HSC মনোবিজ্ঞান ১ম পত্র (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর অধ্যায় ৩ pdf download - Exam Cares

Breaking

Home Top Ad

Responsive Ads Here

Post Top Ad

Responsive Ads Here

HSC মনোবিজ্ঞান ১ম পত্র (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর অধ্যায় ৩ pdf download

এইচএসসি পরীক্ষার পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি
HSC Psychology 1st Paper Srijonshil question and answer. HSC Psychology 1st Paper (Srijonshil) Creative Questions pdf download. HSC Monobiggan 1st paper Srijonshil Proshno Uttor.

উচ্চ মাধ্যমিক
মনোবিজ্ঞান
প্রথম পত্র

সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
অধ্যায়-৩

HSC Psychology
1st Paper
Srijonshil Question and Answer pdf download

১. নবম শ্রেণিতে পড়ুয়া রবি হীনমন্যতায় ভোগে। আকারে ছোট হওয়ায় বন্ধুরা তাকে ‘‘বাবু’’ বলে ডাকে। রবির বড় বোন নাহার ৭ মাসের গর্ভবতী। ডাক্তারের কাছে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার পর জানতে পারল, তার এমন একটি হরমোনের স্বল্পতা আছে, যা সন্তান প্রসবে বিঘ্ন ঘটায়। রবির অপর বোন সুমি গলগন্ড রোগে ভুগছে।
ক. স্নায়ুতন্ত্র কী?
খ. প্রতিবর্তী ক্রিয়া কীভাবে সংঘটিত হয়?
গ. রবির শারীরিক বৈশিষ্ট্যের ক্ষেত্রে কোন হরমোনের প্রভাব রয়েছে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. নাহার ও সুমির শারীরিক অবস্থার জন্য দায়ী হরমোনগুলো তুলনামূলক বর্ণনা কর।

১ নম্বর সৃজনশীর প্রশ্নের উত্তর
ক. স্নায়ুতন্ত্র হলো পরিবেশের সঙ্গে মানুষ বা প্রাণীর সংযোগ রক্ষা এবং তার আচরণ ও মানসিক ক্রিয়ার নিয়ন্ত্রণকারী তন্ত্র।

খ. প্রতিবর্তী ক্রিয়ার মাধ্যমেই শরীরের বেশির ভাগ আচরণ সংগঠিত হয়। স্নায়ুতন্ত্র প্রক্রিয়ার মৌলিক একক হলো প্রতিবর্তী চক্র। প্রতিবর্তী চক্রে অনেকগুলো স্নায়ুকোষ, একটি ইন্দ্রিয় ও এক বা একাধিক পেশি বা গ্রন্থি অংশগ্রহণ করে। অন্তর্মুখী বা সংবেদী স্নায়ু ইন্দ্রিয়ের উদ্দীপনা স্নায়ুপ্রবাহের আকারে মস্তিষ্ক বা মেরুরজ্জুতে নিয়ে যায় এবং সেখান থেকে কর্মোদ্দীপনা পুনরায় বহির্মুখী বা গতিবাহী স্নায়ুর মাধ্যমে মাংসপেশিতে এসে পৌছলে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। এভাবেই প্রতিবর্তী ক্রিয়া সংগঠিত হয়।

গ. উদ্দীপকে রবির শারীরিক বৈশিষ্ট্যের ক্ষেত্রে পিটুইটারি গ্রন্থি নিঃসৃত শরীরবর্ধক হরমোনের প্রভাব রয়েছে। নিচে ব্যাখ্যা করা হলো-
শরীর বর্ধক হরমোন Growth hormone নামেও পরিচিত। এই হরমোন শারীরিক বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। এই হরমোন যদি প্রয়াজেনের অতিরিক্ত ক্ষরিত হয় তাহলে শরীরের অতিরিক্ত বৃদ্ধি ঘটে এবং মানুষ দৈত্যের আকৃতি হয়। এ হরমোনের অতিরিক্ত ক্ষরণের ফলে একটি অল্প বয়স্ক কিশারেকেও ৬ থেকে ৮ ফুট লম্বা একটা দৈত্য বলে মনে হয়। এ ধরনের মানুষকে পিটুইটারি দৈত্য বলে। আবার এ হরমোনের ক্ষরণ কম হলে দেহ খর্বাকৃতি হয়। এ ধরনের ব্যক্তিকে পিটুইটারি বামন বলা হয়।

ঘ. উদ্দীপকে নাহার ও সুমির শারীরিক অবস্থার জন্য দায়ী হরমোনগুলো হলো পিটুইটারি গ্রন্থি নিঃসৃত অক্সিটোসিন হরমোন ও থাইরয়েড গ্রন্থি নিঃসৃত থাইরক্সিন হরমোন। নিচে হরমোনগুলারে তুলনামূলক আলোচনা করা হলো-
অক্সিটোসিন হরমোনে:
এই হরমোনটির কমতি ঘটলে গর্ভবতীদের সন্তান প্রসবে বিঘ্ন ঘটে। এই হরমোনে জরায়ুর সংকোচন ও প্রসারণ ঘটায়।
পিটুইটারী গ্রন্থির পশ্চাৎ অংশ সম্মুখ অংশ অপেক্ষা কম সক্রিয়। পশ্চাৎ অংশ থেকে যে রস ক্ষরিত হয় তা অন্যান্য গ্রন্থিকে উদ্দীপিত করে, অন্ত্র, মূত্রাশয় প্রভৃতিকে সক্রিয় করে তোলে; প্রসবকালে জরায়ুর পেশিকে সংকুচিত করে সন্তান ক্রিয়ায় সহায়তা করে; যৌন শক্তিকে প্রভাবিত করে এবং দেহের চলন ভংগিমাকে নিয়ন্ত্রণ করে।
অন্যদিকে, থাইরয়েড গ্রন্থি থেকে প্রয়াজেনীয় রস ক্ষরিত না হলে শিশুর শারীরিক ও মানসিক বৃদ্ধি বিশেষভাবে ব্যাহত হয় এবং ক্রোটিনিজম নামক রোগে আক্রান্ত হয়। ক্রোটিনিজম রাগে আক্রান্ত শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশ ঠিকমতো হয় না, বৃদ্ধিও সুষ্ঠু, স্বাভাবিক হয় না। এসব শিশুদের বেশিরভাগ হয় মানসিক প্রতিবন্ধি। যৌন বিকাশও ঠিকমতো হয় না। সুষ্ঠু ও স্বাভাবিকভাবে বেড়ে উঠা এক প্রকার অসম্ভব হয়ে উঠে। এই রোগে শিশু খর্বাকৃতি, ক্ষীণদেহী স্ফীতাদের ও ক্ষীণবুদ্ধির হয়।
থাইরক্সিন হরমোন মানব দেহের গঠনে, হাড়ের গঠনে, ক্যালসিয়াম বিপাকে প্রধান ভূমিকা গ্রহণ করে। শৈশবে এই থাইরক্সিন হরমোনের অভাবে অস্থি ও দাঁতের গঠন ব্যাহত হয়। ফলে অনেক শিশ ক্রেটিনিজম্ নামক মারাত্মক রোগের কবলে পড়ে। 
আমাদের দেশে প্রচুর লোক গলগন্ড বা ঘ্যাগ রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে। থাইরক্সিন রসের আধিক্য ঘটলে গলগন্ড বা ঘ্যাগ রোগ দেখা দেয়।

২. মিসেস মাহবুবা সুলতানা সুচ দিয়ে তার একটি জামা সেলাই করছিল। নিবিষ্ট মনে সেলাই করতে থাকলেও হঠাৎ অসতর্কভাবে আঙ্গুলে সুচ ফুটে। তাৎক্ষণিকভাবে তার হাতটি অন্যত্র সরে যায়।
ক. মস্তিষ্ক কী?
খ. হরমোনকে রাসায়নিক দূত বলা হয় কেন?
গ. মিসেস মাহবুবা সুলতানার হাতটি অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার ঘটনাটি ব্যাখ্যা কর। 
ঘ. সুচ ফোটা এবং হাত সরিয়ে নেওয়ার ঘটনায় প্রতিবেদন সৃষ্টিকারী কলাটি না থাকলে কী ঘটতো বিশ্লেষণ কর।

২ নম্বর সৃজনশীর প্রশ্নের উত্তর
ক. সুষুমণাকান্ডেরশীর্ষে কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের যে স্ফীত অংশ করটির মধ্যে অবস্থান করে তাই মস্তিষ্ক।

খ. হরমোন নামক বিশেষ কতকগুলো রাসায়নিক দ্রব্য দেহের সমন্বয়ে অংশ নেয়। হরমোন অতি অল্প পরিমাণে বিশেষ বিশেষ শারীরবৃত্তীয় কাজ বা পদ্ধতি সূক্ষভাবে নিয়ন্ত্রণ করে। এরা উত্তেজক বা রাধেক হিসেবে পরিস্ফুটন, বৃদ্ধি ও বিভিন্ন টিস্যুর কার্য নিয়ন্ত্রণ করে। ব্যক্তির আচরণ, স্বভাব ও আবেগ প্রবণতার উপরও হরমোনের প্রভাব অপরিসীম। এগুলো রক্তের মাধ্যমে পরিবাহিত হয়ে উৎপত্তিস্থল থেকে দূরবর্তী কোনো কোষ বা অঙ্গকে উদ্দীপিত করে। এজন্য এদেরকে রাসায়নিক দূত হিসেবে অভিহিত করা হয়।

গ. মিসেস মাহবুবা সুলতানার হাতে সুচ ফুটলে সে তাৎক্ষণিকভাবে হাতটি অন্যত্র সরিয়ে নেয়। এ ক্রিয়াটি যেভাবে ব্যাখ্যা করা যায় তা হলো আঙ্গুলে সুচ ফুটার সময় আঙ্গুলের ত্বকে অবস্থিত সংবেদী নিউরনের ডেনড্রাইটসমূহ ব্যথার উদ্দীপনা গ্রহণ করে। এখানে ত্বক গ্রাহক অঙ্গ হিসেবে কাজ করে। আঙ্গুলের ত্বক থেকে এ উদ্দীপনা সংবেদী নিউরনের অ্যাক্সনের মাধ্যমে স্নায়ুকান্ডেরধূসর অংশে পৌঁছায়। স্নায়ুকান্ডেরধূসর অংশে অবস্থিত সংবেদী নিউরনের অ্যাক্সন থেকে তড়িৎ রাসায়নিক পদ্ধতিতে উদ্দীপনা মাটের বা আজ্ঞাবাহী স্নায়ুর ডেনড্রাইটে প্রবেশ করে। সংবেদী স্নায়ুর অ্যাক্সন ও আজ্ঞাবাহী স্নায়ুর ডেনড্রাইটের মধ্যবর্তী সিন্যাপসের মধ্য দিয়ে এ উদ্দীপনা পেশিতে প্রবেশ করে। মোটর বা আজ্ঞাবাহী স্নায়ুর নিউরনের ডেনড্রাইট থেকে উদ্দীপনা পেশিতে পৌঁছালে কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের নির্দেশে পেশির সংকোচন ঘটে। ফলে উদ্দীপনাস্থল থেকে হাত দ্রুত আপনা আপনি সরে যায়।

ঘ. মিসেস মাহবুবা সুলতানার হাতে সুচ ফোটা এবং তাৎক্ষণিকভাবে হাত সরিয়ে নেওয়ার ঘটনায় প্রতিবেদন সৃষ্টিকারী কলাটি হলো স্নায়ুকলা। এ কলা না থাকলে মানবদেহে কোনো কার্যাবলি সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হতো না।
নিউরন মানবদেহের সকল কার্যাবলির নিয়ন্ত্রক। স্নায়ুটিস্যু বা নিউরন পরিবেশ থেকে উদ্দীপনা গ্রহণ করে দেহের ভিতরে পরিবাহিত করে। পরবর্তীতে গৃহীত উদ্দীপনা অনুযায়ী উপযুক্ত প্রতিবেদন সৃষ্টি করে এবং তা বাস্তবায়নও করে। অর্থাৎ স্নায়ুতন্ত্রের কাজের একক হিসেবে নিউরন বিভিন্ন ধরনের বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ উদ্দীপনা ও স্নায়ুতাড়না গ্রহণ করে তা দেহের ভিতরে পরিবহন করে। নিউরন কিভাবে কাজ সম্পন্ন করে তা নিমেণাক্ত উদাহরণ হতে স্পষ্ট বাঝো যায়। যেমন- আমাদের শরীরের কোনো অংশে যদি মশা বসে তবে প্রথমে ঐ স্থানের স্নায়টিস্যুর মাধ্যমে উদ্দীপনা আমাদের মস্তিষ্কে প্রবাহিত হয়। মস্তিষ্ক সেই উদ্দীপনা গ্রহণ করে উপযুক্ত পদক্ষেপ হিসেবে নির্দেশ প্রদান করে হাত দ্বারা মশাটি সরিয়ে দাও বা মেরে ফেল। মস্তিষ্কের এই নির্দেশ নিউরনের মাধ্যমে উপযুক্ত অঙ্গে বাহিত হয় এবং তা বাস্তবায়ন হয়। অর্থাৎ উদ্দীপনা অনুযায়ী প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হলে তা বহন করাও নিউরনের কাজ। এছাড়া উচ্চতর প্রাণীদের ক্ষেত্রে নিউরন স্মৃতি সংরক্ষণের কাজও করে। অর্থাৎ বলা যায় যদি স্নায়ুটিস্যু হিসেবে নিউরন না থাকত তবে দেহের বিভিন্ন অঙ্গের কাজ নিয়ন্ত্রিতভাবে সম্পন্ন হতো না এবং বিভিন্ন অঙ্গের কাজের মধ্যে কোনোরূপ সমন্বয় সাধন করাও সম্ভব হতো না।

৩. সেতুর বয়স ১০। তার শারীরিক ও মানসিক বিকাশ নিয়ে বাবা-মা খুব চিহ্নিত। কারণ তার ক্রেটিনিজম রোগ হয়েছে। সেতুর বড় ভাই তীতুর বয়স ১৪ হলেও সে খুব খাটো। এদিকে তাদের মায়ের তৃতীয় সন্তান প্রসব হবে আগামী সপ্তাহে। ডাক্তার তাকে সাবধানে থাকতে বলেন কেননা তার বহুমূত্র রোগ হয়েছে।
ক. হরমোন কী?
খ. ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে প্রভাব বিস্তারকারী হরমোনের প্রভাব ব্যাখ্যা কর।
গ. সেতুর অসুস্থতার জন্য কোন গ্রন্থি দায়ী? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. তীতু ও তার মায়ের ক্ষেত্রে একাধিক হরমোনের প্রভাব পড়লেও মূলত তা একই গ্রন্থির - বিশ্লেষণ কর।

৩ নম্বর সৃজনশীর প্রশ্নের উত্তর
ক. অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত রসকে হরমোন বলে।

খ. ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে প্রভাব বিস্তারকারী হরমোন হলো ইনসুলিন। এর প্রভাব নিমেণ ব্যাখ্যা করা হলো-
অগ্ন্যাশয় থেকে নিঃসৃত ইনসুলিন হরমোন শরীরের কোষে প্রবিষ্ট করাতে এবং সেই গ্লুকোজ গস্নাইকোলাইসিস নামক বিপাকীয় ক্রিয়ার মাধ্যমে শরীরের জন্য শক্তি উৎপাদনে সহায়তা করে। এ হরমোন অগ্ন্যাশয় থেকে পর্যাপ্ত নিঃসৃত না হলে, ঘাটতি হলে বা উৎপাদিত ইনসুলিন কোষে কার্যকর না হলে বা শরীরের ইনসুলিন নিষ্ক্রিয় থাকলে রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ স্বাভাবিকের তুলনায় বৃদ্ধি পায় এবং প্রস্রাবের সাথে গ্লুকোজ বেরিয়ে যায়। একে বলে ডায়াবেটিস রোগ। সুতরাং ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে ইনসুলিন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

গ. সেতুর অসুস্থতার জন্য দায়ী গ্রন্থিটি হলো থাইরয়েড গ্রন্থি।
কারণ- থাইরয়েড গ্রন্থি থেকে প্রয়োজনীয় রস ক্ষরিত না হলেই শিশুর শারীরিক ও মানসিক বৃদ্ধি বিশেষভাবে ব্যাহত হয় এবং ক্রেটিনিজম নামক রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে। নিচে তা ব্যাখ্যা করা হলো-
থাইরয়েড গ্রন্থি প্রধানত দুই ধরনের রস বা হরমোন ক্ষরণ করে থাকে। যথা- থাইরক্সিন ও ট্রাই-আয়োডো-থাইরনিন হরমোন।
১. থাইরক্সিন হরমোন মানব দেহের গঠনে, হাড়ের গঠনে, ক্যালসিয়াম বিপাকে প্রধান ভূমিকা গ্রহণ করে। শৈশবে এই থাইরক্সিন হরমোনের অভাবে অস্থি ও দাঁতের গঠন ব্যাহত হয়। ফলে অনেক শিশু ক্রেটিনিজম নামক মারাত্মক রোগের কবলে পড়ে। 
২. ক্রেটিনিজম রোগে আক্রান্ত শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশে ঠিকমতো হয় না, বৃদ্ধিও সুষ্ঠু, স্বাভাবিক হয় না। এসব শিশুদের বেশিরভাগ হয় মানসিক প্রতিবন্ধী। যৌন বিকাশও ঠিকমতো হয় না। সুষ্ঠু ও স্বাভাবিকভাবে বেড়ে উঠা এক প্রকার অসম্ভব হয়ে উঠে। এই রোগে শিশু খর্বাকৃতি, ক্ষীণদেহী, স্ফীতোদর ও ক্ষীণবুদ্ধির হয়।
পরিণত বয়সে এই হরমোনের কমতি হলে মিক্সেডেমা নামক রোগের আবির্ভাব ঘটে। মিক্সেডেমা রোগ হলে রক্তের চাপ কমে যায়, দেহের বিপাক ক্রিয়া ব্যাহত হয়, ত্বক শুষ্ক ও কুঞ্চিত হয়ে যায়, চেহারায় লাবণ্য কমে যায়, কাজে অলসতা দেখা দেয় এবং উদ্যম কমে যায়।

ঘ. তীতু বয়সের তুলনায় খুব খাটো, অর্থাৎ তীতুর শরীরে সোমাটোট্রপিক হরমোনের প্রভাব পড়েছে। অন্যদিকে তীতুর মায়ের বহুমূত্র রোগ হয়েছে, যা ইনসুলিন হরমোনের প্রভাবে হয়ে থাকে। সোমাটোট্রপিক ও ইনসুলিন আলাদা হরমোন হলেও উভয়ই অন্তঃক্ষরা গ্রন্থির অন্তর্ভুক্ত। নিচে তা বিশ্লেষণ করা হলো-
সোমাটোট্রপিক হরমোন:
সোমাটোট্রপিক পিটুইটারি গ্রন্থি নিঃসৃত একটি হরমোন। এ হরমোন শারীরিক বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। এটির অধিক ক্ষরণ হলে দেহকে অধিক বৃদ্ধি করে এবং অল্প ক্ষরণে দেহকে ছোট করে। তীতুর ক্ষেত্রে এ হরমোনটির ক্ষরণ কম হওয়ায় সে খাটো হয়েছে।
ইনসুলিন হরমোন:
ইনসুলিন হরমোন অগ্ন্যাশয় গ্রন্থি নিঃসৃত একটি হরমোন। রক্ত থেকে শর্করা ব্যবহার করার জন্য কোষের জন্য ইনসুলিনের প্রয়োজন হয়। এ ইনসুলিন রক্ত প্রবাহে শর্করার ভারসাম্য রক্ষা করে এবং গ্লুকোজেন রক্তে শর্করার পরিমাণ বৃদ্ধি করে থাকে।
আবার অতিরিক্ত গ্লুকোজকে লিভারে গস্নাইকোজেন হিসেবে সঞ্চয় করে। ফলে রক্তের গ্লুকোজ একটি স্বাভাবিক মাত্রায় থাকে। এ হরমোন অগ্ন্যাশয় থেকে পর্যাপ্ত নিঃসৃত না হলে, ঘাটতি হলে বা উৎপাদিত ইনসুলিন কোষে কার্যকর না হলে বা শরীরের ইনসুলিন নিষ্ক্রিয় থাকলে রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ স্বাভাবিকের তুলনায় বৃদ্ধি পায় এবং প্রস্রাবের সাথে
গ্লুকোজ বেরিয়ে যায়। একে বলা হয় ডায়াবেটিস রোগ। সুতরাং বলা যায়, অগ্ন্যাশয় যদি ইনসুলিন হরমোন তৈরির ক্ষমতা হারায় তবে ডায়াবেটিস দেখা দেয়। ফলে ব্যক্তির আচরণে নানা রকম নেতিবাচক প্রভাব পরিলক্ষিত হয়। তাই তীতুর মাকে ডাক্তার সাবধানে থাকতে বলেন।
পরিশেষে বলা যায়, তীতু ও তার মায়ের ক্ষেত্রে একাধিক হরমোনের প্রভাব পড়লেও মূলত তা একই গ্রন্থির।

৪. লামিয়া এবং জাকিয়া দুই বান্ধবী। লামিয়া বেশ লম্বা কিন্তু কালো। আর জাকিয়া বেটে কিন্তু ফর্সা। অন্যদিকে তাদের আর এক বান্ধবী রূবা গলগন্ড রোগে ভুগছে।
ক. কোন গ্রন্থিকে জরুরী গ্রন্থি বলা হয়?
খ. থাইরয়েড গ্রন্থিকে অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি বলা হয় কেন?
গ. লামিয়া এবং জাকিয়ার মধ্যে যেসব হরমোনের প্রভাব তা আলোচনা কর।
ঘ. রূবার মধ্যে প্রভাব বিস্তারকারী গ্রন্থিটি ব্যাখ্যা কর।

৪ নম্বর সৃজনশীর প্রশ্নের উত্তর
ক. এড্রিনাল গ্রন্থিকে জরুরী গ্রন্থি বলা হয়।

খ. অন্তক্ষরা গ্রন্থি হলো এক ধরনের নালীবিহীন বা অনালী গ্রন্থি। অন্তক্ষরা গ্রন্থি থেকে এক প্রকার জৈব-রাসায়নিক গ্রন্থিরস বা হরমোন নিঃসৃত হয়। থাইরয়েড গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত হয় থাইরক্সিন ও ট্রাই-আয়োডো-থাইরোনিন নামক হরমোন এ গ্রন্থিরস বা হরমোন। এ গ্রন্থিরস বা হরমোন সরাসরি রক্ত প্রবাহে মিশে রক্তের প্রয়োজনীয় জৈব রাসায়নিক উপাদান সরবরাহ নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে মানবদেহ ও আচরণের উপর বিশেষ প্রভাব বিস্তার করে। এ কারণেই থাইরয়েড গ্রন্থিকে অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি বলা হয়।

গ. উদ্দীপকে লামিয়া ও জাকিয়ার মধ্যে যেসব হরমোনের প্রভাব রয়েছে তা হলো পিটুইটারি গ্রন্থি নিঃসৃত শরীর বর্ধক হরমোন ও পিনিয়াল গ্রন্থি নিঃসৃত মেলাটোনিন হরমোন। নিচে এ হরমোন দুটির প্রভাব আলোচনা করা হলো-
শরীর বর্ধক হরমোন Growth hormone নামেও পরিচিত। এই ও হরমোন শারীরিক বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। এই হরমোন স প্রয়োজনের অতিরিক্ত ক্ষরিত হয়। তাহলে শরীরের অতিরিক বৃদ্ধি ঘটে এবং মানুষ দৈত্যের আকৃতি হয়। এ হরমোনের অতিরিক্ত ক্ষরণের ফলে একটি অল্প বয়স্ক কিশোরকেও ৬ থেকে ৮ ফট লম্বা একটা দৈত্য বলে মনে হয়। এ ধরনের মানুষকে পিটুইটারি দৈত্য বলে। আবার এ হরমোনের ক্ষরণ কম হলে দেহ খর্বাকৃতি হয়। এ ধরনের ব্যক্তিকে পিটুইটারি বামন বলা হয়।
আবার, মেলাটোনিন হরমোন ত্বকের রং নিয়ন্ত্রণ করে। এ হরমোনের স্বাভাবিক ক্ষরণে ত্বকের বর্ণ স্বাভাবিক হয়। পক্ষান্তরে কম বেশি তার নেতিবাচক প্রভাব ত্বকের রং এর উপর পড়ে থাকে। এ হরমোনের পরিমাণ বেশি নিঃসৃত হলে ত্বক কালো হয় এবং কম নিঃসত হলে ত্বক ফর্সা হয়ে থাকে।

ঘ. উদ্দীপকে রূবার মধ্যে প্রভাব বিস্তারকারী গ্রন্থিটি হলো থাইরয়েড গ্রন্থি। নিচে গ্রন্থিটি সম্পর্কে ব্যাখ্যা করা হলো-
আমাদের দেহের অভ্যন্তরে এমন কতকগুলো গ্রন্থি আছে যেগুলো দেহের গঠন, বুদ্ধির বিকাশ, দেহের সুস্থতা ও কর্মক্ষমতা এবং আমাদের ব্যক্তিত্বের ওপর বিশেষভাবে প্রভাব বিস্তার করে। এ সকল গ্রন্থির মধ্যে থাইরয়েড বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। গলদেশের শ্বাসনালীর দুইপাশে এই গ্রন্থিটি অবস্থিত। এ গ্রন্থি প্রধানত দুই ধরনের রস বা হরমোন ক্ষরণ করে থাকে; যথা-
১. থাইরক্সিন ও 
২. ট্রাই-আয়োডো-থাইরোনিন।
থাইরক্সিন শরীরের কোষ বিভাজন ও মৌল তাপ উৎপাদনের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করে। এর আধিক্যে শারীরিক চাঞ্চল্য ও উত্তেজনা বৃদ্ধি পায় এবং শরীরের তাপ উৎপাদনের হার বেড়ে যায়।
দেহে অতিরিক্ত থাইরক্সিন হরমোন ক্ষরিত হলে গলগন্ড রোগ দেখা যায়। শরীরে আয়োডিনের অভাব হলে থাইরয়েড গ্রন্থি অতিরিক্ত থাইরক্সিন হরমোন নিঃসরণ করে, ফলে গলা অস্বাভাবিকভাবে ফুলে যায়। তখন এটিকে গলগন্ড রোগ বলে। 
থাইরয়েড গ্রন্থি থেকে প্রয়োজনীয় রস ক্ষরিত না হলে শিশুর শারীরিক ও মানসিক বুদ্ধি বিশেষভাবে ব্যবহৃত হয় এবং ক্রেটিনিজম নামক রোগে আক্রান্ত হয়। ক্রেটিনিজম রোগে আক্রান্ত শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশ ঠিকমতো হয় না, বুদ্ধিও সুষ্ঠু স্বাভাবিক হয় না। এসব শিশুদের বেশিরভাগ হয় মানসিক প্রতিবন্ধি। যৌন বিকাশ ঠিকমতো হয় না। সুষ্ঠু ও স্বাভাবিকভাবে বেড়ে উঠা এক প্রকার অসম্ভব হয়ে উঠে। এ রোগে শিশু খর্বাকৃতি, ক্ষীণদেহী, স্ফীদের ও ক্ষীণবুদ্ধির হয়।
পরিণত বয়সে এই হরমোনের কমতি হলে মিক্সেডেমা নামক রোগে আবির্ভাব ঘটে। মিক্সেডেমা রোগ হলে রক্তের চাপ কমে যায়, সে বিপাক ক্রিয়া ব্যাহত হয়, ত্বক শুষ্ক ও কুঞ্চিত হয়ে যায়, সে লাবণ্য কমে যায়, কাজে অলসতা দেখা দেয় এবং উদ্যম কমে যায়।

৫. রাজা মাঠে ক্রিকেট খেলছিল। খেলার এক পর্যায়ে যখন সে ব্যাট করছিল হঠাৎ একটি বল একটু উঁচু হয়ে তার মাথার পিছন দিকে আঘাত করল। সে তৎক্ষণাৎ পড়ে গেল। কিছুক্ষণ পর তার মুখ দিয়ে লালাক্ষরণ ও বমি বের হওয়া শুরু হয়। তাকে তাড়াতাড়ি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলো।
ক. মস্তিষ্কের Relay station বলা হয় কাকে?
খ. ভেগাস স্নায়ুর দুটি কাজ লেখ।
গ. উদ্দীপকে বর্ণিত আঘাতপ্রাপ্ত অংশ দ্বারা মস্তিষ্কের যে অংশটি বুঝানো হয়েছে তার গঠন বর্ণনা কর। 
ঘ. আঘাতপ্রাপ্ত অংশটি মানুষের শারীরবৃত্তীয় কার্যক্রমে কি ধরনের প্রভাব ফেলে বলে তুমি মনে কর।

৫ নম্বর সৃজনশীর প্রশ্নের উত্তর
ক. মস্তিষ্কের থ্যালমাসকে Relay station বলা হয়।

খ. ভেগাস স্নায়ুর দুটি কাজ হলো-
১. স্বরযন্ত্রের কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করে।
২. হৃৎপিন্ডের কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করে।

গ. উদ্দীপকে বর্ণিত আঘাতপ্রাপ্ত অংশ দ্বারা মস্তিষ্কের পশ্চাৎ অংশ বুঝানো হয়েছে। পশ্চাৎ মস্তিষ্ক তিনটি অংশ নিয়ে গঠিত। যথা-
১. সেরেবেলাম: পশ্চাৎ মস্তিষ্কের সবচেয়ে বড় অংশ হলো সেরেবেলাম। এটি কু-লিকৃত দুটি সমগোলার্ধে গঠিত। গোলার্ধ দুটি ডার্মিস নামের ক্ষুদ্র যোজকের সাহায্যে গঠিত। পূর্ণবয়স্ক মানুষে সেরেবেলামের গড় ওজন প্রায় ১৫০ গ্রাম।
২. মেডুলা অবলঙ্গাটা: মস্তিষ্কের সবচেয়ে পিছনে অবস্থিত ত্রিকোণাকৃতি পুরু গঠনটি মেডুলা অবলঙ্গাটা নামে পরিচিত। এটি লম্বায় ৩ সে.মি. প্রস্থে ২ সে.মি. এবং পুরুত্ব ১.২ সে.মি.। মেডুলা অবলঙ্গাটায় কর্টেক্স নেই।
৩. পনস: এটি মেডুলা অবলঙ্গাটার উপরের অংশের মেঝেতে অবস্থিত একটি স্ফীত অংশ। পনস এক প্রান্তে স্নায়ু তন্তু বহন করে। এটি সেরেবেলাম, সুষুমণাকা- ও মস্তিষ্কের অংশের মধ্যে রিলে স্টেশন হিসেবে কাজ করে।

ঘ. উদ্দীপকে বর্ণিত আঘাতপ্রাপ্ত অংশটি মস্তিষ্কের পশ্চাৎ অংশ। মস্তিষ্কের এ অংশ শারীরবৃত্তীয় কাজে অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে। নিচে তা আলোচনা করা হলো-
পশ্চাৎ মস্তিষ্কের সেরেবেলাম অংশ। এটি ঐচ্ছিক চলাফেরা নিয়ন্ত্রণ করে। এটি দেহের ভারসাম্য ও দেহভঙ্গি বজায় রাখে এবং চলাফেরার দিক নির্ধারণ করে। মেডুলা অবলঙ্গাটা বিভিন্ন শারীরবৃত্তীয় কাজের যেমন- হৃদস্পন্দন, লালাক্ষরণ, শ্বসন, রক্তবাহিকার সংকোচন প্রভূতির স্বয়ংক্রিয় নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র হিসেবে কাজ করে। এটি পৌষ্টিকনালির প্যারিস্ট্যালসিস নিয়ন্ত্রণ করে। এছাড়া এটি স্বরযন্ত্রের কার্যক্রম, পাকস্থলীর বিভিন্ন শারীরবৃত্তীয় কার্যক্রম এমনকি ফুসফুসের কার্যক্রমও নিয়ন্ত্রণ করে। মলত্যাগ, মূত্রত্যাগ, বমির মতো কার্যাবলিও মেডুলা অবলঙ্গাটা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। অন্যদিকে পশ্চাৎ মস্তিষ্কের পনস অংশ দেহের দুপাশের পেশির কর্মকা- সমন্বয় করে। স্বাভাবিক স্বাসক্রিয়ার হারকে নিয়ন্ত্রণ করে। এখান থেকে সৃষ্ট ৫ম - ৮ম করোটিক স্নায়ু দেহের নানাবিধ কাজ সম্পন্ন করে।
উপযুক্ত আলোচনা থেকে বোঝা যায় যে, পশ্চাৎ মস্তিষ্ক মানুষের। শারীরবৃত্তীয় কার্যের উপর বিশেষ ধরনের প্রভাব ফেলে।

৬. আবল স্যার ছাত্রদের মস্তিষ্ক কীভাবে কাজ করে তা সহজভাবে বুঝানোর জন্য একটি রেখাচিত্র বোর্ডে আঁকলেন। 
স্নায়ু আবেগ → থ্যালামাস → সেরেব্রাম
ক. মেনিনজেস কী?
খ. মধ্যমস্তিষ্কের দুটি কাজ লেখ।
গ. আবুল স্যারের রেখাচিত্রটি মস্তিষ্কের কোন অংশে সংঘটিত হয়? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. রেখাচিত্রের শেষ অংশটি মানব মস্তিষ্কের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ-উক্তিটির যথার্থতা নিরূপণ কর।

৬ নম্বর সৃজনশীর প্রশ্নের উত্তর
ক. সমগ্র কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র ৩টি প্রতিরক্ষামূলক আবরণী বা পর্দা দ্বারা আবৃত থাকে। এ পর্দা তিনটিকে একত্রে মেনিনজেস বলে।

খ. মধ্যমস্তিষ্কের দুটি কাজ নিম্নরূপ-
১. এটি অগ্র ও পশ্চাৎ মস্তিষ্কের মধ্যে যোগসূত্র রচনা করে।
২. দর্শন ও শ্রবণ তথ্যের সমন্বয় ঘটায় এবং প্রতিবেদন সৃষ্টি করে।

গ. আবুল স্যারের রেখাচিত্রটি মস্তিষ্কের অগ্রভাগে অগ্রমস্তিষ্কে সংঘটিত হয়। থ্যালামাস অগ্রমস্তিষ্কের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ যা সংখ্যায় দুটি হিসেবে বিদ্যমান থাকে। প্রতিটি সেরেব্রাল হোমাস্কয়ারের সেরেব্রাল মেডুলায় অবস্থিত এবং গ্রেম্যাটারে গঠিত একেকটি ডিম্বাকার অঞল। দুটি থ্যালামাসই একটি যোজক দিয়ে যুক্ত থাকে। থ্যালামাস সংজ্ঞাবহ স্নায়ুর রিলে স্টেশন হিসেবে কাজ করে। ফলে অনুভূতি থ্যালামাস দ্বারা গৃহীত হয়ে সেরেব্রামে স্থানান্তরিত হয়।
সেরেব্রাম দুটি বড়, কুন্ডলি পাঁকানো ও খাঁজবিশিষ্ট খ-। খ- দুটিকে সেরেব্রাল হেমিস্ফিয়ার বলে। এটি মস্তিষ্কের সবচেয়ে বড় অংশ। সেরেব্রাম মস্তিষ্কের বাকি অংশসমূহকে আবৃত করে রাখে। এ খন্ডগুলো ভেতরের দিকে কর্পাস ক্যালোসাম নামে চওড়া স্নায়ুগুচ্ছ দিয়ে যুক্ত। পৃষ্ঠতল নানা স্থানে ভাঁজ হয়ে উঁচুনিচু অবস্থায় থাকে। উঁচু জায়গাটি জাইরাস এবং নিচু জায়গাটি ফিসার নামে পরিচিত। কয়েকটি ভাঁজ সুগঠিত ও গভীর হয়ে ৩টি প্রশস্ত ফিসার সৃষ্টি করে। ফলে প্রতিটি সেরেব্রাল হেমিস্ফিয়ার ৫টি সুস্পষ্ট খন্ডে বিভক্ত থাকে। সেরেব্রামের বহিঃস্তর ৩ সে.মি. পুরু এবং গ্রেম্যাটারে গঠিত যা সেরেব্রাল কর্টেক্স নামে পরিচিত। সেরেব্রামের অন্তঃস্তর হোয়াইট ম্যাটারে গঠিত। সেরেব্রামের অন্তঃস্তরটি সেরেব্রাল মেডুলা নামে পরিচিত।

ঘ. উদ্দীপকের রেখাচিত্রের শেষ অংশটি সেরেব্রাম। এটি মস্তিষ্কের সবচেয়ে বড় অংশ। এটি মস্তিষ্কের ওজনের ৮০% অংশ দখল করে। থ্যালামাস দ্বারা গৃহীত অনুভূতি সেরেব্রামে স্থানান্তরিত হয় এবং তা সেরেব্রামের মাধ্যমে বিশ্লেষিত ও নিয়ন্ত্রিত হয়। সেরেব্রাম সকল সংবেদী অঙ্গ থেকে আসা অনুভূতি গ্রহণ ও বিশ্লেষণ করে। চিন্তা, বুদ্ধি, ইচ্ছাশক্তি ও উদ্ভাবনী শক্তি প্রভৃতি মানসিক বোধের নিয়ন্ত্রণ করে। বিভিন্ন সহজাত প্রবত্তির নিয়ন্ত্রক হিসেবেও সেরেব্রাম কাজ করে। বাকশক্তি নিয়ন্ত্রণেও সেরেব্রাম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া দেহের সকল ঐচ্ছিক পেশির কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণ সেরেব্রামের মাধ্যমেই হয়। এক্ষেত্রে ডান সেরেব্রাল হেমিস্ফিয়ার দেহের বাম পাশের ঐচ্ছিক পেশিসমূহ ও বাম পাশকে এবং বাম সেরেব্রাল হেমিস্ফিয়ার দেহের ডান পাশের ঐচ্ছিক পেশিসমূহ ও ডান পাশকে নিয়ন্ত্রণ করে। যেহেতু সকল উদ্দীপনা নিয়ন্ত্রণ ও মস্তিষ্কের অন্যান্য অংশের মধ্যে সমন্বয় সাধন সেরেব্রামের মাধ্যমেই হয় তাই সেরেব্রাম মানুষের মস্তিষ্কের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ উক্তিটি যথার্থ।

HSC মনোবিজ্ঞান ১ম পত্র (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর অধ্যায় ৩ pdf download

৭. পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ুয়া সুমিত তার বাবা মায়ের সাথে হাসপাতালের কোয়ার্টারে থাকে। একদিন সে বাসার পাশে একটি লোককে দেখতে পেল যার গলা ফুলে অস্বাভাবিকভাবে আছে। সে তার মাকে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, এটি একটি রোগ এবং এক ধরনের রাসায়নিক পদার্থের অনিয়ন্ত্রিত ক্ষরণের ফলে এটি হয়। 
ক. গোনাড কত ধরনের?
খ. কর্টেক্স থেকে নিঃসৃত হরমোনগুলোর একটি করে কাজ লেখ।
গ. সুমিতের দেখা গলা ফুলে যাওয়া রোগটি কীভাবে হয় ব্যাখ্যা কর। 
ঘ. উদ্দীপকে বর্ণিত রাসায়নিক পদার্থটি ক্ষরণের তারতম্য মানবজীবনে কি ধরনের প্রভাব ফেলবে বলে তুমি মনে কর।

৭ নম্বর সৃজনশীর প্রশ্নের উত্তর
ক. গোনাড দুই ধরনের। যথা:
শুক্রাশয় এবং ডিম্বাশয়।

খ. কর্টেক্স থেকে দু’ধরনের হরমোন নিঃসৃত হয়। যথা-
১. গ্লুকোকর্টিকয়েড।
কাজ: রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বৃদ্ধি করে।
২. মিনারেলোকর্টিকয়েড।
কাজ: দেহে পানি ও লবণের মাত্রা বজায় রাখতে সাহায্য করে।

গ. সুমিত যে লোকটিকে দেখেছিল তার গলা ফুলে অস্বাভাবিক অবস্থায় আছে। যেহেতু এ রোগটি এক ধরনের রাসায়নিক পদার্থের অস্বাভাবিক ক্ষরণের ফলে হয় তাই বলা যায় এ রোগটি গলগন্ড। আর রাসায়নিক পদার্থটি হলো থাইরক্সিন হরমোন, যা থাইরয়েড গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত হয়। থাইরক্সিন হরমোন উৎপাদনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি খনিজ লবণ হলো আয়োডিন। তাই আয়োডিনের অভাবকেও এ রোগের কারণ হিসেবে ধরা হয়। থাইরয়েড গ্রন্থি হতে অতিরিক্ত থাইরক্সিন হরমোন ক্ষরিত হলেও এ রোগটি হয়। 
গ্রেভ রোগ নিয়ন্ত্রণের জন্য শরীরে কিছু অ্যান্টিবডি ভুলবশত উৎপাদন হয় যা পরবর্তীতে থাইরয়েড গ্রন্থিকে আক্রমণ করে। যা অতিরিক্ত থাইরক্সিন উৎপন্ন করতে সাহায্য করে। আর এই অতিরিক্ত থাইরক্সিনের ক্ষরণে গলা ফুলে যায় এবং গলগন্ড রোগ দেখা দেয়।

ঘ. উদ্দীপকে বর্ণিত রাসায়নিক পদার্থটি হলো থাইরক্সিন। এটির কম বা বেশি ক্ষরণ মানবদেহে সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলতে পারে। নিচে সেটি আলোচনা করা হলো:
থাইরক্সিন মানুষের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ হরমোন। এটির সঠিক ক্ষরণ মানুষের বৃদ্ধি, প্রোটিন সংশ্লেষণ, খাদ্যের বিপাক হার বৃদ্ধি করে। এমনকি অসিফিকেশন, কঙ্কালপেশির বৃদ্ধি ও রক্ষণাবেক্ষণ এটি নিয়ন্ত্রণ করে। লোহিত রক্তকণিকা সৃষ্টি, দুগ্ধ উৎপাদন পৌষ্টিকতন্ত্রের স্বাভাবিক কার্যক্রম থাইরক্সিনের সঠিক মাত্রার ক্ষরণের ফলে হয়। অন্যদিকে অতিরিক্ত বা অল্প ক্ষরণ সম্পূর্ণ উল্টো ফলাফল বয়ে আনবে মানুষের জীবনে। এটির অতিরিক্ত ক্ষরণ গলগন্ড রোগের সৃষ্টি করে। আবার যদি প্রয়োজনের চেয়ে কম ক্ষরণ হয় তখনও সমস্যা দেখা দেয়। বিশেষ করে শিশুদের ক্রিটিনিজম এবং বয়স্কদের মিক্সোডেমা রোগ সৃষ্টি করে। 
উপযুক্ত আলোচনার বিশ্লেষণ করলে বোঝা যায় থাইরক্সিন হরমোনে অতি ক্ষরণ ও অল্প ক্ষরণ দুটোই মানুষের জীবনে ক্ষতি নিয়ে আসে।

৮. রাহাতের বয়স ১৫ বছর। সে নবম শ্রেণিতে পড়ে। তার কিছু চুল পেকে গেছে। এজন্য তার বন্ধুরা তাকে নিয়ে হাসি ঠাট্টা করে। সে ডাক্তারের কাছে গেলে বিভিন্ন পরীক্ষা করে বলেন, যে এক ধরনের রাসায়নিক পদার্থের অভাবের কারণে এ সমস্যার সৃষ্টি হয়।
ক. FSH এর পূর্ণরূপ কী?
খ. থাইরক্সিনের দুটি কাজ লেখ।
গ. রাহাতের সমস্যার কারণ ব্যাখ্যা কর। 
ঘ. উদ্দীপকে বর্ণিত রাসায়নিক পদার্থটি মানবজীবনে কি ধরনের প্রভাব ফেলে বলে তুমি মনে কর।

৮ নম্বর সৃজনশীর প্রশ্নের উত্তর
ক. FSH এর পূর্ণরূপ হলো- Follicle stimulating hormone.

খ. থাইরক্সিনের দুটি কাজ হলো-
১. বিপাক প্রক্রিয়ার হার নিয়ন্ত্রণ করে,
২. প্রোটিন সংশ্লেষণে প্রয়োজনীয় ভূমিকা পালন করে।

গ. অল্পবয়েসে চুল পাকা এক ধরনের রোগ। রাহাতের বয়স ১৫ বছর। আর এ বয়সেই তার চুল পেকেছে। বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে দেখেছেন মধ্য পিটুইটারি থেকে নিঃসৃত মেলানোসাইট উদ্দীপক নামে একটি হরমোন এ সমস্যার জন্য দায়ী। নিচে এটি বর্ণনা করা হলো:
মধ্য পিটুইটারি গ্রন্থি নিঃসৃত মেলানোসাইট হরমোন চুলের বর্ণ নিয়ন্ত্রণ করে। মেলানোসাইটের মেলানিনের দুটি ভাগ আছে, একটি ইউমেলানিন আর একটি হলো ফিওমেলানিন। যাদের শরীরে ইউমেলানিনের পরিমাণ বেশি তাদের ত্বক ও চুল কালো হয়। আর যাদের শরীরে ফিওমেলানিনের পরিমাণ বেশি তাদের ত্বক ও চুল অপেক্ষাকৃত স্বর্ণাভ বা ফ্যাকাশে হয়। মেলানোসাইটের রিসেপ্টর কার্যকরী হয়ে মেলানোসাইটকে ইউমেলানিন তৈরিতে সাহায্য করে ফলে চুল কালো হয় আর ফিওমেলানিন উৎপন্ন করলে সাদা চুল তৈরি হয়।

ঘ. উদ্দীপকে বর্ণিত রাসায়নিক পদার্থটি মধ্য স্টিমুলেটিং পিটুইটারি গ্রন্থি নিঃসৃত মেলানোসাইট হরনোন। মানবজীবনে হরমোনটির গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব লক্ষ করা যায়। নিচে সেটি আলোচনা করা হলো:
মেলানোসাইট স্টিমুলেটিং হরমোন মেলানোসাইটের পিগমেন্ট নিয়ন্ত্রণ করে। এই পিগমেন্টই মানুষের চুল ও ত্বকের বর্ণের জন্য দায়ী। এটির পরিমাণ বেশি হলে চুল ও ত্বক কালো হয়। আর কালো চুল ও ত্বকের মধ্য দিয়ে আন্ট্রাভায়োলেট রশ্মি প্রবেশ করতে পারে না। ফলে এর ক্ষতির হাত থেকে কালো বর্ণের মানুষ রক্ষা পায়। পক্ষান্তরে যাদের শরীরে মেলানিনের পরিমাণ কম তারা আন্ট্রাভায়োলেট রশ্মির দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অনেকের ক্যান্সারের মতো রোগও হয়। এছাড়া চোখের বর্ণ নিয়ন্ত্রণেও এটি ভূমিকা পালন করে। মেলানোসাইট স্টিমুলেটিং হরমোন প্রসূতি মায়ের শরীরে বেশি পরিমাণে ক্ষরিত হয়। মানব সমাজে বর্ণবৈষম্যের জন্য এই হরমোনের ক্ষরণের তারতম্যই দায়ী। এভাবে এ হরমোনটি মানব জীবনে বিভিন্নভাবে প্রভাব ফেলে।

৯. প্রাণিবিজ্ঞান ক্লাসে শফিক সাহেব তার ছাত্রদের বিভিন্ন অন্তঃক্ষরা ও বহিঃক্ষরা গ্রন্থি নিয়ে আলোচনা করেন। সবশেষে তিনি অগ্রমস্তিষ্কে অবস্থিত একটি অন্তঃক্ষরা গ্রন্থিকে অন্য সকল অন্তঃক্ষরা গ্রন্থির নিয়ন্ত্রক হিসেবে বর্ণনা করলেন।। 
ক. হরমোন কী?
খ. এনজাইমের তিনটি সাধারণ বৈশিষ্ট্য লেখ।
গ. উদ্দীপকে শফিক সাহেব যে অন্তঃক্ষরা গ্রশ্মিটির কথা বলেছেন তার বর্ণনা দাও।
ঘ. শফিক সাহেবের শেষ উক্তিটির যথার্থতা আছে কী?তোমার মতামত দাও।

৯ নম্বর সৃজনশীর প্রশ্নের উত্তর
ক. হরমোন এক ধরনের জৈব রাসায়নিক পদার্থ যা অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি হতে উৎপন্ন হয়ে রক্ত বা লসিকার মাধ্যমে পরিবাহিত হয় এবং শরীরের দরবর্তী স্থানে শারীরবৃত্তীয় কাজ সম্পন্ন করে নিঃশেষ হয়ে যায়।

খ. এনজাইমের তিনটি সাধারণ বৈশিষ্ট্য নিম্নরূপ:
১. এটি প্রোটিনধর্মী রাসায়নিক পদার্থ। 
২. জৈব প্রভাবকের ভূমিকা পালন করে নিজে অপরিবর্তিত অবস্থায় থেকে যায়। 
৩. বৈষম্যভেদ্য পর্দার মধ্যদিয়ে ব্যাপিত হতে পারে না।

গ. প্রাণিবিজ্ঞান ক্লাসে শফিক সাহেব অগ্রমস্তিষ্কের যে গ্রন্থির কথা বলতে চেয়েছে সেটি হলো পিটুইটারি গ্রন্থি। এটির আকৃতি অনেকটা মটর দানার মতো। এ গ্রন্থি অনেক ধরনের হরমোন নিঃসরণ করে থাকে। পিটুইটারি গ্রন্থি নিঃসৃত হরমোনগুলো অন্যান্য হরমোন নিঃস্রাবী গ্রন্থিগুলোর কাজ নিয়ন্ত্রণ করে। এর ওজন মাত্র ৫০০ মিলি গ্রাম। স্ত্রীদেহের পিটুইটারি গ্রন্থি সচরাচর পুরুষ দেহের পিটুইটারি অপেক্ষা ভারী হয়ে থাকে। পিটুইটারি গ্রন্থি থেকে যে সমস্ত হরমোন নিঃসৃত হয় সেগুলো হলো:
সোমাটোট্রপিক হরমোন, থাইরয়েড উদ্দীপক হরমোন এবং গোনাডোট্রপিক হরমোন।

ঘ. শফিক সাহেব শ্রেণিকক্ষে অগ্রমস্তিষ্কের পিটুইটারির গ্রন্থির কথা বর্ণনা করেছেন এবং একে অন্য সকল অন্তঃক্ষরা গ্রন্থির নিয়ন্ত্রক হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। পিটুইটারি হলো অত্যন্ত ছোট (মটর দানা আকৃতির) একটি অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি। আকারে ছোট হলেও এ গ্রন্থিটি যে সব হরমোন ক্ষরণ করে সেগুলো মানবদেহে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। পিটুইটারি গ্রন্থি হতে তিন ধরনের হরমোন নিঃসৃত হয়। এগুলোর মধ্যে সোমাটোট্রপিক হরমোন দেহের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ও বিপাকীয় কাজ নিয়ন্ত্রণ করে। থাইরয়েড উদ্দীপক হরমোন (TSH) থাইরক্সিনের নিঃসরণে ভূমিকা রাখে এবং গোনাডোট্রপিক হরমোন জনন অঙ্গের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। অর্থাৎ, আমরা দেখতে পাচ্ছি যে, পিটুইটারি গ্রন্থির নিঃসরণ ঠিকমতো না হলে মানবদেহের স্বাভাবিক বৃদ্ধি হয় না। এ গ্রন্থি নিঃসৃত হরমোন অন্যান্য অন্তঃক্ষরা গ্রন্থির ক্ষরণ নিয়ন্ত্রণ করে। এটি জননাঙ্গের বৃদ্ধিতেও সহায়তা করে, না হলে মানুষের পক্ষে বংশ বৃদ্ধি করা সম্ভব হতো না। আকৃতিতে অনেক ছোট হলেও এর কাজের গুরুত্ব অনুধাবন করে একে রাজ এ গ্রন্থিরাজও বলা হয়। তাই আমরা বলতে পারি, ক্লাসে শফিক সাহেব এই গ্রন্থি সম্পর্কে যে উক্তিটি করেছেন তা সম্পূর্ণরূপে যৌক্তিক ও যথার্থ।

১০. আলেয়া তার ডা. বাবার সাথে হেঁটে স্কুলে যাচ্ছিল। পথে একজন বয়স্ক লোক দেখে সে অনেক ভয় পেল। কারণ লোকটির হাত ও মুখ অস্বাভাবিকভাবে বড়। তার বাবা বলল, ভয়ের কিছু নেই এটি একটি রোগ, এবং এক ধরনের জৈব রাসায়নিক পদার্থের কারণে এটি হয়েছে।
ক. ক্রিটিনিজম কী?
খ. গলগন্ড রোগ কেন হয়?
গ. উদ্দীপকে বর্ণিত রোগের আলোকে রাসায়নিক পদার্থটির কারণে মানবদেহে কত ধরনের সমস্যা হতে পারে-ব্যাখ্যা কর। 
ঘ. উদ্দীপকে বর্ণিত রাসায়নিক পদার্থটি মানুষের স্বাভাবিকতার জন্য অপরিহার্য উক্তিটি বিশ্লেষণ কর।

১০ নম্বর সৃজনশীর প্রশ্নের উত্তর
ক. ক্রিটিনিজম একটি রোগ যা থাইরক্সিন হরমোন কম ক্ষরিত হলে শিশুদের হয়।

খ. দেহে অতিরিক্ত থাইরক্সিন হরমোন ক্ষরিত হলে গলগন্ড রোগ দেখা যায়। শরীরে আয়োডিনের অভাব হলে থাইরয়েড গ্রন্থি অতিরিক্ত থাইরক্সিন হরমোন নিঃসরণ করে, ফলে গলা অস্বাভাবিকভাবে ফুলে যায়। তখন এটিকে গলগন্ড রোগ বলে।

গ. উদ্দীপকে বর্ণিত রাসায়নিক পদার্থটি হলো বৃদ্ধি হরমোন। আর এ হরমোনের প্রভাবেই বয়স্ক লোকটির হাত ও মুখম-লের অস্থি অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি হরমোন ক্ষরণের তারতম্যের কারণে মানবদেহে তিন ধরনের সমস্যা দেখা যায়। সেগুলো হলো:
১. শিশুকালে পর্যাপ্ত পরিমাণে গ্রোথ হরমোন ক্ষরিত না হলে মানুষ অনেক ছোট আকারের হয়। এজন্য এ অবস্থাকে বামনরে সাথে তুলনা করে বামনত্ব বলা হয়।
২. শিশুকালে অস্থি গঠনের পূর্বে অতিরিক্ত পরিমান গ্রোথ হরমোন ক্ষরিত হলে মানুষ অনেক লম্বাকৃতির হয়। এ হরমোনটি পেশি কলার উপর সরাসরি কাজ করে তাই মানুষ বিরাটাকার হয়। আর তাই এই আকৃতিকে দৈত্যের সাথে তুলনা করে বলা হয় দৈত্যত্ব।
৩. এ রোগটি হয় বয়স্ক অবস্থায়। এই সময়ে অতিরিক্ত বৃদ্ধি হরমোন ক্ষরিত হলে মানুষের হাত ও মুখম-লের অস্থি অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পায়। এ অবস্থায় সেই মানুষকে দেখতে গরিলার মতো মনে হয়। তাই এ অবস্থাকে বলা হয় গরিলাত্ব।

ঘ. উদ্দীপকে বর্ণিত রাসায়নিক পদার্থটি হলো বৃদ্ধি হরমোন। একজন মানুষের স্বাভাবিকতার জন্য এই হরমোনটি অপরিহার্য। নিচে উক্তিটি বিশ্লেষণ করা হলো-
মানব বৃদ্ধিজনিত অধিকাংশ শারীরবৃত্তীয় কার্যকলাপ এ হরমোন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। এটি মানুষের কঙ্কালতন্ত্রের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। কোমলাস্থির আয়তন বৃদ্ধি, অস্টিওবস্নলাস্টের আবির্ভাব, অস্থিতে ক্যালসিয়াম আয়ন সয়ও করে। এ হরমোনটি কোষের অ্যামিনো এসিড গ্রহণ ও প্রোটিন সংশ্লেষণ হার বৃদ্ধি করে। ফলে দেহের পেশির বৃদ্ধি হয়। ক্ষুধার্ত অবস্থায় এটি রক্তে গ্লুকোজ ও মুক্ত ফ্যাটি এসিডের পরিমাণ বৃদ্ধি করে। ফলে দেহের ক্ষয়রোধ হয়। এটি বিভিন্ন আয়ন শোষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। দুগ্ধ উৎপাদনে স্তনগ্রন্থিকে প্রভাবিত করে যা শিশুর দৈহিক বৃদ্ধিতে প্রধান ভূমিকা রাখে। এটি এরিথ্রোপোয়েসিস প্রক্রিয়াকে উদ্দীপ্ত করে রক্তের লোহিত রক্তকণিকার সংখ্যা বৃদ্ধি করে। মস্তিষ্ক ব্যতীত দেহের সকল নরম অঙ্গের আকার বৃদ্ধি ও স্বাভাবিক অবস্থা ধরে রাখতে সাহায্য করে।
উপযুক্ত আলোচনা বিশ্লেষণ করলে বোঝা যায় যে, বৃদ্ধি হরমোনটি মানুষের স্বাভাবিকতার জন্য অপরিহার্য।

No comments:

Post a Comment

Post Bottom Ad

Responsive Ads Here