HSC সমাজকর্ম ১ম পত্র (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর অধ্যায় ১ pdf download

এইচএসসি পরীক্ষার পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি
HSC Social Work 1st Paper Srijonshil question and answer. HSC SocialWork 1st Paper (Srijonshil) Creative Questions pdf download.

সমাজকর্ম
প্রথম পত্র

সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
অধ্যায়-১

HSC Social Work 1st Paper
Srijonshil Question and Answer pdf download

সমাজকর্ম: প্রকৃতি ও পরিধি
বর্তমান বিশ্বের দ্রুত পরিবর্তনশীল ও জটিল সমাজের বহুমুখী সমস্যা মোকাবিলায় সমাজকর্মের উদ্ভব। সমাজকর্ম একটি বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি, জ্ঞান ও দক্ষতানির্ভর সাহায্যকারী পেশা, যা ব্যক্তি, দল ও সমষ্টি তথা মানুষের জীবনমান উন্নয়নে পরিকল্পিত পরিবর্তন আনায়নের মাধ্যমে তাদের সামাজিক ভূমিকা পালনে সক্ষম করে তোলে। সমাজকর্ম সামাজিক বিজ্ঞানের একটি শাখা, যা একাধারে একটি বিজ্ঞান ও কলা। শিল্পবিপ্লবের ফলে সমাজ ব্যবস্থা জটিল থেকে জটিলতর রূপ লাভ করার প্রেক্ষাপটে প্রথাগত সমাজকল্যাণ ব্যবস্থা অপর্যাপ্ত হয়ে পড়ায় প্রাতিষ্ঠানিক সমাজকর্মের আবির্ভাব হয়েছে।

সমাজকর্মের সংজ্ঞা
সমাজকর্ম হচ্ছে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি ও কৌশলনির্ভর একটি পেশাগত কর্মকান্ড ও প্রক্রিয়া, যা সামাজিক কল্যাণ (Social Betterment) আনয়নে প্রয়াস চালায়। আমেরিকার National Association of Social Workers (NASW) এমন এক প্রকাশিত সমাজকর্ম অভিধানের (১৯৯৫) সংজ্ঞানুযায়ী, “সমাজকর্ম হলো ব্যক্তি, দল ও সমষ্টিকে সাহায্য করার এক পেশাগত কর্মকান্ড, যা তাদের সামাজিক ভূমিকা পালন ক্ষমতাকে পুনরুদ্ধার ও শক্তিশালী করে এবং সামাজিক পরিবেশকে এই লক্ষ্যের উপযোগী করে গড়ে তোলে।’’

সমাজকর্ম মূলত একটি পেশাগত প্রক্রিয়া, যা মানুষের ব্যক্তিগত, দলীয় ও সমষ্টিগত ক্ষেত্রে পরিকল্পিত পরিবর্তন আনয়ন, মানবীয় শক্তি-সামর্থ্য বাড়ানো ও পুনরুদ্ধার করা এবং এক্ষেত্রে অনুকূল সামাজিক পরিবেশ গড়ে তুলে সাহায্যার্থীর ক্ষমতায়ন ও সক্ষমতা লাভে সহায়তা করে। অন্যভাবে বলা যায় যে, সমাজকর্ম একটি সাহায্যকারী প্রক্রিয়া ও পেশা, যা কতগুলো পদ্ধতির মাধ্যমে মানুষের সমস্যার টেকসই সমাধান করে এবং ব্যক্তিগত, দলীয় এবং সামাজিক সম্পর্ক উন্নয়নে সক্ষম করে তুলতে সর্বদা সচেষ্ট থাকে। 

সমাজকর্মের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য
সমাজকর্মের মূল লক্ষ্য হলো সমাজস্থ প্রতিটি স্তরের মানুষকে তার সামাজিক ভূমিকা পালনে সক্রিয় ও সক্ষম করে গড়ে তোলা এবং অনুকূল সামাজিক পরিবেশ সৃষ্টি করে সামাজিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করা। 
এ প্রসঙ্গে সমাজকর্ম বিশ্বকোষে বলা হয়েছে, সমাজকর্মের অন্যতম উদ্দেশ্য হলো ব্যক্তি, পরিবার, দল, সংগঠন এবং সমষ্টিকে কর্মসম্পাদান, দারিদ্র্য বিমোচন, প্রতিরোধ ও সম্পদ ব্যবহারে সাহায্য করার মাধ্যমে তাদের সামাজিক ভূমিকা পালন ক্ষমতার উন্নয়ন, পুনরুদ্ধার, সংরক্ষণ এবং শক্তিশালীকরণ। সমাজকর্মের উল্লেখযোগ্য লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য-
১. জনগণের সমস্যা সমাধান, উপযোজন এবং ক্ষমতার উন্নয়ন সাধন
২. সম্পদ, সেবা ও সুযোগের সাথে মানুষের সংযোগ ঘটানো
৩. কার্যকর মানবসেবা ব্যবস্থা গড়ে তোলা
৪. সামাজিক নীতির বিকাশ ও উন্নয়ন

সমাজকর্মের পরিধি
সমাজকর্মের পরিধি বলতে সাধারণত সমাজকর্মের অনুশীলন বা প্রয়োগক্ষেত্রকে বোঝায়। সমাজকর্মের ব্যবহারিক বা প্রায়োগিকদিক নিয়েই এর পরিধি নির্ধারিত হয়। পেশা হিসেবে সমাজকর্ম মানুষকে তার পরিবেশের সাথে সামঞ্জস্য রেখে কার্যকরভাবে আন্তঃক্রিয়ায় সাহায্য করে, তাই এর পরিধি ব্যাপক ও বিস্তৃত।

আমেরিকার জাতীয় সমাজকর্মী সমিতি (NASW) প্রকাশিত Encyclopedia of Social Work-এ সমাজকর্মের নিম্নোক্ত ক্ষেত্রসমূহ উল্লেখ করা হয়েছে:
১. মাদকাসক্তি নিয়ন্ত্রণ
২. বয়ষ্ক সেবা 
৩. শিশু ও পরিবার কল্যাণ সেবা
৪. সমষ্টির কল্যাণ ও মানবসেবা পরিকল্পনা
৫. অপরাধ ও কিশোর অপরাধী সংশোধন সেবা 
৬. প্রতিবন্ধী ও দৈহিক প্রতিবন্ধী সেবা 
৭. সমাজকর্ম পেশার উন্নয়নে শিক্ষা সেবা
৮. পরিবেশ এবং সামাজিক পরিকল্পনা
৯. পরিবার পরিকল্পনা ও জনসংখ্যা পরিকল্পনা
১০. পরিবারিক সেবা, পারিবারিক শিক্ষা, পরামর্শ
১১. স্বাস্থ্য সেবা, কমিউনিটি মানসিক স্বাস্থ্য, প্রজনন পরামর্শ, স্বাস্থ্য ও হাসপাতাল পরিকল্পনা, মাতৃ ও শিশু স্বাস্থ্য)

সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর

১. নূহা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিশেষ একটি বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করে; যার সম্মান ও মাস্টার্স উভয় শ্রেণিতে ৬০ কর্মদিবসের মাঠকর্ম রয়েছে। বিষয়টির প্রয়োজনীয়তা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
ক. ‘Introduction to Social Welfare’ গ্রন্থটি কার লেখা? 
খ. সমাজকর্ম একটি পদ্ধতিনির্ভর সমাধান প্রক্রিয়া ব্যাখ্যা - করো। 
গ. নূহা যে বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেছে তার বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করো।
ঘ. উদ্দীপকে ইঙ্গিতকৃত বিষয়টি পাঠের আবশ্যকতা বিশ্লেষণ করো।

💘 ১ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর 💘
ক. ‘Introduction to Social Welfare’ গ্রন্থটি ওয়াল্টার এ ফ্রিডল্যান্ডারের লেখা।

খ. সমাজকর্ম হলো সুসংগঠিত, সুশৃঙ্খল ও বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি নির্ভর সমস্যা সমাধান প্রক্রিয়া। যেকোনো ধরনের আর্থ-সামাজিক সমস্যার স্থায়ী কার্যকর ও বিজ্ঞানসম্মত সমাধানের জন্য সমাজকর্ম কতগুলো সুনির্দিষ্ট পদ্ধতির আওতায় সমস্যা সমাধানের প্রয়াস চালায়। এতে তিনটি মৌলিক এবং তিনটি সহায়ক পদ্ধতির মাধ্যমে সমস্যাগ্রস্তদের সাহায্য করা হয়। এ সব পদ্ধতির সাহায্যে সমাজকর্ম ব্যক্তি, দল ও সমষ্টিকে স্বাবলম্বী করে তোলে। এ জন্য বলা হয়, সমাজকর্ম একটি পদ্ধতিনির্ভর সমাধান প্রক্রিয়া।

গ. নূহা সমাজকর্ম বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেছে। 
সমাজের সব স্তরের মানুষের আর্থ-মনো-সামাজিক সমস্যার বাস্তবমুখী সমাধানের লক্ষ্যে সমাজকর্ম পেশার উদ্ভব হয়েছে। তাই সাধারণভাবে একে কল্যাণধর্মী বিষয় ও পেশা হিসেবে চিহ্নিত করা যায়। এর বেশ কিছু সাধারণ বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান।
সমাজকর্মের নির্দিষ্ট কর্ম পদ্ধতির আওতায় জাতি-ধর্ম-বর্ণ, শ্রেণি, বয়স লিঙ্গভেদে সবাই সেবা লাভের অধিকারী। এটি একটি বিশেষ জ্ঞান ও দক্ষতানির্ভর সেবাকর্ম। অর্থাৎ সেবাকাজ সম্পাদনে সমাজকর্মীকে অবশ্যই সমাজকর্মের তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক জ্ঞান অর্জন করতে হয়। এখানে সমাজকর্মী ও সাহায্যার্থী উভয়ের মধ্যকার পারস্পরিক সম্পর্ককে অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করতে হয়। আবার বিভিন্ন পদ্ধতি ও প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সমাজকর্ম ব্যক্তি, দল ও সমষ্টির সমাধান এবং উন্নয়নে বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করে। এ লক্ষ্যে সমাজকর্মের কার্যক্রম প্রতিকার প্রতিরোধ ও উন্নয়ন এ তিনটি ভূমিকাকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয়। এছাড়াও প্রতিটি পেশার মতো সমাজকর্মের কিছু মূল্যবোধ ও ব্যবহারিক নীতিমালা রয়েছে। উদ্দীপকে নুহার ক্ষেত্রেও আমরা একই রকম চিত্র দেখি। সে সমাজকর্ম বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেছে। উপরে তার পঠিত বিষয়ের বৈশিষ্ট্যগুলোই আলোচিত হয়েছে।

ঘ. উদ্দীপকে ইঙ্গিতকৃত বিষয়টি অর্থাৎ সমাজকর্ম পাঠের আবশ্যকতা অনস্বীকার্য।
আধুনিক শিল্প সমাজ পরস্পর সম্পর্কযুক্ত জটিল ও বহুমুখী সমস্যায় জর্জরিত। শিল্পায়ন ও শহরায়ন বিশেষ করে আধুনিকায়নের কারণে আমাদের সমাজব্যবস্থা প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত হচ্ছে। এ পরিস্থিতি ব্যক্তি ও সমাজের মধ্যে ভারসাম্যহীনতার সৃষ্টি করছে। এ অবস্থায় সমাজকর্মের জ্ঞান ব্যক্তি ও নলকে পরিবর্তিত অবস্থার সাথে সামঞ্জস্য বিধানে বিশেষভাবে সহায়তা করে। তাছাড়া যেকোনো দেশের সার্বিক সামাজিক উন্নয়নের অন্যতম প্রতিবন্ধকতা হলো কুসংস্কার, ধর্মীয় গোঁড়ামি, অন্ধবিশ্বাস, অসচেতনতা প্রভৃতি। সমাজকর্ম এসব কুসংস্কার ও কু-প্রথার প্রকৃতি, কারণ ও সমাধানের কৌশল নিয়ে বিশদভাবে আলোচনা ও বিশ্লেষণ করে। আবার সুবিধাবঞ্চিত শ্রেণির কল্যাণে আমাদের দেশে বিভিন্ন কর্মসূচি পরিচালিত হচ্ছে। এ ধরনের কর্মসূচিগুলো সফলভাবে পরিচালনা করতে গেলে সমাজকর্ম জ্ঞানের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। বর্তমানে আমাদের দেশে আর্থ-সামাজিক সমস্যা মোকাবিলায় সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে নানা কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। কিন্তু বাস্তবমুখী নীতি, পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং যথাযথ বাস্তবায়নের মধ্যে যথেষ্ট সমন্বয়ের অভাব রয়েছে। এ সব সমস্যা সমাজকর্ম জ্ঞানের আলোকে নিরসন করা সম্ভব।
উদ্দীপকের মূহা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমন এক বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেছে; যার সম্মান ও মাস্টার্স উভয় শ্রেণিতে ৬০ কর্মদিবস মাঠকর্ম রয়েছে। এতে বোঝা যায়, নূহার বিষয়টি হলো সমাজকর্ম। আর সমাজকর্ম উপরোল্লিখিতভাবে বিভিন্ন সমস্যা মোকাবিলা ও উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
সার্বিক আলোচনা থেকে বলা যায়, বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের সার্বিক কল্যাণ সাধনের জন্য উদ্দীপকে ইঙ্গিতকৃত সমাজকর্ম পাঠের আবশ্যকতা রয়েছে।

২. কৃষক পরিবারের সন্তান আমজাদ হোসেন লেখাপড়া শিখে ভালো চাকরি পেয়েছিলেন। তাই জীবনের তাগিদে গ্রাম ছেড়ে বিভিন্ন শহরে পরিবার নিয়ে থেকেছেন। আজ তার সন্তানরা দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিদেশে অবস্থান করছে। নিজেদের প্রয়োজনেও এখন সন্তানদের কাছে পান না। সামাজিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে দূরত্ব বেড়েছে। একই সাথে এসব সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য কিছু পেশাদার পদ্ধতিও আবিষ্কৃত হয়েছে। 
ক. 'বিপ্লব' শব্দের ইংরেজি প্রতিশব্দ কী? 
খ. সামাজিক নিরাপত্তা বলতে কী বোঝায়?
গ. আমজাদ হোসেনের পারিবারিক জীবনে যে বিশেষ বিষয়টি লক্ষণীয় তার বর্ণনা দাও।
ঘ. উদ্দীপকে ইঙ্গিতকৃত পেশাদার পদ্ধতি সমাজের বহুমুখী সমস্যা সমাধানে যথেষ্ট ভূমিকা রাখে- বিশ্লেষণ করো।

💘 ২ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর 💘
ক. ‘বিপ্লব’ শব্দের ইংরেজি প্রতিশব্দ Revolution.

খ. সামাজিক নিরাপত্তা বলতে বিপর্যয়কালীন সমস্যাগ্রস্ত মানুষ বা সম্প্রদায়ের জন্য গৃহীত আর্থিক সাহায্য কর্মসূচিকে বোঝায়। সাধারণত ব্যক্তির নিয়ন্ত্রণের বাইরে বিভিন্ন বিপর্যয়মূলক পরিস্থিতির উদ্ভব হতে পারে। যেমন- বৃদ্ধকালীন নির্ভরশীলতা, অসুস্থতা, বেকারত্ব, দৈহিক অক্ষমতা, পেশাগত দুর্ঘটনা, মৃত্যু, প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রভৃতি কারণে অসুবিধাগ্রস্ত জনগোষ্ঠীর জন্য রাষ্ট্রীয়ভাবে গৃহীত আর্থিক সহায়তাভিত্তিক কার্যক্রমই হলো সামাজিক নিরাপত্তা। অবসরপ্রাপ্ত চাকরিজীবীদের জন্য পেনশন, বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, প্রভৃতি সামাজিক নিরাপত্তার উদাহরণ।

গ. আমজাদ হোসেনের জীবনে পারিবারিক বন্ধনের শিথিলতা লক্ষ করা যায়। 
সমাজ গঠনের মূল ভিত্তি হলো পরিবার। এর সদস্যরা স্নেহ-ভালোবাসার বন্ধনে একে অপরের সাথে আবদ্ধ থাকে। মূলত পারিবারিক এই বন্ধনই যুগ যুগ ধরে পরিবার ব্যবস্থাকে টিকিয়ে রেখেছে। কিন্তু যখনই এই বন্ধনে শিথিলতা আসে তখন সমাজকাঠামোতে নানা ধরনের বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়।
উদ্দীপকে কৃষক পরিবারের সন্তান আমজাদ হোসেন লেখাপড়া করে ভালো চাকরি পেয়েছিলেন। চাকরির প্রয়োজনে তিনি গ্রাম ছেড়ে বিভিন্ন শহরে পরিবার নিয়ে থেকেছেন। অর্থাৎ তিনি যৌথ পরিবারের গন্ডি থেকে বেড়িয়ে একক পরিবার গঠন করেছেন। এর ফলে বাবা-মা, ভাই-বোন এবং আত্মীয়-স্বজনদের সাথে তার আত্মিক দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে। একক পরিবারে তিনি তার স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে বাস করেছেন। তার পরিবারের সদস্যরা একে অপরের সাথে স্নেহ ও ভালোবাসার বন্ধনে আবদ্ধ ছিল। কিন্তু এক সময় জীবন ও জীবিকার প্রয়োজনে তার সন্তানরাও বিদেশে বসবাস করতে শুরু করে। এখন আমজাদ সাহেবের যেকোনো প্রয়োজনে তার সন্তানরা কেউ কাছে থাকতে পারে না। এ থেকে বলা যায়, আমজাদ হোসেনের জীবনে পারিবারিক বন্ধনে শিথিলতা এসেছে।

ঘ. উদ্দীপকে ইঙ্গিতকৃত সমাজকর্ম পেশা সমাজের বহুমুখী সমস্যা সমাধানে যথেষ্ট ভূমিকা রাখে। 
শিল্প বিপ্লব পরবর্তী যান্ত্রিক সমাজের বিভিন্ন জটিল আর্থ-মনো-সামাজিক সমস্যার মোকাবিলায় সমাজকর্মের কৌশল ও পদ্ধতির প্রয়োগ করা হয়। বিশেষ করে সমাজ পরিবর্তনের ধারাবাহিকতায় মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা, মূল্যবোধ, চিন্তা-চেতনা প্রভৃতিও পরিবর্তিত হচ্ছে। এ পরিবর্তনের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে ব্যক্তি ও সমষ্টিকে সহায়তা করে সমাজকর্ম। উদ্দীপকে তেমন ইঙ্গিতই পাওয়া যায়।
উদ্দীপকের আমজাদ হোসেন একসময় জীবিকার প্রয়োজনে পরিবার নিয়ে শহরে থেকেছেন। এখন তার সন্তানরাও বিদেশে থাকে। নূন্যতম প্রয়োজনের সময়ও তিনি তাদের কাছে পান না। ফলে সামাজিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে দূরত্ব বেড়েছে। আর এসব সমস্যা থেকে উত্তরণে সমাজকর্ম পেশার উদ্ভব হয়েছে। মূলত শিল্পায়ন ও শহরায়নের ফলে আমাদের সমাজব্যবস্থা প্রতিনিয়তই পরিবর্তিত হচ্ছে। সমাজকর্ম পেশার পদ্ধতি ও কৌশল ব্যক্তি ও দলকে পরিবর্তিত অবস্থার সাথে সামঞ্জস্য বিধানে বিশেষভাবে সহায়তা করে। যেকোনো দেশের সার্বিক সামাজিক উন্নয়নের অন্যতম প্রতিবন্ধক হলো কুসংস্কার, ধর্মীয় গোঁড়ামি, অন্ধবিশ্বাস, অসচেতনতা প্রভৃতি। সমাজকর্ম পেশা এসব কুসংস্কার ও কু-প্রথার প্রকৃতি, কারণ ও সমাধানের কৌশল নিয়ে ব্যক্তি ও সমষ্টির সাথে কাজ করে। এছাড়া পেশাদার সমাজকর্মীগণ সমাজকর্মের জ্ঞান, অভিজ্ঞতা, দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে সমস্যার দ্রুত ও কার্যকর সমাধান করে থাকেন। এভাবে সমাজকর্ম পেশা বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে বিভিন্ন সামাজিক সমস্যা মোকাবিলা ও নিয়ন্ত্রণের জন্য কাজ করে।
উপরের আলোচনা থেকে তাই বলা যায়, উদ্দীপকে ইঙ্গিতকৃত সমাজকর্ম পেশা সমাজের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

৩. রিনার উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা সবেমাত্র শেষ হয়েছে। আর কিছুদিনের মধ্যে স্নাতক শ্রেণির ভর্তিযুদ্ধে অবতীর্ণ হতে হবে তাকে। তার জন্য যথাযথ প্রস্তুতিও চলছে। অবশেষে এমন একটি বিষয়ে তার উচ্চশিক্ষা গ্রহণের সুযোগ হয় যেটির জন্ম হয়েছে আধুনিক জটিল শিল্প সমাজের বহুমুখী সমস্যাগুলো সার্থকভাবে মোকাবিলা করার জন্য। বাস্তবতা এবং যুগের সাথে তাল মেলানোর জন্য বিষয়টির কতগুলো সুনির্দিষ্ট নিজস্ব পদ্ধতি, নীতিমালা এবং মূল্যবোধও গড়ে উঠেছে।
ক. সমাজকর্ম কোন ধরনের বিজ্ঞান?
খ. সমাজকর্ম একটি সক্ষমকারী প্রক্রিয়া বুঝিয়ে লেখো।
গ. উদ্দীপকে রিনা যে বিষয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের সুযোগ পেয়েছে তার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য পাঠ্যবইয়ের আলোকে বর্ণনা করো। 
ঘ. বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থার প্রেক্ষিতে উদ্দীপকে ইঙ্গিতকৃত বিষয়টির গুরুত্ব বিশ্লেষণ কর। 

💘 ৩ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর 💘
ক. সমাজকর্ম হলো সামাজিক বিজ্ঞান।

খ. ব্যক্তি, দল ও সমষ্টির সমস্যা সমাধানে সহায়তার মাধ্যমে তাদের সমস্যা মোকাবিলায় সক্ষম করে তোলে বলে সমাজকর্মকে সক্ষমকারী প্রক্রিয়া বলা হয়।
সমাজকর্ম বর্তমান বিশ্বে একটি মানবসেবামূলক সাহায্যকারী পেশা হিসেবে সর্বজনস্বীকৃত। এটি ব্যক্তি, দল ও সমষ্টির সমস্যা সমাধানে এমনভাবে সহায়তা করে যেন তারা নিজেদের সমস্যা নিজেরাই মোকাবিলা করতে সক্ষম হয়। এজন্যই এটি সক্ষমকারী প্রক্রিয়া হিসেবে পরিচিত।

গ. উদ্দীপকে রিনা সমাজকর্ম বিষয়ে উচ্চশিক্ষার সুযোগ পেয়েছে।
শিল্প বিপ্লবোত্তর আধুনিক সমাজের আর্থ-সামাজিক সমস্যা সমাধানের সুসংগঠিত প্রচেষ্টার ফল হিসেবে সমাজকর্মের উদ্ভব হয়েছে। সমাজে বসবাসরত অসহায় দুর্দশাগ্রস্ত ব্যক্তি, দল বা সমষ্টির সমস্যার সুষ্ঠু সমাধানে সমাজকর্ম সহায়তা করে। যে কারণে একে একটি বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিনির্ভর সাহায্যকারী পেশা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।। শিল্পবিপ্লব পরবর্তী জটিল সমাজব্যবস্থায় পরিবর্তিত পরিস্থিতি বিভিন্ন ধরনের সামাজিক সমস্যা সৃষ্টি করছে। এসব সমস্যা মোকাবিলা, পরিস্থিতির সাথে সামঞ্জস্য বিধান ও মানুষের সুপ্ত ক্ষমতা বিকাশ সাধনের উদ্দেশ্যে সক্ষমকারী প্রক্রিয়া হিসেবে সমাজকর্মের কার্যক্রম পরিচালিত হয়। একইসাথে সম্পদের অপচয় রোধ ও সীমিত সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করাও সমাজকর্মের অন্যতম লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। এছাড়া ব্যক্তিকে সামাজিক ভূমিকা পালনে সক্ষম করে তোলার উদ্দেশ্যে সমাজকর্ম কাজ করে। উদ্দীপকে রিনা যে বিষয়ে উচ্চশিক্ষার সুযোগ পেয়েছে সেটি সুনির্দিষ্ট কিছু পদ্ধতি, নীতিমালা ও মূল্যবোধের সমন্বয়ে গড়ে উঠেছে; যা সমাজকর্মের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। মূলত আধুনিক শিল্প সমাজের বহুমুখী সমস্যা সার্থকভাবে মোকাবিলা করার জন্য এ শাখার উদ্ভব হয়েছে। তাই বলা যায়, রিনা সমাজকর্মে উচ্চশিক্ষা অর্জন করছে। আর উপরে আলোচিত লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যে বাস্তবায়নে সমাজকর্ম কাজ করে।

ঘ. বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থার প্রেক্ষিতে উদ্দীপকে ইঙ্গিতকৃত বিষয় অর্থাৎ সমাজকর্মের গুরুত্ব অপরিসীম। 
বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিনির্ভর সেবাকর্ম হিসেবে সমাজকর্মের গুরুত্ব অপরিসীম। এটি সুনির্দিষ্ট পদ্ধতি, নীতিমালা, মূল্যবোধের মাধ্যমে সমস্যাগ্রস্ত ব্যক্তি, দল বা সমষ্টির আর্থ-মনো-সামাজিক সমস্যা মোকাবিলায় কাজ করে। বিশেষত বাংলাদেশের মতো স্বপ্পোন্নত ও উন্নয়নশীল দেশের সামগ্রিক উন্নয়নে এর গুরুত্ব অনস্বীকার্য। উদ্দীপকের রিনা এমন একটি বিষয়ে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ পেয়েছে যা আধুনিক জটিল শিল্প সমাজের বহুমুখী সমস্যাগুলো সুনির্দিষ্ট পদ্ধতি, নীতিমালা ও মূল্যবোধের ভিত্তিতে সমাধান করে থাকে। অর্থাৎ রিনার বিষয়টি হলো সমাজকর্ম যা বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থার প্রেক্ষিতে অত্যন্ত উপযোগী।
বাংলাদেশের অস্থিতিশীল আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতি দেশের উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করছে। যে কারণে দারিদ্র্য, নিরক্ষরতা, জনসংখ্যাস্ফীতি, বেকারত্ব, অপরাধ প্রবণতা, সন্ত্রাস ইত্যাদির মতো সামাজিক সমস্যা প্রতিনিয়ত দেশকে পিছিয়ে দিচ্ছে। এসব সমস্যা মোকাবিলায় সমাজকর্মের প্রতিকার, প্রতিরোধ ও উন্নয়নমূলক কার্যক্রম গ্রহণের বিকল্প নেই। এছাড়া বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে মানুষের মৌলিক চাহিদা পুরণ, প্রয়োজন ও জীবনমান উন্নয়নের লক্ষ্যে সমাজকর্মের সক্রিয় ভূমিকা লক্ষ করা যায়। একইসাথে সমাজকর্মে নিজস্ব সম্পদ ও সামর্থ্যের সর্বোত্তম ব্যবহারের মাধ্যমে আর্থ-সামাজিক স্বনির্ভরতা অর্জনকে উৎসাহিত করা হয়। তাই বাংলাদেশের মতো জনবহুল দেশে অতিরিক্ত জনসংখ্যাকে দক্ষ মানবসম্পদে রূপান্তরিত করতে সমাজকর্মের নীতি, পদ্ধতি ও কৌশল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। 
সামগ্রিক আলোচনায় তাই বলা যায়, বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে সীমিত সম্পদের যথার্থ ব্যবহার এবং মানুষের সুপ্ত প্রতিভার বিকাশ ঘটিয়ে তাদের স্বাবলম্বী করে তুলতে সমাজকর্মের গুরুত্ব অপরিসীম।

৪. জনাব আলীম মানুষের সাহায্যে সর্বদা এগিয়ে আসেন। সাহায্যের সময় তিনি দৈহিক, মানসিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও নৈতিক দিকের প্রতি সমান গুরুত্ব দিয়ে থাকেন। 
ক. COS এর পূর্ণরূপ কী?
খ. সমাজকর্ম একটি সাহায্যকারী পেশা- ব্যাখ্যা করো। 
গ. জনাব আলীম সমাজকর্মের কোন বৈশিষ্ট্যটি অনুশীলন করেন? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. জনাব আলীমের কার্যক্রম সমাজকর্মের উদ্দেশ্যের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ বিশ্লেষণ করো। 

💘 ৪ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর 💘
ক. COS এর পূর্ণরূপ Charity Organization Society.

খ. ব্যক্তি, দল ও সমষ্টির সমস্যা সমাধানে সাহায্য প্রদান করে বলে সমাজকর্মকে সাহায্যকারী পেশা বলা হয়। 
সমাজকর্ম বর্তমান বিশ্বে একটি মানবসেবামূলক সাহায্যকারী পেশা হিসেবে সর্বজনস্বীকৃত। এটি ব্যক্তি, দল ও সমষ্টির সমস্যা সমাধানে এমনভাবে সহায়তা করে যেন তারা নিজেদের সমস্যা নিজেরাই মোকাবিলা করতে সক্ষম হয়। পেশাগত কাঠামোর মধ্যে থেকে সমাজকর্ম সমস্যা সমাধানে এরূপ সহায়তা দিয়ে থাকে। এজন্যই এটি সাহায্যকারী পেশা হিসেবে পরিচিত।

গ. জনাব আলীম সর্বদা মানুষের সাহায্যে এগিয়ে আসার মাধ্যমে সমাজকর্মের 'সাহায্যকারী কার্যক্রম' বৈশিষ্ট্যটি অনুশীলন করেন।
সমাজকর্ম বর্তমান বিশ্বে একটি মানবসেবামূলক পেশা হিসেবে সর্বজনস্বীকৃত। অন্যান্য পেশার মতো সমাজকর্মও কতগুলো স্বতন্ত্র্য বৈশিষ্ট্যের অধিকারী। এ সকল বৈশিষ্ট্যের মধ্যে 'সাহায্যকারী কার্যক্রম' এর অন্যতম প্রধান ও সাধারণ বৈশিষ্ট্য। প্রকৃতপক্ষে সাহায্যকারী কার্যক্রম পরিচালনাই সমাজকর্মের মূল লক্ষ্য।
জনাব আলীমের একটি অনন্য চারিত্রি্যক বৈশিষ্ট্য হলো তিনি মানুষের সাহায্যে স্বতঃস্ফূর্তভাবে এগিয়ে আসেন। মূলত সমাজকর্ম সমাজের অসুবিধাগ্রস্ত ব্যক্তি, দল ও সমষ্টিকে সাহায্য করে; যাতে তারা নিজেদের সম্পদ ও সামর্থ্য সম্পর্কে সচেতন হয়। এর ফলে তারা সামাজিক ভূমিকা পালনের মাধ্যমে নিজেদের অবস্থার উন্নয়ন করতে পারে। এখানে উল্লেখ্য যে সমাজকর্মে সাহায্য বলতে আর্থিক বা নগদ কোনো কিছু প্রদান নয়, ব্যক্তি বা দলকে কর্মপ্রচেষ্টার উন্নয়নে সক্ষম করা বোঝায়। সুতরাং বলা যায়, উদ্দীপকে সমাজকর্মের সাহায্যকারী কার্যক্রমের এ দিকটিই ইঙ্গিত করা হয়েছে।

ঘ. জনাব আলীমের কার্যক্রম সাহায্যকারী পেশা হিসেবে সমাজকর্মের সামগ্রিক লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ। 
মানবসেবা প্রদানকারী বিভিন্ন হিসেবে সমাজকর্মে বহুমুখী লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সামনে রেখে বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচি অনুশীলন করা হয়। মূলত সমাজকর্মের লক্ষ্য হলো সমাজজীবন থেকে সকল জটিল সমস্যা দূর করে পরিকল্পিত উপায়ে কাঙি্ক্ষত ও গঠনমূলক সামাজিক পরিবেশ সৃষ্টি করা। উদ্দীপকে বর্ণিত জনাব আলীম সমস্যাগ্রস্ত মানুষকে সাহায্যের সময় দৈহিক, মানসিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও নৈতিক দিকের প্রতি সমান গুরুত্ব দিয়ে থাকেন। এ থেকে বোঝা যায়, তিনি সাহায্যার্থীর সমস্যা সমাধানে সামগ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করে কাজ করেন। প্রকৃতপক্ষে সমাজকর্মে ব্যক্তি, দল ও সমষ্টির সমস্যা সমাধানে এ বিষয়গুলো বিবেচনায় নেওয়া হয়। এক্ষেত্রে জনাব আলীমের ভূমিকা একজন সমাজকর্মীর অনুরূপ। একজন সমাজকর্মী তার পেশাগত দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে সাহায্যার্থীকে নিজের সমস্যা সমাধানে সক্ষম করে তোলেন। এক্ষেত্রে তিনি ব্যক্তি, দল ও সমষ্টির পারিপার্শ্বিক সকল বিষয় বিবেচনায় নেন। আর এভাবে পরিপূর্ণ সহায়তা প্রদানই সমাজকর্মের মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। অর্থাৎ সাহায্যার্থীকে সর্বোচ্চ সহায়তা প্রদানে সমাজকর্ম সবকিছু বিচার-বিশ্লেষণের মাধ্যমে কাজ করে। 
সার্বিক আলোচনা থেকে বলা যায়, জনাব আলীম তার কার্যক্রমের মাধ্যমে সমাজকর্মের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যেরই প্রতিফলন ঘটিয়েছেন।

৫. অনেকগুলো পাঠ্য বিষয় নিয়ে সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ গঠিত। সব পাঠ্য বিষয়ই তাত্ত্বিক, ব্যবহারিক ও সাহায্যকারী পেশা নয়। তবে সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের এমন একটি পঠিত বিষয় আছে যেটি তাত্ত্বিক, ব্যবহারিক এবং উন্নত দেশগুলোতে পেশা হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। বাংলাদেশেও বিষয়টি পেশা হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার পর্যায়ে রয়েছে। এটি বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে সমস্যা চিহ্নিতকরণ, প্রতিকার, প্রতিরোধ ও উন্নয়নমূলক কাজের সাথে সাথে সচেতনতা সৃষ্টি ও মানব সম্পদ উন্নয়নেও ভূমিকা রাখছে।
ক. ‘Industry’ শব্দটি কোন শব্দ থেকে উৎপত্তি হয়েছে? 
খ. বহুমুখী সমস্যার সমাধান বলতে কী বোঝায়?
গ. উদ্দীপকে সামাজিক অনুষদের কোন বিষয়ের ইঙ্গিত করা হয়েছে? ব্যাখ্যা করো। 
ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত ভূমিকা পালনের মধ্যেই কি বিষয়টি সীমাবদ্ধ? তোমার মতামত দাও। 

💘 ৫ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর 💘
ক. ‘Industry’ শব্দটি ল্যাটিন শব্দ ‘Industria’ থেকে উৎপত্তি হয়েছে।

খ. বহুমুখী সমস্যার সমাধান বলতে সমাজকর্মের অন্যতম লক্ষ্য সমাজের নানা ধরনের সমস্যা দূরীকরণের বিষয়কে বোঝায়। সমাজকর্ম একটি মানব উন্নয়নমূলক পেশা। সমাজের মানুষের নানা ধরনের সমস্যা সমাধানের জন্য এটি বহুমুখী কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে থাকে। শহর সমাজসেবা, গ্রামীণ সমাজসেবা, বিদ্যালয় সমাজকর্ম, হাসপাতাল সমাজকর্ম, মনোচিকিৎসা সমাজকর্ম, শিশুকল্যাণ প্রভৃতি এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য। এ সকল কর্মসূচি সমাজের সৃষ্ট নানা সমস্যা সমাধানে কার্যকর ভূমিকা রাখে।

গ. উদ্দীপকে সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের অন্যতম প্রায়োগিক শাখা সমাজকর্মের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। 
বর্তমান বিশ্বে সমাজকর্ম একটি বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিনির্ভর সাহায্যকারী পেশা। আধুনিক সমাজের বিভিন্ন জটিল আর্থ-মনো-সামাজিক সমস্যার বিজ্ঞানভিত্তিক সমাধানে সমাজকর্মের জ্ঞান প্রয়োগ করা হয়ে থাকে। মূলত সেবামূলক কর্মকান্ডের মাধ্যমে সমাজকর্ম সমাজ এবং মানুষের উন্নয়নে সক্রিয় ভূমিকা রাখে।
উদ্দীপকে সামাজিক বিজ্ঞানের এমন একটি শাখার কথা বলা হয়েছে যেটি তাত্ত্বিক, ব্যবহারিক এবং উন্নত দেশগুলোতে পেশা হিসেবে স্বীকৃত। বাংলাদেশেও বিষয়টি পেশা হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার পর্যায়ে রয়েছে। উদ্দীপকে উল্লিখিত তথ্য অনুসারে বিষয়টি বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে সমস্যা চিহ্নিতকরণ, প্রতিকার প্রতিরোধ ও উন্নয়নমূলক কাজের সাথে সাথে সচেতনতা সৃষ্টি ও মানব সম্পদ উন্নয়নেও ভূমিকা রাখছে। বিষয়টির এসকল বৈশিষ্ট্য সমাজকর্মকেই নির্দেশ করে। সমাজকর্মের সংজ্ঞা বিশ্লেষণ করলেই বিষয়টি সুস্পষ্ট হয়ে ওঠে। সংজ্ঞা অনুযায়ী সমাজকর্ম হলো বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিনির্ভর এমন একটি সাহায্যকারী পেশা যা সমাজস্থ ব্যক্তি, দল ও সমষ্টির বিভিন্ন সমস্যার সুষ্ঠু সমাধানে সহায়তা করে। সুতরাং বলা যায়, উদ্দীপকে উল্লিখিত বিষয়টি সমাজকর্মের সাথেই সাদৃশ্যপূর্ণ।

ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত সমাজকর্মের ভূমিকা পালনের বিষয়টির মধ্য দিয়ে সমাজকর্মের গুরুত্বের পূর্ণ প্রতিফলন ঘটেছে।
সমাজকর্ম একটি প্রায়োগিক সামাজিক বিজ্ঞান। এটি বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে কাজ করে। সমাজে বিদ্যমান বিভিন্ন ধরনের সমস্যা চিহ্নিতকরণ, প্রতিকার ও প্রতিরোধ করাই সমাজকর্মের মূল লক্ষ্য। এক্ষেত্রে সমাজে সচেতনতা সৃষ্টি, উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড পরিচালনা এবং মানব সম্পদ উন্নয়নে সমাজকর্ম ভূমিকা রাখে। আর এ বিষয়গুলোই উদ্দীপকে উল্লিখিত হয়েছে।
উদ্দীপকে সমাজকর্মকে ইঙ্গিত করে বলা হয়েছে যে, এটি বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে সমাজের সমস্যা চিহ্নিতকরণ, প্রতিকার, প্রতিরোধ, চেতনতা সৃষ্টি ও মানব সম্পদ উন্নয়নে ভূমিকা রাখছে। আধুনিক সমাজের বিভিন্ন জটিল আর্থ-মনো-সামাজিক সমস্যার বিজ্ঞানভিত্তিক সমাধানে সমাজকর্মের জ্ঞান প্রয়োগ করা হয়। এক্ষেত্রে প্রথমেই সমাজকর্মের কর্মপদ্ধতি প্রয়োগের মাধ্যমে সমস্যা চিহ্নিত করা হয় এবং সে অনুযায়ী পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা হয়। সাধারণত বিভিন্ন সামাজিক সমস্যা, যেমন- দারিদ্র্য, নিরক্ষরতা, বেকারত্ব, কিশোর অপরাধ, মাদকাসক্তি প্রভৃতি মোকাবিলায় সমাজকর্ম প্রতিকার, প্রতিরোধ ও উন্নয়নমূলক কার্যক্রম গ্রহণ করে। পাশাপাশি এটি সকল স্তরের জনগোষ্ঠী বিশেষ করে পশ্চাৎপদ জনগোষ্ঠীর আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের জন্য চাহিদাভিত্তিক সেবা কার্যক্রমও পরিচালনা করে। এর একটি প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো সামাজিক উন্নয়নে ব্যাপক জনসচেতনতা সৃষ্টি। এক্ষেত্রে সমাজকর্ম সভা-সমিতি, আলোচনা সভা এবং বিভিন্ন প্রচার মাধ্যম ব্যবহার করে।
পরিশেষে বলা যায়, উদ্দীপকে সমাজকর্মের উপর্যুক্ত ভূমিকাই সরলীকরণের মাধ্যমে এক বাক্যে প্রকাশ করা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে সমাজকর্ম এ ভূমিকা পালনে ব্যাপক কর্মক্ষেত্র নিয়ে কাজ করে।

৬. ফাতেমা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সামাজিক বিজ্ঞানের এমন একটি বিষয় নিয়ে অধ্যয়ন করছে যে বিষয়টি বৈজ্ঞানিক জ্ঞান, ব্যবহারিক দক্ষতা ও সুনির্দিষ্ট মূল্যবোধভিত্তিক এমন একটি পেশা যা কতগুলো পদ্ধতির মাধ্যমে সামাজিক সমস্যার বিজ্ঞানসম্মত সমাধান দিতে সক্ষম। 
ক. পদ্ধতি কী?
খ. পেশা বলতে কী বোঝায়? 
গ. উদ্দীপকে ফাতেমা সামাজিক বিজ্ঞানের কোন বিষয়ে অধ্যয়ন করছে? ব্যাখ্যা করো। 
ঘ. উদ্দীপকে ফাতেমার অধ্যয়নকৃত বিষয়টির জ্ঞান সামাজিক সমস্যা সমাধানে কীভাবে ভূমিকা রাখতে পারে? বিশ্লেষণ করো। 

💘 ৬ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর 💘
ক. পদ্ধতি হলো কোনো বিশেষ কাজ সুষ্ঠু ও কার্যকরভাবে সম্পাদনের সুশৃঙ্খল উপায়।

খ. পেশা বলতে জীবিকা নির্বাহের বিশেষ পন্থাকে বোঝায়, যেখানে নির্দিষ্ট বিষয় বা ক্ষেত্রে তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক জ্ঞান যথাযথ দক্ষতা ও নৈপুণ্যের সাথে প্রয়োগ করতে হয়। একটি পূর্ণাঙ্গ পেশায় জ্ঞান, জ্ঞান প্রয়োগের মনোবৃত্তি, দক্ষতা ও অনুশীলন এই চারটি উপাদান থাকে। পেশা সাধারণত জনকল্যাণমুখী হয়। এক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট মূল্যবোধ, প্রাতিষ্ঠানিক ও সামাজিক স্বীকৃতি বিদ্যমান।

গ. উদ্দীপকে ফাতেমা সামাজিক বিজ্ঞানের অন্তর্গত সমাজকর্ম বিষয়ে অধ্যয়ন করছে। 
সমাজকর্ম হলো সমস্যা সমাধানের আধুনিক, বিজ্ঞানভিত্তিক ও সেবামূলক একটি প্রক্রিয়া। এর মাধ্যমে সমাজের মানুষের সমস্যা সমাধান করে তাদেরকে সমাজের আদর্শ ও মূল্যবোধ অনুযায়ী গড়ে তোলার চেষ্টা করা হয়। এটি বর্তমান রাষ্ট্রব্যবস্থায় স্বতন্ত্র পেশা হিসেবে স্বীকৃত।
উদ্দীপকে ফাতেমার অধ্যয়নকৃত বিষয়টির বৈশিষ্ট্য হিসেবে বৈজ্ঞানিক জ্ঞান, ব্যবহারিক দক্ষতা ও সুনির্দিষ্ট মূল্যবোধভিত্তিক পেশার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এই পেশার মাধ্যমে সামাজিক সমস্যার বিজ্ঞানসম্মত সমাধান করা হয়। এ থেকে বোঝা যায়, বিষয়টি সমাজকর্ম। কারণ সমাজকর্মের প্রকৃতি ও লক্ষ্য-উদ্দেশ্য উক্ত বৈশিষ্ট্যের সাথে মিলে যায়। সামাজিক বিজ্ঞানের একটি শাখা হিসেবে সমাজকর্মে বৈজ্ঞানিক জ্ঞান অর্জনের সুযোগ রয়েছে। সেই সাথে অর্জিত জ্ঞান দক্ষতা ও নৈপুণ্যের সাথে বাস্তবে ব্যবহারের ক্ষেত্রও রয়েছে। আর এই ক্ষেত্রই হলো উদ্দীপকে উল্লিখিত সামাজিক সমস্যা। তাই একটি পূর্ণাঙ্গ পেশা হিসেবে। সমাজকর্ম মূল্যবোধ ও ব্যবহারিক নীতিমালার সমন্বয় ঘটিয়ে সমাজের নানা সমস্যার বিজ্ঞানসম্মত ও কার্যকর সমাধান করে। সুতরাং দেখা যাচ্ছে, উদ্দীপকে উল্লিখিত বিষয়টি সমাজকর্মকেই নির্দেশ করে।

ঘ. উদ্দীপকে ফাতেমা যে বিষয়ে পড়াশোনা করছে তা হলো সমাজকর্ম।
এটি সামাজিক সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে বিজ্ঞানভিত্তিক পদ্ধতি ও সুনির্দিষ্ট নীতিমালার ভিত্তিতে সমস্যার কারণ উদ্ঘাটন, বিশ্লেষণ ও সমাধানের উপায় চিহ্নিত করে ভূমিকা রাখতে পারে।
আমাদের সমাজব্যবস্থায় নানা ধরনের সমস্যা বিদ্যমান। এসব সমস্যা সমাধানের মাধ্যমে সামাজিক জীবনের সার্বিক কল্যাণ নিশ্চিত করা সমাজকর্মের দায়িত্ব। আর এজন্য সমাজকর্মে তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক জ্ঞানের সমন্বয় ঘটানোর পাশাপাশি বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতির প্রয়োগ করা হয়। যেকোনো সামাজিক সমস্যা সমাধানের জন্য পরিকল্পনা গ্রহণ করা জরুরি। এক্ষেত্রে সমাজকর্ম সুষ্ঠু নীতিমালা প্রয়োগের মাধ্যমে পরিকল্পনার বাস্তবায়ন ঘটাতে সাহায্য করে। অর্থাৎ এক্ষেত্রে সমাজকর্ম সমস্যা সমাধানে নির্দিষ্ট পদ্ধতি অনুসরণ করে। এ লক্ষ্যে সমস্যা সমাধানের বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়া হিসেবে সমাজকর্ম তার মৌলিক ও সহায়ক পদ্ধতি প্রয়োগের মাধ্যমে সমস্যার বিজ্ঞানভিত্তিক সমাধান প্রদান করে থাকে। কেননা, সমাজকর্মের মূলনীতিই হলো ব্যক্তি, দল বা সমষ্টির সম্পদ ও অন্তর্নিহিত শক্তিকে ব্যবহারের মাধ্যমে সাহায্যার্থীকে সমস্যা সমাধানে সক্ষম করে তোলা। এজন্য সমাজকর্মে গবেষণাভিত্তিক প্রায়োগিক জ্ঞান বিশেষ গুরুত্ব পায়, যা সামাজিক সমস্যা সমাধানে কার্যকর ও ফলপ্রসূ হয়। উদ্দীপকে ইঙ্গিতকৃত সমাজকর্ম বিষয়ের বৈশিষ্ট্য হিসেবেও কতকগুলো পদ্ধতি অনুসরণের মাধ্যমে সামাজিক সমস্যার সমাধান প্রদানের বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে।
পরিশেষে বলা যায়, সামাজিক সমস্যা সমাধানে সমাজকর্ম বৈজ্ঞানিক কর্মপদ্ধতি অনুসরণের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় মূল্যবোধ ও নীতিমালার প্রয়োগ ঘটায়।

HSC সমাজকর্ম ১ম পত্র (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর অধ্যায় ১ pdf download

৭. লিজা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সামাজিক বিজ্ঞানের এমন একটি বিষয় নিয়ে অধ্যয়ন করছে যে বিষয়টি বৈজ্ঞানিক জ্ঞান, ব্যবহারিক দক্ষতা ও সুনির্দিষ্ট মূল্যবোধ ভিত্তিক এমন একটি পেশা যা কতকগুলো পদ্ধতির মাধ্যমে সামাজিক সমস্যার বিজ্ঞানসম্মত সমাধান দিতে সক্ষম।
ক. সমাজকর্ম কী?
খ. সমাজকর্মের উদ্ভব ঘটেছে কেন?
গ. উদ্দীপকে লিজা সামাজিক বিজ্ঞানের কোন বিষয়ে অধ্যয়ন করছে? ব্যাখ্যা করো। 
ঘ. উদ্দীপকে লিজার অধ্যয়নকৃত বিষয়টির জ্ঞান সামাজিক সমস্যা সমাধানে কীভাবে ভূমিকা রাখছে পারে? বিশ্লেষণ করো। 

💘 ৭ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর 💘
ক. সমাজকর্ম হলো বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি নির্ভর একটি সাহায্যকারী পেশা, সমাজের বিভিন্ন সমস্যার সুষ্ঠু সমাধান ও উন্নয়নে সহায়তা করে।

খ. শিল্পবিপ্লব পরবর্তী আর্থ-মনো-সামাজিক সমস্যার কার্যকর সমাধানের লক্ষ্যে সমাজকর্মের উদ্ভব হয়েছে। 
সামাজিক পরিবর্তনের ফলে সমাজে বসবাসরত মানুষের সামাজিক সম্পর্কের ক্ষেত্রেও পরিবর্তন দেখা দেয়। স্বাভাবিকভাবেই সামাজিক সম্পর্কের এ গতিশীল পরিবর্তনের সাথে সামঞ্জস্য বিধানে মানুষ ব্যর্থ হয়। ফলে সমাজে সৃষ্টি হয় নানা ধরনের অসংগতি ও সমস্যা। এসব অসংগতি দূরীকরণ এবং পরিবর্তনশীল পরিবেশের সাথে মানুষকে সামঞ্জস্য বিধানে সক্ষম করে তোলার জন্যই সমাজকর্মের উদ্ভব হয়েছে।

গ. উদ্দীপকে লিজা সামাজিক বিজ্ঞানের অন্তর্গত সমাজকর্ম বিষয়ে অধ্যয়ন করছে। 
সমাজকর্ম হলো সমস্যা সমাধানের আধুনিক, বিজ্ঞানভিত্তিক ও সেবামূলক একটি প্রক্রিয়া। এর মাধ্যমে সমাজের মানুষের সমস্যা সমাধান করে তাদেরকে সমাজের আদর্শ ও মূল্যবোধ অনুযায়ী গড়ে তোলার চেষ্টা করা হয়। এটি বর্তমান রাষ্ট্রব্যবস্থায় স্বতন্ত্র পেশা হিসেবে স্বীকৃত। 
উদ্দীপকে লিজার অধ্যয়নকৃত বিষয়টির বৈশিষ্ট্য হিসেবে বৈজ্ঞানিক জ্ঞান, ব্যবহারিক দক্ষতা ও সুনির্দিষ্ট মূল্যবোধভিত্তিক পেশার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এই পেশার মাধ্যমে সামাজিক সমস্যার বিজ্ঞানসম্মত সমাধান করা হয়। এ থেকে বোঝা যায়, বিষয়টি সমাজকর্ম। কারণ সমাজকর্মের প্রকৃতি ও লক্ষ্য-উদ্দেশ্য উদ্ভ বৈশিষ্ট্যের সাথে মিলে যায়। সামাজিক বিজ্ঞানের একটি শাখা হিসেবে সমাজকর্মে বৈজ্ঞানিক জ্ঞান অর্জনের সুযোগ রয়েছে। সেই সাথে অর্জিত জ্ঞান দক্ষতা ও নৈপুণ্যের সাথে বাস্তবে ব্যবহারের ক্ষেত্রও রয়েছে। আর এই ক্ষেত্রই হলো উদ্দীপকে উল্লিখিত সামাজিক সমস্যা। তাই একটি পূর্ণাঙ্গ পেশা হিসেবে সমাজকর্ম মূল্যবোধ ও ব্যবহারিক নীতিমালার সমন্বয় ঘটিয়ে সমাজের নানা সমস্যার বিজ্ঞানসম্মত ও কার্যকর সমাধান করে। সুতরাং দেখা যাচ্ছে, উদ্দীপকে উল্লিখিত বিষয়টি সমাজকর্মকেই নির্দেশ করে।

ঘ. উদ্দীপকে লিজা যে বিষয়ে পড়াশোনা করছে তা হলো সমাজকর্ম। 
এটি সামাজিক সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে বিজ্ঞানভিত্তিক পদ্ধতি ও সুনির্দিষ্ট নীতিমালার ভিত্তিতে সমস্যার কারণ উদ্ঘাটন, বিশ্লেষণ ও সমাধানের উপায় চিহ্নিত করে ভূমিকা রাখতে পারে।
আমাদের সমাজব্যবস্থায় নানা ধরনের সমস্যা বিদ্যমান। এসব সমস্যা সমাধানের মাধ্যমে সামাজিক জীবনের সার্বিক কল্যাণ নিশ্চিত করা সমাজকর্মের দায়িত্ব। আর এজন্য সমাজকর্মে তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক জ্ঞানের সমন্বয় ঘটানোর পাশাপাশি বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতির প্রয়োগ করা হয়। যেকোনো সামাজিক সমস্যা সমাধানের জন্য পরিবল্পনা গ্রহণ করা জরুরি। এক্ষেত্রে সমাজকর্ম সুষ্ঠু নীতিমালা প্রয়োগের মাধ্যমে পরিকল্পনার বাস্তবায়ন ঘটাতে সাহায্য করে। অর্থাৎ এক্ষেত্রে সমাজকর্ম সমস্যা সমাধানে নির্দিষ্ট পদ্ধতি অনুসরণ করে। এ লক্ষ্যে সমস্যা সমাধানের বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়া হিসেবে সমাজকর্ম তার মৌলিক ও সহায়ক পদ্ধতি প্রয়োগের মাধ্যমে সমস্যার বিজ্ঞানভিত্তিক সমাধান প্রদান করে থাকে। কেননা, সমাজকর্মের মূলনীতিই হলো ব্যক্তি, দল বা সমষ্টির সম্পদ ও অন্তর্নিহিত শক্তিকে ব্যবহারের মাধ্যমে সাহায্যার্থীকে সমস্যা সমাধানে সক্ষম করে তোলা। এজন্য সমাজকর্মে গবেষণাভিত্তিক প্রায়োগিক জ্ঞান বিশেষ গুরুত্ব পায়, যা সামাজিক সমস্যা সমাধানে কার্যকর ও ফলপ্রসূ হয়। উদ্দীপকে ইঙ্গিতকৃত সমাজকর্ম বিষয়ের বৈশিষ্ট্য হিসেবেও কতকগুলো পদ্ধতি অনুসরণের মাধ্যমে সামাজিক সমস্যার সমাধান প্রদানের বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে।
পরিশেষে বলা যায়, সামাজিক সমস্যা সমাধানে সমাজকর্ম বৈজ্ঞানিক কর্মপদ্ধতি অনুসরণের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় মূল্যবোধ ও নীতিমালার প্রয়োগ ঘটায়।

৮. মি. সাইমন একটি বেসরকারি সংস্থায় কর্মরত। তাঁর সংস্থাটি সমস্যাগ্রস্ত ব্যক্তি, বিদ্যালয় থেকে ঝরে পড়া শিশু, মানসিক প্রতিবন্ধী, জনসংখ্যা হ্রাস ও অপরাধপ্রবণ শিশুদের উন্নয়ন ইত্যাদি ক্ষেত্রে কাজ করে। সংস্থাটি দীর্ঘদিন যাবৎ মানুষের পারস্পরিক সম্পর্কের উন্নয়ন, সম্পদের সদ্ব্যবহারসহ আর্থ-সামাজিক ও মনো-দৈহিক সমস্যা দূরীকরণে অবদান রেখে যাচ্ছে। 
ক. CSWE-এর পূর্ণরূপ কী? 
খ. সমাজকর্মের ধারণা দাও।
গ. অনুচ্ছেদে সমাজকর্মের যেসব পরিধির উল্লেখ রয়েছে সেগুলো চিহ্নিত করে ব্যাখ্যা করো। 
ঘ. উদ্দীপকের আলোকে সমাজকর্মের গুরুত্ব বিশ্লেষণ করো।

💘 ৮ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর 💘
ক. CSWE-এর পূর্ণরূপ Council on Social Work Education.

খ. সমাজকর্ম বলতে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিনির্ভর একটি সাহায্যকারী পেশাকে বোঝায়। 
সাহায্যকারী পেশা হিসেবে সমাজকর্ম বিশ্বজুড়ে স্বীকৃত। এটি সুসংগঠিত সমাজকল্যাণ ব্যবস্থার বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়া। এর মূল লক্ষ্য সমাজের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে সাহায্য করা। সমাজকর্ম বিভিন্ন পদ্ধতির মাধ্যমে ব্যক্তি, দল ও সমষ্টির সমস্যা সমাধানে মানুষকে সাহায্য করে।

গ. উদ্দীপকে সমাজকর্মের সামাজিক সমস্যা প্রতিরোধ ও প্রতিকার কর্মসূচি, স্বাস্থ্য ও মানসিক স্বাস্থ্য কর্মসূচি, শহর সমাজসেবা কার্যক্রম, সমাজ সংস্কার ও সামাজিক আইন প্রণয়ন, সমাজ কল্যাণ কর্মসূচি গ্রহণ পরিধি নির্দেশ করা হয়েছে।
সমাজকর্মের পরিধি বলতে মূলত এর ব্যবহারিক দিকের প্রয়োগ উপযোগিতাকে বোঝায়। সমাজে সৃষ্ট সামাজিক বিশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিকার করতে সমাজকর্ম কাজ করে। সমাজজীবনে সৃষ্ট মনস্তাত্ত্বিক সমস্যার সুষ্ঠু সমাধানে ক্লিনিক্যাল সমাজকর্ম ও সাইকিয়াট্রিক সমাজকর্মের প্রয়োজনীয়তা বৃদ্ধি পাচ্ছে। অধিক জনসংখ্যা বৃদ্ধিজনিত সমস্যা হ্রাস ও সক্ষমানব-সম্পদ সৃষ্টি করে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে সমাজকর্ম কাজ করে। বিভিন্ন ধরণের কুপ্রথা, অবাঞ্ছিত পরিস্থিতি, অপরাধ প্রবণতা, কিশোর অপরাধ দমনে সামাজিক আইন প্রণয়ন এবং বাস্তবায়নে সমাজকর্ম পদ্ধতির প্রয়োগ সমাজকর্মের পরিধিভূক্ত।
উদ্দীপকে সমস্যাগ্রস্ত ব্যক্তি, বিদ্যালয় থেকে ঝরে পড়া শিশু অধিক জনসংখ্যা, কিশোর অপরাধ প্রবণতা সামাজিক সমস্যাকে নির্দেশ করে। সামাজিক সমস্যা প্রতিকার ও প্রতিরোধের জন্য সমাজকর্ম বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ ও পরিচালনা করে। মানসিক প্রতিবন্ধী ও মনোদৈহিক সমস্যা দূরীকরণে স্বাস্থ্য ও মানসিক স্বাতন্ত্র কর্মসূচি সমাজকর্মের পরিধিভুক্ত। এছাড়া জনসংখ্যা হ্রাস, কিশোর উন্নয়ন, শিশুদের উন্নয়ন, পারস্পরিক সম্পর্কের উন্নয়ন প্রভৃতি কার্য সম্পাদন করা সমাজকর্মের আওতাভুক্ত।

ঘ. উদ্দীপকের আর্থ-সামাজিক অবস্থা ও মনো-দৈহিক প্রেক্ষিতে সমস্যার সমাজকর্মের গুরুত্ব অপরিসীম।
বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিনির্ভর সেবাকর্ম হিসেবে সমাজকর্মের গুরুত্ব অপরিসীম। এটি সুনির্দিষ্ট পদ্ধতি, নীতিমালা, মূল্যবোধের মাধ্যমে সমস্যাগ্রস্ত ব্যক্তি, দল বা সমষ্টির আর্থ-মনো-সামাজিক সমস্যা মোকাবিলায় কাজ করে। বিশেষত বাংলাদেশের মতো স্বল্পোন্নত ও উন্নয়নশীল দেশের সামগ্রিক উন্নয়নে এর গুরুত্ব অনস্বীকার্য।
উদ্দীপকের মি. সাইমন একটি বেসরকারি সংস্থায় কর্মরত, যেটি বিভিন্ন সামাজিক সমস্যার সমাধান, পারস্পরিক সম্পর্কের উন্নয়ন, আর্থ-সামাজিক ও মনো-দৈহিক সমস্যা দূরীকরণে কাজ করে। যেটি সমাজকর্ম পেশাকে নির্দেশ করে। অস্থিতিশীল আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতি দেশের উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করছে। যে কারণে দারিদ্র্য, নিরক্ষরতা, জনসংখ্যাস্ফীতি, বেকারত্ব, অপরাধ প্রবণতা, সন্ত্রাস ইত্যাদির মতো সামাজিক সমস্যা প্রতিনিয়ত দেশকে পিছিয়ে দিচ্ছে। এসব সমস্যা মোকাবিলায় সমাজকর্মের প্রতিকার, প্রতিরোধ ও উন্নয়নমূলক কার্যক্রম গ্রহণের বিকল্প নেই। এছাড়া বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণ, প্রয়োজন ও জীবনমান উন্নয়নের লক্ষ্যে সমাজকর্মের সক্রিয় ভূমিকা লক্ষ করা যায়।
সামগ্রিক আলোচনায় তাই বলা যায়, সীমিত সম্পদের যথার্থ ব্যবহার, বিভিন্ন সামাজিক সমস্যার সমাধান এবং মনো-দৈহিক সমস্যার সমাধান করে মানুষের সুপ্ত প্রতিভার বিকাশ ঘটিয়ে তাদের সক্ষম করে তুলতে সমাজকর্মের গুরুত্ব অপরিসীম।

৯. সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে মাদকাসস্তি, কিশোর অপরাধসহ বিভিন্ন সামাজিক সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করেছে। অনাকাঙি্ক্ষত খুন আত্মহত্যার মতো ঘটনাও সমাজে বৃদ্ধি পেয়েছ। সকল সমস্যার সমাধানে সমাজকর্মের শিক্ষা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। 
ক. উদীয়মান পেশা কোনটি?
খ. সমাজকর্মকে অনুশীলন ধর্মী পেশা বলা হয় কেন? 
গ. উদ্দীপকটি সমাজকর্মের কোনটিকে ইঙ্গিত করে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকটির শেষোক্ত মন্তব্যটি তুমি কি সমর্থন কর? যৌক্তিক মতামত দাও।

💘 ৯ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর 💘
ক. উদীয়মান পেশা হলো সমাজকর্ম।

খ. সমস্যা সমাধানে সমাজকর্মের তাত্ত্বিক জ্ঞানের ব্যবহারিক প্রয়োগ সরাসরি করা হয় বলে সমাজকর্মকে অনুশীলনধর্মী পেশা বলা হয়। সমাজকর্ম হচ্ছে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি নির্ভর একটি সাহায্যকারী পেশা। বিশেষ তাত্ত্বিক জ্ঞান ও ব্যবহারিক প্রশিক্ষণ গ্রহণের পর পেশা নীতি, কৌশল ও পদ্ধতিসমূহ বাস্তবে প্রয়োগ করা হয়। এক্ষেত্রে সমাজকর্ম সমস্যা সমাধানে কার্যকরী উপায় অনুসন্ধান। একারণেই সমাজকর্ম অনুশীলনধর্মী পেশা হিসেবে স্বীকৃত।

গ. উদ্দীপকটি সমাজকর্মের পরিধিকে ইঙ্গিত করে। 
সমাজকর্মের পরিধি বলতে মূলত এর ব্যবহারিক দিকের প্রয়োগক্ষেত্রকে বোঝানো হয়। সামাজিক জীব হিসেবে মানুষের সমস্যার প্রায় সর্বদিক সমাজকর্মের পরিধির অন্তর্ভুক্ত।
তাছাড়া বিভিন্ন সামাজিক উন্নয়নের লক্ষ্যে সমাজ কাঠামোতে গৃহীত পরিকল্পিত ও গঠনমূলক উন্নয়ন কর্মকান্ডও সমাজকর্মের আলোচ্য বিষয়। আধুনিক সমাজকর্ম সংশোধনমূলক কর্মকান্ডের ওপর অধিক গুরুত্ব দেয়। এ কারণে বিভিন্ন অপরাধ সংশোধনমূলক কর্মকান্ড সমাজকর্মের পরিধির আওতাভুক্ত। এছাড়া রাষ্ট্রীয় নীতি ও পরিকল্পনার আওতায় পরিচালিত জনকল্যাণমূলক কার্যক্রম সমাজকর্মের বৃহত্তর পরিধির অন্তর্ভুক্ত।
উদ্দীপকে সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে সংঘটিত বিভিন্ন সামাজিক সমস্যা যেমন- মাদকাসস্তি, কিশোর অপরাধ ইত্যাদির উল্লেখ রয়েছ। এসব সমস্যার কার্যকর সমাধান সমাজকর্মের পরিধির অন্তর্ভুক্ত। তাই বলা যায়, উদ্দীপকটি সমাজকর্মের পরিধিকে নির্দেশ করছে।

ঘ. হ্যাঁ, আমি মনে করি, বিভিন্ন সামাজিক সমস্যার সমাধানে সমাজকর্মের শিক্ষা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। 
সমাজের বহুমুখী ও জটিল সমস্যার প্রতিরোধ, প্রতিকার ও সংশোধনে পেশাদার সমাজকর্মীর প্রয়োজন রয়েছে। আর এ পেশাদার সমাজকর্মী সৃষ্টিতে সমাজকর্মের জ্ঞান অপরিহার্য।
আধুনিক সমাজের সমস্যাগুলো বহুমুখী ও জটিল প্রকৃতির। এসব সমস্যার উৎস, কারণ, প্রস্তাব ইত্যাদি সম্পর্কে যথাযথ অনুসন্ধানে সমাজকর্মের জ্ঞান অপরিহার্য। এছাড়া সমস্যা সমাধানে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সমাজকর্ম শিক্ষার প্রয়োজন। সমাজকর্ম সীমিত সম্পদের সদ্ব্যবহারের মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের ওপর গুরুত্ব দেয়। এক্ষেত্রে সামাজিক, অর্থনৈতিক, মানবীয় সকল প্রকার সম্পদের সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহারে সমাজকর্মের জ্ঞান অপরিহার্য। সমাজকর্মের জ্ঞান ব্যক্তি ও দলকে পরিবর্তিত অবস্থার সাথে সামঞ্জস্য বিধানে বিশেষভাবে সহায়তা করে। যে কোনো দেশের সার্বিক সামাজিক উন্নয়নের অন্যতম প্রতিবন্ধকতা হলো কুসংস্কার, ধর্মীয় গোঁড়ামি, অন্ধবিশ্বাস, অসচেতনতা। সমাজকর্ম এসব কুসংস্কার ও কুপ্রথার প্রকৃতি, কারণ ও সমাধানের কৌশল নিয়ে আলোচনা করে। সুবিধাবস্থিত শ্রেণির কল্যাণে সমাজে বিভিন্ন কর্মসূচি। এ ধরনের কর্মসূচি সফলভাবে পরিচালনার জন্য সমাজকর্মের শিক্ষা প্রয়োজন। এছাড়া বিভিন্ন নীতি ও পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে সমাজকর্ম শিক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম। সার্বিক আলোচনার প্রেক্ষিতে তাই বলা যায়, আধুনিক জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সমাজকর্মের অবদান অনস্বীকার্য। তাই সমাজ ও মানুষের সার্বিক কল্যাণ ও উন্নয়নে সৃষ্ট প্রতিবন্ধকতা দূর করতে সমাজকর্ম শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই।

১০. উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণির ছাত্র শফিক। পঠিত বিষয়গুলো মধ্যে সমাজকর্ম বিষয় তার ভাল লাগে। কারণ সমাজকর্ম বৈজ্ঞানিক জ্ঞান ও দক্ষতা নির্ভর একটি সক্ষমকারী পেশা। বিজ্ঞান, কলা ও পেশার সমন্বয়ে সম্পদসমূহ কাজে লাগিয়ে ব্যক্তি, দল ও সমষ্টির সমস্যার সমাধান করে থাকে। ব্যক্তিকে পরিবর্তন ও সামঞ্জস্যবিধান করে নিজের পায়ে দাঁড়াতে সক্ষম করে তোলে। সমাজ সম্পর্কিত জ্ঞান অর্জন, মানব সম্পদ উন্নয়ন ও সামাজিক সমস্যার প্রতিকার ও প্রতিরোধে দিন দিন সমাজকর্মের শিক্ষার গুরুত্ব বেড়ে যাচ্ছে। শফিক সমাজকর্মের উপর উচ্চ শিক্ষা নিতে চায়। 
ক. Introduction to Social Welfare-গ্রন্থটির লেখক কে?
খ. সমাজকর্ম একটি সক্ষমকারী পেশা বুঝিয়ে লিখ। 
গ. উদ্দীপকে সমাজকর্মের কোন কোন বৈশিষ্ট্য তুলে ধরা হয়েছে? ব্যাখ্যা করো। 
ঘ. বর্তমান বিশ্বে সমাজকর্ম শিক্ষার গুরুত্ব বেড়ে যাওয়ায় শফিক সমাজকর্মের উপর উচ্চ শিক্ষা নিতে চায় বক্তব্যটিতে তুমি কি একমত? বিশ্লেষণ করো। 

💘 ১০ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর 💘
ক. Introduction to Social Welfare-গ্রন্থটির লেখক হলেন ওয়াল্টার এ ফ্রিল্যান্ডার।

খ. ব্যক্তি, দল ও সমষ্টির সমস্যা সমাধানে সহায়তার মাধ্যমে তাদের সমস্যা মোকাবিলায় সক্ষম করে তোলে বলে সমাজকর্মকে সক্ষমকারী প্রক্রিয়া বলা হয়।
সমাজকর্ম 'বর্তমান বিশ্বে একটি মানবসেবামূলক সাহায্যকারী পেশা হিসেবে সর্বজনস্বীকৃত। এটি ব্যক্তি, দল ও সমষ্টির সমস্যা সমাধানে এমনভাবে সহায়তা করে যেন তারা নিজেদের সমস্যা নিজেরাই মোকাবিলা করতে সক্ষম হয়। এজন্যই এটি সক্ষমকারী প্রক্রিয়া হিসেবে পরিচিত।

গ. উদ্দীপকে সমাজকর্মের যেসব বৈশিষ্ট্যের প্রতিফলন ঘটেছে তা হলো- বৈজ্ঞানিক জ্ঞান ও দক্ষতা, সমন্বিত রূপ, মৌলিক পদ্ধতি এবং সক্ষমকারী পেশা।
অন্যান্য পেশার মতো সমাজকর্ম পেশার বিশেষ জ্ঞানভান্ডার, নীতি মূল্যবোধ রয়েছে। এ পেশায় ব্যবহৃত সমাজকর্ম গবেষণা পদ্ধতি বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অনুসরণ করে। এছাড়া এ পেশায় সেবাকর্ম সম্পাদনের জন্য অর্জিত জ্ঞানকে মানবকল্যাণে ব্যবহারের দক্ষতা অর্জন করতে হয়। সমাজকর্ম পেশা কলা, বিজ্ঞান ও পেশার সমন্বিত রূপ। এটি সমস্যাগ্রস্ত ব্যক্তি, দল ও সমষ্টির সম্পদসমূহ কাজে লাগিয়ে তাদের সমস্যার সমাধান করে। সমাজকর্ম তিনটি মৌলিক পদ্ধতি যথা- ব্যক্তি সমাজকর্ম, দল সমাজকর্ম এবং সমষ্টি সমাজকর্মের মাধ্যমে ব্যক্তি, দল ও সমষ্টির উন্নয়নে কাজ করে। এছাড়া সমাজকর্ম একটি সক্ষমকারী পেশা। এটি সমস্যাগ্রস্ত ব্যক্তি, দল ও সমষ্টিকে এমনভাবে সহায়তা করে যাতে তারা নিজেদের সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহারের মাধ্যমে আত্মনির্ভরশীল হতে সক্ষম হয়। এর মাধ্যমে ব্যক্তি ও দলকে নিজেদের কর্মপ্রচেষ্টা দিয়ে আত্মোন্নয়নে সক্ষম করে তোলা হয়।
উদ্দীপকে সমাজকর্ম সম্পর্কে বলা হয়েছে, সমাজকর্ম বৈজ্ঞানিক জ্ঞান ও দক্ষতা নির্ভর একটি সক্ষমকারী পেশা। বিজ্ঞান, কলা ও পেশার সমন্বয়ে নিজস্ব সম্পদ কাজে লাগিয়ে ব্যক্তি, দল ও সমষ্টির সমস্যার সমাধান করে। ব্যক্তির অবস্থার পরিবর্তন ও পরিবেশের সাথে সামঞ্জস্য বিধানের মাধ্যমে সক্ষম করে তোলে। উদ্দীপকের এ ধরনের বর্ণনার মধ্যে সমাজকর্মের বৈজ্ঞানিক জ্ঞান ও দক্ষতা, সমন্বিত রূপ, মৌলিক পদ্ধতি এবং সক্ষমকারী পেশা এ বৈশিষ্ট্যগুলোই প্রতিফলিত হয়েছে।

ঘ. হ্যাঁ, আমি মনে করি বর্তমান বিশ্বে সমাজকর্ম শিক্ষার গুরুত্ব বেড়ে যাওয়ায় উদ্দীপকে বর্ণিত শফিক সমাজকর্মের উপর উচ্চ শিক্ষা নিতে চায়। বর্তমান বিশ্বে সমাজকর্ম একটি বিজ্ঞানভিত্তিক সাহায্যকারী এবং সমন্বয়ধর্মী অনুশীলনের বিজ্ঞান হিসেবে পরিচিত। আধুনিক সমাজের বিভিন্ন জটি মনো-সামাজিক সমস্যার বিজ্ঞানসম্মত সমাধানের লক্ষ্যে সমাজকর্মের উদ্ভ হয়েছে। সমাজকর্ম মানুষের ব্যক্তিগত, দলীয় ও সমষ্টিগত বিভিন্ন সমস্যা, তাদের উৎস, প্রকৃতি, কারণ, বিস্তৃতি, প্রভাব প্রভৃতি বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে বিশ্লেষণ করে। পাশাপাশি মৌলিক ও সহায়ক পদ্ধতি প্রয়োগের মাধ্যমে এটি সমস্যার বিজ্ঞানভিত্তিক সমাধান দেয়। তাই সমস্যা সমাধানের বিজ্ঞানসম্মত উপায় হিসেবে সমাজকর্মের গুরুত্ব সারা বিশ্বে স্বীকৃত।
যেকোনো উন্নয়ন কার্যক্রমের সুষ্ঠু বাস্তবায়ন জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণ সহযোগিতার উপর নির্ভরশীল। এক্ষেত্রে সমাজকর্ম বিভিন্ন পদ্ধতি ও কৌশল প্রয়োগ করে জনগণকে তাদের সমস্যা, সম্পদ এবং দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন করে তোলে। সমাজকর্মীরা আলোচনা সভা, সেমিনার-সিম্পোজিয়াম আয়োজন, বুকলেট, ম্যাগাজিন প্রকাশ এবং বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমের দ্বারা সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে। এছাড়া সমাজের সার্বিক উন্নয়নের লক্ষ্যে প্রয়োজন সুষম আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন সমাজকর্ম মানুষের চাহিদা ও প্রয়োজন পূরণে কার্যকর ভূমিকা পালন করে। এছাড়া সমাজ সম্পর্কিত জ্ঞান অর্জন, মানব সম্পদ উন্নয়ন ও সামাজিক সমস্যার প্রতিকার ও প্রতিরোধেও এর অবদান অনন্য। উদ্দীপকেও সমাজকর্মের এরূপ গুরুত্বের কথা বর্ণিত হয়েছে।
সমাজকর্মের উল্লিখিত গুরুত্বের প্রেক্ষিতে বলা যায়, বর্তমান বিশ্বে সমাজকর্ম শিক্ষার গুরুত্ব বেড়ে যাওয়ার কারণেই শফিক সমাজকর্মের উপর উচ্চ শিক্ষা অর্জন করতে চায়।
Share:

HSC সমাজকর্ম ১ম পত্র (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর অধ্যায় ২ pdf download

এইচএসসি পরীক্ষার পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি
HSC Social Work 1st Paper Srijonshil question and answer. HSC SocialWork 1st Paper (Srijonshil) Creative Questions pdf download.

সমাজকর্ম
প্রথম পত্র

সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
অধ্যায়-২

HSC Social Work 1st Paper
Srijonshil Question and Answer pdf download

সমাজকর্ম পেশার ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট
আধুনিক সমাজকর্মের জন্মকালের ব্যাপ্তি বেশি দিনের না হলেও মানুষের মধ্যে কল্যাণ বা সেবার মনোভাবের সূত্রপাত ঘটে সভ্যতার আদিলগ্ন থেকেই। মানব সভ্যতার প্রারম্ভেই পারস্পরিক সাহায্য, সহযোগিতা ও সেবার সহজাত মনোবৃত্তি মানুষকে সংঘবদ্ধ জীবন যাপনে উদ্বুদ্ধ করে। আর এ ধরনের কল্যাণমূলক প্রচেষ্টা থেকেই সমাজকল্যাণের যাত্রা শুরু। এই প্রচেষ্টাই পরিবর্তিত সামাজিক অবস্থার সাথে সামঞ্জস্য রেখে ধাপে ধাপে বিভিন্ন পর্যায় অতিক্রম করে আধুনিক, বিজ্ঞানসম্মত ও সুসংগঠিত পেশাদার সমাজকর্ম হিসেবে বিকশিত হয়েছে।

তবে এর বীজ অংকুরিত হয় মূলত ইংল্যান্ডে। প্রাথমিক পর্যায়ে দানশীলতা থেকে এর কার্যক্রম শুরু হয়, কিন্তু সময়ের আবর্তে মানুষের ধর্মীয়, সামাজিক ও অর্থনৈতিক মূল্যবোধের পরিবর্তনের সাথে সাথে সেবামূলক কার্যক্রম ব্যক্তিগত, গোষ্ঠীগত ও প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায় অতিক্রম করে সরকারের হস্তক্ষেপে আইন প্রণয়ন ও নিরাপত্তামূলক কর্মসূচির মাধ্যমে একটি স্থায়ী ও বৈজ্ঞানিক রূপরেখা লাভ করে। আর এই সেবামূলক কর্মসূচি পরবর্তিতে আমেরিকায় আধুনিক ও বৈজ্ঞানিক রূপ পরিগ্রহ করে পূর্ণাঙ্গ ও পরিপূর্ণতা অর্জনেসক্ষম হয়। 

দরিদ্র আইন
প্রাক-শিল্পযুগে ইংল্যান্ডে বিভিন্ন আর্থ-সামাজিক অবস্থার প্রেক্ষাপটে দরিদ্র সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করে। ফলে সরকার বিভিন্ন আইন প্রণয়নের মাধ্যমে সুসংগঠিত উপায়ে সমাজসেবা কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে ক্রমবর্ধমান দারিদ্র্য সমস্যা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে। কিন্তু ষোড়শ শতাব্দী পর্যন্ত দারিদ্র সমস্যা মোকাবিলায় সরকারি কার্যক্রমের বেশিরভাগই ছিল শাস্তি ও দমনমূলক। যার ফলে ১৩৪৯ থেকে ১৬০১ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত বিভিন্ন অভিজ্ঞতার আলোকে ইংল্যান্ডে শাসক শ্রেণি উপলব্ধি করতে সক্ষম হন যে, দমনমূলক পদ্ধতি নয় বরং জনগণের সম্পদের সদ্ব্যবহার নিশ্চিত করে বাস্তবমুখী পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমেই দারিদ্র্য দূর করা সম্ভব।

আর এ ধরনের মনোভাবের প্রেক্ষিতে ইংল্যান্ডে পরবর্তী সময়ে বেশ কতগুলো কার্যকরী আইন প্রণয়ন করা হয়। এই আইনগুলো সরকার কর্তৃক প্রবর্তিত এবং দরিদ্র ও অসহায় মানুষদের সেবায় নিয়োজিত। সুতরাং বলা যায় যে, দরিদ্র আইন হলো সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় দরিদ্রদের সাহায্যদানের জন্য একটি আইনগত পদক্ষেপ যা ইংল্যান্ডের অসহায় ও দরিদ্র জনগনের অভাব মোচনের জন্য একটি সরকারি অনুশাসনের দৃষ্টান্ত।

দান সংগঠন সমিতি
আধুনিক সমাজকল্যাণের বিবর্তনে এবং সমাজকর্মকে পেশার পর্যায়ে উপনীত হতে ইংল্যান্ড এবং আমেরিকার দান সংগঠন আন্দোলন বিশেষ ভূমিকা পালন করে। সনাতন সমাজকল্যাণের ধারাকে পেশাগত মর্যাদা ও বৈজ্ঞানিক রূপ প্রদানে দান সংগঠন সমিতির ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দানশীলতা মানবসেবার সবচেয়ে প্রাচীন ও সনাতন প্রথা। পূর্বে সমাজসেবা কার্যক্রম অসংগঠিত উপায়ে পরিচালনা করা হতো। পরবর্তীতে আর্থ-সামাজিক অবস্থা বিবেচনা করে সমাজসেবা কার্যক্রম সংগঠিত ও সুশৃঙ্খলভাবে পরিচালনা করার লক্ষ্যেই ইংল্যান্ডের ও আমেরিকায় উনবিংশ শতাব্দীতে দান সংগঠন আন্দোলন গড়ে উঠে।

এই আন্দোলনের ফলেই গড়ে উঠে নতুন সমাজকল্যাণ সংগঠন Charity Organization Society (COS)। দান সংগঠন সমিতি ১৮৬৯ সালে যেমন ইংল্যান্ডের দুঃস্থ, দরিদ্র ও অসহায়দের সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় সাহায্য দানে বিভিন্ন কার্যকরী পদক্ষেপ ও ভূমিকা পালন করে তেমনি ইংল্যান্ডের অনুকরণে আমেরিকাতেও ১৮৭৭ সালে দান সংগঠন সমিতি গড়ে উঠে।

ন্যাশনাল এসোসিয়েশন অব সোশ্যাল ওয়ারকার্স ন্যাশনাল এসোসিয়েশন অব সোশ্যাল ওয়ারকার্স বা জাতীয় সমাজকর্মী সমিতি বিশ্বে পেশাগত সমাজকর্মীদের অন্যতম বৃহত্তম পেশাগত সংগঠন। সমাজকর্মের সদস্যনির্ভর এ সংগঠনটির সদস্য সংখ্যা ১৯৯১ সালে ১,৩০,০০০ এর উপর পৌঁছায়, ২০১২ সালে এই সদস্য সংখ্যা হয় প্রায় ১ লাখ ৪৫ হাজার। সমাজকর্মের প্রথম পেশাগত সংগঠন আমেরিকান এসোসিয়েশন অব সোশ্যাল ওয়ারকার্স ১৯২৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়।

সমাজকর্মের পেশাগত শিক্ষাকে সুসমন্বিত ও সুদৃঢ় ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে আমেরিকায় ১৯৫২ সালে জাতীয় সমাজকর্ম শিক্ষা পরিষদ গঠন করা হয়। পরিষদ সমাজকর্মকে একক ও স্বতন্ত্র পেশা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য সমাজকর্মের পেশাগত সংগঠনগুলোকে সমন্বিত করার পদক্ষেপ গ্রহণ করে। পেশাদার সমাজকর্মীদের বৃহৎ সংগঠন জাতীয় সমাজকর্মী সমিতি (NASW) ১৯৫৫ সালে আমেরিকার কর্মরত সমাজকর্মীদের বিভিন্ন পেশাগত সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত হয়।

কাউন্সিল অন সোশ্যাল ওয়ার্ক এডুকেশন বা CSWE
Council on Social Work Education (CSWE) আমেরিকায় সমাজকর্ম শিক্ষার প্রথম পর্যায়ের সংগঠন। এর প্রধান কার্যক্রম হলো শিক্ষার মান উন্নয়নের জন্য শিক্ষা কার্যক্রম পর্যালোচনা ও নতুন নতুন সমাজকর্ম কর্মসূচি প্রবর্তন। প্রচলিত সমাজকর্ম কর্মসূচি মূল্যায়ন, সমাজকর্ম শিক্ষার সাথে সংশ্লিষ্ট বিষয়াদি প্রকাশনার ব্যবস্থাকরণ ও বিতরণ এবংসমাজকর্ম কর্মসূচি উন্নয়নের লক্ষ্যে নতুন নতুন উদ্যোগ গ্রহণ প্রভৃতি। ১৯৫১ সালে CSWE সমাজকর্ম পেশাজীবীদের জন্য ন্যূনতম দুই বছরের মাস্টার্স কোর্সের শর্ত বেধে দেয়। 

শিল্পবিপ্লব
শিল্পবিপ্লবকে সহজ ভাষায় শিল্প সংশ্লিষ্ট বিপ্লব বলে অভিহিত করা যায়। বিপ্লব শব্দটি দ্বারা কোনো ক্ষেত্রের মৌল পরিবর্তনকে বুঝায়। উৎপাদন প্রক্রিয়ায় শিল্প সংশ্লিষ্ট যে মৌলিক পরিবর্তন ঘটেছে, যা উৎপাদন ব্যবস্থাকে সম্পূর্ণরূপে বদলে দিয়েছে তাকে বিপ্লব বলাই শ্রেয়। শিল্পবিপ্লব সম্পর্কে বলতে গিয়ে আবেদীন কাদের বলেন, ১৭৬০ থেকে ১৮৫০ সালের মধ্যবর্তী সময়ে একটা সুদূর প্রসারী ও দীর্ঘ সময়ব্যাপী সামাজিক বিপ্লব বিশেবর অর্থনীতি, রাজনীতি এবং চিন্তাধারায় আমূল পরিবর্তন বয়ে আনে। আর এ ধরনের পরিবর্তন মানব সভ্যতার ইতিহাসে আগে দেখা যায়নি। এর ফলে বদলে গেছে পৃথিবীর বাহ্যিক চেহারা, মৌল কাঠামোতে এসেছে পরিবর্তন। মানুষের জীবনাচারণ ও জীবনযাপন রীতিতে এসেছে বিরাট এক ভিন্নতা।

শিল্পবিপ্লব সম্পর্কে Professor Lady Williams বলেন, অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষার্ধ থেকে উনবিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধ পর্যন্ত জ্ঞান বিজ্ঞানের দ্রুত উনণয়ন এবং উৎপাদন ক্ষেত্রে তার ব্যবহারের ফলে মানব জীবন যাত্রার যে পরিবর্তন এসেছে তাই শিল্পবিপ্লব।

The New Encyclopedia of Britannica তে বলা হয়েছে, শিল্পবিপ্লব হচেছ কৃষিভিত্তিক হস্তশিল্পনির্ভর অর্থনীতি থেকে 
যন্ত্রচালিত উৎপাদন ব্যবস্থায় পরিবর্তনের একটি প্রক্রিয়া; যা অষ্টাদশ শতকে ইংল্যান্ডে শুরু হয়ে বিশ্বের অন্যান্য অংশে বিস্তার লাভ করে। 

সমাজকল্যাণ অভিধানের সংজ্ঞানুযায়ী, শিল্পবিপ্লব হলো অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিবর্তনাদি, যা অষ্টদশ শতাব্দীর মধ্যভাগে কারখানা ব্যবস্থায় সূচনা ঘটেছে।

সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর

১. সৌম্য টেলিভিশনের একটি চ্যানেলে একটি অনুসন্ধানমূলক অনুষ্ঠান দেখছিল। সেখানে উপস্থাপক বিভিন্ন ধরনের ভিক্ষুকদের সাথে কথা বলে তাদের প্রকৃত অবস্থা তুলে ধরছিলেন। দেখা গেল প্রকৃত ভিক্ষুকের চেয়ে ছদ্মবেশী ও ব্যবসায়ী ভিক্ষুকের সংখ্যাই বেশি। সৌম্য ইংল্যান্ডের একটি আইনের কথা শুনলো যা ভিক্ষুকদেরকে কর্মীতে রূপান্তর করেছিল। 
ক. ইংল্যান্ডে বসতি আইনটি কত সালে প্রণীত হয়?
খ. সামাজিক বিমা বলতে কী বোঝায়? 
গ. সৌম্যের দেখা ভিক্ষুকদের জন্য ইংল্যান্ডের তৎকালীন যে আইনটি প্রযোজ্য তার বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করো। 
ঘ. বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে দরিদ্রদের জন্য এ ধরনের আইন প্রয়োগের সম্ভাবনা বিশ্লেষণ করো।

💘 ১ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর 💘
ক. ইংল্যান্ডে বসতি আইনটি ১৬৬২ সালে প্রণীত হয়।

খ. সামাজিক বিমা হলো বার্ধক্য, অক্ষমতা, উপার্জনকারীর মৃত্যু, পেশাগত দুর্ঘটনা বা অসুস্থতার মতো বুঝুঁকির বিপরীতে নাগরিকদের রক্ষায় সরকার বা সংস্থা পরিচালিত অর্থনৈতিক কর্মসূচি। এর উদাহরণ হলো- চাকরিজীবীদের পেনশন, কল্যাণ তহবিল, যৌথ বিমা, শ্রমিক ক্ষতিপূরণ ইত্যাদি। সামাজিক বিমার মাধ্যমে সামাজিক নিরাপত্তা ধারণার সূচনা হয়।

গ. সৌম্যের দেখা ভিক্ষুকদের জন্য ইংল্যান্ডের ১৬০১ সালের দরিদ্র আইনটি প্রযোজ্য। 
প্রাক-শিল্প যুগে ইংল্যান্ড বিভিন্ন ধরনের আর্থ-সামাজিক সমস্যা দারিদ্রের কষাঘাতে জর্জরিত ছিল। ষোড়শ শতাব্দী পর্যন্ত এসব সমস্যা মোকাবিলায় গৃহীত সরকারি কার্যক্রমের বেশির ভাগ ছিল শাস্তি দমনমূলক। তাই দারিদ্র্য দূরীকরণ এবং পরিষদের সঠিক পুনর্বাসনের লক্ষ্যে ১৬০১ সালের দরিদ্র আইনটি প্রণয়ন করা হয়। 
উদ্দীপকে সৌম্য টেলিভিশনে ভিক্ষুকদের ওপর প্রচারিত একটি অনুসন্ধানমূলক অনুষ্ঠান দেখছিল। সেখানে সে দেখে প্রকৃত ভিক্ষুকের চেয়ে ছদ্মবেশী ও ব্যবসায়ী ভিক্ষুকের সংখ্যাই বেশি। এ অবস্থা মোকাবিলায় ইংল্যান্ডে প্রণীত ১৬০১ সালের দরিদ্র আইনটি কার্যকরী হবে। কারণ উক্ত আইনে প্রকৃত ভিক্ষুকদের চিহ্নিত করে তাদের সাহায্যদান ও কর্মের ব্যবস্থা করা হতো। ১৬০১ সালের দরিদ্র আইনে দরিদ্রদের তিনভাগে বিভক্ত করা হয়। যথাত সক্ষম দরিদ্র, অক্ষম দরিদ্র ও নির্ভরশীল শিশু। শ্রেণিবিভাগ অনুযায়ী তাদের কাজ ও সাহায্য দেওয়া হয়। পারিবারিক দায়িত্ব পালনে সক্ষম ব্যক্তিদের দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনের বিধান এ আইনে রাখা হয়। এ আইন অনুযায়ী দরিদ্রদের আত্মীয়-স্বজনরা তাদের সাহায্য করবে। দরিদ্রদের সচ্ছল কোনো আত্মীয়-স্বজন না থাকলে তাদের দায়িত্ব সরকার গ্রহণ করতো। সক্ষম দরিদ্রদের সামর্থ্য অনুযায়ী কাজ করতে বাধ্য করা হতো। এ আইনে ভিক্ষাবৃত্তি মনোভাব কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করা হয়। এ আইনের অধীনে দরিদ্রদের সাহায্যের জন্য বিভিন্ন করারোপের ব্যবস্থা করা হয়।

ঘ. বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে দারিদ্র্য মোকাবিলায় এ ধরনের আইন অর্থাৎ ১৬০১ সালের দরিদ্র আইনটি অত্যন্ত কার্যকরী হবে। 
প্রাক-শিল্প যুগে ইংল্যান্ডে দারিদ্রের কষাঘাতে জর্জরিত ছিল। এ সময় সরকার বিভিন্ন আইন প্রণয়নের মাধ্যমে দারিদ্র্য নিরসনের চেষ্টা করেও আশানুরূপ সাফল্য পায়নি। অবশেষে পূর্বের বিভিন্ন আইনের অভিজ্ঞতার আলোকে ১৬০১ সালের দারিদ্র্য আইনটি প্রণীত হয় যা দারিদ্র্য নিরসনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল।
উদ্দীপকের সৌম্য টেলিভিশনে ভিক্ষুকদের নিয়ে একটি অনুসন্ধানীমূলক অনুষ্ঠান দেখছিল। এ সময় সে ইংল্যান্ডের একটি আইনের কথা শুনলো যা ভিক্ষুকদের কর্মীতে রূপান্তরিত করেছিল। এ আইনটি হলো ১৬০১ সালের দরিদ্র আইন। আমাদের দেশেও দারিদ্র্য দিনে দিনে চরম আকার ধারণ করছে। এ সমস্যা সমাধানে ১৬০১ সালের দরিদ্র আইন প্রয়োগ করা যায়। এই আইন অনুযায়ী আমাদের দেশেও দরিদ্রদের শ্রেণিবিভাগ করে সাহায্যদানের ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়। এক্ষেত্রে অক্ষম দরিদ্ররা সাহায্য পাবে। আর ছদ্মবেশী সক্ষম দরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা যাবে। আমাদের দেশের সরকার দরিদ্রদের সাহায্য করার জন্য তাদের সচ্ছল আত্মীয়-স্বজনদের বাধ্য করতে পারে। যেসব দরিদ্রদের সচ্ছল আত্মীয়-স্বজন থাকবে না তাদের দায়িত্ব সরকার গ্রহণ করতে পারে। এছাড়া আমাদের দেশের সরকারকে আইনের মাধ্যমে ভিক্ষাবৃত্তি কঠোরভাবে নিষিদ্ধ ঘোষণা এবং ভিক্ষুকদের কর্মসংস্থানের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। এ কর্মসূচি আমাদের দেশের ভিক্ষাবৃত্তি দূর করতে সহায়ক হবে।
সার্বিক আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায়, আমাদের দেশের দারিদ্র্যাবস্থা ও ভিক্ষাবৃত্তি দূর করার জন্য ১৬০১ সালের দরিদ্র আইনটি কার্যকর ভূমিকা রাখতে সক্ষম।

২. কদম আলী ঢাকা শহরের একটি ছোটখাটো ভিক্ষুক দলের সর্দার। তার ভিক্ষুক দলে রয়েছে শারীরিক এবং বাকপ্রতিবন্ধী চারজন সদস্য। এছাড়া রয়েছে দিপু নামের এক অনাথ শিশু। এরা সকলেই নানা অঙ্গভঙ্গির মাধ্যমে পথচারীদের সহানুভূতিপূর্ণ দৃষ্টি আকর্ষণ করে ভিক্ষা আদায় করে।
ক. COS কী?
খ. শিল্প দুর্ঘটনা বলতে কী বোঝায়?
গ. উদ্দীপকের দিপু ১৬০১ সালের দরিদ্র আইন অনুযায়ী কোন শ্রেণির দরিদ্র বলে বিবেচিত? ব্যাখ্যা করো। 
ঘ. দিপু ছাড়াও উদ্দীপকে বর্ণিত অপর শ্রেণির মানুষের জন্য ১৬০১ সালের দরিদ্র আইনটি যে বিশেষ ভূমিকা রাখতে সক্ষম তা বিশ্লেষণ করো।

💘 ২ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর 💘
ক. COS হচ্ছে Charity Organization Society বা দান সংগঠন সমিতি।

খ. শিল্পকারখানায় কর্মরত অবস্থায় যে সব দুর্ঘটনা ঘটে সেগুলোই শিল্প দুর্ঘটনা।
শিল্পকারখানায় যান্ত্রিক উৎপাদন পদ্ধতিতে শ্রমিকদের ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত হতে হয়। এতে পেশাগত দুর্ঘটনার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়। পেশাগত দুর্ঘটনার কারণে অনেক সময় শ্রমিক শ্রেণি অকাল মৃত্যু, বিকলাঙ্গতা ও কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। শিল্প-কারখানায় ঘটে যাওয়া এ সব পেশাগত দুর্ঘটনাই শিল্প দুর্ঘটনার অন্তর্ভুক্ত।

গ. উদ্দীপকের দীপু ১৬০১ সালের দরিদ্র আইন অনুযায়ী নির্ভরশীল শিশু হিসেবে বিবেচিত।
১৬০১ সালের দরিদ্র আইনে দরিদ্রদের তিনটি শ্রেণিতে বিভক্ত করা হয়। এগুলো হলো- সক্ষম দরিদ্র, অক্ষম দরিদ্র ও নির্ভরশীল শিশু। এতিম, পরিত্যক্ত ও অক্ষম পিতা-মাতার সন্তানরা নির্ভরশীল শিশু শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত ছিল। এদেরকে কোনো নাগরিকের কাছে বিনা খরচে দত্তক অথবা কম খরচে লালন-পালনের জন্য দেওয়া হতো।
এক্ষেত্রে ছেলেদের ২৪ বছর পর্যন্ত এবং মেয়েদেরকে ২১ বছর বা বিয়ের পূর্ব পর্যন্ত মনিবের বাড়িতে থাকতে হতো। উদ্দীপকে উল্লেখিত দীপু অনাথ শিশু। কদম আলীর অধীনে সে ভিক্ষাবৃত্তিতে নিয়োজিত। অনাথ শিশু হওয়ার কারণে দীপু ১৬০১ সালের আইন অনুযায়ী নির্ভরশীল শিশু শ্রেণির দরিদ্র হিসেবে বিবেচিত হবে।

ঘ. দীপু ছাড়াও উদ্দীপকে বর্ণিত অপর শ্রেণির অর্থাৎ অক্ষম দরিদ্রের জন্য ১৬০১ সালের দরিদ্র আইন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সক্ষম। 
ইংল্যান্ডের দরিদ্রদের কল্যাণে ১৬০১ সালের দরিদ্র আইন প্রণীত হয়েছিল। এই আইনের অধীনে দরিদ্রদের সাহায্য ও পুনর্বাসনে সরকার বিভিন্ন কর্মসূচি পরিচালনা করতো। এক্ষেত্রে সাহায্যদানের সুবিধার্থে দরিদ্রদের বিভিন্ন শ্রেণিতে বিভক্ত করা হয়েছিল। যেমন- সক্ষম দরিষ, অক্ষম দরিদ্র ও নির্ভরশীল শিশু। এই আইনে শ্রেণি অনুযায়ী তাদের কাজের ব্যবস্থা করা, ত্রাণ সহায়তা প্রদান ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করার কথা উল্লেখ রয়েছে।
উদ্দীপকের কদম আলী ভিক্ষুক দলের সর্দার। তার ভিক্ষুক দলে চারজন সদস্য শারীরিক ও বাক প্রতিবন্ধী। ১৬০১ সালের দরিদ্র আইন অনুযায়ী এরা সবাই অক্ষম দরিদ্রের পর্যায়ভুক্ত। তাই এ আইন অনুযায়ী সরকার তাদের জন্য সক্ষমতা অনুসারে জীবিকা লাভের ব্যবস্থা করতে পারে। প্রয়োজন অনুযায়ী তাদেরকে ত্রাণ সাহায্য প্রদান করতে পারে। এসবের পাশাপাশি তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থাও করতে পারে। এভাবে ১৬০১ সালের দরিদ্র আইন উদ্দীপকে উল্লিখিত অক্ষম দরিদ্রের কল্যাণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
উপরের আলোচনা থেকে তাই বলা যায়, দিপু ছাড়াও উদ্দীপকে বর্ণিত অপর শ্রেণি অর্থাৎ অক্ষম পরিদ্র শ্রেণির মানুষের জন্য ১৬০১ সালের দরিদ্র আইনটি বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে।

৩. ইসমাইল শেখ তারুণ্যদীপ্ত একজন টগবগে যুবক। দেশে নিজের জন্য কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে না পেরে অবশেষে সে মালয়েশিয়াতে কাজের সন্ধানে পাড়ি জমালো। প্রায় দশ বছর পর নিজ এলাকায় ফিরে ইসমাইল শেখ অবাক হয়ে গেলো। কেননা অনেক ছোট-বড় কারখানা গড়ে উঠেছে এলাকায়। আরও গড়ে উঠেছে অসংখ্য সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান। কাজের সন্ধানে তাদের এখন অন্য এলাকায় যেতে হয় না। 
ক. ‘Virgin Queen’ নামে কাকে ডাকা হতো?
খ. পেশা বলতে কী বোঝায়?
গ. মালয়েশিয়া ফেরত ইসমাইল শেখের এলাকায় ঘটে যাওয়া ঘটনাটি পাঠ্যপুস্তকে যে ঐতিহাসিক ঘটনাটির সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ তার বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করো। 
ঘ. উদ্দীপকে ইঙ্গিতকৃত ঘটনাটি মানবকল্যাণের দিগন্তকে প্রসারিত করেছেত উদ্দীপক ও পাঠ্যপুস্তকের আলোকে বিশ্লেষণ করো। 

💘 ৩ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর 💘
ক. রানী প্রথম এলিজাবেথকে ‘Virgin Queen’ নামে ডাকা হতো।

খ. পেশা বলতে নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য, দক্ষতা, নৈপুণ্য, তত্ত্বনির্ভর, সুশৃঙ্খল জ্ঞান, মূল্যবোধ, নৈতিকতা এবং ব্যবহারিক জ্ঞানভিত্তিক জীবিকা নির্বাহের পন্থাকে বোঝায়।
প্রকৃত অর্থে পেশা হলো এমন এক ধরনের বৃত্তি বা জীবিকা নির্বাহের উপায়, যেখানে নির্দিষ্ট ক্ষেত্র বা বিষয়ে তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক জ্ঞানার্জন করে যথাযথ দক্ষতা, নৈপুণ্য ও কৌশলের মাধ্যমে তা বাস্তবে প্রয়োগ করতে হয়। এর মাধ্যমে একজন ব্যক্তি তার অর্জিত জ্ঞানকে স্বাধীনভাবে প্রয়োগ করে জীবিকা অর্জন করতে পারে। যেমন- ডাক্তারি শিক্ষকতা, ইত্যাদি। পেশা সাধারণত জনকল্যাণমুখী হয়ে থাকে এবং এর সুনির্দিষ্ট মূল্যবোধ ও সামাজিক স্বীকৃতি রয়েছে।

গ. মালয়েশিয়া ফেরত ইসমাইল শেখের এলাকায় ঘটে যাওয়া ঘটনাটি পাঠ্যবইয়ের ঐতিহাসিক ঘটনা ইংল্যান্ডের শিল্পবিপ্লবের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।
শিল্পবিপ্লব হচেছ কৃষিভিত্তিক হস্তশিল্পনির্ভর ক্ষুদ্রায়তন উৎপাদন ও অর্থনীতি থেকে শিল্প ও যন্ত্রচালিত বৃহদায়তন উৎপাদন ব্যবস্থায় পরিবর্তনের একটি প্রক্রিয়া। এটি অষ্টাদশ শতকে ইংল্যান্ডে শুরু হয়। পরবর্তীতে সেখান থেকে বিশ্বের অন্যান্য অংশে বিস্তার লাভ করে।
শিল্পবিপ্লব উৎপাদন পদ্ধতিতে আমূল পরিবর্তন আনে। এতে উৎপাদন প্রক্রিয়ায় ব্যাপক হারে যন্ত্রপাতি ও প্রযুক্তির ব্যবহার শুরু হয়। কুটির শিল্পভিত্তিক উৎপাদন ব্যবস্থার পরিবর্তে শক্তি ও প্রযুক্তিচালিত যান্ত্রিক উৎপাদন পদ্ধতি প্রবর্তিত হয়। এর ফলে ব্যাপকহারে কলকারখানা গড়ে ওঠে। এ সব কলকারখানায় নতুন নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়। যার কারণে মানুষকে কাজের জন্য অন্য দেশে যেতে হয় না। ফলে উৎপাদন ক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তন আসে। বৃহদায়তন শিল্পের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বিভিন্ন অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক, বিমা ইত্যাদি গড়ে ওঠে।
উদ্দীপকে উল্লিখিত ইসমাইল শেখ কাজের সন্ধানে মালয়েশিয়ায় যায়। প্রায় দশ বছর পর সে নিজ এলাকায় এসে অবাক হয়ে যায়। কারণ তার এলাকায় এখন ছোট-বড় অনেক কারখানা ও অসংখ্য সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান গড়ে় উঠেছে। কাজের সন্ধানে তার এলাকার লোকদের এখন আর অন্যত্র যেতে হয় না। সুতরাং ইসমাইলের এলাকায় ঘটে যাওয়া বিষয়টি শিল্পবিপ্লকেই নির্দেশ করে যার বৈশিষ্ট্য উপরে বর্ণিত হয়েছে।

ঘ. উদ্দীপকে ইঙ্গিতকৃত শিল্পবিপ্লৰ মানবকল্যাণের দিগন্তকে প্রসারিত করেছে। 
শিল্পবিপ্লবের ফলে উৎপাদন প্রক্রিয়ায় ব্যাপক হারে যন্ত্রপাতি ও প্রযুক্তির ব্যবহার শুরু হওয়ায় উৎপাদন বহুগুণে বেড়ে যায়। শিল্প বিপ্লবের ফলে বিশেব অসংখ্য শিল্পকারখানা গড়ে ওঠে। এতে কর্মসংস্থানের বহু সুযোগ সৃষ্টি হয়। এর প্রভাবে সনাতন যোগাযোগ ব্যবস্থার পরিবর্তে যান্ত্রিক যোগাযোগ পদ্ধতি প্রবর্তিত হয়। ফলে ভৌগোলিক দূরত্ব হ্রাস পায়, জনজীবন সহজ, গতিশীল ও আরামপ্রদ হয়। শিল্পবিপ্লবের প্রত্যক্ষ ফল হলো শিল্পায়ন ও শহরায়ন যা সমাজজীবনকে পর্যায়ক্রমে উন্নতি ও প্রগতির দিকে এগিয়ে নিয়ে যায়। শিল্পবিপ্লব শিক্ষাক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তন এনেছে এর ফলে মানুষ বিভিনণ উৎস থেকে জ্ঞানার্জনের সুযোগ পাচ্ছে। এতে মানুষের মেধা ও সৃজনশীলতা বিকশিত হচ্ছে, পাশাপাশি মানুষের দৃষ্টিভঙ্গিরও পরিবর্তন ঘটেছে। শিল্পবিপ্লবের প্রভাবে নারীরা পুরুষের পাশাপাশি কর্মক্ষেত্রে নিযুক্ত হচেছ। এ কারণে সমাজের উনণয়নে নারীদের অংশগ্রহণের হার বাড়ছে। মানুষ বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি, বিশ্বাস ও মূল্যবোধের ভিত্তিতে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছে। শিল্পবিপ্লবের প্রভাবে চিকিৎসা বিজ্ঞানে অকল্পনীয় সাফল্য এসেছে।
উদ্দীপকের ইসমাইল নিজ দেশে কর্মসংস্থান করতে না পেরে মালয়েশিয়ায় যায়। সে দশ বছর পর দেশে ফিরে দেখে তার এলাকায় ছোট-বড় কলকারখানাসহ অসংখ্য সেবা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে যা শিল্পবিপ্লবকে ইঙ্গিত করছে। এর ফলে মানুষের আর্থ-সামাজিক, সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তন ঘটার পাশাপাশি চিন্তাধারায়ও আমূল পরিবর্তন এসেছে। 
উপরের আলোচনা থেকে বলা যায়, উদ্দীপকে ইঙ্গিতকৃত শিল্প বিপ্লব মানবকল্যাপকে প্রসারিত করেছে।

৪. মি. 'ক' একজন সমাজকর্মী। তাকে তার গ্রামের সমস্যা চিহ্নিতকরণের দায়িত্ব দেয়া হয়। তিনি গ্রামের সকল শ্রেণির মানুষের প্রতিনিধিদের সাথে আলোচনা করে কর্তৃপক্ষের নিকট একটি রিপোর্ট জমা দেন। রিপোর্টে তিনি উন্নয়ন কর্মকান্ডে বাধা সৃষ্টিকারী পাঁচটি প্রতিবন্ধকতার নাম উল্লেখ করেন। 
ক. আধুনিক সমাজকর্মের সূত্রপাত কোন দেশে হয়?
খ. কোন আইনে অক্ষম দরিদ্রদেরকে চিহ্নিত করা হয়েছে। ব্যাখ্যা করো।
গ. মি. 'ক' এর রিপোর্টের সাথে তোমার পাঠ্যবইয়ের কোন রিপোর্টের মিল আছে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকে ইঙ্গিতকৃত রিপোর্টই যুক্তরাজ্যের সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করেছে বিশ্লেষণ করো। 

💘 ৪ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর 💘
ক. মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আধুনিক সমাজকর্মের সূত্রপাত হয়।

খ. ১৬০১ সালের এলিজাবেথীয় দরিদ্র আইনে অক্ষম দরিদ্রদেরকে চিহ্নিত করা হয়েছে। 
১৬০১ সালের এলিজাবেথীয় দরিদ্র আইন অনুযায়ী বুম, বৃদ্ধ, পঙ্গু, বধির, অন্ধ ও সন্তানাদিসহ বিধবা প্রমুখ যারা কাজ করতে সক্ষম নন, তারাই অক্ষম পরিদ্রদের পর্যায়ভুক্ত। অক্ষম পরিষদেরকে দরিদ্রাগারে রেখে তাদের সক্ষমতা অনুযায়ী কাজ করতে বাধ্য করা হতো। যাদের আশ্রয়ের ব্যবস্থা থাকতো তাদের জন্য ওভারসিয়ারের মাধ্যমে সাহায্যদানের ব্যবস্থা করা হতো।

গ. মি. 'ক' এর রিপোর্টের সাথে আমার পাঠ্যবইয়ের বিভারিজ রিপোর্টের মিল রয়েছে। 
আধুনিক ইংল্যান্ডের সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা প্রবর্তনে ১৯৪২ সালের সামাজিক নিরাপত্তামূলক কর্মসূচির ভূমিকা উল্লেখযোগ্য। স্যার উইলিয়াম বিভারিজের সামাজিক নিরাপত্তা রিপোর্ট অনুযায়ী এই কর্মসূচি গৃহীত হয়। উদ্দীপকটিতেও অনুরূপ একটি রিপোর্টের বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। 
উদ্দীপকের মি. 'ক' তাঁর গ্রামের সমস্যা চিহ্নিত করে একটি রিপোর্ট প্রণয়ন করেছেন। এই রিপোর্টে তিনি উন্নয়ন কর্মকান্ডে বাধা সৃষ্টিকারী পাঁচটি প্রতিবন্ধকের নাম উল্লেখ করেন। আলোচ্য বিভারিজ রিপোর্টেও অনুরূপ পাঁচটি প্রতিবন্ধকতার উল্লেখ ছিল। বিভারিজের রিপোর্ট অনুসারে তৎকালীন দারিদ্র্যপীড়িত ইংল্যান্ডের সমাজজীবনকে পদ্মদৈত্য অক্টোপাসের ন্যায় জড়িয়ে রেখেছিল। এই পঞ্চদৈত্য হলো- অভাব, রোগ, অজ্ঞতা, মলিনতা ও অলসতা। বিভারিজের মতে, এই পঞ্চদৈত্য বা পাঁচটি সমস্যাই ছিল ইংল্যান্ডের সার্বিক অগ্রগতির প্রধান অন্তরায় বা প্রতিবন্ধক। এজন্য তিনি এই সমস্যা সমাধানে সুপারিশ প্রদান করেছিলেন। সুতরাং দেখা যাচ্ছে, উদ্দীপকে আলোচিত রিপোর্ট এবং বিভারিজ রিপোর্টের মাঝে সাদৃশ্য বিদ্যমান।

ঘ. উদ্দীপকে ইঙ্গিতকৃত বিভারিজ রিপোর্ট যুক্তরাজ্যের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি বাস্তবায়নে একটি উল্লেখযোগ্য মাইলফলক হয়ে আছে। 
বিভারিজ রিপোর্টের সুপারিশগুলো যুক্তরাজ্যে সমাজসেবার ক্ষেত্রে আমূল পরিবর্তন এবং বাস্তবমুখী নতুন ধারা প্রবর্তন করে। এ সুপারিশ অনুসারেই যুক্তরাজ্যের সামগ্রিক সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি এবং এ পরিকল্পনার মেরুদন্ড হিসেবে স্বীকৃত সামাজিক বিমা ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে। এভাবে রিপোর্টটি যুক্তরাজ্যের সামাজিক নিরাপত্তাকে সুসংহত করেছে। উদ্দীপকেও এ রিপোর্টকে ইঙ্গিত করা হয়েছে।
উদ্দীপকের মি. 'ক' কে তার গ্রামের সমস্যা চিহ্নিত করার দায়িত্ব দেওয়া হলে তিনি গ্রামের সব শ্রেণির মানুষের প্রতিনিধিদের সাথে আলোচনা করে কর্তৃপক্ষের কাছে একটি রিপোর্ট জমা দেন যা বিভারিজ রিপোর্ট এর অনুরূপ। আর বিভারিজ রিপোর্টের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো এটি সর্বপ্রথম সকল স্তরের জনগণের জন্য সমন্বিত সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি প্রবর্তনের সুপারিশ করে। এই রিপোর্টের সুপারিশ অনুযায়ী পারিবারিক ভাতা আইন ১৯৪৫, বিমা আইন-১৯৪৬, জাতীয় সাহায্য আইন-১৯৪৮, জাতীয় স্বাস্থ্য সেবা আইন-১৯৪৬ প্রভৃতি সামাজিক নিরাপত্তামূলক আইন প্রণীত হয়েছিল। এ আইনগুলো সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে বিশেষ কার্যকর ছিল। বিশেষত সামাজিক বিমা কর্মসূচির আওতায় যুক্তরাজ্যের জনগণের জন্য জাতীয় স্বাস্থ্য বিমা, বার্ধক্য ও পঙ্গু বিমা, বেকার বিমা, বিবাহ, জন্ম ও মৃত্যুর জন্য বিশেষ বিমা, শ্রমিক ক্ষতিপূরণ প্রভৃতি সুবিধা প্রদান করা হয়। এককথায় বলা যায়, বিস্তারিজ রিপোর্ট যুক্তরাজ্যে আধুনিক সমাজকল্যাণমূলক আইনের ভিত্তি রচনা করে।
উপর্যুক্ত আলোচনা থেকে বলা যায়, বিভারিজ রিপোর্ট সম্পর্কিত প্রশ্নোক্ত বক্তব্যটি যথার্থ।

৫. করিম তার বাবা-মা, ভাই-বোন নিয়ে কুমিল্লায় বসবাস করেন। সম্প্রতি তাঁকে কুড়িগ্রামে বদলি করা হয়। ফলে তিনি তাঁর স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে কুড়িগ্রাম চলে যান। তার বাবা-মা কুমিল্লার বাসায় নিরাপত্তাহীনভাবে বসবাস করেন। 
ক. নগরায়ণ কী?
খ. শিল্পবিপ্লবের ফলে মৃত্যুহার হ্রাস পেয়েছে ব্যাখ্যা করো। 
গ. উদ্দীপকে শিল্পবিপ্লবের কোন নেতিবাচক দিকের প্রভাব পরিলক্ষিত হয়েছে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকের সমস্যা সমাধানে সমাজকর্মের জ্ঞান কীভাবে প্রয়োগ করা যায়? বিশ্লেষণ করো।

💘 ৫ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর 💘
ক. নগরায়ণ হলো এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে কৃষিভিত্তিক পেশা বা জীবনব্যবস্থা হতে মানুষ অকৃষিভিত্তিক পেশা বা জীবন পদ্ধতিতে স্থানান্তরিত হয়।

খ. শিল্পবিপ্লবের ফলে চিকিৎসাবিজ্ঞানের উনণয়ন সাধিত হওয়ায় মানুষের মৃত্যুহার হ্রাস পেয়েছে।
শিল্পবিপ্লবের পরে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে ব্যাপক উনণয়ন সাধিত হয়। বিশেষ করে সনাতন চিকিৎসা পদ্ধতির স্থান দখল করে নেয় আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতি। বিভিন্ন প্রাণঘাতী রোগের টীকা আবিষ্কৃত হয় এবং অস্ত্রোপচার ও ঔষধশিল্পের ব্যাপক প্রসার ঘটে। এছাড়া স্বাস্থ্য সম্বন্ধে মানুষের সচেতনতাও বৃদ্ধি পায়। এসব কারণে শিল্প-বিপ্লবোত্তর সময়ে মানুষের মৃত্যুহার হ্রাস পায়।

গ. উদ্দীপকে সামাজিক ক্ষেত্রে শিল্পবিপ্লবের নেতিবাচক প্রভাব পরিলক্ষিত হয়েছে। 
শিল্পবিপ্লবের ফলে সমাজজীবনে যে প্রভূত উনণয়ন সাধিত হয়েছে, তার সাথে নানা অবাঞ্ছিত ও অস্বস্তিকর অবস্থারও সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে যৌথ পরিবারগুলো ভেঙে গিয়ে সামাজিক দূরত্বের সৃষ্টি হচ্ছে। পাশাপাশি সমাজজীবনে নানা সামাজিক সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে।
উদ্দীপকে একটি যৌথ পরিবারের ভাঙনের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। করিম সাহেব বাবা-মা, ভাই-বোন নিয়ে কুমিল্লায় বসবাস করতেন। কিন্তু বর্তমানে চাকরির কারণে তিনি স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে কুড়িগ্রামে বাস করছেন। ফলশ্রুতিতে বর্তমানে তার বাবা-মা কুমিল্লার বাসায় নিরাপত্তাহীনভাবে বসবাস করছেন। এ ধরনের ঘটনা বর্তমানে সারাবিশ্বেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, শিল্পবিপ্লব পরবর্তী সময় থেকে শুরু করে এখনও পর্যন্ত এ ধরনের পরিবর্তন সূচিত হচ্ছে। কর্মসংস্থান ও উন্নত জীবনের আকর্ষণে মানুষ গ্রাম ছেড়ে শহর ও শিল্পাঞ্চলে গমন করছে। এর ফলে যৌথ পরিবারগুলো ভেঙে একক পরিবারের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং আত্মিক সম্পর্কের অবনতি ঘটছে। ফলে যৌথ পরিবারের বৃদ্ধ, অক্ষম, বিধবা ও এতিমদের মৌলিক চাহিদা পূরণে সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে এবং তারা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। উদ্দীপকের ঘটনাটি শিল্প বিপ্লবের এই নেতিবাচক প্রভাবকেই নির্দেশ করছে।

ঘ. উদ্দীপকের সমস্যা সমাধানে পেশাগত কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে সমাজকর্মের জ্ঞান প্রয়োগ করা যায়।
শিল্পবিপ্লবের ফলে সৃষ্ট নানা ধরনের জটিল সামাজিক সমস্যা মোকাবিলার প্রয়োজনেই পেশাদার সমাজকর্মের উদ্ভব হয়। পেশাদার সমাজকর্মীরা সমাজকর্মের জ্ঞান ও পদ্ধতিসমূহ কাজে লাগিয়ে নানা সমস্যা সমাধান করেন। উদ্দীপকে নির্দেশিত শিল্পবিপ্লবের নেতিবাচক সামাজিক প্রভাব থেকে সৃষ্ট সমস্যা সমাধানেও তাই সমাজকর্মের বিকল্প নেই।
উদ্দীপকে করিমের বাবা-মা এক ধরনের নিরাপত্তাহীনতায় বসবাস করছেন। এ ধরনের পরিস্থিতিতে প্রবীণকল্যাণ সমাজকর্ম নানা ধরনের কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। প্রকৃতপক্ষে পেশাদার সমাজকর্ম বিশ্বাস করে যে, ব্যক্তি নিজের সমস্যা নিজেই সমাধানের মাধ্যমে পরিবার ও সমাজে ভূমিকা রাখবে। এক্ষেত্রে সমাজকর্ম পেশায় নিয়োজিত সমাজকর্মীগণ প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করবে। শিল্পবিপ্লব পরবর্তী সময়ে প্রযুক্তির বিকাশ এবং নগরায়ণ ও শিল্পায়নের ফলে পরিবার কাঠামোর পরিবর্তন, পারিবারিক দূরত্ব বৃদ্ধি, পরিবারের প্রবীণ সদস্যদের নিরাপত্তাহীনতা ও সমস্যাগুলো প্রকট হয়ে ওঠে। আর এ প্রেক্ষিতেই পেশাদার সমাজকর্মের উদ্ভব ও বিকাশ হয়েছে। তাই এ সকল সমস্যা সমাধানে সমাজকর্ম একটি কার্যকর ও ফলপ্রসূ পন্থা বলা যায়। 
উপর্যুক্ত আলোচনা থেকে বলা যায়, পেশাদার সমাজকর্মের তত্ত্ব ও পদ্ধতির সমন্বয়ে উদ্দীপকে নির্দেশিত সমস্যা মোকাবিলা করা সম্ভব।

৬. বাংলাদেশে ভিক্ষুকের সংখ্যা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বৃদ্ধ, অসুস্থ প্রতিবন্ধী ভিক্ষুকের সাথে সাথে সুস্থ-সবল ও অপ্রাপ্তবয়স্ক শিশুরাও ভিক্ষা করছে। এক এলাকার মানুষ আরেক এলাকায় গিয়ে ভিক্ষা করে। বাংলাদেশে ভিক্ষাবৃত্তি একটি সামাজিক সমস্যায় পরিণত হয়েছে। এই সমস্যা মোকাবিলার জন্য এবং সুস্থ-সবল ভিক্ষুকদের পুনর্বাসন, সংশোধন, ভিক্ষাবৃত্তি নিষিদ্ধকরণের জন্যে ১৯৪৩ সালে বঙ্গীয় ভবঘুরে আইন প্রবর্তন করা হয়েছিল।
ক. NASW-এর পূর্ণরূপ লিখ। 
খ. পঞ্চদৈত্য বলতে কী বোঝায়? 
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্যে ইংল্যান্ড কোন আইন প্রবর্তন করেছিল? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত আইনের মতো ইংল্যান্ডে প্রবর্তিত আইন কি পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্যে কোনো সুপারিশ করেছিল? পাঠ্যপুস্তকের আলোকে মতামত দাও। 

💘 ৬ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর 💘
ক. NASW-এর পূর্ণরূপ National Association of Social Workers.

খ. পদ্মদৈত্য বলতে ১৯৪২ সালে পেশকৃত বিভারিজ রিপোর্টে উল্লিখিত পাঁচটি সমস্যা- অভাব, রোগ, অজ্ঞতা, মলিনতা ও অলসতাকে বোঝায়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধজনিত আর্থ-সামাজিক অস্থিরতা ও অনিশ্চয়তা মোকাবিলার লক্ষ্যে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ স্যার উইলিয়াম বিভারিজ একটি সামাজিক নিরাপত্তা রিপোর্ট পেশ করেন। এই রিপোর্টে তিনি উপর্যুক্ত পাঁচটি সমস্যা চিহ্নিত করেন। তার মতে, তৎকালীন দারিদ্র্যপীড়িত ইংল্যান্ডের সমাজজীবনকে এই পাঁচটি সমস্যা অক্টোপাসের মতো আঁকড়ে রেখেছিল। এই সমস্যাগুলোই পঞ্চদৈত্য নামে পরিচিতি পায়।

গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য ইংল্যান্ডে ১৬০১, সালে এলিজাবেথীয় দরিদ্র আইন প্রবর্তিত হয়েছিল। 
প্রাক-শিল্প যুগে ইংল্যান্ড দারিদ্র্য ও নানা ধরনের আর্থ-সামাজিক সমস্যায় আরিত ছিল। সে সময় ক্রমবর্ধমান দারিদ্র্য সমস্যা সমাধান, ভিক্ষা বৃত্তি, ভবঘুরে সমস্যা, বেকারত্ব রোধ এবং দুগ্ধদের সহায়তায় বিভিন্ন আইন প্রণীত হয়। এ সকল আইনের মধ্যে ১৬০১ সালের এলিজাবেথীয় পরিদ্র আইনটি একটি গুরুত্বপূর্ণ আইন হিসেবে স্বীকৃত।
উদ্দীপকে বাংলাদেশের একটি অন্যতম সামাজিক সমস্যা ভিক্ষাবৃত্তির নানা দিক উপস্থাপিত হচ্ছে। এই সমস্যা সমাধানে ১৯৪৩ সালের বঙ্গীয় ভবঘুরে আইনের কথাও উল্লেখ করা হয়েছে। এই আইনের মাধ্যমে সুস্থ-সবল ভিক্ষুকদের পুনর্বাসন সংশোধন, ভিক্ষাবৃত্তি নিষিদ্ধকরণের ব্যবস্থা গৃহীত হয়। ইংল্যান্ডে সৃষ্ট অনুরূপ সমস্যার প্রেক্ষিতেই ১৬০১ সালের দরিদ্র আইন প্রবর্তিত হয়েছিল। উক্ত আইন ইংল্যান্ডের দরিদ্র জনগণের তাৎক্ষণিক অর্থনৈতিক ও আবাসন সমস্যা সমাধানে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিল। বিশেষ করে ভিক্ষুকদের শ্রেণিকরণ করে তাদের পুনর্বাসন, সংশোধন এবং সার্বিক সহায়তায় ১৬০১ সালের দরিদ্র আইনের মাধ্যমে সরকারিভাবে দায়িত্ব গৃহীত হয়। তাই বলা যায়, উদ্দীপকে উল্লিখিত পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য ইংল্যান্ডে ১৬০১ সালের দরিদ্র আইন প্রণীত হয়েছিল।

ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত আইনের ন্যায় ইংল্যান্ডে প্রবর্তিত ১৬০১ সালের পরিদ্র আইনে ভিক্ষাবৃত্তি সমস্যার সমাধানে কিছু সুনির্দিষ্ট বিধান সুপারিশ করা হয়েছিল।
ভিক্ষাবৃত্তি সমস্যার সাথে কয়েক ধরনের মানুষ জড়িত থাকে। যেমন এক শ্রেণির ভিক্ষুকেরা সবল ও কর্মক্ষম, অন্য শ্রেণির ভিক্ষুকেরা প্রকৃতপক্ষেই কাজ করতে অক্ষম। আরেক শ্রেণির ভিক্ষুকদের মধ্যে রয়েছে এতিম ও পরিত্যক্ত শিশুরা। আলোচ্য দুটি আইনেই এই তিন শ্রেণির জন্য ভিন্ন ভিন্ন সুপারিশ করা হয়েছিল।
উদ্দীপকে বলা হয়েছে বাংলাদেশে ভিক্ষুকের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় তা মোকাবিলার জন্য ১৯৪৩ সালে বঙ্গীয় ভবঘুরে আইন প্রবর্তন করা হয় যা পাঠ্যবইয়ের ১৬০১ সালের দরিদ্র আইনকে নির্দেশ করছে। ১৬০১ সালের দরিদ্র আইনের বিধানমতে, সবল বা কর্মক্ষম ভিক্ষুকদেরকে ভিক্ষা দেওয়া কঠোরভাবে নিষিদ্ধ ছিল। এই শ্রেণির ভিক্ষুকদেরকে সংশোধনাগারে কাজ করতে বাধ্য করা হতো। কেউ অনিচ্ছা প্রকাশ করলে তাকে কারাগারে নিক্ষেপ বা কঠোর শাস্তি প্রদান করা হতো। অন্যদিকে অক্ষম দরিদ্র পর্যায়ভুক্ত অর্থাৎ যারা কাজ করতে সক্ষম ছিল না তাদেরকে দরিদ্রাগারে রাখার বিধান ছিল। সেখানে তাদের সক্ষমতা অনুযায়ী কাজ দেওয়া হতো। কারো যদি আশ্রয়ের ব্যবস্থা থাকতো তাহলে তাদেরকে সেখানে রেখে Overseer (ওভারসিয়ার) এর মাধ্যমে সাহায্যদানের ব্যবস্থা করা হতো। আর তৃতীয় শ্রেণির ভিক্ষুকদেরকে অর্থাৎ এতিম শিশুদেরকে কোনো নাগরিকের নিকট বিনা খরচে দত্তক দেওয়া হতো। ছেলেদের ২৪ বছর এবং মেয়েদেরকে ২১ বছর বা বিয়ের পূর্ব পর্যন্ত মনিবের বাড়িতে থাকতে হতো। 
উপর্যুক্ত আলোচনা থেকে দেখা যাচ্ছে, ১৬০১ সালের দরিদ্র আইনে ভিক্ষাবৃত্তি সমস্যা সমাধানে সুবিন্যস্ত ও কার্যকর সুপারিশ পেশ করা হয়েছিল।

HSC সমাজকর্ম ১ম পত্র (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর অধ্যায় ২ pdf download

৭. ১৭৬০ সাল হতে ১৮৫০ সালের মধ্যে প্রথমে ইংল্যান্ডে পরবর্তীতে ইউরোপ ও পৃথিবীর অন্যান্য দেশে উৎপাদন, প্রযুক্তি, যাতায়াত ও যোগাযোগ ক্ষেত্রে আমূল পরিবর্তন সূচিত হয়। এ পরিবর্তনের ফলে নাগরিক সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি পেলেও মানবজীবনে নতুন নতুন জটিল সমস্যার সৃষ্টি হয়। আর এ সমস্যা মোকাবেলায় বিজ্ঞানসম্মত উপায় হিসেবে একটি সুনির্দিষ্ট পদ্ধতির উদ্ভব হয়। 
ক. COS এর পূর্ণরূপ কী? 
খ. বিভারিজ রিপোর্ট কী?
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত আমূল পরিবর্তনকে কী নামে আখ্যায়িত করা হয়? ব্যাখ্যা করো। 
ঘ. উক্ত পরিবর্তনের প্রভাবে কীভাবে সমাজকর্মের উদ্ভব হয়? বিশ্লেষণ করো।

💘 ৭ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর 💘
ক. COS-এর পূর্ণরূপ হলো Charity Organization Society.

খ. বিভারিজ রিপোর্ট হলো ১৯৪২ সালে স্যার উইলিয়াম বিভারিজ কর্তৃক প্রণীত ইংল্যান্ডের সামাজিক নিরাপত্তা বিষয়ক একটি রিপোর্ট। 
বিভারিজ রিপোর্টে অভাব, রোগ, অজ্ঞতা, মলিনতা ও অলসতাকে মানবসমাজের অগ্রগতিতে পাঁচটি প্রধান অন্তরায় হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এই সমস্যাগুলো সমাধানে রিপোর্টে পাঁচটি সুপারিশ করা হয়। এই রিপোর্টের লক্ষ্য ছিল সমাজ হতে অভাব দূর করে ফলপ্রসূ সামাজিক নিরাপত্তা পদ্ধতি প্রচলন করা।

গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত আমূল পরিবর্তনকে শিল্পবিপ্লব নামে আখ্যায়িত করা হয়। 
শিল্পবিপ্লব হচেছ কৃষিভিত্তিক, হস্তশিল্পনির্ভর ক্ষুদ্রায়তন উৎপাদন ও অর্থনীতি থেকে শিল্প ও যন্ত্রচালিত বৃহদায়তন উৎপাদন ব্যবস্থায় পরিবর্তনের একটি প্রক্রিয়া; যা অষ্টাদশ শতাব্দীতে ইংল্যান্ডে শুরু হয়। এর প্রভাবে সমাজের সকল স্তরে উন্নয়নের ক্ষেত্রে উৎকর্ষ ঘটে এবং এর প্রভাব মানবসভ্যতার ইতিহাসে সর্বাধিক গুরুত্ববহ।
উদ্দীপকে ১৭৬০ থেকে ১৮৫০ সাল পর্যন্ত সমগ্র ইউরোপ ও তার সূত্র ধরে পৃথিবীর অন্যান্য দেশে উৎপাদন, প্রযুক্তি, যাতায়াত ও যোগাযোগ ক্ষেত্রে আমূল পরিবর্তন সূচিত হওয়ার কথা বলা হয়েছে। এই পরিবর্তনের সূত্রপাত হয়েছিল ইংল্যান্ড থেকে। এ থেকে বোঝা যায়, উদ্দীপকে শিল্পবিপ্লবের প্রতি ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে। উদ্দীপকে এর ফলাফলও তুলে ধরা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে, শিল্পবিপ্লব আর্থ-সামাজিক জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন নিয়ে এসেছে। এর ফলে অর্থব্যবস্থা দ্রুত সমৃদ্ধ হওয়ার পাশাপাশি নাগরিক সুযোগ-সুবিধা বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়েছে। শিল্পায়ন শিল্পবিপ্লবের প্রধান বৈশিষ্ট্য। আর শিল্পায়নের ফলে শহরায়ন প্রক্রিয়া গড়ে ওঠে, যার ফসল আজকের শহরকেন্দ্রিক সভ্যতা। তবে এর ফলে মানবজীবনে কিছু নতুন সমস্যারও উদ্ভব ঘটে, যা উদ্দীপকে উল্লিখিত হয়েছে। তাই বলা যায়, উদ্দীপকে শিল্পবিপ্লবের ফলে সৃষ্ট আমূল পরিবর্তনের কথাই বলা হয়েছে।

ঘ. উক্ত পরিবর্তন অর্থাৎ শিল্পবিপ্লবের ফলে সৃষ্ট নানাবিধ সমস্যার প্রেক্ষিতে সুনির্দিষ্ট পদ্ধতি হিসেবে সমাজকর্ম পেশার উদ্ভব ও বিকাশ সাধিত হয়।
শিল্পবিপ্লব মানবসভ্যতায় এক আকস্মিক ও ব্যাপক পরিবর্তন এনেছে, যা মানুষকে বস্তুগত ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি দিলেও সমাজজীবনে বহুমুখী জটিল সমস্যার সৃষ্টি করে। এসব সমস্যার সমাধানে একটি বিজ্ঞানসম্মত কার্যকর পদ্ধতির প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়, যার সূত্র ধরে সমাজকর্মের উদ্ভব ঘটে।
শিল্পবিপ্লব প্রযুক্তিগত উনণয়ন সাধন করলেও সামাজিক বিচ্ছিন্নতা ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তাহীনতার মতো ভয়াবহ সমস্যারও সৃষ্টি করে। এ ধরনের সমস্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিরাই সাধারণত সমাজের অন্যান্য নেতিবাচক পরিস্থিতি সৃষ্টিতে প্রভাবকের ভূমিকা পালন করে থাকে। তাই শিল্পবিপ্লবোত্তর সমাজে সামাজিক স্থিতিশীলতা বজায় রেখে স্বাভাবিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে আত্মনির্ভরশীলতার প্রতি গুরুত্বারোপ অপরিহার্য হয়ে পড়ে। এ প্রেক্ষিতে সমাজকর্মের মতো বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতির আবশ্যকতা দেখা দেয়। এক্ষেত্রে একটি সমন্বিত প্রক্রিয়া হিসেবে সমাজকর্মের কার্যকারিতা অপরিহার্য হতে শুরু করে। আর এ কারণেই শিল্প বিপ্লবোত্তর সময়ে সামাজিক সমস্যা সমাধানের প্রধান সহায়ক হয়ে ওঠে সমাজকর্ম। উদ্দীপকেও এই বিষয়টি ফুটে উঠেছে। এতে বলা হয়েছে ১৭৬০ সাল থেকে ১৮৫০ সাল পর্যন্ত সমাজে সংঘটিত আমুল পরিবর্তনের ফলে নাগরিক সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি পেলেও মানব জীবনে নতুন নতুন জটিল সমস্যার উদ্ভব হয়েছে যা সমাধান বিজ্ঞানসম্মত উপায় হিসেবে সমাজকর্মের উদ্ভব হয়েছে। উপরের আলোচনা থেকে তাই বলা যায়, শিল্প বিপ্লবের ফলে সৃষ্ট সমস্যাই সমাজকর্মের উদ্ভব ও বিকাশে প্রধান প্রভাবক হিসেবে ভূমিকা রেখেছে।

৮. সাইদুর রহমান উচ্চ শিক্ষা গ্রহণে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছে। সে লক্ষ করে এ দেশটির স্থায়ী নাগরিকের একটি শিশু জন্মদানের পর থেকে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত বিশেষ ভাতা প্রদান করা হয়। আবার বার্ধক্যে কিংবা মৃত্যুতেও সামাজিক বিমার আওতায় তাদেরকে বিভিন্ন ধরনের রাষ্ট্রীয় সুবিধা দেওয়া হয়ে থাকে।
ক. ১৯০৫ সালে দরিদ্র আইন কমিশনের প্রধান কে ছিলেন? 
খ. পণ্যদৈত্য বলতে কী বোঝায়?
গ. সাইদুরের উল্লিখিত রাষ্ট্রে সামাজিক বিমা পদ্ধতির মাধ্যমে মূলত কোন আইনের কর্মসূচিকে নির্দেশ করা হয়েছে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. 'সমাজকর্ম পেশার বিকাশে উদ্দীপকের উক্ত কর্মসূচির ভূমিকা বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ' -বিশ্লেষণ করো।

💘 ৮ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর 💘
ক. ১৯০৫ সালে লর্ড জর্জ হ্যামিল্টন দরিদ্র আইন কমিশনের প্রধান ছিলেন।

খ. পঞ্চদৈত্য বলতে ১৯৪২ সালে পেশকৃত বিভারিজ রিপোর্টে উল্লিখিত পাঁচটি সমস্যা- অভাব, রোগ, অজ্ঞতা, মলিনতা ও অলসতাকে বোঝায়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধজনিত আর্থ-সামাজিক অস্থিরতা ও অনিশ্চয়তা মোকাবিলার লক্ষ্যে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ স্যার উইলিয়াম বিভারিজ একটি সামাজিক নিরাপত্তা রিপোর্ট পেশ করেন। এই রিপোর্টে তিনি উপর্যুক্ত পাঁচটি সমস্যা চিহ্নিত করেন। তার মতে, তৎকালীন দারিদ্র্যপীড়িত ইংল্যান্ডের সমাজজীবনকে এই পাঁচটি সমস্যা অক্টোপাসের মতো আঁকড়ে রেখেছিল। এই সমস্যাগুলোই পঞ্চদৈত্য নামে পরিচিতি পায়।

গ. সাইদুরের উল্লিখিত রাষ্ট্রের সামাজিক বিমা পদ্ধতি ইংল্যান্ডের ১৯৪২ সালের বিভারিজ রিপোর্টের কর্মসূচিকে নির্দেশ করছে। 
১৯৪২ সালে ইংল্যান্ডের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির কাঠামো মূলত স্যার উইলিয়াম বিভারিজের রিপোর্টের ওপর ভিত্তি করে গড়ে তোলা হয়। এটি ছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইংল্যান্ডে সৃষ্ট সামাজিক অনিশ্চয়তা ও নিরাপত্তাহীনতা নিরসনের লক্ষ্যে গৃহীত একটি কার্যকর পদক্ষেপ। বিভারিজ রিপোর্ট মূলত গ্রেট ব্রিটেনে আধুনিক সমাজকল্যাণমূলক আইনের ভিত্তি রচনা করে।
উদ্দীপকে সাইদুর উচ্চশিক্ষা গ্রহণে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছে। সে লক্ষ করে দেশটিতে স্থায়ী নাগরিকদের একটি শিশু জন্মদানের পর থেকে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত বিশেষ ভাতা প্রদান করা হয়। আবার বার্ধক্যে কিংবা মৃত্যুতে সামাজিক বিমার আওতায় তাদেরকে বিভিন্ন ধরনের রাষ্ট্রীয় সুবিধা দেওয়া হয়ে থাকে। এ সামাজিক বিমা পদ্ধতি ইংল্যান্ডের সামাজিক নিরাপত্তা আইন কর্মসূচিকে নির্দেশ করছে। এর মূল লক্ষ্য ছিল কল্যাণের পথে প্রতিবন্ধক সকল বিষয় অপসারণের মাধ্যমে সমাজে সুখ-সমৃদ্ধি বৃদ্ধি করা। এ রিপোর্টের ওপর ভিত্তি করে তৎকালীন সরকার বিভিন্ন নিরাপত্তামূলক বিমা আইন প্রণয়ন করে। তাই বলা যায়, উদ্দীপকে বর্ণিত বিমা কর্মসূচি ১৯৪২ সালের বিভারিজ রিপোর্টকেই নির্দেশ করে।

ঘ. সমাজকর্ম পেশার বিকাশে উদ্দীপকের উক্ত কর্মসূচি অর্থাৎ সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির ভূমিকা বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ।
১৯৪২ সালের সামাজিক নিরাপত্তামূলক কর্মসূচি এবং পরবর্তীতে এর ওপর ভিত্তি করে প্রণয়ন করা বিভিন্ন সামাজিক নিরাপত্তামূলক আইনসমূহ সমাজকর্ম পেশার ভিত্তি গড়ে দেয়। সমাজকর্মের অন্যতম লক্ষ্য হলো প্রতিটি স্তরের জনগণের সুখী-সমৃদ্ধ জীবন নিশ্চিত করা; আর সামাজিক বিমা কর্মসূচি নাগরিকের সেই জীবনকেই নিশ্চিত করতে সহায়তা করে। উদ্দীপকে নির্দেশিত বিভারিজ রিপোর্ট ইংল্যান্ডের কল্যাণ রাষ্ট্রের মর্যাদা লাভের প্রধান উৎস হিসেবে কাজ করেছে। কারণ এ রিপোর্ট সামাজিক নিরাপত্তার ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধন করেছে। এ রিপোর্টের ওপর ভিত্তি করে তৎকালীন ইংল্যান্ডে পারিবারিক ভাতা, জাতীয় স্বাস্থ্যসেবা এবং জাতীয় সাহায্যের ব্যবস্থা করা হয়।
ইংল্যান্ডে ১৯৪৫ সালের পারিবারিক ভাতা আইন অনুসারে ১৯৪৬ সালের ১ আগস্ট হতে পারিবারিক ভাতা কর্মসূচি গৃহীত হয়। এ আইন মোতাবেক আর্থিক অবস্থা বিবেচনা না করে প্রত্যেক পরিবারে দুই বা ততোধিক ১৬ বছরের নিচের শিশুদের পারিবারিক ভাতা দেওয়া হয়। পাশাপাশি ১৯৪৮ সালের জাতীয় সাহায্য আইনের আওতায় ১৯৪৮ সালের ১ জুলাই থেকে সরকারি সাহায্য কর্মসূচি কার্যকর হয়। বিভারিজ রিপোর্ট পরবর্তী এ ধরনের সামাজিক আইনগুলো তাই সমাজের দরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর সমস্যা মোকাবিলায় সহায়ক হয়। এ ধরনের সরকারি সাহায্য ব্যবস্থা সমাজকর্ম পেশার বিকাশকে বিশেষভাবে উৎসাহিত করে।

৯. ১৭৬০ সাল থেকে ১৮৫০ সালের মধ্যে প্রথমে ইংল্যান্ডে পরবর্তীতে ইউরোপ ও পৃথিবীর অন্যান্ন দেশে উৎপাদন, প্রযুক্তি, যাতায়াত ও যোগাযোগ ক্ষেত্রে আমূল পরিবর্তন সূচিত হয়। এ পরিবর্তনের ফলে নাগরিক সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি পেলেও মানবজীবনে নতুন নতুন জটিল সমস্যার সৃষ্টি হয়। আর এ সমস্যা মোকাবেলায় বিজ্ঞান সম্মত উপায় হিসেবে একটি সুনির্দিষ্ট পদ্ধতির উদ্ভব হয়।
ক. ‘Social Diagnosis’ গ্রন্থটির লেখক কে?
খ. ১৬০১ সালে দরিদ্র আইনে সক্ষম দরিদ্র বলতে কাদেরকে বোঝানো হয়েছে?
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত আমূল পরিবর্তনকে কী নামে আখ্যায়িত করা হয়? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উক্ত পরিবর্তনের প্রভাবে কীভাবে সমাজকর্মের উদ্ভব হয়। বিশ্লেষণ করো।

💘 ৯ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর 💘
ক. ‘Social Diagnosis’ গ্রন্থটির লেখক ম্যারি রিচমন্ড।

খ. ১৬০১ সালের দরিদ্র আইন অনুযায়ী শারীরিক ও মানসিক দিক দিয়ে সুস্থ, সবল ও কর্মক্ষম লোকদের সক্ষম দরিদ্র বলা হয়। ইংল্যান্ডের সক্ষম দরিদ্রদের ভিক্ষাবৃত্তি সর্বতোভাবে নিষিদ্ধ করা হয় এবং জোরপূর্বক কাজ করতে বাধ্য করা হয়। সক্ষম দরিদ্রদের সংশোধনের জন্য সংশোধনাগারে কিংবা কাজ করানোর জন্য শ্রমাগারে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হতো। যারা তা মানতে রাজি হতো না তাদের কারাগারে পাঠানো হতো।

গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত আমূল পরিবর্তনকে শিল্পবিপ্লব নামে আখ্যায়িত করা হয়।
শিল্পবিপ্লব হচেছ কৃষিভিত্তিক, হস্তশিল্পনির্ভর ক্ষুদ্রায়তন উৎপাদন ও অর্থনীতি থেকে শিল্প ও যন্ত্রচালিত বৃহদায়তন উৎপাদন ব্যবস্থায় পরিবর্তনের একটি প্রক্রিয়া; যা অষ্টাদশ শতাব্দীতে ইংল্যান্ডে শুরু হয়। এর প্রভাবে সমাজের সকল স্তরে উন্নয়নের ক্ষেত্রে উৎকর্ষ ঘটে এবং এর প্রভাব মানবসভ্যতার ইতিহাসে সর্বাধিক গুরুত্ববহ। উদ্দীপকে ১৭৬০ থেকে ১৮৫০ সাল পর্যন্ত সমগ্র ইউরোপ ও তার সূত্র ধরে পৃথিবীর অন্যান্য দেশে উৎপাদন, প্রযুক্তি, যাতায়াত ও যোগাযোগ ক্ষেত্রে আমূল পরিবর্তন সূচিত হওয়ার কথা বলা হয়েছে। এই পরিবর্তনের সূত্রপাত হয়েছিল ইংল্যান্ড থেকে। এ থেকে বোঝা যায়, উদ্দীপকে শিল্পবিপ্লবের প্রতি ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে। উদ্দীপকে এর ফলাফলও তুলে ধরা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে, শিল্পবিপ্লব আর্থ-সামাজিক জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন নিয়ে এসেছে। এর ফলে অর্থব্যবস্থা দ্রুত সমৃদ্ধ হওয়ার পাশাপাশি নাগরিক সুযোগ-সুবিধা বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়েছে। শিল্পায়ন শিল্পবিপ্লবের প্রধান বৈশিষ্ট্য। আর শিল্পায়নের ফলে শহরায়ন প্রক্রিয়া গড়ে ওঠে, যার ফসল আজকের শহরকেন্দ্রিক সভ্যতা।
তবে এর ফলে মানবজীবনে কিছু নতুন সমস্যারও উদ্ভব ঘটে, যা উদ্দীপকে উল্লিখিত হয়েছে। তাই বলা যায়, উদ্দীপকে শিল্পবিপ্লবের ফলে সৃষ্ট আমূল পরিবর্তনের কথাই বলা হয়েছে।

ঘ. শিল্পবিপ্লবের ফলে সৃষ্ট নানাবিধ সমস্যার প্রেক্ষিতে সুনির্দিষ্ট পদ্ধতি হিসেবে সমাজকর্ম পেশার উদ্ভব ও বিকাশ সাধিত হয়। 
শিল্পবিপ্লব মানবসভ্যতায় এক আকস্মিক ও ব্যাপক পরিবর্তন এনেছে, যা মানুষকে বস্তুগত ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি দিলেও সমাজজীবনে বহুমুখী জটিল সমস্যার সৃষ্টি করে। এসব সমস্যার সমাধানে একটি বিজ্ঞানসম্মত কার্যকর পদ্ধতির প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়, যার সূত্র ধরে সমাজকর্মের উদ্ভব ঘটে। শিল্পবিপ্লব প্রযুক্তিগত উনণয়ন সাধন করলেও সামাজিক বিচ্ছিন্নতা ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তাহীনতার মতো ভয়াবহ সমস্যারও সৃষ্টি করে। এ ধরনের সমস্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিরাই সাধারণত সমাজের অন্যান্য নেতিবাচক পরিস্থিতি সৃষ্টিতে প্রভাবকের ভূমিকা পালন করে থাকে। তাই শিল্পবিপ্লবোত্তর সমাজে সামাজিক স্থিতিশীলতা বলায় রেখে স্বাভাবিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে আত্মনির্ভরশীলতার প্রতি গুরুত্বারোপ অপরিহার্য হয়ে পড়ে। এ প্রেক্ষিতে সমাজকর্মের মতো বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতির আবশ্যকতা দেখা দেয়। এক্ষেত্রে একটি সমন্বিত প্রক্রিয়া হিসেবে সমাজকর্মের কার্যকারিতা অপরিহার্য হতে শুরু করে। আর এ কারণেই শিল্প-বিপ্লবোত্তর সময়ে সামাজিক সমস্যা সমাধানের প্রধান সহায়ক হয়ে ওঠে সমাজকর্ম। পরিশেষে বলা যায়, শিল্পবিপ্লব সমাজকর্মের উদ্ভব ও বিকাশে প্রধান প্রভাবক হিসেবে ভূমিকা রেখেছে।

১০. 'ক' দেশে ১৮৬৫ থেকে ১৮৭১ সাল পর্যন্ত গৃহযুদ্ধ সংঘটিত হওয়ার কারণে ১৮৭৩ সালে অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দেয়। এ মন্দাবস্থা কাটিয়ে ওঠার জন্য বিশৃঙ্খলভাবে হাজার হাজার সংস্থা গড়ে উঠলে সেগুলোর মধ্যে সমন্বয় সাধনের জন্য মনীথী সজীব 'খ' দেশের অনুকরণে ১৮৭৭ সালে 'একতা' নামক একটি সংস্থা গড়ে তোলেন। উক্ত সংস্থাই পরবর্তী সময় সমাজকর্ম পেশার উদ্ভব বিকাশে পেশাগত প্রশিক্ষণ, পত্রিকা প্রকাশ, পেশাগত সংগঠন ও পদ্ধতি উদ্ভাবনে অবদান রাখে।
ক. ইংল্যান্ডে কত সালে দান সংগঠন সমিতি গঠিত হয়?
খ. শিল্পবিপ্লবের ধারণা দাও।
গ. 'একতা' সংস্থাটির সাথে তোমার পাঠ্যপুস্তকের কোন সংস্থার সাথে মিল রয়েছে? আলোচনা কর। 
ঘ. সমাজকর্ম পেশার উদ্ভব-বিকাশে উদ্দীপকের আলোকে উক্ত সংস্থার কর্মসূচিগুলো বিশ্লেষণ করো।

💘 ১০ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর 💘
ক. ১৮৬৯ সালে ইংল্যান্ডে দান সংগঠন সমিতি গঠিত হয়।

খ. যেসব প্রচেষ্টা ও পরিবর্তনের প্রেক্ষিতে শিল্প যুগের সূচনা হয় তাদের সমষ্টিই হলো শিল্পবিপ্লব। 
শিল্পবিপ্লব শব্দটি 'শিল্প' ও 'বিপ্লব' এ দুটি শব্দের সমন্বিত রূপ। যার সমন্বিত অর্থ শিল্প সংক্রান্ত বিপ্লব। এর সূচনা হয় ইংল্যান্ডে এবং পরে তা অতি দ্রুত পুরো বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। এক কথায় বলা যায়, অষ্টাদশ শতাব্দীর মাঝামাঝি থেকে ঊনবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে ইংল্যান্ড ও বিশ্বের অন্যান্য দেশের উৎপাদন ব্যবস্থায় যে যুগান্তকারী পরিবর্তন আসে, তার প্রভাবে একটি নতুন যুগের সূচনা হয় ঐতিহাসিকগণ একে 'শিল্পবিপ্লব' হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।

গ. উদ্দীপকের 'একতা' সংস্থাটির সাথে যুক্তরাষ্ট্রের দান সংগঠন সমিতির মিল রয়েছে। 
১৮৭৩ সালের অর্থনৈতিক মন্দার প্রেক্ষিতে আমেরিকায় দান সংগঠন আন্দোলন শুরু হয়। এর উদ্দেশ্য ছিল দরিদ্রতার কারণ নির্ণয়পূর্বক এর বৈজ্ঞানিক সমাধান দান। পেশাদার সমাজকর্মের বিকাশে এ সমিতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
উদ্দীপকে দেখা যায়, 'ক' দেশে, ১৮৭৩ সালে অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দেওয়ার পর মন্দাবস্থা মোকাবিলায় অনেক সংস্থা গড়ে উঠে। এগুলোর মধ্যে সমন্বয় সাধনের জন্য জনাব সজীব 'খ' দেশের অনুকরণে ১৮৭৭ সালে 'একতা' নামক একটি সংস্থা গড়ে তোলেন। এটি মূলত যুক্তরাষ্ট্রের দান সংগঠন সমিতিকে নির্দেশ করে। ১৮৭৩ সালে আমেরিকায় দান সংগঠন আন্দোলন প্রথম শুরু হয়েছিল। পরবর্তী ১৮৭৭ সালে আর এইচ গাটিনের নেতৃত্বে ইংল্যান্ডের অনুকরণে নিউইয়র্ক শহরে সর্বপ্রথম দান সংগঠন সমিতি (COS) গঠিত হয়। এ সমিতি দরিদ্রদের সহায়তা দানের পাশাপাশি দারিদ্রের কারণ উদ্ঘাটনে নানামুখী প্রচেষ্টা চালায় এবং বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে বাস্তবমুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করে। ফলে সমাজকল্যাণ ও সেবামূলক কাজ সুসংগঠিত আকারে প্রকাশিত হয়। এতে সমাজকর্ম পেশা বিকাশ লাভ করে। এসব কারণে উদ্দীপকের 'একতা' সংস্থাটির সাথে দান সংগঠন সমিতি'র হুবহু মিল রয়েছে।

ঘ. সমাজকল্যাণমূলক কাজের সমন্বয় এবং দরিদ্রদের সাহায্যদানের নতুন কৌশল চালুর মাধ্যমে দান সংগঠন সমিতি সমাজকর্ম পেশার বিকাশকে ত্বরান্বিত করেছে। 
উদ্দীপকে বর্ণিত প্রেক্ষাপটের ন্যায় এক জটিল পরিস্থিতিতে সৃষ্ট ইংল্যান্ডের দান সংগঠন সমিতি দরিদ্রদের কার্যকর সেবা প্রদানের লক্ষ্যে নানা রকম কার্যক্রম গ্রহণ করে। এর ফলে সমাজকল্যাণ ও সমাজসেবামূলক কার্যক্রম সুসংগঠিত রূপ লাভ করে। আর সমাজকল্যাণের সুসংগঠিত রূপই হলো সমাজকর্ম পেশা।
দান সংগঠন সমিতির কর্মতৎপরতায় ইংল্যান্ডে বহু স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন গড়ে ওঠে। সরকারি ও স্বেচ্ছাসেবী কাজের সমন্বয় সাধনের মাধ্যমে দরিদ্র ব্রণ এবং বেসরকারি দানের মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধি পায়। পাশাপাশি ভুয়া সাহায্য সংস্থা ও পেশাদার ভিক্ষুকদের মুখোশ উন্মোচিত হয়। দান সংগঠন সমিতির কার্যক্রমের ফলে দরিদ্রদের নৈতিক মনোবল শক্তিশালী হতে থাকে। ফলে তারা আত্মনির্ভরশীলতা অর্জনে সক্রিয় হয়ে ওঠে। ইংল্যান্ডের পাশাপাশি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ১৮৭৭ সালে দান সংগঠন সমিতি গড়ে ওঠে। এ সমিতি দরিদ্রদের সহায়তা দানের সাথে সাথে দারিদ্রের কারণ উদ্ঘাটন করে এবং সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নেয়। এদের কর্মসূচি ধীরে ধীরে সমাজকর্ম পেশায় রূপ নেয়। শিশুশ্রম আইন ও কিশোর যুবকদের জন্য আদালত প্রতিষ্ঠা, সমাজসেবা শিক্ষা কোর্স চালু, নিউইয়র্ক স্কুল অব সোশ্যাল ওয়ার্ক, Charitis Review পত্রিকা প্রকাশ প্রভৃতি কার্যক্রম সমাজকর্ম পেশার বিকাশে নতুন পথের সন্ধান দেয়। 
পরিশেষে বলা যায়, ইংল্যান্ডের জটিল পরিস্থিতিতে সৃষ্ট দান সংগঠন সমিতি প্রয়োজনের প্রেক্ষিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ব্যাপকভাবে অনুশীলিত হয়ে অধিকতর সুসংগঠিত হয়। এ সমিতির বিভিন্ন কর্মসূচি এবং কৌশল সমাজকর্ম পেশার বিকাশকে ত্বরান্বিত করেছে।
Share: