HSC মনোবিজ্ঞান ২য় পত্র (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর pdf download অধ্যায় ২ - Exam Cares

Breaking

Home Top Ad

Responsive Ads Here

Post Top Ad

Responsive Ads Here

HSC মনোবিজ্ঞান ২য় পত্র (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর pdf download অধ্যায় ২

এইচএসসি পরীক্ষার পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি
HSC Psychology 2nd Paper Srijonshil question and answer. HSC Psychology 2nd Paper (Srijonshil) Creative Questions pdf download. HSC Monobiggan 2nd paper Srijonshil Proshno Uttor.

উচ্চ মাধ্যমিক
মনোবিজ্ঞান
দ্বিতীয় পত্র

সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
অধ্যায়-২

HSC Psychology
2nd Paper
Srijonshil Question and Answer pdf download

১. জনাব মেহের তার অফিসের জন্য ১০ জন আবেদনকারীর মধ্য থেকে সামনাসামনি বসে পারস্পরিক কথোপকথনের মাধ্যমে লাবলু ও মুকুলকে নির্বাচন করলেন। কিছুদিন পর মেহের লক্ষ্য করলেন বৈশিষ্ট্যের দিক থেকে লাবলু ও মুকুল দুধরনের ব্যক্তিত্বের অধিকারী। লাবলু খুব চিন্তাশীল ও সৃজনশীল। পক্ষান্তরে মুকুল খুব সহজে অন্যের সাথে মিশতে পারে, অন্যের উপকারে ঝাঁপিয়ে পড়ে।
ক. ব্যক্তিত্বের সংজ্ঞা দাও।
খ. পৃথিবীর সকল মানুষই পরস্পর আলাদা কীভাবে?
গ. জনাব মেহের তার অফিসের জন্য মুকুল ও লাবলুকে কোন পদ্ধতির সাহায্যে নির্বাচন করলেন? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকে লাবলু এবং মুকুলের ব্যক্তিত্বের তুলনামূলক আলোচনা কর।

১ নম্বর সৃজনীশল প্রশ্নের উত্তর
ক. ‘‘ব্যক্তিত্ব’ একটি অতি পরিচিত শব্দ। প্রাত্যহিক জীবনে আমরা প্রতিনিয়ত ‘ব্যক্তিত্ব কথাটি ব্যবহার করি, কোনো ব্যক্তি তার কথা-বার্তায় চাল-চলনে, আচার-ব্যবহারে আমাদের চিন্তা-চেতনার উপর যে গভীর রেখাপাত করে, তাকে আমরা তার ব্যক্তিত্ব বলি। এক কথায় ব্যক্তিত্ব হলো ব্যক্তির সকল বৈশিষ্ট্যের সামগ্রিক রূপ যার ভিতর দিয়ে প্রকাশ পায় তার স্বাতন্ত্র্য ভাব।

খ. পৃথিবীর সকল মানুষই ব্যক্তিত্বের জন্য পরস্পর আলাদা। কারণ ব্যক্তিত্ব হলো একটি একক অভিব্যক্তি। কোনো ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব অন্য ব্যক্তির সাথে হুবহু মিলে না। শারীরিক গঠনের ভিত্তিত্তে ব্যক্তিত্বের তারতম্য পরিলক্ষিত হয়। ব্যক্তিত্বের উপর মনস্তাত্ত্বিক প্রভাবও পরিলক্ষিত হয়। ব্যক্তিত্বের উপর মনস্তাত্ত্বিক প্রভাবও পরিলক্ষিত হয়। এছাড়া কেউ আবার অন্তর্মুখী ও বহির্মুখী ব্যক্তিত্বের অধিকারী। কেউ কেউ আবার উভয়ই ব্যক্তিত্বের অধিকারী। তাই বলা যায় যে পৃথিবীর সকল মানুষ পরস্পর আলাদা।

গ. ব্যক্তিত্বের মূল্যায়নের জন্য সাক্ষাৎকার পদ্ধতি বহুলাংশে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। এ পদ্ধতিতে সাক্ষাৎকার গ্রহণকারী এবং সাক্ষাৎকার প্রদানকারী সামনাসামনি আসেন এবং প্রত্যক্ষ কথোপকথনের মাধ্যমে সাক্ষাৎকার প্রদানকারীর ব্যক্তিত্ব মূল্যায়ন করা হয়। সাক্ষাৎকার গ্রহণকারী সাক্ষাৎকার প্রদানকারীকে সামনাসামনি বসিয়ে তার সাথে সরাসরি কথা বলেন এবং তার ব্যক্তিগত বিষয়ের উপর নানা ধরনের আলাপ আলোচনা করেন। এ আলাপের মাধ্যমে ব্যক্তির ইচ্ছা, অনিচ্ছা, আশা, আকাঙ্খা, আগ্রহ, অনুভূতি, মনোভাব ইত্যাদি সম্বন্ধে সাক্ষাৎকার গ্রহণকারী মোটামুটি ধারণা নেওয়ার চেষ্টা করেন। 
বিভিন্ন ভাবে সাক্ষাৎকার নেয়া যেতে পারে। যেমন-
ক. পূর্বনির্ধারিত সাক্ষাৎকার
খ. অনির্ধারিত সাক্ষাৎকার
গ. চাপমূলক সাক্ষাৎকার
ঘ. ক্লান্তিমূলক সাক্ষাৎকার
উদ্দীপকের আলোকে বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে, জনাব মেহের লাবলু ও মুকুলকে অনির্ধারিত সাক্ষাৎকার পদ্ধতিতে নির্বাচন করেছিলেন। এ পদ্ধতিতে আলোচনার গতি আগে থেকে নির্ধারণ করা হয় না। অনির্ধারিত সাক্ষাৎকারে সাক্ষাৎকার গ্রহণকারী স্বাধীনভাবে প্রশ্ন করতে পারেন এবং উত্তরসমূহ খুঁটিয়ে বিশ্লেষণ করতে পারেন। এ ধরনের সাক্ষাৎকারের বড় ত্রুটি হলো এখানে বিভিন্ন সাক্ষাৎকার গ্রহণকারীর দ্বারা একই ব্যক্তির মূল্যায়নে পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়।

ঘ. উদ্দীপকে লাবলু ও মুকুলের ব্যক্তিত্বের ধরন যথাক্রমে অন্তর্মুখী ও বহির্মুখী। নিচে লাবলু ও মুকুলের ব্যক্তিত্বের তুলনামূলক বিশ্লেষণ উপস্থাপন করা হলো-
১. এরা পরোপকারী, অন্যদের নিয়ে ব্যস্ত থাকতে বেশি পছন্দ করে।
২. বহির্মুখী ব্যক্তিত্বের লোকেরা সদালাপি ও আড্ডাবাজ। এরা সাধারণত মিশুক প্রকিৃতর হয়ে থাকে।
৩. এরা উৎফুলস্নতা বা হৈচৈ পছনদ করার কারণে সমাজের বিভিনণ কর্মকান্ডে নিজেদের অতি উৎসাহে সম্পৃক্ত ও সক্রিয় রাখতে পছন্দ করে।
৪. এ শ্রেণির লোকেরা খোলামেলা স্বভাবের হয়ে থাকে তাই এরা সমাজসেবক, রাজনীতিবিদ, খেলোয়াড় ইত্যাদি প্রতিভার অধিকারী হয়।
অন্যদিকে, অন্তর্মুখী ব্যক্তিত্বের অধিকারী হওয়ায় এদের মধ্যে যে সকল বৈশিষ্ট্য দেখা যায় তা হলো-
১. নিজেদের নিয়ে ব্যস্ত থাকার কারণে এরা স্বার্থপর প্রকৃতির হয়ে থাকে।
২. স্বল্পভাষী ও চুপচাপ থাকার কারণে এরা আত্মকেন্দ্রিক প্রকৃতির হয়ে থাকে।
৩. আবেগকে নিজেদের মধ্যে নিয়ন্ত্রণ করার কারণে এরা সহজে নতুন পরিবেশে নিজেদের খাপ খাওয়াতে পারেনা।

২. দৃশ্যকল্প-১: আনিস চেহারায় গোলগাল, মিশুক ও আরামপ্রিয়। সে সর্বদাই অন্যের ভালোবাসা ও প্রশংসা পেতে চায়।
দৃশ্যকল্প-২: আমিন সুঠাম দেহের অধিকারী। তার কাঁধ ও বুক চওড়া। সে কাজেকর্মে প্রভুত্ব প্রিয়, দৃঢ় প্রতিজ্ঞ ও আক্রমণধর্মী।
ক. ব্যক্তিত্বের সংজ্ঞা দাও।
খ. সামাজিক ও উত্তেজনাপ্রবণ ব্যক্তিদেরকে সাইক্লয়েড বলা হয় কেন?
গ. আনিসের মধ্যে কোন ধরনের ব্যক্তিত্ব প্রকাশ পেয়েছে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. ‘‘আমিনের মধ্যে একাধিক ব্যক্তিত্বের সংমিশ্রণ রয়েছে।’’- উক্তিটির স্বার্থকতা যাচাই কর।

২ নম্বর সৃজনীশল প্রশ্নের উত্তর
ক. ব্যক্তিত্ব হলো ব্যক্তির সব বৈশিষ্ট্যের সামগ্রিক রূপ যার ভিতর দিয়ে প্রকাশ পায় তার স্বাতন্ত্র্যভাব। ক্রাইডার ও তাঁর সহযোগীদের (১৯৮৩) মতে, 'ব্যক্তিত্বকে আচরণ ও মানসিক প্রক্রিয়ার অনবদ্য ধরন হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা যেতে পারে, যা ব্যক্তিকে এবং ব্যক্তির সাথে পরিবেশের সম্পর্ককে চিহ্নিত করে।'

খ. সামাজিক ও উত্তেজনাপ্রবণ ব্যক্তিদেরকে সাইক্লয়েড বলা হয়। কেননা সামাজিক ও উত্তেজনা প্রবণ ব্যক্তিরা সাইক্লয়েড শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত। এ শ্রেণির লোক খুব সহজেই উৎফুলস্ন হয়, আবার সহজেই বিষাদগ্রস্ত হয়ে পড়ে। এ টাইপের লোকেরা আবেগকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে প্রকাশ করে এবং এরা হলো সামাজিক, উত্তেজনাপ্রবণ, বাস্তববাদী ও সহিষ্ণু (জি, ডি, বোয়াজ)। খেদোন্মত্ত ব্যক্তিরা খাট, গোলগাল, মেদবহুল দেহের অধিকারী হয়। চরম পর্যায়ে এসে এদের ম্যানিক - ডিপ্রেসিভ বাতুলতার লক্ষণ দেখা দেয়।

গ. উদ্দীপকে দৃশ্যকল্প-১ এ আনিসের মধ্যে যে ধরনের ব্যক্তিত্ব প্রকাশ পেয়েছে তা হলো এনডোমরফিক ব্যক্তিত্ব। নিচে ব্যাখ্যা করা হলো-
এডোমরফিক ব্যক্তিত্বের অধিকারী ব্যক্তির পেট শরীরের অন্যান্য অংশের তুলনায় বড় এবং স্ফীত। সারা দেহে মেদের আধিক্য। পেশি ও অস্থি অপরিপুষ্ট। এদের চেহারা গোলগাল এবং ত্বক খুব নরম। এরা মিশুক, আরামপ্রিয়, বন্ধু ভাবাপন্ন, পরনির্ভরশীল এবং ভোজনপ্রিয়। এরা সব সময় আনন্দপ্রিয় এবং অন্যের কাছ থেকে সবসময় আদর ও ভালোবাসা পেতে চায়।

ঘ. উদ্দীপকে আমীনের মধ্যে মেসোমরফিক ও সোমাটোটনিক এ দু'ধরনের ব্যক্তিত্বের সংমিশ্রণ ঘটেছে।
উদ্দীপকে আমিন সুঠাম শরীরের অধিকারী। এদের কাঁধ ও বুক চওড়া, পেশি মাংসল ও ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র তরঙ্গবিশিষ্ট এবং নিতম্ব চাপা। এদের শরীর খেলোয়াড় (Athlet) ধরনের। এরা খেলাধুলা পছন্দ করে এবং অন্যের উপর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে চায়। এরা তেজোদীপ্ত শারীরিক ও মানসিক শক্তির অধিকারী দুঃসাসিক কাজে এরা আনন্দ অনুভব করে।
আবার আমিনের মধ্যে সোমাটোটনিক ব্যক্তিত্বের বৈশিষ্ট্যও লক্ষণীয়। সোমাটোটনিকরা কাজে, কর্মে, কথায়, ভঙ্গিতে প্রভুত্বপ্রিয়। এদের মধ্যে উদ্যমশীল ও প্রচেষ্টামূলক কাজেরপ্রাধান্য দেখা যায়। আচরণে এরা উদ্যমশীল, দৃঢ় প্রতিজ্ঞ এবং আক্রমণধর্মী। এরা উত্তেজনাপূর্ণ ও অভিযানমূলক কাজ পছন্দ করে। অর্থাৎ উপরোক্ত আলোচনা থেকে বলা যায় যে, 'আমিনের মধ্যে একাধিক ব্যক্তিত্বের সংমিশ্রণ রয়েছে’-উক্তিটি যথার্থ ও সার্থক।

৩. মনোবিজ্ঞানের অধ্যাপক সুরাইয়া আক্তার ক্লাসে ছাত্রীদের ব্যক্তিত্বের সংলক্ষণ বিষয়ে পড়াচ্ছিলেন। তিনি ক্লাসের দুই ছাত্রী সুমনা ও তানিয়াকে সংলক্ষণ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেন। সুমনা ব্যক্তিত্বের সংলক্ষণের মধ্যে আবেগশীলতা, মিতভাষী ও বিনয়ী ভাব ইত্যাদির কথা বলল। অপর দিকে তানিয়া গুরুত্বের দিক দিয়ে প্রাধান্য পাওয়া কিছু সংলক্ষণের নাম বলল।
ক. ব্যক্তিত্ব কী?
খ. রোশাক কালির ছাপ অভীক্ষার কার্ডের রং এর ধরণগুলি লেখ।
গ. উদ্দীপকে সুমনার ব্যক্তিত্বের সংলক্ষণগুলি কোন শ্রেীণর ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকে তানিয়ার বক্তব্যের ভিত্তিতে সংলক্ষণগুলি বিশ্লেষণ কর।

৩ নম্বর সৃজনীশল প্রশ্নের উত্তর
ক. ব্যক্তিত্ব হলো ব্যক্তির সকল বৈশিষ্ট্যের সামগ্রিক রূপ যার ভিতর দিয়ে প্রকাশ পায় তার স্বাতন্ত্র্যভাব।

খ. রোশাক কালির ছাপ অভীক্ষার ১০টি কার্ড আছে। এর মধ্যে-৫টি কালো ও ধূসর বর্ণের ২টি কালো ও লাল বর্ণের বাকি ৩টি অন্যান্য বর্ণের।

গ. উদ্দীপকে সুমনার ব্যক্তিত্বের সংলক্ষণের মধ্যে আবেগশীলতা, মিতভাষী ও বিনয়ী ভাব যা বাহ্যিক সংকলনের অন্তর্ভুক্ত। নিচে ব্যাখ্যা করা হলো-
প্রখ্যাত মনোবিজ্ঞানী বেমন্ড বি. ক্যাটল ১৯৫০ সালে সংলক্ষণ মতবাদ তৈরি করেন। যা ক্যাটলের সংলক্ষণ মতবাদ নামে পরিচিত। তাঁর সংলক্ষণ মতবাদ দুটি ভাগে বিভক্ত। এর মধ্যে অন্যতম একটি হলো বাহ্যিক সংলক্ষণ। ক্যাটলের মতে, ১৬টি বাহ্যিক সংলক্ষণের মাধ্যমে ব্যক্তিত্বের বহিঃপ্রকাশ ঘটে। তিনি লক্ষ করেন যে, ব্যক্তিত্বের এমন কতকগুলো সংলক্ষণ আছে যেগুলোর একটি কোনো ব্যক্তির মধ্যে বর্তমান থাকলে অন্যগুলোও বর্তমান থাকে। যে সংলক্ষণগুলো একত্রে অবস্থান করে সেগুলোকে তিনি একটি গুচ্ছ বা ঝাঁকে সংঘবদ্ধ করেন এবং এ সংলক্ষণগুলোকে একত্রে বাহ্যিক সংলক্ষণ বলে অভিহিত করেন। এগুলো ব্যক্তির আচরণে সরাসরি প্রকাশ পায়। যেমন- বিনয়ী একটি বাহ্যিক সংলক্ষণ। কোনো ব্যক্তি যদি এ সংলক্ষণের অধিকারী হয়, সেটি তার বাহ্যিক আচরণে প্রকাশ পাবে।

ঘ. উদ্দীপকে তানিয়া গুরুত্বের দিক দিয়ে প্রাধান্য পাওয়া কিছু সংলক্ষণের নাম বলে। নিচে তানিয়ার বক্তব্যের ভিত্তিতে সংলক্ষণগুলো বিশ্লেষণ করা হলো-
গুরুত্বের দিক থেকে বিবেচনা করে মনোবিজ্ঞানী আলপোর্ট ব্যক্তিত্বের সংলক্ষণগুলোকে তিন ভাগে ভাগ করেছেন। যথা-
১. মৌলিক সংলক্ষণ: মৌলিক সংলক্ষণ হলো কোনো ব্যক্তির এমন প্রধান গুণাবলি যার মাধ্যমে তিনি বিশেষভাবে পরিচিত হন। এ সংলক্ষণকে ‘বিশেষ বৈশিষ্ট্য'ও বলা যায়। যেমন- নেপোলিয়ান একসঙ্গে সাতটি চিঠির শ্রুতিলিখন দিতে পারতেন।
২. কেন্দ্রীয় সংলক্ষণ: ব্যক্তির কিছুসংখ্যক গুণাবলি যা তার ব্যক্তিত্বের মূল প্রকৃতি বর্ণনা করে। সেগুলোকে কেন্দ্রীয় সংলক্ষণ বলে। যেমন- কেউ কারও সুপারিশ করলে সাধারণত কেন্দ্রীয় সংলক্ষণের কথাই উল্লেখ করেন।
৩. গৌণ সংলক্ষণ: গৌণ সংলক্ষণ হলো সেই সংলক্ষণ যা খুবই সাধারণ এবং যা এক ব্যক্তিকে অন্যজন হতে পৃথক করতে পারে না। সুতরাং উপরোক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায় যে, নাফিজের বক্তব্যটি যথার্থ।

৪. পুলিশ এক ডাকাতকে ধরার পার দুদিনের রিমান্ডে নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্ন করে বিরক্ত করে ফেললেন। স্বীকারোক্ত আদায়ের জন্য এক পর্যায়ে সত্যি না বললে ডাকাতের স্ত্রী সন্তানদের সমস্যা হবে বলে চূড়ান্তভাবে সতর্ক করলেন। ডাকাত মানসিকভাবে খুবই ভেঙ্গে পড়লে মনোবিজ্ঞানী তার সাথে কথাবার্তা বলে চিকিৎসা সেবা প্রদান করলেন। ডাকাতের ছোট ভাই এলাকার খুবই জনপ্রিয়, গ্রামের মানুষের উপকারে ব্যস্ত থাকেন এবংপ্রতি বছর ইউপি চেয়ারম্যান পদে জয়লাভ করেন।
ক. ব্যক্তিত্ব অভীক্ষা কী?
খ. সাক্ষাৎকার বলতে কী বুঝ?
গ. ‘ডাকাতের ছোট ভাই কার্ল ইয়ং তার মতে কোন ধরনের ব্যক্তিত্বের অধিকারী। ব্যাখ্যা কর।
ঘ. মনোবিজ্ঞানী ও পুলিশের সাক্ষাৎকারই কি একই ধরনের?মূল্যায়ন কর।

৪ নম্বর সৃজনীশল প্রশ্নের উত্তর
ক. ব্যক্তির দৈহিক গঠন ও বাহ্যিক আচরণ লক্ষ্য করে তার সম্পর্কে অপরের অভিমত সংগ্রহ করে বা ব্যক্তির চিন্তা, ভাবধারা, বিশ্বাস, আদর্শ, জীবনের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি প্রভৃতি বিষয় সম্পর্কে ব্যক্তিকে প্রশ্ন করে ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব নিরূপণের চেষ্টা করাই হলো ব্যক্তিত্ব অভীক্ষা।

খ. ব্যক্তিত্ব মূল্যায়নের প্রাচীনতম ও সবচেয়ে বহুল ব্যবহৃত পদ্ধতি হলো সাক্ষাৎকারগ্রহণ। সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে ব্যক্তিকে সামগ্রিকভাবে মূল্যায়ন করা হয় এবং ব্যক্তির গুণাবলি বা বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে বর্ণনা প্রদান করা হয় বা বিচারগ্রসূত মতামত দেখা হয়। সাক্ষাৎকার যখন মুক্ত পরিবেশে গ্রহণ করা হয় তখন আলাপ-আলোচনার গতি আগে থেকেই নির্দিষ্ট করা থাকে না। কিন্তু নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে অথবা গ্রামাণ্য সাক্ষাৎকার অবস্থায় বিভিন্ন সাক্ষাৎকার গ্রহণকারীর মধ্যে পার্থক্য কমে যায়। প্রত্যেক পরীক্ষার্থীকে একটি নির্দিষ্ট তালিকা অনুযায়ী কতকগুলো প্রশ্ন করা হয়।

গ. উদ্দীপকে ডাকাতের ছোট ভাই কার্ল ইয়ং এর মতে বহির্মুখী ব্যক্তিত্বের অধিকারী। নিচে তা ব্যাখ্যা করা হলো-
বহির্মুখী শ্রেণির ব্যক্তিত্বের ব্যক্তিরা বাইরের জগতের বিভিন্ন কর্মকান্ডের সাথে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে। এরা অন্যের সাথে মিশতে এবং প্রাণ খুলে আনন্দ প্রকাশে আগ্রহী। বিভিন্ন সামাজিক কর্মকান্ডে এরা সক্রিংয়ভাবে অংশগ্রহণ করে। মুক্ত বিহঙ্গের মতো স্বাধীনভাবে বিচরণই এদের কাম্য। বহির্মুখী ব্যক্তিত্বের লোকেরা খুবই সামাজিক এবং যেকোনো পরিবেশ পরিস্থিতিতে এরা নিজেদের খাপ খাইয়ে নিতে পারে। নিজের জন্যে এদের কোনো মাথাব্যথা নেই; অন্যের জন্য এদের যত চিন্তাভাবনা। সমাজসেবা, খেলাধুলা, ভ্রমণ, ব্যবসায়-বাণিজ্য ইত্যাদি কাজে এরা খুবই আগ্রহী।

ঘ. উদ্দীপকে মনোবিজ্ঞানী ও পুলিশের সাক্ষাৎকার একই ধরনের নয়, ভিন্ন ধরনের। ডাকাতের সাথে মনোবিজ্ঞানী ও পুলিশের যে সাক্ষাৎকার চলেছে তা যথাক্রমে অনির্ধারিত ও ক্লান্তিমূলক সাক্ষাৎকার। নিচে মূল্যায়ন করা হলো-
অনির্ধারিত সাক্ষাৎকার পূর্বে কোনো নির্দিষ্ট প্রশ্নমালা থাকে না। সাক্ষাৎকার গ্রহণকারী গ্রহণকারী তার ইচ্ছামতো যে কোনো সাক্ষাৎকারদাতাকে করতে পারেন। অর্থাৎ অনির্ধারিত সাক্ষাৎকার পর্বে সাক্ষাৎকার গ্রহণকারী স্বাধীনভাবে প্রশ্ন করতে পারেন এবং উত্তরসমূহ খুঁটিয়ে বিশ্লেষণ করতে পারেন।
আবার, ক্লান্তিমূলক সাক্ষাৎকারে ব্যক্তিকে বিভিন্ন ধরনের প্রশ্ন করে ব্যতিব্যস্ত এবং ক্লান্ত করা হয়। ব্যক্তি ক্লান্ত হলে তার মানসিক প্রতিরোধ ব্যবস্থাসমূহ ভেঙ্গে পড়বে এবং তার অসঙ্গতিগুলো ধরা পড়বে। এভাবে ব্যক্তির বাহ্যিক আচরণের আড়ালে লুকায়িত তার প্রেষণা বা দৃষ্টিভঙ্গি অথবা মানসিক দুর্বলতা নির্ণয় করা যেতে পারে।

৫. ফাহিম দ্বাদশ শ্রেীণির ছাত্র। সে মনোবিজ্ঞান বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে পড়াশুনা করে কেননা সে একজন মনোবিজ্ঞানী হতে চায়। তাই মনোবিজ্ঞান ব্যবহারিক ক্লাসগুলো সে অত্যন্ত দক্ষতার সাথে সম্পন্ন করে। একদিন ‘‘ফাহিম পরীক্ষাগারে তার অভীক্ষার্থীকে নির্দিষ্ট কর্মপন্থা অনুসরণ করার পর ১০টি কালির ছাপ বিশিষ্ট কার্ড দেখিয়ে অভীক্ষার্থীর উত্তর সংগ্রহ করে। অভীক্ষার্থীর প্রদত্ত উত্তরগুলোকে সে কয়েকটি বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে মূল্যায়ন করে এবং প্রাপ্ত ফলাফলে ভিত্তিতে অভীক্ষার্থীর ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে ধারণা পায়।
ক. ক্যাটলের মতে কতটি বাহ্যিক সংলক্ষণের মাধ্যমে ব্যক্তিত্বের বহিঃপ্রকাশ ঘটে?
খ. বহির্মুখী ব্যক্তিত্বের দুটি বৈশিষ্ট্য লিখ।
গ. পরীক্ষাগারে ফাহিমের প্রয়োগকৃত অভীক্ষাটির কর্মপন্থা ব্যাখ্যা কর।
ঘ. ফাহিম কোন পদ্ধতি অবলম্বন করে অভীক্ষার্থীর ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে বলে তুমি মনে কর-বিশ্লেষণ কর।

৫ নম্বর সৃজনীশল প্রশ্নের উত্তর
ক. ক্যাটলের মতে, ১৬টি বাহ্যিক সংলক্ষণের মাধ্যমে ব্যক্তিত্বের বহিঃপ্রকাশ ঘটে।

খ. বহির্মুখী ব্যক্তিত্বের ২টি বৈশিষ্ট্য হলো-
১. বহির্মুখী শ্রেণির লোকেরা বহিঃকেন্দ্রিক।
২. বহির্মুখী শ্রেণির লোকেরা সহজেই বাইরের পরিবেশের সাথে নিজেকে খাপ খাইয়ে নিতে পারে।

গ. পরীক্ষাগারে ফাহিমের প্রয়োগকৃত অভীক্ষাটি হলো রোশাক কালির ছাপ অভীক্ষা, যা ১৯২১ সালে সুইজারল্যান্ডের মনোচিকিৎসক হারম্যান রোশাক কর্তৃক প্রণীত। নিচে অভীক্ষাটির কর্মপন্থা ব্যাখ্যা করা হলো-
অভীক্ষাটি ১০টি কালির ছাপ বিশিষ্ট কার্ড নিয়ে গঠিত। রোশাক অভীক্ষার ১০টি কালির ছাপের মধ্যে ৫টি কালো ও ধূসর বর্ণের, ২টি কালো ও লাল বর্ণের এবং বাকি ৩টি অন্যান্য বর্ণের। কার্ডগুলো ১ থেকে ১০ পর্যন্ত সংখ্যা দ্বারা চিহ্নিত। কার্ডগুলোর কালির ছাপ প্রকৃতপক্ষে অর্থহীন, কিন্তু এমন প্রকৃতির যে সেগুলোকে যেমন খুশি তেমন করে প্রত্যক্ষণ করা যায়।
এ অভীক্ষার ক্ষেত্রে পরীক্ষণপাত্রকে এক একটি করে কার্ড দেওয়া হয় এবং কার্ডে সে কি দেখছে তা বলতে বলা হয়। কার্ডগুলো দেখার সময় পরীক্ষণপাত্র যতক্ষণ খুশি এবং যেভাবে খুশি দেখতে পারে। প্রতিটি কার্ড দেখা শেষ হলে পরীক্ষণপাত্রের উত্তর হুবহু লিখে রাখা হয়। এভাবে পরীক্ষণ পাত্রকে ১০টি কার্ড দেখানো শেষ হলে তাকে আবার দ্বিতীয় কার্ডগুলো দেখিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। সে কার্ডে যা দেখেছে তা কার্ডের কোন কোন অংশে দেখেছে তা নির্দেশ করতে বলা হয়। উপরোক্ত প্রক্রিয়ায় ফাহিমের প্রয়োগকৃত অভীক্ষাটির কর্মপন্থা সম্পন্ন হয়।

ঘ. উদ্দীপকে ফাহিম যে পদ্ধতি অবলম্বন করে অভীক্ষার্থীর ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেয় তা হলো প্রতিক্রিয়া।
এখানে অভীক্ষক বিচার-বিশ্লেষণ পূর্বক পরীক্ষণপাত্রের ব্যক্তিতব মূল্যায়ন করবে। পরীক্ষণপাত্রের ব্যক্তিত্ব মূল্যায়ন তিনটি বৈশিষ্ট্যের
ভিত্তিতে করা যায় তা হলো-
১. পরীক্ষণপাত্র কালির ছাপগুলোকে সামগ্রিকভাবে বর্ণনা করছে না অংশবিশেষ বর্ণনা করছে।
২. ছবির আকৃতি, রং বা অন্যকিছুর দ্বারা তার প্রতিক্রিয়া প্রভাবিত হয়েছে কি-না।
৩. পরীক্ষণপাত্রের প্রত্যক্ষণে কি গতি লক্ষণীয়?অথবা সে ছবিগুলোকে মানুষ বা জন্তু হিসেবে দেখছে, না অন্যকিছু দেখছে।
এক্ষেত্রে অভীক্ষার্থীর প্রতিক্রিয়ার সাথে ব্যক্তিত্বের যে প্রতিক্রিয়াজনিত সম্পর্ক তৈরি হবে তা হলো-
১. কালির ছাপ সামগ্রিকভাবে প্রত্যক্ষণ করলে তা বিমূর্ত চিন্তা ও তাত্ত্বিক জ্ঞানের প্রতি আগ্রহ নির্দেশ করে। আর অংশবিশেষ প্রত্যক্ষণ করলে খুঁটিনাটি বা সামান্য বিষয় নিয়ে ব্যন্ত থাকার আগ্রহকে নির্দেশ করে।
২. রঙের উপর প্রতিক্রিয়া অসংযত আবেগ এবং রং ও আকৃতি উভয়ের প্রতি প্রতক্রিয়া সংযত ও সাবলীল আবেগ নির্দেশ করে।
৩. মানুষের ছবি বা গতিশীল মানুষের ছবি অধিক বুদ্ধিমত্তার পরিচায়ক। কালির ছাপের মধ্যে জন্তু প্রত্যক্ষণ করলে তা চিন্তাশক্তির সীমাবদ্ধতাকে নির্দেশ করে।
অর্থাৎ ফাহিম উপরোক্ত প্রক্রিয়ায় অভীক্ষার্থীর ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নিবে।

৬. C - খাটো ও গোলগাল
S লম্বা ও হালকা পাতলা
ক. Personality শব্দটি কোন শব্দ হতে উদ্ভূত?
খ. লিঙ্গচ্ছেদন আশঙ্কা বলতে কি বোঝায়?
গ. উদ্দীপকে ‘C’ ও ‘S’ এর শারীরিক গড়নে যে ভিন্নতা দেখা যায় তা ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উল্লেখিত শারীরিক গঠন কোন মতবাদের অনুরূপ বলে তুমি মনে কর- বিশ্লেষণ কর।

৬ নম্বর সৃজনীশল প্রশ্নের উত্তর
ক. Personality শব্দটি ল্যাটিন ‘Persona' শব্দ থেকে উদ্ভূত।

খ. পুরুষশিশু লৈঙ্গিক পর্যায়ে মাকে নিজের ‘আসক্তির পাত্র বলে মনে করে এবং বাবাকে তার প্রতিপক্ষ হিসেবে ভাবতে থাকে। কিন্তু সে দেখে যে পিতা অনেক ক্ষমতার অধিকারী, তাই মনে এই ভয় দেখা দেয় যে পিতা তার লিঙ্গ কেটে ফেলবে। মনোবিজ্ঞানী ফ্রয়েড একে লিঙ্গচ্ছেদন আশঙ্কা বলেছেন।

গ. উদ্দীপকে ‘C’ হলো সাইক্লয়েড শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত বৈশিষ্ট্য এবং ‘S’ হলো সিজোয়েড শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত বৈশিষ্ট্য। নিচে সাইক্লয়েড ও সিজোয়েড শ্রেণির শারীরিক গড়নে যে ভিন্নতা দেখা যায় তা ব্যাখ্যা করা হলো-
সাইক্লয়েড শ্রেণির লোকেরা খুব সহজেই উৎফুলস্ন হয়, আবার সহজেই বিষাদগ্রস্ত হয়ে পড়ে। এ শ্রেণির লোকেরা আবেগকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে প্রকাশ করে এবং এরা হলো সামাজিক উত্তেজনাপ্রবণ, বাস্তববাদী ও সহিষ্ণু। খেদোন্মত্ত ব্যক্তিরা খাটো, গোলাকার মেদবহুল দেহের অধিকারী হয়। চরম পর্যায়ে এসে এদের ম্যানিক-ডিপ্রেসিভ বাতুলতার লক্ষণ দেখা দেয়।
অপরদিকে সিজোয়েড শ্রেণির লোকেরা অন্তর্মুখী এবং সামাজিক সম্পর্কবিমুখ হয়। এরা লম্বা ও হালকা-পাতলা গড়নের হয়। চরম বিপর্যয়ে এরা সিজোফ্রেনিয়া নামক মানসিক রোগে ভোগে।
উপরোক্ত আলোচনা হতে দেখা যায় যে 'C' ও ‘S’ এর শারীরিক গড়নে ভিন্নতা পরিলক্ষিত হয়।

ঘ. উদ্দীপকে উল্লেখিত শারীরিক গঠন ক্রেৎসমারের ‘শারীরিক গঠন’ মতবাদের অনুরূপ। নিচে মতবাদটি বিশ্লেষণ করা হলো-
জার্মান মনোরোগ বিশারদ আরনেস্ট ক্রেৎস্মার ১৯২৫ সালে মানসিক বিকারগ্রস্ত রোগীদের চিকিৎসা করার সময় তাদের নিয়ে অনেক পরীক্ষা- নিরীক্ষা করেন। তিনি লক্ষ করেন যে, ‘শরীরের গড়নের সাথে মানসিক লক্ষণ ও ব্যক্তিত্বের সম্পর্ক রয়েছে' তার এ মতবাদই ক্রেৎস্মারের ‘শারীরিক গঠন মতবাদ’ নামে পরিচিত। এই মতবাদের মাধ্যমে তিনি এ দেখিয়েছেন মানসিক রোগীদের আচরণে মেজাজ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তিনি স্বাভাবিক ব্যক্তিদের ক্ষেত্রেও শারীরিক গঠনের সাথে তার সকল আচরণ ও মানসিক ক্রিয়া-প্রতিক্রিংয়ার একটি যোগসূত্র লক্ষ করেন। এর উপর ভিত্তি করে মনোবিজ্ঞানী ক্রেৎসমার ব্যক্তিত্বের গুণাবলি ও মেজাজকে দুইভাগে ভাগ করেছেন। যথা- সাইক্লয়েড ও সিজোয়েড। ক্রেসমার যে কেবল অসুস্থ লোকের ওপরই গবেষণা করছেন তা নয়। তিনি স্বাভাবিক লোকের ওপরও গবেষণা পরিচালনা করেন। তিনি সুস্থ ও স্বাভাবিক ব্যক্তিদের পর্যবেক্ষণ করে দৈহিক বৈশিষ্ট্যের দিক থেকে তাদের তিনটি প্রধান শ্রেণিতে ভাগ করেন। যথা- ১. পিকনিক ২. এ্যাসথেনিক এবং ৩. এ্যাথলেটিক।
এছাড়াও মিশ্রগঠনের দেহকে ‘ডিসপস্নাস্টিক’ শ্রেণিভুক্ত করেন। ক্রেৎসমার তাঁর গবেষণা শেষে দেখতে পান যে হালকা-পাতলা গড়নের ব্যক্তিদের মধ্যে সিজোফ্রেনিয়া এবং যারা মোটা ও গোলগাল ধরনের তাদের মধ্যে ম্যানিক ডিপ্রেসিভ নামক মানসিক ব্যাধি বেশি হয়।
উপরোক্ত আলোচনা হতে দেখা যায় যে, উদ্দীপকে উল্লেখিত শারীরিক গঠন ক্রেৎসমারের শারীরিক গঠনের মতবাদের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।

HSC মনোবিজ্ঞান ২য় পত্র (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর অধ্যায় ২ pdf download

৭. সৌরভের মামা একজন মনোবিজ্ঞানী। সৌরভ ও তার বন্ধু নাফিজ মনোবিজ্ঞানের ছাত্র হওয়ায় তারা মামার কাছ থেকে সংলক্ষণ (S) বিষয়ে জানার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করল। মামা তাদের দুজনকে সংলক্ষণ (S) বিষয়ে বিস্তারিত বুঝিয়ে বললেন এবং সৌরভের কাছে কিছু ব্যক্তি সংলক্ষণের নাম জানতে চাইলেন। সৌরভ আবেগশীলতা, বিনয়ী, মিতভাষী প্রভৃতির কথা উল্লেখ করল। অপরদিকে তার বন্ধু নাফিজ গুরুত্বের দিক থেকে নিজের কয়েকটি ব্যক্তিত্বের সংলক্ষণের নাম বলল।
ক. পেপার-পেন্সিল টেস্ট কী?
খ. বংশগত সংলক্ষণ কাকে বলে?
গ. সৌরভের ব্যক্তিত্বের ‘S’ গুলো কোন শ্রেণির?সংক্ষেপে লিখ। 
ঘ. উদ্দীপকে নাফিজের বক্তব্যটি যথার্থভাবে বিশ্লেষণ কর।

৭ নম্বর সৃজনীশল প্রশ্নের উত্তর
ক. যে অভীক্ষায় সাধারণত কাগজ ও পেন্সিল ব্যবহার করা হয় তাই পেপার-পেন্সিল টেস্ট।

খ. বংশগত অর্থাৎ ক্রোমোজোম বা জিনের বৈশিষ্ট্যগত উপাদানের প্রেক্ষিতে এবং সহজাত প্রবৃত্তির ফলে যে সংলক্ষণসমূহ ব্যক্তির মধ্যে প্রকাশ পায়, সেসব সংলক্ষণসমূহকেই আর্গ বা বংশগত সংলক্ষণ বলা হয়।

গ. উদ্দীপকে ‘S’ হলো সংলক্ষণ। উদ্দীপকে সৌরভের ব্যক্তিত্বে সংলক্ষণগুলো হলো আবেগশীলতা, বিনয়ী, মিতভাষী প্রভৃতি যা বাহ্যিক সংলক্ষণের অন্তর্ভুক্ত। নিচে সংক্ষেপে বর্ণনা করা হলো-
প্রখ্যাত মনোবিজ্ঞানী রেমন্ড বি. ক্যাটল ১৯৫০ সালে সংলক্ষণ মতবাদ তৈরি করেন। যা ক্যাটলের সংলক্ষণ মতবাদ নামে পরিচিত। তার সংলক্ষণ মতবাদ দুটি ভাগে বিভক্ত। এর মধ্যে অন্যতম একটি হলো বাহ্যিক সংলক্ষণ। ক্যাটলের মতে, ১৬টি বাহ্যিক সংলক্ষণের মাধ্যমে ব্যক্তিত্বের বহিঃপ্রকাশ ঘটে। তিনি লক্ষ করেন যে, ব্যক্তিত্বের এমন কতকগুলো সংলক্ষণ আছে যেগুলোর একটি কোনো ব্যক্তির মধ্যে বর্তমান থাকলে অন্যগুলোও বর্তমান থাকে। যে সংলক্ষণগুলো একত্রে অবস্থান করে সেগুলোকে তিনি একটি গুচ্ছ বা ঝাঁকে সংঘবদ্ধ করেন এবং এ সংলক্ষণগুলোকে একত্রে বাহ্যিক সংলক্ষণ বলে অভিহিত করেন। এগুলো ব্যক্তির আচরণে সরাসরি প্রকাশ পায়। যেমন- বিনয়ী একটি বাহ্যিক সংলক্ষণ। কোনো ব্যক্তি যদি এ সংলক্ষণের অধিকারী হয়, সেটি তার বাহ্যিক আচরণে প্রকাশ পাবে।

ঘ. উদ্দীপকে নাফিজ গুরুত্বের দিক থেকে ব্যক্তিত্বের সংলক্ষণকে ব্যাখ্যা করেছে। নিচে নাফিজের বক্তব্যটি যথার্থভাবে বিশ্লেষণ করা হলো-
গুরুত্বের দিক থেকে বিবেচনা করে মনোবিজ্ঞানী আলপোর্ট ব্যক্তিত্বের সংলক্ষণগুলোকে তিন ভাগে ভাগ করেছেন। যথা-
১. মৌলিক সংলক্ষণ: মৌলিক সংলক্ষণ হলো কোনো ব্যক্তির এমন প্রধান গুণাবলি যার মাধ্যমে তিনি বিশেষভাবে পরিচিত হন। এ সংলক্ষণকে ‘বিশেষ বৈশিষ্ট্য'ও বলা যায়। যেমন- নেপোলিয়ান একসঙ্গে সাতটি চিঠির শ্রুতিলিখন দিতে পারতেন।
২. কেন্দ্রীয় সংলক্ষণ: ব্যক্তির কিছুসংখ্যক গুণাবলি যা তার ব্যক্তিত্বের মূল প্রকৃতি বর্ণনা করে। সেগুলোকে কেন্দ্রীয় সংলক্ষণ বলে। যেমন- কেউ কারও সুপারিশ করলে সাধারণত কেন্দ্রীয় সংলক্ষণের কথাই উল্লেখ করেন।
৩. গৌণ সংলক্ষণ: গৌণ সংলক্ষণ হলো সেই সংলক্ষণ যা খুবই সাধারণ এবং যা এক ব্যক্তিকে অন্যজন হতে পৃথক করতে পারে না। সুতরাং উপরোক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায় যে, নাফিজের বক্তব্যটি যথার্থ।

৮. সম্পদ ও সাদ দুই ভাই। তাদের দুজনকে নিয়ে বাবা-মা খুবই চিন্তিত। কারণ দুজনের চারিত্রিক আচরণ সম্পূর্ণ ভিন্ন ধরনের। সম্পদ খুবই স্বাধীনচেতা, সক্রিয় ও সাহসী। সব কাজেই সে অংশগ্রহণ করতে চায়। অন্যের প্রয়োজনে সে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়। অপরদিকে সাদ খুবই আত্মকেন্দ্রিক ও রক্ষণশীল। সে সহজে কোনো পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে পারেনা। তাই বাবা-মা সবসময় তাদের নিয়ে আশঙ্কায় থাকেন।
ক. ব্যক্তিত্বের আধুনিক মনোবৈজ্ঞানিক অনুধ্যানকে কয়টি দৃষ্টিভঙ্গিতে ভাগ করা যায়?
খ. অন্তর্মুখী ব্যক্তিত্বের দুটি বৈশিষ্ট্য লিখ।
গ. সাদ এর ব্যক্তিত্বের বৈশিষ্ট্যগুলো ব্যাখ্যা কর।
ঘ. সম্পদ ও সাদের ব্যক্তিত্বের তুলনামূলক বিশ্লেষণ উপস্থাপন কর।

৮ নম্বর সৃজনীশল প্রশ্নের উত্তর
ক. ব্যক্তিত্বের আধুনিক মনোবৈজ্ঞানিক অনুধ্যানকে প্রধানত ৫টি দৃষ্টিভঙ্গিতে ভাগ করা যায়।

খ. অন্তর্মুখী ব্যক্তিত্বের দুটি বৈশিষ্ট্য হলো-
১. অন্তর্মুখী শ্রেণির লোকেরা খুবই আত্মকেন্দ্রিক।
২. অন্তর্মুখী শ্রেণির লোকেরা নতুন পরিবেশের সাথে সহজে খাপ খাওয়াতে পারেনা।

গ. উদ্দীপকে সাদ খুবই আত্মকেন্দ্রিক ও রক্ষণশীল। সে সহজে নিজেকে কোনো পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে পারে না। যা
তার ব্যক্তিত্বের অন্তর্মুখী প্রকাশ।
নিচে সাদের অন্তর্মুখী ব্যক্তিত্বের বৈশিষ্ট্যসমূহ উল্লেখ করা হলো-
১. "অন্তর্মুখী ব্যক্তিত্বের লোকেরা নিজেদের নিয়ে ব্যস্ত থাকতে ভালোবাসে। বাইরের জগতের প্রতি এদের আকর্ষণ কম।
২. এ শ্রেণির লোকেরা খুব আত্মকেন্দ্রিক।
৩. এ শ্রেণির লোকেরা বাহ্যবস্তুর প্রতি উদাসীন, আত্মসচেতন এবং একই সাথে স্বার্থপর।
৪. অন্তর্মুখী ব্যক্তিত্বের লোকেরা অত্যন্ত চিন্তাশীল, আবেগপ্রবণ ও সংবেদনশীল হয়।
৫. এরা কাজের তুলনায় চিন্তার রাজ্যে বিচরণ করতে বেশি পছন্দ করে।
৬. এদের মধ্যে সামাজিকতাবোধের একান্ত অভাব।
৭. কবি, সাহিত্যিক, শিল্পী, বিজ্ঞানীদের এ শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত করা চলে।

ঘ. উদ্দীপকে সম্পদ খুবই স্বাধীনচেতা, সক্রিয়, ও সাহসী। যা কি-না বহির্মুখী ব্যক্তিত্বের অন্তর্ভুক্ত এবং সাদ আত্মকেন্দ্রিক ও রক্ষণশীল যা অন্তর্মুখী ব্যক্তিত্বের অন্তর্ভুক্ত। নিচে সম্পদ ও সাদের ব্যক্তিত্বের তুলনামূলক বিশ্লেষণ উপস্থাপন করা হলো-
উদ্দীপক 'অনুসারে সম্পদ বহির্মুখী ব্যক্তিত্বের অধিকারী। বহির্মুখী ব্যক্তিত্বের ব্যক্তিদের মধ্যে যে সকল বৈশিষ্ট্য দেখা যায় তা হলো-
১. এরা পরোপকারী, অন্যদের নিয়ে ব্যস্ত থাকতে বেশি পছন্দ করে।
২. বহির্মুখী ব্যক্তিত্বের লোকেরা সদালাপি ও আড্ডাবাজ। এরা সাধারণত মিশুক প্রকৃতির হয়ে থাকে।
৩. এরা উৎফুলস্নতা বা হৈচৈ পছনদ করার কারণে সমাজের বিভিনণ কর্মকান্ডে নিজেদের অতি উৎসাহে সম্পৃক্ত ও সক্রিয় রাখতে পছন্দ করে।
৪. এ শ্রেণির লোকেরা খোলামেলা স্বভাবের হয়ে থাকে তাই এরা সমাজসেবক, রাজনীতিবিদ, খেলোয়ার ইত্যাদি প্রতিভার অধিকারী হয়।
অন্যদিকে, সাদ অন্তর্মুখী ব্যক্তিত্বের অধিকারী হওয়ায় এদের মধ্যে যে সকল বৈশিষ্ট্য দেখা যায় তা হলো-
১. নিজেদের নিয়ে ব্যস্ত থাকার কারণে এরা স্বার্থপর প্রকৃতির হয়ে থাকে।
২. স্বল্পভাষী ও চুপচাপ থাকার কারণে এরা আত্মকেন্দ্রিক প্রকৃতির হয়ে থাকে।
৩. আবেগকে নিজেদের মধ্যে নিয়ন্ত্রণ করার কারণে এরা সহজে নতুন পরিবেশে নিজেদের খাপ খাওয়াতে পারেনা।

৯. রমিজ ও রানা দুই বন্ধু। রমিজ খুবই স্বাধীনচেতা, সক্রিয় ও সাহসী। সে বিভিন্ন সামাজিক কর্মকান্ডে অংশ নিতে এবং বন্ধু-বান্ধবদের সাথে আড্ডা দিতে বেশি পছন্দ করে। রানা ছিপ ছিপে লম্বা, হালকা পাতলা গড়নের। সে আত্মকেন্দ্রিক ও নির্জনতাপ্রিয় এবং যেকোনো কাজে দ্রুত প্রতিক্রিয়া করতে পারে।
ক. ব্যক্তিত্বের পাঁচটি প্রধান দৃষ্টিভঙ্গি কী কী?
খ. সাইক্লোয়েড বা খেদোন্মত্তরূপ মেজাজের বৈশিষ্ট্য কী?
গ. রানার বৈশিষ্ট্যকে শেলডন কীভাবে ব্যাখ্যা করেছেন?বর্ণনা কর।
ঘ. রমিজ ও রানার ব্যক্তিত্বকে কার্ল ইয়ুং কীভাবে ব্যাখ্যা করেছেন- বিশ্লেষণ কর।

৯ নম্বর সৃজনীশল প্রশ্নের উত্তর
ক. ব্যক্তিত্বের পাঁচটি প্রধান দৃষ্টিভঙ্গি হলো- i. জৈবিক দৃষ্টিভঙ্গি; ii. মনোগতীয় দৃষ্টিভঙ্গি; iii. সংলক্ষণ দৃষ্টিভঙ্গি; iv. আচরণগত দৃষ্টিভঙ্গি; v. মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি।

খ. সাইক্লোয়েড বা খেদোন্মত্তরূপ মেজাজের বৈশিষ্ট্য নিম্নরূপ-
১. এ শ্রেণির লোক খুব সহজেই উৎফুলস্ন হয়, আবার সহজেই বিষাদগ্রস্ত হয়ে পড়ে।
২. এ টাইপের লোকেরা আবেগকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে প্রকাশ করে এবং এরা হলো, সামাজিক, উত্তেজনাপ্রবণ, বাস্তববাদী ও সহিষ্ণু (জি. ডি. বোয়াজ)।
৩. খেদোন্মত্ত ব্যক্তিরা খাট, গোলগাল, মেদবহুল দেহের অধিকারী হয়।
৪. চরম পর্যায়ে এসে এদের ম্যানিক-ডিপ্রেসিভ বাতুলতার লক্ষণ দেখা দেয়।

গ. শারীরিক গঠনের ভিত্তিতে ১৯৪০ সালে উইলিয়াম শেলডন ব্যক্তিত্বের শ্রেণিবিভাগ করেন। তিনি বহুসংখ্যক ব্যক্তির নগ্ন দেহের ছবি পর্যবেক্ষণ করে দেহের গঠনকে তিনটি প্রধান বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে শ্রেণিবিভাগ করেন। যথা- এনডোমরফিক, একটোমরফিক ও মেসোরফিক। উদ্দীপকে রানার বৈশিষ্ট্যকে ‘শেলডন' এক্টোমরফিক শ্রেণিতে রেখে ব্যাখ্যা করেছেন। নিচে এক্টোমরফিক শ্রেণির বৈশিষ্ট্য ব্যাখ্যা করা হলো-
এ ধরনের ব্যক্তিত্বের অধিকারী লোকদের দেহ ছিপছিপে লম্বা, হালকা, পাতলা গড়নের হয়। এরা যেকোনো কাজে দ্রুত প্রতিক্রিয়া করতে পারে। সামাজিক মেলামেশা এরা পছন্দ করে, এরা আত্মকেন্দ্রিক এবং নির্জনতাপ্রিয়।

ঘ. উদ্দীপকে আলোচিত রমিজ ও রানার ব্যক্তিত্বকে কার্ল ইয়ুং বহির্মূখী ও অন্তর্মুখী এ দু'ভাবে ব্যাখ্যা করেছেন। নিচে বিশ্লেষণ করা হলো-
রমিজের ব্যক্তিত্ব:
বাইরের জগতের প্রতি এদের রয়েছে প্রবল আকর্ষণ। এরা অন্যের সাথে মিশতে এবং প্রাণ খুলে আনন্দ প্রকাশে আগ্রহী। বাইরের জগতের বিভিন্ন সামাজিক কর্মকান্ডে এরা সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে। গৃহে বন্দি থাকতে এরা নারাজ। সুদূর নীলাকাশে মুক্ত বিহঙ্গের মতো স্বাধীনভাবে বিচরণই এদের প্রত্যাশা। বহির্মুখী ব্যক্তিত্বের লোকেরা খুবই সামাজিক এবং যেকোনো পরিবেশ এবং পরিস্থিতিতে এরা নিজেদের তাল মিলিয়ে নিতে পারে। নিজের জন্য এদের তেমন ব্যথা নেই; এদের যত চিন্তা-ভাবনা সবই অন্যের জন্য। সমাজসেবা, খেলাধুলা, দেশভ্রমণ, ব্যবসায়-বাণিজ্য ইত্যাদি কাজে এরা খুবই আগ্রহী।
রানার ব্যক্তিত্ব:
অন্তর্মুখী ব্যক্তিত্বের ব্যক্তিগণ নিজেদের নিয়ে ব্যস্ত থাকতে ভালোবাসে। বাইরের জগতের প্রতি তাদের আকর্ষণ খুবই কম। এ ধরনের লোকের বৈশিষ্ট্য হলো এরা খুব আত্মকেন্দ্রিক, বাহ্য বস্তুর প্রতি উদাসীন, আত্মসচেতন এবং স্বার্থপর। অন্তর্মুখী ব্যক্তিত্বের লোকেরা অত্যন্ত চিন্তাশীল, আবেগপ্রবণ ও সংবেদনশীল হয়। এরা কাজের চেয়ে চিন্তার রাজ্যে বিচরণ করতে বেশি পছন্দ করে। এরা বাইরের জগতের কর্ম কোলাহলে অংশগ্রহণ করতে আগ্রহী হয় না। এদের মধ্যে সামাজিকতা বোধের একান্ত অভাব। নতুন পরিবেশে এরা সহজে নিজেদের খাপখাইয়ে নিতে পারে না। এ ধরনের ব্যক্তিরা খুব চিন্তাশীল এবং সৃজনশীল প্রতিভার অধিকার হয়ে থাকে। কবি, সাহিত্যিক, শিল্পী, বিজ্ঞানীদের এ শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত করা চলে।

১০. রবিন কলেজ থেকে বাসায় ফেরার সময় পুট মিয়ার বাগানের রাস্তার ধারে আম গাছটিতে ৪/৫টি পাকা ফজলি দেখতে পেল। আমটি পাবার উদগ্র বাসনা তাকে পেয়ে বসল। আমটি পেরে তাকে নিতেই হবে, আমটি তাকে খেতেই হবে। কিন্তু দেখতে পেল গাছটির নিচে দারোয়ান বসে আছে। একদিকে আমটি খাবার ইচ্ছা- অন্যদিকে চুরি করে খেলে দারোয়ানের পিটানোর ভয়। আবার ভাবছে চুরি করে খেলে অধর্ম হবে। এমনি করে সে ভাবতে থাকে। হঠাৎ সে ভাবল-তার পকেটেতো টাকা আছেই, তাই সেই টাকা দিয়ে ঐ আমের চেয়ে আরও ভালো আম কিনে খেতে পারবে।
ক. ব্যক্তিত্ব কী?
খ. ব্যক্তিত্বের কাঠামোর ফ্রয়েড কোন বিষয়গুলো নির্দেশ করেছেন?
গ. রবিনের মনোভাবগুলোকে ফ্রয়েড কীভাবে ব্যাখ্যা করেছেন?
ঘ. তুমি কি মনে কর রবিনের শেষ মনোভাবটি সকলের জন্য প্রযোজ্য?বিশ্লেষণ কর।

১০ নম্বর সৃজনীশল প্রশ্নের উত্তর
ক. ব্যক্তিত্ব হলো ব্যক্তির সব বৈশিষ্ট্যের সামগ্রিক রূপ যার ভিতর দিয়ে প্রকাশ পায় তার স্বাতন্ত্র্যভাব। ক্রাইডার ও তাঁর সহযোগীদের (১৯৮৩) মতে, 'ব্যক্তিত্বকে আচরণ ও মানসিক প্রক্রিয়ার অনবদ্য ধরন হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা যেতে পারে, যা ব্যক্তিকে এবং ব্যক্তির সাথে পরিবেশের সম্পর্ককে চিহ্নিত করে।'

খ. ভিয়েনার চিকিৎসক সিগমুন্ড ফ্রয়েড সারা জীবন ধরে মানব মনের অতল হতে অপর রহস্য উদ্ঘাটন করেছেন। তিনি মানুষের মনের অলিতে গলিতে রন্ধ্রে রন্ধ্রে আলো ফেলে গভীর মনোযোগের সাথে দেখেছেন ওখানে কি ঘটে। ফ্রয়েডের মতে, তিনটি ভিন্ন মানসিক কাঠামো নিয়ে ব্যক্তিত্ব গঠিত হয়। ব্যক্তিত্বের কাঠামোয় ফ্রয়েড যে বিষয়গুলো নির্দেশ করেছেন তা হলো- আদিসত্তা, অহম ও অতি অহম। একজন ব্যক্তি কী চিন্তা করে, অনুভব করে এবং কর্ম করে তা নির্ভর করে এই তিনটি কল্পিত বিষয়ের কার্যকলাপের উপর।

গ. ফ্রয়েডের ব্যক্তিত্বের কাঠামো বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে, রবিনের মনোভাবগুলোকে ৩টি কাঠামোর মাধ্যমেই ব্যাখ্যা করা যায়। যেমন:
১. আমটি তাকে নিতেই হবে, আমটি তাকে খেতেই হবে-এ ধরনের মনোভাবকে আদিসত্তা বলা হয়।
২. চুরি করে খেলে দারোয়ানের পিটানোর ভয় এবং পরবর্তীতে পকেটের টাকা দিয়ে ভালো আম কিনে খাওয়ার মনোভাবকে অহম বলা হয়।
৩. চুরি করা অধর্ম, এ ধরনের মনোভাবে নৈতিকতার প্রকাশ ঘটে, যা ব্যক্তিত্বের কাঠামো অনুসারে অধিসত্তার অন্তর্ভুক্ত।

ঘ. রবিনের শেষের মনোভাবটি হলো- ‘‘তার পকেটে টাকা আছে, তাই সেই টাকা দিয়ে ঐ আমের চেয়ে আরও ভালো আম কিনে খেতে পারবে।’’ এটিই বাস্তবতা। আর এ বাস্তবনীতি অনুসারে চলে অহম। ফ্রয়েডের ব্যক্তিত্বের কাঠামোতে অহম একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এটি সবার জন্য প্রযোজ্য। কারণ সমাজে বসবাস করতে গিয়ে সমাজ উপযোগী বান্তবনীতি অনুসরণ করেই সবার চলা উচিত। ফ্রয়েডের ব্যক্তিত্বের কাঠামোর দ্বিতীয়টি হলো অহম। এর ব্যাখ্যা নিচে দেওয়া হলো:
অহম-এর কাজ হলো আদিসত্তা কামনা ও বাস্তব জগতের মধ্যে সমন্বয় সাধন। অহম হলো বাস্তব জ্ঞানের সমষ্টি এবং বাস্তব নিয়মের সেবায় নিয়োজিত। অহম মানুষকে সামাজিক এবং বাস্তবসম্মত উপায়ে তার প্রেষণাগুলোকে পূরণ করার জন্য প্রেরণা দেয়। এ সত্তাটি বাস্তবধর্মী নীতি অনুসরণ করে। বাস্তবধর্মী নীতির উদ্দেশ্য হলো যথাযোগ্য বস্তুর সাহায্যে প্রয়োজন মেটানো। এ নীতির কাজ হলো অভিজ্ঞতা সত্য কী মিথ্যা তা দেখা।
অহমকে ব্যক্তিত্বের কার্যনির্বাহী সত্তা বলা যেতে পারে। এটি ব্যক্তির সকল কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণ করে। আদিসত্তার কোন কামনা পূরণ করতে হবে তা অহম ঠিক করে দেয়। আদিসত্তা ও অধিসত্তার বহু পরস্পর বিরোধী দাবি-দাওয়ার মধ্যে সমন্বয় সাধন করে অহম।

No comments:

Post a Comment

Post Bottom Ad

Responsive Ads Here