HSC যুক্তিবিদ্যা ২য় পত্র (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর pdf download অধ্যায় ৬

HSC যুক্তিবিদ্যা ২য় পত্র (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর pdf download

এইচএসসি পরীক্ষার পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি
HSC Logic 2nd Paper Srijonshil question and answer pdf download.

উচ্চ মাধ্যমিক

যুক্তিবিদ্যা
দ্বিতীয় পত্র

সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
৬ষ্ঠ অধ্যায়

HSC Logic 2nd Paper
Srijonshil
Question and Answer pdf download

১. উন্নত দেশে যখন হঠাৎ করোনার কারণে কিছু সংখ্যক মানুষের মৃত্যুর খবর শোনা গেল। তখন কিছু বিশ্বাসী মনে করল, মানুষের পাপের কারণেই এমনটি হয়েছে। কিন্তু চিকিৎসা বিজ্ঞানের গবেষণায় বলা হলো কোভিড-১৯ নামক এক ধরনের ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েই মানুষ মৃত্যুবরণ করেছে।
ক. ব্যাখ্যার উৎপত্তিগত অর্থ কী?
খ. সাদৃশ্যানুমানের সিদ্ধান্ত সম্ভাব্য হয় কেন?
গ. উদ্দীপকে করোনা সম্পর্কে চিকিৎসা বিজ্ঞানের গবেষণা পাঠ্যপুস্তকের যে বিষয়টি নির্দেশ করেছে তার ব্যাখ্যা করো।
ঘ. করোনা সম্পর্কে সাধারণ মানুষের ধারণা এবং চিকিৎসা বিজ্ঞানের গবেষণার বিষয়টির মধ্যে পার্থক্য ব্যাখ্যার প্রকারভেদের আলোকে বিশ্লেষণ করো।

১ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. ব্যাখ্যার উৎপত্তিগত অর্থ ব্যাখ্যা হলো কোনো পূর্বাবস্থাকে সহজ করা।

খ. সাদৃশ্যানুমানে সিদ্ধান্ত গ্রহণের সময় কার্যকারণ নীতি অনুসরণ করা হয় না। তাই সিদ্ধান্তটি সব সময়ই সম্ভাব্য হয়।
সাদৃশ্যানুমানে কার্যকারণ সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা ছাড়াই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয় বলে এ আরোহ নিশ্চিত সিদ্ধান্ত প্রতিষ্ঠা করতে পারে না, সম্ভাব্য সিদ্ধান্ত প্রতিষ্ঠা করে মাত্র। কারণ এ আরোহানুমানে দুটি বস্তুর মধ্যে কতিপয় বিষয়ে সাদৃশ্যের আলোকে একটি থেকে অন্যটি সম্পর্কে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। সিদ্ধান্তে একটি সম্পর্কে কোনো তথ্য সত্য হলে অন্যটি সম্পর্কেও তা সত্য হবে এমন নিশ্চয়তা দেওয়া যায় না। এক্ষেত্রে সিদ্ধান্তের মাঝে একটি সম্ভাবনা থাকে মাত্র।

গ. উদ্দীপকে করোনা সম্পর্কে চিকিৎসা বিজ্ঞানের গবেষণা পাঠ্যপুস্তকের যে বিষয়টি নির্দেশ করেছে তা হলো বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা।
কোনো জটিল, দুর্বোধ্য ও অস্পষ্ট ঘটনাকে স্পষ্ট, সহজ, সরল ও বোধগম্য করে প্রকাশ করাকে ব্যাখ্যা বলে। আর যখন কোনো ঘটনার কার্যকারণ বা প্রকৃত কারণ উল্লেখ করে ব্যাখ্যা প্রদান করা হয় তখন তাকে বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা বলে। বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যার মাধ্যমে কোনো ঘটনার প্রকৃত কারণ জানা যায়। এরূপ ব্যাখ্যায় প্রাকৃতিক ও বৈজ্ঞানিক নিয়ম উল্লেখ করে কোনো ঘটনার ব্যাখ্যা প্রদান করা হয় বলে বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা সবসময় একই থাকে এবং স্থান-কাল-পাত্রভেদে ভিন্ন হয় না। যার দৃষ্টান্ত উদ্দীপকে লক্ষ করা যায়।
উদ্দীপকে বর্ণিত, উন্নত দেশে যখন হঠাৎ করোনার কারণে কিছু সংখ্যক মানুষের মৃত্যুর খবর শোনা গেল। তখন চিকিৎসা বিজ্ঞানের গবেষণায় বলা হলো, কোভিড-১৯ নামক এক ধরনের ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েই মানুষ মৃত্যুবরণ করেছে। বর্তমানে অধিক মৃত্যুর কারণ হিসেবে তাদের এ গবেষণা প্রাসঙ্গিক। তাই বলা যায়, করোনা সম্পর্কে চিকিৎসা বিজ্ঞানের গবেষণা বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যার সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।

ঘ. করোনা সম্পর্কে সাধারণ মানুষের ধারণা লৌকিক ব্যাখ্যা এবং চিকিৎসা বিজ্ঞানের গবেষণা বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যার সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। নিচে উভয় বিষয়ের মধ্যে পার্থক্য বিশ্লেষণ করা হলো-
যে ব্যাখ্যায় প্রাকৃতিক ও বৈজ্ঞানিক নিয়ম উল্লেখ করে কোনো ঘটনার ব্যাখ্যা প্রদান করা হয়। তাকে বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা বলে। এরূপ ব্যাখ্যায় কার্যকারণ সম্পর্ক নির্ণয় করে ঘটনার ব্যাখ্যা দেওয়া হয় এবং ব্যাখ্যা সংশ্লিষ্ট ঘটনার সাথে প্রাসঙ্গিক হয়। বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যার ক্ষেত্রে প্রাকৃতিক ও বৈজ্ঞানিক নিয়ম অনুসরণ করা হয় বলে এ ব্যাখ্যা সবসময় একই হয়। অর্থাৎ, বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা স্থান-কাল পাত্রভেদে সবসময় একই থাকে।
অন্যদিকে, যে ব্যাখ্যায় অতিপ্রাকৃতিক ও মনগড়া কারণ উল্লেখ করে কোনো ঘটনার ব্যাখ্যা দেওয়া করা হয়। তাকে লৌকিক ব্যাখ্যা বলে। এরূপ ব্যাখ্যা সংশ্লিষ্ট ঘটনার সাথে অপ্রাসঙ্গিক হয়ে থাকে। এখানে সংশ্লিষ্ট ঘটনাকে সমজাতীয় অন্যান্য ঘটনার সাথে সংযুক্তিকরণ করা হয় না। এরূপ ব্যাখ্যায় অতিপ্রাকৃতিক কারণ ও ব্যক্তির ব্যক্তিগত বিশ্বাস প্রতিফলিত হয়ে থাকে। যেহেতু বিভিন্ন ব্যক্তির বিশ্বাস বিভিন্ন রকম, তাই লৌকিক ব্যাখ্যা স্থান-কাল-পাত্রভেদে ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে।
উল্লেখিত দুই প্রকার ব্যাখ্যার পার্থক্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যায় ঘটনার প্রকৃত ও যথার্থ কারণ উল্লেখ থাকে। তাই উদ্দীপকে উল্লেখিত সাধারণ মানুষের ধারণার চেয়ে গবেষণার ফলাফলের মতোই বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা সবার কাছে গ্রহণযোগ্য।

২. এ বছর অনেক মানুষের মৃত্যু দেখে রহিমের দাদি বললো, এ হলো সৃষ্টিকর্তার অভিশাপ। রহিম বললো, এটা ঠিক না দাদি; করোনা ভাইরাসের কারণে এসব মানুষের মৃত্যু হচ্ছে।
ক. বিশ্লেষণ কী?
খ. মনের মৌলিক অনুভূতিকে ব্যাখ্যা করা যায় না কেন?
গ. উদ্দীপকে রহিমের দাদির বক্তব্যে কী ধরনের ব্যাখ্যা সংঘটিত হয়েছে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকে রহিমের ব্যাখ্যার সঙ্গে তার দাদির ব্যাখ্যার তুলনা করো।

২ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যার সাহায্যে কোনো মিশ্র কাজকে আলাদা আলাদা ভাবে উল্লেখ করাকে বলে বিশ্লেষণ (Analysis)।

খ. মনের মৌলিক অনুভূতিগুলো অনন্য বলে সেগুলোর ব্যাখ্যা দেওয়া যায় না।
মনের কিছু মৌলিক অনুভূতি আছে। যেমন: সুখ, দুঃখ, আনন্দ, বেদনা ইত্যাদি। এদের একটির সাথে অপরটির কোনো সাদৃশ্য নেই। পাশাপাশি একটিকে অপরটির সাথে সংযুক্ত করা যায় না। এ কারণেই মনের মৌলিক অনুভূতির ব্যাখ্যা করা অসম্ভব।

গ. উদ্দীপকের রহিমের দাদির বক্তব্যে লৌকিক ব্যাখ্যার প্রতিফলন ঘটেছে।
ব্যাখ্যার মাধ্যমে কোনো জটিল ও দুর্বোধ্য বিষয়কে স্পষ্ট ও বোধগম্যভাবে প্রকাশ করা হয়। যখন অতিপ্রাকৃতিক ও মনগড়া কারণ উল্লেখ করে কোনো ঘটনার বিবৃতি দেওয়া হয় তখন তাকে লৌকিক ব্যাখ্যা বলে। লৌকিক ব্যাখ্যা ব্যক্তির ব্যক্তিগত বিশ্বাস ও ধ্যানধারণার ওপর নির্ভরশীল। তাই এ প্রকার ব্যাখ্যার কোনো যৌক্তিক ও বৈজ্ঞানিক মূল্য নেই।
আলোচ্য উদ্দীপকের রহিমের দাদি যে ব্যাখ্যা প্রদান করেছে সেখানে তার ব্যক্তিগত বিশ্বাস ও ধ্যানধারণা প্রতিফলিত হয়েছে। এছাড়া তার বক্তব্যে অতিপ্রাকৃতিক ও কাল্পনিক কারণ উল্লেখ রয়েছে। তাই তার বক্তব্য হলো লৌকিক ব্যাখ্যা।

ঘ. উদ্দীপকে রহিমের ব্যাখ্যা বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা এবং তার দাদির ব্যাখ্যা লৌকিক ব্যাখ্যার সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। বৈজ্ঞানিক ও লৌকিক ব্যাখ্যার মধ্যে পার্থক্য নিচে বিশ্লেষণ করা হলো-
যে ব্যাখ্যায় প্রাকৃতিক ও বৈজ্ঞানিক নিয়ম উল্লেখ করে কোনো ঘটনার ব্যাখ্যা প্রদান করা হয় তাকে বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা বলে। অন্যদিকে, যে ব্যাখ্যায় অতিপ্রাকৃতিক ও কাল্পনিক কারণ উল্লেখ করে ঘটনার ব্যাখ্যা প্রদান করা হয় তাকে লৌকিক ব্যাখ্যা বলে। বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা সংশ্লিষ্ট ঘটনার সাথে প্রাসঙ্গিক হয়ে থাকে। আর প্রাসঙ্গিকতা ব্যাখ্যার একটি বড় গুণ। অন্যদিকে, লৌকিক ব্যাখ্যা সংশ্লিষ্ট ঘটনার সাথে অপ্রাসঙ্গিক হয়। অর্থাৎ এখানে ঘটনার প্রাসঙ্গিকতা অনুপস্থিত থাকে।
বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যায় সংযুক্তিকরণ করা হয়। এখানে কোনো ঘটনাকে সমজাতীয় অন্যান্য ঘটনার সাথে সংযুক্ত করে ব্যাখ্যা প্রদান করা হয়। অন্যদিকে, লৌকিক ব্যাখ্যায় সংযুক্তিকরণ নেই। তাই এখানে সংশ্লিষ্ট ঘটনাকে অন্যান্য ঘটনার সাথে সংযুক্ত করা হয় না। সর্বোপরি বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যায় যেহেতু প্রকৃত কারণ উল্লেখ করে ব্যাখ্যা প্রদান করা হয়, তাই এ ব্যাখ্যা সবসময় একই থাকে। অর্থাৎ, বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা ব্যক্তিভেদে ভিন্ন হয় না। কিন্তু লৌকিক ব্যাখ্যায় অতিপ্রাকৃতিক কারণ ও ব্যক্তির ব্যক্তিগত বিশ্বাস প্রতিফলিত হয়ে থাকে। তাই এ ব্যাখ্যা ব্যক্তিভেদে ভিন্ন হয়ে থাকে।
পরিশেষে বলা যায়, বৈজ্ঞানিক ও লৌকিক ব্যাখ্যার মধ্যে বিভিন্ন দিক দিয়ে পার্থক্য রয়েছে। তবে উভয় প্রকার ব্যাখ্যার মধ্যে বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যাই প্রকৃত ব্যাখ্যা প্রদান করে থাকে।

৩. দৃশ্যকল্প-১: বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে। অতএব, বজ্রপাত হবে।
দৃশ্যকল্প-২: আকাশে চাঁদ উঠল, নদীতে জোয়ার এল। চাঁদ নেই, নদীতে ভাটা দেখা দিল।
ক. ব্যাখ্যা কী?
খ. পরম নিয়মকে ব্যাখ্যা করা যায় না কেন?
গ. দৃশ্যকল্প-১ এ বর্ণিত ব্যাখ্যাটির রূপ ব্যাখ্যা করো।
ঘ. দৃশ্যকল্প-২ এ ইঙ্গিতকৃত বিষয়টি কীভাবে বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যার সাথে সম্পর্কিত? বিশ্লেষণ করো।

৩ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. কোনো জটিল, অস্পষ্ট, দুর্বোধ্য ও অনির্দিষ্ট বিষয়কে সহজ, সরল ও প্রাঞ্জল ভাষায় ব্যক্ত করাই হলো ব্যাখ্যা (Explanation)।

খ. সর্বোচ্চ নিয়ম হওয়ার কারণে মৌলিক বা পরম নিয়মের ব্যাখ্যা দেওয়া যায় না।
মৌলিক বা পরম নিয়ম হলো সর্বোচ্চ নিয়ম। যেমন: প্রকৃতির নিয়মানুবর্তিতা নীতি, কার্যকারণ নিয়ম ইত্যাদি। এসব নিয়মের চেয়ে উচ্চতর অন্য কোনো নিয়ম নেই। পাশাপাশি এরূপ নিয়মকে অন্য কোনো নিয়মের অন্তর্ভুক্তও করা যায় না। তাই মৌলিক বা পরম নিয়মের ব্যাখ্যা দেওয়া সম্ভব নয়।

গ. দৃশ্যকল্প-১ এ বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যার শৃঙ্খলযোজন রূপের দৃষ্টান্ত লক্ষ করা যায়।
শৃঙ্খলযোজন হচ্ছে বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যার একটি বিশেষ রূপ। সাধারণত শৃঙ্খলযোজন কথাটির অর্থ হলো কতকগুলো ঘটনার পর্যায়ক্রমিক পারস্পরিক সংযুক্তি। অনেক সময় একটি ঘটনা বা কার্য সরাসরি কোনো কোনো কারণের ফলে সংঘটিত না হয়ে দূরবর্তী কোনো কারণ থেকে সংঘটিত হয়। অর্থাৎ, যে বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যায় কোনো কার্য ও তার দূরবর্তী কারণের মধ্যে একটি মধ্যবর্তী পর্যায় আবিষ্কার করা হয় তাকে শৃঙ্খলযোজন বলে। শৃঙ্খলযোজনের মাধ্যমে দেখানো হয় যে, কোনো কার্য তার কারণ থেকে সরাসরি উদ্ভব হয় না, বরং ঘটনার কারণ ও চূড়ান্ত কার্যের মধ্যবর্তী পর্যায় থাকে। এই মধ্যবর্তী পর্যায় অতিক্রম করেই কার্যটি সংঘটিত হয়। যার দৃষ্টান্ত দৃশ্যকল্প-১ এ লক্ষ করা যায়।
দৃশ্যকল্প-১ এ বর্ণিত, বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে। অতএব বজ্রপাত হবে। বৈজ্ঞানিকদের মতে, বিদ্যুৎ তাপ উৎপাদন করে, তাপ বায়ুর আকস্মিক প্রসার ঘটায় এবং বায়ুর সম্প্রসারণের কারণেই প্রচন্ড শব্দের সৃষ্টি হয়। তাই কার্যের (বজ্র গর্জনের) ও তার দূরবর্তী কারণের (বিদ্যুতের) অন্তর্বর্তী যোগসূত্র হচ্ছে তাপ, তাপের ফলে বায়ুর সম্প্রসারণ; এ অন্তর্বর্তী যোগসূত্রই উভয়ের মধ্যে সম্বন্ধ শৃঙ্খলযোজনের সাহায্যে ব্যাখ্যা করা হয়। তাই বলা যায়, দৃশ্যকল্প-১ এ বর্ণিত শৃঙ্খলযোজন রূপের দৃষ্টান্ত।

ঘ. দৃশ্যকল্প-২ এ বর্ণিত দৃষ্টান্ত বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যার অন্তর্ভুক্তি রূপের দৃষ্টান্ত।
সাধারণভাবে অন্তর্ভুক্তির অর্থ হচ্ছে একটি ঘটনাকে অন্য একটি ঘটনার আওতায় নিয়ে আসা বা একটি ক্ষুদ্র ঘটনাকে অন্য একটি বৃহৎ ঘটনার অধীন করা। বস্তুত অনেক সময় আলোচ্য ঘটনাকে তার চেয়ে বড় কোনো ঘটনার অধীনে এনে ব্যাখ্যা করা হয়। বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যার এ ধরনের প্রক্রিয়াকেই বলা হয় ‘অন্তর্ভুক্তি'। অর্থাৎ, এ ক্ষেত্রে একটি কম ব্যাপক নিয়মকে তার থেকে ব্যাপকতর নিয়মের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। আর এভাবে আলোচ্য ব্যাখ্যা পদ্ধতি বেশি ব্যাপক নিয়ম থেকে কম ব্যাপক নিয়মের দিকে অগ্রসর হওয়ায় তা অবরোহ পদ্ধতির অনুসারী হয়ে থাকে। অর্থাৎ, অন্তর্ভুক্তি নামক বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যায় অবরোহ প্রক্রিয়া কার্যকর হয়ে থাকে।
উদ্দীপকের দৃশ্যকল্প-২ এ উল্লেখিত জোয়ার-ভাটার বিষয়টি যে প্রাকৃতিক নিয়মে সংঘটিত হয়, তা মূলত মাধ্যাকর্ষণ নিয়মের' অন্তর্গত। কাজেই জোয়ার-ভাটা সম্পর্কিত কম ব্যাপক বা বিশেষ নিয়মকে অধিক ব্যাপক বা সার্বিক নিয়ম হিসেবে মাধ্যাকর্ষণ নিয়মের আওতায় ব্যাখ্যা করার প্রক্রিয়াই হলো ‘অন্তর্ভুক্তি’ রূপ।
তাই বলা যায়, দৃশ্যকল্প-২ এ ইঙ্গিতকৃত বিষয়টি বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যার সাথে সম্পর্কিত।

৪. সকালে যখন আকাশ কালো হয়ে হঠাৎ বৃষ্টির সাথে বজ্রপাত শুরু হয়। ভয়ে, আতঙ্কে রাহাত বাবাকে প্রশ্ন করল, ‘‘বজ্রপাত কী?’’ রাহাতের বাবা উত্তরে বললো, ‘‘বজ্রপাত হলো আকাশে দানব কর্তৃক নিক্ষেপিত সাদা আগুনের ঝলক।’’ একথা শুনে রাহাতের মা বললো, ‘‘বজ্রপাত হলো আকাশে ভাসমান মেঘের ভারি কণার ঘর্ষণের ফলে তৈরি আলো।’’
ক. বৈজ্ঞানিক ব্যাখার ভিত্তি কী ?
খ. বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা কেন অবরোহমূলক প্রক্রিয়া?
গ. রাহাতের বাবার বক্তব্যে কোন ধরনের ব্যাখ্যা প্রতিফলিত হয়েছে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. রাহাতের মা এবং বাবার বক্তব্যে বিদ্যমান বিষয়ের পার্থক্য পাঠ্যবইয়ের আলোকে বিশ্লেষণ করো।

৪ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. বৈজ্ঞানিক ব্যাখার ভিত্তি হলো কার্যকারণ নিয়ম।

খ. সার্বিক নীতি থেকে বিশেষ নীতি প্রকাশ করা হয় বলে বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা এক ধরনের অবরোহ প্রক্রিয়া।
অবরোহমূলক প্রক্রিয়ায় সার্বিক দৃষ্টান্ত থেকে বিশেষ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। অনুরূপভাবে ‘অন্তর্ভুক্তি’ রূপের মাধ্যমে বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যায় উচ্চতর কোনো সাধারণ নিয়ম থেকে বিশেষ নিয়ম অনুমান করা হয়। এ কারণে বলা হয় বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা হলো অবরোহমূলক প্রক্রিয়া।

গ. রাহাতের বাবার বক্তব্যে লৌকিক ব্যাখ্যা প্রতিফলিত হয়েছে।
যখন অতিপ্রাকৃতিক ও মনগড়া কারণ উল্লেখ করে কোনো ঘটনার বিবৃতি দেওয়া হয় তখন তাকে লৌকিক ব্যাখ্যা বলে। লৌকিক ব্যাখ্যা ব্যক্তির নিজস্ব বিশ্বাস ও ধ্যানধারণার ওপর নির্ভরশীল। তাই এ প্রকার ব্যাখ্যার কোনো যৌক্তিক ও বৈজ্ঞানিক মূল্য নেই।
আলোচ্য উদ্দীপকে রাহাতের বাবা বজ্রপাত সম্পর্কে বলেন, ‘‘বজ্রপাত হলো আকাশে দানব কর্তৃক নিক্ষেপিত সাদা আগুনের ঝলক।’’ তার এই বক্তব্য বজ্রপাতের সংজ্ঞার সঙ্গে অপ্রাসঙ্গিক এবং এটি রাহাতের বাবার নিজস্ব বক্তব্য। তাই বলা যায়, রাহাতের বাবার বক্তব্য লৌকিক ব্যাখ্যার সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।

ঘ. রাহাতের মা এবং বাবার বক্তব্য যথাক্রমে বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা ও লৌকিক ব্যাখ্যার সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। নিচে উভয়ের মধ্যে বিদ্যমান পার্থক্য পাঠ্যবইয়ের আলোকে বিশ্লেষণ করা হলো-
যে ব্যাখ্যায় প্রাকৃতিক ও বৈজ্ঞানিক নিয়ম উল্লেখ করে কোনো ঘটনার ব্যাখ্যা প্রদান করা হয় তাকে বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা বলে। অন্যদিকে, যে ব্যাখ্যায় অতিপ্রাকৃতিক ও কাল্পনিক কারণ উল্লেখ করে ঘটনার ব্যাখ্যা প্রদান করা হয়। তাকে লৌকিক ব্যাখ্যা বলে। বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা সংশ্লিষ্ট ঘটনার সাথে প্রাসঙ্গিক হয়ে থাকে। কিন্তু লৌকিক ব্যাখ্যা সংশ্লিষ্ট ঘটনার সাথে প্রাসঙ্গিক হয় না।
বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যায় সংযুক্তিকরণ করা হয়। এখানে কোনো ঘটনাকে সমজাতীয় অন্যান্য ঘটনার সাথে সংযুক্ত করে ব্যাখ্যা প্রদান করা হয়। অন্যদিকে, লৌকিক ব্যাখ্যায় সংযুক্তিকরণ নেই। তাই এখানে সংশ্লিষ্ট ঘটনাকে অন্যান্য ঘটনার সাথে সংযুক্ত করা হয় না। সর্বোপরি বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যায় যেহেতু প্রকৃত কারণ উল্লেখ করে ব্যাখ্যা প্রদান করা হয়, তাই এ ব্যাখ্যা সবসময় একই থাকে। অর্থাৎ, বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা ব্যক্তিভেদে ভিন্ন হয় না। অন্যদিকে, লৌকিক ব্যাখ্যায় অতিপ্রাকৃতিক কারণ ও ব্যক্তির ব্যক্তিগত বিশ্বাস প্রতিফলিত হয়ে থাকে। তাই এ ব্যাখ্যা ব্যক্তিভেদে ভিন্ন হয়ে থাকে।
পরিশেষে বলা যায়, বৈজ্ঞানিক ও লৌকিক ব্যাখ্যার মধ্যে বিভিন্ন দিক দিয়ে পার্থক্য রয়েছে। তবে উভয় প্রকার ব্যাখ্যার মধ্যে বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যাই প্রকৃত ব্যাখ্যা প্রদান করে থাকে।

৫. বৈশিষ্ট্য-১: জটিল, দুর্বোধ্য, রহস্যাবৃত বিষয়কে সহজ-সরল, সাবলীল ও স্পষ্টীকরণ করা।
বৈশিষ্ট্য-২: অনুমান, প্রকল্প, সংযুক্তিকরণ এবং শ্রেণিকরণের সাথে সম্পর্কিত।
বৈশিষ্ট্য-৩: অজ্ঞানতা, অতিপ্রাকৃতিকতা, অলৌকিকতা, গোঁড়ামি ও অন্ধবিশ্বাসের সাথে সম্পর্কিত।
ক. বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যার রূপ কয়টি?
খ. ‘চিন্তার মৌলিক নিয়ম’ এর কেন ব্যাখ্যা হয় না?
গ. বৈশিষ্ট্য-১ এ কীসের ইঙ্গিত করা হয়েছে? ইহার প্রাসঙ্গিকতা ব্যাখ্যা করো।
ঘ. বৈশিষ্ট্য-২ এবং বৈশিষ্ট্য-৩ এ নির্দেশিত বিষয়ে বৈসাদৃশ্য বিশ্লেষণ করো।

৫ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যার রূপ তিনটি। যথাত বিশ্লেষণ, শৃঙখলযোজন ও অন্তর্ভুক্তি।

খ. সর্বোচ্চ নিয়ম হওয়ার কারণে চিন্তার মৌলিক নিয়মের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দেওয়া যায় না।
চিন্তার মৌলিক নিয়ম হলো সর্বোচ্চ নিয়ম। যেমন: প্রকৃতির নিয়মানুবর্তিতা নীতি, কার্যকারণ নিয়ম ইত্যাদি। এসব নিয়মের চেয়ে উচ্চতর অন্য কোনো নিয়ম নেই। পাশাপাশি এরূপ নিয়মকে অন্য কোনো নিয়মের অন্তর্ভুক্তও করা যায় না। তাই এরূপ মৌলিক নিয়মের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দেওয়া সম্ভব নয়।

গ. বৈশিষ্ট্য-১ এ ব্যাখ্যার ইঙ্গিত করা হয়েছে। নিচে ব্যাখ্যার প্রাসঙ্গিকতা উল্লেখ করা হলো-
প্রকৃতিতে প্রতিনিয়ত অসংখ্য ঘটনা ঘটে চলেছে এবং কিছু ঘটনা এত জটিল অবস্থায় থাকে যে, সেগুলো সম্পর্কে সুস্পষ্টভাবে কোনোকিছু বলা আমাদের পক্ষে সম্ভব হয় না। ব্যাখ্যার মাধ্যমে ঐ ঘটনাগুলো আমাদের কাছে স্পষ্ট হয় এবং আমরা এগুলো সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা লাভ করতে পারি। এভাবে ব্যাখ্যার মাধ্যমে আমরা কোনো বিষয়ের বা ঘটনার প্রকৃত কারণ জানতে পারি। কেননা একটি ঘটনার ঘটনা বিভিন্ন রকম হতে পারে।
অন্ধবিশ্বাস ও কুসংস্কার দূর করার জন্যও ব্যাখ্যার প্রয়োজন। কেননা সাধারণ মানুষ অনেক সময় অতি প্রাকৃতিক কারণ উল্লেখ করে কোনো ঘটনার ব্যাখ্যা প্রদান করে। কিন্তু প্রকৃত ব্যাখ্যায় এসব অলৌকিকতার কোনো স্থান নেই। তাই চূড়ান্তভাবে অন্ধবিশ্বাস ও কুসংস্কার দূর করতে ব্যাখ্যার প্রাসঙ্গিকতা রয়েছে। পাশাপাশি জ্ঞানের পরিধি বৃদ্ধির জন্যও ব্যাখ্যার গুরুত্ব রয়েছে। সাধারণত মানুষ কোনো বিষয় সম্পর্কে খুব বেশি জানতে আগ্রহী হয় না। কিন্তু যখন কেউ কোনো বিষয়ের ব্যাখ্যা দিতে চান তখন তাকে অনেক কিছুই জানতে হয়। কেননা ব্যাখ্যার মধ্যে বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত উপস্থাপন করতে হয়। এতে আমাদের জ্ঞানের পরিধি বৃদ্ধি পায়।
তাই বলা যায়, জ্ঞানের পরিধি বৃদ্ধির জন্য ব্যাখ্যার গুরুত্ব অপরিসীম।

ঘ. বৈশিষ্ট্য-২ ও বৈশিষ্ট্য-৩ এ যথাক্রমে বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা ও লৌকিক ব্যাখ্যার দিকটি প্রকাশ পেয়েছে। নিচে উভয়পক্ষের মধ্যে পার্থক্য বিশ্লেষণ করা হলো-
যে ব্যাখ্যায় প্রাকৃতিক ও বৈজ্ঞানিক নিয়ম উল্লেখ করে কোনো ঘটনার ব্যাখ্যা প্রদান করা হয় তাকে বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা বলে। অন্যদিকে, যে ব্যাখ্যায় অতিপ্রাকৃতিক ও কাল্পনিক কারণ উল্লেখ করে ঘটনার ব্যাখ্যা করা হয় তাকে লৌকিক ব্যাখ্যা বলে। বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা সংশ্লিষ্ট ঘটনার সাথে প্রাসঙ্গিক হয়ে থাকে। আর প্রাসঙ্গিকতা ব্যাখ্যার একটি বড় গুণ। অন্যদিকে, লৌকিক ব্যাখ্যা সংশ্লিষ্ট ঘটনার সাথে অপ্রাসঙ্গিক হয়ে থাকে। অর্থাৎ, এখানে ঘটনার প্রাসঙ্গিকতা অনুপস্থিত থাকে।
বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যায় কোনো ঘটনাকে সমজাতীয় অন্যান্য ঘটনার সাথে সংযুক্ত করে ব্যাখ্যা করা হয়। অন্যদিকে, লৌকিক ব্যাখ্যায় সংশ্লিষ্ট ঘটনাকে অন্যান্য ঘটনার সাথে সংযুক্ত করা হয় না। সর্বোপরি বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা ব্যক্তিভেদে ভিন্ন হয় না। লৌকিক কিন্তু ব্যাখ্যা ব্যক্তিভেদে ভিন্ন হয়ে থাকে।
পরিশেষে বলা যায়, বৈজ্ঞানিক ও লৌকিক ব্যাখ্যার মধ্যে বিভিন্ন দিক দিয়ে পার্থক্য রয়েছে। তবে উভয় প্রকার ব্যাখ্যার মধ্যে বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যাই প্রকৃত ব্যাখ্যা প্রদান করে থাকে।

৬. দৃষ্টান্ত-১: নলকূপের হাতলে চাপ দিলেই পানি উপরে উঠে।
দৃষ্টান্ত-২: বর্ষায় পলি জমে মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি পাওয়ায় ভালো ফসল হওয়ার কারণ এবং ভালো ফসল হওয়া খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত হওয়ার কারণ।
দৃষ্টান্ত-৩: বিজ্ঞানী স্যার আইজ্যাক নিউটনের মাধ্যাকর্ষণ এর নিয়ম অনুসারে জড়বস্তু সর্বদা ভূ-পৃষ্ঠে পতিত হবে।
ক. বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা কী?
খ. লৌকিক ব্যাখ্যাকে সাধারণ মানুষের ব্যাখ্যা বলা হয় কেন?
গ. দৃষ্টান্ত-১ এ বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যার কোন রূপের প্রতিফলন ঘটেছে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. দৃষ্টান্ত-২ ও দৃষ্টান্ত-৩ এ উল্লিখিত বিষয়সমূহ বিশ্লেষণ করো।

৬ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. প্রকৃতির নিয়মানুযায়ী কার্যকারণ সম্পর্কের ভিত্তিতে কোনো ঘটনার ব্যাখ্যা প্রদান করাই হচ্ছে বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা।

খ. লৌকিক ব্যাখ্যায় সাধারণ মানুষের মনগড়া ধারণা প্রাধান্য পায় বলে এরূপ ব্যাখ্যাকে সাধারণ মানুষের ব্যাখ্যা বলা হয়।
ব্যক্তির মনগড়া ধারণা বা অতিপ্রাকৃত শক্তির আশ্রয়ে যে ব্যাখ্যা প্রকাশ পায় তা-ই লৌকিক ব্যাখ্যা। এ ধরনের ব্যাখ্যা সবাই দিতে পারে। কারণ এরূপ ব্যাখ্যায় ব্যক্তির নিজস্ব ধারণা প্রকাশ পায়। এ কারণে লৌকিক ব্যাখ্যাকে সাধারণ মানুষের ব্যাখ্যা বলে।

গ. দৃষ্টান্ত-১ এ বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যার বিশ্লেষণ রূপের প্রতিফলন ঘটেছে।
বিশ্লেষণ হচেছ বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যার একটি অন্যতম রূপ। জগতে অনেক ঘটনা আছে যেখানে একাধিক ঘটনা বা কারণ মিলিত হয়ে সংশ্লিষ্ট ঘটনা বা কার্যটি সংগঠিত করে। এ ক্ষেত্রে কার্যটিকে বলা হয় মিশ্র বা সংযুক্ত কার্য, যাকে সহজ বা প্রাঞ্জলভাবে উপস্থাপন করাই হচ্ছে বিশ্লেষণ রূপ।
দৃষ্টান্ত-১ এ বর্ণিত, নলকূপের হাতলে চাপ দিলেই পানি উপরে উঠে। এটা একটি মিশ্র কার্য। কারণ নলকূপের এই পানি উঠে আসাটাকে বিশ্লেষণ করলে এর বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দাঁড়ায়- বায়ুর প্রতি বর্গ ইঞ্চিতে ১৫ পাউন্ড চাপ দেয়, পানি সব দিকে সমান চাপ দেয়, হাতলে চাপ দিলে নলের ভেতরের বাতাস অপসারিত হয় এবং দুটি বিপরীত চাপের একটি অপসারিত হওয়ায় নলের মধ্যদিয়ে পানির ঊর্ধ্বমুখী গতি সঞ্চারিত হয়ে উপরে উঠে।
এভাবে বিশ্লেষণ রূপের মাধ্যমে নলকূপের হাতলে চাপ দিলেই পানির উপরে ওঠার ঘটনা জানা যায়।

ঘ. দৃষ্টান্ত-২ এ শৃঙ্খলযোজন এবং দৃষ্টান্ত-৩ এ অন্তর্ভুক্তির বিষয়টি পরিলক্ষিত হয়। নিচে উভয় বিষয় বিশ্লেষণ করা হলো-
কার্য ও দূরবর্তী কারণের মধ্যবর্তী স্তর বা পর্যায়কে বলা হয় শৃঙ্খলযোজন। এ শৃঙ্খলযোজনকে আবার প্রক্ষেপণও বলা হয়। তাই শৃঙ্খলযোজন হলো এমন একটি যোগসূত্র যা কার্য ও কারণের উভয় সম্বন্ধকে আবদ্ধ করে বা সম্পর্কিত করে। দৃষ্টান্ত-২ এ বর্ণিত, বর্ষায় পলি জমে মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি পায় যা ভালো ফসল হওয়ার কারণ এবং ভালো ফসল হওয়া খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত হওয়ার কারণ। এভাবে কার্য ও দূরবর্তী কারণের মধ্যবর্তী যোগসূত্র হচ্ছে শৃঙ্খলযোজন।
বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যার ক্ষেত্রে একটি কম ব্যাপক নিয়মকে অধিক ব্যাপক নিয়মের অধীনে এনে ব্যাখ্যা করাকে অন্তর্ভুক্তি বলে। দৃষ্টান্ত-৩ এ উল্লেখিত, বিজ্ঞানী স্যার আইজ্যাক নিউটনের মাধ্যাকর্ষণ এর নিয়মানুসারে জড় বস্তু সর্বদা ভূ-পৃষ্ঠে পতিত হবে। অর্থাৎ তিনি মাধ্যাকর্ষণকে বৃহৎ নিয়ম মনে করে ভূপৃষ্ঠের অন্যান্য বিষয়কে এই নিয়মের অধীনে এনে ব্যাখ্যা করেছেন। এভাবে কোনো কম ব্যাপক নিয়মকে কোনো বেশি ব্যাপক নিয়মের অধীনে এনে ব্যাখ্যা করাকে অন্তর্ভুক্তি বলে।
পরিশেষে বলা যায়, বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যার দুটি রূপ হলো শৃঙ্খলযোজন ও অন্তর্ভুক্তি। স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যের কারণে উভয়ে একটি থেকে অন্যটি আলাদা।

৭. চীনের হুয়ান শহরে এক নতুন ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। প্রতিদিন নতুন নতুন লোক আক্রান্ত হচ্ছেন। চীনের হুয়ান শহর থেকে এই ভাইরাস সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। সাধারণ মানুষ মনে করেন মানুষের আচরণে দেবতারা অসন্তুষ্ট হয়ে এ শাস্তি প্রদান করেছে। কিন্তু বৈজ্ঞানিক গবেষণা থেকে জানা যায় করোনা নামক ভাইরাসের কারণে সারা বিশ্বে মহামারী ছড়িয়ে পড়ে।
ক. ব্যাখ্যা কাকে বলে?
খ. মিশ্রকার্য হলো পৃথক কারণের একত্রিত ফল- বুঝিয়ে দাও।
গ. উদ্দীপকে মহামারীর কারণ হিসেবে বৈজ্ঞানিক গবেষণায় যে বক্তব্য ফুটে উঠেছে তার বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করো।
ঘ. উদ্দীপকে উল্লেখিত সাধারণ মানুষের ধারণার সঙ্গে বৈজ্ঞানিক গবেষণার যে পার্থক্য দেখা যায়ত তা বিশ্লেষণ করো।

৭ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. কোনো জটিল, অস্পষ্ট, দুর্বোধ ও অনির্দিষ্ট বিষয়কে সহজ, সরল ও প্রাঞ্জল ভাষায় ব্যক্ত করাকে ব্যাখ্যা (Explanation) বলে।

খ. মিশ্রকার্য হলো পৃথক কারণের একত্রিত ফল-উক্তিটি যথার্থ।
আমরা জানি, মিশ্র কার্য হচ্ছে কয়েকটি স্বতন্ত্র কারণের একত্রিত ফল। বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যার একটি গুরুত্বপূর্ণ রূপ হলো ‘বিশ্লেষণ’। এই বিশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় মিশ্র কার্যের স্বতন্ত্র কারণকে পৃথকভাবে বা আলাদা আলাদা করে দেখানো হয়ে থাকে। যেমন- বর্তমানে সড়ক দূর্ঘটনার কারণ হিসেবে আমরা চালকের অসচেতনতা, পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণের অভাব, ট্রাফিক আইনের প্রতি অবহেলা ইত্যাদি কারণসমূহকে পৃথক পৃথকভাবে দায়ী করতে পারি। এ কারণেই বলা যায়, মিশ্রকার্য হলো পৃথক কারণের একত্রিত ফল।

গ. উদ্দীপকে মহামারীর কারণ হিসেবে বৈজ্ঞানিক গবেষণায় বৈজ্ঞানিক ব্যাখার ধারণা ফুটে উঠেছে। নিচে বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যার বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করা হলো-
বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যার মাধ্যমে জটিল, দুর্বোধ্য ও অস্পষ্ট ঘটনাকে স্পষ্ট, সহজ, সরল ও বোধগম্য করে প্রকাশ করা হয়। এরূপ ব্যাখ্যায় ঘটনার কার্যকারণ বা প্রকৃত কারণ উল্লেখ করা হয়। তাই এ ব্যাখ্যার মাধ্যমে আমরা কোনো ঘটনার প্রকৃত কারণ জানতে পারি বা ঘটনার স্বরূপ আমাদের কাছে বোধগম্য হয়। বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যায় প্রাকৃতিক ও বৈজ্ঞানিক নিয়ম উল্লেখ করে ঘটনার ব্যাখ্যা দেওয়া হয় বলে এ ব্যাখ্যা সবসময় একই থাকে এবং স্থান- কাল-পাত্রভেদে ভিন্ন হয় না। যার দৃষ্টান্ত উদ্দীপকে লক্ষ করা যায়।
উদ্দীপকে বর্ণিত, চীনের হুয়ান শহরে এক নতুন ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। বৈজ্ঞানিক গবেষণা থেকে জানা যায় করোনা নামক ভাইরাসের কারণে সারা বিশ্বে মহামারী ছড়িয়ে পড়ে। গবেষকদের এই তথ্য সঠিক এবং সর্বজনীন সত্য। এরূপ মৌলিক তথ্যের কারণে বলা যায়, উদ্দীপকে মহামারীর কারণ হিসেবে বৈজ্ঞানিক গবেষণায় বৈজ্ঞানিক ব্যাখার ধারণা ফুটে উঠেছে।

ঘ. উদ্দীপকে উল্লেখিত সাধারণ মানুষের ধারণা লৈকিক ব্যাখ্যা এবং বৈজ্ঞানিক গবেষণা বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যার সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। নিচে উভয় ব্যাখ্যার মধ্যে পার্থক্য বিশ্লেষণ করা হলো-
যে ব্যাখ্যায় প্রাকৃতিক ও বৈজ্ঞানিক নিয়ম উল্লেখ করে কোনো ঘটনার ব্যাখ্যা দেওয়া হয় তাকে বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা বলে। অন্যদিকে, যে ব্যাখ্যায় অতিপ্রাকৃতিক ও কাল্পনিক কারণ উল্লেখ করে কোনো ঘটনার ব্যাখ্যা দেওয়া হয় তাকে লৌকিক ব্যাখ্যা বলে। বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা সংশ্লিষ্ট ঘটনার সাথে প্রাসঙ্গিক হয়ে থাকে। কিন্তু লৌকিক ব্যাখ্যায় ঘটনার প্রাসঙ্গিকতা অনুপস্থিত থাকে।
বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যায় সংযুক্তিকরণ করা হয়। অন্যদিকে, লৌকিক ব্যাখ্যায় সংশ্লিষ্ট ঘটনাকে অন্যান্য ঘটনার সাথে সংযুক্ত করা হয় না। বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা ব্যক্তিভেদে ভিন্ন হয় না। কিন্তু লৌকিক ব্যাখ্যা ব্যক্তিভেদে ভিন্ন হয়ে থাকে।
পরিশেষে বলা যায়, বৈজ্ঞানিক ও লৌকিক ব্যাখ্যার মধ্যে বিভিন্ন দিক দিয়ে পার্থক্য রয়েছে। তবে উভয় ব্যাখ্যার মধ্যে বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যাই প্রকৃত তথ্য করে থাকে।

৮. এ জগৎ বিচিত্র, জটিল ও রহস্যময়। এই রহস্যের উত্তর খুঁজতে গিয়ে জন্ম হয়েছে জ্ঞান-বিজ্ঞানের নানা শাখা-প্রশাখা। কিন্তু সকল ঘটনার প্রকৃত কার্যকারণ মানুষের পক্ষে আবিষ্কার করা হয়ে ওঠেনি। তাই বলা যায়, সকল কিছুর বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দান সম্ভব নয়।
ক. কোন ব্যাখা প্রকল্প প্রণয়নে সহায়তা করে?
খ. বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যায় অন্তর্ভুক্তির প্রয়োজন হয় কেন?
গ. উদ্দীপকে ঘটনার কারণ জানার প্রচেষ্টা কোন বিষয়ের সাথে সম্পর্কিত? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকে উল্লেখিত বিষয়ের সীমাবদ্ধতা বিশ্লেষণ করো।

৮ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. বৈজ্ঞানিক ব্যাখা।

খ. অন্তর্ভুক্তি হলো বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যার অন্যতম রূপ।
বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যায় গ্রহণযোগ্যতা যাচাই করার জন্য আলোচ্য ঘটনাকে তার চেয়ে বড় কোনো ঘটনার অধীনে এনে ব্যাখ্যা করার প্রয়োজন হয়। আর বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যায় এ ধরনের প্রক্রিয়াকে বলা হয় অন্তর্ভুক্তি। যেমন: চুম্বকত্বের নিয়মকে বৈদ্যুতিক শক্তির ব্যাপকতর নিয়মের অন্তর্ভুক্ত করে ব্যাখ্যা করার প্রক্রিয়াই হলো অন্তর্ভূক্তি। এ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কোনো বৈজ্ঞানিক ঘটনার গ্রহণযোগ্যতা যাচাই করা হয়। তাই বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যায় অন্তর্ভুক্তির প্রয়োজন হয়।

গ. উদ্দীপকে ঘটনার কারণ জানার প্রচেষ্টা ব্যাখ্যাকরণের সাথে সম্পর্কিত।
ব্যাখ্যা হলো কোনো কিছুকে সহজ ও স্পষ্টতর করে তোলা। অর্থাৎ, জাগতিক বিষয়সমূহের মধ্যে অপেক্ষাকৃত জটিল, দুর্বোধ্য, অস্পষ্ট ও রহস্যময় ঘটনাকে সহজ ও সাবলীলভাবে উপস্থাপন করাই ব্যাখ্যার উদ্দেশ্য। বস্তুত আমরা কোনো জটিল বা রহস্যময় ঘটনাকে সরল ও সহজবোধ্য করে জানার চেষ্টা চালাই। যেমন- দিন-রাত হওয়ার কারণ, ঋতু পরিবর্তনের কারণ, বিভিন্ন দুর্যোগ হওয়ার কারণ প্রভৃতি সম্পর্কে আমাদের কৌতূহল বিদ্যমান। এ কারণেই বিভিন্ন বই-পুস্তক, জ্ঞানী ব্যক্তির মাধ্যমে আমরা জগতের এসব রহস্য ভেদ করার চেষ্টা করি। এভাবে কোনো ঘটনার কারণ আবিষ্কার করতে গিয়ে অস্পষ্ট ও দুর্বোধ্য ঘটনাবলিকে সুস্পষ্ট ও সহজবোধ্য করে জানার প্রয়াসকেই আমরা ব্যখ্যা বলি।
উদ্দীপকে বলা হয়েছে, এ জগৎ বিচিত্র, জটিল ও রহস্যময়। এ রহস্য উদ্ঘাটন করতে গিয়ে জন্ম হয় জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখার। বস্তুত এসব শাখার মাধ্যমেই আমরা অস্পষ্ট ও দুর্বোধ্য ঘটনাবলিকে জানার প্রয়াস চালাই। তাই বলা যায়, উদ্দীপকে ঘটনার কারণ জানার প্রচেষ্টা ব্যাখ্যাকরণের সাথে সম্পর্কিত।

ঘ. উদ্দীপকে ব্যাখ্যাকরণ বা বৈজ্ঞানিক ব্যাখার বিষয়ে আলোকপাত করা হয়েছে। নিম্নে বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যার সীমাবদ্ধতা আলোচনা করা হলো:
জটিল ও দুর্বোধ্য বিষয়কে সুস্পষ্ট করার লক্ষ্যে বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা করা হয়। এক্ষেত্রে সার্বিক নিয়মের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দেওয়া সম্ভব নয়। কারণ এ ধরনের নিয়ম অন্য কোনো নিয়মের অন্তর্ভুক্ত করা যায় না। যেমন-প্রকৃতির নিয়মানুবর্তিতা নীতি, কার্যকারণ নিয়ম, চিন্তার মৌলিক নিয়ম প্রভৃতি। আবার জড় পদার্থের মৌলিক গুণ ব্যাখ্যা করা যায় না।
যেমন- কাঠ, কলম, পেন্সিল, বইখাতা প্রভৃতি দৃশ্যমান বস্তু একটি থেকে অন্যটি পৃথক। এর ফলে এদের একটিকে অন্যটির সাথে যুক্ত করা যায় না। তাই এসব গুণকে ব্যাখ্যা করা যায় না।
কোনো বস্তুর নিজস্ব বা স্বকীয় বৈশিষ্ট্যের ব্যাখ্যা করা যায় না। কারণ এক ব্যক্তি বা বস্তুর নিজস্ব বৈশিষ্ট্য অন্য কোনো ব্যক্তি বা বস্তুর সাথে সাদৃশ্যের ভিত্তিতে যুক্ত করা যায় না। তাই ব্যক্তি বা বস্তুর এসব গুণকেও ব্যাখ্যা করা যায় না। এছাড়া অনন্য ও অতিসাধারণ কিছু বিষয় যেমন মানুষের মন, আত্মা, ঈশ্বর প্রভৃতি অতিজাগতিক বিষয়গুলোর বিশ্লেষণ, শৃঙখলযোজন কিংবা অন্তর্ভুক্তি কোনোটিই করা সম্ভব নয়। তাই এসব বিষয়ের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যাদান অসম্ভব।
উপর্যুক্ত আলোচনা সাপেক্ষে আমরা এ সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারি যে, আমাদের মৌলিক অনুভূতি, পরম বিষয় প্রভৃতির সংযুক্তিকরণ ও অন্তর্ভুক্তি সম্ভব নয়। এ কারণেই সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোতে ব্যাখ্যার সীমাবদ্ধতা পরিলক্ষিত হয়।

৯. স্বপন ও সুজন সুন্দরবনের গভীর জঙ্গলের মধ্য দিয়ে হাঁটছিল ও গল্প করছিল। জঙ্গলের মধ্যে একটি গুহার সামনে আসতেই স্বপন বলল, এ গুহায় বিরাট এক দানব বাস করে। গত বছর কমল কাকার ছেলে কার্তিককে ধরে মেরে ফেলেছে। তখন সুজন বললো, এ ঘটনা আমি বিশ্বাস করি না। হয়তো সে কোনো বাঘের শিকার হয়েছিল, আর বাঘেই তাকে খেয়ে ফেলেছে।
ক. 'বাদুড় একটি পাখি' এটি কোন ব্যাখাকে নির্দেষ করে?
খ. ব্যাখ্যা বলতে কী বোঝায়?
গ. উদ্দীপকে কার্তিকের মৃত্যু নিয়ে স্বপনের বক্তব্য, যুক্তিবিদ্যার কোন ধরনের ব্যাখ্যার সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ? বর্ণনা করো।
ঘ. স্বপন ও সুজনের বক্তব্যের তুলনামূলক বিশ্লেষণপূর্বক কোনটিকে তুমি যথার্থ বলে মনে করো?

৯ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. 'বাদুড় একটি পাখি' এটি লৌকিক ব্যাখাকে নির্দেশ করে।

খ. ব্যাখ্যা হলো কোনো পূর্বাবস্থাকে সহজ করে প্রকাশ করা।
একটি অস্পষ্ট বা দুর্বোধ্য বিষয়কে সুস্পষ্ট ও সুবোধ্য করে তোলাই হলো ব্যাখ্যা। অস্পষ্ট, জটিল এবং রহস্যজনক বলে দৃষ্ট হয় তবে সেই বিষয়কে সুবোধ্য, স্পষ্ট, সহজ ও বোধগম্য করে তোলার যে প্রক্রিয়া তাকেই ব্যাখ্যা বলে।

গ. উদ্দীপকে কার্তিকের মৃত্যু নিয়ে স্বপনের বক্তব্য যুক্তিবিদ্যায় আলোচিত লৌকিক ব্যাখ্যার সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।
লৌকিক ব্যাখ্যা হলো কোনো ঘটনাকে অতিপ্রাকৃত বা অলৌকিক শক্তির সাহায্যে ব্যাখ্যা করার প্রয়াস। বস্তুত প্রকৃতির নিয়মাবলি সম্বন্ধে সাধারণ মানুষের মধ্যে অনেকের ধারণা থাকে খুবই কম। এক শ্রেণির মানুষ নানা কারণে জ্ঞানচর্চার সুযোগও পায় না। এজন্য তারা বহুবিধ কুসংস্কারে আক্রান্ত। এ কারণে এরূপ মানুষ অনেক সময় কোনো জটিল বা আপাত রহস্যময় ঘটনাকে কাল্পনিক বা অদৃশ্য শক্তির সাহায্যে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করে। সাধারণ মানুষের এরূপ প্রয়াসই লৌকিক ব্যাখ্যা।
উদ্দীপকে বর্ণিত ঘটনায়, স্বপন জঙ্গলের একটি গুহা দেখিয়ে বন্ধুকে বলে, সেখানে বিরাট এক দানব বাস করে। ঐ দানব গত বছর তার কমল কাকার ছেলে কার্তিককে ধরে মেরে ফেলেছে। বস্তুত স্বপনের এ বক্তব্য ঘটনার কার্যকারণ নীতি নির্ভর নয়, বরং নিজের মনগড়া। এ কারণে তার ব্যাখ্যাটি লৌকিক ব্যাখ্যার সাথেই সাদৃশ্যপূর্ণ।

ঘ. স্বপন ও সুজনের বক্তব্যে যথাক্রমে লৌকিক ব্যাখ্যা ও বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যার নমুনা দেখা যায়। সুজনের বক্তব্যটি যথার্থ বলে মনে করি। নিচে উভয়ের বক্তব্যের তুলনামূলক বিশ্লেষণ করা হলো-
কোনো কার্যকারণ নিয়ম ব্যতিরেকে কেবল মনগড়া ধারণা বা অতিপ্রাকৃত শক্তির আশ্রয় নিয়ে যে ব্যাখ্যা প্রদান করা হয়, তা লৌকিক ব্যাখ্যা। অন্যদিকে, কোনো ঘটনার কার্যকারণ নিয়ম অনুসরণ করে যে ব্যাখ্যা প্রদান করা হয়, তাই বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা। বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যায় সংশ্লিষ্ট বিষয়ের মৌলিক ও প্রাসঙ্গিক দিক উল্লেখ করা হয়। এ কারণে বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যায় অলৌকিকতা বা আকস্মিকতার কোনো স্থান নেই। অন্যদিকে, লৌকিক ব্যাখ্যায় সাধারণত অতিপ্রাকৃত শক্তির প্রভুত্ব স্বীকার করা হয়। বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যায় সংশ্লিষ্ট ঘটনার নিয়মকে একই জাতীয় অন্যান্য ঘটনার নিয়মের সাথে সংযুক্ত করা হয়। কিন্তু লৌকিক ব্যাখ্যায় অতিপ্রাকৃত শক্তির আশ্রয় নেওয়া ও মনগড়া কথা বলা হয় বলে এখানে কোনো সুনির্দিষ্ট নিয়ম থাকে না।
উদ্দীপকে বর্ণিত ঘটনায় স্বপন সুন্দরবনের জঙ্গলের মধ্য দিয়ে হাঁটার সময় বন্ধু সুজনকে একটি গুহা দেখিয়ে বলে, সেখানকার একটি দানব তার কাকার ছেলে কার্তিককে ধরে মেরে ফেলেছে। এটি স্বপনের মনগড়া অর্থাৎ নিছক লৌকিক ব্যাখ্যা। কিন্তু সুজন পারিপার্শ্বিকতা বিচার করে বলে, কার্তিক আসলে কোনো বাঘের শিকার হয়েছিল, আর বাঘেই তাকে খেয়ে ফেলেছে। তার এ বক্তব্য মৌলিক ও প্রাসঙ্গিক বিষয়ের সাথে সংশ্লিষ্ট। তাই এটি বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা হিসেবে পরিগণিত।
বস্তুত, বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যায় ঘটনার মৌলিক ও গুরুত্বপূর্ণ দিক প্রাধান্য পায়। কিন্তু লৌকিক ব্যাখ্যায় ব্যক্তির নিজস্ব বিশ্বাস ও ধ্যান-ধারণা প্রকাশ পায়। এ কারণে আমি স্বপনের বক্তব্যের চেয়ে সুজনের বক্তব্যকে যথার্থ বলে মনে করি।

১০. শিক্ষক শাহেদ ক্লাসে গিয়ে জানতে পারলেন শিক্ষার্থী নয়নের কলেরা হয়েছে। তিনি শিক্ষার্থীদের প্রশ্ন করলেন, 'বলো তো, কলেরার কারণ কী?’ কণা বললো, খারাপ বাতাস লাগলে কলেরা হয়। বীণাবললো, মূলত কমা (,) আকৃতির এক ধরনের জীবাণুর কারণে কলেরা হয়ে থাকে। এ রোগ হলে শরীর থেকে প্রচুর পানি বেরিয়ে যায়।
ক. বৈজ্ঞানিক ব্যাখার ভিত্তিমূলে কী কাজ করে?
খ. বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যার রূপ বলতে কী বোঝ?
গ. কণার বক্তব্যে কোন ধরনের ব্যাখ্যার প্রতিফলন ঘটেছে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত কণা ও বীণার বক্তব্যের আন্তঃসম্পর্ক বিশ্লেষণ করো।

১০ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. বৈজ্ঞানিক ব্যাখার ভিত্তিমূলে কাজ করে তথ্য ও উপাত্ত।

খ. বিভিন্ন যুক্তিবিদ বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যার যেসব সংজ্ঞা প্রদান করেছেন, তা থেকে বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যার তিনটি রূপ লক্ষ করা যায়। যেমন: ১. বিশ্লেষণ, ২. শৃঙখলযোজন ও ৩. অন্তর্ভুক্তি।
যে বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যায় কোনো মিশ্র কার্যকে স্বতন্ত্র কারণসমূহের নিয়মের সাথে যুক্ত করা হয় তাকে বিশ্লেষণ বলে। শৃঙখলযোজন হলো বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যায় কোনো দূরবর্তী কারণ ও তার কার্যের মধ্যে একটি মধ্যবর্তী অবস্থা আবিষ্কার করার প্রক্রিয়া। অপরদিকে, অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যায় একটি কম ব্যাপক নিয়মকে বেশি ব্যাপক নিয়মের অধীনে এনে ব্যাখ্যা করা হয়।

গ. কণার বক্তব্যে লৌকিক ব্যাখ্যার প্রতিফলন ঘটেছে।
ঘটনার কার্যকারণ সম্পর্ক ছাড়া কেবল মনগড়া ধারণা বা অতিপ্রাকৃত শক্তির আশ্রয় নিয়ে যে ব্যাখ্যা দেওয়া হয়, তাকে লৌকিক ব্যাখ্যা বলে। লৌকিক ব্যাখ্যায় ব্যক্তির নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ পায়। যেমন: চন্দ্রগ্রহণ সম্পর্কিত ব্যাখ্যা। চন্দ্রগ্রহণ একটি প্রাকৃতিক ঘটনা হলেও অনেকেই একে ‘রাহুর গ্রাস’ বলে মনে করে থাকে। তাদের এরূপ বিবৃতিই হলো লৌকিক ব্যাখ্যা।
উদ্দীপকে বর্ণিত ঘটনায়, কণা কলেরা রোগের কারণ হিসেবে 'খারাপ ভিবরিও কলেরা নামক এক প্রকার ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণে এ রোগ হয়ে থাকে। এ কারণে উদ্দীপকে কণার বক্তব্যটি লৌকিক ব্যাখ্যা ছাড়া আর কিছুই নয়। বাতাস' লাগাকে দায়ী করে। এ বক্তব্যে তার মনগড়া ধারণা প্রকাশ পেয়েছে। কারণ, কলেরা হলো এক প্রকার গুরুতর সংক্রামক রোগ।

ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত কণা ও বীণার বক্তব্যে যথাক্রমে লৈকিক ব্যাখ্যা ও বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা নির্দেশিত হয়েছে। নিচে উভয় বক্তব্যের আন্তঃসম্পর্ক বিশ্লেষণ করা হলো-
উদ্দীপকে বর্ণিত ঘটনায় কণা কলেরার কারণ হিসেবে বলে, খারাপ বাতাস লাগলে কলেরা হয়। কিন্তু এটি তার মনগড়া ব্যাখ্যা। এ ধরনের ব্যাখ্যাকে বলা হয় লৌকিক ব্যাখ্যা। কারণ এরূপ ব্যাখ্যায় কার্যকারণ নিয়ম ব্যতিরেকে সাধারণ মানুষের নিছক মনগড়া ধারণা প্রকাশ পায়। অন্যদিকে, কোনো ঘটনার কার্যকারণ নিয়ম অনুসরণ করে যে ব্যাখ্যা প্রদান করা হয়, তাকে বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা বলে। উদ্দীপকের বীণা বলে, কমা (,) আকৃতির এক ধরনের জীবাণুর কারণে কলেরা হয়ে থাকে। এ রোগ হলে শরীর থেকে প্রচুর পানি বেরিয়ে যায়। তার এই বক্তব্য কলেরা রোগ হওয়ার সঠিক ও বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা হিসেবে স্বীকৃত। বস্তুত উভয় ব্যাখ্যাই আমাদের কৌতূহলের পরিতৃপ্তি সাধন করে। পাশাপাশি কোনো অস্পষ্ট, জটিল বা দুর্বোধ্য বিষয়কে সহজ ও স্পষ্ট করে বুঝতে সাহায্য করে। সে অর্থে উভয় ব্যাখ্যার মধ্যে সাদৃশ্য বিদ্যমান।
অন্যদিকে, লৌকিক ও বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যার মধ্যে মৌলিক ও পদ্ধতিগত তফাৎ রয়েছে। বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যায় সংশ্লিষ্ট বিষয়ের মৌলিক ও প্রাসঙ্গিক দিক উল্লেখ করা হয়। এ কারণে বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যায় অলৌকিকতা বা আকস্মিকতার কোনো স্থান নেই। অন্যদিকে, লৌকিক ব্যাখ্যায় অতিপ্রাকৃত শক্তির প্রভুত্ব স্বীকার করা হয়। বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যায় সংশ্লিষ্ট ঘটনার নিয়মকে একই জাতীয় অন্যান্য ঘটনার নিয়মের সাথে সংযুক্ত করা হয়। কিন্তু লৌকিক ব্যাখ্যায় অতিপ্রাকৃত শক্তির আশ্রয় নিয়ে মনগড়া ব্যাখ্যা দেওয়া হয় বলে এখানে কোনো সুনির্দিষ্ট নিয়ম থাকে না।
পরিশেষে বলা যায়, বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যায় কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক থাকে যা লৌকিক ব্যাখ্যায় থাকে না। তাছাড়া লৌকিক ব্যাখ্যা প্রকৃতিগতভাবে ব্যক্তির নিজস্ব বিশ্বাস ও ধ্যান-ধারণার ওপর নির্ভরশীল। এই কারণে লৌকিক ব্যাখ্যা যৌক্তিক দিক থেকে গ্রহণযোগ্য নয়।
Share:

0 Comments:

Post a Comment