এইচএসসি পরীক্ষার পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি
HSC Psychology 2nd Paper Srijonshil question and answer. HSC Psychology 2nd Paper (Srijonshil) Creative Questions pdf download. HSC Monobiggan 2nd paper Srijonshil Proshno Uttor.
উচ্চ মাধ্যমিক
মনোবিজ্ঞান
দ্বিতীয় পত্র
সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
অধ্যায়-৬
HSC Psychology
2nd Paper
Srijonshil Question and Answer pdf download
১. জনাব আবু রায়হান একজন পরোপকারী ব্যক্তি। সমাজের সকলের সুখে-দুঃখে তিনি ভূমিকা রাখেন। সমাজের মানুষের কল্যাণে সামাজিক শৃঙ্খলা রক্ষায় তিনি নিজ স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে কাজ করেন। আবু রায়হানের চাচাত ভাই আবু আয়মানও একজন সামাজিক মানুষ। তিনিও সমাজের মানুষের সুখে-দুঃখে পাশে থাকেন, মানুষের সেবা করতে চান কিন্তু তিনি মনে করেন মানুষের সেবা করার জন্য ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়া জরুরি। বয়সে ছোট হলেও তিনি অনেক সময় আবু রায়হান সাহেবের উপরও প্রভাব বিস্তার করে থাকেন। তবে, আবু আয়মান একজন সৌন্দর্যপ্রিয় ও শিল্পমনা ব্যক্তিও বটে। তিনি সবসময়ই পরিপাটি থাকেন এবং সন্তানদের সেভাবে রাখতে পছন্দ করেন।
ক. মূল্যবোধ গঠনের প্রধান মাধ্যম কোনটি?
খ. মনোভাব মূল্যবোধের পূর্বশর্ত কীভাবে?
গ. জনাব আবু রায়হান কোন ধরনের মূল্যবোধসম্পন্ন?ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকের উল্লিখিত আবু আয়মানের বৈশিষ্ট্যে কোন কোন মূল্যবোধ লক্ষ করা যায়?যুক্তিসহ বিশ্লেষণ কর।
১ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. মূল্যবোধ গঠনের প্রধান মাধ্যম পরিবার।
খ. প্রত্যেক ব্যক্তিরই তার পরিবেশের বিভিন্ন উপাদানের প্রতি একটি বিশেষ মনোভাব থাকে। মা-বাবা, বন্ধু-বান্ধব, যে কোনো কবি বা সাহিত্যিক প্রভৃতি ব্যক্তির প্রতি আমাদের একেক জনের বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া রয়েছে। বন্ধুকে সাহায্য করার জন্য মানুষ তার দিকে এগিয়ে যায়, আর শত্রুর প্রতি নেতিবাচক থাকার কারণে তার নিন্দা শুনলে খুশি হয়। পরিবেশের বিভিন্ন ব্যক্তির সংস্পর্শে এসে সমাজীকরণের সাথে সাথে মানুষের মধ্যে নানা প্রকার মনোভাব গড়ে উঠে। কতগুলো মনোভাবের সমন্বয়ে গঠিত অপেক্ষাকৃত স্থায়ী বিশ্বাসকে মূল্যবোধ বলে অভিহিত করা হয়। যেহেতু মনোভাবের সমন্বয়েই মূল্যবোধ গড়ে উঠে। তাই বলা যায় মনোভাবই মূল্যবোধের পূর্বশর্ত।
গ. উদ্দীপকে জনাব আবু রায়হান সামাজিক মূল্যবোধসম্পন্ন একজন ব্যক্তি। নিচে জনাব আবু রায়হানের মূল্যবোধ ব্যাখ্যা করা হলো-
সামাজিক মূল্যবোধ:
সমাজেই মানুষের বসবাস, তাই সামাজিক, মূল্যবোধসম্পন্ন ব্যক্তিদের কাছে জনগণের ভালোবাসা বা জনগণের কাছে তার গ্রহণযোগ্যতাই সব কিছু। সামাজিক মূল্যবোধ হচ্ছে সামাজিক ঘটনা বা আচরণের গুণারোপিত যা অংশীদারিত্বের মাধ্যমে সামাজিক সদস্যগণ মানসিকভাবে প্রতিষ্ঠিত করে। এ ধরনের ব্যক্তিদের কাছে মূল্যবোধের অর্থই পরার্থপরতার অধ্যয়ন অথবা দেশপ্রেমের অনুভূতি সর্বস্বতা যা পরিমেয়। এরা নিঃস্বার্থ, সহানুভূতিশীল, দয়ালু হিসেবে নিজেকে উপস্থাপিত করতে চায়। সামাজিক মূল্যবোধসম্পন্ন ব্যক্তিরা অনেক ক্ষেত্রেই ব্যক্তি স্বার্থের ঊর্ধ্বে সামাজিক রীতি-নীতিকেই অধিক গুরুত্ব প্রদান করে এবং তা মেনে চলতে চায়। এরা সমাজে বসবাসকারী মানুষের মধ্যে পারস্পরিক সুসম্পর্ক ও ভালোবাসা বজায় রাখতে নিবিড়ভাবে কাজ করে এবং সেক্ষেত্রেই তারা তাদের সামাজিক জীবনবোধ ও মূল্যবোধকে খুঁজে পায়। এরা নিজের স্বার্থের প্রতি তেমন গুরুত্ব দেয় না। এরা দয়ালু, সহানুভূতিশীল এবং নিঃস্বার্থ হয়ে থাকে।
ঘ. উদ্দীপকের আবু আয়মানের বৈশিষ্ট্য সামাজিক, রাজনৈতিক ও নান্দনিক মূল্যবোধের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। নিচে যুক্তিসহ বিশ্লেষণ করা হলো-
উদ্দীপকে আবু আয়মানও সমাজের মানুষের সুখে-দুঃখে পাশে থাকেন, মানুষের সেবা করতে চান। অপরের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করে তারা আনন্দ পায়। সামাজিক মূল্যবোধের অধিকারী ব্যক্তিগণ নিজ স্বার্থের বাইরে গিয়ে অন্য ব্যক্তি বা সমাজের স্বার্থের প্রতি অধিক গুরুত্ব দিয়ে থাকে। পরের জন্য জীবন উৎসর্গ করে ব্যক্তি সার্থক বোধ করে। পুষ্প যেমন নিজের জন্য ফোটে না তেমনি সামাজিক মূল্যবোধের অধিকারী ব্যক্তিরাও সমাজের ব্যক্তিদের জন্য হয়ে থাকে। পরোপকারের মাধ্যমেই এ ধরনর ব্যক্তি আনন্দ লাভ করে।
তিনি মানুষের সেবা করার জন্য ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়ায় জরুরি মনে করেন। কারণ ক্ষমতায় থাকতে না পারলে দুর্বলের পাশে থাকা যায় না। অন্যের দ্বারা নিগ্রিহীত হতে হয়। এছাড়াও আবু রায়হানের মধ্যে নান্দনিক মূল্যবোধ. অর্থাৎ সৌন্দর্যবোধ ও শিল্পমনা চরিত্রেরও বহিঃপ্রকাশ সুন্দরভাবে দেখেন। তিনি সব সময় পরিপাটি থাকেন এবং তার পরিবার ও সন্তানদেরও সেভাবে রাখতে পছন্দ করেন।
২. দৃশ্যকল্প-১: রহমান সাহেব একটি স্বনামধন্য কোম্পানির মালিক। তা সত্ত্বেও তার মধ্যে টাকা-পয়সার প্রতি কোনো লালসা নেই। তিনি সবসময় মানুষের উপকার করেন। অন্যকে সাহায্য করেই আনন্দ পান। নিজেকে নিয়ে কখনোই চিন্তা করেন না।
দৃশ্যকল্প-২: সোবহান সাহেব একজন ব্যবসায়ী। তিনি ধন সম্পদের প্রতি বেশ আগ্রহী। অনেক সময় তিনি নৈতিকতা উপেক্ষা করে অর্থ উপার্জনের প্রতি মনোনিবেশ করেন।
ক. ধর্মীয় মূল্যবোধ কী?
খ. মূল্যবোধের ৪টি বৈশিষ্ট্য লিখ।
গ. দৃশ্যকল্প-১ এ কোন মূল্যবোধের প্রকাশ ঘটেছে?ব্যাখ্যা কর।
ঘ. দৃশ্যকল্প ১ ও ২ এর মূল্যবোধ মানব আচরণে কি কি প্রভাব ফেলতে পারে?বিশ্লেষণ কর।
২ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. ধর্মীয় মূল্যবোধ হলো ব্যক্তির এমন এক ধরনের বিশ্বাস, যা তার ধর্মীয় বিশ্বাস ও সৃষ্টিকর্তা এবং তার সৃষ্টির রহস্য তথা অনুভূতি চিন্তাধারায় প্রতিষ্ঠিত হয়।
খ. মূল্যবোধের চারটি বৈশিষ্ট্য হলো-
১. মূল্যবোধ এক ধরনের আদর্শ।
২. মূল্যবোধ স্বাধীনভাবে গঠিত।
৩. মূল্যবোধ সামাজিক ঐক্য ও সংহতি রক্ষা করে।
৪. মূল্যবোধের সাথে কৃষ্টি সম্পর্কযুক্ত।
গ. উদ্দীপকে দৃশ্যকল্প-১ এ রহমান সাহেবের মধ্যে সামাজিক মূল্যবোধের প্রকাশ ঘটেছে। নিচে ব্যাখ্যা করা হলো-
সমাজেই মানুষের বসবাস, তাই সামাজিক মূল্যবোধসম্পন্ন ব্যক্তিদের কাছে জনগণের ভালোবাসা বা জনগণের কাছে তার গ্রহণযোগ্যতাই সব কিছু। সামাজিক মূল্যবোধ হচ্ছে সামাজিক ঘটনা বা আচরণের গুণারোপিত যা অংশীদারিত্বের মাধ্যমে সামাজিক সদস্যগণ মানসিকভাবে প্রতিষ্ঠিত করে। এ ধরনের ব্যক্তিদের কাছে মূল্যবোধের অর্থই পরার্থপরতার অধ্যয়ন অথবা দেশপ্রেমের অনুভূতি সর্বস্বতা যা পরিমেয়। এরা নিঃস্বার্থ, সহানুভূতিশীল, দয়ালু হিসেবে নিজেকে উপস্থাপিত করতে চায়। সামাজিক মূল্যবোধসম্পন্ন ব্যক্তিরা অনেক ক্ষেত্রেই ব্যক্তি স্বার্থের ঊর্ধ্বে সামাজিক রীতি-নীতিকেই অধিক গুরুত্ব প্রদান করে এবং তা মেনে চলতে চায়। এরা সমাজে বসবাসকারী মানুষের মধ্যে পারস্পরিক সুসম্পর্ক ও ভালোবাসা বজায় রাখতে নিবিড়ভাবে কাজ করে এবং সেক্ষেত্রেই তারা তাদের সামাজিক জীবনবোধ ও মূল্যবোধকে খুঁজে পায়। এরা নিজের স্বার্থের প্রতি তেমন গুরুত্ব দেয় না। এরা দয়ালু, সহানুভূতিশীল এবং নিঃস্বার্থ হয়ে থাকে।
ঘ. উদ্দীপকে দৃশ্যকল্প-১ এ রহমান সাহেবের মধ্যে সামাজিক মূল্যবোধ এবং দৃশ্যকল্প-২ এ সোবহান সাহেবের মধ্যে অর্থনৈতিক মূল্যবোধের প্রকাশ ঘটেছে। এ সামাজিক ও অর্থনৈতিক মূল্যবোধ মানব আচরণে যে ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে নিচে তা বিশ্লেষণ করা হলো-
সামাজিক মূল্যবোধের প্রভাব:
সামাজিক আদর্শ ও মূল্যবোধগুলো জীবনাচরণকে সুন্দর করে তোলে। তার সমাজীকরণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে কখনো ইতিবাচক আবার কখনো নেতিবাচক আচরণ গড়ে তুলতে সাহায্য করে। সামাজিক মূল্যবোধগুলোর প্রভাবে ব্যক্তি জীবনে সামাজিক নিয়ম-শৃঙ্খলার পাশাপাশি ব্যক্তির আচরণ সঠিক পথে পরিচালিত হয়। এর প্রভাবে সামাজিক জীবনযাত্রা নিয়ন্ত্রিত ও সংশোধিত হয়। ব্যক্তির মূল্যবোধগুলো তার আচরণে কখনো পরোক্ষভাবে আবার কখনো বা প্রত্যক্ষভাবে প্রভাবিত করে। মূলত অন্যান্য সকল মূল্যবোধই সামাজিক মূল্যবোধের অংশ। কারণ ব্যক্তির আচরণ সমাজেই পরিলক্ষিত হয়। ব্যক্তির ধর্মীয় আচরণ সমাজ বা পরিবারের মাধ্যমেই সৃষ্টি। একইভাবে ব্যক্তির রাজনৈতিক মতাদর্শও সমাজ থেকে সৃষ্ট। অর্থাৎ সামাজিক আচরণের মাধ্যমেই ব্যক্তির সামাজিক মূল্যবোধ গঠিত হয়।
অর্থনৈতিক মূল্যবোধের প্রভাব:
সমাজে এমন অনেক ব্যক্তি আছে যারা অর্থ উপার্জন, সঞ্চয়ে সতর্ক এবং মিতব্যয়ী। এ ধরনের ব্যক্তিরা অর্থনৈতিক মূল্যবোধ দ্বারা প্রভাবিত হয়ে থাকে। এ ব্যক্তিদের কাছে অর্থই সবচেয়ে বড় বিষয়। তারা বিশ্বের ব্যবসা-বাণিজ্য, উৎপাদন, বাজারজাতকরণ, দ্রব্যের ভোগ সাধন ইত্যাদির প্রতি আগ্রহ প্রকাশ করে। এরা টিভিতে অর্থনৈতিক সংবাদ, শেয়ার বাজারের খবর বেশি দেখে। অর্থনৈতিক মূল্যবোধের দ্বারা প্রভাবিত ব্যক্তিরা নৈতিকতা বা অনৈতিকতার বিচার না করে অর্থের উৎস খুঁজে ও উপার্জনে ব্যস্ত থাকে। অনেক সময় ব্যক্তির আচরণে অর্থনৈতিক মূল্যবোধের সাথে অন্যান্য মূল্যবোধের দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয়। যেমন- অর্থবান ব্যক্তিদের মধ্যে ধর্মীয় মূল্যবোধও দেখা যায়। উদাহরণস্বরূপ অর্থ ও বিত্তশালী ব্যক্তিদের মসজিদ, মন্দিরে দান করতে বেশি দেখা যায়। এরা ধন-সম্পদের দ্বারা সমাজে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে চায় এবং তাত্ত্বিক জ্ঞান তাদের কাছে তুচ্ছ।
উপরোক্ত আলোচনা হতে দেখা যায় যে, মানব আচরণে উক্ত মূল্যবোধ দুটির প্রভাব খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
৩. জামালউদ্দীনের জীবনে তার বাবা মায়ের প্রভাব খুব বেশি। তাই সে তার বাবা মাকে সবসময় অনুসরণ করে এবং বাবা মা তাকে যে শিক্ষা দিয়েছেন সেভাবেই নিজেকে পরিচালিত করে। সে খুব মিশুক প্রকৃতির এবং মানুষকে খুব ভালোবাসে। সকলের বিপদে-আপদে এগিয়ে আসে। তাই সকলের সাথেই তার বন্ধুত্ব এবং সকলেই তাকে ভালোবাসে। সে একইসাথে খুব ধার্মিক। সৃষ্টিকর্তার প্রতি তার অগাধ বিশ্বাস এবং সে ধর্মীয় নিয়ম-কানুন যথাযথভাবে পালন করে।
ক. মূল্যবোধের সংজ্ঞা দাও।
খ. মূল্যবোধের সাথে মনোভাবের সম্পর্ক দেখাও।
গ. জামালউদ্দীনের মূল্যবোধ গঠনের ক্ষেত্রে যে মাধ্যমটি কাজ করেছে তার গুরুত্ব ব্যাখ্যা কর।
ঘ. জামালউদ্দীনের মধ্যে কোন ধরনের মূল্যবোধ রয়েছে?মানব আচরণে এদের প্রভাব বিশ্লেষণ কর।
৩ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. মূল্যবোধ হলো ব্যক্তির এমন এক ধরনের বিশ্বাস, যার দ্বারা তার আচার-আচরণ ও ভালো-মন্দের বিচার নিয়ন্ত্রিত হয়।
খ. মূল্যবোধের সাথে মনোভাবের সম্পর্ক নিমণরূপ-
মনোভাব মূল্যবোধের অংশবিশেষ। মনোভাবের সংখ্যার চেয়ে মূল্যবোধের সংখ্যা অপেক্ষাকৃত কম। মূল্যবোধ ও মনোভাব দুই-ই পরিবর্তনশীল। কিন্তু মনোভাবের তুলনায় মূল্যবোধ অপেক্ষাকৃত কম পরিবর্তনশীল। কেননা কৃষ্টি মূল্যবোধের ধারক বলেই সম্ভবত মূল্যবোধের স্থিতিশীলতা অপেক্ষাকৃত বেশি। সমাজে কৃষ্টি, এমনকি পরিবেশভেদে ব্যক্তির মধ্যে মূল্যবোধের তারতম্য দেখা যায়।
গ. উদ্দীপকে জামাল উদ্দীনের মূল্যবোধ গঠনের ক্ষেত্রে যে মাধ্যমটি কাজ করেছে তাহলো পরিবার। নিচে মূল্যবোধ গঠনের ক্ষেত্রে মাধ্যমটির গুরুত্ব ব্যাখ্যা করা হলো-
জন্ম লাভের পর শিশুর প্রথম আশ্রয়স্থল হচ্ছে পরিবার। পরিবারের মধ্যেই শিশুর প্রথম মানসিক জগৎ, মৌলিক ধারণা এবং বিশ্বাস জন্ম নেয়। পিতা-মাতার সু-সম্পর্ক শিশুর মূল্যবোধ গঠনে ইতিবাচক প্রভাব বিস্তার করে থাকে। পিতা-মাতা ছেলেমেয়েদের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখলে এবং তাদের মূল্যবোধ সম্পর্কিত ধারণাগুলো ছেলেমেয়েদের সাথে আলোচনা করলে মূল্যবোধগুলো ছেলেমেয়েদের জীবনে প্রতিফলিত হবে। আবার যদি ব্যস্ততার দরুন বাবা-মা ছেলেমেয়েদের সময় না দেয়, তাদের সাথে মেশার সুযোগ না দেয়, তাদের সাথে মেশার সুযোগ না পায় এ ধরনের পরিবারের শিশুদের মধ্যে নেতিবাচক আদর্শ ও বিশ্বাস গড়ে ওঠে।
বাবা-মা যদি ছেলেমেয়েদের অতি আদর বা অতিরক্ষণশীলতার মধ্যে বড় করতে চায় তবে তার নেতিবাচক প্রভাব মূল্যবোধ গঠনে পড়ে থাকে। ছেলেমেয়েরা হঠকারী হয়ে পড়ে, তারা আগ্রাসী আচরণ করতে পারে এবং অন্যের প্রতি বেপরোয়া মনোভাব প্রদর্শন করে থাকে।
সুতরাং দেখা যাচ্ছে যে, সামাজিক, রাজনৈতিক, নান্দনিক, অর্থনৈতিক, ধর্মীয় প্রভৃতি মূল্যবোধ গঠনের ভিত্তি হচ্ছে পরিবার। মা-বাবা ও ভাইবোনের সাথে সু-সম্পর্ক শিশুর মূল্যবোধ গঠনের গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হিসেবে ভূমিকা পালন করে থাকে।
ঘ. উদ্দীপকে জামাল উদ্দীনের মধ্যে দুই ধরনের মূল্যবোধ দেখা যায়। একটি সামাজিক মূল্যবোধ এবং অপরটি ধর্মীয় মূল্যবোধ। নিচে মানব আচরণে মূল্যবোধ দুটির প্রভাব বিশ্লেষণ করা হলো-
সামাজিক মূল্যবোধের প্রভাব:
সামাজিক আদর্শ ও মূল্যবোধগুলো জীবনাচরণকে সুন্দর করে তোলে। তার সমাজীকরণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে কখনো ইতিবাচক আবার কখনো নেতিবাচক আচরণ গড়ে তুলতে সাহায্য করে। সামাজিক মূল্যবোধগুলোর প্রভাবে ব্যক্তি জীবনে সামাজিক নিয়ম-শৃঙ্খলার পাশাপাশি ব্যক্তির আচরণ সঠিক পথে পরিচালিত হয়। এর প্রভাবে সামাজিক জীবনযাত্রা নিয়ন্ত্রিত ও সংশোধিত হয়। ব্যক্তির মূল্যবোধগুলো তাঁর আচরণে কখনো পরোক্ষভাবে আবার কখনো বা প্রত্যক্ষভাবে প্রভাবিত করে। মূলত অন্যান্য সকল মূল্যবোধই সামাজিক মূল্যবোধের অংশ। কারণ ব্যক্তির আচরণ সমাজেই পরিলক্ষিত হয়। ব্যক্তির ধর্মীয় আচরণ সমাজ বা পরিবারের মাধ্যমেই সৃষ্টি। একইভাবে ব্যক্তির রাজনৈতিক মতাদর্শও সমাজ থেকে সৃষ্ট। অর্থাৎ সামাজিক আচরণের মাধ্যমেই ব্যক্তির সামাজিক মূল্যবোধ গঠিত হয়।
ধর্মীয় মূল্যবোধের প্রভাব:
পরিবারের মাধ্যমেই ব্যক্তি মূলত ধর্মীয় মূল্যবোধ পেয়ে থাকে। আচরণ প্রকাশের ক্ষেত্রে ধর্মীয় মূল্যবোধগুলো কখনো প্রত্যক্ষ আবার কখনো পরোক্ষভাবে প্রকাশ পায়। যেমন- একজন মুসলিম পরিবারের ব্যক্তি সৃষ্টিকর্তাকে 'আল্লাহ' বলে ডাকবে আবার একজন খ্রিস্টান ব্যক্তি ‘ঈশ্বর’ বলবে। অর্থাৎ আমাদের কথা-বার্তা, আচার-আচরণে ধর্মীয় মূল্যবোধ প্রকাশিত হয়। এ ধর্মীয় মূল্যবোধের কারণেই বিভিন্ন ব্যক্তি সন্ন্যাস জীবন ধারণ করে আবার কেউ বা মসজিদের ইমাম হতে চায়। এক্ষেত্রে তারা আচরণে ধর্মীয় বিষয়কে সম্পৃক্ত করে এবং তাদের কার্যকলাপ পরিচালিত করে। বর্তমান বিশ্বে এ ধর্মীয় মূল্যবোধের পার্থক্যের কারণেই বা ধর্মীয় ব্যবস্থাকে অপব্যবহার ও নিজেদের স্বার্থে মূল ধর্মীয় চেতনাকে পরিবর্তন করার কারণেই, বিভিন্ন দেশে ধর্মীয় দাঙ্গা দেখা যায়। উদাহরণস্বরূপ ভারতের গুজরাট রাজ্যের দাঙ্গা, মায়ানমারের ধর্মীয় দাঙ্গা উল্লেখযোগ্য।
উপরোক্ত আলোচনা হতে দেখা যায় যে, মানব আচরণে উক্ত মূল্যবোধ দুটির প্রভাব খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
৪. জনাব মতিন একজন ধার্মিক ব্যক্তি। তিনি নিয়ম, নিষ্ঠা ও শৃঙ্খলার প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তিনি সৃষ্টির উৎস সম্বন্ধে জানতে আগ্রহী। পরম সত্যকে উপলব্ধি করার জন্য প্রচন্ড ইচ্ছা তাকে সর্বদা তাড়িয়ে বেড়ায়। অন্যদিকে তার বন্ধু জনাব সুমন সর্বদা সকলের ওপর প্রভাব বিস্তার করে চলতে চান। কারণ সুমনের বাবা ছিল চেয়ারম্যান। যে কোন কাজ সুমনের নেতৃত্বে পরিচালিত হলে খুশি হন। বিভিন্ন সমস্যায় নিজের ক্ষমতা প্রয়োগ করাকে তিনি অধিক পছন্দ করেন। সমাজে সবার উপর প্রভাব খাটানোর প্রবণতা তার চরিত্রের উল্লেখযোগ্য দিক।
ক. মূল্যবোধ কী?
খ. ‘বিদ্যালয়কে’ মূল্যবোধ গঠনের মাধ্যম বলা হয় কেন?
গ. জনাব মতিনের মধ্যে কোন ধরনের মূল্যবোধ বর্তমান ব্যাখ্যা কর।
ঘ. জনাব মতিনের ও সুমনের মূল্যবোধের মধ্যে কোন ধরনের পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়?সুমনের মূল্যবোধের যথার্থ ব্যাখ্যা কর।
৪ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. গুরুত্ব ও ভালো-মন্দের বিচার নিয়ন্ত্রিত হয় এবং চিন্তায় কেন্দ্রীভূত থাকে। ব্যক্তির এমন বিশ্বাসই হলো মূল্যবোধ।
খ. ‘বিদ্যালয়কে’ মূল্যবোধ গঠনের মাধ্যম বলা হয় কারণ-
বৃহত্তর সামাজিক পরিমন্ডলের প্রথম ধাপ হচ্ছে বিদ্যালয় যেখানে শিশু মূল্যবোধ গঠনের মাধ্যম হিসেবে পায় তার শিক্ষক-শিক্ষিকা ও সমবয়সীদের। এছাড়াও বয়সে ছোট ও বড় অন্যান্য শিক্ষার্থীরাও তার মূল্যবোধ গঠনে কমবেশি প্রভাব বিস্তার করে। শ্রেণিকক্ষ শিশুর মতামত, মনোভাব, তার রাজনৈতিক, সামাজিক, তাত্ত্বিক মূল্যবোধ সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখে। শিক্ষার আলোয় আলোকিত হয়ে তারা তাত্ত্বিক মূল্যবোধ গঠনের প্রয়াস পায়। সমবয়সীদের সাথে মেলামেশার প্রেক্ষিতে তাদের মধ্যে সামাজিক, অর্থনৈতিক মূল্যবোধও গঠিত হয়।
গ. উদ্দীপকে জনাব মতিনের মধ্যে তাত্ত্বিক মূল্যবোধ বর্তমান। নিচে তাত্ত্বিক মূল্যবোধ ব্যাখ্যা করা হলো-
তাত্ত্বিক মূল্যবোধ:
যেসব মূল্যবোধের মাধ্যমে এ বিশ্বজগতে বাস্তব প্রয়োগ, সত্য উদ্ঘাটন ও সৃজনশীল বিশ্বাসের মাধ্যমে ব্যক্তি নিজেকে মানসিকভাবে প্রতিষ্ঠিত করে তাকে তাত্ত্বিক মূল্যবোধ বলে। এটি ব্যক্তির এমন এক ধরনের বিশ্বাস, যা অভিজ্ঞতামূলক, সমালোচনামূলক বা বিচারবুদ্ধিসম্পন্ন বৈজ্ঞানিক বা দার্শনিক তথ্য বা দৃষ্টিভঙ্গির উপর প্রতিষ্ঠিত হয়। এ মূল্যবোধ সম্পন্ন ব্যক্তির শক্তিশালী বা আধিপত্য বিসত্মৃতির আগ্রহ এবং সত্যের আবিষ্কারের প্রতি আগ্রহ থাকে। এ সত্যের পিছনে ছুঁটে বেড়িয়ে ব্যক্তি এক জ্ঞানমূলক মনোভাব গ্রহণ করে নিজের পরিচিতি খুঁজে বেড়ায় এবং অন্যের সাথে পার্থক্য খুঁজে বেড়ায়। তবে তাত্ত্বিক মূল্যবোধ বলতে উচ্চ জ্ঞানসম্পন্ন, বিচারবুদ্ধিসম্পন্ন প্রতিভাশালী বা তাত্ত্বিক শ্রেণিভুক্ত ব্যক্তির মূল্যবোধের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণতাকে বুঝায় না। এ ধরনের মূল্যবোধ বলতে মূলত সুবিন্যস্ত জ্ঞান ও সুসংহত নিয়ম-নীতির প্রতি আবদ্ধ থাকা কেন্দ্রীভূত বিশ্বাসকেই বুঝায়। তাত্ত্বিক মূল্যবোধের ব্যক্তিরা অনেকটা বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গিসম্পন্ন বা অনেকটা দার্শনিক।
ঘ. উদ্দীপকে জনাব মতিন ও সুমনের মূল্যবোধ যথাক্রমে তাত্ত্বিক মূল্যবোধ ও রাজনৈতিক মূল্যবোধ। দুজনের মূল্যবোধের মধ্যে নিয়ম-নীতির ও শৃঙ্খলার প্রতি শ্রদ্ধার পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। নিচে সুমনের মূল্যবোধের যথার্থ ব্যাখ্যা করা হলো-
রাজনৈতিক মূল্যবোধ:
যে মূল্যবোধের উপর ভিত্তি করে ব্যক্তি তার রাজনৈতিক কর্মকান্ড, রাজনৈতিক আদর্শ ইত্যাদি পরিচালনা করে থাকে তাই রাজনৈতিক মূল্যবোধ। এ রাজনৈতিক মূল্যবোধের উপর ভিত্তি করেই বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের উদ্ভব। সেক্ষেত্রে কোনো রাজনৈতিক দলের ব্যক্তিদের মূল্যবোধ অন্য কোনো রাজনৈতিক দলের মূল্যবোধের সাথে পার্থক্য থাকে এবং রাজনৈতিক মূল্যবোধসম্পন্ন ব্যক্তিরা সাধারণত নেতৃত্বপ্রিয়। নেতৃত্ব প্রদানই তাদের আকাঙক্ষা বা বাসনা। তবে রাজনৈতিক সংকীর্ণ পরিসরেই এদের কার্যক্রম সীমাবদ্ধ থাকে। গবেষকদের মতে, ব্যক্তির মধ্যে জাতিগত মতভেদ রাজনৈতিক মূল্যবোধের সৃষ্টি করে। ব্যক্তির রাজনৈতিক মূল্যবোধের পিছনে তার পূর্ব সংস্কার, পছন্দ অপছন্দ, বিশ্বাসসমূহ কাজ করে। এরা প্রতিযোগিতা ও সংগ্রামপূর্ণ জীবনে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। রাজনৈতিক মূল্যবোধের লোকেরা পুরোপুরি শক্তিমত্তার মূল্যবোধ খুঁজে। ক্ষমতা, নেতৃত্ব দান, পরিচালনা ইত্যাদি বিষয়কে কেন্দ্র করে এরা নিয়ন্ত্রিত হয়।
অর্থাৎ উদ্দীপকের আলোকে বলা যায় যে, সুমনের রাজনৈতিক মূল্যবোধ যথার্থ।
৫. জনাব আকাশ সাহেব একজন ধার্মিক ব্যক্তি। তিনি নিয়ম, নিষ্ঠা ও শৃঙ্খলার প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তিনি সৃষ্টির উৎস সম্বন্ধে জানতে আগ্রহী। পরম সত্যকে উপলব্ধি করার প্রচন্ড ইচ্ছা তাকে সর্বদা তাড়িয়ে বেড়ায়। অন্যদিকে তার বন্ধু জনাব আহসান সাহেব সর্বদা সকলের ওপর প্রভাব বিস্তার করে চলতে চান। কারণ আহসানের বাবা ছিল রাজনৈতিক দলের নেতা। যে কোনো কাজ আহসানের নেতৃত্বে পরিচালিত হলে খুশি হন। সমাজে সবার উপর প্রভাব খাটানোর প্রবণতা তার চরিত্রের উল্লেখযোগ্য দিক।
ক. Edward Spranger (1928) মূল্যবোধকে কয় ভাগে ভাগ করেছেন?
খ. মূল্যবোধ গঠনে সমবয়সীদের ভূমিকা কী?
গ. জনাব আহসান সাহেবের মূল্যবোধ গঠনের মাধ্যম কী?ব্যাখ্যা কর।
ঘ. জনাব আকাশ ও আহসানের মূল্যবোধের ধরন একই না ভিন্ন ভিন্ন?বিশ্লেষণ কর।
৫ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. সমাজ মনোবিজ্ঞানী Edward Spranger (1928) মূল্যবোধকে ছয় ভাগে ভাগ করেছেন।
খ. মূল্যবোধ গঠনে সমবয়সী দল অর্থাৎ খেলার সাথীদের গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব পরিলক্ষিত হয়। সমবয়সীদের নিন্দা, প্রশংসা, সমর্থন সবকিছুর প্রতি শিশুরা সংবেদনশীল হয়ে থাকে। সঙ্গীদের প্রভাবে শিশুর সামাজিক ‘প্রবণতা, আবেগীয় নিয়ন্ত্রণ ও মনোভাব বিকশিত হয়ে থাকে। একটি শিশু বা কিশোর অন্য একজন শিশু-কিশোরের মনোভাবের নির্ধারিত হিসেবে ফলপ্রসূ ভূমিকা পালন করে। সঙ্গী-সাথীদের প্রভাব অল্প বয়সে ফলপ্রসূ হয়।
গ. জনাব আহসান সাহেবের মূল্যবোধ গঠনের মাধ্যম হলো পরিবার।
ব্যক্তির সামাজিক শিক্ষণের প্রথম ও সর্বপ্রধান মাধ্যম হলো তার পরিবার। মূলত পরিবারেই ব্যক্তির সামাজিক শিক্ষণের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের মূল্যবোধ সৃষ্টি হয়। একক পরিবারে মা-বাবা, ভাই-বোন এবং যৌথ পরিবারে এদের দাদা-দাদী, চাচা, ফুপু এবং আরও নানা সম্পর্কের সদস্য নিয়ে গঠিত হয় পারিবারিক পরিবেশ। এমনি একটি পরিবেশেই শুরু হয় শিশুর মূল্যবোধ গঠন।
শিশু যে ব্যক্তির উপর প্রাথমিকভাবে নির্ভরশীল থাকে তিনি তার মা। এ মায়ের মূল্যবোধ দ্বারা শিশুর মূল্যবোধ প্রভাবিত হয় অথরা গঠন শুরু হয়। শিশুর সকল মূল্যবোধ সৃষ্টিতে মায়ের মুখ্য ভূমিকা থাকে। শিশুর বিভিন্ন চাহিদা নিবৃত্তের উৎস হিসেবে শিশু তার পিতাকে পায়। ফলে পিতাও শিশুর মূল্যবোধ সৃষ্টিতে অন্যতম প্রধান মাধ্যম হিসেবে কাজ করে। পিতা-মাতার ধর্ম এবং ধর্মীয় মনোভাব শিশুর ধর্মীয় মূল্যবোধ সৃষ্টি করে।
ঘ. জনাব আকাশ ও আহসানের মূল্যবোধের ধরণ ভিন্ন প্রকৃতির। অর্থাৎ আকাশের মূল্যবোধ ধর্মীয় এবং আহসানের মূল্যবোধ রাজনৈতিক। নিচে উভয় মূল্যবোধের ভিন্নতা আলোচনা করা হলো-
ধর্মীয় মূল্যবোধ:
ধর্মীয় মূল্যবোধ ব্যক্তির আচরণে স্থিতিশীলতা আনে। সৃষ্টিকর্তার প্রতি ব্যক্তির অগাধ বিশ্বাস থাকে। সে মনে সৃষ্টিকর্তার আদেশ ও নিষেধ মেনে চলে চাকরি, ব্যবসায় অংশ নিলে প্রকৃত সুখ-শান্তি পাওয়া যাবে। এ ধরনের বিশ্বাস থেকে তারা সন্তানের প্রতি কর্তব্য, প্রতিবেশীর প্রতি কর্তব্য, আত্মীয়-স্বজনের কর্তব্য, দরিদ্রদের প্রতি দায়িত্ব; সমাজ ও দেশেরপ্রতি দায়িত্ব কর্তব্য সঠিকভাবে পালন করে থাকে। এভাবে ধর্মীয় মূল্যবোধ ব্যক্তি আচরণে ইতিবাচক প্রভাব বিস্তার করে থাকে।
রাজনৈতিক মূল্যবোধ:
রাজনৈতিক মূল্যবোধের প্রভাবে ব্যক্তি ক্ষমতার প্রতি আকৃষ্ট হয়, ভালো বক্তব্য রাখার চেষ্টা করে, অন্যের উপর প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করে। ফলে সমাজের মানুষ রাজনীতি সচেতন হয়ে উঠে। কোনো রাজনৈতিক দলের পক্ষে সমাজের কিছু মানুষের ইতিবাচক ভূমিকা পালন করে আবার অন্য দলের প্রতিও মানুষ ভূমিকা পালন করে থাকে। সমাজে সুস্থ ও গণতান্ত্রিক রাজনীতির প্রভাবে মানুষের শিক্ষা, নৈতিকতা, ব্যক্তিত্ব, মনোভাব-এসব গড়ে উঠে। অন্যদিকে অসুস্থ ও স্বৈরতান্ত্রিক রাজনীতির প্রভাবে ব্যক্তির আচরণে উচ্ছৃঙ্খলতা দেখা দেয়, দেখা দেয় সন্ত্রাস, সহিংসতা ও মারামারি। এতে ব্যক্তি, সমাজ ও জাতি ক্ষতিগ্রস্থ হয়।
উপরের আলোচনা থেকে বুঝায়, জনাব আহসাবের মূল্যবোধের ধরন ভিন্ন প্রকৃতির।
৬. মাহিন তার বাবা-মার একমাত্র সন্তান। পড়ালেখায় অত্যন্ত মেধাবী। কিন্তু সে কারো সাথে সহজে মিশতে পারে না, একা থাকতে পছন্দ করে। এ করণে তার কোনো বন্ধু হয়নি। সে নিয়মিত স্কুলে যায়, তবে ছুটি হওয়ার সাথে সাথেই বাসায় চলে আসে। এমনকি সে আত্মীয়স্বজনের বাসাতেও যেতে চায় না। প্রথমে বিষয়টি তার চাকুরিজীবী বাবা-মা লক্ষ করেননি। এখন তাদের ব্যাপারটি বেশ ভাবিয়ে তুলেছে।
ক. কতকগুলো মনোভাবের সমন্বয়ে গঠিত অপেক্ষাকৃত স্থায়ী বিশ্বাসকে কী বলে?
খ. কীভাবে মূল্যবোধ গড়ে ওঠে?ব্যাখ্যা কর।
গ. মাহিনের আচরণে কোন ধরনের মূল্যবোধের অভাব লক্ষ করা যায়?ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকে মাহিনের আচরণ পরিবর্তনে কী পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে?বিশ্লেষণ কর।
৬ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. কতকগুলো মনোভাবের সমন্বয়ে গঠিত অপেক্ষাকৃত স্থায়ী বিশ্বাসকে মূল্যবোধ বলে।
খ. সমাজজীবনে দীর্ঘদিন একত্রে বসবাস করা মানবীয় অভিজ্ঞতার মাধ্যমে মূল্যবোধ গড়ে উঠে। মূল্যবোধ হলো মানুষের ইচ্ছার একটি বিশেষ মানদন্ড, যার দ্বারা মানুষের আচার-ব্যবহার ও রীতিনীতি নিয়ন্ত্রিত হয় এবং সমাজের মানুষের ভালো-মন্দ বিচার হয়। একটি জনগোষ্ঠী সামাজিক আচরণগুলোর কোনটি ভালো, কোনটি মন্দ সে সম্পর্কে অভিনব ধারণা পোষণ করে। প্রতিটি সমাজেরই নিজস্ব মূল্যবোধ রয়েছে।
গ. উদ্দীপকে মাহিন বাবা-মার একমাত্র সন্তান। পড়ালেখায় অত্যন্ত মেধাবী, কিন্তু সে কারো সাথে সহজে মিশতে চায় না, একা থাকতে পছন্দ করে, এ কারণে তার কোনো বন্ধু নেই, এমনকি সে আত্মীয়স্বজনের বাসাতেও যেতে চায় না। তার এ ধরনের আচরণ সামাজিক মূল্যবোধের অভাব থেকে সৃষ্টি হয়। নিচে তা ব্যাখ্যা করা হলো-
সমাজেই মানুষের বসবাস। মানুষ সামাজিক জীব। তার জন্ম পরিবারে হয় কিন্তু সে সারাজীবন পরিবারের গন্ডির মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে থাকে না। সমাজের আদর্শকে গ্রহণ ও অনুসরণ করে নিজেকে সামাজিক ব্যক্তি হিসেবে গড়ে তুলতে হয়। সামাজিক রীতি-নীতিকে ধারণ করতে হয়, সামাজিক প্রথা মেনে চলতে হয়। এগুলোই সামাজিক মূল্যবোধের বহিঃপ্রকাশ যা প্রার্থীর মধ্যে নেই। সমাজে বসবাস করেও সে সমাজ থেকে আলাদা জীবনযাপন করছে। সমাজে বসবাসকারী অন্যান্য মানুষদের সাথে নেই তার সুসম্পর্ক, নেই ভালোবাসা। এরকম বিচ্ছিন্ন জীবনযাপনের মাধ্যমে সে নিজেকে অসামাজিক করে গড়ে তুলছে যা তার জন্য সুবিধাজনক নয়। একাকিত্ব, অসামাজিকতা, উদাসীনতা প্রভৃতি মানব আচরণে বিরূপ প্রভাব ফেলে এবং মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করে।
ঘ. উদ্দীপকে মাহিনের আচরণ পরিবর্তনে তার পরিবার, বিদ্যালয়, সমবয়সী দল, সমাজ নানা ধরনের গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিতে পারে। নিচে বিশ্লেষণ করা হলো-
মাহিনের জড়তা, উদাসীনতা কাটানোর ক্ষেত্রে তার পরিবারের সদস্যগণ তাকে সুযোগ করে দিতে পারেন। তার সাথে খোলাখুলিভাবে আলোচনা করে তার অসামাজিকতার কুফল সম্পর্কে ধারণা দিতে পারেন। তাকে বেশি বেশি বেড়াতে নিয়ে যাওয়া যেতে পারে। এক্ষেত্রে সে রাজী না হলেও চেষ্টা করতে হবে তাকে রাজী করানোর। এক্ষেত্রে তার প্রিয় জিনিসগুলোর লোভ দেখানো যেতে পারে। আবার সবার সাথে কথা বলার সুযোগ করে দিতে হবে। বিদ্যালয়ে শিক্ষক শিক্ষিকাও তাকে সামাজিক মূল্যবোধ শেখানোর ক্ষেত্রে অবদান রাখতে পারেন। সহপাঠীদের সাথে বিভিন্ন দলগত কাজের ব্যবস্থা করে দিতে পারেন। আবার সমাজের অন্যান্য সদস্যরা তার সাথে ভাব বিনিময় করে, নানা অজুহাতে তার দ্বিধা-দ্বন্দ্ব সরিয়ে "তার সাথে একাত্ম হয়ে তাকে সামাজিক রীতি-নীতির প্রতি আগ্রহী করে তুলতে পারেন, বিভিন্ন সংগঠনের সাথে যুক্ত করতে পারেন।
মাহিনকে সামাজিক মূল্যবোধ গঠনে পরিবার, বিদ্যালয়, বৃহত্তর সমাজ নানাভাবে অবদান রাখতে পারে এবং আচরণে পরিবর্তন আনতে পারে।
৭. রাফির দাদু তাকে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের, স্বাধীনতার ইতিহাস গল্পের মতো করে শোনাচ্ছিলেন। তা শোনার পর সে মুক্তিযোদ্ধাদের কথা মনে করে খুবই আবেগপ্রবণ হয়ে ওঠে, দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়। তার অনেকগুলো বন্ধু আছে। সবার সাথে সে এ বিষয় নিয়ে আলোচনা করে। সে তার বন্ধুদের সাথে সবসময় সংহতি ও সামঞ্জস্য রক্ষা করে।
ক. হিন্দু সম্প্রদায় বা মুসলমান সম্প্রদায় মূল্যবোধ গঠনের কোন মাধ্যমটিকে নির্দেশ করে?
খ. নান্দনিক মূল্যবোধের পরিচয় দাও।
গ. উদ্দীপকে রাফির মধ্যে কোন মূল্যবোধের বিকাশ ঘটতে দেখা যাচ্ছে এবং এতে তার আচরণে কেমন প্রভাব পড়বে?ব্যাখ্যা কর।
ঘ. বন্ধুদের সাথে রাফির সম্পর্ক আসলে তার আচরণে মূল্যবোধের প্রভাবকেই তুলে ধরছে। বিশ্লেষণ কর।
৭ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. হিন্দু সম্প্রদায় বা মুসলমান সম্প্রদায় মূল্যবোধ গঠনের ‘‘কমিউনিটি ও বৃহত্তর সমাজ’’ মাধ্যমটিকে নির্দেশ করে।
খ. নান্দনিক মূল্যবোধ হলো ব্যক্তির এমন এক ধরনের বিশ্বাস, যা তার সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অনুভূতির বা চিন্তাধারায় প্রতিষ্ঠিত হয়।
এ মূল্যবোধসম্পন্ন ব্যক্তিরা তাত্ত্বিক দৃষ্টিভঙ্গি বা বিচার-বিশ্লেষণ দ্বারা পরিচালিত না হয়ে মূলত মনস্তাত্ত্বিক চাহিদা ও আবেগ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। তারা বিশ্বের সবকিছুর মধ্যে একটি ঐকতান সংবলিত চিন্তাধারার আকার গঠন করে ফেলে। নান্দনিক মূল্যবোধসম্পন্ন ব্যক্তিরা মনে করে, একটি বস্ত্তকে মনোমুগ্ধকররূপে উপস্থাপিত করা, বস্ত্তটিকে সত্য হিসেবে চিহ্নিত করার চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তারা সর্বদা জাঁকজমক, শক্তিমত্তার বিশিষ্ট পরিচয় চিহ্ন বা সম্মানসূচক চিহ্নগুলোকে সবচেয়ে বেশি পছন্দ করতে চায়।
গ. রাফি তার দাদুর কাছ থেকে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের স্বাধীনতার ইতিহাস শোনার পর আবেগপ্রবণ হয়ে ওঠে এবং দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়। এভাবে তার মধ্যে রাজনৈতিক মূল্যবোধের বিকাশ ঘটে।
যে মূল্যবোধের উপর ভিত্তি করে ব্যক্তি তার রাজনৈতিক কর্মকান্ড, রাজনৈতিক আদর্শ ইত্যাদি পরিচালনা করে থাকে, মূলত তাই রাজনৈতিক মূল্যবোধ। রাজনৈতিক মূল্যবোধ সম্পন্ন ব্যক্তিরা সাধারণত নেতৃত্বপ্রিয়, ব্যক্তির রাজনৈতিক মূল্যবোধের পিছনে তার পূর্বসংস্কার, পছন্দ-অপছন্দ, বিশ্বাসসমূহ কাজ করে। রাফির ক্ষেত্রেও এই বিষয়গুলোর বহিঃপ্রকাশ দেখা যাওয়াটা স্বাভাবিক। তার মধ্য রাজনৈতিক মূল্যবোধ বিকাশে তার দাদুর অবদান গুরুত্বপূর্ণ আর এই মূল্যবোধ ধীরে ধীরে এ ধরনের বিভিন্ন ঘটনার মাধ্যমে আরও বিকশিত হবে যার প্রভাব তার আচরণে সুস্পষ্ট হবে। এখন যেমন দেখা যাচ্ছে সে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হচ্ছে, মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি আবেগপ্রবণ হচ্ছে, পরবর্তীতে সে এসব বিষয়ে আরও জানবে, রাষ্ট্র, সরকার ব্যবস্থা সম্পর্কে ধারণা নিবে, নিজের মনোভাব ব্যক্ত করবে এবং আশা করা যায় নিজেকে একজন যথার্থ নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে সচেষ্ট হবে।
ঘ. রাফি তার বন্ধুদের কাছে সহজেই নিজের মনোভাব ব্যক্ত করে, তাদের সাথে সংহতি ও সামঞ্জস্য বজায় রাখে। এতে বুঝা যায় তার মধ্যে বিদ্যমান মূল্যবোধসমূহের প্রভাব-ই তার আচরণে পরিলক্ষিত হবে। সাম্প্রদায়িক ও সামাজিক মিথস্ক্রিয়ার মাধ্যমে তৈরি মূল্যবোধের মধ্য দিয়ে রাফি সাম্প্রদায়িক ও সামাজিক ঐক্য ও সংহতি রক্ষা করতে শিখেছে।
বিদ্যমান সমবয়সী, খেলার সাথী, সম্প্রদায় এবং বৃহত্তর সমাজের সংস্পর্শে রাফি এমন কিছু মূল্যবোধ অর্জন করে যা, তার সামাজিক আচরণকে বিশেষভাবে প্রভাবিত করে। এই মূল্যবোধগুলোর প্রভাব রাফির সামাজিকরণ প্রক্রিয়াকে সহজতর করে। এর ফলে তার বিশৃঙ্খল ও দ্বন্দ্বময় মূল্যবোধগুলো সুগঠিত হয়। যা তার আচরণকে ভিন্নভাবে উপস্থাপন করে। এই মূল্যবোধের প্রভাবেই সে দল গঠনে আগ্রহী হয় এবং নৈতিকতার প্রতি সবচেয়ে বেশি আনুগত্য প্রকাশ করে। তার আচরণে সামাজিক দায়িত্ববোধের প্রকাশ লক্ষ করা যায়। নৈতিক মূল্যবোধগুলোর আলোকে তার আচরণকে সংস্কার করে, তার মধ্যে স্বাধীনচেতা আচরণ বিকশিত হয়। তার সৎ ও উদার মূল্যবোধগুলো তার আচরণকে সুন্দর ও আকর্ষণীয় করে তোলে। সমবয়সীদের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ, বিশেষ আদর্শ অনুকরণ ও অনুসরণ, সমবয়সীদের সাথে সংহতি ও সামঞ্জস্য রক্ষা, নতুন ধারণা পেষণ প্রভৃতি এর উৎকৃষ্ট উদাহরণ।
৮. অর্থী বাবা-মায়ের আদরের মেয়ে। খুবই লক্ষ্মী। পড়াশুনায়ও খুব ভালো। কিন্তু সে কারো সাথে সহজে মেশে না। একা থাকতে পছন্দ করে। কারো সাথে বেশি কথা বলে না। বেড়াতে যেতেও পছন্দ করে না।
ক. ছয়টি মূল্যবোধ কী কী?
খ. ধর্মীয় মূল্যবোধ বলতে কী বোঝ?
গ. অর্থীর আচরণে কোন মূল্যবোধের অভাব লক্ষ করা যায়?ব্যাখ্যা কর।
ঘ. তার এ ধরনের আচরণ কীভাবে পরিবর্তন করা যেতে পারে বলে তুমি মনে কর?বিশ্লেষণ কর।
৮ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. ছয়টি মূল্যবোধ হলো তাত্ত্বিক মূল্যবোধ, অর্থনৈতিক মূল্যবোধ, সামাজিক মূল্যবোধ, রাজনৈতিক মূল্যবোধ, নান্দনিক মূল্যবোধ ও ধর্মীয় মূল্যবোধ।
খ. ধর্মীয় চিন্তা-ধারণা, বিশ্বাস, অনুশাসনের উপর ভিত্তি করে ধর্মীয় মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠিত হয়। এ মূল্যবোধ এমন এক ধরনের বিশ্বাস, যা তার ধর্মীয় বিশ্বাস ও সৃষ্টিকর্তা এবং তার সৃষ্টির রহস্য তথা তার চিন্তাধারায় প্রতিষ্ঠিত হয়। এ ধরনের মূল্যবোধসম্পন্ন ব্যক্তিরা তাদের ধর্মীয় রীতিনীতির একটি বিশেষ প্রতিফলন ঘটায় এবং স্বীয় সুসংহতিকে বিশেষভাবে প্রকাশ করে। তারা তাদের আধ্যাত্মিক দৃষ্টিভঙ্গি ও বিচার-বিশ্লেষণ দ্বারা পরিচালিত হয়। এরা সবসময় ঈশ্বরকে সন্তুষ্ট করার জন্য উদগ্রীব। এরা প্রত্যেক ঘটনার পিছনেই কিছু আধ্যাত্মিক ইঙ্গিত, খুঁজে পায়।
গ. অর্থী লক্ষ্মী একটা মেয়ে, পড়াশুনায়ও ভালো তবে সে কারো সাথে মেশে না, বেশি কথা বলে না, একা থাকতে পছন্দ করে। এ ধরনের আচরণ সামাজিক মূল্যবোধের অভাব থেকে সৃষ্টি হয়।
সমাজেই মানুষের বসবাস। মানুষ সামাজিক জীব। তার জন্ম পরিবারে হয় কিন্তু সে সারাজীবন পরিবারের গন্ডির মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে থাকে না। সমাজের আদর্শকে গ্রহণ ও অনুসরণ করে নিজেকে সামাজিক ব্যক্তি হিসেবে গড়ে তুলতে হয়। সামাজিক রীতি-নীতিকে ধারণ করতে হয়, সামাজিক প্রথা মেনে চলতে হয়। এগুলোই সামাজিক মূল্যবোধের বহিঃপ্রকাশ যা অর্থীর মধ্যে নেই। সমাজে বসবাস করেও সে সমাজ থেকে আলাদা জীবনযাপন করছে। সমাজে বসবাসকারী অন্যান্য মানুষদের সাথে নেই তার সুসম্পর্ক, নেই ভালোবাসা। এরকম বিচ্ছিন্ন জীবনযাপনের মাধ্যমে সে নিজেকে অসামাজিক করে গড়ে তুলছে যা তার জন্য সুবিধাজনক নয়। একাকিত্ব, অসামাজিকতা, উদাসীনতা প্রভৃতি মানব আচরণে বিরূপ প্রভাব ফেলে এবং মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করে।
ঘ. এ ধরনের পরিবর্তনের ক্ষেত্রে তার পরিবার, বিদ্যালয়, সমাজ নানাভাবে গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যমের ভূমিকা পালন করতে পারে।
অর্থীর জড়তা, উদাসীনতা কাটানোর ক্ষেত্রে তার পরিবারের সদস্যগণ তাকে সুযোগ করে দিতে পারেন। তার সাথে খোলাখুলিভাবে আলোচনা করে তার অসামাজিকতার কুফল সম্পর্কে ধারণা দিতে পারেন। তাকে বেশি বেশি বেড়াতে নিয়ে যাওয়া যেতে পারে। এক্ষেত্রে সে রাজী না হলেও চেষ্টা করতে হবে তাকে রাজী করানোর। এক্ষেত্রে তার প্রিয় জিনিসগুলোর লোভ দেখানো যেতে পারে। আবার সবার সাথে কথা বলার সুযোগ করে দিতে হবে। বিদ্যালয়ে শিক্ষক শিক্ষিকাও তাকে সামাজিক মূল্যবোধ শেখানোর ক্ষেত্রে অবদান রাখতে পারেন। সহপাঠীদের সাথে বিভিন্ন দলগত কাজের ব্যবস্থা করে দিতে পারেন। আবার সমাজের অন্যান্য সদস্যরা তার সাথে ভাব বিনিময় করে, নানা অজুহাতে তার দ্বিধা-দ্বন্দ্ব সরিয়ে তার সাথে একাত্ম হয়ে তাকে সামাজিক রীতি-নীতির প্রতি আগ্রহী করে তুলতে পারেন, বিভিন্ন সংগঠনের সাথে যুক্ত করতে পারেন।
অর্থীকে সামাজিক মূল্যবোধ গঠনে পরিবার, বিদ্যালয়, বৃহত্তর সমাজ নানাভাবে অবদান রাখতে পারে এবং আচরণে পরিবর্তন আনতে পারে।
৯. মোবারক আলী এবং আব্দুল জববার দুজনেই গ্রামের চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী। মোবারক আলীর উদ্দেশ্য জনসেবা কিন্তু আব্দুল জববারের আগ্রহ মূলত জনসেবার নির্ধারিত টাকা আত্মসাৎ করার ক্ষেত্রেই।
ক. ব্যক্তির সামাজিক শিক্ষণের প্রথম ও প্রধান ধাপ কোনটি?
খ. সামাজিক আদর্শ ও মূল্যবোধের প্রভাব সংক্ষেপে লেখ।
গ. মোবারক আলী ও আব্দুল জববারের মধ্যে কে প্রকৃত রাজনৈতিক মূল্যবোধের অধিকারী?ব্যাখ্যা কর।
ঘ. আব্দুল জববারের চিন্তা-ভাবনায় কোন মূল্যবোধের উপস্থিতি প্রকট আকার ধারণ করেছে?বিশ্লেষণ কর।
৯ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. ব্যক্তির সামাজিক শিক্ষণের প্রথম ও প্রধান ধাপ হচ্ছে পরিবার।
খ. সামাজিক আদর্শ ও মূল্যবোধগুলোর ব্যক্তির জীবনাচরণকে সুন্দর করে তোলে। তার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে কখনো ইতিবাচক আবার কখনো নেতিবাচক আচরণ গড়ে তুলতে সাহায্য করে। সামাজিক মূল্যবোধগুলোর প্রভাবে ব্যক্তি জীবনে সামাজিক নিয়ম-শৃঙ্খলার পাশাপাশি ব্যক্তির আচরণ সঠিক পথে পরিচালিত হয়। এর প্রভাবে সামাজিক জীবনযাত্রা নিয়ন্ত্রিত ও সংশোধিত হয়। বক্তির মূল্যবোধগুলো তার আচরণকে কখনো পরোক্ষভাবে আবার কখনো বা প্রত্যক্ষভাবে প্রভাবিত করে। সে সমাজের রীতি-নীতি, কলা-কৌশলের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়। পারস্পরিক সুসম্পর্ক গড়ে তোলে ও সৌহার্দ্য বজায় রাখে।
গ. মোবারক আলীর চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী হওয়ার পেছনে উদ্দেশ্য কেবল জনসেবা করা, অপরপক্ষে, আব্দুল জববার জনগণের জন্য নির্ধারিত টাকা আত্মসাৎ করার জন্য আগ্রহী। এক্ষেত্রে অবশ্যই মোবারক আলী প্রকৃত রাজনৈতিক মূল্যবোধের অধিকারী।
মূলত, যে মূল্যবোধের উপর ভিত্তি করে ব্যক্তি তার রাজনৈতিক কর্মকান্ড, রাজনৈতিক আদর্শ ইত্যাদি পরিচালনা করে থাকে, তা-ই রাজনৈতিক মূল্যবোধ। ক্ষমতা, নেতৃত্ব দান, পরিচালনা ইত্যাদি বিষয়কে কেন্দ্র করে এরা নিয়ন্ত্রিত হয়। ব্যক্তির রাজনৈতিক কর্মকান্ড, রাজনৈতিক আদর্শ, দর্শন ইত্যাদি এই মূল্যবোধ দ্বারাই প্রভাবিত। এই মূল্যবোধের প্রভাবেই ব্যক্তির আচরণে দেশপ্রেম ও জাতীয়তাবোধের মতো আচরণ লক্ষ করা যায় ঠিক যেমনটা আমরা লক্ষ করি মোবারক আলীর ক্ষেত্রে। রাজনীতির প্রধান উদ্দেশ্যই হওয়া উচিত জনগণের সেবা এবং মোবারক আলীও জনসেবার উদ্দেশ্যেই চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী হয়েছেন। তার উদ্দেশ্য সৎ ও মহৎ। তিনি জনসেবার জন্য চেয়ারম্যান হতে চান। অপরপক্ষে, আব্দুল জববারের অন্যতম উদ্দেশ্য হচ্ছে জনগণের টাকা আত্মসাৎ যা কখনোই প্রকৃত মূল্যবোধের বৈশিষ্ট্যমূলক আচরণের মধ্যে পড়ে না। অতএব, মোবারক আলী ও আব্দুল জববারের মধ্যে প্রকৃত রাজনৈতিক মূল্যবোধের অধিকারী হচ্ছেন মোবারক আলী।
ঘ. আব্দুল জববারের গ্রামের চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী হওয়ার পেছনে যে উদ্দেশ্যটি কাজ করছে তা হলো জনগণের জন্য নির্ধারিত টাকা আত্মসাৎ করা। এটি খুবই নিম্নমানের, অনৈতিক চিন্তাভাবনার উদাহরণ। এক্ষেত্রে, যে মূল্যবোধটি প্রকট আকার ধারণ করেছে তা হচ্ছে অর্থনৈতিক মূল্যবোধ।
অর্থনৈতিক মূল্যবোধ মূলত ব্যক্তির অর্থ সম্পর্কিত আচার-আচরণ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত এবং অর্থনৈতিক বিশ্বাসের উপর প্রতিষ্ঠিত। এ ধরনের মূল্যবোধসম্পন্ন ব্যক্তিরা অর্থ উপার্জন, অর্থ সঞ্চয়, মিতব্যয়িতা ইত্যাদি। প্রবণতার মাধ্যমে নিজেকে মানসিকভাবে প্রতিষ্ঠিত করে। তার আগ্রহ থাকে সম্পদ সঞ্চিতকরণের প্রতি। উল্লেখযোগ্য বিষয় হচ্ছে এ ধরনের ব্যক্তিবর্গের মধ্যে অনেকেই বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যকে ধারণ করে থাকে, গবেষণায় অর্থ সম্পদের প্রতি অধিক আগ্রহী এমন মনোভাব পোষণকারী ব্যক্তি অর্থনৈতিক মূল্যবোধের সাথে অর্থ সম্পদের প্রতি কম আগ্রহী এমন মনোভাব পোষণকারী ব্যক্তির অর্থনৈতিক মূল্যবোধের একটি বৈশিষ্ট্যপূর্ণ পার্থক্য লক্ষ করা যায়। এ ধরনের মূল্যবোধসম্পন্ন ব্যক্তিরা অনেক ক্ষেত্রেই নৈতিক মূল্যবোধ বা রাজনৈতিক, সামাজিক মূল্যবোধের প্রতি উদাসীনতা প্রদর্শন করে, এ ধরনের ব্যক্তিরা ধনকুবের হতে চায় তাই ধন-সম্পদের জন্য নৈতিকতাকেও বর্জন করতে তাদের বাধে না। ঠিক এরকম বৈশিষ্ট্যই লক্ষ করা যায় আব্দুল জববারের মধ্যেও। তিনি জনগণের টাকা আত্মসাতের মতো নিন্দনীয় উদ্দেশ্য নিয়ে চেয়ারম্যান হতে চান। তার অর্থনৈতিক মূল্যবোধ এতটাই নেতিবাচকরূপে প্রকট আকার ধারণ করেছে যে নৈতিকতার কোনো অবকাশ তিনি রাখেন নি। নৈতিকতাকে তিনি বর্জন করে অনৈতিক পথ বেছে নিয়েছেন একমাত্র ধন-সম্পদের জন্য। এ ধরনের আচরণ কোনোভাবে গ্রহণযোগ্য নয়।
১০. আয়েশা পরিবারের সব কাজ দেখাশোনা করে। কিন্তু সে খুবই কঞ্জুস এবং বাস্তববাদী। অর্থ উপার্জন, অর্থ সঞ্চয় এবং মিতব্যয়িতা তার ধর্ম। কিন্তু তার বান্ধবী মালিহা অন্য ধরনের। তার কাছে সৌন্দর্য সত্য, সত্যই সুন্দর। তার মতে Keat ঠিকই বলেছেন "A thing of beauty is a joy for ever."
ক. রকিচ এর মতে মূল্যবোধ কী?
খ. মূল্যবোধের বৈশিষ্ট্য লেখ।
গ. আয়েশার কোন ধরনের মূল্যবোধ রয়েছে- ব্যাখ্যা কর।
ঘ. মালিহার মূল্যবোধের সাথে তুমি কি একমত?তোমার মতামত উল্লেখ কর।
১০ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. রকিচ (১৯৭৩) এর মতে, ‘‘মূল্যবোধ হলো জ্ঞানের সঙ্গে আন্তরিক দায়বদ্ধতা।’’
খ. মূল্যবোধ হলো মানুষের ইচ্ছার একটি বিশেষ মানদন্ড, যার দ্বারা মানুষের আচার-ব্যবহার, রীতি-নীতি নিয়ন্ত্রিত হয় এবং সমাজের মানুষের কাজের ভালো-মন্দ বিচার হয়। মূল্যবোধের বৈশিষ্ট্যগুলো হলো:
১. মূল্যবোধ এক ধরনের আদর্শ।
২. মূল্যবোধ স্বাধীনভাবে গঠিত।
৩. ব্যক্তির আচার-আচরণ তথা তার চরিত্র গঠনে তার নিজস্ব সমাজের মূল্যবোধ প্রভাব রাখে।
৪. মূল্যবোধ সুসংগত ও সুসংলগ্নভাবে গঠিত।
৫. মূল্যবোধ সংখ্যায় অল্প।
৬. মূল্যবোধ হলো সমাজের চালিকা শক্তি।
৭. মূল্যবোধ সামাজিক ঐক্য ও সংহতি রক্ষা করে।
৮. মূল্যবোধের সাথে কৃষ্টি সম্পর্ক যুক্ত।
গ. আয়েশার মধ্যে অর্থনৈতিক মূল্যবোধ রয়েছে। কারণ অর্থ উপার্জন, অর্থ সঞ্চয় এবং মিতব্যয়ী তার আদর্শ।
আমাদের সমাজে এমন অনেক ব্যক্তি আছে, যারা অর্থ উপার্জন ও অর্থ সঞ্চয়ে অনেক বেশি সতর্ক। তারা সাধারণত মিতব্যয়ী হয়। এ ধরনের মানুষরা অর্থনৈতিক মূল্যবোধ দ্বারা প্রভাবিত। আমাদের সমাজজীবনে অর্থের প্রয়োজনীয়তা অপরিহার্য। এক্ষেত্রে সমাজে বিভিন্ন ব্যক্তি টাকা/অর্থ উপার্জনে ব্যস্ত থাকে। অর্থনৈতিক মূল্যবোধ দ্বারা প্রভাবিত ব্যক্তিরা নৈতিকতা বা অনৈতিকতার বিচার না করে অর্থের উৎস খোঁজা এবং উপার্জনে ব্যস্ত থাকে। এ ধরনের ব্যক্তিদের আচরণে তাত্ত্বিক মূল্যবোধের প্রভাবও লক্ষ করা যায়। ব্যক্তি আচরণে অর্থনৈতিক মূল্যবোধের সাথে সাথে অন্যান্য মূল্যবোধগুলোর দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হতে থাকে। যেমন- অর্থবান ব্যক্তিদের মধ্যে ধর্মীয় মূল্যবোধও বিশেষভাবে পরিলক্ষিত হয়। অর্থ ও বিত্তশালী ব্যক্তিরাই মসজিদ, মন্দিরে দান করে থাকে এবং ধর্মীয় সংস্পর্শ রাখার জন্য এদের নামাজ, রোজা বা মন্দিরে যাওয়ার প্রবণতা বেশি দেখা যায়।
আয়েশা অর্থনৈতিক মূল্যবোধসম্পন্ন মানুষ হওয়ায় এসব বৈশিষ্ট্য তার মধ্যে রয়েছে।
ঘ. মালিহার মূল্যবোধের সাথে আমি সম্পূর্ণ একমত নই। তবে তার মধ্যে যে মূল্যবোধ রয়েছে তার অনেক ক্ষেত্রেই প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।
কারণ সৌন্দর্যপ্রিয় ব্যক্তি তার মানসিকতা থেকে কোনটি বেশি আকর্ষণীয় তা খুঁজে পায়। এ ধরনের ব্যক্তিদের সৌন্দর্যবোধ অত্যন্ত প্রবল। এরা জীবনে সৌন্দর্যপিপাসু হয়ে থাকে এবং প্রকৃতির মধ্যে সর্বদা সৌন্দর্য খুঁজে পেতে চায়। এ ধরনের মূল্যবোধে ব্যক্তি তার সামাজিক রীতি-নীতির একটি অনুপম ঐকতান ও সুসামঞ্জস্যপূর্ণতাকে বিশেষভাবে প্রাধান্য দেয়। তবে এ মূল্যবোধ ব্যক্তির তাত্ত্বিক দৃষ্টিভঙ্গি বা বিচার বিশ্লেষণ দ্বারা পরিচালিত না হয়ে, এটি মূলত তার মনস্তাত্ত্বিক চাহিদা ও আবেগ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। তারা তাত্ত্বিক প্রয়োগের দিকটিকে তেমনভাবে বিবেচনায় রাখে না।
অনেক ক্ষেত্রেই এই সৌন্দর্যবোধ মূল্যবোধে প্রগতিশীল চিন্তাভাবনায় ব্যক্তির প্রাত্যহিক জীবনে এর শিল্পসম্মত উপযুক্ততাকে বিশেষভাবে কাজে লাগানো হয়। সৌন্দর্যপিপাসু ব্যক্তিদের মতে, সৌন্দর্যের সত্য চিরকাল আনন্দের। তবে একথা ঠিক যে ব্যক্তিজীবন শুধু সৌন্দর্য দিয়ে চলে না। এরা রাজনৈতিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধ থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। এসব কারণে মালিহার মূল্যবোধের সাথে আমি সম্পূর্ণভাবে একমত নই।
0 Comments:
Post a Comment