HSC যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর pdf download অধ্যায় ১

HSC যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর pdf download

এইচএসসি পরীক্ষার পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি
HSC Logic 1st Paper Srijonshil question and answer pdf download.

উচ্চ মাধ্যমিক

যুক্তিবিদ্যা
প্রথম পত্র

সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
১ম অধ্যায়

HSC Logic 1st Paper
Srijonshil
Question and Answer pdf download

১. উদ্দীপক-১
সভ্যতার সূচনা লগ্ন হতে মানব সমাজ আত্মরক্ষার্থে নানা কৌশল অবলম্বন করে আসছে। অন্যান্য প্রাণীর আক্রমণ হতে রক্ষার কৌশল ছিল এক সময় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। প্রাকৃতিক দুর্যোগ হতে রক্ষার জন্য আমাদের এখনও নানা কৌশল অবলম্বন করতে হয়। তায়কোয়ান্দো এক ধরনের কৌশল। কিছু শিক্ষার্থী অনাকাঙি্ক্ষত পরিস্থিতি এড়ানোর জন্য এ কৌশল অবলম্বন করে সফলতা অর্জন করেছে।

উদ্দীপক-২
মহাকর্ষীয় তরঙ্গ শনাক্ত করার পদ্ধতি উদ্ভাবন ও গবেষণার জন্য ২০১৭ সালে পুরস্কার লাভ করে মার্কিন গবেষকরা। বাংলাদেশের তরুণ বিজ্ঞানী পরিমল কাজ করেছেন এ গবেষণায়। ১৯১৫ সালে আলবার্ট আইনস্টাইন যে মহাকর্ষীয় তরঙ্গের কথা বলেন, তা ২০১৫ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর প্রমাণিত হয়।
ক. কলা কী?
খ. যুক্তিবিদ্যাকে সকল বিজ্ঞানের বিজ্ঞান বলা হয় কেন?
গ.উদ্দীপক-১ যুক্তিবিদ্যার কোন বিষয়টিকে নির্দেশ করে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপক-১ ও ২ এর স্বরুপ পাঠ্যবইয়ের আলোকে ব্যাখ্যা করো।

১ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. কলা বলতে কোনো বিশেষ জ্ঞানকে বাস্তবে প্রয়োগ করার কৌশলকে বোঝায়।

খ. বিজ্ঞান হলো প্রকৃতির কোনো বিশেষ বিভাগ সম্পর্কে সুশৃঙ্খল ও সুসংবদ্ধ জ্ঞান।
প্রতিটি বিজ্ঞানের কিছু নিজস্ব নিয়ম ও পদ্ধতি রয়েছে। প্রতিটি বিজ্ঞানের নিয়মনীতি যৌক্তিক ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত। বিজ্ঞান সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করতে চায়। আর সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য প্রতিটি বিজ্ঞানকে যুক্তির ওপর নির্ভর হতে হয়। এজন্য যুক্তিবিদ্যাকে সকল বিজ্ঞানের বিজ্ঞান বলা হয়।

গ. উদ্দীপক-১ যুক্তিবিদ্যার কলাবিদ্যা বা কলার দিককে নির্দেশ করছে।
সাধারণত কলাবিদ্যা বলতে কোনো বিশেষ জ্ঞানকে বাস্তবে প্রয়োগ করার কৌশলকে বোঝায়। আবার, কলা বলতে দক্ষতা, পারদর্শিতা বা নৈপুণ্যও বোঝায়। যুক্তিবিদ্যার জনক এরিস্টটল মনে করতেন, কলাবিদ্যা এমন একটা কিছু যা দ্বারা কোনো ব্যক্তি একটি বিষয়ের পরিবর্তন ঘটাতে পারেন। অর্থাৎ, নিজের দক্ষতা দ্বারা কোনো ব্যক্তি একটি বিষয়কে নিজস্ব রূপ দিতে পারেন। যখন একজন ব্যক্তি পাথর দিয়ে মূর্তি তৈরি করেন তখন তিনি তার দক্ষতা বা কৌশলকে প্রয়োগ করেন। আবার, অনেক ক্ষেত্রে কলা বলতে কেউ কেউ কোনো বিধিবদ্ধ জ্ঞানকে বাস্তবে প্রয়োগ করাকে বুঝে থাকেন। যুক্তিবিদ্যা বৈধ যুক্তির কিছু নিয়মকানুন শিক্ষা দেয়। এসব নিয়মের জ্ঞান বাস্তবে প্রয়োগ করা যায়। এদিক থেকে যুক্তিবিদ্যাকে কলা বলে অভিহিত করা যায়।
উদ্দীপকে তায়কোয়ান্দোর কৌশল অবলম্বন করে শিক্ষার্থীদের শারীরিক আক্রমণের মতো অনাকাঙি্ক্ষত পরিস্থিতি এড়ানোর বিষয়টি কলাবিদ্যার অনুরূপ।

ঘ. উদ্দীপক-১ ও উদ্দীপক-২ কলা ও বিজ্ঞান হিসেবে যুক্তিবিদ্যার স্বরুপকে নির্দেশ করে।
যুক্তিবিদ্যাকে বিভিন্ন যুক্তিবিদ নিজস্ব দৃষ্টিকোণ থেকে সংজ্ঞায়িত করেছেন। যুক্তিবিদ্যার স্বরুপ নিয়ে বিভিন্ন যুক্তিবিদ ভিন্ন ভিন্ন মত দিয়েছেন। যুক্তিবিদ হ্যামিলটন, টমসন মনে করেন, যুক্তিবিদ্যা একটি বিজ্ঞান। কারণ চিন্তা সম্পর্কিত কতগুলো নিয়মনীতি প্রদান করাই হলো যুক্তিবিদ্যার কাজ। অর্থাৎ, বিজ্ঞানের মতো যুক্তিবিদ্যা নিজস্ব বিষয়বস্তুকে ব্যাখ্যা করার জন্য কিছু স্বতন্ত্র নিয়মকানুন প্রণয়ন করে। তাই তাত্ত্বিক দিকের ওপর গুরুত্ব দিয়ে তারা যুক্তিবিদ্যাকে বিজ্ঞান বলে অভিহিত করেছেন।
অন্যদিকে, কিছু যুক্তিবিদ যুক্তিবিদ্যাকে কলা বলে অভিহিত করেছেন। যুক্তিবিদ অ্যালড্রিচ মনে করেন, যুক্তিবিদ্যা হলো কলা। তিনি ব্যবহারিক দিকের ওপর গুরুত্ব দিয়ে যুক্তিবিদ্যাকে কলা বলে অভিহিত করেছেন। তার মতে, যুক্তিবিদ্যা কলাবিদ্যার মতো যুক্তিপদ্ধতির নিয়মাবলীকে বাস্তবে প্রয়োগ করার শিক্ষা দেয়। তাই যুক্তিবিদ্যা হলো কলাবিদ্যা।
কিছু যুক্তিবিদ যুক্তিবিদ্যাকে কলা ও বিজ্ঞান উভয়ই বলে অভিহিত করেছেন। যুক্তিবিদ মিল ও হোয়েটলি যুক্তিবিদ্যাকে কলা ও বিজ্ঞান উভয়ই বলেছেন। তাদের মতে, যুক্তিবিদ্যা বিজ্ঞান এই কারণে যে, এটি নির্ভুল চিন্তার নির্দেশ প্রদান করে। আবার, যুক্তিবিদ্যা কলা এই কারণে যে, এটি যুক্তির সাধারণ নিয়মাবলীকে সার্বিকভাবে প্রয়োগের কলাকৌশলের জ্ঞান দান করে। তাই যুক্তিবিদ্যা কলা ও বিজ্ঞান উভয়ই।

২. রবি, সুমন ও লিসা একাদশ শ্রেণিতে পড়ে। ক্লাসের ফাঁকে আড্ডায় লিসা বললো, ‘লক্ষ করেছিস? আমাদের পাঠ্যবিষয়গুলোর মধ্যে একটি বিষয় আছে, যেটি আমাদের বাস্তব জীবনে চলার সঠিক নির্দেশনা দিতে পারে।' সুমন বললো, ‘‘ঠিক বলেছিস, সেটি আমাদের বিভিন্ন বিষয়ে কর্মপদ্ধতির সন্ধান দেয়।' রবি যোগ করে, শুধু কি তাই। এ বিষয়টি বিজ্ঞানের সাথেও সম্পর্কিত।'
ক. 'Logic' শব্দটি কোন ভাষা হতে উৎপত্তি?
খ. কলা বলতে কী বোঝায়?
গ. উদ্দীপকে লিসার বক্তব্যের যৌক্তিকতা ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকে সুমন ও রবির বক্তব্যগুলোর সাথে তুমি কি একমত? তোমার মতের পক্ষে যুক্তি দাও।

২ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. যুক্তিবিদ্যার ইংরেজি প্রতিশব্দ 'Logic' শব্দটির উৎপত্তি হয়েছে গ্রিক শব্দ 'Logike' থেকে।

খ. কলা (Art) বলতে দক্ষতা, পারদর্শিতা, নৈপুণ্য বা কোনো বিশেষ জ্ঞানকে বাস্তব ক্ষেত্রে প্রয়োগ করার কৌশলকে বোঝায়।
কলা হচ্ছে একটি প্রায়োগিক বিদ্যা। এ বিদ্যা কোনো বিশেষ উদ্দেশ্য সাধনের জন্য বৈজ্ঞানিক জ্ঞানকে বাস্তবে প্রয়োগ করার নিয়ম-কানুন ও কৌশল শিক্ষা দেয়। যেমন- শল্যচিকিৎসা বিদ্যা (Surgery) সঠিকভাবে অস্ত্রোপচার করার নিয়মকানুন ও কৌশল শিক্ষা দেয়।

গ. উদ্দীপকে লিসার বক্তব্যে যুক্তিবিদ্যার আদর্শনিষ্ঠ (Normative) দিকটি প্রকাশিত হয়েছে। এ কারণে তার বক্তব্যটি অবশ্যই যৌক্তিক।
যুক্তিবিদ্যা একটি আদর্শনিষ্ঠ বিজ্ঞান। এর মূল আদর্শ হলো সত্যতা। সত্যতার আদর্শের আলোকে যুক্তিবিদ্যা সঠিক চিন্তা পদ্ধতি ও এর নিয়মাবলি নির্ধারণ করে। যেমন- মামলায় জয়লাভের জন্য আদালতে মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়া ঠিক নয়। কেননা, এটি সত্যতা তথা যুক্তিবিদ্যার আদর্শের পরিপন্থী।
উদ্দীপকের লিসা এমন একটি বিষয়ের কথা বলেছে যেটি আমাদের বাস্তব জীবনে চলার সঠিক নির্দেশনা দিতে পারে। যৌক্তিকভাবেই লিসার বক্তব্যটি যুক্তিবিদ্যার আদর্শনিষ্ঠ দিকের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। কেননা, যুক্তিবিদ্যাই সত্যতার আদর্শের আলোকে আমাদের বাস্তব জীবনে চলার সঠিক নির্দেশনা প্রদান করে।

ঘ. হ্যাঁ, সুমন ও রবির বক্তব্যের সাথে আমি একমত। কারণ সুমনের বক্তব্যে যুক্তিবিদ্যার ব্যবহারিক দিক এবং রবির বক্তব্যে তাত্ত্বিক দিক ফুটে উঠেছে।
যুক্তিবিদ্যায় প্রধানত দু'টি দিক রয়েছে। একটি হলো তাত্ত্বিক বা বিজ্ঞান বিষয়ক দিক এবং অন্যটি ব্যবহারিক দিক। প্রকৃতির কোনো নির্দিষ্ট বিষয় সম্পর্কে বিজ্ঞান আমাদের তাত্ত্বিক জ্ঞান প্রদান করে। আর ব্যবহারিক বা প্রায়োগিক বিদ্যা সে জ্ঞানকে বাস্তবে প্রয়োগ করার কর্মপদ্ধতি ও কৌশল শিক্ষা দেয়। যেমন, তাত্ত্বিক বিজ্ঞান হিসেবে পদার্থবিজ্ঞান পদার্থের গঠন ও প্রকৃতি সম্পর্কে জ্ঞান দান করে। আবার প্রায়োগিক বিদ্যা হিসেবে নৌবিদ্যা আমাদের শেখায় কীভাবে নৌযান চালাতে হবে।
উদ্দীপকে সুমন এমন একটি বিষয়ের কথা বলে, যেটি আমাদের বিভিন্ন বিষয়ে কর্মপদ্ধতির সন্ধান দেয়। সুমনের এ বক্তব্য যুক্তিবিদ্যার ব্যবহারিক দিকের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। আবার রবি বলে, এ বিষয়টি বিজ্ঞানের সাথেও সম্পর্কিত। অর্থাৎ তার বক্তব্য যুক্তিবিদ্যার তাত্ত্বিক দিকের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।
পরিশেষে বলা যায়, উদ্দীপকে সুমন ও রবির বক্তব্যে যুক্তিবিদ্যার সামগ্রিক দিক প্রকাশিত হয়েছে।

৩. রাজিব ও মিরাজ খুবই ঘনিষ্ঠ বন্ধু। তারা ২০১৬ সালে এইচএসসি পাস করেছে। তারা কম্পিউটারের ব্যবহার ভালোভাবে জানতে চায়। তাই পরিকল্পনা করে তারা দু'জনই দিনাজপুর কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে ভর্তি হয়ে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করছে। রাজিব প্রশিক্ষণ গ্রহণের পাশাপাশি একটি কম্পিউটার ক্রয় করে তার অর্জিত জ্ঞান বাস্তবে প্রয়োগ করে। অপরদিকে, মিরাজও একটি কম্পিউটার ক্রয় করবে বলে চিন্তা করছে।
ক. যুক্তিবিদ্যা কাকে বলে?
খ. যুক্তিবিদ্যা আমাদের বাস্তব জীবনে কীভাবে সহায়তা করে?
গ. উদ্দীপকে রাজিবের কর্মকান্ডটি কোন বিষয়টিকে ইঙ্গিত করছে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. পাঠ্যবইয়ের আলোকে রাজিব ও মিরাজের কর্মকান্ড-র মধ্যকার পার্থক্য নিরূপণ করো।

৩ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. যে বিদ্যা বৈধ যুক্তি থেকে অবৈধ যুক্তিকে পৃথক করার পদ্ধতি ও নিয়মসমূহ সম্পর্কে আলোচনা করে তাকে যুক্তিবিদ্যা (Logic) বলে।

খ. যুক্তিবিদ্যা আমাদের বাস্তব জীবনের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে, সত্য উদ্ঘাটনে এবং ভ্রান্তি নিরসনে সহায়তা করে।
যুক্তিবিদ্যার দুটি দিক- ১. বিজ্ঞান বিষয়ক এবং ২. কলাবিদ্যা বিষয়ক। বিজ্ঞান হিসেবে যুক্তিবিদ্যা নির্ভুল চিন্তার নীতিসমূহ আবিষ্কার করে। পাশাপাশি কলাবিদ্যা হিসেবে সত্য করতে আমাদের সাহায্য করে।

গ. সৃজনশীল ১ এর ‘গ’ নং প্রশ্নোত্তর দেখো।

ঘ. উদ্দীপকে রাজিবের কর্মকান্ড ব্যাবহারিক বা প্রায়োগিক দিককে এবং মিরাজের কর্মকান্ড তাত্ত্বিক দিককে নির্দেশ করে।
আমরা জানি, সুশৃঙ্খল ও সুসংবদ্ধ আলোচনা হলো তাত্ত্বিক বিষয় বা বিজ্ঞানের কাজ। আর তাত্ত্বিক জ্ঞানকে বাস্তবে প্রয়োগ করে কোনো বিশেষ উদ্দেশ্য সাধনের নিয়ম-কানুন ও কৌশল শেখানো হলো প্রায়োগিক বা কলা বিদ্যার কাজ। অর্থাৎ তাত্ত্বিক জ্ঞানকে যখন ব্যবহারিক জীবনে প্রয়োগ করা হয় তখন তা প্রায়োগিক বিদ্যায় পরিণত হয়। যেমন- জীববিজ্ঞান জীবদেহের গঠন ও কার্যাবলি সম্পর্কে তাত্ত্বিক জ্ঞান প্রদান করে। আর শল্যচিকিৎসা বিদ্যা (Surgery) শেখায় কীভাবে সঠিক পদ্ধতিতে কোনো রোগীর অস্ত্রোপচার করতে হয়। আমরা জানি, তাত্ত্বিক বিষয়ের পরিধি ব্যবহারিক বিষয়ের চেয়ে ব্যাপক। কারণ তাত্ত্বিক বিষয় হলো ব্যবহারিক বিষয়ের পূর্ববর্তী অবস্থা।
উদ্দীপকে রাজিবের কর্মকান্ড ব্যবহারিক বা প্রায়োগিক দিকের সাথে এবং মিরাজের কর্মকান্ড তাত্ত্বিক দিকের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।
পরিশেষে বলা যায়, তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক দিকের মূল পার্থক্য হলো- তাত্ত্বিক বিষয় বা বিজ্ঞান নিজ নিজ আলোচ্য বিষয় সম্পর্কে সুশৃঙ্খল ও ক্রুসংবদ্ধ জ্ঞান দান করে। আর প্রায়োগিক বিদ্যা তথা কলা কোনো বিশেষ উদ্দেশ্য সাধনের জন্য বিজ্ঞানের জ্ঞানকে বাস্তব ক্ষেত্রে প্রয়োগ করার কৌশল শেখায়।

৪. যুক্তিবিদ্যার ক্লাস শেষে খোকন বললো, 'যুক্তিবিদ্যা প্রকৃতপক্ষেই কলাবিদ্যা।' সুমন এর বিরোধিতা করে বললো, 'যুক্তিবিদ্যা হলো একটি বিজ্ঞান।' তাদের বিতর্কের একপর্যায়ে পলি এসে বললো, 'যুক্তিবিদ্যা একটি আদি কলা ও সেরা বিজ্ঞান।'
ক. যুক্তিবিদ্যার জনক কে?
খ. Logic এর ব্যুৎপত্তিগত অর্থ ব্যাখ্যা করো।
গ. উদ্দীপকে যুক্তিবিদ্যা সম্পর্কে খোকন ও সুমন-এর বিতর্কটি পাঠ্যপুস্তকের আলোকে ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকে উল্লেখিত পলির বক্তব্যটি বিশ্লেষণ করো।

৪ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. যুক্তিবিদ্যার জনক হলেন প্রখ্যাত গ্রিক দার্শনিক এরিস্টটল (Aristotle)।

খ. Logic এর ব্যুৎপত্তিগত অর্থ হলু চিন্তা, ভাষা ও বিজ্ঞান। অর্থাৎ যুক্তিবিদ্যা হল ভাষায় ব্যবহৃত চিন্তার বিজ্ঞান।
যুক্তিবিদ্যার ইংরেজি প্রতিশব্দ 'Logic'-এর উৎপত্তি গ্রিক 'Logike' শব্দ থেকে। Logike এর বিশেষ রূপ 'Logos'। গ্রিক পরিভাষায় Logos এর তিনটি অর্থ রয়েছে- চিন্তা, ভাষা ও বিজ্ঞান। তিনটি বিষয়ের সাথেই যুক্তিবিদ্যার মৌলিক সম্পৃক্ততা রয়েছে। কাজেই ব্যুৎপত্তিগত অর্থে Logic হলো ভাষায় প্রকাশিত চিন্তা সম্পর্কিত বিজ্ঞান।

গ. যুক্তিবিদ্যা একটি বিজ্ঞান, না একটি কলা- এ প্রশ্ন নিয়ে খোকন এবং সুমনের মধ্যে মতবিরোধ দেখা যায়।
যুক্তিবিদ্যা শুধু বিজ্ঞান নয়, আবার শুধু কলাও নয়। বরং যুক্তিবিদ্যা একাধারে একটি বিজ্ঞান ও একটি কলা। বিজ্ঞান হিসেবে যুক্তিবিদ্যা সঠিক যুক্তিপদ্ধতির নিয়ম-কানুন সম্পর্কে আমাদেরকে জ্ঞান দান করে। আর কলা হিসাবে যুক্তিবিদ্যা এসব নিয়মকে আমাদের বাস্তব চিন্তাক্ষেত্রে সুষ্ঠুভাবে প্রয়োগের মাধ্যমে সত্যকে আবিষ্কার করতে সহায়তা করে।
উদ্দীপকে খোকন যুক্তিবিদ্যাকে কলাবিদ্যা বলে। কারণ কলাবিদ্যার ন্যায় যুক্তিবিদ্যা বিশেষ কর্ম সম্পাদনের কলাকৌশল শিক্ষা দেয় যা বৈজ্ঞানিক জ্ঞানের ওপর নির্ভরশীল। আবার যুক্তিবিদ্যার তত্ত্বগত দিক বিবেচনা করে সুমন যুক্তিবিদ্যাকে একটি বিজ্ঞান হিসেবে উল্লেখ করে। বিজ্ঞানের ন্যায় যুক্তিবিদ্যার নির্ধারিত ও সুশৃঙ্খল আলোচ্য বিষয় আছে এবং আলোচ্য বিষয় ব্যাখ্যার জন্য পর্যাপ্ত নিয়ম আছে। সুতরাং তাদের মত পক্ষপাত দোষে দুষ্ট। কারণ, যুক্তিবিদ্যা আমাদেরকে তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক উভয় জ্ঞান দান করে। এজন্য এটি একাধারে কলা ও বিজ্ঞান।

ঘ. ‘যুক্তিবিদ্যা একটি আদি কলা ও সেরা বিজ্ঞান - পলির কথায় যুক্তিবিদ্যার প্রকৃত স্বরূপ ফুটে উঠেছে।
কোনো একটি বিদ্যাকে কলা হতে হলে সেটিকে দুটি শর্ত পালন করতে হয়। প্রথমত, সেই বিদ্যাকে বিশেষ কোনো কর্ম সম্পাদনের কলাকৌশল শিক্ষা দিতে হবে। দ্বিতীয়ত, তাকে কোনো বৈজ্ঞানিক জ্ঞানের ওপর নির্ভরশীল হতে হবে। অপরদিকে কোনো একটি জ্ঞানের শাখাকে বিজ্ঞান হতে হলে তার মধ্যে দুটি শর্ত থাকতে হবে। প্রথমত, সেই শাখার নির্ধারিত ও সুশৃঙ্খল আলোচ্য বিষয় থাকতে হবে। দ্বিতীয়ত, আলোচ্য বিষয় ব্যাখ্যার জন্য পর্যাপ্ত নিয়মকানুন থাকতে হবে।
পলি যুক্তিবিদ্যাকে একাধারে একটি বিজ্ঞান ও একটি কলা বলেছে। বিজ্ঞান হিসাবে যুক্তিবিদ্যা সঠিক যুক্তিপদ্ধতির নিয়ম-কানুন সম্পর্কে আমাদের জ্ঞান দান করে। আর কলা হিসেবে যুক্তিবিদ্যা এসব নিয়মকে আমাদের বাস্তব চিন্তাক্ষেত্রে সুষ্ঠুভাবে প্রয়োগের মাধ্যমে সত্যতাকে আবিষ্কার করতে সহায়তা করে।
পরিশেষে বলা যায়, যুক্তিবিদ্যা একাধারে একটি কলা ও বিজ্ঞান। শুধু চিন্তাবা অনুমান সম্পর্কে কয়েকটি নিয়ম কানুন প্রণয়ন করাই যুক্তিবিদ্যার কাজ নয়। সেগুলোকে যথাযথভাবে বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করাও যুক্তিবিদ্যার লক্ষ্য। সুতরাং পলির কথায় যুক্তিবিদ্যার তত্ত্বগত ও ব্যবহারিক উভয় দিকেরই নির্দেশ পাওয়া যায়।

৫. একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হওয়ার সময় পড়াশোনার বিষয় নির্ধারণ করতে গিয়ে সাজিদ বললো, জীবজগৎ ও জড়জগতের যে কোনোটিতে বিশেষ জ্ঞান লাভের সুযোগ আছে, এমন বিষয় আমি পড়তে চাই। এ কথা শুনে সুজন বললো, শুধু বিশেষ জ্ঞান লাভ নয় বরং যে বিশেষ জ্ঞানকে বাস্তব বা ব্যাবহারিক কাজে লাগানো যায় এমন বিষয় আমি পড়তে চাই। সাজিদ ও সুজনের কথা শুনে ফারিহা বললো, বিশেষ জ্ঞান এবং সে জ্ঞানকে ব্যবহারিক কাজে লাগানো যায়, সেরূপ কোনো বিষয়কে আমি বেছে নেব।
ক. যুক্তিবিদ্যা কাকে বলে?
খ. যুক্তিবিদ্যাকে আকারগত বিজ্ঞান বলা হয় কেন?
গ. উদ্দীপকে সাজিদের বক্তব্যে কোন বিষয়ের ইঙ্গিত আছে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. পাঠ্যপুস্তকের আলোকে সুজন ও ফারিহার বক্তব্য যে বিষয় প্রকাশ করছে তাদের সম্পর্ক বিশ্লেষণ করো।

৫ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. যে বিদ্যা বৈধ যুক্তি থেকে অবৈধ যুক্তিকে পৃথক করার পদ্ধতি ও নিয়মসমূহ সম্পর্কে আলোচনা করে তাকে যুক্তিবিদ্যা (Logic) বলে।

খ. যুক্তিবিদ্যার আলোচ্য বিষয় আকারগত সত্যতার ওপর প্রতিষ্ঠিত। এ কারণে যুক্তিবিদ্যাকে আকারগত বিজ্ঞান (Formal Science) বলা হয়।
যে শাস্ত্র তার আলোচ্য বিষয়ের আকার নিয়ে আলোচনা করে তাকে আকারগত বিজ্ঞান বলে। যেমন- গণিত, পরিসংখ্যান, কম্পিউটার বিজ্ঞান প্রভৃতি হলো আকারগত বিজ্ঞান। এ হিসেবে যুক্তিবিদ্যাকেও আকারগত বিজ্ঞান বলা হয়। কেননা, অবরোহ (Deductive) যুক্তিবিদ্যার প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে আকারগত সত্যতা লাভ করা। এছাড়া আরোহ (Inductive) যুক্তিবিদ্যাও বস্তুগত সত্যতা অর্জনের পাশাপাশি আকারগত সত্যতার ওপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করে। এ কারণে ব্রিটিশ যুক্তিবিদ উইলিয়াম হ্যামিলটন (William Hamilton) বলেন, 'যুক্তিবিদ্যা হলো চিন্তার আকারগত নিয়মাবলি সম্পর্কিত বিজ্ঞান'।

গ. উদ্দীপকে সাজিদের বক্তব্যে যুক্তিবিদ্যার তাত্ত্বিক বা বিজ্ঞান (Science) বিষয়ক দিকের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে।
যুক্তিবিদ্যার প্রধানত দুটি দিক রয়েছে। একটি হলো তাত্ত্বিক বা বিজ্ঞান বিষয়ক দিক এবং অন্যটি হলো ব্যবহারিক বা কলাবিদ্যা বিষয়ক দিক। আমরা জানি, কোনো সাধারণ নিয়মের ভিত্তিতে প্রকৃতির একটি বিশেষ বিষয়ের সুশৃঙ্খল ও সুসংবদ্ধ আলোচনা হচ্ছে বিজ্ঞান। অর্থাৎ বিজ্ঞান কোনো নির্দিষ্ট বিষয় সম্পর্কে তাত্ত্বিক জ্ঞান প্রদান করে। যেমন, পদার্থবিজ্ঞান পদার্থের গঠন ও প্রকৃতি সম্পর্কে আলোচনা করে। এর মাধ্যমে আমরা পদার্থ সম্পর্কে তাত্ত্বিক জ্ঞান অর্জন করি।
উদ্দীপকের সাজিদ একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হওয়ার সময় পড়াশোনার বিষয় নির্ধারণ করতে গিয়ে বলে, 'জীবজগৎ ও জড়জগতের যে কোনোটির বিশেষ জ্ঞান লাভের সুযোগ আছে, এমন বিষয় আমি পড়তে চাই'। সাজিদের এ বক্তব্য যুক্তিবিদ্যার তাত্ত্বিক বা বিজ্ঞান বিষয়ক দিকের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।

ঘ. উদ্দীপকে সুজন ও ফারিহার বক্তব্যে যুক্তিবিদ্যার সামগ্রিক দিক তথা তাত্ত্বিক বা বিজ্ঞান এবং ব্যাবহারিক বা কলাবিদ্যা বিষয়ক উভয় দিক ফুটে উঠেছে।
যুক্তিবিদ্যার দুটি প্রধান দিক হলোু তাত্ত্বিক বা বিজ্ঞান বিষয়ক দিক এবং ব্যাবহারিক বা কলাবিদ্যা বিষয়ক দিক। কোনো সাধারণ নিয়মের ভিত্তিতে প্রকৃতির কোনো একটি বিশেষ বিষয়ের সুশৃঙ্খল ও সুসংবদ্ধ আলোচনা হচ্ছে বিজ্ঞান। অর্থাৎ বিজ্ঞান কোনো নির্দিষ্ট বিষয় সম্পর্কে তাত্ত্বিক জ্ঞান প্রদান করে। যেমনত পদার্থবিজ্ঞান পদার্থের গঠন ও প্রকৃতি সম্পর্কে আলোচনা করে। এর মাধ্যমে আমরা পদার্থ সম্পর্কে তাত্ত্বিক জ্ঞান লাভ করি। অন্যদিকে, কলাবিদ্যা হচ্ছে একটি প্রায়োগিক বিদ্যা, যা কোনো বিশেষ উদ্দেশ্য সাধনের জন্য বৈজ্ঞানিক জ্ঞানকে বাস্তব ক্ষেত্রে প্রয়োগ করার নিয়ম-কানুন ও কৌশল শিক্ষা দেয়। যেমন- নৌবিদ্যা শেখায় কীভাবে নৌযান চালনা করতে হবে এবং শল্যচিকিৎসা বিদ্যা (Surgery) সঠিকভাবে অস্ত্রোপচার করার নিয়ম-কানুন ও কৌশল শিক্ষা দেয়।
উদ্দীপকে বর্ণিত, সুজন ও ফারিহা একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হওয়ার সময় এমন একটি বিষয়ে পড়ার আগ্রহ প্রকাশ করে, যা তাদেরকে কোনো বিশেষ জ্ঞান প্রদান করবে এবং সে জ্ঞানকে ব্যবহারিক ক্ষেত্রে কাজে লাগানো যাবে। সুজন ও ফারিহার বক্তব্য যুক্তিবিদ্যার সামগ্রিক তথা তাত্ত্বিক বা বিজ্ঞান বিষয়ক এবং ব্যবহারিক বা কলাবিদ্যা বিষয়ক উভয় দিকের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।
পরিশেষে বলা যায়, বিজ্ঞান ও কলাবিদ্যা যুক্তিবিদ্যার দুটি ভিন্ন দিক হলেও পরস্পর গভীরভাবে সম্পর্কিত। একটিকে ছাড়া অন্যটি পূর্ণাঙ্গ হতে পারে না। কেননা, বিজ্ঞান কোনো নির্দিষ্ট বিষয় সম্পর্কে তাত্ত্বিক জ্ঞান প্রদান করে এবং কলাবিদ্যা বৈজ্ঞানিক জ্ঞানকে বাস্তব ক্ষেত্রে প্রয়োগ করার নিয়ম-কানুন ও কৌশল শিক্ষা দেয়। কাজেই কোনো বিষয়ের পূর্ণাঙ্গ জ্ঞানার্জনের জন্য তাত্ত্বিক ও ব্যাবহারিক উভয় দিক' অবিচ্ছেদ্যভাবে সম্পর্কিত।

৬. একাদশ শ্রেণিতে ক্লাস শুরুর প্রথম দিনই একজন শিক্ষক পঠিত বিষয় সম্পর্কে বললেন, এ বিদ্যা মূলত 'ভাষায় প্রকাশিত চিন্তার বৈজ্ঞানিক আলোচনা, যা জ্ঞাত সত্য থেকে অজ্ঞাত সত্যে আরোহন ও এর সহায়ক অন্যান্য মানসিক প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা করে।' এ বিদ্যার আলোচনায় যেসব ব্যক্তির অবদান উল্লেখযোগ্য তারা হলেনত এরিস্টটল, ইবনে সিনা, আল ফারাবি, ফ্রান্সিস বেকন, লাইবনিজ, জে এস মিল, বার্ট্রান্ড রাসেল প্রমুখ।
ক. আদর্শনিষ্ঠ বিজ্ঞান বলতে কী বোঝায়?
খ. যুক্তিবিদ্যা একটি চিন্তার বিজ্ঞানু বুঝিয়ে লিখ।
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত প্রথম ব্যক্তিই মূলত এ বিদ্যার জনক'-ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকে জ্ঞানের যে শাখার উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশের উল্লেখ করা হয়েছে তার তুলনামূলক বিশ্লেষণ কর।

৬ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. যে বিজ্ঞান একটি আদর্শের আলোকে তার বিষয়সমূহের মূল্যায়ন করে তাকে আদর্শনিষ্ঠ বিজ্ঞান বলে।

খ. যুক্তিবিদ্যা চিন্তা নিয়ে আলোচনা করলেও সব ধরনের চিন্তা এর অন্তর্ভুক্ত নয়। কেবল অনুধ্যানমূলক চিন্তাই যুক্তিবিদ্যার আলোচ্য বিষয়।
উৎপত্তিগত অর্থে যুক্তিবিদ্যা হলো ভাষায় প্রকাশিত চিন্তা সম্পর্কিত বিজ্ঞান। কিন্তু চিন্তা শব্দটি ব্যাপক অর্থে ব্যবহৃত হয়। মনোবিজ্ঞানে চিন্তা বলতে কল্পনা, স্মৃতি, প্রত্যক্ষণ, অনুমান প্রভৃতি বোঝায়। আবার চিন্তা বলতে চিন্তার পদ্ধতি, ফল এবং জ্ঞানকেও বোঝায়। যুক্তিবিদ্যা চিন্তা নিয়ে আলোচনা করলেও সব ধরনের চিন্তা যুক্তিবিদ্যার সাথে সম্পর্কিত নয়। কেবল অনুধ্যানমূলক চিন্তাই এর সাথে সম্পর্কিত। এ কারণেই আধুনিক নারী যুক্তিবিদ স্টেবিং বলেছেন, "Logic is the science of reflective thinking".

গ. উদ্দীপকে উল্লেখিত প্রথম ব্যক্তি তথা গ্রিক দার্শনিক এরিস্টটল যুক্তিবিদ্যার জনক।
এরিস্টটলকে যুক্তিবিদ্যার জনক বলার পেছনে বিভিন্ন যুক্তি রয়েছে। যুক্তিবিদ্যার ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, এরিস্টটল প্রথম উপলব্ধি করেন, বিচারমূলক চিন্তাপদ্ধতি নিয়ে একটি বিশিষ্ট জ্ঞানের বিষয়বস্তু গড়ে উঠতে পারে। তিনিই সর্বপ্রথম যুক্তিবিদ্যার পরিপূর্ণ রূপরেখা নির্দেশ করেছিলেন এবং একে একটি সুসংহত রূপ দিয়েছিলেন। এরিস্টটলীয় যুক্তিবিদ্যা দীর্ঘ দুহাজার বছরেরও বেশিকাল ধরে মানুষের চিন্তার ওপর একচ্ছত্র প্রভাব বিস্তার করেছে। তিনি বলেন, 'জ্ঞানপদ্ধতির নির্দেশ প্রদান করাই হলো যুক্তিবিদ্যার মূলকাজ।' তিনি যুক্তিবিদ্যাকে জ্ঞান আহরণের গুরুতবপূর্ণ বাহন বলে মনে করেন। যুক্তিবিদ্যা হলো প্রারম্ভিক বিজ্ঞান। এরিস্টটল আরোহ ও অবরোহ উভয় যুক্তিবিদ্যারই ধারণা প্রদান করেন।
পরিশেষে বলা যায়, উদ্দীপকে উল্লেখিত প্রথম ব্যক্তি অর্থাৎ এরিস্টটল হলেন যুক্তিবিদ্যার জনক।

ঘ. উদ্দীপকে যুক্তিবিদ্যার উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশের উল্লেখ করা হয়েছে। উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশের দীর্ঘপথ পাড়ি দিয়ে যুক্তিবিদ্যা বর্তমান রূপ ধারণ করেছে।
যুক্তিবিদ্যার বিবর্তন অর্থাৎ উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশকে চারটি যুগে বিভক্ত করা যায়। যথাত প্রাচীন যুগ, মধ্যযুগ, আধুনিক যুগ ও সাম্প্রতিক যুগ। প্রাচীন যুগে যুক্তিবিদ্যার বিকাশে পিথাগোরাস, সক্রেটিস, এরিস্টটল প্রমুখ যুক্তিবিদগণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। মধ্যযুগীয় যুক্তিবিদ্যা বলতে প্রধানত স্কলাস্টিক যুক্তিতত্ত্বকেই নির্দেশ করে। দার্শনিক পরফিরিও মধ্যযুগের যুক্তিবিদ্যার ক্ষেত্রে অবদান রেখেছেন। মধ্যযুগের মুসলিম দার্শনিক ও যুক্তিবিদগণ হলেনত আল-ফারাবি, ইবনে সিনা, ইবনে রুশদ প্রমূখ। আধুনিক যুগের প্রধান যুক্তিবিদগণ হলেন- লাইবনিজ, হেগেল প্রমুখ। লাইবনিজ এর সময় থেকেই সাবেকী যুক্তিবিদ্যা আধুনিক রূপ লাভ করে। তার যৌক্তিক কলন এর মাধ্যমে যুক্তিবিদ্যা একটি নির্দিষ্ট রূপ লাভ করে। সাম্প্রতিক যুগের প্রধান যুক্তিবিদগণ হলেনত জে. এস. মিল, জর্জ বুল, এস জেভন্স, সি এস পার্স, রাসেল প্রমুখ।
উদ্দীপকে যুক্তিবিদ্যার পরিবর্তন ও বিবর্তনের ইঙ্গিত রয়েছে। আড়াই হাজার বছর পরিবর্তন ও বিবর্তনের ভেতর দিয়ে বর্তমান পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে। এই সময়ের মধ্যে এর পরিধিতে নানা রকম সংযোজন ও বিয়োজন ঘটেছে এবং সর্বশেষ এসে প্রতীকী যুক্তিবিদ্যার উদ্ভব ঘটেছে।
সুতরাং যুক্তিবিদ্যার উদ্ভব ও বিকাশের পেছনে রয়েছে সুমহান ঐতিহ্য। যা দীর্ঘ ইতিহাস পার হয়ে বর্তমান রূপ লাভ করেছে।

৭. দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী মিজান বাস্তব অবস্থা বিবেচনা করে তার বন্ধু সুহাইলকে বলে তোর কী মনে হয় না যে আমাদের পাঠ্যবিষয়গুলোর মধ্যে একটি বিষয় আছে, যেটি আমাদের বাস্তবজীবনে চলার পথে সঠিক দিক নির্দেশনা দিতে পারে। সুহাইল মিজানের কথায় মিলিয়ে বলে শুধু তাই নয় বরং এটি আমাদের বিভিন্ন বিষয়ের কর্মপদ্ধতিরও সন্ধান দেয় এবং এই বিষয়টি বিজ্ঞানের সাথেও সম্পর্কিত।
ক. Logos শব্দের অর্থ কী?
খ. Logic এর বুৎপত্তিগত অর্থ ব্যাখ্যা করো।
গ. উদ্দীপকে মিজানের উল্লিখিত বিষয়টির যৌক্তিকতা বা উপযোগিতা ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকের আলোকে মিজান ও সুহাইলের বক্তব্যগুলোর সাথে তুমি কি একমত? উত্তরে সপক্ষে তোমার মত ব্যক্ত করো।

৭ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. Logos শব্দের অর্থ চিন্তা, শব্দ বা ভাষা।

খ. Logic এর ব্যুৎপত্তিগত অর্থ হল- চিন্তা, ভাষা ও বিজ্ঞান। অর্থাৎ, যুক্তিবিদ্যা হল ভাষায় ব্যবহৃত চিন্তার বিজ্ঞান।
যুক্তিবিদ্যার ইংরেজি প্রতিশব্দ 'Logic' এর উৎপতি গ্রিক Logikc শব্দ থেকে। খড়মরশব এর বিশেষ রূপ 'Logos'। গ্রিক পরিভাষায় Logos-এর তিনটি অর্থ রয়েছে- চিন্তা, ভাষা ও বিজ্ঞান। তিনটি বিষয়ের সাথেই যুক্তিবিদ্যার মৌলিক সম্পৃক্ততা রয়েছে। কাজেই ব্যুৎপত্তিগত অর্থে Logic হলো ভাষায় প্রকাশিত চিন্তা সম্পর্কিত বিজ্ঞান।

গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত মিজানের উল্লিখিত বিষয়টি হলো ‘যুক্তিবিদ্যা'।
যুক্তিবিদ্যা আমাদের সুষ্ঠুভাবে চিন্তা করতে সহায়তা করে। কেননা যুক্তিপদ্ধতির সাধারণ নিয়মাবলি যথাযথভাবে পালনের মাধ্যমে ব্যবহারিক জীবনে সেগুলো প্রয়োগ করলে চিন্তার ক্ষেত্রে ভ্রান্তি ঘটার কোনোরূপ সম্ভাবনা থাকে না। পাশাপাশি এটি বিজ্ঞান পাঠকে সহজ করে তোলে। এর মাধ্যমে আমরা সঠিক চিন্তার নিয়মাবলি সম্পর্কে জানতে পারি। তাই চিন্তার ক্ষেত্রে এই জ্ঞান প্রয়োগ করে সহজেই আমার নিজের এবং একই সাথে অন্যের চিন্তার ভুল নির্ণয় করতে পারি।
উদ্দীপকে দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী মিজান বাস্তব অবস্থা বিবেচনা করে তার বন্ধু সুহাইলকে বলে, আমাদের পাঠ্যবিষয়গুলোর মধ্যে একটি বিষয়আছে যা আমাদের বাস্তবজীবনে চলার পথে সঠিক দিক নির্দেশনা দিতে পারে। এখানে যুক্তিবিদ্যার কথা বলা হয়েছে কারণ যুক্তিবিদ্যা আমাদের ভুল নির্ণয় করতে সাহায্য করে যা মানব মনের সহজাত ভাবাবেগকে সুসংহত ও সুনিয়ন্ত্রিত করে সঠিক পথে পরিচালিত করতে সাহায্য করে। যার ফলে, আমরা সংস্কারমুক্ত মন নিয়ে যুক্তির আলোকে সবকিছু যাচাই করার মাধ্যমে সত্যকে অর্জন ও মিথ্যাকে বর্জন করতে পারি।

ঘ. হ্যাঁ, উদ্দীপকের মিজান ও সুহাইলের বক্তব্যগুলোর সাথে আমি একমত।
যে বিদ্যা বৈধ যুক্তি থেকে অবৈধ যুক্তিকে পৃথক করার পদ্ধতি ও নিয়মসমূহ সম্পর্কে আলোচনা করে তাকে যুক্তিবিদ্যা বলে। এর ফলে বাস্তবজীবনে চলার পথে সঠিক দিক নির্দেশনা পাওয়া যায়। আবার, যুক্তিবিদ্যা একটি বিজ্ঞান কারণ এটি নির্ভুল চিন্তার নিয়মাবলিকে নির্দেশ করে এবং বিশুদ্ধ চিন্তা বলতে কী বোঝায় সেটি তুলে ধরে। অন্যদিকে যুক্তিবিদ্যা হলো কলা, কারণ এটি যুক্তির সাধারণ নিয়মাবলিকে বা চিন্তা ও যুক্তিকে সঠিকভাবে প্রয়োগের কৌশলের জ্ঞান দান করে। অর্থাৎ, যুক্তিবিদ্যায় তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক দিক থাকার কারণে যুক্তিবিদ্যা কলা ও বিজ্ঞান উভয়ই। আবার, যুক্তিবিদ্যা সত্যতাকে আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করে যথার্থ চিন্তার সম্ভাব্যতা নির্ধারণ করে বলে এ বিদ্যা আদর্শনিষ্ঠ বিজ্ঞান নামেও পরিচিত।
উদ্দীপকে উল্লিখিত মিজান ও সুহাইল বাস্তবজীবনে যুক্তিবিদ্যার প্রয়োগের পাশাপাশি বিভিন্ন বিষয়ের কর্মপদ্ধতির অনুসন্ধান এবং বিজ্ঞানের সাথে সম্পর্কের কথা বলেছে। বিজ্ঞান, কলা, দর্শনসহ যুক্তিবিদ্যার সাথে কমবেশি সম্পর্কিত বিষয়ের প্রাথমিক কিছু মৌলিক বৈশিষ্ট্য আছে। আবার এ বিদ্যার সাথে ঐ সকল বিষয় পরস্পর নির্ভরশীল।
পরিশেষে বলা যায় যে, প্রায় আড়াই হাজার বছর পূর্বে সূত্রপাত ঘটা যুক্তিবিদ্যার পরিসর অনেক বিসত্মৃত।

৮. একাদশ মানবিকের ছাত্র রাসেল, রতন ও রিপা ক্লাসের ফাঁকে পাঠ্যবিষয় নিয়ে আলোচনা করছিলো। রিপা বললো, আমাদের পাঠ্যবিষয়গুলোর মধ্যে একটি বিষয় রয়েছে যা একটি মানদ--র প্রেক্ষিতে আমাদের বাস্তব জীবনে চলার নির্দেশনা দিতে পারে। রাসেল বললো, এ বিষয়টি বিভিন্ন তত্ত্ব আবিষ্কার করে। এ প্রসঙ্গে রতন বললো- এ বিষয়টি আমাদের কর্মপদ্ধতিরও সন্ধান দেয়।
ক. ‘Logic’ শব্দটির উৎপত্তি কোন ভাষা থেকে?
খ. যুক্তিবিদ্যাকে সকল বিজ্ঞানের বিজ্ঞান বলা হয় কেন?
গ. রিপার ইঙ্গিতকৃত বিষয়টি বর্ণনামূলক না আদর্শমূলক? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকে রাসেল ও রতনের বক্তব্যের সাথে তুমি কি একমত? তোমার মতের পক্ষে যুক্তি দাও।

৮ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. 'Logic' শব্দটির উৎপত্তি হয়েছে গ্রিক ভাষা থেকে।

খ. বিজ্ঞানের প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রণীত পদ্ধতি বা সূত্রাবলি যৌক্তিকতা ও বৈধতা যুক্তিপদ্ধতির নিয়ম-কানুন দ্বারা যাচাই করার কারণে যুক্তিবিদ্যাকে সকল বিজ্ঞানের বিজ্ঞান বলা হয়।
বিজ্ঞানকে যথার্থ হওয়ার জন্য সঠিক অনুমান এবং চিন্তাপদ্ধতির জন্য যুক্তিপদ্ধতি অনুসরণ করতে হয়। কারণ, যুক্তিবিদ্যাই একমাত্র সত্য অর্জনের লক্ষ্যে নির্ভুল চিন্তার নিয়মাবলি প্রণয়ন করে। তাই যুক্তিবিদ্যাকে সকল বিজ্ঞানের বিজ্ঞান বলা হয়।

গ. রিপার ইঙ্গিতকৃত বিষয়টি যুক্তিবিদ্যার আদর্শনিষ্ঠ বা আদর্শমূলক দিকটিকে প্রকাশ করেছে।
যে বিজ্ঞান কোনো আদর্শ বিবেচনা না করে কেবল বাস্তবক্ষেত্রে কোনো ঘটনা যেমন আছে তেমনভাবেই বর্ণনা করে তাকে বর্ণনামূলক বিজ্ঞান বলে। কিন্তু, যুক্তিবিদ্যা সত্যের আদর্শকে সামনে রেখে বৈধ যুক্তি পদ্ধতির নিয়মাবলি আবিষ্কার এবং তাদের মূল্য নিরূপণ করে। আবিষ্কার ও অনুসন্ধান করার জন্য যুক্তিপ্রক্রিয়ার নির্ণয় হলো যুক্তিবিদ্যার আলোচ্য বিষয়। তাই, যুক্তিবিদ্যা বর্ণনামূলক নয় বরং আদর্শমূলক বিজ্ঞান।
ক্লাসের ফাঁকে গল্প করার সময় রিপা বলে, আমাদের পাঠ্যবিষয়গুলোর মধ্যে একটি বিষয় রয়েছে যা একটি মানদ--র প্রেক্ষিতে আমাদের বাস্তব জীবনে চলার নির্দেশনা দিতে পারে। রিপার বক্তব্যটি যুক্তিবিদ্যার আদর্শনিষ্ঠ দিকের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। কারণ, যুক্তিবিদ্যাই সত্যতার আদর্শের আলোকে আমাদের বাস্তবজীবনে চলার সঠিক নির্দেশনা প্রদান করে।

ঘ. হ্যাঁ, উদ্দীপকের রাসেল ও রতনের বক্তব্যের সাথে আমি একমত।
যুক্তিবিদ্যায় প্রধানত দু'টি দিক রয়েছে। একটি হলো তাত্ত্বিক বা বিজ্ঞান বিষয়ক দিক এবং অন্যটি হলো ব্যবহারিক দিক। প্রকৃতির কোনো নির্দিষ্ট বিষয় সম্পর্কে বিজ্ঞান আমাদের তাত্ত্বিক জ্ঞান প্রদান করে। আর ব্যবহারিক বা প্রায়োগিক বিদ্যা সে জ্ঞানকে বাস্তবে প্রয়োগ করার কর্মপদ্ধতি ও কৌশল শিক্ষা দেয়। যেমন, তাত্ত্বিক বিজ্ঞান হিসেবে পদার্থবিজ্ঞান পদার্থের গঠন ও প্রকৃতি সম্পর্কে জ্ঞান দান করে। আবার প্রায়োগিক বিদ্যা হিসেবে নৌবিদ্যা আমাদের শেখায় কীভাবে নৌযান চালাতে হবে।
রাসেল, রতন ও রিপা ক্লাসের ফাঁকে পাঠ্যবিষয় নিয়ে আলোচনা করার সময় রাসেল বলে, এ বিষয়টি বিভিন্ন তত্ত্ব আবিষ্কার করে, যা যুক্তিবিদ্যাকে নির্দেশ করে কারণ, যুক্তিবিদ্যা আমাদের তাত্ত্বিক বা বিজ্ঞান বিষয়ক জ্ঞান প্রদান করে। আবার, ব্যবহারিক বা প্রায়োগিক দিকের কারণে যুক্তিবিদ্যার মাধ্যমে বাস্তবে প্রয়োগ করার কর্ম পদ্ধতি ও কৌশল সম্পর্কে শিক্ষা পাওয়া যায় যা রতনের বক্তব্যের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।
উপরের আলোচনা থেকে বলা যায়, রাসেল ও রতনের বক্তব্যের মাধ্যমে যুক্তিবিদ্যার তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক তথা সামগ্রিক দিক প্রকাশিত হয়েছে।

৯. জিশানের বাবা-মা দুজনই চাকুরিজীবী। সে কলেজ থেকে বাসায় ফিরে দেখে ঘরের দরজা খোলা, তালা ভাঙা। ভেতরে গিয়ে দেখল সবকিছু এলোমেলো অবস্থায় পড়ে আছে। তখন সে বুঝলো, ঘরে চোর এসেছিল।
ক. যুক্তিবিদ্যা কাকে বলে?
খ. যুক্তিবিদ্যাকে আদর্শনিষ্ঠ বিজ্ঞান বলা হয় কেন?
গ. উদ্দীপকে জিশানের ভাবনায় যুক্তিবিদ্যার কোন বিষয়টি প্রকাশ পেয়েছে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকের কোন অংশটি প্রত্যক্ষ জ্ঞান এবং কোন অংশটি পরোক্ষ জ্ঞান তা বিশ্লেষণ করো।

৯ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. কি যে বিদ্যা বৈধ যুক্তি থেকে অবৈধ যুক্তিকে পৃথক করার নিয়ম সম্পর্কে আলোচনা করে তাকে যুক্তিবিদ্যা বলে।

খ. যুক্তিবিদ্যা সত্যতাকে আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করে যথার্থ চিন্তার সম্ভাব্যতা নির্ধারণ করে বলে যুক্তিবিদ্যাকে একটি আদর্শনিষ্ঠ বিজ্ঞান বলা হয়।
যে বিজ্ঞান কোনো আদর্শের আলোকে তার বিষয়বস্তুর মূল্যায়ন করে তাকে আদর্শনিষ্ঠ বিজ্ঞান বলা হয়। যুক্তিবিদ্যাকেও আদর্শনিষ্ঠ বিজ্ঞান বলা হয়। কারণ, যুক্তিবিদ্যা সত্যতাকে আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করে যথার্থ চিন্তার গতিপথ নির্ধারণ করে। আর এ সত্যের আদর্শকে সামনে রেখে যুক্তির বৈধতা- অবৈধতা বিচার করে বলে একে আদর্শনিষ্ঠ বিজ্ঞান বলা হয়।

গ. উদ্দীপকে জিশানের ভাবনায় যুক্তিবিদ্যার অনুমান বিষয়টি প্রকাশ পেয়েছে।
যুক্তিবিদ্যার মূল আলোচ্য বিষয় হলো অনুমান। অনুমান আমাদের জ্ঞান লাভের প্রধান উৎস। কোনো জানা বিষয়ের উপর ভিত্তি করে কোনো অজানা বিষয় সম্বন্ধে জ্ঞান লাভের মানসিক প্রক্রিয়াকে অনুমান বলে। যেমন দূরে সবুজ বনানীর উপর দিয়ে ধোঁয়া উড়তে দেখে আমরা অনুমান করি যে, সেখানে কোন বাড়িতে আগুন লেগেছে। এক্ষেত্রে ধোঁয়া আমাদের জানা বিষয়, কারণ একে আমরা সরাসরি দেখতে পাচ্ছি। এ জানা ও দেখা বিষয়ের উপর নির্ভর করে আমরা অজানা ও অদেখা আগুনের বিষয়টি অনুমান করি।
উদ্দীপকে ঘরের দরজা খোলা ও তালাভাঙা এগুলো হলো দেখা অর্থাৎ জানা বিষয়, আর ‘ঘরে চোর এসেছিল' অজানা বিষয়। জিশান জানা বিষয় (ঘরের দরজা খোলা ও তালা ভাঙা) এর ওপর ভিত্তি করে অজানা বিষয় (ঘরে চোর এসেছিল) সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করে। এই জানা বিষয় থেকে অজানা বিষয়ের জ্ঞান লাভই হলো অনুমান।

ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত 'দরজা খোলা, তালা ভাঙ্গা' অংশটুকু প্রত্যক্ষ জ্ঞান এবং 'ঘরে চোর এসেছিল' অংশটুকু পরোক্ষ জ্ঞান।
আমরা জানি, জানা বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে কোনো অজানা বিষয় সম্পর্কে জ্ঞান লাভের মানসিক প্রক্রিয়াই হলো অনুমান। অনুমান দুই ধরনের জ্ঞানের সমন্বয়ে গঠিত। এক প্রত্যক্ষ জ্ঞান ও দুই পরোক্ষ জ্ঞান। অনুমানের ক্ষেত্রে যেমন প্রত্যক্ষ জ্ঞান প্রয়োজন তেমনি পরোক্ষ জ্ঞান ও অপরিহার্য। মানুষ কেবল বর্তমান সংক্রান্ত জ্ঞান নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে চায় না। বরং সে চায় অতীত ও ভবিষ্যতকে জানতে। এই অতীত ও ভবিষ্যত জ্ঞান হচ্ছে পরোক্ষ জ্ঞান। কিন্তু প্রত্যক্ষ জ্ঞান ব্যতীত পরোক্ষ জ্ঞানার্জন অসম্ভব। কারণ, পরোক্ষ জ্ঞানের ভিত্তি হলো প্রত্যক্ষ জ্ঞান।
উদ্দীপকে জিশান প্রত্যক্ষ জ্ঞান ‘দরজা খোলা, তালা ভাঙা' এর ভিত্তিতেই কিন্তু পরোক্ষ জ্ঞান 'ঘরে চোর এসেছিল' অর্জন করতে সক্ষম আমরা অনুমান হিসেবে আখ্যায়িত করি।
পরিশেষে বলা যায়, প্রত্যক্ষ জ্ঞান ও পরোক্ষ জ্ঞানে সমন্বয় হচ্ছে অনুমান।

১০. পদার্থ, রসায়ন, উদ্ভিদ, প্রাণিবিজ্ঞান প্রভৃতি বিষয় আমাদেরকে জ্ঞান অর্জন করতে বা জানতে শেখায়। এর ভাষা হচ্ছে এটি নৌবিদ্যা, রান্নার কাজ, সংগীত, চিত্রকর্ম প্রভৃতি বিষয়ে আমাদের জ্ঞানকে কাজে লাগাতে বা প্রয়োগ করতে শেখায়।
ক. এরিস্টটল প্রদত্ত যুক্তিবিদ্যাকে কী বলা হয়?
খ. ব্যুৎপত্তিগত দিক থেকে যুক্তিবিদ্যার সংজ্ঞা দাও।
গ. উদ্দীপকটি যে বিষয় দুটির ইঙ্গিত বহন করে, তার ব্যাখ্যা দাও।
ঘ. উদ্দীপকে বিধৃত বিষয় দুটির সাথে যুক্তিবিদ্যার কোনো সম্পর্ক আছে কি? তোমার মতামত বিশ্লেষণ করো।

১০ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. এরিস্টটল প্রদত্ত যুক্তিবিদ্যাকে প্রতীকী যুক্তিবিদ্যা ও আরোহ যুক্তিবিদ্যা বলা হয়।

খ. ব্যুৎপত্তিগত দিক থেকে যুক্তিবিদ্যা হলো ভাষায় প্রকাশিত চিন্তার বিজ্ঞান।
যুক্তিবিদ্যার ইংরেজি প্রতিশব্দ 'Logic'-এর উৎপত্তি গ্রিক 'Logike' শব্দ থেকে। 'Logike' শব্দটি 'Logos' শব্দের বিশেষণ। গ্রিক পরিভাষায় 'খড়মড়ং' এর তিনটি অর্থ রয়েছেত চিন্তা, ভাষা ও বিজ্ঞান। তিনটি বিষয়ের সাথেই যুক্তিবিদ্যার অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক রয়েছে। কাজেই ব্যুৎপত্তিগত অর্থে যুক্তিবিদ্যা হলো ভাষায় ব্যবহৃত চিন্তা সম্পর্কিত বিজ্ঞান।

গ. উদ্দীপকটি 'বিজ্ঞান' ও 'কলা' বিষয় দুটির ইঙ্গিত বহন করে।
যুক্তিবিদ্যার দুটি প্রধান দিক হলো- তাত্ত্বিক বা বিজ্ঞান বিষয়ক দিক এবং ব্যবহারিক বা কলাবিদ্যা বিষয়ক দিক। কোনো সাধারণ নিয়মের ভিত্তিতে প্রকৃতির একটি বিশেষ বিষয়ের সুশৃঙ্খল ও সুসংবদ্ধ আলোচনা হচ্ছে বিজ্ঞান। অর্থাৎ বিজ্ঞান কোনো একটি নির্দিষ্ট বিষয় সম্পর্কে তাত্ত্বিক জ্ঞান প্রদান করে। যেমনত পদার্থ বিজ্ঞান পদার্থের গঠন ও প্রকৃতি সম্পর্কে আলোচনা করে। এর মাধ্যমে আমরা পদার্থ সম্পর্কে তাত্ত্বিক জ্ঞান লাভ করি। অন্যদিকে কলাবিদ্যা হচ্ছে প্রয়োগিক বিদ্যা, যা কোনো বিশেষ উদ্দেশ্য সাধনের জন্য বৈজ্ঞানিক জ্ঞানকে বাস্তব ক্ষেত্রে প্রয়োগ করার নিয়ম-কানুন ও কলা-কৌশলের শিক্ষা দেয়। যেমন- নৌ বিদ্যা শেখায় কীভাবে নৌযান চালনা করতে হবে এবং রন্ধনশিল্প বিদ্যা শেখায় কীভাবে রান্না সবার কাছে সুস্বাদু ও আকর্ষণীয় করতে হবে।
উদ্দীপকটিতে আলোচিত দুটি বিষয়ের প্রথমটি (পদার্থ, রসায়ন, উদ্ভিদ, প্রাণিবিজ্ঞান প্রভৃতি বিষয় ) আমাদের তাত্ত্বিক জ্ঞানার্জনে সহায়তা করে; পক্ষান্তরে দ্বিতীয়টি (নৌবিদ্যা, রান্নার কাজ, সংগীত, চিত্রকর্ম প্রভৃতি বিষয়) জ্ঞান প্রয়োগ করতে বা কাজে লাগাতে সাহায্য করে। এ কারণে প্রথম বিষয়টি হলো বিজ্ঞান ও দ্বিতীয় বিষয়টি হলো কলা।

ঘ. উদ্দীপকে বিধৃত বিষয় দুটির সাথে যুক্তিবিদ্যার অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক রয়েছে। কেননা যুক্তিবিদ্যাকে বিজ্ঞান ও কলা উভয় হিসেবে অভিহিত করা হয়।
বিজ্ঞান ও কলার সাথে যুক্তিবিদ্যার নিবিড় সম্পর্ক বিদ্যমান। যুক্তিবিদ্যা উভয়ের সাথে অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িত। বিজ্ঞান, কলা ও যুক্তির লক্ষ্য, উদ্দেশ্য ও কাজের পদ্ধতি এক ও অভিন্ন। যেমনত সকলে সত্যকে জানতে চায় এবং সত্যকে জানার ক্ষেত্রে একটি সুশৃঙ্খল পদ্ধতি অনুসরণ করে। কেউই কোনো বিষয় বিচার-বিশ্লেষণ না করে অন্ধভাবে গ্রহণ করে না। কলাবিজ্ঞানও যুক্তিবিদ্যার যাচাইকরণ নীতি অনুসরণ করে সত্যকে আবিষ্কার করে। যুক্তিবিদ্যা ও কলাবিদ্যা বিজ্ঞানের নিত্যনতুন আবিষ্কারকে বাস্তব ক্ষেত্রে সঠিকভাবে কাজে লাগানোর রীতিনীতির শিক্ষা দেয়।
উদ্দীপকে বিধৃত বিষয় দুটির সাথে যুক্তিবিদ্যার সম্পর্ক সর্বজনীন এবং উভয়ের লক্ষ্য কল্যাণ সাধন। তাই উভয়ের সম্পর্কের প্রয়োজনীয়তা বাস্তব ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যুক্তিবিদ্যা, বিজ্ঞান ও কলা একে অপরের পরিপূরক। একটি ছাড়া অন্যটি চলতে পারে না।
বিজ্ঞান শুধু আবিষ্কার করে কিন্তু বিজ্ঞানের আবিষ্কারকে মানুষের প্রয়োজনে কাজে লাগাতে কলা ও যুক্তিবিদ্যা উভয়ই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। অর্থাৎ এরা প্রত্যেকেই পরস্পরের ওপর নির্ভরশীল।
Share:

0 Comments:

Post a Comment