HSC যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর pdf download অধ্যায় ৭

HSC যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর pdf download

এইচএসসি পরীক্ষার পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি
HSC Logic 1st Paper Srijonshil question and answer pdf download.

উচ্চ মাধ্যমিক

যুক্তিবিদ্যা
প্রথম পত্র

সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
৭ম অধ্যায়

HSC Logic 1st Paper
Srijonshil
Question and Answer pdf download

১. রহিমা হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ল। তার হাত-পা অবশ হয়ে গেল, তাকে গ্রাম্য চিকিৎসকের নিকট নেয়া হলো। কোনো পরীক্ষা না করে চিকিৎসক তাকে ঔষধ দিলেন। কিন্তু রোগ ভালো হলো না পরবর্তীতে তাকে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের নিকট নেয়া হলো, ডাক্তার তাকে বিভিন্ন পরীক্ষা করাতে দিলেন। দেখা গেল, রহিমা ব্রেন স্ট্রোক করেছে। ডাক্তার তাকে সে অনুযায়ী ওষুধ দিলেন।
ক. পরীক্ষণ কী?
খ. কাকতালীয় অনুপপত্তি কীভাবে হয়?
গ. গ্রাম্য চিকিৎসকের রোগ নির্ণয়ের পদ্ধতি পাঠ্যবইয়ের কোন দিকটিকে নির্দেশ করে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকে চিকিৎসার যে দুটি পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়েছে, তোমার পাঠ্যপুস্তকের আলোকে তা মূল্যায়ন করো।

১ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. কোনো বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে কৃত্রিমভাবে গবেষণাগারে যন্ত্রপাতির সাহায্যে উৎপাদিত ঘটনাবলির সুনিয়ন্ত্রিত প্রত্যক্ষণকে পরীক্ষণ (Experiment) বলে।

খ. কোনো পরিবর্তনীয় ঘটনাকে কোনো কার্যের কারণ বলে চিহ্নিত করলে কাকতালীয় অনুপপত্তি (Fallacy of 'Post hoc ergo propter' hoc) ঘটে।
যেকোনো পূর্ববর্তী ঘটনাকে কারণ বলে চিহ্নিত করা যায় না। কারণ ও কার্যের মধ্যে একটা অনিবার্য সম্পর্ক থাকে। তাই কারণ কোনো পরিবর্তনীয় ঘটনা হতে পারে না। আর কোনো পরিবর্তনীয় ঘটনাকে কারণ বলে ধারণা করলে কাকতালীয় অনুপপত্তি ঘটে। যেমন: বলা- হলো, ধূমকেতুর উদয় রাজার মৃত্যুর কারণ। এখানে কাকতলীয় অনুপপত্তি ঘটেছে। কারণ ধূমকেতুর উদয় একটি পরিবর্তনীয় ঘটনা। যার সাথে রাজার মৃত্যুর কোনো সম্পর্ক নেই।

গ. গ্রাম্য চিকিৎসকের রোগ নির্ণয়ের পদ্ধতি নিরীক্ষণের দিকটিকে নির্দেশ করে।
পাঠ্যবইয়ের কোনো একটি বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে প্রাকৃতিক পরিবেশে কোনো ঘটনাকে সুনিয়ন্ত্রিতভাবে প্রত্যক্ষণ করাকে নিরীক্ষণ (Observation) বলে। অর্থাৎ নিরীক্ষণও এক ধরনের প্রত্যক্ষণ, তবে তা প্রাকৃতিক পরিবেশে সুনিয়ন্ত্রিতভাবে এবং পরিকল্পিতভাবে সম্পন্ন হয়। যেমন: রাস্তার পাশে একটা মৃতদেহ পড়ে আছে। খবর পেয়ে একজন সাংবাদিক ছুটে এলেন। মৃত্যুর রহস্য উদঘাটনের জন্য তিনি মৃত্যুর সাথে যুক্ত অবস্থাদি মনোযোগ সহকারে প্রত্যক্ষ করলেন। এক্ষেত্রে মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে সাংবাদিকের এই উদ্দেশ্যমূলক ও সুনিয়ন্ত্রিত প্রত্যক্ষণই নিরীক্ষণ।
উদ্দীপকে রহিমা হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ল। তার হাত-পা অবশ হয়ে গেল। এ অবস্থায় গ্রাম্য চিকিৎসক কোনো পরীক্ষা ছাড়াই শুধু তাকে দেখে ওষুধ দিলেন। গ্রাম্য চিকিৎসকের রোগ নির্ণয়ের এই পদ্ধতিটি পাঠ্যবইয়ের নিরীক্ষণের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। নিরীক্ষণের ক্ষেত্রে কোনো বিশেষ, উদ্দেশ্য নিয়ে একটা বিষষকে প্রত্যক্ষ করা হয়। তাই গ্রাম্য চিকিৎসকের রোগ নির্ণয়ের এই পদ্ধতিটিকে নিরীক্ষণ বলা যায়।

ঘ. উদ্দীপকে বর্ণিত রোগীর চিকিৎসায় নিরীক্ষণ ও পরীক্ষণ নামক দুটি পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়েছে, যার মধ্যে পরীক্ষণ পদ্ধতি অধিকতর গ্রহণযোগ্য।
প্রাকৃতিক পরিবেশে প্রাকৃতিক বস্তু ও ঘটনাবলির প্রত্যক্ষণ হলো নিরীক্ষণ। আর কৃত্রিম পরিবেশে কৃত্রিমভাবে উৎপাদিত ঘটনাবলির প্রত্যক্ষণ হলো পরীক্ষণ। তাই পরীক্ষণের ঘটনা পরীক্ষকের ওপর
নির্ভরশীল, কিন্তু নিরীক্ষণের ঘটনা প্রকৃতি নির্ভর। পরীক্ষণের ক্ষেত্রে ঘটনার পুনরাবৃত্তি সম্ভব নয়। সবকিছু মিলিয়ে পরীক্ষণে নিশ্চিত সিদ্ধান্ত পাওয়া যায়। কিন্তু নিরীক্ষণে তা পাওয়া যায় না।
উদ্দীপকে রহিমা হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে প্রথমে তাকে গ্রাম্য
চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। গ্রাম্য চিকিৎসক কোনো পরীক্ষা ছাড়াই শুধু তাকে দেখে ওষুধ দিলেন। এতে সে সুস্থ না হলে পরবর্তীতে তাকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। বিশেষজ্ঞ ডাক্তার রহিমাকে বিভিন্ন পরীক্ষা করিয়ে বললেন, রহিমা ব্রেন স্ট্রোক করেছে। গ্রাম্য ডাক্তার শুধুমাত্র নিরীক্ষণের মাধ্যমে চিকিৎসা করায় তার চিকিৎসায় রোগী সুস্থ হয়নি। কিন্তু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বিভিন্ন পরীক্ষণের মাধ্যমে রহিমাকে চিকিৎসা করায় একটা নিশ্চিত সিদ্ধান্ত দিতে পেরেছে এবং সঠিক রোগ নির্ণয় করতে পেরেছে।
প্রত্যক্ষণের ক্ষেত্রে নিরীক্ষণ ও পরীক্ষণ উভয়েরই প্রয়োজন। কিন্তু নিশ্চিত সত্য লাভ করতে হলে পরীক্ষণ পদ্ধতি অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ। একইভাবে উদ্দীপকে গ্রাম্য চিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের চিকিৎসা থেকেই পরীক্ষণের গুরুত্ব অনুধাবন করা যায়।

২. মি. জামিল একজন মনোবিজ্ঞানী। তিনি মানুষের বুদ্ধিমত্তা সংক্রান্ত একটি জরিপ করেছেন। এ জন্য তিনি কয়েকজন লম্বা লোককে নিরীক্ষণ করে দেখেন যে, তাদের সকলেরই বুদ্ধি কম। এরপর তিনি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলেন যে, লম্বা লোক মাত্রই বুদ্ধি কম।
ক. নিরীক্ষণ কী?
খ. ভ্রান্ত নিরীক্ষণ বলতে কী বোঝ?
গ. উদ্দীপকে মি. জামিলের সিদ্ধান্তে নিরীক্ষণের কোন প্রকার অনুপপত্তি ঘটেছে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকে মি. জামিলের সিদ্ধান্তে যে অনুপপত্তির উদ্ভব হয়েছে তা থেকে উত্তরণের উপায় বিশ্লেষণ করো।

২ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. কোনো বিশেষ উদ্দেশ্যে প্রাকৃতিক পরিবেশে কোনো বস্তু বা ঘটনাকে সুনিয়ন্ত্রিত ও পরিকল্পিতভাবে প্রত্যক্ষণ করাই নিরীক্ষণ (Observation)।

খ. কোনো বিষয় বা ঘটনা যেভাবে ঘটে তাকে সেভাবে নিরীক্ষণ না করে অন্য কোনোভাবে নিরীক্ষণ করাকে ভ্রান্ত নিরীক্ষণ (Mal-Observation) বলে।
কোনো বস্তু বা ঘটনা যেভাবে আছে অনেক সময় আমরা ঠিক সেভাবে না দেখে ভিন্নভাবে দেখি। এর ফলে ভ্রান্ত নিরীক্ষণের উদ্ভব ঘটে। যেমন: অন্ধকার রাতে রাস্তায় চলতে গিয়ে কোনো দড়িকে সাপ মনে করে ভয় পাওয়া।

গ. উদ্দীপকে মি. জামিলের সিদ্ধান্তে দৃষ্টান্তের অনিরীক্ষণজনিত (Non-Observation of Instances) অনুপপত্তি ঘটেছে।
কোনো বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের পূর্বে যেসব দৃষ্টান্ত নিরীক্ষণ করা দরকার সেসব দৃষ্টান্ত নিরীক্ষণ না করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলে যে অনুপপত্তি ঘটে তাকে দৃষ্টান্তের অনিরীক্ষণ অনুপপত্তি (Fallacy of Non-Observation of Instances) বলে। যেমন: একজন লোক ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করে না, কারণ যারা ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করে তারাও মৃত্যুবরণ করে। এক্ষেত্রে দৃষ্টান্তের অনিরীক্ষণ অনুপপত্তি ঘটেছে। কেননা প্রয়োজনীয় দৃষ্টান্ত অনিরীক্ষিত রেখেই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।
উদ্দীপকে মি. জামিল মানুষের বুদ্ধিমত্তা সংক্রান্ত জরিপ করতে গিয়ে কয়েকজন লম্বা লোককে নিরীক্ষণ করে দেখলেন যে, তাদের বুদ্ধি কম এর থেকে তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন যে, লম্বা লোক মাত্রই বুদ্ধি কম। মি. জামিলের এই সিদ্ধান্তে মূলত দৃষ্টান্তের অনিরীক্ষণজনিত অনুপপত্তি ঘটেছে। কারণ লম্বা ও বুদ্ধিমান লোক তার নিরীক্ষণের বাইরে থেকে যাচ্ছে।

ঘ. উদ্দীপকে মি. জামিলের সিদ্ধান্তে যে অনুপপত্তি ঘটেছে তার থেকে উত্তরণের জন্য মি. জামিলকে সকল দৃষ্টান্ত পর্যবেক্ষণ করা প্রয়োজন।
দৃষ্টান্তের অনিরীক্ষণ অনুপপত্তির মূল কারণ হচ্ছে কুসংস্কার ও অন্ধবিশ্বাস। এক্ষেত্রে আমরা আগে থেকেই কোনো মতবাদ দ্বারা প্রভাবিত হয়ে যাই। যার ফলে শুধুমাত্র অনুকূল দৃষ্টান্তগুলোকেই নিরীক্ষণ করি। প্রতিকূল দৃষ্টান্তগুলো নিরীক্ষণ করি না। আর এর ফলে অনুপপত্তি তৈরি হয়। তাই এই অনুপপত্তি থেকে উত্তরণের জন্য আমাদেরকে অনুকূল দৃষ্টান্তের সাথে সাথে প্রতিকূল দৃষ্টান্তও নিরীক্ষণ করতে হবে।
মি. জামিল তার জরিপ কাজ পরিচালনা করতে গিয়ে কতগুলো লম্বা লোককে নিরীক্ষণ করেই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কিন্তু তিনি যদি আরো কিছু লোককে পর্যবেক্ষণ করতেন বা আরো কিছু বুদ্ধিমান ও বোবা লোককে পর্যবেক্ষণ করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতেন তবে তার সিদ্ধান্তে এই ধরনের অনুপপত্তি ঘটতো না।
দৃষ্টান্তের অনিরীক্ষণজনিত অনুপপত্তি মূলত প্রয়োজনীয় দৃষ্টান্ত অনিরীক্ষণের কারণে ঘটে থাকে। কোনো বিষয়কে যেভাবে নিরীক্ষণ করা উচিত, তার থেকে কিছু দৃষ্টান্ত বাদ দিলে দৃষ্টান্তের অনিরীক্ষণজনিত অনুপপত্তি ঘটে। উদ্দীপকে মি. জামিল আরো কিছু দৃষ্টান্ত পর্যবেক্ষণ করে সিদ্ধান্ত নিলে তার সিদ্ধান্ত এই ধরনের অনুপপত্তি থেকে মুক্ত থাকতো।

৩. উদ্দীপক-১: আদর্শ বিদ্যাপীঠে প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণই সিরাজের প্রতিষ্ঠিত হওয়ার কারণ।
উদ্দীপক-২: উড়োজাহাজ উড্ডয়নের পরপরই তা বিধ্বস্ত হল। সুতরাং উড্ডয়নই এর বিধ্বস্ত হওয়ার কারণ।
ক. অরোহের ভিত্তি কাকে বলে?
খ. কারণের সদর্থক ও নঞর্থক শর্ত কী?
গ. উদ্দীপক-১ এ কারণের কোন নিয়ম ভঙ্গ করা হয়েছে? তা ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপক-২ এর সিদ্ধান্ত গ্রহণ যৌক্তিক দৃষ্টিতে যথার্থ হয়েছে বলে মনে কর?

৩ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. যেসব নিয়ম অনুসরণ করে আরোহের আকারগত ও বস্তুগত উভয় প্রকার সত্যতা অর্জিত হয়, সেসব নিয়মকে বলা হয় আরোহের ভিত্তি।

খ. কারণ হলো সদর্থক ও নঞর্থক সকল শর্তের সমষ্টি।
যে শর্তের উপস্থিতি কোনো কার্য সংঘটনে প্রয়োজনীয় তাকে কারণের সদর্থক শর্ত বলে। কার্য সংঘটনে সদর্থক শর্তের প্রত্যক্ষ অবদান থাকে। আর যেসব শর্ত অনুপস্থিতি থাকলে কার্য সংঘটিত হয় তাকে কারণের নঞর্থক শর্ত বলে। কার্য উৎপাদনে নঞর্থক শর্তের পরোক্ষ অবদান থাকে। এসব শর্তের সমষ্টি হলো কারণ।

গ. উদ্দীপক-১ এ সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে যে নিয়ম ভঙ্গ করা হয়েছে তা হলো প্রয়োজনীয় অবস্থার অনিরীক্ষণ।
কোনো বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের পূর্বে যেসব অবস্থা নিরীক্ষণ করা দরকার সেসব অবস্থা নিরীক্ষণ না করে আংশিকভাবে নিরীক্ষণ করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলে যে অনুপপত্তি ঘটে তাকে প্রয়োজনীয় অবস্থারঅনিরীক্ষণ অনুপপত্তি বলে।
উদ্দীপক-১ এ দেখা যায, আদর্শ বিদ্যাপিঠে প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণই সিরাজের প্রতিষ্ঠিত হওয়ার কারণ। এখানে প্রয়োজনীয় অবস্থার অনিরীক্ষণ অনুপপত্তি ঘটেছে। কারণ এখানে প্রয়োজনীয় অনেক বিষয় নিরীক্ষণ করা হয়নি। সিরাজের প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পেছনে প্রয়োজনীয় আরো বিষয় থাকতে পারে। যেমন- কঠোর পরিশ্রম, বাবা-মায়ের উৎসাহ, আর্থিক সচ্ছলতা অথবা অন্য কোনো শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানের সহযোগীতার জন্য। তাই কোনো বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় অবস্থা নিরীক্ষণ না করলে প্রয়োজনীয় অবস্থার অনিরীক্ষণ অনুপপত্তি ঘটে।

ঘ. উদ্দীপক-২ এ কাকতালীয় অনুপপত্তির জন্য সিদ্ধান্ত গ্রহণ যথার্থ হয়নি।
যেকোনো পূর্ববর্তী ঘটনাকে কারণ বলে চিহ্নিত করা যায় না। কারণ ও কার্যের মধ্যে একটা অনিবার্য সম্পর্ক থাকে। তাই কারণ কোনো পরিবর্তনীয় ঘটনা হতে পারে না, কোনো পরিবর্তনীয় ঘটনাকে কারণ বলে ধারণা করলে কাকতালীয় অনুপপত্তি ঘটে। যেমন- ধূমকেতুর উদয়কে রাজার মৃত্যুর কারণ হিসেবে গণ্য করলে এই ধরনের অনুপপত্তি ঘটে। কারণ ধূমকেতুর উদয় একটি পরিবর্তনীয় ঘটনা। রাজার মৃত্যুর সাথে এর কোনো অনিবার্য সম্পর্ক নেই।
উদ্দীপকে উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হওয়ার কারণ হিসেবে এর উড্ডয়নকে নির্দেশ করা হয়েছে। এটি কাকতালীয় অনুপপত্তিকে নির্দেশ করে। কেননা বিধ্বস্ত হওয়ার সাথে উড্ডয়নের অনিবার্য কোন সম্পর্ক নাই। বরং বিধ্বস্ত হওয়ার পেছনে যান্ত্রিক ত্রুটি বা পাইলটের অদক্ষতা কারণ হতে পারে। তাই এখানে সিদ্ধান্তটি যথার্থ নয়।
পরিশেষে বলা যায়, উড্ডয়নের সাথে সাথে উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হওয়া একটি কাকতালীয় ঘটনা। তাই উদ্দীপক-২ এর সিদ্ধান্ত গ্রহণ যৌক্তিক দৃষ্টিতে যথার্থ নয়।

৪. উদ্দীপক-১: মেরুদন্ডী প্রাণী যেমন বানর, কুকুর, মানুষ, মাছ এদের মৃত্যুর পর কঙ্কাল পাওয়া যায়। মেরুদন্ডী প্রাণীর এ বৈশিষ্ট্যের কারণেই অমেরুদন্ডী প্রাণি থেকে এরা পৃথক।
উদ্দীপক-২: জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট পরিদর্শন করে দেখা গেল ৭৫ জনের মধ্যে প্রত্যেকেই চোখের ডাক্তার। সুতরাং সিদ্ধান্ত নেয়া যায় যে, এ ইনস্টিটিউটের সকল ডাক্তারই চোখের ডাক্তার।
ক. আরোহের প্রাণ বলতে কী বোঝায়?
খ. আরোহের সিদ্ধান্ত কেন সার্বিক বাক্য হয়?
গ. উদ্দীপকে-১ কোন ধরনের প্রকৃত আরোহকে নির্দেশ করছে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপক-২ এ নির্দেশিত আরোহকে কী প্রকৃত আরোহ বলা যায়? বিশ্লেষণ করো।

৪ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. আরোহের প্রাণ বলতে বোঝায় আরোহমূলক লম্ফ।

খ. আরোহ অনুমানের সিদ্ধান্ত হিসেবে যে বাক্য প্রতিষ্ঠা করা হয় তা একটি সার্বিক বাক্য।
আরোহের কোনো বস্তু বা বিষয় সম্পর্কে যে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয় তা হয় ঐ শ্রেণির সকলের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। কারণ সার্বিক বাক্যে একটি শ্রেণির সকল সদস্য সম্পর্কে কোনো কিছু স্বীকার বা অস্বীকার করা হয়। যেমন: ‘‘সকল মানুষ হয় মরণশীল" এই বাক্যটি একটি সার্বিক বাক্য। এই বাক্যে মানুষ শ্রেণির সকলের ক্ষেত্রে মরণশীলতাকে স্বীকার করা।

গ. উদ্দীপক-১ প্রকৃত আরোহের অঙ্গতা সাদৃশ্যানুমানকে নির্দেশ করে।
সাদৃশ্যানুমান হচ্ছে কয়েকটি বিষয়ের মিলের ভিত্তিতে আরো কিছু বিষয়ে মিল থাকবে বলে অনুমান করে নেয়া। সাধু সাদৃশ্যানুমান সাদৃশ্যানুমানের একটি অংশ। যে সাদৃশ্যানুমানে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ও আবশ্যকীয় বিষয়ে সাদৃশ্য দেখিয়ে সিদ্ধান্ত অনুমান করা হয়। তাকে সাদু সাদৃশ্যানুমান বলে। যেমন- মানুষ ও উদ্ভিদের মধ্যে জন্ম, মৃত্যু, বৃদ্ধি, খাদ্য গ্রহণ বিষয়ে সাদৃশ্যের ভিত্তিতে অনুমান করা হলোু উদ্ভিদেরও প্রাণ আছে।
উদ্দীপকে বানর, কুকুর, মানুষ ও মাছের মৃত্যুর পর কঙ্কাল পাওয়া যায় বলে তারা মেরুদন্ডী প্রাণী বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এখান থেকে অনুমান করা হয়েছে মেরুদন্ডী প্রাণীর এ বৈশিষ্ট্যের জন্যই তারা অমেরুদন্ডী থেকে পৃথক। তাই এটি সাধু সাদৃশ্যানুমানকে নির্দেশ করে। এরূপ অনুমানে সাদৃশ্যের বিষয়ে সংখ্যা ও গুরুত্ব বেশি থাকে। সেই তুলনায় বৈসাদৃশ্য ও অজ্ঞাত বিষয়ের সংখ্যা কম থাকে।

ঘ. উদ্দীপক-২ এ নির্দেশিত আরোহ হলো পূর্ণাঙ্গ আরোহ।
কোনো তথাকথিত সঠিক যুক্তিবাক্যের অন্তর্গত প্রত্যেকটা দৃষ্টান্ত পর্যবেক্ষণ যা পরীক্ষার পর সেই সার্বিক যুক্তিবাক্য স্থাপনের পদ্ধতকে পূর্ণাঙ্গ আরোহ বলা হয়। মিল ও বেইন বলেনত পূর্ণাঙ্গ আরোহকে প্রকৃত বা যথার্থ আরোহ বলা চলে না।
উদ্দীপক-২ এ পূর্ণাঙ্গ আরোহের দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করা হয়েছে। এখানে, জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট পরিদর্শন করে দেখা গেলো ৭৫ জনের মধ্যে প্রত্যেকই চোখের ডাক্তার। সুতরাং, সিদ্ধান্ত নেয়া যায় যে, এ ইনস্টিটিউটের সকল ডাক্তারই চোখের ডাক্তার। মিল ও বেইনের মতে, দুটি কারণে পূর্ণাঙ্গ আরোহকে আরোহ বলা যুক্তিসম্মত নয়। প্রথমত, এখানে আরোহমূলক লম্ফ নেই। জানা থেকে অজানার যাওয়ার কোনো পদক্ষেপ নেই। দ্বিতীয়ত, পূর্ণাঙ্গ আরোহের সিদ্ধান্তটি দেখতেই শুধু সার্বিক যুক্তিবাক্যের মতো, কিন্তু আসলে তা সার্বিক সংশ্লেষক বাক্য নয়। এটা কতগুলো বিশেষ বাক্যের যোগফল মাত্র। এ দুটি কারণে পূর্ণাঙ্গ আরোহকে প্রকৃত আরোহ বলা যায় না। পরিশেষে বলা যায়, যুক্তিবিদ মিল ও বেইনের যুক্তি অনুসারে, উদ্দীপক-২ এ নির্দেশিত আরোহকে প্রকৃত আরোহ বলা যায় না। একে তথাকথিত আরোহ বলা যায়।

৫. স্কুল ছুটির পর রাজু সব সময় বাড়িতে ফিরে আসে। একদিন স্কুল ছুটির পর বাড়ি ফিরতে না দেখে রাজুর মা চিন্তিত হয়ে পড়লেন। এদিকে রাজুর দাদির ধারণা কোন অশরীরী সত্তা রাজুকে নিয়ে যায়নি তো? আবার রাজুর বাবা ভাবলেন বন্ধুদের সাথে সে হয়তো মাঠে খেলছে। এমন সময় রাজুর বোন মিনা এসে জানালো, স্কুল ছুটির পর শরীর চর্চা শিক্ষকের সাথে রাজুকে কথা বলতে দেখেছে। অন্যান্য দিনের তুলনায় প্রায় এক ঘণ্টা পর বাড়িতে এসে রাজু প্রকৃত ঘটনা খুলে বলল।
ক. বাস্তব কারণ কী?
খ. প্রকল্প কেন প্রণয়ন করা প্রয়োজন?
গ. রাজুর দাদির ধারণা বৈধ প্রকল্পের কোন শর্তকে লঙ্ঘন করেছে ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকে কী প্রকল্পের সবগুলো স্তরের প্রতিফলন ঘটেছে বিশ্লেষণ করো।

৫ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. একটি ঘটনাকে ব্যাখ্যা করার জন্য যে কারণের সাহায্য নেয়া হয় সে কারণকেই বাস্তব কারণ বলে।

খ. কোনো ঘটনা বা বিষয়ের ব্যাখ্যাদান কিংবা কার্যকারণ সম্পর্ক আবিষ্কারের জন্য প্রকল্পের প্রয়োজন।
জটিল অবস্থায় থাকে যে, সহজে সেগুলোর কারণ নির্ণয় করা যায় না। এসব ঘটনা বা বিষয়ের প্রকৃত কারণ নির্ণয়ের জন্য আমরা প্রকল্প গ্রহণ করি। তারপর গৃহীত প্রকল্পের ওপর ভিত্তি করে যথার্থ কারণ নির্ণয়ের চেষ্টা করি। প্রকল্প বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধান বা গবেষণারও পথনির্দেশক। নিরীক্ষণ ও পরীক্ষণ পদ্ধতির জন্যও প্রকল্পের প্রয়োজন। এ কারণে আরোহ ও অবরোহ যুক্তিবিদ্যায় প্রকল্পের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।

গ. রাজুর দাদির ধারণা বৈধ প্রকল্পের শর্তকে লঙ্ঘন করেছে। এ শর্তটি হলো প্রকল্পকে হতে হবে সুনির্দিষ্ট ও সুস্পষ্ট, স্ববিরোধী বা অযৌক্তিক নয়।
প্রকল্পের বৈধতার এ সূত্রটি চারটি বিষয়ের সাথে জড়িত। এর মধ্যে অন্যতম একটি হলত প্রকল্প আজগুবি হবে না। বস্তুত আজগুবি কোনো প্রকল্প কখনোই আলোচ্য ঘটনাকে যথাযথভাবে ব্যাখ্যা করতে পারে না। যেমন- রাহু নামক কোনো দেবতা চাঁদকে গ্রাস করলে চন্দগ্রহণ হয়। বিষয়টি সম্পূর্ণ আজগুবি ও মনগড়া যার সাথে চন্দ্রগ্রহণের কোনো সম্পর্ক নেই।
উদ্দীপকে, রাজুর দাদির ধারণা হলো- কোনো অশরীরী সত্তা রাজুকে হয়তো নিয়ে গেছে। এটি একটি আজগুবি প্রকল্প। কারণ প্রকল্পটি সুস্পষ্টভাবে ঘটনা ব্যাখ্যা করতে সক্ষম নয়। কাজেই ঘটনার ব্যাখ্যায় এ ধরনের প্রকল্পকে বাদ দিতে হবে এবং বাস্তবসম্মত প্রকল্প গ্রহণ করতে হবে। সুতরাং প্রকল্প আজগুবি হবে না এ শর্তটিকে রাজুর দাদির ধারণা লঙ্ঘন করেছে।

ঘ. না, উদ্দীপকে প্রকল্পের সবগুলো স্তরের প্রতিফলন ঘটেনি।
প্রকল্পের সহায়তার কোনো বিষয়কে নিয়মের পর্যায়ে উন্নীত করা হয়। এক্ষেত্রে প্রকল্পকে চারটি স্তর অতিক্রম করতে হয়। প্রথম স্তর হচ্ছে নিরীক্ষণ। এ স্তরে ঘটনাকে জানার জন্য কারণ অনুসন্ধান করতে হয়। দ্বিতীয় স্তর হচ্ছে আনুমানিক ধারণা গঠন। কারণ অনুসন্ধানের মাধ্যমে তথ্যের ভিত্তিতে অনুমান গঠন। তৃতীয় স্তর হলো সিদ্ধান্ত স্থাপন। নিরীক্ষণের ভিত্তিতে আনুমানিক ধারণার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত স্থাপন করতে হয়। চতুর্থ স্তরটি হলো সিদ্ধান্তকে পরীক্ষামূলকভাবে যাচাই করতে হয়। উদ্দীপকে রাজুর বাড়ি ফিরতে দেরি হওয়ার কারণ অনুসন্ধান করা হয়েছে। রাজুর বোন মিনা এক্ষেত্রে তথ্য প্রদান করেছে। রাজুর বাবা তার না আসার কারণ হিসেবে অনুমান করেছে। সে হয়তো মাঠে খেলছে। কিন্তু অনুমানের ভিত্তিতে কোনো সিদ্ধান্ত স্থাপন করা হয়নি। তৃতীয় স্তর বা সিদ্ধান্ত স্থাপন না হওয়ার কারণে সিদ্ধান্তকে পরীক্ষা করার কোনো প্রশ্নই ওঠে না। অর্থাৎ এক্ষেত্রে প্রথম ও দ্বিতীয় স্তরের প্রতিফলন ঘটলেও তৃতীয় ও চতুর্থ স্তরের কোনো প্রতিফলন ঘটেনি।
পরিশেষে বলা যায়, প্রকল্পের চারটি স্তর অতিক্রম না করলে কোনো ঘটনাকে সঠিকভাবে জানা যায় না। আর উদ্দীপকে প্রকল্পের সবগুলো স্তরের প্রতিফলন ঘটে নি।

৬. উদ্দীপক-১: হাসু ও হালিমা উভয়ই একই প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী। তাদের উভয়েরই পরিবার ঢাকার উত্তরায় বসবাস করে। সুতরাং হাসুর মতো হালিমাও রন্ধনকার্যে পারদর্শী।
উদ্দীপক-২: গৃহপালিত পশু সাধারণত শান্ত হয়। কারণ আমি এ পর্যন্ত অভিজ্ঞতায় তাই দেখেছি।
ক. প্রকৃত আরোহ কাকে বলে?
খ. আরোহে কেন অবৈধ সার্বিকীকরণ অনুপপত্তি ঘটে?
গ. উদ্দীপক-১ এ নির্দেশিত যুক্তিটির যথার্থতা বিচার করো।
ঘ. উদ্দীপক ১ ও ২ উভয়ই প্রকৃত আরোহকে নির্দেশ করলেও যৌক্তিক ভিন্নতা রয়েছে বিশ্লেষণ করো।

৬ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. যে আরোহে আরোহের প্রকৃত গুণ এবং মৌলিক বৈশিষ্ট্য বর্তমান থাকে তাকে প্রকৃত আরোহ বলে।

খ. ঘটনার মধ্যে কার্য-কারণ সম্পর্ক আবিষ্কার না করে অপর্যাপ্ত সংখ্যক ঘটনার বাস্তব জ্ঞানের ভিত্তিতে একটি শ্রেণি বা জাতির সম্পর্কে সাধারণ বাক্য সিদ্ধান্ত হিসেবে গ্রহণ করার কারণে অবৈধ সার্বিকীকরণ অনুপপত্তি ঘটে।
অবৈধ সার্বিকীকরণ অনুপপত্তি অবৈজ্ঞানিক আরোহের সাথে সম্পৃক্ত। যেহেতু কিছু কিছু ঘটনার বাস্তব জ্ঞান থেকে সার্বিক একটি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয় তাই এই অনুপপত্তি আরোহে ঘটে থাকে।

গ. উদ্দীপক-১ এ অসাধু সাদৃশ্যানুমানকে নির্দেশ করা হয়েছে।
যে সাদৃশ্যানুমানের ক্ষেত্রে দুটি বিষয়ের মধ্যে অমৌলিক, গুরুত্বহীন, অপ্রাসঙ্গিক ও বাহ্যিক সাদৃশ্যের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয় তাকে অসাধু সাদৃশ্যানুমান (Bad Analogy) বলে। যেমন- মানুষের মতো গাছপালার জন্ম, বৃদ্ধি ও মৃত্যু আছে। মানুষের বুদ্ধি আছে। অতএব, গাছপালারও বুদ্ধি আছে। বস্ত্তত এ অনুমানের সিদ্ধান্ত অপ্রাসঙ্গিক, বাহ্যিক সাদৃশ্যের প্রেক্ষাপটে গ্রহণ করা হয়। যেখানে আশ্রয়বাক্য ও সিদ্ধান্তের মধ্যে কোনো কার্যকারণ সম্পর্ক অনুপস্থিত থাকে। এ কারণে অসাধু সাদৃশ্যানুমানকে একটি অবৈধ অনুমান প্রক্রিয়া হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
উদ্দীপক-১ এ অসাধু সাদৃশ্যানুমানের এরকম একটি অপ্রাসঙ্গিক দৃষ্টান্ত দেয়া হয়েছে। এখানে হাস ও হালিমা একই প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী এবং তারা উত্তরায় বসবাস করে। এই সাদৃশ্যের সাথে রন্ধনকার্যে পারদর্শীতার কোনো সম্পর্ক নেই। সুতরাং যুক্তিটি যথার্থ নয়।

ঘ. উদ্দীপক ১ ও এ যথাক্রমে অসাধু সাদৃশ্যানুমান ও অবৈজ্ঞানিক আরোহকে নির্দেশ করা হয়েছে।
যে অনুমান পদ্ধতিতে কোনো কার্যকারণ সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা ব্যতীত শুধু ভৃতির নিয়মানুবর্তিতা বা অভিজ্ঞতার ওপর ভিত্তি করে সার্বিক বাক্য স্থাপন করা হয় তাকে অবৈজ্ঞানিক আরোহ বলে। অন্যদিকে, যে সাদৃশ্যানুমানে কয়েকট গুরুত্বহীন ও অনাবশ্যক বিষয়ে সাদৃশ্য দেখিয়ে সিদ্ধান্ত অনুমান করা হয়। তাকে অসাধু সাদৃশ্যানুমান বলে। এর ভিত্তি হচ্ছে সাদৃশ্য। অন্যদিকে অবৈজ্ঞানিক আরোহের ভিত্তি হচ্ছে অনুকূল অভিজ্ঞতা। এর সিদ্ধান্ত একটি সার্বিক সংশ্লেষক যুক্তিবাক্য। অন্যদিকে অসাধু সাদৃশ্যানুমানের সিদ্ধান্ত বিশিষ্ট যুক্তিবাক্য।
উদ্দীপক-১ এ দুটি সাদৃশ্যের ভিত্তিতে সম্পূর্ণ অপ্রাসঙ্গিক একটি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে যা অসাধু সাদৃশ্যানুমানকে নির্দেশ করে।
অন্যদিকে উদ্দীপক-২ এ অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে একটি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে যা অবৈজ্ঞানিক আরোহকে নির্দেশ করে। অবৈজ্ঞানিক আরোহের সরল প্রকৃতি দৈনন্দিন জীবনের কিছু ক্ষেত্রে ব্যবহার হয়ে থাকে। কিন্তু অসাধু সাদৃশ্যানুমান বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই মিথ্যা ও গুরুত্বহীন সিদ্ধান্ত প্রদান করে।
পরিশেষে বলা যায়, উভয়ই প্রকৃত আরোহ হলেও তাদের মধ্যে যৌক্তিক ভিন্নতা রয়েছে। তবে তাদের মধ্যে একাধিক বিষয়ে সাদৃশ্যও বিদ্যমান।

৭. সাফিন ও শোভন সব সময় কলেজের নিয়ম মেনে চলে। তাদের শিক্ষক বলেছিলেন, 'আমাদের দেহ-যন্ত্র থেকে শুরু করে এ বিশ্বজগতের সব জায়গায় চলছে নিয়মের রাজত্ব। আর সেজন্যই এত সৌন্দর্য। আমাদের সুন্দর হতে হলে অবশ্যই নিয়মের অনুসরণ করতে হবে।' সাফিন তখন শোভনকে বলল, আরেকটি কথাও স্যার বলেছেন যে, পড়ালেখা না করে ভালো ফলাফল করা যায় না এটা যেমন সত্য তেমনি এটাও সত্য খাবার না খেলে খিদে মেটে না।
ক. পরীক্ষণ কী?
খ. কাকতালীয় অনুপপত্তি কেন ঘটে?
গ. শিক্ষকের বক্তব্য দুটিতে আরোহের কোন কোন ভিত্তির কথা এসেছে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. শিক্ষকের দ্বিতীয় বক্তব্যের বিষয়বস্তুকে আবশ্যিকতা ও পর্যাপ্ততার দৃষ্টিকোণ থেকে মূল্যায়ন করো।

৭ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. কোনো বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে কৃত্রিমভাবে গবেষণাগারে যন্ত্রপাতির সাহায্যে উৎপাদিত ঘটনাবলির সুনিয়ন্ত্রিত প্রত্যক্ষণকে পরীক্ষণ (Experiment) বলে।

খ. কোনো পরিবর্তনীয় ঘটনাকে কোনো কার্যের কারণ বলে চিহ্নিত করলে কাকতালীয় অনুপপত্তি (Fallacy of 'Post hoc ergo propter hoc') ঘটে।
যেকোনো পূর্ববর্তী ঘটনাকে কারণ বলে চিহ্নিত করা যায় না। কারণ ও কার্যের মধ্যে একটা অনিবার্য সম্পর্ক থাকে। তাই কারণ কোনো পরিবর্তনীয় ঘটনা হতে পারে না। আর কোনো পরিবর্তনীয় ঘটনাকে কারণ বলে ধারণা করলে কাকতালীয় অনুপপত্তি ঘটে। যেমন- ধূমকেতুর উদয় রাজার মৃত্যুর কারণ। এখানে কাকতালীয় অনুপপত্তি ঘটেছে। কারণ ধূমকেতুর উদয় একটি পরিবর্তনীয় ঘটনা। যার সাথে রাজার মৃত্যুর কোনো সম্পর্ক নেই।

গ. শিক্ষকের বক্তব্য দুটিতে প্রকৃতির নিয়মানুবর্তিতা নীতি ও কার্যকারণ নিয়মের ইঙ্গিত পাওয়া যায়।
প্রকৃতির নিয়মানুবর্তিতা নীতি ও কার্যকারণ নীতি উভয়ই আরোহের আকারগত ভিত্তির অপরিহার্য অংশ। যুক্তিবিদদের মতে প্রকৃতির নিয়মানুবর্তিতার নীতির প্রকৃতি হচ্ছে- প্রকৃতি নিয়মের উপাসক, প্রকৃতির রাজ্যের সর্বত্র একই রূপ বিরাজ করে, প্রকৃতি ইতিহাসের অনুসারী ইত্যাদি। অপরদিকে, কার্যকারণ নিয়ম অনুযায়ী জগতের প্রতিটি ঘটনা কার্যকারণ শৃঙ্খলে যুক্ত। কোনো ঘটনাই বিনা কারণে ঘটে না। অর্থাৎ, কারণ ছাড়া কার্য ঘটে না।
উদ্দীপকের শিক্ষকের প্রথম বক্তব্যে স্পষ্টভাবেই প্রকৃতির নিয়মানুবর্তিতা নীতির প্রতিফলন দেখা যায়। কারণ এখানে বলা হয়েছে আমাদের দেহ- যন্ত্র বিশ্বজগতের নিয়মে চলে। দ্বিতীয় বক্তব্যে কার্যকারণ, নীতি দেখা যায়। যেখানে ভালো ফলাফল ও খিদে মেটানোর কারণ হিসেবে পড়ালেখা ও খাবার খাওয়ার কথা বলা হয়েছে।

ঘ. শিক্ষকের দ্বিতীয় বক্তব্যে কার্যকারণ নীতি প্রকাশ পেয়েছে।
কারণ হলো- কোনো ঘটনার পূর্ববর্তী সকল শর্তের সমষ্টি।
যুক্তিবিদদের মধ্যে কেউ কেউ শর্তকে আবশ্যিক অর্থে এবং কেউ কেউ পর্যাপ্ত অর্থে গ্রহণ করেছেন। আবশ্যিক শর্ত হলো ঘটনার সাথে আবশ্যিকভাবে যুক্ত। যেমন- খাবার খাওয়া হলো খিদে মেটানোর জন্য আবশ্যিক শর্ত। কেননা খাবার না খেলে কোনোভাবেই খিদে মেটানো সম্ভব নয়। তাই এখানে খাবার খাওয়া হলো খিদে মেটানোর আবশ্যিক শর্ত।
যে সব শর্তের উপস্থিতিতে কোনো ঘটনা অবশ্যই ঘটবে সে সব শর্তকে পর্যাপ্ত শর্ত বলে। যুক্তিবিদ মিল পর্যাপ্ত শর্ত হিসেবে কারণের কথা বলেছেন। শিক্ষকের দ্বিতীয় বক্তব্যের বিষয়বস্তু হলো- কার্যকারণ। অর্থাৎ, পর্যাপ্ত শর্ত পড়ালেখা না করলে এবং খাবার না খেলে যথাক্রমে কোনভাবেই ভালো ফলাফল সম্ভব নয় এবং খিদে মেটানো সম্ভব নয়। পরিশেষে বলা যায়, আবশ্যিক শর্ত ও পর্যাপ্ত শর্ত একত্রে কারণের কাজ করে। এ জন্য যুক্তিবিদ কপি উভয় শর্তের কথা বলেছেন।

৮. রাফিন যুক্তিবিদ্যার বইয়ে একটি দৃষ্টান্ত পড়ে চিন্তা করছে। দৃষ্টান্তটি হচ্ছে- আকাশ হয় সুন্দর; বৃক্ষ হয় সুন্দর; পাহাড়, নদী ও ঝর্না হয় সুন্দর; সুতরাং সমগ্র প্রকৃতির জগতটাই হয় সুন্দর।
ক. কারণ কাকে বলে?
খ. অন্ধকারে দড়িকে মানুষ কেন সাপ মনে করে?
গ. রাফিনের দৃষ্টান্তটিতে যে অনুমানের কথা এসেছে তার বৈশিষ্ট্য ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উক্ত অনুমানের স্তরগুলো যথাযথভাবে পালন করলে সার্বিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ সম্ভব হয় বিশ্লেষণ করো।

৮ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. কারণ (Cause) হলো কোনো ঘটনার পূর্ববর্তী ঘটনা বা ঘটনাসমূহের সমষ্টি যাকে ঐ ঘটনাটি অপরিবর্তনীয় ও শর্তনিরপেক্ষভাবে অনুসরণ করে।

খ. ভ্রান্ত নিরীক্ষণের কারণে অন্ধকারে দড়িকে মানুষ সাপ মনে করে।
ভ্রান্ত নিরীক্ষণ অর্থ ভুল প্রত্যক্ষণ বা ভুল দেখা। যখন কোন বিষয়কে আমরা সঠিকভাবে না দেখে ভুলভাবে প্রত্যক্ষণ করি তখন তাকে ভ্রান্ত প্রত্যক্ষণ বলে। রাতের অন্ধকারে দড়িকে ভুলভাবে প্রত্যক্ষ করার কারণে তা সাপ বলে মনে হতে পারে। এটি ব্যক্তিগত ভ্রান্ত নিরীক্ষণ কেননা কোনো ব্যক্তি এককভাবে এ ভুল প্রত্যক্ষণ করে।

গ. রাফিনের দৃষ্টান্তটিতে আরোহ অনুমানের কথা এসেছে। যার সংজ্ঞা ও উদাহরণ বিশ্লেষণ করলে কতগুলো বৈশিষ্ট্য পাওয়া যায়।
আরোহ অনুমানের সিদ্ধান্ত হিসেবে যে বাক্য প্রতিষ্ঠা করা হয় তা একটি সার্বিক বাক্য, বিশেষ বাক্য নয়। এ সার্বিক বাক্যটি একটি সংশ্লেষক বাক্য। কেননা আরোহ অনুমানের সিদ্ধান্ত নতুন তথ্য প্রকাশ করে।
অনুমানের সিদ্ধান্ত আশ্রয়বাক্য থেকে ব্যাপক হয়। বিশেষ বিশেষ দৃষ্টান্তের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। আর এ দৃষ্টান্ত সংগ্রহ করা হয় প্রত্যক্ষণের ভিত্তিতে। আরোহ অনুমানে আরোহমূলক লম্ফ বিদ্যমান। এ অনুমানে প্রকৃতির নিয়মানুবর্তি নীতির ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। এ নিয়মানুবর্তিতা নীতি আরোহের একটি স্বত:সিদ্ধ নীতি। আরোহ অনুমানে সিদ্ধান্ত প্রতিষ্ঠার সময় বিভিন্ন ঘটনা পর্যবেক্ষণ করে সেগুলোর কারণ নির্ণয় করা হয়।
আরোহ অনুমানের বৈশিষ্ট্য আলোচনা করে দেখা যায়, রাফিনের দৃষ্টান্তটি আরোহ অনুমানের একটি দৃষ্টান্ত।

ঘ. আরোহ অনুমানে সিদ্ধান্ত প্রতিষ্ঠার জন্য কতগুলো পর্যায় বা স্তর অতিক্রম করতে হয় যার মাধ্যমে একটি সার্বিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ সম্ভব হয়।
আরোহের প্রথম স্তর হলো সংজ্ঞা। কার্যকারণ সম্পর্ক নির্ণয়ের উদ্দেশ্যে আমরা যে বিষয়টিকে বেছে নেই প্রথমেই তার একটি সংজ্ঞা দিতে হয়। এরপরে নির্বাচিত বিষয়টি পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ করতে হয় যা আরোহের দ্বিতীয় স্তর। আরোহের তৃতীয় স্তর হলো অপনয়ন। এখানে নিরীক্ষিত বিষয়গুলোর মধ্য থেকে অবান্তর বা আকস্মিক বিষয়গুলোকেবাদ দিয়ে প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো নির্বাচন করতে হয়। এরপর প্রয়োজনীয় বিষয়গুলোর কারণ নির্ণয়ের জন্য প্রকল্প প্রণয়ন করতে হয় তাকে বলা হয় প্রকল্পের চতুর্থ স্তর। যথার্থ প্রকল্প প্রণয়নের পর এটি সর্বক্ষেত্রে প্রযোজ্য কিনা তা যাচাই করে দেখা হয়। এই প্রক্রিয়াকে বলে সার্বিকীকরণ। এটি আরোহের পঞ্চম স্তর। সবশেষে সার্বিকীকরণের মাধ্যমে প্রাপ্ত সিদ্ধান্তকে পরীক্ষা করে এর যথার্থতা প্রমাণ করা হয়। একে বলে পরীক্ষামূলক সমর্থন।
সুতরাং দেখা যাচ্ছে, উপরিউক্ত স্তরগুলো অতিক্রমের মাধ্যমে সার্বিক সিদ্ধান্ত প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হয় এবং সার্বিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য সবগুলো স্তর গুরুত্বপূর্ণ।

৯. বাসন্তী বাসে ওঠার আগে একটি কালো বিড়াল দেখেছিল। সুতরাং কালো বিড়ালই বাসন্তীর বাস দুর্ঘটনার কারণ। বাসটি কলাবাগানে পুকুরধারে পড়ে গেলে দশ জন লোক সমবেতভাবে বাসটি ঠেলে আবার রাস্তায় উঠালো। তারপর ধীরে বাসটি চলতে শুরু করলো।
ক. পর্যাপ্ত শর্ত কী?
খ. 'কারণ কার্যের সাক্ষাৎ পূর্ববর্তী ঘটনা' বলতে কী বোঝ?
গ. 'কালো বিড়ালই বাসন্তীর বাস দুর্ঘটনার কারণ' - কারণের লক্ষণ অনুযায়ী উক্তিটি ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকে কারণ সম্পর্কিত কোন মতবাদ প্রতিফলিত হয়েছে বিশ্লেষণ করো।

৯ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. যে শর্তের উপস্থিতিতে কোনো ঘটনা অবশ্যই ঘটবে সে শর্তকে ঐ ঘটনার পর্যাপ্ত শর্ত বলে।

খ. কার্যকারণ নিয়ম অনুযায়ী কারণ ও কার্যের মধ্যে আবশ্যিক সম্পর্ক বিদ্যমান এবং কারণ হলো কার্যের শর্তহীন পূর্ববর্তী ঘটনা।
একই কার্য ঘটায়। এক্ষেত্রে কারণ থাকে আগে এবং কার্য থাকে কারণের পরে। কারণ কার্যের অপরিবর্তনীয় পূর্ববর্তী ঘটনা। কিন্তু এই ঘটনা কোনো শর্তের অধীন না। তাই বলা হয়ে থাকে কারণ কার্যের সাক্ষাৎ পূর্ববর্তী ঘটনা।

গ. কালো বিড়ালই বাসন্তীর বাস দুর্ঘটনার কারণ বিষয়টি কারণের গুণগত দিক থেকে যুক্তিসঙ্গত বাস্তব ঘটনার পরিপন্থী। এটি কাকতালীয় অনুপপত্তিকে নির্দেশ করে।
কার্যকারণ সম্পর্কবিহীন কোনো পূর্ববর্তী ঘটনাকে কোনো পরবর্তী ঘটনার কারণ মনে করাকে কাকতালীয় অনুপপত্তি বলে। যেমন- আকাশে ধূমকেতুর আবির্ভাবই রাজার মৃত্যুর কারণ। যুক্তিটি অবৈধ। কেননা এতে কার্যকারণ সম্পর্কবিহীন পূর্ববর্তী ঘটনা ধূমকেতুর আবির্ভাবকে পরবর্তী ঘটনা রাজার মৃত্যুর কারণ বলে মনে করা হয়েছে। ফলে যুক্তিটিতে কাকতালীয় অনুপপত্তি ঘটেছে।
উদ্দীপকে বাস দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে কালো বিড়ালকে দেখানো হয়েছে যা একটি অযৌক্তিক কারণ। কালো বিড়ালকে কারণ হিসেবে গ্রহণ করলে তা হবে কাল্পনিক এবং অযৌক্তিক। গুণগত দিক থেকে কারণের ক্ষেত্রে যুক্তিসঙ্গত বাস্তব ঘটনার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু আলোচ্য উক্তিতে তা লঙ্ঘন করা হয়েছে। সুতরাং গুণগত দিক থেকে উক্তিটি যথার্থ নয় এবং এটি কাকতালীয় অনুপপত্তি নির্দেশ করে।

ঘ. উদ্দীপকে কারণ সম্পর্কিত কাকতালীয় অনুপপত্তি প্রতিফলিত হয়েছে।
কোনো পরিবর্তনীয় ঘটনাকে কোনো কার্যের কারণ বলে চিহ্নিত করলে কাকতালীয় অনুপপত্তি ঘটে। যেকোনো পূর্ববর্তী ঘটনাকে কারণ বলে চিহ্নিত করা যায় না। কারণ ও কার্যের মধ্যে একটা অনিবার্য সম্পর্ক থাকে। তাই কারণ কোনো পরিবর্তনীয় ঘটনা হতে পারে না। আর কোনো পরিবর্তনীয় ঘটনাকে কারণ বলে ধারণা করলে কাকতালীয় অনুপপত্তি ঘটে। যেমন- ধূমকেতু উদয় রাজার মৃত্যুর কারণ। এখানে কাকতালীয় অনুপপত্তি ঘটেছে। কারণ ধূমকেতুর উদয় একটি পরিবর্তনীয় ঘটনা। যার সাথে রাজার মৃত্যুর কোনো সম্পর্ক নেই।
উদ্দীপকে বলা হয়েছে- বাসন্তী বাসে ওঠার আগেই একটা কালো বিড়াল দেখেছিল। সুতরাং কালো বিড়ালই দুর্ঘটনার কারণ। এখানে কাকতালীয় অনুপপত্তি ঘটেছে। কারণ বিড়াল দেখার বিষয়টা একটি পরিবর্তনীয় বিষয়। যার সাথে বাস দুর্ঘটনার কোনো সম্পর্ক নেই।
পরিশেষে বলা যায়, কারণ ছাড়া কার্য হয় না। তাই কারণ ও কার্যের মধ্যে অনিবার্য সম্পর্ক বিদ্যমান। তবে কারণকে অবশ্যই যৌক্তিক হতে হবে।

১০. পরিবেশ বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশুনা করছে হুমায়রা। সে ভূমিকম্প নিয়ে কাজ করলেও বাস্তবে সে কখনো ভূমিকম্প অনুভব করেনি। তার ছোট বোন নওশিন ডাক্তার। সে তার ওষুধের কার্যকারিতা দেখার জন্য ইঁদুরের উপর প্রয়োগ করে সফলতা পেয়েছে।
ক. আরোহের বস্তুগত ভিত্তি কী কী?
খ. ‘সূর্য পৃথিবীর চারদিকে ঘোরে'ত কোন ধরনের অনুপপত্তি? ব্যাখ্যা করো।
গ. হুমায়রার কাজের তুলনায় নওশিনের কাজের সুবিধা ব্যাখ্যা করো।
ঘ. হুমায়রার কাজের অসুবিধাসমূহ আলোচনা করো।

১০ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. আরোহের বস্তুগত ভিত্তি হলো নিরীক্ষণ ও পরীক্ষণ।

খ. 'সূর্য পৃথিবীর চারদিকে ঘোরে' - এটি সার্বজনীন ভ্রান্ত নিরীক্ষণজনিত অনুপপত্তি।
যখন সবাই মিলে কোনো একটি ভুল করে, তখন তাকে সার্বজনীন ভ্রান্ত নিরীক্ষণ বলে। যেমন, সূর্য পৃথিবীর চারদিকে ঘোরে। বাস্তবে সূর্য স্থির, পৃথিবী ঘূর্ণায়মান। আমরা সবাই মিলে এ ভুল করি বলে একে সার্বজনীন ভ্রান্ত নিরীক্ষণ বলে।

গ. উদ্দীপকে হুমায়রার কাজটি নিরীক্ষণ ও নওশিনের কাজটি পরীক্ষণকে নির্দেশ করে।
প্রথমত, পরীক্ষণে আমরা অসংখ্য দৃষ্টান্ত পেতে পারি। যা নিরীক্ষণের ক্ষেত্রে পাওয়া অসম্ভব। উদ্দীপকে হুমায়রা ভূমিকম্প নিয়ে কাজ করে। কিন্তু ভূমিকম্পের অসংখ্য দৃষ্টান্ত পাওয়া যায় না। অন্যদিকে নওশিন ঔষধের কার্যকারিতা ইঁদুরের ওপর প্রয়োগ করে। এক্ষেত্রে অসংখ্য দৃষ্টান্ত পাওয়া সম্ভব। দ্বিতীয়ত, পরীক্ষণে নির্দিষ্ট ঘটনাকে অন্যান্য ঘটনা থেকে বিচ্ছিন্ন করে নেয়া সম্ভব। কিন্তু নিরীক্ষণে তা অসম্ভব। উদ্দীপকে উল্লিখিত ভূমিকম্পকে ইচছা করলেই অন্যান্য প্রাকৃতিক ঘটনা থেকে বিচিছনণ করা যায় না। কিন্তু নওশিনের পরীক্ষার বিষয়টিকে ইচ্ছামতো অন্যান্য ঘটনা থেকে বিচ্ছিন্ন করে পরীক্ষা করা যায়। তৃতীয়ত, পরীক্ষণে আমরা অসংখ্যবার পারিপার্শ্বিক অবস্থার পরিবর্তন করতে পারি। কিন্তু নিরীক্ষণে তা অসম্ভব। চতুর্থত, পরীক্ষণের ক্ষেত্রে আমরা পরীক্ষণীয় ঘটনাটাকে ধীরস্থিরভাবেও সঠিকভাবে পর্যবেক্ষণ করতে পারি। কিন্তু নিরীক্ষণে তা অসম্ভব। পঞ্চমত, পরীক্ষণের সিদ্ধান্ত হয় সুনিশ্চিত। কিন্তু নিরীক্ষণের সিদ্ধান্ত হয় সম্ভাব্য।
অতএব উদ্দীপকের আলোকে বলা যায়, হুমায়রার তুলনায় নওশিনের কাজের সুবিধা অনেক।

ঘ. উদ্দীপকে হুমায়রা যে কাজটি করে তা নিরীক্ষণকে নির্দেশ করে।
প্রকৃতিতে ঘটনাবলি অত্যন্ত জটিল অবস্থায় থাকে। কদাচিৎ কোনো ঘটনাকে এককভাবে পাওয়া যায়। নিরীক্ষণে নিরীক্ষণীয় ঘটনাকে পারিপার্শ্বিক অবস্থা থেকে বিচ্ছিন্ন করা যায় না, কিন্তু একটা ঘটনা সম্পর্কে পূর্ণ জ্ঞান লাভের জন্য তাকে অন্যান্য ঘটনা বা অবস্থা থেকে বিচ্ছিন্ন করে নেয়া প্রয়োজন। নিরীক্ষণ তা সম্ভব হয় না। নিরীক্ষণ প্রকৃতি নির্ভর বলে প্রয়োজন অনুসারে পারিপার্শ্বিক অবস্থার পরিবর্তন ঘটাতে পারে না। কিন্তু নির্বাচিত ঘটনা সম্পর্কে নির্ভুল তথ্য পাওয়ার জন্য পারিপার্শ্বিক অবস্থার পরিবর্তন একান্ত প্রয়োজন। নির্বাচিত ঘটনাকে একটি পরিবেশে নিরীক্ষণ করা হলে ঘটনার সাথে জড়িত অপ্রয়োজনীয় বিষয়ের প্রভাব থেকেই যায়। কিন্তু আলোচ্য ঘটনাকে বিভিন্ন পরিবেশে নিরীক্ষণ করা সম্ভব হলে ঘটনা সম্পর্কে যথার্থ জ্ঞান লাভ করা সম্ভব হয়।
হুমায়রা ভূমিকম্প নিয়ে কাজ করে যা একটা প্রাকৃতিক দুর্যোগ কিন্তু এ বিষয়ে তার কোনো বাস্তব অভিজ্ঞতা নাই। কারণ, নিরীক্ষণে নির্বাচিত ঘটনা ঘটার জন্য প্রকৃতির ওপর নির্ভর করে। তাই নিরীক্ষণের ফলাফল প্রথমবার সমেত্মাষজনক না হলে কিংবা ফলাফল সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার জন্য ঘটনাটা পুনরায় নিরীক্ষণ করার প্রয়োজন হলে নিরীক্ষণের সাহায্যে ঘটনাটা ঘটানো যায় না। এরূপ ঘটনার জন্য প্রকৃতির খেয়াল খুশির দিকে চেয়ে থাকতে হয়। নিরীক্ষণে প্রকৃতির ঘটনাবলির ওপর আমাদের কোনো নিয়ন্ত্রণ থাকে না। অনেকক্ষেত্রে প্রাকৃতিক ঘটনা খুব দ্রম্নত গতিতে ঘটে না। ফলে নিরীক্ষণে ত্রুটি থেকে যায়।
পরীক্ষণে পরীক্ষক পরিবেশকে নিয়ন্ত্রণে এনে বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতির সাহায্যে নির্বাচিত বিষয় পরীক্ষা করেন। প্রয়োজনে পরীক্ষণের পুনরাবৃত্তি করে ফলাফল সম্পর্কে নিশ্চিত হন। কিন্তু নিরীক্ষণে প্রাকৃতিক ঘটনাবলি সীমিত সময়ের মধ্যে ইন্দ্রিয়সমূহের সাহায্যে সম্পন্ন করা হয়। কাজেই নিরীক্ষণ থেকে যে ফলাফল পাওয়া যায় তা সম্ভাব্য, নিশ্চিত নয়।
Share:

0 Comments:

Post a Comment