লিখে রেখে এক ফোঁটা দিলেম শিশির।”
[ঢাকা বোর্ড ২১, চট্টগ্রাম বোর্ড ২২, যশোর বোর্ড ২৩]
মূলভাবঃ সংকীর্ণ মনের অধিকারীরা উপকারীর উপকার স্বীকার করে না। যারা অকৃতজ্ঞ তারা যদি অপরের সামান্য উপকার করে তাহলে গর্বভরে সে কথা প্রচার করে বেড়ায়। কিন্তু মহৎ ও উদার মনের মানুষেরা আত্মপ্রচারে উৎসাহ পান না।
ভাবসম্প্রসারণঃ শৈবালের জন্ম এবং পরিবৃদ্ধি হয় দিঘির অথৈ জলে। নিজের অস্তিত্বের জন্য দিঘির প্রতি শৈবালের কৃতজ্ঞতাবোধ থাকা উচিত। কিন্তু শৈবাল এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। কুয়াশা ঢাকা শীতের সকালে শৈবালের গায়ে জমা হয় বিন্দু বিন্দু শিশির। প্রাকৃতিক নিয়মে সেই শিশির গড়িয়ে পড়ে দিঘির জলে। ক্ষুদ্র শৈবাল এটাকেই দিঘির প্রতি তার বড় দান হিসেবে চিহ্নিত করতে চায়। বিচিত্র এ পৃথিবীতে পরনির্ভরশীল শৈবালের মতো চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন মানুষের অভাব নেই। তারা আশ্রয়দাতার প্রতি সকৃতজ্ঞ নয় বরং নিজেকে জাহির করার জন্য সামান্য অবদানের কথাই জনসমক্ষে তুলে ধরতে সচেষ্ট থাকে। অথচ সেই জলভরা দিঘি অন্যের উপকার হেতু নিজেকে অকাতরে বিলিয়ে দেয়। শৈবালের মতো সে দানের হিসাব লিখে রাখতে বলে না। এখানেই ক্ষুদ্র ও মহৎ প্রাণের পার্থক্য দেখা যায়। দিঘির মতোই কোনো কিছুর প্রত্যাশা না করে পৃথিবীর মহৎ মানুষেরা পরোপকারে ব্রতী হন। অন্যের মঙ্গল সাধনাকেই তারা নিজেদের কর্তব্য বলে মনে করেন। এর বিনিময়ে তাঁরা কিছুই চান না। তাঁরা ত্যাগের মহিমা দ্বারা নিজেকে উজাড় করে দেন অপরের সুখ-শান্তির জন্য।
মন্তব্যঃ পরোপকারের হিসাব মনে রাখা দানশীল মহৎপ্রাণ ব্যক্তিদের ধর্ম নয়। অন্যের কল্যাণ সাধন করেই তাঁরা কৃতার্থ হন। আত্মপ্রচারের ফলে ক্ষুদ্র দানের মহিমাও ম্লান হয়ে যায়। তাই প্রত্যেকেরই উচিত, উপকারীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ এবং নিজের উপকারের জন্য বড়াই না করা।
0 Comments:
Post a Comment