HSC Economics 2nd Paper Srijonshil question and answer pdf download.
উচ্চমাধ্যমিক
অর্থনীতি
দ্বিতীয় পত্র
সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
৬ষ্ঠ অধ্যায়
HSC Economics 2nd Paper
Srijonshil
Question and Answer pdf download
১. সাফিন ও নাফিনসহ সাত বন্ধু তাদের নিজস্ব মূলধন নিয়ে একটি কারবার আরম্ভ করলেন। সম্ভাবনাময় হওয়ায় কারবারটি সম্প্রসারণের জন্য তারা পুঁজিবাজার থেকে মূলধন সংগ্রহের চিন্তা করলেন। সাফিন এমন একটি অনুমোদিত মূলধনের কথা চিন্তা করল যার দ্বারা কোম্পানির মালিকানা নির্দেশ করে এবং লাভ-ক্ষতির অংশীদারিত্ব নিশ্চিত করে। অন্যদিকে নাফিন এমন একটি দলিল ক্রয়ের সিদ্ধান্ত নেয় যা দ্বারা নির্দিষ্ট হারে সুদ পাবে কিন্তু কোম্পানির লভ্যাংশের অংশীদার হতে পারবে না।
ক. অর্থায়ন কী?
খ. অর্থায়নের উৎস হিসেবে ব্যাংক ঋণের ভূমিকা কী?
গ. উদ্দীপকে সাফিন যে বিশেষ পদ্ধতিতে মূলধন সংগ্রহের কথা চিন্তা করল তার বৈশিষ্ট্য ব্যাখ্যা করো।
ঘ. সাফিন ও নাফিনের অর্থ সংগ্রহের যে দুটি উৎসের কথা বলা হয়েছে তার তুলনামূলক বিশ্লেষণ করো।
১ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. অর্থায়ন হলো এমন একটি কার্যপ্রক্রিয়া, যা অর্থসংগ্রহ ও ব্যবহারের সাথে জড়িত।
খ. অর্থায়নের উৎস হিসেবে ব্যাংক ঋণের ভূমিকা যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। সাধারণত চেকের মাধ্যমে উত্তোলনযোগ্য ব্যাংক প্রদত্ত অর্থকে ব্যাংক ঋণ বলা হয়। আর, অর্থায়নের যতগুলো উৎস রয়েছে তার মধ্যে এই ব্যাংক ঋণ অন্যতম। এক্ষেত্রে বাণিজ্যিক ব্যাংক সাধারণত স্বপ্ন ও মধ্যমমেয়াদি এবং ক্ষেত্রবিশেষে দীর্ঘমেয়াদি ঋণ প্রদান করে। তাই বলা যায়, অর্থায়নের উৎস হিসেবে ব্যাংক ঋণের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত সাফিন শেয়ার এর মাধ্যমে মূলধন সংগ্রহের কথা। চিন্তা করেছে। নিচে শেয়ারের বৈশিষ্ট্য ব্যাখ্যা করা হলো। সাধারণত শেয়ার বলতে কোম্পানির অনুমোদিত মূলধনের অংশকে বোঝায়। এই শেয়ার রুয়ের মাধ্যমে যে কেউ উক্ত কোম্পানির আর্থিক মালিকানা লাভ করে। এজন্য শেয়ার মালিকগণকে কোম্পানির লাভ- ক্ষতি বহন করতে হয়। পুঁজি বাজারে বিভিন্ন ধরনের শেয়ার লক্ষ করা যায়। যেমন- প্রাথমিক শেয়ার, মাধ্যমিক শেয়ার, সাধারণ শেয়ার, বোনাস শেয়ার ইত্যাদি। বিভিন্ন শেয়ারে ঝুঁকির মাত্রা ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে। তবে, মাধ্যমিক শেয়ারের মূল্য বেশি উঠা-নামা করে বলে এ ধরনের শেয়ারে অন্যান্য শেয়ারের চেয়ে ঝুঁকি বেশি থাকে।
উদ্দীপকে লক্ষ করা যায়, সাফিন মূলধন সংগ্রহের জন্য পুঁজি বাজার থেকে এমন একটি অনুমোদিত মূলধন রুয়ের কথা চিন্তা করল, যার দ্বারা সে কোম্পানির মালিকানা লাভ করতে পারবে এবং লাভ-ক্ষতির অংশীদারিত্ব লাভ করবে। তাই বলা যায়, সাফিন যে বিশেষ পদ্ধতিতে মূলধন সংগ্রহের কথা চিন্তা করল, তা হলো শেয়ার। পুঁজিবাজারে শেয়ারের মূল্য চাহিদা ও যোগানের দ্বারা নির্ধারিত হয়। তাছাড়া, কর্তৃপক্ষ প্রদত্ত নির্দিষ্ট নিয়মনীতি অনুসারে শেয়ার ক্রয়-বিক্রয় পরিচালিত হয়।
ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত সাফিন ও নাফিনের অর্থ সংগ্রহের উৎস দুটি যথাক্রমে শেয়ার ও বন্ড। শেয়ার ও বন্ডের মধ্যে তুলনামূলক বিশ্লেষণ তুলে ধরা হলো।
যৌথ মূলধনী কোম্পানির মূলধনের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশকে শেয়ার বলে। আর বন্ধ হলো দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি, যাতে ঋণগ্রহীতা সুদ ও আসলসহ একটি নির্দিষ্ট তারিখে বন্ড মালিককে ফেরত দিতে অঙ্গীকার করে। সাধারণত শেয়ার মূলধনের ক্ষেত্রে মুনাফা বা লাভ হলে শেয়ারহোল্ডারদেরকে লভ্যাংশ দিতে হয়, আর লাভ না হলে তা দিতে হয় না। এজন্য এক্ষেত্রে শেয়ারের ঝুঁকি কম। কিন্তু, বন্ডের ক্ষেত্রে কোম্পানির লাভ বা ক্ষতি যাই হোক বন্ড হোল্ডারদেরকে চুক্তি অনুযায়ী অর্থ ফেরত দিতে হয়। উদ্দীপকে লক্ষ করা যায়, সাফিন ও নাফিন তাদের ব্যবসা সম্প্রসারণের জন্য পুঁজিবাজার থেকে মূলধন সংগ্রহের কথা চিন্তা করেছে। যেখানে সাফিন শেয়ার ক্রয় এবং নাফিন বন্ড ক্রয়ের মাধ্যমে মূলধন সংগ্রহের কথা চিন্তা করেছে। এক্ষেত্রে সাফিনের শেয়ার কোম্পানির মালিকানা নির্দেশ করে। কিন্তু নাফিনের বন্ড দ্বারা কোম্পানির মালিকানা লাভ করা ন্যায় না। শুধু নির্দিষ্ট হারে সুদ পাওয়া যায়।
তাই শেয়ারহোল্ডারগণ ভোটাধিকারের মাধ্যমে কোম্পানির পরিচালনায় অংশগ্রহণ করতে পারলেও বন্ডের ধারকদের এরূপ কোনো সুযোগ নেই।
২. পঞ্চগড়ে ক্রমবর্ধমান চা চাষ দেখে মি. 'X' পঞ্চগড়ে একটি চা প্রক্রিয়াকরণ কারখানা স্থাপন করতে চান। তিনি জানেন যে, এতে অনেক মূলধন প্রয়োজন হবে। তিনি বিভিন্ন ব্যাংক, বেসরকারি সংস্থা, না কি বন্ধু-বান্ধবের নিকট থেকে টাকা ধার নিবেন, এই চিন্তায় অস্থির। অবশ্য এক সময় তার মনে হয় যে, তিনি তার বর্তমান যে গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি আছে তার কিছু শেয়ার বিক্রি করবেন।
ক. পূজিবাজার বলতে কী বুঝায়?
খ. অর্থায়ন কেন করা হয়?
গ. অর্থায়নের উৎসগুলো কী কী হতে পারে বলে তুমি মনে কর? উদ্দীপকের আলোকে ব্যাখ্যা করো।
ঘ. শিল্পের অর্থায়নে পুঁজিবাজার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে- উদ্দীপকের আলোকে বিশ্লেষণ করো।
২ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. পূজিবাজার বলতে এমন কতকগুলো আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে বুঝায় যা দীর্ঘমেয়াদি ঋণের কারবার করে।
খ. কোনো দেশে শিল্পায়ন তথা শিল্প-কারখানা স্থাপন ও বিনিয়োগের জন্য প্রচুর মূলধন দরকার।
আধুনিককালে প্রায় সব দেশেই শিল্পের উদ্যোক্তারা নিজস্ব তহবিল ছাড়াও বিভিন্ন উৎস থেকে প্রয়োজনীয় মূলধন সংগ্রহ করে থাকে। আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, জনকল্যাণ, ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান সম্প্রসারণ ও উৎপাদনমুখী করার জন্য সরকার, ব্যক্তি বা ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান অর্থায়ন করে থাকে।
গ. মি 'x' অর্থায়নের উৎস হিসেবে উদ্দীপকে উল্লিখিত বিভিন্ন প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক উভয় উৎস হতে ঋণ গ্রহণ করে চা প্রক্রিয়াকরণ কারখানা স্থাপন করতে পারেন।
অর্থায়নের প্রাতিষ্ঠানিক উৎসগুলোর মধ্যে বাণিজ্যিক ব্যাংক অন্যতম। নতুন শিল্প স্থাপন, ব্যবসায় সম্প্রসারণ, শিল্পের আধুনিকায়ন ইত্যাদির প্রয়োজনে বাণিজ্যিক ব্যাংক স্বপ্ন ও মধ্যম মেয়াদি অর্থায়ন করে। বর্তমানে প্রতিযোগিতামূলক ব্যাংকিং খাতে বাণিজ্যিক ব্যাংক বিশেষ খাতে দীর্ঘমেয়াদি ঋণও প্রদান করে। এছাড়া, শিল্পায়ন ও নতুন ব্যবসায় স্থাপনের ক্ষেত্রে বিনিয়োগ ব্যাংক দীর্ঘমেয়াদি অর্থসংস্থানের ব্যবস্থা করে থাকে। আবার, ব্যাংক, বিমা কোম্পানি বা পুঁজিবাজার ছাড়াও ব্যক্তিগত বা দলীয়ভাবে অর্থায়নের কিছু অপ্রতিষ্ঠানিক উৎস রয়েছে। বৃহৎ ব্যবসায়ের জন্য উদ্যোক্তা সাধারণত ব্যবসায়ের প্রয়োজনে আত্মীয়-স্বজনের কাছ থেকে টাকা ধার নিয়ে ব্যবসা শুরু করতে পারে। উপরিউক্ত আলোচনা থেকে প্রতীয়মান হয় যে, মি. x চা কারখানা স্থাপন করতে চাইলে অর্থায়নের উৎস হিসেবে ব্যাংক থেকে গৃহীত ঋণ সব থেকে সুবিধাজনক হবে কারণ এটি দীর্ঘমেয়াদি ঋণের ব্যবস্থা করে।
ঘ. মি. 'X' এর মতো উদ্যোক্তাদের স্থাপিত শিল্পের অর্থায়নে পুঁজিবাজার নানাভাবে ভূমিকা রাখে।
প্রথমত, শেয়াবাজারে বিশেষ করে সেকেন্ডারি শেয়ার মার্কটে বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ার প্রতিনিয়ত বেচাকেনা হয়। এর ফলে পুঁজির গতিশীলতা এবং উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি পায়।
দ্বিতীয়ত, দেশে অনেক উচ্চবিত্ত লোক আছে যারা প্রাতিষ্ঠানিক সুযোগ- সুবিধার অভাবে তাদের সময়কে কোনো উৎপাদনমুখী কাজে ব্যবহার না করে অলসভাবে ফেলে রাখে। শেয়ারবাজার এসব সঞ্চয়কারীর অস অর্থকে বিনিয়োগ করে পুঁজি গঠনে সহায়তা করে।
তৃতীয়ত, সমাজে এমন অনেক ক্ষুদ্র সঞ্চয়কারী বা আমানতকারী আছে যারা তাদের সময় বা আমানতকে বিনিয়োগের কাজে খাটাতে চায়। কিন্তু বর্তমানে বৃহদায়তন শিল্পের যুগে কোনো ক্ষুদ্র আমানতকারীর পক্ষে এককভাবে কোনো শিল্প প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হয় না। এক্ষেত্রে শেয়ারবাজারে শেয়ার ক্রয় করে তারা যেকোনো শিল্প প্রতিষ্ঠানের মালিকানা লাভের মাধ্যমে উৎপাদনে অংশগ্রহণ করতে পারে।
চতুর্থত, শেয়ারবাজার জনগণকে বিনিয়োগে উৎসাহ প্রদান করে। পণ্য বাজারের মতো শেয়ারবাজারেও জনগণ ইচ্ছেমতো যেকোনো কোম্পানির শেয়ার ক্রয় করতে পারে। আবার, ইচ্ছা করলে প্রয়োজনের সময় এসব শেয়ার বিক্রি করে নগদ টাকা ফেরত পেতে পারে। এ কারণে জনগণ শেয়ারবাজারে বিনিয়োগে উৎসাহিত হয়। এর ফলে শেয়ারবাজারের মাধ্যমে দেশে বিনিয়োগ বৃদ্ধি পায়।
৩. ব্যবসার প্রশাসনে উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করে মি. রউফ তার কয়েকজন বন্ধুসহ ব্যক্তিগত সঞ্চয় দিয়ে প্রিন্টিং এর ব্যবসা শুরু করলেন। কিছুদিন পর তারা অনুভব করলেন, ব্যবসায় আরও পুঁজি খাটালে মুনাফার পরিমাণ বাড়বে। কাজেই সিদ্ধান্ত হলো, শেয়ারবাজারে প্রবেশ করবে। যথারীতি শেয়ার বিক্রি করে পুঁজি সংকটের মোকাবিলা করে তারা ব্যবসাকে প্রসারিত করলেন। এতে উৎপাদন খরচ, দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা এবং সম্পদ ব্যবহারের ইতিবাচক পরিবর্তন আসল।
ক. বন্ড কী?
খ. ঝুঁকি ও মুনাফার দৃষ্টিকোণ হতে বন্ড এবং কীভাবে পৃথক?
গ. মি. রউফ এবং তার বন্ধুদের অর্থায়নের উৎস ব্যাখ্যা করো।
ঘ. শেয়ারবাজার হতে মি. রউফ ও তার বন্ধুরা কীভাবে উপকৃত হলেন? উদ্দীপকের আলোকে ব্যাখ্যা করো।
৩ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. বন্ড হলো দীর্ঘমেয়াদি ঋণের দলিল, যা বিক্রি করে কোম্পানি বা সরকার তহবিল সংগ্রহ করে।
খ. যৌথ মূলধনী কোম্পানির মূলধনের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশকে শেয়ার বলে। আর বন্ড হলো দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি, যাতে ঋণগ্রহীতা সুদ ও আসলসহ একটি নির্দিষ্ট তারিখে বন্ড মালিককে ফেরত দিতে অঙ্গীকার করে। সাধারণত শেয়ার মূলধনের ক্ষেত্রে মুনাফা বা লাভ হলে শেয়ার হোল্ডারদেরকে লভ্যাংশ দিতে হয়, আর লাভ না হলে তা দিতে হয় না। এজন্য শেয়ারের ঝুঁকি কম। কিন্তু, বন্ডের ক্ষেত্রে কোম্পানির লাভ বা ক্ষতি যাই হোক বন্ধ হোন্ডারদেরকে চুক্তি অনুযায়ী অর্থ ফেরত দিতে হয়।
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত মি. রউফ এবং তার বন্ধুদের অর্থায়নের প্রাথমিক উৎস হলো ব্যক্তিগত সঞ্চয় এবং পরবর্তী উৎস হলো পুঁজিবাজার। ব্যক্তি তার আয়ের পুরোটা ব্যয় না করে কিছু অংশ সময় করে। এই সঞ্চিত অর্থ যখন বিনিয়োগ করা হয়, তখন তা অর্থায়নের উৎস হিসেবে বিবেচিত হয়। অর্থায়নের আরেকটি উৎস হলো পুঁজিবাজার। যে বাজারে যৌথমূলধনী কারবার, সরকার ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ক বিক্রয় হয়, তাকে পুঁজিবাজার বলে। সাধারণত, দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নের জন্য পুঁজিবাজার থেকে মূলধন সংগ্রহ করা হয়।
উদ্দীপকে লক্ষ করা যায়, মি. রউফ ও তার কয়েকজন বন্ধু তাদের ব্যক্তিগত অর্থ দিয়ে প্রিন্টিং ব্যবসা শুরু করেন। পরবর্তীতে তারা তাদের ব্যবসার পরিধি বৃদ্ধির লক্ষ্যে পুঁজিবাজারে শেয়ার বিক্রি করে মূলধন সংগ্রহ করেন। কাজেই বলা যায়, মি. রউফ ও তার বন্ধুরা প্রথমে ব্যক্তিগত সঞ্চয় এবং পরবর্তীতে পুঁজিবাজার থেকে মূলধন সংগ্রহ করেছেন।
ঘ. শেয়ারবাজার হতে মি. রউফ ও তার বন্ধুরা যেভাবে উপকৃত হলেন, তা নিচে আলোচনা করা হলো-
সাধারণত শেয়ারবাজার দীর্ঘমেয়াদি মূলধন সরবরাহ করে থাকে। তাই ব্যবসায়ীগণ দীর্ঘমেয়াদি পুঁজির জন্য শেয়ারবাজারকে বেছে নেন। শেয়ারবাজার থেকে অধিক পরিমাণে মূলধন সংগ্রহ করা যায়। তাছাড়া এ বাজার থেকে সংগৃহীত মূলধন জামানতমুক্ত। তাই, প্রতিভাবান শিল্প উদ্যোক্তাগণ সহজেই শেয়ারবাজার থেকে মূলধন সংগ্রহ করে শিল্প স্থাপন বা সম্প্রসারণ করতে পারেন।
উদ্দীপকে দেখা যায়, মি. রউফ ও তার বন্ধুরা নিজস্ব পুঁজি দিয়ে ব্যবসা শুরু করলেও তা দিয়ে তারা বৃহৎ আয়তনে উৎপাদন করতে পারছিলেন না। তাই তারা শেয়ারবাজারে শেয়ার বিক্রির মাধ্যমে অধিক পরিমাণে মূলধন সংগ্রহ করেন। এর ফলে তারা দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ ও বৃহৎ পরিসরে উৎপাদন করতে সক্ষম হয়েছেন। এতে করে তাদের উৎপাদন ব্যবস্থায় শ্রমবিভাজন সম্ভব হয়েছে এবং উৎপাদন ব্যয় হ্রাস পেয়েছে। ফলশ্রুতিতে মুনাফার পরিমাণও বৃদ্ধি পেয়েছে। তাছাড়া, শেয়ারবাজার থেকে অর্থ সংগ্রহ করলে কোনো রকম আর্থিক বাধ্যবাধকতা থাকে না। ফলে এ ধরনের সংগৃহীত মূলধনে ঝুঁকি কম। কাজেই উপর্যুক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায়, মি. রউফ ও তার বন্ধুরা শেয়ারবাজার থেকে মূলধন সংগ্রহ করায় তাদের ব্যবসায় উৎপাদন ও মুনাফা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং দীর্ঘমেয়াদি উৎপাদন পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়নে ঝুঁকি হ্রাস পেয়েছে।
৪. মানিক এবং রতন দুই বন্ধু । দুজনেই অনার্সের ছাত্র। তারা প্রাইভেট টিউশনি করে প্রচুর টাকা আয় করেন। সহিত অর্থ বিনিয়োগের জন্য তারা স্কয়ার কোম্পানির শেয়ার ক্রয়ের জন্য আবেদন করেন। আবেদনকারীর সংখ্যা বেশি হওয়ায় লটারির মাধ্যমে শেয়ার বিতরণ করা হয়। লটারিতে জিতে মানিক স্কয়ার কোম্পানির শেয়ার ক্রয় করেন। অন্যদিকে, লটারিতে হেরে রতন চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ থেকে ব্রোকার হাউসের মাধ্যমে 'একমি কোম্পানির শেয়ার ক্রয় করেন।
ক. অর্থায়ন বলতে কী বুঝায়?
খ. বন্ড থেকে আয় প্রাপ্তি পূর্বনির্ধারিত এবং নিশ্চিত। ব্যাখ্যা করো।
গ. রতনের ক্রয়কৃত শেয়ার কী প্রকৃতির? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. মানিক ও রতনের ক্রয়কৃত শেয়ার একই ধরনের নয়। ব্যাখ্যা করো।
৪ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. অর্থায়ন বলতে তহবিল সংগ্রহের কাজকে বুঝায়।
খ. বন্ড একটি ঋণ সম্পর্কিত দলিল। এ দলিলে ঋণের পরিমাণ, ঋণের মেয়ান, সুদের হারসহ আনুষঙ্গিক শর্তাবলি উল্লেখ থাকে।
বন্ডের ধারককে একটি নির্দিষ্ট হারে সুদ প্রদান করতে হয়, যা তার আয়ও বটে। কোম্পানির লাভ হোক বা না হোক এ সুদ পরিশোষ করতেই হয়। বন্ডের মালিকরা প্রকৃতপক্ষে কোম্পানির ঋণদাতা। নির্দিষ্ট সুদের হারে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য বন্ডের মালিকরা কোম্পানিকে ঋণ দিয়ে থাকে। এ কারণে বলা হয়, 'বন্ড থেকে আয় প্রাপ্তি পূর্বনির্ধারিত এবং নিশ্চিত।
গ. রতনের ক্রয়কৃত শেয়ার হলো মাধ্যমিক বা সেকেন্ডারি শেয়ার। প্রাথমিক শেয়ার ইস্যুর পর পরবর্তী পর্যায়ে যখন শেয়ার কেনাবেচা হয় তখন তাকে মাধ্যমিক বা সেকেন্ডারি শেয়ার বলা হয়। যে বাজারে এ ধরনের শেয়ার ক্রয়-বিক্রয় হয় তাকে সেকেন্ডারি শেয়ার মার্কেট বলে। শেয়ারবাজার বলতে মূলত সেকেন্ডারি শেয়ারবাজারকেই বোঝায়। সেকেন্ডারি মার্কেটে কেনাবেচাই হলো শেয়ার ব্যবসায়ের প্রাণকেন্দ্র। স্টক এক্সচেঞ্জে নিবন্ধিত সদস্যবৃন্দ এ বাজারে কেনাবেচা করে। এদেরকে 'ব্রোকার' বা 'ডিলার' বলা হয়। শেয়ারবাজারের যেকোনো সদস্য এ শেয়ার ক্রয়-বিক্রয়ের স্বাধীনতা ভোগ করে। প্রাথমিক শেয়ার রুয়ের মতো এ শেয়ার রুয়ের জন্য আবেদন করতে হয় না। একজন বিনিয়োগকারী কখনই শেয়ারবাজারে সরাসরি কেনাবেচায় অংশ নিতে পারেন না। যখন কেউ শেয়ারবাজারে শেয়ার কিনতে বা বিক্রি করতে চায় তখন তাকে নিবন্ধিত বা তালিকাভুক্ত ব্রোকার বা ডিলারদের মাধ্যমেই তা করতে হয়। এই ব্রোকার বা ডিলাররা শেয়ার ব্যবসায়ে বিনিয়োগকারী এবং শেয়ার বিক্রেতাদের মধ্যে মধ্যস্থতাকারী বা মধ্যবর্তী প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করে। সুতরাং, রতন চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ থেকে ব্রোকার হাউসের মাধ্যমে যে শেয়ার ক্রয় করেছিল তা মাধ্যমিক বা সেকেন্ডারি শেয়ার।
ঘ. লটারিতে জিতে মানিক 'স্কয়ার' কোম্পানির শেয়ার ক্রয় করেন। যা ছিল প্রাইমারি শেয়ার। অন্যদিকে, রতন চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ থেকে ব্রোকার হাউসের মাধ্যমে 'একমি কোম্পানির শেয়ার ক্রয় করেন। যা ছিল মাধ্যমিক বা সেকেন্ডারি শেয়ার বৈশিষ্ট্যগত দিক থেকে প্রাইমারি শেয়ার ও মাধ্যমিক বা সেকেন্ডারি শেয়ার একই ধরনের নয়। নিচে তা ব্যাখ্যা করা হলো।
প্রাইমারি শেয়ার: কোনো কোম্পানি যখন পুঁজিবাজারে নতুন শেয়ার বিক্রির জন্য ছাড়ে তখন তাকে 'প্রাথমিক শেয়ার' বলা হয়। এরূপ শেয়ার সাধারণত ব্যাংক বা কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বিক্রির ব্যবস্থা করা হয়। ফেস ভেল্যুর ভিত্তিতে প্রাথমিক শেয়ার ক্রয়-বিক্রয় হয়ে থাকে। স্টক এক্সচেঞ্জ ব্রোকার হাউসে BO (Beneficiary Owners ) হিসাব খোলার মাধ্যমে যেকোনো নাগরিক প্রাথমিক শেয়ার ক্রয় করতে আবেদন করতে পারে। প্রাথমিক শেয়ারের ক্ষেত্রে শেয়ার লটের চেয়ে আবেদনকারীর সংখ্যা বেশি হলে লটারির মাধ্যমে শেয়ার বিক্রি হয় প্রাথমিক শেয়ার অবিক্রীত থাকলে অবলেখক ঐ শৈয়ার ক্রয় করে। সেকেন্ডারি শেয়ার: প্রাথমিক শেয়ারের মালিকানা বদল হয়ে প্রথম ক্রেতার নিকট হতে অন্য কোনো ক্রেতার নিকট হস্তান্তরিত হলে তাকে সেকেন্ডারি শেয়ার বলে। শেয়ারবাজারের মাধ্যমে এ । শেয়ার হস্তান্তর বা ক্রয়-বিক্রয় হয়ে থাকে।
সেকেন্ডারি শেয়ার প্রকৃতপক্ষে স্বাধীন অসিস্তেত্ববিশিষ্ট কোনো শেয়ার নয়। এ শেয়ারের দাম তার চাহিদা ও যোগানের ভিত্তিতে নির্ধারিত হয়। তাই চাহিদা ও যোগানের ঘাত-প্রতিঘাতের মাধ্যমে এর নাম পরিবর্তিত হয়। বাজারে প্রতিদিন শেয়ারের দাম ওঠা-নামা করে। ফলে বাজার দামে মাধ্যমিক শেয়ার ক্রয়-বিক্রয় হয়। বিও হিসাবধারী যে কেউ মাধ্যমিক শেয়ার ক্রয় করতে পারে। প্রাথমিক শেয়ার রুয়ের মতো এ শেয়ার রুয়ের জন্য আবেদন করতে হয় না।
৫. বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল দেশ। ইতোমধ্যেই দেশটি সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করেছে। দেশে বৃহৎ শিল্প কারখানা, পাওয়ার প্লান্ট, পদ্মা সেতুসহ বড় বড় অবকাঠামো নির্মাণ হচ্ছে। এসব কার্য সম্পাদনে সরকারের রাজস্ব তহবিল থেকে অর্থায়ন পুরোপুরি সম্ভব নয়। তাই অর্থায়নের জন্য প্রায়ই বিদেশি সাহায্যের ওপর নির্ভর করতে হয়। এসব বৈদেশিক সাহায্যনির্ভর অর্থায়ন হ্রাস করতে বর্তমান সরকার দৃঢ় প্রতিজ্ঞা।
ক. শেয়ার কী?
খ. বন্ড বিনিয়োগে ঝুঁকি নেই কেন?
গ. উদ্দীপকে অর্থায়নের কোন উৎসের কথা বলা হয়েছে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকে বর্ণিত অবকাঠামোগুলোর উন্নয়নে সাহায্যের পরিবর্তে সরকার কোন কোন উৎস হতে অর্থায়নের ব্যবস্থা করতে পারে? আলোচনা করো।
৫ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. শেয়ার হলো কোনো লিমিটেড কোম্পানির মূলধনের ক্ষুদ্রতম অংশ।
খ. বন্ডের ধারক একটি নির্দিষ্ট হারে সুদ পেয়ে থাকে ফলে তার মুনাফা সুনিশ্চিত। তাই বন্ড বিনিয়োগে ঝুঁকি নেই।
বন্ড হলো দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি যাতে ঋণ গ্রহীতা সুদ ও আসল একটি নির্দিষ্ট তারিখে বহু মালিককে ফেরত দিতে অঙ্গীকারবদ্ধ থাকে। বন্ধের ধারককে কোম্পানির লাভ অথবা লোকসান কোনোটির ভারই বন করতে হয়না। এতে কোম্পানি যখন লাভবান হয় তখন বন্ডের মালিককে নির্ধারিত মুনাফার অতিরিক্ত মুনাফা প্রদান করা হয়না। আবার, কোম্পানি যখন ক্ষতিগ্রস্ত হয় তখনও বন্ডের মালিককে তার নির্ধারিত সুদ প্রদান করা হয়। এতে বন্ডের মালিককে লোকসানের ঝুঁকি বহন করতে হয়না। তাই বলা যায়, বন্ড বিনিয়োগে কোনো ঝুঁকি নেই।
গ. উদ্দীপকে সরকারি অর্থায়নের অভ্যন্তরীণ উৎস ও বাহ্যিক উৎস উভয়ের কথা বলা হয়েছে।
কাজের ধরন ও প্রকৃতি অনুযায়ী অর্থায়ন দুই প্রকার। যথা- সরকারি অর্থায়ন ও বেসরকারি অর্থায়ন। সরকারি অর্থায়নকে আবার দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন- অভ্যন্তরীণ উৎস ও বাহ্যিক উৎস। কোনো দেশের সরকার তার প্রয়োজনীয় অর্থের একটি অংশ অভ্যন্তরীণ উৎস যেমন- কর, শুল্ক, অ-কর রাজস্ব ইত্যাদির মাধ্যমে সংগ্রহ করতে পারে। আবার, বিভিন্ন অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে প্রাপ্ত আর যখন সরকারের জন্য যথেষ্ট হয় না, তখন সরকার বাহ্যিক উৎস থেকে অর্থায়ন করে থাকে। যেমন- বিভিন্ন দেশ হতে সাহায্য, আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান তথা বিশ্বব্যাংক, IMF, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক ইত্যাদি থেকে ঋণ গ্রহণ করে থাকে।
উদ্দীপকে, দেশে বৃহৎ শিল্প-কারখানা, পাওয়ার প্লান্ট ও পদ্মা সেতুর মতো বড় বড় অবকাঠামো নির্মাণের কথা বলা হয়েছে। যেখানে সরকারের রাজস্ব তহবিল হতে ও বৈদেশিক সাহায্যের মাধ্যমে অর্থা করা হয়েছে। এক্ষেত্রে রাজস্ব তহবিল অভ্যন্তরীণ উৎস ও বৈদেশিক সাহায্য বাহ্যিক উৎসকে প্রতিনিধিত্ব করে।
সুতরাং বলা যায় যে, উদ্দীপকে সরকারি অর্থায়নের অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক উৎস নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
ঘ. উদ্দীপকে বর্ণিত অবকাঠামোগুলো উন্নয়নে সরকার সাহায্যের পরিবর্তে বেসরকারি উৎস হতে অর্থায়ন করতে পারে। কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের অর্থায়নকে বেসরকারি অর্থায়ন বলে। অর্থাৎ সরকারি অর্থায়ন ব্যতীত অন্য সব অর্থায়ন এই শ্রেণির অন্তর্ভুক প্রতিষ্ঠান ব্যবসায়ী হতে পারে আবার অ-ব্যবসায়ীও হতে পারে। বেসরকারি অর্থায়নকে আবার তিনভাগে ভাগ করা হয়। যেমন- ব্যক্তিগত অর্থায়ন, ব্যবসায় অর্থায়ন ও অ-ব্যবসায় অর্থায়ন। সরকার যদি বেসরকারি উৎস হতে আয়ের পরিমাণ বাড়ায় তাহলে বৈদেশিক নির্ভরশীলতা বা সাহায্য হ্রাস পায়।
উদ্দীপকে সরকার বৃহৎ শিল্প প্রতিষ্ঠান, পাওয়ার প্লান্ট ও পদ্মা সেতুর মতো বড় বড় অবকাঠামোগত উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালনা করে। এ সকল কার্যক্রম বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সরকার প্রথমে রাজস্ব তহবিল তথা অভ্যন্তরীণ উৎস হতে 'অর্থায়নের সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু তা পর্যান্ত না হওয়ায় বৈদেশিক সাহায্য তথ্য বাহ্যিক উৎস থেকে অর্থায়ন করে, যা কোনো দেশের স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের পথে হুমকি। তাই সরকার স্বনির্ভরতা অর্জনে বৈদেশিক সাহায্য হ্রাস করতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।
কোনো দেশের স্বনির্ভরশীলতা অর্জনে অবশ্যই বৈদেশিক সাহায্য বা দান-অনুদানের বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এক্ষেত্রে বাহ্যিক উৎসের পরিবর্তে যদি বেসরকারি অর্থায়নকে কাজে লাগানো যায় তাহলে কাঙ্ক্ষিত উন্নয়নের পথ আরো সুগম হবে। তাই আমাদের উন্নয়ন কার্যক্রমকে অব্যাহত রাখতে ও একটি স্বনির্ভর জাতি গড়ে তুলতে সরকারি ও বেসরকারি উভয় প্রকার অর্থায়নকে উৎসাহিত করতে হবে।
৬. মিসেস রেবেকা সুলতানা একজন অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারী। তিনি নগদ ৫ লক্ষ টাকা পেনশন পেয়েছেন। স্বামীর পরামর্শে ৪ লক্ষ টাকায় পারিবারিক সন্যায়পত্র ক্রয় করলেন এবং অবশিষ্ট টাকা দিয়ে 'ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ'-এ বিভিন্ন কোম্পানির কিছু শেয়ার করলেন।
ক. বোনাস শেয়ার কী?
খ. প্রাইমারি শেয়ারের ঝুঁকি কম ব্যাখ্যা করো।
গ. মিসেস রেবেকা সুলতানার কোন খাতে বিনিয়োগ কম ঝুঁকিপূর্ণ, কিন্তু মুনাফা নিশ্চিত? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকের শেষোক্ত বিনিয়োগে ঝুঁকি ও অনিশ্চয়তা থাকলেও সবচেয়ে অধিক মুনাফা পাওয়ার সম্ভাবনা আছে বুঝিয়ে লিখ।
৬ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. কোম্পানির বন্টনযোগ্য মুনাফা অংশীদার মধ্যে বন্টন না করে যদি সমমূল্যের শেয়ার বিতরণ করা হয়, তবে তাকে বোনাস শেয়ার বলে।
খ. প্রাইমারি শেয়ারের দাম পূর্বনির্ধারিত হওয়ায় এ ধরনের শেয়ারে ঝুঁকি কম কোনো কোম্পানি যখন পুঁজিবাজারে নতুন শেয়ার বিক্রির জন্য ছাড়ে তখন তাকে প্রাথমিক শেয়ার বলে। এরূপ শেয়ার সাধারণত ব্যাংক বা কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বিক্রির ব্যবস্থা করা হয়। এ শেয়ারে মালিক কোনো নির্দিষ্ট হারে মুনাফা পায় না। তবে প্রাথমিক শেয়ারের মালিকরা কোম্পানির পরিচালনায় ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে। তাছাড়া, প্রাইমারি শেয়ারের ফেইস ভ্যালুই হলো প্রাইমারি শেয়ারের মূল্য। প্রাইমারি শেয়ারের দাম স্টক এক্সচেঞ্জ এর নীতিমালা অনুযায়ী নির্ধারিত হয়। ফলে এতে কোনো ধরনের ঝুঁকি বা অনিশ্চয়তা পরিলক্ষিত হয় না। তাই বলা যায়, অন্যান্য শেয়ারের তুলনায় প্রাইমারি শেয়ারে ঝুঁকি কম।
গ. মিসেস রেবেকা সুলতানার পারিবারিক সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ কম ঝুঁকিপূর্ণ কিন্তু মুনাফা নিশ্চিত।
বাংলাদেশ সরকার সমাজের নিম্নবিত্তের লোকদেরকে সঞ্চয়মুখী করে তোলা এবং মুনাফা প্রদান বাবদ সামান্য টাকা আয় করতে সহায়তা করার উদ্দেশ্যে পারিবারিক সঞ্চয়পত্র চালু করেছে। পারিবারিক সঞ্চয়পত্র ৫ বছরমেয়াদি। এ সঞ্চয়পত্রের জন্য প্রদেয় মুনাফার হার নির্দিষ্ট যা নির্দিষ্ট সময় অন্তর প্রদেয় সঞ্চয়পত্রের মেয়াদ পূর্তির পর মুনাফা ও আসল টাকা ফেরত পাওয়া যায়, আর মেয়াদ পূর্তির আগে ভাঙালে হ্রাসকৃত হারেও মুনাফা পাওয়া যায়। এক কথায় সঞ্চয়পত্র থেকে প্রাপ্তব্য আসল টাকা ও মুনাফা নির্ধারিত ও নিশ্চিত।
মিসেস রেবেকা তার ১ লক্ষ টাকা দিয়ে যে শেয়ার ভয় করেন সেখান: থেকে প্রাপ্তব্য মুনাফা অনিশ্চিত। মিসেস রেবেকা যে কোম্পানির শেয়ার ক্রয় করেছেন ওই কোম্পানি কেবল লাভ করলেই শেয়ারহোল্ডারকে মুনাফা দেয়; ক্ষতিগ্রস্ত হলে কিছুই দেয় না। তাছাড়া, মিসেস রেবেকার ক্রয়কৃত শেয়ারের মূল্যের ব্যাপক পতন ঘটলে তার যথেষ্ট ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। কোম্পানি দেউলিয়া হয়ে গেলে তিনি কিছুই পাবেন না।
ঘ. উদ্দীপকের শেষোক্ত বিনিয়োগের অর্থাৎ 'ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ' এ বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ার করে ঝুঁকি ও অনিশ্চয়তা থাকলেও অধিক মুনাফা পাওয়ার সম্ভাবনা আছে।
শেয়ার মার্কেট বা স্টক এক্সচেরা হলো শিল্প প্রতিষ্ঠানের শেয়ার বেচাকেনার একটি বিপণন কেন্দ্র। এ বাজারে সাধারণত যৌথ মূলধনী কোম্পানিগুলো মূলধন সংগ্রহের উদ্দেশ্যে শেয়ার বিক্রি করে। বিনিয়োগকারীরা শেয়ারের লভ্যাংশ কোম্পানির লাভ-লোকসানের ভিত্তিতে পেয়ে থাকে। তবে এক্ষেত্রে যেকোনো প্রব্যের মতো শেয়ারের চাহিদা ও যোগানের ভিত্তিতে তার বাজার দাম নির্ধারিত হয়। এতে শেয়ারের দাম উঠানামা করে বিধায় দাম ও মুনাফা কমবেশি হতে পারে। তবে যেসব কোম্পানির সুনাম আছে এবং যেগুলো বছর শেষে অধিক স্টক ডিভিডেন্ড বা ক্যাশ ডিভিডেন্ড বা উভয়ই বেশি পরিমাণে প্রদান করে সেগুলোর চাহিদা বেশি হওয়ায় তার বাজার দামও বেশি হয়। এ ধরনের কোম্পানির শেয়ার ক্রয় করলে আকস্মিকভাবে অনেক মুনা লাভ করা যায়। আবার, কোনো কোম্পানির চাহিদা হঠাৎ করে কমে গেলে তৎসংশ্লিষ্ট সকল শেয়ারের নাম তথা মুনাফা অনেক কমে যায়। এতে ঝুঁকি বা অনিশ্চয়তা বিরাজ করে।উদ্দীপকে মিসেস রেবেকা সুলতানা পেনশনের টাকার কিছু অংশ দিয়ে 'ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জল' হতে কতিপয় শেয়ার ক্রয় করেন। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ' মার্কেটে শেয়ার রুয়ের ক্ষেত্রে অধিক মুনাফা পাওয়ার সুযোগ থাকলেও অনেক ক্ষেত্রে ঝুঁকি ও অনিশ্চয়তা পরিলক্ষিত হয়। তবে শেয়ার মার্কেটের অন্যান্য সুবিধা যেমন- নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ, Cost of fund কম, বিনিয়োগকারীরা সবাই এ মার্কেটের অংশগ্রহণকারী হতে পারে ইত্যাদির ফলে শেয়ার বাজারের অধিক জনপ্রিয়তা লক্ষ করা যায়। এ ধরনের বিনিয়োগে অধিক মুনাফা লাভের সম্ভাবনা থাকায় মানুষ ঝুঁকি ও অনিশ্চয়তা বহনেও রাজি থাকে।
৭. দেলোয়ার সাহেব তার সঞ্চিত পাঁচ লক্ষ টাকা শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করেন। ২০১৩ সালে 'X' কোম্পানির প্রতিটি প্রাথমিক শেয়ারের মূল্য ছিল ১০. ০০ টাকা। বর্তমানে এই শেয়ারের বাজার মূল্য ৭৫. ০০ টাকা। গত বছর এই শেয়ারের মূল্য ছিল ১২০.০০ টাকা।
ক. IPO এর পূর্ণরূপ কী?
খ. অর্থায়নের বাহ্যিক উৎস বলতে কী বোঝায়?
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত দু'ধরনের শেয়ারের মধ্যে তুলনামূলক আলোচনা করো।
ঘ. মেঘ উদ্দীপকে শেয়ারের মূল্যে পরিবর্তনের ধারণাটি বন্ড মার্কেটের সাথে তুলনা করো।
৭ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. IPO- পূর্ণরূপ হলো - Initial Public Offering.
খ. মালিক বা উদ্যোত্তার নিজস্ব মূলধন এবং অবণ্টিত মুনাফা ছাড়া ঋণ হিসেবে যে সমস্ত উৎস হতে ঋণ সংগ্রহ করা হয় তাকে অর্থায়নের বাহ্যিক উৎস বলে । অর্থায়নের এ উৎস আবার দু'ধরনের; যথা- দেশীয় ও আন্তর্জাতিক। ক্রেতা থেকে অগ্রিম গ্রহণ, প্রাপ্য বিল বাট্টাকরণ, বাণিজ্যিক ও বিশেষায়িত ব্যাংক ইত্যাদি হলো অর্থায়নের দেশীয় বাহ্যিক উৎস। আর দাতা দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থা কর্তৃক সাহায্য, ঋণদান, অনুদান ইত্যাদি হলো অর্থায়নের আন্তর্জাতিক বাহ্যিক উৎস।
গ. উদ্দীপকের দু'ধরনের শেয়ারের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। যথা- প্রাইমারি বা প্রাথমিক শেয়ার এবং সেকেন্ডারি বা মাধ্যমিক শেয়ার। নিচে এ দু'ধরনের শেয়ারের মধ্যে তুলনামূলক আলোচনা করা হলো-
১. কোম্পানি বা ইস্যু হাউস যে শেয়ার আইপিও (IPO) এর মাধ্যমে বিক্রির উদ্দেশ্যে বাজারে ছাড়ে এবং আবেদন দ্বারা সরাসরি কিংবা লটারির মাধ্যমে তা না করা যায়, সেটিই প্রাইমারি শেয়ার। অন্যদিকে, প্রাইমারি শেয়ার মাণিকরা যখন তাদের শেয়ার ব্রোকার হাউসে বিক্রি করে তখন ঐ বিক্রিত শেয়ার হয়ে যায় সেকেন্ডারি শেয়ার।
২. প্রাইমারি শেয়ারের মালিকানা বদলায় না, যে তা পায় সেই তার মালিক হয়। কিন্তু সেকেন্ডারি শেয়ারের মালিকানা শেয়ার বিক্রির সাথে সাথে বদলাতে থাকে।
৩. প্রাইমারি শেয়ার ব্যাংক বা কোনো ইস্যু হাউসের মাধ্যমে সংগ্রহ করা যায়। কিন্তু সেকেন্ডারি শেয়ার কেবল স্টক এক্সচেঞ্জ থেকেই ক্রয় করতে হয়।
৪. প্রাইমারি শেয়ার ইস্যুকারক কর্তৃক আইপিও-এর মাধ্যমে নির্বাচিত বিও (Beneficiary Owners) একাউন্টধারীর একাউন্টে পৌঁছায়। অন্যদিকে, সেকেন্ডারি শেয়ার ব্রোকার হাউসের মাধ্যমে স্টক এক্সচেয়া কর্তৃক পরিচালিত ইলেকট্রনিক ব্যবস্থার মাধ্যমে কেনা যায়।
৫. প্রাইমারি শেয়ারের দাম তার ফেইসভ্যালু (FV) দ্বারা প্রকাশিত হয়। সেক্ষেত্রে সেকেন্ডারি শেয়ারের নাম তার চাহিদা ও যোগানের ঘাত-প্রতিঘাত দ্বারা নির্ধারিত হয় এবং তা প্রায়ই ওঠা-নামা করে।
ঘ. উদ্দীপকটি পাঠ করে জানা যায়, শেয়ারবাজারে রুনা-বিক্রয়যোগ্য শেয়ারের মূল্য সময় ব্যবধানে অনেক ওঠা-নামা করে। শেয়ার মূল্যের এ উত্থান-পতন বন্ডের বাজারে বন্ডের মূল্যের ওঠা-নামা অপেক্ষা তাঁর ও ক্রিয়াশীল।
১. শেয়ার মার্কেটে সাধারণ ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী সবাই অংশগ্রহণ করে শেয়ার কেনাবেচায় অংশ নেয়। তাই এখানে শেয়ারের মূল্য নির্ধারণে সাধারণ ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা একযোগে ভূমিকা পালন করে। কিন্তু বন্ড মার্কেটে মূলত প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরাই বন্ড কেনা-বেচায় অংশ নেয়। এ জন্য এখানে বন্ডের মূল্য নির্ধারণে একক প্রভাব লক্ষ করা যায়।
২. শেয়ারের মূল্যের সাথে সুদের হারের কোনো সম্পর্ক নেই। শেয়ারের মূল্য কোম্পানির লাভ-লোকসানের সাথে জড়িত। কোম্পানি থেকে লাভের প্রত্যাশা বাড়লে শেয়ারের মূল্য বাড়ে, বিপরীত অবস্থায় তার মূল্য কমে। কিন্তু বন্ডের মূল্য সরাসরি সুদের হারের সাথে সম্পর্কিত। বাজারে সুদের হার বাড়লে বন্ডের মূল্য কমে; আবার সুদের হার কমলে বন্ডের মূল্য বাড়ে।
৩. শেয়ারবাজারে শেয়ারের মূল্যের উত্থান-পতন নিত্যদিনের ঘটনা। প্রকৃতপক্ষে শেয়ার কেনা-বেচা চলাকালীন অবস্থায় তার মূল্য ক্ষণে ক্ষণে পরিবর্তিত হয়। কিন্তু বন্ডের বাজারে বন্ডের মূল্য ধীর গতিতে পরিবর্তিত হয়। প্রায়শই এর মূল্য কিছু সময় ধরে একই থাকতে পারে।
৪. শেয়ারের মূল্য অসাধু শেয়ার ব্যবসায়ীদের দ্বারা যথেষ্ট প্রভাবিত হয়। কিন্তু বন্ডের কেনা-বেচায় মূলত প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা জড়িয়ে থাকায় কেউ বন্ডের মূল্য নির্ধারণে কৌশলের আশ্রয় নিতে পারে না।
৮. বিভাবতী একটি বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। জনাব জামির ঐ প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক। তিনি বিদ্যালয় সম্প্রসারণ ও অবকাঠামো নির্মাণের জন্য সমাজের বিত্তবান লোকের কাছে আর্থিক সহযোগিতার। জন্য আবেদন জানান। অতি সম্প্রতি দেশের জনৈক বিত্তবান ব্যক্তি কোটি টাকা খরচ করে ভবন নির্মাণ করে দেন। সরকারের ICT মন্ত্রণালয় শিক্ষার আধুনিক সরঞ্জাম সরবরাহ করেন। সরকারি বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার ক্ষেত্রে নগদ অর্থ সহায়তাসহ বিভিন্ন অনুদান প্রদান করেন। শিক্ষার্থীরা লেখাপড়ায় খুবই অগ্রগামী। ফলে বিভাবতী দেশের শ্রেষ্ঠ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সুনাম অর্জন করেছে।
ক. বাংলাদেশে মোট কয়টি স্টক এক্সচেঞ্জ রয়েছে?
খ. প্রাথমিক শেয়ার ও সেকেন্ডারি শেয়ারের পার্থক্য দেখাও।
গ. বিভাবতী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের উন্নয়নে কোন উৎস থেকে অর্থায়ন হয়- ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত অর্থায়নের উৎসগুলোর পার্থক্য বিশ্লেষণ করো।
৮ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. বাংলাদেশে মোট ২টি স্টক এক্সচেঞ্জ রয়েছে।
খ. প্রাইমারি শেয়ার ও সেকেন্ডারি শেয়ারের মধ্যে নিম্নরূপ পার্থক্য রয়েছে:
১. শেয়ার ইস্যু করে বিক্রির জন্য বাজারে প্রথমে যে শেয়ার ছাড়ে এবং ক্রেতা ঐ শেয়ার আইপিও (IPO) আবেদনের মাধ্যমে লাভ করে তাই হলো প্রাথমিক শেয়ার। অন্যদিকে, প্রাইমারি শেয়ার মালিকরা তাদের শেয়ার ব্রোকার হাউসের মাধ্যমে অন্য বিনিয়োগকারীদের নিকট বিক্রি করলে তা হয় সেকেন্ডারি শেয়ার।
২. প্রাইমারি শেয়ার সাধারণত ব্যাংকের মতো আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে সংগ্রহ করা যায়। কিন্তু সেকেন্ডারি শেয়ার স্টক এক্সচেঞ্জ থেকেই সংগ্রহ করা যায়।
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত বিভাবতী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের উন্নয়নে প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক উৎস থেকে অর্থায়ন হয়।
যখন কোনো স্বীকৃত বা রাষ্ট্রীয়ভাবে বৈধ আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে অর্থায়ন করা হয়, তাকে প্রাতিষ্ঠানিক উৎস বলে। আর যদি কোনো ব্যক্তি, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব থেকে অর্থায়ন করা হয়, তবে তাকে অপ্রাতিষ্ঠানিক অর্থায়ন বলে।
উদ্দীপকে লক্ষ করা যায়, প্রধান শিক্ষক জনাব জামির বিভাবতী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সম্প্রসারণ ও অবকাঠামো নির্মাণের জন্য আর্থিক সহযোগিতা আহবান করেন। এতে সাড়া দিয়ে জনৈক বিত্তবান ব্যক্তি ৪ কোটি টাকা প্রদান করেন, যা অপ্রাতিষ্ঠানিক উৎস হিসেবে বিবেচিত। আর সরকারের ICT মন্ত্রণালয় শিক্ষার আধুনিক সরঞ্জাম এবং সরকারি বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান নগদ অনুদান প্রদান করে, যা অর্থায়নের প্রাতিষ্ঠানিক উৎস হিসেবে বিবেচিত।
ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত অর্থায়নের উৎসগুলো হলো প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক উৎস। নিচে এগুলোর মধ্যে পার্থক্য বিশ্লেষণ করা হলো। সাধারণত অর্থায়নের প্রাতিষ্ঠানিক উৎসগুলো বিভিন্ন ব্যাংক, বিনিয়োগ ব্যাংক, কৃষি ব্যাংক, বিমা কোম্পানি, ক্ষুদ্র ঋণদান সংস্থা ইত্যাদি। অন্যদিকে, অপ্রাতিষ্ঠানিক উৎসগুলো হলো- আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু- বান্ধব, বন্ধক, মহাজন, ধনাঢ্য ব্যক্তি ইত্যাদি।
উদ্দীপকে দেখা যায়, বিভাবতী বিদ্যালয়ের উন্নয়নে অপ্রাতিষ্ঠানিক উৎস জনৈক বিত্তবান ব্যক্তি থেকে এবং প্রাতিষ্ঠানিক উৎস সরকারি বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে অর্থায়ন করা হয়। স্পষ্টত, প্রাতিষ্ঠানিক উৎসের আওতা ও পরিধি তুলনামূলক বেশি।
আবার, প্রাতিষ্ঠানিক উৎস হতে অর্থায়নে দেশের প্রচলিত আইন বা পাতা প্রতিষ্ঠানের শর্তাবলি পূরণ করতে হয়। অন্যদিকে, অপ্রাতিষ্ঠানিক উৎস থেকে অর্থায়নের ব্যক্তির ইচ্ছামাফিক শর্ত পূরণ করতে হয়। তাছাড়া, বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান যেমন- বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক ইত্যাদি সহজ শর্তে দরিদ্র ও প্রান্তিক কৃষককে ঋণ নিয়ে থাকে। কিন্তু অপ্রাতিষ্ঠানিক উৎস বিশেষ করে গ্রাম্য মহাজন, ফড়িয়া জামানত ব্যতীত ও নিম্ন সুদে ঋণ দিতে রাজি থাকে না। কাজেই বলা যায়, অর্থায়নের প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক উৎসগুলোতে যথেষ্ট পার্থক্য লক্ষ করা যায়।
৯. আতিক একজন মুদি দোকানদার। সেই সাথে সে শেয়ারবাজারে শেয়ার কেনাবেচাও করে। সে শেয়ারের দাম কমলে শেয়ার কেনে ও দাম বাড়লে শেয়ার বিক্রি করে। এতে আতিক সাহেব লাভবান হতে থাকে এবং তার পুঁজির পরিমাণ বাড়তে থাকে। তাকে দেখে অনেকে শেয়ার ব্যবসায় আকৃষ্ট হয়।
ক. বাংলাদেশে কত সালে এসএসি গঠন হয়?
খ. শেয়ার ও বন্ড মার্কেটের মধ্যে দুটি প্রধান পার্থক্য লেখ।
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত আতিক সাহেবের শেয়ার কোন ধরনের? তার বৈশিষ্ট্য লেখ।
ঘ. আতিক সাহেবের পুঁজি গঠনে শেয়ারবাজার কীভাবে ভূমিকা রাখে? ব্যাখ্যা করো।
৯ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. বাংলাদেশে ১৯৯৩ সালে এসইসি গঠন হয়।
খ. অর্থায়নের উৎস হিসেবে শেয়ার ও বন্ড উভয় মার্কেটের বৈশিষ্ট্যগুলো তুলনা করে এদের মধ্যে পার্থক্য নির্ণয় করা যায়।
১. সুদের হারের সাথে শেয়ারবাজারের কোনো সম্পর্ক নেই। শেয়ারহোল্ডাররা কোম্পানির মালিক এবং কোম্পানির লভ্যাংশ লাভ করে থাকে। অন্যদিকে, সুদের হারের সাথে বন্ডমার্কেট সরাসরি সম্পর্কযুক্ত। কারণ বন্ডের মূল্য সুদের হারের উঠানামার সাথে সাথে উঠানামা করে থাকে।
২. শেয়ারমার্কেটের মাধ্যমে অর্থায়নে কোনোরূপ ঝুঁকি নেই। কারণ- এখান থেকে পুঁজি সংগ্রহ করলে ঐ পুঁজির জন্য সুদ গুনতে হয় না। কিন্তু বন্ডমার্কেটের মাধ্যমে অর্থায়ন করলে বন্ডের সুদ না দিতে পারার ঝুঁকি আছে।
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত আতিক সাহেবের শেয়ার হলো মাধ্যমিক বা সেকেন্ডারি শেয়ার। প্রাথমিক শেয়ারের মালিকগণ যখন তাদের শেয়ার বিক্রি করে তখন তা মাধ্যমিক শেয়ারে রূপান্তরিত হয়। অর্থাৎ প্রাথমিক শেয়ারের মালিকানা বদল হয়ে প্রথম ক্রেতার নিকট হতে অন্য কোনো ক্রেতার নিকট হস্তান্তরিত হলে তাকে সেকেন্ডারি শেয়ার বলে। সেকেন্ডারি শেয়ারের বৈশিষ্ট্যগুলো নিম্নরূপ :
প্রাইমারি শেয়ারের বিশেষ রূপ: সেকেন্ডারি শেয়ার প্রকৃতপক্ষে স্বাধীন অসিস্তেত্ববিশিষ্ট কোনো শেয়ার নয়। প্রাথমিক শেয়ারই শেয়ারবাজারে ক্রয়-বিক্রয় হলে তা সেকেন্ডারি শেয়ার বলে বিবেচিত হয়। চাহিদা ও যোগানের ভিত্তিতে দাম নির্ধারণ; এ শেয়ারের দাম তার চাহিদা ও যোগানের ভিত্তিতে নির্ধারিত হয়। তাই চাহিদা ও যোগানের ঘাত-প্রতিঘাতে নিয়মিতই এর নাম পরিবর্তিত হয়।
ক্রয়-বিক্রয়ের অবাধ স্বাধীনতা: শেয়ারবাজারের যেকোনো সদস্য এ শেয়ার ক্রয়-বিক্রয়ের স্বাধীনতা ভোগ করে। প্রাথমিক শেয়ার ক্রয়ের মতো এ শেয়ার রুয়ের জন্য আবেদন করতে হয় না। বোনাস বা রাইট শেয়ার ভোগের সুবিধা: এ শেয়ারের মালিক শেয়ারের সংখ্যানুপাতে বোনাস ও বোনাস শেয়ার পায় এবং রাইট শেয়ার ক্রয়ের সুবিধা ভোগ করে।
ঘ. আতিক সাহেবের মতো দেশের পুঁজি গঠনে শেয়ারবাজার নানাভাবে ভূমিকা রাখে। শিল্প পুঁজি গঠনে শেয়ারবাজারের গুরুত্ব অপরিসীম। শেয়ারবাজার এই শিল্প পুঁজি (Industrial Capital) গঠন ও শিল্পের অর্থসংস্থানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
প্রথমত, শেয়ারবাজার দেশে পুঁজির গতিশীলতা বৃদ্ধি করে। শেয়ারবাজারে, বিশেষ করে সেকেন্ডারি শেয়ার মার্কেটে বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ার প্রতিনিয়ত বেচাকেনা হয়। এর ফরে পুঁজির গতিশীলতা এবং উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি পায়।
দ্বিতীয়ত, শেয়ারবাজার দেশে পুঁজি গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। দেশে অনেক উচ্চবিত লোক আছে যারা প্রাতিষ্ঠানিক সুযোগ-সুবিধার অভাবে তাদের সঞ্চয়কে কোনো উৎপাদনমুখী কাজে ব্যবহার না করে অলসভাবে ফেলে রাখে। শেয়ারবাজার এসব সঞ্চয়কারীর অলস অর্থকে বিনিয়োগ করে পুঁজি গঠনে সহায়তা করে।
তৃতীয়ত, শেয়ারবাজার দেশের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের জন্য বিনিয়োগের জন্য বিশেষ সুযোগ সৃষ্টি করে। সমাজে এমন অনেক ক্ষুদ্ৰ ক্ষুদ্র সঞ্চয়কারী বা আমানতকারী আছে যারা তাদের সময় বা আমানতকে বিনিয়োগের কাজে খাটাতে চায়। কিন্তু বর্তমান বৃহদায়তন শিল্পের যুগে কোনো ক্ষুদ্র আমানতকারীর পক্ষে এককভাবে কোনো শিল্প প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হয় না। এক্ষেত্রে শেয়ারবাজারে শেয়ার ক্রয় করে তারা যেকোনো শিল্প প্রতিষ্ঠানের মালিকানায় অংশগ্রহণ করতে পারে। এভাবে শেয়ারবাজার ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের জন্য বিনিয়োগের বিশেষ সুযোগ সৃষ্টি করে।
চতুর্থত, শেয়ারবাজার জনগণকে বিনিয়োগ উৎসাহ প্রদান করে। পণ্য বাজারের মতো শেয়ারবাজারেও জনগণ ইচ্ছেমতো যেকোনো কোম্পানির শেয়ার ক্রয় করতে পারে। আবার, ইচ্ছা করলে প্রয়োজনের সময় এসব শেয়ার বিক্রি করে নগদ টাকা ফেরত পেতে পারে। এ কারণে জনগণ শেয়ারবাজারে বিনিয়োগে উৎসাহিত হয়। এর ফলে শেয়ারবাজারের মাধ্যমে দেশে বিনিয়োগ বৃদ্ধি পায়।
১০. কবির সাহেব আবেদনপূর্বক X কোম্পানির ১০০ টাকার অভিহিত মূল্যের ৫০০টি শেয়ার ক্রয় করলেন। পরবর্তীতে তিনি অর্ধেক শেয়ার প্রতিটি ২০০ টাকা দামে বিক্রয় করলেন। এক বছর পর কবির সাহেবের শেয়ার হিসাবে বিনামূল্যে উক্ত কোম্পানির কিছু শেয়ার যুক্ত হলে তিনি খুশি হলেন।
ক. শেয়ারবাজার কী?
খ. অর্থায়নের ক্ষেত্রে মূলধন বাজার কেন গুরুত্বপূর্ণ?
গ. উদ্দীপকে বর্ণিত শেয়ারের নাম লেখো।
ঘ. কবির সাহেবের বিনামূল্যে অর্জিত শেয়ারের সাথে রাইট শেয়ারের তুলনা করো।
১০ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. মূলধন বাজারের যে অংশে কোম্পানির শেয়ার কেনাবেচা হয় তাকে "শেয়ারবাজার' বলে।
খ. বাজারে দীর্ঘমেয়াদি পুঁজির যোগান, সহজে প্রয়োজনীয় পুঁজি সংগ্রহ, রাজস্ব বৃদ্ধি করে পুনঃপুনঃ ঋণ গ্রহণের দুশ্চিন্তা দূর করা যায় বলে অর্থায়নের ক্ষেত্রে মূলধন বাজার অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ।
অর্থায়নের যে কয়টি উৎস রয়েছে তার মধ্যে মূলধন বাজার প্রধান। এটি দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নের অন্যতম উৎস। কলকারখানা প্রতিষ্ঠা, ভারী যন্ত্রপাতি ক্রয়, হিমাগার স্থাপন প্রভৃতি ক্ষেত্রে মূলধন বাজার থেকে অর্থায়ন করা হয়।
গ. কবির সাহেবের আবেদনপূর্বক ক্রয়কৃত শেয়ারের নাম হলো প্রাইমারি শেয়ার।
কোনো কোম্পানি যখন পুঁজিবাজারে নতুন শেয়ার বিক্রির জন্য ছাড়ে তখন তাকে 'প্রাইমারি বা প্রাথমিক শেয়ার' বলা হয়। কোম্পানি নিজেই জনসাধারণের মধ্যে এ শেয়ার বিক্রি করে। ফেসডেল্যুর ভিত্তিতে প্রাইমারি শেয়ার ক্রয়-বিক্রয় হয়ে থাকে। প্রাইমারি শেয়ার অবলেখিত হতে হয়। আর্থিক প্রতিষ্ঠান এই কাজ করে থাকে।
স্টক এক্সচেঞ্জ ব্রোকারেজ হাউসে বিও হিসাব খোলার মাধ্যমে যেকোনো নাগরিক প্রাথমিক শেয়ার ক্রয় করার আবেদন করতে পারে। প্রাইমারি শেয়ারের ক্ষেত্রে শেয়ার লটের চেয়ে আবেদনকারীর সংখ্যা বেশি হলে লটারির মাধ্যমে শেয়ার বিক্রি হয়। প্রাইমারি শেয়ার অবিক্রীত থাকলে অবলেখক ঐ শেয়ার কর করে। প্রাইমারি শেয়ারের ক্রয়-বিক্রয় বাজারকে প্রাথমিক শেয়ারবাজার বলে। প্রাইমারি শেয়ার সম্পর্কিত বিষয় প্রসপেকটাস ছাপিয়ে পত্রিকার মাধ্যমে জনসাধারণকে অবহিত করা হয়।
ঘ. উদ্দীপকে কবির সাহেবের বিনামূল্যে অর্জিত শেয়ারকে বোনাস শেয়ার বলে। নিচে বোনাস শেয়ারের সাথে রাইট শেয়ার তুলনা করা হলো:
কোম্পানি সঞ্চয়ী তহবিলে প্রচুর অর্থ জমা হলে তা থেকে প্রয়োজনের অতিরিক্ত যে অর্থ পরিচালকদের সাধারণ সভায় সিদ্ধান্তক্রমে অতিরিক্ত শেয়ার হিসেবে পুরাতন শেয়ার মালিকদের মধ্যে বিতরণ করে তাকে বোনাস শেয়ার বলে। অর্থাৎ সাধারণ শেয়ারহোল্ডারদের প্রাপ্য লভ্যাংশের বিনিময়ে তাদেরকে যে পূর্ণ আদায়ী শেয়ার বণ্টন করা হয় তাকে বোনাস শেয়ার বলে। এ শেয়ারের পূর্ণ মূল্য পরিশোধ করতে হয়। না। অনেক সময় কোম্পানির মুনাফার সম্পূর্ণ অংশ সদস্যদের মধ্যে বণ্টন না করে কিয়দাংশ মূলধন হিসেবে ব্যবহার করার জন্য কারবারে রেখে দেয় এবং তার বিনিময়ে শেয়ারহোল্ডারদের ভেতর পূর্ণ আদায়ী অধিবৃত্তি বা বোনাস শেয়ার বণ্টন করে। এরূপ শেয়ার কোম্পানির অংশীদার ছাড়া অন্য কেউ ক্রয় করতে পারে না।
অন্যদিকে, পরিশোধিত মূলধন বৃদ্ধির লক্ষ্যে কোম্পানির বর্তমান অংশীদারগণকে অতিরিক্ত শেয়ার ক্রয়ের জন্য অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। এরূপ শেয়ারকে রাইট শেয়ার বলা হয়। অনেক সময় কোম্পানি পরিশোধিত মূলধনের পরিমাণ বাড়াতে চায়। এজন্য অতিরিক্ত শেয়ার ইস্যু করা হয়। এরূপ শেয়ার কয়ের জন্য কোম্পানি বর্তমান শেয়ার মালিকদের অগ্রাধিকার প্রদান করে থাকে। এ ধরনের শেয়ারই হলো 'রাইট শেয়ার'। কোম্পানির বর্তমান শেয়ার মালিক ছাড়া অন্য কেউ তা ক্রয় করতে পারে না।
0 Comments:
Post a Comment