HSC Logic 2nd Paper Srijonshil question and answer pdf download.
উচ্চ মাধ্যমিক
যুক্তিবিদ্যা
দ্বিতীয় পত্র
সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
৭ম অধ্যায়
HSC Logic 2nd Paper
Srijonshil
Question and Answer pdf download
১. ৬ষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী মুক্তা তার জন্মদিনের উপহারগুলো রঙের ভিত্তিতে সুন্দরভাবে আলাদা আলাদা করে তাকে সাজিয়ে রেখেছে। অপরদিকে, অর্পিতা একটি ফুলের বাগান করেছে। যেখানে সে গন্ধযুক্ত ফুল একদিকে আর গন্ধবিহীন ফুল অন্যদিকে লাগিয়েছে।
ক. শ্রেণিকরণ কী?
খ. পরিবর্তনশীল বস্তুর শ্রেণিকরণ করা যায় না কেন?
গ. উদ্দীপকে মুক্তার শ্রেণিকরণ কোন ধরনের শ্রেণিকরণ? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকে অর্পিতার শ্রেণিকরণ মুক্তার শ্রেণিকরণ থেকে কি ভিন্ন? পাঠ্যবিষয়ের আলোকে বিশ্লেষণ করো।
১ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. বিশেষ উদ্দেশ্যে কোনো বস্তুসমূহ বা ঘটনাবলির মধ্যে সাদৃশ্যের আলোকে তাদের একত্রে সন্নিবেশ করার মানসিক প্রক্রিয়াই হলো শ্রেণিকরণ।
খ. পরিবর্তনশীল বস্তুর গুণ অস্থায়ী বলে তার শ্রেণিকরণ করা যায় না।
সাধারণত কোনো বস্তু বা ঘটনাসমূহের শ্রেণিকরণ করার সময় স্থায়ী ও আবশ্যিক গুণ বিবেচনা করা হয়। কিন্তু যেসব বস্তুর গুণ নিয়ত পরিবর্তনশীল এবং এক বস্তুর গুণ অন্য বস্তুর মধ্যে নিহিত থাকে তাদের শ্রেণিকরণ করা যায় না।
গ. উদ্দীপকে মুক্তার শ্রেণিকরণ হলো কৃত্রিম শ্রেণিকরণ।
যে শ্রেণিকরণে কোনো বিশেষ উদ্দেশ্য সাধনের জন্য অনাবশ্যক ও বাহ্যিক সাদৃশ্যের ভিত্তিতে বস্তু বা ঘটনাসমূহের বিন্যাস করা হয়, তাকে কৃত্রিম শ্রেণিকরণ বলে। অর্থাৎ কৃত্রিম শ্রেণিকরণের মাধ্যমে ব্যক্তি তার বিশেষ উদ্দেশ্য পূরণ করে থাকে। যেমন- একজন গ্রন্থাগারিক তার পাঠাগারে বিষয়বস্তুর ভিত্তিতে বিভিন্ন বই সাজিয়ে রাখেন। পাঠকরা যেন সহজেই অল্প সময়ের মধ্যে প্রয়োজনীয় বইটি খুঁজে পান, সেজন্যই তা করা হয়। গ্রন্থাগারিকের বই বিশেষভাবে সাজিয়ে রাখার এই প্রক্রিয়া কৃত্রিম শ্রেণিকরণের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।
উদ্দীপকের মুক্তা তার জন্মদিনের উপহারগুলো রঙের ভিত্তিতে সুন্দরভাবে আলাদা আলাদা করে তাকে সাজিয়ে রাখে। সে তার বিশেষ কোনো উদ্দেশ্য সাধনের জন্য এ কাজটি করেছে। সুতরাং মুক্তার কাজটি হলো কৃত্রিম শ্রেণিকরণ।
ঘ. উদ্দীপকে অর্পিতার শ্রেণিকরণ মুক্তার শ্রেণিকরণ থেকে ভিন্ন। কারণ অর্পিতার শ্রেণিকরণ প্রাকৃতিক হলেও মুক্তারটি কৃত্রিম শ্রেণিকরণ। নিচে উভয় শ্রেণিকরণের মধ্যকার পার্থক্য বিশ্লেষণ করা হলো-
ফলে প্রাকৃতিক শ্রেণিকরণ মৌলিক বা গুরুত্বপূর্ণ সাদৃশ্যের ওপর নির্ভরশীল। এ শ্রেণিকরণের সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্যগুলো প্রকৃতিতে বিদ্যমান থাকে। প্রাকৃতিক শ্রেণিকরণের সময় বস্তুসমূহের অপরিহার্য বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হয়। এ কারণে যুক্তিবিদরা প্রাকৃতিক শ্রেণিকরণকে বিজ্ঞানসম্মত প্রক্রিয়া বলে মনে করেন। অর্পিতার কাজে এরকম শ্রেণিকরণের দৃষ্টান্তই পরিলক্ষিত হয়। কারণ সে গন্ধযুক্ত ফুল একদিকে আর গন্ধবিহীন ফুল অন্যদিকে লাগিয়েছে। অর্থাৎ সে ফুলের মৌলিক সাদৃশ্যের ভিত্তিতে এ কাজটি করেছে। তাই তার কাজটি প্রাকৃতিক শ্রেণিকরণের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।
অন্যদিকে, কৃত্রিম শ্রেণিকরণ অবান্তর এবং বাহ্যিক সাদৃশ্যের ওপর নির্ভরশীল। এ শ্রেণিকরণে সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্যগুলো প্রকৃতি প্রদত্ত নয়, বরং মানুষের নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গির প্রকাশ মাত্র। এ কারণে কৃত্রিম শ্রেণিকরণের দৃষ্টান্ত ব্যক্তিভেদে ভিন্ন হয়। কৃত্রিম শ্রেণিকরণের মাধ্যমে আমাদের ব্যবহারিক প্রয়োজন সাধিত হয় বলে একে ব্যবহারিক শ্রেণিকরণও বলা হয়। মুক্তার কাজ এরূপ শ্রেণিকরণের দৃষ্টান্ত। এ কারণে মুক্তার শ্রেণিকরণ অর্পিতার শ্রেণিকরণ থেকে আলাদা।
পরিশেষে বলা যায়, প্রাকৃতিক ও কৃত্রিম শ্রেণিকরণের মধ্যে লৌহ প্রাচীর নির্মাণ করা সম্ভব নয়। কারণ উভয় শ্রেণিকরণের প্রকৃতি একই। বস্তুত, উভয়ের মধ্যে পার্থক্য শুধু উদ্দেশ্যগত। উদ্দীপকের অর্পিতা ও মুক্তার কাজের দিকে ভালো করে নজর দিলেই তা বোঝা যায়।
২. দৃশ্যকল্প-১: রাশেদের মা বলল, 'তুমি পড়ার টেবিলের প্রথম তাকে পাঠ্যবই, দ্বিতীয় তাকে গল্পের বই, তৃতীয় তাকে খাতা-কলম সাজিয়ে রাখবে।'
দৃশ্যকল্প-২: শফিক বললো, ‘প্রাণিজগৎ, উদ্ভিদজগৎ ও অন্যান্য বস্তুরাজিকে প্রকৃতি তার নিজস্ব নিয়মে বিন্যস্ত করে রেখেছে।'
ক. শ্রেণিকরণের প্রধান ভিত্তি কী ?
খ. ক্রমিক শ্রেণিকরণ বলতে কী বোঝ?
গ. দৃশ্যকল্প-১ এ কোন শ্রেণিকরণকে নির্দেশ করছে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. দৃশ্যকল্প-১ এবং দৃশ্যকল্প-২ এর দ্বারা নির্দেশিত শ্রেণিকরণের মধ্যে পার্থক্য দেখাও।
২ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. শ্রেণিকরণের প্রধান ভিত্তি হলো উপাত্তের বৈশিষ্ট্যগত পার্থক্য।
খ. গুণের মাত্রার ভিত্তিতে কোনো বস্তু বা ঘটনাবলির শ্রেণিকরণ প্রক্রিয়াকে বলে ক্রমিক শ্রেণিকরণ।
ক্রমিক শ্রেণিকরণে বিভক্ত শ্রেণির মধ্যে একই গুণ ভিন্ন ভিন্ন মাত্রায় বিদ্যমান থাকে। যেমন- মানুষ, অন্যান্য প্রাণী ও উদ্ভিদ সবার মধ্যেই জীবন আছে। কিন্তু মানুষের মধ্যে জীবনের প্রকাশ সবচেয়ে বেশি, অন্যান্য প্রাণীতে জীবনের প্রকাশ কিছুটা কম এবং ‘নিশ্চল’, উদ্ভিদে জীবনের প্রকাশ সবচেয়ে কম। সুতরাং ‘জীবনের মাত্রা অনুসারে উক্ত উপাদানগুলোকে ক্রমানুসারে সাজালে প্রথমে মানুষ, মাঝখানে প্রাণী এবং শেষে থাকে উদ্ভিদ। এভাবেই ক্রমিক শ্রেণিকরণে একই গুণবিশিষ্ট কোনো বিষয়কে কেবল ‘গুণের মাত্রা’ অনুসারে শ্রেণিকরণ করা হয়।
গ. দৃশ্যকল্প-১ এর দ্বারা কৃত্রিম শ্রেণিকরণকে নির্দেশ করা হয়।
কৃত্রিম শ্রেণিকরণে ব্যক্তির বিশেষ উদ্দেশ্য সাধনের জন্য অনাবশ্যক ও বাহ্যিক সাদৃশ্যের ভিত্তিতে বস্তু বা ঘটনাসমূহের বিন্যাস করা হয়। যেমন- একজন বই বিক্রেতা বিষয়বস্তুর ভিত্তিতে বিভিন্ন বই সাজিয়ে রাখেন। এতে ক্রেতারা সহজেই তাদের চাহিদামতো বই খুঁজে পেতে পারেন। এ কারণে পুস্তক বিক্রেতার বই সাজিয়ে রাখার প্রক্রিয়া কৃত্রিম শ্রেণিকরণের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।
দৃশ্যকল্প-১ এর ঘটনায় রাশেদের মা তাকে পড়ার টেবিলের প্রথম তাকে পাঠ্যবই, দ্বিতীয় তাকে গল্পের বই, তৃতীয় তাকে খাতা-কলম সাজিয়ে রাখার নির্দেশ দেন। তার এই নির্দেশ বাহ্যিক সাদৃশ্যের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ। তাই এটি কৃত্রিম শ্রেণিকরণের দৃষ্টান্ত।
ঘ. দৃশ্যকল্প-১ এবং দৃশ্যকল্প-২ দ্বারা যথাক্রমে কৃত্রিম শ্রেণিকরণ ও প্রাকৃতিক শ্রেণিকরণকে ইঙ্গিত করা হয়। নিচে উভয় শ্রেণিকরণের মধ্যে পার্থক্য পাঠ্যবইয়ের আলোকে বিশ্লেষণ করা হলো-
কৃত্রিম শ্রেণিকরণ অবান্তর ও বাহ্যিক সাদৃশ্যের ওপর নির্ভরশীল। অর্থাৎ এ শ্রেণিকরণে নির্দেশিত সাদৃশ্যের বিষয়গুলো প্রকৃতি প্রদত্ত নয়, বরং মানুষের খেয়াল-খুশিমতো সৃষ্টি করা হয়। কৃত্রিম শ্রেণিকরণে প্রথমেই একটি নমুনা নির্বাচন করে বস্তুসমূহকে তার সাথে মিলিয়ে বিন্যস্ত করা হয়। অন্যদিকে, প্রাকৃতিক শ্রেণিকরণ মৌলিক বা গুরুত্বপূর্ণ নিয়মের ওপর নির্ভরশীল। এর দৃষ্টান্ত দৃশ্যকল্প-২ এ পরিলক্ষিত হয়। এরূপ শ্রেণিকরণের সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্যগুলো প্রকৃতিতে বিদ্যমান থাকে।
বিশেষ উদ্দেশ্য দ্বারা পরিচালিত হয় বলে কৃত্রিম শ্রেণিকরণ ব্যক্তিভেদে ভিন্ন হয়। পাশাপাশি এ শ্রেণিকরণের মাধ্যমে মানুষের ব্যবহারিক প্রয়োজন মিটে বলে একে ব্যবহারিক শ্রেণিকরণও বলা হয়। অন্যদিকে, প্রাকৃতিক শ্রেণিকরণ একটি বিজ্ঞানসম্মত প্রক্রিয়া। এ শ্রেণিকরণের মাধ্যমে বস্তুসমূহ বা ঘটনাবলি সম্পর্কে তত্ত্বগত জ্ঞান লাভ করা যায়।
পরিশেষে বলা যায়, প্রাকৃতিক ও কৃত্রিম শ্রেণিকরণের মধ্যে ব্যবধানের লৌহ প্রাচীর নির্মাণ করা সম্ভব নয়। কারণ উভয় শ্রেণিকরণের প্রকৃতি একই। উভয়ের মধ্যে তফাৎ মূলত উদ্দেশ্যগত। প্রাকৃতিক শ্রেণিকরণের উদ্দেশ্য হচ্ছে সাধারণ জ্ঞান অর্জন করা এবং কৃত্রিম শ্রেণিকরণের উদ্দেশ্য হচ্ছে বিশেষ কোনো ব্যবহারিক সুবিধা লাভ করা।
৩. রেশমা ম্যাডাম তার ছাত্রীদেরকে বললেন, ‘তোমরা সপুষ্পক ও অপুষ্পক উদ্ভিদগুলো আলাদা করে রাখ।' আর ছাত্রদের বললেন, ‘বর্ণের ক্রমানুযায়ী উদ্ভিদগুলো আলাদা কর।' এ প্রসঙ্গে রানা স্যার বললেন, 'আপনি ছাত্র-ছাত্রীদের দিয়ে যে কাজটি করাচ্ছেন তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।'
ক. ভ্রান্ত ব্যাখ্যা কী?
খ. দূরবর্তী কোনো ঘটনাকে কারণ বলা যায় না কেন?
গ. রানা স্যার কোন বিষয়কে গুরুত্বপূর্ণ বলেছেন? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. রেশমা ম্যাডাম তার ছাত্র-ছাত্রীদের দিয়ে যে দুটি কাজ করাচ্ছেন তাদের মধ্যে পার্থক্য দেখাও।
৩ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. যে ব্যাখ্যায় যথার্থ ধারণা পাওয়া যায় না, তাকে ভ্রান্ত ব্যাখ্যা বলে।
খ. দূরবর্তী কোনো ঘটনার মধ্যে কারণের মূল বৈশিষ্ট্য অনুপস্থিত থাকে। এ কারণে দূরবর্তী ঘটনাকে কার্যের কারণ বলা যায় না।
কারণ হচ্ছে কোনো কার্যের অব্যবহিত পূর্ববর্তী সংশ্লিষ্ট ঘটনা। কিন্তু অনেক সময় আমরা কোন দূরবর্তী শর্তকে কারণ বলে গ্রহণ করে থাকি। আর এর ফলে অনুপপত্তি ঘটে। বস্তুত কারণ কার্যকে সংঘটিত করে। তাই কারণ হলো পূর্ববর্তী ঘটনা, আর কার্য হলো পরবর্তী ঘটনা। কোন কার্য সংঘটিত হওয়ার পূর্বে অনেকগুলো শর্ত থাকতে পারে। কিন্তু কার্য সংঘটিত হওয়ার পূর্বের অব্যবহিত ঘটনাই হবে কারণ। দূরবর্তী ঘটনা কোনো কার্যের শর্ত হতে পারে না।
গ. রানা স্যার শ্রেণিকরণের মতো বিষয়কে অধিক গুরুত্বপূর্ণ বলেছেন।
শ্রেণিকরণ হলো সাদৃশ্যের ভিত্তিতে কোনো বিষয় বা বস্তুসমূহকে একত্রে সন্নিবেশ করার মানসিক প্রক্রিয়া। যেমন- যেসব প্রাণী ঘাস বা তৃণ খায়, তাদের আমরা তৃণভোজী প্রাণী হিসেবে শ্রেণিকরণ করি। বস্তুত জগতের প্রতিটি বিষয়কে ভিন্ন ভিন্ন ভাবে জানা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। এ কারণে শ্রেণিকরণের মাধ্যমে নির্ধারিত বিষয়কে সাদৃশ্যের ভিত্তিতে জানা যায়।
শ্রেণিকরণের মাধ্যমে সার্বিক ও সাধারণ জ্ঞান অর্জিত হয়। ব্যবহারিক জীবনে আমরা বিভিন্ন বিষয় শ্রেণিকরণের মাধ্যমে সহজভাবে উপস্থাপন করতে পারি। তাই জ্ঞানগত দিক থেকে শ্রেণিকরণের তাৎপর্য অনেক বেশি। সর্বপরি আরোহ অনুমানে শ্রেণিকরণ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে কাজ করে। এ কারণে যুক্তিবিদ্যায় শ্রেণিকরণের ভূমিকা অপরিসীম। যার দৃষ্টান্ত উদ্দীপকের রানা স্যারের বক্তব্যে পরিলক্ষিত হয়।
ঘ. রেশমা ম্যাডাম তার ছাত্র-ছাত্রীদের দিয়ে যে দুটি কাজ করাচ্ছেন, তাতে প্রাকৃতিক ও কৃত্রিম শ্রেণিকরণের দৃষ্টান্ত পরিলক্ষিত হয়। নিচে উভয় শ্রেণিকরণের মধ্যে পার্থক্য করা হলো-
প্রাকৃতিক শ্রেণিকরণ গুরুত্বপূর্ণ সাদৃশ্যের ওপর নির্ভরশীল। এ শ্রেণিকরণের সাদৃশ্যের বিষয়গুলো প্রকৃতিতে বিদ্যমান থাকে।
অন্যদিকে, কৃত্রিম শ্রেণিকরণ অবান্তর ও বাহ্যিক সাদৃশ্যের ওপর নির্ভরশীল। এ শ্রেণিকরণে নির্দেশিত সাদৃশ্যের বিষয়গুলো ব্যক্তি নিজের খেয়াল-খুশিমতো তা সৃষ্টি করে থাকে। প্রাকৃতিক শ্রেণিকরণের মাধ্যমে বস্তুসমূহের মৌলিক বৈশিষ্ট্য প্রকাশ পায়। তাই একে বৈজ্ঞানিক শ্রেণিকরণও বলা হয়। কিন্তু কৃত্রিম শ্রেণিকরণ বিশেষ উদ্দেশ্য দ্বারা পরিচালিত। পাশাপাশি এ ধরনের শ্রেণিকরণের মাধ্যমে ব্যক্তির ব্যবহারিক প্রয়োজন সাধিত হয়। এ কারণে কৃত্রিম শ্রেণিকরণকে লৌকিক শ্রেণিকরণও বলা হয়।
পরিশেষে বলা যায়, প্রাকৃতিক ও কৃত্রিম শ্রেণিকরণ উভয়ের মধ্যে উদ্দেশ্যগত পার্থক্য বিদ্যমান। এ কারণেই প্রাকৃতিক ও কৃত্রিম শ্রেণিকরণ দুটি আলাদা।
৪. দৃশপট-১: ডঃ ইমতিয়াজ গবেষণার উদ্দেশ্যে সুন্দরবনে গেলেন। তিনি সেখানে তার দেখা প্রাণীগুলিকে মেরুদন্ডী ও অমেরুদন্ডী শ্রেণিতে বিভক্ত করলেন।
দৃশ্যপট-২: মিসেস দিনাত জাহান তার ব্যক্তিগত সংগ্রহের উদ্দেশ্যে নিজস্ব গ্রন্থাগারের বইগুলিকে সাহিত্য, প্রবন্ধ এবং ছোট গল্পে বিভক্ত করলেন।
ক. ক্রমিক শ্রেণিকরণ কী?
খ. পরিবর্তনশীল বস্তুর শ্রেণিকরণ সম্ভব নয় কেন?
গ. দৃশ্যপট-১ এ ডঃ ইমতিয়াজের কাজ শ্রেণিকরণের কোন বৈশিষ্ট্যের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকে দৃশ্যপট-১ ও দৃশ্যপট-২ এর যে শ্রেণিকরণগুলি দেখা যায় তার পার্থক্যসমূহ পাঠ্যবইয়ের আলোকে বিশ্লেষণ করো।
৪ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. একই গুণবিশিষ্ট কোনো ব্যক্তি, বস্তু বা ঘটনার মধ্যে কেবল ‘গুণের মাত্রা’ অনুসারে শ্রেণিকরণ করার প্রক্রিয়াই হলো ক্রমিক শ্রেণিকরণ।
খ. পরিবর্তনশীল বস্তুর গুণ অস্থায়ী। তাই এরূপ বস্তুর শ্রেণিকরণ করা যায় না।
সাধারণত কোনো বস্তু বা ঘটনাসমূহের শ্রেণিকরণ করার সময় স্থায়ী ও আবশ্যিক গুণ বিবেচনা করা হয়। কিন্তু যেসব বস্তুর গুণ নিয়ত পরিবর্তনশীল এবং এক বস্তুর গুণ অন্য বস্তুর মধ্যে নিহিত থাকে, তাদের শ্রেণিকরণ করা যায় না।
গ. দৃশ্যপট-১ এ ডঃ ইমতিয়াজের কাজ প্রাকৃতিক শ্রেণিকরণের বৈশিষ্ট্যের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ।
প্রাকৃতিক শ্রেণিকরণ মৌলিক ও গুরুত্বপূর্ণ সাদৃশ্যের ওপর নির্ভরশীল। এ শ্রেণিকরণের সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্যগুলো প্রকৃতিতে বিদ্যমান থাকে। ফলে বস্তুসমূহের অপরিহার্য বৈশিষ্ট্য প্রকাশ পায়। যেমন- পুষ্পের উপস্থিতির ভিত্তিতে উদ্ভিদকে সপুষ্পক ও অপুষ্পক উদ্ভিদে বিন্যস্ত করা প্রাকৃতিক শ্রেণিকরণের দৃষ্টান্ত।
দৃশ্যপট-১ এ ডঃ ইমতিয়াজ প্রাণীকে মেরুদন্ডী ও অমেরুদন্ডী হিসেবে বিভক্ত করেছেন। তার এ বিভক্তকরণ প্রক্রিয়া প্রাণীর মৌলিক ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ। এ কারণেই এটি প্রাকৃতিক শ্রেণিকরণের অন্তর্গত।
ঘ. দৃশ্যপট-১ এ প্রাকৃতিক শ্রেণিকরণ এবং দৃশ্যপট-২ এ কৃত্রিম শ্রেণিকরণের দৃষ্টান্ত রয়েছে। নিচে উভয় শ্রেণিকরণের মধ্যে পার্থক্য বিশ্লেষণ করা হলো-
প্রাকৃতিক শ্রেণিকরণ মৌলিক ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের সাদৃশ্যের ভিত্তিতে করা হয়। পাশাপাশি সাদৃশ্যের বিষয়গুলো প্রকৃতিতে বিদ্যমান থাকে। ফলে প্রাকৃতিক শ্রেণিকরণের বেলায় বস্তুসমূহকে বিন্যস্ত করার আগে তাদের গুরুত্বপূর্ণ ও অপরিহার্য বৈশিষ্ট্য উদ্ঘাটনের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু কৃত্রিম শ্রেণিকরণে ব্যক্তির নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গির প্রকাশ পায়। এরূপ শ্রেণিকরণ অবান্তর ও বাহ্যিক সাদৃশ্য নির্ভর হয়ে থাকে। এ কারণে কৃত্রিম শ্রেণিকরণে নির্দেশিত সাদৃশ্যের বিষয়গুলো প্রকৃতি প্রদত্ত নয়, বরং মানুষের নিজস্ব মনোভাবের প্রকাশমাত্র।
প্রাকৃতিক শ্রেণিকরণের মাধ্যমে বস্তুসমূহ বা ঘটনাবলি সম্পর্কে তত্ত্বগত ও আবশ্যিক জ্ঞান লাভ করা যায়। এসব কারণে প্রাকৃতিক শ্রেণিকরণ একটি বিজ্ঞানসম্মত প্রক্রিয়া। কিন্তু কৃত্রিম শ্রেণিকরণ বিশেষ উদ্দেশ্যে পরিচালিত হয় বলে এ শ্রেণিকরণ ব্যক্তিভেদে ভিন্ন হয়। তাই কৃত্রিম শ্রেণিকরণ হলো একটি লৌকিক প্রক্রিয়া।
পরিশেষে বলা যায়, প্রাকৃতিক ও কৃত্রিম উভয় শ্রেণিকরণই মানসিকভাবে সম্পন্ন হওয়ার কারণে এদের মধ্যে তেমন বড় কোনো পার্থক্য লক্ষ করা যায় না। উভয়ের মধ্যে কার্যত উদ্দেশ্যগত পার্থক্যই বিদ্যমান।
৫. সুহাইল শখ করে বিভিন্ন দেশের মুদ্রা আলাদা আলাদা বক্সে জমিয়ে রাখে। একদিন তার বাবা দেখেন সুহাইল মুদ্রাগুলোর সাথে বিভিন্ন দেশের কাগজের নোটও রেখেছে। বাবা জিজ্ঞেস করলেন, তুমি মুদ্রার সাথে নোট রেখেছ কেন? সুহাইল বলে ‘নোটও মুদ্রা, সবই তো এক। বাবা তখন সুহাইলকে মুদ্রা ও নোটের বিভাজনটা বুঝিয়ে দিলেন।
ক. কোন ধরনের শ্রেণিকরণ অবৈজ্ঞানিক?
খ. ‘গুণগত বিভাগ যৌক্তিক বিভাগ নয়’ কেন?
গ. সুহাইলের মুদ্রা সংগ্রহের প্রক্রিয়ায় কোন শ্রেণিকরণের দৃষ্টান্ত লক্ষ করা যায়? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকের সুহাইলের বক্তব্যে যে অসঙ্গতি রয়েছে পাঠ্যবিষয়ের আলোকে তা বিশ্লেষণ করো।
৫ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. কৃত্রিম শ্রেণিকরণ হলো অবৈজ্ঞানিক।
খ. গুণগত বিভাগে যৌক্তিক বিভাগের নিয়ম অনুসরণ করা হয় না বলে তা যৌক্তিক বিভাগ নয়।
যৌক্তিক বিভাগের প্রথম নিয়মানুযায়ী, শ্রেণিবাচক পদকে বিভক্ত করা গেলেও কোনো ব্যক্তি বা বস্তুকে বিভক্ত করা যায় না। কিন্তু এ নিয়ম অমান্য করে কোনো ব্যক্তি বা বস্তুকে তার বিভিন্ন গুণে বিভক্ত করা হলে গুণগত বিভাগ নামক অনুপপত্তি ঘটে। যেমন- আমকে বর্ণ, আকৃতি, গন্ধ ও স্বাদে বিভক্ত করলে গুণগত বিভাগ নামক অনুপপত্তি ঘটে। এই কারণে বলা হয়, গুণগত বিভাগ যৌক্তিক বিভাগ নয়।
গ. সুহাইলের মুদ্রা সংগ্রহের প্রক্রিয়ায় কৃত্রিম শ্রেণিকরণের দৃষ্টান্ত লক্ষ করা যায়।
যে শ্রেণিকরণ প্রক্রিয়ায় কোনো বিশেষ উদ্দেশ্য সাধনের জন্য অনাবশ্যক ও বাহ্যিক সাদৃশ্যের ভিত্তিতে বস্তু বা ঘটনাসমূহের বিন্যাস করা হয় তাকে কৃত্রিম শ্রেণিকরণ বলে। অর্থাৎ কৃত্রিম শ্রেণিকরণের মাধ্যমে ব্যক্তি তার বিশেষ উদ্দেশ্য সাধন করে থাকে। যেমন- সহজেই কোনো বই খুঁজে পাওয়ার উদ্দেশ্যে একজন গ্রন্থগারিক আকৃতি বা মূল্যের ভিত্তিতে বিভিন্ন বই সাজিয়ে রাখেন। তার এই সাজিয়ে রাখার প্রক্রিয়া কৃত্রিম শ্রেণিকরণের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।
উদ্দীপকের সুহাইল বিভিন্ন দেশের মুদ্রা সাদৃশ্যের ভিত্তিতে আলাদা আলাদা বক্সে জমিয়ে রাখে। মুদ্রা সাজিয়ে রাখার প্রক্রিয়ায় সুহাইলের নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ পায়। এ কারণে বলা যায়, সুহাইলের কর্মকান্ড হলো কৃত্রিম শ্রেণিকরণ।
ঘ. সুহাইলের বক্তব্যে অতিব্যাপক বিভাগ অনুপপত্তি ঘটেছে।
অতিব্যাপক বিভাগ এক প্রকার ভ্রান্ত বিভাগ প্রক্রিয়া। যৌক্তিক বিভাগে বিভক্ত উপজাতির মিলিত ব্যক্ত্যর্থ যদি বিভাজ্য জাতির ব্যক্ত্যর্থের চেয়ে বেশি হয় তাহলে অতিব্যাপক বিভাগ অনুপপত্তি ঘটে। যেমন: মুদ্রাকে স্বর্ণমুদ্রা, রৌপ্যমুদ্রা, ব্রোঞ্জমুদ্রা ও অন্যান্য ধাতব মুদ্রা এবং ব্যাংক নোটে বিভক্ত করলে অতিব্যাপক বিভাগ অনুপপত্তি ঘটবে। কেননা, স্বর্ণ মুদ্রা এবং অন্যান্য ধাতব মুদ্রা এ দুই ভাগের মধ্য দিয়েই মুদ্রার ব্যক্ত্যর্থ সমান হয়। কিন্তু উক্ত দৃষ্টান্তে মুদ্রার ব্যক্ত্যর্থের সাথে ব্যাংক নোট অতিরিক্ত যোগ করায় মোট ব্যক্ত্যর্থ বেশি হয়। ফলে অতিব্যাপক বিভাগ অনুপপত্তি ঘটে।
উদ্দীপকে বর্ণিত ঘটনায়, সুহাইল বিদেশি মুদ্রার সাথে নোটের সমন্বয় করার ফলে মুদ্রার ব্যক্ত্যর্থ বেশি হয়েছে। এ কারণে সুহাইলের বক্তব্যে অতিব্যাপক বিভাগ অনুপপত্তি ঘটেছে।
পরিশেষে বলা যায়, যৌক্তিক বিভাগের তৃতীয় নিয়মানুসারে, বিভাজ্য জাতির ব্যক্ত্যর্থ এবং বিভক্ত উপজাতির ব্যক্ত্যর্থ পরস্পর সমান হবে। উদ্দীপকের সুহাইল এই নিয়ম লঙ্ঘন করেছে বলে তার বক্তব্যে অতিব্যাপক বিভাগ অনুপপত্তি ঘটেছে।
৬. সুহাইল আল মাখতুম একজন উদ্ভিদ বিজ্ঞানী। তিনি বিভিন্ন ধরনের উদ্ভিদ নিয়ে গবেষণা করেন। তিনি লক্ষ করেন কোনো উদ্ভিদের বীজ এককোষী, আবার কোনো উদ্ভিদের বীজ বহুকোষী। এ ভিত্তিতে তিনি উদ্ভিদকে দুটি শ্রেণিতে ভাগ করেন। একদিন তিনি এককোষী বীজ সম্পর্কে আরো ভালোভাবে জানার জন্য লাইব্রেরিতে যান। সেখানে একটি সেলফের প্রথম তাকে বেশ কিছু বই দেখেন। প্রতিটি বই ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করে দেখেন যে, সেখানে ১০টি বই আছে।
ক. শ্রেণিকরণের সাধারণ উদ্দেশ্য কী?
খ. শ্রেণিকরণের উদ্দেশ্য উল্লেখ করো।
গ. উদ্দীপকের সুহাইল আল মাখতুমের বিভাজনে শ্রেণিকরণের কোন বিষয়টি প্রতিফলিত হয়েছে?
ঘ. সুহাইল আল মাখতুমের গণনা প্রক্রিয়ায় ইঙ্গিতকৃত আরোহের যথার্থতা মূল্যায়ন করো।
৬ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. শ্রেণিকরণের সাধারণ উদ্দেশ্য হলো জ্ঞান অর্জন করা।
খ. শ্রেণিকরণের দুটি উদ্দেশ্য আছে।
যুক্তিবিদরা শ্রেণিকরণের দুটি উদ্দেশ্য উল্লেখ করেন। যথাত সাধারণ বা বৈজ্ঞানিক উদ্দেশ্য এবং বিশেষ বা ব্যবহারিক উদ্দেশ্য। যে কোনো ব্যক্তি এই দুটি উদ্দেশ্যের মাধ্যমে শ্রেণিকরণ করে থাকে।
গ. উদ্দীপকে সুহাইল আল মাখতুমের বিভাজনে শ্রেণিকরণের বিন্যস্তকরণের দিকটি নির্দেশ করে।
প্রকৃতিতে বিভিন্ন বস্তু ও ঘটনা এলোমেলো ও বিচ্ছিন্নভাবে বিদ্যমান থাকে। এসব বস্তু ও ঘটনাকে সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্যের ভিত্তিতে একত্রিত করা হয় শ্রেণিকরণের মাধ্যমে। অর্থাৎ কিছু বিষয়ের মধ্যে সাদৃশ্য লক্ষ করে তাদের একই শ্রেণিভুক্ত করা এবং কিছু বিষয়ের মধ্যে বৈসাদৃশ্য লক্ষ করে তাদের একত্র করা হয়। এভাবে শ্রেণিকরণে সকল বস্তু ও ঘটনাকে বিভিন্ন শ্রেণিতে বিন্যস্ত করা হয়।
উদ্দীপকের সুহাইল আল মাখতুম উদ্ভিদের বীজকে এককোষী এবং বহুকোষীতে বিভক্ত করেছেন। তার এই কার্যক্রম শ্রেণিকরণের বিন্যস্তকরণের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।
ঘ. উদ্দীপকে সুহাইল আল মাখতুমের গণনা প্রক্রিয়ায় পূর্ণাঙ্গ আরোহের দৃষ্টান্ত পরিলক্ষিত হয়, যা প্রকৃত আরোহ নয়।
যে আরোহ অনুমানে প্রতিটি দৃষ্টান্ত পর্যবেক্ষণ বা নিরীক্ষণের ভিত্তিতে সার্বিক যুক্তিবাক্য প্রতিষ্ঠা করা হয় তাকে পূর্ণাঙ্গ আরোহ বলে। পূর্ণাঙ্গ আরোহের অন্তর্গত প্রতিটি দৃষ্টান্ত পর্যবেক্ষণ করার পর সার্বিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। বস্তুত আরোহ অনুমানের মূল বৈশিষ্ট্য হচ্ছে আরোহমূলক লম্ফের (জানা থেকে অজানায় যাওয়া) উপস্থিতি। কিন্তু পূর্ণাঙ্গ আরোহে আরোহমূলক লম্ফ অনুপস্থিত থাকে। এ কারণে পূর্ণাঙ্গ আরোহকে প্রকৃত আরোহ বলা যায় না।
পূর্ণাঙ্গ আরোহ সীমিত পরিসরে নির্দিষ্ট সংখ্যক দৃষ্টান্ত সম্পর্কে সিদ্ধান্ত প্রতিষ্ঠা করে বলে এর সিদ্ধান্তকে যথার্থ অর্থে সার্বিক বলা যায় না। কারণ এর সিদ্ধান্ত কতকগুলো বিশেষ দৃষ্টান্তের সমষ্টি।
পরিশেষে বলা যায়, উদ্দীপকে বর্ণিত পূর্ণাঙ্গ আরোহ প্রকৃত আরোহ নয়। কারণ ব্রিটিশ যুক্তিবিদ জন স্টুয়ার্ট মিল মনে করেন, পূর্ণাঙ্গ আরোহ নিছক জ্ঞাত ঘটনাবলির সংক্ষিপ্ত সমষ্টিকরণ। সুতরাং বলা যায়, পূর্ণাঙ্গ আরোহ হলো অপ্রকৃত আরোহ।
৭. নিচের চিত্রটি লক্ষ্য কর এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
চিত্র
ক. শ্রেণিকরনের অপর নাম কি ?
খ. পরতম জাতির শ্রেণিকরণ করা যায় না কেন?
গ. দৃশ্যকল্প-১ এ কোন শ্রেণিকরণের ইঙ্গিত পাওয়া যায়?
ঘ. দৃশ্যকল্প-১ ও দৃশ্যকল্প-২ এ যে দুটি শ্রেণিকরণ করা হয়েছে তাদের মধ্যে সম্পর্ক দেখাও।
৭ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. শ্রেণিকরণের অপর নাম বিন্যাসকরণ।
খ. পরতম জাতি থেকে ব্যাপকতর অন্য কোনো জাতি নেই বলে এরূপ জাতির শ্রেণিকরণ করা যায় না।
পরতম জাতি হচ্ছে সর্বোচ্চ জাতি, যাকে অন্তর্ভুক্ত করার মতো ব্যাপক অন্য কোনো জাতি বা স্তর নেই। এ কারণে সর্বোচ্চ জাতি হিসেবে পরতম জাতির শ্রেণিকরণ করা সম্ভব হয় না। যেমন: দ্রব্য হচ্ছে একটি পরতম জাতি। দ্রব্যকে আর অন্য কোনো জাতির অন্তর্ভুক্ত করা যায় না। সুতরাং এর শ্রেণিকরণ করাও অসম্ভব।
গ. দৃশ্যকল্প-১ এ প্রাকৃতিক শ্রেণিকরণের ইঙ্গিত পাওয়া যায়।
প্রাকৃতিক শ্রেণিকরণ মৌলিক বা গুরুত্বপূর্ণ সাদৃশ্যের ওপর নির্ভরশীল। এ শ্রেণিকরণের সাদৃশ্যের বিষয়গুলো প্রকৃতিতে বিদ্যমান থাকে। ফলে প্রাকৃতিক শ্রেণিকরণে বস্তুসমূহের অপরিহার্য বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হয়। যেমন- মেরুদন্ডের উপস্থিতি ও অনুপস্থিতির ওপর ভিত্তি করে প্রাণীকে মেরুদন্ডী ও অমেরুদন্ডী হিসেবে বিন্যস্ত করা প্রাকৃতিক শ্রেণিকরণের একটি দৃষ্টান্ত।
দৃশ্যকল্প-১ এ উদ্ভিদ জগতকে সপুষ্পক ও অপুষ্পক শ্রেণিতে বিভক্ত করা হয়েছে। এ বিভক্তকরণ প্রক্রিয়া মৌলিক বা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ। এ কারণেই দৃশ্যকল্প-১ এর দৃষ্টান্ত প্রাকৃতিক শ্রেণিকরণের অন্তর্গত।
ঘ. দৃশ্যকল্প-১ প্রাকৃতিক শ্রেণিকরণ ও দৃশ্যকল্প-২ কৃত্রিম শ্রেণিকরণকে নির্দেশ করে। নিচে উভয় শ্রেণিকরণের মধ্যে বিদ্যমান সম্পর্ক বিশ্লেষণ করা হলো-
প্রাকৃতিক ও কৃত্রিম শ্রেণিকরণের মধ্যে সম্পর্ক বিশ্লেষণ করলে উভয়ের মধ্যে কিছু সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্য লক্ষ করা যায়। সাদৃশ্যের ক্ষেত্রে দেখা যায়, উভয় শ্রেণিকরণের উদ্দেশ্যই হলো জ্ঞানার্জন করা। পাশাপাশি উভয় শ্রেণিকরণ মানসিকভাবে সম্পন্ন হয় এবং আলোচ্য বিষয় সাদৃশ্যের ওপর গুরুত্বারোপ করে।
বৈসাদৃশ্যের ক্ষেত্রে দেখা যায়, প্রাকৃতিক শ্রেণিকরণ মৌলিক সাদৃশ্যভিত্তিক হলেও কৃত্রিম শ্রেণিকরণ গুরুত্বহীন ও বাহ্যিক সাদৃশ্যভিত্তিক। প্রাকৃতিক শ্রেণিকরণের উদ্দেশ্য হলো সাধারণ জ্ঞান লাভ। অর্থাৎ এ শ্রেণিকরণের মাধ্যমে আলোচ্য বিষয়ে সার্বিক ধারণা লাভ করা যায়। কিন্তু কৃত্রিম শ্রেণিকরণ ব্যক্তিভেদে আলাদা হয়। তাই এ শ্রেণিকরণের মাধ্যমে পাওয়া যায় বিশেষ জ্ঞান। প্রাকৃতিক শ্রেণিকরণের উপকরণগুলো প্রাকৃতিক পরিবেশে পাওয়া যায়। অন্যদিকে, কৃত্রিম শ্রেণিকরণের উপকরণগুলো মানুষের তৈরি। প্রাকৃতিক শ্রেণিকরণ সংজ্ঞাভিত্তিক আর কৃত্রিম শ্রেণিকরণ নমুনাভিত্তিক। প্রাকৃতিক শ্রেণিকরণ বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়া হলেও কৃত্রিম শ্রেণিকরণ হলো লৌকিক প্রক্রিয়া।
পরিশেষে বলা যায়, প্রাকৃতিক শ্রেণিকরণ ও কৃত্রিম শ্রেণিকরণের পেছনে উদ্দেশ্যের পার্থক্য থাকায় দুটির মধ্যে কিছু সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্য থাকা স্বাভাবিক।
৮. নিচের চিত্রটি লক্ষ্য কর এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
চিত্র
ক. শ্রেণিকরণের ইংরেজি প্রতিশব্দ কী ?
খ. শ্রেণিকরণ একটি মানসিক প্রক্রিয়াত ব্যাখ্যা করো।
গ. উদ্দীপকের ছক-২ কী নির্দেশ করেছে এবং কেন?
ঘ. উদ্দীপকের ছক-১ ও ছক-২ দ্বারা নির্দেশিত বিষয়ের তুলনামূলক পার্থক্য লেখো।
৮ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. শ্রেণিকরণের ইংরেজি প্রতিশব্দ হলো 'Classification'।
খ. শ্রেণিকরণ প্রক্রিয়াটি ব্যক্তি কাল্পনিকভাবে সম্পন্ন করে বলে একে মানসিক প্রক্রিয়া বলা হয়।
শ্রেণিকরণের মৌলিক বৈশিষ্ট্য হলো, এটি একটি মানসিক প্রক্রিয়া যেমন- পদার্থ কঠিন, তরল ও বায়বীয় এই তিনটি শ্রেণিতে বিভক্ত। এ বিভক্তকরণ প্রক্রিয়া মানসিক চিন্তার ফল। যেমন- একজন ছাত্র তার সমস্ত বই গুরুত্বের ভিত্তিতে বিভিন্ন তাকে (Bookshelf) সাজিয়ে রাখে। তার এই সাজিয়ে রাখার প্রক্রিয়া মানসিকভাবে সম্পন্ন হয়েছে। এজন্য বলা হয় শ্রেণিকরণ একটি মানসিক প্রক্রিয়া।
গ. উদ্দীপকের ছক-২ এ কৃত্রিম শ্রেণিকরণকে নির্দেশ করছে।
যে শ্রেণিকরণ প্রক্রিয়ায় কোনো বিশেষ উদ্দেশ্য সাধনের জন্য অনাবশ্যক ও বাহ্যিক সাদৃশ্যের ভিত্তিতে বস্তু বা ঘটনাসমূহের বিন্যাস করা হয়, তাকে কৃত্রিম শ্রেণিকরণ বলে। এরূপ শ্রেণিকরণের মাধ্যমে ব্যক্তি তার বিশেষ উদ্দেশ্য সাধন করে থাকে। যার দৃষ্টান্ত ছক-২ এ লক্ষ করা যায়।
ছক-২ প্রাণীকে বন্যপ্রাণী ও গৃহপালিত প্রাণী পদে বিভক্ত করা হয়েছে। এরূপ বিভক্তকরণে ব্যক্তির বিশেষ উদ্দেশ্য প্রাধান্য পায়। তাই বলা যায়, ছক-২ কৃত্রিম শ্রেণিকরণের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।
ঘ. উদ্দীপকের ছক-১ ও ছক-২ দ্বারা প্রাকৃতিক ও কৃত্রিম শ্রেণিকরণের দৃষ্টান্ত পরিলক্ষিত হয়। নিচে উভয় শ্রেণিকরণের মধ্যে তুলনামূলক পার্থক্য করা হলো-
প্রাকৃতিক শ্রেণিকরণ গুরুত্বপূর্ণ সাদৃশ্যের ওপর নির্ভরশীল। এ শ্রেণিকরণের সাদৃশ্যের বিষয়গুলো প্রকৃতিতে বিদ্যমান থাকে। অন্যদিকে, কৃত্রিম শ্রেণিকরণ অবান্তর ও বাহ্যিক সাদৃশ্যের ওপর নির্ভরশীল। এ শ্রেণিকরণে নির্দেশিত সাদৃশ্যের বিষয়গুলো ব্যক্তি নিজের খেয়াল-খুশিমতো তা সৃষ্টি করে থাকে।
প্রাকৃতিক শ্রেণিকরণের মাধ্যমে বস্তুসমূহের মৌলিক বৈশিষ্ট্য প্রকাশ পায়। তাই একে বৈজ্ঞানিক শ্রেণিকরণও বলা হয়। কিন্তু কৃত্রিম শ্রেণিকরণ বিশেষ উদ্দেশ্য দ্বারা পরিচালিত। পাশাপাশি এ ধরনের শ্রেণিকরণের মাধ্যমে ব্যক্তির ব্যবহারিক প্রয়োজন সাধিত হয়। এ কারণে কৃত্রিম শ্রেণিকরণকে লৌকিক শ্রেণিকরণও বলা হয়।
পরিশেষে বলা যায়, প্রাকৃতিক ও কৃত্রিম শ্রেণিকরণ উভয়ের মধ্যে উদ্দেশ্যগত পার্থক্য বিদ্যমান। এ কারণেই ছক-১ ও ছক-২ এর মধ্যে পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়।
৯. উদ্দীপক-১ : বাংলাদেশে ১৯৭০ সালের ঘূর্ণিঝড়, ১৯৮৭ সালের বন্যা, ১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়, ২০১৭ সালের ভয়াবহ বন্যা সম্পর্কে আমরা অবগত। এসব প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতি হয়েছে ব্যাপক। বিভিন্ন তথ্য বিশ্লেষণে এটা প্রতীয়মান হয়, অসচেতনতার কারণে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বেশি হয়। প্রকৃতির এরূপ আচরণ অতীত অপেক্ষা বর্তমানে ঘন ঘন সংঘটিত হচ্ছে।
উদ্দীপক-২ : ঢাকা শহরে কয়েক বছর আগে জ্বরে মানুষ মৃত্যুবরণ করে। প্রথমাবস্থায় জ্বরের মৃত্যুতে সাধারণ মানুষ আতঙ্কিত হয়। বিভিন্ন অনুসন্ধানে ডাক্তারেরা নিশ্চিত করলেন এডিস ইজিপটি মশার কামড়ে ডেঙ্গু জ্বর হয়।
ক. পরীক্ষণ কী?
খ. আরোহের আকারগত ভিত্তি বলতে কী বোঝ?
গ. উদ্দীপক-২ এ কোন বিষয়ের প্রতিফলন ঘটেছে?
ঘ. পাঠ্যপুস্তকের আলোকে উদ্দীপক-১ ও উদ্দীপক-২ এর স্বরূপ আলোচনা করো।
৯ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. কোনো বিশেষ উদ্দেশ্য সাধনের জন্য কৃত্রিম পরিবেশে উৎপাদিত কোনো কৃত্রিম ঘটনার প্রত্যক্ষণকে পরীক্ষণ বলে।
খ. যে সব বিষয়ের ওপর নির্ভর করে আরোহের আকারগত দিক গড়ে ওঠে তাকে আরোহের আকারগত ভিত্তি বলে।
আরোহ অনুমানে বিশেষ বিশেষ দৃষ্টান্তের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে একটি সার্বিক সিদ্ধান্ত প্রতিষ্ঠা করা হয়। অর্থাৎ, আরোহ অনুমান হলো বিশেষ থেকে সার্বিকে গমনের একটি প্রক্রিয়া। আর আরোহ অনুমানে বিশেষ থেকে সার্বিকে গমন করা হয় প্রকৃতির নিয়মানুবর্তিতা নীতি ও কার্যকারণ নিয়মের ভিত্তিতে। তাই এই দুটি বিষয় আরোহের আকারগত ভিত্তি।
গ. উদ্দীপক-২ এ আরোহের আকারগত ভিত্তি কার্যকারণ নিয়মের প্রতিফলন ঘটেছে।
আরোহের আকারগত ভিত্তির একটি হলো কার্যকারণ নিয়ম। কার্যকারণ নিয়মে কারণ ও কার্যের মধ্যে আবশ্যিক সম্পর্ক স্বীকার করা হয়। এই মত অনুসারে কোনো কার্যের কারণ একটি। তাই বলা যায়, যে মতবাদ অনুযায়ী কারণ ও কার্যের মধ্যে আবশ্যিক সম্পর্ক বিদ্যমান এবং প্রতিক্ষেত্রে একই কারণ একই কার্য ঘটায় সেই মতবাদকে কার্যকারণ নিয়ম বলে। এই মতবাদ অনুযায়ী কারণই কার্যকে সংঘটিত করে।
উদ্দীপক-২ এ বলা হয়েছে যে, ডাক্তাররা অনুসন্ধান করে নিশ্চিত হয়েছেন এডিস ইজিপটি মশার কামড়ে ডেঙ্গু জ্বর হয়। এখানে এডিস ইজিপটি মশার কামড় কারণ এবং ডেঙ্গু জ্বর হচ্ছে কার্য। এভাবে কার্যকারণের ক্ষেত্রে কারণই কার্যকে সংঘটিত করে। আর কারণ থাকে আগে এবং কার্য থাকে কারণের পরে।
ঘ. উদ্দীপক-১ এর মাধ্যমে প্রকৃতির নিয়মানুবর্তিতা নীতির ইঙ্গিত পাওয়া যায় এবং উদ্দীপক-২ এর মাধ্যমে কার্যকারণ নিয়মের ইঙ্গিত পাওয়া যায়।
প্রকৃতির নিয়মানুবর্তিতা নীতি আরোহের আকারগত ভিত্তির অন্যতম অংশ। আরোহ অনুমানে বিশেষ থেকে সার্বিকে গমনের ক্ষেত্রে প্রকৃতির নিয়মানুবর্তিতা নীতি অপরিহার্য ভূমিকা পালন করে। এটি আরোহের একটি স্বতঃসিদ্ধ নীতি। তাই এক কথায় এর সংজ্ঞা দেওয়া যায় না। যুক্তিবিদদের মতে, প্রকৃতির নিয়মানুবর্তিতা নীতির প্রকৃতি হচ্ছে- প্রকৃতি, নিয়মের উপাসক, প্রকৃতির, রাজ্যে সর্বত্র একই রূপ বিরাজ করে, প্রকৃতি ইতিহাসের অনুসারী ইত্যাদি। অনেক সময় প্রকৃতির নিয়মানুবর্তিতা নীতিকে নঞর্থকভাবে প্রকাশ করা হয়। কিন্তু এটিও প্রকৃতির নিয়মানুবর্তিতা নীতির শৃঙ্খলাকে প্রকাশ করে। যেমন- প্রকৃতিতে খামখেয়ালির কোনো স্থান নেই। প্রকৃতি অভিন্ন অবস্থায় ভিন্ন রূপ আচরণ করে না ইত্যাদি। মোট কথা প্রকৃতির নিয়মানুবর্তিতা অনুযায়ী প্রকৃতির সর্বত্র একই নিয়ম কার্যকর এবং প্রকৃতিতে খামখেয়ালির কোনো স্থান নেই। প্রকৃতির সর্বত্র একই রূপ বিরাজমান।
কার্যকারণ নিয়মও আরোহের আকারগত ভিত্তির অপরিহার্য অংশ। এই নীতিটিও আরোহের একটি মৌলিক নীতি। কার্যকারণ নিয়ম অনুযায়ী জগতের প্রতিটি ঘটনায় কার্যকারণ শৃঙ্খলে যুক্ত। জগতে কোনো ঘটনা বিনা কারণে ঘটেনা। আর প্রতিটি ঘটনার কারণ নির্দিষ্ট। তাই প্রতিটি ক্ষেত্রে একই কারণ একই কার্য ঘটায়। কার্যকারণ নিয়ম অনুযায়ী কোনো কারণ তার কার্যের সাথে এমনভাবে যুক্ত যে, কারণটি ঘটলে কার্য ঘটে আর কারণটি না ঘটলে কার্য ঘটেনা। অর্থাৎ, কারণ ছাড়া কার্য হয় না। তাই কারণ ও কার্যের মধ্যে অনিবার্য সম্পর্ক বিদ্যমান।
পরিশেষে বলা যায় যে, প্রকৃতির নিয়মানুবর্তিতা নীতি ও কার্যকারণ নিয়ম উভয়ই আরোহের আকারগত ভিত্তির অংশ। উভয়ের সমন্বয়ে আরোহের আকারগত ভিত্তি গড়ে ওঠে।
১০. নিচের চিত্রটি লক্ষ্য কর এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
চিত্র
ক. বৈজ্ঞানিক শ্রেণিকরণ কী?
খ. বৃহত্তম বা পরতম জাতিকে কি শ্রেণিকরণ করা যায়?
গ. ছক-১ এ কোন শ্রেণিকরণ নির্দেশ করে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. ছক-১ ও ছক-২ এর তুলনামূলক বিশ্লেষণ করো।
১০ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. যে শ্রেণিকরণে মৌলিক অপরিহার্য সাদৃশ্যের ভিত্তিতে বস্তু বা ঘটনাসমূহ বিন্যস্ত করা হয় তাকে বৈজ্ঞানিক শ্রেণিকরণ বলে।
খ. বৃহত্তম বা পরতম জাতি থেকে ব্যাপকতর অন্য কোনো জাতি নেই বলে এরূপ জাতির শ্রেণিকরণ করা যায় না
পরতম জাতি হচ্ছে সর্বোচ্চ জাতি। এই জাতিকে অন্তর্ভুক্ত করার মতো অন্য কোনো জাতি বা স্তর নেই। এ কারণে সর্বোচ্চ জাতি হিসেবে পরতম জাতির শ্রেণিকরণ করা সম্ভব হয় না।
গ. ছক-১ এ কৃত্রিম শ্রেণিকরণকে নির্দেশ করে।
কৃত্রিম শ্রেণিকরণে ব্যক্তির বিশেষ উদ্দেশ্য সাধনের জন্য অনাবশ্যক ও বাহ্যিক সাদৃশ্যের ভিত্তিতে বস্তু বা ঘটনাসমূহের বিন্যাস করা হয় যেমন- একজন বই বিক্রেতা বিষয়বস্তুর ভিত্তিতে বিভিন্ন বই সাজিয়ে রাখেন। এতে ক্রেতারা সহজেই তাদের চাহিদা মতো বই খুঁজে পায়। এ কারণে পুস্তক বিক্রেতার বই সাজিয়ে রাখার প্রক্রিয়া কৃত্রিম শ্রেণিকরণের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।
ছক-১ এ বর্ণিত বুক সেলফে কাব্য, উপন্যাস ও নাটকের বই সাজিয়ে রাখার দৃষ্টান্ত বর্ণিত হয়েছে। এরূপ দৃষ্টান্তে ব্যক্তির নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ পায়। তাই এটি কৃত্রিম শ্রেণিকরণের দৃষ্টান্ত।
ঘ. ছক-১ এ কৃত্রিম শ্রেণিকরণ এবং ছক-২ এ ক্রমিক শ্রেণিকরণকে নির্দেশ করে। নিচে উভয় শ্রেণিকরণের তুলনামূলক আলোচনা করা হলো-
যে শ্রেণিকরণে কোনো বিশেষ উদ্দেশ্য সাধনের জন্য অনাবশ্যক ও বাহ্যিক সাদৃশ্যের ভিত্তিতে বস্তু বা ঘটনাসমূহের বিন্যাস করা হয় তাকে কৃত্রিম শ্রেণিকরণ বলে। অন্যদিকে, গুণের মাত্রার ভিত্তিতে কোনো বস্তু বা ঘটনাবলির শ্রেণিকরণ প্রক্রিয়াকে বলে ক্রমিক শ্রেণিকরণ। কৃত্রিম শ্রেণিকরণে বস্তু বা বিষয়ের গুণ তেমন বিবেচনা করা হয় না। কিংবা হলেও তা প্রতিটি দৃষ্টান্তে সমান ভাবে বিদ্যমান থাকে। কিন্তু ক্রমিক শ্রেণিকরণে বিভক্ত শ্রেণির মধ্যে একই গুণ ভিন্ন মাত্রায় বিদ্যমান থাকে।
ছক-১ এ বর্ণিত বুক সেলফে কাব্য, উপন্যাস ও নাটকের বই সাজিয়ে রাখার দৃষ্টান্তে ব্যক্তির স্বীয় দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ পেয়েছে, বস্তুর গুণের মাত্রা নয়। এ কারণে এটি কৃত্রিম শ্রেণিকরণের দৃষ্টান্ত। অন্যদিকে, ছক-২ এ ‘জীবনের মাত্রা' নামক গুণের ভিত্তিতে উক্ত উপাদানগুলোকে প্রথমে মানুষ, এরপর ইতর প্রাণী এবং শেষে উদ্ভিদকে বিন্যস্ত করা হয়েছে। এ কারণে এটি ক্রমিক শ্রেণিকরণের দৃষ্টান্ত।
তাই বলা যায়, কৃত্রিম শ্রেণিকরণ এবং ক্রমিক শ্রেণিকরণ উভয়ই মানসিক প্রক্রিয়া হলেও তাদের মধ্যে পদ্ধতিগত ভিন্নতা বিদ্যমান।
0 Comments:
Post a Comment