HSC যুক্তিবিদ্যা ২য় পত্র (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর pdf download অধ্যায় ১

HSC যুক্তিবিদ্যা ২য় পত্র (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর pdf download

এইচএসসি পরীক্ষার পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি
HSC Logic 2nd Paper Srijonshil question and answer pdf download.

উচ্চ মাধ্যমিক

যুক্তিবিদ্যা
দ্বিতীয় পত্র

সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
১ম অধ্যায়

HSC Logic 2nd Paper
Srijonshil
Question and Answer pdf download

১. শিক্ষক সুজনকে ‘মানুষ' পদের সংজ্ঞা দিতে বললেন এবং সুজন বললো, ‘‘মানুষ হয় মনুষ্য জাতীয় জীব’’। সোহেল বললো, ‘‘মানুষ হয় শিক্ষিত বুদ্ধিবৃত্তিসম্পন্ন জীব’’। শিক্ষক বললেন, ‘‘তোমাদের দুজনেরই উত্তর ভুল’’।
ক. যৌক্তিক সংজ্ঞা কী?
খ. বৃহত্তম জাতির সংজ্ঞা দেওয়া যায় না কেন?
গ. উদ্দীপকে সুজনের বক্তব্যে যৌক্তিক সংজ্ঞার কোন নিয়মটি লঙ্ঘন করা হয়েছে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকে সোহেলের সংজ্ঞা কি যথার্থ? তোমার পাঠ্যবইয়ের আলোকে বিশ্লেষণ করো।

১ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. কোনো পদের পূর্ণ জাত্যর্থ উল্লেখের মাধ্যমে পদটিকে সহজ, সরল ও স্পষ্টভাবে প্রকাশ করাকে যৌক্তিক সংজ্ঞা বলে।

খ. পরতম বা সর্বোচ্চ পদ হওয়ার কারণে বৃহত্তম জাতির সংজ্ঞা দেওয়া যায় না।
বৃহত্তম জাতি হচ্ছে সর্বোচ্চ জাতি, যা অন্য কোনো জাতির উপজাতি নয়। এ কারণে এরূপ জাতির কোনো আসন্নতম জাতি থাকে না। আর সংজ্ঞায় যেহেতু আসন্নতম জাতির উল্লেখ থাকা অপরিহার্য, তাই আসন্নতম জাতি না থাকার কারণে বৃহত্তম জাতির সংজ্ঞা দেওয়া সম্ভব নয়।

গ. উদ্দীপকে সুজনের বক্তব্যে যৌক্তিক সংজ্ঞার তৃতীয় নিয়মটি লঙ্ঘন করা হয়েছে।
যৌক্তিক সংজ্ঞার তৃতীয় নিয়মানুসারে বলা হয়, ‘সংজ্ঞায় কোনো পদের প্রতিশব্দ বা সমার্থক ভাষা ব্যবহার করা যাবে না’। এই নিয়ম লঙ্ঘন করলে চক্রক সংজ্ঞাজনিত অনুপপত্তি (Circle in definition) ঘটে। যেমন- ‘গাছ হয় বৃক্ষ’, ‘টাকা হয় অর্থ' ইত্যাদি। এসব দৃষ্টান্তে একই পদের সমার্থক বা প্রতিশব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। ফলে সংজ্ঞায় নতুন কিছুই বলা হয়নি। এতে সংজ্ঞেয় পদের অর্থ মোটেই সুস্পষ্ট হয়নি। বরং একই শব্দ একই আবর্তে ফিরে আসায় চক্রক সংজ্ঞাজনিত অনুপপত্তি ঘটেছে।
উদ্দীপকের সুজন বলে, ‘মানুষ হয় মনুষ্যজাতীয় প্রাণী’। এটি একটি ভ্রান্ত সংজ্ঞা। কারণ মানুষের এ সংজ্ঞাটিতে একই কথার পুনরাবৃত্তি ঘটেছে। কেননা 'মানুষ' এবং ‘মনুষ্য’ একই অর্থবোধক শব্দ। কাজেই ‘মনুষ্য’ শব্দটি দ্বারা মানুষকে সংজ্ঞায়িত করায় সংজ্ঞাটি চক্রক সংজ্ঞায় পরিণত হয়েছে। সুতরাং বলা যায়, উদ্দীপকে সুজনের বক্তব্যে যৌক্তিক সংজ্ঞার তৃতীয় নিয়মটি লঙ্ঘন করা হয়েছে।

ঘ. উদ্দীপকের সোহেলের সংজ্ঞা যথার্থ নয়। কারণ তার বক্তব্যে অব্যাপক সংজ্ঞাজনিত অনুপপত্তি ঘটেছে।
সংজ্ঞায় জাত্যর্থের অতিরিক্ত কোনো গুণের উল্লেখ থাকলে এবং তা বিচেছদ্য অবান্তর লক্ষণ (Separable Accident) হলে অব্যাপক সংজ্ঞা অনুপপত্তি বা অতি সংকীর্ণ সংজ্ঞা অনুপপত্তি (Fallacy of Too Narrow Definition) ঘটে। যথাত ‘মানুষ একটা ভদ্র বুদ্ধিবৃত্তিসম্পন্ন জীব।' এ দৃষ্টান্তে মানুষের সংজ্ঞায় ভদ্রতা গুণটার অন্তর্ভুক্তি সংজ্ঞাটাকে সংকীর্ণ করে তুলেছে। কারণ, গুণটা কিছুসংখ্যক মানুষেরই আছে, সব মানুষের নেই।
উদ্দীপকে সোহেল বলে, ‘মানুষ হয় শিক্ষিত বুদ্ধিবৃত্তিসম্পন্ন প্রাণী’। এক্ষেত্রে 'শিক্ষিত' গুণটি হচ্ছে মানুষ পদের বিচ্ছেদ্য অবান্তর লক্ষণ, যা মানুষের সংজ্ঞায় অতিরিক্ত হিসেবে যুক্ত হওয়ার সংজ্ঞাটি অব্যাপক সংজ্ঞায় পরিণত হয়েছে। কারণ মানুষের সংজ্ঞায় ‘শিক্ষিত’ গুণটি যুক্ত করায় কেবল শিক্ষিত শ্রেণি মানুষের অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। আর অশিক্ষিত শ্রেণি মানুষের বহির্ভূত রয়েছে। অথচ শিক্ষিত-অশিক্ষিত উভয় শ্রেণিই মানুষের অন্তর্ভুক্ত। কাজেই ‘শিক্ষিত’ গুণটি মানুষের সংজ্ঞায় ব্যবহার করায় সংজ্ঞাটি ভ্রান্ত হয়েছে।
তাই বলা যায়, উদ্দীপকের সোহেলের বক্তব্যে অব্যাপক সংজ্ঞাজনিত অনুপপত্তি ঘটায় তার সংজ্ঞা যথার্থ নয়।

২. দৃষ্টান্ত-১: ‘‘ন্যায় তাকেই বলে যা অন্যায় নয়।’’
দৃষ্টান্ত-২: ‘‘শৈশব হলো জীবনের প্রভাতকাল।’’
ক. বর্ণনা বলতে কী বোঝ?
খ. মৌলিক গুণের সংজ্ঞা দেওয়া যায় না কেন?
গ. দৃষ্টান্ত-১ এ যৌক্তিক সংজ্ঞার কোন ধরনের অনুপপত্তি ঘটেছে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. দৃষ্টান্ত-২ এর যৌক্তিক সংজ্ঞাটি কি যথার্থ? পাঠ্যবইয়ের আলোকে বিশ্লেষণ করো।

২ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. কোনো পদের উপলক্ষণ বা অবান্তর লক্ষণ অথবা জাত্যর্থের অংশবিশেষ উল্লেখ করে যে বিবৃতি দেওয়া হয় তাকে বর্ণনা বলে।

খ. মৌলিক গুণের অপরিহার্য অর্থ প্রকাশ করা যায় না বলে এ বিষয়ের কোনো সংজ্ঞাও দেওয়া যায় না।
ব্যক্তি বা বস্তুর বিভিন্ন মৌলিক গুণ রয়েছে। যেমন: তিক্ততা, মিষ্টতা, আনন্দ, বেদনা ইত্যাদি। এসব মৌলিক গুণের আসন্নতম জাতি ও বিভেদক লক্ষণ না থাকার কারণে অপরিহার্য অর্থ প্রকাশ করা যায় না। তাই এসব পদের যৌক্তিক সংজ্ঞা দেওয়া সম্ভব নয়।

গ. দৃষ্টান্ত-১ এ যৌক্তিক সংজ্ঞার নঞর্থক অনুপপত্তি ঘটেছে।
কোনো পদের সংজ্ঞায় নর্থক ভাষা ব্যবহার করা হলে সংজ্ঞা ভ্রান্ত বা ত্রুটিপূর্ণ হবে। এরূপ সংজ্ঞাকে বলা হয় নঞর্থক বা নেতিবাচক সংজ্ঞা। যেমন ‘পাপ নয় পুণ্য’, ‘পাখি নয় চতুষ্পদ’। এ সংজ্ঞা দুটোতে ‘পাপ’ ও ‘পাখির’ মধ্যে কী কী বৈশিষ্ট্য আছে তা বলা হয়নি। বরং যে গুণ নেই শুধু তাই উল্লেখ করা হয়েছে। অনুরূপ ভ্রান্তি লক্ষ করা যায় দৃষ্টান্ত-১ এ।
দৃষ্টান্ত-১ এ উল্লেখিত, ‘ন্যায় তাকেই বলে যা অন্যায় নয়।' এ সংজ্ঞায় 'ন্যায়’ কী তা ব্যক্ত হয়নি, বরং ‘ন্যায়’ কী নয় কেবল তাই ব্যক্ত হয়েছে। এতে ন্যায় এর অর্থ সুস্পষ্ট না হয়ে অস্পষ্টই রয়ে গেছে। এরূপ নেতিবাচক অর্থ প্রকাশকারণে বলা যায়, দৃষ্টান্ত-১ এ নঞর্থক সংজ্ঞাজনিত অনুপপত্তি ঘটেছে।

ঘ. দৃষ্টান্ত-২ এর যৌক্তিক সংজ্ঞাটি যথার্থ নয়। কারণ এই সংজ্ঞায় রূপক সংজ্ঞাজনিত অনুপপত্তি ঘটেছে।
যৌক্তিক সংজ্ঞার অন্যতম ভ্রান্ত রূপ হচ্ছে ‘রূপক সংজ্ঞা', যার উদ্ভব ঘটে সংজ্ঞার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য একটি গুরুত্বপূর্ণ নিয়মের লঙ্ঘন থেকে। এই নিয়মের মূলকথা হচ্ছে, কোনো পদের সংজ্ঞাদানের ক্ষেত্রে সেই পদের চেয়ে স্পষ্ট ও সহজ ভাষা ব্যবহার করতে হবে। সংজ্ঞাকে কোনো অবস্থায় দুর্বোধ্য বা রূপক ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। কারণ সংজ্ঞার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে সংজ্ঞেয় পদের অর্থকে সুস্পষ্ট ও সহজবোধ্য করা। কিন্তু কোনো পদের সংজ্ঞা দেওয়ার ক্ষেত্রে রূপক শব্দ ব্যবহার করা হলে পদটি ভিন্ন অর্থ ধারণ করে। এতে সংজ্ঞাটি অস্পষ্ট হয়ে পড়ে। যার ফলে সংজ্ঞার মূল উদ্দেশ্য ব্যাহত হয়। আর এরূপ ক্ষেত্রেই উদ্ভব ঘটে ‘রূপক সংজ্ঞা’ নামক ত্রুটিপূর্ণ সংজ্ঞার।
দৃষ্টান্ত-২ এ বর্ণিত, শৈশব হলো জীবনের প্রভাতকাল। এটি একটি ভ্রান্ত সংজ্ঞা। কারণ এ সংজ্ঞায় ‘শৈশব' পদটির স্বরূপ ব্যক্ত হয়নি, বরং এ ক্ষেত্রে যা ব্যক্ত হয়েছে তা থেকে মানুষের মনে শৈশব পদের একটি ভিন্ন ধারণা পেতে পারে। ফলে এতে সংজ্ঞেয় পদের প্রকৃত অর্থ অস্পষ্ট হয়ে পড়ে। কাজেই সংজ্ঞেয় পদকে সুস্পষ্টভাবে উপস্থাপন করতে হলে এর সংজ্ঞার্থে এমন ভাষা ব্যবহার করতে হবে, যা পদটির অন্তর্নিহিত রূপকে প্রকাশ করে এবং যা মূলত জাত্যর্থের মধ্য দিয়ে প্রকাশিত হয়। অন্যথায় সংজ্ঞাটি রূপক ভাষার অন্তরালে থেকে ভ্রান্তির সৃষ্টি করে।
পরিশেষে বলা বলা যায়, রূপক শব্দ ব্যবহার করার কারণে দৃষ্টান্ত-২ এর যৌক্তিক সংজ্ঞাটি যথার্থ নয়।

৩. অনিক, পাঠান ও মামুন যুক্তিবিদ্যায় ‘মানুষকে’ কীভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে তা নিয়ে আলোচনা করছিল। অনিক বললো, ‘‘মানুষ হলো হাস্যপ্রিয় অনুভূতিপ্রবণ সামাজিক জীব’’। পাঠান বললো, ‘‘মানুষ নয় জড়বস্তু।’’ উভয়ের কথা শুনে মামুন বললো, ‘‘তোমাদের কারো দেওয়া সংজ্ঞা যৌক্তিক হয়নি। কারণ মানুষ হলো বুদ্ধিবৃত্তিসম্পন্ন জীব।’’
ক. যৌক্তিক সংজ্ঞার উপায় কী?
খ. ‘দ্রব্য' পদটির কি যৌক্তিক সংজ্ঞা দেওয়া সম্ভব?
গ. উদ্দীপকের পাঠানের বক্তব্যে সংজ্ঞার কোন ধরনের অনুপপত্তি ঘটেছে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকে অনিক এর সংজ্ঞা থেকে মামুনের সংজ্ঞা কেন পৃথক? বিশ্লেষণ করো।

৩ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. যৌক্তিক সংখ্যার উপায় হলো অপরিহার্য গুণ হিসেবে পদের জাত্যর্থ উল্লেখ করা।

খ. না, দ্রব্য পদটির সংজ্ঞা দেওয়া সম্ভব নয়।
আমরা জানি, দ্রব্য হলো সর্বোচ্চ জাতি। এর চেয়ে ব্যাপকতর জাতি নেই। পাশাপাশি এর কোনো আসন্নতম জাতিও নেই। তাই এ পদের সংজ্ঞা দেওয়া যায় না।

গ. উদ্দীপকে পাঠানের বক্তব্যে নঞর্থক সংজ্ঞাজনিত অনুপপত্তি ঘটেছে।
কোনো পদের সংজ্ঞায় নঞর্থক ভাষা ব্যবহার করা হলে সংজ্ঞা ভ্রান্ত বা ত্রুটিপূর্ণ হবে। এরূপ সংজ্ঞাকে বলা হয়, নঞর্থক বা নেতিবাচক সংজ্ঞা। যেমন- ‘পাপ নয় পুণ্য’, ‘পাখি নয় চতুষ্পদী'। এ সংজ্ঞা দুটোতে ‘পাপ’ ও ‘পাখির’ মধ্যে কী কী বৈশিষ্ট্য আছে তা বলা হয়নি। বরং পদগুলোর মধ্যে যে গুণ নেই শুধু তাই উল্লেখ করা হয়েছে।
অনুরূপভাবে উদ্দীপকের পাঠান বলে, ‘‘মানুষ নয় জড় বস্তু।’’ অর্থাৎ সে মানুষের সংজ্ঞা না দিয়ে বরং মানুষ কি নয় তাই বলেছে। নেতিবাচকভাবে মানুষ সম্পর্কে বলার কারণে তার বক্তব্য নঞর্থক সংজ্ঞাজনিত অনুপপত্তির দৃষ্টান্ত।

ঘ. উদ্দীপকে অনিক অবান্তর সংজ্ঞা এবং মামুন যৌক্তিক সংজ্ঞা দিয়েছে। দুই সংজ্ঞার বৈশিষ্ট্যের ভিন্নতার কারণে উভয়ের সংজ্ঞা পরস্পর থেকে পৃথক।
সংজ্ঞায় জাত্যর্থের অতিরিক্ত গুণ থাকলে এবং তা অবিচ্ছেদ্য অবান্তর লক্ষণ (Inseparable Accident) হলে অবান্তর লক্ষণজনিত সংজ্ঞা অনুপপত্তি (Fallacy of Accidental Definition) ঘটে। যেমন- উদ্দীপকের অনিক বলে, মানুষ একটা হাস্যপ্রিয়, অনুভূতিপ্রবণ, সামাজিক জীব। এ দৃষ্টান্তে ‘হাস্যপ্রিয়’, ‘অনুভূতিপ্রবণ’, সামাজিক গুণগুলো মানুষের অবান্তর লক্ষণ। পাশাপাশি মানুষ পদের অপরিহার্য দিক হিসেবে বুদ্ধিবৃত্তি উল্লেখ করা হয়নি। এসব কারণেই অনিকের সংজ্ঞাটি অবান্তর সংজ্ঞার দৃষ্টান্ত। এই সংজ্ঞার মাধ্যমে পদের অপরিহার্য অর্থ জানা যায় না। কারণ এটি একটি ভ্রান্ত প্রক্রিয়া।
অন্যদিকে, মামুন বলেছে, মানুষ হয় বুদ্ধিবৃত্তিসম্পন্ন জীব। এখানে সে ‘মানুষ’ পদের পূর্ণ জাত্যর্থ হিসেবে আসন্নতম জাতি ও বিভেদক লক্ষণ উল্লেখ করেছে। পাশাপাশি মানুষ পদের অতিরিক্ত কোনো গুণ উল্লেখ করেনি। এ কারণে এটি মানুষ পদের যথার্থ সংজ্ঞা।
পরিশেষে বলা যায়, অবান্তর সংজ্ঞা ও যৌক্তিক সংজ্ঞা দুটি ভিন্ন বিষয়। কোনো পদের অপরিহার্য অর্থ জানার জন্য যৌক্তিক সংজ্ঞা একটি মাধ্যম, অবান্তর সংজ্ঞা নয়।

৪. দৃষ্টান্ত-১: মানুষ হলো বুদ্ধিবৃত্তিসম্পন্ন জীব।
দৃষ্টান্ত-২: নদী হলো সতত চলনশীল স্রোতস্বিনী জলাধার।
দৃষ্টান্ত-৩: হাইড্রোজেন হলো এক প্রকার গ্যাস।
ক. বাহুল্য সংজ্ঞা কী?
খ. যৌক্তিক সংজ্ঞার দুটি বৈশিষ্ট্য লেখো।
গ. দৃষ্টান্ত-২ এ যৌক্তিক সংজ্ঞার কোন ধরনের অনুপপত্তি সংঘটিত হয়েছে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. দৃষ্টান্ত-৩ কীভাবে দৃষ্টান্ত-১ থেকে পৃথক? বিশ্লেষণ করো।

৪ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. কোনো পদের সংজ্ঞায় জাত্যর্থের অতিরিক্ত কোনো গুণের উল্লেখ থাকলে এবং সে গুণটি উপলক্ষণ হলে যে অনুপপত্তি ঘটে তাকে বাহুল্য সংজ্ঞা বলে।

খ. যৌক্তিক সংজ্ঞার দুটি বৈশিষ্ট্য হলো-
১. সংজ্ঞায় কোনো শ্রেণিবাচক পদের সমগ্র জাত্যর্থ বা মৌলিক বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করা হয়।
২. যৌক্তিক সংজ্ঞা সর্বদা একটি সমীকরণের নির্দেশনা দান করে। যথার্থ সংজ্ঞা সংজ্ঞেয় এবং সংজ্ঞার্থ পদের পরিধির সমান থাকে।

গ. দৃষ্টান্ত-২ এ দুর্বোধ্য সংজ্ঞাজনিত অনুপপত্তি ঘটেছে।
সংজ্ঞাকে সংজ্ঞেয় পদের চেয়ে স্পষ্ট হতে হবে। কোনো পদের সংজ্ঞায় বহু অর্থবোধক বা দুর্বোধ্য শব্দ ব্যবহার করা যাবে না। সংজ্ঞায় সহজ- সরল ভাষার পরিবর্তে দুর্বোধ্য ভাষা ব্যবহার করলে দুর্বোধ্য সংজ্ঞাজনিত অনুপপত্তি ঘটে।
দৃষ্টান্ত-২ এ বলা হয়েছে, নদী হলো সতত চলনশীল স্রোতস্বিনী জলাধার। এখানে নদীকে দুর্বোধ্যভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে। এ সংজ্ঞার প্রতিটি শব্দ অত্যন্ত কঠিন, জটিল ও দুর্বোধ্য। সংজ্ঞায় সহজ-সরল ভাষার পরিবর্তে দুর্বোধ্য ভাষা ব্যবহার করা হয়েছে বিধায় দুর্বোধ্য সংজ্ঞাজনিত অনুপপত্তি ঘটেছে।

ঘ. অনুপপত্তির ভিত্তিতে দৃষ্টান্ত-৩ থেকে দৃষ্টান্ত-১ পৃথক।
দৃষ্টান্ত-৩ এ বলা হয়েছে, হাইড্রোজেন হলো একপ্রকার গ্যাস। এটি অতিব্যাপক সংজ্ঞাজনিত অনুপপত্তির দৃষ্টান্ত। কারণ সংজ্ঞার ক্ষেত্রে পালনীয় একটি অন্যতম নিয়ম হচ্ছে, সংজ্ঞার ক্ষেত্রে সংজ্ঞেয় ও সংজ্ঞার্থের ব্যক্ত্যর্থ বেশি হতে পারবে না। অথচ দৃষ্টান্ত-৩ এ প্রদত্ত সংজ্ঞায় এ নিয়মটির লঙ্ঘন করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে হাইড্রোজেন পদের ব্যক্ত্যর্থের চেয়ে গ্যাস পদের ব্যক্ত্যর্থ বেশি। কারণ হাইড্রোজেন ছাড়াও জগতে অক্সিজেন, নাইট্রোজেন নামে আরও বিভিন্ন গ্যাস আছে। কিন্তু হাইড্রোজেনকে গ্যাস বললে অন্যান্য গ্যাসের নাম বাদ পড়ে যায়। অর্থাৎ, তখন হাইড্রোজেন পদের ব্যক্ত্যর্থ বৃদ্ধি পায়। এর ফলে অতিব্যাপক সংজ্ঞা অনুপপত্তি ঘটে।
দৃষ্টান্ত-১ এ বর্ণিত, ‘মানুষ হয় বুদ্ধিবৃত্তিসম্পন্ন জীব'। এখানে 'মানুষ' পদের পূর্ণ জাত্যর্থ হিসেবে আসন্নতম জাতি ও বিভেদক লক্ষণ উল্লেখ করা হয়েছে। এ কারণে এটি মানুষ পদের যথার্থ সংজ্ঞা। এখানে কোনো অনুপপত্তি ঘটেনি।
তাই এরূপ অনুপপত্তিজনিত কারণে দৃষ্টান্ত-১ ও দৃষ্টান্ত-৩ একটি থেকে অন্যটি পৃথক।

৫. দৃশ্যকল্প-১: হেঁশেল হলো রান্নাঘর।
দৃশ্যকল্প-২: পদ্মাসন হলো ত্রিকোণাকার মন্ডলমধ্যে পদ্মাসনে সমাসীন।
দৃশ্যকল্প-৩: ইংল্যান্ড হলো ক্রিকেটের মক্কা।
ক. সংজ্ঞার্থ পদ কাকে বলে?
খ. ‘চেতনা’ পদের যৌক্তিক সংজ্ঞা দেওয়া যায় না কেন? ব্যাখ্যা করো।
গ. দৃশ্যকল্প-২ এ কোন ধরনের সংজ্ঞা অনুপপত্তি ঘটেছে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. সংজ্ঞার নিয়মের আলোকে দৃশ্যকল্প-১ ও ৩ এর সম্পর্ক বিশ্লেষণ করো।

৫ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. যে পদের মাধ্যমে সংজ্ঞা প্রদান করা হয় তাকে সংজ্ঞার্থ পদ বলে।

খ. সরলতম গুণ হওয়ার কারণে চেতনা পদের সংজ্ঞা দেওয়া যায় না।
সরল ও মৌলিক মানসিক প্রক্রিয়া হচ্ছে চেতনা, সুখ, দুঃখ ইত্যাদি। এগুলো হচ্ছে সরলতম গুণ। এদের যেমন বিশ্লেষণ করা যায় না তেমনি আবার অন্য কোনো গুণের সাথে মিশানোও যায় না বা তুলনাও করা যায় না। যে কারণে এদের সংজ্ঞা প্রদান করা যায় না।

গ. দৃশ্যকল্প-২ এ দুর্বোধ্য সংজ্ঞা অনুপপত্তি ঘটেছে।
কোনো পদের সংজ্ঞায় কঠিন বা দুর্বোধ্য শব্দ ব্যবহার করলে সংজ্ঞাটি দুর্বোধ্য বা জটিল প্রকৃতির হয়। এর ফলে যে ভ্রান্তি ঘটে তাই দুর্বোধ্য সংজ্ঞাজনিত অনুপপত্তি। সংজ্ঞার দ্বিতীয় নিয়মানুসারে, যে পদের সংজ্ঞা দিতে হবে সে পদটি থেকে সংজ্ঞার্থ পদকে অধিক স্পষ্ট হতে হবে।' অর্থাৎ সংজ্ঞায় দুর্বোধ্য ভাষা ব্যবহার করা যাবে না। যেমন- সংগীত হলো দুর্মূল্য কোলাহল। এটি দুর্বোধ্য সংজ্ঞাকে নির্দেশ করে।
দৃশ্যকল্প-২ এ বর্ণিত, পদ্মাসন হলো ত্রিকোণাকার মন্ডলমধ্যে পদ্মাসনে সমাসীন। এখানে ‘পদ্মাসন' পদের যে সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে তা জটিল ও দুর্বোধ্য। এ কারণে সংজ্ঞাটিতে দুর্বোধ্য সংজ্ঞাজনিত অনুপপত্তি ঘটেছে।

ঘ. দৃশ্যকল্প-১ ও ৩ যথাক্রমে যৌক্তিক সংজ্ঞার তৃতীয় ও দ্বিতীয় নিয়মের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। নিচে উভয় বিষয়ের সম্পর্ক সংজ্ঞার নিয়মের আলোকে বিশ্লেষণ করা হলো-
সংজ্ঞার তৃতীয় নিয়মানুসারে, যে পদের সংজ্ঞা দেয়া হয়, সংজ্ঞায় সে পদ বা তার সমার্থক পদ ব্যবহার করা যাবে না। এ নিয়ম লঙ্ঘন করলে চক্রক সংজ্ঞানুপপত্তি ঘটে। অর্থাৎ কোনো পদের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে ভিন্ন ভাষার সেই পদের পুনরুক্তি করা হলে সংজ্ঞাটায় ভ্রান্তি দেখা দিবে। এ অনুপপত্তির নাম চক্রক সংজ্ঞা অনুপপত্তি। যেমন- দৃশ্যকল্প-১ এ বর্ণিত, হেঁশেল হলো রান্নাঘর। এ সংজ্ঞাটা ভ্রান্ত। এতে নতুন কিছুই বলা হয়নি ফলে সংজ্ঞেয় পদটার অর্থ মোটেই সুস্পষ্ট হয়নি। এখানে ‘হেঁশেল' ও ‘রান্নাঘর’ হলো সমার্থক শব্দ।
যৌক্তিক সংজ্ঞার দ্বিতীয় নিয়মানুসারে, যে পদের সংজ্ঞা নির্দেশ করা হয় সংজ্ঞাটা সে পদ অপেক্ষা স্পষ্টতর হবে, সংজ্ঞাটি রূপকের মাধ্যমে বা দুর্বোধ্য ভাষায় ব্যক্ত করা যাবে না। এ নিয়মটি লঙ্ঘন করে সংজ্ঞায় কোনো রূপক বা দুর্বোধ্য শব্দ ব্যবহার করা হলে রূপক সংজ্ঞা কিংবা দুর্বোধ্য সংজ্ঞা অনুপপত্তি ঘটবে। দৃশ্যকল্প-৩ এ উল্লেখিত, ইংল্যান্ড হলো ক্রিকেটের মক্কা। এটা হলো একটি রূপক সংজ্ঞা। কারণ এখানে ‘ক্রিকেট’ পদের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে মক্কা নামক রূপক শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। তাই দৃশ্যকল্প-৩ এ রূপক সংজ্ঞাজনিত অনুপপত্তি ঘটেছে।
পরিশেষে বলা যায়, দৃশ্যকল্প-১ ও ৩ যথাক্রমে যৌক্তিক সংজ্ঞার তৃতীয় ও দ্বিতীয় নিয়মের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। কারণ উভয় দৃষ্টান্তে সংজ্ঞার তৃতীয় ও দ্বিতীয় নিয়ম লঙ্ঘনজনিত অনুপপত্তি ঘটেছে।

৬. দৃশ্যকল্প-১: ধনী নয় দরিদ্র
দৃশ্যকল্প-২: দুগ্ধজাত পণ্য হলো পনির।
দৃশ্যকল্প-৩: চাল হলো শর্করা জাতীয়।
ক. বাহুল্য সংজ্ঞা কাকে বলে?
খ. অবান্তর সংজ্ঞা অনুপপত্তি কখন ঘটে? ব্যাখ্যা করো।
গ. দৃশ্যকল্প-১ যৌক্তিক সংজ্ঞার কোন নিয়মের পরিপন্থী? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. দৃশ্যকল্প-২ ও দৃশ্যকল্প-৩ এ যৌক্তিক সংজ্ঞাগত যে পার্থক্য রয়েছে তা বিশ্লেষণ করো।

৫ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. কোনো পদের সংজ্ঞায় জাত্যর্থের অতিরিক্ত কোনো গুণের উল্লেখ থাকলে এবং সে গুণটি উপলক্ষণ হলে যে অনুপপত্তি ঘটে তাকে বাহুল্য সংজ্ঞা বলে।

খ. সংজ্ঞায় জাত্যর্থের অতিরিক্ত গুণ থাকলে এবং তা অবিচ্ছেদ্য অবান্তর লক্ষণ (Inseparable Accident) হলে অবান্তর লক্ষণজনিত সংজ্ঞা অনুপপত্তি (Fallacy of Accidental Definition) ঘটে।
অবান্তর সংজ্ঞা এক প্রকার ভ্রান্ত সংজ্ঞা। এরূপ সংজ্ঞায় অতিরিক্ত গুণ হিসেবে অবান্তর লক্ষণ উল্লেখ করা হয়। যথাত মানুষ একটা হাস্যপ্রিয় বুদ্ধিবৃত্তিসম্পন্ন জীব। এ দৃষ্টান্তে ‘হাস্যপ্রিয়’ গুণটা মানুষের অবান্তর লক্ষণ। কাজেই এটি অবান্তর সংজ্ঞার দৃষ্টান্ত।

গ. দৃশ্যকল্প-১ যৌক্তিক সংজ্ঞার চতুর্থ নিয়মের পরিপন্থী।
সংজ্ঞার চতুর্থ নিয়মানুসারে, কোনো পদের সংজ্ঞায় সর্বদা সদর্থক ভাষা ব্যবহার করতে হবে, নর্থক ভাষা ব্যবহার করা যাবে না। এ নিয়ম লঙ্ঘন করলে নর্থক সংজ্ঞাজনিত অনুপপত্তি ঘটে। যেমন: 'আনন্দ হচ্ছে বেদনার অভাব’ এখানে আনন্দের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বেদনার অভাব নামক নঞর্থক ভাষা ব্যবহার করা হয়েছে। ফলে নঞর্থক সংজ্ঞাজনিত অনুপপত্তি ঘটেছে।
দৃশ্যকল্প-১ এ বর্ণিত, ধনী নয় দরিদ্র। এ সংজ্ঞায় ধনী পদে কী বৈশিষ্ট্য আছে তা বলা হয়নি। বরং এই পদে যে গুণ নেই শুধু তাই উল্লেখ করা হয়েছে। এ কারণে বলা যায়, দৃশ্যকল্প-১ যৌক্তিক সংজ্ঞার চতুর্থ নিয়মের পরিপন্থী।

ঘ. দৃশ্যকল্প-২ ও দৃশ্যকল্প-৩ যথাক্রমে অব্যাপক সংজ্ঞা ও অতিব্যাপক সংজ্ঞার দৃষ্টান্ত। নিচে উভয় সংজ্ঞার যে পার্থক্য রয়েছে তা বিশ্লেষণ করা হলো-
কোনো পদের সংজ্ঞায় যদি দেখা যায় যে, সংজ্ঞার্থ পদ সংজ্ঞেয় পদের ব্যক্ত্যর্থকে কমিয়ে দিচ্ছে, তাহলে সংজ্ঞাটি ত্রুটিপূর্ণ হবে। এরূপ ত্রুটিপূর্ণ সংজ্ঞাকে অব্যাপক সংজ্ঞা বলে। যেমন- দৃশ্যকল্প-২ এ বর্ণিত, দুগ্ধজাত পণ্য হলো পনির। এখানে দুগ্ধজাত পণ্য হিসেবে শুধু পনির উল্লেখ করায় দই, মিষ্টি, ছানা ইত্যাদি বাদ পড়ে যাচ্ছে। ফলে দুগ্ধজাত পদের ব্যক্ত্যর্থ কমে যাচ্ছে। তাই এটি একটি অব্যাপক সংজ্ঞা।
অন্যদিকে, কোনো পদের সংজ্ঞায় যদি দেখা যায় যে, সংজ্ঞার্থ পদ সংজ্ঞেয় পদের ব্যক্ত্যর্থকে বাড়িয়ে দিচ্ছে, তাহলে সংজ্ঞাটি ত্রুটিপূর্ণ অতিব্যাপক সংজ্ঞা বলে বিবেচিত হবে। যেমন- দৃশ্যকল্প-৩ এ বর্ণিত, চাল হলো শর্করা। এই সংজ্ঞায় চালকে শর্করা বলায় অন্যান্য শর্করাযুক্ত খাবারও চালের শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত হয়ে পড়ছে। ফলে চালের ব্যক্ত্যর্থ বেড়ে যাচ্ছে। তাই এটি একটি অতিব্যাপক সংজ্ঞা।
পরিশেষে বলা যায়, অতিব্যাপক ও অব্যাপক দুটি পরস্পর বিপরীতধর্মী সংজ্ঞা। যার একটি ব্যক্ত্যর্থ বৃদ্ধির বিপরীতে জাত্যর্থ হ্রাস পায়। অন্যদিকে ব্যক্ত্যর্থ হ্রাস পেলে জাত্যর্থ বৃদ্ধি পায়। এ কারণে দৃশ্যকল্প-২ ও দৃশ্যকল্প-৩ এর মধ্যে যৌক্তিক সংজ্ঞাগত পার্থক্য প্রকাশ পায়।

৭. দৃশ্যকল্প-১: বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন থেকে ঘুরে এসেছে প্রমা। প্রমার ছোট বোন লায়লা যুক্তিবিদ্যার ছাত্রী হওয়ায় চালাকি করে সেন্টমার্টিনের অপরূপ সৌন্দর্য্যের মূল বিষয় জানতে চায়। কিন্তু প্রমা তাকে যথার্থ উত্তর দিতে ব্যর্থ হয়। প্রমার ব্যর্থতা লায়লাকে কষ্ট দেয়। তাই প্রমা তাকে বলে, তোমার নামের যেমন কোনো সংজ্ঞা নেই, তেমনি সেন্টমার্টিনেরও কোনো সংজ্ঞা নেই।
দৃশ্যকল্প-২: ত্রিভুজ হলো তিনবাহু দ্বারা বেষ্টিত একটি সমতলক্ষেত্র।
ক. যৌক্তিক সংজ্ঞার নিয়ম কয়টি?
খ. ‘আলো নয় অন্ধকার’ সংজ্ঞাটি সঠিক নয় কেন?
গ. যুক্তিবিদ্যার আলোকে প্রমার বক্তব্য ব্যাখ্যা করো।
ঘ. দৃশ্যকল্প-২ দ্বারা নির্দেশিত বিষয়টির প্রয়োজনীয়তা যুক্তিবিদ্যার আলোকে মূল্যায়ন করো।

৭ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. যৌক্তিক সংজ্ঞার নিয়ম পাঁচটি।

খ. ‘আলো নয় অন্ধকার’ এই সংজ্ঞাটিতে যৌক্তিক সংজ্ঞার চতুর্থ নিয়ম লঙ্ঘন করা হয়েছে বলে এটি সঠিক নয়।
যৌক্তিক সংজ্ঞার চতুর্থ নিয়মানুযায়ী, কোনো পদের সংজ্ঞায় নঞর্থক ভাষা ব্যবহার করা যাবে না। যেহেতু সংজ্ঞাটিতে যৌক্তিক সংজ্ঞার নিয়ম লঙ্ঘন করা হয়েছে, তাই সংজ্ঞাটি সঠিক নয়।

গ. উদ্দীপকে প্রমার বক্তব্যে যৌক্তিক সীমাবদ্ধতার দিকটি প্রকাশ পেয়েছে।
পরতম বা সর্বোচ্চ জাতির সংজ্ঞা দেওয়া যায় না। কারণ এরূপ পদের আসন্নতম জাতি থাকে না। পাশাপাশি বিশিষ্ট গুণবাচক পদ হিসেবে বিষাদ-সিন্ধু, তুষার-ধবল ইত্যাদি পদ এতো সরল ও বিশিষ্ট যে এর কোনো জাত্যর্থ পাওয়া যায় না। এছাড়াও স্বকীয় নামবাচক পদ হিসেবে নূরজাহান, সুমনা, ঢাকা প্রভৃতি পদেরও জাত্যর্থ নেই। তাই এরূপ স্বকীয় নামবাচক পদের সংজ্ঞা দেওয়া সম্ভব নয়। আমরা জানি, চরম প্রাকৃতিক গুণ (প্রকৃতির নিয়মানুবর্তিতা নীতি, কার্যকারণ নিয়ম, মাধ্যাকর্ষণ নিয়ম ইত্যাদি) ও মৌলিক গুণের সংজ্ঞা দেওয়া যায় না। কেননা, এসব গুণের আসন্নতম জাতি ও বিভেদক লক্ষণ উল্লেখ করা যায় না। পাশাপাশি অনন্য বিষয় হিসেবে বিধাতা, দেশ, কাল, আত্মা ইত্যাদি পদের আসন্নতম জাতি নির্ণয় করা যায় না। তাই এর সংজ্ঞা দেওয়া সম্ভব নয়।
উদ্দীপকে প্রমার বক্তব্যে উল্লেখিত সেন্টমার্টিন পদটি একটি স্বকীয় নামবাচক পদ। তাই এর সংজ্ঞা দেওয়া যায় না।

ঘ. দৃশ্যকল্প-২ দ্বারা নির্দেশিত যৌক্তিক সংজ্ঞার বিষয়টির প্রয়োজনীয়তা যুক্তিবিদ্যার আলোকে মূল্যায়ন করা হলো-
একটি পদের অর্থ সুস্পষ্ট ও সুনির্দিষ্টভাবে প্রকাশ করা যায় সংজ্ঞার মাধ্যমে। যুক্তির অন্তর্গত যুক্তিবাক্যে যেসব শব্দ বা পদ ব্যবহৃত হয় সংজ্ঞার মাধ্যমে সেগুলোর অর্থ সুনির্দিষ্ট ও সুস্পষ্ট হয়। কাজেই পদের সংজ্ঞা দানের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য।
আমাদের চিন্তার স্বচ্ছতা অনেকাংশে সংজ্ঞায়নের ওপর নির্ভর করে। কারণ সংজ্ঞার মাধ্যমে পদের সাধারণ ও আবশ্যিক গুণ বা বৈশিষ্ট্যসমূহ প্রকাশিত হলে তা আমাদের সুষ্ঠু চিন্তার সহায়ক হয়। পাশাপাশি বস্তুগুলো সম্বন্ধে আমাদের ধারণা সুস্পষ্ট ও সুনির্দিষ্ট করে দেয়। এর ফলে আমরা নির্ভুল সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারি। কারণ সঠিক সিদ্ধান্তে আসার জন্য প্রয়োজন নির্ভুল অনুমানের। আবার অনুমানের যথার্থতা নির্ভর করে পদ সম্পর্কে আমাদের জ্ঞানের ওপর। এ জ্ঞান সংজ্ঞাই দিয়ে থাকে। তাই সঠিক সংজ্ঞায়ন ছাড়া বৈজ্ঞানিক জ্ঞান অর্জন করা সম্ভব হয় না। এ কারণেই এরিস্টটল বলেছেন- সংজ্ঞাই হচ্ছে বৈজ্ঞানিক জ্ঞানের আদি ও অন্ত।
পরিশেষে বলা যায়, যৌক্তিক সংজ্ঞার জ্ঞান যৌক্তিক বিভাজনের জন্য সহায়ক। কারণ কোনো শ্রেণিকে তার অধীনস্থ শ্রেণিতে বিভাজন করতে হলে তার আসন্নতম জাতি ও বিভেদক লক্ষণ সম্পর্কে জ্ঞানের প্রয়োজন। যৌক্তিক সংজ্ঞার জ্ঞান ছাড়া কোনো শ্রেণিকে তার অন্তর্গত বিভিন্ন উপ- শ্রেণিতে যথাযথভাবে বিভক্ত করা যায় না। এসব বিবেচনায় বলা যায়, যুক্তিবিদ্যায় যৌক্তিক সংজ্ঞার প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।

৮. যুক্তিবিদ্যা ক্লাসে নিখিল স্যার যৌক্তিক সংজ্ঞা পড়াতে গিয়ে শিক্ষার্থীদের ‘মানুষ’ পদের সংজ্ঞা দিতে বললেন। উত্তরে নয়ন বললো, ‘‘মানুষ হলো জীব’’। সুমি বললো, ‘‘না স্যার, মানুষ হলো মনুষ্য জাতীয় জীব’’। তাদের উত্তর শুনে নিখিল স্যার বিষয়টি নিয়ে ক্লাসে বিস্তারিত আলোচনা করলেন।
ক. যৌক্তিক সংজ্ঞা কী?
খ. রূপক সংজ্ঞা অনুপপত্তি কখন ঘটে?
গ. উদ্দীপকে সুমির যৌক্তিক সংজ্ঞায় কোন ধরনের অনুপপত্তি ঘটেছে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. নয়ন ও সুমির প্রদত্ত সংজ্ঞার মধ্যে তুলনামূলক পার্থক্য বিশ্লেষণ করো।

৮ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. কোনো পদের পূর্ণ জাত্যর্থের সুস্পষ্ট বিবৃতিই হলো যৌক্তিক সংজ্ঞা।

খ. কোনো পদের সংজ্ঞায় রূপক শব্দ ব্যবহার করলে রূপক সংজ্ঞাজনিত অনুপপত্তি ঘটে।
যৌক্তিক সংজ্ঞার দ্বিতীয় নিয়মানুসারে, 'কোনো পদের সংজ্ঞায় রূপক ভাষা ব্যবহার করা যাবে না’’। এই নিয়ম লঙ্ঘন করে কোনো পদের সংজ্ঞায় রূপক শব্দ ব্যবহার করলে সংজ্ঞাটি ত্রুটিপূর্ণ হবে। যেমন- 'উট হচ্ছে মরুভূমির জাহাজ'। এখানে 'উট' পদের সংজ্ঞায় ‘মরুভূমির জাহাজ’ নামক রূপকের সাহায্য নেওয়া হয়েছে। তাই এখানে রূপক সংজ্ঞাজনিত অনুপপত্তি ঘটেছে।

গ. সুমির বক্তব্যে চক্ৰক সংজ্ঞাজনিত অনুপপত্তি ঘটেছে।
চক্রক সংজ্ঞাজনিত অনুপপত্তি হলো এক প্রকার ভ্রান্ত সংজ্ঞা। যে সংজ্ঞায় সংজ্ঞেয় পদের সমার্থক শব্দ ব্যবহার করা হয়। এতে একই কথার পুনরুক্তি ঘটে। যেমন: ‘কুমার হয় অবিবাহিত ব্যক্তি’। এখানে কুমার ও অবিবাহিত ব্যক্তি মূলত একই কথা। তাই এটি একটি চক্রক সংজ্ঞার দৃষ্টান্ত।
উদ্দীপকের সুমি ‘মানুষ’ পদের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলে, মানুষ হলো মনুষ্য জাতীয় জীব। এখানে সে মানুষ পদের কোনো প্রয়োজনীয় গুণ উল্লেখ করেনি; বরং প্রতিশব্দ ব্যবহার করেছে মাত্র। সুতরাং তার সংজ্ঞাটি ত্রুটিপূর্ণ। এরূপ ত্রুটিপূর্ণ সংজ্ঞাই হলো চক্রক সংজ্ঞা।

ঘ. নয়ন ও সুমির বক্তব্যে যথাক্রমে অতিব্যাপক সংজ্ঞা ও চক্রক সংজ্ঞার দৃষ্টান্ত পরিলক্ষিত হয়। নিচে উভয় সংজ্ঞার মধ্যে তুলনামূলক পার্থক্য বিশ্লেষণ করা হলো-
কোনো পদের সংজ্ঞায় জাত্যর্থের কম গুণ উল্লেখ করা হলে সংজ্ঞাটি ত্রুটিপূর্ণ হবে। এরূপ ত্রুটিপূর্ণ সংজ্ঞাকে বলা হয় অতিব্যাপক সংজ্ঞা। উদ্দীপকের নয়ন ‘মানুষ’ পদের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেছে, ‘মানুষ হলো জীব’। এখানে সে মানুষ পদের পূর্ণ জাত্যর্থ উল্লেখ বরং তার বক্তব্যে ‘বুদ্ধিবৃত্তি’ গুণটি বাদ পড়েছে। তাই নয়নের বক্তব্যটি অতিব্যাপক সংজ্ঞা। অপরদিকে, করেনি। কোনো পদের সংজ্ঞায় সমার্থক বা প্রতিশব্দ ব্যবহার করলে যে অনুপপত্তি ঘটে তা-ই চক্রক সংজ্ঞা। উদ্দীপকের সুমি বলেছে, মানুষ হলো মনুষ্য জাতীয় জীব। এখানে সে মানুষ সম্পর্কে নতুন কিছুই না বলে একই কথা। ঘুরিয়ে বলেছে। এ কারণে তার বক্তব্যটি চক্রক সংজ্ঞার দৃষ্টান্ত।
অতিব্যাপক সংজ্ঞায় মূল পদের জাত্যর্থ বা অপরিহার্য গুণের উল্লেখ কম। থাকে। অন্যদিকে, চক্রক সংজ্ঞায় মূল পদের অপরিহার্য গুণ উল্লেখ না করে। প্রতিশব্দ ব্যবহার করা হয়।
শেষে বলা যায়, অতিব্যাপক সংজ্ঞা ও চক্রক সংজ্ঞা উভয়ই ত্রুটিপূর্ণ। তবেু উভয়ের ত্রুটির ধরন আলাদা। এ কারণেই উভয় সংজ্ঞার মধ্যে ভিন্নতা লক্ষ করা যায়।

৯. সোহেল বললো, "মানুষ হলো বুদ্ধিবৃত্তিসম্পন্ন জীব।' নাসির বললো, মানুষ হলো এমন জীব যার দু'টি পা, দু'টি হাত আছে; সে হাসে, কাঁদে ও তার ব্যক্তিত্ব আছে।' আসমা বললো, মানুষ হলো কলুর বলদ।
ক. বাহুল্য সংজ্ঞা কী?
খ. পাপ নয় পুণ্যত সংজ্ঞাটি সঠিক নয় কেন?
গ. আসমার বক্তব্যে যৌক্তিক সংজ্ঞার কোন নিয়মের লঙ্ঘন ঘটেছে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. সোহেল ও নাসিরের বক্তব্যে যে দু'টি বিষয় ফুটে উঠেছে তাদের মধ্যে পার্থক্য দেখাও।

৯ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. কোনো পদের সংজ্ঞায় জাত্যর্থের অতিরিক্ত গুণ হিসেবে উপলক্ষণ উল্লেখ করা হলে যে ভ্রান্তি ঘটে তাকে বাহুল্য সংজ্ঞা বলে।

খ. পাপ নয় পুণ্যত সংজ্ঞাটিতে নঞর্থক শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। এ কারণেই সংজ্ঞাটি সঠিক নয়।
আমরা জানি, যৌক্তিক সংজ্ঞার চতুর্থ নিয়মানুযায়ী কোনো পদের সংজ্ঞা সদর্থকভাবে দেওয়া সম্ভব হলে তাতে নঞর্থক ভাষা ব্যবহার করা যাবে না।' এ নিয়মটি লঙ্ঘন করে কোনো পদের সংজ্ঞায় নঞর্থক ভাষা ব্যবহার করা হলে নঞর্থক সংজ্ঞাজনিত অনুপপত্তি ঘটে। যেমন- পাপ নয় পুণ্য। এখানে নেতিবাচক শব্দের ব্যবহারের ফলে নঞর্থক সংজ্ঞার উদ্ভব হয়েছে। এ কারণেই সংজ্ঞাটি সঠিক নয়।

গ. আসমার বক্তব্যে যৌক্তিক সংজ্ঞার দ্বিতীয় নিয়মের লঙ্ঘন ঘটেছে।
যৌক্তিক সংজ্ঞার দ্বিতীয় নিয়মটি হলো- ‘যে পদের সংজ্ঞা দেওয়া হবে সেই পদটি থেকে সংজ্ঞাটি স্পষ্টতর হতে হবে। অর্থাৎ সংজ্ঞায় কোনো রূপক ভাষা ব্যবহার করা যাবে না।' এ নিয়মটি লঙ্ঘন করে যদি কোনো পদের সংজ্ঞায় রূপক শব্দ ব্যবহার করা হয়, তাহলে রূপক সংজ্ঞাজনিত অনুপপত্তি ঘটে।
উদ্দীপকের আসমা ‘মানুষ’ পদের সংজ্ঞায় দ্বিতীয় নিয়ম লঙ্ঘন করেছে। কারণ সে বলেছে ‘মানুষ হলো কলুর বলদ।' অর্থাৎ সে ‘মানুষ' পদের সংজ্ঞায় 'কলুর বলদ' নামক রূপকের আশ্রয় নিয়েছে। যা যৌক্তিক সংজ্ঞার দ্বিতীয় নিয়ম বিরুদ্ধ। এ কারণেই বলা যায়, আসমার বক্তব্যে যৌক্তিক সংজ্ঞার দ্বিতীয় নিয়মের লঙ্ঘন ঘটেছে।

ঘ. সোহেল ও নাসিরের বক্তব্যে যৌক্তিক সংজ্ঞা ও বর্ণনার বিষয় দু'টি ফুটে উঠেছে।
যৌক্তিক সংজ্ঞায় পদের পূর্ণ জাত্যর্থ উল্লেখ করতে হয়। উদ্দীপকের সোহেল ‘মানুষ’ পদের সংজ্ঞায় জীববৃত্তি ও বুদ্ধিবৃত্তি উভয় গুণ উল্লেখ করছে। যা মানুষ পদের পূর্ণ জাত্যর্থ। এ কারণে তার বক্তব্য যৌক্তিক সংজ্ঞা বলে বিবেচিত। অন্যদিকে, বর্ণনায় পদের নিছক বিবৃতি দেওয়া হয়। উদ্দীপকের নাসির বলেছে, মানুষ হলো এমন জীব যার দু'টি পা, দু'টি হাত আছে; সে হাসে, কাঁদে ও তার ব্যক্তিত্ব আছে। এটি মানুষ পদের বিবৃতি মাত্র। এ কারণে নাসিরের বক্তব্যকে বর্ণনা বলা যায়।
সংজ্ঞার ক্ষেত্রে জাত্যর্থ ছাড়া অন্য কোনো গুণ উল্লেখ করা হয় না। কিন্তু বর্ণনায় পদের জাত্যর্থ ছাড়াও অন্যান্য গুণ উল্লেখ করা হয়। এ কারণে অনেক পদ রয়েছে, যার বর্ণনা দেওয়া গেলেও সংজ্ঞা দেওয়া যায় না। যেমন- দ্রব্য, টাকা, সততা ইত্যাদি। পরিশেষে বলা যায়, যৌক্তিক সংজ্ঞা ও বর্ণনা দু'টি ভিন্ন বিষয়। এ কারণে সোহেল ও নাসিরের বক্তব্যে পার্থক্য লক্ষ করা যায়।

১০. মিশা বললো, 'কোনো জিনিসকে জানতে হলে সেটা যেরকম সেভাবেই জানতে হবে। যেমন- লাল শাড়িটি হলো লাল বর্ণের। সীমা বললো, 'কেউ কেউ আবার নিজের মতো করে কোনো জিনিসকে প্রকাশ করে। যেমন- তারা মানুষকে প্রকাশ করতে গিয়ে বলে যে, মানুষ হলো যুক্তিপ্রবণ জীব কিংবা মানুষ হলো হাস্যপ্রিয় জীব।'
ক. রূপক সংজ্ঞা কী?
খ. ‘মানুষ একটা জীব'ত সংজ্ঞাটিতে কোন দোষ ঘটেছে?
গ. মিশার বক্তব্যে যৌক্তিক সংজ্ঞার কোন নিয়মের প্রকাশ ঘটেছে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. সীমার বক্তব্যে যে দুটি সংজ্ঞা দোষ ঘটছে তা বিশ্লেষণ করো।

১০ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. কোনো পুদের সংজ্ঞায় রূপক ভাষা ব্যবহার করলে যে অনুপপত্তি ঘটে, তাকে রূপক সংজ্ঞা বলে।

খ. ‘মানুষ একটা জীব’- সংজ্ঞাটিতে অতিব্যাপক সংজ্ঞা দোষ ঘটেছে।
যৌক্তিক সংজ্ঞার প্রথম নিয়ম অনুসারে- 'কোনো পদের সংজ্ঞায় পূর্ণ জাত্যর্থ উল্লেখ করতে হবে। এই নিয়ম অমান্য করে কোনো পদের সংজ্ঞায় আংশিক জাত্যর্থ উল্লেখ করলে সে পদের ব্যক্ত্যর্থ বৃদ্ধি পাবে। এর ফলে অতিব্যাপক সংজ্ঞাজনিত অনুপপত্তি ঘটবে। যেমন- 'মানুষ একটা জীব।
এখানে ‘মানুষ’ পদের সংজ্ঞায় ‘বুদ্ধিবৃত্তি' গুণটি বাদ পড়েছে। ফলে মানুষ পদের জাত্যর্থ হ্রাস পাওয়ার বিপরীতে ব্যক্ত্যর্থ বৃদ্ধি পেয়েছে। এ কারণে অতিব্যাপক সংজ্ঞাজনিত অনুপপত্তি ঘটেছে।

গ. মিশার বক্তব্যে যৌক্তিক সংজ্ঞার প্রথম নিয়মের প্রকাশ ঘটেছে।
যৌক্তিক সংজ্ঞার প্রথম নিয়মানুসারে- যে পদের সংজ্ঞা দেওয়া হবে সেই পদের পূর্ণ জাত্যর্থ উল্লেখ করতে হবে, পূর্ণ জাত্যর্থের কম বা বেশি উল্লেখ করা যাবে না। অর্থাৎ যৌক্তিক সংজ্ঞায় আসন্নতম জাতি ও বিভেদক লক্ষণ উল্লেখ করলেই পূর্ণ জাত্যর্থ প্রকাশ করা হবে। যেমন: ‘মানুষ হয় বুদ্ধিবৃত্তিসম্পন্ন জীব'। এখানে ‘মানুষ’ পদের পূর্ণ জাত্যৰ&থ হিসেবে ‘জীববৃত্তি’ ও ‘বুদ্ধিবৃত্তি’ উভয়ই উল্লেখ করা হয়েছে। তাই এটি মানুষ পদের যথার্থ সংজ্ঞা।
উদ্দীপকের বর্ণিত ঘটনায় মিশা বলে, কোনো জিনিসকে জানতে হলে সেটা যেরকম সেভাবেই জানতে হবে। অর্থাৎ কোনো বিষয়ের সংজ্ঞায় তার পরিপূর্ণ অর্থ প্রকাশ করতে হবে। এ কারণে বলা যায়, মিশার বক্তব্যে যৌক্তিক সংজ্ঞার প্রথম নিয়মের প্রকাশ ঘটেছে।

ঘ. সীমার বক্তব্যে চক্রক ও অব্যাপক সংজ্ঞা দোষ বা অনুপপত্তি ঘটেছে। নিচে উভয় অনুপপত্তি বিশ্লেষণ করা হলো-
কোনো পদের সংজ্ঞায় সমার্থক বা প্রতিশব্দ ব্যবহার করলে চক্রক সংজ্ঞাজনিত অনুপপত্তি ঘটে। যেমন- ‘মানুষ হয় মনুষ্য জাতীয় জীব। এ সংজ্ঞায় মানুষ সম্পর্কে নতুন কিছুই না বলে একই কথা ঘুরিয়ে বলা হয়েছে। কারণ ‘মানুষ’ ও ‘মনুষ্য’ হলো সমার্থক শব্দ।
উদ্দীপকে বর্ণিত ঘটনায় মানুষ পদের সংজ্ঞা প্রসঙ্গে সীমা বলে, মানুষ হলো যুক্তিপ্রবণ জীব। এখানে 'যুক্তিপ্রবণ জীব’ মানুষ পদের সমার্থক শব্দ হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। তাই সীমার এ বক্তব্যে চক্রক সংজ্ঞাজনিত অনুপপত্তি ঘটেছে।
কোনো পদের সংজ্ঞায় যদি পূর্ণ জাত্যর্থ উল্লেখের পরিবর্তে অতিরিক্ত কোনো গুণ উল্লেখ করা হয় এবং সেই গুণ যদি ঐ পদের বিচ্ছেদ্য অবান্তর লক্ষণ হয়, তাহলে সংজ্ঞায় ভ্রান্তি দেখা দেবে। যা অব্যাপক সংজ্ঞা হিসেবে পরিচিত। যেমন- ‘মানুষ হয় বুদ্ধিবৃত্তিসম্পন্ন কালো জীব’। এখানে 'কালো' গুণটি মানুষ পদের একটি অবিচ্ছেদ্য অবান্তর লক্ষণ। কেননা, এ গুণটি সকল মানুষের বেলায় প্রযোজ্য নয়। উদ্দীপকের সীমা মানুষ পদের সংজ্ঞায় বলে, ‘মানুষ হলো হাস্যপ্রিয় জীব।' এখানে ‘হাস্যপ্রিয়' গুণটি হলো বিচ্ছেদ্য অবান্তর লক্ষণ। ফলে সীমায় সংজ্ঞাটি অব্যাপক সংজ্ঞায় পরিণত হয়েছে।
পরিশেষে বলা যায়, যৌক্তিক সংজ্ঞা হলো জাত্যর্থের সুস্পষ্ট প্রকাশ। এজন্য এখানে বেশ কিছু নিয়ম অনুসরণ করতে হয়। এ নিয়মগুলো লঙ্ঘন করলে বিভিন্ন অনুপপত্তি ঘটে। তাই তো সংজ্ঞার তৃতীয় ও প্রথম নিয়ম লঙ্ঘনের ফলে সীমার প্রদত্ত সংজ্ঞা দু'টিতে চক্রক সংজ্ঞা ও অব্যাপক সংজ্ঞা নামক অনুপপত্তি ঘটেছে।
Share:

0 Comments:

Post a Comment