HSC অর্থনীতি ২য় পত্র (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর pdf download অধ্যায় ১

HSC অর্থনীতি ২য় পত্র (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর pdf download অধ্যায় ১

এইচএসসি পরীক্ষার পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি
HSC Economics 2nd Paper Srijonshil question and answer pdf download.

উচ্চমাধ্যমিক

অর্থনীতি
দ্বিতীয় পত্র

সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
১ম অধ্যায়

HSC Economics 2nd Paper
Srijonshil
Question and Answer pdf download

১. একটি দেশ দীর্ঘদিন যাবত বিদেশিদের দ্বারা শাসিত ও শোষিত হয়েছে। দেশটি যুদ্ধ করে স্বাধীন হয়েছে। কিন্তু অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য তার লড়াই অব্যাহত রয়েছে। দেশটি কৃষিপ্রধান হলেও তা অনুন্নত, শিল্পে অনগ্রসর, বিপুল জনসংখ্যা, শিক্ষার হার কম, খাদ্য, ঘাটতি, অনুন্নত আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো, প্রাকৃতিক সম্পদের স্বল্পতা ইত্যাদি কারণে তার কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি হয়নি। কিন্তু সরকার আর্থ- সামাজিক অবকাঠামো উন্নয়নের পাশাপাশি শিক্ষার ব্যাপক প্রসারের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। আশা করা যায় দেশটি দ্রুতই কাঙ্ক্ষিত উন্নয় অর্জন করতে সক্ষম হবে।
ক. গ্রামীণ খাত কী?
খ. বিশ্বায়নের ফলে সৃষ্ট সুবিধাসমূহ কীরূপ?
গ. উদ্দীপকে কোন দেশের অর্থনীতির চিত্র তুলে ধরা হয়েছে? এর বৈশিষ্ট্যগুলো লিখ।
ঘ. দেশটির অর্থনীতি সম্ভাবনাময় তুমি কি এই ধারণার সাথে একমত? উদ্দীপকের আলোকে তোমার মতামত ব্যক্ত করো।

১ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. গ্রামীণ জনগণের অর্থনৈতিক কার্যাবলির সমষ্টি হলো গ্রামীণ খাত। বিশ্বায়নের ফলে সৃষ্ট সুবিধাসমূহ কাজে লাগিয়ে অনেক দেশ অর্থনৈতিক উন্নয়ন অর্জন করছে।

খ. বিশ্বায়নের ফলে স্বল্প ব্যয়ে কাঁচামাল আমদানির দরুন সামগ্রিক উৎপাদন বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। তাছাড়া, বিশ্বায়নের ফলে বিশ্বে পুঁজি ও তথ্যপ্রযুক্তির অবাধ প্রবাহ থাকায় দেশীয় শিল্প ও সেবা খাতে উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার ঘটছে। ফলে স্বল্প উন্নত অনেক দেশেই ইতিবাচক প্রভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে।

গ. উদ্দীপকে বাংলাদেশের অর্থনীতির চিত্র তুলে ধরা অর্থনীতির বৈশিষ্ট্যগুলো হলো- এদেশের বাংলাদেশ তৃতীয় বিশ্বের একটি উন্নয়নশীল স্বাধীন দেশ।
প্রায় দুইশত বছরের ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন এদেশের অর্থনৈতিক মেরুদ- ভেঙে দেয়। অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক মুক্তি এবং উন্নতির মূলমন্ত্রকে সামনে রেখে ১৯৭১ সালে এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে জয়লাভের মাধ্যমে বিশ্বের বুকে একটি স্বাধীন দেশ হিসেবে আবির্ভূত হলেও অদ্যাবধি বাংলাদেশ তার কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন ঘটাতে সক্ষম হয়নি। নানামুখী সমস্যা বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের গতিটাকে আজও মথ করে রেখেছে।
বাংলাদেশের অর্থনীতি কৃষিনির্ভর হলেও এ খাতে উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন ঘটেনি। সনাতন কৃষিব্যবস্থার কারণে খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি না পাওয়ায় দেশে খাদ্য ঘাটতি পরিলক্ষিত হয়। আধুনিক প্রযুক্তির যথাযথ প্রয়োগ এবং বিভিন্ন শিল্পনীতির যথাযথ বাস্তবায়নের অভাবে বাংলাদেশে এখনও শিল্পের যথেষ্ট প্রসার ঘটেনি। আবার, বাংলাদেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির তুলনায় কর্মসংস্থান বৃদ্ধির হার কম বলে দেশে বেকারের হার ধীরে ধীরে বাড়ছে; যা অর্থনৈতিক পশ্চাৎপদতার অন্যতম একটি কারণ। এছাড়া অনুন্নত পরিবহণ ও যোগাযোগ ব্যবস্থা, স্বাস্থ্য ও শিক্ষার অপ্রতুল সুযোগ- সুবিধার কারণে এদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। তবে সরকার বর্তমানে কিছু বাস্তবমুখী কার্যক্রম ও পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে যার ফলে বাংলাদেশের অর্থনীতি সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাচ্ছে।

ঘ. হ্যাঁ, বাংলাদেশের অর্থনীতি সম্ভাবনাময়' এই ধারণার সাথে আমি একমত। বিষয়টি ব্যাখ্যা করা হলো-
বর্তমান সরকার বাংলাদেশের অর্থনৈতিক মুক্তির লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। বাংলাদেশের অর্থনীতিকে পুনরুদ্ধার করতে সরকার বিভিন্ন বাস্তবমুখী প্রকল্প প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে মনোনিবেশ করেছে। ১৯৭৩ সাল থেকে আজ পর্যন্ত বাংলাদেশে ৭টি পণ্যবার্ষিক পরিকল্পনা, ২টি দ্বি-বার্ষিক পরিকল্পনা ও একটি দারিদ্র্য বিমোচন কৌশলপত্র গৃহীত ও সম্পন্ন হয়েছে।
১৯৯৩ সালে বেশ কিছু শিল্প প্রতিষ্ঠান ও কোম্পানি বেসরকারিকরণ করা হয়। এতে শিল্পক্ষেত্রে অগ্রগতি পরিলক্ষিত হয়, যা সামগ্রিক উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি ও জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার হ্রাস পাওয়ায় দেশে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ঘটে। ২০১৮ সালে মাথাপিছু আয় বেড়ে ১৭৫২ মার্কিন ডলারে পৌঁছে। তাছাড়া বর্তমান সরকার দেশকে 'ডিজিটাল বাংলাদেশ' হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে 'ভিশন ২০২১' ঘোষণা করেছে। এ ঘোষণা অনুসারে সরকার ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে ও ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত- দেশে পরিণত করার চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেছে।
উদ্দীপকের আলোকে বলা যায়, কাঙ্ক্ষিত উন্নয়নের লক্ষ্য বাস্তবায়নে সরকার নানা ধরনের বাস্তবমুখী পরিকল্পনা (ICT শিক্ষা বাধ্যতামূলক, সকল প্রক্রিয়া ডিজিটালাইজেশন) গ্রহণ করায় জনগণ বিশ্বায়নের সুফল পেতে শুরু করেছে। ফলে উন্নত বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। এ ধারা অব্যাহত থাকলে ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ অবশ্যই মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হবে। কাজেই বলা যায়, বাংলাদেশ একটি সম্ভাবনাময় দেশ।

২. বাংলাদেশ এশিয়া মহাদেশের দক্ষিণে অবস্থিত। এদেশের ভূখ- উত্তর-পশ্চিম থেকে দক্ষিণ-পূর্ব দিকে ক্রমশ ঢালু। পূর্বে সামান্য উঁচু ভূমি ছাড়া সমগ্র দেশের ভূমি সমভূমি। জলবায়ু মোটামুটি উষ্ণ, আর্দ্র ও সমভাবাপন্ন। মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়। এই জলবায়ুতে নানারকম ফসল উৎপাদিত হয়। এর সাথে আধুনিক প্রযুক্তি প্রয়োগের ফলে সবজিসহ বিভিন্ন ফসল উৎপাদন ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে যা দেশের চাহিদা পূরণ করে রপ্তানিও হচ্ছে।
ক. পরিবেশ বলতে কী বোঝ?
খ. বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রধান দুইটি বৈশিষ্ট্য ব্যাখ্যা করো।
গ. উদ্দীপকের আলোকে বাংলাদেশের প্রাকৃতিক পরিবেশের প্রকৃতি ব্যাখ্যা করো।
ঘ. বাংলাদেশে বিদ্যমান প্রাকৃতিক পরিবেশে ভবিষ্যৎ অর্থনৈতিক বিকাশের সম্ভাবনা উদ্দীপকের আলোকে বিশ্লেষণ করো।

২ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. যে পারিপার্শ্বিক অবস্থা তথা বিভিন্ন উপাদান, শক্তি এবং বস্তুসমূহ মানুষসহ সকল প্রাণীর জীবনযাত্রাকে প্রভাবিত ও পরিবর্তিত করে, তাকে পরিবেশ বলে।

খ. বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রধান দুটি বৈশিষ্ট্য হলো- অনুন্নত কৃষিনির্ভর অর্থনীতি এবং অতিরিক্ত জনসংখ্যা।
১. বাংলাদেশের অর্থনীতি প্রধানত কৃষিনির্ভর। দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৭০ শতাংশ লোক প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কৃষির ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু কৃষি জমির ত্রুটিপূর্ণ মালিকানা, কৃষকের দরিদ্রতা, স্বপ্ন বিনিয়োগ, প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রভৃতি কারণে কৃষির ব্যাপক উন্নয়ন হয়নি। তবে বর্তমানে কৃষকের সচেতনতা, উন্নত বীজ, সার, সেচ সুবিধা বৃদ্ধি, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা প্রভৃতি কারণে কৃষি উৎপাদন বাড়ছে।
২. পৃথিবীর মধ্যে বাংলাদেশ সবচেয়ে জনবহুল দেশগুলোর একটি। বর্তমানে এ দেশের জনসংখ্যা ১৫. ৮৯ কোটি (BBS, July, ২০১৫)। তবে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার আসেস্তে আসেস্তে কমছে। যেমন- জুলাই ২০০৪ এ জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ছিল ১. ৪২%। ২০১৭ সালে জনসংখা বৃদ্ধির হার কমে ১. ৩৭% হয়।

গ. উদ্দীপকের আলোকে বাংলাদেশের প্রাকৃতিক পরিবেশের প্রকৃতি ব্যাখ্যা করা হলো-
বৈচিত্র্যময় ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম জীববৈচিত্র্য সমৃদ্ধ একটি দেশ। তবে অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশের, মতোই বাংলাদেশেও পরিবেশগত উন্নয়ন একটি বড় চ্যালেঞ্জ। যেহেতু অর্থনৈতিক কার্যাবলি এখনো দেশের প্রাকৃতিক সম্পদের ওপর বহুলাংশে নির্ভরশীল, সেহেতু গুরুত্বপূর্ণ সেক্টরসমূহের জিডিপিতে অবদান উন্নত পরিবেশ দ্বারা অনেকাংশে প্রভাবিত হয়।
বাংলাদেশের ভূ-পৃষ্ঠের ভূমিরূপ সর্বত্র একরূপ নয়। ভূ-প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য বিবেচনায় বাংলাদেশের ভূ-প্রকৃতি প্রধানত দুধরনের (যথা- সমভূমি এবং পাহাড়ি) হলেও এর মধ্যে বৈচিত্র্য রয়েছে। যেমন- চট্টগ্রাম ও সিলেটের টারশিয়ারি যুগের পাহাড়ি অঞ্চল; রাজশাহী অঞ্চলের বরেন্দ্রভূমি, মধুপুর ও ভাওয়ালের গড় এবং কুমিল্লার লালমাই পাহাড় হলো প্লাইস্টোসিন যুগের চত্বর ভূমি বা সোপান যা প্রায় ২৫ হাজার বছর পূর্বে গঠিত। এ ছাড়াও রয়েছে খুলনা, রংপুর ও দিনাজপুর এলাকার বনভূমি। বাংলাদেশের জলবায়ু উচ্চ, আর্দ্র ও সমভাবাপন্ন। গ্রীষ্মকালে মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়। গড় বৃষ্টিপাত ১২০-২০০ সে.মি. বাতাসের আর্দ্রতা সর্বোচ্চ ৯৯% এবং সর্বনিম্ন ৩৬%।

ঘ. বাংলাদেশে বিদ্যমান প্রাকৃতিক পরিবেশে ভবিষ্যৎ অর্থনৈতিক বিকাশের সম্ভাবনা উদ্দীপকের আলোকে নিচে বিশ্লেষণ করা হলো- কোনো দেশের অর্থনীতিতে প্রাকৃতিক পরিবেশের প্রভাব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশের প্রাকৃতিক পরিবেশ বলতে এদেশের ভৌগোলিক অবস্থানসহ তার ভূ-প্রকৃতি, নদ-নদী, জলবায়ু, প্রাকৃতিক সম্পদ, বনজ সম্পদ, খনিজ সম্পদ ইত্যাদির সম্মিলিত প্রভাবে সৃষ্ট পারিপার্শ্বিকতাকে বোঝায়। ভৌগোলিক অবস্থান বিবেচনায় বাংলাদেশ যেমন সুবিধাজনক স্থানে অবস্থিত ঠিক তেমনি এর ভূ-প্রকৃতি ও জলবায়ুও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির জন্য সহায়ক। এদেশের নদ-নদী, মৃত্তিকা, জলবায়ু ও বৃষ্টিপাত কৃষিকাজের জন্য উপযোগী। তবে খনিজ ও বনজ সম্পদ প্রভৃতি দিক নিয়ে বাংলাদেশ অপেক্ষাকৃত কম সমৃদ্ধ।
ভৌগোলিকভাবে বাংলাদেশ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত হওয়ায় বিশ্বের অর্থনৈতিক পরাশক্তিগুলোর সাথে এদেশের ঘনিষ্ঠ বাণিজ্যিক সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। আবার সমুদ্রবন্দর ও নদীবন্দরগুলোর বিভিন্নমুখী ব্যবহার দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে নব দিগন্তের সূচনা করেছে। এছাড়া কৃষিকাজের অনুকূল পরিবেশের কারণে বর্তমানে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে সবজিসহ বিভিন্ন ফসল উৎপাদন ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা দেশের চাহিদা পূরণ করে রপ্তানিও হচ্ছে।
উপরের আলোচনা থেকে একথা প্রতীয়মান হয় যে, বাংলাদেশে বিদ্যমান প্রাকৃতিক পরিবেশে ভবিষ্যৎ অর্থনীতির বিকাশের যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে।

৩. আজিম স্যার ক্লাসে প্রাকৃতিক পরিবেশ নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে ছাত্রদের বললেন, গাছ পরিবেশ রক্ষার জন্য খুবই প্রয়োজনীয় উপাদান। বাংলাদেশে প্রায় ২৫,০৮৭ বর্গ কি.মি. বনভূমি আছে, যা প্রয়োজনের তুলনায় সামান্য। সুন্দরবন, মধুপুর ও ভাওয়াল গড় প্রভৃতি অল্প কয়েকটি অঞ্চল ছাড়া প্রায় পুরো দেশেই বৃক্ষরাজির অভাব রয়েছে। তাই আমাদের নিজেদের বাঁচার প্রয়োজনেই সারাদেশে প্রচুর পরিমাণে বৃক্ষরোপণ করতে হবে। তাছাড়া দেশের ভূ-নিম্নস্থ বিভিন্ন প্রাকৃতিক সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহারের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতির ঢাকা আরো গতিশীল করা সম্ভব।
ক. বাংলাদেশের আয়তন কত বর্গকিলোমিটার?
খ. বাংলাদেশে অর্থনীতি কৃষিনির্ভর কেন?
গ. ক্লাসে আজিম স্যারের দেওয়া তথ্যে বাংলাদেশের প্রাকৃতিক পরিবেশের যে দিকটি ফুটে উঠেছে, তা ব্যাখ্যা করো।
ঘ. বনভূমি নিয়ে আলিম স্যারের হতাশা থাকলেও, ভূ-নিম্নদ্ধ প্রাকৃতিক সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার নিয়ে তিনি কেন আশাবাদী তোমার উত্তরের সপক্ষে যুক্তি দাও।

৩ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. বাংলাদেশের আয়তন ১,৪৭,৫৭০ বর্গকিলোমিটার।

খ. বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৭০ শতাংশ প্রা পরোক্ষভাবে কৃষির ওপর নির্ভরশীল; শ্রমশক্তির প্রায় ৪৫. ১ শতাংশ কৃষিখাতে নিয়োজিত।
কৃষি এদেশের মানুষের খাদ্য এবং শিল্পের কাঁচামালের যোগান দেয়। কৃষি মানুষের বাসস্থানের উপকরণ যোগায় এবং প্রামা-লে জ্বালানির উৎস হিসেবে কাজ করে। অপ্রচলিত পণ্য হিসেবে কৃষিজাত পণ্য রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হয়। এসব কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতি কৃষিনির্ভর।

গ. ক্লাসে আজিম স্যার বাংলাদেশের প্রাকৃতিক পরিবেশ তথা বনা সম্পদের প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করেছেন। নিচে ব্যাখ্যা করা হলো-
বাংলাদেশের অর্থনীতি সম্পর্কে সম্যক ধারণা পেতে হলে এদেশের প্রাকৃতিক পরিবেশ সম্পর্কে জানা প্রয়োজন। দেশের মানুষের জীবিকা অর্জন, ভোগ, বাণিজ্য তথা সার্বিক অর্থনৈতিক কার্যকলাপ প্রাকৃতিক পরিবেশের প্রভাবে গড়ে ওঠে। সেক্ষেত্রে প্রাকৃতিক পরিবেশের যতগুলো উপাদান রয়েছে তার মধ্যে বনভূমি বা বনজ সম্পদ অন্যতম। বন বা বনজ সম্পদ যেমন মানুষের বেঁচে থাকার অক্সিজেন যোগান দেয় তেমনি জীবন-জীবিকার প্রধান উ হিসেবে কাজ করে। বনজ সম্পদের প্রভাবে কোনো অঞ্চলের তাপমাত্রা, বৃষ্টির পরিমাণ, জলবায়ু অনেক কিছু নির্ভর করে। তবুও বাংলাদেশে যে পরিমাণ বনজ সম্পদের প্রয়োজন তা প্রয়োজনের তুলনায় অ হয়ে থাকে মানুষের জীবন ধারণের জন্য একটি দেশে তার আয়তনের ২৫ ভাগ বনভূমি থাকা উচিত। কিন্তু বাংলাদেশে তা অনেক কম। সুন্দরবন এবং মধুপুর ও ভাওয়াল গড় ব্যতীত অন্যান্য অঞ্চলে বনভূমির সংখ্যা অনেক সীমিত। তাই প্রাকৃতিক পরিবেশের অপরিহার্য উপাদান হিসেবে বনল সম্পদকে অগ্রাধিকার প্রদান করে বাড়ির আশপাশে বা খোলা স্থানে গাছ- পালা লাগানোর অভ্যাস তৈরি করতে হবে। কাজেই বলা যায়, ক্লাসে আজিম স্যার বাংলাদেশের প্রাকৃতিক পরিবেশের তথা বনজ সম্পদের গুরুত্বের কথা তুলে ধরেছেন।

ঘ. বাংলাদেশের ধনভূমির বিদ্যমান অবস্থা নিয়ে আজিম স্যার হতাশাগ্রসেস্তে হলেও, ভূমি নিম্নয়া প্রাকৃতিক সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার নিয়ে তিনি আশাবাদী। তার এমন ধারণার সপক্ষে নিম্নোক্ত বিভিন্ন যুক্তি প্রদান করা হলো।
বাংলাদেশে প্রয়োজনের তুলনায় বনভূমি কম হলেও ভূমি-নিম্নদ্ধ বিভিন্ন প্রাকৃতিক সম্পদ তথা খনিজ সম্পদ খুব একটা কম নেই। এদেশের ভূ- নিম্নস্থ প্রাকৃতিক সম্পদগুলোর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ হলো- প্রাকৃতিক গ্যাস। এ সম্পদে বাংলাদেশ বেশ সমৃদ্ধ। প্রাকৃতিক গ্যাস হলো এদেশের জ্বালানি শক্তির প্রধান উৎস। যা কীটনাশক প্রভৃতি তৈরিতে কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হয়। প্রাকৃতিক গ্যাসের যোগান বাড়লে তা এসব দ্রব্যের উৎপাদন বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে। এদেশের বিভিন্ন কলকারখানা ও বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রগুলোতে প্রাকৃতিক গ্যাস জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এর যোগান বাড়লে শিল্পের প্রসার ঘটবে এবং বিদ্যুৎ উৎপাদনের ব্যয় কমবে।
এদেশে কয়েকটি জায়গায় সীমিত পরিমাণে পাথুরে কয়লা উত্তোলিত হচ্ছে; অন্যত্র কয়েকটি জায়গায় কয়লা মজুদের সন্ধান পাওয়া গেছে। ভবিষ্যতে কয়লা প্রাপ্তি বাড়লে তা দেশে শক্তি সম্পদের যোগান বাড়াবে এবং শিল্পোন্নয়নকে ত্বরান্বিত করবে।
বাংলাদেশে প্রচুর পরিমাণে চুনাপাথর সঞ্চিত আছে। সিমেন্ট, কাগজ, সাবান, ব্রিচিং পাউডার ইত্যাদি শিল্পে চুনাপাথর ব্যবহৃত হয়। সময়ান্তরে এর যোগান বাড়লে তা এসব শিল্পের উন্নয়নে অবদান রাখবে। সুতরাং, এদেশের ভূ-নিম্নস্থ প্রাকৃতিক সম্পদগুলোর সুষ্ঠু ব্যবহার নিয়ে আলিম স্যারের আশাবাদী হওয়ার যথেষ্ট যুক্তিসংগত কারণ রয়েছে।

৪. 

খাতসমূহ

         অবদান (শতকরা হার)

১৯৯০-৯১

২০০০-০১

২০১৩-১৪

কৃষি

২৯.২৩

২৫.০৩

১৬.৫০

শিল্প

২১.০৪

২৬.২০

২৯.৫৫

সেবা

৪৯.৭৩

৪৮.৭৭

৫৩.৯৫

ক. প্রাকৃতিক পরিবেশ কী?
খ. বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল দেশ'- ব্যাখ্যা করো।
গ. উদ্দীপকের আলোকে ২০১৩-১৪ অর্থবছরে অর্থনৈতিক খাতসমূহের অবদান দ-চিত্রে দেখাও।
ঘ. বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন কৃষিনির্ভর নয় ভিত্তিতে বক্তব্যটির যৌক্তিকতা বিশ্লেষণ করো।

৪ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. প্রাকৃতিক পরিবেশ বলতে একটি দেশের ভৌগোলিক অবস্থানসহ তার ভূ-প্রকৃতি, মাটি, জলবায়ু, নদ-নদী, খনিজ, বনজ, প্রাণিজ প্রভৃতি প্রাকৃতিক সম্পদের সম্মিলিত প্রভাবে সৃষ্ট পারিপার্শ্বিক অবস্থাকে বোঝায়।

খ. বাংলাদেশের অর্থনীতি ক্রমোন্নয়নশীল বলে এদেশ একটি উন্নয়নশীল দেশ।
যে দেশের অর্থনৈতিক অবকাঠামো ক্রমোন্নতির দিকে ধাবমান, সেই দেশকে উন্নয়নশীল দেশ বলে। বর্তমানে বাংলাদেশ উন্নত দেশের মতো কৃষির ওপর নির্ভরতা কমিয়ে শিল্পের উৎপাদন বাড়াচ্ছে। তাছাড়া, পত তিন বছরে গড়ে প্রবৃদ্ধি ৬% এর ওপরে ছিল এবং একটি দেশকে উন্নয়নশীল বলতে গেলে যে যে বৈশিষ্ট্য থাকা প্রয়োজন তার সবগুলো বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বিদ্যমান। তাই বলা যায়, বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল দেশ।

গ. প্রদত্ত তথ্যের আলোকে বাংলাদেশের GDP-তে ২০১৩-১৪ অর্থবছরে অর্থনৈতিক খাতসমূহের অবদান নিচে দ-চিত্রের মাধ্যমে দেখানো হলো-
অর্থনৈতিক খাতসমূহের অবদান
চিত্র-দ
উপরিউক্ত দ-চিত্রে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ২০১৩-১৪ অর্থবছরে অর্থনৈতিক খাতসমূহের অবদান দেখানো হয়েছে। চিত্রে দেখা যায়, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে কৃষিখাতের অবদান ১৬. ৫০ যা সব থেকে কম, অন্যদিকে জিডিপিতে শিল্প খাত ও সেবা খাতের অবদান (২৯. ৫৫ ৩. ৫৩. ৯৫) অধিক।

ঘ. বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন ক্রমোন্নতির দিকে। এদেশের প্রধান অর্থনৈতিক খাত কৃষি হলেও GDP-তে এর অবদান দিন দিন কমছে এবং শিল্প ও সেবা খাতের অবদান বাড়ছে। এদেশের অধিকাংশ মানুষ কৃষির ওপর নির্ভর করে। তবে, বর্তমানে শিক্ষা ও প্রযুক্তি জ্ঞানের বিকাশ ও অর্থনৈতিক অবকাঠামোর উন্নয়নের ফলে এউচ-তে শিল্প ও সেবা খাতের অবদান বৃদ্ধি পেয়েছে। উদ্দীপকে লক্ষ করা যায়, ১৯৯০-৯১ অর্থবছরে বাংলাদেশের GDP-তে কৃষির অবদান ছিল ২৯. ২৩%। কিন্তু ২০০০-০১ এবং ২০১৩-১৪ অর্থবছরে তা কমে যথাক্রমে ২৫. ০৩% এবং ১৬. ৫০% হয়। অন্যদিকে, শিল্পের অবদান, ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকে। যেমন- ১৯৯০-৯১, ২০০০- ০১ এবং ২০১৩-১৪ অর্থবছরের এউচ-তে শিল্পের অবদান যথাক্রমে ২১. ০৪%, ২৬. ২০% এবং ২৯. ৫৫% ছিল। একই অবস্থা দেবা খাতেও লক্ষ করা যায়। যদিও ১৯৯০-৯১ অর্থবছরের তুলনায় ২০০০- ০১ অর্থবছরে এউচ-তে সেবা খাতের অবদান কিছুটা কম ছিল। তবে, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে এ খাতের অবদান বেড়ে ৫৩. ৯৫% হয়। বাংলাদেশ উন্নত দেশের মতো অর্থনৈতিক উন্নয়নে তথা GDP-তে শিল্প ও সেবা খাতের অবদান বেড়েছে। অর্থাৎ, কৃষির ওপর নির্ভরতা কমিয়ে শিল্প ও সেবা খাতের ওপর নির্ভরতা বাড়ানো হচ্ছে। তাই বলা যায়, বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন কৃষিনির্ভর নয়।

৫. বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার একটি বৃষিপ্রধান দেশ। প্রায় দুইশত বছরের ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন এবং ২৪ বছরের পাকিস্তানি শাসন ও শোষণের কারণে এদেশের অর্থনীতি ছিল অনুন্নত। অনুন্নত কৃষি, শিল্পের পশ্চাৎপদতা, নিম্ন জীবনযাত্রার মান, জনাধিক্যের কারণে বেকারত্ব ছিল অর্থনীতির প্রধান বৈশিষ্ট্য। সময়ের পরিক্রমায় বিশ্ব অর্থনীতির পরিবর্তনের সাথে সাথে বাংলাদেশ সরকার বাস্তবমুখী নানান পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। ফলে বিশ্বায়নের সুফল এদেশের জনগণ পেতে শুরু করেছে। আশা করা যায়, 'রূপকল্প-২০২১' বাস্তবায়নের মাধ্যমে এদেশ একটি মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হবে।
ক. বাংলাদেশের মোট সীমানা কত কিলোমিটার?
খ. মুসলিম যুগে বাংলার অর্থনৈতিক অবস্থা কেমন ছিল?
গ. উদ্দীপকের আলোকে স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশের অর্থনীতির বৈশিষ্ট্যসমূহ বর্ণনা করো।
ঘ. তুমি কি মনে কর, বাংলাদেশ একটি মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হবে? উদ্দীপক হতে উত্তরের সপক্ষে যুক্তি দাও।

৫ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. বাংলাদেশের মোট সীমানা হলো ৪, ৭১২ কিলোমিটার।

খ. মন মুসলিম যুগে বাংলার অর্থনৈতিক অবস্থা ছিল সমৃদ্ধ ও স্বয়ংসম্পূর্ণ। বাংলার ইতিহাসে ১২০০ সাল থেকে শুরু করে ১৭৫৭ সাল পর্যন্ত মুসলিম যুগ তথা মধ্যযুগ স্থায়ী ছিল। এ সময় বাংলা ছিল খাদ্য ও শিল্পে পরিপূর্ণ এবং বিভিন্ন পর্যটক, বণিক ও বিখ্যাত পরিব্রাজকদের আনাগোনা হতো এখানে। তাদের লেখায় তৎকালীন অর্থনীতির প্রাচুর‌্যের প্রমাণ পাওয়া যায়। মুসলিম শাসনামলে কৃষি, শিল্প ও বাণিজ্য ক্ষেত্রে ব্যাপক প্রসার লক্ষ করা যায়। তখন খুব সস্তায় দ্রব্যসামগ্রী পাওয়া যেত। ১ টাকায় ৮ মণ চাল পাওয়া যেত এ যুগে। এজন্য মুসলিম যুগ বাংলার ইতিহাসে স্বর্ণযুগ নামে পরিচিতি লাভ করে।

গ. স্বাধীনতা-উত্তর (১৯৭১-বর্তমান) বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য লক্ষ করা যায়। নিম্নে তা উদ্দীপকের আলোকে বর্ণনা করা হলো-
বাংলাদেশের জন্ম লগ্ন (১৯৭১ সালে ১৬ ডিসেম্বর) হতে শুরু করে বর্তমান সময় পর্যন্ত অর্থনীতিকে বিশ্লেষণ করলে আমরা দেখতে পাই, স্বাধীনতার দীর্ঘ ৪৬ বছর পরেও আমরা অর্থনৈতিক মুক্তির পরিপূর্ণ স্বাদ পাইনি।
প্রায় দুইশত বছরের ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন এ দেশের অর্থনৈতিক মেরুদ- ভেঙে দেয়। তাছাড়া এ দেশে সনাতন কৃষিব্যবস্থা প্রচলিত থাকায় কৃষিতে উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন ঘটেনি। শিল্প ক্ষেত্রেও বাংলাদেশ অনেক পিছিয়ে রয়েছে। আধুনিক প্রযুক্তির যথাযথ প্রয়োগ ঘটাতে না পারায় কৃষি ও শিল্পক্ষেত্রে অগ্রগতি লক্ষ করা যায়নি। স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে দ্রুত হারে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় দেশে বেকারত্ব বৃদ্ধি পায়। আবার অতিরিক্ত জনসংখ্যার তুলনায় খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি না পাওয়ায় দেশে খাদ্য ঘাটতি পরিলক্ষিত হয়, যা দেশকে আমদানি নির্ভর করে তোলে। ফলে এদেশের অর্থনীতি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। উদ্দীপকের আলোকে বলা যায়, ঔপনিবেশিক শাসন, পাকিস্তানি শোষণ ও বৈষম্য এদেশের অর্থনীতিকে ধ্বংস করে দেয়। ফলে অনুন্নত কৃষি, শিল্পের পশ্চাৎপদতা, নিম্ন জীবনযাত্রার মান, বেকারত্ব ইত্যাদি স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশের অর্থনৈতিক বৈশিষ্ট্যে পরিণত হয়। এছাড়া রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, দুর্নীতি, দেশে অভিজ্ঞ ও দক্ষ উদ্যোক্তার অভাব, ধর্মীয় গোঁড়ামি, সাংস্কৃতিক অবক্ষয় ইত্যাদি এদেশের অর্থনীতিকে ধ্বংসের দিকে ধাবিত করে। তবে বর্তমান সরকার কর্তৃক গৃহীত বাস্তবমুখী নানান পরিকল্পনা দেশের অর্থনীতিকে পুনরুদ্ধার করে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিতে সাহায্য করছে।

ঘ. হ্যাঁ, বাংলাদেশে একটি মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হবে বলে আমি মনে করি।
বর্তমান সরকার বাংলাদেশের অর্থনৈতিক মুক্তির লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। বাংলাদেশের অর্থনীতিকে পুনরুদ্ধার করতে সরকার বিভিন্ন বাস্তবমুখী। প্রকল্প প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে মনোনিবেশ করেছে। ১৯৭৩ সাল থেকে আ পর্যন্ত বাংলাদেশে ৬টি পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা, ২টি দ্বি-বার্ষিক পরিকল্পনা ও একটি দারিদ্র্য বিমোচন কৌশলপত্র গৃহীত ও সম্পূর্ণ হয়েছে। যা অর্থনীতিকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।
১৯৯৩ সালে বেশ কিছু শিল্প প্রতিষ্ঠান ও কোম্পানি বেসরকারিকরণ করা হয়। এতে শিল্প ক্ষেত্রে অগ্রগতি পরিলক্ষিত হয়, যা সামগ্রিক উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। এছাড়া খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি ও জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার হ্রাস পাওয়ায় দেশে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ঘটে। ফলে ২০১৭ সাল শেষ মাথাপিছু আয় বেড়ে ১৭৫২ মার্কিন ডলারে পৌঁছে। বর্তমান সরকার দেশেকে 'ডিজিটাল বাংলাদেশ" হিসেবে গড়ে তোলার জন্য 'ভিশন ২০২১' ঘোষণা করেছে। এ ঘোষণা অনুসারে সরকার ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে ও ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে পরিণত করার চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে।
উদ্দীপকের আলোকে বলা যায়, সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে বাংলাদেশের অর্থনীতিও একসময় ঘুরে দাঁড়াবে। এ লক্ষ্য বাস্তবায়নে সরকার নানা ধরনের বাস্তবমুখী পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। ফলে। বিশ্বায়নের সুফল পেতে শুরু করেছে।
সরকার 'রূপকল্প-২০২১' বাস্তবায়নের জন্য বিভিন্ন কার্যক্রম যেমন- আইসিটি শিক্ষা বাধ্যতামূলক, অনলাইনে ভর্তি কার্যক্রম, সর্বত্র ইন্টারনেট ব্যবহার নিশ্চিতকরণ, সকল কার্যপ্রক্রিয়া ডিজিটালাইজেশন, কম্পিউটার শিক্ষার প্রতি গুরুত্ব প্রদান ইত্যাদি পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। ফলে উন্নত বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। এ ধারা অব্যাহত থাকলে ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ অবশ্যই মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হবে।

৬. প্রায় ত্রিশ বছর আগে মি. জসিম লেখাপড়া শেষ করে কানাডায় চলে যান। তৎসময়ে বাংলাদেশ সম্পর্কে তার ধারণা ছিল নেতিবাচক। একটানা ত্রিশ বছর কাটিয়ে দেশে ফিরে তিনি অবাক। আগের বাংলাদেশ আর নেই। কৃষি, শিল্প, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, দারিদ্র্য বিমোচন, খাদ্য নিরাপত্তা প্রভৃতি সূচকে বাংলাদেশ আজ অগ্রসরমান। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি পেয়ে নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশে পদার্পণ করেছে। মি. জসিম সিদ্ধান্ত নিলেন তিনি দেশেই অবস্থান করবেন এবং অর্জিত অর্থ বিনিয়োগ করবেন।
ক. প্রাকৃতিক পরিবেশ কী?
খ. অর্থনৈতিক উন্নয়নের ভিত্তি হলো অর্থনৈতিক অবকাঠামো- ব্যাখ্যা করো।
গ. বাংলাদেশ কি একটি উন্নয়নশীল দেশ? উদ্দীপকের আলোকে ব্যাখ্যা করো।
ঘ. বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে মি. জসিমের যে ইতিবাচক মনোভাব সৃষ্টি হয়েছে, সে সম্পর্কে তোমার মতামত দাও।

৬ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. প্রাকৃতিক পরিবেশ বলতে একটি দেশের ভৌগোলিক অবস্থানসহ তার ভূ-প্রকৃতি, মাটি, জলবায়ু, নদ-নদী, খনিজ, বনজ, প্রাণিজ প্রভৃতি প্রাকৃতিক সম্পদের সম্মিলিত প্রভাবে সৃষ্ট পরিপার্শ্বিক অবস্থাকে বোঝায়।

খ. অর্থনৈতিক অবকাঠামোই অর্থনৈতিক উন্নয়নের ভিত্তি অর্থনৈতিক কাঠামো বলতে সমাজের সামগ্রিক অর্থনৈতিক কর্মকা-, অর্থনীতির খাতসমূহের গঠন ও আকৃতি, অর্থব্যবস্থার গতিধারা ও উন্নয়ন এবং মানুষে মানুষে অর্থনৈতিক সম্পর্কের ধরনকে বোঝায়। বিভিন্ন খাত-উপখাতের সমন্বয়ে অর্থনৈতিক কাঠামো গড়ে ওঠে। অর্থনীতির কাঠামোর এরূপ খাতসমূহের মধ্যে আছে কৃষিখাত, শিল্পখাত, সেবাখাত, বিভিন্ন ধরনের মালিকানা ভিত্তিক ঘাত, শাহরে ও গ্রামীণ খাত ইত্যাদি। অর্থনৈতিক কাঠামো যত বেশি মজবুত হবে একটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন তত বেশি ত্বরান্বিত হবে।

গ. হ্যাঁ, বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল দেশ। বাংলাদেশের অর্থনীতি উন্নয়নশীল। একটি দেশের অর্থনীতি যখন পরিকল্পিত উপায়ে উন্নয়নের দিকে অগ্রসর হতে থাকে তখন তাকে উন্নয়নশীল দেশ বলা হয়। উন্নয়নশীল দেশের জনগণের মাথাপিছু আয়, শিক্ষার হার, জীবনযাত্রার মান, কৃষি ও শিল্পের অগ্রসরতা কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে না হলে এসব দেশের অর্থনীতি স্থবির হয়। কারণ পরিকল্পিত উন্নয়ন পদক্ষেপের মাধ্যমে উন্নয়নশীল দেশের জনগণের মাথাপিছু আয় বাড়ছে, শিক্ষার হার বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং দারিদ্র্যের হার কমছে।
বাংলাদেশের অর্থনীতিকে বিশ্লেষণ করলেও একই চিত্র পাওয়া যায়। উদ্দীপকের মি. জসিম প্রায় ত্রিশ বছর আগে লেখাপড়া শেষ করে কানাডায় চলে যান। ত্রিশ বছর পর দেশে ফিরে এসে দেখেন বাংলাদেশের অর্থনীতি আর আগের মতো নেই। বাংলাদেশ এখন কৃষি, শিল্প, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, দারিদ্র্য বিমোচন এবং খাদ্য নিরাপত্তা প্রভৃতি সূচকে বেশ এগিয়ে গেছে। এসব সূচকের উন্নয়নের ভিত্তিতে বলা যায়, বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল দেশ।

ঘ. বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে মি. জসিমের যে ইতিবাচক মনোভাব সৃষ্টি হয়েছে তা বিশ্লেষণ করলে বোঝা যায়, বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা অত্যন্ত উজ্জ্বল।
বাংলাদেশ উদীয়মান দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম। বাংলাদেশের বিপুল সংখ্যক জনসংখ্যা এবং প্রাকৃতিক সম্পদ এক সম্ভাবনাময় বিষয়। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা, জ্বালানি তেলের ক্রমাগত মূল্যবৃদ্ধি, আন্তর্জাতিক বাজারে অস্থিতিশীলতা, যুদ্ধ বিগ্রহ ও সংকট ইত্যাদি বিষয় যখন বৈশ্বিক অর্থনীতিতে চরম অনিশ্চয়তা ও মন্দার সৃষ্টি করছে, তখনও বাংলাদেশের অর্থনীতি মসৃণ গতিতে এগিয়ে চলেছে। এদেশের তৈরি পোশাক শিল্পের শ্রমিক এবং প্রবাসী শ্রমিকরা পর্যাপ্ত বৈদেশিক মুদ্রা সরবরাহ করে দেশের অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে আসছে।
উদ্দীপকের মি. জসিম বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে ইতিবাচক মনোভাব রাখেন। কারণ বর্তমানে বাংলাদেশ পরিকল্পিত উন্নয়ন পদক্ষেপের মাধ্যমে এগিয়ে যাচ্ছে। তাছাড়া, এদেশের মানুষের জীবনযাত্রার মান ক্রমাগত উন্নত হচ্ছে। এখন বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু আয় ১৭৫২ মার্কিন ডলার। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে কৃষিখাত ও শিল্পখাতের অবদান যথাক্রমে ১৪. ৭৯ শতাংশ এবং ৩২. ৪৮ শতাংশ প্রাক্কলিত হয়েছে। সাক্ষরতার হার (৭+) বেড়ে হয়েছে ৬৩. ৬ শতাংশ। স্বাধীনতা-উত্তরকালে দারিদ্র্যের হার ৬৫ ভাগ থাকলেও বর্তমানে তা ২৩. ৫ ভাগে নেমে এসেছে। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে খাদ্যশস্যের মোট উৎপাদন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৮৪. ১৯ লক্ষ মেট্রিক টন। এছাড়াও স্বাস্থ্যসেবা খাত ও ব্যাংকিং প্রবৃদ্ধির উন্নয়নও বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর বাংলাদেশের মতো
উন্নয়নশীল দেশের জন্য এগুলো অনেক বড় অর্জন। উপরিউক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায়, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গতিশীলতা বেড়েছে। আর অচিরেই বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হওয়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে।

৭. ব্রিটিশ ও পাকিস্তান শাসকগোষ্ঠীর ধ্বংসাস্তেক কর্মকান্ড এদেশের অর্থনীতি মেরুদ-হীন হয়েছিল। আর তাই ধ্বংসসত্মূপ থেকে উঠে আসতে বাংলাদেশকে অনেক পিছিয়ে পড়তে হয়েছে। যার ফলে বাংলাদেশে শিল্পোন্নয়নসহ সামগ্রিক উন্নয়ন ব্যাহত হয়েছে।
ক. বাংলাদেশ ও মায়ানমারের সীমানার দৈর্ঘ্য কত কি.মি.?
খ. বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থান ব্যাখ্যা করো।
গ. ব্রিটিশ সরকারের ঔপনিবেশিক শাসন ও শোষণ নীতিই বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অনগ্রসরতার মূল কারণ'- উদ্দীপকের আলোকে ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকের আলোকে, পাকিস্তান আমলে বাংলাদেশের শোষণ, বঞ্চনা ও অর্থনৈতিক বৈষম্যের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস বিশ্লেষণ করো।

৭ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. বাংলাদেশ ও মায়ানমারের সীমানার দৈর্ঘ্য ২৮০ কিলোমিটার।

খ. বাংলাদেশ এশিয়া মহাদেশের দক্ষিণ-পূর্ব অংশে অবস্থিত। বাংলাদেশ উত্তরে ২০ক্ক৩৪ থেকে ২৬ক্ক৩৮' উত্তর অক্ষাংশ এবং পূর্বে ৮৮ক্ক০১ক্ম থেকে ৯২ক্ক৪১' দ্রাঘিমাংশে বিস্তৃত। এদেশের মাঝখান দিয়ে কর্কটক্রান্তি রেখা অতিক্রম করেছে। তাছাড়া বাংলাদেশের তিন দিকে ভারত, দক্ষিণ-পূর্ব দিকে মায়ানমার এবং দক্ষিণ দিকে বঙ্গোপসাগার অবস্থিত। এদেশের মোট আয়তন ১,৪৭,৫৭০ বর্গকিলোমিটার।

গ. ব্রিটিশ সরকারের ঔপনিবেশিক শোষণ ও শাসন নীতিই বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অনগ্রসরতার মূল কারণ' কথাটি যথেষ্ট।
১৭৫৭ সালের পলাশি যুদ্ধে নবাব সিরাজউদ্দৌলার পরাজয়ের মাধ্যমে বাংলায় শুরু হয়েছিল ইংরেজ শাসন। ইংরেজ শাসকগোষ্ঠী বাংলাদেশকে প্রায় ২০০ বছর শোষণ করে। ব্রিটিশ শাসন আমলে বাংলার কাঁচামাল দ্বারা তারা ইংল্যান্ডে শিল্পকারখানা গড়ে তুলেছিল। আর এদেশ ছিল তাদের শিল্পজাত দ্রব্য বিক্রয়ের স্থায়ী বাজার। বিশ্বখ্যাত মসলিনের বুননকারীদের হাত ও আঙুল কেটে তারা এ শিল্পকে ধ্বংস করে দেয়। ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রথমদিকে ব্রিটিশরা এদেশের কৃথকদেরকে জোরপূর্বক নীল চাষে করেছিল। এর ফলে এদেশে কৃষি উৎপাদন হ্রাস পেয়েছিল। উদ্দীপকে উল্লেখ রয়েছে ব্রিটিশ শাসকগোষ্ঠীর ধ্বংসাস্তেক কর্মকান্ড এদেশের অর্থনীতি মেরুদ-হীন হয়ে পড়েছিল। মূলত, ব্রিটিশ সরকারের শোষণ নীতির ফলে বাংলার অর্থনীতি প্রায় অচল হয়ে পড়েছিল। ইংরেজদের দ্বৈতশাসন, অত্যাচার ও কোম্পানি শাসন ও শোষণের মাধ্যমে বাংলার শিল্প ও ব্যবসা-বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাই বলা যায়, ব্রিটিশ সরকারের ঔপনিবেশিক শাসন ও শোষণ নীতিই এদেশের অর্থনৈতিক অনগ্রসরতার মূল কারণ।

ঘ. ব্রিটিশদের পদাঙ্ক অনুসরণ করে পাকিস্তান সরকারও বৈষম্য ও শোষণ নীতি অবলম্বন করে বাংলাদেশকে তাদের অস্থায়ী কলোনি হিসেবে গড়ে তুলেছিল। নিচে পাকিস্তান আমলের শোষণ, বঞ্ছনা ও অর্থনৈতিক বৈষম্যের চিত্র তুলে ধরা হলো-
১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট ভারতীয় উপমহাদেশ বিভক্ত হয়ে পাকিস্তান রাষ্ট্র সৃষ্টি হয়। যার দুটি প্রদেশ হলো পশ্চিম পাকিস্তান ও পূর্ব পাকিস্তান (বাংলাদেশ)। কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়ন্ত্রণে পূর্ব পাকিস্তানের আয় পশ্চিম পাকিস্তানে চলে যেত। পাকিস্তান আমলে রাজস্ব আয়ের বেশি অংশ অর্জন হতো পূর্ব পাকিস্তান হতে। অথচ, তার সিংহভাগ বায় হতো পশ্চিম পাকিস্তানে। যেমন- ১৯৪৭-৪৮ থেকে ১৯৬০-৬১ অর্থবছর পর্যন্ত মোট রাজস্ব বায়ের মাত্র ১২% পূর্ব পাকিস্তানে ব্যয় করা হয়েছিল।
তাছাড়া পূর্ব পাকিস্তানে বেসরকারি বিনিয়োগে কোনো সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পায়নি। রাজধানী পশ্চিম পাকিস্তানে হওয়ায় সেখানকার ২২টি পরিবারের হাতে বেসরকারি বিনিয়োগের ৮০ ভাগ চলে যায়। ১৯৬৯-৭০ অর্থবছরে পূর্ব পাকিস্তানে মাথাপিছু আয় ছিল ৩৩৯ টাকা, কিন্তু পশ্চিম পাকিস্তানে তা ছিল ৫০০ টাকা। পাকিস্তান শাসকগোষ্ঠীর শোষণের ফলে এদেশে প্রবৃদ্ধির হারও পশ্চিম পাকিস্তানের তুলনায় কম ছিল।
উপর্যুক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায়, বাংলাদেশের ওপর পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর শোষণ, বজ্রনার মাত্রা ছিল অসহনীয়। যার ফলশ্রুতিতে দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র বাংলাদেশের জন্ম হয়।

৮. সম্প্রতি এক সেমিনারে বক্তারা মতামত প্রকাশ করেন যে, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থা প্রতিনিয়ত উন্নত হচ্ছে। বিশেষ করে গণতান্ত্রিক সরকারের আমলে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থার যথেষ্ট পরিবর্তন হয়েছে। GDP'-তে প্রবৃদ্ধি বেড়েছে। জীবনযাত্রার মান উন্নত হয়েছে। GDP-তে কৃষির অবদান কমেছে। মানবসম্পদসহ অন্যান্য খাতের উন্নয়ন সম্ভব হলে বাংলাদেশ ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হবে বলে বক্তারা আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
ক. অর্থনৈতিক অবকাঠামো কাকে বলে?
খ. কী কী শিল্পের জন্য মুসলিম যুগ বিখ্যাত ছিল?
গ. উদ্দীপকের আলোকে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক গতিধারা পরিবর্তনের বর্ণনা দাও।
ঘ. উদ্দীপকে বক্তাদের ধারণা অনুযায়ী, বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে পৌঁছাতে কী কী পদক্ষেপ গ্রহণ করা দরকার? আলোচনা করো।

৮ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. যে সমস্ত অর্থনৈতিক উপাদান অর্থনৈতিক উন্নয়নের ভিত্তি হিসেবে কাজ করে এবং যাদের অনুপস্থিতিতে অর্থনৈতিক কর্মকা- পরিচালনা ও উন্নয়ন কার্যক্রমকে অব্যাহত রাখা সম্ভব হয় না, এককথায় সেগুলোকে অর্থনৈতিক অবকাঠামো বলে।

খ. মুসলিম যুগকে বাংলার ইতিহাসে স্বর্ণযুগ বলা হয়। এ সময়ে দেশে বিভিন্ন ধরনের শিল্প গড়ে ওঠে।
এ সময়ের উল্লেখযোগ্য শিল্পগুলো হলো: কার্পাস বস্তু শিল্প, মসলিন বস্তু শিল্প, নৌ-শিল্প, চিনিশিল্প, লৌহ শিল্প, কামান শিল্প, বারুদ শিল্প, ভোজ্য তেল শিল্প, অলংকার শিল্প ইত্যাদি। এ সময়ে দেশে রেশম শিল্পও গড়ে ওঠে। তখনকার বাংলার সবচেয়ে বিখ্যাত শিল্প ছিল মসলিন বস্ত্র শিল্প। বাংলার মসলিন তখন সবচেয়ে মূল্যবান রপ্তানি পণ্য ছিল।

গ. উদ্দীপকে বাংলাদেশের অর্থনীতির চলমান গতিধারা ও পরিবর্তনের একটি চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। নিচে উদ্দীপকের আলোকে তার বিবরণ দেওয়া হলো:
১. অতীতে বাংলাদেশে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে বিভিন্ন লক্ষ্যমাত্রা ধার্য। করা হলেও বিভিন্ন সীমাবদ্ধতার কারণে তা বাস্তবায়িত হয়নি। কিন্তু সাম্প্রতিককালে নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী, উচ্চ হারে প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। ২০১৩-২০১৪, ২০১৪-২০১৫, ২০১৫-২০১৬ ও ২০১৬- ২০১৭ অর্থবছরের প্রবৃদ্ধি যথাক্রমে ৬. ০৬%, ৬. ৫১%, ৭. ২% ও ৭. ২৪% যা প্রবৃদ্ধির ক্রমোন্নয়ন নির্দেশ করে। আবার দেশের সঞ্চয়, বিনিয়োগ ও রপ্তানি বাণিজ্যের পরিবর্তনের গতিধারা লক্ষ করা যায়। ২০১৬-২০১৭ অর্থ বছরে মোট দেশজ ও জাতীয় সঞ্চয়ের হার যথাক্রমে ২৬. ০৬% ও ৩০.৩০% এবং বিনিয়োগ দাঁড়িয়েছে ৩০.২৭ শতাংশ যা পূর্বে তুলনায় অনেক বেশি।
২. বিগত এক দশকে বাংলাদেশের জনগণের জীবনযাত্রার মান অনেক উন্নত হয়েছে। এখন এ দেশের জনগণের মাথাপিছু আয় হলো ১৭৫২ মার্কিন ডলার। এক দশক আগে এ আয় ছিল ৪৬৫ মার্কিন ডলার।
৩. বিগত ৪-৫ বছরের তুলনায় বর্তমানে বাংলাদেশের কৃষি উৎপাদন যথেষ্ট বৃদ্ধি পেলেও জিডিপিতে তার অবদান কমে এসেছে। ২০১৮- ১৭ অর্থবছরে দেশের জিডিপিতে সমন্বিত কৃষিখাতের অবদান ধরা হয় শতকরা ১৪. ৭৯ ভাগ। দেশে শিল্প, সেবা ও ব্যবসা খাত ক্রমেই উন্নত হওয়ায় এমনটি দাঁড়িয়েছে। ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে জিডিপিতে শিল্প ও সেবা খাতের অবদান যথক্রমে ৩২. ৪৮% ও ৫২. ৭৩%। সুতরাং বলা যায়, বর্তমানে বাংলাদেশের অর্থনীতি পরিবর্তনের একটি ধারা লক্ষ করা যায়।

ঘ. প্রদত্ত উদ্দীপকে বস্তুরা এমন আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন যে, ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ একটি মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হবে। এমনটি হতে হলে যেসব পদক্ষেপ গ্রহণ করা দরকার নিচে তা আলোচনা করা হলো;
১. বাংলাদেশকে ২০২১ সাল নাগাদ একটি মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করতে হলে সর্বপ্রথমে প্রয়োজন উচ্চহারে জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন। বর্তমানে এদেশে জিডিপির গড় প্রবৃদ্ধির হার ৬ শতাংশের ওপরে রয়েছে; ভবিষ্যতেও প্রবৃদ্ধির এ হার বজায় রাখতে হবে।
২. ভবিষ্যতে বাংলাদেশকে একটি মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে বিবেচনা করতে হলে দারিদ্র্য বিমোচন করতে হবে। এ উদ্দেশ্যে দরিদ্র লোকদের জন্য কর্মমুখী শিক্ষার ব্যবস্থা, নারীর ক্ষমতায়ন, সামাজিক নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা জোরদারকরণ ইত্যাদি কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে।
৩. 'রূপকল্প ২০২১' অনুযায়ী, বাংলাদেশকে একটি মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত করতে হলে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার অবশ্যই নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। এ উদ্দেশ্যে চলমান পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচিকে গতিশীল ও কার্যকর করে তুলতে হবে।
৪. সাম্প্রতিককালে নানা কারণে দেশে উচ্চ মুদ্রাস্ফীতি দেখা দিয়েছে। একে ঠিকমতো রুখতে না পারলে উন্নয়নের সকল প্রচেষ্টাই বিফলে যাবে। তাই অর্থনীতির সকল খাতে উৎপাদন বৃদ্ধি এবং সরকারের আর্থিক ও রাজস্ব নীতির সুষ্ঠু প্রয়োগের মাধ্যমে মুদ্রাস্ফীতিকে অবশ্যই নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
৫. দ্রুত অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য শিল্পোন্নয়ন অপরিহার্য। এ জন্য শিল্পক্ষেত্রে বিদ্যমান সমস্যাগুলোর সমাধান, যথোপযুক্ত শিল্পনীতি প্রণয়ন, দেশীয় কাঁচামালভিত্তিক শিল্প স্থাপন, পিপিপি-এর অধীনে
ভারী শিল্প স্থাপন ইত্যাদি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। উপরের আলোচনার আলোকে বলা যায়, দ্রুত অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করলে ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ একটি মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হবে।

৯. প্রাচীন যুগের অর্থনীতি এবং বিশ্বায়নের যুগে বাংলাদেশ নামক এ ভূখন্ডের অর্থনীতির চিত্র এক নয়। ৭০ দশক থেকে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থা দিন দিন উন্নত হচ্ছে। বিশেষ করে গণতান্ত্রিক সরকারগুলোর আমলে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থার যথেষ্ট পরিবর্তন হয়েছে, যেমন: GDP এর প্রবৃদ্ধি বেড়েছে। GDP-তে কৃষির অবদান হ্রাস পৈয়ে শিল্পের অবদান বেড়েছে। জীবনযাত্রার মান বেড়েছে। প্রযুক্তি শিক্ষার প্রসার, অবকাঠামো উন্নয়ন ও মানবসম্পদ উন্নয়নের মাধ্যমে ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে বিশ্বে পরিচয় লাভ করবে বলে অর্থনীতিবিদরা আশা করেন।
ক. পরিবেশ কী?
খ. কোন যুগকে বাংলার ইতিহাসে স্বর্ণযুগ বলা হয়? কেন?
গ. উদ্দীপকের আলোকে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক গতিধারা, পরিবর্তনের সূচকগুলো চিহ্নিত করো।
ঘ. তুমি কি মনে কর, উদ্দীপকে অর্থনীতিবিদদের বর্ণিত আশা বাস্তবায়িত হবে? উত্তরের সপক্ষে যুক্তি দেখাও।

৯ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. যে পারিপার্শ্বিক অবস্থা তথা বিভিন্ন উপাদান, শক্তি এবং বস্তুসমূহ মানুষসহ সকল প্রাণীর জীবনযাত্রাকে প্রভাবিত ও পরিবর্তিত করে তাকে পরিবেশ বলে।

খ. মুসলিম যুগকে বাংলার ইতিহাসে স্বর্ণযুগ বলা হয়। বাংলায় মুসলিম যুগ ছিল এক গৌরবোজ্জ্বল যুগ। এ যুগে বাংলায় আধুনিক মুদ্রাব্যবস্থার প্রচলন হয় ও মহাজনী ব্যবসার বিকাশ ঘটে। এ যুগে বাংলা কৃষি ও শিল্পে সমৃদ্ধ হয়ে ওঠে। এ সময় এখানে বস্ত্র, বিশেষ মসলিন বস্ত্র, চিনি, লৌহ, বারুদ, কামান, লবণ, কাগজ ইত্যাদি উৎপাদিত হতো। বিদেশি পর্যটকদের লেখায় এ সময়ের বাংলার সমৃদ্ধ অর্থনীতির রূপটি ফুটে ওঠে। এসব কারণে বাংলার ইতিহাসে মুসলিম যুগ স্বর্ণযুগ বলে পরিচিত।

গ. উদ্দীপকে বাংলাদেশের অর্থনীতির চলমান গতিধারা ও পরিবর্তনের একটি চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। নিচে উদ্দীপকের আলোকে তার বিবরণ দেওয়া হলো:
১. অতীতে বাংলাদেশে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে বিভিন্ন লক্ষ্যমাত্রা ধার্য। করা হলেও বিভিন্ন সীমাবদ্ধতার কারণে তা বাস্তবায়িত হয়নি। কিন্তু সাম্প্রতিককালে নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী, উচ্চ হারে প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। ২০১৩-২০১৪, ২০১৪-২০১৫, ২০১৫-২০১৬ ও ২০১৬- ২০১৭ অর্থবছরের প্রবৃদ্ধি যথাক্রমে ৬. ০৬%, ৬. ৫১%, ৭. ২% ও ৭. ২৪% যা প্রবৃদ্ধির ক্রমোন্নয়ন নির্দেশ করে। আবার দেশের সঞ্চয়, বিনিয়োগ ও রপ্তানি বাণিজ্যের পরিবর্তনের গতিধারা লক্ষ করা যায়। ২০১৬-২০১৭ অর্থ বছরে মোট দেশজ ও জাতীয় সঞ্চয়ের হার যথাক্রমে ২৬. ০৬% ও ৩০.৩০% এবং বিনিয়োগ দাঁড়িয়েছে ৩০.২৭ শতাংশ যা পূর্বে তুলনায় অনেক বেশি।
২. বিগত এক দশকে বাংলাদেশের জনগণের জীবনযাত্রার মান অনেক উন্নত হয়েছে। এখন এ দেশের জনগণের মাথাপিছু আয় হলো ১৭৫২ মার্কিন ডলার। এক দশক আগে এ আয় ছিল ৪৬৫ মার্কিন ডলার।
৩. বিগত ৪-৫ বছরের তুলনায় বর্তমানে বাংলাদেশের কৃষি উৎপাদন যথেষ্ট বৃদ্ধি পেলেও জিডিপিতে তার অবদান কমে এসেছে। ২০১৮- ১৭ অর্থবছরে দেশের জিডিপিতে সমন্বিত কৃষিখাতের অবদান ধরা হয় শতকরা ১৪. ৭৯ ভাগ। দেশে শিল্প, সেবা ও ব্যবসা খাত ক্রমেই উন্নত হওয়ায় এমনটি দাঁড়িয়েছে। ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে জিডিপিতে শিল্প ও সেবা খাতের অবদান যথক্রমে ৩২. ৪৮% ও ৫২. ৭৩%। সুতরাং বলা যায়, বর্তমানে বাংলাদেশের অর্থনীতি পরিবর্তনের একটি ধারা লক্ষ করা যায়।

ঘ. হ্যাঁ, বাংলাদেশে একটি মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হবে বলে আমি মনে করি।
বর্তমান সরকার বাংলাদেশের অর্থনৈতিক মুক্তির লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। বাংলাদেশের অর্থনীতিকে পুনরুদ্ধার করতে সরকার বিভিন্ন বাস্তবমুখী। প্রকল্প প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে মনোনিবেশ করেছে। ১৯৭৩ সাল থেকে আ পর্যন্ত বাংলাদেশে ৬টি পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা, ২টি দ্বি-বার্ষিক পরিকল্পনা ও একটি দারিদ্র্য বিমোচন কৌশলপত্র গৃহীত ও সম্পূর্ণ হয়েছে। যা অর্থনীতিকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।
১৯৯৩ সালে বেশ কিছু শিল্প প্রতিষ্ঠান ও কোম্পানি বেসরকারিকরণ করা হয়। এতে শিল্প ক্ষেত্রে অগ্রগতি পরিলক্ষিত হয়, যা সামগ্রিক উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। এছাড়া খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি ও জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার হ্রাস পাওয়ায় দেশে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ঘটে। ফলে ২০১৭ সাল শেষ মাথাপিছু আয় বেড়ে ১৭৫২ মার্কিন ডলারে পৌঁছে। বর্তমান সরকার দেশেকে 'ডিজিটাল বাংলাদেশ" হিসেবে গড়ে তোলার জন্য 'ভিশন ২০২১' ঘোষণা করেছে। এ ঘোষণা অনুসারে সরকার ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে ও ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে পরিণত করার চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে।
উদ্দীপকের আলোকে বলা যায়, সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে বাংলাদেশের অর্থনীতিও একসময় ঘুরে দাঁড়াবে। এ লক্ষ্য বাস্তবায়নে সরকার নানা ধরনের বাস্তবমুখী পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। ফলে। বিশ্বায়নের সুফল পেতে শুরু করেছে।
সরকার 'রূপকল্প-২০২১' বাস্তবায়নের জন্য বিভিন্ন কার্যক্রম যেমন- আইসিটি শিক্ষা বাধ্যতামূলক, অনলাইনে ভর্তি কার্যক্রম, সর্বত্র ইন্টারনেট ব্যবহার নিশ্চিতকরণ, সকল কার্যপ্রক্রিয়া ডিজিটালাইজেশন, কম্পিউটার শিক্ষার প্রতি গুরুত্ব প্রদান ইত্যাদি পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। ফলে উন্নত বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। এ ধারা অব্যাহত থাকলে ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ অবশ্যই মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হবে।

১০.

          খাদ্যশস্য উৎপান (লক্ষ মেট্রিক টন)

অর্থ বছর

উৎপাদনের পরিমাণ

১৯৮০-৮১

১৪৯.৭

১৯৯০-৯১

১৮৮.৬

২০১৩-১৪

৩৭৭.৮২

ক. অবকাঠামো কাকে বলে?
খ. ইংরেজ শাসনামলে বাংলার অর্থনৈতিক অবস্থা কীরূপ ছিল?
গ. উদ্দীপকের ভিত্তিতে একটি স্তম্ভচিত্র অঙ্কন করো।
ঘ. উদ্দীপকের আলোকে বাংলাদেশের খাদ্য উৎপাদনের গতিধারা বিশ্লেষণ করো।

১০ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. একটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন কর্মকা- সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য যেসব অর্থনৈতিক উপাদান অপরিহার্য, সেগুলোকে অবকাঠামো বলা হয়।

খ. ইংরেজ শাসনামলে বাংলার অর্থনৈতিক অবস্থা ছিল অনুন্নত। ১৭৫৭ সালে পলাশির যুদ্ধে সিরাজ-উদ-দৌলার পতনের মধ্য দিয়ে বাংলার অর্থনীতির ভাগ্যে বিপর্যয় নেমে এসেছিল। লর্ড ক্লাইভের দ্বৈত শাসন, ছিয়াত্তরের মন্বন্তর ও চিরস্থায়ী বন্দোবস্তু এ অঞ্চলের অর্থনীতির ভিত্তি দুর্বল করে দিয়েছিল। এ সময়ে বাংলায় তেমন কোনো শিল্প স্থাপন করা হয়নি। ব্রিটিশরা এদেশের কৃষকদের নীল চাষে বাধ্য করেছিল। ফলে বাংলার অর্থনীতিকে ব্রিটিশরা দু'শ বছর পিছিয়ে দিয়েছিল।

গ. উদ্দীপকের তথ্যের ভিত্তিতে স্তম্ভচিত্র অঙ্কন করা হলো-
ছকের তথ্য ব্যবহার করে অঙ্কিত চিত্রে ভূমি অক্ষে (OX) অর্থবছর এবং লম্ব অক্ষে (OY) উৎপাদনের পরিমাণ পরিমাপ করা হয়েছে। ১৯৮০-৮১ অর্থবছরে বাংলাদেশের খাদ্যশস্য উৎপাদন ছিল ১৪৯. ৭ লক্ষ মে. টন। ১৯৯০-৯১ অর্থবছরে যা বেড়ে দাঁড়ায় ১৮৮. ৬ লক্ষ মে. টন এবং পরবর্তীতে ২০১৩-১৪ অর্থবছরে আরও বেড়ে তা দাঁড়ায় ৩৭৭. ৮২ লক্ষ মে. টনে।

ঘ. উদ্দীপকের আলোকে বলা যায়, আধুনিক কৃষিব্যবস্থা উদ্ভাবন, সম্প্রসারণ ও কৃষির উপকরণ সহজলভ্যতা নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে বাংলাদেশে খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জিত হয়েছে।
সবার জন্য খাদ্য নিশ্চিত করার মাধ্যমে বর্তমান সময়ের মধ্যে বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। কৃষি খাতকে বাংলাদেশের সবচেয়ে অগ্রাধিকার প্রাপ্ত খাত হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। বাংলাদেশের কৃষির উন্নয়নে নানামুখী কর্মসূচি গ্রহণে কৃষিক্ষেত্রে আধুনিকায়নের ছোঁয়া লেগেছে। ২০১৩ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করতে এ খাতকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার প্রদান করা হয়েছে। পদ্মবার্ষিক পরিকল্পনা ও জাতীয় কৃষিনীতির মাধ্যমে এ খাতটির উন্নয়নে সরকারের অব্যাহত প্রচেষ্টার ফলে কৃষি উৎপাদন পূর্বের তুলনায় অনেক বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। ১৯৮০-৮১ অর্থবছরে খাদ্য উৎপাদন ছিল ১৪৯. ৭ লক্ষ মে. টন, ১৯৯০-৯১ অর্থবছরে ১৮৮. ৬ লক্ষ মে. টন। পরবর্তীতে ধীরে ধীরে কৃষির উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়ে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে এ উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়ে ৩৮৮. ১৭ লক্ষ মেট্রিক টনে উন্নীত হয়। ২০১৬- ১৭ অর্থবছরে খাদ্যশস্যের মোট উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ৩৯৬. ৮৮।
গত এক দশকে বাংলাদেশে খাদ্যশস্য, বিশেষ করে চালের উৎপাদন লক্ষণীয়ভাবে বেড়েছে। খাদ্য উৎপাদন সম্পর্কিত উল্লিখিত তথ্য বিশ্লেষণ করে বলা যায়, বর্তমান বাংলাদেশ খাদ্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে যথেষ্ট অগ্রগতি অর্জন করেছে।
Share:

0 Comments:

Post a Comment