HSC সমাজবিজ্ঞান ২য় পত্র (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর অধ্যায় ৮ pdf download

এইচএসসি পরীক্ষার পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি
HSC Sociology 2nd Paper Srijonshil question and answer pdf download.

সমাজবিজ্ঞান
দ্বিতীয় পত্র

সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
অধ্যায়-৮

HSC Sociology 2nd Paper
Srijonshil
Question and Answer pdf download

১. রাজশাহী বিভাগের জেলা শহরের একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকুরি করেন জামান সাহেব। সম্প্রতি এই জেলা শহরে অনেক কলকারখানা গড়ে উঠেছে। শহরের বাইরের মানুষ এখন আর চাষাবাদে পূর্বের মতো আগ্রহী নয়। ইটের তৈরি বাড়িঘরে প্রায় মানুষ বসবাস করছে। বিগত দশ বছরের তুলনায় মানুষের জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধি পেয়েছে।
ক. Ageism শব্দের অর্থ কী?
খ. টেকসই উন্নয়ন বলতে কী বোঝ?
গ. উদ্দীপকে শহরের সামাজিক পরিবর্তনে যে উপাদানটি লক্ষ করা যায় তার ব্যাখ্যা দাও।
ঘ. উদ্দীপকে কলকারখানার ব্যাপক বিস্তার কৃষিক্ষেত্র ছাড়াও আর কোন কোন ক্ষেত্রে প্রভাব বিস্তার করছে বলে তুমি মনে কর? মতামত দাও।

❖ ১ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. Ageism একটি সমাজতাত্ত্বিক প্রত্যয় বা ধারণা যার অর্থ হলো বয়স বৈষম্যবাদ।

খ. টেকসই উন্নয়ন বলতে দীর্ঘমেয়াদী উন্নয়নকে বোঝায়। ১৯৯২ সালে ব্রাজিলের রিও-ডি-জেনেইরোতে রিও-তে. যে ধরিত্রী সম্মেলন Earth Summit. অনুষ্ঠিত হয় সেখানে গৃহীত Agenda-21-এ টেকসই উন্নয়নের সংজ্ঞায় বলা হয়ত 'টেকসই উন্নয়ন হচ্ছে অর্থনৈতিক অগ্রগতি, সামাজিক বিকাশ এবং পরিবেশ সংরক্ষণে সমন্বিত ব্যবস্থা এবং এটি বাস্তবায়িত হবে মানুষকে কেন্দ্র করে। ২০১২ সালে রিও-তেই অনুষ্ঠিত রিও+২০ সম্মেলনে গৃহীত 'The Future We Want'-এ এই সংজ্ঞা পুনর্ব্যক্ত করা হয় এবং এর মানবকেন্দ্রিকতাকে গুরুত্ব দেয়া হয়।

গ. উদ্দীপকে রাজশাহী বিভাগের জেলা শহরের সামাজিক পরিবর্তনের ক্ষেত্রে ‘শিল্পায়ন ও নগরায়ণ' উপাদানটির ভূমিকা লক্ষ করা যায়। সাধারণ অর্থে, শিল্পায়ন বলতে এমন একটি প্রক্রিয়াকে বোঝায়, যে প্রক্রিয়ায় যান্ত্রিক পদ্ধতিতে অকৃষিজ পণ্য উৎপাদিত হয়। অর্থাৎ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে বৃহৎ ও ব্যাপকহারে উৎপাদন করার প্রক্রিয়াই হচ্ছে শিল্পায়ন। শিল্পায়নের ফলে কৃষিভিত্তিক অর্থনীতির পরিবর্তে শিল্পভিত্তিক অর্থনীতির প্রচলন শুরু হয়। এর পাশাপাশি জীবনের সকলক্ষেত্রে যন্ত্রের ব্যাপক ব্যবহার পরিলক্ষিত হয়। অন্যদিকে, নগরায়ণ হলো শিল্পায়নের ফল। সাধারণভাবে নগরায়ণ বলতে এমন একটি প্রক্রিয়াকে বোঝায়, যাতে কোনো একটি এলাকার মানুষ কৃষিজ পেশার পরিবর্তে অকৃষিজ পেশায় জীবিকা নির্বাহ করে এবং আধুনিক সুযোগ সুবিধার কারণে সেখানে অনেক লোকের ঘনবসতি গড়ে ওঠে।
উদ্দীপকে লক্ষণীয় যে, রাজশাহী বিভাগের জেলা শহরে কলকারখানা গড়ে ওঠায় মানুষ এখন আর আগের মতো চাষাবাদে আগ্রহী নয়। এছাড়া বাসস্থানের প্রকৃতিতে পরিবর্তন সাধিত হওয়ার পাশাপাশি জীবনযাত্রার মানও বৃদ্ধি পেয়েছে, যা নিঃসন্দেহে শিল্পায়ন ও নগরায়ণের প্রত্যক্ষ ফলাফলের সাথে সম্পৃক্ত। উপর্যুক্ত আলোচনা শেষে বলা যায় যে, উদ্দীপকের শহরের সামাজিক পরিবর্তনে শিল্পায়ন ও নগরায়ণের ভূমিকা পরিলক্ষিত হয়।

ঘ. উদ্দীপকে কলকারখানার ব্যাপক বিস্তার কৃষিক্ষেত্র ছাড়াও কর্মসংস্থান, বাসস্থান ও জীবনযাত্রার মানের ওপর প্রভাব বিস্তার করেছে বলে আমি মনে করি। শিল্পায়ন ও নগরায়ণ উভয়ই অকৃষিজ পেশার সাথে সম্পৃক্ত। যে অঞ্চলে শিল্পায়ন তথা কলকারখানা গড়ে ওঠে, সেখানে নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হওয়ায় মানুষ কৃষিকাজে আগ্রহ হারিয়ে ফেলে এবং অকৃষিজ পেশায় নিজেকে নিয়োজিত করে। আবার শিল্পায়নের অত্যাবশকীয় ফল হলো নগরায়ণ। এর ফলে বাসস্থানের প্রকৃতিতেও পরিবর্তন সাধিত হয়। মানুষ মাটি, ছন বা কাঠের তৈরি ঘরবাড়ির পরিবর্তে ইট দ্বারা নির্মিত বাড়িঘরে বসবাস করতে আরম্ভ করে। এছাড়া শিল্পায়ন তথা কলকারখানা গড়ে ওঠায় মানুষের আয়ের পরিমাণও বৃদ্ধি পায়। ফলে স্বাভাবিকভাবেই তাদের সঞ্চয়ের পরিমাণও বৃদ্ধি পায়, যা তাদের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। উদ্দীপকে লক্ষণীয় যে, রাজশাহী বিভাগের জেলা শহরে কলকারখানা গড়ে ওঠার ফলে মানুষ অকৃষিজ পেশার সাথে জড়িত হচ্ছে, তাদের বাসস্থানের প্রকৃতিতেও পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। পাশাপাশি তাদের জীবনযাত্রার মানও বৃদ্ধি পেয়েছে যা মূলত শিল্পায়ন ও নগরায়ণের কারণেই সম্ভবপর হয়েছে।
পরিশেষে বলা যায় যে, শিল্পায়ন তথা কলকারখানার ব্যাপক বিস্তার রাজশাহী বিভাগের জেলা শহরের কৃষিক্ষেত্র ছাড়াও কর্মসংস্থান, বাসস্থান ও জীবনযাত্রার ওপর প্রভাব বিস্তার করেছে।

২. নাসির এবং তার আরও দশজন বন্ধু কৃষি বিষয়ে উচ্চ শিক্ষার জন্য বিদেশে যায়। বিদেশে থাকাকালীন তারা তাদের বাবা মায়ের সাথে মোবাইল, ফেসবুক, ই-মেইল ইত্যাদির মাধ্যমে প্রতিদিন যোগাযোগ করত। বর্তমানে তারা এদেশে উন্নতজাতের ধান উৎপাদনের জন্য গবেষণা করে দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করার কাজে নিয়োজিত রয়েছে। 
ক. ‘সামাজিক পরিবর্তন কী?
খ. জেন্ডার প্রত্যয়টির ধারণা ব্যাখ্যা করো। 
গ. নাসির ও তার বন্ধুদের তাদের বাবা-মায়ের সাথে যোগাযোগ করতে পারা কোন ধরনের সামাজিক পরিবর্তনের প্রভাব? ব্যাখ্যা করো। 
ঘ. নাসির ও তার বন্ধুর উচ্চ শিক্ষা শেষে বর্তমান কার্যক্রম বিশ্বায়নেরই প্রভাব। তুমি কি একমত? যুক্তিসহ বিশ্লেষণ করো।

❖ ২ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. সামাজিক পরিবর্তন বলতে মূল্যবোধ, সংস্কৃতি, জীবন ও আদর্শের পরিবর্তনকে বোঝায়।

খ. সমাজবিজ্ঞানে জেন্ডার প্রত্যয়টি দ্বারা নারী-পুরুষের জৈবিক দিককে না বুঝিয়ে বরং সামাজিক দিককে বোঝানো হয়। ল্যাটিন শব্দ Genas থেকে ইংরেজি Gender শব্দটির উৎপত্তি যার অর্থ ধরন বা প্রকার। চৌদ্দ শতকে জেন্ডার শব্দটি দ্বারা জৈবিক পার্থক্যকে বোঝানো হত। কিন্তু, বিগত শতকে মাঝামাঝি জেন্ডার শব্দটির একটি নতুন মাত্রা যোগ হয় যা জৈবিক পার্থক্যকে না বুঝিয়ে নারী পুরুষের সামাজিক সাংস্কৃতিক সম্পর্ককে বোঝায়। অর্থাৎ, সমাজ কর্তৃক সৃষ্ট নারী ও পুরুষের মধ্যকার-সামাজিক সম্পর্ককে জেন্ডার বলা হয়।

গ. নাসির ও তার বন্ধুদের তাদের বাবা-মায়ের সাথে যোগাযোগ করতে পারা সামাজিক পরিবর্তনের ক্ষেত্রে তথ্যপ্রযুক্তির প্রভাবকে নির্দেশ করে। সমাজ পরিবর্তনের বিভিন্ন উপাদানের মধ্যে তথ্যপ্রযুক্তি অন্যতম। মূলত তথ্য আদান-প্রদানের কলাকৌশলই হলো তথ্যপ্রযুক্তি। এটি হলো প্রযুক্তিভিত্তিক এক ধরনের যোগাযোগ ব্যবস্থা। তথ্যপ্রযুক্তির বিশাল উন্নতির ফলে তথ্য প্রাপ্তি যেমন সহজলভ্য হয়েছে তেমনি বিশ্বের একপ্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে যোগাযোগ করা যাচ্ছে মুহূর্তের মধ্যেই। ইন্টারনেট এবং ই-মেইলের মাধ্যমে সারা বিশ্বের নাগরিক সমাজ খুব নিকটে চলে আসছে, যেন হাত বাড়ালেই ছোয়া যায়। মানুষের জীবনে প্রতিটি বিষয় এখন তথ্য ও প্রযুক্তি নির্ভর হয়ে পড়েছে। কম্পিউটার, মোবাইল, ফেসবুক হয়ে উঠেছে আমাদের দৈনন্দিন জীবনের যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম, যার ফলে সমাজজীবনে যোগাযোগের ক্ষেত্রে এসেছে অভূতপূর্ব পরিবর্তন। উদ্দীপকের নাসির ও তার বন্ধুরা উচ্চ শিক্ষার জন্য বিদেশ গমন করলেও। পিতামাতার সাথে মোবাইল, ফেসবুক ও ই-মেইলের মাধ্যমে প্রতিদিন। যোগাযোগ করতে পারছে যা উপরে আলোচিত সামাজিক যোগাযোগ ব্যবস্থার পরিবর্তনের ক্ষেত্রে তথ্যপ্রযুক্তির প্রভাবের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।

ঘ. নাসির ও তার বন্ধুদের উচ্চ শিক্ষা শেষে বর্তমান কার্যক্রম তথা উন্নতজাতের ধান উৎপাদনের জন্য গবেষণা করা বিশ্বায়নেরই প্রভাব- বক্তব্যটির সাথে আমি একমত। 
বর্তমান বিশ্বায়নের যুগে পৃথিবীর জনসংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে, কিন্তু বৃদ্ধিরত জনসংখ্যার সাথে খাদ্য উৎপাদন সে হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে না। ফলে খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে উন্নতজাতের ফসল নিয়ে গবেষণা করা হচ্ছে যা স্বল্প সময়ে অধিক ফলন দানে সক্ষম হবে। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে খাদ্য উৎপাদন সে হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে না। ফলে খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি করে দেশকে স্বয়ংসম্পূর্ণ করে তোলার লক্ষ্যে বিভিন্ন ধরনের উন্নতজাতের ধান নিয়ে গবেষণা করা হচ্ছে, যা মূলত কৃষি ক্ষেত্রে বিশ্বায়নের প্রত্যক্ষ প্রভাবকে নির্দেশ করে।
উদ্দীপকে দেখা যায়, নাসির ও তার বন্ধুরা কৃষি বিষয়ে উচ্চ শিক্ষা শেষে উন্নতজাতের ধান উৎপাদনের জন্য গবেষণা করছে, যাতে দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করে তোলা যায়। তাদের উপর্যুক্ত কার্যক্রম উপর আলোচিত কৃষিক্ষেত্রে বিশ্বায়নের প্রভাবের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। সুতরাং বলা যায় যে, নাসির ও তার বন্ধুদের কার্যক্রম মূলত বিশ্বায়নের প্রভাবকেই নির্দেশ করে।

৩. শিমুলিয়া গ্রামের মানুষ এখন আর যাত্রাগান, পালাগানের আসরে তেমন যায় না। তারা ঘরে বসে টেলিভিশনেই পাচ্ছে বিনোদনের সব উপকরণ। আকাশ সংস্কৃতির উত্তাল স্রোতে আমাদের মাটি ও মানুষের গান ভাটিয়ালী, জারিগান, সারিগান আজ বিলুপ্তির পথে। ঐতিহ্যবাহী শাড়ি, লুঙ্গি, ফতুয়ার জায়গা দখল করছে সালোয়ার-কামিজ, জিন্স, টিশার্ট। বিদেশি ঘরানার খাদ্যের তোড়ে 'মাছে ভাতে বাঙালি' প্রবাদটি তলিয়ে যাচ্ছে। ক্রিকেটের জোয়ারে হাডুডু, কাবাডি, গোল্লাছুট খেলার কথা সবাই ভুলতে বসেছে। 
ক. ই-কমার্স কী?
খ. জনসংখ্যার হ্রাস-বৃদ্ধি কীভাবে সামাজিক পরিবর্তনের সাথে সম্পর্কিত? ব্যাখ্যা করো। 
গ. উদ্দীপকে প্রতিফলিত বাংলাদেশের গ্রামীণ সংস্কৃতির উপাদানসমূহ চিহ্নিত করো। 
ঘ. উদ্দীপকে শিমুলিয়া গ্রামের সামাজিক পরিবর্তনে বিশ্বায়নের প্রভাব বিশ্লেষণ করো।

❖ ৩ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. ই-কমার্স হচ্ছে পণ্য কেনাবেচা ও আর্থিক লেনদেনের ইলেক্ট্রনিক সংস্করণ।

খ. জনসংখ্যার হ্রাসবৃদ্ধি সামাজিক পরিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
কোনো সমাজের জনসংখ্যা হ্রাসবৃদ্ধি এবং গঠন-প্রকৃতির পরিবর্তনের ফলে সমাজের পারিবারিক জীবন, দলীয় জীবন ও সামাজিক জীবনে।
বিভিন্ন ধরনের পরিবর্তনের সূচনা হয়ে থাকে। আমাদের ভৌগোলিক সীমারেখার মধ্যে যেটুকু ভূমি রয়েছে তার তুলনায় জনসংখ্যা কম বা বেশি হলে সমাজে বিভিন্ন পরিবর্তন সাধিত হয়। তাই বলা যায় যে, জনসংখ্যার হ্রাস-বৃদ্ধি সামাজিক পরিবর্তনের সাথে সম্পর্কিত। 

গ. উদ্দীপকে বাংলাদেশের গ্রামীণ সংস্কৃতির উপাদানের চিত্র প্রতিফলিত হয়েছে।
প্রথমে লক্ষ করা যায়, উৎসব ও অনুষ্ঠানগত উপাদানের মধ্যে যাত্রা ও পালাগান গ্রামীণ সংস্কৃতির গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। তারপর দেখা যায়, ভাষা। ও সাহিত্য বাংলাদেশের গ্রামীণ সংস্কৃতির গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। গ্রামীণ ভাওয়াইয়া, পল্লিগীতি, জারিসারি আমাদের সংস্কৃতিতে নতুন মাত্রা যোগ করেছ। পোশাক পরিচ্ছদের বৈচিত্র্যগত উপাদান আমাদের গ্রামীণ সংস্কৃতিকে স্বকীয়তা দান করেছে। শাড়ি, লুঙ্গি, ফতুয়া, পায়জামা, পাঞ্জাবি বাঙালি সংস্কৃতির অংশ। খাদ্যাভ্যাসগত উপাদান বাংলাদেশের গ্রামীণ সংস্কৃতির গুরুত্বপূর্ণ দিক। বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে অভিন্নতা সত্যিকারের বাঙালি সংস্কৃতির বৈশিষ্ট্য। অন্যদিকে খেলাধুলা সংক্রান্ত উপাদানগুলোর মধ্যে লক্ষ করা যায় বৌছি, দাঁডw়য়াবান্ধা, হাডুডু, গোল্লাছুট, ডাঙুলি, মোরগ লড়াই, লাঠিখেলা প্রভৃতি। উপর্যুক্ত বর্ণিত উপাদানগুলোই আলোচ্য উদ্দীপকে ফুটে উঠেছে যা বাংলাদেশের গ্রামীণ সংস্কৃতির উপাদানসমূহকে নির্দেশ করে।

ঘ. উদ্দীপকে শিমুলিয়া গ্রামের পরিবর্তনে বিশ্বায়নের প্রভাব লক্ষ করা যায়। বিশ্বায়ন উন্নত বিশ্বের সৃষ্টি। উন্নত বিশ্ব তৃতীয় বিশ্বের দরিদ্র দেশগুলোকে প্রত্যক্ষভাবে শোষণ করার পরিবর্তে পরোক্ষভাবে শোষণ করার জন্য বিশ্বায়ন প্রক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে। উদ্দীপকে শিমুলিয়া গ্রামে সামাজিক পরিবর্তনে বিশ্বায়নের নেতিবাচক প্রভাব ফুটে ওঠেছে। বিশ্বায়নের কারণে পাশ্চাত্য সংস্কৃতির অনুপ্রবেশ ঘটেছে। ফলে দেশীয় সংস্কৃতির মূল্যবোধের পরিপন্থী বিজাতীয় সংস্কৃতি দেশীয় সংস্কৃতির বিকাশকে বাধাগ্রস্থ করছে। বিশ্বায়নের ফলে মানুষের আচার-আচারণ রীতিনীতি ও মূল্যবোধের ক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তন গঠিত হচ্ছে। উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তানরা পাশ্চাত্য ধাঁচে জীবনযাপন করছে। শিক্ষার ক্ষেত্রে পাশ্চাত্য রীতিনীতি অনুসরণ করছে।
উদ্দীপকে আমরা দেখতে পাই যে, বিশ্বায়নের প্রভাবে উৎসব-অনুষ্ঠানে ভাষা-সাহিত্য, পোশাক-পরিচ্ছেদ, খাদ্যাভ্যাস ও খেলাধুলায় ব্যাপক পরিবর্তন লক্ষ করা যায় যা আমাদের দেশীয় সংস্কৃতি ও রীতিনীতি ধ্বংসের মুখে টেনে দেয়। এছাড়াও শিমুলিয়া গ্রামের মানুষ যাত্রাপালা আসরে না গিয়ে টেলিভিশন দেখছে। সংস্কৃতির বিশ্বায়নের ফলে বিনোদনের উপকরণ বদলে যাচ্ছে। জারি, সারি, ভাটিয়ালি গান আজ বিলুপ্তির পথে। শাড়ি, লুঙ্গির জায়গায় জিন্স, টিশার্ট ব্যবহৃত হচ্ছে তাই বলা যায়, উদ্দীপকের শিমুলিয়া গ্রামের সামাজিক পরিবর্তনে বিশ্বায়নের প্রভাব অপরিসীম।


৪. আগে গ্রামীণ গৃহিণীদের লাকড়ির চুলায় রান্না করতে গিয়ে যেখানে ধোঁয়ায় কষ্ট পেতে হতো সেখানে এখন তারা রাইস কুকার, কারি কুকার, ওয়াটার হিটার, মাইক্রোওয়েভ ওভেন ব্যবহার করতে পেরে জীবনকে সহজ করে ফেলেছে। তাদের অনেকের অবসর বিনোদনের সঙ্গী এখন টিভি সিরিয়াল। শিশু-কিশোররাও এখন খেলার মাঠের চেয়ে ইন্টারনেট, মোবাইল ফোন, ট্যাব, ল্যাপটপ বা টিভিকে বিনোদন উপকরণ হিসেবে বেশি পছন্দ করছে।
ক. ১৯৭০-এর নির্বাচনে পূর্ব পাকিস্তান জাতীয় পরিষদে আওয়ামী লীগ কয়টি আসন লাভ করে? 
খ. যৌতুক প্রথা বলতে কী বোঝ?
গ. উদ্দীপকে গ্রামীণ গৃহিণীদের জীবনযাত্রার পরিবর্তনের পেছনে কোন কারণটি মুখ্য বলে তুমি মনে কর? মতামত দাও। 
ঘ. উদ্দীপকে শিশু-কিশোরদের বিনোদন মাধ্যম হিসেবে যে বিকল্প ফুটে উঠেছে তার ভালো-মন্দ দিক ব্যাখ্যা করো। 

❖ ৪ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. ১৯৭০-এর নির্বাচনে পূর্ব পাকিস্তান জাতীয় পরিষদে আওয়ামী লীগ ১৬৭টি আসন লাভ করে।

খ. যে প্রথা অনুসারে বিবাহে বরপক্ষ কিংবা কনেপক্ষ বাধ্য হয়ে নগদ অর্থ বা মূল্যবান সম্পদ প্রদান করে, তাই যৌতুক প্রথা। যৌতুক প্রথা একটি অন্যতম সামাজিক সমস্যা। যৌতুক হলো এক ধরনের দাবি। সামাজিকভাবে এ প্রথাকে উপহার, উপঢৌকন, নজরানা প্রদান, শুভেচ্ছার নিদর্শন বলা হলেও এটি বর্তমানে অনেক বড় একটি সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। যৌতুক উভয়পক্ষকে প্রদানের রীতি চালু থাকলেও সাধারণত আমাদের সমাজে যৌতুক পাত্রীপক্ষ পাত্রপক্ষকে প্রদান করে।

গ. উদ্দীপকে গ্রামীণ গৃহিণীদের জীবনযাত্রার পরিবর্তনের পেছনে নগরায়ণ তথ্য গ্রামীণ সমাজে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার মুখ্য বলে আমি মনে করি।
পল্লি বিদ্যুতায়নের ফলে গ্রামে তথ্য ও প্রযুক্তির ব্যবহার দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। তথ্যপ্রযুক্তি সহজে প্রবেশ করায় গ্রামে অনেক সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে, যা থেকে মানুষ উপকৃত হচ্ছে এবং মানুষের জীবনযাত্রার মান বেড়ে চলেছে।
উদ্দীপকে দেখা যায়, আগে গ্রামীণ গৃহিণীরা লাকড়ির চুলায় রান্না করতো। লাকড়ির চুলায় রান্না করতে গিয়ে ধোঁয়ায় কষ্ট হতো। কিন্তু তথ্য প্রযুক্তি এখন গ্রামীণ মানুষের জীবনকে অনেক সহজতর করে দিয়েছে। এখন তারা রাইস কুকার, কারি কুকার, ওয়াটার হিটার, মাইক্রোওয়েভ ওভেন ব্যবহার করছে। এতে করে গ্রামীণ জীবনে অনেক পরিবর্তন সাধিত হয়েছে।
শিশু-কিশোররা এক সময় খেলার মাঠে সময় কাটাতো। কিন্তু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ছোঁয়ায় বদলে গেছে তাদের সবকিছু। তারা এখন খেলার মাঠের চেয়ে ইন্টারনেট, মোবাইল ফোন, ট্যাব, ল্যাপটপ বা টিভিকে বিনোদন উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করছে। উপর্যুক্ত আলোচনা হতে বলা যায়, গ্রামীণ সমাজব্যবস্থায় জীবনযাত্রার পরিবর্তনে মুখ্য ভূমিকা রাখছে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার।

ঘ. উদ্দীপকে শিশু-কিশোরদের বিনোদন মাধ্যমে যে বিকল্প ফুটে উঠেছে অর্থাৎ, খেলার মাঠের পরিবর্তে বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক বিনোদন উপকরণ ব্যবহৃত হচ্ছে, তার ভালো-মন্দ দুটো দিকই বর্তমান।
সামাজিক পরিবর্তনের বিভিন্ন উপাদানের মধ্যে তথ্যপ্রযুক্তি অন্যতম। তথ্যপ্রযুক্তির বিকাশ সাধনের ফলে সামাজিক পরিবর্তন দ্রুত হচ্ছে। মানুষের জীবনে প্রতিটি বিষয় এখন তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর হয়ে পড়ছে। যেমন- অনেক পরিবারেই এখন কম্পিউটার, ল্যাপটপ, মোবাইল ফোন রয়েছে। ঐ সমস্ত পরিবারের শিশুরা এসব উপকরণের ব্যবহার করে থাকে। শিশুরা এ সকল উপকরণ ব্যবহার করার মাধ্যমে মূলত নিজের বিকাশ ঘটায়। আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির বিকাশের কারণে বিজ্ঞাপন চিত্র, জনপ্রিয় সিনেমা, বিখ্যাত ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব এবং তাদের জীবন ধারণ প্রচার মাধ্যমের কল্যাণে দ্রুত সমাজে ছড়িয়ে পড়ে, যা শিশুর সামাজিকীকরণে প্রভাব ফেলে। এই প্রভাব ইতিবাচক ও নেতিবাচক উভয় প্রকারের হয়ে থাকে। অনেক পরিবারের অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের বিভিন্ন ধরনের উদ্ভাবন, জ্ঞান-বিজ্ঞান বিষয়ে আগ্রহের সাথে শিক্ষার উদ্দেশ্যে স্যাটেলাইটগুলো ব্যবহারের অনুমতি প্রদান করেন। আবার সন্তানরা অনেক ক্ষেত্রে স্বাধীনভাবে বিভিন্ন পর্নো ভিডিও কিংবা অশ্লীল ছবি উপভোগ করে যা তাদের জীবনে প্রভাব ফেলে।
পরিশেষে বলা যায় যে, তথ্যপ্রযুক্তির বিকাশের কল্যাণে শিশু কিশোরদের যে ধরনের আধুনিক বিনোদন উপকরণের বিকল্প ব্যবস্থা হয়েছে তার ভালো-মন্দ দুটো দিকই রয়েছে।

৫. মোহন সরদার বাগেরহাট জেলা শহরের পাশেই বসবাস করেন। সম্প্রতি তার বাড়ির চারপাশে অনেক কলকারখানা গড়ে উঠেছে। সেখানকার মানুষ এখন আর ক্ষেতে খামারে কাজ করে না। এলাকার ঘরবাড়িগুলোর ধরনও গত পাঁচ বছরে অনেক পাল্টে গেছে। বর্তমানে প্রায় সব বাড়িই ইটের তৈরি। তবে মোহন সরদার মনে করেন, তার এলাকার মানুষের জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধি পেলেও নিরাপত্তা অনেক কমে গেছে।
ক. প্রযুক্তির ক্রমোন্নতিতে আমাদের সমাজব্যবস্থায় কয় ধরনের। ফলাফল দেখতে পাওয়া যায়?
খ. শিল্পায়নের ফলে কীভাবে সামাজিক পরিবর্তন ঘটে? করো ব্যাখ্যা
গ. মোহন সরদারের এলাকায় সামাজিক পরিবর্তনের যে উপাদানটি লক্ষ করা যায় তার ব্যাখ্যা দাও। 
ঘ. মোহন সরদারের এলাকার কলকারখানা ও ইটের তৈরি ঘরবাড়ি জনজীবনে ব্যাপক প্রভাব বিস্তারে সক্ষমু বিশ্লেষণ করো। 

❖ ৫ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. প্রযুক্তির ক্রমোন্নতিতে আমাদের সমাজব্যবস্থায় দুই ধরনের ফলাফল দেখতে পাওয়া যায়। 

খ. সামাজিক পরিবর্তনের অন্যতম উপাদান হলো শিল্পায়ন।
যে অঞ্চলে শিল্পায়ন তাত শিল্প-কলকারখানা গড়ে ওঠে, সে অঞ্চলে নতুন নতুন কর্মক্ষেত্র সৃষ্টি হওয়ায় মানুষ কৃষিজ পেশা ছেড়ে অকৃষিজ পেশায় গ্রহণ করে। ফলে উক্ত এলাকায় পেশাগত পরিবর্তন দেখা দেয়। এছাড়াও শিল্পাঞ্চল এলাকায় আয়ের সুযোগ বেশি থাকায় মানুষের সঞ্চয় বৃদ্ধি পায় যা মানুষের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে ভূমিকা রাখে। শিল্পায়নের অবশ্যম্ভাবী ফল হলো নগরায়ণ। নগরায়ণের ফলে মানুষের মূল্যবোধ, আদর্শ, রীতিনীতি তথা সামগ্রিক সংস্কৃতির পরিবর্তন সাধিত হয় যা সামাজিক পরিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

গ. মোহন সরদারের এলাকায় সামাজিক পরিবর্তনের শিল্পায়ন ও নগরায়ণ উপাদানটির প্রভাব লক্ষ করা যায়। শিল্পায়ন হলো এমন একটি প্রক্রিয়া যেখানে সমাজের উৎপাদন প্রক্রিয়া কৃষি থেকে কারখানাভিত্তিতে রূপান্তরিত হয় এবং শ্রম বিভাজন সাধারণ থেকে জটিলতর স্তরের দিকে ধাবিত হয়। আর নগরায়ণ হচ্ছে গ্রামীণ অবস্থা থেকে নগর বা শহরে রূপান্তরিত করার প্রক্রিয়া। নগরায়ণ প্রক্রিয়ার মূল উদ্দেশ্য হলো অবস্থার উন্নতি সাধন। জনসংখ্যা বৃদ্ধি, স্থানের অপ্রতুলতা, যানবাহনের অসুবিধা, উন্নয়ন ইত্যাদির ফলে নগরায়ণ ঘটে। বলা হয়ে থাকে, নগরায়ণ শিল্পকেন্দ্রিক সমাজের এক অবশ্যম্ভাবী পরিণতি। কলকারখানা, শিল্পপ্রতিষ্ঠান নগরায়ণের একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য।
মোহন সরদারের এলাকায় অনেক কলকারখানা গড়ে উঠেছে এবং এলাকার লোকজন আর ক্ষেতে খামারে কাজ করে না। এলাকার প্রায় ঘরবাড়িগুলো ইটের দ্বারা তৈরি। এগুলো সবই শিল্পায়ন ও নগরায়ণের বৈশিষ্ট্যের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। সুতরাং বলা যায় যে, মোহন সরদারের এলাকায় শিল্পায়ন ও নগরায়ণের প্রভাব লক্ষ করা যায়।

ঘ. মোহন সরদারের এলাকার কলকারখানা ও ইটের তৈরি ঘরবাড়ি জনজীবনে ব্যাপক প্রভাব বিস্তারে সক্ষম।
অপরিকল্পিত নগরায়ণের ফলে পরিবেশের মারাত্মক বিপর্যয় ঘটে। অনিয়ন্ত্রিত বর্জ্য ব্যবস্থা পরিবেশকে দূষিত করে তোলে। মোহন সরদারের এলাকায়ও এ ধরনের পরিবেশ বিপর্যয় দেখা দিতে পারে। শিল্পায়নের ফলে সামাজিক বন্ধন শিথিল হয়ে যায়। শিল্প এলাকায় বিভিন্ন অঞ্চলের লোক একসঙ্গে বাস করে। আচার-আচরণের ভিন্নতা এবং ব্যস্ততার কারণে তাদের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে ওঠে না। বিভিন্ন এলাকার লোকজনদের মধ্যেও ব্যস্ততার কারণে সামাজিক বন্ধনে শিথিলতা আসতে পারে।
কলকারখানার বর্জ্য সঠিকভাবে অপসারণ না করলে যেকোনো এলাকার পরিবেশ দূষিত হতে পারে। এর ফলে এলাকার লোকজন বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হতে পারে। এছাড়া কলকারখানা স্থাপনের জন্য খোলা জায়গার পরিমাণ কমে যায়। এর ফলে খেলাধুলা এবং বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের জন্য উন্মুক্ত স্থান পাওয়া যায় না। এর ফলে চিত্তবিনোদন ব্যবস্থা ব্যাহত হয়।
কলকারখানা তৈরির কারণে মোহন সরদারের এলাকার লোকজন কাজের সুযোগ পাবে। এর ফলে তারা অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ হবে। মোহন সরদারের এলাকার শিল্পায়ন ও নগরায়ণ, আধুনিকায়নকে সহায়তা দেবে। এর ফলে শিক্ষার প্রসার বাড়বে এবং আর্থ-সামাজিক ও সাংস্কৃতিক উন্নয়ন ঘটবে।
শিল্পায়ন ও নগরায়ণ তথ্য ও প্রযুক্তির ব্যবহারকে সমৃদ্ধ করে। তথ্য ও প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে মোহন সরদারের এলাকার লোকজন। নিজেদেরকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবে। সুতরাং উপরের আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায়, কলকারখানা ও নগরায়ণের ফলে নানারকম অসুবিধা দেখা দিলেও এর উপকারিতাও অনেক। মোহন সরদারের এলাকার লোকজনের জীবনে তাই শিল্পায়ন ও নগরায়ণের প্রভাব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

৬. দেলপাড়া ও ভূইগড় পাশাপাশি দুটি গ্রাম। এই আধুনিক সময়েও ভূইগড় গ্রামটির কোনো পরিবর্তন লক্ষ করা যায় না। অপরদিকে দেলপাড়া গ্রামটি দেখতে এখন আর গ্রাম মনে হয় না। পুরো গ্রামজুড়েই দোকানপাট, মাঝে মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন কলকারখানা। এ এলাকার মানুষ এখন আর কৃষি পেশার ওপর নির্ভর করে না। শুধু তাই নয়, দেশের অন্য স্থান থেকেও মানুষ এসে দেলপাড়া গ্রামে বসবাস শুরু করেছে।
ক. নগরায়ণ কী?
খ. শিল্পায়ন কীভাবে আমাদের দেশের বেকারত্ব দূর করতে পারে? 
গ. যে কারণে দেশের অন্য স্থান থেকে মানুষ দেলপাড়া গ্রামে এসে বসবাস শুরু করেছে তা পাঠ্যবইয়ের আলোকে ব্যাখ্যা করো। 
ঘ. 'কলকারখানা স্থাপনের মাধ্যমে বাংলাদেশের যে কোনো গ্রামকে দেলপাড়া গ্রামের মতো উন্নত করা সম্ভব।'- উক্তিটির যথার্থতা নিরূপণ করো। 

❖ ৬ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. যে প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কোনো এলাকা নগরে রূপান্তরিত হয় তাকে নগরায়ণ বলে।

খ. বাংলাদেশের বেকারত্ব দূরীকরণে শিল্পায়ন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
আমাদের কৃষি সেক্টরে প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত মানুষ কাজ করছে। বস্তুত, গ্রামের অনেক কৃষি পরিবারেই দেখা যায় যে, দুই জনের কাজ ৩/৪ জনে করছে। ফলে, এক ধরনের প্রচ্ছন্ন তথা ছদ্ম বেকারত্ব লক্ষ করা যায়। তদুপরি, বাংলাদেশের জনসংখ্যার একটা বিরাট অংশ বেকার জীবনের অভিশাপ নিয়ে দিনাতিপাত করছে। শিল্পকারখানায় কাজ করে। আমাদের দেশের বেকাররা জীবিকার্জন করতে পারবে। এর ফলে বেকারত্ব দূর হবে। 

গ. নগরায়ণ ও শিল্পায়নের কারণে মানুষ দেশের অন্য স্থান থেকে এসে দেলপাড়া গ্রামে বসবাস শুরু করেছে।
নগরায়ণের মাধ্যমে মানুষের কর্মের ক্ষেত্র তৈরি, আর্থিক সচ্ছলতা আনয়ন, বেকারত্ব দূর করা যায়। দেলপাড়া গ্রামেও নগরায়ণ হয়েছে। ফলে দেশের অন্যান্য স্থান হতে মানুষ দেলপাড়া গ্রামে এসে বসবাস করছে। তাছাড়াও নগরের লোকজন গ্রামের তুলনায় অধিক নাগরিক সুযোগ-সুবিধা ভোগ করে। নগরে থাকে পর্যাপ্ত স্কুল, কলেজ, হাসপাতাল, বিনোদনের ব্যবস্থাসহ নানাবিধ সুযোগ-সুবিধা যা গ্রামের এই সব সুবিধাবঙ্খিত মানুষদের শহরে বসবাসের জন্যে আকৃষ্ট করে থাকে। শিল্পায়ন বলতে মূলত কৃষি সমাজে আধুনিক যান্ত্রিক শিল্পের বিকাশকে। বোঝায়। শিল্পায়ন অর্থনৈতিক জীবনে আমূল পরিবর্তন ঘটায়। শিল্প এলাকায় মানুষের কর্মক্ষেত্র তৈরি হয়। ফলে জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধি পায়। শিল্পায়নের মাধ্যমে সমাজে অর্থনৈতিক আত্মনির্ভরশীলতা বৃদ্ধি পায়। দেলপাড়া গ্রামের হাট-বাজারে মাঝে মাঝে কলকারখানা গড়ে ওঠায় এখানে মানুষের কর্মক্ষেত্রের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। শিল্পায়নের কারণে দোকানপাটও বৃদ্ধি পাচ্ছে। সুতরাং বলা যায়, দেলপাড়া গ্রামে নাগরিক সুযোগও রয়েছে যা দেশের অন্য অঞ্চলের মানুষকে এখানে এসে বসবাস করার জন্যে উৎসাহিত করছে।

ঘ. কলকারখানা স্থাপনের মাধ্যমে বাংলাদেশের যেকোনো গ্রামকে দেলপাড়া গ্রামের মতো উন্নত করা সম্ভব। শিল্পায়নের ফলে গ্রামগুলোতে মানুষের বেকারত্ব দূর হবে এবং মানুষের অর্থনৈতিক উন্নতি হবে। শিল্পায়ন অর্থনৈতিক উন্নয়নে বর্তমানে মূল ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। শিল্পায়ন ঘটিয়ে যেকোনো গ্রামকে অর্থনৈতিকভাবে সচ্ছল করা যায়। এছাড়া শিল্পাঞ্চলের লোকেরা রাজনীতি সচেতন হয়। নিজেদের দাবিদাওয়া আদায়ে তারা গ্রামের লোকদের চেয়ে বেশি সচেতন। শিল্পায়ন ঘটিয়ে গ্রামগুলোতে রাজনৈতিক সচেতনতা বৃদ্ধি করা সম্ভব। গ্রামগুলোতে দেলপাড়ার মতো শিল্পায়ন ঘটিয়ে সামাজিক মূল্যবোধ বৃদ্ধি করা যায়। শিল্পাঞ্চলে শিক্ষিত লোকের হার গ্রামের তুলনায় বেশি। কলকারখানা স্থাপনের মাধ্যমে গ্রামগুলোতে শিক্ষার হার বাড়ানো যায়। শিক্ষার জন্যে যে আর্থিক সচ্ছলতা প্রয়োজন তা শিল্পাঞ্চলের মানুষের কাছে থাকে। তারা সন্তানদের লেখাপড়া করিয়ে যোগ্য মানুষ করে তুলতে পারে। দেলপাড়া গ্রামের উন্নয়নে আমরা শিল্পায়নের প্রভাব লক্ষ করেছি।
শিল্পায়নের ফলে ভূইগড় গ্রামকে পেছনে ফেলে দেলপাড়া উন্নতি সাধন করেছে। দেশের প্রত্যেকটি গ্রামে যদি দেলপাড়ার মতো শিল্পায়িত হয় তবে গ্রামগুলোর অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামাজিক মূল্যবোধ, শিক্ষা, ইত্যাদি ক্ষেত্রে উন্নত হওয়ার সুযোগ রয়েছে। সর্বশেষে আমরা বলতে পারি, শিল্পায়নের মাধ্যমে গ্রামগুলোর সব ধরনের দীনতা মোচন করা সম্ভব। দেলপাড়া গ্রামের উদাহরণ এই ব্যাপারে লক্ষণীয়।

HSC সমাজবিজ্ঞান ২য় পত্র (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর অধ্যায় ৮ pdf download

৭. ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটে। স্বাধীন-সার্বভৌম এ দেশটি ভৌগোলিক কারণে নানা সময়ে বিভিন্ন ধরনের দুর্যোগের সম্মুখীন হয়েছে। যেমন ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর ঘূর্ণিঝড় ‘সিডর' দেশটির দক্ষিণাঞ্চলে আঘাত হানায় জনগণের জানমালের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল।
ক. নগরায়ণের উদ্দেশ্য কী?
খ. আধুনিক তথ্য ও প্রযুক্তি কীভাবে শিশুর সামাজিকীকরণে প্রভাব ফেলে? ব্যাখ্যা করো।
গ. উদ্দীপকে সামাজিক পরিবর্তনের কোন কোন ধরনের পরিচয় ফুটে উঠেছে? ব্যাখ্যা করো। 
ঘ. সামাজিক পরিবর্তনের ক্ষেত্রে তুমি কি শুধু উদ্দীপক দ্বারা ইঙ্গিতকৃত ধরনগুলোই দেখতে পাও? মতামত দাও।

❖ ৭ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. নগরায়ণের উদ্দেশ্য হলো অবস্থার উন্নতি সাধন।

খ. তথ্য ও প্রযুক্তির বিসত্মৃত প্রয়োগ নানা প্রকার সামাজিক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। আধুনিক তথ্য ও প্রযুক্তি বিকাশের কারণে বিজ্ঞাপন চিত্র, জনপ্রিয়। সিনেমা, বিখ্যাত ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব এবং তাদের জীবন। ধারণ প্রচার মাধ্যমের কল্যাণে দ্রুত সমাজে ছড়িয়ে পড়ে যা শিশুর বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। সর্বোপরি শিশুর সামাজিকীকরণে প্রভাব ফেলে।

গ. উদ্দীপকে সামাজিক পরিবর্তনের দুটি ধরনের পরিচয় ফুটে উঠেছে। এগুলো হলো- পরিকল্পিত পরিবর্তন ও অপরিকল্পিত পরিবর্তন।
সহজ অর্থে সামাজিকভাবে বা মানবসৃষ্ট পরিবর্তনই হলো পরিকল্পিত পরিবর্তন। যেমন- যুদ্ধ, বিপ্লব, অভ্যুত্থান ইত্যাদি। অনুরূপভাবে উদ্দীপকে দেখা যায়, ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটে। যা পরিকল্পিত পরিবর্তনের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। আবার সাধারণত প্রাকৃতিক কারণে যেমন- বন্যা, খরা, ইত্যাদি. যে পরিবর্তন ঘটে তাই অপরিকল্পিত বা প্রাকৃতিক পরিবর্তন। উদ্দীপকেও দেখা যায়, ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর অন্যতম প্রাকৃতিক দুর্যোগ 'সিডর' বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে আঘাত হানে। শুধু সিডরই নয়, ভৌগোলিক কারণে দেশটি বিভিন্ন ধরনের দুর্যোগের সম্মুখীন হয়, যা সামাজিক পরিবর্তনের অন্যতম ধরন অপরিকল্পিত পরিবর্তনকে নির্দেশ করে। সুতরাং বলা যায়, উদ্দীপকে পরিকল্পিত ও অপরিকল্পিত পরিবর্তনের ধরন ফুটে উঠেছে।

ঘ. উদ্দীপকে সামাজিক পরিবর্তনের দুটি ধরনের ইঙ্গিত রয়েছে। এগুলো হলো- পরিকল্পিত পরিবর্তন ও অপরিকল্পিত পরিবর্তন। তবে উক্ত ধরনগুলো ব্যতীত সামাজিক পরিবর্তনের আরও কতকগুলো ধরন দেখা যায়।
ম্যাকাইভার ও পেজ তাদের Society: An Introductory Analysis গ্রন্থে সামাজিক পরিবর্তনের তিনটি ধরনের কথা উল্লেখ করেছেন। এগুলো হলো প্রথম ধরনের সামাজিক পরিবর্তনের উদাহরণ হিসেবে উদ্ভাবনের কথা বলা হয়। এ ধরনের পরিবর্তন হঠাৎ করে ঘটে থাকে, এ ধরনের উদ্ভাবন বিশ্ববাসীর কাছে প্রকাশের পূর্বে সাধারণত একটি দীর্ঘ ধারাবাহিক প্রস্তুতির ধাপ থাকে এবং এক সময় এটি বাস্তবে রূপ নেয়। টেলিফোন, কার, অ্যারোপ্লেন, বেতার এবং আরও অনেক ধরনের উদ্ভাবনের ইতিহাস এ পরিবর্তনকে ব্যাখ্যা করে।
দ্বিতীয় ধরনের পরিবর্তন ভৌগোলিকভাবে উপস্থাপিত হতে পারে। এছাড়া এ প্রকারের পরিবর্তন অর্থনৈতিক প্রপঞ্চ এবং জনসংখ্যা প্রপঞ্চের দীর্ঘ সময়ের বৈশিষ্ট্যমন্ডিত। নগরের উদ্ভব এবং পতন, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের প্রসার ও পতনে এ ধরনের সামাজিক পরিবর্তন ঘটে থাকে। তৃতীয় ধরনের পরিবর্তন দ্বিতীয় প্রকারের পরিবর্তনের অনেকটা অনুরূপ। মানবসমাজের প্রকৃতির মতো অনেক প্রপঞ্চক চক্রাকার ধারার চিন্তাধারা এ ধরনের পরিবর্তনের উদাহরণ।

৮. বলেশ্বর নদীর উপর সেতু নির্মিত হওয়ার পর পাথরঘাটা এলাকায় বেশকিছু ছোট ছোট শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। ওই এলাকার নারী-পুরুষরা এ শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোতে কাজে নিয়োজিত হয়ে নিজেদের অর্থনৈতিক অবস্থার বেশ উন্নতি সাধন করেছে। 
ক. সামাজিক পরিবর্তন প্রধানত কত প্রকার?
খ. সামাজিক পরিবর্তন বলতে কী বোঝ?
গ. উদ্দীপকের পাথরঘাটা এলাকার সামাজিক পরিবর্তনের ক্ষেত্রে কোন কারণটি কার্যকর হয়েছে? ব্যাখ্যা করো। 
ঘ. উদ্দীপকের পাথরঘাটা এলাকার সামাজিক পরিবর্তনের পেছনে যে কারণটিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে, তা ব্যতীত অন্য কারণগুলো বিশ্লেষণ করো। 

❖ ৮ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. সামাজিক পরিবর্তন প্রধানত দুই প্রকার।

খ. সামাজিক পরিবর্তন হলো সমাজবদ্ধ মানুষের জীবনধারার প্রচলিত প্রাতিষ্ঠানিক অবস্থা, বৈষয়িক আচরণ অর্থাৎ সমাজ কাঠামো, সামাজিক সংগঠন, সামাজিক মিথস্ক্রিয়া, সামাজিক কার্যপ্রক্রিয়া ইত্যাদির পরিবর্তন। মানবসমাজ সর্বদাই পরিবর্তনশীল। এই পরিবর্তনের গতি কখনো দ্রুত কখনো বা মন্থর হয়ে থাকে।

গ. পাথরঘাটার সামাজিক পরিবর্তনের ক্ষেত্রে শিল্পায়ন কারণটি কার্যকর। শিল্পায়ন বলতে কলকারখানা স্থাপন ও সেগুলোর প্রসার লাভকে বোঝায়। বস্তুত শিল্পায়ন হচ্ছে কৃষিজ দ্রব্যের রূপান্তর ঘটিয়ে অন্য জাতের পণ্য উৎপাদনে এবং অকৃষিজ পণ্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে যন্ত্রচালিত উৎপাদন ব্যবস্থার প্রবর্তন। যেমন- কৃষিজ দ্রব্য পাটকে রূপান্তর করে কার্পেট, চট, থলে এবং তুলাকে রূপান্তর করে কাপড় তৈরি করতে যথাক্রমে পাট শিল্প ও বস্ত্র শিল্পের প্রবর্তন হয়েছে। শিল্পায়নের ফলে আর্থসামাজিক অবস্থার পরিবর্তন ঘটে, যা সামাজিক পরিবর্তনে ভূমিকা রাখে।
উদ্দীপকেও দেখা যায়, পাথরঘাটা এলাকায় বেশকিছু ছোট ছোট শিল্প ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে যেগুলোর মধ্যে কিছু উৎপাদনমুখী প্রতিষ্ঠানও রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানে ঐ এলাকার নারী-পুরুষ বিভিন্ন রকম কাজে নিয়োজিত হয়ে নিজের অবস্থার বেশ উন্নতি করছে। সুতরাং উপযুক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায় যে, পাথরঘাটা এলাকায় সামাজিক পরিবর্তনের ক্ষেত্রে শিল্পায়ন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।

ঘ. শিল্পায়ন ব্যতীত সামাজিক পরিবর্তনের আরও কতগুলো কারণ রয়েছে। এগুলো হলো-
জনসংখ্যা বৃদ্ধি: কোনো সমাজের জনসংখ্যার হ্রাস-বৃদ্ধি এবং গঠন প্রকৃতির পরিবর্তন সমাজের পারিবারিক জীবন, গোষ্ঠীজীবন ও সামাজিক জীবনে বিভিন্ন ধরনের পরিবর্তনের সূচনা করে। 
অর্থনৈতিক কারণ: অর্থনৈতিক অবস্থার সাথে সামাজিক অবস্থা ওতপ্রোতভাবে জড়িত। তাই অর্থনৈতিক অবস্থায় কোনো পরিবর্তন ঘটলে তা সামাজিক পরিবর্তনকেও ত্বরান্বিত করে থাকে। 
সামাজিক কারণ: বিভিন্ন আর্থ-সামাজিক অবস্থার পেক্ষাপটে সামাজিক পরিবর্তন সূচিত হয়।
রাজনৈতিক কারণ: কোনো দেশ বা গোষ্ঠীর রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট পরিবর্তনের সাথে সামাজিক পরিবর্তনের ঘনিষ্ঠ যোগসূত্র রয়েছে। শিক্ষা ও সংস্কৃতি: শিক্ষা মানুষকে অধিক সচেতন করে তোলে। ফলে মানুষের জীবনযাত্রার মান ও আচার-আচরণে পরিবর্তন সূচিত হয়। পাশাপাশি ভিন্ন সংস্কৃতির অনুপ্রবেশের ফলে বিভিন্নমুখী সামাজিক পরিবর্তন সূচিত হয়।
এ ছাড়া ভৌগোলিক কারণ, ধর্মীয় প্রভাব, প্রযুক্তিগত পরিবর্তন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রভৃতি সামাজিক পরিবর্তনে ভূমিকা রাখে। সুতরাং বলা যায়, শিল্পায়ন ব্যতীত উপযুক্ত কারণসমূহ সামাজিক পরিবর্তনের জন্য দায়ী।

৯. সম্প্রতি প্রকাশিত পরিবেশ দূষণ সম্পর্কিত একটি রিপোর্ট পড়ে সুবর্ণ জানতে পারে, আধুনিক বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্র ও সমাজের মধ্যে বহুবিধ সংযোগ ও সম্পর্ক স্থাপিত হওয়ায় উৎপাদন প্রক্রিয়ায়, বিশেষত কৃষি উৎপাদনের ওপর অধিক মাত্রায় চাপ সৃষ্টি হচ্ছে। এছাড়া মানুষের ভোগ প্রবণতারও পরিবর্তন হচ্ছে। উৎপাদন প্রক্রিয়া ও ভোগ প্রবণতার এই পরিবর্তনের ফলে প্রাকৃতিক পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর উপাদানও বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর ফলে বর্তমানে প্রাকৃতিক পরিবেশ অনেক বেশি হুমকির সম্মুখীন হয়ে পড়েছে। 
ক. সামাজিক পরিবর্তন কী? 
খ. সামাজিক পরিবর্তনের ভৌগোলিক কারণ ব্যাখ্যা করো।
গ. উদ্দীপকে সামাজিক পরিবর্তনের ক্ষেত্রে কোন বিষয়ের নেতিবাচক প্রভাবের ইঙ্গিত রয়েছে? ব্যাখ্যা করো। 
ঘ. সমাজের ওপর উদ্দীপক দ্বারা ইঙ্গিতকৃত বিষয়ের কি কোনো ইতিবাচক প্রভাব আছে? উত্তরের সপক্ষে যুক্তি দাও। 

❖ ৯ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. সামাজিক পরিবর্তন বলতে সমাজ কাঠামো যেমন- পরিবার, বিবাহ, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান প্রভৃতির পরিবর্তনকে বোঝায়।

খ. প্রাকৃতিক পরিবেশ বা ভৌগোলিক কারণে মানুষের জীবনযাত্রা বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। সমাজজীবনের সর্বক্ষেত্রেই ভৌগোলিক প্রভাব রয়েছে। এ প্রভাব কোথাও প্রত্যক্ষ, পরোক্ষ এবং কম বেশি স্থায়ী হতে পারে। এ জন্য শীতপ্রধান অঞ্চল ও গ্রীষ্মপ্রধান অঞ্চল, সমতলভূমি অঞ্চল, মরুভূমি ও পাহাড়ি অঞ্চলের জনগণের জীবনযাত্রায় পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। ফলে সামাজিক পরিবর্তনের মাত্রাতেও পার্থক্য সূচিত হয়।

গ. উদ্দীপকে সামাজিক পরিবর্তনে বিশ্বায়নের নেতিবাচক প্রভাবের ইঙ্গিত রয়েছে। বিশ্বায়ন হলো আধুনিক বিশ্ব ব্যবস্থার অন্তর্গত বিভিন্ন রাষ্ট্র এবং সমাজের মধ্যে বহুবিধ সংযোগ এবং সম্পর্ক স্থাপন। আর এই বিশ্বায়ন প্রক্রিয়ার ফলে উৎপাদন প্রক্রিয়ায় বিশেষ করে কৃষি উৎপাদনের ওপর অধিকমাত্রায় চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে। শুধু তাই নয় এই বিশ্বায়নের কারণে মানুষের ভোগ প্রবণতারও পরিবর্তন হচ্ছে। এই উৎপাদন ও ভোগ প্রবণতার জন্য অধিকমাত্রায় বর্জ্য তথা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর উপাদান বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে পরিবেশ অধিকতর হুমকির সম্মুখীন হয়ে পড়া়ছে যা পরিবেশের ওপর বিশ্বায়নের নেতিবাচক প্রভাব। অনুরূপভাবে উদ্দীপকেও দেখা যায়, পরিবেশ দূষণ নিয়ে লেখা সম্প্রতি প্রকাশিত একটি রিপোর্ট পড়ে সুবর্ণ জানতে পারে, আধুনিক বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্র ও সমাজের মধ্যে বহুবিধ সংযোগ ও সম্পর্ক স্থাপিত হয়েছে। এর ফলে উৎপাদন প্রক্রিয়ায় বিশেষ করে কৃষি উৎপাদনের ওপর অধিকমাত্রায় চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে। এছাড়া মানুষের ভোগ। প্রবণতারও পরিবর্তন হচ্ছে। এই উৎপাদন ও ভোগ প্রবণতার জন্য অধিকমাত্রায় বর্জ্য তথা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর উপাদান বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে পরিবেশ অধিকতর হুমকির সম্মুখীন হয়ে পড়েছে যা পরিবেশের ওপর বিশ্বায়নের নেতিবাচক প্রভাবকে নির্দেশ করে। সুতরাং উপর্যুক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে আমরা বলতে পারি, উদ্দীপকে সামাজিক পরিবর্তনে বিশ্বায়নের নেতিবাচক প্রভাবের প্রতি ইঙ্গিত রয়েছে।

ঘ. উদ্দীপকে বর্ণিত সুবর্ণ একটি রিপোর্ট পড়ে জানতে পারে, আধুনিক বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্র ও সমাজের মধ্যে বহুবিধ সংযোগ ও সম্পর্ক স্থাপিত হয়েছে যা বিশ্বায়নকে নির্দেশ করে। সমাজের ওপর বিশ্বায়নের কতকগুলো ইতিবাচক প্রভাব রয়েছে। বিশ্বায়ন প্রক্রিয়ার ফলে পুঁজির আন্তর্জাতিক চলাচল বৃদ্ধি পাচ্ছে। যদিও তার বৃহৎ অংশ উন্নত দেশগুলোর মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকছে তথাপি কিছু অংশ তৃতীয় বিশ্বে নিয়োজিত হচ্ছে। ফলে তা কর্মসংস্থান ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করছে।
বিশ্বায়ন প্রক্রিয়ার পরিণতিতে কৃষির বাণিজ্যিকীকরণের ফলে কৃষিখাতে স্বাভাবিকভাবেই উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে কৃষকের জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশ্বায়নের ফলে তথ্য প্রযুক্তির সাথে সাথে জ্ঞানগত সম্পদের আন্তঃরাষ্ট্রীয় প্রবাহ বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে উন্নত বিশ্বের জ্ঞান ও দক্ষতা দ্বারা তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলো লাভবান হচ্ছে।
গোষ্ঠী বা জাতিসমূহের আন্তঃসম্পর্ক বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে নতুন ধরনের বিশ্ব রচনার উদ্ভব ঘটেছে। যেমন- মানবাধিকার, নারী সচেতনতা, পরিবেশ সচেতনতা, ক্ষুদ্র নিরাপত্তা প্রভৃতি বিষয়গুলো নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নীতি নির্ধারকগণ ভাবতে বাধ্য হচ্ছেন। উপরের আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায়, সমাজের ওপর বিশ্বায়নের প্রভাব অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।

১০. দীর্ঘদিন প্রবাস জীবন শেষে আমিন সাহেব দেশে ফিরে আসেন এবং গ্রামের বাড়িতে যান। এক সময় এ গ্রামে ফসল আবাদের জন্য বৃষ্টির অপেক্ষা, গরমে হাতপাখার প্রচলন এবং বিনোদনের জন্য রেডিওই ছিল অন্যতম মাধ্যম। কিন্তু বর্তমানে এসব ক্ষেত্রে উন্নত পানির পাম্প, শ্যালো মেশিন, সিলিং ফ্যান এবং ঘরে ঘরে টেলিভিশনের ব্যাপক ব্যবহার লক্ষণীয়। 
ক. অর্থনৈতিক নিয়ন্ত্রণবাদের মূল কথা কী? 
খ. পেশা নির্বাচনের ক্ষেত্রে বিশ্বায়ন কীরূপ ভূমিকা রাখছে? ব্যাখ্যা করো।
গ. আমিন সাহেবের ঘটনায় সমাজবিজ্ঞানের যে প্রত্যয়টির ইঙ্গিত পাওয়া যায় তা ব্যাখ্যা করো। 
ঘ. উদ্দীপকের বর্ণনায় উক্ত প্রত্যয়টির তুমি কী ধরনের পরিবর্তন লক্ষ করছো? বিশ্লেষণ করো।

❖ ১০ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. অর্থনৈতিক নিয়ন্ত্রণবাদের মূল কথা হলো সমাজের মৌল বা অর্থনৈতিক শক্তিই সমাজের সবকিছুকে নিয়ন্ত্রণ করে।

খ. বিশ্বায়ন প্রক্রিয়ায় পেশা নির্বাচনের ক্ষেত্রে লিঙ্গ পরিচয় সমাজে সব সময় একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। মানুষের কর্ম, দক্ষতা অর্জন ইত্যাদি ক্ষেত্রে ঐতিহ্যগত ধারণাগুলো ক্রমাগতভাবে বদলে যাচ্ছে। বিশ্বায়নের অভিজ্ঞতা মানুষের কর্মের পরিধিকে নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করেছে। পেশার বিভিন্নতা, বিভিন্ন কর্মকান্ড ও অর্থনৈতিক গতিশীলতার কারণে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে। এভাবে কর্মসংস্থান প্রক্রিয়ায় বিশ্বায়নের ইতিবাচক এবং নেতিবাচক উভয় ধরনের প্রভাবই লক্ষ করা যাচ্ছে। একদিকে যেমন শিল্পক্ষেত্রে কর্মসংস্থান সংকুচিত হয়েছে অন্যদিকে সেবাখাতগুলোতে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পাচ্ছে।

গ. আমিন সাহেবের ঘটনায় সমাজবিজ্ঞানের যে প্রত্যয়টির ইঙ্গিত পাওয়া যায় তা হলো সামাজিক পরিবর্তন।
সমাজবিজ্ঞানের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রত্যয় হলো সামাজিক পরিবর্তন। মানবসমাজ পরিবর্তনশীল। অর্থাৎ, কোনো সমাজই স্থির নয় বরং গতিশীল। সামাজিক পরিবর্তন বলতে সামাজিক কাঠামোর পরিবর্তনকে বোঝায়। যেহেতু সমাজকাঠামোর ভিত্তি হলো পারস্পরিক সম্পর্ক বা মিথস্ক্রিয়া তাই সামাজিক পরিবর্তনের অর্থ হলো সংঘবদ্ধ মানুষের পারস্পরিক সম্পর্কের পরিবর্তন। অর্থাৎ, সমাজের বিভিন্ন অনুষ্ঠান, প্রতিষ্ঠান যেমন- অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, ধর্মীয় ইত্যাদির পরিবর্তন।
উদ্দীপকে আমিন সাহেব দীর্ঘদিন প্রবাসে থেকে দেশে ফিরে গ্রামে গিয়ে দেখেন, সেখানে সর্বক্ষেত্রে আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছে। বর্তমানে উন্নত পানির পাম্প, ফসলের মেশিন, সিলিং ফ্যান এবং ঘরে ঘরে রঙিন টেলিভিশন অতি সাধারণ ব্যাপার। গ্রামের লোকজন এখন অতি সহজেই দেশ-বিদেশের খবর পাচ্ছে। এসকল বিষয় সামাজিক পরিবর্তনেরই ফল। সামাজিক পরিবর্তন দেশের সমাজ কাঠামোতে রূপান্তর নিয়ে আসে। তাই বলা যায়, আমিন সাহেবের ঘটনায় সামাজিক পরিবর্তন প্রত্যয়টির ইঙ্গিত পাওয়া যায়।

ঘ. উদ্দীপকের বর্ণনায় সামাজিক পরিবর্তনের ধরনগুলোর মধ্যে আমি পরিকল্পিত পরিবর্তন লক্ষ করছি।
সাধারণত সামাজিকভাবে অর্থাৎ, মনুষ্যসৃষ্ট পরিবর্তনই হলো পরিকল্পিত পরিবর্তন। যেমনত যুদ্ধ, বিপ্লব, অভ্যুত্থান, উদ্ভাবন বা আবিষ্কার ইত্যাদি। এখানে উদ্দীপকে আমরা লক্ষ করছি যে, সামাজিক পরিবর্তনের ধরন হিসেবে উদ্ভাবনের কথা বলা হয়েছে যা মূলত পরিকল্পিত পরিবর্তনকেই নির্দেশ করেছে। আমরা জানি, এ ধরনের পরিবর্তন হঠাৎ করে ঘটে থাকে, এ ধরনের উদ্ভাবন বিশ্ববাসীর কাছে প্রকাশের পূর্বে সাধারণত একটি দীর্ঘ ধারবাহিক প্রস্তুতির ধাপ থাকে এবং এক সময় এটি বাস্তবে রূপ নেয়। উদাহরণ হিসেবে আমরা বলতে পারি যে, টেলিফোন, কার, অ্যারোপ্লেন, বেতার, কম্পিউটার এবং আরও অনেক ধরনের উদ্ভাবনের ইতিহাস এ পরিবর্তনকে ব্যাখ্যা করে। সমাজে ব্যাপক পরিবর্তন ও দ্রুত পরিবর্তন সাধনে যান্ত্রিক এবং যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার পরিকল্পিত পরিবর্তনকে বিশ্লেষণ করে থাকে।
মোটকথা, সামাজিক পরিবর্তন প্রধানত পরিকল্পিত পরিবর্তন হিসেবেই সর্বাধিক লক্ষণীয় হয়ে থাকে। সুতরাং উপর্যুক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে আমরা বলতে পারি যে, উদ্দীপকে সামাজিক পরিবর্তনের ধরন হিসেবে পরিকল্পিত পরিবর্তনের প্রতিচ্ছবি স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে।
Share:

HSC সমাজবিজ্ঞান ২য় পত্র (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর অধ্যায় ৯ pdf download

এইচএসসি পরীক্ষার পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি
HSC Sociology 2nd Paper Srijonshil question and answer pdf download.

সমাজবিজ্ঞান
দ্বিতীয় পত্র

সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
অধ্যায়-৯

HSC Sociology 2nd Paper
Srijonshil
Question and Answer pdf download

১. রহিমার গায়ের রং কালো। তাই বিয়ে দেয়ার সময় তার বাবা পাত্র পক্ষকে স্বর্ণালংকার, গৃহস্থালি সামগ্রী, মোটর সাইকেল ও নগদ অর্থসহ অনেক উপহার প্রদান করেন। কিছুদিন পরে পাত্র পক্ষ আরো অনেক কিছু দাবি করে এবং রহিমাকে নানান কটূক্তি করে। পাত্র পক্ষের চাহিদা মেটাতে পারেনি বলে রহিমাকে বাবার বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়। অবশেষে সে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়।
ক. জ্ঞাতি সম্পর্ক কয় প্রকার?
খ. কর্মজীবী নারীরা নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে কেন?
গ. উদ্দীপকে রহিমার বিয়েতে উপঢৌকন ছাড়া অন্যান্য কিছু দাবী করা কোন ধরনের সমস্যাকে নির্দেশ করে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. তুমি কি মনে কর, উক্ত সমস্যাটির কারণে বেশির ভাগ নারী সমাজে আত্মহত্যা করে? বিশ্লেষণ করো।

❖ ১ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. জ্ঞাতি সম্পর্ক ৪ প্রকার। যথা- রক্তসম্পর্কিত, বৈবাহিক, কাল্পনিক এবং প্রথাগত।

খ. কর্মজীবী নারীরা সামাজিক ও পরিবেশগত কারণে নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে। বর্তমানে সমাজে প্রতিটি ক্ষেত্রেই নারীরা অবহেলিত ও নির্যাতিত হচ্ছে। বিশেষ করে কর্মক্ষেত্রে নারীরা নানাভাবে সমস্যার শিকার হচ্ছে। যেমনত যৌন নির্যাতন, অধিক কাজে বাধ্য করা, মানসিকভাবে চাপে রাখা, পারিশ্রমিক কম দেওয়া, আসা-যাওয়ার রাস্তায় নিরাপত্তাহীনতা ইত্যাদি। আর এসব সমস্যার ফলেই কর্মজীবী নারীরা নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে।

গ. উদ্দীপকে রহিমার বিয়েতে উপঢৌকন ছাড়া অন্যান্য কিছু দাবি করা ‘যৌতুক' নামক ভয়াবহ সামাজিক সমস্যাকে নির্দেশ করে। যৌতুক হলো এক ধরনের অর্থনৈতিক দাবি। সামাজিকভাবে এ প্রথাকে উপহার, উপঢৌকন, নজরানা প্রদান প্রভৃতি হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়ে থাকে। সাধারণত পাত্র বা পাত্রীপক্ষ কর্তৃক পাত্রী বা পাত্রকে প্রদেয় অর্থ সম্পত্তি বা অন্যান্য দ্রব্যসামগ্রী যৌতুক হিসেবে গণ্য হয়ে থাকে। তবে বাংলাদেশের সামাজিক প্রেক্ষাপটে যৌতুক মূলত পাত্রীপক্ষ কর্তৃক পাত্রপক্ষকে দেওয়া হয়ে থাকে। যৌতুকের দ্রব্যাদির মধ্যে নগদ অর্থ থেকে শুরু করে গহনা, টিভি, ফ্রিজ, মোবাইল, আসবাবপত্র প্রভৃতি দাবি করা হয়ে থাকে। যৌতুকের সাধারণ ব্যাখ্যায় ফরাসি সমাজবিজ্ঞানী ম্যাক্স র‍্যাডিন বলেন, ‘‘যৌতুক হলো সে সম্পদ যা বিবাহের সময় ব্যক্তি তার স্ত্রী বা স্ত্রীর পরিবার থেকে পেয়ে থাকে।’’
উদ্দীপকে দেখা যায়, রহিমার বিয়ের সময় তার বাবা পাত্রপক্ষকে স্বর্ণালংকার, গৃহস্থালী সামগ্রী, মোটর সাইকেল ও নগদ অর্থসহ অনেক উপহার প্রদান করেন। পাত্রপক্ষ বিয়ের কিছুদিন পর আরো অনেক কিছু দাবি করে। পূর্বে আলোচিত যৌতুকের সংজ্ঞা এবং উদাহরণের প্রেক্ষিতে সহজেই বোঝা যায় যে, উপঢৌকন ব্যতিত পাত্রপক্ষ অন্যান্য যা কিছু দাবি করেছে তা যৌতুক সমস্যাকেই নির্দেশ করে।

ঘ. হ্যাঁ, আমি মনে করি, উদ্দীপক দ্বারা নির্দেশকৃত সমস্যা তথা যৌতুক প্রথার কারণে বেশিরভাগ নারী সমাজে আত্মহত্যা করে। এ কথা সর্বজনস্বীকৃত যে, যৌতুক একটি অমানবিক সামাজিক অনাচার। এ অনাচার বিবাহকে ঘিরে ঘটে থাকে। আমাদের দেশে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বিবাহের সময় কনেপক্ষকেই যৌতুক প্রদান করতে বাধ্য করা হয়। অর্থাৎ যৌতুকের প্রভাবে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয় কন্যার পরিবার। যৌতুকের দাবি মেটাতে গিয়ে নিম্নবিত্ত পরিবারের কন্যাদায়গ্রস্ত পিতাকে সর্বস্ব হারাতে হয়।
ফলে পারিবারিকভাবে আর্থিক সংকট দেখা দেয়। এছাড়াও পরিবারে নানা ধরনের অশান্তি ও ভাঙনও দেখা দেয়। অনেক সময় যৌতুকের অর্থ না পাওয়ার কারণে স্বামী ও তার পরিবারের সদস্যরা স্ত্রীর ওপর অমানবিক অত্যাচার করে। ফলে মৃত্যুর মতো অনাকাঙি্ক্ষত ঘটনাও ঘটে থাকে। আবার অনেকক্ষেত্রে যৌতুকের দাবি পূরণে ব্যর্থ হলে স্বামী তার স্ত্রীকে বাবার বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়, সেখানে সে মানসিক ভোগান্তির শিকার হয়ে আত্মহত্যার মতো জঘন্য পথ বেছে নিতে বাধ্য হয়। উদ্দীপকে লক্ষণীয় যে, যৌতুকের দাবি মেটাতে না পারায় রহিমাকে তার স্বামী বাবার বাড়ি পাঠিয়ে দেয়, যেখানে সে বিভিনণ ধরনের মানসিক নির্যাতনের শিকার হয় এবং আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়। উক্ত ঘটনাটি রহিমার মতো সমাজে আরো অনেক নারীর ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য যারা যৌতুকের দাবি মেটাতে না পারায় আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। বস্তুত বাংলাদেশে পারিবারিক কারণে যতো নারী আত্মহত্যা করে, তাদের মধ্যে সিংহভাগই যৌতুকের শিকার হয়ে মৃত্যুর মতো চরম পথ বেছে নেয়।

২. শীতকালীন ছুটিতে শফিক স্যারের নেতৃত্বে শিক্ষার্থীরা শিক্ষা সফরে গেল। শীতকাল হলেও অনেকেই গরম পোশাক নেয়নি। স্যার বিষয়টি লক্ষ করে গরম পোশাক না পরার জন্য বকাবকি করল। এক ছাত্র বলল, স্যার এ বছর শীত একেবারে নেই বললেই চলে তো তাই গরম পোশাক পরিনি। স্যারও বিষয়টির সত্যতা স্বীকার করে বললেন, আসলেই বৈশ্বিক উষ্ণতা বেড়ে যাচ্ছে, তাই শীত কম অনুভূত হচ্ছে।
ক. মাদকাসক্তি কী?
খ. সামাজিক উন্নয়ন বলতে কী বোঝ?
গ. উদ্দীপকে শিক্ষার্থীদের শীত অনুভূত না হওয়ার কারণটি কিসের পরিবর্তনকে নির্দেশ করে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. বৈশ্বিক উষ্ণতাই প্রাকৃতিক দুর্যোগের অন্যতম কারণত বিশ্লেষণ করো।

❖ ২ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. মাদকাসক্তি বলতে এমন এক দ্রব্যসমগ্রী ব্যবহারকে বোঝায়, যা সেবনকারী ব্যক্তির মানসিক ও ব্যবহারিক আচরণকে প্রভাবিত করে এবং দ্রব্যসামগ্রির ওপর ব্যক্তি আসক্ত হয়ে পড়ে।

খ. সামাজিক উন্নয়ন একটি অবিচ্ছিন্ন সামাজিক অগ্রগতির প্রক্রিয়া। পরিভাষায় সামাজিক উন্নয়ন বলতে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, জীবনযাত্রার মানের অবস্থান, মানব সম্পদের বিকাশ, জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার হ্রাস, আয়ুষ্কাল বৃদ্ধি, পরিবেশ প্রভৃতির পূর্ববস্থা থেকে অপেক্ষাকৃত উন্নততর অবস্থায় উন্নীত হওয়াকে বোঝায়। এ প্রসঙ্গে 'Encyclopedia of Social Work in India'-তে বলা হয়েছেত ‘‘সামাজিক উন্নয়ন একটি ব্যাপক ধারণা যা রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ কাঠামোগত পরিবর্তন নির্দেশ করে এবং সমাজ পরিবর্তনের ভূমিকা পালনের অংশ হিসেবে সুচিন্তিত পদক্ষেপ গ্রহণ করে।’’ বস্তুত সামাজিক উন্নয়ন বলতে সমাজজীবনের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নকে বোঝায়।

গ. উদ্দীপকের শিক্ষার্থীদের শীত অনুভূত না হওয়ার কারণটি জলবায়ু পরিবর্তনকে নির্দেশ করে। মানব সভ্যতার সূচনালগ্নে আবহাওয়া ও জলবায়ুর উপাদানগুলো স্বাভাবিক স্থিতি অবস্থায় ছিল। কিন্তু সভ্যতার অগ্রগতি, জনসংখ্যা বৃদ্ধি, যান্ত্রিক সভ্যতার অগ্রগতি ইত্যাদি কারণে এই ভারসাম্যপূর্ণ জলবায়ু পরিবর্তিত হয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে ব্যাপক শিল্পায়ন ও নগরায়ণের ন্যায় প্রযুক্তিনির্ভর কর্মকান্ড জলবায়ুর স্বাভাবিক আচরণকে অস্বাভাবিকভাবে প্রভাবান্বিত করেছে। জলবায়ুর স্বাভাবিক আচরণের এই যে পরিবর্তন সাধিত হচ্ছে এটাই 'জলবায়ু পরিবর্তন' হিসেবে বিবেচিত হয়। আরো নির্দিষ্ট করে বললে, বৈশ্বিক উষ্ণায়নের ফলে আবহাওয়ার যে পরিবর্তন হচ্ছে তাকে জলবায়ু পরিবর্তন বলে। পরিবেশ বিজ্ঞানীদের মতে, মানুষের বিভিন্ন ধরনের কর্মকান্ড যেমন- গাছ কেটে ফেলা, কলকারখানা ও যানবাহনের কালো ধোয়া প্রভৃতি কারণে কার্বন ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর ফলে বিশ্ব পূর্বের তুলনায় বেশি উষ্ণ হচ্ছে এবং জলবায়ু পরিবর্তিত হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করা যায়ত সময়ে-অসময়ে অনাবৃষ্টি-অতিবৃষ্টি, ঋতুগুলোর দীর্ঘকালীন বা স্বল্পকালীন স্থায়িত্ব, ঘন ঘন প্রাকৃতিক দুর্যোগ বন্যা, খরা, ভূমিকম্প প্রভৃতি. সংঘটন ইত্যাদি। উদ্দীপকে লক্ষণীয় যে, শিক্ষার্থীরা শীতকালে শিক্ষা সফরে গেলেও সাথে গরম পোশাক নেয়নি। কারণ হিসেবে এক ছাত্র বলে যে, এ বছর শীত একেবারেই পড়ে নি বলে তারা গরম পোশাক আনেনি। উক্ত বক্তব্য সমর্থনপূর্বক শ্রদ্ধেয় শফিক স্যার এরূপ অবস্থার জন্য বৈশ্বিক উষ্ণতাকে দায়ী করেন, যা জলবায়ু পরিবর্তনকে নির্দেশ করে। কেননা জলবায়ু পরিবর্তনের ফলেই ঋতুগুলো তার নিজস্ব বৈশিষ্ট্য হারিয়ে ফেলছে।

ঘ. বৈশ্বিক উষ্ণায়ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের অন্যতম কারণত উক্তিটি যথার্থ। জলবায়ু পরিবর্তন হলো বৈশ্বিক উষ্ণায়নের ফলে আবহাওয়ার পরিবর্তিত রূপ। অর্থাৎ- জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে যে সকল প্রাকৃতিক দুর্যোগ সংঘটিত হচ্ছে তার মূলে রয়েছে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি। বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির ফলে হিমবাহ গলে যাবার হার দ্রুত হারে বেড়ে গেছে। পরিসংখ্যানুযায়ী, বরফগলার এই হার ১৯৮০-১৯৯০ সালের তুলনায় ২০০০-২০১০ সালে ৩ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। যার ফলে সমুদ্রের উচ্চতা বৃদ্ধি পেয়ে জলোচ্ছ্বাস ও বন্যার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা দিচ্ছে, যা সমুদ্র উপকূলবর্তী দেশগুলোর জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আবার বৈশ্বিক উষ্ণায়নের কারণে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে তাপমাত্রার ভিন্নতা দেখা যাচ্ছে। যার ফলে অনাবৃষ্টি বা অতিবৃষ্টি কিংবা এসিড বৃষ্টির মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা দিচ্ছে। দাবানলের মতো ভয়াবহ দুর্যোগের কারণও বৈশ্বিক উষ্ণায়ন। যদিও অমনকে মনে করেন, দাবানল পুরোপুরি অনিশ্চিত ঘটনা, তবুও এটা নিশ্চিতভাবেই বলা যায় যে, তাপমাত্রা বৃদ্ধি, খরাভাব, কার্বন ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ বৃদ্ধি ইত্যাদি হচ্ছে বৈশ্বিক উষ্ণায়নের ফল। আর এসবের ফলে জলবায়ু পরিবর্তিত হয়ে দাবানল সৃষ্টি করে। উপর্যুক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায় যে, পরিবেশ তার ভারসাম্য হারিয়ে যে বিপর্যয়ের মুখে পতিত হয়েছে, তার ফলে সৃষ্ট প্রাকৃতিক দুর্যোগের জন্য বৈশ্বিক উষ্ণায়নই মূলত দায়ী।

৩. ঘটনা-১: রাকিব বি.এ পাস করেও পাঁচ বছর ধরে কোনো কাজের ব্যবস্থা করতে পারেনি।
ঘটনা-২: মতিন নেশাজাত দ্রব্য গ্রহণ করে নেশাগ্রস্ত হয়ে থাকে। যখন নেশার টাকা সংগ্রহ করতে পারে না, তখন চুরি, ছিনতাই, খুন করতেও দ্বিধাগ্রস্ত হয় না।
ক. শব্দ দূষন কী?
খ. জলবায়ু পরিবর্তন বলতে কী বুঝো?
গ. ঘটনা-১ কোন ধরনের সামাজিক সমস্যাকে নির্দেশ করে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. ঘটনা-২ এর অন্যতম কারণ ঘটনা-১। তুমি কি একমত? যুক্তিসহ বিশ্লেষণ করো।

❖ ৩ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. মাত্রাতিরিক্ত অনিয়ন্ত্রিত শব্দ যা মানুষের শারীরবৃত্তীয় কাজকর্মকে প্রভাবিত করে এবং বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে তাকে শব্দ দূষন বলে।

খ. জলবায়ু পরিবর্তন বলতে ৩০ বছর বা তার বেশি সময়ে জলবায়ুর উপাদানসমূহের উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনকে বোঝায়। জলবায়ু পরিবর্তন মূলত একটি প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া। কিন্তু শিল্পায়ন ও আধুনিক সভ্যতা এই পরিবর্তনের গতি বাড়িয়ে এক অস্বাভাবিক অবস্থার সৃষ্টি করেছে। অর্থৎ, ব্যাপক শিল্পায়ন, নগরায়ণ প্রভৃতির প্রভাবে জলবায়ুর স্বাভাবিক আচরণের যে পরিবর্তন সংঘটিত হয় তাকে জলবায়ু পরিবর্তন বলে।

গ. উদ্দীপকের ঘটনা-১ বেকারত্ব নামক অন্যতম সামাজিক সমস্যাকে নির্দেশ করে। বেকারত্ব হলো কোনো সমাজে কর্মক্ষম লোক থাকা সত্ত্বেও কর্মসংস্থানের অভাব। শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ কোনো ব্যক্তি যখন পূর্ণ বা খ-কালীন কাজ করতে ইচ্ছুক হয় অথচ কাজ পায় না তখন সে ব্যক্তিকে বেকার বলা হয়ে থাকে। দেশের স্বাভাবিক শ্রমশক্তির অঙ্গ হয়েও যারা কর্মহীন থাকে তারাই বেকার। বেকার সমস্যার সমাজতাত্ত্বিক তাৎপর্য সম্পর্কে লর্ড বেভারিজ বলেছেন, বেকারত্বের ফলে সমাজ ও ব্যক্তি উভয়ই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বেকারত্বের প্রত্যক্ষ ফল দারিদ্র্য এবং দারিদ্র্য থেকে আসে নৈরাশ্য ও হতাশা।
উদ্দীপকে ঘটনা-১ এ রাকিবের বি.এ পাস করেও পাঁচ বছর ধরে কোনো কাজের ব্যবস্থা করতে না পারা উপরে আলোচিত বেকারত্ব সমস্যার সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। সুতরাং, এ কথা স্পষ্টতর যে, উদ্দীপকে ঘটনা-১ বেকারত্ব সমস্যাকে নির্দেশ করে।

ঘ. উদ্দীপকের ঘটনা-২ এ সামাজিক সমস্যা হিসেবে মাদকাসক্তির প্রতিচ্ছবি ফুটে উঠেছে। ঘটনা-২ অর্থাৎ, মাদকাসক্তির অন্যতম কারণ হলো ঘটনা-১ ত থা বেকারত্ব-এ বক্তব্যের সাথে আমি একমত। বাংলাদেশ তৃতীয় বিশ্বের একটি উন্নয়নশীল দেশ। জনসংখ্যাধিক্যের কারণে এ দেশে নিরক্ষরতা দরিদ্রতা, বেকারত্বসহ নানাবিধ সামাজিক সমস্যা বিরাজমান। জনসংখ্যা প্রতিনিয়ত যে হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে সে হারে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে না। ফলে পর্যাপ্ত কর্মসংস্থানের অভাবে বেকারত্বের সৃষ্টি হচ্ছে। শিক্ষাজীবন শেষে একজন ব্যক্তি যখন তার প্রত্যাশিত চাকরি লাভে ব্যর্থ হয়, তখন তার বেকার জীবন হতাশা ও দুর্দশাগ্রস্ত হয়ে পড়ে। চলমান এ হতাশা ও দুর্দশার কষাঘাতে এক পর্যায়ে সে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। ফলশ্রুতিতে সে ধীরে ধীরে মাদকের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ে, যা সামাজিক ক্ষেত্রে মাদকাসক্তির মতো ভয়াবহ একটি সামাজিক সমস্যা সৃষ্টি করে। উপর্যুক্ত আলোচনা শেষে স্পষ্টরূপে প্রতীয়মান হয় যে, মাদকাসক্তির অন্যতম কারণ হলো বেকারত্ব।

৪. সুমাইয়া অষ্টম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় তার পিতা জাহিদ মিয়া তাকে বিয়ে দেন। বিয়ের সময় পাত্রের বাবা মজিদ মিয়ার দাবী অনুযায়ী নগদ পঞ্চাশ হাজার টাকা ও টেলিভিশন দিতে জাহিদ মিয়া বাধ্য হন। বছর খানেক পরে জাহিদ মিয়া খবর পান তার মেয়ে প্রথম সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে মৃত্যুবরণ করেছে।
ক. NGO-এর পূর্ণরূপ কী?
খ. জঙ্গীবাদ কী? ব্যাখ্যা করো।
গ. উদ্দীপকের মজিদ মিয়ার দাবী করা বিষয়টি কোন ধরনের সামাজিক সমস্যা? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. সুমাইয়া মৃত্যুর 'কারণ' মূলত একটি সামাজিক ব্যাধি। তুমি কি একমত? উত্তরের সপক্ষে যুক্তি দাও।

❖ ৪ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. NGO-এর পূর্ণরূপ হলো Non-Government Organisation.

খ. জঙ্গিবাদ হলো এক ধরনের নেতিবাচক আদর্শ যা একটি রাষ্ট্রের আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রের জন্য হুমকীস্বরূপ। সাধারণত জঙ্গি বলতে তাদেরকে বুঝায় যারা রাজনৈতিক কোনো উদ্দেশ্য হাসিলের লক্ষ্যে ধর্মীয় আদর্শ বা ধর্মকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে আক্রমনাত্মক বা ধ্বংসাত্মক কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। আর এ জঙ্গিদের রচিত ও প্রচারকৃত ধ্যান-ধারণাই জঙ্গিবাদ হিসেবে অভিহিত।

গ. উদ্দীপকের মজিদ মিয়ার দাবী করা বিষয়টি যৌতুক সমস্যাকে নির্দেশ করে।
যৌতুক বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক সমস্যার মধ্যে অন্যতম সমস্যা। আমাদের দেশে বিবাহের সময় উভয় পক্ষের মধ্যে উপহার সামগ্রী লেনদেন হয়ে থাকে। এ প্রথা ঐতিহ্যগতভাবে দীর্ঘদিন চলে আসছে, যা সময়ের পরিক্রমায় এবং মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি, মূল্যবোধ, আদর্শ, রীতিনীতির পরিবর্তন তথা সামাজিক পরিবর্তনের ফল হিসেবে যৌতুক প্রথায় পরিণত হয়েছে।
সাধারণত বৈবাহিক লেনদেন সম্পর্কিত আলোচনায় পাত্রপক্ষ কর্তৃক পাত্রীপক্ষের নিকট দাবি করা নগদ অর্থ, টিভি, ফ্রিজ, মোটর সাইকেল, সোনা-রূপার অলংকার প্রভৃতি যৌতুক নামে পরিচিত। আর এ যৌতুককে কেন্দ্র করে বিবাহ বিচ্ছেদ, নারী নির্যাতন এমনকি হত্যার মতো জঘন্য কার্যক্রম সংঘটিত হয়ে থাকে।
উদ্দীপকের উল্লিখিত পাত্রের বাবা মজিদ মিয়া কর্তৃক কন্যার বাবা জাহিদ মিয়ার নিকট দাবিকৃত পঞ্চাশহাজার নগদ টাকা ও টেলিভিশন উপরে আলোচিত যৌতুক প্রথার সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।

ঘ. উদ্দীপকের সুমাইয়ার মৃত্যুর জন্য দায়ী সামাজিক ব্যাধি হলো বাল্যবিবাহ-বক্তব্যটির সাথে আমি একমত। বাল্যবিবাহ একটি সামাজিক ব্যাধি যা ঐতিহ্যগতভাবে সমাজে চলে আসছে। বাংলাদেশে বিবাহের ক্ষেত্রে মেয়েদের ১৮ বছর ও ছেলেদের ২১ বছর সর্বনিম্ন বয়সসীমা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর চেয়ে কম বয়সে ছেলে মেয়েরা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হলে তাকে বাল্যবিবাহ বলে। বাল্যবিবাহের সাথে মানুষের সহজাত প্রবণতা, ধর্মীয়, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক প্রভৃতি দিক জড়িত। সমাজজীবনে বাল্যবিবাহের নেতিবাচক প্রভাব আরো ভয়াবহ। অল্প বয়সে বিবাহের ফলে আমাদের দেশের নারীরা অতিদ্রুত গর্ভবতী হয়ে পড়ে। ফলে অল্প বয়সে মা হতে গিয়ে তাদের স্বাস্থ্যহানী ঘটে এবং অনেক ক্ষেত্রে মৃত্যুর কোলে ঢোলে পড়ে।
উদ্দীপকে উল্লেখিত সুমাইয়া ক্ষেত্রে দেখা যায়, তার পিতা তাকে অল্প বয়সে বিবাহ দিয়ে দেন, যার ফলশ্রুতিতে প্রথম সন্তানের জন্ম দিতে গিয়ে সে মৃত্যুবরণ করে। সুমাইয়ার মৃত্যুর একমাত্র কারণ হিসেবে উপরে আলোচিত বাল্যবিবাহ নামক সামাজিক ব্যাধিকে দায়ী করা যায়। উপর্যুক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায়, সুমাইয়ার মৃত্যুর 'কারণ' মূলত একটি সামাজিক ব্যাধি- উক্ত বক্তব্যটির পক্ষে আমার সহমত পোষন করা যথার্থ।

৫. রুনা স্থানীয় স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্রী। বান্ধবীদের সাথে পায়ে হেঁটে স্কুলে যায়। যাওয়া-আসার পথে এলাকার কিছু বখাটে তরুণ প্রায়শ: তাদের পিছু নেয় এবং নানা রকমের মন্তব্য করে। রুনার এক বান্ধবী এ ধরনের পরিস্থিতিতে লেখাড়া বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু রুনা তার অন্য বান্ধবী ও স্কুলের সহপাঠীদের নিয়ে এলাকার মুরুববীদের সাথে যোগাযোগ করে এবং বখাটেদের বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলে। বখাটেরা বাধ্য হয় এলাকা ছেড়ে পালাতে।
ক. বেসরকারি সংস্থা কী?
খ. বাল্যবিবাহ কীভাবে জনসংখ্যা বৃদ্ধির জন্য দায়ী?
গ. উদ্দীপকে বর্ণিত সমস্যাটির সাথে তোমার পাঠ্যবইয়ের কোন সমস্যার সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. ‘‘সামাজিক প্রতিরোধ ছাড়া নারীর সামাজিক নিরাপত্তা সম্ভব নয়’’ - উদ্দীপকের রুনার অভিজ্ঞতার আলোকে উক্তিটি বিশ্লেষণ কর।

❖ ৫ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. বেসরকারি সংস্থা হলো অলাভজনক সেবা প্রতিষ্ঠান যা শিক্ষামূলক ও উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড- নিয়োজিত থাকে।

খ. জনসংখ্যা বৃদ্ধির জন্য যেসব কারণ রয়েছে তার মধ্যে বাল্যবিবাহ অন্যতম।
বাল্যবিবাহের ফলে দম্পতি অল্প সময়েই অনেকগুলো সন্তানের জন্ম দেয়ার সুযোগ লাভ করে। যার ফলে জনসংখ্যাও দ্রুত বৃদ্ধি পায়। যারা বাল্যবিবাহ করে তারা জন্ম নিয়ন্ত্রণ সম্পর্কেও সচেতন না হয়ে অপরিকল্পিতভাবে সন্তান জন্ম দিতে থাকে, যার কারণেও জনসংখ্যা বৃদ্ধি পায়।

গ. উদ্দীপকে বর্ণিত সমস্যাটি আমার পাঠ্য বইয়ের যৌন নিপীড়ন সমস্যার সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। বর্তমান সময়ের আলোচিত একটি সমস্যা হলো যৌন নিপীড়ন। সাধারণত কোনো পুরুষের আচার-আচরনে যখন কোনো নারী শারীরিক ও মানসিক যন্ত্রণার মুখোমুখি হয় তখন তাকে যৌন নিপীড়ন বলে। যৌন নিপীড়নের ধরনগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- অশ্লীল গান বাজানো বা গাওয়া, অশ্লীল বা উদ্দেশ্যমূলক কথা বলা, অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি করা, পিছু নেওয়া, পথরোধ করে দাঁড়ানো, শিষ দেওয়া, প্রেম নিবেদন বা বিয়ের প্রস্তাব দেওয়া প্রস্তাবে সাড়া না দিলে হুমকি দেওয়া ইত্যাদি। উদ্দীপকে দেখা যায়, রুনা স্থানীয় স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্রী। স্কুলে আসা যাওয়ার পথে এলাকার কিছু বখাটে তরুণ প্রায়সময় রুনা ও তার বান্ধবীদের পিছু নেয়। রুনা ও তার বান্ধবীদের উদ্দেশ্য করে বখাটে তরুণেরা নানা রকম অশ্লীল মন্তব্য করে। পূর্বোক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায় যে, উদ্দীপকে বর্ণিত সমস্যাটি যৌন নিপীড়নের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।

ঘ 'সামাজিক প্রতিরোধ ছাড়া নারীর সামাজিক নিরাপত্তা সম্ভব নয়' উদ্ভিটি আমি যথার্থ বলে মনে করি।
নারীর সামাজিক নিরাপত্তা বিধানে সামাজিক প্রতিরোধ গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক হিসেবে কাজ করে। প্রতিরোধ গড়ে তোলার অংশ হিসেবে প্রথমে সচেতনতামূলক কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে এবং মানুষকে এর নেতিবাচক দিক সম্পর্কে অবহিত করতে হবে। এ ছাড়াও মহল্লায় যৌন নিপীড়ন প্রতিরোধে অভিভাবক সমাবেশ করে যৌন নিপীড়নের নেতিবাচক দিক সম্পর্কে জনমত গঠন করা যায়। নারী নির্যাতনকারীদের সামাজিকভাবে বয়কট এবং রুখে দেওয়ার জন্য পাড়ায় পাড়ায় নারী নির্যাতন ও নারীর প্রতি সহিংসতা বিরোধী সংগঠন গঠন করা, যাতে সামাজিক মান-মর্যাদার ভয়ে মানুষ যৌন নিপীড়ন তথা নারী নির্যাতন থেকে বিরত থাকে। উদ্দীপকেও দেখা যায় যে, রুনা তার অন্য বান্ধবী ও স্কুলের সহপাঠীদের নিয়ে এলাকার মুরুববীদের সাথে যোগাযোগ করে বখাটের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ আন্দোলন গড়ে তুলে। উপর্যুক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায় যে, 'সামাজিক প্রতিরোধ ছাড়া নারীর সামাজিক নিরাপত্তা সম্ভব নয়' উক্তিটি যথার্থ।

৬. বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে অবস্থিত সেনবাগ গ্রাম। এ এলাকার মানুষের জীবিকা নির্বাহের প্রধান উপায় মাছধরা ও কৃষিকাজ। কিছুকাল আগে এ নদীর তীর ঘেঁষে গড়ে উঠেছে চামড়া শিল্প। এ কারখানার উৎপাদিত বর্জ্যসমূহ পার্শ্ববর্তী নদীতে গিয়ে পড়ছে। বর্তমানে এ নদীতে পূর্বের মতো প্রচুর মাছ পাওয়া যাচ্ছে না। আবার সেচযোগ্য পানির অভাবে ফলন ভালো হচ্ছে না। অধিকাংশ মানুষ তাদের সনাতনী পেশা ছেড়ে শ্রমিক হিসেবে কারখানায় ভিড় করছে।
ক. বার্ধক্য সমস্যা কী? 
খ. নিরক্ষরতা কি সামাজিক সমস্যা? বুঝিয়ে লিখ।
গ. উদ্দীপকে সেনবাগ গ্রামে কোন পরিবেশগত সমস্যার চিত্র ফুটে উঠেছে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. সেনবাগ গ্রামের পরিবেশগত সমস্যাসমূহ নিরসনে তুমি কী কী সুপারিশ করবে?

❖ ৬ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. বার্ধক্য জীবনে পারিবারিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং মনস্তাত্ত্বিক দিকের সমস্যাই হচ্ছে বার্ধক্য সমস্যা।

খ. প্রকৃতিগত দিক থেকে নিরক্ষরতা বাংলাদেশের অন্যতম সামাজিক সমস্যা।
সামাজিক সমস্যার প্রকৃতি পর্যবেক্ষণ করে এর তিনটি বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হয়। যথাত- ১. সমাজের সাথে সংশ্লিষ্ট বিষয়, ২. সমাজের অধিকাংশ মানুষের কাছে অনাকাংঙ্খিত, ৩. যৌথ প্রচেষ্টার মাধ্যমে সমাধান সম্ভব। নিরক্ষরতা সমস্যার প্রকৃতি বিশ্লেষণ করে আমরা সামাজিক সমস্যার এই তিনটি বৈশিষ্ট্যই খুঁজে পাবো। সুতরাং নিশ্চিতভাবেই, বলা যায় যে, নিরক্ষরতা একটি সামাজিক সমস্যা। সমাজবিজ্ঞানী আর্নল্ড রোজ সামাজিক সমস্যার সংজ্ঞা প্রদানে বলেন, ‘‘সামাজিক সমস্যা এমন একটি অবস্থা যা সমাজের বেশিরভাগ মানুষের ওপর প্রভাব বিস্তার করে। যাদের ওপর প্রভাব বিস্তার করে তারা তাদের কঠিন অথবা অসমেত্মাষজনক অবস্থার জন্য একে দায়ী করে এবং এ থেকে তারা মুক্তি পায়।’’

গ. উদ্দীপকের সেনবাগ গ্রামে অন্যতম পরিবেশগত সমস্যা পানিদূষণের চিত্র ফুটে ওেঠছে।
উদ্দীপকে বর্ণিত কারখানার বর্জ্যসমূহ নদীতে ফেলায় বিষয়টি পানি দূষণের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়, যা একটি পরিবেশগত সমস্যা। পানি নানা কারণে দূষিত হয়। শিল্প-কারখানার অপরিশোধিত বর্জ্য পানি দূষণের অন্যতম কারণ। ট্যানারি শিল্প, ডাইং শিল্প, কাগজ, চিনি প্রভৃতি শিল্পের বর্জ্য পানিকে দূষিত করে। পানি দূষণের প্রভাব মারাত্মক। পানি দূষিত হলে জীববৈচিত্র্য নষ্ট হতে থাকে। কৃষি ও মৎস্য উৎপাদনের মূল বাধা পানি দূষণ। মাটি দূষণেরও গুরুত্বপূর্ণ কারণ এই পানি দূষণ। উদ্দীপকের সেনবাগ গ্রামে নদীর পানি দূষিত হওয়ার চিত্র লক্ষ করা যায়। দূষণের কারণে বর্তমানে উক্ত নদীতে পূর্বের মতো প্রচুর মাছ পাওয়া যাচ্ছে না। আবার সেচযোগ্য পানির অভাবে কৃষি উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। উপর্যুক্ত আলোচনা শেষে বলা যায় যে, উদ্দীপকে পানি দূষণের পরিবেশগত সমস্যার চিত্রই ফুটে ওেঠছে।

ঘ. সেনবাগ গ্রামের পরিবেশগত সমস্যা তথা পানিদূষণ নিরসনে বেশকিছু পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে। 
প্রথমত, পানিতে কোনো শিল্পকারখানার বর্জ্য যাতে না মিশতে পারে সেজন্য আইনি পদক্ষেপ গ্রহণে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে সচেতন হতে হবে। অর্থাৎ আইন প্রণয়নের মাধ্যমে নদীর পানিতে কারখানার বর্জ্য ফেলতে দেওয়া। কেউ আইন অমান্য করলে তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া।
দ্বিতীয়ত, শিল্প ও কলকারখানার বর্জ্য পানিতে পড়ার আগে তা পরিশোধন তথা দূষণমুক্ত করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত।
তৃতীয়ত, নদীর পানির স্বাভাবিক প্রবাহ অব্যাহত রাখা প্রয়োজন। নদীর তলদেশে যাতে পলি জমা না হতে পারে সেজন্যে নিয়মিত ড্রেজিং-এর ব্যবস্থা গ্রহণ করা আবশ্যক। চতুর্থত, কীটনাশক, ছত্রাক নাশক ও রাসায়নিক সারের যথেচ্ছ ব্যবহার বন্ধ করে দেয়া প্রয়োজন। তেলবাহী জাহাজ ও ট্যাংকের তেল যাতে নদীতে না পড়ে সেদিকে দৃষ্টি রাখতে হবে। পঞ্চমত, পানি দূষণ রোধে পোস্টারিং, সভা সমাবেশ করে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করা যেতে পারে। উপর্যুক্ত পদক্ষেপগুলোর মাধ্যমেই সেনবাগ গ্রামের উল্লিখিত পরিবেশগত সমস্যা নিরসন সম্ভব।

HSC সমাজবিজ্ঞান ২য় পত্র (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর অধ্যায় ৯ pdf download

৭. রাজীব দেশের নামকরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএ পাস করেছে পাঁচ বছর আগে। তার ইচ্ছা ছিল বিসিএস-এর মাধ্যমে সরকারি উচ্চপদে চাকরি করবে। সুযোগ থাকা সত্ত্বেও সে বেসরকারি চাকরিতে যোগদান করেনি। আজ এতদিনের চেষ্টায় সে সরকারি চাকরি না পেয়ে হতাশায় নিমজ্জিত হয়েছে এবং মাদকাসক্ত হয়ে পড়েছে। 
ক. নয়াবাস পরিবার কী?
খ. সামাজিক স্তরবিন্যাস ধারণাটি বুঝিয়ে লেখ।
গ. উদ্দীপকে রাজীবের বর্তমান অবস্থাকে কি বেকারত্ব হিসেবে দেখা যায়? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. রাজীবের মাদকাসক্তির পেছনে শুধুই কি বেকারত্ব নাকি অন্য কোনো প্রভাবক কাজ করতে পারে বলে তোমার মনে হয়? মতামতসহ বিশ্লেষণ কর।

❖ ৭ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. বিবাহের পর নবদম্পতি যদি নতুন কোনো আবাস স্থলে বসবাস করে অর্থাৎ স্বামীর বাবার বাড়ি কিংবা স্ত্রীর বাবার বাড়িতে বসবাস না করে, তবে তাকে নয়াবাস পরিবার বলে।

খ. সামাজিক স্তরবিন্যাস একটি সমাজতাত্ত্বিক ধারণা বা প্রত্যয়। সামাজিক স্তরবিন্যাস হচ্ছে এমন এক প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে সমাজের ব্যক্তি ও গোষ্ঠীকে মর্যাদা, শ্রেণি ও অন্যান্য আরও কিছু বৈশিষ্ট্যের প্রেক্ষিতে বিভিন্ন স্তরে বিন্যস্ত করা হয়। এক কথায়, সামাজিক স্তরবিন্যাস হলো সমাজের গোষ্ঠী বা শ্রেণির উঁচু-নিচু অবস্থান বা বিন্যাস ব্যবস্থা।

গ. হ্যাঁ, উদ্দীপকের রাজীবের বর্তমান অবস্থানকে বেকারত্ব হিসেবে দেখা যায়।
বেকারত্ব হলো কোনো সমাজে কর্মক্ষম লোক থাকা সত্ত্বেও কর্মসংস্থানের অভাব। শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ কোনো ব্যক্তি যখন পূর্ণ বা খ-কালীন কাজ করতে ইচ্ছুক হয় অথচ কাজ পায় না তখন সে ব্যক্তিকে বেকার বলা হয়ে থাকে। দেশের স্বাভাবিক শ্রমশক্তির অঙ্গ হয়েও যারা কর্মহীন থাকে তারাই বেকার। বেকার সমস্যার সমাজতাত্ত্বিক তাৎপর্য সম্পর্কে লর্ড বেভারিজ বলেছেন, বেকারত্বের ফলে সমাজ ও ব্যক্তি উভয়ই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বেকারত্বের প্রত্যক্ষ ফল দারিদ্র্য এবং দারিদ্র্য থেকে আসে নৈরাশ্য ও হাতাশা।
উদ্দীপকে দেখা যায়, রাজীব দেশের নামকরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএ পাস করে পাঁচ বছর পরও চাকরি পায়নি। তার ইচ্ছা ছিল সরকারি উচ্চপদে চাকরি করার সুযোগ থাকার পরও সে বেসরকারি চাকরিতে যোগদান করেনি। অনেকদিন চেষ্টার পরও সে যখন চাকরি পায়নি, তার জীবনে নেমে আসে হতাশা। এক সময় দেখা যায়, হতাশা ও নৈরাশ্যে নিমজ্জিত রাজীব মাদকাসক্ত হয়ে পড়া়। উল্লিখিত চিত্রটি বর্তমান বাংলাদেশে বেকারত্বের ধারণা ও অবস্থাকে স্পষ্ট করেছে। 

ঘ. আমি মনে করি, রাজীবের মাদকাসক্তির পেছনে বেকারত্ব, হতাশা ইত্যাদি প্রভাবক হিসেবে কাজ করেছে।
বেকার লোকজন অন্যের ওপর নির্ভরশীল। আর বেকারদের নির্ভরশীলতা বেশি ভয়াবহ। কেননা এদের চাওয়া-পাওয়া বেশি থাকে। এ জন্য ঘটে থাকে নানা ধরনের বিপত্তি। আবার সুষ্ঠু স্বাভাবিক পরিবার গঠন করতে হলে প্রয়োজন আর্থিক নিরাপত্তা। কোনো কারণে এটা ব্যাহত হলে পরিবার টিকে থাকে না। অনেক ক্ষেত্রেই কর্মহীন বা বেকার কোনো লোকের পরিবার ব্যবস্থা টিকে না। তাছাড়া মানুষের মানসম্মান সবই টিকে থাকে আদর্শ ও মূল্যবোধ দ্বারা। কিন্তু বেকারত্বের অভিশাপে এ আদর্শ ও মূল্যবোধের অবক্ষয় ঘটে। সমাজের কোনো একটি শ্রেণি যদি কোনো কারণে বঞ্চিত হয় তাহলে সমাজের শান্তি-শৃঙ্খলা ব্যাহত হয়। বেকার লোকজন দ্বারা অনেক সময় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হতে দেখা যায়। একজন শিক্ষিত লোক যখন দেখে তার কোনো কাজ নেই, তখন হতাশা ও নৈরাশ্যে নিমজ্জিত হয়ে সে বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকান্ড- জড়িয়ে পড়ে।
উদ্দীপকে দেখা যায়, রাজীব শিক্ষিত মেধাবী ছেলে। এমএ পাস করার পর পাঁচ বছরের মধ্যেও তার চাকরি হয়নি। চাকরি না হওয়ায় তার জীবনে নেমে আসে নৈরাশ্য। হতাশায় নিমজ্জিত হয়ে এক সময় সে মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে। পরিশেষে বলা যায়, শিক্ষিত রাজীবের মাদকাসক্তির পেছনে বেকারত্বের পাশাপাশি হতাশা, আর্থিক নিরাপত্তাহীনতা, মূল্যবোধের অবক্ষয় ইত্যাদি প্রভাবক হিসেবে কাজ করেছে।

৮. কালুর বয়স ১৮, সখিনার বয়স ১৫, যখন ওদের বিয়ে হয়। বর্তমানে তারা তিন কন্যা সন্তানের জনক ও জননী। শাশুড়ির 'নাতি চাই' এই ইচ্ছা পূরণের জন্য সখিনা আরেক কন্যা সন্তান জন্ম দেয়। সংসারে সদস্য সংখ্যার সাথে তার আয় বৃদ্ধি পায়নি। বরং অভাব অনটন, ঝগড়া-ঝাটি, মারপিট লেগেই আছে। 
ক. আবহাওয়া কী?
খ. বৃক্ষ নিধনের ফলে কী সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে? 
গ. উদ্দীপকে কোন সামাজিক সমস্যার ইংগিত প্রদান করা হয়েছে? ব্যাখ্যা করো। 
ঘ. কালু ও সখিনার বয়স পরিবারের সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধির জন্য কি একমাত্র কারণ? বিশ্লেষণ করো।

❖ ৮ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. কোনো একটি বিশেষ সময়ে কোনো স্থানের বায়ুমন্ডলের তাপমাত্রা, বায়ুর চাপ, কুয়াশা, শিলাবৃষ্টি, তুষারপাত, বৃষ্টিপাত, আর্দ্রতা সম্পর্কিত অবস্থাকে আবহাওয়া বলে।

খ. বৃক্ষ নিধনের ফলে সমাজে নানা সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। বনভূমি উজাড় হওয়া ছাড়াও বিশ্ব ক্রমশ বৃক্ষহীন হওয়ার উপক্রম হচ্ছে এবং এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে মাটির ওপর। মাটির উপরিভাগ বৃক্ষ আচ্ছাদিত না হলে মাটি দ্রুত ক্ষয়প্রাপ্ত হয় এবং মরুপ্রবণতার দিকে ধাবিত হয়।

গ. উদ্দীপকে জনসংখ্যা সমস্যার প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। জনসংখ্যা বৃদ্ধি বর্তমানে মানবসমাজের সবচেয়ে ভয়াবহ সমস্যা। কোনো স্থানের জনসংখ্যা বৃদ্ধি বলতে ঐ স্থানে বিভিন্ন সময়ের জনসংখ্যায় পরিমাণগত পার্থক্যকে বোঝায়। বর্তমান বিশ্বে জনসংখ্যার দিক দিয়ে বাংলাদেশের স্থান দশম। দেশে বর্তমান জনসংখ্যা প্রায় ১৬ কোটি। নানা সমস্যার কারণে এটি দ্রুত হারে বেড়েই চলেছে। এই হার বিশ্বের উন্নত যেকোনো দেশের চেয়ে বেশি।
উদ্দীপকে আমরা দেখতে পাই, কালুর বয়স যখন ১৯ এবং সখিনার ১৫ তখন ওদের বিয়ে হয়। বর্তমানে তারা তিন কন্যা সন্তানের জনক ও জননী। শাশুড়ির নাতি চাই এই ইচ্ছা পূরণের জন্য সখিনা আরেক কন্যা সন্তানের জন্ম দেয়। এর ফলে তাদের পরিবারের লোকসংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই বলা যায়, উদ্দীপকের চিত্রটি বাংলাদেশের এক নম্বর সমস্যা তথা জনসংখ্যা সমস্যাকে নির্দেশ করছে।

ঘ. কালু ও সখিনার বয়স পরিবারের সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধির জন্য একমাত্র কারণ নয়।
আমাদের দেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির একটি অন্যতম কারণ হলো পুত্রসন্তান লাভের আকাঙ্ক্ষা। সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখা গেছে, বর্তমানে দেশের প্রায় ৯৫ ভাগ পরিবারই তাদের প্রথম সন্তান পুত্র আশা করে। অনেক পরিবারে পুত্র সন্তানের আকাঙ্ক্ষায় অনেকগুলো মেয়ে সন্তানের জন্ম দিয়ে থাকে। এভাবে দেশের জনসংখ্যা দ্রুত হারে বাড়তে থাকে। যার প্রতিফলন আমরা দেখতে পাই উদ্দীপকের কালু ও সখিনার জীবনে। সখিনা তার শাশুড়ির নাতির ইচ্ছা পূরণ করতে গিয়ে আরেকটি কন্যা সন্তানের জন্ম দেয়। যা তাদের পরিবারের সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধি করে। তবে এটা ঠিক যে, বাল্যবিবাহের ফলে অধিক সময় বিবাহিত জীবন অতিবাহিত করতে গিয়ে তারা অধিক সন্তানের জন্ম দেয়। তার চিত্র আমরা দেখতে পাই উদ্দীপকের কালু ও সখিনার জীবনে কেবল অল্পবয়সে বিয়ের কারণে তারা তিন সন্তানের জন্ম দেয়। উপর্যুক্ত আলোচনার পরিশেষে বলা যায়, বাল্যবিবাহ এবং পুত্র সন্তানের আকাঙ্ক্ষা কালু ও সখিনার পরিবারে সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধির জন্য দায়ী।

৯. স্লোগান-১: 'দুটি সন্তানই যথেষ্ট, একটি হলে ভালো হয়।' স্লোগান-২: 'গাছ লাগান, ধরিত্রী বাঁচান। 
ক. যৌথ পরিবার কী?
খ. ক্ষমতার ভিত্তিতে পরিবার কয় প্রকার? বর্ণনা করো।
গ. উদ্দীপকে বর্ণিত স্লোগান-১, বাংলাদেশের কোন সমস্যাকে নির্দেশ করে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকে বর্ণিত স্লোগান-২ যে সামাজিক সমস্যাকে নির্দেশ করে, স্লোগান-১-এ বর্ণিত সমস্যা তার অন্যতম একটি কারণ- এ বিষয়ে তুমি কি একমত? বিশ্লেষণ করো।

❖ ৯ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. বর্ধিত পরিবারের কর্তার সাথে যদি এক বা একাধিক ভাই এবং তাদের সন্তান-সন্ততি ও নিকটাত্মীয় থাকে তবে তাকে যৌথ পরিবার বলে। 

খ. ক্ষমতার ভিত্তিতে পরিবার দু' ধরনের। যথা : পিতৃপ্রধান পরিবার ও মাতৃপ্রধান পরিবার। যে পরিবারের প্রধান কর্তা ব্যক্তি হলো কোনো পুরুষ তাকে পিতৃপ্রধান পরিবার বলে। বাংলাদেশের পরিবার মূলত পিতৃপ্রধান। আর যে পরিবারের ক্ষমতা ও নেতৃত্ব নারী তথা মাতা, স্ত্রী বা বয়স্ক মেয়েদের ওপর ন্যাস্ত থাকে সে পরিবারকে মাতৃপ্রধান পরিবার বলে।

গ. উদ্দীপকে বর্ণিত স্লোগান-১, বাংলাদেশের জনসংখ্যা সমস্যাকে নির্দেশ করে।
যদি কোনো দেশের জনসংখ্যা প্রয়োজনাতিরিক্ত বা জনসংখ্যা দ্বারা জনগণের কল্যাণ ব্যাহত হয় এবং দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন বাধাপ্রাপ্ত হয় তখন জনসংখ্যাকে সমস্যা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। পৃথিবীর অন্যতম ঘনবসতিপূর্ণ ও জনবহুল দেশ হচ্ছে বাংলাদেশ। ১৯৫১ সাল হতে ১৯৮০ সাল পর্যন্ত ৩০ বছরে এদেশের জনসংখ্যা দ্বিগুণ হয়েছে। ২০১৩ সালে প্রকাশিত বিশ্ব ব্যাংকের রিপোর্ট অনুযায়ী ২০১২-এর ডিসেম্বরে বাংলাদেশের জনসংখ্যা ১৫১.৫০ মিলিয়ন। অর্থাৎ বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ২.১৮% বাংলাদেশে বাস করে। বাংলাদেশের আয়তন ১,৪৭,৫৭০ বর্গ কি.মি.। আয়তন একই থাকছে অথচ জনসংখ্যা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। যার ফলে বাংলাদেশের জনসংখ্যার ঘনত্ব দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমানে বাংলাদেশের জনসংখ্যার ঘনত্ব প্রতি বর্গকিলোমিটারে ১০২৭ জন। ক্ষুদ্র আয়তনবিশিষ্ট এদেশের জনসংখ্যার ঘনত্ব বৃদ্ধি পাওয়াতে সামাজিক সমস্যা দিন দিন বেড়ে়ই চলছে। এ কারণে বাংলাদেশের জনসংখ্যা সমস্যাকে এক নম্বর সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। আর এ সমস্যা সমাধানে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। তার মধ্যে সচেতনতামূলক কার্যক্রম অন্যতম। এ সচেতনতামূলক কাজের অন্যতম স্লোগান হলো ‘দুটি সন্তানই যথেষ্ট, একটি হলে ভালো হয়।' যা উদ্দীপকের ১নং স্লোগানেও উল্লেখ করা হয়েছে। সুতরাং বলা যায়, উদ্দীপকে বর্ণিত ১ নং স্লোগান বাংলাদেশের জনসংখ্যা সমস্যাকে নির্দেশ করে।

ঘ. উদ্দীপকে বর্ণিত স্লোগান-২ পরিবেশগত সমস্যাকে নির্দেশ করছে। আর এ পরিবেশগত সমস্যার অন্যতম একটি কারণ হলো স্লোগান-১ এর সমস্যা অর্থাৎ অধিক জনসংখ্যা। এ বিষয়ে আমি সহমত পোষণ করি। কারণত
অতিরিক্ত জনসংখ্যার জন্য যানবাহন এবং কল-কারখানার সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এসব যানবাহন ও কারখানার দূষিত ধোঁয়া বায়ু দূষণ ঘটাচ্ছে। জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় দেশে কল-কারখানার সংখ্যা বেড়ে়ছে। এসব বেশির ভাগ কল-কারখানারই বর্জ্য শোধনের ব্যবস্থা নেই। এসব বর্জ্য নদীতে বা জলাধারে ফেলার কারণে পানি দূষিত হচ্ছে। জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে গৃহস্থালির বর্জ্য, মলমূত্র, রান্নাঘরের বর্জ্য, অসুস্থ মানুষের মল-মূত্র থেকে রোগ উৎপাদনকারী ব্যাকটেরিয়ার পরিমাণও বৃদ্ধি পাচ্ছে। এসব বর্জ্য অনেক সময় নদী কিংবা জলাশয়ে ফেলা হয়। এর ফলে দূষিত হচ্ছে পানি। অধিক জনসংখ্যার খাদ্য চাহিদা পূরণের জন্য জমিতে বেশি রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহার করা হচ্ছে। এর ফলে মাটি তার উর্বরতা শক্তি হারাচ্ছে; যা মাটি দূষণের অন্যতম কারণ। এছাড়া জমি অতিকর্ষণের ফলে ভূমিক্ষয়, উর্বরতা হ্রাস ও মাটির গুণাগুণে ব্যাপকভাবে অবনতি ঘটছে। এর ফলে মাটি দূষণের পরিমাণও বৃদ্ধি পাচ্ছে। উপরের আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায়, অতিরিক্ত জনসংখ্যার কারণে শিল্পায়ন, নগরায়ণ এবং মানুষের বিভিন্ন কর্মকান্ড দ্বারা পরিবেশ নানাভাবে দূষিত হচ্ছে। যার প্রভাব পড়ছে সমগ্র দেশের জনগণের ওপর।

১০. করিম সাহেবের বর্তমান বয়স ৭০ বছর। তিনি তার সমস্ত আয় দিয়ে ৪ সন্তানকে বড় করেছেন। তার সন্তানরা বর্তমানে স্বাবলম্বী কিন্তু তারা বৃদ্ধ বাবার ভরণ-পোষণ করে না এবং খোঁজ-খবরও রাখে না।
ক. কর্মজীবী নারী কাকে বলে? 
খ. সামাজিক সমস্যা কাকে বলে?
গ. উদ্দীপকের করিম সাহেব যে পরিস্থিতির শিকার হয়েছেন তার বর্ণনা দাও।
ঘ. উক্ত বয়সে মানুষ যে সকল স্থিতির সম্মুখীন হয় তা আলোচনা করো।

❖ ১০ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. যেসব নারী সাধারণত বাড়ির বাইরে নিয়মিত চাকরির মাধ্যমে বেতন, মজুরি বা অন্যান্য আয় অর্জন করে তাদেরকে কর্মজীবী নারী বলে।

খ. সামাজিক সমস্যা বলতে সমাজের এমন অবস্থাকে বোঝায় যে অবস্থাকে সমাজের অনেক লোকই অনাকাঙি্ক্ষত মনে করে, যে অবস্থা অনেকের ওপর অবাঞ্ছিত প্রভাব রাখে এবং যার সমাধানের লক্ষ্যে অনেকেই যৌথ প্রয়াস চালানোর প্রয়োজন অনুভব করে।

গ. উদ্দীপকের করিম সাহের বার্ধক্য সমস্যার শিকার হয়েছেন। সাধারণভাবে বার্ধক্য দ্বারা বয়োবৃদ্ধিকে বোঝানো হয়। বার্ধক্য হলো জীবনচক্রের একটি স্বাভাবিক পরিণতি। মানুষের জীবনচক্রের শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তনের সর্বশেষ পরিণতি হলো বার্ধক্য। এটা মানুষের জৈবিক পরিণতি। অনেক সময় বয়সকেই বার্ধক্য নির্ধারণের মানদন্ড হিসেবে ধরা হয়। বাংলাদেশে বয়সকে বার্ধক্য নির্ধারণের একক হিসেবে ব্যবহার করলেও তার কোনো নির্দিষ্ট মানদন্ড নেই। তবে জাতিসংঘের প্রদত্ত সংজ্ঞা অনুযায়ী স্বল্পোন্নত দেশে ৬০ বছর বয়স হলে তাকে প্রবীণ বা বৃদ্ধ ধরা হয়। আর বৃদ্ধদের শারীরিক ও মানসিক অবস্থার প্রেক্ষিতে পরিবারে ও সমাজে যে সমস্যার সৃষ্টি হয় তাকেই বলা হয় বার্ধক্য সমস্যা। উদ্দীপকে উল্লিখিত করিম সাহেবের বর্তমান বয়স ৭০ বছর। পাঠ্যবইয়ের তথ্য অনুযায়ী বয়সের দিক থেকে করিম সাহেব বার্ধক্যে উপনীত হয়েছেন। তার সন্তানরা স্বাবলম্বী হলেও কেউ বৃদ্ধ বাবার ভরন-পোষণ করেন না এবং খোঁজখবরও রাখে না। অর্থাৎ তিনি বার্ধক্যের বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন।
উপরের আলোচনার প্রেক্ষিতে আমরা তাই বলতে পারি, করিম সাহেব বার্ধক্য সমস্যার শিকার হয়েছেন। 

ঘ. উক্ত বয়সে অর্থাৎ বার্ধক্যের সময় মানুষ নানা ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হন। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট ও জাতিসংঘের সংজ্ঞানুযায়ী করিম সাহেব একজন বৃদ্ধ। এ বয়সী মানুষদের নানা সমস্যা ও প্রতিকূল পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয় যেমনত
বাংলাদেশের বৃদ্ধদের কর্মসংস্থান নেই বললেই চলে। ফলে তারা চরম দারিদ্র্য ও আর্থিক অসচ্ছলতার শিকার হয়। গ্রাম বাংলার দরিদ্র বৃদ্ধরা পরিচিত এলাকার কারণে ভিক্ষা করতে পারে না। ফলে এই শ্রেণির বৃদ্ধরা শহরে এসে ভিক্ষাবৃত্তি করে মানবেতর জীবনযাপন করে। স্বাস্থ্যহীনতা ও পুষ্টিহীনতা বার্ধক্যের অন্যতম প্রধান সমস্যা। উপার্জন না থাকায় ক্রয় ক্ষমতার অভাবে খাদ্য গ্রহণ ও চিকিৎসা নিতে বৃদ্ধরা অক্ষম। আর্থিক উপার্জন না থাকায় বৃদ্ধরা পারিবারিক ও সামাজিকভাবে উপেক্ষা, অনাদর, অবহেলা-বঞ্চনার শিকার হন। ফলে তারা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন ও নিজেদেরকে অপ্রয়োজনীয় বোঝা মনে করেন। বৃদ্ধদের চিত্তবিনোদন ও সময় কাটানোর সুযোগ-সুবিধা খুবই কম। বর্তমান পরিবর্তিত সমাজ ব্যবস্থায় পরিবারের সবাই ব্যস্ত থাকে। বৃদ্ধদের সাথে সময় কাটানোর মতো সময় কারো নেই। ফলে তারা একাকিত্ব অনুভব করেন। বৃদ্ধরা প্রায় সময় নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন, সরকারিভাবে তেমন কোনো প্রতিষ্ঠান গড়ে না ওঠায় তারা সব সময় নিজেদেরকে অসহায় মনে করেন।
উপরের আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায়, করিম সাহেবের অনুরূপ বৃদ্ধ মানুষ নানা রকম সমস্যার সম্মুখীন হন।
Share:

HSC পৌরনীতি ও সুশাসন ২য় পত্র (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর অধ্যায় ১ pdf download

 এইচএসসি পরীক্ষার পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি
HSC Civics and Good Governance 2nd Paper Srijonshil Question Answer pdf download

পৌরনীতি ও সুশাসন
দ্বিতীয় পত্র

সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
অধ্যায়-১

HSC Civics and Good Governance 2nd Paper pdf download
Srijonshil
Question and Answer

১. ঔপনিবেশিক শাসন ও নির্যাতনের যাতাকলে নিষ্পেষিত 'গ' রাষ্ট্রের জনগণ দীর্ঘদিন যাবৎ স্বাধীনতার জন্য আন্দোলন করে চলেছে। গণআন্দোলনে বাধ্য হয়ে শাসকগোষ্ঠী একটি নতুন আইন প্রণয়ন করে রাষ্ট্রকে দুভাগে ভাগ করে দুটি পৃথক রাষ্ট্রের জন্ম দিয়ে দেশ ত্যাগ করে।
ক. মন্ত্রিমিশন পরিকল্পনার সদস্য সংখ্যা কতজন?
খ. বঙ্গভঙ্গ বলতে কী বোঝায়?
গ. উদ্দীপকের সাথে তোমার পঠিত কোনো আইনের সাদৃশ্য আছে কি? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ আইনের গুরুত্ব বিশ্লেষণ করো।

১ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. মন্ত্রিমিশন পরিকল্পনার সদস্য সংখ্যা ৩ জন।

খ. বঙ্গভঙ্গ বলতে ১৯০৫ সালে বাংলা প্রেসিডেন্সিকে ২ ভাগে বিভক্ত করাকে বোঝায়।
প্রায় ২ লক্ষ বর্গমাইল আয়তনের বাংলা প্রেসিডেন্সিকে প্রশাসনিক কাজের সুবিধার্থে পূর্ব বঙ্গ ও আসাম এবং বাংলা প্রদেশ নামে ২টি প্রদেশে বিভক্ত করা হয়। ব্রিটিশ ভারতের তদানীন্তন ভাইসরয় লর্ড কার্জন ১৯০৫ সালের ১ সেপ্টেম্বর বঙ্গভঙ্গ কার্যকর করেন। যা ভারতীয় উপমহাদেশের ইতিহাসে বঙ্গভঙ্গ নামে পরিচিত। ১৯১১ সালে বঙ্গভঙ্গ রদ করা হয়।

গ. উদ্দীপকে প্রণীত আইনের সাথে আমার পঠিত ১৯৪৭ সালের ভারত স্বাধীনতা আইনের সাদৃশ্য রয়েছে।
ভারতবর্ষের জনগণ ব্রিটিশ শাসনের এক পর্যায়ে তাদের শোষণ থেকে মুক্তি পেতে গণআন্দোলন শুরু করে। তাছাড়া সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা এবং মুসলিম লীগ ও কংগ্রেসের পরস্পর বিরোধী দাবির প্রেক্ষিতে ব্রিটিশ সরকার মহাসমস্যায় পড়ে। ভারতের এই রাজনৈতিক ও শাসনতান্ত্রিক অচলাবস্থা দূর করার লক্ষ্যে তৎকালীন গভর্নর জেনারেল লর্ড মাউন্টব্যাটেন ১৯৪৭ সালের ৩ জুন একটি পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। এটি কার্যকর করার লক্ষ্যে ৪ জুলাই ব্রিটিশ পার্লামেন্টে তিনি একটি বিল উত্থাপন করেন। এ বিলে ব্রিটিশ ভারতে 'ভারত' ও 'পাকিস্তান' নামে দুটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব করা হয়। ১৯৪৭ সালের ১৮ জুলাই বিলটি রাজকীয় সম্মতির মাধ্যমে আইনে পরিণত হয়। এটিই ১৯৪৭ সালের 'ভারত স্বাধীনতা আইন' নামে খ্যাত।
উদ্দীপকের 'গ' রাষ্ট্রের জনগণ ঔপনিবেশিক শোষণ থেকে মুক্তি পেতে দীর্ঘদিন যাবৎ স্বাধীনতার জন্য আন্দোলন করে চলেছে। তাদের গণআন্দোলনে বাধ্য হয়ে শাসকগোষ্ঠী একটি নতুন আইন প্রণয়ন করে দেশ ত্যাগে বাধ্য হয়। শাসকগোষ্ঠীর প্রণীত নতুন আইন অনুযায়ী জন্ম হয় দুটি স্বাধীন রাষ্ট্রের। এ আইনের সাথে ১৯৪৭ সালের ভারত স্বাধীনতা আইন সাদৃশ্যপূর্ণ।

ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত আইনের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ আইন অর্থাৎ ১৯৪৭ সালের ভারত স্বাধীনতা আইনের গুরুত্ব অপরিসীম। 
১৯৪৭ সালের ভারত স্বাধীনতা আইনের মাধ্যমে ব্রিটিশ ভারতের রাজনৈতিক ও সাংবিধানিক সমস্যা সমাধানের পথ সুগম হয়। এর মাধ্যমে ভারতবর্ষে দুইশ বছরের ব্রিটিশ শাসনের অবসান ঘটে এবং পাকিস্তান ও ভারত নামে দুটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্রের সৃষ্টি হয়। এ আইনের মাধ্যমে গভর্নর জেনারেল ও গভর্নরের স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতার বিলুপ্তি ঘটে। ফলে পাকিস্তান ও ভারতে দায়িত্বশীল সরকার প্রতিষ্ঠার পথে বাধা দূরীভূত হয়।
দীর্ঘ আন্দোলন, হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা, ব্যাপক রাজনৈতিক ও সামাজিক অস্থিরতার পর ১৯৪৭ সালের ভারত স্বাধীনতা আইন প্রণয়ন করা হয়। এজন্য এ আইন ভারতীয় উপমহাদেশের ইতিহাসে এক তাৎপর্যপূর্ণ ও ঐতিহাসিক দলিল। উক্ত আইন প্রণয়নের ফলে এ উপমহাদেশে রক্তপাতহীন ও স্বাধীনতা যুদ্ধ ছাড়াই স্বাধীন দুটি রাষ্ট্রের জন্ম হয়। এটি ভারতীয় উপমহাদেশের জনগণের কৃষ্টি, সভ্যতা, সাহিত্য ইত্যাদিতে বৈপ্লবিক পরিবর্তনের সূচনা করে। ফলে ভারতীয় উপমহাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয়। নতুন প্রেরণা ও আশা-আকাঙ্ক্ষা নিয়ে দুটি স্বাধীন দেশের জনগণ নতুনভাবে স্বপ্ন দেখতে শুরু করে।
উপরের আলোচনা থেকে প্রতীয়মান হয় যে, ভারত ও পাকিস্তান রাষ্ট্র সৃষ্টির ইতিহাসে ১৯৪৭ সালের ভারত স্বাধীনতা আইনের গুরুত্ব অপরিসীম।

২. 'গ' একজন রাজনৈতিক নেতা। মানবতার কল্যাণ তাঁর রাজনীতির মূল লক্ষ্য। বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষের কথা চিন্তা করে তিনি একাধিক স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব করেন।
ক. ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস প্রতিষ্ঠিত হয় কখন?
খ. 'দ্বিজাতি তত্ত্ব' বলতে কী বোঝায়?
গ. উদ্দীপকের সাথে তোমার পঠিত কোনো ঐতিহাসিক প্রস্তাবের সাদৃশ্য আছে কি? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ প্রস্তাবের মধ্যে স্বাধীন বাংলাদেশের বীজ নিহিত ছিল- বিশ্লেষণ করো।

২ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস প্রতিষ্ঠিত হয় ১৮৮৫ সালে।

খ. 'দ্বিজাতি তত্ত্ব' হলো ভারত ও পাকিস্তান নামে দুটি স্বাধীন রাষ্ট্র গঠনের একটি রাজনৈতিক মতবাদ।
মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ১৯৪০ সালের ২২ মার্চ লাহোরে অনুষ্ঠিত মুসলিম লীগের কাউন্সিলে সভাপতির ভাষণে মুসলমানদের জন্য একটি স্বতন্ত্র আবাসভূমি গঠনের লক্ষ্যে 'দ্বিজাতি তত্ত্ব' ঘোষণা করেন। তার মতে, হিন্দু-মুসলমান উভয় সম্প্রদায়ই ধর্মীয় দর্শন, সামাজিক রীতি, জীবন পরিচালনা, সাহিত্য, ইতিহাস প্রভৃতি ক্ষেত্রে দুটি স্বতন্ত্র অবস্থানে রয়েছে। সুতরাং জাতীয়তার মানদ-- তারা পৃথক দুটি জাতি। তার এই মতবাদটি 'দ্বিজাতি তত্ত্ব' নামে পরিচিত।

গ. উদ্দীপকে আলোচিত প্রস্তাবের সাথে আমার পঠিত লাহোর প্রস্তাবের সাদৃশ্য রয়েছে।
১৯৪০ সালের ২৩ মার্চ পাকিস্তানের লাহোরে মুসলিম লীগের কাউন্সিল অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত অধিবেশনে বাংলার তদানীন্তন মুখ্যমন্ত্রী এ. কে. ফজলুল হক মুসলমানদের জন্য স্বতন্ত্র আবাসভূমির দাবি সম্বলিত একটি প্রস্তাব উত্থাপন করেন। এই প্রস্তাবই ঐতিহাসিক 'লাহোর প্রস্তাব' নামে পরিচিত। এ প্রস্তাবে তৎকালীন ভারতের অঙ্গরাজ্যগুলোর সংখ্যালঘুদের ধর্মীয়, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং শাসন সংক্রান্ত অধিকার রক্ষার কথা উল্লেখ করা হয়। এ প্রস্তাব গ্রহণের পর মুসলিম রাজনীতিতে ইতিবাচক সাড়া জাগে এবং মুসলমানদের মধ্যে নব জাগরণের সৃষ্টি হয়। পরবর্তীতে এ প্রস্তাব 'পাকিস্তান প্রস্তাব' নামে পরিচিত অর্জন করে।
উদ্দীপকের 'গ' একজন রাজনৈতিক নেতা। তিনি বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষের কথা চিন্তা করে তাঁর অঞ্চলে একাধিক স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব করেন। তাঁর এই প্রস্তাব শেরে বাংলা এ. কে. ফজলুল হক কর্তৃক উত্থাপিত লাহোর প্রস্তাবের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। লাহোর প্রস্তাবের ভিত্তিতেই ১৯৪৭ সালের ১৪ ও ১৫ আগস্ট যথাক্রমে ভারত ও পাকিস্তান নামে দুটি স্বাধীন রাষ্ট্রের উদ্ভব হয়।

ঘ. উদ্দীপকের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ প্রস্তাবের মধ্যে অর্থাৎ লাহোর প্রস্তাবে স্বাধীন বাংলাদেশের বীজ নিহিত ছিল- আমি এ উক্তিটিকে যথার্থ মনে করি।
উদ্দীপকে বর্ণিত প্রস্তাবের সাথে শেরে বাংলা এ. কে. ফজলুল হক কর্তৃক উত্থাপিত লাহোর প্রস্তাবটি সাদৃশ্যপূর্ণ। প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট পাকিস্তান নামক মুসলিম রাষ্ট্রটির সৃষ্টি হয়। যে রাষ্ট্রটি পূর্ব ও পশ্চিম এই দুই অংশে বিভক্ত ছিল। কিন্তু পশ্চিম পাকিস্তানের ক্ষমতাসীন দল মুসলিম লীগ লাহোর প্রস্তাবে উল্লিখিত প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসনের বিষয়টি এড়িয়ে যায় এবং পূর্ব বাংলার (পূর্ব পাকিস্তান) প্রতি চরম বৈষম্যমূলক আচরণ করতে থাকে। ফলে পূর্ব বাংলার জনগণ প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসনের জোর দাবি জানায়। 
১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্টের ২১ দফা, ১৯৬৬ সালের ঐতিহাসিক ছয় দফা কর্মসূচি, ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান সবকিছুই ছিল লাহোর প্রস্তাবে গৃহীত প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসনের দাবি আদায়ের প্রচেষ্টা। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৭০ সালের নির্বাচনে পূর্ব পাকিস্তানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগের বিজয় হয়। কিন্তু পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী ক্ষমতা হস্তান্তরে অস্বীকৃতি জানায়। ক্ষমতা হস্তান্তরের দাবীতে পূর্ববাংলায় শুরু হয় অসহযোগ আন্দোলন। অবশেষে দীর্ঘ নয় মাস সশস্ত্র যুদ্ধের পর ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটে।
উপরের আলোচনায় প্রতীয়মান হয় যে, ১৯৪০ সালের ঐতিহাসিক লাহোর প্রস্তাবের মধ্যেই স্বাধীন বাংলাদেশের বীজ নিহিত রয়েছে

৩. ভারতীয়দের স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য ১৮৮৫ সালে সর্বপ্রথম এ উপমহাদেশে একটি রাজনৈতিক দলের উদ্ভব ঘটে। মুসলমানগণও তাদের স্বার্থ এবং দাবি-দাওয়া পূরণের উদ্দেশ্যে আরো একটি রাজনৈতিক দল গঠন করেন। দল দুটি প্রাথমিক পর্যায়ে ব্রিটিশদের প্রতি আনুগত্য দেখায়। পরবর্তীতে দল দুটির নেতৃত্বে ভারত বিভক্ত হয়ে দুটি স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্ম হয়।
ক. দ্বি-জাতি তত্ত্বের প্রবক্তা কে?
খ. প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসন বলতে কী বোঝ?
গ. উদ্দীপকে কোন কোন রাজনৈতিক দলের কথা বলা হয়েছে?
ঘ. যেকোনো একটি রাজনৈতিক দলের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য আলোচনা করো। ভারত বিভক্তিতে উক্ত দল দুটির ভূমিকা মূল্যায়ন করো।

৩ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. দ্বি-জাতি তত্ত্বের প্রবক্তা হলেন মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ।

খ. প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসন বলতে প্রদেশগুলোর নিজস্ব স্বাধীন শাসনব্যবস্থাকে বোঝায়।
১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইনে প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসন প্রবর্তন করা হয়েছিল। এতে প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসন তিনটি নীতির ওপর প্রতিষ্ঠিত ছিল। প্রথমত, সংবিধান অনুযায়ী প্রাদেশিক সরকারের ওপর ন্যস্ত বিষয়গুলোর ওপর কেন্দ্রীয় সরকারের কোনো হস্তক্ষেপ থাকবে না। দ্বিতীয়ত, প্রদেশগুলোতে দায়িত্বশীল সরকার প্রতিষ্ঠিত হবে। তৃতীয়ত, অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে প্রতিটি প্রদেশ আত্মনির্ভরশীল হবে। মোটকথা, প্রদেশগুলোর সুনির্দিষ্ট ক্ষমতা প্রাপ্তি এবং প্রাদেশিক সরকারের দায়িত্বশীল হওয়াই হলো প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসন।

গ. উদ্দীপকে 'কংগ্রেস' ও 'মুসলিম লীগ' নামে ব্রিটিশ ভারতের দুটি প্রধান রাজনৈতিক দলের কথা বলা হয়েছে।
ব্রিটিশ শাসিত ভারতে ১৮৮৫ সালের শেষের দিকে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস নামে একটি রাজনৈতিক দলের সৃষ্টি হয়। দলটির সদস্যপদ হিন্দু-মুসলিম সবার জন্য উন্মুক্ত ছিল। পরবর্তী সময়ে ভারতে মুসলিম জাতীয়তাবাদের উন্মেষ ঘটে এবং ইংরেজ শাসকদের কাছে দাবি-দাওয়া তুলে ধরতে মুসলমানরা নিজেদের একটি পৃথক রাজনৈতিক দল গঠনে উদ্বুদ্ধ হয়। ১৯০৬ সালের ৩০ ডিসেম্বর ঢাকায় মুসলিম লীগ নামে মুসলমানদের নিজস্ব দলটি প্রতিষ্ঠিত হয়। কয়েকটি লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে এ দলটি গঠিত হয়েছিল। যথা:
১. ব্রিটিশ সরকারের প্রতি ভারতীয় মুসলমানদের আনুগত্য প্রদর্শন এবং সরকারের কোনো নীতি সম্পর্কে তাদের মনে ভুল ধারণা জন্মালে তা দূর করা।
২. ভারতের মুসলমানদের রাজনৈতিক অধিকার ও স্বার্থরক্ষা এবং তাদের অভাব-অভিযোগ ও দাবি-দাওয়া গঠনমূলকভাবে সরকারের কাছে উপস্থাপন করা।
৩. এ সংগঠনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যগুলো বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে অন্য সম্প্রদায়ের প্রতি যেন কোনো বিদ্বেষভাব না জাগে, সে ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
৪. রাজনীতিতে কংগ্রেসের একচ্ছত্র আধিপত্য খর্ব করা।

ঘ. ভারত বিভক্তিতে উক্ত দল দুটি অর্থাৎ কংগ্রেস ও মুসলিম লীগের ভূমিকা ছিল তাৎপর্যপূর্ণ।
ভারতীয়দের দাবি-দাওয়া আদায়ের লক্ষ্য নিয়ে ১৮৮৫ সালে সর্বভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস প্রতিষ্ঠিত হয়। দলটির সদস্যপদ হিন্দু-মুসলিমসহ সব ভারতীয়র জন্য উন্মুক্ত ছিল। তবে পরবর্তী সময়ে কংগ্রেসের কিছু সিদ্ধামেত্ম মুসলমানরা ভিন্নমত পোষণ করে এবং তাদের মধ্যে হতাশা সৃষ্টি হয়। তুলনামূলকভাবে অনগ্রসর ভারতীয় মুসলমান সম্প্রদায়ের অধিকার আদায় ও অগ্রগতির লক্ষ্যে মুসলিম নেতারা কংগ্রেসের প্রতি হতাশা থেকে ১৯০৬ সালে পৃথক রাজনৈতিক দল মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠা করেন।
জাতীয় কংগ্রেস দল ভারতীয়দের অধিকার আদায়ে নানামুখী কর্মসূচি পালনের মাধ্যমে দেশের জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতীক হয়ে ওঠে। ধীরে ধীরে কংগ্রেসের জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকে। ফলে ইংরেজ সরকার কংগ্রেসকে তাদের প্রতিপক্ষ ভাবতে শুরু করে। প্রথমদিকে কংগ্রেস সরকারের কাছ থেকে নিয়মতান্ত্রিক পন্থায় দাবি-দাওয়া আদায়ের চেষ্টা করে। তবে পরে এ সংগঠনটি ভারতে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন ও স্বাধীনতা সংগ্রামে নেতৃত্ব দেয়। ভারতীয় কংগ্রেসের নেতৃত্বেই ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ ভারতের স্বাধীনতা অর্জিত হয়।
অন্যদিকে বিংশ শতকের শুরুর দিকে মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠার ফলে ভারতীয় মুসলমানদের মধ্যে ধীরে ধীরে রাজনৈতিক সচেতনতা সৃষ্টি হয়। রাজনৈতিক, আর্থ-সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে তাদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি পায়। সাংগঠনিক ভিত্তি থাকায় মুসলমানদের ন্যায়সঙ্গত দাবি আদায় সহজ হয়। পৃথক নির্বাচনের দাবিসহ মুসলমানদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে সংগ্রাম করায় মুসলিম লীগের জনসমর্থন ক্রমশ বাড়তে থাকে। গঠনের পরবর্তী ৪০ বছরে (স্বাধীনতার আগ পর্যন্ত) মুসলমানদের মধ্যে দলটি ব্যাপকভাবে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। এদিকে ব্রিটিশদের 'ভাগ কর ও শাসন কর' (ডিভাইড অ্যান্ড রুল) নীতিসহ বিভিন্ন কারণে হিন্দু-মুসলিম সম্পর্কে তিক্ততা সৃষ্টি হয়। এমন প্রেক্ষাপটে বিশ শতকের চল্লিশের দশকে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ 'দ্বি-জাতি তত্ত্ব' উপস্থাপন করেন। এতে মুসলিমদের পৃথক জাতি হিসেবে উল্লেখ করে তাদের জন্য রাষ্ট্রের পক্ষে যুক্তি দেওয়া হয়।
কংগ্রেস ও মুসলিম লীগ ভারতবাসীর মনে স্বাধিকারের চেতনার জন্ম দিয়েছিল। কিছু চেষ্টা সত্ত্বেও দুই দলের নেতাদের মতপার্থক্য শেষ পর্যন্ত দূর করা সম্ভব না হওয়ায় ভারত অনিবার্যভাবে ধর্মের ভিত্তিতে বিভক্তির পথে এগিয়ে যায়। ১৯৪৭ সালের আগস্ট মাসে ভারত বিভক্ত হয়ে ভারত ও পাকিস্তান নামে দুটি স্বাধীন রাষ্ট্রের সৃষ্টি হয়।

৪. নাগরিকদের অধিকতর সেবা দেওয়ার সুযোগ সৃষ্টির জন্য সরকার ঢাকা সিটি কর্পোরেশনকে দু'ভাগে ভাগ করে ‘ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন' ও 'ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন' নামে পৃথক দুটি সিটি কর্পোরেশনে রূপান্তরিত করে।
ক. বঙ্গভঙ্গ কী?
খ. দ্বৈতশাসন বলতে কী বোঝায়?
গ. উদ্দীপকের সাথে তোমার পঠিত কোনো ঐতিহাসিক ঘটনার সাদৃশ্য আছে কি? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ ঘটনার মূলে ছিল জাতীয়তাবাদী আন্দোলনকে নস্যাৎ করা - বিশ্লেষণ করো।

৪ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. ১৯০৫ সালে বঙ্গদেশকে(প্রদেশ) বিভাজন করাই হলো বঙ্গভঙ্গ।

খ. ব্রিটিশ শাসনামলের শুরুর দিকে বাংলার শাসনভার সংক্রান্ত দায়িত্ব দুটি পৃথক কর্তৃপক্ষের হাতে ন্যস্ত করাই হলো দ্বৈত শাসন।
৭৬৫ খ্রিষ্টাব্দে দেওয়ানি লাভের (রাজস্ব আদায়ের ক্ষমতা) পর লর্ড ক্লাইভ বাংলায় দ্বৈতশাসন প্রবর্তন করেন। দ্বৈত শাসনের অর্থ হলো দু'জনের শাসনব্যবস্থা। এ ব্যবস্থায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা, ফৌজদারি বিচার, শান্তিরক্ষা, দৈনন্দিন প্রশাসন পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয় বাংলার নামেমাত্র নবাবের হাতে। অন্যদিকে, বাংলার রাজস্ব আদায়, দেওয়ানি ও জমির বিবাদ সম্পর্কিত বিচার ইত্যাদি লাভজনক কাজ কোম্পানি নিজের হাতে রাখে। বলা হয়, দ্বৈত শাসন ব্যবস্থায় ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি লাভ করে দায়িত্বহীন ক্ষমতা আর অন্যদিকে নবাব পান ক্ষমতাহীন দায়িত্ব।

গ. উদ্দীপকের সাথে আমার পঠিত ঐতিহাসিক ঘটনা ১৯০৫ সালের বঙ্গভঙ্গের সাদৃশ্য আছে।
বঙ্গভঙ্গ ব্রিটিশ ভারতের রাজনৈতিক ইতিহাসের এক যুগান্তকারী ঘটনা। এটি ব্রিটিশ সরকারের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সাধনের পাশাপাশি প্রশাসনিক বোঝা লাঘব করে। তাছাড়া এটি নবগঠিত পূর্ববঙ্গের অর্থনীতি ও জীবনমান উন্নয়নে নতুন যুগের সূচনা করে। উদ্দীপকে বর্ণিত ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের দু'ভাগে ভাগ হওয়ার সাথে বঙ্গভঙ্গের সাদৃশ্য আছে।
ব্রিটিশ ভারতে অবিভক্ত বাংলা প্রদেশ ছিল আয়তনে ও জনসংখ্যায় সবচেয়ে বড়। একজন গভর্নর জেনারেলের পক্ষে এত বড় প্রদেশ শাসন করা খুবই কষ্টকর ছিল। তাই গভর্নর জেনারেল লর্ড কার্জন (George Nathaniel Curzon; 1859-1925) ভারত সচিবকে লিখেছিলেন যে, একটিমাত্র কেন্দ্র থেকে এত বড় ও জনবহুল এলাকা শাসন করা সম্ভব নয়। তার এ লিখিত রিপোর্টের আলোকেই ১৯০৫ সালে বাংলাকে ভাগ করে দুটি প্রদেশ সৃষ্টি করা হয়। নতুন প্রদেশটি গঠিত হয় পার্বত্য ত্রিপুরা, ঢাকা, রাজশাহী (দার্জিলিং বাদে), চট্টগ্রাম ও আসাম নিয়ে। এর নাম হয় পূর্ববাংলা ও আসাম প্রদেশ। ঢাকাকে এ নতুন প্রদেশের রাজধানী করা হয়। অন্যদিকে পশ্চিম বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যা নিয়ে গঠিত হয় পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশ, কলকাতা হয় এর রাজধানী।
উদ্দীপকে আমরা দেখতে পাই, নাগরিকদের অধিকতর সেবা দেওয়ার জন্য সরকার ঢাকা সিটি কর্পোরেশনকে দু'ভাগে ভাগ করে। এর একটি হলো ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন এবং অন্যটি ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন; যা ১৯০৫ সালের বঙ্গভঙ্গ ঘটনার কথাই মনে করিয়ে দেয়।

ঘ. উদ্দীপকের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ ঘটনা অর্থাৎ বঙ্গভঙ্গের মূলে ছিল জাতীয়তাবাদী আন্দোলনকে নস্যাৎ করাত এ বক্তব্যটি যথার্থ।
'১৯০৫ সালের বঙ্গভঙ্গের পেছনে প্রশাসনিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক কারণ থাকলেও এর অন্যতম কারণ ছিল রাজনৈতিক তথা ভারতবাসীর জাতীয়তাবাদী আন্দোলনকে নস্যাৎ করা। ইংরেজি শিক্ষার প্রসারের ফলে ভারতীয়রা নিজেদের অধিকারের বিষয়ে রাজনৈতিকভাবে সচেতন হলে তাদের মধ্যে জাতীয়তাবাদী চিন্তা-চেতনার বিকাশ ঘটে। ১৮৮৫ সালে প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দলে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের নেতৃত্বে সমগ্র ভারতে বিশেষ করে বাংলা প্রেসিডেন্সিতে জাতীয়তাবাদী আন্দোলন শুরু হয়।
ভারতবর্ষকে স্বাধীন করার লক্ষ্যে 'যুগান্তর দল' এবং 'অনুশীলন সমিতি' নামে দুটি অতি বিপ্লবী সংগঠন প্রতিষ্ঠিত হয়। জাতীয়তাবাদী আন্দোলন ও বিপ্লবী কর্মকান্ডর কেন্দ্রবিন্দু ছিল কলকাতা। এসব আন্দোলনে ভীত হয়ে ব্রিটিশ শাসকগোষ্ঠী তাদের চিরায়ত শাসন কৌশল 'ভাগ কর এবং শাসন কর নীতি' (Divide & Rule Policy) প্রয়োগ করে। বাংলা তথা বঙ্গপ্রদেশকে বিভক্ত করে ব্রিটিশরা এ দেশের জাতীয়তাবাদী আন্দোলনকে দুর্বল করে তাদের শাসনকে দীর্ঘায়িত করার কৌশল গ্রহণ করে। এছাড়া ঢাকার নবাব স্যার সলিমুল্লাহও বঙ্গভঙ্গের পক্ষে আন্দোলন শুরু করে জনগণকে বোঝাতে চেষ্টা করেন যে, নতুন প্রদেশ সৃষ্টি হলে পূর্ব বাংলার মুসলমানরা নিজেদের ভাগ্য উন্নয়নের সুযোগ পাবে। কিন্তু বঙ্গভঙ্গ বাংলার হিন্দু সম্প্রদায় বিশেষ করে বুদ্ধিজীবী ও রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি করে। শিক্ষিত হিন্দু সমাজ মনে করে, তাদের দ্রুত বেড়ে ওঠা বুদ্ধিবৃত্তিক শক্তিকে ব্যাহত করা এবং এর পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে পূর্ব বাংলার মুসলিম প্রভাব বাড়ানোকে উৎসাহিত করাই সরকারের প্রধান লক্ষ্য। আবার বাংলার অধিকাংশ বাণিজ্যের নিয়ন্ত্রণ ছিল তাদের হাতে, তাই বঙ্গভঙ্গের ফলে তারা আর্থিকভাবেও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আর এভাবেই বঙ্গভঙ্গের দ্বারা ব্রিটিশ শাসকগণ কৌশলে কলকাতাকেন্দ্রিক সর্বভারতীয় জাতীয়তাবাদী আন্দোলনকে নস্যাৎ করার সুযোগ লাভ করে।
পরিশেষে বলা যায় যে, প্রশাসনিক কাজ সহজতর করার পাশাপাশি বঙ্গভঙ্গের মাধ্যমে ব্রিটিশরা 'ভাগ কর ও শাসন কর' কৌশল সার্থকভাবে প্রয়োগ করতে চেয়েছিল। এর মাধ্যমে তারা পূর্ব বাংলার সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানদের পশ্চিম বাংলার সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দুদের থেকে আলাদা করে দুটি সম্প্রদায়ের মধ্যে দূরত্ব সৃষ্টি করে। এ দুই সম্প্রদায়ের মধ্যকার অনৈক্য ভারতে তাদের শাসনকে আরো শক্তি যুগিয়েছিল।

৫. ‘ক’ রাষ্ট্রের প্রদেশগুলোতে প্রাদেশিক বিষয়গুলোকে দুভাগ করে সংরক্ষিত বিষয় ও হস্তান্তরিত বিষয় নামে নতুন ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হয়। সংরক্ষিত বিষয়গুলো গভর্নর তার হাতে রাখেন। 
ক. মর্লে-মিন্টো সংস্কার আইন কী?
খ. লাহোর প্রস্তাব বলতে কী বোঝ?
গ. ‘ক’ রাষ্ট্রের প্রদেশে প্রবর্তিত আইনের সাথে তোমার পঠিত ১৯১৯ সালের ভারত শাসন আইনের সাদৃশ্য আছে কি? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ আইনের কার্যকারিতা ব্যাখ্যা করো।

৫ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. ব্রিটিশ ভারতে সাংবিধানিক সংস্কার সাধনের লক্ষ্যে ভারত সচিব জন মর্লে ও গভর্নর জেনারেল লর্ড মিন্টোর উদ্যোগে ১৯০৯ সালে যে সংস্কার আইন পাস করা হয়, তাই মর্লে-মিন্টো সংস্কার আইন নামে পরিচিত।

খ. ভারতীয় উপমহাদেশে বসবাসকারী মুসলমানদের জন্য একটি স্বতন্ত্র রাষ্ট্রের দাবি জানিয়ে উত্থাপিত প্রস্তাবনাই হচ্ছে লাহোর প্রস্তাব।
১৯৪০ সালের ২৩ মার্চ পাকিস্তানের লাহোরে মুহাম্মদ আলী জিন্নাহর সভাপতিত্বে নিখিল ভারত মুসলিম লীগ সম্মেলনে শেরে বাংলা এ.কে. ফজলুল হক এ প্রস্তাবটি উত্থাপন করেন। বস্তুতপক্ষে, ভারতের মুসলিম লীগ এবং ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের আদর্শগত পার্থক্যের ফল ছিল ১৯৪০ সালের লাহোর প্রস্তাব। এ প্রস্তাবকে 'পাকিস্তান প্রস্তাব' হিসেবেও অভিহিত করা হয়।

গ. 'ক' রাষ্ট্রের প্রদেশে প্রবর্তিত ব্যবস্থার সাথে আমার পঠিত ১৯১৯ সালের ভারত শাসন আইনের অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য প্রদেশে দ্বৈত শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার সাদৃশ্য রয়েছে।
১৯১৯ সালের ভারত শাসন আইন দ্বারা ব্রিটিশ ভারতের প্রদেশগুলোতে দ্বৈতশাসন প্রবর্তন করা হয়। এটি ভারতের শাসনতান্ত্রিক ইতিহাসে নিঃসন্দেহে একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ ছিল। সাধারণত দ্বৈতশাসন বলতে কোনো প্রশাসনে দুটি কর্তৃপক্ষের উপস্থিতিকে বোঝায়। এমন ক্ষেত্রে প্রশাসনিক বিষয়কে দুভাগে ভাগ করা হয় এবং পরিচালনার জন্য দুই ধরনের প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষ গঠন করা হয়।
১৯১৯ সালের ভারত শাসন আইনে প্রাদেশিক সরকারের প্রশাসনিক বিষয়গুলোকে ‘সংরক্ষিত' ও 'হস্তান্তরিত' এ দুভাগে ভাগ করা হয়। বিচার বিভাগ, ভূমিরাজস্ব, পুলিশ, জেল, ভূমি উন্নয়ন ও কৃষিঋণ, ত্রাণ, সেচ, সংবাদপত্র ও প্রকাশনা নিয়ন্ত্রণ, বনজশিল্প, বিমা, গৃহ নির্মাণ, ঋণদান, শ্রমিক সমস্যার সমাধান, খাল খনন, বাঁধ নির্মাণ প্রভৃতি সংরক্ষিত বিষয় হিসেবে পরিচালনার দায়িত্ব গভর্নর ও তার কার্যনির্বাহী পরিষদের ওপর ন্যস্ত হয়। অপরদিকে কৃষি, শিক্ষা, সমবায়, মৎস্য, স্থানীয় সরকার, জনস্বাস্থ্য, জনকল্যাণমূলক কাজ প্রভৃতি হস্তান্তরিত বিষয় হিসেবে পরিচালনার ভার গভর্নর ও প্রাদেশিক মন্ত্রিসভার ওপর ন্যস্ত হয়। প্রাদেশিক গভর্নর হস্তান্তরিত বিষয় পরিচালনার ক্ষেত্রে মন্ত্রিসভার উপদেশ ও পরামর্শ অনুযায়ী পরিচালিত হতেন। উদ্দীপকের 'ক' রাষ্ট্রের প্রদেশগুলোতে আমরা দেখতে পাই, প্রাদেশিক বিষয়গুলোকে দুভাগ করে সংরক্ষিত বিষয় ও হস্তান্তরিত বিষয় নামে নতুন ব্যবস্থা প্রবর্তন করে এবং সংরক্ষিত বিষয়সমূহ গভর্নর তার হাতে রাখেন। সুতরাং বলা যায় যে, উদ্দীপকের রাষ্ট্রের আইন আমার পঠিত ১৯১৯ সালের ভারত শাসন আইনের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।

ঘ. উদ্দীপকের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ অর্থাৎ ১৯১৯ সালের ভারত শাসন আইন কার্যকারিতার দিক দিয়ে ব্যর্থ হলেও ভারতের সাংবিধানিক সংস্কারের দিক দিয়ে এটি একটি উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ ছিল।
১৯১৯ সালের ভারত শাসন আইনের অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল ধাপে ধাপে ভারতে দায়িত্বশীল সরকার প্রতিষ্ঠা করা। কিন্তু বাস্তবে তা কার্যকর হয়নি। কেননা, এ আইনে গভর্নর জেনারেল ও প্রাদেশিক গভর্নরদের ক্ষমতা ছিল অপ্রতিহত। প্রাদেশিক সরকারের প্রশাসনিক বিষয়গুলোকে দুটি সংস্থায় বা দুভাগে বিভক্ত করায় সরকারের স্বাভাবিক কর্মপ্রবাহ বিঘি্নত হয়ে প্রহসনে পরিণত হয়।
যেকোনো দেশে দলব্যবস্থা সংসদীয় ও দায়িত্বশীল শাসনব্যবস্থার অন্যতম পূবশর্ত। কিন্তু প্রদেশে দ্বৈত শাসন কার্যকর করার সময় এমন দলব্যবস্থা ছিল না। মন্ত্রীগণ যৌথভাবে নিযুক্ত না হয়ে ব্যক্তিগতভাবে নিযুক্ত হন এবং সরকারি সদস্যদের ওপর নির্ভরশীল থাকতেন। তাছাড়া মন্ত্রিসভার দায়িত্বহীনতা, সংসদীয় ঐতিহ্যের অভাব, বিষয় বণ্টনের ত্রুটি, মন্ত্রিসভা ও কার্যনির্বাহী পরিষদের মধ্যে ক্ষমতার দ্বন্দ্ব, সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ প্রভৃতি কারণে ১৯১৯ সালের আইনটি কার্যত ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। আইনটির মাধ্যমে কেন্দ্রে দায়িত্বশীল সরকার প্রতিষ্ঠা করাও সম্ভব হয়নি। তাই এ আইন ভারতবাসীকে সন্তুষ্ট করতে পারেনি। ভারতের রাজনৈতিক দলগুলো এ আইনকে অসম্পূর্ণ অসমেত্মাষজনক ও নৈরাশ্যজনক বলে ঘোষণা করে এবং প্রত্যাখ্যান করে।
স্বায়ত্তশাসন ও দায়িত্বশীল সরকার প্রতিষ্ঠায় ব্যর্থ হওয়ায় এবং কংগ্রেসের আন্দোলনের ফলে জনগণ শীঘ্রই ১৯১৯ সালের ভারত শাসন আইনের বিরোধিতা শুরু করে। তবে সাংবিধানিক সংস্কারের দিক বিবেচনায় এ আইনকে এক উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি বলা যায়।

HSC পৌরনীতি ও সুশাসন ২য় পত্র (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর অধ্যায় ১ pdf download

৬. প্রশাসনিক সুবিধার্থে 'ক' অঞ্চলটিকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়। অবশ্য এর পিছনে সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক কারণও বিদ্যমান ছিল।
ক. ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস কত সালে গঠিত হয়?
খ. বেঙ্গল প্যাক্ট বলতে কী বোঝায়?
গ. উদ্দীপকের ঘটনাটি ব্রিটিশ ভারতের কোন ঘটনার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উক্ত ঘটনাটি ভারতবর্ষের রাজনীতিকে প্রভাবিত করে? আলোচনা করো।

৬ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস গঠিত হয় ১৮৮৫ সালে।

খ. ব্রিটিশ আমলে বাংলার হিন্দু ও মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠার জন্য সম্পাদিত একটি চুক্তি হলো বেঙ্গল প্যাক্ট।
ব্রিটিশ শাসনের অধীনে বাংলার জনসংখ্যার শতকরা ৬০ ভাগই ছিল মুসলমান। সংখ্যাগরিষ্ঠ হলেও অশিক্ষাসহ বিভিন্ন কারণে তারা হিন্দু সম্প্রদায়ের তুলনায় পিছিয়ে ছিল। অসাম্প্রদায়িক মানসিকতার জন্য খ্যাত নেতা দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ এ বৈষম্য দূর করতে বেঙ্গল প্যাক্ট এর উদ্যোগ গ্রহণ করেন। তার অক্লান্ত প্রচেষ্টায় এ. কে. ফজলুল হক, হোসেন শহীদ সোহ্রাওয়ার্দীসহ বাংলার মুসলিম নেতৃবৃন্দের সাথে ১৯২৩ সালে বেঙ্গল প্যাক্ট সম্পাদিত হয়। অনগ্রসর মুসলিমদের কিছু বাড়তি সুবিধা দিয়ে সরকারি চাকরি ও আইন পরিষদসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বৈষম্য হ্রাস করাই ছিল এর প্রধান লক্ষ্য।

গ. উদ্দীপকের ঘটনাটি ব্রিটিশ ভারতের ঐতিহাসিক বঙ্গভঙ্গের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
ব্রিটিশ ভারতের রাজনৈতিক ইতিহাসে ১৯০৫ সালের বঙ্গভঙ্গ একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা। লর্ড কার্জনের শাসনামলে বঙ্গভঙ্গ সংঘটিত হয়। এ ঘটনার পেছনে যে কারণগুলো নিহিত ছিল, উদ্দীপকের 'ক' অঞ্চলটি ভাগের ক্ষেত্রেও সেগুলো লক্ষণীয়।
উদ্দীপকের 'ক' অঞ্চলটি প্রশাসনিক কারণে ভাগ করা হয়েছিল। তবে এর পেছনে সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক কারণও বিদ্যমান ছিল। বঙ্গভঙ্গের ক্ষেত্রেও তেমনটিই দেখা যায়। ১৯০৫ সালের আগে ব্রিটিশ ভারতে অবিভক্ত বঙ্গই ছিল সবচেয়ে বড় প্রদেশ। এর আয়তন ছিল প্রায় ১ লক্ষ ৮৯ হাজার বর্গমাইল। তাই প্রশাসনিক সুবিধার জন্য বঙ্গভঙ্গ করা হয়। এছাড়া পশ্চিমবঙ্গে অবস্থিত কলকাতা নগরই ছিল ভারতবর্ষের তৎকালীন রাজধানী এবং বাংলা প্রদেশের সব অর্থনৈতিক কর্মকান্ডর কেন্দ্রবিন্দু। এতে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ পূর্ববঙ্গ দিনে দিনে পিছিয়ে পড়েছিল। শিক্ষার অভাবসহ বিভিন্ন কারণে অনগ্রসর পূর্ব বাংলার মুসলিম জনগোষ্ঠীর মধ্যে ছিল চরম হতাশা। তাই উন্নয়ন ও অধিকার প্রশ্নে পূর্ববঙ্গের মুসলমানদের দাবি পূরণ এবং একইসঙ্গে কলকাতাকেন্দ্রিক ব্রিটিশবিরোধী জাতীয়তাবাদী আন্দোলন নস্যাৎ করার জন্য লর্ড কার্জন বঙ্গভঙ্গের সিদ্ধান্ত নেন। অর্থাৎ শুধু প্রশাসনিক কারণই নয়, ১৯০৫ সালে বাংলাকে বিভক্ত করার পেছনে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক কারণও ক্রিয়াশীল ছিল। বঙ্গভঙ্গের উল্লিখিত কারণগুলো উদ্দীপকের 'ক' অঞ্চলের বিভক্তিকরণের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।

ঘ. ব্রিটিশ ভারতের রাজনৈতিক ইতিহাসে উদ্দীপকের উক্ত ঘটনাটি অর্থাৎ ১৯০৫ সালের বঙ্গভঙ্গ সুদূরপ্রসারী প্রভাব বিস্তার করেছিল।
বঙ্গভঙ্গের ফলে বাংলার হিন্দু ও মুসলমানদের মধ্যে সম্পূর্ণ বিপরীত প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। অনগ্রসর মুসলমানরা মনে করেছিল বঙ্গভঙ্গ হয়ে নুতন প্রদেশ হলে শিক্ষাদীক্ষা, কর্মসংস্থান, ব্যবসাবাণিজ্য ইত্যাদি বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাদের উন্নয়ন হবে এবং দীর্ঘদিনের অবহেলা ও বঞ্চনার অবসান ঘটবে। অন্যদিকে হিন্দু সম্প্রদায় বঙ্গভঙ্গের ঘটনাকে বাঙালি জাতির বিকাশমান সংহতি ও চেতনার ওপর আঘাত হিসেবে দেখে। পূর্ব বাংলা ও আসাম নামে নতুন প্রদেশ হওয়ায় পূর্ববঙ্গের ঢাকাকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠান, সরকারি অফিস-আদালত, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ইত্যাদি গড়ে ওঠে। তবে পশ্চিম বাংলার সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু সম্প্রদায়, বিশেষ করে ধনাঢ্য ভূস্বামীরা বঙ্গভঙ্গের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। দুই সম্প্রদায়ের ওপর বঙ্গভঙ্গের এই বিপরীতধর্মী প্রভাবের ফলে সাম্প্রদায়িক চেতনার বিষবৃক্ষ রোপিত হয়। হিন্দুরা বঙ্গভঙ্গ রদের জন্য তীব্র আন্দোলন শুরু করে।
আপাতদৃষ্টিতে, বঙ্গভঙ্গ মুসলিমদের অনুকূলে একটি প্রশাসনিক উদ্যোগ হলেও প্রকৃতপক্ষে এর মাধ্যমে ব্রিটিশদের বড় একটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্য বাস্তবায়িত হয়। বঙ্গভঙ্গ ছিল তাদের 'ভাগ কর ও শাসন কর' নামে পরিচিত কূটকৌশলের অংশ। বাংলা প্রদেশকে ভেঙে দেওয়ার মাধ্যমে ব্রিটিশ সরকার কৌশলে কলকাতাকেন্দ্রিক সর্বভারতীয় জাতীয়তাবাদী আন্দোলন নস্যাৎ করার সুযোগ লাভ করে। এছাড়া এর ফলে বাংলা তথা ভারতের রাজনীতিতে উগ্র হিন্দু জাতীয়তাবাদের বিকাশ ঘটে। অন্যদিকে মুসলমানদের মধ্যেও বিচ্ছিন্নতার বোধ ও কট্টরপন্থার জন্ম হয়। এটি বাংলার দীর্ঘদিনের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ঐতিহ্যকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।
পরিশেষে বলা যায়, বঙ্গভঙ্গ বাংলার রাজনীতিতে সাম্প্রদায়িক বিভক্তি উসকে দেয়। এমনকি বঙ্গভঙ্গ রদের পরেও, রাজনীতি এবং অধিকার আদায়ের প্রশ্নে হিন্দু ও মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে সত্যিকারের কোনো ঐক্য আর গড়ে ওঠেনি।

৭. বিশাল আয়তনে গঠিত অঞ্চলের প্রশাসক ছিলেন জনাব ইসমাঈল। তাঁর একার পক্ষে বিশাল অঞ্চলের উন্নয়ন ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা করা কঠিন হচ্ছিল। এর ফলে কর্তৃপক্ষ বিশাল অঞ্চল 'ক' ও 'খ' অঞ্চলে বিভক্ত করে। এতে 'ক' অঞ্চলের জনগণ খুশি হলেও 'খ' অঞ্চলের জনগণ তীব্র বিরোধিতা করে। ফলে দুই অঞ্চলকে পুনরায় একত্রীকরণ করা হয়।
ক. প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসন কাকে বলে?
খ. মুসলিম লীগ কেন প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল?
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত বিভক্তির সাথে তোমার পাঠ্যবইয়ের কোন ঘটনার মিল আছে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত বিভক্তিকরণ 'ক' অঞ্চলের জনজীবনে যে প্রভাব ফেলেছিল তা বিশ্লেষণ করো।

৭ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়ন্ত্রণমুক্ত থেকে প্রাদেশিক বিষয়গুলোর ওপর প্রাদেশিক সরকারের পূর্ণ কর্তৃত্বকে প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসন বলে।

খ. ভারতীয় মুসলিম সম্প্রদায়কে রাজনৈতিক বিষয়ে ঐক্যবদ্ধ ও সচেতন করে গড়ে তোলা এবং তাদের দাবি-দাওয়া আদায়ের লক্ষ্যে মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল।
ব্রিটিশ শাসনের শুরু থেকেই ভারতের মুসলিম সম্প্রদায় সর্বদিক হতে অবহেলিত ও বঞ্চিত হতে থাকে। ১৮৮৫ সালে সর্বভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস গঠিত হলেও এটি অবহেলিত ও বঞ্চিত মুসলমানদের দাবি-দাওয়া আদায় করতে ব্যর্থ হয়। মুসলমানদের এ অবহেলিত ও হীন অবস্থা হতে উদ্ধারকল্পে একটি রাজনৈতিক সংগঠনের বিশেষ প্রয়োজন অনুভূত হয়। এ অনুভূতির সার্থক বাস্তবায়নের লক্ষ্যে মুসলিম স্বার্থ সংরক্ষণের ধারক ও বাহক হিসেবে ১৯০৬ সালে মুসলিম লীগের জন্ম হয়।

গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত বিভক্তির সাথে আমার পাঠ্যবইয়ের ১৯০৫ সালের বঙ্গভঙ্গের মিল রয়েছে।
১৯০৫ সালের পূর্বে ব্রিটিশ ভারতে বঙ্গ প্রদেশেই ছিল আয়তনে এবং জনসংখ্যায় সর্বাপেক্ষা বৃহৎ। এর আয়তন ছিল ১ লক্ষ ৮৯ হাজার বর্গমাইল, এবং লোক সংখ্যা ছিল প্রায় ৭ কোটি ৮০ লক্ষ। একজন গভর্নরের পক্ষে এত বড় প্রদেশ শাসন করা ছিল খুবই কষ্টকর। তাই এ প্রদেশকে ভেঙে দুটি অঞ্চলে বিভক্ত করা হয়, যা উদ্দীপকেও লক্ষণীয়।
উদ্দীপকে দেখা যায়, জনাব ইসমাইল তার অধীনে বিশাল অঞ্চলের উন্নয়ন ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার্থে অঞ্চলটিকে 'ক' ও 'খ' অঞ্চলে বিভক্ত করে। এতে 'ক' অঞ্চলের জনগণ খুশি হলেও 'খ' অঞ্চলের জনগণ তীব্র বিরোধিতা করে। এ ঘটনা মূলত বঙ্গভঙ্গকেই নির্দেশ করে। বৃহৎ আয়তন ও বিশাল জনসংখ্যার বঙ্গ প্রদেশকে একজন ব্রিটিশ শাসকের পক্ষে শাসন করা দূরহ ছিল। তাই ১৯০৫ সালে লর্ড কার্জনের বঙ্গভঙ্গ পরিকল্পনা অনুযায়ী 'পূর্ব বাংলা ও আসাম নামে একটি প্রদেশ এবং পশ্চিম বাংলা' নামে অন্য একটি প্রদেশ গঠিত হয়। বঙ্গ প্রদেশকে দুই প্রদেশে বিভক্ত করার কারণে মুসলমানরা খুশি হলেও ভারতীয় কংগ্রেসের হিন্দু নেতৃবৃন্দ অনেক অসন্তুষ্ট হয়। বঙ্গভঙ্গকে রদ করার জন্য হিন্দুরা আন্দোলন শুরু করে। এর এক পর্যায়ে ব্রিটিশ সরকার ১৯১১ সালে বঙ্গভঙ্গ রদ করে। আর উদ্দীপকেও এ ঘটনারই প্রতিফলন ঘটেছে।

ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত বিভক্তিকরণ অর্থাৎ বঙ্গভঙ্গ 'ক' অঞ্চলের তথা পূর্ব বাংলার জনজীবনে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছিল।
উদ্দীপকের বিশাল অঞ্চলের বিভক্তিকরণ ব্রিটিশ ভারতের বঙ্গভঙ্গকে নির্দেশ করে। আর 'ক' অঞ্চল দিয়ে পূর্ব বাংলাকে বোঝানো হয়েছে। বঙ্গভঙ্গের ফলে পূর্ব বাংলার জনজীবনে যে প্রভাব পড়েছিল উদ্দীপকের 'ক' অঞ্চলের জনগণের জীবনেও একই ধরনের প্রভাব পড়বে।
পূর্ব বাংলার জনগণের নিকট বঙ্গভঙ্গ ছিল অত্যন্ত তাৎপর্যবহ। এর ফলে পূর্ব বাংলা ও আসাম প্রদেশের মুসলিম সমাজের রাজনীতিতে প্রাণচাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়। নতুন প্রদেশের প্রশাসনের প্রতিটি শাখায় নতুন প্রাণশক্তি ও উদ্দীপনা দেখা যায়। বাংলা প্রদেশ বিভক্ত হওয়ার ফলে ঢাকা পূর্ববঙ্গের প্রশাসনিক কেন্দ্রে পরিণত হয়। বঙ্গভঙ্গের অব্যবহিত পরেই ঢাকায় নতুন নতুন সুরম্য অট্রালিকা, হাইকোর্ট, সেক্রেটেরিয়েট, আইন পরিষদ ভবন, কার্জন হল প্রভৃতি নির্মিত হতে থাকে। শিক্ষা ও সংস্কৃতির ক্ষেত্রে মুসলমানদের ব্যাপক উন্নতি সাধিত হয়। মুসলমানদের ব্যবসা- বাণিজ্যেও অগ্রগতি অর্জিত হয়। এছাড়া ঢাকা নগরের পুনর্জন্ম ও চট্টগ্রাম বন্দরের উন্নতি ত্বরান্বিত হয়। পূর্ব বাংলায় রেল লাইনসহ যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি সাধিত হয়। লর্ড কার্জন স্বয়ং আশা প্রকাশ করেন, নতুন প্রদেশ উন্নত কৃষ্টি ও ঐতিহ্য বলে বলীয়ান হয়ে পূর্ববঙ্গ শাসনব্যবস্থায় যোগ্য ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে।
সার্বিক আলোচনার প্রেক্ষিতে প্রতীয়মান হয় যে, বঙ্গভঙ্গের ফলে পূর্ববঙ্গের জনজীবনে ইতিবাচক প্রভাব পড়েছিল। অনুরূপভাবে উদ্দীপকে উল্লিখিত বিভক্তিকরণও 'ক' অঞ্চলের জনজীবনের ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছিল।

৮. উপমহাদেশের শাসনের এক পর্যায়ে ব্রিটিশরা ভারত শাসন আইন নামে একটি আইন তৈরি করে। উক্ত আইনে সর্বপ্রথম ভারতের প্রদেশগুলোতে স্বায়ত্তশাসনের কথা বলা হয়। এই আইনে সর্বভারতীয় যুক্তরাষ্ট্র ও দুটি নতুন প্রদেশ গঠন করা হয়। এই আইনের ধারাবাহিকতায় এক সময় ভারত ও পাকিস্তান স্বাধীন হয়।
ক. দ্বৈতশাসন কাকে বলে?
খ. কেন ব্রিটিশ সরকার 'ভাগ কর ও শাসন কর' নীতি গ্রহণ করেছিল?
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত আইনের সাথে তোমার পাঠ্যবইয়ের কোন আইনের সাদৃশ্য আছে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. এই আইনের ধারাবাহিকতায় ভারত ও পাকিস্তান স্বাধীন হয় বিশ্লেষণ করো।

৮ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. ১৭৬৫ সালে বাংলা শাসনের জন্য ক্ষমতা ও দায়িত্ব ভাগাভাগি করে রবার্ট ক্লাইভ যে অভিনব শাসন পদ্ধতি প্রবর্তন করেন তাকে দ্বৈতশাসন বলে।

খ. ভারত উপমহাদেশে বসবাসরত প্রধান দুটি সম্প্রদায় হিন্দু ও মুসলমানদের মধ্যে দ্বন্দ্ব তৈরি করে নিজেদের অবস্থান পাকাপোক্ত করার জন্যই ব্রিটিশরা 'ভাগ কর ও শাসন কর' নীতি গ্রহণ করেছিল।
ব্রিটিশরা ১৯০ বছর ভারতবর্ষ শাসন করে। এ দীর্ঘ সময় তারা এ উপমহাদেশে নানা শোষণ, অত্যাচার-নির্যাতন চালিয়েছে। তাদের শাসননীতির উল্লেখযোগ্য দিক ছিল হিন্দু-মুসলমানদের মধ্যে নানা দ্বন্দ্ব-সংঘাত সৃষ্টি করে নিজেদের শাসনকাল দীর্ঘস্থায়ী করা। ১৯০৫ সালে লর্ড কার্জনের গৃহীত বঙ্গভঙ্গ এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ।

গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত আইনের সাথে ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইনের সাদৃশ্য রয়েছে।
ব্রিটিশ ভারতের রাজনৈতিক ও শাসনতান্ত্রিক অগ্রগতির ইতিহাসে ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইন একটি গুরুত্বপূর্ণ দলিল। প্রদেশগুলোকে স্বায়ত্তশাসন দেওয়া, সর্বভারতীয় যুক্তরাষ্ট্র গঠন এবং নতুন প্রদেশ গঠন করার মাধ্যমে এ আইন ভারতীয়দের মধ্যে জাতীয়তাবাদী চেতনার উন্মেষ ঘটিয়েছে।
উদ্দীপকে ব্রিটিশ সরকারের গৃহীত একটি আইনের কথা বলা হয়েছে। যেখানে প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসন, সর্বভারতীয় যুক্তরাষ্ট্র গঠন, দুটি আলাদা প্রদেশ সৃষ্টির কথা বলা হয়েছে। এগুলো ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইনের প্রধান বৈশিষ্ট্য। ব্রিটিশ ভারতের প্রদেশগুলোতে পূর্ণ- স্বায়ত্তশাসনের দাবির প্রেক্ষিতে ১৯৩৫ সালে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে এ আইন গৃহীত হয়। এ আইনে একটি সর্বভারতীয় যুক্তরাষ্ট্র গঠনের জন্য ব্রিটিশ ভারতের সকল প্রদেশ ও ফেডারেশনে যোগদানে ইচ্ছুক দেশীয় রাজ্যগুলোকে নিয়ে একটি যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার গঠনের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। তাছাড়া সংবিধান অনুযায়ী প্রাদেশিক তালিকাভুক্ত বিষয়গুলোর ওপর প্রাদেশিক সরকারেরই পূর্ণ কর্তৃত্ব থাকবে বলে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। আবার এ আইনে ব্রহ্মদেশকে (বার্মা) পৃথক করে উড়িষ্যা ও সিন্ধু নামে দুটি আলাদা(নতুন) প্রদেশ সৃষ্টি করা হয়। সুতরাং দেখা যাচ্ছে, উদ্দীপকে বর্ণিত আইনটিতে ১৯৩৫ সালে ভারত শাসন আইনের উল্লিখিত বৈশিষ্ট্যগুলোই প্রতিফলিত হয়েছে।

ঘ. উদ্দীপকে ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইনের ফলাফল সম্পর্কে মন্তব্য করা হয়েছে। মন্তব্যটি যথার্থ।
১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইনের প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসনের বিষয়টি ভারতীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও সচেতন জনগণের মধ্যে জাতীয়তাবাদী চেতনার উন্মেষ ঘটায়। ফলে তারা আলাদা রাষ্ট্র গঠনের উদ্যোগ নেয়। এ বৈশিষ্ট্যের সূত্র ধরেই ১৯৩৭ সালে প্রাদেশিক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ নির্বাচনের ফলাফল প্রমাণ করে হিন্দু-মুসলিম উভয়ই আলাদা জাতি, আর এ নীতি পাকিস্তান-ভারত নামক আলাদা রাষ্ট্র গঠনের পথ তৈরি করে দেয়।
১৯৩৭ সালের প্রাদেশিক নির্বাচনে কংগ্রেস সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করলে তারা হিন্দু অধ্যুষিত প্রদেশগুলোতে মন্ত্রিসভা গঠন করে। কংগ্রেসের আচরণ মুসলিম লীগের নেতৃবৃন্দের মধ্যে হতাশা সৃষ্টি করে। এরূপ পরিস্থিতিতে ১৯৪০ সালের ২৩ মার্চ লাহোরে সর্বভারতীয় মুসলিম লীগের অধিবেশনে ঐতিহাসিক লাহোর প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়। জিন্নাহর দ্বিজাতি তত্ত্বের (হিন্দু-মুসলিম আলাদাজাতি) ভিত্তিতে এ প্রস্তাব গৃহীত হয়। এ প্রস্তাবে সুস্পষ্টভাবে মুসলমানদের জন্য আলাদা রাষ্ট্র গঠনের দাবি তোলা হয়। এ প্রেক্ষিতে ১৯৪৬ সালে প্রাদেশিক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ নির্বাচনে হিন্দু ও মুসলিম অধ্যুষিত প্রদেশগুলোতে উভয়সম্প্রদায় আলাদাভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। ১৯৪৬ সালে মন্ত্রিমিশন পরিকল্পনার মাধ্যমে হিন্দু-মুসলিম ঐক্য প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করা হলেও তা ব্যর্থ হয়। তাছাড়া মন্ত্রিমিশন পরিকল্পনায় পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার দাবি সরাসরি প্রত্যাখ্যান করায় মুসলমানদের আশা-আকাঙ্ক্ষা ভেসেত্ম যায়। তারপরও তারা পরিকল্পনার প্রতি নমনীয় থেকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে যোগদানের ইচ্ছা পোষণ করে। কিন্তু কংগ্রেস মন্ত্রিমিশন পরিকল্পনায় তাদের স্বার্থগত বিষয়গুলোকে সমর্থন দেয়। এরূপ পরিস্থিতিতে কংগ্রেস ও মুসলিম লীগের মধ্যে নানা বিরোধ, দ্বন্দ্ব- সংঘাত মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। বিভিন্ন বিষয়ে মতানৈক্য দেখা দেওয়ায় শাসনব্যবস্থায় অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়। ইতোমধ্যে হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা চরম আকার ধারণ করলে তা দেশব্যাপী গৃহযুদ্ধে রূপ নেয়। ভারতের প্রধান দুটি রাজনৈতিক দলের পরস্পর বিরোধী ভূমিকার কারণে ১৯৪৭সালে ব্রিটিশ সরকার ভারত স্বাধীনতা আইন প্রণয়নে বাধ্য হয়। ফলে জন্ম নেয় ভারত-পাকিস্তান নামক দুটি আলাদা রাষ্ট্র।
পরিশেষে বলা যায়, ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইনে উল্লিখিত প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসনের বিষয়টি ক্রমান্বয়ে স্বাধীনতার দাবিতে রূপ লাভ করে। ফলে নানা ধারাবাহিক ঘটনার প্রেক্ষিতে জন্ম নেয় দুটি স্বাধীন রাষ্ট্র।

৯. দক্ষিণ আফ্রিকা এমন একটি দেশ যেখানে বিদেশি শাসক দীর্ঘদিন শাসন করেছে। নেলসন ম্যান্ডেলার নেতৃত্বে সেখানকার কৃষ্ণাঙ্গ জনগণ স্বাধীনতার জন্য দীর্ঘকাল সংগ্রাম করে। অবশেষে দক্ষিণ আফ্রিকা স্বাধীনতা লাভ করেছে।
ক. কত সালে সর্বভারতীয় মুসলিম লীগ গঠন করা হয়েছিল? 
খ. ১৯৩৫ সালে প্রবর্তিত ভারতীয় প্রাদেশিক শাসন কীরূপ ছিল?
গ. উদ্দীপকের ঘটনাটির সাথে তোমার পঠিত কোন ঘটনার সাদৃশ্য আছে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. ভারতবর্ষের রাজনীতির প্রেক্ষাপটে উক্ত ঘটনার পরিণতি বিশ্লেষণ করো।

৯ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. ১৯০৬ সালে সর্বভারতীয় মুসলিম লীগ গঠন করা হয়েছিল।

খ. ১৯৩৫ সালে প্রবর্তিত ভারত শাসন আইনে ভারতের প্রদেশগুলোতে স্বায়ত্তশাসন প্রবর্তন করা হয়। এতে বলা হয়, কেন্দ্রের নিয়ন্ত্রণমুক্ত হয়ে প্রদেশগুলো তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করবে। দায়িত্বশীলরা তাদের কাজের জন্য প্রাদেশিক আইনসভার নিকট দায়ী থাকবে। কেন্দ্রীয় সরকার এবং এর অনুগত প্রাদেশিক গভর্নর প্রদেশে কোনো হস্তক্ষেপ করতে পারবে না। তাই বলা যায় যে, ১৯৩৫ সালে প্রবর্তিত ভারতীয় প্রাদেশিক শাসন ছিল অনেকটা নামমাত্র ও অর্থহীন।

গ. উদ্দীপকের ঘটনাটির সাথে আমার পঠিত ভারতবর্ষের স্বাধীনতা আন্দোলনের সাদৃশ্য রয়েছে।
ভারতবর্ষ দীর্ঘদিন বিদেশি অর্থাৎ ব্রিটিশ শাসনের অধীনে ছিল। কিন্তু ভারতবর্ষের মানুষ নিরবে এ পরাধীনতাকে মেনে নেয়নি। দীর্ঘদিন সংগ্রাম চালিয়ে একসময় তারা স্বাধীনতা অর্জন করে। 
১৭৫৭ সালে পলাশীর যুদ্ধে পরাজয়ের মাধ্যমে ভারতবর্ষের মানুষ তাদের স্বাধীনতা হারায়। ব্রিটিশ ইস্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানি নানা কৌশল ও বল প্রয়োগের মাধ্যমে এ উপমহাদেশে তাদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করে। তারা কালক্রমে পুরো ভারতবর্ষের শাসনব্যবস্থাকে কুক্ষিগত করে। এ অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে ভারতবর্ষের জনসাধারণ বিভিন্ন আন্দোলন- সংগ্রাম শুরু করে। ১৮৫৭ সালের সিপাহি বিদ্রোহ ছিল ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রথম মাইলফলক। ধীরে ধীরে ভারতবর্ষে পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রেণির বিকাশ ঘটে এবং তারা স্বাধীনতার দাবিতে সংগঠিত হতে থাকে। উপমহাদেশের দীর্ঘ স্বাধীনতা আন্দোলনে মহাত্মা গান্ধী, জওহরলাল নেহেরু, মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ, শেরে বাংলা এ. কে. ফজলুল হক প্রমুখ রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ভূমিকা পালন করেন। তাদের আন্দোলনের মুখে ব্রিটিশ সরকার ১৯৪৭ সালে ভারতীয়দের স্বাধীনতা প্রদান করে। উদ্দীপকেও আমরা দেখতে পাই, দক্ষিণ আফ্রিকায় দীর্ঘদিন বিদেশি শাসন কার্যকর ছিল। নেলসন ম্যান্ডেলার নেতৃত্বে সেখানকার কৃষ্ণাঙ্গ জনগণ দীর্ঘ সংগ্রামের পর নায্য অধিকার লাভ করে।
সুতরাং বলা যায়, উদ্দীপকের ঘটনাটি ভারতবর্ষের স্বাধীনতা আন্দোলনের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।

ঘ. ভারতবর্ষের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে উক্ত ঘটনা অর্থাৎ ভারতবর্ষের স্বাধীনতার পরিণতি ছিল অত্যন্ত সুদূরপ্রসারী।
দীর্ঘ আন্দোলনের পর ১৯৪৭ সালে ধর্মের ভিত্তিতে ভারত ও পাকিস্তান নামে দুটি স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্ম হয়। সাধারণত মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ অঙ্গরাজ্যগুলো পাকিস্তানের এবং হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ অঙ্গরাজ্যগুলো ভারতের অন্তর্ভুক্ত হয়। এতে করে দুটি রাষ্ট্র নানান সমস্যার সম্মুখীন হয়। পাকিস্তান অংশে বিভক্ত হয়ে একটি পূর্ব পাকিস্তান, অন্যটি পশ্চিম পাকিস্তান নামে আত্মপ্রকাশ করে। কিন্তু পূর্ব পাকিস্তান পশ্চিম পাকিস্তানের দ্বারা নানাভাবে বিশেষ করে অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে নিগৃহীত ও শোষিত হতে থাকে।
১৯৪০ সালে শেরে বাংলা এ. কে. ফজলুল হকের লাহোর প্রস্তাবের ভিত্তিতে ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান রাষ্ট্রের জন্ম হয়। এর মূল প্রস্তাবই ছিল প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসন। কিন্তু পাকিস্তান সৃষ্টির পর থেকেই মুসলিম লীগ প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার বিষয়টি এড়িয়ে যায় এবং ব্যাপক সামরিক, রাজনৈতিক, প্রশাসনিক ও অর্থনৈতিক বৈষম্য সৃষ্টি করে। এভাবে লাহোর প্রস্তাবকে এড়িয়ে যাওয়া এবং ভারতের পূর্বাঞ্চলের মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ এলাকার জন্য স্বতন্ত্র ও স্বাধীন রাষ্ট্র গঠনের ব্যবস্থা না করায় এ অঞ্চলের মানুষের জন্য ব্রিটিশদের কাছ থেকে স্বাধীনতা মূলত সমস্যা সৃষ্টি করেছিল, সমাধান দিতে পারেনি। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস এর উজ্জ্বল প্রমাণ। ১৯৪৭ সালের ভারতবর্ষের স্বাধীনতা বিনা রক্তপাতে সম্ভব হলেও বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জিত হয় এক সাগর রক্তের বিনিময়ে। যদিও পাকিস্তান সৃষ্টির সময়ই বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের প্রচ্ছন্ন স্বীকৃতি ছিল, তথাপি অনেকেই মনে করেন, ভারতবর্ষের স্বাধীনতা তথা পাকিস্তানের অভ্যুদয়ের মধ্যেই স্বাধীন বাংলাদেশের বীজ নিহিত।
পরিশেষে বলা যায় যে, ভারতবর্ষের স্বাধীনতার পরিণতিই হলো আজকের বাংলাদেশ। দীর্ঘ নয় মাস সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাঙালি জাতি স্বাধীনতা লাভ করে।

১০. বিশ্বের বৃহৎ মুসলিম রাষ্ট্র ইন্দোনেশিয়া ছিল ডাচ উপনিবেশ। এই ঔপনিবেশিক শাসন থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য এবং নিজেদের দাবি- দাওয়া আদায়ের জন্য ইন্দোনেশিয়ার জনগণ সকল জাতি-গোষ্ঠীর সমন্বয়ে একটি রাজনৈতিক দল গঠন করে। কিন্তু দলটি প্রতিষ্ঠিত হয়ে একপেশে নীতি বিশেষ করে খ্রিষ্টানদের বঞ্চিত করার নীতি গ্রহণ করে। ফলে ইন্দোনেশিয়ার পূর্ব তিমুরের খ্রিষ্টানরা পৃথক একটি রাজনৈতিক দল গঠন করে। কেননা তারা মনে করে প্রথম রাজনৈতিক দলটি দ্বারা তাদের দাবি-দাওয়া পূরণ সম্ভব হবে না। 
ক. বঙ্গভঙ্গের সমর্থনে মুসলমানদের সংগঠিত করেন কে?
খ. জিন্নাহর দ্বি-জাতি তত্ত্ব সম্পর্কে তুমি কী জান ?
গ. উদ্দীপকে খ্রিষ্টানদের রাজনৈতিক দল গঠনের সাথে ব্রিটিশ ভারতের কোন রাজনৈতিক দল গঠনের সাদৃশ্য রয়েছে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. পাকিস্তান রাষ্ট্র সৃষ্টিতে উক্ত রাজনৈতিক দলের ভূমিকা আলোচনা করো।

১০ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. বঙ্গভঙ্গের সমর্থনে মুসলমানদের সংগঠিত করেন নবাব স্যার সলিমুল্লাহ।

খ. মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ কর্তৃক প্রবর্তিত দ্বি-জাতি তত্ত্ব হলো ব্রিটিশ ভারতকে রাজনৈতিকভাবে বিভক্ত করার নির্ণায়ক ও আদর্শাশ্রয়ী একটি রাজনৈতিক মতবাদ।
১৯৪০ সালে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ দ্বি-জাতি তত্ত্বটি প্রদান করেন। তিনি ধর্মের ভিত্তিতে ভারতীয় উপমহাদেশকে দুই ভাগে বিভক্ত করার কথা বলেন। তিনি বলেন, হিন্দু ও মুসলিম দুইটি আলাদা জাতি। তাদের সভ্যতা-সংস্কৃতি সম্পূর্ণ আলাদা। অতএব, তারা কখনো এক হতে পারে না। সুতরাং, দুটি জাতিকে আলাদা করে মুসলমানদের আলাদা জাতি হিসেবে স্বীকৃতি দিতে হবে। তার এ ঘোষণাটি ব্রিটিশ ভারতের ইতিহাসে ‘দ্বি-জাতি তত্ত্ব' নামে খ্যাত।

গ. উদ্দীপকে বর্ণিত খ্রিষ্টানদের রাজনৈতিক দল গঠনের সাথে ব্রিটিশ ভারতের মুসলিম লীগ দল গঠনের সাদৃশ্য রয়েছে।
উদ্দীপকে দেখা যায় যে, ডাচ শাসন থেকে মুক্তি পেতে ইন্দোনেশিয়ার সমগ্র জাতিগোষ্ঠীর সমন্বয়ে একটি রাজনৈতিক দল গঠন করা হয়। কিন্তু দলটি পূর্ব তিমুরের সংখ্যালঘু খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের স্বার্থের ব্যাপারে ছিল উদাসীন। ফলশ্রুতিতে পূর্ব তিমুরের খ্রিষ্টানরা তাদের স্বার্থ আদায়ে একটি পৃথক রাজনৈতিক দল গঠন করতে বাধ্য হয়। ব্রিটিশ ভারতের মুসলিম লীগ গঠনের ক্ষেত্রেও একই পরিস্থিতি লক্ষ করা যায়।
১৮৮৫ সালে কংগ্রেস প্রতিষ্ঠিত হলে তারা ভারতবাসীর আর্থ-সামাজিক, রাজনৈতিক এবং প্রশাসনিক বিভিন্ন দাবি-দাওয়া ব্রিটিশ সরকারের নিকট তুলে ধরে। ফলে অল্প সময়ের মধ্যেই দলটি সমগ্র ভারতবাসীর সমর্থন লাভে সচেষ্ট হয়। কিন্তু ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গ হলে কংগ্রেসের অধিকাংশ হিন্দু নেতা এ নীতির তীব্র বিরোধিতা করে এবং বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলন গড়ে তোলে। ফলে শুরু হয় হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা-হাঙ্গামা। হিন্দু সম্প্রদায়ের এমন আক্রমণাত্মক আচরণে মুসলমানরা বুঝতে পারে কংগ্রেস মুসলিম স্বার্থের অনকূল কোনো দল নয়। এমতাবস্থায় অনগ্রসর ও অবহেলিত মুসলমানদের এগিয়ে নেওয়ার জন্য প্রগতিশীল নেতৃস্থানীয় মুসলমানরা একটি রাজনৈতিক সংগঠনের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন।
এরই ধারাবাহিকতায় ১৯০৬ সালে মুসলিম লীগের আত্মপ্রকাশ ঘটে। তাই বলা যায় যে, উদ্দীপকের খ্রিষ্টানদের রাজনৈতিক দল গঠনের উদ্দেশ্য ও মুসলিম লীগ গঠনের প্রেক্ষাপট অভিন্ন।

ঘ. পাকিস্তান রাষ্ট্র সৃষ্টিতে উক্ত রাজনৈতিক দল তথা মুসলিম লীগের অবদান অসামান্য।
মুসলমানদের রাজনৈতিক সংগঠন হিসেবে মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে উপমহাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে দলটি বিশেষ ভূমিকা পালন করে। মুসলমানদের ন্যায্য অধিকার আদায় ও স্বার্থ সংরক্ষণের লক্ষ্যে দলটি বিভিন্ন কার্যক্রম চালিয়ে যেতে সচেষ্ট হয়। পরবর্তীকালে ১৯০৯ সালে মর্লে-মিন্টো সংস্কার আইন, ১৯১৬ সালের লক্ষ্ণৌ চুক্তি, ১৯৪০ সালের লাহোর অধিবেশনে দলটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ১৯৪০ সালে দলটি ভারতবর্ষের সংকট সমাধানে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব পেশ করে। এই লাহোর প্রস্তাবের ভিত্তি ছিল জিন্নাহর দ্বি-জাতি তত্ত্ব। এ দ্বি-জাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে মুসলমানরা তাদের পৃথক আবাসভূমির প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে। ১৯৪২ সালের ক্রিপস মিশন, ১৯৪৬ সালের মন্ত্রিমিশন পরিকল্পনা এবং সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার পরিপ্রেক্ষিতে ব্রিটিশ সরকার জিন্নাহর দ্বি-জাতি তত্ত্বের কিছুটা পরিবর্তন সাপেক্ষে পাকিস্তান নামক রাষ্ট্র সৃষ্টির পদক্ষেপ গ্রহণ করে। পরবর্তীকালে ১৯৪৭ সালে ভারত শাসন আইনের মাধ্যমে পাকিস্তান ও ভারত নামের দুটি আলাদা রাষ্ট্র জন্মলাভ করে।
উপর্যুক্ত আলোচনায় এ কথাই প্রমাণিত হয় যে, উপমহাদেশের রাজনৈতিক উন্নয়ন তথা পাকিস্তান রাষ্ট্র সৃষ্টিতে মুসলিম লীগের ভূমিকা বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ।

Share: