HSC যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর pdf download অধ্যায় ২

HSC যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর pdf download

এইচএসসি পরীক্ষার পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি
HSC Logic 1st Paper Srijonshil question and answer pdf download.

উচ্চ মাধ্যমিক

যুক্তিবিদ্যা
প্রথম পত্র

সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
২য় অধ্যায়

HSC Logic 1st Paper
Srijonshil
Question and Answer pdf download

১. উদ্দীপক-১: বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিখ্যাত কিশোর গল্প ‘পড়ে পাওয়া'। এ গল্পে কিশোরেরা এক বাক্স টাকা পেয়ে লোভের পরিচয় দেয়নি। বরং তারা সঠিক ব্যক্তির নিকট টাকা ফেরত দিয়ে সততা, নিষ্ঠা ও চারিত্রিক দৃঢ়তার পরিচয় দিয়েছে।
উদ্দীপক-২: সত্য-মিথ্যা এক নয়। দার্শনিক সক্রেটিস হেমলক বিষ পান করে সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। মিথ্যাকে মেনে নিলে হয়তো তাকে বিষপান করে মৃত্যুবরণ করতে হতো না। ব্যবহারিক জীবনে সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করার এটা এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
ক. যুক্তিবিদ্যা কী?
খ. নীতিবিদ্যা আদর্শনিষ্ঠ বিজ্ঞান কেন?
গ. উদ্দীপক-১ এ উল্লেখিত বিষয়টি পাঠ্যপুস্তকের আলোকে ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপক-১ ও উদ্দীপক-২ এর পার্থক্য বিশ্লেষণ করো।

১ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. অবৈধ ন্যায় বা যুক্তি থেকে বৈধ ন্যায়কে পৃথক করার পদ্ধতি ও নীতিসমূহের একটি বিশিষ্ট বিদ্যা হলো যুক্তিবিদ্যা।

খ. সমাজে বসবাসকারী মানুষের ঐচ্ছিক আচরণকে নৈতিক আদর্শের ভিত্তিতে মূল্যায়ন করে বলে নীতিবিদ্যা আদর্শনিষ্ঠ বিজ্ঞান।
নীতিবিদ্যা মানুষের ঐচ্ছিক আচরণ মূল্যায়নের ক্ষেত্রে নৈতিক আদর্শকে ব্যবহার করে। আর আদর্শনিষ্ঠ বিজ্ঞান আদর্শ বা মানদন্ডের ভিত্তিতে নিজস্ব বিষয়বস্তু মূল্যায়ন করে। যেহেতু, নীতিবিদ্যা নৈতিক আদর্শের ভিত্তিতে নিজস্ব বিষয়বস্তুর মূল্যায়ন করে, তাই নীতিবিদ্যাকে আদর্শনিষ্ঠ বিজ্ঞান বলা হয়।

গ. উদ্দীপক-১-এর মাধ্যমে নীতিবিদ্যার পরিচয় পাওয়া যায়।
মূল্যবিদ্যার তিনটি শাখার মধ্যে অন্যতম একটি হলো নীতিবিদ্যা।
নীতিবিদ্যার ইংরেজি প্রতিশব্দ হলো 'Ethics'। ইংরেজি 'Ethics' শব্দটি গ্রিক শব্দ 'Ethica' থেকে এসেছে। 'Ethica' শব্দটি এসেছে 'Ethos' শব্দ থেকে, যার অর্থ হলো আচার-আচরণ, রীতি-নীতি, অভ্যাস ইত্যাদি। তাই শব্দগত অর্থে নীতিবিদ্যা আচার-আচরণ, রীতি-নীতি সংক্রান্ত বিজ্ঞান। নীতিবিদ্যাকে বিভিন্ন নীতি দার্শনিক বিভিন্নভাবে সংজ্ঞায়িত করেছেন। তবে নীতিবিদ্যা সমাজবদ্ধ মানুষের ঐচ্ছিক আচরণের সাথে যুক্ত এবং মানব আচরণের ভালো-মন্দ মূল্যায়ন করাই নীতিবিদ্যার কাজ। যদিও বর্তমানে নীতিবিদ্যার পরিধি অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে কিন্তু আদর্শগত দিক থেকে নীতিবিদ্যা মানব আচরণের মূল্যায়নের সাথে যুক্ত। উদ্দীপকে কিশোরদের নৈতিকতা ও সততা নীতিবিদ্যাকেই নির্দেশ করে।
তাই বলা যায়, নীতিবিদ্যা এমন একটি আদর্শনিষ্ঠ বিজ্ঞান যা সমাজে বসবাসকারী মানুষের ঐচ্ছিক আচরণের ভালোত্ব-মন্দত্ব ইত্যাদি নৈতিক আদর্শের ভিত্তিতে মূল্যায়ন করে।

ঘ. উদ্দীপক-১ ও উদ্দীপক-২-এর মাধ্যমে যথাক্রমে নীতিবিদ্যা ও যুক্তিবিদ্যার পরিচয় পাওয়া যায়। এই দুটি বিষয়ের মধ্যে বেশকিছু পার্থক্য রয়েছে।
নীতিবিদ্যা মানব আচরণের সাথে যুক্ত। এই বিষয়টি মানুষের ঐচ্ছিক আচরণের ভালোত্ব-মন্দত্ব ইত্যাদি নৈতিক আদর্শের ভিত্তিতে মূল্যায়ন করে। অন্যদিকে, যুক্তিবিদ্যা যুক্তির বৈধতা-অবৈধতার সাথে যুক্ত। অবৈধ যুক্তি থেকে বৈধ যুক্তির পার্থক্য নির্ণয় করাই যুক্তিবিদ্যার প্রধান কাজ। নৈতিক নিয়মের ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, স্থান-কাল-পাত্র ভেদে এই বিদ্যার ভিন্নতা থাকে। অর্থাৎ, স্থান-কাল-পাত্র ভেদে নীতিবিদ্যা ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে। অন্যদিকে, যৌক্তিক নিয়মের ক্ষেত্রে কোনো ভিন্নতা দেখা যায় না। অর্থাৎ, স্থান-কাল-পাত্র ভেদে যৌক্তিক নিয়ম একই হয়ে থাকে। আবার দেখা যায়, নৈতিক নিয়মের সাথে বাস্তবতার মিল থাকে। অর্থাৎ, নৈতিক নিয়ম বাস্তবতার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ। কিন্তু যৌক্তিক নিয়মের সাথে সবসময় বাস্তবতার মিল থাকে না। অর্থাৎ, বাস্তবতার অনুরূপ না হয়েও অনেক সময় যুক্তি বৈধ হয়। নৈতিক নিয়ম সমাজের মানুষের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হয়। কেননা নৈতিক নিয়ম না মানলে সামাজিক মানুষকে অনেক খারাপ চোখে দেখা হয়। অপরদিকে, যৌক্তিক নিয়ম যুক্তির বৈধতা-অবৈধতার সাথে যুক্ত। এই নিয়ম মানা সামাজিক মানুষের জন্য অপরিহার্য নয়।
উদ্দীপকে কিশোরদের নৈতিকতা ও সততা নীতিবিদ্যাকে এবং দার্শনিক সক্রেটিসের হেমলক বিষ পান যুক্তিবিদ্যাকে নির্দেশ করে। এই দুটি ঘটনার ভিন্নতা মূলত যুক্তিবিদ্যা ও নীতিবিদ্যার পার্থক্যকে তুলে ধরেছে। সুতরাং দেখা যাচ্ছে যে, নীতিবিদ্যা ও যুক্তিবিদ্যার মধ্যে বিভিন্ন দিক দিয়ে পার্থক্য রয়েছে। তবে বিভিন্ন দিক দিয়ে এই দুটি বিষয়ের মধ্যে সম্পর্কও রয়েছে। কেননা উভয়ই মূল্যবিদ্যার অন্তর্গত দুটি শাখা।

২. বিপ্লব সরকার ও তাঁর স্ত্রী সুজাতা সরকার দু'জন একটি বিদ্যালয়ে জনপ্রিয় শিক্ষক। বিপ্লব সরকার তাঁর পাঠদানে জীবন ও শিল্পের নানদনিক বৈচিত্র্য, শৈল্পিক চিন্তা ও সংস্কৃতির সামগ্রিক সত্তাকে তুলে ধরেন। পক্ষান্তরে, সুজাতা সরকার তাঁর পাঠদানে প্রতীকমূলক পদ্ধতির ব্যবহার করেন। তাঁর পাঠদানের বৈশিষ্ট্য হল সরলতা, যথার্থতা ও উত্তরের নিশ্চয়তা। ইহা পরিমাণ ও পরিমাপের সুস্পষ্ট ধারণা দেয়।
ক. যুক্তিবিদ্যার অভিধানিক অর্থ কী?
খ. সৌন্দর্য বিষয়ক বিজ্ঞান' বলতে কী বোঝায়?
গ. উদ্দীপকে বর্ণিত বিপ্লব সরকার ও সুজাতা সরকারের পাঠদানের বিষয়টি পাঠ্যসূচির কোন বিষয়ের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ ব্যাখ্যা করো।
ঘ. বিপ্লব সরকার ও সুজাতা সরকারের পাঠদানের বিষয়ের তুলনামূলক বিশ্লেষণ করো।

২ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. যুক্তিবিদ্যা (Logic) গ্রিক শব্দ Logos থেকে এসেছে। যার অর্থ হচ্ছে, চিন্তা, শব্দ বা ভাষা।

খ. সৌন্দর্য বিষয়ক বিজ্ঞান বলতে বোঝায় নন্দনতত্ত্বকে (Aesthetics)।
নন্দনতত্ত্ব এমন একটি বিদ্যা যা বিভিন্ন প্রকারে সৌন্দর্য চর্চার জন্য নিয়ম কানুন প্রণয়ন করে এবং সেগুলোকে আমাদের বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করে সুন্দরভাবে জীবন যাপন করার নির্দেশনা দান করে। যেমন: সুন্দর করে কথা বলা, সুন্দর পোশাক পরা, নিজ দেহের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের পরিচর্যা করে সুন্দরভাবে সাজাতে পারা। এ সকল সৌন্দর্য বিজ্ঞানের অন্তর্ভুক্ত।

গ. উদ্দীপকে বর্ণিত বিপ্লব সরকার ও সুজাতা সরকারের পাঠদানের বিষয়টি যথাক্রমে পাঠ্যসূচীর নন্দনতত্ত্ব (Aestheticis) এবং গণিত (Mathematics) বিষয়ের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ।
নন্দনতত্ত্ব হচ্ছে সৌন্দর্য বিষয়ক বিজ্ঞান। নন্দনতত্ত্বে বিভিন্ন প্রকারে সৌন্দর্য চর্চার জন্য নিয়ম-কানুন প্রণয়ন করে এবং সেগুলোকে বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করে সুন্দরভাবে জীবন যাপন করার নির্দেশনা দেয়। যেমন: একজন চিত্র শিল্পীর অংকিত শিল্পকর্মের দ্বারা সামগ্রিক সত্তার সৌন্দর্য ফুটে ওঠে। অপরদিকে, গণিত একটি পরিমাণ সংক্রান্ত বিজ্ঞান। কোনো কিছুর গণনা বা পরিমাণ করাই গণিতের মূল লক্ষ্য। সংখ্যা বা প্রতীক হচ্ছে গণিতের প্রাণ যার মধ্যে কোনো অযৌক্তিক তত্ত্ব নেই এবং এটি সরল, যথার্থ ও নিশ্চিত জ্ঞান দান করে। যেমন: ২ + ২ = ৪, এটি নিশ্চিত জ্ঞান।
উদ্দীপকে বিপ্লব সরকার তাঁর পাঠদানে জীবন ও শিল্পের যে নান্দনিক বৈচিত্র্য তুলে ধরেন তা নন্দনতত্ত্বের জ্ঞানের উপর ভিত্তি করে। যেখানে নন্দনতত্ত্ব সৌন্দর্য চর্চার নিয়ম শিক্ষা দেয় এবং তা বাস্তব জীবনে প্রয়োগের নির্দেশনা প্রদান করে। অপরদিকে, তাঁর স্ত্রী সুজাতা সরকার পাঠদানে প্রতীকমূলক পদ্ধতির ব্যবহার করেন। যে পদ্ধতি সর্বদা সঠিক, সরল এবং নিশ্চিত তথ্য প্রদান করে।

ঘ. বিপ্লব সরকার ও সুজাতা সরকারের পাঠদানের বিষয় হলো নন্দনতত্ত্ব (Aesthetics) এবং গণিত (Mathematics)। যাদের মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ে মিল ও অমিল রয়েছে।
নন্দনতত্ত্ব হচ্ছে সৌন্দর্য বিষয়ক বিজ্ঞান। সৌন্দর্যকে আয়ত্ত্ব করা নন্দনতত্ত্বের আদর্শ। এই বিদ্যা বিভিন্ন প্রকারে সৌন্দর্য চর্চার জন্য নিয়ম-কানুন প্রণয়ন করে এবং সেগুলোর বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করে। অপরদিকে, গণিত একটি পরিমাণ সংক্রান্ত বিজ্ঞান। কোনো কিছুর গণনা বা পরিমাণ করাই গণিতের মূল লক্ষ্য। সংকেত বা প্রতীক ব্যবহার করার মাধ্যমে গণিতের আকার প্রকাশ পায়। নন্দনতত্ত্ব ও গণিত উভয়ই ‘যুক্তিনির্ভর ব্যবহারিক বিজ্ঞান। কারণ উভয় বিষয় নিজস্ব লক্ষ্য অর্জনে বিভিন্ন নিয়ম-কানুন প্রণয়ন করে এবং সেগুলো বাস্তব জীবনে প্রয়োগের নির্দেশ দান করে অপরদিকে নন্দনতত্ত্ব আদর্শমূলক গুণ হলেও গণিতের কোন আদর্শ নেই। গণিতের লক্ষ্য কেবলই পরিমাপ। তাদের মধ্যে বিষয়গত পার্থক্যও বিদ্যমান। নন্দনতত্ত্বের আলোচ্য বিষয় সৌন্দর্য। পক্ষান্তরে, গণিতের আলোচ্য বিষয় সংখ্যা বা পরিমাণ।
উদ্দীপকে বিপ্লব সরকার পাঠদানে জীবন ও শিল্পের যে নানদনিক বৈচিত্র্য তুলে ধরেন তা ননদনতত্ত্বের জ্ঞানের উপর ভিত্তি করে। তার পাঠদানের বিষয়টি সৌন্দর্যবোধ এবং তা চর্চার ওপর গুরুত্ব দেয়। অপরদিকে, তার স্ত্রী সুজাতা সরকার পাঠদানে প্রতীকমূলক পদ্ধতির ব্যবহার করেন। যা গণিতের সাথে সংশ্লিষ্ট। এর পদ্ধতি সর্বদা সঠিক, সরল ও নিশ্চিত জ্ঞান প্রদান করে।
পরিশেষে বলা যায়, ব্যবহারিক এবং যুক্তিনির্ভর মিল ছাড়া নন্দনতত্ত্ব এবং গণিতের প্রকৃতি ভিন্নরূপ। আদর্শ, বিষয়বস্তু এবং নিয়মাবলির ক্ষেত্রে উভয়ের মধ্যে পার্থক্য বিদ্যমান। যুক্তিবিদ্যা এই দুটি বিষয়ের সাথে সম্পর্ক তৈরিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।

৩. দৃশ্যকল্প-১: মি. রহমান যেকোনো বিষয় সুন্দরভাবে উপস্থাপন করেন। অন্যের বক্তব্যে ভুল থাকলে তিনি তা শনাক্ত করেন এবং কৌশলে সংশোধন করে দেন।
দৃশ্যকল্প-২: মি. জামান ক্রেতাদের সাথে ভালো ব্যবহার করেন এবং সীমিত লাভে মানসম্পন্ন পণ্য বিক্রয় করেন।
ক. যুক্তিবিদ্যার জনক কে?
খ. যুক্তিবিদ্যা কোন ধরনের বিজ্ঞান?
গ. উদ্দীপকের দৃশ্যকল্প-১ এ কোন বিষয়টির প্রতিফলন ঘটেছে? সংক্ষেপে ব্যাখ্যা করো।
ঘ. পাঠ্যপুস্তকের আলোকে দৃশ্যকল্প-১ ও ২ এর মধ্যকার পার্থক্য বিশ্লেষণ করো।

৩ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. গ্রিক দার্শনিক এরিস্টটল (Aristotle) যুক্তিবিদ্যার জনক।

খ. যুক্তিবিদ্যা হলো আদর্শনিষ্ঠ বিজ্ঞান (Normative Science)।
যে বিজ্ঞান একটি আদর্শের ভিত্তিতে কোনো আচরণের বিষয় বা ঘটনার মূল্য নির্ধারণ করে তাকে আদর্শনিষ্ঠ বিজ্ঞান বলে: যুক্তিবিদ্যা তার বিষয়বস্তুকে সত্যতার মানদ-- যাচাই করে থাকে। যেমন: সকল মানুষ হয় মরণশীল। যেহেতু অতীত থেকে এখন পর্যন্ত কোনো মানুষ অমর নেই সেজন্য এ যুক্তিটি সত্য। এ কারণে বলা হয়, যুক্তিবিদ্যা একটি আদর্শনিষ্ঠ বিজ্ঞান।

গ. উদ্দীপকে দৃশ্যকল্প-১ এ যুক্তিবিদ্যার (Logic) প্রতিফলন ঘটেছে।
যুক্তিবিদ্যা হচ্ছে চিন্তা বা অনুমান সম্পর্কিত বিজ্ঞান। অর্থাৎ যুক্তিবিদ্যা চিন্তার নিয়মাবলি নিয়ে আলোচনা করে। যেসব নিয়ম অনুসরণ করে যুক্তির বৈধতা নির্ণয় করা যায় সেগুলো আবিষ্কার করা যুক্তিবিদ্যার কাজ। যুক্তিবিদ্যার জ্ঞান আমাদেরকে নিজেদের ও অপরের চিন্তার মধ্যকার ত্রুটি খুঁজে বের করতে এবং তা পরিহার করতে সাহায্য করে। যেমন: কেউ যদি বলে, হাতি হয় পশুরাজ। তাহলে সেটি অশুদ্ধ হবে। কারণ আমরা জানি, পশুরাজ হচ্ছে সিংহ। এরূপ তথ্যগত ত্রুটি পরিহার করতে যুক্তিবিদ্যা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
উদ্দীপকে দৃশ্যকল্প-১-এ বর্ণিত মি. রহমান যেকোনো বিষয় সুন্দরভাবে উপস্থাপন করেন। অন্যের বক্তব্যে ভুল থাকলে তিনি তা শনাক্ত করে কৌশলে সংশোধন করে দেন। তার এরূপ কর্মকান্ড যুক্তিবিদ্যার জ্ঞানের অনুরূপ। কারণ যুক্তিবিদ্যা নিজের এবং অপরের চিন্তার ত্রুটি খুঁজে বের করতে এবং তা পরিহার করতে সাহায্য করে।

ঘ. উদ্দীপকে দৃশ্যকল্প-১ এ পাঠ্যপুস্তকের যুক্তিবিদ্যা এবং দৃশ্যকল্প-২ এ নীতিবিদ্যার ব্যবসায় ও পেশাগত বিষয়ের ওপর আলোকপাত করা হয়েছে।
যুক্তিবিদ্যা হচ্ছে চিন্তা বা অনুমান সম্পর্কিত বিজ্ঞান। সুশৃঙ্খল নিয়ম- কানুন প্রয়োগের মাধ্যমে প্রকৃত সত্য আবিষ্কার করা যুক্তিবিদ্যার কাজ। যেমন- মানুষ হয় মরণশীল। এ বাক্যটি মানুষের মরণশীলতার ওপর নির্ভর করে। প্রকৃতপক্ষে, পৃথিবীর কোনো মানুষ অমর নয়। সুতরাং এ যুক্তিটি সত্য। আর নীতিবিদ্যা সমাজে বসবাসকারী মানুষের আচরণ সম্পর্কিত বিজ্ঞান। কল্যাণ হচ্ছে নীতিবিদ্যার আদর্শ। এটি মানুষের বিভিন্ন কাজকে উচিত-অনুচিত অর্থে মূল্যায়ন করে থাকে। যেমন- ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে ওজনে কম দেওয়া অনৈতিক কাজ। বস্তুত যুক্তিবিদ্যা সঠিক যুক্তিপদ্ধতি আবিষ্কার তথা ঘটনার সত্যতা নির্ণয় করে। যা একটি মানসিক প্রক্রিয়া। অন্যদিকে, নীতিবিদ্যা আমাদের আচরণের ভালো-মন্দ দিক মূল্যায়ন করে থাকে।
উদ্দীপকে দৃশ্যকল্প-১ এ মি. রহমানের যেকোনো বিষয় সুন্দরভাবে উপস্থাপন করা, কারো বক্তব্যে ভুল থাকলে তা শনাক্ত করে কৌশলে সংশোধন করা হচ্ছে তার মানসিক প্রক্রিয়ার ফল। তিনি চিন্তা বা অনুমানের মাধ্যমে এ কাজ সম্পাদন করেন। সুতরাং, তার কর্মকান্ড যুক্তিবিদ্যার সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। অপরপক্ষে, দৃশ্যকল্প-২ এ মি. জামান ব্যবসায়ক্ষেত্রে ক্রেতাদের সাথে ভালো ব্যবহার এবং সীমিত লাভে পণ্য বিক্রি করে থাকেন। তার এ কর্মকান্ড- নৈতিকতার দিকটি প্রকাশ পায়। অর্থাৎ এটি তার বাহ্যিক আচরণের প্রতিফলন। এ কারণে মি. জামানের কর্মকান্ড নীতিবিদ্যার সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।
পরিশেষে বলা যায়, যুক্তিবিদ্যা ও নীতিবিদ্যার আলোচ্য বিষয় ভিন্ন। আমরা জানি, চিন্তা একটি মানসিক প্রক্রিয়া এবং আচরণ একটি বাহ্যিক প্রক্রিয়া। উদ্দীপকে মি. রহমানের কাজটি অনুমান নির্ভর আর মি. জামানের কাজটি আচরণ নির্ভর। এ কারণে তাদের মধ্যে বিষয়গত পার্থক্য বিদ্যমান।

৪. মিজান সাহেব দর্শনের শিক্ষক। তার মেয়ে মিলি একাদশ মানবিক বিভাগে যুক্তিবিদ্যা নিয়ে পড়ে। সে বাবাকে বললো, 'বাবা যুক্তির প্রকারভেদ ও বৈধতা-অবৈধতা বুঝতে পারছি না।' মিজান সাহেব রুলেন, 'যুক্তি গঠনের উপাদান হলো যুক্তিবাক্য। যুক্তির প্রকারভেদ ও যথার্থতা বিচার করতে হলে প্রথমে ধারণা, পদ, অবধারণ ও যুক্তিবাক্যের প্রকৃতি, প্রকারভেদ এবং ব্যাকরণের শব্দ ও বাক্যের সাথে এদের সম্পর্ক সুস্পষ্টভাবে জানা দরকার। সেই সাথে যুক্তিবাক্যে পদের ব্যাপ্যতা অবশ্যই জানতে হবে। তাহলেই তুমি সহজে যুক্তির গঠন, প্রকারভেদ এবং বৈধতা বিচার করতে পারবে।'
ক. একটি যুক্তিবাক্যের অংশ কয়টি ও কী কী?
খ. অবধারণ বলতে কী বোঝ?
গ. উদ্দীপকের আলোকে যুক্তির উপাদানগুলো কী কী? আলোচনা করো।
ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত মিজান সাহেবের বিষয় এবং তার মেয়ে মিলির পাঠ্য বিষয়ের মধ্যে আন্তঃসম্পর্ক আলোচনা করো।

৪ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. একটি যুক্তিবাক্যের ৩টি অংশ। যথা- উদ্দেশ্য, সংযোজক ও বিধেয়।

খ. দুটি ধারণার মানসিক সংযুক্তিকে অবধারণ বলে।
অবধারণ হলো এমন একটি মানসিক প্রক্রিয়া যাকে চেতনার প্রাথমিক স্তর বলা হয়। অবধারণের সাহায্যে আমরা দুটি সার্বিক ধারণাকে মনে মনে তুলনা করে তাদের মধ্যে সম্বন্ধ স্থাপন করি। যেমন- কাক হয় কালো' এখানে 'কাক' ও 'কালো' এই দুইটি পদের মধ্যে সমন্ধ স্থাপন করি বলে এটি অবধারণ।

গ. উদ্দীপকের আলোকে যুক্তির উপাদানগুলো হলো পদ, শব্দ ও যুক্তিবাক্য।
পদ, ও বাক্য যুক্তিবিদ্যার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। পদ হচ্ছে বাক্যের বা বচনের উদ্দেশ্য বা বিধেয় হিসেবে ব্যবহৃত শব্দ। পদের মাধ্যমে আমরা কেবল বিবৃতি বা চিন্তা প্রকাশ করতে পারি। যুক্তিবিদ্যায় শব্দ বা শব্দের সমষ্টিতে পদ গঠিত হয়। তাই শব্দ হচ্ছে ধ্বনি বা অক্ষরের অর্থপূর্ণ সমষ্টি। শব্দকে পদযোগ্য শব্দ, সহ-পদযোগ্য শব্দ এবং পদ- নিরপেক্ষ শব্দে বিভক্ত করা হয়। যুক্তিবিদ্যায় দুটি পদের মধ্যে কোনো সম্পর্কের বর্ণনাকে যুক্তিবাক্য বলে। গঠনগত দিক থেকে যুক্তিবাক্যের তিনটি অংশ থাকে। যথাত উদ্দেশ্য, সংযোজক ও বিধেয়।
উদ্দীপকে বর্ণিত মিজান সাহেবে যুক্তিবিদ্যা বোঝাতে মেয়ে মিলিকে যুক্তির উপাদানসমূহ জানার প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করেন। পাশাপাশি যুক্তির উপাদান হিসেবে পদ, অবধারণ, যুক্তিবাক্যের প্রকৃতি, শব্দ ইত্যাদি বিষয় উল্লেখ করেন। তার বক্তব্যের মাধ্যমেই যুক্তির উপাদান শব্দ, পদ ও যুক্তিবাক্যের বিষয় পরিলক্ষিত হয়।

ঘ. উদ্দীপকে উল্লেখিত মিজান সাহেবের বিষয় তথা দর্শন এবং মেয়ে মিলির পাঠ্য বিষয়ে যুক্তিবিদ্যার বিষয় পরিলক্ষিত হয়।
জনাব মিজান সাহেব দর্শনের শিক্ষক। অন্যদিকে, তার মেয়ে একাদশ শ্রেণির মানবিক বিভাগের ছাত্রী হিসেবে যুক্তিবিদ্যা বিষয়কে পাঠ্য করেছে। নিচে দর্শন ও যুক্তিবিদ্যার আন্তঃসম্পর্ক আলোচনা করা হলো- যুক্তিবিদ্যায় যুক্তিপদ্ধতির যে নিয়মাবলি নির্দেশ করে দর্শনকে তা মেনে চলতে হয় এবং সত্তার স্বরূপ ও অস্তিত্ব সম্পর্কে দর্শন যে যুক্তি প্রদর্শন করে সেগুলোকে অবশ্যই যৌক্তিক নিয়মাবলির সাথে সঙ্গতিপূর্ণ হতে হয়। এদিক থেকে দর্শন যুক্তিবিদ্যার ওপর নির্ভরশীল। অন্যদিকে, দর্শন যুক্তিবিদ্যার মৌলিক নিয়মাবলির নিশ্চয়তা বিধান করে থাকে। যেমন- 'অভেদ নিয়ম', 'বিরোধ নিয়ম', 'প্রকৃতির নিয়মানুবর্তিতা নিয়ম', ‘কার্যকারণ নিয়ম' প্রভৃতি। যুক্তিবিদ্যা এ নিয়মগুলোকে স্বতঃসিদ্ধ হিসেবে স্বীকার করে। দর্শন যুক্তির সাহায্যে এগুলোর বৈধতা প্রতিষ্ঠিত করে।
প্রকৃতপক্ষে দর্শন ও যুক্তিবিদ্যা একে অন্যের পরিপূরক, একে অন্যের ওপর নির্ভরশীল। দর্শন ছাড়া যৌক্তিক চিন্তার অগ্রগতি সম্ভব নয়, ঠিক তেমনি যুক্তিবিদ্যার নিয়মাবলি ছাড়া দার্শনিক বিশ্লেষণ সম্ভব নয়। দর্শনের কষ্টিপাথরে যুক্তিবিদ্যার নিয়মগুলো যাচাই করা হয় বলেই যুক্তিবিদ্যা সেগুলোকে নির্দ্বিধায় মেনে নিতে পারে। যুক্তিবিদ্যার যৌক্তিক পথপ্রদর্শন দর্শনের জন্য এক অতি মূল্যবান ও গুরুত্বপূর্ণ সহায়তা। এজন্য যুক্তিবিদ্যা ও দর্শন পরস্পর অবিচ্ছেদ্য সম্পর্কে আবদ্ধ।

৫. সভ্যতার উন্নয়নের সাথে সাথে মানুষের জীবনযাত্রায় পরিবর্তন এসেছে। বৈজ্ঞানিক গবেষণার মাধ্যমে মানুষ নতুন নতুন সম্ভাবনার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এর পিছনে কাজ করেছে কেবল মানুষের উন্নত চিন্তা। রেহানা বলল, সঠিক চিন্তাই মানুষকে বৈধ থেকে অবৈধ বিষয়ের পার্থক্য বোঝাতে সক্ষম। আর এটিই মানুষের কাছে সত্যের আদর্শ। সত্য তাই যা সবার জন্য কল্যাণ বয়ে আনে। অন্যদিকে সোহানা বলল মানুষ যেসব কাজ করে সেগুলোর সাথে তাকে নৈতিক দিকটিও বিবেচনায় রাখতে হয়।
ক. কলাবিদ্যা কী?
খ. যুক্তিবিদ্যাকে কি বিজ্ঞান বলা যায়? বুঝিয়ে লেখো।
গ. উদ্দীপক অনুযায়ী রেহানার বক্তব্যে যে দিকটি ফুটে উঠেছে তার বাস্তব উপযোগিতা ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপক অনুযায়ী রেহানা আর সোহানার বক্তব্যে যে দুটি দিক ফুটে উঠেছে তার তুলনামূলক বিশ্লেষণ করো।

৫ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. কোনো বিশেষ জ্ঞানকে বাস্তবে প্রয়োগ করার কলাকৌশল সম্পর্কিত বিদ্যাকে কলাবিদ্যা বলে।

খ. হ্যাঁ, যুক্তিবিদ্যাকে বিজ্ঞান বলা যায়।
বিজ্ঞান যেমন সাধারণ নীতি প্রণয়নের চেষ্টা করে, আর বিশেষ ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট সূত্র প্রবর্তন করে, যুক্তিবিদ্যা তেমনি বৈধ যুক্তি থেকে অবৈধ যুক্তির পার্থক্য নির্ণয়ের জন্য কিছু নিয়ম নির্ধারণ করে। তাই এসব বিবেচনায় যুক্তিবিদ্যাকে যথার্থই বিজ্ঞান বলা চলে।

গ. উদ্দীপকে রেহানার বক্তব্য যুক্তিবিদ্যাকে নির্দেশ করে।
জীবনের সকল ক্ষেত্রে যে কোনো সমস্যায় যথার্থ সমাধান সম্পর্কে কেবল যুক্তিবিদ্যাই যথার্থ পথ নির্দেশ করতে পারে। বাস্তব জীবনে প্রত্যেকটি মানুষের চাকরির উন্নয়ন ও পেশাগত প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে যুক্তিবিদ্যা সহায়তা করতে পারে। ব্যবস্থাপনা, প্রশাসন, আইন, অর্থ, পদার্থ অন্যান্য জ্ঞান শাখা সকল ক্ষেত্রেই যুক্তিবিদ্যার জ্ঞান অপরিহার্য। আমাদের চিন্তা-ভাবনা ও কাজ যৌক্তিকভাবে পরিচালিত হলে ব্যক্তিগত পরিমন্ডল থেকে শুরু করে পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় ক্ষেত্রে সমস্যা অনেক কমে আসবে। অন্যের মতের প্রতি আমরা যেমন সহনশীল হতে পারব তেমনি নিজের জীবনের অনেক সমস্যাই আর সমস্যারূপে প্রতীয়মান হবে না।
উদ্দীপকে রেহানার বক্তব্য অনুসারে দেখা যাচ্ছে যে, যুক্তিবিদ্যা শুধু শ্রেণিকক্ষে সীমাবদ্ধ নেই বরং বাস্তব জীবনেও এর উপযোগীতা অনস্বীকার্য।

ঘ. উদ্দীপকে সোহানা ও রেহানার বক্তব্যে যথাক্রমে নীতিবিদ্যা ও যুক্তিবিদ্যার পরিচয় পাওয়া যায়।
নীতিবিদ্যা মানব আচরণের সাথে যুক্ত। এই বিষয়টি মানুষের ঐচ্ছিক আচরণের ভালোত্ব-মন্দত্ব ইত্যাদি নৈতিক আদর্শের ভিত্তিতে মূল্যায়ন করে। অন্যদিকে, যুক্তিবিদ্যা যুক্তির বৈধতা-অবৈধতার সাথে যুক্ত। অবৈধ যুক্তি থেকে বৈধ যুক্তির পার্থক্য নির্ণয় করাই যুক্তিবিদ্যার প্রধান কাজ। নৈতিক নিয়মের ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, স্থান-কাল-পাত্র ভেদে এই বিদ্যার ভিন্নতা থাকে। অর্থাৎ, স্থান-কাল-পাত্রভেদে নীতিবিদ্যা ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে। অন্যদিকে, যৌক্তিক নিয়মের ক্ষেত্রে কোনো ভিন্নতা দেখা যায় না। অর্থাৎ, স্থান-কাল-পাত্রভেদে যৌক্তিক নিয়ম একই হয়ে থাকে। আবার দেখা যায়, নৈতিক নিয়মের সাথে বাস্তবতার মিল থাকে। অর্থাৎ, নৈতিক নিয়ম বাস্তবতার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ। কিন্তু যৌক্তিক নিয়মের সাথে সবসময় বাস্তবতার মিল থাকে না। অর্থাৎ, বাস্তবতার অনুরূপ না হয়েও অনেক সময় যুক্তি বৈধ হয়। নৈতিক নিয়ম সমাজের মানুষের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হয়। কেননা নৈতিক নিয়ম না মানলে সমাজে মানুষকে অনেক খারাপ চোখে দেখা হয়। অপরদিকে, যৌক্তিক নিয়ম যুক্তির বৈধতা-অবৈধতার সাথে যুক্ত। এই নিয়ম মানা সামাজিক মানুষের জন্য অপরিহার্য নয়।
উদ্দীপকে রেহানা সঠিক চিন্তার মাধ্যমে বৈধ-অবৈধ বিষয়ের পার্থক্যের কথা বলেছে যা যুক্তিবিদ্যা। সোহানা মানুষ যেস কাজ তার মান নৈতিক দিকটি বিবেচনায় রাখার কথা বলে যা নীতিবিদ্যা। এই দুটি ঘটনার ভিন্নতা মূলত যুক্তিবিদ্যা ও নীতিবিদ্যার তুলনামূলক দিকগুলোকে ধরেছে।
সুতরাং দেখা যাচ্ছে যে, নীতিবিদ্যা ও যুক্তিবিদ্যার মধ্যে বিভিন্ন দিক দিয়ে পার্থক্য রয়েছে। তবে বিভিন্ন দিক দিয়ে এই দুটি বিষয়ের মধ্যে সম্পর্কও রয়েছে। কেননা উভয়ই মূল্যবিদ্যার অন্তর্গত দুটি শাখা।

৬. দৃশ্যকল্প-১: আকবর আলী সীমিত লাভে ব্যবসা করেন।
ওজনে সঠিক দেন। ফ্রেশ ফল বিক্রয় করেন। তিনি সব সময় যৌক্তিক চিন্তা ও কাজ করতে পছন্দ করেন। তিনি সত্যকে গ্রহণ করেন। অসত্যকে বর্জন করেন।
দৃশ্যকল্প-২: আঁখি চমৎকার ছবি আঁকে এবং গান শুনে, চমৎকার করে কথা বলে। সে মার্জিত পোশাক পরিধান করে। আসলে সে সুন্দরের পূজারী।
ক. যুক্তিবিদ্যার জনক কে?
খ. যুক্তিবিদ্যা একটি চিন্তার বিজ্ঞান বুঝিয়ে লেখো।
গ. দৃশ্যকল্প-২ এ তোমার পাঠ্যবই এর কোন বিষয়ের প্রতিফলন ঘটেছে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. দৃশ্যকল্প-১ এ যে দুটি বিষয়ের প্রতিফলন রয়েছে তাদের সম্পর্ক বিশ্লেষণ করো।

৬ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. যুক্তিবিদ্যার জনক হলেন প্রখ্যাত গ্রিক দার্শনিক এরিস্টটল।

খ. 'যুক্তিবিদ্যা চিন্তার বিজ্ঞান'- উক্তিটি যথার্থ।
চিন্তা মানুষের একটি বুদ্ধিমূলক প্রক্রিয়া। চিন্তা বিভিন্ন ধরনের। যেমন- স্মৃতি, কল্পনা, স্মরণ, পর্যবেক্ষণ, অনুমান ইত্যাদি। সমস্ত চিন্তার মধ্যে উন্নততর চিন্তা হলো যুক্তিপদ্ধতি বা অনুমান। অতএব বলা যায়, চিন্তা পদ্ধতি মূলত যুক্তিবিদ্যাকে নির্দেশ করে। নিয়ম অনুযায়ী চিন্তা করে সত্যকে অর্জন ও ভুলকে বর্জন করাই হলো চিন্তার প্রকৃতি বা যুক্তিবিদ্যার প্রকৃতি।

গ. উদ্দীপকে দৃশ্যকল্প-২ এ পাঠ্যবইয়ের নন্দনতত্ত্ব (Aesthetics) বিষয়ের প্রতিফলন ঘটেছে।
নন্দনতত্ত্ব হচ্ছে সৌন্দর্য বিষয়ক বিজ্ঞান। এটি এমন একটি বিদ্যা যা বিভিন্ন নান্দনিক বিষয়ের নিয়মকানুন প্রণয়ন করে এবং সেগুলোকে আমাদের বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করে সুন্দরভাবে জীবনযাপন করতে সাহায্য করে। বস্তুত মানুষ মাত্রই সুন্দরের পূজারী। নন্দনতত্ত্বের আদর্শ হচ্ছে সুন্দরকে আয়ত্ত করা। যেমন: সুন্দর করে কথা বলতে পারা, সুন্দর পোশাক পরিধান করা, দৈহিক পরিচর্যা ইত্যাদি বিষয়গুলো নন্দনতত্ত্বের মাধ্যমে শিক্ষা নেয়।
দৃশ্যকল্প-২ এ আঁখির চমৎকার ছবি আঁকা, গান শোনা, চমৎকার করে কথা বলতে পারা এবং মার্জিত পোশাক পরিধানের গুণগুলি সে নন্দনতত্ত্ব থেকে গ্রহণ করেছে। কারণ নন্দনতত্ত্ব জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সৌন্দর্য চর্চার শিক্ষা দেয়। তাই আঁখি সৌন্দর্য চর্চার নিয়মকানুন, কলা-কৌশল শিক্ষা নিয়ে বাস্তব জীবনে তার যথাযথ প্রয়োগ ঘটিয়েছে।

ঘ. দৃশ্যকল্প-১ এ নীতিবিদ্যা (Ethics) এবং যুক্তিবিদ্যা (Logic) বিষয় দুটির প্রতিফলন ঘটেছে।
যে বিদ্যা সমাজে বসবাসকারী মানুষে আচরণের ভালো-মন্দ উচিত- অনুচিত নৈতিক আদর্শের আলোকে মূল্যায়ন করে তাকে নীতিবিদ্যা বলে। আর যে বিদ্যা বৈধ যুক্তি থেকে অবৈধ যুক্তিকে পৃথক করার পদ্ধতি ও নিয়মাবলি শিক্ষা দেয় তাকে যুক্তিবিদ্যা বলে। নীতিবিদ্যা ও যুক্তিবিদ্যার সম্পর্ক আলোচনা করলে তাদের মধ্যে কিছু সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্য পরিলক্ষিত হয়। সাদৃশ্যের ক্ষেত্রে উভয়ই মূল্যায়নমূলক বিদ্যা। উভয়েই কিছু নির্দিষ্ট মানদ- অনুসরণ করে এবং আদর্শ প্রতিষ্ঠায় তৎপর। বৈসাদৃশ্যের ক্ষেত্রে দেখা যায় ত নীতিবিদ্যা আচার আচরণ সংক্রান্ত বিদ্যা। আর যুক্তিবিদ্যা যুক্তি সংক্রান্ত বিদ্যা। নীতিবিদ্যার আদর্শ হলো কল্যাণ। আর যুক্তিবিদ্যার আদর্শ হলো সত্য। নীতিবিদ্যার বিষয়গুলো স্থান, কাল, পাত্র ভেদে ভিন্ন হয়। কিন্তু যুক্তিবিদ্যার বিষয়গুলো স্থান, কাল, পাত্র ভেদে একই রূপ হয়। নীতিবিদ্যার নিয়ম না মানলে মানুষকে সমাজে খারাপ চোখে দেখা হয়। কিন্তু যৌক্তিক নিয়মের ক্ষেত্রে তেমনটা করা হয় না। নীতিবিদ্যা মানুষের সব ধরনের কর্মকান্ড-র নৈতিক মান বিচার করে। অন্যদিকে, যুক্তিবিদ্যা মানুষের চিন্তা ও কর্মের যৌক্তিকতা বিচার করে।
উদ্দীপকে দৃশ্যকল্প-১ এ আকবর আলীর সীমিত লাভে ব্যবসা, ওজনে সঠিক দেওয়া এবং ফ্রেশ ফল বিক্রি করা নৈতিকতার প্রতিফলন। আবার তার সব সময়ে যৌক্তিক চিন্তা ও কাজ করা, সত্যকে গ্রহণ এবং অসত্যকে বর্জন করার বিষয়গুলো যুক্তিবিদ্যার কলা-কৌশলের ব্যবহারিক রূপ।
পরিশেষে বলা যায়, আকবর আলীর চিন্তা ও কাজের সাথে যুক্তিবিদ্যা এবং নীতিবিদ্যার মিল লক্ষণীয়। তার ব্যবসায় ক্ষেত্রে সীমিত লাভ, ওজনে সঠিক দেওয়া, ফ্রেশ ফল বিক্রি নীতিবিদ্যার আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে করা। অপরদিকে, যৌক্তিক চিন্তা ও কাজ, সত্যকে গ্রহণ এবং অসত্যকে বর্জন করার দিকগুলো যুক্তিবিদ্যার কলা-কৌশল। যার লক্ষ্য ভুল-ত্রুটি সংশোধন করে সততার সাথে জীবন পরিচালনা করা।

৭. ফারহান ও মুগ্ধ দুই ভাই। উভয়ই মেধাবী শিক্ষার্থী। ফারহান যেকোনো বিষয় যৌক্তিকভাবে চিন্তা করার মাধ্যমে বোঝার চেষ্টা করে। এইচ.এস.সি.তে পড়ার সময় সে যুক্তিবিদ্যা নেয়। তখন থেকেই সে অন্ধবিশ্বাস ও কুসংস্কারকে অপছন্দ করে। অন্যদিকে মুগ্ধ তার চেয়ে জুনিয়র। আধুনিক তথ্য প্রযুক্তির প্রতি তার প্রবল ঝোঁক। কারণ খুব সহজেই এর মাধ্যমে সে তথ্য সংরক্ষণ, বিশ্লেষণ ও নিজের কাজে ব্যবহার করতে পারে।
ক. দর্শন কাকে বলে?
খ. পেশাগত জীবনে নীতিবিদ্যার প্রয়োজন কেন?
গ. মুগ্ধ কোন বিষয় নিয়ে পড়ছে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. ফারহানের জীবনে যুক্তিবিদ্যার বাস্তব প্রয়োগ ঘটেছে- কথাটির মূল্যায়ন করো।

৭ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. জগত ও জীবন সম্পর্কিত কিছু মৌলিক বিষয়ের যৌক্তিক অনুসন্ধানই হলো দর্শন।

খ. প্রতিটি পেশায় কোনো না কোনো নৈতিক ভিত্তি কাজ করে বিধায় পেশাগত জীবনে নীতিবিদ্যার প্রয়োজন রয়েছে।
সকল পেশার সাথে ভালো-মন্দ, ন্যায়-অন্যায় এবং বৈধতা-অবৈধতা ও কর্তব্যবোধের প্রশ্ন জড়িত আছে। তাই নীতিবিদ্যার নীতিসমূহ অনুসরণ করলে মানুষ খুব সহজে সফলতা লাভ করতে পারে। নীতিবিদ্যার আদর্শ মানুষের পেশাগত জীবনকে নৈতিক করে তোলে। এজন্য পেশাগত জীবনে নীতিবিদ্যার শিক্ষা অতীব প্রয়োজনীয়।

গ. উদ্দীপকে মুগ্ধ যে বিষয়টি নিয়ে পড়ছে তা হলো কম্পিউটার বিজ্ঞান (Computer Science)।
কম্পিউটার বিজ্ঞান জ্ঞানের একটি শাখা যেখানে তথ্য ও গণনার তাত্ত্বিক ভিত্তির গবেষণা করা হয়। কম্পিউটার নামক যন্ত্রে এসব গণনা সম্পাদনের ব্যবহারিক পদ্ধতির প্রয়োগ ও বাস্তবায়ন সম্পর্কে আলোচনা করা হয়। এর মূল লক্ষ্য হচ্ছে, তথ্যের উন্নত ব্যবহারের মাধ্যমে মানব জাতির বর্তমান ও ভবিষ্যতের উন্নতি সাধন। তত্ত্ব, প্রকৌশল ও পরীক্ষা- নিরীক্ষা এ তিন মিলেই কম্পিউটার বিজ্ঞান। যেমন: কম্পিউটার বিজ্ঞানীরা রোবট তৈরির তত্ত্ব দাঁড় করে ঐ তত্ত্বের ওপর ভিত্তি করে হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যারের সমন্বয়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করেন।
উদ্দীপকে মুগ্ধ আধুনিক তথ্য প্রযুক্তিকে পছন্দ করে। কেননা এর মাধ্যমে সে সহজেই তথ্য সংরক্ষণ, বিশ্লেষণ ও নিজের কাজে ব্যবহার করতে পারবে। তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে তথ্য সংরক্ষণ ও তা কাজে লাগানোর এই পদ্ধতি কম্পিউটার বিজ্ঞানকে নির্দেশ করে।

ঘ. যুক্তিবিদ্যা এমন একটি বিদ্যা যা মানুষকে যৌক্তিকভাবে চিন্তা করতে শেখায় এবং সত্যকে জানতে সহযোগিতা করে। ফারহানের জীবনে এর প্রয়োগ দেখা যায়।
যুক্তিবিদ্যা আমাদের শুদ্ধভাবে চিন্তা করতে সাহায্য করে। ভ্রান্তিকে উদ্ঘাটন ও আমাদের বুদ্ধিবৃত্তিকে শাণিত করতে যুক্তিবিদ্যার জ্ঞান অপরিহার্য। এ জ্ঞানের মাধ্যমে আমরা যেমন নিজেদের চিন্তার ভুল-ভ্রান্তি নির্ণয় করতে পারি তেমনি অন্য মানুষের চিন্তার ভুল-ভ্রান্তিও ধরিয়ে দিতে পারি। যুক্তিবিদ্যা চর্চা ও অনুশীলনের ফলে আমাদের চিন্তাশক্তির উৎকর্ষ সাধিত হয়। এর ফলে আমরা সূক্ষ্ম চিন্তা করার ক্ষমতা অর্জন করি।
উদ্দীপকে ফারহান যেকোনো বিষয় যৌক্তিকভাবে চিন্তা করে এবং অন্ধ বিশ্বাস ও কুসংস্কার অপছন্দ করে। তার এই মনোভাব যুক্তিবিদ্যার স্পষ্ট প্রতিফলন এবং যুক্তিবিদ্যার বাস্তব প্রয়োগকে নির্দেশ করে।
সুতরাং বলা যায়, যুক্তিবিদ্যা মানুষের জীবন পদ্ধতিকে পরিবর্তন করে দিতে পারে। তাই প্রায়োগিক দিক বিবেচনায় বাস্তব জীবনে যুক্তিবিদ্যার প্রয়োগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

৮. দিব্যদের পরিবারের সবাই খুব ছিমছাম থাকে। ঘরের জিনিসপত্রও তারা সবাই গুছিয়ে জায়গা মতো রাখে। দিব্যর বাবা ঘর-বাড়ি সাজিয়ে রাখার জন্য সুন্দর ফুলের টব, ফুল ও বিভিন্ন ধরনের উপকরণ কিনে আনেন। দিব্যর মা সেগুলি দিয়ে খুব সুন্দর করে সাজিয়ে ঘর-বাড়ি পরিপাটি করে রাখেন। তাদের ঘরে গেলেই সবার দৃষ্টি আকৃষ্ট হয় আর তাদের রুচি-বোধের পরিচয় পাওয়া যায়। অন্যদিকে দিব্যর কাকা রহমান সাহেব ও তার বন্ধু আবিদ একই মহাজনের কাছ থেকে কাপড় কিনে দোকানে বিক্রি করে। রহমান সাহেব তার দোকানের সব কাপড় সুন্দর করে সাজিয়ে রাখেন, ন্যায্য মূল্যে কাপড় বিক্রয় করেন ও মহাজনের টাকা সময়মতো পরিশোধ করলেও আবিদ তা করেন না। ফলে আবিদের দোকানে লোকসান দেখা যায়।
ক. আদর্শনিষ্ঠ বিজ্ঞান কাকে বলে?
খ. কোন দিক থেকে যুক্তিবিদ্যা গণিতের সাথে সম্পর্কযুক্ত? ব্যাখ্যা করো।
গ. দিব্যদের পরিবারের চিত্রে যুক্তিবিদ্যার প্রায়োগিক দিকের কোন বিষয়টি ফুটে ওঠে?
ঘ. উদ্দীপকে রহমান সাহেব ও আবিদের কর্মকান্ড- যে প্রায়োগিক দিকটি ফুটে উঠেছে তার সাথে যুক্তিবিদ্যার তুলনামূলক আলোচনা করো।

৮ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. যে বিজ্ঞান কোনো আদর্শের আলোকে কোনো বিষয় বা ঘটনা আসলে কেমন হওয়া উচিত তা নিয়ে আলোচনা করে তাকে আদর্শনিষ্ঠ বিজ্ঞান বলে।

খ. তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক দিক থেকেই যুক্তিবিদ্যা ও গণিত পরস্পর নির্ভরশীল।
যুক্তিবিদ্যা গণিতকে বিকশিত হওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে। অপরদিকে গণিতের তাত্ত্বিক প্রয়োগ যুক্তিবিদ্যার সমকালীন বিকাশকে করেছে সমৃদ্ধ থেকে সমৃদ্ধতর। ফলে যুক্তিবিদ্যা ও গণিত একে অপরকে ছাড়া বিকশিত হতে পারে না। বর্তমানে তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক উভয় দিক থেকেই যুক্তিবিদ্যা ও গণিত বিষয় দুটি পরস্পর পরস্পরের পরিপূরক।

গ. উদ্দীপকে দিব্যদের পরিবারের চিত্রে নন্দনতত্ত্ব (Aesthetics) বিষয়ের প্রতিফলন ঘটেছে।
নন্দনতত্ত্ব হচ্ছে সৌন্দর্য বিষয়ক বিজ্ঞান। এটি এমন একটি বিদ্যা যা বিভিন্ন নান্দনিক বিষয়ের নিয়মকানুন প্রণয়ন করে এবং সেগুলোকে আমাদের বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করে সুন্দরভাবে জীবনযাপন করতে সাহায্য করে। বস্তুত মানুষ মাত্রই সুন্দরের পূজারী। নন্দনতত্ত্বের আদর্শ হচ্ছে সুন্দরকে আয়ত্ত করা। যেমন: সুন্দর করে কথা বলতে পারা, সুন্দর পোশাক পরিধান করা, দৈহিক পরিচর্যা ইত্যাদি বিষয়গুলো নন্দনতত্ত্বের মাধ্যমে শিক্ষা নেয়।
দিব্যদের বাড়ি সুন্দর ফুলের টব, ফুল ও বিভিন্ন ধরনের উপকরণ দিয়ে পরিপাটি করে সাজানো। এখানে তাদের রুচিবোধের পরিচয় পাওয়া যায় যা সে নন্দনতত্ত্ব থেকে গ্রহণ করেছে। কারণ নন্দনতত্ত্ব জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সৌন্দর্য চর্চার শিক্ষা দেয়। তাই দিব্যর বাবা-মা, সৌন্দর্য চর্চার নিয়মকানুন, কলা-কৌশল শিক্ষা নিয়ে বাস্তব জীবনে তার যথাযথ প্রয়োগ ঘটিয়েছে।

ঘ. উদ্দীপকে আবিদ সাহেব ও রহমানের কর্মকান্ড- নীতিবিদ্যার ব্যবসায় ও পেশাগত দিক এবং যুক্তিবিদ্যার মধ্যে কিছু সাদৃশ্য-বৈসাদৃশ্য লক্ষ করা যায়।
যুক্তিবিদ্যা হচ্ছে চিন্তা বা অনুমান সম্পর্কিত বিজ্ঞান। সুশৃঙ্খল নিয়ম- কানুন প্রয়োগের মাধ্যমে প্রকৃত সত্য আবিষ্কার করা যুক্তিবিদ্যার কাজ। যেমন- মানুষ হয় মরণশীল। এ বাক্যটি মানুষের মরণশীলতার ওপর নির্ভর করে। প্রকৃতপক্ষে, পৃথিবীর কোনো মানুষ অমর নয়। সুতরাং এ যুক্তিটি সত্য। আর নীতিবিদ্যা সমাজে বসবাসকারী মানুষের আচরণ সম্পর্কিত বিজ্ঞান। কল্যাণ হচ্ছে নীতিবিদ্যার আদর্শ। এটি মানুষের বিভিন্ন কাজকে উচিত-অনুচিত অর্থে মূল্যায়ন করে থাকে। যেমন- ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে ওজনে কম দেওয়া অনৈতিক কাজ। বস্তুত যুক্তিবিদ্যা সঠিক যুক্তিপদ্ধতি আবিষ্কার তথা ঘটনার সত্যতা নির্ণয় করে। যা একটি মানসিক প্রক্রিয়া। অন্যদিকে, নীতিবিদ্যা আমাদের আচরণের ভালো-মন্দ দিক মূল্যায়ন করে থাকে।
উদ্দীপকে রহমান সাহেব দোকানের সব কাপড় সুন্দর করে সাজিয়ে রাখেন, ন্যায্যমূল্যে কাপড় বিক্রি করেন ও মহাজনের টাকা সময়মত পরিশোধ করেন। অর্থাৎ তার বাহ্যিক আচরণে নৈতিকতার প্রতিফলন দেখা যায় যা পেশাগত নীতিবিদ্যা আবার, আবিদ সাহেব এ কাজগুলো করেন না। এ জন্য তার কর্মকান্ড পেশাগত নীতি পরিপন্থী। পেশাগত নীতিবিদ্যা হলো বাহ্যিক আচরণের প্রতিফলন। অপরদিকে যুক্তিবিদ্যা হলো অবৈধ যুক্তি থেকে বৈধ যুক্তি পৃথক করার প্রক্রিয়া, যা একটি মানসিক প্রক্রিয়া।
পরিশেষে বলা যায়, যুক্তিবিদ্যা ও নীতিবিদ্যার আলোচ্য বিষয় ভিন্ন। আমরা জানি, চিন্তা একটি মানসিক প্রক্রিয়া এবং আচরণ একটি বাহ্যিক প্রক্রিয়া।

৯. মুনমুন ও মিথুন দুই বান্ধবী। তারা তাদের দেশকে মনেপ্রাণে ভালোবাসে। নিম্ন আয়ের দেশ থেকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার খবরে তাদের মন যেমন আনন্দে ভরে যায়। তেমনি দেশের মানুষের মধ্যে অশান্তি, বিরোধ, নারী ও শিশু নির্যাতনের খবরে তারা কষ্ট অনুভব করে। তাদের মতে, যা কিছু যৌক্তিক, সুন্দর ও কল্যাণকর তা সবাইকে মেনে চলা উচিত।
ক. নন্দনতত্ত্বের ইংরেজি প্রতিশব্দ কী?
খ. নন্দনতত্ত্ব কাকে বলে?
গ. যুক্তিবিদ্যার সাথে নন্দনতত্ত্বের পার্থক্য নিরূপণ করো।
ঘ. উদ্দীপকে যে দুটি বিষয়ের ইঙ্গিত রয়েছে তাদের সম্পর্ক ব্যাখ্যা করো।

৯ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. নন্দনতত্ত্বের উংরেজি প্রতিশব্দ Aesthetics।

খ. সৌন্দর্যবিষয়ক বিজ্ঞানকে নন্দন তত্ত্ব বলে।
নন্দনতত্ত্ব এমন একটি বিদ্যা যা বিভিন্ন প্রকারের সৌন্দর্য চর্চার জন্য নিয়ম-কানুন প্রণয়ন করে এবং সেগুলোকে আমাদের বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করে সুন্দরভাবে জীবনযাপন করার নির্দেশনা দেয়। যেমন: সুন্দর করে কথা বলা, সুন্দর পোশাক পরা, বাড়ির সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য বাগান করা এগুলো সৌন্দর্য বিজ্ঞানের অন্তর্ভুক্ত।

গ. বিভিন্ন দিক থেকে যুক্তিবিদ্যা ও নন্দনতত্ত্বের মধ্যে মিল থাকলেও বেশকিছু দিক থেকে পার্থক্যও রয়েছে।
যুক্তিবিদ্যা ও নন্দনতত্ত্বের পার্থক্য নিচে নিরূপণ করা হলো। যেমন: যুক্তিবিদ্যা বচনের সত্যতা ও যুক্তির বৈধতা নিয়ে আলোচনা করে। পক্ষান্তরে নন্দনতত্ত্ব সৌন্দর্য, শিল্প, রুচিবোধ, রসবোধ নিয়ে আলোচনা করে। যুক্তিবিদ্যায় আবেগ-অনুভূতির স্থান নেই। কিন্তু নন্দনতত্ত্বে ঐগুলো বিশেষ ভূমিকা পালন করে। যুক্তিবিদ্যা একটি বিজ্ঞান কিন্তু নন্দনতত্ত্ব বিজ্ঞান বলে বিবেচিত হয় না। যুক্তিবিদ্যার সুনির্দিষ্ট পদ্ধতি রয়েছে। নন্দনতত্ত্বের কোনো পদ্ধতি পাওয়া যায় না। যুক্তিবিদ্যা নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম অনুসরণ করে। কিন্তু নন্দনতত্ত্বের কোনো নিয়ম নেই। যুক্তিবিদ্যা বুদ্ধিনির্ভর। পক্ষান্তরে নন্দনতত্ত্ব অভিজ্ঞতামূলক। যুক্তিবিদ্যায় কোনো কিছুকে প্রশংসা করা হয় না। কিন্তু নন্দনতত্ত্ব কোনো ব্যক্তি বা বস্তু সম্পর্কে প্রশংসা করে থাকে।
পরিশেষে বলা যায় যে, যুক্তিবিদ্যা ও নন্দনতত্ত্ব একই শাখার দুটি উপশাখা হলেও অনেক ক্ষেত্রেই উভয়ের মধ্যে বিপরীতমুখী সম্পর্ক বিদ্যমান।

ঘ. উদ্দীপকে যুক্তিবিদ্যা ও নীতিবিদ্যা বিষয় দুটির ইঙ্গিত রয়েছে।
যে বিদ্যা সমাজে বসবাসকারী মানুষের আচারণের ভালো-মন্দ, উচিত- অনুচিত নৈতিক আদর্শের আলোকে মূল্যায়ন করে তাকে নীতিবিদ্যা বলে। আর যে বিদ্যা বৈধ যুক্তি থেকে অবৈধ যুক্তিকে পৃথক করার পদ্ধতি ও নিয়মাবলির শিক্ষা দেয় তাকে যুক্তিবিদ্যা বলে। নীতিবিদ্যা ও যুক্তিবিদ্যার সম্পর্ক আলোচনা করলে তাদের মধ্যে কিছু সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্য লক্ষ করা যায়। সাদৃশ্যের ক্ষেত্রে উভয়ই মূল্যায়নমূলক বিদ্যা। উভয়ই কিছু মানদ- অনুসরণ করে এবং আদর্শ প্রতিষ্ঠায় তৎপর। বৈসাদৃশ্যের ক্ষেত্রে দেখা যায় নীতিবিদ্যা আচার-আচরণ সংক্রান্ত বিদ্যা আর যুক্তিবিদ্যা হলো যুক্তি সংক্রান্ত বিদ্যা। নীতিবিদ্যার আদর্শ কল্যাণ। পক্ষান্তরে যুক্তিবিদ্যার আদর্শ সত্য। নীতিবিদ্যার বিষয়গুলো স্থান, কাল, পাত্রভেদে ভিন্ন হয়। কিন্তু যুক্তিবিদ্যার বিষয়গুলো স্থান, কাল, পাত্রভেদে একই রূপ হয়।
উদ্দীপকের আলোকে যুক্তিবিদ্যা ও নীতিবিদ্যার সম্পর্ক অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ। যুক্তিবিদ্যা ও নীতিবিদ্যা আদর্শগত দিক থেকে, সত্যের দিক থেকে সম্পর্কিত। উভয়ের উদ্দেশ্য সত্য, সুন্দর ও কল্যাণের দিকে ধাবিত হওয়া।
পরিশেষে বলা যায় যে, আদর্শনিষ্ঠ বিজ্ঞান হিসেবে যুক্তিবিদ্যা ও নীতিবিদ্যা একই সূত্রে গাঁথা। আদর্শের বিকাশের জন্য তা ভিন্ন ভিন্ন পদ্ধতি প্রয়োগ করে। মানবজীবনকে সুন্দর ও সার্থক করে তোলার ক্ষেত্রে উভয়ের পারস্পরিক সম্পর্কের গুরুত্ব অত্যধিক।

১০. দৃশ্যকল্প-১: প্রথম আলোচক বললেন- ‘‘সক্রেটিস শারীরিক সৌন্দর্য নয় বরং প্রখর যুক্তিবাদিতার জন্য যুগে যুগে মানুষের অন্তরে শ্রদ্ধার পাত্র হিসেবে বিরাজমান।"
দৃশ্যকল্প-২: দ্বিতীয় আলোচক বললেন ‘‘সক্রেটিসের মতে, যার যা কর্তব্য তা পালন করাই হলো ন্যায়।"
ক. দর্শনের তিনটি শাখা কী কী?
খ. যুক্তিবিদ্যা, নীতিবিদ্যা ও নন্দনতত্ত্ব দর্শনের কোন শাখায় আলোচনা করা হয়?
গ. দৃশ্যকল্প-১ এর মূল বিষয় দর্শনে প্রয়োজন আছে কি?
ঘ. দৃশ্যকল্প-১ ও ২ এর সম্পর্ক আলোচনা করো।

১০ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. দর্শনের তিনটি শাখা হলো- i. জ্ঞানবিদ্যা ii. তত্ত্ববিদ্যা এবং iii. মূল্যবিদ্যা।

খ. যুক্তিবিদ্যা, নীতিবিদ্যা ও নন্দনতত্ত্ব দর্শনের মূল্যবিদ্যা শাখায় আলোচনা করা হয়েছে।
দর্শনের আলোচ্য বিষয়ের অন্যতম হলো মূল্যবিদ্যা। আবার মূল্যবিদ্যার আলোচ্য বিষয় হলো সত্য, সুন্দর ও মঙ্গল। এর মধ্যে সত্য হচ্ছে যুক্তিবিদ্যার আদর্শ, সুন্দর হচ্ছে নন্দনতত্ত্বের আদর্শ এবং মঙ্গল কল্যাণের আদর্শ। অর্থাৎ যে বিদ্যা মানুষের ঐচ্ছিক আচরণের সত্য, সুন্দর ও কল্যাণকর বিষয়গুলো মূল্যায়ন করে তাকে মূল্যবিদ্যা বলে।

গ. দৃশ্যকল্প-১ এর মূল বিষয় হলো যুক্তিবিদ্যা যার প্রয়োজন দর্শনে আবশ্যক। কেননা যুক্তিবিদ্যা হলো দর্শনের একটি শাখা।
দর্শন ও যুক্তিবিদ্যার নিয়মগুলো একই হওয়ার কারণে তারা পরস্পরের ওপর নির্ভরশীল। যুক্তিবিদ্যার ক্ষেত্রে যেমন দর্শনের প্রয়োগ দেখা যায়, তেমনি দর্শনের ক্ষেত্রেও যুক্তিবিদ্যার প্রয়োগ দেখা যায়। দর্শন যেমন যৌক্তিক চিন্তা করতে সাহায্য করে তেমনি যৌক্তিক নিয়মগুলো দার্শনিক বিশ্লেষণে সহায়তা করে। দর্শন হলো সত্য বা জ্ঞানের প্রতি অনুরাগ। পক্ষান্তরে যুক্তিবিদ্যা হলো যৌক্তিক চিন্তার ভিত্তিতে অসত্য বর্জন করে প্রকৃত সত্যকে অর্জন করা।
তাই বলা যায়, দৃশ্যকল্প-১ এর মূল বিষয় যুক্তিবিদ্যা দর্শনে প্রয়োজন আছে এবং বিষয় দুটি ভিন্ন বিষয় হলেও একে অন্যের ওপর নির্ভরশীল।

ঘ. দৃশ্যকল্প-১ ও ২ হলো যুক্তিবিদ্যা এবং নীতিবিদ্যা। নিচে উভয়ের সম্পর্ক আলোচনা করা হলো।
যে বিদ্যা বৈধ যুক্তি থেকে অবৈধ যুক্তিকে পৃথক করার পদ্ধতি ও নিয়মাবলির শিক্ষা দেয় তাকে যুক্তিবিদ্যা বলে। আর যে বিদ্যা মানুষের ঐচ্ছিক আচরণের ভালো-মন্দ, উচিত-অনুচিত নৈতিক আদর্শের আলোকে মূল্যায়ন করে তাকে নীতিবিদ্যা বলে। যুক্তিবিদ্যা ও নীতিবিদ্যার সম্পর্ক আলোচনা করলে তাদের মধ্যে কিছু সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্য লক্ষ করা যায়। সাদৃশ্যের ক্ষেত্রে উভয়ই মূল্যায়নমূলক বিদ্যা। উভয়ই কিছু নির্দিষ্ট মানদ- অনুসরণ করে এবং আদর্শ প্রতিষ্ঠায় তৎপর। বৈসাদৃশ্যের ক্ষেত্রে দেখা যায় যুক্তিবিদ্যা যুক্তি সংক্রান্ত বিদ্যা। আর নীতিবিদ্যা আচার-আচরণ সংক্রান্ত বিদ্যা। যুক্তিবিদ্যার আদর্শ সত্য, পক্ষান্তরে নীতিবিদ্যার আদর্শ কল্যাণ। যুক্তিবিদ্যার বিষয়গুলো স্থান, কাল, পাত্রভেদে একই রূপ হয়। আর নীতিবিদ্যার বিষয়গুলো স্থান, কাল, পাত্রভেদে ভিন্ন হয়।
দৃশ্যকল্প-১: প্রথম আলোচক বলেন, ‘‘সক্রেটিস শারীরিক সৌন্দর্য নয় বরং প্রখর যুক্তিবাদিতার জন্য যুগে যুগে মানুষের অন্তরে শ্রদ্ধার পাত্র হিসেবে বিরাজমান।" যুক্তিবিদ্যার জ্ঞানের প্রতিফলন এবং দৃশ্য ২: ‘‘ সক্রেটিসের মতে, যার কর্তব্য তা পালন করাই হলো ন্যায়।" নীতিবিদ্যায় জ্ঞানের প্রতিফলন হয়। যুক্তিবিদ্যা ও নীতিবিদ্যার সাথে এখানে চিন্তা ও কাজের মিল লক্ষণীয়।
পরিশেষে বলা যায় যে, যুক্তিবিদ্যা ও নীতিবিদ্যা পরস্পর ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কযুক্ত। উভয়ের উদ্দেশ্য সত্যকে প্রতিষ্ঠা করা এবং সার্বিক কল্যাণ সাধন করা।
Share:

0 Comments:

Post a Comment