HSC যুক্তিবিদ্যা ২য় পত্র (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর pdf download অধ্যায় ৩

HSC যুক্তিবিদ্যা ২য় পত্র (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর pdf download

এইচএসসি পরীক্ষার পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি
HSC Logic 2nd Paper Srijonshil question and answer pdf download.

উচ্চ মাধ্যমিক

যুক্তিবিদ্যা
দ্বিতীয় পত্র

সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
৩য় অধ্যায়

HSC Logic 2nd Paper
Srijonshil
Question and Answer pdf download

১. দৃশ্যকল্প-১: জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি, মার্চ হতে ডিসেম্বর পর্যন্ত সকল মাসই ৩২ দিনের কম। সুতরাং, ইংরেজি বছরের সকল মাসই ৩২ দিনের কম।
দৃশ্যকল্প-২: রাম, রহিম, জন মরণশীল। অতএব, সকল মানুষ মরণশীল।
ক. পূর্ণাঙ্গ আরোহ কী?
খ. অবৈজ্ঞানিক আরোহের সিদ্ধান্ত সম্ভাব্য হয় কেন?
গ. দৃশ্যকল্প-১ এ নির্দেশিত আরোহ ব্যাখ্যা করো।
ঘ. দৃশ্যকল্প-২ এবং দৃশ্যকল্প-১-এ বর্ণিত আরোহের মধ্যে সম্পর্ক বিশ্লেষণ করো।

১ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. কোনো সার্বিক বচনের অন্তর্গত প্রতিটি বিশিষ্ট দৃষ্টান্তকে আলাদা আলাদাভাবে গণনার মাধ্যমে একটি সার্বিক সংশ্লেষক বচন স্থাপন করার প্রক্রিয়াকে বলে পূর্ণাঙ্গ আরোহ।

খ. কার্যকারণ নীতি অনুসরণ না করার কারণে অবৈজ্ঞানিক আরোহের সিদ্ধান্ত সম্ভাব্য হয়।
প্রকৃতির নিয়মানুবর্তিতা নীতির ওপর নির্ভর করে অবৈজ্ঞানিক আরোহে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। এখানে প্রতিকূল দৃষ্টান্তের কার্যকারণ সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করা হয় না বলে সিদ্ধান্ত সব সময়ই সম্ভাব্য হয়। যেমনু ঢাকা শহরে কতিপয় কাক দেখে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হলো, 'সকল কাক হয় কালো’। এখানে কার্যকারণ সম্পর্ক ছাড়াই বাস্তব অভিজ্ঞতার সাহায্যে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। এই কারণে অবৈজ্ঞানিক আরোহের সিদ্ধান্ত সর্বদা সম্ভাব্য হয়।

গ. দৃশ্যকল্প-১ এ অবৈজ্ঞানিক আরোহ নির্দেশ করে।
প্রকৃতির নিয়মানুবর্তিতা নীতি বা প্রতিকূল দৃষ্টান্ত বিহীন অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে যে সার্বিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়, তাকে অবৈজ্ঞানিক আরোহ বলে। যেমন: এ যাবৎ যত মানুষ দেখেছি তারা সবাই স্বার্থপর। অতএব, সব মানুষ হয় স্বার্থপর। এখানে অনুকূল দৃষ্টান্তের আলোকে সার্বিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয় তাই এটি অবৈজ্ঞানিক আরোহের দৃষ্টান্ত।
দৃশ্যকল্প-১ এ বর্ণিত জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি, ‘মার্চ হতে ডিসেম্বর পর্যন্ত সকল মাসই ৩২ দিনের কম। সুতরাং ইংরেজি বছরের সকল মাসই ৩২ দিনের কম।' এই যুক্তিপ্রক্রিয়ায় কেবল অনুকূল অভিজ্ঞতার আলোকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তাই দৃষ্টান্তটি অবৈজ্ঞানিক আরোহের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।

ঘ. দৃশ্যকল্প-১ এবং দৃশ্যকল্প-২ এ যথাক্রমে অবৈজ্ঞানিক আরোহ এবং বৈজ্ঞানিক আরোহকে নির্দেশ করা হয়েছে। নিচে এদের মধ্যে বিদ্যমান সম্পর্ক বিশ্লেষণ করা হলো-
প্রকৃত আরোহের গুরুত্বপূর্ণ দুটি প্রকরণ হলো, বৈজ্ঞানিক আরোহ ও অবৈজ্ঞানিক আরোহ। উভয় আরোহ অনুমানে আরোহমূলক লম্ফের মাধ্যমে সার্বিক সিদ্ধান্ত প্রতিষ্ঠা করা হয়। পাশাপাশি উভয় অনুমান প্রকৃতির নিয়মানুবর্তিতা নীতির ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু এর পরেও উভয় আরোহে বিভিন্ন বৈসাদৃশ্য পরিলক্ষিত হয়। যেমন- বৈজ্ঞানিক আরোহে প্রকৃতির নিয়মানুবর্তিতা নীর্তি ও কার্যকারণ নিয়মের ওপর নির্ভর করে
সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। এ কারণে বৈজ্ঞানিক আরোহের সিদ্ধান্ত নিশ্চিত হয়। অন্যদিকে, অবৈজ্ঞানিক আরোহে কেবল প্রকৃতির নিয়মানুবর্তিতা নীতির ওপর নির্ভর করে অবাধ অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। এ কারণে অবৈজ্ঞানিক আরোহের সিদ্ধান্ত হয় সম্ভাব্য।
বৈজ্ঞানিক আরোহে বিশেষ বিশেষ দৃষ্টান্তের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত প্রতিষ্ঠা করা হলেও এখানে দৃষ্টান্তের সংখ্যার চেয়ে মানের ওপর বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়। তাই এ অনুমানের সিদ্ধান্ত বাস্তবতার সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ হয়। অন্যদিকে, অবৈজ্ঞানিক আরোহে দৃষ্টান্তের সংখ্যার ওপর বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়। এ অনুমানে সদর্থক দৃষ্টান্তকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হলেও নঞর্থক দৃষ্টান্তকে তেমন গুরুত্বই দেওয়া হয় না। এ কারণে অনেক ক্ষেত্রেই অবৈজ্ঞানিক আরোহের সিদ্ধান্তের সাথে বাস্তবতার কোনো মিল থাকে না।
পরিশেষে বলা যায় যে, বৈজ্ঞানিক ও অবৈজ্ঞানিক আরোহ উভয়ই প্রকৃত আরোহের শ্রেণি হলেও এদের মধ্যে বিভিন্ন দিক দিয়ে পার্থক্য বিদ্যমান।

২. ২০১৯ সালে অনুষ্ঠিত কোপা আমেরিকার ফুটবল ম্যাচের ১০টি খেলার সবগুলো দেখার পর আশরাফ তার বন্ধু মনিরকে বললো, কোপা আমেরিকার সব খেলাই ভালো মানের। উত্তরে মনির বললো, আমিও এ পর্যন্ত যে কয়টি ম্যাচ দেখেছি সেগুলো ভালো মানের ছিল। তাই বলা যায়, কোপা আমেরিকার সব খেলা হয় ভালো মানের।
ক. অপ্রকৃত আরোহ কত প্রকার?
খ. অপ্রকৃত আরোহকে প্রকৃত আরোহ বলা যায় না কেন? ব্যাখ্যা করো।
গ. উদ্দীপকে আশরাফের বক্তব্য কোন ধরনের আরোহকে নির্দেশ করেছে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. আরোহের প্রকারভেদের আলোকে আশরাফ ও মনিরের বক্তব্যের তুলনামূলক বিশ্লেষণ করো।

২ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. অপ্রকৃত আরোহ তিন প্রকার। যথা: ১. পূর্ণ গণনামূলক আরোহ, ২. যুক্তিসাম্যমূলক আরোহ এবং ৩. ঘটনা সংযোজন।

খ. আরোহমূলক লম্ফ না থাকার কারণে অপ্রকৃত আরোহকে প্রকৃত আরোহ বলা যায় না। অপ্রকৃত আরোহের মধ্যে আরোহের মৌলিক বৈশিষ্ট্য আরোহাত্মক উলস্নম্ফন বিদ্যমান থাকে না। এ আরোহগুলোকে দেখতে আরোহের মতো মনে হয় কিন্তু এগুলো আসলে আরোহ নয়। তাই অনেকে অপ্রকৃত আরোহের সমালোচনা করে থাকেন।

গ. উদ্দীপকে আশরাফের বক্তব্য পূর্ণাঙ্গ আরোহকে নির্দেশ করে।
যে আরোহ অনুমানে সকল দৃষ্টান্তের পর্যবেক্ষণ বা নিরীক্ষণের ভিত্তিতে সার্বিক যুক্তিবাক্য প্রতিষ্ঠা করা হয়, তাকে পূর্ণাঙ্গ আরোহ বলে। যেমন- একটি বাগানে ৫০টি ফলের গাছ আছে। প্রতিটি ফলের গাছ পর্যবেক্ষণ করে একটি সার্বিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হলো- বাগানের সকল গাছই লিচুর।
উদ্দীপকে বর্ণিত ঘটনায় ২০১৯ সালে অনুষ্ঠিত কোপা আমেরিকার ফুটবল ম্যাচের ১০টি খেলার সবগুলো দেখার পর আশরাফ তার বন্ধু মনিরকে বললো, কোপা আমেরিকার সব খেলাই ভালো মানের। অর্থাৎ, তাকে প্রতিটি খেলা দেখে যাচাই করতে হয়েছে। এ কারণে বলা যায়, উদ্দীপকের দৃষ্টান্ত পূর্ণাঙ্গ আরোহের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।

ঘ. আশরাফ ও মনিরের বক্তব্যে পূর্ণাঙ্গ ও অবৈজ্ঞানিক আরোহের প্রতিফলন ঘটেছে। নিচে উদ্দীপকের আলোকে উভয় আরোহের পার্থক্য বিশ্লেষণ করা হলো-
পূর্ণাঙ্গ আরোহে আরোহমূলক লম্ফ অনুপস্থিত থাকে। তাই এটি অপ্রকৃত আরোহের একটি প্রকরণ। কিন্তু অবৈজ্ঞানিক আরোহ ‘আরোহমূলক লম্ফ' নির্ভর বলে এটি প্রকৃত আরোহের একটি প্রকরণ। উদ্দীপকের মনির আরোহমূলক লম্ফের মাধ্যমে কতিপয় দৃষ্টান্ত থেকে সার্বিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। সুতরাং, তার বক্তব্য অবৈজ্ঞানিক আরোহের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। অন্যদিকে, আশরাফ কোপা আমেরিকার ফুটবল ম্যাচের ১০টি খেলা দেখে বলে, কোপা আমেরিকার সব খেলাই ভালো মানের। এরূপ প্রতিটি দৃষ্টান্ত যাচাই করার কারণে তার বক্তব্যে আরোহমূলক লম্ফ অনুপস্থিত। পূর্ণাঙ্গ আরোহের সিদ্ধান্ত সর্বদা অল্প কিছু দৃষ্টান্তের প্রত্যেকটিকে নিরীক্ষণের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠা করা হয়। ফলে তা সার্বিকীকরণ না হয়ে হয় ‘সমষ্টিকরণ’। কিন্তু অবৈজ্ঞানিক আরোহে মাত্র কয়েকটি দৃষ্টান্ত পর্যবেক্ষণ করে সমগ্র বিষয় সম্পর্কে সিদ্ধান্ত গঠন করা হয়। ফলে এটি হয় যথার্থ সার্বিকীকরণ।
তাই বলা যায়, অবৈজ্ঞানিক ও পূর্ণাঙ্গ আরোহের মধ্যে পার্থক্য বিদ্যমান।

৩. দৃশ্যকল্প-১: একজন ডায়াবেটিক রোগীর রোগ শনাক্তের জন্য খাওয়ার পূর্বে এবং খাওয়ার দুই ঘণ্টা পর পরীক্ষাগারে রক্ত পরীক্ষা করে ডাক্তার চূড়ান্তভাবে নিশ্চিত হন তার ডায়াবেটিক হয়েছে।
দৃশ্যকল্প-২: বারী সাহেব বাজার থেকে আম ক্রয় করতে যান। আম বিক্রেতা একটি আম ঝুঁড়ি থেকে খেতে দেন। বিক্রেতা বলেন, ঝুড়ির সব আমই মিষ্টি। বারী সাহেব বলেন, সব আম খেলে বুঝতে পারবো সব আম মিষ্টি কি-না।
ক. কার্যকারণ নিয়ম কী?
খ. অবৈজ্ঞানিক আরোহ কি প্রকৃত আরোহ?
গ. দৃশ্যকল্প-১ এ কোন ধরনের প্রকৃত আরোহের ইঙ্গিত আছে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. দৃশ্যকল্প-২ এ যে ধরনের আরোহের প্রতিফলন ঘটেছে তাকে প্রকৃত আরোহ বলা যায় কি? বিশ্লেষণ করো।

৩ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. জগতের প্রতিটি কার্যেরই কারণ আছে এবং কার্য ও কারণের মধ্যে অনিবার্য সম্পর্ক বিদ্যমানত কার্য ও কারণের এমন নীতিকেই বলা হয় কার্যকারণ নিয়ম।

খ. হ্যাঁ, অবৈজ্ঞানিক আরোহ প্রকৃত আরোহ।
যেসব আরোহ অনুমানে জ্ঞাত থেকে অজ্ঞাতে উত্তরণ এবং আরোহমূলক লম্ফ উপস্থিত থাকে তাকে প্রকৃত আরোহ বলে। তাছাড়া প্রকৃত আরোহে প্রকৃতির নিয়মানুবর্তিতা, কার্যকারণ নীতি অনুসরণ করা হয় এবং সিদ্ধান্ত সার্বিক সংশ্লেষক যুক্তিবাক্য প্রতিষ্ঠা করা হয়। অবৈজ্ঞানিক আরোহে আরোহের প্রকৃত বৈশিষ্ট্য আরোহমূলক লম্ফ উপস্থিত থাকে। পাশাপাশি প্রকৃতির নিয়মানুবর্তিতা নীতির আলোকে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। এ কারণে অবৈজ্ঞানিক আরোহ হলো প্রকৃত আরোহ।

গ. দৃশ্যকল্প-১ এ বৈজ্ঞানিক আরোহের ইঙ্গিত আছে।
যে আরোহে প্রকৃতির নিয়মানুবর্তিতা নীতি ও কার্যকরণ নিয়মের ওপর নির্ভর করে বিশেষ বিশেষ দৃষ্টান্তের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে একটি সার্বিক সংশ্লেষক সিদ্ধান্ত প্রতিষ্ঠা করা হয় তাকে বৈজ্ঞানিক আরোহ বা ঝপরবহঃরভরপ ওহফঁপঃরড়হ বলে। এ আরোহে অপ্রয়োজনীয় ও অপ্রাসঙ্গিক উপাদানগুলোকে অপনয়ন করে সিদ্ধান্ত প্রতিষ্ঠা করা হয়। তাই বলা যায়, বৈজ্ঞানিক আরোহের মধ্যে আরোহের সকল মৌলিক ও গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান থাকে এবং এ প্রকার আরোহ অন্যান্য আরোহ থেকে অনেক বেশি গুরুত্ব বহন করে।
দৃশ্যকল্প-১ এ বর্ণিত, একজন ডায়াবেটিক রোগীর রোগ শনাক্তের জন্য খাওয়ার পূর্বে এবং খাওয়ার দুই ঘণ্টা পর পরীক্ষাগারে রক্ত পরীক্ষা করে ডাক্তার চূড়ান্তভাবে নিশ্চিত হন তার ডায়াবেটিক হয়েছে। ডাক্তারের এই সিদ্ধান্ত আরোহের মৌলিক ও গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্যে সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। এ কারণে একটি বৈজ্ঞানিক আরোহের দৃষ্টান্ত।

ঘ. দৃশ্যকল্প-২ এর দৃষ্টান্ত হলো পূর্ণাঙ্গ আরোহ। আরোহমূলক লম্ফ না থাকার কারণে এটি প্রকৃত আরোহ নয়।
যে আরোহ অনুমানে প্রতিটি দৃষ্টান্ত পর্যবেক্ষণ বা নিরীক্ষণের ভিত্তিতে সার্বিক যুক্তিবাক্য প্রতিষ্ঠা করা হয়, তাকে পূর্ণাঙ্গ আরোহ বলে। পূর্ণাঙ্গ আরোহে প্রতিটি দৃষ্টান্ত পর্যবেক্ষণ করার পর সার্বিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। বস্তুত আরোহ অনুমানের মূল বৈশিষ্ট্য হচ্ছে আরোহমূলক লম্ফের (জানা থেকে অজানায় যাওয়া) উপস্থিতি। কিন্তু পূর্ণাঙ্গ আরোহে আরোহমূলক লম্ফ অনুপস্থিত থাকে। এ কারণে পূর্ণাঙ্গ আরোহকে প্রকৃত আরোহ বলা যায় না।
পূর্ণাঙ্গ আরোহ সীমিত পরিসরে নির্দিষ্ট সংখ্যক দৃষ্টান্ত সম্পর্কে সিদ্ধান্ত প্রতিষ্ঠা করে বলে এর সিদ্ধান্তকে যথার্থ অর্থে সার্বিক বলা যায় না। কারণ এর সিদ্ধান্ত কতকগুলো বিশেষ দৃষ্টান্তের সমষ্টি। যেমন: দৃশ্যকল্প-২ এ উল্লেখিত বারী সাহেব বাজার থেকে আম ক্রয় করতে যান। বিক্রেতা বলেন, ঝুড়ির সব আমই মিষ্টি। কিন্তু বারী সাহেব বলেন, সব আম খেলে বুঝতে পারবো সব আম মিষ্টি কিনা। অর্থাৎ, তিনি প্রতিটি আম যাচাই করে সিদ্ধান্ত নিতে চান। তার এই সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়ায় আরোহমূলক লম্ফ অনুপস্থিত রয়েছে। এ কারণে তার এই সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়া পূর্ণাঙ্গ আরোহের দৃষ্টান্ত যা প্রকৃত আরোহ নয়।
ব্রিটিশ যুক্তিবিদ জন স্টুয়ার্ট মিল মনে করেন, পূর্ণাঙ্গ আরোহ নিছক জ্ঞাত ঘটনাবলির সংক্ষিপ্ত সমষ্টিকরণ। সুতরাং বলা যায়, পূর্ণাঙ্গ আরোহ হলো অপ্রকৃত আরোহ।

৪. দৃশ্যকল্প-১: জুঁই দেখতে তার ভাইয়ের মতো। তার ভাই একজন বিখ্যাত সাহিত্যিক। সুতরাং জুঁই অবশ্যই একজন বিখ্যাত সাহিত্যিক।
দৃশ্যকল্প-২: মানুষ ও উদ্ভিদের মধ্যে জন্ম, বৃদ্ধি, মৃত্যু, বংশবিস্তার ও খাদ্যগ্রহণ ইত্যাদি বিষয়ে মিল আছে। মানুষের প্রাণ আছে। সুতরাং উদ্ভিদেরও প্রাণ আছে।
ক. বৈজ্ঞানিক আরোহের মৌলিক নিয়ম কোনটি?
খ. নিখুঁত আরোহ বলতে কী বোঝ?
গ. দৃশ্যকল্প-১ এ কোন ধরনের অনুমানের ইঙ্গিত দেয়? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. দৃশ্যকল্প-১ ও দৃশ্যকল্প-২ এর মধ্যে কোনটি অধিক গ্রহণযোগ্য? বিশ্লেষণ করো।

৪ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. বৈজ্ঞানিক আরোহের মৌলিক নিয়ম হলো- প্রকৃতির নিয়মানুবর্তিতা নীতি ও কার্যকারণ সম্পর্কের ওপর ভিত্তি করে আরোহমূলক লম্ফের সাহায্যে ঘটনার পর্যবেক্ষণের অভিজ্ঞতা থেকে একটি সার্বিক সংশ্লেষকবাক্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

খ. নিখুঁত আরোহ বলতে পূর্ণাঙ্গ আরোহকে বোঝায়।
মধ্যযুগীয় স্কলাস্টিক যুক্তিবিদগণ পূর্ণাঙ্গ আরোহকে নিখুঁত আরোহ বলে অভিহিত করেছেন। তারা পূর্ণাঙ্গ আরোহের সংজ্ঞায় বলেন, কোন তথাকথিত সার্বিক বাক্যের অন্তর্গত প্রত্যেকটি বিশিষ্ট দৃষ্টান্ত পরীক্ষা করার পর সেই তথাকথিত সঠিক বাক্যটিকে সিদ্ধান্ত হিসেবে স্থাপন করার প্রক্রিয়াই হলো পূর্ণাঙ্গ আরোহ। অর্থাৎ, এই আরোহের মাধ্যমে প্রতিটি দৃষ্টান্ত যাচাই করে সেই বিষয় সম্পর্কে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয় বলে এটিকে নিখুঁত আরোহ বলা হয়।

গ. দৃশ্যকল্প-১ এ অসাধু সাদৃশ্যানুমানের ইঙ্গিত দেয়।
যে সাদৃশ্যানুমানের ক্ষেত্রে দুটি বিষয়ের মধ্যে অমৌলিক, গুরুত্বহীন অপ্রাসঙ্গিক ও বাহ্যিক সাদৃশ্যের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত অনুমিত হয়, তাকে অসাধু সাদৃশ্যানুমান (Bad Analogy) বলে। এ ধরনের অনুমান অবৈধ হয়। অসাধু সাদৃশ্যানুমান সর্বদা অসত্য ও ভ্রান্ত পথে পরিচালিত হয়। কারণ এই সাদৃশ্যানুমানের সাদৃশ্যের বিষয়গুলো নিতান্তই অবান্তর ও অপ্রাসঙ্গিক।
দৃশ্যকল্প-১ এ বর্ণিত, জুঁই দেখতে তার ভাইয়ের মতো। তার ভাই একজন বিখ্যাত সাহিত্যিক। সুতরাং জুই অবশ্যই একজন বিখ্যাত সাহিত্যিক। এই যুক্তির অনুমানের সিদ্ধান্ত অপ্রাসঙ্গিক ও অমৌলিক এবং বাহ্যিক সাদৃশ্যমূলক। এখানে কোনো কার্যকারণ সম্পর্কের প্রভাব নেই। আশ্রয়বাক্য ও সিদ্ধান্তের বৈসাদৃশ্য ও অজ্ঞাত বিষয়ের সংখ্যা বেশি। তাই এটি অসাধু সাদৃশ্যানুমানের দৃষ্টান্ত।

ঘ. দৃশ্যকল্প-১ ও দৃশ্যকল্প-২ এ যথাক্রমে অসাধু সাদৃশ্যানুমান ও সাধু সাদৃশ্যানুমান দৃষ্টান্ত পরিলক্ষিত হয়। সংগত কারণেই দৃশ্যকল্প-১ এর চেয়ে দৃশ্যকল্প-২ বেশি গ্রহণযোগ্য।
সাধু সাদৃশ্যানুমানে আশ্রয়বাক্যের মৌলিক, গুরুত্বপূর্ণ ও প্রয়োজনীয় বিষয়ের সাদৃশ্যের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। যেমন- দৃশ্যকল্প-২ এ বর্ণিত, মানুষ ও উদ্ভিদের মধ্যে জন্ম, বৃদ্ধি, মৃত্যু, বংশবিস্তার ও খাদ্যগ্রহণ ইত্যাদি বিষয়ে মিল আছে। মানুষের প্রাণ আছে। সুতরাং উদ্ভিদেরও প্রাণ আছে। এটি সাধু সাদৃশ্যানুমানের দৃষ্টান্ত। এরূপ অনুমানের সাদৃশ্যের বিষয়গুলো মৌলিক ও গুরুত্বপূর্ণ হওয়ার কারণে কার্যকারণ নীতির উপস্থিতি লক্ষ করা যায়। তাই সাধু সাদৃশ্যানুমানের মূল্য ও গুরুত্ব অনেক বেশি।
অন্যদিকে, দৃশ্যকল্প-২ এ উল্লেখিত অনুমানের আশ্রয়বাক্যের অমৌলিক, গুরুত্বহীন, ও অপ্রাসঙ্গিক সাদৃশ্যের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত অনুমিত হয়। এ কারণে এটি অসাধু সাদৃশ্যানুমানের দৃষ্টান্ত। এ অনুমানে সাদৃশ্যের বিষয়গুলো বাহ্যিক, গুরুত্বহীন ও অজ্ঞাত হওয়ায় অনুপপত্তি বা যুক্তিদোষ ঘটে। এ কারণে এটি একটি লৌকিক প্রক্রিয়া।
তাই বলা যায়, দৃশ্যকল্প-১ এর চেয়ে দৃশ্যকল্প-২ বেশি গ্রহণযোগ্য।

৫. দৃষ্টান্ত-১: আমি এ যাবৎ যত মানুষ দেখেছি তারা সবাই মরণশীল। অতএব, সকল মানুষ হয় মরণশীল
দৃষ্টান্ত-২: আমি এ যাবৎ যত জাপানি দেখেছি তারা সকলেই বিনয়ী। সুতরাং, সকল জাপানি হয় বিনয়ী।
ক. প্রকৃত আরোহ কত প্রকার?.
খ. ‘আরোহের প্রাণশক্তি’’ বলতে কী বোঝ?
গ. দৃষ্টান্ত-২ যে আরোহকে প্রকাশ করে তা ব্যাখ্যা করো।
ঘ. দৃষ্টান্ত-১ এবং দৃষ্টান্ত-২ দ্বারা নির্দেশিত আরোহের মধ্যে তুলনামূলক বিশ্লেষণ করো।

৫ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. প্রকৃত আরোহ তিন প্রকার। যথা: ১. বৈজ্ঞানিক আরোহ, ২. অবৈজ্ঞানিক আরোহ এবং ৩. সাদৃশ্যানুমান।

খ. আরোহের প্রাণশক্তি বলতে আরোহাত্মক উলস্নম্ফনকে বোঝায়।
আরোহ অনুমানে জ্ঞাত থেকে অজ্ঞাতে, নিরীক্ষিত থেকে অনিরীক্ষিতে গমন করা হয়। আর যে বৈশিষ্ট্যের ওপর ভিত্তি করে ওই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয় তা হলো আরোহাত্মক উলস্নম্ফন। এজন্য আরোহাতমক উলস্নম্ফনকে আরোহের প্রাণ বলা হয়।

গ. দৃষ্টান্ত-২ এ অবৈজ্ঞানিক আরোহ অনুমান প্রকাশ করে।
অবৈজ্ঞানিক আরোহ প্রক্রিয়ায় সবসময় সার্বিক সংশ্লেষক যুক্তিবাক্য স্থাপন করা হয়। আমরা জানি, এ আরোহ প্রক্রিয়ার মূল সূত্র হচ্ছে ‘‘একটি ঘটনা সবসময়ই সত্য হতে দেখা গেছে কখনো এর কোনো বিরুদ্ধ দৃষ্টান্ত ঘটেনি অতএব, এ ঘটনাটি সত্য।’’ মূলত অবৈজ্ঞানিক আরোহ কতকগুলো দৃষ্টান্তের গণনার ভিত্তিতেই সঠিক সিদ্ধান্ত প্রতিষ্ঠা করতে চায়।
দৃষ্টান্ত-২ এ বর্ণিত, আমি এ যাবৎ যত জাপানি দেখেছি তারা সকলেই বিনয়ী। সুতরাং, সকল জাপানি হয় বিনয়ী। এই যুক্তি প্রক্রিয়ায় কেবল অনুকূল অভিজ্ঞতার আলোকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তাই দৃষ্টান্তটি অবৈজ্ঞানিক আরোহের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।

ঘ. দৃষ্টান্ত-১ এ বৈজ্ঞানিক আরোহ এবং দৃষ্টান্ত-২ এ অবৈজ্ঞানিক আরোহ নির্দেশ করে। নিচে উভয় আরোহের মধ্যে তুলনামূলক বিশ্লেষণ করা হলো-
বৈজ্ঞানিক আরোহে প্রকৃতির নিয়মানুবর্তিতা নীতি ও কার্যকারণ নিয়মের ওপর নির্ভর করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এ কারণে বৈজ্ঞানিক আরোহের সিদ্ধান্ত নিশ্চিত হয়। যেমন- দৃষ্টান্ত-১ এ বর্ণিত, ‘আমি এ যাবৎ যত মানুষ দেখেছি তারা সবাই মরণশীল। অতএব, সকল মানুষ হয় মরণশীল।' এরূপ এরূপ নিশ্চিত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার কারণে এটি বৈজ্ঞানিক আরোহের দৃষ্টান্ত। অন্যদিকে, অবৈজ্ঞানিক আরোহে কেবল প্রকৃতির নিয়মানুবর্তিতা নীতির ওপর নির্ভর করে অবাধ অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তাই অবৈজ্ঞানিক আরোহের সিদ্ধান্ত সম্ভাব্য হয়।
বৈজ্ঞানিক আরোহে বিশেষ বিশেষ দৃষ্টান্তের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। সেক্ষেত্রে সদর্থক ও নঞর্থক উভয় দৃষ্টান্ত পর্যবেক্ষণ ও পরীক্ষণ করা হয়। তাই এ অনুমানের সিদ্ধান্ত বাস্তবতার সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ হয় অন্যদিকে, অবৈজ্ঞানিক আরোহে দৃষ্টান্তের সংখ্যার ওপর বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়। এ অনুমানে সদর্থক দৃষ্টান্তকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হলেও নর্থক দৃষ্টান্তকে একেবারেই গুরুত্ব দেওয়া হয় না। তাই অনেক ক্ষেত্রেই অবৈজ্ঞানিক আরোহের সিদ্ধান্তের সাথে বাস্তবতার কোনো মিল থাকে না। পরিশেষে বলা যায়, বৈজ্ঞানিক ও অবৈজ্ঞানিক আরোহ উভয়ই প্রকৃত আরোহের শ্রেণিবিভাগ হলেও এদের মধ্যে পদ্ধতিগত ও গ্রহণযোগ্যতার ক্ষেত্রে ভিন্নতা বিদ্যমান।

৬. দৃশকল্প-১: রুটিমেকার ও মানুষ উভয়ই রুটি বানাতে পারে ও সেঁকতে পারে। রুটিমেকার এক ধরনের বৈদ্যুতিক যন্ত্র। সুতরাং মানুষও একধরনের বৈদ্যুতিক যন্ত্র।
দৃশ্যকল্প-২: মার্ক জুকারবার্গ ও বিল গেটস উভয়েরই বার্ষিক আয় ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের অধিক। উভয়েরই ব্যক্তিগত বিলাসবহুল বাড়ি, গাড়ি, জাহাজ ও জেট পেস্নন রয়েছে। সুতরাং মার্ক জুকারবার্গের মতো বিল গেটসও বিশ্বের শীর্ষ ধনী ব্যক্তি।
ক. সাদৃশ্যানুমানের সংজ্ঞা দাও।
খ. সাদৃশ্য অনুমানকে কেন প্রকৃত আরোহ বলা হয়? ব্যাখ্যা করো।
গ. দৃশ্যকল্প-১ এ কোন ধরনের অনুপপত্তি ঘটেছে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. দৃশ্যকল্প-২ এর অনুমান প্রক্রিয়া কি যথার্থ? বিশ্লেষণ করো।

৬ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. যে অনুমান প্রক্রিয়ায় দুটি বিষয় বা ঘটনার সাদৃশ্যের ভিত্তিতে নতুন কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়, তাকেই বলে সাদৃশ্যানুমান (Analogy)।

খ. সাদৃশ্যানুমানে আরোহাত্মক উলস্নম্ফন বিদ্যমান এবং এখানে জ্ঞাত থেকে অজ্ঞাতে গমন করা হয়, তাই সাদৃশ্যানুমানকে প্রকৃত আরোহ বলা হয়।
সাদৃশ্যানুমান একটি আরোহমূলক যুক্তিপদ্ধতি। এ অনুমানে আরোহমূলক লম্ফের সাহায্যে সাদৃশ্যের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত অনুমিত হয়। তবে এ সিদ্ধান্ত হয় সম্ভাব্য। যে কারণে দুটি বিষয়ের মৌলিক সাদৃশ্য যত বেশি হবে সাদৃশ্যানুমানের সম্ভাবনার মাত্রা তত বেশি হবে। তাই যে অনুমানে দুটি বিষয়ের মধ্যে আনুপাতিক সমতা পরিলক্ষিত হয় তাকে সাদৃশ্যানুমান বলে। আর এ কারণে যুক্তিবিদ মিল এটিকে প্রকৃত আরোহ বলে অভিহিত করেছেন।

গ. দৃশ্যকল্প-১ এর যুক্তিটি বৈধ নয়। কারণ এ যুক্তিটিতে অসাধু সাদৃশ্যানুমানজনিত অনুপপত্তি ঘটেছে।
যে সাদৃশ্যানুমানের ক্ষেত্রে দুটি বিষয়ের মধ্যে অমৌলিক, গুরুত্বহীন, অপ্রাসঙ্গিক ও বাহ্যিক সাদৃশ্যের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়, তাকে অসাধু সাদৃশ্যানুমান বলে। যেমন: মানুষের মতো গাছপালার জন্ম, বৃদ্ধি ও মৃত্যু আছে। মানুষের বুদ্ধি আছে। অতএব, গাছপালারও বুদ্ধি আছে। বস্তুত এ অনুমানের সিদ্ধান্ত অপ্রাসঙ্গিক, বাহ্যিক সাদৃশ্যের প্রেক্ষাপটে গ্রহণ করা হয়। যেখানে আশ্রয়বাক্য ও সিদ্ধান্তের মধ্যে কার্যকারণ সম্পর্ক অনুপস্থিত থাকে।
দৃশ্যকল্প-১ এ বর্ণিত, ‘রুটিমেকার ও মানুষ উভয়ই রুটি বানাতে পারে ও সেঁকতে পারে। রুটিমেকার এক ধরনের বৈদ্যুতিক যন্ত্র। সুতরাং মানুষও এক ধরনের বৈদ্যুতিক যন্ত্র।' বস্তুত এ ধরনের সিদ্ধান্তের বাস্তব কোনো ভিত্তি নেই। কারণ মানুষ হলো জীব। কিন্তু রুটিমেকার হলো জড়। এরূপ বাহ্যিক ও অমৌলিক সাদৃশ্যের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার কারণেই এতে অসাধু সাদৃশ্যানুমানজনিত অনুপপত্তি ঘটেছে।

ঘ. হ্যাঁ, দৃশ্যকল্প-২ এর অনুমান প্রক্রিয়াটি যথার্থ। কারণ এটি সাধু সাদৃশ্যানুমানের দৃষ্টান্ত।
আমরা জানি, সাধু সাদৃশ্যানুমানে আশ্রয়বাক্যের মৌলিক, গুরুত্বপূর্ণ ও প্রয়োজনীয় বিষয়ের সাদৃশ্যের ভিত্তিতে আরোহমূলক লম্ফের সাহায্যে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। এ সাদৃশ্যানুমানের সাদৃশ্যের বিষয়গুলো মৌলিক ও গুরুত্বপূর্ণ হওয়ার কারণে কার্যকারণ নীতির উপস্থিতি লক্ষ করা যায়।
বস্তুত একটি যথার্থ অনুমান প্রক্রিয়ায় আরোহমূলক লম্ফ উপস্থিত থাকে। পাশাপাশি প্রকৃতির নিয়মানুবর্তিতা নীতি ও কার্যকারণ নীতির ওপর প্রতিষ্ঠিত হতে হয়। দৃশ্যকল্প-২ এ বর্ণিত, ‘মার্ক জুকারবার্গ ও বিল গেটস উভয়েরই বার্ষিক আয় ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের অধিক। উভয়েরই ব্যক্তিগত বিলাসবহুল বাড়ি, গাড়ি, জাহাজ ও জেট পেস্নন রয়েছে। সুতরাং, মার্ক জুকারবার্গের মতো বিল গেটসও বিশ্বের শীর্ষ ধনী ব্যক্তি। এই অনুমান প্রক্রিয়া আরোহমূলক লম্ফের সাহায্যে, প্রকৃতির নিয়মানুবর্তিতা নীতি ও কার্যকারণ নীতির ভিত্তিতে মৌলিক সাদৃশ্যের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।
তাই বলা যায়, দৃশ্যকল্প-২ এর অনুমান প্রক্রিয়াটি যথার্থ।

৭. একটি কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির নির্বাচনি পরীক্ষায় যুক্তিবিদ্যার ৫০টি উত্তরপত্র ছিল। প্রতিটি উত্তরপত্র মূল্যায়ন করে দেখা গেল যুক্তিবিদ্যার প্রত্যেক ছাত্র-ছাত্রীই A+ পেয়েছে। এ থেকে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা যায় ঐ কলেজের যুক্তিবিদ্যার সকল ছাত্র-ছাত্রীই হয় A+ এর অধিকারী।
ক. আরোহ কী?
খ. অবৈজ্ঞানিক আরোহের সিদ্ধান্ত নিশ্চিত নয় কেন?
গ. উদ্দীপকে কোন আরোহের প্রতিফলন ঘটেছে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকে প্রতিফলিত আরোহের যথার্থতা মূল্যায়ন করো।

৭ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. কয়েকটি বিশেষ বস্তু বা ঘটনার অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে একটি সার্বিক সিদ্ধান্ত প্রতিষ্ঠা করার প্রক্রিয়াকে আরোহ্ (Induction) বলে।

খ. অবৈজ্ঞানিক আরোহে কার্যকারণ সম্পর্ক অনুপস্থিত থাকে। এই প্রকার আরোহে প্রতিকূল দৃষ্টান্তবিহীন অবাধ অভিজ্ঞতার ওপর ভিত্তি করে সিদ্ধান্ত প্রতিষ্ঠা করা যায়। যেহেতু কার্যকারণ সম্পর্ক ব্যতীত কেবল অবাধ অভিজ্ঞতার ওপর নির্ভর করে এখানে সিদ্ধান্ত প্রতিষ্ঠা করা হয়, তাই এ প্রকার আরোহের সিদ্ধান্তের নিশ্চয়তা দেওয়া যায় না।

গ. উদ্দীপকে পূর্ণাঙ্গ আরোহের প্রতিফলন ঘটেছে।
যে আরোহ অনুমানে সকল দৃষ্টান্তের পর্যবেক্ষণ বা নিরীক্ষণের ভিত্তিতে সার্বিক যুক্তিবাক্য প্রতিষ্ঠা করা হয়, তাকে পূর্ণাঙ্গ আরোহ (Perfect Induction) বলে।
উদ্দীপকে বর্ণিত ঘটনায় একটি কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির নির্বাচনি পরীক্ষায় যুক্তিবিদ্যার ৫০টি উত্তরপত্র ছিল। প্রতিটি উত্তরপত্র মূল্যায়ন করে দেখা গেল যুক্তিবিদ্যার প্রত্যেক ছাত্র-ছাত্রীই অ+ পেয়েছে। এ থেকে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা যায় ঐ কলেজের যুক্তিবিদ্যার সকল ছাত্র- ছাত্রীই হয় A+ এর অধিকারী। এভাবে প্রতিটি দৃষ্টান্ত যাচাই করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার কারণে এটি পূর্ণাঙ্গ আরোহের দৃষ্টান্ত।

ঘ. উদ্দীপকে প্রতিফলিত পূর্ণাঙ্গ আরোহ যথার্থ আরোহ নয়।
পূর্ণাঙ্গ আরোহের অন্তর্গত প্রতিটি দৃষ্টান্ত পর্যবেক্ষণ করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। বস্তুত আরোহ অনুমানের মূল বৈশিষ্ট্য হচ্ছে আরোহমূলক লম্ফের (জানা থেকে অজানায় যাওয়া) উপস্থিতি। কিন্তু পূর্ণাঙ্গ আরোহে আরোহমূলক লম্ফ অনুপস্থিত থাকে। এ কারণে পূর্ণাঙ্গ আরোহকে প্রকৃত আরোহ বলা যায় না।
পূর্ণাঙ্গ আরোহ সীমিত পরিসরে নির্দিষ্ট সংখ্যক দৃষ্টান্ত সম্পর্কে সিদ্ধান্ত প্রতিষ্ঠা করে বলে এর সিদ্ধান্তকে যথার্থ অর্থে সার্বিক বলা যায় না। কারণ এর সিদ্ধান্ত কতকগুলো বিশেষ দৃষ্টান্তের সমষ্টি। যেমন: উদ্দীপকে বর্ণিত প্রতিটি উত্তরপত্র মূল্যায়ন করে দেখা গেল যুক্তিবিদ্যার প্রত্যেক ছাত্র-ছাত্রীই A+ পেয়েছে। এরূপ দৃষ্টান্তে, জানা থেকে অজানায় যাওয়া হয়নি বরং জানা বিষয়ের ভিত্তিতেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
পূর্ণাঙ্গ আরোহ নিছক জ্ঞাত ঘটনাবলির সংক্ষিপ্ত সমষ্টিকরণ। তাই বলা যায়, পূর্ণাঙ্গ আরোহ হলো অপ্রকৃত আরোহ।

৮. সফিক সাহেব ঝুড়ির আপেল একটা একটা করে দেখে বুঝতে পারলো, সব আপেল সবুজ ও ভালো। তাই তিনি তার মেয়েকে বললেন যে, ঐ ঝুড়ির সব আপেল হয় সবুজ ও ভালো।
ক. অপ্রকৃত আরোহ কী?
খ. প্রকৃতির নিয়মানুবর্তিতা নীতিকে আরোহের আকারগত ভিত্তি বলা হয় কেন?
গ. উদ্দীপকে প্রতিফলিত অনুমানটি কোন আরোহ?
ঘ. উদ্দীপকে যে অনুমান প্রতিফলিত হয়েছে তা কি যথার্থ অনুমান? তোমার উত্তরের সপক্ষে যুক্তি খন্ডন করো।

৮ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. যে অনুমান পদ্ধতি আপাতদৃষ্টিতে অনেকটা আরোহের মতো, কিন্তু আরোহের মূল বৈশিষ্ট্য হিসেবে এ অনুমানে আরোহাত্মক লম্ফ উপস্থিত থাকে না তাকে অপ্রকৃত আরোহ বলে।

খ. আরোহের আকারগত দিক প্রকৃতির নিয়মানুবর্তিতা নীতির ওপর নির্ভর করে বলে প্রকৃতির নিয়মানুবর্তিতা নীতিকে আরোহের আকারগত ভিত্তি বলা হয়।
আরোহ অনুমানে বিশেষ থেকে সার্বিকে গমন করা হয়। আর এই বিশেষ বিশেষ দৃষ্টান্ত থেকে সার্বিক সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়ার ভিত্তি হলো প্রকৃতির নিয়মানুবর্তিতানীতি। আমরা বিশ্বাস করি প্রকৃতি একরূপ আচরণ করে এবং প্রকৃতি নিয়মানুবর্তী। প্রকৃতির একরূপতায় বিশ্বাস থাকার কারণে আমরা কয়েকটি দৃষ্টান্ত পর্যবেক্ষণ করে একটি সার্বিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারি। তাই প্রকৃতির নিয়মানুবর্তিতা নীতিকে আরোহের আকারগত ভিত্তি বলা হয়।

গ. উদ্দীপকে প্রতিফলিত অনুমানটি হলো পূর্ণাঙ্গ আরোহ।
যে আরোহ অনুমানে সকল দৃষ্টান্তের পর্যবেক্ষণ বা নিরীক্ষণের ভিত্তিতে সার্বিক যুক্তিবাক্য প্রতিষ্ঠা করা হয়, তাকে পূর্ণাঙ্গ আরোহ (Perfect Induction) বলে। এই আরোহে সীমিত সংখ্যক দৃষ্টান্ত থাকে। সেসব দৃষ্টান্ত নিরীক্ষণের সাহায্যে সংগ্রহ করা হয়। সর্বোপরি এই আরোহের সিদ্ধান্ত নিশ্চিত হয়।
উদ্দীপকে উল্লেখিত সফিক সাহেব ঝুড়ির আপেল একটা একটা করে দেখে বুঝতে পারলেন, সব আপেল সবুজ ও ভালো। তাই তিনি তার মেয়েকে বললেন, ঐ ঝুড়ির সব আপেল হয় সবুজ ও ভালো। এভাবে প্রতিটি দৃষ্টান্ত যাচাইয়ের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার কারণে উদ্দীপকটি পূর্ণাঙ্গ আরোহের দৃষ্টান্ত।

ঘ. উদ্দীপকে উল্লেখিত পূর্ণাঙ্গ আরোহ যথার্থ আরোহ নয়।
আমরা জানি, প্রকৃত আরোহ অনুমানের মূল বৈশিষ্ট্য হচ্ছে আরোহমূলক লম্ফের (জানা থেকে অজানায় যাওয়া) উপস্থিতি। কিন্তু পূর্ণাঙ্গ আরোহে আরোহমূলক লম্ফ অনুপস্থিত থাকে। কারণ এই আরোহের প্রতিটি দৃষ্টান্ত পর্যবেক্ষণ বা যাচাই করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। তাই পূর্ণাঙ্গ আরোহকে প্রকৃত আরোহ বলা যায় না। যেমন: উদ্দীপকের সফিক সাহেব ঝুড়ির আপেল একটা একটা করে দেখে বুঝতে পারেন সব আপেল সবুজ ও ভালো। এভাবে প্রতিটি দৃষ্টান্ত যাচাই করার কারণে জানা থেকে অজানায় গমন করা হয়নি বরং জানা বিষয়ের ভিত্তিতেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তাই উদ্দীপকে বর্ণিত পূর্ণাঙ্গ আরোহ প্রকৃত আরোহ নয়। পূর্ণাঙ্গ আরোহ সীমিত পরিসরে নির্দিষ্ট সংখ্যক দৃষ্টান্ত সম্পর্কে সিদ্ধান্ত প্রতিষ্ঠা করে বলে এর সিদ্ধান্তকে যথার্থ অর্থে সার্বিক বলা যায় না। কারণ এর সিদ্ধান্ত কতকগুলো বিশেষ দৃষ্টান্তের সমষ্টি।
ব্রিটিশ যুক্তিবিদ জন স্টুয়ার্ট মিল মনে করেন, পূর্ণাঙ্গ আরোহ নিছক জ্ঞাত ঘটনাবলির সংক্ষিপ্ত সমষ্টিকরণ। সুতরাং বলা যায়, পূর্ণাঙ্গ আরোহ হলো অপ্রকৃত আরোহ।

৯. দৃশ্যকল্প-১: আমার জীবন অভিজ্ঞতায় আমি যত কুকুর দেখেছি তারা সব প্রভুভক্ত। অতএব, সব কুকুর হয় প্রভুভক্ত।
দৃশ্যকল্প-২: সুমন টেলিভিশনে খবর শুনে জানতে পারলো যে, ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, রাজশাহী সব জেলার মানুষ ‘X’ নামক ভ্যাকসিন নিয়ে ‘Y’ রোগ থেকে নিষ্কৃতি লাভ করেছে। অতএব সে তার বাবাকে বললো, বাংলাদেশের সব জেলার মানুষই ‘X’ নামক ভ্যাকসিন নিয়ে ‘Y’ রোগ থেকে নিষ্কৃতি লাভ করেছে।
ক. সাদৃশ্যমূলক অনুমান কী?
খ. কার্যকারণ নীতিকে আরোহের আকারগত ভিত্তি বলা হয় কেন?
গ. দৃশ্যকল্প-১ এ কোন ধরনের অনুপপত্তি ঘটেছে?
ঘ. ‘দৃশ্যকল্প-২-এ যে আরোহের ইঙ্গিত পাওয়া যায় তার মূল্য সর্বাধিক' - উত্তরের সপক্ষে তোমার বক্তব্য উপস্থাপন করো।

৯ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. যে অনুমান প্রক্রিয়ায় দুটি বিষয় বা ঘটনার সাদৃশ্যের ভিত্তিতে নতুন কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়, তাকেই বলে সাদৃশ্যমূলক অনুমান (Analogy)।

খ. আরোহের আকারগত দিক কার্যকারণ নিয়মের ওপর নির্ভর করে বলে, কার্যকারণ নিয়মকে আরোহের আকারগত ভিত্তি বলা হয়।
যুক্তিবিদ বেইনের মতে, কারণ হলো কার্যের সাথে আবশ্যিকভাবে যুক্ত পূর্ববর্তী ঘটনা। তাই, প্রত্যেক কার্যের কারণ আছে। কারণের ফলাফল হিসেবে কার্য সিদ্ধান্ত হিসেবে গৃহীত হয় যা আরোহকে নির্দেশ করে। অর্থাৎ, কার্যকারণ আরোহের ভিত্তি। তবে সব ধরনের আরোহ এর ওপর প্রতিষ্ঠিত নয়।

গ. দৃশ্যকল্প-১ এর ঘটনাটি অবৈজ্ঞানিক আরোহ এবং এখানে অবৈধ সার্বিকীকরণ অনুপপত্তি ঘটেছে।
কার্যকারণ সম্পর্ক ছাড়া কেবল অবাধ অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে যে আরোহ অনুমানে বিশেষ বিশেষ দৃষ্টান্তের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে সার্বিক সংশ্লেষক সিদ্ধান্ত প্রতিষ্ঠা করা হয় তাকে অবৈজ্ঞানিক আরোহ বলে। অবৈজ্ঞানিক আরোহে অবাধ অভিজ্ঞতাকে আশ্রয়বাক্য হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে।
উদ্দীপকের দৃশ্যকল্প-১ এ বর্ণিত, আমার জীবন অভিজ্ঞতায় আমি যত কুকুর দেখেছি তারা সব প্রভুভক্ত। অতএব, সব কুকুর হয় প্রভুভক্ত। এখানে কার্যকারণ সম্পর্ক ছাড়া কেবল অবাধ অভিজ্ঞতার ওপর ভিত্তি করে সিদ্ধান্ত প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। তাই তার সিদ্ধান্তটি অবৈজ্ঞানিক আরোহের। অপরপক্ষে কোনো বিষয়ে সিদ্ধান্ত প্রতিষ্ঠা করতে গেলে অনুকূল ও প্রতিকূল উভয় প্রকার দৃষ্টান্ত নিরীক্ষণ করতে হয়। কিন্তু উদ্দীপকের দৃশ্যকল্প-১-এ কেবল অনুকূল দৃষ্টান্তের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। আর প্রতিকূল দৃষ্টান্তের নিরীক্ষণ করা হয়নি। তাই দৃশ্যকল্প-১ এর সিদ্ধান্তে অবৈধ সার্বিকীকরণ অনুপপত্তি ঘটেছে।

ঘ. ‘দৃশ্যকল্প-২-এ ইঙ্গিতকৃত বৈজ্ঞানিক আরোহের মূল্য সর্বাধিক' - বক্তব্যটি যথার্থ।
বৈজ্ঞানিক আরোহ প্রকৃতির নিয়মানুবর্তিতা নীতি ও কার্যকারণ নীতির ওপর নির্ভরশীল। এছাড়া বৈজ্ঞানিক আরোহে বাস্তব দৃষ্টান্ত গণনার সাথে সাথে পরিবেশ পরিবর্তনের মাধ্যমে গৃহীত সিদ্ধান্তগুলো বিশেষ গুরুত্বের সাথে পরীক্ষা করা হয়। অর্থাৎ বৈজ্ঞানিক আরোহের আশ্রয়বাক্যগুলো বস্তুগত সত্যতা প্রমাণ করে বিধায় এ থেকে নিশ্চিত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। এ কারণে বৈজ্ঞানিক আরোহ একটি পূর্ণাঙ্গ ও যথার্থ আরোহ প্রক্রিয়া।
আরোহাত্মক লম্ফ বৈজ্ঞানিক আরোহের একটি মৌলিক বৈশিষ্ট্য। এ বৈশিষ্ট্যের কারণে আমরা জানা আশ্রয়বাক্য থেকে অজানা সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারি। যেমন- উদ্দীপকের দৃশ্যকল্প-২ এ বর্ণিত, সুমন টেলিভিশনে খবর শুনে জানতে পারলো যে, ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, রাজশাহী সব জেলার মানুষ ‘ঢ’ নামক ভ্যাকসিন নিয়ে ‘ণ’ রোগ থেকে নিষ্কৃতি লাভ করেছে। অতএব সে তার বাবাকে বললো, বাংলাদেশের সব জেলার মানুষই ‘ঢ’ নামক ভ্যাকসিন নিয়ে ‘ু’ রোগ থেকে নিষ্কৃতি লাভ করেছে। এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে ঘটনার আকারগত ও বস্তুগত উভয় সত্যতা প্রতিষ্ঠিত হয়। এ কারণে বলা হয় বৈজ্ঞানিক আরোহ নিশ্চিত সিদ্ধান্ত প্রতিষ্ঠা করতে পারে।
পরিশেষে বলা যায়, বৈজ্ঞানিক আরোহ যথার্থভাবে আরোহের মৌলিক ও গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্যগুলো ধারণ করে থাকে। এ কারণেই আরোহের অন্যান্য শ্রেণিবিভাগ থেকে বৈজ্ঞানিক আরোহ অনেক বেশি গুরুত্ব বহন করে। সুতরাং বলা যায়, উদ্দীপকে ইঙ্গিতকৃত বৈজ্ঞানিক আরোহের মূল্য সর্বাধিক।

১০. দৃশ্যকল্প-১: ঝলক ও পুলক দুই বন্ধু। তারা একই গ্রামে থাকে, একই স্কুলে পড়ে। উভয়েই ভালো ক্রিকেট খেলোয়াড়। ঝলক পদার্থবিজ্ঞান অলিম্পিয়াডে প্রথম হয়েছে। অতএব, পুলকও পদার্থবিজ্ঞান অলিম্পিয়াডে প্রথম হবে।
দৃশ্যকল্প-২: গণি মিয়া ও সফি মিয়া গ্রামে কৃষিকাজ করে। উভয়েই আধুনিক কৃষি পদ্ধতিতে চাষ করে, শস্যাদির রোগ সম্পর্কে জানে এবং নিরাময়ের জন্য উপযুক্ত কীটনাশক ব্যবহার করে। গত বছরে তারা ধান উৎপাদন প্রতিযোগিতায় প্রথম হয়েছে। গণি মিয়া কৃষি বিষয়ে অভিজ্ঞ। অতএব, সফি মিয়াও কৃষি বিষয়ে অভিজ্ঞ হবে।
ক. প্রকৃত অনুমান কী?
খ. ‘সাদৃশ্যানুমানের সিদ্ধান্ত সম্ভাব্য’ বলতে কী বোঝায়?
গ. দৃশ্যকল্প-১ এ সংঘটিত অনুপপত্তিটি নির্ণয় করো।
ঘ. দৃশ্যকল্প-১ ও দৃশ্যকল্প-২ এর মধ্যস্থিত পার্থক্য বিশ্লেষণ করো।

১০ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. যেসব আরোহের মধ্যে আরোহের মৌলিক বৈশিষ্ট্য আরোহাত্মক উলস্নম্ফন বিদ্যমান থাকে তাকে প্রকৃত অনুমান বলে।

খ. সাদৃশ্যানুমানে সাদৃশ্যের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত অনুমিত হয়, এজন্য সিদ্ধান্ত নিশ্চিত হয় না, বরং সম্ভাব্য হয়। অর্থাৎ, কিছু জানা সাদৃশ্যের ভিত্তিতে নতুন কোনো বিষয়ের সাদৃশ্য প্রত্যক্ষ করে কার্যকারণ সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করা হয় না। ফলে সিদ্ধান্ত নিশ্চিত না হয়ে সম্ভাব্য হয়। যেমন- ‘পৃথিবীর মতো মঙ্গলগ্রহেও মাটি, পানি ও বায়ু আছে। পৃথিবীতে মানুষ বাস করে। অতএব, মঙ্গলগ্রহেও মানুষ বাস করে।' মঙ্গলগ্রহেও মানুষ বাস করে সিদ্ধান্তটি এটি সম্ভাবনামূলক, নিশ্চিত নয়।

গ. দৃশ্যকল্প-১ এ অসাধু সাদৃশ্যানুমানজনিত অনুপপত্তি ঘটেছে।
যে সাদৃশ্যানুমানের ক্ষেত্রে দুটি বিষয়ের মধ্যে অমৌলিক, গুরুত্বহীন, অপ্রাসঙ্গিক ও বাহ্যিক সাদৃশ্যের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার কারণে যে ভুল বা ভ্রান্তি হয় তাকে অসাধু সাদৃশ্যানুমানজনিত অনুপপত্তি বলে। যেমন- মানুষের মতো গাছপালার জন্ম, বৃদ্ধি ও মৃত্যু আছে। মানুষের বুদ্ধি আছে। অতএব, গাছপালারও বুদ্ধি আছে। বস্তুত এ অনুমানের সিদ্ধান্ত অপ্রাসঙ্গিক, বাহ্যিক সাদৃশ্যের প্রেক্ষাপটে গ্রহণ করা হয়। দৃশ্যকল্প-১ এ বলা হয়েছে, ঝলক ও পুলক দুই বন্ধু। তারা একই গ্রামে থাকে, একই স্কুলে পড়ে। উভয়েই ভালো ক্রিকেট খেলোছাড়। ঝলক পদার্থবিজ্ঞান অলিম্পিয়াডে প্রথম হয়েছে। অতএব, পুলকও পদার্থবিজ্ঞান অলিম্পিয়াডে প্রথম হবে। বস্তুত এখানে অপ্রাসঙ্গিক সাদৃশ্যের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এরূপ অপ্রাসঙ্গিক সাদৃশ্যের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়ায় কারণে দৃশ্যকল্প-১ এ অসাধু সাদৃশ্যানুমানজনিত অনুপপত্তি ঘটেছে।

ঘ. দৃশ্যকল্প-১ ও দৃশ্যকল্প-২ এ যথাক্রমে অসাধু সাদৃশ্যানুমান এবং সাধু সাদৃশ্যানুমানের বিষয় লক্ষ করা যায়। নিচে উভয় সাদৃশ্যানুমানের মধ্যে পার্থক্য দেখানো হলো-
যে সাদৃশ্যানুমানে আশ্রয়বাক্যের মৌলিক, গুরুত্বপূর্ণ ও প্রয়োজনীয় বিষয়ের সাদৃশ্য বা মিল অনুসারে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়, তাকে সাধু সাদৃশ্যানুমান বলে। এ সাদৃশ্যানুমানে সাদৃশ্যের বিষয়গুলো মৌলিক ও গুরুত্বপূর্ণ হওয়ার কারণে এর মূল্য ও গুরুত্ব অনেক বেশি। অন্যদিকে, যে সাদৃশ্যানুমানে আশ্রয়বাক্যের অমৌলিক গুরুত্বহীন ও অপ্রাসঙ্গিক সাদৃশ্যের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত অনুমিত হয়, তাকে অসাধু সাদৃশ্যানুমান বলে। এ অনুমানে সাদৃশ্যের বিষয়গুলো বাহ্যিক, গুরুত্বহীন ও অজ্ঞাত হওয়ায় অনুপপত্তি বা যুক্তিদোষ ঘটে।
উদ্দীপকের দৃশ্যকল্প-২ এ উল্লেখিত সাধু সাদৃশ্যানুমান প্রকৃতির নিয়মকানুন ও কার্যকারণ নীতির সাথে সঙ্গতিপূর্ণ বলে জ্ঞানচর্চার ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। কিন্তু উদ্দীপকের দৃশ্যকল্প-১ এ উল্লেখিত অসাধু সাদৃশ্যানুমান সামাজিক কুসংস্কার, লোকবিশবাস ও কাল্পনিক চিন্তাধারার ওপর নির্ভরশীল বলে বিশুদ্ধ জ্ঞান চর্চার ক্ষেত্রে অন্তরায় হিসেবে কাজ করে।
পরিশেষে বলা যায়, অসাধু সাদৃশ্যানুমান প্রক্রিয়া ভ্রান্ত, কিন্তু সাধু সাদৃশ্যানুমান মৌলিক ও বৈজ্ঞানিক। এ কারণে উভয় অনুমানের মধ্যে পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়।
Share:

0 Comments:

Post a Comment