HSC ভূগোল ২য় পত্র (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর pdf download অধ্যায় ৭

এইচএসসি পরীক্ষার পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি
HSC Geography 2nd Paper Srijonshil question and answer. HSC Geography 2nd Paper (Srijonshil) Creative Questions pdf download. HSC Vugol 2nd paper Srijonshil Proshno Uttor.

উচ্চ মাধ্যমিক
ভূগোল
দ্বিতীয় পত্র

সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
অধ্যায়-৭

HSC Geography
2nd Paper
Srijonshil Question and Answer pdf download

১. আরেফিন সাহেব কুয়াকাটার সমুদ্র উপকূল দেখার জন্য প্রথমে লঞ্চে করে পটুয়াখালী যান। পরবর্তীতে মাইক্রোবাসে করে কুয়াকাটা পৌছান।
ক. মংলা বন্দর কোন নদীর তীরে অবস্থিত?
খ. বন্দরের উন্নতি নির্ভর করে পশ্চাভূমির ওপর - ব্যাখ্যা কর।
গ. আরেফিন সাহেবের প্রথমে ব্যবহৃত পথটির বৈশিষ্ট্য ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকে ইঙ্গিতকৃত পথ দুটির সুবিধাসমূহের তুলনামূলক বিশ্লেষণ কর।

১ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. মংলা বন্দর পশুর নদীর তীরে অবস্থিত।

খ.কোনো একটি বন্দরে যে অঞ্চলের বহির্ঘায়ের কাজ করে সেই অঞ্চলকে উক্ত বন্দরের পশ্চাদভূমি বলে।
অন্যভাবে বলা যায় যেসব স্থানের রপ্তানি দ্রব্যসমূহ কোনো বন্দরের মধ্যদিয়ে বিদেশে প্রেরণ করা হয় এবং ঐসব অঞ্চলের আমদানি দ্রব্যসমূহ ঐ বন্দরের মধ্য দিয়ে বিদেশ হতে আনয়ন করা হয়। সে অঞ্চলটি হলো উক্ত বন্দরের পশ্চাদভূমি। তাই বন্দরের উন্নতি বহুলাংশে এর পশ্চাদভূমির বিস্তার ও সমৃদ্ধির ওপর নির্ভর করে। পশ্চাদভূমি যত বেশি বিস্তৃত, জনবহুল, শিল্পপ্রধান ও সম্পদশালী হবে বন্দর তত বেশি অগ্রগতি লাভ করবে।

গ. আরেফিন সাহেব প্রথমে যে পথটি ব্যবহার করেন তা হলো নৌপথ। নদীপথে সাধারণত নৌকা, লঞ্চ, স্টিমার চলাচল করে। এ দেশে রয়েছে অসংখ্য নদী, খাল, বিল। কিন্তু দেশের সবগুলো নদীই নাব্য নয়। বাংলাদেশে প্রায় ৮,৪০০ কিলোমিটার দীর্ঘ অভ্যন্তরীণ নাব্য জলপথ রয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ৫,৪০০ কিলোমিটার সারাবছর নৌচলাচলের জন্য উন্মুক্ত রয়েছে। অবশিষ্ট প্রায় ৩,০০০ কিলোমিটার শুধু বর্ষাকালে ব্যবহৃত হয়। নাব্য নৌপথগুলো অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের অধীনে রয়েছে। বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ নদীপথে ছোট ছোট নৌকা থেকে আরম্ভ করে লঞ্চ, স্টিমার, সী ট্রাক, ফেরী, ট্যাঙ্কার, কোস্টার প্রভৃতি যানবাহন যাতায়াত করে।
উদ্দীপকে আরেফিন সাহেব কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত দেখার জন্য প্রথমে। লঞ্চে করে পটুয়াখালী যান। ঢাকায় সাথে পটুয়াখালীসহ সমস্ত দক্ষিণবঙ্গ ভ্রমণে নৌপথ সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত পরিবহন মাধ্যম। তাই গুরুত্বপূর্ণ নদীবন্দরগুলো এ অঞ্চলে অবস্থিত।

ঘ. উদ্দীপকে আরেফিন সাহেব প্রথমে নৌপথে পটুয়াখালী যান এবং পরবর্তীতে সড়কপথে মাইক্রোবাসের মাধ্যমে কুয়াকাটা যান, অর্থাৎ তার ব্যবহৃত পথদ্বয় হলো নৌপথ ও সড়কপথ। নিচে নৌপথ ও সড়কপথের সুবিধাসমূহের তুলনামূলক আলোচনা করা হলো-
অনেক দেশের অর্থনৈতিক উন্নতি বহুলাংশে নৌ পরিবহন ব্যবস্থার ওপর নির্ভরশীল। বিশেষ করে যেসব দেশ নদীবহুল সেসব দেশের অর্থনীতিতে জলপথ তথা নৌপথ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। অন্য যেকোনো পরিবহনের তুলনায় জলপথে ভারী বস্তু একস্থান হতে অন্যস্থানে অতি সহজে ও সুলভে স্থানান্তরিত করা যায়। বাংলাদেশের ৭৫% অভ্যন্তরীণ যাত্রী ও বাণিজ্য পরিবহনকার্য জলপথেই সম্পাদিত হয়। বাংলাদেশের বিশ্ব-বাণিজ্য চলে সমুদ্র বন্দরের মাধ্যমে।
অন্যদিকে, বাংলাদেশের অর্থনীতিতে সড়কপথেরও বিশেষ সবিধা রয়েছে। বিভিন্ন গ্রামাঞ্চলের মধ্যে সংযোগসাধনের জন্য সড়কপথই সর্বোৎকৃষ্ট উপায়। এমন অনেক স্থান আছে যেখানে রেলপথ বা জলপথ নেই। এসব স্থানে সড়কপথই একমাত্র অবলম্বন। বাংলাদেশের যাতায়াত ও পরিবহন ব্যবস্থার প্রধান মাধ্যম হলো সড়কপথ। কৃষিকাজের জন্য অতি প্রয়োজনীয় সার, কীটনাশক, বীজ এবং উৎপাদিত পচনশীল কৃষিপণ্য এবং শিল্পকারখানার প্রয়োজনীয় কাঁচামাল ও উৎপাদিত পণ্য দেশের সর্বত্র পরিবহনের ক্ষেত্রে সড়ক পরিবহন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
উদ্দীপকে আরেফিন সাহেব কুয়াকাটা যাওয়ায় জন্য নৌপথে প্রথমে পটুয়াখালী যান। বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে নদী বেশি থাকায় সেখানে পরিবহন মাধ্যম হিসেবে নৌপথ সুলভ ও উত্তম মাধ্যম। পরবর্তীতে সড়কপথ ব্যবহার করে, কারণ প্রত্যন্ত অঞ্চলে যাওয়ায় জন্য সড়কপথ সুবিধা জনক।

২. নিচের চিত্রটি লক্ষ্য কর এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।

ক. বন্দর কাকে বলে?
খ. বন্দর গড়ে উঠার পিছনে পশ্চাৎভূমির ভূমিকা ব্যাখ্যা কর।
গ. ‘খ’ নির্দেশক অঞ্চলের পরিবহন পথের বৈশিষ্ট্য ব্যাখ্যা কর।
ঘ. পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে ‘ক’ নির্দেশিত অঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে অধিক ভূমিকা রাখছে- ব্যাখ্যা কর।

২ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. বন্দর হলো স্থল ও জলভাগের মিলনস্থলে অবস্থিত এমন - সুবিধাজনক স্থান যেখানে জলযান থেকে পণ্য ও যাত্রী উঠানামার সুব্যবস্থা থাকে।

খ. বন্দর গঠন ও এর উন্নতিতে পশ্চাদভূমির গুরুত্ব অপরিসীম।
বন্দরের মাধ্যমে যে অঞ্চলের পণ্যদ্রব্য রপ্তানি ও প্রয়োজনীয় পণ্যদ্রব্য আমদানি করা হয় তাকে ঐ বন্দরের পশ্চাদভূমি বলে।
পশ্চাদভূমি কোনো পণ্যের স্থানীয় চাহিদা মিটাতে সক্ষম হলে তাকে উদ্বৃত্ত অঞ্চল বলে। এতে করে রপ্তানি আর ঘাটতি অঞ্চল হলে আমদানি বাণিজ্য (যেমন, বাংলাদেশের খাদ্যশস্য) বৃদ্ধি পায়। স্বাভাবিকভাবেই পশ্চাদভূমি যদি অর্থনৈতিক দিক থেকে সমৃদ্ধ হয় তাহলে বন্দরের উন্নতি হয়।

গ. ‘খ’ নির্দেশক অঞ্চলটি বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চল। পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে পরিবহন পথের প্রধানতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে ভূপ্রকৃতির প্রভাব। এখানে ভৌগোলিক প্রতিকূলতায় সড়কপথ কম রেলপথ নেই এবং নৌপথ খুবই সামান্য।
পার্বত্য চট্টগ্রামের ভূপ্রকৃতি বন্ধুর ও উঁচুনিচু বিধায় এ অঞ্চলে সড়কপথ তৈরি করা কষ্টকর, ব্যয়বহুল ও সময়সাপেক্ষ। তাই এখানে সড়কপথ কম।
বন্ধুর প্রকৃতির ভূমি হওয়ায় এ অঞ্চলে রেলপথ গড়ে তোলা সম্ভব হয়নি। অর্থাৎ পার্বত্য অঞ্চলে কোনো ধরনের যোগাযোগ ব্যবস্থাই অনুকূল নয়। তবে প্রধান প্রধান অঞ্চলের সাথে যোগাযোগের জন্য প্রয়োজনীয় সড়কপথ রয়েছে। এছাড়া কিছু কিছু স্থানে অঞ্চলভিত্তিক যোগাযোগের জন্য নদীপথও রয়েছে তবে তা খুবই বিরল।

ঘ. পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে ‘ক’ নির্দেশিত অঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থা (অর্থাৎ নৌ পরিবহন) বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে অধিক ভূমিকা রাখছে। ‘ক’ নির্দেশিত অঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থা বাংলাদেশের নৌ পরিবহনকে নির্দেশ করছে। পণ্য পরিবহনের মাধ্যমে এ দেশে নৌপথ অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে সর্বাধিক ভূমিকা রাখছে।
সুলভ ও সহজ পরিবহন ব্যবস্থা ছাড়া কৃষিকাজে উন্নতি হয় না। কারণ, কৃষিক্ষেত্রে বীজ, সার, কৃষি যন্ত্রপাতি, শ্রমিক প্রভৃতি নিয়ে যাওয়া এবং উৎপাদিত পণ্য সংগ্রহ ও বাজারজাতকরণে সুলভ পরিবহন ব্যবস্থার প্রয়োজন হয়।
বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে দ্রুত নানা প্রকারের শিল্প গড়ে ওঠার মূলে রয়েছে নদীপথের অবদান। এ পথে শিল্পের কাঁচামাল সুলভে সংগ্রহ করা যায় এবং শিল্পজাত দ্রব্য অল্প খরচে বিভিন্ন বাজারে প্রেরণ করা যায়। তাছাড়া অন্য যেকোনো পরিবহনের তুলনায় জলপথে ভারি বস্তু একস্থান হতে অন্যস্থানে অতি সহজে স্থানান্তরিত করা যায়। অভ্যন্তরীণ জলপথ বাংলাদেশের স্বাভাবিক যাতায়াত ও পরিবহন ব্যবস্থা। এ পথে পরিবহন ও যাতায়াত খরচ খুবই কম। ফলে জলপথেই দেশের শতকরা ৭৫ ভাগ যাত্রী ও বাণিজ্য পরিবাহিত হয়। উল্লেখ্য যে, বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্য নদীপথের ওপর অনেকাংশে নির্ভরশীল। সুলভে পণ্য পরিবহনের কাজে নদীপথ খুবই উপযোগী।
ভৌগোলিক অবস্থাগত কারণে নদীপথই ‘ক’ চিহ্নিত এলাকার যাতায়াতের শ্রেষ্ঠ মাধ্যম এ পথেই পণ্য ও যাত্রী পরিবাহিত হয়। ফলে নদীপথ এসব এলাকার অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বিরাট ভূমিকা পালন করে থাকে।
সুতরাং বলা যায়, পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে নৌ পরিবহন বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে অধিক ভূমিকা রাখছে।

৩. নিচের ছকটি লক্ষ্য কর এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।

পোড়াদহ

আখাউড়া

 

 

কমলাপুর

চালনা

পার্বতীপুর

 

 

 

টঙ্গী

চট্টগ্রাম

সৈয়দপুর

 

 

 

সিলেট

পায়রা

রাজশাহী

 

 

ঈশ্বরদী

ভৈরব

 

ক. বাংলাদেশের জনশক্তি আমদানিকারক একটি দেশের নাম লেখ।
খ. দেশের সার্বিক উন্নয়নে যোগাযোগ ব্যবস্থার ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ ব্যাখ্যা কর।
গ. ক ও খ কলামের স্থানসমূহের যোগাযোগ ব্যবস্থার ধরনের পার্থক্য ব্যাখ্যা কর।
ঘ. ক ও খ কলামের যোগাযোগ কেনদ্রসমূহের মাধ্যম অপেক্ষা গ কলামের যোগাযোগ কেন্দ্রসমূহের পরিবহন মাধ্যম শিল্প বিকাশে অধিক কার্যকরী বিশ্লেষণ কর।

৩ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. বাংলাদেশের জনশক্তি আমদানিকারক একটি দেশ হলো- ওমান।

খ. একটি দেশের সার্বিক উন্নয়নে যোগাযোগ ব্যবস্থা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।
উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার মাধ্যমে দেশের অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক যোগাযোগ সহজতর হয়। পণ্যসামগ্রী দেশ-বিদেশের বিভিন্ন স্থানে স্থানান্তর, রপ্তানি বৃদ্ধি, প্রাকৃতিক সম্পদ ও শিল্পের কাঁচামাল সরবরাহ, দ্রুততম সময়ে একস্থান থেকে অন্যস্থানে গমনাগমন প্রভৃতি উন্নত যোগাযোগের মাধ্যমে খুব সহজেই করা যায়। তাই উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার ওপর দেশের সার্বিক উন্নতি অনেকাংশেই নির্ভরশীল।

গ. উদ্দীপকের ‘ক’ ও ‘খ’ কলামের স্থানসমূহের যোগাযোগের ধরন হলো ব্রডগেজ ও মিটারগেজ রেলপথ। এ দুটি যোগাযোগ মাধ্যমের মধ্যে যথেষ্ট পার্থক্য বিদ্যমান রয়েছে।
ক এর যোগাযোগের অঞ্চলগুলো ব্রডগেজ রেলপথ গড়ে উঠেছে। এ ধরনের রেলপথ যমুনা নদীর পশ্চিমাংশে গড়ে উঠেছে। ব্রডগেজ রেলপথে দুটি পাতের মধ্যবর্তী দূরত্ব ১.৮৪ মিটার। বাংলাদেশে উত্তর পশ্চিমে প্রায় ৬৫৯ কি.মি. ব্রডগেজ রেলপথ চালু আছে যা বাংলাদেশ। রেলপথের আধুনিকায়নের একটি অংশ। এ পথের রেলগুলো প্রশস্ত হওয়ায় চলাচল আরামদায়ক। এ পথের কয়েকটি জংশন ও রেলস্টেশন হলো- খুলনা, যশোর, দর্শনা, পোড়াদহ, পার্বতীপুর, ঈশ্বরদী, রাজশাহী, সৈয়দপুর প্রভৃতি।
অন্যদিকে কলাম ‘খ’ এর যোগাযোগ স্থানসমূহে মিটারগেজ রেলপথ গড়ে ওঠেছে। এ পথের দুটি পাতের মধ্যে ব্যবধান থাকে ১ মিটার। যমুনা নদীর পূর্বাংশে অর্থাৎ দেশের উত্তর ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের জেলাগুলোতে এ ধরনের রেলপথ চালু রয়েছে। বাংলাদেশে মিটারগেজ রেলপথের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি (১,৮০৮ কি.মি.)। এ পথের কয়েকটি জংশন ও রেলস্টেশন হলো- কমলাপুর, ভৈরব ময়মনসিংহ, টঙ্গী, আখাউড়া, সিলেট, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম প্রভৃতি।

ঘ. উদ্দীপকের ‘গ’ কলামের যোগাযোগ মাধ্যমটি হলো নৌ পরিবহন। পরিবহনের এ মাধ্যম ‘ক’ ও ‘খ’ কলামে নির্দেশিত বেল পরিবহনের তুলনায় শিল্প বিকাশে অধিক কার্যকরী।
বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ হওয়ায় এদেশের অর্থনীতিতে নদীবন্দর বিরাট ভূমিকা পালন করে। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে কৃষি ও শিল্পপল পৌছে দিতে নদীবন্দরের গুরুত্ব অনেক। বাংলাদেশের অভ্যন্তরী যোগাযোগের জন্য নদীবন্দর এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সংঘটনের জন্য সমুদ্র বন্দর রয়েছে। এক্ষেত্রে চট্টগ্রাম ও পায়রা সমুদ্র বন্দর এবং চালনা নদী বন্দর উল্লেখযোগ্য যা দেশের শিল্প বিকাশে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ যোগাযোগের ক্ষেত্রে নৌপথ সহজ ও সহজলভ্য হওয়ায় শিল্পের যন্ত্রপাতি, কলকজা প্রভৃতির সরবরাহ এ পথেই হয়ে থাকে। বিশ্বের অন্যান্য দেশ হতে ভারী শিল্পের কাঁচামাল আমদানির ক্ষেত্রেও নৌ পরিবহন সুবিধাজনক যা রেলপথের মাধ্যমে সম্ভব হয় না। রেলপথ স্থাপন ব্যয়বহুল এবং সর্বত্র সম্ভবও নয়। ফলে এ পরিবহন পথে পণ্যদ্রব্য স্থানান্তর ও আমদানি-রপ্তানির ব্যয় অনেক বেশি। ফলে এ পথ ব্যবহার করে শিল্পের প্রসার ব্যয়বহুল। এছাড়া আমাদের দেশের নৌবন্দরগুলোকে কেন্দ্র করে এর আশেপাশে অনেক শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠেছে যা শিল্প বিকাশে ভূমিকা রাখছে।
সুতরাং বলা যায়, বাংলাদেশের যোগাযোগের ক্ষেত্রে রেল পরিবহনের চেয়ে নৌ পরিবহন ব্যবস্থা শিল্প বিকাশে অধিক কার্যকরী ভূমিকা রাখছে।

৪. নিচের চিত্রটি লক্ষ্য কর এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।

ক. মংলা বন্দর কোন নদীর তীরে অবস্থিত?
খ. বন্দরের উন্নতিতে পশ্চাদভূমির ভূমিকা কী? ব্যাখ্যা কর।
গ. চিত্রে প্রদর্শিত 'A' স্থানে যে বন্দরগুলো গড়ে উঠেছে তার ভৌগোলিক নিয়ামকগুলো ব্যাখ্যা কর।
ঘ. আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে 'B' স্থানটির তাৎপর্য বিশ্লেষণ কর।

৪ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. মংলা বন্দর পশুর নদীর তীরে অবস্থিত।

খ. বন্দর গঠন ও এর উন্নতিতে পশ্চাদভূমির গুরুত্ব অপরিসীম। বন্দরের মাধ্যমে যে অঞ্চলের পণ্যদ্রব্য রপ্তানি ও প্রয়োজনীয় পণ্যদ্রব্য আমদানি করা হয় তাকে ঐ বন্দরের পশ্চাদভূমি বলে।
পশ্চাদভূমি কোনো পণ্যের স্থানীয় চাহিদা মিটাতে সক্ষম হলে তাকে উদ্বৃত্ত অঞ্চল বলে। এতে করে রপ্তানি বাণিজ্য বৃদ্ধি পায় আর ঘাটতি অঞ্চল হলে আমদানি বাণিজ্য বৃদ্ধি পায়। স্বাভাবিকভাবেই পশ্চাদভূমি যদি অর্থনৈতিক দিক থেকে সমৃদ্ধ হয় তাহলে বন্দরের উন্নতি হয়।
সুতরাং বন্দর গড়ে ওঠার পিছনে পশ্চাদভূমির ভূমিকা অপরিসীম।

গ. নদীর তীরবর্তী বাণিজ্য কেন্দ্রগুলো নদীবন্দর নামে পরিচিত।
চিত্রে 'A' স্থানটি বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের কিছু নদীবন্দরকে (বরগুনা, বরিশাল, চাদপুর, নারায়ণগঞ্জ ও আরিচা নদীবন্দর) দেখানো হয়েছে। যেগুলো গড়ে উঠার পিছনে বিভিন্ন ভৌগোলিক নিয়ামকের অবদান রয়েছে।
চিত্রে উল্লিখিত নদীবন্দরগুলো গড়ে ওঠার জন্য নদীতে পানির পর্যাপ্ততা, বালুচর ও কর্দমমুক্ত খাত, সরল প্রকৃতির নদীখাত, পশ্চাদভূমির উপস্থিতি প্রভৃতি অনুকূল পরিবেশ রয়েছে।
বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের নদীগুলোতে পর্যাপ্ত পানি থাকার কারণে নদীবন্দরগুলো গড়ে উঠেছে। এ কারণে নৌকা, লঞ্চ, স্টিমার নদীতে চলাচল করে সহজে পণ্যসামগ্রী আনা-নেওয়া করা যায়। নদীখাত বালুচর ও কর্মমুক্ত হলে লঞ্চ, স্টিমার, নৌকা প্রভৃতি সহজেই পণ্যসামগ্রী নিয়ে বন্দর থেকে বিভিন্ন অঞ্চলে পরিবাহিত করতে পারে। তাছাড়া উক্ত নদীগুলো সরল প্রকৃতির বলে সহজে পণ্যসামগ্রী আমদানি, রপ্তানি করার জন্য এ অঞ্চলে নদীবন্দর গড়ে উঠেছে।
যে, এদেশের নদীবন্দরের আশেপাশে ব্যাপক সমভূমি রয়েছে যেখানে পণ্যসামগ্রী সরবরাহ করে বন্দরে নিয়ে আসা যায়। আরও উল্লেখা যে, এদেশের দক্ষিণাঞ্চলের নদীবন্দরগুলোর পাশে দীর্ঘ পশ্চাদভূমি রয়েছে। যে কারণে এ অঞ্চল থেকে পণ্যসামগ্রীগুলো নদীবন্দরে নিয়ে আসা সহজ হয়।
সুতরাং বলা যায়, আলোচিত নিয়ামকের কারণে চিত্রে উল্লিখিত স্থানগুলোতে নদীবন্দর গড়ে উঠেছে।

ঘ. উদ্দীপকে 'B' স্থানটি হচ্ছে চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে উক্ত সমুদ্রবন্দরের ভূমিকা তাপর্যপূর্ণ।
চট্টগ্রাম বন্দর বাংলাদেশের প্রধান সামুদ্রিক বন্দর। বাংলাদেশের বহির্বাণিজ্য তথা অভ্যন্তরীণ শিল্পকারখানা, কৃষির উন্নয়ন, গোটা ও অর্থনীতিতেই চট্টগ্রাম বন্দরের গুরুত্ব অপরিসীম। বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের শতকরা ৮০ ভাগ এ বন্দরের মাধ্যমে সংঘটিত হয়। এ বন্দরের মাধ্যমে প্রধান প্রধান পণ্যসামগ্রী আমদানি ও রপ্তানি করা হয় বলে এ বন্দরের গুরুত্ব দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
আমদানি ও রপ্তানিজাত পণ্যসম্ভার সুষ্ঠুভাবে পরিবহন ও সরবরাহের জন্য এ বন্দর রেল, সড়ক ও জলপথে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে থাকে। বর্তমানে এ বন্দরে ২৪টির মতো জাহাজ ভিড়তে পারে। তেলবাহী ট্যাঙ্কার ভিড়ার জন্য বন্দরে কতকগুলো পৃথক নোঙর ঘাট রয়েছে।
বাংলাদেশের রপ্তানিযোগ্য পণ্যসামগ্রীর মধ্যে পাট ও পাটজাত দ্রব্য, তৈরি পোশাক, চা, চামড়া প্রভৃতি এবং আমদানিকৃত পণ্যসামগ্রীর মধ্যে খাদ্যশস্য, পেট্রোলিয়াম, শিল্পের প্রয়োজনীয় কাঁচামাল, যন্ত্রপাতি প্রভৃতি এ বনদরের মাধ্যমে আমদানি-রপ্তানি করা হয়।
সুতরাং বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য তথা অর্থনীতিতে পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরের ভূমিকা তাৎপর্যপূর্ণ।

৫. সাবিবর ও রানা দুই বন্ধু ঢাকায় একটি কলেজে পড়াশোনা করে। সাবিবরের বাড়ি সিরাজগঞ্জ জেলায় এবং রানার বাড়ি বরিশালে। দুই জন গ্রামের বাড়িতে যাওয়ার সময় দুই ধরনের পথ অবলম্বন করে।
ক. পৌরসভার সড়কপথ বলতে কী বোঝ?
খ. সাবিবরের এলাকা থেকে ঢাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হওয়ার পেছনে কোন নিয়ামকটি উল্লেখযোগ্য?
গ. দুই বন্ধুর দুই ধরনের পথ বেছে নেওয়ার কারণ কী? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. সাবিবর ও রানার এলাকার পথগুলো অর্থনৈতিকভাবে কতটুকু গুরুত্ব বহন করে? বিশ্লেষণ কর।

৫ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. বাংলাদেশের বিভিন্ন পৌরসভার অধীনে যে সড়কপথ রয়েছে তাকে পৌরসভার সড়কপথ বলে।

খ. উদ্দীপকে উল্লেখ্য সাবিবরের এলাকাটি সিরাজগঞ্জ।
সিরাজগঞ্জ থেকে ঢাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হওয়ার পেছনে উল্লেখযোগ্য নিয়ামক হিসেবে ভূমিকা পালন করে যমুনা সেতু। যমুনা সেতু নির্মাণের পর সড়ক ও রেলপথে ঢাকার সাথে সিরাজগঞ্জসহ উত্তরবঙ্গের যোগাযোগ ব্যবসার উন্নতি ঘটে।

গ. উদ্দীপকে সাবিবরের বাড়ি সিরাজগঞ্জ এবং রানার বাড়ি বরিশাল হওয়ায় সাবিবর ও রানা দুই বন্ধ তাদের গন্তব্যে পৌছানোর জন্য দুই ধরনের পথ বেছে নিয়েছে।
সিরাজগঞ্জের সাথে ঢাকার যোগাযোগ মাধ্যম হলো সড়কপথ এবং বরিশালের সাথে ঢাকার যোগাযোগের সর্বোত্তম মাধ্যম হলো নদীপথ। ঢাকা থেকে সিরাজগঞ্জ যাওয়ার জন্য উন্নত সড়কপথ সম্ভব হয়েছে বঙ্গবন্ধু সেতুর কারণে। শুধু তাই নয় সমস্ত উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের সাথে সড়ক ও রেল যোগাযোগ বৃদ্ধি পাওয়ার পেছনে যমুনা সেতুর মুখ্য ভূমিকা রয়েছে। তাই সাবিবর সিরাজগঞ্জ থেকে ঢাকায় আসার জন্য সড়কপথ বেছে নিয়েছে। কিন্তু দেশের দক্ষিণাঞ্চলের কিছু কিছু জায়গার সাথে ঢাকার যোগাযোগ মাধ্যম হিসেবে সহজ হলো নৌপথ। তাই রানা তার বাড়ি বরিশালে নৌপথে গিয়েছে। এখানে নদীপথেই মানুষ যাতায়াত করে থাকে এবং যাবতীয় ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রয়োজনীয় কাঁচামাল অথবা অন্যান্য সামগ্রী নদীপথেই পরিবাহিত হয়। অতএব ভূপ্রকৃতিগত পার্থক্যের কারণে উদ্দীপকে উল্লিখিত দুই জেলায় দুটি ভিন্ন যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার হয়।

ঘ. সাবিবরের ব্যবহৃত পথ হলো সড়কপথ এবং রানার ব্যবহৃত পথ হলো জলপথ।
বাংলাদেশের ব্যবসায় বাণিজ্যের সম্প্রসারণ ও উন্নয়নে জলপথ ও সড়কপথ উভয়ই সমান ভূমিকা পালন করে। সড়কপথের দুত উন্নতির ফলে যেমন সড়কপথে যোগাযোগ বৃদ্ধি পেয়েছে তেমনি নদীমাতৃক বাংলাদেশে নৌপথও ব্যবসায় বাণিজ্য সম্প্রসারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এ দুইপথের উন্নয়নের ফলে সার্বিকভাবে বাংলাদেশের যোগাযোগের ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব অগ্রগতি সাধিত হয়েছে।
জলপথ দু-ধরনের; অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক জলপথ। দুটি জলপথই দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। নদীনালা, খালবিল, দেশের দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর যা বাংলাদেশের জলপথের মূল, যোগাযোগ ব্যবস্থাকে তাৎপর্যপূর্ণ করে তুলেছে। অভ্যন্তরীণভাবে জলপথে মানুষ ও পণ্য পরিবাহিত হলেও আন্তর্জাতিক জলপথে বাংলাদেশের বেশিরভাগ পণ্য বিদেশে পরিবাহিত হয়ে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আয় করে। জলপথে পরিবহন ও যাতায়াত খরচ খুবই কম বলে বেশিরভাগ পণ্যদ্রব্য এ পথেই পরিবাহিত হয়।
সুতরাং বলা যায়, সাবিবর ও রানার এলাকায় পথ অর্থাৎ জলপথগুলো অর্থনৈতিকভাবে অনেকখানি গুরুত্ব বহন করে।

৬. আফিফ হিশাম শীতের ছুটিতে পরিবারের সবার সাথে সাগর কন্যা কুয়াকাটা ভ্রমণে বের হয়। সদরঘাট থেকে লযোগে তারা কুয়াকাটার উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। নিরাপদ আরামদায়ক এবং নদীর দু'পাশের প্রাকৃতিক দৃশ্য তাদের মুগ্ধ করে। তারা দেখতে পায় অসংখ্য জলযান পণ্য বোঝাই করে বিভিন্ন গন্তব্যে যাচ্ছে। নদীমাতৃক বাংলাদেশে পরিবহন ও যোগাযোগের এই মাধ্যমটি সস্তা ও সুলভ বলে তাদের কাছে মনে হলো।
ক. বাংলাদেশে কয় ধরনের রেলপথ আছে?
খ. পরিবহন ও যোগাযোগ বলতে কী বোঝ?
গ. আফিফ হিশামের ভ্রমণ করা পরিবহন পথটি গড়ে ওঠার পেছনে ভৌগোলিক নিয়ামকের প্রভাব ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকে ইঙ্গিতকৃত পরিবহন পথটি বাংলাদেশের অর্থনীতিতে কি ভূমিকা রেখেছে বিশ্লেষণ কর।

৬ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. বাংলাদেশে তিন ধরনের রেলপথ আছে।

খ. দেশের একস্থান থেকে অন্যস্থানে অথবা একদেশ থেকে অন্যদেশে পণ্যসামগ্রী, মালপত্র এবং যাত্রী চলাচলের মাধ্যমকে পরিবহন বলে। পরিবহন তিন ধরনের থাকে যথা- স্থল পরিবহন, জল পরিবহন ও আকাশ পরিবহন। পরিবহন ব্যবস্থা ও তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে সম্পর্ক স্থাপন ও চলাচলের মাধ্যমকে যোগাযোগ ব্যবস্থা বলে। যোগাযোগ পরিবহন, ডাক, টেলিগ্রাম ও টেলিযোগ, বেতার ও টেলিভিশন, ই-মেইল, মোবাইল, ইন্টারনেট, ভূউপগ্রহ, ইলেকট্রনিক মাধ্যম, তথ্য ও প্রযুক্তির মাধ্যমে সম্পন্ন করা হয়।

গ. আফিফ হিশামের ভ্রমণ করা পরিবহন অর্থাৎ নৌ পরিবহন পথটি গড়ে উঠার পেছনে ভৌগোলিক নিয়ামক হিসেবে নদনদী যথেষ্ট প্রভাববিস্তার করে।
বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ। এদেশে অসংখ্য নদনদী রয়েছে। যে অঞ্চলে নদনদীর সংখ্যা বেশি সেসব অঞ্চলে নৌপরিবহন গড়ে উঠে।
এদেশের দক্ষিণাঞ্চল অর্থাৎ খুলনা, বরিশাল, পটুয়াখালী, ভোলা বরগুনা জেলায় নদনদীর সংখ্যা অনেক বেশি। এসব জেলায় রাস্তাঘাট, রেলপথ তৈরি করতে হলে প্রচুর ছোট বড় সেতু, কালভার্ট নির্মাণ করতে হবে। এসব জেলায় সেতু ও কালভার্ট নির্মাণ করা অনেক কষ্টসাধ্য ও ব্যয়বহুল। ফলে এসব জেলায় সড়কপথ ও রেলপথ পর্যাপ্ত পরিমাণে গড়ে উঠেনি। সুতরাং নৌপরিবহন গড়ে উঠার ভৌগোলিক নিয়ামক হলো নদনদী।

ঘ. উদ্দীপকে ইঙ্গিতকৃত নৌপরিবহন পথটি বাংলাদেশের অর্থনীতিতে যথেষ্ট ভূমিকা রাখছে। বাংলাদেশের যাতায়াত ব্যবস্থার মধ্যে নৌ পরিবহন পথ (জলপথ) সবচেয়ে সহজ ও সুলভ মাধ্যম। নদীমাতৃক বাংলাদেশে অসংখ্য নদনদী জালের মতো ছড়িয়ে রয়েছে। প্রাচীনকাল থেকেই যাতায়াত মাধ্যম হিসেবে নৌ পরিবহন পথ গুরত্বপূর্ণ। বাণিজ্য, পণ্য ও যাত্রী পরিবহন করে নৌ পরিবহন পথ বাংলাদেশের অর্থনীতিতে যথেষ্ট ভূমিকা রাখে।
বাংলাদেশের বিশ্ববাণিজ্য চলে চট্টগ্রাম ও মংলা সমুদ্রবন্দরের মাধ্যমে। নদীপথের মাধ্যমে এ দুটি বন্দরে মাল আনা-নেওয়া করা হয়। নদীমাতৃক দেশ হিসেবে যাতায়াত ব্যবস্থায় নদীপথ গুরুত্বপূর্ণ। এ পথে স্বল্প খরচে এবং সহজেই পণ্য ও যাত্রী বহন করা হয়। ফলে দেশের ব্যবসা বাণিজ্যের উন্নতির মাধ্যমে অর্থনৈতিক উন্নতিতে এ পথ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্য নদীপথের ওপর নির্ভরশীল। জলপথে কৃষি ও শিল্প পণ্যসহ ভারী পণ্য সহজে ও সুলভে স্থানান্তর করা যায়। ফলে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য ক্রমাগত উন্নতির দিকে অগ্রসর হচ্ছে।
সুতরাং বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের বিভিন্ন দিক নৌপরিবহনের ওপর সম্পূর্ণরূপে নির্ভরশীল।

HSC ভূগোল ২য় পত্র (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর অধ্যায় ৭ pdf download

৭. বাংলাদেশে বিভিন্ন ধরনের সড়কপথ রয়েছে। গ্রাম ও শহরের মধ্যে সংযোগসাধনের জন্য সড়কপথই সর্বোৎকৃষ্ট উপায়। তবে অর্থনৈতিক উন্নয়নে এ পথের গুরুত্ব অনেক হলেও নানা রকম সমস্যাও এ পথে রয়েছে।
ক. বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কয়টি?
খ. জাতীয় জনপথ বলতে কী বোঝায়?
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত পরিবহন পথটির গুরুত্ব ব্যাখ্যা কর।
ঘ. বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থান উদ্দীপকে উল্লিখিত পরিবহন পথের উন্নয়নে সমস্যার সৃষ্টি করেছে- বিশ্লেষণ কর।

৭ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. বাংলাদেশে বর্তমানে ৩টি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর আছে।

খ. বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার সাথে দেশের প্রধান শহর, বন্দর ও বাণিজ্য কেন্দ্রগুলোর সাথে সংযোগ স্থাপনকারী সড়কপথসমূহকে জাতীয় জনপথ বলে।
বাংলাদেশের পথগুলো বেশ চওড়া ও মসৃণ। এটা নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণ বাংলাদেশ সরকারের সড়ক জনপথ সওজ বিভাগের ওপর ন্যস্ত রয়েছে। এ জাতীয় সড়কের পরিমাণ ২১,৫৯৬ কিলোমিটার। এর মধ্যে জাতীয় মহাসড়ক ৩,৯০৬ কি.মি. এবং ১৩,২০৭ কি.মি. জেলা সড়ক। (বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষা ২০১৯)।

গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত সড়কপথটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে সড়কপথের সুবিধা অত্যধিক।
বাংলাদেশের যাতায়াত ও পরিবহন ব্যবস্থার প্রধান মাধ্যম হলো সড়কপথ। কৃষিকাজের জন্য অতি প্রয়োজনীয় সার, কীটনাশক, বীজ এবং উৎপাদিত পচনশীল কৃষিপণ্য একস্থান থেকে অন্যস্থানে পরিবহনের জন্য সড়কপথ অন্যতম উপায়। শিল্পকারখানার প্রয়োজনীয় কাঁচামাল ও উৎপাদিত পণ্য দেশের সর্বত্র পরিবহনের ক্ষেত্রে সড়ক পরিবহন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বনজ সম্পদ সড়ক পরিবহনের মাধ্যমে সহজেই করা যায়। এ পরিবহন গ্রাম ও শহরের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপন করে। এ পরিবহন কৃষি ও শিল্পের উন্নয়ন ঘটায়। কর্মসংস্থান ও দ্রব্যের সুসম বণ্টনে এর যথেষ্ট অবদান রয়েছে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় ও স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে এটি যথেষ্ট অবদান রাখে।
সুতরাং দেশের অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রভৃতি সকল খাতের উন্নয়নে সড়কপথ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

ঘ. বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থান উদ্দীপকে উল্লিখিত সড়ক পরিবহনের উন্নয়নে মারাত্মক সমস্যার সৃষ্টি করেছে।
বাংলাদেশের ভূপ্রকৃতিগত বৈশিষ্ট্য পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায় অসংখ্য খাল, নদীনালা, হাওড়-বাওড় সর্বত্র ছড়িয়ে আছে। এগুলোর উপর দিয়ে রাস্তাঘাট নির্মাণ করা অনেক কঠিন কাজ ও ব্যয়বহুল। এসব নদনদী সড়ক পরিবহনের জন্য বিরাট বাধাস্বরূপ।
নিচু ভূমি ও মৃত্তিকার এদেশের সড়ক পরিবহন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। নিচুভূমি হওয়াতে বর্ষার সময়ে অনেক রাস্তাঘাট তলিয়ে যায়। মাটি অনেক নরম হওয়ায় রাস্তাঘাট নষ্ট হয়ে যায় ফলে এদেশের সড়ক পরিবহনে মারাত্মক সমস্যার সৃষ্টি হয়। এদেশের জলবায়ুর আর্দ্রতার কারণে চলাচলের উপযোগী রাস্তাঘাট নির্মাণ করা সহজসাধ্য হয় না। ফলে এদেশের সড়ক পরিবহন ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে অনেক পিছিয়ে আছে।
সুতরাং বলা যায়, বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থান উদ্দীপকে উল্লিখিত সড়ক পরিবহনের উন্নয়নে মারাত্মক সমস্যার সৃষ্টি করেছে।

৮. মি. বিল্লাল সাহেব একজন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী। পণ্যদ্রব্য আমদানি ও রপ্তানির জন্য তিনি চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার করেন। এ বন্দর দেশের, অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
ক. বাংলাদেশের কোন অঞ্চলে নদীপথ উন্নতি লাভ করেছে।
খ. বাংলাদেশে কত ধরনের রেলপথ রয়েছে? ব্যাখ্যা কর।
গ. মি. বিল্লাল সাহেব যে বনদর ব্যবহার করেন তা গড়ে ওঠার ভৌগোলিক নিয়ামক ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত বন্দরের উন্নতিতে পশ্চাদভূমির গুরত্ব বিশ্লেষণ কর।

৮ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে নদীপথ উন্নতি লাভ করেছে।

খ. বাংলাদেশে তিন ধরনের রেলপথ রয়েছে। যথা:
(১) মিটারগেজ: রেলের দুটি পাটির মধ্যবর্তী ব্যবধান ১ মিটার।
(২) ব্রডগেজ: রেলের দুটি পাটির মধ্যবর্তী ব্যবধান ৫ ফুট ৬ ইঞ্চি। যমুনা নদীর পশ্চিমাংশের জেলাগুলোতে এ রেলপথ চালু রয়েছে।
(৩) ডুয়েলগেজ: মিটারগেজ ও ব্রডগেজ একই লাইনে থাকলে তা ডুয়েলগেজ। যমুনা নদীর পূর্ব ও পশ্চিমাংশের মধ্যে যোগাযোগ করার জন্য ডুয়েলগেজ রেলপথ চালু করা হয়েছে।

গ. উদ্দীপকে মি. বিল্লাল সাহেব চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার করেন। এটি বাংলাদেশের দুটি আন্তর্জাতিক সমুদ্রবন্দরের একটি। এ বন্দর গড়ে ওঠার পেছনে পোতাশ্রয়, পশ্চাদভূমি এবং ভগ্ন তটরেখা প্রভৃতি ভৌগোলিক কারণ রয়েছে।
সমুদ্রবন্দর গড়ে ওঠার অন্যতম নিয়ামক হলো পোতাশ্রয়। চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরের কাছাকাছি পোতাশ্রয় রয়েছে। এই পোতাশ্রয় জাহাজগুলো সহজেই ঝড় বা প্রাকৃতিক দুর্যোগে আশ্রয়গ্রহণ করতে পারে। এটি বঙ্গোপসাগরের তীরে অবস্থিত বলে অনেক জাহাজ একসাথে পোতাশয়ে অবস্থান করতে পারে।
উপকূল ভাগ ভগ্ন হলে স্বাভাবিকভাবে অনেক প্রশস্ত ও গভীর - থাকে। এসব খাড়িতে জাহাজগুলো ঝড় বাদলে আশ্রয় নিতে পারে।
তাছাড়া এ বন্দরটি গড়ে ওঠার অন্যতম কারণ হলো এটি শৈলমুক্ত।
চট্টগ্রাম বন্দরের উপকূল সমুদ্র বেশ গভীর। এতে সব ধরনের জাহাজ বন্দরে যাতায়াত করতে পারে। জাহাজ নির্মাণ, মালের গুদাম ইত্যাদি
নির্মাণের জন্য এ বন্দরের বিশাল সমভূমি রয়েছে। এ বন্দরে পণ্য সাথে পণ্য আনা নেওয়ার জন্য ভালো পরিবহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থা রয়েছে। এ সকল ভৌগোলিক নিয়ামকের কারণে চট্টগ্রাম বন্দর গড়ে উঠেছে।

ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত চট্টগ্রাম বন্দরের উন্নতিতে পশ্চাদভূমির গুরুত্ব আলোচনা করা হলো:
বন্দর গঠন ও এর উন্নতি অনেকটা নির্ভর করে পশ্চাদভূমির বিস্তৃত ও সমৃদ্ধির ওপর। পশ্চাদভূমি বিস্তৃত হলে পণ্য উৎপাদন বেশি হয় ফলে বেশি পরিমাণ পণ্য রপ্তানি সম্ভব হয়। বিস্তৃত থাকলে আমদানি রপ্তানি কম হয় ফলে বন্দরের গুরুত্ব অনেকাংশে হ্রাস পায়। পশ্চাদভূমি প্রাকৃতিক ও শিল্পসম্পদে সমৃদ্ধ হওয়া প্রয়োজন। উৎপন্ন দ্রব্যের প্রাচুর্য না থাকলে রপ্তানিযোগ্য পণ্যদ্রব্য কমে যায়। খনিজ, প্রাণিজ ও বনজ সম্পদে সমৃদ্ধ পশ্চাদভূমি থেকে বিদেশে রপ্তানির জন্য প্রচুর সামগ্রী প্রতিদিন বন্দরে আনা হয়। কেবল সম্পদ থাকলে চলবে না। ঐসব সম্পদের উৎপাদন ক্ষমতার ওপর বন্দরের উন্নতি নির্ভর করে। চট্টগ্রাম বন্দরের পশ্চাদভূমির উৎপাদন ক্ষমতা বেশি বলে রপ্তানিযোগ্য পণ্যদ্রব্যও বেশি। ফলে এ বন্দরটি উন্নত।
পশ্চাদভূমি ঘন বসতিপূর্ণ হলে সব অঞ্চলে নানাবিধ পণ্যদ্রব্যের চাহিদা থাকে। ফলে আমদানিকৃত পণ্যদ্রব্যের পরিমাণ বেশি হয়। চট্টগ্রাম বন্দরের পশ্চাদভূমি ঘনবসতিবিশিষ্ট হওয়ায় দ্রুত উন্নতি লাভ করেছে। উপযুক্ত আলোচনা থেকে বোঝা যায় যে, চট্টগ্রাম বন্দরের উন্নতিতে পশ্চাদভূমির গুরুত্ব অনস্বীকার্য।

৯. নিচের চিত্রটি লক্ষ কর এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।

ক. বন্দর কাকে বলে?
খ. বন্দর গড়ে ওঠার পিছনে পশ্চাদভূমির ভূমিকা ব্যাখ্যা কর।
গ. চিত্রে ‘খ’ চিহ্নিত বন্দরটি গড়ে ওঠার কারণ ব্যাখ্যা কর।
ঘ. আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে ‘ক’ বন্দরের ভূমিকা বিশ্লেষণ কর।

৯ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. বন্দর হলো স্বল ও জলভাগের মিলনস্থলে অবস্থিত এমন একটি সুবিধাজনক স্থান যেখানে জলযান থেকে পণ্য ও যাত্রী উঠানামার সুব্যবস্থা থাকে।

খ. বন্দর গঠন ও এর উন্নতিতে পশ্চাদভূমির গুরুত্ব অপরিসীম। বন্দরের মাধ্যমে যে অঞ্চলের পণ্যদ্রব্য রপ্তানি ও প্রয়োজনীয় পণ্যদ্রব্য আমদানি করা হয় তাকে ঐ বন্দরের পশ্চাদভূমি বলে।
পশ্চাদভূমি কোনো পণ্যের স্থানীয় চাহিদা মিটাতে সক্ষম হলে তাকে উদ্বৃত্ত অঞ্চল বলে। এতে করে রপ্তানি আর ঘাটতি অঞ্চল হলে আমদানি বাণিজ্য (যেমন, বাংলাদেশের খাদ্যশস্য) বৃদ্ধি পায়। স্বাভাবিকভাবেই পশ্চাদভূমি যদি অর্থনৈতিক দিক থেকে সমৃদ্ধ হয় তাহলে বন্দরের উন্নতি হয়। তাই বলা যায় বন্দর গড়ে উঠার পেছনে পশ্চাদভূমির ভূমিকা রয়েছে।

গ. চিত্রে ‘খ’ চিহ্নিত বন্দরটি হলো চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর।
চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর গড়ে ওঠার পেছনে বিভিন্ন ভৌগোলিক নিয়ামক কাজ করেছে। সমদ্রবন্দর গড়ে ওঠার অন্যতম নিয়ামক হলো পোতাশ্রয়। চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরের কাছাকাছি পোতাশ্রয় রয়েছে। এ পোতাশ্রয় জাহাজগুলো সহজেই ঝড় বা প্রাকৃতিক দুর্যোগে আশ্রয়গ্রহণ করতে পারে। এটি বঙ্গোপসাগরের তীরে অবস্থিত বলে অনেক জাহাজ একসাথে পোতাশ্রয় অবস্থান করতে পারে। তাই বলা যায়,
চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর গড়ে ওঠার পেছনে পোতাশ্রয়ের প্রভাব রয়েছে। তাছাড়া এ বন্দরটি গড়ে ওঠার অন্যতম কারণ হলো এটি শৈলমুক্ত।
চট্টগ্রাম বন্দরের অর্থাৎ চট্টগ্রাম উপকূল সমুদ্র বেশ গভীর। এতে সব ধরনের জাহাজ বন্দরে যাতায়াত করতে পারে। জাহাজ নির্মাণ, মালের গুদাম ইত্যাদি নির্মাণের জন্য এ বন্দরের বিশাল সমভূমি রয়েছে। এ বন্দরের সাথে পণ্য আনা-নেওয়ার জন্য ভালো পরিবহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থা রয়েছে। এ সকল ভৌগোলিক নিয়ামকের কারণে চট্টগ্রাম বন্দর গড়ে উঠেছে। সুতরাং বলা যায়, উদ্দীপকে ‘খ’ সমুদ্রবন্দরটি গড়ে ওঠার পেছনে যেসব নিয়ামক কাজ করছে তন্মধ্যে পোতাশ্রয়, পশ্চাদভূমি, ভগ্ন তটরেখা, শৈলমুক্ততা, উপকূলের গভীরতা, সুবিস্তৃত সমভূমি, জলবায়ু, উন্নত যাতায়াত ও পরিবহন ব্যবস্থা উল্লেখযোগ্য।

ঘ. চিত্রে ‘ক’ বন্দরটি হলো মংলা সমুদ্রবন্দর।
চট্টগ্রাম বন্দরের ওপর চাপ কমানোর জন্য মংলা বন্দর প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গৃহীত হয়। মংলা বন্দর প্রতিষ্ঠার ফলে চট্টগ্রাম বন্দরের উপর চাপ কিছুটা হলেও হ্রাস পেয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে মোট রপ্তানির ১৩ শতাংশ এবং আমদানির প্রায় ৮ শতাংশ বাণিজ্য সম্পন্ন হয়। এ বন্দরের মাধ্যমে দেশ থেকে মৎস্য, বনজ সম্পদ, শাকসবজি ইত্যাদি কিছু পণ্য রপ্তানি করা হয়। বিদেশ থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং দ্রব্যসামগ্রী, কলকজা, কয়লা, খনিজ তেলসহ বিভিন্ন দ্রব্য আমদানি করা হয়।
সুতরাং বলা যায় আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে ‘ক’ অর্থাৎ মংলা বন্দরের।

১০. বাংলাদেশের রেলপথ বর্তমানে বিভিন্ন ধরনের সমস্যায় জর্জরিত। এসব নানাবিধ সমস্যার প্রেক্ষিতে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করতে রেলপথ সহায়ক ভূমিকা পালন করতে ব্যর্থ হচ্ছে। কারণ এ সমস্যাবলি রেলওয়ের কার্যকারিতা, ব্যয় ও রাজস্বের ওপর প্রকৃত প্রভাববিস্তার করে থাকে। সুষ্ঠু পরিকল্পনা প্রণয়ন, দুর্নীতি দমন ও বেসরকারিকরণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে রেল পরিবহন ব্যবস্থাকে সমৃদ্ধিশালী করা যায়।
ক. বাংলাদেশে কয় ধরনের রেলপথ চালু আছে?
খ. মিটারগেজ ও ব্রডগেজ লাইন বলতে কী বোঝ?
গ. বাংলাদেশের রেল পরিবহনের ইতিহাস বর্ণনা কর।
ঘ. উদ্দীপকের আলোকে বাংলাদেশের রেলওয়ের সমস্যাসমূহ এবং তা সমাধানের উপায় নির্দেশ কর।

১০ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. বাংলাদেশে তিন ধরনের রেলপথ চালু রয়েছে।

খ. বাংলাদেশের তিন ধরনের রেল লাইনের মধ্যে অন্যতম হলো মিটারগেজ ও ব্রডগেজ রেললাইন।
যেসব রেললাইনের মধ্যবর্তী দূরত্ব ১ মিটার তাকে মিটারগেজ রেললাইন বলে। আর যেসব রেললাইনের মধ্যবর্তী দূরত্ব ১ মিটারের বেশি বা ১.৬৭ মিটার ঐসব রেললাইনকে ব্রডগেজ রেললাইন বলে।

গ. বাংলাদেশে প্রথম রেল পরিবহন ব্যবস্থা চালু হয় ১৮৬২ সালের ১৫ নভেম্বর। এ সময় কলকাতা থেকে কুষ্টিয়া অবধি রেলপথ চালু হয়। বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ১৮৮৫ সালের জানুয়ারি মাসে ঢাকা নারায়ণগঞ্জ রেলপথে রেল চলাচল শুরু হয়। বাংলাদেশের সরকারি রেলপরিবহন সংস্থার সদর দপ্তর চট্টগ্রামে অবস্থিত।
বাংলার প্রথম রেলপথ চালু হয় ১৮৫৪ সালে পশ্চিমবঙ্গের হাওড়া থেকে হুগলি পর্যন্ত ৩৮ কিলোমিটার রেলপথের উদ্বোধনের মাধ্যমে।
কলকাতা থেকে উত্তরবঙ্গ এবং আসামের মধ্যে সরাসরি যোগাযোগের জন্য পদ্মার উপরে ১৯১৫ সালের ৪ মার্চ দুই লেনবিশিষ্ট হার্ডিঞ্জ ব্রিজ রেল চলাচলের জন্য উদ্বোধন করা হয়। ১৯২০ সালে রেলওয়ে ব্যবস্থাপনা আরও উন্নত করার লক্ষ্যে ময়মনসিংহ থেকে জগন্নাথগঞ্জ ঘাট পর্যন্ত রেললাইন রাষ্ট্রীয় করণ করা হয়। ১৯৪৭ সালের দেশ বিভক্তির পর পূর্ব বাংলা বা পূর্ব পাকিস্তান প্রায় ২,৬০৬.৫৯ কিমি. রেললাইন নিয়ে ইস্টার্ন বেঙ্গল রেলওয়ে (ইবিআর) নামে পরিচিতি পায়। ১৯৯৮ সালের ২৩ জুন যমুনা বহুমুখী সেতু উন্মুক্তকরণের ফলে জামতলা থেকে ইব্রাহিমাবাদ ব্রডগেজ রেলপথের মাধ্যমে পূর্ব-পশ্চিম রেল যোগাযোগ শুরু হয়। সর্বশেষ ১৪ এপ্রিল ২০০৮ তারিখে মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেন চালুর ফলে ঢাকা এবং কলকাতার মধ্যে সরাসরি রেল যোগাযোগ প্রতিষ্ঠিত হয়। ২০১১ সালে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়কে ভেঙে নতুন রেল মন্ত্রণালয় গঠন করা হয়।

ঘ. বাংলাদেশ রেলওয়ে একটি দুর্নীতিগ্রস্ত জাতীয় প্রতিষ্ঠান। এর আয়ের চেয়ে ব্যয়ের পরিমাণ বেশি। বাংলাদেশের রেলপথের বিভিন্ন সমস্যার পাশাপাশি কিছু সম্ভাবনাও বিদ্যমান রয়েছে।
বাংলাদেশ রেলপথের প্রধান প্রধান সমস্যা হলো প্রয়োজনীয় সিস্নপার-ও পাথরের অভাব, উন্নত টেলিযোগাযোগের অভাব, পুরাতন রেলট্রাক, মান্ধাতার আমলের সিগন্যাল পদ্ধতি, ইঞ্জিন ও বগির অভাব, দুনীতি, মূলধনের অভাব, বিনা টিকিটে ভ্রমণ, দক্ষ কর্মীর অভাব এবং ঘন ঘন দুর্ঘটনা ও যাত্রী হয়রানি।
বাংলাদেশ রেলওয়ের আলোচ্য সমস্যাবলি সমাধানকল্পে যেসব ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায় সেগুলো হলো রেলপথের আধুনিকীকরণ, ওয়াগন আমদানি, বিনা টিকিটে ভ্রমণ রোধ, দক্ষ প্রশাসন গড়ে তোলা, যন্ত্রপাতির সুষ্ঠু সংরক্ষণের ব্যবস্থা, দুর্নীতি দমন, দুর্ঘটনা হ্রাস, বাজেট বৃদ্ধিকরণ, সরকার ও জনগণের সর্বাত্মক সহযোগিতা।
বাংলাদেশের অর্থনীতিতে রেলপথের যথেষ্ট গুরুত্ব থাকা সত্ত্বেও আজও এর কোনো উন্নতি হচ্ছে না। তাই বাংলাদেশ সরকারকে রেলপথের যাবতীয় সমস্যার সমাধান, সুষ্ঠু পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন এবং সকল স্তরের দুর্নীতি দমন করে অর্থনৈতিক অগ্রগতিকে সচল রাখার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে।

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post