HSC মনোবিজ্ঞান ২য় পত্র (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর pdf download অধ্যায় ৫ - Exam Cares

Breaking

Home Top Ad

Responsive Ads Here

Post Top Ad

Responsive Ads Here

HSC মনোবিজ্ঞান ২য় পত্র (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর pdf download অধ্যায় ৫

এইচএসসি পরীক্ষার পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি
HSC Psychology 2nd Paper Srijonshil question and answer. HSC Psychology 2nd Paper (Srijonshil) Creative Questions pdf download. HSC Monobiggan 2nd paper Srijonshil Proshno Uttor.

উচ্চ মাধ্যমিক
মনোবিজ্ঞান
দ্বিতীয় পত্র

সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
অধ্যায়-৫

HSC Psychology
2nd Paper
Srijonshil Question and Answer pdf download

১. দৃশ্যকল্প-১: জনাব আবদুল করিম একটি বিদেশি কোম্পানির উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা। ইদানিং কাজের চাপের কারণে তাকে অতিরিক্ত সময় অফিসে কাটাতে হয়। আজকাল অফিসে প্রায়ই তার মাথা ব্যথা এবং কাজের প্রতি অনাগ্রহ ইত্যাদি সমস্যাগুলো দেখা দিচ্ছে।
দৃশ্যকল্প-২: এইচএসসি পাশের পর সোমা বুয়েটে ভর্তি পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিয়ে তৈরি করেছিল নিজেকে। কিন্তু বুয়েটে ভর্তি পরীক্ষায় সে কৃতকার্য হতে পারেনি। তাই সে মানসিকভাবে প্রচন্ড রকম ভেঙ্গে পড়েছে।
ক. চাপ কী?
খ. ‘জলে কুমির ডাঙায় বাঘ’ কে বিকর্ষণ-বিকর্ষণ দ্বন্দ্ব বলা হয় কেন?
গ. সোমার মানসিক অবস্থাকে মনোবিজ্ঞানের ভাষায় কী বলা হয়?ব্যাখ্যা কর।
ঘ. জনাব করিমের সমস্যার সাথে সম্পর্কিত অবস্থাটিকে কী বলা হয়?এর মনোবিজ্ঞানের ভাষায় প্রকারভেদগুলো বিশ্লেষণ কর।

১ নম্বর সৃজনীশল প্রশ্নের উত্তর
ক. ইংরেজি Stress শব্দের অর্থ চাপ। তাই শাব্দিক অর্থে ব্যক্তি যখন মানসিকভাবে কোনো চাপের সম্মুখীন হয় তাকে মানসিক চাপ বলে। অর্থাৎ যে ধরনের পরিস্থিতি ব্যক্তির মধ্যে মানসিক অস্বস্থিকর অবস্থা সৃষ্টি করে সেই পরিস্থিতিই হলো মানসিক চাপ।

খ. বিকর্ষণ-বিকর্ষণ দ্বন্দ্বকে ‘জলে কুমির ডাঙ্গায় বাঘ’ বলা হয়। এর কারণ নিচে ব্যাখ্যা করা হলো-
এ ধরনের দ্বন্দ্বে একজন ব্যক্তি একই সময়ে প্রায় সমশক্তিসম্পন্ন দুটি বিকর্ষণমূলক বা ঋণাত্মক (-) বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন লক্ষ্যের দ্বারা তাড়িত হয়। দুটি অপছন্দনীয় লক্ষ্যের মধ্যে থেকে তাকে বাধ্য হয়ে যেকোনো একটিকে বেছে নিতে হবে। অর্থাৎ ‘‘জলে কুমির ডাঙ্গায় বাঘ’’ প্রবাদটি এক্ষেত্রে প্রযোজ্য।
উদাহরণস্বরূপ: একটি শিশু স্কুলে যেতে চায় না; কারণ তার পড়া তৈরি হয়নি; সেজন্য শিক্ষক তাকে শাস্তি দিবেন, অথচ বাড়িতে থাকলেও মা-বাবার বকুনি বা শাস্তি পেতে হবে। এক্ষেত্রে শিশুটি বিকর্ষণ-বিকর্ষণ দ্বন্দ্বের সম্মুখীন।

গ. উদ্দীপকে সোমার মানসিক অবস্থাকে মনোবিজ্ঞানের ভাষায় হতাশা বলা হয়। হতাশা হলো সফলতা লাভের আশাভঙ্গের একটি মানসিক অনুভূতি। প্রেরণা দ্বারা চালিত হয়ে মানুষ সর্বদা লক্ষ্যবস্তু অর্জনের জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে। এ লক্ষ্যবস্তু অর্জনে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হলে বা বাধাপ্রাপ্ত ব্যক্তি অসহায় বোধ করে এবং এর ফলশ্রুতিতে দেখা দেয় হতাশা। হতাশাগ্রস্ত একজন ব্যক্তির সকল প্রচেষ্টা যখন ব্যর্থ হয়ে যায় তখন সে ব্যর্থতার প্রতিক্রিয়া হিসেবে রাগ, দুঃখ এবং দুশ্চিন্তা প্রকাশ করে থাকে। চরম হতাশার ফলে ব্যক্তি বিভিন্ন ধরনের অপ্রতাশিত ও ক্ষতিকর আচরণ করে থাকে।
উদ্দীপকে সোমার দিকে লক্ষ করলে দেখতে পাই, সে পড়াশোনা শেষ করে একজন প্রকৌশলী হতে চায়। সে লক্ষ্যে সে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে বিভিন্ন শিক্ষা স্তর পার করে প্রকৌশলী ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে অকৃতকার্য হয় এবং মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়ে। এখানে ভর্তি পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়া তার লক্ষ্যবস্তুতে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধক হিসেবে কাজ করে। ফলে সে নিজেকে অযোগ্য মনে করে অসহায়ত্ব বোধ করে। তার এই অসহায়ত্ব বোধই তার ভেতরে হতাশার জন্ম দেয়। তাই উদ্দীপকে সৃষ্ট সোমার মানসিক বিপর্যস্ত অবস্থাকে হতাশা বলে আখ্যায়িত করা যায়।

ঘ. উদ্দীপকে জনাব করিমের সমস্যার সাথে সম্পর্কিত অবস্থাটিকে মনোবিজ্ঞানের ভাষায় ‘‘কর্মভার’’ বলা হয়।
কর্মভারকে দু'ভাগে ভাগ করা যায়। যথা-
১। দৈহিক বা বস্তুনিষ্ঠ
২। মানসিক বা ব্যক্তিনিষ্ঠ।
নিচে প্রকারভেদগুলো বিশ্লেষণ করা হলো-
দৈহিক কর্মভারের প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এর ফলে কতগুলো শারীরবৃত্তীয় পরিবর্তন ঘটে, যেগুলো ব্যক্তি নিজে এবং অন্যরাও প্রত্যক্ষ করতে বা পরিমাপ করতে পারে। কিন্তু সব ধরনের কর্মভারের দৈহিক উপসর্গ থাকে না। যেমন, হালকা কায়িক পরিশ্রমের ফলে যে কর্মভার সৃষ্টি হয়, তাতে তেমন কোনো শারীরবৃত্তীয় পরিবর্তন ঘটে না। পক্ষান্তরে, মানসিক কর্মভার হচ্ছে কর্মভারের অনুভূতি বা অবসাদবোধ, যা শুধু ব্যক্তি নিজে উপলব্ধি করতে পারে। অন্যরা তা প্রত্যক্ষও করতে পারে না এবং বস্তুনিষ্ঠভাবে পরিমাপও করতে পারে না।

২. দিনমজুর করিম শেখের মেধাবী ছেলে সিফাত এবার মেডিক্যাল ও বুয়েটের ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে দুটোতেই কৃতকার্য হয়। সে ভীষণ চিন্তিত কোনটাতে ভর্তি হবে। মেডিক্যাল না বুয়েটে। ছেলের সাফল্যে বাবা খুশী হলেও ভীষণ অস্থির ও চিন্তিত সিফাতের ভর্তি ও পড়াশুনার খরচ চালানো নিয়ে। অবশেষে ছেলের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে তার একমাত্র সম্বল দুধের গাভী বিক্রয় করার সিদ্ধান্ত নেয়। আর নিজেকে এই বলে সান্তবনা দেয় পড়াশুনা শেষ করে ছেলে সংসারের হাল ধরবে।
ক. হতাশার সংজ্ঞা দাও।
খ. কর্মভার কীভাবে মানসিক চাপ সৃষ্টি করে?
গ. উদ্দীপকে সিফাতের মধ্যে কোন ধরনের দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়েছে?ব্যাখ্যা কর।
ঘ. করিম শেখ মানসিক চাপ সামলানোর যে সমস্ত কৌশল অবলম্বন করে তা কতখানি যৌক্তিক?মতামত দাও।

২ নম্বর সৃজনীশল প্রশ্নের উত্তর
ক. হতাশার সংজ্ঞা নিম্নরূপ-
প্রেষিত আচরণ বাধাপ্রাপ্ত হলে অর্থাৎ প্রাণী লক্ষ্যে পৌঁছাতে না পারলে তার মধ্যে যে অবস্থার সৃষ্টি হয় তাকে হতাশা বলে।

খ. মানসিক চাপ সৃষ্টির ক্ষেত্রে কর্মভার একটি বিশেষ উদ্দীপক বা বৈশিষ্ট্য। এমন একটি বিষয়, যেখানে কোনো একটি উদ্দীপক তীব্র হয়ে ওঠে, যা আমাদের স্বাভাবিক কর্ম পরিবেশকে যন্ত্রণাদায়ক করে তোলে। তবে আমরা ঐ সকল যন্ত্রণাদায়ক উদ্দীপককে স্বাভাবিক হিসেবে গ্রহণ করে নিতে পারি যদি আমরা অনেক সময় ধরে তার মধ্যে অবস্থান করি। কারণ তখন আমরা উদ্দীপকগুলোর সাথে অভিযোজিত হয়ে পড়ি। অপরদিকে যদি উদ্দীপকের তীব্রতার সাথে আমাদের অভিযোজিত হওয়ার সীমা অতিক্রম হয়ে যায়, সেক্ষেত্রে আমরা মানসিক চাপ অনুভব করি।

গ. উদ্দীপকে সিফাতের মধ্যে আকর্ষণ-আকর্ষণ ধরনের দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়েছে। নিচে ব্যাখ্যা করা হলো-
এ ধরনের দ্বন্দ্বে দুটি আকর্ষণী বা ধনাত্মক (+) বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন লক্ষ্যবস্তু সমান শক্তিতে একই সময়ে ব্যক্তিকে আকর্ষণ করে। এক্ষেত্রে ব্যক্তিকে কেবলমাত্র যেকোনো একটি লক্ষ্যকে গ্রহণ করতে হবে। দুটিকে একই সঙ্গে গ্রহণ করা তার পক্ষে সম্ভব নয়। অর্থাৎ আকর্ষণ-আকর্ষণ দ্বন্দ্বে দুটি ধনাত্মক লক্ষ্যবস্তু উপস্থিত থাকে এবং সমান আকর্ষণীয়।
উদ্দীপকে দিনমজুর করিম শেখের মেধাবী ছেলে সিফাত এবার মেডিকেল ও বুয়েটের ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে দুটোতেই কৃতকার্য হয়। দুটোই আকর্ষণীয় কিন্তু তাকে যে কোনো একটিতে ভর্তি হতে হবে। এমতাবস্থায় তার মধ্যে এ ধরনের আকর্ষণ-আকর্ষণ দ্বন্দ্ব মানসিক চাপের সৃষ্টি হয়। এ ধররে মানসিক চাপের সমাধান খুব সহজ। কারণ, যে কোনো একটি বেছে নিলেই হয়।

ঘ. উদ্দীপকে করিম শেখ মানসিক চাপ সামলানোর যে সমস্ত কৌশল অবলম্বন করে তার মধ্যে প্রথমত সে তার একমাত্র সম্বল দুধের গাভী বিক্রি করে দেয় এবং দ্বিতীয়ত সে এই বলে নিজেকে সান্তবনা দেয় যে পড়াশুনা শেষে ছেলে সংসারের হাল ধরবে। কিন্তু মানসিক চাপ সামলানের ক্ষেত্রে করিম শেখের এ কৌশল দুটি মোটেও যৌক্তিক নয়। এক্ষেত্রে করিম শেখকে মানসিক চাপ সামলানের জন্য সামাজিক সহায়তা লাভের উদ্যেগ গ্রহণ করা উচিত ছিল বলে আমি মনে করি। নিচে আমার মতামত উপস্থাপন করা হলো-
সামাজিক সহায়তা লাভের উদ্যোগ হলো এমন একটি পদ্ধতি যার মাধ্যমে ব্যক্তি তার পূর্বের কোনো মানসিক চাপমূলক পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে সৃষ্ট যে মানসিক চাপ, তা সামলানোর ক্ষেত্রে সামাজিক সমর্থন ও ভালোবাসা পাওয়ার চেষ্টা। সামাজিক সহায়তা বা সমর্থন লাভের ক্ষেত্রে তিনটি উপায় বা ফর্মের কথা উল্লেখ করেন। যেমন-

১. ব্যক্তি জীবনের বিভিন্ন ঘটনাসমূহের প্রেক্ষিতে সৃষ্ট যে মানসিক চাপ, তা কমানোর একটি উপায় হলো বাস্তবিক কোনো সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে অপরের নির্দেশনা গ্রহণ এবং ব্যক্তিগত তথ্যের আদান-প্রদান করা। কারণ, এর মধ্য দিয়েই আমরা মানসিক চাপ কমানো বা সামলানোর একটি জ্ঞানীয় দক্ষতা অর্জন করি।

২. ব্যক্তি যদি পারিবারিক ও সামাজিকভাবে উপযুক্ত মায়া-মমতা ও সহায়তা লাভ করে, তবে তার জীবনের মানসিক চাপ কমানো বা সামলানো সহজ হয়ে ওঠে। কারণ, পারিবারিক ও সামাজিকভাবে পাওয়া এই যত্ন, মায়া-মমতা ও প্রতিপলানই ব্যক্তির জীবনে এক ধরনের আত্ম-সম্মান ও মনোবল তৈরি তথা মানসিক চাপ কমাতে বা সামলাতে সাহায্য করে থাকে।

৩. ব্যক্তি যদি পারিবারিক ও সামাজিকভাবে উপযুক্ত নিরাপত্তা ও অনুপ্রেরণা লাভ করে, তবে তার জীবনের অনেক মানসিক চাপ কমানো বা সামলানো সহজ হয়ে ওঠে। কারণ, পারিবারিক ও সামাজিকভাবে পাওয়া এই নিরাপত্তা, আশ্বস্ততা ও অনুপ্রেরণাই ব্যক্তির জীবনের মানসিক চাপ কমাতে বা সামলাতে এবং বিপর্যস্ত জীবনকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে সর্বাধিক সাহায্য করে থাকে।

ব্যক্তি জীবনের মানসিক চাপ কমানো বা সামলানোর ক্ষেত্রে সামাজিক সহায়তা লাভের গুরুত্ব সর্বাধিক। কারণ, এটি ব্যক্তি জীবনে এক ধরনের আলাদা প্রভাব তৈরি করে। মানসিক চাপ সামলানোর ক্ষেত্রে উদ্দীপকে করিম শেখ উপরোক্ত ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারতেন। এ ধরনের ব্যবস্থাগ্রহণের মাধ্যমে তিনি অতি সহজেই মানসিক চাপ থেকে পরিত্রাণ পেতে পারতেন। অর্থাৎ পরিশেষে বলা যায় যে, ব্যক্তি জীবনের মানসিক চাপ কমানো বা সামলানোর ক্ষেত্রে সামাজিক সহায়তা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যা, আমাদেরকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে তথা মানসিক চাপ সামলাতে সহায়তা করে।

৩. ছেলেবেলা থেকে মিজানের স্বপ্ন সে প্রকৌশলী হবে। কিন্তু যথেষ্ট প্রস্তুতি থাকা সত্ত্বেও ভর্তি পরীক্ষায় সে কৃতকার্য হতে পারে না। এ অবস্থায় সে মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে। তার এ মানসিক অবস্থা বুঝতে পেরে তার বড় ভাই গঠনমূলক প্রতিক্রিয়া করার কথা বলে। এতে সে অনুপ্রাণিত হয়ে তার ব্যর্থতার কারণ মূল্যায়ন করে এবং যথাযথ প্রস্তুতি নিয়ে সে পুনরায় পরীক্ষা দেয় এবং সফলতা অর্জন করে।
ক. মানসিক চাপ কী?
খ. বিকর্ষণ-বিকর্ষণ দ্বন্দ্ব বলতে কী বুঝ?
গ. মিজানের মানসিক বিপর্যস্ত উৎস কী?
ঘ. মিজান কিভাবে তার স্বাভাবিক জীবনে ফিরে তা পাঠ্যবইয়ের আলোকে আলোচনা কর।

৩ নম্বর সৃজনীশল প্রশ্নের উত্তর
ক. দৈনন্দিন জীবনের নানাবিধ চাহিদা অথবা মিথস্ক্রিয়ায় সৃষ্ট নানাবিধ সমস্যা মোকাবেলায় ব্যক্তির মধ্যে যে শারীরিক ও মানসিক প্রক্রিয়াগত পীড়নমূলক অবস্থা তৈরি হয় তাকেই মানসিক চাপ বলে।

খ. এ ধরনের দ্বন্দ্বে একজন ব্যক্তি একই সময়ে প্রায় সমশক্তি সম্পন্ন দুটি বিকর্ষণমূলক বা ঋণাত্মক (-) বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন লক্ষ্যের দ্বারা তাড়িত হয়। দুটি অপছন্দনীয় লক্ষ্যের মধ্য থেকে তাকে বাদ্য হয়ে যেকোনো একটিকে বেছে নিতে হবে। অর্থাৎ ‘‘জলে কুমির ডাঙ্গায় বাঘ’’ প্রবাদটি এক্ষেত্রে প্রযোজ্য।
উদাহরণস্বরূপ:
একটি শিশু স্কুলে যেতে চায় না; কারণ তার পড়া তরি হয়নি, সেজন্য শিক্ষক তাকে শাস্তি দিবেন, অথচ, বাড়িতে থাকলেও মা-বাবার বকুনি বা শাস্তি পেতে হবে। এক্ষেত্রে শিশুটি বিকর্ষণ-বিকর্ষণ দ্বন্দ্বের সম্মুখীন।

গ. উদ্দীপকে মিজানের মানসিক বিপর্যস্ততাকে হতাশা বলা হয়। হতাশা হলো সফলতা লাভের আশা ভঙ্গের একটি মানসিক অনুভূতি প্রেরণা দ্বারা চালিত হয়ে মানুষ সর্বদা লক্ষ্যবস্তু অর্জনের জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে। এ লক্ষ্যবস্তু অর্জনে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হলে বা বাধাপ্রাপ্ত ব্যক্তি অসহায় বোধ করে এবং এর ফলশ্রুতিতে দেখা দেয় হতাশা। হতাশাগ্রস্থ একজন ব্যক্তির সকল প্রচেষ্টা যখন ব্যর্থ হয়ে যায়, তখন সে ব্যর্থতার প্রতিক্রিয়া হিসেবে রাগ, দুঃখ এবং দুশ্চিস্তা প্রকাশ করে থাকে। চরম হতাশার ফলে ব্যক্তি বিভিন্ন ধরনের অপ্রত্যাশিত ও ক্ষতিকর আচরণ করে থাকে।
উদ্দীপকে মিজানের দিকে লক্ষ করলে দেখতে পাই, সে পড়াশোনা শেষ করে একজন প্রকৌশলী হতে চায়। সে লক্ষ্যে সে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে বিভিন্ন শিক্ষাস্তর পার করে প্রকৌশলি ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে প্রথমবার অকৃতকার্য হয় এবং মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে। অবস্থায় সে লেখাপড়া বাদ দেওয়ার মতো ক্ষতিকর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। এখানে ভর্তি পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়ায় তার লক্ষ্যবস্তুতে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধক হিসেবে কাজ করে। ফলে সে নিজেকে অযোগ্য মনে করে অসহায়ত্ব বোধ করে। তার এই অসহায়ত্ব বোধই তার ভেতরে হতাশার জন্ম দেয়। তাই উদ্দীপকে সৃষ্ট জ্ঞানের মানসিক বিপর্যস্ততাকে হতাশা বলে আখ্যায়িত করা যায়।

ঘ. উদ্দীপকে মিজান চাপমূলক পরিস্থিতির পুনর্মূল্যায়ন কৌশল অবলম্বন করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে। নিমেণ তা পাঠ্য বইয়ের আলোকে আলোচনা করা হলো-
মানুষ তার জীবনের বিভিন্ন স্তরে হতাশা, কর্মভার, দ্বন্দ্ব ইত্যাদি প্রতিকূল পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়। এসব পরিস্থিতি মানসিক চাপ সৃষ্টি করে এবং এ চাপ এতটাই গভীর হয় যে তা কখনো কখনো ব্যক্তির পুরো জীবনকে বদলে দেয়। এরূপ পরিস্থিতিতে ব্যক্তি নানাভাবে মানসিক চাপ সামলানোর চেষ্টা করে এবং নিজেকে চাপমুক্ত রাখার প্রচেষ্টা চালায়। ব্যক্তি চাপ সামলানোর জন্য যে সকল কৌশল অবলম্বন করে তার মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশল হলো চাপমূলক পরিস্থিতির পুনর্মূল্যায়ন করা। এছাড়াও ব্যক্তি চাপ মোকাবিলার পশ্চাদপ্রসরণ, সমঝোতা এবং বিভিন্ন প্রকারের আত্মরক্ষামূলক কৌশল অবলম্বন করে থাকে।
উদ্দীপকে মিজান তার মানসিক চাপ কমনোর জন্য উদ্ভূত পরিস্থিতি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে মূল্যায়ন করে। এখানে সে প্রকৃত সমস্যাটিকে চিহ্নিত করে চাপ সামলানোর মতো প্রয়োজনীয় মানসিক শক্তি সঞ্চয়ের ওপর গুরুত্বারোপ করে। ফলে মিজান দৃঢ় মানসিক শক্তি নিয়ে পুনরায় নব উদ্যমে ব্যর্থতাকে সফলতায় পরিণত করার জন্য আত্মনিয়োগ করে এবং সবশেষে সে তার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে সক্ষম হয়। আমরা চাপমূলক পরিস্থিতির পুনর্মূল্যায়নের দিকে খেয়াল করলে দেখতে পাই, সেখানে চাপ সৃষ্টিকারী সমস্যার জন্য সরাসরি প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলা হয়েছে। তাই দেখা যায়, সেখানে ঐ পরিস্থিতির সঠিক পুনর্মূল্যায়ন করতে সক্ষম হয়েছে। পরিশেষে বলা যায়, হতাশাজনক পরিস্থিতিতে আমাদের একেবারেই ভেঙে পড়া উচিত নয় বরং দৃঢ় মানসিক প্রত্যয় নিয়ে উক্ত পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে হবে। তাহলে সকল প্রকার দ্বন্দ্ব-হতাশার অবসান ঘটিয়ে লক্ষ্যবস্তুতে পৌঁছানো সম্ভব হবে।
 
৪. চাহিদা → বাধা → লক্ষ্য → [?]
ক. ‘?’ চিহ্নিত স্থানে কী হবে?
খ. মানসিক চাপের ৩টি বৈশিষ্ট্য লিখ।
গ. উদ্দীপকের ‘?’ চিহ্নিত স্থানের পরিস্থিতিসমূহ ব্যাখ্যা কর। 
ঘ. উদ্দীপকে উল্লেখিত সমস্যা মোকাবেলার উপায়সমূহ আলোচনা কর।

৪ নম্বর সৃজনীশল প্রশ্নের উত্তর
ক. ‘?’ চিহ্নিত স্থানে ‘মানসিক চাপ হবে।

খ. মানসিক চাপের ৩টি বৈশিষ্ট্য নিম্নরূপ:
১. মানসিক চাপ স্নায়ুতন্ত্র, গ্রন্থি ও হৃৎপিন্ডের কাজের উপর বাধা দেয়।
২. মানসিক চাপ শারীরিক, পরিবেশগত ও সামাজিক ঘটনা দ্বারা সৃষ্ট।
৩. মানসিক চাপ মানুষের আচরণে নেতিবাচক প্রভাব বিস্তার করে।

গ. উদ্দীপকে ‘?’ স্থানে রয়েছে মানসিক চাপ। জীবন প্রসারের প্রতিটি ধাপে মানুষ চাপের সম্মুখীন হয়ে থাকে। বিভিন্ন বয়সে চাপমূলক বিভিন্ন পরিস্থিতি তৈরি হয়। নিচে মানসিক চাপমূলক পরিস্থিতিসমূহ ব্যাখ্যা করা হলো-
১. স্নেহ ভালোবাসার বঞ্চনা: জন্মের পর প্রথম আশ্রয়স্থল হলো পরিবার। মায়ের পরশ, পিতার ভালোবাসা এবং ভাইবোনদের স্নেহ শিশুর অসহায়ত্ব দূর করে এবং নিরাপত্তাবোধের জন্ম দেয়। মাতৃস্নেহের বঞ্চনা শিশুর মধ্যে সমস্যা সৃষ্টি করে। ফলে এরা পরবর্তীতে নেতিবাচক আচরণে জড়িয়ে যেতে পারে।
২. স্বামী বা স্ত্রীর মৃত্যু: শিশুকালেই যদি বাবা মা অথবা উভয়ের একজনের মৃত্যু হয় তবে চাপমূলক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। এ কারণে অনেক সময় তাদের বিকাশমূলক সমস্যা দেখা দিতে পারে।
৩. বিবাহ বিচ্ছেদ: সন্তান সবসময় বাবা ও মায়ের স্নেহ ভালোবাসা প্রত্যাশা করে। কোনো কারণে তাদের বিবাহবিচ্ছেদ ঘটলে সে যে কোনো একজনের কাছে থাকে বা অনেক সময় আশ্রমে থাকে। ফলে চাপমূলক পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়।
৪. শৈশবে মানসিক আঘাত: শৈশবকালের ভীতিকর কোনো ঘটনা শিশুর মধ্যে স্থায়ী হতে পারে। যা পরবর্তী জীবনে তাকে চাপমূলক অবস্থায় রাখবে।
৫. বাবা মায়ের ব্যক্তিত্ব: বাবা মা উভয়ে যদি চাকরিজীবী হন এবং দুর্নীতিতে জড়িয়ে অসৎ অর্থ উপার্জন করেন তবে সন্তানের উপর তার প্রভাব পড়ে।
৬. আবেগ: মানসিক চাপমূলক পরিস্থিতি সৃষ্টির জন্য অনেক সময় অবদমিত আবেগ কাজ করে থাকে। যেমন- প্রেমে ব্যর্থতা, বন্ধুদের সাথে ঝগড়া।
৭. পিতামাতার উচ্চ আশা: কোনো বাবা মা সন্তানের যোগ্যতা অপেক্ষা তার নিকট থেকে অধিক প্রত্যাশা করে। এ লক্ষ্যে সন্তানকে তারা প্রচন্ড চাপ দেয়। এতে তারা ব্যর্থ হলে অনেক সময় আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলে। এভাবে তারা চাপের সম্মুখীন হয়।
৮. শারীরিক ত্রুটি: দৈহিন গঠন, গায়ের রং, ওজন, উচ্চতা-এসব বৈশষ্ট্য যদি অস্বাভাবিক হয় তবে ব্যক্তি চাপমূলক পরিস্থিতির শিকার হতে পারে।
৯. দাঙ্গা: গোষ্ঠীতে গোষ্ঠীতে দাঙ্গা-হাঙ্গামা, রাজনৈতিক সহিংসতা, সন্ত্রাস, আর্থিক ও সামাজিক কারণে মানুষের মধ্যে ভয়ভীতি সৃষ্টি হলে কোনো কোনো ব্যক্তি চাপমূলক পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে পারে।
১০. বেকারত্ব: অধিক জনগোষ্ঠী এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ কম এমতাবস্থায় বেকারত্বের সৃষ্টি হয়। শিক্ষিত ব্যক্তি দীর্ঘদিন চাকরি না পেলে চাপের মুখোমুখি হতে পারে।

ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত সমস্যাটি হলো মানসিক চাপ। মানসিক চাপ সামলানোর বিভিন্ন উপায় রয়েছে। নিচে মানসিক চাপ মোকাবেলার উপায়সমূহ আলোচনা করা হলো-
১. চাপমূলক পরিস্থিতির পুনর্মূল্যায়ন: চাপমূলক পরিস্থিতিকে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পুনর্মূল্যায়নের ব্যবস্থা করতে হবে। প্রকৃত সমস্যাটিকে চিহ্নিত করতে হবে এবং নিজের মধ্যে প্রয়োজনীয় দক্ষতার উন্নয়ন সাধন করতে হবে। পরিশেষে নব উদ্যমে সর্বশক্তি প্রয়োগ করে সমস্যার সমাধানে আত্মনিয়োগ করা। অর্থাৎ চাপমূলক যে সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে তা সরাসরি সমাধানের জন্য পদক্ষেপ নিতে হবে। সরাসরি মোকাবিলার সাথে উপরোক্ত বিষয়গুলো জড়িত রয়েছে। যে চাপমূলক পরিস্থিতি ব্যক্তি ভোগ করছে সেটিকে উপরোক্তভাবে সরাসরি মোকাবিলা করতে হবে।
২. পশ্চাৎপসারণ: যে সমস্যাজনক পরিস্থিতি ব্যক্তির জন্য মানসিক চাপের সৃষ্টি করেছে, তা যদি সমাধান করা ব্যক্তির পক্ষে সম্ভব না হয়, তবে নিজেকে সে ঐ পরিস্থিতি থেকে সরিয়ে নিতে পারে বা অপসারণ করতে পারে। ব্যক্তি পরিস্থিতি ও স্বীয় দক্ষতাকে বাস্তব দৃষ্টিতে যাচাই করে এ যথার্থ পদক্ষেপ গ্রহণ করে।
৩. সমঝোতা: সমঝোতার মাধ্যমে আমরা মানসিক চাপ থেকে রেহাই পেতে পারি। ব্যক্তি সমস্যাজনক পরিস্থিতির কিছুটা পরিবর্তন করে এবং নিজের অভ্যন্তরীণ অবস্থার কিছু পরিবর্তন এনে পরস্পরের মধ্যে সমন্বয় সাধন করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে ব্যক্তির স্বীয় দক্ষতা ও যোগ্যতা এবং বিরাজমান পরিস্থিতিকে বাস্তব দৃষ্টিতে করে এ সমঝোতার পদক্ষেপ নেয়া হয়।
৪. আত্মরক্ষামূলক কৌশল: প্রকৃত সমস্যার সমাধান না করে কিছু কৌশল প্রয়োগ করে মানসিক চাপের কবল থেকে ব্যক্তি আত্মরক্ষা করার যে প্রচেষ্টা তাকেই আত্মরক্ষামূলক কৌশল বা প্রতিক্ষণ কৌশল বলে।
আত্মরক্ষামূলক কৌশল বিভিন্ন রকমের হয়ে থাকে। কয়েকটি উল্লেখযোগ্য কৌশল হলো- অবদমন, অপব্যাখ্যান, প্রতিক্রিয়া সংগঠন, প্রত্যাবৃত্তি, অপস্থাপন ইত্যাদি।

৫. সুজন ও সোহাগ ঢাকা বিশ্বিবিদ্যালয় থেকে এক বছর আগে এম.এস.সি পাশ করেছে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে তাঁরা চাকুরির জন্য আবেদন করেও হচ্ছিলনা। হঠাৎ সোহাগের দুটি বেসরকারী ব্যাংক থেকে চাকুরির প্রস্তাব এসেছে। উভয় চাকুরির বেতন ভালো। চাকুরির স্থল ঢাকায়।
সুজনের একটি সরকারির চাকুরি হয়েছে। পদমর্যাদা ভালো, বাসস্থান, গাড়ি ও অন্যান্য সুবিধা দেয়া হবে। কিন্তু চাকুরিরস্থল হলো খাগড়াছড়ির দুর্গম এলাকায়। বেতনও কম।
সুতরাং দুজনেই মানসিক চাপে আছে।
ক. মানসিক চাপ কী?
খ. কর্মভার বলতে কী বোঝায়?
গ. সোহাগের মধ্যে কোন ধরনের মানসিক চাপ বিদ্যমান তা ব্যাখ্যা কর।
ঘ. সোহাগ ও সুজনের মানসিক অবস্থার ধরণ একই না ভিন্ন তা যুক্তি দিয়ে ব্যাখ্যা কর।

৫ নম্বর সৃজনীশল প্রশ্নের উত্তর
ক. যে ধরনের পরিস্থিতি ব্যক্তির মধ্যে মানসিক অস্বস্তিকর অবস্থা সৃষ্টি করে, তা-ই মানসিক চাপ।

খ. কর্মভার একটি ব্যাপক ধারণা যা বিভিন্ন সময়ে ভিন্ন ভিন্ন অর্থে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। কর্মভার হলো কাজের প্রতি ইচ্ছা বা আগ্রহ হ্রাস পাওয়া, বিরক্তবোধ করা। দীর্ঘসময় কোনো কাজ করার ফলে এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়ে থাকে। মানসিক চাপ সৃষ্টির ক্ষেত্রে কর্মভার বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। সুতরাং কর্মভার হচ্ছে এমন একটি অবস্থা যেখানে কোনো উদ্দীপক তীব্র হয়ে উঠে এবং যা স্বাভাবিক কর্মপরিবেশকে ব্যাহত করে।

গ. উদ্দীপকে সোহাগের মধ্যে আকর্ষণ-আকর্ষণ দ্বন্দ্ব মানসিক চাপ বিদ্যমান। নিচে ব্যাখ্যা করা হলো-
এ ধরনের দ্বন্দ্বে দুটি আকর্ষণী বা ধনাত্মক (+) বৈশিষ্টসম্পন্ন লক্ষ্যবন্তু সমান শক্তিতে একই সময়ে ব্যক্তিকে আকর্ষণ করে। এক্ষেত্রে ব্যক্তিকে কেবলমাত্র যেকোনো একটি লক্ষ্যকে গ্রহণ করতে হবে। দুটিকে একই সঙ্গে গ্রহণ করা তার পক্ষে সম্ভব নয়। অর্থাৎ আকর্ষণ-আকর্ষণ দ্বন্দ্বে দুটি ধনাত্মক লক্ষ্যবস্তু উপস্থিত থাকে এবং সমান আকর্ষণীয়।
চিত্রের সাহায্যে আকর্ষণ-আকর্ষণ দ্বন্দ্ব নিম্নরূপ:
উদ্দীপকে সোহাগ এক বছর আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম.এস.সি পাস করে হঠাৎ দুটি বেসরকারি ব্যাংক থেকে চাকুরির প্রস্তাব পেয়েছে। উভয় চাকুরির বেতন ভালো, চাকুরিস্থল ঢাকায়। কিন্তু তাকে যেকোনো একটি গ্রহণ করতে হবে। তখন তার মধ্যে এ ধরনের আকর্ষণ-আকর্ষণ দ্বন্দ্ব মানসিক চাপের সৃষ্টি হয়। এ ধরনের মানসিক চাপের সমাধান খুব সহজ। কারণ, যে কোনো একটি বেছে নিলেই হয়।

ঘ. উদ্দীপকে সোহাগ আকর্ষণ-আকর্ষণ দ্বন্দ্ব মানসিক চাপে রয়েছে ও সুজন আকর্ষণ-বিকর্ষণ দ্বন্দ্ব মানসিক চাপে রয়েছে। নিচে সোহাগ ও সুজনের মানসিক অবস্থার ধরন একই না ভিন্ন তা যুক্তি দিয়ে ব্যাখ্যা করা হলো-
আকর্ষণ-বিকর্ষণ দ্বন্দ্ব:আকর্ষণ-বিকর্ষণ দ্বন্দ্বে একটিমাত্র লক্ষ্যবন্তু থাকে। লক্ষ্যবস্তুটি একদিকে আকর্ষণীয় আবার অন্যদিকে অপ্রীতিকর অর্থাৎ লক্ষ্যবস্তুটি সমপরিমাণ ধনাত্মক ও সমপরিমাণ ঋণাত্মক বৈশিষ্ট্যের। এ ধনাত্মক বা পছন্দের জন্য ব্যক্তি যেমন লক্ষ্যস্থলের দিকে এগিয়ে যেতে চায়, তেমনি ঋণাত্মক বা অপছন্দনীয় বৈশিষ্ট্যের জন্য আবার পিছিয়েও যেতে চায়। অর্থাৎ আকর্ষণ-বিকর্ষণ দ্বন্দ্ব একই সাথে কাছে টানে, আবার দূরেও সরিয়ে দেয়।
চিত্রের সাহায্যে আকর্ষণ-বিকর্ষণ দ্বন্দ্ব:
উদ্দীপকে সুজন সরকারি চাকুরি পেয়েছে। পদমর্যাদা ভালো, বাসস্থান, গাড়ি ও অন্যান্য সুবিধা দেওয়া হবে। কিন্তু চাকুরিরস্থল খাগড়াছড়ির দুর্গম এলাকায়, বেতনও কম। এমতাবস্থায় সুজন আকর্ষণ-বিকর্ষণ দ্বন্দ্ব মানসিক চাপের শিকার। আমাদের সমাজে এ ধরনের পরিস্থিতি অহরহ ঘটে থাকে। এ ধরনের মানসিক চাপের সমাধান বেশ জটিল।
উপরোক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায় যে, সোহাগ ও সুজনের মানসিক চাপের ধরন ভিন্ন। একজন আকর্ষণ-আকর্ষণ দ্বন্দ্ব মানসিক চাপ এবং অপরজন আকর্ষণ-বিকর্ষণ দ্বন্দ্ব মানসিক চাপে রয়েছে। সোহাগের মানসিক চাপের সমাধান সহজ হলে সুজনের মানসিক চাপের সমাধান বেশ জটিল।

৬. আর্মি স্টেডিয়ামে রিমা ও তার ভাই প্রিয় শিল্পী সাবিনা ইয়াসমিনের গানের কনসার্ট দেখতে যায়। কিন্তু প্রচুর বৃষ্টির কারণে কনসার্ট স্থগিত হয়ে যায়। এতে দুজনেরই খুব মন খারাপ হয়। রিমা আবার খুব ভালো গান করে। এলাকার সবাই তাকে ভালো গায়িকা হিসেবে চিনে। তার খুব ইচ্ছা ছিল বাংলা সিনেমার গান করবে কিন্তু অনেক চেষ্টা করেও সুযোগ আসেনি। সবসময় সে নিজের কণ্ঠকে সাবিনা ইয়াসমিনের অনুরূপ মনে করে আনন্দ পায়। রিমা ভালো গান করলেও পড়ালেখায় খুবই দুর্বল। অনেক কষ্টে পরপর তিনবার চেষ্টা করার পর কোন রকম এসএসসি পাস করে। কিন্তু রিমা ভালো ছাত্রী না হওয়ায় কোনো আফসোস নেই।
ক. দ্বন্দ্ব কী?
খ. কর্মভার কীভাবে মানসিক চাপ সৃষ্টি করে?ব্যাখ্যা কর।
গ. রিমা ও তার ভাইয়ের মন খারাপের জন্য হতাশার কোন উৎস দায়ী?ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকে রিমার মাঝে উল্লিখিত আতমরক্ষামূলক ২টি কৌশলের নাম উল্লেখপূর্বক কৌশলগুলো বিশ্লেষণ কর।

৬ নম্বর সৃজনীশল প্রশ্নের উত্তর
ক. পরস্পর বিরোধী দুই বা দুইয়ের অধিক প্রেষণা একই সাথে উপস্থিত হলে ব্যক্তির মধ্যে উভয়মুখী যে মানসিক অস্থিরতার সৃষ্টি হয় তাকে দ্বন্দ্ব বলে।

খ. মানসিক চাপ সৃষ্টির ক্ষেত্রে কর্মভার একটি বিশেষ উদ্দীপক বা বৈশিষ্ট্য। এমন একটি বিষয়, যেখানে কোনো একটি উদ্দীপক তীব্র হয়ে ওঠে, যা আমাদের স্বাভাবিক কর্ম পরিবেশকে যন্ত্রণাদায়ক করে তোলে। তবে আমরা ঐ সকল যন্ত্রণাদায়ক উদ্দীপককে স্বাভাবিক হিসেবে গ্রহণ করে নিতে পারি যদি আমরা অনেক সময় ধরে তার মধ্যে অবস্থান করি। কারণ তখন আমরা উদ্দীপকগুলোর সাথে অভিযোজিত হয়ে পড়ি। অপরদিকে যদি উদ্দীপকের তীব্রতার সাথে আমাদের অভিযোজিত হওয়ার সীমা অতিক্রম হয়ে যায়, সেক্ষেত্রে আমরা মানসিক চাপ অনুভব করি।

গ. উদ্দীপকে রিমা ও তার ভাইয়ের মন খারাপের জন্য হতাশার পরিবেশগত উৎস দায়ী। নিচে হতাশার পরিবেশগত উৎস ব্যাখ্যা করা হলো-
পরিবেশগত প্রতিবন্ধকতার কারণে প্রেষণা পরিতৃপ্তিতে বাধার সৃষ্টি হতে পারে এবং এর ফলে ব্যক্তি হতাশাগ্রস্থ হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, বনভোজনে যাওয়ার সময় মাঝপথে গিয়ে গাড়ির বিকল হয়ে যাওয়া, অথবা জুয়েল আইচ-এর যাদু দেখার জন্য টিকিটের লাইনে দু'ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকেও টিকিট না পাওয়া প্রভৃতি পরিবেশগত কারণে হতাশার সৃষ্টি হতে পারে।
সামাজিক পরিবেশের বিভিন্ন রীতি-নীতি ও বর্ণ-বৈষম্য অনেক ক্ষেত্রে প্রেষণার সন্তুষ্টিতে বাধার সৃষ্টি করে। যেমন ধনিক শ্রেণির সাথে দরিদ্র শ্রেণির অথবা উচ্চ বর্ণের সাথে নিম্নবর্ণের যুবক-যুবতীর প্রেমের ব্যর্থতা হতাশার জন্ম দিয়ে থাকে।
দরিদ্রতা হতাশার অন্যতম কারণ। এ দরিদ্রতার কারণেই কন্যাদায়গ্রস্থ পিতা কন্যাকে সৎপাত্রে দান করতে ব্যর্থ হয়ে হতাশার গভীরে নিমজ্জিত হয়; বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত ছাত্র তার পড়াশোনার খরচ চালাতে না পেরে হতাশ হয়ে পড়ে এবং বিভিন্ন অসামাজিক কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়ে।
এছাড়াও বিভিন্ন প্রাকৃতিক কারণ রয়েছে। যুদ্ধ, বন্যা, অর্থনৈতিক মন্দা, রাজনৈতিক অস্থিরতা প্রভৃতি কারণে মানবিক চাহিদা বাধাপ্রাপ্ত হয় এবং সুপরিকল্পিত পরিকল্পনাসমূহ সম্পূর্ণ উল্টে যায়। ফলে জীবনযাত্রা ভীষণভাবে বাধাগ্রস্থ হয়। মানুষ হতাশার অতলে নিমজ্জিত হয়ে পড়ে।

ঘ. উদ্দীপকে রিমার মাঝে বৃষ্টির জন্য কনসার্ট স্থগিত হওয়ার কারণে না দেখতে পারা এবং নিজের কণ্টকে সাবিনা ইয়াসমিনের অনুরূপ মনে করে আনন্দ পাওয়া এ দুইটি বিষয় পরিলক্ষিত হয়। দুইটি বিষয় আত্মরক্ষার অবদমন ও একাত্মভাবন কৌশল। নিচে কৌশল দুইটি বিশ্লেষণ করা হলো-

অবদমন:
তীব্র মানসিক চাপের ফলে আমাদের মনের ইচ্ছাগুলো বা অসামাজিক ও নীতিবিরোধী কাজগুলো আমাদের নিজেদের কাছেই গ্রহণযোগ্য হয় না বা তৃপ্তি সাধন করা সম্ভব হয় না। এ ধরনের অগ্রহণযোগ্য কামনা-বাসনাকে ব্যক্তি স্বভাবতই জোরপূর্বক ভুলে থাকে বা অচেতন মনে দাবিয়ে রাখে। এ জোরপূর্বক ভুলে থাকা বা দাবিয়ে রাখার কাজটিকে অবদমন বলে। প্রকৃতির দিক দিয়ে অবদমন হলো সঙ্গতিবিধানের চরমতম এবং নিকৃষ্টতম কৌশল।

একাত্মভাবন:
কোনো বিষয়ে ব্যর্থ ব্যক্তি অপরের সঙ্গে বা অপরের কৃতিত্বের সঙ্গে নিজেকে বা নিজের কৃতিত্বকে অভিন্ন বলে মনে করে তৃপ্তি পায়। এটিকে একাত্মভাবন বলে। শৈশবে শিশু তার পিতার সঙ্গে নিজেকে অভিন্ন মনে করে তৃপ্তি পায়। এই একাত্মভাবন আছে বলেই আমরা সিনেমা, নাটক দেখে বা গল্প উপন্যাস পয়ে আনন্দ পাই। কারণ নায়ক-নায়িকাদের সাথে নিজেদের একাত্ম ভেবেই আমরা তৃপ্তি লাভ করি। উদ্দীপকের রিমাও তার কণ্ঠকে সাবিনা ইয়াসমিনের কণ্ঠের অনুরূপ মনে করে আনন্দ পায়।

HSC মনোবিজ্ঞান ২য় পত্র (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর অধ্যায় ৫ pdf download

৭. নাবিলার আম্মু নাবিলাকে তার আগের স্কুল ছাড়িয়ে একটি নতুন স্কুলে ভর্তি করানোর ইচ্ছা পোষণ করলেন কেননা, নতুন স্কুলটি তাদের বাসা। থেকে কাছে। পড়াশুনার মান খুবই ভালো এবং সাংস্কৃতিক দিক দিয়েও স্কুলটি এগিয়ে। কিন্তু নাবিলা তার বান্ধবীদের ছেড়ে অন্য স্কুলে ভর্তি হতে কিছুতেই রাজী হচ্ছে না। তখন তার আম্মু তাকে নতুন স্কুলটির ইতিবাচক দিকগুলো জানিয়ে দিয়ে তাকে রাজী করালেন।
ক. আত্মরক্ষামূলক কৌশল কী?
খ. ২টি আত্মরক্ষামূলক কৌশল বর্ণনা কর।
গ. নাবিলার মানসিক চাপমূলক পরিস্থিতি থেকে তাকে বের করে আনতে নাবিলার আম্মু কোন উপায়টি অবলম্বন করলেন- ব্যাখ্যা কর।
ঘ. নাবিলার আম্মু দ্বারা বাছাইকৃত উপায় ছাড়াও আর কোন কোন উপায় অবলম্বন করে নাবিলাকে রাজী করানো যেত- বিশ্লেষণ কর।

৭ নম্বর সৃজনীশল প্রশ্নের উত্তর
ক. বিপর্যস্ত মানসিক অবস্থার প্রেক্ষিতে সৃষ্ট উদ্বেগ ও পীড়নকে প্রশিক্ষিত করা বা এড়ানোর জন্য ব্যক্তি যে অভ্যাসগত ও অসচেতন মনস্তাত্ত্বিক কৌশলের আশ্রয় গ্রহণ করে থাকে তাকেই আত্মরক্ষামূলক কৌশল বলে।

খ. নিচে ২টি আত্মরক্ষামূলক কৌশল বর্ণনা করা হলো-
১. অবদমন: কোনো পরিবেশ, পরিস্থিতি বা অবস্থার কারণে ব্যক্তির মধ্যে যখন মানসিক চাপের সৃষ্টি হয়, তখন ব্যক্তি তার ঐ মানসিক চাপমূলক অবস্থা থেকে মুক্তি পাওয়া বা মানসিক চাপকে প্রশমিত করার জন্য ঐ মানসিক চাপমূলক অবস্থাকে ইচ্ছাপূর্বক ভুলে যায় বা ভুলে থাকার চেষ্টা করে। একেই অবদমন বলা হয়। মানসিক চাপের প্রতি আত্মরক্ষামূলক কৌশল হিসেবে ব্যক্তি অনেক সময় অবদমনের আশ্রয় নেয়।
২. প্রক্ষেপণ: কোনো কারণে ব্যক্তির মধ্যে মানসিক চাপের সৃষ্টি হলে, ব্যক্তি তার ঐ মানসিক চাপমূলক অবস্থা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য বা মানসিক চাপকে প্রশমিত করার জন্য ঐ মানসিক চাপমূলক অবস্থার জন্য অন্যকে দায়ী করে থাকে। এটিই প্রক্ষেপণ, যা একটি উল্লেখযোগ্য আতমরক্ষামূলক কৌশল।

গ. নাবিলা তার পুরনো স্কুলের বান্ধবীদের ছেড়ে নতুন স্কুলে ভর্তি হতে রাজী না, কারণ তার বান্ধবীরা তার খুবই প্রিয়। বান্ধবীদের ছেড়ে যেতে হবে, এ নেতিবাচক দিকটি নিয়েই নাবিলা মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত ছিল। তখন তার আম্মু তাকে নতুন স্কুলের ইতিবাচক দিকগুলোর কথা বললেন। নতুন স্কুলে ভর্তি হলে সে কী সব সুবিধা পাবে তার কথা বললেন, যেমন- নতুন স্কুলটি বাসার কাছে, ওখানে পড়াশুনার মান অনেক ভালো, সাংস্কৃতিক দিক দিয়ে এগিয়ে। এটি মানসিক চাপমূলক পরিস্থিতি মোকাবিলার অন্যতম উপায় পুনর্মূল্যায়নকে নির্দেশ করছে। নাবিলার আম্মু পুনর্মূল্যায়ন পদ্ধতি অবলম্বন করেছিলেন।
পুনর্মূল্যায়ন পদ্ধতিতে ব্যক্তি তার পূর্বের কোনো মানসিক চাপমূলক পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে সৃষ্ট যে মানসিক চাপ, তা সামলানোর ক্ষেত্রে ঐ পরিস্থিতির পুনঃপর্যবেক্ষণ করে। অর্থাৎ, পুনর্মূল্যায়ন করতে হলে প্রাথমিকভাবে কোনো পরিস্থিতির পুনঃপরীক্ষণ করতে হবে। এক্ষেত্রে পরিস্থিতির নেতিবাচক দিকগুলোকে ইতিবাচকভাবে পর্যবেক্ষণ ও চিন্তা করতে হয়। ঠিক যেমনটি নাবিলার আম্মু করেছেন। নাবিলার মন থেকে সমস্ত নেতিবাচক চিন্তা-ভাবনা সরিয়ে দিয়ে তাকে ইতিবাচক কথাগুলোর দিকে আকর্ষিত করে নতুন স্কুলে ভর্তি হওয়ার জন্য রাজী করিয়েছেন।

ঘ. নাবিলার আম্মু ‘‘পুনর্মূল্যায়ন’’ পদ্ধতিটি ব্যবহার করে নাবিলাকে নতুন স্কুলে ভর্তি হতে রাজী করিয়েছেন। এ পদ্ধতি ছাড়াও ‘‘সামাজিক সহায়তা লাভের উদ্যোগ’’ অবলম্বন করা যেত।
সামাজিক সহায়তা লাভের উদ্যোগ:
এ পদ্ধতির মাধ্যমে ব্যক্তি তার পূর্বের কোনো মানসিক চাপমূলক পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে সৃষ্ট যে মানসিক চাপ, তা সামলানোর ক্ষেত্রে সামাজিক সমর্থন ও ভালোবাসা পাওয়ার চেষ্টা করে। ক্যাপস্নান এ সামাজিক সমর্থন লাভের ক্ষেত্রে তিনটি উপায় বা কর্মের কথা উল্লেখ করেন। যেমন:
১. উপদেশনা-নির্দেশনা গ্রহণ ও তথ্য আদান-প্রদান: ব্যক্তি জীবনের বিভিন্ন ঘটনাসমূহ এর প্রেক্ষিতে সৃষ্ট যে মানসিক চাপ, তা কমানোর উপায় হলো বাস্তবিক কোনো সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে অপরের নির্দেশনা গ্রহণ এবং ব্যক্তিগত তথ্যের আদান-প্রদান করা। কারণ, এর মধ্যে দিয়েই আমরা মানসিক চাপ কমানো বা সামলানোর একটি জ্ঞানীয় দক্ষতা অর্জন করি।

২. পারিবারিক যত্ন ও মায়া-মমতা এবং সামাজিক সহায়তা: ব্যক্তি যদি পারিবারিক ও সামাজিকভাবে উপযুক্ত মায়া-মমতা ও সহায়তা লাভ করে তবে তার জীবনের মানসিক চাপ কমানো বা সামলানো সহজ হয়ে ওঠে। কারণ, পারিবারিক ও সামাজিকভাবে পাওয়া এ যত্ন, মায়া-মমতা ও প্রতিপালনই ব্যক্তির জীবনে এক ধরনের আত্মসম্মান ও মনোবল তৈরি তথা মানসিক চাপ কমাতে বা সামলাতে সাহায্য করে থাকে।

৩. সামাজিক নিরাপত্তা ও অনুপ্রেরণামূলক পরিবেশ: ব্যক্তি যদি পারিবারিক ও সামাজিকভাবে উপযুক্ত নিরাপত্তা ও অনুপ্রেরণা লাভ করে, তবে তার জীবনের অনেক মানসিক চাপ কমানো বা সামলানো সহজ হয়ে ওঠে। কারণ, পারিবারিক ও সামাজিকভাবে পাওয়া এ নিরাপত্তা, আশ্বস্ততা ও অনুপ্রেরণাই ব্যক্তির জীবনের মানসিক চাপ কমাতে বা সামলাতে এবং বিপর্যস্ত জীবনকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে সর্বাধিক সাহায্য করে থাকে।

উপরোক্ত সামাজিক সহায়তা মানসিক চাপ সামলানোর ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। নাবিলার ক্ষেত্রেও এ উপায় প্রয়োগ করে তাকে তার মানসিক বিপর্যস্ততা থেকে বেরিয়ে নতুন স্কুলে যাওয়ার জন্য রাজী করানো যেত।

৮. রাহাত এবং সেলিম দুই বন্ধু। তারা দু'জনেই বিগত কয়েক দিন ধরে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। রাহাতের বাবা ও তার চাচার মধ্যে সম্পত্তি নিয়ে রেষারেষি চলছে। প্রতিদিন তাদের বাসায় এ নিয়ে ঝামেলা হচ্ছে। অপরপক্ষে, সেলিম দুটি চাকরির নিয়োগপত্র পেয়েছে। একটির বেতন কম কিন্তু কর্মস্থল নিজ এলাকায় আর অপরটির বেতন বেশি কিন্তু কর্মস্থল দুর্গম এলাকায়।
ক. মানসিক চাপমূলক পরিস্থিতি বলতে কী বোঝ?
খ. মাসিক চাপমূলক পরিস্থিতি সৃষ্টির ২টি কারণ লেখ।
গ. সেলিম কোন ধরনের মানসিক চাপের পরিস্থিতির শিকার ব্যাখ্যা কর।
ঘ. সেলিম ও রাহাতের মানসিক চাপমূলক পরিস্থিতি দুইটি ভিন্ন সমস্যা দ্বারা উদ্ভূত- ব্যাখ্যা কর।

৮ নম্বর সৃজনীশল প্রশ্নের উত্তর
ক. যে ঘটনা বা পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে একজন ব্যক্তি পীড়নের শিকার হয়, তাকে মানসিক চাপমূলক পরিস্থিতি বলে।

খ. মানসিক চাপমূলক পরিস্থিতি সৃষ্টির ২টি কারণ নিচে দেওয়া হলো-
১. পারিবারিক সমস্যা: মানসিক চাপমূলক পরিস্থিতি সৃষ্টির ক্ষেত্রে একটি উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো পারিবারিক সমস্যা। কারণ বিভিন্ন পারিবারিক সমস্যা থেকে ব্যক্তির মধ্যে এক ধরনের মানসিক চাপমূলক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। এ পারিবারিক সমস্যাগুলো হতে পারে পারিবারিক অশান্তি, পরিবারের কোনো সদস্যের অসুস্থতা, পারস্পরিক দ্বন্দ্ব ইত্যাদি।
২. শারীরিক সমস্যা: মানসিক চাপমূলক পরিস্থিতি সৃষ্টির ক্ষেত্রে একটি উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো শারীরিক সমস্যা। কারণ বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা থেকে ব্যক্তির মধ্যে এক ধরনের মানসিক চাপমূলক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।এ শারীরিক সমস্যাগুলো হতে পারে গায়ের রং কালো, বেঁটে আকৃতি ইত্যাদি।

গ. সেলিম মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। কারণ হচ্ছে সে দুটি চাকরির নিয়োগপত্র পেয়েছে। একটির বেতন কম কিন্তু কর্মস্থল নিজ এলাকায় আর অপরটির বেতন বেশি কিন্তু কর্মস্থল দুর্গম এলাকায়। এ ধরনের সমস্যাকে বলা হয় সিদ্ধান্তগত সমস্যা।
সিদ্ধান্তগত সমস্যা হলো মানসিক চাপমূলক পরিস্থিতি সৃষ্টির ক্ষেত্রে একটি বিশেষ বিষয়। বিভিন্ন সময় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার ক্ষেত্রে ব্যক্তির মধ্যে বিভিন্ন সমস্যা ও দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়। যার ফলশ্রুতিতে ব্যক্তিকে এক ধরনের মানসিক চাপমূলক পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়। সেলিমের ক্ষেত্রেও একই জিনিস ঘটেছে। সে সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছে।
কাজেই বলা যায় সেলিম সিদ্ধান্তগত সমস্যার শিকার।

ঘ. প্রতিনিয়ত মানুষ বিভিন্ন ধরনের মানসিক চাপমূলক পরিস্থিতির শিকার হয়। এ পরিস্থিতির পেছনে উদ্দীপক হিসেবে কাজ করে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা।
উদ্দীপকের রাহাত ও সেলিম মানসিক চাপমূলক পরিস্থিতির শিকার তবে তাদের সমস্যা কিন্তু ভিন্ন।
রাহাতের বাবা ও তার চাচার মধ্যে সম্পত্তি নিয়ে রেষারেষি চলছে। ‘প্রতিদিন তাদের বাসায় এ নিয়ে ঝামেলা হচ্ছে। এ ধরনের সমস্যাকে বলা হয় পারিবারিক সমস্যা (Family Problem)। মানসিক চাপমূলক পরিস্থিতি সৃষ্টির ক্ষেত্রে একটি উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো পারিবারিক সমস্যা। বিভিন্ন পারিবারিক সমস্যা থেকে ব্যক্তির মধ্যে এক ধরনের মানসিক চাপমূলক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। এ পারিবারিক সমস্যাগুলো হতে পারে পারিবারিক অশান্তি, পরিবারের কোনো সদস্যের অসুস্থতা, পারস্পরিক দ্বন্দ্ব ইত্যাদি। ঠিক যেমনটি রাহাতের পরিবারে ঘটছে। পারস্পরিক দ্বন্দ্ব সৃষ্টির কারণে রাহাত মানসিক রণে রাহাত মানসিক চাপমূলক পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছে।
অপরদিকে সেলিম দুটি চাকরির নিয়োগপত্র পেয়ে সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছে যে, কোনটা ছেড়ে কোনটা নিবে কেননা; দুটি চাকরিরই ইতিবাচক দিকও রয়েছে আবার নেতিবাচক দিকও রয়েছে। এ ধরনের সমস্যাকে বলা হয় সিদ্ধান্তগত সমস্যা। এ ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার সময় ব্যক্তির মধ্যে বিভিন্ন সমস্যা ও দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়। যার ফলশ্রুতিতে ব্যক্তিকে এক ধরনের মানসিক চাপমূলক পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়। যেমন- শিশু একটি মাত্র পছন্দনীয় খেলনা গ্রহণ করতে পারবে, এক্ষেত্রে সে কোনটি গ্রহণ করবে, ঠিক তেমনি সেলিম সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না সে কোন চাকরিটি গ্রহণ করবে এবং তাই সে মানসিক চাপমূলক পরিস্থিতির শিকার হচ্ছে।
অতএব বলা যায় যে, সেলিম ও রাহাতের চাপমূলক পরিস্থিতি দুটির ভিন্ন সমস্যা দ্বারা উদ্ভূত।

৯. মিতু একাদশ শ্রেণির ছাত্রী। এবার বার্ষিক পরীক্ষায় সে দুটি বিষয়ে অকৃতকার্য হয়েছে। তাই সে প্রচন্ড মানসিক চাপের মধ্যে রয়েছে। সে ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়া করছে না। কারো সাথে কথাও বলছে না।
ক. মানসিক চাপ কী?
খ. একজন ব্যক্তি কেন মানসিক চাপের সম্মুখীন হয়?
গ. মিতুর মানসিক চাপের পেছনে উদ্দীপক হিসেবে কী কাজ করছে?ব্যাখ্যা কর।
ঘ. মিতুর মানসিক চাপের পরিণতি ও এর থেকে পরিত্রাণের উপায় বিশ্লেষণ কর।

৯ নম্বর সৃজনীশল প্রশ্নের উত্তর
ক. দৈনন্দিন জীবনের নানাবিধ চাহিদা অথবা মিথস্ক্রিয়ায় সৃষ্ট নানাবিধ সমস্যা মোকাবেলায় ব্যক্তির মধ্যে যে শারীরিক ও মানসিক প্রক্রিয়াগত পীড়নমূলক অবস্থা তৈরি হয় তাকেই মানসিক চাপ বলে।

খ. মনোচিকিৎসাবিজ্ঞানী হ্যান্স সেলাই (Selye, H.) ১৯৩৬ সালে তাঁর মানসিক চাপ তত্ত্বে উল্লেখ করেন যে, ‘‘মানসিক চাপ হলো ব্যক্তি জীবনের একটি সাধারণ ঘটনা বা অংশ। তিনি বলেন ‘‘শরীরে কোনো নির্দিষ্ট পীড়ন উদ্দীপকীয় প্রতিক্রিয়া ছাড়াই মানসিক চাপ তৈরি হয়।’’
সাধারণভাবে বলা যায়, ‘মানসিক চাপ সৃষ্টির মূলে কোনো না কোনো উদ্দীপকের প্রভাব বর্তমান থাকে। অর্থাৎ ব্যক্তি প্রতিনিয়ত তার চারপাশের উদ্দীপক দ্বারা উদ্দীপিত হয়। এই উদ্দীপকসমূহের মধ্যে এমন অনেক উদ্দীপক আছে যারা ব্যক্তি জীবনে পীড়নের সৃষ্টি করে। যার ফলশ্রুতিতে ব্যক্তি মানসিক চাপের সম্মুখীন হয়।

গ. মানসিক চাপ বা পীড়ন সৃষ্টিকারী উদ্দীপককে পীড়ন উদ্দীপক (Stressor) বলা হয়। বিভিন্ন প্রকার পীড়ন উদ্দীপক ইন্দ্রিয় সহযোগে প্রতিনিয়ত আমাদের স্বয়ংক্রিয় স্নায়ুতন্ত্রকে সক্রিয় করে তোলে এবং মানসিক চাপ বা পীড়নমূলক অবস্থার সৃষ্টি করে। হেইডার (Heider, F. 1958) উল্লেখ করেন যে, ‘‘অবহিতিমূলক সকল উপাদানসমূহ যখন সুসামঞ্জস্যপূর্ণ হয়, তখন ব্যক্তি কোনো প্রকার মানসিক চাপ অনুভব করে না। অপরদিকে এ মানসিক চাপ তখন সৃষ্টি হয়, যখন তার অবহিতিমূলক উপাদানসমূহের মধ্যে ভারসাম্যের অভাব ঘটে।
মিতুর মানসিক চাপের পেছনে যে উদ্দীপক (stressor) কাজ করছে তা হচ্ছে, তার বার্ষিক পরীক্ষায় দুটি বিষয়ে অকৃতকার্য হওয়া। উল্লেখ্য যে, মানসিক চাপ সৃষ্টিকারী একেক ধরনের উদ্দীপকের ক্ষেত্রে একক ধরনের ব্যক্তি একেক ধরনের প্রতিক্রিয়া করে থাকে। এখানে আমরা দেখতে পাচ্ছি পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়ায় মিতু নেতিবাচক চাপের শিকার হয়েছে। এ বিষয়টি সে মেনে নিতে পারছে না। পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়ার কারণেই সে এ পীড়নের শিকার।

ঘ. মানসিক চাপ যত না বস্তুনিষ্ঠ, তার চেয়ে অনেক বেশি ব্যক্তিনিষ্ঠ। কেননা মানসিক চাপ মূলত নির্ভর করে ব্যক্তি তার মানসিক চাপমূলক কোনো ঘটনাকে কীভাবে প্রত্যক্ষণ করছে তার উপর।
মিতুর ক্ষেত্রে আমরা দেখতে পাচ্ছি পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়ার কারণবশত সে তীব্র মানসিক চাপের মধ্যে রয়েছে। খাওয়া-দাওয়া, সবার সাথে মেলামেশা বন্ধ করে দিয়েছে।
তার এ অতিরিক্ত মানসিক চাপ তার মানসিক ও শারীরিক তথা স্নায়ুতন্ত্রের উপর বিশেষ প্রভাব তৈরি করছে যা থেকে তার শারীরিক ও মানসিক অবস্থায় অস্বাভাবিকতার সৃষ্টি হবে। মানসিক চাপ সৃষ্টি হলে মস্তিষ্কের কেন্দ্র হাইপোথ্যালামাস সবচেয়ে বেশি উদ্দীপিত হয়। যার প্রভাব পড়ে পিটুইটারি গ্রন্থিতে। তাই মিতুর মানসিক চাপের কারণে পিটুইটারি গ্রন্থির হরমোন নিঃসরণ ব্যাহত হবে এবং এড্রিনো-কর্টিকোট্রপিন নামক হরমোনের নিঃসরণ বেড়ে যাবে। শুধু তাই নয়, এর ফলে বিভিন্ন ধরনের অনালী ও স্বর্নালী গ্রন্থির হরমোন ও রাসায়নিক উৎপাদনের নিঃসরণগত অস্বাভাবিকতা, রক্তের গতির অস্বাভাবিকতাসহ মানসিক অস্থিরতা, অনিদ্রা, পেটে আলসার, অভিযোজন অস্বাভাবিকতা ইত্যাদি দেখা দিতে পারে।
এর থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে মিতুকে পরিস্থিতির পুনর্মূল্যায়ন করতে হবে। নেতিবাচক দিকটিকে ইতিবাচকভাবে পর্যবেক্ষণ ও চিন্তা করতে হবে। নিজের মধ্যে এক ধরনের নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা তৈরি করতে হবে। উদ্বিগ্ন না হয়ে তাকে বরং চিন্তা করতে হবে পরের পরীক্ষাটিতে সে কীভাবে পড়লে ভালো ফলাফল করতে পারবে। হতাশ না হয়ে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। বোঝাতে হবে যে পরের বার সে অবশ্যই এ বিষয় দুটিতে ভালো নম্বর আনবে। তাহলেই এ মানসিক চাপ থেকে তার বেরিয়ে আসা সম্ভব হবে।

১০. রুনুদের গ্রাম ও তাদের পার্শ্ববর্তী গ্রামের মধ্যে সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষ চলছে যা নিয়ে রুনু খুব দুশ্চিন্তাগ্রস্থ। রুনুর ভাইয়া তাকে ঢাকায় নিয়ে যেতে চাচ্ছেন; তিনি রুনুকে এ পরিবেশের মধ্যে রাখতে চান না। কিন্তু রুনু আবার নিজের প্রিয় গ্রাম ছেড়ে যেতে চইছে না। রুনুর ভাইয়া তাকে বুঝাচ্ছেন সব ঠিক হয়ে গেলে আবার তারা ফিরে আসবে।
ক. মরগান ও সহযোগীদের মতে মানসিক চাপ কী?
খ. শারীরবৃত্তীয় অবস্থার উপর মানসিক চাপের প্রভাব কেমন হয়?
গ. রুনু কোন ধরনের মানসিক চাপমূলক পরিস্থিতির শিকার?ব্যাখ্যা কর।
ঘ. রুনুর মানসিক চাপ দূরীকরণে রুনুর ভাইয়া কর্তৃক গৃহীত পদক্ষেপটি মানসিক চাপ সামলানোর কোন উপায়টিকে চিহ্নিত করছে?বিশ্লেষণ কর।

১০ নম্বর সৃজনীশল প্রশ্নের উত্তর
ক. মরগান ও সহযোগীদর মতে, ‘‘মানসিক চাপ হলো এমন একটি অভ্যন্তরীণ অবস্থা, যা দৈহিক চাহিদা বা পরিবেশ এবং সামাজিক পরিস্থিতির কারণ দ্বারা সৃষ্ট, যেখানে কার্যকর ভাবে ক্ষতিকারক, অনিয়ন্ত্রিত অথবা নিজের মধ্যে তৈরি হয় এমন বিষয়সমূহকে মূল্যায়ন করা হয়।

খ. অতিরিক্ত মানসিক চাপ ব্যক্তির মানসিক ও শারীরিক তথা স্নায়ুতন্ত্রের উপর বিশেষ প্রভাব তৈরি করে যা থেকে ব্যক্তির শারীরিক ও মানসিক অবস্থায় অস্বাভাবিকতার সৃষ্টি হয়। এক্ষেত্রে মস্তিষ্কের কেন্দ্র হাইপোথ্যালামাস সবচেয়ে বেশি উদ্দীপিত হয়। যার প্রভাব পড়ে পিটুইটারি গ্রন্থিতে। এ উদ্দীপনার প্রভাবে পিটুইটারি গ্রন্থির হরমোন নিঃসরণ ব্যাহত হয় এবং এড্রিনো-কার্টিকেট্রপিন নামক হরমোন এর নিঃসরণ বেড়ে যায়। এছাড়াও বিভিন্ন ধরনের অনালী ও স্বনালী গ্রন্থির হরমোন ও রাসায়নিক উপাদনের নিঃসরণগত অস্বাভাবিকতা, রক্তের গতির অস্বাভাবিকতাসহ মানসিক অস্থিরতা, অনিদ্রা, পেটে আলসার, অভিযোজন অস্বাভাবিকতা ইত্যাদি দেখা যায়।

গ. রুনুদের গ্রামের সাথে পার্শ্ববর্তী গ্রামের সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষ চলছে যা রুনুর দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। রুনুর এ মানসিক চাপমূলক পরিস্থিতি সামাজিক বা পরিবেশগত সমস্যা দ্বারা সৃষ্ট।
সামাজিক বা পরিবেশগত সমস্যা হলো মানসিক চাপমূলক পরিস্থিতি সৃষ্টির ক্ষেত্রে একটি উল্লেখযোগ্য বিষয়। কারণ, বিভিন্ন সামাজিক বা পরিবেশগত সমস্যা থেকে ব্যক্তির মধ্যে এক ধরনের মানসিক চাপমূলক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। এ সামাজিক বা পরিবেশগত সমস্যা ব্যাক্তির মনমানসিকতায় বিরূপ প্রভাব ফেলে। ঠিক যেমনটি রুনুর ক্ষেত্রে ঘটেছে। এ সংঘর্ষ, হানাহানি সে মেনে নিতে পারছে না।
আবার তার ভাইয়া তাকে এসব থেকে বাঁচাতে ঢাকায় নিয়ে যেতে চাইলে সে তার প্রিয় গ্রামের মায়াও ত্যাগ করতে পারছে না। অতএব, এক্ষেত্রে সে আবার সিদ্ধান্তগত সমস্যায় ভুগছে। বিভিন্ন সময় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার ক্ষেত্রে ব্যক্তির মধ্যে বিভিন্ন সমস্যা ও দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয় যার ফলশ্রুতিতে ব্যক্তিকে এক ধরনের মানসিক চাপমূলক পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়’’। রুনুও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার ক্ষেত্রে এমন দ্বন্দ্বে ভুগছে। হানাহানি তার ভালো লাগছে না, আবার গ্রামের মায়াও ত্যাগ করতে পারছে না।

ঘ. রুনুর গ্রাম ও তাদের পার্শ্ববর্তী গ্রামের মধ্যে সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষ চলছে যা নিয়ে রুনু খুব দুশ্চিন্তাগ্রস্থ। রুনুকে এ পরিবেশ থেকে পরিত্রাণ দিতে তার ভাই তাকে ঢাকা নিয়ে যেতে চান। রুনুর মানসিক চাপ সামলাতে তার ভাইয়ের গৃহীত পদক্ষেপটি ‘‘সামাজিক সহায়তা লাভের উদ্যোগ’’ উপায়টির প্রতিফলন।
সামাজিক সহায়তা লাভের উদ্যোগ হলো এমন একটি পদ্ধতি, যার মাধ্যমে ব্যক্তি তার পূর্বের কোনো মানসিক চাপমূলক পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে সৃষ্ট যে মানসিক চাপ তা সামলানোর ক্ষেত্রে সামাজিক সমর্থন ও ভালোবাসা পাওয়ার চেষ্টা করে।
বলাবাহুল্য, বর্তমানে রুনুর গ্রামের সামাজিক পরিবেশ তার মধ্যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। তাই তার ভাইয়া তাকে ঢাকায় নিয়ে যেতে চাচ্ছেন যেখানে রুনু একটি সুস্থ, ইতিবাচক সামাজিক পরিবেশ পাবে। ক্যাপস্নানের উল্লেখিত সামাজিক সহায়তা লাভের তিনটি কর্ম অনুযায়ী যেভাবে রুনুর সমস্যা সমাধান হবে-

১. উপদেশনা-নিদর্শেনা গ্রহণ ও তথ্যের আদান-প্রদান: ব্যক্তি জীবনের বিভিন্ন ঘটনাসমূহের প্রেক্ষিতে সৃষ্ট যে মানসিক চাপ, তা প্রশমনের জন্য অপরের নির্দেশনা গ্রহণ এবং ব্যক্তিগত তথ্যের আদান-প্রদান করা। যেমন- রুনুর ভাই রুনুকে নির্দেশনা দিবেন, তাকে তথ্য দিয়ে বুঝাবেন গ্রামে থাকাটা তার জন্য কত ক্ষতিকর হতে পারে এবং ঢাকায় সে নিরাপদ থাকবে।

২. পারিবারিক যত্ন ও মায়া-মমতা এবং সামাজিক সহায়তা: পারিবারিক মায়া-মমতা ও ভালোবাসা মানসিক চাপ সামলানোর অন্যতম উপায়। এতে ব্যক্তির মনোবল দৃঢ় হয়। যেমন- ভাই ও পরিবারের আদর পেয়ে রুনু দুশ্চিন্তামুক্ত হতে পারে।

৩. সামাজিক নিরাপত্তা ও অনুপ্রেরণামূলক পরিবেশ: পারিবারিক ও সামাজিক নিরাপত্তা ও অনুপ্রেরণার মাধ্যমে মানসিক চাপ সামলানো সহজ। রুনু ঢাকায় চলে আসলে অপেক্ষাকৃত নিরাপত্তামূলক পরিবেশে তার মানসিক চাপ দূর হয়ে যাবে।
রুনুর ভাই কর্তৃক গৃহীত সামাজিক সহায়তা লাভের উদ্যোগ ফলপ্রসূ হবে।

No comments:

Post a Comment

Post Bottom Ad

Responsive Ads Here