HSC যুক্তিবিদ্যা ২য় পত্র (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর pdf download অধ্যায় ৫

HSC যুক্তিবিদ্যা ২য় পত্র (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর pdf download

এইচএসসি পরীক্ষার পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি
HSC Logic 2nd Paper Srijonshil question and answer pdf download.

উচ্চ মাধ্যমিক

যুক্তিবিদ্যা
দ্বিতীয় পত্র

সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
৫ম অধ্যায়

HSC Logic 2nd Paper
Srijonshil
Question and Answer pdf download

১. দৃশ্যকল্প-১: শীতের সকাল। দীপ্তি শরীর গরম করার জন্য জ্বলন্ত আগুনের পাশে দাঁডw়য়ে আছে। দীপ্তি দেখল, জ্বলন্ত আগুন থেকে আমরা যতই দূরে সরে যাই ততই তাপ কম লাগে এবং যতই নিকটে আসি ততই তাপ বেশি লাগে।
দৃশ্যকল্প-২: কনিকা সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী। গণিত পরীক্ষায় সে শূন্য (০০) নম্বর পেয়েছে। কনিকা ভাবতেই পারছে না কেন এমন ফল বিপর্যয় হলো। মা বলল, গণিত পরীক্ষার আগে তুমি ডিম খেয়েছ বলে শূন্য নম্বর পেয়েছ।
ক. পরীক্ষণাত্মক পদ্ধতিগুলো কী কী?
খ. ব্যতিরেকী পদ্ধতিকে পরীক্ষণের পদ্ধতি বলা হয় কেন?
গ. দৃশ্যকল্প-১ এ কার্যকারণ সম্পর্ক প্রমাণের কোন পদ্ধতিকে নির্দেশ করে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. দৃশ্যকল্প-২ এ মা যে যুক্তি দেখিয়েছেন তার যথার্থতা পাঠ্যবিষয়ের আলোকে মূল্যায়ন করো।

১ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. পরীক্ষণাত্মক পদ্ধতি পাঁচ প্রকার। যথা- অন্বয়ী, ব্যতিরেকী, যৌথ অন্বয়ী-ব্যতিরেকী পদ্ধতি, সহপরিবর্তন পদ্ধতি ও পরিশেষ পদ্ধতি।

খ. ব্যতিরেকী পদ্ধতির দৃষ্টান্তসমূহ পরীক্ষণের সাহায্যে সংগৃহীত বলে একে পরীক্ষণের পদ্ধতি বলে।
ব্যতিরেকী পদ্ধতিতে যে দৃষ্টান্তের প্রয়োজন তা কেবল পরীক্ষণের মাধ্যমে পাওয়া যায়। আমরা জানি, ব্যতিরেকী পদ্ধতিতে দুটি দৃষ্টান্ত থাকে। যথা- সদর্থক দৃষ্টান্ত ও নঞর্থক দৃষ্টান্ত। সদর্থক দৃষ্টান্তে আলোচ্য ঘটনাটির মূল বৈশিষ্ট্য উপস্থিত থাকে এবং নঞর্থক দৃষ্টান্তে তা অনুপস্থিত থাকে। উভয় দৃষ্টান্ত পরীক্ষণের সাহায্যে সংগ্রহ করা হয়। এ কারণে বলা হয়, ব্যতিরেকী পদ্ধতি হলো পরীক্ষণের পদ্ধতি।

গ. দৃশ্যকল্প-১ এ কার্যকারণ সম্পর্ক প্রমাণের সহপরিবর্তন পদ্ধতিকে নির্দেশ করে।
‘সহপরিবর্তন’ শব্দটির অর্থ পারস্পরিক সমান পরিবর্তন। অর্থাৎ সহপরিবর্তন পদ্ধতি অনুযায়ী, একটি ঘটনার পরিবর্তনের সাথে সাথে যদি অন্য ঘটনাও সমানভাবে পরিবর্তিত হয়, তাহলে পূর্ববর্তী ঘটনাকে কারণ এবং পরবর্তী ঘটনাকে কার্য বলে। যেমন- বায়ুর চাপ বৃদ্ধি বা হ্রাসের সাথে সাথে ব্যারোমিটারের পারদ স্তম্ভের উচ্চতাও বৃদ্ধি বা হ্রাস পায়। সুতরাং আমরা বলতে পারি, বায়ুর চাপই পারদের ওঠা-নামার কারণ। এখানে ‘বায়ুর চাপ হলো কারণ এবং ‘পারদের ওঠা-নামা’ হলো কার্য।
দৃশ্যকল্প-১ এ বর্ণিত ঘটনায় দীপ্তি খেয়াল করে যে, জ্বলন্ত আগুন থেকে আমরা যতই দূরে সরে যাই ততই তাপ কম লাগে এবং যতই কাছে আসি ততই তাপ বেশি লাগে। এভাবে একটি ঘটনার পরিবর্তনের সাথে অন্য ঘটনার পরিবর্তন লক্ষ করা যায়। এ কারণে দৃশ্যকল্প-১ এ বর্ণিত ঘটনা সহপরিবর্তনের পদ্ধতির সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।

ঘ. দৃশ্যকল্প-২ এ মা যে যুক্তি দেখিয়েছেন তা কাকতালীয় অনুপপত্তি ঘটেছে। এ কারণে তার যুক্তি যথার্থ নয়।
ব্যতিরেকী পদ্ধতির ভুল প্রয়োগে কাকতালীয় অনুপপত্তি ঘটে। ব্যতিরেকী পদ্ধতি মূলত একটি পরীক্ষণমূলক পদ্ধতি। কিন্তু যখন ভ্রান্ত নিরীক্ষণের ক্ষেত্রে এ পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয় এবং কোনো অবান্তর ঘটনার উপস্থিতি ও অনুপস্থিতিকে পার্থক্যসূচক ঘটনা মনে করে কার্যকারণ সম্পর্ক প্রমাণের চেষ্টা করা হয়, সেক্ষেত্রে কাকতালীয় অনুপপত্তি ঘটে বলে। যেমন- পরীক্ষার পূর্বে মিষ্টি খাওয়ায় পরীক্ষা ভালো হয়েছে এবং যেদিন পরীক্ষার পূর্বে মিষ্টি খাওয়া হয়নি, সেদিন পরীক্ষা খারাপ হয়েছে। সুতরাং পরীক্ষা ভালো হওয়া ও মিষ্টি খাওয়ার মধ্যে কার্যকারণ সম্পর্ক বিদ্যমান। অর্থাৎ মিষ্টি খাওয়া হচ্ছে পরীক্ষা ভালো হওয়ার কারণ- এটি একটি কাকতালীয় অনুপপত্তির দৃষ্টান্ত। ঠিক একই অনুপপত্তি দৃশ্যকল্প-২ এ লক্ষ করা যায়।
দৃশ্যকল্প-২ এ কনিকার মা বলেন, গণিত পরীক্ষার আগে কনিকা ডিম খেয়েছে বলেই সে শূন্য নম্বর পেয়েছে। অর্থাৎ তিনি ভিত্তিহীন বা অবান্তর ঘটনার উপস্থিতি বা অনুপস্থিতিকে পার্থক্যসূচক ঘটনা মনে করে কার্যকারণ সম্পর্ক প্রমাণের চেষ্টা করেছেন। এ কারণে কনিকার মার বক্তব্যে কাকতালীয় অনুপপত্তি ঘটেছে।
কাজেই দৃশ্যকল্প- ২ এ মা যে যুক্তি দেখিয়েছেন তা যথার্থ নয়।

২. ১ম দৃশ্যকল্প: সূর্যের তাপ যত বাড়ে গরমের মাত্রাও তত বাড়ে। আবার সূর্যের তাপ যত কমে গরমের মাত্রাও তত কমে।
২য় দৃশ্যকল্প: রহিম বাসা থেকে বের হতে গিয়ে হোঁচট খেল, রাস্তায় তার দুর্ঘটনা ঘটলো। সুতরাং হোঁচট খাওয়া দুর্ঘটনার কারণ।
ক. ব্যতিরেকী পদ্ধতি কী?
খ. দৃষ্টান্তের অনিরীক্ষণ অনুপপত্তি ঘটে কেন?
গ. ২য় দৃশ্যকল্পে কোন নিয়ম লঙ্ঘিত হয়েছে?
ঘ. পাঠ্যপুস্তকের আলোকে ১ম দৃশ্যকল্প ও ২য় দৃশ্যকল্পের প্রকৃতি বিশ্লেষণ করো।

২ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. ব্যতিরেকী পদ্ধতি হলো এমন এক পরীক্ষণের পদ্ধতি যেখানে সদর্থক ও নর্থক দৃষ্টান্তের পরিপ্রেক্ষিতে দুটি ঘটনা থেকে কার্য ও কারণ নির্ণয় করা হয়।

খ. কোনো বিষয় নিরীক্ষণের সময় প্রয়োজনীয় সকল অবস্থা নিরীক্ষণ না করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলে দৃষ্টান্তের অনিরীক্ষণ অনুপপত্তি ঘটে।
একটি ঘটনা যথাযথভাবে নিরীক্ষণ না করে ভুল সিদ্ধান্ত নিলে যে ভ্রান্তি ঘটে, তাকে অনিরীক্ষণ অনুপপত্তি বলে। যেমন- কয়েকজন লম্বা লোককে নিরীক্ষণ করে দেখা গেল যে, তাদের বুদ্ধি কম। এ থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো যে, সব লম্বা লোকের বুদ্ধি কম। এরূপ দৃষ্টান্তে অনিরীক্ষণ অনুপপত্তি ঘটবে। কারণ যেসব লম্বা লোক বুদ্ধিমান তাদের অনিরীক্ষিত রেখে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।

গ. ২য় দৃশ্যকল্পে ব্যতিরেকী পদ্ধতির নিয়ম লঙ্ঘিত হয়েছে। এ কারণে কাকতালীয় অনুপপত্তি ঘটেছে।
ব্যতিরেকী পদ্ধতি মূলত একটি পরীক্ষণমূলক পদ্ধতি। কিন্তু এ পদ্ধতি নিরীক্ষণের ওপর প্রতিষ্ঠিত হলে কাকতালীয় অনুপপত্তি ঘটে। যার দৃষ্টান্ত ২য় দৃশ্যকল্পে পাওয়া যায়।
২য় দৃশ্যকল্পে বলা হয়েছে, রহিম বাসা থেকে বের হতে গিয়ে হোঁচট খায় এবং রাস্তায় তার দুর্ঘটনা ঘটে। সুতরাং হোঁচট খাওয়া দুর্ঘটনার কারণ। এতে একটি সদর্থক ও নঞর্থক দৃষ্টান্তের উল্লেখ আছে। উক্ত দৃষ্টান্ত অনুসারে, ‘হোচট খাওয়া’ যখন অনুপস্থিত ছিল, তখন দুর্ঘটনাও অনুপস্থিত ছিল। এরপর ‘হোচট খাওয়া' যখন উপস্থিত হলো তখন দুর্ঘটনাও উপস্থিত হলো। এ থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো যে, হোঁচট খাওয়া দুর্ঘটনার কারণ। কিন্তু হোচট খাওয়ার সাথে দুর্ঘটনার কোনো সম্পর্ক নেই। তাই যুক্তিটিতে ব্যতিরেকী পদ্ধতির নিয়ম লঙ্ঘিত হয়েছে।

ঘ. ১ম দৃশ্যকল্পে সহপরিবর্তন পদ্ধতি এবং ২য় দৃশ্যকল্পে ব্যতিরেকী পদ্ধতির দৃষ্টান্ত পরিলক্ষিত হয়। নিচে উভয় দৃশ্যকল্পের প্রকৃতি বিশ্লেষণ করা হলো-
‘সহপরিবর্তন' শব্দটির অর্থ পারস্পরিক সমান পরিবর্তন। সহপরিবর্তন পদ্ধতি অনুযায়ী, একটি ঘটনার পরিবর্তনের সাথে সাথে যদি অন্য ঘটনাও সমানভাবে পরিবর্তিত হয়, তাহলে পূর্ববর্তী ঘটনাকে কারণ এবং পরবর্তী ঘটনাকে কার্য বলে। যেমন- ১ম দৃশ্যকল্পে বলা হয়েছে, সূর্যের তাপ যত বাড়ে গরমের মাত্রাও তত বাড়ে। আবার সূর্যের তাপ যত কমে গরমের মাত্রাও তত কমে। সুতরাং আমরা বলতে পারি, সূর্যের তাপই গরমের মাত্রা ওঠা-নামার কারণ। অর্থাৎ সহপরিবর্তন পদ্ধতির সাহায্যে বলা যায়, এখানে ‘সূর্যের তাপ’ হলো কারণ এবং গরমের মাত্রা ওঠা-নামা’ হলো কার্য।
ব্যতিরেকী পদ্ধতি হলো যথার্থ পরীক্ষণের পদ্ধতি। এ পদ্ধতিতে সদর্থক ও নঞর্থক উভয় দৃষ্টান্তই পাওয়া যায়। সদর্থক দৃষ্টান্তে আলোচ্য ঘটনাটির মূল বৈশিষ্ট্য উপস্থিত থাকে এবং নঞর্থক দৃষ্টান্তে তা অনুপস্থিত থাকে। তবে উভয় দৃষ্টান্তই পরীক্ষণের সাহায্যে সংগ্রহ করা হয়। যার দৃষ্টান্ত ২য় দৃশ্যকল্পে পাওয়া যায়।
পরিশেষে বলা যায়, ব্যতিরেকী পদ্ধতি এবং সহপরিবর্তন পদ্ধতি দুটি ভিন্ন পদ্ধতি যার প্রকৃতি উপরের আলোচনায় সুস্পষ্ট।

৩. মজিদ ও রঞ্জিত পাশাপাশি বসে পরীক্ষা দিল। পরীক্ষক দেখলেন যে, মজিদ পাঁচটি প্রশ্নের মধ্যে চারটির নির্ভুল উত্তর দিয়েছে, কিন্তু একটি প্রশ্নের উত্তরে অনেক ভুল করেছে। পরীক্ষক আরো দেখলেন যে, এ চারটি উত্তর রঞ্জিতের উত্তরের সাথে হুবহু মিলে যায়। তখন পরীক্ষক সিদ্ধান্ত নিলেন যে, এ পঞ্চম প্রশ্নের উত্তর মজিদের নিজ বুদ্ধিপ্রসূত।
ক. পরিশেষ পদ্ধতি কী?
খ. পরিশেষ পদ্ধতির দুটি অসুবিধা লেখো।
গ. উদ্দীপকে পরীক্ষক কোন পদ্ধতি ব্যবহার করে পঞ্চম প্রশ্নের উত্তর সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন?
ঘ. পরীক্ষক যে পদ্ধতি প্রয়োগ করে সঠিক সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পেরেছেন সে পদ্ধতির প্রয়োজনীয়তা বিশ্লেষণ করো।

৩ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. যে পরীক্ষামূলক পদ্ধতির ক্ষেত্রে আরোহের সাহায্যে কোনো ঘটনার যে অংশকে পূর্বেই কোনো ঘটনার কারণ বলে জানা গেছে, সে অংশকে ঐ ঘটনা থেকে বিয়োগ করার পর অবশিষ্ট অংশকে পূর্ববর্তী ঘটনা বা পূর্বগের কার্য বলে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়, তাকে পরিশেষ পদ্ধতি বলে।

খ. পরিশেষ পদ্ধতির দুটি অসুবিধা হলো-
১. পরিশেষ পদ্ধতি প্রয়োগের জন্য অভিজ্ঞতার প্রয়োজন হয়। যার এ পদ্ধতি সম্পর্কে কোনো ধারণা নেই, সে এই পদ্ধতি প্রয়োগ করতে পারে না।
২. পরিশেষ পদ্ধতিকে কোনো একক কার্য বা কারণের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা যায় না। এই পদ্ধতি জটিল বা মিশ্র ঘটনার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হলেও কোনো একক ঘটনার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হয় না।

গ. উদ্দীপকে পরীক্ষক পরিশেষ পদ্ধতি ব্যবহার করে পঞ্চম প্রশ্নের উত্তর সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
উদ্দীপকের শিক্ষক মূল ঘটনা থেকে জানা অংশ বাদ দিয়ে অবশিষ্ট অংশের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এটি কার্যকারণ সম্পর্ক নির্ণয়ের পরিশেষ পদ্ধতিকে নির্দেশ করে। পরিশেষ পদ্ধতি কার্যকারণ সম্পর্ক নির্ণয়ের অন্যতম পদ্ধতি হলেও এটি কোনো মৌলিক পদ্ধতি নয়। পরিশেষ অর্থ হলো সর্বশেষ বা অবশিষ্ট অংশ। এই পদ্ধতিতে কোনো ঘটনার যে অংশকে পূর্বেই আরোহের সাহায্যে পূর্ববর্তী ঘটনা বা পূর্বগের কারণ বলে জানা গেছে, সেই অংশকে মূল ঘটনা থেকে বাদ দিয়ে অবশিষ্ট অংশকে পূর্ববর্তী ঘটনার কার্য বলে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। যেমন- পানিসহ বালতির ওজন ২০ কেজি। আগেই জানা আছে বালতির ওজন ৫ কেজি। অতএব, পরিশেষ পদ্ধতি অনুযায়ী বালতির ওজন বাদ দিলে পানির ওজন হবে ১৫ কেজি।
উদ্দীপকের পরীক্ষক মজিদের পাঁচটি প্রশ্নের উত্তরের মধ্যে চারটি প্রশ্নের উত্তর রঞ্জিতের সাথে হুবহু মিলে যায় বলে জানতে পেরেছেন। তাই পরীক্ষক মল ঘটনা থেকে জানা অংশ বাদ দিয়ে অবশিষ্ট অংশকে পূর্ববর্তী ঘটনার কার্য বলে চিহ্নিত করেছেন। তাই বলা যায়, উদ্দীপকের পরীক্ষক পরিশেষ পদ্ধতি প্রয়োগ করে পঞ্চম প্রশ্নের উত্তর সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

ঘ. উদ্দীপকের পরীক্ষক পরিশেষ পদ্ধতি প্রয়োগ করে সঠিক সিদ্ধান্তে পৌছাতে পেরেছেন। নিচে পরিশেষ পদ্ধতির প্রয়োজনীয়তা বিশ্লেষণ করা হলো-
উদ্দীপকের পরীক্ষক মজিদের খাতা মূল্যায়ন করতে গিয়ে পাঁচটি প্রশ্নের মধ্যে চারটি সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। আর সব কয়টি প্রশ্ন থেকে জানা অংশ বাদ দিয়ে অবশিষ্ট অংশকে পূর্ববর্তী ঘটনার কার্য বলে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন। পরীক্ষকের এভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণের বিষয়টি কার্যকারণ সম্পর্ক নির্ণয়ের পদ্ধতি হিসেবে পরিশেষ পদ্ধতিকেই প্রতিফলিত করে।
বিভিন্ন জটিল বা মিশ্র ঘটনা ব্যাখ্যার ক্ষেত্রে পরিশেষ পদ্ধতি খুবই প্রয়োজনীয়। পরিশেষ পদ্ধতির সাহায্যে কোনো মিশ্র কার্য শুদ্ধ ও মিশ্র কারণ থেকে কারণ ও কার্য উভয়ই আলাদা করা যায়। তাই এই পদ্ধতির সাহায্যে কারণ ও কার্য উভয়ই আলাদা করা যায়। বহু কারণবাদজনিত সমস্যার সমাধানে পরিশেষ প্রতি খুবই প্রয়োজনীয়। পরিশেষ পদ্ধতির ক্ষেত্রে অনেকটা গাণিতিক হিসাব নিকাশের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। তাই এই পদ্ধতির সাহায্যে নিশ্চিত সিদ্ধান্ত প্রতিষ্ঠা করা যায়। নিরীক্ষণ ও পরীক্ষণ উভয় পদ্ধতির ক্ষেত্রে প্রয়োগ করার জন্য পরিশেষ পদ্ধতি প্রয়োজনীয়। এছাড়া বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে পরিশেষ পদ্ধতির প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।
সুতরাং দেখা যাচ্ছে যে, উদ্দীপকের পরীক্ষক যে পদ্ধতি প্রয়োগ করে। সঠিক সিদ্ধান্তে পৌছাতে পেরেছেন, সেটি হলো পরিশেষ পদ্ধতি। আর মিশ্র ঘটনা ব্যাখ্যা, বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার, কারণ ও কার্য নির্ণয়সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে পরিশেষ পদ্ধতির প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।

৪. বারেক ও তারেক ব্যবসায়ী। বারেক তারেককে বলল, শীতকালে যতই বেশি শীত বাড়তে থাকে সবজির দামও তত কমতে থাকে। আবার শীত যখন কমতে থাকে সবজির দামও তত বাড়তে থাকে। তারেক বলল, বিষয়টি যেন চাহিদা ও সরবরাহভিত্তিক।
ক. 'অন্বয়ী' শব্দটি সর্বপ্রথম কে ব্যবহার করেন?
খ. অনিরীক্ষণ অনুপপত্তি কখন ঘটে?
গ. উদ্দীপকে বারেকের বক্তব্য কোন পরীক্ষণমূলক পদ্ধতিকে নির্দেশ করে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকে উপস্থাপিত পদ্ধতির অসুবিধাগুলো বিশ্লেষণ করে দেখাও।

৪ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. 'অন্বয়ী' শব্দটি সর্বপ্রথম ব্যবহার করেন যুক্তিবিদ বেকন।

খ. কোন একটি বিষয় নিরীক্ষণের সময় প্রয়োজনীয় সকল অবস্থা নিরীক্ষা না করে, বিশেষ করে প্রতিকূল দৃষ্টান্ত নিরীক্ষণ না করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলে অনিরীক্ষণ অনুপপত্তি ঘটে।
কোনো ঘটনা যথাযথভাবে নিরীক্ষণ না করে ভুল সিদ্ধান্ত নিলে যে ভ্রান্তি ঘটে, তাকে অনিরীক্ষণ অনুপপত্তি বলে। যেমন- কয়েকজন লম্বা লোককে নিরীক্ষণ করে দেখা গেল যে, তাদের বুদ্ধি কম। এ থেকে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হলো যে, সব লম্বা লোকের বুদ্ধি কম। এক্ষেত্রে দৃষ্টান্তের অনিরীক্ষণ অনুপপত্তি ঘটবে। কারণ যেসব লম্বা লোক বুদ্ধিমান তাদেরকে অনিরীক্ষিত রেখে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।

গ. উদ্দীপকে বারেকের বক্তব্য সহপরিবর্তন পদ্ধতিকে নির্দেশ করে।
'সহপরিবর্তন' শব্দটির অর্থ হলো পারস্পরিক সমান পরিবর্তন। সহপরির্তন পদ্ধতিতে বলা হয়, একটি ঘটনার পরিবর্তনের সাথে সাথে যদি অন্য ঘটনাও সমানভাবে পরিবর্তিত হয়, তাহলে পূর্ববর্তী ঘটনাকে কারণ এবং পরবর্তী ঘটনাকে কার্য বলে। সহপরিবর্তন পদ্ধতির নীতি অনুসারে এই পরিবর্তন সমমুখীও হতে পারে আবার বিপরীতমুখীও হতে পারে। যেমন- বায়ুর চাপ বৃদ্ধি বা হ্রাসের সাথে সাথে ব্যারোমিটারের পারদ স্তম্ভের মাত্রাও বৃদ্ধি বা হ্রাস পায়। এরূপ পরিবর্তনের কারণে বলা হয়, বায়ুর চাপের হ্রাস-বৃদ্ধিই পারদের ওঠা-নামার কারণ।
উদ্দীপকে বর্ণিত ঘটনায় বারেক বলে, শীতকালে যতই বেশি শীত বাড়তে থাকে সবজির দামও তত কমতে থাকে। আবার শীত যখন কমতে থাকে সবজির দামও তত বাড়তে থাকে। এভাবে শীতের মাত্রার সাথে দ্রব্যের দামের যে বিপরীতমুখী সম্পর্ক তা সহপরিবর্তন পদ্ধতির সাহায্যে জানা যায়।

ঘ. উদ্দীপকে সহপরিবর্তন পদ্ধতির দৃষ্টান্ত পরিলক্ষিত হয়। নিচে এ পদ্ধতির অসুবিধাগুলো বিশ্লেষণ করা হলো-
সহপরিবর্তন পদ্ধতি নিরীক্ষণভিত্তিক হলে এর সিদ্ধান্ত সম্ভাব্য হয়। এই পদ্ধতি কেবল পরিমাণগত পরিবর্তনের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, গুণগত পরিবর্তনের ক্ষেত্রে নয়। যেসব ঘটনা গুণগতভাবে পরিবর্তিত হয়, সেসব ঘটনার ক্ষেত্রে এ পদ্ধতিতে কার্যকারণ সম্পর্ক নির্ণয় করা যায় না। আবার এমন অনেক ঘটনা আছে যা কোনো কিছুর প্রভাবে বাড়লেও খুবই ধীরগতিতে বাড়ে। এসব বিষয়েও সহপরিবর্তন পদ্ধতির প্রয়োগ সুবিধাজনক নয়।
জগতে যে সকল ঘটনা বা বিষয় পরিবর্তনশীল নয়, সে সকল ক্ষেত্রে সহপরিবর্তন পদ্ধতি কাজ করে না। যেমন- সন্তানের প্রতি মায়ের ভালোবাসা। এটি সাধারণত চিরন্তন অর্থাৎ স্থিতিশীল ঘটনা বা বিষয়। সহপরিবর্তন পদ্ধতির ক্ষেত্রে কতিপয় ভ্রান্তি বা অনুপপত্তি ঘটারও আশঙ্কা থাকে। যেমন- দৃষ্টান্তের অনিরীক্ষণজনিত অনুপপত্তি, কার্যকারণ সংক্রান্ত অনুপপত্তি ইত্যাদি।
পরিশেষে বলা যায়, সহপরিবর্তন পদ্ধতির কয়েকটি অসুবিধা রয়েছে। তবে পরিমাণগত পরিবর্তন সম্পর্কে জানার জন্য এ পদ্ধতির ভূমিকা অপরিহার্য।

৫. উদ্দীপক-১: নবজাতকের আগমনই পরিবারের সমৃদ্ধির কারণ।
উদ্দীপক-২: সাতক্ষীরা থেকে খুলনার মৃত্যুসংখ্যা বেশি, সুতরাং খুলনা একটি অস্বাস্থ্যকর স্থান।
ক. দ্বিকোটিক বিভাগ কী?
খ. সহ-কার্যকারণজনিত অনুপপত্তি কখন ঘটে?
গ. উদ্দীপক-১ এ কোন অনুপপত্তি ঘটেছে? তা ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপক-২ এর সিদ্ধান্তটি কি যথার্থ? বিশ্লেষণ করো।

৫ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. দ্বিকোটিক বিভাগ মূলত একটি আকারগত প্রক্রিয়া, যেখানে কোনো জাতিকে একটি সদর্থক ও তার নঞর্থক উপজাতিতে বিভক্ত করতে হয়।

খ. কার্যকারণ সম্পর্কবিহীন দুটি কার্যের একটিকে অন্যটির কারণ বলে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলে সহ-কার্যকারণজনিত অনুপপত্তি ঘটে।
কার্যকারণ নিয়ম অনুযায়ী কারণ ও কার্যের মধ্যে অপরিহার্য সম্পর্ক বিদ্যমান। আর কারণ থাকে আগে এবং কার্য থাকে কারণের পরে। কিন্তু অনেক সময় দুটি সহকার্যকে ঘটতে দেখে একটিকে অন্যটির কারণ মনে করা হয়। এভাবে কার্যকারণ সম্পর্কবিহীন দুটি কার্যের একটিকে অন্যটির কারণ বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হলে তা ত্রুটিপূর্ণ হয়। এই ত্রুটিকেই সহকার্যকে কারণ হিসেবে গ্রহণ সংক্রান্ত অনুপপত্তি বলে।

গ. উদ্দীপক-১ এ কাকতালীয় অনুপপত্তি ঘটেছে।
ব্যতিরেকী পদ্ধতির ভ্রান্ত প্রয়োগে কাকতালীয় অনুপপত্তি ঘটে। ব্যতিরেকী পদ্ধতি মূলত একটি পরীক্ষণ পদ্ধতি। কিন্তু একে যখন ভ্রান্তভাবে নিরীক্ষণের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা হয় এবং কোনো অবান্তর ঘটনার উপস্থিতি। বা অনুপস্থিতিকে পার্থক্যসূচক ঘটনা মনে করে কার্যকারণ সম্পর্ক প্রমাণের চেষ্টা করা হয়, সেক্ষেত্রে অনুপপত্তি দেখা দেয়। এই অনুপপত্তিকে কাকতালীয় অনুপপত্তি বলা হয়।
উদ্দীপক-১ এ বলা হয়েছে, নবজাতকের আগমনই পরিবারের সমৃদ্ধির কারণ। কিন্তু বাস্তবে নবজাতকের আগমনের সাথে পরিবারের সমৃদ্ধির কোনো কার্যকারণ সম্পর্ক নেই। এটি একটি আকস্মিক ঘটনামাত্র। তাই এখানে কাকতালীয় অনুপপত্তি ঘটেছে।

ঘ. না, উদ্দীপক-২ এর সিদ্ধান্তটি যথার্থ নয়। কারণ উদ্দীপকটিতে অন্বয়ী পদ্ধতির অনিরীক্ষণজনিত অনুপপত্তি ঘটেছে।
অন্বয়ী পদ্ধতিতে কোনো ঘটনার কারণ নির্ণয় করতে হলে বিভিন্ন ঘটনা পর্যবেক্ষণ করতে হয়। কিন্তু সব ঘটনাই গুরুত্বপূর্ণ নয়। এমন হতে পারে যে- প্রয়োজনীয় ঘটনাসমূহ পর্যবেক্ষণ না করে, কয়েকটি অপ্রয়োজনীয় অবস্থা পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে কোনো কার্যকারণ সম্পর্ক আবিষ্কার করা হলো। এক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় অবস্থা বা বাস্তব অবস্থার অনিরীক্ষণজনিত অনুপপত্তি ঘটে। যেমন- কোনো হাসপাতালে নিবিড় তত্ত্বাবধানে রাখা সকল রোগী মারা গেল। এ থেকে এটা মনে করা হলো যে, নিবিড় তত্ত্বাবধান কেন্দ্রে (ICU-তে) রাখাই মৃত্যুর কারণ। এক্ষেত্রে যে বাস্তব অবস্থাটি অনিরীক্ষিত তা হলো, নিবিড় তত্ত্বাবধানে সাধারণত মুমূর্ষু রোগীদেরই রাখা হয়। কাজেই তাদের সকলে বা অনেকেই মারা যাওয়াটা অস্বাভাবিক নয়।
উদ্দীপক-২ এ বলা হয়েছে, সাতক্ষীরা থেকে খুলনার মৃত্যুসংখ্যা বেশি, সুতরাং খুলনা একটি অস্বাস্থ্যকর স্থান। এখানে খুলনা জেলার মৃত্যুসংখ্যা বেশি বলেই জেলাটিকে অস্বাস্থ্যকর স্থান বলাটা অনিরীক্ষণজনিত সমস্যা। আর এ থেকেই উদ্দীপকে অন্বয়ী পদ্ধতির অনিরীক্ষণজনিত অনুপপত্তি ঘটেছে।
পরিশেষে বলা যায়, ভুলভাবে বা শুধু কতিপয় দৃষ্টান্ত দেখে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কারণে অনিরীক্ষণজনিত অনুপপত্তি ঘটে। উদ্দীপক-২ এ এরই দৃষ্টান্ত পরিলক্ষিত হয়।

৬. মিথিলা এবং তার মা, বাবা সকলেই একদিন পেটের পীড়ায় আক্রান্ত হয়। তাদের জিজ্ঞাসা করে জানা গেল যে, আগের রাত্রে মিথিলা ভাত, মাছ, মাংস ও ডাল খেয়েছে। মিথিলার মা ভাত, সবজি, ডিম এবং মাংস খেয়েছেন। মিথিলার বাবা রুটি, কলা, মাংস এবং সবজি খেয়েছেন।
ক. পরীক্ষণমূলক পদ্ধতিগুলো কী কী?
খ. কারণ বলতে কী বোঝায়?
গ. উদ্দীপকে পরীক্ষণমূলক যে পদ্ধতির প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে সেটি ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকে ইঙ্গিতকৃত পদ্ধতিটির সুবিধাগুলো বিশ্লেষণ করো।

৬ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. পরীক্ষণমূলক পদ্ধতি পাঁচ প্রকার। যথা- অন্বয়ী পদ্ধতি, ব্যতিরেকী পদ্ধতি, যৌথ অন্বয়ী-ব্যতিরেকী পদ্ধতি, সহপরিবর্তন পদ্ধতি ও পরিশেষ পদ্ধতি।

খ. কোনো ঘটনার পূর্ববর্তী অবস্থাকে কারণ বলে।
প্রত্যেক কার্য সংগঠনের পিছনে সুনির্দিষ্ট কারণের উপস্থিতি লক্ষণীয়। তাই কারণ হলো কার্যের অপরিবর্তনীয় শর্ত নিরপেক্ষ ও সাক্ষাৎ পূববর্তী ঘটনাবলির সমষ্টি। এক কথায়, প্রকৃতিগত দিক থেকে কারণ হলো সদর্থক ও নঞর্থক শর্তসমূহের সমষ্টি। পাশাপাশি পরিমাণগত দিক থেকে কারণ ও কার্য সমান।

গ. উদ্দীপকের দৃষ্টান্তটি অন্বয়ী পদ্ধতির অন্তর্ভুক্ত।
অন্বয় শব্দের অর্থ হলো মিল। অন্বয়ী পদ্ধতি অনুসারে একাধিক ঘটনার মধ্যে একটি সাধারণ অবস্থাকে ঐ সব ঘটনার কারণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। যেমন- ম্যালেরিয়া জ্বরে আক্রান্ত কয়েকজন রোগীর ওপর অনুসন্ধান করে। দেখা গেল যে, প্রত্যেকের মধ্যেই অ্যানোফিলিস মশার কামড় খাওয়ার ঘটনা বর্তমান। তাই অন্বয়ী পদ্ধতি অনুসারে বলা যায়, অ্যানোফিলিস নামে বিশেষ প্রজাতির মশার কামড়ই ম্যালেরিয়া জ্বরের কারণ।
উদ্দীপকে বর্ণিত, মিথিলা এবং তার মা, বাবা সবাই একদিন পেটের পীড়ায় আক্রান্ত হয়। তাদের জিজ্ঞাসা করে জানা যায় যে, সবাই বিভিন্ন খাবার খেলেও প্রত্যেকেই মাংস খেয়েছিল। এরূপ সাদৃশ্যের কারণে অর্থাৎ অন্বয়ী পদ্ধতি প্রয়োগের মাধ্যমে বোঝা যায়, খারাপ মাংস খাওয়ার কারণেই সবার পেটের পীড়া হয়েছিল।

ঘ. উদ্দীপকে অন্বয়ী পদ্ধতির ইঙ্গিত পাওয়া যায়। নিচে এ পদ্ধতির সুবিধাগুলো বিশ্লেষণ করা হলো-
অন্বয়ী পদ্ধতি একটি সহজ-সরল পদ্ধতি। এ পদ্ধতিতে নিরীক্ষণের মাধ্যমে দৃষ্টান্তসমূহ সংগ্রহ করা যায়। বিভিন্ন দৃষ্টান্তে সাধারণ ঘটনা পর্যবেক্ষণ করে সহজেই তাদের মধ্যে কার্যকারণ সম্পর্ক নির্ণয় করা যায়। বস্তুত নিরীক্ষণের মাধ্যমে ঘটনার কার্যকারণ সম্পর্ক নির্ণয় করা হয় বিধায় এর প্রয়োগক্ষেত্র অপেক্ষাগত ব্যাপকতর। পাশাপাশি অন্যান্য পদ্ধতি প্রয়োগ করতে যে শ্রম দিতে হয়, সে তুলনায় অন্বয়ী পদ্ধতি সহজতর। এ পদ্ধতির জন্য পরীক্ষাগার, যন্ত্রপাতি ইত্যাদির প্রয়োজন হয় না। তাই এটি পরীক্ষণমূলক নানাবিধ খরচ থেকে মুক্ত।
অন্বয়ী পদ্ধতিতে সহজেই কার্য থেকে যেমন কারণ নির্ণয় করা যায়, তেমনি কারণ থেকেও কার্য নির্ণয় করা যায়। পাশাপাশি এ পদ্ধতিতে সহজেই অবান্তর বা অপ্রাসঙ্গিক বিষয় বাদ দেওয়া যায়। এই কারণে অন্বয়ী পদ্ধতি প্রকল্প প্রণয়নে সহায়ক।
তাই দেখা যায়, নিরীক্ষণনির্ভর হওয়ার কারণে অন্বয়ী পদ্ধতি বেশ সুবিধাজনক। অপেক্ষাকৃত সহজ হওয়ায় এবং কৃত্রিম যন্ত্রপাতির প্রয়োজন না থাকায় এ পদ্ধতির প্রয়োগ ব্যাপকভাবে লক্ষণীয়।

৭. দৃশ্যকল্প-১: আমরা ফল খেলে সুস্থ থাকি। অতএব, ফল খাওয়াই সুস্বাস্থ্যের কারণ।
দৃশ্যকল্প-২: কলেজের আন্তঃবিভাগ সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা কলেজ অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত হয়। এতে দর্শন বিভাগ জয়লাভ করে। দর্শন বিভাগের ছাত্ররা বলল, ওয়াসিম স্যার উপস্থিত থাকলে আমরা জয়লাভ করি। আর অনুপস্থিত থাকলে আমরা হেরে যাই। সুতরাং ওয়াসিম স্যারই প্রতিযোগিতায় জয়ী হওয়ার কারণ।
ক. পরীক্ষণাত্মক পদ্ধতি কাকে বলে?
খ. অন্বয়ী পদ্ধতিকে নিরীক্ষণের পদ্ধতি বলা হয় কেন?
গ. দৃশ্যকল্প-১ এ কার্যকারণ সংক্রান্ত কোন অনুপপত্তি ঘটেছে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. দৃশ্যকল্প-২ এ সিদ্ধান্ত দেয়ার পদ্ধতিটি কী পদ্ধতি? তোমার উত্তরের সপক্ষে যুক্তি দেখাও।

৭ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. কার্যকারণ সম্পর্ক আবিষ্কার ও প্রমাণ করার জন্য যে পদ্ধতিসমূহ ব্যবহৃত হয় সেগুলোই পরীক্ষণাত্মক পদ্ধতি।

খ. ‘অন্বয়’ শব্দের অর্থ মিল। আমরা জানি, অন্বয়ী পদ্ধতি অনুযায়ী মিলের বা সাদৃশ্যের ভিত্তিতে নিরীক্ষণের মাধ্যমে প্রাপ্ত দুটি ঘটনার মধ্যে কার্যকারণ সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করা হয়। অর্থাৎ এ পদ্ধতির ক্ষেত্রে ব্যবহৃত দৃষ্টান্তসমূহ প্রাকৃতিক পরিবেশে বিদ্যমান থাকে এবং এই দৃষ্টান্তসমূহ নিরীক্ষণ করেই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। এ কারণেই অন্বয়ী পদ্ধতিকে নিরীক্ষণের পদ্ধতি বলা হয়।

গ. দৃশ্যকল্প-১ এ কার্যকারণ সম্পর্ক প্রমাণে একটি শর্তকে কারণ হিসেবে গ্রহণজনিত অনুপপত্তি ঘটেছে।
আমরা জানি, কারণ হলো সদর্থক ও নঞর্থক শর্তের সমষ্টি। কিন্তু কোনো ঘটনার কার্যকারণ সম্পর্ক নির্ণয়ে একটি শর্তকেই কারণ বলে মনে করলে ভ্রান্তির সৃষ্টি হয়। যাকে বলে শর্তকে কারণ হিসেবে গ্রহণজনিত অনুপপত্তি। বস্তুত ব্যতিরেকী পদ্ধতির অপপ্রয়োগে এ দোষ ঘটতে পারে।
দৃশ্যকল্প-১ এ বলা হয়েছে, আমরা ফল খেলে সুস্থ থাকি। অতএব, ফল খাওয়াই সুস্বাস্থ্যের কারণ। এখানে একটি শর্তকে কারণ বলে মনে করা হয়েছে। অর্থাৎ ফল খাওয়াই সুস্বাস্থ্যের একমাত্র কারণ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু সুস্থ থাকার এটিই একমাত্র কারণ নয়। এ কারণে দৃষ্টান্তটিতে একটি শর্তকে কারণ হিসেবে গ্রহণজনিত অনুপপত্তি ঘটেছে।

ঘ. দৃশ্যকল্প-২ এ সিদ্ধান্ত নেওয়ার পদ্ধতিটি হচ্ছে ব্যতিরেকী পদ্ধতি।
ব্যতিরেকী পদ্ধতি মূলত একটি পরীক্ষণের পদ্ধতি। এ পদ্ধতিতে যে দৃষ্টান্তের প্রয়োজন তা কেবল পরীক্ষণের সাহায্যে পাওয়া সম্ভব। ঘটনাবলীর ওপর নিয়ন্ত্রণ স্থাপন করে শুধু পরীক্ষণের সাহায্যেই ব্যতিরেকী পদ্ধতির প্রয়োগ ঘটানো যায়। এ পদ্ধতিতে দুটি দৃষ্টান্তের প্রয়োজন হয়। এদের একটি দৃষ্টান্ত হয় সদর্থক অন্যটি নঞর্থক। দৃষ্টান্ত দুটিতে অন্যান্য বিষয় অপরিবর্তিত রেখে একটি বিষয় হাজির করে তার ক্রিয়া লক্ষ করা হয়।
দৃশ্যকল্প-২ এ বলা হয়েছে, কলেজের দর্শন বিভাগের শিক্ষার্থীরা মনে করে তাদের ওয়াসিম স্যার উপস্থিত থাকলে তারা জয়লাভ করে। আর তিনি অনুপস্থিত থাকলে তারা হেরে যায়। সুতরাং তাদের মতে, ওয়াসিম স্যারই আন্তঃবিভাগ সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় দর্শন বিভাগের জয়ী হওয়ার কারণ। অর্থাৎ এখানে সদর্থক ও নঞর্থক দৃষ্টান্তের সাহায্যে ঘটনার কার্যকারণ সম্পর্ক নির্ণয় করা হয়েছে। তবে এই প্রক্রিয়া নিরীক্ষণ নির্ভর। এ কারণে এটি ব্যতিরেকী পদ্ধতির দৃষ্টান্ত হলেও তা কাকতালীয় অনুপপত্তি দোষে দুষ্ট।
পরিশেষে বলা যায়, ব্যতিরেকী পদ্ধতি হচ্ছে পরীক্ষণের পদ্ধতি। তাই এই পদ্ধতির মাধ্যমে নিশ্চিত সত্য লাভ করা যায়।

৮. সুমন ঠান্ডা জাতীয় খাবার গ্রহণ করলে টনসিলাইটিস রোগে আক্রান্ত হয়। আবার ঠান্ডা খাবার পরিহার করলে টনসিলাইটিস রোগে আক্রান্ত হয় না। এতে প্রতীয়মান হয়, ঠান্ডা খাবারই তার টনসিলাইটিস এর কারণ।
ক. পরীক্ষণাত্মক পদ্ধতি কত প্রকার?
খ. সহকার্যে কারণ হিসেবে গ্রহণজনিত অনুপপত্তি ব্যাখ্যা করো।
গ. উদ্দীপকে উল্লেখিত দৃষ্টান্তটি কার্যকারণ সম্পর্ক প্রমাণে কোন পদ্ধতির সাথে সঙ্গতিপূর্ণ? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকে উল্লেখিত পদ্ধতির সুবিধাগুলো তোমার পাঠ্যবইয়ের আলোকে বিশ্লেষণ করো।

৮ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. পরীক্ষণাত্মক পদ্ধতি পাঁচ প্রকার। যথা- অন্বয়ী, ব্যতিরেকী, যৌথ অন্বয়ী-ব্যতিরেকী পদ্ধতি, সহপরিবর্তন পদ্ধতি ও পরিশেষ পদ্ধতি।

খ. অন্বয়ী পদ্ধতি বিশ্লেষণে দেখা যায় একাধিক দৃষ্টান্ত সাধারণভাবে উপস্থিত থাকলে পূর্ববর্তী বিষয় কারণ এবং পরবর্তী বিষয় কার্য হিসেবে বিবেচিত হয়। যদি কোনো ক্ষেত্রে শর্তসাপেক্ষে পূর্ববর্তী বিষয়টি কারণ হিসেবে চিহ্নিত হয় তাহলে সহকার্যকে কারণ হিসেবে গ্রহণজনিত অনুপপত্তি সৃষ্টি হয়। যেমন- রাতের পর দিন আসে, এটি একটি অপরিবর্তনীয় পূর্ববর্তী ঘটনা। এক্ষেত্রে যদি সিদ্ধান্ত নেয়া হয় যে, রাত হলো দিনের কারণ তবে সেক্ষেত্রে সহকার্যকে কারণ হিসেবে গ্রহণজনিত অনুপপত্তি ঘটতে পারে।

গ. উদ্দীপকে উল্লেখিত দৃষ্টান্তটি কার্যকারণ সম্পর্ক প্রমাণে ব্যতিরেকী পদ্ধতির সাথে সঙ্গতিপূর্ণ।
বাতিরেকী পদ্ধতি মূলত একটি পরীক্ষণের পদ্ধতি। এ পদ্ধতির ব্যাখ্যায় দুটি দৃষ্টান্তের প্রয়োজন হয়। দৃষ্টান্ত দুটির ঘটনার কারণ ও কার্য উপস্থিত থাকে এবং নঞর্থক দৃষ্টান্তে ঐ ঘটনার কারণ ও কার্য অনুপস্থিত থাকে। এ থেকেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে, ঘটনাটির মধ্যে কার্যকারণ সম্পর্ক আছে। উদ্দীপকে বলা হয়েছে, সুমন ঠান্ডা জাতীয় খাবার গ্রহণ করলে টনসিলাইটিসে আক্রান্ত হয়। আবার ঠান্ডা খাবার পরিহার করলে টনসিলাইটিস রোগে আক্রান্ত হয় না। এই সদর্থক ও নঞর্থক দৃষ্টান্তের ভিত্তিতে সিদ্ধান্তে বলা হয়েছে, ঠান্ডা খাবারই সুমনের টনসিলাইটিসের কারণ। এ কারণে বলা যায়, উদ্দীপকটিতে ব্যতিরেকী পদ্ধতিই প্রতিফলিত হয়েছে।

ঘ. ব্যতিরেকী পদ্ধতির সাহায্যে কার্যকারণ সম্পর্ক নির্ণয় ও প্রমাণ করা যায়। এ কারণে ব্যতিরেকী পদ্ধতি হলো পরীক্ষণের পদ্ধতি। নিচে ব্যতিরেকী পদ্ধতির সুবিধা উল্লেখ করা হলো-
ব্যতিরেকী পদ্ধতিকে বলা হয় কার্যকারণ সম্পর্ক নির্ণয়ের পদ্ধতি। এর সাহায্যে কার্যকারণ সম্পর্ককে আবিষ্কারের পাশাপাশি তাকে প্রমাণও করা হয়। আমরা জানি, কার্যকারণ সম্পর্কের ওপর ভিত্তি করেই গড়ে উঠেছে আরোহ অনুমান। আরোহের যথার্থতা নিরূপণের অন্যতম উপায় হলো- কার্যকারণ সম্পর্ক নিরূপণ করা।
ব্যতিরেকী পদ্ধতি পরীক্ষণের পদ্ধতি হওয়ায় এই পদ্ধতি কার্যকারণ সম্পর্ক শুধুমাত্র নিরীক্ষণই করে না, বরং পরীক্ষা করেও দেখে। তাই এই পদ্ধতি থেকে প্রাপ্ত ফলাফল নিশ্চিত হয়। উদ্দীপকে বর্ণিত ঘটনায় সুমন ঠান্ডা খাবারের সঙ্গে টনসিলাইটিসের আবশ্যিক সম্পর্ক প্রমাণ করে। বস্তুত এরূপ নিশ্চিত সিদ্ধান্ত বা সম্পর্ক প্রমাণের কারণে ব্যতিরেকী পদ্ধতি আরোহ অনুমানের বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। পরিশেষে বলা যায়, ব্যতিরেকী পদ্ধতি পরীক্ষণের পদ্ধতি হওয়ায় এর সাহায্যে কার্যকারণ সম্পর্ক নির্ণয় ও প্রমাণ করা যায়। তাই এই পদ্ধতি আরোহ অনুমানের যথার্থতা নির্ণয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

৯. দৃশ্যকল্প-১: দেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেলে খাদ্য ঘাটতি বৃদ্ধি পায়। আবার জনসংখ্যা হ্রাস পেলে খাদ্য ঘাটতি হ্রাস পায়।
দৃশ্যকল্প-২: আলুসহ একটি বস্তার ওজন ৫২ কেজি। বস্তার ওজন ২ কেজি। অতএব, আলুর ওজন ৫০ কেজি!
ক. ‘অপনয়ন' শব্দের অর্থ কী?
খ. কাকতালীয় অনুপপত্তি বলতে কী বোঝ?
গ. দৃশ্যকল্প-২ এ কার্যকারণ সম্পর্ক নির্ণয়ের কোন পদ্ধতিকে নির্দেশ করে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. দৃশ্যকল্প-১ এ ইঙ্গিতকৃত কার্যকারণ সম্পর্ক নির্ণয়ের পদ্ধতির সুবিধাগুলো বিশ্লেষণ করো।

৯ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. ‘অপনয়ন' শব্দের অর্থ হলো বাদ দেওয়া।

খ. কাকতালীয় অনুপপত্তি হলো ব্যতিরেকী পদ্ধতির অপপ্রয়োগের ফল।
কোনো পরিবর্তনশীল দৃষ্টান্তকে নির্দিষ্ট কোনো ঘটনার কারণ হিসেবে অনুমান করলে যে ভ্রান্তি হয়, তাকে কাকতালীয় অনুপপত্তি বলে। যেমন- আকাশে ধূমকেতুর আবির্ভাবের পর রাজার মৃত্যু হওয়ায় মনে করা হলো, ধূমকেতুর আবির্ভাবই রাজার মৃত্যুর কারণ। কিন্তু বাস্তবে ধূমকেতুর আবির্ভাবের সাথে পৃথিবীর বুকে রাজার মৃত্যুর কোনো সম্পর্ক নেই। কোনো কার্যের নিছক একটি পূর্ববর্তী ঘটনাকেই এর কারণ বলে মনে করায়। যুক্তিটিতে কাকতালীয় অনুপপত্তি ঘটেছে।

গ. দৃশ্যকল্প-২ এ কার্যকারণ সম্পর্ক নির্ণয়ের পরিশেষ পদ্ধতিকে নির্দেশ করে।
পরিশেষ পদ্ধতি হলো যুক্তিবিদ মিল এর সর্বশেষ পরীক্ষণমূলক পদ্ধতি। পরিশেষ কথাটির অর্থ- বিয়োগফল বা অবশিষ্ট অংশ। অর্থাৎ যে পরীক্ষণমূলক পদ্ধতির ক্ষেত্রে কোনো পূর্ববর্তী ঘটনা থেকে তার কোনো অংশ বিয়োগ করার পর যা অবশিষ্ট থাকে, তাকে পূর্ববর্তী ঘটনার ‘কার্য’ হিসেবে অনুমান করা হয়, তাকে পরিশেষ পদ্ধতি বলে। যেমন- দুধসহ একটি পাত্রের ওজন ২০ কেজি। পাত্রের ওজন ৩ কেজি হলে দুধের ওজন হবে ১৭ কেজি।
দৃশ্যকল্প-২ এ বলা হয়েছে, আলুসহ একটি বস্তার ওজন ৫২ কেজি। সেখানে বস্তার ওজন ২ কেজি। অতএব, আলুর ওজন ৫০ কেজি। এখানে বিয়োগের মাধ্যমে ঘটনার কার্য ও কারণ নির্ণয় করা হয়েছে। এ কারণে দৃশ্যকল্প-২ পরিশেষ পরীক্ষণমূলক পদ্ধতির সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।

ঘ. দৃশ্যকল্প-১ এ কার্যকারণ সম্পর্ক নির্ণয়ের সহপরিবর্তন পদ্ধতির পরিচয় পাওয়া যায়। নিচে এ পদ্ধতির সুবিধাগুলো বিশ্লেষণ করা হলো-
সহপরিবর্তন পদ্ধতির সাহায্যে কারণ ও কার্যের পরিমাণগত দিক নির্ণয় করা যায়। এখানে পরিমাণের দিক থেকে কারণের পরিবর্তনের ফলে কার্যও সমানভাবে পরিবর্তিত হয়। আমরা জানি, অন্বয়ী ও ব্যতিরেকী পদ্ধতি কারণের গুণগত দিকের ওপর প্রতিষ্ঠিত। আর কারণ ও কার্য নির্ণয় করে বলে এটিকে অন্বয়ী ও ব্যতিরেকী পদ্ধতির পরিপূরক বলা যায়। পাশাপাশি সহপরিবর্তন পদ্ধতি একটি ফলপ্রসূ পদ্ধতি। কেননা প্রকৃতির স্থায়ী কারণগুলোর ওপর এ পদ্ধতি সফলভাবে প্রয়োগ করা যায়।
সহপরিবর্তন পদ্ধতির সাহায্যে নিশ্চিত সিদ্ধান্ত প্রতিষ্ঠা করা যায়। কেননা এ পদ্ধতি যখন পরীক্ষণভিত্তিক হয় তখন বার বার ঘটনা পরীক্ষণ করে নিশ্চিত সিদ্ধান্ত লাভ করা যায়। এছাড়াও জটিল প্রাকৃতিক বাস্তবতা অথবা পরীক্ষণের দৃষ্টান্ত দুটি যে সকল ক্ষেত্রে কিছুটা কঠিন ও অবাস্তব, সে সকল ক্ষেত্র ছাড়া সহপরিবর্তন পদ্ধতি প্রয়োগ অত্যন্ত সহজ।
পরিশেষে বলা যায়, সহপরিবর্তন পদ্ধতির অনেকগুলো সুবিধার দিক রয়েছে। তবে বিশ্লেষণ করলে কিছু অসুবিধাও পাওয়া যায়। সার্বিকভাবে বলা যায়, সহপরিবর্তন পদ্ধতি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতি বলে স্বীকৃত।

১০. দৃশ্যকল্প-১: থার্মোমিটারের তাপমাত্রা বৃদ্ধি ও পারদ স্তম্ভের উর্ধ্বগতি।
দৃশ্যকল্প-২: সকল ক্ষেত্রে অ্যানোফিলিস মশার কামড়ই ম্যালেরিয়া জ্বরের কারণ।
দৃশ্যকল্প-৩: যে পাত্রে বাতাস আছে সে পাত্রের ঘণ্টাধ্বনি শোনা যায়। যে পাত্রে বাতাস নেই, সে পাত্রের ঘণ্টাধ্বনি শোনা যায় না।
ক. পরীক্ষণমূলক পদ্ধতি কী?
খ. সার্বিক সত্য প্রতিষ্ঠায় কার্যকারণ নীতি দরকার হয় কেন?
গ. দৃশ্যকল্প-১ এ তোমার পাঠ্য কোন বিষয়কে নির্দেশ করে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. দৃশ্যকল্প-২ ও দৃশ্যকল্প-৩ এ তোমার পাঠ্য যে দুটি বিষয়কে নির্দেশ করে, তা বিশ্লেষণ করো।

১০ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. কার্যকারণ সম্পর্ক আবিষ্কার ও প্রমাণ করার জন্য যে পদ্ধতিসমূহ ব্যবহৃত হয় সেগুলোই পরীক্ষণমূলক পদ্ধতি।

খ. কার্যকারণ হচ্ছে কারণ ও কার্যের মধ্যে একটি অনিবার্য সম্পর্ক যার মাধ্যমে কোনো ঘটনা বা বিষয়ের সত্যতা যাচাই করা হয়। যেমন- একটি লোক বিষপান করেছে এবং বিষের প্রভাবে তার মৃত্যু হয়েছে। সুতরাং বিষপান হচ্ছে লোকটির মৃত্যুর কারণ। এখানে বিষপান ও মৃত্যুর ঘটনার সাথে যে অপরিহার্য সম্পর্ক প্রকাশ পেয়েছে তা-ই কার্যকারণ সম্পর্ক। এভাবে কোনো সার্বিক সত্য প্রতিষ্ঠার জন্য কার্যকারণ নীতি দরকার হয়।

গ. দৃশ্যকল্প-১ এ পাঠ্যবইয়ে বর্ণিত সহপরিবর্তন পদ্ধতিকে নির্দেশ করে।
সহপরিবর্তন কথাটির অর্থ হচ্ছে একই সাথে পরিবর্তন বা হ্রাস-বৃদ্ধি। যুক্তিবিদ্যায় সহপরিবর্তন পদ্ধতি হচ্ছে এমন একটি পদ্ধতি, যার দ্বারা দুটি ঘটনাকে একই সাথে পরিবর্তিত হতে দেখে তাদের মধ্যে কার্যকারণ সম্পর্ক অনুমান করা হয়। যেমন- আমরা লক্ষ করি যে, বায়ুর চাপ ও ব্যারোমিটারের পারদ স্তম্ভ একই রকম আনুপাতিক হারে বাড়ে ও কমে।
দৃশ্যকল্প-১ এ থার্মোমিটারের তাপমাত্রা বৃদ্ধি ও পারদ স্তম্ভের ঊর্ধ্বগতির কথা বলা হয়েছে। এরূপ সমমুখী পরিবর্তন সহপরিবর্তন পদ্ধতিকেই নির্দেশ করে।

ঘ. দৃশ্যকল্প-২ এ অন্বয়ী পদ্ধতি এবং দৃশ্যকল্প-৩ এ ব্যতিরেকী পদ্ধতির ইঙ্গিত রয়েছে। নিম্নে পদ্ধতি দুটি বিশ্লেষণ করা হলো-
অন্বয় শব্দের অর্থ হলো মিল। অন্বয়ী পদ্ধতি অনুসারে একাধিক ঘটনার একটি সাধারণ অবস্থাকে ঐ সব ঘটনার কারণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এটি একটি সহজ-সরল পদ্ধতি। এ পদ্ধতিতে নিরীক্ষণের মাধ্যমে দৃষ্টান্ত সংগ্রহ করা যায়। এ কারণে এ পদ্ধতিকে নিরীক্ষণের পদ্ধতি বলা হয়। অন্বয়ী পদ্ধতিতে যেমন সহজেই কার্য থেকে কারণ নির্ণয় করা যায়, তেমনি কারণ থেকেও কার্য নির্ণয় করা যায়। যেমন- দৃশ্যকল্প-২ এ বর্ণিত, সকল ক্ষেত্রে অ্যানোফিলিস মশার কামড়ই ম্যালেরিয়া জ্বরের কারণ। অর্থাৎ ম্যালেরিয়া জ্বরে আক্রান্ত রোগীর ওপর অনুসন্ধান করে দেখা গেছে প্রত্যেকের ক্ষেত্রেই অ্যানোফিলিস মশার কামড় খাওয়ার ঘটনা বর্তমান। তাই অন্বয়ী পদ্ধতি অনুসারে বলা যায়, অ্যানোফিলিস মশার কামড়ই ম্যালেরিয়া জ্বরের কারণ।
ব্যতিরেকী পদ্ধতি মূলত পরীক্ষণের পদ্ধতি। এ পদ্ধতির ব্যাখ্যায় দুটি দৃষ্টান্তের প্রয়োজন হয়। দৃষ্টান্ত দুটির একটি সদর্থক এবং অপরটি নঞর্থক হয়। সদর্থক দৃষ্টান্তে ঘটনার কারণ ও কার্য উপস্থিত থাকে এবং নঞর্থক দৃষ্টান্তে তা থাকে না। এ থেকেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে, ঘটনাটির মধ্যে কার্যকারণ সম্পর্ক আছে। যেমন-দৃশ্যকল্প-৩ এ বর্ণিত, যে পাত্রে বাতাস আছে সে পাত্রের ঘণ্টাধ্বনি শোনা যায়। যে পাত্রে বাতাস নেই, সে পাত্রের ঘণ্টাধ্বনি শোনা যায় না। অর্থাৎ সদর্থক ও নঞর্থক দৃষ্টান্তের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কারণে বলা হয় দৃশ্যকল্প-৩ এ ব্যতিরেকী পদ্ধতির প্রতিফলন ঘটেছে।
পরিশেষে বলা যায়, অন্বয়ী পদ্ধতি ও ব্যতিরেকী পদ্ধতি হলো পরীক্ষণ পদ্ধতির দুটি মৌলিক রূপ। দৃশ্যকল্প-২ ও দৃশ্যকল্প-৩ এ এগুলোর দৃষ্টান্তই পরিলক্ষিত হয়।
Share:

0 Comments:

Post a Comment