HSC যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর pdf download অধ্যায় ৩

HSC যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর pdf download

এইচএসসি পরীক্ষার পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি
HSC Logic 1st Paper Srijonshil question and answer pdf download.

উচ্চ মাধ্যমিক

যুক্তিবিদ্যা
প্রথম পত্র

সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
৩য় অধ্যায়

HSC Logic 1st Paper
Srijonshil
Question and Answer pdf download

১. পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন জাতি-গোষ্ঠী ডিসেম্বর মাসে উৎসব পালন করে। বিভিন্ন ধর্ম ও বর্ণের লোক এ উৎসবের অংশগ্রহণ করে। উৎসব দেখার সময় সুবর্ণা পাশের একজন সাদা রঙবিশিষ্ট লোককে দেখলেন। তিনি ঐ লোকটিকে জিজ্ঞাসা করেন, ভাই আপনি কি 'ভারতবাসী না অ-ভারতবাসী'। লোকটি উত্তরে বলেন যে, আমি ভারতবাসী নই অস্ট্রেলিয়াবাসী। আমার নাম ওয়ার্ন।
ক. পদ কী?
খ. একটি পদ কেন অব্যাপ্য হয়?
গ. উদ্দীপকে সুবর্ণার বক্তব্যে কোন পদের বিশ্লেষণ ঘটেছে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. যুক্তিবিদ্যার আলোকে সুবর্ণা ও ওয়ার্নের বক্তব্য বিশ্লেষণ করো।

১ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. কোনো যুক্তিবাক্যের উদ্দেশ্য বা বিধেয় হিসেবে ব্যবহৃত হওয়ার যোগ্যতা সম্পন্ন শব্দ বা শব্দসমষ্টিকে পদ বলে।

খ. একটি পদ আংশিক ব্যক্ত্যর্থে কোনো যুক্তিবাক্যে ব্যবহৃত হওয়ার কারণে অব্যাপ্য হয়।
কোনো পদ একটি যুক্তিবাক্যে কতটুকু ব্যক্ত্যর্থের ভিত্তিতে প্রকাশিত হলো তার ওপর নির্ভর করে পদটির ব্যাপ্যতা নির্ধারিত হয়। যখন একটি পদ তার সম্পূর্ণ ব্যক্ত্যর্থের ভিত্তিতে কোনো যুক্তিবাক্যে ব্যবহৃত হয় তখন পদটি ব্যাপ্য হয়। আর যখন একটি পদ কোনো যুক্তিবাক্যে আংশিক ব্যক্তার্থে প্রকাশিত হয় তখন সেটিকে অব্যাপ্য পদ বলে। সুতরাংআংশিক ব্যক্ত্যর্থে কোনো যুক্তিবাক্যে ব্যবহৃত হওয়ার কারণে একটি পদ অব্যাপ্য হয়।

গ. উদ্দীপকে সুবর্ণার বক্তব্যে বিরুদ্ধ পদের বিশ্লেষণ ঘটেছে।
যে শব্দ বা শব্দসমষ্টি কোনো যুক্তিবাক্যের উদ্দেশ্য বা বিধেয় হিসেবে ব্যবহৃত হয় বা হতে পারে সে শব্দ বা শব্দসমষ্টিকে যুক্তিবিদ্যায় পদ বলে। যুক্তিবিদ্যায় পদকে বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে ভাগ করা হয়। এর মধ্যে ভিন্ন অর্থবোধক যুগল পদকে সম্বন্ধের দিক থেকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়, যার মধ্যে একটি হলো বিরুদ্ধ পদ। যদি পরস্পর বিরোধী দুটি পদ এমনভাবে সম্পর্কিত হয় যে তাদের দ্বারা নির্দেশিত বিষয়ের সম্পূর্ণ ব্যক্ত্যর্থকে প্রকাশ করে তবে পদ দুটিকে পরস্পর বিরুদ্ধ পদ বলে। যেমন- 'সাদা' ও 'অ-সাদা' এই শব্দ দুটি পরস্পর বিরুদ্ধ পদ। এখানে প্রথম পদটি সাদা রংকে এবং দ্বিতীয় পদটি সাদা ব্যতীত অন্যান্য সকল রংকে নির্দেশ করে।
উদ্দীপকে সুবর্ণা তার বক্তব্যে যে দুটি পদের উল্লেখ করেছে তা হলো- ভারতবাসী ও অ-ভারতবাসী। এই শব্দ দুটিও পরস্পর বিরুদ্ধ পদ। সুতরাং সুবর্ণার বক্তব্যে বিরুদ্ধ পদের বিশ্লেষণ ঘটেছে।

ঘ. উদ্দীপকের সুবর্ণার বক্তব্যে বিরুদ্ধ পদ এবং ওয়ার্নের বক্তব্যে বিপরীত পদের প্রকাশ ঘটেছে।
পদকে বিভিন্ন শ্রেণিতে ভাগ করা যায়। তবে দুটি ভিন্ন অর্থবোধক পদের পাশাপাশি উপস্থিতির ভিত্তিতে পদকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যথা- ১. বিপরীত পদ ও ২. বিরুদ্ধ পদ। বিরুদ্ধ পদ দুটি পরস্পর বিরুদ্ধ এবং ঐ পদ দুটি মিলিতভাবে কোনো বিষয়ের সম্পূর্ণ ব্যসত্ম্যর্থকে প্রকাশ করে। যেমন- 'সবুজ ও অ-সবুজ' মিলিতভাবে সম্পূর্ণ রং-এর ব্যস্তার্থকে প্রকাশ করে। তাই পদ দুটি পরস্পর বিরুদ্ধ পদ। অন্যদিকে, বিপরীত পদ একটি অন্যটির বিপরীত কিন্তু এর দ্বারা কোনো বিষয়ের সম্পূর্ণ ব্যক্ত্যর্থ প্রকাশিত হয় না। তাই বলা যায়, যদি দুটি পরস্পরবিরোধী পদ এমনভাবে সম্পর্কিত হয় যে এদের দ্বারা কোনো বিষয়ের সম্পূর্ণ ব্যক্ত্যর্থ প্রকাশিত হয় না, তাহলে পদ দুটিকে পরস্পর বিপরীত পদ বলে। যেমন- 'লাল ও নীল'-এই পদ দুটি রং শ্রেণির সম্পন্ন ব্যক্ত্যর্থ প্রকাশ করে না। তাই পদ দুটি পরস্পর বিপরীত পদ।
উদ্দীপকের সুবর্ণা যে দুটি পদের উল্লেখ করেছে সেখানে সমগ্র ব্যসত্ম্যর্থ প্রকাশিত হয়েছে। কেননা 'ভারতবাসী ও অ-ভারতবাসী' মিলে সকল মানব জাতির ব্যক্ত্যর্থকেই প্রকাশ করে। তাই পদ দুটি পরস্পর বিরুদ্ধ পদ। আবার ওয়ার্নের বক্তব্যে বিপরীত পদ প্রকাশিত হয়েছে। তার বক্তব্যে যে দুটি পদ প্রকাশিত হয়েছে তা হলো- 'ভারতবাসী ও অস্ট্রেলিয়াবাসী'। এই দুটি পদ দ্বারা সম্পূর্ণ মানব জাতির ব্যক্ত্যর্থ প্রকাশিত হয় না। তাই পদ দুটি পরস্পর বিপরীত পদ।
সুতরাং, ওপরের আলোচনা থেকে বলা যায় বিরুদ্ধ ও বিপরীত পদ পদের সম্পূর্ণ ভিন্ন দুটি রূপ।

২. বাবা বাজার থেকে এক ঝুডw় আম কিনে আনলেন। ছেলে অমল বললো, বাবা আমগুলো দেখতে বেশ সুন্দর। মেয়ে অর্চনা বললো, কিন্তু কিছু কিছু আম ছোট। বাবা বললেন, তোমরা এক ধরনের গুণের কথা বলেছ, আর এক ধরনের পরিমাণের কথা বলেছ। গুণ ও পরিমাণ একত্রে বর্ণনা করোনি।
ক. যুক্তিবাক্য কী?
খ. যুক্তিবাক্য ও অবধারণের মধ্যে পার্থক্য আছে কি?
গ. অর্চনার বক্তব্যে যুক্তিবাক্যের যে শ্রেণিবিভাগ উল্লেখ হয়েছে, তা তোমার পাঠ্যপুস্তকের আলোকে ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত বাবার বক্তব্য তোমার পাঠ্যপুস্তকের আলোকে মূল্যায়ন করো।

২ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. উদ্দেশ্য (Subject) এবং বিধেয় (Predicate) নামক দুটি পদের মধ্যে স্বীকৃতি বা অস্বীকৃতি জ্ঞাপক কোনো সম্পর্কের লিখিত বা মৌখিক বিবৃতি হলো যুক্তিবাক্য।

খ. যুক্তিবাক্য (Proposition) এবং অবধারণের (Judgement) মধ্যে পার্থক্য আছে।
দুটি ধারণার মধ্যকার কোনো সম্পর্কের স্বীকৃতি বা অস্বীকৃতি অথবা সংযোগমূলক মানসিক অবস্থা হলো অবধারণ। পক্ষান্তরে, দুটো পদের মধ্যে সম্পর্ক জ্ঞাপক ভাষায় প্রকাশিত রূপ হলো যুক্তিবাক্য। আবার, অবধারণ যুক্তির অংশ হতে পারে না। কেননা, তার অবস্থান মনে। সেটি অনুমানের বিষয় হতে পারে। কিন্তু যুক্তিবাক্য যুক্তির অংশ হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

গ. উদ্দীপকে অর্চনার বক্তব্যে পরিমাণ অনুসারে যুক্তিবাক্যের শ্রেণিবিভাগ উল্লেখ করা হয়েছে।
পরিমাণ অনুসারে যুক্তিবাক্য দুই প্রকারত ১. সার্বিক যুক্তিবাক্য ও ২. বিশেষ যুক্তিবাক্য। যে যুক্তিবাক্যে উদ্দেশ্যের সম্পূর্ণ ব্যক্ত্যর্থ (Denotation) সম্পর্কে কোনো কিছু স্বীকার বা অস্বীকার করা হয় তাকে সার্বিক যুক্তিবাক্য বলে। যেমন- 'সকল দার্শনিক হয় বিচক্ষণ।' এখানে ‘বিচক্ষণ' বিধেয় পদটিকে উদ্দেশ্য দার্শনিক পদের সমগ্র ব্যক্ত্যর্থ সম্পর্কে স্বীকার করা হয়েছে। আবার, 'কোনো মানুষ নয় অমর' এখানে 'অমর' বিধেয় পদটিকে উদ্দেশ্য 'মানুষ' পদের সমগ্র ব্যক্ত্যর্থ সম্পর্কে অস্বীকার করা হয়েছে। অপরদিকে, যে যুক্তিবাক্যে উদ্দেশ্যের আংশিক ব্যক্ত্যর্থ সম্পর্কে বিধেয়কে স্বীকার বা অস্বীকার করা হয় তাকে বিশেষ যুক্তিবাক্য বলে। যেমন: কিছু ছাত্র হয় মেধাবী এখানে 'মেধাবী' বিধেয় পদকে উদ্দেশ্য 'ছাত্র' পদের আংশিক ব্যক্ত্যর্থ সম্পর্কে স্বীকার করা হয়েছে। একইভাবে 'কিছু মানুষ নয় সৎ' এই যুক্তিবাক্যে 'সৎ' বিধেয় পদটি উদ্দেশ্য 'মানুষ' পদের আংশিক ব্যসত্ম্যর্থ সম্পর্কে অস্বীকার করা হয়েছে।
উদ্দীপকে অর্চনার বক্তব্যে বলা হয়েছে, কিছু কিছু আম ছোট। এখানে আংশিক আমের ক্ষেত্রে ছোট হওয়াকে স্বীকার করে নেয়া হয়েছে। যা বিশেষ যুক্তিবাক্যের অনুরূপ।

ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত বাবার বক্তব্যের বিষয় হলো গুণ ও পরিমাণের যৌথ নীতি অনুসারে যুক্তিবাক্যের শ্রেণিবিন্যাস।
গুণ ও পরিমাণের যৌথ নীতি অনুসারে- যুক্তিবাক্যকে সার্বিক সদর্থক, সার্বিক নঞর্থক, বিশেষ সদর্থক ও বিশেষ নঞর্থক এই চারভাগে ভাগ করা যায়। এই চার প্রকার যুক্তিবাক্যকে যথাক্রমে A, E, I এবং O দ্বারা চিহ্নিত করা হয়।
যেসব যুক্তিবাক্যে বিধেয় পদ (Predicate) উদ্দেশ্য পদের (Subject) সমগ্ৰ ব্যক্ত্যর্থ (Denotation) সম্পর্কে স্বীকার করা হয় তাকে সার্বিক সদর্থক যুক্তিবাক্য (Universal Affirmative Proposition) বা অ বাক্য বলে। যেমন- 'সকল মানুষ হয় মরণশীল।' এখানে বিধেয় পদ ‘মরণশীল' কে উদ্দেশ্য পদ ‘মানুষ' এর সমগ্র ব্যক্ত্যর্থ সম্পর্কে স্বীকার করে নেওয়া হয়েছে। যেসব যুক্তিবাক্যে বিধেয় পদকে উদ্দেশ্য পদের সমগ্র ব্যক্ত্যর্থ সম্পর্কে অস্বীকার করা হয় তাকে সার্বিক নঞর্থক যুক্তিবাক্য (Universal Negative Proposition) বা E বাক্য বলে। যেমন- 'কোনো মানুষ নয় অমর' এখানে বিধেয় 'অমর' পদকে উদ্দেশ্য ‘মানুষ' পদের সমগ্র ব্যক্ত্যর্থ সম্পর্কে অস্বীকার করা হয়েছে।
আবার, যেসব যুক্তিবাক্যে বিধেয় পদকে উদ্দেশ্য পদের আংশিক ব্যসত্ম্যর্থ সম্পর্কে স্বীকার করা হয় তাকে বিশেষ সদর্থক যুক্তিবাক্য (Particular Affirmative Preposition) বা ১ বাক্য বলে। যেমন- কিছু ফুল হয় লাল' এই যুক্তিবাক্যে 'লাল' বিধেয় পদকে 'ফুল' উদ্দেশ্য পদের আংশিক ব্যক্ত্যর্থ সম্পর্কে স্বীকার করে নেওয়া হয়েছে। একইভাবে, যেসব যুক্তিবাক্যে বিধেয় পদকে উদ্দেশ্য পদের আংশিক ব্যক্ত্যর্থ সম্পর্কে অস্বীকার করা হয় তাকে বিশেষ নঞর্থক যুক্তিবাক্য (Particular Negative Proposition) বা বাক্য বলে। যেমন- "কিছু মানুষ নয় সৎ এই যুক্তিবাক্যে বিধেয় 'সৎ' পদকে উদ্দেশ্য 'মানুষ' পদের আংশিক ব্যসত্ম্যর্থ সম্পর্কে অস্বীকার করা হয়েছে।
উদ্দীপকে বাবার বক্তব্যে উল্লিখিত গুণ ও পরিমাণের একত্রে বর্ণনা উপরের গুণ ও পরিমাণের যৌথ নীতি অনুসারে যুক্তিবাক্যের শ্রেণিবিন্যাসের অনুরূপ।
সুতরাং আমরা বলতে পারি, উপর্যুক্ত আলোচনাই হলো গুণ ও পরিমাণের যৌথ নীতি অনুসারে যুক্তিবাক্যের শ্রেণিবিন্যাসের বিশ্লেষিত রূপ।

৩. মা আট বছর বয়সের মেয়ে রুনাকে নিয়ে মার্কেটে গেলেন। দোকানে লাল ও অ-লাল রঙের পোশাক দেখিয়ে মা রুনাকে বললো, তোমাকে হয় লাল না হয় অ-লাল রঙের পোশাকটি নিতে হবে। মায়ের বক্তব্য শ্রবণ করে রুনা বললো, আমি লাল ও সাদা রঙের দু'টি পোশাকই নিব।
ক. পদ কাকে বলে?
খ. বিশেষ যুক্তিবাক্যের উদ্দেশ্য পদ অব্যাপ্য কেন?
গ. উদ্দীপকে মায়ের বক্তব্যে কোন বিষয়টির প্রতিফলন ঘটেছে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. তোমার পাঠ্যপুস্তকের আলোকে রুনা ও মায়ের বক্তব্যের তুলনামূলক আলোচনা করো।

৩ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. যে অর্থপূর্ণ শব্দ বা শব্দ সমষ্টি কোনো যুক্তিবাক্যের উদ্দেশ্য বা বিধেয় হিসেবে ব্যবহৃত হয় বা হওয়ার যোগ্যতা রাখে তাকে পদ (Term) বলে।

খ. বিশেষ যুক্তিবাক্যের উদ্দেশ্য পদ আংশিক ব্যক্ত্যর্থ নিয়ে ব্যবহৃত হয় তাই এটি অব্যাপ্য।
কোনো যুক্তিবাক্যে একটি পদ তার আংশিক ব্যক্ত্যর্থ নিয়ে ব্যবহৃত হলে তাকে অব্যাপ্য পদ বলে। আবার, যে যুক্তিবাক্যে বিধেয় পদকে উদ্দেশ্য পদের আংশিক ব্যক্ত্যর্থ সম্পর্কে স্বীকার বা অস্বীকার করা হয় তাকে বিশেষ যুক্তিবাক্য বলে। সুতরাং, আংশিক ব্যক্ত্যর্থ নির্দেশক পদকে যেহেতু অব্যাপ্য বলা হয়, সেহেতু বিশেষ যুক্তিবাক্যের উদ্দেশ্য অব্যাপ্য।

গ. উদ্দীপকে মায়ের বক্তব্যে বৈকল্পিক যুক্তিবাক্যের (Disjunctive Proposition) প্রতিফলন ঘটেছে।
যে সাপেক্ষ যুক্তিবাক্যে দুই বা ততোধিক সরল যুক্তিবাক্য পরস্পর বিকল্প হিসেবে 'হয়-না হয়', 'বা', 'অথবা', 'কিংবা' ইত্যাদি জাতীয় অর্থ প্রকাশক শব্দ দ্বারা যুক্ত থাকে তাকে বৈকল্পিক যুক্তিবাক্য বলে। এ ধরনের বাক্যে দুটি পৃথক বিকল্পের সম্ভাবনাকে কোনো ব্যক্তি বা বস্তুর ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা হয়। দুটি বিকল্পের মধ্যে যে কোনো একটি সত্য হলে অন্যটি মিথ্যা হয়। যেমনত লোকটি হয় সৎ না হয় অসৎ। এখানে লোকটি যদি সৎ হয় তবে সে অসৎ নয়। আবার যদি অসৎ হয় তবে সে সৎ নয়।
উদ্দীপকে, মা রুনাকে বলেন তার হয় লাল না হয় সাদা রঙের পোশাক নিতে হবে। এখানে দুটি বিকল্প আছে। একটি লাল রঙের পোশাক অন্যটি সাদা রঙের পোশাক। রুনা যদি লাল রঙের পোশাক নেয় তবে সাদা রঙের পোশাক নিতে পারবে না। আবার, সে যদি সাদা পোশাক নেয় তবে লাল রঙের পোশাক নিতে পারবে না। অর্থাৎ এখানে দুটি বিকল্প 'হয়-না হয়' শর্ত দ্বারা যুক্ত এবং এদের একটি সত্য হলে অন্যটি মিথ্যা হবে। তাই রুনার মায়ের বক্তব্য বৈকল্পিক যুক্তিবাক্য।

ঘ. যে উদ্দীপকে রুনার বক্তব্য সংযৌগিক যুক্তিবাক্যকে এবং মায়ের বক্তব্য বৈকল্পিক যুক্তিবাক্যকে নির্দেশ করে। এই দু'ধরনের বাক্যের তুলনামূলক সম্পর্ক নিচে আলোচনা করা হলো।
যে সাপেক্ষ যুক্তিবাক্যে একাধিক বিকল্প সম্ভাবনার উল্লেখ থাকে এবং এগুলো হয় না হয়' কিংবা 'অথবা' এসব আকারে যুক্ত থাকে তাকে বৈকল্পিক যুক্তিবাক্য বলে। যেমনত সুমন হয় মেধাবী না হয় বোকা আবার, যৌগিক যুক্তিবাক্যের অন্তর্গত প্রতিটি সরল বচন সদর্থক হলে তাকে সংযৌগিক যুক্তিবাক্য বলে। যেমন: তাপস হয় সৎ ও বুদ্ধিমান।
বৈকল্পিক যুক্তিবাক্য এবং সংযৌগিক যুক্তিবাক্যের সাদৃশ্য হলো এরা উভয়ই দুই বা ততোধিক সরল বাক্যের সমন্বয়ে গঠিত হয়। উদ্দীপকে মায়ের বক্তব্য 'রুনা হয় লাল না হয় সাদা পোশাক পাবে' বৈকল্পিক যুক্তিবাক্যটির দুটি সরল বাক্য ১. রুনা লাল পোশাক পাবে ২. অথবা রুনা সাদা পোশাক পাবে এর সমন্বয়ে গঠিত। আবার, রুনার বক্তব্যে সংযৌগিক বাক্যটি 'আমি লাল ও সাদা রঙের দুটি পোশাকই নিব' দুটি সরল বাক্য- ১. আমি লাল রঙের পোশাক নিব, ২. আমি সাদা রঙের পোশাক নিব এর সমন্বয়ে গঠিত।
বৈকল্পিক যুক্তিবাক্য ও সংযৌগিক যুক্তিবাক্যের বৈসাদৃশ্য হলো, বৈকল্পিক যুক্তিবাক্যে দুটি বিকল্পের একটি সত্য হলে অন্যটি মিথ্যা হয়। যেমনত উদ্দীপকে মায়ের মতে, রুনা হয় লাল পোশাক পাবে নয়তো সাদা পোশাক পাবে। কিন্তু সংযৌগিক যুক্তিবাক্যে উভয় বিকল্পই একইসাথে সত্য বা মিথ্যা হতে পারে। যেমনত উদ্দীপকে রুনা লাল ও সাদা উভয় পোশাকই নিবে। আবার, বৈকল্পিক যুক্তিবাক্যে চিহ্ন হিসেবে অথবা, হয় না হয় ইত্যাদি ব্যবহৃত হয়। যেমনত উদ্দীপকে রুনা লাল না হয় সাদা পোশাক পাবে। কিন্তু, সংযৌগিক যুক্তিবাক্যে চিহ্ন হিসেবে ব্যবহৃত হয় ও, এবং ইত্যাদি। যেমনত উদ্দীপকে রুনা লাল ও সাদা উভয় পোশাকই নিবে।
সুতরাং, বৈকল্পিক যুক্তিবাক্য ও সংযৌগিক যুক্তিবাক্যের তুলনামূলক আলোচনা থেকে আমরা বলতে পারি এদের মধ্যে সাদৃশ্যের ও বৈসাদৃশ্যের উভয় সম্পর্কই রয়েছে।

৪. দৃশ্যকল্প-১ : সকল মানুষ হয় দ্বিপদ
কিছু ছাত্র হয় মেধাবী।
দৃশ্যকল্প-২ : কোনো ফুল নয় ফল।
কিছু ছাত্র নয় মেধাবী।
ক. যুক্তিবাক্যের অংশ কয়টি?
খ. কোন ধরনের বাক্যকে অ যুক্তিবাক্যে রূপান্তর করা হয়?
গ. দৃশ্যকল্প-১ কোন নীতিতে গঠিত হয়েছে বিশ্লেষণ করো।
ঘ. দৃশ্যকল্প-১ ও দৃশ্যকল্প-২ এর পার্থক্য নির্দেশ করো।

৪ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক যুক্তিবাক্যের (Proposition) অংশ তিনটি।

খ. যেসকল বাক্যে উদ্দেশ্য ও বিধেয়কে সদর্থক সংযোজক দ্বারা সংযুক্ত করা যায় এবং যাদের পরিমাণ নির্দিষ্ট করে থাকে না তাদের অ বাক্য বা সার্বিক সদর্থক যুক্তিবাক্যে রূপান্তর করা যায়।
এমন অনেক বাক্য আছে যেগুলোতে উদ্দেশ্য ও বিধেয় থাকলেও পৃথকভাবে কোনো সংযোজক থাকে না এবং পরিমাণের বিষয়টিও নির্দিষ্ট থাকে না। এক্ষেত্রে সংযোজক স্থাপনের মাধ্যমে এদের অ বাক্যে রূপান্তর করা যায়। যেমন- সব মানুষ মরণশীল।
অ বাক্য: সব মানুষ হয় মরণশীল। (রূপান্তরিত)

গ. দৃশ্যকল্প-১ গুণ ও পরিমাণের যৌথ নীতি অনুসারে গঠিত হয়েছে। এখানে, প্রথম যুক্তিবাক্যটি সার্বিক সদর্থক এবং দ্বিতীয়টি বিশেষ সদর্থক যুক্তিবাক্য।
যেসব বাক্যের বিধেয় উদ্দেশ্যের সমগ্র ব্যক্ত্যর্থ সম্পর্কে স্বীকৃত হয় সেসব বাক্যকে সার্বিক সদর্থক যুক্তিবাক্য (Universal Affirmative Proposition) বলে। এরূপ বাক্য পরিমাণগত দিক থেকে 'সার্বিক' এবং গুণগত দিক থেকে ‘সদর্থক' হয়ে থাকে। যেমনত সকল মানুষ হয় মরণশীল'ত এ বাক্যে বিধেয় ‘মরণশীল' উদ্দেশ্য 'মানুষ' শ্রেণির সমগ্র ব্যক্ত্যর্থ সম্পর্কে স্বীকৃত হয়েছে।
আবার, যেসব বাক্যের বিধেয় উদ্দেশ্যের আংশিক ব্যর্ক্ত্যর্থ সম্পর্কে স্বীকৃত হয় সেসব বাক্যকে বিশেষ সদর্থক যুক্তিবাক্য (Particular Affirmative Proposition) বলে। এরূপ বাক্য পরিমাণগত দিক থেকে ‘বিশেষ' এবং গুণগত দিক থেকে ‘সদর্থক' হয়ে থাকে। যেমনত 'কিছু মানুষ হয় কবি', এ বাক্যে বিধেয় 'কবি' উদ্দেশ্য 'মানুষ' শ্রেণির আংশিক ব্যক্ত্যর্থ সম্পর্কে স্বীকৃত হয়েছে।
এ উদ্দীপকে প্রথম বাক্যে 'সকল মানুষ হয় দ্বিপদ' এ 'দ্বিপদ' বিধেয় পদকে উদ্দেশ্য 'মানুষ' পদের সমগ্র ব্যক্ত্যর্থ সম্পর্কে স্বীকার করা হয়েছে তাই এটি সার্বিক সদর্থক যুক্তিবাক্য। আবার দ্বিতীয় বাক্য 'কিছু ছাত্র হয় মেধাবী' এ বাক্যে 'মেধাবী' বিধেয় পদটি উদ্দেশ্য ছাত্র' পদের আংশিক ব্যক্ত্যর্থ সম্পর্কে স্বীকার করা হয়েছে তাই এটি বিশেষ সদর্থক যুক্তিবাক্য।

ঘ. দৃশ্যকল্প-১ সদর্থক যুক্তিবাক্যকে এবং দৃশ্যকল্প-২ নঞর্থক যুক্তিবাক্যেকে নির্দেশ করে। তাই এদের মূল পার্থক্য হলো গুণের দিক থেকে।
যেসকল যুক্তিবাক্যে বিধেয় পদকে উদ্দেশ্য পদের সমগ্র ব্যক্ত্যর্থ সম্পর্কে স্বীকার করা হয় তাকে সার্বিক সদর্থক যুক্তিবাক্য বলে। যেমনত সকল মানুষ হয় দ্বিপদ'। আবার, যেসকল যুক্তিবাক্যে বিধেয় পদকে উদ্দেশ্য পদের আংশিক ব্যক্ত্যর্থ সম্পর্কে স্বীকার করা হয় তাকে বিশেষ সদর্থক যুক্তিবাক্য বলে। যেমনত 'কিছু ফুল হয় লাল'।
অপরপক্ষে, যেসকল যুক্তিবাক্যে বিধেয় পদকে উদ্দেশ্য পদের সমগ্র ব্যক্ত্যর্থ সম্পর্কে অস্বীকার করা হয় তাকে সার্বিক নঞর্থক যুক্তিবাক্য বলে। যেমনত 'কোনো মানুষ নয় অমর'। আবার, যেসকল যুক্তিবাক্যে বিধেয় পদকে উদ্দেশ্য পদের আংশিক ব্যক্ত্যর্থ সম্পর্কে অস্বীকার করা হয় তাকে বিশেষ নঞর্থক যুক্তিবাক্য বলে। যেমন- কিছু ছাত্র নয় মেধাবী।
উদ্দীপকে, দৃশ্যকল্প-১ এ উভয় বাক্যেই উদ্দেশ্য সম্পর্কে বিধেয়কে স্বীকার করা হয়েছে তাই এরা সদর্থক। অন্যদিকে, দৃশ্যকল্প-২-এ উভয় বাক্যেই উদ্দেশ্য সম্পর্কে বিধেয়কে অস্বীকার করা হয়েছে তাই এরা নঞর্থক।
সুতরাং, দৃশ্যকল্প-১ ও দৃশ্যকল্প-২ এর প্রধান পার্থক্য হলো গুণের দিক থেকে।

৫. রাজন বললো, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পেলে দ্রব্যের চাহিদা যেমন কমে আবার দ্রব্যমূল্য কমলে চাহিদা বৃদ্ধি পায়। ফয়েজ বললো, যুক্তিবিদ্যার স্যারও যুক্তির উপাদান অধ্যায়ে এরূপ একটি বিষয় আলোচনা করেছেন।
ক. সরল পদ কাকে বলে?
খ. বস্তুবাচক ও গুণবাচক পদ বলতে কী বোঝ?
গ. উদ্দীপকে ফয়েজের বক্তব্যে যুক্তির উপাদান অধ্যায়ের যে বিষয়ের ইঙ্গিত আছে তা ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকে রাজনের বক্তব্যে যে বিষয়গুলোর ইঙ্গিত আছে তাদের সম্পর্ক বিশ্লেষণ করো।

৫ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. যে পদ মাত্র একটি শব্দ দ্বারা গঠিত তাকে সরল পদ বলে।

খ. যে পদ দ্বারা কোন অস্তিত্বশীল বস্তুকে নির্দেশ করা হয় তাকে বস্তুবাচক পদ বলে। পক্ষান্তরে যে পদ দ্বারা কোন গুণকে নির্দেশ করা. হয় তাকে গুণবাচক পদ বলে।
বস্তুবাচক পদ হল একটি নাম যা একটি বস্তুর ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়। যেমন: মানুষ, গরু, বই, খাতা ইত্যাদি পদগুলো বস্তুবাচক পদ। অন্যদিকে গুণবাচক পদ হল একটি নাম যা একটি বস্তুর কোনো গুণের নির্দেশ প্রদানে ব্যবহৃত হয়। যেমন- সততা, সাদার, মিষ্টত্ব ইত্যাদি পদগুলো গুণবাচক পদ।

গ. উদ্দীপকে ফয়েজের বক্তব্যে যুক্তির উপাদান অধ্যায়ের পদের ব্যক্ত্যর্থ এবং পদের জাত্যর্থের বিষয়ে ইঙ্গিত রয়েছে।
কোন পদ একই অর্থে যে বস্তু বা বস্তু সমূহের উপর আরোপিত হয় সে বস্তু বা বস্তুসমূহকে ঐ পদের ব্যক্ত্যর্থ বলে। ব্যসত্ম্যর্থ হলো পদের সংখ্যার দিক। যেমন- 'মানুষ' পদের ব্যক্ত্যর্থ হচ্ছে অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যতের সেই সমস্ত জীব যারা মানুষ নামে পরিচিত। আবার যে পদ সাধারণ বা আবশ্যিক গুণ বা গুণের সমষ্টিকে নির্দেশ করে সেই গুণ বা গুণ সমষ্টিকে পদের জাত্যর্থ বলে। যেমন- 'মানুষ' পদের জাত্যর্থ হচ্ছে- জীববৃত্তি ও বুদ্ধিবৃত্তি। ব্যক্ত্যর্থ ও জাত্যর্থের মধ্যে সব সময় বিপরীতমুখী সম্পর্ক বিরাজ করে। কোনো পদের ব্যক্ত্যর্থ বাড়লে জাত্যর্থ কমে। আবার ব্যক্ত্যর্থ কমলে জাত্যর্থ বাড়ে।
উদ্দীপকে ফয়েজের বক্তব্যে পদের ব্যক্ত্যর্থ এবং জাত্যর্থের মধ্যকার সম্পর্কের ইঙ্গিত পাওয়া যায়। কারণ দ্রব্যের দামের সাথে চাহিদার বিপরীতধর্মী সম্পর্ক উল্লেখ করে। এই সম্পর্কের সাথে পদের ব্যক্ত্যর্থ ও জাত্যর্থ সাদৃশ্যপূর্ণ।

ঘ. রাজনের বক্তব্যে পদের ব্যক্ত্যর্থ এবং পদের জাত্যর্থের মধ্যকার সম্পর্কের আলোকপাত করা হয়েছে।
পদের ব্যক্ত্যর্থ ও জাত্যর্থের মধ্যে গভীর সম্পর্ক বিদ্যমান। এরা একে অপরের ওপর নির্ভরশীল। পদের ব্যক্ত্যর্থ ও জাত্যর্থ বিপরীতক্রমে হ্রাস- বৃদ্ধি পায়। অর্থাৎ এদের একটি বাড়লে অপরটি কমে এবং একটিকমলে অপরটি বাড়ে। যেমন- জীব পদের ব্যক্ত্যর্থ হচ্ছে 'সকল জীব'। মানুষ পদের ব্যক্ত্যর্থ 'সকল মানুষ' আর সভ্য মানুষের ব্যক্ত্যর্থ সকল ‘সভ্য মানুষ'। সুতরাং জীব-মানুষ-সভ্যমানুষ এর মধ্যে জীবের ব্যক্ত্যর্থ বেশি। আবার জীবের জাত্যর্থ 'জীববৃত্তি'। মানুষের জাত্যর্থ 'জীববৃত্তি' ও 'বুদ্ধিবৃত্তি'; সভ্য মানুষের জাত্যর্থ 'জীববৃত্তি', 'বুদ্ধিবৃত্তি’ ও ‘সভ্যতা' সুতরাং এখানে সভ্য মানুষের জাত্যর্থ বেশি।
রাজন দ্রব্যমূল্য এবং দ্রব্যের চাহিদার সম্পর্কে বলে, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পেলে দ্রব্যের চাহিদা যেমন কমে আবার দ্রব্যমূল্য কমলে চাহিদা বৃদ্ধি পায়। তদ্রূপ যুক্তিবিদ্যায় যুক্তির উপাদান অধ্যায়ে দ্রব্যমূল্য এবং দ্রব্যের চাহিদার ন্যায়পদের ব্যক্ত্যর্থ এবং জাত্যর্থের মধ্যে এরূপ সম্পর্ক বিদ্যমান। অর্থাৎ পদের ব্যক্ত্যর্থ বৃদ্ধি পেলে জাত্যর্থ কমে আবার জাত্যর্থ কমলে ব্যক্ত্যর্থ বাড়ে।
পরিশেষে বলা যায়, পদের ব্যক্ত্যর্থ ও জাত্যর্থ বিপরীতমুখী সম্পর্কের নির্দেশ করে। যে পদের ব্যক্ত্যর্থ বেশি তার জাত্যর্থ কম এবং যে পদের জাত্যর্থ বেশি তার ব্যক্ত্যর্থ কম। জাত্যর্থ বাড়লে ব্যক্ত্যর্থ কমে যাবে আবার ব্যসত্ম্যর্থ বাড়লে জাত্যর্থ কমে যাবে। সুতরাং রাজনের কথায় পদের ব্যক্ত্যর্থ ও জাত্যর্থের মধ্যকার সম্পর্কের যথার্থ রূপটি ফুটে উঠেছে।

৬. নিশানের ভাই নিশাত একটি দুর্ঘটনার কারণে কথা বলতে পারত না। বিভিন্ন জায়গায় চিকিৎসার পর সে আবার কথা বলতে পারে। সেই আনন্দের খবর জানাতে নিশান পবনের বাড়ীতে গেল। পবন পড়া লেখা করছিল। নিশানের মুখে এই খুশীর সংবাদ; শুনে সে বলল, আজ আর আমি পড়ব না ও চল আমরা শব্দের খেলা খেলি। তখন পবন শব্দ বলা শুরু করেত টেবিল, পাখি, মাছ, থলা ইত্যাদি। পবনকে থামিয়ে নিশান জোড়া জোড়া শব্দ বলল, মাতা-পিতা, গুরু-শিষ্য, ধনী-গরিব ইত্যাদি।
ক. পদের সংজ্ঞা দাও।
খ. সকল ক্ষেত্রে কি পদের ব্যক্তর্থ্য বাড়লে জাত্যর্থ কমে? ব্যাখ্যা করো।
গ. উদ্দীপকে নিশাতের চিকিৎসার ধরনে বস্তু ও গুণের অস্তিত্বের ভিত্তিতে কোন পদকে নির্দেশ করে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. পবন ও নিশানের উল্লিখিত শব্দগুলো যে দুই শ্রেণীর পদ নির্দেশ করে তাদের আন্ত-সম্পর্ক বিশ্লেষণ কর।

৬ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. যে শব্দ বা শব্দ সমষ্টি কোন যুক্তিবাক্যের উদ্দেশ্য বা বিধেয় হিসেবে ব্যবহৃত হয় বা ব্যবহৃত হওয়ার যোগ্যতা রাখে তাকে পদ (Term) বলে।

খ. না, সকল ক্ষেত্রেই পদের ব্যক্তার্থ বাড়লে জ্ঞাতার্থ কমে না।
পদের ব্যক্ত্যর্থ ও জাত্যর্থের বিপরীতমুখী হ্রাস বৃদ্ধি সকল ক্ষেত্রে ঠিক থাকে না। যে সব ক্ষেত্রে কোনো পদকে জাতি-উপজাতি, শ্রেণি- উপশ্রেণি আকারে ক্রমিক ভাবে সাজানো যায় না, সে ক্ষেত্রে এ নিয়ম কার্যকর হয় না। কিছু পদের ব্যক্ত্যর্থ সুনির্দিষ্ট থাকে। তাদের ক্ষেত্রেও এ নিয়ম কার্যকর নয়। তাই কোনো পদের ব্যক্ত্যর্থ বাড়লেই যে জাত্যৰ&থ কমে যাবে এমনটি অপরিহার্য নয়।

গ. উদ্দীপকে নিশাতের চিকিৎসার ধরনে বস্তু ও গুণের অস্তিত্বের ভিত্তিতে সদর্থক এবং ব্যাহতার্থক পদকে নির্দেশ করে।
যেসব পদ দ্বারা কোনো বস্তু বা গুণের উপস্থিতিকে বোঝায় সেসব পদকে সদর্থক পদ বলে। যেমন: সৎ, জ্ঞানী ইত্যাদি আবার যেসব পদ দ্বারা কোনো বস্তুতে কোনো গুণের বর্তমান অনুপস্থিতি বোঝায় অথচ বস্তুটি স্বাভাবিক ভাবে ওই গুণের অধিকারী হতে পারে সেসব পদকে ব্যাহতার্থক পদ বলে। যেমন: অন্ধ, কালা, বোবা, অচেতন ইত্যাদি।
উদ্দীপকে নিশাত চিকিৎসার মাধ্যমে কথা বলার শক্তি ফিরে পায়। চিকিৎসার মাধ্যমে তার এই শক্তি ফিরে পাওয়া বা এই শক্তির উপস্থিতি হলো সদর্থক পদ। অপরদিকে কথা বলার ক্ষমতা তার মধ্যে বর্তমান থাকার কথা ছিল কিন্তু দুর্ঘটনার কারণে ক্ষমতার অনুপস্থিতি ব্যাহতার্থকে নির্দেশ করে।

ঘ. পবনের উল্লেখিত শব্দগুলো নিরপেক্ষ পদ এবং নিশানের উল্লেখিত শব্দগুলো সাপেক্ষ পদ।
যেসব পদের নিজস্ব অর্থ আছে এবং যেগুলোকে বোঝার জন্য অন্য কোনো পদের সাহায্য নিতে হয় না সেসব পদকে নিরপেক্ষ পদ বলে। যেসব পদের স্বয়ংসম্পূর্ণ কোনো অর্থ নেই এবং যেসব পদের অর্থ বোঝার জন্য অন্য কোনো পদের সাহায্য নিতে হয় সেসব পদকে সাপেক্ষ পদ বলে।
উদ্দীপকে পবনের উচ্চারিত পদগুলো টেবিল, পাখি, মাছ, থালা ইত্যাদি। এগুলোর নিজস্ব অর্থ আছে এবং এগুলোর অর্থ আমরা সহজেই বুঝতে পারি। অন্যদিকে নিশানের উল্লেখিত পদগুলো মাতা-পিতা, গুরু শিষ্য ধনী-গরিব ইত্যাদি। এগুলো ভিনণ অর্থবোধক সাপেক্ষ শব্দ। এক্ষেত্রে প্রতিটি জোড়ার মূল পদ ও তার পরিপূরক পদ পরস্পর ভিন্ন অর্থবোধক এবং এরা ভিন্ন দুটি জিনিসকে নির্দেশ করে।
নিরপেক্ষ পদ ও সাপেক্ষ পদ সংজ্ঞাগত দিক থেকে আলাদা হলেও তাদের মধ্যে আন্ত:সম্পর্ক রয়েছে। উভয় ধরনের পদই স্বয়ংসম্পূর্ণতার দিক থেকে কিছু শব্দকে আলাদা করেছে মাত্র।

৭. তন্দ্রা একটি বাগান দেখে এসে তামান্নাকে দেখিয়ে বলল, এই বাগানের সকল গাছ গোলাপ ফুলের। উত্তরে তামান্না বলল, যদি বাগানটিতে সাথে ডালিয়া ফুলের গাছ থাকত তাহলে সুন্দর দেখাত। তখন তন্দ্রার ছোট ভাই এসে বলল, আমাদের বাড়ীর বাগানটিতে আমি রজনীগন্ধা ও গোলাপ ফুলের গাছ রোপণ করব।
ক. সংযোজক কাকে বলে?
খ. বাক্যকে যুক্তিবাক্যে রূপান্তরের সময় কোন দুটি বিষয় স্পষ্ট করতে হবে? ব্যাখ্যা করো।
গ. তন্দ্রার ভাইয়ের বক্তব্য কোন ধরনের যুক্তিবাক্যকে নির্দেশ করে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. তন্দ্রা ও তামান্নার বক্তব্যে উল্লেখিত যুক্তিবাক্য দুটির পারস্পরিক সম্পর্ক বিশ্লেষণ করো।

৭ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. যুক্তিবাক্যে উদ্দেশ্য এবং বিধেয়ের মাঝখানে বসে যে শব্দ বাক্যের সদর্থক বা নঞর্থক গুণ প্রকাশ করে তাকে সংযোজক বলে।

খ. ভাষায় প্রকাশিত যে কোনো বাক্যকে যুক্তিবাক্যের আকারে রূপান্তর করাকে যুক্তিবাক্যে রূপান্তর বলে।
বাক্যকে যুক্তিবাক্যে রূপান্তরের সময় দুটি বিষয় স্পষ্ট করতে হবে। প্রথমত, যুক্তিবাক্যে রূপান্তরের পর যেন তার অর্থের কোনো পরিবর্তন না হয়। এবং দ্বিতীয়ত, সদর্থক বা নঞর্থক গুণ আরোপের ক্ষেত্রে উদ্দেশ্য এবং বিধেয়ের মাঝখানে সংযোজক বসাতে হবে। অর্থাৎ যৌক্তিক আকারের জন্য উদ্দেশ্য, সংযোজক ও বিধেয় আকারে সাজাতে হবে।

গ. তন্দ্রার ভাইয়ের বক্তব্য সংযোজক যুক্তিবাক্যকে নির্দেশ করে।
যে যৌগিক যুক্তিবাক্য একাধিক সদর্থক সরল যুক্তিবাক্য দিয়ে গঠিত হয় তাকে সংযোজক যুক্তিবাক্য বলে। যেমন- সকল শিশুই নিষ্পাপ ও সুন্দর এ যুক্তিবাক্যটি বিশ্লেষণ করলে দুটি সদর্থক সরল যুক্তিবাক্য পাওয়া যায়।
উদ্দীপকের তন্দ্রার ভাইয়ের বক্তব্যটি হলো- বাগানটিতে আমি রজনীগন্ধা ও গোলাপ ফুলের গাছ রোপণ করব। বাক্যটি একটি সংযোজক যুক্তিবাক্য। এখানে দুটি সদর্থক সরল বাক্য রয়েছে। একটি হলো- বাগানটিতে রজনীগন্ধা ফুলের গাছ রোপণ করব এবং অন্যটি বাগানটি গোলাপ ফুলের গাছ রোপণ করব। সুতরাং তনদ্রার ভাইয়ের বক্তব্যটি সংযোজক যুক্তিবাক্য।

ঘ. উদ্দীপকে তন্দ্রার বক্তব্যটি একটি নিরপেক্ষ যুক্তিবাক্য এবং তামান্নার বক্তব্যটি প্রাকল্পিক যুক্তিবাক্যকে নির্দেশ করে।
যে যুক্তিবাক্যের উদ্দেশ্য ও বিধেয়ের সম্পর্ক কোনো প্রকার শর্তের উপর নির্ভরশীল নয় তাকে নিরপেক্ষ যুক্তিবাক্য বলে। এসব বাক্যের বিধেয় শর্তহীনভাবে উদ্দেশ্যের ক্ষেত্রে স্বীকৃত বা অস্বীকৃত হয়। যেসব সাপেক্ষ যুক্তিবাক্যে কোনো শর্ত অস্বীকৃত হয়, সেসব সাপেক্ষ যুক্তিবাক্যকে প্রাকল্পিক যুক্তিবাক্য বলে। এ যুক্তিবাক্যের উদ্দেশ্য ও বিধেয়ের সম্পর্ক অন্য শর্তের ওপর নির্ভরশীল। প্রাকল্পিক যুক্তিবাক্যসমূহ যদি.....তাহলে দ্বারা নির্দেশিত হয়।
উদ্দীপকে তন্দ্রার বক্তব্যটি হলো এই বাগানের সকল গাছ গোলাপ ফুলের। এই বাক্যের মধ্যে কোন শর্ত আরোপ করা হয়নি। তামান্নার বক্তব্যটি হলো- যদি বাগানটিতে ডালিয়া ফুলের গাছ থাকত তাহলে সুন্দর দেখাতো। এখানে শর্তের অবতারণা করা হয়েছে। এটি একটি প্রাকল্পিক যুক্তিবাক্য।
পরিশেষে বলা যায়, পারস্পরিক সম্পর্কের দৃষ্টিকোণ থেকে নিরপেক্ষ ও প্রাকল্পিক যুক্তিবাক্য আলাদা হলেও তারা উভয়ই সম্পর্ক বা সম্বন্ধ অনুসারে যুক্তিবাক্যের দুটি প্রকার।

৮. রাজন বললো, দ্রব্য মূল্য বৃদ্ধি পেলে দ্রব্যের চাহিদা যেমন কমে আবার দ্রব্যমূল্য কমলে চাহিদা বৃদ্ধি পায়। ফয়েজ বললো, যুক্তিবিদ্যার স্যারও যুক্তির উপাদান অধ্যায়ে এরূপ একটি বিষয় আলোচনা করেছেন।
ক. পদ কী?
খ. সকল শব্দই পদ নয় কেন? ব্যাখ্যা করো।
গ. উদ্দীপকের ফয়েজের বক্তব্যে যুক্তি উপাদান অধ্যায়ের যে বিষয়ের ইঙ্গিত আছে তা ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকে রাজনের বক্তব্যে যে বিষয়গুলোর ইঙ্গিত আছে তাদের সম্পর্ক বিশ্লেষণ করো।

৮ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. যে অর্থপূর্ণ শব্দ বা শব্দসমষ্টি কোনো যুক্তিবাক্যের উদ্দেশ্য বা বিধেয় হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে বা ব্যবহৃত হওয়র যোগ্যতা রাখে, তাকে পদ বলে।

খ. সব পদ শব্দ হলেও সব শব্দ পদ নয়।
শব্দ হলো অর্থপূর্ণ ধ্বনি বা ধ্বনি সমষ্টি। কিন্তু পদ হলো কোনো যুক্তিবাক্যের উদ্দেশ্য বা বিধেয় হিসেবে ব্যবহৃত হওয়ার যোগ্যতাসম্পন্ন শব্দ বা শব্দ সমষ্টি। শব্দের সংখ্যা অসংখ্য। অসংখ্য শব্দের মধ্যে যেসব শব্দ কোনো যুক্তিবাক্যের উদ্দেশ্য বা বিধেয় হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে কেবল ঐসব শব্দকে পদ বলে। যেহেতু সব শব্দ যুক্তিবাক্যের উদ্দেশ্য বা বিধেয় হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে না, তাই সব শব্দ পদ নয়।

গ. উদ্দীপকে ফয়েজের বক্তব্যে যুক্তির উপাদান অধ্যায়ের পদের ব্যক্ত্যর্থ এবং পদের জাত্যর্থের বিষয়ে ইঙ্গিত রয়েছে।
কোন পদ একই অর্থে যে বস্তু বা বস্তু সমূহের উপর আরোপিত হয় সে বস্তু বা বস্তুসমূহকে ঐ পদের ব্যক্ত্যর্থ বলে। ব্যক্ত্যর্থ হলো পদের সংখ্যার দিক। যেমন- 'মানুষ' পদের ব্যক্ত্যর্থ হচ্ছে অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যতের সেই সমস্ত জীব যারা মানুষ নামে পরিচিত। আবার যে পদ সাধারণ বা আবশ্যিক গুণ বা গুণ সমষ্টিকে উক্ত নির্দেশ করে সেই গুণ বা গুণ সমষ্টিকে পদের জাত্যর্থ বলে। যেমন- 'মানুষ' পদের জাত্যর্থ হচ্ছে- জীববৃত্তি ও বুদ্ধিবৃত্তি। ব্যক্ত্যর্থ ও জাত্যর্থের মধ্যে সব সময় বিপরীতমুখী সম্পর্ক বিরাজ করে। কোনো পদের ব্যক্ত্যর্থ বাড়লে জাত্যর্থ কমে। আবার ব্যক্ত্যর্থ কমলে জাত্যৰ&থ বাড়ে।
উদ্দীপকে ফয়েজের বক্তব্যে পদের ব্যক্ত্যর্থ এবং জাত্যর্থের মধ্যকার সম্পর্কের ইঙ্গিত পাওয়া যায়। কারণ দ্রব্যের দামের সাথে চাহিদার বিপরীতধর্মী সম্পর্ক উল্লেখ করে। এই সম্পর্কের সাথে পদের ব্যক্ত্যর্থ ও জাত্যর্থ সাদৃশ্যপূর্ণ।

ঘ. রাজনের বক্তব্যে পদের ব্যক্ত্যর্থ এবং পদের জাত্যর্থের মধ্যকার সম্পর্কের আলোকপাত করা হয়েছে।
পদের ব্যক্ত্যর্থ ও জাত্যর্থের মধ্যে গভীর সম্পর্ক বিদ্যমান। এরা একে অপরের ওপর নির্ভরশীল। পদের ব্যক্ত্যর্থ ও জাত্যর্থ বিপরীতক্রমে হ্রাস- বৃদ্ধি পায়। অর্থাৎ এদের একটি বাড়লে অপরটি কমে এবং একটি কমলে অপরটি বাড়ে। যেমন- জীব পদের ব্যক্ত্যর্থ হচ্ছে 'সকল জীব'। মানুষ পদের ব্যক্ত্যর্থ 'সকল মানুষ' আর সভ্য মানুষের ব্যক্ত্যর্থ সকল ‘সভ্য মানুষ'। সুতরাং জীব-মানুষ-সভ্য মানুষ এর মধ্যে জীবের ব্যক্ত্যর্থ বেশি। আবার জীবের জাত্যর্থ 'জীববৃত্তি'। মানুষের জাত্যর্থ 'জীববৃত্তি' ও 'বুদ্ধিবৃত্তি'; সভ্য মানুষের জাত্যর্থ 'জীববৃত্তি', 'বুদ্ধিবৃত্তি' ও 'সভ্যতা'। সুতরাং এখানে সভ্য মানুষের জাত্যর্থ বেশি।
রাজন দ্রব্যমূল্য এবং দ্রব্যের চাহিদার সম্পর্কে বলে, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পেলে দ্রব্যের চাহিদা যেমন কমে আবার দ্রব্যমূল্য কমলে চাহিদা বৃদ্ধি পায়। তদ্রূপ যুক্তিবিদ্যায় যুক্তির উপাদান অধ্যায়ে দ্রব্যমূল্য এবং দ্রব্যের চাহিদার ন্যায় পদের ব্যক্ত্যর্থ এবং জাত্যর্থের মধ্যে এরূপ সম্পর্ক বিদ্যমান। অর্থাৎ পদের ব্যক্ত্যর্থ বৃদ্ধি পেলে জাত্যর্থ কমে আবার জাত্যর্থ কমলে ব্যক্ত্যর্থ বাড়ে।
পরিশেষে বলা যায়, পদের ব্যক্ত্যর্থ ও জাত্যর্থ বিপরীতমুখী সম্পর্কের নির্দেশ করে। যে পদের ব্যক্ত্যর্থ বেশি তার জাত্যর্থ কম এবং যে পদের জাত্যর্থ বেশি তার ব্যক্ত্যর্থ কম। জাত্যর্থ বাড়লে ব্যক্ত্যর্থ কমে যাবে আবার ব্যক্ত্যর্থ বাড়লে জাত্যর্থ কমে যাবে। সুতরাং রাজনের কথায় পদের ব্যক্ত্যর্থ ও জাত্যর্থের মধ্যকার সম্পর্কের যথার্থ রূপটি ফুটে উঠেছে।

৯. তাহসীন ও শায়ান কলেজ লাইব্রেরিতে বসে বিভিন্ন বই দেখছিল। তাহসীন একটি বই হাতে নিয়ে বলল, বইটি হয় সুন্দর। শায়ান তখন তার দিকে মনোযোগ দিলে বলল, কিছু বই নয় সুন্দর।
ক. শব্দ কাকে বলে?
খ. সব বাক্য যুক্তিবাক্য নয় কেন?
গ. তাহসীনের বাক্যটি কোন ধরনের যুক্তিবাক্য?
ঘ. তাহসীন ও শায়ানের উক্তিতে কোন ধরনের পার্থক্য বিদ্যমান? আলোচনা কর।

৯ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. এক বা একাধিক বর্ণের সমষ্টি যখন কোনো অর্থ প্রকাশ করে তখন তাকে শব্দ বলে।

খ. যুক্তিবাক্যের নিয়ম অনুযায়ী গঠিত না হওয়ার কারণে সকল বাক্যকে যুক্তিবাক্য বলা যায় না।
একটি যুক্তিবাক্যে দুটি পদ থাকে। যথা- ১. উদ্দেশ্য পদ ও ২. বিধেয় পদ। উদ্দেশ্য ও বিধেয় পদ সংযোজকের দ্বারা যুক্ত হয়ে যুক্তিবাক্য গঠন করে। তাই যুক্তিবাক্য সবসময় উদ্দেশ্য সংযোজক-বিধেয়' আকারে প্রকাশিত হয়। যেহেতু সকল বাক্য উদ্দেশ্য সংযোজক-বিধেয়' আকারে প্রকাশিত হয় না, তাই সকল বাক্য যুক্তিবাক্য নয়।

গ. তাহসীনের বাক্যটি বিশেষ সদর্থক যুক্তিবাক্যকে নির্দেশ করে।
যেসব বাক্যের বিধেয় উদ্দেশ্যের আংশিক ব্যক্ত্যর্থ সম্পর্কে (Particular Affirmative Proposition) বলে। এরূপ বাক্য পরিমাণগত দিক থেকে 'বিশেষ' এবং গুণগত দিক থেকে ‘সদর্থক' হয়ে থাকে। যেমন- ‘কিছু মানুষ হয় কবি' এ বাক্যে বিধেয় ‘করি' উদ্দেশ্য ‘মানুষ’ শ্রেণির আংশিক ব্যক্ত্যর্থ সম্পর্কে স্বীকৃত হয়েছে।
উদ্দীপকে তাহসীনের বক্তব্যটি হলো- 'বইটি হয় সুন্দর'। এ বাক্যে 'সুন্দর' বিধেয় পদটি উদ্দেশ্য 'বই' পদের আংশিক ব্যক্ত্যর্থ সম্পর্কে স্বীকার করা হয়েছে। তাই তাহসীনের বক্তব্যটি একটি বিশেষ সদর্থক যুক্তিবাক্য।

ঘ. উদ্দীপকে তাহসীনের উদ্ভিটি বিশেষ সদর্থক যুক্তিবাক্য এবং শায়ানের উক্তিটি বিশেষ নঞর্থক যুক্তিবাক্য।
যে সকল যুক্তিবাক্যে বিধেয় পদকে উদ্দেশ্য পদের আংশিক ব্যক্ত্যর্থ সম্পর্কে স্বীকার করা হয় তাকে বিশেষ সদর্থক যুক্তিবাক্য বা ঞ বাক্য বলে। উদাহরণস্বরূপ- ‘‘কিছু কবি হন দার্শনিক'। এখানে বিধেয় 'দার্শনিক' পদকে উদ্দেশ্য 'কবি' পদের আংশিক ব্যক্ত্যর্থ সম্পর্কে স্বীকার করা হয়েছে। অপরদিকে যে সকল যুক্তিবাক্যের বিধেয় পদ উদ্দেশ্য পদের আংশিক ব্যক্ত্যর্থকে অস্বীকার করে তাকে নঞর্থক যুক্তিবাক্য বা 'O' বাক্য বলা হয়। যেমন- ‘‘কিছু মানুষ নয় সৎ'। এখানে বিধেয় পদ 'সৎ' কে উদ্দেশ্য পদ ‘মানুষের’ আংশিক ব্যক্ত্যর্থ সম্পর্কে অস্বীকার করা হয়েছে।
উদ্দীপকের তাহসীনের বক্তব্যটি হলো 'বইটি হয় সুন্দর'। আলোচনার মাধ্যমে দেখা যায়, এটি বিশেষ সদর্থক যুক্তিবাক্য। অন্যদিকে, শায়ানের বক্তব্যটি হলো 'কিছু বই নয় সুন্দর'। যা বিশেষ নঞর্থক যুক্তিবাক্যের প্রতিফলন।
সুতরাং, তাহসীন ও শায়ানের বক্তব্য পরিমাণগত দিক থেকে উভয়ই বিশেষ যুক্তিবাক্য। কিন্তু, এদের পার্থক্য হলো গুণগত দিক থেকে। তাহসীনের বক্তব্য হলো সদর্থক এবং শায়ানের বক্তব্য হলো নঞর্থক।

১০. অর্থনীতির শিক্ষক বরকত স্যার বললেন, বাজারে দ্রব্যের সরবরাহ বাড়লে দাম কমে যায়। আবার সরবরাহ কমলে দাম বাড়ে। একজন ছাত্র তখন বলল, স্যার যুক্তিবিদ্যায়ও এ ধরনের একটি বিষয় আছে।
ক. বিবরণমূলক যুক্তিবাক্য কাকে বলে?
খ. সার্বিক যুক্তিবাক্যের উদ্দেশ্য পদ ব্যাপ্য কেন?
গ. বরকত স্যারের কথায় যুক্তিবিদ্যার কোন বিষয়টির ইঙ্গিত এসেছে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উক্ত বিষয়টির হ্রাস-বৃদ্ধির তুলনামূলক আলোচনা কর।

১০ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. যে যুক্তিবাক্যের উদ্দেশ্য ও বিধেয়ের মধ্যকার সম্পর্ক আমাদের অভিজ্ঞতার ওপর নির্ভরশীল তাকে বিবরণমূলক যুক্তিবাক্য বলে।

খ. সার্বিক যুক্তিবাক্যের উদ্দেশ্যপদ সম্পূর্ণ ব্যক্ত্যর্থ নিয়ে ব্যবহৃত হয়, তাই এটি ব্যাপ্য।
কোনো যুক্তিবাক্যে একটি পদ তার সম্পূর্ণ ব্যক্ত্যর্থ নিয়ে ব্যবহৃত হলে তাকে ব্যাপ্য পদ বলে। আবার, যে যুক্তিবাক্যে বিধেয় পদকে উদ্দেশ্য পদের সম্পূর্ণ ব্যক্ত্যর্থ সম্পর্কে স্বীকার বা অস্বীকার করা হয় তাকে সার্বিক যুক্তিবাক্য বলে। সুতরাং সম্পূর্ণ ব্যক্ত্যর্থ নির্দেশক পদকে যেহেতু ব্যাপ্য বলা হয়, সেহেতু সার্বিক যুক্তিবাক্যের উদ্দেশ্য পদ ব্যাপ্য।

গ. উদ্দীপকে বরকত স্যারের বক্তব্যে যুক্তির উপাদান অধ্যায়ের পদের ব্যক্ত্যর্থ এবং পদের জাত্যর্থের বিষয়ে ইঙ্গিত রয়েছে।
কোন পদ একই অর্থে যে বস্তু বা বস্তু সমূহের উপর আরোপিত হয় সে বস্তু বা বস্তুসমূহকে ঐ পদের ব্যক্ত্যর্থ বলে। ব্যক্ত্যর্থ হলো পদের সংখ্যার দিক। যেমন- 'মানুষ' পদের ব্যক্ত্যর্থ হচ্ছে অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যতের সেই সমস্ত জীব যারা মানুষ নামে পরিচিত। আবার যে পদ সাধারণ বা আবশ্যিক গুণ বা গুণ সমষ্টিকে নির্দেশ করে সেই গুণ বা গুণ সমষ্টিকে পদের জাত্যর্থ বলে। যেমন- 'মানুষ' পদের জাত্যর্থ হচ্ছে- জীববৃত্তি ও বুদ্ধিবৃত্তি। ব্যক্ত্যর্থ ও জাত্যর্থের মধ্যে সব সময় বিপরীতমুখী সম্পর্ক বিরাজ করে। কোনো পদের ব্যক্ত্যর্থ বাড়লে জাত্যর্থ কমে। আবার ব্যক্ত্যর্থ কমলে জাত্যৰ&থ বাড়ে।
উদ্দীপকে বরকত স্যারের বক্তব্যে পদের ব্যক্ত্যর্থ এবং জাত্যর্থের মধ্যকার সম্পর্কের ইঙ্গিত পাওয়া যায়। কারণ দ্রব্যের দামের সাথে চাহিদার বিপরীতধর্মী সম্পর্ক উল্লেখ করে। এই সম্পর্কের সাথে পদের ব্যক্ত্যর্থ ও জাত্যর্থ সাদৃশ্যপূর্ণ।

ঘ. উদ্দীপকে পদের ব্যক্ত্যর্থ এবং পদের জাত্যর্থের মধ্যকার সম্পর্কের আলোকপাত করা হয়েছে।
পদের ব্যক্ত্যর্থ ও জাত্যর্থের মধ্যে তুলনামূলক সম্পর্ক বিদ্যমান। পদের ব্যক্ত্যর্থ ও জাত্যর্থ বিপরীতক্রমে হ্রাস-বৃদ্ধি পায়। অর্থাৎ এদের একটি বাড়লে অপরটি কমে এবং একটি কমলে অপরটি বাড়ে। যেমন- জীব পদের ব্যক্ত্যর্থ হচ্ছে 'সকল জীব'। মানুষ পদের ব্যক্ত্যর্থ 'সকল মানুষ’ আর সভ্য মানুষের ব্যক্ত্যর্থ সকল 'সভ্য মানুষ'। সুতরাং জীব-মানুষ- সভ্যমানুষ এর মধ্যে জীবের ব্যক্ত্যর্থ বেশি। আবার জীবের জাত্যর্থ ‘জীববৃত্তি'। মানুষের জাত্যর্থ 'জীববৃত্তি' ও 'বুদ্ধিবৃত্তি'; সভ্য মানুষের জাত্যৰ&থ 'জীববৃত্তি', 'বুদ্ধিবৃত্তি' ও 'সভ্যতা'। সুতরাং এখানে সভ্য মানুষের জাত্যর্থ বেশি।
উদ্দীপকে দ্রব্যমূল্য এবং দ্রব্যের চাহিদার সম্পর্কে বলা হয়েছে, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পেলে দ্রব্যের চাহিদা যেমন কমে আবার দ্রব্যমূল্য কমলে চাহিদা বৃদ্ধি পায়। তদ্রূপ যুক্তিবিদ্যায় যুক্তির উপাদান অধ্যায়ে দ্রব্যমূল্য এবং দ্রব্যের চাহিদার ন্যায় পদের ব্যক্ত্যর্থ এবং জাত্যর্থের মধ্যে এরূপ সম্পর্ক বিদ্যমান। অর্থাৎ পদের ব্যসত্ম্যর্থ বৃদ্ধি পেলে জাত্যর্থ কমে আবার জাত্যর্থ কমলে ব্যক্ত্যর্থ বাড়ে।
পরিশেষে বলা যায়, পদের ব্যক্ত্যর্থ ও জাত্যর্থ বিপরীতমুখী সম্পর্কের নির্দেশ করে। যে পদের ব্যক্ত্যর্থ বেশি তার জাত্যর্থ কম এবং যে পদের জাত্যর্থ বেশি তার ব্যক্ত্যর্থ কম। জাত্যর্থ বাড়লে ব্যক্ত্যর্থ কমে যাবে আবার ব্যক্ত্যর্থ বাড়লে জাত্যর্থ কমে যাবে।
Share:

0 Comments:

Post a Comment