মূলভাবঃ অন্যের সহযোগিতা ছাড়া মানবজীবন অচল। পৃথিবীতে যে ব্যক্তি নিঃসঙ্গ ও একা, সে নিঃসন্দেহে অসহায়। ঐক্যবদ্ধ জীবনপ্রবাহ থেকে বিচ্ছিন্ন বলে সে শক্তিতে সামান্য এবং সামাজিকভাবে তুচ্ছ।
ভাবসম্প্রসারণঃ একজন মানুষ বা অন্য যেকোনো প্রাণী যখন একা তখন তার শক্তি থাকে সীমিত। কিন্তু যখন একতাবদ্ধ হয়ে দশজন একসঙ্গে কোনো কাজে হাত দেয় তখন সে হয় অনেক সবল ও শক্তিশালী। তখন কোনো কঠিন কাজ আর কঠিন বলে মনে হয় না। পৃথিবীর আদিপর্বে মানুষ ছিল ভীষণ অসহায়। কারণ তখন সে ছিল একা। সভ্যতার ঊষালগ্নে মানুষ উপলব্ধি করল যে, ঐক্যবদ্ধ জীবন ছাড়া এ পৃথিবীর সমস্ত প্রতিকূলতা মোকাবেলা করা সম্ভব নয়। তাই মানুষ গড়ে তোলে সমাজবদ্ধ জীবন, হয়ে ওঠে সামাজিক বলে বলীয়ান। এর পর থেকে মানুষ আর পেছনে ফিরে তাকায়নি। একতার শক্তিকে উপেক্ষা করে যে একা থাকতে চায় সে আসলে অসহায়। শক্তি বা সামর্থ্যরে ক্ষুদ্রতার কারণে একক মানুষ সকলের নিকট উপেক্ষিত। কিন্তু যারা ঐক্যবদ্ধ তাদের শক্তি অসীম। ঐক্যই প্রকৃত শক্তি। বিন্দু বিন্দু বৃষ্টির সমন্বয়ে সৃষ্টি হয় বিশাল জলরাশি। এইভাবে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র শক্তির সমন্বয়ে সৃষ্টি হয় অসীম শক্তি। অনেক ব্যক্তিসত্তা যখন একতাবদ্ধ হয়ে সমষ্টির সৃষ্টি করে, তখন তাদের সমবেত শক্তি জাতীয় জীবনে বিরাট অবদান রাখতে সক্ষম হয়। একতার শক্তি অসম্ভবকে সম্ভবে পরিণত করে। সমগ্র জাতির মধ্যে একতা ছিল বলেই আমরা মুক্তিযুদ্ধে জয়ী হয়েছি। একক কোনো শক্তি বলে তা সম্ভব ছিল না। আমাদের ইতিহাসের দিকে তাকালে আমরা দেখি, যখনই আমাদের জাতীয় জীবনে ঐক্যের অভাব হয়েছে তখনই নানা বিপদ ও দুর্ভাগ্য নেমে এসেছে। শুধু জাতীয় জীবনে নয়, আমাদের সামাজিক ও পারিবারিক জীবনেও একতার প্রয়োজন। একতাবদ্ধ হয়ে আমরা যেকোনো কাজ যত সহজে ও নির্বিঘেœ করতে পারি একাকী তা করা সম্ভব নয়।
মন্তব্যঃ মানুষ এককভাবে সামান্য আর তুচ্ছ। ব্যক্তিগত, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় উন্নতিতে চাই মানুষের ঐক্যবদ্ধ প্রয়াস।
0 Comments:
Post a Comment