HSC অর্থনীতি ২য় পত্র (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর pdf download অধ্যায় ২

HSC অর্থনীতি ২য় পত্র (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর pdf download অধ্যায় ২

এইচএসসি পরীক্ষার পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি
HSC Economics 2nd Paper Srijonshil question and answer pdf download.

উচ্চমাধ্যমিক

অর্থনীতি
দ্বিতীয় পত্র

সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
২য় অধ্যায়

HSC Economics 2nd Paper
Srijonshil
Question and Answer pdf download

১. বাংলাদেশ একটি কৃষিপ্রধান দেশ। পূর্বে সনাতন পদ্ধতিতে চাষাবাদ হলেও বর্তমানে কৃষিতে আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছে। কৃষি উৎপাদনেও বৈচিত্র্য এসেছে। যার জন্য পূর্বের তুলনায় কৃষকদের বেশি পরিমাণে মূলধন প্রয়োজন হচ্ছে। কিন্তু নানা কারণে কৃষক প্রাতিষ্ঠানিক উৎস থেকে পর্যাপ্ত কৃষি ঋণ সংগ্রহ করতে পারে না। অতি সম্প্রতি সরকার কৃষি ঋণ ও উপকরণ বিতরণ অধিকতর সহজলভ্য করেছে। যার ইতিবাচক প্রভাব কৃষি উৎপাদনে পরিলক্ষিত হচ্ছে।
ক. কৃষিজাত কাকে বলে?
খ. মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্যের কারণেই কৃষকগণ ফসলের ন্যায্য মূল্য পায় না- ব্যাখ্যা করো।
গ. প্রাতিষ্ঠানিক উৎস থেকে ঋণ সংগ্রহে কৃষকের সমস্যাসমূহ উদ্দীপকের আলোকে বর্ণনা করো।
ঘ. কৃষির উন্নয়নে সরকারের গৃহীত কৃষি ঋণ ও কৃষি উপকরণ বিতরণ যথেষ্ট কি? তোমার মতামত দাও।

১ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. কৃষক যে আয়তনের জমির উপর কৃষিকাজ পরিচালনা করে, তাকে কৃষিলোত বলে।

খ. কৃষিপণ্য বাজারজাতকরণ প্রক্রিয়ায় দালাল, ফড়িয়া, বেপারি, মজুতদার, আড়তদার ইত্যাদি মধ্যবর্তী ব্যবসায়ী শ্রেণিকে মধ্যস্বত্বভোগী বলা হয়। এ সকল ব্যবসায়ীরা তৃণমূল কৃষকদের কাছ থেকে নাম মাত্র মূল্যে কৃষিপণ্য ক্রয় করে বাজারে উচ্চ মূল্যে চূড়ান্ত ভোক্তাদের নিকট বিক্রি করে। ফলে কৃষিপণ্যের মূল্য বৃদ্ধি পেলেও কৃষক সম্প্রদায় ফসলের ন্যায্য মূল্য পায় না। এতে ভোক্তা ও উৎপাদক উভয়ই ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

গ. কৃষকগণ প্রাতিষ্ঠানিক উৎস হতে ঋণ সংগ্রহে নানাবিধ সমস্যার সম্মুখীন হন। সমস্যাগুলো উদ্দীপকের আলোকে বর্ণনা করা হলো- যে সকল আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বেসরকারি সংস্থা সরকারি ঋণদানের বিধি ও নিয়মের অন্তর্ভুক্ত হয়ে কৃষিঋণ প্রদান করে থাকে, তাদেরকে কৃষি ঋণের প্রাতিষ্ঠানিক উৎস বলে। প্রাতিষ্ঠানিক ঋণের জন্য উপযুক্ত জামানত প্রদান করতে হয়।
কিন্তু এদেশের বেশির ভাগ কৃষক ভূমিহীন ও প্রান্তিক হওয়ায় উপর্যুক্ত জামানত দেয়ার সামর্থ্য তাদের নেই। ফলে তারা কাঙ্ক্ষিত প্রাতিষ্ঠানিক ঋণ সুবিধা পাচ্ছে না। এছাড়া আমাদের দেশে কিছু বিশেষায়িত আর্থিক প্রতিষ্ঠান (বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক) কর্তৃক স্বল্পসুদে কৃষি ঋণের ব্যবস্থা থাকলেও তা চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল। এ সকল প্রতিষ্ঠানের বেশির ভাগই শহরভিত্তিক। তাছাড়া এ প্রতিষ্ঠানগুলো দরিদ্র ও ভূমিহীন কৃষকদের সাহায্যের নিমিত্তে গড়ে উঠলেও এর অধিকাংশ সুবিধা গ্রামের ধনী কৃষক ও মহাজনরাই ভোগ করে থাকে। ফলে দরিদ্র কৃষকদের অবস্থা পরিবর্তন করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। উদ্দীপক অনুসারে, বর্তমানে এদেশের কৃষিতে আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছে। এজন্য কৃষকদের পূর্বের তুলনায় অধিক মূলধনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিচ্ছে। তারা কৃষিতে আধুনিক যন্ত্রপাতি (ট্রাক্টর, সেচ পাম্প) ব্যবহার করে ফলন বৃদ্ধি করতে আগ্রহী। কিন্তু উপর্যুক্ত সমস্যাগুলোর কারণে তারা প্রাতিষ্ঠানিক ঋণ সুবিধা হতে বঞ্চিত হচ্ছে।

ঘ. বাংলাদেশে দরিদ্র কৃষকদের কৃষিঋণ ও কৃষি উপকরণ সংগ্রহে সমস্যা লাঘবের জন্য সরকার বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। সরকারের গৃহীত এসব কর্মসূচি মূল্যায়ন করা হলো-
বাংলাদেশ সরকার কৃষিতে উৎপাদন বিনিয়োগের যাতা দূর করার জন্য বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক ও রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করেছে। এগুলোর মাধ্যমে মাঝারি সুদের হারে কৃষকদের স্বল্প, মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদি ঋণ প্রদান করা হয়। এছাড়া সরকার রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংক, বিআরডিবি এবং সরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে কৃষি ঋণদান কার্যক্রমের সাথে জড়িত করেছে। আবার ঋণের অপ্রাতিষ্ঠানিক উৎসগুলোর হয়রানি ও শোষণ বন্ধ করার জন্য সরকার একটি জাতীয় ঋণ সালিশ বোর্ড গঠন করেছে। অন্যদিকে প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষকদের কথা চিন্তা করে সরকার ক্ষুদ্র কৃষক উন্নয়ন ফাউন্ডেশনের আওতায় জামানতবিহীন ক্ষুদ্র ঋ কর্মসূচি চালু করেছে, আমদানি বিকল্প শস্য চাষে শতকরা ৪ সুদে বিকল্প ঋণ প্রদান করছে এবং ১০ টাকার বিনিময়ে কৃষকের ব্যাংক হিসাব খোলার সুবিধা প্রদান করছে। রেখাতি বাংলাদেশ সরকার কৃষি উপকরণে ভর্তুকি, উপকরণ সহজলভ্যকরণ ও উপকরণ সহায়ক কার্ড বিতরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। সরকার BADC কর্তৃক ভর্তুকি দিয়ে কৃষকের কাছে স্বল্প মূল্যে বিভিন্ন কৃষি উপকরণ যেমন- রাসায়নিক সার, উচ্চ ফলনশীল বীজ, সেচযন্ত্র, কীটনাশক, উন্নতমানের সার ইত্যাদি কৃষকদের কাছে পৌঁছে দিচ্ছে। সুতরাং বলা যায়, কৃষকদের সমস্যা লাঘব ও কৃষির উন্নয়নের লক্ষ্যে সরকার কর্তৃক গৃহীত কৃষিঋণ ও কৃষি উপকরণ বিতরণ সংক্রান্ত বিভিন্ন কর্মসূচি আপাতত যথেষ্ট বলেই মনে হয়।

২. মি. 'ক' একদিন খবরের কাগজ পড়ছিলেন। সেখানে একটি খবরের প্রতি তার দৃষ্টি আটকে যায়। খবরে বলা হয়, বগুড়ার মহাস্থানগড় বাজারের সবজির দামের সঙ্গে ঢাকার কাওরান বাজারের সবজির দামে আকাশ-পাতাল পার্থক্য। খবরে আরও জানতে পারেন, অনুন্নত যোগাযোগব্যবস্থা, মধ্যস্বত্বভোগী ও দালালদের দৌরাত্ম্য, কৃষকদের সচেতনতার অভাব ইত্যাদি কারণে দামের এই পার্থক্য সৃষ্টি হচ্ছে। বর্তমান সরকার এইসব সমস্যা সমাধানে রাস্তাঘাট নির্মাণ ও প্রযুক্তির মাধ্যমে যোগাযোগব্যবস্থা উন্নয়নের চেষ্টা করছে।
ক. জীবননির্বাহী খামার কী?
খ. দীর্ঘমেয়াদি কৃষি ঋণ কৃষি উন্নয়নের ভিত্তি ব্যাখ্যা করো।
গ. উদ্দীপকের আলোকে বাংলাদেশের কৃষিপণ্য বাজারজাতকরণের সমস্যাসমূহ আলোচনা করো।
ঘ. কৃষিপণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে সরকার কর্তৃক গৃহীত পদক্ষেপসমূহ যথেষ্ট কি? উদ্দীপকের ভিত্তিতে বিশ্লেষণ করো।

২ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. যে খামারে পারিবারিক শ্রম ব্যবহার করে পরিবারের ভরণ-পোষণের জন্য প্রয়োজনীয় বিভিন্ন কৃষিপণ্য উৎপাদন করা হয়, তাকে জীবননির্বাহী আমার বলে।

খ. দীর্ঘমেয়াদি কৃষি ঋণকে কৃষি উন্নয়নের ভিত্তি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কৃষি জমির স্থায়ী উন্নয়ন, নলকূপ বসানো, ট্রাক্টর ক্রয়, ভারি যন্ত্রপাতি ভয়, পুরোনো ঋণ পরিশোধে দীর্ঘমেয়াদি ঋণের প্রয়োজন হয়। কৃষি জমির উৎপাদন বাড়াতে চাইলে প্রথমে কৃষি জমির স্থায়ী উন্নয়ন আবশ্যক। কারণ, কৃষি জমি যদি উন্নত চাষাবাদের উপযোগী না হয় অর্থাৎ কোথাও উঁচু, কোথাও নিচু হয় তবে ফসল উৎপাদন কখনো কাঙ্ক্ষিত হবে না। এক্ষেত্রে এসব সমস্যা সমাধানের জন্য কৃষককে দীর্ঘমেয়াদি বা বৃহৎ উৎস হতে ঋণ সংগ্রহ করতে হয়। স্বল্পমেয়াদি বা মধ্যম মেয়াদি ঋণ দ্বারা উপর্যুক্ত সমস্যার সমাধান কষ্টসাধ্য। তাই দীর্ঘমেয়াদি কৃষি ঋণকে কৃষি উন্নয়নের ভিত্তি হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

গ. উদ্দীপকে বাংলাদেশে কৃষিপণ্য বাজারজাতকরণের সমস্যাসমূহ হলো অনুন্নত যোগাযোগব্যবস্থা, মধ্যস্বত্বভোগী ও দালালদের দৌরাত্তা এবং কৃষকের সচেতনতার অভাব। নিচে এ সমস্যাসমূহ আলোচনা করা হলো- অনুন্নত পরিবহনব্যবস্থার জন্য কৃষকরা তাদের উৎপাদিত পণ্য শহরে এনে বেশি দামে বিক্রি করতে পারে না। বাড়িতে বা স্থানীয় হাটবাজারে কম নামে পণ্য বিক্রি করে। ফলে তারা কৃষিপণ্যের উপযুক্ত নাম পায় না।
কৃষিপণ্য রাজারজাতকরণ প্রক্রিয়ায় দালাল, ফড়িয়া, বেপারি, মজুতদার, আড়তদার ইত্যাদি বহু ধরনের মধ্যবর্তী ব্যবসায়ী শ্রেণির অসিস্তেত্ব আছে। কৃষক যে দাম পায় এবং সর্বশেষ ভোন্না যে নাম দেয় তার মধ্যে অনেক ব্যবধান থাকে এই মধ্যবর্তী ব্যবসায়ীদের জন্য। ফলে কৃষক ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হয়। বাংলাদেশের কৃষিপণ্যের বাজারগুলো পরস্পর বিচ্ছিন্ন। এজন্য একই পণ্য কোনো বাজারে চড়া দামে এবং কোনো বাজারে কম দামে বিক্রি হয়। এতে কম দামে বাজারে বিক্রয়কারী কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এছাড়া আমাদের কৃষকেরা কম শিক্ষিত বা অশিক্ষিত। ফলে ফটকা কারবারের জটিলতা ও বৈদেশিক বাজারের গতি প্রকৃতির সাথে তারা একেবারেই অপরিচিত। তাই তারা কৃষিপণ্যের তথ্য সম্পর্কে সম্পূর্ণ অজ্ঞ থাকে।

ঘ. কৃষিপণ্যের ন্যাযমূল্য নিশ্চিত করতে সরকার কর্তৃক গৃহীত পদক্ষেপসমূহ যথেষ্ট নয়। উদ্দীপকের ভিত্তিতে বিশ্লেষণ করা হলো:-
উদ্দীপকে সরকার বাংলাদেশের কৃষিপণ্যের বিপণন বা বাজারজাতকরণ সমস্যা সমাধানের জন্য শুধু রাস্তাটি নির্মাণ ও প্রযুক্তির মাধ্যমে যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়নের পদক্ষেপ হাতে নিয়েছে। যা কৃষকের কৃষিপণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে যথেষ্ট নয়। এছাড়া সরকার আরও যেসব ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে সেগুলো নিচে উল্লেখ করা হলো-
সরকার কৃষককে স্বল্পসুদে ঋণদানের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও দান সংস্থা গ্রামাঞ্চলে স্থাপন করতে পারে যাতে কৃষকের প্রয়োজনের সময় পর্যন্ত ঋণ সরবরাহ করা সম্ভব হ আমার সরকার কৃষিপণ্যের বাজার থেকে দালাল ও মধ্যবর্তী ফড়িয়াদের বিলোপ সাধনের জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ ও শস্য সংরক্ষণের সময় শস্যের যেন ক্ষতি না হয়, এজন্য সরকার গুদামঘর নির্মাণ এবং শস্য গুদামে মজুত রাখার বিপরীতে ঋণ দিতে পারে। এছাড়া সরকার কৃষিপণ্যের মান অনুসারে এদের শ্রেণিবিন্যাস করতে পারে। সর্বোপরি, কৃষকদেরকে লাভবান করার জন্য সরকার কৃষিপণ্যের সর্বনিম্নমূল্য ধার্য করে যাতে সেটি কার্যকর হয় সেদিকে লক্ষ রাখতে পারে।
উপরিউক্ত ব্যবস্থাদি সঠিকভাবে গৃহীত হলে কৃষিজাত পণ্যের বিপণন ব্যবস্থা উন্নত হবে এবং কৃষকেরা উৎপাদিত ফসলের ন্যায্যমূল্য লাভ করবে।

৩. বাংলাদেশের কৃষকরা সাধারণত প্রান্তিক পর্যায়ের। তাদের নিজস্ব জমি নেই বললেই চলে। রহিম উদ্দিন এ বুকমই একজন কৃষক। তবে আজিজ উদ্দিন এক্ষেত্রে ব্যতিক্রমী। তার কৃষি খামারের আয়তন অনেক বড়। তিনি পরিবারের প্রয়োজন মিটিয়ে উদ্ধৃত ফসল বাজারজাত করে প্রচুর মুনাফা অর্জন করেন।
ক. কৃষিঋণ কী?
খ. কৃষি জাতীয় উন্নয়নে সহায়তা করে ব্যাখ্যা করো।
গ. রহিম উদ্দিনের কৃষি খামার কোন ধরনের? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. চাষ পদ্ধতি, মূলধনের পরিমাণ, আয় উপার্জন এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টি- এসব দৃষ্টিকোণ হতে রহিম উদ্দিন ও আজিজ উদ্দিনের কৃষি খামারের পার্থক্য তুলে ধরো।

৩ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. কৃষিকাজ পরিচালনার জন্য কৃষকরা যে ঋণ গ্রহণ করে তাকে কৃষিঋণ বলা হয়।

খ. বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশের অর্থনীতির ভিত্তি হলো কৃষি। কৃষিজাতীয় উন্নয়নে ব্যাপকভাবে সহায়তা করে। বাংলাদেশের মোট শ্রমশক্তির ৪৫. ১% লোক কৃষি কাজে নিয়োজিত। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে GDP তে সমন্বিত কৃষি খাতের অবদান ছিল ১৪. ৭৯ ভাগ। তাছাড়া, শিল্পের প্রয়োজনীয় কাঁচামাল কৃষি হতে আসে। আবার, বাণিজ্যিক ভিত্তিতে উৎপাদন করে বিভিন্ন কৃষি সামগ্রী (মাছ, মাংস, পশুর চামড়া ইত্যাদি) রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা যায়, যা একটি দেশের জাতীয় উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তাই বলা যায়, কৃষি জাতীয় উন্নয়নে সহায়তা করে।

গ. রহিম উদ্দিনের কৃষি খামার হলো জীবননির্বাহী কৃষি খামার। উৎপাদনের উদ্দেশ্যের ভিত্তিতে কৃষি খামার দুই প্রকার। যথা- জীবননির্বাহী খামার এবং বাণিজ্যিক খামার। যে কৃষি খামারে বা জমিতে জীবন নির্বাহের জন্য চাষাবাদ করা হয়, তাকে জীবননির্বাহী খামার বলে। সাধারণত এ ধরনের খামারে ব্যবস্থাপনা অসংগঠিত ও পরিদর্শন ব্যবস্থা অদক্ষ হয়ে থাকে। তাই উদ্বৃত্ত ফসলের পরিমাণও কম হয়।
বাংলাদেশের অধিকাংশ কৃষক রহিম উদ্দিনের মতো প্রান্তিক কৃষক রহিম উদ্দিনের কৃষি কাজে তেমন উদ্বৃত থাকে না, কারণ তার কৃষি কাজের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে জীবন ব্যয় নির্বাহ করা। রহিম উদ্দিনের নিজের কোনো জমি নেই বললেই চলে। অর্থাৎ তার খামারের আয়তন ক্ষুদ্র এবং মূলধনের পরিমাণও কম। কাজেই বলা যায়, রহিম উদ্দিনের খামার হলো জীবননির্বাহী খামার।

ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত রহিম উদ্দিনের খামারটি জীবন নির্বাহী সামার এবং আজিজ উদ্দিনের খামারটি বাণিজ্যিক খামার। নিম্নে চাষ পদ্ধতি, মূলধনের পরিমাণ, আয় উপার্জন এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টির দৃষ্টিকোণ থেকে উক্ত খামারদ্বয়ের মধ্যে পার্থক্য তুলে ধরা হলো-
১. চাষ পদ্ধতি: জীবননির্বাহী খামারে সনাতন পদ্ধতিতে এবং বাণিজ্যিক খামারে আধুনিক পদ্ধতিতে চাষাবাদ করা হয়।
২. মূলধনের পরিমাণ; রহিম উদ্দিন প্রান্তিক কৃষক হওয়ায় তার চাষাবাদে কম মূলধন ব্যবহার করেন। অন্যদিকে, আজিজ উদ্দিন তুলনামূলক বেশি মূলধন ব্যবহার করে থাকেন।
৩. আয় উপার্জন: জীবননির্বাহী খামার ক্ষুদ্রায়তন হওয়ায় উৎপাদন ক্ষমতা কম। যার ফলশ্রুতিতে আয়ও অনেক কম। পক্ষান্তরে, বাণিজ্যিক খামারের মূল উদ্দেশ্যই হলো মুনাফা অর্জন। এজন্য এ ধরনের খামারে আয়ও বেশি।
৪. কর্মসংস্থান সৃষ্টি: জীবননির্বাহী খামারে মূলত পরিবারের সদস্যরাই কাজ করে থাকে। অর্থাৎ নতুন কোনো লোকের কর্মসংস্থান হয় না কিন্তু, বাণিজ্যিক খামারের আয়তন বড় হওয়ায় এখানে বহু লোকের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়।

৪. মি. ফজলে ইলাহী অর্থনীতি বিষয়ের একজন জনপ্রিয় শিক্ষক। বাংলাদেশের কৃষিতে আইসিটি (ICT)-এর গুরুত্বের ওপর তিনি শ্রেণিকক্ষে পড়াচ্ছেন। তিনি বলেন, কৃষি জমির গুণাগুণ, রোগবালাই ও তার প্রতিকার সম্বন্দ্বে জানা, প্রাকৃতিক দুর্যোগের পূর্বাভাস এবং কৃষিবিজ্ঞানী ও গবেষকদের সাথে যোগাযোগ ক্ষেত্রে ওঈঞ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এজন্য সরকার উপজেলা পর্যায়ে কৃষক তথ্য ও পরামর্শ কেন্দ্র' স্থাপন, প্রশিক্ষণ প্রদান, কৃষি ঝগঝ-সহ নানাবিধ কার্যক্রম গ্রহণ করেছে।
ক. শস্য বহুমুখীকরণ বলতে কী বোঝায় ?
খ. বাংলাদেশের কৃষকরা প্রাতিষ্ঠানিক ঋণের সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়'- ব্যাখ্যা করো।
গ. উদ্দীপকের আলোকে ICT-এর মাধ্যমে কৃষকরা কী কী সুবিধা পায়? মূল্যায়ন করো।
ঘ. কৃষিক্ষেত্রে ICT এর সুবিধাদি বাস্তবায়নে সরকারের গৃহীত উদ্যোগসমূহ কি যথেষ্ট? - বিশ্লেষণ করো।

৪ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. শস্য বহুমুখীকরণ বলতে একই জমিতে বিভিন্ন মৌসুমে কেবল একটি শস্যের পরিবর্তে ভিন্ন ভিন্ন শস্য উৎপাদন করার প্রক্রিয়াকে বোঝায়।

খ. বাংলাদেশের কৃষকরা নানাবিধ কারণে প্রাতিষ্ঠানিক ঋণের সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়। বাংলাদেশে প্রাতিষ্ঠানিক কৃষি ঋণদানকারী সংস্থার সংখ্যা কম। তাছাড়া, এসব ঋণদানকারী সংস্থার ঋণ প্রদানের ক্ষমতাও কম। আবার, এ পদ্ধতিও জটিল, শর্তসাপেক্ষ ও সময়সাপেক্ষ বলে অশিক্ষিত বা স্বল্প শিক্ষিত কৃষকের পক্ষে তা অনুসরণ করা কঠিন হয়ে পড়ে। তাই, দরিদ্র ও অশিক্ষিত- কৃষকরা প্রাতিষ্ঠানিক ঋণের সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়।

গ. বর্তমানে তথ্যপ্রযুক্তির সুফল বাংলাদেশের কৃষি খাতেও পড়েছে। ফলে ICT-এর বিভিন্ন সুবিধাসমূহ কৃষকরা পাচ্ছে।
আমরা জানি, কম্পিউটার ও টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থার মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ, একত্রীকরণ, সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াকরণ এবং বিনিময় বা বিতরণই হলো তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি (ICT)। ICT এর মাধ্যমে বাংলাদেশের কৃষকরা নানা ধরনের সুবিধা পেয়ে থাকে। যেমন-
১. আবহাওয়ার পূর্বাভাস।
২. কৃষি জমির গুণাগুণ যাচাই এবং সেই অনুসারে ফসল চাষের পরামর্শ।
৩. পশু-পাখির বিভিন্ন রোগবালাই ও তার প্রতিকার সম্পর্কে জ্ঞান লাভ।
৪. শস্য পরিচর্যা পদ্ধতি, শসা ও উদ্ভিদের রোগ সম্পর্কে জানা এবং যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
৫. কৃষি বিজ্ঞানী ও গবেষকের সাথে যোগাযোগ রাখা ও বিভিন্ন পরামর্শ গ্রহণ করা ইত্যাদি।

ঘ. ICT-কে কৃষকদের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করেছে। নিচে সরকারের গৃহীত উদ্যোগসমূহ মূল্যায়ন করা হলো-
মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য প্রতিরোধে সরকারের বিভিন্ন কৃষি উপকরণের নির্ধারিত দামের তথ্য ICT-এর মাধ্যমে কৃষকদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়। এতে কৃষকরা ন্যায্যমূল্যে কৃষি উপকরণ সংগ্রহ করতে পারে।
কৃষকদের বিভিন্ন সেবা প্রদানের লক্ষ্যে সরকার উপজেলা পর্যায়ে 'কৃষক তথ্য ও পরামর্শ কেন্দ্র স্থাপন করেছে। এতে কৃষকরা প্রয়োজন অনুযায়ী বিভিন্ন সেবা পেয়ে থাকে। তাছাড়া সরকার দেশের দক্ষিণাঞ্চলের জন্য লবণাক্ততাসহিষ্ণু জাতের অন্য শস্য উদ্ভাবনের মাধ্যমে
কৃষি উৎপাদন বাড়ানোর কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। ICT এর ব্যবহার করে কৃষি SMS, অনলাইন কৃষি সার্ভিস ইত্যাদি ব্যবস্থা করা হয়েছে। এতে বাংলাদেশের কৃষকরা কৃষিকালের প্রতি আগ্রহী হচ্ছে এবং এর ফলে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে। কাজেই উপযুক্ত বিশ্লেষণের প্রেক্ষিতে বলা যায়, কৃষিক্ষেত্রে ICT এর সুবিধাদি বাস্তবায়নে সরকারের গৃহীত উদ্যোগসমূহ যথেষ্ট।

৫. রফিকুল ইসলাম একজন গরিব কৃষক। তিনি রুবেলের নিকট থেকে ঋণ নিয়ে তার জমিতে টমেটো চাষ করেন। টমেটোর ফলন খুব ভালো হয়েছে। প্রতি কেজি টমেটো উৎপাদন করতে তার খরচ হয় ১৫ টাকা। কিন্তু রুবেলের নিকট তিনি টমেটো প্রতি কেজি ১৬ টাকা দরে বিক্রি করতে বাধ্য হন। রুবেল সে টমেটো বাজারে প্রতি কেজি ২৫ টাকা ধরে বিক্রি করেন। রফিকুল ইসলামের মতো কৃষকদের অবস্থার উন্নয়নে সরকার গ্রামাঞ্চলে ক্রয়কেন্দ্র ও কোল্ড স্টোরেজ নির্মাণ এবং কৃষকদের বিনা সুদে ঋণদানের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।
ক. বাংলাদেশে কৃষির উপখাতসমূহ কী?
খ. বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি কৃষির ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে'- ব্যাখ্যা করো।
গ. রফিকুল ইসলামের সমস্যার প্রকৃতি বিশ্লেষণ করো।
ঘ. রফিকুল ইসলামের মতো কৃষকদের অবস্থার উন্নয়নের গৃহীত সরকারি পদক্ষেপসমূহের যথার্থতা বিশ্লেষণ করো।

৫ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. বাংলাদেশে কৃষির উপখাতসমূহ হলো শস্য ও শাকসবজি, পশু সম্পদ, বনজ সম্পদ ও মৎস্য সম্পদ।

খ. পরিবেশ দূষণের ফল হলো বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি ও জলবায়ু পরিবর্তন। বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির দরুন সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়ছে কৃষিক্ষেত্রের ওপর। জলবায়ুর পরিবর্তন মানবজীবন এবং সমগ্র প্রাকৃতিক পরিবেশের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। কৃষি উৎপাদনের ওপর তার প্রভাব সবচেয়ে মারাস্তেক আকার ধারণ করেছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ফসল উৎপাদন হ্রাস, বন্যার ঝুঁকি বৃদ্ধি, বৃক্ষরাজি, মৎস্য উৎপাদন ও প্রজননক্ষমতা ধ্বংস হচ্ছে। ফলে সামগ্রিকভাবে কৃষি উৎপাদন তথা খাদ্য উৎপাদন হ্রাস পাচ্ছে। খাদ্য উৎপাদন হ্রাস পাওয়ায় বাংলাদেশের মতো দরিদ্র ও উন্নয়নশীল দেশগুলোতে তৈরি হচ্ছে খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা।

গ. রফিকুল ইসলামের সমস্যাটি হলো কৃষিপণ্যের বিপণনের সমস্যা। নিচে এই সমস্যার প্রকৃতি বিশ্লেষণ করা হলো। প্রথমত, টমেটো পচনশীল পণ্য হওয়ায় তা সংরক্ষণের সমস্যা রয়েছে।
রফিকুল ইসলাম যখন টমেটো সংগ্রহ করেন তখন তার দাম কম থাকে। তাই ওই সময় টমেটো বিক্রি না করে যদি কোল্ড স্টোরেজে সংরক্ষণ করা যেত, তবে যখন টমেটোর দাম বাড়ত তখন বিক্রি করতে পারলে ন্যায্যমূল্য পাওয়া সম্ভব হতো। কিন্তু বাংলাদেশে পচনশীল কৃষিপণ্য সংরক্ষণের তেমন কোনো কোল্ড স্টোরেজ তৈরি হয়নি। তাছাড়া এ ধরনের পচনশীল পণ্য সাধারণ মানুষের পক্ষে সংরক্ষণ করাও সম্ভব নয়।
দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশে কৃষিপণ্যের বাজারে কৃষকের অবস্থান খুবই দুর্বল। এদেশের কৃষিপণ্যের প্রাথমিক বাজারে পণ্য বিক্রেতা কৃষকের সংখ্যা অগণিত। অন্যদিকে, ক্রেতা হিসেবে আছে অল্পসংখ্যক ফড়িয়া ও বেপারি। তদুপরি, নগদ অর্থের তাঁর প্রয়োজনে কৃষক অবিলম্বে পণ্যসামগ্রী বিক্রি করতে বাধ্য হয়। পরিণতিতে রফিকুল ইসলামের মতো গরিব কৃষক কখনো তার পণ্যের ন্যায্যমূল্য পায় না।
তৃতীয়ত, আমাদের দেশে কৃষিপণ্যের বাজারে কৃষক তার পণ্য প্রকৃত ক্রেতাদের নিকট বিক্রি করতে পারে না। প্রকৃত ক্রেতা ও কৃষক বা উৎপাদনকারীর মাঝে একদল দালাল শ্রেণির লোক থাকে। অর্থাৎ বাংলাদেশে কৃষিপণ্য খামার থেকে ভোক্তার হাতে পৌঁছানো পর্যন্ত মধ্যবর্তী ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম্য রয়েছে। ফড়িয়া, দালাল, মজুতদার, বেপারি, মহাজন ইত্যাদি মধ্যস্বত্বভোগীরা কৃষকদের আর্থিক সংকটের সুযোগে হাতিয়ে নেয় মোটা অঙ্কের মুনাফা। মুনাফার প্রায় সবটুকুই এ সকল দালালের হাতে চলে যায়। ফলে কৃষক তার পণ্যের মূল্যের একটি অংশ পায় মাত্র। আবার অনেক সময় এরা কৃষকদেরকে দ্রব্যের চাহিদা ও যোগান সম্পর্কে ভুল তথ্য দিয়ে কৃষকদেরকে তাদের উৎপাদিত ফসলের ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত করে।

ঘ. কৃষিপণ্য বিপণনে রাষ্ট্রীয় অংশগ্রহণ খুবই জরুরি। কেননা, বাংলাদেশে কৃষিপণ্যের নিম্নমান, কৃষকদের দারিদ্র্য&য, বিপণন ব্যবস্থায় মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য, অনুন্নত পরিবহন ব্যবস্থা, পণ্য গুদামজাতকরণ ও সংরক্ষণের অভাব ইত্যাদি সমস্যা কৃষিপণ্যের সুষ্ঠু বিপণন করার ক্ষেত্রে অন্তরায় হয়ে আছে। কৃষকদের ব্যক্তিগত উদ্যোগে তার সমাধান সম্ভব নয়। একমাত্র সরকারের সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধমেই কৃষিপণ্যের বিদ্যমান সমস্যাগুলো দূর করে কৃষির দ্রুত উন্নয়নের পথ প্রশস্ত করা সম্ভব। নিচে বাংলাদেশে কৃষিপণ্য বিপণনের সরকারি পদক্ষেপসমূহ মূল্যায়ন করা হলো-
বাফার স্টক: বাফার স্টকের মাধ্যমে কৃষিপণ্যের দামের ঊর্ধ্বগতি এবং নিম্নগতি রোধ করা যায়। যখন কৃষিতে বাম্পার ফলন হয় তখন সরকার কৃষিপণ্য জয় করে তা সংরক্ষণ করলে কৃষিপণ্যের দামের নিম্নগতি রোধ হয়। আবার, যখন কৃষি উৎপাদন কম হয় তখন বাফার স্টকের পণ্য বাজারে ছাড়লে পণ্যের দামের ঊর্ধ্বগতি রোধ পায়। এভাবে সরকার রফিকুল ইসলামের মতো কৃষকদের অবস্থার উন্নয়নে সহায়তা করে থাকে।
গুদামঘর নির্মাণ: কৃষিপণ্য সংরক্ষণের জন্য গ্রামে গুদামঘর থাকা দরকার। কিন্তু গুদামঘর নির্মাণ করা কৃষকদের জন্য কঠিন। তাই সরকারি উদ্যোগে গুদামঘর নির্মাণ করা হয়েছে। যদিও তা প্রয়োজনের তুলনায় পর্যাপ্ত নয়। কোল্ড স্টোরেজ নির্মাণ: কিছু কৃষিশস্য সহজেই পচে যায় বা নষ্ট হয়ে যায়। যেমন- টমেটো, আলু, পেঁয়াজ, কাঁচা মরিচ, পান, আদা ইত্যাদি। সরকারি উদ্যোগে এসব ফসল সংরক্ষণ করার জন্য সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। ঋণদান: কৃষকদের দারিদ্র্যের কারণে তাদের নিজস্ব মূলধন নেই। তাই কৃষকরা ঋণ করে বা বাকিতে বীজ, সার, সেচ, কীটনাশক ইত্যাদি ক্রয় করে থাকে। কৃষকরা মূলধনের অভাবের কারণে সঠিক সময়ে ও প্রয়োজনমাফিক ফসল উৎপাদন করতে পারে না। তাই তারা গ্রাম্য মহাজনদের কাছে চড়া সুদে ঋণ গ্রহণ করতে বাধ্য হয়। এসব কৃষকের জন্য সরকারি ঋণের পরিমাণ বৃদ্ধি ও পদ্ধতি সহজ করা হয়েছে। যাতে স্বল্প সময়ে, স্বল্প সুদে সহজ শর্তে কৃষকরা ঋণ পেতে পারে। উপর্যুক্ত পর্যলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায়, কৃষকদের অবস্থার উন্নয়নে সরকারের গৃহীত পদক্ষেপসমূহ যথেষ্ট।

৬. জনাব দুলাল তার বাবার আমল থেকেই কৃষিকাজে জড়িত। পুরনো পদ্ধতিতে চাষ করেন বলে উৎপাদন কম হয়। তার কৃষিজাতগুলো ক্ষুদ্র ও বিক্ষিপ্ত, ফলে আধুনিক পদ্ধতিতে চাষাবাদ করা সম্ভব নয়। তাছাড়াও রয়েছে উপকরণাদির অভাব ও শস্য বহুমুখীকরণের অভাব। জনাব দুলাল এসব সমস্যা সমাধানের জন্য সরকারি সাহায্য কামনা করেন।
ক. শস্য বহুমুখীকরণ কী?
ঘ. শস্য বহুমুখীকরণের ফলে কি খাদ্য ঘাটতি দেখা দিতে পারে? ব্যাখ্যা করো।
গ. জনাব দুলাল কৃষিতে উন্নতি করতে পারছেন না কেন? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. আধুনিক প্রযুক্তিতে চাষাবাদ করা দুলাল সাহেবের পক্ষে সম্ভব নিয় উদ্দীপকের আলোকে ব্যাখ্যা করো।

৬ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. একই জমি বা কৃষিজোতে বিভিন্ন মৌসুমে এক ফসলের পরিবর্তে ভিন্ন ভিন্ন ফসল উৎপাদন করার প্রক্রিয়াকে শস্য বহুমুখীকরণ বলে।

খ. কৃষিতে শস্য বহুমুখীকরণের ফলে উৎপাদন বৃদ্ধি পায়; যা জনবহুল দেশে ব্যাপক খাদ্য চাহিদা পূরণে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
শস্য বহুমুখীকরণের মধ্য দিয়ে বিগত দুই দশক যাবৎ বাংলাদেশের কৃষিক্ষেত্রে ঘটেছে নীরব বিপ্লব। অর্থাৎ একই জমিতে বার বার একই ফসল চাষ না করে ভিন্ন ভিন্ন শস্য উৎপাদন করলে জমির উর্বরতা এবং ফসল উৎপাদন দুটিই বৃদ্ধি পায়। এরূপ চাষাবাদ করাই হলো শস্য বহুমুখীকরণ। সুতরাং বলা যায়, শস্য বহুমুখীকরণের মাধ্যমে খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি করে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করা সম্ভব।

গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত জনাব দুলাল সনাতন পদ্ধতির চাষাবাদ, ক্ষুদ্র কৃষিজোত, কৃষি উপকরণ এবং শস্য বহুমুখীকরণের অভাব প্রভৃতি সমস্যার কারণে কৃষিতে উন্নতি করতে পারছেন না।
বাংলাদেশের অনেক কৃষক চাষাবাদের ক্ষেত্রে এখনো সনাতন কৃষিপদ্ধতি অনুসরণ করে। আধুনিক বৈজ্ঞানিক যুগেও আমাদের কৃষকরা লাল ও গোয়ালের সাহায্যে চাষাবাদ করে। আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতির ব্যবহার এখনো খুবই সীমিত। তদুপরি, আমাদের দেশের গরিব কৃষকদের পক্ষে এসব ব্যয়বহুল কৃষি যন্ত্রপাতি সংগ্রহ করাও কঠিন। আবার বাংলাদেশের অধিকাংশ কৃষিজমি অতি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র খন্ডে বিভক্ত। কোনো কোনো জমি এত ছোট যে, এসব জমিতে আধুনিক যান্ত্রিক পদ্ধতিতে চাষাবাদ করা যায় না। ভালো ফসল ফলাতে হলে ভালো সার ও উৎকৃষ্ট বীজের প্রয়োজন হয়। আর যা কি না প্রয়োজনের তুলনায় খুবই সামান্য। তাছাড়া শস্য বহুমুখীকরণের মাধ্যমে ফসল উৎপাদন বহুগুণে বাড়ানো সম্ভব। আমাদের দেশের অধিকাংশ কৃষকেরই শস্য বহুমুখীকরণ সম্পর্কে ধারণা নেই।
উদ্দীপকে উল্লিখিত জনাব দুলালও বাংলাদেশের কৃষিতে বিদ্যমান সমস্যাগুলোর সম্মুখীন হচ্ছেন। কারণ, তিনি উৎপাদন ক্ষেত্রে সনাতন চাষ পদ্ধতি ব্যবহার করেন। আবার, তার কৃষিজোতগুলো ক্ষুদ্র ও বিক্ষিপ্ত বলে আধুনিক পদ্ধতিতে চাষাবাদ করতে পারছেন না। এছাড়াও কৃষি উপকরণের অভাব এবং শস্য বহুমুখীকরণ সম্পর্কে জ্ঞান না থাকায় তার উৎপাদন বাড়ছে না। তাই তিনি কৃষিতে উন্নতি করতে পারছেন না।

ঘ. আধুনিক প্রযুক্তিতে চাষাবাদ করা জনাব দুলালের পক্ষে সম্ভব নয়।
কারণ তার কৃষিজোতগুলো ক্ষুদ্র ও বিক্ষিপ্ত। কৃষক যে আয়তনের জমির ওপর কৃষিকাজ পরিচালনা করে তাকে কৃষিজাত বলে। এরকম জোত ক্ষুদ্র, মাঝারি কিংবা বড় হতে পারে। আবার, কৃষকের কৃষিজোতগুলো একত্রে না থেকে মাঠের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকতে পারে। বাংলাদেশের বেশিরভাগ কৃষকেরই কৃষিলোতগুলো উপবিভক্ত ও বিচ্ছিন্নভাবে অবস্থিত।
বাংলাদেশের মোট কৃষিজোতের শতকরা প্রায় ৮৮. ৪৯ ভাগই হলো ক্ষুদ্রায়তনের জোত। জোতগুলো অতি ক্ষুদ্রায়তনের হয় বলে সেখানে প্রয়োজনমাফিক বিনিয়োগ করা এবং আধুনিক যন্ত্রপাতির প্রয়োগ করা সম্ভব হয় না। উদ্দীপকের জনাব দুলাল বহুদিন ধরে কৃষিকালের সাথে জড়িত। তিনি পুরাতন চাষ পদ্ধতিতে চাষ করেন বলে উৎপাদনও কম হয়। তাছাড়া তার কৃষি জোতগুলো ক্ষুদ্র ও বিক্ষিপ্ত। তাই সেখানে আধুনিক প্রযুক্তিতে চাষাবাদ করা সম্ভব হয় না।
বাংলাদেশে ক্ষুদ্রায়তনের কৃষিজোতের আধিক্য দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ প্রেক্ষিতে বলা যায়, এখানকার বেশিরভাগ কৃষিজোতই পরিমিত আয়তনের নয়। এরূপ লোতে শ্রম ও মূলধন পূর্ণভাবে ব্যবহার করা যায় না। এখানে কৃষিকাজ অদক্ষভাবে পরিচালনা করা হয় বলে উদ্দীপকের দুলালের মত কৃষকরা প্রাপ্ত ফসল দ্বারা সন্তোষজনক জীবন নির্বাহ করতে পারে না এবং কৃষিকাজের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যয় মেটাতেও সক্ষম হয় না।

৭. কৃষকের সন্তান বাবুল। স্থানীয় কলেজ থেকে বিএ পাস করেছেন। চাকরি না খুঁজে কৃষিকাজেই নিয়োজিত হলেন। বাবার কাছ থেকে এক একর জমি নিয়ে তাতে মাল্টা চাষ করলেন। এজন্য তিনি ব্যাংক থেকে ঋণ নিলেন। তাছাড়া কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শ নিলেন। ফলন খুব ভালো হলো। কিন্তু অধিক পরিবহন ব্যয়, দালাল ফড়িয়া ইত্যাদি সমস্যার কারণে মাল্টার উপযুক্ত মূল্য পেলেন না।
ক. কৃষিপণ্যের বিপণন কী?
খ. কৃষি পরিবেশের ওপর নির্ভরশীল ব্যাখ্যা করো।
গ. বাবুল মাল্টা বিক্রি করতে গিয়ে কী ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হন? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. কৃষিপণ্য বিপণনের সমস্যা সমাধানে সরকারের করণীয় উদ্দীপকের আলোকে ব্যাখ্যা করো।

৭ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. কৃষিপণ্যের বিপণন বলতে কৃষিপণ্যের ক্রয়-বিক্রয় বা জারজাতকরণ ব্যবস্থাকে বোঝায়। কৃষি প্রজনন সম্বন্ধীয় কাজ হওয়ায় তা প্রকৃতির ওপর অনেকাংশে নির্ভরশীল।

খ. পর্যাপ্ত সেচ ব্যবস্থার অভাবে আমাদের দেশের কৃষকরা চাষাবাদের জন্য বৃষ্টির ওপর নির্ভর করে থাকে। মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে যদি সময়মতো বৃষ্টিপাত হয় তাহলে ভালো ফসল হয়, কিন্তু যদি সময়মতো বৃষ্টিপাত না হয় তাহলে ভালো ফসল হয় না। ফলে দেখা যায়, বাংলাদেশের কৃষিব্যবস্থা এখনো অনেকটাই প্রকৃতির ওপর নির্ভরশীল।

গ. বাবুল মাল্টা বিক্রি করতে গিয়ে কৃষিপণ্যের বিপণন সমস্যার সম্মুখীন হন।
কৃষিপণ্যের বিপণন বলতে কৃষিপণ্য সংগ্রহ, গুদামজাতকরণ নমুনাকরণ, পরিবহন, ঝুঁকি গ্রহণ, মানোন্নয়ন প্রভৃতি কার্যাবলিকে বোঝায়। বাংলাদেশের কৃষিজাত পণ্যের বিপণন ব্যবস্থা খুব একটা উন্নত নয়। ফলে কৃষক তাদের উৎপাদিত দ্রব্য তথা ফসল বিক্রি করে ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তি হতে বঞ্চিত হয়। কৃষিজাত পণ্য বিপণনের একটি প্রধান সমস্যা হলো অনুন্নত পরিবহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থা। যোগাযোগ ব্যবস্থার অসুবিধার জন্য কৃষকরা তাদের উৎপাদিত পণ্য শহরে এনে বেশি দামে বিক্রি করতে পারে না। বাড়িতে বা গ্রামের হাট-বাজারে কম দামে মধ্যস্বত্বভোগীদের কাছে বিক্রি করে। ফলে তারা কৃষিপণ্যের উপযুক্ত দাম পায় না। আমাদের দেশে কৃষিপণ্য বাজারজাতকরণ প্রক্রিয়ায় দালাল, ফড়িয়া, বেপারি, মজুতদার, আড়তদার ইত্যাদি বহু ধরনের মধ্যবর্তী ব্যবসায়ী শ্রেণির অসিস্তেত্ব রয়েছে। কৃষিপণ্যের বাজারে কৃষক তার পণ্য প্রকৃত ক্রেতাদের নিকট বিক্রি করতে পারে না। কারণ, প্রকৃত ক্রেতা ও কৃষকের মাঝে থাকে এই মধ্যবর্তী ব্যবসায়ীরা। মুনাফার প্রায় সবটুকুই এই সমস্ত মধ্যবর্তী ব্যবসায়ীদের হাতে চলে যায়। ফলে কৃষক তার পণ্যের মূল্যের একটি অংশ পায় মাত্র।

ঘ. উদ্দীপকের বাবুল ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে মাল্টা চাষ শুরু করলেন। তার মাল্টার ফলনও বেশ ভালো হয়েছে। কিন্তু তিনি অধিক পরিবহন ব্যয়ের জন্য মাল্টা অন্যত্র নিয়ে বিক্রি করতে পারেন না। এজন্য তাকে দালাল- ফড়িয়াদের কাছে কম দামে মাল্টা বিক্রি করতে হয়। কাজেই বলা যায়, কৃষিপণ্যের বিপণন সমস্যার কারণেই বাবুল মাল্টার ন্যায্য দাম পান না।
বাংলাদেশের কৃষিপণ্যের বিপণন ব্যবস্থা নানা ধরনের সমস্যায় আক্রান্ত। সেগুলো কৃষকদের পক্ষে ব্যক্তিগত উদ্যোগে সমাধান করা সম্ভব নয়। যা সরকারের হস্তক্ষেপেই সম্ভব। কৃষিপণ্য বিপণনের সমস্যা সমাধানে সরকারের করণীয় দিকগুলো নিচে উল্লেখ করা হলো-
১. বাংলাদেশে কৃষিপণ্যের বিপণন ব্যবস্থার অন্যতম প্রধান ত্রুটি হলো- অনুন্নত পরিবহন ব্যবস্থা। পণ্যের সুষ্ঠু বিপণনের জন্য তাই পরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়ন অপরিহার্য। এক্ষেত্রে বিপুল মূলধন বিনিয়োগ করতে হয় এবং তা থেকে সরাসরি কোনো মুনাফা অর্জন করা যায় না বলে এ কাজে ব্যক্তিগত উদ্যোগ তেমন দেখা যায় না। একমাত্র সরকারেরই সক্রিয় ও অব্যাহত অংশগ্রহণের ফলে তার উন্নয়ন সম্ভব হয়।

২. কৃষক যাতে তার উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য পায় সেজন্য বাজারজাতকরণের নিমিত্তে সারাদেশে সরকারি উদ্যোগে কৃষক বিপণন দল', 'কৃষক ক্লাব' গঠনের পাশাপাশি কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্র, জেলা-উপজেলা পর্যায়ে কৃষি বাজার উন্নয়ন এবং লিংকেজ তৈরির জন্য ঢাকাতে একটি সেন্ট্রাল মার্কেট নির্মাণকাজ (গাবতলীতে) সম্পন্ন হয়েছে।

৩. কৃষিপণ্যের বাজার থেকে দালাল ও মধ্যবর্তী' ফড়িয়াদের বিলোপ সাধন করতে হবে। উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ ও সমবায় সমিতি স্থাপনের মাধ্যমে এদের কার্যকলাপ বন্ধ করা সম্ভব।

৪. বিভিন্ন বাজারে কৃষকদের নিকট থেকে যাতে আড়তদারি, পাল্লাদারি টোল, চাঁদা প্রভৃতির অজুহাতে অর্থ আদায় করতে না পারে, সেজন্য আমাদের গ্রামাঞ্চলের বাজারগুলো সুষ্ঠুভাবে নিয়ন্ত্রণ করা দরকার।

৫. উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে কৃষি উপকরণে ভর্তুকি বৃদ্ধি, কৃষি উপকরণ সহজলভ্যকরণ, কৃষি ঋণের আওতা বৃদ্ধি এবং প্রাপ্তি সহজীকরণ, সেচ সুবিধার সম্প্রসারণ এবং ফসল সংরক্ষণের জন্য পর্যাপ্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
সুতরাং দেখা যায়, বাংলাদেশের কৃষিপণ্যের বিপণন সমস্যাগুলো সমাধান করার ক্ষেত্রে সরকার বা রাষ্ট্র গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।

৮. সাদিপুর নিবাসী করিম মিয়া পৈতৃকসূত্রে এক বিঘা কৃষি জমির মালিক। বিগত বছরগুলোতে টমেটোর দাম ভালো থাকায় এই বছর গ্রামের মহাজনের নিকট হতে চড়াসুদে ঋণ নিয়ে সবটুকু জমিতে টমেটো আবাদ করেন। কিন্তু অনুন্নত যাতায়াত ও যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে উৎপাদিত টমেটো সময়মতো শহরের বাজারে নিতে পারেননি। টমেটো পচনশীল দ্রব্য হওয়ায় বাধ্য হয়ে কম নামে স্থানীয় বাজারে বিক্রি করে দিয়েছেন। করিম মিয়া তার ঋণের টাকা পরিশোধ করতে পারছেন না।
ক. কৃষি খামার কী?
খ. কৃষি কেন পরিবেশের ওপর নির্ভরশীল?
গ. উদ্দীপকে বর্ণিত করিম মিয়ার উৎপাদিত পণ্য বাজারজাতকরণের সমস্যাসমূহ ব্যাখ্যা করো।
ঘ. করিম মিয়ার উৎপাদিত দ্রব্যটি বাজারজাতকরণ ও ন্যায্যমূল্য নিশ্চিতকরণে সরকারের ভূমিকা অনস্বীকার্য- আলোচনা করো।

৮ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. একজন কৃষক ফসল ফলানোর জন্য যে জমি ব্যবহার করে থাকে তাকে কৃষি খামার বলে।

খ. বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ হওয়া সত্ত্বেও সার্বিকভাবে কৃষিকাজ ত্রুটিপূর্ণ ও প্রকৃতিনির্ভর। বাংলাদেশের কৃষির জন্য একটি মৌলিক সমস্যা হচ্ছে প্রাকৃতিক পরিবেশের ওপর নির্ভরশীলতা। আমাদের দেশের সেচব্যবস্থা অনুন্নত বিধায় মৌসুমি বৃষ্টিপাতের ওপর কৃষি খুব বেশি নির্ভরশীল। সময়মতো ও পরিমিত বৃষ্টির অভাবে প্রায়ই কৃষি উৎপাদন ব্যাহত হয়।

গ. যেকোনো কৃষিদ্রব্য উৎপাদনে সময়মতো পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি সেচের প্রয়োজন হয়। কিন্তু বাংলাদেশে এখনো ব্যাপকভাবে বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে সেচব্যবস্থার প্রচলন হয়নি। ফলে কৃষি মূলত প্রাকৃতিক পরিবেশের বৃষ্টিপাতের ওপর নির্ভরশীল।
করিম মিয়ার উৎপাদিত পণ্যটি হলো কৃষিজাত দ্রব্য। বাংলাদেশের কৃষিজাত পণ্যের বিপণন বা বাজারজাতকরণের ক্ষেত্রে বিভিন্ন সমস্যা বিদ্যমান। নিচে করিম মিয়ার উৎপাদিত পণ্য বাজারজাতকরণের সমস্যাসমূহ ব্যাখ্যা করা হলো-
কৃষকের অর্থনৈতিক অবস্থা: করিম মিয়া একজন দরিদ্র কৃষক। করিম মিয়ার মতো কৃষকরা ফসল কাটার সাথে সাথেই কম মূল্যে বিক্রয় করে অথবা ফসল জমিতে রেখেই বিক্রয় করে ফেলে। অর্থাৎ কৃষকরা তাদের দারিদ্র্যের কারণে ফসলের দাম বৃদ্ধি পর্যন্ত অপেক্ষা করতে পারে না। অনুন্নত পরিবহন ব্যবস্থা: আমাদের দেশে পরিবহন ব্যবস্থাও উন্নত নয়। প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে রাস্তাঘাটের অবস্থা খুবই খারাপ। পরিবহন ব্যবস্থার অসুবিধার কারণে করিম মিয়ার মতো কৃষকরা পণ্যসামগ্রী নিয়ে দূর-দূরান্তের বাজারে যেতে পারে না। ফলে, স্থানীয় বাজারেই স্বল্প মূল্যে পণ্য বিক্রি করতে হয়।
মধ্যস্বত্বভোগীদের উপদ্ধিতি: কৃষিপণ্য খামার থেকে ভোক্তার হাতে পৌঁছানো পর্যন্ত মধ্যবর্তী ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম্য রয়েছে। ফড়িয়া, দালাল, মজুতদার, বেপারি, মহাজন ইত্যাদি মধ্যস্বত্বভোগীরা কৃষকদের আর্থিক সংকটের সুযোগে হাতিয়ে নেয় মোটা অঙ্কের মুনাফা। এরা অনেক সময় কৃষকদেরকে দ্রব্যের চাহিদা ও যোগান সম্পর্কে ভুল তথ্য দিয়ে কৃষকদেরকে তাদের উৎপাদিত ফসলের ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত করে। গুদামজাতকরণ ও সংরক্ষণের অভাব: বাংলাদেশের কৃষকরা উপযুক্ত গুদাম এর অভাবে ভবিষ্যতে বেশি দাম পাওয়ার জন্য পণ্য সংরক্ষণ করতে পারে না। গুদামের অভাবে প্রায় সব কৃষকই শস্য কাটার সময় পণ্য বিক্রয়ের জন্য অত্যন্ত ব্যস্ত হয়ে পড়ে। ফলে কৃষিজাত পূন্যের দাম অনেক কমে যায়।

ঘ. উদ্দীপকের করিম মিয়া ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে টমেটো চাষ শুরু করলেন। তার মাল্টার ফলনও বেশ ভালো হয়েছে। কিন্তু তিনি অধিক পরিবহন ব্যয়ের জন্য টমেটো অন্যত্র নিয়ে বিক্রি করতে পারেন না। এজন্য তাকে দালাল- ফড়িয়াদের কাছে কম দামে টমেটো বিক্রি করতে হয়। কাজেই বলা যায়, কৃষিপণ্যের বিপণন সমস্যার কারণেই করিম মিয়া টমেটো ন্যায্য দাম পান না।
বাংলাদেশের কৃষিপণ্যের বিপণন ব্যবস্থা নানা ধরনের সমস্যায় আক্রান্ত। সেগুলো কৃষকদের পক্ষে ব্যক্তিগত উদ্যোগে সমাধান করা সম্ভব নয়। যা সরকারের হস্তক্ষেপেই সম্ভব। কৃষিপণ্য বিপণনের সমস্যা সমাধানে সরকারের করণীয় দিকগুলো নিচে উল্লেখ করা হলো-
১. বাংলাদেশে কৃষিপণ্যের বিপণন ব্যবস্থার অন্যতম প্রধান ত্রুটি হলো- অনুন্নত পরিবহন ব্যবস্থা। পণ্যের সুষ্ঠু বিপণনের জন্য তাই পরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়ন অপরিহার্য। এক্ষেত্রে বিপুল মূলধন বিনিয়োগ করতে হয় এবং তা থেকে সরাসরি কোনো মুনাফা অর্জন করা যায় না বলে এ কাজে ব্যক্তিগত উদ্যোগ তেমন দেখা যায় না। একমাত্র সরকারেরই সক্রিয় ও অব্যাহত অংশগ্রহণের ফলে তার উন্নয়ন সম্ভব হয়।

২. কৃষক যাতে তার উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য পায় সেজন্য বাজারজাতকরণের নিমিত্তে সারাদেশে সরকারি উদ্যোগে কৃষক বিপণন দল', 'কৃষক ক্লাব' গঠনের পাশাপাশি কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্র, জেলা-উপজেলা পর্যায়ে কৃষি বাজার উন্নয়ন এবং লিংকেজ তৈরির জন্য ঢাকাতে একটি সেন্ট্রাল মার্কেট নির্মাণকাজ (গাবতলীতে) সম্পন্ন হয়েছে।

৩. কৃষিপণ্যের বাজার থেকে দালাল ও মধ্যবর্তী' ফড়িয়াদের বিলোপ সাধন করতে হবে। উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ ও সমবায় সমিতি স্থাপনের মাধ্যমে এদের কার্যকলাপ বন্ধ করা সম্ভব।

৪. বিভিন্ন বাজারে কৃষকদের নিকট থেকে যাতে আড়তদারি, পাল্লাদারি টোল, চাঁদা প্রভৃতির অজুহাতে অর্থ আদায় করতে না পারে, সেজন্য আমাদের গ্রামাঞ্চলের বাজারগুলো সুষ্ঠুভাবে নিয়ন্ত্রণ করা দরকার।

৫. উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে কৃষি উপকরণে ভর্তুকি বৃদ্ধি, কৃষি উপকরণ সহজলভ্যকরণ, কৃষি ঋণের আওতা বৃদ্ধি এবং প্রাপ্তি সহজীকরণ, সেচ সুবিধার সম্প্রসারণ এবং ফসল সংরক্ষণের জন্য পর্যাপ্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
সুতরাং দেখা যায়, বাংলাদেশের কৃষিপণ্যের বিপণন সমস্যাগুলো সমাধান করার ক্ষেত্রে সরকার বা রাষ্ট্র গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।

৯. 'X' ও 'Y' দু'টি দেশ। কৃষির বিভিন্ন ক্ষেত্রে "X" দেশটির আবহাওয়া অনুকূল হলেও 'Y' দেশটি সমুদ্র উপকূলবর্তী হওয়ায় বছরের বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের মুখোমুখি হয়। নিচের ছকে ২০১৫-২০১৬ অর্থবছরে উভয় দেশের জিডিপিতে কৃষির বিভিন্ন উপ- খাতের অবদান তুলে ধরা হলো-

কৃষি উপ-খাত

X দেশ (%)

Y দেশ (%)

শস্য ও শাকসবজি

১২.০০

৮.৫০

পশু সম্পদ

৮.০০

৪.০০

বনজ সম্পদ

৪.০০

২.৫০

মৎস্য সম্পদ

৫.০০

৩.০০

ক. কৃষিজাত কী?
খ. একই জমিতে পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন ফসলের উৎপাদন কি কল্যাণকর?
গ. উদ্দীপকের আলোকে 'X' দেশের ক্ষেত্রে জিডিপিতে কৃষি উপ-খাতসমূহের অবদান লেখচিত্রের মাধ্যমে দেখাও।
ঘ. বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি "Y" দেশের জিডিপিতে কৃষি উপখাতগুলোতে উল্লিখিত অবদানের ক্ষেত্রে কীরূপ প্রভাব বিস্তার করতে পারে বলে তুমি মনে করো?

৯ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. কৃষক যে আয়তনের জমির ওপর কৃষিকাজ পরিচালনা করে তাকে কৃষিজাত বলে।

খ. একই জমিতে পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন শস্য চাষ করলে একটি দেশের বিভিন্ন ধরনের খাদ্যশস্যের চাহিদা পূরণ হয়। ধান, গম, ভুট্টা, আলু, সজি ইত্যাদি পর্যায়ক্রমে উৎপাদন করলে সামগ্রিকভাবে খাদ্যোৎপাদন বাড়ে। বিভিন্ন শস্য চাষের ফলে সারাবছর ধরে কৃষিকাজ চলে বলে গ্রামাঞ্চলে কর্মসংস্থান বাড়ে। কোনো কারণে একটি শস্যের উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হলে অন্য শস্য দ্বারা তা অনেকটাই পূরণ করে নেওয়া যায় বলে কৃষিতে ঝুঁকির মাত্রা কমে। সুতরাং বলা যায়, একই জমিতে পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন ফসল উৎপাদন করা কল্যাণকর।

গ. উদ্দীপকে প্রদত্ত তথ্যের ভিত্তিতে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে 'X' দেশের জিডিপিতে কৃষির উপখাতগুলোর অবদান নিচে লেখচিত্রের মাধ্যমে দেখানো হলো-

ঘ. প্রদত্ত উদ্দীপকটি পড়ে জানা যায়, কৃষির বিভিন্ন ক্ষেত্রে 'X' দেশটির আবহাওয়া অনুকূল হলেও 'Y' দেশটি সমুদ্র উপকূলবর্তী হওয়ায় বছরের বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের শিকার হয়। এ কারণে দেশটির জিডিপিতে কৃষির বিভিন্ন উপখাতের অবদান 'Y' দেশটির তুলনায় অনেক কম হয়। 'Y' দেশের এরূপ অবস্থার জন্য মূলত বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি বা বৈশ্বিক উষ্ণায়ন দায়ী।
বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির ফলে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সমুদ্র উপকূলবর্তী 'Y' দেশটিতে প্রায় প্রতিবছরই ঝড়, সাইক্লোন, ঘূর্ণিঝড়, সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাস ইত্যাদি প্রাকৃতিক বিপর্যয় দেখা দেবে। এর ফলে একদিকে কৃষিকাজ দারুণভাবে ব্যাহত হবে এবং অন্যদিকে উৎপাদনযোগ্য ফসলের এক বিরাট অংশ বিনষ্ট হবে। বর্ষাকালে সমুদ্রের লোনাপানি দেশের অভ্যন্তরে অনেক দূর পর্যন্ত নদীতে প্রবেশ করবে। ফলে নদীর পাশের অনেক জায়গার মাটি লবণাক্ত হয়ে পড়বে ও চাষবাসের জন্য অযোগ্য হয়ে পড়বে। গড় বৃষ্টিপাত বাড়ায় জলাবদ্ধতা বাড়বে এবং অল্প অল্প করে জমি চাষের আওতার বাইরে চলে যাবে। এসবের ফলে কৃষি-উৎপাদন ব্যাহত হলে শস্য ও শাক-সাজির উৎপাদন বর্তমানের তুলনায় অনেক কমে যাবে। বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির ফলে 'Y' দেশটির প্রাণিজগতের স্বাভাবিক প্রজনন ও বৃদ্ধি প্রক্রিয়া ব্যাহত হবে। ফলে পশু সম্পদের অব্যাহত বৃদ্ধি বিঘ্নিত হবে। বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি দেশটির উদ্ভিদ ও বনাঞ্চলের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ক্ষুণ্ণ করবে; যার ফলে বনজ সম্পদ আহরণের পরিমাণ কমে যাবে। সর্বোপরি, বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি 'y' দেশের বড় বড় নদীতে উজান থেকে পানি প্রবা কমে গেলে অনেক নদী-নালা শুকিয়ে যাবে; ফলে মাছ চাষ ব্যাহত হবে। বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি সাগরে ঘূর্ণিঝড়ের সংখ্যা ও প্রকোপ বৃদ্ধি করলে অশান্ত সমুদ্র জেলেদের জীবিকার ওপর প্রতিকূল প্রভাব ফেলবে।
সুতরাং বলা যায়, বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি "Y" দেশটির জিডিপিতে কৃষির উপখাতগুলোর উল্লিখিত অবদানের ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব বিস্তার করবে।

১০. রাজারামপুর গ্রামে বর্গাচাষি আনু মিঞা অন্যের ৫ বিঘা জমি চাষ করেন। আবাদ মৌসুমে উন্নত বীজ, সার, কীটনাশক ও সেচের ব্যয় নির্বাহের জন্য গ্রাম্য মহাজনের নিকট থেকে চড়া সুদে ঋণ গ্রহণ করেন। ইতোপূর্বে আনু মিঞা স্থানীয় ব্যাংকে সহজ শর্তে কৃষি ঋণ গ্রহণের জন্য যোগাযোগ করেন, কিন্তু ঋণদান পদ্ধতির নানা জটিলতার কারণে ঋণ গ্রহণ করতে পারেনি।
ক. জীবননির্বাহী খামার কাকে বলে?
খ. 'প্রকৃতিনির্ভর কৃষি বাংলাদেশের কৃষি উন্নয়নের একটি বড় সমস্যা- ব্যাখ্যা করো।
গ. উদ্দীপকের আনু মিঞা যে উৎস থেকে আবাদ মৌসুমে ঋণ গ্রহণ করেছে, তা বর্ণনা করো।
ঘ. আনু মিঞার মতো কৃষকদের সমস্যা লাঘবের জন্য সরকার কর্তৃক গৃহীত বিভিন্ন কর্মসূচি কি যথেষ্ট? তোমার উত্তরের স্বপক্ষে যুক্তি দাও।

১০ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. যে খামারে পারিবারিক শ্রম ব্যবহার করে পরিবারের ভরণ-পোষণের জন্য প্রয়োজনীয় বিভিন্ন কৃষিপণ্য উৎপাদন করা হয় তাকে জীবননির্বাহী খামার বলে।

খ. বাংলাদেশের কৃষি প্রকৃতির ওপর নির্ভরশীল। এখানে বৃষ্টিপাত নিয়মিত, পর্যাপ্ত ও সময়মতো হলে কৃষিকাজ সফলতার সাথে পরিচালনা করা যায়; অন্যথায় কৃষি উৎপাদন নারুণভাবে ব্যাহত হয়। তাছাড়া বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির ফলে জলবায়ুর পরিবর্তন ঘটায় সমুদ্র উপকূলবর্তী অন্যালে ঘূর্ণিঝড়, সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাস, নদীতে লোনা পানির প্রবেশ, ইত্যাদি সমস্যাও দেখা দিচ্ছে, যা কৃষি উৎপাদনকে বাধাগ্রস্ত করে তুলছে। সুতরাং বলা যায়, বাংলাদেশে প্রকৃতিনির্ভরতা কৃষি উন্নয়নের একটি বড় সমস্যা।

গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত আনু মিঞা যে উৎস থেকে ঋণ গ্রহণ করেছেন তা কৃষি ঋণের অপ্রাতিষ্ঠানিক উৎস বলে পরিচিত।
আত্মীয়স্বজন, বন্ধু-বান্ধব, গ্রাম্য মহাজন, গ্রাম্য ব্যবসায়ী ও দোকানদার, ধনী কৃষক, দালাল, বেপারি ও প্রতিবেশীরা হলো অপ্রাতিষ্ঠানিক ঋণের বিভিন্ন উৎস। ঋণের এ উৎসগুলো প্রাতিষ্ঠানিক ঋণ-উৎসগুলোর মতো নিয়মতান্ত্রিক এবং সরকারি বিধি-বিধানের অধীন নয়। এগুলো বাংলাদেশ ব্যাংকের আইন-কানুন ও শর্তের বাইরে ব্যক্তিগত পর্যায়ে নিজস্ব নিয়মানুযায়ী পরিচালিত হয়। ঋণের এসব উৎস এককথায় অসংগঠিত, অনিশ্চিত এবং শোষণমূলক। আনু মিঞাদের মতো কৃষক এরকম উৎস থেকে ঋণ গ্রহণ করে প্রায়ই প্রতারিত হন; এমনকি কখনো কখনো নিঃস্বও হয়ে পড়েন। উদ্দীপকে লক্ষ করা যায়, রাজারামপুর গ্রামের বর্গাচাষি আনু মিঞা অন্যের ৫ বিঘা জমি চাষ করেন। তিনি একজন দরিদ্র কৃষক হওয়ায় প্রয়োজনীয় কৃষি- উপকরণসমূহ ব্রম্ননা এবং কৃষিকাজ সুষ্ঠুরূপে পরিচালনার জন্য ঋণ গ্রহণ করতে বাধ্য হন। ইতিপূর্বে স্বপ্ন সুদের হারে প্রয়োজনমাফিক ফল প্রাপ্তির জন্য তিনি স্থানীয় বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের শাখায় যান।কিন্তু সেখানে ব্যাংক ঋণ প্রদান পদ্ধতি জটিল, সময়ক্ষেপণকারী ও হয়রানিমূলক হওয়ায় তিনি বাধ্য হয়েই কৃষিকাজের ব্যয় নির্বাহের জন্য আবাদ মৌসুমে গ্রাম্য মহাজনের শরণাপন্ন হন। তার কাছ থেকে অত্যন্ত কঠিন শর্তে ও চড়া সুদে ঋণ গ্রহণ করেন। যা কৃষি ঋণের অপাতিষ্ঠানিক উৎস।

ঘ. বাংলাদেশে আনু মিঞানের মতো দরিদ্র কৃষকদের কৃষিঋণ সমস্যা। লাঘবের জন্য বাংলাদেশ সরকার বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। সরকারের গৃহীত ঋণ কর্মসূচি নিচে মূল্যায়ন করা হলো: ঋণের অপ্রাতিষ্ঠানিক উৎসগুলো ঋণগ্রহণকারী কৃষকদেরকে যাতে অযথা হয়রানি কিংবা শোষণ করতে না পারে সেজন্য সরকার একটি জাতীয় ঋণ সালিশ বোর্ড গঠন করেছে। এ বোর্ড ঋণদাতা ও ঋণগ্রহীতাদের মধ্যে আপোশ-মীমাংসা করে।
কৃষি উৎপাদনে বিনিয়োগের স্বল্পতা দূর করার জন্য সরকার বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক ও রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করেছে। এগুলোর মাধ্যমে মাঝারি সুদের হারে কৃষকদেরকে স্বল্প, মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদি ঋণ প্রদান করা হয়। এ ছাড়া নগদ তহবিল সরবরাহের মাধ্যমে সরকার ৪টি রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংক, বিআরডিবি, বাংলাদেশ সমবায় ব্যাংক লি. এবং বেসরকারি ও বিদেশি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে কৃষি ঋণদান কার্যক্রমের সাথে জড়িত করছে। সরকার কৃষিঋণ বিতরণ সহজতর করার লক্ষ্যে কৃষি/পলস্নী ঋণ নীতিমালা ও কর্মসূচি প্রণয়ন করেছে।
তাছাড়া, সকল ব্যাংকের কার্যকর অংশগ্রহণের মাধ্যমে কৃষিঋণের পরিবেশ ও আওতা বাড়ানো এবং পলস্নী এলাকায় ব্যাংকিং কর্মকান্ডর সম্প্রসারণের কৌশলগত পদ্ধতি অবলম্বন করা হচ্ছে। প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষকদের কথা চিন্তা করে সরকার ক্ষুদ্র কৃষক উন্নয়ন ফাউন্ডেশনের আওতায় জামানতবিহীন ক্ষুদ্রঋণ কর্মসূচি চালু করেছে।
সুতরাং বলা যায়, আনু মিগ্রাদের মতো কৃষকদের সমস্যা লাঘবের জন্য সরকার কর্তৃক গৃহীত বিভিন্ন কর্মসূচি আপাতত যথেষ্ট বলেই মনে হয়।
Share:

0 Comments:

Post a Comment