HSC Economics 2nd Paper Srijonshil question and answer pdf download.
উচ্চমাধ্যমিক
অর্থনীতি
দ্বিতীয় পত্র
সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
৪র্থ অধ্যায়
HSC Economics 2nd Paper
Srijonshil
Question and Answer pdf download
১. অর্থনীতির অধ্যাপক সাকিব নোমান "Q" নামক একটি ধারণার উপর আলোকপাত করতে গিয়ে শিক্ষার্থীদের নিকট শিক্ষাবিস্তার, উপযুক্ত চিকিৎসা নিশ্চিতকরণ, আবাসন ব্যবস্থা উন্নয়ন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি ইত্যাদি বিষয়গুলো উল্লেখ করেন। বাংলাদেশের সরকারও বিষয়টির উন্নয়নে যথাসাধ্য চেষ্টা করে যাচ্ছে। যেমন- শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা, স্বাস্থ্য সেবার উন্নয়ন, অপুষ্টি দূরীকরণ, নারী শিক্ষা প্রসার ও উন্নয়ন ইত্যাদি।
ক. জনসংখ্যার ঘনত্ব কী?
খ. জনসংখ্যা বৃদ্ধি খাদ্য সমস্যা সৃষ্টি করে ব্যাখ্যা করো।
গ. উদ্দীপকের 'Q' নামক ধারণাটি কী? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. বিষয়টির উন্নয়নে সরকারের গৃহীত ব্যবস্থা যথেষ্ট কি? উদ্দীপকের আলোকে তোমার মতামত দাও।
১ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. জনসংখ্যা ঘনত্ব হলো কোনো দেশে একটি নির্দিষ্ট সময়ে প্রতি বর্গকিলোমিটারে যতজন লোক স্থায়ীভাবে বসবাস করে।
খ. জনসংখ্যা বৃদ্ধি খাদ্য সমস্যা সৃষ্টি করে। কারণ অধিক জনগণের জন্য অধিক খাদ্যের প্রয়োজন। একটি দেশের খাদ্য উৎপাদনের প্রবৃদ্ধির হার অপেক্ষা জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার বেশি হলে খাদ্য ঘাটতি দেখা দেয়। তাই অতিরিক্ত জনগণের জন্য খাদ্য আমদানি করতে হয়। কিন্তু বিশ্ব বাজারে খাদ্য শস্যের চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় এর দাম অনেক বেশি। ফলে স্বল্প আয়ের দেশগুলো চাহিদার তুলনায় প্রয়োজনীয় খাদ্যের যোগান দিতে ব্যর্থ হয়। তাই বলা যায়, অতিরিক্ত জনসংখ্যা খাদ্য সমস্যা তৈরি করে।
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত 'Q' নামক ধারণাটি হলো মানবসম্পদ। নিচে বিষয়টি ব্যাখ্যা করা হলো।
কোনো দেশের উৎপাদনশীল, দক্ষ ও কর্মক্ষম জনশন্তিকে ঐ দেশের মানবসম্পদ বলে। একটি দেশের ভূমি ও মূলধনকে তথ্য বস্তুগত সম্পদকে কাজে লাগানোর জন্য প্রয়োজন কর্মক্ষম জনগণ। কাজেই উপযুক্ত শিক্ষা, প্রশিক্ষণ, প্রযুক্তি ইত্যাদির মাধ্যমে প্রতিকে দক্ষ হিসেবে গড়ে তোলা হলে তা অর্থনৈতিক উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করবে। আর এই দক্ষ জনশক্তি বা শ্রমশক্তিকেই মানবসম্পদ বলা হয়।
উদ্দীপকে লক্ষ করা যায়, অধ্যাপক সাকিব নোমান 'Q' নামক ধারণাটি ব্যাখ্যার জন্য শিক্ষার বিস্তার, উপযুক্ত চিকিৎসা নিশ্চিতকরণ, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ইত্যাদি বিষয় উল্লেখ করেন। এই বিষয়গুলো মূলত একটি দেশের জনগণকে দক্ষ শ্রমশন্তিতে পরিণত করে। তাই বলা যায, 'Q' নামক ধারণাটি হলো মানবসম্পদ।
ঘ. বাংলাদেশ সরকার উদ্দীপকে উল্লিখিত বিষয়টি তথা মানবসম্পদ উন্নয়নে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ বা ব্যবস্থাসমূহ মূল্যায়ন করা হলো।
সাধারণত উপযুক্ত শিক্ষা, প্রশিক্ষণ ও কারিগরি জ্ঞান ইত্যাদির দ্বারা মানুষকে দক্ষ করে গড়ে তোলার নিয়মকে মানবসম্পদ উন্নয়ন বলে। এ লক্ষ্যে সরকার শিক্ষার ক্ষেত্রে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে বিনামূল্যে বই বিতরণ এবং প্রাথমিক শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করেছে। এছাড়া, শিক্ষা আইন প্রণয়ন ও কারিকুলামে পরিবর্তন এনেছে। এতে দেশের শিক্ষার হার বৃদ্ধি পেয়েছে। আমাদের দেশের জনসংখ্যার প্রায় ৫০% নারী। তাই, এই নারীদের শিক্ষিত ও দক্ষ মানবসম্পদ হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে জাতীয় উন্নয়ন নীতি-২০১১ গৃহীত হয়েছে। এর ফলে বর্তমানে কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ ও নারীর ক্ষমতায়ন বৃদ্ধি পেয়েছে, যা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এছাড়া, সবার জন্য স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে জাতীয় স্বাস্থ্যনীতি- ২০১১ গ্রহণ এবং জাতীয় ঔষধ নীতি যুগোপযুগী করা হয়েছে। আবাসন উন্নয়নে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য গৃহায়ন তহবিল গঠন করেছে। এ সকল কার্যক্রম গ্রহণের ফলে বাংলাদেশের জনগণ দক্ষ শ্রমশক্তি তথা মানবসম্পদে পরিণত হচ্ছে। এই উপরের পর্যালোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায়, মানবসম্পদ উন্নয়নে সরকারের গৃহীত ব্যবস্থা আপাতত যথেষ্ট। তবে উল্লিখিত কার্যক্রমগুলো অব্যাহত রাখতে হবে এবং আরও আধুনিক কার্যক্রম গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করতে হবে।
২. জনসংখ্যা সম্পর্কিত আলোচনা অতি প্রাচীন। তবে বর্তমানে এ সম্পর্কিত দুটি তত্ত্ব বহুল প্রচলিত। এ তত্ত্বদ্বয়ের মাধ্যমে বিভিন্ন দেশের জনসংখ্যা পরিস্থিতি ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করা হয়।
ক. নিট অভিবাসন কী?
খ. আস্তেকর্মসংস্থান দারিদ্র্য দূরীকরণে সহায়ক- ব্যাখ্যা করো।
গ. উদ্দীপকে যে দুটি তত্ত্বকে ইঙ্গিত করা হয়েছে তার মূল বক্তব্য উপস্থাপন করো।
ঘ. ভরদ্বয়ের আলোকে তুমি কি বাংলাদেশকে জনাধিক্যের দেশ হিসেবে আখ্যায়িত করবে? যুক্তিসহ মতামত দাও।
২ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. একটি নির্দিষ্ট বছরে কোনো একটি দেশের মোট বহিরাগমন ও বহির্গমন এর পার্থক্যকে ঐদেশের নিট অভিবাসন বলা হয়।
খ. আস্তেকর্মসংস্থান একটি দেশের নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে জনগণের আয় বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। এর ফলে দেশে দারিদ্র্যের পরিমাণ বা মাত্রা হ্রাস পায়।
সাধারণত কোনো ব্যক্তি নিজের অর্থ বা ঋণ গ্রহণের মাধ্যমে নিজস্ব বুদ্ধিমত্তা ও দক্ষতার আলোকে সীমিত ঝুঁকি নিয়ে নিজস্ব উদ্যোগে জীবিকা অর্জনের প্রচেষ্টাকে আস্তেকর্মসংস্থান বলা হয়। এর ফলে উদ্যোঞ্জাসহ তার প্রতিষ্ঠানে কর্মরত অন্যান্য কর্মীরা তুলনামূলক উন্নত জীবনযাপন করতে সক্ষম হয়। তাই বলা যায়, আস্তেকর্মসংস্থান দারিদ্র দূরীকরণে সহায়ক।
গ. উদ্দীপকে ইঙ্গিতকৃত দুটি তত্ত্ব হলো ম্যালথাসের জনসংখ্যা তত্ত্ব এবং কাম্য জনসংখ্যা তত্ত্ব। নিচে তাদের মূল বক্তব্য উপস্থাপন করা হলো। অর্থনীতিবিদ থমাস রবার্ট ম্যালথাস এর জনসংখ্যা তত্ত্বের মূল বক্তব্য হলো,
"জনসংখ্যা বাড়ে জ্যামিতিক প্রগতিতে এবং খাদ্য উৎপাদন বাড়ে গাণিতিক প্রগতিতে। ম্যালথাসের মতে, মানুষের অসিস্তেত্বের জন্য খাদ্য অত্যাবশ্যক হলেও তা জনসংখ্যা বাড়ার তুলনায় কম হারে বাড়ে। তার মতে, মানুষের অতি প্রজনন ক্ষমতার জন্য জনসংখ্যা দ্রুত বাড়ে এবং তার ওপর কোনো নিয়ন্ত্রণ আরোপ না করলে প্রতি ২৫ বছরে একটি দেশের জনসংখ্যা দ্বিগুণ হয়। কিন্তু তামির যোগান সীমিত এবং সেখানে ক্রমহ্রাসমান উৎপাদন বিধি কার্যকর হওয়ায় খাদ্যশস্যের উৎপাদন দ্রুত বাড়তে পারে না। এর ফলে এমন এক সময় আসে যখন জনসংখ্যার পরিমাণ খাদ্য উৎপাদনের পরিমাণকে ছাড়িয়ে যায় এবং দেশে জনাধিক্য দেখা দেয়।
কাম্য জনসংখ্যা তত্ত্বের মূল কথা হলো, কোনো দেশে একটি নির্দিষ্ট সময়ে যে জনসংখ্যা বর্তমান থাকলে গড় উৎপাদন বা মাথাপিছু আয় সর্বোচ্চ হয়। তাকে কাম্য জনসংখ্যা বলে। কাম্য জনসংখ্যা বলতে এমন একটি অবস্থাকে বোঝায় যেখানে কোনো দেশের জনসংখ্যা আরও বৃদ্ধি পেলে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য ক্ষতিকারক হতে পারে; কেবল দীর্ঘকালীন প্রবৃদ্ধির জন্য ক্ষতিকারক নয় বরং স্বল্পকালীন প্রবৃদ্ধির জন্যও ক্ষতিকারক হতে পারে। অর্থাৎ এ অবস্থায় প্রান্তিক উৎপাদন শূন্য বা ঋণাস্তেক হয়।
ঘ. ম্যালথাসের জনসংখ্যা তত্ত্ব ও কাম্য জনসংখ্যা তত্ত্বের আলোকে বাংলাদেশ একটি জনাধিক্যের দেশ কি না- তা বিবেচনা করা হলো-
ম্যালথাসের তত্ত্বের আলোকে বাংলাদেশের জনসংখ্যা: বাংলাদেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার প্রতি বছর ১. ৩৭% কিন্তু শস্য উৎপাদনে প্রবৃদ্ধির হার ০.১৫%। অর্থাৎ যে হারে জনসংখ্যা বাড়ছে উৎপাদন সে হারে বাড়ছে না। এর ফলে এদেশে ঘাটতি লেগেই আছে। আবার, জন্মহার হ্রাসের জন্য সরকার, বিভিন্ন দাতা ও সামাজিক সংস্থা জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতিকে উৎসাহিত করছে। অর্থাৎ, এদেশে জনাধিক্য হ্রাসের লক্ষ্যে ম্যালথাসের প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা কিছুটা কার্যকর হচ্ছে। কাজেই বলা যায়, ম্যালথাসের জনসংখ্যা তত্ত্বের আলোকে বাংলাদেশকে জনাধিক্যের দেশ হিসেবে আখ্যায়িত করা যায়।
কাম্য জনসংখ্যার তত্ত্বের আলোকে বাংলাদেশের জনসংখ্যা: কাম্য জনসংখ্যা তত্ত্ব অনুযায়ী একটি দেশের প্রাপ্ত সম্পদের পূর্ণ ব্যবহারের জন্য যে জনসংখ্যা প্রয়োজন তাকে ঐ দেশের কাম্য জনসংখ্যা বলে। আর এই কাম্য জনসংখ্যা অপেক্ষা প্রকৃত জনসংখ্যা কম হলে নিম্ন জনসংখ্যার দেশ এবং বেশি হলে অধিক জনসংখ্যার দেশ বলা হয়। বাংলাদেশে জনসংখ্যার আয়তন বিশাল ও জন্মহার বেশি। কিন্তু সেই তুলনায় প্রাপ্ত প্রাকৃতিক সম্পদ কম। তাই, এদেশে প্রকট বেকারত্ব, জীবনযাত্রার মান নিম্ন পুষ্ঠিহীনতা, রোগ-ব্যাধি বিদ্যমান ও শিক্ষার অভাব প্রভৃতি পরিলক্ষিত হয়। এজন্য অনেক অর্থনীতিবিদ কাম্য জনসংখ্যা তত্ত্বের আলোকে বাংলাদেশকে অতিরিক্ত জনসংখ্যার দেশ বলে বিবেচনা করেন। উপরের পর্যালোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায়, উদ্দীপকে উল্লিখিত তত্ত্ব দুটির ভিত্তিতে বাংলাদেশকে জনাধিক্যের দেশ হিসেবে আখ্যায়িত করা যায়।
৩. রূপু রোজার ঈদে তার বাবা-মার সঙ্গে ঢাকা থেকে নানার গ্রামের বাড়িতে যাবে। বাবা প্রথমে ঢাকার গাবতলীতে যান। বাসে কোনো টিকেট না পেয়ে সবাই মিলে রেল স্টেশনে যান। রূপু দেখে ট্রেনে তিল ধারণের জায়গা নেই। অনেক কষ্টে নানার বাড়ি পৌঁছে। সে দেখে গ্রামের অধিকাংশ মানুষ রোগা, গরিব এবং বেকার। সে গ্রাম্য মানুষের এসব সমস্যা সমাধানের উপায় নিয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধির সাথে আলোচনা করল।
ক. কাম্য জনসংখ্যা কী?
খ. মানবসম্পদ উন্নয়নের প্রধান দুটি সূচক ব্যাখ্যা করো।
গ. উদ্দীপকের আলোকে বাংলাদেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধির প্রভাব আলোচনা করো।
ঘ. রূপুর নানার গ্রামের মানুষদের বিদ্যমান সমস্যা সমাধানে কী পদক্ষেপ গ্রহণ করা যায়? বিশ্লেষণ করো।
৩ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. কোনো দেশে একটি নির্দিষ্ট সময়ে যে জনসংখ্যা বর্তমান থাকলে উৎপাদন বা মাথাপিছু আয় সর্বোচ্চ হয়, তাকে কাম্য জনসংখ্যা বলে।
খ. মানবসম্পদ উন্নয়নের প্রধান দুটি সূচক হলো কাল এবং শিক্ষার্জন বা জ্ঞানার্জন।
মানুষের কর্মক্ষম জীবনকাল তার আয়ুষ্কালের ওপর নির্ভর করে। যার আয়ুষ্কাল যত বেশি, তার কর্মক্ষম জীবনকালও তত বেশি। কোনো দেশের জনগণের আয়ুষ্কাল পরিমাপ করা হয় জনগণের জীবন প্রত্যাশা দ্বারা। যদি কোনো দেশের জনগণের জীবন প্রত্যাশা বাড়তে থাকে তাহলে বোঝা যাবে যে, মানবসম্পদ উন্নয়ন হচ্ছে। তাছাড়া মানবসম্পদ উন্নয়নের আর একটি সূচক হলো শিক্ষার্জন বা জ্ঞানার্জন। শিক্ষা মানুষকে পক্ষ হিসেবে গড়ে তোলে।
গ. উদ্দীপকের আলোকে বাংলাদেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধির প্রভাব আলোচনা করা হলো-
১. বাংলাদেশে প্রকট খাদ্যঘাটতি রয়েছে। বাংলাদেশ ২০১৭-১৮ অর্থবছরে (জুলাই-জানু) সরকারি ও বেসরকারি খাতে মোট ৬৮. ৪০ লক্ষ মে. টন খাদ্যশস্য আমদানি করেছে। বিশাল এই খাদ্য ঘাটতির কারণ হলো অধিক জনসংখ্যা।
২. বাংলাদেশে অধিক জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে বাসস্থানের সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। এতে চাষযোগ্য জমির পরিমাণ কমছে।
৩. কোনো দেশে জনসংখ্যা বেশি হলে মাথাপিছু আয় কমে যায়। বাংলাদেশে বর্তমানে মাথাপিছু আয় ১৭৫২ মার্কিন ডলার। উন্নত দেশের তুলনায় তা অত্যন্ত কম।
৪. এদেশে প্রায় ১৫ কোটি ৮৯ লাখ লোকের বসবাস। জনগোষ্ঠীকে শিক্ষিত করার জন্য সে তুলনায় স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও বিশ্ববিদ্যালয় কম। ফলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ওপর তার বিশাল চাপ পড়ছে।
৫. অতিরিক্ত জনসংখ্যার চাপে বাংলাদেশে স্বাস্থ্য ব্যবস্থারও নাজুক অবস্থা। পর্যাপ্ত পরিমাণে হাসপাতাল নেই, নেই প্রয়োজনীয় সংখ্যক ডাক্তার। যারা আছে তারা তত প্রশিক্ষিত নয়। চিকিৎসার অভাবে রোগাক্রান্ত ও নির্জীব জনগোষ্ঠী সামাজিক ও অর্থনৈতিক সমস্যাকে আরও জটিল করে তুলছে।
ঘ. রূপুর নানার গ্রামের মানুষের বিদ্যমান অধিক জনসংখা সমস্যা সমাধানে নিম্নোক্ত পদক্ষেপসমূহ গ্রহণ করা যায়।
১. পরিবার পরিকল্পনার মাধ্যমে জনসংখ্যা বৃদ্ধিকে প্রত্যক্ষভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। সাম্প্রতিককালে জনসংখ্যা সমস্যার সমাধান হিসেবে পরিবার পরিকল্পনা প্রায় সব দেশেই জনপ্রিয়তা লাভ করেছে।
২. শিক্ষার প্রসার জনসংখ্যা রোধে সহায়তা করে। ছেলেমেয়েরা লেখাপড়া নিয়ে ব্যস্ত থাকলে সাধারণত একটি নির্দিষ্ট সময়ে বিয়ে করে। তাছাড়া দেশে শিক্ষার প্রসার ঘটলে জনগণকে উৎপাদনশীল কাজে নিয়োজিত করা যাবে এবং তাতে জনসংখ্যা সমস্যা হ্রাস পাবে।
৩. কর্মসংস্থান সুযোগের অভাবে বাংলাদেশের জনগণ দরিদ্র। ডি. ক্যাস্ট্রো তার বিখ্যাত 'Geography of Hunger' গ্রন্থে প্রমাণ করেছেন যে, ক্ষুধার্ত মানুষের প্রজনন ক্ষমতা অধিক। তাই জনসংখ্যা সমস্যা সমাধান করতে হলে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করে দেশের জনগণের আয় ও জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধি করতে হবে।
৪. উপযুক্ত শিক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমে সমাজ থেকে অশিক্ষা ও অজ্ঞতা দূর করতে হবে। এতে অধিকাংশ লোক বিবাহের দায়িত্ব ও ছেলেমেয়েদের প্রতিপালন সম্পর্কে সচেতন হবে। ফলে জন্মহার কমবে।
৫. বাংলাদেশের নারী সমাজের সিংহভাগ ঘরের বাইরে গিয়ে উৎপাদন কাজে অংশগ্রহণ করতে পারে না। ফলে তারা পরিবারের জন্য আয় উপার্জনে অক্ষম। ফলশ্রুতিতে পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে তাদের মর্যাদা কম। এ কারণে অনেক সময় তাদের মতের বিরুদ্ধেও তাদের ওপর মাতৃত্বের বোঝা চাপিয়ে দেয়া হয়। তাই জনসংখ্যা রোধকল্পে উপযুক্ত কর্মসূচির মাধ্যমে পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে নারীর ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে।
সুতরাং উপরিউক্ত ব্যবস্থাসমূহ যথাযথভাবে কার্যকর করা হলে রূপুর নানার গ্রামের অধিক জনসংখ্যা সমস্যা সমাধান হবে।
৪. সুজন ও সুমন বাল্যবন্ধু। ছাত্রজীবন শেষে সুজন বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোতে এবং সুমন অর্থনীতির প্রভাষক হিসেবে কর্মরত আছেন। বাংলাদেশের জনসংখ্যা সমস্যা নিয়ে একদিন তাদের মধ্যে তর্ক হয়। সুজন পরিসংখ্যানিক উপাত্ত দিয়ে বলেন, জনসংখ্যার ঘ কর্মসংস্থানের সুযোগ, কৃষিজমির পরিমাণ এসব বিবেচনায় বাংলাদেশের জন্য অতিরিক্ত জনসংখ্যা অভিশাপস্বরূপ। অন্যদিকে, সুমন মনে করেন, অতিরিক্ত জনসংখ্যা সবসময় অভিশাপ নয়, বরং মানবসম্পদ উন্নয়নের মাধ্যমে জনসংখ্যাকে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে আশীর্বাদে পরিণত করা যায়।
ক. আস্তেকর্মসংস্থান বলতে কী বোঝায়?
খ. কোনো কোনো দেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার (০)- কীভাবে সম্ভব?
গ. জনসংখ্যা সম্পর্কিত সুজনের মতামত ব্যাখ্যা করো।
ঘ. কোন ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করলে অতিরিক্ত জনসংখ্যাকে অভিশাপ থেকে আশীর্বাদে পরিণত করা যায়? উদ্দীপকের আলোকে বিশ্লেষণ করো।
৪ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. নিজস্ব অথবা ঋণ করা স্বপ্ন সম্পদ, নিজস্ব চিন্তা, জ্ঞান, বুদ্ধিমত্তা ও দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে ন্যূনতম ঝুঁকি নিয়ে নিজস্ব প্রচেষ্টায় জীবিকা অর্জনের ব্যবস্থাকে আস্তেকর্মসংস্থান বলে।
খ. স্থূল জন্মহার ও স্থূল মৃত্যুহার সমান হলে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার শূন্য হয়। কোনো দেশের জন্মহার ও মৃত্যুহারের পার্থক্যকে শতকরায় প্রকাশ করলে ঐ দেশের জনসংখ্যার স্বাভাবিক বৃদ্ধির হার পাওয়া যায়।
এখন, একটি নির্দিষ্ট সময়ে যদি একটি দেশের জন্মহার ও মৃত্যুহার সমান হয়, তাহলে ঐ দেশটির জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার শূন্য হবে। তাই বলা যায়, কোনো কোনো দেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার শূন্য হতে পারে।
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত পরিসংখ্যানিক উপাত্তের ভিত্তিতে সুজনের মতে, বাংলাদেশের জন্য অতিরিক্ত জনসংখ্যা অভিশাপস্বরূপ।
যে জনসংখ্যার দ্বারা জীবনযাত্রার মান সর্বোচ্চ পর্যায়ে থাকে, তাকে কাম্য জনসংখ্যা বলে। বাংলাদেশে কাম্য জনসংখ্যার চেয়ে বেশি জনসংখ্যা বিদ্যমান। আর এই অতিরিক্ত জনসংখ্যার প্রভাবে দেশে বিভিন্ন ধরনের অর্থনৈতিক ও সমাজিক সমস্যা দেখা দিচ্ছে। যেমন-
বাংলাদেশে বর্তমান জনসংখ্যার ঘনত্ব প্রতি বর্গকিলোমিটারে ১০৭৭ জন যা তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি। এই অতিরিক্ত জনসংখ্যার ফলে খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা, শিক্ষা ইত্যাদি মৌলিক অধিকার থেকে অনেকই বঞ্চিত হচ্ছে। আবার, অতিরিক্ত জনসংখ্যার চাপে বর্ধিত আবাসন চাহিদা মেটানোর লক্ষ্যে আবাদি জমিতে ঘর-বাড়ি গড়ে উঠছে। ফলে কৃষিজমির পরিমাণ হ্রাস পাচ্ছে। এছাড়াও বাংলাদেশে অতিরিক্ত জনসংখ্যার জন্য। পর্যাপ্ত কর্মসংস্থানের সুযোগ নেই। ফলে দিন দিন বেকারত্ব বৃদ্ধি পাচ্ছে। পরিশেষে বলা যায়, এইসব দিক বিবেচনা করে সুজন বাংলাদেশের অতিরিক্ত জনসংখ্যাকে অভিশাপস্বরূপ বলে মনে করেন।
ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত সুজনের বাল্যবন্ধু সুমনের মতে, মানবসম্পদ উন্নয়নের মাধ্যমে বাংলাদেশের অতিরিক্ত জনসংখ্যাকে আশীর্বাদে পরিণত করা যেতে পারে।
কোনো দেশের জনসংখ্যাকে স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে সুস্বাস্থ্য, দক্ষ মানবগোষ্ঠী হিসেবে গড়ে তোলাকে মানবসম্পদ উন্নয়ন বলে। আর একটি দেশের মানবসম্পদ উন্নয়নের মাধ্যমে অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্ভব। এক্ষেত্রে নিম্নোক্ত পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করে অতিরিক্ত জনসংখ্যাকে আশীর্বাদে পরিণত করা যায়।
শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ প্রদান: বাংলাদেশের জনসংখ্যাকে কর্মমুখী ও আধুনিক শিক্ষা এবং বিভিন্ন প্রশিক্ষণ প্রদান করা হলে তাদের দক্ষতা ও উপার্জন ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। ফলে দেশের উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে।
নারীর ক্ষমতা ও সম-অধিকার: বাংলাদেশের জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেকই নারী। কিন্তু নানা ধরনের সামাজিক ও ধর্মীয় প্রতিবন্ধকতা থাকার জন্য তারা ঘরের বাইরে যেতে পারেন না। ভাই, নারীকে সম-অধিকার প্রদান ও নারীর ক্ষমতায়নের মাধ্যমে মানবসম্পদের উন্নয়ন করা উচিত।
মানবসম্পদ রপ্তানি: অতিরিক্ত জনসংখ্যাকে উপযুক্ত প্রশিক্ষণ প্রদান করে শ্রমের প্রযুক্তিগত জ্ঞান, উৎপাদনশীলতা ও দক্ষতা বৃদ্ধি করা সম্ভব হলে মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশি শ্রমবাজারের প্রসার ঘটবে। অর্থাৎ প্রশিক্ষিত শ্রমিক রপ্তানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব হবে।
কাজেই উপর্যুক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায়, বাংলাদেশের অতিরিক্ত জনসংখ্যাকে দক্ষ মানবসম্পদে রূপান্তরের মাধ্যমে আশীর্বাদে পরিণত করা যায়।
৫. স্বপন অর্থনীতিতে মাস্টার্স পাস করার পর সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরির জন্য অনেক দিন চেষ্টা করেছেন, কিন্তু চাকরি হয়নি। পরে গ্রামে গিয়ে আত্মীয়স্বজনদের নিকট থেকে টাকা ধার করে একটি ডেইরি ফার্ম গড়ে তোলেন। এখন তিনি একজন সফল ব্যবসায়ী। নিজেকে স্বাবলম্বী করতে পেরে তিনি খুব খুশি।
ক. জনসংখ্যার ঘনত্ব কী?
খ. স্বাস্থ্য সেবার সম্প্রসারণ মানবসম্পদ উন্নয়নে সহায়ক' ব্যাখ্যা করো।
গ. স্বপনের কর্মসংস্থান কী প্রকৃতির? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. স্বপনের মতো সফল হতে দেশের বেকার যুবকদের করণীয় বিশ্লেষণ করো।
৫ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. জনসংখ্যার ঘনত্ব বলতে কোনো দেশে একটি নির্দিষ্ট সময়ে প্রতি বর্গকিলোমিটারে গড়ে কতজন লোক স্থায়ীভাবে বাস করে তা বোঝায়।
খ. মানবসম্পদ উন্নয়নের জন্য যেসব সহায়ক উপাদান প্রয়োজন তার মধ্যে স্বাস্থ্য সেবার সম্প্রসারণ অন্যতম। উন্নত স্বাস্থ্য সুবিধা দেওয়ার মাধ্যমে বাংলাদেশের জনসাধারণের শারীরিক যোগ্যতা বাড়ানো হলে তাদের পক্ষে ভারী ও কষ্টকর কাজে নিয়োজিত হওয়া সম্ভব হবে। পর্যাপ্ত স্বাস্থ্য সুবিধা প্রদানের মাধ্যমে শ্রমিকদের মধ্যে কাজের প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি করতে পারলে তাদের উৎপাদনশীলতা বাড়বে। বিভিন্ন ধরনের রোগ, অপুষ্টি ও শারীরিক অক্ষমতার কারণে বাংলাদেশের জনসংখ্যার এক বিরাট অংশ পরনির্ভরশীল। এ জনগোষ্ঠীকে উৎপাদনক্ষম করে গড়ে তোলার জন্য স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা অপরিহার্য। সুতরাং বলা যায়, স্বাস্থ্য সেবার সম্প্রসারণ এদেশের মানবসম্পদ উন্নয়নে সহায়ক।
গ. স্বপনের কর্মসংস্থানটি আস্তেকর্মসংস্থান বা স্বকর্মসংস্থান হিসেবে পরিচিত। এ কর্মসংস্থানের প্রকৃতি নিচে ব্যাখ্যা করা হলো-
বেকারত্ব ঘোচানোর জন্য যখন কেউ নিজের যৎসামান্য পুঁজি ও স্থাবর সম্পত্তি কিংবা অন্য কোনো উৎস হতে সংগৃহীত সামান্য পুঁজি এবং কোনো কাজ করার অভিজ্ঞতা ও প্রশিক্ষণ নিয়ে উক্ত কাজে লাগিয়ে অর্থোপার্জন করে, তখন তাকে আস্তেকর্মসংস্থান বলে। ব্যক্তির নিজ উদ্যোগে কর্মসংস্থানের এ ব্যবস্থাতে সরকারি বা বেসরকারি ঋণ দানকারী প্রতিষ্ঠানের ঋণ দান, সহযোগিতা ও পরামর্শের প্রয়োজন পড়ে। নির্দিষ্ট কাজের প্রশিক্ষণ নিয়ে নিজেই কাজ করা শুরু করলে আস্তেকর্মসংস্থানের ব্যবস্থা কার্যকর ও স্থায়ী হয়। আস্তেকর্মসংস্থানের মাধ্যমে মানুষ নিজের বুদ্ধি ও শক্তিকে নিজেই কাজে লাগাতে ও বেকারত্বের গ্লানি থেকে মুক্ত হতে পারে। এর মাধ্যমে সে উৎপাদন ও আয় বাড়াতে পারে।
বাংলাদেশে জনসংখ্যা খুব বেশি; কিন্তু সে তুলনায় কর্মসংস্থানের সুযোগ সীমিত। এ অবস্থায় আস্তেকর্মসংস্থান অর্থোপার্জন ও সুন্দর জীবনযাপনের একটি উৎকৃষ্ট উপায় হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। আস্তেকর্মসংস্থানের বিভিন্ন উপায় আছে। যেমন- গবাদি পশুর খামার, হাঁস-মুরগির খামার, মাছ চাষ, চিংড়ি চাষ, শাকসবজির চাষ, মাশরুম চাষ, ফুলের চাষ, ফলের চাষ, কুটিরশিল্প স্থাপন, গম বা চালের কল ইত্যাদি। এছাড়া নার্সারি, যানবাহন ও যন্ত্রপাতি মেরামত, ক্ষুদ্র ব্যবসায় ইত্যাদিও আস্তেকর্মসংস্থানের উপায় হিসেবে বেছে নেওয়া যায়।
ঘ. উদ্দীপক অনুসারে, ডেইরি ফার্ম ব্যবসায়ী স্বপন এখন একজন সফল উদ্যোক্তা। স্বপনের মতো সফল হতে হলে দেশের বেকার যুবকদের অনেক কিছুই করণীয় রয়েছে। নিচে তা বিশ্লেষণ করা হলো-
আস্তেকর্মসংস্থানে ইচ্ছুক ব্যক্তির প্রবল ইচ্ছাশক্তি ও কাজের প্রতি আগ্রহ থাকতে হবে। সৎভাবে জীবিকা অর্জনের জন্য যেকোনো কাজ করতে তাকে যেমন প্রস্তুত থাকতে হবে তেমনি কোনো কাজকেই অপমানজনক বা হেয় মনে করা যাবে না। আস্তেকর্মসংস্থানের উদ্দেশ্যে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে কাজের উপযোগী সম্ভাব্য ক্ষেত্রগুলো চিহ্নিত করতে হবে। তাকে ঠিক করতে হবে কোন কাজটি করা লাভজনক হবে, কালের ঝুঁকি কতটা, প্রাপ্ত মূলধন দ্বারা কাজটি করা সম্ভব হবে কি না ইত্যাদি। আজকাল যেকোনো কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্য উপযুক্ত শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে হয়। তাই আস্তেকর্মসংস্থানের ক্ষেত্র চিহ্নিতকরণের পর ব্যক্তিকে সরকারি/বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে সংশ্লিষ্ট কাজের উপযোগী শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে হবে।
স্ব-উদ্যোগে কোনো কাজ করার জন্য অল্প বিস্তর পুঁজির প্রয়োজন পড়ে। এক্ষেত্রে ব্যক্তিকে নিজ উদ্যোগে নিজস্ব ও পরিবারের সঞ্চয় সংগ্রহ, ক্ষুদ্র ঋণদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে যোগাযোগ করে ঋণ গ্রহণ করে প্রাপ্ত পুঁজিকে উৎপাদনক্ষম কাজে লাগাতে হবে। আমাদের আস্তেকর্মসংস্থানে ইচ্ছুক যুব সম্প্রদায়কে এসব বিষয়ে যত্নবান হতে হবে।
উপরিউক্ত করণীয়সমূহ ঠিকভাবে বাস্তবায়নের মাধ্যমে আমাদের দেশের বেকার যুব সম্প্রদায় তাদের ভাগ্য পরিবর্তন করে উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ সুনিশ্চিত করতে পারে।
৬. জনাব হারুন যুব উন্নয়ন সংস্থা থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে একটি মৎস্য খামার করলেন। মৎস্য অফিসারের সহায়তায় উন্নত জাতের পোনা ও ডিম উৎপাদন করলেন। নিয়মিত মাছের খাদ্য ও যত্ন দিয়ে প্রচুর মাছ উৎপাদন করলেন। এতে তার প্রচুর মুনাফা হলো। তার অনুসরণে গ্রামের অনেক বেকার যুবক মাছ চাষ ও হাঁস-মুরগি পালনে উৎসাহিত হলো।
ক. নিট অভিবাসন কী?
খ. নারী শিক্ষা কীভাবে জনসংখ্যা হ্রাসে ভূমিকা রাখে?
গ. জনাব হারুনের মৎস্য খামারটি কীভাবে অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখে?
ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত জনাব হারুন ও তার অনুসারীদের ফার্মগুলোকে কি স্বকর্মসংস্থান বলা যেতে পারে? আলোচনা করো।
৬ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. একটি নির্দিষ্ট বছরে কোনো একটি দেশের মোট অভিবাসী জনসংখ্যা ও মোট দেশান্তরিত জনসংখ্যার মধ্যকার পার্থক্য হলো ঐ দেশের নিট অভিবাসন।
খ. নারী শিক্ষার প্রসার জনসংখ্যা হ্রাসে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বাংলাদেশের নারী সমাজের সিংহভাগ ঘরের বাইরে গিয়ে উৎপাদন কাজে অংশগ্রহণ করতে পারে না। ফলে তারা পরিবারের জন্য আয় উপার্জনে অক্ষম। নারী শিক্ষার ব্যাপক প্রসার ঘটিয়ে মহিলাদের জন্য ঘরে-বাইরে কাজের সংস্থান করতে পারলে তারা সন্তান জন্মদানের সুযোগ কম পাবে এবং জন্মহার হ্রাস পাবে। কারণ, কর্মজীবী মহিলাদের সামাজিক মর্যাদা বেশি বলে ইচ্ছার বিরুদ্ধে তাদের ওপর মাতৃত্বের বোঝা চাপিয়ে দেয়াও সম্ভব হয় না।
গ. জনাব হারুন মৎস্য খামার তৈরি করার মাধ্যমে আস্তেকর্মসংস্থানের সৃষ্টি করেছেন। স্বকর্মসংস্থান দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
কোনো ব্যক্তি নিজের বা ঋণের মাধ্যমে স্বল্প সম্পদ, নিজস্ব জ্ঞান ও দক্ষতার আলোকে সীমিত ঝুঁকি নিয়ে নিজস্ব উদ্যোগে জীবিকা অর্জনের প্রচেষ্টায় নিয়োজিত থাকলে, তাকে আস্তেকর্মসংস্থান বলে। আস্তেকর্মসংস্থানের মাধ্যমে উৎপাদন বাড়ে, ফলে আয় বাড়ে এবং নিয়োগও বাড়ে। আমাদের দেশে প্রয়োজনীয় মূলধনের অভাব রয়েছে। ফলে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ব্যাহত হচ্ছে। আস্তেকর্মসংস্থানের মাধ্যমে অল্প মূলধনের সাহায্যে সহজেই উৎপাদনশীলতা বাড়ানো যায়। ফলশ্রুতিতে অর্থনীতিতে উন্নয়ন ঘটে।
উদ্দীপকের জনাব হারুন যুব উন্নয়ন সংস্থা থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে একটি মৎস্য খামার করলেন। সেখানে তিনি উন্নত জাতের পোনা ও ডিম উৎপাদন করলেন। এছাড়াও তিনি মাছ উৎপাদনের মাধ্যমে প্রচুর মুনাফা অর্জন করলেন। জনাব হারুন মাছের খামার তৈরির মাধ্যমে নিজেই নিজের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করেছেন সাথে তার খামারে অনেক যুবকের কর্মের ব্যবস্থাও হয়েছে। যেহেতু তাকে অনুসরণ করে গ্রামের অনেক বেকার যুবক আস্তেকর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করছে। তাই বলা যায়, অধিক আস্তেকর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করে।
ঘ. হ্যাঁ, জনাব হারুন ও তার অনুসারীদের ফার্মগুলোকে স্বকর্মসংস্থান বলা যাবে।
আস্তে শব্দের অর্থ 'নিজ' এবং কর্মসংস্থান অর্থ নিয়োগ'। কোনো ব্যক্তি নিজেই নিজের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করাকে আস্তেকর্মসংস্থান বা স্বকর্মসংস্থান বলে। হাঁস-মুরগি পালন, কবুতর পালন, নার্সারি, ফুলের চাষ, মৎস্য চাষ, ফলের বাগান, পশুপালন, বাঁশ ও বেতের কাজ, কম্পিউটার কম্পোজের দোকান, টাইপ মেশিন চালানো প্রভৃতি স্বকর্মসংস্থান সৃষ্টির উদাহরণ। স্বকর্মসংস্থানের কার্যাবলি একক বা যৌথ উদ্যোগে করা যায়। আমাদের দেশের বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংক ও NGO-সমূহ ঋণ ও পরামর্শ প্রদানের মাধ্যমে স্ব-কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে সহায়তা করে, যা কি না বেকারত্বের বোঝা হ্রাস করে দেশের উন্নয়নে অবদান রাখে।
উদ্দীপকের হারুন যুব উন্নয়ন সংস্থা থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে একটি মৎস্য খামার করলেন। মৎস্য অফিসারের সহায়তায় উন্নত জাতের মাছের পোনা ও হাঁস-মুরগির ডিম উৎপাদন করলেন। তাছাড়া তিনি মাছ উৎপাদনের মাধ্যমে প্রচুর মুনাফাও অর্জন করলেন। তার এই সাফল্য দেখে গ্রামের অনেক বেকার যুবক মাছ চাষ ও হাঁস-মুরগি পালন শুরু করলেন। যা সহজেই প্রতীয়মান যে, উদ্দীপকের কাজগুলো স্বকর্মসংস্থানের আওতাভূষা।
সুতরাং বলা যায়, স্বকর্মস্থানের মাধ্যমে স্বল্প পুঁজি ও সামান্য প্রশিক্ষণের সমন্বয়ে বেকার যুব সম্প্রদায় পরনির্ভরশীলতার মানি মোচন করে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হতে পারে।
৭. শামীম ও শাহিন দুই ভাই। আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে এসএসসি পাসের পর তাদের পড়াশুনা বন্ধ হয়ে যায়। তাই দুই ভাই উপজেলা যুব উন্নয়ন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে মোবাইল রিপেয়ারিং কোর্সের ওপর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে। পরবর্তীতে স্থানীয় বাজারে 'ভাই ভাই মোবাইল সলিউশন' নামের একটি দোকান দেয়। প্রথম মাসেই সমস্ত খরচ বাদে নিট লাভ হয় ১০,০০০ টাকা। তাদের আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।
ক. কাম্য জনসংখ্যা তত্ত্বটি কী?
খ. অধিক জনসংখ্যা বাংলাদেশের প্রধান সমস্যা ব্যাখ্যা করো।
গ. উদ্দীপকের ভাই ভাই মোবাইল সলিউশন' প্রতিষ্ঠায় কোন বিষয়টি প্রতিফলিত হয়েছে- ব্যাখ্যা করো।
ঘ. তোমার মতে, উদ্দীপকের দুই ভাইয়ের উদ্যোগটি দেশের বেকারত্ব দূরীকরণ ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে কতটুকু ভূমিকা রাখবে?
৭ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. বিংশ শতাব্দীর প্রথমদিকে অধ্যাপক অ্যাডউইন ক্যানান, ডাল্টন, রবিন্স প্রমুখ আধুনিক অর্থনীতিবিদগণ ম্যালথাসের জনসংখ্যাতত্ত্বের একটি বিকল্প তত্ত্ব প্রচার করেন, যা কাম্য জনসংখ্যা তত্ত্ব নামে পরিচিত।
খ. বাংলাদেশের সকল সমস্যার মধ্যে অন্যতম প্রধান সমস্যা হলো অধিক জনসংখ্যা।
সাধারণত কোনো নির্দিষ্ট সময়ে একটি দেশে কাম্য মাত্রার চেয়ে জনসংখ্যা বেশি হলে তা জনসংখ্যা সমস্যায় পরিণত হয়। তাছাড়া বাংলাদেশের অর্থনীতি খুব বেশি সচ্ছল না হওয়ায় এই বিপুল সংখ্যক জনসংখ্যার সকল মৌলিক চাহিদা পূরণে ব্যর্থ। এদেশের বেশির ভাগ লোকের জীবনযাত্রার মান খুব নিম্ন হওয়ায় এরা উপযুক্ত শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের অভাবে দক্ষ মানবসম্পদে রূপান্তরিত হতে পারে না। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে এদের উল্লেখযোগ্য অবদান না থাকায় এরা বোঝা হিসেবে পরিগণিত হয়। আর এরূপ জনসংখ্যা সমস্যা দেশের সকল উন্নয়নের পথে প্রতিবন্ধকতাস্বরূপ। তাই অধিক জনসংখ্যা বাংলাদেশের প্রধান সমস্যা হিসেবে বিবেচিত হয়।
গ. উদ্দীপকের 'ভাই ভাই মোবাইল সলিউশন' প্রতিষ্ঠায় আস্তেকর্মসংস্থানের বিষয়টি প্রতিফলিত হয়েছে।
কোনো ব্যক্তি নিজেই নিজের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করাকে আস্তেকর্মসংস্থান বলে। যেমন- হাঁস-মুরগি পালন, কবুতর পালন, মৎস্য চাষ, ফলের বাগান, পশুপালন, কুটিরশিল্প, ক্ষুদ্র ব্যবসায় পরিচালনা, একক বা যৌথ খামার ইত্যাদি হচ্ছে আস্তেকর্মসংস্থানের উদাহরণ। এটি এমন এক ধরনের কর্মসংস্থান যা স্বল্প মূলধন ও সামান্য প্রশিক্ষণের মাধ্যমে একজন ব্যক্তিকে স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ সৃষ্টি করে পরনির্ভরশীলতা ও বেকারত্বের অভিশাপ থেকে মুক্তি দেয়। আমাদের দেশের বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংক ও NGO-সমূহ এ ক্ষেত্রে ঋণ ও পরামর্শ প্রদান করে থাকে। উদ্দীপকে শামীম ও শাহিনের আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে এসএসসি পাসের পর পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যায়। তবে তারা হতাশ না হয়ে এবং সরকারি বা কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের ওপর চাকরির জন্য নির্ভরশীল না হয়ে আস্তেকর্মসংস্থান সৃষ্টিতে মনোনিবেশ করে। তারা উপজেলা যুব উন্নয়ন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র হতে মোবাইল রিপেয়ারিং কোর্সে প্রশিক্ষণ নিয়ে ও সামান্য পুঁজির সমন্বয়ে 'ভাই ভাই মোবাইল সলিউশন' নামে স্থানীয় বাজারে একটি দোকান দেয়। এর ফলে তাদের আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। এভাবে আস্তেকর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে তারা সমাজে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পেরেছে।
ঘ. আমার মতে, উদ্দীপকের দুই ভাইয়ের উদ্যোগটি দেশের বেকারত্ব দূরীকরণ ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে যথাযথ ভূমিকা রাখবে।
বাংলাদেশর অর্থনীতিতে আস্তেকর্মসংস্থান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। আস্তেকর্মসংস্থানের মাধ্যমে মানুষ পরনির্ভরশীলতা কাটিয়ে নিজেকে আবিষ্কার করতে পারে। এদেশের ৮ কোটি কর্মক্ষম লোকের মধ্যে ২ কোটি বেকার। এর মধ্যে অনেকে উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করে যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও কোথাও চাকরি পাচ্ছে না। আস্তেকর্মসংস্থান বেকারত্বের অভিশাপ থেকে জাতিকে মুক্তি দিতে পারে। স্বল্প পরিমাণ পুঁজি ও সামান্য প্রশিক্ষণের মাধ্যমে একক বা যৌথ উদ্যোগে এরূপ কর্মসংস্থান গড়ে তোলা যায়, যা আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশের স্বার্থ রক্ষা করে। এর ফলে সামাজিক অপকর্ম ও অনাচার থেকে যুব সমাজকে রক্ষা করা যায়। মানুষের সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধি পায় ও অর্থনীতিতে উৎপাদন ও নিয়োগ বৃদ্ধির মাধ্যমে আয় বৃদ্ধি পায়। যা বাংলাদেশকে একটি স্বনির্ভর দেশে পরিণত করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। উদ্দীপকের দুই ভাইয়ের উদ্যোগটি দেশের বেকারত্ব দূরীকরণে সুদূরপ্রসারী ভূমিকা পালন করবে। তারা স্বল্প মূলধন ও সামান্য প্রশিক্ষণের মাধ্যমে স্ব- কর্মসংস্থান তৈরি করে দারিদ্র্য বিমোচনে সক্ষম হয়। স্থানীয় বাজারে দোকান দেয়ায় বেচাকেনাও ভালো হয়। প্রথম মাসেই সমস্ত খরচ উঠে যায় এবং ১০,০০০ টাকা লাভ হয়। তাদের দেখে ঐ গ্রামের অন্যান্য বেকার বা দরিদ্র যুবকরা উৎসাহিত হবে।
বাংলাদেশের মতো দরিদ্র দেশে স্বকর্মসংস্থানের উদ্যোগটি সত্যিই প্রসংশনীয়। এর মাধ্যমে দেশকে দরিদ্র ও বেকারত্বের অভিশাপ থেকে মুক্ত করে একটি স্বনির্ভর অর্থনীতি গড়ে তোলা সম্ভব বলে আমি মনে করি। তাই শামিম ও শাহিনের মতো অন্যান্য বেকার যুবকদেরও স্বকর্মসংস্থানের প্রতি মনোনিবেশ করে দরিদ্রতাকে জয় করা উচিত বলে আমি মনে করি।
৮. শিক্ষিতের হার কম হওয়া সত্ত্বেও এক সময় 'ক' দেশটির জনগণ সুখে শান্তিতে বাস করত। গোলাভরা ধান, গোয়াল ভরা গরু, পুকুর ভরা মাছ - এসবই তাদের ছিল, কিন্তু সময়ের সাথে সাথে বর্তমানে তারা এমন এক অবস্থায় পৌঁছেছে যে, উৎপাদিত পণ্য দ্বারা জনগণের খাদ্যের সংস্থান সঠিকভাবে করা যাচ্ছে না। ফলে ছিনতাই, রাহাজানি বেড়েই চলেছে। সম্প্রতি বন্যা ও ঘূর্ণিঝড়ে অনেক মানুষের প্রাণহানিও ঘটেছে।
ক. জনসংখ্যার ঘনত্ব নির্ণয়ের সূত্রটি লেখ।
খ. অধিক জনসংখ্যা কীভাবে স্বপ্ন মাথাপিছু আয়ের কারণ হিসেবে কাজ করে?
গ. উদ্দীপকের সাথে কোন জনসংখ্যা তত্ত্বের সাদৃশ্য রয়েছে? কেন?
ঘ. 'ক' দেশটির বর্তমান পরিস্থিতির জন্য মূলত কি দায়ী বলে তুমি মনে করো? এ থেকে উত্তরণের উপায় নির্দেশ করো।
৮ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. জনসংখ্যার ঘনত্ব নির্ণয়ের সূত্র নিম্নে:
DP =
যেখানে, জনসংখ্যার ঘনত্ব = DP, মোট জনসংখ্যা = TP ও মোট আয়তন = TA.
খ. কোনো দেশে একটি নির্দিষ্ট সময়ে মোট জাতীয় আয়কে মোট জনসংখ্যা দ্বারা ভাগ করলে মাথাপিছু আয় পাওয়া যায়। তাই নির্দিষ্ট জাতীয় আয়কে ক্রমেই বেশি সংখ্যক জনসংখ্যা দ্বারা ভাগ করলে মাথাপিছু আয় কমে যাওয়ারই কথা। প্রকৃতপক্ষে যেমন নির্দিষ্ট পরিমাণ দ্রব্য ও সেবা ক্রমেই অধিক সংখ্যক লোকের মধ্যে ভাগ করলে মাথাপিছু দ্রব্য ও সেবা প্রাপ্তির পরিমাণ কমে যায়, তেমনি নির্দিষ্ট জাতীয় আয় ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা দ্বারা ভাগ করলে মাথাপিছু আয় কমে যায়। তাই অধিক জনসংখ্যা স্বপ্ন মাথাপিছু আয়ের কারণ হিসেবে কাজ করে।
গ. উদ্দীপকের সাথে ম্যালথাসের জনসংখ্যা তত্ত্বের সাদৃশ্য রয়েছে; তা নিচে ব্যাখ্যা করা হলো-
উদ্দীপকটি পাঠ করে জানা যায়, অতীতে একসময়ে শিক্ষিতের হার কম হওয়া সত্ত্বেও 'ক' দেশের জনগণ সুখ-শান্তিতে বাস করত। গোলাভরা ধান, গোয়ালভরা গরু, পুকুর ভরা মাছ, এসবই তাদের ছিল। কিন্তু সময় অতিবাহিত হওয়ার সাথে সাথে সে দেশের জনগণ এমন এক অবস্থায় পৌঁছেছে, যেখানে উৎপাদিত খাদ্যসামগ্রী দ্বারা জনগণের খাদ্যের সংস্থান সুষ্ঠুভাবে করা যাচ্ছে না। দেশে খাদ্য ঘাটতি লেগেই আছে। খাদ্য ঘাটতি পূরণের জন্য প্রতিবছর মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয়ে বিপুল পরিমাণ খাদ্য আমদানি করতে হচ্ছে। তাছাড়া ক্রয়ক্ষমতার অভাবে দেশের বিশাল জনগোষ্ঠী প্রয়োজনমাফিক খাদ্য ক্রয় করতে পারছে না; পুষ্টিকর খাদ্য ক্রয় করা তো দূরের কথা। এ অবস্থায় দেশটির জনসংখ্যার একটি উল্লেখযোগ্য অংশ অনাহার, অর্ধাহার ও অপুষ্টির শিকার। অতিরিক্ত জনসংখ্যার দরুন কৃষি ও কৃষি-বহির্ভূত খাতে কর্ম- সংস্থানের সুযোগ কম হওয়ার দেশের প্রকট বেকারত্ব বিদ্যমান তাছাড়া অধিক জনসংখ্যা ও তার দ্রুত বৃদ্ধির দরুন নানাভাবে পরিবেশ দূষিত হওয়ায় ঘন ঘন বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, সামদ্রিক জলোচ্ছ্বাস ইত্যাদি প্রাকৃতিক বিপর্যয় দেখা দিচ্ছে। দূষিত পরিবেশ সামাজিক অনাচার সৃষ্টি করছে— ছিনতাই, রাহাজানি ইত্যাদি বেড়েই চলেছে। উদ্দীপকে বর্ণিত এসব লক্ষণই ম্যালথাসের জনসংখ্যা তত্ত্বকে প্রতিফলিত করে। সুতরাং বলা যায়, উদ্দীপকের ঘটনার সাথে ম্যালথাসের জনসংখ্যা তত্ত্বের সাদৃশ্য রয়েছে।
ঘ. 'ক' দেশটির বর্তমান পরিস্থিতির জন্য মূলত অতিরিক্ত জনসংখ্যা দায়ী। এ সমস্যা থেকে উত্তরণের উপায় হলো- জনসংখ্যা নিয়ন্ত্র জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের উপায়সমূহ নিম্নরূপ:
১. আধুনিককালে কোনো দেশে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এ কর্মসূচির মাধ্যমে জনসংখ্যা প্রত্যক্ষভাবে নিয়ন্ত্রণ করে জনসংখ্যার উত্তাল তরঙ্গ রোধ করা যায়।
২. জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের অন্যতম উপায় হচ্ছে- দরিদ্র জনগণের জীবনযাত্রার মান উন্নত করা। জীবনযাত্রার মান উন্নত হলে মানুষ তা বজায় রাখার স্বার্থে পরিবারের সদস্য সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করবে।
৩. শিক্ষার প্রসার জনসংখ্যা রোধে সহায়তা করে। ছেলেমেয়েরা লেখাপড়া নিয়ে ব্যস্ত থাকলে সাধারণত কিছুটা দেরিতেই বিয়ে করে। এর ফলে জনসংখ্যা বৃদ্ধি রোধ পায়।
৪. নারীদের জন্য উপযুক্ত কাজের ব্যবস্থা করতে পারলে তারা ঘরের বাইরে গিয়ে উৎপাদন কাজে অংশগ্রহণ করতে পারে। তখন অব্যাহতভাবে কাজ করে অর্থোপার্জনের জন্য তারা পরিবার ছোট রাখবে।
৫. জনসংখ্যা বৃদ্ধি মোকাবিলা করতে হলে আইনের সাহায্যে বাল্যবিবাহ ও বহুবিবাহ রোধ করতে হবে। একটি নির্দিষ্ট সময়ের পূর্বে মেয়েদের বিবাহ ও পুরুষদের বহুবিবাহ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ঘোষণা করে তা কঠোরভাবে বলবৎ করতে হবে।
এভাবে 'ক' দেশটিতে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে। আর এমনটি হলে অতীতের সুখ-সমৃদ্ধি আবার ফিরে আসবে।
ক. জনসংখ্যার ঘনত্ব কী?
খ. কীভাবে মানবসম্পদ তৈরি করা যায়?
গ. উদ্দীপকের চিত্রটি কোন তত্ত্বের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ? তত্ত্বটি ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উল্লিখিত রেখাচিত্রের b এবং এর ব্যবধান দূর করা যায় কীভাবে বিশ্লেষণ করো।
৯ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. কোনো দেশের বা এলাকায় প্রতি বর্গ কিলোমিটারে যতজন লোক বাস করে, তাকে ঐ দেশ বা এলাকার জনসংখ্যার ঘনত্ব বলে।
খ. জনগণকে শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে মানবসম্পদে পরিণত করা যায়। কোনো দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য বস্তুগত সম্পদের পাশাপাশি মানবসম্পদ একান্ত প্রয়োজন। আর মানবসম্পদ তৈরি করা যায় মানবসম্পদ উন্নয়নের মাধ্যমে মানবসম্পদ উন্নয়ন বলতে কোনো দেশের জনশক্তিকে স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা, প্রশিক্ষণ ও প্রযুক্তিগত জ্ঞান প্রদানের মাধ্যমে দক্ষ মানবগোষ্ঠী গড়ে তোলাকে বোঝায়। কাজেই, মানুষের অন্তর্নিহিত কর্মগুণ উন্নত ও বিকশিত করার মাধ্যমে মানবসম্পদ তৈরি করা যায়।
গ. উদ্দীপকের চিত্রটি জনসংখ্যা সম্পর্কিত ম্যালথাসের জনসংখ্যা সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। ম্যালথাসের মতে, জনসংখ্যা বৃদ্ধি পায় জ্যামিতিক কিন্তু এ জনসংখ্যার জীবন ধারনের উপকরণ খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি পায় গাণিতিক হারে। এভাবে জনসংখ্যা ও খাদ্য বৃদ্ধির পার্থক্যের কারণে প্রতি ২৫ বছর অন্তর অন্তর জনসংখ্যা দ্বিগুণ হবে। মানুষ যদি নিজেরা জনসংখ্যাকে নিয়ন্ত্রণ না করে তবে প্রকৃতি তার নির্মম হাতে প্রাকৃতিক বিপর্যয় ঘটিয়ে জনসংখ্যা ও খাদ্যের মধ্যে ভারসাম্য ফিরিয়ে আনবে। নিচে চিত্রের সাহায্য তত্ত্বটি ব্যাখ্যা করা হলো-
চিত্রে ভূমি অক্ষে প্রতি ২৫ বছর সময়কে একক হিসেবে ধরা হয় এবং লম্ব অক্ষে খাদ্য উৎপাদন ও জনসংখ্যা বৃদ্ধি পরিমাপ করা হয়। প্রতি ২৫ বছর অন্তর খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি পায় গাণিতিক হারে তথা ১,২,৩,৪,৫. .......। এভাবে প্রাপ্ত বিন্দু সমূহের সমন্বয়ে খাদ্য রেখা পাওয়া যায় UF। সূচি থেকে প্রাপ্ত প্রতি একক সময়ে জনসংখ্যা বৃদ্ধির পরিমাপ দ্বারা জনসংখ্যা রেখা পাওয়া যায় UP। চিত্র থেকে লক্ষ করা যায়, ২৫ বছর সময়ের পর খাদ্য বৃদ্ধির হার অপেক্ষা জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার অধিক হয়। ১০০ বছরের সময়ের মধ্যে উভয়ের মধ্যে দূরত্ব সৃষ্টি হয় ধনপ পরিমাণ।
ঘ. খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি এবং জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে উদ্দীপকের উল্লিখিত রেখাচিত্রের b c এর ব্যবধান দূর করা যায়।
ম্যালথাস ক্রমহ্রাসমান প্রান্তিক উৎপাদন বিধির ওপর ভিত্তি করে খাদ্য উৎপাদনে গাণিতিক হারের মতবাদ দেন। কিন্তু বর্তমানে বিজ্ঞানের অগ্রগতির ফলে কৃষি উৎপাদন বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়েছে। এর ফলে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হারের মধ্যকার ব্যবধান হ্রাস পাচ্ছে। অর্থাৎ, উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধির দ্বারা bac এর ব্যবধান কমানো যায়।
আবার জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ যেমন- জন্মনিয়ন্ত্রণ কার্যকর, স্বাস্থ্যসেবা ও মাতৃস্বাস্থ্য উন্নয়ন ইত্যাদির মাধ্যমে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার কমানো যায়। এতে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার রেখা ভূমি অক্ষের কাছাকাছি চলে আসে। অর্থাৎ, bsc এর ব্যবধান কমে যায়।
ম্যালথাস জনসংখ্যা বৃদ্ধি রোধকল্পে ১. প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা ও ২. প্রাকৃতিক নিরোধ এই দুটি উপায়ের কথা বলেছেন। জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধির হারের চেয়ে বেশি হলে জনাধিক্য দেখা দেয়। তখন প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা না গ্রহণ করা হলে প্রাকৃতিক নিরোধ কার্যকরী হয় এবং অতিরিক্ত জনসংখ্যাকে নিশ্চিহ্ন করে খাদ্য উৎপাদন ও জনসংখ্যার মধ্যে ভারসাম্য অবস্থা ফিরিয়ে আনে। অর্থাৎ, b ও c এর ব্যবধান দূর করা যায়।
১০. করিম খুলনায় জুট মিলে কাজ করে। সে মিলের পাশেই বসিস্তেতে বসবাস করে। সেখানে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে অনেক লোকের বাস। নাই পয়ঃনিষ্কাশন ও রাস্তাঘাটের সুবিধা। আমাশয়, কলেরা, ডায়রিয়া প্রভৃতি রোগ লেগেই আছে। একদিন টেলিভিশন দেখে সে জানতে পারল- এ দেশের স্বাস্থ্যগত সমস্যা, পরিবেশ দূষণ প্রভৃতি জনসংখ্যা বেশি হওয়ার কারণেই হচ্ছে।
ক. জনসংখ্যার ঘনত্ব কী?
খ. প্রশিক্ষণ কীভাবে মানবসম্পদ উন্নয়নে সহায়তা করে।
গ. উদ্দীপকের আলোকে বাংলাদেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির প্রভাসমূহ ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকে করিমের সমস্যা সমাধানে কী কী পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে? আলোচনা করো।
১০ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. জনসংখ্যার ঘনত্ব বলতে কোনো দেশে একটি নির্দিষ্ট সময়ে প্রতি বর্গকিলোমিটারে কতজন লোক স্থায়ীভাবে বাস করে তা বোঝায়।
খ. কোনো একটি কাজ সুষ্ঠু ও নির্ভুলভাবে করার জন্য বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে তা বার বার করাই হলো প্রশিক্ষণ। কোনো কাজের জন্য প্রশিক্ষণ মানুষকে ঐ কাজটি কার্যকর ও ফলপ্রসূ উপায়ে সম্পাদন করতে সাহায্য করে। প্রশিক্ষণ মানুষকে উৎপাদনশীল করে তার শ্রমের গুণগত মান বাড়ায়। প্রশিক্ষণ যত উন্নত পদ্ধতিতে প্রদান করা হয় মানুষ ততই তার কাজে দক্ষ হয়ে ওঠে। এ জন্যই বলা হয়- প্রশিক্ষণ মানবসম্পদ উন্নয়নে সহায়তা করে।
গ. নিচে উদ্দীপকের আলোকে বাংলাদেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির প্রভাবসমূহ ব্যাখ্যা করা হলো-
বাংলাদেশে জনাধিক্যের কারণে বাসস্থান সমস্যা প্রকট। শহরে বসবাসকারী বেশির ভাগ মানুষেরই নিজস্ব কোনো ঘর-বাড়ি নেই। বিপুল সংখ্যক ছিন্নমূল মানুষ রাস্তা, রেল লাইন, ড্রেন ইত্যাদির আশপাশে যত্রতত্র কুঁড়েঘর তুলে অত্যন্ত অস্বাস্থ্যকর, ঘিঞ্জি ও জনাকীর্ণ পরিবেশে বসবাস করে। বড় বড় শহরের আশপাশের বসিস্তে এলাকায় বিপুল সংখ্যক লোক গাদাগাদি করে বাস করে, যেখানে নেই কোনো স্বাস্থ্যসম্মত পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা ও পরিচ্ছন্ন রাস্তাঘাট। বিভিন্ন ধরনের প্রাণঘাতী রোগ-বালাই যেখানে মানুষের নিত্য সহচর। বাংলাদেশে বর্তমানে চিকিৎসার সুবিধা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। সরকারি হাসপাতাল ও চিকিৎসকের স্বল্পতা, চিকিৎসা সরঞ্জামাদির অভাব, হাসপাতাল থেকে প্রয়োজনীয় ওষুধ না পাওয়া ইত্যাদি সরকারি খাতের চিকিৎসা সমস্যাকে প্রকট করে তুলেছে।
বাংলাদেশে বেশি জনসংখ্যা এবং জনসংখ্যার অধিক ঘনত্ব দেশের সর্বত্র বিভিন্নভাবে পরিবেশ দূষিত করছে। খাদ্যোৎপাদন বৃদ্ধির জন্য কৃত্রিম সার ও কীটনাশক ব্যবহার করায় গ্রামাঞ্চলের পানি ও বাতাস দূষিত হচ্ছে। শহরাঞ্চলে অধিক যানবাহন, কলকারখানা, ইটের ভাটা ইত্যাদি থেকে নির্গত কার্বন ডাই-অক্সাইড মিশ্রিত ধোঁয়া ও কলকারখানার বর্জ্য বাতাস দূষিত করছে। সুতরাং উদ্দীপকের আলোকে বলা যায়, বাংলাদেশে অধিক জনসংখ্যা উন্নয়নের পথে একটি বড় অন্তরায়।
ঘ. উদ্দীপকে করিমের সমস্যা বা জনসংখ্যা সমস্যা একটি সর্বজনীন জটিল সমস্যা। এ সমস্যা সমাধানে নিম্নোক্ত পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করা যেতে পারে:
১. পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচির মাধ্যমে সুপরিকল্পিত উপায়ে উচ্চ জন্মহার কমিয়ে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করা যায়। এভাবে উচ্চ জন্মহার কমিয়ে সীমিত সম্পদের সাথে জনসংখ্যার সামজস্য বিধান করে জনসংখ্যার ঘনত্ব হ্রাস করা যায় এবং সামাজিক সুযোগ-সুবিধা জনগণের নিকট সহজলভ্য করা যায়।
২. জনসংখ্যা সমস্যা সমাধানের অন্যতম উপায় হচ্ছে দরিদ্র জনগণের জীবনযাত্রার মান উন্নত করা। জীবনযাত্রার মান উন্নত হলে লোক তা বজায় রাখার স্বার্থেই পরিবারের আয়তন ছোট রাখবে ফলে জনসংখ্যা বৃদ্ধি রোধ করা যাবে।
৩. শিক্ষার প্রসার অধিক জনসংখ্যা রোধে সহায়তা করে। শিক্ষিত মানুষ অনেক আগেই অতিরিক্ত জনসংখ্যার কুফল সম্পর্কে অবহিত হয়ে পরিবার ছোট রাখে। শিক্ষা ধর্মীয় কুসংস্কার দূর করে যা জনসংখ্যা বৃদ্ধি রোধে সহায়তা করে। আবার নারী শিক্ষা একদিকে নারীকে কর্মসংস্থানে সহায়তা করে এবং অন্যদিকে, কাজ-কর্মে জড়িত রেখে পরিবার ছোট রাখতে উদ্বুদ্ধ করে।
৪. অর্থনৈতিক উন্নয়ন হলো জনসংখ্যা সমস্যা সধানের অন্যতম উপায়। সুষ্ঠু পরিকল্পনার মাধ্যমে যদি দেশের কৃষি, শিল্প ও সেবা খাতের উন্নতি ঘটানো যায়, তাহলে লোকের মাথাপিছু আয় বাড়বে, মানুষ সুখ ও স্বাচ্ছন্দ্যময় জীবনযাপন করবে। পরিণামে সে আপনা- আপনি জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে আগ্রহী হয়ে উঠবে। উপরিল্লিখিত পদক্ষেপগুলো গ্রহণের মাধ্যমে প্রকৃতপক্ষে করিমের মতো লোকদের সমস্যার সমাধান হতে পারে।
0 Comments:
Post a Comment