সংসার সাগরে দুঃখ তরঙ্গের খেলা আশা তার একমাত্র ভেলা | ভাবসম্প্রসারণ

সংসার সাগরে দুঃখ তরঙ্গের খেলা আশা তার একমাত্র ভেলা | ভাবসম্প্রসারণ

সংসার সাগরে দুঃখ তরঙ্গের খেলা
আশা তার একমাত্র ভেলা
[চট্টগ্রাম বোর্ড ২১]

মূলভাবঃ জীবন সংগ্রামে মানুষ আশায় বুক বাঁধে। আশায় ভর করেই মানুষ সম্মুখে এগিয়ে যায়। অথবা আশাই মানুষকে বাঁচিয়ে রাখে। আশা বা প্রত্যাশাই তার স্বপ্ন। আশাই তার কর্মের প্রেরণা জোগায়। আশার ভেলায় চড়েই সে জীবনসমুদ্রে পাড়ি জমায়।

ভাবসম্প্রসারণঃ মানুষের জীবনে চলার পথ কুসুমাস্তীর্ণ নয়। এখানে দোলনা থেকে কবর পর্যন্ত নিত্য নতুন দুঃখ-দুর্দশার সাথে চিরন্তন সংগ্রাম করে বেঁচে থাকতে হয়। মনীষীরা সংসারটাকে সীমাহীন সমুদ্রের সাথে তুলনা করেছেন, আর সেই সমুদ্রে নিরন্তর আছড়ে পড়ে দুঃখের তরঙ্গমালা। বাস্তবকে মেনে নিলে দুঃখের অমানিশা কেটে একদিন সুখের সোনালি সকাল জীবনে আসবেই। এ আশাতেই মানুষ স্বপ্ন দেখে। দুঃখের দিনে আশাই মানুষকে বাঁচিয়ে রাখে। সাগরের উত্তাল ঢেউয়ের মতো এই পৃথিবীর সীমাহীন দুঃখের সমুদ্র পাড়ি দেওয়ার জন্য ভেলা যেমন একমাত্র ভরসা তেমনি আশাই হচ্ছে জীবন সংসারের অবলম্বন। মানুষ সুখের জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করে। কিন্তু সুখ পাখির নাগাল পাওয়াও যে বড় কষ্ট। সোনার হরিণের মতো সুখ শুধু পালিয়ে বেড়ায়; কিন্তু মানুষ হাল ছাড়ে না- আপ্রাণ চেষ্টা করে তাকে ধরতে। সহস্র দুঃখ-বেদনা আর প্রতিকূলতার মধ্যেই মানুষ রুখে দাঁড়ায়, সংগ্রামে ব্রতী হয়। কিন্তু তার এই প্রচেষ্টা অনেক সময় ব্যর্থ হয়, সুখ থাকে নাগালের বাইরে। তবু মানুষ স্বপ্ন দেখে আশার ভেলায় ভর করে। কেউ বলে আশা সে তো মরীচিকা, মাইকেল মধুসূদন হাহাকার করে বলেন- ‘আশার ছলনে ভুলি, কী ফুল লভিনু হায়, তাই ভাবি মনে-’ কিন্তু আশার অমৃত রসেই উজ্জীবিত হয় মানুষ। আশা না থাকলে মানুষের পক্ষে সংসারধর্ম পালন করা সম্ভবপর হতো না। কেউ কোনো কাজ করত না, মানবজীবনের অস্তিত্ব হয়ে পড়ত বিপন্ন। আশা আছে বলেই মানুষের জীবন গতিশীল। আশাই মানুষকে টিকিয়ে রাখে সোনালি ভবিষ্যতের জন্য। মানুষ যখন চাওয়া পাওয়া হতাশার দ্বন্দ্বে দোদুল্যমান ঠিক তখনই আশা মানুষকে এগিয়ে নিয়ে যায় সম্মুখ পানে।

মন্তব্যঃ আশা নামের এক অনির্বাণ শিখার আলোকে মানুষ অন্ধকারে খুঁজে নেয় পথ। সংসার সমুদ্রে মানুষ অক্লান্ত প্রচেষ্টার দ্বারা মানুষ সুখ, সমৃদ্ধি ও কল্যাণ লাভ করে। হতাশাগ্রস্ত মানুষের জীবনে সফলতা নেই। সকলকেই তাই হতে হবে আশাবাদী প্রাণবন্ত মানুষ।
Post a Comment (0)
Previous Post Next Post