এইচএসসি পরীক্ষার পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি
HSC Psychology 1st Paper Srijonshil question and answer. HSC Psychology 1st Paper (Srijonshil) Creative Questions pdf download. HSC Monobiggan 1st paper Srijonshil Proshno Uttor.
উচ্চ মাধ্যমিক
মনোবিজ্ঞান
প্রথম পত্র
সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
অধ্যায়-৬
HSC Psychology
1st Paper
Srijonshil Question and Answer pdf download
১. রাহা, রুমা ও বেলী সমুদ্রতীরে বেড়াতে গিয়েছে। সৈকতে কিছু ছেলে বল খেলছে। রাহার দৃষ্টি বলের দিকে। কিন্তু সাইরেনের শব্দে সে সমুদ্রে জাহাজের দিকে তাকালো। অন্যদিকে, রুমাকে সমুদ্র তীরের ঝাউগাছ, বিভিন্ন রংয়ের ফেস্টুন ও হাতী বিমোহিত করছে। কিন্তু বেলী সৈকতের দোকানগুলো দেখছে। কারণ তার জামা ও পুঁতির মালা কিনতে হবে।
ক. সংবেদন কী?
খ. প্রত্যক্ষণ কীভাবে সংঘটিত হয়?
গ. রাহার মধ্যে মনোযোগের কোন কোন বৈশিষ্ট্য ফুটে উঠেছে?বর্ণনা কর।
ঘ. রুমা ও বেলীর মনোযোগের শর্তের ভিন্নতার তুলনামূলক আলোচনা কর।
১ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. সংবেদন হলো এমন একটি প্রক্রিয়া যার সাহায্যে ইন্দ্রিয় যন্ত্র যেমন চক্ষু, কর্ণ, পরিবেশ সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করে।
খ. পারিপার্শ্বিক অবস্থাদি সম্পর্কে মানুষ বা প্রাণী যে অর্থপূর্ণ ধারণা এবং অভিজ্ঞতা লাভ করে তাকে প্রত্যক্ষণ বলে। উত্তেজক পারিপার্শ্বিক বস্তু বা ঘটনার বার্তা বয়ে মস্তিষ্কে নিয়ে আসে এবং সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় এর বিশ্লেষণ, সমন্বয়সাধন ও একীকরণ। মস্তিষ্কে এর বিশ্লেষণ, সমন্বয়সাধন ও একীকরণের পর অতীত অভিজ্ঞতার আলোকে উক্ত বস্তু বা ঘটনার একটা পরিচয় পাওয়া যায় এবং তখনই সৃষ্টি হয় প্রত্যক্ষণ। উদাহরণস্বরূপ, রাস্তায় চলতে চলতে হঠাৎ এক ঝলক আলো চোখে এসে পড়ল। আলোর প্রতি এই প্রাথমিক অনুভূতি হলো সংবেদন। পরে যখন বোঝা গেল যে, সেটা মটর গাড়ির হেড লাইটের আলো, তখন তা প্রত্যক্ষণে পরিণত হলো।
গ. উদ্দীপকে রাহার মধ্যে মনোযোগের নির্বাচনধর্মী ও মনোযোগের পরিবর্তনশীলতা বৈশিষ্ট্য ফুটে উঠেছে। নিচে বর্ণনা করা হলো-
আমরা যে বিষয়ের প্রতি মনোযোগ স্থাপন করি তা নির্বাচন করেই করা হয়। এক সঙ্গে বহু সংখ্যক উদ্দীপক আমাদের চেতনায় আঘাত করতে পারে। কিন্তু যে উদ্দীপকটি আমাদের প্রয়োজন সাধন করে অথবা যে উদ্দীপকটির আকর্ষণীয় ক্ষমতা বেশি সেটি নির্বাচন করে আমরা তার প্রতি মনোযোগী হই।
উদাহরণস্বরূপ, ফুটবল খেলার মাঠে ২২ জন খেলোয়াড় থাকে। বল বিভিন্ন খেলোয়াড়ের পায়ে পায়ে সারা মাঠ ছুটে চলে। কিন্তু বলটি যখন কোনো বিশেষ পরিচিত খেলোয়াড়ের পায়ে যায় তখন তা বেশি করে আমাদের মনোযোগ আকর্ষণ করে।
কোনো উদ্দীপকের প্রতি মনোযোগ নিবিষ্ট হলে সঞ্চালনমূলক পরিবর্তন দেখা দেয়। কোনো উদ্দীপক আমাদের ইন্দ্রিয়ে আঘাত করলে স্নায়ুসমূহ সক্রিয় হয়ে উঠে এবং তথ্যসমূহ মস্তিষ্কে নিয়ে যায়। এ মস্তিষ্কের স্নায়ুসমূহ সক্রিয় হয়ে উঠে এবং করণীয় কাজ সম্পর্কে সিদ্ধান্ত দিলে তা আবার প্রান্তে প্রেরিত হয়। তখন আমরা ঐ উদ্দীপকের প্রতি প্রতিক্রিয়া করে থাকি। অর্থাৎ কোনো বিষয়ের প্রতি মনোযোগী হলে শরীরাভ্যন্তরে স্নায়বিক প্রক্রিয়ার পবির্তন ঘটে। উদ্দীপকে রাহার সাইরেনের শব্দে সমুদ্রে জাহাজের দিকে দৃষ্টি দেয়। অর্থাৎ রাহার দৃষ্টি ছেলেদের খেলার বল থেকে জাহাজের সাইরেনের শব্দে জাহাজের দিকে পরিবর্তন হয়েছে।
ঘ. উদ্দীপকে রুমার মধ্যে মনোযোগের শর্ত বিশেষ বৈশিষ্ট্য, আকার, রং প্রভৃতি লক্ষণীয়, অপরদিকে বেলির মধ্যে নতুনত্ব শর্তটি লক্ষণীয়। নিচে রুমা ও বেলির - মনোযোগের শর্তের ভিন্নতার তুলনামূলক আলোচনা করা হলো-
উদ্দীপকে রুমা সমুদ্রতীরের ঝাউগাছের প্রতি আকৃষ্ট। সমুদ্রতীরের ঝাউগাছ সমুদ্র তীরের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য। আবার, আকার মনোযোগ আকর্ষণের একটি উল্লেখযোগ্য শর্ত। যেসব বস্তু আকারে ছোট সেগুলো অনেক সময় আমাদের দৃষ্টি এড়িয়ে যায়। কিন্তু যা আকারে বড় তা সহজেই আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। চলতে পথে একটি পিপীলিকা হয়ত আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারে না, কিন্তু একটি হাতি অতি সহজেই আমাদের মনোযোগ আকর্ষণ করতে পারে। আবার, বিভিন্ন রঙের ফেস্টুন মনোযোগের একটি উল্লেখযোগ্য শর্ত। এক গবেষণায় দেখা যায় সাদা-কালো বিজ্ঞাপন তথা ফেস্টুনের চেয়ে দুই রং বিশিষ্ট ফেস্টুন ১% বেশি পাঠক আকৃষ্ট করে এবং চার রং বিশিষ্ট ফেস্টুন ৫৪% বেশি পাঠক আকৃষ্ট করে থাকে।
অন্যদিকে, বেলির মনোযোগ সমুদ্র সৈকতের দোকানগুলোর দিকে, কেননা তার জামা ও পুঁতির মালা কিনতে হবে। এক্ষেত্রে মনোযোগের অন্যতম শর্ত নতুনত্বের প্রভাব রয়েছে। নতুন ডিজাইনের পোশাক। অলঙ্কার, নতুন মডেলের রেডিও, টেলিভিশন প্রভৃতি দ্রুত আমাদের দৃষ্টি কেড়ে নেয়।
২. নিজাম সাহেব মটরবাইকে চড়ে অফিসে যান। একদিন তার ছেলে শিপন দোতলার বেলকুনিতে দাঁড়িয়ে গভীর আগ্রহে রাস্তার দিকে তাকিয়ে আছে কখন বাবা বাড়ি ফিরবে।
ক. প্রত্যক্ষণ কী?
খ. মনোযোগ নির্বাচনধর্মী কেন?
গ. ‘‘শিপন দাঁড়িয়ে বাবার জন্য অপেক্ষা করছে’’-প্রত্যক্ষণ সংগঠনের কোন শর্তের সাথে সম্পর্কিত? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. শিপনের সূর্য প্রত্যক্ষণ ও বাবার ডাক শোনাকে তুমি কিভাবে ব্যাখ্যা করবে? যুক্তি দেখাও।
২ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. প্রত্যক্ষণ হলো সংবেদনের অর্থবোধক বা ব্যাখ্যা।
খ. মনোযোগ নির্বাচনধর্মী, কারণ উদ্দীপকের নির্বাচন মনোযোগের একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য। একটি বিষয় নির্বাচন করা ও অপরগুলোকে বর্জন বা চেতনার ক্ষেত্র থেকে অপসারিত করাই হলো মনোযোগের ধর্ম। যেমন, ছাত্র যখন পাঠ্যবিষয়ের উপর চেতনাকে নিবন্ধ করে তখন সে অন্যান্য বিষয়, যেমন- গাড়ির শব্দ, পাখির ডাক, নানা রকম গোলমালের শব্দকে চেতনার ক্ষেত্র থেকে বর্জন করে।
গ. উদ্দীপকে শিপন দাঁড়িয়ে বাবার জন্য অপেক্ষা করছে - যা প্রত্যক্ষণ সংগঠনের ব্যক্তিনিষ্ঠ শর্তের মনোভাবের সাথে সম্পর্কিত। নিচে ব্যাখ্যা করা হলো-
যে সকল উপাদান ব্যক্তির অভ্যন্তরীণ কারণে সৃষ্টি হয় বা ব্যক্তি থেকে উদ্ভূত হয়ে প্রত্যক্ষণকে প্রভাবিত করে তাকে ব্যক্তিনিষ্ঠ শর্ত বলে। ব্যক্তির মনোভাব, ঝোঁক বা প্রবণতা, চাহিদা, আবেগ, মূল্যবোধ প্রভৃতি বিভিন্ন ব্যক্তিনিষ্ঠ শর্ত প্রত্যক্ষণের উপর প্রভাব বিস্তার করে। উদ্দীপকে শিপন যে ধরনের মনোভাব পোষণ করেন, তার সাথে মিলযুক্ত ব্যক্তি বা বস্তুকে তিনি তাড়াতাড়ি প্রত্যক্ষণ করেন। শিপন গভীর আগ্রহে দোতলার বেলকুনিতে দাঁড়িয়ে গভীর আগ্রহে রাস্তার দিকে তাকিয়ে আছে কখন বাবা মটর বাইক নিয়ে বাড়ি ফিরবে এই আশায়। এখানে শিপনের মনোভাব সম্পূর্ণ তার বাবার বাড়ি ফিরে আসার জন্য। তাই সে রাস্তায় যেকোনো গাড়ির শব্দ হলেই ভাবে বাবা আসছে।
ঘ. উদ্দীপকে শিপনের সূর্য প্রত্যক্ষণ ও বাবার ডাক শোনাকে যথাক্রমে অধ্যাস ও অলীক প্রত্যক্ষণ হিসেবে ব্যাখ্যা করতে পারি। নিচে যুক্তিসহকারে আলোচনা করা হলো-
উদ্দীপকের প্রতি প্রাণীর প্রাথমিক চেতনা হলো সংবেদন। আর সংবেদনের যথার্থ ব্যাখ্যাই হলো প্রত্যক্ষণ। কিন্তু সংবেদনের ব্যাখ্যা যখন যথার্থ না হয়ে ভ্রান্ত বা ত্রুটিপূর্ণ হয় তখন তাকে অধ্যাস বলে। উদ্দীপকে শিপন পশ্চিমা আকাশে বড় লাল সূর্য দেখতে দেখতে হঠাৎ তা মেঘের মধ্যে হারিয়ে যায়। যা এক ধরনের প্রাকৃতিক অধ্যাস। প্রাকৃতিক অধ্যাসের মধ্যে রয়েছে চন্দ্র ও সূর্য অধ্যাস। অথবা পানিতে ডোবানো আগুল যা লাঠির অংশ বিশেষ মোটা বা বাঁকা মনে হয় প্রভৃতি।
আবার, বাস্তবে কোনো উদ্দীপক নেই অথচ তাকে প্রত্যক্ষণ করা হয় এরূপ প্রত্যক্ষণই অলীক প্রত্যক্ষণ নামে পরিচিত। অর্থাৎ অবাস্তব উদ্দীপকের প্রত্যক্ষণই হচ্ছে অলীক প্রত্যক্ষণ। উদ্দীপকে শিপন বাবার জন্য অপেক্ষা করতে করতে এক সময় ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। ঘুমের মধ্যে বাবার ডাক শুনে জেগে উঠে কিন্তু দেখলো বাবা এখনও বাসায় ফিরে নাই। এ ধরনের ঘটনাই অলীক প্রত্যক্ষণ। এ ধরনের আরও ঘটনার মধ্যে রয়েছে, আবছা অন্ধকারে একজন দেখতে পেল সাদা কাপড় পরিহিত এক মহিলা তাকে ইশারায় ডাকছে। অথচ বাস্তবে সেখানে কোনো মহিলার অস্তিত্ব নেই। অথবা কেউ শুনতে পায় যে ফেরেশতা তাকে ডাকছে। কিন্তু তারই পাশে বসে থাকা অন্যান্য ব্যক্তিরা তা শুনতে পায় না।
৩. দুই বন্ধু তমাল ও হিমেল বিকালে ক্লাস শেষে মাঠে বসে গল্প করছিল। এক পর্যায়ে তমাল হিমেলকে বলছে, দূরে একটি বস্তু দেখা যাচ্ছে। তবে বুঝতে পারছে না সেটি কী?হিমেল উঠে গিয়ে সেটি হাতে নিয়ে দেখে এটি তারই বন্ধু রফিকের বই। তমাল ও হিমেল বাসায় যাওয়ার পথে রফিককে বইটি দিতে যাচ্ছে। এ সময় রাস্তায় একটি হাতি দেখে তাদের দৃষ্টি সেদিকে যায় এবং সেটির কার্যকলাপ দেখতে থাকল।
ক. অধ্যাস কী?
খ. অলীক বীক্ষণ কাদের ক্ষেত্রে ঘটে? ব্যাখ্যা কর।
গ. উদ্দীপকে তমালের দূরের বস্তুটিকে বুঝতে না পারার ঘটনাটি পাঠ্যবই এর আলোকে ব্যাখ্যা কর।
ঘ. হিমেলের বস্তুটিকে বই বলে বুঝতে পারে এবং দুই বন্ধুর রাস্তায় হাতির দিকে দৃষ্টি যাওয়ার ঘটনাটি কি একই?বিশ্লেষণ কর।
৩ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. কোনো বাস্তব উদ্দীপককে স্বতন্ত্রভাবে প্রত্যক্ষণ করার নামই হচ্ছে অধ্যাস।
খ. অলীক বীক্ষণ হলো এমন প্রত্যক্ষণীয় অভিজ্ঞতা যা একই সংবেদীয় পরিস্থিতিতে অন্যরা যেভাবে অভিজ্ঞতা লাভ করে তা থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। উদাহরণস্বরূপ, আবছা অন্ধকারে একজন দেখতে পেল সাদা কাপড় পরিহিত এক মহিলা তাকে ইশারায় ডাকছে। অথচ বাস্তবে সেখানে কোনো মহিলার অস্তিত্ব নেই।
মস্তিষ্কের বিকৃতি ও মানসিক অস্বাভাবিকতাই অলীক বা বীক্ষণের জন্য দায়ী। যেমন- সিজোফ্রেনিয়া (Schizophrenia) নামক মানসিক রোগের অন্যতম প্রধান লক্ষণ হচ্ছে অলীক বীক্ষণ। অতিরিক্ত ঔষধাসক্ত (Drug addicted) বা মাদকাসক্ত ব্যক্তিদের মধ্যে অলীক বীক্ষণ দেখা যায়।
গ. উদ্দীপকে তমালের দূরের বস্তুটিকে বুঝতে না পারার ঘটনাটি হলো দূরত্বজনিত অধ্যাস। নিচে পাঠ্য বইযয়ের আলোকে তা ব্যাখ্যা করা হলো-
কোনো উদ্দীপক তার দূরত্বজনিত অবস্থান বা উপস্থাপনগত অবস্থার প্রেক্ষিতে সেই প্রত্যক্ষিত উদ্দীপক সম্পর্কে শিক্ষণ ও অভিজ্ঞতাগত বিশ্লেষণ সমন্বয়সাধনে ব্যর্থ সংবেদীয় ও মানকি প্রক্রিয়ায় একটি ত্রুটিপূর্ণ ব্যাখ্যাসম্পন্ন ধারণাকেই দূরত্বজনিত অধ্যাস বলে। যেমন- 'Linear perceptual illusion' বা রৈখিক প্রত্যক্ষণগত অধ্যাস; অর্থাৎ রেল লাইনের যত দূরের অংশের দিকে তাকানো যায়, মনে হয় যেন ক্রমাগত রেল লাইন দুটি নিকটবর্তী হতে হতে একসঙ্গে মিলিত হয়ে গিয়েছে। 'Size perceptual illusion' বা আকারের প্রত্যক্ষণগত অধ্যাস অর্থাৎ একই আকারের উদ্দীপক বা বস্তু কাছে থাকলে বড় এবং দূরে থাকলে ছোট মনে হয়।
উদ্দীপকে দূরের বস্তুটিকে তমাল দূরত্বজনিত অধ্যাসের কারণে চিনতে পারেনি। যখন তমালের বন্ধু হিমেল কাছে গিয়ে বস্তুটি হাতে নিল তখন বুঝতে পারে যে এটি তাদের বন্ধু রফিকের বই।
ঘ. হিমেলের বস্তুটিকে বই বলে বুঝতে পারা এবং দুই বন্ধুর রাস্তায় হাতির দিকে দুর্কি যাওয়ার ঘটনাটি মনোযোগের বস্তুনিষ্ঠ উপাদানসমূহের অন্যতম উপাদান আকার এর অন্তর্ভুক্ত। নিচে তা বিশ্লেষণ করা হলো-
মনোযোগের ক্ষেত্রে উদ্দীপক বা বস্তুর আকার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। কারণ, স্বাভাবিক উদ্দীপক বা বস্তুর তুলনায় বড় আকারের উদ্দীপক যেমন মনোযোগ আকর্ষণ করে, ঠিক তেমনিভাবে স্বাভাবিক উদ্দীপক বা বস্তুর তুলনায় ছোট আকারের উদ্দীপকও মনোযোগ আকর্ষণ করে। উদ্দীপকে হিমেল দূরে থেকে বস্তুটিকে বই বলে চিনতে পারেনি কারণ বইয়ের আকার ছোট দূরে থেকে আরো ছোট দেখায়। যখন কাছে যায় তখন বস্তুটিকে বই বলে চিনতে পারে। আবার বৃহৎ আকৃতির হাতির দিকে দুই বন্ধুর দৃষ্টি চলে যায়। হাতি আকারে বৃহৎ হওয়ার কারণেই তাদের মনোযোগ খুব সহজেই হাতির দিকে চলে যায়।
তাই উপরোক্ত আলোচনা হতে বলা যায় যে, হিমেলের বস্তুটিকে বই বলে বুঝতে পারা এবং দুই বন্ধুর রাস্তায় হাতির দিকে দৃষ্টি যাওয়ার ঘটনাটি একই।
৪. রুমি এবং ছবি দুই বান্ধবী। রুমি ছবিকে বলল, মনোবিজ্ঞান ক্লাসে মনোযোগ অধ্যায়টি পড়ানো হলো জানতে পারলাম পুনরাবৃত্তি রাগ আকর্ষণের একটি শর্ত। যার জন্য ক্ষুধার্ত ব্যক্তি খাদ্যের প্রতি, তুষ্ণার্ত ব্যক্তি পানির প্রতি আকৃষ্ট হয়।
ক. সংবেদন ব্যাখ্যা ও অর্থবোধকে কী বলা হয়?
খ. মনোযোগকে প্রত্যক্ষণের নির্বাচনমুখিতা বলা হয় কেন?
গ. রুমি ছবিকে মনোযোগের যে শর্তের ২টি উদাহরণ দিয়েছে সে রকম আরও ৩টি শর্ত উদাহরণসহ আলোচনা কর।
ঘ. রুমি ছবিকে মনোযোগ আকর্ষণের পিছনে ভিন্ন আরেক ধরনের শর্তের কথা বলেছে - উদাহরণসহ সে রকম ৪টি শর্ত আলোচনা কর।
৪ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. সংবেদন ব্যাখ্যা ও অর্থবোধকে প্রত্যক্ষণ বলা হয়।
খ. উদ্দীপক নির্বাচন প্রত্যক্ষণের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য। আমরা যা কিছু প্রত্যক্ষণ করি তা বাছাই করে বা নির্বাচন করে প্রত্যক্ষণ করি। প্রতি মুহূর্তে অসংখ্য উদ্দীপক আমাদের ইন্দ্রিয়ে আঘাত করে। আমরা এগুলো থেকে একটি বা দুটি উদ্দীপক নির্বাচন করে প্রত্যক্ষণ করি। অর্থাৎ আমরা আমাদের চারপাশের অসংখ্য ঘটনার মধ্য থেকে মাত্র দু'একটির প্রতি মনোযোগ দেই। প্রত্যক্ষণের নির্বাচনমুখিতাই হলো মনোযোগ।
গ. উদ্দীপকে রুমি ছবিকে মনোযোগের বস্তুনিষ্ঠ শর্তের একটি উদাহরণ দিয়েছে। নিচে বস্তুনিষ্ঠ শর্তের আরও ৩টি শর্ত উদাহরণসহ আলোচনা করা হলো-
১. আকৃতি: বস্তুর আকৃতি মনোযোগ সৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ছোট আকৃতির বস্তু বা দ্রব্যের তুলনায় বড় আকৃতির বস্তুর প্রতি মনোযোগ সহজেই আকৃষ্ট হয়। যেমন - ছোট আকারের বিজ্ঞাপনের তুলনায় বড় আকারের বিজ্ঞাপন আমাদের মনোযোগ বেশি আকৃষ্ট করে।
২. তীব্রতা: মনোযোগ আকর্ষণের ক্ষেত্রে উদ্দীপকের তীব্রতা বিশেষ ভূমিকা পালন করে। দুর্বল উদ্দীপকের তুলনায় শক্তিশালী উদ্দীপক সহজেই মনোযোগ আকর্ষণ করে। ক্ষীণ আলোর তুলনায় উজ্জ্বল ও আলো অধিক মনোযোগ আকর্ষণ করে।
৩. পরিবর্তন: উদ্দীপকের পরিবর্তিত দিকটির প্রতি আমাদের মনোযোগ সহজেই আকৃষ্ট হয়। যেমন- কোনো একটি সাদা রঙের বস্তুকে যদি রঙিন বস্তুতে রূপান্তর করা হয় তাহলে মনোযোগ আকৃষ্ট হবে।
ঘ. উদ্দীপকে রুমি ছবিকে মনোযোগ আকর্ষণের পিছনে ভিন্ন আরেক ধরনের শর্তের কথা বলেছেন তা হলো মনোযোগের ব্যক্তিনিষ্ঠ শর্ত। নিচে মনোযোগের ব্যক্তিনিষ্ঠ শর্তের ৪টি উদাহরণসহ আলোচনা করা হলো-
১. আগ্রহ: ব্যক্তির আগ্রহ মনোযোগ সৃষ্টিতে সাহায্য করে। কোনো বস্তুর বা দ্রব্যের প্রতি ব্যক্তির আগ্রহ স্থায়ী ও অস্থায়ী হতে পারে। সংবাদপত্র, ম্যাগাজিন, টেলিভিশন প্রোগ্রাম এবং বিভিন্ন ক্রীড়ার প্রতি ব্যক্তির স্থায়ী আগ্রহ থাকতে পারে। অন্যদিকে কোনো বিশেষ সময়ে কোনো কিছুর প্রতি অস্থায়ী আগ্রহ সৃষ্টি হতে পারে। যেমন- স্কুলগামী ছাত্রছাত্রীদের অস্থায়ী আগ্রহের বিষয় হলো নতুন জামা, নতুন জুতা ও একটি নতুন ব্যাগ।
২. প্রস্তুতি ও প্রত্যাশা: প্রস্তুতি ও প্রত্যাশা মনোযোগ সৃষ্টিতে সাহায্য করে। আমরা যেসব বিষয়কে দেখতে, শুনতে এবং গ্রহণ করতে প্রস্তুতি নিয়ে থাকি সেসব বিষয় উপস্থিত হলেই আমরা মনোযোগী হয়ে পড়ি। আবার যেসব বিষয় সম্বন্ধে প্রত্যাশা করি, সেসব বিষয় উপস্থিত হলেই মনোযোগী হই।
৩. মূল্যবোধ: মূল্যবোধসংক্রান্ত বিষয় ও শব্দের প্রতি আমাদের মনোযোগ সহজেই আকৃষ্ট হয়। যেমন- ধর্মীয় মূল্যবোধসম্পন্ন ব্যক্তিরা ধর্ম সম্পর্কিত যেকোনো শব্দকে সহজেই চিনতে পারবে।
৪. আবেগ: মনোযোগ আকর্ষণের ক্ষেত্রে আবেগের ভূমিকা কম নয়। যেমন- আমরা যাকে পছন্দ করি তার ভালো গুণের প্রতি মনোযোগী হই এবং যাকে অপছন্দ করি তার দোষত্রুটিগুলো আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে।
৫. মলোবিজ্ঞানী জামান সাহেবের মতে, ‘‘সংবেদনের দৈহিক প্রক্রিয়ার উপস্থিতির ফলেই আমাদের দৃশ্য সংবেদন হয়। এর স্নায়বিক প্রক্রিয়া বেশ সরল। কোনো বস্তু থেকে আলোকরশ্মি যখন আমাদের চোখের আলোকগ্রাহী কোষগুলোকে উদ্দীপিত করে, তখন স্নায়ুপ্রবাহ সৃষ্টি হয় এবং তা মস্তিষ্কের দর্শনকেন্দ্রে পেছে আমাদের দৃশ্য সংবেদন সৃষ্টি করে।
ক. মনোযোগ কী?
খ. সংবেদন বলতে কী বোঝায়?
গ. উদ্দীপকে দৃশ্য সংবেদনের জন্য যে প্রক্রিয়াটিকে জামান সাহেব দায়ী করেছেন, তা ব্যাখ্যা কর।
ঘ. ‘‘একই সময়ে হাজার হাজার আলোকরশ্মি চোখে আসছে কিন্তু দৃশ্য সংবেদন হচ্ছে খুবই কম’’-কারণটি বিশ্লেষণ কর।
৫ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. ইন্দ্রিয়সমূহকে কোনো একটি বা একগুচ্ছ উদ্দীপকের প্রতি নিবিষ্ট করার প্রক্রিয়াই হলো মনোযোগ।
খ. সংবেদন হলো উদ্দীপনার প্রাথমিক চেতনা বা বোধ। উদ্দীপক হচ্ছে বাহ্যিক বিষয় বা বস্তু, যা গ্রাহক ইন্দ্রিয়ের উপর আঘাত করে উদ্দীপনা সৃষ্টি করে। গ্রাহক ইন্দ্রিয় থেকে এ উদ্দীপনা স্নায়বিক প্রবাহ আকারে মস্তিষ্কে পৌঁছে এবং প্রাণীকে উদ্দীপক সম্পর্কে সচেতন করে। এভাবে উদ্দীপক সম্পর্কে সচেতন করার প্রক্রিয়াকে সংবেদন বলে। যেমন- আলোর সংবেদন, শব্দের সংবেদন ইত্যাদি।
গ. মনোবিজ্ঞানী জামান সাহেব দৃশ্য সংবেদনের জন্য সংবেদনের দৈহিক প্রক্রিয়াকে দায়ী করেন।
পরিবেশের কোনো উদ্দীপককে কেন্দ্র করে শুরু হয় সংবেদন প্রক্রিয়া। উদ্দীপক হলো এক ধরনের শক্তি যা স্নায়ুতন্ত্রকে উত্তেজিত করতে সক্ষম। যেমন- আলো, শব্দ, গন্ধ, তাপ ইত্যাদি। কোনো উদ্দীপক প্রথমে কোনো গ্রহণ ইন্দ্রিয়ের কোষসমূহকে উত্তেজিত করে। এ উত্তেজনা অন্তর্মুখী স্নায়ুর মাধ্যমে মস্তিস্কে চলে যায় এবং মস্তিষ্কের মধ্যে অবস্থিত সংযোগীয় স্নায়ুকোষ উদ্দীপিত হয়। এই উদ্দীপনাই সংবেদনের জন্ম দিয়ে থাকে। তবে অনেক সময় মেরুরজ্জ্বর মাধ্যমেও আমরা সংবেদন লাভ করতে পারি। সাপেক্ষ প্রতিবর্ত ক্রিয়ার (Reflaction) সংবেদন গুল মেরুরজ্জতেও অবস্থিত। বাইরের কোনো উদ্দীপক আমাদের কোনো ইন্দ্রিয়কে উত্তেজিত করলে অন্তর্মুখী স্নায় এ উত্তেজনা মেরুদ--র ভিতর অবস্থিত মেরুরজ্জুতে নিয়ে গেলেও আমরা অনেক ক্ষেত্রে সংবেদন লাভ করতে পারি।
ঘ. দৃশ্য সংবেদন কম হওয়ার কারণ হিসেবে মানসিক প্রক্রিয়া মনোযোগকে দায়ী করা যায়। মনোযোগের কিছু বৈশিষ্ট্য আছে, যার মাধ্যমে আমরা সংবেদনকে নির্বাচন করে খুব কম সংখ্যক গ্রহণ করি। এক্ষেত্রে মনোযোগের নির্বাচনমুখিতাকে দায়ী করা যায়।
আমরা যে বিষয়ের প্রতি মনোযোগ স্থাপন করি তা নির্বাচন করেই করা হয়। একসঙ্গে বহু সংখ্যক উদ্দীপক আমাদের চেতনায় আঘাত করতে পারে। কিন্তু যে উদ্দীপকটি আমাদের প্রয়োজন সাধন করে অথবা যে উদ্দীপকটির আকর্ষণীয় ক্ষমতা বেশি সেটি নির্বাচন করে আমরা তার প্রতি মনোযোগী হই। তাই মনোযোগ খুবই নির্বাচনমূলক।
উদাহরণস্বরূপ, ফুটবল খেলার মাঠে ২২ জন খেলোয়াড় থাকে। বল বিভিন্ন খেলোয়াড়ের পায়ে পায়ে সারা মাঠ ছুটে চলে। কিন্তু বলটি যখন কোনো বিশেষ পরিচিত খেলোয়াড়ের পায়ে যায় তখন তা বেশি করে আমাদের মনোযোগ আকর্ষণ করে। অথবা আলোক ঝলমলে সুসজ্জিত কোনো মঞ্চে বিভিন্ন নেতৃবৃন্দ উপবিষ্ট আছেন। যখন কোনো নেতা বক্তব্য রাখেন তখন সবকিছু বাদ দিয়ে আমরা নেতার প্রতি মনোনিবেশ করি।
৬. সোহেল, রুবেল এবং হেভেন তিন বন্ধু রাতের বেলা বাজার থেকে বাড়ি ফিরছিল। হঠাৎ সোহেল বলল, কেউ একজন আমাদের পিছন পিছন আসছে। অন্যরা বলল ও কিছু নয়। কিছুদূর অগ্রসর হয়ে রুবেল বলল, দেখ আকাশের চাঁদটি আমাদের সাথে সাথে হাঁটছে। পক্ষান্তরে হেভেন বলল, তাকিয়ে দেখ বিয়ে বাড়ির মরিচা বাতিগুলো কেমন চারদিকে ঘুরছে।
ক. Adaptation শব্দের অর্থ কী?
খ. মনোযোগ কীভাবে প্রত্যক্ষণকে প্রভাবিত করে? ব্যাখ্যা কর।
গ. সোহেলের ক্ষেত্রে সংঘটিত ঘটনাটি কী? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. রুবেল এবং হেভেনের দেখা ঘটনা দু’টি এক না ভিন্ন?তোমার উত্তরের সপক্ষে যুক্তি দাও।
৬ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. Adaptation শব্দের অর্থ হলো সমতা বা অভিযোজন।
খ. উদ্দীপক প্রতিক্রিয়ার ভিত্তিতে বলা যায় যে, অসংখ্য উদ্দীপক বা একই উদ্দীপকের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যের মধ্যে কেবলমাত্র নির্দিষ্ট কোনো উদ্দীপক অথবা উদ্দীপকের নির্দিষ্ট কোনো বৈশিষ্ট্যের প্রতি প্রতিক্রিয়া করার নির্দিষ্ট মানসিক অবস্থাকে মনোযোগ বলা হয়। উপরের চিত্রে অনেকগুলো উদ্দীপক (১২টি) চেতনার প্রান্তে ছড়িয়ে আছে। প্রতিটি উদ্দীপকই প্রান্ত থেকে কেন্দ্রে আসার জন্য সচেষ্ট। কিন্তু সব উদ্দীপকই কেন্দ্রে আসতে পারে না। কেবলমাত্র সেই উদ্দীপকটিই কেন্দ্রে আসতে সক্ষম হবে যেটি নিজ বৈশিষ্ট্যের শক্তিতে বলীয়ান, অথবা যেটি ব্যক্তির নিকট অধিক আকর্ষণীয়। উপরের চিত্রে ৪নং উদ্দীপকটি চেতনার কেন্দ্রে আসতে সক্ষম হয়েছে। অর্থাৎ এতগুলো উদ্দীপকের মধ্য থেকে কেবল একটি (৪নং) উদ্দীপক চেতনার কেন্দ্রে আসতে পেরেছে। অসংখ্য উদ্দীপক আমাদের চেতনায় আঘাত করে। কিন্তু সবগুলোর প্রতি আমরা সমানভাবে প্রতিক্রিয়া করি না। আমরা দু'একটিকে বাছাই করে প্রত্যক্ষণ করি। প্রত্যক্ষণের এরূপ বাছাইকরণই হলো মনোযোগ। তাই বলা যায়, মনোযোগ প্রত্যক্ষণকে প্রভাবিত করে।
গ. উদ্দীপকে সোহেলের ক্ষেত্রে সংঘটিত ঘটনাটি হলো ব্যক্তিনিষ্ঠ মনস্তাত্ত্বিক অধ্যাস। নিচে ব্যাখ্যা করা হলো-
ব্যক্তির নিজস্ব ভীতিমূলক কোনো মানসিক প্রবণতার কারণে মৃদু আলো অথবা অন্ধকারে কোনো উদ্দীপক সম্পর্কে শিক্ষণ ও অভিজ্ঞতাগত বিশ্লেষণ ও সমন্বয়সাধনে ব্যর্থ সংবেদীয় ও মানসিক প্রক্রিয়ায় একটি ত্রুটিপূর্ণ ব্যাখ্যাসম্পন্ন ধারণাকেই মনস্তাত্ত্বিক অধ্যাস বলে। যেমন- অন্ধকারে রাস্তায় পড়ে থাকা কোনো মোটা দড়িকে সাপ মনে করা; অথবা, চাদের আলোতে ডাল-পালাহীন দ-ায়মান কোনো মৃত গাছের কা-কে সাদা কাপড় পরিহিত জ্বীন বা ভূত মনে করা ইত্যাদি।
ঘ. উদ্দীপকে রুবেল এবং হেভেনের দেখা ঘটনা দুটি একই। এই দুটি ঘটনাই গতি অধ্যাস যা বস্তুনিষ্ঠ অধ্যাসের অন্তর্ভুক্ত। নিচে আমার উত্তরের সপক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করা হলো-
গতি অধ্যাস:
গতি অধ্যাস হলো গতিজনিত বা উপস্থাপনজনিত এ কারণে স্থির বস্তু বা উদ্দীপককে গতিশীল মনে হওয়া। অর্থাৎ কোনো স্থির বস্তু বা উদ্দীপকের উপস্থাপনগত অবস্থার প্রেক্ষিতে অথবা ব্যক্তির নিজস্ব গতিশীলতার কারণে ঐ স্থির বস্তু বা উদ্দীপককে গতিশীল মনে হয়, ঐ স্থির বস্তু বা উদ্দীপকের স্থিরতা সম্পর্কে শিক্ষণ ও অভিজ্ঞতাগত বিশ্লেষণ ও সমন্বয়সাধনে ব্যর্থ সংবেদীয় ও মানসিক প্রক্রিয়ায় একটি ত্রুটিপূর্ণ ব্যাখ্যাসম্পন্ন ধারণাকেই গতি অধ্যাস বলে। যেমন- আলোকসজ্জায় গতিশীলতা বা ফাই-ঘটনা অর্থাৎ ক্রমাগত উপস্থাপনের কারণে স্থির বৈদ্যুতিক বাতিগুলো গতিশীল মনে হয়। অথবা, চলন্ত বাস বা টেনে অবস্থানরত ব্যক্তির নিজস্ব গতিশীলতার কারণে দূরের স্থির উদ্দীপকসমূহকে ব্যক্তির সাথে ধাবমান ও গতিশীল মনে হয় ইত্যাদি।
উদ্দীপকে রুবেল মনে করছে আকাশের চাদটি তাদের সাথে সাথে হাঁটছে পক্ষান্তরে হেভেন দেখে বিয়ে বাড়ির মরিচা বাতিগুলো কেমন চারদিকে ঘুরছে যা গতি অভ্যাসের অন্তর্ভুক্ত।
ক. আচরণ কী?
খ. গভীরতা প্রত্যক্ষণ বলতে কি বুঝায়?
গ. উদ্দীপকে উল্লেখিত প্রাণীর খুব কমসংখ্যক প্রতিক্রিয়ার কারণ ব্যাখ্যা কর।
ঘ. ‘‘কমসংখ্যক প্রতিক্রিয়ার কারণ প্রত্যক্ষণের বিভিন্নতা’’ - উক্তিটির যথার্থতা যাচাই কর।
৭ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. উদ্দীপকীয় উদ্দীপনা থেকে সৃষ্ট পর্যবেক্ষণযোগ্য ও পরিমাণযোগ্য সকল প্রতিক্রিয়াসমূহের সামগ্রিক রূপ বা কার্যকলাপকেই আচরণ বলে।
খ. গভীরতা বা দূরত্ব একই অর্থে ব্যবহৃত হয়। প্রত্যেক কঠিন পদাথের্র দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ ছাড়া আরও একটা দিক আছে একে গভীরতা বলে। একে পদার্থের ত্রিমাত্রিক দিক বলা হয়।
গভীরতা প্রত্যক্ষণ একটি জটিল সমস্যা। এ জটিলতার সৃষ্টি হয় আমাদের অক্ষিপটের গঠন হতে। আমাদের অক্ষিপট একটা সমতল ভূমির মতো, যার দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ আছে কিন্তু গভীরতা নেই। অতএব, অক্ষিপটের উপর বস্তুর যে ছবি পড়ে তাতে শুধু দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ থাকবে, তাহলে আমরা দূরত্ব বা গভীরতা প্রত্যক্ষণ করি কিভাবে?আমাদের অক্ষিপট এবং মস্তিষ্ক একযোগে কাজ করে পদার্থের ত্রিমাত্রিক প্রত্যক্ষণে সহায়তা করে। গভীরতা প্রত্যক্ষণে আমরা কতকগুলো নিদর্শন ব্যবহার করে থাকি।
যেমন- এক চক্ষুমূলক নিদর্শন, দ্বিচক্ষুমূলক নিদর্শন।
গ. উদ্দীপকের প্রতি প্রাণীর প্রতিক্রিয়াই আচরণ। পরিবেশের হাজার হাজার উদ্দীপক প্রতিনিয়ত প্রাণীর ইন্দ্রিয়ে আঘাত করছে এবং সংবেদন সৃষ্টি করছে, কিন্তু প্রাণী খুব কম সংখ্যক প্রতিক্রিয়া করছে। এর কারণ হলো-
১. সংবেদনের কিছু বৈশিষ্ট্য আছে, যার উপর প্রত্যক্ষণ নির্ভর করে অর্থাৎ প্রতিক্রিয়া হয়। সংবেদনের বৈশিষ্ট্যগুলো হলো-
উদ্দীপকের তীব্রতা, স্থায়িত্ব, ব্যাপকতা, নিম্ন ও উচ্চসীমা, সংবেদনের সমতা, সংকেত ইত্যাদি।
২. অন্যদিকে আমাদের মধ্যে যেসব সংবেদনের সৃষ্টি, তাই সবগুলোতেই মনোযোগ দিতে পারি না। কারণ সমবিষয়ের প্রতি একই সময়ে আমাদের মানসিক সচেতন ক্রিয়াকে নিবিষ্ট করা সম্ভব হয় না। কাজেই সাধারণত একটি বিষয়ের পরে আর এ একটি বিষয়ে আমরা মনোযোগ নিবিষ্ট করি। অর্থাৎ মনোযোগ হলো সেই মানসিক প্রক্রিয়া যার দ্বারা চেতনার ক্ষেত্রটি সংকুচিত হয়ে মাত্র একটি বিষয়বস্তুতে মানসিক সচেতন ক্রিয়াকে নিবিষ্ট করা হয়। এজন্যই প্রাণী একই সাথে খুব কমসংখ্যক প্রতিক্রিয়া করে।
ঘ. ‘‘কম সংখ্যক প্রতিক্রিয়ার কারণ প্রত্যক্ষণের বিভিন্নতা’’ উক্তিটির যথার্থ কারণ প্রত্যক্ষণের বৈশিষ্ট্যের ওপর নির্ভর করেও কম সংখ্যক প্রতিক্রিয়া হয়। এ জন্য মূলত প্রত্যক্ষণের বিভিন্নতা দায়ী। প্রত্যক্ষণের বৈশিষ্ট্যগুলো হলো-
১. উদ্দীপকীয় ব্যাখ্যা: উদ্দীপকীয় ব্যাখ্যা প্রত্যক্ষণের একটি প্রধান বৈশিষ্ট্য। কারণ, উদ্দীপকের প্রেক্ষিতে স্নায়বিক ও মানসিক সংবেদনের সৃষ্টি হয়। এ সংবেদন বা উদ্দীপকীয় উদ্দীপনা তথা উদ্দীপক সম্পর্কে শিক্ষণ ও অভিজ্ঞতাগত বিশ্লেষণ, একীকরণ এবং সমন্বয়সাধনভিত্তিক কার্যকর ও অর্থপূর্ণ ব্যাখ্যার মাধ্যমেই প্রত্যক্ষণ সম্পন্ন হয়।
২. নির্বাচনমুখিতা: নির্বাচনমুখিতা প্রত্যক্ষণের একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য। কারণ, প্রত্যক্ষণের ক্ষেত্রে ব্যক্তি বা প্রাণীর মনোযোগ বা প্রবণতা একটি কার্যকর ভূমিকা পালন করে। যেখানে বহুসংখ্যক উদ্দীপকের মধ্য হতে কেবলমাত্র প্রয়োজনীয় ও গুরুত্বপূর্ণ এক বা একাধিক উদ্দীপক নির্বাচনের মাধ্যমে প্রত্যক্ষণ সম্পন্ন হয়।
৩. সংগঠনমূলক: সংগঠন মনোভাব প্রত্যক্ষণের একটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য। কারণ, এলোমেলো বা বিক্ষিপ্ত উদ্দীপকসমূহকে একটি সামঞ্জস্য ও অর্থপূর্ণ রূপ প্রদান করা প্রত্যক্ষণ প্রক্রিয়ার মূল কাজ। এর ফলে এলোমেলো বিষয়, বস্তু বা ঘটনাসমূহকে আমরা বস্তুগত ও ব্যক্তিগত শর্তসাপেক্ষে সুসংবদ্ধ এবং সামগ্রিকভাবে প্রত্যক্ষণ করি।
৪. সামগ্রিকতা: আমরা যখন কোনো কিছু প্রত্যক্ষণ করি, তা খ- খ- ভাবে না দেখে সামগ্রিকভাবে প্রত্যক্ষণ করি। অর্থাৎ খ- খ- অংশকে গুছিয়ে সংঘবদ্ধভাবে সামগ্রিকরূপ প্রদান করাই হলো প্রত্যক্ষণের বৈশিষ্ট্য।
উপরোক্ত বৈশিষ্ট্যগুলো পর্যালোচনাপূর্বক বলা যায় উক্তিটি তাৎপর্যপূর্ণ।
৮. রাতে যখন মিতার ঘরে হঠাৎ করেই বিদ্যুৎ চলে যায়, তখন তার কাছে ঘরের ভিতরের অন্ধকার খুব বেশি মনে হয় এবং ঘরের ভিতরের কিছুই সে দেখতে পায় না। কিন্তু কিছু সময় পর তা স্বাভাবিক হয়ে উঠে। মিতার মনে হয় ঘরের অন্ধকারটি অনেকখানি কমে গেছে এবং ঘরের ভিতরে ঝাপসা ঝাপসা দেখা যাচ্ছে।
ক. সংবেদনের আরম্ভ সীমা কী?
খ. শব্দ অভিযোজন বলতে কী বোঝায়?
গ. উদ্দীপকের ঘটনাটি ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকের ঘটনাটির পর পরই যদি হঠাৎ বিদ্যুৎ চলে আসত তাহলে মিতার পরিস্থিতি কি হতো-বিশ্লেষণ কর।
৮ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. সংবেদন সৃষ্টির জন্য উদ্দীপকের ন্যূনতম শক্তিকে সংবেদনের আরম্ভ সীমা বলে।
খ. প্রচন্ড হট্টগোলপূর্ণ কক্ষে প্রবেশ করলে প্রথমে কানে তালা লেগে যায়। কিছুক্ষণ পরে শব্দের তীব্রতা আর ততটা বেশি বলে মনে হয় না। শব্দের সাথে অভিযোজন ঘটার ফলেই এরকম হয়।
গ. বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার পর মিতার অন্ধকার অভিযোজন হয়েছে। খুব কম আলোতে কারো দর্শন শক্তির পর্যায়ক্রমিক বৃদ্ধি বা উন্নতি ঘটলে অন্ধকার অভিযোজন সংঘটিত হয়। যেমন- নাটক মঞ্চায়নের সময় হলঘরের আলো নিভিয়ে দেওয়া হলে প্রথমে কিছুই দেখা যায় না। কিন্তু কিছু সময় পরে ধীরে ধীরে সব কিছুই আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়। যদিও তখন আলোর মাত্রায় কোনো পরিবর্তন করা হয়নি। অথবা সিনেমা হলে সিনেমা শুরু হওয়ার পূর্ব মুহুর্তে আলো নিভিয়ে দিলেও অন্ধকার অভিযোজন প্রত্যক্ষ করা যায়। অন্ধকার অভিযোজনের ক্ষেত্রে প্রথমে কোনো কিছু দেখা যায় না এবং পরে ধীরে ধীরে সব স্পষ্ট হয়ে উঠে।
ঘ. অন্ধকার ঘরে হঠাৎ বিদ্যুৎ চলে আসলে তাৎক্ষণিকভাবে মিতা কিছুই দেখতে পেত না, তখন মিতার আলো অভিযোজন হতো।
যদি আলোর দিকে তাকান যায় তাহলে চোখ আলো অভিযোজিত হয়ে পড়ে। আলো অভিযোজিত চক্ষুর একটা বৈশিষ্ট্য হচ্ছে যে, এর সংবেদনশীলতা হ্রাস পায়। তীব্র আলোতে সংবেদনশীলতার ক্রমাবনতিকে আলো অভিযোজন বলা যেতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, অন্ধকার কক্ষে হঠাৎ তীব্র আলো জ্বলে উঠলে প্রথমে চোখ বন্ধ হয়ে আসে, কিছু দেখা যায় না। কিন্তু ধীরে ধীরে সব কিছুই গোচরীভূত হয়। রৌদ্রোজ্জ্বল দুপুর বেলা সিনেমা শেষে হল থেকে বের হলেও অনুরূপ ঘটনার সৃষ্টি হয়। আলোর অভিযোজন বা সমতার জন্যই এরকম হয়ে থাকে।
আলো অভিযোজনের ক্ষেত্রে উচ্চমাত্রার আলোর প্রতি চক্ষু কম সংবেদনশীল হয়ে পড়ে। অন্ধকার অভিযোজনের মতো আলো অভিযোজনও প্রচলিত পরিবেশে আমাদের দর্শনের সূক্ষমতার উন্নতি ঘটায়। আলো অভিযোজন প্রক্রিয়া অন্ধকার অভিযোজনের চেয়ে বেশি দ্রুত সংঘটিত হয়।
৯. মা রিজুকে খুব আদর করেন। মাঝে মাঝে টিফিন কেনার টাকা দেন। একদিন রিজু তার ঘরে বসে পড়ছে। হঠাৎ করে বড় ভাই তার ঘরে বসে ডাকছে, মাও একই সময়ে ডাকছে রান্নাঘর থেকে। সে কোনদিকে যাবে?সে মার কাছে চলে গেল। বিকেলে বড় বোনের সাথে সে শাড়ি মেলাতে গেল। বেশ দূর থেকে দুটি দোকান তার চোখে পড়ল। একটি দোকানের নাম বড় বড় হরফে লেখা, ‘শাড়ি মিউজিয়াম’ এবং অন্য দোকানে বিভিন্ন ধরনের রঙিন বস্তু রয়েছে।
ক. মনোযোগ বলতে কী বুঝায়?
খ. আবেগ কেন প্রত্যক্ষণকে প্রভাবিত করে?
গ. রিজু মনোযোগের কোন বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে মায়ের কাছে গেল? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. শাড়ি মেলাতে মনোযোগের যে শর্তসমূহ রিজুকে আকর্ষণ করল তা বিস্তারিত বিশ্লেষণ কর।
৮ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. যে মানসিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে চেতনাকে একাধিক বিষয় থেকে সরিয়ে নিয়ে এসে একটি নির্দিষ্ট বিষয়ে সীমাবদ্ধ করা হয় তাকে মনোযোগ বলে।
খ. আবেগ প্রত্যক্ষণকে প্রভাবিত করে, কারণ-
ব্যক্তির প্রত্যক্ষণতার আবেগ দ্বারা প্রভাবিত হয়ে থাকে। আবেগের দ্বারা প্রভাবিত হলে ব্যক্তি পক্ষপাতদোষে দুষ্ট হতে পারে। ভাবাবেগের দ্বারা পরিচালিত হলে কালো কুৎসিত রমণীও আকর্ষণীয় বলে মনে হয়। আবার আবেগের কারণেই সুন্দরী ও গুণবতী রমণীকেও অসুন্দর বলে মনে হতে পারে এবং রমণীর সাথে সম্পর্কযুক্ত সকলকেই খারাপ বলে মনে হবে। আবেগের সময় যা ভালো বলে মনে হয়, আবেগ প্রশমিত হলে তা ভালো নাও লাগতে পারে। তাই দেখা যাচ্ছে যে, আবেগ দ্বারা প্রত্যক্ষণ প্রভাবিত হয়ে থাকে।
গ. উদ্দীপকে রিজু মনোযোগের যে বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে মায়ের কাছে গেল তা হলো ইচ্ছামূলক প্রক্রিয়া। নিচে ব্যাখ্যা করা হলো-
একই সঙ্গে শত শত উদ্দীপক আমাদের ইন্দ্রিয়কে উত্তেজিত করে। কিন্তু সবগুলো উদ্দীপকই চেতনার কেন্দ্রবিন্দুতে পৌঁছতে পারে না। সেই উদ্দীকপটিই আমাদের সচেতন অভিজ্ঞতায় পৌঁছতে সক্ষম হয়। যেটি আমাদের প্রেষণাকে পরিতৃপ্ত করে, যেটির প্রতি আমাদের ইচ্ছা প্রকাশ পায়। অর্থাৎ যে বিষয়টির প্রতি আমরা মনোযোগ দিতে চাই, অন্যান্য বিষয় বাদ দিয়ে সে বিষয়টিই আমরা প্রত্যক্ষণ করি।
উদ্দীপকে রিজু ঘরে বসে পড়ছে। হঠাৎ করে একই সময়ে বড় ভাই ঘর থেকে এবং তার মা রান্না ঘর থেকে ডাকছে। এখানে এক সঙ্গে দুটি উদ্দীপক রিজুর ইন্দ্রিয়কে উত্তেজিত করে। রিজু তার মায়ের ডাকের দিকে মনোযোগ দিয়ে সে তার মায়ের কাছে গেল। এখানে তার মায়ের উদ্দীপকটিই সচেতন অভিজ্ঞতায় পৌছাতে সক্ষম হয় যেটির প্রতি রিজুর ইচ্ছা প্রকাশ পায়।
অর্থাৎ উপরোক্ত আলোচনা হতে বলা যায় রিজু মনোযোগের ইচ্ছামূলক প্রক্রিয়ার বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে তার মায়ের কাছে গেল।
ঘ. উদ্দীপকে শাড়ি মেলাতে মনোযোগের যে শর্তসমূহ রিজুকে আকর্ষণ করল তা হলো ‘আকার’ ও ‘রঙ্গিন বস্তু’। নিচে বিস্তারিত বিশ্লেষণ করা হলো-
মনোযোগ আকর্ষণ করার এক গুরুত্বপূর্ণ শর্ত হলো উদ্দীপকের আকার। সাধারণত ক্ষুদ্রাকার বস্তুর তুলনায় বিরাট বস্তু সহজেই আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। একদল বানরের মাঝে একটি গরিলা থাকলে তা সহজেই আমাদের আকর্ষণ করে। আবার, রঙিন বস্তুর মনোযোগ আকর্ষণ করার ক্ষমতা সাদামাটা বস্তুর তুলনয় অনেক বেশি। সাদা আলোয় আলোকিত বাড়ির তুলনায় রঙিন আলোয় সাজানো বাড়ি সহজেই মনোযোগ আকর্ষণ করে।
উদ্দীপকে রিজু তার বড় বোনের সাথে বিকালে শাড়ি মেলাতে যায়। দূর থেকে দুটি দোকান রিজুর মনোযোগ আকর্ষণ করে। যার মধ্যে একটি দোকানের নাম বড় অক্ষরে লেখা ‘শাড়ি মিউজিয়াম’ এখানে রিজুর মনোযোগ আকর্ষণের মূল কারণ বস্তুর আকার। কারণ দোকানের নাম বড় বড় অক্ষরে লেখা ছিল। কেননা ক্ষুদ্রকার বস্তুর তুলনায় বড় বস্তু সহজেই আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। অপর আরেকটি দোকানও মনোযোগ আকর্ষণের কারণ দোকানের বিভিন্ন রঙিন বস্তু। কেননা অধিক উজ্জ্বল রং এর উদ্দীপকসমূহই সহজে আমাদের মনোযোগ আকর্ষণ করে।
অথাৎ উপরোক্ত আলোচনা হতে বলা যায় যে শাড়ি মেলাতে মনোযোগের যে শতসমূহ রিজুকে আকর্ষণ করল তা হলো ‘আকার’ ও ‘রঙিন বস্তু’।
১০. দশ্যকল্প ১: টক জাতীয় খাবার দেখলেই জিহবায় পানি এসে যায়। আমাদের স্বাদ গ্রহণকারী ইন্দ্রিয়ের সংস্পর্শে আসার প্রয়োজন হয় না। কিন্তু প্রতিক্রিয়াস্বরূপ জিহবায় পানি আসে।
দৃশ্যকল্প ২: শুভেচ্ছা লাইট বন্ধ করে অন্ধকার ঘরে বসেছিল হঠাৎ তার ছোট ভাই লাইট জ্বালিয়ে দিলে যে কিছু মুহূর্তের জন্য চোখে কিছুই দেখতে পায় না। তবে কয়েক সেকে- পর তার দর্শন প্রক্রিয়া স্বাভাবিক হয়।
ক. শারীরবিদ আইভান প্যাভলভ কত সালে নোবেল ও পুরস্কার পান?
খ. প্রতীক ও পটভূমির মধ্যে ২টি পার্থক্য লিখ।
গ. উদ্দীপকের ২য় দৃশ্যকল্পে অন্ধকার ঘরে লাইট জালানোর পর শুভেচ্ছার ঘটনার সাথে অন্যান্য ইন্দ্রিয়ের সম্পর্ক ব্যাখ্যা কর।
ঘ. ১ম দৃশ্যকল্পের বিষয়টির মনোবৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যাকে একটি গবেষণার মাধ্যমে উপস্থাপন কর।
১০ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. শারীরবিদ আইভান প্যাভলভ ১৯০৪ সালে নোবেল পুরস্কার পান।
খ. প্রতীক ও পটভূমির মধ্যে ২টি পার্থক্য নিম্নরূপ।
প্রতীক পটভূমি
১. পটভূমির নির্দিষ্ট আকার ও সীমারেখা আছে। ১. পটভূমির নির্দিষ্ট আকার ও সীমারেখা নেই।
২. প্রতীক পটভূমির চেয়ে ছোট। ২. পটভূমির প্রতীকের চেয়ে বড়।
গ. উদ্দীপকের ২য় দৃশ্যকল্পে অন্ধকার ঘরে লাইট জ্বালানোর পর শুভেচ্ছা কিছু মুহুতের্র জন্য চোখে কিছুই দেখতে পায় না। কিন্তু কয়েক সেকে- পর তার দর্শন প্রক্রিয়া স্বাভাবিক হয়। এ স্বাভাবিক দর্শনের ক্ষেত্রে আলো অভিযোজন কাজ করেছে।
দীর্ঘ সময়ে ধরে যখন মৃদু আলো বা অন্ধকার দর্শন ইন্দ্রিয়ের উপর ক্রয়াশীল থাকে তখন আলোর প্রতি দর্শন ইন্দ্রিয়ের সংবেদনশীলতা কিছুটা বৃদ্ধি পায়। ফলে তীব্র আলো আরও তীব্র মনে হয়, যা কিছু সময় পর বা সময়ের ব্যবধানে স্বাভাবিক হয়ে যায়। সময়ের ব্যবধানে দর্শন ইন্দ্রিয়ের এ মৃদু আলোর পর তীব্র আলোর প্রতি সংবেদনশীলতায় সামাঞ্জস্য বিধানের প্রক্রিয়াকেই আলোর অভিযোজন বলে। অর্থাৎ শুভেচ্ছার ক্ষেত্রে আলো অভিযোজনের ঘটনা ঘটে। শুভেচ্ছার এ ঘটনা অন্যান্য ইন্দ্রিয়ের সাথেও সম্পর্কযুক্ত। যেমন-
শব্দ অভিযোজন:
প্রচন্ড হট্টগোলপূর্ণ কক্ষে প্রবেশ করলে প্রথমে কানে তালা লেগে যায়। কিছুক্ষণ পরে শব্দের তীব্রতা আর ততটা বেশি বলে মনে হয় না। শব্দের সাথে অভিযোজন ঘটার ফলেই এরকম হয়।
গন্ধ অভিযোজন:
বিশ্রী গন্ধপূর্ণ জায়গাং গেলে প্রথমে নাক ঝঝিয়ে যায়, গন্ধ সহ্য করা কষ্ট হয়ে পড়ে। কিন্তু কিছুক্ষণ পড়ে গন্ধটা তার তীব্রতা অনেকটা হারিয়ে ফেলে।
তাপ ও শৈত্য অভিযোজন:
এক বালতি গরম পানিতে হাত ডুবালে প্রথমে হাত গরমে পুড়ে যেতে চায় কিন্তু ধীরে তা সহ্য হয়ে যায় এবং পানি আর ততটা গরম মনে হয় না। তেমনি বরফ মিশ্রিত পানিতে হাত ডুবালেও ধীরে ধীরে হাত ঠান্ডা পানির সাথে খাপ খাইয়ে নেয়।
ঘ. উদ্দীপকের প্রথম দৃশ্যকল্পে টক জাতীয় খাবার দেখলেই জিহবায় পানি আসে ঘটনাটির মনোবৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দাঁড় করান রাশিয়ান শারীরবিদ আইভান প্যাভলভ। বিজ্ঞানী প্যাভলভ চিরায়ত সাপেক্ষীকরণ ব্যাখ্যায় কুকুর নিয়ে পরীক্ষণের তথ্য উপস্থাপন করেন এবং ফলাফল বিশ্লেষণ করে চিরায়ত সাপেক্ষীকরণকে সামনে নিয়ে আসেন। নিচে প্যাভলভের পরীক্ষণটি উপস্থাপন করা হলো-
সাপেক্ষ প্রতিবর্ত ক্রিয়ার পরীক্ষণে প্যাভলভ একটি যান্ত্রিক উপায় উদ্ভাবন করেন। এ পদ্ধতিতে যন্ত্রের সাহায্যে একটি কুকুরের মুখে খাদ্য দেওয়া যেত এবং কুকুরের মুখ নিঃসৃত লালার পরিমাণ পরিমাপ করা হতো। কুকুরের মুখে মাংসের টুকরা দিলে লালা নিঃসরণ হতো যা স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া। প্যাভলভ কুকুরের মুখে মাংসের টুকরা দেবার পূর্ব মুহূর্তে একটি ঘণ্টা বাজাবার ব্যবস্থা করেছিলেন। প্রথমে ঘণ্টাধ্বনি শুনে কুকুরটি কান খাড়া করে দাঁড়াত; কিন্তু লালা ফেলত না। ঘণ্টা দেবার কয়েক সেকে-- পরেই তিনি মাংসের টুকরা দিতে লাগলেন। এভাবে কয়েকবার করার পর প্যাভলভ শুধু ঘণ্টাধ্বনি করলেন কিন্তু মাংসের টুকরা দিলেন না। দেখা গেল শুধু ঘণ্টাধ্বনিতে কুকুর লালা ফেলছে। ঘন্টাধ্বনির মাধ্যমে এভাবে লালা নিঃসরণকে প্যাভলভ সাপেক্ষে প্রতিবর্তী ক্রিয়া নামে আখ্যায়িত করেন।
অর্থাৎ উপরোক্ত আলোচনা হতে বলা যায় যে, ‘টক জাতীয় খাবার দেখলেই জিহবায় পানি এসে যায়’ যা একটি সাপেক্ষ প্রতিবর্তী ক্রিয়া।
0 Comments:
Post a Comment