HSC কৃষিশিক্ষা ২য় পত্র (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর pdf download অধ্যায় ৫ - Exam Cares

Breaking

Home Top Ad

Responsive Ads Here

Post Top Ad

Responsive Ads Here

HSC কৃষিশিক্ষা ২য় পত্র (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর pdf download অধ্যায় ৫

এইচএসসি পরীক্ষার পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি
HSC Agricultural Education 2nd Paper Srijonshil question and answer. HSC Agricultural Education 2nd Paper (Srijonshil) Creative Questions pdf download. HSC Krishi Shikkha 2nd paper Srijonshil Proshno Uttor.

উচ্চ মাধ্যমিক
কৃষিশিক্ষা
দ্বিতীয় পত্র

সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
অধ্যায়-৫

HSC Agricultural Education
2nd Paper
Srijonshil Question and Answer pdf download

১. করিম উপকূলীয় এলাকার একজন মৎস্য চাষি। অধিক লাভবান হওয়ার আশায় তিনি বাংলাদেশের 'সাদা সোনা' নামে পরিচিত মাছের চাষ করেন। কিন্তু মাছ পচনশীল হওয়ায় সঠিক সময়ে ভালো মানের মাছ বিক্রি করা তার জন্য দূরহ ও ব্যয়বহুল হয়ে পড়ে। এমতাবস্থায় তার বন্ধু শরীফ তাকে কৃষি সমবায়ের সদস্য হতে বলেন।
ক. মৎস্যবিজ্ঞান কাকে বলে?
খ. কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে মৎস্য সম্পদ কীভাবে ভূমিকা রাখে ব্যাখ্যা করো।
গ. করিম কোন প্রকারের সমবায়ের সদস্য হবে এবং উক্ত সমবায় দ্বারা কীভাবে উপকৃত হবে- ব্যাখ্যা করো।
ঘ. বাংলাদেশে করিমের চাষকৃত মাছের সম্ভাবনা বিশ্লেষণ করো।

১ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. জীববিজ্ঞানের যে শাখায় মাছের শ্রেণিবিন্যাস, মাছ চাষ ব্যবস্থাপনা, মাছের প্রজনন, রোগতত্ত্ব তথা মাছ সংশ্লিষ্ট বিষয় আলোচনা করা হয় তাকে মৎস্যবিজ্ঞান বলে।

খ. দেশে মৎস্য উৎপাদন বৃদ্ধির ফলে দরিদ্র মৎস্যজীবীদের আয় বৃদ্ধির সাথে সাথে অতিরিক্ত কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশের জনসংখ্যার প্রায় ১১% লোক মাছ উৎপাদন, আহরণ, প্রক্রিয়াজাতকরণ ও বাজারজাতকরণের সাথে জড়িত (সূত্র: মৎস অধিদপ্তর, ২০১৭)। এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, বিগত চার বছরে এ খাতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ৬ লক্ষাধিক দরিদ্র জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। সরকারি বা বেসরকারিভাবে মাছের উৎপাদন বাড়িয়ে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে হ্যাচারি, নার্সারি, খামার ইত্যাদি স্থাপনের মাধ্যমেও কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা হচ্ছে। তাই বলা যায়, কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে মৎস্য সম্পদ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।

গ. করিম তার উৎপাদিত মাছ বিক্রি করার জন্য কৃষিপণ্য বাজারজাতকরণ সমবায়ের সদস্য হবে।
যে প্রক্রিয়ার মাধ্যমে উৎপাদিত কৃষিপণ্য কৃষকের নিকট হতে ভোক্তার নিকটে পৌছায় তাকে কৃষিপণ্য বাজারজাতকরণ বলে। কৃষকগণ যাতে তাদের উৎপাদিত পণ্যসমূহের ন্যায্যমূল্য পেতে পারে এবং সঠিক সময়ে পণ্য বাজারজাত করতে পারে সেজন্য কৃষিপণ্য বাজারজাতকরণ সমবায় গঠিত হয়ে থাকে। আমাদের গ্রামাঞ্চলে উৎপাদিত মাছ সংরক্ষণের কোন ভালো উপায় নেই। কৃষি বিপণন সমবায়ের মাধ্যমে করিম তার মাছ যথাযথভাবে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করে বাজারজাত করতে পারবে। এভাবে বাজারজাত করলে তার উৎপাদিত মাছের গুণগত মান অক্ষুণ্ণ থাকবে এবং ক্রেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করবে।
উপরের আলোচনায় দেখা যাচ্ছে যে, করিম কৃষি বিপণন সমবায়ের সদস্য হয়ে তার পণ্য বাজারজাতকরণের ক্ষেত্রে উপকৃত হবে।

ঘ. করিম অধিক লাভবান হওয়ার জন্য বাংলাদেশের সাদা সোনা অর্থাৎ চিংড়ির চাষাবাদ করেছিল।
চিংড়ি বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলের প্রাকৃতিক পরিবেশ এবং মাটি চিংড়ি চাষের জন্য খুবই উপযোগী। প্রাকৃতিক উৎস হতে সহজেই চিংড়ির পোনা সংগ্রহ করা যায়। স্বল্পমূল্যে বাগদা-গলদার পোনা পাওয়া যায়। উপকূলীয় এলাকায় ৪০% জমিতে অর্থাৎ, ১.৭২ লাখ হেক্টর জমিতে বর্তমানে চিংড়ি চাষ করা হচ্ছে। সনাতন পদ্ধতিতে চিংড়ি চাষ করা হলে এর উৎপাদন হয় হেক্টরপ্রতি ২০০-৩৫০ কেজি। কিন্তু উন্নত পদ্ধতিতে চাষ করা হলে হেক্টরপ্রতি গড় উৎপাদন পাওয়া যাবে ৪৫০-৬০০ কেজি (সূত্র: Year Book of Statistics, ২০১৭)।
চিংড়ি চাষযোগ্য জমির পরিমাণ বাড়িয়ে সহজেই পতিত জমি চাষাবাদের আওতায় আনা সম্ভব। উপকূলীয় এলাকার বহুলোক একই জমিতে বছরে একবার ধান উৎপাদন করছে এবং একবার চিংড়ি চাষ করছে। বিশেষ করে খুলনা, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাট এলাকায় চিংড়ি চাষের উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে। বাংলাদেশের অভ্যন্তরে স্বাদু পানিতে অর্থাৎ ধানক্ষেতে গলদা চিংড়ি চাষের প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে। এ পদ্ধতিতে একই জমিতে একই সময়ের ব্যবধানে দুইটি পণ্য উৎপাদন করা সম্ভব। যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর থেকে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে চিংড়ি চাষ প্রযুক্তি আয়ত্ত করে ব্যক্তি পর্যায়ে স্বল্প বিনিয়োগে ক্ষুদ্র চিংড়ি খামার গড়ে তোলা যায়।
উপরের আলোচনায় এই সিদ্ধান্তে আসা যায় যে, বাংলাদেশে চিংড়ি চাষের সম্ভাবনা অত্যন্ত উজ্জ্বল।

২. হরিপুর গ্রামটি সমুদ্র উপকূলীয় অঞ্চলে অবস্থিত। এখানে বেশিরভাগ মানুষ মাছের শুঁটকি তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করে। কিন্তু তারা সঠিকভাবে বাজারজাত করতে না পারায় লাভবান হতে পারে না। মধ্যসত্ত্বভোগীদের দ্বারা প্রতারিত হয়ে থাকে। স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তা তাদের একটি সমবায় সংগঠন গড়ে তোলার পরামর্শ দেন যাতে তারা সঠিকভাবে শুঁটকি বাজারজাত করতে পারে।
ক. রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক কত সালে প্রতিষ্ঠিত হয়?
খ. পশুকে সুষম খাদ্য প্রদানের গুরুত্ব ব্যাখ্যা করো।
গ. হরিপুর গ্রামের মানুষের জীবিকা নির্বাহ পদ্ধতিটি ব্যাখ্যা করো।
ঘ. স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শটি বিশ্লেষণ করো।

২ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. ১৯৮৭ সালে রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হয়।

খ. যে খাদ্যে পশুর প্রয়োজনীয় সকল অত্যাবশ্যকীয় পুষ্টি উপাদান।
উপযুক্ত পরিমাণে ও অনুপাতে থাকে তাকে পশুর সুষম খাদ্য বলে। পশু সুষম খাদ্য দেওয়া হলে পশুর স্বাস্থ্য ভালো থাকে ও কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি পায়। পশুর মাংস ও দুধ উৎপাদন ক্ষমতা বাড়ে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেড়ে যায়। পশু হতে প্রাপ্ত দ্রব্যের গুণগত মান বৃদ্ধি পায়। কম সময়ে বড় আকারের সুস্থ ও সবল গরু পাওয়া যায়।

গ. হরিপুর গ্রামের মানুষ মাছের শুঁটকি তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করে।
শুঁটকি করার জন্য তারা প্রথমে মাছের পাখনা, আঁইশ, নাড়িভুঁড়ি ইত্যাদি ফেলে দেয় (রুই, কাতলা জাতীয় মাছের ক্ষেত্রে মাথা কেটে ফেলে দেয়)। পরে মাছকে বুক হতে লেজের দিকে লম্বালম্বিভাবে কাটে যাতে লেজের প্রান্ত সামান্য লেগে থাকে। এটি মাছকে শুকানোর ঝুলিয়ে রাখতে সাহায্য করে। পাখি বা অন্যান্য প্রাণীর আক্রমণ থেকে মাছগুলোকে রক্ষা করার জন্য তারা জাল টানিয়ে রাখে। মাছের জলীয় অংশ ১৬% বা তার কম পর্যায়ে নামিয়ে আনে। তারপর শুঁটকির জন্য প্রস্তুতকৃত মাছকে চাটাইয়ে ছড়িয়ে বা রশির সাহায্যে ঝুলিয়ে শুকায়। আবহাওয়া ও মাছের প্রকৃতির ওপর নির্ভর করে মাছগুলোকে শুকাতে ৭-১০ দিন সময় লাগে। এভাবে হরিপুর গ্রামবাসীরা শুঁটকি করে থাকে।

ঘ. স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তা হরিপুর গ্রামবাসীকে শুঁটকি সঠিকভাবে বাজারজাত করার জন্য বাজারজাতকরণ সমবায় গঠন করতে বলেন।
কৃষিপণ্য বাজারজাতকরণে সমবায় বাজারজাতকরণের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। কৃষিপণ্য বাজারজাতকরণ সমবায়ের মাধ্যমে বিভিন্ন স্থানে উৎপাদিত কৃষিপণ্য বাজারজাতকরণের মাধ্যমে কৃষকের ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তি ও ভোক্তার কাছে গুণগত মানসম্পন্ন পণ্য প্রাপ্তি নিশ্চিত হয়।
হরিপুর গ্রামবাসী যদি বাজারজাতকরণ সমবায় গড়ে তোলে তবে তাদের উৎপাদিত শুঁটকি সঠিকভাবে বাজারে সরবরাহ করার পাশাপাশি নিজেরাও এর ন্যায্যমূল্য পাবে। মধ্যসত্ত্বভোগীদের দৌরাত্ম থেকে রেহাই পাবে। এতে করে আরও ব্যক্তিরা এ কাজে উৎসাহিত হবে। বাজারের চাহিদা, বাজার দর, বাজারে পণ্যের ঘাটতি, ভবিষ্যৎ চাহিদা ইত্যাদি বাজার সংক্রান্ত তথ্য সমবায়ের মাধ্যমে সহজে সরবরাহ করা যায়। ফলে বাজারজাতকরণ সহজ হয়। অর্থাৎ গ্রামবাসীরা এ সমবায়ের মাধ্যমে তাদের অর্থনৈতিক উন্নয়নের পাশাপাশি জীবনযাত্রায় মানোন্নয়ন করতে পারবে। অতএব, কৃষি কর্মকর্তার উক্তিটি যথার্থ ছিল।

৩. কৃষির আধুনিকায়নের লক্ষ্যে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান সহজ শর্তে ঋণ প্রদান করে থাকে। আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য শরিফ কৃষি ব্যাংক হতে ঋণ গ্রহণ করে স্বল্প পরিসরে হাঁস পালন শুরু করে। অল্প দিনের মধ্যেই সে লাভের মুখ দেখে।
ক. খামার ব্যবস্থাপনা কাকে বলে?
খ. ক্ষুদ্র ঋণ দরিদ্র ভূমিহীনদের জন্য আশির্বাদস্বরূপ- ব্যাখ্যা করো।
গ. শরিফ যে উৎস হতে ঋণ গ্রহণ করেছিল তার সুবিধা ও অসুবিধা ব্যাখ্যা করো।
ঘ. শরিফের কার্যক্রমটি মূল্যায়ন করো।

৩ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. খামারে ভূমি, শ্রম, মূলধন ও ব্যবস্থাপনার উপযুক্ত সমন্বয় ও কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন করার পদ্ধতিকে খামার ব্যবস্থাপনা বলে।

খ. গ্রামীণ অর্থনৈতিক কাজের জন্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে স্বল্পপরিমাণে যে ঋণ দেওয়া হয় তাকে ক্ষুদ্র ঋণ বলে।
দেশে এমন অনেক দরিদ্র মানুষ আছে যারা অল্প পরিমাণ অর্থ ঋণ করার যোগ্যতা রাখেন। তারা সহজ শর্তে ও স্বল্প সুদে ক্ষুদ্র ঋণ গ্রহণ করে মহাজনের উচ্চ সুদের ঋণের হাত থেকে রক্ষা পেতে পারেন। ক্ষুদ্র ঋণ গ্রহণ করে গ্রামের দরিদ্র মহিলারা ছাগল, ভেড়া বা গরু কিনে উৎপাদিত মাংস এবং দুধ বিক্রি করতে পারেন। এভাবে তারা তাদের নিজস্ব কর্মসংস্থান ও দারিদ্র্য বিমোচন করতে পারেন। তাই বলা যায়, ক্ষুদ্র ঋণ দরিদ্র ভূমিহীনদের জন্য আশির্বাদস্বরূপ।

গ. শরিফ কৃষি ব্যাংক হতে ঋণ গ্রহণ করেছিল যা কৃষিঋণের একটি প্রাতিষ্ঠানিক উৎস।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ঋণ দানের বিধি ও নিয়ম অনুযায়ী পরিচালিত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে কৃষিঋণের প্রাতিষ্ঠানিক উৎস বলা হয়। এ সকল প্রতিষ্ঠান হতে ঋণ নিলে কৃষক প্রতারিত হওয়ার সুযোগ। কম থাকে। চাহিদামাফিক ঋণ পাওয়া যায়, অনেক সময় বন্ধকী রাখার প্রয়োজন হয় না। দুর্যোগকালীন সময়ে বিশেষ সুবিধা বা কম সুদে ঋণ পাওয়া যায়। কখনও কখনও প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে কৃষি ঋণের সুদ সরকার মওকুফ করে। দল গঠন না করেও ব্যক্তিগতভাবে ঋণ পাওয়া যায়। কিন্তু প্রাতিষ্ঠানিক উৎস থেকে ঋণ পেতে অনেক সময় বিলম্ব হয় কারণ ঋণের প্রক্রিয়াকরণ বেশ জটিল এবং প্রচুর আমলাতান্ত্রিক জটিলতা রয়েছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বন্ধকীর প্রয়োজন হয়। যা অনেক কৃষকের নেই।
শরিফের গৃহীত প্রাতিষ্ঠানিক ঋণের উৎসসমূহের উপরিউক্ত সুবিধা ও অসুবিধা বিদ্যমান।

ঘ. শরিফ আত্মকর্মসংস্থানে ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে হাঁস পালন শুরু করে।
আমাদের দেশে গ্রামের দুঃস্থ, ভূমিহীন ও বেকার গুরুত্ব ও মহিলারা বসতবাড়ি ও তৎসংলগ্ন জলাশয়ে অনায়াসে হাঁস পালন করতে পারে। এমনকি বড় আকারের খামার করে নিজের কর্মসংস্থানের পাশাপাশি অন্যদেরকে এ কাজে নিয়োজিত করতে পারে। হাঁসের ডিম ও মাংস বিক্রি করে অর্থ উপার্জন করা যায়। পরিবারের সদস্যদের পুষ্টির চাহিদা পূরণে হাঁসের ডিম ও মাংস উপকারি। কেক, বিস্কুট, পাউরুটি, পুডিং ইত্যাদি তৈরিতে হাঁসের ডিম ব্যবহার করা হয়।
আমাদের দেশে অনেক নদী-নালা, খাল-বিল, হাওর, বাঁওড়, পুকুর, ডোবা রয়েছে। হাঁস পালনে এসব জলাভূমি ব্যবহার করা যায়। হাঁসের বিষ্ঠা উন্নতমানের জৈব সার ও মাছের খাদ্য। হাঁস পালন করে বিষ্ঠা ফসল উৎপাদন ও মাছ চাষে ব্যবহার করা যায়।
হাঁসের নাড়িভুড়িও মাছের খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। হাঁসের পালক দিয়ে উন্নতমানের ঝাড়ু গদি, বালিশ ইত্যাদি তৈরি করা হয়। ডিমের খোসা বিভিন্ন সৌন্দর্যবর্ধক জিনিস তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। এছাড়া বিভিন্ন প্রকার শিল্পদ্রব্য যেমন রং, বার্নিশ, ছাপার কালি ইত্যাদি তৈরিতে ডিমের অংশবিশেষ ব্যবহৃত হয়।
উপরে আলোচিত হাঁস পালনের সুবিধাগুলোর কথা বিবেচনা করে। বলা যায় যে, শরিফের হাঁস পালনের কার্যক্রমটি যথাযথ ছিল।

৪. হোসেনপুর গ্রামের কয়েকজন কৃষক মিলে 'ভোরের আলো সমবায় সমিতি' নামে একটি কৃষি সমবায় গঠন করেন। এই সমিতি হতে ঋণগ্রহণ করে আবুল হোসেন ডিম উৎপাদনকারী মুরগির খামার গড়ে তোলেন এবং তার অবস্থার পরিবর্তন করতে সক্ষম হন। তাকে দেখে এলাকার আরও কয়েকজন কৃষক সমবায়ে যুক্ত হন এবং কৃষিকাজে সফল হন।
ক. সমবায় আইন কী?
খ. সুষম খাদ্যের অভাব এদেশে পোল্ট্রি শিল্পের অন্যতম সমস্যা-ব্যাখ্যা করো।
গ. আবুল হোসেনের খামারের মুরগির বৈশিষ্ট্য ব্যাখ্যা করো।
ঘ. হোসেনপুর গ্রামের কৃষকদের কার্যক্রমটি মূল্যায়ন করো।

৪ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. সমবায় প্রতিষ্ঠা, নিবন্ধন, পরিচালনা ও সমবায়ের সদস্যদের স্বার্থ সংরক্ষণের আইনই হলো সমবায় আইন।

খ. যে খাদ্যে শর্করা, আমিষ, স্নেহ পদার্থ, ভিটামিন, পানি ও খনিজ লবণ এ ছয়টি উপাদান প্রয়োজনীয় পরিমাণে ও আনুপাতিক হারে বিদ্যমান থাকে তাকে সুষম খাদ্য বলে।
হাঁস-মুরগি পালনে মোট ব্যয়ের ৬৫-৭০ ভাগ ব্যয় হয় খাদ্য বাবদ। আর এ খাদ্য গুণগত মানসম্পন্ন না হলে হাঁস-মুরগির দৈহিক বৃদ্ধি ও উৎপাদন ব্যাহত হবে। কিন্তু বাংলাদেশে হাঁস-মুরগির খাদ্য উৎপাদনের পর্যাপ্ত খাদ্যমিল প্রতিষ্ঠিত হয়নি। ফলে এসব খাদ্যের প্রাপ্যতা পর্যাপ্ত নয় এবং দামও অনেক বেশি। এছাড়া প্রাপ্ত খাদ্য অধিকাংশ ক্ষেত্রে ভেজাল মিশ্রিত থাকে। তাই সুষম খাদ্যের অভাব বাংলাদেশের পোল্ট্রি শিল্পের অন্যতম একটি সমস্যা।

গ. আবুল হোসেন তার খামারের জন্য লেয়ার বা ডিম উৎপাদনকারী মুরগি ক্রয় করেন।
ডিম উৎপাদনকারী মুরগির জাত আকারে ছোট ও ওজনে তুলনামূলকভাবে হালকা হয়ে থাকে। তবে এরা বেশ বড় আকারের ও অধিক পরিমাণে ডিম দিয়ে থাকে। এদের শরীরে চর্বি কম থাকে এবং এরা দ্রুত পরিপক্কতা লাভ করে। ডিম উৎপাদনকারী মুরগি দুই ধরনের। একটি বিশুদ্ধ বা খাঁটি জাত অপরটি বিশুদ্ধ জাত থেকে সংকরায়ণের মাধ্যমে তৈরি স্ট্রেইন যাকে বাণিজ্যিক লেয়ার বলে। বিশুদ্ধ বা খাঁটি জাতগুলোর মধ্যে লেগহর্ন, মিনকা, এনকোনা, ফাউমি ইত্যাদি ডিম উৎপাদনকারী জাত হিসেবে বিশেষভাবে পরিচিত। এদেরকে মাতৃজাতও বলা হয়। অন্যদিকে বাণিজ্যিক লেয়ারগুলো হলো স্টারক্রস সাদা, স্টারক্রস ব্রাউন, ব্যাবকক, লোহম্যান ব্রাউন, ইসা ব্রাউন প্রভৃতি যেগুলো বর্তমানে খামার পর্যায়ে পালন করা হয়। এ সকল মুরগি ২০ সপ্তাহ থেকে ৭৬ সপ্তাহ পর্যন্ত অনবরত ডিম দিয়ে থাকে এবং বছরে ৩০০টি বা তারও বেশি ডিম দেয়। এদের খাদ্যকে ডিমে রূপান্তর করার ক্ষমতা বেশি (২: ১)। অর্থাৎ, এরা দৈনিক ১০৫-১১৫ গ্রাম খাদ্য গ্রহণ করলে ৫৫-৬৫ গ্রাম ওজনের একটি ডিম ত দিতে পারে।
অতএব বলা যায়, আবুল হোসেনের ডিম উৎপাদন খামারের মুরগিগুলো উপরিউক্ত বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন।

ঘ. হোসেনপুর গ্রামের কৃষকরা 'ভোরের আলো সমবায় সমিতি' নামক একটি কৃষি সমবায় গড়ে তোলে।
স্বপ্রণোদিত হয়ে এবং সম্মিলিত স্বার্থের জন্য কাজ করাই কৃষি সমবায়ের মূল লক্ষ্য। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল কৃষিপ্রধান দেশে কৃষি সমবায় বিশেষ গুরুত্ব বহন করে।
আমাদের দেশের অধিকাংশ কৃষক তাদের কৃষিকাজের জন্য প্রয়োজনীয় মূলধনের যোগান দিতে সক্ষম নয়। সমবায়ের মাধ্যমে এ সমস্যা দূরীকরণ সম্ভব। সমবায় কৃষকদের মধ্যে সঞ্চয়ের প্রবণতা সৃষ্টি করে, মধ্যসত্বভোগীর উপদ্রব রোধ করে তাদের মধ্যে নেতৃত্বের বিকাশ ঘটায়। কৃষি সমবায়ের মাধ্যমে উন্নত প্রযুক্তি অবলম্বনে চাষাবাদ করা যায় বিধায় কৃষকের উৎপাদন বৃদ্ধি পায়। ক্ষুদ্র, অস্বচ্ছল কৃষকরাও বাণিজ্যিক খামার গড়ে তুলতে পারে। ফলে কৃষিকাজে গতিশীলতা আসে। কৃষি সমবায়ের মাধ্যমে কৃষি পণ্যের বাজারজাতকরণ পদ্ধতির উন্নয়ন হয় এবং উৎপাদন পর্যায়ে কৃষিপণ্য নষ্ট হওয়া বা কম দামে বিক্রিজনিত ক্ষতি থেকে রেহাই পাওয়া যায়। তাছাড়া কৃষি প্রযুক্তিতে উন্নত দেশের তত্ত্ব নিয়ে কৃষি সমবায়কে গতিশীল ও আধুনিক হিসেবে গড়ে তোলার মাধ্যমে কৃষিভিত্তিক কলকারখানা এবং গ্রামীণ শিল্প স্থাপনের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করা সম্ভব।
উপরে আলোচিত কৃষি সমবায়ের বিবিধ সুবিধার কথা বিবেচনা করে বলা যায় যে, হোসেনপুর গ্রামের কৃষকদের কার্যক্রমটি যুক্তিযুক্ত ছিল।

৫. রাবিব তার বসত ও কৃষিবনের বড় গাছগুলো বিক্রি করে গত বছরে নেওয়া ঋণ পরিশোধ করলেন। যদিও কৃষি কাজের উদ্দেশ্যে নেওয়া এ ঋণ দ্বারা তিনি তেমন লাভবান হতে পারেননি।
ক. সামাজিক বনায়ন কী?
খ. কৃষি যান্ত্রিকীকরণ বলতে কী বোঝ?
গ. উদ্দীপকে যে বনের কথা বলা হয়েছে তার গুরুত্ব ব্যাখ্যা করো।
ঘ. বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে উদ্দীপকের শেষ লাইনটি বিশ্লেষণ করো।

৫ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. দেশের প্রাকৃতিক বন ব্যতিরেকে বনজ সম্পদের উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে জনসাধারণের প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণের মাধ্যমে বসতবাড়িতে, রেললাইনের পাশে, পতিত জমিতে, রাস্তা, বাঁধ, খাস ও প্রাতিষ্ঠানিক জমিতে স্বল্প পরিসরে সারাদেশব্যাপী বৃক্ষরোপণ করাকে সামাজিক বনায়ন বলে।

খ. কৃষি যান্ত্রিকীকরণ বলতে কৃষিতে বিভিন্ন ধরনের আধুনিক যন্ত্রপাতি, যেমন-পাওয়ার টিলার, ট্রাক্টর, থ্রেসার মেশিন ইত্যাদি ব্যবহার করাকে বোঝায়।
বর্তমানে অধিকাংশ কৃষকই জমি চাষে লাঙল বা পশুর পরিবর্তে ট্রাক্টর ব্যবহার করেন। কারণ একটি লাঙল দিয়ে দিনে যেখানে ১-২ বিঘা জমি চাষ করা যায়, সেখানে একটি ট্রাক্টর দিয়ে প্রায় ২০ বিঘা জমি চাষ করা যায়। এক সময় কৃষকরা হাত দিয়ে বীজ বপন করত, কিন্তু বর্তমানে বীজ বপনের কাজে ড্রাম সীডার ব্যবহৃত হচ্ছে। অর্থাৎ, কৃষিকাজে যন্ত্রের ব্যবহার করাই হলো কৃষি যান্ত্রিকীকরণ।

গ. উদ্দীপকে কৃষি বন ও বসত বনের কথা বলা হয়েছে।
অতিরিক্ত জনসংখ্যা আমাদের জাতীয় জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা। আমাদের ভূমি সীমিত। বিশাল জনসংখ্যার চাহিদা মেটাতে এ ভূমি সক্ষম নয়। সুতরাং, বনায়ন শুধু বনভূমিতে সীমাবদ্ধ রাখলে চলবে না। কৃষি বনায়নকে আধুনিক প্রযুক্তি হিসেবে গ্রহণ করতে হবে। শুধু তাই নয়, রাস্তা ও বাঁধের ধার, বাড়ির আঙিনা, প্রতিষ্ঠানের চারপাশ সর্বত্র বনায়ন জরুরি।
বসত বনের মাধ্যমে পরিবারের সদস্যদের ফল ও সবজির চাহিদা পূরণ হয়। এ বনের বৃক্ষের পাতা পশুখাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয় এবং কাষ্ঠল গাছ বৃক্ষ থেকে আসবাবপত্র তৈরির কাঠ পাওয়া যায়। আবার কৃষিবন হলো এক ধরনের ভূমি উৎপাদন ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি। এ বনায়নে একই জমিতে বৃক্ষ, ফসল, পশুখাদ্য ও মৎস্য উৎপাদন করা যায়। এছাড়া এ বন ভূমিক্ষয় রোধ করে, মাটিতে জৈব পদার্থের মাত্রা বাড়িয়ে জমি উর্বর করে। এ বনায়নে এক উপাদান অন্য উপাদানকে ব্যাহত করে না। সব উপাদান সমন্বিতভাবে পরিবেশকে সমৃদ্ধ করে।
অতএব বলা যায়, আমাদের জীবনের বহুমুখী সমস্যা সমাধানে বসত ও কৃষিবন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

ঘ. রাবিব কৃষিঋণ গ্রহণ করার পরও আশানুরূপ লাভবান হতে পারেননি।
আমাদের দেশের অধিকাংশ কৃষক দরিদ্র হওয়ায় কৃষিকাজের জন্য প্রয়োজনীয় মূলধনের যোগান দিতে পারেন না। ফলে তারা বিভিন্ন উৎস থেকে ঋণ গ্রহণ করে উৎপাদন কাজে ব্যয় করেন। কৃষির আধুনিকায়নের জন্যও প্রচুর মূলধনের প্রয়োজন। তবে কৃষকেরা কৃষিকাজের জন্য ঋণ গ্রহণ করলেও অনেক ক্ষেত্রে সেই ঋণের সঠিক ব্যবহার করেন না।
কৃষকেরা দরিদ্র হওয়ার দরুন কৃষিঋণ ব্যক্তিগত কাজে ও অনুৎপাদনশীল খাতে (যেমন- বাড়িঘর নির্মাণ, বিয়ে, ঈদ ইত্যাদি) ব্যবহার করে ঋণ শোধ করতে না পেরে ঋণখেলাপি হয়ে যান। তাছাড়া প্রাকৃতিক দুর্যোগের (যেমন- বন্যা, খরা, লবণাক্ততা ইত্যাদি) দ্বারা ফসল নষ্ট হলে বা গবাদিপশু মারা গেলে কৃষকেরা অভাবের ফলে আরও ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েন। কৃষিপণ্য সঠিক সময়ে বাজারজাত করতে না পারলে পণ্যের গুণগত মান নষ্ট হয়ে যায় বলে সঠিক মূল্য পাওয়া যায় না। ফলে কৃষক আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হন। আবার অনেক সময় যে পরিমাণ ঋণ কৃষক গ্রহণ করেন তার চেয়েও অনেক বেশি অর্থ কৃষিকাজে ব্যয় করেন। উল্লিখিত কারণ ছাড়াও ভূমির অনুর্বরতা, ফসলের ধরণ ও যথাযথ পরিচর্যার অভাবে ফসলের উৎপাদন কমে যেতে পারে।
অতএব বলা যায়, এসকল প্রতিকূলতার কারণে আমাদের দেশের কৃষকরা কৃষি ঋণ নিয়ে প্রায়শঃই লাভবান হতে পারেন না।

৬. কারাপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা স্থানীয় একটি সমবায় প্রতিষ্ঠান পরিদর্শনে যায়। কৃষকরা জানায় এই সমবায় গঠনের ফলে তারা মূলধন সংগ্রহ, উপকরণ ক্রয়, উৎপাদন ও বাজারজাতকরণ সহজেই করতে পারে। এর ফলে তারা নানা সুবিধা প্রাপ্ত হচ্ছে। শ্রেণিশিক্ষক শিক্ষার্থীদের বলেন, 'কৃষি উন্নয়নে সমবায়ের ভূমিকা অপরিসীম'।
ক. স্বল্পমেয়াদি ঋণ কাকে বলে?
খ. কৃষি উৎপাদন সমবায় সমিতি বলতে কী বোঝ?
গ. শিক্ষার্থীদের পরিদর্শনকৃত প্রতিষ্ঠানটির মাধ্যমে কৃষকেরা কীভাবে উপকৃত হয় ব্যাখ্যা করো।
ঘ. শিক্ষকের উক্তিটির যথার্থতা মূল্যায়ন করো।

৬ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. সাধারণত শস্য উৎপাদনের সাথে সম্পৃক্ত উপকরণাদি যেমন- বীজ, সার, বালাইনাশক ক্রয়, শ্রমিকের মজুরি প্রদান, ফসল নিড়ানো, কাটাই, মাড়াই, সেচের পানি ব্যয় ইত্যাদি মেটানোর জন্য কৃষকদের ১ বছর মেয়াদে যে ঋণ দেওয়া হয় তাকে স্বল্পমেয়াদি ঋণ বলে।

খ. কৃষি উৎপাদনে প্রত্যক্ষভাবে সম্পৃক্ত ব্যক্তিবর্গের সমন্বয়ে গঠিত সমবায়কে কৃষি উৎপাদন সমবায় সমিতি বলে।
উৎপাদন বৃদ্ধি, সেচ প্রকল্প বাস্তবায়ন, স্বল্পমূল্যে কৃষি উপকরণ (বীজ, সার, কীটনাশক প্রভৃতি) সরবরাহ, পশু সম্পদ উন্নয়ন প্রভৃতি উদ্দেশ্যসমূহ বাস্তবায়নের জন্য এই প্রকার সমবায় সমিতি গঠিত হয়। যেমনত ফসল, শাকসবজি, পোল্ট্রি, গবাদিপশু উৎপাদন সমবায় সমিতি।

গ. শিক্ষার্থীদের পরিদর্শনকৃত প্রতিষ্ঠানটি হলো একটি সমবায় প্রতিষ্ঠান।
মূলধন সমবায়ের মাধ্যমে কৃষকরা তাদের সঞ্চিত অর্থ একত্রিত করে প্রয়োজনীয় মূলধনের যোগান দিয়ে থাকে। যার মাধ্যমে কৃষকরা যৌথভাবে ব্যাপক আকারে চাষাবাদ করতে পারে বা যৌথ খামার গড়ে তুলতে পারে। আধুনিক কৃষিবিজ্ঞানও প্রযুক্তি নির্ভর হয়ে পড়েছে। উপকরণ সমবায়ের মাধ্যমে কৃষকরা বীজ, সার, উপকরণ ও যন্ত্রপাতি ইত্যাদি সহজেই সংগ্রহ করতে পারে। তাছাড়া সমবায়ের মাধ্যমে কৃষকরা কৃষিপণ্য যথাযথভাবে সংরক্ষণ ও পরিবহন নিশ্চিত করতে পারে। উৎপাদন সমবায়ের মাধ্যমে কৃষকরা যৌথভাবে উৎপাদন প্রযুক্তির ও প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারে বলে উৎপাদনের ক্ষেত্রে বৃহদায়তন ব্যবসায়ের সুবিধা পরিলক্ষিত হয়। পণ্যমূল্য নির্ধারণ, ভর্তুকি গ্রহণ, কৃষিপণ্য বিক্রয় এবং এতদসংক্রান্ত হিসাব রক্ষার জন্য সমবায় গড়ে তোলা হয়। ফলে কৃষকরা সার্বক্ষণিকভাবে পণ্যের বাজার সম্পর্কে অবহিত থাকে এবং আর্থিকভাবে লাভবান হয়। অতএব, বলা যায়, উল্লিখিত উপায়ে কৃষকগণ সমবায়ের মাধ্যমে উপকৃত হয়।

ঘ. উদ্দীপকে শ্রেণিশিক্ষক শিক্ষার্থীদের বলেন, 'কৃষি উন্নয়নে সমবায়ের ভূমিকা অপরিসীম'।
কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি তথা কৃষি কর্মকান্ড সুষ্ঠুরূপে পরিচালনার জন্য যে সমবায় সমিতি করা হয় তাকে কৃষি সমবায় বলে। আমাদের দেশের কৃষকরা খুব দরিদ্র। কৃষিপণ্য উৎপাদনের জন্য বীজ, সার, সেচের পানি, জ্বালানী, শ্রমিকসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রচুর টাকা খরচ হয়। এছাড়া কৃষিপণ্য সংরক্ষণ, বাজারজাতকরণ ও প্রক্রিয়াজাত খাতেও প্রচুর অর্থ ব্যয় করতে হয়। আবার উৎপাদিত কৃষি পণ্যের দাম কম হলে কৃষকরা মূলধন ফিরে পায় না। পরবর্তী কৃষিপণ্য উৎপাদনের সময় কৃষকদের আর্থিক সংকট থাকে চরমে, ফলে কৃষিপণ্য ক্রয়সহ উৎপাদন কর্মকান্ড, পরিচালনা বাধাগ্রস্ত হয়।
এসকল কৃষকের একার পক্ষে সমাধান করা সম্ভব নয়। কিন্তু সমবায় গঠনের মাধ্যমে সমাধান সম্ভব। সমবায়ের সদস্যদের সঞ্চিত অর্থ দিয়ে বড় আকারের পুঁজি গঠন করে উপকরণ সংগ্রহ এবং উৎপাদন বাড়ানোর জন্য কৃষিতে নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার ও কারিগরি ক্ষেত্রে জ্ঞান ও দক্ষতা অর্জন সম্ভব হয়। সমবায়ের মাধ্যমে খ- খ- জমিগুলোকে একত্রিত করে যৌথভাবে উৎপাদন করার মাধ্যমে ফলন বৃদ্ধি করা যায়। সমবায়ের মাধ্যমেই একমাত্র গ্রামীণ যোগাযোগ, উন্নয়ন, পরিবেশ সংরক্ষণ, স্বাস্থ্য ও বিদ্যুৎ সুবিধা সৃষ্টি করা সম্ভব। তাছাড়া, রেজিস্ট্রিকৃত কৃষি সমবায় হলে ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো ঋণ দিতে আগ্রহী হয়।
অতএব বলা যায়, কৃষকরা কৃষি সমবায় সমিতির মাধ্যমে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান হতে সহজেই কৃষিঋণ লাভ করে, যা বিভিন্ন উপকরণ ক্রয়, ভূমিতে স্থায়ী উন্নতি সাধন, পণ্যের সংরক্ষণ, প্রক্রিয়াকরণ, পরিবহন ইত্যাদি কাজে সহায়তা করে। তাই বলা যায়, শিক্ষকের উক্তিটি যথার্থ।

HSC কৃষিশিক্ষা ২য় পত্র (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর অধ্যায় ৫ pdf download

৭. সাজ্জাদ একজন প্রান্তিক কৃষক। তার বন্ধু কামরান তাকে বসতবাড়ির চারপাশের জমিকে কাজে লাগিয়ে পরিবারের চাহিদা মেটানোর পরামর্শ দেন। পরামর্শটি বাস্তবায়নে তিনি পরিকল্পনা মাফিক কিছু কার্যাবলি সম্পাদন করে সফলতা লাভ করেন।
ক. মাঠ ফসল কাকে বলে?
খ. ফসল খামার বলতে কী বোঝ?
গ. সাজ্জাদের সফলতার কারণ ব্যাখ্যা করো।
ঘ. কামালের পরামর্শটি মূল্যায়ন করো।

৭ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. যে সকল ফসল সাধারণত বিস্তীর্ণ নিচু ও মাঝারি উঁচু জমিতে চাষ করা হয় তাদেরকে মাঠ ফসল বলে।

খ. ফসল খামার হলো ফসল উৎপাদন ব্যবস্থার একটি স্থাপনা যেখানে খামারের বিভিন্ন উপাদানের সুষ্ঠু সমন্বয় সাধনের মাধ্যমে কৃষিপণ্য উৎপাদন করা হয়।
ফসল খামার বাড়ির আশপাশের খালি জায়গা, উঁচু ভিটা, মাঝারি নিচু জমিতেও করা যায়। অভিজ্ঞ কৃষকের পরামর্শ নিয়ে ঋতুভিত্তিক সারা বছরের চাষ পরিকল্পনা করলে প্রায় সারা বছরই এই সকল খামার থেকে ফসল পাওয়া যেতে পারে, যা থেকে কৃষক আয় করতে পারে।

গ. সাজ্জাদ তার বন্ধু কামালের পরামর্শে বসতবাড়ির চারপাশে পরিবারের চাহিদা মেটানোর জন্য পারিবারিক খামার গড়ে তোলেন।
পারিবারিক খামার বলতে একদিকে অতি প্রাচীন এবং অন্যদিকে অতি আধুনিক খামার ব্যবস্থাপনা বোঝায়। সাজ্জাদ খামারকে লাভজনক করার উদ্দেশ্যে সঠিকভাবে খামার পরিকল্পনা করে অনুসৃত পদ্ধতি অনুসরণ করে খামার স্থাপন করেন। খামার পরিচালনার জন্য সঠিক দামে খামারের উপকরণ ক্রয় করেন এবং যে পণ্য উৎপাদিত হয় তাতে পরিবারের চাহিদা মেটানোর পর উদ্বৃত্ত পণ্য বাজারে নিয়ে বিক্রি করেন। খামারে ফসল উৎপাদনের জন্য সঠিকভাবে পরিচর্যার কাজ করেন। নিজে খামারের দৈনন্দিন কাজ পরিচালনার পাশাপাশি বাইরে থেকে অতিরিক্ত একজন শ্রমিক নিয়োগ দেন। সাজ্জাদ উৎপাদিত পে পণ্যের যথোপযুক্ত ব্যবহার নিশ্চিত করেন। প্রাকৃতিক উৎস বা সম্পদসমূহের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করেন। ঋতুভিত্তিক বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ফসল উৎপাদন হয় বলেই তিনি সঠিক সময়ে উৎপাদন কার্য পরিচালনা করেন ও খামারে উৎপাদিত পণ্য সঠিক প্রক্রিয়ায়। বাজারজাত করেন।
সাজ্জাদ উপরিউক্ত কাজগুলো যথাযথভাবে পরিচালনার দরুন সফলতা লাভ করেন।

ঘ. সাজ্জাদকে তার বন্ধু কামরান বসতবাড়ির চারপাশের জমিকে কাজে লাগিয়ে পারিবারিক খামার গড়ে তোলার পরামর্শ দেন।
পারিবারিক খামার বলতে নির্দিষ্ট আয়তনের ভূখ-কে বোঝায় যেখানে উপকরণের সুষ্ঠু প্রয়োগের ফলে একর প্রতি যে সকল ফসল উৎপাদন হয় তার আয় থেকে সেখানে নিয়োজিত কৃষক এবং তার পরিবার মোটামুটি সমেত্মাষজনকভাবে জীবিকা নির্বাহ করতে সক্ষম হয়। এই খামারে মূলত ব্যক্তিগত ব্যবহারের উদ্দেশ্যে ফসল উৎপাদন করা হয়।
এরূপ খামারে কৃষিকাজ মূলত পারিবারিক শ্রমের ভিত্তিতে পরিচালিত হয়। তবে ক্ষেত্র বিশেষে বা প্রয়োজনে কিছু শ্রম বাইরে থেকে ভাড়া নেওয়া হয়। জমি এবং পারিবারিক শ্রম হলো এরূপ খামারের উৎপাদনের প্রধান উপাদান। এ ধরনের খামারের মূল উদ্দেশ্য পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে উদ্বৃত্ত অংশটুকু বাজারজাত করা। তাই এই খামারে বিনিয়োগ ঝুঁকির সম্ভাবনা নেই। এ ধরনের খামারে মূলধন বিনিয়োগ কম হয় এবং উৎপাদনের ক্রমহ্রাসমান প্রান্তিক উৎপাদনবিধি দ্রুত প্রযোজ্য হয়। বাংলাদেশের 'একটি বাড়ি একটি খামার' প্রকল্প এ আদর্শেই প্রণীত হয়েছে। সারা বিশ্বেই এ ধরনের খামারের প্রসার ঘটছে। বিশ্ব খাদ্য দিবসের সাথে সমন্বয় রেখে প্রতি বছর 'আন্তর্জাতিক পারিবারিক খামার দিবস' সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে পালিত হয়।
উপরিউক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, বর্তমান বিশ্বে পারিবারিক খামারের যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে। সুতরাং কামালের পরামর্শটি যথাযথ ছিল।

৮. ভুট্টা বর্তমানে পোল্ট্রি ফিড, পশু-পাখি ও মাছের খাদ্য হিসেবে এবং আন্তঃফসল হিসেবে ব্যাপকভাবে চাষ করা হচ্ছে। তাই অভি ভুট্টা ফসলের খামার স্থাপনে আগ্রহী হয়। খামারকে সঠিকভাবে পরিচালনার জন্য সে বেশ কিছু পরিকল্পনা গ্রহণ করে।
ক. সমবায়ের মূল উদ্দেশ্য কী?
খ. ফার্মিং এর মূল উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করো।
গ. অভি তার উদ্যোগটি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে কোন কোন বিষয় বিবেচনায় রাখবে- ব্যাখ্যা করো।
ঘ. অভির গৃহীত পরিকল্পনা খামারকে লাভজনক করতে সহায়ক হবে- বিশ্লেষণ করো।

৮ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. সমবায়ের মূল উদ্দেশ্য হলো লাভ বা মুনাফা অর্জন।

খ. খামারকরণ বা ফার্মিং একটি উৎপাদনমুখী প্রতিষ্ঠান, যা প্রাকৃতিক উৎসসমূহ ব্যবহার করে ফসল, মাছ, পাখি, পশু প্রভৃতি উৎপাদন করে।
ফার্মিং এর মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে উৎপাদিত পণ্য স্বল্পমূল্যে উৎপাদন করে অধিক মূল্যে বিক্রয় করা। অর্থাৎ, ফার্মিং হচ্ছে এক ধরনের ব্যবসা। এ ব্যবসায় লাভ করার উদ্দেশ্যে খামারে সবসময় লাভজনক হয় এমন পণ্য নির্বাচন, উৎপাদনের পরিমাণ বাড়ানো, যথাসময়ে ফসল লাগানো, পর্যাপ্ত পরিচর্যা, ফসল সংগ্রহ এবং গুণগত মান উন্নয়ন করা যায়।

গ. বহুবিধ ব্যবহার এবং ভুট্টা চাষ ব্যাপকভাবে জনপ্রিয় হওয়ায় অভি ভুট্টা ফসলের খামার স্থাপনে আগ্রহী হয়।
ভুট্টা মাঠ ফসল। একটি নতুন খামার স্থাপনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো মূলধন। খামার সাধারণত শহর, বন্দর ও শিল্প প্রতিষ্ঠানের আশপাশে গড়ে তুলতে হবে। তবে বড় বড় সড়ক ও কলকারখানার একেবারে নিকটে খামার স্থাপন করা উচিত নয়। শস্য খামার স্থাপনের জন্য উর্বর ও নিষ্কাশিত জমির একান্ত প্রয়োজন। বৃষ্টিপাত ও জলবায়ুর ভিন্নতার কথাও বিবেচনায় রাখতে হবে। আধুনিক প্রযুক্তি কত সহজে পাওয়া যায় তার ওপর খামার স্থাপন নির্ভর করে। কৃষি খামারের জন্য আধুনিক প্রযুক্তির পাশাপাশি নিয়মিতভাবে এবং নগদ দামে উপকরণ সরবরাহের ব্যবস্থাও থাকা প্রয়োজন। শ্রমের সহজলভ্যতা, বাজার ও পরিবহন সুবিধার বিষয়টি খামার স্থাপনে অগ্রাধিকার দিতে হবে। খামারের দৈনন্দিন কাজ ও আয়-ব্যয়ের হিসাব লিপিবদ্ধ করার জন্য খামার ব্যবস্থাপকের তত্ত্বাবধানে রেজিস্ট্রার রাখতে হবে। উপরিউক্ত বিষয়গুলো বিবেচনাধীন রেখে খামার স্থাপন করতে হবে।

ঘ. অভি ভুট্টার খামার সঠিকভাবে পরিচালনার জন্য কিছু পরিকল্পনা গ্রহণ করে।
খামার ব্যবসায় এর ভবিষ্যৎ কার্যক্রম সম্পর্কে পূর্বে প্রস্তুতকৃত ধারাবাহিক বিবরণকে খামার পরিকল্পনা বলে। খামার ব্যবসায়কে লাভজনক হিসেবে পরিচালনার জন্য পরিকল্পনা প্রণয়ন অত্যাবশ্যক। খামার পরিকল্পনার মূল প্রক্রিয়াটি হচ্ছে খামারের বর্তমান অবস্থা ও কার্যক্রমকে সতর্কতার সাথে পর্যালোচনা করে ভবিষ্যতের কার্যক্রমগুলো পুনঃবিন্যাস করা যাতে কম অর্থ ব্যয়ে অধিক মুনাফা অর্জন করা যায় এবং খামার ব্যবস্থাপনার কাজ সুষ্ঠু হয়।
খামার পরিকল্পনার ফলে খামারের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা সহজ হয়। খামার পরিকল্পনা খামারের উৎপাদনের বিভিন্ন সঠিক বিনিয়োগের উপায় সন্ধান করে। এ ধরনের পরিকল্পনা বিভিন্ন পণ্যের ব্যবহার নিশ্চিত করে এবং উৎপাদিত বিভিন্ন পণ্যের সমন্বয় সাধন করে। ফলে উৎপাদিত পণ্য যথাযথভাবে বাজারজাত করা সহজ হয়। খামার পরিকল্পনা খামারে যথাযথভাবে অর্থের যোগান দেয়। পরিকল্পনার মাধ্যমে খামারের উৎপাদন ঝুঁকি হ্রাস পায় এবং দক্ষতার সাথে খামার পরিচালনা করা সহজ হয়। অত্যাধুনিক তথ্য ও প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করে এবং খামারের আর্থিক ব্যয় কমায়।
অতএব বলা যায়, অভির গৃহীত পরিকল্পনা তার গড়ে তোলা খামারকে লাভজনক করতে সহায়ক হবে।

৯. করিম একজন দরিদ্র কৃষক। কৃষিকাজের প্রয়োজনীয় অর্থের জন্য সে দালাল ও বেপারীর নিকট থেকে চড়া সুদে ঋণ গ্রহণ করে। করিমের করুণ দশা দেখে তার বন্ধু আসাদ তাকে পল্লী উনণয়ন বোর্ড থেকে ঋণ গ্রহণের পরামর্শ দেয়।
ক. দীর্ঘমেয়াদি ঋণ কাকে বলে?
খ. বিভিন্ন উৎস থেকে দরিদ্র মানুষ ক্ষুদ্র ঋণ গ্রহণ করে কেন?
গ. করিমের বন্ধু আসাদ তাকে যে প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ গ্রহণের পরামর্শ দেয় তার উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করো।
ঘ. আসাদের পরামর্শকৃত প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ গ্রহণের মাধ্যমে করিম উপকৃত হবে কিনা বিশ্লেষণ করো।

৯ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. সাধারণত পাঁচ বছরের বেশি সময়ের জন্য যে ঋণ দেওয়া হয় তাকে দীর্ঘমেয়াদি ঋণ বলে।

খ. বাংলাদেশের পল্লী এলাকার মানুষ যেসব অর্থনৈতিক কর্মকান্ড- জড়িত তার মধ্যে কৃষিকাজ, পশুপালন, মৎস্য চাষ, কুটির শিল্প ও ইত্যাদি অন্যতম। এসব কর্মকান্ড পরিচালনার জন্য প্রয়োজন অর্থসংস্থান। পল্লীর বেশিরভাগ দরিদ্র মানুষের পক্ষে নিজস্ব উৎস স থেকে প্রয়োজনীয় অর্থের সংস্থান করা সম্ভব হয় না বিধায় তারা ক্ষুদ্র ঋণ গ্রহণ করে।

গ. করিমের বন্ধু আসাদ তাকে বাংলাদেশ পল্লী উনণয়ন বোর্ড থেকে ঋণ গ্রহণের পরামর্শ দেয়।
বাংলাদেশের কৃষকেরা বিভিন্ন উৎস থেকে ঋণ গ্রহণ করে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের কৃষকদের কৃষিঋণ সরবরাহ করার জন্য যে সমস্ত প্রতিষ্ঠান রয়েছে তার মধ্যে বাংলাদেশ পল্লী উনণয়ন বোর্ড অন্যতম। এ বোর্ড কৃষকদের বিভিন্ন উদ্দেশ্যে কৃষিঋণ প্রদান করে। যেমন-
১. কৃষককে প্রয়োজনীয় অর্থের যোগানদানের জন্য এবং উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য কৃষককে ঋণ প্রদান করে।
২. গ্রামভিত্তিক সমবায় সমিতির মাধ্যমে কৃষককে সংগঠিত করে একটি উৎপাদনমুখী শক্তিতে পরিণত করে।
৩. সমবায় সমিতির শেয়ার ক্রয় এবং সাপ্তাহিক ক্ষুদ্র সঞ্চয় করানোর মাধ্যমে গরিব কৃষকদের মূলধন গড়ে তোলে।
৪. কৃষক সমিতিসমূহ নিয়ে উপজেলা/থানা কেন্দ্রীয় সমবায় সমিতি গঠন করে।
৫. উন্নয়নমূলক কাজে নিয়োজিত ও সমবায় কর্মীদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে গরিব কৃষকদের মূলধন গড়ে তোলে।
৬. ক্ষুদ্র শিল্পে বিভিন্ন পণ্য উৎপাদনের পাশাপাশি কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করে এবং সমবায়ের মাধ্যমে গ্রাম অঞ্চলে ক্ষুদ্র শিল্প প্রতিষ্ঠার বিকাশ সাধন করে।
৭. কৃষিজাত পণ্য গুদাম ও বাজারজাতকরণ এবং শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বাসস্থান প্রভৃতি উন্নয়নের পরিকল্পনা গ্রহণ করে।
উল্লিখিত উদ্দেশ্যসমূহ বাস্তবায়নের জন্য বাংলাদেশ পল্লী উনণয়ন বোর্ড কৃষকদের ঋণ প্রদান করে থাকে।

ঘ. আসাদ তার বন্ধু করিমকে বাংলাদেশ পল্লী উনণয়ন বোর্ড থেকে কৃষিঋণ গ্রহণের পরামর্শ দেয়।
কৃষকদের কৃষিকাজকে সহজতর করার জন্য বিভিন্ন ধরনের প্রতিষ্ঠান ঋণ প্রদান করে। এ ধরনের প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ গ্রহণের প্রধান সুবিধা হলো এখান থেকে ঋণ গ্রহণে কৃষকের প্রতারিত হওয়ার সুযোগ কম থাকে। চাহিদামাফিক ঋণ পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। কৃষক তার প্রয়োজন অনুসারে ঋণ গ্রহণে গ্রহণ করতে পারে। এ ধরনের ঋণ অধিকাংশ সময়ই বন্ধকীর প্রয়োজন হয় না। দুর্যোগকালীন সময়ে এ ধরনের প্রতিষ্ঠান কৃষকদের ঋণ দানে - বিশেষ সুবিধা প্রদান করে। অনেক সময় কম সুদে ও ঋণ প্রদান করে। এ ধরনের ঋণ গ্রহণে সমবায় বা দল গঠনের প্রয়োজন হয় না। ব্যক্তি একাকীও এ ধরনের ঋণ গ্রহণ করতে পারে।
এ ধরনের ঋণ গ্রহণে কৃষকেরা অনেক সমস্যার সম্মুখীনও হয়। কারণ, এখানে দালাল দ্বারা প্রতারিত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এখানে ঋণের প্রক্রিয়াকরণও বেশ জটিল। কেননা এতে আমলাতান্ত্রিক প্রচুর জটিলতা রয়েছে। তাই অনেক সময় ঋণ পেতে বেশ বিলম্ব হয়ে যায়।
উক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়, এ ধরনের প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ গ্রহণে অসুবিধার তুলনায় সুবিধাই বেশি। তাই করিম উক্ত প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ গ্রহণ করে উপকৃত হবে।

১০. গোবিন্দপুর গ্রামের কৃষকরা দীর্ঘদিন থেকে সেচের পানির অভাবে কাঙি্ক্ষত ফসল উৎপাদন করতে পারছে না। এ সমস্যা সমাধানে তারা সমবায় সমিতি গঠনের সিদ্ধান্ত নেয়। সমবায়টিতে নিবন্ধনের সময় তারা বাংলাদেশ সরকারের সমবায় বিষয়ক নীতিমালা সম্পর্কে জানতে পারে।
ক. ICA-এর পূর্ণরূপ কী?
খ. কৃষি সমবায় বলতে কী বোঝ?
গ. গোবিন্দপুর গ্রামের কৃষকদের গড়ে তোলা সংগঠনটির মূলনীতি ব্যাখ্যা করো।
ঘ. গাবিন্দপুর গ্রামের কৃষকদের গৃহীত সিদ্ধান্তের যথার্থতা ব্যাখ্যা করো।

১০ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. ICA-এর পূর্ণরূপ হলো International Co-operative Alliance.

খ. কৃষিকাজ সুচারুভাবে সম্পন্ন করতে সীমিত সংখ্যক কৃষক একত্রিত হয়ে পারস্পরিক সম্মতির ভিত্তিতে নির্দিষ্ট আইনের আওতায় যে সমবায় গড়ে তোলে তাকে কৃষি সমবায় বলে।
ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি, সেচ প্রকল্প বাস্তবায়ন, স্বল্পমূল্যে কৃষি উপকরণ (বীজ সার, কীটনাশক ইত্যাদি) সরবরাহ, পশু সম্পদের উন্নয়ন প্রভৃতি উদ্দেশ্যসমূহ বাস্তবায়নের জন্য কৃষি সমবায় গড়ে তোলা হয়। এছাড়া কৃষি সমবায় উৎপাদিত কৃষিপণ্য সংরক্ষণ, বাজারজাতকরণ ও ন্যাযমূল্যে বিক্রির মাধ্যমে সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চত করে।

গ. গোবিন্দপুর গ্রামের কৃষকদের গড়ে তোলা সংঘটি হলো কৃষি সমবায়।
কৃষিকাজের জন্য প্রয়োজনীয় মূলধন সংগ্রহ, কৃষি যান্ত্রিকীকরণ, ফসল উৎপাদন, সংগ্রহ, সংগ্রহোত্তর পরিচর্যা, গুদামজাতকরণ, পরিবহন এবং বাজারজাতকরণ সুচারুভাবে সম্পন্ন করার জন্য কৃষকগণ যে সমবায় গড়ে তোলেন তাকে বলে কৃষি সমবায়।
কতগুলো মৌলিক নীতির ওপর ভিত্তি করে এই সমবায় সমিতি গড়ে ওঠে। এসব মূলনীতির মধ্যে রয়েছেত
১. সহযোগিতার মনোভাব: সদস্যগণের মধ্যে সহযোগিতা ও সৌহার্দ্যপূর্ণ মনোভাবের ওপর সমবায়ের সাফল্য বহুলাংশে নির্ভরশীল।
২. একতা: খামারের কাজে সকল সদস্যদের মধ্যে একতা থাকলে সহজেই সফলতা লাভ করা যাবে।
৩. সাম্য: ধনী-গরিব, ছোট-বড়, সকলেই সাম্যের ভিত্তিতে সমান অধিকার নিয়ে নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করবে।
৪. আঞ্চলিকতা: কৃষি সমবায়ের সদস্যগণ একই গ্রাম বা একই মহল্লার হওয়া উত্তম।
৫. মিতব্যয়িতা: সদস্যগণের মধ্যে মিতব্যয়িতার অভ্যাস থাকলে সমিতিগুলো দ্রুত উন্নতি লাভ করতে পারবে।
৬. সততা: কৃষি সমবায়ের উন্নতি ও সফলতার জন্য প্রতিটি সদস্যের মধ্যে ন্যায়নীতি ও সততা থাকতে হবে।
৭. গণতন্ত্র: সমবায় প্রতিষ্ঠানের সদস্যগণের কাজকর্ম, অধিকার ও দায়িত্বে সমান অংশীদারিত্ব থাকা আবশ্যক।
৮. সমঅধিকার: মুনাফা বা লোকসানের ক্ষেত্রে সমঅধিকার থাকবে।
৯. নিরপেক্ষ মানদ-: কৃষি সমবায়কে ধর্ম, বর্ণ ও রাজনৈতিক বিষয়গুলো থেকে দূরে থাকতে হবে।
১০. স্বাধীনতা: সমিতির সকল সদস্যেরই নিজস্ব মতামত প্রকাশের অধিকার থাকবে।
১১. আস্থা ও বিশ্বাস: সফলতা পেতে হলে এর সদস্যদের মধ্যে পারস্পরিক আস্থা ও বিশ্বাস রাখতে হবে।
উপরিউক্ত মূলনীতির ওপর ভিত্তি করে কৃষি সমবায় সমিতি গড়ে ওঠে।

ঘ. গোবিন্দপুর গ্রামের কৃষকেরা পর্যাপ্ত সেচের পানি প্রাপ্তির জন্য সমবায় সমিতি গড়ে তোলেন।
আধুনিক কৃষির জন্য প্রয়োজনীয় সকল উপকরণ সংগ্রহ ও ব্যবহারে কৃষকদের সক্ষম করে গড়ে তুলতে কৃষকদের নিয়ে সমবায় সমিতি গড়ে তোলা হয়। কৃষকরা কৃষিকাজের সময় বিভিন্ন ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হন। এর মধ্যে জমিতে সেচ প্রদান অন্যতম।
সেচ দিলে ফসলের ফলন বাড়ে। ফসল উৎপাদনের মোট খরচের প্রায় ৩০ ভাগ খরচ হয় সেচ ব্যবস্থাপনায়। আর্থিক সংকটের জন্য একজন কৃষকের পক্ষে এককভাবে অনেক ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় পানি সেচের ব্যবস্থা করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। অথচ সমবায় সমিতি গঠনের মাধ্যমে জলাধার নির্মাণ করে, গভীর ও অগভীর নলকূপ স্থাপন, শক্তিচালিত পাম্প প্রভৃতি ক্রয় বা ভাড়া করে জমিতে পানি সেচ দেওয়া সম্ভব হয়। এতে সেচের খরচ কম হয়। সেচের অভাবজনিত ফলন ঘাটতি হ্রাস পায় এবং কৃষকদের আর্থ সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন ঘটে।
সুতরাং বলা যায়, গোবিন্দপুর গ্রামের কৃষকদের সমবায় সমিতি গঠনের সিদ্ধান্ত যথার্থ ছিল।

No comments:

Post a Comment

Post Bottom Ad

Responsive Ads Here