HSC অর্থনীতি ২য় পত্র (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর pdf download অধ্যায় ৫

HSC অর্থনীতি ২য় পত্র (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর pdf download অধ্যায় ৫

এইচএসসি পরীক্ষার পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি
HSC Economics 2nd Paper Srijonshil question and answer pdf download.

উচ্চমাধ্যমিক

অর্থনীতি
দ্বিতীয় পত্র

সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
৫ম অধ্যায়

HSC Economics 2nd Paper
Srijonshil
Question and Answer pdf download

১. বাংলাদেশ একটি ক্ষুদ্র আয়তনের দেশ কিন্তু জনসংখ্যা প্রায় ১৬ কোটি। এই বিরাট জনগোষ্ঠীর খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা দেশটির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। সরকার অভ্যন্তরীণভাবে খাদ্যোৎপাদন বাড়ানোর জন্য কৃষি ও পল্লি উন্নয়নে অগ্রাধিকার দিচ্ছে। বিশেষ করে কৃষি উৎপাদনে ভর্তুকি প্রদান, কৃষি ঋণ সহজলভ্যকরণ, কৃষিতে বায়োটেকনোলজির ব্যবহার, কাবিখা, ভিজিএফসহ নানাবিধ কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। সময় সময় খাদ্য আমদানিরও ব্যবস্থা করছে।
ক. ভেজাল খাদ্য কী?
খ. ভেজাল খাদ্য কীভাবে খাদ্য নিরাপত্তাকে বিঘ্নিত করে? ব্যাখ্যা করো।
গ. উদ্দীপকে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে যে বিষয়গুলোর কথা বলা হয়েছে তা চিহ্নিত করে ব্যাখ্যা করো।
ঘ. খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে উদ্দীপকে উল্লিখিত সরকারি পদক্ষেপসমূহের সাথে বেসরকারি সংস্থার ভূমিকা থাকা জরুরি কি না ব্যাখ্যা করো।

১ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. এক খাদ্যের সাথে অন্য খাদ্যের সংমিশ্রণ, খাদ্যে স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর এমন রাসায়নিক পদার্থ মিশ্রণ, খাদ্য সংরক্ষণের জন্য ক্ষতিকর দ্রব্য ব্যবহার, খাদ্যের সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য রং প্রয়োগ ইত্যাদিকে একত্রে খাদ্যে ভেজাল বা ভেজাল খাদ্য বলে।

খ. খাদ্যের ব্যবহার বা উপযোগিতা বিনষ্ট করার মাধ্যমে ভেজাল খাদ্য, খাদ্য নিরাপত্তাকে বিঘ্নিত করে। সাধারণত খাদ্য নিরাপত্তা খাদ্যের প্রাপ্যতা, ক্রয়যোগ্যতা ও ব্যবহারের ওপর নির্ভর করে। এর যেকোনো একটি বিঘ্নিত হলেই খাদ্য নিরাপত্তা ব্যাহত হয়। আর ভেজাল খাদ্য তথা বিষাক্ত কেমিক্যালযুক্ত ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তৈরিকৃত খাদ্য অথবা মেয়াদ উত্তীর্ণ খাদ্য গ্রহণ করলে মারাস্তেক স্বাস্থ্যহানি ঘটতে পারে।

গ. উদ্দীপকে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে কৃষি ও পল্লি উন্নয়ন অগ্রাধিকার প্রদান, কৃষি ঋণ সহজলভ্যকরণ, বায়োটেকনোলজির ব্যবহার, কৃষি উৎপাদনে ভর্তুকি দান, কাবিখা ইত্যাদি বিষয়গুলোর কথা উল্লেখ করা হচ্ছে।
খাদ্য নিরাপত্তা হলো এমন এক অবস্থা যেখানে দেশের সকল জনগণ তাদের প্রয়োজনীয় খাদ্য সংগ্রহের ক্ষমতা রাখে। এক্ষেত্রে দেশে উৎপাদিত খাদ্যের পর্যাপ্ত মজুদ ও সরবরাহ নিশ্চিত করা হয়। দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে খাদ্য উৎপাদন বহুগুণে বৃদ্ধি করতে হয়, যাতে উৎপাদিত খাদ্য দ্বারা দেশে খাদ্যের সামগ্রিক চাহিদা সম্পূর্ণরূপে মেটানো যায়।
বাংলাদেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করতে সার্বিক কৃষি ও পল্লি উন্নয়ন ঘাতকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার প্রদান করা হয়েছে। খাদ্যোৎপাদন লক্ষণীয়ভাবে বৃদ্ধির লক্ষ্যে কৃষি উপকরণে ভর্তুকি বৃদ্ধি, কৃষি উপকরণ সহজলভ্য করা এবং কৃষিঋণের আওতা বৃদ্ধি ও প্রাপ্তি সহজীকরণ করা হয়েছে। তাছাড়া, খাদ্যশস্যের উৎপাদন বৃদ্ধিসহ কৃষিখাতের সার্বিক উন্নয়নের জন্য সেচ সম্প্রসারণ, জলাবদ্ধতা নিরসন, উন্নতমানের ও উচ্চ ফলনশীল বীজ উৎপাদন, সংরক্ষণ, বিতরণ প্রভৃতি কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। পরমাণু ও প্রাণ-প্রযুক্তি ব্যবহার করে লবণাক্ততা সহিষ্ণু, আবহাওয়া ও পরিবেশ উপযোগী এবং স্বল্পসময়ে (সর্বোচ্চ ১১০ দিন) ফসল পাওয়া যায়. এরূপ শস্যের জাত ও প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও মাঠপর্যায়ে সম্প্রসারণ করা হয়েছে। এছাড়া সরকার পাবলিক ফুড ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেমে বিভিন্ন চ্যানেলে নির্ধারিত আয়ের সরকারি কর্মচারী ও নিম্ন আরের জনগোষ্ঠীর জন্য খাদ্য সহায়তা দিচ্ছে।

ঘ. খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে সরকারি পদক্ষেপগুলোর পাশাপাশি বেসরকারি সংস্থার ভূমিকা থাকা অত্যন্ত জরুরি। নিচে এই বিষয়টি ব্যাখ্যা করা হলো-
খাদ্য নিরাপত্তা এমন একটি বিষয়, যা সরকারের একার পক্ষে নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। কারণ, শুধু আইন প্রণয়ন ও প্রয়োগ দ্বারা খাদ্যে ভেজাল রোধ করা যায় না। বরং এক্ষেত্রে সবাইকে সচেতন ও সতর্ক হতে হবে স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে দেশের উন্নয়নে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি সংস্থাও খাদ্য নিরাপদকরণে ভূমিকা পালন করে আসছে। আবার, উন্নয়নের অংশীদার হিসেবে এনজিওর ভূমিকাও এ দেশে ব্যাপক। খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে এসব সংস্থা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
আমাদের দেশে কেউ কেউ খাদ্যে জেনে ভেজাল মেশায় আবার কেউ কেউ না জেনে মেশায়। অর্থাৎ খাদ্যে ভেজালের কুফল তথা খাদ্য সংরক্ষণ ব্যবহৃত পদ্ধতির ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে অনেকেই অমস্ন। তাই বেসরকারি সংস্থাগুলো এক্ষেত্রে সচেতনতা তৈরি করতে পারে। আবার ভেজাল বিরোধী আন্দোলনে জনগণকে সম্পৃক্ত করার পাশাপাশি সরকার আইনের কঠোর প্রয়োগ করতে পারে। তাছাড়া পচনশীল দ্রব্য সংরক্ষণে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবস্থা করতে পারে।
সর্বোপরি সচেতনতা, সাবধানতা, ব্যবসায়ী ও কর্মচারীদের সততার কোনো বিকল্প নেই। তাই প্রিন্ট মিডিয়া, ইলেকট্রনিক মিডিয়া দেশের স্বার্থে খাদ্যে ডেলান আর ক্ষতিকারক রাসায়নিক দ্রব্য প্রয়োগ বিষয়ে নিয়মিত সচেতনতা আর তথ্যভিত্তিক প্রচারণা চালাতে পারে। তাই, উদ্দীপকে উল্লিখিত সরকারি পদক্ষেপের সাথে বেসরকারি সংস্থার ভূমিকাও অত্যন্ত জরুরি।

২. 'A' দেশের জনগণ অতি দরিদ্র। খাদ্যসামগ্রীও প্রয়োজনের তুলনায় স্বপ্ন। 'A' দেশে প্রতি বছর প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে প্রচুর ফসল হানি হয়। কিছু জনগণ অতি মুনাফালোভী হওয়ায় ফলমূল, শাকসবজি ও অন্যান্য খাদ্যদ্রব্যে ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করে। ফলে ভেজাল খাদ্য খেয়ে অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়ে। এ পরিস্থিতিতে দেশের সচেতন জনগণ, মিডিয়া এবং এনজিওসমূহ নিরাপদ খাদ্যের পক্ষে সোচ্চার হয়ে উঠে এবং সরকারও বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করে।
ক. নিরাপদ খাদ্য কী?
খ. খাদ্য সংরক্ষণ করা প্রয়োজন কেন?
গ. উদ্দীপকের আলোকে 'A' দেশের খাদ্য অনিরাপদের দিকগুলো আলোচনা করো।
ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত মাধ্যমসমূহ কীভাবে নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে পারে? বিশ্লেষণ করো।

২ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. উৎপাদন ক্ষেত্র থেকে শুরু করে ভোক্তার কাছে পৌঁছানো পর্যন্ত যে খাদ্য কোনোভাবেই দূষিত হয় না এবং স্বাস্থ্যের জন্য হুমকির কারণ হয়ে দাঁড়ায় না তাকে নিরাপদ খাদ্য বলে।

খ. খাদ্য যাতে পঁচে নষ্ট না হয়ে যায় সেজন্য খাদ্যদ্রব্য সংরক্ষণ করা প্রয়োজন।
খাদ্য সংরক্ষণ বলতে বোঝায় খাদ্য যেন পচে নষ্ট না হয়ে যায় সেজন্য যথাযথ ব্যবস্থা অবলম্বন করে খাদ্যের গুণগত মান অনুসারে খাদ্যকে বিভিন্নভাবে মজুত রাখা। খাদ্যদ্রব্যের পুষ্টি উপাদানের গুণগত মান বজায় রাখা এবং খাদ্যের স্বাদ, গন্ধ ও বর্ণ বহুদিনের জন্য অবিকৃত রাখাই খাদ্য সংরক্ষণের প্রধান উদ্দেশ্য। খাদ্যের অপচয় রোধ ও পুষ্টির চাহিদা পুরণ এবং ভবিষ্যতের নিরাপত্তার জন্য খাদ্য সংরক্ষণ ও মজুত রাখা প্রয়োজন।

গ. উদ্দীপকের A দেশের খাদ্য নিরাপত্তার তিনটি দিক (খাদ্যের প্রাপ্যতা, ক্রয়যোগ্যতা ও ব্যবহার) ব্যাহত হয়েছে।
সাধারণত খাদ্য নিরাপত্তা অর্জন করতে হলে খাদ্যের প্রাপ্যতা, খাদ্যের ক্রয়যোগ্যতা ও খাদ্যের ব্যবহার (পুষ্টিসম্পন্ন ও ভেজালমুক্ত) এই তিনটি দিকের প্রতি খেয়াল রাখতে হয়। এর যেকোনো একটি বা সবকয়টি বিঘ্নিত হলে খাদ্য নিরাপত্তা ব্যাহত হয় তথা খাদ্য অনিরাপদ হয়ে পড়ে। এখানে, খাদ্যের প্রাপ্যতা বলতে সামঞ্জস্যের ভিত্তিতে পর্যাপ্ত পরিমাণ খাদ্যকে বোঝায়। আর খাদ্যের ক্রয়যোগ্যতা হলো খাদ্য ক্রয় করার জন্য জনগণের নিকট পর্যাপ্ত অর্থ থাকা বা দ্রব্যসামগ্রীর দাম সহনীয় মাত্রায় থাকা। আবার, খাদ্যে ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করা হলে কিংবা প্রয়োজনীয় পুষ্টি খাদ্যে না থাকলে খাদ্যের ব্যবহার নিশ্চিত হয় না। উদ্দীপকে লক্ষ করা যায়, 'A' দেশটিতে প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীর স্বল্পতা বিদ্যমান তথা পর্যাপ্ত খাদ্যের অভাব রয়েছে। আবার, দেশটির জনগণ দরিদ্র হওয়ায় বলা যায় প্রয়োজনীয় খাদ্য তারা কম করতে ব্যর্থ। তার ওপর দেশটির কিছু অসাধু ব্যবসায়ী অতি মুনাফার লোভে খাদ্যে ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ মিশিয়ে থাকে। এতে খাদ্য পুষ্টিহীন ও অস্বাস্থ্যকর হয়ে পড়ছে। অর্থাৎ খাদ্য নিরাপত্তা ব্যাহত হচ্ছে। পরিশেষে বলা যায়, 'A' দেশটিতে খাদ্য মারাস্তেকভাবে অনিরাপদ হয়ে পড়ছে।

ঘ. খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে উদ্দীপকে উল্লিখিত 'A' দেশের সচেতন জনগণ, মিডিয়া ও সরকার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। তাদের কার্যকারিতা বিশ্লেষণ করা হলো-
জনসাধারণ: সাধারণ জনগণ খাদ্যে ভেজাল মেশানো পছন্দ করে না। কিন্তু তাদের কাছে প্রয়োজনীয় পরিমাণ ভেজাল নিরূপণকারী কিট না থাকায় খাদ্যে ভেলালের পরিমাণ জানতে পারছে না। সাধারণ জনগণ যদি এই ভেজালের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায় তবে অবশ্যই দেশ থেকে ভেজালের সমস্যা দূর হবে। খাদ্যে ভেজাল মেশানো যে অনৈতিক এবং দ-নীয় অপরাধ তা অনেকেই জানে না। তাদেরকে এ বিষয়গুে সাধারণ জনগণ জানাতে পারে। কেউ খাদ্যে ভেজাল মেশালে তাদের আইন প্রয়োগকারী সংস্থার হাতে তুলে দিতে পারে। ভেজালযুক্ত খাদ্য ক্রয় থেকে নিজেকে বিরত রাখতে পারে।
মিডিয়া: মিডিয়া প্রতিটি দেশের দর্পণ হিসেবে বিবেচিত হয়। তাই খা ভেজাল প্রতিরোধে মিডিয়ার কার্যকারিতা অন্য যেকোনো মাধ্যম থেকে অধিক। এক্ষেত্রে খাদ্য ভেজালের কুফল বা ক্ষতিকারক দিকগুলো ব্যাপক প্রচারের মাধ্যমে মিডিয়া জনসাধারণের মধ্যে প্রভাব ফেলতে পারে।
বেসরকারি সংস্থা: স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে দেশের উন্নয়নে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি সংস্থাও খাদ্য নিরাপদকরণে ভূমিকা পালন করে আসছে। আবার, উন্নয়ন অংশীদার হিসেবে এনজিওর ভূমিকাও এদেশে ব্যাপক। এসব সংস্থাগুলো বিভিন্ন দিকনির্দেশনার মাধ্যমে জনগণকে ভেজালবিরোধী আন্দোলনে সংযুক্ত করতে পারে। আবার সরকারকে ভেজালবিরোধী আইন তৈরিতে চাপও প্রয়োগ করতে পারে।

৩. বাংলাদেশে ক্যালরিযুক্ত খাদ্য গ্রহণের পরিমাণভিত্তিক দারিদ্র্যের শতকরা হিসাব নিম্নরূপ :

দারিদ্র্যের ধরন

এলাকা

          সময়কাল

১৯৮১-৮২

১৯৯১-৯২

২০১০-১১

দারিদ্র

পল্লি

৭৩.৮০

৪৭.৮০

৩৫.২০

শহর

৬৬.০০

৪৬.৭০

২১.৩০


উক্ত দারিদ্র্য পরিস্থিতির কারণে খাদ্যের ক্রমযোগ্যতা যাতে বিঘ্নিত না হয় তার জন্য সরকার OMS কার্যক্রম পরিচালনা, সুলভমূল্য কার্ডের প্রচলন এবং সামাজিক নিরাপত্তামূলক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
ক. খাদ্যের ক্রয়যোগ্যতা বলতে কী বোঝায় ?
খ. "শুধুমাত্র খাদ্যের অবাধ সরবরাহ থাকলেই খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত হয় না বুঝিয়ে লেখ।
গ. উদ্দীপকের আলোকে পরি দারিদ্র্যের হারের ওপর স্তষ্ঠচিত্র অঙ্কন করো।
ঘ. খাদ্যের ক্রয়যোগ্যতা নিশ্চিতকরণে সরকারের পদক্ষেপসমূহ মূল্যায়ন করো।

৩ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. কোনো নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠীর, নির্দিষ্ট দামে, নির্দিষ্ট পরিমাণ দ্রব্য ব্রম্নয়ের যোগ্যতাকেই খাদ্যের কয়যোগ্যতা বলে।

খ. খাদ্যের প্রাপাতা, ক্রয়যোগ্যতা ও ব্যবহার এই তিনটি বিষয়ের ওপর খাদ্য নিরাপত্তা নির্ভর করে।
খাদ্যের প্রাপ্যতা ব্যক্তি ও পরিবারের চাহিদার প্রেক্ষিতে পর্যাপ্ত পরিমাণ খাদ্য প্রাপ্তিকে নির্দেশ করে। আবার খাদ্য প্রাপ্তির নিমিত্তে পর্যাপ্ত সম্পদ হলো ক্রয়যোগ্যতা এবং মৌলিক পুষ্টি জ্ঞানের মাধ্যমে খাদ্য গ্রহণ হলো খাদ্যের ব্যবহার। এখন, কোনো দেশে যদি পর্যাপ্ত খাদ্য থাকে, কিন্তু তা যদি জনগণের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে থাকে কিংবা পুষ্টি জ্ঞান অনুযায়ী তার ব্যবহার নেই, তাহলে বলা যায়, ঐ দেশটির খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়নি। তাই, শুধু খাদ্যের অবাধ সরবরাহ (প্রাপাতা) থাকলেই খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়।

গ. উদ্দীপকের প্রদত্ত তথ্যের আলোকে নিম্নে পরি দারিদ্র্যের হারের ওপর চিত্র অঙ্কন করা হলো-
উপর্যুক্ত ম্রচিত্রের OX অক্ষে সময়কাল এবং OY অক্ষে পরি দারিদ্র্যের হার দেখানো হয়েছে। চিত্রে লক্ষ করা যায়, পল্লি দারিদ্র্যের হার ক্রমশ কমছে। যেখানে ১৯৮১-৮২ সালে ছিল ৭৩. ৮০% সেখানে ২০১০-১১ সালে কয়েক বছরের ব্যবধানে দারিদ্র্যের হার কমে ৩৫. ২০% হয়েছে।

ঘ. উদ্দীপকের প্রদত্ত তথ্যের আলোকে খাদ্যের ক্রয়যোগ্যতা নিশ্চিতকরণে সরকারের গৃহীত পদক্ষেপসমূহ নিম্নে মূল্যায়ন করা হলো- পুষ্টিকর খাদ্যের জন্য উপযুক্ত খাদ্য প্রাপ্তির নিমিত্তে পর্যাপ্ত সম্পদ থাকাকেই খাদ্যের ক্রযোগ্যতা বলে। খাদ্যের জনযোগ্যতা নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকার OMS (Open Market Sale) কার্যক্রম পরিচালনা, কাজের বিনিময় খাদ্য (কাবিখা), দেশীয় উৎপাদন বৃদ্ধি, খাদ্যশস্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণ ইত্যাদি কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। এর ফলে বাংলাদেশে দরিদ্র লোকের সংখ্যা কমেছে। বর্তমানে প্রায় ২৩. ৫% লোক দারিদ্র্য সীমার নিচে বসবাস করে।
উদ্দীপকে লক্ষ করা যায়, ১৯৮১-৮২ অর্থবছরে পরি-শহরে দরিদ্র লোক ছিল যথাক্রমে ৯০.৮০% ও ৬৬. ০০% সরকারের গৃহীত পদক্ষেপের ফলে ২০১০-১১ সালে দরিদ্র লোকের সংখ্যা কমে পরিতে ৩৫. ২০% এবং শহরে ২১. ৩০% হয়েছে। এর ফলে জনগণের বিশেষ করে দি লোকের ক্রয়ক্ষমতা বেড়েছে।
আবার, গত দুই দশক ধরে ভূমিহীন অদক্ষ দরিদ্র জনগণের জন্য সরকারের গৃহীত সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কর্মসূচি বেশ প্রশংসিত হয়েছে। তবে, জনগণের খাদ্যের ক্রয়ক্ষমতা নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে সরকারের গৃহীত পদক্ষেপসমূহ বাস্তবায়নে ত্রুটি এবং আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে কিছু কিছু ক্ষেত্রে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি ও খাদ্যে ভেজাল পরিলক্ষিত হয়। উপর্যুক্ত আলোচনা থেকে বলা যায়, খাদ্যের ক্রয়যোগ্যতা নিশ্চিতকরণে সরকারের গৃহীত পদক্ষেপসমূহ কিছু ক্ষেত্রে ব্যর্থ হলেও সার্বিকভাবে জনগণের সক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে।

৪. 'Y' দেশে ২০১৫ সালে খাদ্যশস্যের পর্যাপ্ত মজুদ ছিল। কিন্তু বেকার সমস্যা ছিল প্রকট। জনগণের হাতে পর্যাপ্ত অর্থ ছিল না। ফলে সে সময় দেশের অনেক লোক ক্ষুধায় কষ্ট পেত। পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকার খাদ্য আমদানি বৃদ্ধি এবং মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে ভেজালবিরোধী কার্যক্রম জোরদার করে।
ক. নিরাপদ খাদ্য কী?
খ. 'খাদ্য নিরাপদকরণে জনসাধারণের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। ব্যাখ্যা করো।
গ. "Y" দেশের খাদ্য নিরাপত্তায় কোন দিকটি বিঘ্নিত হয়েছে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকের উল্লিখিত পরিস্থিতি মোকাবিলায় গৃহীত সরকারি পদক্ষেপসমূহের যথার্থতা বিশ্লেষণ করো।

৪ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর

ক. যে খাদ্য উৎপাদনক্ষেত্র থেকে শুরু করে ভোক্তার কাছে পৌঁছানো পর্যন্ত কোনোভাবেই দূষিত (Contaminated) হয় না এবং স্বাস্থ্যের জন হুমকির কারণ হয়ে দাঁড়ায় না, তাকে নিরাপদ খাদ্য বলা যায়।

খ. সাধারণ জনগণ খাদ্যে ভেজাল মেশানো বন্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
খাদ্যে ভেজাল মেশানো যে অনৈতিক এবং দ-নীয় অপরাধ তা অনেকেই জানে না। তাদেরকে এ বিষয়গুলো সাধারণ জনগণ জানাতে পারে, ভেজালবিরোধী আইন প্রয়োগে সরকারকে তথ্য দিয়ে সাহায্য করতে পারে। ভেজালের ক্ষতিকর দিকগুলো সম্পর্কে সকলকে উদ্বুদ্ধ করতে পারে। কেউ খাদ্যে ভেজাল মেশালে তাদেরকে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার হাতে তুলে দিতে পারে। ভেজালযুক্ত খাদ্য ক্রয় থেকে নিজেকে বিরত রাখতে পারে।

গ. 'Y' দেশের খাদ্য নিরাপত্তায় খাদ্যের ক্রয়যোগ্যতার দিকটি বিঘ্নিত খাদ্য নিরাপত্তা অর্জন তিনটি মৌলিক বিষয়ের ওপর নির্ভরশীল। যথা- ১. পর্যাপ্ত খাদ্য সরবরাহ, ২. খাদ্য ক্রয়ের প্রয়োজনীয় ক্ষমতা ও ৩. খাদ্যের সদ্ব্যবহার। খাদ্যের ক্রয়যোগ্যতার পূর্বশর্ত খাদ্য প্রাপ্যতা। কোনো নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠীর নির্দিষ্ট দামে, নির্দিষ্ট পরিমাণ, দ্রব্য ক্রয়ের যোগ্যতাকেই খাদ্যের ক্রয়যোগ্যতা বলে। খাদ্য সংগ্রহের ক্ষমতা অনেকটাই পরিবারের ক্রয়ক্ষমতার ওপর নির্ভরশীল। এটি বাজারের ধরন, নাম নীতি এবং সময়ভেদে বাজার অবস্থা দ্বারা খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ন্ত্রিত হয়। জনসাধারণ উন্নত জীবনযাত্রায় প্রবেশ করে, তবে তাদের খাদ্যের ক্রমযোগ্যতাও উন্নতি ঘটে। খাদ্যের ক্রয়যোগ্যতার অন্যতম নিয়ামক ব্যক্তির আয়। যদি ব্যক্তির আয় কম হয় তবে তার যোগ্যতারও কমে যায়। আবার কোনো ব্যক্তির আয়ের স্তর বৃদ্ধি পেলে তার খাদ্যের ক্রয়ক্ষমতাও বৃদ্ধি পায়। এ প্রেক্ষিতে বলা যায়, আন্তর্জাতিক বা জাতীয় পর্যায়ে খাদ্যের পর্যাপ্ত যোগান পারিবারিক পর্যায়ে খাদ্যের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা প্রদান করে না। খাদ্য নিরাপত্তার ব্যাপারে তখনই নিশ্চিত হওয়া যায় যখন পরিবারসমূহ খাদ্য প্রয়, বিনিময়, দান, ঋণ কিংবা সাহায্যের মাধ্যমে নিয়মিত ও পর্যাপ্ত পরিমাণে খাদ্য সংগ্রহের ক্ষমতা রাখে। উদ্দীপকে লক্ষ করা যায়, 'Y' দেশে ২০১৫ সালে খাদ্যশস্যের মজুন পর্যাপ্ত থাকলেও জনগণের হাতে পর্যাপ্ত অর্থ ছিল না। এর ফলে তারা প্রয়োজনীয় খাদ্যশস্য ক্রয় করতে ব্যর্থ হয়। এ কারণে সে সময় ' Y ' দেশের অনেক লোক ক্ষুধায় কষ্ট পায়।

ঘ. উদ্দীপকের উল্লিখিত পরিস্থিতি মোকাবিলায় গৃহীত সরকারি পদক্ষেপসমূহ হলো- খাদ্য আমদানি, দারিদ্র্য নিরসন এবং ভেজালবিরোধী অভিযান।
খাদ্যশস্য আমদানি: খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে খাদ্য চাহিদার একটি বিরাট অংশ সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে গৃহীত নীতিমালার মাধ্যমে প্রতি বছর আমদানি করে থাকে।
দারিদ্র্য নিরসন: দেশে পর্যাপ্ত পরিমাণে উন্নত খাদ্যের যোগান থাকা সত্ত্বেও দেখা যায়, অনেক লোক খাদ্যাভাবে অনাহার ও অপুষ্টিতে ভুগছে। খাদ্য ক্রয়ের অক্ষমতার জন্যই এমনটি হয়। আর এজন্য দারিদ্রাই দায়ী। তাই দেশে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে দারি নিরসন করতে হবে। এ উদ্দেশ্যে সরকারের করণীয়গুলো হলো: দেশের দরিদ্র লোকদের জন্য কাজের সুযোগ সৃষ্টি, কৃষির উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি, খাস জমি বিতরণে ভূমিহীন ও প্রান্তিক কৃষকদেরকে অগ্রাধিকার প্রদান, দরিদ্রদের জন্য প্রাতিষ্ঠানিক অর্থায়নের ব্যবস্থা করা, দরিদ্রদের জন্য কর্মোপযোগী শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা এবং দারিদ্র্য বিমোচনে গৃহীত সামাজিক নিরাপত্তা কার্যক্রম জোরদারকরণ ইত্যাদি।
ভেজালবিরোধী অভিযান: সরকার খাদ্য নিরাপত্তা তথা ভেজাল খাদ্য দূর করার জন্য যে ভ্রাম্যমাণ আদালতের ব্যবস্থা করেছে তা সব মহলে দারুণ প্রশংসিত হয়েছে। এ অভিযানটি মোবাইল কোর্ট নামে পরিচিত। খাদ্য নিরাপদকরণে এ অভিযান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। এ প্রতিষ্ঠানটির কার্যকারিতা বৃদ্ধির জন্য সরকারের প্রয়োজন সৎ ও যোগ্য লোকের নেতৃত্বে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা এবং মোবাইল কোর্ট পরিচালনাকারী অফিসারদের সাথে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও ব্যবসায়ীদের যেকোনো আর্থিক সম্পর্ক যাতে না গড়ে ওঠে সেদিকে লক্ষ রাখা।

৫. খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের বিষয়ে শিক্ষক ছাত্রদের উদ্দেশ্যে বললেন, কোনো দেশে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য সরকারের রাজনৈতিক অঙ্গীকার এবং পরিকল্পনা বাস্তবায়নের দক্ষতা থাকতে হবে। বর্তমান সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পরই সার, বীজ, ডিজেলের মূল্য ও অন্যান্য কৃষি উপকরণের ওপর যথেষ্ট ভর্তুকি প্রদান করেছে। ফলে কৃষি উৎপাদন ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। এছাড়া খাদ্য নিরাপত্তার জন্য খাদ্য আমদানি, সংগ্রহ ও সংরক্ষণের ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে।
ক. খাদ্যের প্রাপ্যতা কী?
খ. জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ খাদ্য নিরাপত্তা অর্জনে কীভাবে সহায়তা করে? ব্যাখ্যা করো।
গ. উদ্দীপকের আলোকে বাংলাদেশে খাদ্য নিরাপত্তার জন্য সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ ব্যাখ্যা করো।
ঘ. খাদ্য নিরাপত্তার ক্ষেত্রে আর কোনো বিষয় সম্পৃক্ত করা যায় কি না উদ্দীপকের আলোকে ব্যাখ্যা করো।

৫ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. কোনো নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠীর নির্দিষ্ট সময়ে অত্যাবশ্যকীয় খাদ্য প্রাপ্তিকে খাদ্যের প্রাপ্যতা বলে।

খ. জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করলে খাদ্যের ওপর চাপ হ্রাস পায়, যা খাদ্য নিরাপত্তা অর্জনে সহায়তা করে। বাংলাদেশে প্রতি বছর জনসংখ্যা বাড়তে থাকলেও তার সাথে পাল্লা দিয়ে খাদ্যোৎপাদন বাড়ানো সম্ভব হচ্ছে না। তাই জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করে বিদ্যমান জনসংখ্যার জন্য পর্যাপ্ত খাদ্যের ব্যবস্থা করতে হবে। দেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার কমে আসলে আগের থেকে অপেক্ষাকৃত কম পরিমাণ খাদ্য উৎপাদন করেও খাদ্য নিরাপত্তা অর্জন করা সম্ভব।

গ. বাংলাদেশ সরকারের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে গৃহীত পদক্ষেপগুলো নিম্নে আলোচনা করা হলো-
১. বিশ্বখাদ্য সম্মেলন ১৯৯৬ পরবর্তী সরকার এবং দাতাদেশ ও সংস্থা বাংলাদেশে খাদ্য নীতি প্রণয়নে উদ্যোগী হয়। সে লক্ষ্যে 'National. Food Policy Plan of Action' 4 Investment Plan for Food Security and Nutrition' প্রণয়ন করা হয়েছে। এতে সমন্বিতভাবে খাদ্য নিরাপত্তার সকল দিক; যেমন খাদ্যের প্রাপ্যতা, ক্রয়যোগ্যতা, উপযোগিতা বা ব্যবহার বৃদ্ধি পাচ্ছে।
২. সরকার খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কৌশল হিসেবে দেশীয় উৎপাদন বাড়ানোর প্রতি সর্বোচ্চ গুরুত্বারোপ করে। এ লক্ষ্যে ইউরিয়া ব্যতীত সকল প্রকার সারের মূল্য অর্ধেকে কমিয়ে আনা, উচ্চ ফলনশীল বাজ সহজলভ্য করা, ডিজেলের মূল্যে কৃষককে ভর্তুকি দেওয়া, ন্যায্যমূল্যে কৃষি উপকরণ সহজলভ্যকরণ ও সরবরাহ নিশ্চিতকরণ, সেচ সুবিধা সম্প্রসারণ, ব্যাংক ঋণ সহজ করাসহ কৃষিতে ভর্তুকি বাড়ানোর পদক্ষেপ নেয়, এতে কৃষকরা ফসল উৎপাদনে উৎসাহী হয়।
৩. খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে খাদ্য চাহিদার একটি বিরাট অংশ সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে, নীতিমালার মধ্য থেকে প্রতিবছর আমদানি করে। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে মোট খাদ্যশস্য আমদানির পরিমাণ ছিল ৪১. ৯১ লক্ষ মেট্রিক টন।
উদ্দীপকে বাংলাদেশে খাদ্য নিরাপত্তা বিষয়ে যে তথ্য ও উপাত্ত দেয়া হয়েছে তার ভিত্তিতে বলা যায়, এখানে বর্তমানে খাদ্য নিরাপত্তা সমস্যা থাকলেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেশে খাদ্য উৎপাদনে লক্ষণীয় বৃদ্ধি এবং সরকারের খাদ্য সম্পর্কিত বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণের ফলে এক্ষেত্রে যথেষ্ট অগ্রগতি সাধিত হয়েছে।

ঘ. বাংলাদেশে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে ওপরে উল্লিখিত বিষয়গুলো ছাড়াও সরকার যে যে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারে তা নিম্নরূপ-
১. খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন এবং খাদ্য নিরাপত্তা সৃষ্টির লক্ষ্যে সরকার কৃষি খাতের সার্বিক উন্নয়নকে সর্বাধিক গুরুত্ব প্রদান করেছে। এ লক্ষ্যে সেচ সম্প্রসারণ, জলাবদ্ধতা নিরসন, উন্নত মানের ও উচ্চ ফলনশীল বীজ উৎপাদন কার্যক্রম গ্রহণ করেছে।
২. কৃষকের চাহিদা ও বাজার চাহিদাভিত্তিক কীটপতঙ্গা, রোগবালাই মুক্ত, খরা বা লবণাক্ততা সহিষ্ণু, আবহাওয়া ও পরিবেশ উপযোগী ও স্বল্প সময়ে ফসল পাওয়া যায় এরূপ শস্যের জাত ও প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও সম্প্রসারণসহ সার্বিক কৃষি গবেষণাকে বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করা হয়েছে।
৩. দেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারি কৃষকদের উৎপাদিত শস্য প্রাকৃতিক দুর্যোগে নষ্ট হওয়ার কারণে তাদেরকে শস্যমূল্য সহায়তার জন্য কৃষিবিমা এবং কৃষক পর্যায়ে কৃষিপণ্যের ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তি নিশ্চিত করার জন্যও বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।
৪. বাংলাদেশ একটি দুর্যোগপ্রবণ দেশ। যেকোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগে কৃষিখাত সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অপরদিকে, এ সময়ে দুর্গত মানুষের জন্য প্রয়োজন হয় উদ্বৃত খাদ্যশস্যের। এরূপ পরিস্থিতিতে খাদ্য নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করেছে সরকার।
৫. দেশের বিপুল সংখ্যক নিম্ন আয় ও দরিদ্র মানুষের জন্য খাদ্য প্রাপ্তির নিশ্চয়তা বিধান করা সরকারের অন্যতম দায়িত্ব। এ শ্রেণির জনগোষ্ঠীর খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে সরকার কিছু কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। যথা- ভালনারেবল গ্রুপ ফিডিং, গ্রাটিউইটাস রিলিফ, খোলা বাজারে খাদ্যশস্য বিক্রি (OMS) কাজের বিনিময়ে খাদ্য প্রভৃতি কার্যক্রম গ্রহণ করেছে।

৬. বাংলাদেশ একটি কৃষিপ্রধান দেশ হওয়া সত্ত্বেও প্রচুর পরিমাণ খাদ্যশস্য বিদেশ হতে আমদানি করতে হতো। কিন্তু বিগত দশকে এই খাতের উন্নয়নের জন্য সরকার কৃষকদের মাঝে স্বল্পমূল্যে বীজ, সার, কীটনাশক বিতরণ ও ডিজেলে ভর্তুকি প্রদানসহ কৃষিবান্ধব নানান কর্মসূচি গ্রহণ করায় খাদ্য উৎপাদন বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে সরকার বিদেশে চাল রপ্তানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
ক. খাদ্য নিরাপত্তা কী?
খ. জনসংখ্যা ও খাদ্য উৎপাদনের মধ্যে সামান্য বিধান আবশ্যক- বুঝিয়ে বলো।
গ. উদ্দীপকের আলোকে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে বাংলাদেশ সরকারের গৃহীত কর্মসূচিগুলো আলোচনা করো।
ঘ. তুমি কি মনে করো উদ্দীপকের গৃহীত পদক্ষেপের কারণেই বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে?- মূল্যায়ন করো।

৬ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. খাদ্য নিরাপত্তা হলো এমন এক অবস্থা, যেখানে দেশের সব মানুষ সবসময় বাহ্যিক ও অর্থনৈতিক দিক থেকে তাদের প্রয়োজনমাফিক খাদ্য সংগ্রহের ক্ষমতা রাখে।

খ. জনসংখ্যা ও খাদ্য উৎপাদনের মধ্যে সামজস্য বিধান যেকোনো দেশের জন্য অতি আবশ্যক। কোনো দেশের উৎপাদিত মোট খাদ্য দ্বারা যদি সেই দেশের সকল জনগণের খাদ্যের চাহিদা পূরণ করা যায় তাহলে উৎপাদিত খাদ্য ও জনসংখ্যার মধ্যে সামঞ্জস্য রয়েছে বলে ধরে নেওয়া যায়। তবে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে জনসংখ্যা বৃদ্ধির তুলনায় খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি পায় না। এতে খাদ্য ঘাটতি পরিলক্ষিত হয় যা মোটেই কাম্য নয়। তাই দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করতে হলে খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি করতে হবে যাতে এটি প্রয়োজনীয় খাদ্যের যোগান দিতে পারে। সুতরাং, আমদানি বায় কমাতে ও দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করে গড়ে তুলতে জনসংখ্যা ও খাদ্য উৎপাদনের মধ্যে সামঞ্জস্য বিধান করা অতি আবশ্যক।

গ. বাংলাদেশে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে সরকার ইতোমধ্যে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। উদ্দীপকের আলোকে তা আলোচনা করা হলো- খাদ্য নিরাপত্তা হলো এমন এক অবস্থা যেখানে দেশের সকল জনগণ তাদের প্রয়োজনীয় খাদ্য সংগ্রহের ক্ষমতা রাখে। দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে খাদ্য উৎপাদন বহুগুণে বৃদ্ধি করতে হয়, যাতে উৎপাদিত খাদ্য দ্বারা দেশে খাদ্যের সামগ্রিক চাহিদা সম্পূর্ণরূপে মেটানো যায়।
সরকার কৃষি খাতকে সম্প্রসারণের লক্ষ্যে নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। কৃষিতে ভর্তুকি ও সুদমুক্ত ঋণ এর ব্যবস্থা করে কৃষকদের উৎসাহিত করা হচ্ছে। উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে সরকার কৃষকদের বিনামূল্যে সার ও উন্নত বীজ সরবরাহ করছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত ফসলের ভর্তুকিসহ কৃষিবান্ধৰ বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। উন্নত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কৃষকদের দক্ষতা বৃদ্ধি করে অভিনব পদ্ধতিতে ফসল উৎপাদনের ব্যবস্থা করছে। ফলে উৎপাদনশীলতা বহুগুণে বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাছাড়া মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উন্নয়নের জন্য নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। কৃষিকে আধুনিকায়নের জন্য তথ্য স্বল্প পরিমাণ জমিতে অধিক ফলনের আশায় কৃষি গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এতে ফসলের উৎপাদন বেড়ে যায়। উদ্দীপকের আলোকে বলা যায় যে, বিগত দশকে সরকার কৃষিখাতের উন্নয়নের জন্য নানান কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। কৃষিতে ভর্তুকিসহ কৃষকদের মাঝে স্বল্পমূল্যে কৃষি উপকরণ বিতরণ করায় পূর্বের তুলনায় উৎপাদন বহুগুণে বাড়ানো সম্ভব হয়েছে। ফলে প্রচুর পরিমাণে খাদ্যশস্য আমদানি হ্রাস পেয়েছে। এমনকি সরকার বিদেশে চাল রপ্তানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সরকারের এ সকল কর্মসূচির যথাযথ বাস্তবায়ন ঘটলে অতিশীঘ্রই বাংলাদেশে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব।

ঘ. হ্যাঁ, উদ্দীপকে গৃহীত তথা কৃষিবান্দৰ কর্মসূচি গ্রহণ করার কারণেই বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করতে সক্ষম হবে।
সরকার খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের লক্ষ্যে কৃষিতে ভর্তুকিসহ কৃষিবান্ধব নানান ধরনের কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে সরকার সাম্প্রতিক বাজেটগুলোতে কৃষিক্ষেত্রে পর্যাপ্ত বরাদ্দের ব্যবস্থা করেছে। কৃষক পর্যায়ে স্বল্পমূল্যে উন্নত বীজ, সার, কীটনাশক ইত্যাদি সরবরাহ করায় দ্রুত ফলন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এছাড়াও কৃষিক্ষেত্রকে সম্প্রসারিত করতে সরকার বিনাসুদে ও সহজশর্তে মৌসুমি ঋণসহ বিভিন্ন রকম ঋণের ব্যবসূদ্ধা করেছে। কৃষি আধুনিকায়নের জন্য সরকার নানা রকম কৃষি যন্ত্রপাতি অতি স্বল্পমূল্যে সরবরাহ করছে এবং কৃষক সম্প্রদায় যাতে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে ফলন বৃদ্ধি করতে পারে সে জন্য প্রত্যেক গ্রামে কৃষি অধিদপ্তর থেকে কৃষকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। বেসরকারি উদ্যোগে খামার তৈরি করাকে সরকার বিশেষভাবে উৎসাহিত করেছে। এতে পূর্বের তুলনায় খাদ্য উৎপাদন বহুগুণে বেড়েছে। ফলে আমদানির পরিমাণ অনেকখানি কমে গিয়েছে এবং বাংলাদেশ খাদ্য স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের পথে এগিয়ে যাচ্ছে।
উদ্দীপকের আলোকে বলা যায় যে, বিগত দশকে কৃষিখাতের উন্নয়নের জন্য সরকার কৃষকদের মাঝে স্বল্পমূল্যে বীজ, সার, কীটনাশক ইত্যাদিতে ভর্তুকি প্রদান করে আসছে। তাছাড়া বিভিন্ন কৃষিবান্দব কর্মসূচি গ্রহণ করার ফলে উৎপাদন বহুগুণে বৃদ্ধি পাচ্ছে ও আমদানি নির্ভরতা হ্রাস পাচ্ছে। এভাবে উৎপাদন বৃদ্ধি পাওয়ায় সরকার বিদেশে চাল রপ্তানির সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। সুতরাং, খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি করে দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করে গড়ে তুলতে সরকার কর্তৃক গৃহীত পদক্ষেপ সত্যিই প্রশংসনীয়।

৭. জানুয়ারি মাসের ১ম সপ্তাহে মমিনুল স্যার ঢাকা থেকে গাজীপুরের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস নিতে যাওয়ার সময় ব্যাগে কিছু নাস্তা ও দুইটি কমলা নিয়ে যান। পথিমধ্যে নাস্তা ও একটি কমলা খেলেও ভুলক্রমে ব্যাগে একটি কমলা থেকে যায়। প্রায় একমাস পর ব্যাগ পরিষ্কার করতে গিয়ে দেখেন ব্যাগের কমলাটি না পঁচে প্রায় পূর্বের মতোই রয়েছে।
ক. ভেজাল খাদ্য কী?
খ. খাদ্য প্রাপ্যতাই কি খাদ্য নিরাপত্তার জন্য যথেষ্ট?
গ. মমিনুল স্যারের ব্যাগের কমলাটি পূর্বের ন্যায় থাকল কীভাবে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকের ঘটনা নিরাপদ খাদ্য ধারণাকে সমর্থন করে কি? তোমার মতামত দাও।

৭ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. এক খাদ্যের সাথে অন্য খাদ্যের সংমিশ্রণ, স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর এমন রাসায়নিক পদার্থ খাদ্যে মিশ্রণ, খাদ্য সংরক্ষণের জন্য ক্ষতিকর দ্রব্য ব্যবহার ইত্যাদি একত্রে খাদ্যে ভেজাল বা ভেজাল খাদ্য বলে পরিচিত।

খ. খাদ্য প্রাপ্যতাই খাদ্য নিরাপত্তার জন্য যথেষ্ট নয়। খাদ্যের প্রাপ্যতা, খাদ্য সংগ্রহের ক্ষমতা এবং খাদ্যের সহাবহার খাদ্য নিরাপত্তার এসব দিক এককভাবে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারে না। খাদ্যের প্রাপ্যতা যথেষ্ট থাকা সত্ত্বেও যদি পরিবারের খাদ্যের কা যোগ্যতা না থাকে বা পরিবারের খাদ্য ক্রয়যোগ্যতা আছে কিন্তু ভেজালমুক্ত ও পুষ্টিকর খাদ্য সংগ্রহের ক্ষমতা নেই, তাহলেও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত হয় না। তাই খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের জন্য খাদ্যের প্রাপ্যতা প্রয়োজনীয় হলেও পর্যাপ্ত নয়।

গ. উদ্দীপকটি থেকে জানা যায়, প্রায় এক মাস পরেও মমিনুল স্যারের কেনা কমলাটি আগের মতোই আছে; অর্থাৎ তা না পঁচে তালা কমলার মতোই দেখাচ্ছে। এক মাস পরেও কমলাটি সতেজ দেখতে পাওয়ার বিষয়টি ভেজাল খাদ্যকে নির্দেশ করে। নিচে বিষয়টি ব্যাখ্যা করা হলো- বর্তমানে বাংলাদেশের বিশাল জনসংখ্যার খাদ্য চাহিদার তুলনায় তার যোগান অপ্রতুল। তাছাড়া বিগত কয়েক বছর ধরে খাদ্যের দাম ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। এর সাথে যুক্ত হয়েছে খাদ্য স্থানান্তরের ক্ষেত্রে পরিবহন ও সংরক্ষণজনিত সমস্যা। এ পরিস্থিতিতে ভেজাল খাদ্য উপাদন, বিক্রয় ও পরিবেশন একটি লাভজনক ব্যবসায়ে পরিণত হয়েছে। এখন তাই বিভিন্নভাবে ভেজাল খাদ্য তৈরি হচ্ছে। কমলালেবু, পেঁপে, আপেল, পাকা আম ইত্যাদি সতেজ রাখার জন্য ফরমালিন ব্যবহৃত হচ্ছে। শুধু তাই-ই নয়, কলা দ্রুত পাকাতে ইথিন, মিষ্টিতে স্যাকারিন, শুঁটকি মাছে কীটনাশক ও ডিডিটি, দুধের সাথে পানি ও পাউডার এবং জুস ও জেলির সাথে বিষাক্ত রং ব্যবহার করা হচ্ছে। এভাবে দেখা যায়, শিশুখাদ্য থেকে শুরু করে ফলমূল, শাক-সবজি, মাছ-মাংস, দুধ, মিষ্টি, প্যাকেটজাত খাদ্যসহ প্রায় সব ধরনের খাবারে বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ মেশানো হয়। সুতরাং বলা যায়, খাদ্যে ভেজাল বা ভেজাল খাদ্যের হাত ধরেই মমিনুল স্যারের ব্যাগের কমলাটি আগের মতোই রয়েছে।

ঘ. উদ্দীপকের ঘটনার প্রেক্ষিতে বলা যায়, আজকাল বাংলাদেশে শিশুখাদ্য থেকে শুরু করে ফলমূল, শাক-সবজি, মাছ-মাংস, দুধ, মিষ্টি, প্যাকেটজাত খাদ্যসহ প্রায় সব ধরনের খাবারে নানা রকম বিষা রাসায়নিক পদার্থ মেশানো হয়। ফলে প্রায় সব ধরনের খাদাই ভেজালযুক্ত হয়ে পড়েছে। বর্তমানে আমরা প্রায় সবাই পেটে নানা ধরনের পীড়া, শরীর ক্রমেই দুর্বল ও কৃশ হয়ে যাওয়া, স্মরণশক্তি হ্রাস পাওয়া, শারীরিক ওজন অত্যন্ত কম বা বাড়া, চুল পড়া, মানসিক অবসাদ, অতিরিক্ত ক্লান্তি ইত্যাদি অসুখে ভুগছি। এসবই ভেজাল খাদ্যের কুফল বলা যায়। এরূপ অবস্থা আমাদেরকে এমন খাদ্যের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়, যা ভেজালমুক্ত অর্থাৎ নিরাপদ।
যে খাদ্য উৎপাদনক্ষেত্র থেকে শুরু করে ভোক্তার কাছে পৌঁছানো পর্যন্ত কোনোভাবেই দূষিত হয় না এবং স্বাস্থ্যের জন্য হুমকির কারণ হয়ে পাঁড়ায় না তাকে নিরাপদ খাদ্য বলা যায়। ভেজাল খাদ্যের কথা উঠলেই নিরাপদ খাদ্যের কথা মনে হয়।
নিরাপদ খাদ্য মানুষকে সুস্থ-সবল রাখে ও তার আয়ুষ্কাল বাড়ায়। এ খাদ্য গ্রহণের ফলে তাই ব্যক্তি ও জনস্বাস্থ্যের উন্নয়ন ঘটে। এর ফলে মানুষ জীবনের বেশিরভাগ সময় কর্মক্ষম থাকে ও তার উৎপাদনশীলতা বাড়ে। নিরাপদ খাদ্য পুষ্টি সমৃদ্ধি হয়। খাদ্য নিরাপদ করতে পারলে তাই তা থেকে পুষ্টি আহরণ সম্ভব হয়। যা দেহ ও মনের স্বাভাবিক বিকাশ ঘটায়। নিরাপদ খাদ্যের পুষ্টিমানের তারতম্য ঘটে না। যথাযথ তাপমাত্রা ও পরিবেশে খাদ্য সংরক্ষণ করলে তার পুষ্টিমান বজায় থাকে। খাদ্য নিরাপদ করতে পারলে তাই তা থেকে তাজা খাবারের মতোই পুষ্টি প্রাপ্তি সম্ভব। সুতরাং উপরিউক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায়, উদ্দীপকের ঘটনা নিরাপদ খাদ্য ধারণাকে সমর্থন করে।

৮. বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রাকৃতিক দুর্যোগের পাশাপাশি কৃষি ও শিল্প উৎপাদনে নানা রকম কারণে মানুষ নদীর বাঁধ এবং পাকা সড়কের ওপরে আশ্রয় নেয়। রাসায়নিকের ব্যবহার বেড়েই চলছে। সরকার বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে দেখছে।
ক. নিরাপদ খাদ্য কী?
খ. মজুদের ওপর খাদ্য নিরাপত্তা নির্ভর করে, ব্যাখ্যা করো।
গ. খাদ্য নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার কারণ কী? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কী করা উচিত বলে তুমি মনে করো?

৮ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. যে খাদ্য উৎপাদনক্ষেত্র থেকে শুরু করে ভোক্তার কাছে পৌঁছানো পর্যন্ত কোনোভাবেই দূষিত (Contaminated) হয় না এবং স্বাস্থ্যের জন্য হুমকির কারণ হয়ে দাঁড়ায় না, তাকে নিরাপদ খাদ্য বলা যায়।

খ. একটি দেশের সার্বিক প্রাপ্যতা তথা খাদ্য নিরাপত্তা বজায় রাখতে খাদ্য মজুদের ভূমিকা অপরিসীম।
খাদ্য নিরাপত্তার অন্যতম অত্যাবশ্যক দিক হলো খাদ্যের প্রাপ্যতা। আর এই প্রাপ্যতাকে পর্যাপ্ত রাখার জন্য প্রয়োজন খাদ্য মজুদ রাখা। এর ফলে আপদকালীন খাদ্য ঘাটতি মোকাবিলা করা যায়। মূলত সরকারের অভ্যন্তরীণ খাদ্য সংগ্রহ, আমদানি এবং খাদ্য সাহায্যকে অবলম্বন করে। খাদ্যের মজুদ গড়ে ওঠে। যেমন- বাংলাদেশে সরকার প্রতি বছর প্রায় ১০ লাখ মেট্রিক টন খাদ্য মজুদ রাখে। যা দেশের খাদ্যের প্রাপ্যতা তথা খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করে।

গ. খাদ্য নিরাপত্তার প্রধান তিনটি দিক হলো- খাদ্যের প্রাপ্যতা, খাদ্যের ক্রয়যোগ্যতা ও খাদ্যের ব্যবহার। এর যেকোনো একটি দিক নিশ্চিত না হলেই খাদ্য নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয়। সামঞ্জস্যের ভিত্তিতে পর্যাপ্ত পরিমাণ খাদ্য প্রাপ্তিকে খাদ্যের প্রাপ্যতা বলে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে মোট দেশজ উৎপাদন কম হলে সরকার দেশের জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্য মজুদ করতে ব্যর্থ হয়। এতে
খাদ্য নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয়। আবার, পুষ্টিকর খাদ্যের জন্য উপযুক্ত খাদ্য প্রাপ্তির নিমিত্তে পর্যাপ্ত সম্পদ থাকাকে খাদ্যের ব্রম্নয়যোগ্যতা বলে। খাদ্য নিরাপত্তা তখনই নিশ্চিত হবে, যখন দেশের প্রতিটি পরিবার বা ব্যক্তির হাতে পুষ্টিকর এবং প্রয়োজনীয় খাদ্য ক্রয়ের জন্য পর্যাপ্ত সম্পদ বা অর্থ থাকবে। দেশে উচ্চ মুদ্রাস্ফীতি, নিম্ন আর ইত্যাদি কারণে জনগণ প্রয়োজনীয় খাদ্য ক্রয় করতে না পারলে খাদ্য নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয়। তাছাড়া, খাদ্যে ভেজাল, বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ (যেমন ফরমালিন) এর ব্যবহার নিম্ন পুষ্টিমানসম্পন্ন খাদ্য উৎপাদন ইত্যাদি কারণেও খাদ্য নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয়।

ঘ. খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে সরকার কঠোর ও জনগণ সচেতন হলে দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে। খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এদের ভূমিকা আলোচনা করা হলো:-
১. সরকারের করণীয়: খাদ্য উৎপাদন ও বাজারজাতকরণের কোনো পর্যায়েই যাতে দৃষিত না হয়, তা সরকারকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে নিশ্চিত করতে হবে। দেশের প্রয়োজনীয় খাদ্য বিভিন্ন অঞ্চল থেকে সংগ্রহ ও সংরক্ষণের মাধ্যমে মজুদ ভা-ার গড়ে তুলতে হবে। দরিদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের প্রয়োজনীয় ঋণ ও সাহায্য প্রদান করে খাদ্যদ্রব্য উৎপাদনে উৎসাহিত করা। মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে খাদ্য ভেজালবিরোধী অভিজান জোরদার ও কঠোর আইন প্রয়োগ করতে হবে। টিসিবির মাধ্যমে শুধু লাইসেন্সধারীদের নিকট ফরমালিন বিক্রি নিশ্চিত করতে হবে। ভেজাল খাদ্যদ্রব্য উৎপাদন ও বিক্রয়ের জন্য দ-দানের ব্যবস্থা ও দৃষ্টান্তমূলক শাসিস্তে প্রদান করতে হবে।
২. জনগণের ভূমিকা: খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে জনগণকে ভেজাল ও অনিরাপদ খাদ্য সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে। ভেজাল খাদ্য গ্রহণে ক্ষতিকর দিক ও নিরাপদ খাদ্য গ্রহণের উপকারিতা সম্পর্কে জানতে হবে। খাদ্যদ্রব্যের উৎপাদক ও বিক্রেতাদেরকে সাময়িক লাভের আশায় ভেজাল খাদ্য উৎপাদন ও বিক্রি করা হতে বিরত থাকতে হবে। প্রিন্ট মিডিয়া, ইলেকট্রনিক মিডিয়াকে দেশের স্বার্থে খাদ্যে ভেজাল ও ক্ষতিকর রাসায়নিক দ্রব্য প্রয়োগের বিষয়ে নিয়মিত সচেতনতামূলক অনুষ্ঠান, বিজ্ঞাপন ও তথ্যচিত্র প্রচার করতে হবে। উপযুক্ত পদক্ষেপগুলো গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা হলে দেশে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে বলে আমি মনে করি।

৯. বাংলাদেশে কৃষিতে নীরব বিপ্লব সাধিত হয়েছে। হাওর, বাঁওড় ও উপকূলীয় এলাকায়ও এখন ধান চাষ হচ্ছে। সার, বীজ ও আধুনিক কৃষিপ্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে কৃষির উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে খাদ্য ঘাটতি অনেক কমেছে। এ ছাড়াও সরকার খাদ্য নিরাপত্তার জন্য খাদ্যশস্য আমদানি, আপদকালীন মজুদ ও কৃষি গবেষণার ওপর গুরুত্ব দিয়েছে।
ক. খাদ্য নিরাপত্তা কী?
খ. খাদ্য প্রাপ্যতাই কি খাদ্য নিরাপত্তার জন্য যথেষ্ট? ব্যাখ্যা করো।
গ. উদ্দীপকের আলোকে খাদ্য নিরাপত্তার জন্য গৃহীত পদক্ষেপসমূহ আলোচনা করো।
ঘ. বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে খাদ্য নিরাপত্তার জন্য আরো কী কী পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে?

৯ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. খাদ্য নিরাপত্তা এমন এক অবস্থাকে নির্দেশ করে, যেখানে দেশের সব মানুষ সবসময় বাহ্যিক ও অর্থনৈতিক দিক থেকে তাদের প্রয়োজনমতো খাদ্য সংগ্রহের ক্ষমতা রাখে।

খ. খাদ্য প্রাপ্যতাই খাদ্য নিরাপত্তার জন্য যথেষ্ট নয়। খাদ্যের প্রাপ্যতা, খাদ্য সংগ্রহের ক্ষমতা এবং খাদ্যের সহাবহার। খাদ্য- নিরাপত্তার এসব দিক এককভাবে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারে না। খাদ্যের প্রাপ্যতা যথেষ্ট থাকা সত্ত্বেও যদি পরিবারের খাদ্যের জয় যোগ্যতা না থাকে বা পরিবারের খাদ্য যোগ্যতা আছে কিন্তু ভেজালমুক্ত ও পুষ্টিকর খাদ্য সংগ্রহের ক্ষমতা নেই, তাহলেও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত হয় না।

গ. উদ্দীপকে দেশে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের জন্য সরকার কর্তৃক বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণের কথা বলা হয়েছে। নিচে উদ্দীপকের আলোকে আলোচনা করা হলো-
১. বাংলাদেশে কৃষি জমির পরিমাণ নিতান্তই সীমিত। তাই খাদ্য নিরাপত্তা অর্জনের উদ্দেশ্যে খাদ্যোৎপাদন বৃদ্ধির জন্য চাষের জমির আওতা বৃদ্ধির পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। এক্ষেত্রে সরকার দেশের হাওর-বাঁওড়, পানি নিষ্কাশন ও পানিসেচের ব্যবস্থা এবং সমুদ্র উপকূলবর্তী এলাকায় জমির লবণাক্ততা দূর করে কৃষি জমির আওতা বৃদ্ধি করেছে।
২. খাদ্যোৎপাদন লক্ষ্যণীয়ভাবে বৃদ্ধির লক্ষ্যে কৃষি উপকরণে ভর্তুকি বৃদ্ধি, কৃষি উপকরণ সহজলভ্যকরণ এবং কৃষিঋণের আওতা বৃদ্ধি ও প্রাপ্তি সহজীকরণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে সরকার দেশে ১. ৪ কোটি কৃষক পরিবারের মধ্যে উপকরণ সহায়তা কার্ড বিতরণ করেছে।
৩. খাদ্য নিরাপত্তা অর্জনের অংশ হিসেবে অভ্যন্তরীণ খাদ্যশস্য সংগ্রহ অভিযান জোরদার ও খাদ্য আমদানির পরিমাণ বাড়ানো হয়েছে। খাদ্য নিরাপত্তা অর্জনের জন্য এবং আপদকালীন পরিস্থিতি মোকাবিলার উদ্দেশ্যে সরকার বর্তমানে প্রতিবছর গড়ে ১০ লক্ষ মে. টন খা মজুদ করে।
৪. কৃষকের চাহিদা ও বাজার চাহিদাভিত্তিক কীটপতঙ্গ, রোগবালাই মুক্ত, ফরাসহিষ্ণু আবহাওয়া ও পরিবেশ উপযোগী শস্যের জাত ও প্রযুক্তির উদ্ভাবন করা হয়েছে। ইতোমধ্যে পরমাণু ও বায়োটেকনোলজি পদ্ধতি ব্যবহার করে লবণাক্ততা সহিষ্ণু এবং স্বল্পসময়ের শস্যের জাত ও প্রযুক্তি উদ্ভাবন এবং মাঠপর্যায়ে সম্প্রসারণ করা হয়েছে।
উদ্দীপকে খাদ্য নিরাপত্তা অর্জনে উপরিউক্ত কর্মসূচিসমূহ গ্রহণ করা হয়েছে।

ঘ. উদ্দীপকে বাংলাদেশে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণের কথা বলা হয়েছে। এ ব্যাপারে আরো যেসব পদক্ষেপ গ্রহণ করা যায় সেগুলো নিম্নরূপ-
১. ফসল উৎপাদনের পরিমাণ বৃদ্ধির জন্য আস্তেপোষণমূলক চাষাবাদের পরিবর্তে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে চাষাবাদ করা প্রয়োজন। মুনাফা অর্জনের উদ্দেশ্যে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে খাদ্যশস্য ও অন্যান্য খাদ্যের উৎপাদন শুরু করলে দেশে সার্বিকভাবে খাদ্যের যোগান বাড়বে।
২. খাদ্যের যোগান বিপুলভাবে বৃদ্ধির জন্য কৃষি-উৎপাদন কৌশলের যুগোপযোগী পরিবর্তন আবশ্যক। এক্ষেত্রে শস্যের ক্রমাবর্তন, বহুমুখী শস্যোৎপাদন বিন্যাস ইত্যাদি চাষ পদ্ধতি প্রবর্তন করতে হবে।
৩. খাদ্যের সার্বিক যোগান বাড়ানোর জন্য ভুট্টা, আলু, ডাল, তেলবীজ, শাক-সবজি, ফলমূল, মাছ, মাংস, দুধ, ডিম ইত্যাদিও অধিক পরিমাণে উৎপাদনের ব্যবস্থা করতে হবে। এগুলোর উৎপাদন বাড়লে জনসাধারণের খাদ্যের মানও উন্নত হবে।
৪. খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনের দ্বারাও খাদ্য চাহিদার সাথে খাদ্যের যোগানের সামাস্য বিধান করা যায়। ভাত ও রুটির সাথে বেশি পরিমাণে আলু, সবজি ইত্যাদি গ্রহণ করলে চাল ও গমের চাহিদা কমবে এবং তার যোগান চাহিদার সাথে অনেকটাই সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে।
৫. দেশে খাদ্যের যোগান বাড়াতে হলে কৃষকদের খাদ্যশস্যসহ বিভিন্ন ধরনের খাদ্য উৎপাদনের উদ্ভাবিত নবতর উৎপাদন পদ্ধতি সম্পর্কে অবহিত করতে হবে। একই সাথে উৎপাদিত খাদ্য দেশে-বিদেশে যাতে প্রতিযোগিতামূলক দামে বিক্রি করা যায় তারও ব্যবস্থা করতে হবে। এ কাজে তথ্য ও প্রযুক্তির যথাযথ ব্যবহার করা যায়।
সুতরাং বলা যায়, বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে খাদ্য নিরাপত্তা অর্জনের জন্য উদ্দীপকে উল্লিখিত পদক্ষেপ ছাড়াও উপরিউল্লিখিত পদক্ষেপগুলোও প্রয়োগযোগ্য।

১০. বাংলাদেশ একটি জনবহুল দেশ। দেশটি কৃষিপ্রধান হলেও খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়। ফলে জনসংখ্যার এক-তৃতীয়াংশই খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার শিকার। ভূমিহীন কৃষকের ব্যাপক উপস্থিতি, বর্গাচাষ প্রথা, খাদ্য গুদামজাতকরণের অভাব, অধিক পরিবহণ ব্যয় ইত্যাদি কারণে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে খাদ্য নিরাপত্তা অর্জনে সরকার টেকসই কৃষিব্যবস্থা প্রবর্তনের মাধ্যমে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। আশা করা যাচ্ছে, অচিরে বাংলাদেশ খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সক্ষম হবে।
ক. ভেজাল খাদ্য কী?
খ. নিরাপদ খাদ্য প্রয়োজন কেন?
গ. খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার কারণগুলো উদ্দীপকের আলোকে চিহ্নিত করো।
ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত পদক্ষেপ ছাড়া খাদ্য নিরাপত্তা অর্জনে সরকার আরো কী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারে? মতামত দাও।

১০ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. এক খাদ্যের সাথে অন্য খাদ্য মিশ্রণ, স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর এমন রাসায়নিক পদার্থ মিশ্রণ, খাদ্য সংরক্ষণের জন্য ক্ষতিকর দ্রব্য ব্যবহার ইত্যাদি একত্রে খাদ্যে ভেজাল বা ভেজাল খাদ্য বলে পরিচিত।

খ. খাদ্য নিরাপত্তার ক্ষেত্রে খাদ্যের প্রাপ্যতা ও করযোগ্যতা নিশ্চিতকরণের সাথে সাথে তা নিরাপদ করাও প্রয়োজন। নিরাপদ খাদ্য মানুষকে সুস্থ সবল রাখে; ফলে সে জীবনের বেশির ভাগ সময় কর্মক্ষম থাকে। খাদ্য নিরাপদ হলে রোগ-ব্যাধি থেকে রক্ষা পাওয়া যায় এবং কর্মক্ষম থাকা সম্ভব হয়। নিরাপদ খাদ্য পুষ্টিসমৃদ্ধ হয় বলে তা থেকে পুষ্টি আহরণ সম্ভব হয় যা দেহ ও মনের স্বাভাবিক বিকাশ ঘটায়। তাই খাদ্য নিরাপদ হওয়া আবশ্যক।

গ. উদ্দীপকে বাংলাদেশে খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার জন্য কিছু কারণ চিহ্নিত করা হয়েছে। নিচে তা ব্যাখ্যা করা হলো:
১. বাংলাদেশে ভূমিস্বত্ব প্রথার বড় একটি ত্রুটি হলো কৃষিখাতে ভূমিহীন কৃষকের অসিস্তেত্ব। ত্রুটিপূর্ণ ভূমিস্বত্ব ব্যবস্থার কারণে এদেশের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ কৃষকই ভূমিহীন। তারা খাদ্যশস্য বা অর্থের বিনিময়ে অন্যের জমি চাষ করে। চাষকৃত জমি নিজেদের না হওয়ায় তারা পূর্ণ উদ্যমের সাথে কৃষিকাজ করে না। ফলে ফলন কম হয়। এ অবস্থায় খাদ্যের প্রাপ্যতা বাড়ে না এবং খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা বিরাজ করে।
২. বাংলাদেশে ব্যাপকভাবে বর্গাচাষ প্রথা প্রচলিত আছে। এখানে চাষকৃত জমি বর্গাচাষির না হওয়ায় এবং জমির মালিক কর্তৃক যেকোনো সময়ে জমি থেকে উৎখাত হওয়ার আশঙ্কা থাকায় কৃষি উৎপাদন কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হয় না। এজন্য খাদ্য প্রাপ্তির পরিমাণ তেমন বাড়ে না।
৩. বাংলাদেশে গ্রামাঞ্চলে খাদ্য গুদামজাতকরণের পর্যাপ্ততা নেই। খাদ্য গুদামজাতকরণ ও সংরক্ষণের অভাবে তা ঠিকমতো এ পর্যাপ্ত পরিমাণে গুদামজাত করা যায় না। সংরক্ষণজনিত ত্রুটির জন্যও গুদামজাতকৃত খাদ্যের একাংশ বিনষ্ট হয়।
৪. সাম্প্রতিক সময়ে ডিজেল ও গ্যাসের দাম অনেক বেড়ে যাওয়ায় পরিবহণ ভাড়াও যথেষ্ট বেড়েছে। ফলে সব জায়গায় খাদ্যের যোগান ঠিকমতো দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।
খাদ্য নিরাপত্তার অন্যতম দিক হলো খাদ্যের প্রাপ্যতা বৃদ্ধি। উপরে উল্লিখিত কারণগুলোর জন্য তা বিঘ্নিত হওয়ায় দেশে এখনও খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা বিরাজ করছে।

ঘ. সাম্প্রতিককালে দেশে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের জন্য সরকার টেকসই কৃষিব্যবস্থা প্রবর্তনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তবে সরকারের এ পদক্ষেপ খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের জন্য যথেষ্ট নয়; এ ব্যাপারে আরো কিছু করণীয় আছে। এগুলো নিম্নরূপ:
১. বাংলাদেশ প্রাকৃতিক দুর্যোগপ্রবণ অঞ্চল বলে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ভবিষ্যতে এখানে প্রাকৃতিক দুর্যোগ সংঘটনের হার ও ভীব্রতা উভয়ই বাড়তে পারে। এর ফলে খাদ্যোৎপাদনের পরিমাণ ও তার মজুদ অনেকটাই কমে যেতে পারে। এ প্রেক্ষিতে বৃহত্তর স্বার্থে চাল ও গমের বাফার স্টকের পরিমাণ বাড়ানো উচিত যাতে তার দ্বারা উদ্ভূত খাদ্য সংকট কার্যকরভাবে মোকাবিলা করা যায়।
২. বাংলাদেশে যেহেতু নানা সীমাবদ্ধতার কারণে হঠাৎ করে খাদ্যোৎপাদন বিপুল পরিমাণে বাড়ানো সম্ভব নয়, তাই জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করেই বিদ্যমান জনসংখ্যার জন্য পর্যাপ্ত খাদ্যের ব্যবস্থা করতে হবে। সরকার কর্তৃক পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচি কার্যকরভাবে বাস্তবায়িত করতে পারলে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার কমে আসবে।
৩. দেশে খাদ্যের প্রাপ্যতা বৃদ্ধি করে খাদ্য নিরাপত্তা অর্জন করতে হলে কৃষকদের খাদ্যশস্যসহ বিভিন্ন ধরনের খাদ্য উৎপাদনের উদ্ভাবিত নতুন নতুন উৎপাদন পদ্ধতি সম্পর্কে অবহিত করতে হবে। একই সাথে উৎপাদিত খাদ্য দেশে-বিদেশে যাতে প্রতিযোগিতামূলক দামে বিক্রি করা যায় তার ব্যবস্থা করতে হবে। এক্ষেত্রে আইসিটি মারফত কৃষকরা তাদের কম্পিউটারের সাহায্যে ঘরে বসেই আবহাওয়া, কৃষি উৎপাদন ও চাষাবাদের নতুন নতুন কৌশল, উদ্ভিদের পরিপুষ্টিকর ও পানির ব্যবহার, কৃষিপণ্যের চাহিদা, বিদ্যমান দাম, পশু-পাখির রোগ ও তার প্রতিষেধক ইত্যাদি সম্পর্কে জানতে ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবে।
সুতরাং, খাদ্য নিরাপত্তা অর্জনের জন্য উদ্দীপকে উল্লিখিত পদক্ষেপ গ্রহণ ছাড়াও সরকার উপরিউল্লিখিত বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে দেশে খাদ্য নিরাপত্তা অর্জন নিশ্চিত করতে পারে।
Share:

0 Comments:

Post a Comment