HSC ইতিহাস ১ম পত্র (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর অধ্যায় ২ pdf download

এইচএসসি পরীক্ষার পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি
HSC History 1st Paper Srijonshil question and answer. HSC History 1st Paper (Srijonshil) Creative Questions pdf download. HSC Itihas 1st paper Srijonshil Proshno Uttor.

 ইতিহাস 
প্রথম পত্র

সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
অধ্যায়-২

HSC History 1st Paper
Srijonshil Question and Answer pdf download

উচ্চ মাধ্যমিক | ইতিহাস (প্রথম পত্র) | অধ্যায়ভিত্তিক আলোচনা, সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ও পরীক্ষা প্রস্তুতি
দ্বিতীয় অধ্যায় : ইংরেজ ঔপনিবেশিক শাসন : কোম্পানি আমল

পলাশীর যুদ্ধে ইংরেজদের সহযোগিতার উপহার হিসেবে বিশ্বাসঘাতক মীর জাফর আলী খান বাংলার সিংহাসন লাভ করেছিল। তবে রাজকোষ শুন্য থাকায় প্রতিশ্রম্ত অর্থ প্রদানের জন্য মীর জাফর তীর ব্যক্তিগত স্বর্ণালঙ্কার, ও মূল্যবান আসবাবপত্র বিক্রি করতে বাধ্য হন। অন্যদিকে দরবারে ইংরেজ রেসিডেন্ট রাখার অনুমতিও দিতে হয়েছিল তাকে। ঢাকা ও পূর্ণিয়ায় সেনাবিদ্রোহ দেখা দেয়। ক্লাইভের সাহায্যে ঢাকার বিদ্রোহ দমন করা গেলেও বকেয়া বেতনের দাবিতে সংঘটিত পূর্ণিয়ার বিদ্রোহ দমন সম্ভব হয়নি। মীরজাফর নবাবি পেলেও প্রকৃত ক্ষমতা প্রয়োগের শক্তি তার ছিল না। ফলে বিশ্বাসঘাতক মীরজাফরও একটা সময় বিরক্ত হয়ে পড়েন। তিনি ইংরেজদের বাংলা থেকে তাডw়য়ে দেয়ার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। পূর্বতন বিশ্বাসঘাতকতার অপরাধবোধ ও অযোগ্যতা এক্ষেত্রে অন্তরায় হয়ে দেখা দিয়েছিল। ফলে ওলন্দাজদের সঙ্গে পত্রালাপ এবং প্রতিশ্রচ্ত অতিরিক্ত অর্থ না দেয়ার অজুহাতে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির অস্থায়ী গভর্নর ভ্যানসি ট্রাট মীরজাফরকে সিংহাসনচ্যুত করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। বলতে গেলে তখন থেকে উপনিবেশিক শাসনের শুরু হয়। তারপর ১৯৪৭ সালের স্বাধীনতা অর্জনের পূর্বে বাংলার ইতিহাসে ঘটে অনেকগুলো গুরুতপূর্ণ ঘটনা।

বক্সার যুদ্ধের পটভূমি ও কারণ
মীর কাশিম বাংলার সিংহাসনে বনেই বুঝতে পেরেছিলেন ভবিষ্যতে ইংরেজদের সাথে তাঁর সংঘর্ধ অনিবার্ঘ। ইংরেজদের সাথে সরাসরি দ্বন্দে না জড়ালেও তাদের প্রভুর আসনে রাখতে চাওয়ার মনোবৃত্তি ছিল না তীর। যেভাবেই হোক ক্ষমতায় গিয়ে তিনি প্রকৃত নবাব হিসেবে বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যা শাসন করতে চেয়েছিলেন। ফলে তিনি দেশ, জাতি এবং নিজের প্রয়োজনে কিছু পদক্ষেপ নিয়ে ইংরেজদের চক্ষুশূল হয়েছিলেন। মূলত এ কারণেই ঐতিহাসিক বক্সার যুদ্ধ অনিবার্য হয়ে পড়ে।

বক্সারের যুদ্ধের ঘটনাবলী
নবাব মীর কাশিমের গৃহীত নানা সিদ্ধান্ত ইংরেজদের ক্ষোভের কারণ হয়। তারা নবাবকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেয়ার পদক্ষেপ গ্রহণ করে। এর ফলে বক্সারের যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল। যুদ্ধের শুরুতেই কলকাতায় ইংরেজ কুঠির প্রধান এলিসের সঙ্গে নবাবের সংঘর্ষ বাধে। ইংরেজ নেতা এলিস হঠাৎ পাটনা আক্রমণ করে শহরটি দখল করে নিলে বাধ্য হয়ে নবাবকে তার বিরুদ্ধে অস্ত্রধারণ করতে হয়েছিল। মীর কাশিম পাটনা হতে এলিসকে তাড়িয়ে দিয়ে পুরো এলাকার উপর নিয়ন্ত্রণ পুনরুদ্ধার করেছিলেন। তারপর কোলকাতা-কাউন্সিল নবাবের বিরদ্ধে ১৭৬৩ সালে যুদ্ধ ঘোষণা করে। মীর কাশিম মেজর আ্যাডামসের নেতৃত্বে ইংরেজরা নবাবের বিরদ্ধে শক্তিশালী সেনাবাহিনী প্রেরণ করে। সৈন্য সংখ্যা বেশি থাকা সক্তেও গিরিয়া, কাটোয়া ও উদয়নালার যুদ্ধে (১৭৬৩ খ্রি:) শোচনীয়ভাবে পরাজিত হয়েছিলেন মীর কাশিম। এরপর বাধ্য হয়ে তিনি অযোধ্যায় আশ্রয় গ্রহণ করেন।

মীর কাশিমের বিরুদ্ধে ১৭৬৩ সালে যুদ্ধ চলাকালীন ইংরেজগণ আবার মীরজাফরকে নবাব হিসেবে বাংলার সিংহাসনে বসিয়েছিল। নতুনভাবে নবাব হয়ে বিশ্বাস ঘাতক মীরজাফর মীর কাশিম কতৃর্ক জারীকৃত ইংরেজ স্থার্থাবরোধী প্রত্যেকটি ঘোষণা ও বিধি প্রত্যাহার করে নেয়। বার বার পরাজিত হয়েও মীর কাশিম হাল ছাড়েননি। তিনি এরপর অযোধ্যার নবাব সুজাউদ্দৌলা ও মুঘল সম্রাট শাহ আলমের সহায়তা প্রার্থনা করেন। তাদের সহযোগিতায় গঠিত সম্মিলিত বাহিনী নিয়ে ১৭৬৪ সালে মীর কাশিম ইংরেজদের বিরুদ্ধে শক্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি গ্রহণ করেছিলেন। তবে বরাবরের মত এবারেও ভাগ্য সহায় হয়নি তার। তিনি বিহারের বক্সার নামক স্থানে সংঘটিত যুদ্ধে মেজর মনরোর সেনাদলের কাছে শোচনীয়ভাবে পরাজিত হন। বলতে গেলে এ যুদ্ধের মধ্য দিয়ে বাংলায় স্বাধীনতা ধরে রাখার শেষ সম্ভাবনা নপ্যাৎ হয়ে যায়। এরপর ইতিহাসের পাতায় মীর কাশিমের নাম সেভাবে পাওয়া যায়নি। অনেকের মতে তিনি আত্মগোপনে চলে গেছেন। কারও কারও বিশ্বাস নবাব সিরাজ উদ্দৌলার মত তাকেও হত্যা করা হয়েছিল।

ফলাফল ও গুরুত্ব
১. এ যুদ্ধে পরাজিত দিল্লির মুঘল সম্রাট শাহ আলম ইংরেজদের পক্ষে যোগদান করে। মূলত সম্রাট শাহ আলমের সঙ্গে ইংরেজদের একটা চুক্তি হয়েছিল। এই চুক্তির বলে কোম্পানি বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যার দিউয়ানি লাভ করে।
২. অযোধ্যার নবাব সুজাউদ্দৌলা রোহিলাখ-- পালিয়ে গিয়েছিলেন।
৩. যুদ্ধে পরাজিত হয়ে মীর কাশিম গা ঢাকা দিয়েছিলেন। অবশেষে ১৭৭৭ সালের দিকে দিল্লির কাছে তার মৃত্যু হয়। অনেকের ধারণা বাংলার এই শেষ স্বাধীনতাকামী নবাবকে হত্যা করা হয়েছিল। সম্রাট শাহ আলমের সঙ্গে ইংরেজদের একটি চুক্তি হয়েছিল যে চুক্তির বলে কোম্পানি বাংলা বিহার, উড়িষ্যার দিউয়ানি লাভ করে।
৪. এ যুদ্ধের ফলে মীরকাশিমের ইংরেজ বিতাড়ণ ও স্বাধীনতা রক্ষার শেষ স্বপ্ন ধুলিসাৎ হয়। বলতে গেলে উপমহাদেশে ইংরেজ প্রভাব-প্রতিপত্তি বহুগুণে বেড়ে যায়।
৫. এ যুদ্ধের ফলে উপমহাদেশের অন্যান্য অঞ্চলেও বিনা বাধায় ইংরেজ আধিপত্য বিস্তারের পথ উন্মুক্ত হয়েছি। তারা এর পর থেকেই ভারতবর্ষের নানা স্থানে কুঠি নির্মাণ শুরু করে।
৬. কোম্পানির যোদ্ধারা অযোধ্যার নবাবের নিকট থেকে কারা ও এলাহাবাদ অঞ্চল দু'টি কেড়ে নিয়েছিল।
৭. বক্সারের যুদ্ধে কেবলমাত্র মীর কাশিম পরাজিত হননি। এযুদ্ধে স্বয়ং সম্রাট শাহ আলম ও সুজাউদ্দৌলাও পরাজিত হয়েছিলেন। এর মাধ্যমে দিল্লি থেকে শুরু করে বাংলা পর্যন্ত সমগ্র উত্তর ভারত ইংরেজদের অধীনে চলে গিয়েছিল।
৮. বক্সার যুদ্ধের ফলে ক্লাইভ দিলি্সতে আনুষ্ঠানিকভাবে সম্রাটের কাছ থেকে বাংলা বিহার ও উড়িষ্যার দিওয়ানি (রাজস্য আদায়ের কর্তৃত্ব) লাভ করে।

পরীক্ষা উপযোগী সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
২য় অধ্যায় : ইংরেজ ঔপনিবেশিক শাসন : কোম্পানি আমল

১. বাংলাদেশ টেলিভিশনে ঔপনিবেশিক শাসন আমলের একটি নাটক সম্প্রচারিত হয়। নাটকের নায়ক মি. জ্যাক একজন ঘোর সাম্রাজ্যবাদী ও উচ্চাভিলাষী শাসক। তিনি কয়েকটি দেশীয় রাজ্যের রাজনৈতিক অধিকার হরণ করে বাধ্যতামূলক মিত্রতায় আবদ্ধ করেন। তিনি একই উদ্দেশ্যে দুটি নীতি প্রয়োগ করে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের বিস্তৃতি ঘটান।
ক. কে সতীদাহ প্রথা বিলোপ করেন?
খ. ফরায়েজি আন্দোলন কী? ব্যাখ্যা দাও।
গ. উদ্দীপকে পাঠ্যবইয়ের যে গভর্নর জেনারেলের প্রতিচ্ছবি ফুটে উঠেছে, তাঁর রাজ্য দখলের নীতিটি আলোচনা কর।
ঘ. ‘‘উক্ত নীতির প্রয়োগের দ্বারা তিনি ভারতে ব্রিটিশ শক্তিকে সুসংহত করেন’’ - মতামত দাও।

🍭 ১ নং প্রশ্নের উত্তর 🍭
ক. লর্ড বেন্টিঙ্ক সতীদাহ প্রথা বিলোপ করেন।

খ. মুসলমানদের আবশ্যকীয় ধর্মীয় বিধানকে ফরজ বলা হয়। মক্কা থেকে হজ কার্য সম্পন্ন করে হাজি শরীয়তউল্লাহ বাংলার মুসলমানদের মধ্যে বিরাজমান কুসংস্কার ও অনৈসলামিক রীতিনীতি দূরকরণার্থে যে আন্দোলন পরিচালনা করেন তাকে ফরায়েজি আন্দোলন বলে। ফরায়েজি আন্দোলনে বাংলার নিগৃহীত, অত্যাচারিত কৃষকশ্রেণি শামিল হয়। ধীরে ধীরে তা একটি রাজনৈতিক আন্দোলনে রূপ নেয়। কিন্তু শেষদিকে দুদু মিয়ার মৃত্যু হলে ফরায়েজি আন্দোলন অত্যন্ত দুর্বল হয়ে পড়ে।

গ. উদ্দীপকে পাঠ্যবইয়ের লর্ড ওয়েলেসলির প্রতিচ্ছবি ফুটে উঠেছে। লর্ড ওয়েলেসলি ভারতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্য বিস্তারে অধীনতামূলক মিত্রতা নীতির প্রবর্তন করেন।
লর্ড ওয়েলেসলি ভারতে আগমন করে যথাসম্ভব ভারতের রাজ্যগুলো ইংরেজদের নিয়ন্ত্রণে আনার সংকল্প করেন। দুটি উদ্দেশ্য দ্বারা ওয়েলেসলি পরিচালিত হন। এক সমগ্র আর্যাবর্তে ও দাক্ষিণাত্যে রাজনৈতিক মৈত্রী স্থাপন করে ব্রিটিশ শক্তিকে সার্বভৌম শক্তিতে পরিণত করা এবং দুই ভারত থেকে ফরাসি প্রভাব দূর করে ফরাসি সাম্রাজ্য গঠনের পরিকল্পনা ব্যর্থ করা।
ভারতের শাসনভার গ্রহণ করে ওয়েলেসলি লক্ষ করেন যে ভারতের রাজাগণ ইউরোপীয় সামরিক সাহায্য লাভের জন্য ব্যাকুল। তাই ওয়েলেসলি ফরাসি সাহায্যের পরিবর্তে তারা যেন ব্রিটিশদের প্রতি আকৃষ্ট হয় সেজন্য অধীনতামূলক মিত্রতানীতি গ্রহণ করেন। এ নীতির শর্তাবলি ছিল নিম্নরূপ-
১. কোনো দেশীয় রাজা যদি অধীনতামূলক মিত্রতার্নীতিতে আবদ্ধ হয়, তবে ব্রিটিশ সরকারের অনুমতি ভিন্ন অপর কোনো রাজ্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা বা কোনো ধরনের আলাপ-আলোচনা করতে পারবে না।
২. শক্তিশালী দেশীয় রাজাগণ নিজ নিজ রাজ্যের মধ্যে একদল ইংরেজ সেনা পোষণ করবেন। তবে সেনাদের ব্যয় নির্বাহের জন্য তাদের রাজ্যের একাংশ কোম্পানির হাতে সমর্পণ করবেন। অপেক্ষাকৃত ছোট রাজ্যগুলো রাজ্যের একাংশ ছাড়ার পরিবর্তে বছরে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ কর হিসেবে প্রদান করবে।
৩. মিত্রতা সূত্রে আবদ্ধ সকল দেশীয় রাজ্য থেকে একমাত্র ইংরেজ ছাড়া অন্যসব ইউরোপীয় কর্মচারী ও নাগরিকদের বিতাড়িত করতে হবে। উপরের শর্তগুলোর বিনিময়ে ব্রিটিশ সরকার অধীনতামূলক মিত্রতায় আবদ্ধ রাজাদের রাজ্যের নিরাপত্তার দায়িত্ব গ্রহণ করবে। দেশীয় রাজাদের নিরাপত্তার বিনিময়ে তাদের স্বাধীন রাজনৈতিক সত্তার বিসর্জনই ছিল এ নীতির মূল লক্ষ্য।

ঘ. উক্ত নীতি অর্থাৎ অধীনতামূলক মিত্রতানীতির প্রয়োগের দ্বারা লর্ড ওয়েলেসলি ভারতে ব্রিটিশ শক্তিকে সুসংহত করেন।
লর্ড ওয়েলেসলির অধীনতামূলক মিত্রতা নীতি ভারত উপমহাদেশে ব্রিটিশ সাম্রাজ্য বিস্তারের এক অভিনব উপায় হিসেবে কাজ করে। অবশেষে ওয়েলেসলি তার সাম্রাজ্যবাদী অধীনতামূলক মিত্রতানীতি প্রয়োগে অগ্রসর হন। সর্বপ্রথম এ নীতি প্রয়োগ করা হয় হায়দ্রাবাদের নিজামের রাজ্যে। খরদার যুদ্ধে লাঞ্ছিত ও ক্ষতিগ্রস্ত নিজাম মারাঠাদের আক্রমণের ভয়ে সর্বদাই আতঙ্কিত ছিলেন। তাই ওয়েলেসলি মিত্রতানীতি গ্রহণে আমন্ত্রণ জানালে নিজাম সহজে তা গ্রহণ করেন। কিন্তু মহীশূরের বাঘ খ্যাত টিপু সুলতান এ নীতি গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানালে কোম্পানির সাথে তার যুদ্ধ হয়। যুদ্ধে টিপু সুলতান পরাজিত ও নিহত হলে মহীশূর রাজ্য ব্রিটিশ সাম্রাজ্যভুক্ত হয়। ওয়েলেসলি মারাঠা শক্তিকে যুদ্ধে পরাজিত করে রাজ্যটি ব্রিটিশ সাম্রাজ্যভুক্ত করেন। ছোট ছোট রাজ্যগুলোর মধ্যে তাঞ্জোর, সুরাট ও কর্ণাটের ওপর বলপ্রয়োগ করে অধীনতামূলক নীতি গ্রহণে বাধ্য করা হয়। তার সাম্রাজ্যবাদী নীতির নগ্ন প্রয়োগ ঘটে অযোধ্যা রাজ্য দখলের মধ্য দিয়ে। অযোধ্যায় কুশাসন চলছে এবং কাবুলের জামানশাহ কর্তৃক আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কার অজুহাতে অযোধ্যার নবাবকে মিত্রতায় আবদ্ধ হতে বাধ্য করা হয়। এভাবে তিনি ভারতের শক্তিশালী ও দুর্বল রাজ্যগুলোকে একে একে পদানত করে ব্রিটিশ সার্বভৌমত্বকে সুপ্রতিষ্ঠিত করেন।
তাই বলা যায়, লর্ড ওয়েলেসলি অধীনতামূলক মিত্রতানীতির মাধ্যমে ভারতে ব্রিটিশ শক্তিকে সুসংহত করেন।

২. সালমান সাহেব প্রচুর ভূসম্পত্তির মালিক। গ্রামের বর্গাচাষিরা তার জমি চাষ করে। কিন্তু জমির যত্ন না নেওয়ায় ফসল কম হয়। প্রত্যেক বছরে বর্গাদার পরিবর্তন করেও তিনি সুফল পেলেন না। তাই তিনি বার্ষিক নির্দিষ্ট পরিমাণ ফসলের বিনিময়ে স্থায়িভাবে বর্গা দেওয়ার পরিকল্পনা করলেন এতে তিনি নানাভাবে লাভবান হন।
ক. কাকে ভারতের রেলপথের জনক বলা হয়?
খ. স্বত্ববিলোপ নীতি কী? ব্যাখ্যা কর।
গ. উদ্দীপকের সালমান সাহেবের পরিকল্পনার সাথে পাঠ্যবইয়ের কোন শাসকের পরিকল্পনার সাদৃশ্য রয়েছে? উক্ত পরিকল্পনার উদ্দেশ্যগুলো আলোচনা কর।
ঘ. উক্ত পরিকল্পনায় দোষগুণের সংমিশ্রণ ছিলত পঠিত বইয়ের আলোকে বিশ্লেষণ কর।

🍭 ২ নং প্রশ্নের উত্তর 🍭
ক. এক লর্ড ডালহৌসিকে ভারতের রেলপথের জনক বলা হয়।

খ. ভারতের ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের বিস্তারে যে কয়জন ব্যক্তি ও তাদের নীতিতে বিশেষ অবদান রেখেছেন তাদের মধ্যে লর্ড ডালহৌসির স্বত্ববিলোপ নীতি অন্যতম। স্বত্ববিলোপ নীতির মূলকথা হলো- ব্রিটিশ অধীন বা ব্রিটিশ শক্তি দ্বারা সৃষ্ট কোনো দেশীয় রাজ্যের রাজবংশের কোনো উত্তরাধিকার না থাকলে সেই রাজ্য সরাসরি ব্রিটিশ সাম্রাজ্যভুক্ত হয়ে পড়বে। কোনো দত্তক পুত্রকে এসব রাজ্যের উত্তরাধিকার দেওয়া যাবে না। এর ফলে নাগপুর, ঝাঁসি, ভগৎ, মধ্যপ্রদেশের উদয়পুর, রাজস্থানের করোলি প্রভৃতি রাজ্য ব্রিটিশ সাম্রাজ্যভুক্ত করেন।

গ. উদ্দীপকে সালমান সাহেবের পরিকল্পনার সাথে পাঠ্যবইয়ের লর্ড কর্নওয়ালিসের চিরস্থায়ী ভূমি বন্দোবস্তের পরিকল্পনার সাদৃশ্য রয়েছে। কোম্পানির শাসন দুর্নীতিমুক্ত ও সুসংগঠিত করতে ১৭৮৬ সালে লর্ড ও কর্নওয়ালিসকে ভারতের গভর্নর জেনারেল ও সেনাপ্রধানের দায়িত্ব দিয়ে পাঠানো হয়। তিনি ১৭৯৩ সালে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত বা স্থায়ী ভূমি ব্যবস্থা প্রবর্তন করেন। ওই বছর ২২ মার্চ রাজস্ব পরিশোধের বিনিময়ে বাংলা, বিহার, উড়িষ্যার জমিদারদের নিজ নিজ জমির ওপর স্থায়ী মালিকানা প্রদান করে যে বন্দোবস্ত চালু করা হয়, তাকেই ‘চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত' বলা হয়। এ ব্যবস্থার অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল-
i. বাংলায় কোম্পানির ভূমি রাজস্ব আদায় নির্ধারিত ও নিশ্চিত করা।
ii. বাংলার ভগ্নপ্রায় কৃষিব্যবস্থাকে উজ্জীবিত করে কৃষিবিপ্লব ঘটানো।
iii. জমিদারদের সাথে ভূমি বন্দোবস্ত করে শাসনকার্যে স্থায়ী সুবিধা আনয়নের লক্ষ্যে একটি অনুগত শ্রেণি তৈরি করা।
iv. ভারতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের ভিত্তিকে আরও সুপ্রতিষ্ঠিত করা। এসব উদ্দেশ্যের বাস্তবায়নে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত সফল হলেও বাংলা কৃষি বিপ্লবে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত কোনো সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারেনি।

ঘ. উক্ত পরিকল্পনা অর্থাৎ চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত দোষ ও গুণের সংমিশ্রণ ছিল। চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত বাংলার আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক কাঠামোয় সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলে। কর্নওয়ালিস নিজে জমিদার ছিলেন। তিনি ইংল্যান্ডের মতো এদেশেও একটি জমিদার শ্রেণি গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ইউরোপ আর উপমহাদেশের আর্থসামাজিক কাঠামো ও তার বিকাশের ধরন এক ছিল না। ফলে বাইরে থেকে চাপিয়ে দেওয়া এ ব্যবস্থায় সুবিধার চেয়ে অসুবিধাই অধিক পরিলক্ষিত হয়।
গুণ:
◉ এ ব্যবস্থার প্রধান সুবিধা হচ্ছে সরকার তার আয়ের পরিমাণ সম্পর্কে নিশ্চিত হয়। যে কারণে বাজেট প্রণয়ন, বিভিন্ন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা সরকারের পক্ষে সহজ হয়।
◉ চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের ফলে সৃষ্ট জমিদার শ্রেণি কোম্পানির একনিষ্ঠ সমর্থক হয়ে ওঠে। পরে ব্রিটিশ শাসন দৃঢ়করণ এবং দীর্ঘায়িতকরণে জমিদাররা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সক্ষম হয়।
◉ জমির ওপর জমিদারের স্থায়ী মালিকানা স্বীকৃত হওয়ার কারণে অনেকেই নিজ নিজ এলাকায় নানা জনকল্যাণমূলক কাজে ব্রতী হয়। জঙ্গলাকীর্ণ জমি চাষের আওতায় আনা হয়। ফলে উৎপাদন বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে দেশের আর্থিক অবস্থার উন্নতি হয়।
দোষ :
চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের ফলে জমিদারের স্বার্থ সুরক্ষিত হয়। তারা ধীরে ধীরে ধনিক শ্রেণিতে পরিণত হয়। অপরদিকে, জমিতে প্রজাদের পুরনো স্বত্ব সম্পূর্ণ বিলুপ্ত হয়। ফলে জমিদার ইচ্ছে করলেই যেকোনো সময় তাদের জমি থেকে উচ্ছেদ করতে পারত। প্রথমদিকে প্রজাস্বত্ব আইন না থাকায় তাদের ভাগ্যের জন্য সম্পূর্ণভাবে জমিদারের দয়ার ওপর নির্ভর করতে হতো।
পরিশেষে বলা যায় যে, লর্ড কর্নওয়ালিসের চিরস্থায়ী বন্দোবস্তে গুণের চেয়ে দোষই অধিক পরিমাণে ছিল। যার ফলে তা বাংলার অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় যথেষ্ট ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে ব্যর্থ হয়।

৩. একটি বহুজাতিক কোম্পানি প্রতিষ্ঠার সময় পরিচালনার জন্য কিছু আইন প্রণয়ন করা হয়। কিন্তু সময়ের ব্যবধানে কোম্পানিটির ব্যাপক বিস্তৃতির ফলে আইনের সীমাবদ্ধতায় বৈশকিছু জটিলতার সৃষ্টি হয় এবং আইনের কয়েকটি ধারা অকার্যকর প্রমাণিত হয়। এ প্রেক্ষিতে কোম্পানির ব্যবস্থাপককে ব্যাপক ক্ষমতা দিয়ে নতুন একটি আইন প্রণয়ন করা হয়। নতুন আইন কোম্পানিটির ব্যবসায় বাণিজ্য বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করলেও ত্রুটিমুক্ত ছিল না।
ক. ব্রিটিশ ভারতের কোন গভর্নর জেনারেলকে ইম্পিচমেন্টের সম্মুখীন হতে হয়?
খ. 'সূর্যাস্ত আইন' বলতে কী বোঝায়?
গ. উদ্দীপকে বর্ণিত আইনে ব্রিটিশ ভারতের যে আইনের প্রতিফলন ঘটেছে তার পটভূমি ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উক্ত আইনের ত্রুটিসমূহ বিশ্লেষণপূর্বক তোমার মতামত দাও।

🍭 ৩ নং প্রশ্নের উত্তর 🍭
ক. ব্রিটিশ ভারতের গভর্নর জেনারেল ওয়ারেন হেস্টিংস ইম্পিচমেন্টের সম্মুখীন হন।

খ. লর্ড কর্নওয়ালিসের চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত আইন অনুযায়ী নির্দিষ্ট দিনের সূর্যাস্তের পূর্বে খাজনা প্রদান না করলে জমিদারি বাজেয়াপ্ত করা হতো। এটি সূর্যাস্ত আইন নামে পরিচিত। এ আইন সম্পর্কে অনেকের সঠিক ধারণা না থাকায় এবং নির্দিষ্ট সময়ে খাজনা পরিশোধ করতে না পারায় অনেক জমিদার জমিদারি হারিয়ে সর্বস্বান্ত হন।

গ. উদ্দীপকে বর্ণিত আইনে ব্রিটিশ ভারতের রেগুলেটিং অ্যাক্ট বা নিয়ামক আইনের প্রতিফলন ঘটেছে।
১৭৭৩ খ্রিষ্টাব্দের রেগুলেটিং অ্যাক্ট ভারতে ব্রিটিশ শাসন কাঠামো প্রবর্তনে একটি মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত। ভারতের তদানীন্তন সমস্যার সমাধানকল্পে ব্রিটিশ পার্লামেন্টের হস্তক্ষেপের ফল হলো। রেগুলেটিং অ্যাক্ট। যেহেতু এ আইনের মুখ্য উদ্দেশ্য ছিল কোম্পানির কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণ করা, সেহেতু এ আইন রেগুলেটিং বা নিয়ন্ত্রণের আইন নামে খ্যাত। ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির গঠনতন্ত্র ও কোম্পানির ভারতীয় সাম্রাজ্য সম্পর্কে এ আইন ছিল ব্রিটিশ পার্লামেন্ট ও কোম্পানি কর্তৃপক্ষের মধ্যে একটি আপসমূলক ব্যবস্থা। এ আইন মোতাবেক সর্বপ্রথম ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কলকাতাভিত্তিক কেন্দ্রীয় সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়। অর্থাৎ এ আইন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি, ব্রিটিশ পার্লামেন্ট ও ভারতীয়দের মধ্যে একটি আপসনামা হিসেবে পরিচিত। তৎকালীন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী লর্ড নর্থ এ আইনটি প্রণয়ন করেন। এজন্য আইনটির সংক্ষিপ্ত নাম দেওয়া হয় 'Norths Regulating Act, 1773' বা সংক্ষেপে রেগুলেটিং অ্যাক্ট। এ আইনের মাধ্যমে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি একটি বাণিজ্যিক সংস্থা থেকে রাজনৈতিক সরকারে রূপান্তরিত হয়। এ প্রসঙ্গে মাইকেল এডওয়ার্ড তাঁর 'British India' গ্রন্থে বলেন, "This (regulating) act marked the beginning of the decline of the company as a trading power." অর্থাৎ, এ (রেগুলেটিং) আইন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে কোম্পানির পতন সূচনা করে। এ আইন দ্বারা কোম্পানির ব্যাপারে ইংল্যান্ডের মন্ত্রীদের ক্ষমতা বা পৃষ্ঠপোষকতার সম্ভাবনাও পরিহার করা হয়।

ঘ. উদ্দীপকে মূলত রেগুলেটিং অ্যাক্ট সম্পর্কেই আলোকপাত করা হয়েছে। এ আইনে কতিপয় ত্রুটি লক্ষণীয়।
রেগুলেটিং অ্যাক্ট দ্বারা আইন, বিচার ও কার্যনির্বাহক ক্ষমতাগুলো সুনির্দিষ্ট করা হয় এবং একটি নতুন প্রশাসনিক ব্যবস্থার ভিত্তি রচনা করা হয়। কিন্তু এ আইন ত্রুটিমুক্ত ছিল না। এর ত্রুটি সম্পর্কে ইলবার্ট লিখেছেন, ‘‘সুপ্রিম কের্টের এলাকা, বাংলার সরকারের সাথে কোর্টের -সম্পর্ক এবং গভর্নর জেনারেল ও তার কাউন্সিলের প্রকৃত ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব সম্পর্কে ১৭৭৩ খ্রিস্টাব্দের আইন ছিল অস্পষ্ট ও দুর্বোধ্য।" রেগুলেটিং আইনের সমালোচনা করে বাউটেন রাউজ বলেন যে, ‘‘এ আইনের উদ্দেশ্য ছিল মহৎ, কিন্তু এর সৃষ্ট ব্যবস্থা ছিল ত্রুটিপূর্ণ।" রবার্টস (Roberts)-এর মতে, ‘‘কোম্পানির ওপর ব্রিটিশ মন্ত্রিসভার নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা, কোম্পানির কর্মচারীদের ওপর ডাইরেক্টর সভার নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা এবং কাউন্সিলের ওপর গভর্নর জেনারেলের নিয়ন্ত্রণ। ক্ষমতা এ আইনে সুনির্দিষ্ট ছিল না।"
সর্বোপরি রেগুলেটিং অ্যাক্ট-এর সমালোচনা বা ত্রুটি থাকা সত্ত্বেও এর গুরুত্ব অস্বীকার করা যায় না। ভারত সম্বন্ধে ব্রিটিশ পার্লামেন্ট যেসব ১ আইন রচনা করেছিল, রেগুলেটিং আইন ছিল তন্মধ্যে সর্বপ্রথম। ব্রিটিশ শাসিত ভারতের জন্য এটি ছিল সর্বপ্রথম লিখিত সংবিধান। কোম্পানির ব্যাপারে পার্লামেন্টের হস্তক্ষেপের অধিকার ও কোম্পানির প্রশাসন পরিচালনা করার ব্যাপারে পার্লামেন্টের নিয়ন্ত্রণের অধিকার সর্বপ্রথম এ আইন দ্বারা স্বীকৃত হয়। কোম্পানির হাত থেকে পার্লামেন্টের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের এটিই হলো প্রথম সূচনা। যা ব্যক্তিবিশেষের শাসনের পরিবর্তে গোষ্ঠী শাসনের প্রতিষ্ঠা করেছিল।

৪. সম্রাট শেরশাহ ভারতে ভূমি রাজস্ব ব্যবস্থার একজন অন্যতম পথ প্রদর্শক। তাঁর শাসনামলে নিজস্ব চিন্তা-চেতনার মাধ্যমে ভূমি রাজস্ব ব্যবস্থার সংস্কার করেন। প্রচলিত পদ্ধতিকে বাতিল করে দিয়ে সম্পূর্ণ নতুন আদলে তিনি এ ব্যবস্থা প্রবর্তন করেন। এতে ভূমি রাজস্ব ব্যবস্থায় গতিশীলতা আসে এবং সাম্রাজ্যের রাজস্ব আয় অনেকাংশে বৃদ্ধি পায়। তাঁর এ নীতি প্রবর্তনের মূল লক্ষ্য ছিল প্রজাদের দুর্দশা লাঘব। এ নীতিটি এতই উন্নত ছিল যে, পরবর্তীতে মুঘল সম্রাটগণ এমনকি ইংরেজরাও এ নীতি অনুসরণ করেছিলেন।
ক. কোন সালে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি দিওয়ানি লাভ করে?
খ. ছিয়াত্তরের মন্বন্তরের কারণ ব্যাখ্যা কর।
গ. উদ্দীপকে বর্ণিত শেরশাহের কার্যক্রমের সাথে লর্ড কর্ণওয়ালিশের গৃহীত কোন ব্যবস্থার মিল আছে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উল্লিখিত ব্যবস্থা ভারতে ইংরেজ কোম্পানির অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি আনয়নে সহায়ক হয়েছিল? তুমি কি এর সাথে একমত? যুক্তি দাও।

🍭 ৪ নং প্রশ্নের উত্তর 🍭
ক. ১৭৬৫ সালে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি দিওয়ানি লাভ করে।

খ. ১১৭৬ বঙ্গাব্দে অনাবৃষ্টি ও খরার কারণে ফসল নষ্ট হয়ে গেলে দেশে খাদ্যাভাব দেখা দেয়। ফলে সমগ্র বাংলায় এক ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ দেখা যায় যা ছিয়াত্তরের মন্বন্তর নামে পরিচিত। আবার দ্বৈত শাসনের ফলে বাংলায় অরাজকতা প্রচলিত হয়েছিল তাতে দরিদ্র মানুষের অবস্থা আরও সংকটপূর্ণ হয়ে ওঠে। এ শাসনব্যবস্থায় দুর্ভিক্ষ মোকাবিলা করা সম্ভব হয়ে ওঠেনি এবং এক তৃতীয়াংশ লোক মান্না যায়। বাংলা ৭৬ সালে এ দুর্ভিক্ষ হওয়ায় এটাকে 'ছিয়াত্তরের মন্বন্তর' বা 'মহাদুর্ভিক্ষ' বলা হয়।

গ. উদ্দীপকে বর্ণিত শেরশাহের কার্যক্রমের সাথে লর্ড কর্ণওয়ালিশের গৃহীত চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত ব্যবস্থার মিল আছে। উদ্দীপকে হতে জানা যায়, সম্রাট শেরশাহ ভারতে ভূমি রাজস্ব ব্যবস্থার একজন অন্যতম পথপ্রদর্শক। তাঁর শাসনামলে নিজস্ব চিন্তা চেতনার মাধ্যমে ভূমি রাজস্ব ব্যবস্থার সংস্কার করেন। এ নীতি এতই উন্নত ছিল যে, পরবর্তীতে মুঘল সম্রাটগণ এমনকি ইংরেজরাও এ নীতি অনুসরণ করেছিলেন।
অপরদিকে পাঠ্যবই হতে আমরা জানতে পারি লর্ড কর্ণওয়ালিশ ১৭৯৩ খ্রিস্টাব্দের ২২ মার্চ ভূমি ব্যবস্থায় চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের প্রবর্তন করেন। এ ব্যবস্থায় জমিদারগণ জমির স্থায়ী মালিক হলেন এবং তাদের রাজস্বের পরিমাণ চিরদিনের জন্য নির্দিষ্ট হলো। যথা সময়ে নির্দিষ্ট কর প্রদান করে জমিদারগণ পুরুষানুক্রমে জমিদারী ভোগ করার অধিকার পেলেন। চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত প্রবর্তনের ফলে জমিদারদের আয় বৃদ্ধি পায় এবং দেশের উৎপাদন ও অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি সাধিত হয়। চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত দ্বারা জমিদারদের দেয় রাজস্বের পরিমাণ সুনির্দিষ্ট হওয়ায় বাৎসরিক বাজেট প্রণয়ন ও বিভিন্ন পরিকল্পনা বাস্তবায়নের সুযোগ লাভ করে। চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত এদেশের জমিদার শ্রেণিকে বিত্তবান করেছিল এবং এ সমস্ত বিত্তবান জমিদারেরা এদেশের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা পালন করেছিলেন। সুতরাং সার্বিক আলোচনার প্রেক্ষিতে এটি স্পষ্ট যে, উদ্দীপকে বর্ণিত শেরশাহের কার্যক্রমের সাথে লর্ড কর্ণওয়ালিশের গৃহীত চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত ব্যবস্থার মিল আছে।

ঘ. উল্লিখিত ব্যবস্থা অর্থাৎ লর্ড কর্ণওয়ালিশের চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত ভারতে ইংরেজ কোম্পানির অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি আনয়নে সহায়ক ছিলত উক্তিটির সাথে আমি একমত। চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত ব্যবস্থায় কৃষিকার্য সম্প্রসারিত হয় এবং জমিদারদের আয় বৃদ্ধি পায়। সরকারি রাজস্বের পরিমাণ চিরদিনের জন্য নির্ধারিত হওয়ায় জমিদারগণ জমিতে অতিরিক্ত শ্রম ও মূলধন নিয়োগ করে ভূমির উৎপাদন বৃদ্ধিতে উৎসাহিত হন। তারা জঙ্গলাকীর্ণ ও পতিত জমি চাষাবাদের ব্যবস্থা করেন। এতে উৎপাদন বৃদ্ধি পায় ও দেশের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি সাধিত হয়। আর জমিদারদের দেয় রাজস্বের পরিমাণ সুনির্দিষ্ট হওয়ায় কোম্পানি তার আয় সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট হয়। এতে বাৎসরিক বাজেট প্রণয়নের সুবিধা হয় এবং কোম্পানি বিভিন্ন পরিকল্পনা বাস্তবায়নের সুযোগ লাভ করে। অস্থায়ী বন্দোবস্তের ফলে উদ্ভূত কুফলগুলো কোম্পানি এ ব্যবস্থা দ্বারা দূর করতে সমর্থ হয়। এ বন্দোবস্ত প্রবর্তনের ফলে যে জমিদার শ্রেণির উদ্ভব ঘটেছিল তারা স্বভাবতই কোম্পানির নির্ভরযোগ্য সমর্থক শ্রেণিতে পরিণত হয়েছিল। এ রাজভক্ত জমিদার শ্রেণি এদেশে কোম্পানি তথা ব্রিটিশ শক্তিকে সুদৃঢ় করতে সহায়তা করেছিল। চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত এদেশে কোম্পানির অনুগত জমিদার শ্রেণিকে বিত্তবান করেছিল। এ সমস্ত বিত্তবান জমিদারেরা এদেশের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা পালন করেছিল। এ সময় কোম্পানির শাসনে জমিদারগণ প্রজাদের মঙ্গলার্থে পুষ্করিণী খনন, বিদ্যালয়, চিকিৎসালয়, প্রভৃতি স্থাপনের জন্য প্রচুর অর্থ দান করেছেন। নানাবিধ জনকল্যাণকর কার্যাবলি গ্রামীণ জীবনকে যথেষ্ট সচল করেছিল। সুতরাং সার্বিক আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায়, চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত ভারতে ইংরেজ কোম্পানির অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি আনয়নে সহায়ক হয়েছিল- উক্তিটি যথার্থ ও সঠিক।

৫. ‘ক’ একটি বিশাল রাজ্য। এ রাজ্যের নিরাপত্তার জন্য শক্তিশালী সামরিক বাহিনী ছিল। সামরিক বাহিনীতে বিভিন্ন অঞ্চলের, বিভিন্ন জাতির সৈনিকের সমাবেশ ছিল। এক সময় দেখা গেল শাসকশ্রেণির জাতিভুক্ত সৈন্যদের আলাদাভাবে বেতন প্রদান করা হচ্ছে। এতে করে সৈন্যদের মধ্যে বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। তারা বেতন বৈষম্যের অবসান চেয়ে বিক্ষুব্ধ হয়। পারিপার্শ্বিক কিছু বিষয় সৈন্যদেরকে আন্দোলনের দিকে ঠেলে দেয়।
ক. ভারতের প্রথম গভর্নর জেনারেল কে ছিলেন?
খ. স্বত্ববিলোপ নীতি বলতে কী বোঝায়?
গ. উদ্দীপকের সৈন্যদের বিদ্রোহের সাথে তোমার পাঠ্যবইয়ের কোন বিদ্রোহের মিল খুঁজে পাওয়া যায়? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উল্লিখিত বিদ্রোহের ফলাফল ছিল সুদূরপ্রসারী। তোমার মতামত দাও।

🍭 ৫ নং প্রশ্নের উত্তর 🍭
ক. ভারতের প্রথম গভর্নর জেনারেল হলেন লর্ড ক্যানিং।

খ. ভারতীয় উপমহাদেশে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের ব্যাপক বিস্তৃতি সাধনের উদ্দেশ্যে যেসব নীতি প্রণয়ন করা হয় তার মধ্যে স্বত্ববিলোপনীতি অন্যতম। স্বত্ববিলোপ নীতি হলো এমন নীতি যার দরুন অপুত্রক রাজা দত্তক গ্রহণ করে রাজবংশ ও রাজ্য রক্ষায় অধিকার হারান। দত্তক গ্রহণ করতে না পারায় অনেক অপুত্রক রাজার রাজ্য ব্রিটিশ সাম্রাজ্যভুক্ত হয়। এ নীতির স্বার্থক প্রয়োগ করেছিলেনত লর্ড ডালহৌসি।

গ. উদ্দীপকের সৈন্যদের বিদ্রোহের সাথে আমার পাঠ্যবইয়ের সিপাহি বিদ্রোহের মিল খুঁজে পাওয়া যায়। পাঠ্যবই হতে আমরা জানতে পারি ব্রিটিশ ভারতের নিরাপত্তার জন্য বিভিন্ন জাতির সমন্বযে একটি শক্তিশালী সেনাবাহিনী ছিল। ভারতীয় সিপাহি এবং ব্রিটিশ সৈন্যদের মধ্যে বেতন, ভাতা প্রভৃতি ক্ষেত্রে তারতম্য ভারতীয় সিপাহিদের মনে অসন্তোষের জন্ম দেয়। ব্রিটিশ সৈন্যদের তুলনায় ভারতীয় সৈন্যদের বেতন অত্যন্ত অল্প ছিল এবং তাদের পদোন্নতির কোনো আশা ছিল না। ব্রিটিশ সেনাবাহিনীতে চাকরিরত ভারতীয় সেনাদের বিভিন্ন সময়ে যুদ্ধের জন্য বিভিন্ন দেশে যেতে হতো। সামরিক কারণে দূরদেশে অবস্থানকালে ইংরেজ সৈনিকরা অতিরিক্ত ভাতা পেত। কিন্তু ভারতীয় সিপাহিরা অতিরিক্ত ভাতা থেকে বঞ্চিত ছিল। এ বৈষম্য সিপাহীদের মনে দারুণভাবে আঘাত করে। ইংরেজ সামরিক অফিসাররা সিপাহিদের প্রতি অত্যন্ত দুর্ব্যবহার করত। কমিশন প্রাপ্ত অফিসাররা ভারতীয় সিপাহিদের মানবেতর জীব হিসেবে গণ্য করত। হিন্দু সিপাহিগণকে সমুদ্র পাড়ি দিতে বাধ্য করা, সিপাহিদের মধ্যে খ্রিষ্টধর্মের প্রচারে উৎসাহ দেওয়া, কপালে তিলক লেপন, দাঁড়ি রাখা ও পাগড়ি পড়া নিষিদ্ধ করায় ভারতীয় সিপাহিরা অত্যন্ত ক্ষুণ্ন ছিল। এসব কারণে সিপাহিদের মধ্যে যখন বিদ্রোহের ক্ষেত্র প্রন্তুত হচ্ছে তখন সেনাবাহিনীতে এনফিল্ড রাইফেলের ব্যবহার সৈন্যদেরকে বিদ্রোহের দিকে ঠেলে দেয়। ফলে সংঘটিত হয় ১৮৫৭ সালের সিপাহি বিদ্রোহ। সুতরাং নিঃসন্দেহে বলা যায়, উদ্দীপকের সৈন্যদের বিদ্রোহের সাথে আমার পাঠ্যবইয়ের ১৮৫৭ সালের সিপাহি বিদ্রোহের মিল খুঁজে পাওয়া যায়।

ঘ. উল্লিখিত বিদ্রোহ অর্থাৎ ১৮৫৭ সালের সিপাহি বিদ্রোহের ফলাফল ছিল সুদূরপ্রসারী। নিচে আমার মতামত উপস্থাপন করা হলো-
সিপাহি ও জনসাধারণের সম্মিলিত এ বিদ্রোহ ব্রিটিশ শাসনের ভিত কাঁপিয়ে দেয়। সিপাহি বিদ্রোহের ফলে বহু অনিশ্চয়তার অবসান হয়েছিল এবং ভারতের শাসন ব্যবস্থায় বিরাট পরিবর্তন ঘটেছিল। ব্রিটিশরা এ যাবৎ অনুসৃত শাসননীতির মৌলিক ব্যর্থতা উপলদ্ধি করেন এবং শাসন পদ্ধতির পরিবর্তন সাধনে যত্নবান হন। ভারতের মতো একটি বিশাল দেশের শাসনভার একটি বণিক কোম্পানির হাতে আর রাখা যে উচিৎ নয় তা ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সদস্যরা অনুভব করেন। এজন্য ১৮৫৭ সালের ভারত শাসন আইন দ্বারা ভারতে কোম্পানির শাসনের অবসান ঘটানো হয়। ১৮৫৭ সালের ১ নভেম্বর মহারাণী ভিক্টোরিয়ার ঘোষণাপত্র দ্বারা স্বত্ববিলোপ নীতি পরিত্যক্ত হয়। এছাড়া রাজ্যবিস্তার নীতি পরিত্যাগ করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। ১৮৩৩ সালের সনদ আইনে প্রস্তাবিত কেন্দ্রীকরণ নীতি ১৮৬১ সালের কাউন্সিল আইন দ্বারা পরিত্যক্ত হয় এবং মোম্বাই ও মাদ্রাজ কাউন্সিলকে আইন প্রণয়নের ক্ষমতা প্রত্যপিত হয়। এ নতুন কাউন্সিল আইন অনুসারে ভারতের নতুন আইনসভা বাতিল হয়। সামরিক বিভাগকে নতুনভাবে গঠন করা হয়। ইউরোপীয় সৈন্যসংখ্যা বৃদ্ধি করা হয়। সিপাহি বিদ্রোহের ফলে মুঘল সাম্রাজ্যের সম্পূর্ণ বিলুপ্তি ঘটে। দ্বিতীয় বাহাদুর শাহ বন্দি হয়ে রেঙ্গুনে নির্বাসিত হন এবং তাঁর পুত্র ও পৌত্রগণকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। শাসক ও শাসিতের মধ্যে জাতিগত বৈরিতা ও পরস্পর তিক্ততার সৃষ্টি হয়। এ সময় থেকেই সহযোগিতার পরিবর্তে ব্রিটিশের বিরুদ্ধে ভারতবাসীর বিরোধীতা শুরু হয়। সিপাহি বিদ্রোহের পর সরকার মুসলিম সম্প্রদায়ের ওপর বিশেষ রোষ দেখায় এবং বেশ কিছুদিন মুসলিমদের দিক থেকে সরকার মুখ ফিরিয়ে রাখে। ভারতবাসীর সুষ্ঠু সামাজিক ও পারিবারিক জীবন গঠনের জন্য যে নীতি এ যাবৎ অনুসৃত হয়েছিল তা সম্পূর্ণভাবে ব্রিটিশ সরকার কর্তৃক পরিত্যক্ত হয়। ভারতবাসীর কুসংস্কারের ওপর সিপাহি বিদ্রোহ চরমভাবে আঘাত হানে এবং নতুন দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে ভারতীয় সাম্রাজ্যের পুনর্গঠনে কাজ শুরু হয়। সুতরাং সার্বিক আলোচনার প্রেক্ষিতে এটি স্পষ্ট যে, সিপাহি বিদ্রোহের ফলাফল ছিল সুদূরপ্রসারী।

৬. দশটি জেলার রাজপথ এসে মিশেছে রাজধানীগামী মহাসড়কের সাথে সাঁঝের মায়া গ্রামে। আর তাই মাতববর হিসেবে রশিদ সাহেব বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন উক্ত গ্রামে এবং পার্শ্ববর্তী এলাকায়। উক্ত দশ জেলার মাতববররাও তাকে সমীহ করতে বাধ্য হয়েছেন সুষ্ঠু যাতায়াত ব্যবস্থার স্বার্থে। অবশেষে প্রশাসন সাঁঝের মায়া গ্রামের প্রভাব খর্ব করতে একে চারটি ভাগে বিভক্ত করে। এ বিভক্তকরণের পূর্বে রশিদ সাহেব অবশ্য মিছিল মিটিং, অবরোধ করেছিল কিন্তু সফলতা না পেয়ে আমরণ অনশন শুরু করেন এবং মৃত্যুমুখে পতিত হন।
ক. সিকিম রাজ্য কখন ব্রিটিশ সাম্রাজ্যভুক্ত হয়?
খ. 'খেরওয়ারী হুল' বলতে কী বোঝ- ব্যাখ্যা কর।
গ. উদ্দীপকের রশিদ সাহেবের গ্রামের ব্যবচ্ছেদ আমাদেরকে ইংরেজ কর্তৃক দক্ষিণ ভারতে কোন শক্তিশালী রাজ্যের ব্যবচ্ছেদকে মনে করিয়ে দেয়? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উক্ত ব্যক্তির নাম ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে উক্ত রাজ্যের আলোকে বিশ্লেষণ কর।

🍭 ৬ নং প্রশ্নের উত্তর 🍭
ক. সিকিম রাজ্য ১৮৪৯ সালে ব্রিটিশ সামাজ্যভুক্ত হয়।

খ. 'খেরওয়ারী হুল' অর্থ হলো সাঁওতাল বিদ্রোহ। বিহারের ভাগলপুর জেলার অন্তর্গত দামিন-ই-কো অঞ্চল থেকে বীরভূম পর্যন্ত বিস্তৃত সাঁওতাল ভাষাভাষি ও কৃষি নির্ভর জনগোষ্ঠীর ইংরেজ শাসন বিরোধী অভ্যুত্থান হল খেরওয়ারী হুল বা সাঁওতাল বিদ্রোহ। ১৮৫৪ সালের ৩০ জুন এ বিদ্রোহ শুরু হয় এবং ১৮৫৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে সাঁওতালদের পরাজয়ের মাধ্যমে তা সমাপ্ত হয়।

গ. রশিদ সাহেবের গ্রামের ব্যবচ্ছেদ আমাদেরকে ইংরেজ শক্তি কর্তৃক দক্ষিণ ভারতের শক্তিশালী রাজ্য মহীশূরের ব্যবচ্ছেদকে মনে করিয়ে দেয়।
ইংরেজ গভর্নর লর্ড ওয়েলেসলি রণপ্রস্তুতি সম্পন্ন করে মহীশূরের রাজা টিপু সুলতানকে অধীনতামূলক মিত্রতা গ্রহণ করার জন্যে আমন্ত্রণ জানান। স্বাধীনচেতা টিপু এ আমন্ত্রণ ঘৃণা ভরে প্রত্যাখ্যান করলে ইংরেজরা উন্নত অস্ত্র এবং মারাঠা ও নিজামের বাহিনীর সহায়তায় টিপুকে তিন দিক থেকে আক্রমণ করে। সদাশির ও মলাভেলীর যুদ্ধে পরাজিত হয়ে টিপু রাজধানী শ্রীরঙ্গপট্টমে এসে সৈন্য সমাবেশ করেন। ইংরেজ বাহিনী টিপুর রাজধানী অবরোধ করলে একমাস টানা যুদ্ধ চলে। টিপু সুলতান বীরের মতো যুদ্ধ করে প্রাণত্যাগ করেন। টিপুর পতনের পর রাজ্যকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়। অধিকাংশ এলাকা ব্রিটিশ সাম্রাজ্যভুক্ত করা হয় এবং নিজামকে এক ক্ষুদ্রাংশ দেওয়া হয়। মারাঠাদেরকে কিছু ভূখন্ড দেওয়ার কথা থাকলেও তারা তা গ্রহণ করে নি। মহীশূর রাজ্যের এ ব্যবচ্ছেদের অবশিষ্ট ক্ষুদ্র অংশটিতে মহীশূরের প্রাচীন এক হিন্দু রাজবংশের উত্তরাধিকারীকে ক্ষমতায় বসানো হয়। রশিদ সাহেবের গ্রামের আধিপত্যকেও খর্ব করতে চারটি ভাগে ভাগ করা গ্রামটিকে। রশিদ এর প্রতিবাদে অনশন শুরু করলে মৃত্যুমুখে পতিত হয়। সুতরাং রশিদ সাহেবের গ্রামের ব্যবচ্ছেদ আমাদেরকে মহীশূর সাম্রাজ্যের ব্যবচ্ছেদকে মনে করিয়ে দেয়।

ঘ. উক্ত ব্যক্তি অর্থাৎ টিপু সুলতানের নাম ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। টিপু সুলতান বিদেশি আক্রমণ প্রতিহত করতে আমৃত্যু যুদ্ধ করেছেন। তিনি ছিলেন মহান যোদ্ধা। দেশপ্রেমিক ও স্বাধীনচেতা। তিনি সহজেই ইংরেজদের সাথে অধীনতামূলক মিত্রতা নীতিতে স্বাক্ষর করে নিজ রাজ্য ভোগ করতে পারতেন। কিন্তু স্বদেশপ্রেম ও আত্মমর্যাদাবোধের কারণে তিনি তা করেন নি। ইংরেজ দার্শনিক মিল টিপুকে প্রাচ্যের একজন শ্রেষ্ঠ রাজা হিসেবে বর্ণনা করেছেন। ইংরেজরা যখন মহীশূর রাজ্য দখল করে তখন তারা বিস্ময়ের সাথে লক্ষ করছিল যে ব্রিটিশ অধিকারভুক্ত অন্যান্য সাম্রাজ্যের কৃষক সমাজের তুলনায় মহীশূরের কৃষক সমাজ অনেক বেশি সমৃদ্ধির অধিকারী। টিপুর ব্যক্তিগত পাঠাগারে ধর্ম, ইতিহাস, রণনীতি, চিকিৎসা ও গণিতের অনেক গ্রন্থ ছিল। অন্যদিকে তিনি ছিলেন ধর্ম নিরপেক্ষ আধুনিক মানুষ। মারাঠা বাহিনী কর্তৃক ১৭৯৯ সালে 'শৃঙ্গেরি মঠ' লুণ্ঠিত হওয়ার পর সারদাদেবীর মূর্তি নির্মাণের জন্য অর্থ দান করেন টিপু সুলতান। রাজ্যে টিপু সুলতান আধুনিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা চালু করেন। ফলে ব্যবসায়-বাণিজ্যে রাজ্যটি সমৃদ্ধিশালী হয়ে ওঠে। টিপুর মৃত্যুর পর রাজ্যটি ব্যবচ্ছেদ করা হলে মহীশূর সাম্রাজ্য তার সমৃদ্ধি হারায়। তাই টিপু ইতিহাসে অমর হয়ে আছেন। তেমন রশিদ সাহব সাঁঝের মায়া গ্রামের সমৃদ্ধি অক্ষুণ্ণ রাখতে এর ব্যবচ্ছেদের বিরুদ্ধে আমরণ অনশন শুরু করেন। তিনি মারা গেলে গ্রামটির অতীত সমৃদ্ধি অক্ষুণ্ণ রাখার শেষ প্রচেষ্টাটুকু বন্ধ হয়ে যায়। তাই রশিদ সাহেবেরও সাঁঝের মায়া গ্রামের সমৃদ্ধির ইতিহাসে অমর হয়ে থাকবেন। সুতরাং উক্তিটি যথার্থ ও সঠিক।

HSC ইতিহাস ১ম পত্র (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর অধ্যায় ২ pdf download

৭. খালেক হোসেনের পিতা জীবিত অবস্থায় এতটাই দান-খয়রাত করেছেন যে গ্রামের লোকেরা তাকে দানবীর হাজী মুহম্মদ মুহসীনের সাথে তুলনা করেন। খালেক হোসেনও গ্রামের মানুষের জন্য কিছু করতে চান যেন পিতার মতো তিনিও মানুষের হৃদয়ে শ্রদ্ধার সাথে স্থান পান।
ক. দামিন-ই-কো শব্দের অর্থ কী?
খ. লর্ড ডালহৌসি ভারতীয় তার বিভাগের বিশেষভাবে স্মরণীয় কেনত ব্যাখ্যা কর।
গ. উদ্দীপকের খালেক হোসেন গ্রামের সমাজজীবনে কী ধরনের কর্মকান্ড পরিচালনা করলে গভর্নর লর্ড উইলিয়াম বেন্টিঙ্কের সাথে তুলনীয় হবেন? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উক্ত কর্মকান্ড সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সুদূরপ্রসারী প্রভাব রাখতে সক্ষম- বেন্টিঙ্কের শাসনামলের প্রেক্ষাপটে বিশ্লেষণ কর।

🍭 ৭ নং প্রশ্নের উত্তর 🍭
ক. দামিন-ই-কো শব্দের অর্থ পাহাড়ের প্রান্ত দেশ।

খ. লর্ড ডালহৌসি বৈদ্যুতিক টেলিফোন টেলিগ্রাফ লাইনের দ্বারা ভারতের কলকাতাকে পেশোয়ার, বোম্বাই ও মাদ্রাজ্যের সঙ্গে যুক্ত করেন। ফলে সংবাদ আদান-প্রদান অতি সহজ হয়ে ওঠে আর এ ব্যবস্থা যোগাযোগ ক্ষেত্রে এক অভূতপূর্ব বিপ্লব সৃষ্টি করে। তাই লর্ড ডালহৌসিকে ভারতীয় তার বিভাগে বিশেষভাবে স্মরণ করা হয়।

গ. খালেক হোসেন গ্রামের সমাজজীবনে কুসংস্কার দূর করে মানুষের সামাজিক ধ্যান-ধারণার উন্নয়ন ঘটাতে পারলে ইংরেজ গভর্নর লর্ড উইলিয়াম বেন্টিংকের সাথে তুলনীয় হবেন।
প্রাচীনকালে থেকে এদেশের হিন্দু সমাজে সতীদাহ প্রথা প্রচলিত ছিল। সামাজিকতা রক্ষার জন্য মৃত ব্যক্তির পরিবার-পরিজন বিধবাকে অনেক সময় অনিচ্ছাসত্ত্বেও জোরপূর্বক চিতায় পুড়িয়ে মারত। বেন্টিংক ১৮২৯ সালে সদর নিজামত আদালতের জজদের সমর্থন নিয়ে এক আদেশ বলে এ অমানবিক প্রথা রহিত করেন। তৎকালীন হিন্দু রীতি অনুযায়ী দেবতাকে খুশি করার জন্য নিজের প্রথম সন্তানকে গঙ্গা নদীতে নিক্ষেপ ও বিবাহ দেওয়াল অক্ষমতার দরুন নিজ কন্যাকে গলাটিপে হত্যা করার নিয়মও চিরতরে বন্ধ করে দেন বেন্টিংক। তখন সমাজে বর্গীরা পুরোহিত, দরবেশ ইত্যাদি ছদ্মবেশে এসে নিরীহ পথিকদের, তীর্থযাত্রীদের ও ভ্রমণকারীদের গলায় ফাঁস লাগিয়ে হত্যা করে তাদের সবকিছু লুট করে নিয়ে যেত। জনগণের নিরাপত্তার জন্য বেন্টিংক প্রায় ১৫০০ বর্গীকে কর্নেল সস্নীমানের সাহায্যে বন্দী করেন এবং ১৮৩০ খ্রিষ্টাব্দে তাদের কঠোর শাস্তি দেন। লর্ড উইলিয়াম বেন্টিংক ভারতীয় উদার পন্থী সংস্কারক রাজা রামমোহন রায় ও প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুরের সমর্থন ও সহায়তায় সমাজে অনেক কল্যাণমূলক সংস্কার সাধন করে ভারতবর্ষের ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন। অর্থাৎ উদ্দীপকের খালেক হোসেন গ্রামের সমাজ জীবনে বিদ্যমান বিভিন্ন সমস্যা যা মানুষের জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছে এবং গ্রামীণ সমাজের উন্নয়নের পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে তা দূর করতে ইংরেজ গভর্নর লর্ড উইলিয়াম বেন্টিংকের সাথে তুলনীয় হতে পারবেন।

ঘ. উক্ত কর্মকান্ড অর্থাৎ লর্ড বেন্টিংকের সাথে তুলনীয় খালেক সাহেব কর্তৃক গৃহীত কর্মকান্ড সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সুদূরপ্রসারী প্রভাব রাখতে সক্ষম।
ইংরেজ গভর্নর লর্ড উইলিয়াম বেন্টিংক সমাজে যেসব সংস্কার সাধন করেন তার প্রভাবে সমাজের মানুষ সচেতন হয়ে ওঠে এবং আধুনিক শিক্ষার প্রতি আগ্রহী হয়ে ওঠে। ফলে ভারতে বিভিন্ন বিষয়ের কলেজের পাশাপাশি মেডিকেল কলেজও স্থাপিত হয়। আর সম্ভব হয় ফারসি ভাষার পরিবর্তে আধুনিক শিক্ষায় সহায়ক ইংরেজি ভাষাকে সরকারি ভাষারূপে গ্রহণ করা। এদেশের সমাজের মানুষের জীবনবোধ উন্নত হওয়ায় বেন্টিংকের সময় সর্বপ্রথম শাসন ও বিচার' সংক্রান্ত উচ্চপদে এদেশীয়দের নিয়োগ সম্ভব হয়। এমনকি এদেশীয় বিচারক ও কর্মচারীদের বেতন স্কেল ও পদমর্যাদাও বৃদ্ধি পায়। সমাজের মানুষের অর্থনৈতিক কর্মকান্ড বৃদ্ধি পায় এবং বেন্টিংক আফিমের ওপর ও অবৈধ নিষ্কর জমির ওপর কর আরোপ করেন। সিন্ধুর আমীর ও পাঞ্জাবের রণজিৎ সিংহের সাথে বাণিজ্য চুক্ত সম্পাদন করেন বেন্টিংক। ফলে কোম্পানির আয় বৃদ্ধ পায়। নদী ও সমুদ্রপথে জাহাজ চলাচলে এবং চা ও কফি উৎপাদনের জন্য চা বাগান স্থাপনে উৎসাহ বৃদ্ধি পায় সমাজে। সেনাবাহিনীতে বেত্রাঘাত করে শাস্তি প্রদানের নিয়ম ও ভারতের বিভিন্ন স্থানে নরবলির নিয়ম বন্ধ করা সম্ভব হয়। খালেক সাহেবের সমাজেও একই রকম সুদূরপ্রসারী প্রভাব হবে এটাই বাঞ্ছনীয়। সুতরাং উক্তিটি সঠিক ও তাৎপর্যপূর্ণ।

৮. ছোট দেওড়া গ্রামের ছগির মাতবর ছিল অতি লোভী ও চতুর। সে সারাদিন গ্রামের আনাচে-কানাচে ঘুরত আর দেখত কোথায়। তার স্বার্থসিদ্ধি হবে। সে সবসময় অন্যের সম্পদ আত্মসাতের ধান্ধায় থাকত এবং এক্ষেত্রে কিছু কূটকৌশলের আশ্রয় নিত। এভাবে সে গ্রামের মানুষদের পথের ভিখারি বানিয়ে নিজে পাহাড়সম সম্পদের মালিক হয়ে যায়।
ক. লর্ড ডালহৌসি কত সালে পাঞ্জাব দখল করেন?
খ. স্বত্ববিলোপ নীতি সম্পর্কে বর্ণনা কর।
গ. উদ্দীপকের ছগির মাতবরের আচরণ ভারতের কোন লর্ডের আচরণের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উক্ত নীতির ফলে ভারতে ব্রিটিশদের কী উন্নতি লক্ষ করা যায়? বিশ্লেষণ কর।

🍭 ৮ নং প্রশ্নের উত্তর 🍭
ক. লর্ড ডালহৌসি ১৮৪৯ সালে পাঞ্জাব দখল করেন।

খ. ব্রিটিশ আশ্রিত বা ব্রিটিশ সৃষ্ট কোনো রাজ্যের উত্তরাধিকারী না থাকলে সে রাজ্য সরাসরি ইংরেজ অধিকারে চলে যাবে। এটাই স্বত্ব বিলোপনীতি। ব্রিটিশ আধিপত্য বিস্তারে স্বত্ববিলোপ নীতির প্রয়োগে লর্ড ডালহৌসি সমধিক খ্যাতি অর্জন করেন। তিনি যেসব রাজ্য ব্রিটিশ সাম্রাজ্যভুক্ত করেন তার মধ্যে সর্বাধিকসংখ্যক রাজ্য স্বত্ববিলোপ নীতির প্রয়োগে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যভুক্ত হয়। এ নীতির উদ্দেশ্য ছিল, যে সমস্ত ব্রিটিশ আশ্রিত ও ব্রিটিশ সৃষ্ট দেশীয় রাজ্যের উত্তরাধিকারী না থাকলে সে রাজ্য সরাসরি ইংরেজ অধিকারে চলে যাবে। কোনো দেশীয় রাজার পালিত পুত্রের রাজ্য লাভের অধিকার স্বীকৃত হবে না।

গ. উদ্দীপকের ছগির মাতবরের আচরণের সাথে ভারতের ইংরেজ লর্ড ডালহৌসির আচরণ সাদৃশ্যপূর্ণ বলে আমি মনে করি।
ব্রিটিশ আধিপত্য বিস্তারে স্বত্ববিলোপ নীতির প্রয়োগে লর্ড ডালহৌসি সমধিক খ্যাতি অর্জন করেন। তিনি যেসব রাজ্য ব্রিটিশ সাম্রাজ্যভুক্ত করেন তার মধ্যে সর্বাধিকসংখ্যক রাজ্য স্বত্ববিলোপ নীতির প্রয়োগে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যভুক্ত হয়। এ নীতির উদ্দেশ্য ছিল, যে সমস্ত ব্রিটিশ আশ্রিত ও ব্রিটিশ সৃষ্ট দেশীয় রাজ্যের উত্তরাধিকারী না থাকলে সে রাজ্য সরাসরি ইংরেজ অধিকারে চলে যাবে। কোনো দেশীয় রাজার পালিত পুত্রের রাজ্য লাভের অধিকার স্বীকৃত হবে না। অথচ প্রাচীন হিন্দু আইন অনুযায়ী অপুত্রক রাজামাত্রই দত্তক (পালক) পুত্র গ্রহণ করে বংশ রক্ষা ও রাজ্য রক্ষা করতে পারতেন। ডালহৌসি হিন্দুদের এ চিরন্তন নীতি উপেক্ষা করে স্বত্ববিলোপ নীতি প্রয়োগ করেন এবং সাতারা, সম্বলপুর, নাগপুর, ঝাঁসি, ভগৎ, উদয়পুর, জৈতপুর ইত্যাদি দেশীয় হিন্দুরাজসমূহ বাজেয়াপ্ত করে নেন। তাঞ্জোরের রাজ্য ও কর্নাটকের নবাব অপুত্রক অবস্থায় মারা গেলে তাদের রাজ্যও ব্রিটিশ সাম্রাজ্যভুক্ত করা হয়। উদ্দীপকের ছগির মাতবরের চরিত্রেও এরূপ অর্থলোলুপতার চিত্র ফুটে উঠেছে। তিনি তার কূটকৌশলকে কাজে লাগিয়ে গ্রামের মানুষের সম্পদকে আত্মসাৎ করে নিতেন।

ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত সাম্রাজ্যবাদী নীতি গ্রহণের ফলে ব্রিটিশরা সমগ্র ভারত উপমহাদেশে আধিপত্য বিস্তার করতে সক্ষম হয়। উপমহাদেশে ইংরেজ বেনিয়া শাসন সম্প্রসারণের জন্য লর্ড ডালহৌসি মানবতাবোধহীন নানাবিধ অভিনব নীতি প্রবর্তন করেন। এর মধ্যে একটি উল্লেখযোগ্য নীতি হল স্বত্ববিলোপ নীতি। এ নীতি প্রণয়নের মাধ্যমে ইংরেজরাই সবচেয়ে বেশি উপকৃত হয়। উদ্দীপকের ছগির মাতবর একজন অর্থলোভী। গ্রামের লোকদের দোষত্রুটি অন্বেষণ ও অর্থসম্পদ আত্মসাৎ করাই তার কাজ। সে কূটকৌশলে গ্রামের লোকদের পথের ভিখারি বানিয়ে সম্পদের পাহাড় গড়ে। তদ্রূপ ইংরেজরাও ভারত উপমহাদেশে ছলেবলে কৌশলে সাম্রাজ্য বিস্তার করে। এদেশের শাসন ক্ষমতা ও ধনসম্পদ তারা কূটকৌশলের জান বুনে নির্লজ্জ চোখে আত্মসাৎ করেছে। বিভিন্ন সময় এক একটি অজুহাত দেখিয়ে এদেশের মানুষের সম্পদ কেড়ে নিয়েছে। যেমন তারা সেসব ব্রিটিশ আধিপত্য বিস্তারে স্বত্ববিলোপ নীতির প্রয়োগে লর্ড ডালহৌসি সমধিক খ্যাতি অর্জন করেন। তিনি যেসব রাজ্য ব্রিটিশ সাম্রাজ্যভুক্ত করেন তার মধ্যে সর্বাধিকসংখ্যক রাজ্য স্বত্ববিলোপ নীতির প্রয়োগে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যভুক্ত হয়। এ নীতির উদ্দেশ্য ছিল, যে সমস্ত ব্রিটিশ আশ্রিত ও ব্রিটিশ সৃষ্ট দেশীয় রাজ্যের উত্তরাধিকারী না থাকলে সে রাজ্য সরাসরি ইংরেজ অধিকারে চলে যাবে। কোনো দেশীয় রাজার পালিত পুত্রের রাজ্য লাভের অধিকার স্বীকৃত হবে না। অথচ প্রাচীন হিন্দু আইন অনুযায়ী অপুত্রক রাজামাত্রই দত্তক (পালক) পুত্র গ্রহণ করে বংশ রক্ষা ও রাজ্য রক্ষা করতে পারতেন। ডালহৌসি হিন্দুদের এ চিরন্তন নীতি উপেক্ষা করে স্বত্ববিলোপ নীতি প্রয়োগ করেন এবং সাতারা, সম্বলপুর, নাগপুর, ঝাঁসি, ভগৎ, উদয়পুর, জৈতপুর ইত্যাদি দেশীয় হিন্দুরাজ্যসমূহ বাজেয়াপ্ত করে নেন। তাঞ্জোরের রাজ্য ও কর্নাটকের নবাব অপুত্রক অবস্থায় মারা গেলে তাদের রাজ্যও ব্রিটিশ সাম্রাজ্যভুক্ত করা হয়।

৯. মানিক চৌধুরী সান্তাল গ্রামে যোগাযোগের ক্ষেত্রে আমূল পরিবর্তন ঘটিয়েছেন। সেখানে সড়কপথ ও রেলপথ নির্মিত হওয়ার পাশাপাশি নদীর পাড়ে লঞ্চঘাট তৈরি করেছেন। এছাড়া টেলিযোগাযোগের সুবিধাসহ ইন্টারনেট সংযোগের সহজ ব্যবস্থা করেছেন। কিন্তু গ্রামের লোকেরা তারপরও মানিক চৌধুরীর ওপর সন্তুষ্ট হতে পারে নি। কারণ উক্ত গ্রামে তখন অধিকাংশ লোক ছিল অক্ষরজ্ঞানহীন এবং বিধবা বিবাহ পাপ কন্যা সন্তান হলে বিবাহ বিচ্ছেদ, যৌতুক প্রথার নিষ্ঠুরতা প্রভৃতি প্রচলিত ছিল। এসব ব্যাপারে মানিক চৌধুরী কোনো ইতিবাচক পরিবর্তন সাধন করতে পারেন নি।
ক. মুঘল সম্রাট দ্বিতীয় বাহাদুর শাহকে বর্তমান কোন দেশে নির্বাসন দেওয়া হয়?
খ. পাইক বিদ্রোহ বলতে কী বোঝত ব্যাখ্যা কর।
গ. উদ্দীপকের মানিক চৌধুরীর কোন কর্মকান্ড ইংরেজ গভর্নর লর্ড ডালহৌসির সাথে বৈসাদৃশ্যপূর্ণ? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. মানিক চৌধুরী যোগাযোগ ব্যবস্থায় যেন উক্ত গভর্নরেরই একজন উত্তরসূরি যুক্তিসহ বিশ্লেষণ কর।

🍭 ৯ নং প্রশ্নের উত্তর 🍭
ক. মুঘল সম্রাট দ্বিতীয় বাহাদুর শাহকে বর্তমান মায়ানমারে নির্বাসন দেওয়া হয়।

খ. ১৮১৭ সালে উড়িষ্যায় পাইকরা ইংরেজদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী হয় এবং বাহারামপুরের পুলিশ ঘাঁটি ও সরকারি কার্যালয়গুলোর ওপর আক্রমণ চালায়। পাইকার প্রায় একশত ইংরেজকে হত্যা করে। কিছুদিনের জন্য উড়িষ্যার ইংরেজ শাসন নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়।

গ. উদ্দীপকের মানিক চৌধুরীর সামাজিক ও শিক্ষামূলক কর্মকান্ড ইংরেজ গভর্নর লর্ড ডালহৌসির সাথে বৈসাদৃশ্যপূর্ণ।
লর্ড ডালহৌসি বিধবা বিবাহ আইন পাস করে হিন্দু বিধবা বিবাহকে আইনসংগত করেন। ডালহৌসি এমন একটি আইন পাস করেন যাতে ধর্মান্তরিত হলেও এদেশীয়গণ তাদের পৈত্রিক সম্পত্তি ভোগ করতে সক্ষম হয়। গঙ্গা খাল খনন ও জল সেচ ব্যবস্থার উন্নতি সাধন করেন। রাজপথ ও সড়কগুলোর উন্নয়ন সাধন করেন। মেরিয়া নামক সমাজ বিরোধী দল বিভিন্ন অঞ্চলে ত্রাসের রাজস্ব সৃষ্টি করলে তিনি কঠোর হাতে তাদের দমন করেন। তাঁর ঐকান্তিক চেষ্টায় স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠার প্রাথমিক কাজ শুরু হয়। ১৮৫৭ সালে কলকাতা, মাদ্রাজ ও বোম্বাইয়ে ইংল্যান্ডের আদর্শে উচ্চশিক্ষার জন্য তিনটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করেন ডালহৌসি। আপাত কলেজ ও উচ্চ বিদ্যালয়গুলো পরীক্ষা গ্রহণ ও ডিগ্রি প্রদানের দায়িত্ব পায় এ বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। আইন-ইঞ্জিনিয়ারিং-এর পাশাপাশি সাহিত্য ও বিজ্ঞান গবেষণার ব্যবস্থাও করা হয় বিশ্ববিদ্যালয়ে। ফলে ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষার দ্রুত প্রসার ঘটে। অন্যদিকে মানিক চৌধুরী সমাজে প্রচলিত নানা রকম কুপ্রথা ও সমাজের মানুষের শিক্ষার উন্নয়নে কোনো ফলপ্রসূ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারেন নি। সুতরাং সামাজিক ও শিক্ষার ক্ষেত্রে লর্ড ডালহৌসির সাথে উদ্দীপকের মানিক চৌধুরীর বৈসাদৃশ্য সুস্পষ্ট।

ঘ. মানিক চৌধুরী যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে উক্ত গভর্নর অর্থাৎ লর্ড ডালহৌসির-ই একজন উত্তরসূরি বলাই শ্রেয়।
১৮৫৩ সালে ডালহৌসি বোম্বাই থেকে থানে পর্যন্ত সর্বপ্রথম রেলপথ স্থাপন করেন। পরের বছর কলকাতা-রানীগঞ্জ রেলপথ তৈরি করে। কলকাতার কারখানা ও পাটকলগুলোতে কয়লা পরিবহনের সুবিধা সৃষ্টি করেন। তাঁর শাসনামলে রেল ব্যবস্থার অভূতপূর্ব উন্নতি ঘটে। তিনি বৈদ্যুতিক টেলিগ্রাম লাইনের দ্বারা কলকাতাকে পেশোয়ার, বোম্বাই ও মাদ্রাজের সঙ্গে যুক্ত করেন। ফলে বৈদ্যুতিক তারের দ্বারা সংবাদ আদান-প্রদান অতিসহজ হয়ে ওঠে আর এ ব্যবস্থা যোগাযোগের ক্ষেত্রে এক অভূতপূর্ব বিপ্লব সৃষ্টি করে। ১৮৫৭-৫৮ সালে স্বাধীনতা সংগ্রামের সময়কালে বৈদ্যুতিক তারে দ্রুত সংবাদ প্রেরণে ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ বিশেষ সুবিধা লাভ করে। উদ্দীপকের মানিক চৌধুরী নিজ এলাকায় সড়ক ও রেলপথ নির্মাণের পাশাপাশি নদীর পাড়ে লঞলঘাট স্থাপন করেছেন গ্রামের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটানোর লক্ষ্যে। এছাড়া সান্তাল গ্রামে মানিক চৌধুরী ইন্টারনেট ও টেলিযোগাযোগের সহজ ব্যবস্থা করেছেন। তার উন্নয়ন কর্মকান্ড-ই যেন যোগাযোগ ব্যবস্থাকে কেন্দ্র করে। সুতরাং মানিক চৌধুরী যোগাযোগের ক্ষেত্রে উক্ত গভর্নরের-ই যেন একজন উত্তরসূরিত উক্তিটি যথার্থ ও যুক্তিযুক্ত।

১০. রাস্তায় ভিক্ষা করে জীবিকা নির্বাহকারী আর সংসারবিরাগী দুদল জনগোষ্ঠী মিলে একসময় সাম্রাজ্যবাদী শাসনের বিরুদ্ধে ব্যাপক আন্দোলন সংগ্রামে অবতীর্ণ হয়েছিল। বাংলার মানুষকে পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্ত করতে এদের অবদানকে কোনোভাবেই খাটো করে দেখেন না ইতিহাসের শিক্ষক মর্তুজা আলী। তিনি মনে করেন এ জনগোষ্ঠী সরকারি কুঠি, জমিদারদের কাছারি ও নায়েব-গোমস্তার বাড়ি আক্রমণ করে যে দুঃসাহসিকতা দেখিয়েছিল তা পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল।
ক. ইংরেজরা ভারতীয় উপমহাদেশে কী করতে এসেছিল?
খ. "তিতুমীর এক সাহসী যোদ্ধার নাম"- ব্যাখ্যা কর। গ. উদ্দীপকে যে আন্দোলনের প্রতিচ্ছবি প্রকাশিত হয়েছে তার ব্যাখ্যা দাও।
ঘ. তুমি কি মনে কর, এ ধরনের আন্দোলনকারীরা ইংরেজদের কাছে পরাজিত হয়েছিল? উত্তরের সপক্ষে যুক্তি দাও।

🍭 ১০ নং প্রশ্নের উত্তর 🍭
ক. ইংরেজরা ভারতীয় উপমহাদেশে এসেছিল ব্যবসায় বাণিজ্য করতে।

খ. তিতুমীর এক সাহসী যোদ্ধার নাম - কারণ তিনি জমিদার, নীলকরদের নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। তিনি নিজস্ব বাহিনী গঠন করেন ও বাঁশের কেল্লা নির্মাণ করেন। তার বাহিনীতে নির্যাতিত কৃষক, সাধারণ জনগণ যোগ দেয়। কিন্তু তিতুমীর ১৮৩১ খ্রিষ্টাব্দে ইংরেজদের সুশিক্ষিত সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে এবং কামান বন্দুকের সামনে বীরের মতো লড়াই করে পরাজিত হয়। ইংরেজদের গোলাবারুদ, নীলকর জমিদারদের ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধের মুখে তাঁর বাঁশের কেল্লা ছিল দুঃসাহস আর দেশপ্রেমের প্রতীক।

গ. উদ্দীপকে দুদল জনগোষ্ঠী মিলে একসময় সাম্রাজ্যবাদী শাসনের বিরুদ্ধে ব্যাপক আন্দোলন সংগ্রামে অবতীর্ণ হয়েছিল। বাংলার মানুষকে পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্ত করতে এদের অসামান্য অবদান রয়েছে। তাছাড়া এ জনগোষ্ঠী সরকারি কুঠি, জমিদারদের কাছারি ও নায়েব-গোমস্তার বাড়ি আক্রমণ করেন। পাঠ্যবইয়ে আমরা একটি আন্দোলন দেখতে পাই যেটিতে ফকির-সন্ন্যাসীরা ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে। তাদের আন্দোলনের ফলে আক্রান্ত হয় সরকারি কুঠি, জমিদারদের কাছারি ও নায়েব-গোমস্তার বাড়ি। উদ্দীপক ও পাঠ্যবইয়ের তুলনামূলক আলোচনা থেকে এটা নিশ্চিতভাবে প্রমাণিত হয় যে এটি ফকির-সন্ন্যাসী আন্দালনের অনুরূপ একটি আন্দোলন। নিচে ফকির-সন্ন্যাসী আন্দোলনের চিত্র তুলে ধরা হলো-
আঠারো শতকের শেষার্ধে এ আন্দোলন শুরু। এর আগে নবাব মীর কাসিম ইংরেজদের সাথে যুদ্ধে ফকির-সন্ন্যাসীদের সাহায্য চান। এ ডাকে সাড়া দিয়ে ফকির-সন্ন্যাসীরা নবাবের পক্ষে যুদ্ধ করে। মীর কাসিম পরাজিত হয়ে পালিয়ে গেলেও ফকির-সন্ন্যাসীরা তাঁদের ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন চালিয়ে যায়। বিদ্রোহী ফকির দলের নেতা ছিলেন মজনু শাহ। আর সন্ন্যাসীদের নেতা ছিলেন ভবানী পাঠক। ১৭৬০ খ্রিষ্টাব্দে পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলায় সন্ন্যাসীরা ইংরেজদের বিরুদ্ধে প্রথম বিদ্রোহ শুরু করে। ১৭৭৭ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৭৮৬ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত রংপুর, দিনাজপুর ও ময়মনসিংহ জেলায় ইংরেজদের সঙ্গে মজনু শাহ বহু সংঘর্ষে লিপ্ত হন।

ঘ. হ্যাঁ, আমি মনে করি, এ ধরনের একটি আন্দোলনকারীরা ইংরেজদের কাছে পরাজিত হয়েছিল।
উদ্দীপকে যে দু'দল জনগোষ্ঠীর পরিচয় পাওয়া যায় তারা সাম্রাজ্যবাদী শাসনের বিরুদ্ধে ব্যাপক আন্দোলন করে। তাদের আক্রমণের লক্ষ্যবন্তু ছিল সরকারি কুঠি, জমিদারদের কাছারি ও নায়েব-গোমস্তার বাড়ি। পাঠ্যবইয়েও ইংরেজ সাম্রাজ্যবাদীদের বিরুদ্ধে আন্দোলনরত ফকির সন্ন্যাসীদের মাধ্যমে এ চিত্র লÿ্য করা যায়। যারা ইংরেজদের বিভিন্ন কুঠি, জমিদারদের কাছারি ও নায়েব-গোমস্তার বাড়ি আক্রমণ করে। পাঠ্যবইয়ের ফকির-সন্ন্যাসীরাই উদ্দীপকের দুদল 'সংসারবিরাগী জনগোষ্ঠী।
১৭৭৭ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ১৭৮৬ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত রংপুর, দিনাজপুর ও ময়মনসিংহ জেলায় ইংরেজদের সাথে মজনু শাহের বহু সংঘর্ষ হয়। তাঁর গেরিলা পদ্ধতির যুদ্ধ কৌশলের কারণে ইংরেজরা তাঁর কাছে পর্যদুস্ত হয়। তিনি ১৭৮৭ খ্রিষ্টব্দে মৃত্যুবরণ করেন এবং পর পর তাঁর দলের নেতৃত্ব দেন মুসা শাহ, সোবান শাহ, চেরাগ আলী শাহ, মাদার বক্স, করিম শাহসহ প্রমুখ ফকিরগণ। এ নেতারা কয়েক বছর ইংরেজ প্রশাসনকে ব্যতিব্যস্ত করে রাখে। ১৮০০ খ্রিষ্টাব্দে তারা চূড়ান্তভাবে পরাজিত হয়। অপরদিকে সন্ন্যাসী বিদ্রোহের নেতা ভবানী পাঠক ১৭৮৭ খ্রিষ্টাব্দে লেফটেন্যান্ট ব্রেনানের নেতৃত্বে একদল ব্রিটিশ সৈন্যের আক্রমণে দু সহকারীসহ নিহত হন। তার মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে সন্ন্যাসী আন্দোলনের অবসান ঘটে।

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post