HSC Economics 1st Paper Srijonshil question and answer pdf download.
উচ্চমাধ্যমিক
অর্থনীতি
প্রথম পত্র
সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
৭ম অধ্যায়
HSC Economics 1st Paper
Srijonshil
Question and Answer pdf download
১. সৃষ্টিশীল ও পরিশ্রমী সুদান ব্যবসায়িক লক্ষ্যকে সামানে রেখে ব্যাংক থেকে ঋণ ও সরকারের কাছ থেকে একখন্ড জমি লিজ নিয়ে সেখানে চুক্তিভিত্তিক ও দিনভিত্তিক কিছু কর্মচারী ও শ্রমিক নিয়োগের মাধ্যেমে একটি শিল্প কারখানা স্থাপন করে। পরবর্তীতে সুদানের বুদ্ধিমত্তা ও দূরদর্শিতা এবং কর্মের দৃঢ়তার কারণে পাঁচ বছরের মাথায় শিল্প প্রতিষ্ঠানটির সুনাম সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে।
ক. এক-মালিকানা কারবার কাকে বলে?
খ. অংশীদারি কারবারে বিশ্বাস ও আস্থার অভাব হয় কেন?
গ. সুদানের কার্যক্রমে উৎপাদনের কোন উপাদানের কার্যক্রম ফুটে উঠেছে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. ‘কোনো প্রতিষ্ঠানের সফলতা উক্ত উপাদানের ভূমিকার ওপর নির্ভরশীল।’ উদ্দীপকের আলোকে বিশ্লেষণ করো।
১ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. যে কারবারে একজন মালিক থাকে এবং মালিক নিজেই ব্যবসার উপকরণ সংগ্রহ ও ব্যবস্থাপনায় দায়িত্ব পালন করে, তাকে এক-মালিকানা কারবার বলে।
খ. সাধারণত গণতান্ত্রিক মনোভাব ও দায়িত্বের সুস্পষ্ট নিয়মনীতির অভাবে অংশীদারি কারবারে বিশ্বাস ও আস্থার অভাব দেখা যায়।
মূলত অংশীদারি কারবার অংশীদারিদের মধ্যে পরস্পর বিশ্বাস ও আস্থার ওপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠে। কিন্তু অনেক সময় দেখা যায় অংশীদারিদের মধ্যে কেউ একজন অদক্ষ হলে সবাইকে সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। আবার কার দায়িত্ব কতটুকু তার সুস্পষ্ট নিয়মনীতি থাকে না। এতে কেউ বেশি পরিশ্রম করেও কম সুবিধা ভোগ করতে পারে। এসব বিষয়ে নিজেদের মধ্যে প্রায় মনোমালিন্য দেখা দেয়। এর ফলে বিশ্বাস ও আস্থার অভাব দেখা দেয়।
গ. উদ্দীপকে উল্লেখিত সুদানের কার্যক্রমে উৎপাদনের উপাদান সংগঠন এর কার্যক্রম ফুটে উঠেছে।
উৎপাদনের উদ্দেশ্য ভূমি, শ্রম ও মূলধনের আনুপাতিক সংগ্রহ, সংযোজন ও নিয়োগ করার উদ্যোগ বা প্রচেষ্টাকে সংগঠন বলে। তাই সংগঠনের কার্যক্রমরে অন্তর্ভুক্ত থাকে-কারবারে পরিকল্পনা গ্রহণ, নীতি নির্ধারণ ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ, সার্বিক তত্ত্বাবধান এবং ঝুকি বহন ইত্যাদি।
উদ্দীপকে লক্ষ করা যায়, সুদান ব্যবসায়ীক উদ্দেশ্যে উৎপাদনের বিভিন্ন উপকরণ যেমন-ব্যাংক থেকে ঋণ তথা মূলধন সংগ্রহ, সরকারের কাছ থেকে এক খন্ড জমি তথা ভূমি লিজ নেয় এবং স্থায়ী ও অস্থায়ী শ্রমিক নিয়োগ তথা শ্রম নিয়োগ দেয়। অর্থাৎ সুদানের কার্যক্রমে উৎপাদনের অন্যান্য উপাদান ভূমি, মূলধন ও শ্রমের সমন্বয়ের মাধ্যমে উৎপাদন কার্যক্রম পরিচালিত হয়। তাই বলা যায় সুদানের কার্যক্রমে সংগঠনের কার্যক্রম ফুটে উঠেছে।
ঘ. কোনো প্রতিষ্ঠানের সফলতা মূলত সংগঠনের ভূমিকার উপর নির্ভরশীল-কথা সত্য। এ বিষয়টি উদ্দীপকের আলোকে নিচে বিশ্লেষণ করা হলো।
একজন সফল সংগঠক বা একটি সফল সংগঠন উৎপাদনের অন্যান্য উপাদান যেমন- ভূমি, শ্রম ও মূলধন প্রভৃতির মধ্যে সমম্বয় সাধনের মাধ্যমে উৎপাদন পরিচালনা করেন। এক্ষেত্রে সংগঠক তার মেধা, সৃজনশীলতা ও কঠোর পরিশ্রমের দ্বারা সর্বাধিক মুনাফা অর্জনে সচেষ্টা থাকে। এভাবে যে প্রতিষ্ঠান যতবেশি মুনাফা অর্জন করতে পারে ঐ প্রতিষ্ঠান প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার সম্ভাবনা ততটা প্রবল হয়।
উদ্দীপকে লক্ষ করা যায়, সৃষ্টিশীল ও পরিশ্রমী সুদান তার বুদ্ধিমত্তা ও দুরদর্শিতা এবং কর্মের দৃঢ়তার দ্বারা তার শিল্পপ্রতিষ্ঠানটি ক্রমোন্নতি অর্জন করতে সক্ষম। অর্থাৎ তার কারখানাটি সফলতা অর্জন করতে সক্ষম হয়। ফলশ্রুতিতে উক্ত প্রতিষ্ঠানটির সুনাম সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু সুদান যদি পরিশ্রমী ও দুরদর্শিতা গুণসম্পন্ন না হতো তাহলে ভূমি, শ্রম ও মূলধনের সুষ্ঠু সমম্বয়ের অভাবে উৎপাদন ব্যহত হতো। এর ফলে পর্যাপ্ত মুনাফা অর্জনে ব্যর্থতার দরুন উক্ত প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ হয়ে যেত।
কাজেই উপর্যুক্ত পর্যালোচনা থেকে স্পষ্টই বলা যায়, কোনো প্রতিষ্ঠানের সফলতা মূলত সংগঠনের ওপর নির্ভর করে।
২. রহিম সাহেব একটি প্লাস্টিক কারখানার মালিক। তিনি নিজেই অত্যন্ত দক্ষতার সাথে উপকরণ সংগ্রহ ও ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পালন করনে। তার দক্ষতা, ঝুঁকি গ্রহনের ক্ষমতা, একক বুদ্ধিমত্তা, নতুনত্ব প্রবর্তন, সৃষ্টিশীলতা, দুরদর্শিতা, পরিকল্পনা গ্রহণ ও সুষ্ঠু বাজারজাত করণের ফলে প্রতিষ্ঠানটি দিন দিন উন্নত হচ্ছে। তিনি একাই প্রতিষ্ঠানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করনে এবং সকল মুনাফা ভোগ করেন। সীমাহীন দায়িত্ব ও ঝুঁকির আধিক্য থাকলেও তার প্রতিষ্ঠানের গোপনীয়তা বজায় থাকে।
ক. যেীথ মূলধনী কারবার কাকে বলে?
খ. অংশীদারি কারবারে কি পর্যাপ্ত মূলধনের যোগান দান সম্ভব?
গ. রহিম সাহেবের কার্যাবলি উদ্দীপকের আলোকে ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকে উল্লেখিত প্রতিষ্ঠানের ধরন উল্লেখপূর্বক এর সুবিধা ও অসুবিধাসমূহ আলোচনা করো।
২ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. যখন একাধিক ব্যক্তি যেীথভাবে মিলিত হয়ে মূলধন সরবরাহ করে ব্যবসা বা কারবার শুরু করে তখন তাকে যেীথ মূলধনী কারবার বলে।
খ. অংশীদারি কারবারে অংশীদারিদের সংখ্যা সীমিত হওয়ায় পর্যাপ্ত মূলধনের যোগান দেওয়া সম্ভব না।
অংশীদারি কারবারের মালিকরা সাধারণত সমাজের মধ্যবিত্ত শ্রেণি থেকে আসেন বলে তারা যথেষ্ট ধন-সম্পদের মালিক হন না। এছাড়া এ কারবারের অংশীদারিদের অসীম দায়িত্ব, স্বল্প স্থায়ীত্ব, কারবারের ওপর জণগনের আস্থার অভাব রয়েছে। এজন্য অর্থলগ্নীকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর অংশীদারি ব্যবসায়কে ঋণ দিতে চায় না। এসব কারণে অংশীদারি কারবারে পর্যাপ্ত মূলধনের যোগান দান সম্ভব হয় না।
গ. উদ্দীপকে উল্লেখিত রহিম সাহেব একটি প্লাস্টিক কারখানার মালিক। সংগঠক হিসেবে তিনি নানা ধরনের কার্যাবলি পালন করে থাকে।
উৎপাদনের উপকরণগুলোকে সংগঠনের মাধ্যমে সমম্বয় করে যিনি সঠিকভাবে উৎপাদন কাজ পরিচালনা করেন তাকে সংগঠক বলে। সাধারণত একজন সংগঠক ঝুঁকি গ্রহণ, পরিকল্পনা প্রণয়ন, লক্ষ্য নির্ধারণের মতো কাজগুলো করে থাকেন।
উদ্দীপকে লক্ষ করা যায়, রহিম সাহেব একটি প্লাস্টিক কারখানার মালিক। তিনি দক্ষতার সাথে উৎপাদনের বিভিন্ন উপাদান সংগ্রহ ও সমস্বয় করেন। তাছাড়া তিনি কি উৎপাদন করা হবে এবং ভূমি, শ্রম ও মূলধনের সংমিশ্রণ কিরূপ হবে তা নিজেই নির্ধারণ করেন। এমনকি ব্যবসা থেকে অর্জিত লাভ-ক্ষতির ঝুঁকিও তিনি বহন করেন। কাজেই বলা যায় রহিম সাহেব একজন সংগঠকের যাবতীয় কার্যাবলি পালন করেন।
ঘ. উদ্দীপকে রহিম সাহেব যেহেতু একাই সকল ঝুঁকি গ্রহণ করে নিজ বুদ্ধিমত্তা ও দক্ষতা ব্যবহার করে উৎপাদন পরিচালনা করেন, তাই তার প্রতিষ্ঠানটি হলো এক-মালিকানা কারবার। নিচে এক-মালিকানা কারবারের সুবিধা ও অসুবিধা আলোচনা করা হলো:
সুবিধাসমূহ:
1.একমালিকানা কারবারে একজন মালিক থাকায় দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা যায়।
2.প্রত্যক্ষ ও যোগাযোগের কারণে শ্রমিক-মালিকের মধ্যে সবসময় ভালো সম্পর্ক বজায় থাকে।
3.মালিক একজন থাকায় যেকোনো পদ্ধতিতে হিসাব সম্পন্ন করা যায়। এক্ষেত্রে আইনগত কোনো বাধ্যবাধকতা থাকে না।
অসুবিধাসমূহ:
1.এক-মালিকানা কারবারে মালিকের দায় অসীম। ব্যবসায়ের ক্ষতির জন্য তার ব্যক্তিগত সম্পদও ব্যবহার করতে হয়।
2.ঝুঁকি ভাগ করার মতো কেউ থাকে না বলে মালিককে অধিক ঝুঁকি বহন করতে হয়।
3.মালিকের পক্ষে খুব বেশি মূলধন সংগ্রহ করা সম্ভব হয় না। তাই এ ধরনের কারবারে স্বল্প মূলধন, বৃহদায়তন উৎপাদনের অভাব দেখা যায়।
মূলত এসব অসুবিধা থাকা সত্ত্বেও কিছু বিশেষ সুবিধার কারণে এক-মালিকানা কারবার বর্তমানেও প্রচলিত রয়েছে।
৩. আলাউদ্দীন তার দশ বন্ধুকে নিয়ে স্বেচ্ছায়, সমানাধিকার ও সমান দায়িত্বের ভিত্তিতে একটি মৎস্য খামার গড়ে তোলে। কিন্তু মূলধনের স্বল্পতা, অদক্ষ পরিচালনা ও মতবিরোধের কারণে এই মৎস্য খামার আশানুরূপ মুনাফা অর্জন করতে পারেনি। অন্যদিকে বেলাল ও আজগর চুক্তির ভিত্তিতে পরস্পরের উপর বিশ্বাস ও অসীম দায়-দায়িত্ব নিয়ে একটি কার্টন ফ্যাক্টরি প্রতিষ্ঠা করে। এতে যে মুনাফা হয় তা চুক্তি অনুসারে বণ্টিত হয়।
ক. সংগঠক কাকে বলে?
খ. সংগঠন উৎপদনের একটি স্বতন্ত্র ও অপরিহার্য উপাদান- ব্যাখ্যা করো।
গ. উদ্দীপকের আলোকে মৎস্য খামার কোন ধরনের সংগঠন তা চিহ্নিত করে এর বৈশিষ্ট্যসমূহ লেখ।
ঘ. উদ্দীপকের আলোকে মৎস্য খামার ও কার্টন ফ্যাক্টরি এ দুটি সংগঠনের মধ্যে তুলনা করো।
৩ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. উৎপাদনের উপকরণগুলোকে সংগঠনের মাধ্যমে সমম্বয় করে যিনি সঠিকভাবে উৎপাদন কাজ পরিচালনা করেন তাকে সংগঠক বলে।
খ. সংগঠন উৎপাদনের এমন একটি সক্রিয় উপাদান যা কারবার পরিচালনার ক্ষেত্রে অন্যান্য উপাদানকে ক্রিয়াশীল ও উৎপাদনক্ষম করে তোলে।
আধুনিক উপাদান ব্যবস্থা ক্রমান্বয়ে বড় ও জটিল হয়ে পড়ায় সেখানে জনবল ও প্রযুক্তির ব্যবহার, শ্রমবিভাগ পরিবর্তন, শ্রমিক-মালিক সম্পর্ক, বিনিয়োগের সমস্যাসহ বিভিন্ন ধরনের সমস্যার উদ্ভুব ঘটে। এক্ষেত্রে সংগঠনের মাধ্যমে ফলপ্রসূ উপায়ে সঠিক ভাবে এসব ব্যবস্থাপনা আবশ্যক। সুতরাং সংগঠন উৎপাদনের একটি স্বতন্ত্র ও অপরিহার্য উপাদান।
গ. উদ্দীপকে যে মৎস্য খামারের কথা বলা হয়েছে তা একটি সমবায় প্রতিষ্ঠান বা কারবার।
কিছুসংখ্যক ব্যক্তি নিজেদের মধ্যে কোনো সাধারণ অর্থনৈতিক উদ্দেশ্য সাধনের জন্য স্বেচ্ছোয়, সমান অধিকার ও দায়িত্বের ভিত্তিতে যেীথভাবে যে কারবার গঠন করে তাকে সমবায় প্রতিষ্ঠান বা কারবার বলে।
উদ্দীপকের মৎস্য খামারে সমবায় প্রতিষ্ঠান বা কারবারের মতো কতকগুলো স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য লক্ষ করা যায়। সমবায় কারবার গনতান্ত্রিক চেতনার ভিত্তিতে পরিচালিত হয়। এ কারবার উৎপাদক ও ভোক্তা উভয়ের স্বার্থ-হননকারী মধ্যস্বত্বভোগীদের কোনো অসিস্তেত্ব থাকে না। সমবায় কারবারে শ্রমিকরাই মালিক। এজন্য এখানে অন্য কারবারের মতো মালিক ও শ্রমিকদের মধ্যে স্বার্থ নিয়ে বিরোধ ও সংঘাত নেই। এর মূল উদ্দেশ্য হলো কল্যাণ বৃদ্ধি, মুনাফা অর্জন নয়। এটি সমাজে নিঃস্ব, অবহেলিত ও বেকার লোকদের মর্যাদার সাথে বেঁচে থাকার সুযোগ সৃষ্টি করে থাকে। তাই পরস্পরের মধ্যে প্রতিযোগিতার পরিবর্তে সহযোগিতার মনোভাব দেখা যায়। সমবায় প্রতিষ্ঠান বা কারবারের এসব বৈশিষ্ট্যই উদ্দীপকে মৎস্য খামারে দেখা যায়।
ঘ. উদ্দীপকে আল্লাউদ্দিন ও তার দশ বন্ধুকে নিয়ে গড়ে ওঠা মৎস্য খামারটি হলো একটি সমবায় প্রতিষ্ঠান বা কারবার। আর বেলাল ও আসগরের প্রতিষ্ঠিত কার্টন ফ্যাক্টরিটি হলো একটি অংশীদারি কারবার। এ বিবেচনায় উদ্দীপকের আলোকে মৎস্য খামার ও কার্টন ফ্যাক্টরি এ দুটি সংগঠনের মধ্যে নিচে তুলনা করা হলো:
আলাউদ্দিন ও তার দশ বন্ধু স্বেচ্ছায়, সমান অধিকার ও দায়িত্বের ভিত্তিতে খামারটি গড়ে তোলে। অন্যদিকে বেলাল ও আসগর চুক্তির ভিত্তিতে পরস্পরের ওপর বিশ্বাস স্থাপন করে, অসীম দায়-দায়িত্ব নিয়ে কার্টন ফ্যাক্টরি প্রতিষ্ঠা করে। মৎস্য খামারটি সমবায় নন্দিত আদর্শের ভিত্তিতে গড়ে উঠেছে, এ আদর্শ হলো ‘সকলের তরে সকলে আমরা, প্রত্যেকে আমরা পরের তরে’। কার্টন ফ্যাক্টরিতে এমন কোনো আদর্শ নেই। মৎস্য খামারটি মূলত সদস্যদের কল্যাণ সাধন, বাজার থেকে কিছুটা কম দামে মাছ সরবরাহ, স্থানীয় জণগনের চাহিদা পূরণ ইত্যাদি উদ্দেশ্য সাধনের জন্য গড়ে উঠেছে। কার্টন ফ্যাক্টরিতে সর্বাধিক মুনাফা অর্জন, স্থানীয় ও অস্থানীয় ব্যবসায়ীদের কার্টনের চাহিদা পূরণ, অংশীদারদের বৈষয়িক সমৃদ্ধি আনয়ন ইত্যাদি উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠিত।
কার্টন ফাক্টরিটি প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে এর সদস্যদের দায়-দায়িত্ব, সরবরাহকৃত মূলধন, কারবারের লাভ-লোকসান, সদস্যদের আনুপাতিক সংশ্লিষ্টতা, অর্থ-সংগ্রহ, নতুন সদস্য গ্রহণ ইত্যাদি ব্যাপারে অংশীদারদের মধ্যে লিখিত চুক্তি হয়েছে। কিন্তু মৎস্য খামারটি প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে সদস্যদের মধ্যে এরূপ কোনো চুক্তি হয়নি।
এভাবে উদ্দীপকের আলোকে মৎস্য খামার ও কার্টন ফ্যাক্টরি এ দুইটি সংগঠনের মধ্যে তুলনা করা যায়।
৪. জসীম মিয়া তার একক নেতৃত্বে ও ব্যবস্থাপনায় ৫০,০০০ টাকা মূলধন নিয়োগ করে একটি হাঁস-মুরগির খামার প্রতিষ্ঠা করেন। কয়েক বছরের মধ্যেই জসীম মিয়ার খামারটি বড় খামারে পরিণত হয়। অন্যদিকে জসীম মিয়ার সাফল্য দেখে তার কয়েকজন বন্ধু মিলে একটি খামার প্রতিষ্ঠা করে।
ক. অংশীদারি কারবার কী?
খ. দারিদ্র্যের হার NGO কমাতে কীভাবে ভূমিকা রাখে?
গ. উদ্দীপক অনুযায়ী জসীম মিয়ার খামারের প্রকৃতি নির্ণয় করো।
ঘ. উদ্দীপকের জসীম মিয়ার বন্ধুদের প্রতিষ্ঠিত খামারের সফলতা কী কী বিষয়ের ওপর নির্ভর করবে? বিশ্লেষণ করো।
৪ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. দুই বা ততোধিক ব্যক্তি মুনাফা অর্জনের উদ্দেশ্যে স্বেচ্ছায় চুক্তিবদ্ধ হয়ে যে কারবার গঠন করে তাকে অংশীদারি কারবার বলে।
খ. ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রমের মাধ্যমে দরিদ্র লোকের কর্মসংস্থান সৃষ্টির দ্বারা NGO দারিদ্র্যের হার কমাতে ভূমিকা রাখছে।
বাংলাদেশে বিভিন্ন NGO কৃষি, কুঠির শিল্প, ঋণদান ও সঞ্চয়, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পরিবার পরিকল্পনা, স্যানিটেশন ইত্যাদিসহ নানাবিধ সামাজিক ও অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে নিজেদের NGO সম্পৃক্ত করছে। এর ফলে দেশে দরিদ্র লোকদের ভাগ্য উন্নয়ন হচ্ছে। অর্থাৎ দরিদ্র লোকদের আয় বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলশ্রুতিতে দেশে দারিদ্র্যের হার দিন দিন কমছে।
গ. উদ্দীপক অনুযায়ী জসীম মিয়ার খামারটি হলো এক-মালিকানা কারবার। নিচে এর বৈশিষ্ট্য চিহ্নিত করা হলো।
সাধারণত একজন ব্যক্তির একক মালিকানায় গঠিত, পরিচালিত ও নিয়ন্ত্রিত ব্যবসাকে এক-মালিকানা কারবার বলে। অর্থাৎ মুনাফা অর্জনের উদ্দেশ্যে যখন কোনো ব্যক্তি নিজ দাযিত্বে মূলধন জোগাড় করে কোনো ব্যবসায় গঠন ও পরিচালনা করে এবং উক্ত ব্যবসায় অর্জিত লাভ বা ক্ষতি একাই ভোগ করে তখন তাকে এক-মালিকানা কারবার বলে।
উদ্দীপকে লক্ষ করা যায়, জসীম মিয়া তার একক নেতৃত্বে ও ব্যবস্থাপনায় ৫০,০০০ টাকা মূলধন বিনিয়োগ করে একটি হাঁস-মুরগির খামার প্রতিষ্ঠা করে। তাই তার খামারটি হলো এক-মালিকানা কারবার। এ ধরনের কারবারে মালিক একাই ব্যবসার সকল সিদ্ধান্ত নেয় এবং ব্যবসায়ের দায়িত্ব হস্তান্তর করা যায় না। তবে এক-মালিকানা কারবারের স্থায়ীত্ব মালিকের ইচ্ছে ও ক্ষমতার ওপর নির্ভরশীল।
ঘ. উদ্দীপক অনুযায়ী জসীম মিয়ার বন্ধুদের প্রতিষ্ঠিত খামারটি হলো অংশীদারি কারবার। এ ধরনের কারবারের সাফল্য নির্ভর করে পারস্পরিক আস্থা ও বিশ্বাসের ওপর।
একের অধিক ব্যক্তি দ্বারা গঠিত কারবারকে অংশীদারি কারবার বলে। সাধারণত অংশীদারি কারবারে সর্বনিমণ ২ জন, সর্বউচ্চ ২০ জন এবং ব্যাংকিং অংশীদারিত্বের ক্ষেত্রে ১০ জন সদস্য থাকতে পারে। এ ধরনের কারবারের মূলনীতি হলো পারস্পরিক আস্থা ও বিশ্বাস। কারণ এই পারস্পরিক আস্থা ও বিশ্বাসের কল্যাণে যেমন ব্যবসাটি সাফল্যের মুখ দেখতে পারে তেমনি এর অভাবে কারবারটি বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
উদ্দীপকে দেখা যায় জসীম মিয়ার সাফল্য দেখে তার বন্ধুরা মিলে একটি খামার প্রতিষ্ঠা করে। অর্থাৎ বন্ধুদের মধ্যে পারস্পারিক আস্থা ও বিশ্বাসের ওপর ভিত্তি করে তারা একটি অংশীদারি কারবার শুরু করে। এ ধরনের কারবার এক-মালিকানার চেয়ে ঝুঁকি কম।
আবার অংশীদারিদের মধ্যে কেউ অদক্ষ হলে সবাইকে সমস্যা মোকাবিলা করতে হয়। ফলে অংশীদারিদের দক্ষতাও এ ধরনের কারাবারের সাফল্যকে প্রভাবিত করে। তাছাড়া পারস্পরিক আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হলে নির্ভুল সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়। এতে কারবারের সাফল্য নিশ্চিত হয়।
উপরোক্ত বিষয়গুলোর ওপর অংশীদারি কারবারের সাফল্য নির্ভর করে।
৫. করিম কৃষি উপকরণ তৈরির কারখানায় কাজ করে। আর মনে মনে স্বপ্ন দেখে সেও একদিন একটি কারখানার মালিক হবে। সে কাজে বেশ দক্ষতা অর্জন করেছে। এখন সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের পালা উদ্যোক্তা হবার।
ক. BRAC এর পূর্ণরূপ কী?
খ. সংগঠনকে শিল্পের চালক বলা হয় কেন?
গ. একজন শিল্প উদ্যোক্তা হিসেবে করিম কী কী যোগ্যতা অর্জন করেছে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্যোক্তা হবার স্বপ্ন বাস্তবায়নে করিমের করণীয় সম্পর্কে ধারণা দাও।
৫ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. BRAC এর পূর্ণরূপ: Bangladesh Rural Advancement Council.
খ. সংগঠক উৎপাদনের সকল উপাদানকে সংগ্রহ করে উৎপাদনকে সফল করে। উৎপাদন ক্ষেত্রে কোনো কিছু উৎপাদনের জন্য পরিকল্পনা প্রণয়ন, মেীলিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও নীতি নির্ধারণ সংগঠকের গুরুত্বপূর্ণ কাজ। এছাড়া তিনি উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ সংগ্রহ, তাদের মধ্যে সমম্বয় সাধন, মূলধন সংগ্রহ ও উৎপাদন ক্ষেত্রে শ্রমবিভাগের মাত্রা নির্ধারণ করেন। সংগঠক উৎপাদনে নিযুক্ত উপাদানগুলোর পারশ্রমিক প্রদান করেন, উৎপাদনের ঝুঁকি বহন করেন, অব্যাহতভাবে উৎপাদন চালিয়ে যান এবং উৎপাদিত দ্রব্যের বাজার বিস্তৃত করেন। তার এ সকল কাজ সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হলে গঠিত কারবার মুনাফা অর্জন করে ও ব্যবসায়ে টিকে থাকে। এসব করণে সংগঠককে উৎপাদনের চালিকা শক্তি বলা হয়।
গ. একজন শিল্প উদ্যোক্তা হতে করিমের সাংগঠনিক ক্ষমতা, উদ্যোক্তার আকাঙক্ষা,বুদ্ধিমত্তা, কর্মের দৃঢ়তা এবং দুরদর্শিতার যোগ্যতা অর্জন করতে হবে।
যে কোনো উৎপাদন প্রতিষ্ঠানের সফলতা সংগঠকের দক্ষতা, কর্মনিপূণতা ও বুদ্ধিমত্তার উপর নির্ভর করে। তাই উৎপাদনের উপাদানসমূহের সুষ্ঠু প্রয়োগের মাধ্যমে উৎপাদন ব্যবস্থাকে পরিচালনা করাই হলো সফল সংগঠকের দায়িত্ব। তাছাড়া সফল উদ্যোক্তার জন্য সাংগঠনিক দক্ষতা ও ক্ষমতা অর্জন অপরিহার্য। সেই সাথে উপস্থিত ও সম্ভাব্য পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য উদ্যোক্তাকে চেীকাস ও বুদ্ধিমত্তা হতে হবে। কারণ সামান্য পুঁজি ও সম্পদ নিয়ে অনেক বুদ্ধিমত্তার গুণে সফল উদ্যোক্তা হয়েছে। আবার একজন সফল উদ্যোক্তা সুদৃঢ়ভাবে কর্মে নিয়োজিত থাকেন এবং জয়লাভ করেন। তাছাড়া একজন সফল উদ্যোক্তার একটি বিশেষ গুণ হলো দুরদর্শিতা। এর মাধ্যমেই একজন উদ্যোক্তা বর্তমানে ভবিষ্যৎকে পরিগণনা করেন।
করিম কৃষি উপকরণ কারখানায় কাজ করেন। সে কাজ শেখার মাধ্যমে একটি কারখানার মালিক হওয়ার ইচ্ছে পোষণ করছে। করিমের মধ্যে সংগঠকের দক্ষতা, কর্মনিপূণতা ও বুদ্ধিমত্তা এবং দুরদর্শিতা রয়েছে। তাই বলা যায় করিম একজন সফল উদ্যোক্তা হতে পারে।
ঘ. উদ্যোক্তা হবার স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য করিমকে বিভিন্ন ধরনের কার্যাবলি দক্ষতার সাথে সম্পন্ন করতে হবে।
কীভাবে উৎপাদন করা হবে, ভূমি, শ্রম ও মূলধনের মিশ্রণ কিরূপ হবে, উৎপাদিত দ্রব্যই বা কি হবে, কী ধরনের শ্রমিক নির্ধারণ করা হবে ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারে উদ্যোক্তাকে প্ররিকল্পনা প্রণয়ন ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে। তাছাড়া উৎপাদিত দ্রব্যের লক্ষমাত্রা নির্ধারণ, সর্বোচ্চ মুনাফার জন্য কতটুকু দ্রব্য উৎপাদন করা উচিত, উপযুক্ত শ্রমিক নিয়োগ করে কীভাবে উৎপাদন খরচ নিমণ পর্যায়ে রাখা যায় এরূপ সিদ্ধান্ত উদ্যোক্তাকে নিতে হবে। উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় ভূমি, শ্রম ও মূলধন এ তিনটি উপকরণের সমন্বয়-সাধন করে সংগঠক। উদ্যোক্তা প্রয়োজনীয় মূলধন ও দক্ষ শ্রমিক নির্ধারণ করে এবং উপযুক্ত জায়গা নির্ধারণ করে উৎপাদন কাজ পরিচালনা করেন। উদ্যোক্তা ছাড়া উৎপাদনকে কল্পনা করা যায় না। ব্যাংকের সুদের হার এবং অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সুদের হারের সাথে নিজের মূলধনের সমন্বয়-সাধনের কাজ উদ্যোক্তাকে করতে হয়। তাছাড়াও উদ্যোক্তাকে ঝুঁকি নিতে হয়। দক্ষতার ওপর নির্ভর করে শ্রমিক ও কর্মচারীদের উৎপাদনের পরিমাণ বা কাজের পরিমাণ। তাই সংগঠককে দক্ষতার সাথে তত্ত্বাবধান করতে হয়। আবর উৎপাদিত দ্রব্য বিক্রি করে উদ্যোক্তা আয় করে। উপার্জিত আয় উৎপাদনের উপকরণগুলোর মধ্যে কীভাবে বণ্টিত হবে বা কোন অনুপাতে তাদের মধ্যে বিতরণ করা হবে তা উদ্যোক্তাই নির্ধারণ করবে।
সুতরাং উপরের আলোচনায় উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন বাস্তবায়নে করণীয় আলোচনা করা হয়েছে।
৬. কাশেম ১০ লক্ষ টাকা নিয়ে ব্যবসা শুরু করে। তার ব্যবসা বড় হলে সে তার আরোও ৩ বন্ধুকে অংশীদার করে। পরবর্তী সময়ে তাদের ব্যবসা আরো বড় হলে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ নিবন্ধন করে। বর্তমানে তার কোম্পানি পৃথিবী বিখ্যাত।
ক. সরকারি সংগঠন কী?
খ. সংগঠন উৎপাদনের প্রাণ-ব্যাখ্যা করো।
গ. উদ্দীপকে কী কী ধরনের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
ঘ. মূলধন গঠনে স্টক এক্সচেঞ্জ এর ভূমিকা বর্ণনা করো।
৬ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. সরকার কর্তৃক যেসব সংগঠন পরিচালনা করা হয় তাকে সরকারি সংগঠন বলে।
খ. যেকোনো উৎপাদন প্রতিষ্ঠানের সফলতা সংগঠকের দক্ষতা,কর্মনিপূণতা ও বুদ্ধিমত্তার ওপর নির্ভর করায় সংগঠককে উৎপাদনের প্রাণ বলা হয়।
সংগঠক ও উদ্যোক্তার যোগ্যতা ও গুণাবলির ওপর সংগঠনের সফলতা ও বিফলতা নির্ভর করে। এজন্যই উদ্যোক্তার গুণাবলি ও যোগ্যতার কারণে ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা বৃহৎ ব্যবসায় রূপ নেয়। আবার দক্ষতার অভাবে ব্যবসায় ক্রমাগত ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যায়। বাস্তবে এসবের জ্বলন্ত প্রমাণ বিদ্যমান। সুতরাং প্রতিটি সংগঠকই উৎপাদনের প্রাণ হিসেবে বিবেচ্য হয়।
গ. কাশেমের প্রতিষ্ঠানটি প্রথমে এক-মালিকানা কাববার ছিল। পরবর্তী সময়ে তিনি তার ৩ বন্ধুকে একত্রিত করে প্রতিষ্ঠানটি অংশীদারি কারবারে পরিণত করেন। সর্বশেষে তাদের প্রতিষ্ঠানটি ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ নিবন্ধনের মাধ্যমে যেীথমূলধনী কারবারে পরিণত হয়।
যে কারবারে মাত্র একজন মালিক থাকে তাকে এক-মালিকানা কারবার বলে। উদ্দীপকে কাশেম ১০ ও লক্ষ টাকা নিয়ে যে প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তোলেন তা এক-মালিকানা কারবার স্বরূপ। আবার পরস্পর পরিচিতি দুই বা ততোধিক ব্যক্তি স্বেচ্ছায় তাদের মূলধন একত্রিত করে চুক্তিবদ্ধ হয়ে যে কারবার প্রতিষ্ঠা করে তা হলো অংশীদারি কারবার। পর্যাপ্ত মূলধন, ঝুঁকি যেীথভাবে বহন, যেীথ সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং দক্ষ পরিচালনার জন্য কাশেম তার আরোও তিন বন্ধুকে নিয়ে অংশীদারি কারবার গড়ে তোলেন।
অন্যদিকে যেীথমূলধনী কারবার বলতে বহুসংখ্যক ব্যক্তির যেীথ মালিকানায় গঠিত কারবারকে বোঝায়। যেীথমূলধনী কারবার অতি সহজে শেয়ার, ঋণ পত্র বিক্রি করে, ঋণ গ্রহণ করে প্রয়োজনীয় মূলধন সংগ্রহে সমর্থ হয়। সেজন্য কাশেমরা তাদের ব্যবসা আরও বড় করলে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ নিবন্ধন করে।
ঘ. দেশের পুঁজি গঠনে শেয়ারবাজার নানাভাবে ভূমিকা রাখে। মূলধন গঠনে শেয়ারবাজারের গুরুত্ব অপরসীম।
প্রথমত, শেয়ারবাজার দেশে পুঁজি গতিশীলতা বৃদ্ধি করে। শেয়ারবাজারে বিশেষ করে সেকেন্ডারি শেয়ার মার্কেটে বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ার প্রতিনিয়ত বেচাকেনা হয়। এর ফলে পুঁজির গতিশীলতা এবং উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি পায়।
দ্বিতীয়ত, শেয়ারবাজার দেশে পুঁজি গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। দেশে অনেক উচ্চবিত্ত লোক আছে যারা প্রতিষ্ঠানিক সুযোগ-সুবিধার অভাবে তাদের সঞ্চয়কে কোনো উৎপাদনমুখী কাজে ব্যবহার না করে অলসভাবে ফেলে রাখে। শেয়ারবাজার এসব সঞ্চয়কারীদের অলস অর্থকে বিনিয়োগ করে পুঁজি গঠনে সহায়তা করে।
তৃতীয়ত, শেয়ারবাজার দেশের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের জন্য বিশেষ সুযোগ সৃষ্টি করেছে। সমাজে এমন অনেক সঞ্চয়কারী আছে যারা তাদের সঞ্চয়কে বিনিয়োগ কাজে লাগাতে চায়। কিন্তু বর্তমানে বৃহদায়তন শিল্পের যুগে কোনো ক্ষুদ্র আমানতকারীর পক্ষে একক ভাবে কোনো শিল্প প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে শেয়ারবাজারে শেয়ার ক্রয় করে তারা যেকোনো শিল্প প্রতিষ্ঠানের মালিকানায় অংশগ্রহণ করতে পারে।
চতুর্থত, শেয়ারবাজারে জনগণকে বিনিয়োগে উৎসাহ প্রদান করে। পণ্য বাজারের মতো শেয়ারবাজারেও জনগণ ইচ্ছেমতো যেকোনো কোম্পানির শেয়ার ক্রয় করতে পারে। আবার ইচ্ছা মতো যেকোনো কোম্পানির শেয়ার বিক্রি করে নগদ টাকা ফেরত পেতে পারে। এ কারণে জনগণ শেয়ারবাজারে বিনিয়োগে উৎসাহিত হয়। ফলে শেয়ারবাজারের মাধ্যমে দেশে বিনিয়োগ বৃদ্ধি পায়।
৭. ঝুঁকি গ্রহণ, অনিশ্চয়তা, তত্ত্বাবধান, উপকরণ নিযোগ, পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন, মূলধন সংগ্রহ ও নিয়োগ, নতুন নতুন বাজার অনুসন্ধান, পণ্যের গুণগত মান নিয়ন্ত্রণ সবই উদ্যোক্তার গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বের অংশ। উদ্যোক্তার দক্ষতার ওপরই কারবারের দক্ষতা নির্ভর করে। এর ব্যতিক্রম হলে কারবার পন্ডও হতে পারে।
ক. যেীথ মূলধনী কারাবার কী?
খ. আধুনিক উৎপাদন ব্যবস্থায় উদ্যোক্তাকে কারবারের প্রাণ বলা হয় কেন?
গ. উদ্দীপকের আলোকে একজন দক্ষ উদ্যোক্তার গুরুত্বপূর্ণ কার্যাবলির বিবরণ দাও।
ঘ. কেন একটি কারবার সঠিকভাবে পরিচালিত হতে পারে না? উদ্দীপকের আলোকে বর্ণনা করো।
৭ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. যেীথ মূলধনী কারবার এরূপ কারবার যা কিছু সংখ্যক ব্যক্তির যেীথ প্রতিষ্ঠান, যেখানে তারা কোনো কারবার করে তার লাভ-লোকসান ভোগ করার জন্য যেীথভাবে সাধারণ তহবিলে অর্থ প্রদান করে থাকে।
খ. প্রাণ না থাকলে যেমন দেহের অসিস্তেত্ব থাকে না, তেমনি উদ্যোক্তা না থাকলে কারবারও চলতে পারে না।
উদ্যোক্তা কারবারের পরিকল্পনা প্রণয়ন করেন এবং কারবারের মেীলিক সিদ্ধান্ত ও নীতি গ্রহণ করেন। এছাড়া তিনি উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণগুলো সংগ্রহ, তাদের মধ্যে সমন্বয় সাধন, মূলধন সংগ্রহ ও উৎপাদন ক্ষেত্রে শ্রমবিভাগের মাত্রা নির্ধারণ করে থাকেন। এজন্যই আধুনিক উৎপাদন ব্যবস্থায় উদ্যোক্তাকে কারবারের প্রাণ বলা হয়।
গ. একজন দক্ষ উদ্যোক্তা কীভাবে তার কার্যাবলি সম্পাদন করে কারবারকে সফল করে তোলে তার বিবরণ নিচে দেওয়া হলো:
একজন দক্ষ উদ্যোক্তা কারবারের সকল ঝুঁকি বহন করতে প্রস্তুত থাকেন। ভবিষ্যতে উৎপাদিত দ্রব্যের চাহিদা হ্রাসের ফলে কিংবা চাহিদা পরিবর্তন ঘটলে যে ব্যবসায়ীক অনিশ্চয়তা দেখা দিতে পারে তিনি তা মোকাবিলা করতে সদা সচেষ্ট থাকেন। একজন দক্ষ উদ্যোক্তা অভিঙ্গতা ও বিচক্ষণতার সাথে উৎপাদন কাজ পরিচালনা ও তত্ত্বাবধান করেন। তিনি উৎপাদনের জন্য সংগৃহীত উপকরণের মাধ্যমে এমন ভাবে সমন্বয় সাধন করেন যাতে উৎপাদিত ব্যয় সর্বনিমণ হয় এবং মুনাফার পরিমাণ অধিক হয়। দক্ষ উদ্যোক্তা তার মেধার ভিত্তিতে বাস্তব সন্মত উৎপাদন পরিকল্পনা প্রণয়ন করেন এবং তা তার বুদ্ধিমত্তার আলোকে বাস্তবায়নের চেষ্টা করেন। মূলধন হলো কারবারের প্রাণ আর শ্রম হলো তার হাতিয়ার। তাই একজন দক্ষ উদ্যোক্তা সবচেয়ে কম খরচে ও নিরাপদ উৎস থেকে মূলধন সংগ্রহ ও যোগ্য শ্রমিক নিয়োগ করেন। এছাড়া দ্রব্যের বাজার বিস্তৃত করার জন্য তিনি নতুন নতুন ক্রেতাদেরকে আকৃষ্ট করার উদেশ্যে প্রচারণা করেন।
এভাবে একজন দক্ষ উদ্যোক্তা তার বাস্তবমুখী বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করে তার কারবারকে সাফল্যের চূড়াই নিয়ে যায়।
ঘ. উদ্দীপক থেকে জানা যায়, কোনো কারবার যদি অদক্ষ উদ্যোক্তা দ্বারা পরিচালিত হয় তবে উৎপাদন পন্ডও হতে পারে। এ প্রেক্ষিতে কেন একটি কারবার সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হতে পারে না তা বিশ্লেষণ করা হলো:
কোনো কারবারে উদ্যোক্তা যদি অদক্ষ হন তবে তিনি তার ঝুঁকি বহন ও অনিশ্চয়তা মোকাবিলা করতে অপারগ হন। এজন্য কারবার ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে। একজন দক্ষ উদ্যোক্তা উৎপাদন কার্য পরিচালনা ও তত্ত্বাবধানে ব্যর্থ হলে কখনো অতি উৎপাদন, কখনো নিমণ উৎপাদন ঘটে। আবার কখনো কারখানার উৎপাদন হঠাৎ করে বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এরূপ পরিস্থিতি মোকাবিলা করার মতো সাহস, বুদ্ধি ও দক্ষতা উদ্যোক্তার থাকে না।
উৎপাদন পরিকল্পনা অনুযায়ী পরিচালনা করতে হলে ব্যবহৃত উপকরণসমূহের মধ্যে নির্ধারিত অনুপাত প্রায়ই রক্ষা হয় না। সে অবস্থায় উৎপাদন ক্ষেত্রে বিশৃঙ্খলা, সম্পদের অপচয়, কারখানার কাজ করার পরিবেশ বিনষ্ট প্রভৃতি সমস্যা দেখা দেয়। এ অবস্থায় কারাবরে ক্ষতি হয়। উদ্যোক্তা অদক্ষ হলে তিনি সব থেকে কম খরচে মূলধন সংগ্রহ করতে পারে না।
সুতরাং বলা যায়, একজন অদক্ষ উদ্যোক্তা বিভিন্ন কারণে কারবার সঠিকভাবে পরিচালনা করতে পারেন না এবং কারবারকে সঙ্কটের মধ্যে ফেলে।
৮. জনাব আব্দুর রহিম তার কয়েকজন বন্ধু মিলে আইনগত ভাবে চুক্তিবদ্ধ হয়ে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। কয়েক বছরের মধ্যে তাদের প্রতিষ্ঠানের সুনাম ছড়িয়ে পড়ে এবং লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়। কিন্তু মূলধনের অভাবে তারা তাদের ব্যবসা সম্প্রসারণ করতে পারছে না। তাই তারা সংশ্লিষ্ট সরকারি প্রতিষ্ঠানে নিবন্ধিত হওয়ার মাধ্যমে জনগণের নিকট শেয়ার বিক্রি করে ব্যবসায় সম্প্রসারণ করেন।
ক. এনজিও কী?
খ. চুক্তিই অংশীদারি কারবারের ভিত্তি-ব্যাখ্যা করো।
গ. উদ্দীপকের জনাব আব্দুর রহিম ও তার বন্ধুদের বর্তমান ও পূর্বেকার প্রতিষ্ঠানের ধরন ব্যাখ্যা করো।
ঘ. জনাব আব্দুর রহিম ও তার বন্ধুদের পূর্বেকার প্রতিষ্ঠান অপেক্ষা বর্তমান প্রতিষ্ঠান অনেক সুবিধাজনক- মতামত দাও।
৮ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. ব্যক্তি মালিকানা বা যেীথ উদ্যোগে যে সংগঠন সমাজের অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর জন্য বিভিন্ন সেবামূলক কর্মকান্ড পরিচালনা করে তাকে এনজিও বলে।
খ. চুক্তিই অংশীদারি কারবারের মূলভিত্তি।
চুক্তিবদ্ধ সম্পর্কের আলোকেই ব্যবসা গঠিত ও পরিচালিত হয়। এরূপ চুক্তি মেীখিক ও লিখিত যেকোনো রকম হতে পারে। এ কারবারে সকল সদস্য মিলেমিশে বা সবার পক্ষে একজন পরিচালনার দায়িত্ব পালন করে। অংশীদারি কারবারে মালিক বা সদস্যরা সমান ভাবে অথবা চুক্তি অনুসারে যেমনি মূলধন সরবরাহ করেন তেমনি লাভ-ক্ষতিও বণ্টন করে নেন।
গ. উদ্দীপকের জনাব আব্দুর রহিম ও তার বন্ধুদের বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটি হলো একটি যেীথ মূলধনী প্রতিষ্ঠান ও পূর্বের প্রতিষ্ঠানটি ছিল অংশীদারি প্রতিষ্ঠান।
বহুসংখ্যক ব্যক্তি সম্মিলিতভাবে মূলধনের যোগান দিয়ে যেীথভাবে যে কারবার প্রতিষ্ঠা করে তাকে যেীথ মূলধনী কারবার বলে। এ কারবারে পর্যাপ্ত পরিমাণ মূলধন সংগ্রহ করা যায়। এসব প্রতিষ্ঠান প্রয়োজনে শেয়ার হস্তান্তর বা বিক্রি করে মূলধন বৃদ্ধি করতে পারে। ফলে যেীথ মূলধনী কারবারে বৃহদায়তন উৎপাদন করা যায়।
অন্যদিকে অংশীদারি কারবার বলতে সেই প্রতিষ্ঠানকে বোঝায় যেখানে দুই বা ততোধিক ব্যক্তি চুক্তিবদ্ধ হয়ে নিজ উদ্যোগে মূলধন গঠন করে কারবার পরিচালনায় নিয়োজিত হয় এবং উক্ত মূলধনের অনুপাতে অর্জিত সকলে মুনাফা বণ্টন করে নেন। তবে এ কারবারে ইচ্ছে করলেই সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধি করে মূলধন সংগ্রহ করতে পারে। এছাড়াও কোনো অংশীদার তার অংশ বা শেয়ার অন্য কারো কাছে হস্তান্তর বা বিক্রি করতে পাওে না। চুক্তি মোতাবেক সকল সদস্যের অংশগ্রহণের মাধ্যমে এ কারবার পরিচালিত হয় বলে কোনো অংশীদার মারা গেলে আইনগতভাবে উক্ত কারবার বন্ধ হয়ে যায়।
ঘ. জনাব আব্দুর রহিম ও তার বন্ধুদের পূর্বের প্রতিষ্ঠান তার অংশীদারি কারবার অপেক্ষা বর্তমান প্রতিষ্ঠান বা যেীথ মূলধনী কারবার অধিক সুবিধাজনক।
অংশীদারি কারবারে অসুবিধাসমূহ থেকে উত্তরণের জন্য যেীথ মূলধনী কারবারের উদ্ভব হয়েছে। এ কারবারে বহুসংখ্যক ব্যক্তি সম্মিলিতভবে মূলধনের যোগান দিয়ে থাকে। তাছাড়া এ কারবারে শেয়ার বাহিরের জনগণের কাছে বিক্রি করা যায় বলে শেয়ার হস্তান্তরের সুযোগ থাকে। ফলে বিপুল পরিমাণ মূলধন সংগ্রহ করা যায়। এরূপ মূলধন সংগ্রহের সুযোগ থাকায় এ কারবারে বৃহদায়তন উৎপদন সম্ভব। যেীথ মূলধনী কারবারে শেয়ারহোল্ডারদের অনুপস্থিতিতে কারবারের স্থায়ীত্ব অনেক বেশি হয়। অন্যদিকে অংশীদারি কারবারে শেয়ার হস্তান্তরের কোনো সুযোগ থাকে না বা মূলধন বৃদ্ধির ইচ্ছে করলেও অংশীদারের সংখ্যা বাড়ানো যায় না। এজন্য কারবার সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত মূলধন সরবরাহ বা সংগ্রহ করা কঠিন হয়ে পড়ে।
সুতরাং উপরের আলোচনার প্রেক্ষিতে বলতে পারি, অংশীদারি কারবার অপেক্ষা যেীথ মূলধনী কারবার অধিক সুবিধাজনক।
৯. শাহানা বেগম অর্থনীতিতে এমএ পাস করে তার বাসার কাছেই একটি বুটিক কারখানা স্থাপন করেন। তার কারখানায় ১০ জন মহিলা শ্রমিক কাজ করেন। তিনি নিজেই ব্যবসার উপকরণ সংগ্রহ করেন এবং ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পালন করেন। প্রথম বছর ৩ লক্ষ টাকা মুনাফা হলেও তিনি তার ব্যবসাকে আরো সম্প্রসারিত করেন। এ ব্যবসার ঝুঁকি তাকে এককভাবে বহন করতে হয়।
ক. একক মালিকানা কারবার কী?
খ. উৎপাদনের ক্ষেত্রে সংগঠকের ভূমিকা কী প্রধান?
গ. শাহানা বেগমের প্রতিষ্ঠান কোন মালিকানাধীন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান? ব্যাখ্য করো।
ঘ. আমাদের দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে এসব প্রতিষ্ঠানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে-ব্যাখ্যা করো।
৯ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. কোনো ব্যক্তি এককভাবে ব্যবসায় গঠন ও নিয়ন্ত্রণ, মূলধন সরবরাহ, ঝুঁকি ও পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ এবং মুনাফা বা ক্ষতি একাই ভোগ করলে তাকে একক মালিকানা কারবার বলে।
খ. উৎপাদনের উপাদানসমূহের মধ্যে সমন্বয়ন সাধন করা সংগঠক বা উদ্যোক্তার প্রধান কাজ।
উৎপাদনের উপকরণগুলোকে সমন্বয় করে উৎপাদন কাজটি সঠিকভাবে যে ব্যক্তি পরিচালনা করেন তাকে সংগঠক বা উদ্যোক্তা বলা হয়। উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ ভূমি, শ্রম ও মূলধন-এ তিনটি উপকরণের সমন্বয় সাধন করেন সংগঠক। উদ্যোক্তা প্রয়োজনীয় মূলধন ও দক্ষ শ্রমিক নির্ধারণ করেন এবং উপযুক্ত জায়গা নির্বাচন করে উৎপাদন কাজ পরিচালনা করেন।
গ. মালিকানার ভিত্তিতে উদ্দীপকের শাহানা বেগমের কারখানাটি এক-মালিকানা কারবার।
এক-মালিকানা কারবার একক ব্যক্তির মালিকানায় গঠিত ও পরিচালিত হয়। মালিক নিজেই এ ব্যবসায়ের সব মূলধন বিনিযোগ করে। ব্যবসায়ের সব মুনাফা তিনি একাই ভোগ করেন। ঝুঁকিও তিনি একই বহন করেন।
উদ্দীপকের শাহানা বেগম বুটিক কারখানা স্থাপন করে কারবারকে জীবিকা হিসেবে বেছে নিয়েছে। উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে তিনি নিজ দক্ষতায় একজন উদ্যোক্তা হয়েছেন। তিনি একাই কারখানাটি পরিচালনা করেন। কাজেই পুঁজিও তিনি নিজেই বিনিয়োগ করেন। তিনি যেহেতু একাই সব পুঁজি বিনিয়োগ করেন তাই কারখানার সম্পূর্ণ মুনাফা তিনি একাই ভোগ করেন। এসব বৈশিষ্ট্য এক-মালিকানা কারবারের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
সুতরাং বলা যায়, মালিকানার ভিত্তিতে শাহানা বেগমের কারখানাটি এক-মালিকানা কারবার।
ঘ. আমাদের অর্থনৈতিক উন্নয়নে শাহানা বেগমের স্থাপন করা প্রতিষ্ঠানের মতো প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।
প্রথমত, আমাদের দেশে বিভিন্ন ধরনের দ্রব্য ও সেবাকর্মের যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে। এ অবস্থায় শাহানা বেগমের মতো সংগঠক এ দেশের জনগণের জন্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য ও সেবাকর্ম উৎপাদনে নিয়োজিত হতে পারে। এদেশে সংগঠকগণ তার মতো কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে এদেশে বেকার সমস্য লাঘব করতে পারে। এ উদেশ্যে দেশে আরও এমন উদ্যোক্তা হওয়া প্রয়োজনন।
দ্বিতীয়ত, ব্যবসায়ের অনিশ্চয়তা ও ঝুঁকি বহন করা সংগঠনের অন্যতম দায়িত্বপূর্ণ কাজ। শাহানা বেগম এই ঝুঁকি বহন করেছেন বলেই তিনি একজন সংগঠক হতে পেরেছেন। বাংলাদেশে বিভিন্ন দ্রব্য ও সেবাকর্মের চাহিদা পূরণের জন্য শাহানা বেগমের মতো প্রতিষ্ঠিত আরও প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার মানসিকতা সংগঠকদের থাকাতে হবে।
তৃতীয়ত, শাহানা বেগম তার কারবার ১ বছর পরিচালনা করার পরে ৩ লক্ষ টাকা মুনাফা পায় এবং তিনি আরও ব্যবসা সম্প্রসারণ করেন। এতে তার ঝুঁকির পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে। বাংলাদেশের বুটিক পণ্যের বৈদশিক চাহিদা রয়েছে। তাই এই ধরনের প্রতিষ্ঠানের উচিত ব্যবসা সম্প্রসারণ করে দেশের চাহিদা পূরণ করে তাদের পণ্য বিদেশে রপ্তানি করা। তাহলে পণ্যের বাজার আরো বিস্তারলাভ করবে। তাছাড়াও প্রচুর পরিমাণে বৈদশিক মুদ্রা অর্জিত হবে। যা বিনিয়োগ বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখবে। বিনিয়োগ বৃদ্ধি পেলে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পাবে। ফলে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে।
সুতরাং বলা যায়, শাহানা বেগমের মতো প্রতিষ্ঠান আমাদের দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
১০. আরিফ যুব উন্নয়ন অধিকদপ্তর হতে প্রশিক্ষণ নিয়ে ৩ টি পুকুর লিজ নিয়ে মৎস্য চাষ শুরু করে। ৪ জন শ্রমিক নিয়োগ করে আরিফ বছর শেষে সফল মৎস্য চাষি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করে। অন্যদিকে তার বন্ধু জালাল ও রনি নিজেদের মূলধন একত্রিত করে একটি কাপড়ের দোকান দিল। তারা মূলধনের ভিত্তিতে মুনাফা ভাগ করে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।
ক. স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান কী?
খ. রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানের ক্ষতির সম্ভাবনা বেশি থাকে কেন?
গ. উদ্দীপকের আরিফের কোন ধরনের সংগঠন ব্যাখ্যা করো।
ঘ. আরিফের সংগঠনের সাথে জালাল ও রনির সংগঠনের পার্থক্য আলোচনা করো।
১০ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. যেসব প্রতিষ্ঠান সরকারি নীতি ও আদর্শের আওতায় একটি স্বাধীন পরিচালনা পর্ষদের মাধ্যমে পরিচালিত হয় তাকে স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান বলে।
খ. রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানে অনেক সময় প্রয়োজনের অতিরিক্ত কর্মচারী নিয়োগ করা হয়। ফলে উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি পায়। আবার রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানে শ্রমিকদের মুজরি নির্দিষ্ট ও স্থায়ী। তাই শ্রমিকরা অধিক উৎপাদনে কোনোরূপ আগ্রহ দেখায় না। ফলে উৎপাদন হ্রাস পায়।
তাছাড়া রাষ্ট্রায়ত্ত কারবারে প্রায়ই লোকসান হয়। কারণ কর্মচারীদের অদক্ষতা ও কাজে ফাঁকি দেওয়ার প্রবণতা বেশি থাকে। ফলে রাষ্ট্রায়ত্ত কারবার ব্যয়বহুল ও অলাভজনক হয়। এভাবে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানগুলো ক্ষতির সম্মখীন হয়।
গ. উদ্দীপকে উল্লেখিত আরিফের ব্যবসাটি হলো এক-মালিকানা কারবার।
আরিফ তার খামারের একমাত্র মালিক। তিনি নিজেই তার ব্যবসার পুঁজি ও প্রয়োজনীয় উপকরণগুলো সরবরাহ করেন।আরিফ তার খামারের লাভ-লোকসান যাই হোক না কেন তিনি নিজেই তা বহন করেন। লাভ হলে তিনি তা একাই ভোগ করেন। আর লোকসান হলে তার দায়ভার তিনি একাই বহন করেন। যেহেতু তিনি তার খামারের একমাত্র মালিক তাই কারবারের সকল ব্যাপারে তিনি একক ভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারেন। সিদ্ধান্ত নেওয়ার ব্যাপারে কারো সাথে আলাপ করতে হয় না বলে, তিনি তা দ্রুত গ্রহণ করতে পারেন। তার খামারের সব রকম ঝুঁকি তিনি একাই বহন করেন।
ব্যবসায়ের গোপনীয়তা রক্ষা করা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আরিফ তার খামারের একমাত্র মালিক হওয়ায় তিনি ব্যবসায়িক গোপনীয়তা সহজেই রক্ষা করতে পারেন। তিনি ক্রেতাদের সাথে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রক্ষা করতে পারেন। ফলে ক্রেতাদের পছন্দ ও রুচি অনুযায়ী দ্রব্য উৎপাদন ও সরবরাহ করতে পারেন।
ঘ. আরিফের সংগঠন হলো এক-মালিকানা কারবার এবং জালাল ও রনির সংগঠন হলো অংশীদারি কারবার। এক-মালিকানা কারবারের সাথে অংশীদারি কারবারের যথেষ্ঠ পার্থক্য রয়েছে।
যে কারবারে মাত্র একজন মালিক থাকে তাকে এক-মালিকানা কারবার বলে। অপর দিকে পরস্পর পরিচিত দুই বা ততোধিক ব্যক্তি স্বেচ্ছায় তাদের মূলধন একত্রিত করে চুক্তিবদ্ধ হয়ে যে কারবার প্রতিষ্ঠা করে তাকে অংশীদারি কারবার বলে। এক-মালিকানা করবার এককভাবে নিয়ন্ত্রিত ও পরিচালিত হয়, কিন্তু অংশীদারি কারবারে অংশীদার কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত ও পচিালিত হয়।
এক-মালিকানা কারবারে দায় অসীম থাকে কিন্তু অংশীদারি কারবারে দায় অংশীদাররা সমানভাবে বণ্টন করে নেয়।
উপরের পার্থক্যের আলোকে বলা যায়, আরিফের সংগঠন হলো এক-মালিকানা কারবার যা কেবল তার নিয়ন্ত্রণাধীন থাকে। কিন্তু জালাল ও রনির সংগঠন হলো অংশীদারি কারবার যেখানে তারা সম্মিলিতভাবে নিয়ন্ত্রণ করে। তাছাড়া আরিফের কারবারে দায় অসীম অন্যদিকে জালাল ও রনির দায় অসীম হলেও তাদের লাভ-লোকসান চুক্তির ভিত্তিতে নির্ধারিত হয়।
0 Comments:
Post a Comment