এইচএসসি পরীক্ষার পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি
HSC Psychology 1st Paper Srijonshil question and answer. HSC Psychology 1st Paper (Srijonshil) Creative Questions pdf download. HSC Monobiggan 1st paper Srijonshil Proshno Uttor.
উচ্চ মাধ্যমিক
মনোবিজ্ঞান
প্রথম পত্র
সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
অধ্যায়-৫
HSC Psychology
1st Paper
Srijonshil Question and Answer pdf download
১. একদিন ঘুম থেকে উঠে মায়া মাকে ঘরের কোথাও খুঁজে না পেয়ে জুতার সেলফে মায়ের জুতার অনুপস্থিতি দেখে বুঝতে পারে মা অফিসে গেছেন। অন্যদিকে ছায়া সহজে পড়া মনে রাখতে পারে না। ছায়ার মা আমেনা বেগম তাকে একই বিষয়ে বার বার পড়া, ছন্দের মাধ্যমে মনে রাখা, শিক্ষণীয় বিষয়গুলো মাঝে মাঝে পুনরাবৃত্তি এ ধরনের কিছু নিয়ম শিখিয়ে দিলেন। বার্ষিক পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর দেখা গেল ছায়া খুবই ভালো ফলাফল করেছে।
ক. স্মৃতি কী?
খ. বলবৃদ্ধি শিক্ষণের অন্যতম উপাদান কেন?
গ. মায়ার ক্ষেত্রে শিক্ষণের কোন ধরনের শর্ত ফুটে উঠেছে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. আমেনা বেগমের পরামর্শ ছায়ার মতো অন্য শিক্ষার্থীদের স্মৃতিকে উন্নত করতে কী সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারবে?তোমার উত্তরের সপক্ষে যুক্তি দেখাও।
১ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. স্মৃতি হলো এমন এক ধরনের মানসিক প্রক্রিয়া, যার দ্বারা ব্যক্তি তার অভিজ্ঞতা ও শিক্ষালব্ধ কোনো বিষয়কে একটি মনোদৈহিক প্রক্রিয়ায় যথাযথভাবে সংরক্ষণ ও পরবর্তীতে তা পুনরূৎপাদন করতে পারে।
খ. বলবর্ধক বা বলবৃদ্ধি হলো এমন কোনো শর্ত বা অবস্থা যা সংযোগকে শক্তিশালী করতে সাহায্য করে। এর ফলে উদ্দীপক-উদ্দীপক সংযোগ বা উদ্দীপক প্রতিক্রিয়া সংযোগ প্রতিষ্ঠিত ও শক্তিশালী হয়ে থাকে। ক্ষুধার্ত প্রাণী সঠিক প্রতিক্রিয়া করার পর যদি খাবার না পায় তাহলে সে এই প্রতিক্রিয়াটি আর শিখবে না। তাই প্রেষণার উপযুক্ত বলবর্ধক বা বলবৃদ্ধি শিক্ষণের একটি অন্যতম উপাদান।
গ. উদ্দীপকে মায়ার ক্ষেত্রে শিক্ষণের অন্যতম শর্ত পরিপক্কতার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। নিচে ব্যাখ্যা করা হলো-
পরিপক্কতা বা পরিনমন হচ্ছে শারীরিক বৃদ্ধি। ছোট শিশুর বয়স বাড়ার সাথে সাথে শিক্ষণের হারও বাড়তে থাকে। বয়স বাড়ার সাথে সাথে অনেক জটিল বিষয়ও সহজে শিখতে পারে। উদ্দীপকে ঘুম থেকে উঠে মায়া মাকে ঘরের কোথাও খুঁজে না পেয়ে জুতার সেলফে মায়ের জুতার অনুপস্থিতি দেখে বুঝতে পারে মা অফিসে গেছেন। আর এ ধরনের বুঝতে পারাই হচ্ছে পরিপক্কতা।
অর্থাৎ উপরোক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায় যে, মায়ার ক্ষেত্রে শিক্ষণের শর্ত পরিপক্কতার বহিঃপ্রকাশ ফুটে উঠেছে।
ঘ. হ্যাঁ, উদ্দীপকে আমেনা বেগমের শেখানো পরামর্শ ছায়ার মত অন্য শিক্ষার্থীদের স্মৃতিকে উন্নত করতে সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারবে। নিচে আমার উত্তরের সপক্ষে যুক্তি দেখানো হলো-
১. কোনো নির্দিষ্ট পাঠ মুখস্থ করার সময় একই সঙ্গে অনেকবার চেষ্টা না করে কিছুক্ষণ চেষ্টা করার পর বিরতি দিয়ে পুনরায় চেষ্টা করা অর্থাৎ বার বার চেষ্টা করা ভাল। এতে পাঠঅভ্যাস দ্রুত হয় এবং দীর্ঘদিন মনে রাখা সম্ভব হয়।
২. পাঠ্য বিষয়ের মধ্যে তাল ও ছন্দের মাধ্যমে শিখলে তাড়াতাড়ি মুখস্ত হয়।
৩. কোনো বিষয় আয়ত্ত করার সময় যত বেশিবার পুনরাবৃত্তি করা হবে তত বেশি তা স্মৃতিতে থাকবে।
অর্থাৎ আমেনা বেগমের পরামর্শ ছায়ার মত অন্য শিক্ষার্থীদের স্মৃতিকে উন্নত করতে সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারবে।
২. জুঁই ক্লাস টেস্টের জন্য বাংলা কবিতা মুখস্থ করেছিল। পরীক্ষায় কবিতা হুবহু লিখে পূর্ণ নম্বরও পেয়েছিল। কিন্তু বার্ষিক পরীক্ষার আগে দেখা কবিতাটি সে হুবহু স্মরণ করতে পারছে না। বার বার প্রচেষ্টার পর সম্পূর্ণ কবিতাটি সে আয়ত্ত করতে পারল। জুঁই এর বান্ধবী চাপা অর্থনীতির প্রশ্নোত্তর মুখস্থ করে এবং বিরতি না দিয়েই মনোবিজ্ঞানের প্রশ্ন মুখস্থ করে। পরীক্ষায় অর্থনীতির প্রশ্ন উত্তর লিখতে গিয়ে চাপা বুঝতে পারলো উত্তরটি সে হুবহু লিখতে পারছে না।
ক. সুপ্ত শিক্ষণ কী?
খ. তাৎক্ষণিক স্মৃতির ধারণক্ষমতা ৭ ২ বলতে কী বোঝায়?
গ. জুঁই কবিতা মুখস্থ করার ক্ষেত্রে কী কৌশল অবলম্বন করেছে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. জুঁই এবং চাপার বিস্মৃতির কারণ কি একই? ব্যাখ্যা কর।
২ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. সুপ্ত শিক্ষণ হলো এমন এক শিক্ষণ, যা আবশ্যিক বলবর্ধক ছাড়াই সংঘটিত হয় এবং উপযুক্ত বলবর্ধক উপস্থিত না হওয়া পর্যন্ত তা পরিলক্ষিত হয় না।
খ. কোনো বিষয় একবার দেখে বা শুনে তাৎক্ষণিকভাবে বলতে পারাই হলো স্বল্পস্থায়ী স্মৃতি। এর ধারণক্ষমতা খুবই সীমিত। এখানে ২০ সেকেন্ডের কম সময় তথ্য সংরক্ষিত থাকে। স্বল্পস্থায়ী স্মৃতি বা তাৎক্ষণিক স্মৃতির ধারণক্ষমতা হলো ৭ ২। অর্থাৎ কোনো ব্যক্তি একবার দেখে বা শুনে ৫ থেকে ৯ টির বেশি তথ্য মনে রাখতে পারে না।
গ. উদ্দীপকে জুঁই কবিতা মুখস্থ করার ক্ষেত্রে যে কৌশল অবলম্বন করেছে তা হলো অনুশীলন। নিচে কৌশলটি ব্যাখ্যা করা হলো-
উদ্দীপকে জুঁই ক্লাসটেস্টের জন্য একটি বাংলা কবিতা মুখস্থ করেছিল। পরীক্ষায় কবিতাটি হুবুহু লিখে পূর্ণ নম্বরও পেয়েছিল। কিচ্ছু এ বার্ষিক পরীক্ষার আগে দেখল কবিতাটি সে স্মরণ করতে পারছে না। এক্ষেত্রে সে তার স্মৃতিকে উন্নত করার ক্ষেত্রে অনুশীলন কৌশলটি অবলম্বন করে। অর্থাৎ সে বাংলা কবিতাটি বার বার চর্চার মাধ্য স্মৃতিকে উন্নত করে মুখস্থ করার চেষ্টা করে। এক্ষেত্রে মনোবিজ্ঞানী জি.এফ.স্কাউট (১৮৮৬) এর মতে, ‘‘অনুশীলনের মাধ্যমে স্মৃতিশক্তি উন্নয়ন করা সম্ভব।
উপরোক্ত কৌশল অবলম্বন করে জুঁই বার্ষিক পরীক্ষার জন্য কবিতা মুখস্থ করতে সক্ষম হয়।
ঘ. না, জুঁই এবং চাপার বিস্মৃতির কারণ একই নয়। জুই এর এ বিস্মৃতির কারণ অব্যবহারজনিত স্মৃতির অবক্ষয় এবং চাপার বিস্মৃতির কারণ অনুশিক্ষণ প্রতিবন্ধকতা। নিচে ব্যাখ্যা করা হলো-
জুঁই -এর ক্ষেত্রে বিস্মৃতির কারণ অব্যবহারজনিত স্মৃতির অবক্ষয়।
এ শিক্ষণকৃত বিষয় যদি ব্যবহার না করি বা অনুশীলন না করি তাহলে কালের স্রোতে তা হারিয়ে যায়। অর্থাৎ অব্যবহারজনিত কার কালের প্রবাহে স্মৃতি চিহ্নগুলো ধীরে ধীরে হারিয়ে যায়। ফলে আমরা শিক্ষণকৃত বিষয়গুলো বিস্মৃত হই। এ অব্যবহারজনিত বিস্মৃতির কারণেই আমরা অনেক জানা গল্প বা ঘটনা বিস্মৃত হই।
অব্যবহারজনিত কারণে স্মৃতির অবক্ষয় ঘটলেও কোনো কোনো ক্ষেত্রে বা কোনো কোনো সময়ে তা পুনর্জাগরণ হয়ে থাকে। বাল্যকালের কোনো একটি ঘটনা ঘটেছিল যার কথা ভুলে গিয়েছে। কিন্তু বৃদ্ধ বয়সে ঘটনাক্রমে হঠাৎ করে স্মৃতির পাতায় বাল্যকালের সেই ঘটনাটি জাগরিত হতে পারে। তবুও বলা যায় যে, বিষয় যদি ব্যবহার করা না হয় বা পর্যালোচনা করা না হয়, এ সময়ের সাথে সাথে তা বিস্মৃতির অতল তলে হারিয়ে যায়। আবার, চাপার ক্ষেত্রে বিস্মৃতির কারণ অনুশিক্ষণ প্রতিবন্ধকতা। এ মতবাদের মূল বিষয় হলো, নতুন বিষয় শিক্ষা করার ফলে আমরা পূর্বে শিক্ষা করা বিষয় ভুলে যাই। শিক্ষণ ও পুনরূদ্রেকের মধ্যকার বিরতির সময়ে মানসিক কার্যের ফলে স্মৃতির যে ব্যাঘাত হয় তাকে অনুশিক্ষণ প্রতিবন্ধকতা বা পশ্চাদমুখী বাধা বলা হয়। কোনো বিষয় শিক্ষণের সময় প্রথমটি শেখার পর কিছুটা সময় বিরতি দিয়ে তবে দ্বিতীয়টা শিক্ষা করতে হয়। কিন্তু কোনো একটা বিষয় শেখার পরই কোনো বিরতি না দিয়ে যদি সঙ্গে সঙ্গে আর একটি বিষয় শিখি, তাহলে দেখা যাবে যে প্রথম বিষয়টির অংশ বিশেষ ভুলে গেছি। এর কারণ দ্বিতীয় বিষয়টি প্রথম বিষয়টি মনে রাখার পক্ষে বাধার সৃষ্টি করেছে এবং পেছন দিক থেকে এসে প্রথম বিষয়টিকে ভুলিয়ে দিচ্ছে।
অর্থাৎ উপরোক্ত আলোচনা হতে বলা যায় যে, জুঁই এবং চাপার বিস্মৃতির কারণ একই নয়।
৩. সুমন একাদশ শ্রেণিতে পড়ে। সে কলেজে যাবার পথে ঢাকা মেডিকেলের অবস্থান দেখতে পায়। এরপর থেকে কেউ ঢাকা মেডিকেল কোথায় জানতে চাইলে সুমন সেটা বলতে পারে। সুমি দশম শ্রেণির ছাত্রী। একদিন স্কুলে যাবার পথে কিছু বখাটে ছেলে তাকে বিরক্ত করায় সে অন্য পথে স্কুলে যেতে শিখল।
ক. প্রচেষ্টা ও ভুল সংশোধনের মাধ্যমে শিক্ষণ কি?
খ. শিক্ষণ অভ্যাস বা অনুশীলনের ফলে হয় কেন?
গ. উদ্দীপকে সুমনের শিক্ষণটি কোন ধরনের শিক্ষণ তা ব্যাখ্যা কর।
ঘ. সুমন ও সুমির শিক্ষণ প্রক্রিয়া একই না ভিন্ন ব্যাখ্যা কর।
৩ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. বার বার এলোমেলো প্রচেষ্টার মাধ্যমে শিক্ষণ করার প্রক্রিয়াকে প্রচেষ্টা ও ভুল সংশোধনের মাধ্যমে শিক্ষণ বলা হয়।
খ. শিক্ষণ হলে আচরণের পরিবর্তন ঘটবে। আচরণের যে পরিবর্তন ঘটে তা হতে হবে মূলত অনুশীলন বা অভ্যাসের ফলে। এ পরিবর্তন শারীরিক বৃদ্ধি বা পরিপক্বতা অথবা দুর্ঘটনার কারণে হলে তা শিক্ষণ হবে না। উদাহরণস্বরূপ একটি ছোট শিশুকে সালাম শিখানো হলো। বাড়িতে নতুন কোনো লোক এলেই সে হাত তুলে আসসালামু আলাইকুম বলে। কিন্তু শিশুটি একবার প্রচেষ্টাতেই আসসালামু আলাইকুম বলা শেখেনি। এটি শেখার জন্য তাকে অনেকবার চেষ্টা করতে হয়েছে বা অভ্যাস করতে হয়েছে। তাই বলা যায়, শিক্ষণ অভ্যাস বা অনুশীলনের ফলে হয়।
গ. উদ্দীপকে সুমনের শিক্ষণটি প্রাসঙ্গিক শিক্ষণ। নিচে তা ব্যাখ্যা করা হলো:
শিক্ষণের জন্য প্রেষণা একটি গুরুত্বপূর্ণ শর্ত। কিন্তু এমন অনেক ক্ষেত্র আছে যেখানে প্রেষণার অনুপস্থিতিতেও শিক্ষণ সম্ভব। প্রেষণা ব্যত এ ধরনের শিক্ষণকে প্রাসঙ্গিক শিক্ষণ বলা হয়। উদ্দেশ্যহীনভাবে ঘোরাফেরা করতে গিয়েও আমরা অনেক কিছু শিখে থাকি। শেখার ইচ্ছা বা উদ্দেশ্য না থাকলেও ঘটনাক্রমে শিক্ষণ হয়ে যায়। উদ্দীপকে সুমন কলেজে যাবার পথে ঢাকা মেডিকেলের অবস্থান দেখতে পায়। এরপর থেকে কেউ সুমনের কাছে ঢাকা মেডিকেলের অবস্থান কোথায় জানতে চাইলে সে বলতে পারে। এখানে সুমনের এ শিক্ষণ প্রক্রিয়াটি হলো প্রাসঙ্গিক শিক্ষণ। প্রাসঙ্গিক শিক্ষণ সংক্রান্ত জেনকিনসের (১৯৩৩) পরীক্ষণটি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তিনি তার পরীক্ষণ পাত্রদের দুটি দলে ভাগ করেন। প্রথম দলকে ২০টি অর্থহীন বাক্য জোড়ে পড়তে নির্দেশ দেওয়া হয়। দ্বিতীয় দলকে প্রথম দল যা পড়ছে তা শিখতে বলা হয়। পরে দুই দলেরই পরীক্ষা নেওয়া হয় কে কতটুকু শিখেছে। ফলাফলে দেখা যায় যে, দ্বিতীয় দল ভালো শিখলেও প্রথম দলটিও অনেক শিখেছে। এখানে প্রথম দলের যে শিক্ষণ তাই প্রাসঙ্গিক শিক্ষণ নামে পরিচিত।
ঘ. উদ্দীপকে সুমনের শিক্ষণ প্রক্রিয়াটি প্রাসঙ্গিক শিক্ষণ ও সুমির শিক্ষণ প্রক্রিয়াটি পরিহার শিক্ষণ বা বর্জনমূলক শিক্ষণ।
শিক্ষণের জন্য প্রেষণা একটি গুরুত্বপূর্ণ শর্ত। কিন্তু এমন অনেক ক্ষেত্র আছে যেখানে প্রেষণার অনুপস্থিতিতেও শিক্ষণ সম্ভব। প্রেষণা ব্যতীত এ ধরনের শিক্ষণকে প্রাসঙ্গিক শিক্ষণ বলা হয়। উদ্দেশ্যহীনভাবে ঘোরাফেরা করতে গিয়েও আমরা অনেক কিছু শিখে থাকি। শেখার ইচ্ছা বা উদ্দেশ্য না থাকলেও ঘটনাক্রমে শিক্ষণ হয়ে যায়। উদ্দীপকে সুমন কলেজে যাবার পথে ঢাকা মেডিকেলের অবস্থান দেখতে পায়। এরপর থেকে কেউ সুমনের কাছে ঢাকা মেডিকেলের অবস্থান কোথায়। জানতে চাইলে সে বলতে পারে। এখানে সুমনের এ শিক্ষণ প্রক্রিয়াটি হলো প্রাসঙ্গিক শিক্ষণ। পক্ষান্তরে, যে শিক্ষণ প্রক্রিয়ায় প্রাণী যখন তার প্রতিক্রিয়ার সাহায্যে ক্ষতিকর কোনো ফলাফলকে এড়াতে শেখে তখন তাকে পরিহার শিক্ষণ বলে। পরিহার শিক্ষণ বা বর্জনমূলক শিক্ষণের একটি প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো ঋণাত্মক বলবর্ধকের সাহায্যে প্রাণীকে কোনো প্রক্রিয়া শিক্ষা দেওয়া। ঋণাত্মক বলবৃদ্ধি বলতে বুঝায় সে সকল উদ্দীপক বা অবস্থা যেগুলোর অবসান ঘটলে একটি প্রতিক্রিয়া ঘটাবার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়। পরিহার শিক্ষণ মূলত চিরায়ত সাপেক্ষীকরণ ও করণ শিক্ষণের একটি মিশ্ররূপ। উদ্দীপকে সুমি স্কুলে যাবার পথে কিছু বখাটে ছেলে তাকে বিরক্ত করায় সে বিকল্প পথে স্কুলে যেতে শিখল। এখানে বিকল্প পথে স্কুলে না গেলে তার ক্ষতির সম্ভবনা থাকে। তাই সুমির এরূপ শিক্ষণকে পরিহার বা বর্জনমূলক শিক্ষণ বলে।
উপরোক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায়, সুমন ও প্রক্রিয়া একই রকম নয়, সম্পূর্ণ ভিন্ন।
৪. জীবন সদা প্রবহমান। মানুষ জন্ম থেকেই বিভিন্ন শিক্ষণ লাভ করে থাকে। তবে সবকিছুই মানুষ মস্তিষ্কে ধারণ করতে পারে না। অপুর ছোটবেলায় পড়া ‘ঐ দেখা যায় তাল গাছ’ কবিতাটি মনে আছে কিন্তু গতকালের পড়া একটি বিষয় আজ লিখতে গিয়ে মনে পড়ছে না।
ক. ক্ষণস্থায়ী স্মৃতি কী?
খ. কম্পিউটার ও মানুষের মধ্যে পার্থক্য কী?
গ. অপুর ছোটবেলায় শেখা কবিতাটি মনে থাকার ক্ষেত্রে কি কি উপাদান কাজ করেছে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. ‘মানুষ অনেক শিক্ষণ স্মৃতিতে ধারণ করতে পারে’- উদ্দীপকের আলোকে উক্তিটি বিশ্লেষণ কর।
৪ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. ক্ষণস্থায়ী স্মৃতি হলো একটি স্বল্প ক্ষমতা সম্পন্ন অস্থায়ী সংরক্ষণ ব্যবস্থা, যা সর্বোচ্চ ২০ সেকেন্ডের জন্য অল্প কয়টি (৫-৯) তথ্য ধরে রাখতে পারে।
খ. কম্পিউটার ও মানুষ উভয়েরই তথ্য সংরক্ষণ ও স্মরণ করার ক্ষমতা রয়েছে। এই দুই ধরনের স্মৃতি অনেকটা একই রকম হলেও মানব স্মৃতি হলো অনেক উন্নত প্রক্রিয়া।
কম্পিউটারের সাহায্যে কোনো এক বিশেষ মুহূর্তের বা কয়েক মাসের এমনকি কয়েক বছরের ঘটনা সংরক্ষণ করা যায়, কিন্তু মানুষ তার সমস্ত জীবনের বিভিন্ন তথ্য রেকর্ড করে স্মৃতিতে সংরক্ষণ করে। কম্পিউটারে শুধুমাত্র দর্শন ও শ্রবণমূলক তথ্য সংরক্ষণ করা যায় কিন্তু মানুষ যেকোনো ইন্দ্রিয়ের তথ্য সংরক্ষণ করতে পারে।
গ. অপুর ছোটবেলার কবিতা মনে থাকার কারণ কবিতাটি সংরক্ষণে অর্থাৎ স্মৃতিতে রাখার প্রক্রিয়া অনেক শক্তিশালী ছিল। অর্থাৎ কবিতাটি শিখতে অপু স্মৃতির সবগুলো উপাদানই অতিক্রম করেছে। উপাদানগুলো নিচে বর্ণিত হলো-
১. শিক্ষণ: স্মৃতির প্রথম ও প্রধান শর্ত হলো শিক্ষণ। শিক্ষণ ব্যতীত স্মৃতির প্রশ্নই ওঠে না। কোনো বিষয়বস্তু আমাদের স্মৃতিতে আছে কি না তা জানার আগে দেখতে হবে এ বিষয়টি শিক্ষা হয়েছে কি না।
২. সংরক্ষণ: আমরা যখন কোনো বিষয় মনোযোগ সহকারে বার বার শেখার চেষ্টা করি, তখন বিষয়টি আমাদের মনে সংরনি হয়। বিষয়টি আমাদের চেতন মনের স্তর থেকে অবচেতন স্তরে চলে আসে।
৩. পুনরুদ্রেক/পুনরুৎপাদন: মনে সংরক্ষিত প্রতিরূপগুলোকে করার মানসিক ক্রিয়াকেই পুনরুদ্রেক বলে। পূর্ব অভিজ্ঞতাকে মনে জাগিয়ে তোলা বা মনে করাই হলো পুনরুদ্রেক। সুতরাং পুনরুদ্রেকে বা পুনরুৎপাদন স্মৃতির একটি অপরিহার্য শর্ত।
৪. প্রত্যভিজ্ঞ বা পুনঃপরিজ্ঞান: যে অতীত অভিজ্ঞতার প্রতিরূপগুলোকে পুনরুদ্রেক করা হলো তাকে আমাদের অভিজ্ঞতার প্রতিরূপ বলে চিনে নিতে হবে। একেই বলা হয়েছে প্রত্যভিজ্ঞ বা পুনঃপরিজ্ঞান। প্রত্যভিজ্ঞ হলো একটা পরিচিতির বোধ বা চেতনা যার অভাব ঘটলে স্মরণ ক্রিয়া সুনির্দিষ্ট হয় না। সুতরাং প্রত্যভিজ্ঞ বা পুনঃপরিজ্ঞান স্মৃতির একটি উপাদান।
৫. স্থান-কাল নির্দেশ: নির্ভুল স্মরণ ক্রিয়া তখনই হয়, যখন ঘটনাটি স্থান-কাল নির্দেশ করা যায়। ঘটনাটি কোন সময়ে এবং কোন স্থানে ঘটেছিল তা নির্ণয় করতে না পারলে স্মরণ ক্রিয়ার সঙ্গে প্রত্যাশার প্রভেদ করা যায় না। বস্তুর পুনরুদ্রেকের সঙ্গে সঙ্গে যদি স্থান-কাল নির্দেশিত না হয়, তাহলে বস্তুর পরিচিতি বোধ ঘটে না এবং এ পরিচিতি বোধই প্রত্যভিজ্ঞতার প্রাণ। কাজেই স্থান-কাল স্মৃতির একটি শর্ত।
ঘ. মানুষ তার অতীতের অনেক শিক্ষণকৃত বিষয়ই স্মৃতিতে রাখতে পারে। অপুর ছোটবেলার শেখা কবিতা স্মৃতিতে থাকার মতোই মানুষের স্মৃতিতে তথ্য প্রক্রিয়াজাত হয়ে সংরক্ষিত হয়। তথ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ ভালো না হলে স্মৃতি মুছে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
আধুনিক মনোবিজ্ঞানিগণ স্মৃতিকে সংবাদ বা তথ্যের প্রক্রিয়াজাতকরণ প্রক্রিয়ার আলোকে ব্যাখ্যা করে থাকেন। তাদের মতে স্মৃতি একটি সক্রিয় প্রক্রিয়া যে প্রক্রিয়ায় অভিজ্ঞতাকে শুধু নিষ্ক্রিয়ভাবে গ্রহণ করাকে বোঝায় না, বরং অভিজ্ঞতাগুলোকে সংগঠনের জন্য বিভিন্নভাবে প্রক্রিয়াজাত করা হয়, সংকেতবদ্ধ করা হয়, সংরক্ষণ করা হয় এবং পুনরায় ব্যবহার করার জন্য প্রত্যাহবান বা পুনরুদ্রেক করা হয়।
তথ্যের প্রক্রিয়াজাতকরণ তত্ত্বানুসারে স্মৃতির প্রক্রিয়া মূলত তিনটি মৌলিক প্রক্রিয়া দ্বারা গঠিত। যথা: ১. সংকেত গ্রহণ, ২. সংরক্ষণ এবং ৩. প্রত্যাহবান।
সংকেত গ্রহণ বা এনকোডিং হলো সেই প্রক্রিয়া যার দ্বারা বাইরের উদ্দীপক সম্পর্কিত কোনো তথ্য বা সংবাদকে স্মৃতিতে সঞ্চয় করে রাখার উপযোগী করে তৈরি করা। সংরক্ষণ হলো এনকোডিং প্রক্রিয়াজাত তথ্যকে দীর্ঘদিন রক্ষণাবেক্ষণ করা। আর প্রত্যাহবান প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আমরা স্মৃতির তথ্য ভান্ডার থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য খুঁজে বের করে তা ব্যবহার করি।
৫. শাওন এর মা একদিন তাকে বাজার থেকে চাল, ডাল, তেল, লবণ, সাবান এবং আলু আনতে পাঠাল। সে যাতে ভুলে না যায় তাই মুখস্থ বলতে বলতে বাজারের দিকে যাচ্ছিল। চাচিদের বাড়ি হয়ে যাওয়ার সময় রান্নাঘর থকে তার চাচি তাকে ডেকে বলল বাবা আমাদের জন্য রসুন, পিয়াজ, আদা এবং কাপড় কাচার সাবান আনবে। পরের জিনিসগুলোও সে মুখস্থ করা শুরু করলে পরবর্তীতে দেখা গেল নিজেদের তেল, লবণ এবং সাবান ছাড়াই সে বাজার করে এনেছে।
ক. প্যাভলভ কে?
খ. স্মৃতি বলতে কী বোঝায়?
গ. শাওন এর তেল, লবণ এবং সাবান কেনার কথা ভুলে যাওয়া বিস্মৃতির কোন ধরনের কারণের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকে শাওন এর স্মৃতিকে উন্নত করতে হলে তোমার মতামত বিশ্লেষণ কর।
৫ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. প্যাভলভ হলেন প্রখ্যাত রাশিয়ান শারীরবিদ যিনি সাপেক্ষীকরণের মূল সূত্রটির আবিষ্কারক।
খ. কিছু কিছু অভিজ্ঞতা আছে যা খুবই ক্ষণস্থায়ী। আবার এমন কতকগুলো অভিজ্ঞতা আছে যা দীর্ঘদিন স্মরণ থাকে। আমাদের এ স্মরণ রাখার ক্ষমতাই সাধারণ ভাষায় স্মৃতি বলে পরিচিত।
অতীত অভিজ্ঞতার যথাসম্ভব অবিকল পুনরূৎপাদন করার ক্ষমতাকে স্মৃতি বলা হয়। অর্থাৎ স্মৃতি হলো পূর্ব অভিজ্ঞতা বা শিক্ষণের সংরক্ষণ ও পুনরুদ্দীপন। অন্য কথায়, স্মৃতি হচ্ছে যা শিখেছিলাম এবং যা ভুলে গেছি তাদের বিয়োগফল। অর্থাৎ, স্মৃতি = শিক্ষণ - বিস্মৃতি।
গ. উদ্দীপকে শাওন এর তেল, লবণ এবং সাবান কেনার কথা ভুলে যাওয়া বিস্মৃতির অনুশিক্ষণ প্রতিবন্ধকতা কারণের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। নিচে ব্যাখ্যা করা হলো-
অনুশিক্ষণ প্রতিবন্ধকতা মতবাদের মূল বিষয় হলো, নতুন বিষয় শিক্ষা করার ফলে আমরা পূর্বে শিক্ষা করা বিষয় ভুলে যাই। শিক্ষণ ও পুনরূদ্রেকের মধ্যকার বিরতির সময়ে মানসিক কার্যের ফলে স্মৃতির যে ব্যাঘাত হয় তাকে অনুশিক্ষণ প্রতিবন্ধকতা বা পশ্চাদমুখী বাধা বলা হয়। কোনো বিষয় শিক্ষণের সময় প্রথমটি শেখার পর কিছুটা সময় বিরতি দিয়ে তবে দ্বিতীয়টা শিক্ষা করতে হয়। কিন্তু কোনো একটা বিষয় শেখার পরই কোনো বিরতি না দিয়ে যদি সঙ্গে সঙ্গে আর একটি বিষয় শিখি, তাহলে দেখা যাবে যে প্রথম বিষয়টির অংশ বিশেষ ভুলে গেছি। এর কারণ দ্বিতীয় বিষয়টি প্রথম বিষয়টি মনে রাখার পক্ষে বাধার সৃষ্টি করেছে এবং পেছন দিক থেকে এসে প্রথম বিষয়টিকে ভুলিয়ে দিচ্ছে।
ঘ. আমার মতে, শাওনের স্মৃতি উন্নত করতে হলে নিম্নলিখিত কৌশলসমূহ অবলম্বন করতে হবে,
১. আবৃত্তি: নীরবে পড়ার চেয়ে শব্দ করে এবং আবৃত্তি করে পড়া অনেক ভালো। এতে চক্ষু ও কর্ণ দুই-ই সমানভাবে ব্যবহৃত হয়। ছোটদের বেলায় এ পদ্ধতি বিশেষ উপকারী।
২. সময়ের ব্যবধানে পুনরাবৃত্তি: সামান্য বিরতি দিয়ে পাঠ মুখস্থের চেষ্টা করলে পাঠ অভ্যাস দ্রুত হয় এবং দীর্ঘদিন মনে রাখা সম্ভব হয়।
৩. স্মৃতির সংকেত: কোনো সংকেত বা স্মৃতি-সহায়ক ছড়ার সহায়তা গ্রহণ করলে বিষয়বস্তু তাড়াতাড়ি মুখস্থ করা যায়।
৪. সংঘবদ্ধকরণ: বিষয়বস্তুকে বিশেষ নিয়েমে শ্রেণিবদ্ধ করে শিক্ষা গ্রহণ করলে সেটি সহজে স্মরণ রাখা সম্ভব হয়।
৫. দৃঢ় সংকল্প: কোনো কিছু শিক্ষা গ্রহণ করার জন্য দৃঢ় সংকল্প নিয়ে কোনো কিছু আয়ত্ত করার চেষ্টা করলে তা সহজেই আয়ত্ত করা যায়।
৬. গভীর মনোযোগ: যেকোনো বিষয় গভীর মনোযোগ সহকারে অধ্যয়ন করলে তা সহজেই মনে রাখা যায়।
৭. তাল ও ছন্দ: পাঠ্যবিষয়কে মধ্যে তাল ও ছন্দ খুঁজে নিয়ে তাল ও ছন্দের মাধ্যমে শিখলে তাড়াতাড়ি মুখস্থ হয়।
৮. অতিশিক্ষণ ও পর্যালোচনা: পাঠ্যবিষয়কে অতিশিক্ষণের সহায়তায় মনে দৃঢ়ভাবে সংরক্ষিত করা যায় এবং মাঝে মাঝে পর্যালোচনা করলে বিষয়বস্তুর পুনরুজ্জীবন ও পাঠ্যবিষয়ের পর্যালোচনা করলে বিষয়বস পুনরুদ্রেক সহজতর হয়।
৯. শিক্ষণের শক্তি: আধক সংখ্যক বার বল, শিক্ষণের শক্তি বৃদ্ধি পাবে এবং স্মৃতিতে অধিক সংখ্যক বার বল-বৃদ্ধিসহ পড়লে শিক্ষণের শক্তি বৃদ্ধি পাবে এবং স্মৃতিতে দীর্ঘদিন সঞ্চিত থাকবে।
১০. অর্থপূর্ণ শিক্ষণ: পড়ার সময় অর্থ অনুধাবন করে পড়লে দ্রুত স্মৃতি গাঁথে এবং দীর্ঘদিন মনে রাখা যায়।
১১. সামগ্রিক শিক্ষণ: বিষয়বস্তুকে খ- খ-ভাবে অধ্যয়ন না করে সামগ্রিকভাবে পাঠ করলে তার স্মৃতি দীর্ঘস্থায়ী হয়।
১২. অবদমনকারী শর্ত অপসারণ: অনুশিক্ষণ ও পূর্ব শিক্ষণ প্রতিবন্ধকতা হ্রাস করা হলে বা এদের প্রভাব না পড়লে পড়া
ভালো হয় এবং তা স্মৃতিতে দীর্ঘদিন থাকে।
১৩. রবিনসনের নিয়ম: রবিনসন স্মৃতিকে উন্নত করার যে নিয়মের কথা বলেছেন তার সূত্র হলো ‘‘Survey Q3R”। সূত্রের ব্যাখ্যা হলো Survey -জরিপ কর, Question -প্রশ্ন কর, Read -পড়, Recite আবৃত্তি কর এবং Review পুনরায় স্মরণ কর।
৬. আলফাজ আহমেদ চট্টগ্রাম কলেজে চাকুরিতে যোগদানের জন্য ঢাকা থেকে প্রথমবার চট্টগ্রাম শহরে আসে। চট্টগ্রাম কলেজের অবস্থান তিনি জানেন না। এমনকি চট্টগ্রামে কোনো পরিচিত ব্যক্তিও নেই। এমতাবস্থায় তিনি মোবাইলে ইন্টারনেট চালু করে Google Map-এ প্রথমে চট্টগ্রাম শহরটি খুঁজে বের করলেন এবং পরে চট্টগ্রাম রেল স্টেশন থেকে চট্টগ্রাম কলেজের দূরত্ব ও দিক সম্পর্কে জানলেন এবং যথাসময়ে তিনি কলেজে যোগদান করতে সক্ষম হলেন।
ক. সুপ্ত শিক্ষণ কী?
খ. সহায়ক শিক্ষণ ও চিরায়ত সাপেক্ষীকরণের মধ্যে সাদৃশ্য দেখাও।
গ. আলফাজ আহমেদের সমস্যা সমাধানের প্রক্রিয়াটি কী ধরনের শিক্ষণ? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকের গল্পের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ একটি মনোবৈজ্ঞানিক গবেষণা আলোচনা কর।
৬ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. সুপ্ত শিক্ষণ হলো এমন এক শিক্ষণ, যা আবশ্যিক বলবর্ধক ছাড়াই সংঘটিত হয় এবং উপযুক্ত বলবর্ধক উপস্থিত না হওয়া পর্যন্ত তা পরিলক্ষিত হয় না।
খ. সহায়ক শিক্ষণ ও চিরায়ত শিক্ষণের মধ্যে নিম্নরূপ সাদৃশ্য দেখা যায়-
১. উভয় শিক্ষণে ক্ষুধার্ত প্রাণী ব্যবহার করা হয়।
২. উভয় শিক্ষণে প্রাণীকে একটি যান্ত্রিক পরিবেশে রাখা হয়।
৩. উভয় শিক্ষণেই পর্যবেক্ষণের বিষয় হিসেবে একটি নির্দিষ্ট প্রতিক্রিয়াকে বেছে নেওয়া হয়।
৪. শিক্ষণ সম্পন্ন হওয়ার পর উভয় শিক্ষণে অবলুপ্তি ও স্বতঃস্ফূর্ত পুনরাগমন ঘটে থাকে।
গ. আলফাজ আহমেদের সমস্যা সমাধানের প্রক্রিয়াটি এক ধরনের জ্ঞাণগত শিক্ষণ। কারণ চট্টগ্রাম কলেজের অবস্থান জানার জন্য তিনি তথ্য নির্বাচন, অনুষঙ্গ স্থাপন, স্মৃতিতে সংরক্ষণ ইত্যাদি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছেন। জ্ঞানগত শিক্ষণ হলো মানুষের মধ্যে তথ্যের চরম প্রক্রিয়াজাত অবস্থান। ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে পরিপার্শ্বিক পরিবেশ সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহের পদ্ধতিই হলো জ্ঞানগত প্রক্রিয়া। জ্ঞানীয় প্রক্রিয়ার অন্তর্ভুক্ত বিষয় হলো:
১. তথ্য নির্বাচন,
২. নির্বাচিত তথ্যে পরিবর্তন আনয়ন,
৩. তথ্যের বিষয়গুলোর মধ্যে অনুষঙ্গ স্থাপন,
৪. চিন্তার ক্ষেত্রে তথ্যের প্রসারণ বা বৃদ্ধি,
৫. স্মৃতিতে তথ্যের সংরক্ষণ এবং প্রয়োজনে,
৬. সংরক্ষিত তথ্যের প্রত্যাহবান।
একজন ব্যক্তি বা প্রাণী যে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে তার ফলে তথ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ প্রক্রিয়ায়, যে পরিবর্তন ঘটে তাই হলো জ্ঞানগত শিক্ষণ। অন্য কথায়, অতীত অভিজ্ঞতার কারণে ঘটনাসমূহের গুরুত্ব এবং অর্থ পরিবর্তন হয়ে যাবে, নতুন অনুষঙ্গ গড়ে উঠবে এবং ভবিষ্যতের ব্যবহারের জন্য পরিবর্তনসমূহ স্মৃতিতে সংরক্ষিত থাকবে। অনেক শিক্ষণই জ্ঞানগর্ত ধরনের। পরিজ্ঞানমূলক শিক্ষণ, সুপ্তশিক্ষণ এবং অনুকরণ জ্ঞানগত শিক্ষণের উদাহরণ।
ঘ. উদ্দীপকের ঘটনাটি জ্ঞানগত শিক্ষণের বাস্তব উদাহরণ। পরিজ্ঞানমূলক শিক্ষণের সাথে উদ্দীপকের ঘটনার মিল রয়েছে। তথ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ করে সঠিক প্রতিক্রিয়া করলেই পরিজ্ঞানমূলক শিক্ষণ হয়।
কোহলার, ওয়ারদিমার, ইয়ারকিস, হনজিক, টলম্যান প্রমুখ। মনোবিজ্ঞানী পরিজ্ঞানমূলক শিক্ষণের ওপর গবেষণা করেন। তবে পরিজ্ঞানমূলক শিক্ষণের গবেষণায় কোহলারের অবদান বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। সুলতান নামক শিম্পাঞ্জী নিয়ে তার গবেষণাটি খুবই চমকপ্রদ। সুলতানকে তিনি একটি ঘরে ছেড়ে দেন, যে ঘরে কলা ঝুলানো ছিল। শিম্পাঞ্জী খুব কলাভক্ত। শিম্পাঞ্জীর নাগালের বাইরে কলা ঝুলানো ছিল। ঐ ঘরে দুটো লাঠি রেখে দেওয়া হয়েছিল। লাঠি দুটি দিয়ে কলা পাড়া সম্ভব ছিল না, কারণ কলার নাগাল পাওয়ার পক্ষে ঐ লাঠি যথেষ্ট ছিল না। কিন্তু লাঠি দুটি একত্রে জোড়া দিতে পারলে তবে কলা পাড়া যাবে। সুলতান নামক শিম্পাঞ্জীকে প্রথমে ঐ ঘরে ছেড়ে দিলে সে কলা খাবার ব্যাপারে খুব ব্যস্ত হয়ে পড়ল। কিন্তু উপায় নেই দেখে খানিকক্ষণ চুপচাপ বসে ঘরের অবস্থাটা পর্যবেক্ষণ করল। তারপর হঠাৎ করে লাঠি দুটির দিকে তার নজর পড়ল। এ অবস্থায় শিম্পাঞ্জী কিছুক্ষণ চুপচাপ থেকে সমগ্র সমস্যাটিকে জরিপ করল এবং লাঠি দুটি জোড়া দিয়ে কলা পেড়ে খেল। অবশ্য পূর্বে কোনো এক সময় সুলতানকে লাঠি জোড়া দেওয়া দেখান হয়েছিল।
৭. মিঠু HSC পরীক্ষা দিয়েই ভার্সিটি কোচিং এ ভর্তি হয়। ক্লাস ও পরীক্ষায় সে নিয়মিত যায়। HSC-র ফল প্রকাশ পেলে দেখা যায় মিঠু A+ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে। সে ঢাকায় গিয়ে পরিচিত এক বড় ভাইয়ের মেসে উঠে ঢাকা ইউনিভার্সিটি ভর্তি পরীক্ষার তিন দিন আগে। কিন্তু মিঠ লক্ষ করলো এতদিন যা পড়ে এসেছে সব যেন কেমন ভুলে যাচ্ছে। সে হতাশ হয়ে পড়ে। ভাইয়া বললেন, 'Survey Q 3R' পদ্ধতি প্রয়োগ কর, দেখবে সব মনে পড়ছে।
ক. কোন স্মৃতির ধারণক্ষমতা ২০ সেকেন্ডের কম সময়?
খ. শিক্ষণের অন্যতম একটি উপাদান হলো ‘সমস্যা’ ব্যাখ্যা কর।
গ. উদ্দীপকে মিঠুর ভুলে যাওয়ার নির্দিষ্ট কারণ ব্যাখ্যা কর।
ঘ. তুমি কি মনে কর উদ্দীপকে মিঠুর বিষয়বস্তু মনে রাখার একমাত্র কৌশল 'Survey Q 3R' - উত্তরের সপক্ষে যুক্তি দাও।
৭ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. স্বল্পস্থায়ী স্মৃতির ধারণ ক্ষমতা ২০ সেকেন্ডের কম সময়।
খ. শিক্ষণের অন্যতম একটি উপাদান হলো সমস্যা। নিচে ব্যাখ্যা করা হলো।
শিক্ষণের সূত্রপাত হয় কোনো সমস্যাকে কেন্দ্র করে। কোনো সমস্যা না থাকলে কেউ কোনো কাজ করতো না বা তাকে কিছু শিখতে হতো না। একজন শ্রেণিশিক্ষক কোনো ছাত্রকে বাড়ির কাজ হিসেবে একটি কবিতার প্রথম ৮ লাইন মুখস্থ করতে দিয়েছেন, যা পরবর্তী দিবসে তাকে বলতে হবে। বাসায় এসে ছাত্রটি বার বার অনুশীলন করে কবিতার ৮ লাইন মুখস্থ করল। শিক্ষক কবিতাটি পরবর্তী ক্লাসে মুখস্থ বলতে বলবেন-এটিই ঐ ছাত্রের কাছে সমস্যা ছিল। এ সমস্যার প্রেক্ষিতেই ছাত্রটি কবিতার ৮ লাইন শিক্ষণের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে।
গ. উদ্দীপকে মিঠর ভুলে যাওয়ার নির্দিষ্ট কারণ হলো-অব্যবহারজনিত স্মৃতির অবক্ষয়। নিচে ব্যাখ্যা করা হলো-
শিক্ষণকৃত বিষয় যদি ব্যবহার না করা হয় বা অনুশীলন না করা হয় কালের স্রোতে তা হারিয়ে যায়। অর্থাৎ অব্যবহারজনিত
কারণে কালের স্রোতে স্মৃতিচিহ্নগুলো ধীরে ধীরে হারিয়ে যায়। ফলে মানুষের শিক্ষণকৃত বিষয়গুলো বিস্মত হয়ে যায়। এ অব্যবহারজনিত বিস্মৃতির কারণেই মানুষ অনেক জানা গল্প বা ঘটনা বিস্মৃত হয়ে যায়।
অব্যবহারজনিত কারণে স্মৃতির অবক্ষয় ঘটলেও কোনো কোনো ক্ষেত্রে বা কোনো কোনো সময়ে তা পুনঃজীবিত হতে পারে। তবুও বলা যায় যে, শিক্ষণকৃত বিষয় যদি ব্যবহার করা না হয় বা পর্যালোচনা করা না হয়, তাহলে সময়ের সাথে সাথে তা বিস্মৃতির অতল গভীরে হারিয়ে যায়।
শিক্ষণকৃত বিষয় যদি ব্যবহার করা না হয় বা পর্যালোচনা করা হয়, তাহলে সময়ের সাথে সাথে তা বিস্মৃতির অতল তলে হারিয়ে যায়।
ঘ. উদ্দীপকে মিঠুর বিষয়বস্তু মনে রাখার একমাত্র কৌশল Survey Q 3R -অর্থাৎ Survey Question, Read, Recite, Review। পাঠ্যাভ্যাসে এ কয়েকটি ধাপ অনুসরণ করলে ভালো শিক্ষণ হতে পারে। উত্তরের সপক্ষে আমার যুক্তি নিচে উপস্থাপন করা হলো-
১. সার্ভে করার অর্থ হলো জরিপ করা। কোনো বিষয়বস্তু পড়তে হলে সর্বপ্রথম বিষয়টির একটা পরিমিতি নিতে হবে। অধ্যয়নের শেষে পাঠ্যবিষয়ের সার সংকলন করতে হবে।
২. কোনো বিষয়বস্তু পাঠ শেষে বইতে প্রশ্নমালা দেওয়া না থাকলে নিজে নিজেই প্রশ্ন করতে হবে লেখক কি বলতে চাইছেন?পাঠ্যবিষয়ের সঙ্গে সংশিস্নষ্ট কোনো সমস্যা সৃষ্টি করে নিজে নিজেই তার উত্তর দিতে চেষ্টা করতে হবে।
৩. নিজে নিজে যে প্রশ্নগুলো তৈরি করা হলো, সেগুলো উত্তর দেওয়ার জন্য পাঠ্যবিষয়কে আবার গভীর অভিনিবেশ সহকারে পড়তে হবে এবং স্মরণ রাখার অভিপ্রায় নিয়ে পড়তে হবে।
৪. কতখানি শিক্ষণ হলো তা আবৃত্তির সাহায্যে নির্ণয় করা যায়। একটি বিষয়বস্তু পড়ার পর শিক্ষার্থীকে মাঝখানে থেমে নিজেকে প্রশ্ন করতে হবে: কি কি পড়লাম সব মনে আছে কি?এ প্রশ্নের জবাব পাওয়ার জন্যে পাঠ্যবিষয় আবৃত্তি করতে হবে।
৫. বিষয়বস্তু শিক্ষা করা শেষ হলে আবৃত্তির মাধ্যমে স্মরণ করতে হবে। পরীক্ষার পূর্বে পাঠ্যবিষয়গুলোকে আরেকবার ঝালিয়ে নিতে হবে। তবে পরীক্ষার পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত বই মুখস্থ করা উচিত নয়। শিক্ষণের পর বিশ্রাম অবশ্য কর্তব্য।
৮. দীপন ও মিঠ দুই বন্ধু একই ক্লাসে পড়ে। দীপন দুষ্ট প্রকৃতির; সারাদিন খেলাধুলা করে, রাতে কিছু সময় পড়ে। অন্যদিকে মিঠু নম্র, ভদ্র, বিনয়ী স্বভাবের। সারাদিন, স্কুল ও বাসায় পড়াশুনা করে। কিন্তু স্কুলের পরীক্ষায় সবসময়ই দীপন মিঠর চেয়ে বেশি নম্বর পায়।
ক. অনুষঙ্গ কী?
খ. শিক্ষণ বলতে কি বুঝায়?
গ. দীপনের বেশি নম্বর পাওয়ার কারণ ব্যাখ্যা কর।
ঘ. মিঠ ও দীপনের মধ্যে তোমার দৃষ্টিতে কী ধরনের পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়?বিশ্লেষণ কর।
৮ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. অনুষঙ্গ অর্থ হলো দুটো ঘটনার মধ্যে সম্পর্ক স্থাপন করা। অনুষঙ্গ শিক্ষণকে শক্তিশালী করে।
খ. প্রকৃতির সঙ্গে সঙ্গতি বিধান করে চলাই জীবনের বৈশিষ্ট্য। তাই জীবকে তার পরিবেশের উপযোগী নিত্যনতুন আচরণ সম্পন্ন করতে হয়। প্রাণীর অতীত অভিজ্ঞতাই প্রাণীকে নতুন আচরণ সম্পন্ন করার জন্য এবং নতুন বিষয় আয়ত্ত করার জন্য সহায়তা করে। সুতরাং দেখা যেতে পারে যে, অতীত অভিজ্ঞতার মাধ্যমে নতুন বিষয় আয়ত্ত করাই হলো শিক্ষণ। অর্থাৎ আর একটু গুছিয়ে আমরা এভাবে শিক্ষণের সংজ্ঞা নির্দেশ করতে পারি যে, শিক্ষণ হলো সেই প্রক্রিয়া যার সাহায্যে আমরা আচরণের মধ্যে এমন পরিবর্তন আনতে পরি যা পরিবেশের সঙ্গে আমাদের সম্বন্ধের উন্নতি সাধন করে।
গ. দীপনের বেশি নম্বর পাওয়ার ক্ষেত্রে শিক্ষণের কিছু শর্তকে কারণ হিসেবে দায়ী করা যায়। শিক্ষণের শর্তগুলোকে ব্যাখ্যা করা হলো-
১. মনোযোগ: মনোযোগ হলো শিক্ষণের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শর্ত। কার্যক্রমে মনোযোগ থাকলে দ্রুত শিক্ষণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। দীপন শিক্ষণ কার্যক্রমে অধিক মনোযোগী ছিল বিধায় দ্রুত শিক্ষণ সম্পন্ন করে এবং পরীক্ষায় বেশি নম্বর পায়।
২. অনুষঙ্গ: শিক্ষণের ক্ষেত্রে অনুষঙ্গ একটি গুরুত্বপূর্ণ শর্ত। কারণ, অনুষঙ্গ তথা উদ্দীপক ও প্রতিক্রিয়ার মধ্যে যথার্থ সংযোগ বা সম্পর্ক স্থাপনের মাধ্যমে শিক্ষণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে।
৩. নৈকট্য: অনুষঙ্গ তথা উদ্দীপক ও প্রতিক্রিয়ার মধ্যে যথার্থ। সংযোগ বা সম্পর্ক স্থাপনে নৈকট্য একটি গুরুত্বপূর্ণ শর্ত। কারণ, উদ্দীপক-উদ্দীপক ও উদ্দীপক-প্রতিক্রিয়ার কাছাকাছি অবস্থান করে অর্থাৎ নৈকট্য, আচরণকে বিশেষভাবে প্রভাবিত করে এবং শিক্ষণ প্রক্রিয়াকে গতিশীল ও ত্বরান্বিত করে। দীপনের ক্ষেত্রে নৈকট্য উপাদানটি কার্যক্রম ভূমিকা পালন করে।
৪. পর্যবেক্ষণ: শিক্ষণের ক্ষেত্রে পর্যবেক্ষণ একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কারণ, পর্যবেক্ষণ সমস্যার সমাধান সম্পর্কে সম্যক ধারণা প্রদান ও সচেতন করে তোলার পাশাপাশি শিক্ষণ প্রক্রিয়াকে সহজতর করে।
৫. প্রচেষ্টা: অধিকাংশ শিক্ষণের বেলায় বার বার চেষ্টা চালালে শিক্ষণ তাড়াতাড়ি সংঘটিত হয়। দীপন বার বার অনুশীলনের মাধ্যমে সহজেই সফল হয়।
অর্থাৎ দীপনের পড়াশুনায় মনোযোগ, অনুষঙ্গ, নৈকট্য, পর্যবেক্ষণ ও প্রচেষ্টা অনেক বেশি ছিল, যার কারণেই সে পরীক্ষায় ভালো নম্বর পায়।
ঘ. মিঠু ও দীপন একই ক্লাসের ছাত্র। স্কুল পরীক্ষায় সবসময়ই দীপন মিঠুর চেয়ে বেশি নম্বর পায়। নিমেণাক্ত উপাদানের পার্থক্য তাদের পরীক্ষার ফলাফলের জন্য দায়ী-
১. সমস্যা: কোনো সমস্যা না থাকলে কেউ কোনো কাজ করত না, তাকে কিছু শিখতে হতো না। দীপন বার বার অনুশীলনের মাধ্যমে প্রতিদিনের পাঠ শেষ করে। মিঠুর ক্ষেত্রে এ উপাদানটি যথাযথভাবে সম্পন্ন হয়নি।
২. প্রেষণা: যা কিছু মানুষ বা প্রাণীকে কোনো কাজে প্রণোদিত বা চালিত করে তাই প্রেষণা। দীপনের ক্ষেত্রে পরীক্ষায় ভালো ফলাফলের প্রেষণা তীব্রভাবে কাজ করেছে। ফলে সে ভালোভাবে দৈনন্দিন পড়া সম্পন্ন করেছে। মিঠুর ক্ষেত্রে প্রেষণা তীব্র ছিল না বিধায় সে পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করতে পারেনি।
৩. মনোযোগ: কোনো শিক্ষণীয় বিষয়ের প্রতি মনোযোগ দিলে শিক্ষণ ত্বরান্বিত হয়। দীপন দুষ্টু প্রকৃতির হলেও পড়াশোনায় মনোযোগী ছিল, অন্যদিকে মিঠু নম্র, ভদ্র ও বিনয়ী হলেও এ উপাদানটি তার ক্ষেত্রে কার্যকর ছিল না।
৪. প্রচেষ্টা: কোনো কোনো শিক্ষণ একবার প্রচেষ্টাতেই সম্পন্ন হয়। আবার কখনও কখনও বহুবার প্রচষ্টার প্রয়োজন হয়। পরীক্ষার ফলাফল দ্বারা বুঝা যায়, দীপনের শিক্ষণে বহুবার প্রচেষ্টার প্রয়োজন হয়নি। মিঠুর ক্ষেত্রে বহুবার প্রচেষ্টার ফলে শিক্ষণ সম্পন্ন হয়েছিল।
৯. ইমন ও নাসিফ দুই ভাই। নাসিফ বয়সে ছোট। সে বিড়াল দেখে ভয় পায়। ইমন ছোট ভাই নাসিফকে বলে এত বেশি ভয় পেলে যে ঘুড়াতে পারবে না। সে আরও বলে তার এক বন্ধু প্রাণিবিজ্ঞানের অনার্স পড়ে এবং বাসায় বাক্সের মধ্যে কয়েকটি বিড়াল রেখেছে। মাঝে মাঝে সেগুলো নিয়ে সে খেলা করে এবং তাদের সম্পর্কে জানার চেষ্টা করে। ইমন কয়েকদিন তার বন্ধুর বাসায় নাসিফকে নিয়ে যায় এবং বিড়ালের পরিচর্যা দেখায়। এক সময় নাসিফ বিড়ালকে আর ভয় পায় না।
ক. শিক্ষণের সংজ্ঞা দাও।
খ. শিক্ষণে প্রভাব বিস্তারকারী উপাদানসমূহ বর্ণনা কর।
গ. উদ্দীপকে নাসিফের কোন ধরনের শিক্ষণ সংগঠিত হয়েছে তা পরীক্ষণসহ বর্ণনা কর।
ঘ. উদ্দীপকের আলোকে বাস্তব জীবনে উক্ত শিক্ষণ কীভাবে প্রয়োগ করা যায় তা ব্যাখ্যা কর।
৯ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. আচরণের অপেক্ষাকৃত স্থায়ী পরিবর্তন যা অনুশীলন এবং পূর্ব অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে অর্জিত হয়ে থাকে, যার জন্য বলবর্ধকের প্রয়োজন হয় এবং যার বহিঃপ্রকাশ ঘটতেও পারে আবার নাও পারে। তাকে শিক্ষণ বলে।
খ. শিক্ষণে প্রভাববিস্তারকারী উপাদানসমূহ নিচে বর্ণনা করা হলো-
১. সংয়োগ বা অনুষঙ্গ: দুটি সম্পর্কযুক্ত ঘটনা পাশাপাশি ঘটলে শিক্ষণ দ্রুত হয়। সংযোগ প্রধানত দুধরনের। যথা- (১) উদ্দীপক-উদ্দীপক সংযোগ, (২) উদ্দীপক-প্রতিক্রিয়া সংযোগ।
২. প্রেষণা: প্রেষণা বা তাগিদের জন্য মানুষ বা প্রাণী শিখতে সচেষ্ট হয়।
৩. বলবৃদ্ধি: বলবৃদ্ধি হলো এমন শর্ত বা অবস্থা যা সংযোগকে শক্তিশালী করে। যেমন- ক্ষুধার্ত ব্যক্তির জন্য খাদ্য।
৪. নৈকট্য: শিক্ষণের ক্ষেত্রে দুটি উদ্দীপকের মধ্যে নৈকট্য হয়। যেমন:
কোনো ছাত্রকে শিক্ষণের পর পুরস্কার প্রদানে বলা হলে শিক্ষণ সমাপ্ত হবার পর পরই তাকে পুরস্কৃত করা উচিত।
৫. প্রচেষ্টা: বেশির ভাগ শিক্ষণই বারবার চেষ্টার ফলে ঘটে থাকে।
৬. মনোযোগ: মনোযোগ বা একাগ্রতা শিক্ষণে প্রভাব বিস্তার মনোযোগ শিক্ষণকে ত্বরান্বিত করে।
৭. পরিপক্কতা: বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে ব্যক্তি জটিল বিষয় করতে পারে।
গ. উদ্দীপকে নাসিফের অনুকরণ ও মডেলিং এর মাধ্যমে শিক্ষণ সংঘটিত হয়। নিচে এ শিক্ষণ প্রক্রিয়া উদ্দীপকের আলোকে পরীক্ষণসহ বর্ণনা করা হলো-
মানুষ অনুকরণপ্রিয়। সে সহজেই অন্যকে অনুকরণ করে শিখে। বান্দুরা এবং তার সঙ্গীরা (১৯৬৯) সর্বপ্রথম অনুকরণ প্রক্রিয়া প্রয়োগ করে মানসিক সমস্যা সমাধানের চিকিৎসায় সফলতা লাভ করেন। তারা অনুকরণ মডেলিং-এর মাধ্যমে কয়েকজন ব্যক্তির সর্পভীতি দূর করেছিলেন। যারা সাপ দেখলে ভয় পেতো এমন বয়স্ক ব্যক্তিদের ভিডিও ফিল্মে এবং বাস্তবে সাপ ধরা দেখানো হতো। এভাবে কয়েকবার দেখানোর পর তাদের সর্পভীতি অনেক কমেছিল। তারপর একসময় সাপ ধরতেও শিখেছিল। এভাবে তাদের সাপের ভয় সম্পূর্ণ দূর করা হয়েছিল।
উদ্দীপকে নাসিফ ঠিক একইভাবে বিড়ালভীতি দূর করেছি। কয়েকদিন ইমনের বন্ধুর বাসায় বিড়ালের পরিচর্যা দেখে। এ নাসিফ বিড়ালকে আর ভয় পায় না। আর এভাবেই নাসিফের বিড়ালভীতি দূর হয় এবং অনুকরণের মাধ্যমে শিক্ষণ সম্পন্ন হয়।
ঘ. উদ্দীপকে আলোচিত শিক্ষণ প্রক্রিয়া বাস্তব জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। আমাদের অনেকের মধ্যেই বিভিন্ন ধরনের সামাজিক ভীতি, যেমন- কারো সাথে মিশার ভয়, সাক্ষাতের ভয়, কথা বলার ভয, কোনো অনুষ্ঠানে যাওয়ার ভয়, কোনো বিল্ডিংয়ের পাশ দিয়ে যাওয়ার ভয় ইত্যাদি আছে। আবার বিভিন্ন ধরনের পশুপাখি (যেমন- কুকুর, বিড়াল, হুতুমপেঁচা ইত্যাদি এবং পোকামাকড়ের (যেমন- তেলাপোকা, মাকড়সা) ভয় থাকে।
আমরা কোনো বিষয়ে ভয় পেলে প্রথমে উক্ত বিষয়কে দূর থেকে দেখব বা ভিডিও ফিল্মে দেখব। তারপর ধীরে ধীরে কাছ থেকে দেখব। এই প্রক্রিয়াটি কয়েকবার করব। এরপর কাছ থেকে দেখব। এরপর বিষয়টিকে স্পর্শ করব বা মুখোমুখি হব। এটিও কয়েকবার অনুশীলন করব। এভাবে আমরা ঐ বিষয়টি সম্পর্কে আমাদের ভয় দূর করতে পারব। আর এটিই হচ্ছে উদ্দীপকে আলোচিত অনুকরণীয় শিক্ষণ প্রক্রিয়া। পরিশেষে বলা যায়, উদ্দীপকে আলোচিত শিক্ষণ প্রক্রিয়া বাস্তব জীবনে প্রয়োগের মাধ্যমে আমরা আমাদের দৈনন্দিন ভীতি দূর করতে পারি।
১০. আনসের বয়স ১৮ বছর। সে ৫ বছর আগে কোরআন মুখস্থ করেছে। যেকোনো পাতা, সূরা থেকে সে এখনও বলতে পারে। যেকোনো বিষয় সে একবার শুনলেই পরবর্তীতে বলতে পারে।
ক. সহায়ক শিক্ষণ কী?
খ. স্মৃতির সংরক্ষণ বলতে কী বোঝায়?
গ. আনিস এর সবকিছু মনে থাকার বিষয়টি ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকের বিষয়টিকে যদি স্মৃতি বলা যায় তবে তার উপাদানগুলো বিশ্লেষণ কর।
১০ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. যেসব প্রতিক্রিয়া বা আচরণ প্রাণীর জীবনে কোনো প্রয়োজন সাধন করে বা প্রেষণা নিবৃত্তি করতে সাহায্য করে সেসব আচরণ। শিক্ষণের প্রক্রিয়াকেই সহায়ক শিক্ষণ বলে।
খ. কোনোকিছু শিক্ষা করলেই স্মৃতি হয় না, শিক্ষার পর একে যথাযথভাবে সংরক্ষণ করতে হয়। সংরক্ষণ ক্ষমতার ওপর স্মৃতি অনেকাংশেই নির্ভর করে। সব মানুষের স্মৃতিশক্তি সমান নয়, কারণ সবার সংরক্ষণ ক্ষমতা সমান নয়। আমরা যখন কোনো বিষয় বার বার মনোযোগসহকারে শেখার চেষ্টা করি তখন বিষয়টি আমাদের মনে সংরক্ষিত হয়। অর্থাৎ বিষয়টি আমরা মনে ধারণ করি। বিষয়টি আমাদের চেতন মনের স্তর থেকে অবচেতন মনের স্তরে চলে আসে।
গ. উদ্দীপকে আনিসের সবকিছু মনে থাকার বিষয়টি দীর্ঘস্থায়ী স্মৃতির সঙ্গে জড়িত। নিচে ব্যাখ্যা করা হলোদীর্ঘস্থায়ী স্মৃতি হলো একটি অসীম ধারণক্ষম ভান্ডার যা তথ্যকে দীর্ঘ সময়ব্যাপী ধারণ করতে পারে। এ ভান্ডারের তথ্যসমূহ সংগঠিত ও প্রক্রিয়াজাত হয়ে দীর্ঘদিন সংরক্ষণের জন্য সঞ্চিত থাকে। এ ভান্ডারের তথ্য ধারণ ক্ষমতা অসীম। এ ভান্ডারের সঞ্চিত তথ্যসমূহের কিছু সংখ্যক অল্প প্রচেষ্টাতেই ক্ষণস্থায়ী স্মৃতির ভান্ডারে ফেরত আনা যায় এবং প্রত্যাহবান করা যায়। যেমন আমার পিতা-মাতার নাম আমি যেকোনো মুহূর্তে প্রত্যাহবান করতে পারি, কিন্তু আমার ছোটবেলার বন্ধুর নাম শুধুমাত্র বিশেষ শর্তাবলির উপস্থিতিতে প্রত্যাহবান করতে পারি।
ঘ. উদ্দীপকের বিষয়টিকে স্মৃতি বলা যায়। নিচে স্মৃতির উপাদানগুলো বিশ্লেষণ করা হলো-
১. শিক্ষণ: স্মৃতির প্রথম ও প্রধান শর্ত হলো শিক্ষণ। শিক্ষণ ব্যতীত স্মৃতির প্রশ্নই ওঠে না। কোনো বিষয়বস্তু আমাদের স্মৃতিতে আছে কি-না তা জানার আগে দেখতে হবে ঐ বিষয়টি শিক্ষা হয়েছে কি-না।
২. সংরক্ষণ: আমরা যখন কোনো বিষয় মনোযোগ সহকারে বার বার শেখার চেষ্টা করি, তখন বিষয়টি আমাদের মনে সংরক্ষিত হয়। বিষয়টি আমাদের চেতন মনের স্তর থেকে অবচেতন মনের স্তরে চলে আসে।
৩. পুনরূদ্রেক/পুনরূৎপাদন: মনে সংরক্ষিত প্রতিরূপগুলোকে ব্যক্ত করার মানসিক ক্রিয়াকেই পুনরূদ্রেক বলে। পূর্ব অভিজ্ঞতাকে মনে। জাগিয়ে তোলা বা মনে করাই হলো পুনরূদ্রেক।
৪. প্রত্যভিজ্ঞ বা পুনঃপরিজ্ঞান: যে অতীত অভিজ্ঞতার প্রতিরূপগুলোকে পুনরূদ্রেক করা হলো তাকে আমাদের অভিজ্ঞতার প্রতিরূপ বলে চিনে নিতে হবে। একেই বলা হয়েছে প্রত্যভিজ্ঞ বা পুনঃপরিজ্ঞান। প্রত্যভিজ্ঞ হলো একটা পরিচিতির বোধ বা চেতনা যার অভাব ঘটলে স্মরণ ক্রিয়া সুনির্দিষ্ট হয় না।
৫. স্থান-কাল নির্দেশ: নির্ভুল স্মরণ ক্রিয়া তখনই হয়, যখন ঘটনাটির স্থান-কাল নির্দেশ করা যায়। ঘটনাটি কোন সময়ে এবং কোন স্থানে ঘটেছিল তা নির্ণয় করতে না পারলে স্মরণ ক্রিয়ার সঙ্গে প্রত্যাশার প্রভেদ করা যায় না। বস্তুর পুনরূদ্রেকের, সঙ্গে সঙ্গে যদি স্থান-কাল নির্দেশিত না হয়, তাহলে বস্তুুর পরিচিতি বোধ ঘটে না এবং এ পরিচিতি বোধই প্রত্যভিজ্ঞতার প্রাণ।
0 Comments:
Post a Comment