এইচএসসি পরীক্ষার পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি
HSC Psychology 1st Paper Srijonshil question and answer. HSC Psychology 1st Paper (Srijonshil) Creative Questions pdf download. HSC Monobiggan 1st paper Srijonshil Proshno Uttor.
উচ্চ মাধ্যমিক
মনোবিজ্ঞান
প্রথম পত্র
সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
অধ্যায়-২
HSC Psychology
1st Paper
Srijonshil Question and Answer pdf download
১. দৃশ্যকল্প -১: ঢাকা মেডিকেল কলেজের মেধাবী ছাত্র রোমেল কক্সবাজার জেলার কুতুবদিয়ায় জন্মগ্রহণ করে। উপকূলীয় জীবনযাত্রার খোলা আবহাওয়ায় বেড়ে ওঠায় সে সুঠামদেহী, প্রচন্ড সাহসী ও পরিশ্রমী।
দৃশ্যকল্প-২: জীবনে চলার পথে মানুষ একে অপরের সাহায্য করে, বিপদে এগিয়ে এসে সমাজের মঙ্গল সাধন করে। আবার সমাজের কিছু মানুষ সর্বক্ষণ মানুষের ক্ষতি, ঘুষ, দুর্নীতি করে মানুষের ক্ষতি করে চলেছে।
ক. ফেরেল মানব কী?
খ. কন্যা শিশুর লিঙ্গ নির্ধারণ হয় কীভাবে?
গ. রোমেলের ক্ষেত্রে জন্ম পরবর্তী কোন পরিবেশের প্রভাব উল্লেখ করা হয়েছে?পাঠ্য বইয়ের আলোকে ব্যাখ্যা কর।
ঘ. দৃশ্যকল্প-২ এ যে সমস্ত আচরণের কথা উল্লেখিত হয়েছে তা তুলনামূলক বিশ্লেষণ কর।
১ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. যে সকল মানব শিশু আজন্ম মানব সমাজের সংস্পর্শের বাইরে তথা বন্য পরিবেশে লালিত-পালিত হয়েছে তাদের ফেরেল মানব বলা হয়।
খ. কোন ধরনের শুক্রাণু ডিম্বাণুর সাথে মিলিত হচ্ছে তার উপর নির্ভর করছে সন্তান ছেলে না মেয়ে হবে। পরিপক্ক ডিম্বাণুতে থাকে ২২টি সমরূপী ক্রোমোজোম এবং একটি X ক্রোমোজোম। অপরপক্ষে, শুক্রাণুতে থাকে ২২টি সমরূপী এবং একটি X অথবা একটি Y ক্রোমোজোম। এই X এবং Y ক্রোমোজোমগুলোই শিশুর লিঙ্গ নির্ধারণ করে। X ক্রোমোজোম বহনকারী ডিম্বাণু যদি X ক্রোমোজোম বহনকারী শুক্রাণুর সাথে মিলিত হয় তবে শিশুটি মেয়ে (XX) হবে।
গ. উদ্দীপকে রোমেলের ক্ষেত্রে জন্ম পরবর্তী প্রাকৃতিক পরিবেশের উল্লেখ করা হয়েছে। নিচে পাঠ্যবইয়ের আলোকে ব্যাখ্যা করা হলো-
প্রাকৃতিক পরিবেশ ব্যক্তির জীবনকে বিশেষভাবে প্রভাবিত করে। প্রাকৃতিক পরিবেশ বলতে বুঝায় ভূ-প্রকৃতি, আবহাওয়া, জলবায়ু, আলো-বাতাস, গাছ-পালা, বন-জঙ্গল, পাহাড়-পর্বত, নদী-নালা প্রভৃতি। সমতল ভূমিতে বেড়ে উঠা ব্যক্তির জীবন প্রণালী পাহাড়ী এলাকায় বেড়ে উঠা ব্যক্তি থেকে আলাদা। অথবা শীতপ্রধান অঞ্চলের লোকের সাথে গরম প্রধান অঞ্চলের লোকের তুলনা করলে তাদের মধ্যে বিস্তর পার্থক্য দেখা যায়। বিভিন্ন অঞ্চলের লোকদের মধ্যে দৈহিক গড়ন ও চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের ভিন্নতার মূলে রয়েছে প্রাকৃতিক পরিবেশের প্রভাব।
উপরোক্ত আলোচনায় দেখা যায়, রোমেল সুঠামদেহী, প্রচন্ড সাহসী ও পরিশ্রমী হিসেবে বেড়ে উঠার পেছনে জন্মপরবর্তী পরিবেশ তথা উপকূলীয় খোলা আবহাওয়ার প্রাকৃতিক পরিবেশের প্রভাব বিস্তার করেছে।
ঘ. দৃশ্যকল্প-২ এ যে সমস্ত আচরণের কথা উল্লেখিত হয়েছে তা হলো নৈতিক আচরণ ও অনৈতিক আচরণ। নিচে নৈতিক ও অনৈতিক আচরণের তুলনামূলক বিশ্লেষণ করা হলো-
১. ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও জাতির জন্য যেসব আচরণ মঙ্গলজনক। সেসব আচরণই হলো নৈতিক আচরণ। অন্যদিকে যে সব আচরণ ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ যা জাতির সাধারণত কল্যাণ বয়ে আনে না সেসব আচরণকে অনৈতিক আচরণ বলে।
২. নৈতিকতা সম্পন্ন ব্যক্তি পারস্পরিক ক্রিয়ার ক্ষেত্রে আইন ও নিয়ম কানুন মেনে চলে, সমাজ স্বীকৃত আচরণ করে, মিথ্যা থেকে বিরত থাকে, সুশিক্ষা নেয়, অন্যের পাওনা পরিশোধ করে, ন্যায়ের পথে চলে, অন্ধকার কক্ষেও সে অন্যায় করে না। অপরদিকে অনৈতিক সম্পন্ন ব্যক্তি সমাজের প্রচলিত নিয়ম-কানুন মেনে চলতে চায় না, মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে থাকে, সুশিক্ষার যথাযথ প্রয়োগ করে না, অন্যের অধিকার হরণ করতে দ্বিধা করে না, ন্যায়ের পথে চলতে চায় না।
৩. নৈতিক আচরণের মানুষ অন্য মানুষ বিপদে পড়লে সে তার সাহায্যে এগিয়ে আসে, পরামর্শ দিয়ে, অর্থ দিয়ে, সে বিচারপ্রার্থীকে সহায়তা করে। অন্যদিকে অনৈতিক আচরণের মানুষ মানুষকে বিপদে ফেলেই আনন্দ পায়।
৪. নৈতিকতা মানুষকে অন্যায় থেকে বিরত রাখে, পতনের পথ থেকে বাঁচায়, আলোর পথে নিয়ে আসে, স্বার্থপরতা থেকে ব্যক্তিকে সরিয়ে আত্নত্যাগে উদ্বুদ্ধ করে। অপরদিকে অনৈতিকতা সম্পন্ন ব্যক্তি সাধারণত বিবেকের দংশন অনুভব করে না।
৫. নৈতিকতাসম্পন্ন মানুষ সাধারণ মানুষের জন্য অনুকরণীয় ব্যক্তিত্ব হয়ে উঠেন। অন্যদিকে অনৈতিকতা সম্পন্ন মানুষকে সাধারণ মানুষ ঘৃণার চোখে দেখে।
২. ৬ মাসের গর্ভবতী রহিমা রাসায়নিক পদার্থ উৎপাদনকারী কারখানায় কাজ করেন। সে তার গর্ভজাত সন্তানের স্বাস্থ্য নিয়ে চিন্তিত। অন্যদিকে তার ৭ বছরের সন্তান অর্ক বড় ভাইয়ের অভিন্ন যমজ সন্তানের সাথে পারিবারিক পরিবেশে বেড়ে উঠেছে।
ক. বংশগতি কী?
খ. সন্তানের লিঙ্গ নির্ধারণ হয় কীভাবে?
গ. রহিমা গর্ভজাত সন্তানের কোন পরিবেশ নিয়ে চিন্তিত? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকের আলোকে অর্ক ও অভিন্ন যমজ সন্তানের আচরণের ভিন্নতা আলোচনা কর।
২ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. বংশগতি হলো এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে জীব তার দোষগুণ, চেহারার ভিন্নতা, বর্ণ ইত্যাদি তার বংশধরদের মধ্যে সংক্রমিত করে।
খ. কোন ধরনের শুক্রাণু ডিম্বাণুর সাথে মিলিত হচ্ছে তার উপর নির্ভর করছে সন্তান ছেলে না মেয়ে হবে। পরিপক্ক ডিম্বাণুতে থাকে ২২টি সমরূপী ক্রোমোজোম এবং একটি X ক্রোমোজোম। অপরপক্ষে, শুক্রাণুতে থাকে ২২টি সমরূপী এবং একটি X অথবা একটি Y ক্রোমোজোম। এই X এবং Y ক্রোমোজোমগুলোই শিশুর লিঙ্গ নির্ধারণ করে। X ক্রোমোজোম বহনকারী ডিম্বাণু যদি X ক্রোমোজোম বহনকারী শুক্রাণুর সাথে মিলিত হয় তবে শিশুটি মেয়ে (XX) হবে। আর যদি ডিম্বাণু X ক্রোমোজোম বহনকারী শুক্রাণুর সাথে মিলিত হয় তবে শিশুটি মেয়ে (XX) হবে।
গ. উদ্দীপকে রহিমা গর্ভজাত সন্তানের জন্মপূর্ব পরিবেশ নিয়ে চিন্তিত। নিচে ব্যাখ্যা করা হলো-
কোনো কোনো বিশেষ ধরনের চাকরি গর্ভস্থ শিশুর বিকাশ ধারায় বিঘ্ন ঘটাতে পারে। হাসপাতাল, রূপচর্চা কেন্দ্র, ওষুধ পরীক্ষণাগার, কলকারখানায় কর্মরত গর্ভবতী মহিলারা বিভিন্ন প্রকার রাসায়নিক পদার্থের সংস্পর্শে আসার ফলে তাদের সন্তানদের মধ্যে বেশি জন্মগত ত্রুটি দেখা দিয়ে থাকে। এ প্রসঙ্গে বার্নহাম (Buruham, ১৯৭৬) বলেন, গর্ভবতী মহিলারা অধিক সংখ্যায় কাজে যোগদান করার ফলে গর্ভস্ত শিশুর যে সমূহ ক্ষতি এবং বিকাশ ধারা বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা বস্তুত। চিকিৎসার ক্ষেত্রে গুরুতর সমস্যার সৃষ্টি করছে।
উদ্দীপকে গর্ভবতী রহিমা রাসায়নিক পদার্থ উৎপাদনকারী কারখানায় কাজ করেন বিধায় সে তার গর্ভজাত সন্তানের স্বাস্থ্য নিয়ে চিন্তিত।
ঘ. উদ্দীপকের আলোকে অর্ক তার মামার অভিজ্ঞ যমজ সন্তানের সাথে বেড়ে উঠে। নিচে তাদের আচরণের ভিন্নতা আলোচনা করা হলো-
অভিন্ন যমজ সন্তান একটি ভ্রৃণ থেকে সৃষ্টি হয়। এরা একই লিঙ্গ ও একই রকম শারীরিক বৈশিষ্ট্যের অধিকারী হয়ে থাকে। তাদের গায়ের রং চুলের গড়ন, উচ্চতা, চোখের রং সকল বৈশিষ্ট্যই একই হয়ে থাকে। এ ধরনের সন্তানদের ক্ষেত্রে আচরণের কোনো পার্থক্য হয়না। তবে ভিন্ন পরিবেশে পালিত হলে বুদ্ধ্যঙ্কের কিছুটা পার্থক্য দেখা যায়। যেহেতু উদ্দীপকে অভিন্ন যমজ সন্তান তাদের নিজ পরিবেশে বেড়ে উঠেছে তাই তাদের আবার-আচরণ সবকিছু স্বাভাবিক রয়েছে। অন্যদিকে অর্ক অভিন্ন যমজ সন্তানদের সাথে বেড়ে উঠছে। সে তার নিজ পরিবেশের বাইরে এসে লালিত-পালিত হচ্ছে।
এক্ষেত্রে সে অনেকটা একাকী অনুভব করে। সবসময় সে অভিন্ন যমজ সন্তানদের সাথে মানিয়ে নিয়ে চলতে পারে না। অভিন্ন যমজ সন্তানদের সাথে তার বুদ্ধ্যাঙ্কের বেশ পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়।
৩. সৃষ্টির সেরা প্রাণী মানুষ। অথচ একজনের সাথে আরেকজনের মিলের চেয়ে অমিলই বেশি। একজনের সাথে অন্যজনের মিল থাকলেও দৈহিক গড়ন, চেহারার লাবণ্য, আকার-আকৃতি, চুলের গড়ন, চোখের রং, কর্মতৎপরতা এসবেও রয়েছে পার্থক্য।
ক. আচরণ কী?
খ. বংশগতি বলতে কী বুঝ?
গ. কমলা কোন ধরনের শিশু ব্যাখ্যা কর।
ঘ. মানব আচরণে বংশগতি ও পরিবেশের প্রভাব তোমার বইয়ের আলোকে ব্যাখ্যা কর।
৩ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. আচরণ হলো মানুষ বা প্রাণীর যেকোনো ক্রিয়া বা প্রতিক্রিয়া।
খ. বংশগতি বলতে এমন একটি প্রক্রিয়াকে বোঝায় যার মাধ্যমে জীব তার আকার-আকৃতি, চেহারা, বর্ণ ইত্যাদি তার বংশধরগণের মধ্যে সংক্রমিত করে। আবার, বংশগতি বলতে বোঝায় এমন কিছু মানসিক ও দৈহিক বৈশিষ্ট্য বা গুণাগুণ যা ব্যক্তির মধ্যে রক্তের সম্পর্ক সূত্রে প্রবাহিত হয়। সাদা বা কালো, লম্বা বা খাটো, চঞ্চল বা শান্ত প্রভৃতি ব্যক্তিগত বৈশিষ্ট্যসমূহ জন্মসূত্রে অর্জিত প্রবণতারই ফলশ্রুতি।
গ. আলোচ্য প্রশ্নে কমলা একজন ফেরেল মানব। যেসব মানবশিশু জন্মের পর থেকে মানব সমাজে অবস্থান না করে কোনো না কোনো কারণে নির্জন স্থানে বন্য পরিবেশে বেড়ে উঠে তাদেরকে ফেরেল মানব বলা হয়ে থাকে। এরা আজন্ম মানব সমাজের বাইরে বেড়ে উঠে। এসব মানব শুধু অস্পষ্ট ধ্বনি উচ্চারণ করতে পারে। সোজা হয়ে দাড়াতে ও হাঁটতেও পারে না। অর্থাৎ একজন মানুষের যেসব বৈশিষ্ট্য থাকা দরকার তা এদের মধ্যে অনুপস্থিত থাকে। রেভারেন্ড সিং- এর স্ত্রী (১৯৩০) ভারতের মেদেনীপুর এলাকা থেকে কমলাকে উদ্ধার করেন যে কিনা বাঘের সাথে বন্য পরিবেশে বেড়ে উঠছিল। কমলার বয়স ছিল আট বছর। ড. সিং বলেন, কমলা হাঁটু ও কনুই এর উপর ভর করে হামাগুড়ি দিত এবং দুই পায়ে ভর করে দৌড় দিত। সে চেটে চেটে পানীয় বা মাংস খেত। দিনের বেলা ঘুমাত এবং রাতে বিভিন্ন স্থানে বিচরণ করত। অর্থাৎ একজন স্বাভাবিক মানুষের মধ্যে যেসব বৈশিষ্ট্য থাকে কমলার মধ্যে তা অনুপস্থিত। মি. সিং এবং মিসেস সিং- এর কয়েক বছরের চেষ্টার ফলে কমলার মধ্যে মানুষের মত আচরণ লক্ষ করা যায়।
উপরিউক্ত আলোচনা থেকে বলা যায় যে, কমলা একজন ফেরেল মানব শিশু।
ঘ. মানব আচরণে বংশগতি ও পরিবেশের প্রভাব বইয়ের আলোকে নিচে ব্যাখ্যা করা হলো-
মানুষের আচরণ বংশগতি ও পরিবেশ উভয়ের দ্বারাই প্রভাবিত। কালম্যান (Kallman, ১৯৩৭) অভিন্ন যমজ সন্তানদের কতকগুলো আচরণ পর্যবেক্ষণ করে বলেছেন যমজদের একজনের মধ্যে সিজোফ্রিনিয়া রোগ হলে আরেকজনের এ রোগ হওয়ার সম্ভাবনা শতকরা ৮৬ ভাগ। বংশগতির গুরুত্ব পর্যালোচনার ক্ষেত্রে জিউক্স এডওয়ার্ডস পরিবারদ্বয়ের উপর পরিচালিত গবেষণাটি অতীব। এ সমীক্ষাং দেখা যায় জিউক পদবি ধারণকারীদেরকেই যুক্তরাষ্ট্রে বিভিন্ন জেলে
অধিক সংখ্যায় দেখা যায়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পরিচালিত অপর এক সমীক্ষায় দেখা যায়, বংশানুক্রমিকভাবে সুখ্যাত এডওয়ার্ড পরিবারের সদগুণসমুহ সেইপরিবারের পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যেও সঞ্চারিত হয়েছে।
মানব আচরণে পরিবেশের প্রভাব নিরূপণের জন্য নিউম্যান, ফ্রিম্যান এবং হলজিঙ্গার (১৯৩৭) একটি গবেষণা পরিচালনা করেন। তারা এক জোড়া যমজ শিশুকে দুটি ভিন্ন পরিবেশে রাখেন। ১০ বছর বয়সে দেখা যায় যে, ভিন্ন পরিবেশে পালিত হলেও তারা প্রায় একই ধরনের ব্যক্তিগত বৈশিষ্ট্যাবলি অর্জন করেছে। কিংসলে ডেভিস ৬ বছর একটি কক্ষে আবদ্ধ থাকা ইসাবেলা নামক এক শিশুকে দুই বছর প্রশিক্ষণের দেখেন সে কথা বলতে শিখে এবং তার বুদ্ধ্যঙ্ক ৩ গুণ বৃদ্ধি পায়।
৪. নিউয়র্কের অদূরে একটি নির্জন খামার বাড়ি থেকে ডোনাল্ড নামের এক ভদ্রলোক একটি মেয়েকে উদ্ধার করে। উদ্ধারের সময় থেকেই মেয়েটি উদাসীন, হাঁটতে পারত না, কথা বলতে পারত না। ডোনাল্ড পরবর্তীতে পুলিশের তদন্তের মাধ্যমে জানতে পারল, মেয়েটির মা দ্বিতীয় বিয়ে করে এবং স্বামীর অপছন্দের কারণেই মেয়েটিকে নির্জন বাড়িতে ছয় বছর ধরে আটকে রাখে।
ক. ফেরেল মানব কী?
খ. প্রাক-শৈশবে শিশুর কৌতূহল ব্যাখ্যা কর।
গ. উদ্ধারকৃত মেয়েটির এরকম আচরণের কারণ ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উল্লিখিত মেয়েটির সমস্যা সমাধানে পরিবেশের গুরুত্ব আলোচনা কর।
৪ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. যে সকল মানব শিশু আজন্ম মানব সমাজের সংস্পর্শের বাইরে তথা ও বন্য পরিবেশে লালিত-পালিত হয়েছে তাদের ফেরেল মানব বলা হয়।
খ. প্রাক-শৈশবে শিশুরা সর্বদা নতুন কোনো জিনিসের প্রতি কৌতূহলী হয়ে উঠে। জিনিসটি সম্পূর্ণভাবে নতুন হলে তা দেখে শিশু প্রথমে ভয় পায়। ভয় কেটে গেলে জিনিসটি সম্বন্ধে শিশু জানতে আগ্রহী হয়। শিশুর চেহারা দেখেই বোঝা যায় সে ভয় পেয়েছে। এ সময় মুখের মাংসপেশী সঙ্কুচিত হয়, মুখ হা হয়ে জিভ বেরিয়ে আসে। পরে শিশু কৌতূহলী হয়ে জিনিসটি ধরে নড়াচড়া করে, চুষতে থাকে, মাটিতে আছাড় দেয়।
গ. উদ্ধারকৃত মেয়েটি হাঁটতে পারত না, কথা বলতে পারত না, উদাসীন ছিল। জন্মের দুই বছর থেকেই মেয়েটি সমাজ পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে একাকী বাস করতো। সামাজিক অভিজ্ঞতাও ছিল না। অর্থাৎ তার শিক্ষণ হয়নি বললেই চলে। এদেরকে ফেরেল মানবের সাথে তুলনা করা যায়। ফেরেল মানবরা অবশ্য অন্য কোনো প্রাণীর সংস্পর্শে থাকে এবং ঐ প্রাণীদের (যেমন-বাঘ, সিংহ) মতোই আচরণ শিখে। কিন্তু উদ্ধারকৃত মেয়েটি এরকম কারো সংস্পর্শে আসে নি। তাই তার মধ্যে কোনো ধরনের শিক্ষণই হয়নি। পরিশেষে বলা যায় যে, পারিবারিক বন্ধন না থাকা এবং শিক্ষার অভাব থাকার কারণে উদ্ধারকৃত মেয়েটির মধ্যে উল্লিখিত আচরণ পরিলক্ষিত হয়।
ঘ. ডোনাল্ড কর্তৃক উদ্ধারকৃত মেয়েটি আট বছর বয়সী হলেও সে হাটতেও পারত না, এমনকি কথাও বলা শেখেনি। শিশুটির এ ধরনের সমস্যা সমাধানে পরিবেশের কিছু উপাদানের ভূমিকা নিচে আলোচনা করা হলো-
১. পারিবারিক পরিবেশ: শিশু বা ব্যক্তির ক্ষেত্রে তার পারিবারিক পরিবেশ একটি গুরুত্বপূর্ণ শর্ত। কারণ সামাজিক মর্যাদা, আর্থিক ও শিক্ষাগত অবস্থা, পারিবারিক সম্পর্ক ও মূল্যবোধ ইত্যাদি শিশু বা ব্যক্তির স্বাভাবিক শারীরিক, মানসিক বিকাশ ও আচরণকে প্রভাবিত করে।
২. খেলার সাথী: শিশু বা ব্যক্তি যাদের সঙ্গে উঠা-বসা করে, চলাফেরা করে বা সময় কাটায়, যেমন- খেলার সাথী বা বন্ধুবান্ধব তাদের আচার-আচরণ, আর্থ-সামাজিক অবস্থা, পারিবারিক ও শিক্ষাগত অবস্থা, মূল্যবোধ ইত্যাদি শিশু বা ব্যক্তির স্বাভাবিক শারীরিক ও মানসিক তথা ব্যক্তিত্ব বিকাশের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব বিস্তার করে থাকে।
৩. শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিবেশ অর্থাৎ প্রতিষ্ঠানের নিয়ম-কানুন, পাঠ্যসূচি, সহপাঠী ও শিক্ষকদের বহুমাত্রিক আচরণ ইত্যাদি শিশুর স্বাভাবিক শারীরিক ও মানসিক তথা ব্যক্তিত্ব। বিকাশের ক্ষেত্রে বিশেষভাবে প্রভাব বিস্তার করে থাকে।
৪. সাংস্কৃতিক পরিবেশ: সাংস্কৃতিক পরিবেশ যেমন- জাতিগত সংস্কৃতি, ধর্মীয় সংস্কৃতি, পারিবারিক প্রথাগত বা ঐতিহ্যগত সংস্কৃতি ইত্যাদি সাংস্কৃতিক প্রভাব শিশু বা ব্যক্তির আচরণ ও মানসিক বিকাশকে প্রভাবিত করে।
৫. সামাজিক পরিবেশ: সমাজ হলো শিশু বা ব্যক্তির সাথে তার চারপাশে বসবাসরত মানুষদের একটি পারস্পরিক মিথস্ক্রিয়া। এই সামাজিক পরিবেশ, যেমন-সংস্কৃতি, ধর্মীয় মূল্যবোধ, রাজনীতি, সামাজিক প্রথা বা ঐতিহ্য ইত্যাদি শিশু বা ব্যক্তির আচরণ ও মানসিক বিকাশকে প্রভাবিত করে।
৬. প্রাকৃতিক পরিবেশ: প্রাকৃতিক পরিবেশ অর্থাৎ প্রকৃতিগত ভৌগোলিক পরিবেশ, যথা- ভৌগোলিক অবস্থান, জলবায়ু, তাপমাত্রা, সমতল বা পাহাড়ি ভূমিগত অবস্থা, বন বা গাছ-পালা ইত্যাদি শিশু বা ব্যক্তির আচরণ, শারীরিক ও মানসিক বিকাশের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব বিস্তার করে থাকে।
পরিশেষে বলা যায় যে, উদ্ধারকৃত শিশুটিকে যদি উপরোক্ত পরিবেশে রাখা যেত তাহলে তার আচরণগত সমস্যা সমাধান করা সম্ভব হতো।
৫. আশিক, সায়মা ও সাকিব ভাই-বোন। আশিকের বয়স ২ বছর, সায়মার বয়স ১১ বছর এবং সাকিবের বয়স ১৩ বছর। বয়সের ব্যবধান থাকার কারণে তারা ভিন্ন ধরনের আচরণ ও মনোভাব প্রকাশ করে থাকে।
ক. আবেগ কী?
খ. ছোট শিশুদের আবেগের বৈশিষ্ট্য কিরূপ?
গ. আশিকের আবেগের প্রকৃতি মনোবিজ্ঞানীদের ধারণায় ব্যাখ্যা কর।
ঘ. সায়মা ও সাকিবের মধ্যে কী ধরনের আবেগীয় প্রকাশ থাকবে?তোমার ধারণায় বিশ্লেষণ কর।
৫ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. প্রাণীর পেশীসমূহের ক্রিয়া, স্নায়ুবিক ক্রিয়া, রক্ত-সঞ্চালন ক্রিয়া, শ্বাসক্রিয়া, হরমোনের ক্ষরণ ইত্যাদি শারীরবৃত্তীয় পরিবর্তন ও মানসিক ক্রিয়ার ভারসাম্যচ্যুত অবস্থা থেকে সৃষ্ট এক ধরনের বৈশিষ্ট্যপূর্ণ অভিব্যক্তি হলো আবেগ।
খ. ছোট শিশুদের আবেগের বৈশিষ্ট্য:
১. শিশুর আবেগ ক্ষণস্থায়ী
২. শিশুর আবেগ পরিবর্তনশীল
৩. শৈশবকালীন আবেগ তীব্রভাবে প্রকাশ পায়
৪. আবেগের ভিন্নতা কম থাকে
৫. আবেগের স্বরূপ সহজেই ধরা পড়ে।
গ. আশিকের বয়স ২ বছর। অর্থাৎ সে প্রাক-শৈশব পর্যায়ে অবস্থান করছে। তার আবেগ মনোবিজ্ঞানীদের ধারণায় ব্যাখ্যা করা হলো-
দুই বছর থেকে ছয় বছর পর্যন্ত সময়কে শৈশবের প্রাথমিক পর্যায় বলা হয়। এ সময়ে যে সকল আবেগময় প্রতিক্রিয়া লক্ষ করা যায় তা। নিম্নরূপ:
১. রাগ: শিশু যা করতে চায় বা বলতে চায় তাতে বাধা দিলে শিশুরা রেগে যায়। রাগ সাধারণত চিৎকার, লাথি মারা, প্রচন্ডভাবে বাহু সাঞ্চালন অথবা নাগালের মধ্যে যা কিছু থাকে তাকে সজোরে আঘাত করার মাধ্যমে প্রকাশিত হয়।
২. ভয়: জোরে শব্দ হলে ছোট্ট শিশু ভীষণ ভয় পায়। অন্ধকার ঘর, উঁচু জায়গা, অপরিচিত ব্যক্তি বা বস্তু, বিভিন্ন ধরনের জীবজন্তু প্রভৃতি শিশুর মনে ভীতির সঞ্চার করে।
৩. কৌতুহল: নতুন যেকোনো জিনিসই শিশুদের মনে কৌতুহল উদ্রেক করে। জিনিসটি নতুন হলে তা দেখে শিশু ভয় পায় কেটে গেলেই তা কৌতূহলে রূপান্তরিত হয়।
৪. ভালোবাসা: ছোট্ট শিশুকে কেউ যদি আদর করে তার সাথে খেলা করে বা চাহিদা পূরণ করে তাহলে এই স্নেহ-ভালোবাসা তাকে অন্যদের ভালোবাসতে শেখায়। শিশুরা বাবা-মা বা আপনজনকে জড়িয়ে ধরে বা চুমো দিয়ে ভালোবাসা প্রকাশ করে।
৫. আনন্দ: শিশুরা তিন মাস বয়স থেকেই আনন্দের অভিব্যক্তি প্রকাশ করতে সক্ষম হয়। শিশুরা হাত-পা ছুঁড়ে বা হেসে আনন্দ প্রকাশ করে। খুব বেশি খুশি হলে শিশুরা গড় গড় শব্দ করে এবং খিল্ খিল্ শব্দ করে হেসে উঠে।
ঘ. সায়মার বয়স ১১ বছর এবং সাকিবের বয়স ১৩ বছর। অর্থাৎ তারা বয়োসন্ধিকালে উপনিত। এ সময়ে তাদের নিম্নরূপ আবেগীয়। প্রকাশ ঘটবে -
সাধারণত ১১ থেকে ১৩ বছর বয়সকে Puberty বা বয়োসন্ধিকাল হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। বয়োসন্ধিকালে পিটুইটারি গ্রন্থি নিঃসৃত গোনাডোট্রপিক হরমোনের সক্রিয়তা বৃদ্ধি পায় এবং যৌন গ্রন্থির কর্মকান্ডেরউপর প্রভাব বিস্তার করে। যৌন গ্রন্থির কর্মতৎপরতা বেড়ে যায়। ফলে যৌন পরিবর্তন শুরু হয়। এ সময় ছেলেদের ক্ষেত্রে এন্ড্রোজেন এবং মেয়েদের ক্ষেত্রে এস্ট্রোজেন নামক যৌন হরমোন।
ক্ষরিত হয় এবং স্ব-দৈহিক বৈশিষ্ট্য লাভ করে। অর্থাৎ এ সময় কিশোরদের ক্রমশ পুরুষ সুলভ এবং কিশোরীদের ক্রমশ মেয়ে সুলত যৌন বৈশিষ্ট্য বিকশিত হয়।
অভিমান, রাগে ফেটে পড়া, সামান্য কারণে কেঁদে ফেলা ইত্যাদি প্রাথমিক বয়োসন্ধিকালের স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া। যৌন পরিণতির সঙ্গে সঙ্গে ছেলে-মেয়েদের মনে অপরিহার্যভাবে দেখা দেয় যৌন বিষয়ে আগ্রহ। এ আগ্রহ নানাভাবে প্রকাশ পায়। সাধারণত ছেলেদের ক্ষেত্রে মেয়েদের প্রতি ও মেয়েদের ক্ষেত্রে ছেলেদের প্রতি আকর্ষণ ও মনোযোগের রূপ নিয়েই এ আগ্রহ দেখা দেয়।
বয়োসন্ধিকালে ছেলে-মেয়েরা একা থাকতে চায় এবং সঙ্গাদের মিলেমিশে কাজ করতে চায় না। এরা নিজেদের একঘেঁয়ে মনে করে। যৌন পরিবর্তনে কিশোর-কিশোরীরা অতিরিক্ত লাজুক হয়। তার পরবর্তীতে বয়ঃপ্রাপ্তির মাধ্যমে দৈহিক পরিপক্কতা অর্জনের ফলে ছেলেমেয়ে মানসিক চাপ সহ্য করার ক্ষমতা অর্জন করে এবং আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।
৬. শ্যামা শৈশবে পুলিশ দেখলে ভয় পেতো। এখন পুলিশ দেখলে আর ভয় পায় না। কিন্তু স্কুলে প্রতিযোগিতায় হেরে যাওয়ার ভয় দেখা যাচ্ছে। শ্যামার ভয়ের উপাদান পরিবর্তন হয়েছে। অন্যদিকে পাঁচ বছর বয়সী তার ছোট ভাই পলাশ স্বাধীনভাবে কাজ করতে চায়। তার কোনো কাজে বাধা দিলে সে আবেগের বশবর্তী হয়ে বিভিন্ন ধরনের প্রতিক্রিয়া প্রদর্শন করে।
ক. বয়োসন্ধিকালে ছেলেদের কোন ধরনের হরমোন ক্ষরিত হয়?
খ. শিশুর আবেগের দুটি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ কর।
গ. শ্যামা শৈশবে পুলিশকে ভয় পেলেও পরবর্তীতে ভয় পায় না কেন? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. পলাশের আবেগময় প্রক্রিয়ার ধরন মনোবিজ্ঞানের আলোকে বিশ্লেষণ কর।
৬ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. বয়োসন্ধিকালে ছেলেদের এন্ড্রোজেন নামক যৌন হরমোন ক্ষরিত হয়।
খ. শিশুর আবেগের দুটি বৈশিষ্ট্য নিচে উল্লেখ করা হলো-
১. ছোট শিশুরা আবেগ নিয়ন্ত্রণে অক্ষম। শিশুর আবেগ সৃষ্টি হওয়ার অল্প সময়ের ব্যবধানে তা আবার প্রশমিত হয়ে যায়। শৈশবের প্রথম পর্যায়ে সব রকম আবেগের প্রকাশ পেয়ে থাকে। কিন্তু শৈশবের শেষ পর্যায়ে আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে শেখে বলে আবেগ। প্রকাশ দৃশ্যমান নাও হতে পারে।
২. শিশুর ক্ষণিকের হাসি ও ক্ষণিকের কান্না বড়ই দুর্বোধ্য মনে হয়। শিশুর মনোযোগ ক্ষণস্থায়ী। তাই সে একটি বিষয়ের প্রতি যেমন মনোযোগ দিতে পারে না আবার তেমনি কোন বিষয় মনেও রাখতে পারে না।
গ. শৈশবকালের আবেগ বয়স বাড়ার সাথে সাথে পরিবর্তিত হয়। আবেগীয় ধরনের পরিবর্তনের কারণে কিছু আবেগের প্রকাশে পরিবর্তন আসে এবং কিছু আবেগের উপকরণগত পরিবর্তন আসে। শ্যামা শৈশবে পুলিশকে ভয় পেলেও বয়স বাড়ার সাথে সাথে তার বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশের ফলে ভয় পাওয়ার উপকরণে পরিবর্তন আসে। বর্তমানে অন্য কোনো বাস্তবধর্মী বিপজ্জনক প্রাণীকে ভয় পাবে। যেমন- শ্যামা সাপে ভয় পেতে পারে।
দুই বছর বয়স থেকে শিশুর শৈশবকাল শুরু হয়। এই সময় শিশুর মধ্যে আধক মাত্রায় আবেগ বিকশিত হয়ে থাকে। এই সময় সাপেক্ষিকরণ ও অনুকরণের মধ্য দিয়েও শিশুদের মধ্যে সহানুভূতি, ভয় ও ঘৃণার মতো কিছু আবেগীয় বিকাশ ঘটে। শিশুদের মধ্যে এই সময় প্রতিবাদী ও ধ্বংসাত্মক আবেগ বিকাশ লাভ করে। কারণ, এই সময় শিশুরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তাদের চাহিদা ও কর্মে বিধি-নিষেধের সম্মুখীন হয়। এই সময় ছেলেদের মধ্যে রাগ ও কৌতুহলজনিত আবেগীয় আচরণের বিকাশের পরিমাণ মেয়েদের তুলনায় অধিক হয়। অপরদিকে মেয়েদের স্নেহশীল ও মমতাজনিত আবেগীয় আচরণের বিকাশের পরিমাণ ছেলেদের তুলনায় অধিক হয়।
ঘ. পলাশের বয়স পাঁচ বছর। এ সময়টাই মূলত শৈশবকাল। এ সময়ে তাদের কোনো কাজে বাধা দেওয়া হলে তারা তার প্রতিবাদ জানায় এবং আবেগতাড়িত হয়ে ওঠে। শৈশবকালে পলাশের মধ্যে আবেগের নিম্নলিখিত প্রতিক্রিয়া লক্ষ করা যায়-
১. রাগ: শিশুদের মধ্যে খেলার সামগ্রী নিয়ে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ঝগড়া হয়, যা শিশুকে রাগিয়ে তোলে। কাজে বাধা পেলে বা অন্য শিশু আক্রমণ করলে অথবা ইচ্ছা পূরণে বাধা দিলে শিশুরা রেগে যায়।
২. ভয়: এ পর্যায়ে শিশুরা ভয়ের গল্প শুনলে, বইয়ে ছবি বীভৎস ছবি দেখলে অথবা টেলিভিশনে প্রচারিত ভীতিকর ছবি দেখলে শিশুরা ভয় পায়।
৩. কৌতূহল: শৈশবের প্রথম পর্যায়ে শিশুদের মধ্যে কৌতূহল প্রবণতা খুব বেশি পরিলক্ষিত হয়। কোনো অপরিচিত ব্যক্তি অথবা জিনিস বা নিজের দেহের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সম্বন্ধে শিশুদের মনে কৌতূহল জাগে।
৪. ঈর্ষা: বাবা-মার আদর-যত্নে কেউ ভাগ বসাক শিশুরা তা চায় না। তাইতো ছোট ভাইবোনদের প্রতি বাবা-মার মনোযোগ নিবদ্ধ হলে শিশুরা ছোটদের প্রতি ঈর্ষান্বিত হয়ে পড়ে। অনেক সময় তারা ছোটদের আঘাত করে শাস্তি দেয়।
৫. হিংসা: এ বয়সে শিশুরা খুব আত্মকেন্দ্রিক হয় এবং তারা একে অপরকে হিংসা করে। শিশুরা তাদের সমবয়সীদের যোগ্যতা, কৃতিত্ব বা জিনিসপত্র দেখে হিংসা করে।
৭. সাহিদা হক একজন মনোবিশারদ। তিনি ২ থেকে ৫/৬ বছর বয়সী শিশুদের বিকাশ ও আচরণ নিয়ে কাজ করেন। তিনি পর্যবেক্ষণ করেছেন, এ বয়সী শিশুরা কিছু সুনির্দিষ্ট সামাজিক আচরণ প্রদর্শন করে।
ক. সামাজিক বিকাশ কী?
খ. শিশুরা কীভাবে কৌতূহল প্রকাশ করে?
গ. সাহিদা হকের পর্যবেক্ষণতৃত শিশুদের সামাজিক আচরণগুলো ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকের শিশুরা সামাজিক আচরণের পাশাপাশি অগ্রহণযোগ্য আচরণ ও করে ফেলে- উক্তিটির সপক্ষে যুক্তি দাও।
৭ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. সামাজিক বিকাশ বলতে বুঝায় সামাজিক প্রবণতার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ আচরণের ক্ষমতা অর্জন। সামাজিক চাহিদা ও প্রত্যাশা অনুযায়ী আচরণ করার ক্ষমতা অর্জন করা বা সামাজিক রীতি-নীতিতে অভ্যস্ত হওয়ার ক্ষমতা হচ্ছে সামাজিক বিকাশ।
খ. নতুন যেকোনো জিনিসই শিশুদের মনে কৌতূহল উদ্রেক করে। জিনিসটি সম্পূর্ণ নতুন হলে তা দেখে শিশু প্রথমে ভয় পায়। ভয় কেটে গেলেই তা কৌতূহলে রূপান্তরিত হয়। শিশুরা তাদের মুখের অভিব্যক্তি ও জিহবার প্রতিকৃতি দিয়ে কৌতূহল প্রকাশ করে। পরবর্তীতে শিশুরা কৌতূহল উদ্রেককারী বস্তু ধরে ঝাঁকুনি দেয়, শব্দ করে অথবা চুষে কৌতূহল প্রকাশ করে।
গ. সাহিদা হক ২ থেকে ৫/৬ বছর বয়সী শিশুদের বিকাশ ও আচরণ নিয়ে কাজ করেন। এ বয়সী শিশুরা কিছু সুনির্দিষ্ট সামাজিক আচরণ প্রদর্শন করে। আচরণগুলো হলো -
১. সহযোগিতা: ছোট্ট শিশুরা সহযোগিতার মনোভাব নিয়ে খেলা করে এবং সবার সাথে মিলেমিশে কাজ করে। শিশুরা যখন বড় হয় তখন তারা অন্য শিশুদের সঙ্গেও সহযোগিতার মনোভাব নিয়ে কাজ করার আগ্রহ আরও বেড়ে যায়।
২. সমবেদনা: শিশুরা অন্যের অনুভূতি, সুখ, দুঃখের সাথে সমবেদনা প্রকাশ করে এবং খেলাধুলার মাধ্যমে তা বেশি প্রকাশ পায়।
৩. পরার্থপরায়ণতা: এ সময় শিশুরা অন্য ব্যক্তির অবস্থা কল্পনা করতে হয়। তাইতো সমবেদনার মতো পরার্থপরায়ণতার জন্য অন্য লোকের সুখ, দুঃখ বুঝতে হয়।
৪. অংশীদারিত্ব: শিশু নিজের জিনসপত্র গুছিয়ে রাখতে চায়। তবে শিশু বুঝতে শেখে যে, নিজের জিনিসপত্র বিশেষ করে খেলার সামগ্রী অন্যকে ব্যবহার করতে দিলে সঙ্গী-সাথীর স্বীকৃতি অর্জন করা সম্ভব এবং এতে উদারতা ও মহানুভবতার পরিচয় পাওয়া যায়।
৫. অনুরক্ত আচরণ: কোন শিশু শৈশবে কোন ব্যক্তি বা একটি বস্তুর সাথে ঘনিষ্ঠ উষ্ণ এবং ব্যক্তিগত সম্পর্কের মাধ্যমে খুব বেশি পরিতৃপ্তি অর্জন করে পরবর্তীতে ঐ শিশুর তার প্রতি অনুরক্ত আচরণ অনুভব করে।
৬. সামাজিক স্বীকৃতি: পারিবারিক পরিবেশের চেয়ে সমবয়সী খেলার সাথীদের স্বীকৃতি একটি শিশুর জীবনে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
ঘ. যেকোনো ধরনের অসামাজিক আচরণ সমাজে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি করে। ২ থেকে ৬ বছর বয়সী শিশুরা সামাজিক আচরণের পাশাপাশি বিভিন্ন অগ্রহণযোগ্য আচরণও করে ফেলে। নিচে যুক্তি সহকারে আচরণগুলো আলোচিত হলো-
শৈশবে শিশুর বিকাশে এই ধরনের অসামাজিক বা সমাজের কাছে অগ্রহণযোগ্য আচরণগুলো বিকশিত হয় অর্থাৎ শিশুর শিক্ষণ হয় যা পরবর্তী পর্যয়ে প্রকাশ পায়। শৈশবের বিভিন্ন অসামাজিক বা নেতিবাচক আচরণগুলো হলো:
১. আত্মকেন্দ্রিকতা: ছোট্ট শিশুরা সবচেয়ে বেশি স্বার্থপর ও আত্মকেন্দ্রিক হয়। শিশুর সামাজিক জগৎ গৃহে কেন্দ্রীভূত। স্বার্থপরতার মত একইভাবে অন্যের প্রতি আগ্রহ ও অন্য ব্যক্তির সম্পর্কে উৎকণ্ঠা ধীরে ধীরে আত্মকেন্দ্রিকতার স্থান দখল করে।
২. নেতিবাচক আচরণ: শিশুরা ছোট বয়সে না-সূচক আচরণ বেশি করে। শিশুরা মৌলিকভাবে অস্বীকৃতি জানায় অথবা এমন ভাব দেখায় যেন কি করতে বলা হয়েছে তা সে শোনেনি। পরবর্তীতে তা হ্রাস পায়।
৩. আক্রমণাত্মক আচরণ: শিশুরা দৈহিকভাবে অন্যকে আক্রমণ মনোভাব প্রকাশ করে। এরপর ধীরে ধীরে এ প্রবণতা কমে যায়।
৪. প্রভূত্বব্যঞ্জক আচরণ: ছোট অবস্থায় শিশুরা অন্যের উপর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে চায়। তবে ছেলেদের চেয়ে মেয়েরা অনেকের উপর বেশি কর্তৃত্ব করে।
৫. ধ্বংসাত্মক আচরণ: হাতের কাছে যা কিছু রয়েছে সেগুলো অথবা নিজের কিংবা অন্যের হোক তা ভেঙে তছনছ করাই হল এ বয়েসের রাগের প্রতিক্রিয়া। রাগ যত বেশি হবে জিনিসপত্র নষ্ট করার পরিমাণও তত বেশি হবে।
৮. একদিন বাবা বাড়ির বাইরে থেকে গোপনে লক্ষ করলেন মা তার মেয়েকে দুধের পরিমাণ সম্পর্কে প্রশ্ন করেছে। মেয়ে উত্তরে বলছে এ দুধের পরিমাণ পূর্ব দিনের তুলনায় কিছুটা কম। মা তার মেয়ের নৈতিকতা পরীক্ষার লক্ষ্যে, বলেন দুধে একটু পানি মিশিয়ে নাও তাহলেই পূর্ব দিনের সমান হয়ে যাবে। মেয়ে উত্তর দিল এটা করা তো বাবার নিষেধ আছে। মা উত্তরে বলেন, বাবা তো রাতের অন্ধকারে দেখতে পাবে না। মেয়ে আবার উত্তর দিল বাবা দেখতে না পেলেও আমার সৃষ্টিকর্তা তো দেখছেন।
ক. নৈতিক বিকাশ কী?
খ. বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশ কী?
গ. বাল্যকালের নৈতিক বিকাশ বইয়ের আলোকে ব্যাখ্যা কর।
ঘ. নৈতিকতা বিকাশে মেয়েটির ঘটনা কীভাবে তোমার জীবনে প্রভাব বিস্তার করতে পারে তা আলোচনা কর।
৮ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. নৈতিক বিকাশ হলো এমন বিকাশ যেখানে ব্যক্তির সাথে পারস্পরিক ক্রিয়ায় প্রচলিত আইন ও নিয়ম কানুনকে শ্রদ্ধা করা হয়।
খ. মানব বিকাশ পর্যায়ে যে ক্ষমতার ফলে সমস্যাজনিত পরিস্থিতিতে সাঠক সিদ্ধান্ত নিতে পারে, মানুষ, বস্তু ও পরিবেশ সম্পর্কে বুঝাতে পারে, বস্তুর বিভিন্ন গুণ বুঝতে পারে, তাই বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশ।
গ. বাল্যকালের নৈতিক বিকাশ বইয়ের আলোকে নিচে ব্যাখ্যা করা হলো-
বাল্যবয়সে অর্থাৎ ৬ বছর থেকে যৌন পরিপক্কতার পূর্ব পর্যন্ত ছেলে মেয়ের নৈতিক ধারণার প্রসার হয়। সাধারণ নৈতিক ধারণা গড়ে ওঠার ফলে শিশু বাল্যবয়সে কোনো একটি নির্দিষ্ট পরিস্থিতির পরিবর্তে ন্যায় অন্যায় শব্দগুলো যেকোনো পরিস্থিতিতে প্রয়োগ করতে পারে। নৈতিকতার বিকাশ সম্পর্কে পিয়াজের (১৯৭০) মতবাদে দেখা যায় যে, শিশুদের ন্যায় বিচার বিষয়ক ধারণা পাঁচ থেকে বারো বছ, বয়সের মধ্যে বদলে যায়। মা-বাবার প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সঠিক অথবা ভুল আচরণ সম্পর্কে শিশুদের মনে যে দৃঢ় ও অনমনীয় বিশ্বাসের সঞ্চার হয় তাও অনেক সময় বদলে যায়।
কোলবার্গ বাল্যকাল অথবা শৈশবের শেষ পর্যায়কে ‘Good boy morality’ নামে আখ্যায়িত করেছেন। এ সময় সবার স্বীকৃতি অর্জন এবং সবার সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখার উদ্দেশ্যে শিশুরা সমাজে প্রচলিত নিয়মকানুন মেনে চলে।
উপরিউক্ত আলোচনায় প্রতীয়মান হয় যে, বাল্যকালে শিশুর নৈতিক বিকাশ বৃদ্ধি পেতে থাকে।
ঘ. উদ্দীপকে আলোচিত মেয়েটির ঘটনা আমার জীবনে বেশ ভালোভাবেই প্রভাব বিস্তার করবে। আলোচিত ঘটনা থেকে আমি বুঝতে পারলাম মেয়ের মায়ের চাওয়াটি একটি অনৈতিক কাজ। কোনো কারণেই দুধের সাথে পানি মিশিয়ে পরিমাণ বাড়ালে তা হবে অনৈতিক। শুধু তাই নয় আমার জীবনে আমি কখনোও কোন কিছুর সাথে খারাপ বা নকল কিছু মিশ্রিত করব না। অপরদিকে মেয়েটি যে সাহসের সাথে তার নৈতিকতা ঠিক রেখেছে, তা আমাকে উৎসাহিত করবে। মেয়েটি একদিকে তার বাবার নিষেধের কথা বলেছে এবং অন্যদিকে অন্ধকারে দুধে পানি মিশাতে চায় নি। বলেছে বাবা দেখতে না পেলেও আমার সৃষ্টিকর্তা তো দেখছে। এই ঘটনাটি আমাকে শিক্ষা দেয় যে বাবার নিষেধ অপেক্ষা করে কোন কিছু করা ঠিক নয়। শুধু বাবা নয়, যারা সৎপথে চলে তাদের নিষেধ অমান্য করা ঠিক নয়। এটি আরও শিক্ষা দেয় যে আমি যা কিছুই করব তা সবকিছুই আল্লাহ তাআলা দেখেন এবং জানেন। তাই অন্ধকারে হোক বা কারো সামনেই হোক, কখনও আমি এ ধরনের কাজে লিপ্ত হব না।
পরিশেষে বলা যায় যে, উদ্দীপকে আলোচিত মেয়েটির ঘটনাটির সবার জীবনেই শিক্ষণীয় এবং প্রভাব বিস্তার করবে।
৯. চট্টগ্রাম সরকারি মহিলা কলেজের সামনে চায়ের দোকানে বখাটে ছেলেরা দাড়িয়ে থাকে, অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি করে, শিস বাজায় এমন কলেজের মেয়েদের পিছু নেয়। কলেজ অধ্যক্ষ পুলিশ অভিভাবকদের নিয়ে আলোচনা করে সমস্যাটির সমাধান করে।
ক. বখাটেদের আচরণকে কী বলে?
খ. প্রাকৃতিক পরিবেশ ব্যক্তির জীবনকে কীভাবে প্রভাবিত করে?
গ. তোমার কলেজে যদি উক্ত ঘটনা ঘটে তবে এর কারণ। হিসেবে তুমি কী ব্যাখ্যা করবে?
ঘ. উদ্দীপকের ঘটনাটি তোমার কলেজে ঘটলে, তোমার ভূমিকা কী হবে?মতামত দাও।
৯ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. বখাটেদের আচরণকে ইভ টিজিং বলে।
খ. প্রাকৃতিক পরিবেশ ব্যক্তির জীবনকে বিশেষভাবে প্রভাবিত করে। প্রাকৃতিক পরিবেশ বলতে বুঝায় ভূ-প্রকৃতি, আবহাওয়া, জলবায়ু, আলো-বাতাস, গাছপালা, বন-জঙ্গল, পাহাড়-পর্বত, নদী-নালা প্রভূতি। সমতল ভূমিতে বেড়ে উঠা ব্যক্তির জীবন প্রণালী পাহাড়ী এলাকায় বেড়ে উঠা ব্যক্তি থেকে আলাদা। অথবা শীতপ্রধান অঞ্চলের লোকের সাথে গরম প্রধান অঞ্চলের লোকের তুলনা করলে তাদের মধ্যে বিস্তর পার্থক্য দেখা যায়। বিভিন্ন অঞ্চলের লোকদের মধ্যে দৈহিক গড়ন ও চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের ভিন্নতার মূলে রয়েছে প্রাকৃতিক পরিবেশের প্রভাব।
গ. ইভ টিজিং সারা দেশেই ছড়িয়ে পড়েছে। যেকোনো স্কুল, কলে শপিংমল এর সামনে নারী ইভ টিজিং এর শিকার হয়। এর কতকগুলো কারণ আছে। কারণগুলো হলো-
১. পারিবারিক ও নৈতিক মূল্যবোধের অবক্ষয়,
২. শিক্ষা নীতিতে সুস্থ চরিত্র গঠন উপযোগী যথাযথ ধর্মীয় শিক্ষার কারিকুলাম বাস্তবায়ন না করা,
৩. নারীর প্রতি শ্রদ্ধাশীল দৃষ্টিভঙ্গির অভাব,
৪. নারীকে পণ্যবস্তু ও ভোগ্যবস্তুর মতো মনে করা,
৫. স্যাটেলাইট টিভির অবাধ ও অনিয়ন্ত্রিত প্রদর্শন,
৬. পর্ণোগ্রাফীর ছড়াছড়ি,
৭. সুস্থ্য মুল্যবোধ সৃষ্টির ক্ষেত্রে মাতা-পিতার অসচেতনতা,
৮. অসৎ সঙ্গ,
৯. বেকারত্ব ও অশিক্ষা,
১০. মাদকদ্রব্যের প্রতি আসক্তি,
১১. ইভ টিজিং বিষয়ক অপরাধ সম্পর্কে অজ্ঞতা,
১২. লিঙ্গ বৈষম্যমূলক সামাজিক ব্যবস্থাপনা,
১৩. ইভ টিজিং বিবোধী স্বতন্ত্র আইন না থাকা।
ঘ. উদ্দীপকে উল্লেখিত ঘটনাটি মূলত ইভ টিজিং। এ ধরনের ঘটনা আমার কলেজে ঘটলে নিম্নলিখিত প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া পারে-
১. সামাজিক প্রতিরোধ: ইভ টিজিংকে সামাজিকভাবে প্রতিবোধের জন্য এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ, জনপ্রতিনিধি, সুশীল সমাজ, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্য, যুব ও নারীসমাজসহ সমাজের দায়িত্বশীল জনগণ নিয়ে এলাকা ভিত্তিক ইভ টিজিং কমিটি গঠন করতে হবে। এই কামিটি ইভ টিজিং ঘটলে তৎক্ষণাৎ সক্রিয় ভূমিকা পালন করবে। তারা নারী ও তার পরিবারের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করবে এবং উত্যক্তকারী ও তার পরিবারকে ডেকে নিয়ে সমাজবিরোধী আচরণ থেকে বিরত থাকার জন্য আল্টিমেটাম দিবে।
২. অভিযোগ নম্বর ৭৩৭৩: বাংলাদেশ পুলিশ সদর দপ্তর অভিযোগ নম্বর ‘৭৩৭৩’ চালু করেছে। ইভ টিজিং এর শিকার নারীরা এর মাধ্যমে পুলিশে ফোন করে অভিযোগ করতে পারেন।
৩. মোবাইল হেল্পলাইন: সমাজসেবামূলক প্রতিষ্ঠান দি হাঙ্গার প্রজেক্ট ও উইন্ডমিল ইনফোটেক লিমিটেড যৌথভাবে মোবাইল হেল্পলাইন চালু করেছে। কোন নারী ইভ টিজিং এ শিকার হলে কিংবা হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিলে মোবাইল হেল্পলাইনে সরাসরি ফোন করে অভিযোগ করতে এবং আইনী সহায়তা নিতে পারবেন।
১০. ফজলু ও সাবিহা ভালবাস বাসি করে বিয়ে করেছে। সাবিহার ধূসর বর্ণ চোখ এবং কালো চুল ফজলুকে মোহিত করেছে। তাদের যজম সন্তান হল একটি ছেলে ও একটি মেয়ে। সন্তানের চোখ মায়ের মতো ধূসর এবং চুল খুবই কালো। বাবা ছেলেকে নিয়ে বিলেত গেলেন। ১৫ বৎসর পর আবার বাসায় ফিরে এলেন। দেখা গেল, দুই ভাই-বোনের কথাবার্তা ও কাজেকর্মে পার্থক্য পরিলক্ষিত হলো।
ক. বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশ কী?
খ. শিশুর আবেগীয় বিকাশ গুরুত্বপূর্ণ কেন?
গ. ফজলু ও সাবিহা দম্পতির সন্তান ভিন্ন যমজ না অভিন্ন যমজ-ব্যাখ্যা কর।
ঘ. যমজ সন্তানদের আচরণের ভিন্নতার মূলে কোন কারণটির প্রভাব বেশি?বিশ্লেষণ কর।
১০ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. মানব শিশু বেড়ে উঠার সাথে সাথে বুদ্ধিবৃত্তিক ধারণাসমূহ অর্জনের মাধ্যমে জগতকে অনুধাবন করার ক্ষমতা ও বাধাসমূহ মোকাবিলা করার যে সামর্থ্য লাভ করে তাকে বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশ বলা হয়।
খ. শিশুর আবেগীয় বিকাশ গুরুত্বপূর্ণ। কারণ আবেগীয় বিকাশের মাধ্যমে ব্যক্তি নিজের আবেগসমূহের উপর নিয়ন্ত্রণ অর্জন করতে পারে। শৈশবের প্রথম পর্যায়ে প্রায় শিশুরা নির্দিষ্ট আবেগ প্রকাশ করে। সামান্য কারণে তীব্র আবেগ প্রকাশ পায় যা নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন। কিন্তু মেজাজ দেখানো, রাগ করা, উদাসীনতা ইত্যাদি আবেগময় প্রতিক্রিয়া যে সঙ্গী সাথীর পছন্দ নয়, তা শৈশবের শেষ পর্যায়ে ছেলেমেয়েরা অল্প দিনের মধ্যেই বুঝতে শেখে। ধীরে ধীরে এও বুঝতে শিখে যে রাগে ফেটে পড়াকে বন্ধুরা ছেলেমি ভাবে। একইভাবে ভয় পেয়ে সরে গেলে কাপুরুষতার পরিচয় মনে করে। সেজন্য শৈশবের শেষ পর্যায়ে ছেলেমেয়ে নিজেদের আবেগ অন্যের সামনে যাতে প্রকাশ না পায় সে বিষয়ে সচেষ্ট হয়। শৈশবের শেষ পর্যায়ে আনন্দ প্রকাশ করাই হচ্ছে আবেগের বৈশিষ্ট্য। তারা আবেগ প্রকাশ করতে গিয়ে খিলখিল করে হাসে। হাত-পা ছেড়ে, লাফালাফি করে।
গ. উদ্দীপকে ফজলু ও সাবিহা দম্পতির সন্তান ভিন্ন যমজ প্রকৃতির। নিচে ব্যাখ্যা করা হলো-
কোনো কারণে একাধিক ডিম্বাণুর সাথে একাধিক শুক্রাণু মিলিত হয়ে একাধিক জাইগোটের সৃষ্টি হয় এবং এ একাধিক জাইগোট একই সময়ে একটি গর্তে অবস্থান করে এবং বৃদ্ধি পায়। এমন ব্যতিক্রমধর্মী গর্ভধারণের ফলে যে যমজ সন্তানের জন্ম হয় তাদেরকে ভ্রাতৃপ্রতিম বা ভিন্ন যমজ বলে। এ ধরনের যমজ শিশুরা কখনো একই লিঙ্গবিশিষ্ট আবার কখনো আলাদা লিঙ্গবিশিষ্ট হয়ে থাকে এবং এ ধরনের যমজ শিশুরা শারীরিক ও চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের ক্ষেত্রেও সাধারণত আলাদা প্রকৃতির হয়ে থাকে।
উদ্দীপকে ফজলু ও সাবিহা দম্পত্তির যমজ সন্তান একটি ছেলে ও একটি মেয়ে হয়। তাই উপরোক্ত আলোচনা হতে বলা যায় তাদের সন্তান ভিন্ন যমজ প্রকৃতির।
ঘ. যমজ সন্তানদের আচরণের ভিন্নতার মূলে পরিবেশের প্রভাবই বেশি বলে আমি মনে করি। অনেক গবেষক তাদের গবেষণায় পালিত সন্তানদের ক্ষেত্রে বংশগতির চেয়ে পরিবেশের প্রভাব বেশি বলে প্রমাণ পেয়েছেন। নিচে বিশ্লেষণ করা হলো-
পরিবেশের প্রভাব প্রসঙ্গে কিংসলি ডেভিস্ ইসাবেলা নামের একটি শিশুর উল্লেখ করেছেন। ইসাবেলা তার কালা এবং বোবা মায়ের সাথে সাড়ে ছ' বছর একটি বিচ্ছিন্ন কক্ষে আবদ্ধ ছিল। সাড়ে ছ' বছর পর ইসাবেলাকে যখন উদ্ধার করা হয় তখন তার মধ্যে অনেক মানবিক গুণাবলি অনুপস্থিত ছিল। প্রশিক্ষণের ফলে দু' বছরে সে ভালোভাবে কথা বলতে শেখে এবং তার বুদ্ধ্যঙ্ক বেড়ে যায় তিনগুণ। ইসাবেলা ১৪ বছর বয়েসে ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হয় এবং স্বাভাবিক শিশুর মতো আচরণ করে। পরিবেশের প্রভাবের কারণেই ইসাবেলার আচরণের এরূপ উন্নতি ঘটেছে।
অনুকূল পরিবেশ হিসেবে যদি শিশুকে বেড়ে উঠার জন্য বাড়িতে সঠিক পরিবেশ, ভালো স্কুল এবং শিক্ষণ সুবিধা দেওয়া যায় তাহলে ফলাফলে দেখা যায় শিশুর বুদ্ধির বিকাশকে উৎসাহিত করে।
উদ্দীপকে ফজলু ও সাবিহার ভিন্ন যমজ সন্তান একটি ছেলে ও একটি মেয়ে হওয়া সত্ত্বেও ফজলু সাহেব ছেলেকে নিয়ে বিলেত যান। ফলে মেয়ে সন্তান সাবিহার কাছে এবং ছেলে সন্তান বাবার কাছে বিলেত থাকে। দুজনেই সম্পূর্ণ ভিন্ন পরিবেশে বেড়ে উঠে। তাই ১৫ বছর পরে ফজলু সাহেব ছেলেকে নিয়ে দেশে ফিরে এলে দেখা গেল দুই ভাইবোনের অর্থাৎ ফজলু-সাবিহার সন্তানদের কথাবার্তা ও কাজকর্মে পার্থক্য পরিলক্ষিত হলো। অর্থাৎ উপরোক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায় যে, যমজ সন্তানদের আচরণের ভিন্নতার মূলে পরিবেশের প্রভাবই বেশি।
0 Comments:
Post a Comment