HSC যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর pdf download অধ্যায় ৮

HSC যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর pdf download

এইচএসসি পরীক্ষার পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি
HSC Logic 1st Paper Srijonshil question and answer pdf download.

উচ্চ মাধ্যমিক

যুক্তিবিদ্যা
প্রথম পত্র

সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
৮ম অধ্যায়

HSC Logic 1st Paper
Srijonshil
Question and Answer pdf download

১. বর্ণনা-১: কোন কিছুকে সহজে নির্দেশ করার, বোঝার বা জ্ঞাপন করার জন্য ব্যবহৃত লিখিত বা কথিত চিহ্নকে আমরা প্রায়শই ব্যবহার করে থাকি। এই সকল চিহ্ন আমাদের ব্যবহারের ওপর এবং ব্যাখ্যার ওপর গড়ে উঠে। আমরা আমাদের কাজের জন্য বিভিন্ন চিহ্ন আবিষ্কার করি, পরে তা ব্যবহার করি। যেমন- লাল আলো গাড়ি থামার নির্দেশ হিসেবে কাজ করে। এখানে লাল আলোর সাথে গাড়ি থামার কোনো আবশ্যিক সম্পর্ক নেই। কিন্তু লাল বাতিকে আমরা থামার নির্দেশ হিসেবে ব্যবহার করি।
বর্ণনা-২: পৃথিবীতে অনেক বিষয় আছে যা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে অন্য কোন বিষয়কে সূচীত করে কিংবা অন্য কোন বিষয়ের প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করে। যেমন- একটি দেশের মানচিত্র বা পতাকা সেই দেশের প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করে।
ক. প্রতীকী যুক্তিবিদ্যার অন্যমত প্রবর্তক কে?
খ. যুক্তিবিদ্যায় প্রতীক ব্যবহার করা হয় কেন?
গ. বর্ণনা-১ এ যে বিষয়ের প্রতিফলন ঘটেছে তা ব্যাখ্যা করো।
ঘ. বর্ণনা-১ এবং বর্ণনা-২ অনুসারে প্রতীকী যুক্তিবিদ্যার গুরুত্ব আলোচনা করো।

১ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. প্রতীকী যুক্তিবিদ্যার অন্যতম প্রবর্তক হলেন জর্জ বুল।

খ. প্রতীকের প্রায়োগিক উপযোগিতার জন্য এবং যুক্তির নিশ্চয়াত্মক নির্ভুলতা প্রকাশের জন্য যুক্তিবিদ্যায় প্রতীক ব্যবহার করা হয়। প্রতীক চিন্তা প্রকাশে সহায়কা ভূমিকা পালন করে। তাছাড়া ভাষার দ্ব্যর্থকতা দূরীকরণেও প্রতীকের প্রয়োগ যথেষ্ট উপযোগী। ভাষা সংক্ষিপ্তকরণেও প্রতীক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। যেমন- 'দুইয়ে দুইয়ে চার হয়' কথাটি ২ + ২ = ৪ লেখা যায়। সর্বোপরি, যুক্তির বৈধতা ও ভাষার দূর্বোধ্যতা দুরীকরণে প্রতীকের ব্যবহার অপরিহার্য।

গ. উদ্দীপকের লাল বাতি দ্বারা পাঠ্যপুস্তকের প্রতীকের ইঙ্গিত রয়েছে।
যুক্তিবিদ্যায় প্রতীক খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। কোনো কিছু নির্দেশ করার জন্য, বোঝার জন্য, চিনে নেওয়ার জন্য বা সহজে প্রকাশ করার জন্য ইচ্ছাকৃতভাবে যে চিহ্ন বা সংকেত ব্যবহার করা হয় তাকে প্রতীক বলে। যেমন: '+', '', 'x', + ইত্যাদি হলো গণিতের প্রতীক। আবার, P, S ও M হচ্ছে যুক্তিবিদ্যায় যথাক্রমে প্রধান পদ, অ-প্রধান পদ ও মধ্যপদের প্রতীক। এমনিভাবে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিভিন্ন রকম প্রতীক ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
উদ্দীপকে যে 'লাল বাতি'-এর কথা বলা হয়েছে সেটিও প্রতীক। কেননা লাল বাড়ি গাড়ি থামার প্রতীক। তেমনিভাবে সবুজ বাতি গাড়ি চলার প্রতীক। কেবল যুক্তিবিদ্যা নয় বিভিন্ন ক্ষেত্রেই প্রতীক ব্যবহৃত হয়ে থাকে এবং এটি খুবই গুরুত্ব বহন করে।

ঘ. উদ্দীপকের বর্ণনা-১ এবং বর্ণনা-২ এর মাধ্যমে প্রতীকের বিষয়টি নির্দেশিত হয়েছে। বাস্তব জীবনে প্রতীকের বিভিন্ন উপযোগিতা পরিলক্ষিত হয়।
আমাদের চিন্তা-ভাবনা, অনুভূতি অপরের কাছে প্রকাশ করার জন্যই আমরা ভাষা ব্যবহার করি। কিন্তু কথ্য ও লেখ্য ভাষার মধ্যে নানা অস্পষ্টতা ও জটিলতা রয়েছে। ফলে কখনো কখনো মনের ভাব যথাযথভাবে প্রকাশ করা সম্ভব হয় না। শুধু তাই নয়, ব্যাকরণসম্মত ভাষাও অনেক ক্ষেত্রে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে। যেমন- সরকার হন রাষ্ট্রের পরিচালক, রফিক সাহেব হন সরকার। অতএব, রফিক সাহেব হন রাষ্ট্রের পরিচালক। এ যুক্তিটিতে ‘সরকার' শব্দটির অর্থ নিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হতে পারে। কেননা বাংলা ভাষায় 'সরকার' বলতে আমরা যেমন রাষ্ট্রের পরিচালককে বুঝি, তেমনি 'সরকার' বলতে কোনো মানুষের বংশগত পদবিকেও বোঝানো হয়। এ সমস্যা সমাধানকল্পে যুক্তিবিদরা ভাব প্রকাশের বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে প্রতীকের প্রচলন করেন। প্রতীক ব্যবহারের মাধ্যমে সহজেই যুক্তির আকার নির্ধারণ করা যায়। যুক্তির আকার নির্ধারণ বলতে কোনো একটি যুক্তি কোন প্রকৃতির তা নির্ধারণ করাকে বোঝায়। একটি যুক্তির আকার নির্ধারণ করতে পারলে যুক্তিটির বৈধতা নির্ণয় খুব সহজ হয়ে যায়। পাশাপাশি প্রতীক ব্যবহারের মাধ্যমে ভাষাগত জটিলতা দূর করা সম্ভব হয়। কেননা ভাষায় বিভিন্ন শব্দ ও বাক্য অনেক জটিলতা সৃষ্টি করে। প্রতীক ব্যবহারের মাধ্যমে ভাষার এসব জটিলতা দূর হয়।
উদ্দীপকে বিভিন্ন দেশের পতাকা সেই দেশকে নির্দেশ করে। তাছাড়া লাল বাতি ব্যবহারের মাধ্যমে গাড়ি থামাকে নির্দেশ করে। এক্ষেত্রে পতাকাগুলো ও লাল বাতি প্রতীক আকারে ব্যবহৃত হওয়ায় অর্থ নিয়ে কোনো বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয় না।
সুতরাং আলোচনা শেষে বলা যায় যে, প্রতীকের উপযোগিতার গুরুত্ব অপরিসীম। এ কারণেই ব্রিটিশ দার্শনিক Alfred North Whitehead তাঁর An Introduction to Mathematics নামের গ্রন্থে বলেন- 'প্রতীক ব্যবহারের সাহায্যে যুক্তিপদ্ধতিকে আমরা যান্ত্রিক পদ্ধতিতে রূপান্তরিত করি, চোখ দিয়েই যার সমাধান করা যায়। অন্যথায় তার জন্য মস্তিষ্কের উন্নততর অংশকে কাজে লাগাতে হতো।

২. রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা থাকলে দেশের অর্থনৈতিক উন্নতি অব্যাহত থাকে এবং দেশের সমৃদ্ধি হয়। দেশের সমৃদ্ধি না হলে মানুষ ভাল থাকে না এবং মানুষের জীবনযাত্রা নিম্নগামী হয়। কাজেই মানুষের জীবনযাত্রা নিম্নগামী হবে না, যদি এবং কেবল যদি রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা থাকে অথবা দেশের সমৃদ্ধি হয়।
ক. সত্য সারণি কি?
খ. সরল ও যৌগিক বাক্য বলতে কি বোঝায়।
গ. উদ্দীপকে কোন কোন বাক্যের উল্লেখ রয়েছে। বাক্যগুলোর যথাযথ আকার দিয়ে প্রতিটির প্রতীক রূপ দাও।
ঘ. পাঠ্যপুস্তক অনুসারে উদ্দীপকে ব্যক্ত বাক্যগুলোর স্বরূপ বিশ্লেষণ করো।

২ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. সত্য-সারণি হলো এমন একটি সারণি যার সাহায্যে কোনো যৌক্তিক যোজকের অর্থ, তাৎপর্য, যৌগিক বাক্যের সত্যমান ও যুক্তির বৈধতা অবৈধতা যাচাই করা হয়।

খ. নিচে সরল বাক্য ও যৌগিক বাক্যের সংজ্ঞা দেওয়া হলো-
যে বাক্য বক্তব্য বা বিবৃতি প্রকাশ করে তাকে সরল বাক্য বলে। যেমন- মানুষ মরণশীল। পক্ষান্তরে, যে বাক্য একাধিক বক্তব্য বা বিবৃতি প্রকাশ করে তাকে যৌগিক বাক্য বলে। যেমন- রাসেল হন একজন দার্শনিক ও সাহিত্যিক।

গ. উদ্দীপকে সংযৌগিক ও সমমানিক বাক্যের উল্লেখ রয়েছে। বাক্যগুলোর যথাযথ আকার দিয়ে প্রতিটির প্রতীক রূপ দেওয়া হলো-
যখন দুই বা ততোধিক সরলবাক্য 'এবং' 'ও', 'আর' প্রভৃতি যোজকের মাধ্যমে সংযুক্ত করা হয়, তখন তাকে সংযৌগিক বাক্য বলে। যেমন- মুহিত হয় ডাক্তার এবং সঙ্গীত শিল্পী। এই যুক্তিবাক্যের দুটি অঙ্গবাক্য হলো 'মুহিত হয় ডাক্তার' এবং 'মুহিত হয় সঙ্গীত শিল্পী'। অঙ্গবাক্য দুটির যোজক 'এবং'।
অঙ্গবাক্য দুটিকে p ও q দ্বারা এবং 'এবং' -কে (ডট) চিহ্ন দ্বারা প্রতীকায়িত করা হয়। সুতরাং সংযৌগিক বাক্যটির প্রতীকীরূপ p.q। আবার দুই বা ততোধিক সরলবাক্য 'যদি এবং কেবল যদি' যোজকের সাহায্যে যুক্ত হয়ে যে যুক্তি বাক্য গঠন করে, তাকে সমমানিক বাক্য বলে। যেমন- বাংলাদেশের উন্নতি হবে যদি এবং কেবল যদি দেশের মানুষ সৎ হয়। এ বাক্যের অঙ্গবাক্য দুটি হলো বাংলাদেশের উন্নতি হবে এবং দেশের মানুষ সৎ হয়। যোজক হলো 'যদি এবং কেবল যদি' বাক্য দুটিকে p ও q এবং যোজক 'কেবল যদি' কে = চিহ্ন দ্বারা প্রতীকায়িত করা হয়। সুতরাং প্রতীক রূপ হলো p=q।

ঘ. উদ্দীপকে ব্যক্ত বাক্যগুলো একটি সংযৌগিক এবং অন্যটি সমমানিক। পাঠ্যপুস্তকের আলোকে বাক্যগুলোর স্বরূপ বিশ্লেষণ করা হলো-
যে যৌগিক বাক্যের অন্তর্গত দুটি সরল বাক্য 'এবং' 'ও', 'আর', 'কিন্তু' ইত্যাদি জাতীয় শব্দ দ্বারা যুক্ত হয়, তাকে সংযৌগিক বাক্য বলে। যেমন: 'রাসেল হন দার্শনিক এবং সাহিত্যিক' এ বাক্যটিকে বিশ্লেষণ করলে যে দুটি সরল বাক্য পাওয়া যায় তাহলো-
(i) রাসেল হন দার্শনিক,
(ii) রাসেল হন সাহিত্যিক।

বস্তুত সংযৌগিক বাক্যের আকারকে বলে সংযৌগিক অপেক্ষক, অপেক্ষকের উপাদান সরল বাক্যগুলোকে বলে সংযোগী এবং যে যোজক দ্বারা সংযোগীগুলো যুক্ত হয় তাকে বলে সংযোজক। সংযোজকের প্রতীক হিসেবে ডট (.) চিহ্ন ব্যবহৃত হয়। কাজেই উপর্যুক্ত বাক্যটির অন্তর্গত সংযোগীদ্বয়কে যথাক্রমে গ্রাহক প্রতীক p ও q ধরে আর এর সংযোজন হিসেবে এবং যোজকের পরিবর্তে ' . ' (ডট) প্রতীক ব্যবহার করে বাক্যটিকে প্রতীকায়ন করলে এর আকার হবে p. q। আবার, যে শর্তমূলক যৌগিক বাক্যের অন্তর্গত দুটি সরলবাক্য 'যদি এবং কেবল যদি' শব্দসমষ্টি দ্বারা যুক্ত থাকে তাকে সমমানিক বাক্য বলে। যেমন- ছাত্ররা পরিক্ষায় পাস করবে যদি এবং কেবল যদি তারা পড়াশুনা করে। এখানে দুটি সরল বাক্য হলো-
(i) ছাত্ররা পরীক্ষায় পাস করে,
(ii) ছাত্ররা ভালোভাবে পড়াশোনা করে

এখানে, বাক্যদ্বয়ের গ্রাহক প্রতীক p ও q এবং যোজকের প্রতীক ≡ ব্যবহার করে বাক্যটিকে প্রতীকায়ন করলে এর আকার হবে- p ≡ q উদ্দীপকে উল্লেখিত বাক্যগুলো যৌগিক বাক্যের শ্রেণিবিভাগের অন্তর্গত। উভয় বাক্যের স্বরূপ আলোচনা করে দেখা যায় যে, তাদের মধ্যে সম্পর্কের ক্ষেত্রে মিল হলো উভয় বাক্যে দুটি করে সরল বাক্যের উপস্থিতি।
পরিশেষে বলা যায়, সংযৌগিক ও সমমানিক বাক্যের মধ্যে যেমন মিল রয়েছে তেমনি তাদের মধ্যে বিভিন্ন ক্ষেত্রে পার্থক্যও লক্ষ করা যায়।

৩. বাংলাদেশ ও ইংল্যান্ড এর মধ্যে টেস্ট সিরিজ চলছে। স্টেডিয়ামের উপরে দুই দেশের পতাকা বাতাসে উড়ছে। গ্যালারিতে বসে দর্শকগণ বাঘের প্রতিকৃতি নিয়ে মাঝে মাঝে হই দিয়ে বাংলাদেশের খেলোছাড়দের উৎসাহ প্রদান করছেন।
ক. সত্য সারণি কী?
খ. সকল সংকেত কে প্রতীক বলা যায় না কেন?
গ. সত্যতা ও বৈধতা যুক্তি বিদ্যার কোন কোন বিষয়ের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকের আলোকে আমাদের ব্যবহারিক জীবনে প্রতীকের উপযোগিতা মূল্যায়ন করো।

৩ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. যে সারণি ব্যবহার করে যৌক্তিক যোজকের অর্থ ও তাৎপর্য, বচনের সত্যমান এবং যুক্তির বৈধতা বা অবৈধতা নির্ধারণ করা হয় তাকে সত্য সারণি বলে।

খ. সব সংকেতকে প্রতীক বলা যায় না।
সংকেত হলো এক প্রকার চিহ্ন। যদি কোনো চিহ্ন স্বাভাবিকভাবে ব্যবহৃত হতে হতে কোনো বিশেষ বিষয়কে প্রতিনিধিত্ব করে বা কোনো লক্ষণ, উপস্থিতি নির্দেশ করে তখন তাকে ঐ বিষয়ের সংকেত বলে। সব প্রতীককে সংকেত হিসেবে অভিহিত করা যায়। কিন্তু সকল সংকেত ইচ্ছা ও পরিকল্পনা অনুযায়ী ব্যবহৃত হয় না। তাই সব সংকেত প্রতীক নয়।

গ. সত্যতা ও বৈধতা যুক্তিবিদ্যার বচন ও যুক্তির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।
বচন বা বাক্যের বৈশিষ্ট্য হলো- এটি সত্য বা মিথ্যা হবে। সত্যতা যুক্তিবাক্যের একটি বিশেষ গুণ। কোন যুক্তি বাক্য যখন বাস্তবের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ হয় তখন তা সত্য বলে পরিগণিত হয়। আবার, যুক্তিবাক্য যখন বাস্তবের সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ হয় তখন তা মিথ্যা বলে বিবেচিত হয়। যেমন: সকল মানুষ হয় মরণশীল'। এই যুক্তিবাক্যটি সত্য। অন্যদিকে 'সকল মানুষ হয় কবি' এই যুক্তি বাক্যটি মিথ্যা।
পক্ষান্তরে কোন যুক্তির বৈধতা তার অন্তর্গত বাক্যের সত্যতার উপর নির্ভর করে না। যুক্তির ক্ষেত্রে আমাদের বিচার্য বিষয় হলো আশ্রয়বাক্য থেকে সিদ্ধান্তটি বিধি অনুসারে নিঃসৃত হলো কিনা তা দেখা। সিদ্ধান্তটি আশ্রয়বাক্য থেকে বিধি অনুসারে নিঃসৃত হলে যুক্তিটি বৈধ হবে। যেমন:
সকল দার্শনিক হন জ্ঞানী
সক্রেটিস একজন দার্শনিক
অতএব, সক্রেটিস হলো জ্ঞানী।
উপরের যুক্তিটি বৈধ। কারণ আশ্রয় বাক্য থেকে সিদ্ধান্তটি বিধিসম্মতভাবে নিঃসৃত হয়েছে।
উপরের আলোচনা থেকে বলতে পারি যে, সত্যতা ও বৈধতা যথাক্রমে বচন ও যুক্তির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।

ঘ. সুশৃঙ্খল ও সহজ জীবনযাপনের জন্য দৈনন্দিন জীবনে প্রতীকের ব্যবহার প্রয়োজন।
কোনো কিছু নির্দেশ করার জন্য বা বোঝার জন্য যে চিহ্ন ব্যবহার করা তাকে প্রতীক (Symbol) বলে। মাথায় টুপি ও পাগড়ি, সিঁদুর ব্যবহার বিশেষ ধর্মীয় ও সামাজিক স্বীকৃতির প্রতীক হিসেবে কাজ করে। জলোচ্ছ্বাস ও ঘূর্ণিঝড়ের সময় সাইরেনের বিভিন্ন শব্দ দুর্যোগের মাত্রার প্রতীক হিসেবে কাজ করে। তেমনিভাবে ট্রাফিকের লালবাতি চলন্ত গাড়ির প্রতিরোধের প্রতীক হিসেবে কাজ করে। এ কারণেই আমাদের দৈনন্দিন জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রতীকের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য।
উদ্দীপকে দেখা যায়, বাংলাদেশ ও ইংল্যান্ডের মধ্যে টেস্ট সিরিজ চলছে। স্টেডিয়ামের উপরে দুই দেশের পতাকা বাতাসে উড়ছে। গ্যালারিতে বসে দর্শকগণ বাঘের প্রতিকৃতি নিয়ে মাঝে মাঝে হই দিয়ে বাংলাদেশের খেলোছাড়দের উৎসাহ প্রদান করছেন। উদ্দীপকে দেখা যায়, পতাকা হলো একটি দেশের পরিচিতির প্রতীক এবং অন্যদিকে বাঘের প্রতিকৃতি বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের প্রতীক। আমাদের সুশৃঙ্খল ও সহজ জীবন যাপনের জন্য প্রতীকের যথেষ্ট উপযোগিতা রয়েছে।
পরিশেষে বলা যায় যে, দৈনন্দিন জীবনকে সহজ ও সুশৃঙ্খল করে সাজাতে প্রতীকের গুরুত্ব অপরিসীম।

৪. মুসা ইব্রাহিম সর্বোচ্চ শৃঙ্গ এভারেস্টে আরোহণ করে বাংলাদেশের পতাকা উড়িয়েছেন। নিল আর্মস্ট্রং যেদিন চাঁদে যান সেদিন মার্কিন পতাকা চাঁদে উড়িয়েছেন। রুশ বিপ্লবের শততম বার্ষিকীতে পৃথিবীর অনেক দেশে লাল পতাকা মিছিল হয়েছে।
ক. যৌগিক বচন কী?
খ. প্রাকল্পিক বচন বলতে কী বোঝ?
গ. উদ্দীপকে পতাকা দ্বারা পাঠ্যপুস্তকের কোন বিষয়ের ইঙ্গিত রয়েছে?
ঘ. উদ্দীপকে নির্দেশিত বিষয়টির উপযোগিতা বিশ্লেষণ করো।

৪ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. একাধিক সরল বচন যুক্ত হয়ে যে বচন গঠন করে তাকে যৌগিক বচন বলে।

খ. যে সাপেক্ষ যুক্তিবাক্য যদি....তাহলে বা এর কোনো সমার্থক শব্দ দ্বারা গঠিত হয় তাকে প্রাকল্পিক বচন বা যুক্তিবাক্য বলে।
যেমন: 'যদি মেঘ হয় তাহলে বৃষ্টি হবে' - এই যুক্তিবাক্যটি একটি প্রাকল্পিক যুক্তিবাক্য। প্রাকল্পিক যুক্তিবাক্যের দুটি অংশ থাকে। এর প্রথম অংশকে বলা হয় পূর্বর্গ এবং দ্বিতীয় অংশকে বলা হয় অনুগ। এই পূর্বগ ও অনুগ শর্ত দ্বারা যুক্ত হয়ে প্রাকল্পিক যুক্তিবাক্য গঠন করে।

গ. উদ্দীপকের পতাকা দ্বারা পাঠ্যপুস্তকের প্রতীকের ইঙ্গিত রয়েছে।
যুক্তিবিদ্যায় প্রতীক খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। কোনো কিছু নির্দেশ করার জন্য, বোঝার জন্য, চিনে নেওয়ার জন্য বা সহজে প্রকাশ করার জন্য ইচ্ছাকৃতভাবে যে চিহ্ন বা সংকেত ব্যবহার করা হয় তাকে প্রতীক বলে। যেমন: '+', ' - ', 'x', স্ট ইত্যাদি হলো গণিতের প্রতীক। আবার, P, S ও M হচ্ছে যুক্তিবিদ্যায় যথাক্রমে প্রধান পদ, অ-প্রধান পদ ও মধ্যপদের প্রতীক। এমনিভাবে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিভিন্ন রকম প্রতীক ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
উদ্দীপকে যে 'পতাকা'-এর কথা বলা হয়েছে সেটিও প্রতীক। কেননা বাংলাদেশের 'পতাকা' হচ্ছে আমাদের দেশের প্রতীক। তেমনিভাবে অন্যান্য দেশের পতাকাও সেসব দেশের প্রতীক। কেবল যুক্তিবিদ্যা নয় বিভিন্ন ক্ষেত্রেই প্রতীক ব্যবহৃত হয়ে থাকে এবং এটি খুবই গুরুত্ব বহন করে।

ঘ. উদ্দীপকের মাধ্যমে প্রতীকের বিষয়টি নির্দেশিত হয়েছে। বাস্তব জীবনে প্রতীকের বিভিন্ন উপযোগিতা পরিলক্ষিত হয়।
আমাদের চিন্তা-ভাবনা, অনুভূতি অপরের কাছে প্রকাশ করার জন্যই আমরা ভাষা ব্যবহার করি। কিন্তু কথ্য ও লেখ্য ভাষার মধ্যে নানা অস্পষ্টতা ও জটিলতা রয়েছে। ফলে কখনো কখনো মনের ভাব যথাযথভাবে প্রকাশ করা সম্ভব হয় না। শুধু তাই নয়, ব্যাকরণসম্মত ভাষাও অনেক ক্ষেত্রে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে। যেমন- সরকার হন রাষ্ট্রের পরিচালক, রফিক সাহেব হন সরকার। অতএব, রফিক সাহেব হন রাষ্ট্রের পরিচালক। এ যুক্তিটিতে 'সরকার' শব্দটির অর্থ নিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হতে পারে। কেননা বাংলা ভাষায় 'সরকার' বলতে আমরা যেমন রাষ্ট্রের পরিচালককে বুঝি, তেমনি 'সরকার' বলতে কোনো মানুষের বংশগত পদবিকেও বোঝানো হয়। এ সমস্যা সমাধানকল্পে যুক্তিবিদরা ভাব প্রকাশের বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে প্রতীকের প্রচলন করেন। প্রতীক ব্যবহারের মাধ্যমে সহজেই যুক্তির আকার নির্ধারণ করা যায়। যুক্তির আকার নির্ধারণ বলতে কোনো একটি যুক্তি কোন প্রকৃতির তা নির্ধারণ করাকে বোঝায়। একটি যুক্তির আকার নির্ধারণ করতে পারলে যুক্তিটির বৈধতা নির্ণয় খুব সহজ হয়ে যায়। পাশাপাশি প্রতীক ব্যবহারের মাধ্যমে ভাষাগত জটিলতা দূর করা সম্ভব হয়। কেননা ভাষায় বিভিন্ন শব্দ ও বাক্য অনেক জটিলতা সৃষ্টি করে। প্রতীক ব্যবহারের মাধ্যমে ভাষার এসব জটিলতা দূর হয়।
উদ্দীপকে বাংলাদেশের পতাকা বাংলাদেশকে মার্কিন পতাকা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে এবং লাল পতাকা রুশ বিপ্লবকে নির্দেশ করে। এক্ষেত্রে পতাকাগুলো প্রতীক আকারে ব্যবহৃত হওয়ায় অর্থ নিয়ে কোনো বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয় না।
সুতরাং আলোচনা শেষে বলা যায় যে, প্রতীকের উপযোগিতার গুরুত্ব অপরিসীম। এ কারণেই ব্রিটিশ দার্শনিক Alfred North Whitehead তাঁর An Introduction to Mathematics নামের গ্রন্থে বলেন- 'প্রতীক ব্যবহারের সাহায্যে যুক্তিপদ্ধতিকে আমরা যান্ত্রিক পদ্ধতিতে রূপান্তরিত করি, চোখ দিয়েই যার সমাধান করা যায়। অন্যথায় তার জন্য মস্তিষ্কের উন্নততর অংশকে কাজে লাগাতে হতো।'

৫. দৃষ্টান্ত-১: P . Q
দৃষ্টান্ত-২: যদি পড়ালেখা কর, তবে পরীক্ষায় পাস করবে। পড়ালেখা করোনি।
অতএব, পরীক্ষায় পাস করোনি।
ক. প্রতীক কাকে বলে?
খ. সকল সংকেতকে প্রতীক বলা যায় না কেন?
গ. দৃষ্টান্ত-১ এবং দৃষ্টান্ত ২ দ্বারা কোন বিষয়টি নির্দেশ করছে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকে দৃষ্টান্ত-১ দ্বারা যা বোঝানো হয়েছে তার সাথে সাবেকী যুক্তিবিদ্যার পার্থক্য উল্লেখ করো।

৫ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. কোনো বক্তব্য বা বিষয়কে সংক্ষেপে প্রকাশ করার জন্য যে চিহ্নব্যবহার করা হয় তাকে প্রতীক বলে।

খ. সব সংকেতকে প্রতীক বলা যায় না।
সংকেত হলো এক প্রকার চিহ্ন। যদি কোনো চিহ্ন স্বাভাবিকভাবে ব্যবহৃত হতে হতে কোনো বিশেষ বিষয়কে প্রতিনিধিত্ব করে বা কোনো লক্ষণ, উপস্থিতি নির্দেশ করে তখন তাকে ঐ বিষয়ের সংকেত বলে। সব প্রতীককে সংকেত হিসেবে অভিহিত করা যায়। কিন্তু সকল সংকেত ইচ্ছা ও পরিকল্পনা অনুযায়ী ব্যবহৃত হয় না। তাই সব সংকেত প্রতীক নয়।

গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত দৃষ্টান্ত-১ দিয়ে প্রতীকী যুক্তিবিদ্যা এবং দৃষ্টান্ত-২ দিয়ে সাবেকী যুক্তিবিদ্যার বিষয়টিকে নির্দেশ করা হয়েছে।
যুক্তিবিদ্যার যে শাখায় প্রতীক প্রবর্তনের মাধ্যমে বাক্যের সত্যতা বা মিথ্যাত্ব এবং যুক্তির বৈধতা বা অবৈধতা নিরূপণ করা হয়, তাকে প্রতীকী যুক্তিবিদ্যা বলে। এই যুক্তিবিদ্যায় প্রতীক ব্যবহার করে সহজেই যৌগিক বাক্যের সত্যমূল্য এবং যুক্তির বৈধতা বা অবৈধতা নিরূপণ করা হয়। অপরদিকে, গতানুগতিক সনাতনী ও এরিস্টটলীয় যুক্তিবিদ্যাকে সাবেকী যুক্তিবিদ্যা বলে। সাবেকী যুক্তিবিদ্যা একটি নির্দিষ্ট আদর্শের আলোকে অবৈধ যুক্তি থেকে বৈধ যুক্তির পার্থক্য নির্ণয় করে।
উদ্দীপকে উল্লিখিত দৃষ্টান্ত-১ এ P . Q এর .(Dot) দিয়ে এবং, ও, আর, কিন্তু বোঝানো হয়। যেমন- রহিম এবং করিম মেধাবী বাক্যটিকে P.Q দিয়ে সংক্ষেপে প্রকাশ করা হয়। তাই এটি প্রতীকী যুক্তিবিদ্যা। অপরদিকে, যদি পড়ালেখা কর, তবে পরীক্ষায় পাস করবে; পড়ালেখা করেনি অতএব, পরীক্ষায় পাস করেনি। যুক্তিবাক্যের মাধ্যমে যুক্তির পার্থক্য নির্ণয় করে সিদ্ধান্তে উপনীত হয় তাই এটা সাবেকী যুক্তিবিদ্যা।

ঘ. উদ্দীপকে নির্দেশিত প্রতীকী যুক্তিবিদ্যার সাথে সাবেকী যুক্তিবিদ্যার বেশকিছু পার্থক্য লক্ষ করা যায়।
গতানুগতিক, সনাতনী ও এরিস্টটলীয় যুক্তিবিদ্যাকে সাবেকী যুক্তিবিদ্যা বলে। অপরদিকে সাবেকী যুক্তিবিদ্যার আকারগত দিককে যখন প্রতীকের মাধ্যমে প্রকাশ করা হয় তখন তাকে প্রতীকী যুক্তিবিদ্যা বলে। প্রাচীন যুগে এরিস্টটলের সময় থেকে শুরু হয়ে বর্তমান পর্যন্ত সাবেকী যুক্তিবিদ্যার ইতিহাস বিসত্মৃত। অন্যদিকে গাণিতিক ধারা হিসেবে যুক্তিবিদ্যায় প্রতীকের ব্যবহার হচ্ছে মূলত আধুনিক যুগ থেকে।
সাবেকী যুক্তিবিদ্যায় অবৈধ যুক্তি থেকে বৈধ যুক্তির পার্থক্য নির্ণয় করা হয়। কিন্তু প্রতীকী যুক্তিবিদ্যায় নির্দিষ্ট প্রতীক ব্যবহারের মাধ্যমে যুক্তির অন্তর্গত বাক্যের সত্যতা মিথ্যাত্ব নির্ণয় করা হয়। সাবেকী যুক্তিবিদ্যায় যেখানে সীমিত পরিসরে প্রতীকের ব্যবহার হয়, সেখানে প্রতীকী যুক্তিবিদ্যায় কেবলই প্রতীক ব্যবহার হয়। যেমন- সাবেকী যুক্তিবিদ্যার ক্ষেত্রে বলা হয়, 'যদি বৃষ্টি হয় তাহলে মাটি ভিজবে'। অপরদিকে প্রতীকী যুক্তিবিদ্যায় P ⊃ Q লিখেই বিষয়টি প্রকাশ করা হয়। সাবেকী যুক্তিবিদ্যা হলো যুক্তিবিদ্যার মৌলিক ও প্রাথমিক দিক। পক্ষান্তরে প্রতীকী যুক্তিবিদ্যা হলো এর আধুনিক ও প্রায়োগিক দিক। আবার সাবেকী যুক্তিবিদ্যায় বিষয়বস্তু (পদ, যুক্তিবাক্য, যুক্তি) ব্যাখ্যা করা হয় ব্যাকরণগত দিক থেকে। কিন্তু প্রতীকী যুক্তিবিদ্যার বিষয়বস্তু (বচন, যুক্তি ও এদে আকার) ব্যাখ্যা করা হয় গাণিতিক দিক থেকে।
সুতরাং উপরের আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়, সাবেকী ও প্রতীকী যুক্তিবিদ্যার মধ্যে বিষয়বস্তুগত কোনো পার্থক্য নেই; তাদের পার্থক্য কেবল বিষয়বস্তু প্রকাশ করার পদ্ধতিতে।

৬. রহমত সাহেব দেশের নামকরা 'সাংবাদিক'। তার মেয়ে গণিত অলিম্পিয়াডে +, -, x + চিহ্নের খেলায় পুরস্কার লাভ করেছে। তিনি মেয়ের কাছে জানতে চাইলেন যে, x2 = কত? মেয়ে বলল, x-এর মান না জানলে এর মান নির্ণয় করা সম্ভব নয়। মেয়েরা কথা শুনে তিনি খুব খুশি হলেন।
ক. প্রতীক কাকে বলে?
খ. সত্যতা ও বৈধতা কি একই বিষয়? বুঝিয়ে লেখ
গ. রহমত সাহেবের পেশা প্রতীকের কোন নির্দেশ করে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. মেয়ের খেলা এবং বাবার জিজ্ঞাসা প্রতীকের আলোকে মূল্যায়ন করো।

৬ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. প্রতীক হলো এমন একটি চিহ্ন যা কোনো কিছু নির্দেশ করে।

খ. সত্যতা আর বৈধতা একই বিষয় নয়।
বাস্তব ঘটনার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ বিষয় হলো সত্যতা। আর বৈধতা হলো যুক্তিবাক্যের নিয়মের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ। সত্যতা হচ্ছে বচনের বৈশিষ্ট্য কিন্তু বৈধতা হচ্ছে যুক্তির বৈশিষ্ট্য। এক্ষেত্রে সকল যুক্তিবাক্য সত্য হলেও বৈধতার বিচারে ভ্রান্ত হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। আবার সত্যতা বাক্যের আকারগত ও বস্তুগত উভয় দিকের ওপর নির্ভর করে। কিন্তু বৈধতা কেবল আকারগত দিকের ওপর নির্ভরশীল। অর্থাৎ উভয়ই যুক্তিবিদ্যার অন্তর্ভুক্ত হলেও এরা পরস্পর আলাদা।

গ. সাংবাদিক রহমত সাহেবের পেশা শাব্দিক প্রতীককে নির্দেশ করে।
কোনো কিছুকে নির্দেশ করার জন্য যে লিখিত বা কথিত চিহ্ন ব্যবহার করা হয় তাকে প্রতীক বলে। প্রতীক দুই প্রকার। যথা- শাব্দিক প্রতীক ও অশাব্দিক প্রতীক। ভাষায় ব্যবহৃত প্রতীককে শাব্দিক প্রতীক বলে। যখন কোনো শব্দ কোনো কিছুর প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত হয়, তখন তাকে শাব্দিক প্রতীক বলে। যেমন- বাড়ি, গাড়ি, চেয়ার শব্দগুলো হলো দ্রব্যের প্রতীক। শাব্দিক প্রতীকগুলো অস্পষ্ট ও দ্ব্যর্থক হয়। এই প্রতীকের সাহায্যে বক্তা সব সময় তার চিন্তা ও আবেগকে শ্রোতার নিকট সঠিকভাবে প্রকাশ করতে পারে না। যেমন- ধর্ম শব্দটি কোনো সুনির্দিষ্ট বিষয়কে বোঝায় না। সেজন্য ধর্ম সম্পর্কে যে কোনো আলোচনা প্রায়ই অযৌক্তিক বিতর্কে পরিণত হয়।
উদ্দীপকে দেখা যায়, রহমত সাহেব একজন সাংবাদিক। এখানে 'সাংবাদিক' শব্দটি একটি পেশার প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। তাই এই শব্দটি একটি শাব্দিক প্রতীক।

ঘ. প্রতীক ধারণার ক্ষেত্রে মেয়ের গণিত অলিম্পিয়াড খেলাকে ধ্রুবক প্রতীকের সাথে এবং বাবার জিজ্ঞাসাকে গ্রাহক প্রতীকের সাথে তুলনা করা যায়। উভয়ই অশাব্দিক প্রতীকের উদাহরণ।
গ্রাহক প্রতীক হচ্ছে এমন একটা প্রতীক যা কোনো একটি বিষয়ের প্রতিনিধিত্ব করে। আর ধ্রুবক প্রতীক হচ্ছে এমন একটা প্রতীক যা বাক্যের অপরিবর্তনীয় আকারকে সংক্ষেপে প্রকাশ করতে ব্যবহৃত হয়। রহমত সাহেব মেয়ের কাছে জানতে চায় x2 = কত?। এখানে x2 রহমত সাহেবের জিজ্ঞাসার প্রতিনিধিত্ব করছে তাই এটাকে গ্রাহক প্রতীক বলা যায়। অন্যদিকে রহমত সাহেবের মেয়ে গণিত অলিম্পিয়াডের +, -, ×, ÷ চিন্তের খেলায় প্রথম পুরস্কার লাভ করেছে। গণিতের +, -, x, ÷ এই চিহ্নগুলো সর্বদা অপরিবর্তনীয় বলে এগুলোকে আমরা ধ্রুবক প্রতীক বলতে পারি।
গ্রাহক প্রতীকের নিজস্ব কানো অর্থ নেই। এটি কেবল একটি স্থান নির্দেশক চিহ্ন। রহমত সাহেবের জিজ্ঞাসার x2 প্রতীকের নিজস্ব কোনো অর্থ নেই। কিন্তু মেয়ের খেলায় ব্যবহৃত প্রতীকগুলো (+, -, ×, ÷) ধ্রুবক প্রতীক হওয়ায় এগুলোর নিজস্ব অর্থ রয়েছে এবং সেই অর্থ অপরিবর্তনীয়।
আধুনিক প্রতীকী যুক্তিবিদ্যা এবং গণিতে গ্রাহক প্রতীক ধ্রুবক প্রতীকের ব্যবহার খুব গুরুত্বপূর্ণ। ভাষার অস্পষ্টতা ও দ্ব্যর্থকতা নিরসনে গ্রাহক প্রতীক ও ধ্রুবক প্রতীক ব্যবহার করা হয়। উদ্দীপকে বাবার জিজ্ঞাসা ও মেয়ের খেলার পদ্ধতি প্রকাশে এই প্রতীক দুটির ব্যবহার করা হয়েছে যার থেকে আমরা বাবার জিজ্ঞাসা ও মেয়ের খেলার পদ্ধতি সম্পর্কে একটি সংক্ষিপ্ত ও পূর্ণাঙ্গ ধারণা পাই।

৭. দিপ্তা কলেজে যাওয়ার জন্য বাসা থেকে বের হচ্ছে এমন সময় হঠাৎ আকাশে ঘন কালো মেঘ দেখা যায় এবং মেঘের গর্জন শুনতে পায়। সে দ্রম্নত রিকশা নিয়ে যাচ্ছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই সে রাস্তার পাশে তীর চিহ্ন দেওয়া তার স্কুলের নামের প্ল্যাকার্ড দেখতে পায় এবং বৃষ্টি শুরুর আগেই স্কুলে পৌঁছে যায়
ক. জর্জবুলের মতে প্রতীক কী?
খ. দৈনন্দিন জীবনে প্রতীকের ব্যবহার প্রয়োজন কেন?
গ. উদ্দীপকে উল্লেখিত প্ল্যাকার্ডটি কোন বিষয়কে ইঙ্গিত করছে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকে যে দুটি বিষয়ের প্রকাশ ঘটেছে তাদের মধ্যে পার্থক্য দেখাও।

৭ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. জর্জ বুলের মতে- সংকেতিক ভাষার মাধ্যমেই চিন্তার নিয়মাবলি সঠিকভাবে প্রকাশ করা যায়। আর চিন্তার উপাদান হলো প্রতীক বা চিহ্ন।

খ. সুশৃঙ্খল ও সহজ জীবনযাপনের জন্য দৈনন্দিন জীবনে প্রতীকের ব্যবহার প্রয়োজন।
কোনো কিছু নির্দেশ করার জন্য বা বোঝার জন্য যে চিহ্ন ব্যবহার করা তাকে প্রতীক (Symbol) বলে। মাথায় টুপি ও পাগড়ি, সিঁদুর ব্যবহার বিশেষ ধর্মীয় ও সামাজিক স্বীকৃতির প্রতীক হিসেবে কাজ করে। জলোচ্ছ্বাস ও ঘূর্ণিঝড়ের সময় সাইরেনের বিভিন্ন শব্দ দুর্যোগের মাত্রার প্রতীক হিসেবে কাজ করে। তেমনিভাবে ট্রাফিকের লালবাতি চলন্ত গাড়ির প্রতিরোধের প্রতীক হিসেবে কাজ করে। এ কারণেই আমাদের দৈনন্দিন জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রতীকের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য।

গ. উদ্দীপকের প্ল্যাকার্ড দ্বারা পাঠ্যপুস্তকের প্রতীকের ইঙ্গিত রয়েছে।
যুক্তিবিদ্যায় প্রতীক খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। কোনো কিছু নির্দেশ করার জন্য, বোঝার জন্য, চিনে নেওয়ার জন্য বা সহজে প্রকাশ করার জন্য ইচ্ছাকৃতভাবে যে চিহ্ন বা সংকেত ব্যবহার করা হয় তাকে প্রতীক বলে। যেমন: '+', 'x', ÷ ইত্যাদি হলো গণিতের প্রতীক। আবার, P, S ও M হচ্ছে যুক্তিবিদ্যায় যথাক্রমে প্রধান পদ, অ-প্রধান পদ ও মধ্যপদের প্রতীক। এমনিভাবে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিভিন্ন রকম প্রতীক ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
উদ্দীপকে যে 'পস্নাকার্ড'-এর কথা বলা হয়েছে সেটিও প্রতীক। কেননা বাংলাদেশের 'পতাকা' হচ্ছে আমাদের দেশের প্রতীক। তেমনিভাবে অন্যান্য দেশের পতাকাও সেসব দেশের প্রতীক। কেবল যুক্তিবিদ্যা নয় বিভিন্ন ক্ষেত্রেই প্রতীক ব্যবহৃত হয়ে থাকে এবং এটি খুবই গুরুত্ব বহন করে।

ঘ. উদ্দীপকে প্রতীক ও সংকেতের বিষয় দুটি প্রকাশ পেয়েছে।
কোনো কিছুকে নির্দেশ করার, বোঝার এবং ব্যক্ত করার জন্য যে চিহ্ন ব্যবহার করা হয় তাকে প্রতীক বলে। অর্থাৎ প্রতীক সর্বদাই কৃত্রিম। যেমন- জাতীয় পতাকা হচ্ছে আমাদের জাতীয়তা, সার্বভৌমত্ব ও স্বাধীনতার প্রতীক। অন্যদিকে, কোনো বিষয় যখন নির্দিষ্ট কিছুর আভাস দেয় তখন তাকে সংকেত বলে। উদ্দীপকে বর্ণিত ঘটনায় আকাশে ঘন কালো মেঘ ঝড়-বৃষ্টির সংকেত বহন করে। কারণ আকাশে মেঘ দেখলে আমরা ধারণা করি, বৃষ্টি হতে পারে। তেমনিভাবে বাসস্ট্যান্ডের স্টার্টারের হুইসেল গাড়ি ছাড়ার সংকেত হিসেবে কাজ করে। অর্থাৎ সংকেত প্রাকৃতিক ও কৃত্রিম উভয় হতে পারে।
প্রতীক সর্বদা মানুষের ব্যবহার ও ব্যাখ্যার ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু সংকেত মানুষের ব্যবহার বা ব্যাখ্যার ওপর নির্ভরশীল নয়। যেমন- উদ্দীপকে বর্ণিত প্ল্যাকার্ডটি একটি নির্দেশসূচক চিহ্ন হিসেবে কাজ করে। এ চিহ্নের তাৎপর্য যখন ব্যাখ্যা করা হয় তখনই এর অর্থ আমাদের কাছে সুস্পষ্ট হয়। অন্যদিকে, সংকেত হিসেবে আকাশের মেঘ ঝড়-বৃষ্টির প্রতিনিধিত্ব করে। এটা আমাদের ব্যাখ্যার ওপর নির্ভর করে না। কারণ আকাশে মেঘ দেখলে যে কেউ ধারণা করে যে বৃষ্টি হতে পারে। অর্থাৎ প্রতীক হচ্ছে সুপরিকল্পিত। কিন্তু সংকেত হলো অপরিকল্পিত।
পরিশেষে বলা যায়, সব ধরনের প্রতীক সংকেতের মর্যাদা পেলেও সকল সংকেত প্রতীকের মর্যাদা পায় না। উদ্দীপকে বর্ণিত কালো মেঘকে আমরা বৃষ্টির সংকেত বললেও বৃষ্টির প্রতীক বলতে পারি না। এ কারণেই প্রতীক ও সংকেত দুটি আলাদা বিষয়।

৮. রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা থাকলে, দেশের অর্থনৈতিক উন্নতি অব্যাহত থাকে এবং দেশের সমৃদ্ধি হয়। দেশের সমৃদ্ধি না হলে, মানুষ ভালো থাকে না এবং মানুষের জীবনযাত্রা নিম্নগামী হয়। কাজেই মানুষের জীবনযাত্রা নিম্নগামী হবে না, যদি এবং কেবল যদি রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা থাকে অথবা দেশের সমৃদ্ধি হয়।
ক. সত্য সারণি কী?
খ. সরল ও যৌগিক বাক্য বলতে কী বোঝায়?
গ. উদ্দীপকে কোন কোন বাক্যের উল্লেখ রয়েছে? বাক্যগুলোর যথাযথ আকার দিয়ে প্রতিটির প্রতীকী রূপ দাও।
ঘ. পাঠ্যপুস্তক অনুসারে উদ্দীপকে ব্যক্ত বাক্যগুলোর স্বরূপ ব্যাখ্যা করো।

৮ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. যে সারণি ব্যবহার করে যৌক্তিক যোজকের অর্থ ও তাৎপর্য, বাক্য ও বাক্যাকারের সত্যমান এবং যুক্তির বৈধতা বা অবৈধতা নির্ধারণ করা হয়, তাকে সত্য সারণি বলে।

খ. যে বাক্যে একাধিক অবস্থা বা ঘটনা বিবৃত হয় এবং যেখানে একাধিক বক্তব্য নিহিত থাকে তাকে সরল বাক্য বলে। যেমন- 'রাসেল হন দার্শনিক।' -এ বাক্যে কেবল রাসেলের দার্শনিক হওয়ার বিষয়টি ব্যক্ত হয়েছে। কাজেই এটি একটি সরল বাক্য।
আর যে বাক্যে একাধিক অবস্থা বা ঘটনা বিবৃত হয় এবং যেখানে একাধিক বক্তব্য নিহিত থাকে, তাকে যৌগিক বাক্য বলে। যেমন: রাসেল হন দার্শনিক এবং সাহিত্যিক।

গ. উদ্দীপকে যথাক্রমে সংযৌগিক, সমমানিক এবং বৈকল্পিক বাক্যের উল্লেখ রয়েছে।
১ম বাক্যটি হলো সংযৌগিক বাক্য এবং এর প্রতীকী রূপ হলো→ p.q। ২য় বাক্যটিও হলো সংযৌগিক বাক্য এবং এর প্রতীকী রূপ হলো → pq। ৩য় বাক্যটি হলো সমমানিক বাক্য এবং বৈকল্পিক বাক্য। যার প্রতীকী রূপ হলো→ p≡q এবং p v q।
উদ্দীপকে ৩টি বাক্যের উল্লেখ আছে এবং তিনটি বাক্যের ১ম টি হলো সংযৌগিক বাক্য। যেমন- রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা থাকলে দেশের অর্থনৈতিক উন্নতি অব্যাহত থাকে এবং দেশের সমৃদ্ধি হয়। ২য় বাক্যটি সংযৌগিক বাক্য। যেমন- দেশের সমৃদ্ধি না হলে মানুষ ভালো থাকে না এবং মানুষের জীবনযাত্রা নিম্নগামী হয়। ৩য় বাক্যটি একাধারে সমমানিক ও বৈকল্পিক বাক্য। যেমন: কাজেই মানুষের জীবন যাত্রা নিম্নগামী হবে না, যদি এবং কেবল যদি রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা থাকে অথবা দেশের সমৃদ্ধি হয়।

ঘ. উদ্দীপকে যে বাক্যগুলো ব্যক্ত হয়েছে সেগুলো হলো→ সংযৌগিক, সমমানিক এবং বৈকল্পিক বাক্য।
যে যৌগিক যুক্তিবাক্যে তার অংশগুলো এবং, ও, আর, কিংবা ইত্যাদি যোজক দ্বারা সংযোজিত হয় তাকে সংযৌগিক যুক্তিবাক্য বলে। যেমন: সে চা খায় এবং কফি খায়। এখানে
সে চা খায় = p
সে কফি খায় = q
এবং এর প্রতীকী রূপ হলো→ p.q। অন্যদিকে, যে যৌগিক যুক্তিবাক্যে একাধিক সরল যুক্তিবাক্য পরস্পর বিকল্প হিসেবে হয় না হয়, অথবা ইত্যাদি বিকল্প সূচক শব্দ দ্বারা সংযুক্ত করা হয় তাকে বৈকল্পিক যুক্তিবাক্য বলে। যেমন: সে চা খায় অথবা কফি খায়। এর প্রতীকী রূপ হলো → p v q। আর যে যৌগিক যুক্তিবাক্য 'যদি এবং কেবল যদি' কিংবা অনুরূপ কোনো সমার্থক শব্দ দ্বারা দুই বা ততোধিক সরল যুক্তিবাক্যকে যুক্ত করা হয়, তাকে সমমানিক যুক্তিবাক্য বলে। যেমন: সে সম্মানিত হবে যদি এবং কেবল যদি সে সৎ হয়। বাক্যটির প্রতীকী রূপ হলো p ≡ q।
উদ্দীপকের আলোকে সংযৌগিক বাক্য দ্বারা সর্বদা বাক্যকে যুক্ত করা হয়, বৈকল্পিক বাক্য দ্বারা বাক্যের বিকল্প ধারার উল্লেখ করা হয় এবং সমমানিক বাক্য সমার্থক শব্দ বা দুই বা ততোধিক সরল যুক্তিবাক্যকে যুক্ত করা হয়।
পরিশেষে বলা যায় যে, উদ্দীপকে আলোচিত তিনটি বাক্যই দৈনন্দিন জীবনের যৌক্তিক ব্যাখ্যায়ও বিজ্ঞানসম্মত আলোচনার ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

৯. দৃষ্টান্ত-১ দৃষ্টান্ত-২
ছাত্রটি মেধাবী অথবা চালাক। pvq
ছাত্রটি চালাক। p
অতএব, ছাত্রটি মেধাবী অতএব, q
ক. প্রতীক কী?
খ. সব সংকেত প্রতীক নয় কেন? ব্যাখ্যা করো।
গ. উদ্দীপকে বর্ণিত দৃষ্টান্ত-১ এর প্রথম সারিতে কোন ধরনে যৌগিক বচনের ইঙ্গিত রয়েছে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. দৃষ্টান্ত-১ ও দৃষ্টান্ত-২ এ যুক্তিবিদ্যার যে দুটি বিষয়ের প্রতিফলন ঘটেছে তাদের পার্থক্য বর্ণনা করো।

৯ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. কোনো কিছু নির্দেশ করার জন্য, বোঝার জন্য, চিনে নেওয়ার জন্য বা সহজে প্রকাশ করার জন্য ইচ্ছাকৃতভাবে যে চিহ্ন বা সংকেত ব্যবহার করা হয় তাকে প্রতীক বলে।

খ. সব সংকেতকে প্রতীক বলা যায় না।
সংকেত হলো এক প্রকার চিহ্ন। যদি কোনো চিহ্ন স্বাভাবিকভাবে ব্যবহৃত হতে হতে কোনো বিশেষ বিষয়কে প্রতিনিধিত্ব করে বা কোনো লক্ষণ, উপস্থিতি নির্দেশ করে তখন তাকে ঐ বিষয়ের সংকেত বলে। সব প্রতীককে সংকেত হিসেবে অভিহিত করা যায়। কিন্তু সকল সংকেত ইচ্ছা ও পরিকল্পনা অনুযায়ী ব্যবহৃত হয় না। তাই সব সংকেত প্রতীক নয়।

গ. উদ্দীপকে বর্ণিত দৃষ্টান্ত-১-এর প্রথম সারিতে বৈকল্পিক বচনের ইঙ্গিত রয়েছে।
যৌগিক বচনে একাধিক সরল বচন যুক্ত থাকে এবং সরল বচনগুলো বিভিন্ন প্রকার যোজক দ্বারা যুক্ত হয়ে যৌগিক বাক্য গঠন করে। আর যখন একাধিক সরল বচন হয়....না হয় ইত্যাদি যোজক দ্বারা যুক্ত হয়ে যৌগিক বচন গঠন করে তখন তাকে বৈকল্পিক যুক্তিবাক্য বলে। যেমন- হাসান হয় ঢাকা যাবে না হয় খুলনা যাবে' এই যৌগিক বাক্যটি একটি বৈকল্পিক বাক্য। কেননা এখানে দুটি সরল বচন বৈকল্পিক যোজক দ্বারা যুক্ত হয়ে যৌগিক বাক্য গঠন করেছে।
উদ্দীপকের প্রথম সারির যৌগিক বাক্যটি হচ্ছে, ছাত্রটি মেধাবী অথবা চালাক'। এই যৌগিক বাক্যটিতে দুটি সরল বাক্য বৈকল্পিক যোজক দ্বারা যুক্ত হয়েছে। তাই দৃষ্টান্ত-১-এর প্রথম সারির বাক্যটি বৈকল্পিক যুক্তিবাক্যকে প্রকাশ করেছে।

ঘ. দৃষ্টান্ত-১ ও দৃষ্টান্ত-২-এর মাধ্যমে যথাক্রমে সাবেকী যুক্তিবিদ্যা ও প্রতীকী যুক্তিবিদ্যার প্রতিফলন ঘটেছে।
গতানুগতিক সনাতনী ও এরিস্টটলীয় যুক্তিবিদ্যাকে সাবেকী যুক্তিবিদ্যা বলে। অপরদিকে সাবেকী যুক্তিবিদ্যার আকারগত দিককে যখন প্রতীকের মাধ্যমে প্রকাশ করা হয় তখন তাকে প্রতীকী যুক্তিবিদ্যা বলে। প্রাচীন যুগে এরিস্টটলের সময় থেকে শুরু হয়ে বর্তমান পর্যন্ত সাবেকী যুক্তিবিদ্যার ইতিহাস বিসত্মৃত। অন্যদিকে গাণিতিক ধারা হিসেবে যুক্তিবিদ্যায় প্রতীকের ব্যবহার হচ্ছে মূলত আধুনিক যুগ থেকে।
সাবেকী যুক্তিবিদ্যায় অবৈধ যুক্তি থেকে বৈধ যুক্তির পার্থক্য নির্ণয় করা হয়। কিন্তু প্রতীকী যুক্তিবিদ্যায় নির্দিষ্ট প্রতীক ব্যবহারের মাধ্যমে যুক্তির অন্তর্গত বাক্যের সত্যতা মিথ্যাত্ব নির্ণয় করা হয়। সাবেকী যুক্তিবিদ্যায় যেখানে সীমিত পরিসরে প্রতীকের ব্যবহার হয় সেখানে প্রতীকী যুক্তিবিদ্যায় কেবলই প্রতীক ব্যবহার হয়, যেমন- সাবেকী যুক্তিবিদ্যার ক্ষেত্রে বলা হয় 'যদি বৃষ্টি হয় তাহলে মাটি ভিজবে'। অপরদিকে প্রতীকী যুক্তিবিদ্যায় p ⊃ q লিখেই বিষয়টি প্রকাশ করা হয়। সাবেকী যুক্তিবিদ্যা হলো যুক্তিবিদ্যার মৌলিক ও প্রাথমিক দিক। পক্ষান্তরে আধুনিক ও প্রায়োগিক দিক হলো প্রতীকী যুক্তিবিদ্যা। আবার সাবেকী যুক্তিবিদ্যায় বিষয়বস্তু (পদ, যুক্তিবাক্য, যুক্তি) ব্যাখ্যা করা হয় ব্যাকরণগত দিক থেকে কিন্তু প্রতীকী যুক্তিবিদ্যার বিষয়বস্তু (বচন, যুক্তি ও এদের আকার) ব্যাখ্যা করা হয় গাণিতিক দিক থেকে।
উদ্দীপকের দৃষ্টান্ত-১ এর ছাত্রটি মেধাবী অথবা চালাক' যুক্তিবাক্যটি সাবেকী যুক্তিবিদ্যাকে এবং দৃষ্টান্ত-২ এর ঢ়ায় প্রতীকী যুক্তিবিদ্যাকে নির্দেশ করে।
সুতরাং ওপরের আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায় যে, সাবেকী ও প্রতীকী যুক্তিবিদ্যার মধ্যে বিষয়বস্তুগত কোনো পার্থক্য নেই, তাদের কেবল বিষয়বস্তু প্রকাশ করার পদ্ধতিতে।

১০. দৃষ্টান্ত-১: যদি কোথাও ধোঁয়া থাকে, তাহলে সেখানে পাখি বাস করে।
সাগরে ধোঁয়া থাকে।
অতএব, সাগরে পাখি বাস করে।
দৃষ্টান্ত-২: যদি পড়ালেখা করো, তবে পরীক্ষায় পাস করবে।
পড়ালেখা করনি,
অতএব, পরীক্ষায় পাস করনি।
ক. প্রতীক কাকে বলে?
খ. সকল সংকেতকে প্রতীক বলা যায় না কেন?
গ. দৃষ্টান্ত-১ এর আশ্রয়বাক্য ও সিদ্ধান্তের সত্যতা বিচার করো।
ঘ. দৃষ্টান্ত-১ ও দৃষ্টান্ত-২ এ উপস্থাপিত যুক্তিসমূহের বৈধতা ও অবৈধতার ব্যাপারে তোমার মতামত দাও।

১০ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. কোনো কিছু নির্দেশ করার জন্য, বোঝার জন্য যে চিহ্ন ব্যবহার করা হয় তাকে প্রতীক বলে।

খ. সংকেত শব্দের অর্থ হলো চিহ্ন। সংকেত দুই প্রকার। যথা: স্বাভাবিক সংকেত ও কৃত্রিম সংকেত। স্বাভাবিক সংকেত মানুষের ব্যাখ্যা ও ব্যবহারের ওপর নির্ভরশীল নয়। কিন্তু প্রতীক মানুষের ব্যাখ্যা ও ব্যবহারের ওপর নির্ভরশীল। তাই সব ধরনের সংকেতকে প্রতীক বলা যায় না। কেবল কৃত্রিম সংকেত প্রতীকের মর্যাদা পেতে পারে। কেননা কৃত্রিম সংকেত আমাদের ব্যবহারিক উপযোগিতা নির্দেশ করে। যেমন- ট্রাফিকের লাল বাতি একদিকে প্রতীক এবং অন্যদিকে গাড়ি থামানোর সংকেত হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

গ. দৃষ্টান্ত- ১ এর আশ্রয়বাক্য (Conclusion) সত্যতা বিচার করা হলো-
(Premises) ও সিদ্ধান্তের সত্যতা (Truth) হলো বচনের একটি বিশেষ গুণ। সত্যতা বাস্তব ঘটনার অনুরূপ বিষয়কে নির্দেশ করে। অর্থাৎ কোনো বিষয় বা ঘটনা বাস্তবের অনুরূপ হলে তা সত্য বলে বিবেচিত হবে। অন্যথায় মিথ্যা বলে গণ্য হবে। যেমন- পাঠাগারে বই থাকে। এ বাক্যটি সত্য। কেননা বাস্তবে পাঠাগার হলো বইয়ের আধার। আমরা জানি, অবরোহ অনুমানে আশ্রয়বাক্যগুলো সত্য হলে সিদ্ধান্ত সত্য হয়।
দৃষ্টান্ত- ১ এ আশ্রয়বাক্য ও সিদ্ধান্তের সত্যতা বিচার করতে বলা হয়েছে। বস্তুত এটি একটি অবরোহ অনুমানের দৃষ্টান্ত। যেখানে উল্লেখ করা হয়েছে-
যদি কোথাও ধোঁয়া থাকে, তাহলে সেখানে পাখি বাস করে।
সাগরে ধোঁয়া থাকে।
অতএব, সাগরে পাখি বাস করে।
ওপরের যুক্তিটিতে আশ্রয়বাক্য ও সিদ্ধান্ত মিথ্যা। কেননা, বাস্তবে কোথাও ধোঁয়া থাকলে সেখানে পাখি থাকে না। তাছাড়া সাগর হলো বিশাল জলরাশির ভান্ডার। সেখানে পাখির বাসা থাকার প্রশ্নই ওঠে না। তাই বলা যায় উপযুক্ত যুক্তিটির আশ্রয়বাক্য ও সিদ্ধান্ত মিথ্যা।

ঘ. আমি মনে করি, দৃষ্টান্ত-১ ও দৃষ্টান্ত-২ এ উপস্থাপিত উভয় যুক্তিই বৈধ।
প্রাকল্পিক নিরপেক্ষ সহানুমানের (Hypothetical Categorical Syllogism) ১ম নিয়মানুযায়ী অপ্রধান আশ্রয়বাক্যে, প্রধান আশ্রয়বাক্যের পূর্বর্গকে স্বীকার করে সিদ্ধান্তে অনুগকে স্বীকার করতে হয়। এই নিয়মটি প্রয়োগ করে দৃষ্টান্ত- ১ এর বৈধতা বা অবৈধতা বিচার করা হলো-
দৃষ্টান্ত-১ এ বলা হয়েছে,
যদি কোথাও ধোঁয়া থাকে, তাহলে সেখানে পাখি বাস করে।
সাগরে ধোঁয়া থাকে।
অতএব, সাগরে পাখি বাস করে।
আলোচ্য যুক্তিটি প্রাকল্পিক নিরপেক্ষ সহানুমানের একটি দৃষ্টান্ত। উপর্যুক্ত নিয়মানুযায়ী যুক্তিটি বৈধ। কেননা এতে পূর্ববর্গকে (সাগরে ধোঁয়া থাকে) স্বীকার করা অনুগকে (সাগরে পাখি বাস করে) স্বীকার হয়েছে।
প্রাকল্পিক নিরপেক্ষ সহানুমানের ২য় নিয়মানুযায়ী অপ্রধান আশ্রয়বাক্যে, প্রধান আশ্রয়বাক্যের পূর্বগকে অস্বীকার করে সিদ্ধান্তে অনুগকে অস্বীকার করতে হয়। যেমন-দৃষ্টান্ত-২ এ বলা হয়েছে,
যদি পড়ালেখা করো তাহলে পরীক্ষায় পাস করবে।
পড়ালেখা করনি,
অতএব, পরীক্ষায় পাস করনি।
আলোচ্য যুক্তিটিতে অপ্রধান আশ্রয়বাক্যে, প্রধান আশ্রয়বাক্যের পূর্বপকে (পড়ালেখা করনি) অস্বীকার করে সিদ্ধান্তে অনুগকে (পরীক্ষায় পাস করনি) অস্বীকার করা হয়েছে। এ কারণে যুক্তিটি অবৈধ বলে প্রতিপন্ন হয়েছে।
পরিশেষে বলা যায় যুক্তিবিদ্যা হলো বৈধ যুক্তি থেকে অবৈধ যুক্তিকে পৃথক করার নিয়মাবলি ও পদ্ধতি সংক্রান্ত বিজ্ঞান। এ কারণেই সহানুমানের ১ম ও ২য় নিয়মের সঠিক প্রয়োগের ফলে দৃষ্টান্ত- ১ ও দৃষ্টান্ত- ২ উভয় যুক্তিই বৈধ হিসেবে প্রমাণিত।
Share:

0 Comments:

Post a Comment