HSC সমাজকর্ম ১ম পত্র (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর অধ্যায় ৮ pdf download

এইচএসসি পরীক্ষার পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি
HSC Social Work 1st Paper Srijonshil question and answer. HSC SocialWork 1st Paper (Srijonshil) Creative Questions pdf download.

সমাজকর্ম
প্রথম পত্র

সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
অধ্যায়-৮

HSC Social Work 1st Paper
Srijonshil Question and Answer pdf download

সমাজকর্ম পেশার সমস্যা এবং সম্ভাবনা
বিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে উন্নত দেশে শিল্পবিপ্লব ও যান্ত্রিক যুগের সূচনার ফলে আধুনিক সমাজকর্মের উদ্ভব ও বিকাশ ঘটে। পরবর্তীতে উনণয়নশীল ও অনুনণত দেশে সমাজকর্মের প্রয়োগ শুরু হয়। শিল্পায়ন ও শহরায়নজনিত সমস্যা মোকাবিলার জন্য উন্নত দেশের অনুসরণে পঞ্চাশের দশকে বাংলাদেশে সমাজকর্ম পেশার সূচনা এবং ষাটের দশকে এর সম্প্রসারন ঘটে। কিন্তু দীর্ঘ কয়েক দশক অতিক্রান্ত হলেও এখনো বাংলাদেশে সমাজকর্ম পূর্ণাঙ্গ পেশা হিসেবে রাষ্ট্রীয় বা সামাজিক স্বীকৃতি অর্জন করতে পারেনি। কিন্তু নারীকল্যাণ, শিশুকল্যাণ, যুবকল্যাণ, প্রবীণকল্যাণ, শ্রমকল্যাণসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সমাজকর্ম পেশা অনুশীলনের সম্ভাবনা রয়েছে।

পেশাগত সংগঠনের অভাব, দেশজ শিক্ষা উকরণের সীমাবদ্ধতা, জনসচেতনার অভাব, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির অভাবে সমাজকর্ম পেশা এদেশে যথাযথ বিকাশ লাভ করতে পারেনি। তবে বাংলাদেশের মত উন্নয়নশীল দেশে সমাজকর্ম শিক্ষার সম্ভাবনা অত্যাধিক গুরুত্বপূর্ণ। বেসরকারি পর্যায়ে সীমিত পরিসরে হলেও সমাজকর্ম পেশার অনুশীলন অব্যাহত রয়েছে। এছাড়া সমাজকর্ম পেশার রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি অর্জনের নিমিত্তে ইঈঝডঊ এর মতো সংগঠন তৎপর রয়েছে। অদূর ভবিষ্যত বাংলাদেশে সমাজকর্ম একটি পূর্ণাঙ্গ ও গুরুত্বপূর্ণ পেশা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে বলে আশা করা যায়।

বাংলাদেশে সমাজকর্ম পেশার সম্ভাব্য প্রয়োগক্ষেত্র
১. শহর ও গ্রামীণ সমষ্টি উন্নয়ন: বাংলাদেশে পেশাদার সমাজকর্মের প্রয়োগ শুরু হয় মূলত শহর সমষ্টি উন্নয়ন প্রকল্প (UCDP) এর মাধ্যমে ১৯৫৫ সালে। এটি বর্তমানে শহর সমাজসেবা কার্যক্রম নামে ৮০টি ইউনিটের মাধ্যমে সারা দেশের পৌর এলাকায় বাস্তবায়িত হচ্ছে, যা শহর এলাকার বস্তিবাসীর জীবনমান উন্নয়নের লক্ষ্য কাজ করছে। অন্যদিকে গ্রামীণ দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে ১৯৭৪ সাল থেকে গ্রামীণ সমাজসেবা কর্মসূচি (জঝঝ) চালু রয়েছে। এটি দেশের সকল উপজেলায় দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে বিভিন্ন রকম কার্যক্রম পরিচালনা করছে। শহর ও গ্রামীণ সমষ্টি উন্নয়নে সমাজকর্মের জ্ঞান, কৌশল ও পদ্ধতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।

২. বিদ্যালয় পর্যায়ে সমাজকর্ম: বাংলাদেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া, পড়ালেখার প্রতি বিমুখতা, বিদ্যালয়ের পরিবেশের সাথে সামঞ্জস্যবিধান করতে না পারাসহ বিবিধ সমস্যা লক্ষণীয়। বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া প্রতিরোধ, পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার প্রতি মনোযোগী করা তথা শিক্ষার্থী বান্ধব পরিবেশ সৃষ্টির ক্ষেত্রে বিদ্যালয় সমাজকর্ম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বাংলাদেশে ১৯৬৯ সালে পরীক্ষামূলকভাবে ঢাকার আরমানিটোলা উচ্চ বিদ্যালয় এবং চট্টগ্রামের মুসলিম হাই স্কুলে চালু করা হলেও তা ১৯৮৪ সালে এনাম কমিটির সুপারিশ বন্ধ করে দেয়া হয়। তবে বর্তমানে বাংলাদেশে ইউসেপ, ব্র্যাকের মতো কিছু এনজিও বিদ্যালয় সমাজকর্মের জ্ঞান প্রয়োগ করে। বাংলাদেশে বিদ্যালয়ে সমাজকর্ম প্রয়োগ করার যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে।

৩. সংশোধনমূলক কার্যক্রম: অপরাধী ও কিশোর অপরাধীদের আচরণ সংশোধনে বাংলাদেশে প্রাতিষ্ঠানিক আবাসিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক সমষ্টিভিত্তিক সেবা কর্মসূচি চালু রয়েছে। প্রাতিষ্ঠানিক আবাসিক সেবা কর্মসূচির মধ্যে কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্র, কারাগারের অভ্যন্তরে বন্দী কয়েদীদের প্রশিক্ষণ, কাউন্সিলিং ও মটিভেশন কর্মসূচি উল্লেখযোগ্য। অন্যদিকে অপ্রাতিষ্ঠানিকসেবা কর্মসূচির মধ্যে প্রবেশন, আফটার কেয়ার সার্ভিস ও প্যারোল রয়েছে। প্রতিকারমূলক এই সব সর্মসূচিতে সমাজকর্ম পদ্ধতি প্রয়োগ যথেষ্ট কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। উল্লেখ্য যে, কিশোর-কিশোরী উনণয়ন কেনেদ্র ব্যক্তি সমাজকর্মী ও সাইকিয়াট্টিক সোশ্যাল ওয়ার্কার নামে পদ রয়েছে। তবে এক্ষেত্রে সমাজকর্মে ডিগ্রিধারীদের নিয়োগের সুযোগ বাধ্যতামূলক করতে হবে।

৪. চিকিৎসা ক্ষেত্রে: বাংলাদেশে স্বাস্থ্য ও চিকিৎসাক্ষেত্রে সমাজকর্মীর জ্ঞান প্রয়োগের অপার সম্ভাবনা রয়েছে। এদেশে ১৯৫৬ সালে সর্বপ্রথম ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চালুর মধ্য দিয়ে চিকিৎসা সমাজকর্মের মাত্রা শুরু হয় যা বর্তমানে হাসপাতাল সমাজসেবা কার্যক্রম নামে সমগ্র বাংলাদেশের মোট ৯০টি সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে পরিচালিত হচ্ছে। এক্ষেত্রে চিকিৎসা সমাজকর্মের জ্ঞান, কৌশল, দক্ষতা প্রয়োগের মাধ্যমে সাফল্য অর্জন সম্ভবপর। চিকিৎসা ক্ষেত্রে টীম ওয়ার্ক অ্যাপ্রোচের (team work approach) মাধ্যমে কাজ করা হয়ে থাকে যা বাংলাদেশের মতো তৃতীয় বিশ্বের উন্নয়নশীল রাষ্ট্রে কার্যকর ফল বয়ে আনতে সক্ষম।

৫. পরিবারকল্যাণ: পরিবার সমাজের আদিম প্রতিষ্ঠান। পরিবারেই শিশু জন্ম গ্রহণ করে। পরিবারে সঠিক দিকনির্দেশনা, সচেতনতা ও নেতৃত্বের অভাবে পরিবারের সদস্য ও সন্তান-সন্ততিরা অনেক সময় যথাযথ ভূমিকা পালনে ব্যর্থ হয়। ফলে পরিবারের সদস্যরা বহুমুখী সমস্যার সম্মুখীন হয়ে থাকে। বাংলাদেশের মতো দেশে পরিবার কল্যাণে গৃহীত কর্মসূচি যেমন- পারিবারিক সহিংসতা প্রতিরোধ, নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধ, পারিবারিক ও দাম্পত্যকলহ প্রতিরোধে সমাজকর্মের জ্ঞান বিশেষভাবে উপযোগী।

৬. শিশুকল্যাণ: শিশুকল্যাণের নিমিত্ত গৃহীত কর্মসূচির সফলতা আনয়নে সমাজকর্ম অনুশীলন করা যেতে পারে। পুষ্টি কার্যক্রম, মা ও শিশুর স্বাস্থ্য সুরক্ষা, শিশু যত্ন, মা ও শিশুর নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, শিশু সুরক্ষা, শিশু নির্যাতন রোধ, শিশু বঞ্চনা ও নিপীড়ন প্রতিরোধে সমাজকর্মীরা যথার্থ ভূমিকা রাখতে সক্ষম। বাংলাদেশে শিশু পরিবার, ছোটমনি নিবাস, দিবাকালীন শিশু যত্ন কেন্দ্র, দুঃস্থ শিশু প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কার্যক্রম, কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্র, সেফ হোম, প্রতিবন্ধী শিশুদের কল্যাণে পরিচালিত কার্যক্রমসহ অন্যান্য কার্যক্রমে সমাজকর্মের পদ্ধতি প্রয়োগ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

৭. নারীকল্যাণ: বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক হচ্ছে নারী। নারীরা বহুবিধ সমস্যায় জর্জরিত। নারীর অনগ্রসরতা, অসচেতনতা ও কুসংস্কার দূর করে সচেতন, দায়িত্বশীল, উপার্জনক্ষম করে নারী ক্ষমতায়ন তথা নারী উন্নয়নের ক্ষেত্রে সমাজকর্ম জ্ঞান অধিক ফলপ্রসূ ও কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। এছাড়া সেফ হোম, পল্লী মাতৃ কেন্দ্র, দুঃস্থ মহিলা প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্র, এসিড দগ্ধ মহিলা ও শারীরিক প্রতিবন্ধীর পুনর্বাসন কর্মসূচিসহ নারী কল্যাণমূলক কর্মসূচিতে সমাজকর্ম প্রয়োগ করা যেতে পারে।

সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর

১. আফগানিস্তানের নাগরিক গুলফাম বারাকজাই নারীদের মর্যাদা ও শিক্ষার অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করতেন। কাজ করতে গিয়ে তিনি তালেবানদের কারণে নানা প্রতিকূলতার শিকার হন। তারপরও তিনি নারী জাগরণের কাজ করে যাচ্ছিলেন। কিন্তু তালেবান জঙ্গিরা তাকে প্রাণনাশের হুমকি দিলে এক সময় বাধ্য হয়ে তিনি জাপানে চলে যান। বর্তমানে তিনি Tokyo University of Social Welfare এ সমাজকর্ম বিষয়ে গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করছেন।
ক. কোন দেশকে সমাজকর্মের সুতিকাগার বলা হয়?
খ. সমাজকর্ম শিক্ষায় মাঠকর্ম অনুশীলন কেন করা হয়? 
গ. গুলফাম বারাকজাই এর প্রচেষ্টার মধ্যে উপমহাদেশের কোন সমাজ সংস্কারকের প্রতিচ্ছবি ফুটে উঠেছে। ব্যাখ্যা করো। 
ঘ. গুলফাম বারাকজাই এর গবেষণাতে সমাজকর্মের প্রয়োগক্ষেত্রের আংশিক প্রকাশিত হয় ব্যাখ্যা করো।

💘 ১ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর 💘
ক. ইংল্যান্ডকে সমাজকর্মের সূতিকাগার বলা হয়।

খ. সমাজকর্মের ব্যবহারিক জ্ঞান অর্জনের জন্য সমাজকর্ম শিক্ষায় মাঠকর্ম অনুশীলন করা হয়।
মাঠকর্ম বলতে কোনো বিষয় বা ঘটনা সম্পর্কে সরজমিনে তথ্য সংগ্রহ করাকে বোঝায়। এর প্রধান উদ্দেশ্য হলো কাঙি্ক্ষত তথ্যাবলি সংগ্রহ ও সরবরাহ করা। এছাড়া সামাজিক উপাদান সম্পর্কিত তথ্যাবলি সংগ্রহ, সামাজিক সমস্যার কারণ উদ্ঘাটন, সামাজিক চলকের প্রকৃতি ব্যাখ্যাকরণ, বিস্তৃত তথ্যাবদি সরবরাহ করা, সংখ্যাবাচক বর্ণনা প্রদান, নমুনায়নের জন্য প্রতিনিধিত্বশীল নির্বাচন, এলাকাভিত্তিক জনগোষ্ঠীর বৈশিষ্ট্য প্রকাশ, চলকের কার্যকারণ সম্পর্ক আবিষ্কার, সংগৃহীত তথ্যের ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ ইত্যাদি উদ্দেশ্যে সমাজকর্মে মাঠকর্ম অনুশীলন করা হয়ে থাকে।

গ. গুলফাম বারাকজাই এর প্রচেষ্টায় উপমহাদেশের সমাজ সংস্কারক বেগম রোকেয়ার প্রতিচ্ছবি ফুটে উঠেছে। 
বেগম রোকেয়া ছিলেন নারী জাগরণের অগ্রদূত। তিনি মুসলিম নারীদের স্বাধীনতা, শিক্ষা এবং অধিকার আদায়ের জন্য সারাজীবন সংগ্রাম করেছেন। নারী শিক্ষা বিস্তারের জন্য তিনি ভাগলপুরে সাখাওয়াত মেমোরিয়াল গার্লস স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। এক্ষেত্রে তিনি স্থানীয়দের বাধার সম্মুখীন হন। পারিবারিক কারণে তিনি স্কুলটি কলকাতায় স্থানান্তর করেন। সেখানেও তিনি রক্ষণশীল মুসলমানদের বিরোধিতা ও বর্ণনার শিকার হন। সব বাধা উপেক্ষা করে তিনি অসীম ধৈর্য ও দৃঢ় মনোবলের সাথে নারী শিক্ষা বিস্তারে এগিয়ে যান। বেগম রোকেয়ার এই প্রচেষ্টার সাথে গুলফাম বারাকজাইয়ের মিল পাওয়া যায়।
গুলফাম বারাকলাই আফগানিস্তানের নারীদের মর্যাদা ও শিক্ষার অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করতেন। এ কাজ করতে গিয়ে তিনি তালেবানদের বাধার সম্মুখীন হন। তিনি থেমে যাননি, বরং নারী জাগরণে তার সংগ্রাম অব্যাহত রেখেছেন। গুলফাম বারাকজাই এর এই প্রচেষ্টা বেগম রোকেয়ার প্রচেষ্টার সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। তাই বলা যায়, উদ্দীপকের গুলফাম বারাকজাই-এর প্রচেষ্টায় বেগম রোকেয়ার চিত্র ফুটে উঠেছে।

ঘ. উদ্দীপকের গুলফাম বারাকজাই নারী জাগরণের জন্য গবেষণা করছেন, যা সমাজকর্মের প্রয়োগক্ষেত্রের আংশিক ৰ~পমাত্র সমাজকর্ম পেশা সমগ্র বিশ্বজুড়েই একটি স্বীকৃত সামাজিক বিজ্ঞান। সমাজের নানা সমস্যার সমাধান ও উন্নয়নে সমাজকর্মের বিভিন্ন পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়। সামাজিক নীতি ও পরিকল্পনা প্রণয়ন, পল্লি উনণয়ন, সামাজিক আইন প্রণয়ন, পারিবারিক সেবা,আগে মানসিক স্বাস্থ্য, প্রতিবন্ধী কল্যাণ, অপরাধ সংশোধন, নারী জাগরণ, শিক্ষা, নারী ও শিশু উন্নয়ন প্রভৃতি নানা ক্ষেত্রে সমাজকর্ম কৌশল ও পদ্ধতির কার্যকর ব্যবহার রয়েছে।
উদ্দীপকে আফগানিস্তানের নাগরিক গুলফাম বারাকজাই নারীদের মর্যাদা ও শিক্ষার অধিকার প্রতিষ্ঠায় গবেষণাকর্ম চালিয়েছেন। নারী উন্নয়ন, নারী জাগরণ, নারী শিক্ষার প্রসার ও বিকাশে সমাজকর্ম কার্যক্রম পরিচালনা করে। নারীদেরকে শিক্ষামুখী করতে বিদ্যালয় সমাজকর্মের প্রয়োগ কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। কিন্তু শুধু উদ্দীপকের বিষয়টির ক্ষেত্রে সমাজকর্মের জ্ঞান, কৌশল ও পদ্ধতি প্রয়োগ হয় না। সামাজিক বহুমুখী সমস্যার সমাধান ও সার্বিক উন্নয়নে সামাজিক নীতি ও পরিকল্পনা প্রণয়নে সমাজকর্মের জ্ঞান ও কার্যক্রম ব্যবহৃত হয়। পরিদ্র জনগোষ্ঠীর আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, নিরক্ষরতা অজ্ঞতা দূরীকরণ জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে সমাজকর্ম পেশা ব্যাপক ভূমিকা পালন করে। গ্রামীণ ও শহর উন্নয়ন সার্বিক সমস্যা সমাধানে সমাজকর্ম কাজ করে। 
উপরের আলোচনা ক্ষেত্রে বলা যায়, সমাজকর্মের প্রয়োগ ক্ষেত্র ব্যাপক ও বিস্তৃত।

২. উচ্চ মাধ্যমিকের শিক্ষার্থী জসিম সমাজকর্ম বিষয়ে পড়াশোনা করে জানতে পারে শিক্ষাহীনতা, স্বাস্থ্যহীনতা, শ্রেণিবৈষম্য, পারস্পরিক সম্পর্কহীনতা ও প্রবল বেকারত্ব থাকা সত্ত্বেও মানুষের ভ্রান্ত ধারণা, পেশাগত সংগঠনের অভাব, সচেতনতার অভাব ও প্রশাসনিক জটিলতার কারণে বাংলাদেশে সমাজকর্ম আজও পেশা হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করতে পারেনি। 
ক. আমেরিকায় 'দানশীলতা, সংশোধন ও মানবহিতৈষণা'র আন্তর্জাতিক সম্মেলন কত সালে অনুষ্ঠিত হয়? 
খ. বাংলাদেশে সমাজকর্ম পেশা অনুশীলনের পটভূমি আলোচনা কর।
গ. উদ্দীপকের আলোকে সমাজকর্ম পেশার প্রয়োগক্ষেত্রগুলো আলোচনা কর। 
ঘ. বাংলাদেশে সমাজকর্ম পেশা বিকাশের প্রতিবন্ধকতাসমূহ উদ্দীপকের আলোকে বিশ্লেষণ কর। 

💘 ২ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর 💘
ক. আমেরিকায় 'দানশীলতা, সংশোধন ও মানবহিতৈষণা'র আন্তর্জাতিক সম্মেলন ১৮৯৩ সালে অনুষ্ঠিত হয়।

খ. বাংলাদেশে জাতিসংঘের সহায়তায় সমাজকর্ম পেশার অনুশীলন শুরু হয়। 
১৯৫২ সালে জাতিসংঘের কার্যকরি সাহায্য কর্মসূচির আওতায় ড. জেন্স ডাম্পসন এর নেতৃত্বে ছয় সদস্য বিশিষ্ট্য একটি সমাজকর্ম বিশেষজ্ঞ দল বাংলাদেশে আসেন। বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থার ওপর সমস্যা জরিপ ও বিশ্লেষণ করে এদেশে পেশাগত সমাজকর্মের অনুশীলনে সুপারিশ করা হয়। পরবর্তী সময়ে ১৯৫৫ সালে ঢাকা প্রজেক্ট' নামে শহর সমাজসেবা কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে পেশাদার সমাজকর্মের ভিত্তি স্থপিত হয়।

গ. উদ্দীপকে নির্দেশিত শিক্ষাহীনতা, স্বাস্থ্যহীনতা, বৈষম্য, পারস্পরিক সম্পর্কহীনতা, বেকারত্ব প্রভৃতি সমস্যা সমাধানে সমাজকর্ম পেশা প্রয়োগ করা যায়।
দ্রুত শিল্পায়ন, ডিজিটালাইজেশন ও নগরায়ণের প্রভাবে যে আমূল পরিবর্তন ও সমস্যা তৈরি হয়েছে, তাতে সমাজকর্ম পেশার সম্ভাবনা ও সম্ভাব্য প্রয়োগক্ষেত্রগুলো ক্রমেই বেড়ে চলেছে। শিক্ষার উন্নয়নে বিদ্যালয় সমাজকর্মের প্রয়োগ করা যায়। পারিবারিক সমস্যা ও সহিংসতা প্রতিরোধ ও উন্নয়নে দিক নির্দেশনা ও সচেতনতা সৃষ্টি করতে সমাজকর্মের পদ্ধতি প্রয়োগ করা সম্ভব। ভগ্ন স্বাস্থ্য মা ও শিশুর স্বাস্থ্য পুষ্টি, নারী-পুরুষের মধ্যে সমতা প্রতিষ্ঠা, যুবকল্যাপ ও বেকারত্ব হ্রাসের ক্ষেত্রে সমাজকর্ম পেশা সফলতার সাথে কাজ করতে পারে।
উদ্দীপকে দেখা যায়, শিক্ষার্থী জসিম সমাজকর্ম পড়তে গিয়ে শিক্ষাহীনতা, স্বাস্থ্যহীনতা, সম্পর্কের সংকট, কর্মসংস্থানের অভাব প্রভৃতি সমস্যার চিত্র দেখতে পায়। উক্ত সমস্যাগুলো সমাধানে সমাজকর্ম পেশার প্রয়োগ করা যেতে পারে। শিক্ষার উন্নয়নে বাংলাদেশ ইতোমধ্যে ইউসেপ, ব্র্যাকসহ কিছু এনজিও বিদ্যালয়কে শিশু বান্ধব করার লক্ষ্যে সমাজকর্মের পদ্ধতি প্রয়োগ করছে। বাংলাদেশে নারী-পুরুষ ও ধনী দরিদ্রের ব্যাপক বৈষম্য লক্ষণীয়। স্ত্রীর সাথে স্বামীর সহিংসতা, স্বাস্থ্য ও পুষ্টি সচেতনতার প্রভাব, ব্যাপক বেকারত্বসহ সামাজিক বিভিন্ন সংকট প্রবল আকার ধারণ করছে। এসব ক্ষেত্রে উন্নয়নমূলক প্রতিষ্ঠান গড়ে় তুলে পেশাদার সমাজকর্মীর মাধ্যমে তাদের নিজস্ব পেশাগত জ্ঞান ও সক্ষতা কাজে লাগিয়ে সমস্যাগুলোর সমাধান করা যেতে পারে।

ঘ. উদ্দীপকে বাংলাদেশে সমাজকর্ম পেশার বিকাশে মানুষের ভ্রান্ত ধারণা, পেশাগত সংগঠন ও সচেতনতার অভাব ও প্রশাসনিক জটিলতাকে প্রতিবন্ধকতা হিসেবে নির্দেশ করা হয়েছে। 
বাংলাদেশে জাতিসংঘের সহযোগিতায় ষাটের দশকে পেশাদার সমাজকর্মের সূচনা হয়। কিন্তু পেশার সার্বিক বৈশিষ্ট্যগুলোর সবকয়টি বিদ্যমান থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশে সমাজকর্ম স্বতন্ত্র পেশার মর্যাদা লাভ করেনি। যে সকল সমস্যা প্রতিবন্ধকতা হিসেবে দাঁড়িয়েছে তাদের মধ্যে পেশার মান বজায় ও নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠানের পেশাগত সম্মিলিত সংগঠনের অভাব, জনগণের অসচেতনতা, প্রয়োগিক প্রতিষ্ঠানের সীমাবদ্ধতা অন্যতম।
উদ্দীপকে বাংলাদেশে সমাজকর্ম পেশা বিকাশের ক্ষেত্রে মানুষের ভুল ধারণা ও সচেতনতার অভাব, পেশাগত সংগঠনের অভাব, প্রশাসনিক জটিলতা প্রভৃতি প্রতিবন্ধকতার কথা উল্লেখ রয়েছে। বাংলাদেশে অজ্ঞ, নিরক্ষর ও অসচেতন জনগণের পেশাদার সমাজকর্ম সম্পর্কে জ্ঞানের অভাবে সমাজকর্ম পেশা বিকশিত হচ্ছে না। সমাজকর্ম পেশার এখন পর্যন্ত পেশাদার সমাজকর্মীদের কার্যকর কোনো সংগঠন গড়ে ওঠেনি। বাংলাদেশে সমাজকর্ম পেশার মান বজায় রাখার আক্রিভিটেশন ব্যবস্থা নেই। বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থার প্রেক্ষিতে সমাজকর্মের পেশাগত ব্যবহারিক মূল্যবোধ ও মানদন্ড কী হওয়া উচিত সে বিষয়েও কোনোরূপ সুনির্দিষ্ট ধারণা এখনো গড়ে ওঠেনি।
পরিশেষে বলা যায়, মৌল মানবিক চাহিদা পূরণের তীব্রতা ও ব্যাপকতাসহ আলোচিত সার্বিক কারণে বাংলাদেশে সমাজকর্ম পেশা স্বতন্ত্র পেশার মর্যাদা লাভ করেনি।

৩. আদিবের বয়স ১২ বছর। সমাজবিরোধী কিছু লোকের সংস্পর্শে এসে সে অপরাধপ্রবণ হয়ে পড়ে। সংশোধনের জন্য তাকে একটি সরকারি সমাজসেবা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি করা হয়। ঐ প্রতিষ্ঠানের কিছু সমস্যার কারণে আদিব অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে চিকিৎসার জন্য অন্য একটি প্রতিষ্ঠানে ভর্তি করা হয়। দুটি প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়হীনতার কারণে আদিবের বর্তমান অবস্থা বেশ শোচনীয় হয়ে পড়েছে।
ক. ঢাকা মেডিকেল কলেজে কত সালে হাসপাতাল সমাজসেবা কর্মসূচি চালু করা হয়? 
খ. শব্দদৈত্য বলতে কী বোঝায়?
গ. উদ্দীপকে উল্লেখিত সমাজকর্ম পেশার প্রয়োগক্ষেত্র চিহ্নিত করে ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উক্ত প্রয়োগক্ষেত্রে সমাজকর্ম পেশার সফল প্রয়োগে সমস্যা বিশ্লেষণ করো।

💘 ৩ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর 💘
ক. ১৯৫৮ সালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সমাজসেবা কর্মসূচি চালু করা হয়।

খ. স্যার উইলিয়াম বিভারিজ পঞ্চদৈত্য বলতে পাঁচটি সামাজিক প্রতিবন্ধকতাকে বুঝিয়েছেন। 
তার মতে, সমাজ থেকে এ পঞ্চদৈত্য অপসারণ করা গেলে সমাজে সুখ সমৃদ্ধি আনা সম্ভব। বিভারিজ রিপোর্ট হচ্ছে স্যার উইলিয়াম বিভারিজের নেতৃত্বে গঠিত কমিটি কর্তৃক সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি প্রণয়ন সংক্রান্ত এক প্রতিবেদন। বিভারিজ রিপোর্টে মানব সমাজের অগ্রগতি ও প্রতিবন্ধকতা হিসেবে পাঁচটি বিষয়ের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়। এগুলো হলো- অভাব, রোগ, অজ্ঞতা, অস্বাস্থ্যকর নোংরা পরিবেশ এবং অলসতা।

গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত সমাজকর্ম পেশার প্রয়োগক্ষেত্র হিসেবে সংশোধনমূলক কার্যক্রম এবং হাসপাতাল সমাজসেবা কার্যক্রমকে চিহ্নিত করা যায়।
উদ্দীপকে দেখা যায়, ১২ বছর বয়সী কিশোর আদিবের অপরাধপ্রবণতা সংশোধনের জন্য তাকে সরকারি সমাজসেবা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি করা হয়, যা কিশোর অপরাধ প্রতিরোধে সংশোধনমূলক কার্যক্রমকে নির্দেশ করে। মূলত শিল্পায়ন ও শহরায়নের প্রভাব অপরাধ ও কিশোর অপরাধ প্রবণতাকে ক্রমাগত বৃদ্ধি করছে। এই প্রবণতা দমনের ক্ষেত্রে শাস্তির পরিবর্তে সংশোধনের প্রতি অধিক গুরুত্ব আরোপ করা হচ্ছে। কিশোর অপরাধী ও অপরাধীদের সংশোধনের ক্ষেত্রে প্রবেশন, প্যারোল, আফটার কেয়ার সার্ভিস গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। 
উদ্দীপকে আরও দেখা যায়, সমাজসেবা প্রতিষ্ঠানের কিছু সমস্যার কারণে আদিব অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে চিকিৎসার জন্য অন্য একটি প্রতিষ্ঠানে ভর্তি করা হয়। এ ক্ষেত্রে যে প্রতিষ্ঠানটি সমাজকর্মের প্রয়োগ ক্ষেত্র হিসেবে চিহ্নিত হয় তা হলো হাসপাতাল সমাজসেবা কার্যক্রম। এ কার্যক্রমের ক্ষেত্রে রোগীর রোগ নিরাময়ের সাথে সাথে তার সামাজিক, অর্থনৈতিক ও মনস্তাত্ত্বিক অবস্থা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত। একজন সমাজকর্মী এ সমস্ত প্রাসঙ্গিক বিষয়ে তথ্য অনুসন্ধান করে চিকিৎসককে রোগ নির্ণয় ও উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণে সাহায্য করতে পারে।

ঘ. উদ্দীপকে ইঙ্গিতকৃত প্রয়োগক্ষেত্রে অর্থাৎ সংশোধনমূলক কাজ এবং হাসপাতাল সমাজসেবা কার্যক্রমে সমাজকর্ম পেশার সফল প্রয়োগে পেশাগত মূল্যবোধ ও মানদন্ড, রাষ্ট্রীয় নীতি এবং পেশাগত সংগঠনের অভাব রয়েছে।
উদ্দীপকের আদিবের সমস্যা মোকাবিলায় সংশোধনমূলক কার্যক্রম ও হাসপাতাল সমাজসেবার উল্লেখ আছে। কিন্তু এ ক্ষেত্রগুলোতে এখনো সমাজকর্ম পেশার সফল প্রয়োগ হচ্ছে না। মূলত, সমাজকর্ম পেশার বিকাশের জন্য সংশ্লিষ্ট বই, সাময়িকী, পত্রপত্রিকা আমদানি করতে হয় বিদেশ থেকে। যার ফলে এখনো মানুষের মধ্যে এ পেশা সম্পর্কিত চিরাচরিত ধারণা বিদ্যমান, যা সমাজকর্মের সফল প্রয়োগের অন্তরায়। এছাড়া এদেশে পেশাদার সমাজকর্মের কোনো কার্যকর পেশাগত সংগঠন নেই। উপরন্তু সমাজসেবা বিভাগে সমাজসেবা কর্মকর্তা পদটি ১৯৭৭ সাল পর্যন্ত সমাজকর্মের স্নাতকদের জন্য সংরক্ষিত থাকলেও পরে উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। যার কারণে হাসপাতালে সমাজসেবা ও সংশোধনমূলক কার্যক্রমগুলো অপেশাদার লোকদের দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে। ফলশ্রুতিতে প্রতিষ্ঠানসমূহের মধ্যে সমন্বয়হীনতা দেখা দেয়, যার ইঙ্গিত উদ্দীপকেও পাওয়া যায়।
উদ্দীপকে উল্লিখিত প্রয়োগ ক্ষেত্রগুলোর আরেকটি বড় সমস্যা হলো প্রচারণা সংকট। আমাদের দেশে প্রচলিত কিশোর অপরাধ, পারিবারিক সমস্যাজনিত মানসিক বিপর্যস্ততা কিংবা হাসপাতাল সমাজসেবার মতো কার্যক্রমগুলোর তেমন কোনো প্রচারণা নেই। ফলে জনগণ তাদের সমস্যা মোকাবিলায় এ ক্ষেত্রগুলোর সাহায্য নেয় না, যা সমাজকর্মের বিকাশের পথে বড় বাধা।
উপরের আলোচনা থেকে বলা যায়, উদ্দীপকে উল্লিখিত প্রয়োগক্ষেত্রগুলোতে সমাজকর্ম পেশার সফল প্রয়োগে বেশকিছু সমস্যা বিদ্যমান। এ সমস্যাগুলোর সমাধান না করা হলে ভবিষ্যতেও সমাজকর্মের মূল দর্শন কাগজপত্রেই সীমাবদ্ধ থেকে যাবে।

৪. সুমন একটি প্রতিষ্ঠানে সমাজকর্মী হিসেবে চাকরি করে। সমাজকর্মে স্নাতক পাস তার বন্ধু হাসান তাকে সমাজকর্মী বলতে নারাজ। কিন্তু সমাজে সমাজকর্মী বলে তাদেরকে, যারা বেশি বেশি দান, সদকা ইত্যাদি করে। সমাজকর্ম যে পেশা, তা সমাজের অধিকাংশই জানে না। সুমন সমাজকর্মী হিসেবে চাকরি করলেও সে লেখাপড়া করেছে অর্থনীতি নিয়ে।
ক. ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে সমাজকল্যাপ কলেজ ও গবেষণা কেন্দ্র করে চালু করা হয়? 
খ. বাংলাদেশে সমাজকর্ম পেশার বিকাশে 'সংগঠনের অভাব' বুঝিয়ে লেখ। 
গ. উদ্দীপকে সুমনের কর্মে সমাজকর্মের সীমাবদ্ধতার প্রতিফলন কতটুকু? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকে চিহ্নিত সমস্যা থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশে এ বিষয়ে সম্ভাবনার ক্ষেত্রগুলো বিশ্লেষণ করে তোমার মতামত দাও। 

💘 ৪ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর 💘
ক. ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে সমাজকল্যাণ কলেজ ও গবেষণা কেন্দ্র চালু করা হয় ১৯৬৪ সালে।

খ. বাংলাদেশে সমাজকর্ম পেশার বিকাশে একটি অন্যতম প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে সংগঠনের অভাব। 
যেকোনো পেশার মানোন্নয়ন, স্বার্থ সংরক্ষণ ও সম্প্রসারণে পেশাগত সংগঠন অপরিহার্য। এজন্য আমাদের দেশে ১৯৭৬ সালে জাতীয় সমাজকর্মী সমিতি এবং ১৯৮৬ সালে বাংলাদেশ সমাজকর্ম শিক্ষক সমিতি প্রভৃতি সংগঠন গড়ে ওঠে। কিন্তু বর্তমানে এদের কোনো কার্যকারিতা নেই। ফলে সমাজকর্মকে পেশার মর্যাদায় উন্নীত করার জন্য সঠিক মূল্যায়ন, বাস্তববাদী আন্দোলন প্রভৃতির অভাব লক্ষ করা যায়। তাই সমাজকর্ম পেশার বিকাশে সংগঠনের অভাব একটি বড় প্রতিবন্ধকতা।

গ. উদ্দীপকে সুমনের কর্মে সমাজকর্মের বেশকিছু সীমাবদ্ধতার প্রতিফলন ঘটেছে। 
সমাজকর্ম পেশার একটি মারাত্মক প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে এ বিষয়টি সম্পর্কে মানুষের সনাতন দৃষ্টিভঙ্গি ও বিশ্বাস। এদেশের মানুষ দান, ব্রাণ, সাহায্য প্রভৃতি কাজকে সমাজকর্ম হিসেবে ভেবে থাকে। বাংলাদেশের সামাজিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক, পেশাগত মূল্যবোধ ও মানদন্ড সম্পর্কে সুস্পষ্ট ও সুনির্দিষ্ট কোনো ধারণা এখনও গড়ে ওঠেনি। এদেশের শিক্ষার্থীরা বিদেশের সংস্কৃতিভিত্তিক বই-পত্রপত্রিকা প্রভৃতি নির্ভর শিক্ষাকোর্স সম্পন্ন করে যা আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে অসামঞ্জস্যপূর্ণ। ফলে সমাজকর্মীরা শিক্ষা শেষে তা প্রয়োগে নানা সমস্যার সম্মুখীন হয়। সমাজকর্মের অন্যতম একটি সীমাবদ্ধতা হচ্ছে অনেক সমাজকল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠানে সমাজকর্মের জ্ঞান ও দক্ষতাসম্পন্ন প্রার্থীকে বাদ দিয়ে অন্যান্য বিষয়ে ডিগ্রিধারীদের নিযুক্ত করা হয়। ফলে তারা দক্ষতা অনুযায়ী কাজ করতে পারে না। অনেক ক্ষেত্রে দায়িত্ব পালনে তারা উদাসীন থাকে।
উদ্দীপকে দেখা যায়, সুমন অর্থনীতি বিষয়ে উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করে সমাজকর্মী হিসেবে একটি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত রয়েছে। অর্থাৎ সমাজকর্মে তার তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক কোনো জ্ঞান না থাকার পরেও সে তৎসংশ্লিষ্ট কর্মে নিয়োজিত, যা সমাজকর্মের সীমাবদ্ধতার দিককে প্রতিফলিত করছে।

ঘ. উদ্দীপকে ইঙ্গিতকৃত বাংলাদেশে সমাজকর্মের প্রতি মানুষের নেতিবাচক ধারণা এবং পেশাগত সংগঠনের অভাব থাকলেও এদেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থার প্রেক্ষাপটে এ পেশার প্রয়োগক্ষেত্র সম্ভাবনাময়। বাংলাদেশে শিশুকল্যাণ, নারীকল্যাণ, অপরাধ নিয়ন্ত্রণ, জনসংখ্যা সমস্যা, শিক্ষা উন্নয়নে পেশাদার সমাজকর্মের যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে। বিদ্যালয় থেকে শিক্ষার্থীর ঝরে পড়া ঠেকাতে শিক্ষার উপযুক্ত পরিবেশ বজায় রাখা, ছাত্র ও অভিভাবকদের মধ্যে সুসম্পর্ক স্থাপনে সমাজকর্ম কাজ করতে পারে। শিশুদের কল্যাণে শিশু সনদ, বেবি হোম, শিশু পরিবার ও এতিমখানায় একজন সমাজকর্মী তার পেশাদারি জ্ঞান প্রয়োগ করে উক্ত ক্ষেত্রে উন্নয়নে অবদান রাখতে পারে।
অপরাধ নিয়ন্ত্রণে বর্তমানে বিভিন্ন সংগঠন যেমন- কিশোর আদালত, প্যারোল, প্রবেশন প্রভৃতি পরিচালনা করা হচ্ছে, যা পেশাদার সমাজকর্মের সম্ভাবনার ক্ষেত্র হিসেবে বিবেচিত। এছাড়া পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে উন্নয়নের মূল স্রোতধারায় নিয়ে আসার ক্ষেত্রে সমাজকর্মীরা ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারে। পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর মধ্যে আত্মসচেতনাবোধ জাগ্রতকরণ, আত্মকর্মসংস্থান ও ক্ষমতায়ন প্রভৃতি বিষয়ে পরামর্শ ও সহায়তা করতে সমাজকর্মীরা ভূমিকা রাখতে পারে। উদ্দীপকে সমাজকর্মের প্রতি মানুষের অজ্ঞতা, অসচেতনতা এবং সমাজকর্মী হিসেবে সমাজকর্ম ব্যতীত অন্য বিষয়ের ডিগ্রিধারী নিযুক্ত হওয়ায় প্রভৃতিসমস্যা লক্ষ করা যায়। কিন্তু সমাজকর্মের সম্ভাবনার ক্ষেত্রসমূহ বিবেচনা করে এসব সমস্যা সমাধানে বাস্তবসম্মত উদ্যোগ গ্রহণ জরুরি।
উপরের আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়, একটি উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশ বহুমুখী সমস্যায় জড়িত। আর সমাজকর্ম শিক্ষা ছাড়া এসব সমস্যার সমাধান ও সমাজ উন্নয়ন সম্ভব নয়। তাই নিঃসন্দেহে বলা যায়, বাংলাদেশে সমাজকর্ম শিক্ষার ক্ষেত্র যথেষ্ট সম্ভাবনাময়।

৫. শাহীন এমন একটি দেশে বসবাস করছে যেখানে সমাজকর্ম পেশা হিসেবে স্বীকৃত। উক্ত দেশটিতে সমাজকর্ম শিক্ষা চালু হয় ইংল্যান্ডের সমাজসেবা কাঠামোর উপর ভিত্তি করে। উক্ত দেশের সমাজকর্ম শিক্ষার ইতিহাস প্রায় শত বছরের।
ক. কোন দেশকে সমাজকর্মের সূতিকাগার বলা হয়?
খ. উন্নত দেশ বলতে কী বোঝায়? 
গ. উদ্দীপকে কোন দেশের সমাজকর্ম শিক্ষাকে ইঙ্গিত করা হয়েছে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উক্ত দেশের সমাজকর্ম শিক্ষার বর্তমান অবস্থা-বিশ্লেষণ করো। 

💘 ৫ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর 💘
ক. ইংল্যান্ডকে সমাজকর্মের সুতিকাগার বলা হয়।

খ. যেসব দেশ প্রাকৃতিক সম্পদের সর্বাধিক ব্যবহারের মাধ্যমে প্রকৃত মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি ও জীবনযাত্রার সর্বোচ্চ মান নিশ্চিত করতে সক্ষম হয়েছে সেসব দেশই উন্নত দেশ হিসেবে পরিচিত। 
উন্নত দেশগুলোতে সাধারণত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অনেক বেশি হয় এবং এসব দেশের মানুষ উন্নত জীবন-যাপনে অভ্যস্ত। বিশ্বের বিভিন্ন উন্নত দেশের মধ্যে রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জাপান, চীন প্রভৃতি।

গ. উদ্দীপকে আমেরিকার সমাজকর্ম শিক্ষাকে ইঙ্গিত করা হয়েছে। 
পেশাদার সমাজকর্মের বিকাশে আমেরিকার নাম উজ্জ্বল। ইংল্যান্ডের হাত ধরে আমিরিকাতে সমাজকর্ম পেশার উৎপত্তি হলেও সমাজকর্মের পেশাগত শিল্প বিকাশে আমেরিকার ভূমিকা সবচেয়ে বেশি। মূলত আধুনিক সমাজকর্মের জ্ঞান ও শিক্ষা আমেরিকারই অবদান। এদেশে স্বেচ্ছাসেবী পর্যায়ে ব্যাপকভাবে পরিচালিত সেবা কর্মসূচি এবং সমাজকর্ম শিক্ষার ক্ষেত্রে প্রাতিষ্ঠানিক ও ব্যক্তি উদ্যোগে বিশেষভাবে লক্ষণীয়।
আমেরিকায় সমাজকর্ম শিক্ষার প্রবর্তনে এনা এল ভয়েস অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। তিনি ১৮৯৩ সালে শিকাগো শহরে অনুষ্ঠিত International Congress of Charities. Correction and Philanthorphy' সম্মেলনে সমাজসেবা উন্নত করার জন্য পেশাগত প্রশিক্ষণ দানের প্রস্তাব উত্থাপন করেন। আমেরিকার একটি বিখ্যাত সমাজকর্ম শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হচ্ছে ফিলাডেলফিয়া বিশ্ববিদ্যালয়। আমেরিকার সমাজকর্ম শিক্ষার ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, উক্ত দেশের সমাজকর্ম শিক্ষার ইতিহাস প্রায় শত বছরের পুরনো। আমেরিকার সমাজকর্ম শিক্ষা সম্পর্কিত উল্লিখিত বিষয়সমূহের সাথে শাহীনের বসবাসকৃত দেশের সমাজকর্ম শিক্ষার মিল রয়েছে। 
তাই বলা যায়, উদ্দীপকে আমেরিকার সমাজকর্ম শিক্ষার প্রতিফলন রয়েছে।

ঘ. উদ্দীপকে নির্দেশিত আমেরিকা পেশাদার সমাজকর্ম ও শিক্ষার বিকাশে এক উজ্জ্বল নাম। 
আমেরিকার সমাজকর্ম শিক্ষার ইতিহাস প্রায় ১০০ বছরের। মূলত ইংল্যান্ডের সমাজসেবা বা কাঠামোর উপর ভিত্তি করে এদেশে সমাজকর্ম শিক্ষা সূচিত হয়। সমাজকর্ম শিক্ষার জন্য এদেশে বহু প্রশিক্ষণ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। সমাজকর্ম আমেরিকায় একটি জনপ্রিয় পেশা হিসেবে স্বীকৃতি।
উদ্দীপকে বিভিন্ন নির্দেশনা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বা আমেরিকার সমাজকর্মকে নির্দেশ করছে। আমেরিকায় পেশাগত সমাজকর্ম চালু হয় ১৯০৪ সালে। এই সময় থেকে ১৫ বছরের মধ্যে ১৫টি সমাজকর্ম শিক্ষাদান ভিত্তিক স্কুল প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৩০ থেকে ১৯৪০ সালের মধ্যে সরকারি পর্যায়ে সমাজকর্মভিত্তিক উচ্চ শিক্ষা চালুর সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। দক্ষ সমাজকর্মী তৈরি করার জন্য এ প্রতিষ্ঠানগুলো ৪ বছর ব্যাপী স্নাতক শিক্ষা কার্যক্রম এবং এর সাথে এক বছরের স্নাতক কোর্স চালু করে। বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় ১০০০ বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর এবং পিএইচডি পর্যায়ে এ বিষয় পাঠদান ও ডিগ্রি প্রদান করা হচ্ছে। এ ছাড়া সমাজকর্ম শিক্ষাকে অধিকতর কার্যপোযোগী ও মানসম্মত করার জন্য বিভিন্ন সংগঠনও কাজ করে। CSWE আমেরিকার সমাজকর্ম শিক্ষার প্রথম পর্যায়ের সংগঠন।
উপরের আলোচনা বিশ্লেষণপূর্বক বলা যায়, সমাজকর্ম শিক্ষার ক্ষেত্রে আমেরিকা এক উজ্জ্বল উদাহরণ, যা বিশ্বে সমাজকর্ম শিক্ষা ও পেশাকে বিশেষ অবস্থানে নিয়ে গিয়েছে।

৬. পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে সমাজকর্ম একটি পেশা হলেও বাংলাদেশে এটি আজও পেশার স্বীকৃতি পায়নি। আব্দুল আলিম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজকর্ম বিষয়ে অনার্স ও মাস্টার্স পাস করে একটি বেসরকারি সেবামূলক প্রতিষ্ঠানে কাজ করতে গিয়ে সমাজকর্ম বাংলাদেশে পেশার স্বীকৃতি না পাওয়ার কারণগুলো খুঁজে পেলেন।
ক. সামাজিক প্রশাসন কী?
খ. দল সমাজকর্মের উপাদানগুলো কী কী?
গ. আব্দুল আলিম সাহেবের পেশা স্বীকৃতি না পাওয়ার কী কী কারণ থাকতে পারে?
ঘ. আব্দুল আলিম সাহেবের পেশার সমস্যা সমাধানের কী কী উপায় থাকতে পারে বলে তুমি মনে কর? তোমার উত্তরের পক্ষে যুক্তি দেখাও।

💘 ৬ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর 💘
ক. সামাজিক প্রশাসন সমাজকর্মের একটি কৌশল ও প্রক্রিয়া যা সামাজিক নীতিকে সামাজিক সেবায় পরিণত করে।

খ. দল সমাজকর্মের উপাদানগুলো হলো- সামাজিক দল, দল সমাজকর্ম প্রতিষ্ঠান, দল সমাজকর্মী এবং দল সমাজকর্ম প্রক্রিয়া। দল সমাজকর্ম প্রক্রিয়ার অপরিহার্য উপাদান হচ্ছে সামাজিক দল ছাড়া দল সমাজকর্ম অনুশীলন করা যায় না। যেসব প্রতিষ্ঠান থেকে দল সমাজকর্মে সেবা প্রদান করা হয় সেগুলোকে দল সমাজকর্ম প্রতিষ্ঠান বলা হয়। সমাজকর্মের জ্ঞান ও দক্ষতা অনুশীলনের মাধ্যমে দলকে সাহায্য করাই দল সমাজকর্মীর মূল কাজ। দল সমাজকর্ম অনুশীলনে গৃহীত সুশৃঙ্খল ধারাবাহিক কার্যক্রমই হলো দল সমাজকর্ম প্রক্রিয়া।

গ. আব্দুল আলিম সাহেবের সমাজকর্ম পেশাটি স্বীকৃতি না পাওয়ার পেছনে বেশকিছু কারণ রয়েছে।
কোনো পেশার বিকাশে পেশাগত সংগঠনের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশে সমাজকর্ম পেশার জ্ঞানার্জনের জন্য পেশাগত প্রতিষ্ঠান আছে কিন্তু কার্যকর কোনো সংগঠন নেই। এতে সমাজে মানুষ সমাজকর্মীদের মূল্যায়ন করার সুযোগ পাচ্ছে না। সমাজকর্ম পেশার বিকাশে আরেকটি অন্যতম প্রতিবন্ধকতা হলো এ পেশা সম্পর্কে রাষ্ট্রীয় নীতিমালার অভাব। প্রশাসনে অব্যবস্থাপনা ও সমাজকর্ম প্রশাসন সম্পর্কে প্রশাসনিক ব্যক্তিদের অস্বচ্ছ ধারণা পেশাদর সমাজকর্মের স্বীকৃতি অর্জনে বিপত্তি সৃষ্টি করছে। সমাজকর্ম সম্পর্কে জনগণ ও সরকারের অজ্ঞতা এবং ভ্রান্ত ধারণা সমাজকর্ম পেশার সুষ্ঠু বিকাশ না হওয়ার আরেকটি কারণ।
সমাজকর্ম শিক্ষা কার্যক্রমের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব বাংলাদেশে সমাজকর্ম পেশার ক্ষেত্রে বিরাজমান সমস্যাগুলোর মধ্যে অন্যতম। বাংলাদেশে বিভিন্ন সময়ে নানা পরিকল্পনা গৃহীত হলেও সমাজকল্যাণমূলক খাতে বরাদ্দ কম থাকে। এছাড়া সরকারি প্রশাসনের পাশাপাশি বেসরকারিভাবেও তেমন কোনো উদ্যোগী প্রতিষ্ঠান গড়ে় ওঠেনি। এছাড়া সরকারি প্রশাসনের সাথে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এবং এগুলোর কর্মসূচির সমন্বয়হীনতাও সমাজকর্ম পেশার বিকাশে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। তাই বলা যায়, উল্লিখিত কারণগুলোই আব্দুল আলিমের সমাজকর্ম পেশা স্বীকৃতি না পাওয়ার জন্য দায়ী।

ঘ. আব্দুল আলিম সাহেবের সমাজকর্ম পেশার সমস্যা সমাধানের জন্য কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে বলে আমি মনে করি।
পেশাদার সমাজকর্মের বিকাশে পেশাগত সংগঠনের গুরুত্ব অপরিসীম। কিন্তু আমাদের দেশে পেশাদার সমাজকর্মের কোনো কার্যকরী পেশাগত সংগঠন গড়ে ওঠেনি। তাই সমাজকর্ম পেশার বিকাশে পেশাগত সংগঠন গড়ে তুলতে হবে। সমাজকর্ম পেশার বিকাশে অন্যতম প্রতিবন্ধকতা হলো সমাজকর্মের প্রতি মানুষের সনাতন দৃষ্টিভঙ্গি ও বিশ্বাস। মানুষের এই দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন ঘটাতে হবে। জনগণকে সমাজকর্ম সম্পর্কে সঠিক ধারণা দিতে হবে। বাংলাদেশে পেশাদার সমাজকর্মের বিকাশের ক্ষেত্রে বিশেষ প্রতিবন্ধকতা হলো সমাজকর্ম শিক্ষার ক্ষেত্রে দেশীয় উপকরণের অভাব। এ সমস্যা মোকাবিলায় সমাজকর্ম বিষয়ে দেশীয় শিক্ষা উপকরণের ব্যবস্থা করতে হবে। বাংলাদেশে সমাজকর্মের পেশাগত স্বীকৃতি এবং সমাজকর্ম শিক্ষাকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করতে হবে। বাংলাদেশে জাতীয় পর্যায়ে সমাজকর্মের কোনো পেশাগত মানদন্ড ও মূল্যবোধ নেই। এ কারণে পেশাগত সংগঠন প্রতিষ্ঠা করে সমাজকর্মের মানদন্ড ও মূল্যবোধ নির্ধারণ করতে হবে।
সমাজকর্ম পেশার স্বীকৃতির জন্য সরকারকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। সমাজকল্যাণ খাতে সরকারের বরাদ্দের পরিমাণ বাড়াতে হবে। সমাজকল্যাণমূলক কার্যক্রম পরিচালনায় সরকারি প্রশাসনের সাথে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রমসমূহে সমন্বয় আনতে হবে। প্রচলিত প্রশাসনিক কাঠামোর জটিলতা এবং নানা আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক সমস্যা আমাদের দেশে সমাজকর্ম পেশার বিকাশকে বাধাগ্রস্ত করেছে। এ কারণে সমাজকর্ম পেশার বিকাশের জন্য প্রশাসনিক কাঠামোর জটিলতা ও রাজনৈতিক সমস্যা দূর করতে হবে।
সার্বিক আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায়, উপরে উল্লিখিত পদক্ষেপসমূহের যথাযথ বাস্তবায়নই সমাজকর্ম পেশার স্বীকৃতি অর্জনে সহায়ক ভূমিকা রাখবে।

HSC সমাজকর্ম ১ম পত্র (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর অধ্যায় ৮ pdf download

৭. সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সুবর্ণা তার একটি গবেষণা প্রকল্পে সমাজকর্ম সম্পর্কে মানুষের সাধারণ ধারণা সম্পর্কে জরিপ পরিচালনা করছে। জরিপ থেকে সে দেখতে পায়। বেশির ভাগ মানুষ সমাজকর্মকে সরকারি অনুদান, বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় ত্রাণ বিতরণ করা এবং সাময়িক সেবা হিসেবে মনে করে। এছাড়া সে আরও লক্ষ্য করেছে যে সমাজসেবামূলক কর্মকান্ডে সরকারের তেমন বরাদ্দ নেই, সমাজকর্মের পেশাগত অনুশীলনও আমাদের দেশে হয় না।
ক. বাংলাদেশে কত সালে পেশাদার সমাজকর্ম শিক্ষার যাত্রা শুরু হয়?
খ. বাংলাদেশে সমাজকর্ম পেশার সম্ভাব্য প্রয়োগক্ষেত্রগুলো উল্লেখ কর।
গ. বাংলাদেশে সমাজকর্ম পেশার বিকাশে কোন কোন সমস্যাগুলোর প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। আলোচনা কর।
ঘ. তুমি কি মনে কর উদ্দীপকে ইঙ্গিতকৃত সমস্যাগুলো বাংলাদেশে সমাজকর্ম পেশার বিকাশে সমস্যা সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ ধারণা প্রদান করে? তোমার উত্তরের সপক্ষে যুক্তি দাও।

💘 ৭ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর 💘
ক. বাংলাদেশে পেশাদার সমাজকর্ম শিক্ষার যাত্রা শুরু হয় ১৯৫৩ সালে।

খ. বাংলাদেশের মতো সমস্যাগ্রস্ত দেশে সমাজকর্ম পেশার বহুল প্রয়োগক্ষেত্র রয়েছে।
বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে সমাজকর্মের অনুশীলন অপরিহার্য। এদেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর আত্ম-কর্মসংস্থান ও ক্ষমতায়ন, অবহেলিত নারীর অধিকার, মর্যাদা প্রতিষ্ঠা ও ক্ষমতায়ন, সামাজিক ন্যায়-বিচার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে মানবাধিকার নিশ্চিত করা, শিক্ষা, অপরাধ, কিশোর অপরাধ ও মাদকাসক্তের প্রতিকার, জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ প্রভৃতি ক্ষেত্রে সমাজকর্মের জ্ঞান ও দক্ষতা প্রয়োগ করা যায়।

গ. উদ্দীপকে বাংলাদেশে সমাজকর্ম পেশার বিকাশে মানুষের ধারণা ও সচেতনতার অভাব, সরকারি বরাদ্দের সীমাবদ্ধতা ও পেশাগত অনুশীলনমূলক সমস্যাগুলোকে দায়ী করা হয়েছে।
বাংলাদেশে জাতিসংঘের সহায়তায় ষাটের দশকে পেশাদার সমাজকর্মের সূচনা হলেও আজও স্বতন্ত্র পেশার মর্যাদা লাভ করতে পারেনি। এক্ষেত্রে বিভিন্ন সমস্যা বিদ্যমান। পেশার মান বজায়ের ক্ষেত্রে এ্যাক্রিডিটেশন ব্যবস্থার হীনতা, পেশাগত সংগঠনের অভাব, মূল্যবোধের স্পষ্ট ধারণার অভাব, মানুষের সচেতনতা ও নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি সমাজকর্ম পেশা বিকাশের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে।
উদ্দীপকের শিক্ষার্থী সুবর্ণা তার গবেষণায় সম্বাকর্ম সম্পর্কে মানুষের ভুল ধারণা সরকারি অনুদান ও বরাদ্দের অভাব, পেশাগত সংগঠনের অভাব লক্ষ করে। বাংলাদেশের অজ্ঞ, নিরক্ষর ও অসচেতন জনগণের পেশাদার সমাজকর্ম সম্পর্কে জ্ঞানের অভাব রয়েছে। যা সমাজকর্ম যে এক ধরনের মহৎ ও নিয়মিত পেশা ও ধারণাকে প্রতিষ্ঠিত করতে দেয়নি। বাংলাদেশ সরকার সমাজকর্ম পেশা বিকাশের ক্ষেত্রে বড় রকম পরিকল্পনা ও অনুদান এখন পর্যন্ত বরাদ্দ দেয়নি। এ পেশার এখন পর্যন্ত পেশাদার সমাজকর্মীদের কার্যকরি কোনো পেশাগত সংগঠন গড়ে় উঠেনি। তাছাড়া, পেশাদার সমাজকর্ম প্রয়োগ করার মত প্রতিষ্ঠানের সীমাবদ্ধতা বিদ্যমান। বাংলাদেশে সমাজকর্ম পেশার বিকাশে উপরের সমস্যাগুলো বড় ধরনের বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

ঘ. হ্যাঁ, উদ্দীপকে ইঙ্গিতকৃত দৃষ্টিভঙ্গিগত সমস্যা সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার অভাব, পেশাগত অনুশীলনের অভাব সমস্যাগুলো সমাধান করলে সমাজকর্ম পেশা অনেকাংশে বিকাশ লাভ করবে।
বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল দেশ। অবকাঠামোগত ও প্রতিষ্ঠানিক উন্নয়ন একযোগে শুরু হয়েছে। এ অবস্থায় সমাজকর্ম বিষয়ের উপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন। বাংলাদেশের মানুষের অজ্ঞতা, নিরক্ষরতা ও অসচেতনতা শিক্ষার মাধ্যমে দূর করে সমাজকর্ম পেশার প্রতি ইতিবাচক ও বলিষ্ঠ দৃষ্টিভঙ্গি প্রতিষ্ঠিত করা প্রয়োজন। এছাড়া পেশাদার সংগঠন সৃষ্টি, প্রতিষ্ঠানের সীমাবদ্ধতা দূরীকরণ, মূল্যবোধ ও মানদন্ড সম্পর্কে শিক্ষা ও জ্ঞান লাভ, সরকারি বরাদ্দ বৃদ্ধি, শক্তিশালী জার্নাল প্রকাশ প্রভৃতি সমাজকর্ম পেশার বিকাশে বিশেষ ভূমিকা পালন করবে।
উদ্দীপকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সুবর্ণা মানুষের দৃষ্টিভঙ্গিগত সমস্যা, সরকারি বরাদ্দের অভাব, পেশাগত অনুশীলনের স্বল্পতা সমস্যাগুলোকে সমাজকর্ম পেশা বিকাশের পথে বাধা বলে আবিষ্কার করে। বাংলাদেশে সমাজকর্ম পেশার পেশাগত সংগঠন এখন পর্যন্ত গড়ে উঠেনি। এ ধরনের সংগঠন সমাজকর্ম পেশার বিকাশকে বিশেষভাবে ত্বরান্বিত করবে। সরকারি অনুদান, বরাদ্দ তথা যথাযথ পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এই ধারণাটি জনকল্যাণে আরও কার্যকরভাবে প্রয়োগ করা যাবে। যা সমাজকর্মের পেশাকে এক নতুন মাত্রায় উন্নীত করতে পারে। উপরের আলোচনা থেকে বলা যায়, বাংলাদেশে সমাজকল্যাণ পেশার বিকাশে আলোচিত সমস্যাগুলোর যথাযথ সমাধান সমাজকর্ম পেশার বিকাশ ও উন্নয়নে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।

৮. ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর থেকে 'ক' নামক দেশে অনেক আর্থ-সামাজিক সমস্যার উদ্ভব হয়। সদ্য স্বাধীনতাপ্রাপ্ত উত্ত দেশের সরকারের পক্ষে ঐ পরিস্থিতি সামাল দেয়া প্রায় অসম্ভব ছিলো। তাই বাধ্য হয়ে সংশ্লিষ্ট দেশের সরকার আন্তর্জাতিক সংস্থার কাছে পরিস্থিতি সামাল দেবার জন্য সাহায্যের হাত বাড়ায়। সংস্থাটির আবেদনে সাড়া দিয়ে প্রথমে পরীক্ষামূলক এবং পরবর্তীতে স্থায়ী সমাজসেবা কর্মসূচি চালু করে। একই সাথে সমস্যা সমাধানের জন্য দক্ষ পেশাদার সমাজকর্মীর প্রয়োজন অনুভূত হয়। কেননা শুধুমাত্র দক্ষ ও স্বেচ্ছাসেবী পেশাদার সমাজকর্মীদের থেকে এসব সমস্যার বিজ্ঞানসম্মত ও দীর্ঘমেয়াদী সমাধান আশা করা সম্ভব।
ক. কত সালে ঢাকা প্রজেক্ট শুরু হয়?
খ. সমষ্টি সংগঠন ও উন্নয়ন বলতে কী বোঝায়?
গ. উদ্দীপকে কোন দেশের কথা বলা হয়েছে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. "উক্ত দেশে পেশাদার সমাজকর্ম শিক্ষার সূচনা হয়" উদ্দীপকের আলোকে বিশ্লেষণ কর।

💘 ৮ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর 💘
ক. ১৯৫৫ সালে ঢাকা প্রজেক্ট শুরু হয়।

খ. সমষ্টি সংগঠন হলো সামাজিক উন্নতি ও ভারসাম্য রক্ষার জন্য পরিচালিত জনসমষ্টিকেন্দ্রিক সুশৃঙ্খল সেবাকর্ম প্রক্রিয়া। সমষ্টি সংগঠন পদ্ধতি মূলত উন্নত দেশসমূহে সমষ্টির কল্যাণে প্রয়োগ করা হয়। আর সমাজকর্মের নীতি ও কর্মকৌশল যথাযথ প্রয়োগের মাধ্যমে সমষ্টি জীবনের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান ও সার্বিক জীবনমান উন্নয়নে যে পদ্ধতিটি বিশেষভাবে নিয়োজিত তা হলো সমষ্টি উন্নয়ন। উন্নয়নশীল দেশসমূহে এবং উন্নত দেশের অনুন্নত এলাকার উন্নয়নে এ পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়।

গ. উদ্দীপকে বাংলাদেশের কথা বলা হয়েছে।
১৯৪৭ সালের দেশভাগের ফলে বাংলাদেশ তৎকালীন পাকিস্তানের অংশ হিসেবে পূর্ব-পাকিস্তান নামে আত্মপ্রকাশ করে। দেশ বিভাগের ফলে স্থানান্তরজনিত কারণে অনেক শরণার্থী এদেশে প্রবেশ করে। এজন্য সদ্য স্বাধীন দেশের শহর এলাকায় এ বিশাল জনগোষ্ঠীকে পুনর্বাসন করা কষ্টকর হয়ে পড়ে। তাছাড়া পুরোনো সমস্যার সাথে আরও নতুন নতুন সামাজিক সমস্যা যুক্ত হতে থাকে এবং সমাজে এর বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। ফলশ্রুতিতে শিক্ষা, স্বাস্থ্য কর্মসংস্থানসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সৃষ্ট সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করে। ১৯৫১ সালে তৎকালীন পাকিস্তান সরকার এ সংকটজনিত অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য জাতিসংঘের কার্যকরীসাহায্য কর্মসূচির আওতায় ড. জেমস ডাম্পসন এর নেতৃত্বে ছয় সদস্যবিশিষ্ট একটি সমাজকর্ম বিশেষজ্ঞ দল এদেশে আসেন। তারা তৎকালীন বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থা ও সমস্যা সম্পর্কে জরিপ ও পর্যালোচনার পর এদেশে পেশাদার সমাজকর্ম এবং এ সংক্রান্ত শিক্ষাব্যবস্থা গ্রহণ ও প্রবর্তনের সুপারিশ করেন। জাতিসংঘ বিশেষজ্ঞ দলের সুপারিশ ও সহায়তায় ১৯৫৩ সালে ঢাকায় সর্বপ্রথম তিন মাসের একটি স্বল্পমেয়াদি প্রশিক্ষণ কোর্স চালু করা হয়। এ প্রশিক্ষণ কোর্সের মধ্যদিয়েই বাংলাদেশে সর্বপ্রথম সমাজকর্ম শিক্ষা বিকাশ লাভ করে। প্রশিক্ষণ শিক্ষার পাশাপাশি ধীরে ধীরে সমাজকর্ম। বিষয়ে উচ্চ শিক্ষার প্রবর্তন করা হয়।
উদ্দীপকের 'ক' দেশের সমাজকর্ম শিক্ষার বিকাশের সাথে বাংলাদেশের সমাজকর্ম শিক্ষার বিকাশ সাদৃশ্যপূর্ণ। তাই বলা যায়, উদ্দীপকে বাংলাদেশের কথা বলা হয়েছে।

ঘ. উদ্দীপকে বাংলাদেশে সমাজকর্ম শিক্ষার উদ্ভবের কথা বলা হয়েছে। যা পরবর্তীতে পেশাদার সমাজকর্ম শিক্ষার বিকাশ ঘটায়।
শিল্পবিপ্লব পরবর্তী সমাজের জটিল ও বহুমুখী সমস্যা মোকাবিলায় উন্নত দেশগুলো সমাজকর্ম অনুশীলনের সূত্রপাত ঘটে। এরই ধারাবাহিকতায় বিভিন্ন সামাজিক সমস্যা মোকাবিলায় বাংলাদেশেও পশাদার সমাজকর্ম শিক্ষার সূচনা হয়।
বাংলাদেশে সমাজকর্মের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা প্রবর্তনের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞ ড. জে মুর-এর ওপর ন্যস্ত হয়। তার রিপোর্টের প্রেক্ষিতে ১৯৫৮-৫৯ শিক্ষাবর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে সমাজকল্যাণ কলেজ ও গবেষণা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা হয়। এ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বাংলাদেশে প্রথম দু'বছর মেয়াদে স্নাতকোত্তর পাঠ্যক্রম চালু করা হয়। ১৯৬৬-৬৭ শিক্ষাবর্ষ থেকে স্নাতক (সম্মান) পর্যায়ে সমাজকল্যাণ কোর্স সংযোজনের মাধ্যমে শিক্ষা কার্যক্রমের প্রসার ঘটে। ১৯৭৩ সালে পৃথক ইনস্টিটিউট হিসেবে এ সমাজকল্যাণ কলেজটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে আত্মীকরণ করা হয়। তখন এর নাম 'সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট' রাখা হয়। ১৯৬৪-৬৫ শিক্ষাবর্ষ থেকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে সমাজকর্ম কলেজ প্রতিষ্ঠা এবং সমাজকর্মে স্নাতক (সম্মান) ও মাস্টার্স কোর্স চালু করা হয়। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদের একটি বিভাগ হিসেবে ১৯৭২ সালে এ কলেজটি সমাজকর্ম বিভাগ নামে আত্মপ্রকাশ করে।
১৯৬৪ সালে উচ্চ মাধ্যমিক ও বিএ (পাস কোর্স) এ ঐচ্ছিক বিষয় হিসেবে সমাজকল্যাণ বিষয় অন্তর্ভূক্তির মাধ্যমে এদেশের সমাজকর্ম শিক্ষা আরও সম্প্রসারিত হয়। ১৯৯২-৯৩ শিক্ষাবর্ষে সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় সমাজকর্ম বিভাগ চালু করে। এবং স্নাতক (সম্মান) ও মাস্টার্স কোর্স প্রবর্তন করে। ১৯৯৩ সালে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর এর অধিভুক্ত বিভিন্ন কলেজে স্নাতক (পাস), স্নাতক (সম্মান) এবং স্নাতকোত্তর পর্যায়ে অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি বিষয় হিসেবে এটি চালু করা হয়েছে। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের একটি পছন্দনীয় বিষয় হিসেবে সমাজকর্ম তার শিক্ষা ও জ্ঞানের বিস্তৃতি ঘটিয়ে চলছে। এছাড়া উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজকর্মে এমফিল ও পিএইচডি ডিগ্রি প্রদান করা হচ্ছে।
পরিশেষে বলা যায়, বাংলাদেশে সমাজকর্ম শিক্ষার বিকাশ পেশাদার সমাজকর্ম অনুশীলনের ক্ষেত্রকে বিকশিত করছে।

৯. ইংল্যান্ডকে সমাজকর্মের সূতিকাগার বলা হয়। দরিদ্র জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে ইংল্যান্ড-এ ৪৩তম এলিজাবেথীয় দরিদ্র আইন ১৬০১ প্রণীত হয়। এছাড়াও ইংল্যান্ডের সার্বিক সমাজকল্যাণ কার্যক্রমের উৎকর্ষ সাধনের জন্য বিভারিজ রিপোর্ট প্রণয়ন করা হয়। এভাবে ক্রমান্বয়ে ইংল্যান্ডে সমাজকর্ম পেশার বিকাশ সাধিত হয়।
ক. ঢাকা প্রজেক্ট কত সালে চালু হয়?
খ. গ্রামীণ সমাজসেবা বলতে কী বুঝ?
গ. উদ্দীপকের সমাজকর্ম পেশার বিকাশের সাথে ভারতে সমাজকর্ম পেশার বিকাশের প্রক্রিয়ার বৈসাদৃশ্য ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকের দেশটি দরিদ্র সম্প্রদায়ের জন্য আইন প্রণয়ন করলেও ভারতে তাদের সমগোত্রীয়দের উদ্দেশ্যে নানামুখী সেবা কর্মসূচি বিদ্যমান বিশ্লেষণ কর।

💘 ৯ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর 💘
ক. ঢাকা প্রজেক্ট চালু হয় ১৯৫৫ সালে।

খ. গ্রামীণ সমাজসেবা হচ্ছে সমষ্টি-উন্নয়ন পদ্ধতির ওপর ভিত্তিশীল একটি গ্রাম উন্নয়নমূলক কর্মসূচি।
গ্রামীণ সমাজসেবা একটি বহুমুখী উন্নয়ন প্রক্রিয়া। এ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মাধ্যমে গ্রামীণ জনগণের নিজস্ব সম্পদ ও সামর্থ্যের সদ্ব্যবহার করে তাদের চাহিদা পূরণ, সমস্যা সমাধান এবং সার্বিক কল্যাণ সাধনের প্রচেষ্টা চালানো হয়।

গ. উদ্দীপকের দেশ অর্থাৎ ইংল্যান্ডে সমাজকর্ম পেশার বিকাশের সাথে ভারতের সমাজকর্ম পেশার বিকাশের ক্ষেত্রে কিছু মৌলিক পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়।
ইংল্যান্ডকে সমাজকর্মের সূতিকাগার বলা হয়। কেননা আধুনিক সমাজকর্মের বীজ রোপিত হয় ইংল্যান্ডে। বিভিন্ন ঘটনা প্রবাহের মধ্য দিয়ে যেমন বিভিন্ন সময়ে প্রণীত দরিদ্র আইন, বিভারিজ রিপোর্ট প্রভৃতির মাধ্যমে ইংল্যান্ডে সমাজকর্মমূলক ব্যবস্থা সুদৃঢ় হয়। উদ্দীপকেও এদেশের সমাজকর্ম বিকাশের কথা বলা হয়েছে।
উদ্দীপকে সমাজকর্মের সূতিকাগার হিসেবে ইংল্যান্ডকে উল্লেখ করা হয়েছে। ইংল্যান্ডে মূলত প্রাচীনকাল থেকে খ্রিস্টধর্মের প্রভাবে সমাজসেবামূলক কার্যক্রম শুরু হয়। ইংল্যান্ড সরকার গরিবদের সাহায্য সহযোগিতার জন্য বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন আইন প্রণয়ন করে। যেমন Statue of Labourers Act-1349, ১৫৩১ সালের দরিদ্র আইন, ১৬০১ সালের দরিদ্র আইন, ১৬৬২ সালের বসতি আইন, ১৮৩৪ সালের দরিদ্র আইন, ১৮৬৩ সালের দানশীল বোর্ড, ১৯০৫ সালের দরিদ্র আইন, ১৯৪২ সালের বিভারিজ রিপোর্ট প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। ইংল্যান্ডে সমাজকর্ম পেশার বিকাশে এ আইনগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এছাড়াও ১৮৬৯ সালের Charity Organization Society এবং পরবর্তীকালে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রতিষ্ঠান ইংল্যান্ডে সমাজকর্ম পেশার বিকাশে খুবই গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। অন্যদিকে ধর্মীয় অনুপ্রেরণা মানবতাবোধ ও সামাজিক দায়িত্ববোধ থেকে ভারতে সমাজকর্ম কার্যক্রম শুরু হয়। ব্রিটিশ ভারতে বেসরকারি সমাজসেবামূলক কার্যক্রমে খ্রিস্টান মিশনারির অবদান ছিল গুরুত্বপূর্ণ। ভারতে হিন্দু, মুসলমান ও শিখ ধর্মের লোকদের বসবাস ছিল বেশি। এসব ধর্ম থেকে খ্রিস্টধর্মে আকৃষ্ট করতে খ্রিষ্টান মিশনারি বিভিন্ন কল্যাণমূলক কার্যক্রম গ্রহণ যেমন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, গির্জা, চিকিৎসালয় প্রভৃতি স্থাপন করে। আর এসব প্রতিষ্ঠান ভারতে সমাজকর্ম পেশার বিকাশে সহায়তা করে। ১৯৩৬ সালে ক্লিফোর্ডের সহায়তায় ভারতে আধুনিক সমাজকর্মের সূচনা হয়। পরবর্তীতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান যেমন- Tata School of Social Work, Tata School of Social Science, YWCA, Social Work Institute সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ভারতে সমাজকর্ম পেশার বিকাশে ভূমিকা রাখে। সুতরাং বলা যায়, ইংল্যান্ড ও ভারতে সমাজকর্ম পেশার বিকাশের প্রক্রিয়া ছিল ভিন্ন।

ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত দেশটি অর্থাৎ ইংল্যান্ড দরিদ্র সম্প্রদায়ের জন্য বিভিন্ন আইন প্রণয়ন করে। কিন্তু ভারতে তাদের সমগোত্রীয়দের উদ্দেশ্যে নানামুখী সেবা কর্মসূচি বিদ্যমান রয়েছে-এ ধারণার সাথে আমি একমত।
ভারতে সমষ্টি উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডের অধীনে নারী-পুরুষ ও শিশুদের জীবনমান উন্নয়ন ও তাদের সুষ্ঠু বিকাশে সহায়তা করা হয়। শিশুদের শিক্ষার জন্য পরিচালিত হচ্ছে নার্সারি ক্লাস। দর্জি, কাটিং এবং বয়ন ইত্যাদি ক্ষেত্রে প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে নারী ও পুরুষদেরকে আত্মকর্মে নিয়োজিত হতে সাহায্য করা হয়। নামমাত্র মূল্যে শিক্ষার্থীদেরকে বিভিন্ন ধরনের খাদ্য প্রস্তুতকরণ বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। আইনগত সহায়তা কেন্দ্রের সহযোগিতায় দরিদ্র ও অসহায় জনগোষ্ঠীকে আইনি পরামর্শ, আর্থিক সাহায্য সংস্থার পক্ষ থেকে আইনজীবী নিয়োগ প্রভৃতি সহায়তা প্রদান করা হয়। জনগণকে তাদের দুর্দশা লাঘবে সহায়তা করার জন্য Assistant Public Relations Officer Cell কাজ করছে। দরিদ্র, শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধী এবং বিধবা বয়স্কদের প্রতি মাসে নির্দিষ্ট হারে ভাতা প্রদান করা হয়। ভারত সরকার বিভিন্ন দাতব্য প্রতিষ্ঠানে আর্থিক অনুদান প্রদান করে। তাছাড়া বস্তিবাসীদের জীবনমান উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন স্টীম বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। ভারত সরকার নাগরিকদের আত্মনির্ভরশীলতা অর্জন, কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা, শিক্ষিত হওয়া, সুখী ও স্বাস্থ্যসম্মত জীবনযাপনে নানা ধরনের কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধীকরণ আইন অনুসারে প্রত্যেকটি জন্ম, মৃত্যু নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
উদ্দীপকে বর্ণিত ইংল্যান্ডে দরিদ্র্য দূরীকরণে বিভিন্ন আইন প্রণয়ন করে। এক্ষেত্রে ইংল্যান্ডে পরিদ্রদের জন্য প্রণীত আইনগুলোর মধ্যে Statue of Labourers Act- 1349, ১৫৩১ সালের দরিদ্র আইন, ১৫৬২ সালের আর্টিফিসারস আইন, ১৬০১ সালের দরিদ্র আইন, ১৬৬২ সালের বসতি আইন, ১৮৩৪ সালের দরিদ্র আইন, ১৯০৫ সালের দরিদ্র আইন কমিশন ও ১৯৪২ সালের বিভারিজ রিপোর্ট উল্লেখযোগ্য। এসকল আইনের আওতায় বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। কিন্তু ভারত আইন প্রণয়ন না করেই বিভিন্ন সেবা কর্মসূচির মাধ্যমে জনগণের কল্যাণে কাজ করছে। তাই বলা যায়, প্রশ্নোত্ত বক্তব্যটি যথার্থ।

১০. ১৯৪৭ সালে ভারত ও পাকিস্তান সৃষ্টির প্রেক্ষাপটে উদ্বাস্তু সমস্যা মোকাবিলায় তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানে একটি বিশেষ পেশার অনুশীলন শুরু করে। ১৯৫৩ সালে সর্বপ্রথম তিনমাস মেয়াদি কোর্সরে মাধ্যমে এর যাত্রা শুরু। বর্তমানে দেশের অনেকগুলো পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় ও উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে এই বিষয়ের উপর এইচ.এস.সি স্নাতক (পাস ও সম্মান) এবং মাস্টার্স পর্যায়ে পাঠদান দেয়া হয়।
ক. Rapport অর্থ?
খ. সামাজিক নিরাপত্তা বলতে কী বুঝ?
গ. উদ্দীপকে কোন পেশার কথা বলা হয়েছে। বাংলাদেশে উত্ত পেশা অনুশীলনের ইতিহাস বর্ণনা কর।
ঘ. বাংলাদেশের বর্তমান সামাজিক প্রেক্ষাপটে উদ্দীপকে উল্লেখিত পেশার সম্ভাবনাসমূহ আলোচনা কর।

💘 ১০ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর 💘
ক. Rapport অর্থ পেশাগত সম্পর্ক।

খ. সামাজিক নিরাপত্তা বলতে সমস্যাগ্রস্ত ব্যক্তির আর্থিক বিপর্যয় কাটিয়ে উঠতে রাষ্ট্র প্রদত্ত আয়ের ব্যবস্থাকে বোঝায়।
মূলত দ্রুত পরিবর্তনশীল ও শিল্পায়িত সমাজব্যবস্থায় অসুস্থতা, বেকারত্ব, দরিদ্রতা, উপার্জন অক্ষমতা, পেশাগত দুর্ঘটনা, মানসিক প্রতিবন্ধিতা ও অন্যান্য কারণে অসুবিধাগ্রস্ত জনগোষ্ঠীর জন্য রাষ্ট্রীয়ভাবে গৃহীত আর্থিক বা অন্যভাবে সহায়তাভিত্তিক কার্যক্রমই হলো সামাজিক নিরাপত্তা। বয়স্ক ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা, বিধবা ভাতা, মাতৃত্বকালীন ভাতা প্রভৃতি সামাজিক নিরাপত্তার উদাহরণ।

গ. উদ্দীপকে সমাজকর্ম পেশার কথা বলা হয়েছে।
শিল্প বিপ্লবের ফলে সৃষ্ট জটিল ও বহুমুখী সমস্যার প্রভাব থেকে বাংলাদেশও রক্ষা পায়নি। আর এসব সমস্যার কার্যকর সমাধানে উন্নত দেশের মতো আমাদের দেশেও সমাজকর্মের অনুশীলন শুরু কর। জাতিসংঘের আর্থিক ও কারিগরি সহায়তায় ১৯৫৩ সালে সমাজকর্মের উপর স্বল্পকালীন প্রশিক্ষণ কোর্স প্রবর্তন ও তার বাস্তব প্রয়োগের জন্য ঢাকার গোপীবাগ ও মোহাম্মদপুরে দুটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। ১৯৫৪ সালে পরীক্ষামূলকভাবে 'ঢাকা প্রজেক্ট' নামে শহর সমাজ উন্নয়নমূলক এক কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়। এ প্রজেক্টের সাফল্যের ভিত্তিতে ১৯৫৫-৫৬ অর্থবছরে ঢাকার কায়েতটুলিতে শহর সমাজ উন্নয়ন প্রকল্প চালু করা হয়।
১৯৫৮ সালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা সমাজকর্ম চালু করা হয়। ১৯৬২ সালে সংশোধনমূলক কার্যক্রম ও প্রতিবন্ধী কল্যাণ কর্মসূচি প্রবর্তন করা হয়। পল্লি এলাকার উনণয়নের লক্ষ্যে ১৯৭৪ সালে গ্রামীণ সমাজসেবা কর্মসূচি চালু করা হয়। বর্তমানে এই কর্মসূচি উপজেলা সমাজসেবা নামে পরিচিত। ১৯৬১ সালে এদেশে সমাজকল্যাণ কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য সমাজকল্যাণ পরিদপ্তর গঠন করা হয়। ১৯৭৪ সালে এটি সমাজকল্যাণ দপ্তর এ উন্নীত হয়। পরবর্তী সময়ে ১৯৮৪ সালে এর নামকরণ হয় সমাজসেবা অধিদপ্তর।

ঘ. বাংলাদেশের বর্তমান সামাজিক প্রেক্ষাপটে সমাজকর্ম পেশা অনুশীলনের যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে।
বাংলাদেশে বিভিন্ন সমস্যা বিদ্যমান। এ সমস্যাগুলো জটিল ও বহুমাত্রিক। এসব সমস্যা সমাধানের জন্য সমাজকর্ম শিক্ষার প্রয়োগ আবশ্যক। এ দেশের উন্নয়নে সরকার সমাজসেবা অধিদপ্তর, যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর, মহিলা ও শিশু বিষয়ক অধিদপ্তরসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছে। এ সকল অধিদপ্তর ও প্রতিষ্ঠাসমূহে সমাজকর্ম অনুশীলনের যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। সমাজকর্মের ডিগ্রিধারীগণ শিক্ষা, প্রশাসন ও সমাজসেবাসহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে উচ্চ পদে নিয়োগ লাভ করছে।
বাংলাদেশে সমাজকর্ম স্বতন্ত্র পেশা হিসেবে স্বীকৃত নয়। তারপরও এ বিষয়ের ডিগ্রিধারীগণ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান রাখছে। সমাজকর্মের শিক্ষার্থীরা কর্মে দক্ষতার পরিচয় দিতে পারার কারণ হলো এ বিষয়ে তাত্ত্বিক জ্ঞানের পাশাপাশি মাঠকর্ম অনুশীলন করতে হয়। বাংলাদেশের একটি সম্ভাবনাময় শিল্প হচ্ছে লোকশিল্প। 
Share:

HSC সমাজকর্ম ২য় পত্র (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর অধ্যায় ১ pdf download

এইচএসসি পরীক্ষার পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি
HSC Social Work 2nd Paper Srijonshil question and answer. HSC SocialWork 2nd Paper (Srijonshil) Creative Questions pdf download.

সমাজকর্ম
দ্বিতীয় পত্র

সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
অধ্যায়-১

HSC Social Work 2nd Paper
Srijonshil Question and Answer pdf download

১. রফিক সিডরে মারা যাওয়ায় তার পরিবার অতিকষ্টে জীবন-যাপন করছে। পরিবারের সদস্য সংখ্যা বেশি হওয়ায় রফিকের ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া চলে না। এমন কি স্বাস্থ্যহীনতা ও পুষ্টিহীনতারও শিকার হচ্ছে। উপরন্তু দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে সংসারের ব্যয়ভার মেটানো সম্ভব হচ্ছে না।
ক. 'Common Human Needs' গ্রন্থের লেখক কে?
খ. মৌল মানবিক চাহিদা হিসেবে শিক্ষার গুরুত্ব লিখ।
গ. উদ্দীপকে উল্লেখিত রফিকের পরিবারে মৌল মানবিক চাহিদা পূরণে ব্যর্থতা থেকে কী কী সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত সমস্যাসমূহ মোকাবিলায় সরকার কর্তৃক গৃহীত পদক্ষেপসমূহ তুলে ধর।

১ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. 'Common Human Needs' গ্রন্থের লেখক হলেন শার্লট টোলে।

খ. মৌল মানবিক চাহিদা হিসেবে শিক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম।
শিক্ষা এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে মানুষের মধ্যে ইতিবাচক ও নেতিবাচক বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ধারণা সুস্পষ্ট হয়। এ আলোয় আলোকিত মানুষ যে কোনো ধরনের অন্যায় থেকে নিজেকে বিরত রাখে এবং ভালো কাজে নিয়োজিত হয়। শিক্ষা মানুষকে আদর্শ নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

গ. উদ্দীপকে উল্লেখিত রফিকের পরিবারের মৌল মানবিক চাহিদা পূরণে ব্যর্থতা থেকে নিরক্ষরতা, স্বাস্থ্যহীনতা, পুষ্টিহীনতা, অপরাধ প্রবণতার মতো সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে।
মানুষের সুস্থ ও স্বাভাবিকভাবে বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় চাহিদাগুলোকে মৌল মানবিক চাহিদা বলে। খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও চিত্তবিনোদন এ চাহিদার অন্তর্গত। এ চাহিদার অপূরণ থেকে বিভিন্ন রকমের আর্থ-সামাজিক সমস্যার সৃষ্টি হয়। উদ্দীপকের রফিকের পরিবার সে ধরনের সমস্যার মুখোমুখি হয়েছে।
উদ্দীপকের রফিক সিডরে মারা গেছে। একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি হওয়ায় তার মৃত্যুতে পরিবারের মৌল মানবিক চাহিদা পূরণ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। রফিক মারা যাবার পর তার সন্তানরা কোনোরকমে জীবনধারণ করলেও লেখাপড়া করতে পারছে না। অথচ শিক্ষার চাহিদা পূরণ না হলে নিরক্ষরতার মতো সমস্যা সৃষ্টি হবে। আবার স্বাস্থ্যহীনতা, পুষ্টিহীনতা, জনসংখ্যা বৃদ্ধি, দারিদ্র্য, কুসংস্কার ইত্যাদি সমস্যারও অন্যতম কারণ নিরক্ষরতা। অন্যদিকে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে সংসারের ব্যয়ভার মেটাতে রফিকের পরিবারের সদস্যরা হিমশিম খাচ্ছেন। এ রকম পরিস্থিতিতে অনেকেই মৌল মানবিক চাহিদা পূরণ করার জন্য অবৈধ পথ বেছে নেয়। ফলে চুরি, ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের মতো অপরাধ বাড়ে। তাই বলা যায়, মৌল মানবিক চাহিদা পূরণের ব্যর্থতা থেকে রফিকের পরিবারে ওপরে আলোচিত সমস্যা দেখা দেবে।

ঘ. উদ্দীপকে রফিকের পরিবারের মাধ্যমে নিরক্ষরতা, স্বাস্থ্যহীনতা, পুষ্টিহীনতা, অপরাধপ্রবণতার মতো সমস্যার কথা উঠে এসেছে যেগুলো মোকাবিলায় সরকারের সুনির্দিষ্ট কিছু কার্যক্রম রয়েছে।
শিক্ষা মানুষের অন্যতম মৌলিক মানবিক অধিকার। বাংলাদেশ সরকার নাগরিকের এ অধিকার নিশ্চিত করতে প্রাথমিক শিক্ষাকে অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক করেছে। এছাড়া সরকারিভাবে প্রথম থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত বিনামূল্যে বই বিতরণ; মেয়েদের জন্য দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত উপবৃত্তি চালু; প্রাথমিক ও মাধ্যমিক খাতে বৃত্তির সংখ্যা বৃদ্ধির মতো বিভিন্ন কর্মসূচিও গৃহীত হয়েছে। এছাড়া জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০ এর আওতায় সমগ্র শিক্ষাব্যবস্থাকে (প্রথম থেকে উচ্চতর ডিগ্রি) ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
তবে নিরক্ষরতা ছাড়াও রফিকের পরিবারে স্বাস্থ্যহীনতা, পুষ্টিহীনতা, অপরাধপ্রবণতার মতো সমস্যাও লক্ষ করা যায়। এ সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের আওতায় ২০১১-১৬ মেয়াদে ৫১,০৮২.৪১ কোটি টাকা ব্যয়ে স্বাস্থ্য, জনসংখ্যা ও পুষ্টিখাত উন্নয়ন কর্মসূচি কর্মসূচি বাস্তবায়িত হয়। সাধারণ মানুষের কাছে প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেওয়ার জন্য জেলা ও উপজেলায় প্রতিটি সরকারি হাসপাতালে (মোট ৪৮২টি হাসপাতাল) মোবাইল ফোনের মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবা চালু করা হয়েছে। এছাড়া জাতীয় টিকাদান কর্মসূচি, ভিটামিন এ ক্যাপসুল সপ্তাহ প্রভৃতি বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য এসএমএস এর মাধ্যমে প্রচারণা চালানো হচ্ছে। এছাড়া এ ধরনের দরিদ্র পরিবারের জন্য সরকারিভাবে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিও চালু আছে। এ খাতে সরকার ২০১৬-১৭ অর্থবছরে সরকার বিভিন্ন ভাতা বাবদ ২৩,৬০২ কোটি টাকা বরাদ্দ করে।
সার্বিক আলোচনা থেকে তাই বলা যায় উদ্দীপকে উল্লিখিত শিক্ষা, পুষ্টি ও স্বাস্থ্যজনিত সমস্যা মোকাবিলায় সরকার গৃহীত কর্মসূচিগুলো ফলপ্রসূ ভূমিকা রাখতে পারে।

২. বিগত বছরে হাওর অঞ্চলে অকাল বন্যায় কৃষকের প্রধান ফসল ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়। যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হওয়ায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্লাস বন্ধ থাকে। জরুরি চিকিৎসা সেবায়ও সংকট দেখা দেয়। আয়-রোজগার না থাকায় অনেকে ক্ষতিগ্রস্ত ঘর-বাড়ি মেরামত করতে পারেনি।
ক. মানবজীবনের সবচেয়ে প্রয়োজনীয় চাহিদা কী?
খ. শিক্ষাকে কেন মৌল মানবিক চাহিদা বলা হয়?
গ. উদ্দীপকে কোন মৌল মানবিক চাহিদার অনুপস্থিতি লক্ষণীয়? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকে অনুপস্থিত মানবজীবনের মৌল মানবিক চাহিদার তাৎপর্য বিশ্লেষণ কর।

২ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. মানবজীবনের সবচেয়ে প্রয়োজনীয় চাহিদা হলো খাদ্য।

খ. সামাজিকভাবে উন্নত জীবনযাপনের জন্য মানুষকে যেসব চাহিদা পূরণ করতে হয় শিক্ষা তার অন্যতম। তাই একে মৌল মানবিক চাহিদা বলা হয়।
শিক্ষার মাধ্যমেই একজন মানুষ তার জীবন ও জগৎ সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা লাভ করতে পারে। এটি মনুষ্যত্ব অর্জনের একমাত্র উপায়। শিক্ষাই পারে মানুষের সুপ্ত প্রতিভার বিকাশ ঘটাতে। এর মাধ্যমে ব্যক্তিত্ব গঠন, মানবিক মূল্যবোধ অর্জনের পাশাপাশি সামাজিক দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন হওয়া যায়। এ কারণে শিক্ষাকে মৌল মানবিক চাহিদা বলা হয়।

গ. উদ্দীপকে বস্ত্র, চিত্তবিনোদন ও সামাজিক নিরাপত্তার মতো মৌল মানবিক চাহিদার অনুপস্থিতি লক্ষণীয়।
সমাজে বাস করার জন্য মানুষকে কিছু চাহিদা পূরণ করতে হয়। এগুলো পূরণের মাধ্যমে মানুষের শারীরিক, মানসিক ও সামাজিক বিকাশ সুষ্ঠু ও সুন্দর হয়। এসব চাহিদা পূরণ ছাড়া পৃথিবীতে বেঁচে থাকা বা উন্নত জীবনযাপন করা সম্ভব নয়। এগুলো হলো- খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা, চিত্তবিনোদন ও সামাজিক নিরাপত্তা। এর মধ্যে উদ্দীপকে তিনটি চাহিদার কথা উল্লেখ করা হয়নি।
উদ্দীপকে দেখা যায়, হাওর অঞ্চলের বন্যায় মানুষের ফসলহানি ঘটেছে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ক্লাস বন্ধ থাকছে, চিকিৎসাসেবায় সংকট দেখা দিয়েছে এবং ক্ষতিগ্রস্তরা ঘরবাড়ি মেরামত করতে পারছে না। কিন্তু খাদ্য, শিক্ষা, চিকিৎসা ও বাসস্থান ছাড়াও মানুষের আরো কিছু মৌল মানবিক চাহিদা রয়েছে। এগুলোর মধ্যে একটি হলো বস্তু। এটি দৈনন্দিন প্রয়োজনের বিষয় ছাড়াও সভ্যতার অন্যতম প্রতীক। বস্ত্র ছাড়া কোনো মানুষ সভ্য সমাজে থাকতে পারে না। আবার চিত্তবিনোদন হলো মানুষের মনের খোরাক। সুস্থ বিনোদন মানুষকে কাজ করার শক্তি ও প্রেরণা জোগায়। এর অভাবে মানুষ স্বাভাবিক কর্মশক্তি হারিয়ে ফেলে এবং নেতিবাচক কাজে জড়িয়ে পড়ে। ইদানীং সামাজিক নিরাপত্তাকেও মৌল মানবিক চাহিদা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী বিশেষ পরিস্থিতিতে প্রত্যেক নাগরিকের সামাজিক নিরাপত্তা সুবিধা (বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, বেকার ভাতা, প্রভিডেন্ট ফান্ড, দুর্ঘটনাজনিত ক্ষতিপূরণ প্রভৃতি) পাওয়ার অধিকার আছে। সুতরাং দেখা যায়, উদ্দীপকে বস্তু, সামাজিক নিরাপত্তা এবং চিত্তবিনোদনে মৌল মানবিক চাহিদাগুলোর ইঙ্গিত অনুপস্থিত।

ঘ. উদ্দীপকে অনুপস্থিত মৌল মানবিক চাহিদা অর্থাৎ বস্ত্র, সামাজিক নিরাপত্তা ও চিত্তবিনোদনের তাৎপর্য অপরিসীম।
মানুষের শারীরিক, মানসিক ও সামাজিক বিকাশ এবং ভালোভাবে বেঁচে থাকার জন্য মৌল মানবিক চাহিদা প্রয়োজন। প্রত্যেক মানুষের জন্য এসব চাহিদা পূরণ হওয়া জরুরি।
বস্ত্র মানবজীবনের দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ চাহিদা। সভ্যতার সূচনা থেকে এর ব্যবহার শুরু হয়েছে। বস্ত্র ছাড়া কোনো মানুষ সমাজে বাস করতে পারে না এবং এর অভাবে তার স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হয়। বস্ত্র লজ্জা নিবারণ ছাড়াও মানুষকে অতি শৈত্য বা উষ্ণতা এবং নানা ধরনের সংক্রামক রোগ থেকে রক্ষা করে। আবার খাদ্য যেমন দেহের বৃদ্ধি ঘটায়, তেমনি চিত্তবিনোদন মানুষের মনের খোরাক জোগায়। এর ফলে কাজে উদ্দীপনা আসে। কাজের ব্যস্ততার কারণে মানুষের জীবন মাঝে মাঝে একঘেয়ে হয়ে ওঠে। তখন চিত্তবিনোদনমূলক কাজ মানুষের মনকে চাঙ্গা করে। ক্লাস্তি করে কাজের প্রেরণা জোগায়। শুধুমাত্র প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিই নয় শিশু, কিশোরদের ক্ষেত্রেও চিত্তবিনোদনের ইতিবাচক ভূমিকা রয়েছে।
যান্ত্রিক ও ভোগবাদী এই যুগে মানুষের প্রতি মানুষের সহানুভূতির পরিমাণ অনেকটাই কমে এসেছে। তাই অসহায় ও বিপদগ্রস্ত মানুষের সহায়তায় রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনায় সামাজিক নিরাপত্তার প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।
বর্তমানে এটি মৌল মানবিক চাহিদা হিসেবেও স্বীকৃতি পেয়েছে। এর মাধ্যমে বেকার, প্রতিবন্ধী, বিধবা, এতিম, প্রবীণসহ অসহায় ও দুস্থ মানুষের আর্থ-সামাজিক অবস্থানে পরিবর্তন আসছে। তাই সার্বিক আলোচনা থেকে বলা যায় বস্ত্র, সামাজিক নিরাপত্তা ও চিত্তবিনোদন মানুষের জীবনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

৩. পঞ্চগড়ের সফিকুলের নাম দেশবাসীর মুখে মুখে। কারণ সে এবার ভর্তি পরীক্ষায় মেধা তালিকায় স্থান করে ঢাকা মেডিকেল কলেজে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেয়েছে। অথচ কখনও দুবেলা দুমুঠো পেট ভরে খাবার পায়নি। এক কাপড়ে কেটেছে, অসুস্থ মায়ের চিকিৎসা করাতে ব্যর্থ হয়েছে বার বার। পরিবারের ছয় সদস্য নিয়ে গাদাগাদি করে জরাজীর্ণ ঘরে সে রাত কাটাতো। অবশ্য পরিবারটি 'দশ টাকা কেজি চাল' কর্মসূচির আওতায় ছিল। আর এর মধ্যেই সফিকুল স্বপ্ন দেখতো সে ডাক্তার হবে, অসুস্থ মাকে সুস্থ করে তুলবে, সাথে সাথে গ্রামবাসীর সেবা করবে।
ক. মৌলিক মানবিক চাহিদা কয়টি?
খ. বস্তুকে কেন মানবিক চাহিদা বলা হয়?
গ. উদ্দীপকে সফিকুল কোন চাহিদা পূরণের স্বপ্ন দেখেছে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত কর্মসূচি কি মৌলিক মানবিক চাহিদা পূরণে যথেষ্ট? মতামত দাও।

৩ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. মৌলিক মানবিক চাহিদা ছয়টি; যেমন- খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা, চিত্তবিনোদন।

খ. মানুষের পক্ষে বস্তু ছাড়া সভ্য সমাজে বসবাস সম্ভব নয়। এ কারণে বস্তুকে মানবিক চাহিদা বলা হয়।
সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবনযাপনের জন্য প্রয়োজনীয় চাহিদাগুলোই মানবিক চাহিদা। সামাজিক পরিচিতি ও মর্যাদা রক্ষার জন্য মানবিক বা সামাজিক চাহিদার গুরুত্ব অপরিসীম। বস্ত্র এ ধরনেরই একটি চাহিদা। বস্ত্র ছাড়া মানুষের পক্ষে সভ্য সমাজে থাকা সম্ভব নয়। পোশাক একদিকে লজ্জা নিবারণ করে মানুষকে সমাজে মর্যাদার সঙ্গে বাস করতে সাহায্য করে, অন্যদিকে শীত ও গরম এবং নানা ধরনের রোগজীবাণু থেকে রক্ষা করে।

গ. উদ্দীপকের সফিকুল মৌলিক মানবিক চাহিদা পূরণের স্বপ্ন দেখেছে। একজন মানুষের শারীরিক, মানসিক ও সামাজিক বিকাশ এবং সভ্য সমাজে বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় চাহিদাই হলো মৌলিক মানবিক চাহিদা। এ চাহিদাগুলো পূরণ না হলে সভ্য সমাজে ভালোভাবে টিকে থাকা যায় না।
প্রখ্যাত মার্কিন সমাজবিজ্ঞানী শার্লট টোলে তার 'Common Human Needs' গ্রন্থে ছয়টি মৌলিক মানবিক চাহিদার উল্লেখ করেছেন। সেগুলো হলো— খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও চিত্তবিনোদন। সমাজে সুন্দরভাবে বেঁচে থাকার জন্য এই ছয়টি চাহিদা পূরণ হওয়া অত্যাবশ্যক। উদ্দীপকের সফিকুল কিছুদিন আগেও এই মৌলিক মানবিক চাহিদাগুলো থেকে বঞ্চিত ছিল। পর্যাপ্ত খাবার না পাওয়া, মায়ের চিকিৎসা করায় ব্যর্থতা, জরাজীর্ণ ঘরে গাদাগাদি করে বাস করা এসব থেকে সফিকুলের আগের অবস্থা অনুমান করা যায়। কিন্তু বর্তমানে সে মেধাতালিকায় স্থান করে ঢাকা মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পয়েছে। এর ফলে তার সাম নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হয়েছে সফিকুল এখন ডাক্তার হয়ে সংসারের দারিদ্র্য দূর করতে পারবে। মা ও গ্রামবাসীর চিকিৎসা করতে পারবে। সে পরিবারের সবার জন্য উপযুক্ত বাসস্থান, ভালো পোশাক এবং চিত্তবিনোদনের ব্যবস্থাও করতে পারবে। অর্থাৎ সফিকুল মৌলিক মানবিক চাহিদাগুলো পূরণের মাধ্যমে সমাজে সম্মানের সাথে বসবাস করতে পারবে।

ঘ. উদ্দীপকে বাংলাদেশের অতি দরিদ্র জনগোষ্ঠীর অন্যতম মৌলিক মানবিক চাহিদা খাদ্যের অভাব পূরণে সরকারের 'দশ টাকা কেজি চাল' কর্মসূচির উল্লেখ করা হয়েছে। মৌলিক মানবিক চাহিদা পূরণে কেবল এই কর্মসূচিটি যথেষ্ট নয়। এর পাশাপাশি আরও পদক্ষেপ গ্রহণের প্রয়োজন রয়েছে।
বাংলাদেশের সংবিধান অনুসারে দেশের মানুষের মৌলিক মানবিক চাহিদা পূরণ করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। আর এই দায়িত্ব পালনে সরকারকে নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হয়। এক্ষেত্রে মৌলিক মানবিক চাহিদা পূরণে খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা ও চিত্তবিনোদন প্রতিটি খাতেই সরকারকে গুরুত্ব দিতে হবে।
দরিদ্র জনগোষ্ঠীর খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন সামাজিক নিরাপত্তামূলক কর্মসূচি রয়েছে। দশ টাকা কেজি চাল’ এ ধরনেরই একটি কর্মসূচি। এই কর্মসূচির ফলে উদ্দীপকের সফিকুলের পরিবারের মতো অনেক দরিদ্র পরিবার উপকৃত হচ্ছে। তবে লক্ষণীয় বিষয় হলোত এই কর্মসূচিটি কেবল খাদ্যের চাহিদা পূরণ করে। অর্থাৎ অন্য মৌলিক চাহিদা পূরণের জন্যও আরও কর্মসূচি প্রয়োজন। বিশেষ করে শিক্ষা ও চিকিৎসা খাতে স্বল্প ব্যয়ে প্রয়োজনীয় সেবা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। এছাড়া সাধারণ মানুষের বস্ত্রের চাহিদা পূরণে উৎপাদন বৃদ্ধি, বাসস্থান সমস্যার সমাধানে প্রকল্প গ্রহণ ইত্যাদি ব্যবস্থাও করা উচিত। উপরের আলোচনা থেক তাই বলা যায়, উদ্দীপকে উল্লিখিত “দশ টাকা চাল’’ কর্মসূচি মানুষের মৌল মানবিক চাহিদা পূরণে যথেষ্ট নয়।

৪. জাহিদ হাসান স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে গ্রামে বসবাস করতেন কিন্তু গ্রামে আয়ের ভাল ব্যবস্থা না থাকায় কাজের সন্ধানে তিনি শহরে যান এবং রিকশা চালিয়ে সংসার লান। তিনি যা আয় রেন তা দিয়ে সংসারের সবার খাবারের ব্যবস্থা করতে পারেন। বাসার পাশেই সরকারি প্রাইমারি স্কুল থাকায় ছেলেমেয়েদের লেখাপড়াও করান। কিন্তু স্বল্প আয়ের কারণে স্ত্রী-সন্তানদের প্রয়োজনমত কাপগ-চোপড় কিনে দিতে পারেন না, অসুস্থ হলে চিকিৎসা করাতে পারেন না এবং অবসর সময় কাটানোর জন্য একটি টিভিও কিনে দিতে পারেন না। তবে বস্তি এলাকায় বাস করলেও ঘরে থাকতে তাদের খুব একটি অসুবিধা হয় না।
ক. মানব উন্নয়ন সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান কততম?
খ. মৌল মানবিক চাহিদা বলতে কী বোঝ?
গ. উদ্দীপকে জাহিদ হাসানের পরিবার কী কী মৌল মানবিক চাহিদা পূরণ করতে পারছে না? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকে জাহিদ হাসান এবং তার পরিবার যে সকল চাহিদা পূরণ করতে পারছে তা যথার্থ কিনা? তোমার মতামত দাও।

৪ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. মানব উন্নয়ন সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ১৩৯তম।

খ. একজন মানুষের শারীরিক, মানসিক ও সামাজিক বিকাশ এবং সভ্য সমাজে বসবাসের জন্য যে সব চাহিদা পূরণ করতে হয় সেগুলোকেই মৌল মানবিক চাহিদা বলা হয়।
মৌল মানবিক চাহিদার মধ্যে রয়েছে- খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা ইত্যাদি। প্রতিটি মানুষের জন্যই এ চাহিদাগুলো পূরণ করা প্রয়োজন। এসব চাহিদার বেশিরভাগ পূরণ করা না গেলে নানা ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। প্রকৃতপক্ষে মানবিক চাহিদাগুলো পূরণ না হলে সমাজে মানুষ মর্যাদার সাথে বসবাস করতে পারে না।

গ. উদ্দীপকের জাহিদ হাসানের পরিবার বস্ত্র, চিকিৎসা ও বিনোদন এই তিনটি মৌল মানবিক চাহিদা পূরণ করতে পারছে না।
একজন মানুষের ভালোভাবে বেঁচে থাকা এবং সভ্য সমাজে বসবাস করার জন্য প্রয়োজনীয় চাহিদাগুলোই মৌল মানবিক চাহিদা। এসব চাহিদার সবগুলো পূরণ না হলে মানুষের পক্ষে সমাজে সুষ্ঠুভাবে জীবনযাপন করা কষ্টকর হয়ে পড়ে। বস্ত্র, চিকিৎসা ও বিনোদন এ ধরনের তিনটি চাহিদা, যা থেকে জাহিদ হাসানের পরিবার বঞ্চিত হচ্ছে। জাহিদ হাসান দারিদ্রের কারণে স্ত্রী-সন্তানদের প্রয়োজনমত কাপড়- চোপড় কিনে দিতে পারেন না। অথচ বস্ত্র মানবজীবনের দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ চাহিদা। এটি একদিকে মানুষের মৌলিক চাহিদা অন্যদিকে মানবিক চাহিদা পূরণ করে। এ চাহিদা ঠিকমতো পূরণ না হলে সমাজে সম্মানের সাথে বসবাস করা যায় না। বস্ত্রের পাশাপাশি জাহিদ হাসানের পরিবার চিকিৎসা ও বিনোদনের চাহিদাও পূরণ করতে পারছে না। অথচ অসুস্থতা থেকে মুক্তির জন্য চিকিৎসার কোনো বিকল্প নেই। শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা ছাড়া বেঁচে থাকা অর্থহীন। সুস্থ জীবনের জন্য বিনোদনও অতি প্রয়োজনীয়। কারণ চিত্তবিনোদন হলো মনের খোরাক। এটি মানুষকে মানসিক শক্তি ও প্রেরণা জোগায়। জাহিদ হাসানের পরিবার ওপরে উল্লেখ করা তিনটি মৌল মানবিক চাহিদা পূরণ করতে পারছে না।

ঘ. উদ্দীপকের জাহিদ হাসান এবং তার পরিবার খাদ্য, বাসস্থান ও শিক্ষার চাহিদা পূরণ করতে পারছে। তবে আমি মনে করি, এই চাহিদা পূরণ যথাযথভাবে হচ্ছে না।
সমাজে সম্মানজনকভাবে বেঁচে থাকার জন্য ছয়টি মৌল মানবিক চাহিদাই পূরণ হওয়া প্রয়োজন। কোনো একটি চাহিদা পূরণ না হলে জীবনযাত্রায় অসঙ্গতি দেখা যায়। ফলে সভ্য সমাজে ভালোভাবে বসবাস করা সম্ভব হয় না। জাহিদ হাসানের পরিবারে তিনটি মৌলিক চাহিদা পূরণ হলেও তা যথেষ্ট নয়।
জাহিদ হাসান তার উপার্জন দিয়ে স্ত্রী-সন্তানদের জন্য খাদ্যের ব্যবস্থা করতে পারেন। তিনি বাড়ির পাশের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার ব্যবস্থাও করেছেন। তাছাড়া বস্তি এলাকায় থাকলেও তার বাসস্থানের চাহিদাও আপাতদৃষ্টিতে পূরণ হচ্ছে। তবে এখানে লক্ষণীয় হচ্ছে, তিনি অপর তিনটি চাহিদা অর্থাৎ বস্ত্র, চিকিৎসা ও বিনোদনের ব্যবস্থা কার্যত করতে পারছেন না। এর প্রধান কারণ হলো দারিদ্র্য। জাহিদ হাসান পরিবারের যে তিনটি চাহিদা পূরণ করতে পারছেন সেগুলোও তেমন মানসম্পন্ন নয়। অর্থাৎ এই চাহিদাগুলোও তার পরিবারে কোনো রকমে পূরণ হচ্ছে। ভালো খাবার বা থাকার স্থান তাদের নেই। জাহিদ হাসান ভবিষ্যতে সন্তানদের উচ্চ শিক্ষার ব্যয় কতটুকু বহন করতে পারবেন তাও প্রশ্ন সাপেক্ষ।
পরিশেষে বলা যায়, জাহিদ হাসানের পরিবারে তিনটি চাহিদা পূরণ হচ্ছে যা যথার্থ নয়।

৫. সুমন আট সন্তানের জনক। পরিবারের সবাইকে নিয়ে একটি ছোট ঘরে বাস করে। অর্থাভাবে সে তার সন্তানদের স্কুলে পাঠাতে পারছে না। সেই সাথে পরিবারের কোনো সদস্য অসুস্থ হলে তাকে ডাক্তার দেখানো সম্ভব হয় না। এমনকি তার পরিবারে আনন্দ-উৎসব করার মতো কোনো ব্যবস্থাও নেই।
ক. বাংলাদেশের মৌল মানবিক চাহিদাগুলোর নাম লেখো।
খ. মৌল মানবিক চাহিদার একটি তাৎপর্য ব্যাখ্যা করো।
গ. সুমনের পরিবারের অবস্থা মৌল মানবিক চাহিদা পূরণের কোন অবস্থাকে নির্দেশ করে? নিরূপণ করো।
ঘ. সুমনের মতো পরিবারগুলো মৌল মানবিক চাহিদা পূরণ করতে না পেরে কী ধরনের সমস্যার সৃষ্টি করে? বিশ্লেষণ করো। 

৫ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. বাংলাদেশের সমাজে মৌল মানবিক চাহিদাগুলো হলো- খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা ও চিত্তবিনোদন।

খ. মৌল মানবিক চাহিদার একটি তাৎপর্য হলো এগুলো পূরণের মাধ্যমে মানুষ শারীরিক, মানসিক ও সামাজিকভাবে বিকশিত হতে পারে।
সমাজে মানুষের সুষ্ঠুভাবে বেঁচে থাকার জন্য মৌল মানবিক চাহিদা পূরণের বিকল্প নেই। কেননা, এ চাহিদাগুলো পূরণের মাধ্যমেই কেবল মানুষ পরিপূর্ণভাবে বিকশিত হয়। মানুষের বেঁচে থাকা ও জীবনমানের উন্নয়নে খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান ও চিকিৎসা ভূমিকা রাখে। এছাড়া, শিক্ষা ও চিত্তবিনোদন তার মানসিক ও সামাজিক বিকাশ সম্পন্ন করে।

গ. উদ্দীপকের সুমনের পরিবারের অবস্থা বাংলাদেশে মৌল মানবিক চাহিদা পূরণের প্রতিবন্ধকতাকে নির্দেশ করে।
বিভিন্ন কারণে বাংলাদেশে মৌল মানবিক চাহিদা পূরণে সমস্যার সৃষ্টি হয়। এরকম দুটি কারণ হলো- অধিক জনসংখ্যা ও দারিদ্র্য। কোনো রাষ্ট্রের আয়তন ও সম্পদের তুলনায় জনসংখ্যার আধিক্য মৌল মানবিক চাহিদা পূরণে অন্তরায় হিসেবে কাজ করে। আবার দারিদ্র্যও এ ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলে।
উদ্দীপকের সুমনের পরিবারের মৌল মানবিক চাহিদা পূরণের ক্ষেত্রে অধিক জনসংখ্যা ও দারিদ্র্য প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে। সুমন আট সন্তানের জনক অর্থাৎ তার পরিবার অনেক বড়। পরিবারের সদস্যসংখ্যা বেশি হওয়ার কারণে সুমন সবার জন্য বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা, চিত্তবিনোদন প্রভৃতি মৌল মানবিক চাহিদা নিশ্চিত করতে পারছে না। এক্ষেত্রে দারিদ্র্যও অন্যতম অন্তরায়। কারণ সুমনের আর্থিক অবস্থা যদি শক্তিশালী হতো তাহলে হয়তো আট সন্তান সত্ত্বেও পরিবারের মৌল মানবিক চাহিদা পূরণ করতে পারত। আর্থিক সামর্থ্য না থাকা এবং পরিবার বেশি বড় হওয়া এ দুই সমস্যার কারণে সুমন তার পরিবারের জীবনমানের উন্নয়ন ঘটাতে ব্যর্থ হচ্ছে। সুতরাং বলা যায়, উদ্দীপকের সুমনের পরিবারের অবস্থা বাংলাদেশের মৌল মানবিক চাহিদা পূরণের অন্যতম প্রতিবন্ধকতা জনসংখ্যাধিক্য দারিদ্র্যকে নির্দেশ করছে।

ঘ. সুমনের মতো পরিবারগুলো মৌল মানবিক চাহিদা পূরণ করতে না পেরে আর্থ-সামাজিক বিভিন্ন ধরনের সমস্যার সৃষ্টি করে।
সমাজে মানুষের স্বাভাবিকভাবে ও মর্যাদার সঙ্গে বেঁচে থাকার জন্য তার মৌল মানবিক চাহিদাগুলো পূরণ করা অপরিহার্য। কিন্তু দারিদ্র্য, জনসংখ্যাধিক্য, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা প্রভৃতি কারণে অনেকেই মৌল মানবিক চাহিদাগুলো পূরণ করতে পারে না। ফলে পুষ্টিহীনতা, স্বাস্থ্যহীনতা, অপরাধপ্রবণতা, নিরক্ষরতার মতো বিভিন্ন সমস্যার সৃষ্টি হয়। 
উদ্দীপকের সুমনের দশ সদস্যের বিশাল পরিবারে মৌল মানবিক চাহিদা পূরণ হচ্ছে না। এ অবস্থায় তার পরিবারে পুষ্টিহীনতা ও স্বাস্থ্যহীনতার মতো সমস্যা সৃষ্টি হবে। শিক্ষার চাহিদা পূরণ না হওয়ায় তার সন্তানেরা নিরক্ষর বা অজ্ঞ থেকে যাবে। তাছাড়া অভাবের জেরে তার পরিবারের সদস্যরা অপরাধের দিকে ঝুঁকে পড়তে পারে। প্রকৃতপক্ষে মৌল মানবিক চাহিদা পূরণ না হলে যেকোনো পরিবারেই উল্লিখিত সমস্যাগুলো সৃষ্টি হতে পারে। কেননা, খাদ্যের চাহিদা পূরণ না হলে পরিবারগুলোতে মারাত্মক পুষ্টিহীনতা দেখা দেয়। পাশাপাশি শিক্ষার সুযোগের অভাবে নিরক্ষরতা দেখা দেয় যা আবার পরবর্তী সময়ে জনসংখ্যাধিক্য, দারিদ্র্য, বেকারত্বসহ নানামুখী সংকট তৈরি করে। এ ধরনের পরিবারের সদস্যরা মৌল মানবিক চাহিদা পূরণের জন্য অনেক সময় অবৈধ পথ বেছে নেয়। ফলে সমাজে নৈরাজ্য ও বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়।
উপর্যুক্ত আলোচনা থেকে বলা যায়, মৌল মানবিক চাহিদা পূরণ না হলে সুমনের মতো পরিবার নানামুখী সমস্যা সৃষ্টির মাধ্যমে সমাজকে বিশৃঙ্খল ও অস্থিতিশীল করে তোলে।

৬. ভূমিহীন কৃষক রফিক মিয়ার সংসারে অভাব-অনটন লেগেই থাকে। অর্থাভাবে তিনি তার পরিবারের ৬ সদস্যের মুখে তিন বেলা খাবার যোগাতে পারে না। পাশাপাশি তিনি তার ছেলেমেয়েদের বিদ্যালয়ে পাঠাতে পারেনি। আবার তিনি তাঁর অসুস্থ স্ত্রীকে চিকিৎসা করাতে পারেননি।
ক. মৌলিক চাহিদা কী?
খ. সামাজিক চাহিদা বলতে কী বোঝায়?
গ. উদ্দীপকের রফিক মিয়ার পরিবারে কোন কোন চাহিদা পূরণ হচ্ছে না? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকে উল্লেখিত চাহিদাগুলো পূরণের পথে অন্তরায়/বাধাগুলো আলোচনা করো।

৬ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. মানুষের বেঁচে থাকা, শারীরিক ও মানসিক বিকাশের জন্য যেসব চাহিদা পূরণ হওয়া প্রয়োজন তাই মৌলিক চাহিদা।

খ. সুস্থ ও স্বাভাবিক মানুষ হিসেবে সামাজিক জীবন যাপনের জন্য যে চাহিদাগুলো পূরণ হওয়া অপরিহার্য সেগুলোকেই সামাজিক চাহিদা, বলা হয়। 
সামাজিক জীবনে স্বাভাবিকভাবে চলা এবং উৎকর্ষতা অর্জনের জন্য মানুষের কিছু চাহিদা যেমন- বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা, চিত্তবিনোদন, নিরাপত্তা প্রভৃতি পূরণ হওয়া জরুরি। মানুষের এই চাহিদাগুলোই সামাজিক চাহিদা। এগুলোকে মানবিক চাহিদাও বলা হয়।

গ. উদ্দীপকের রফিক মিয়ার পরিবারে খাদ্য, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য এ তিনটি মৌল মানবিক চাহিদা পূরণ হচ্ছে না।
সাধারণত মানুষের সুস্থ ও স্বাভাবিকভাবে বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় চাহিদাগুলোকে মৌল মানবিক চাহিদা বলা হয়। খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও চিত্তবিনোদন এ চাহিদার অন্তর্গত বিষয়।
উদ্দীপকে রফিক মিয়ার পরিবারে খাবারের অপ্রতুলতা, অভাবের কারণে সন্তানদের স্কুলে না পাঠানো জটিল রোগে আক্রান্ত স্ত্রীর চিকিৎসা করাতে না পারার বিষয়গুলো চিত্রায়িত হয়েছে। এ বিষয়গুলো মৌল মানবিক চাহিদা হিসেবে খাদ্য, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের অনুপস্থিতিকে নির্দেশ করছে। সুতরাং প্রশ্নানুযায়ী বলা যায়, রফিক মিয়ার পরিবারে খাদ্য, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের মতো মৌল মানবিক চাহিদার অনুপস্থিতি রয়েছে।

ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত রফিক মিয়ার মতো পরিবারগুলোর মৌল মানবিক চাহিদা পূরণ করতে না পারার একাধিক অন্তরায় লক্ষ করা যায়।
বাংলাদেশে সব সমস্যার মূলে রয়েছে অধিক জনসংখ্যা বাড়তি জনসংখ্যার কারণে মৌল মানবিক চাহিদা পূরণের ক্ষেত্রে সমস্যা দেখা দেয়। লক্ষণীয় যে, বাংলাদেশে এখনও অনেক লোক দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করছে। স্বাভাবিকভাবেই দারিদ্রের কারণে তারা ন্যূনতম মৌল চাহিদাগুলো পূরণ করতে পারে না।
ভৌগোলিক অবস্থানগত কারণে বাংলাদেশ বিশ্বের মধ্যে দুর্যোগপূর্ণ দেশ হিসেবে পরিচিত। বন্যা, খরা, জলোচ্ছ্বাস, টর্নেডো, ঘূর্ণিঝড় প্রভৃতি প্রাকৃতিক দুর্যোগ এদেশে প্রায়ই আঘাত হানে। সেই সাথে বেকার সমস্যা ও নির্ভরশীল জনসংখ্যার হার দেশে ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে, ফলে অধিকাংশ মানুষের মৌল মানবিক চাহিদা পূরণ সম্ভব হচ্ছে না। বাংলাদেশের ৭০-৮০ ভাগ লোক এখনও প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কৃষির ওপর নির্ভরশীল, অথচ তাদের চাষাবাদ পদ্ধতি অনুন্নত। এর ফলে প্রত্যাশিত ফলন না পাওয়ায় মৌল চাহিদা পূরণে সমস্যার সৃষ্টি হয়। তাছাড়া ধনী-দরিদ্রের বৈষম্যের হার অনেক বেশি। ফলে দরিদ্র লোকজন ন্যূনতম মৌলিক চাহিদা পূরণ করতে পারে না। এছাড়াও দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণে নিম্ন আয়ের লোকজনের জীবনযাপন অনেক কষ্টকর হয়ে পড়ে। কেননা, দ্রব্যমূল্য বাড়লেও মানুষের আয় আশানুরূপ হারে বাড়ে না। সর্বোপরি, সামাজিক নিরাপত্তার অভাব এবং শহরে লোকসংখ্যার চাপ বেশি হওয়ার ফলে ভূমিহীন কৃষক রফিকের পরিবারের মতো পরিবারগুলোতে মৌল চাহিদা পূরণ করা কষ্টকর হয়ে পড়েছে।

HSC সমাজকর্ম ২য় পত্র (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর অধ্যায় ১ pdf download

৭. রীমা বাবা-মায়ের সাথে মিরপুরে একটি ফ্ল্যাটে থাকে। তার চার ভাই-বোন স্কুলে পড়ে। তার বাবা তাদের জন্য পুষ্টিকর খাবার ও সুন্দর পোশাকের ব্যবস্থা করেন। অবসরে সবাই মিলে বেড়াতে যান, গল্প-গুজব করেন।
ক. মানবিক চাহিদা কী?
খ. 'চিত্তবিনোদন একটি মৌলমানধিক চাহিদা' বুঝিয়ে লেখ।
গ. উদ্দীপকে রীমার কোন মৌল মানবিক চাহিদা পূরণের বর্ণনা অনুপস্থিত?
ঘ. উক্ত অনুপস্থিত চাহিদাটি অন্য চাহিদাকে কীভাবে প্রভাবিত করে?

৭ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. সুস্থ ও স্বাভাবিকভাবে বেঁচে থাকার জন্য মানুষের চাহিদা পূরণ প্রয়োজন সেগুলোকে মৌল মানবিক চাহিদা বলে।

খ. মৌলিক মানবিক চাহিদা হিসেবে চিত্তবিনোদনের গুরুত্ব অপরিসীম।
চিত্তবিনোদন হলো মানুষের মনের খোরাক। চিত্তবিনোদনের ফলে মানুষের মনে আসে আনন্দ, কাজে পায় শক্তি ও প্রেরণা, দূর হয় একঘেয়েমি। মানুষ বাস্তব জীবনে এত বেশি ব্যস্ত থাকে যে, মাঝে মধ্যে কাজে একঘেয়েমি চলে আসে, কাজে মন বসে না। তখনই দরকার নির্মল চিত্তবিনোদনের, যা ক্লাস্তি দূর করে নতুন কাজ করার জোগায়।

গ. উদ্দীপকে রীমার মৌল মানবিক চাহিদা স্বাস্থ্য পূরণের বর্ণনা অনুপস্থিত।
সমাজে মর্যাদার সাথে বেঁচে থাকতে এবং সামাজিক ভূমিকা পালনের জন্য মৌল মানবিক চাহিদাগুলো পূরণ করা অপরিহার্য। এ চাহিদাগুলো পূরণ না করলে পৃথিবীতে বেঁচে থাকা প্রায় অসম্ভব। যেমন- খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা ও চিত্তবিনোদন ইত্যাদি।। প্রত্যেক মানুষের এসব চাহিদা পূরণ করা আবশ্যক।
উদ্দীপকে দেখা যায়, রীমা বাবা-মায়ের সাথে একটি ফ্ল্যাটে থাকে। এছাড়া তারা চার ভাই-বোন স্কুলে পড়ে। তারা পুষ্টিকর খাবার খায়; সুন্দর পোশাক পড়ে এবং অবসরে বেড়াতে যায়, গল্প গুজব করে। উদ্দীপকের এসব তথ্য মৌল মানবিক চাহিদা যথাক্রমে খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিত্তবিনোদনকে নির্দেশ করে। কিন্তু আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ মৌল মানবিক চাহিদা স্বাস্থ্য উদ্দীপকে অনুপস্থিত। যা মানুষ কর্মক্ষম ও আর্থ-সামাজিক ভূমিকা পালনে সহায়তা করে। স্বাস্থ্যহীনতা মানুষকে হীনমন্যতায় ভোগায়। তাই ব্যক্তিগত, সামাজিক ও জাতীয় উন্নয়নে সুস্বাস্থ্য একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান অন্যতম উপাদান। সুতরাং বলা যায় উদ্দীপকে মৌল মানবিক চাহিদার স্বাস্থ্যের বর্ণনা অনুপস্থিত।

ঘ. উক্ত অনুপস্থিত চাহিদাটি হলো স্বাস্থ্য, যা অন্যান্য চাহিদাকে প্রত্যেক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রভাবিত করে।
মৌল মানবিক চাহিদা মানুষের শারীরিক, মানসিক ও সামাজিক ভূমিকা পালনে ও মানুষের পরিপূর্ণ বিকাশে সাহায্য করে। এর কোন একটির অভাব অন্য চাহিদাগুলোকে উপর বিরূপ প্রভাব ফেলে। সেইসা বিভিন্ন সমস্যারও সৃষ্টি করে।
স্বাস্থ্যের চাহিদা পূরণ করা মানুষের বেঁচে থাকার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সুস্বাস্থ্যের অভাবে মানুষের শারীরিক ও মানসিক বিকাশ বাধাপ্রাপ্ত হয়। স্বাস্থ্য ভালো না থাকলে মানুষের কোনো কিছুই ভালো লাগে না। সুস্বাস্থ্যের সাথে খাদ্য, বাসস্থান, শিক্ষা, চিত্তবিনোদন বস্তু সব কিছুই পরস্পর সম্পর্কযুক্ত। স্বাস্থ্য ভালো না থাকলে খাদ্যগ্রহণে অনীহা দেখা দেয়, বাসস্থানে ভালো লাগে না, সুস্বাস্থ্যের অভাবে অপুষ্টি দেখা দেয়, যা মেধাশক্তি বিকাশের অন্তরায়। এভাবে স্বাস্থ্য শিক্ষাকে প্রভাবিত করে। এছাড়া চিত্তবিনোদন যা মনের খোরাক মেটায় কিন্তু স্বাস্থ্যই যদি ভালো না থাকে, এ চাহিদাও গৌণ হয়ে পড়ে। মানুষের মাঝে এক ধরনের হতাশা কাজ করে। হীনমন্যতায় ভোগে। সামাজিক ভূমিকা পালনে ব্যর্থ হয়। এভাবে স্বাস্থ্য অন্যান্য মৌল মানবিক চাহিদার উপর প্রভাব বিস্তার করে।
সুতরাং বলা যায়, উদ্দীপকে উল্লিখিত অনুপস্থিত মৌল মানবিক চাহিদা স্বাস্থ্য যদি যথাযথভাবে পূরণ না হলে অন্যান্য চাহিদাগুলোকে নানাভাবে প্রভাবিত করে।

৮. 'ক' গ্রামে গত বছর খরায় সমস্ত আবাদি ফসল নষ্ট হয়। ঐ গ্রামের সকলেই ফসলের অভাবে ঠিকমত তাদের চাহিদা মেটাতে পারেনি। এ পর্যায়ে রোগ-বালাই প্রকট আকার ধারণ করে। পরবর্তীতে সরকার তাদের চাহিদা পূরণে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়।
ক. কাদেরকে চরম দরিদ্র বলে গণ্য করা হয়?
খ. মানবসম্পদ কীভাবে উন্নয়ন করা যায়?
গ. 'ক' গ্রামে কোন কোন চাহিদার অভাব রয়েছে? ব্যাখ্যা করো। 
ঘ. উক্ত পরিস্থিতিতে কী কী সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে বলে তুমি মনে কর? মন্তব্য করো।

৮ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. দৈনিক যারা ১৮০৫ কিলো ক্যালরির নিচে খাদ্য গ্রহণ করে তাদের চরম দরিদ্র বলে।

খ. যথাযথ শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে মানবসম্পদের উন্নয়ন ঘটানো যায়।
কাঙি্ক্ষত জনসংখ্যা একটি দেশের মূল্যবান সম্পদ। তারা দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগাতিকে তরান্বিত করে। কিন্তু বাংলাদেশের মতো অধিক জনসংখ্যা প্রবণ দেশের জন্য তা অভিশাপ। কারণ এদেশের আয়তনের তুলনায় জনসংখ্যা অনেক বেশি। এ বাড়তি জনসংখ্যা বিভিন্ন সমস্যার সৃষ্টি করে। তাই জনসংখ্যাকে উপযুক্ত কারিগরি শিক্ষার মাধ্যমে দেশের সম্পদে পরিণত করা যায়।

গ. উদ্দীপকের 'ক' গ্রামে খাদ্য ও স্বাস্থ্যের অভাব রয়েছে।
মানুষের শারীরিক, মানসিক ও সামাজিক বিকাশের জন্য যেসব চাহিদা পূরণ করতে হয় তাকে মৌলিক মানবিক চাহিদা বলে। খাদ্য ও চিকিৎসা মানুষের মৌলিক মানবিক চাহিদায় মধ্যে অন্যতম। মানুষ জন্মগ্রহণের পর তার বেঁচে থাকা, বৃদ্ধি ও বিকাশের জন্য খাদ্যের দরকার হয়। আবার মানুষের আরেকটি মৌলিক মানবিক চাহিদা হলো স্বাস্থ্য স্বাস্থ্য বলতে মানুষের শারীরিক মানসিক উভয় ধরনের সুস্থতাকে বোঝায়। এর অভাবে মানুষ দুর্বল, কর্মশক্তিহীন ও রোগাক্রান্ত হয়ে পড়ে। উদ্দীপকে এ দুটি চাহিদার অভাবকেই ইঙ্গিত করা হয়েছে।
উদ্দীপকে দেখা যায়, 'ক' গ্রামে খরায় আবাদি ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। ঐ গ্রামের কেউই ফসলের অভাবে খাদ্যের চাহিদা ঠিকমতো পূরণ করতে পারেনি। এক পর্যায়ে সেই গ্রামে রোগ-বালাই প্রকট আকার ধারণ করে। তাই বলা যায়, 'ক' গ্রামে খাদ্য ও স্বাস্থ্য নামক মৌলিক মানবিক চাহিদার অভাব পরিলক্ষিত হয়।

ঘ. উক্ত পরিস্থিতিতে অর্থাৎ খাদ্য ও স্বাস্থ্যের অভাবে 'ক' গ্রামে পুষ্টিহীনতা, স্বাস্থ্যহীনতা, অপরাধ প্রবণতা প্রভৃতি সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। মানুষের মৌলিক মানবিক চাহিদাগুলোর মধ্যে প্রধান হলো খাদ্য। 'মানুষের শারীরিক ও মানসিক বিকাশের জন্য সুষম ও পরিমিত খাদ্য গ্রহণ করা আবশ্যক। আর পরিমিত ও সুষম খাদ্যের অভাবে পুষ্টিহীনতা দেখা দেয়। আবার স্বাস্থ্য মানুষের আরেকটি মৌল মানবিক চাহিদা, ও শারীরিক ও মানসিক সুস্থতাই হলো স্বাস্থ্য। আর শারীরিক ও মানসিক সুস্থতার অভাবে স্বাস্থ্যহীনতা দেখা দেয়। স্বাস্থ্যহীনতা বলতে রোগে আক্রান্ত হওয়া বা দেহ ও মনের সুস্থতার অভাবকে বোঝায়। এছাড়া মানুষ যখন মৌল মানবিক চাহিদাগুলো পূরণে ব্যর্থ হয় তখন তা পূরণের জন্য বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকান্ড যেমন- চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, লুটতরাজ প্রভৃতি কাজে জড়িয়ে পড়ে। উদ্দীপকে 'ক' গ্রামে খরার কারণে ফসল নষ্ট হওয়া ঐ এলাকার মানুষ খাদ্যের চাহিদা পূরণ করতে পারেনি। এজন্য 'ক' এলাকার জনগণের মধ্যে পুষ্টিহীনতা ও স্বাস্থ্যহীনতা দেখা দিবে। আবার খাদ্য ও স্বাস্থ্যের চাহিদা পূরণ করতে গিয়ে ঐ এলাকার অনেকেই চুরি, ছিনতাই, ডাকাতির মতো অপরাধমূলক কাজে জড়িয়ে পড়তে পারে। উপরের আলোচনা থেকে বলা যায়, উদ্দীপকে 'ক' গ্রামে উদ্ভূত পরিস্থিতে সেখানে পুষ্টিহীনতা, স্বাস্থ্যহীনতা ও অপরাধপ্রবণতা দেখা দিতে পারে।

৯. সমাজকর্মী পল্লব সামাজিক সমস্যার উপর পিএইচডি করে সম্প্রতি দেশে ফিরেছেন। রাতের ঢাকার স্বাভাবিক চিত্র দেখে তিনি অবাক হন। রাস্তার পাশে, রেল ও বাস টার্মিনালে শুয়ে রাত কাটাচ্ছে নানা ধরনের মানুষ। এসব দৃশ্য একদিকে তাকে মর্মাহত করে, অন্যদিকে তিনি তার প্রশ্নের জবাবটি খুঁজে পান। তার ধারণা, মৌলিক চাহিদা পূরণের ব্যর্থতা থেকেই সৃষ্টি হয় সামাজিক সমস্যা। 
ক. মানুষের আশ্রয়স্থল কী?
খ. মৌলিক মানবিক চাহিদা বলতে কী বোঝায়?
গ. উদ্দীপকটিতে কোন মৌলিক মানবিক চাহিদাটির ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকের সর্বশেষ উক্তিটি কতটুকু যুক্তিসঙ্গত বলে তোমার মনে হয়? মতামত দাও।

৯ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. বাসস্থানই হলো মানুষের আশ্রয়স্থল।

খ. একজন মানুষের শারীরিক, মানসিক ও সামাজিক বিকাশ এবং সভ্য সমাজে বসবাসের জন্য যেসব চাহিদা পূরণ করতে হয় সেগুলোকেই মৌল মানবিক চাহিদা বলা হয়।
মৌল মানবিক চাহিদার মধ্যে রয়েছে খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা ইত্যাদি। প্রতিটি মানুষের জন্যই এ চাহিদাগুলো পূরণ করা প্রয়োজন। এসব চাহিদার বেশিরভাগ পূরণ করা না গেলে নানা ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। প্রকৃতপক্ষে মানবিক চাহিদাগুলো পূরণ না হলে সমাজে মানুষ মর্যাদার সাথে বসবাস করতে পারে না।

গ. উদ্দীপকটিতে মানুষের অন্যতম মৌল মানবিক চাহিদা বাসস্থানের ইঙ্গিত করা হয়েছে।
বাসস্থান বলতে মানুষের বসবাস করার জন্য স্থায়ী আবাসন ব্যবস্থাকে বোঝায়। সমাজ ও সভ্যতাকে স্থিতিশীল রূপ দেওয়ার পেছনে বাসস্থানে অবদান সবচেয়ে বেশি। এটি সমাজের ভিত্তি। সেই সাথে এটি বিভিন্ন প্রকৃতিক দুর্যোগ থেকে মানুষকে রক্ষা করা ও নিরাপত্তা প্রদানের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। বাসস্থানের কারণেই মানুষের প্রতি মানুষের পারস্পরিক সংহতি একাত্মতা, গোষ্ঠী জীবনযাপন ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে। এছাড়া সুষ্ঠু সহায়তা, গোপনীয়তা রক্ষা এবং নির্দিষ্ট ঠিকানায় থাকতে হলেও পরিবার গঠন করতে তাকে কোনো না কোনো আবাসস্থলে বসবাস করতে হয়। তাই বাসস্থান একটি অন্যতম মৌল মানবিক চাহিদা।
উদ্দীপকে দেখা যায়, সমাজকর্মী পল্লব সামাজিক সমস্যার উপর পিএইচডি করে দেশে ফিরেছেন। রাতে ঢাকার স্বাভাবিক চিত্র তাকে অবাক করে দেয়। মানুষ রাস্তার পাশে, রেল ও বাস টার্মিনালে শুয়ে রাত কাটাচ্ছে। উদ্দীপকের এ দৃশ্য মানুষের গুরুত্বপূর্ণ মৌল মানবিক চাহিদা বাসস্থানে সমস্যাকে নির্দেশ করে। সুতরাং বলা যায়, উদ্দীপকের ইঙ্গিতকৃত মৌল মানবিক চাহিদাটি হচ্ছে বাসস্থান।

ঘ. হ্যাঁ, উদ্দীপকের সর্বশেষ লাইন অর্থাৎ 'মৌলিক মানবিক চাহিদা পূরণের ব্যর্থতা থেকেই সামাজিক সমস্যা সৃষ্টি হয়’। উক্তিটি যুক্তিসঙ্গত।
মৌল মানবিক চাহিদা পূরণে ব্যর্থ হওয়ার কারণে পুষ্টিহীনতা, নিরক্ষরতা, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, অসামাজিক কর্মকান্ড ও ভিক্ষাবৃত্তির মতো বিভিন্ন সামাজিক সমস্যার সৃষ্টি হয়। যেকোনো দেশের আর্থ-সামাজিক সমস্যা সৃষ্টির পেছনে প্রধান কারণ হলো মৌল মানবিক চাহিদা পূরণের ব্যর্থতা। বাংলাদেশে এ চাহিদা পূরণের ব্যর্থতা থেকে সৃষ্ট সমস্যাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ হলো পুষ্টিহীনতা।
বিশ্বব্যাংকের জরিপে উল্লেখ আছে, বাংলাদেশে মোট জনসংখ্যা ২৬ শতাংশ অপুষ্ঠিতে ভুগছে। সেই সাথে প্রতিবছর ৩০ হাজার শিশু ভিটামিন 'এ' এর অভাবে অন্ধ হচ্ছে।
এছাড়া শিক্ষার মতো মৌল মানবিক চাহিদা পূরণের ব্যর্থতা থেকে বেকারত্ব সমস্যা দেখা দেয়। একইসাথে স্বাস্থ্যহীনতা, পুষ্টিহীনতা, জনসংখ্যা বৃদ্ধি, দারিদ্র্য, অপরাধপ্রবণতা, কুসংস্কার ইত্যাদি সমস্যার মূল কারণও নিরক্ষরতা। অন্যদিকে বাংলাদেশে বাসস্থানের মতো মৌল মানবিক চাহিদা পূরণ না হওয়ায় বস্তি এবং গৃহসমস্যা প্রকট আকার ধারণ করছে। সাধারণত শহরাঞ্চলের বস্তিগুলো মাদক চোরাচালানসহ নানা ধরনের অসামাজিক কাজের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়, যা সমাজে ব্যাপকমাত্রায় অপরাধপ্রবণতা বৃদ্ধি করে। উদ্দীপকেও মানুষের বিভিন্ন সমস্যার মধ্যে অন্যতম মৌল মানবিক চাহিদা বাসস্থান সমস্যা। আর এ চাহিদা পূরণের ব্যর্থতা থেকে সৃষ্টি হচ্ছে নানান ধরনের সামাজিক সমস্যা। মূলত মানুষের মৌল মানবিক চাহিদা পূরণের তাগিদেই এরূপ সামাজিক সমস্যা দেখা দেয়।
পরিশেষে বলা যায়, সামাজিক সমস্যা সৃষ্টির পেছনে অন্যতম কারণই হলো মৌল মানবিক চাহিদার পূরণের অপূর্ণতা।

১০. সুমন ঢাকা শহরে একটি বস্তিতে বসবাস করে। সে সারাদিন কাগজ কুড়ায়। দিন শেষে যা টাকা পায়, তা দিয়ে কোনো রকমে সংসার চালায়। ছোট দুই বোন এবং মায়ের ভরণপোষণ এবং বাবার চিকিৎসার টাকা জোগাড় করতে সে হিমশিম খায়। সংসারে সবাই খেয়ে না খেয়ে কোনো রকমে দিনযাপন করছে। প্রায়শই অভুক্ত থাকা সুমনের পরিবারে স্বাভাবিক ব্যাপার।
ক. দারিদ্র কী?
খ. মৌল মানবিক চাহিদা কয়টি ও কী কী?
গ. মৌল মানবিক চাহিদা হিসেবে খাদ্যের গুরুত্ব উদ্দীপকের আলোকে ব্যাখ্যা করো।
ঘ. অপুরিত মৌল মানবিক চাহিদা কীভাবে পুষ্টিহীনতার জন্য দায়ী? উদ্দীপকের আলোকে বিস্তারিত বর্ণনা করো।

১০ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. দারিদ্র হলো সামাজিক মর্যাদার অর্থনৈতিক মাপকাঠি।

খ. মানুষের মৌল মানবিক চাহিদা ছয়টি। এগুলো হলো, খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও চিত্তবিনোদন। সামাজিক জীব হিসেবে মানুষের দৈহিক বৃদ্ধি ও মানসিক বিকাশ এবং সামাজিক জীবনের উৎকর্ষতা অর্জনে এই চাহিদাগুলো পূরণ করা জরুরি। এ চাহিদাগুলো পূরণ না হলে পৃথিবীকে বেঁচে থাকা সম্ভব নয়।

গ. মৌল মানবিক চাহিদা হিসেবে খাদ্যের গুরুত্ব অপরিসীম।
সমাজে সম্মানজনকভাবে বেঁচে থাকার জন্য ছয়টি মৌল মানবিক চাহিদাই পূরণ হওয়া প্রয়োজন। কোন একটি চাহিদা পূরণ না হলে জীবনযাত্রার অসঙ্গতি দেখা দেয়। তারমধ্যে মানুষের প্রথম ও সবচেয়ে প্রয়োজনীয় চাহিদা হলো খাদ্য খাদ্য বলতে সেসব বস্তু বা দ্রব্যকে বোঝানো হয় যা শরীরের বৃদ্ধি ঘটায় ও কর্মশক্তি দানে সাহায্য করে। প্রয়োজনীয় খাবার গ্রহণ না করলে ব্যক্তির শারীরিক ও মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়।
উদ্দীপকে সুমন ঢাকা শহরে একটি বস্তিতে বাস করে এবং দিন শেষে কাগজ বিক্রির টাকা দিয়ে কোনো মতে সংসার চালায়। ছোট দুই বোন এবং মায়ের ভরণপোষণ ও বাবার চিকিৎসার টাকা জোগাড় করতে সে হিমশিম খায়। সেই সাথে সংসারে সবাই খেয়ে না খেয়ে কোনো মতে দিনযাপন করে। উদ্দীপকের এসব তথ্য দ্বারা সুমনের পরিবারে মৌল মানবিক চাহিদার ঘাটতিকে বোঝানো হয়েছে। বিশেষ করে খাদ্য ঘাটতিকে। খাদ্য মানুষের বেঁচে থাকার জন্য জরুরি মৌল মানবিক চাহিদা। তাই বলা যায়, সুমনের পরিবারে মৌল মানসিক চাহিদা হিসেবে খাদ্যের গুরুত্ব অপরিসীম।

ঘ. খাদ্যের মতো মৌল মানবিক চাহিদা পূরণ না হওয়ার কারণে পুষ্টিহীনতা দেখা দেয়।
সাধারণত পরিমিত খাদ্যের অভাবে পুষ্টিহীনতা দেখা দেয়। খাবারের ছয়টি উপাদানের কোনো একটির ঘাটতিই পুষ্টিহীনতার জন্য দায়ী। আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে। ফলে তারা পর্যাপ্ত খাবার পায় না। আর পুষ্টিকর খাবারের সংস্থান করা তাদের পক্ষে প্রায় অসম্ভব। ফলে এদেশের মানুষ পুষ্টিহীনতায় ভোগে। ফলে তারা রক্তশূন্যতা, চক্ষুরোগ, রিকেটস, রাতকানাসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়। এছাড়া মৌল মানবিক চাহিদা শিক্ষা যার অভাবে এদেশের মানুষ নিরক্ষর। এ নিরক্ষতার কারণে জনগণ খাদ্যে গ্রহণের ক্ষেত্রে অসচেতন। যার ফলে খাবার তালিকায় সুষম খাদ্যের অভাব থেকে যায়; যা তাদের পুষ্টিহীনতার জন্য দায়ী। এছাড়া সুষম খাদ্য গ্রহণের অভাবে দেশের ১৮ শতাংশ গর্ভবতী মা অপুষ্টির শিকার ও ৩৬ শতাংশ শিশু কম ওজনসহ জন্ম নিচ্ছে।
উদ্দীপকের সুমন ঢাকা শহরে সারা দিন কাগজ কুড়ায়। সে যে টাকা উপার্জন করে তা দিয়ে পরিবারে সদস্যদের ভরণপোষণ ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হিমশিম খেতে হয়। এর ফলে তার পরিবারে খাদ্যের চাহিদা যেমন পূরণ হয় না তেমনি তারা পুষ্টিহীনতাতেও ভোগে। এ থেকে বোঝা যায় সুমনের পরিবার অপুষ্টি শিকার। বিশেষ করে যার ফলে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়।
পরিশেষে বলা যায়, অপূরিত মৌল মানবিক চাহিদা খাদ্যই পুষ্টিহীনতার জন্য দায়ী।
Share:

HSC সমাজকর্ম ২য় পত্র (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর অধ্যায় ২ pdf download

এইচএসসি পরীক্ষার পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি
HSC Social Work 2nd Paper Srijonshil question and answer. HSC SocialWork 2nd Paper (Srijonshil) Creative Questions pdf download.

সমাজকর্ম
দ্বিতীয় পত্র

সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
অধ্যায়-২

HSC Social Work 2nd Paper
Srijonshil Question and Answer pdf download

১. রহিমা ভীষণ অসুস্থ। সমাজকর্মী কণা তাকে একটি হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে দেন। তার সহায়তায় রহিমার বিনামূল্যে চিকিৎসার ব্যবস্থা হয়। কণা হলো ঐ হাসপাতালের সমাজসেবা বিভাগের একজন দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসার। এজন্য এ কাজ করা তার জন্য সহজ হয়েছে।
ক. ‘Kline’ শব্দের উৎপত্তি কোন ভাষা হতে?
খ. প্রবীণকল্যাণ সমাজকর্ম বলতে কী বোঝ?
গ. উদ্দীপকে বর্ণিত কণার কার্যক্রম সমাজকর্মের কোন শাখাকে ইঙ্গিত করে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকে কণা সংশ্লিষ্ট শাখার একজন সমাজকর্মী হিসেবে আর কী কী ভূমিকা পালন করতে পারে? তোমার পাঠ্যবইয়ের আলোকে ব্যাখ্যা করো।

১ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. গ্রিক ভাষা থেকে 'Kline' শব্দের উৎপত্তি হয়েছে।

খ. সমাজকর্মের যে বিশেষায়িত শাখার জ্ঞান, দক্ষতা ও কৌশল প্রয়োগের মাধ্যমে প্রবীণদের কল্যাণে বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয় তাকে প্রবীণকল্যাণ সমাজকর্ম বলে।
বার্ধক্যে মানুষ নানা ধরনের সমস্যায় ভোগে। এ সময় অনেককেই দারিদ্র্য, অনাহার, অবহেলা, মানসিক নির্যাতন, প্রতারণা আর শারীরিক নানা বাধা-বিপত্তি বিপর্যস্ত করে তোলে। এ ধরনের সমস্যা মোকাবেলা করা বা কাটিয়ে ওঠার জন্যই প্রবীণকল্যাণ সমাজকর্ম কাজ করে। এক্ষেত্রে সমাজকর্মীরা বয়স্কদের কল্যাণে নিজস্ব জ্ঞান ও দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে সেবা প্রদান করে।

গ. উদ্দীপকের সমাজকর্মী কণার কার্যক্রম চিকিৎসা সমাজকর্মের ইঙ্গিত দেয়।
সমাজকর্মের একটি বিশেষ শাখা হলো চিকিৎসা সমাজকর্ম। রোগীকে হাসপাতালে ভর্তির পর এর পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে সাহায্য করা এ শাখার কাজ। সেইসাথে দরিদ্র ও দুস্থ রোগীদের ওষুধ ও বিভিন্ন শারীরিক পরীক্ষার ব্যয় বহন এবং চিকিৎসার সময় তাদের পরিবারকে আর্থিক সাহায্য প্রদানে এ শাখা কাজ করে। এছাড়াও রোগ ও অসুস্থতার ধরন অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট বিভাগ বা ডাক্তারের কাছে পাঠানোর ক্ষেত্রে চিকিৎসা সমাজকর্ম ভূমিকা রাখে। 
চিকিৎসা সমাজকর্ম শাখা রোগীদের খাদ্য, বস্ত্র, ওষুধ ও চিকিৎসা উপকরণ দিয়ে সাহায্য করার পাশাপাশি মানসিক ও আবেগীয় সমর্থন দেয়। প্রয়োজন অনুযায়ী দরিদ্র রোগীদের ক্ষুদ্রঋণ পেতে সাহায্য করাও চিকিৎসা সমাজকর্মের কার্যক্রমভুক্ত। উদ্দীপকের রহিমাকে সাহায্য করতে গিয়ে কণা উল্লেখিত কাজগুলোই করেন। তাই বলা যায়, কণার কার্যক্রম চিকিৎসা সমাজকর্মের ইঙ্গিত দেয়।

ঘ. কণা একজন সমাজকর্মী হিসেবে উদ্দীপকে উল্লিখিত কাজ ছাড়াও আরও বিভিন্ন ধরনের ভূমিকা রাখতে পারেন।
সাধারণত চিকিৎসা সমাজকর্মীরা সমাজকর্মের জ্ঞান, দক্ষতা, কৌশল প্রয়োগের মাধ্যমে চিকিৎসা ও স্বাস্থ্য সুবিধা পেতে রোগীকে সাহায্য করেন। এছাড়া তারা রোগীদের সামাজিকভাবে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করেন। তবে এক্ষেত্রে সমাজকর্মীরা আরও কিছু ভূমিকা রাখতে পারেন। উদ্দীপকের কণার মতো চিকিৎসা সমাজকর্মীরা রোগীর চাহিদা অনুযায়ী আর্থিক সহায়তা দিতে ও চিকিৎসা উপকরণ সরবরাহ করতে সচেষ্ট থাকেন। অনেক সময় তারা রোগীকল্যাণ সমিতির মাধ্যমে গরিব ও দুস্থ রোগীদের বিনামূল্যে ওষুধ, চশমা, হুইল চেয়ার, ক্র্যাচ ইতাদি সরবরাহ করার উদ্যোগও নেন। এছাড়া তিনি ডাক্তার, নার্স ও রোগীদের মধ্যে সমন্বয়কের ভূমিকা পালন করে থাকেন। এক্ষেত্রে সমাজকর্মী রোগী সম্পর্কে ডাক্তারকে সঠিক তথ্য দেন। সেইসাথে হাসপাতালে ভর্তি হবার পর রোগীর মধ্যে যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা, ভয়ভীতি বা চিকিৎসা সংক্রান্ত কুসংস্কার থাকে তা দূর করা ও যথাসময়ে চিকিৎসা গ্রহণে তাকে উদ্বুদ্ধ করতেও সমাজকর্মী ভূমিকা রাখেন।
সার্বিক আলোচনা থেকে তাই বলা যায়, একজন চিকিৎসা সমাজকর্মী হিসেবে কণা শুধুমাত্র উদ্দীপকে উল্লিখিত কাজ নয়, বরং আরও বিভিন্ন ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখতে পারেন।

২. রবিন ও তার স্ত্রী দু'জনে ব্যাংক কর্মকর্তা। রবিনের বাবা সম্প্রতি অবসরে গেছেন। রবিন তার বাবার তেমন খোঁজ-খবর রাখতে পারে না। বাবার সাথে মাঝেমাঝেই তার ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়। তাই রবিন বাবাকে বেসরকারিভাবে গড়ে ওঠা একটি বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠানে পাঠিয়েছে যে। থাকা, খাওয়া ও চিকিৎসার ব্যবস্থা আছে।
ক. কত সালে সর্বপ্রথম ক্লিনিক্যাল সমাজকর্ম ধারণাটি ব্যবহার করে?
খ. ‘শ্রমকল্যাণের সম্প্রসারিত রূপই শিল্প সমাজকর্ম'— বুঝিয়ে
গ. উদ্দীপকে যে প্রতিষ্ঠানের ইঙ্গিত করা হয়েছে সেটি সমাজকর্মের কোন শাখার সাথে সংশ্লিষ্ট? ব্যাখ্যা করো। 
ঘ. উদ্দীপকে ইঙ্গিতকৃত শাখাটির কার্যক্রম ফলপ্রসূকরণে একজন সমাজকর্মীর ভূমিকা বিশ্লেষণ করো।

২ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. NASW ১৯৮৪ সালে সর্বপ্রথম ক্লিনিক্যাল সমাজকর্মের ধারণা দেয়।

খ. শিল্প সমাজকর্ম শ্রমিকদের কল্যাণে কাজ করে বলে একে শ্রমকল্যাণের সম্প্রসারিত রূপ হিসেবে আখ্যায়িত করা যায়।
শিল্প সমাজকর্ম এমন একটি ক্ষেত্র যেখানে সমাজকর্মী শিল্প প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের প্রত্যক্ষভাবে এবং প্রাতিষ্ঠানিক উন্নয়নে পরোক্ষভাবে সাহায্য করেন। এ সহায়তা শ্রমিক শ্রেণির মানবিক ও সামাজিক চাহিদা পূরণের মাধ্যমে তাদের সামগ্রিক জীবনমান উন্নয়নে ভূমিকা রাখে। শিল্প সমাজকর্মে শিল্পের উৎপাদন ও শ্রমিকের স্বার্থ দুটি দিকই রক্ষিত হয়। তবে সমাজকর্মের এ শাখার মূল কাজ হলো শ্রমিকদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা। এজন্য বলা হয় শ্রমকল্যাণের সম্প্রসারিত রূপই শিল্প সমাজকর্ম।

গ. উদ্দীপকে বৃদ্ধনিবাসের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে, যেটি সমাজকর্মের অন্যতম শাখা প্রবীণকল্যাণের সাথে সংশ্লিষ্ট।
বয়স বাড়ার সাথে সাথে দারিদ্র্য, অনাহার, অনাদর, অবহেলা, বিদ্রুপ, মানসিক নির্যাতন, প্রতারণা আর শারীরিক নানা ধরনের বাধা-বিপত্তি ব্যক্তিকে বিপর্যস্ত করে তোলে। এসব সমস্যার সমাধান ও প্রবীণদের জন্য সুস্থ, সুন্দর এবং নিরাপদ পারিবারিক ও সামাজিক পরিবেশ সৃষ্টির লক্ষ্যে প্রবীণকল্যাণ সমাজকর্মের উৎপত্তি হয়েছে।
আর এর অন্যতম কার্যক্রম হলো বৃদ্ধ নিবাস স্থাপন করে সেখানে অসহায় দরিদ্র প্রবীণদের থাকা, খাওয়া, চিকিৎসা, নিরাপত্তা, বিনোদনসহ যাবতীয় ব্যবস্থা করা।
উদ্দীপকের রবিন তেমনই একটি বৃদ্ধনিবাসে বাবাকে পাঠিয়েছে। কাজের ব্যস্ততার কারণে তার পক্ষে সবসময় অবসরপ্রাপ্ত বাবার খোঁজ নেওয়া সম্ভব হয় না। প্রায়ই বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বাবার সাথে ভুল বোঝাবুঝিও হয়। এক পর্যায়ে রবিন তাই বাবাকে বেসরকারি একটি বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান অর্থাৎ বৃদ্ধনিবাসে পাঠিয়ে দেয়। প্রতিষ্ঠানটি রবিনের বাবার মতো প্রবীণদের থাকা, খাওয়া ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করে। তাই বলা যায়, উদ্দীপকে ইঙ্গিতকৃত প্রতিষ্ঠান অর্থাৎ বৃদ্ধনিবাস প্রবীণকল্যাণ সমাজকর্মের কার্যক্রমের আওতাভুক্ত।

ঘ. উদ্দীপকে ইঙ্গিতকৃত প্রবীণকল্যাণ সমাজকর্মের কার্যক্রম ফলপ্রসূ করে তুলতে একজন সমাজকর্মী অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে পারেন।
বার্ধক্যে ব্যক্তি যে ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হন সে ব্যাপারে অনেক সময় পরিবার, সমাজ বা রাষ্ট্রের পূর্ণাঙ্গ ধারণা থাকে না। এতে করে প্রবীণদের প্রতি আমাদের করণীয় কী হতে পারে সে সম্পর্কেও সবার সঠিক ধারণা নেই। এজন্য জনগণকে এ ব্যাপারে সচেতন করে তোলা জরুরি। এ ব্যাপারে সমাজকর্মীরা সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারেন।
কৃষিনির্ভর ও গ্রামপ্রধান বাংলাদেশে একসময় যৌথ পরিবার প্রথা প্রচলিত ছিল। সে সময় বয়স্ক ব্যক্তিরা পরিবার থেকেই প্রয়োজনীয় আর্থিক, মানসিক ও সামাজিক নিরাপত্তা পেতেন। শিল্প বিপ্লব পরবর্তী আধুনিক সমাজ এ ঐতিহ্য থেকে ধীরে ধীরে অনেকটাই সরে এসেছে। বাংলাদেশে সাম্প্রতিক কয়েকযুগের নগরায়ণ ও শিল্পায়ন প্রবীণদের জন্য পরিস্থিতিকে আরও প্রতিকূল করে তুলেছে। এক্ষেত্রে সমাজকর্মীরা বয়স্ক মানুষদের সমস্যা সমাধানে সামাজিক কার্যক্রম (Social Action) পদ্ধতি প্রয়োগের মাধ্যমে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে পারেন। আবার প্রবীণদের কল্যাণে কাজ করা বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সাথেও সংশ্লিষ্ট হতে পারেন। যেমন, বাংলাদেশ প্রবীণ হিতৈষী সংঘ ও জরাবিজ্ঞান প্রতিষ্ঠান। অনেক সময় দেখা যায়, প্রবীণরা তাদের বয়সজনিত মূল্যবোধ বা পুরনো বদ্ধমূল ধারণার কারণে বিভিন্ন ধরনের মানসিক সমস্যার মুখোমুখি হন। এক্ষেত্রে সমাজকর্মী তাদেরকেও সচেতন করে তুলতে পারে। সেইসাথে তারা যাতে পরিবারের অন্য সদস্যদের আদর্শ ও চিন্তাধারার সাথে খাপ খাইয়ে নিতে পারেন সে ধরনের পরিবেশ সৃষ্টির উদ্যোগ নিতে পারেন। এ সব ক্ষেত্রে একজন প্রবীণকল্যাণ সমাজকর্মী নিজস্ব জ্ঞান, দক্ষতা ও কৌশলের প্রয়োগ ঘটাতে পারেন।
সামগ্রিক আলোচনা থেকে তাই বলা যায়, প্রবীণকল্যাণ সমাজকর্মের কার্যক্রম ফলপ্রসূ করতে একজন সমাজকর্মীর ভূমিকা অপরিসীম।

৩. সাভারে একটি গার্মেন্টসে মালিক ও শ্রমিক দ্বনে্দ্বর কারণে উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। ফলে নিম্ন শ্রেণির কর্মচারিদের ছাঁটাই করে মালিক নতুন করে কারখানা শুরু করতে চাইলে তারা প্রতিবাদ ও আন্দোলন শুরু করে। উচ্চবিত্ত কর্মকর্তাদের সমস্যা না হলেও নিম্ন শ্রেণির কর্মীদের পথে বসতে হয়। এদের সমস্যা সমাধান ও উভয় পক্ষের মধ্যে সমঝোতা করার জন্য তৃতীয় পক্ষের প্রয়োজন উপলব্ধি করে। 
ক. কারা সাইকিয়াট্রিক সমাজকর্মের কাজ করে?
খ. প্রবীণ সমাজকর্ম বলতে কী বোঝ?
গ. উদ্দীপকের সমস্যা সমাধানের জন্য সমাজকর্মের কোন বিশেষায়িত শাখা তৃতীয় পক্ষ হিসেবে কাজ করতে পারে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত সমস্যার সমাধানে তৃতীয় পক্ষ কীভাবে ভূমিকা রাখতে পারে? মতামত দাও।

৩ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. সাইকিয়াট্রিক সমাজকর্মীরা সাইকিয়াট্রিক সমাজকর্মের কাজ করে।

খ. প্রবীণ সমাজকর্ম বলতে সমাজকর্মের এমন শাখাকে বোঝায় যেটি প্রবীণদের সার্বিক কল্যাণের জন্য কাজ করে।
বর্তমানে প্রবীণদের বিশেষ জনগোষ্ঠী হিসেবে বিবেচনা করা প্রতি বিশ্বের সবদেশে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। এ প্রেক্ষিতেই প্রবীণ সমাজকর্মের উদ্ভব হয়েছে। সমাজকর্ম অভিধানের (১৯৯৫) ব্যাখ্যানুযায়ী, প্রবীণকল্যাণ সমাজকর্ম হলো সমাজকর্মের বিশেষ অনুশীলন ক্ষেত্র, যাতে প্রবীণ জনগোষ্ঠীর মনো-সামাজিক চিকিৎসা এবং প্রবীণ ব্যক্তিদের জন্য কর্মসূচি প্রণয়নের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়।

গ. উদ্দীপকের মালিক-শ্রমিক দ্বন্দ্ব নিরসনের জন্য সমাজকর্মের অন্যতম বিশেষায়িত শাখা শিল্প সমাজকর্ম তৃতীয় পক্ষ হিসেবে কাজ করতে পারে।
শিল্প সমাজকর্ম শিল্প প্রতিষ্ঠানের সাথে সংশ্লিষ্ট নানা সমস্যা নিয়ে কাজ করে। বিশেষ করে শিল্প প্রতিষ্ঠানে মালিক-শ্রমিক সম্পর্কের উন্নয়ন এবং শ্রমিকদের অধিকার ও সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিতকরণে শিল্প সমাজকর্ম কাজ করে। উদ্দীপকের সমস্যাটিও শিল্প সমাজকর্মের পরিধির আওতাভুক্ত। উদ্দীপকের বর্ণনা অনুসারে, সাভারের একটি গার্মেন্টসে মালিক-শ্রমিক দ্বনে্দ্বর কারণে প্রতিষ্ঠানটির উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। এক্ষেত্রে মালিক পক্ষের স্বার্থের কারণে শিল্প প্রতিষ্ঠানটির নিম্ন পর্যায়ের কর্মীরা তাদের প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এ প্রেক্ষিতে প্রতিষ্ঠানটিতে সৃষ্ট সংকটাবস্থার অবসান ঘটাতে তৃতীয় পক্ষ হিসেবে একজন শিল্প সমাজকর্মী নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করতে পারেন। প্রকৃতপক্ষে এ ধরনের সংকটের কারণেই সময়ের প্রয়োজনে শিল্প সমাজকর্মের উদ্ভব ও বিকাশ ঘটেছে।
তাই বলা যায়, উদ্দীপকের সমস্যা সমাধানে পেশাদার সমাজকর্মের বিশেষায়িত শাখা শিল্প সমাজকর্মের ভূমিকা অত্যন্ত কার্যকর ও ফলপ্রসূ হবে।

ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত মালিক-শ্রমিক দ্বন্দ্ব নিরসনে শিল্প সমাজকর্ম পরামর্শ প্রদান ও কার্যকর হস্তক্ষেপের মাধ্যমে ভূমিকা রাখতে পারে।
শিল্প প্রতিষ্ঠান পরিচালনার কিছু সুনির্দিষ্ট বিধি-বিধান রয়েছে। বিশেষ করে শ্রম আইনে এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোকপাত করা হয়েছে। এ প্রেক্ষিতে মালিক-শ্রমিক দ্বনে্দ্বর সমাধানে শ্রম আইন অনুসারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণে শিল্প সমাজকর্ম ভূমিকা রাখে। উদ্দীপকেও শিল্প সমাজকর্মের এরূপ ভূমিকা ফলপ্রসূ হবে।
উদ্দীপকের সাভারের গার্মেন্টস প্রতিষ্ঠানটিতে মালিক-শ্রমিক দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয়েছে। এখন শিল্প সমাজকর্মীরা এই দ্বন্দ্ব সৃষ্টির পেছনে বিদ্যমান কারণ নির্ধারণ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারেন। দ্বনে্দ্বর কারণ চিহ্নিত করার পর তারা বিদ্যমান শ্রম আইনের আলোকে এর সমাধান নির্ধারণ করবেন। পরবর্তী ধাপে তারা মালিক ও শ্রমিক পক্ষের মধ্যে সেতুবন্ধন সৃষ্টির কাজ করবেন। তাদের সাথে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার প্রকৃতি ও কারণ তুলে ধরে সমাধানের পথ নির্দেশ করে দেবেন। এক্ষেত্রে মূলত শিল্প সমাজকর্মীরা দল সমাজকর্মের পদ্ধতির আলোকে সমস্যা সমাধানে কাজ করবেন। তারা সাভারের শিল্প প্রতিষ্ঠানটিতে বিদ্যমান দল বা সমষ্টিকে অর্থাৎ মালিক-শ্রমিক পক্ষকে পরামর্শ প্রদানের মাধ্যমে তাদের মধ্যে সমঝোতা সৃষ্টি করার চেষ্টা করবেন। এভাবে তারা আলোচ্য সমস্যার একটি যৌক্তিক সমাধান দিতে সমর্থ হবেন।
পরিশেষে বলা যায়, উদ্দীপকের সমস্যা সমাধানে শিল্প সমাজকর্ম উপরোল্লিখিতভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

৪. দরিদ্র বাবার সন্তান শারমিনের অল্প বয়সে বিয়ে হয়। বিয়ের এক বছর পরে তার একটি প্রতিবন্ধী সন্তান হয়। শারমিনের স্বামী তার ভরণপোষণ করতে না পেরে তাকে তালাক দেয়। দরিদ্র, অসহায় ও স্বামী পরিত্যক্তা শারমিন প্রতিবন্ধী সন্তানটিকে নিয়ে খুবই কষ্টে আছে।
ক. চিকিৎসা সমাজকর্মের সর্বপ্রথম প্রয়োগ শুরু হয় কত সালে? 
খ. শিল্প সমাজকর্ম বলতে কী বোঝ?
গ. উদ্দীপকের শারমিন ও তার সন্তানের জন্য সমাজকর্মের কোন শাখা সাহায্য করতে পারে? আলোচনা করো।
ঘ. উদ্দীপকের উল্লিখিত শাখা বাংলাদেশের বহুমুখী সমস্যা সমাধানে কতটা কার্যকরী বলে তুমি মনে কর? ব্যাখ্যা করো।

৪ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. ১৯০৫ সালে চিকিৎসা সমাজকর্মের সর্বপ্রথম প্রয়োগ শুরু হয়।

খ. শিল্প সমাজকর্ম বলতে কারখানার পরিবেশে শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়নে সাহায্য করার লক্ষ্যে সমাজকর্মের জ্ঞান ও দক্ষতার অনুশীলনকে বোঝায়।
শিল্প সমাজকর্ম পেশাদার সমাজকর্ম অনুশীলনের একটি বিশেষায়িত শাখা। এক্ষেত্রে শিল্প-কারখানায় নিয়োজিত শ্রমিকদের সামগ্রিক জীবনমান উন্নয়নের লক্ষ্যে সমাজকর্মের জ্ঞান, নীতি ও দক্ষতা প্রয়োগ করা হয়। মূলত শ্রমিক এবং তাদের পরিবারের সামাজিক ভূমিকা ও মানবিক সম্পর্ক সংশ্লিষ্ট সমস্যা মোকাবিলায় সাহায্য করাই শিল্প সমাজকর্মের লক্ষ্য।

গ. উদ্দীপকের শারমিন ও তার সন্তানের সমস্যা মোকাবিলায় সমাজকর্মের অন্যতম শাখা ক্লিনিক্যাল সমাজকর্ম সাহায্য করতে পারে। ক্লিনিক্যাল সমাজকর্ম হলো সমাজকর্মের সেই শাখা যেখানে সাহায্যার্থীর (Client) সমস্যা (রোগ) নির্ণয় বা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সমাধানে সাহায্য করা হয়। চিকিৎসা চলাকালীন রোগীকে মানসিক স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া সমাজকর্মের এ শাখার বৈশিষ্ট্য। বিবাহবিচ্ছেদ, অটিজম প্রভৃতির মতো সমস্যা নিয়ে এ শাখা কাজ করে।
উদ্দীপকের শারমিন একজন স্বামী পরিত্যক্তা নারী। তার সন্তানটিও প্রতিবন্ধী। সে দারিদ্র্য ও নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হয়ে অসহায় জীবনযাপন করছে। এ অবস্থায় ক্লিনিক্যাল সমাজকর্মীরা তাকে সুস্থ জীবনযাপনে সাহায্য করতে পারেন। ক্লিনিক্যাল সমাজকর্মীরা দৈহিক ও মানসিক অসুস্থতায় আক্রান্ত ব্যক্তি এবং অবহেলা, বঞ্চনা এবং সহিংসতার শিকার মানুষদের নিয়ে কাজ করেন। এছাড়া প্রতিবন্ধী শিশুদের পারস্পরিক মিথস্ক্রিয়া, সামাজিক বিষয়ে দক্ষতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রেও ক্লিনিক্যাল সমাজকর্মীরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। স্বামী পরিত্যক্তা শারমিনের মানসিক শক্তি ফিরিয়ে আনতে ক্লিনিক্যাল সমাজকর্মীরা সাহায্য করতে পারেন। সমাজকর্মীরা তার প্রতিবন্ধী সন্তানের জন্য প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসেবার ব্যবস্থা করতেও কার্যকর ভূমিকা নিতে পারেন। এভাবে ক্লিনিক্যাল সমাজকর্ম শারমিন ও তার প্রতিবন্ধী সন্তানকে নতুন করে আশার আলো দেখাতে পারে।

ঘ. উদ্দীপকের উল্লিখিত শাখা অর্থাৎ কিলনিক্যাল সমাজকর্ম বাংলাদেশের সমাজে বিদ্যমান বহুমুখী সমস্যা সমাধানে অত্যন্ত কার্যকর ও ফলপ্রসূ হতে পারে।
বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থা বিশ্লেষণ করলে বহু ধরনের সমস্যা দেখা যায়। এসব সমস্যা সৃষ্টির জন্য দায়ী মূলত দারিদ্র্য, অশিক্ষা আর নানা ধরনের সামাজিক কুপ্রথা। বাংলাদেশের বাস্তবতায় এ সব সমস্যা সমাধানে সমাজকর্ম অনুশীলনের বিকল্প নেই। বিশেষ করে ক্লিনিক্যাল সমাজকর্মের যথার্থ প্রয়োগ ঘটাতে পারলে অনেক সামাজিক সমস্যার কার্যকর সমাধান সম্ভব।
ক্লিনিক্যাল সমাজকর্ম ব্যক্তিগত, পারিবারিক এবং দলীয়ভাবে সেবা দিয়ে থাকে। সমাজকর্মের এ শাখার পরিধি ব্যাপক। প্রিয়জনের মৃত্যু, ব্যক্তিগত অসামর্থ্য, ব্যর্থতা, বিবাহবিচ্ছেদ চাকরি হারানো ইত্যাদি ঘটনায় জীবনযাত্রায় যে পরিবর্তন হয় তা অনেক সময় ব্যক্তিকে বিভিন্নমাত্রায় বিপর্যস্ত করে। এরকম পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিতে ক্লিনিক্যাল সমাজকর্ম কাজ করে। তাছাড়া ক্লিনিক্যাল সমাজকর্ম উদ্বাস্তু, বেকার, দুর্বল ও অসহায় প্রবীণ জনগোষ্ঠী এবং গৃহহীনদের নিয়ে কাজ করে থাকে। দাম্পত্যকলহ, পারিবারিক দ্বন্দ্ব, সামাজিক যোগাযোগহীনতা, মাদকাসক্তি, অপরাধপ্রবণতা, কিশোর অপরাধ ইত্যাদি সমস্যাও ক্লিনিক্যাল সমাজকর্মের পরিধিভুক্ত। আর বর্তমান বাংলাদেশে এসব সমস্যা ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়েছে। সমাজকর্মের কর্মপদ্ধতির আলোকে ক্লিনিক্যাল সমাজকর্ম এসব সমস্যা সমাধানে উপযুক্ত।
পরিশেষে বলা যায়, ক্লিনিক্যাল সমাজকর্মের অনুশীলন বাংলাদেশে বিদ্যমান নানারকম পারিবারিক ও সামাজিক সমস্যা সমাধানে ভূমিকা রাখতে পারে। 

৫. ফারজানা হক পরিবারের একমাত্র সন্তান। মা-বাবা কাজের প্রয়োজনে বাইরে গেলে সে বাসায় একা থাকে। খেলার সাথি পায় না। এই একাকিত্ব তাকে অসুস্থ করে তোলে। তার মধ্যে একধরনের ভ্রাস্তি বা ব্যক্তিত্বের অস্বাভাবিকতা তৈরি হয়। সে বড় হলেও সবার সাথে মিলেমিশে চলতে পারে না। তাই তার মা-বাবা তার জন্য বড়ই দুশ্চিন্তাগ্রস্ত। 
ক. বাংলাদেশে কোন মেডিকেল কলেজে প্রথম চিকিৎসা সমাজকর্ম কার্যক্রম শুরু হয়?
খ. বিদ্যালয় সমাজকর্ম বলতে কী বোঝ?
গ. উদ্দীপকে ফারজানা হকের চিকিৎসার জন্য সমাজকর্মের কোন শাখা উপযোগী? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উক্ত শাখা সমাজকর্মের পেশাগত বিকাশে কতটা কার্যকরী বলে তুমি মনে করো।

৫ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. বাংলাদেশে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রথম চিকিৎসা সমাজকর্ম কার্যক্রম শুরু হয়।

খ. বিদ্যালয় সমাজকর্ম বলতে সমাজকর্মের এমন শাখাকে বোঝায় যা স্কুলগামী ছেলেমেয়েদের শিক্ষাগ্রহণ এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিবেশে সৃষ্ট সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে কাজ করে।
পেশাদার সমাজকর্মের একটি প্রায়োগিক শাখা হলো বিদ্যালয় সমাজকর্ম। এটি স্কুলের প্রধান কার্যাবলির সাথে সহায়ক হিসেবে ভূমিকা রাখে। বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঠিক পথে পরিচালনা করা, ভবিষ্যতে সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলা, নেতিবাচক আচরণ, বিশেষ দৈহিক আবেগীয় বা আর্থিক সমস্যা প্রভৃতি সমাধানে ৷ সমাজকর্ম কাজ করে।

গ. উদ্দীপকে ফারজানার সমস্যা মানসিক হওয়ায় তার চিকিৎসার জন্য সাইকিয়াট্রিক সমাজকর্ম কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।
সাইকিয়াট্রিক সমাজকর্ম হলো সমাজকর্মের এমন একটি শাখা যার মাধ্যমে মানসিকভাবে সমস্যাগ্রস্ত মানুষের সমস্যা সমাধানে কাজ করা।
শাখার মাধ্যমে বিভিন্ন মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত রোগীদের তত্ত্বাবধান, তাদের রোগের কারণ অনুসন্ধান, পর্যাপ্ত সেবা ও ওষুধ প্রদান, কাউন্সেলিং ইত্যাদি মানসিক সেবা প্রদান করা হয়। আর এ ধরনের সহায়তাই উদ্দীপকের ফারজানার ক্ষেত্রে প্রয়োজন।
ফারজানা পরিবারের একমাত্র সন্তান। চাকরির কারণে বাবা-মা বেশিরভাগ সময় বাসায় না থাকায় এবং অন্য কোনো খেলার সাথি না থাকায় সে মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছে। স্বাভাবিক আচরণ করতে পারছে না এবং সবার সাথে মিলেমিশে চলতে পারছে না। এ অবস্থায় একজন সাইকিয়াট্রিক সমাজকর্মী ফারজানাকে সুস্থ করে তুলতে সহায়তা করতে পারেন। ফারজানার জন্য কী ধরনের চিকিৎসা প্রয়োজন তা তিনি ঠিক করে দিতে পারেন। তাছাড়া ফারজানার সাথে নিয়মিত কাউন্সেলিং, তার বাবা-মাকে প্রয়োজনীয় দিক-নির্দেশনা প্রদান প্রভৃতি ক্ষেত্রেও সাইকিয়াট্রিক সমাজকর্মীরা সহায়তা করেন। সুতরাং বলা যায়, ফারজানাকে দ্রুত সুস্থ করে তুলতে তার বাবা-মায়ের উচিত একজন সাইকিয়াট্রিক সমাজকর্মীর সহায়তা নেওয়া।

ঘ. আমি মনে করি, সমাজকর্মের পেশাগত বিকাশে উক্ত শাখা অর্থাৎ সাইকিয়াট্রিক সমাজকর্ম কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।
সমাজকর্ম একটি প্রায়োগিক জ্ঞান। কেবল তাত্ত্বিক আলোচনার মধ্যেই এটি সীমাবদ্ধ নয়। বরং বহুমুখী মনো-সামাজিক সমস্যা সমাধানে এই জ্ঞানের প্রয়োগ ঘটানো যায়। এক্ষেত্রে সমাজকর্মের ভূমিকাকে কার্যকর করতে সাইকিয়াট্রিক সমাজকর্মের মতো শতভাগ প্রায়োগিক শাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
একজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ বিভিন্ন মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার কাজ করে থাকেন। তিনি শুধু রোগী নিয়েই গবেষণা ও আলোচনা করে থাকেন। কিন্তু একজন সাইকিয়াট্রিক সমাজকর্মী সাহায্যার্থীকে চিকিৎসা দেওয়ার পাশাপাশি তার পরিবার, বাবা-মা ও ভাই-বোন, বন্ধু-বান্ধবদের নিয়ে পারিবারিক এবং দলীয় থেরাপি দিয়ে থাকেন। তিনি সাহায্যার্থীর মানসিক ও সামাজিক দিক বিবেচনা করে তার সমস্যা সমাধানে ভূমিকা রাখেন। এ ধরনের পেশাগত দিক বিবেচনায় সমাজকর্মের এ শাখার প্রয়োগযোগ্যতা অসামান্য। তাছাড়া বর্তমান সমাজব্যবস্থায় বিভিন্ন ধরনের আর্থ-মনো-সামাজিক জটিলতা বাড়তে থাকায় সাইকিয়াট্রিক সমাজকর্মের আবেদন দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে এর পেশাগত ক্ষেত্রও প্রসারিত হচ্ছে। বর্তমানে সারাবিশ্বেই সমাজকর্মের এ শাখার প্রসার ঘটছে।
ওপরের আলোচনার আলোকে বলা যায়, সাইকিয়াট্রিক সমাজকর্ম মানসিক রোগীদের চিকিৎসায় অত্যন্ত ফলপ্রসূ। আর এ কারণেই সমাজকর্মের পেশাগত বিকাশে এর ভূমিকা অত্যন্ত কার্যকর।

৬. জনাব রায়হান একজন পেশাদার সমাজকর্মী তিনি সমাজকর্মের একটি বিশেষ শাখার জ্ঞান, দক্ষতা ও পদ্ধতি প্রয়োগ করে ব্যক্তি ও পরিবারের মনো-দৈহিক, সামাজিক নিষি্ক্রয়তা, অক্ষমতা, জড়তা ইত্যাদি সমস্যা সমাধান ও প্রতিরোধে সাহায্য করে থাকেন।
ক. বাংলাদেশে চিকিৎসা সমাজকর্মের যাত্রা শুরু হয় কখন?
খ. নিরক্ষরতা বলতে কী বোঝায়?
গ. উদ্দীপকে জনাব রায়হান সমাজকর্মের কোন শাখায় কাজ করেছেন? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত জনাব রায়হানের অনুশীলন শাখার গুরুত্ব বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে বিশ্লেষণ করো।

৬ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. ১৯৫৫ সালে বাংলাদেশে চিকিৎসা সমাজকর্মের যাত্রা শুরু হয়।

খ. নিরক্ষরতা বলতে কোনো ব্যক্তির অক্ষর জ্ঞান জানা না থাকাকে বোঝায়।
মানুষ আনুষ্ঠানিকভাবে যে দুটি ভাষা-দক্ষতা অর্জন করে তা হলো লেখা ও পড়ার দক্ষতা। অন্যদিকে ভাষা বলা ও শোনার দক্ষতা প্রতিটি মানুষই সহজাতভাবে অর্জন করে। কিন্তু সবাই লিখতে ও পড়তে পারে না। আর আনুষ্ঠানিক শিক্ষার এই অভাবই নিরক্ষরতা নামে পরিচিত।

গ. উদ্দীপকে জনাব রায়হান চিকিৎসা সমাজকর্ম শাখায় কাজ করেছেন।
একজন রোগীর চিকিৎসা গ্রহণ ও সুস্থ হওয়ার ক্ষেত্রে নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হতে পারে। এসব প্রতিবন্ধকতা দূরীকরণে চিকিৎসা সমাজকর্মের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। এক্ষেত্রে একজন চিকিৎসা সমাজকর্মী সমাজকর্মের বিশেষ জ্ঞান, দক্ষতা ও কৌশল প্রয়োগ করে সমস্যার সমাধান করেন।
উদ্দীপকের রায়হান একজন পেশাদার সমাজকর্মী। তার কার্যাবলি পর্যালোচনা করে আমরা তাকে একজন চিকিৎসা সমাজকর্মী হিসেবে চিহ্নিত করতে পারি। তিনি ব্যক্তি ও পরিবারের মনো-দৈহিক সমস্যা, সামাজিক নিষি্ক্রয়তা, অক্ষমতা, জড়তা ইত্যাদির সমাধান ও প্রতিরোধে সাহায্য করেন। এক্ষেত্রে তিনি সমাজকর্মের জ্ঞান ও দক্ষতাকে কাজে লাগান যা চিকিৎসা সমাজকর্মীর কাজের অনুরূপ। চিকিৎসা সমাজকর্মীরা রোগী ও তার পরিবারকে নানাভাবে সহায়তা প্রদান করেন। এক্ষেত্রে তিনি রোগীর আর্থ-সামাজিক, মানসিক ও পারিবারিক অবস্থা বিবেচনায় রাখেন। ফলে তিনি সহজেই রোগীর মনো-দৈহিক সমস্যা সমাধানে সহায়তা করতে পারেন। অর্থাৎ রোগীকে মানসিকভাবে সবল করে তোলা এবং তার সঠিক চিকিৎসা নিশ্চিত করতে একজন চিকিৎসা সমাজকর্মী কার্যকর ভূমিকা পালন করেন। উদ্দীপকের জনাব রায়হানও উপরোল্লিখিত কাজগুলো করছেন। তাই বলা যায়, উদ্দীপকের রায়হান চিকিৎসা সমাজকর্ম শাখায় কাজ করছেন।

ঘ. বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে জনাব রায়হানের অনুশীলন শাখা অর্থাৎ চিকিৎসা সমাজকর্মের গুরুত্ব অপরিসীম।
বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল দেশ। আয়তনের তুলনায় এ দেশের জনসংখ্যা অনেক বেশি। যে কারণে স্বাস্থ্য ও চিকিৎসাখাতে সমস্যাও অনেক। আর এসব সমস্যা সমাধানে সমাজকর্মের বিশেষায়িত অনুশীলন শাখা চিকিৎসা সমাজকর্মের কোনো বিকল্প নেই। তাই বাংলাদেশে সমাজকর্মের এ শাখার বিস্তার ঘটানো প্রয়োজন।
বাংলাদেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির তুলনায় চিকিৎসক, নার্স ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা পর্যাপ্ত নয়। ফলে রোগীর সঙ্গে অবিচ্ছেদ্যভাবে সম্পর্কিত সামাজিক, মানসিক ও অন্যান্য প্রভাব বিস্তারকারী উপাদানের প্রতি দৃষ্টি দেওয়া চিকিৎসা সংশ্লিষ্ট সবার পক্ষে সম্ভব হয় না। আবার বাংলাদেশে দারিদ্র্য, নিরক্ষরতা, অজ্ঞতা ও কুসংস্কার প্রভৃতির নেতিবাচক প্রভাবের কারণে সাধারণ জনগণ রোগ-ব্যাধি ও তার চিকিৎসা সম্পর্কে সচেতন নয়। দরিদ্র জনগোষ্ঠী চিকিৎসার সুযোগ- সুবিধা গ্রহণে অনেক ক্ষেত্রেই উদাসীন থাকে। তা ছাড়া আমাদের দেশে রোগমুক্তির পর রোগীর আর্থ-সামাজিক পুনর্বাসনের কোনো ব্যবস্থাও করা যায় না। রোগীর অতীত ইতিহাস সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহের সুযোগও অনেক সীমিত। এসব সমস্যা বাংলাদেশের চিকিৎসা ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। এ অবস্থায় চিকিৎসা সমাজকর্মের ব্যাপক প্রসার ও বাস্তবায়ন সমস্যার ফলপ্রসূ সমাধান করতে পারে।
পরিশেষে বলা যায়, বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে জনাব রায়হানের অনুশীলিত চিকিৎসা সমাজকর্মের প্রসার ও তার বাস্তবায়ন অত্যন্ত প্রয়োজনীয় একটি বিষয়।

HSC সমাজকর্ম ২য় পত্র (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর অধ্যায় ২ pdf download

৭. মাহি নবম শ্রেণির ছাত্রী। অষ্টম শ্রেণির ফাইনাল পরীক্ষায় সে কৃতিত্বের সাথে উত্তীর্ণ হয়েছিল। কিন্তু নবম শ্রেণিতে তার পরীক্ষার ফলাফলে বিপর্যয় ঘটেছে। শিক্ষক বিষয়টি অনুধাবন করে মাহির বাবাকে বললে তিনি একটি সমাজসেবা এজেন্সির কর্মকর্তার শরণাপন্ন হন। কর্মকর্তা সমস্যাটি চিহ্নিত করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণে উদ্যোগী হন।
ক. চিকিৎসা সমাজকর্ম কী?
খ. প্রবীণকল্যাণ সমাজকর্ম বলতে কী বোঝায়?
গ. উদ্দীপকে সমাজকর্মের কোন শাখার মাধ্যমে মাহির সমস্যার সমাধান করা হয়েছে? নিরূপণ করো।
ঘ. উদ্দীপকে অনুশীলনকৃত সমাজকর্মের শাখাটির কার্যকারিতা বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে মূল্যায়ন করো।

৭ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা ক্ষেত্রে সমাজকর্মের পদ্ধতি ও দর্শনের যে বাস্তব প্রয়োগ করা হয় তাই চিকিৎসা সমাজকর্ম।

খ. প্রবীণকল্যাণ সমাজকর্ম হলো এমন একটি বিশেষায়িত শাখা যেটি প্রবীণ জনগোষ্ঠীর কল্যাণে সমাজকর্মের জ্ঞান, দক্ষতা ও কৌশল প্রয়োগ করে। 
বার্ধক্যে মানুষ নানা ধরনের সমস্যায় ভোগে। এ সময় দারিদ্র্য, অনাহার, অবহেলা, মানসিক নির্যাতন, প্রতারণা আর শারীরিক নানা বাধা-বিপত্তি তাদেরকে বিপর্যস্ত করে। এসব সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্যই প্রবীণকল্যাণ সমাজকর্ম কাজ করে। এক্ষেত্রে সমাজকর্মীরা বয়স্কদের কল্যাণে সমাজকর্মের জ্ঞান ও দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে সেবা প্রদান করে।

গ. উদ্দীপকে বিদ্যালয় সমাজকর্মের মাধ্যমে মাহির সমস্যার সমাধান করা হয়েছে।
বিদ্যালয়ে শিশুদের আনুষ্ঠানিক শিক্ষার যাত্রা শুরু হয়। কিন্তু বিদ্যালয়ের নতুন পরিবেশে অনেক শিশু খাপ খাইয়ে নিতে পারে না। আবার একজন শিক্ষার্থী সেখানে নানা ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হতে পারে। যার প্রভাবে তার জীবনে বিভিন্ন রকম নেতিবাচক পরিণতির উদ্ভব হয়। মূলত এরকম অনাকাঙি্ক্ষত পরিণতি এড়াতেই বিদ্যালয় সমাজকর্ম কাজ করে।
উদ্দীপকের মাহি অষ্টম শ্রেণিতে কৃতিত্বের সাথে উত্তীর্ণ হলেও নবম শ্রেণিতে তার পরীক্ষার ফলাফল আশানুরূপ ছিল না। পারিবারিক অথবা ব্যক্তিগত কোনো সমস্যার কারণে সে পড়াশোনায় মনোযোগ ধরে রাখতে ব্যর্থ হচ্ছিল। এরকম পরিস্থিতিতে একজন শিক্ষার্থীকে অনুপ্রেরণা দিতে বিদ্যালয় সমাজকর্মের প্রয়োগ অত্যন্ত কার্যকর ভূমিকা রাখে। এক্ষেত্রে বিদ্যালয় সমাজকর্মের দায়িত্ব হলো মূল সমস্যা নির্ণয় করে তার আশু সমাধান করা। উদ্দীপকের মাহির ক্ষেত্রেও সমাজসেবা এজেন্সির কর্মকর্তা সমস্যা চিহ্নিত করেছেন এবং তা সমাধানে উদ্যোগী হয়েছেন। এক্ষেত্রে তিনি একজন বিদ্যালয় সমাজকর্মীর ভূমিকাই পালন করেছেন।
সুতরাং বলা যায়, মাহির সমস্যা সমাধানের প্রক্রিয়াটি বিদ্যালয় সমাজকর্মের অন্তর্ভুক্ত।

ঘ. বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে উদ্দীপকে অনুশীলনকৃত বিদ্যালয় সমাজকর্মের কার্যকারিতা আগে ফলপ্রসূ না হলেও বর্তমান সময়ে এটি শিক্ষার্থীদের জন্য ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারে।
শিক্ষার সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত ও নানা সমস্যায় আক্রান্ত শিক্ষার্থীদের কল্যাণের জন্যই বিদ্যালয় সমাজকর্মের উদ্ভব ঘটে। বাংলাদেশেও এ উদ্দেশ্যে ১৯৬৯ সালে ঢাকা ও চট্টগ্রামের দুটি বিদ্যালয়ে এ শাখা চালু করা হয়। কিন্তু আশানুরূপ ফল না পাওয়ায় ১৯৮৪ সালে তা বন্ধ হয়ে যায়। অর্থাৎ বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে এ পদ্ধতিটি তখনকার সময়ে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারেনি।
উদ্দীপকে বিদ্যালয় সমাজকর্মের একটি সফলতার চিত্র অঙ্কিত হয়েছে যদিও অতীতে বাংলাদেশে এ শাখার প্রয়োগ ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছে; তারপরও বর্তমান সময়ের প্রেক্ষিতে এটি উদ্দীপকে উল্লিখিত বিভিনণ ধরনের সমস্যা মোকাবিলায় কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। বর্তমানে বাংলাদেশে শিক্ষার্থীর সংখ্যা অনেক বেশি। অথচ সে অনুপাতে বিদ্যালয় ও শিক্ষক-শিক্ষিকার সংখ্যা পর্যাপ্ত নয়। ফলে সঠিক সমন্বয়ের অভাবে শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে নানা ধরনের মনো-সামাজিক সমস্যার (যেমন- পরীক্ষায় খারাপ ফলাফলজনিত হতাশা, সহপাঠীদের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে না পারা, আত্মবিশ্বাসের অভাব) সম্মুখীন হয়। এ ধরনের সমস্যা থেকে শিক্ষার্থীদের বের করে আনতে বিদ্যালয় সমাজকর্ম সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারে। এ অবস্থায় আমি মনে করি, সঠিক পদ্ধতি প্রয়োগ ও পর্যবেক্ষণের আওতায় বিদ্যালয় সমাজকর্ম বাংলাদেশে আবার চালু করা যেতে পারে। আশা করা যায় এর ফলে শিক্ষার্থীরা উপকৃত হবে।
পরিশেষে বলা যায়, বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে বিদ্যালয় সমাজকর্মের প্রয়োগ প্রশ্নসাপেক্ষ হলেও বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপটে তা ফলপ্রসূ হতে পারে।

৮. আশুলিয়ায় একটি গার্মেন্টেসে মালিক ও শ্রমিক দ্বনে্দ্বর কারণে উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। ফলে নিম্ন শ্রেণির কর্মচারিদের ছাঁটাই করে মালিক নতুন করে কারখানা শুরু করতে চাইলে তারা প্রতিবাদ ও আন্দোলন শুরু করে। উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সমস্যা না হলেও নিম্ন শ্রেণির কর্মীদের পথে বসতে হয়। এদের সমস্যা সমাধান ও উভয় পক্ষের মধ্যে সমঝোতা করার জন্য তৃতীয় পক্ষের প্রয়োজন উপলব্ধি করে। 
ক. ক্লিনিক্যাল সমাজকর্ম কী?
খ. প্রবীণ সমাজকর্ম বলতে কী বোঝ?
গ. উদ্দীপকের সমস্যা সমাধানের জন্য সমাজকর্মের কোন বিশেষায়িত শাখা তৃতীয় পক্ষ হিসেবে কাজ করতে পারে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত সমস্যার সমাধানে তৃতীয় পক্ষ কীভাবে ভূমিকা রাখতে পারে? মতামত দাও।

৮ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. ক্লিনিক্যাল সমাজকর্ম হলো সমাজকর্মের একটি বিশেষ শাখা যেখানে সাহায্যার্থীর সমস্যা (রোগ) নির্ণয় বা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সমাধানের ব্যবস্থা গ্রহণ করার ক্ষেত্রে সাহায্য করা হয়।

খ. প্রবীণ সমাজকর্ম বলতে সমাজকর্মের এমন শাখাকে বোঝায় যেটি প্রবীণদের সার্বিক কল্যাণের জন্য কাজ করে।
বর্তমানে প্রবীণদের বিশেষ জনগোষ্ঠী হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তাই সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠী হিসেবে প্রবীণকল্যাণের প্রতি বিশ্বের সবদেশে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। এ প্রেক্ষিতেই প্রবীণ সমাজকর্মের উদ্ভব হয়েছে। সমাজকর্ম অভিধানের (১৯৯৫) ব্যাখ্যানুযায়ী, প্রবীণকল্যাণ সমাজকর্ম হলো সমাজর্মের বিশেষ অনুশীলন ক্ষেত্র, যাতে প্রবীণ জনগোষ্ঠীর মনো-সামাজিক চিকিৎসা এবং প্রবীণ ব্যক্তিদের জন্য কর্মসূচি প্রণয়নের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়।

গ. উদ্দীপকের মালিক-শ্রমিক দ্বন্দ্ব নিরসনের জন্য সমাজকর্মের অন্যতম বিশেষায়িত শাখা শিল্প সমাজকর্ম তৃতীয় পক্ষ হিসেবে কাজ করতে পারে।
শিল্প সমাজকর্ম শিল্প প্রতিষ্ঠানের সাথে সংশ্লিষ্ট নানা সমস্যা নিয়ে কাজ করে। বিশেষ করে শিল্প প্রতিষ্ঠানে মালিক-শ্রমিক সম্পর্কের উন্নয়ন এবং শ্রমিকদের অধিকার ও সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিতকরণে শিল্প সমাজকর্ম কাজ করে। তাই বলা যায়, উদ্দীপকের সমস্যাটি শিল্প সমাজকর্মের পরিধির আওতাভুক্ত।
উদ্দীপকের বর্ণনা অনুসারে, আশুলিয়ায় একটি গার্মেন্টসে মালিক-শ্রমিক দ্বনে্দ্বর কারণে প্রতিষ্ঠানটির উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। এক্ষেত্রে মালিক পক্ষের স্বার্থের কারণে শিল্প প্রতিষ্ঠানটির নিম্ন পর্যায়ের কর্মীরা তাদের প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এ প্রেক্ষিতে প্রতিষ্ঠানটিতে সৃষ্ট সংকটাবস্থার অবসান ঘটাতে তৃতীয় পক্ষ হিসেবে একজন শিল্প সমাজকর্মী নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করতে পারেন। প্রকৃতপক্ষে এ ধরনের সংকটের কারণেই সময়ের প্রয়োজনে শিল্প সমাজকর্মের উদ্ভব ও বিকাশ ঘটেছে। সমাজকর্ম বিশেষজ্ঞদের নিয়োগের মাধ্যমে শিল্প- শ্রমিকদের চাহিদা, শ্রমিক উন্নয়ন এবং বৃহৎ সংগঠনের লক্ষ্য অর্জনে সহায়তা প্রদান করাই শিল্প সমাজকর্মের মূল লক্ষ্য। তাই বলা যায়, উদ্দীপকের সমস্যা সমাধানে পেশাদার সমাজকর্মের বিশেষায়িত শাখা শিল্প সমাজকর্মের ভূমিকা অত্যন্ত কার্যকর ও ফলপ্রসূ হবে।

ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত মালিক-শ্রমিক দ্বন্দ্ব নিরসনে শিল্প সমাজকর্ম পরামর্শ প্রদান ও কার্যকর হস্তক্ষেপের মাধ্যমে ভূমিকা রাখতে পারে।
শিল্প প্রতিষ্ঠান পরিচালনার কিছু সুনির্দিষ্ট বিধি-বিধান রয়েছে। বিশেষ করে শ্রম আইনে এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোকপাত করা হয়েছে। এ প্রেক্ষিতে মালিক-শ্রমিক দ্বনে্দ্বর সমাধানে শ্রম আইন অনুসারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণে শিল্প সমাজকর্ম ভূমিকা রাখে। উদ্দীপকেও শিল্প সমাজকর্মের এরূপ ভূমিকা ফলপ্রসূ হবে।
উদ্দীপকের আশুলিযার গার্মেন্টস প্রতিষ্ঠানটিতে মালিক-শ্রমিক দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয়েছে। এখন শিল্প সমাজকর্মীরা এই দ্বন্দ্ব সৃষ্টির পেছনে বিদ্যমান কারণ নির্ধারণ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারেন। দ্বনে্দ্বর কারণ চিহ্নিত করার পর তারা বিদ্যমান শ্রম আইনের আলোকে এর সমাধান নির্ধারণ করবেন। পরবর্তী ধাপে তারা মালিক ও শ্রমিক পক্ষের মধ্যে সেতুবন্ধন সৃষ্টির কাজ করবেন। তাদের সাথে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার প্রকৃতি ও কারণ তুলে ধরে সমাধানের পথ নির্দেশ করে দেবেন। এক্ষেত্রে মূলত শিল্প সমাজকর্মীরা দল সমাজকর্মের পদ্ধতির আলোকে সমস্যা সমাধানে কাজ করবেন। তারা সাভারের শিল্প প্রতিষ্ঠানটিতে বিদ্যমান দল বা সমষ্টিকে অর্থাৎ মালিক-শ্রমিক পক্ষকে পরামর্শ প্রদানের মাধ্যমে তাদের মধ্যে সমঝোতা সৃষ্টি করার চেষ্টা করবেন। এভাবে তারা আলোচ্য সমস্যার একটি যৌক্তিক সমাধান দিতে সমর্থ হবেন।
পরিশেষে বলা যায়, উদ্দীপকের সমস্যা সমাধানে শিল্প সমাজকর্মের কর্মপদ্ধতি প্রয়োগের কোনো বিকল্প নেই।

৯. সড়ক দুর্ঘটনায় আহত জামালকে তার আত্মীয়-স্বজনরা পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তির জন্য নিয়ে এলে মি. সুখেন চৌধুরী হাসপাতালের আউটডোর থেকে শুরু করে ভর্তি হওয়া পর্যন্ত সমস্ত প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে সহায়তা দেন। এরপর তিনি জামালের আত্মীয়কে পরবর্তী করণীয় যেমন- রক্তসংগ্রহ, ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ, অপারেশনের জন্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র, ক্লাচ ইত্যাদি সংগ্রহের জন্য পরামর্শ প্রদান করেন।
ক. বাংলাদেশে কত সালে প্রথম স্কুল সমাজকর্ম চালু হয়?
খ. ক্লিনিক্যাল সমাজকর্মের ধারণা দাও।
গ. উদ্দীপকে মি. সুখেন চৌধুরীর কাজটি সমাজকর্মের কোন শাখার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকের আলোকে উক্ত শাখার গুরুত্ব বিশ্লেষণ করো।

৯ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. বাংলাদেশে ১৯৬৬ সালে প্রথম স্কুল সমাজকর্ম চালু হয়।

খ. ক্লিনিক্যাল সমাজকর্ম বলতে ব্যক্তি, পরিবার এবং দলের সাথে অথবা তাদের পক্ষে প্রত্যক্ষভাবে সমাজকর্ম অনুশীলন করাকে বোঝায়।
সমাজকর্মের এ শাখায় মানুষের সমস্যাগুলোকে ক্ষুদ্র আঙ্গিকে বিশ্লেষণ করা হয়। সাধারণত শারীরিক ও মানসিক বিভিন্ন সমস্যা, যেমন- প্রিয়জনের মৃত্যু, পারিবারিক দ্বন্দ্ব, দাম্পত্যকলহ, বিবাহ বিচ্ছেদ, চাকরি হারানো ইত্যাদির ফলে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় ব্যাপক পরিবর্তন আসে। এক্ষেত্রে ক্লিনিক্যাল সমাজকর্মের জ্ঞান ও দক্ষতা প্রয়োগ করে সাহায্যার্থীকে সাইকোথেরাপি এবং পরামর্শ সেবার মাধ্যমে সাহায্য দেওয়া হয়।

গ. উদ্দীপকে মি. সুখেন চৌধুরীর কাজটি সমাজকর্মের চিকিৎসা সমাজকর্মের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।
বিশ্বব্যাপী সমাজকর্ম অনুশীলনের সুপরিসর ক্ষেত্র হলো চিকিৎসা কার্যক্রম। চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে আসা রোগীর চিকিৎসা গ্রহণের ক্ষেত্রে কার্যকর ভূমিকা পালনের জন্য চিকিৎসা সমাজকর্মের জন্ম হয়েছে। একজন রোগী হাসপাতালে আসার পর সামাজিক, অর্থনৈতিক, পারিবারিক ও মানসিক প্রতিবন্ধকতা দেখা দেয়। এগুলো চিহ্নিতপূর্বক রোগীর মানসিক, শারীরিক তথা সর্বজনীন কল্যাণ সাধনে প্রচেষ্টা চালানো চিকিৎসা সমাজকর্মের অন্যতম লক্ষ্য। 
উদ্দীপকে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত জামাল আত্মীয়-স্বজনদের সাথে হাসপাতালে আসলে মি. সুখেন চৌধুরী নামের সমাজকর্মী ভর্তি প্রক্রিয়ায় সহায়তাসহ চিকিৎসা বিষয়ক বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শ দেন। যেসব সমস্যা রোগীর রোগ নিরাময় প্রক্রিয়াকে শারিরিক ও মানসিকভাবে বাধাগ্রস্ত করে এবং চিকিৎসা সংক্রান্ত মানসিক, অর্থনৈতিক ও অন্যান্য সুযোগ- সুবিধা গ্রহণে অসমর্থ করে, সেসব সমস্যা চিহ্নিত করে তা সমাধানে চিকিৎসা সমাজকর্ম কাজ করেছে। মি. সুখেন চৌধুরী জামালের হাসপাতালে ভর্তিতে সহায়তা ও পরামর্শ দেন। এজন্য বলা যায় মি. সুখেন চৌধুরীর কাজটি সমাজকর্মের চিকিৎসা সমাজকর্মের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।

ঘ. উদ্দীপকে নির্দেশিত চিকিৎসা সমাজকর্মের অপরিসীম গুরুত্ব রয়েছে।
মানুষ শারীরিক ও মানসিক সুস্থতার জন্য হাসপাতালের শরণাপন্ন হন। ডাক্তার রোগ নির্ণয়ের পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে রোগীকে সুস্থ করে তোলেন। বর্তমানের চিকিৎসা ব্যবস্থা পুরোপুরি হাসপাতাল ও ক্লিনিক কেন্দ্রিক হওয়ায় অনেকের ক্ষেত্রেই রোগী এবং ডাক্তারের মধ্যে সঠিক যোগাযোগ নিশ্চিত করা কঠিন হয়ে পড়ে। রোগীকে পুরোপুরি সুস্থ করে তুলতে রোগী সম্পর্কে পূর্ণ ধারণা দরকার। এতে রোগীর অসুস্থতার ধরন, রোগীর আর্থ-সামাজিক, পারিবারিক কাঠামো মানসিক অবস্থা, রোগীর ব্যক্তিত্ব সম্পদের পর্যাপ্ততা, হাসপাতালের পরিবেশ ও চিকিৎসা ব্যবস্থা সম্পর্কে তথ্য জানা দরকার। কিন্তু যাবতীয় তথ্য চিকিৎসকের পক্ষে জানা সম্ভব হয় না। এক্ষেত্রে চিকিৎসা সমাজকর্ম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
উদ্দীপকে দেখা যায়, আহত জামালকে মি. সুখেন চৌধুরী চিকিৎসার জন্য সহায়তা ও পরামর্শ প্রদান করেন। মি. সুখেন একজন চিকিৎসা সমাজকর্মী। হাসপাতালে আসা গ্রামের অশিক্ষিত, নিরক্ষর, আর্থিকভাবে অসচ্ছল, মানসিকভাবে বিপর্যস্ত বিভিন্ন ধরনের রোগীদের সহায়তা করেন চিকিৎসা সমাজকর্মী। রোগ নির্ণয়ে প্রয়োজনীয় বিভিন্ন পরীক্ষা- নিরীক্ষা যেমন- রক্ত গ্রহণ, রক্ত পরীক্ষা, এক্স-রে অস্ত্র পচার, সিটি স্ক্যান প্রভৃতি করাতে অনেক রোগী ভয় এবং এ সকল বিষয়ে থাকে। এছাড়া চিকিৎসা পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন দিক নির্দেশনা, কাউন্সেলিং প্রয়োজন হয়। এসব কাজ সম্পাদন করে থাকে চিকিৎসা সমাজকর্ম, যা মি. সুখেন চৌধুরীর কার্যক্রমের মধ্যে দেখা যায়।
তাই বলা যায়, চিকিৎসার শুরু থেকে রোগীর সম্পূর্ণ সুস্থ হওয়া পর্যন্ত সাধারণ চিকিৎসার পাশাপাশি চিকিৎসা সমাজকর্মের গুরুত্ব অপরিসীম।

১০. শায়লা যক্ষ্মায় আক্রান্ত হয়ে শ্যামলীর যক্ষ্মা হাসপাতালে এসেছে। কিন্তু হাসপাতালের পরিবেশ, ডাক্তার, নার্সসহ অন্যান্যদের সাথে খাপ খাওয়াতে ব্যর্থ হয়ে অসহায় বোধ করছিল। এমন অবস্থায় তার সাথে জসিম নামে একজন ব্যক্তি সাথে পরিচয় হয় যে তাকে হাসপাতালের পরিবেশ ও চিকিৎসা ব্যবস্থার সাথে খাপ খাওয়াতে সহায়তা করেন এবং তার সমস্যা সমাধানে নানা কৌশলের মাধ্যমে প্রচেষ্টা চালান।
ক. সাইক্রিয়াট্রিক সমাজকর্ম কী?
খ. চিকিৎসা সমাজকর্ম বলতে কি বোঝ?
গ. উদ্দীপকের জসিম সাহেবের কার্যক্রম কোন ধরনের কার্যক্রম? 
ঘ. জসিম সাহেবের কার্যক্রম একটি শিল্প প্রতিষ্ঠানে সম্পাদনের বিবরণ দাও।

১০ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. সাইক্রিয়াটিক সমাজকর্ম হলো মানসিক স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে সমাজকর্ম অনুশীলনের একটি বিশেষ প্রক্রিয়া।

খ. চিকিৎসা সমাজকর্ম হলো সমাজকর্মের এমন একটি বিশেষ শাখা যার মাধ্যমে হাসপাতালে আসা রোগীর চিকিৎসা গ্রহণের ক্ষেত্রে কার্যকর ভূমিকা পালন করে।
এটি সমাজকর্মের একটি বিশেষ শাখা। সাধারণত হাসপাতাল পরিবেশে চিকিৎসা সুযোগ-সুবিধার সর্বোচ্চ ব্যবহারে সহায়তা দান এ শাখার লক্ষ্য। এক্ষেত্রে চিকিৎসা সমাজকর্মী রোগী ও তার পরিবার এবং চিকিৎসকদের মাঝে সমন্বয় সাধন করেন।

গ. উদ্দীপকের জসিম সাহেবের কার্যক্রমের সাথে সমাজকর্মের অন্যতম শাখা চিকিৎসা সমাজকর্মের কার্যক্রমে সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।
চিকিৎসা সমাজকর্ম সমাজকর্মের অন্যতম শাখা হিসেবে সারা বিশ্বে স্বীকৃত। একজন রোগীকে সুস্থ করে তুলতে সাধারণ চিকিৎসার পাশাপাশি আর্থ-সামাজিক ও আবেগীয় সমর্থনের প্রয়োজন হয়, যা একজন দক্ষ ও অভিজ্ঞতাসম্পন্ন চিকিৎসা সমাজকর্মীর মাধ্যমে পাওয়া সম্ভব। একজন চিকিৎসা সমাজকর্মী ডাক্তার, নার্স ও রোগীর মধ্যে সমন্বয়কের ভূমিকা পালন করেন। তিনি হাসপাতালে রোগী ভর্তি, তাকে সঠিক চিকিৎসা পেতে সাহায্য করা, রোগ ও চিকিৎসা সম্পর্কিত ভয়-ভীতি দূর করা, দরিদ্র রোগীদের আর্থিক ও বস্তুগত সাহায্য পেতে সাহায্য করা, প্রয়োজনীয় পরামর্শ প্রদানসহ আরও বিভিন্ন কাজ করে থাকে।
উদ্দীপকের জসিম সাহেব একটি যক্ষ্মা হাসপাতালে চাকরি করেন। সেখানে শায়লা যক্ষ্মা আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে আসে। শায়লার হাসপাতালের পরিবেশ, ডাক্তার, নার্সসহ অন্যান্যদের সাথে খাপ খাওয়াতে ব্যর্থ হয়ে অসহায় বোধ করছিল। তখন জসিম তাকে হাসপাতালে খাপ খাওয়াতে সাহায্য করে এবং তার সমস্যা সমাধানে নানা কৌশল প্রয়োগ করে। জসিম সাহেবের এ সকল কার্যক্রমের মাধ্যমে বোঝা যায় তিনি একজন চিকিৎসা সমাজকর্মী। সুতরাং বলা যায়, জসিম সাহেবের কার্যক্রম চিকিৎসা সমাজকর্মকেই নির্দেশ করে।

ঘ. জসিম সাহেবের কার্যক্রমগুলো হলো চিকিৎসা সমাজকর্মীর। তবে একজন শিল্প সমাজকর্মী হিসেবে শিল্প প্রতিষ্ঠানে সমাজকর্মের কার্যক্রম সম্পাদনের ক্ষেত্রে জসিম সাহেব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
পেশাদার সমাজকর্মের একটি বিশেষায়িত শাখা হলো শিল্প সমাজকর্ম। মূলত শিল্প বিপ্লব এর পরবর্তী সময়ে মানবতাবাদী চিন্তাধারা এবং ফলপ্রসূ উৎপাদনের স্বার্থে সমাজকর্মের এ শাখার উদ্ভব হয়। সমাজকর্মের জ্ঞান, দক্ষতা, কৌশল ও পদ্ধতি প্রয়োগকে কেন্দ্র করে শিল্প সমাজকর্ম গড়ে উঠেছে। এক্ষেত্রে একজন শিল্প সমাজকর্মী হিসেবে তার পেশাগত দক্ষতা ব্যবহার করে শ্রমিক-মালিক সম্পর্কের উন্নয়ন ঘটিয়ে উৎপাদন বৃদ্ধি করতে পারেন। শ্রমিকদের মানবিক ও সামাজিক চাহিদা পূরণ করার লক্ষ্যে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারেন। শিল্প-কারখানার উৎপাদন বৃদ্ধিতে ও কর্মীদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় একজন সমাজকর্মীর ভূমিকা অনন্য। এছাড়া কর্ম পরিবেশের সাথে শ্রমিকদের খাপ খাওয়াতে সাহায্য করা, কর্মীদের চিত্তবিনোদনের ব্যবস্থায় বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ, তাদের স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধি করা, শিল্প সংক্রান্ত বিষয়ে পরামর্শ প্রদান প্রভৃতি ক্ষেত্রে শিল্প সমাজকর্মী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। সেই সাথে অন্যান্য কল্যাণমূলক সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের সাথে সমন্বয়কের ভূমিকা পালন প্রভৃতি ক্ষেত্রে একজন শিল্প সমাজকর্মী কাজ করেন।
উদ্দীপকে জসিম সাহেব একজন চিকিৎসা সমাজকর্মী হিসেবে হাসপাতালে আসা রোগীদের হাসপাতালের পরিবেশের সাথে খাপ খাওয়াতে সহায়তা করেন। পাশাপাশি সমস্যা সমাধানের বিভিন্ন কৌশলের মাধ্যমে প্রচেষ্টা চালয়। ঠিক একইভাবে শিল্প জসিম সাহেবের কার্যক্রম একজন শিল্প সমাজকর্মী হিসেবে একটি শিল্প প্রতিষ্ঠানের সার্বিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারেন।
সুতরাং বলা যায়, জসিম সাহেবের কার্যক্রম একটি শিল্প প্রতিষ্ঠানে সম্পাদনের ক্ষেত্রে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।
Share: