HSC অর্থনীতি ১ম পত্র (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর pdf download অধ্যায় ১০

HSC অর্থনীতি ১ম পত্র (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর pdf download

এইচএসসি পরীক্ষার পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি
HSC Economics 1st Paper Srijonshil question and answer pdf download.

উচ্চমাধ্যমিক

অর্থনীতি
প্রথম পত্র

সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
১০ম অধ্যায়

HSC Economics 1st Paper
Srijonshil
Question and Answer pdf download

১. ‘ক’ দেশটি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর লাগামহীন ঋণ প্রদান কার্যক্রম সম্প্রসারণের ফলে সাম্প্রতিককালে দ্রব্যমূল্যের ওপর বিশেষ প্রভাব পরিলক্ষিত হয়। ফলশ্রুতিতে দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক খোলাবাজার নীতি ও ব্যাংক হার পরিবর্তনের নীতি গ্রহণ করে।
ক. মুদ্রার চাহিদা কাকে বলে?
খ. অন্যান্য অবস্থা অপরিবর্তিত অবস্থায় অর্থের মূল্য হ্রাস পেলে দ্রব্যমূল্যের কীরূপ পরিবর্তন হবে? ব্যাখ্যা করো।
গ. ‘ক’ দেশটিতে মুদ্রাস্ফীতি সৃষ্টির পিছনে বাণিজ্যিক ব্যাংকই দায়ী- ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উক্ত পরিস্থিতি মোকাবেলায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গৃহীত নীতি দুটি কীভাবে কার্যকরী হবে তা বিশ্লেষণ করো।

১ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. একটি নির্দিষ্ট সময়ে দেশের জনগণ বিভিন্ন প্রয়োজনে যে পরিমাণ নগদ মুদ্রা হাতে ধরে রাখতে চায় তাকে মুদ্রার চাহিদা বলে।

খ. অন্যান্য অবস্থা অপরিবর্তিত অবস্থায় অর্থের মূল্য হ্রাস পেলে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পাবে।
সাধারণত অন্যান্য অবস্থা স্থির রেখে অর্থের মূল্য হ্রাস করা হলে অর্থের যোগান বৃদ্ধি পায় এবং অর্থের যোগান বৃদ্ধি পেলে দ্রব্যসামগ্রীর দামস্তর বৃদ্ধি পায়। অর্থাৎ অর্থের মূল্য অর্ধেক করা হলে অর্থের যোগান দ্বিগুণ হবে। আর অর্থের যোগান ও দ্রব্যসামগ্রীর দামস্তরও দ্বিগুণ হবে। কাজেই বলা যায়, অর্থের মূল্য ও দ্রব্যমূল্যের মধ্যে বিপরীত সম্পর্ক বিদ্যমান। তাই অর্থের মূল্য হ্রাস পেলে দামস্তর বাড়বে।

গ. ‘ক’ দেশটিতে মুদ্রাস্ফীতি সৃষ্টির পিছনে বাণিজ্যিক ব্যাংকই দায়ী।
ফিশারের বিনিময় সমীকরণ হতে জানা, অর্থের যোগানের সাথে দ্রব্যসামগ্রীর দামস্তর সমমুখী সম্পর্ক বিদ্যমান। অর্থাৎ অর্থের যোগান বাড়লে দামস্তর বাড়বে। যেখানে অর্থের যোগান হলো প্রচলিত নোট বা ধাতব মুদ্রা এবং ব্যাংক সৃষ্ট মুদ্রা যেমন- চেক, বিনিময় বিল, ঋণপত্র ইত্যাদির সমষ্টি।
উদ্দীপকে লক্ষ করা যায়, ‘ক’ দেশটিতে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো লাগামহীন ঋণ প্রদান কার্যক্রম সম্প্রসারণ করেছে। অর্থাৎ দেশটিতে ব্যাংক সৃষ্ট মুদ্রা তথা ঋণ এর পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে। এর ফলশ্রুতিতে দেশটির মুদ্রা মোট যোগান বৃদ্ধি পাওয়ায় দ্রব্যসামগ্রীর দামস্তর বৃদ্ধি পেযেছে। তথা মুদ্রাস্ফীতি দেখা দিয়েছে। সুতরাং বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর লাগামহীন ঋণ প্রদান কার্যক্রমের ফলে ‘ক’ দেশটিতে মুদ্রাস্ফীতি সৃষ্টি হয়েছে।

ঘ. উদ্দীপকে উল্লেখিত ‘ক’ দেশটির মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের খোলা বাজার নীতি ও ব্যাংক হার পরিবর্তনের নীতি গ্রহণ করলে মুদ্রাস্ফীতি হ্রাস পাবে।
কোনো দেশের স্থিতিশীল অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য মুদ্রার যোগান নিয়ন্ত্রণ আবশ্যক। তাই মুদ্রাস্ফীতির মতো পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক খোলা বাজার নীতি ও ব্যাংক হার পরিবর্তন নীতি অনুসারে বাণিজ্যিক ব্যাংকের ঋণ প্রদান ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।
বাণিজ্যিক ব্যাংক কর্তৃক সৃষ্ট ঋণ মুদ্রা যোগানের অন্যতম অংশ হওয়ায় ব্যাংক হার বাড়ানো হলে ‘ক’ দেশটিতে অর্থের যোগান হ্রাস পাবে। ফলে দামস্তর হ্রাস পাবে। আবার খোলা বাজারে সরাসরি ঋণ পত্র বিক্রয় করলে ক্রেতারা কেন্দ্রীয় ব্যাংকে তাদের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর চেক কেটে ঋণ পত্রের মূল্য পরিশোধ করে। আর কেন্দীয় ব্যাংক এই চেকের অর্থ বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর গচ্ছিত আমানত থেকে আদায় করে। এর ফলে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো ঋণ প্রদানের ক্ষমতা হ্রাস পায়। তথা দেশটিতে অর্থের যোগান হ্রাসের মাধ্যমে দামস্তর হ্রাস পায়।
কাজেই বলা যায়, ‘ক’ দেশটিতে মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের খোলা বাজার ও ব্যাংক হার পরিবর্তন নীতি যথেষ্ট ভূমিকা রাখবে।

২. ‘ক’ দেশের বিহিত মুদ্রার পরিমাণ ৫০০০, ব্যাংক সৃষ্ট মুদ্রা ৩০০০, উভয় মুদ্রার প্রচলন গতি ৪, ক্রয়-বিক্রয়ের জন্য দ্রব্যসামগ্রীর পরিমাণ ৪০০০। সময়ের পরিবর্তনে ‘ক’ দেশের বিহিত মুদ্রা ও ব্যাংক সৃষ্ট মুদ্রার যোগান দ্বিগুণ হলো।
ক. বাণিজ্যিক ব্যাংক কাকে বলে?
খ. ‘বাংলাদেশ ব্যাংক’ কে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলা হয় কেন?
গ. ফিশারের বিনিময় সমীকরণের আলোকে উদ্দীপকে প্রদত্ত তথ্যের ভিত্তিতে দামস্তর নির্ণয় করো।
ঘ. উদ্দীপকের আলোকে অর্থের যোগান ও অর্থের মূল্যের বিপরীত সম্পর্ক আরভিং ফিশারের অর্থের পরিমাণ তত্ত্বের ভিত্তিতে বিশ্লেষণ করো।

২ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. মুনাফা অর্জনের উদ্দেশ্যে যে ব্যাংক জনসাধারণের নিকট হতে আমানত গ্রহণ করে এবং স্বল্পমেয়াদি ঋণ প্রদান করে তাকে বাণিজ্যিক ব্যাংক বলে।

খ. কেন্দ্রীয় ব্যাংকের যাবতীয় দায়িত্ব বাংলাদেশ ব্যাংক পালন করে থাকে এ জন্য বাংলাদেশ ব্যাংককে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক এমন একটি ব্যাংক যেটি দেশের মুদ্রা বাজারের অভিভাবক হিসেবে মুদ্রা ও ব্যাংক ব্যবস্থাকে নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনা করার জন্য সরকার কর্তৃক সর্বোচ্চ ক্ষমতাপ্রাপ্ত হয়। বাংলাদেশ ব্যাংক মুদ্রা বাজারে অভিভাবক এবং মুদ্রা প্রচলন ও নিয়ন্ত্রনের একক ক্ষমতার অধিকারী হওয়ায় একে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলা হয়।

গ. নিচে ফিশারের বিনিময় সমীকরণের আলোকে প্রদত্ত তথ্যের ভিত্তিতে দামস্তর নির্ণয় করা হলো।
ফিশারের বিনিময় সমীকরণ হতে পাওয়া যায়,
MV + M΄V΄ = PT
বা, P = M = বিহিত মুদ্রার পরিমাণ
M΄= ব্যাংক সৃষ্ট মুদ্রা
V = বিহিত মুদ্রার প্রচলন গতি
V΄ = ব্যাংক মুদ্রার প্রচলন গতি
T = ক্রয়-বিক্রয় পরিমাণ
উদ্দীপকের তথ্যের ভিত্তিতে মান বসিয়ে,
দামস্তর (P) =
=
= 8
অতএব ফিশারের বিনিময় সমীকরণের আলোকে উদ্দীপকের প্রদত্ত নির্ণেয় দামস্তর ৮ একক।

ঘ. অর্থের যোগান ও অর্থের মূল্যের মধ্যে বিপরীত সম্পর্ক বিদ্যমান। অর্থাৎ অর্থের যোগান বাড়ানো হলে অর্থের মূল্য হ্রাস পায় এবং কমানো হলে মূল্য বৃদ্ধি পায়।
ফিশারের অর্থের পরিমাণ তত্ত্বে বলা হয়, অর্থের প্রচলন গতি ও দ্রব্যসমগ্রী লেনদেনের পরিমাণ স্থির থেকে অর্থের যোগান যে হারে ও যেদিকে পরিবর্তিত হয় সাধারণত দামস্তরও সেই হারে ও সেই দিকে পরিবর্তিত হয়। তাই অর্থের মূল্যেও একই হারে কিন্তু বিপরীত দিকে পরিবর্তিত হয়। অর্থাৎ যোগানের সাথে অর্থের মূল্যের বিপরীত সম্পর্ক পরিলক্ষিত হয়।
উপরের চিত্রে অর্থের যোগান (M₁) ২০ একক থেকে (M₂) ৪০ একক হলে অর্থের মূল্য (VM₁) ৮ একক থেকে কমে (VM₂) ৪ একক হয়। অর্থাৎ যোগান দ্বিগুণ করা হলে অর্থের মূল্য অর্ধেক হয়।

৩. মি. ‘ক’ একজন অর্থনীতি বিষয়ের প্রভাষক। তিনি শ্রেণি কক্ষে মুদ্রার মূল্য ও দামস্তরের সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে একজন বিখ্যাত অর্থনীতিবিদ এর বক্তব্য পেশ করেন। বক্তব্যটি হলো: মুদ্রার ক্রয়ক্ষমতা ও দামস্তর বিপরীতভাবে সম্পর্কযুক্ত। মুদ্রার পরিমাণ দ্বিগুণ হলে দ্রব্যের দামস্তর দ্বিগুণ হয় কিন্তু মূল্য অর্ধেক হয়।
ক. বিহিত মুদ্রা কী?
খ. ব্যাংক হার কীভাবে মুদ্রার যোগানকে প্রভাবিত করে?
গ. উদ্দীপকের উল্লেখিত বক্তব্যটির সাথে সম্পর্কিত তত্ত্বটি আলোচনা করো।
ঘ. উদ্দীপক অনুযায়ী মুদ্রার পরিমাপ চারগুণ হলে মুদ্রার মূল্য কত হবে? গাণিতিক উদাহারণের মাধ্যমে বিশ্লেষণ করো।

৩ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. যে অর্থ সরকারের আইন দ্বারা স্বীকৃত এবং লেনদেনের মাধ্যম হিসেবে সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য তাকে বিহিত মুদ্রা বলে।

খ. ব্যাংক হারের পরিবর্তন দ্বারা কেন্দীয় ব্যাংক ঋণের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করে, মুদ্রার যোগান নিয়ন্ত্রণ করে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক যখন দেশে মুদ্রার যোগান কমাতে চায় তখন ঋণের পরিমাণ কমানোর জন্য ব্যাংক হার বাড়ায়। এর ফলে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিকট হতে ঋণ নিতে অপেক্ষাকৃত অধিক হারে সুদ দিতে হয় বলে তারা তাদের প্রদেয় ঋণের জন্য সুদহার বাড়ায়। এ অবস্থায় ঋণগ্রহীতারা কম পরিমাণে ঋণ নিলে অর্থের যোগান কমে যায়। আবার কেন্দ্রীয় ব্যাংক দেশে মুদ্রা যোগান বাড়াতে চেয়ে ব্যাংক হার কমিয়ে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো কম সুদের হারে অধিক ঋণ দিতে সহায়তা করে।

গ. উদ্দীপকে উল্লেখিত ব্যক্তব্যটি অর্থনীতিবিদ ফিশারের অর্থের পরিমাণের তত্ত্বের সাথে সম্পর্কিত।
ফিশারের অর্থের পরিমাণ তত্ত্বনুযায়ী, অন্যান্য অবস্থা অপরিবর্তিত থাকা অবস্থায় অর্থের পরিমাণের সাথে দামস্তরের সম্পর্ক হয় সমমুখী ও সমানুপাতিক এবং অর্থের মূল্যের সাথে সম্পর্ক হয় বিপরীতমুখী।
ধরা যাক, কোনো নির্দিষ্ট সময়ে অর্থের পরিমাণ দ্বিগুণ হলো। এ অবস্তায় দামস্তরও দ্বিগুণ এবং অর্থের মূল্য অর্ধেক হবে। আবার অর্থের পরিমাণ অর্ধেক হলে দামস্তর হবে অর্ধেক ও অর্থের মূল্য হবে দ্বিগুণ। সুতরাং বলা য়ায়, ফিশারের তত্ত্বনুযায়ী দামস্তর ও অর্থের মূল্য পরস্পর সম্পর্কযুক্ত। দামস্তর কমলে অর্থের মূল্য বাড়ে এবং দামস্তর বাড়লে অর্থের মূল্য কমে।
চিত্রে লক্ষ করা যায়, দামস্তর (P2) থেকে কমে (P1) হলে অর্থের মূল্য (VM₂) থেকে বেড়ে (VM₁) হয়। সুতরাং উদ্দীপকের বক্তব্যটি ফিশারের বিনিময় তত্ত্বকেই প্রকাশ করে।

ঘ. উদ্দীপক অনুযায়ী মুদ্রার পরিমাণ চারগুণ হলে মুদ্রার মূল্য এক-চতুর্থাংশ হবে।
প্রদত্ত তথ্যের আলোকে বিনিময় সমীকরণ হলো,
MV = PT M = বিহিত মুদ্রার পরিমাণ
বা, V = V = বিহিত মুদ্রার প্রচলন গতি
P = দামস্তর
T = ক্রয়-বিক্রয় পরিমাণ
অরি, M= ১২৫, P = ৪০ এবং T = ২৫
তাহলে, V =
= 8
এখন P ও T স্থির রেখে অর্থের পরিমাণ (M) কে ৪ গুণ করা হলে অর্থের মূল্য হবে,
V = = 2
অর্থাৎ অর্থের মূল্য গুণ।
কাজেই বলা যায়, উদ্দীপকের উল্লেখিত ফিশারের অর্থের বিনিময় তত্ত্ব অনুসারে লেনদেন ও দামস্তর স্থির রেখে অর্থের পরিমাণ এক-চতুর্থাংশ।

৪. মি. করিম একটি ব্যাংকে চাকরি করেন যাকে মুদ্রা বাজারের অভিভাবক বলা হয়। ব্যাংকটি নোট প্রচলনের একচেটিয়া অধিকার ভোগ করে। তার ভাই মি. সালাম অপর একটি ব্যাংকে চাকরি করেন যা জনগণের কাছ থেকে আমানত সংগ্রহ করে এবং স্বল্প ও মধ্যমেয়াদি ঋণদান করে।
ক. অর্থের মূল্য কাকে বলে?
খ. মুদ্রা কী শুধু বিনিময়ের মাধ্যম হিসেবেই কাজ করে?
গ. মি. করিম ও মি. সালাম কোন ধরনের ব্যাংকে কাজ করেন? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. মি. করিমের ব্যাংকের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ আলোচনা করো।

৪ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ দ্বারা যে পরিমাণ পণ্য বা সেবা ক্রয় করা যায় তাকে অর্থের মূল্য বলা হয়।

খ. মুদ্রা হলো সর্বজনস্বীকৃত ও সর্বোৎকৃষ্ট বিনিময়ের মাধ্যম।
তবে, বর্তমানে মুদ্রা বিনিময়ের মাধ্যম ছাড়াও আরো অন্যান্য কাজ করে। যেমন- মূল্যের পরিমাপক, সঞ্চয়ের বাহন, স্থগিত লেনদেনের মান, ঋণের ভিত্তি ইত্যাদি। তাই বলা হয় মুদ্রা শুধু বিনিময়ের মাধ্যম হিসেবে কাজ করে না।

গ. উদ্দীপকের মি. করিম কেন্দ্রীয় ব্যাংকে এবং মি. সালাম বাণিজ্যিক ব্যাংকে কাজ করেন।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক হলো এমন একটি ব্যাংক যা সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীনে থেকে মুদ্রা বাজারে অভিভাবক হিসেবে কাজ করে। এই ব্যাংকের প্রধান কাজ হলো নোট প্রচলন করা ও এর মূল লক্ষ হলো জনকল্যাণ। অন্যদিকে বাণিজ্যিক ব্যাংক হলো এমন এক আর্থিক প্রতিষ্ঠান যা মুনাফার উদ্দেশ্যে জনগণের কাছ থেকে অর্থ আমানত হিসেবে গ্রহণ করে এবং বিভিন্ন প্রয়োজনে স্বল্পমেয়াদি ঋণ প্রদান করে।
উদ্দীপকে লক্ষ করা যায়, মি. করিম যে ব্যাংকে কাজ করেন সেটি মুদ্রা বাজারের অভিভাবক এবং নোট প্রচলনে একচেটিয়া ক্ষমতার অধিকারী। সুতরাং মি. করিমের ব্যাংকটি কেন্দ্রীয় ব্যাংক। অন্যদিকে, মি. সালাম যে ব্যাংকে কাজ করেন সেটি জনগণের কাছ থেকে আমানত গ্রহণ করে এবং প্রয়োজনে স্বল্পমেয়াদি ঋণ প্রদান করে। সুতরাং এ ব্যাংকটি বাণিজ্যিক ব্যাংক।

ঘ. মি. করিম কেন্দ্রীয় ব্যাংকে কাজ করেন। নিচে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ বর্ণনা করা হলো:
১. কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধান কাজ হলো দেশের জনগণ ও ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রয়োজন অনুসারে নোট বা ধাতব মুদ্রা প্রচলন করা।
২. কেন্দ্রীয় ব্যাংক দেশের মুদ্রা বাজারে অভিভাবক হিসেবে কাজ করে। মুদ্রা বাজারে পরিচালক ও নিয়ন্ত্রক হিসেবে এ ব্যাংক দেশে মুদ্রা ও ঋণের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করে, মুদ্রা সরবরাহ স্থিতিশীলতা রক্ষা, বিনিময় হার নির্ধারণ ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কার্যাবলি পর্যবেক্ষণ করে।
৩. মুদ্রা সরবরাহের ওপর বিধি-নিষেধ আরোপ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক দেশে দামস্তর স্থিতিশীলতা রক্ষা করে। এ উদ্দেশ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক মুদ্রা বাজারে মুদ্রা সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ করে।
মি. করিমের ব্যাংকটি উপরিউক্ত কার্যাবলি পূরণ ছাড়াও জনকল্যাণে আরো অনেক কার্য সম্পাদন করে থাকে।

৫. অর্থনীতিবিদ আরভিং ফিশারের অর্থের পরিমাণ তত্ত্বে, M = 100, V = 5, T = 10
এখানে, M = বিহিত মুদ্রা, T = লেনদেনের পরিমাণ এবং V = প্রচলন গতি।
ক. অর্থ কী?
খ. জনগণের আয় বৃদ্ধি পেলে অর্থের চাহিদা হ্রাস পায়-ব্যাখ্যা করো।
গ. উদ্দীপকে উল্লেখিত তথ্যের ভিত্তিতে দামস্তর নির্ণয় করো।
ঘ. উদ্দীপকে M এর মান ২০০ হলে অর্থের ওপর কী প্রভাব পড়বে? বিশ্লেষণ করো।

৫ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. যা বিনিময়ের সাধারণ মাধ্যম, ঋণ গ্রহণ ও পরিশোধের উপায়, মূল্যের পরিমাপক ও সঞ্চযের বাহন হিসেবে সরকার কর্তৃক প্রবর্তিত সকলের নিকট গ্রহণযোগ্য হয় তাকে অর্থ বলা হয়।

খ. অর্থের চাহিদা ও আয়ের মধ্যে সমমুখী সম্পর্ক বিদ্যমান থাকায় জনগণের আয় বৃদ্ধি পেলে অর্থের চাহিদার পরিমাণ বৃদ্ধি পায়।
একটি নির্দিষ্ট সময়ে দেশের জনগণ বিভিন্ন প্রয়োজনে যে পরিমাণ নগদ অর্থ হাতে রাখতে চায় তাকে অর্থের চাহিদা বলে। এখন জনগণের আয় বৃদ্ধি পেলে নগদ লেনদেনের পরিমাণ বেড়ে যায়। অর্থাৎ লেনদেন জনিত অর্থের চাহিদা বেড়ে যায়। আবার মানুষ ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তা মোকাবেলা করার জন্যও অর্থ জমা রাখে। তাই আয় বেশি হলে সতর্কতামূলক অর্থের চাহিদাও বাড়ে। কাজেই বলা যায়, জনগণের আয় বৃদ্ধি পেলে অর্থের চাহিদা হ্রাস না পেয়ে বরং বৃদ্ধি পায়।

গ. অর্থনীতিবিদ আরভিং ফিশার তার অর্থের পরিমাণ তত্ত্ব প্রকাশের জন্য প্রাথমিক অবস্থায় যে সমীকরণ প্রদান করেন তা বিনিময় সমীকরণ নামে পরিচিত। সমীকরণটি নিমণরূপ:
MV = PT M = বিহিত মুদ্রার পরিমাণ
বা, P = V = বিহিত মুদ্রার প্রচলন গতি
P = দামস্তর
T = ক্রয়-বিক্রয় পরিমাণ
এ সমীকরণে দেখা যায়, M, V ও T এর মান জানা থাকলে P এর মান সহজেই নির্ণয় করা যায়। এ হিসেবে উদ্দীপকে M, V ও T এর যে মানগুলো দেওয়া আছে তার ভিত্তিতে মান বসিয়ে,
P =
= 50
অর্থাৎ দামস্তর P = ৫০।

ঘ. অর্থনীতিবিদ আরভিং ফিশারের মতে কোনো নির্দিষ্ট সময়ে অর্থের প্রচলন গতি (V) ও বাণিজ্যিক লেনদেন (T) এর পরিমাণ স্থির থাকলে অর্থের পরিমাণ (M) এর সাথে দামস্তর (P) এর সম্পর্ক হয় সমানুপাতিক। তখন দামস্তরের সাথে অর্থের মূল্য (Vm) এর সম্পর্ক হয় বিপরীত। এ অবস্থায় অর্থের পরিমাণ দ্বিগুণ হলে অর্থের মূল্য অর্ধেক হয়। এখন উদ্দীপকের বিভিন্ন তথ্যের প্রেক্ষিতে অর্থের পরিমাণ ১০০ থেকে ২০০ হলে অর্থের মূল্যের ওপর তার প্রভাব নিচের ছকে দেখানো হলো:

M

V

T

P =

V= 

100

5

10

P =  =50

V= =0.02

200

5

10

P =   =100

V= =0.01

উপরের টেবিলে দেখা যায়, V ও T স্থির অবস্থায় M বৃদ্ধি পেয়ে দ্বিগুণ হলে দামস্তরও বৃদ্ধি পেয়ে দ্বিগুণ হয়। তখন অর্থের মূল্য হ্রাস পেয়ে অর্ধেক হয়।

৬. ‘খ’ দেশের একটি ব্যাংক সে দেশের আর্থিক ব্যবস্থার প্রধান। এটি নোট প্রচলন করে। অনেক সময় অর্থের পরিমাণ কাঙিক্ষত স্তরে না থাকলে বিভিন্ন পদ্ধতি প্রয়োগ করে ব্যাংকটি অর্থের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করে।
ক. অর্থের মূল্য কী?
খ. চাহিদা আমানত হচ্ছে ব্যাংক মুদ্রা- ব্যাখ্যা করো।
গ. উদ্দীপকে উল্লেখিত ‘খ’ দেশের ব্যাংকটি কোন ধরনের ব্যাংক? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকের ব্যাংকটির ঋণ নিয়ন্ত্রণে সবচেয়ে সফল হাতিয়ার কোনটি? বিশ্লেষণ করো।

৬ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ মুদ্রা দ্বারা যে পরিমাণ পণ্য বা সেবা ক্রয় করা যায় তাকে অর্থের মূল্য বলে।

খ. বর্তমানে ব্যবসায়িক লেনদেন ও দেনা-পাওনা পরিশোধ করতে ব্যাংক হিসাব বা ব্যাংক সৃষ্ট আমানত বিনিময়ের মাধ্যম হিসেবে চেক, ডেভিট বা ক্রেডিট কার্ড ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়। একে ব্যাংক মুদ্রা বলে। আর চাহিদা আমানত হলো এমন আমানত যার অর্থ চাহিবা মাত্র উত্তোলন করা যায়। এই আমানত ব্যবহার করে গ্রাহক ব্যাংকের মাধ্যমে তাদের লেনদেন সম্পন্ন করতে পারেন। তাই চাহিদা আমানতকে ব্যাংক মুদ্রা হিসাবে বিবেচনা করা হয়। অর্থাৎ চাহিদা আমানত হচ্ছে ব্যাংক মুদ্রা।

গ. উদ্দীপকে উল্লেখিত ‘খ’ দেশের ব্যাংকটি হলো কেন্দ্রীয় ব্যাংক। নিচে ব্যাংকটির ধরন ব্যাখ্যা করো হলো।
ব্যাংক ব্যবস্থার শীর্ষে অবস্থান করে, যে ব্যাংক দেশের মুদ্রা ও ব্যাংক ব্যবস্থাকে নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনা করে তাকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলে। এটি সরকার কর্তৃক সর্বোচ্চ ক্ষমতাপ্রাপ্ত একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান যা মুনাফা অর্জনের জন্য নয় বরং জনস্বার্থে ও দেশের সামগ্রিক কল্যাণের দিকে নজর রেখে কাজ করে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক দেশে কাগজী নোট বা ধাতব মুদ্রা প্রচলনের একচেটিয়া অধিকার ভোগ করে। এ ব্যাংক অন্যান্য দেশের মুদ্রার সাথে দেশীয় মুদ্রার বিনিময় হার নির্ধারণ ও নিয়ন্ত্রণ করে। আবার এ ব্যাংক দেশে একটি উন্নত ও স্থিতিশীল মুদ্রা বাজার গড়ার উদ্দেশ্যে বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কার্যাবলি তদারকি করে ও তাদেরকে পরামর্শ প্রদান করে। বাণিজ্যিক ব্যাংক সৃষ্ট ঋণ অর্থের যোগানের অন্যতম উপাদান হওয়ায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক দেশে অর্থের যোগান নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্যে ঋণ নিয়ন্ত্রণ করে। এ ব্যাংক বিভিন্ন ব্যাংকের আন্তঃদেনাপাওনার দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য নিকাশ ঘর হিসেবে কাজ করে। তাছাড়া এ ব্যাংক তালিকাভুক্ত ব্যাংকগুলোর আর্থিক সংকটকালে ঋণদানের শেষ আশ্রয়স্থল হিসেবে কাজ করে।

ঘ. উদ্দীপকের ‘খ’ দেশটির ব্যাংক ঋণ নিয়ন্ত্রণে সবচেয়ে সফল হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে ব্যাংক হার নীতি।
ব্যাংক হার বলতে এমন একটি হারকে বোঝায় যে হারে কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রথম শ্রেণির বিনিময় বিল পুনঃবাট্টা করে। এই ব্যাংক হার হ্রাস বা বৃদ্ধির ফলে বাজার ঋণের পরিমাণের বৃদ্ধি বা হ্রাস ঘটে তথা ঋণদান ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণ হয়।
সাধারণত কেন্দ্রীয় ব্যাংক তার ব্যাংক হার বাড়িয়ে দিলে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো তার সুদের হার বাড়িয়ে দেয়। কারণ কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে বেশি সুদ দিতে হয়। এর ফলে দেশের মোট ঋণের পরিমাণ হ্রাস পায়। আবার দেশে ঋণের পরিমাণ বাড়াতে চাইলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক তার ব্যাংক হার কমিয়ে দেয়। ফলশ্রুতিতে দেশে মোট ঋণের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়।
এছাড়া কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঋণ নিয়ন্ত্রণে অন্যান্য হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে খোলা বাজার নীতি, নগদ জমার হার পরিবর্তন, নৈতিক প্ররোচনা ইত্যাদি। তবে এই হাতিয়ার গুলো আংশিকভাবে কার্যকর এবং ঋণ নিয়ন্ত্রণ ধীর গতিতে পরিচালনা হয়। সুতরাং, সকল হাতিয়ারগুলোর ব্যবহারিক তাৎপর্য অন্যান্য হাতিয়ারের তুলনায় ব্যাংক হার বেশি কার্যকর।

৭. ফারুখ কুয়েতে শ্রমিক হিসেবে কাজ করে। সে তার উপার্জনের একটি অংশ দেশে পাঠায়। আবার বাংলাদেশে জাপানি নাগরিক মি. তাকিও একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত আছেন। এ প্রতিষ্ঠান থেকেও প্রচুর অর্থ উপার্জিত হয়।
ক. জাতীয় আয় কী?
খ. সরকারি ব্যয় বলতে কি বোঝ?
গ. ফারুখ এর আয় বাংলাদেশের যে হিসাবে অন্তর্ভূক্ত হবে সেটি ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকের ফারুখ ও মি. তাকিও এর আয়ের তুলনামূলক বিশ্লেষণ করো।

৭ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. জাতীয় আয় হলো একটি নির্দিষ্ট সময়ে সাধারণত এক বছরে বিভিন্ন উৎস থেকে প্রাপ্ত আয়ের সমষ্টি।

খ. কোনো দেশের সরকার তার দেশের উন্নয়ন কর্মকান্ড সম্পাদনের জন্য যে ব্যয় করেন তাই সরকারি ব্যয়।
সরকার দেশের অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা বজায় রাখা; দেশকে বহিঃশত্রুর আক্রমণ থেকে রক্ষা করা, কর্মসংস্থান বৃদ্ধি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য সুবিধা, অবকাঠামো নির্মাণ, সামাজিক কল্যাণ সাধন প্রভৃতির লক্ষ্যে প্রচুর অর্থ ব্যয় করে। এসব ব্যয়ের সমষ্টিই হলো সরকারি ব্যয়।

গ. ফারুখ এর আয় বাংলাদেশের মোট জাতীয় উৎপাদনে অন্তর্ভূক্ত হবে।
মোট দেশজ উৎপাদন হচ্ছে কোনো নির্দিষ্ট সময়ে সাধারণত এক বছরে কোনো দেশের নাগরিক কর্তৃক উৎপাদিত চূড়ান্ত দ্রব্য ও সেবার বাজার মূল্যের সমষ্টিকে মোট জাতীয় আয় বলে। জাতীয় আয় হিসাব করার ক্ষেত্রে ভেীগোলিক সীমানা বিবেচনায় নেওয়া হয় না। এক্ষেত্রে দেশে ও বিদেশে অবস্তানরত সকল দেশীয় নাগরিকদের আয়ের সমষ্টি যুক্ত করা হয়।
উদ্দীপকে দেখা যায়, ফারুখ কুয়েতে কাজ করেন এবং তার উপার্জনের একটি অংশ দেশে পাঠায়। সুতরাং ফারুখের এ আয় বাংলাদেশের মোট জাতীয় আয়ের অন্তর্ভূক্ত।

ঘ. উদ্দীপকের মি. ফারুখের আয় GNI এবং মি. তাকিও এর আয় GDP তে অন্তর্ভূক্ত।
একটি নির্দিষ্ট সময়ে সাধারণত একটি আর্থিক বছরে একটি দেশের অভ্যন্তরে তথা তার ভেীগোলিক সীমানার ভিতরে যে পরিমাণ চূড়ান্ত দ্রব্যসামগ্রী ও সেবাকর্ম উৎপাদিত হয় তার আর্থিক মূল্যের সমষ্টিকে মোট দেশজ উৎপাদন বা GDP বলে। অন্যদিকে, দেশে ও বিদেশে অবস্থানরত দেশের নাগরিক উৎপাদন কাজের সাথে জড়িত হয়ে যে পরিমাণ দ্রব্যসামগ্রী ও সেবাকর্ম উৎপাদন করে তার চলতি বাজার মূল্যের সমষ্টিই হলো মোট জাতীয় আয় বা GNI।
উদ্দীপকে দেখা যায়, বাংলাদেশের নাগরিক ফারুখ কুয়েতে কাজ করে এবং উপার্জিত অর্থের একটা অংশ দেশে পাঠায়। ফারুখের এ আয় দেশের GNI তে অন্তর্ভূক্ত হবে। আবার জাপানি নাগরিক মি. তাকিও বাংলাদেশের একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন। তার এ আয় এদেশের GDP তে অন্তর্ভূক্ত হবে।
কাজেই উপর্যুক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায়, ফারুখের আয় বাংলাদেশের জাতীয় আয়কে এবং মি. তাকিও এর আয় দেশজ উৎপাদনকে প্রভাবিত করে।

৮. আরাফাত বিবিএ-এর একজন ছাত্র। সে তার ইন্টার্নশিপ প্রোগ্রামের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংককে বেছে নিল। সেখানে কাজ করতে গিয়ে সে জানতে পারে, একটি দেশে একটি মাত্র কেন্দ্রীয় ব্যাংক থাকে যেটি সরকার নিয়ন্ত্রণ করে। এটি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে তালিকাভুক্ত করে ঋণদান ও বিভিন্ন সময়ে উপদেশ দিয়ে থাকে।
ক. ঋণ নিয়ন্ত্রণের পদ্ধতি কয়টি?
খ. ক্লিয়ারিং হাউজ সম্পর্কে লিখ?
গ. আরাফাত উদ্দীপকে উল্লেখিত ব্যাংকের কী কী বৈশিষ্ট্য জানতে পেরেছে তা ব্যাখ্যা করো।
ঘ. আরাফাত উক্ত ব্যাংকের যে কার্যাবলি তুলে ধরেছে তা বিশ্লেষণ করো।

৮ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. ঋণ নিয়ন্ত্রণের পদ্ধতি ২টি।

খ. ক্লিয়ারিং হাউজ এর আভিধানিক অর্থ ‘নিষ্পত্তি স্থল’।
ভিন্ন ভিন্ন ব্যাংকের ভিন্ন ভিন্ন শাখার মধ্যে আন্তঃব্যাংকিং লেনদেনের নিষ্পত্তি স্থলকে নিকাশ ঘর বা ক্লিয়ারিং হাউজ বলে। এ ব্যবস্থার মাধ্যমে ব্যাংক সমূহ তাদের মধ্যকার সব দেনাপাওনা নিষ্পত্তি করে থাকে। পৃথিবীর সব দেশেই এ নিকাশ ঘর ব্যবস্থা রয়েছে এবং প্রতিটি দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ দায়িত্ব পালন করে। এর ফলে ব্যাংকিং ব্যবস্থা তথা আর্থিক লেনদেন আরো গতিশীল হয়।

গ. উদ্দীপকের আরাফাত ইন্টার্নশিপের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংককে বেছে নেয়।
মুদ্রা বাজারের শীর্ষে থেকে দেশের অর্থ ও ব্যাংক ব্যবস্থাকে নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনা করে যে ব্যাংক তাকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলে। এটি সরকার কর্তৃক সর্বোচ্চ ক্ষমতাপ্রাপ্ত আর্থিক প্রতিষ্ঠান। কেন্দ্রীয় ব্যাংক দেশে মুদ্রা বা নোট প্রচলনের একমাত্র অধিকার ভোগ করে যা অন্য কোনো ব্যাংকের নেই। এ দ্বারা দেশে ঋণের সরবরাহ, নিয়ন্ত্রণ, বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার নিয়ন্ত্রণ, সরকারের পক্ষে লেনদেনের কাজ নিয়ন্ত্রণ, সরকারকে অর্থসংক্রান্ত উপদেশ প্রদান ইত্যাদি কাজে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একমাত্র অধিকার। যেহেতু সরকারের জন্য কাজ করে সেহেতু কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধান উদ্দেশ্য মুনাফা অর্জন নয় বরং জনকল্যণ এর প্রধান লক্ষ্য।
উদ্দীপকের আরাফাত কেন্দ্রীয় ব্যাংকে ইন্টার্নশিপ করতে গিয়ে উপরিউক্ত বৈশিষ্ট্যসমূহ প্রত্যক্ষ করে।

ঘ. উদ্দীপকের আরাফাত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের যে সব কার্যাবলি সম্পর্কে জানতে পেরেছে তা আলোচনা করা হলো:
দেশের অর্থবাজারে প্রধান ও সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী একমাত্র প্রতিষ্ঠান হিসেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কার্যাবলি অন্যান্য ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠান হতে আলাদা ও গুরুত্বপূর্ণ। কেন্দ্রীয় ব্যাংক হলো একটি দেশের মুদ্রা বাজারের অভিভাবক। একটি দেশের একটি মাত্র ব্যাংক থাকে যা দেশের স্বার্থে শক্তিশালী মুদ্রা বাজার গঠন, পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণে সদা তৎপর থাকে। এ লক্ষ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিভিন্ন ব্যাংকিং ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান সমূহকে সহায়তা দেয় ও তাদের কার্যাবলি নিয়ন্ত্রণ করে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক সম্পূর্ণ সরকার কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত। তাই সরকারের আর্থিক নীতিমালা প্রণয়নে ও নির্ধারণে এ ব্যাংক বিভিন্ন পরামর্শ নিয়ে সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করে। এছাড়া এ ব্যাংক তালিকাভুক্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকসমূহের সঠিক পরিচালনার লক্ষ্যে বিভিন্ন ধরনের দিকনির্দেশনা ও পরামর্শ প্রদান করে থাকে।
উপরিউক্ত কার্যক্রমগুলো ছাড়াও কেন্দ্রীয় ব্যাংক সরকারের গুরুত্বপূর্ণ বিভাগের হিসাব সংরক্ষণ, নিকাশ ঘরের দায়িত্ব পালন, বিনিময় হার নিয়ন্ত্রণ, ব্যাংকিং ব্যবস্থার উন্নয়ন ও উন্নয়ন মূলক বিবিধ কার্যক্রম সম্পাদন করে থাকে।

৯. নিচের তথ্যের ভিত্তিতে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও:
M = 200, V = 5, T = 20
এখানে, M = বিহিত মুদ্রা, T = লেনদেনের পরিমাণ এবং V = প্রচলন গতি।
ক. মুদ্রার মূল্য কী?
খ. কেন্দ্রীয় ব্যাংক কীভাবে ঋণ নিয়ন্ত্রণ করে?
গ. উদ্দীপকের তথ্যের ভিত্তিতে ফিশারের বিনিময় সমীকরণের মাধ্যমে দামস্তর নির্ণয় করো।
ঘ. উদ্দীপকের M এর মান ৪০০ হলে দামস্তরের উপর কীরূপ প্রভাব বিস্তার করবে তা ব্যাখ্যা করো।

৯ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. একটি নির্দিষ্ট সময়ে এক একক মুদ্রা দ্বারা যে পরিমাণ দ্রব্য বা সেবা ক্রয় করা যায় তাই মুদ্রার মূল্য।

খ. কেন্দ্রীয় ব্যাংক যখন দেশে ঋণের পরিমাণ কমাতে চায় তখন ব্যাংক হার বাড়ায়। এর ফলে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিকট থেকে ঋণ নিতে অপেক্ষাকৃত অধিক হারে সুদ দিতে হয়। এজন্য তাদের প্রদেয় ঋণের ওপর সুদের হার বাড়াতে হয়। সুদের হার বাড়লে ঋণ গ্রহীতারা কম পরিমাণে ঋণ গ্রহণ করে। ফলে দেশে ঋণের পরিমাণ কমে যায়। একই ভাবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক দেশে ঋণের পরিমাণ বাড়াতে চাইলে ব্যাংক হার কমায়। ঋণ নিয়ন্ত্রণের জন্য এভাবেই কাজ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

গ. অর্থনীতিবিদ আরভিং ফিশার তার অর্থের পরিমাণ তত্ত্ব প্রকাশের জন্য প্রাথমিক অবস্থায় যে সমীকরণ প্রদান করেন তা বিনিময় সমীকরণ নামে পরিচিত। সমীকরণটি নিমণরূপ:
MV = PT M = বিহিত মুদ্রার পরিমাণ
বা, P = V = বিহিত মুদ্রার প্রচলন গতি
P = দামস্তর
T = ক্রয়-বিক্রয় পরিমাণ
এ সমীকরণে দেখা যায়, M, V ও T এর মান জানা থাকলে P এর মান সহজেই নির্ণয় করা যায়। এ হিসেবে উদ্দীপকে M, V ও T এর যে মানগুলো দেওয়া আছে তার ভিত্তিতে মান বসিয়ে,
P =
=
= 50
অর্থাৎ দামস্তর P = ৫০।

ঘ. অর্থনীতিবিদ আরভিং ফিশারের মতে কোনো নির্দিষ্ট সময়ে অর্থের প্রচলন গতি (V) ও বাণিজ্যিক লেনদেন (T) এর পরিমাণ স্থির থাকলে অর্থের পরিমাণ (M) এর সাথে দামস্তর (P) এর সম্পর্ক হয় সমানুপাতিক। তখন দামস্তরের সাথে অর্থের মূল্য (Vm) এর সম্পর্ক হয় বিপরীত। এ অবস্থায় অর্থের পরিমাণ দ্বিগুণ হলে অর্থের মূল্য অর্ধেক হয়। এখন উদ্দীপকের বিভিন্ন তথ্যের প্রেক্ষিতে অর্থের পরিমাণ ২০০ থেকে ৪০০ হলে অর্থের মূল্যের ওপর তার প্রভাব নিচের ছকে দেখানো হলো:

M

V

T

P =

V= 

200

5

20

P =  =50

V= =0.02

400

5

20

P =   =100

V= =0.01

উপরের টেবিলে দেখা যায়, V ও T স্থির অবস্থায় M বৃদ্ধি পেয়ে দ্বিগুণ হলে দামস্তরও বৃদ্ধি পেয়ে দ্বিগুণ হয়। তখন অর্থের মূল্য হ্রাস পেয়ে অর্ধেক হয়।
সুতরাং উদ্দীপকে M এর মান ২০০ থেকে ৪০০ অর্থাৎ দ্বিগুণ হলে অর্থের মূল্য অর্ধেক হবে।

১০. মুদ্রা আবিষ্কার একটি যুগান্তকারী ঘটনা। মুদ্রা কেবল বিনিয়োগের মাধ্যম হিসেবেই কাজ করে না, এটি মূল্যের পরিমাপক ও সঞ্চয়ের বাহন। মানুষের সামাজিক ও মনস্তাত্ত্বিক জিবনেও এর ভূমিকা কম নয়।
ক. মুদ্রা কী?
খ. বিহিত মুদ্রা কাকে বলে বুঝিয়ে লেখ?
গ. মুল্যের পরিমাপক ও সঞ্চয়ের বাহন হিসেবে মুদ্রার কার্যাবলি ব্যাখ্যা করো।
ঘ. ‘বিনিময়ের মাধ্যম হিসেবে অর্থ মানুষের অর্থনৈতিক জীবনকে গতিময় ও স্বাচ্ছন্দ্যময় করছে’ মূল্যায়ন করো।

১০ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. যা কিছু বিনিময়ের মাধ্যম, মূল্যের পরিমাপক ও সঞ্চয়ের বাহন হিসেবে কাজ করে তাই মুদ্রা।

খ. যে মুদ্রা দেশের জনসাধারণ গ্রহণ করতে আইনত বাধ্য থাকে তাকে বিহিত মুদ্রা বলে।
বাংলাদেশ সরকার ও সরকারের পক্ষে বাংলাদেশ ব্যাংক যেসব অর্থ প্রচলন করেছে সেগুলো বিহিত মুদ্রা হিসেবে পরিচিত। এসব মুদ্রা বাংলাদেশের নাগরিকগণ গ্রহণ করতে আইনত বাধ্য থাকে। গ্রহণের সীমার দিক থেকে বিহিত মুদ্রা আবার দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যথা: অসীম বিহিত মুদ্রা এবং সসীম বিহিত মুদ্রা।

গ. মূল্যের পরিমাপক ও সঞ্চয়ের বাহন হিসেবে মুদ্রার কার্যাবলি নিচে ব্যাখ্যা করা হলো:
অধিকাংশ দ্রব্যসামগ্রী পচনশীল এবং দীর্ঘকালে সংরক্ষণ উপযোগী না হওয়ায় সঞ্চয়ের বাহন হিসেবে অর্থকেই অধিক উপর্যুক্ত বলে বিবেচনা করা হয়। আবার এমন কিছু দ্রব্য আছে যেগুলো মূল্যবান সম্পদ হিসেবে বিবেচিত হলেও সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে এদের মূল্যমানের পরিবর্তন ঘটে। এমতাবস্থায় সঞ্চিত দ্রব্যের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ মূল্যের মধ্যে তারতম্য দেখা দিতে পারে। কিন্তু সময়ের পরিবর্তনের সাথে অর্থ মূল্যের সামঞ্জস্যতা বজায় থাকায় সঞ্চয়ের বাহন হিসেবে অর্থকেই অধিক নিরাপদ ও সুবিধাজনক বলা হয়। তাই অর্থ সঞ্চয়ের উৎকৃষ্ট বাহন হিসেবে কাজ করে।
আবার দ্রব্য বিনিময় প্রথায় মূল্য পরিমাপের কোনো সাধারণ মানদন্ড না থাকায় বিভিন্ন দ্রব্যের আপেক্ষিক মূল্য নির্ধারণ করা কঠিন ছিল। কিন্তু অর্থ সকল দ্রব্য, সেবা বা সম্পদের মূল্য পরিমাপের সাধারণ মানদন্ড হিসেবে কাজ করায় বিনিময় ব্যবস্থার উন্নয়ন, সম্প্রসারণ ও লেনদেন সহজতর হয়। কাজেই বলা যায়, অর্থ সঞ্চয়ের উৎকৃষ্ট বাহন ও মূল্যের পরিমাপক হিসেবে কাজ করায় অনেক জটিল সমস্যার সমাধান সম্ভব হয়েছে।

ঘ. বিনিময়ের মাধ্যম হিসেবে অর্থ মানুষের অর্থনৈতিক জীবনকে করেছে গতিময় ও স্বাচ্ছন্দ্যময়।
মুদ্রার প্রচলনের ফলে দ্রব্য বিনিময় প্রথার প্রধান সমস্যা তথা অভাবের অমিল সমস্যাটি দূর হয়েছে। ফলে ব্যবসায়িক লেনদেন সহজ, নিরাপদ ও গতিশীল হয়েছে। এছাড়া কোনো দ্রব্যের মূল্য নির্ধারণ, সমাজে প্রতিটি মানুষের অবস্থান, সামাজিক মান-মর্যাদা, প্রতিপত্তি সবকিছুই এখন অর্থের মানদন্ডে নির্ধারিত হয় যা বিনিময় প্রথার মাধ্যমে কঠিন ছিল। আবার অর্থের মাধ্যমে সহজেই সঞ্চয় করা যায় কারণ এটি অধিকতর স্থায়ী ও নিরাপদ।
অতীতে দ্রব্য বিনিময় প্রথায় অর্থাৎ মুদ্রা আবিষ্কারের পূর্বে অভাবের অমিল, দ্রব্য অভিজাত্যতা, মূল্য পরিমাপে অসুবিধা, সঞ্চয়ের অসুবিধা ইত্যাদির কারণে সাধারণ মানুষকে অনেক কষ্ট, ঝুঁকি ও অনিশ্চয়তার শিকার হতে হতো। কালক্রমে মুদ্রার প্রচলনের পর এসকল সমস্যা দূর হওয়ায় মানুষের জীবনমান তথা অর্থনৈতিক কর্মকান্ড সহজ, সরল ও গতিশীল হয়ে ওঠে।
তাই বলা যায়, উদ্দীপকে আবিষ্কৃত বস্ত্তটি তথা মুদ্রা মানুষের দৈনন্দিন জীবনের সকল কার্যাবলিকে অত্যন্ত সহজ করে দিয়েছে। ফলে বর্তমান অর্থনীতি অতীতের তুলনায় অনেক গতি লাভ করে।
Share:

0 Comments:

Post a Comment