ভোগে নয়, ত্যাগেই প্রকৃত সুখ | ভাবসম্প্রসারণ

ভোগে নয়, ত্যাগেই প্রকৃত সুখ | ভাবসম্প্রসারণ

ভোগে সুখ নাই, ত্যাগেই সুখ
অথবা,
ভোগে নয়, ত্যাগেই প্রকৃত সুখ
অথবা,
ভোগে সুখ নাই, কর্ম সম্পাদনেই প্রকৃত সুখ
[সিলেট বোর্ড ২৩]

মূলভাবঃ মনুষ্যত্বই মানুষের আসল পরিচয়। আর ত্যাগের মহিমাই পারে মানুষের এ মনুষ্যত্বের উৎকর্ষ ও বিকাশ ঘটাতে। ত্যাগের মাধ্যমে সম্পদ চলে যায়, কিন্তু তার বদলে পাওয়া যায় অমিয় সুখ। তাই ত্যাগই মানুষের একমাত্র আদর্শ হওয়া উচিত।

ভাবসম্প্রসারণঃ জগৎসংসারে ভোগ ও ত্যাগ দুটি বিপরীতমুখী দিক। ভোগ ও ত্যাগের দরজা সবার জন্যই উন্মুক্ত। ভোগে আনন্দ থাকলেও তৃপ্তি নেই। কিন্তু ত্যাগের মাধ্যমে আনন্দ ও তৃপ্তি দুটোই লাভ করা যায়। তাই ভোগ নয়, ত্যাগই জীবনের মূল সাধনা হওয়া বাঞ্ছনীয়। মনুষ্যত্বের কল্যাণেই মানুষ অন্যান্য প্রাণী থেকে আলাদা ও শ্রেষ্ঠ। শুধু মানুষ হিসেবে জন্ম নিলেই মনুষ্যত্ব লাভ করা যায় না। মানুষকে তার স্বীয় চেষ্টায় এ মনুষ্যত্বের বিকাশ ঘটাতে হয়। ভোগের মাধ্যমে এর বিকাশ ঘটে না। ভোগ মানুষকে জড়িয়ে ফেলে পঙ্কিলতা, গ্লানি ও কালিমার সঙ্গে। মনুষ্যত্বহীন মানুষদের অর্জিত সম্পদ নিজের স্বার্থ ছাড়া সমাজের অন্য কোনো কাজে আসে না। পরের দুঃখে তাদের মন কাঁদে না। তারা স্বার্থান্ধ ও সংকীর্ণচিত্ত বলে সমাজে পরিচিত। অন্যদিকে ত্যাগের পরের কল্যাণে নিজেকে উৎসর্গ করার দিকে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করে। মনুষ্যত্বের গুণে মানুষ নিজের স্বার্থের কথা ভুলে গিয়ে পরার্থে, দীনদুঃখীদের জন্য নিজেকে বিলিয়ে দিয়ে আনন্দ পায়। সুখের জন্য অনেকেই বিলাস-ব্যসনে মত্ত হয়ে ওঠে এবং ভোগ-বিলাসের নানা উপকরণের আয়োজন করে। কিন্তু কোনোভাবেই ভোগাকীর্ণ জীবন সুখের সন্ধান দেয় না। কেননা তা হলে বিত্ত ও ক্ষমতাবানরাই পৃথিবীতে সবচেয়ে সুখী বলে গণ্য হতেন। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, এঁরাও জীবনে প্রকৃত সুখী হতে পারেন না। একমাত্র মহৎ কর্মের মধ্য দিয়েই অন্তরের সুখ পাওয়া যায়। দেশব্রতী, মানবব্রতী কর্মেই মানুষ লাভ করে জীবনের সার্থকতা।

মন্তব্যঃ বস্তুত পরের জন্য স্বার্থ ত্যাগ করার মধ্যেই মানুষের মানবিক গুণাবলির শ্রেষ্ঠত্ব প্রকাশ পায়। যথার্থ সুখ ভোগ-বিলাসে পাওয়া যায় না, পাওয়া যায় নিরন্তর কাজের মধ্যে। আর দেশব্রতী ও মানবব্রতী ভূমিকার মধ্যে।
Post a Comment (0)
Previous Post Next Post