HSC যুক্তিবিদ্যা ২য় পত্র (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর pdf download অধ্যায় ৪

HSC যুক্তিবিদ্যা ২য় পত্র (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর pdf download

এইচএসসি পরীক্ষার পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি
HSC Logic 2nd Paper Srijonshil question and answer pdf download.

উচ্চ মাধ্যমিক

যুক্তিবিদ্যা
দ্বিতীয় পত্র

সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
৪র্থ অধ্যায়

HSC Logic 2nd Paper
Srijonshil
Question and Answer pdf download

১. স্কুলে রূপা হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে যায়। স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীরা বললো, রূপাকে ভূতে ধরেছে। পরবর্তীতে ডাক্তার পরীক্ষা করে বললেন যে, জ্বরের তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় সে অজ্ঞান হয়ে গিয়েছে।
ক. প্রতিবেদক অনুকল্প কী?
খ. প্রকল্পকে ভবিষ্যদ্বাণী করার ক্ষমতা থাকতে হয় কেন?
গ. উদ্দীপকে ছাত্র-ছাত্রীদের ইঙ্গিতকৃত বিষয়টি পাঠ্যপুস্তকের আলোকে ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকে ইঙ্গিতকৃত বিষয়টির গুরুত্ব তোমার পাঠ্যপুস্তকের আলোকে বিশ্লেষণ করো।

১ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. যখন কোনো ঘটনার বাস্তব কারণ বিদ্যমান থাকা সত্ত্বেও তাকে প্রত্যক্ষ করা যায় না কিন্তু এর অস্তিত্ব পরোক্ষভাবে প্রমাণিত হয় তখন তাকে প্রতিবেদক অনুকল্প (Representative Fictions) বলে।

খ. প্রকল্পকে প্রমাণ করার জন্য ভবিষ্যদ্বাণী করার ক্ষমতা থাকতে হবে।
ব্রিটিশ যুক্তিবিদ উইলিয়াম হিওয়েল বলেন, ভবিষ্যদ্বাণী করার ক্ষমতা হলো প্রকল্পের অন্যতম প্রমাণ। প্রকল্প একটি আনুমানিক ধারণার ওপর ভিত্তি করে কোনো ঘটনা সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করে থাকে। পরবর্তীতে দেখা গেলো ভবিষ্যদ্বাণী সত্য বলে প্রমাণিত হয়। তখন প্রকল্পটি যথার্থ ও সঠিক বলে বিবেচিত হয়। তাই প্রকল্প প্রমাণের জন্য ভবিষ্যদ্বাণী করার ক্ষমতা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

গ. উদ্দীপকে ছাত্র-ছাত্রীদের ইঙ্গিতকৃত বিষয়টি প্রকল্পের সাথে সম্পর্কিত। তবে তা অবৈধ প্রকল্পের দৃষ্টান্ত।
‘প্রকল্প' শব্দের অর্থ আনুমানিক ধারণা। অর্থাৎ কোনো ঘটনার প্রকৃত কারণ আবিষ্কার করতে যে সম্ভাব্য বিষয়কে কারণ হিসেবে অনুমান করা হয় তা- ই প্রকল্প। প্রকল্প যথার্থ বা বৈধ হতে হলে তাকে বাস্তব কারণভিত্তিক হতে হবে। বাস্তব অস্তিত্ব নেই, এমন কোনো কারণকে প্রকল্প হিসেবে গ্রহণ করা হলে তা বৈধ হবে না। যেমন: কোনো ব্যক্তির নিখোঁজ হওয়ার কারণ হিসেবে যদি বলা হয়, এক দুষ্ট দৈত্য-দানব লোকটিকে লোকচক্ষুর অন্তরালে নিয়ে গেছে। তাহলে তা বৈধ হতে পারে না। কারণ বাস্তবে কোনো দৈত্য-দানব আমরা দেখতে পাই না।
উদ্দীপকে রূপা হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার ফলে ছাত্র-ছাত্রীরা বলে, রূপাকে ভূতে ধরেছে। তাদের এই ইঙ্গিতকৃত বিষয়টি প্রকল্পের সাথে সম্পর্কিত। তবে তা অবৈধ প্রকল্পের দৃষ্টান্ত। কেননা, মানুষ অজ্ঞান হওয়ার কারণ হিসেবে শারীরিকভাবে অসুস্থ থাকতে পারে। কিন্তু ভূতে ধরার কারণে অজ্ঞান হয়ে যাওয়া, এটি একটি অবাস্তব ও অযৌক্তিক প্রকল্প।

ঘ. উদ্দীপকে ইঙ্গিতকৃত বিষয়টি হলো প্রকল্প। নিচে প্রকল্পের গুরুত্ব বিশ্লেষণ করা হলো-
প্রকল্প হলো কোনো সাময়িক অনুমান বা আনুমানিক ধারণা। যে ধারণা কোনো ঘটনার বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানের প্রাথমিক ও সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি হিসেবে কাজ করে। যেকোনো বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের পূর্বে বিজ্ঞানীগণ একটি সম্ভাব্য প্রাথমিক আনুমানিক ধারণা করে অগ্রসর হন। তারপর সেই ধারণার সত্যতা যাচাই করতে গিয়ে বিভিন্ন তত্ত্ব ও নিয়ম আবিষ্কার করেন। বিজ্ঞানী নিউটনের মাধ্যাকর্ষণ তত্ত্ব, আইনস্টাইনের ফোটনতত্ত্ব, কোপার্নিকাসের সূর্যকেন্দ্রিক মতবাদ- এসব তত্ত্বে আমরা প্রকল্পের ব্যবহার ও এর সুফল দেখতে পাই।
ভূ-অভ্যন্তরে বিভিন্ন খনিজ সম্পদ আবিষ্কারের জন্য প্রকল্প প্রণয়ন করতে হয়। কেননা এসব আবিষ্কারের শুরুতে আবিষ্কারকগণ সম্ভাব্য প্রকল্প গ্রহণ করেই অগ্রসর হন। দৈনন্দিন অনেক ঘটনার কারণ অনুসন্ধানের জন্য প্রকল্পের প্রয়োজন হয়। সামাজিক সমস্যা, বিভিন্ন অপরাধের রহস্য উদ্ঘাটন, অর্থনৈতিক পরিকল্পনা, দৈনন্দিন জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে প্রকল্পের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। প্রত্যেকটি রাষ্ট্র প্রকল্পের ওপর ভিত্তি করে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করে। যেমন: বার্ষিক আয়-ব্যয়ের সম্ভাব্য পরিকল্পনা হিসেবে বাজেট প্রণয়ন করা হয়। একইভাবে প্রকল্পের মাধ্যমে উন্নয়ন পরিকল্পনাও গ্রহণ করা হয়। শিক্ষার উন্নতি সাধন, জনগণের জীনযাত্রার মান উন্নয়ন, আন্তর্জাতিক বিভিন্ন লক্ষ্য অর্জনের জন্য প্রকল্পের মাধ্যমেই বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়। মানুষের ব্যক্তিগত জীবনেও প্রকল্প অনেক গুরুত্ব বহন করে। কারণ মানুষ কোনো লক্ষ্য অর্জনের আগে প্রাথমিক পরিকল্পনা করে এবং ঐ পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করে।
তাই আমাদের দৈনন্দিন জীবনে প্রকল্প গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

২. রনি ঢাকা চিড়িয়াখানা দেখতে গেল। সে বাস থেকে নেমে কোন দিকে যাবে বুঝতে পারছে না। এমন সময় রাস্তার মোড়ে তীর চিহ্ন দিয়ে চিড়িয়াখানায় কোন রাস্তায় যেতে হবে তা দেখতে পেল এবং সে চিডw়য়াখানায় পৌঁছে গেল।
ক. প্রকল্প কী?
খ. প্রকল্পকে বাস্তব কারণভিত্তিক হতে হয় কেন?
গ. উদ্দীপকে রাস্তার মোড়ের তীর চিহ্নটি তোমার পাঠ্যপুস্তকের কোন বিষয়টি ইঙ্গিত করে তা ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকে ইঙ্গিতকৃত বিষয়টি কীভাবে একটি প্রকল্পকে প্রতিষ্ঠাই করে না বরং অন্য প্রকল্প অস্বীকার করে তা বিশ্লেষণ করো।

২ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. কোনো বিষয় বা ঘটনা সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা বা আন্দাজ করাই হলো প্রকল্প।

খ. প্রকল্পকে বৈধ হতে হলে তাকে বাস্তব কারণভিত্তিক হতে হবে।
যে কোনো প্রাথমিক অনুমান বা ধারণা বৈধ প্রকল্প নয়। বৈধ হতে হলে তাকে বাস্তব কারণভিত্তিক হতে হবে। বাস্তব অস্তিত্ব নেই, এমন কোনো কারণকে প্রকল্প হিসেবে গ্রহণ করা হলে তা বৈধ হবে না। যেমন: মানুষের বদনজরে ফসল নষ্ট হয়ে যায়। কিন্তু বদনজরে কখনোই বাস্তবে ফসল নষ্ট হয়নি। যদি বলা হতো অতিবৃষ্টির কারণে ফসল নষ্ট হয়েছে, তাহলে সেটি বৈধ প্রকল্প হিসেবে গণ্য হতো। তাই প্রকল্পটি বৈধ হতে হলে অবশ্যই বাস্তব কারণভিত্তিক হতে হয়।

গ. উদ্দীপকে রাস্তার মোড়ের তীর চিহ্নটি সংকট উত্তরক দৃষ্টান্ত বা চরম দৃষ্টান্তের বিষয়টিকে ইঙ্গিত করেছে।
কোনো একটি ঘটনার জন্য যদি একাধিক প্রকল্প প্রণয়ন করা হয়, সেক্ষেত্রে একাধিক প্রকল্পের মধ্য থেকে সঠিক প্রকল্পটি নির্বাচন করা কঠিন হয়ে পড়ে। তখন কোনো একটি বিশেষ ঘটনার মাধ্যমে একাধিক প্রকল্পের সমস্যার সংকট নিরসন করা যায়। তাকে সংকট উত্তরক দৃষ্টান্ত বলে।
উদ্দীপকে রনি ঢাকা চিড়িয়াখানা যাওয়ার রাস্তা খুঁজে পাচ্ছে না। এমন সময় রাস্তার মোড়ে তীর চিহ্ন দেখে তা অনুসরণ করে চিড়িয়াখানায় পৌঁছে গেলো। রনি যে তীর চিহ্ন অনুসরন করেছে তা মূলত সংকট উত্তরক দৃষ্টান্ত, যার সাহায্যে সে গন্তব্যস্থলে পৌঁছায়। এভাবে সংকট উত্তরক দৃষ্টান্ত আমাদের জানিয়ে দেয়, প্রতিযোগী কিংবা একাধিক প্রকল্পের মধ্যে কোনটি গ্রহণ করতে হবে আর কোনটি বাদ দিতে হবে।

ঘ. উদ্দীপকে ইঙ্গিতকৃত বিষয়টি সংকট উত্তরক দৃষ্টান্ত। এটি শুধু প্রকল্পকে প্রতিষ্ঠাই করে না বরং অন্যান্য অযৌক্তিক প্রকল্পকে অস্বীকারও করে।
প্রকল্প প্রণয়নের ক্ষেত্রে কোনো ঘটনার কারণ অনুসন্ধানের জন্য প্রাথমিকভাবে আনুমানিক ধারণা করতে হয়। কিন্তু অনেক সময় একটি ঘটনার জন্য একাধিক প্রকল্প প্রণয়ন করা হয়। সেক্ষেত্রে সঠিক প্রকল্প নির্বাচন করা কঠিন হয়ে পড়ে। তখন কোনো একটি বিশেষ দৃষ্টান্ত বা ঘটনার মাধ্যমে প্রতিযোগী প্রকল্পের সংকট নিরসন করা যায়। সেই বিশেষ দৃষ্টান্ত বা ঘটনাকে বলা হয় সংকট উত্তরক দৃষ্টান্ত।
রনি ঢাকা চিড়িয়াখানা যাওয়ার রাস্তা খুঁজে পাচ্ছে না। তখন সে একটি তীর চিহ্ন দেখতে পায়, যা চিড়িয়াখানা যাওয়ার রাস্তা নির্দেশ করছে। তীর চিহ্নটি অনুসরণ করে সে চিড়িয়াখানায় পৌঁছায় এক্ষেত্রে একটি প্রকল্পের পরিবর্তে অনেকগুলো প্রকল্প তার সামনে আসে। এতে একটি সংকট মুহূর্ত সৃষ্টি হয়। পরবর্তী সময়ে, একটি বিশেষ দৃষ্টান্ত বা চিহ্নের মাধ্যমে প্রতিযোগী প্রকল্পগুলো বাদ দিয়ে একটি সঠিক প্রকল্প প্রণয়ন করে সে চিড়িয়াখানায় পৌঁছায়।
উপরের বিশ্লেষণের মাধ্যমে বলা যায় যে, সংকট উত্তরক দৃষ্টান্ত শুধু একটি প্রকল্পকে প্রতিষ্ঠাই করে না বরং অন্য প্রকল্প অস্বীকার করে থাকে। এতে বৈধ প্রকল্প প্রণয়ন করতে সহজ হয়।

৩. মোবাইল ফোন হারিয়ে যাওয়ায় দাদা মনে মনে ভাবলেন পাশের বাড়ির কাশেম নিয়েছে। দাদি ভাবলেন কোনো জ্বিন ভুলে নিয়েছে। অবশেষে বাড়ির বুয়েটে পড়ুয়া ছেলে মোমেন হাতের ছাপ পরীক্ষা করে প্রকৃত চোর শনাক্ত করলেন।
ক. কাজ চালানো প্রকল্প কী?
খ. প্রতিবেদক অনুকল্পের প্রয়োজন হয় কেন? ব্যাখ্যা করো।
গ. মোমেনের চোর শনাক্তকরণ প্রক্রিয়াটি প্রকল্প প্রমাণের কোন দিককে নির্দেশ করছে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. প্রকল্পের শর্তের আলোকে উদ্দীপকটি বিশ্লেষণ করো।

৩ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. কোনো ঘটনাকে ব্যাখ্যা দেওয়ার জন্য কোনো বৈধ প্রকল্পের অভাবে আমরা কাজ চালানোর জন্য সাময়িকভাবে যে প্রকল্প প্রণয়ন করে তাকে কাজ চালানো প্রকল্প বলে।

খ. কোনো ঘটনা প্রত্যক্ষভাবে প্রমাণ করা না গেলেও পরোক্ষভাবে প্রমাণ করার জন্য প্রতিবেদক অনুকল্পের প্রয়োজন হয়।
এমন অনেক ঘটনা আছে যার বাস্তব কারণ আছে, কিন্তু কারণটিকে। প্রত্যক্ষ করা যায় না, তখন প্রতিবেদক অনুকল্পের প্রয়োজন হয়। কারণ এসব ঘটনাবলির বর্ণনা বা প্রকাশের ক্ষেত্রে এ প্রকল্প খুবই উপযোগী। প্রতিবেদক অনুকল্পের উদাহরণ হিসেবে আমরা ইথারের কথা বলতে পারি। কারণ ইথার রাস্তবে প্রত্যক্ষযোগ্য নয়। রেডিও, টেলিভিশন ইত্যাদির মাধ্যমে আমরা পরোক্ষভাবে এর প্রমাণ পাই।

গ. মোমেনের চোর শনাক্তকরণ প্রক্রিয়াটি প্রকল্প প্রমাণের সংকট উত্তরক দৃষ্টান্তের দিকটি নির্দেশ করেছে।
প্রতিদ্বন্দ্বী প্রকল্পগুলোর মাধ্যমে যখন একটি বিশেষ দৃষ্টান্তের মাধ্যমে একমাত্র প্রকল্প প্রণয়ন করা হয় তখন তাকে সংকট উত্তরক দৃষ্টান্ত বলে। কোন ঘটনার প্রকৃত কারণ নির্ণয়ে, এরূপ দৃষ্টান্ত মুখ্য ভূমিকা পালন করে। তাই প্রকল্প প্রমাণের জন্য সংকট উত্তরক দৃষ্টান্ত খুবই গুরুত্বপূর্ণ মাটি খুঁড়তে গিয়ে এক সময় একটি পাত্রে কতগুলো চকচকে পদার্থের টুকরো পাওয়া গেল। প্রথমে বোঝা গেল না এগুলো কাঁচ না হীরা। পরে পরীক্ষা করে দেখা গেল এগুলো হীরার টুকরো।
উদ্দীপকে মোবাইল ফোন চুরি হওয়ায় দাদা ভাবলেন পাশের বাসার কাশেম নিয়েছে। দাদী ভাবলেন জ্বিন নিয়েছে। কিন্তু পরবর্তীতে মোমেন হাতের ছাপ পরীক্ষা করে প্রকৃত চোরকে শনাক্ত করলেন। এতে প্রতিদ্বন্দ্বী সকল প্রকল্প পরীক্ষণের মাধ্যমে প্রকৃত কারণ নির্ণয় করা হয়েছে। যা সংকট উত্তরক দৃষ্টান্তকে নির্দেশ করে।

ঘ. উদ্দীপকে দাদা ও দাদির বক্তব্যে বৈধ প্রকল্পের শর্তাবলি লঙ্ঘিত হয়েছে। তবে বুয়েটে পড়ুয়া মোমেনের কর্মকান্ড- বৈধ প্রকল্প ফুটে উঠেছে।
একটি বৈধ প্রকল্পে বিভিন্ন রকম শর্ত বিদ্যমান থাকে। এ শর্তগুলো অনুসরণ করে আমরা প্রকল্পের বৈধতা ও অবৈধতা নির্ণয় করতে পারি। বৈধ প্রকল্পের গুরুত্বপূর্ণ শর্ত হলো প্রকল্পকে অবশ্যই সুনির্দিষ্ট, যৌক্তিক ও বাস্তব কারণভিত্তিক এবং প্রমাণযোগ্য হতে হবে। প্রকল্প বৈধ হতে হলে উক্ত নীতিমালা অনুসরণ করা প্রয়োজন। অন্যদিকে প্রকল্পে যদি বৈধ শর্তাবলি অনুসরণ না করা হয় তাহলে প্রকল্প অবৈধ হবে।
উদ্দীপকে মোবাইল ফোন হারিয়ে যাওয়ায় দাদা মনে মনে ভাবলেন পাশের বাড়ির কাশেম ফোনটি নিয়েছে। এক্ষেত্রে প্রকল্পের সুনির্দিষ্ট শর্তটি উপেক্ষা করা হয়েছে। আবার দাদি ভাবলেন, কোনো জ্বিন ভুলে নিয়েছে। এক্ষেত্রেও বৈধ প্রকল্পের বাস্তবকারণভিত্তিক শর্তটি উপেক্ষা করা হয়েছে। তবে পরবর্তীতে মোমেন হাতের ছাপ পরীক্ষা করে প্রকৃত চোর শনাক্ত করলেন। এতে বৈধ প্রকল্পের যৌক্তিক প্রমাণভিত্তিক শর্তটি ফুটে উঠেছে।
তাই বলা যায়, কোনো প্রকল্প বৈধ হতে হলে অবশ্যই বৈধ প্রকল্পের কতকগুলো শর্ত অনুসরণ করতে হবে। তাহলে সেটি যথার্থ প্রকল্প হিসেবে বিবেচিত হবে।

৪. দৃশ্যকল্প-১: মনোহর গ্রামে গত রাতে সব বাড়িতে চুরি হয়েছে। গ্রামবাসী কে চুরি করেছে তা চিহ্নিত করতে না পেরে স্থানীয় পুলিশের সহায়তা চাইলে, পুলিশ এসে চোরের পায়ের ছাপ, হাতের স্পর্শ এবং চুরির ধরন বিশ্লেষণ করে চোরকে শনাক্ত করতে সক্ষম হয়।
দৃশ্যকল্প-২: বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাওয়ায় হোসেনপুর গ্রামবাসী ধারণা করল যে, করোনা মহামারীর কারণে বাজারে জিনিসপত্রের দাম বেড়ে গিয়েছে।
ক. প্রকল্প কী?
খ. আরোহ সমন্বয় বলতে কী বোঝ?
গ. দৃশ্যকল্প-১ এ প্রকল্পের কোন প্রমাণটি নির্দেশ করছে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. দৃশ্যকল্প-২ কি দৃশ্যকল্প-১ এর মত বাস্তবসম্মত? বিশ্লেষণ করো।

৪ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. কোনো বিষয় বা ঘটনা সম্পর্কে আনুমানিক ধারণা বা আন্দাজ গঠন করাই প্রকল্প।

খ. কোনো ঘটনাকে ব্যাখ্যা করার জন্য প্রকল্পের সহায়ক গুণকে আরোহ সমন্বয় বলে।
সাধারণত কোনো ঘটনার সত্যতা নির্ণয়ের জন্য প্রকল্প গঠন করা হয়। অনেক ক্ষেত্রে একটি প্রকল্পের সাহায্যে একাধিক ঘটনার কারণ ব্যাখ্যা করা যায়। প্রকল্পের এই গুণকে বলা হয় আরোহ সমন্বয়। যেমন: জড়বস্তুর ভূপতন ব্যাখ্যা করার জন্য মাধ্যাকর্ষণ শক্তিকে প্রকল্প হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছিল। পরে দেখা যায়, মাধ্যাকর্ষণ শক্তির সাহায্যে জোয়ার-ভাটার ঘটনাকেও ব্যাখ্যা করা যায়। প্রকল্পের এই অতিরিক্ত গুণকে আরোহ সমন্বয় বলে।

গ. দৃশ্যকল্প-১ সংকট উত্তরক দৃষ্টান্তের প্রমাণটি নির্দেশ করছে।
যে ঘটনা বা দৃষ্টান্তের মাধ্যমে প্রতিযোগী প্রকল্পগুলোর মধ্যকার সংকট নিরসন করা হয় তাকে সংকট উত্তরক দৃষ্টান্ত বলে। ব্রিটিশ যুক্তিবিদ ফ্রান্সিস বেকন প্রথম সংকট উত্তরক দৃষ্টান্ত কথাটি ব্যবহার করেন। তিনি সংকট উত্তরক দৃষ্টান্তকে রাস্তার মোড়ে স্থাপিত পথনির্দেশক চিহ্ন বা ফলকের সাথে তুলনা করেছেন। একাধিক রাস্তার মিলনস্থলে পথনির্দেশক ফলকের সাহায্যে গন্তব্যস্থলে পৌঁছানো যায়। অনুরূপভাবে সংকট উত্তরক দৃষ্টান্ত আমাদের বলে দেয়, প্রতিযোগী প্রকল্পগুলোর মধ্যে কোনটি গ্রহণ করতে হবে এবং কোনটি বাদ দিতে হবে।
দৃষ্টান্ত-১ এ মনোহর গ্রামে চুরি হয়। গ্রামবাসী বুঝতে পারছে না কে চুরি করেছে। পরবর্তীতে পুলিশ এসে চোরের পায়ের ছাপ, হাতের স্পর্শ এবং চুরির ধরন বিশ্লেষণ করে চোরকে শনাক্ত করতে সক্ষম হয়। অর্থাৎ, এখানে পায়ের ছাপ এবং হাতের স্পর্শ প্রভৃতি পরীক্ষা করে প্রকৃত কারণ উদ্ঘাটন করাই হলো সংকট উত্তরক দৃষ্টান্ত।

ঘ. দৃশ্যকল্প-২, দৃশ্যকল্প-১ এর মতো বাস্তবসম্মত নয়। কেননা দৃশ্যকল্প-২ একটি প্রাথমিক আনুমানিক ধারণা মাত্র।
কোনো প্রকল্প বা আনুমানিক ধারণাকে যথার্থ হতে হলে কতকগুলো গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য বা শর্ত পূরণ করতে হয়। তাহলেই প্রকল্প বৈধ বলে বিবেচিত হবে। আর বৈধ প্রকল্প যাচাইকরণের মাধ্যমে প্রমাণিত হলে তা তত্ত্বের মর্যাদা লাভ করে। কাজেই বৈধ প্রকল্পকে পর্যাপ্ত বা যথেষ্ট যাচাইকরণ করতে হবে।
দৃশ্যকল্প-২ এ বাজারে জিনিসপত্রের দাম বাড়ায় গ্রামবাসী ধারণা করলো যে, করোনা মহামারীর কারণে বাজারে জিনিসপত্রের দাম বেড়ে গিয়েছে। এখানে কোনো জিনিসের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে কেবল করোনা মহামারীকে কল্পনা করলে চলবে না। কেননা বাজারে পণ্যের মূল্য বৃদ্ধির সাথে চাহিদা বৃদ্ধি, কাঁচামালের মূল্য বৃদ্ধি, কাঁচামালের দুষ্প্রাপ্যতা ইত্যাদি জড়িত থাকে। সেক্ষেত্রে দৃশ্যকল্প-২ এ যথেষ্ট প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষ যাচাইকরণ করা হয়নি। একটি সাধারণ ধারণা ও অপর্যাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে প্রকল্প প্রণয়ন করা হয়েছে। তবে দৃশ্যকল্প-১ এ তথ্য যাচাই-বাছাই করণের মাধ্যমে পুলিশ চোরকে শনাক্ত করে।
পরিশেষে বলা যায়, দৃশ্যকল্প-২ এর চেয়ে দৃশ্যকল্প-১ অধিক বাস্তবসম্মত ও যথার্থ প্রকল্প।

৫. অদিতি গ্যাস্ট্রিকের রোগী। তিনি শাক খেতে পারেন না। যখনই শাক খান তখনই তার ডায়রিয়া দেখা দেয়। এই থেকে তিনি ধারণা করেন, গ্যাস্ট্রিকের রোগীদের জন্য শাক বদহজমের কারণ। তাই তিনি গ্যাস্ট্রিকের রোগীদের শাক খেতে মানা করেন।
ক. পরীক্ষামূলক সমর্থন কী?
খ. বৈধ প্রকল্পের শর্ত বলতে কী বোঝায়?
গ. উদ্দীপকে অদিতির ধারণায় প্রকল্পের যে বিষয়টি ফুটে উঠেছে তা মূল্যায়ন করো।
ঘ. উদ্দীপকের প্রকল্পটিকে যথার্থ হতে হলে কী ধরনের শর্ত পালন করতে হবে? মতামত দাও।

৫ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. পরীক্ষামূলকভাবে যখন কোনো প্রকল্প বাস্তব ঘটনার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ আছে কিনা তা যাচাই করা হয় তখন তাকে পরীক্ষামূলক সমর্থন বলে।

খ. প্রকল্প প্রণয়ন করতে গেলে কতকগুলো নীতিমালা অনুসরণ করতে হয়, সেইসব নীতিমালাকে বৈধ প্রকল্পের শর্ত বলে।
কোনো প্রকল্পকে বৈধ হতে হলে প্রকল্পকে অবশ্যই সুনির্দিষ্ট, যৌক্তিক, প্রাসঙ্গিক, বাস্তবকারণভিত্তিক, আত্মবিরোধী ও প্রমাণযোগ্য হতে হবে। এই সকল শর্তাবলি বৈধ প্রকল্প হওয়ার পিছনে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। এগুলোকে যথার্থ বা বৈধ প্রকল্পের শর্ত বলে।

গ. উদ্দীপকে অদিতির ধারণায় অবৈধ প্রকল্পের বিষয়টি ফুটে উঠেছে।
যে কোনো অনুমান বা ধারণাই বৈধ প্রকল্প নয়। কোনো ধারণাকে যথার্থ প্রকল্প হতে হলে কতকগুলো শর্ত পূরণ করতে হবে। তাহলে ধারণাটি বৈধ প্রকল্প হিসেবে গ্রহণযোগ্যতা পাবে। অন্যথায় শর্ত লঙ্ঘিত হলে অবৈধ প্রকল্প হিসেবে চিহ্নিত হবে। প্রকল্পটি বৈধ হওয়ার পিছনে পর্যাপ্ত ব্যাখ্যার ভূমিকা অপরিসীম। কেননা, অপর্যাপ্ত ব্যাখ্যার কারণে বিষয়টি স্পষ্ট হয় না।
উদ্দীপকে অদিতির ধারণা শাক খেলে ডায়রিয়া দেখা দেয়। এখানে অদিতির ধারণায় বৈধ প্রকল্পের শর্ত লঙ্ঘিত হয়েছে। তিনি আংশিক বা অপর্যাপ্ত কারণকে গ্রহণ করে প্রকল্প প্রণয়ন করেছেন। এক্ষেত্রে ডায়রিয়ার অন্যান্য কারণ যেমন- পরিপাকতন্ত্র ভালো কাজ না করা, দূষিত পানি পান করা ইত্যাদি উপেক্ষা করে অপর্যাপ্ত বা আংশিক প্রকল্প প্রণয়ন করেন। তাই অদিতির ধারণা আংশিক হওয়াতে এটি অবৈধ প্রকল্প হিসেবে বিবেচিত হয়েছে।

ঘ. উদ্দীপকের প্রকল্পটি ঘটনার ব্যাখ্যা দেওয়ার জন্য পর্যাপ্ত, পূর্ণাঙ্গ এবং প্রকৃত কারণভিত্তিক হলে যথার্থ প্রকল্প হিসেবে গণ্য হতো।
কোনো ঘটনাকে ব্যাখ্যা করা বা কার্যকারণ সম্পর্ক নির্ণয় করার জন্য প্রকল্প প্রণয়ন করা হয়। এ জন্য প্রকল্পকে বৈধ হতে হলে অবশ্যই ঘটনা ব্যাখ্যার জন্য পর্যাপ্ত হতে হবে। আংশিক বা অসম্পূর্ণ প্রকল্প কোনো অবস্থাতেই বৈধ হতে পারে না। যেমন: কোনো দেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে নারী ও শিশু পাচার হচ্ছে। তাহলে এখানে আংশিক কারণ উল্লেখ করা হয়েছে। তাই এই প্রকল্পটি অবৈধ। অন্যদিকে প্রকল্পকে প্রকৃত কারণ অনুসন্ধানভিত্তিক হতে হবে। যেমন: রোগীর রোগ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে একটা কারণকে ধরে চিকিৎসা না করে বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে সঠিক কারণ নির্ণয় করে ডাক্তার ঔষধ দিলে তা যথার্থ হয়।
উদ্দীপকে অদিতির ডায়রিয়ার কারণ হিসেবে শুধু শাক খাওয়ার কথা বলা হয়েছে। অদিতির প্রকল্প যথার্থ হতো যদি পরিপাকযন্ত্রের সমস্যা ও দূষিত পানির কারণ উল্লেখ থাকতো। তাতে প্রকল্পটি পর্যাপ্ত ব্যাখ্যায় যথার্থ হতো। সুতরাং পরিশেষে বলা যায়, ঘটনার পর্যাপ্ত ব্যাখ্যা ও প্রকৃত কারণ শর্তটি অনুসরণ করে প্রকল্পটি যথার্থ হিসেবে পরিগণিত হতো।

৬. কাদের সাহেব বিদেশ থেকে দীর্ঘদিন পর গ্রামের বাড়ি আসেন। গ্রামের বাড়িতে এসে তিনি দেখতে পান তাদের গ্রামে নারী শিক্ষার হার একেবারে কম। তিনি এ বিষয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর সিদ্ধান্ত দেন যে, এ অঞ্চলে নারী শিক্ষা অভাবের প্রধান কারণ তাদের বাল্যবিবাহ।
ক. সংকট উত্তরক দৃষ্টান্ত কী?
খ. পরীক্ষণাত্মক সমর্থন কত প্রকার?
গ. উদ্দীপকে কাদের সাহেবের বক্তব্যটি প্রকল্পের কোন স্তরের অন্তর্ভুক্ত? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকে উল্লেখিত সমস্যা সম্পর্কে সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য প্রকল্পের কোন কোন স্তর অনুসরণ করতে হবে? বিশ্লেষণ করো।

৬ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. যে ঘটনা বা দৃষ্টান্তের মাধ্যমে প্রতিযোগী প্রকল্পগুলোর মধ্যকার সংকট নিরসন করা হয় তাকে সংকট উত্তরক দৃষ্টান্ত বলে।

খ. পরীক্ষণাত্মক সমর্থন দুই প্রকার। যথা- প্রত্যক্ষ সমর্থন ও পরোক্ষ সমর্থন।
প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে যখন কোনো প্রকল্পকে যাচাই বা সমর্থন করা হয় তখন তাকে প্রত্যক্ষ সমর্থন বলে। আর অবরোহ পদ্ধতি ও ঘটনা সংকলনের সাহায্যে কোনো প্রকল্প প্রমাণ করাকে পরোক্ষ সমর্থন বলে।

গ. উদ্দীপকে কাদের সাহেবের বক্তব্যটি প্রকল্পের তৃতীয় স্তর বা সিদ্ধান্ত গ্রহণ স্তরের অন্তর্ভুক্ত।
প্রকল্পের ক্ষেত্রে প্রাকৃতিক ঘটনাবলির নিরীক্ষণ থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে প্রাথমিক আনুমানিক ধারণা গঠন করা হয়। এই আনুমানিক ধারণার ওপর ভিত্তি করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। যেমন: বিজ্ঞানী নিউটন গাছ থেকে আপেল মাটিতে পড়তে দেখে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছিলেন যে, মাটিতে কোনো আকর্ষণ আছে।
উদ্দীপকে কাদের সাহেব গ্রামের নারী শিক্ষার হার পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর সিদ্ধান্ত নেন যে, এ অঞ্চলে নারী শিক্ষার অভাবে বাল্যবিবাহ হচ্ছে। এক্ষেত্রে প্রকল্পের তৃতীয় স্তর সিদ্ধান্ত গ্রহণের দিকটি প্রতিফলিত হয়েছে। যা প্রকল্প প্রণয়নের ক্ষেত্রে একটি অপরিহার্য স্তর। সিদ্ধান্ত গ্রহণ ব্যতীত প্রকল্প প্রণয়ন করা অসম্ভব।

ঘ. উদ্দীপকে উল্লেখিত সমস্যা সম্পর্কে সিদ্ধান্ত গ্রহণের পূর্বে ঘটনার নিরীক্ষণ ও আনুমানিক ধারণা গঠন নামক দুইটি স্তর অনুসরণ করতে হবে।
প্রকল্পের প্রথম স্তর হলো নিরীক্ষণ। প্রকৃতিতে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন ঘটনা ঘটছে। আমরা এসব ঘটনা প্রত্যক্ষ করে সে সম্পর্কে অভিজ্ঞতা লাভ করি। প্রাকৃতিক পরিবেশে ঘটনার এরূপ প্রত্যক্ষণই হলো নিরীক্ষণ। প্রকল্পের দ্বিতীয় স্তর হচ্ছে প্রাথমিক আনুমানিক ধারণা গঠন। প্রাকৃতিক ঘটনার যথার্থ নিরীক্ষণের মাধ্যমে আমরা যেসব তথ্য পেয়ে থাকি তার মধ্যে প্রয়োজনীয় তথ্যের মাধ্যমে প্রাথমিক আনুমানিক ধারণা গঠন করি।
উদ্দীপকে কাদের সাহেব দেখতে পেলেন, তার গ্রামে নারী শিক্ষার হার খুবই কম। তিনি এই বিষয়টি নিরীক্ষণ করে দেখলেন, নারীর শিক্ষার অভাবে অল্প বয়সেই বিবাহ হচ্ছে। এই ক্ষেত্রে তিনি প্রকল্পের দ্বিতীয় স্তরটি অর্থাৎ, আনুমানিক ধারণা গঠন করলেন। পরে সিদ্ধান্ত নিলেন যে, নারী শিক্ষার অভাবে বাল্যবিবাহ হচ্ছে।
পরিশেষে বলা যায় যে, কোনো বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের পূর্বে অবশ্যই ঘটনা নিরীক্ষণ এবং একটি আনুমানিক ধারণা গঠন করতে হবে।

৭. সুন্দরবনে অগ্নিকান্ড-র ঘটনা দেখে বনবিভাগ কর্তৃপক্ষ ধারণা করেন যে, নাশকতা অথবা মৌয়ালদের মধু সংগ্রহ করার কারণে এ অগ্নিকান্ড-র ঘটনা ঘটেছে। এরপর তদন্ত কমিটি গঠন করে ও বিভিন্ন আলামত পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখেন যে, মধু সংগ্রহকারী মৌয়ালদের মাধ্যমেই ঐ অগ্নিকান্ড-র সূত্রপাত হয়েছিল।
ক. প্রকল্প কী?
খ. প্রকল্প কখন গ্রহণযোগ্য হয়? ব্যাখ্যা করো।
গ. উদ্দীপকে অগ্নিকান্ড-র ঘটনা দেখার বিষয়টি প্রকল্পের কোন স্তরকে নির্দেশ করে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকে প্রকল্পের যথাযথ স্তরসমূহের সন্নিবেশ ঘটেছে- তোমার মতামত দাও।

৭ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. কোনো বিষয় বা ঘটনা সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা বা আন্দাজ করাই হলো প্রকল্প।
খ. বৈধ প্রকল্পের শর্তাবলি অনুসরণ করলেই প্রকল্প গ্রহণযোগ্য হবে।
কোনো বস্তু বা ঘটনা ব্যাখ্যা করার জন্য আমরা প্রকল্প গঠন করি। কিন্তু সব প্রকল্প গ্রহণযোগ্যতা পায় না। কোনো একটি প্রকল্পের গ্রহণযোগ্যতা পেতে হলে প্রকল্পকে অবশ্যই কতকগুলো শর্ত অনুসরণ করতে হয়। যেমন: কোনো প্রকল্পকে সুনির্দিষ্ট, আত্মসঙ্গতিপূর্ণ, যৌক্তিক, বাস্তব কারণভিত্তিক, সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে। তাহলেই প্রকল্প গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করবে।

গ. উদ্দীপকে অগ্নিকান্ড-র ঘটনা দেখার বিষয়টি প্রকল্পের ঘটনা নিরীক্ষণের স্তরকে নির্দেশ করেছে।
প্রকল্পের প্রথম স্তর হলো নিরীক্ষণ। প্রকৃতিতে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন ঘটনা ঘটছে। আমরা এসব ঘটনা প্রত্যক্ষ করে সে সম্পর্কে অভিজ্ঞতা লাভ করি। প্রাকৃতিক পরিবেশে ঘটনার এরূপ প্রত্যক্ষণই হলো নিরীক্ষণ। এমনিভাবে প্রাকৃতিক ঘটনাবলি নিরীক্ষণের মাধ্যমে প্রাপ্ত অভিজ্ঞতা থেকে প্রকল্প গঠন করি, এরপর ঐ প্রকল্পের ওপর ভিত্তি করে অগ্রসর হই।
উদ্দীপকে সুন্দরবনে অগ্নিকান্ড-র ঘটনাটি বনবিভাগ প্রত্যক্ষণ করে। তা থেকে অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে পর্যায়ক্রমে অগ্রসর হয়ে প্রকল্প প্রণয়ন করা হয় যে নাশকতা বা মোয়ালদের কারণে অগ্নিকান্ড ঘটেছে। পরবর্তীতে। অগ্নিকান্ড-র পেছনে মোয়ালদের ভূমিকা প্রমাণিত হয়। এভাবে নিরীক্ষণ ব্যতীত আনুমানিক ধারণা গঠন কিংবা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা অসম্ভব। তাই কোনো প্রকল্প গঠনের ক্ষেত্রে নিরীক্ষণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

ঘ. উদ্দীপকে প্রকল্পের যথাযথ স্তরসমূহের সন্নিবেশ ঘটেছে।
প্রকল্প গঠন করার জন্য প্রকল্পকে কতকগুলো পর্যায় অতিক্রম করতে হয়, যাকে প্রকল্পের স্তর বলে। প্রকল্পের স্তর চারটি। কোনো ঘটনা যদি উক্ত চারটি স্তর অনুসরণের মাধ্যমে প্রকল্প প্রণয়ন করে তবে তা সত্য বলে প্রমাণিত হবে। প্রকল্পের চারটি স্তর হলো- প্রথমত, কোনো বিষয়ক প্রাকৃতিক ঘটনাবলি নিরীক্ষণের মাধ্যমে প্রাপ্ত অভিজ্ঞতা থেকে প্রকল্প গঠন করা। দ্বিতীয়ত, প্রকল্পে আমরা নিরীক্ষণের মাধ্যমে প্রাপ্ত অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে প্রাথমিক আনুমানিক ধারণা গঠন করা। তৃতীয়ত, আনুমানিক ধারণার ওপর ভিত্তি করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা। চতুর্থত, কোনো প্রকল্পের গৃহীত সিদ্ধান্তকে বাস্তবতার নিরিখে যাচাই করা।
উদ্দীপকে বর্ণিত ঘটনায় বনবিভাগ সুন্দরবনে অগ্নিকান্ড দেখে ধারণা করেন যে, নাশকতা অথবা মৌয়ালদের মধু সংগ্রহ করার কারণে এ অগ্নিকান্ড-র ঘটনা ঘটেছে। এরপর তদন্ত কমিটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখেন যে, মধু সংগ্রহকারী মৌয়ালদের মাধ্যমেই ঐ অগ্নিকান্ড-র সূত্রপাত হয়েছে। উক্ত ঘটনাটি প্রকল্পের চারটি স্তরই অর্থাৎ ঘটনার নিরীক্ষণ, প্রাথমিক আনুমানিক ধারণা গঠন, সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও সিদ্ধান্ত যাচাইকরণ যথার্থভাবে অনুসরণ করা হয়েছে। তাই উক্তিটি যথার্থ বলে প্রমাণিত হয়েছে।
পরিশেষে বলা যায়, অভিজ্ঞতা ও নিরীক্ষণের মাধ্যমে পাওয়া তথ্যগুলোর মাধ্যমে বনবিভাগের প্রকল্পটি বৈধ প্রমাণিত হয়েছে। এ কারণেই বলা যায়, বনবিভাগের প্রকল্পটিতে চারটি স্তরেরই সন্নিবেশ ঘটেছে।

৮. দৃশ্যকল্প-১: আসিফ সাহেবকে ইংরেজির শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেয়ার পর দেখো গেল তিনি পদার্থবিজ্ঞান, গণিত ও সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়েও পড়াতে সক্ষম।
দৃশ্যকল্প-২: কেক বানাতে গিয়ে মিতা সাদা পাউডারযুক্ত তিনটি বৈয়াম দেখে চিনি শনাক্ত করতে না পেরে সবগুলোর স্বাদ আস্বাদন করল এবং যেটি মিষ্টি সেটিকে চিনি পাউডার হিসেবে শনাক্ত করলো।
ক. কাজ চালানো প্রকল্প কী?
খ. প্রকল্পকে কেন প্রমাণের মানদ-- পরীক্ষিত হতে হয়? ব্যাখ্যা করো।
গ. দৃশ্যকল্প-১ প্রকল্পের কোন প্রমাণটি নির্দেশ করে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. প্রকল্প প্রমাণের আলোকে দৃশ্যকল্প-২ এর স্বরূপ বিচার করো।

৮ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. বৈধ প্রকল্পের অভাবে কাজ চালানোর জন্য সাময়িকভাবে গৃহীত প্রকল্পকে কাজ চালানো প্রকল্প বলে।

খ. এককে একটি নিয়ম বা নীতির কিংবা তত্ত্বের পর্যায়ে উন্নীত করার জন্য একাকে প্রমাণের মানদ-- পরীক্ষিত হতে হয়।
প্রকল্প মানুষের আনুমানিক ধারণামাত্র। তাই প্রকল্প সত্যও হতে পারে আবার মিথ্যাও হতে পারে। প্রকল্প সত্য ও সঠিক হতে হলে বৈধ প্রকল্প যাচাইকরণের মাধ্যমে প্রমাণিত হতে হবে। তাহলেই তা তত্ত্বের মর্যাদা লাভ করবে। অর্থাৎ বৈধ প্রকল্প বিভিন্ন পরীক্ষার মাধ্যমে প্রমাণিত হওয়ার পরই কেবল নিয়ম বা তত্ত্বে পরিণত হয়।

গ. দৃশ্যকল্প-১ এ প্রকল্পের আরোহ সমন্বয়ের প্রমাণটি নির্দেশ করেছে।
প্রকল্প হলো কোনো ঘটনাকে ব্যাখ্যা করার জন্য আনুমানিক ধারণা। কিন্তু অনেক সময় দেখা যায়, যে ঘটনাকে ব্যাখ্যা করার জন্য প্রকল্প প্রণয়ন করা হয় সে ঘটনাকে ব্যাখ্যা করা ছাড়াও একই প্রকল্প দিয়ে অন্যান্য ঘটনাকেও ব্যাখ্যা করা যায় তখন তাকে আরোহ সমন্বয় বলে। যেমন: মাধ্যাকর্ষণ প্রকল্পটি প্রথমে বস্তুর পতনের ব্যাখ্যা করার জন্য প্রণয়ন করা হয়েছিল। পরবর্তীতে একই প্রকল্প দিয়ে আকাশে গ্রহ- নক্ষত্রের অবস্থান, জোয়ার-ভাটা ইত্যাদি ঘটনাকেও ব্যাখ্যা করা হয়।
দৃশ্যকল্প-১ এ আসিফ সাহেব প্রথমে ইংরেজির শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পান। পরবর্তীতে দেখা গেলো যে তিনি পদার্থবিজ্ঞান, গণিত ও সামাজিকবিজ্ঞান বিষয়েও পড়াতে সক্ষম। এক্ষেত্রে তিনি ইংরেজি শিক্ষক হলেও পরবর্তীতে আরও অন্যান্য বিষয়েও পড়াতে পারদর্শী। এতে পাঠ্যবইয়ের আরোহ সমন্বয়ের প্রমাণটি প্রতিফলন ঘটে।

ঘ. প্রকল্প প্রমাণের সংকট উত্তরক দৃষ্টান্তের আলোকে দৃশ্যকল্প-২ এর স্বরূপ বিচার করা হলো।
কোনো ঘটনা বা বিষয়ের ব্যাখ্যা করতে গেলে তার বিপরীতে অনেক প্রতিযোগী বা প্রতিদ্বন্দ্বীমূলক প্রকল্প এসে ভড় করে। এতে সমস্যা বা সংকট তৈরি হয়। উক্ত সংকট নিরসনে যে দৃষ্টান্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে একমাত্র প্রকল্প হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করে তাকে সংকট উত্তরক দৃষ্টান্ত বলে। যেমন: বাসায় চুরি হয়েছে। কে প্রকৃত চোর তা বোঝা মুশকিল হয়ে দাঁডw়য়েছে। পরবর্তীতে পুলিশ হাতের ছাপ পরীক্ষা করে প্রকৃত চোরকে শনাক্ত করেন। এখানে হাতের ছাপ পরীক্ষা করা সংকট উত্তরক দৃষ্টান্ত।
দৃশ্যকল্প-২ এ কেক বানাতে গিয়ে মিতা সাদা পাউডারযুক্ত তিনটি বৈয়াম দেখে চিনি শনাক্ত করতে পারল না। তাই শনাক্তকরণের ক্ষেত্রে সংকট তৈরি হয়। এই সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য সে সবগুলো বৈয়ামের স্বাদ আস্বাদন করে এবং যেটি মিষ্টি সেটিকে চিনি পাউডার হিসেবে শনাক্ত করে। এভাবে সংকট উত্তরক দৃষ্টান্তের মাধ্যমে প্রকল্প প্রমাণের তাৎক্ষণিক সমস্যা সমাধান করা যায়।
পরিশেষে বলা যায়, একটি ঘটনার অনেকগুলো কারণ যখন ভিড় করে তখন সংকট উত্তরক দৃষ্টান্তের মাধ্যমে প্রকৃত কারণ নির্ণয় করা যায়।

৯. দৃশ্যকল্প ১: জিতেন ছুটিতে গ্রামের বাড়ি গিয়েছে। রাতে হঠাৎ করে বিদ্যুৎ চলে গেলে জিতেন হারিকেন জ্বালিয়ে সাময়িকভাবে তার জরুরি কাজ শেষ করেছে।
দৃশ্যকল্প ২: বিদ্যালয় থেকে বাসায় ফেরার পথে মিঠু হারিয়ে গেলো। ছোট বোন বাড়িতে এসে মাকে বললো, ‘‘মা দাদাকে পরী ধরে নিয়ে গেছে।’’ ড্রাইভার বললো, ‘‘হয়তো কোনো ছেলেধরা ওকে ধরে নিয়ে গেছে অথবা সে তার কোনো বন্ধুর বাসায় চলে গেছে।" সন্ধ্যার দিকে দেখা গেলো মিঠু তার বন্ধুর সঙ্গে বাড়িতে ফিরেছে।
ক. যুক্তিবিদ কফির মতে প্রকল্প কী?
খ. বাস্তব কারণ বলতে কী বোঝায়?
গ. দৃশ্যকল্প-১ এ কোন ধরনের প্রকল্পের ইঙ্গিত রয়েছে?
ঘ. দৃশ্যকল্প ২-এ ছোটবোন ও ড্রাইভারের বক্তব্যে যে প্রকল্প প্রতিফলিত হয়েছে তার তুলনামূলক বিশ্লেষণ করো।

৯ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. যুক্তিবিদ কফির মতে, কোনো ঘটনাকে বৈজ্ঞানিকভাবে ব্যাখ্যা করার জন্য যে অস্থায়ী ধারণা বা অনুমান করা হয় তাই প্রকল্প।

খ. কোনো একটি ঘটনার ব্যাখ্যার জন্য আমাদের এমন একটি কারণ অনুমান করতে হয় যার বাস্তব অস্তিত্ব আছে, সেই কারণকেই বাস্তব কারণ বলে।
প্রকল্পের প্রকৃত কারণকেই বাস্তব কারণ হিসেবে মনে করা হয়। বস্তুত কোনো অবাস্তব প্রকল্প কখনো প্রকৃত ঘটনার ব্যাখ্যা বা বিশ্লেষণ করতে পারে না। তাই কারণ হিসেবে এমন কিছু বিষয় সম্পর্কে ধারণা করা যায় যে, যার অবস্থান সম্পর্কে উপযুক্ত প্রমাণের মাধ্যমে বর্ণনা করা সম্ভব। এ ধরনের একটি আনুমানিক কারণকেই বাস্তব কারণ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়।

গ. দৃশ্যকল্প-১ এ কাজ চালানো প্রকল্পের ইঙ্গিত করা হয়েছে।
কোনো ঘটনাকে ব্যাখ্যা করার মতো বৈধ প্রকল্পের অভাবে আমরা যে প্রকল্প প্রণয়ন করি তাকে কাজ চালানো প্রকল্প বলে। বাস্তবিক ক্ষেত্রে আমরা এমন অনেক ঘটনার সম্মুখীন হই যে, সংঘটিত ঘটনার সমাধানের জন্য আমাদের প্রকল্প গঠন করে কাজ চালাতে হয়। যেমন: বিদ্যুতকে ব্যাখ্যা করতে গিয়ে আমরা বুঝি বিদ্যুৎ যে আসলে কী-তা আমাদের জানা নেই। এই অবস্থায় ব্যাখ্যার কাজ চালানোর জন্য প্রকল্প করা হয় যে, বিদ্যুৎ এক প্রকার তরল পদার্থ। তবে এই প্রকল্পের কোনো বৈজ্ঞানিক মূল্য নেই।
দৃশ্যকল্প-১ এ জিতেনের বাসায় রাতে হঠাৎ বিদ্যুৎ চলে যাওয়াতে তিনি হারিকেন জ্বালিয়ে সাময়িকভাবে তার জরুরি কাজ শেষ করেন। এখানে জিতেন বিদ্যুতের অভাবে হারিকেন জ্বালাতে বাধ্য হয়েছে। অনুরূপভাবে বৈধ প্রকল্পের অভাবে কাজ চালানোর জন্য সাময়িকভাবে প্রকল্প প্রণয়ন করা হয়। বৈধ প্রকল্প গঠনের আগ পর্যন্ত এই প্রকল্প দিয়ে কাজ চালানো হয়ে থাকে।

ঘ. দৃশ্যকল্প-২ এ ছোট বোন ও ড্রাইভারের বক্তব্যের মধ্যে ড্রাইভারের প্রকল্পটি বাস্তবসম্মত ও যুক্তিসঙ্গত বলে মনে করি।
প্রকল্প অবশ্যই বাস্তব ঘটনাবলির সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ হলে এবং এর অস্তিত্ব প্রকৃতিতে বিদ্যমান হলেই সমর্থিত হবে। যার অস্তিত্ব প্রকৃতিতে নেই তা কোনো ঘটনার কারণ হিসেবে গণ্য করা মোটেই সমীচীন নয়। যেমন: কোনো এলাকায় বন্যা হওয়ার পর এলাকাবাসী ধারণা করল, দেবতার অভিশাপে বন্যা হয়েছে। কিন্তু বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিতে অতিবৃষ্টি হলো বন্যার অন্যতম কারণ। এখানে এলাকাবাসীর প্রকল্পে কোনো বাস্তব ঘটনার অনুসরণ করা হয়নি।
উদ্দীপকে ছোট বোনের বক্তব্যটি বাস্তব ঘটনার আলোকে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেনি। তার বক্তব্যে ‘পরীর ধারণা' প্রাধান্য পেয়েছে যা অলৌকিক অনুমান ছাড়া আর কিছুই নয়। কিন্তু ড্রাইভারের বক্তব্যে আমরা বাস্তব ঘটনাবলির প্রতিফলন দেখি। ড্রাইভার মিঠু হারিয়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে ছেলেধরা বা বন্ধুর বাসায় যাওয়ার বাস্তব কারণ উল্লেখ করেন। পরবর্তীতে দেখা যায় মিঠু তার বন্ধুর বাসা থেকে ফেরত আসে। তাই ড্রাইভারের বক্তব্য বাস্তবসম্মত ও যুক্তিযুক্ত।
যুক্তিবিদ্যার অন্যতম লক্ষ্য হচ্ছে সার্বিক নিয়ম প্রতিষ্ঠা করা। এই সূত্র যতটা না তাত্ত্বিক তার চেয়ে বেশি ব্যবহারিক বা বাস্তবতা নির্ভর। এই কারণে দৃশ্যকল্প-২ এ ছোট বোনের চেয়ে ড্রাইভারের বক্তব্য যুক্তিসঙ্গত ও প্রাসঙ্গিক।

১০. লিলির একটি গোলাপ বাগান ছিলো। সকালে ঘুম থেকে উঠে সে দেখতে পেলো বাগানের লাল গোলাপটি নেই। সে টিনাকে জিজ্ঞেস করলো, ‘‘কে লাল গোলাপটি নিয়েছে?" টিনা বললো, ‘‘আজ মায়ের জন্মদিন তাই আমি নিয়েছি মাকে দেব বলে।’’ তখন লিলি আবার টিনাকে জিজ্ঞেস করলো, কোন অবস্থায় তুমি ফুলটি নিলে? টিনা বললো, ‘‘যখন সবাই ঘুমিয়ে ছিলো তখন আমি চুপিচুপি গোলাপটি ছিড়েছি। এরপর মা লিলিকে বললো, 'তুমি যার মাধ্যমে গোলাপ চোরকে শনাক্ত করলে দৈনন্দিন জীবনে তার যথেষ্ট প্রয়োজন আছে। জীবনে যে কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণের পূর্বে আনুমানিক ধারণা গঠন করা খুবই দরকার।"
ক. যুক্তিবিদ কার্ভেথ রীডের মতে, প্রকল্প কত প্রকার?
খ. 'আরোহ সমন্বয়' বলতে কী বোঝায়?
গ. উদ্দীপকে প্রকল্পের কোন বিষয়টির ইঙ্গিত রয়েছে?
ঘ. উদ্দীপকের আলোকে প্রকল্পের প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব মূল্যায়ন করো।

১০ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. যুক্তিবিদ কার্ভেথ রীডের মতে, প্রকল্প তিন প্রকার।

খ. একই প্রকল্প সংশ্লিষ্ট ঘটনা ব্যাখ্যা করা ছাড়াও অন্যান্য ঘটনা ব্যাখ্যা করতে সক্ষম হয় তাকে আরোহ সমন্বয় বলে।
সাধারণত কোনো ঘটনার সত্যতা নির্ণয়ের জন্য প্রকল্প গঠন করা হয়। অনেক ক্ষেত্রে একটি প্রকল্পের সাহায্যে একাধিক ঘটনার কারণ ব্যাখ্যা করা যায়। প্রকল্পের এই গুণকে আরোহ সমন্বয় বলে। যেমন: ভূ-পৃষ্ঠে জড়বস্তু পতনের কারণ হিসেবে বিজ্ঞানী নিউটন মাধ্যাকর্ষণ শক্তি সম্পর্কিত একটি প্রকল্প গঠন করেছিলেন। পরে দেখা যায়, জোয়ার-ভাটা, গ্রহ-নক্ষত্রের গতি ইত্যাদি বিষয়গুলো ব্যাখ্যা প্রদানেও সক্ষম।

গ. উদ্দীপকে প্রকল্পের সংকট উত্তরক দৃষ্টান্তর বিষয়টিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে।
যে প্রকল্পের মাধ্যমে কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী প্রকল্প পরিহার করে একমাত্র বৈধ প্রকল্পকে প্রতিষ্ঠা করা যায় তাকে সংকট উত্তরক দৃষ্টান্ত বলে। যুক্তিবিদ ফ্রান্সিস বেকন প্রথম সংকট উত্তরক দৃষ্টান্তের কথা বলেন। তিনি সংকট উত্তরক দৃষ্টান্তকে রাস্তার মোড়ে স্থাপিত পথনির্দেশক চিহ্ন বা ফলক- এর সাথে তুলনা করেছেন। যাতে পথচারী সহজে একটি মাত্র রাস্তা নির্ণয় করতে পারে।
উদ্দীপকে লিলির বাগানের লাল গোলাপ ফুলটি চুরি হয়েছিলো। উপযুক্ত লোককে শনাক্ত করার জন্য যে প্রক্রিয়ায় লিলি অগ্রসর হয়েছে তা সংকট উত্তরক দৃষ্টান্তের অনুরূপ। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই প্রতিযোগী প্রকল্পের মধ্য থেকে একটি মাত্র প্রকল্প প্রণয়ন করে সমস্যা সমাধান করা যায়। যা বাস্তব জীবনে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

ঘ. আমাদের দৈনন্দিন জীবন ছাড়াও বৈজ্ঞানিক গবেষণার ক্ষেত্রে প্রকল্পের প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব রয়েছে।
বর্তমানে আমরা যেসব মতবাদ বা তত্ত্বের কথা বলি, সেগুলো একসময় প্রকল্প ছিল। তারপর বিভিন্ন স্তর অতিক্রম করে আজকের এ অবস্থায় উপনীত হয়েছে। আমাদের দৈনন্দিন জীবনে বিভিন্ন ঘটনা নিরীক্ষণ ও পরীক্ষণের জন্যও প্রকল্প প্রয়োজন। শুধু তাই নয়, ইতিহাস রচনা থেকে শুরু করে সুসংবাদ ও সুশৃঙ্খল জ্ঞান ও চিকিৎসার ক্ষেত্রেও প্রকল্পের প্রয়োজন। তাই আমাদের সামাজিক সমস্যা, বিভিন্ন অপরাধের রহস্য উদ্ঘাটন, অর্থনৈতিক পরিকল্পনা গ্রহণের ক্ষেত্রে প্রকল্পের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।
উদ্দীপকে লিলির বাগানের ফুল চুরির বিষয়টি শনাক্তকরণ দেখে তার মা লিলিকে বললো, ‘‘তুমি যার মাধ্যমে গোলাপ চোরকে শনাক্ত করলে দৈনন্দিন জীবনে তার যথেষ্ট প্রয়োজন আছে। জীবনে যে কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণের পূর্বে আনুমানিক ধারণা গঠন করা খুবই দরকার।’’ উক্ত আলোচনায় প্রকল্প যে দৈনন্দিন জীবনে খুবই গুরুত্বপূর্ণত তা বলার চেষ্টা করেছেন।
পরিশেষে বলা যায় যে, আমাদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রকল্পের প্রয়োজন ও গুরুত্ব অপরিসীম। যে কোনো ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনের ক্ষেত্রে প্রকল্প যথেষ্ট ভূমিকা পালন করে।
Share:

0 Comments:

Post a Comment