃতীয়টি পটাসডাম সম্মেলন।
ক. কত সালে চার্চিল ও রুজভেল্টের মধ্যে গোপন বৈঠক সংঘটিত হয়?
খ. দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপের নেতারা কেন ইয়াল্টায় সমবেত হন?
গ. উসমান সাহেবের গবেষণা কীভাবে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা দূর করবে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উসমান সাহেবের গবেষণার মাঝে নিহিত আছে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য- তোমার মতামত বিশ্লেষণ কর।

৬ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. ১৯৪১ সালের ৯ আগস্ট চার্চিল ও রুজভেল্টের মধ্যে গোপন বৈঠক সংঘটিত হয়।

খ. দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপের পুনর্গঠনের জন্য নেতারা ইয়ান্টায় সমবেত হন। ১৯৪৫ সালে ফেব্রুয়ারি মাসে তিন রাষ্ট্রের প্রধান স্ট্যালিন, চার্চিল ও রুজভেল্ট রাশিয়ার ক্রিমিয়া প্রদেশের ইয়াল্টা নগরীতে সমবেত হন। এ সম্মেলনটি যুদ্ধোত্তর পৃথিবী পুনর্গঠনের জন্য ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ সম্মেলনে তিন রাষ্ট্রপ্রধানকে সহায়তার জন্য বিভিন্ন পররাষ্ট্র মন্ত্রীরা এসেছিলেন। ইয়াল্টার মতো এত জাঁকজমকপূর্ণ মিত্রপক্ষীয় সম্মেলন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন আর দেখা যায়নি। মোটকথা, ইয়াল্টার সম্মেলন যুদ্ধোত্তর পৃথিবীর পুনর্গঠনের ভাগ্য নিয়ন্তা বলে ইউরোপের নেতারা এ সম্মেলনে যোগ দেন।

গ. উসমান সাহেবের গবেষণা হলো জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখা তিনটি বিখ্যাত সম্মেলন কীভাবে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা দূর করতে পারে। আটলান্টিক সম্মেলন, ইয়াল্টা সম্মেলন এবং পটাসডাম সম্মেলন এ তিনটি সম্মেলন নিয়ে তিনি গবেষণা করছেন। দেশের চলমান রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা দূর করতে তার গবেষণা যেভাবে সমাধান দিতে পারে তার মধ্যে প্রধান হলো-
১. আটলান্টিক সম্মেলনের প্রধান বৈশিষ্ট্য ছিল এতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। এছাড়াও ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর উন্নয়ন ও পুনর্বাসন এবং ভবিষ্যৎ বিশ্বনিরাপত্তা রক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপের কথা বলা হয়েছে। এ নীতি অনুসরণ করে দেশে শান্তিশৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা এবং অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করা সম্ভব। এর সাথে এ সম্মেলনের শিক্ষাকে অনুসরণ করে ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা যায়।
২. ইয়াল্টা সম্মেলনে বিভিন্ন মতবাদের অনুসারীদের মধ্যে বিরোধ নিষ্পত্তি হয় এবং ক্ষমতার ভারসাম্য রক্ষা করা হয়। এ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে দেশে ক্ষমতাসীন ও বিরোধী দলের মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য রক্ষিত হতে পারে।
৩. পটাসডাম সম্মেলনে প্রধানত স্থির হয় যুদ্ধ পরবর্তী জার্মানি ও অক্ষশক্তির সাথে কীরূপ ব্যবহার করা হবে সে সম্পর্কে। একটি শান্তিপূর্ণ বিশ্ব প্রতিষ্ঠায় এটি প্রয়োজনীয় ছিল। ঠিক একইভাবে এ সম্মেলনের শিক্ষাকে অনুসরণ করে দেশে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা করা যায়।
এভাবে তিনটি সম্মেলনের শিক্ষা অস্থিতিশীল পরিবেশে শান্তি প্রতিষ্ঠায় সহায়ক হতে পারে।

ঘ. গবেষণা হলো কোনো প্রতিষ্ঠিত সত্য থেকে নতুন কিছু বের করে আনা। বিভিন্ন ধরনের গবেষণার লক্ষ্য, উদ্দেশ্য ও প্রকৃতি বিভিন্ন হয়ে থাকে। উদ্দীপকের উসমান সাহেব যে গবেষণা করছেন তা এক ধরনের ঐতিহাসিক সামাজিক গবেষণা। এরূপ গবেষণা পরিচালনা করা হয় ঐতিহাসিক কোনো ঘটনা থেকে বর্তমান সামাজিক সমস্যার। সমাধান করতে। উসমান সাহেবের গবেষণাটি মূলত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন বাস্তবতার নিরিখে কীভাবে শান্তিপ্রতিষ্ঠিত হয়েছিল তা বিশ্লেষণ করে বর্তমানে দেশে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শুরুটা ছিল প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর সংঘটিত কিন্তু ভুলের ফল। এছাড়াও জাতিপুঞ্জের ব্যর্থতাও ছিল এর অন্যতম কারণ। এ বাস্তবতায় বিশ্ব নেতৃবৃন্দ বিশ্বের শান্তি ও নিরাপত্তার স্বার্থে বেশকিছু গোপন ও প্রকাশ্য সম্মেলনে মিলিত হন। প্রথম দিককার এরূপ একটি সম্মেলন ছিল আটলান্টিক সম্মেলন বা সনদ। পর্যায়ক্রমিক এরূপ আরও দুটি সম্মেলন হলো ইয়াল্টা সম্মেলন ও পঢ়াসডাম সম্মেলন। এসব সম্মেলনের মাধ্যমে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ক্ষয়ক্ষতি কমাতে এবং যুদ্ধ পরবর্তী পুনর্গঠনে বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা ছিল। বিভিন্ন দেশের মধ্যকার বিরোধ নিরসন এবং ক্ষমতার ভারসাম্য রক্ষা করে কীভাবে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা যায় এবং জাতিসংঘকে শক্তিশালী করা যায়, সেসব বিষয় এ সম্মেলনে গুরুত্ব পায়। এ বিষয়গুলোকে ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করলে বিশেবর যেকোনো অঞ্চলে কোনো না কোনো সমস্যার সাথে সাদৃশ্য পাওয়া যাবে। গবেষণার মাধ্যমে তা সেসব সমস্যার সমাধানে কাজে লাগানো সম্ভব। এতে খুব সহজেই শান্তিপ্রতিষ্ঠা করা যাবে। উসমান সাহেবও এ লক্ষ্যেই কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি দেশের চলমান রাজনৈতিক সমস্যা সমাধানে এ তিনটি সম্মেলনের শিক্ষাকে কাজে লাগাতে তার গবেষণাকর্ম পরিচালনা করছেন। তার গবেষণার মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হলো রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা।

HSC ইতিহাস ২য় পত্র (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর অধ্যায় ৬ pdf download

৭. শালিখা উপজেলার নূর-উল চেয়ারম্যান নিজ এলাকার সকল ধর্মের মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে বেশকিছু কর্মকান্ড পরিচালনা করছেন। বেকার যুবক-যুবতীদের জন্য কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করছেন। সৎ মানুষ হিসেবে সুখ্যাতি থাকায় পার্শ্ববর্তী বুনাগাতি ইউনিয়নের বিভিন্ন বিবাদ মেটানোর জন্য বিভিন্ন প্রভাবশালী ব্যক্তিরাও তার কাছে ছুটে আসে মীমাংসার আশায়।
ক. চার্চিল ও রুজভেল্টের মধ্যে সংঘটিত বৈঠক কী নামে পরিচিত?
খ. বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে জাতিসংঘের ভূমিকা ব্যাখ্যা কর।
গ. নূর-উল চেয়ারম্যান বুনাগাতি ইউনিয়নে যে কর্মকান্ড পরিচালনা করেন তা জাতিসংঘের কোন ধরনের কার্যকলাপের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. তুমি কি মনে কর উক্ত সামঞ্জস্যপূর্ণ কার্যকলাপ শান্তিপূর্ণ পরিবেশ রক্ষায় বিশেষ সহায়ক? তোমার মতামত বিশ্লেষণ কর।

৭ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. চার্চিল ও রুজভেল্টের মধ্যে সংঘটিত বৈঠক 'আটলান্টিক সনদ' নামে বিশ্বের ইতিহাসে পরিচিত।

খ. বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে জাতিসংঘের ভূমিকা ছিল খুবই বিতর্কিত। জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল বিশ্বশান্তি ও প্রতিরক্ষার জন্য। কিন্তু বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় ১৯৭১ সালে জাতিসংঘ কোনো সহায়তা করার জন্য এগিয়ে আসেনি। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মানুষের ওপর পশ্চিম পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর গণহত্যার সময় বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সাহায্য প্রার্থনা করা হয়েছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত জাতিসংঘ এ আবেদনে কোনো সাড়া দেয়নি। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে জাতিসংঘ কোনো ধরনের সহযোগিতামূলক ভূমিকা পালন করেনি।

গ. উদ্দীপকের নূর-উল চেয়ারম্যান বেকার যুবক-যুবতীদের জন্য কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছেন। বিভিন্ন সমস্যায় মীমাংসাকারী হিসেবেও তার ভূমিকা দেখা যায়। এসব কাজ সামাজিক ও রাজনৈতিক কার্যাবলির সাথে যুক্ত। জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদের কাজের সাথে এর মিল দেখা যায়। আবার জাতিসংঘের উন্নয়ন কর্মসূচিতেও এরূপ পরিষদের কার্যাবলির সাথে বিরোধ মীমাংসার কার্যাবলি যুক্ত। জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদের কাজের সাথে এর মিল দেখা যায়। আবার জাতিসংঘের উন্নয়ন কর্মসূচিতেও এরূপ কার্যাবলি লক্ষ করা যায়। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের কার্যাবলির সাথে বিরোধ মীমাংসার কার্যাবলি যুক্ত। জাতিসংঘের গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো সারা পৃথিবীর মানুষের সামাজিক উন্নয়ন সাধন করা। এজন্য এটি শিল্প, বাণিজ্য, শিক্ষা ও পরিবেশ উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে। বেকারত্ব লাঘবেও জাতিসংঘের ভূমিকা রয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন দেশের আঞ্চলিক বিরোধ মীমাংসার জন্যও জাতিসংঘ কাজ করে। এক্ষেত্রে জাতিসংঘের গুরুত্বপূর্ণ সংস্থাসমূহ হলো অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদ, UNDP, UNFPA, UNHCR, UNIDO, FAO, UNESCO, UNEP নিরাপত্তা পরিষদ ইত্যাদি। নূর-উল চেয়ারম্যানের কার্যাবলিও জাতিসংঘের উপরিউক্ত কাজের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কযুক্ত। জাতিসংঘ কাজ করে। সারা বিশ্বব্যাপী। কিন্তু নূর-উল সাহেব কাজ করেন তার এলাকার মধ্যে। পার্থক্য এতটুকুই।

ঘ. ক্ষুদা, দারিদ্র্য, অশিক্ষা, কুশিক্ষা, বেকারত্ব, হতাশা, সন্ত্রাস এবং যুদ্ধবিগ্রহ অশান্তি সমস্যাগুলো খুব ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কযুক্ত। যখন একজন ব্যক্তি ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও কাজ না পেয়ে বেকার থাকে, তখন সে বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজে জড়িয়ে পড়ে। এরূপ হতাশাগ্রস্ত যুবকশ্রোণ একসময় সন্ত্রাসী কার্যাবলির সাথে যুক্ত হয়ে থাকে। এসব যুবকেরা রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিতেও কাজ করে। ফলে সমাজে অশান্তি ও নৈরাজ্য সৃষ্টি হয়। সমাজের শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বিনষ্ট হয়। কিন্তু যদি এসব যুবকদের উৎপাদনমূলক কাজের সাথে যুক্ত করা সম্ভব হতো, তবে তা যেমন সমাজের মোট উৎপাদনকে বৃদ্ধি করত তেমনি উন্নয়নকেও ত্বরান্বিত করত। চেয়ারম্যান যে কাজ করছেন তা প্রত্যক্ষভাবে সমাজ উন্নয়নমূলক এবং পরোক্ষভাবে সমাজে শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষাকারী কার্যাবলি হিসেবে বিবেচিত হয়। জাতিসংঘ বিভিন্ন দেশের সামাজিক এবং রাজনৈতিক পরিবেশ উন্নয়নে এরূপ পদক্ষেপ গ্রহণ করে থাকে। দেখা গেছে, যেখানে পর্যাপ্ত মজুরির বিনিময়ে উপযুক্ত সম্মানজনক কাজ পাওয়া সহজ, সেখানে সন্ত্রাস- অশান্তির বিস্তার সহজে হয় না। অন্যদিকে যেখানে বেকারত্ব বেশি সেখানে অশান্তিও বেশি। যেমন- সোমালিয়ার জনগোষ্ঠীর বেকারত্ব-ই তাদেরকে অন্যায় পথে ঠেলে দিয়েছে। ফলে সেখানকার পরিবেশ অশান্তিতে পূর্ণ। তাই নূর-উল সাহেবের কার্যকলাপ সমাজে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলেই আমাদের বিশ্বাস।

৮. 'ক' ও 'খ' রাষ্ট্র দুটির সীমান্তবর্তী নদীর মোহনায় নতুন একটি দ্বীপ জেগে উঠলে উভয় দেশই এর মালিকানা দাবি করে। দ্বীপটির মালিকানার দ্বনে্দ্ব দেশ দুটির মধ্যে যুদ্ধ বাধার উপক্রম হয়। তখন 'ক' দেশটি জাতিসংঘের মাধ্যমে এর সমাধান চাওয়ার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করে।
ক. জাতিসংঘ 'ঘোষণাপত্র' কত সালে স্বাক্ষরিত হয়?
খ. প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের মধ্যে বিরাট ফাটলের কারণ ব্যাখ্যা কর।
গ. 'ক' দেশটি জাতিসংঘের কোন সংস্থার নিকট সমস্যাটি উপস্থাপন করবে? বর্ণনা কর।
ঘ. 'জাতিসংঘের উক্ত সংস্থাটির কাজ হলো আন্তর্জাতিক বিরোধের নিষ্পত্তি করা' -তোমার মতামত বিশ্লেষণ কর।

৮ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. জাতিসংঘ 'ঘোষণাপত্র' ১৯৪২ সালে স্বাক্ষরিত হয়।

খ. স্ট্যালিন এমন কতকগুলো কাজ করেন যা পূর্ব ও পশ্চিমের মধ্যে। ১৯৪৫ সালে ইয়ান্টা চুক্তির সময়কাল হতে জুলাই মাস পর্যন্ত ফাটল সৃষ্টি করে। রাশিয়ার হস্তক্ষেপে পোল্যান্ডে অ-কমিউনিস্ট নেতাদের বন্দী বা অন্তরীণ করা হয়। রুশ মন্ত্রীর হস্তক্ষেপে রুমানিয়ায় কমিউনিস্ট শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়। বুলগেরিয়ায়ও কমিউনিস্ট শাসন স্থাপিত হয়। চেকোস্লাভাকিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ পদগুলো কমিউনিস্টরা দখল করে। তাছাড়া পূর্ব জার্মানি ও পূর্ব অস্ট্রিয়ায় কমিউনিস্ট শাসন গড়ে ওঠে। এ কারণে পূর্ব অর্থাৎ রাশিয়া ও পশ্চিম অর্থাৎ আমেরিকার মধ্যে বিরাট ফাটল দেখা দেয়।

গ. 'ক' দেশটি তার সমস্যা জাতিসংঘের অঙ্গসংগঠন 'আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে' উপস্থাপন করবে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহতা দেখে মানুষ বিশ্বশান্তি রক্ষায় একটি আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে, যা থেকেই জন্ম হয় জাতিসংঘের। জাতিসংঘ বিভিন্ন দেশের মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে প্রায় ৭ দশক থেকে। বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের জন্য এবং কার্যাবলি সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের জন্য জাতিসংঘের ৬টি মূল অঙ্গসংস্থা এবং অনেকগুলো বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান আছে। আন্তর্জাতিক বিচার আদালত হলো জাতিসংঘের ৬টি মূল সংস্থার একটি যা বিভিন্ন আন্তর্জাতিক বিরোধ নিরসনে কাজ করে। নেদারল্যান্ডের হেগ শহরে এর সদর দফতর অবস্থিত। উদ্দীপকের 'ক' ও 'খ' দেশ দুটি তাদের বিরোধের মীমাংসার জন্য এ আদালতের শরণাপন্ন হতে পারে। এক্ষেত্রে 'ক' দেশটি আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে তার অভিযোগটি উপস্থাপন করবে।

ঘ. এখানে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের কথা বলা হয়েছে। আন্তর্জাতিক বিচার আদালত প্রতিষ্ঠিত হয়েছে আন্তর্জাতিক বিরোধের নিষ্পত্তি করার জন্য। যেকোনো দুটি দেশের মধ্যকার সমস্যা বা বিরোধ নিষ্পত্তি করা এর কাজ। এছাড়াও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে কারও স্বার্থহানি ঘটলে কিংবা গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলোর বিচার করাও এর কাজ। নেদারল্যান্ডের হেগ ভিত্তিক এ সংস্থাটি বিশ্বশান্তির জন্য হুমকি হতে পারেত এরূপ বহু সমস্যার সমাধান করে ইতোমধ্যে বিশ্বশান্তি রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। এ আদালতের দেওয়া রায় কার্যকর করার দায়িত্ব নিরাপত্তা পরিষদের। নিরাপত্তা পরিষদ প্রয়োজনে শক্তি প্রয়োগ করে এ রায় কার্যকর করে থাকে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মধ্যকার বিরোধ নিরসনে এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে এর ভূমিকা সবার নিকট প্রশংসিত হয়েছে। এর দেওয়া রায়ের ফলে বেশকিছু সমস্যার সমাধান উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছে। যা বিশবকে আসনণ যুদ্ধ থেকে রক্ষা করেছে।

৯. আতাহার হোসেন নিজ পরিবারে স্ত্রী ও কন্যাদ্বয়ের প্রাপ্ত অধিকার সংরক্ষণ করে চলেন সর্বদা। তিনি সন্তানদের স্বাস্থ্য ও শিক্ষার উন্নয়নের ব্যাপারে বিশেষ খেয়াল রাখেন। আর তাই বাড়িতে নলকূপ স্থাপন করেছেন বিশুদ্ধ পানি ব্যবহারের জন্য। তার পরিবারে যে পারিবারিক লাইব্রেরিটি রয়েছে তা অনেক অতিথিকেই অবাক করে দেয়। তাছাড়া সন্তানদের উপযুক্ত বয়সে প্রয়োজনীয় টিকা প্রদান তার সচেতনতার পরিচয় বহন করে।
ক. কোন দেশগুলো সর্বপ্রথম 'জাতিসংঘ ঘোষণাপত্রে' স্বাক্ষর করে?
খ. 'পটাসডাম সম্মেলনে বাহ্যিক মতৈক্যের আড়ালে লুকিয়েছিল ব্রিটেন মার্কিন জোট বনাম রাশিয়ার গভীর মতানৈক্য' ফ্লেমিং-এর এ উক্তিটি ব্যাখ্যা কর।
গ. আতাহার হোসেনের কার্যকলাপ জাতিসংঘের কোন কাজগুলোর সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. তুমি কি তার কার্যাবলির মাঝে পরিতৃপ্তির আভাস পাও? তোমার মতামত বিশ্লেষণ কর।

৯ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. চীন, ব্রিটেন, সোভিয়েত ইউনিয়ন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সর্বপ্রথম জাতিসংঘ ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর করে।

খ. পটাসডাম সম্মেলনে তিন পরাশক্তি তথা ব্রিটেন, যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার স্বার্থ ব্যাপকভাবে বিবেচিত হয়েছিল। সম্মেলনে পরাশক্তিগুলো নিজেদের স্বার্থরক্ষার্থে সচেষ্ট হয়ে ওঠে। বার্লিনকে চার ভাগে ভাগ করে অধিকার করা হয়। জার্মানিতে ভবিষ্যতে কোনো সমরাস্ত্র নির্মাণ করা নিষিদ্ধ করা হয়। জার্মানি থেকে নাৎসি মতবাদ, নাৎসি সংস্কৃতি, জাতিগত অহমিকাবোধ নাৎসিবাদী ইতিহাস নির্মূল করা হয়। মূলত পটাসডাম সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন ও রাশিয়ার স্বার্থ ও গভীর মতানৈক্য লুকিয়ে ছিল।

গ. আতাহার সাহেব তার পরিবার ও অতিথিদের জন্য যে কাজগুলো করেন তা জাতিসংঘের কল্যাণমূলক কাজের সাথে সম্পর্কযুক্ত। মানুষের বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজন খাদ্য-বস্ত্র-বাসস্থানের মতো মৌলিক চাহিদাগুলোর। আবার এসব চাহিদার মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন স্তরের উপাদান। যেমন- কেউ বিলাসবহুল জীবনযাপন করে, কেউবা সাধারণ। কিন্তু এর মধ্যে সাধারণ একটি বিষয় হলো নিরাপত্তার বিষয়টি। যেমন- খাবার পানির বিশুদ্ধতা, রোগপ্রতিরোধে মৌলিক টিকা ইত্যাদি। এসব বিষয় নিশ্চিত করার দায়িত্ব সব সরকারের জন্যই আবশ্যক। কিন্তু পৃথিবীর অনেক রাষ্ট্রের পক্ষেই তা পূরণ করা সম্ভব হয় না। এক্ষেত্রে জাতিসংঘ রাষ্ট্রগুলোকে সহায়তা করে। বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ, পোলিওসহ সংক্রামকরোগের টিকা প্রদান, মা ও শিশু স্বাস্থ্য সংরক্ষণসহ বিভিন্ন বিষয়ে জাতিসংঘ অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোকে সহায়তা করে। জাতিসংঘের UNESCO, FAO, WHO ইত্যাদি সংস্থাসমূহ এসব কাজের সাথে যুক্ত। জাতিসংঘ জনগণের মৌলিক এ চাহিদা পূরণের জন্য কল্যাণমূলক কাজ হিসেবে এসব করে থাকে। আতাহার সাহেবও তার দায়িত্ব হিসেবে আবশ্যক কল্যাণমূলক কাজ মনে করে এসব পালন করছেন।

ঘ. মানুষের জন্য কিছু কাজ আবশ্যক, কিছু নৈতিক দায়িত্ব, কিছু কাজ মানসিক পরিতৃপ্তিদায়ক আবার কতিপয় কাজ মানসিক পীড়াদায়ক। সাধারণত মৌলিক চাহিদা পূরণ এবং আইনের দ্বারা অর্পিত দায়িত্বগুলো আবশ্যক কাজ হিসেবে চিহ্নিত হয়। যেসব কাজ করা নৈতিক দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। কিন্তু পালন না করলে শাস্তি পেতে হয় না, তা নৈতিক দায়িত্ব। আবার যেসব কাজ সমৃদ্ধি ও উন্নত জীবনযাপনের জন্য সম্পাদন করা হয় তা মানসিক শান্তিদায়ক বলে গণ্য হয়। যেসব কাজ নৈতিক মানদ-- সমর্থিত নয়, তা অনৈতিক এবং আইনের দ্বারা নিষিদ্ধ কাজগুলো অন্যায় বলে বিবেচিত হয়।
আতাহার হোসেন যে কাজগুলো সম্পন্ন করেন এর মধ্যে স্ত্রী-কন্যাদের অধিকার সংরক্ষণ করা, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের উন্নয়নে পদক্ষেপ নেওয়া এবং বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা করা তার আবশ্যক দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। এছাড়াও পারিবারিক লাইব্রেরি অতিথিদের ব্যবহার করতে দেওয়া তার উদারতা প্রকাশ করে। সন্তানদেরকে সময়মতো টিকা দেওয়া তার দায়িত্ব। এসব দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনের মাধ্যমে তিনি তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করেন বলে মনে হয়। দায়িত্ব পালনের ফলে যখন ভালো ফলাফল পাওয়া যায় তখন এক ধরনের মানসিক তৃপ্তি অনুভব করা মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি। আতাহার হোসেন যখন তার পরিবারের প্রতি দায়িত্ব ও কর্তব্য যথাযথভাবে পালন করেন তখন তারও এরূপ পরিতৃপ্তি অনুভূত হওয়াটা স্বাভাবিক ব্যাপার। আর এর প্রকাশ দেখতে পাওয়া যায় তার পারিবারিক লাইব্রেরির সংগ্রহের মধ্যে।

১০. বহুদিন ধরে গোরিপুর ও দোহার ইউনিয়নের মধ্যে বিরোধ লেগেই আছে। বিরোধ নিরসনে দু চেয়ারম্যান শান্তিচুক্তি করলেও তাতে অবস্থার তেমন উন্নতি হয় নি। সবশেষে তারা এ সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে জেলা পরিষদের দ্বারস্থ হন। জেলা পরিষদ তাদের এ বিরোধের একটা সুন্দর মীমাংসা দান করেন।
ক. জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক আদালতের সদর দপ্তর কোথায় অবস্থিত?
খ. জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠিত হয় কেন?
গ. উদ্দীপকের জেলা পরিষদের ভূমিকার সাথে জাতিসংঘের কোন শাখার সাদৃশ্য রয়েছে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকের আলোকে নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠায় উক্ত শাখার ভূমিকা মূল্যায়ন কর।

১০ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক আদালতের সদর দপ্তর হল্যান্ডের হেগ নগরীতে অবস্থিত।

খ. বিংশ শতাব্দীতে দুটি বিশ্বযুদ্ধের ধ্বংসাত্মক পরিণতি সম মানবজাতিকে ভাবিয়ে তুলেছিল এবং তারা শান্তির সন্ধানে অধীর হয়ে উঠেছিল। বিশেষ করে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর 'লীগ অব নেশনস' তৈরি হলেও এর ব্যর্থতায় তৎকালীন বিশ্ব নেতৃবৃন্দ শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষার লক্ষ্যে নতুন আন্তর্জাতিক সংস্থা গঠনের তাগিদ অনুভব করেন। অবশেষে বিশ্ব শান্তির লক্ষ্যে বিশ্ব নেতৃবৃন্দের নিরলস প্রচেষ্টার ফসল হিসেবে ১৯৪৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় জাতিসংঘ বা United Nation.

গ. উদ্দীপকে গৌরিপুর ও দোহার ইউনিয়নের মধ্যকার বিরোধপূর্ণ। পরিস্থিতির চিত্র উপস্থাপন করা হয়েছে। এ বিরোধ নিরসনে দু চেয়ারম্যান শান্তিচুক্তি করলে নানা কারণে তা ব্যর্থ হয়ে যায়। অবশেষে তারা এ সমস্যা সমাধানে জেলা পরিষদের দ্বারস্থ হন। জেলা পরিষ বিচারের মাধ্যমে তাদের বিরোধ নিষ্পত্তি করে একটি সমঝোতা করেন। এসব, বিষয় বিবেচনা করলে জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক আদালতের সাথে উক্ত জেলা পরিষদের ভূমিকার সাদৃশ্য পাওয়া যায়। একাধিক রাষ্ট্রের মাঝে কোনো বিষয় নিয়ে বিরোধ সৃষ্টি হলে। জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক আদালতের শরণাপন্ন হওয়ার সুযোগ আছে। আদালত আইনগত পরামর্শ প্রদান করে সমস্যার নিষ্পত্তিতে অবদান রাখতে পারে। তবে আদালতের রায় নিয়ে জোরজবরদস্তি করার সুযোগ নেই। কোনো বিষয় সম্পর্কে আইনগত মতামত চাওয়া হলে আন্তর্জাতিক আদালত তা দিতে পারে। এ আদালতের কার্যালয় নেদারল্যান্ডের হেগ নগরীতে অবস্থিত। এ আদালতের বিচারকের সংখ্যা ১৫ জন।

ঘ. বিশ্ব শান্তি ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ১৯৪৫ সালের ২৪ অক্টোবর বহু আলোচনার মাধ্যমে জাতিসংঘের আত্মপ্রকাশ ঘটে। জন্মলগ্ন থেকে এটি তার ৬টি শাখার মাধ্যমে বিশ্বের বিরোধসমূহের নিষ্পত্তি সাধন করে আসছে। এ ছয়টি শাখার মধ্যে একটি হলো আন্তর্জাতিক আদালত। বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় এ আদালত গুরুত্বপূর্ণ প্রশি কার্যাবলি পালন করে থাকে যেমন-
১. বিরোধ মীমাংসা সংক্রান্ত : আন্তর্জাতিক আদালত জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রের মধ্যে সংঘটিত বিরোধের মীমাংসা করে।
২. চুক্তি বিশ্লেষণ : জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রের সম্পাদিত চুক্তির বিরোধ দেখা দিলে এবং তা আন্তর্জাতিক আদালতে উত্থাপিত হলে আন্তর্জাতিক আদালত সে চুক্তি যথাযথভাবে বিশ্লেষণের মাধ্যমে উক্ত বিরোধ মীমাংসা করে।
৩. ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা : আন্তর্জাতিক আইনের যথাযথ ব্যবহারের মাধ্যমে আমর্ত্মর্জাতিক আদালত ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করে।
৪. রায়সংক্রান্ত : আন্তর্জাতিক আদালতের রায় বাস্তবে কার্যকরী হয়ে থাকে।
৫. পরামর্শ সংক্রান্ত কোনো কোনো সময় আন্তর্জাতিক আদালত সাধারণ পরিষদ ও নিরাপত্তা পরিষদকে প্রয়োজনে বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শ প্রদান করে।
আন্তর্জাতিক আদালত জাতিসংঘের বিচার বিভাগের ন্যায় কার্য সম্পাদন করে। ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সদস্য রাষ্ট্রের মধ্যে শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখতে আন্তর্জাতিক আদালতের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

Share:

HSC ইতিহাস ২য় পত্র (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর অধ্যায় ৭ pdf download

এইচএসসি পরীক্ষার পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি
HSC History 2nd Paper Srijonshil question and answer. HSC History 2nd Paper (Srijonshil) Creative Questions pdf download. HSC Itihas 2nd paper Srijonshil Proshno Uttor.

ইতিহাস
দ্বিতীয় পত্র

সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
অধ্যায়-৭

HSC History 2nd Paper
Srijonshil Question and Answer pdf download

উচ্চ মাধ্যমিক ■ ইতিহাস (দ্বিতীয় পত্র) ■ অধ্যায়ভিত্তিক সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ও পরীক্ষা প্রস্তুতি
সপ্তম অধ্যায় : স্নায়ুযুদ্ধ : পুঁজিবাদ ও সমাজতান্তিক বিশ্বের দ্বন্দ্ব

১. তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী নিয়োগে হানিফ সাহেব অভিজ্ঞতাকে প্রাধান্য দিতে চাইলেও রবিউল হাসান শিক্ষাগত যোগ্যতাকে প্রাধান্য দিতে চান। বিষয়টি নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ দুটি দলে বিভক্ত হয়ে পড়েন এবং আধিপত্য বিস্তারের লক্ষ্যে একে অপরের বদলির জন্য জোর প্রচেষ্টা শুরু করেন। পরিস্থিতি মারাত্মক আকার ধারণ করে যখন তাদের অনুগত দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারীরা একে অপরকে অফিসের বাইরে দেখে নেওয়ার হুমকি প্রদান করে।
ক. কোন দুটি শিবিরের মধ্যে রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব বিশ্বব্যাপী স্নায়ুযুদ্ধের পরিবেশ তৈরি করে?
খ. Coldwar বা স্নায়ুযুদ্ধ বলতে কী বোঝায়?
গ. হানিফ সাহেব ও রবিউল হাসানের মাঝে সৃষ্ট উত্তেজনা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে কোন দুটি বৃহৎ রাষ্ট্রের যুদ্ধের কথা মনে করিয়ে দেয়? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. হানিফ সাহেব ও রবিউল হাসানের মাঝে যুদ্ধ না হলেও যুদ্ধের কৌশল পরিলক্ষিত- তোমার মতামত বিশ্লেষণ কর।

১ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে ন্যাটো ও সোভিয়েত ইউনিয়নের নেতৃত্বে ওয়ারশ প্যাক্ট এ দুটি শিবিরের মধ্যে রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব বিশ্বব্যাপী স্নায়ুযুদ্ধের পরিবেশ তৈরি করে।

খ. Coldwar বা স্নায়ুযুদ্ধ মূলত একটি মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধ যা দুটি বিরোধী মতাদর্শগত দ্বন্দ্ব থেকে উদ্ভূত। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর দুটি পরস্পর বিরোধী রাষ্ট্র জোট প্রত্যক্ষ সংগ্রামে অবতীর্ণ না হয়ে পরস্পরের প্রতি যে যুদ্ধভাব বিরাজ করছিল বা সংগ্রামে লিপ্ত ছিল তাকেই ঠান্ডা স্নায়ুযুদ্ধ বা Cold War বলে অভিহিত করা হয়। মূলত 'যুদ্ধও নয়, শান্তিও নয়' সাধারণত এ ধরনের সম্পর্ককে স্নায়ুযুদ্ধ বলে। কাজেই ঠান্ডা লড়াই ছিল দু জোটের মধ্যে এমন একটি যুদ্ধংদেহী সম্পর্ক, যে সম্পর্ক যুদ্ধ সৃষ্টি করেনি, কিন্তু যুদ্ধের পরিবেশ সৃষ্টি করতে পেরেছিল। অনেকে ঠান্ডা লড়াই বলতে পরাশক্তিগুলোর মাঝে পরস্পরবিরোধী রাজনৈতিক অর্থনৈতিক ও সামাজিক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠাকে নির্দেশ করেছে। স্নায়ুযুদ্ধ হলো এমনই এক অবস্থা যা সরাসরি যুদ্ধে না জড়িয়ে কূটনৈতিক রাষ্ট্রজোট গঠনের দুটি শিবিরে প্রতিদ্বন্দ্বী পরিবেশ বিরাজ করে।

গ. উদ্দীপকের হানিফ সাহেব ও রবিউল হাসানের মাঝে সৃষ্ট উত্তেজনা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সমাজতান্ত্রিক রুশ ফেডারেশন ও গণতান্ত্রিক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার বিরোধ তথা স্নায়ুযুদ্ধের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া পরস্পর মিত্রতাসূত্রে আবদ্ধ হয়েছিল। কিন্তু যুদ্ধ পরবর্তীকালে এ সম্পর্ক পরস্পর অবিশ্বাস ও সন্দেহের দিকে এগিয়ে যেতে থাকে। আন্তর্জাতিক রাজনীতির ক্ষেত্রে এরূপ বিরোধের ফলে দুটি ব্লকের সৃষ্টি করে যা দ্বিমেরুভিত্তিক বিশ্বরাজনীতির জন্ম দেয়। বিশ্বের অধিকাংশ রাষ্ট্র এ দু ব্লকের কোনো না কোনোটিতে যোগ দিয়ে এই বিরোধকে প্রকাশ্য রূপ দেয় এবং পরস্পরের বিরুদ্ধে নানাভাবে হুমকি প্রদর্শন করতে থাকে। এটি প্রকাশ্য সশস্ত্র যুদ্ধের রূপ না নিলেও কূটনৈতিক ও রাষ্ট্রজোট গঠনের মাধ্যমে প্রভাব বিস্তারের কৌশলে পরিণত হয়। রাজনৈতিক ক্ষেত্র ছাড়িয়ে অর্থনৈতিক, সংস্কৃতি, সামরিক প্রভৃতি ক্ষেত্রেও এর প্রভাব দেখা যায়। ইতিহাসে এ ঘটনা স্নায়ুযুদ্ধ নামে বিখ্যাত। উদ্দীপকের হানিফ ও রবিউলের মাঝে সৃষ্ট উত্তেজনাও অনুরূপ আকার ধারণ করেছে।

ঘ. উদ্দীপকের হানিফ ও রবিউল সাহেবের মধ্যে নিয়োগ পরীক্ষার প্রার্থীর কোন যোগ্যতা প্রাধান্য পাবে এ প্রশ্নে বিতর্ক দেখা দিয়েছিল। এরূপ একটি সাধারণ বিতর্ক তাদেরকে দুটি গ্রুপে ভাগ করে দিয়েছে। এ দুগ্রুপের অনুসারীরা আবার পরস্পর পরস্পরের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। সম্পূর্ণ ঘটনাটিতে কোনো সশস্ত্র সংঘাত হয়নি, কিন্তু বিবাদমান এ দুটি পক্ষের মধ্যে সংঘাতের পরিবেশ বিরাজ করছে। স্নায়ুযুদ্ধকালীন সময়ে রুশপন্থি সমাজতান্ত্রিক ব্লক এবং মার্কিনপন্থি পুঁজিবাদী ব্লক দুটির মধ্যেও এরূপ অবস্থা বিরাজ করত। সেসময় কেউ কারও বিরুদ্ধে সরাসরি যুদ্ধ ঘোষণা করেনি। কিন্তু অর্থনৈতিক, কূটনৈতিক, সামরিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ইত্যাদি সর্বক্ষেত্রেই পরস্পর পরস্পকে প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করত এবং যুদ্ধের মত একটা পরিবেশ বিরাজ করত। এসময় দুই পক্ষের মধ্যে ছিল অনেকটা ঠান্ডা মাথার যুদ্ধ। এরূপ যুদ্ধের ফলে কেউ কারও বিরুদ্ধে অস্ত্র হাতে তুলে নেয়নি কিন্তু যুদ্ধের কোনো কৌশলই প্রয়োগের বাকি রাখেনি। সবসময় এক ধরনের যুদ্ধাংদেহী মানসিকতা বিরাজ করত। অথচ এ দুপক্ষের মধ্যে সরাসরি কোনো যুদ্ধই হয়নি। একই অবস্থা দেখতে পাওয়া যাচ্ছে উদ্দীপকের হানিফ সাহেব ও রবিউল হাসানের মাঝে। তাদের মধ্যে যে গ্রুপিং দেখা যাচ্ছে তা কোনোভাবেই হয়তবা যুদ্ধের বা সংঘাতের পর্যায়ে পৌছাবে না, কিন্তু যুদ্ধের ন্যায় এক ধরনের পরিবেশকে জড়িয়ে রাখবে দীর্ঘসময় ধরে। এ কারণে তাদের মধ্যে যুদ্ধের কৌশলও দেখা যাবে একটা দীর্ঘসময় ধরে।

২. লোপা ও নিপা দু বোন বাবা-মা মারা যাওয়ার পর জমিসংক্রান্ত বিষয়সহ বেশকিছু ব্যাপারে পরস্পর দ্বনে্দ্ব জড়িয়ে পড়ে। লোপা ধর্মীয় কর্মকান্ড বেশি করে পালন করত ও আশেপাশের মানুষের সাথে তেমন মেলামেশা করত না। অন্যদিকে নিপা ছিল মিশুক ও আধুনিক মনোভাবসম্পন্ন এক নারী। তাই আচরণগত দিক দিয়েও দুই বোন ছিল দুই মেরুবাসী।
ক. মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যকার স্নায়ুযুদ্ধের যবনিকাপাত কখন ঘটে?
খ. স্নায়ুযুদ্ধের পটভূমি ব্যাখ্যা কর।
গ. লোপা ও নিপার প্রত্যাশা কীভাবে মনস্তাত্ত্বিক দ্বনে্দ্বর নিকটবর্তী হতে পারে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. তুমি কি মনে কর লোপা ও নিপার মাঝে আদর্শগত ভিন্নতা রয়েছে? তোমার মতামত বিশ্লেষণ কর।

২ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. আশির দশকের শেষে দিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যকার স্নায়ুযুদ্ধের যবনিকাপাত ঘটে।

খ. প্রকৃতপক্ষে রাশিয়ার বলশেভিক বিপ্লবের পর সণায়ুযুদ্ধের সূত্রপাত হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে স্নায়ুযুদ্ধর বাস্তবে রূপ পরিগ্রহ করে। ১৯৪৫ সালে ইয়াল্টা সম্মেলনের পর কয়েকটি ঘটনা স্নায়ুযুদ্ধের পটভূমি রচনা করে। রুজভেল্টের মৃত্যুর পর রাশিয়া দক্ষিণ পশ্চিম ইউরোপে প্রাধান্য স্থাপনের চেষ্টা করে। রাশিয়া ইয়ান্টা চুক্তি উপেক্ষা করে পোল্যান্ডের অস্থায়ী সরকারকে সমর্থন না করে লাবলিন সরকারকে সমর্থন করে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আঘাতে বিধ্বস্ত দক্ষিণ পূর্ব ইউরোপে রাশিয়া প্রাধান্য স্থাপনে বদ্ধ পরিকর হলে রুশ-মার্কিন স্নায়ুযুদ্ধ নগ্নরূপ ধারণ করে। আমেরিকা গ্রিক ও পশ্চিম এশিয়ার বিভিন্ন রাষ্ট্রকে সাম্যবাদী প্রভাবের বিরুদ্ধে সাহায্য দানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। রাশিয়া মলোটডের নেতৃত্বে সাম্যবাদী দেশসমূহের প্রতিনিধিদের নিয়ে কমিউনিফরম নামে একটি অন্তঃরাষ্ট্র সংস্থা স্থাপন করে। এ সংস্থার প্রধান উদ্দেশ্য ছিল আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে সাম্যবাদী দেশসমূহের মধ্যে তথ্যাদির আদান প্রদান ও পররাষ্ট্রনীতির সংহতি। বৃদ্ধি এবং সাম্রাজ্যবাদের বিরোধিতা। এভাবে সোভিয়েত রাশিয়া ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে স্নায়ুযুদ্ধ পুরোদমে চলতে থাকে।

গ. উদ্দীপকের লোপা ও নিপার জীবনযাপন প্রণালি এবং বিশ্বাস ও আদর্শের মধ্যে পার্থক্য দেখা যায়। এর সাথে আবার যুক্ত আছে। জমিজমা সংক্রান্ত বিষয়। পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে বিরোধ থাকার প্রেক্ষিতে আদর্শিক বিরোধ বড় হয়ে দেখা দিতে পারে। একটি বিরোধ অন্য বিরোধকে বাড়িয়ে দিতে পারে। যেমনটি দেখা গিয়েছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তীকালে বিশ্বের দু পরাশক্তি রাশিয়া ও মার্কিন দু যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে এ দু দেশ মৈত্রী বন্ধনে আবদ্ধ হয়। কিন্তু বিভিন্ন স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে যখন এ দুটি দেশের মধ্যে বিরোধ জন্মে তখন তাদের আদর্শিক বিরোধ বড় হয়ে স্নায়ুযুদ্ধের রূপ নেয়। অথচ অভিন্ন স্বার্থের সময় এটি কোনো বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি। তাই লোপা ও নিপার মধ্যকার জমিজমার বিরোধের ক্ষেত্রে তাদের জীবনের আদর্শ ও বিশ্বাস বাধা হিসেবে কাজ করতে পারে। এটি এক সময় মনস্তাত্ত্বিক দ্বনে্দ্বর কারণও হতে পারে।

ঘ. উদ্দীপকের লোপা ও নিপার মাঝে আদর্শগত দ্বনে্দ্বর চিহ্ন স্পষ্ট। কেননা তারা বোন হওয়া সত্ত্বেও তাদের মধ্যে জীবনযাপন ও ধর্মীয় বিধিবিধান পালনের ক্ষেত্রে পার্থক্য দেখা যায়। লোপা ধর্মীয় বিধিনিষেধ পালনের ক্ষেত্রে অগ্রগামী এবং বাইরের মানুষের সাথে তার মেলামেশা কম। অন্যদিকে নিপা ধর্মীয় বিধিবিধান তেমনটা মানে না। বলেই মনে হয়। সে অনেকটা আধুনিক এবং সবার সাথে মেলামেশা বেশি করে থাকে। এ দুজনের এরূপ জীবনযাপনের প্রধান কারণ হলো তাদের আদর্শ। আদর্শিক বিশ্বাস ও এ থেকে উৎসারিত জীবনাচরণ তাদের কার্যাবলি এবং জীবনযাপন প্রণালিকে প্রভাবিত করেছে। ধর্মীয় আদর্শ এবং আধুনিকতার আদর্শ এ দু বোনের জীবনকে বেশি প্রভাবিত করেছে। আদর্শিক ভিন্নতা তাদেরকে পথনির্দেশ করেছে এবং সে অনুসারে তারা তাদের জীবন নির্বাহ করছে। যখন তারা দু বোন হিসেবে বসবাস করে তখন এ ভিন্নতা তাদের মধ্যে বিরোধের কারণ হতে পারবে না। এমন সম্ভাবনা কম। কিন্তু যখন জমিজমাসহ অন্যান্য বিরোধ আসবে, তখন এটি বড় হয়ে দেখা দিতে পারে।

৩. কবির সাহেবের কৃষি খামারটির নিজস্ব শ্রমিকদল এবং নিরাপত্তা বাহিনী আছে। তিনি তার বাহিনীর সাহায্যে পার্শ্ববর্তী অন্যান্য খামারের দখল নেওয়ার চেষ্টা করলে আনোয়ার ও সাইদুরের নেতৃত্বে ভিন্ন মতাবলম্বী দুইপক্ষ একত্রিত হয়ে কবিরের খামার আক্রমণ করে দখল করে। নেয়। সাইদুর ও আনোয়ার সাহেব কবিরের খামারের মাঝে একটি দীর্ঘ দেয়াল তুলে দিয়ে দুপাশে দুজন ভোগদখল করা শুরু করেন। দীর্ঘদিন পর এ দেয়াল অপসারিত হয় এবং কবিরের খামারটি একত্রিত হয়।
ক. ন্যাটো ও ওয়ারশ প্যাক্ট-এর মধ্যকার উত্তেজনাকর অবস্থাকে সোভিয়েত ইউনিয়ন কী নামে অভিহিত করেছে?
খ. স্নায়ুযুদ্ধের আদর্শগত কারণ ব্যাখ্যা কর।
গ. উদ্দীপকের ঘটনাটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পূর্ববর্তী কোন ঘটনার সাথে মিল রয়েছে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. তুমি কি মনে কর কবির সাহেবের আগ্রাসী ভূমিকাই তার খামারটি বিভক্তির মূল কারণ? তোমার মতামত বিশ্লেষণ কর।

৩ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. ন্যাটো ও ওয়ারশ প্যাক্ট-এর মধ্যকার উত্তেজনাকর অবস্থাকে সোভিয়েত ইউনিয়ন 'শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান' বা 'Peaceful Coexistence' নামে অভিহিত করেছে।

খ. সাধারণভাবে আন্তর্জাতিক রাজনীতিবিদগণ পূর্ব ও পশ্চিম ব্লকের লড়াইকে আদর্শগত সংগ্রাম বলে অভিহিত করেন। স্নায়ুযুদ্ধের পূর্ব বুক সাম্যবাদ এবং পশ্চিম ব্লক ধনতন্ত্রকে সমর্থন করে। এ দুটি আদর্শ ছিল পরস্পরবিরোধী। রাশিয়ান সাম্রাজ্যবাদকে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃবৃন্দ আপত্তিকর ও বিপজ্জনক বলে মনে করেন। কারণ এখানে জনগণের স্বাধীনতার কোন স্থান নেই। অপরদিকে আমেরিকার গণতন্ত্রকে রাশিয়া আদৌ গণতন্ত্র বলে স্বীকার করে না। কারণ তাদের মতে আমেরিকায় গণতন্ত্র হলো ধনীদের যন্ত্র এবং জনগণের গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে আক্রমণ। রাশিয়া মনে করে যে, আমেরিকার মূল লক্ষ্যই হলো ধনতান্ত্রিক আদর্শ প্রচার করা যা সাম্রাজ্যবাদেরই নামান্তর। আর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতে, রাশিয়া সাম্যবাদের এবং বিশ্বের সকল রাষ্ট্রের সামাজিক অবস্থা পরিবর্তনের কথা প্রচার করে। সুতরাং বলা যায় যে, আদর্শগত দ্বন্দ্বই স্নায়ুযুদ্ধের অন্যতম প্রধান কারণ।

গ. উদ্দীপকের ঘটনাটিতে কবির সাহেবের আগ্রাসী ভূমিকার জবাব দিতে গিয়ে সাইদুর ও আনোয়ার সাহেব যৌথভাবে কবিরের খামারটি দখল করে নেন। এ ঘটনাটির সাথে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পূর্ব জার্মানির আগ্রাসী ভূমিকা এবং যুদ্ধ পরবর্তীকালে জার্মানিকে বিভক্ত করার ঘটনার মিল রয়েছে।
জার্মানি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সূচনা করে পোল্যান্ড আক্রমণ করার মাধ্যমে। এরপর শুরু হয় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। যুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়ন সম্মিলিতভাবে জার্মানিকে পরাজিত করে। এ দুটি দেশের মধ্যে বিরোধ থাকলেও যুদ্ধে একসাথে কাজ করে। যুদ্ধে জার্মানি আত্মসমর্পণ করলে সোভিয়েত ইউনিয়ন ও মার্কিন সমর্থনপুষ্ট দুই দল জার্মানিকে দুটি ভাগে ভাগ করে। পূর্ব ও পশ্চিম জার্মানির মধ্যে বার্লিন প্রাচীর নির্মাণ করা হয়। স্নায়ুযুদ্ধকালীন সময়ে এ বার্লিন প্রাচীরের গুরুত্ব ছিল অনেক বেশি। অবশেষে বার্লিন প্রাচীরের পতন ঘটে এবং দু জার্মানি একত্রিত হয়। উদ্দীপকের কবির সাহেবের খামারটিরও একই চিত্র দেখা যায়।

ঘ. উদ্দীপকের কবির সাহেব তার খামারের কর্মচারী ও নিরাপত্তা রক্ষীর দ্বারা অন্যের খামার আক্রমণ করেন। তার এ আচরণের জবাব দিতে গিয়েই সাইদুর ও আনোয়ার এগিয়ে আসেন। যদি কবির সাহেব আগ্রাসী ভঙ্গিতে এগিয়ে না আসতেন তবে হয়তবা তাকে প্রতিরোধের সম্মুখীন হতে হতো না। তার নিজের কৃতকর্মের জবাব পেতেই তাকে বরণ করতে হয় শোচনীয় পরাজয়। এজন্য মূলত কবির সাহেবের আগ্রাসী ভূমিকাই দায়ী।
একইভাবে জার্মানির আগ্রাসী মনোভাব এবং কৃতকর্মের জন্য একে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে শোচনীয় পরাজয়বরণ করতে হয়। ফল হিসেবে জার্মানিকে বিভক্ত করা হয়। বার্লিন প্রাচীর নির্মাণ করা হয়। স্নায়ুযুদ্ধে একটি অন্যতম উপাদান হিসেবে কাজ করেছে এ বার্লিন প্রাচীর। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জার্মানি প্রসঙ্গে বিরোধ নিয়ে প্রথম রাশিয়া ও আমেরিকার মধ্যে দ্বন্দ্ব তৈরি হয়। এটি বিরোধ পরবর্তীকালে স্নায়ুযুদ্ধে রূপ নেয়। অক্ষশক্তির অংশ জার্মানিকে কেউ কেউ এজন্য দায়ী করে। থাকেন। জার্মানির চূড়ান্ত পতনও হয় এ একই কারণে। কেননা জার্মানির আগ্রাসনের প্রতিরোধ-ই জার্মানিকে ধ্বংস করে দেয়। এজন্য জার্মানিকে। চরম মূল্য দিতে হয়, বিভক্ত হতে হয়। উদ্দীপকের কবির সাহেবও একই। কারণে তার খামার হারান। এজন্য তার আগ্রাসী মনোভাবই প্রধানত দায়ী।

৪. হাকিমপুর ইউনিয়নের আব্দুর রশীদ ও নারদা ইউনিয়নের জহিরুল ইসলাম পরস্পরকে অর্থনৈতিক, সামাজিক ও শিক্ষার ক্ষেত্রে সহযোগিতার পাশাপাশি সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে একই সাথে কাজ করবে এ শর্তে একটি চুক্তি সম্পাদন করে গতবছর। কিন্তু এ বছরের শুরুতেই হাকিমপুর ইউনিয়নের কিছু বখাটে ছেলে নারদা ইউনিয়নের কয়েকটি দোকানে হামলা চালায় ও কয়েক লক্ষ টাকা ছিনিয়ে নিয়ে যায়। এ ব্যাপারে কোনো মীমাংসা না হতেই ঐ ইউনিয়নের বেশকিছু লোক নারদা গ্রামে কুৎসা রটনা করে সামাজিক পরিবেশ বিঘ্নিত করার চেষ্টা করে। এতে উক্ত নেতাদ্বয়ের পরস্পরের প্রতি সন্দেহ এক পর্যায়ে ক্ষোভে পরিণত হয়।
ক. ন্যাটো ও ওয়ারশ প্যাক্ট-এর মধ্যকার উত্তেজনাকর অবস্থাকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কি নামে অভিহিত করে?
খ. 'মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার প্রতি কঠোর নীতি গ্রহণ করে' কথাটি বুঝিয়ে লেখ।
গ. আব্দুর রশিদ ও জহিরুল ইসলামের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান কীভাবে বিঘ্নিত হলো? উদ্দীপকের বর্ণনার আলোকে ব্যাখ্যা কর।
ঘ. তুমি কি মনে কর হাকিমপুর ইউনিয়ন ও নারদা ইউনিয়নের লোকেরা আদর্শগত প্রতিদ্বনি্দ্বতায় সীমাবদ্ধ ছিল? তোমার মতামত বিশ্লেষণ কর।

৪ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. ন্যাটো ও ওয়ারশ প্যাক্ট-এর মধ্যকার উত্তেজনাকর অবস্থাকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র 'দাঁতাত' বা 'Detente' নামে অভিহিত করে।

খ. দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর রাশিয়ার সম্প্রসারণে যুক্তরাষ্ট্র অসন্তুষ্ট হয়ে রাশিয়ার প্রতি কঠোর নীতি গ্রহণ করে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অব্যবহিত পর পূর্ব ইউরোপের কয়েকটি দেশে সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়। এদের মধ্যে ছিল পোল্যান্ড, বুলগেরিয়া, রুমানিয়া, হাঙ্গেরি, যুগোশস্নাভিয়া, আলবেনিয়া, চেকোশেস্নাভাকিয়া। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এসময় এদের ভয়ে ভীত ছিল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভাবছিল যুদ্ধবিধ্বস্ত এবং অর্থনৈতিক সংকটে জর্জরিত ইউরোপ ধীরে ধীরে সাম্যবাদের প্রতি ধাবিত হতে পারে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বব্যাপী গণতন্ত্রের বিস্তার ঘটাতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়। তাই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার প্রতি কঠোর নীতি গ্রহণ করে।

গ. উদ্দীপকের আবদুর রশিদ ও জহিরুল ইসলামের গৃহীত শান্তিচুক্তি ছিল একটি মাইলফলক। দুটি ইউনিয়নের মধ্যে এরূপ একটি চুক্তি সমাজে শান্তিশৃঙ্খলা ও সম্প্রীতিকে সংহত করে উন্নয়নের দিকে নিয়ে যেতে সহায়তা করবে। কিন্তু হাকিমপুরের কিছু বখাটের নারদায় আক্রমণ এবং এ থেকে সৃষ্ট সংঘাত দুটি ইউনিয়নের সম্পর্ককে নষ্ট করে। এখানে চুক্তি অনুসারে বিরোধের মীমাংসা হলে আমরা খুশি হতাম। কিন্তু যোগাযোগের ঘাটতি এখানে প্রকট আকারে দেখা যায়। যে কারণে অপপ্রচারের সুযোগ থেকে যায়। এ সুযোগ নিয়েই সুযোগ সন্ধানীরা পরস্পরের বিরুদ্ধে কুৎসা রটনা করে বিরোধকে উস্কে দেয়। ফলে আবদুর রশিদ ও জহিরুল ইসলামের মধ্যে এক ধরনের ক্ষোভ জন্ম নেয়। এ ক্ষোভ সৃষ্টি হওয়ার জন্য প্রধানত দায়ী বলে মনে করা যায়, যোগাযোগের অভাবকে। কেননা যোগাযোগের দুর্বলতার কারণেই নিন্দুকেরা কুৎসা রটানোর সুযোগ পায়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে এরূপ কারণ স্নায়ুযুদ্ধ দ্রুত বিস্তার লাভ করে।

ঘ. উদ্দীপকের হাকিমপুর ও নারদা ইউনিয়নের লোকদের মধ্যে লোকদের মধ্যে আদর্শিক দ্বনে্দ্বর মতো কোনো উপাদান এখানে লক্ষ করা যায় না। কেননা এ দুটি ইউনিয়নের আদর্শগত দ্বন্দ্ব লক্ষ করা যায় না।
বিশ্বের দ্বন্দ্ব ২৮৩ হাকিমপুর ও নারদা ইউনিয়নের রশিদ ও জহিরুলের মধ্যে যে চুক্তি, সম্পাদিত হয়, তা অভিন্ন লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে। এরূপ অবস্থায় তাদের মধ্যে আদর্শিক কোনো দ্বন্দ্ব চোখে পড়ে না। আদর্শিক দ্বন্দ্ব বলতে প্রধানত বোঝানো হয় কোনো বিশ্বাস, মতবাদ কিংবা তত্ত্বের বিরোধের কারণে সৃষ্ট দ্বন্দ্ব। যেমন সোভিয়েত-মার্কিন দ্বনে্দ্বর প্রধান কারণ ছিল আদর্শিক। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ছিল ধনতান্ত্রিক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার অনুসারী। আর রাশিয়া ছিল সমাজতন্ত্র তথা সাম্যবাদে বিশ্বাসী। রাশিয়া ধনতন্ত্রকে দেখত শ্রমিক শোষণ ও আগ্রাসনের উপায় হিসেবে। তারা একে গণতন্ত্র না বলে ধনীদের যন্ত্র হিসেবে বর্ণনা করত। একে সাম্রাজ্যবাদ হিসেবেও গণ্য করত। অন্যদিকে মার্কিনরা রাশিয়ান ব্যবস্থাকে আপত্তিকর ও বিপজ্জনক বলে বর্ণনা করত। কারণ এতে জনগণের স্বাধীনতা বা পার্লামেন্টারি কোনো ব্যবস্থা নেই। এখানে রাজনৈতিক দলের স্বাধীনতা নেই, একটিমাত্র রাজনৈতিক দল এবং সবাই এর সদস্য। এরূপ ব্যবস্থাকে যুক্তরাষ্ট্র মনে করত শৃঙ্খলিত ব্যবস্থা হিসেবে। এটি ছিল আদর্শিক বিরোধ। এরূপ বিরোধের কারণে জন্ম হয়েছিল স্নায়ুযুদ্ধের। কিন্তু উদ্দীপকের ইউনিয়ন দুটিতে এরূপ কোনো বিরোধ দেখা যায় না। তাই বলা যায়, তাদের মধ্যে আদর্শগত কোনো প্রতিদ্বনি্দ্বতা ছিল না।

৫. লতিফউদ্দিন এলাকার মানুষের সমস্যা সমবায় ভিত্তিতে সমাধান ও তাদেরকে একই আদর্শ নিয়মনীতির প্রতি ঐক্যবদ্ধ করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু বাধা হয়ে দাঁড়ান বিত্তশালী লোকমান হাসান। তিনি প্রত্যেক পরিবারকে স্বাধীনভাবে জীবনযাপনের তাগিদ দেন ও তাদেরকে অর্থনৈতিক মুক্তির ব্যাপারে সাহায্যের আশ্বাস দেন এবং একটি সমিতি গঠন করেন। এসব পরিবারের স্বাধীন জীবনযাপন নিশ্চিত করতে লতিফ সাহেবের সমিতির পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে একটি প্রতিরোধ কমিটি গঠন করেন লোকমান সাহেব।
ক. ইংরেজি ঐতিহাসিক টয়েনবি বর্তমান আন্তর্জাতিক রাজনীতিকে কী নামে অভিহিত করেন?
খ. স্নায়ুযুদ্ধের কারণ ব্যাখ্যা কর।
গ. লোকমান হাসান কীভাবে লতিফউদ্দিনের সমিতিকে অবরোধ করেছেন? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. লোকমান হাসানের উদ্যোগের মাঝে লতিফউদ্দিনের আদর্শকে প্রতিরোধ করার নীতি নিহিত ছিল- তোমার মতামত বিশ্লেষণ কর।

৫ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. ইংরেজি ঐতিহাসিক টয়েনবি বর্তমান আন্তর্জাতিক রাজনীতিকে 'বাইপোলার রাজনীতি' (Bipolar Politics) নামে আখ্যায়িত করেছেন।

খ. স্নায়ুযুদ্ধের অন্যতম প্রধান কারণ হলো দু পরাশক্তি রাশিয়া ও আমেরিকার মধ্যে প্রতিদ্বনি্দ্বতা। এ যুদ্ধের অন্যতম কারণ হলো-
প্রথমত : দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ইউরোপের যেসব অঞ্চলে বিভিন্ন মিত্রশক্তি প্রবেশ করে তারা সেখানে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে নিজেদের আধিপত্য স্থাপন করার চেষ্টা করে। সোভিয়েত ইউনিয়ন এর সম্বাবহার করে। অপরদিকে যুদ্ধে পশ্চিমা দেশগুলো দুর্বল হয়ে পড়ায় তাদের মধ্যে সোভিয়েত ভীতি বিশেষভাবে সৃষ্টি হয়। এ পরিস্থিতিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পশ্চিম ইউরোপের সাথে চুক্তি স্থাপন করে সোভিয়েত বিরোধী এক জোট সৃষ্টি করে।
দ্বিতীয়ত : আদর্শগত সংঘাতও ঠান্ডা লড়াইয়ের জন্ম দেয়। আমেরিকা তথা পশ্চিম বিশ্বের ধনবাদী আদর্শ ও সোভিয়েত ইউনিয়নের সমাজতান্ত্রিক আদর্শের দ্বন্দ্ব এক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য।
তৃতীয়ত : প্রযুক্তিগত উন্নতির সাথে সাথে লড়াইর প্রবণতা বৃদ্ধি পায়।

গ. উদ্দীপকের লতিফউদ্দিন সাহেব সাম্যবাদী ধারণার সমর্থক এবং তিনি এটি প্রতিষ্ঠা করার জন্য একটি সমিতি গঠন করেছেন। অপরদিকে লোকমান হাসান পুঁজিবাদী ধারণার সমর্থক এবং তিনিও তার পক্ষে একটি সমিতি গঠন করেছেন। এখানে লতিফ ও লোকমানের আদর্শগত ভিত্তির সমর্থনে দুটি সমিতি গঠিত হয়েছে এবং উভয়ে পরস্পরের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। লক্ষণীয়, প্রথমে লতিফ সমবায় ভিত্তিতে সাম্যবাদ প্রতিষ্ঠার জন্য উদ্যোগ নেন। আর লোকমান লতিফকে প্রতিরোধ করতে সমিতি গঠন করেন। এখানে লতিফ সাহেবের মূল লক্ষ্য যখন সাম্যবাদ প্রতিষ্ঠা করা, সেখানে লোকমান সাহেবের মূল লক্ষ্য হলো সাম্যবাদ প্রতিরোধ করা। প্রয়োজনে তিনি প্রত্যেক পরিবারকে অর্থনৈতিক সাহায্য দিবেন। লোকমান সাহেবের সকল কার্যাবলির মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হলো লতিফ সাহেবের কার্যাবলিকে বাধাগ্রস্ত করা। এজন্য তিনি যাবতীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন এবং অনেকটা সফল হয়েছেন। লোকমান সাহেব ও লতিফ সাহেব পরস্পরের বিরুদ্ধে পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে যে সমিতি গঠন করেছেন তা অনেকটা রুশপন্থি সমাজতান্ত্রিক ব্লক এবং মার্কিনপন্থি ধনতান্ত্রিক ব্লকের ন্যায়। লোকমান সাহেব তার ব্লকের সদস্যদের সহায়তায় জন্য যে সমিতি করেছেন, এর সার্বিক কার্যাবলির মাধ্যমে লতিফ সাহেবের সমিতিকে অবরুদ্ধ করে রেখেছেন।

ঘ. উদ্দীপকের লতিফ সাহেব সমবায় সমিতির মাধ্যমে গ্রাম্য মানুষের সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে কাজ করতে সমিতি গঠন করেন। কিন্তু লোকমান হাসানের তা পছন্দ হয়নি বলে তিনি এর পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে আর একটি সমিতি গঠন করেন। এরূপ দুটি সমিতি ছিল দুটি আদর্শের ভিত্তিতে গঠিত। একটি ধনতান্ত্রিক আদর্শ এবং অন্যটি সমাজতান্ত্রিক আদর্শ। এক্ষেত্রে সমাজতান্ত্রিক আদর্শের সমিতিটি গঠিত হয়েছে নিজেদের আদর্শকে বিস্তার করার জন্য এবং ধনতান্ত্রিক আদর্শের সমিতিটি গঠিত হয়েছে সমাজতান্ত্রিক আদর্শের সমিতিটিকে প্রতিহত করার জন্য। ফলে এক সময় দুটি সমিতি পরস্পর পরস্পরের প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড়িয়েছে। ঠিক যেমন স্নায়ুযুদ্ধকালীন সময়ে রুশপন্থি ও মার্কিনপন্থি দুটি ব্লকের মধ্যে বিরোধ ছিল। এ দুটি ব্লক পরস্পর পরস্পরের বিরুদ্ধে সশস্ত্র যুদ্ধে লিপ্ত না থাকলেও একে অন্যের ভয়ে ভীত থাকত। একপক্ষ অন্যপক্ষের আদর্শের বিস্তারকে নিজেদের জন্য হুমকি হিসেবে দেখত এবং তা প্রতিহত করতে সর্বদা চেষ্টা করত। উদ্দীপকের লোকমান ও লতিফ সাহেবের সমিতির মধ্যেও অনুরূপ প্রবণতা লক্ষণীয়। লতিফ সাহেবের সমিতি যখন নিজেদের আদর্শের বিস্তারের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছিল তখন লোকমান সাহেবের পক্ষের সমিতি তা প্রতিরোধ করতে কাজ করছিল। এজন্য যা যা করা প্রয়োজন লোকমান সাহেবের সমিতি তার সবই করছিল। তিনি লোকজনকে আর্থিক সহায়তা করছিলেন এবং ব্যক্তিস্বাধীনতা রক্ষা করতে লোকজনকে উদ্বুদ্ধ করছিলেন। এর মাধ্যমে মূলত তিনি লতিফউদ্দিন সাহেবের সাম্যবাদী আদর্শকে প্রতিরোধে কাজ করছিলেন।

৬. করিমগঞ্জ উপজেলার ২২টি ইউনিয়নের প্রভাবশালী ৪টি ও ৬টি ইউনিয়ন মিলে আলাদাভাবে দুটি জোট গঠন করে। এ দুটি জোট পরস্পর পরস্পরের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে সংঘর্ষের মুখোমুখি হয়। এমতাবস্থায় বাদবাকি ১২টি ইউনিয়ন, যারা অপেক্ষাকৃত দুর্বল, তারা এ দুটি পক্ষের কোনটিতেই না যাওয়ার শর্তে একটি নতুন জোট গঠন করে। নতুন জোট স্বাধীনভাবে কাজ করার দৃঢ় সংকল্প করে।
ক. প্রকৃত অর্থে দাঁতাত-এর পর্যায় শুরু হয় কবে?
খ. স্নায়ুযুদ্ধের পর্যায়গুলো ব্যাখ্যা কর।
গ. উদ্দীপকের ১২টি ইউনিয়নের নতুন জোট স্নায়ুযুদ্ধকালীন কোন জোটটির কথা মনে করিয়ে দেয়? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. তুমি কি মনে কর নতুন এ জোটটি কার্যকর ভূমিকা পালন করতে সচেষ্ট হবে? পাঠ্যপুস্তকের আলোকে তোমার মতামত বিশ্লেষণ কর।

৬ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. কিউবা ক্ষেপণাস্ত্র সংকটের পর থেকে প্রকৃত অর্থে দাঁতাত-এর পর্যায় শুরু হয়।

খ. স্নায়ুযুদ্ধকে চারটি পর্যায়ে ভাগ করা যায়। এ পর্যায়গুলো হলো-
প্রথম পর্যায় : ১৯৪৫ সাল থেকে ১৯৫০ সাল পর্যন্ত।
দ্বিতীয় পর্যায় : ১৯৫০ সাল থেকে ১৯৫৩ সাল পর্যন্ত।
তৃতীয় পর্যায় : ১৯৫৩ সাল থেকে ১৯৫৯ সাল পর্যন্ত।
চতুর্থ পর্যায় : ১৯৫৯ সাল থেকে ১৯৬২ সাল পর্যন্ত।

গ. উদ্দীপকের করিমগঞ্জ উপজেলার প্রভাবশালী ইউনিয়নের বিরোধের প্রেক্ষাপটে নিরপেক্ষ ও দুর্বল ইউনিয়নসমূহের নতুনজেট এক নব অধ্যায়। স্নায়ুযুদ্ধকালীন সময়ে যখন রুশ-মার্কিন বুকের মধ্যে বিরোধ চরম আকার ধারণ করেছিল এবং প্রত্যেকেই নিজ সমর্থক বাড়ানোর প্রচেষ্ট, লাচ্ছিল, সেই প্রেক্ষাপটে নব্য স্বাধীন ও নিরপেক্ষ দেশগুলো মিলে গড়ে তোলে জোট নিরপেক্ষ আন্দোলন। এ দেশগুলো কোনো পক্ষেই যোগ না দিয়ে নিরপেক্ষ থাকার নীতি গ্রহণ করে। "কারও সাথে শত্রুতা নয়" এটি হয় এ জোটের মূলনীতি। ১৯৬১ সালে যুগোশ্লাভিয়ার রাজধানী বেলগ্রেডে এটি গঠিত হয়। এ জোটটি সে সময় এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল বিশ্বশান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষায়। এটি ছিল সে সময়ে এক সাহসী পদক্ষেপ।

ঘ. করিমগঞ্জ উপজেলার বিবাদমান দুটি পক্ষের একদিকে ছিল ৪টি ইউনিয়ন এবং অপরপক্ষে ছিল ৬টি ইউনিয়ন। শক্তিশালী এ দুটি জোট সংগত কারণেই নিজেদের শক্তি বাড়াতে ও সমর্থক বাড়াতে সচেষ্ট। থাকার কথা। এসময় বাদবাকি ইউনিয়নের জোটের নিরপেক্ষ থাকার ঘোষণা দুপক্ষকেই আঘাত করেছে- এ বিষয়ে সন্দেহ নেই। আবার অপেক্ষাকৃত দুর্বল ইউনিয়নগুলো নিজেদের এ অবস্থান দ্বারা কতটর লাভবান হবে তা বলা কঠিন। কেননা শূন্যের সাথে শূন্য যোগ করলে তা শূন্যই হয়।
জোট নিরপেক্ষ আন্দোলন নামে যে জোটটি ১৯৬১ সালে গঠিত হয়েছিল তার কার্যকারিতা ও সফলতা বিতর্কের ঊর্ধ্বে নয়। এ জোটের একটি বড় সফলতা হলো এ জোট গঠনের ফলে স্নায়ুযুদ্ধ দুর্বল হয়ে যায়। কেননা শক্তি ও প্রভাব বিস্তারের যে প্রতিযোগিতা চলছিল তার পথ অনেকটাই রুদ্ধ হয়ে যায় এ জোট গঠনের ফলে। ফলে একসময় স্নায়ুযুদ্ধের অবসান ঘটে। আবার অপরপক্ষের মতে, NAM কার্যকর কোনো ভূমিকা পালন করতে পারেনি। কেননা ন্যামভুক্ত অনেক দেশ রুশ কিংবা মার্কিন ব্লকের সাথে চুক্তিবদ্ধ ছিল। এর ক্ষমতা ও কার্যাবলিও ছিল সীমিত। ফলে এর সফলতা নিয়ে সন্দেহ পোষণ করেন তারা। কিন্তু তারপরও বলা যায়, জোট নিরপেক্ষা আন্দোলন (NAM) ছিল সময়ের প্রয়োজনে দুর্বলের এক শক্ত ভাষা। এটি না থাকলে অনেক দেশই বিরূপ পরিস্থিতির সম্মুখীন হতো। সে অর্থে ঘঅগ সফল একটি সংস্থা। তেমনিভাবে করিমগঞ্জ ইউনিয়নের নতুন নিরপেক্ষ জোটটিও NAM-এর মতো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে আমাদের বিশ্বাস।

HSC ইতিহাস ২য় পত্র (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর অধ্যায় ৭ pdf download

৭. পূর্বে নোহালি গ্রাম ও চড়ুইভাতি গ্রামের লোকদের মাঝে সংঘর্ষ, হানাহানি লেগেই থাকত। তৌকিরের মতো নোহালি গ্রামের অনেকেই শিল্পের উন্নয়নে বেশি সময় দেওয়ায় এবং চড়ুইভাতি গ্রামের চেয়ারম্যান শিরিন আক্তার সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখতে বেশ কিছু চুক্তি মেনে চললে দু গ্রামের মাঝে উত্তেজনা প্রশমিত হয়। সংঘর্ষের পরিবর্তে অর্থনৈতিক উন্নয়নমূলক প্রতিযোগিতায় ব্যস্ত হয়ে ওঠে দু গ্রামবাসী।
ক. স্নায়ুযুদ্ধের ইংরেজি প্রতিশব্দ কী?
খ. ন্যাটো বলতে কী বোঝ?
গ. উদ্দীপকের তৌকির ও শিরিন আক্তার কীভাবে দু গ্রামের মাঝে সাংঘর্ষিক মনোভাব প্রশমন করেছেন? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. তুমি কি মনে কর নোহালি ও চড়ুইভাতি গ্রামের সাংঘর্ষিক পরিবেশ দূরীকরণ একটি চাঞ্চল্যকর ঘটনা তোমার মতামত বিশ্লেষণ কর।

৭ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. স্নায়ুযুদ্ধের ইংরেজি প্রতিশব্দ হলো Cold War.

খ. ন্যাটো তথা NATO-এর পূর্ণরূপ হলো 'North Atlantic Treaty Organization'.
১৯৪৯ সালের ৪ এপ্রিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ১২টি দেশের প্রতিনিধিসহ ন্যাটো জোট গঠন করে। ১৯৫২ সালে গ্রিস ও তুরস্ক এবং ১৯৫৫ সালে পশ্চিম জার্মানি এ জোটের সদস্য নিযুক্ত হন। মূলত সামরিক দিক থেকে সোভিয়েত ইউনিয়নকে অবরোধ করে রাখার নীতি কার্যকর করার জন্য ন্যাটো গঠিত হয়েছিল।

গ. উদ্দীপকের নোহালি ও চড়ুইভাতি গ্রামের লোকদের মাঝে সংঘর্ষ, হানাহানি লেগে থাকা ছিল এক স্বাভাবিক ব্যাপার। এ দুটি গ্রামের এ সংঘর্ষও হানাহানির কারণ জানা যায় না। হতে পারে পূর্বের কোনো বড় ঘটনা থেকে এরূপ চলে আসছে। কিন্তু যখন গ্রামবাসীর একপক্ষ শিল্পের উন্নয়নে বেশি সময় দিতে থাকে এবং অন্যপক্ষ শান্তিচুক্তি মেনে চলে, তখন এদের বিরোধ প্রশমিত হয়। ঘটনাটি অনেকটা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী জাপানের ঘটনার ন্যায়। এসময় জাপান শিল্পের উন্নয়নের দিকে নজর দেয়। অতিঅল্প সময়ের মধ্যেই জাপানের শিল্প বিশ্বব্যাপী খ্যাতি অর্জন করে। এ সময় জাপানের সবচেয়ে বড় শিল্প সহযোগী দেশ হিসেবে পরিণত হয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। অথচ যুক্তরাষ্ট্র জাপানে পারমাণবিক বোমার বিস্ফোরণ ঘটায়। উদ্দীপকের নোহালি। গ্রাম ও চড়ুইভাতি গ্রামের মাঝে সম্পর্ক উন্নয়নে তৌকির ও শিরিন অনেকটা এ পথই বেছে নিয়েছিলেন।

ঘ. উদ্দীপকের নোহালি ও চড়ুইভাতি গ্রামের সদস্যদের মধ্যে চলে আসা দ্বন্দ্ব, সংঘাত দুটি গ্রামের জনজীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছিল। এরূপ দ্বন্দ্ব-সংঘাত মানুষের কাজের পরিবেশ নষ্ট করে, সৃজনশীলতা ধ্বংস করে এবং সামগ্রিক জীবনযাত্রার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। এরূপ দ্বন্দ্ব, সংঘাত মানুষের জীবনকে বিষিয়ে তোলে। নিরাপত্তাকে বিঘ্নিত করে। ব্যবসায় বাণিজ্য শিক্ষা-সংস্কৃতি ইত্যাদি সবকিছুর ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। তাই যদি এরূপ একটি অবস্থা থেকে বের হয়ে আসা যায়, তবে তা একটি চাঞ্চল্যকর ঘটনাই হবে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তীকালে জাপান-মার্কিন বিরোধ নিরসন এরূপ চাঞ্চল্যের জন্ম দিয়েছিল। ফল হিসেবে জাপান বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী অর্থনৈতিক পরাশক্তিতে পরিণত হয়েছে। শিল্পোন্নত জাপানের সাথে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র হয়েছে সবচেয়ে বড় অংশীদার। অথচ এ বিরোধের নিষ্পত্তি না হলে জাপানের পক্ষে সম্ভব হতো না শিল্পে এত উন্নত হওয়া এবং যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে সম্ভব হতো না এত স্বল্পব্যয়ে উন্নত মানের পণ্য পাওয়া। মার্কিন বিনিয়োগকারীদেরও জাপানে বিনিয়োগ সম্ভব হতো না। সবদিক দিয়ে এ বিরোধ নিষ্পত্তি এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছিল। নোহালি গ্রাম ও চড়ুইভাতি গ্রামের বিরোধ দূরীভূত হওয়ার ফলেও এরূপ একটি ফলাফল আসতে পারে। এটি স্থানীয় মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন, শিল্পে সমৃদ্ধি এবং শান্তিপূর্ণ এক সমাজ নির্মাণে সহায়ক হতে পারে। যে কারণে এর তাৎপর্যও অপরিসীম। তাই এটিকে একটি চাঞ্চল্যকর ঘটনা বলা যেতে পারে।

৮. আব্দুল কুদ্দুস নিজ জমিতে হায়দার আলীর সাথে সম্পাদিত চুক্তি অনুযায়ী তুলা চাষ শুরু করেন। এতে সামসুল হক অত্যন্ত রাগান্বিত হন এবং কুদ্দস কৃষককে শাস্তি দিতে লোক পাঠান। কারণ হায়দার আলীর সাথে কারও মিত্রতা হোক এটা তিনি মেনে নিতে পারেন না। খবরটি শুনে হায়দার আলীও আব্দুল কুদ্দুসকে রক্ষা করতে লোক পাঠান। অবশেষে হায়দার আলী ও সামসুল হক উভয়ে বন্ধুত্ব স্থাপনের জন্য উদ্যোগী হলে পরিস্থিতি স্থিতিশীল হয়।
ক. সোভিয়েত ইউনিয়ন শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের নীতি কত সালে ঘোষণা করে?
খ. ট্রুম্যানের নীতি বলতে কী বোঝ?
গ. উদ্দীপকের আব্দুল কুদ্দুসের সঙ্কটময় অবস্থা কীভাবে দূর হলো? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. হায়দার আলী ও সামসুল হকের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝির অবসান কেবল তাদের দুইজনকে নয় বরং সম্পূর্ণ গ্রামবাসীর শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান সম্ভব করেছে- তোমার মতামত বিশ্লেষণ কর।

৮ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. সোভিয়েত ইউনিয়ন ১৯৫৬ সালে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের নীতি ঘোষণা করে।

খ. মার্কিন কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনে ১৯৪৭ সালের ১২ মার্চ রাষ্ট্রপতি ট্রুম্যান সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রতিরোধের যে নীতি ঘোষণা করেন তাই ট্রুম্যানের নীতি বলে বিবেচিত। ট্রুম্যান গ্রিস ও তুরস্কে কমিউনিস্ট প্রভাব ধ্বংস এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রভাব বিস্তারের সম্ভাবনা নির্মূল করার জন্য ৪০০ মিলিয়ন ডলার সাহায্য দান এবং সামরিক মিশন প্রেরণের জন্যে কংগ্রেসের অনুমোদন দাবি করেন। ট্রুম্যান ঘোষণা করেন, যেসব স্বাধীন মানুষ দেশের অভ্যন্তরীণ সশস্ত্র সংখ্যালঘু এবং বাইরের চাপ প্রতিরোধ করছে যুক্তরাষ্ট্র তাদের সাহায্য করবে। ট্রুম্যানের এ ঘোষণা সোভিয়েত ইউনিয়নের সাথে দীর্ঘস্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার পরিপন্থী ছিল। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রুম্যানের এ ঘোষণা বিশ্ব ইতিহাসে ট্রুম্যানের নীতি হিসেবে খ্যাত।

গ. উদ্দীপকের আব্দুল কুদ্দুস হায়দার আলীর সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়ে তুলা উৎপাদন করতে চাইলে সংকটের সূচনা হয়। কেননা হায়দার আলীর প্রতিদ্বন্দ্বী সামসুল হক চাননি কুদ্দুস হায়দার আলীর সাথে কাজ করুক। এক্ষেত্রে হায়দার ও সামসুল সাহেবের দ্বনে্দ্বর ফলে ভুক্তভোগী হতে হয় কুদ্দুসকে। ঘটনাটি অনেকটা ষাটের দশকের কিউবা সংকটের মতো। কিউবা রাশিয়ার সাথে চুক্তি সম্পাদন করলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ক্ষেপে যায়। এ নিয়ে রুশ-মার্কিন যুদ্ধাবস্থার সৃষ্টি হয়। অবশেষে কূটনৈতিক সমঝোতার মাধ্যমে সমস্যাটির সমাধান হয় এবং কিউবা সংকট দূর হয়। উদ্দীপকের সামসুল হক ও হায়দার আলীর ক্ষেত্রে আব্দুল কুদ্দুসকে নিয়ে যে সংকটের সূচনা হয় তার সমাধান হয় এ দু প্রভাবশালী ব্যক্তির মধ্যকার বিরোধের মীমাংসার মাধ্যমে। তাদের বন্ধুত্ব স্থাপনের ফলে দু পক্ষের বিরোধ মিটে যায়, ফলে আব্দুল কুদ্দুস সংকটময় অবস্থা থেকে মুক্তি পায়।

ঘ. কোনো গ্রামের প্রভাবশালী দুটি পক্ষের মধ্যে বিরোধ থাকলে তা বড় ধরনের অশান্তির কারণ হতে পারে। কেননা এক্ষেত্রে অধিকাংশ মানুষকে নিতান্ত বাধ্য হয়েই কোনো না কোনো পক্ষকে সমর্থন করতে হয়। ফলে দলাদলি সৃষ্টি হয়, যা সমাজের বিভক্তিকে বাড়িয়ে দেয়। এরূপ গ্রুপিং সমাজের মানুষের শান্তিপূর্ণ বসবাসকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। একই কথা প্রযোজ্য গ্রাম থেকে বড় ইউনিয়ন, উপজেলা, জেলা, জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও। জাতীয় পর্যায়ে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ কিংবা গোষ্ঠীগত বিরোধ থাকলে তা জাতীয় সংহতি ও নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে দুর্বল করে দেয়। এরূপ অবস্থা দেশের বৃহত্তর ক্ষতিসাধন করতে পারে। আবার আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে আমরা দেখেছি স্নায়ুযুদ্ধকালীন সময়ের চিত্র। এসময় বৃহৎ শক্তিধর দুটি রাষ্ট্রের বিরুদ্ধ সম্পূর্ণ বিশ্বকে এক অনিশ্চয়তার পথে ঠেলে দিয়েছিল। বিশ্বের শক্তিশালী মানুষকে সবসময় আতঙ্ক উৎকণ্ঠার মাঝে দিন কাটাতে হতো। অথচ স্নায়ুযুদ্ধের অবসানের ফলে বিশ্বে শান্তি ও স্বস্তি ফিরে এসেছে। একইভাবে উদ্দীপকের হায়দার আলী ও সামসুল হক সাহেবের বিরুদ্ধ মনোভাব আব্দুল কুদ্দুসের মতো মানুষের জীবনকে বিষিয়ে তুলেছিল। এ বিরোধ যদি আরও বেশিদিন স্থায়ী হতো তবে তা গ্রামের আরও অন্যান্য বাসিন্দাদেরকে প্রভাবিত করত। এমনকি সংঘাতের সম্ভাবনাও তৈরি হতো। ফলে গ্রামবাসীও কোনো না কোনোভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হতো। তাই প্রভাবশালী এ দু ব্যক্তির বিরোধ নিরসন গ্রামবাসীকেও স্বস্তি দিয়েছে।

৯. যমুনা নদীর তীরবর্তী সালেমপুর ও মকসুদপুর চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দুটি গ্রাম। সালেমপুর গ্রামের নেতৃবৃন্দ চরের জমিকে ব্যক্তিমালিকানায় রাখতে চান অথচ মকসুদপুরের নেতারা চান সমবায় খামারের মাধ্যমে চর শাসন করতে। এরূপ বিরোধের প্রেক্ষাপটে, সালেমপুরের অধিবাসীরা পার্শ্ববর্তী সমমনা কয়েকটি গ্রামকে নিয়ে একটি লাঠিয়াল বাহিনী গঠন করে। পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে মকসুদপুর গ্রামবাসীও অনুরূপ বাহিনী গঠনের চেষ্টা চালায়।
ক. সোভিয়েত নেতা ক্রুশ্চেভ কত সালে যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণ করেন?
খ. মার্শাল পরিকল্পনা ব্যাখ্যা কর।
গ. সালেমপুর গ্রামবাসীর গঠিত লাঠিয়াল বাহিনীর সাথে স্নায়ুযুদ্ধকালীন কোন সামরিক জোট গঠনের মিল দেখা যায়? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. তুমি কি মনে কর পাল্টাপাল্টি লাঠিয়াল বাহিনী গঠনের ফলে এলাকায় ক্ষমতার ভারসাম্য ফিরে আসবে? মতামত দাও।

৯ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. সোভিয়েত নেতা ক্রুশ্চেড ১৯৫৯ সালে যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণ করেন।

খ. ১৯৪৭ সালের ৫ জুন মার্কিন পররাষ্ট্র সচিব জর্জ সি. মার্শাল হারভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ইউরোপের অর্থনৈতিক পুনরুজ্জীবন সম্পর্কে মার্কিন নীতি ব্যাখ্যা করেন। মার্শালের এ নীতি ক্ষুধা, দারিদ্র্য, হতাশা ও বিশৃঙ্খলার বিরুদ্ধে কোনো দেশ বা মতাদর্শের বিরুদ্ধে নয়। তিনি বলেন, ইউরোপকে অর্থনৈতিক দিক থেকে স্বাবলম্বী করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এককভাবে কর্মসূচি গ্রহণ করবে। মার্শালের এ পুনরুজ্জীবনের পরিকল্পনা বিশ্ব ইতিহাসে 'মার্শাল পরিকল্পনা' নামে অভিহিত। মার্শালের বক্তব্যের মাধ্যমে সোভিয়েত বিরোধিতা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। ১৯৪৭ সালের ২৯ এপ্রিল চীফ অব স্টাফ-এর নিকট জয়েন্ট স্ট্রাটেজিক সার্ভে কমিটির সুপারিশে বলা হয়েছিল, সাহায্যদানের ক্ষেত্রে সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং তার নিয়ন্ত্রণাধীন সকল দেশকে যেন বাদ দেওয়া হয়।

গ. উদ্দীপকের সালেমপুর গ্রামবাসী নিজেদের পুঁজিবাদী চিন্তাচেতনাকে বিস্তার করতে এবং মকসুদপুরের সাম্যবাদী ধারণাকে রুখতে নিজস্ব লাঠিয়াল বাহিনী গঠন করেন। এক্ষেত্রে তাদের মতাদর্শের পক্ষের শক্তিসমূহ তাদের সহায়তা করে। ঘটনাটি আমাদেরকে ১৯৪৯ সালে গঠিত NATO জোটের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। স্নায়ুযুদ্ধকালীন সময়ে শক্তির মহরা দিতে এবং পুঁজিবাদী ও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার প্রসারের মাধ্যমে সমাজতন্ত্রকে প্রতিহত করতে ন্যাটো গঠিত হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে সেসময় ১২টি দেশ নিয়ে গঠিত হয়েছিল ন্যাটো নামক সামরিক জোটটি। এ জোটের সবদেশ ছিল পুঁজিবাদের সমর্থক এবং সমাজতন্ত্রের বিরোধী। সামরিক দিক থেকে প্রতিপক্ষ সোভিয়েত ইউনিয়নকে চাপের মধ্যে রাখা ছিল এর মুখ্য উদ্দেশ্য। উদ্দীপকের সালেমপুরের লাঠিয়াল বাহিনীর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের দিকে তাকালে আমরা দেখতে পাই, এটিও ঠিক ন্যাটো জোটেরই প্রতিরূপ। ন্যাটো যেখানে শক্তিশালী দেশসমূহের শক্তিশালী সামরিক জোট, সেখানে সালেমপুরের সামর্থ্যের মধ্যে সামরিক বাহিনী হলো লাঠিয়াল দল।

ঘ. দুটি ভিন্ন মতাদর্শের দলের জন্য ক্ষমতার লড়াইয়ে টিকে থাকতে হলে প্রয়োজন ক্ষমতার ভারসাম্য। ক্ষমতার ভারসাম্য রক্ষার একটি উপায় হলো সামরিক শক্তি বৃদ্ধি করা। কিন্তু ভারসাম্যের নাম করে ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য, অন্ত্রের প্রতিযোগিতা কোনো সময়ই ভালো পরিণতি ডেকে আনে না।
সালেমপুর গ্রামের গঠিত লাঠিয়াল বাহিনীর খবরে মকসুদপুর গ্রামবাসী ও তার মিত্রদের মাঝে ভীতির সঞ্চার হওয়াটা খুবই স্বাভাবিক। এজন্য মকসুদপুর গ্রামবাসী নিরাপত্তার অভাব অনুভব করতে পারে। সালেমপুর গ্রামের মিত্রদের সম্মিলিত বাহিনী শক্তির আধিপত্যে হামলাও করে বসতে পারে। এজন্য মকসুদপুরবাসীদেরও পাল্টা বাহিনী গঠন অপরিহার্য হয়ে দাঁড়ায়। এতে হয়তবা ক্ষমতার ভারসাম্য আসতে পারে, কিন্তু হামলা-পাল্টা হামলার ঝুঁকি অনেক বেড়ে যাবে, স্থিতিশীলতা নষ্ট হবে। একই ঘটনা দেখা গিয়েছিল ন্যাটো জোটের বিপরীতে সোভিয়েত ও তার মিত্রদের ওয়ার্শ প্যাক্ট গঠনের সময়। এ দুটি সামরিক জোট গঠনের ফলে বিশ্ব আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি অস্থিতিশীল হয়ে পড়ে। কিন্তু তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ বাধেনি, অনেকের মতে ক্ষমতার ভারসাম্য থাকার কারণে। তাই যমুনা তীরের দুটি গ্রামেও এরূপ দুটি প্রতিদ্বন্দ্বী বাহিনীর গঠন ক্ষমতার ভারসাম্য আনতে পারলেও ঝুঁকি বাড়াবে একথা বলা যায়।

১০. বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সোফিয়া ও তানজিনার মাঝে প্রায় মারামারি ভাব বিরাজ করত সর্বদা। এটি দেখে হোস্টেলের গাইড। ম্যাডাম লাইজু আক্তার দুজনকে দুটি পৃথক রুমে সিট পরিবর্তন করেন। এতে তাদের মাঝে বিরোধের অবসান হলেও সোফিয়া বান্ধবীদের মাধ্যমে তানজিনার গতিবিধি নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করত। আর তানজিনা নতুন রুমের মেয়েদের কাছ থেকে ইন্টারনেটে আউট সোর্সিং-এর কাজ শিখে বেশ ভালোই আয় করতে শুরু করে। এতে প্রশান্তির ক্ষেত্রে দুজনেই বেশ ভালো থাকে।
ক. মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে কোন ক্ষেত্রে সংগ্রাম পরিস্ফুট হয়?
খ. স্নায়ুযুদ্ধের দ্বিতীয় পর্যায়ের উল্লেখযোগ্য ঘটনা ব্যাখ্যা কর।
গ. উদ্দীপকের সোফিয়া ও তানজিনার রুম পরিবর্তনের পর তাদের মাঝে কী প্রভাব লক্ষণীয়? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. তুমি কি মনে কর দ্বন্দ্ব-সংঘাত সোফিয়াকে একটু বেশি ভাবিয়েছে? তোমার মতামত বিশ্লেষণ কর।

১০ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামরিক ক্ষেত্রে সংগ্রাম পরিস্ফুট হয়।

খ. স্নায়ুযুদ্ধের দ্বিতীয় পর্যায়ের উল্লেখযোগ্য ঘটনা হলো কোরিয়া যুদ্ধ। ১৯৪৮ সালে কোরিয়াকে উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়া দুভাগে ভাগ করা হয়। দক্ষিণ অংশে মার্কিন প্রভাবিত সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়। যুক্তরাষ্ট্রের কার্যকলাপের কারণে দক্ষিণ কোরিয়া সরকারের প্ররোচনায় ১৯৫০ সালে উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যে যুদ্ধ শুরু হয়। নিরাপত্তা পরিষদে সোভিয়েত ইউনিয়নের অনুপস্থিতিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র উত্তর কোরিয়াকে আক্রমণকারী রূপে ঘোষণার চেষ্টায় সফল হন। ফলে জাতিসংঘের নেতৃত্বে উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ আরম্ভ হয়। অন্যদিকে চীন ও রাশিয়া কোরিয়াকে সাহায্যের জন্য অগ্রসর হয়। অবশেষে অস্ত্রসংবরণ চুক্তির মাধ্যমে কোরিয়া যুদ্ধের অবসান হয়।

গ. উদ্দীপকের তানজিনা ও সোফিয়া একই রুমে থাকাকালীন সময়ে তাদের মধ্যে বিরোধ কাজ করত যা সংঘাতের সম্ভাবনাকে বাড়িয়ে দিয়েছিল। তাদেরকে পৃথক রুমে স্থানান্তরের ফলে একজন অন্যজনের। গতিবিধি লক্ষ করতে থাকে আর অন্যজন আউটসোর্সিং-এ মনোযোগ দেয়। এ থেকে বোঝা যায়, তানজিনার জন্য রুম পরিবর্তন ইতিবাচক ফল নিয়ে আসে। কেননা সে নতুন রুমে এসে আউটসোর্সিং-এর কাজ শুরু করে অর্থ উপার্জন শুরু করে, যা তার আয় বৃদ্ধি করে। তার পূর্বের রুমের চেয়ে নতুন রুমটি বেশি কার্যকর এবং ফলপ্রসূ হয়। অন্যদিকে, সোফিয়া রুম পরিবর্তনের পরও তানজিনার গতিবিধি পর্যবেক্ষণে সময় ব্যয় করে, যা তার জন্য কোনো কল্যাণ বয়ে আনতে পারেনি। তবে দুজনের ক্ষেত্রেই বিরোধ নিরসন একটি কার্যকরী ফলাফল। কেননা উভয়েই নতুন রুমে আগের চেয়ে ভালো থাকে, যা তাদের মানসিক প্রশান্তি আনয়নে সহায়ক। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী স্নায়ুযুদ্ধের সময় বিভিন্ন দেশের ক্ষেত্রে এরূপ পরিণতি দেখা গেছে।

ঘ. উদ্দীপকের ঘটনায় তানজিনা ও সোফিয়া আলাদা রুমে স্থানান্তরিত হলেও সোফিয়া নিয়মিত তানজিনার গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করত। এক্ষেত্রে সে তার বন্ধবীদের সহায়তা নিত। কিন্তু তানজিনার ক্ষেত্রে এরূপ দেখা যায় না। সে বরং নতুন রুমে গিয়ে বান্ধবীদের থেকে ইন্টারনেটের আউটসোর্সিং এর কাজ শিখে আয় বাড়াতে থাকে। পূর্বের ঘটনার প্রভাব তার মাঝে দেখা যায় না। অথচ সোফিয়া তানজিনার গতিবিধি পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে আগের ঘটনার সাথে তার সম্পৃক্ততার কথাই মনে রাখে। এ থেকে বোঝা যায় যে, তানজিনা পূর্বের ঘটনাকে মনে না রাখলেও সোফিয়ার মধ্যে এখনও বিদ্যমান আছে। সোফিয়ার মধ্যে পূর্বের দ্বন্দ্ব সংঘাত বেশি প্রভাব বিস্তার করেছিল বলেই সে এরূপ করছে। তা না হলে সেও এ ঘটনা ভুলে গিয়ে নতুন কিছু শুরু করত। সোফিয়া নতুন কিছুর সাথে সম্পৃক্ত না হওয়ার ফলে পূর্বে ঘটনা তাকে বেশি প্রভাবিত করছে। কারণে সে আগের ঘটনাকে বেশি বেশি স্মরণ করছে নিজের অনিচ্ছা সত্ত্বেও। তবে পূর্বের দ্বন্দ্ব-সংঘাত সোফিয়াকে বেশি ভাবিয়েছে, একথা সহজেই বলা যায় তার কার্যাবলি পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে।

Share: