HSC অর্থনীতি ২য় পত্র (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর pdf download অধ্যায় ৩

HSC অর্থনীতি ২য় পত্র (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর pdf download অধ্যায় ৩

এইচএসসি পরীক্ষার পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি
HSC Economics 2nd Paper Srijonshil question and answer pdf download.

উচ্চমাধ্যমিক

অর্থনীতি
দ্বিতীয় পত্র

সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
৩য় অধ্যায়

HSC Economics 2nd Paper
Srijonshil
Question and Answer pdf download

১. বাংলাদেশের শিল্প সম্পর্কে শ্রেণিকক্ষে পাঠদান করতে গিয়ে অর্থনীতির অধ্যাপক নাসির মামুন বলেন, পাট, চামড়া ও তৈরি পোশাক ইত্যাদি বাংলাদেশের প্রধান প্রধান শিল্প। ঔপনিবেশিক শাসন, শোষণ, মূলধনের স্বল্পতা, কারিগরি জ্ঞানের অভাব, দক্ষ শ্রমিকের অভাব, অবকাঠামোগত দুর্বলতা ইত্যাদি বাংলাদেশের শিল্পের অনগ্রসরতার প্রধান কারণ। সম্প্রতি সরকার দেশের দ্রুত শিল্পায়নের লক্ষ্যে সরকারি- বেসরকারি অংশীদারিত্ব নীতি গ্রহণ করেছে।
ক. কুটির শিল্প কাকে বলে?
খ. পাট শিল্পের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা উজ্জ্বল- ব্যাখ্যা করো।
গ. উদ্দীপকের আলোকে বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানিমুখী শিল্পের বর্ণনা দাও।
ঘ. উদ্দীপকে বাংলাদেশের শিল্পের যেসব সমস্যার কথা বলা হয়েছে তা সমাধানে সরকারি বেসরকারি অংশীদারিত্ব কতটুকু ভূমিকা পালন করতে পারে তা ব্যাখ্যা করো।

১ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. নিজ গৃহে পারিবারিক ভিত্তিতে স্বল্প মূলধন ও সহজলভ্য কাঁচামাল এবং ছোটখাটো সাধারণ যন্ত্রপাতির দ্বারা যে শিল্প উৎপাদন পরিচালিত হয় তাকে কুটির শিল্প বলে।

খ. সম্প্রতি উন্নতজাতের পাট ও পাটজাত দ্রব্যের উদ্ভাবন, পাটের বিকল্প পণ্য ব্যবহারের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি ও বিভিন্ন সরকারি উদ্যোগের ফলে নতুন করে পাট শিল্পের সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হয়েছে।
পাটের বিকল্প ব্যবহার আবিষ্কৃত হওয়ায় বিশ্বব্যাপী এর চাহিদা কমে গিয়েছিল। কিন্তু বর্তমানে আবার নতুন করে পাট ও পাটজাত দ্রব্যের চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে। কারণ সাম্প্রতিক সময়ে পার্ট দ্বারা বিভিন্ন উন্নত ও রুচিশীল পণ্যের উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে। যেমন- পাটের তৈরি ব্যাগ, জুতা, মাদুর ইত্যাদি। তাছাড়া, এসব পণ্য পরিবেশের কোনো ক্ষতি করে না। তাই বলা যায়, পাট শিল্পের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা উজ্জ্বল।

গ. উদ্দীপকে বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানিমুখী শিল্পের মধ্যে পাট, চামড়া ও তৈরি পোশাক শিল্পের উল্লেখ রয়েছে। নিচে এদের বর্ণনা দেওয়া হলো - পাট শিল্প বাংলাদেশের বৃহদায়তন ও গুরুত্বপূর্ণ শিল্প। বিশ্বের বৃহত্তম পাট উৎপাদনকারী দেশ হিসেবে বাংলাদেশ স্বীকৃত। পাটজাত পণ্য থেকে বৈশ্বিক রপ্তানি আয়ের প্রায় ৬৫ শতাংশই রয়েছে বাংলাদেশের নিয়ন্ত্রণে। ২০১৭ সালে এদেশে ৯১. ৯২ লক্ষ বেল পাট আঁশ উৎপাদিত হয়েছে। পাটপণ্য রপ্তানি করে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বাংলাদেশ ৭৯ কোটি ডলার আয় করে। আবার, চামড়া শিল্পে যথেষ্ট উন্নতি না হলেও এদেশ চামড়া রপ্তানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আয় করে থাকে। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর হিসাব অনুসারে, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি করে ১২৩ কোটি ৪০ লাখ মার্কিন ডলার আয় হয়েছে। তৈরি পোশাক শিল্প বর্তমানে বাংলাদেশের শিল্পক্ষেত্রে এক নতুন সম্ভাবনার দিগন্ত উম্মোচন করেছে। দেশের রপ্তানি আয়ের ৭৫ থেকে ৮২ শতাংশের বেশি এ খাত থেকে অর্জিত হয়। বিশ্বের প্রায় ৯০টি দেশে পোশাক রপ্তানি করা হয়। আর যুক্তরাষ্ট্র হচ্ছে প্রধান আমদানিকারক দেশ। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে তৈরি পোশাক খাত (নিটওয়্যারসহ) হতে রপ্তানি আয় হয় ১৩৭৫ কোটি ৭০ লাখ মার্কিন ডলার।

ঘ. উদ্দীপকে বাংলাদেশের শিল্পের যেসব সমস্যার কথা বলা হয়েছে তা সমাধানে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের (PPP) ভূমিকা মূল্যায়ণ করা হলো- সরকার ভৌত অবকাঠামো খাতে বিশেষ করে মহাসড়ক, এক্সপ্রেসওয়ে (যেমন- ম্যাস ট্রানজিট) ফ্লাইওভার, বাসটার্মিনাল, বিমানবন্দর, এভিয়েশন, সমুদ্রবন্দর, রেলওয়ে ইত্যাদি) এবং সেবা খাতে দীর্ঘমেয়াদি কৌশলগত ও লক্ষ্যভিত্তিক সম্পর্ক গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।
বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশসমূহের দ্রুত উন্নয়ন সাধনে ব্যাপক পুঁজির প্রয়োজন রয়েছে যা এককভাবে সরকার বা বৈদেশিক ঋণ গ্রহণের মাধ্যমে সম্পাদন করা দুরূহ। কারণ, কাঙ্ক্ষিত মূলধনের সম্পূর্ণ সংস্থান শুধুমাত্র সরকারি আয় দ্বারা মেটানো সম্ভব নয়। আবার, বৈদেশিক ঋণ শর্তযুক্ত ও প্রভার বেশি হওয়ায় তা দেশের উন্নয়নে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। এরূপ ক্ষেত্রে সরকারের PPP উদ্যোগের প্রয়োজন হয়। পিপিপি-র মাধ্যমে ভৌত অবকাঠামো খাতের শক্তিশালী বিকাশ সাধনের ফলে দেশে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ব্যবসা, বাণিজ্য, ব্যাংক, বিমা প্রভৃতি সেবা খাতের উন্নয়ন ঘটে। এসব খাতের উন্নয়নের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত পিপিপি-এর উন্নয়ন। কর্মকান্ড প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে বিপুল কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়। ফলে দেশে বেকারত্বের হার হ্রাস এবং জীবনযাত্রার মান ও মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি পায়। এর মাধ্যমে শক্তিশালী বেসরকারি খাতের সৃষ্টি হয়। কাজেই বলা যায়, উদ্দীপকে উল্লিখিত সমস্যাগুলোর সমাধানে সরকারি- বেসরকারি অংশীদারিত্ব যথেষ্ট ভূমিকা পালন করবে।

২. মি. 'X' কোরবানির ঈদে ঢাকা থেকে তার দাদার বাড়িতে এসেছে। তার দাদা একটি বড় গরু কোরবানি দিল। ঈদের দিন তার আনন্দ ধরে না। সে দেখে এক জায়গায় অনেক গরু-ছাগল কোরবানি হলো। কোরবানির পর চামড়ার বিশাল মজুদ গড়ে উঠল। অথচ দেশে চামড়া প্রক্রিয়াজাতকরণের তেমন ব্যবস্থা নেই, দক্ষ শ্রমিক নেই, উপযুক্ত রাসায়নিক দ্রব্য নেই, শিল্পপতি পর্যাপ্ত ঋণ পায় না। তাই চামড়া শিল্পের বিকাশ কম এবং স্বল্পমূল্যে চামড়াসমূহ বিক্রি হচ্ছে। অবশ্য সরকার চামড়া শিল্পের বিকাশে প্রশিক্ষণ, বাজার সম্প্রসারণ, শিল্প নগরী স্থাপনসহ নানাবিধ কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে। ফলে আসেস্তে আসেস্তে চামড়া শিল্পের উন্নয়ন ঘটছে।
ক. শিল্প কী?
খ. ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের মধ্যে প্রধান দুটি পার্থক্য লিখ।
গ. উদ্দীপকের আলোকে চামড়া শিল্পের সমস্যাসমূহ আলোচনা করো।
ঘ. বাংলাদেশের চামড়া শিল্পের দ্রুত উন্নয়নে সরকারের আর কী কী পদক্ষেপ নেয়া উচিত? বিশ্লেষণ করো।

২ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. শিল্প হলো কারখানার যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে প্রাথমিক দ্রব্যকে মাধ্যমিক দ্রব্যে এবং মাধ্যমিক দ্রব্যকে চূড়ান্ত দ্রব্যে রূপান্তর করার প্রক্রিয়া।

খ. কুটিরশিল্প ও ক্ষুদ্রশিল্পের মধ্যে প্রধান দুটি পার্থক্য হলো পরিচালনা পদ্ধতি ও মূলধন সংগ্রহ।
কুটিরশিল্প পারিবারিক মালিকানায় পরিচালিত হয়। যেখানে ক্ষুদ্রশিল্প পারিবারিক মালিকানা ছাড়াও অংশীদারি অথবা সমবায়ভিত্তিক । মালিকানায় পরিচালিত হয়। কুটিরশিল্পে পুঁজি পারিবারিক উৎস থেকে আসলেও ক্ষুদ্রশিল্পে তা মালিক ছাড়াও বিভিন্ন ঋণদানকারী সংস্থা থেকে সংগৃহীত হতে পারে। কুটিরশিল্পে হালকা যন্ত্রপাতি ও দেশজ কাঁচামাল ব্যবহৃত হয়। কিন্তু ক্ষুদ্রশিল্পে আধুনিক ও ভারী যন্ত্রপাতি ও দেশি-বিদেশি কাঁচামাল ব্যবহৃত হয়।

গ. উদ্দীপকে চামড়া শিল্পের সমস্যা বলতে প্রক্রিয়াজাতকরণের সমস্যা, দক্ষ শ্রমিকের অভাব, উপযুক্ত রাসায়নিক দ্রব্যের অপর্যাপ্ততা, ঋণের অভাবকে বোঝানো হয়েছে। নিচে উক্ত সমস্যাসমূহ আলোচনা করা হলো-
১. চামড়া সঠিকভাবে প্রক্রিয়াজাতকরণের জন্য প্রয়োজনীয় ট্যানারি শিল্প সারা দেশে সমভাবে গড়ে ওঠেনি। ফলে চামড়া প্রায়ই তার গুণগতমান হারায়।
২. বাংলাদেশের অধিকাংশ শ্রমিক অদক্ষ হওয়ায় চামড়া শিল্পে প্রায়ই অদক্ষ শ্রমিক নিয়োগ করা হয়। ফলে চামড়ার গুণগতমান নষ্ট হয়।
৩. চামড়া শিল্পের জন্য প্রয়োজনীয় রাসায়নিক দ্রব্য অনেক সময় পাওয়া যায় না। এতে চামড়া প্রক্রিয়াজাতকরণ ব্যাহত হয় এবং সংরক্ষণ না করতে পারায় অতি দ্রুত চামড়া নষ্ট হয়।
৪. চামড়া শিল্পের সাথে জড়িত ব্যবসায়ীরা ব্যাংক থেকে সহজ শর্তে ঋণ পায় না। কোরবানির সময় ব্যবসায়ীদের অনেক টাকার প্রয়োজন হয়, কিন্তু প্রায়ই সরকার এক্ষেত্রে প্রয়োজনের তুলনায় কম ঋণ বরাদ দিয়ে থাকে।
উপরের সমস্যাসমূহের জন্য চামড়া শিল্পের বিস্তৃতি ব্যাহত হচ্ছে।

ঘ. উদ্দীপকে বাংলাদেশ সরকার চামড়া শিল্পের সমস্যা সমাধানে শ্রমিকের প্রশিক্ষণ, বাজার সম্প্রসারণ, শিল্প নগরী স্থাপনসহ নানাবিধ কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। এছাড়াও সরকার এ শিল্পের উন্নয়নে আরও যেসব পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারে, তা নিচে বিশ্লেষণ করা হলো-
১. চামড়া শিল্পের জন্য পর্যাপ্ত ঋণের ব্যবস্থা করতে পারলে এবং সেই ঋণ সহা শর্তযুক্ত হলে এ শিল্পের বিকাশ ঘটবে।
২. চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুতের সরবরাহ নিশ্চিত করলে এ শিল্পের সমস্যার সমাধান হবে।
৩. প্রয়োজনীয় রাসায়নিক দ্রব্যের সরবরাহ নিশ্চিত করতে পারলে এ শিল্প আলোর মুখ দেখতে পারবে।
৪. বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্টের জন্য সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা অধিক প্রয়োজন।
৫. দেশের বাইরে যেন চামড়া পাচার হতে না পারে সে দিকে সকলকে খেয়াল রাখতে হবে।
৬. বিদেশে বাজার সৃষ্টি করার জন্য দেশীয় বিনিয়োগকারীদের ও সরকারের কূটনৈতিক তৎপরতা জোরদার করতে হবে।
৭. দেশে আরও বেশি ট্যানারি শিল্প স্থাপনের উদ্যোগ নিতে হবে।
৮. চামড়া শিল্পের বিকাশের জন্য সঠিক চামড়া নীতি প্রণয়ন করতে হবে। উপরিউক্ত পদক্ষেপসমূহ গ্রহণ করলে বাংলাদেশের চামড়া শিল্প রপ্তানি আয়ে যথেষ্ট অবদান রাখতে সক্ষম হবে।

৩. বিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে পাট ও পাটজাত পণ্যের জন্য বাংলাদেশ বিখ্যাত ছিল। কিন্তু একই শতাব্দীর শেষার্ধে পলিথিন, নাইলন ও প্লাস্টিক সামগ্রীর উৎপাদন ও ব্যবহার বেড়ে যায় এবং পাটের বৈশ্বিক চাহিদা কমে যাওয়ায় পাট ব্যবসায় মন্দা দেখা দেয়। ১ জানুয়ারি, ২০০২ থেকে ঢাকা শহরে এবং মার্চ, ২০০২ থেকে সারাদেশে সরকার পলিথিন ব্যাগ নিষিদ্ধ করে পাটের তৈরি ব্যাগের ব্যাপক ব্যবহারের উদ্যোগ নেয়। অন্যদিকে, সম্প্রতি বাংলাদেশের বিজ্ঞানীরা পাটের জীবন রহস্য উন্মোচন করায় পাটশিল্প বিকাশের নতুন সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
ক. আমদানি বিকল্প শিল্প কী?
খ. 'কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে কুটিরশিল্পের অগ্রণী ভূমিকা রয়েছে।'- ব্যাখ্যা করো।
গ. উদ্দীপকের আলোকে পাটের ব্যবসায় মন্দা দেখা দেয়ার কারণগুলো ব্যাখ্যা করো।
ঘ. 'পাট শিল্পের সম্ভাবনার দ্বার নতুনভাবে উন্মোচিত হয়েছে। যরিসহ বিশ্লেষণ করো।

৩ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. আমদানি দ্রব্য অন্য দেশ থেকে আমদানি না করে, নিজ দেশে উৎপাদনের জন্য যে শিল্প গড়ে তোলা হয়, তাকে আমদানি বিকল্প শিল্প বলে।

খ. স্বল্প পুঁজি ও পারিবারিক পরিবেশে কুটিরশিল্প স্থাপন করা যায় বলে কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে এ শিল্পের অগ্রণী ভূমিকা রয়েছে। যে শিল্পে স্বল্প মূলধন এবং পারিবারিক সদস্যসহ সর্বোচ্চ ১৫ জন শ্রমিক নিয়োজিত থাকে, তাকে কুটিরশিল্প বলে। পুঁজি কম হওয়ায় ঘরোয়া পরিবেশে বা অল্প জায়গা (যেমন- ১টি ঘর) নিয়ে যে কেউ এই শিল্প স্থাপন করতে পারে। তাই শিক্ষিত বা অশিক্ষিত যেকোনো লোকই সামান্য প্রশিক্ষণ ও পুঁজির ব্যবস্থা করে খুব সহজেই কুটির শিল্প স্থাপন করে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে পারে।

গ. পাট ও পাটজাত দ্রব্যের বিকল্প দ্রব্য আবিষ্কার হওয়ায় বিংশ শতাব্দীর শেষার্ধে পাটের ব্যবসার মন্দা দেখা দেয়।
বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে বাংলাদেশের পাট ও পাটজাত দ্রব্য বিশ্ব বিখ্যাত ছিল। আর এ পাট ও পাটজাত দ্রব্যসামগ্রী রপ্তানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হতো। কিন্তু জ্ঞান-বিজ্ঞানের প্রসারের ফলে পাটজাত পণ্যের বিকল্প পণ্য যেমন- পলিথিন, নাইলন, প্লাস্টিক ইত্যাদির ব্যবহার বেড়ে যায়। যার ফলে পাটের বৈশ্বিক চাহিদা ব্যাপক হ্রাস পায় এতে এদেশের পাট শিল্পের ব্যাপক ক্ষতি হয়। তাছাড়া, রাজনৈতিক পটপরিবর্তন ও অব্যবস্থাপনার ফলে সোনালি আঁশ খ্যাত পাট হুমকির সম্মুখীন হয়। বিভিন্ন পার্ট কল বন্ধ হয়ে যায়।
উপরের কারণগুলো ছাড়াও পাট ব্যবসায় মন্দা দেখা দেয়ার অন্যা কারণগুলো হলো- পাট চাষে সনাতন পদ্ধতির ব্যবহার, পাট ও পাটজা পণ্যের গুণগত মান সময়োপযোগী না হওয়া, বিজ্ঞাপন বা প্রচারের স্বল্পতা, ন্যায্য মূল্য না পাওয়ায় চাষীদের পাট চাষে অনীহা ইত্যাদি।

ঘ. সম্প্রতি উন্নতজাতের পাট ও পাটজাত দ্রব্যের উদ্ভাবন, পাটের বিবর পণ্য ব্যবহারের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি ও বিভিন্ন সরকারি উদ্যোগের ফলে নতুন করে পাট শিল্পের সম্ভাবনার দ্ব উন্মোচিত হয়েছে।
পাটের বৈশ্বিক চাহিদা কমে যাওয়ায় পাট শিল্প প্রায় ধ্বংস হয়ে যাচ্ছিল কিন্তু বর্তমানে আবার নতুন করে পাট ও পাটজাত দ্রব্যের চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে। কারণ, পাট ও পাটজাত দ্রব্য পরিবেশবান্ধব উপাদান অন্যদিকে, পলিথিন, নাইলন ও প্লাস্টিক উৎপাদন ও ব্যবহার পরিবেশ ও মানব স্বাস্থ্যের জন্য হুমকিস্বরূপ। বর্তমান সরকার ১৭টি পণ্যের মোড়কে পাটের বস্তার ব্যবহার বাধ্যতামূলক করেছে।
উদ্দীপকে লক্ষ করা যায়, সম্প্রতি বাংলাদেশের বিজ্ঞানীরা পাটের জীবন রহস্য উন্মোচন করতে পেরেছেন। ফলে উন্নত জাতের পাট ও পাটজা দ্রব্য ব্যাপক মাত্রায় উৎপাদন করা সম্ভব হয়েছে। এতে মুনাফা লাভের পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়ায় নতুন করে অনেক কৃষক এখন পাট চাষে উৎসাহী হচ্ছে। তাছাড়া ২০০২ সালের মার্চ থেকে বাংলাদেশ সরকার সারাদেশে পলিথিন ব্যাগ নিষিদ্ধ করে এবং পাটের তৈরি ব্যাগ ব্যবহারে ব্যাপক উদ্যোগ গ্রহণ করে। এতে সারাদেশে পাটের তৈরি ব্যাগের ব্যবহার বেড়ে যায়। আবার, সাম্প্রতিক সময়ে পাট ছারা বিভিন্ন উন্নত ও রুচিশীল পণ্যের উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে। যেমন- পাটের তৈরি ব্যাগ, জুতা, মাদুর ইত্যাদি ব্যবহার বৃদ্ধি পেয়েছে। তাছাড়া এ সকল পণ্য পরিবেশের কোনো ক্ষতি করে না।
উপর্যুক্ত আলোচনা থেকে বলা যায়, সম্প্রতি পাট শিল্পের সম্ভাবনার দ্বার নতুনভাবে উন্মোচিত হয়েছে।

৪. শিল্পায়নের ভিত্তি মজবুত করা এবং অর্থনীতির অবকাঠামো উন্নয়নের লক্ষ্যে 'X' দেশের সরকার সম্প্রতি এক নতুন নীতি গ্রহণ করেছে। এ নীতির আওতায় সরকার বিদ্যুৎ খাতে ১৫০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন একটি বৃহৎ বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের প্রকল্প গ্রহণ করেছে। এ প্রকল্পে বেসরকারি উদ্যোক্তা মনটেক্স গ্রুপ সরকারের সাথে আছে। অর্থনীতিবিদ জনাব অনীকের মতে, বেসরকারি উদ্যোক্তাদের সাথে নিয়ে। সরকারের এ ধরনের প্রকল্প দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করবে।
ক. বৃহৎ শিল্প কী?
খ. "আমদানি বিকল্প শিল্প বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় করে। - ব্যাখ্যা করো।
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত প্রকল্পটি কী প্রকৃতির? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. অর্থনীতিবিদ জনাব অনীকের মতের যথার্থতা বিশ্লেষণ করো।

৪ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. যেসব শিল্প প্রতিষ্ঠান বিপুল মূলধন, বহু সংখ্যক দক্ষ ও অর্ধদক্ষ শ্রমিক, উন্নত প্রযুক্তি ও আধুনিক যন্ত্রপাতি ও সাজসরঞ্জাম ব্যবহার করে বেশি পরিমাণে দ্রব্য উৎপাদন করে সেগুলোকে বৃহৎ শিল্প বলে।

খ. আমদানি বিকল্প শিল্প বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় করে। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলো বিদেশ থেকে প্রচুর পরিমাণে প্রয়োজনীয় ভোগ্যদ্রব্য ও মূলধনী দ্রব্য আমদানি করে। এসব বিদেশি দ্রব্যের দাম অধিক বলে তা আমদানি করতে গিয়ে তাদেরকে অনেক বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় করতে হয়। কিন্তু যদি এসব দেশ নিজস্ব কাঁচামাল ব্যবহার করে ঐসব দ্রব্য নিজেরাই উৎপাদন করে, তবে সেক্ষেত্রে বৈদেশিক মুদ্রার অনেক সাশ্রয় হবে।

গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত প্রকল্পকটি হলো এমন এক ধরনের প্রকল্প সেখানে সরকারি ও বেসরকারি খাতে যৌথ উদ্যোগ পরিলক্ষিত হয়। নিচে এ ধরনের প্রকল্পের প্রকৃতি ব্যাখ্যা করা হলো-
বাংলাদেশে বড় বড় ও গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে শিল্পের প্রসার ও আধুনিকায়ন, ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং দ্রুত অর্থনৈতিক উন্নয়নের মধ্য দিয়ে উচ্চ হারে জিডিপির প্রবৃদ্ধি অর্জন সম্ভব। এর জন্য অবশ্য বিপুল পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করা দরকার। কিন্তু উন্নয়ন বাজেটের এ বিনিয়োগের অর্থ সরকারের একার পক্ষে যোগান দেয়া সম্ভব নয়। এ কাজে বেসরকারি উদ্যোগ প্রয়োজন। উন্নয়ন বিষয়ক এ ধারণার প্রেক্ষিতে উন্নয়ন বাজেটে বেসরকারি খাতের পুঁজি আকৃষ্ট করার লক্ষ্যে ২০১০ সালে পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) ধারণার সৃষ্টি করা হয়। এ ব্যবস্থার আওতায় দেশের বড় বড় ও ব্যয়বহুল উন্নয়ন প্রকল্পে সরকারি ও বেসরকারি খাতের যৌথ মালিকানা, উদ্যোগ ও পুঁজি বিনিয়োগ করা শুরু হয়। অর্থনীতির চাকাকে সচল ও বেগবান করতে হলে বিনিয়োগের একটি বড় ধাক্কা (Big Push) দেয়া প্রয়োজন। দেশের অর্থনীতিতে এ বৃহৎ ধাক্কা সৃষ্টির জন্য এ পিপিপি ব্যবস্থার প্রবর্তন করা হয়েছে।

ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত প্রকল্পটি হলো সরকারি ও বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে বৃহৎ উন্নয়ন প্রকল্প বেসরকারি উদ্যোত্তাদের সাথে নিয়ে সরকারের এ ধরনের প্রকল্প দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করবে। কথাটি যথার্থ নিচে তার এ মতের যথার্থতা বিশ্লেষণ করা হলো
১. দেশে শিল্প উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় পুঁজির যোগান পিপিপির মাধ্যমে সম্ভব। কেননা কেবল সরকারি বা বেসরকারি পুঁজি ও শর্তযুক্ত বিদেশি যাণ দ্বারা বৃহদাকার শিল্পের উন্নদান ও প্রসার সম্ভব নয়।
২. শিল্পায়নের জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন শক্তিশালী অর্থনৈতিক অবকাঠামো। সরকারি ও বেসরকারি অংশীদারিত্ব সড়ক, মহাসড়ক, রেলপথ, বিদ্যুৎ কেন্দ্র, জ্বালানি সরবরাহ, তথ্যপ্রযুক্তি খাতের জন্য নতুন নতুন স্থাপনা নির্মাণ দেশে শিল্পায়নের গতি দ্রুততর করতে যথেষ্ট সহায়ক। এক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় বিপুল পুঁজির যোগান পিপিপির দ্বারাই সম্ভব।
৩. পিপিপির মাধ্যমে সামাজিক অবকাঠামোও শক্তিশালী করা সম্ভব। যৌথ উদ্যোগের এ কৌশল দেশে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ব্যবসা-বাণিজ্য, ব্যাংক বিমা প্রভৃতি সেবাখাতের জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণেও যথেষ্ট সহায়ক হবে।
৪. পিপিপির মাধ্যমে অবকাঠামো নির্মাণ ও শিল্পায়ন হলে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের দক্ষতা বৃদ্ধি পাবে।
৫. পিপিপির উদ্যোগে দেশে বড় বড় উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে সেখানে অনেকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে।
৬. স্থায়ী ও টেকসই উন্নয়নের জন্য দীর্ঘমেয়াদি প্রকল্পের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। এক্ষেত্রে পিপিপির উদ্যোগ ছাড়া কেবল সরকারি বা বেসরকারি প্রচেষ্টা এককভাবে সফল নাও হতে পারে।
উপরিউক্ত আলোচনার মাধ্যমে অর্থনীতিবিদ জনাব অনীকের মতের যথার্থতা উপলদ্ধি করা যায়।

৫. 'Y' দেশ একটি উন্নয়নশীল দেশ। দেশটি বেশির ভাগ শিল্পজাত দ্রব্য আমদানি করে। পূর্বে সকল মোটরসাইকেল বিদেশ থেকে আমদানি করা হতো। কিন্তু সম্প্রতি দেশীয় কোম্পানি 'সিলেক্স' গ্রুপ দেশে ভালো মানের মোটরসাইকেল উৎপাদন করছে। ফলে মোটরসাইকেলের আমদানি অনেক কমে গেছে। অর্থনীতিবিদ জনাব জাহিদের মতে, মোটর সাইকেলের মতো টিভি, ফ্রিজ এবং চামড়া শিল্প দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে।
ক. কুটির শিল্প কী?
খ. পাট শিল্প তার গৌরব হারিয়েছে ব্যাখ্যা করো।
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত শিল্পটি কী প্রকৃতির? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. অর্থনীতিবিদ জনাব জাহিদের মতের যথার্থতা বিশ্লেষণ করো।

৫ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. নিজ গৃহে পারিবারিক ভিত্তিতে স্বপ্ন মূলধন এবং সহজলভ্য কাঁচামাল ও হালকা যন্ত্রপাতির সাহায্যে যে শিল্প পরিচালিত হয়, তাকে কুটির শিল্প বলে।

খ. সাম্প্রতিককালে দেশে ও বিদেশে পাটের বিকল্প হিসেবে কেনাফ, মেশতা, সিসাল প্রভৃতি কৃত্রিম আঁশের প্রচলন হওয়ায় পাটজাত দ্রব্যের চাহিদা যথেষ্ট কমে গেছে।
পাটজাত দ্রব্য রপ্তানির ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে এখন ভারত, থাইল্যান্ড, ব্রাজিল, মায়ানমার প্রভৃতি দেশের সাথে তীব্র প্রতিযোগিতা করতে হচ্ছে। কাঁচাপাটের অনিয়মিত যোগান, যন্ত্রাংশের অভাব, বিদ্যুৎ ঘাটতি, শ্রমিক অসন্তোষ ইত্যাদি কারণে পাট শিল্পের দুর্দিন চলছে। কাঁচাপাট ও পাটজাত দ্রব্যাদি থেকে আয় পূর্বের তুলনায় অনেক কমে গেছে। এসব কারণেই বলা হচ্ছে, পাট শিল্প তার গৌরব হারিয়েছে।

গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত শিল্পটি হলো আমদানি বিকল্প শিল্প। অতিমাত্রায় আমদানি নির্ভরতা ও বাণিজ্য ঘাটতি হ্রাসের লক্ষ্যে কিছু কিছু দ্রব্য আমদানি না করে সুবিধামতো সেসব দ্রব্যের শিল্প দেশে স্থাপন করা হলে তাকে আমদানি বিকল্প শিল্প বলে।
কোন কোন দ্রব্যের আমদানি বিকল্প শিল্প স্থাপন করা যুক্তিসংগত তা নির্ধারণের জন্য যে বিষয়গুলো বিবেচনা করা হয় তা হলো- শিল্পের জন্য নিজস্ব কাঁচামাল, প্রযুক্তি, প্রয়োজনীয় শ্রমশক্তি ও অভ্যন্তরীণ বাজারে প্রাপ্তি। এসব শিল্পের দ্রব্যাদি কমপক্ষে আমদানি প্রব্যের নিকট-বিকল্প হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
আমদানি বিকল্প শিল্প প্রব্যের মান বিদেশি দ্রব্যের তুলনায় কম হতে পারে, আবার বেশিও হতে পারে। সে জন্য আমদানি বিকল্প শিল্পগুলোকে বিদেশি পণ্যের অসম প্রতিযোগিতা থেকে রক্ষার জন্য সরকার এ শিল্পে ভর্তুকি ও কর অবকাশ সুবিধা প্রদান করে।
আমদানি বিকল্প শিল্পের কতকগুলো লক্ষণীয় দিক বা বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এ শিল্পে কেবল আমদানিকৃত দ্রব্যের মতো বা তার নিকট বিকল্প দ্রব্য উৎপাদন করা হয়। এ শিল্পের দ্রব্য কেবল অভ্যন্তরীণ বাজারে বিক্রির জন্য উৎপাদন করা হয়। এ শিল্পে যতদূর সম্ভব দেশীয় কাঁচামাল, নিজস্ব প্রযুক্তি, শ্রমঘন উৎপাদন ব্যবস্থা ব্যবহার করা হয়। এ শিল্প স্থাপনের উদ্দেশ্য হলো বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয়, অর্জন নয়।

ঘ. উদ্দীপকটি পড়ে জানা যায়, বাংলাদেশে উল্লিখিত শিল্পগুলো স্থাপনের কথা বলে অর্থনীতিবিদ জনাব জাহিদ প্রকারান্তরে, এদেশে আমদানি বিকল্প শিল্প স্থাপনের পক্ষেই তার মত দিয়েছেন। তার মতের যথার্থতা বিশ্লেষণ করা হলো-
১. বাংলাদেশের অব্যাহত বাণিজ্য ঘাটতি দূর করার জন্য রপ্তানি বৃদ্ধি ও আমদানি হ্রাস করা দরকার। আমদানি হ্রাসের জন্য আমদা বিকল্প শিল্পায়নের প্রয়োজন আছে।
২. বাংলাদেশ শিল্পায়নের প্রয়োজনে সাধারণত মূলধনী দ্রব্য বেশি আমদানি করে। তাই আমদানি বিকল্প শিল্পায়ন নীতি গ্রহণ করা হলে দেশের ভেতরে মূলধনী দ্রব্য উৎপাদিত হবে। ফলে দেশে শিল্পায়নের গতি ত্বরান্বিত হবে।
৩. আমদানি বিকল্প শিল্পায়নের ফলে দেশের আমদানি হ্রাস পাবে। ফলে বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় হবে এবং অন্য কাজে তা ব্যবহার করা যাবে।
৪. আমদানি বিকল্প শিল্পায়নের ফলে দেশে বিভিন্ন রকম ভোগ্যপণ্য, মধ্যবর্তী দ্রব্য ও পুঁজি দ্রব্য উৎপাদিত হবে। ফলে শিল্পপণ্যের দিক থেকে দেশ স্বনির্ভর হয়ে উঠবে।
৫. আমদানি বিকল্প শিল্পায়নের ফলে শিল্পের বিকেন্দ্রীকরণ ঘটে এবং সমগ্র শিল্প খাতের প্রসার ঘটে। এদেশে অধিক সংখ্যায় আমদানি বিকল্প স্থাপন হলে এসব সুবিধা ভোগ করা যাবে।
৬. বাংলাদেশসহ যেসব দেশে জনসংখ্যা বেশি সেখানে জনগণের প্রয়োজন অনুযায়ী, অনেক প্রকারের পণ্য আমদানি করতে হয়। এ অবস্থায় দেশে আমদানি বিকল্প শিল্প স্থাপন করা হলে এসব শিল্পপণ্যের বাজারের নিশ্চয়তা থাকবে। যার ফলে শিল্পায়ন অনেকটাই প্রসারিত হবে।
উপরের আলোচনার আলোকে বলা যায়, উদ্দীপকে অর্থনীতিবিদ জনাব জাহিদ এদেশে আমদানি বিকল্প শিল্প স্থাপনের পক্ষে যে মত প্রকাশ করেছেন তা যথার্থ।

৬. আমেরিকা প্রবাসী জনাব জামান একজন ধনাঢ্য ব্যক্তি। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ ঘুরে বেড়ানো তার শখ। ইউরোপ, আমেরিকার বাজারে যেখানেই গিয়েছেন সর্বত্রই বাংলাদেশের তৈরি পোশাক, পাটজাত দ্রব্য ও কুটিরশিল্পের নিপুণ সামগ্রী দেখে নিজ দেশ নিয়ে আনন্দিত হয়েছেন। তার মতে, বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন আর স্থবির নেয়।
ক. হাইটেক শিল্প কী?
খ. ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প দেশে সুষম উন্নয়ন ঘটায়- ব্যাখ্যা করো।
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত তৈরি পোশাক শিল্প বাংলাদেশের অর্থনীতিতে। কীরূপ ভূমিকা পালন করেছে? আলোচনা করো।
ঘ. বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন আর স্থবির নয়-উদ্দীপকের আলোকে ব্যাখ্যা করো।

৬ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. হাইটেক শিল্প বলতে, জ্ঞান ও পুঁজিনির্ভর, উচ্চ প্রযুক্তিভিত্তিক; পরিবেশবান্ধব এবং আইটি বা গবেষণা ও উন্নয়ননির্ভর শিল্পকে বোঝায়।

খ. ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প গ্রামাণে প্রসার লাভ করলে সুষম উন্নয়ন সম্ভব। কারণ বৃহৎ শিল্প শুধু শহরকেন্দ্রিক স্থাপনের ফলে গ্রাম ও শহরের মধ্যে বৈষম্য বৃদ্ধি পায়। বাংলাদেশের প্রধান বৃহৎ শিল্পগুলো হলো- পাট শিল্প, বস্তু শিল্প, সিমেন্ট শিল্প, কাগজ শিল্প প্রভৃতি। এসব শিল্প সাধারণত শহরকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে। ফলে গ্রামের সাধারণ পরিবারের লোকসানের এসব শিল্পে কাজ করার সুযোগ খুবই কম থাকে। এ দিক থেকে চিন্তা করলে অধিকাংশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের কারখানাগুলো গ্রামাখালে ও শহরের উপকণ্ঠে স্থাপিত হয়ে থাকে। যা অধিক লোকের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করে। তাই বলা হয়ে থাকে ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প সুষম উন্নয়ন ঘটায়।

গ. তৈরি পোশাক শিল্প বর্তমানে বাংলাদেশের শিল্পক্ষেত্রে এক নতুন সম্ভাবনার দিগন্ত উন্মোচিত করেছে। বর্তমানে বাংলাদেশে প্রায় পাঁচ হাজার পোশাক তৈরির কারখানা রয়েছে। এই কারখানাগুলোতে প্রায় ৫০ লক্ষ শ্রমিক নিয়োজিত আছে এবং এর মধ্যে প্রত্যক্ষভাবে ২২ লক্ষ শ্রমিক নিয়োজিত। এই শিল্পে প্রায় ৮০ শতাংশই হলো অশিক্ষিত ও অর্ধশিক্ষিত মহিলা কর্মী। মহিলাদের কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে এই শিল্পটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। বাংলাদেশের রপ্তানি বাণিজ্যেও পোশাক শিল্পের গুরুত্ব অপরিসীম। এ দেশের রপ্তানি আয়ের ৭৫ থেকে ৮২ শতাংশেরও বেশি বস্ত্রপণ্য ও তৈরি পোশাক শিল্প থেকে অর্জিত হয়। ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে ২৮,১৪৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের তৈরি পোশাক ও নিটওয়্যার রপ্তানি করেছে। বিশ্বের প্রায় ৯০টি দেশে পোশাক রপ্তানি করা হয়। বাংলাদেশি তৈরি পোশাক শিল্পের প্রধান আমদানিকারক দেশ হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। ২০১৪-২০১৫ অর্থবছরে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আয় ছিল প্রায় ৩২০৪. ৬৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। যা দেশের মোট রপ্তানি আয়ের ২৯. ০ শতাংশ। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে ৩৪,৬৫৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি হয়েছে। যেখানে তৈরি পোশাক খাতের (নিটওয়্যারসহ) রপ্তানি আয় ছিল ২,৮১৪ কোটি ৯৮ লাখ ৪০ হাজার মার্কিন ডলার। উদ্দীপকের আমেরিকা প্রবাসী জনাব জামান একজন ধনাঢ্য ব্যক্তি। তিনি পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ঘুরে বেড়ান। ওই দেশগুলোতে তিনি নিজালশের পণ্য দেখে খুশি হন। কারণ তিনি চিন্তা করেন বাংলাদেশ বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি করে এখন প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করছে। যা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভূমিকা পালন করে।

ঘ. বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন আর স্থবির নয়; বরং গতিশীল।
১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিশ্বের মানচিত্রে বাংলাদেশ নামে একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্ম হয়। সময়ের পরিক্রমায় বিশ্ব অর্থনীতির পরিবর্তনের সাথে সাথে বাংলাদেশ তাল মিলিয়ে চলছে। বাংলাদেশের জনগণ বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায়, বিভিন্ন দেশে নিজেদের স্থান প্রতিষ্ঠিত করেছে। আশা করা হচ্ছে, বাংলাদেশ ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হবে। সত্তরের দশকের শেষ ভাগ থেকে এদেশের অর্থনীতি বাজার অর্থনীতির দিকে ধীরে ধীরে ধাবিত হতে শুরু করেছে। বাজার অর্থনীতির নীতিমালা অনুসরণে বাংলাদেশে বিশ্ব ব্যাংকের কাঠামোগত সংস্কার কর্মসূচি গ্রহ করা হয়। এর মূল বিষয় ছিল বিরাষ্ট্রীয়করণ অর্থাৎ রাষ্ট্রায়ত্ত খাতকে সংকুচিত করা, ব্যক্তি খাতকে উৎসাহিত করা এবং বাণিজ্য উদারীকর করা। বর্তমানে বাংলাদেশের সাথে বিশ্বের প্রায় ১১০টি দেশের বাণিজি সম্পর্ক ক্রমশ প্রসারিত হচ্ছে। ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে এদেশের জিডি প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে ৭. ২৪%, যা পূর্ববর্তী অর্থবছরে ছিল ৭. ০৫%। ২০০৫ সালে বাংলাদেশে দারিদ্র্যের হার ছিল ৪০.৪ শতাংশ, যা ২০১৬ সালে নেমে দাঁড়িয়েছে ২৩. ৫ শতাংশে। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বিনিয়োগ দাঁড়িয়েছে জিডিপির ৩০.২৭% শতাংশ, গত অর্থবছরে যা ছিল জিডিপির ২৯. ৬৫ শতাংশ। এ ছাড়াও ২০১৬-১৭ অর্থবছরে দেশের রপ্তানি বাণিজে পরিমাণ দাঁড়ায় ২৫,৯৪৬. ০২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়, বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন আর স্থবির নয় বরং অর্থনীতির মৌলিক সমস্যাগুলো ধীরে ধীরে প্রশমিত হচ্ছে এবং সম্ভাবনার নতুন নতুন ক্ষেত্র তৈরি হচ্ছে।

৭. বাংলাদেশ বিশ্বের প্রধান পাট উৎপাদক ও রপ্তানিকারক দেশ ছিল। এককালে বাংলাদেশের পাটকে 'স্বর্ণসূত্র' বলা হতো। পরবর্তীতে বিশ্বব্যাপী পাটের বিকল্প আবিষ্কার ও কৃত্রিম আঁশের ব্যবহার বৃদ্ধি পাওয়ায় পাটের চাহিদা ও মূল্য দিন দিন হ্রাস পেতে থাকে। সরকার পাটের অতীত ঐতিহ্য পুনরুদ্ধারে জাতীয় পাটনীতি-২০১১' প্রণয়ন করে। সরকার কৃষকদের পাট চাষে উদ্বুদ্ধকরণ, পাটের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিতকরণ, বন্ধ পাটকলগুলো পুনরায় চালুসহ নতুন পাটকল স্থাপনে বেসরকারি উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করে। বর্তমানে পাটের উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
ক. কুটির শিল্প কী?
খ. কীভাবে অর্থনৈতিক উন্নয়নে পিপিপি সহায়তা করে।
গ. উদ্দীপকের আলোকে বাংলাদেশের পাট শিল্পের সমস্যাবলি চিহ্নিত করো।
ঘ. তোমার কি মনে হয় পাট শিল্প তার হারানো গৌরব ফিরে পাবে? উদ্দীপকের আলোকে ব্যাখ্যা করো।

৭ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. গৃহে পারিবারিক ভিত্তিতে স্বল্প মূলধন এবং সহজলভ্য কাঁচামাল ও হালকা যন্ত্রপাতির সাহায্যে যে শিল্প পরিচালিত হয়, তাকে কুটির শিল্প বলে।

খ. সরকারি ও বেসরকারি মালিকানার যৌথ প্রয়াসের ভিত্তিতে অর্থনৈতিক উন্নয়নে পিপিপি সহায়তা করে। PPP এর পূর্ণ রূপ হলো- Public Private Partnership. অর্থাৎ চুক্তিভিত্তিক সরকারি-বেসরকারি অংশগ্রহণে কোনো প্রকল্প নির্দিষ্ট সময়ে সম্পন্ন করার একটি সময়োপযোগী কৌশল বা প্রক্রিয়া উন্নয়নশীল দেশে মূলধনের স্বল্পতা থাকায় কোনো বড় প্রকল্প বাস্তবায়নে সরকার বা কোনো বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের একার পক্ষে সম্পূর্ণ অর্থায়ন সম্ভব হয় না। এক্ষেত্রে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে যেকোনো প্রকল্পের সুষ্ঠু বাস্তবায়ন সম্ভব। বর্তমানে PPP-এর অধীনে বেশ কিছু প্রকল্পের সার্থক বাস্তবায়ন সম্ভব হয়েছে। যেমন: বিদ্যুৎ উৎপাদন, উড়াল সড়ক, রেলওয়ে ইত্যাদি। এ সকল প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে অর্থনৈতিক উন্নয়নে PPP অনেক সহায়তা করে।

গ. একসময় পাটকে 'স্বর্ণসূত্র' বলা হলেও বর্তমানে বাংলাদেশের পাট শিল্পে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিয়েছে। পাটকে বাংলাদেশের প্রধান অর্থকরী ফসল বলা হলেও বর্তমানে এই শিল্পটি প্রায় মাংসের মুখে পতিত হয়েছে। পাট শিল্পের এই করুণ অবস্থার জন্য অনেক কারণ নারী। নিম্নে সমস্যাগুলো চিহ্নিত করা হলো- পূর্বে বিশ্বব্যাপী পাটজাত দ্রব্যের ব্যাপক প্রচলন থাকলেও প্লাস্টিকের ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় হঠাৎ করেই কমে যায় পাট ও পাটজাত দ্রব্যের দাম। চাষি থেকে শুরু করে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ব্যবসায়ীরাও বড় ধরনের লোকসানের শিকার হয়েছে। বন্ধ হয়ে যায় একাধিক জুট মিল। চাষিরাও জীবিকার তাগিদে অন্য ফসল চাষে মনোনিবেশ করে। এতে ধ্বংস হয়ে যায় দেশের সম্ভাবনাময় এই রপ্তানি শিল্প। তাছাড়া চালের মূল্য বৃদ্ধি, চাষিদের পাট চাষে অনীহা, সরকারি পর্যায়ে প্রতিবন্ধকতা, মজুদকরণের সমস্যা, বিকল্প প্রব্যের উপস্থিতি প্রভৃতি সমস্যার কারণে বাংলাদেশের এই সম্ভাবনাময় খাতটি আজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। উদ্দীপকের আলোকে বলা যায়, বাংলাদেশ এক সময় বিশ্বের প্রধান পার্ট উৎপাদক ও রপ্তানিকারক দেশ হলেও পরবর্তীতে বিশ্বব্যাপী পাটের বিকল্প আবিষ্কার ও কৃত্রিম আঁশের ব্যবহার বৃদ্ধি পাওয়ায় দিন দিন এর চাহিদা ও মূল্য হ্রাস পেতে থাকে। ফলে এ শিল্পটি নানা ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হয়। এতে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব পড়ে।

ঘ. সরকার কর্তৃক গৃহীত 'পাটনীতি-২০১১' প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে পাট শিল্পের হারানো ঐতিহ্য ফিরে পাওয়া যাবে বলে আমি মনে করি। একসময় পাটই ছিল বাংলার প্রধান অর্থকরী ফসল, যাকে 'স্বর্ণসূত্র' বলা হতো। এ খাত হতে অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রা আমাদের অর্থনীতিতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করত। বিভিন্ন সমস্যার কারণে এ সম্ভাবনাময় খাতটি ক্ষতিগ্রস্ত হলেও সরকার কর্তৃক গৃহীত বিভিন্ন নীতিমালা ও পদক্ষেপ দ্বারা এর হারিয়ে যাওয়া গৌরব ফিরিয়ে আনা সম্ভব। ইতোমধ্যে সরকার 'পাটনীতি-২০১১' গ্রহণ করে এ খাতকে পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করছে। এছাড়াও কৃষক পর্যায়ে উন্নতমানের বীজ সরবরাহ করা যেতে পারে যাতে তারা পাট চাষ করে লাভবান হতে পারে। কৃষকদের পাট চাষে উদ্বুদ্ধ করতে সহজ শর্তে ঋণ প্রদান, উন্নত চাষাবাদ প্রক্রিয়া সম্মন্ধে প্রশিক্ষণ, পাট ও পাটজাত পণ্যের ন্যূনতম মূল্য নির্ধারণ করে এ খাতকে আরো প্রসারিত করা যেতে পারে। বিভিন্ন স্থানে বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে, উৎসবে পাটজাত পণ্যের মেলার আয়োজন করলে এই পণ্য ব্যবহারে দেশের মানুষ আগ্রহী হবে। এতে পাটের চাহিদা তথা উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে। তাছাড়া বন্ধ হয়ে যাওয়া মিলগুলোকে পুনরায় চালু করতে পারলে পাটজাত পণ্যের উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি তা কর্মসংস্থানের সুযোগও সৃষ্টি করবে। উদ্দীপকের আলোকে বলা যায়, পাটের সেই সোনালি দিন ফিরিয়ে আনতে সরকার অনেক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। 'পাটনীতি-২০১১' প্রণয়ন, পাটের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিতকরণ, বেসরকারি উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করার মত নানাবিধি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণই হলো তার আভাস। পরিশেষে বলা যায় যে, সরকারের সদিচ্ছা ও বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করার পাট শিল্পের বর্তমান উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে। ভবিষ্যতে সকল কার্যক্রম অব্যাহত থাকলে ও প্রকল্পগুলো সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হলে হারানো গৌরব ফিরে পাওয়া অসম্ভব নয়।

৮. মি. জনসন ইংল্যান্ডের একজন সফল ব্যবসায়ী। তার দেশে বাংলাদেশে উৎপাদিত বিভিন্ন তৈরি পোশাক ও চামড়াজাত পণ্য বেশ জনপ্রিয় হওয়ায় এসবের প্রায় সবকিছুই তিনি বাংলাদেশ থেকে ক্রয় করেন। ২০১৪ সালে জনসন বাংলাদেশে এসে এক সপ্তাহ অবস্থানকালে বেশকিছু তৈরি পোশাক কারখানা পরিদর্শন করেন এবং এ শিল্পের বেশ কিছু সমস্যা সম্পর্কে অবগত হন। তিনি মনে করেন, কারিগরি উন্নয়ন, উৎপন্ন পণ্যের গুণগতমান বৃদ্ধি, শ্রমিকদের প্রশিক্ষণ, পোশাকের আইটেম বৃদ্ধি করতে পারলে এদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি আরো বহুগুণ বৃদ্ধি পাবে। ২০১৫ সালে মি. জনসন আবার বাংলাদেশে এসে হাজারীবাগে বেশ কিছু চামড়াজাত পণ্য তৈরি, কারখানা পরিদর্শন করেন এবং এ শিল্পের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনাও তার কাছে খুব উজ্জ্বল মনে হয়।
ক. হাইটেক শিল্প কী?
খ. শিল্পায়নের মাধ্যমে কীভাবে একটি দেশ স্বনির্ভরতা অর্জন করে?
গ. মি. জনসন কর্তৃক ২০১৪ সালে পরিদর্শনকৃত শিল্পের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে যেসব পরামর্শগুলো নিয়েছেন তার ব্যাখ্যা করো।
ঘ. মি. জনসন ২০১৫ সালে যে শিল্প পরিদর্শন করেন, ঐ শিল্পের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা সম্পর্কে যে ধারণা পোষণ করেন, তার সাথে তুমি কি একমত? তোমার উত্তরের সপক্ষে যুক্তি দাও।

৮ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. হাইটেক শিল্প বলতে জ্ঞান ও পুঁজিনির্ভর, উচ্চ প্রযুক্তিভিত্তিক, পরিবেশবান্ধব, আইটি গবেষণা ও উন্নয়ন নির্ভর (R & D) শিল্পকে বোঝায়।

খ. দেশে শিল্পায়ন ঘটলে দেশটি এমন কতগুলো প্রাকৃতিক সম্পদ উত্তোলন ও ব্যবহার করতে সক্ষম হয়, যা অতীতে আমদানি করতে হতো।
দেশে বড় বড় কল-কারখানার প্রসার ঘটলে নতুন ও আধুনিক প্রযুক্তির বিকাশ ঘটে, যার ফলে সেক্ষেত্রে বিদেশি নির্ভরতা কমে। দেশে শিল্প বিকশিত হলে প্রতিরক্ষার সাজ-সরঞ্জাম দেশেই উৎপাদন করা যায়; বিদেশের ওপর নির্ভর করতে হয় না। তাই বলা যায়, শিল্পায়নের মাধ্যমে একটি দেশ বিভিন্ন উপায়ে স্বনির্ভরতা অর্জন করে।

গ. উদ্দীপকটি থেকে জানা যায়, ইংল্যান্ডের ব্যবসায়ী মি. জনসন ২০১৪ সালে বাংলাদেশের বেশ কিছু তৈরি পোশাক কারখানা পরিদর্শন করেন এবং এ শিল্পের বিভিন্ন সমস্যা সম্পর্কে অবগত হন। তিনি এ শিল্পের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের জন্য কিছু কার্যকরী পরামর্শ প্রদান করেন, যা নিচে ব্যাখ্যা করা হলো-
১. কারিগরি উন্নয়ন: তৈরি পোশাকের উৎপাদন বৃদ্ধি, মানোন্নয়ন ও উৎপাদন ব্যয় হ্রাসের জন্য উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করতে হবে। এক্ষেত্রে বিদেশি প্রযুক্তি ছাড়াও দেশের অভ্যন্তরে উন্নত প্রযুক্তি উদ্ভাবনের জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।
২. উৎপন্ন পণ্যের গুণগত মান বৃদ্ধি: আমদানিকারক দেশগুলোর চাহিদা অনুযায়ী বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের মান উন্নত করতে হবে। তাহলে বিশ্ব বাজারে আমাদের এ শিল্পের অবস্থান আরো সংহত ও দৃঢ় হবে।
৩. শ্রমিকদের প্রশিক্ষণ প্রদান: আমাদের পোশাক শিল্পের অধিকাংশ শ্রমিকই গ্রাম থেকে আগত অশিক্ষিত ও অদক্ষ মহিলা। পোশাক শিল্পের উন্নতি ঘটাতে হলে এসব অদক্ষ শ্রমিকদের জন্য উপযুক্ত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ অপরিহার্য।
৪. পোশাকের আইটেম বৃদ্ধি: প্রতিযোগী দেশগুলোর সাথে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের আইটেম বাড়াতে হবে। তাহলে কোটা না থাকা অনেক আইটেমের পোশাক রপ্তানি বৃদ্ধির সুযোগ ঘটবে।
মি. জনসনের পরামর্শগুলোর দিকে সরকার নজর দিলে পাট শিল্পের বর্তমান সমস্যার উত্তোরণ ঘটবে।

ঘ. ইংল্যান্ডের ব্যবসায়ী মি. জনসন ২০১৫ সালে বাংলাদেশের হাজারীবাগে বেশকিছু চামড়াজাত পণ্য তৈরির কারখানা পরিদর্শন করেন। পরিদর্শন শেষে তিনি এ শিল্প তথা চামড়া শিল্পের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা সম্পর্কে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। আমি তার সে ধারণার সাথে একমত পোষণ করি। নিচে আমার যুক্তিসমূহ প্রদান করা হলো-
১. এদেশে প্রতিদিন বহুসংখ্যক গরু, মহিষ, ছাগল ও ভেড়া জবাই করা হয়। তাছাড়া কোরবানির সময় প্রচুর চামড়া পাওয়া যায়। তাই, বাংলাদেশের চামড়া শিল্পের জন্য প্রয়োজনীয় প্রধান কাঁচামাল তথা কাঁচা চামড়ার পর্যাপ্ত যোগান রয়েছে।
২. এদেশে যে কাঁচা চামড়া পাওয়া যায় তা উন্নতমানের। এরূপ চামড়া দ্বারা পাকা চামড়া প্রক্রিয়াজাতকরণ উৎপাদিত চামড়াজাত পণ্যের উন্নতমানের নিশ্চয়তা প্রদান করে।
৩. জনবহুল দেশ হওয়ায় বাংলাদেশে শ্রমিকের সংখ্যা বেশি এবং মজুরিতেই শ্রমিক পাওয়া যায়। এজন্য চামড়াজাত পণ্যের উৎপাদন খরচ কম পড়ে।
৪. দেশের ভেতরে ও বাইরে চামড়াজাত দ্রব্যের চাহিদা দিনদিন বাড়ছে। তাই বিদেশের বাজারে উন্নতমানের পাকা চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের সরবরাহ নিশ্চিত করতে পারলে চামড়া শিল্পের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা উজ্জ্বল হবে।
সুতরাং, উপরিউক্ত যুক্তিগুলোর আলোকে মি. জনসনের সাথে একমত।

৯. নাবিলা একজন নারী উদ্যোগে তিনি নিজে ঘরে বে হাতে তৈরি বিভিন্ন পণ্য তৈরি করে বাজারে বিক্রি করতেন। বর্তমানে তার পণ্যের চাহিদা বেড়ে যাওয়ার তার স্বামীও তাকে সহযোগিতা করেন। তিনি অধিক উৎপাদনের জন্য ১০ জন শ্রমিক নিয়োগ দিয়েছেন। প্রতিষ্ঠানটির মূলধন প্রায় ৫ লক্ষ টাকা। বর্তমানে তার পণ্যের চাহিদা দেশের সীমানা ছাড়িয়ে অন্যান্য দেশেও ব্যাপৃত হয়েছে।
ক. শিল্প কী?
খ. দেশের উন্নয়নে আমদানি বিকরা শিল্প স্থাপন করা প্রয়োজন কেন?
গ. নাবিলার প্রতিষ্ঠানটি কোন ধরনের শিল্প নির্দেশ করে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে নাবিলার প্রতিষ্ঠিত শিল্পের গুরুত্ব ব্যাখ্যা করো।

৯ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. কারখানায় যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে প্রাথমিক প্রধাকে (কাঁচামাল) মাধ্যমিক দ্রব্যে এবং মাধ্যমিক দ্রব্যকে চূড়ান্ত দ্রব্যে রূপান্তর করার প্রক্রিয়াকেই শিল্প বলে।

খ. দেশের উন্নয়নের জন্য আমদানি বিকল্প শিল্প স্থাপন করা হলে লেনদেন ভারসাম্যে প্রতিকূলতা ও বৈদেশিক সাহায্যের ওপর নির্ভরশীলতা পায়। কোনো দেশ যেসব দ্রব্য বিদেশ হতে আমদানি করে সেসব বা আমদানি না করে নিজস্ব প্রযুক্তি ও ব্যবস্থাপনায় নিজ দেশে উৎপাদনের লক্ষ্যে শিল্প স্থাপন করে তাকে আমদানি বিকল্প শিল্প বলে। এ ধরনের শিল্প স্থাপনের ফলে দেশীয় শিল্প বিদেশি প্রতিযোগিতার হাত থেকে রক্ষা পায়। ফলে দেশের উৎপাদন বৃদ্ধি, রপ্তানি আয় বৃদ্ধি তথা অর্থনৈতিক উন্নয়ন বৃদ্ধি পায়। তাই, দেশীয় শিল্প সংরক্ষণ ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য আমদানি বিকল্প শিল্প স্থাপন প্রয়োজন।

গ. কর্মরত শ্রমিক সংখ্যা ও মূলধন মূল্যের ভিত্তিতে নাবিলার প্রতিষ্ঠানটি। কুটিরশিল্পকে নির্দেশ করে।
'শিল্পনীতি-২০১৬' অনুসারে, যে শিল্পে স্বল্প মূলধন (১০ লক্ষ টাকার নিচে) এবং পারিবারিক সদস্যসহ সর্বাধিক ১৫ জন শ্রমিক নিয়োজিত থাকে, তাকে কুটিরশিল্প বলে। সাধারণত পারিবারিক মালিকানায় গৃহের ভেতরে বা পাশে (ছোট পরিসরে এ শিল্প স্থাপিত হয়। যেমন- তাঁত শিল্প, বাঁশ শিল্প, কাঠ ও বেত শিল্প ইত্যাদি হলো কুটিরশিল্প। উদ্দীপকে লক্ষ করা যায়, নাবিলা একজন নারী উদ্যোঞ্জা। তিনি নিজ ঘরে বসে হাতে তৈরি বিভিন্ন পণ্য বাজারে বিক্রি করেন। এ কাজে তার স্বামীও তাকে সহযোগিতা করে থাকেন। তার প্রতিষ্ঠানের শ্রমিক সংখ্যা ১০ জন এবং মূলধনের পরিমাণ প্রায় ৫ লক্ষ টাকা। কাজেই বলা যায়, নাবিলার প্রতিষ্ঠানটির বৈশিষ্ট্যসমূহ কুটির শিল্পকে নির্দেশ করে।

ঘ. বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে নাবিলার প্রতিষ্ঠান তথা কুটির শিল্পের গুরুত্ব অপরিসীম।
বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল দেশ। দেশের মানুষ মূলধনের অভাবে কৃষিকে পেশা হিসেবে বেছে নেয়। এছাড়া দেশের মূলধন গঠনের হারও কম। মূলধন গঠনের হার কম হওয়ায় এক্ষেত্রে কুটির শিল্প স্থাপন করা যায়। আর কুটিরশিল্পে স্বল্প পুঁজি ও ঘরোয়া পরিবেশে উৎপাদন করা যায়। তাই, কুটিরশিল্প স্থাপিত হলে দেশে কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে বেকার সমস্যার সমাধান ঘটবে। সর্বোপরি, দেশের উন্নয়ন সাধিত হবে। তাছাড়া, বাংলাদেশের জনসংখ্যার অর্ধেক নারী। এই বিশাল নারী সমাজের অধিকাংশই ধর্মীয়, পারিবারিক ও সামাজিক কারণে ঘরের বাইরে কাজ করতে পারে না। তাই এই নারী সমাজ কুটিরশিল্পের মাধ্যমে দেশের মোট উৎপাদনে অবদান রাখতে পারে।
আবার, কুটিরশিল্পের কাঁচামাল হিসেবে আমাদের দেশের গ্রাম-গঞ্জে প্রাপ্ত প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবহার করা যেতে পারে। ফলে দেশীয় সম্পদের যথাযথ ব্যবহারের মাধ্যমে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে। উপযুক্ত নিকগুলো ছাড়াও কুটিরশিল্প বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন, জাতীয় ঐতিহ্য সংরক্ষণ, মুদ্রাস্ফীতি হ্রাস, জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন ইত্যাদি ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তাই বলা যায়, নাবিলার প্রতিষ্ঠান তথা কুটিরশিল্প বাংলাদেশের অড়থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

১০. দিনু বাঁশের কুলা, ঢাকি তৈরি ও বিক্রি করে। তার বউ সোহাগী তার এই কাজে সাহায্য করে। দিলুর পুঁজি কম থাকায় সে ব্যাংকে ঋণের জন্য যায়। কিন্তু জামানত দিতে না পারায় ব্যাংক তাকে ঋণ দেয় না। ফলে তাকে অনেক কষ্টে সংসার চালাতে হয়।
ক. রপ্তানিমুখী শিল্প কী?
খ. কর্মসংস্থান বৃদ্ধিতে ppp এর ভূমিকা কী?
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত শিল্পের সমস্যাসমূহ কী কী?
ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত শিল্পের উন্নয়নের জন্য তুমি কী কী ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করো?

১০ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. যেসব শিল্প প্রতিষ্ঠান প্রধানত রপ্তানিযোগ্য দ্রব্যাদি উৎপাদন ও তা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করে, সেগুলোকে রপ্তানিমুখী শিল্প বলে।

খ. পিপিপির আওতায় প্রতিষ্ঠিত বিনিয়োগ কর্মকান্ড প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে বিপুল কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়। পিপিপির মাধ্যমে বিপুল পুঁজির সমাবেশ ঘটে এবং সৃষ্টি হয় বহুমুখী ও সম্প্রসারিত প্রতিষ্ঠান। এর আওতায় প্রতিষ্ঠিত বিনিয়োগ কর্মকান্ড প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে বিপুল কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হয়। ফলে একটি দেশে সংগত কারণেই কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পায় এবং বেকারত্বের হার হ্রাস পায়।

গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত শিল্পটি কুটিরশিল্প বলে পরিচিতি'। বাংলাদেশে এ ধরনের শিল্পের প্রাধান্য রয়েছে। এতদসত্ত্বেও এ শিল্পের সমস্যা অনেক। এ. শিল্পের সমস্যাগুলো নিম্নরূপ:
১. বাংলাদেশের কুটিরশিল্পীরা অসচ্ছল ও দরিদ্র। তারা প্রয়োজন মাফিক পুঁজি সংগ্রহ ও বিনিয়োগ করতে ব্যর্থ হয়;
২. বাংলাদেশের কুটিরশিল্পে জামানতের অভাবে ঋণ পাওয়া যায় না;
৩. এ দেশের অধিকাংশ কুটিরশিল্পে অনুন্নত ও সেকেলে উৎপাদন পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়। ফলে উৎপাদন মানসম্মত হয় না এবং উৎপাদনের পরিমাণ ও কম হয়;
৪. কুটিরশিল্পের জন্য যেসব কাঁচামাল দরকার হয় তার যোগান অপর্যাপ্ত ও অনিয়মিত হওয়ায় অনেক ক্ষেত্রে তার দাম বেশি হয়; যার ফলে উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পায়;
৫. বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে বেশির ভাগ জায়গায় বিদ্যুৎ পাওয়া যায় না; আর পাওয়া গেলেও তা হয় অপর্যাপ্ত ও অনিয়মিত। ফলে কুটিরশিল্পগুলোর উৎপাদন ব্যাহত হয়, বাংলাদেশে কুটিরশিল্পের সমরূপ অনেকদ্রব্য আমদানি করা হয়। এসব দ্রব্যের মান উন্নত ও দাম কম হওয়ায় দেশীয় কুটিরশিল্পজাত দ্রব্যাদির চাহিদা হ্রাস পায়।
তাই বলা যায়, উদ্দীপকে উল্লিখিত শিল্প বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হয়ে থাকে।

ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত শিল্পটি হলো কুটিরশিল্প। বাংলাদেশের এ শিল্পটি বিভিন্ন সসম্যায় জর্জারিত। ফলে এ শিল্প দেশের অর্থনীতিতে তার যথাযোগ্য ভূমিকা পালন করতে পারে না। তাই এ শিল্পের সমস্যা দূর তথা এর উন্নয়ন আবশ্যক। এদেশের কুটিরশিল্পের উন্নয়নের জন্য নিম্নলিখিত সুপারিশগুলো করা যায়-
১. বাংলাদেশের কুটিরশিল্পে প্রাচীন উৎপাদন পদ্ধতির পরিবর্তে আধুনিক পদ্ধতি প্রবর্তন করতে হবে। এর ফলে উৎপাদন ব্যয় কমবে এবং উৎপাদিত দ্রব্যের মান উন্নত হবে;
২. কুটিরশিল্পে বিনিয়োগের স্বল্পতা দূর করার জন্য সহজ শর্তে ও কম সুদে প্রাতিষ্ঠানিক ঋণের ব্যবস্থা করতে হবে; ৩. বাংলাদেশের কুটিরশিল্পে ব্যবহারযোগ্য বিভিন্ন ধরনের কাঁচামালের নিয়মিত যোগান নিশ্চিত করতে হবে;
৪. বিভিন্ন প্রকার কুটিরশিল্পে নিয়োজিত কারিগরদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য শিল্প প্রশিক্ষণ কর্মসূচির আওতায় একটি কারিগরি প্রতিষ্ঠান স্থাপন করা দরকার;
৫. আধুনিক উৎপাদন কৌশল, উন্নত যন্ত্রপাতি ও দক্ষ কারিগর এসবের সমন্বয়ে কুটিরশিল্পের পণ্যের মান উন্নত করতে হবে। তাহলে পণ্যের উৎপাদন ব্যয় হ্রাস পাবে এবং পণ্যের চাহিদা বৃদ্ধি পাবে।
৬. কুটিরশিল্পকে বিদেশি প্রতিযোগিতার হাত থেকে রক্ষার উদ্দেশ্যে যথাযোগ্য নীতি গ্রহণ করতে হবে।
৭. বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে ছড়িয়ে থাকা কুটিরশিল্প-কারখানাগুলো যাতে নিয়মিত ও অব্যাহতভাবে বিদ্যুৎ ব্যবহার করতে পারে সে জন্য দেশের গ্রামাঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে।
উল্লিখিত ব্যবস্থাগুলো গ্রহণ করা হলে এদেশের কুটির শিল্পের সমস্যাবলির সমাধান সম্ভব হবে।
Share:

0 Comments:

Post a Comment