এইচএসসি পরীক্ষার পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি
HSC Psychology 1st Paper Srijonshil question and answer. HSC Psychology 1st Paper (Srijonshil) Creative Questions pdf download. HSC Monobiggan 1st paper Srijonshil Proshno Uttor.
উচ্চ মাধ্যমিক
মনোবিজ্ঞান
প্রথম পত্র
সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
অধ্যায়-৭
HSC Psychology
1st Paper
Srijonshil Question and Answer pdf download
১. রবি এবং নীল দু'জন ঘনিষ্ঠ বন্ধু। তাদের উভয়ের বয়স ১৪ বছর। রবির ইচ্ছা ভবিষ্যতে একটা ভালো চাকরি করে তার পরিবারের দুঃখ কষ্ট দূর করবে। অপরদিকে নীলের কণ্ঠস্বরে হঠাৎ পরিবর্তন আসায় সে অন্যের সাথে কথা বলতে লজ্জা পায়। নীলের ছোট বোন ডলির বয়স ১২ বছর। ইদানিং ডলি প্রায়ই মন খারাপ করে একা বসে থাকে, সময়মত খাওয়া-দাওয় করে না, বিষন্ন থাকে।
ক. বয়ঃসন্ধিকাল কী?
খ. বয়ঃসন্ধিকালে শিশুদের সঙ্গে বাবা-মায়ের প্রত্যাশিত আচরণগুলো কী হওয়া উচিত?
গ. উদ্দীপকে রবির মানসিক স্বাস্থ্যের উপর কিসের প্রভাব বিদ্যমান? ব্যাখ্যা কর
ঘ. ‘‘নীল ও ডলির আচরণ পরিবর্তনের কারণ এক হলেও বৈশিষ্ট্যের দিক দিয়ে ভিন্ন’’- উক্তিটি বিশ্লেষণ কর।
১ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. বয়ঃসন্ধিকাল হলো যৌন পরিপক্কতার এমন সময়কাল, যেখানে প্রথম একজন সন্তান উৎপাদনের সক্ষমতা অর্জন করে।
খ. বয়ঃসন্ধিকালে শিশুদের সঙ্গে বাবা-মায়ের প্রত্যাশিত আচরণগুলো নিম্নলিখিত ৩ ধরনের হওয়া উচিত।
১. সন্তানদের রক্ষণাবেক্ষণ ও সমর্থন। এ পর্যায়ে মা-বাবা তাদের সন্তানের খাওয়া-দাওয়া ও শারীরিক মঙ্গলের দিকে নজর দেবেন।
২. দ্বিতীয় পর্যায়ে তারা সন্তানের প্রতি আবেগপ্রবণ হবেন। তারা সন্তানকে ভালবাসবেন এবং তাদের বিপদে এগিয়ে আসবেন।
৩. এ পর্যায়ে তারা সন্তানকে সামাজিক শিক্ষা দিবেন, উপযুক্ত সময়ে স্কুলে পাঠাবেন।
এ সকল দায়িত্ব ও কর্তব্য ছাড়াও মা সন্তানকে ভালবাসেন এবং সেজন্য তাকে তার ইতিবাচক অনুভূতিগুলোকে প্রকাশ করেন।
গ. উদ্দীপকে রবির মানসিক স্বাস্থ্যের উপর অর্থনৈতিক প্রভাব বিদ্যমান। রবির ইচ্ছা ভবিষ্যতে একটা ভালো চাকরি করে তার পরিবারের দুঃখ-কষ্ট দূর করবে। রবির এ ইচ্ছাটি বয়োসন্ধিকালের জীবিকার নিমিত্তের জন্য অর্থনৈতিক প্রভাব।
বয়োসন্ধিকালের ছেলেমেয়েরা অর্থনীতির কথা বিশেষভাবে চিন্তা করে; তারা ভাবে কিভাবে জীবিকা নির্বাহ করতে হবে। কোন পেশা নির্বাচন করলে সুখী হওয়া যাবে অথবা কোন বৃত্তি বাছাই করলে জীবনে সফলতা আসবে- এ সময়ে ছেলেমেয়েরা তা চিন্তা করে। বয়োসন্ধিকালে এ ধরনের অর্থনৈতিক প্রভাবের ক্ষেত্রে কতকগুলো কারণ রয়েছে। যথা-
১. মা-বাবা, শিক্ষক, সমসাময়িক ব্যক্তিবর্গ বয়োসন্ধিকালের ছেলেমেয়েদের বৃত্তি নির্বাচনে সাহায্য করে। কারণ বৃত্তি নির্বাচন তাদের স্বাধীন ও স্বাবলম্বী করে।
২. বয়োসন্ধিকালের ছেলেমেয়েরা নিজেদের স্বাধীন ভাবে এবং বয়স্কস ব্যক্তির মতো ভূমিকা পালনের জন্য তাকে জীবিকা নির্বাচন করতে।
৩. জীবিকা নির্বাচন একই বযসের ছেলেমেয়েকে তার ইচ্ছা পূরণের জন্য সামাজিক স্বীকৃতি দিয়ে থাকে। আইন, চিকিৎসাবিদ্যা, ইঞ্জিনিয়ারিং, সমাজকল্যাণ, সেনাবাহিনী ইত্যাদি পেশা তাদের পরিচিতি দান করে এবং অপর লোকের উপকারে সাহায্য করে। আজকাল আমাদের পাঠ্যসূচিও তাদের ভবিষ্যৎ জীবিকা নির্ধারণে সহযোগিতা করে। উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ছেলেমেয়েরা নিজেদের ভবিষ্যৎ জীবন সম্পর্কে একটি ধারণা অর্জন করে থাকে।
উপরের বর্ণিত কারণগুলোই রবির অর্থনৈতিক ইচ্ছার ক্ষেত্রে ভূমিকা রেখেছে।
ঘ. উদ্দীপকে ডলির বয়স ১২ বছর এবং নীলের বয়স ১৪ বছর। উভয়ের ক্ষেত্রে এ বয়স হলো বয়োসন্ধিকাল। ডলি ও নীলের পরিবর্তনের কারণ এ বয়োসন্ধিকাল। এ বয়োসন্ধিকালে যেসব পরিবর্তনীয় বৈশিষ্ট্য লক্ষ করা যায় তা নিম্নরূপ-
ডলির ক্ষেত্রে পরিবর্তনীয় বৈশিষ্ট্য:
১. উচ্চতা ও ওজন বৃদ্ধি পাবে।
২. ত্বক, পুরু হবে, রঙ বদলাবে এবং ত্বকের উপর লোমকূপের আকৃতি বড় হবে।
৩. পেশির আকৃতি ও শক্তি বৃদ্ধি হওয়ায় বাহু, পা এবং কাঁধ সঠিক আকৃতি পাবে।
৪. অন্ডাশয় এবং লিঙ্গের আকৃতি বৃদ্ধি পাবে এবং এক বছরের মধ্যে বিভিন্ন গোপন স্থানে লোম গজাবে।
৫. গলার স্বর মোটা হবে এবং স্বরভঙ্গ দেখা দিবে।
৬. ১২-১৪ বছরের মধ্যে স্তনে অবস্থিত গ্রন্থির চারপাশ শক্ত হয়ে যাবে।
নীলের পরিবর্তনীয় বৈশিষ্ট্য:
১. উচ্চতা ও ওজন বাড়ে।
২. শরীরে দৃঢ়তা আসে, বুক ও কাধ চওড়া হয়।
৩. শরীরের বিভিন্ন অংশে লোম গজায়।
৪. ১৬/১৭ বছর বয়সে দাড়ি গোঁঅ ওঠে।
৫. স্বরভঙ্গ হয় ও গলার স্বর মোটা হয়।
৬. প্রজনন অঙ্গ বড় হয়ে ওঠে।
৭. বীর্যপাত হয়।
উপরোক্ত আলোচনা হতে প্রতীয়মান হয় যে, ‘‘ডলি ও নীলের পরিবর্তনের কারণ একই হলেও বৈশিষ্ট্যের দিক থেকে ভিন্নতা লক্ষ করা যায়’’- উক্তিটি যথার্থ।
২. রেবা, জেবা ও জয় তিন ভাইবোন। রেবা বয়োসন্ধিকাল প্রায় তিন বছর আগে পার করেছে। জেবার বয়স ১৩ এবং তাদের একমাত্র ভাই জয়ের বসয় ১৫। রেবা খেয়াল করল, জেবা প্রায়ই মন খারাপ করে একা বসে থাকে। সময়মতো খেতে চায় না। সব সময় বিষণ্ণ থাকে। রেবা ছোট বোনের সমস্যা বুঝতে পেরে তার সব কথা শুনে এবং পরামর্শ দেয়। অন্যদিকে জয়ের কণ্ঠস্বর হঠাৎ পরিবর্তন হয়ে যাওয়ায় সে বোনদের সামনে কথা বলতে লজ্জা পায়।
ক. বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস কত তারিখে পালিত হয়?
খ. বয়োসন্ধিকাল স্বল্পস্থায়ী কেন? ব্যাখ্যা কর।
গ. উদ্দীপকের আলোকে জেবার বয়সের শারীরিক বৈশিষ্ট্য ব্যাখ্যা কর।
ঘ. ‘‘জেবা ও জয়ের আচরণ পরিবর্তনের কারণ এক হলেও বৈশিষ্ট্যের দিক থেকে ভিন্ন’’- উক্তিটি বিশ্লেষণ কর।
২ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. ১০ অক্টোবর বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস পালিত হয়।
খ. বয়োসন্ধিকাল স্বল্পস্থায়ী কারণ, এ সম শরীরের বাইরে এবং ভিতরে যে পরিবর্তন ঘটে তা লক্ষ করলে দেখা যায় যে, পরিবর্তনগুলো মাত্র দু থেকে চার বছরের সংক্ষিপ্ত পরিসরে সংঘটিত হয়। যেসব কিশোর-কিশোরীর এ জাতীয় পরিবর্তনগুলো দু বা কম সময়ের মধ্যে সম্পন্ন হয় তাদের পরিপক্কতা দ্রুত হয়েছে এবং যাদের এ পরিবর্তনগুলো চার তার বেশি সময়ের প্রয়োজন সম্পন্ন হয়। তাদের পরিপক্কতা দেরিতে হয়েছে বলা যায়। যদিও মেয়েরা ছেলেদের তুলনায় আগে পরিপক্কতা অর্জন করলেও এ ব্যতিক্রম দেখা যায়।
গ. উদ্দীপকে জেবার বয়স ১৩ বছর। অর্থাৎ জেবার বয়োসন্ধিকাল শুরু হয়েছে। আমাদের দেশের ভৌগোলিক অবস্থার কারণে সাধারণত ১২-১৫ বছর বয়সের মধ্যে মেয়েদের বয়োসন্ধিকাল হয়ে থাকে। উদ্দীপকের আলোকে জেবার যেসব শারীরিক বৈশিষ্ট্য ফুটে উঠেছে তা নিচে ব্যাখ্যা করা হলো-
১. উচ্চতা ও ওজন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
২. স্তনের বৃদ্ধি ঘটছে।
৩. কোমরের হাড় মোটা, উরু ও নিতম্ব ভারী হচ্ছে।
৪. গুপ্তস্থানে লোম গজাচ্ছে।
৫. ঋতুস্রাব শুরু হয়েছে।
৬. এ সময়ে মেয়েদের গলার স্বর পূর্ণতা লাভ করে ও শ্রুতিমধুর হয়।
ঘ. উদ্দীপকে জেবার বয়স ১৩ বছর এবং জয়ের বয়স ১৫ বছর। উভয়ের ক্ষেত্রে এ বয়স হলো বয়োসন্ধিকাল। জেবা ও জয়ের পরিবর্তনের কারণ এ বয়োসন্ধিকাল। এ বয়োসন্ধিকালে যেসব পরিবর্তনীয় বৈশিষ্ট্য লক্ষ করা যায় তা নিম্নরূপ-
জেবার ক্ষেত্রে পরিবর্তনীয় বৈশিষ্ট্য:
১. উচ্চতা ও ওজন বৃদ্ধি পাবে।
২. ত্বক পুরু হবে, রঙ বদলাবে এবং ত্বকের উপর লোমকূপের আকৃতি বড় হবে।
৩. পেশির আকৃতি ও শক্তি বৃদ্ধি হওয়ায় বাহু, পা এবং কাঁধ সঠিক আকৃতি পাবে।
৪. অন্ডাশয় এবং লিঙ্গের আকৃতি বৃদ্ধি পাবে এবং এক বছরের মধ্যে বিভিন্ন গোপন স্থানে লোম গজাবে।
৫. গলার স্বর মোটা হবে এবং স্বরভঙ্গ দেখা দিবে।
৬. ১২-১৪ বছরের মধ্যে স্তনে অবস্থিত গ্রন্থির চারপাশ শক্ত হয়ে যাবে।
জয়ের পরিবর্তনীয় বৈশিষ্ট্য:
১. উচ্চতা ও ওজন বাড়ে।
২. শরীরে দৃঢ়তা আসে, বুক ও কাধ চওড়া হয়।
৩. শরীরের বিভিন্ন অংশে লোম গজায়।
৪. ১৬/১৭ বছর বয়সে দাড়ি গোফ ওঠে।
৫. স্বরভঙ্গ হয় ও গলার স্বর মোটা হয়।
৬. প্রজনন অঙ্গ বড় হয়ে ওঠে।
৭. বীর্যপাত হয়।
উপরোক্ত আলোচনা হতে প্রতীয়মান হয় যে, ‘‘জেবা ও. জয়ের পরিবর্তনের কারণ একই হলেও বৈশিষ্ট্যের দিক থেকে ভিন্নতা লক্ষ করা যায়’’- উক্তিটি যথার্থ।
৩. নবম শ্রেণির ছাত্র সাজ্জাদ ইদানীং কারো সাথেই ভালো আচরণ করে না। তার নানারকম শারীরিক পরিবর্তন ঘটছে। মেয়েদের প্রতি তার কৌতূহল বাড়ছে। তার উচ্চ শিক্ষিত বাবা-মা বিষয়টি লক্ষ করলেন এবং এ সময়ে তার যা যা করা উচিত সে সম্পর্কে বুঝিয়ে বললেন।
ক. হরমোন কী?
খ. বয়োসন্ধিকালে কিশোরদের কী কী শারীরিক পরিবর্তন ঘটে।
গ. সাজ্জাদের মানসিক ও শারীরিক পরিবর্তনে খাপ খাওয়ানোর ব্যাপারে একজন ভালো বন্ধুর ভূমিকা ব্যাখ্যা কর।
ঘ. সাজ্জাদের বয়সী ছেলেমেয়েদের দৈহিক ও মানসিক স্বাস্থ্যরক্ষার কৌশল বিশ্লেষণ কর।
৩ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. হরমোন এক ধরনের রাসায়নিক পদার্থ। যার কারণে বয়োসন্ধিকালের পরিবর্তন ঘটে।
খ. বয়োসন্ধিকালে কিশোরদের শারীরিক পরিবর্তন নিচে উল্লেখ করা হলো-
১. উচ্চতা ও ওজন বাড়ে।
২. শরীরে দৃঢ়তা আসে, বুক ও কাধ চওড়া হয়।
৩. শরীরের বিভিন্ন অংশে লোম গজায়।
৪. ১৬/১৭ বছর বয়সে দাড়ি গোপ ওঠে।
৫. স্বরভঙ্গ হয় ও গলার স্বর মোটা হয়।
৬. প্রজনন অঙ্গ বড় হয়ে ওঠে।
৭. বীর্যপাত হয়।
গ. উদ্দীপকে দেখা যায়, নবম শ্রেণির ছাত্র সাজ্জাদ ইদানীং কারও সাথে ভালো আচরণ করছে না। শারীরিক পরিবর্তনের পাশাপাশি মেয়েদের প্রতি তার কৌতুহল বেড়েছে। পরিবর্তনের শর্তানুযায়ী তার মধ্যে বয়োসন্ধিকালের পরিবর্তনগুলো দেখা দিয়েছে। এসময় তার মানসিক ও শারীরিক পরিবর্তনকে খাপ খাইয়ে তাকে স্বাভাবিক রাখায় একজন ভালো বন্ধু যথেষ্ট ভূমিকা রয়েছে। কারণ এসময় কিশোরদের কিছু ঝুঁকিপূর্ণ মানসিক পরিবর্তন ঘটে। যেমন মাদকের প্রতি আকর্ষণ, আবেগপ্রবণ হওয়া, দুঃসাহসিক কাজে লিপ্ত হওয়া ইত্যাদি। একজন ভালো বন্ধু এ সমস্ত কাজে কখনো উৎসাহ প্রদান করে না বরং এসব কাজ থেকে দূরে রাখার চেষ্টা করে ও পরামর্শ দেয়। তাছাড়া মানসিকভাবে চাঙ্গা রাখার জন্য একজন ভালো বন্ধু সাজ্জাদের সাথে বন্ধুসুলভ আচরণ করবে এবং অন্যান্য সব ব্যাপারে সহযোগিতা ও সাহস প্রদান করবে। এজন্য সাজ্জাদের দৈহিক ও মানসিক পিরবর্তনকে খাপ খাওয়ানোর জন্য একজন ভালো বন্ধুর যথেষ্ট ভূমিকা রয়েছে।
ঘ. সাজ্জাদের বয়সী ছেলেমেয়েদের বয়োসন্ধিকালে তাদের দৈহিক ও মানসিক স্বাস্থ্যরক্ষার কিছু কৌশল রয়েছে।
১. দৈহিক স্বাস্থ্যরক্ষার কৌশল: বয়োসন্ধিকালে ছেলেমেয়েদের শারীরিক পরিবর্তন যেমন- উচ্চতা ও ওজন বাড়া, হাড়মোটা হওয়া ইত্যাদি ঘটে থাকে। এ সময় শারীরিক পরিবর্তনের সাথে তাদের স্বাস্থ্যরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি যোগান নিশ্চিত করতে হবে। ৬টি উপাদানসমৃদ্ধ সুষম খাবার প্রদানের মাধ্যমে সাজ্জাদের বয়সী ছেলেমেয়েদের শারীরিক স্বাস্থ্য রক্ষা করা সম্ভব।
২. মানসিক স্বাস্থ্য রক্ষার কৌশল: বয়োসন্ধিকালে সাজ্জাদের বয়সী ছেলেমেয়েদের মানসিক পরিবর্তনের সাথে খাপ খাইয়ে তাদের মানসিক সুস্থতা ও স্বাস্থ্য বজায় রাখা যায়। এজন্য তাদের সাথে ভালো আচরণ করতে হবে। অভিভাবকদের উচিত হবে তাদের সাথে বন্ধুভাবাপন্ন আচরণ করা, সহানুভূতি প্রদর্শন করা, রোগব্যাধি হলে তা প্রতিবিধান করা, সাথীদের সাথে খেলাধুলা করা ইত্যাদির মাধ্যমে মানসিক স্বাস্থ্য রক্ষা করা যায়।
৪. ঝিনুক বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান। সে সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে। পড়াশুনায় যেমন ভালো, আচার আচরণেও তেমন ভালো। কিন্তু কিছুদিন ধরে তার বাবা মা লক্ষ্য করছেন যে, ঝিনুক কিছুদিন ধরে পড়াশুনায় অমনোযোগী হয়ে পড়েছে। একটুতেই রেগে যাচ্ছে। এ অবস্থা দেখে তাকে মনোবিজ্ঞানীর কাছে নিয়ে গেলে মনোবিজ্ঞানী বলেন, ঝিনুকের বয়োসন্ধিকাল চলছে। এ সময়ে এমনটি হওয়াই স্বাভাবিক।
ক. বয়োসন্ধিকালের মেয়েদের সময়সীমা কত?
খ. মানসিক স্বাস্থ্য বলতে কী বুঝায়?
গ. ঝিনুকের মধ্যে কী ধরনের শারীরিক পরিবর্তন ফুটে উঠেছে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. ঝিনুকের মধ্যে শারীরিক পরিবর্তনের সাথে মানসিক পরিবর্তনও লক্ষ করা যায়- উক্তিটি বিশ্লেষণ কর।
৪ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. বয়োসন্ধিকালের মেয়েদের সময়সীমা ১১-১৫ বছর।
খ. জ্ঞানের যে শাখায় মনোরোগ মুক্ত সুস্থ জীবনযাপন ও আত্নোন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় বিধি-নিষেধ ও নীতিমালা প্রণয়ন ও পর্যালোচনা করে তাকে মানসিক স্বাস্থ্য বলে। মানসিক স্বাস্থ্য পূর্ণাঙ্গ শাস্ত্ররূপ গড়ে উঠেছে অতি সাম্প্রতিককালে। মানসিক স্বাস্থ্যবিজ্ঞানের প্রধান কাজ হলো সব রকম মানসিক অসুস্থতার প্রতিষেধক ব্যবস্থার উদ্ভাবন করা এবং যাতে মানসিক ব্যাধির কার্যকরী চিকিৎসা হয় তার আয়োজন করা। অস্বভাবী মনোবিজ্ঞানের উন্নয়ন ও সামাজিক বিকাশের। সাথে সাথে মানসিক স্বাস্থ্য সংরক্ষণ সংক্রান্ত একটি সামাজিক আন্দোলন গড়ে উঠেছে।
গ. উদ্দীপক অনুযায়ী ঝিনুকের বয়োসন্ধিকাল চলছে। বয়োসন্ধিকাল অর্থাৎ ১১-১৫ বছরের ছেলে মেয়েদের মধ্যে শারীরিক পরিবর্তন দেখা দেয়। তাই বয়োসন্ধিকাল অনুযায়ী ঝিনুকের মধ্যে যে ধরনের শারীরিক পরিবর্তন ফুটে উঠেছে তা নিম্নরূপ-
১. উচ্চতা ও ওজন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
২. স্তনের বৃদ্ধি ঘটছে।
৩. কোমরের হাড় মোটা, উরু ও নিতম্ব ভারী হচ্ছে।
৪. গুপ্তস্থানে লোম গজাচ্ছে।
৫. ঋতুস্রাব শুরু হয়েছে।
৬. এ সময়ে মেয়েদের গলার স্বর পূর্ণতা লাভ করে ও শ্রুতিমধুর হয়।
ঘ. ঝিনুকের মধ্যে শারীরিক পরিবর্তনের সাথে সাথে মানসিক পরিবর্তনও লক্ষ করা যায়। নিচে মানসিক পরিবর্তনসমূহ বিশ্লেষণ করা হলো-
১. অসামঞ্জস্যপূর্ণ আচরণ: বয়োসন্ধিকালের ছেলেমেয়েদের দেহের দ্রুত ও অসামঞ্জস্যপূর্ণ বিকাশের জন্য আচরণ বিশৃঙ্খলাময় ও অদ্ভুত মনে হয়। দৈহিক বৃদ্ধির ফলে ছেলেমেয়েরা অস্বস্তি অনুভব করে। দৈহিক বৃদ্ধির গতি কমে এলে তাদের আচরণ সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়।
২. একঘেয়েমী: এ সময়ে ছেলেমেয়েরা একঘেয়ে হয়ে যায়। ছেলেমেয়েরা ছোটবেলার মতো খেলাধুলা, স্কুলের কাজ এবং বিভিন্ন সামাজিক কাজে আনন্দ পায় না। তাছাড়া এরা যতটুকু কাজ করতে সক্ষম তার সদ্ব্যবহার করতে চায় না।
৩. একাকী থাকার ইচ্ছা: ছেলেমেয়েরা এ সময়ে সবার সাথে মেলামেশা করতে চায় না, একা থাকতে চায়। এ সময় বিভিন্ন কাজকর্ম ও খেলাধুলা করতে অনিচ্ছা প্রকাশ করে। সকলে তাদের সাথে খারাপ ব্যবহার করছে এবং তাদের ভুলভাবে বিচার করছে এ সম্পর্কে তারা প্রায় সময়ই চিন্তা-ভাবনা করে।
৪. আবেগের পার্থক্য: বয়োসন্ধিকালের অভিমান, ভাবপ্রবণতা, রাগে ফেটে পড়া, সামান্য কারণেই কেঁদে ফেলা ইত্যাদির ফলে তাদের মধ্যে উদ্বেগ, দুশ্চিন্তা ও অস্থিরতা বাসা বাঁধে। এছাড়া মাসিক শুরু হলে মেয়েরা অস্থিরতা ও বিষণ্ণতায় ভোগে এবং কারো কথা না শোনার মনোভাব দেখা দেয়।
৫. সামাজিক বৈরিতা: ছেলেমেয়েরা কারো সাথে একমত পোষণ করতে চায় না, প্রতিদ্বন্দ্বিতার মনোভাব পোষণ করে এবং একে অন্যের সহযোগিতা করতে চায় না। ছেলেমেয়েরা পরস্পরকে হিংসা করে, একে অন্যের সমালোচনামুখর হয়ে ওঠে এবং অবমাননাসূচক মন্তব্য করে। বয়োসন্ধিকালের শেষেরদিকে এসে এসব ভাব কমে আসে এবং সহনশীল হয়ে ওঠে।
৬. অতিরিক্ত লজ্জা: এ সময়ে পরিস্ফুট যৌন বৈশিষ্ট্য দেখতে পেয়ে অন্য ব্যক্তি বিরূপ মন্তব্য করতে পারে ভেবে এরা লাজুক হয়। অর্থাৎ অতিরিক্ত যৌন পরিবর্তনের কারণেই এরা অনেকটা ভীত হয়ে পড়ে।
৭. আত্মপ্রত্যয়ের অভাব: সহনশীলতার অভাব এবং বয়স্ক ব্যক্তি ও সঙ্গীদের কাছ থেকে সবসময় কাজের সমালোচনা শোনার ফলে এদের মধ্যে আত্মপ্রত্যয়ের অভাব দেখা দেয়। ফলে এ বয়সে অনেকের মধ্যে হীনম্মন্যতা দেখা যায়।
৫. সদা হাসি-খুশি অবমত্মী হঠাৎ করে কেমন যেন চুপচাপ হয়ে গেছে। সব সময় ঘরে থাকতে চায়। কারো সাথে বেশি কথা বলে না। খাবারেও তেমন আগ্রহ নেই। অবমত্মীর এ অবস্থা দেখে মা মেয়ের সাথে খোলামেলা কথা বলার চেষ্টা করেন। মা অবমত্মীকে তার শারীরিক অবস্থা বোঝাতে গেলে প্রথমে সে লজ্জা, সংকোচবোধ করলেও ধীরে ধীরে মায়ের সাথে স্বাভাবিক হয়ে আসে।
ক. জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট কত সালে প্রতিষ্ঠিত হয়?
খ. বেকারত্ব কীভাবে মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকি- ব্যাখ্যা কর।
গ. কী ধরনের পরিবর্তনের কারণে অবমত্মীর মধ্যে এ ধরনের আচরণ লক্ষ করা যায়- ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকে অবমত্মীর মায়ের ভূমিকা তাকে স্বাভাবিক আচরণে অভ্যস্ত করবে-উত্তরের সপক্ষে যুক্তি দাও।
৫ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. জাতীয় স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ১৯৪৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়।
খ বেকারত্ব মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকি। নিচে ব্যাখ্যা করা হলো-
যুব সমাজই দেশের প্রকৃত শক্তি। কিন্তু বেকারত্বের দরুন এ শতম অপচয় ঘটে। বেকার হওয়ার দরুন তাদের কোনো কাজ থাকে না। যা তাদের মধ্যে হতাশা ও হীনম্মন্যতার সৃষ্টি করে। অনেক সময় তারা অপরাধমূলক কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়ে। সুতরাং বেকারত্ব মানসিক স্বাস্থ্য বিকাশে ঝুঁকিপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
গ. বয়োসন্ধিকালীন শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তনের কারণে অবমত্মীর মধ্যে উদ্দীপকে উল্লিখিত আচরণ লক্ষ করা যায়। নিচে অবমত্মীর উল্লিখিত আচরণের কারণসমূহ ব্যাখ্যা করা হলো-
আমাদের দেশের ভৌগোলিক অবস্থার কারণে সাধারণত ১২-১৫ বছর বয়সের মধ্যে মেয়েদের বয়োসন্ধিকাল হয়ে থাকে। উদ্দীপকের আলোকে অবমত্মীর যেসব শারীরিক বৈশিষ্ট্য ফুটে উঠেছে তা নিচে ব্যাখ্যা করা হলো-
১. উচ্চতা ও ওজন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
২. স্তনের বৃদ্ধি ঘটছে।
৩. কোমরের হাড় মোটা, উরু ও নিতম্ব ভারী হচ্ছে।
৪. গুপ্তস্থানে লোম গজাচ্ছে।
৫. ঋতুস্রাব শুরু হয়েছে।
৬. এ সময়ে মেয়েদের গলার স্বর পূর্ণতা লাভ করে ও শ্রুতিমধুর হয়।
ঘ. উদ্দীপকে অবমত্মীর মায়ের ভূমিকা তাকে স্বাভাবিক আচরণে অভ্যস্ত করবে। নিচে উত্তরের সপক্ষে যুক্তি নিমেণ উপস্থাপন করা হলো-
উক্ত অবস্থা অর্থাৎ বয়োসন্ধিকালের মানসিক পরিবর্তনের সাথে খাপ খাওয়ানোর জন্য অবমত্মীর মায়ের করণীয় বিষয়সমূহ আলোচনা করা হলো-
যেহেতু বয়োসন্ধিকালের পরিবর্তনগুলো সম্পর্কে জানা থাকলে এবং এ সম্বন্ধে করণীয় বিষয়ে পূর্ব ধারণা থাকলে, কিশোর-কিশোরীদের মানসিক প্রস্তুতি থাকে। ফলে তারা বিষয়টি সহজভাবে নিতে পারে, তাদের স্বাভাবিক জীবনযাপন ব্যাহত হয় না এবং সম্ভাব্য রোগব্যাধিও প্রতিরোধ করা যায়। তাই অবমত্মীর মায়ের উচিত-
১. বয়োসন্ধিকালের পরিবর্তনগুলো সম্পর্কে তাকে অবগত করানো, ফলে তার সংকোচনতা ও একা থাকার প্রবণতা কমে যাবে।
২. মা-বাবা ও অন্যান্যদের বন্ধুসুলভ ও সহানুভূতিশীল আচরণ করতে হবে।
৩. তাকে মানসিক দিকসহ অন্য সব ব্যাপারে সহযোগিতা প্রদান ও সাহস জোগাতে হবে।
উপরোক্ত আলোচনা হতে বলা যায় যে, অবমত্মীর মায়ের ভূমিকা অবমত্মীকে স্বাভাবিক আচরণে অভ্যস্ত করবে- যা যথার্থ ও সঠিক।
৬. মনির ও মুহিত দুই বন্ধু। দু’জনেরই বয়স ১৪ বছর। মুনির মানসিকভাবে অনেক দৃঢ় এবং স্বনির্ভরশীল স্বভাবের হলেও মুহিত দুর্বল মানসিকতাসম্পন্ন এবং পরনির্ভরশীল।
ক. মানসিক স্বাস্থ্য কী?
খ. মানসিক স্বাস্থ্যবিজ্ঞানের উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা কর।
গ. মুহিতের উক্ত মানসিকতার কারণ ব্যাখ্যা কর।
ঘ. মুনিরের মানসিকতাটি পারিবারিক প্রভাবের ফল বিশ্লেষণ কর।
৬ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. জ্ঞানের যে শাখায় মনোরোগ মুক্ত সুস্থ জীবনযাপন ও আত্মোন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় বিধি-নিষেধ ও নীতিমালা প্রণয়ন ও পর্যালোচনা করে তাকে মানসিক স্বাস্থ্য বলা হয়।
খ. মানসিক স্বাস্থ্যবিজ্ঞানের উদ্দেশ্য হচ্ছে জনগণকে মানসিক রোগ। সম্পর্কে শিক্ষাদান করা এবং মানসিক রোগী সম্পর্কে বিভ্রান্তিমূলক ধারণাসমূহ দূর করে তাদের প্রতি সেবামূলক দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করার জন্য জনগণকে উদ্বুদ্ধ করা এছাড়া প্রাথমিক পর্যায়েই মাসিক রোগীদের শনাক্ত করে তাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা এবং মানসিক মাসের প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা। যেকোনো সমাজের মানসিক স্বাস্থ্য আন্দোলকে জোরদার করতে হলে এ আন্দোলনের প্রতি অনুকূল জনমত গড়ে তোলা দরকার।
গ. উদ্দীপকের বর্ণনানুযায়ী মুহিতের বয়স ১৪ বছর এবং সে দুর্বল মানসিকতাসম্পন্ন এবং পরনির্ভরশীল স্বভাবের। মুহিতের এখন বয়োসন্ধিকাল চলছে।
বয়োসন্ধিকাল ছেলেমেয়েরা অনেকটা স্বাধীনচেতা হয়। মা বাবা এ হঠাৎ পাওয়া স্বাধীনতাকে তখন সন্দেহের চোখে দেখেন। এ সময়ে মা বাবার সাথে ছেলেমেয়েদের দুটি প্রধান কারণে মতবিরোধ দেখা দেয়।
প্রথমত বয়োসন্ধিকালের ছেলেমেয়েদের অতিমাত্রায় স্বাধীনচেতা মনোভাব এবং দ্বিতীয়ত, অতিমাত্রায় শিশুসুলভ আচরণ। বয়োসন্ধিকালে শিশু কতটা স্বাধীনচেতা হবে তা নির্ভর করছে তার মা বাবার সাথে প্রতিষ্ঠিত আগের সম্পর্কের উপর। শিশু ছোটবেলা থেকেই অতিরক্ষণশীল পরিবেশে মানুষ হয় এবং সে তার পরনির্ভরশীলতা, মা বাবার কাছে নত থাকা এবং অন্যের সাহায্য নিয়ে কাজ করবে।
উদ্দীপকের মুহিতের ক্ষেত্রেও পারিবারিক পরিবেশ থেকে উপরে বর্ণিত আচরণের সম্মুখীন হওয়ায় সে পরনির্ভরশীল ও দুর্বল মানসিকতা সম্পন্ন হয়েছে।
ঘ. উদ্দীপকের বর্ণনানুযায়ী মুনির দৃঢ় মানসিকতাসম্পন্ন এবং স্বনিভর্র প্রকৃতির। মুনিরে এ ধরনের মানসিকতা লাভের পেছনে তার পারিবারিক পরিবেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। কারণ-
শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশে পরিবার তথা মা, বাবা ও তার পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের প্রভাব খুব গুরুত্বপূর্ণ। দেখা গেছে যে শিশুর ধারণা ও বিশ্বাস সম্পূর্ণভাবে উত্তরাধিকারসূত্রে তার বাবা মার কাছ থেকে আসে এমন পরিবার থেকেই তারা এসব বস্তু শিক্ষা লাভ করে ও তাদের এ শিক্ষা লাভ প্রাপ্ত বয়স পর্যন্ত চলতে থাকে (Berelso এবং Seiner, ১৯৬৪)। শিশুরা মা বাবার মাধ্যমে কতকগুলো ধারণা সম্পর্কে জ্ঞানলাভ করে এবং মা বাবার আদর্শ পুরস্কার দ্বারা তা প্রভাবিত হয়। শিশুদের এসব ধারণা বিভিন্ন পরিবারে বিভিন্নভাবে চালিত হয়। কোনো কোনো পরিবারে বয়োসন্ধিকালের আচার-ব্যবহার, রীতিনীতি তাদের মা বাবার অনুকরণে হয়ে থাকে।
মুনির তার এ মানসিকতাও পারিবারিক সূত্রে পেয়েছে। এছাড়াও ছোটবেলা থেকেই মুনিরের সাথে তার বাবা-মার বন্ধুত্বসুলত ছিল। বিভিন্ন বিষয়ে তার বাবা-মা সন্দেহ পোষণ বা রাগ দেখিয়ে সুন্দর পরামর্শ প্রদান করেছে। অর্থাৎ পারিবারিক সুন্দর কারণেই মুনির দৃঢ় মানসিকতাসম্পন্ন ও স্বনির্ভর হয়েছে।
৭. মনোবিজ্ঞানের শিক্ষিকা নাফিসা সুলতানা ক্লাসে মানুষের আচরণের, উপর অন্তঃক্ষরাগ্রন্থির প্রভাব সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে বলেন, প্রত্যেক ব্যক্তির জীবনে একটি নির্দিষ্ট সময়ে এ গ্রন্থিগুলো থেকে নিঃসৃত হরমোনের প্রভাবে ব্যক্তির দ্রুত শারীরিক বর্ধন হয় এবং ব্যক্তি যৌন পরিপক্কতা অর্জন করে। যদিও ব্যক্তির সারাজীবনব্যাপী এ গ্রন্থিগুলো থেকে কম বেশি হরমোন নিঃসৃত হয়।
ক. অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি কী?
খ. মানসিক স্বাস্থ্য আন্দোলনের উদ্দেশ্য লেখ।
গ. শিক্ষিকা নাফিসা সুলতানার বর্ণিত সময়টি ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকে বর্ণিত পরিবর্তনগুলোর জন্য কোন গ্রন্থি দায়ী বলে তুমি মনে কর?বর্ণনা দাও।
৭ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. যেসব গ্রন্থির ক্ষরণ কোনো নালির ভিতর দিয়ে না গিয়ে সরাসরি রক্তস্রোতে মিশে আমাদের আচরণকে নিয়ন্ত্রণ করে, সেসব গ্রন্থিকে অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি বলে।
খ. ক্লিফোর্ড বিয়ার্সই মানসিক স্বাস্থ্য আন্দোলনের প্রবর্তক। তিনি ১৯০৯ সালে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য সমিতি' নামক একটি কল্যাণধর্মী প্রতিষ্ঠান স্থাপন করেন। ক্লিফোর্ড বিয়ার্সের এ প্রতিষ্ঠানটি পরবর্তীতে আন্তর্জাতিক মানসিক স্বাস্থ্য আন্দোলনের অগ্রদূত হিসেবে কাজ করছিল।
ক্লিফোর্ড বিয়ার্সের মানসিক স্বাস্থ্য আন্দোলনের দুটি প্রধান উদ্দেশ্য ছিল:
১. মানসিক রোগ সম্পর্কে জনসাধারণের ভ্রান্ত ধারণার অবসান ঘটানো এবং মানসিক ব্যাধিতে আক্রান্ত লোকদের প্রতি সমাজের লোকের বিরূপ মনোভাব দূর করা।
২. মানসিক রোগে আক্রান্ত রোগীদের সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করা এবং তা তাদের প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিশ্চিত করা।
গ. শিক্ষিকা নাফিসা সুলতানা বয়োসন্ধিকালীন সময়ের কথা বলেছেন।
তারুণ্যের প্রথম পর্যায়ে যখন যৌন বৈশিষ্ট্যসমূহ স্পষ্ট হয়ে ওঠে সে অবস্থাটিকে বয়োসন্ধি বলা হয়। এ.ডবিস্নউ. রুট বলেছেন যে, বয়োসন্ধি জীবনবিকাশের এমন একটি পর্যায়, যখন যৌন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ পরিপক্কতা অর্জন করে এবং ব্যক্তির মধ্যে সন্তান উৎপাদন ক্ষমতা জন্মে। সুনির্দিষ্টভাবে বলতে গেলে, বৈজ্ঞানিক পরিভাষায় বয়োসন্ধি হচ্ছে মেয়েদের ক্ষেত্রে ডিম্বকোষের তথা জরায়ুসহ অন্যান্য অঙ্গসমূহের বৃদ্ধি এবং পুরুষের বেলায় প্রস্টেট গ্রন্থি ও শুক্রবাহী কোষসমূহের বৃদ্ধি। যৌন পরিপক্কতা শুরু হওয়ার সাথে সাথে উচ্চতা ও ওজনের দ্রুত বৃদ্ধি ঘটে। মেয়েদের ক্ষেত্রে ১১ থেকে ১৫ বছর এবং ছেলেদের ক্ষেত্রে ১২ থেকে ১৬ বছর বয়সীমা বয়োসন্ধিকালের অন্তর্ভুক্ত।
ঘ. উদ্দীপকে বর্ণিত পরিবর্তন বলতে বয়োসন্ধিকালীন পরিবর্তনকে বুঝানো হয়েছে। আর এ পরিবর্তনগুলোর জন্য দায়ী হরমোনগুলোর বর্ণনা নিচে উপস্থাপন করা হলো-
১. পিটুইটারি গ্রন্থি: পিটুইটারি গ্রন্থি হতে অনেকগুলো হরমোন ক্ষরিত হয় এবং এর মধ্যে দু'ধরনের হরমোন হলো-শরীর বর্ধক হরমোন এবং গোনাডোট্রপিক হরমোন। শরীর বর্ধক হরমোন দেহের উচ্চতা ও আকৃতি নিয়ন্ত্রণ করে এবং গোনাডোট্রপিক হরমোন যৌন গ্রন্থির কর্মকান্ডেরউপর প্রভাব বিস্তার করে। বয়োসন্ধিকালের পূর্বে গোনাডোট্রপিক হরমোনের পরিমাণ ক্রমশ বৃদ্ধি পাওয়ায় যৌন গ্রন্থির তৎপরতা বেড়ে যায় বলে যৌন পরিবর্তন শুরু হয়।
২. যৌন গ্রন্থি: যৌন গ্রন্থির আকৃতি ও ক্ষমতার পরিবর্তন শুরু হওয়ায় লিঙ্গের আকৃতি বড় হয় ও সঠিক কার্যক্ষমতা অর্জন করে এবং গৌণ যৌন বৈশিষ্ট্যের বিসত্মৃতি ঘটে।
৩. পিটুইটারি গ্রন্থি ও যৌন গ্রন্থির পরিপক্কতা: পিটুইটারি গ্রন্থি নিঃসৃত গোনাডোট্রপিক হরমোন যৌন গ্রন্থি নিঃসৃত হরমোনকে উদ্দীপিত করে আবার যৌন গ্রন্থি নিঃসৃত হরমোন পিটুইটারি গ্রন্থিতে উৎপন্ন হরমোনের উপর প্রভাব বিস্তার করে। হরমোনের এরকম মিথস্ক্রিয়ার ফলে দৈহিক বৃদ্ধি ধীরগতি সপন্ন হয়। পুরুষের সন্তান উৎপাদন ক্ষমতা লুপ্ত হলে এবং মহিলাদের ঋতু বন্ধের সময় হলে এরকম পারস্পরিক ক্রিয়া কমে যায়।
৮. বেলালের বয়স ১৪ বছর। সে দশম শ্রেণিতে পড়ে। পড়াশুনায় অধিক মনোযোগী ছিল বেলাল কিন্তু ইদানিং সে অন্য রকম হয়ে গেছে। কোনো কাজে ঠিকমতো মন বসে না। বন্ধুদের সাথেও ভালো ব্যবহার করে না। তার হঠাৎ মানসিক অবস্থা পরিবর্তন দেখে বাবা-মা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে।
ক. শৈশবকাল কাকে বলে?
খ. বয়োসন্ধিকালের দুটি শারীরিক পরিবর্তন লেখ।
গ. বেলালের মানসিক অবস্থা পরিবর্তন হওয়ার প্রধান কারণ বর্ণনা কর।
ঘ. বেলালের উক্ত মানসিক অবস্থায় পরিবার ও বেলালের করণীয় বিশ্লেষণ কর।
৮ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. শিশুর জন্ম থেকে পাঁচ বছর পর্যন্ত বয়সকে শৈশবকাল বলে।
খ. বয়োসন্ধিকালের দুটি শারীরিক পরিবর্তন হলো-
১. উচ্চতা ও ওজন বাড়ে।
২. শরীরে দৃঢ়তা আসে, বুক ও কাঁধ চওড়া হয়।
গ. উদ্দীপকের তথ্যানুযায়ী বেলালের বয়স ১৪ বছর। বয়সের ভিত্তি ও পর্যায় অনুযায়ী এখন তার বয়োসন্ধিকাল শুরু হয়েছে। এ সময় কিশোরদের কিছু মানসিক অবস্থার পরিবর্তন হয়। বেলালেরও মানসিক অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। এর প্রধান কারণ হলো বয়োসন্ধিকালের পরিবর্তন। বেলালের কোনো কাজে ঠিকমতো মন বসে না এবং বন্ধুদের সাথেও ভালো ব্যবহার করে না। বেলালের এ ও নেতিবাচক বর্তমান পরিস্থিতির কারণ হলো নিজস্ব সংকোচবোধ ও তার পারিবারিক অসচেতনতা, বয়োসন্ধিকালে কিশোর বা কিশোরীদের মন প্রফুলস্ন রাখা এবং তাকে সঠিক পথে পরিচালনায় পরিবারের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি থাকে। অভিভাবকদের বন্ধুসুলভ আরচণ। সহানুভূতি প্রকাশ করা। মানসিক দিক দিয়ে সহযোগিতা প্রদান, শারীরিক সমস্যাগুলোর খোলাখুলি আলোচনা ও সমাধান একজন কিশোরকে সঠিক পথে পরিচালনা করতে এ বয়সে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখে। এছাড়াও বয়োসন্ধিকালে যেসব পরিবর্তন ঘটে তার জন্য দায়ী এক ধরনের রাসায়নিক পদার্থ যাকে ‘হরমোন’ বলে।
শরীর ও মনের বিভিন্ন পরিবর্তনের জন্য দায়ী ইস্ট্রোজেন ও প্রজেস্টেরন নামে দুটি হরমোন। আর ছেলেদের শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন ঘটে টেস্টোস্টেরন নামক হরমোনের কারণে। বেলালের মানসিক অবস্থার যে পরিবর্তন ঘটেছে এগুলো হয়তো সে তার পরিবারের সাথে আলোচনা করতে লজ্জাবোধ করেছে অথবা পরিবারও তা জানতে চায়নি। ফলে বেলালের মানসিক অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে।
উপরোক্ত আলোচনার মাধ্যমে আমরা বুঝতে পারলাম যে, বেলালের, মানসিক অবস্থার কারণ হলো তার সংকোচবোধ ও পরিবারের অসচেতনতা। বয়োসন্ধিকালে কিশোর বা কিশোরীদের মন প্রফুলস্ন রাখা এবং তাদের সঠিকপথে পরিচালনা করতে পরিবারের ভূমিকা রাখতে হবে।
ঘ. উক্ত অবস্থা অর্থাৎ বয়োসন্ধিকালের মানসিক পরিবর্তনের সাথে খাপ খাওয়ানোর জন্য বেলালের পরিবারের ও বেলালের করণীয় বিষয়সমূহ আলোচনা করা হলো-
যেহেতু বয়োসন্ধিকালের পরিবর্তনগুলো সম্পর্কে জানা থাকলে এবং এ সম্বন্ধে করণীয় বিষয়ে পূর্ব ধারণা থাকলে, কিশোর-কিশোরীদের মানসিক প্রস্তুতি থাকে। ফলে তারা বিষয়টি সহজভাবে নিতে পারে, তাদের স্বাভাবিক জীবনযাপন ব্যাহত হয় না এবং সম্ভাব্য রোগব্যাধিও প্রতিরোধ করা যায় তাই বেলালের পরিবারের উচিত-
১. বয়োসন্ধিকালের পরিবর্তনগুলো সম্পর্কে তাকে অবগত করানো, ফলে তার সংকোচনতা ও একা থাকার প্রবণতা কমে যাবে।
২. মা-বাবা ও অন্যান্যদের বন্ধুসুলভ ও সহানুভূতিশীল আচরণ করতে হবে।
৩. তাকে মানসিক দিকসহ অন্য সব ব্যাপারে সহযোগিতা প্রদান ও সাহস জোগাতে হবে।
বেলালের করণীয়:
১. বেলালের প্রথম কাজ হবে শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তনগুলোর সাথে খাপ খাওয়ানোর চেষ্টা করা।
২. ভালো গল্পের বই পড়তে হবে।
৩. বন্ধুদের সাথে খেলাধুলা করতে হবে। কারণ-খেলাধুলায় মনে প্রফুলস্নতা আসবে এবং মানসিক চাপ সামলানো সম্ভব হবে।
৯. প্রণব ও সোমা এক বছরের ছোট বড় হলেও ছোটবেলা থেকে একসাথে মেলামেশা ও খেলাধুলা করেছে। প্রণব এখন অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে। একদিন সোমার মামী প্রণবকে বলে যে, এখন বড় হয়েছ, তাই মেয়েদের সাথে মেলামেশা করা লোকে ভালো চোখে দেখবে না। প্রণবের মনে প্রশ্ন এবং কৌতূহল জাগে, কেন এখন মেয়েদের সাথে মেলামেশা করা যাবে না।
ক. মানসিক স্বাস্থ্য আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী আন্তর্জাতিক দুটি সংস্থার নাম লেখ।
খ. উন্নততর মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য কি ধরনের গুণ থাকা দরকার?
গ. প্রণবের উদ্দেশ্যে সোমার মামীর উপদেশটির যথার্থতা ব্যাখ্যা কর।
ঘ. প্রণবের প্রশ্নের উত্তর বা কৌতূহল মেটানোর দায়িত্ব কাদের বলে তুমি মনে কর?আলোচনা কর।
৯ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. মানসিক স্বাস্থ্য আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী দুটি আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান হলো-
১. World Health Organization (WHO)
২. United Nations Educational Scientific and Cultural Organization (UNESCO)
খ. একজন ব্যক্তিকে উন্নত মানসিক স্বাস্থ্যের অধিকারী বলা যায়। যদি-
১. তিনি জীবনকে অর্থপূর্ণ এবং উপভোগ্য মনে করেন এবং বেঁচে থাকার সার্থকতা উপলব্ধি করেন।
২. তিনি আত্মবিশ্বাসী, বাস্তবধর্মী, নিজের এবং অন্যান্য যাদের সঙ্গে থাকেন বা কাজ করেন, তাদের ক্ষমতার সীমা বুঝে চলতে পারেন।
৩. সাধারণভাবে তিনি নিরাপত্তা-বোধ করেন, মামলা-মোকদ্দমার ঝামেলা এড়িয়ে চলতে পারেন এবং জীবনের সুযোগের পূর্ণ ব্যবহার করতে পারেন।
৪. তিনি সহজে বিচলিত হন না এবং পারিপার্শ্বিক অবস্থা ও সমাজের অন্যান্য লোকের সঙ্গে সুসামঞ্জস্যভাবে চলতে পারেন।
গ. প্রণবের প্রতি সোমার মামীর উপদেশটি আমাদের বর্তমান সামাজিক প্রেক্ষাপটে খুব সাধারণ ব্যাপার কিন্তু বাস্তবতায় এ উপদেশটি ঠিক নয়। এ উপদেশের ফলে প্রণবের মনে কৌতূহল জাগে, কেন এ সময়ে মেয়েদের সাথে মেশা যাবে না। এ ধরনের কৌতূহল মেটানোর জন্য প্রণব চেষ্টা করবে এবং খুব ভালোভাবে অনেক কিছু বুঝতে পারে, যা প্রণবকে বয়োসন্ধিকালীন মানসিক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে ফেলবে।
জন্মের পর শিশুর প্রথম জায়গা হলো তার পরিবার। এ পারিবারিক পরিবেশ শিশুর মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ শর্ত। কারণ, পরিবারের সামাজিক মর্যাদা, অর্থনৈতিক ও শিক্ষাগত অবস্থা, পারিবারিক সম্পর্ক ও মূল্যবোধ ইত্যাদি শিশুর স্বাভাবিক মানসিক বিকাশকে সর্বাধিক প্রভাবিত করে। বাংলাদেশের বেশির ভাগ পরিবারগুলোই শিশুর স্বাভাবিক শারীরিক বিকাশ সম্পর্কে অনেকাংশে সচেতন থাকলেও মানসিক বিকাশ সম্পর্কে একেবারেই অজ্ঞ ও উদাসীন। যা বাংলাদেশের শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।
ঘ. বয়োসন্ধিকালীন সময়ে ছেলেমেয়েদের যেকোনো প্রশ্ন বা কৌতূহল মেটানোর দায়িত্ব পরিবারের। প্রণবের কৌতূহল মেটাতে পরিবার তথা তার বাবা-মা মুখ্য ভূমিকা রাখতে পারে।
শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশে পরিবার তথা মা, বাবা ও তার পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের প্রভাব খুবই গুরুত্বপূর্ণ। দেখা গেছে যে শিশুর ধারণা ও বিশ্বাস সম্পূর্ণভাবে উত্তরাধিকার সূত্রে তার বাবা মার কাছ থেকে আসে এবং পরিবার থেকেই তারা এসব বস্তু শিক্ষা লাভ করে ও তাদের এ শিক্ষা লাভ প্রাপ্ত বয়স পর্যন্ত চলতে থাকে। শিশুরা মা বাবার মাধ্যমে কতকগুলো ধারণা সম্পর্কে জ্ঞানলাভ করে এবং মা বাবার আদর্শ ও পুরস্কার দ্বারা তা প্রভাবিত হয়। শিশুদের এসব ধারণা বিভিন্ন পরিবার বিভিন্নভাবে চালিত হয়। কোনো কোনো পরিবারে বয়োসন্ধিকালের আচার-ব্যবহার, রীতিনীতি তাদের মা বাবার অনুকরণে হয়ে থাকে।
মা বাবার সাথে বয়োসন্ধিকালের শিশুদের আচরণ তাদের সমঝোতার উপর নির্ভরশীল। Bealer এবং তার সাথীরা (১৯৬৪) মন্তব্য করেছেন যে, শিশুরা তাদের মা বাবাকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আসন দান করে এবং যেসব শিশু তাদের মা বাবার আদর্শ অনুসরণ করে তারা তাদের মা বাবাকে অনেক উপরে আসন দিয়ে থাকে ও প্রকৃতপক্ষে তারাই সুখী।
১০. রিতা ও মিতা দুই বোন। তাদের এক ভাই। নাম রিফাত। রিতার বয়স ১২ মিতার ১৯ এবং রিফাতের ১৫ বছর। রিতা ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে। প্রায়ই বাসায় মন খারাপ করে একাকী বসে থাকে। সময়মতো খেতে চায় না, তাকে ক্লান্ত ও বিষণ্ণ মনে হয়। মিতা ছোট বোন রিতার সমস্যা বুঝতে পেরে তার সব কথা শুনে এবং পরামর্শ দেয়। তারপর থেকে রিতা স্বাভাবিক হয়ে উঠেছে। অন্যদিকে রিফাতের কণ্ঠস্বর হঠাৎ পরিবর্তন হয়ে যায়। এতে সে বোনদের সামনে অনেক সময় কথা বলতে লজ্জা পায়।
ক. বয়োসন্ধিতে ছেলেদের বয়সসীমা কত?
খ. বয়োসন্ধিকাল স্বল্পস্থায়ী কেন? ব্যাখ্যা কর।
গ. উদ্দীপকের আলোকে রিতার যেসব শারীরিক বৈশিষ্ট্য ফুটে উঠেছে তা ব্যাখ্যা কর।
ঘ. ‘‘রিতা ও রিফাতের পরিবর্তনের কারণ একই হলেও বৈশিষ্ট্যের দিক থেকে ভিন্নতা লক্ষ করা যায় উক্তিটি বিশ্লেষণ কর।
১০ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. বয়োসন্ধিতে ছেলেদের বয়সসীমা ১২ থেকে ১৬ বছর।
খ. বয়োসন্ধিকাল স্বল্পস্থায়ী কারণ, এ সময় শরীরের বাইরে এবং ভিতরে যে পরিবর্তন ঘটে তা লক্ষ করলে দেখা যায় যে, পরিবর্তনগুলো মাত্র দু থেকে চার বছরের সংক্ষিপ্ত পরিসরে সংঘটিত হয়। যেসব কিশোর-কিশোরীর এ জাতীয় পরিবর্তনগুলো দু বা কম সময়ের মধ্যে সম্পন্ন হয় তাদের পরিপক্কতা দ্রুত হয়েছে এবং যাদের এ পরিবর্তনগুলো চার বা তার বেশি সময়ের প্রয়োজন সম্পন্ন হয় তাদের পরিপক্কতা দেরিতে হয়েছে বলা যায়। যদিও মেয়েরা ছেলেদের তুলনায় আগে পরিপক্কতা অর্জন করলেও এ ব্যতিক্রম দেখা যায়।
গ. উদ্দীপকে রিতার বয়স ১২ বছর। অর্থাৎ রিতার বয়োসন্ধিকাল শুরু হয়েছে। আমাদের দেশের ভৌগোলিক অবস্থার কারণে সাধারণত ১২-১৪ বছর বয়সের মধ্যে মেয়েদের বয়োসন্ধিকাল হয়ে থাকে। উদ্দীপকের আলোকে রিতার যেসব শারীরিক বৈশিষ্ট্য ফুটে উঠেছে তা নিচে ব্যাখ্যা করা হলো-
১. উচ্চতা ও ওজন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
২. স্তনের বৃদ্ধি ঘটছে।
৩. কোমরের হাড় মোটা, উরু ও নিতম্ব ভারী হচ্ছে।
৪. গুপ্তস্থানে লোম গজাচ্ছে।
৫. ঋতুস্রাব শুরু হয়েছে।
৬. এ সময়ে মেয়েদের গলার স্বর পূর্ণতা লাভ করে ও শ্রুতিমধুর হয়।
ঘ. উদ্দীপকে রিতার বয়স ১২ বছর এবং রিফাতের বয়স ১৫ বছর। উভয়ের ক্ষেত্রে এ বয়স হলো বয়োসন্ধিকাল। রিতা ও রিফাতের পরিবর্তনের কারণ এ বয়োসন্ধিকাল। এ বয়োসন্ধিকালে যেসব পরিবর্তনীয় বৈশিষ্ট্য লক্ষ করা যায় তা নিম্নরূপরিতার ক্ষেত্রে পরিবর্তনীয় বৈশিষ্ট্য:
১. উচ্চতা ও ওজন বৃদ্ধি পাবে।
২. ত্বক পুরু হবে, রঙ বদলাবে এবং ত্বকের উপর লোমকূপের আকৃতি বড় হবে।
৩. পেশির আকৃতি ও শক্তি বৃদ্ধি হওয়ায় বাহু, পা এবং কাঁধ সঠিক আকৃতি পাবে।
৪. অন্ডাশয় এবং লিঙ্গের আকৃতি বৃদ্ধি পাবে এবং এক বছরের মধ্যে বিভিন্ন গোপন স্থানে লোম গজাবে।
৫. গলার স্বর মোটা হবে এবং স্বরভঙ্গ দেখা দিবে।
৬. ১২-১৪ বছরের মধ্যে স্তনে অবস্থিত গ্রন্থির চারপাশ শক্ত হয়ে যাবে।
রিফাতের পরিবর্তনীয় বৈশিষ্ট্য:
১. উচ্চতা ও ওজন বাড়ে।
২. শরীরে দৃঢ়তা আসে, বুক ও কাঁধ চওড়া হয়।
৩. শরীরের বিভিন্ন অংশে লোম গজায়।
৪. ১৬/১৭ বছর বয়সে দাড়ি গোঁঅ ওঠে।
৫. স্বরভঙ্গ হয় ও গলার স্বর মোটা হয়।
৬. প্রজনন অঙ্গ বড় হয়ে ওঠে।
৭. বীর্যপাত হয়।
উপরোক্ত আলোচনা হতে প্রতীয়মান হয় যে, ‘‘রিতা ও রিফাতের পরিবর্তনের কারণ একই হলেও বৈশিষ্ট্যের দিক থেকে ভিন্নতা লক্ষ করা যায়’’- উক্তিটি যথার্থ।
0 Comments:
Post a Comment